ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২০

0
1211

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২০ ||

– জাইফ ঘুম ভাঙলো তোর ভাঙলে আম….

রিকেশ বলতে বলতে জাইফের রুমে এসে ঢুকলো। জাইফ তখন বসে কফি খাচ্ছিলো। কফি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জাইফ বলে,”হ্যাঁ কেন কিছু বলবি?”

– বলার জন্যই তো এলাম। এই আনুস্কা টা না বড্ড জ্বালাচ্ছে আমাকে। বলে কিনা সাগরের টকবগা রুইমাছ খাবে? মানে এতোটাও কেউ করে ভাই? আমি এই রাক্ষসীকে কি করে সামলাবো বলতো?

জাইফ ফিক করে হেসে দেয় তারপর বলে,”তো আনিয়ে নে এতে এতো অভিযোগ কিসের তোর?”

– স্বাধে কি আর অভিযোগ করি ভাই! রাত তো আমার জমপেশ খেলো এখন সকাল হতে না হতেই আমার গায়ে জল ঢেলে ঘুম থেকে উঠালো রুইমাছ খাবে না।(অসহায় ভঙ্গিতে)

জাইফ মুখ টিপে হেসে কফি খেতে খেতে বলে,”বিয়ে যখন করেছিস সামলা এই আমি বেশ আছি!”

– বুঝবা চান্দু বুঝবা যখন একটা কালসাপ কপালে জুটবে।

তখনই আনুস্কার ডাক পরে রিকেশের। আনুস্কা গহর থেকে চেঁচিয়ে বলছে,”ওই বজ্জাত বর তুই কই রে কোন জায়গায় আমার দুর্নামে মত্ত আপনি? উফফ আমার জিবহায় ইয়া বড় কামড় খেলাম! তাড়াতাড়ি আসেন রুমে নইলে কপালে আপনার দুঃখ আছে।”

আনুস্কা বলতে দেরী রিকেশ দৌড়ে যেতে দেরি নাই। রিকেশ যেতেই জাইফ হাফ ছেড়ে বাচলো। তারপর কোনো কিছু না ভেবে ডান পাশের থেকে বেডশিট উঠিয়ে নেয়। সেখানে যীনাত লম্বা হয়ে শুয়ে ছিলো। বেডশিট মোটা বিধায় ডান সাইডে যে কোনো মানুষ ছিলো সেটা বোঝাই যায়নি। রিকেশ আসার আগেই জাইফ যীনাতকে লুকিয়ে ফেলেছিলো। যীনাত ভয়ার্ত চোখে জাইফের দিকে তাকাতেই জাইফ একটা টেডি স্মাইল দিলো। আবার যেই যীনাতের দিকে যাবে ওমনি যীনাত জাইফকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। যীনাতকে এমন বাচ্চাদের মতো দৌড়াতে দেখে জাইফ শব্দ করে হেসে দেয়। জাইফ সিঁড়ই দিয়ে নেমে মল্লিকা দেবীর কাছেই যাচ্ছিলো তখনই দেখে যীনাত কফি নিয়ে উপরের দিকেই আসছে আর তার চেহারায় ভয় স্পষ্ট। জাইফ কিছু না ভেবেই আবার নিজের রুমে ফিরে আসে আর দরজা ভিজিয়ে দেয়। তারপর বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর ভান ধরে থাকে।

যীনাত নিজের ঘরে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটুর জন্য মনে হচ্ছিলো যেনো তার প্রাণটাই বেরিয়ে হাতে চলে আসতো। কখনো কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে আসেনি। আর জাইফ…. ভাবতেই যীনাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। জাইফের এমন আচরণে যীনাত আরও বেশি ভয় পেয়ে যায়।

সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করলো নতুন বউকে নিয়ে। যীনাত লজ্জায় একবারের জন্যেও জাইফের দিকে তাকাতে পারেনি। জাইফ আড়চোখে যীনাতের লজ্জামাখা চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসছিলো আর খাচ্ছিলো! তিশানা জাইফের এমন মুখ টিপে হাসা খেয়াল করে এবং সাথে সাথেই বলে,”দাভাই তুই এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেন?”

জাইফ কথা ঘুরিয়ে বলে,”তোকে পেত্নির মতো লাগছে তো তাই।”

তিশানা রেগে জাইফের দিকে কাটা চামচ নিক্ষেপ করলো আর জাইফ সেটা খপ করে ধরে বলে,”ইশশ রে ভালো করে এবারও নিশানা লাগাতে পারলি না চো চ্যাড!”

– তুই কবে জানি আমার হাতে উদুম কেলানি খাস দাভাই! দাড়া তোর বউকে আসতে দে তারপর দেকজ তোর বউকে দিয়ে কেমন তোকে কাবু করি!

বউয়ের কথা শুনে যীনাত বিষম খেলো। আনুস্কা জলদি করে যীনাতকে পানি দিয়ে বলে,”তুমি ঠিক আছো যীনাত?”

যীনাত পুরো গ্লাসের পানি খতম করে কাশতে কাশতে বলে,”হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।”

দেবনাথ দেব মুখ টিপে হাসছে আর জাইফ তো এবার আলাশের চাঁদ হাতে পেলো এমন অবস্থা। সেও যেনো নিজেকে তৈরি করে বলা শুরু করে,”আমার বউকে আমি নিজেই হাতের মুঠোয় রাখবো সে আবার আমায় কি কাবু করবে? সে তো মেয়বি আমার ধারে কাছে আসতেই ভয় পাবে, আমার চোখ গরম দেখলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে আবার সে নাকি আমায় করবে কাবু? হা হা তিশু তোর মাথায় আসলেই স্ক্রু ঢিলা।”

জাইফের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে যীনাতের। গলা দিয়ে আর খাবার নামানো সম্ভব হলো না তার। এখানে কতো গুরুজনরা আছে, দেবনাথ দেব, নিকেশ, কমলা দেবী আর মল্লিকা দেবী। কেন জানিনা এদের মাঝেই যীনাতের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এদিকে জাইফ রেডিওর মতো বলেই যাচ্ছে। যীনাত খাচ্ছে না দেখে সোভন বললো,”কি হলো আপনি খাচ্ছেন না কেন?”

জাইফ আড়চোখে যীনাতের দিকে তাকালো। সত্যিই বেচারী খাচ্ছে না জাইফ যা বলেছে যীনাতের সেসবই হজম হয়ে গেছে আবার কি খাবে?যীনাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,”ইয়ে… হ্যাঁ আসলে আমার খাওয়া শেষ আমি উঠি!”

– কোথায় খাওয়া শেষ আপনি তো তেমন কিছুই খেলেন না।

সোভনের এমন কথা শুনে জাইফের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। এই ভাইটাকেও তার এখন বিষের মতো লাগে। অন্যের বউয়ের দিকে নজর কেন দেয় তাও নিজের কাজিনের বউয়ের দিকে?

যীনাত ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে গেলো। এদিকে জাইফ সোভনের জন্য রাগে ফুসতে লাগে। আনুস্কা সবটাই খুটিয়ে খুটিয়ে খেয়াল করলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। যীনাত নিজের রুমে এসে আচ্ছাশির জাইফকে লবণ মরিচ দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে।

– পাইসে টা কি আমাকে, সকাল থেকে কি পরিমাণে জ্বালাচ্ছে ব্যাটায়! উফফ কতোগুলা মানুষের সামনে আমার সম্মান বিলিয়ে দিলো ধুর ধুর! এর থেকে রিভেন্সও নিতে পারিনা। কি করে নিবো তাকে দেখলেই তো অটোমেটিক ঠান্ডা হয়ে যাই মুহূর্তেই কেমন হাত পা কাঁপাকাঁপি অবস্থা হয়ে যায়।

এসবই ভাবছিলো যীনাত। কিন্তু তার পাশে কখন যে জাইফ এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে তার খেয়ালই নাই। জাইফ নিরবতা ভেঙে বলে,”তুমি যে ভীতু তাই আমার ভয়ে কাঁপাকাঁপি করো!”

যীনাত টাস্কি খেয়ে পাশে তাকায়। জাইফকে দেখে যীনাত দু’কদম পিছিয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা যীনাতের মনের কথা জাইফ কি করে বললো?

যীনাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আ…আপনি এখানে?”

– হুম আমি কেন, কাকে আশা করছিলে?

– কাকাউকে ননা! আর আপনি আমাকে না বলে কয়ে ঘরে ঢুকেন কেন?

– না ঢুকলে জানতাম নাকি আমার বউটা এতোটা ভিতু।

– একদম আমাকে ভীতু বলবেন না আর আপনি আমার মনের কথা কি করে শুনেন?

– তুমি যদি জোরে জোরে বলো তাহলে আমি কেন যে কেউ-ই শুনবে! আর তুমি তো মুখে বলেছো মনে নয়।

এবার যীনাত নিজেই কনফিউশনে পরে গেলো। সত্যি-ই কি সে মুখে বলেছে নাকি মনে? কে জানে। জাইফ আরও কিছুক্ষণ থেকে অফিসের জন্য রেডি হতে নিকের রুমে চলে গেলো। যীনাতও যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। জাইফ তার আশেপাশে থাকলে যেনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

– কি খবর এনেছো পৃথিবী থেকে?

অবয়কটি মাথা নিচু করে বলে,”সর্দার পুরো পৃথিবীর মুসলিম পরিবার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও রাজপুত্রের নাম নিশানাও খুঁজে পাইনি।”

সর্দার হাতের সামনে থাকা মানুষের মাথার কঙ্কাল হাতে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলে। সর্দারের এমন রূপ দেখে অবয়কটার আত্মা কেঁপে উঠে আর থরথর করে কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দেয়। সর্দার ভয়ংকর প্রাণীর মতো হুংকার দিয়ে বলে,”তাহলে কোথায় রাজকুমার হ্যাঁ? কোথায় তাকে লুকিয়ে রেখেছে ওই বুড়ী? বুড়ী তুই আমাদের হাতে মরেও আমাকে এতো বছর দজরে কুকুরের মতো নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছিস! তোরে মন চাচ্ছে খুবলে খেতে। তুই… (মাথায় হাত দিয়ে) আর তুই ভালো করে খুঁজে বের কর। আর যেই মানুষটার কাছে ওয়ারদূন আসরার তার খবর কি? সে কি সেই বিস্ফোরণে মরেনি?”

অবয়কটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে ফেলতে বলে,”জানিনা হুজুর কিভাবে যেনো বেচে যায় মেয়েটা। আর মেয়েটার সাথে একটা হিন্দু ছেলের বিয়েও হয়েছে!”

বিয়ের কথা শুনে সর্দার পুরো ঘর ছিন্নভিন্ন করে ফেললো।

– আয়ায়ায়ায়ায়া নায়ায়ায়ায়ায়ায়া আমার একের পর এক পরিকল্পনা কি করে বিফলে যাচ্ছে কি করেএএএ!! আমি কিচ্ছু জানিনা! যেভাবেই হোক রাজপুত্র আর ওয়ারদূন আসরার কে চাই-ই চাই! যদি এনে না দিতে পারিস তাহলে তোদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে রাখ!(হুংকার ছেড়ে)

অবয়কটি কেঁপে বলে,”জজজজ্বী হুজুর!”

বলেই যেতে নিলো ওমনি সর্দার বলে উঠে,”আজকে রাতের মধ্যে মেয়েটার রক্ত পান করতে চাই। এর মানে বুঝেছিস তো?”

– মেয়েটাকে মেরে দিতে হবে?

– এইতো বুদ্ধিমানের মতো কথা এখন যা সময় নষ্ট করা আমি অপছন্দ করি।

বলেই হায়নার চেয়েও হিংস্রভাবে হাসতে থাকে সর্দার। অবয়কটি যাওয়ার অনুমতি পেতেই ভ্যানিস হয়ে গেলো।

যীনাত ঘুমিয়ে আছে তখনই তার ঘরে ৪টা অবয়ক তাকে ঘিরে হাজির হলো। সেই একই সময়ে জাইফের রুমে একটা সাদা রশ্মি উদয় হয় আর চট করে সেই রশ্মিটা জাইফের মাথায় ঢুকে গেলো।

অবয়কগুলো বিস্রিভাবে যীনাতকে দেখছে। তাদের যীনাতকে দেখে লোভ সামলাতে পারেনা এবং সিদ্ধান্ত নেয় যীনাতকে ভোগ করেই তারা যীনাতকে সর্দারের হুকুমে মেরে দিবে। যেই লালসার সাথে যীনাতের দিকে এগোতে থাকে এমন সময়ই কেউ বাতাসের বেগে এসে চারজন অবয়ককে একসাথে একই হাতে একসাথে গলা টিপে দেয়ালের সাথে বারি লাগায়। সামনের লোকটার সাথে তারা ধস্তাধস্তি করতে চেয়েও পারছে না। তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে সামনের জন দৃশ্যমান হতে থাকে। অবয়কগুলো বিস্ফোরিত চোখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,”রারারাজকুকুমার!!!”

———————————-

চলবে!!!

(ধামাকা কেমন লাগলো সবার?)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে