Thursday, July 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1529



অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৬

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খোলার সময় খেয়াল করলাম জানালা তো লাগাতে ভুলে গেছি।
এদিকে দরজার লক খোলা অবস্থায়, তৎক্ষনাৎ ভাবী দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো। আমি চোখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে নজর করলাম, তাকিয়ে দেখলাম ইয়াজ ততক্ষণে জানালাটা বাইরে থেকে হালকা চাপিয়ে দিয়েছে।
ভাবী ভেতরে এসে বললো,
___ভেতরে কোনো আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কার সাথে কথা বলছিলে? নাকি কান্না করছিলে? এই ইয়াজ ছেলেটা যে কোথায় গিয়ে বসে আছে আল্লাহ জানে!

এইটুকু বলেই ভাবী জানালায় নজর করে আঙুল দিয়ে বললো,
___আরে এটা তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। কে খুললো?

এটা শুনে আমি চুপসে গেলাম। এখন ইয়াজ একেবারে ধরা! আমি তাকিয়ে বললাম,
___আসলে আমিই খুলেছিলাম!

ভাবী তাকিয়ে বললো,
___ইয়াজ আসছে কিনা দেখছিলে নাকি? বিন্দিয়া তোমার খুব খারাপ লাগছে?

বলতে বলতেই ভাবী জানালাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে অগ্রসর হচ্ছে। আমি আগ বাড়িয়ে তারাতাড়ি জানালার কাছে গিয়ে বললাম,
___আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।

ভাবী ওখানেই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
___ঘুমিয়ে যাও তুমি। সে আসলেও এখন আর ভেতরে আসতে দিওনা। আমিও ঘুমিয়ে যাচ্ছি।
এই যে নাও চাবি, রাতে দরজা একদম খুলবেনা। সকালে খুলবে বুঝেছো?

আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম। ভাবী আস্তে আস্তে চলে গেলো।
ভাবী নিজের রুমে যাওয়ার পরেই আমি জানালা খুলে এদিক ওদিক তাকালাম। আমাকে দেখে এবার সে উপরে না উঠেই জিজ্ঞাসা করলো,
___ইথিলা চলে গেছে?

___ হুম ঘুমাতে গেছে। আর চাবি আমার কাছে।

ইয়াজ অস্থির স্বরে বললো,
___তারাতাড়ি গেইট খুলো তাহলে।

আমি ঘাড় ফিরিয়ে বললাম,
___ নাহ খোলার অনুমতি নেই। সকালে আসবেন, শুভ রাত্রি!

ইয়াজ কোমরে হাত রেখে রেগে বললো,
___ ইথিলা বলেছে না খুলতে? আরে সে তো খোলার জন্যই চাবি তোমাকে দিয়ে গেছে, সকাল হলে তো সে নিজেই খুলতো। আচ্ছা বাদ দাও, বলো কিসের শাস্তি এগুলো? দেরি করেছি বলে?

আমি ঠোঁট বেঁকে বললাম,
___সবকিছুর একসাথে। ওই যে আপনার সাথে দেখা হওয়া প্রথমদিন থেকে শুরু এই পর্যন্ত যত অপমান করেছেন! আমি কিন্তু একটাও ভুলিনি। মনে আছে প্রথমবার আমার সাথে রিকশায় চড়ে কি বলেছিলেন? তো এখন আমার সাথে ঘুমাবেন কি করে? খারাপ লাগবেনা? তার চেয়ে বাইরেই থাকেন, প্রকৃতি দেখতে দেখতে, আশেপাশের ডাস্টবিনের সুগন্ধি শুঁকতে শুঁকতে রাতটা সুন্দর কেটে যাবে।
আমি না হয় এইসব সাজানো ফুলের গন্ধে একাই থাকি, হাঁ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে প্রিয় স্বামী। কাল দেখা হবে।

হাই তুলতে তুলতে জানালা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণ বস একা একা হাসলাম। তারপর চাবি হাতে রুমের দরজা খোলে পা টিপে মেইন গেইটের দিকে গেলাম। গেইটটা আস্তে আস্তে খুলেই চমকে উঠলাম। ইয়াজ সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত বুকের উপর ভাঁজ করে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি একটু পিছিয়ে আসলাম। ইয়াজ হুড়মুড় করে এসে গেইট লাগিয়েই পেছন থেকে একটানে আমাকে কোলে তুলে ফেললো।
আমি চোখ রাঙিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
___কি হচ্ছে কি?

ইয়াজ কোন কথা শুনলোনা। সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
___এই মধ্যরাতে ছাদে কেন?

ইয়াজ বেরসিকভাবে বললো,
___তোমাকে সেখান থেকে একদম নিচে ফেলে দিবো। এতক্ষণ আমার সাথে ফাজলামো করছিলে সেটার শাস্তি!

আমি গলা জড়িয়ে ধরে মুখ বরাবর মুখ রেখে বললাম,
___ফেলে দিয়েন দেখবো কতো সাহস!

ইয়াজ চোখের তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
___হ্যাঁ ফেলবোই তো চিরদিনের জন্য, আমার প্রেমে! আর সাহস না থাকলে কি এভাবে বিয়ে করতে পারতাম?

আমি গলাটা আরো আঁকড়ে ধরে মৃদু হাসলাম।

সে আর দুই সিঁড়ি গিয়েই বললো,
___ এই চাবিওয়ালি, গেইট খুলো।

আমি একহাত দিয়ে ইশারা করলাম কোনটা চাবি, ইয়াজ দেখিয়ে দিলো। তারপর খুলে দিলাম। ইয়াজ দরজা টেনে খুলে আমাকে বললো,
___চোখ বন্ধ রাখো একটু।

কিছু জিজ্ঞাসা না করেই চোখ বন্ধ করলাম।
ইয়াজ আমাকে কোলে নিয়েই একটু এগিয়ে কিছু একটাতে বসায়ে বললো,
___চোখ খুলো এবার।

আমি চোখ খুলে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। পুরো ছাদের ঠিক মধ্যখানে ফুল দিয়ে বিশাল আসন পাতানো। যার একপ্রান্তে আমি বসে আছি। উপরে আকাশে তালার মতো বিরাট চাঁদ, সেটার কিরণে ঝলমল করছে চারপাশ।
আর আমার ঠিক সামনে ইয়াজ দু’হাতে এক ঝুড়ি ফুল উপরে ছড়িয়ে দিয়ে বলছে,
___আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি বিন্দিয়া!

আমি এক মূহুর্ত না বসে একটা দৌঁড় দিয়ে গিয়ে ইয়াজকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম। কতক্ষণ চলে গেলো, জানিনা। কিন্তু হঠাৎই ইয়াজ আমাকে স্থির করে দাঁড় করালো,ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিলো।
আমি নিচু হয়ে সেটা তুলে দেখলাম সেখানে একটা লকেট ঝুলছে! কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললাম,
___এটা কি E এর মধ্যে B? দুটোই তো একসাথে বুঝা যাচ্ছে।

ইয়াজ আমাকে আবারও জড়িয়ে ধরলো, আর বললো,
___হ্যাঁ যেমন আমার মধ্যে তুমি আছো!

কিছুক্ষণ আবার নিরব। তারপর বলতে লাগলো,
___বিন্দিয়া এসব কিন্তু আমার বন্ধুরা করেছে। ওদের নিয়ে পার্টিসার্টি শেষ ছিল ৯ টার দিকেই। তারপর ওরা বসে এই প্ল্যান করে সব কিনলো আর ১১ টার পরে ছাদে উঠার জন্য আলাদা মই এনে পেছন দিক থেকে সব উপরে তুলে এসব করলো।কতো আস্তে আস্তে পা ফেলে এগুলো করতে হয়েছে জানো? নইলে ছাদের উপর ভূত আছে ভয়ে বাড়ির সবার কলিজা শুকিয়ে যেতো। আর এইজন্যই আসলে আমি তারাতাড়ি আসতে পারিনি। সরি!

আমি মাথা তুলে বললাম,
___মই এখনো পেছনে লাগানো নাই তো? আপনার বন্ধুরা কোথায়?

ইয়াজ হেসে বললো,
___আরে নাহ, সবাই চলে গেছে কবেই।

তারপর ইয়াজ কি ভেবে যেন আবার আস্তে আস্তে বললো,
___ আমাদের বিয়েটা এতো তারাতাড়ি হয়েছে যে স্বর্ণ কতটুক দিবে, কি দিবে কিছুই আগে বলেনি, সময়ই ছিল না। সবটাই আমার দোষ! তাছাড়া তোমার বাবাও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। শুধু হাতের আংটিটা বিয়েরদিন তারাহুরোর মধ্যে কিনে নিয়েছি। বিষয়টা খারাপ লাগছে খুব। সবকিছুরই তো একটা সামাজিকতা আছে তাইনা?

আমি কানে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললাম,

___এই যে মা দুলগুলো আজ পরিয়ে দিলো,আরেকটা আংটিও তো দিলো। আবার আপনি এখন এই এই লকেটসহ চেইন দিলেন। আমার জন্য সবকিছুই অপ্রত্যাশিত ছিল, এমনকি আপনার ভালোবাসাও! আমি ভাবিনি এতো সুন্দর একটা সময় আসবে আমার! আমি এমনিতেই খুব খুশি।

ইয়াজ মাথা নেড়ে বললো,
___উমম মা এই জন্যই বলতো তোকে কিছু দিবোনা,তোর বউকে দিবো! তাহলে শুধু ইথিলা আর বাবা বাকি আছে! আর আমার দেওয়া তো আজ থেকে আজীবন!

আমি ইয়াজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
___ কি বলছেন এসব? আমি কিছু চেয়েছি? আমার জীবনে আপনি থাকলে আমার আর কিচ্ছু চাইনা।
আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি!

সাথে একটা পূর্ণতার হাসি হেসে ইয়াজের কপাল জুড়ে ছুঁয়ে দিলাম ভালোবাসার স্পর্শ!
হ্যাঁ আমি পূর্ণ, একজীবন এখানে থেমে গেলেও আমি হাসতে হাসতে বলতে পারবো আমি আমার ভালোবাসার কাছে বিজয়ী!


পরেরদিন সকাল সকাল ভাবী এসে দরজায় নক করলো।
আমি দরজা খুলতে বললো,
___ইয়াজ কি রুমে আসেনি?

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
___হ্যাঁ আসেনি।

ভাবী রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো। আমি দরজা বন্ধ মুখ চেপে হাসলাম। তবে আমি মিথ্যে বলিনি। রাতে ইয়াজ সত্যিই রুমে আসেনি। আমি রুমে আসলেও সে ওইসব আয়োজনপত্র সরিয়ে আবার কোথাও চলে গেছে, বলেছিলো নাস্তার সময় আসবে। জানিনা সে কেন আমার কাছাকাছি আসার ব্যপারটা লুকাতে চাইছে। হতে পারে সবাই যা ভাবছে সে তাদেরকেও তাই বুঝাতে চাইছে, কিন্তু আমাকে বুঝাচ্ছে নাহ সবার ধারণা ভুল। সে তার বোনের ভালোবাসার জন্য আমাকে তারাতাড়ি বিয়ে করলেও তার মধ্যে প্রতিশোধের তাড়না নেই, সে নিজের ভালোবাসা এবং তার বোনের সুখে থাকা চায়।

৮ টার দিকে আমি আর আর ভাবী নাস্তা তৈরি করে সবাইকে খাবার দিয়ে শেষ করে তারপর নিজেরা খেতে বসলাম। ভাবী আমার বরাবর চেয়ারে বসেছে, আর আমি এমন একটা জায়গায় বসেছি এখান থেকে ভেতরে কেউ আসলে দেখবো কিন্তু ভাবী দেখতে চাইলে পেছনে তাকাতে হবে।
আমি খাবার সময় বললাম,
___আচ্ছা ভাবী ভাই কি তোমাকে বলেছে উনার কোনো প্রেমিকার কথা?

ভাবী খেতে খেতেই চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
___বলেছে সে আমার সাথে সংসার করতে পারবেনা, আমার প্রতি তার কোনো ভালোলাগা, ভালোবাসা,আকর্ষণ নেই। তার জীবনে অন্য কেউ আছে। তাই আমি নিজের জীবন নষ্ট না করে যেন নতুন করে জীবন সাজাই, আর তাকে ছেড়ে দেই। আমি খুব কষ্টে বলেছিলাম আপনি সেটা করেন, আমার দেনমোহরের টাকাও শোধ করে ফেলেছেন, এখন শুধু দুইতিনটা কথা বললেই বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। কিন্তু সে সেটা করবেনা, তাহলে নাকি তোমার বাবা তাকে জায়গা দিবেনা। এমনিতে তার দোষ দিয়ে হলেও যাতে আমি ছেড়ে দেই। শুধু এটা না, বলেছে এরপর আমি ওর বাড়ি গেলে আমার মুখ দেখার আগে সে নিজেকে শেষ করে দিবে,তাই এটা আমাকে করতেই হবে!

কথাগুলো বলতে বলতে ভাবী খাবারে শুধুই ঘাঁটছিলো,আর মুখে নিচ্ছিলোনা। আমি সেটা খেয়াল করে বললাম,
___বাদ দাও। আমার আনস্মার্ট, বুইড়া ভাইয়ের জন্য মন খারাপ করতে হবে না। খাও তো।

ভাবী না চাইতেও একটু হাসলো, আর আস্তে আস্তে খেতে লাগলো। এদিকে আমার খাওয়ার শেষ সময়ই দেখি পা টিপে ইয়াজ ভেতরে প্রবেশ করছে। এসেই আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে খাবার নিয়ে রুমে আসতে। তারপর চুপচাপ চলে গেলো রুমের দিকে।
আমি ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
___আরেকটু খাবো, আমি রুমে গিয়ে খাই?

ভাবী অবাক চেহেরায় বললো
___ ওমা এখানে কি সমস্যা? আচ্ছা ঠিকাছে তোমার যেখানে ভালো লাগে।

তারপর ভাবী সন্দেহচোখে পেছনে আর সামনে একবার তাকালো। আমি সেটাকে খেয়াল না করে কয়েকটা রুটি তুলে নিলাম।
ভাবী রসিকতার সাথে হেসে বললো,
___ বিন্দিয়া, এই কয়দিন উপোস ছিলে নিশ্চয়ই? আহারে তাইতো মুখটা পুরো শুকিয়ে গেছে। নাও নাও আরো নিয়ে যাও। বেশি করে খেয়ে একদম মোটকু হয়ে যাবা। ইয়াজ ত্যাড়ামি করলে যাতে ধরে মাইর দিতে পারো।

আমি হাসতে হাসতে খাবার নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ইয়াজ সোজা হয়ে শুয়ে আছে। আমি খাবার রেখে বসলাম, আমাকে বসতে দেখেই উঠে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
___ ইথিলা আমার উপর বেশি রেগে আছে? কি মনে হয় সামনে পেলে মারতে শুরু করে দিবেনা তো?
বুঝতেছিনা ওর রাগ কমাতে কি করতে পারি, সামনে যাওয়ার উপযোগী অন্তত হতে হবে।

___আমি কি ডাকবো? তাহলেই তবে সামনে যাওয়া সম্ভব!

___ আরে না না, এভাবে না।

___তাহলে আর কীভাবে! আর শুনেন আজকে আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকজন আসবে আমাদের নিয়ে যেতে। দুপুরে যেখানেই থাকেন ফিরবেন কিন্তু।

___আচ্ছা তাহলে আমাকে তুমি নিজ হাতে খাইয়ে তারপর পেছন দিক দিয়ে পালাতে সাহায্য করবে, দুপুরে সময়মতো এসে একদম তোমাদের বাড়ি চলে যাবো, একদিন ওখানে থেকে ফিরলেই ইথিলা সব ভুলে যাবে।

আমি হেসে মাথাটা ঠেলে সরিয়ে তারপর খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে ওকে পেছনের দরজা খুলে দিলাম। যাওয়ার সময় সে গালে একটা চুমু খেয়ে এক দৌঁড়ে সেখান থেকে কোথায় উধাও হলো বুঝতেই পারলাম না।
সেখান থেকে চাবি হাতে ফিরতেই দেখি শাশুড়ী মা আমার সামনাসামনি।
দেখেই চাবিটা লুকিয়ে ফেললাম। মা কাছে এসে গালে হাত রেখে বললো,
___চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

তার উনি নিজের রুমে চলে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে ভাবলাম উনি হয়তো ভাবছে ইয়াজের জন্য এখানে সেখানে আনমনে দাঁড়িয়ে মনখারাপ করছি! আমিও আর কিছু না ভেবে রুমে আসলাম। দুপুরের দিকে আমার বাবা, চাচা,ফুফা,আরো কয়েকজন মুরব্বিরা এসে খাওয়া করলেন আর আমাদেরকে তৈরি হতে বললেন।
এদিকে ইয়াজকে ঘরে না দেখেই আমার বাবার মুখটা অন্ধকার হয়ে ছিল।
আমার রওয়ানা দিবো তখনও ইয়াজ নেই, বাবাসহ অন্যরা চলে গেলো, আর আমরা যে গাড়ী দিয়ে যাবো সেটা অপেক্ষা করছে। আমি সবকিছু নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সে কখন আসবে!
অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরে হঠাৎ দেখলাম ইয়াজ দূর থেকে গাড়ী এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদেরকে ডাকছে। ইথিলা ভাবী এমনি বের হয়ে গেছিলো,তাই সামনে আর এগুতে পারলোনা। কিন্তু বুঝতে পারছে ইয়াজ ভয়ে সামনে আসছেনা। ভাবী হেসে বললো, কয়দিন পালাবে চান্দু, এরপর আসুক!
আমি হেসে দিলাম, আর বিদায় নিয়ে উঠে গাড়ীতে বসলাম। গাড়ী একটু এগুলো, সামনে গিয়ে ইয়াজকে তুলে ছেড়ে দিলো।

আমি ইয়াজের মাথায় দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম,
___এতো দেরি কেন?

ইয়াজ আমার হাতে ধরে অসহায় চোখ করে চুপ করে রইলো। বুঝলাম না ওর চুপ করে থাকার মানে কি। তখনি আস্তে আস্তে বললো,
___তোমার ভাই তোমার সামনে যদি কষ্ট পায়, তোমার কি বেশি খারাপ লাগবে?

আমি এমন প্রশ্নের জবাব কি দিবো বুঝতে পারলাম না। নিরব ছিলাম, এতে হয়তো ইয়াজ উত্তরটাও বুঝে নিয়েছে।

আমাদের বাড়িতে পৌঁছাতেই দেখি আজ এখানে জামাই দেখার ভীড়। ইয়াজের বাড়িতে ছিল বউ দেখার ভীড় আর আমার বাড়িতে জামাই দেখার। সবার কাছে বিষয়টা আশ্চর্যজনক লাগছে বোধহয়। এদিকে নতুন জামাই গাড়ী থেকে নেমে সবাইকে সালাম দিতে দিতে ইয়াজ হাঁফিয়ে উঠলো। এতো মানুষ, মুরব্বিরা দাঁড়িয়ে আছে যে সে সামনে যেতে পারছিলোনা। শেষ পর্যন্ত বলে উঠলো,
___বাবা গো বাবা এতো মানুষ এই বাড়িতে কখন ছিল? আমার সমন্ধীকে ডাকো কেউ, উনার পায়ে ধরে সালাম করতে চাই।

এই খবর কেউ একজন ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিলো, আমিও ভাইয়াকে ডাকতে ভেতরে যেতে চাইলাম, কিন্তু দেখি ভাই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে তারাহুরো করে কোথাও যাচ্ছে,
___আমি এগিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে বললাম, তোমাদের জামাই সালাম জানাতে ডাকছে!

ভাই পরিশ্রান্ত হয়ে আমাকে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করেই বললো,
___আমি একদিনের জন্য মা’র বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি। আর যাওয়ার জায়গা নেই, জামাইয়ের যা লাগে বাবা ম্যনেজ করবে। যাই আমি হ্যাঁ!

তখন ইয়াজ সামনে দিয়ে এসে পেছনে গেলো,আর ভাইয়ের কাঁধ চাপড়ে ধরলো। কাঁধে কেউ চেপে বসলে মানুষ যেমনভাবে চোখ গোলা বের করে হাঁ হয়ে যায়, তেমন করে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

চলবে….

অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৫

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৫ম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

আমি মাথা তুলে ইয়াজের গালে একটা হাত রেখে খুশিতে আবারও কেঁদে ফেললাম।
ইয়াজ এবার ধমকের স্বরে বললো,
___এই এই কি হচ্ছে? এখনো কাঁদছো কেন? আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি আমাকে বিয়ে করে খুশি হওনি?

এটা শুনে আমি ইয়াজের চোখ বরাবর তাকালাম। আর কেঁদে কেঁদে ভেঙে যাওয়া ক্ষীণ গলায় বললাম,
___ ভালোবাসলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন কেন এই কান্নাটা?

সাথে সাথে ইয়াজ খুব কাছে আসলো, আর আমার কানের পাশে এলো হয়ে যাওয়া চুল আর গালে হাত রাখলো, নাকে নাক ঘঁষে ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
___অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছিনা বিন্দিয়া, ছুঁয়ে অনূভব করি!

আমি ওর গলাটা আরো শক্ত আঁকড়ে ধরলাম, ঠোঁটজোড়া কাঁপছে! ইয়াজের কথার বলার সময় তার ঠোঁটের স্পর্শ আমার গালে উপর মৃদু ঠেকছে,চোখ বন্ধ করে ওর নিঃশ্বাসে খুঁজে পাচ্ছিলাম অনূভুতির মহাসাগর! আমি বুঝতে পারছিলাম গাল বেয়ে আসা জলগুলো ইয়াজের ঠোঁটের স্পর্শে থেমে গেছে, এই মূহুর্তের সার্থকতার প্রবাহমান জলের সাথে সে মুছে দিয়েছে বিষাক্ত সেই কয়দিনের বাজে অনূভুতিদেরও! তারপর আমাকে বুকে জড়িয়ে বললো,
___যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, তুমি আমাকে বুঝবে তো বিন্দিয়া? তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমায় আজীবন আগলে রাখবে তো? কখনো ছেড়ে যাবেনা বলো?

আমি আলতো হেসে বললাম,
___কখনোই না। শুধু একটু ভরসা হয়ে পাশে থাকবেন, আমি আজীবন আপনার জন্য লড়ে যাবো!

ইয়াজ মাথার উপরে একটা চুমু খেলো। আর আস্তে আস্তে বললো,
___আমরা এসে পড়েছি প্রায়। ঠিকঠাক হয়ে বসো।

আমি চোখে তুলে দেখলাম আসলেই এসে পড়েছি। ভাইয়ার বিয়ের সময় যেই রাস্তাটা মাটির ছিল সেটাও এখন সরো ইটের পাকা রাস্তা। গাড়ী একদম বাড়ি পর্যন্ত গেলো।
দেখলাম অনেক মানুষ দাঁড়ানো, ছোট বড় সবাই হয়তো বউ দেখতে এসেছে। অনেক দূর থেকেও মানুষ এটা দেখতে এসেছে যে ইয়াজের বোনের ছাড়াছাড়ির পরেও তার ভাই করে সেই ছেলের বোনকেই বিয়ে করে আনলো। তাও এভাবে হুট করে! অবশ্য এই ব্যপারটা রটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
গাড়ী থামার সাথে সাথে ইয়াজ নেমে গেলো। ইথিলা ভাবী হাত বাড়িয়ে আমাকে নামতে সাহায্য করলো।
আমার দিকে একটু তাকিয়েই ইয়াজকে বললো,
___কিরে ভাই এতো কান্না করেছে মেয়েটা, চোখ দুটো ফুলে কি অবস্থা, তুমি দেখোনি?

ইয়াজ হাত দিয়ে হাই তুলতে তুলতে জোরে বললো,
___ তোহ আমার কি হয়েছে? এসব দেখার সময় আছে নাকি? কাঁদতে ইচ্ছে হয়েছিল বলে কাঁদছে, ইচ্ছে হলে আরো কাঁদবে। কাঁদতেই তো আসছে তাইনা? আর এই যে আপনারা এতজন দেখতে আসছেন, ভালো করে দেখে যাবেন। কয়দিন পরে আর নাও দেখতে পারেন!

উপস্থিত সবাই মুখে হাত দিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে গুমগুম করে কানাকানি শুরু করে দিছে। ইথিলা ভাবী আমার দিকে ১০ সেকেন্ড একনাগাড়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
কাঁদতে কাঁদতে বললো,
___বিন্দিয়া আমি তোমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতেছি মনে হয়, তুমি আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও প্লিজ!

আমি প্রতিত্তোরে কিছুই বললাম না। উনি আমাকে ছেড়ে হাত ধরে আস্তে আস্তে ভেতরে নিয়ে বসালো। একেক করে সবাই দেখে গেলো, আর চুপিচুপি অনেক ধরনের কথা বলতে লাগলো। আমি স্পষ্ট না শুনলেও এটা ধারণা করতে পারছি সবাই বলছে, এই ছেলে ইয়াজ তার বোনের জন্য খুব পাগল, সে প্রতিশোধ নিতেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করছে,দেখে নিও দুইদিন পরে ছেড়ে দিবে।
এইধরনের কোনো কথাকে আমি পরোয়া করছিলাম না। কারণ আমি ইতোমধ্যে জানি ইয়াজের উদ্দেশ্য কি! শুধু সবার আড়ালে এদিক ওদিক ইয়াজকে খুঁজছিলাম।
আস্তে আস্তে মানুষের ভীড় কমতে লাগলো। আর আমি স্বাভাবিক হতে লাগলাম। এদিকে আমি এই বাড়িতে কাকে কি ডাকবো তা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ে গেছি। এক বছর ধরে যা ডেকে আসছি তা কি করে বদলাবো বুঝতে পারছিলাম না। তার মধ্যে ভাবী আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলো, আর আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলো। ভীষণ খিদে ছিল, এতক্ষণ লজ্জায় চাইতে পারছিলাম না। খাবার আনার সাথে সাথে হাতমুখ ধুয়ে কোনো শঙ্কা ছাড়াই খেতে শুরু করলাম, খাবারের শেষ দিকে বললাম,
___ ভাবী ভীষণ খিদে আমার, আরো অল্প আনো না?

কেন জানি আমার কথায় ভাবীর চোখ কেমন ছলছল করছিলো। তাও তিনি অভিমান কাতুরে হয়ে বললেন,
___আমাকে আর ভাবী বলোনা। আমি আর তোমার ভাবী হইনা৷ সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন থেকে আমাকে আপু ডাকবে ৷

আমি মুখ পর্যন্ত খাবারটা নিয়েও হাতটা নিচু করে গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
___তুমি ভাবী, এখনো ভাবী। কারণ তোমাদের বিচ্ছেদ হয়নি। এই ডিভোর্সও হয়নি। আমি দেখেছি তোমাদের কাবিননামায় এমন কোনো উল্লেখ ছিল না যে তুমি আমার ভাইকে কোনো রকম সমস্যা হলে ছাড়তে পারবে। বিয়ের সময় কাবিননামায় মেয়েদের এই চুক্তি না দেওয়া হলে তারা ছাড়তে পারেনা। এরপরও যদি আমার ভাই খারাপ কিংবা অবাধ্য হয়ে থাকে তাহলে সেটার জন্য মুরব্বিদের, কিংবা পরিবারের লোকদের জানিয়ে তাকে বুঝিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত, এরপর না মানলে কিংবা বেশি অত্যাচার করলে সে ক্ষেত্রে সবার সিদ্ধান্তে তার সাথে খোলাখুলি তালাকের কার্য সম্পন্ন করা উচিত। কিন্তু তুমি তো এমনটা করো নি, আর মন থেকেও এই বিচ্ছেদ চাওনি। তাহলে কি করে তুমি বলছো তুমি আমার ভাবী হওনা?

ভাবী খাবারের বাটিটা হাতে নিয়ে বললো,
___বিচ্ছেদ কিভাবে হয় কিংবা হয়না সেটা খুঁজে কি লাভ বলো? তোমার ভাই তো আর চায়না।

তারপর আর কিছু না বলেই ভাবী চলে গেলো খাবার আনতে। দুই মিনিটের মধ্যেই এসে আমার সামনে রাখলো আর ধিরে ধিরে বললো,
___বিন্দিয়া তোমার ভাই এতো রাতে যে ফিরে, খেয়ে ঘুমায় তো? নিজে নিজে খাবার বেড়ে খাওয়ার অভ্যাস তো তার মধ্যে কখনোই ছিল না। আর সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য কে ডেকে দেয়?

কথাগুলো বলতে ভাবীর গলা কাঁপছিলো। কথা শেষে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ভিজে উঠা চোখ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলো।

কিন্তু আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
___ভাই এখন আর দেরি করে ফিরেনা। সন্ধ্যার পরেই বাসায় এসে শুয়ে থাকে, আর আমি ভাইয়ার রুম ঝাড়ু দিতে কিংবা খাবারের জন্য ডাকতে গেলে দেখি আনমনে কোনো একদিকে তাকিয়ে বসে আছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। এই কয়দিনে উনার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

ভাবী জোর করে মুখে একটা হাসি টেনে বললো,
___বাহ তাহলে তো ভালোই।

তারপর আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বাকি খাওয়া শেষ করলাম। তখন দরজায় কেউ নক করছিলো। ভাবী খাবারের সরঞ্জাম একপাশে রেখে আমাকে বললো,
___ ফ্রেশ হয়ে একটু সাজগোজ করো, বউদের এমন শুকনো মলিন মুখে মানায়না৷

বলেই ভাবী দরজা খুলতে গেলো। আর আমি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলাম। কথার ধরনে বুঝলাম আবার একদল বউ দেখতে এসেছে।

ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পরে ভাবীর কথামতো একটু সাজগোজ করে বসলাম। অপেক্ষমাণ বউ দেখা জনগণ এসে দেখে গেলো। তারা যাওয়ার পরেই ইয়াজের মা হাতে একটা বক্স নিয়ে আমার পাশে বসলো। মাথায় হাত রেখে বললো,

___ তুমি যখন তোমার মা বাবার সাথে আমার মেয়ের বিয়ের তারিখে এসেছিলে, তখনি তোমার নম্রমুখের হাস্যজ্জ্বল চেহেরাটা আমাকে টেনেছিলো। কেন জানিনা অদ্ভুত একটা ভাবনা এসেছিলো আমার ইয়াজের জন্য যদি এমন একটা মেয়ে পেতাম! সত্যি সত্যি সেটার বাস্তব ধারণা পেলাম, ইথিলার বিয়ের কয়েকমাস পরেই সে আমাকে বলেছিলো ইয়াজ তোমাকে পছন্দ করে। আর তুমি তো জানোই গতবার তোমার শ্বশুরবাবার পেনশনের টাকায় উনি আর আমি হজ্জ্বে গিয়েছিলাম। সময় ইয়াজ বাদে সবার জন্যই আমি দামী গিফট এনেছিলাম। সারা জীবনের সঞ্চয় সেবার শেষ করে এসেছি, ইয়াজের জন্য আনিনি কারণ তার বউয়ের জন্য এনেছিলাম। কেনার সময়ই তোমার মুখটা আমার চোখে ভাসছিল। এই যে দেখো এই দুলজোড়া আর এই হাতের রিংটা। আজকে বিয়ের আয়োজনের সাথে দেইনি কারণ এটা শুধুই আমার তরফ থেকে তোমার জন্য। তাই চেয়েছি আমার বাড়িতে আসলে আমিই তোমাকে পরিয়ে দিবো।

আমি মুগ্ধ হয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। উনাকে ভীষণ গম্ভীর আর রাগী বলেই এতদিন ধারণা ছিল। কারণ উনি সবসময় কম কথা বলেন। কিন্তু আজকে উনার এই ভালোবাসা আমার খুশির ফোয়ারার বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী একজন!
তারপর তিনি আমার কানে পরে রাখা দুল খুলে উনার ভালোবাসার চিহ্নটা লাগিয়ে দিলেন। হাতের মধ্যমা আঙুলে পরিয়ে দিলেন আংটিটা।
তারপর মাথায় হাত রেখে কপালে চুমু খেলেন। আর বললেন,
___ জানিনা তোমার ভাগ্যে কি আছে, আর ভাগ্য বদলানোর সাধ্যিও আমাদের কারোর নেই। কিন্তু আমার পাগল ছেলেকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় হয়, আমি ছোট বেলা থেকে ওর বোনের জন্য এতো এতো পাগলামি দেখে এসেছি। আজকে ওর বোনের জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়ার পরে তোমাকে এভাবে বিয়ে করার বিষয়টা মাথায় খেলছেনা। সে তোমাকে এড়িয়ে গেলেও তুমি কষ্ট পেওনা মা!

আমি হেসে বললাম,
___ মা আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি সবকিছু সামলে নিবো।

এইটুকু বলেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। কি করে মা ডেকে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। তাই বুঝি লোকে বলে নিজের মা জন্মের পরে লালন পালন করার এক বছরে মা ডাক শুনে, আর শাশুড়ীরা শুনে একদিনে!

তিনি ইথিলা ভাবীকে বললেন আমাকে ইয়াজের রুমে নিয়ে যেতে। তারপর আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হতে যাবেন তখনি উনার ফোনে রিং বেজে ওঠলো। পেছনে তাকিয়ে বললো,
___বিন্দিয়ার বাবা ফোন দিয়েছে।

ইথিলা ভাবী এগিয়ে বললো,
___ইয়াজ তোমার ফোন ফেরত দিয়েছে? কিন্তু আমারটা দেয়নি। কতো বড় বেয়াদব।

আমার শাশুড়ী ফোন আমার হাতে দিয়ে বললেন,
___নাও কথা বলো।

আমি ফোন কানে দিতেই শুনলাম বাবার কান্নাস্বর। বাবা বলতেছে,
___বিন্দিয়া মা, ওরা বলছে ইয়াজ নাকি বাড়ির বাইরে থেকেই তোকে ছেড়ে দেওয়ার উল্লেখ দিয়েছে। বাদলের কাছে এমন অনেক কথা ওখানকার মানুষরা বলতেছে? বাদল ভীষণ অস্থির আচরণ করছে, সত্যিই কিছু হয়নি তো?

আমি ভাবী আর আমার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
___বাবা তুমি চিন্তা করো না। সব ঠিক আছে।

বাবা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কে কেমন আছে, খেয়েছি কিনা এসব জিজ্ঞাসা করে ফোন রাখলো।

ইথিলা ভাবী আমাকে ইয়াজের রুমের দিকে নিতে নিতে বললো,
___ একটা মজার ব্যপার কি জানো? ইয়াজের রুমে এই প্রথম অন্য কেউ তার সাথে রুম শেয়ার করবে। এই বাড়ি বানানোর পরে ওর রুমে ওর কোনো বন্ধু পর্যন্ত থাকার সুযোগ পায়নি। সারাঘর জুড়ে ওর যতো আজগুবি যন্ত্রপাতি আর বই ছড়িয়ে থাকতো। এবার তার বউ থাকবে। তাও যাকে সে আগে আসার পরেও তার রুমে একবারও যেতে দেয়নি।

ভাবী কথাগুলো বলে বলে হাসছে, উনার হাসির সাথে আমিও হাসছি। এখানে আসার পরে এখন একটু হাসতে দেখলাম।

রুমে গিয়ে ভাবছিলাম অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক হবে । কিন্তু সেটা ছিল না, এটা পরিপূর্ণ সাজানো। ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
___এসব কে করলো আর কখন করলো?

ভাবী হেসে বললো,
___আমি করেছি সারাদিনে। সাজিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম। জামাই কাছে কিংবা দূরে থাকুক,বিয়েররাতে ঘর সাজানো কিন্তু অত্যাবশ্যক, হাহহাহাহাহা!

ভাবীর সাথেও আমিও হাহাহা শব্দ করেই হাসলাম। এই হাসিটা ভাবীর মুখে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য। বেশিরভাগই উনি হাঁ করে জোরে শব্দ করে হাসেন।

কিন্তু রুমে গিয়ে একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন,
___এগারোটা বাজে ইয়াজ তো বাসার বাইরে থাকেনা। আজকে এখনো আসেনি মানে!

___চিন্তা করো না চলে আসবে।

অনেক্ষণ কথাবার্তা বললাম। হঠাৎ ভাবী বললো, পৌনে একটা বাজে, কোথায় আছে সে! তুমি বসো তো আমি দেখছি। বলেই ভাবী বের হয়ে গেলো। ভাবী যাওয়ার পরে আমারও অদ্ভুত একটা ভয় লাগছে। সত্যিই সে কোথায়? গাড়ী থেকে নেমে কোথায় গিয়েছিল, এসে খেয়েছিল কিনা আর এখনি বা কোথায় আছে ইয়াজ?
বিয়ের রাতে আমার ভাইও অনেক রাতে বাসায় এসেছিল, সে কি সেটাই করতে যাচ্ছে?
না না উল্টা পাল্টা কিছু ভাব্বোনা। ইয়াজ এমন করবেনা!

রুমের মধ্যেই এদিক ওদিক পায়চারী করছিলাম। তখনই একটা ঠকঠক আওয়াজ হলো, আমি দরজা খোলে দেখলাম কেউ নেই। দরজা বন্ধ করার সময়ও শুনলাম আবার সেই আওয়াজ। তারপর দরজা খোলা অবস্থায় রাখলাম। হ্যাঁ তখনও আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছি। আমি এবার জানালার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে সেদিকে এগুলাম। জানালার কপাটের দ্বারে গিয়ে কান পাতলাম। তখন আবারও আওয়াজ করলো, আমি আস্তে আস্তে বললাম,
___কে?

ফিসফিস করে আওয়াজ আসলো,
___জানালাটা একটু খুলো, আমি তোমার বর!

আমার ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠলো। আমি সেটা বুঝতে না দিয়ে বললাম,
___ আমার বর হলে তো ভেতরে থাকার কথা। আপনি নিশ্চয়ই চোর ডাকাত। না না বাবা আমি জানালা খুলবোনা, আমার শরীরে অনেক গয়নাগাটি, আপনি এগুলো নিয়ে পালিয়ে যাবেন আমি বুঝে গেছি, ভালো ভালো চলে যান নইলে চিৎকার করবো।

এটা বলে আমি মুখ চেপে হাসি থামিয়ে রাখলাম। ইয়াজ অস্থির গলায় বলছে,
___বিশ্বাস করো আমি ইয়াজ। খুলেই দেখোনা! আর ওই দরজায় ইথিলা বসে আছে, আমি গেলে এখন কানমলা খাবো। শুনো, আম্মু ঘুমিয়ে গেছে,তুমি আস্তে আস্তে আম্মুর রুম থেকে চাবিগুলো নিয়ে আসো, আর পেছনের দরজাটা খুলে দাও। প্লিজ বিন্দিয়া।

আমি হাসি থামিয়ে বললাম,
___ এ খোদা কি সাংঘাতিক আজকালকার চোররা, কণ্ঠও নকল করতে জানে। পুরো বাড়ি ছিনতাই করতে চাবি পর্যন্ত চায়! এই আপনি চলে যান তো, আমার স্বামী আমার পাশেই আছে। নাহলে লোক জড়ো করতে বাধ্য হবো!

ইয়াজ এবার জোরে জোরে বললো,
___ঠিকাছে চলে যাচ্ছি…

আমি এবার জানালার একটা পার্ট খুলতে চাইলাম, সাথে সাথে টান দিয়ে দুটো পার্ট খুলে ইয়াজ আমার বামহাত চেপে ধরলো। তাকে দেখে বুঝলাম সে উঁচু কিছুর উপরে দাঁড়িয়ে আছে। নইলে একতলা হলেও এভাবে জানালা পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়ানো সহজ ছিল না।
ইয়াজ রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
___কোথায় তোমার স্বামী, তোমার সঙ্গে না আছে!

আমি ডান হাতের নখ কামড়ে লজ্জা নিয়ে বললাম,
___এই যে আমার সামনে, আমার হাত ধরে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে!

ইয়াজ হাত দিয়ে আমার গলায় ধরে জানালার গ্রিল পর্যন্ত টেনে এনে বললো,
___ আমি চোর?

___হ্যাঁ আপনি মনচোর!

___তাহলে যা বলছি তাই করো, চাবিটা এনে আমাকে ভেতরে আনো।

___না আনবোনা, এত দেরি করে আসলেন কেন?

___এখানে দাঁড়িয়ে আজকের মতো এমন রাতটা পার করতে হবে?

___আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন।

___ উফফ বিন্দিয়া আমি এটা কেন চাইবো, আমাকে বন্ধুরা আসতে দিচ্ছিলোনা। হঠাৎ বিয়ে করছি,দাওয়াত দেইনি তাই এখন ওদের জন্য পার্টি দিতে হয়েছে। খুব কষ্টে এসেছি, প্লিজ দরজাটা খুলো বউ!

আমি ভেংচি কেটে বললাম,
___ সামনের দরজা দিয়ে আসুন। আমি পারবোনা।

___ তুমি পারবেনা?

___না বললাম তো!

ইয়াজ আমার মুখটা এবার আরো কাছে টেনে ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইবে তখনি দরজার বাইরে থেকে ভাবী আওয়াজ করে বললো,

___ এই বিন্দিয়া দরজা লক করলে কেন?

আমি তারাহুরো করে সরে গেলাম। ইয়াজও হুড়মুড় করে নামতে নামতে লাগলো।
আমি দরজার খুলতে গিয়েই খেয়াল করলাম জানালা লাগাইনি!

চলবে……

অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৪

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৪র্থ পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

আমার বুকের ধুকধুক আরো বেড়ে উঠলো। আমি আমার কানকে বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না।
ইয়াজ আমাকে বিয়ে করতে চায় তার মানে কি?
তার বোনের এতো বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরেও সে এতো স্বাভাবিক কি করে থাকতে পারে?
আমি তো ভেবেছি এক্ষুনি গিয়ে আমার ভাইয়ের মাথা ফাটাবে।

ইয়াজের বিয়ের প্রস্তাবের জবাবে আমার বাবা বললো,
___ আমি কিছু বুঝতে পারছি না, কাল সারারাত ঘুম হয়নি। নিজের ছেলেকে বকেছি, বাড়ি থেকে বের করার হুমকি দিয়েছি। কিন্তু সে মুখ খুলেনা। তার অন্য জায়গায় সম্পর্ক আছে সেটাও স্পষ্ট বলে না। এতো বড় ঘটনা হয়ে যাওয়ার পরে তোমার কথাটাকে কেমন যেন মনে হচ্ছে । তুমি কেন বিয়ে করতে চাও বিন্দিয়াকে?

ইয়াজ পেছনে একবার তাকিয়ে বললো,
___ বিন্দিয়াকে বহু আগে থেকেই আমি পছন্দ করি। আর বিন্দিয়াও পছন্দ করে। এটা অবিশ্বাস্য মনে হলে তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। যদি বিন্দিয়া রাজী থাকে আমি তাকে যেকোনো উপায়ে বিয়ে করবো। তবে আপনারা হ্যাঁ সিদ্ধান্ত নিলেই ভালো হবে। যদি মানা করেন বুঝে নিবো, আত্মীয়তা চিরতরে ছিন্ন করতেই এটা করছেন। আর আপনার ছেলের সাথে আপনারাও যুক্ত আছেন।

ইয়াজের কথা শুনে আমার বাবার মুখটা কালো হয়ে গেলো। ইয়াজের বাবা চুপ করে বসে আছে। উনার মুখে কোনো একটা কথাও নাই। আমার মা সেখান থেকে উঠে এসে আমার হাত ধরে বললো,
___ইয়াজ যা বলছে তা সত্যি? সত্যি তুই ওকে পছন্দ করিস? এইজন্যই কাল এতো কেঁদেছিলি?

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
___মা এটা সত্যি, কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি!

মা আর এই ব্যাপারে কোনো কথা না বলে আমাকে নাস্তা বানাতে বললো, আর ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে চার গ্লাস লেবুর জল নিয়ে আবার সেখানে গেলো।
আমি চায়ের পানি বসিয়ে আবার শুনতে গেলাম কি বলছে। মা সবার হাতে একটা করে গ্লাস দিয়ে বললো,
___আসলে বিন্দিয়াকে হুট করে এভাবে বিয়ে দিতে চাইনা। ওর পড়ালেখাটাও আরেকটু হোক।

ইয়াজ জোর দিয়ে বললো,
___মাঐ মানে এখন কি ডাকা উচিত জানিনা, শুনেন আমি কয়েকমাস আগে যেই চাকরিটা পেয়েছি সেটা বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে যোগ্যতার দাবী রাখে। এরপরও আরো ভালো চাকরির চেষ্টা করবো। বিন্দিয়াকে পড়ালেখাও করাবো। এদিকে আমার ভালো চাকরি পাওয়ার বয়স আরো অনেক আছে। আর যদি আমাকে কোনো কারণে আপনাদের অযোগ্য কিংবা মন্দ বলে মনে হয় বলতে পারেন, শুধরে ফেলবো সেটা। তবুও আমি বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে চাই।

আমার বাবা আস্তে আস্তে বললো,
___আমরা এই ব্যপারে ভাব্বো, এবং আমার ছেলে বাদল আর বিন্দিয়ার সাথে ভালো করে কথা বলবো। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে জানাবো।

ভাইয়ার নাম শুনতেই ইয়াজের গালগুলো কেমন লাল হয়ে গেলো। আমি ওর হাতের দিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম সে হাতটা শক্ত করে মুঠো করছে আর ছাড়ছে।
আমি এখান থেকে সরে পড়লাম। নাস্তা বানানোতে মনোযোগ দিলেও আমার সারাশরীর কাঁপছে। আমি আঁচ করতে পারছিলাম খারাপকিছু হতে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মা এসে খাবারগুলো নিয়ে গেলো।
আমি আর কিছু শুনলাম না, রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লাম। কাল থেকে ইয়াজকে হারানোর ভয়ে বুকে যন্ত্রণা হচ্ছিলো, কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করবে শুনেও কেন সেই কম্পন থামছেনা? আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়েই যাচ্ছে। ঠিক তখনি আমার ফোন বেজে ওঠলো, ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম একটা অচেনা নাম্বার। আরো ৪ টা ফোন এসেছিলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ইথিলা ভাবীর কান্নামিশ্রিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। অস্থিরতা আর অভিযোগের সাথে বললাম,
___ভাবী তুমি কেন এমন করলে? কেন একদিনে আমাদের পুরো সময়টাকে তুমি এলোমেলো করে দিলে? কেন তুমি আমার ভাইকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছো? আমার কথাও একটাবার ভাবতে, দেখো তোমার ভাই আর বাবা এখন আমার বিয়ের ব্যপারে এসেছে, আমার ভীষণ ভয় লাগছে।

ভাবী গলা ঝেড়ে বললো,
___বিন্দিয়া তুমি প্লিজ কেঁদোনা আর মন দিয়ে শুনো আমার কথা। ইয়াজের বিয়ের প্রস্তাবে তুমি রাজী হইয়োনা প্লিজ, তোমাকে আমি এই এক বছরে ভীষণ ভালোবেসেছি, চোখের সামনে তোমার ক্ষতি আমি সইতে পারবোনা। আমি আমার ভাইকে চিনি, তুমিও তো জানো ওর সম্পর্কে। সে তোমার ভাইয়ের জন্য তোমাকেও ছাড়বেনা। ভীষণ ক্ষেপে আছে ইয়াজ।
তুমি যেভাবেই পারো ইয়াজকে ফিরিয়ে দাও। সে তার ভাবনা অনুযায়ী বিয়েটা করতে না পারলেও পরবর্তীতে আরো বেশি কিছু করতে পারে, কিন্তু আমি সেসব সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবো। তুমি এই মূহুর্তে জাস্ট ওকে মানা করে দাও। আমার ফোন, আমার মা’র ফোন সে নিয়ে গেছে। এটা চাচির নাম্বার। তোমাকে এটা বলতেই ফোন দিয়েছি। এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ!

আমি ফোনটা হাত ছেড়ে দিলাম। সেটা ছিটকে বিছানার একপাশে গিয়ে পড়লো।
আমি পলক ফেলছিনা, কিন্তু চোখের সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। মিলাতে পারছিলাম না আমার ভাইয়ের অপরাধে আমি শাস্তি পাচ্ছি কেন?

ভাবীর কথামতো মানা করতে আমি ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি ততক্ষণে ওরা চলে গেছে। বাবা বললো তিনি ডিরেক্ট মানা করে দিয়েছেন। ভাইয়াও রুম থেকে বের হয়ে চেঁচামেচি করছে, বলতেছে,
___মা তুমি কি করে ভাবলে এমন পাগলের কাছে বিন্দিয়ার বিয়ে দিবো? হ্যাঁ ইয়াজ অনেক অনেক ভালো। সবদিকেই ভালো, ওর মতো ছেলে হয়না। কিন্তু এই মূহুর্তে সে ভালো নেই। সে আমাকে শাস্তি দিতে এটা করবে। তার বোন যেমন বিয়ের পরেও সংসার করতে পারেনি, সেও আমার বোনকেও বিয়ে করে সংসার করতে দিবেনা। এভাবে হঠাৎ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিবে। সে বুঝেছে ভাইয়েরা বোনের এই দশা মানতে পারবেনা, তাই এমনটা আমাকেও…

ভাইয়া আর কিছু বলার আগেই বাবা ভাইয়ার গালে ঠাস ঠাস করে দুই-তিনটা থাপ্পড় একসাথে বসিয়ে দিলো। ভাইয়া একদম চুপ করে গেলো। বাবা একদম নেতিয়ে গেলো, আর ধিরে ধিরে বললো,
___যদি এটা ভাবতি তুই কখনোই বউটাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করতিনা। তুই চেয়েছিলি তোর বোনের উপরেও এমন হোক, তাই ইচ্ছে করে এমন করেছিস। কেন করেছিস বাদল? কেন আমার নিষ্পাপ বিন্দিয়াকে তার সাজা দিতে চাইছিস? ইথিলা কোনদিকে কম ছিল? কোথায় পাবি এমন একটা লক্ষী বউ? সকাল থেকে রাত মেয়েটা শুধু এই পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টাই করেছে। তুই যা করেছিস অন্য মেয়ে হলে বিয়ের পরেরদিন চলে যেতো, কিন্তু সে একটা বছর তোর মনে জায়গা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তুই এতো পাথর কেন রে? তোর মতো সন্তান আমার ঘরে কি করে জন্মালো?

ভাইয়া চোখে তাকিয়ে দেখলাম, পানিগুলো বাঁধ ভাঙতে প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু সেটাকে ভাইয়া সামলে রেখেছে। একটু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ভাইয়া চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।

পরেরদিন সকালে বাবা আমাকে খাওয়ার জন্য ভীষণ জোরাজোরি করতে লাগলো।
মা বলেছে আমি প্রাণ রক্ষার্থে সারাদিনে এক মুঠ ভাত খেয়ে পড়ে আছি। বাবা রুটি নিয়ে আমার রুমে এসেছে।
বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে জোর করে খেলাম। খাওয়া শেষে বাবা বললো,
___ইয়াজকে শুধু পছন্দ করিস নাকি ভালোও বাসিস? জানি বাবা হয়ে এমন প্রশ্ন করা বিব্রতকর। কিন্তু আমিও তোর মাকে বহু সংগ্রামের পরে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি,তাই জানি ভালোবাসা হারানোর আশঙ্কা সামনে আসলে কতো কষ্ট হয়।
আমার বিশ্বাস ইয়াজ অন্তত আমার ছেলের মতো নয়। আসল অপরাধী তো তোর ভাই, আর ইয়াজ তো শুধু তাকে শিক্ষা দিতে চায়। কিন্তু আমার বিশ্বাস তোর ভালোবাসা, সহনশীলতা আর একটু ধৈর্য্যধারণ ওকে স্বাভাবিক করে দিবে। সে তোর কোনো ক্ষতি করবে বলে হয়না, কারণ তুই তো কিছু করিস নি। তুই চাইলে আমি বিয়ের কথা বলতে পারি, কারণ এমনিতেও কষ্ট পাচ্ছিস আর সারাজীবন পাবি। তার চেয়ে বরং,

আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
___ না বাবা ইয়াজকে যতটা স্বাভাবিক ভাবছো সে ততটা স্বাভাবিক না। ভীষণ জেদি সে আর এককথার মানুষ, তার বোনের উপরে কোনো অন্যায় মেনে নেয়নি আর কখনো মেনে নিবেনা। সে সেটার প্রতিফলন ঘটাবেই।

বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
___তুই যা ভালো ভাবিস তাই হোক।

বাবার কথাগুলো আমি গভীরভাবে ভাবছি,সত্যিই কি সে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে? এই তীব্র রাগ কখনোই হালকা হতে পারে?

সেদিন ভাবনা হিসেব, ভবিষ্যৎ ভেবেই সেদিন কেটে গেলো।
পরেরদিন সকালে আমার নাম্বারে ভাবীর সেই চাচীর নাম্বার থেকে ফোন আসলো, ফোন ধরেই শুনলাম ভাবীর অস্থির গলা, একনাগাড়ে বলছে,
___বিন্দিয়া ইয়াজ ভীষণ ক্ষেপে গেছে । সে বলেছে এই বিয়ে না হলে হয় সে নিজে মরবে নয়তো তোমার ভাইকে মারবে। আমি জানি সে তোমার ভাইয়ের ক্ষতি করবেই করবে। এটা শোনার পর থেকে আমার ভেতর শুকিয়ে গেছে,জানো ভয়ে আমার বুক এখনো কাঁপছে। মানুষটা আমাকে এতটা অবহেলা করার পরেও কেন তার ক্ষতির আশঙ্কা নিতে পারছিনা, আমি জানিনা। ইয়াজকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাও বোন। সে তোমাকে ভালোবাসে, কিন্তু তোমার ভাই তো আমাকে ভালোই বাসেনি। আমার মনে হচ্ছে ইয়াজ তোমার সাথে খারাপ করবেনা। কিন্তু বিয়ে না হলে সে তারচেয়েও খারাপ কিছু করবে।

আমি শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম। কথা বলার শক্তি সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে বসেছি। এদিকে ভাবী এসব বলতে বলতে কাঁদতেছে। এই মানুষটার কান্না আমার বুকটা আরো ছিড়ে ফেলছিল। এতো কিছু হওয়ার পরেও আমার ভাইয়ের ক্ষতি হবে ভয়ে সে কান্না থামাতে পারছেনা, আমার কি অন্তত তার কান্নার মূল্যটা দেওয়া উচিত না?

ফোন রেখে তখনি বাবাকে বললাম আমি ইয়াজকে বিয়ে করতে রাজী।
আমার কথা শুনে মা হৈ-হল্লা করে কাঁদতে শুরু করলো, ভাইয়াও সাফ বললো ..
___নিজের দূর্ভাগ্য নিজে ডেকে আনছিস কিন্তু। ইয়াজ আমার ক্ষতি করলে করতো। কিন্তু তুই কেন আমার জন্য সাজা পাবি?

আমি কারো কথা শুনলাম না। মা তার একমাত্র ছেলের ক্ষতির ভয়েও চুপ করে গেলো। তারপর শুধু বাবার ভরসায় ইয়াজকে খবর দেওয়া হলো। কাবিন আর কাজী ডেকে পরেরদিনই বিয়ে সম্পন্ন। এতোটা স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করবো আশা করিনি।

নিজের সব কল্পনা জল্পনা, আশা আকাঙ্খারা কেমন যেন পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ। এতোদিনের যাবতীয় অভিলাষ আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। শুধু ভেতরের অনূভুতিগুলো ভিন্ন, ভীষণ রকম ভিন্ন। শুধু প্রশ্ন জাগছে, মানুষটাও এক আমিও এক, স্বপ্নটাও ছিল এক! তাহলে এতো ভিন্নতা কেন? এটা আমার সাথে না হলে কি পারতোনা? আমার ভাই কেন এমন করলো? মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কি করে পারলো সব তছনছ করে দিতে?

যেই মেয়েটা বিয়ের সময় মেকাপে একাকার হয়ে নাচানাচি করে শ্বশুরবাড়ি যাবে ভেবে রেখেছিলো সেই মেয়েটা আজ মুখে সাধারণ ক্রিমের প্রলেপ না লাগিয়েই একটা বেনারসি কোনো রকম পেঁচিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে রওয়ানা দিয়েছে। মা মুখে আঁচল চাপড়ে যতক্ষণ গাড়ী দেখা দেখা যায় তাকিয়ে রইলো। সবাই আড়াল হওয়ার সাথে আমার যন্ত্রণারা যেন অগ্রসর হতে লাগলো। কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। হঠাৎ করেই গাড়ীর পেছনের লাইটটা অফ করে দিলো ইয়াজ।
আমি আর ইয়াজ এই গাড়ীতে, শুধু সামনে ড্রাইভার। অন্যরা যারা সাক্ষী হিসেবে ছিল তারা অন্যভাবে যাচ্ছে।
আমার কান্নার সাথে ইয়াজ হাসছে। তারপর হঠাৎ করেই আমার পাশে ঘেঁষে আস্তে আস্তে বললো,
___ এই বিন্দিয়া, কি লাভ আর কান্দিয়া?

ওর এমন কথা শুনে আমার ঠোঁট ভাঙা কান্না আরও তীব্রতর হলো। আমি তার থেকে দূরে যেতে চাইলেই আমার কাঁধে হাত জড়িয়ে একটানে মাথাটা তার বুকের সাথে লেপ্টে নিলো, আর কানের কাছে বললো,
___বিন্দিয়া কেন ভয় পাচ্ছো? আমার ভালোবাসায় সন্দেহ আছে তোমার? এখনো বুঝি বুঝতে পারোনি আমাকে? এই যে কান পেতে শুনো আমার বুকের মধ্যে আজ পূর্ণতার ডাক। সবটা জুড়ে শুধু তোমার আলোরণ।

আমি পুরো নিরব হয়ে গেলাম। আমার সব কান্নারা মূহুর্তেই উধাও। মাথা তুলে ইয়াজের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি উঠাচ্ছিনা, তার বুকে মাথা রেখে যেন পৃথিবী প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি। তাহলে সত্যিই আমার ইচ্ছেরা পূর্ণ?

ইয়াজ আমার মাথাটা একটু উঁচু করে কপালে আলতো পরশ এঁকে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
___ জানো বিন্দিয়া, ইথিলা তোমার ভাইকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমি ইচ্ছে করলেই তার বারোটা বাজাতে পারি কিন্তু সেটার ভয় দেখালেও কখনো করতাম না। কারণ আমার বোন তাতে একেবারে ভেঙে পড়বে, আর আমি এটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবোনা। সেদিন ইথিলাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে তোমার ভাই। কিন্তু তুমি জানো মেয়েদের ডিভোর্স ইসলামে সমথর্ন করে না। তাছাড়া তোমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে থেকে এই বিচ্ছেদ আসেনি।
সেদিন থেকেই আমি চাইছি এমন কিছু করতে,যাতে তোমার ভাই আমার বোনের শূন্যতা হারে হারে বুঝে, কিন্তু সেটার কোনো উপায়ই ছিল না তুমি ছাড়া। তুমি আমার সাথে থাকলে, আর একটু মিথ্যে অভিনয় করলে তোমার ভাই বোনের কষ্ট থেকেও আমার বোনকে ভালোবাসবে। কিন্তু তোমাদের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে সেটা কি করে সম্ভব? আর আমিও বা তোমাকে ছাড়া নিজেকে কি করে ভাবতে পারি বলো?

আমি মাথা তুলে ইয়াজের গালে একটা হাত রেখে খুশিতে এবার কেঁদে ফেললাম।

চলবে….

অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৩

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৩য় পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

পরেরদিন সকাল ১১ টায় শপিং করার জন্য রওয়ানা হলাম। আত্মীয়তার শুরুতে প্রথমবার আগমণে সবাইকেই নাকি গিফট দিতে হয়। ইয়াজ, ভাবী আর আমি গেলাম। ভাইয়া বাসায়ই রয়ে গেলো।
আমি আর ভাবী একটা রিকশায়, আর ইয়াজ পেছনে আরেকটা রিকশায়। সেদিন ভাবী কমলা রঙের শাড়ী পরে বের হয়েছে তবে ভীষণ শালীনতার সাথে । আর আমি সবুজ রঙের একটা সাধারণ থ্রিপিসে। বলা বাহুল্য ভাবী আমার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সুন্দরী।
রাস্তার বামপাশ মানে যাওয়ার রাস্তাটা ক্লেয়ার ছিল কিন্তু ডানপাশে ফিরার রাস্তায় অনেকগুলো গাড়ীর ভীড় জমেছে। এদিকে আমাদের রিকশা সেই বরাবর এসে একটু সাইড করে থামলো, পাশের দোকানে কিছু একটা রাখবে বলে। এর মধ্যেই রাস্তার ওপাশ থেকে একটা ছেলে প্রথম আমাকে উদ্দেশ্য করে জোরে জোরে বললো,
__হেই সবুজপরী,চলোনা গিয়ে বিয়ে করি! (এরপর শুরু করলো তীব্র হাসির রোল)

সেসময়ই ইয়াজের রিকশা আমাদের বরাবর আসলো,ইয়াজও ওই ছেলের কথা শুনে ভীষণ হাস্যভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো। তার রিকশা পাশ হয়ে যাওয়ার সময়ই সেখান থেকে আরেকটা ছেলে আরো জোরে বললো,
___সবুজটাকে বাদ দিয়ে কমলাসুন্দরী দেখ। আবার শাড়ী পরেছেরে, কি হট লাগছে উফফ!

আমি এসব কথাকে পরোয়া করছিলাম না। কিন্তু ভাবী এবার ভয় ভয় চোখে ইয়াজের রিকশার দিকে তাকিয়ে আমাকে আঙুল দিয়ে দেখালো। আমি তাকিয়ে দেখলাম রিকশা সাইডে আর ইয়াজ নেই। ভাবী ভীষণ পেরেশান হয়ে ডানে তাকিয়েই চিৎকার করে বললো,
___ইয়াজ ছেড়ে দাও। প্লিজ রাস্তায় ঝামেলা করো না। দোহাই লাগে ভাই ওদের ছেড়ে দাও। ইয়াজ ইয়াজ! আমার কথা শুনো।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ভয়ে আৎকে উঠলাম। আমি দেখলাম ইয়াজ সেই ছেলেটার কলার টেনে থাপ্পড়ের সাথে জিজ্ঞাসা করছে, কি বলছিস আবার বল? এই ছেলেগুলোর বাজে কথাগুলো অন্যরাও শুনেছিলো, তাই ততক্ষণে এখানে ভীড় জমে গেছে। তাই তারাও ছেলেগুলোকে এসে ভীষণভাবে ধমকাচ্ছে, জোরে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এবার অন্যরাই ওদেরকে কানমলা দিচ্ছে, থাপ্পড় দিচ্ছে। আর ইয়াজ ফোন কানে দিয়ে বলছে, এক্ষুনি ইভটিজিংয়ের অপরাধে তোদের জেলে পাঠাবো।
আমরাও রিকশা থেকে নেমে গেলাম। ইয়াজ কাকে ফোন করেছে জানিনা, তবে সেখানকার আশেপাশে ডিউটিরত কয়েকজন পুলিশ ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে আসলো। আর ওদেরকে ঘাড়ে ধরে রাস্তা পার করে আরেকটা মোড়ে গিয়ে গাড়ীতে তুলে চলে গেলো। এতক্ষণে গাড়ীর ভীড় কবেই শেষ হয়ে যেতো, কিন্তু এই ঝামেলায় সেটা হয়নি।
এবার আস্তে আস্তে সব গাড়ী সামনে এগুতে লাগলো। ইয়াজ মুখের ঘামগুলো মুছতে মুছতে এসে নিজের রিকশায় বসলো। আর আমাদের দুটো রিকশা’ই আগেপিছে এগুতে লাগলো। আমার বুক এখনো ধুকপুক করছে। ভাবীও ভীষণ আতঙ্কতায় আছে, সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
আমি জোরে শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে বললাম,
___তুমি বলেছিলে ও ঝগড়াঝাটি করেনা,কিন্তু এখন..

ভাবী জবাব দিলো,
___ বিন্দিয়া তোমায় বলেছিলাম তো আমাকে কেউ অল্প আঘাত করলেও সে সেটা সহ্য করে না। আমি ওর বোন নই শুধু, ওর আত্মার আংশিক। ওর নিজের এবং আমার উপর বিন্দু পরিমাণেও আঁচ আসলে সে সেটাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেয়। সেখানে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে বুঝতে পারছো ব্যপারটা? ওই ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে যখন বলেছিলো, আমি লুকিয়ে দোয়া করছিলাম যেন আমাকে কিছু না বলে। কারণ আমি জানতাম এটাই হবে। তাইতো বিয়ের আগে ওর সাথে বের হলে সবসময় বোরকা পরে বের হতাম। তারপরও এমন ঝামেলা কয়েকবার করেছে। অন্যদিকে আমাদের দুজনের স্কুল কলেজ সব তো একসাথেই ছিল, সেখানে ওর জন্য কেউ আমাকে কিছু বলার সাহস পেতোনা। ইয়াজ আমার ব্যপারে ভীষণ রকম সিরিয়াস।

আমি হাতের টিস্যুটা ফেলে আরেকটা বের করলাম। এতো ঘামছি কেন বুঝতে পারছি না। সত্যি বলতে এর আগে নিজেদের জন্য এমন ঝামেলার সম্মুখীন হইনি। আর ইয়াজকে নিয়ে আমার মধ্যে যা ধারণা ছিল সে তার চেয়েও ভয়ংকর। মনে মনে শপথ নিলাম ওর সাথে আর কোনো ব্যপারে বাড়াবাড়ি করবোনা। সেবার সত্যি সত্যিই ওর সাথে কথা বলিনি।

এর ঠিক দুইমাস পরে সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল তাদের গাছের ফলমূল নিয়ে। অনেক রকম ফল। পুরো এক গাড়ী পরিপূর্ণ করে আমাদের বাসায় নামলো।
কেন জানি বাসায় এসেই আমাকে নিজে থেকে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলো। তাও হাসিমুখে।
এটা সত্যি ওর হাসিমুখে তাকালে প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই। মনে হতো ভীষণ নিষ্পাপ সেই হাসি, আর আছে প্রগাঢ় টান!

আমার ফুফাতো বোন রাহমি তখন আমার বাড়িতে গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে এসেছিলো। আর চাচাতো বোন বিন্তি সেদিন সারাদিন আমাদের বাসায়।
রাতে রাহমি আমার ভাবী ভাইয়াসহ আমাদেরকে নিয়ে বসলো একটা খেলা খেলবে।
খেলাটা ছিল প্রশ্নোত্তর নিয়ে।
মোট ১০ টা কাগজের টুকরো নিলাম। আমরা ৫ জনের নামে ৫ টা টুকরো বানানো হলো। বাকি পাঁচটাতে, আম,জাম,লিচু,কাঁঠাল,পেয়ারা এসব লেখা হলো। সবার নামের সাথে ফলগুলোর সম্পর্ক বিঁধে দেওয়া হলো। যেমন আমার নামের সাথে আম,বিন্তির নামের সাথে জাম,ভাইয়ার সাথে লিচু,ভাবীর সাথে কাঁঠাল, আর রাহমির সাথে পেয়ারা। এবার কথা হলো প্রথমে তুমি দুইটা কাগজ নিবে, যদি তোমার নাম পাও, এবং অপরপক্ষের একজন নিজের নাম না পেয়েও তোমার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম পায় তাহলে সে তোমাকে প্রশ্ন করবে। যা ইচ্ছে প্রশ্ন করবে। তুমি উত্তর পারলে ১০ পাবে, নয়তো শূন্য। কিন্তু যে প্রশ্ন করবে সে ১০ পাবে। আর বাকিরা যারা নিজেদের নাম পাবেনা এবং ফলের নামও মিলবেনা তারা সবাই শূন্য পাবে।
খুব উৎসুক ছিলাম, অন্য রকম একটা খেলা।
কিন্তু খেলা শুরুর মূহুর্তেই ইয়াজ আসলো। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
___ এই বিন্দিয়া আমার জন্যও একটা কাগজ লিখো। আমিও খেলবো।

ভাবীর দিকে তাকালাম। ভাবীও বললো ওকে নিতে। তাই আমিও ওর জন্যও দুটো কাগজ লিখলাম।
প্রথম রাউন্ডে সবাই শূন্য পেলো, কারণ কেউই নিজের নাম পায়নি। পরেরবার কাকতালীয়ভাবে ভাইয়া নিজের নাম পেয়েছে আর ভাবী পেয়েছে ভাইয়ার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম।
পুরো টানটান উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি ভাইয়াকে কি প্রশ্ন করা হয়, আর সেটার জবাব ভাইয়া দিতে পারে কিনা।
অতঃপর ভাবী কাগজে প্রশ্নটা লিখলো, যেটা ছিল..
যদি চাইলেই সম্ভব হতো, তাহলে কতবছর আমার সাথে একসাথে বাঁচতে চাইতেন?

ভাইয়া খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লিখলো, একটা নিঃশ্বাস ফেলতে যতসময়!

বিন্তি আর রাহমি একসাথে বললো, তারমানে এই অল্প মূহুর্ত পর্যন্ত ভাবীকে চান? সাথে সাথে ভাবীর চেহেরা অন্য রকম হয়ে গেলো। ইতোমধ্যে ইয়াজের চেহেরা লাল হয়ে গেছে।
বুঝতে পারছি সে যতটা সম্ভব রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাও সে নিজের গালেমুখে হাত বুলাতে বুলাতে হাসি টানিয়েই বলল,
___হাহাহা তাহলে আপনার বেঁচে থাকাও কিন্তু এই পর্যন্তই হবে ! মনে রাখবেন যতক্ষণ আমার বোনকে আগলে রাখবেন আপনার নিঃশ্বাস ততক্ষণই সতেজ বইবে।

ভাবী বুঝতে পারছে ব্যপারটা মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
___আরে একটা নিঃশ্বাস বলতে সে শেষবারের নিঃশ্বাসটা বুঝাইছে। মানে তখন পর্যন্তই আমাকে চায়। তুমিও না কি সব মজা করো। এই তোমরা শুরু করো আবার।

বলেই ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখলো। আর ইয়াজ একটু স্বাভাবিক হয়ে নিচে তাকালো। চার রাউন্ড চলে গেলো সবাই শূন্য পাচ্ছে। কারোটাই মিলছেনা। এরপর আবার পঞ্চমবার ইয়াজ নিজের নাম পেলো, আর রাহমি পেলো তার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম। রাহমি পেয়েই মিটমিট করে হেসে ইয়াজের উদ্দেশ্যে কাগজে প্রশ্ন লিখলো, আমাকে কেমন লাগে আপনার?
ইয়াজ বা’হাতে বিচ্ছিরি করে লিখলো, ভুল ডিম।

এটা দেখে সবাই হুহু করে হেসে উঠলো । কিন্তু বেচারা রাহমির মুখটা সত্যি সত্যিই ভুল ডিমের মতো নিস্তেজ হয়ে গেছে।

এর পরেরবার আবারও ইয়াজ নিজের নাম পেলো। এটা দেখে সবাই বলাবলি করতে লাগলো সে নিশ্চয়ই সেই কাগজটা চিহ্নিত করে ফেলেছে। কিন্তু আমি কিছু বললাম না, কারণ এবার আমি তার সংযুক্ত ফলের নাম পেয়েছি। কিন্তু রাহমির মতো লজ্জা পেতে হয় কিনা সেই ভয়ে কোনো প্রশ্ন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত লিখলাম, আমার ক্ষেত্রে আপনার জীবনে চিরতরে অসম্ভব হয়ে যাক এমন তিনটা ইচ্ছে কি কি হতে পারে?

ইয়াজ কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর লিখলো।
১.. আমি বিন্দিয়ার সাথে কথা বলতে চাইনা।
২.. আমি ওর মুখ দেখতে চাইনা।
৩.. খুব শীগ্রই তার বিয়ের দাওয়াত পেতে চাই।

এই উত্তরগুলো দেখে ভাবী আর আমি বাদে সবাই জোরে জোরে হেসে উঠলো। আমি প্রথমে নেগেটিভ ভেবেই মুখ ভার করেছিলাম। তারপর আমার প্রশ্নের দিকে খেয়াল করতেই আলতো হাসলাম। ভাবীও হাসলো, হয়তো উনিও এটা বুঝেছে এর মানে কি। আমি ওদেরকে কিছু না বুঝিয়েই আবার কাগজ ফেললাম।

শেষ পর্যন্ত ইয়াজ প্রথম হলো, ভাবী দ্বিতীয়, আর ভাইয়া আমি আর রাহমি তৃতীয়। বিন্তি একটাও পায়নি।

এর মধ্যে মা আমাকে ডেকে বললো তাদেরকে চা বানিয়ে দিতে। আমি বের হতে যাওয়ার সময় ইয়াজ একটু কেশে নিয়ে বললো,
___ এই বিন্দিয়া, আমার জন্য চা আনবে আদা দিয়া।

ইয়াজের এই কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে এক এক করে বলতে শুরু করলো, এই বিন্দিয়া আমার জন্য চা আনবে চিনি কম দিয়া। এই বিন্দিয়া আমার জন্য চা আনবে কাপ দিয়া, মগ দিয়া, ট্রে দিয়া,দুধ দিয়া,লেবু দিয়া । আরো যা যা বলা যায় অদ্ভুত অদ্ভুত বলতেই লাগলো। আমি রাগ নিয়া ফিরে বললাম,
___আমি বিন্দিয়া, আজ তোমাদের জন্য চা বানাবো হলুদ,মরিচ,জিরে,ধনিয়া,আলু পেঁয়াজ রসুন আরো যা তারকারি আছে সব দিয়া। সেগুলো তোমরা খাবে বিস্কুট দিয়া ভিজাইয়া।

আর কিছু না শুনে আমি তারাতাড়ি করে সেখান থেকে চলে আসলাম। হাসতে হাসতে ভাবীও আমার সাথে আসলো। তারপর চা বানিয়ে ভাবী আর আমি রান্নাঘর থেকে বেড়িয়েই দেখলাম বিন্তি আর রাহমি ড্রয়িং রুমে টিভি দেখে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
___ তারা দুজন কোথায়?

বিন্তি বলল,
___ভাইয়া তার রুমেই আছে। আর ইয়াজ বিয়াইসাব যে রুমে রাতে থাকবে সেই রুমেই আছে।

ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
___ওদের দুজনকে এখানে দিয়ে তুমি ইয়াজকে চা দিয়ে আসো। আমি তোমার ভাইয়াকে দিচ্ছি।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে ইয়াজের রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম সে মোবাইল টিপছে। আমি আস্তে আস্তে কাপটা রেখে চলে আসতে চাইলেই হুড়মুড় করে উঠে আমার হাত চেপে ধরলো।
আমি চমকে উঠলাম। পেছন ঘুরে থমথমে গলায় বললাম,
___ হাতে ধরলেন কেন? ছাড়ুন।

ইয়াজ হাসতে হাসতে বললো,
___বিন্দিয়াকে রেখে দিবো টান দিয়া।

আমি টেনেও হাত ছাড়াতে পারছিলাম না। উপায়ন্তর না পেয়ে বসে পড়লাম আর বললাম,
___কি চাই আপনার?

ইয়াজ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো। অন্য হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছন গুঁজে ফিসফিস করে বললো,
___তোমাকে চাই বিন্দিয়া।

আমি পেছনে সরে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে বললাম,
___ওই যে অসম্ভব তিনটা ইচ্ছের কথা বলেছিলেন তার মানে কি এটাই, আপনি কথা বলতে চাননা বলা বিষয়টা একেবারেই অসম্ভব হয়ে যাক। মানে আপনি কথা বলতে চান, আর আপনি আমাকে দেখতে চান না সেটাও অসম্ভব হয়ে যাক। মানে আপনি চান সবসময়ই যেন সামনে থাকি। আর বিয়ের দাওয়াত পেতে চান মানে..

আমি লজ্জায় নিচু হয়ে হাতের নখ কামড়াতে লাগলাম। ইয়াজ আমার মাথা তুলে বললো,
___ হ্যাঁ সেটাই। এটাও অসম্ভব হোক। মানে তোমার বিয়ের দাওয়াত খাওয়া শুধুই আমার জন্য অসম্ভব হোক। তার মানে হলো দাওয়াত নয়, আমিই বিয়ে করবো তোমায়। আর বরেরা তো দাওয়াত পায়না, তাইনা? তারা দাওয়াত ছাড়া খেতেও আসে আবার বউও নিয়ে যায়।

আমি প্রচন্ড লজ্জায় ইয়াজের বুকের উপর একটা ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলাম। ইয়াজ সেখানে বসেই হেসে হেসে বললো,
____ তোমার মনের ঘরে আমায় রেখো বান্ধিয়া!

আমি একটু ফিরে মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
___নামটা প্রথমে উচ্চারণ করেই ছন্দটা মিলাতেন।

বলেই দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। প্রচন্ড লজ্জাও লাগছিলো কিন্তু মুখ থেকে হাসির রেশটা থামাতেই পারছিলাম না। রাতে খাওয়ার সময়ও ইয়াজের সামনে যাইনি। কেমন যেন লাগছিলো। পর্দার আড়াল থেকে দেখছিলাম সে শুধু আমাকে খুঁজে চলেছে।
সেদিন শুধু সে নয় আমার হৃদয়ে তার জায়গাটুকুও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। ফোনে আমাদের কথাবার্তা তেমন হতোনা। কিন্তু সবসময় তাকে দেখার তীব্র আকুলতা ঘিরে থাকতো। আমরা জানতাম আমরা দুজন দুজনকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। সেদিনের পর এতটা কাছাকাছিও আর যাওয়া হয়নি, তবে কল্পনায় ঠিকি যেতাম। ভালোবাসায় মাখামাখি হতাম কতোবার!



তার প্রায় ১০ মাস পরে আজ যখন ভাবী আমার ভাইকে ডিভোর্স দিলো, তখন আমার পুরো দুনিয়াটাই থমকে গেলো। প্রচন্ড রকম ভয় আর নিজের সব স্বপ্নগুলোর মৃত্যু দেখতে পাচ্ছিলাম। ইয়াজ কোনোভাবেই এটা ছেড়ে দিবেনা, তার বোন কম কষ্ট নিয়ে আমার ভাইকে ডিভোর্স দেয়নি, তার জন্য আমার ভাইকে নিয়ে আমার যতটা চিন্তা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি চিন্তা হচ্ছে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ আমি ইয়াজকে ছাড়া এক মূহুর্ত ভাবতে পারিনা। কিন্তু এই পর্যায়ে সবাই আমাকে মেনে নিলেও ইয়াজ কোনোভাবেই আমাকে মেনে নিবেনা। সে বোনের জন্য ভালোবাসার কুরবানী দিতে একবারও ভাব্বেনা, কারণ তার বোন তার জীবন, আর জগৎ! সে সবসময় বলে তারা দুজন একসাথে পৃথিবীতে এসেছে আর সারাজীবন সুখদুঃখ একসাথেই ভাগ করবে। তা-ই হয়তো সে যেই বাড়িতে তার বোনকে দিয়েছে সেই বাড়ি থেকেই নিজের জন্য আমাকে চেয়েছিল।

তারপর সারা দিনরাত আমার কেঁদে কেঁদেই কেটে গেলো। কিছু খাইনি, খেতে ইচ্ছেও করে না। ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো। ইয়াজ আমার ফোনও রিসিভ করে না। ভাবীদের বাড়ির সবাই তাদের ফোন থেকে আমাদের সবাইকে ব্লক করে দিয়েছে।

দুপুরের পর পর আমি গোসল করে বারান্দায় আনমনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। গাল বেয়ে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়ছিলো। হঠাৎ করেই বাইকের হর্ণ শুনে আমি নিচে তাকিয়ে চমকে গেলাম। ইয়াজ এসেছে। এক দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোললাম। ইয়াজের সাথে তার বাবাও আছে। ইয়াজ আমার দিকে তাকালোনা। আমি প্রথম ভাবলাম ডিভোর্স নিয়েই বুঝি কিছু বলতে এসেছে। আমি গিয়ে আমার বাবা আর ভাইকে ডেকে দিলাম। আমার পুরো ভেতরটা কাঁপছিলো, এদিকে ইয়াজ এসেছে শুনে আমার ভাই দরজা লক করে বললো,
___আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলবি আমি বাড়িতে নেই।

মা আর বাবা গিয়ে তাদের সামনে বসলো। আমার মা ভাবীর ব্যপারে কোনো কথা তোলার আগেই ইয়াজ বললো,
___কি হয়েছে বা হবে সেই প্রসঙ্গ টানতে চাইনা। আমি আপনাদের মেয়ে বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে চাই।

এটা শুনে সবাই হাঁ হয়ে গেলো। আমার বুক আরো বেগ নিয়ে ধুকধুক করে উঠলো। আমি আমার কানকে বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না।

চলবে…

অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০২

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (২য় পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

লাফিয়ে উনাকেই জড়িয়ে ধরতেই উনি আমাকে সরিয়ে আচমকা বলে উঠলেন,
___ছেলে দেখলে হুশ থাকেনা?

কাচুমাচু করতে করতে আমি সরে গেলাম। দ্বিতীয়বারের মতো এমন অসহনীয় লজ্জা পেয়ে যা যা বলবো ভেবে রেখেছিলাম সব ভুলে গিয়েছি। ভীষন বিব্রতকর অবস্থায় আমার নিজেকেই গালি দিতে ইচ্ছে করছিলো। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে গেছে আমি কি থেকে কি করে বসেছি নিজেই মিলাতে পারছিনা।

ইয়াজিদ ধির পায়ে রুমে প্রবেশ করলো। বিছানায় বসে এমন একটা ভাব নিলো, যেন এটা তার বাড়ি, তার রুম। তারপর আমার দিকে ইশারা করে বললো,
___এই মেয়ে আমাকে চিনোতো? আমি হলাম ইথু মানে তোমার ভাবী ইথিলার ৫ মিনিটের ছোট এবং তার জমজভাই, আমার নাম ইয়াজিদ ইমতিয়াজ। যদিও সবাই আমাকে ইয়াজ বলে ডাকে। তবে তুমি ভাই বলে ডাকবে। এখন আসি বিশেষ কথায়, ইথিলা যে আমার ৫ মিনিটের বড় সেটা ছোট বেলা থেকেই মানিনা, তাই তোমার ভাইকে দুলাভাই বলে ডাকতেও আমার সংকোচ। ইথিলাকে বলেছি শ্বশুরবাড়ির সবাইকে যাতে বলে আমি তার বড়। আমি চাই স্নেহ পেরিয়ে সম্মান ব্যপারটা আমাকে সর্বদা ঘিরে থাকুক কেননা পুরো এক যুগ ধরে সেটাকে আমি মস্তিষ্কে ধারণ করেছি। আর সেখানে তোমার মতো পুঁচকে মেয়েরা আমাকে অসম্মান কিংবা মসকারা করার সাহস করা তো কল্পনার বাইরে। আমাকে সবসময় সম্মান করে কথা বলবে বুঝলে?

একনাগাড়ে এগুলো বলে একটু থেমে আবার বললো,

___আচ্ছা যাই হোক এতক্ষণ আমার ব্যপারে ঝকঝকে পরিষ্কার ধারণা দিলাম । এখন বলো আমাদের বাড়িতে যেতে চাও কিনা?

আমি দরজার পাশ থেকে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললাম,
___না আমি যাবোনা।

ইয়াজ সুন্দর করে দাঁড়িয়ে বললো,
___তাহলে ঠিক আছে। বাবার অনুরোধে এসেছিলাম। বিকেলে তোমাকে না দেখেই মা-বাবা তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বিরক্ত করে ফেলছিল, এমনিতেও আমার পক্ষে মেয়েটেয়ে সাথে নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। এবার বাড়িতে গিয়ে বলবো আসতে রাজী হয়নি। ফোন দিলেও তার প্রমাণ পেয়ে যাবে ৷ তাহলে আমি যাচ্ছি!

বলেই আমাকে পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। কিছু একটা ভেবে আমি তৎক্ষনাৎ চোখনাক মুছতে মুছতে ডাক দিয়ে বললাম,
___ এই যে ড্রয়িং রুমে একটু বসুন। আমি ১০ মিনিটে আসছি।

আমার কথা শুনে ইয়াজ আড়চোখে তাকালো। তারপর ভ্রু কোঁচকায়ে চেহেরা ভাঁজ করে বিরবির করে কিছু একটা বলে ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলো।

আমি যত দ্রুত সম্ভব তৈরি হয়ে বের হলাম। মা আমাকে এতো দ্রুত রাজী হয়ে যেতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। যাওয়ার সময় ধিরে ধিরে আমার কাছে এসে বললো,
___বিন্দিয়া তুই তো যাবিনা বলেছিলি? তাছাড়া এমন উপযুক্ত ছেলের সাথে তুই সন্ধ্যা সময়ে যাবি ব্যপারটা আপত্তিকর কিন্তু ।

আমি মা’কে আস্বস্ত করে উনার ব্যপারে বললাম। এটাও বললাম উনি ফালতু আচরণ তো করবেইনা, উল্টো আমাকে সবকিছুতে শাসাবে। এসব শুনে মা না চাইতেও রাজী হলো।
কিন্তু আমার রাজী হওয়ার পেছনে ছিল এর ঠিক উল্টো কারণ। উনার এসব দেমাকি কথাবার্তা আমাকে ভীষণ হার্ট করেছে। দুনিয়ার সব বেয়াই বেয়াইনদের সম্পর্ক কতো রসিকতার হয়, সেখানে কিনা আমাকে বারবার অপমান করছে।
তখন মনে মনে বলেছিলাম, ইয়াজের ভাব আর গম্ভীরতার ১২ টা না বাজাতে পারলে আমিও বিন্দিয়া না!

ইয়াজ কোনো গাড়ী নিয়ে আসেনি। কারণ সে ভেবেছে আমি যাবোনা। সে একা একা কানে ইয়ারফোন গুঁজে নাচতে নাচতে অটো কিংবা সিএনজি চলে আসছে, এভাবেই ফিরে যাবে ভেবেছিলো।
কিন্তু এবার তার মুখ শুকনো। কোনো কথা না বলে একটা সিএনজি ডেকে তাদের বাজারের নাম বলে উঠে বসলো। আমার সাথে তখন একজন মহিলা ছিল, আর ইয়াজ সামনে বসা। একটু পর মহিলাটা নেমে গেলো। সেখানে ২৫-২৬ বয়সী একজন ছেলে উঠলো। কেমন যেন অন্য রকম লাগছিলো, গলায় মোটা স্টিলের চেইন, কানেও রিং পরা আছে। হাতে মেয়েদের চেয়েও মোটা বালা পরা। ভয় ভয় লাগছিলো আমার। এরপর আবার উঠেই বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে কর্কশ গলায় বসে বসলো,
___আচ্ছা আপনি কি অবিবাহিত?

আমি থতমত করে বিবাহিত কথাটা বলতে যাবো তখনি ইয়াজ সামনে থেকেই ঘাড় ফিরিয়ে বললো,
___ হ্যাঁ ভাই সে অবিবাহিত, তারপর আবার একদম সিঙ্গেল। আমরা ওর জন্য পাত্র খুঁজতেছি, আপনার কি পছন্দ হয়েছে? হলে আমার সাথে এ ব্যপারে কথা বলতে পারেন৷

লোকটা আমার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে লাজুকতার সাথে মিটমিট করে হাসলো। আমি বারবার পিছাচ্ছিলাম আর উনি একটু একটু ঘেঁষার চেষ্টা করছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বাজারে পৌঁছে গেলাম। সিএনজি থেকে নেমে ছেলেটা ভাড়া দিয়েই ইয়াজের সামনে গিয়ে লজ্জামাখা মুখে বললো,
__ভাই আপনার নাম্বারটা দিয়ে যাবেন প্লিজ। নইলে ওই আপার নাম্বার দিলেও চলবে। আসলে উনাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে, বিয়ে করতেও আপত্তি নাই।

এটা শুনে আমি রাগে পুরো আগুন হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ভয়ে কোনো কথা বলছিলাম না। এর মধ্যে আমাকে আরো রাগিয়ে ইয়াজ হাসতে হাসতে বললো,
___আরে আমরা যেহেতু পাত্র খুঁজতেছি, আপনাকে কষ্ট করে নিজে যোগাযোগ করতে হবে না। এমন পাত্র কীভাবে হাতছাড়া করবো বলুন? আপনার নাম্বার দেন, আমরাই শীগ্রই যোগাযোগ করবো।

বিজয়ের হাসি হেসে ছেলেটা নিজের নাম্বার দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো। আমি সেখান তারাহুরো করে হাঁটা ধরলাম। আমার পেছনে ভাবসাব নিয়ে ইয়াজ আসতেছে। তারপর একটু গিয়েই ইয়াজ বললো,
__ রিকশা ডাকবো? নাকি হেঁটে যেতে পারবে?

আমি রাগী গলায়ই বললাম,
___এই রাতে আপনার সাথে হেঁটে যাওয়ার আমার কোনো ইচ্ছে নেই, তারাতাড়ি রিকশা ডাকুন।

এদিক ওদিক খুঁজে একটা রিকশা এনে আমাকে বসালো। তারপর আবারো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আমি বুঝলাম আরেকটা রিকশা খুঁজতেছে। সে আমার সাথে একসাথে যেতে ইচ্ছুক নয়। আমিও একদম মধ্যখানে বসে পা দোলাচ্ছিলাম। ১০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে বললো,
___একটু সরো তো। আর রিকশা পাওয়া যাচ্ছেনা।

আমি রাগী চেহেরায় তাকিয়ে বড়সড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে অল্প সরলাম। সেই অল্প জায়গায় বসতে ইয়াজের কষ্ট হচ্ছিলো। তাও সে কিছুটা সরে থাকার চেষ্টা করছিলো। এটা দেখে যদিও আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু সেটা বুঝালাম না । সারা রাস্তায় জমানো ক্ষোভ থাকলেও এবার মনে মনে ভাবছিলাম বেটা চান্দু আমাকে এতো অপমান করে শেষ পর্যন্ত তো আমার সাথেই যেতে হচ্ছে। তাও এক পা রাখার মতো জায়গায় বসে। আর আমার সাথে এখানে একটু জায়গা পেতে তার অনুনয়ের মুখটা চোখে ভাসছিলো। এটা চোখে ভাসতেই নিজের উপর এবার একটা প্রশান্তি আসছে, কিন্তু মনে আসা এই ভাবটা মূহুর্তে আবার বদলে দিয়ে ইয়াজ নাকে হাত দিয়ে বললো,
___ উফফ! আমার বমি বমি পাচ্ছে! কয়দিন ধরে গোসল করো না?

এটা শোনার পরে আমার মুখটা মূহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। সাথে সাথে আমি সীটের একদম কর্ণার পর্যন্ত চেপে গেলাম। আমি তো আজকে গোসল করেছি, তার উপর গায়ে দামী পারফিউম মাখানো। সেখানে ইয়াজ এটা কি করে বললো?
হঠাৎ করে খেয়াল করি ইয়াজ এবার ঠিকঠাক মতো নিজের জায়গা নিয়ে বসেছে। তারপর মাথায় আসলো সে তাহলে জায়গা প্রশস্ত করতে আমাকে এই কথা বলেছে? যাতে করে আমি অযথা দখল করে রাখা জায়গাটা ছেড়ে দেই!? আর সে ভালো করে বসতে পারে!
এ খোদা! এই ছেলের সাথে আমি পারবোনা, ভীষণ ভীষণ জঘন্য রকম চালাক সে!

তাদের বাড়িতে পৌঁছাতেই ভাবী খুশিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ইয়াজ কোনদিকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।
ভাবী আমার হাতে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম। ভাবী নিজে থেকেই বললো ইয়াজ ছোট বেলা থেকেই নাকি অন্য রকম, অন্যদের মতো নিজের প্রতি খাপছাড়া নয়। ভীষণ জেদি আর আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণ! পড়ালেখায় মনোযোগী আর বড় হওয়ার পরে নিজের রুমে সহজে কাউকে যেতে দেয়না। সে সবকিছুরে ছাড় দেয় কিন্তু সবার মতো ঝগড়াঝাটিতে নাই । এমনকি ভাবী আর সে ৫ মিনিটের ছোট বড় হওয়া সত্ত্বেও তারা তুমি করে সম্বোধন করে। তবে তারপরও নাকি ভাবীর জন্য তার পুরো হৃদয়টাই পাতানো। তার বোনকে কেউ কষ্ট দিলে সে সেটা সহ্য করতে পারে না!
কেন জানি ইয়াজের ব্যপারে শুনতে ভালো লাগছিলোনা। কারণ সে আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছে এবং রাগিয়েছে। ভাবি এসব বলার মধ্যেই আমি হুট করে বলে উঠলাম,
___আরে ভাবী আমার ভাই তো বিয়েই করতে চাইছিলো না। তোহ কেমন বুঝাপড়া হয়েছে তোমাদের?

আমার কথার সাথে ভাবীর চেহেরাটা অন্য রকম হয়ে গেলো, একটু আনমনা হয়েও স্বাভাবিক স্বরে হেসে বললো,
___ তোমার ভাইয়ের কথা আর বলোনা, সবার সামনে ভালোই কিন্তু এমনিতে আমাকে পাত্তা দেয়না। আচ্ছা বিয়ের আগে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক টম্পর্ক ছিল নাকি?

আমি ভাবীর এই কথাটাকে কেন জানি মজা ভেবে হাসির সাথেই উড়িয়ে দিলাম। কারণ আমি ভালো করেই জানি ভাইয়ের এমন কিছু ছিল না। এই টপিক বাদ দিয়ে বললাম,
___ উফফ! প্রচন্ড গরম। আচ্ছা ভাবী দেখো তো আমার শরীর থেকে ঘামের কোনো গন্ধ আসছে কিনা?

ভাবী না শুঁকেই বললো,
___আরে না, তুমি আসার পরে দূর থেকেই কি মিষ্টি একটা সুগন্ধ পাচ্ছিলাম। কাছ থেকে আরো ভালো লাগছে !

আমি অবাক হয়ে বললাম,
___সত্যি বলছো?

___আরে হ্যাঁ মিথ্যা কেন বলবো?

ভাবীর কথা শুনে মনে মনে ইয়াজের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে বকতে আরম্ভ করে দিলাম। কতো বড় বেয়াদব! রিকশায় নাক চেপে কি অপমান করেই না কথাটা বললো ! গন্ধে নাকি ওর বমি পাচ্ছে! এটা শুনে রিকশাওয়ালাও তখন পেছন থেকে গামছাটা টেনে নাক বরাবর নিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ইয়াজের কথা শুনে উনারও বমি বমি লাগছিলো।

চলবে…..

অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০১

0

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (প্রথম পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

বিয়ে করার এক বছরেও নাকি নিজের বউয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়নি আমার ভাই। এতদিন ভাবতাম ভাবী বুঝি মিছামিছি দুষ্টামি করে এসব উদ্ভট কথা বলে।
কিন্তু আজকে ভাবীর পাঠানো ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে আমাদের সব ভ্রান্ত ধারণা বদলে গেলো। সেখানে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন ভাইয়ার অন্যত্র সম্পর্ক থাকার জন্য তিনি স্ত্রীকে প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছেন না। তাই তিনি তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

কাগজে এসব দেখার পর থেকে আম্মুর বিলাপ থামছেনা। বলতেছে এতো ভালো মেয়েটা শুধু ভাইয়ার দোষে চলে গেলো, আব্বু বাসায় ফিরলে ভাইকে সোজা ঘর থেকে বের করে দিবে। এমন কুলাঙ্গার ছেলের এই বাড়িতে কোনো ঠাঁই নেই।

এদিকে আমি সেই তখন থেকে আমি ফুঁপিয়ে কান্না করছি। কারো দিকেই ভাইয়ার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পুরো আধ ঘন্টা ধরে তিনি ভাত খাচ্ছেন৷ উনার বউ উনাকে ছেড়ে চলে গেছে দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেনা। খাওয়া শেষ হওয়ার পরে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে তিনি আমাকে পাশ কাটানোর সময় বলে,
___বিন্দিয়া কাঁদছিস কেন?

আমি কান্নাভেজা চোখেই রেগে তাকালাম। আর জোরে ভাঙা গলায় বললাম,
___ কিছু জানোনা তুমি? আরে তোমার বউ চলে গেছে এবার খুশি তুমি? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। যাও যাও এবার কোন প্রেমিকা নাকি আছে, তাকে নিয়ে কোথাও চলে যাও। এই বাড়িতে আসবা না। বাবাকে বলে দিবো তোমাকে আজীবনের জন্য এই বাড়ি নিষিদ্ধ করে দিতে৷

ভাই স্বাভাবিকভাবে বলে,
___আরে বউ গেলে আমার গেছে। তোদের কি তাতে? ন্যাকা কান্না এবার থামা, মা’কে নিয়ে খেয়ে নে।

বলেই উমি হনহন করে চলে গেলো। আমি ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে এবার হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে বারবার শোকের গভীরতা প্রকাশ করছেন। ভাবছে আমি সঙ্গীবিহীন হয়ে গেলাম তাই হয়তো এভাবে কাঁদতেছি। তাছাড়া আমার ভাবী ছিল রূপেগুণে একদম নজরকাড়া। এক বছরে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। ঈদ কাটাতে বাবার বাড়ি গিয়ে যে আর আসবেন না সেটা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি সব দোষ ভাইয়ার। তিনি এটা করতে বাধ্য করেছেন।
আমি ভাবীর জন্য কাঁদছি কথা ঠিক কিন্তু তার সাথে আরেকটা কারণ রয়েছে। যেটার সাথে আমার জীবনটাই আষ্টেপৃষ্টে সম্পৃক্ত!

আমার ভাই বিয়ে করার সময়েই কেমন যেন উদাস ছিল। কিন্তু আমার বাবা মা উনাকে অসংখ্যবার জিজ্ঞাসা করেছে উনার পছন্দের কেউ আছে কিনা, সেই মেয়ে যদি দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট কেউও হয় তাহলেও মেনে নিবেন। কারণ ভাইয়াকে এর কয়েকবছর আগে থেকেই বিয়ের জন্য প্যারা দিচ্ছিলেন কিন্তু উনি কিছুতেই কান দিতেন না এমনকি রাজীও হতেন না। তাই শেষ পর্যন্ত আমাদের সবার পছন্দে বিয়ে ঠিক করেছিলেন।
কিন্তু ভাই শুধরালোনা। শেষ পর্যন্ত ভাবীকে চলে যেতে বাধ্য করলো।
কিন্তু এসসবকিছু যাই হোক, কষ্ট হলেও আমি মেনে নিতাম, যেহেতু জোর করে সম্পর্ক হয়না। কিন্তু এখন যে এই সম্পর্কের সাথে আমার জীবনও জড়িয়ে আছে, এখন আমার কি হবে!?
আমার চোখ ঝাপসা , সেখানে বারবার ভাসছে সেই সোনালী সময়গুলো।


বিয়ের আগেরদিনের ঘটনা..

গায়ে হলুদের যাবতীয় আয়োজন নিয়ে আমার সমবয়সী চাচাতো, ফুফাতো, আর মামাতো বোনকে দিয়ে আমাকে ভাবীদের বাড়িতে পাঠানো হলো। আমার সাথে ছিল বিন্তি, রাহমি, আর প্রিয়ন্তী।
আব্বু আমাদের চারজনকে পাঠিয়েছে এগুলো পোঁছেই আবার চলে আসতে। অন্যদিকে আমাদের গাড়ী মেইন রাস্তা পেরিয়ে আর ঢুকতে পারছিলোনা। সকালে প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভেতরের মাটির রাস্তাটা কাদায় একাকার ছিল।
সেদিন মারাত্মক বিরক্তি নিয়ে গাড়ী থেকে নামতেই দেখলাম একটু দূরে চোখ থেকে সানগ্লাস নামাতে নামাতে চুল ঠিক করছে একটা ছেলে। মুখটা ভালোভাবে উপরে তুলতেই রাহমির দিকে তাকিয়ে আমি চোখ বড় করে নিজের মুখ চেপে ধরলাম।
তারাও চোখ ড্যাবড্যাব করছে। বিন্তি একটু জোরেসোরে বলেই ফেললো,
___আরে এ তো ইথিলা ভাবী, মানে আমাদের হবু ভাবী এটা। ছেলের ছদ্মবেশে এসেছে।

আমি বিন্তির কাঁধে হাত রেখে বললাম,
___ ভাবীর জমজ ভাই আছে শুনেছিলি তুই? ইয়াজিদ না কি যেন নাম। শুনেছিলাম তারা একরকম দেখতে, তবে এতটা হবে ভাবিনি। উনিই সেই মানুষ, নয়তো উচ্চতা খেয়াল কর গাধী, মুখে আবার ছাপদাঁড়িও আছে৷ এটা উনিই কনফার্ম। চেহেরা আর গায়ের রঙ দেখে ভুল ভাবছিলি। উনি পরিক্ষার জন্য আগে আসেনি,তাই তারিখ হওয়ার সময়ও দেখিনি। আমাদেরকে এখন এগিয়ে নিতে এসেছে।

প্রিয়ন্তী আমার কানে এসে ফিসফিস করে বললো,
___ওরেএএ এই ছেলে কি হ্যান্ডসাম। ছোঁ মেরে নিয়ে উড়াল দিতে ইচ্ছে করছে।

আমি মাথায় জোরে চটকানা দিয়ে দেখালাম উনি ততক্ষণে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কাছাকাছি এসেই হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি মুখটা ত্যাড়া করে বললাম,
___আপনার সাথে হাত মিলাতে আমরা ইচ্ছুক নই।

তখনি খেয়াল করি প্রিয়ন্তী, রাহমি,বিন্তি তিনজনের হাতই সামনে ঝুঁকে আছে। এদিকে উনি কাউকে পাত্তা না দিয়ে আমাদের ব্যাগগুলো তুলে নিয়ে সেখানে আরেকটা ব্যাগ রেখে পেছন ফিরেছেন।

প্রথমত হাত মিলানোর কথা বলে আমি লজ্জা পেলাম, আসলে হাত মেলাতে নয় ব্যাগ নিতে হাত বাড়িয়েছিল, দ্বিতীয়ত আমার কথা শুনে হাত মেলানোর আবেগ সামলাতে না পেরে আমার সাথের তিনজনই টক স্বাদের লজ্জা নিয়ে আর চোখ খুলে তাকাতে পারছেনা, মনে হচ্ছে ফাঁকফোকর পেলে এখনি এখান থেকে উধাও হয়ে যাবে।
ওদের তিনজনকে ধরে উনার উদ্দেশ্যে বললাম,
___আসলে ভাবীর হলুদের এই জিনিসপত্রগুলো পৌঁছাতেই এসেছি, তাহলে আর বাড়ির ভেতরে না যাই কেমন? চলে যাচ্ছি আমরা! আসলে অনেক কাআজ..

আমার কথা শেষ করার আগেই তিনি মাথা নেড়ে বললেন,
___আচ্ছা সাবধানে যাবেন।

আমি তখনও কাজ আছে কথাটা বলার জন্য হাঁ করেই আছি। কিন্তু উনি এটা বলেই পেছনে আর না তাকিয়ে পা টিপে টিপে কাদার উপর দিয়ে হাঁটা ধরেছে।

আমি শুকনো মুখ করে তাকিয়ে আছি, ওরা তিনজন কেঁদে ফেলার অবস্থা। আত্মীয়তা বুঝেনা কেমন বাড়িতে ভাইকে বিয়ে করাচ্ছি? আমি তো জাস্ট একটু ভাব নেওয়ার জন্য এমনভাবে বলেছি যে আমরা এখান থেকেই চলে যাবো,আমাদের কাজ আছে। আসলে ভেবেছি তাহলে আমাদেরকে বারবার বলে তারপর বাড়িতে নিবে। ভালো খাতিরযত্ন করবে। কিন্তু একবার না করাতে সত্যি সত্যি রাস্তা থেকে আমাদেরকে বিদায় করে দিবে, এটা কেমন মানুষ?
চারপাশে কতক্ষণ পায়চারি করে ভাইকে ফোন করে জানালাম এই তীব্র অপমানের কথা।
ভেবেছিলাম ভাই হয়তো শ্বশুর বাড়ির কাউকে ফোন করে ব্যপারটা জানাবে, আর কেউ ক্ষমা চেয়ে আমাদেরকে এখান থেকে সাদরে নিয়ে যাবে। কিন্তু এবারও উল্টো হলো, ভাই সুন্দর করে বললো, আমরা এখান থেকেই ফিরে যেতে।

একবুক হতাশা নিয়ে আমি উনার রেখে যাওয়া ব্যাগটা তুলে গাড়ীতে রাখলাম। আর আমরা রাস্তা থেকেই বাড়িতে ফিরে আসলাম। মনে মনে শপথ করলাম বরযাত্রীর সাথে এখানে আর আসবোই না। আমি জামাইয়ের একমাত্র বোন।আর যাই হোক আমার আলাদা ভাব আছে, সেখানে আজকেই কিনা অপমানিত হলাম!
প্রচন্ড জিদ হচ্ছিলো এই ছেলের উপর।

বাড়িতে এসে নিজের ভাবনামতো আনন্দও করা হলোনা। রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। কিন্তু যাদের নিয়ে গেছিলাম তারা স্বাভাবিক ছিল। আবার পরেরদিন নাচতে নাচতে বরযাত্রী চলে গেছে। আর আমি অসুস্থ বাহানায় সারাদিন বিছানায় পড়ে রইলাম।

সন্ধ্যার পরে বউ আসলো, সারা বাড়িঘরে আনন্দের ধুম। কিন্তু আমার ভেতরটা এখনো চুপসানো। সেই অপমান কোনোভাবেই ভুলতে পারছিনা। পরেরদিন আমাদের বাড়ির অনুষ্ঠানে ইয়াজিদ এসেছিলো। কিন্তু আমি আমার দেখা দেইনি। আড়ালে আড়ালে ছিলাম। সেদিনই ভাইয়া যখন শ্বশুরবাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছেন, তখন সবাই আমাকে জোর করলো ভাইয়ার সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি গেলাম না। এমনকি ভাবী আমার সাথে রাগ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু আমি ভীষণ একগেঁয়ে, কেউই রাজী করাতে পারলোনা।

সেদিন সন্ধ্যার পরে হঠাৎ করেই আমাদের বাড়িতে ইয়াজিদ আবার আসলো। এসেই আমার মা’কে বললো আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আবার পাঠানো হয়েছে। নয়তো উনার মা-বাবা ভীষণ রাগ করবে৷ মা ভালো করেই জানতেন আমি এখনো রাজী হবোনা। তাই উনাকে বললেন আমাকে রাজী করানোর চেষ্টা করতে।
এসব কথা আমি লুকিয়ে শুনে নিলাম। আর আমি নিজের রুমে গিয়ে আমাকে করা অপমান ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।

দরজার সামনে গিয়ে দুইবার উঁকি দিলাম আসছে কিনা। তারপর তৃতীয়বার ডানে বায়ে উঁকি দেওয়ার সময় সুযোগ খুঁজে কি করে যেন আমার পেছনে এসে দাঁড়ালো। এদিকে আমি হালকা পিছিয়ে ভেতরে যেতে চাইলেই বাঘ দেখার মতো লাফিয়ে উনাকেই জড়িয়ে ধরলাম, উনি সাথে সাথেই আমাকে সরিয়ে আচমকা বলে উঠলেন,
___ছেলে দেখলে হুশ থাকেনা?

চলবে….

নারীর সতীত্ব পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_২১
Wohad Mahmud

সাবনাজ ভাবির কাছে গিয়ে ভাবিকে ধরে রুম থেকে নিয়ে আসছে ছাদে যাবে বলে। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ভাবি।

সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তেমন কিছু হয়নি। তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সবার ভয় হচ্ছিল বাচ্চার যেন, কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। ভাবিকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন অজ্ঞান ছিল। আমি ডাক্তারকে বললাম ভাবি গর্ভবতী পরিক্ষা করে দেখবেন কোনো সমস্যা হয়েছে কী।

পরীক্ষার রিপোর্টে যা আসলো সেটা দেখে আমরা রিতিমত পুরাই অবাক হলাম। এটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভাবি গর্ভবতী ছিল না।‌ এতদিন সে আমাদের সাথে মিথ্যা বলে আসছে। আমরা প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল সেটা আজ বাস্তবে পরিণত হলো। তারপর ভাবিকে বিকালে বাসায় নিয়ে আসা হলো।

ভাইয়া তো রেগে আগুন হয়ে আছে। রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ইতোমধ্যে বাসার জিনিস পত্র ভাঙচুর করে দিয়েছে। তাকে নিজের স্ত্রী বলতে ঘৃণা করছে। ওর বাসায় খবর দাও নিয়ে তাদের মেয়ে। তার জন্য আমার বাসায় কোনো জায়গায় নেই।

বাসার বাকি সবাই ভাবির উপরে ক্ষুব্ধ। কারণ ইতোমধ্যে সবাই জেনে গিয়েছে ভাবি গর্ভবতী না। মিথ্যা কথা বলেছে। আর সে জন্যই সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দোষটা আজ সাবনাজকে দেয়নি। আমার ভয় হচ্ছিল ভাবি তো গর্ভবতী ছিল, যদি বাচ্চার কিছু হয়ে যায়। তাহলে সাবনাজকে ফাঁসিয়ে দিবে। কিন্তু অবাক কান্ড তার পেটে বাচ্চাই নেই।

রুমে এসে সাবনাজকে বললাম অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছ আজকে।

কেন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আফসানা কে ঘরে আনার চিন্তা ভাবনা করেছিলেন না কি?

আমি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললাম, এটা কেমন ধরনের কথা সাবনাজ? আর কীভাবে বুঝালে তুমি বিষয় টা বুঝবে? আফসানার বিয়ে হয়ে গেছে আর আমারো বিয়ে হয়ে গেছে। তাকে তার মতো থাকতে দাও। আমারা আমাদের মতো থাকি।

আমি তো তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম ভাবির বিষয় নিয়ে। ভাবি আজ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে আর পাশে তুমি ছিলে। ভাবি যদি সত্যিই গর্ভবতী হতো আর সন্তানের কোনো সমস্যা হলে সব দোষারোপ তোমাকে করত। বলতো যে, তুমি ইচ্ছে করেই তাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছো। এটা বলে রাগ করে রুমে থেকে বেরিয়ে আসলাম।

এভাবে বেশ অনেকদিন কেটে গেল। সবার চোখে সাবনাজ ভাবি একজন অবহেলার পাত্র রয়ে গেল। সাবনাজের সাথে সম্পর্ক টা আর আগের মতো নেই। আফসানাকে কেন্দ্র করে আমাদের আমাদের মাঝে অনেক টাই ফাটল ধরছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাপের বাড়িতে আছে সাবনাজ। তেমন কথা হয় না আমাদের।

দুই সপ্তাহ পরে ভাবি আবার বলছে আমি প্রেগন্যান্ট। আমি মা হতে চলেছি।

কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছে না। ভাইয়া তো সরাসরি বলে দিয়েছে এসব কথা মুখে নিয়ে আসলে সারাজীবনের জন্য বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিব।

ভাবি তখন বেবি চেক দেখিয়ে বলল, আমার মুখের কথা বিশ্বাস না করলে এই যে, দেখো এটা দেখে তো বিশ্বাস করবে তুমি?

ভাইয়া তখন বলল আমি জানি এসবের ভিতরেও কোনো চক্রান্ত আছে। অবহেলা থেকে বাঁচার জন্য সবার চোখে ভালো হওয়ার জন্য এসব মিথ্যা নাটক করছো।

এই দুই সপ্তাহ আমি আর ভাবিকে আগের মতো দেখছি না। আগের মতো আর কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।‌ তার চোখে এখন শুধু অনুশোচনা দেখতে পাই।

সন্ধ্যায় চেম্বার থেকে বাসায় আসছিল অটোতে করে এমন সময় একটা প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা মারে অটোতে। তারপর অজ্ঞান হয়ে যাই। দুদিন পর নিজেকে আবিস্কার করি হাসপাতালের বেডে। জানতে চাইলে কেউ একজন বলে আমি দুইদিন হাসপাতালের বেডে আছি। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার ফলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম এবং জ্ঞান ফিরতে অনেক দেরি হয়েছে।

এক সপ্তাহ পরে আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এই এক সপ্তাহ রাত দিন এক করে সাবনাজ আমার পাশে ছিল। বাবা অসুস্থ তাই মাকে তেমন থাকতে দেয়নি এখানে। মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যেত এবার বাসায় গিয়ে বাবাকে দেখাশোনা করতেন। ভাবি মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যেত। সাবনাজ আর মাহমুদা প্রতিটি মূহুর্ত আমার কাছে থাকতো।

বাসায় এসে সাবনাজকে বললাম হঠাৎ এতো পরিবর্তন হয়ে গেলে কেমন করে?

কেমন আবার পরিবর্তন হলাম আগের মতই তো আছি।

রাগ করে বাপের বাসায় চলে গিয়েছিলেন আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আবার এখানে চলে আসলে কেন ? অনেক কান্না করেছিলে আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে।

কে বলছে তোমাকে? সব মিথ্যা কথা। আমি একটুও কষ্ট পায়নি তোমার জন্য।

তাহলে এক্সিডেন্ট করে মরে যায় ভালো ছিল। আমার জন্য যখন কেউ কষ্ট পাওয়ার মতো নেই তাহলে নিশ্চয়ই খুশি হতে মরে গেলে।

সাবনাজ তখন চোখের অশ্রু ছেড়ে বলে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও মাহমুদ। আমি তোমাকে এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি ছোট একটা বিষয় কে কেন্দ্র করে। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি।##

আমি হেসে বললাম এসব কথা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়েছে। আমারো দোষ কম না। আগেই তোমাকে সবকিছু বলার পদরকার ছিল। আর সম্পর্কের মাঝে মান অভিমান সন্দেহ ভালোবাসা বাড়ে না।

সাবনাজ তখন বলল, আচ্ছা বাদ দিলাম। তবে একটা খুশির খবর আছে?

কী খুশির খবর?

কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলল আমি মা হতে চলেছি।

তাহলে আমি বাবা হতে চলেছি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। খুশিতে শারীরিক কষ্ট গুলো সব মাটি হয়ে গেল।

দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। আজ ডাক্তার কাছ থেকে এসেছে ভাবি সত্যি প্রেগন্যান্ট।

ভাবি আজ আমাকে এমন এক সত্যি কথা বলল। সেটা আমি শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এতদিন সত্যি টা জানলেও আমাকে বলে নাই কিন্তু আজ আমাকে সত্যি টা বলে দিল।
রাকিবের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। সেটা নিয়ে আজো কেস চলছে। বাইরে থেকে নেশা করে এসে প্রতিদিন বউকে নির্যাতন করতো।

এতো কিছু হয়ে গেল, আর আমি কিছুই জানি না। আমি তো মনে করেছিলাম ভালো হয়ে গেছে। যদি এখন ভালো হয়ে যেত তাহলে আমি যখন মাহমুদার সাথে রাকিবের বিয়ের কথা বলেছিলাম তখন আমাকে সবটা খুলে বলতো। কিন্তু বলেনি লুকিয়ে রাখছে।

আমি মাহমুদা আর সাবনাজকে ডেকে সবকিছু বললাম। ওরা তো সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আমার কথা শুনে সাবনাজ অনেক খুশি হয়েছে। কারণ সাবনাজ কখনও চায় মাহমুদার সাথে রাকিবের বিয়ে হোক।

সাবনাজ বলে তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। অনেক দিন থেকে বলব ভাবছি কিন্তু বলতে পারছি না।

বলো কী কথা?

আমি চাচ্ছিলাম মাহমুদার সাথে আমার ভাই আকাশের বিয়েটা হয়ে যাক।

আমিও হাসতে হাসতে বললাম তাহলে এই ব্যপার তাহলে এই জন্যই রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ে মেনে নিতে পারছিলে না।

বাসার সবাই অনুমতি নিয়ে বেশ ভালোই করেই বিয়ে টা হয়ে যায় মাহমুদা আর আকাশের।

এভাবে বেশ অনেকদিন কেটে যায়। আজ ভাবির ডেলিভারি ডে। কিন্তু ডেলিভারিতে ভাবি বেঁচে গেলেও বাচ্চাকে বাঁচানো যায়নি। পরিবারে আজ শোকের ছায়া। কোনো ভাবেই ভাইয়া আর ভাবিকে শান্তনা দিয়ে বোঝানো যাচ্ছে না।

আর কয়দিন পরে সাবনাজের ডেলিভারি হবে। আমার অনেক ভয় করছে। আমি আমার সন্তান স্ত্রী কাউকে হারাতে চাই না। সবাই যেন সুস্থ থাকবে।

প্রায় এক সপ্তাহ পরে আজ সাবনাজের ডেলিভারি হচ্ছে। আমি বাইরে অস্থির হয়ে আছি। মনে হচ্ছে যেন আমার বুকের উপরে পাথর বেঁধে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে এসে ডাক্তার বলল, আপনি দুইটা মেয়ে বাচ্চার বাবা হয়েছেন মাহমুদ সাহবে। মা ও সন্তান সবাই সুস্থ আছে। আমরা সবাই সাবনাজের কাছে গেলাম। সাথে ভাবি আর ভাইয়া ও ছিল।

আমি একটা সন্তান ভাবির কোলে তুলে দিয়ে বললাম এটা আজ থেকে আপনার সন্তান। ভাবির চোখে তখন আমি খুশি ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম।

হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ভাবি আমাকে আড়ালে ডেকে বলল, কিছু কথা বলার ছিল মাহমুদ তোমার সাথে ‌

জ্বী বলেন ভাবি।

আসলে সাবনাজের সতীত্ব পরীক্ষার জন্য মায়ের কাছে রুমাল টা আমিই দিয়ে তোমাকে দিতে বলেছিলাম। আর আমি জানি তুমি সেই রুমালে তোমার হাতের রক্ত লাগিয়ে মাকে দেখিয়েছিলে। এই বিষয় টা সাবনাজকে তুমি না বললেও আমি সব বলে দিয়েছিলাম।

আমি তখন মুচকি হেসে বললাম। এসব বিষয় বাদ দেন। আগে যা হওয়ার হয়েছে এখন আমরা মিলেমিশে থাকব। আর আপনিও আগের মতো নেই। আগের বিষয় নিয়ে যা হয়েছে কষ্ট পাবেন না।

আমি একটা বিষয় চিন্তা করতে লাগলাম সাবনাজ সব জানলেও আমাকে কিছু বলে নাই। সব মানিয়ে নিয়েছে। এমন স্ত্রী যেন সব ঘরে ঘরে হয়।

আগের সব ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আমরা খুব সুন্দর ভাবে জীবন পার করছি। এভাবেই যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবন চলতে থাকে। যে ব্যক্তি ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরে আসে আর সব ভুলে স্বীকার করে নেই অবশ্যই তার জন্য ক্ষমা প্রযোজ্য। ক্ষমা মানুষের মহৎ গুণ।

বি.দ্র: অনেক দিন থেকেই গল্প টা লিখছি। জানি না কার কাছে কেমন লাগছে। কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই বলবেন। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি নতুন গল্প দিব।

———+++++++++সমাপ্ত++++++++++——

নারীর সতীত্ব পর্ব-২০

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_২০
Wohad Mahmud

আমি রুম থেকে যাচ্ছি আর ভাবছি আল্লাহ এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। রুম থেকে বাহির গিয়ে দেখি তিন জন বসে আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে আমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে হলো আমি অন্য জগতে আছি।

তিন জনের মধ্যে একজন মেয়ে আছে যায় নাম আফসানা। আফসানাকে দেখে আমি পুরোপুরি শকড খেয়ে গেলাম। এই আফসানা আর কেউ না, এটা আমার প্রাক্তন। এখানে দেখে আমি অবাক হলাম।

ওদের সামনে গিয়ে বসতেই একজন বললেন আপনি নিশ্চয়ই মাহমুদ সাহবে?

জ্বী আমি মাহমুদ সাহবে। আপনি নিশ্চয়ই সুমির বাবা?

জ্বী আমি সুমির বাবা। তবে নিজের মেয়ের বাবা বলে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে। কীভাবে এমন একটা কাজ করতে পারল। ফোনে আপনার সাথে আমার কথা হয়েছিল। আপনার কথা আমার খুব ভালো লেগেছিল তাই এখানে এসেছি। না হলে এমন মেয়ে আমার দরকার নেই। যে মেয়ে নিজের বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে না সেই মেয়ে না থাকা ভালো।

আমি তখন বললাম প্লিজ এমন বলবেন না। দুজন দুজনকে ভালোবাসে। সোহেলে সুমিকে অনেক সুখে রাখবে। আপনি এই বিয়ে মেনে নেন, যদি কোনো সমস্যা হয় তার দায়ভার আমি নিব।

তখন আফসানা বলে উঠলো এমন কথা বলা খুব সহজ কিন্তু এর জন্য সবার সামনে অপমানিত হতে হয়েছে আমাদের।

মনে মনে বললাম আমি জানতাম এমন কিছু একটা বলবে আফসানা। কোনো কথা বলে কাজ হচ্ছে না। আমি সোহেলের বাবা আর সুমির বাবাকে বললাম। যায় হোক একটা বিষয় হয়ে গেছে। এর সমাধান তো করতে হবে। আপনারা কথা বলে দেখেন কী করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন এই বিয়ে যদি না মেনে নেন তাহলে যতটুকু মান সম্মান আছে ততটুকু থাকবে না। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা।

নিচে সবাই আলোচনা করছে। সাবনাজ, মা আর মাহমুদা রান্না করছে। আমি এসে রুমে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আফসানা আমার রুমে আসল। আফসানা রুমে আসায় আমার কেমন অস্বস্তি বোধ লাগছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বললাম। আমি বুঝতে পারছি আপনার বোন এভাবে পালিয়ে বিয়ে করে ঠিক করে নাই। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। আপনার বাবাকে বুঝানোর দায়িত্ব আপনার, যাতে দুটা জীবন নষ্ট না হয়ে যায়। হাজার হলেও আপনার বোন।

আফসানা তখন বলল আপনার মুখে এসব মানায় না। আমি আমার বোন কে নিয়ে যাব। দুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। দুজন দুজনকে ভুলে যাবে।

আমি তখন বললাম, বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেন। যদি দুজন বা দু’জনের মধ্যে কেউ একজন খারাপ কিছু করে ফেলে তখন কী হবে?

ওকে আপনার কথা মেনে নিলাম, ছেলে তো বেকার বউয়ের চাহিদা কীভাবে পূর্ণ করবে? আচ্ছা আমি না হয় সব চাহিদা বাদ দিয়ে দিলাম। বউকে খেতে দিবে কী? পোশাক কিনে দিবে কীভাবে?

আমি তখন বললাম, এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না। সোহেলের বাবা আছে, যদি চাকরি না হয় ততদিন ওর বাবা চালিয়ে নিবে।

অন্যের বেলায় বলা খুব সহজ কিন্তু নিজের সময় এসব কথা কোথায় ছিল?

আজ থেকে দুই বছর আগে আমিও এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম। তখন তো খুব বলেছিলেন আমি এখনো কোনো চাকরি করি না খেতে দিতে পারব না। তোমার কোনো চাহিদা পূরণ করতে পারব না। পালিয়ে বিয়ে করলে পরিবারের কেউ মেনে নিবে না। পরিবারের সম্মান নষ্ট হবে। কিন্তু এখন তো খুব সহজেই বলছেন এইভাবে, ওইভাবে সবকিছু হয়ে যাবে। তখন কোথায় ছিল আপনার এসব কথা। তখন তো বেশ ভালো করেই আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন।

এখন এসব বলার কথা না আফসানা। দুই বছর অনেক আগের কথা। হঠাৎ এসব কথা বলার কোনো মানে হয় না। তুমিও সুখে আছো আমিও সুখে আছি। এখন যেটা হচ্ছে সেটার সমাধান করেন।

আপনি কীভাবে জানলেন আমি সুখে আছি?

তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলে কিন্তু সারাজীবন এক হওয়া কপালে লেখা ছিল না।

এটা বলার সাথে সাথে রুমের মধ্যে সাবনাজ প্রবেশ করল। আমি ভয় পেয়ে ঢোক গিললাম। সাবনাজ আমার কথা শুনে ফেলেছে মনে হয়, না জানি কী ভাবছে। আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি আফসানা সাবনাজকে বলল,

এভাবে কারোর রুমে ঢোকা ঠিক না। অত্যন্ত নক করে ঢুকতে হয়।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে স্যরি বলে চলে যায় সাবনাজ।

আমি তখন আফসানাকে বললাম ওটা আমার স্ত্রী ছিল।

আফসানা বলল, স্যরি আমি বুঝতে পারি নাই। আর ভাবি নাই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবেন। আর হ্যাঁ আমি আমার বোনকে নিয়ে যাব শুধু বোনকে না সোহেল কেউ। আপনি না বললেও আমি এই বিয়ে হাসিমুখে মেনে নিতাম আর বাবাকেও মানিয়ে দিতাম। কারণ, ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা কেউ বুঝে না।

আমি আর কিছু বললাম না। কথা বললে কথা বাড়বে। পুরোনো কথা টেনে নিয়ে আসবে। বিষয় টা যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় তত ভালো। বিয়েটা মেনে নিয়েছে এতেই অনেক কিছু।

তারপর ওরা সবকিছু মেনে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যায়।

খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে বসে আছি। কিন্তু সাবনাজকে দেখছি না রুমে। সারাদিন তেমন কথাও বলে নাই আমার সাথে। হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো ভিতরে আস্তে পারি। এটা আর কেউ না সাবনাজ।

আমি বললাম স্বামীর রুমে আসতে আবার অনুমতি নেওয়ার কী আছে?

কেন আপনি জানেন না? কারোর রুমে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিতে হয়।

তুমি এখনো সেই বিষয় নিয়ে রাগ করে আছো? মানছি আমি ভুল করেছি তোমাকে বলার দরকার ছিল আমার। ওটা আমার প্রাক্তন, নাম আফসানা। দুই বছর থেকে কোনো যোগাযোগ নেই। হঠাৎ এখানে দেখা। আমি কী করতাম বলো? তাড়িয়ে দিতাম?

প্রাক্তনের সাথে রুমের দরজা ঠেলে দিয়ে কথা বলতে হয় আগে জানতাম না।

তুমি আমাকে সন্দেহ করছো?

না না সন্দেহ কেন করব? এমনিতেই বললাম। আমাকে ভালো না লাগলে বলতে পারতে। আমি তোমার ঘাড়ে এসে চেপে বসতাম না। এখনো সময় আছে যদি চাও তাহলে বলো আমি তোমাকে মুক্তি করে দিব। জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

কী সব আজে বাজে কথা বলছো। আমি তো বললাম তার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ নেই। তখন মাহমুদা বাইরে থেকে বলল, আসব ভাইয়া। আমি বললাম হ্যাঁ আই মাহমুদা।

দু’জন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে যেন, কিছুই হয়নি। তখন সাবনাজ বলে উঠল রাকিব ছেলেটা কখনো ভালো হবে না মাহমুদা। একের পরে এক মিথ্যা কথা আর অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। সুমির বাড়ি থেকে থেকে পালিয়ে আসা তাও আবার বিয়ের দিন। পালিয়ে দুজন বিয়ে করে এখানে আসা সবকিছুর পিছনে তো রাকিবের হাত আছে।

আমি তখন বললাম এখানে খারাপের কী আছে? তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসা এক করতে সাহায্য করেছে রাকিব।

তাহলে সবার সামনে মিথ্যা কথা কেন বলেছে তখন যে, এই সব বিষয়ে কিছু জানে না।

হ্যাঁ আমি এটা মানছি যে সত্যটা জানা সত্বেও মিথ্যা বলেছে। এর শাস্তি তাকে পেতেই হবে।

এতকিছুর পরেও সেই রাকিবের সাথেই তোমার মাহমুদার বিয়ে দিতে হবে? আর কোনো ছেলে খুঁজে পাচ্ছো না তুমি। ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলেই তো হয়ে।

সাবনাজ আজকাল এসব বিষয় নিয়ে তুমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছো। আমি বলেছি তাকে আগে ভালো হতে হবে। কিন্তু দিন দিন সে আরো খারাপের পথে যাচ্ছে। তোমার কী মনে হয় এমন হলে আমি তার সাথে মাহমুদার বিয়ে দিব।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেল। ভাবি ছাদে যাবে কিন্তু একা যেতে পারবে না, ধরে নিয়ে যেতে হবে। সে জন্য মাহমুদা কে ডাকছে। মাহমুদা তখন ঘুমিয়ে ছিল। তাই সাবনাজকে বললাম গিয়ে দেখো ভাবি কী বলছে?

সাবনাজ ভাবির কাছে গিয়ে ভাবিকে ধরে রুম থেকে নিয়ে আসছে ছাদে যাবে বলে। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ভাবি,,,,

চলবে,,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

নারীর সতীত্ব পর্ব-১৯

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_১৯
Wohad Mahmud

আমার খুব রাগ হচ্ছিল। বিয়ে করে যেদিকে যাবি যা, আমাদের মাথার উপরে আসার কী দরকার। সোহেলের কাছে থেকে ওর বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে এখানে আসতে বললাম। তারপর ওর বাবা এসে এসব কান্ড দেখে রাকিবকে কে কিছু না বলে থাপ্পড়াতে শুরু করে দেয়। সেই সাথে নিজের ছেলেকেও।

আমি বুঝতে পারলাম না। এখানে রাকিবের কী দোষ? রাকিবকে কেন থাপ্পড় দিল?

আমি সোহেলের বাবাকে বললাম, এখানে রাকিবের তো কোনো দোষ নেই, ভুল যা করার করছে সব আপার ছেলে করছে।

সোহেলের বাবা যা বলল তা শোনার পরে আমার রাগ আরো দ্বিগুন হয়ে গেল।

সোহেলের বাবা বলল, সব সমস্যার মূল এই রাকিব। আমার ছেলের তো দোষ আছেই তার তাকে সাহায্য করছে রাকিব। এর পিছনে রাকিবের হাত না থাকলে কোনোদিন এমন কাজ করতে পারত না সোহেল। আর রাকিব বলেছে নিশ্চিয় এখানে আসার কথা।

আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম, আপনি কীভাবে বুঝলেন এর পিছনে রাকিবের হাত আছে আর রাকিব এখানে আসতে বলেছে।

আমি সিওর কারণ, রাকিব একদিন এই মেয়ের বিষয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসছিল, আমি মানা করে দিয়েছিলাম আর তখন রাকিব বলেছিল বিষয় টা আমি সামলিয়ে নিব। আর এটা রাকিব করছে। রাকিব ছোট থেকেই এমন, কাউকে সম্মান দিতে জানে না।

আমি রাকিব কে বললাম এটা কী সত্যি রাকিব।

রাকিব তখন বলল, হ্যাঁ আমি ওই মেয়ের বিষয়ে কাকার সাথে কথা বলছিলাম। কিন্ত আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না আর এখানে আসতেও বলি নাই। পালিয়েও বিয়ে করতে বলি নাই আমি।

বুঝলাম রাকিব কে ধরে হবে না। তাই সোহেল কে বললাম আমার একটা ফ্রেন্ড আছে সে পুলিশ অফিসার যদি প্রথম থেকে সব ঠিক ঠিক বলো তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করব, না হলে আমি স্যরি।

সোহেল তখন বলে আমি রাকিবকে কথা অনুযায়ী সব করছি। রাকিব বলেছে পালিয়ে বিয়ে করে এখানে আসতে। আমি তাই করেছি। বলছে এখানে চলে আই, মাহমুদ ভাইয়া সাহায্য করতে পারবে। তাই এখানে এসেছি।

আমি রাকিবের দিকে তাকাতেই রাকিব লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। মনে মনে বললাম কুকুরের লেজ কখনো সোজা হবে না। আর যেখানে যায় ঝামেলা সৃষ্টি করে।

সুমির কাছে থেকে ওর বাবার নাম্বার নিয়ে ফোন দিয়ে সব খুলে বললাম। আর বাসার ঠিকানা দিয়ে বললাম এখানে আসেন আপনারা আর প্লিজ পুলিশ নিয়ে আসবেন না। নিজেরা নিজেরাই এই বিষয় টা সমাধান করতে পারলে ভালো হবে। কিছুক্ষণ বোঝানোর পরে ওরা আসতে রাজি হলো আমাদের এখানে।

সবাই বসে আছে গম্ভীর হয়ে। কেউ কোনো কথা বলছে না।সবার মাঝ থেকে সাবনাজ অনুপস্থিত। কিছুক্ষণ আগেও তো দেখলাম এখানেই ছিল। মনে হয় আমার এখানে আসতে দেখে চলে গিয়েছে। রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের কথা বলার পরে থেকে এমন করছে। কথা বলছে না। আমার সাথে রাগ করে আছে।

আমিও অনেক রাগ করে আছি সাবনাজের উপর। কালকে আমার কথার উত্তর না দেওয়ায় জন্য।

ওখান থেকে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি সাবনাজ বসে আছে খাটের উপরে। আমার আসার উপস্থিত ঠিক পেয়ে রুম থেকে চলে যেতে চাইলে জোরে হাত ধরে আবার খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে বললাম, তোমার সমস্যা কী সাবনাজ?

আমার আবার কী হবে? আমার কোনো সমস্যা নেই মাহমুদ। আমি ঠিক আছি।

তাহলে কাল থেকে আমাকে ইগনোর করে চলছো কেন? ঠিক মতো কথা বলছো না কেন?

কিছু হয়নি। আর বাসায় আরেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে না জানি কী হয়। যদি মেয়ের পরিবার ঝামেলা সৃষ্টি করে। পুলিশ নিয়ে এসে কেস করে। এসব বিষয় নিয়ে ঝামেলা হবে ভেবে মন খারাপ।

আমি কিছুটা রাগ নিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম মিথ্যা বলছো কেন ‌? আমি বেশ ভালো করেই জানি অন্য কারণে মন খারাপ তোমার। রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের কথা বলেছি বলে এমন করছো তাই তো? না কি অন্য বিষয়।

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহমুদা এসে বলল, মা আপনাকে ডাকছে ভাবি। আমাকে আর কিছু না বলে মাহমুদার সাথে চলে যায় সাবনাজ।

রাগে রাগে হাত দিয়ে টেবিলের উপর কাঁচের গ্লাসে মারলাম এক ঘুশি, হাত কেটে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। আমার রাগ তত বাড়ছে। বুঝতে পারছি না কী করব। এক দিকে সাবনাজ আর অন্যদিকে মাহমুদা, রাকিব। যতক্ষণ না বলছি মাহমুদার সাথে বিয়ে দিব না ততক্ষণ সাবনাজ ঠিক হবে না। সাবনাজের এই অবহেলা একদম আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অসহ্য লাগছে সবকিছু।

হাতে ব্যান্ডেজ করে নিচে গেলাম। নিচে সবার জন্য চা তৈরি নিয়ে এসে দিচ্ছে সাবনাজ। আমাকে চা দেওয়ার সময় আমার হাতের দিকে লক্ষ্য করে সাবনাজ আস্তে করে বলছে হাতে কী হয়েছে?

আমি কোনো কথা বলছি না। চুপ করে বসে আছি। একটু বোঝানো দরকার অবহেলা করার যন্ত্রণা কেমন হয়। ইশারায় পাশের রুমে আসতে বললে না দেখার ভান করে এখানেই বসে রইলাম। অনেক মেসেজ দিচ্ছে কল দিচ্ছে কিন্তু আমি কানে নিচ্ছি না।

পরে দেখি মাহমুদা কে দিয়ে আমাকে ডাকতে দিয়ে পাঠাইছে সাবনাজ।

মাহমুদা বলল ভাইয়া একটু এইদিকে আই তোর সাথে কথা আছে।

আমি বললাম, কী কথা এখানে বল। আমি তো বেশ ভালোই বুঝতে পারছি কেন ডাকছে।

না এখান বলা যাবে না। পাশের রুমে চল‌ তাড়াতাড়ি। খুব জরুরি কথা।

তারপর মাহমুদা সাথে পাশের রুমে গেলাম। আমি রুমে ঢুকতেই মাহমুদা চলে যায়। রুমের মধ্যে সাবনাজ দাঁড়িয়ে আছে।

কাছে গিয়ে বললাম কী হলো কিছু বলবেন?

সাবনাজ বলল তোমার হাতে কি হয়েছে?

হাতে আবার কী হবে কিছু হয়নি।

হাতে যদি কিছু না হয় তাহলে রুম রুম থেকে আসার সময় দেখলাম হাত ঠিক আছে আর এখন দেখছি হাত ব্যান্ডেজ করা।

আমি কিছুটা মুড নিয়ে বললাম। আমার হাতে যা হওয়ার হয়েছে তাতে আপনার কী? আপনার এতো দরদ দেখাতে হবে না।

আমার অনেক কিছু কারণ তোমার শরীরের উপর আমার অধিকার আছে। এখন এই শরীর তোমার একার নয়, আমারো ভাগ আছে।

এতো সুন্দর কথা শুনে কেউ কী আর রাগ করে থাকতে পারে বউয়ের উপর। তাই রাগ ভেঙে বললাম তোমার উপর রাগ করে তখন হাত দিয়ে কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলছি তাই হাত কেটে গেছে।

সাবনাজ তখন বলল, আসলে আমি স্যরি। আমাকে মাফ করে দিও। তোমাকে এমন অবহেলা করা আমার একদম ঠিক হয়নি। সবকিছু তোমাকে বলা উচিত ছিল।

আমি তখন হাসতে হাসতে বললাম, তুমি তো আর বোবা হয়ে যাওনি আর সময় ফুরিয়ে যায়নি। এখন আমাকে বলো তোমার কী হয়েছে।

সাবনাজ তখন কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমার বুঝতে বাকী রইল না, সুমির বাসা থেকে মানুষ এসেছে। সাবনাজ কে বললাম ওরা চলে এসেছে। আমি ওদের সাথে কথা বলে আসি তারপর তোমার সাথে কথা বলব।

আমি রুম থেকে যাচ্ছি আর ভাবছি আল্লাহ এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো। রুম থেকে বাহির গিয়ে দেখি তিন বসে আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে আমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে হলো আমি অন্য জগতে আছি,,,,,,,

চলবে,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

নারীর সতীত্ব পর্ব-১৮

0

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_১৮
Wohad Mahmud

কিন্তু তোর যদি ভালো মনে হয় রাকিবের সাথে বিয়ে করলে ভালো হবে, তাহলে আমি তাই করব। আমি কোনোদিন তোর কথা ফেলতে পারব না।

সাবনাজ বলে তুমি পাগল হয়ে গেছো মাহমুদা। আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন এই বিয়ে হতে দিব না।

ঠিক তখনি রাকিব বাইরে থেকে বলে আসতে পারি?

আমি কিছুটা হতভম্ব হলাম। এটা তো রাকিবের কন্ঠ। হঠাৎ এখানে কী চায়। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কী আমাদের সব কথা শুনছিল? যদি শুনে থাকে তাহলে তো চলে যেত আসতো না এখানে। আর আসলেও অনুমতি নিয়ে না সরাসরি চলে আসতো। আবার কোনো খারাপ মতলব থাকতে পারে শুনেও না শোনার ভান করছে।

তার মনে যায় থাকুন না কেন, খারাপ, ভালো। সেটা পরে দেখা যাবে। আজ তো অত্যন্ত সত্যি কথা বলেছে‌। আর নিজের বোনের মুখুশ খুলে দিয়েছে। তাই আমি আর কিছু না ভেবে বললাম আসো রাকিব ভিতরে আসো।

কেমন আছেন মাহমুদ ভাইয়া?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো? বসো তুমি, বসে কথা বলি।

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

মাহমুদা কে বললাম চা নিয়ে আসতে। মাহমুদা গিয়ে চা নিয়ে আসলো।

রাকিবকে চা দেওয়ার আগেই রাকিব কিছুটা ভয় নিয়ে বলল না থাক লাগবে না।

আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি গায়ে চা ফেলে দেওয়ার কথা এখনো মনে আছে তাহলে।

মাহমুদা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ভয় নেই রাকিব সাহেব প্রতিবার আর ভুল করে গায়ে চা পড়বে না। তখন তো ভুল করে গায়ে চা পড়েছিল আপনাকে স্যরি বলতেও ভুলে গেছি। আপনিও হয়তো আপনার বোনের মতো মনে করছেন আমি ইচ্ছে করেই এমন করেছি। যায় হোক এসব কথা আর মনে রাখবেন না প্লিজ।

রাকিব বলল, আরে না না কী যে বলেন মাহমুদা আপনি। ইচ্ছে করে কেন এমন করবেন। আমিও বুঝতে পারছি ভুল করেই পড়েছে।

আমি তখন বললাম তো হঠাৎ এখানে রাকিব? কিছু বলবে কী আমাকে?

আমতা আমতা করে বলল, না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি। আর তেমন কিছু বলব না। এমনিতেই আপনাদের সাথে একটা কথা বলতে আসলাম। আর আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত সবকিছুর জন্য। এর আগে মাহমুদার জন্য আপনাদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। কোনোদিন সরিও বলি নাই। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি।

আমি বললাম না না, ঠিক আছে সব। আমি সেই কথা আমি অনেক আগেই ভুলে গিয়েছি। আমি বুঝেছিলাম ভালোবাসার জন্য এমন করেছ। কিন্তু সেটা তোমার ভালোলাগা ছিল, ভালোবাসা না। ভালোবাসা কখনো বাহুর জোরে আদায় করা যায় না। ভালোবাসা সব সময় মন দিয়ে আদায় করে নিতে হয়। আর মাহমুদার প্রতি তখন তোমার ভালোবাসা না ভালোলাগা ছিল।

জ্বী ভাইয়া আমি বুঝতে পারছি। আর আজকের জন্য স্যরি। সাইমা আপু আমাকে সব করতে বলেছে। কিন্তু আমি মাহমুদার জন্য আজ সত্যি কথা বলে দিয়েছি।

আমি তখন বললাম শুধু মাহমুদার জন্য না ন্যায়ের জন্য সত্যি বলতে হবে। মাহমুদা যদি ভুল করে সেটাই ধরিয়ে দিতে হবে। যদি এসব কিছু মানতে পারো তবেই তোমার সাথে মাহমুদার বিয়ে হবে।

জ্বী ভাইয়া আমি সব পারব।

সাবনাজকে দেখছি রাকিবের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাকিবকে মোটেও সহ্য করতে পারছে না সাবনাজ। কিন্তু সাবনাজ তো এমন না। যত বড় শত্রু হোক না‌ কেন কারোর উপর এমন রাগ করে থাকে না। সব সময় হাসি মুখে কথা বলে।যেমন বিয়ের তৃতীয় দিনের কথা চিন্তা করি। সাইমা ভাবি সাবনাজকে থাপ্পড় মেরেছিল। কিন্তু সেখানে সাবনাজ সঠিক ছিল আর ভাবি ভুল ছিল তবুও সাবনাজ প্রতিবাদ করে নাই। আর আমাকেও বলে নাই যে, ভাবি তাকে থাপ্পড় মেরেছে কারণ সাবনাজ চায় না এটা নিয়ে বাসায় বড় কিছু হয়ে যাক। সম্পর্ক নষ্ট হোক।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এই রাগটা সাবনাজের নিজের জন্য না অন্য কারোর জন্য। কিন্তু কেন এমন করছে খুঁজে বাহির করতে হবে।

আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি সাবনাজ রাকিব কে বলল,

রাকাবি ভাইয়া আপনার বোন তো অনেক অসুস্থ। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে ‌। আপনার বোনের এই খারাপ সময়ে তার পাশে থাকার দরকার। তাকে সেবাযত্ন করা দরকার। আপনার মা মুরুব্বি মানুষ আর কত করবে একা একা। তাদেরকে সাহায্য করা দরকার।

রাকিব তখন বলল, জ্বী আপনি ঠিক বলেছেন। তাহলে আপনারা থাকেন আপনি যাই। গিয়ে দেখি সাইমা আপু কেমন আছে।

রাকিব চলে যাওয়ার পরে বললাম। ভালোই তো গল্প করছিলাম আমরা, রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের বিষয়ে। আর সাইমা ভাবি তো নাটক করছে এটা তুমিও ভালো করে জানো, তাহলে রাকিবকে কেন চলে যেতে বললে বোনের কাছে?

সাবনাজ তখন বললো, আমরা ভাবছি যে, সাইমা ভাবি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এমন নাটক করছে। তবে এমনও হতে পারে সত্যি সত্যি সমস্যা হয়েছে। তুমি কী ভুলে গিয়েছ, বাঘ আর রাখালের গল্প?

এটা বলে রুম থেকে চলে যায় সাবনাজ। আমি মাহমুদা কে বললাম তোমার ভাবির কি হয়েছে।‌ কোনোদিন এমন করে না‌। আজ হঠাৎ এমন করছে না। সাবনাজকে অনেক অদ্ভুত লাগছে।

মাহমুদা বলল , আমি কিছু জানি না ভাইয়া। তুই থাক আমি গিয়ে ঘুমাই। আর তুই ও ঘুমিয়ে পড়। রাত দেখছিস কত হয়েছে। আজকের এসব বিচারে জন্য রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে। আমার আবার সকালে উঠে টিউশনিতে যেতে হবে ভাইয়া।

মাহমুদা চলে যাওয়ার পরে আমি সাবনাজকে খুঁজতে গেলাম। প্রথমে বারান্দায় গেলাম কিন্তু বারান্দায় নেই। বারান্দায় যখন নেই তাহলে নিশ্চয়ই ছাদে আছে। কিন্তু ছাদেও নেই। বাবা মায়ের রুমেও নেই। পরে আবার আমার রুমেও এসে পেলাম না। কোনো জায়গায় যখন নেই তাহলে কোথায় থাকতে পারে। বাড়ির বাইরে তো যাবে না। এখানেই কোথাও নেই। শুধু ভাবিদের রুম টা দেখতে বাকি আছে। ভাবির রুমে গিয়ে দেখি ভাবি ঘুমিয়ে আছে আর ভাইয়া, রাকিব, ভাবির মা আর সাবনাজ গল্প করছে। আমাকে দেখে রাকিব বলল, বসেন ভাইয়া।

আমি বললাম না বসব না এখন আর। সাবনাজ কে বললাম চলো অনেক রাত হয়েছে আর কিছু কথা আছে তোমার সাথে আমার।

আর কোনো কথা না বলে, সাবনাজ ওখান থেকে উঠে আমার সাথে রুমে আসে। রুমে আসার পরে আমি বললাম তখন তো রাকিব কে বললে চলে যেতে, ওর সাথে মাহমুদার বিয়ে ঠিক করছি বলে খুব তো রাগ করলে। এখন আবার গিয়ে তাদের সাথে হেসে কথা কেন বলো?

কেন মাহমুদ, তুমিই তো বলেছিলে আমি যেন তাদের মতো না হয়। তাদের মতো খারাপ না হয়। তাহলে এখন যখন ভালো করে কথা বলছি তাহলে তোমার কেন সমস্যা হচ্ছে? ওক তাহলে আমি ও আজ খারাপ হয়ে যাব। সাইমা ভাবির মতো খারাপ হয়ে যাব।

আমি রাগ নিয়ে বললাম এটা কেমন কথা সাবনাজ। এমনটা তো বলি নাই আমি। উল্টা কেন বুঝছো। আর রাকিবের সাথে মাহমুদার বিয়ের কথা শুনে রেগে কেন গেলে তুমি রাকিবের উপরে।

আমার কথা ইগনোর করে সাবনাজ বলে আমার খুব ঘুম পাইছে। অনেক রাত হয়েছে। সকালে উঠে রান্না করতে হবে। “শুভ রাত্রি”

তারপর ঘুমিয়ে যায়।

কেউ আমার কথা ইগনোর করুক এটা আমার অনেক আত্মসম্মানবোধে লাগে। আমি এটা একদম সহ্য করতে পারি না‌, ছোট থেকেই। আগে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিলে যদি কেউ সিন করে রিপ্লাই না দেয় তাহলে মেসেজ রিমুভ করে দিতাম। বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা নিয়ে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরেক কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে। তখন সকাল ১০ টা বাজে। ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকালে ডেকে দেয় কিন্তু আজ শুক্রবার বলে কেউ ডেকে দেয়নি। নিচে গিয়ে দেখি ভাবির চাচাতো ভাই একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে আমাদের বাসায় উঠেছে। কালকে বিকালে বিয়ে করেছে । রাতে দুজন দুজনের বন্ধু/বান্ধবীর বাসায় ছিল। আর সকালে এখানে চলে এসেছে। বিপদের মধ্যে আরেক বিপদ।

আমি সব শোনার পরে বললাম, এভাবে কেউ কী বিয়ে করে? বাসায় বলে বিয়ে করতে পারতে।

তখন সোহেল ( ভাবির চাচাতো ভাই) বলে, বাসা থেকে মেনে নিবে না আর কালকে সুমির বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল, এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমাদের কাছে।‌ আর কোনো উপায় না পেয়ে এখানে এসেছি । প্লিজ আমাদের জন্য কিছু একটা করেন ভাইয়া।

আমি তখন বললাম এটা এতো সহজ না। তোমার নামে নারী অপহরণের মামলা দিয়ে পারে মেয়ের পরিবার।

সুমি তখন বলে না এমনটা হতে দিব না। আমি সাক্ষী দিব নিজ ইচ্ছায় সোহেলের সাথে এসেছি আমি।

আমার খুব রাগ হচ্ছিল। বিয়ে করে যেদিকে যাবি যা, আমাদের মাথার উপরে আসার কী দরকার। সোহেলের কাছে থেকে ওর বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে এখানে আসতে বললাম। তারপর ওর বাবা এসে এসব কান্ড দেখে রাকিবকে কে কিছু না বলে থাপ্পড়াতে শুরু করে দেয়। সেই সাথে নিজের ছেলেকেও।

আমি বুঝতে পারলাম না। এখানে রাকিবের কী দোষ? রাকিবকে কেন থাপ্পড় দিল,,,,,,,

চলবে,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।