অপূর্ণ অভিলাষ পর্ব-০৩

0
1360

গল্পঃ #অপূর্ণ_অভিলাষ (৩য় পর্ব)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার

পরেরদিন সকাল ১১ টায় শপিং করার জন্য রওয়ানা হলাম। আত্মীয়তার শুরুতে প্রথমবার আগমণে সবাইকেই নাকি গিফট দিতে হয়। ইয়াজ, ভাবী আর আমি গেলাম। ভাইয়া বাসায়ই রয়ে গেলো।
আমি আর ভাবী একটা রিকশায়, আর ইয়াজ পেছনে আরেকটা রিকশায়। সেদিন ভাবী কমলা রঙের শাড়ী পরে বের হয়েছে তবে ভীষণ শালীনতার সাথে । আর আমি সবুজ রঙের একটা সাধারণ থ্রিপিসে। বলা বাহুল্য ভাবী আমার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সুন্দরী।
রাস্তার বামপাশ মানে যাওয়ার রাস্তাটা ক্লেয়ার ছিল কিন্তু ডানপাশে ফিরার রাস্তায় অনেকগুলো গাড়ীর ভীড় জমেছে। এদিকে আমাদের রিকশা সেই বরাবর এসে একটু সাইড করে থামলো, পাশের দোকানে কিছু একটা রাখবে বলে। এর মধ্যেই রাস্তার ওপাশ থেকে একটা ছেলে প্রথম আমাকে উদ্দেশ্য করে জোরে জোরে বললো,
__হেই সবুজপরী,চলোনা গিয়ে বিয়ে করি! (এরপর শুরু করলো তীব্র হাসির রোল)

সেসময়ই ইয়াজের রিকশা আমাদের বরাবর আসলো,ইয়াজও ওই ছেলের কথা শুনে ভীষণ হাস্যভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো। তার রিকশা পাশ হয়ে যাওয়ার সময়ই সেখান থেকে আরেকটা ছেলে আরো জোরে বললো,
___সবুজটাকে বাদ দিয়ে কমলাসুন্দরী দেখ। আবার শাড়ী পরেছেরে, কি হট লাগছে উফফ!

আমি এসব কথাকে পরোয়া করছিলাম না। কিন্তু ভাবী এবার ভয় ভয় চোখে ইয়াজের রিকশার দিকে তাকিয়ে আমাকে আঙুল দিয়ে দেখালো। আমি তাকিয়ে দেখলাম রিকশা সাইডে আর ইয়াজ নেই। ভাবী ভীষণ পেরেশান হয়ে ডানে তাকিয়েই চিৎকার করে বললো,
___ইয়াজ ছেড়ে দাও। প্লিজ রাস্তায় ঝামেলা করো না। দোহাই লাগে ভাই ওদের ছেড়ে দাও। ইয়াজ ইয়াজ! আমার কথা শুনো।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ভয়ে আৎকে উঠলাম। আমি দেখলাম ইয়াজ সেই ছেলেটার কলার টেনে থাপ্পড়ের সাথে জিজ্ঞাসা করছে, কি বলছিস আবার বল? এই ছেলেগুলোর বাজে কথাগুলো অন্যরাও শুনেছিলো, তাই ততক্ষণে এখানে ভীড় জমে গেছে। তাই তারাও ছেলেগুলোকে এসে ভীষণভাবে ধমকাচ্ছে, জোরে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এবার অন্যরাই ওদেরকে কানমলা দিচ্ছে, থাপ্পড় দিচ্ছে। আর ইয়াজ ফোন কানে দিয়ে বলছে, এক্ষুনি ইভটিজিংয়ের অপরাধে তোদের জেলে পাঠাবো।
আমরাও রিকশা থেকে নেমে গেলাম। ইয়াজ কাকে ফোন করেছে জানিনা, তবে সেখানকার আশেপাশে ডিউটিরত কয়েকজন পুলিশ ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে আসলো। আর ওদেরকে ঘাড়ে ধরে রাস্তা পার করে আরেকটা মোড়ে গিয়ে গাড়ীতে তুলে চলে গেলো। এতক্ষণে গাড়ীর ভীড় কবেই শেষ হয়ে যেতো, কিন্তু এই ঝামেলায় সেটা হয়নি।
এবার আস্তে আস্তে সব গাড়ী সামনে এগুতে লাগলো। ইয়াজ মুখের ঘামগুলো মুছতে মুছতে এসে নিজের রিকশায় বসলো। আর আমাদের দুটো রিকশা’ই আগেপিছে এগুতে লাগলো। আমার বুক এখনো ধুকপুক করছে। ভাবীও ভীষণ আতঙ্কতায় আছে, সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
আমি জোরে শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে বললাম,
___তুমি বলেছিলে ও ঝগড়াঝাটি করেনা,কিন্তু এখন..

ভাবী জবাব দিলো,
___ বিন্দিয়া তোমায় বলেছিলাম তো আমাকে কেউ অল্প আঘাত করলেও সে সেটা সহ্য করে না। আমি ওর বোন নই শুধু, ওর আত্মার আংশিক। ওর নিজের এবং আমার উপর বিন্দু পরিমাণেও আঁচ আসলে সে সেটাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেয়। সেখানে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে বুঝতে পারছো ব্যপারটা? ওই ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে যখন বলেছিলো, আমি লুকিয়ে দোয়া করছিলাম যেন আমাকে কিছু না বলে। কারণ আমি জানতাম এটাই হবে। তাইতো বিয়ের আগে ওর সাথে বের হলে সবসময় বোরকা পরে বের হতাম। তারপরও এমন ঝামেলা কয়েকবার করেছে। অন্যদিকে আমাদের দুজনের স্কুল কলেজ সব তো একসাথেই ছিল, সেখানে ওর জন্য কেউ আমাকে কিছু বলার সাহস পেতোনা। ইয়াজ আমার ব্যপারে ভীষণ রকম সিরিয়াস।

আমি হাতের টিস্যুটা ফেলে আরেকটা বের করলাম। এতো ঘামছি কেন বুঝতে পারছি না। সত্যি বলতে এর আগে নিজেদের জন্য এমন ঝামেলার সম্মুখীন হইনি। আর ইয়াজকে নিয়ে আমার মধ্যে যা ধারণা ছিল সে তার চেয়েও ভয়ংকর। মনে মনে শপথ নিলাম ওর সাথে আর কোনো ব্যপারে বাড়াবাড়ি করবোনা। সেবার সত্যি সত্যিই ওর সাথে কথা বলিনি।

এর ঠিক দুইমাস পরে সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল তাদের গাছের ফলমূল নিয়ে। অনেক রকম ফল। পুরো এক গাড়ী পরিপূর্ণ করে আমাদের বাসায় নামলো।
কেন জানি বাসায় এসেই আমাকে নিজে থেকে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলো। তাও হাসিমুখে।
এটা সত্যি ওর হাসিমুখে তাকালে প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই। মনে হতো ভীষণ নিষ্পাপ সেই হাসি, আর আছে প্রগাঢ় টান!

আমার ফুফাতো বোন রাহমি তখন আমার বাড়িতে গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে এসেছিলো। আর চাচাতো বোন বিন্তি সেদিন সারাদিন আমাদের বাসায়।
রাতে রাহমি আমার ভাবী ভাইয়াসহ আমাদেরকে নিয়ে বসলো একটা খেলা খেলবে।
খেলাটা ছিল প্রশ্নোত্তর নিয়ে।
মোট ১০ টা কাগজের টুকরো নিলাম। আমরা ৫ জনের নামে ৫ টা টুকরো বানানো হলো। বাকি পাঁচটাতে, আম,জাম,লিচু,কাঁঠাল,পেয়ারা এসব লেখা হলো। সবার নামের সাথে ফলগুলোর সম্পর্ক বিঁধে দেওয়া হলো। যেমন আমার নামের সাথে আম,বিন্তির নামের সাথে জাম,ভাইয়ার সাথে লিচু,ভাবীর সাথে কাঁঠাল, আর রাহমির সাথে পেয়ারা। এবার কথা হলো প্রথমে তুমি দুইটা কাগজ নিবে, যদি তোমার নাম পাও, এবং অপরপক্ষের একজন নিজের নাম না পেয়েও তোমার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম পায় তাহলে সে তোমাকে প্রশ্ন করবে। যা ইচ্ছে প্রশ্ন করবে। তুমি উত্তর পারলে ১০ পাবে, নয়তো শূন্য। কিন্তু যে প্রশ্ন করবে সে ১০ পাবে। আর বাকিরা যারা নিজেদের নাম পাবেনা এবং ফলের নামও মিলবেনা তারা সবাই শূন্য পাবে।
খুব উৎসুক ছিলাম, অন্য রকম একটা খেলা।
কিন্তু খেলা শুরুর মূহুর্তেই ইয়াজ আসলো। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
___ এই বিন্দিয়া আমার জন্যও একটা কাগজ লিখো। আমিও খেলবো।

ভাবীর দিকে তাকালাম। ভাবীও বললো ওকে নিতে। তাই আমিও ওর জন্যও দুটো কাগজ লিখলাম।
প্রথম রাউন্ডে সবাই শূন্য পেলো, কারণ কেউই নিজের নাম পায়নি। পরেরবার কাকতালীয়ভাবে ভাইয়া নিজের নাম পেয়েছে আর ভাবী পেয়েছে ভাইয়ার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম।
পুরো টানটান উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি ভাইয়াকে কি প্রশ্ন করা হয়, আর সেটার জবাব ভাইয়া দিতে পারে কিনা।
অতঃপর ভাবী কাগজে প্রশ্নটা লিখলো, যেটা ছিল..
যদি চাইলেই সম্ভব হতো, তাহলে কতবছর আমার সাথে একসাথে বাঁচতে চাইতেন?

ভাইয়া খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লিখলো, একটা নিঃশ্বাস ফেলতে যতসময়!

বিন্তি আর রাহমি একসাথে বললো, তারমানে এই অল্প মূহুর্ত পর্যন্ত ভাবীকে চান? সাথে সাথে ভাবীর চেহেরা অন্য রকম হয়ে গেলো। ইতোমধ্যে ইয়াজের চেহেরা লাল হয়ে গেছে।
বুঝতে পারছি সে যতটা সম্ভব রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাও সে নিজের গালেমুখে হাত বুলাতে বুলাতে হাসি টানিয়েই বলল,
___হাহাহা তাহলে আপনার বেঁচে থাকাও কিন্তু এই পর্যন্তই হবে ! মনে রাখবেন যতক্ষণ আমার বোনকে আগলে রাখবেন আপনার নিঃশ্বাস ততক্ষণই সতেজ বইবে।

ভাবী বুঝতে পারছে ব্যপারটা মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
___আরে একটা নিঃশ্বাস বলতে সে শেষবারের নিঃশ্বাসটা বুঝাইছে। মানে তখন পর্যন্তই আমাকে চায়। তুমিও না কি সব মজা করো। এই তোমরা শুরু করো আবার।

বলেই ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখলো। আর ইয়াজ একটু স্বাভাবিক হয়ে নিচে তাকালো। চার রাউন্ড চলে গেলো সবাই শূন্য পাচ্ছে। কারোটাই মিলছেনা। এরপর আবার পঞ্চমবার ইয়াজ নিজের নাম পেলো, আর রাহমি পেলো তার সাথে সংযুক্ত ফলের নাম। রাহমি পেয়েই মিটমিট করে হেসে ইয়াজের উদ্দেশ্যে কাগজে প্রশ্ন লিখলো, আমাকে কেমন লাগে আপনার?
ইয়াজ বা’হাতে বিচ্ছিরি করে লিখলো, ভুল ডিম।

এটা দেখে সবাই হুহু করে হেসে উঠলো । কিন্তু বেচারা রাহমির মুখটা সত্যি সত্যিই ভুল ডিমের মতো নিস্তেজ হয়ে গেছে।

এর পরেরবার আবারও ইয়াজ নিজের নাম পেলো। এটা দেখে সবাই বলাবলি করতে লাগলো সে নিশ্চয়ই সেই কাগজটা চিহ্নিত করে ফেলেছে। কিন্তু আমি কিছু বললাম না, কারণ এবার আমি তার সংযুক্ত ফলের নাম পেয়েছি। কিন্তু রাহমির মতো লজ্জা পেতে হয় কিনা সেই ভয়ে কোনো প্রশ্ন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত লিখলাম, আমার ক্ষেত্রে আপনার জীবনে চিরতরে অসম্ভব হয়ে যাক এমন তিনটা ইচ্ছে কি কি হতে পারে?

ইয়াজ কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর লিখলো।
১.. আমি বিন্দিয়ার সাথে কথা বলতে চাইনা।
২.. আমি ওর মুখ দেখতে চাইনা।
৩.. খুব শীগ্রই তার বিয়ের দাওয়াত পেতে চাই।

এই উত্তরগুলো দেখে ভাবী আর আমি বাদে সবাই জোরে জোরে হেসে উঠলো। আমি প্রথমে নেগেটিভ ভেবেই মুখ ভার করেছিলাম। তারপর আমার প্রশ্নের দিকে খেয়াল করতেই আলতো হাসলাম। ভাবীও হাসলো, হয়তো উনিও এটা বুঝেছে এর মানে কি। আমি ওদেরকে কিছু না বুঝিয়েই আবার কাগজ ফেললাম।

শেষ পর্যন্ত ইয়াজ প্রথম হলো, ভাবী দ্বিতীয়, আর ভাইয়া আমি আর রাহমি তৃতীয়। বিন্তি একটাও পায়নি।

এর মধ্যে মা আমাকে ডেকে বললো তাদেরকে চা বানিয়ে দিতে। আমি বের হতে যাওয়ার সময় ইয়াজ একটু কেশে নিয়ে বললো,
___ এই বিন্দিয়া, আমার জন্য চা আনবে আদা দিয়া।

ইয়াজের এই কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে এক এক করে বলতে শুরু করলো, এই বিন্দিয়া আমার জন্য চা আনবে চিনি কম দিয়া। এই বিন্দিয়া আমার জন্য চা আনবে কাপ দিয়া, মগ দিয়া, ট্রে দিয়া,দুধ দিয়া,লেবু দিয়া । আরো যা যা বলা যায় অদ্ভুত অদ্ভুত বলতেই লাগলো। আমি রাগ নিয়া ফিরে বললাম,
___আমি বিন্দিয়া, আজ তোমাদের জন্য চা বানাবো হলুদ,মরিচ,জিরে,ধনিয়া,আলু পেঁয়াজ রসুন আরো যা তারকারি আছে সব দিয়া। সেগুলো তোমরা খাবে বিস্কুট দিয়া ভিজাইয়া।

আর কিছু না শুনে আমি তারাতাড়ি করে সেখান থেকে চলে আসলাম। হাসতে হাসতে ভাবীও আমার সাথে আসলো। তারপর চা বানিয়ে ভাবী আর আমি রান্নাঘর থেকে বেড়িয়েই দেখলাম বিন্তি আর রাহমি ড্রয়িং রুমে টিভি দেখে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
___ তারা দুজন কোথায়?

বিন্তি বলল,
___ভাইয়া তার রুমেই আছে। আর ইয়াজ বিয়াইসাব যে রুমে রাতে থাকবে সেই রুমেই আছে।

ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
___ওদের দুজনকে এখানে দিয়ে তুমি ইয়াজকে চা দিয়ে আসো। আমি তোমার ভাইয়াকে দিচ্ছি।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে ইয়াজের রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম সে মোবাইল টিপছে। আমি আস্তে আস্তে কাপটা রেখে চলে আসতে চাইলেই হুড়মুড় করে উঠে আমার হাত চেপে ধরলো।
আমি চমকে উঠলাম। পেছন ঘুরে থমথমে গলায় বললাম,
___ হাতে ধরলেন কেন? ছাড়ুন।

ইয়াজ হাসতে হাসতে বললো,
___বিন্দিয়াকে রেখে দিবো টান দিয়া।

আমি টেনেও হাত ছাড়াতে পারছিলাম না। উপায়ন্তর না পেয়ে বসে পড়লাম আর বললাম,
___কি চাই আপনার?

ইয়াজ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো। অন্য হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছন গুঁজে ফিসফিস করে বললো,
___তোমাকে চাই বিন্দিয়া।

আমি পেছনে সরে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে বললাম,
___ওই যে অসম্ভব তিনটা ইচ্ছের কথা বলেছিলেন তার মানে কি এটাই, আপনি কথা বলতে চাননা বলা বিষয়টা একেবারেই অসম্ভব হয়ে যাক। মানে আপনি কথা বলতে চান, আর আপনি আমাকে দেখতে চান না সেটাও অসম্ভব হয়ে যাক। মানে আপনি চান সবসময়ই যেন সামনে থাকি। আর বিয়ের দাওয়াত পেতে চান মানে..

আমি লজ্জায় নিচু হয়ে হাতের নখ কামড়াতে লাগলাম। ইয়াজ আমার মাথা তুলে বললো,
___ হ্যাঁ সেটাই। এটাও অসম্ভব হোক। মানে তোমার বিয়ের দাওয়াত খাওয়া শুধুই আমার জন্য অসম্ভব হোক। তার মানে হলো দাওয়াত নয়, আমিই বিয়ে করবো তোমায়। আর বরেরা তো দাওয়াত পায়না, তাইনা? তারা দাওয়াত ছাড়া খেতেও আসে আবার বউও নিয়ে যায়।

আমি প্রচন্ড লজ্জায় ইয়াজের বুকের উপর একটা ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলাম। ইয়াজ সেখানে বসেই হেসে হেসে বললো,
____ তোমার মনের ঘরে আমায় রেখো বান্ধিয়া!

আমি একটু ফিরে মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
___নামটা প্রথমে উচ্চারণ করেই ছন্দটা মিলাতেন।

বলেই দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। প্রচন্ড লজ্জাও লাগছিলো কিন্তু মুখ থেকে হাসির রেশটা থামাতেই পারছিলাম না। রাতে খাওয়ার সময়ও ইয়াজের সামনে যাইনি। কেমন যেন লাগছিলো। পর্দার আড়াল থেকে দেখছিলাম সে শুধু আমাকে খুঁজে চলেছে।
সেদিন শুধু সে নয় আমার হৃদয়ে তার জায়গাটুকুও আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। ফোনে আমাদের কথাবার্তা তেমন হতোনা। কিন্তু সবসময় তাকে দেখার তীব্র আকুলতা ঘিরে থাকতো। আমরা জানতাম আমরা দুজন দুজনকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। সেদিনের পর এতটা কাছাকাছিও আর যাওয়া হয়নি, তবে কল্পনায় ঠিকি যেতাম। ভালোবাসায় মাখামাখি হতাম কতোবার!



তার প্রায় ১০ মাস পরে আজ যখন ভাবী আমার ভাইকে ডিভোর্স দিলো, তখন আমার পুরো দুনিয়াটাই থমকে গেলো। প্রচন্ড রকম ভয় আর নিজের সব স্বপ্নগুলোর মৃত্যু দেখতে পাচ্ছিলাম। ইয়াজ কোনোভাবেই এটা ছেড়ে দিবেনা, তার বোন কম কষ্ট নিয়ে আমার ভাইকে ডিভোর্স দেয়নি, তার জন্য আমার ভাইকে নিয়ে আমার যতটা চিন্তা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি চিন্তা হচ্ছে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ আমি ইয়াজকে ছাড়া এক মূহুর্ত ভাবতে পারিনা। কিন্তু এই পর্যায়ে সবাই আমাকে মেনে নিলেও ইয়াজ কোনোভাবেই আমাকে মেনে নিবেনা। সে বোনের জন্য ভালোবাসার কুরবানী দিতে একবারও ভাব্বেনা, কারণ তার বোন তার জীবন, আর জগৎ! সে সবসময় বলে তারা দুজন একসাথে পৃথিবীতে এসেছে আর সারাজীবন সুখদুঃখ একসাথেই ভাগ করবে। তা-ই হয়তো সে যেই বাড়িতে তার বোনকে দিয়েছে সেই বাড়ি থেকেই নিজের জন্য আমাকে চেয়েছিল।

তারপর সারা দিনরাত আমার কেঁদে কেঁদেই কেটে গেলো। কিছু খাইনি, খেতে ইচ্ছেও করে না। ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো। ইয়াজ আমার ফোনও রিসিভ করে না। ভাবীদের বাড়ির সবাই তাদের ফোন থেকে আমাদের সবাইকে ব্লক করে দিয়েছে।

দুপুরের পর পর আমি গোসল করে বারান্দায় আনমনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। গাল বেয়ে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়ছিলো। হঠাৎ করেই বাইকের হর্ণ শুনে আমি নিচে তাকিয়ে চমকে গেলাম। ইয়াজ এসেছে। এক দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোললাম। ইয়াজের সাথে তার বাবাও আছে। ইয়াজ আমার দিকে তাকালোনা। আমি প্রথম ভাবলাম ডিভোর্স নিয়েই বুঝি কিছু বলতে এসেছে। আমি গিয়ে আমার বাবা আর ভাইকে ডেকে দিলাম। আমার পুরো ভেতরটা কাঁপছিলো, এদিকে ইয়াজ এসেছে শুনে আমার ভাই দরজা লক করে বললো,
___আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলবি আমি বাড়িতে নেই।

মা আর বাবা গিয়ে তাদের সামনে বসলো। আমার মা ভাবীর ব্যপারে কোনো কথা তোলার আগেই ইয়াজ বললো,
___কি হয়েছে বা হবে সেই প্রসঙ্গ টানতে চাইনা। আমি আপনাদের মেয়ে বিন্দিয়াকে বিয়ে করতে চাই।

এটা শুনে সবাই হাঁ হয়ে গেলো। আমার বুক আরো বেগ নিয়ে ধুকধুক করে উঠলো। আমি আমার কানকে বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে