Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1520



অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৮

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮

গেটটা খোলার সাথে সাথে এক ঝলক আলোক রশ্নি এসে আলোর মুখে থুবরে পড়ল। সে সাথে হালকা মৃদু মন্দ বাতাস গায়ে এসে লেপ্টে গেল। আলোর মধ্যে একটা শীতলতার অনুভূতি কাজ করছে। ভেতরটা প্রশান্ত লাগছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখল পুরো ছাদটায় সবজি,ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো। হুট করে বন্দি জীবন থেকে এমন মনোরম পরিবেশ দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে দৌঁড়ে গেল ছাদের দিকে। আলোর এমন ছটফট স্বভাব দেখে তানভীরের কেমন জানি সন্দেহ হয়। মাঝে মাঝে আলোকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করে। তার মনে হয় মেয়েটা হুট করে পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়েছে। তবে এ মুহূর্তে আলোর মুখের এক চিলতে হাসির কাছে সবকিছু ফিকে হয়ে গেছে। আলোকে যে সে কিছু বলবে সেটার উপায়ও নেই। আলোকে যতই দেখছে ততই কেন জানি না তানভীরের মনে ভালোলাগার একটা সুক্ষ্ম রেখা জাগছে। আলো ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটা সূর্যের দিকে তাক করে আছে৷ কতদিন রোদ পোহানো হয় না। এ রোদের সুমিষ্ট তাপ আলোর মরীচিকা ধরা শরীরটা যেন সতেজ করছে। পেছন থেকে তখন তানভীর এসে আলোর কানে বলল

– পাগলা গারদে কী রোদ পোহাতে পারেন নি?

কথাটা আলোর কানে যেতেই আলো চট করেই তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– এরকম টা বললেন কেন?

– কারণ আপনার কাজকর্ম দেখে মনে হয় পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন। কারও মাথা টাথা ফটিয়ে পালিয়েছেন না তো আবার?

তানভীরের এমন কথা শুনতেই আলোর বুকটা ধুক করে উঠল। ভাবতে লাগল তানভীর কী, সব জেনে গিয়েছে। নাহয় ঐ লোকটার মাথা ফাটিয়ে এসেছে তানভীর জানলো কী করে। হাস্যজ্জ্বল মুখটা ক্রমশেই মলিন হয়ে গেল। অবচেতন মনে বলে উঠল

– আপনি জানলেন কী করে?

আলোর এমন জবাবে তানভীরও চমকে গেল।তাহলে কী আলো সত্যিই কারও মাথা ফাটিয়ে এসেছে? তানভীর এবার নড়ে চড়ে দাঁড়াল। কিছুটা জোর গলায় বলল

– তার মানে কী সত্যিই এ কাজ করেছেন?

তানভীরের অনিশ্চয়তা মাখা প্রশ্ন শুনে আলো বুঝতে পারল যে, সে আন্দাজে ঢিল মেরেছে।আলোও এবার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল

– আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম আর কী।কতটা বোকা আপনি। যা বলি তাই বিশ্বাস করে ফেলেন। মাথা ফাটানো কী এত সোজা? বললাম আর ফাটিয়ে আসলাম।আমি একটু চঞ্চল স্বভাবের। এর বাইরে কিছু না। আচ্ছা এবার বলুন জেল কেন খেটেছিলেন?

– সে এক লম্বা কাহিনি। আরেকদিন বলব।

– আজকেই বলুন না। জানার অনেক আগ্রহ জাগছে।

– পরে কোনোদিন বলা যাবে। আজকে বলব না।

– তাহলে আপনার ভাই কেন অভিমান করেছে সেটা বলুন।

– ভাইয়ার অভিমানের পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পারিবারিক বিষয় বলতে চাচ্ছি না।

– আমাকে বললে এমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারণ বিষয়গুলো আমি কাকে বলব? আমি আপনার আশে পাশের কাউকে চিনি না। সুতরাং বলতেই পারেন।

কথাগুলো বলে আলো তানভীরের চোখের দিকে তাকাল। তানভীরের, আলোর চোখে চোখ পড়তেই কেন জানি না নিজের ভেতরে থাকা সমস্ত কিছু বলে দিতে মন চায়ছে । নিজেকে সে সামলাতে পারল না। অবচেতন মনে বলে ফেলল

– আচ্ছা বলব তবে বিষয়টা আপনার আর আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন। পারবেন তো?

– অবশ্যই পারব।

– তাহলে শুনোন। প্রায় চার বছর আগে আপনার মতোই একজনকে এ বাসায় নিয়ে এসেছিলাম রাস্তা থেকে । মেয়েটার নাম ছিল রুশি। মেয়েটাও বেশ অসহায় দাবি করেছিল৷ তখন আমি ইন্টার পাশ করি। আর আমার বড় ভাই অনার্স কমপ্লিট করে। আমার মা স্বাভাবিকভাবে জটিল হলেও সরল মনের। মেয়েটার মা, বাবা কেউ ছিল না ফুফার কাছে মানুষ কিন্তু সেখানে তাকে অত্যাচার করা হতো তাই পালিয়েছিল। আমরাও বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে ওকে থাকতে দিই। বেশ ভালোই যাচ্ছিল সময়। মেয়েটাও খুব মিশুক ছিল। অল্পতেই মায়ের মন জয় করে ফেলে। রুশি আমার এক বছরের ছোট ছিল। দুজনের মধ্যে ভালোই বন্ধুত্ব ছিল । বেশ ভালোই যাচ্ছিল সময়। সব কিছু ঠিকঠাকেই ছিল। ভালোও লাগত কিছুটা। তবে প্রেমিক বা বউ হিসেবে না একজন বন্ধু হিসেবে।

“পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর সম্পর্ক হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিষাদময় অধ্যায়গুলোও আলোকিত হয়ে যায়”।

রুশির সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক ঐ ধরণের ছিল। কিন্তু একটা সময় পর রুশির মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করি। আগের চেয়ে আনমনা। কিছু নিয়ে চিন্তিত। ব্যপারটা বুঝতে পারতাম না কেন? তবে তাকে বেশ অগোছাল মনে হত। অনেক বার জিজ্ঞেস করার পরও তেমন কিছু বলত না। চুপচাপ থাকত। আনমনা হয়ে থাকত। অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়লে যেমনটা হত ঠিক তেমনটা। আমি ওকে কাছে থেকে চিনেছি তাই তার পরিবর্তন টা কারও নজরে না আসলেও আমার নজরে পড়ে।

আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলাম সে আমার বড় ভাই সানীর সাথে বেশ আন্তরিক হচ্ছে। বড় ভাই পেইন্টিং করলে সেখানে বসে থাকত। বড় ভাইয়ের আশে পাশে ঘুরঘুর করত। বুঝতে পেরেছিলাম তাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে। একটা সময় বেশ পরখ করে বুঝলাম সানী ভাইয়ার সাথে তার প্রেমটা জমে গেছে। আমার কেন জানি না একটু খারাপ লাগত। বুকের বা পাশটায় ব্যথা অনুভব করতাম।

তানভীরের এ কথাটা শুনে তানভীরের কথায় ব্যাগরা দিয়ে আলো বলে উঠল

– আপনি কী রুশিকে পছন্দ করতেন?

তানভীর নিজের জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল

– ছিঃ কী সব বলছেন? ওকে আমি নিজের বন্ধু মনে করতাম। আমার কষ্ট লাগত কারণ ও আমাকে কেন জানি না এড়িয়ে যেত। তেমন কিছুই শেয়ার করত না।ওর বড় ভাইয়ের সাথে প্রেম চলতেই পারে বিষয়টা বেশ স্বাবাভিক। তবে আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। আমাকে বললেই পারত। এমন একজনকে ভাবী হিসেবে পেলে আমিও খুশি থাকব। তবে তার এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা আমাকে বিব্রত করত।

– আচ্ছা দুঃখিত এমন কথা বলে আপনাকে বিচলিত করার জন্য। তারপর কী হলো বলুন।

– তারপর বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয় যখন সানী ভাই রুশিকে বিয়ে করার কথাটা মাকে বলে। আর মা ও সানী ভাইয়ের পছন্দে অমত করেনি। তাদের বিয়েও ঠিক হয়। কিন্তু রুশিকে কেমন জানি লাগত।মনে হতো কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তিত।আমরা বিষয়টা বুঝতেও পারতাম না। তবে সানী ভাই বেশ উৎফুল্ল থাকত। দুজনের দুরকম ব্যবহার আমার নজর এড়িয়ে যায়নি। তবে রুশিকে কিছু জিজ্ঞেস করার তেমন সাহস পেলাম না। তাকে দেখে মনে হতো তার মনে কোনো চাপা কষ্ট ব্যাগরা দিয়ে বসেছে। শুধু ভাবতাম রুশি তো সানী ভাইকে ভালোবাসে তাহলে তার মন এত আনমনা কেন? ভাবনাটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারতাম না। মনের গহীনে তাকে ঘিরে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতই।

আস্তে আস্তে বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসলো। মা রুশির ফুফা ফুফির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল তবে রুশি চাইনি বলে আর এগুই নি বিষয়টা। রুশি আর সানী ভাই রোজ শপিং এ বের হতো এটা ওটা কিনত। কিন্তু রুশির মুখ অবয়ব দেখে কেন জানি না আমার মনে হত সে খুশি না। ভাবতে লাগলাম রুশি কী চায় না সানী ভাইকে। তবে পরক্ষণে আবার ভাবতাম রুশি সানী ভাইকে না চাইলে তো বিয়েটা এগুতো না। আস্তে আস্তে রুশির সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে লাগল।

বিয়ের ঠিক আগের দিন আমি বেশ আনমনা হয়ে কী যেন ভাবছিলাম। এমন সময় দরজায় নক করার আওয়াজ পেলাম। দরজা খুলেই দেখলাম রুশি। রুশির চোখ বেশ ফুলা ছিল। অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছিল বুঝায় যাচ্ছিল। আমি দরজাটা খুলতেই সে রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম

– কাঁদছো কেন? কী হয়েছে?

রুশি কোনো উত্তর দিল না। শুধু বলল

– আমার কিছু ভালো লাগছে না।

– তুমি কি এ বিয়েতে রাজি না? সানী ভাইকে কি তুমি ভালোবাসো না?

রুশি মাথা নেড়ে নেড়ে উত্তর দিল

– হ্যাঁ বাসি। ভালোবাসি বলেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। কিন্তু?

– কিন্তু কী?

– নাহ কিছু না।

কথাটা বলেই রুশি রুম থেকে বের হয়ে গেল। বুঝতে পেরেছিলাম সে আমাকে কিছু বলতে গিয়েও পারছিল না। আমি বিষয়টা নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে চুপ হয়ে যাই। তারপর নিজের মতো করে ঘুমিয়ে যাই।

সকাল বেলা মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে। আমি তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বের হই। লক্ষ্য করলাম কান্নাটা রুশির রুম থেকে আসছে। আমি দৌঁড়ে সেখানে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যাই। কারণ….

কথাটা বলেই তানভীর থেমে যায়। তার চোখে অশ্রুজল টলমল করতে থাকে। আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– কী হলো থেমে গেলেন কেন? তারপর কী হলো বলুন?

তানভীর এবার কান্নাটা আটকাতে পারল না। চোখ দিয়ে তার পানি পড়তে লাগল। কান্না জড়িত কন্ঠে জবাব দিয়ে বলল

– কারণ দেখলাম রুশি সিলিং ফ্যানে ঝুলছে। পাশে একটা ডায়রি ছিল সেখানে শুধু আমার নামটায় লিখে রেখেছিল। হয়তো আরও কিছু লিখতে গেছিল তবে পারে নি।

রুশির এ অবস্থাটা দেখে সানী ভাই পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। পুলিশ আসে। রুশির ডায়রিতে আমার নাম দেখে সবাই ভেবে নেয় যে রুশি আত্নহত্যা করেছে আমার জন্য। পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সে সাথে আমার বড় ভাই ও আমাকে ভুল বুঝে। সেই যে সে বিদেশ গিয়েছে আর দেশে আসে নি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো রুশি এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তবে ডি এন এ টেস্ট করে জানা গেছে সে বাচ্চাটা আমার বা সানী ভাইয়ের না। তাই আমি জেল থেকে ছাড়া পাই। তবে আজও জানতে পারলাম না রুশি সেদিন কী বলতে এসেছিল। তার মনে কী চলছিল। কেন সে আত্নহত্যা করল। তার পেটের বাচ্চাটা কার ছিল। সব মিলিয়ে বিষয়টা এখনও গোলক ধাঁধায় আছে। আর ঠিক এ জন্য মা আপনাকে এত প্রশ্ন করছিল। কারণ সেদিন রুশিকে আমিই নিয়ে এসেছিলাম এ বাড়িতে। রুশির পরিবারের ঠিকানা এখনও জানি না। অনেক খুঁজ নেওয়ার পরও জানতে পারেনি। কোথায় থেকে এসেছিল সে জানে। সব মিলিয়ে বিষয়টা অস্পষ্ট। বড় ভাইয়ের ধারণা রুশির আত্নহত্যার পেছনে পরোক্ষভাবে আমি দায়ী। যার কারণে সে ঘটনার পর আমাদের বাসায় আর আসেনি। এখনও ভেবে পাই না রুশি কেন এমন করল।

কথাগুলো বলেই তানভীর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল

– হয়তো আকাশে আছো তুমি। কিন্তু একটা বার বলে যেতে পারতা তোমার কী হয়েছিল। তাহলে এত অপবাদের গ্লানি নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াতে হত না। এ গ্লানি বহন করা বড্ড কষ্ট রুশি। একটাবার বলে যাও কে তোমার সাথে এত ঘৃনিত কাজ করেছে। তোমাকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

বলেই কাঁদতে লাগল। আলো তানভীরের কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেল। রুশির মৃত্যুর রহস্যটা যেন আলোকেও ঘিরে ধরেছে। আলোও নীরব। কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। দম বন্ধ লাগছে। তানভীরের কষ্টটা উপলব্ধি সে করতে পারছে। কারণ মিথ্যা অপবাদের গ্লানি বহন করা খুব কষ্ট দায়ক।

“পৃথিবীতে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ভারী বস্তু হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ। যা মানুষের কাঁধে আসলে বহন করা দুষ্কর হয়ে উঠে।”

তানভীরকে সাত্ত্বণা দেওয়ার ভাষা আলোর নেই।

“পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেই তার নিজের জায়গায় কোনো না কোনো বিষয়ে দুঃখী। কারও বেশি কারও কম। দুঃখ আছে বলেই সবাই সুখের মর্ম বুঝে”

দুজনের মধ্যেই এখন নীরবতা বিরাজ করছে। নীরবতার অবসান ঘটিয়ে আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– হয়তো কোনো একদিন আপনার মনে জমে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে। এ মিথ্যা অপবাদের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবেন। চলেন ঘরে যাওয়া যাক। এখানে আর ভালো লাগছে না। আপনারও বিশ্রামের প্রয়োজন।

তানভীর নিজেকে সামলে নিয়ে আলোকে উত্তর দিল

– চলুন।

এরপর দুজন ঘরে আসলো। ঘরে এসেই ড্রইং রুমে দুজন বসলো। তানভীর টিভিটা অন করল। আলো টিভির পর্দায় তাকাতেই ভয়ে চুপসে গেল। তার বুক ধুকধুক করতে লাগল নীলার গলা কাটা লাশটা টিভির পর্দায় দেখে। কিছু মানুষ তাকে ধর্ষণ করে গলা কেটে ফেলে রেখেছে। আলোর হাত পা কাঁপতে লাগল। তার মানে নীলা তার গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই কাটা লাশ হয়ে গেছে। কি নির্মম এ দুনিয়া। আলো জোরে জোরে দম নিতে লাগল। হুট করেই চেঁচিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল

– ওহ! আল্লাহ! এ কী হলো?

আলোর চিৎকার তানভীরের কানে পৌঁছাতেই তানভীর আলোর পাশে এসে বলল

– কী হয়েছে আপনার? আপনি কী মেয়েটাকে চিনেন? মেয়েটার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আছে। চিনলে বলুন ঐ থানায় যোগাযোগ করি।

আলো কী বলবে বুঝতে পারছে না। এ মুহূর্তে নীলাকে চিনে বললে আলোয় বিপদে পড়ে যাবে। কারণ ঐ লোকটার বিষয়টা সবাই জেনে যাবে। সে সাথে আবার আলোকে অন্ধকার গলিতে ডুবে যেতে হবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আলো তানভীরকে নীলাকে চেনার কথাটা বলতে পারল না। মাথা নেড়ে না বলল শুধু। তবে নীলার মৃত্যুটাও আলো নিতে পারছে না। মাথাটা বেশ ঘুরপাক খেতে লাগল। চোখগুলো বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। এ কষ্টটা বুকটা চেপে ধরে রেখেছে আলোর। সে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল।

একটু পর যখন আলোর জ্ঞান ফিরল। তানভীর আলোর কাছে এসে যা বলল তা শুনে রীতিমতো আলোর গা, হাত, পা আবার কাঁপতে লাগল।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৭

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৭

সে কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়ে তার পাশের রুমটায় দরজা খোলা পেয়ে হালকা উঁকি দিয়ে কিছুটা বিস্মিত হলো।কারণ পুরো রুমটায় পেইন্টিং দিয়ে সাজানো। রুমটা বেশ ফাঁকা আর পরিপাটি । আলো দিশা না পেয়ে রুমটায় প্রবেশ করলো। একে একে সবগুলো পেইন্টিং দেখতে লাগলো। প্রতিটা পেইন্টিং এ কোনো নারী রুপের অবয়ব লুকিয়ে আছে মনে হচ্ছিল। বিস্ময়ের সাথে প্রতিটা পেইন্টিং সে দেখতে লাগল। কী অপরুপ হাতের নিপুণে আঁকা ছবি গুলো। ঘরের এক কোণে একটা গিটার রাখা। বিছানার পাশে ল্যাম্প টা আধু আধু করে এ দিনের বেলাতেও জ্বলছে। ল্যাম্পটার ঠিক পাশে তাজা ফুলগুলো ফুলদানিতে রাখা যা সুভাস ছড়াচ্ছে। ঘরটা বেশ সযত্নে সাজানো বুঝায় যাচ্ছিল। আলো ভাবতে লাগল এটা কী তানভীরের রুম? কিন্তু তানভীরের রুম হলে তানভীর কোথায়? রাবু নানু বলেছিল তানভীর রুমে ঘাপটি মেরে আছে। তাহলে হয়তো এটা তানভীরের রুম না। কিন্তু কার রুম? ভাবতে ভাবতেই আনমনে গিটারটা হাতে নিয়ে তারগুলো টেনে ধরল। তারগুলো টান দিতেই একটা বেসুরা আওয়াজ গিটার থেকে বের হয়ে আসলো। গিটারের আওয়াজটা পেয়েই তানভীর কোথায় থেকে যেন হাজির হয়ে রুমে প্রবেশ করলো। আর আলোর দিকে রুষানলে তাকিয়ে বলল

– এই মেয়ে হুট করে এ রুমে ঢুকেছেন কেন? মা জানলে আপনাকে আস্ত রাখবে না। এক তো এ রুমে ঢুকেছেন তার উপর অনুমতি ছাড়া জিনিসপত্র ধরতেছেন। বাসা থেকে কী কোনো ভদ্রতা শেখায় নি আপনাকে?

তানভীরের কথা শুনে যেন আলোর টনক নড়ল। সত্যিই তো কারও অনুমতি ব্যতীত রুমে প্রবেশ করা অন্যায় তার উপর জিনিস পত্র ধরা তো নেহাত অন্যায়। আলোর মুখটা চুপসে শুকনো হয়ে গেল। আধু আধু কন্ঠে ঢুক গিলতে গিলতে বলল

– দুঃখিত বুঝতে পারে নি। আপনাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম হঠাৎ করে এ রুমে চোখ গেল আর দেখে বেশ অন্যরকম লাগল তাই ঢুকার লোভ জাগল আর ঢুকে পড়লাম। সরি কিছু মনে করবেন না দয়াকরে। এটা সত্যিই ভুল হয়েছে। আচ্ছা এটা কী আপনার রুম?

তানভীর ভ্রুটা কুচকে কর্কশ গলায় বলল

– এত কিছু জেনে আপনার কী হবে? সবকিছুতে শুধু প্রশ্ন করেন। এটা যার ইচ্ছা তার রুম হোক। আপনাকে যে রুম দিয়েছি সে রুমে থাকুন। আর থাকতে চেয়েছেন সেটার ব্যবস্থাও করছি। এত লাফালাফি করলে এ বাসায় থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে আপনার জন্য। আপনি বেশ ছটফটে স্বভাবের। ভাগ্য ভালো যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে আপনি বিয়ে করেন নি। না হয় বেচারার কপালে একটা পাগল জুটত। বের হন রুম থেকে।

আলো তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু তানভীরের কথাগুলো শুনছিল। আর ঢুক গিলতে লাগল। তানভীরের কপালে বিন্দু বিন্দু ইষৎ লোনা ঘাম জমে আছে বৃষ্টি ফোটা কণার মতো। মুখটা বেশ রাগান্বিত হয়ে আছে। আলোর ভয়টা বাড়তে লাগল। তবুও এ ভয় প্রকাশ করে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। কারণ

“দুর্বলতা এমন একটা জিনিস যেটা একবার প্রকাশ পেলে সেটা কাটিয়ে উঠা বেশ কঠিন। কারণ আঘাতের মুখ্যম জায়গা হিসেবে মানুষ তখন সেটাকেই ব্যবহার করে”

তাই আলো নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের কপালেও রাগ এনে জবাব দিল

– এই যে থাকতে দিচ্ছেন তার মানে মাথা কিনে নেন নি? আমার উনি আসলেই চলে যাব। আর আমি ভুল করেছি ক্ষমাও তো চেয়েছি তাহলে এমন কেন করছেন? এত চেঁচিয়ে উঠার কী আছে? আমি কী এ রুমে থাকতে এসেছি নাকি।

বলতে বলতেই আলোর গাল গড়িয়ে চোখের জল বৃষ্টি হয়ে নামতে শুরু করল। এ বিষয়টা বেশ অসচেতন হয়েই হয়েছে। আলো জানে না হুট করে তার চোখ দিয়ে এত অভিমানের জল কেন নেমে আসলো। সে তাড়াহুড়ো করে চোখের জলটা মুছে রুম ত্যাগ করল। তানভীর আলোর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। এতটা বকা দেওয়াও তার উচিত হয়নি। কিন্তু কেন জানি না অতীত মনে হয়ে তানভীরের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। সে চাইলেও নিজেকে সামলে নিতে পারছে না।

“অতীত বেশ ভয়ানক জিনিস। অতীতকে কাটিয়ে নিয়ে সামনে এগুনো গেলেও সেটা ভুলে যাওয়া বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার”

নিজের অজান্তেই সে রেগে যাচ্ছে যেটা একদম অনুচিত। তানভীরের মনে হলো আলোর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এতটা কঠিন হওয়া তার উচিত হয়নি।

আর এদিকে আলো রুমে এসে ঘাপটি মেরে বসে আছে। নিজের জীবনের কালো অতীত গুলো তাকে যেন আরও তাড়া করছে। যত ভাবেই সে এটা কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছে ঠিক ততটাই যেন সব তাকে ঘিরে ধরছে। আলোর কী তানভীরকে মিথ্যা বলাটা আদৌ উচিত হয়েছে। তানভীরকে তো বেশ মননশীলেই মনে হয় আলোর। তাহলে কী সে তানভীরকে সবটা বলে দেবে। এসব ভাবনা মনের মধ্যে আওরাতে লাগল সে। চুপ হয়ে বসে আছে। আনমনে কত চিন্তা আলোকে গ্রাস করছে সে নিজেও জানে না। আলোর বয়স সবে ১৪। এ বয়সের একটা মেয়ের উচিত হেসে খেলে বড় হওয়া। অথচ আলোকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে চরম বাস্তবতায়।এ পথের শেষ কী? এর গন্তব্য কী সে জানে না। আচ্ছা নীলা কী গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে? নীলার ভাবনাটা আবার ঝেঁকে বসলো আলোর মনে। নীলার চোখ গুলো বারবার তার চোখে ভেসে আসছিল। আলো জানে না নীলা কোথায়? এ অন্ধকার গলিতে হারিয়ে গেল নাকি আলোর নিশানায় ছুটে গেল। ইশ নীলার খুঁজ যদি মিলত কত ভালোই না হত। কতশত চিন্তা তার মনে বাসা বাঁধছে। সে সাথে চিন্তা করছে ঐ লোকটা কী মরে গেছে নাকি বেঁচে আছে। কত নির্মম এ দুনিয়া নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে কত হিংস্র হতে হয়। যে আলো মানুষের রক্ত দেখলে ভয় পেত সে আলোই একটা লোককে রক্তাক্ত করে পালিয়েছে। আলো সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে এসবেই ভাবছিল। এমন সময় তানভীর হালকা কাশি দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। আলোর ভাবনায় ছেদ পড়ল সে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। তানভীরকে দেখে আলো মুখটা বাকিয়ে অভিমানের রেখা মুখে ফুটিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। তানভীর আলোর ঠিক কাছে বসে বলল

– শুনুন এভাবে আপনাকে বলা ঠিক হয়নি। সত্যি বলতে রুমটা আমার বড় ভাইয়ের। মা বেশ যত্ন করে রেখেছে। ভাইয়া কিছুটা মায়ের উপর অভিমান করেই বিদেশ চলে গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত আসেনি। আর কবে আসবে বলেও না। রুমের যা পেইন্টিং গুলো দেখেছেন সেটাও আমার বড় ভাই করেছে। মা সে রুমটাকে বেশ পরিপাটি করে সবসময় সাজিয়ে রাখে। মায়ের একটা দুর্বল জায়গা ঐটা বলা যায়। আপনাকে যদি আমার জায়গায় মা ঐখানে দেখত বেশ রেগে বসত। আমি আপনাকে ওভাবে বকতে চাইনি তবে রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।

আলো তানভীরের কথায় ওপাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনার ভাই রাগ করে চলে গেল কেন? আর ফোনে কী কথাও বলে না?

– রাগের কারণ বলতে পারব না।সেটা একান্তই ব্যক্তিগত।বাইরের মানুষকে বলা উচিত হবে না। ভাইয়া সবার সাথেই কথা বলে। তবে দেশে আসতে চায় না। ভাইয়ার অভিমানটা জমিয়ে রেখেছে সেটা বুঝতে না দিলেও আমরা বুঝতে পারি।আপনি আর ঐ রুমে যাবেন না।

তানভীরের কথা শুনে আলো যেন এক রহস্যের জগতে পড়ে গেল।তানভীরের ব্যপারটাও আলোর কাছে এতক্ষণ রহস্যজনক মনে হয়েছিল এখন তার বড় ভাইয়ের বিষয়টাতে বেশ রহস্য পরিলক্ষিত করল। সবকিছু তার জানতে ইচ্ছা করছে। তবে জানতে চাওয়াটা উচিত হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এতে তানভীর আবার রেগে যেতে পারে। আর আলোর কোনোভাবেই উচিত না তানভীরকে রাগানো। কারণ তাকে এ বাসায় থাকতে হবে নাহয় বাইরে বের হলে আবার কোনো হায়েনার কবলে পড়বে। অনেক কৌতুহল থাকা সত্ত্বেও আলো তানভীরের কথার তেমন কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে শুধু হালকা গলায় বলল

– আমি আর যাব না। তখন আমাকে এভাবে বললেও যেতাম না। তবে হুট করে ধমক দিয়েছেন তো তাই মন খারাপ হয়ে গেছিল।

– হুম বুঝতে পরেছি। নাস্তা করেছেন? রাবু খালা কী নাস্তা দিয়েছেন?

– হ্যাঁ দিয়েছেন।আচ্ছা আপনি রাবু নানুকে খালা কেন ডাকেন? শুনেছি আপনার মাকে উনি খালা ডাকে তার মানে আপনার মায়ের খালা উনি। তাহলে রাবু নানু আপনার খালা হয় কী করে। সম্পর্কটা গরমিল করে ফেললেন না?

তানভীর নিজের জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল

– সত্যিই তো ঠিক বলেছেন। এখন থেকে তাহলে আমিও নানু ডাকব।এ বিষয়টা আমার নজরে আসে নি। যাক বিষয়টা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তার জন্য আপনাকে একটা গিফট দেই কী বলেন?

আলো ছটফট গলায় জবাব দিল

– কী গিফট দিবেন? আর আমার কিছু লাগবে না।

– এমন কিছু দিব না যেটা আপনি নিজের কাছে রাখতে পারেন। গিফট হিসেবে আমি আপনাকে আমাদের ছাদে নিয়ে যাব।

– আপনার সাথে ছাদে যাব না। দেখা গেল ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে রাগের মাথায় ফেলে দিবেন তারপর আবার সরি বলবেন।

আলোর এমন কথায় তানভীর জোরে হেসে দিয়ে বলল

– বেশ মজার কথা বলেন আপনি। আপনার প্রেমিক আপনাকে সামলায় কী করে কে জানে। যাইহোক ধাক্কা দিয়ে আপনাকে মেরে জেলের ভাত খাব না। এমনিতে একবার জেলে গিয়ে শিক্ষা হয়ছে।

শেষের কথাটা শুনে আলো অবাক হয়ে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে বলল

– আপনি কী এর আগে খুন করেছেন?

– মানে?

– এই যে বললেন জেলে গিয়েছিলেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

– আরে আপনি তো বেশ বোকা। খুন করলে কেউ ছাড়া পায় নাকি। জেলে গিয়েছি অন্য কারণে। কোনো একদিন বলব। এখন আপনি কী যাবেন আমার সাথে নাকি রুমেই থাকবেন।

তানভীরের কথা শুনে আলো যেন রহস্যের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছিল। তবে এ মুহূর্তে সে ছাদে যাওয়ার লোভটাও সামলাতে পারছে না। লাজুক সুরে জাবাব দিল

– এত করে যখন বলছেন তাহলে তো যাওয়ায় যায়।

এরপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। ছাদের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিল সে। ছাদের ঠিক কাছে গিয়ে গেটটার সামনে দাঁড়াল দুজন।গেটটা তালা দেওয়া। গেটের চাবি তানভীরের কাছে। তানভীর চাবিটা বের করে গেটটা খুলল। গেটটা খোলার সাথে সাথে এক ঝলক আলোক রশ্নি এসে আলোর মুখের থুবরে পড়ল। সে সাথে…

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৬

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৬

দুজনের মাথায় যেন বাজ পড়ল। আর ধরা পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা অনুভব করল। ঠিক এ মুহূর্তে তানভীর চট করে চপল গলায় বলে উঠল

– ও তো মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়ে। এবার দশম শ্রেণীতে।

তানভীরের কথায় সুর মিলিয়ে আলো বলে উঠল

– জি আন্টি ভাইয়া ঠিক বলেছেন।

জাহানারা সুফিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইল৷ তারপর হালকা গলায় বলল

– আলো নিজের যত্ন নিও। আর নাস্তা দিলে খেয়ে নিও। খারাপ লাগলে আমাকে কল করো। ওহ! তোমার মোবাইল নম্বর তো আমার কাছে নেই। মোবাইল নম্বরটা দাও।

আলো যতই জাহানারা সুফিয়ার সাথে কথা বলছিল ততই কথার জটিলতায় জড়িয়ে যাচ্ছিল। আলো বুঝতে পারছিল না কী বলবে। কারণ তার কোনো মোবাইল নেই। তবুও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে ভয় ভয় গলায় বলল

– আমার তো কোনো মোবাইল নেই।

জাহানারা সুফিয়া কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

– মোবাইল নেই তাহলে বাড়িতে যোগাযোগ করো কী দিয়ে। তুমি তো আর পরিবারের সাথে থাকো না।

এবারও আলো উনার কথা শুনে ভয়ে চুপসে গেল। যে কথারেই জবাব দিচ্ছে সে কাথারেই কোনো না কোনো কিন্তু রয়ে যাচ্ছে। এখন বুঝতে পারছে সে তানভীর কেন তার মাকে এত ভয় পায়। আলো একদম চুপচাপ। আলোর নীরবতা দেখে জাহানারা সুফিয়া আলোকে ডেকে বলল

– কী ব্যপার চুপচাপ কেন? বেশি খারাপ লাগছে নাকি?

আলো মাথাটা নাড়িয়ে বলল

– নাহ! তেমন খারাপ লাগছে না। আমি তো আমার ভাইয়ের সাথে থাকি। ভাইয়ার ফোন দিয়েই মা,বাবার সাথে কথা বলতাম। তাই আমার কোনো মোবাইল নেই।

-ওহ আচ্ছা। তোমার ভাইয়ের নাম যেন কী?

আলো চট করে বলে উঠল

– ছোটন।

আলোর জবাবে তানভীর হতবাক। সে জিহ্বায় নিজের দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে মাথায় হাত দিল। আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তানভীর তার মাকে অন্য নাম বলেছে। আলো ও এবার ভয় পেতে লাগল। জাহানারা সুফিয়াকে যতটা নীরব এবং সরল বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছিল তিনি তার ঠিক বিপরীত। প্রতিটা কথা তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন বিচক্ষণ ভাবে। আর সে জন্যই তিনি মেয়ে হয়েও একজন সফল ব্যবসায়ী। এর মধ্যেই উনি বলে উঠলেন

– তাহলে শায়ান কে?

তারপর তানভীরের দিকে তাকিয়ে বললেন

– তুমি তো বলেছিলে ও শায়ানের বোন। তাহলে ছোটন কে? তানভীর তোমার কথার সাথে আলোর কথায় বেশ অসামান্জস্য রয়েছে। কী হয়েছে আমাকে সঠিক করে বলো তো।

তানভীর তার মায়ের কথার জবাব কী দিবে বুঝতে পারছিল না। সবকিছুই যেন তালগোল পাকাতে লাগল। মাথাটাও তার এত কথার প্যাঁচে ঘুরাতে লাগল। ধরা পড়ে যাওয়ার একটা ভয় কাজ করছে। আর ধরা পড়লে কী হবে সেটা ভেবেও তার মাথা ব্যথা করতে লাগল। এদিকে আলো জাহানারা সুফিয়ার কথা শুনে পাশ থেকে মৃদু কন্ঠে বলে উঠল

– আমরা সবাই শায়ান ভাইকে ছোটন বলে ডাকি। তানভীর ভাইয়া ভুল কিছু বলেনি আন্টি।

জাহানারা সুফিয়া এবার সন্দেহদৃষ্টি ত্যাগ করে তানভীরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– যাক ভালো। সত্যি বলতে তানভীর বেশ অগোছাল।ওর কথায় আর কাজে কোনো মিল নেই। তুমি আবার আমার কথায় মনে কিছু নিও না। এর আগে ও এমন কতগুলো কাজ করেছে যেটাতে আমি বিরক্ত। আর বিরক্তের বশবর্তী এবং তার বোকামির শিকার বেশ কয়েকবার হয়েছি বলেই ওকে এত প্রশ্ন করা।

কথাগুলো বলে উনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল

– অলরেডি আটটা বেজে গেছে। এখন অফিস যেতে হবে। বাকি কথা সন্ধ্যার পর হবে। কোনো অসুবিধা হলে বাসার ফোন দিয়ে আমাকে কল দিও অথবা তানভীরকে বলো। আমি গেলাম।

আলো লাজুক একটা হাসি দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বলল

– আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক আছি।

জাহানারা সুফিয়া আর দাঁড়াল না সোজা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আর আলো ভাবতে লাগল এর আগে কী তানভীর কোনো মেয়েকে এনে এ বাসায় ঝামেলা করেছে? যদি ঝামেলায় না করত তাহলে তো উনি এভাবে বলত না কথা গুলো। তানভীরের কাছে সে নিরাপদ তো? ভাবনাটা মনে আসতেই তার ভেতরটা অজানা বিপদের আশঙ্কায় কেঁপে উঠল। তার জীবনে এত নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে যে ইতিবাচক কোনো ঘটনা ঘটবে সেটা যেন সে ভাবতেই পারছে না। কিছুটা ভয়,কিছুটা অনিশ্চয়তা আর কিছুটা শঙ্কা নিয়ে তানভীরের দিকে তাকাল। তানভীরের চোখের দিকে তাকাতেই যেন তার চোখে আলোর চোখ দুটো গেথে গেল। অদ্ভুত এক নেশা কাজ করছে আলোর মধ্যে সে নেশাটা হচ্ছে ভালোলাগার নেশা,তাকিয়ে থাকার নেশা।

“পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নেশা হলো ভালো লাগার নেশা। এ নেশা থেকেই মানুষে জীবনে ঘটে যায় যতসব কাঙ্ক্ষিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।”

আর আলো যেন সে নেশা কাটিয়ে উঠতেই পারছে না। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকার একটা প্রবণতা কাজ করছে। একটা ছেলের চোখ এত নিষ্পাপ হয় কী করে। তার চোখে তাকিয়ে যেন সব ভুলে থাকা যায়। আর আলো ইতোমধ্যে ভুলে গেছে তানভীরকে সে কী বলতে নিয়েছিল। আলোর এমন অদ্ভুত তাকানোতে তানভীর কিছুটা বিভ্রতবোধ করল। কিছু একটা বলতে চেয়েও যেন আটকে গেল। ভাবতে লাগল এ মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে কী দেখছে। নিজের দিকে সে কয়েকবার নজর দিল। তারপর আলোকে বলল

– কী হয়েছে?

এর মধ্যেই আলোর চোখ থেকে তানভীরের চোখটা সরে গেল। আলো যেন সম্বিত ফিরে পেল। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস টেনে হালকা করে সেটা ছেড়ে বলল

– এমনি চিন্তা করছিলাম।

– কী চিন্তা করছিলেন?

– এই যে আন্টি বলল আপনার কথায় আর কাজে কোনো মিল নেই। এর আগে কী এমন করেছেন যে আন্টি আপনাকে এত সন্দেহ করছে।বারবার কটু দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিশ্চয় মেয়েগঠিত কোনো সমস্যা আছে আপনার।

কথাটা শুনে তানভীর আলোর কাছে এসে আলোর হাতটা ধরে বলল

– হ্যাঁ আছেই তো মেয়েগঠিত সমস্যা। এই যে আপনার হাত ধরলাম এখন দেখবেন আপনাকে কী করি। আর মা এজন্যই আমাকে বিশ্বাস করছিল না।

কথাটা বলেই তানভীর হালকা সামনের দিকে এগুলো। তানভীরের এমন আচরণে আলোর দম যেন বন্ধ হয়ে যেতে লাগল।ভাবতে লাগল এতক্ষণ একটা হায়েনাকে সে মানুষ ভেবেছিল। এ হায়েনার থেকে নিজেকে বাঁচাবে কী করে। এসব ভাবতেই তানভীরের দিকে তাকাতেই তানভীর ফিক করে একটা হাসি দিয়ে আলোর হাতটা ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসে বলল

– এত ভয় পেয়ে গেলেন কেন? কী মনে হয় আপনাকে এভাবে একা পেয়ে নিজের পুরুষত্ব দেখাব। পাগল আপনি? আর কী মনে করেন আমাকে? এতটাও কাপুরুষ নয় যে একা একটা মেয়েকে পেয়ে যা’তা করে বসব। আমার মা এ কথাটা বলেছে অন্য কারণে। মেয়ে নিয়েই ঝামেলা হয়েছে সেটা ঠিক তবে চারিত্রিক সমস্যা নিয়ে হয়নি।

আলো অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

– আপনার কথার মানে বুঝছি না। একটু বুঝিয়ে বলুন।

– আপনাকে এত বুঝতেও হবে না। অনেক বুঝেছেন। এখন চুপচাপ বসুন।

– মেয়ে নিয়ে কী ঝামেলা হয়েছে বললে আমি সতর্ক থাকতে পারব।

– আপনাকে এ বিষয়ে বলার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না। কারণ এটা জেনে সতর্ক হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। আপনি এখানে বসুন।

আলোও নাছোরবান্দার মতো তানভীরের কথার ভ্রুক্ষেপ না করে পুনরায় বলে উঠল

– আরে এমন করছেন কেন? বলুন না কী হয়েছে।

আলোর কথা শুনে তানভীর কিছুটা বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে আলোর মুখ বরারবর নিজের মুখ বাড়িয়ে বলল

– একদম চুপ। সাহায্য করতেছি বলে মাথা কিনে নেন নি যে আপনার সব কথার জবাব আমাকে দিতে হবে।এত ঘ্যানঘ্যান করবেন না। বেশ বিরক্ত লাগছে।দয়াকরে রাগ তুলবেন না। বসতে বলেছি বসুন। এমনিতেই মথা গরম তার উপর আপনার আজে বাজে প্রশ্নে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। চুপ থাকুন একদম।

বলেই তানভীর বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। এদিকে আলো তার এমন ব্যবহারে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। আলোর হাত পা কাঁপতে লাগল। সামান্য এ কথায় যে সে রেগে যাবে সেটা আলো বুঝতে পারেনি। আলোর ভেতরে ধুকধুক করতে লাগল। আলো একদম নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে তানভীরের দিকে তাকালে তানভীর আলোর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে আর কোনো কথা না বলে রুম ত্যাগ করল।আলো বুঝতে পারছে না তানভীরের এমন ব্যবহারের কারণ সে জানে না কেন এমন হলো।তবে কোনো কিন্তু তো রয়েছেই। তবে সে ব্যপারে আলোর এখন না ভাবলেও চলবে।এ বাসায় থাকার ব্যবস্থাটা এখনও কনফার্ম হয়নি তার। আদৌ থাকতে পারবে কী না তাও জানে না। জাহানারা সুফিয়া বেশ জটিল মানুষ হলেও তার মন সরল মনে হয়েছে আলোর কাছে।আর তানভীরকে এতক্ষণ মজার মানুষ মনে হলেও এখন বেশ রাগী লেগেছে। মানুষের ভেতর আর বাহিরে পরখ করা বেশ কঠিন। কখন কী হয় সেটা জানা অসম্ভব। আলো অনিশ্চয়তা নিয়ে বসে আছে। জানে কী আছে তার কপালে। বারবার একটা ভয় তার ভেতর ঝেঁকে আসছে।সবসময় তার সাথে খারাপ হচ্ছে এখন কী ভালো হবে। এসব ভাবতে লাগল। এর মধ্যেই একজন মেয়েলি কন্ঠ বাইরে থেকে আওয়াজ দিয়ে বলল

– আপা ঘরে আসব কী?

আলো জানে না কে। আধুআধু গলায় বলল

– আসেন।

মহিলাটা ঘরে প্রবেশ করল। মধ্য বয়স্ক একটা মহিলা। মহিলার হাতে একটা খাবারের প্লেট। আলো বুঝতে পারলো উনি এ বাসায় কাজ করে।আলোর দিকে মহিলটা খবার বাড়িয়ে দিয়ে বলল

– আপা আপনার খবার।

আলো খাবার টা হাতে নিয়ে বলল

– আপনি খেয়েছেন?

– হ আপা খাইছি।

– আচ্ছা আপনাকে কী বলে ডাকব?

মহিলাটা হালকা হেসে বলল

– খালা বলে ডাইকেন।

আলো উনার কথা শুনে এক গাল হেসে বলল

– সম্পর্কের গরমিল করে ফেললেন। আপনি আমায় আপা ডাকছেন আর আমাকে বলছেন খালা ডাকতে বিষয়টা কেমন না?

উনি জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল

– হ আফায় বিষয়টা ঠিক বলছেন। সুফিয়া খালাও আমারে খালা বলে ডাকে। আপনি সুফিয়া খালার কী হন?

– উনি আমার আন্টি হয়। তাহলে সম্পর্কের হিসাব করলে আপনি আমার আপা হন। তবে আপনার আর আমার বয়সের পার্থক্য অনেক। আপনাকে আপা ডাকলে আমার নিজেকে বুড়ি মনে হবে। আচ্ছা আপনার নাম কী?

মহিলাটা মুচকি হেসে বলল

– রাবু।

– তাহলে আপনাকে রাবু নানু বলে ডাকব। ঠিক আছে?

– আপনার ইচ্ছা।

– আপনার বাড়িতে কে কে আছে?

– শুধু একটা মেয়ে আছে আপা। মেয়েটারে তার মামার কাছে রেখে আসছি। আর আমি কাম কইরা মেয়েটার পড়ার খরচ চালাই।

আলো কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল

– নানা কোথায়?

কথাটা জিজ্ঞেস করতেই রাবু হালকা চোখের পানি জড়িয়ে বলল

– আমারে ছাইড়া আরেকটা বিয়া কইরা ঐ বউ লইয়ায় আছে। আর এর লাইগায় মাইনসের বাসায় কাম করি। আর মেয়েডারে তার মামা মামীর কাছে রাইখা আসছি। তারায় দেখাশোনা করে।

– আপনার মেয়ের কোনো অসুবিধা হয় না মামা মামীর কাছে থাকতে?

– নাহ তো আপা সে ভালোই আছে। আমার ভাই,ভাবী ভালোই যতন করে।

আলো নিশ্চুপ। রাবুর মেয়ে মামার কাছে থাকে শুনে নীলার কথা আলোর মনে পড়ে গেল। আলোর ভাবনার আকাশ জুড়ে এখন নীলা নামটার বিচরণ করছে। ভাবছে নীলা কী পেরেছে নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে। সাথে সাথে সেটাও ভাবছে নীলা মেয়েটা মামার কাছে ধর্ষণ হয়েছে আর এদিকে রাবু নানুর মেয়েটা তার মামার কাছে নিরাপদ আছে। কত অদ্ভুত এ দুনিয়া একই সম্পর্ক তবে তার নিয়তির লিখন দু ধরণের। আলোর নীরবতা দেখে রাবু আলোকে ডেকে বলল

– আপা কী ভাবতেছেন?

আলো ভাবনা থেকে বের হয়ে বলল

– তেমন কিছু না। আচ্ছা তানভীর ভাই কোথায়? উনি আসলো না কেন?

– ভাইজানের মেজাজ মনে হয় গরম।আমারে বলল আপনারে নাস্তা দিতে তারপর নিজের রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে আছে। আপনার কিছু লাগলে আমাকে বলেন।

আলো মৃদু হেসে বলল

– কিছু লাগবে না নানু আপনি যান।

– আচ্ছা গেলাম আফা।

বলতে বলতেই রাবু রুম থেকে বের হলো। আলো নাস্তাটা হাতে নিয়ে পরোটাটা ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগল আর ভাবতে লাগল তানভীরের কী এমন হয়েছে যে আলোর কথায় এতটা রিয়েক্ট করল। এসব ভাবতে লাগল আর খেতে লাগল।খাওয়াটা শেষ করার পর তার মনে হলে সে তানভীরকে রাগিয়েছে সুতরাং তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তাই কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে রুম থেকে বের হলো। রুম থেকে বের হয়ে লক্ষ্য করল এ বাসাটা অনেক বড় আর অনেকগুলো রুম। কোন রুমে তানভীর সেটা সে জানে না। সে কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়ে তার পাশের রুমটায় দরজা খোলা পেয়ে হালকা উঁকি দিয়ে কিছুটা বিস্মিত হলো।কারণ

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৫

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৫

ভাবতে ভাবতেই আলো পেছন ফিরে তাকাতেই ভয়টা তার আরও বেড়ে গেল। আলো খেয়াল করল একটা ছেলে তার মুখটা চেপে ধরেছে। ছেলেটার মাথায় ঝাঁকরা কুকড়া চুল। গালে খুচা খুচা দাঁড়ি। গায়ের রঙ শ্যাম বর্ণ। নাক বুচাও বলা যায় না আবার খাড়াও বলা যায় না৷ দুয়ের মাঝে বলতে হবে। চোখ গুলো একটু বড় বড়। ছেলেটাকে দেখে আলোর আশার আলো যেন নিভে গেল। বুঝতে পারল সে আরেকটা হায়েনার কবলে পড়েছে। আলো তার চোখের দিকে তাকাল। কিন্তু একটা হায়েনার চোখ এত নিষ্পাপ কেন মনে হচ্ছে। কেন জানি না এ ছেলেটাকে আলো হায়েনা ভাবতে পারছে না। কেননা একটা হায়েনার চাহুনি তো এত সুন্দর হতে পারে না। সে অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখে চেপে ধরা ছেলেটার হাতটা নিজের হাত দিয়ে ছুটাতে চাইতে নিলেই ছেলেটা হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট চেপে আলোকে ইশারা দিয়ে বলল

– চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না দয়াকরে। মা বিষয়টা অন্যভাবে নিতে পারে। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করব না। রাস্তায় আপনি পড়ে ছিলেন। আপনাকে সেখান থেকে তুলে বাসায় এনেছি। মাকে বলেছি আপনি আমার বন্ধুর বোন। এখানে হোস্টেলে থেকে পড়েন। হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আর আমার বন্ধু গ্রামে তাই আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি। আমার মা অনেক কড়া মানুষ। আপনি যদি বিষয়টা না বুঝে আমাকে ভুল বুঝে চিৎকার করে বসেন তাহলে মা ভুল বুঝবে। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করব না। এসেছিলাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে কী না দেখতে। কারণ গতকাল ডাক্তার দেখে বলল যেকোনো সময় আপনার জ্ঞান ফিরতে পারে। রাতে অনেকবার দেখে গিয়েছি। সকালে এসে দেখলাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে। মনে হলো আপনি চেঁচিয়ে উঠবেন। তাই মুখটা চেপে ধরেছি। দয়া করে চেঁচাবেন না।

বলেই ছেলেটা আলোর কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলো। আলো হালকা দম নিতে লাগল। সে সাথে ঢুক গিলতে লাগল। একটু স্বস্তি যেন আলো পেল। সে মৃদু গলায় ছেলেটাকে জবাব দিল

– আপনার এ উপকারের কথা ভুলব না।আপনি যা বলবেন আমি আপনার মা কে তাই বলব। কিন্তু আমাকে একটা সাহায্য করবেন দয়াকরে। আর আপনার নাম কী?

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল

– আমার নাম তানভীর। সবে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। টুকিটাকি গান করা আমার শখ। সে সাথে আঁকাআঁকির একটা বদঅভ্যাস আছে। দুই ভাই আমার। বড় ভাই বিদেশে থাকে। সেখানেই পড়াশোনা করছে। আর আমি বাংলাদেশে। বাবা মারা গেছেন সে ছোট্ট বেলায়। এরপর থেকে মায়ের হাতে মানুষ। বাবার বিশাল ব্যবস্যা আর আমাদের মানুষ করার দায়িত্বটা মায়ের হাতেই পড়ে। মা খুব কঠিন আবার খুব নরম ও বলতে পারেন। বাবার মৃত্যুর পর মা কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের ব্যবস্যাটা বাড়ায়। আর আমাদের মানুষ করে। এ পরিবারে সবকিছু মায়ের কথায় চলে। গতকাল একটা কনসার্টে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় গাড়ির আলোতে লক্ষ্য করলাম কী যেন রাস্তায় পড়ে আছে। একটু ভয় ও লাগছিল কারণ অনেকে বলে রাস্তাটা ভুতূরে রাস্তা।মায়াবী আত্মারা নাকি সে রাস্তায় হেঁটে বেড়ায়। ভেবেছিলাম কোনো আত্মা হবেন তবে মনে সাহস নিয়ে নেমে দেখলাম আপনি আমার মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। এভাবে এত রাতে ঐ রাস্তায় ফেলে আসতে মন সায় দিল না। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। মাকে কী বলব বুঝতে পারছিলাম না তাই ঐরকম বলেছি। আরও কিছু বলা লাগবে? আপনি আরও প্রশ্ন করার আগেই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলাম।

আলো শুধু অপলক নয়নে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা কতটা সাবলীল হয়ে এক নিঃশ্বাসে সব বলে যাচ্ছে। আলোর মনে হচ্ছে তানভীরকে সে যুগ যুগান্তর ধরে চেনে। আলোকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে বলল

– কী হয়েছে কী ভাবছেন? গড়গড় করে কথা বলে যাচ্ছি। আপনি কোনো কথা কেন বলেছেন না? কথা শেষ করে বসে আছি আর আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কী দেখছেন? নাকি আমার দিকে তাকিয়ে অন্য কাউকে ভাবছেন?

আলো মৃদু গলায় জবাব দিল

– তেমন কিছু না। আপনি বেশ সাবলীল ভাবে কথা বলছিলেন সেটাই শুনছিলাম। ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।

– ধন্যবাদ দিতে হবে না৷ আচ্ছা আপনি ঐ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন কেন? আর আপনার শরীরেও টুকিটাকি আঘাতের চিন্হ আছে। ছিনতাই কারীর কবলে পড়েছিলেন?

আলো তানভীরের এ প্রশ্নের জাবাব কী দিবে বুঝতে পারছে না। তানভীরকে কী সে তার জীবনের সব বলে দিবে নাকি লুকাবে। তার মনে হলো সে যদি তানভীরকে তার কালো অধ্যায়ের কথা বলে তাহলে তানভীরও তার সুযোগ নিতে পারে। তানভীরকে বুঝতে দেওয়া যাবে সে অসহায়। ঘুরিয়ে পেচিয়ে অন্য উত্তর দিবে। আলো হালকা কাশি দিয়ে বলল

– নাহ ছিনতাইকারীর হাতে পড়েনি। বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।

তানভীর গাল দুটো ফুলিয়ে মুখে সবটা বাতাস ঢুকিয়ে পরক্ষণে তা ছেড়ে দিয়ে বলল

– বাসা থেকে পালিয়ে এসেছেন মানে?

– আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।ছেলেটা একদম ভালো না। জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল আর কী।ছেলে আমার থেকে পঁচিশ বছরের বড়। আমার সবে ষোল।( বয়সটা দুই বছর আলো লুকালো কারণ তার মনে হলো সে কমবয়সী সেটা তানভীরকে বললে তানভীর বিষয়টা মিথ্যা মনে করতে পারে) অল্প বয়স তার উপর বিয়ের চাপ নিতে পারছিলাম না। বিয়েতে মোটেও রাজি ছিলাম না। তাই রাজি করানোর জন্য বাবা গায়ে হাত তুলে। আর তার জন্যই শরীরে আঘাতের চিন্হ। গতকাল রাতে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাই বাসা থেকে পালিয়ে চলে এসেছিলাম। কখন যে জ্ঞান হারালাম খেয়ালেই নেই।

তানভীর অবাক হয়ে বলল

– তাই বলে বাসা থেকে পালাবেন। এত সাহস আপনার?

– আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়লে বুঝতেন। আর আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।

– তাহলে তার সাথে পালাতেন। একা পালাতে গেলেন কেন?

– সে তো এ দেশে নেই। সে ও আপনার ভাইয়ের মতো বিদেশ থাকে। তাই বাধ্য হয়ে একা পালিয়েছি। আপনি দয়াকরে আমাকে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন।

– বেশ মুশকিলে ফেললেন। মাকে কী বলব বুঝতে পারছি না। মা কে তো বলেছিলাম আপনি এখান থেকে সুস্থ হলে চলে যাবেন। চিন্তায় পড়ে গেলাম আপনার কথা শুনে। দেখা যাক কিছু করতে পারি কিনা।

আলো হাতটা জোর করে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– দয়াকরে রাজি করাবেন। আমি জানি আপনি পারবেন। তারপর আমার প্রেমিক চলে আসলে আপনি যা চান তাই দেবো।

– লোভ দেখাচ্ছেন আমাকে?

আলো নিজের জিভে নিজের দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে বলল

– আরে লোভ দেখাব কেন। সত্যি বলছি।

– তাহলে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

– ঘুষ কেন হবে? সেটা আমি খুশি হয়ে দেবো। আর খুশি হয়ে কিছু দেওয়াকে ঘুষ না হাদিয়া বলে। বুঝছেন?

– বুঝলাম। সাহায্যটা করতাম না যদি সুযোগ্য পাত্রের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পালিয়ে আসতেন। যেহেতু বলেছেন পাত্র ভালো না আর পরিবারও আপনাকে সাপোর্ট করছে না তাই যেভাবে হোক মাকে বুঝিয়ে এখানে থাকার ব্যবস্থা করব। তবে আমি যা বলি তাই করবেন। নাহয় মাকে ম্যানেজ করা কষ্ট হয়ে যাবে।

আলো মাথাটা নেড়ে বলল

– আপনি যা বলবেন তাই করব।

কথাটা বলা শেষ করতে না করতেই তানভীরের মা জাহানারা সুফিয়া রুমে প্রবেশ করলেন। জাহানারা সুফিয়া প্রবেশ করার সাথে সাথে তানভীর একদম চুপ হয়ে গেল। আলো লক্ষ্য করল মহিলাটা দেখতে অনেক সুন্দরী। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক সতেজ। চেহারায় বয়সের কোনো ছাপ নেই। এত বড় বড় দুটো ছেলে আছে উনাকে দেখে কেউ বলবে না। উনার মুখের এক কোণে হাসির বিন্দু পরিলক্ষিত করলো আলো।।সে ভাবতে লাগল তানভীর উনাকে কেন এত ভয় পায়। দেখে মনেই হচ্ছে না উনার মধ্যে কোনো রাগ আছে। আলো পরক্ষণে ভাবলো উনি কতটা ভালো স্বামী মারা যাবার পর নিজের সন্তান নিয়েই বাকিটা জীবন কাটিয়েছে৷ অথচ আলোর মা নিজের স্বামীকে নিজে খুন করেছে। পৃথিবীতে নেতিবাচক দিকের বাইরে এসব ইতিবাচক দিক আছে বলেই হয়তো পৃথিবীটা এখনও সুন্দর,এখনও টিকে আছে। আলোর ভাবনার বিচ্যুতি ঘটল জাহানারা সুফিয়ার ডাকে। উনি নরম সুরে বললেন

– কী অবস্থা এখন? আর শরীর কেমন লাগছে?

আলো মৃদু সুরে জবাব দিল

– অনেক ভালো লাগছে এখন।

– নাস্তা কী কেউ দিয়ে গেছে?

আলো মাথা নেড়ে না বলল। জাহানারা সুফিয়া তানভীরের দিকে কটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

– নাস্তা দিতে বলো নি কাউকে কেন?

– মা মাত্রই জ্ঞান ফিরল ওর।

– নাস্তা দিতে বলো। আর আমি অফিসে যাচ্ছি। সে আমাদের অতিথি খালাকে বলবে যত্নের ত্রুটি যেন নাহয়। আর ওর ভাই কী গ্রাম থেকে ফিরেছে?

তানভীর ঢুক গিলতে গিলতে বলল

– নাহ,মা ফেরে নি।

– আচ্ছা আমি গেলাম। ফিরলে আমাকে জানিও।

কথাটা বলে রুম থেকে বের হতে নিয়েও আবার রুমে ঢুকে আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– তুমি কোন স্কুলে পড়ো বা কলেজে? আর নাম কী তোমার?

আলো মৃদু গলায় জবাব দিল

– আমার নাম আলো।

জাহানারা সুফিয়া কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

– তানভীর বলল তোমার নাম তরী। তুমি বলছো আলো।

মায়ের এমন প্রশ্নে তানভীরও কিছুটা বিভ্রত হয়ে গেল। ভাবতে লাগল ধরা পড়ে যাবে না তো। এর মধ্যেই আলো চট করে জবাব দিল

– আমাকে বাসায় সবাই আলো নামে ডাকে আর স্কুলের সবাই তরী নামে ডাকে।

– ওহ! তাই বলো। কোন স্কুলে পড়ো? আর কোন হোস্টেলে থাকতে?

আলো এবার ঢুক গিলতে লাগল। ভাবতে লাগল কী জবাব দিবে। ধরা পড়ে যাবার উপক্রম। তানভীরও বেশ দুটানায় পড়ে গেল। বুঝতে পারছিল না এর উত্তর কী দিবে? দুজনের মাথায় যেন বাজ পড়ল। আর ধরা পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা অনুভব করল। ঠিক এ মুহূর্তে…

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৪

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৪

বসার মিনেট দুয়েক পরেই ভয়ে কেঁপে উঠল একটা আওয়াজ পেয়ে। বিকট একটা হাসির আওয়াজ রাস্তার পাশের গাছের আড়াল থেকে আসছে। আলো আঁচমকা হাসির আওয়াজটা পেয়ে কেঁপে গিয়ে বুকে থুথু দিয়ে গাছের আড়ালে নজর দিয়ে দেখতে লাগল বিষয়টা কী। আলোর নজর সেখানে পড়তেই খানিকটা অবাক হলো। একটা মেয়ে আর ছেলে কত অবাধে মেলামেশা করছে। মেয়েটা সিগারেট টেনে ধোয়া উড়াচ্ছে ছেলেটাও সাথে সাথে ধোয়া উড়াচ্ছে। সে সাথে মেয়েটা স্বেচ্ছায় সব বিলিয়ে দিচ্ছে।।দেখে মনে হচ্ছে বেশ বড় ঘরের মেয়ে।

” শহরের অলিগলিতে এমন অনেক ছেলেমেয়েকেই দেখা যায় যারা ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম করে অশালীন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। নারী স্বাধীনতা মানে তো এই না যে কোনো ছেলের সাথে বসে অবাধে মিলতে হবে। সিগারেট খেতে হবে। রাত বিরাতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। নারী স্বাধীনতা মানে এই যে সমাজে ভালো কাজ গুলোতে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।সাবলম্বী হওয়া। আজকাল অনেক নারীরায় নারী স্বাধীনতা বলতে নেতিবাচক টায় গ্রহণ করে। ”

আলো বিষয়টা লক্ষ্য করার পর সেখানে বসার সাহস পেল না। নেশায় ডুবে থাকা দুটো ছেলে মেয়ের কাছে থাকতেও আলোর বিবেকবোধ নাড়া দিচ্ছে। কখন তারা মানুষ থেকে হায়ানার রুপ নেয় বলা যায় না। কারণ নেশা যেকোনো মানুষের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটাতে সক্ষম।তাই আলো আস্তে করে উঠে সামনের দিকে আগালো। আগাতে আগাতে অভার ব্রিজটার নীচে আসতেই আলো দ্বিতীয় বারের মতো কেঁপে উঠল একটা মেয়ে আর ছেলেকে অভার ব্রিজের নীচের জায়গায় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখে। তারা আলোকে দেখেই সেখান থেকে উঠে সামনের দিকে যেতে লাগল। আলো বেশ ভালোই বুঝতে পারল টাকার বিনিময়ে দেওয়া নেওয়া চলছে তাদের। আলোর এবার ভয় হতে শুরু করল। কখন জানি কোন হায়েনা এসে আলোকে খুবলে খায়। এ অন্ধকার শহরের গলিতে একটা যুবতী মেয়ের একা চলাফেরা বেশ আশঙ্কাজনক। আলো যতই সামনের দিকে হাঁটতে লাগল ততই আলোর ভেতরটা কম্পিত হতে লাগল। অনিশ্চিত পথ বরাবর আলো হাঁটছে। আলো জানে না এ অন্ধকার কবে ঘুচবে। রাতের অন্ধকার হয়তো কিছুক্ষণ পর ঘুচে যাবে কিন্তু জীবনের অন্ধকার কবে ঘুচবে। ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে আগাল। আলোর চোখ পড়ল একটা মেয়ের দিকে। লক্ষ্য করল মেয়েটা হাতে রেশমি লাল চুরি পড়েছে। কপালে বড় টিপ। চুলগুলো খোপা করা। পরনে পাতলা জরজেট শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজ। ঠোঁটে কড়া করে লিপস্টিক দেওয়া। কতক্ষণ পরপর কল ধরছে আর কার সাথে যেন কথা বলছে। আলো এক কোণে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে অবলোকন করতে লাগল। মেয়েটা কল কেটে আবার মুখের সাজগোজ হাত দিয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে শাড়ি ঠিক করছে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে থামল মেয়েটার সামনে। গাড়ি থেকে বেশ হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক বের হয়ে আসলেন। বয়স আনুমানিক ৩০-৩৫ হবে। এসেই মেয়েটার হাত ধরে গাড়িতে তুললেন।

আলো বুঝতে পারলো মেয়েটা এতক্ষণ এ লোকটার সাথেই কথা বলছিল।

“শহরের অন্ধকার গলিতে কতশত অন্ধকার ঘটনা রয়েছে সেটা অন্ধকার পথে না হাঁটলে হয়তো দেখা যেত না। দিনের বেলা যারা মস্ত অফিসের সাহেব রাতের বেলায় তারা কোনো কোনো পতিতালয়ের মেয়ের খদ্দের। দিনের বেলা তারা নারী অধিকার নিয়ে চিল্লায়৷ নারী সম্মান নিয়ে চিল্লায়। রাতের বেলায় তারা নারীর সম্মান ধুলোয় লুটায়। এ হলো আজকের ভদ্র সমাজের দিন আর রাতের কাহিনি।”

আলো যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। আলো এবার সামনের দিকে আগাল। কিছু দূর যেতেই আলোর পিছু নিল এক লোক। আলো তা বুঝতে পেরে জোরে হাঁটতে লাগল। লোকটাও হাঁটতে লাগল জোরে। আর পেছন থেকে জোরে জোরে বলতে লাগল

– আরে যাও কোথাও।এদিকে এসো। ভয় পাওয়ার কী আছে। দুইশো বাড়িয়ে দিব। একদম পুষিয়ে দিব।সুন্দরী এদিকে এসো।

আলো এবার দৌঁড় লাগাল। কারণ নিজেকে আর ভোগের পন্য বানাতে আলোর ইচ্ছা হচ্ছে না। আলোর পেছন পেছন লোকটাও দৌঁড়াতে লাগল। দৌঁড়ানোর এক পর্যায়ে লোকটা আলোকে ধরে ফেলল। আলো নিজেকে ছাড়াবার বেশ চেষ্টা করছিল।তবে পারছিল না। যতই ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল লোকটা ততই আলোর এক হাত চেপে ধরছিল। আলোর পেটের দিক,কোমরের দিকে হাত দিতে লাগল।আলোর এবার অস্বস্থি হতে লাগল। ভাবলো নিজের সম্মান পুনরায় বিসর্জন দেওয়ার থেকে মরে যাওয়া শ্রেয়। তবে এ হায়ানার হাত থেকে ছুটতে পারলে হয়তো মরার চেষ্টা করতে পারবে।ছুটতে না পারলে তো তাও করা যাবে না। কী করবে বুঝতে পারছে না। এদিকে লোকটা দস্তাদস্তি করেই যাচ্ছে।।দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে আলো লোকটার চোখ বরাবর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিল। আলোর হাতে রক্ত মেখে একাকার।লোকটা আলোকে ছেড়ে চোখটা চেপে ধরল।আর আলো সে সুযোগে দৌঁড় লাগাল।

দৌঁড়ানোর এক পর্যায়ে আলো হাঁপিয়ে গেল। লক্ষ্য করলো একটা পার্কে এসে পৌঁছেছে। আলোর তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে।।সারা শরীরে ঘাম দিচ্ছে। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই পার্কের রমরমা দৃশ্য আলোর চোখে পড়ল। টাকার বিনিময়ে চলছে শরীর দেওয়া নেওয়ার খেলা। আলো বুঝতে পারলো এখানে থাকাও আলোর জন্য বিপদ জনক।আলো নিজের রক্ত মাখা হাতটা কাপড়ে মুছে সামনের দিকে দৌঁড়াতে লাগল। আলো জানে না এ পথের শেষ কোথায়।।কোথায় যাবে সে। শুধু জানে অন্ধকারে এক চিলতে আলোর দেখা মিলতেও পারে। প্রায় আধাঘন্টা দৌঁড়ানোর পর আলো রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ল। এবার আলো আরও চমকালো। কারণ সে লক্ষ্য করল সোডিয়াম আলোর নীচে দাঁড়িয়ে আছে অনেক সুদর্শন পুরুষ। সেখানে আবার কিছু কিছু নারী এসে তাদের থেকে একজনকে পছন্দ করে গাড়িতে তুলছে। আলো এবার হাজার কষ্টে থেকেও মনে মনে বিকৃত হাসলো। এ সমাজে শুধু মেয়েরায় ভোগের পন্য না ছেলেরাও ভোগের পন্য। টাকার জন্য তারাও এসব কাজে নামতে বাধ্য হয়। আলো নিজেকে সামলালো।

শহরের অলিগলিতে যতই আলো ছুটছে ততই একেকটা কাহিনি আলোর সামনে পড়ছে। দিনের শহর আর রাতের শহরের মধ্যে কত তফাৎ। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাতের শহরটা হয়ে যায় অন্ধকারে মোড়ানো নষ্ট গলি। আর আলো ফুটার সাথে সাথে শহরটা হয়ে যায় কর্ম ব্যস্তময় প্রাণ চঞ্চল আর সজীব।

আলোর পানির পিপাসাটা বাড়তে লাগল। আলো নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগল। আলোর পা টা আর চলছে না। ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে। শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছে না। তবুও কষ্ট করে সামনের দিকে এগুচ্ছে। এগুতে এগুতে একটা গাছের সামনে এসে হেলান দিয়ে বসলো। চোখটা বুজে আসছে আলো। এমন সময় আলো একটা লাঠির স্পর্শ পেল। আচমকা এমন লাঠির স্পর্শ পেয়ে আলো চোখটা মেলে দেখল পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। আলোকে চোখ খুলতে দেখেই জিজ্ঞেস করল

– এখানে কী?

– নাহ তেমন কিছু না স্যার।

– বাসা কোথায়?

– সামনেই।

– তাহলে এখানে কী? রাস্তায় নেমেছিস নষ্টামি করতে নাকি?

– মুখ সামলে কথা বলুন।

– মুখ সামলাবো কেন? এত রাতে রাস্তায় বসে আছি কিছু বুঝি না ভাবছিস। চল থানায় চল।

– আমাকে থানায় নিবেন না স্যার। আপনি যা ভাবছেন আমি তা না।

লোকটা মুচকি হেসে বলল

– তুই বললে তোকে কিছুই করব না। আমাকে একটু খুশি করলেই হবে।

পুলিশটার কথা শুনে আলোর বুকটা কেঁপে উঠল। এদের হাতে নাকি নিরাপত্তার দায়ভার। অথচ এদের থেকে নিরাপদ থাকাটা সবার আগে জরুরী।এরা তো নিরাপত্তা দেওয়ার নামে নিরাপদ মানুষটাকে বিপদে ফেলে। তবে পুলিশ সমাজে এর ব্যতিক্রম ও আছে যারা নিরাপত্তা দিতে তৎপর। তবে তার পরিমাণ সংখ্যালঘু। আলো পুলিশটার কথা শুনে কিছু না বলেই তৎক্ষনাৎ উঠে দৌঁড় দিল। পুলিশটা পিছু নিলেও আলো নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হলো।

আলো দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কোথায় এসে পৌঁছেছে সে নিজেও জানে না। এ রাস্তায় কোনো সোডিয়াম আলো ও নেই। পুরো রাস্তাটা বিদঘুটে অন্ধকার।এ অন্ধকারটায় আলোর ভয়ের কারণ।অন্ধকারটা এতই প্রখর যে আলো শুধু নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে এছাড়া কোনো আওয়াজ বা কিছু দেখতে পারছে না। আলোর মাথাটা প্রচুর রকমে ঝিমাতে লাগল। তার চোখ গুলো বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। মাথায় অসহ্য ব্যথা সে সাথে পেটের ক্ষুধা। সব মিলিয়ে আলো ক্লান্ত। অন্ধকারে শুধু হেঁটেই যাচ্ছে সে। নীলার কথা মনে পড়ছে তার। জানে না সে নীলা কোথায় আছে। সে কী পেরেছে এসব মোকাবেলা করতে। নাকি সে এতক্ষণে কারও খাদক হয়ে গেছে৷ কথাটা মনে আসতেই আলোর হার্টবিট বেড়ে কম্পন দিতে লাগল। নীলার জন্য খুব মন খারাপ লাগতে লাগল আলোর। কারণ নীলার সাথে থাকলে হয়তো চলার পথটা আরও মসৃন হতো। সামনের দিকে এ অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছে জানে না সে। কোথায় থেকে যেন কুকুরের কান্না আসছে। কুকুরের কান্নাটা আলোর বেশ অসহ্য লাগছে৷ সারাশরীর অবশ হয়ে যেতে লাগল। চোখ গুলো শত চেষ্টার পরও খুলতে পারছিল না। একটা সময় মাটিতে নেতিয়ে পড়ল।

অনেক্ষণ পর চোখটা যখন খুলল তখন ভোরের আলো, তার চোখে পড়ল। সে চোখটা খুলে আশপাশ তাকাল। একটা পরিপাটি রুমে সে শুয়ে আছে। আলো বুঝতে পারছে না সে কোথায়। আলো কিছুটা অবাক হয়ে উঠতে নিলেই কেউ একজন পেছন থেকে আলোর মুখটা চেপে ধরল। আলোর ভেতরটা কম্পিত হলো।।ভাবতে লাগল সে কী আবার কোনো নোংরা লোকের পাল্লায় পড়ল। ভাবতে ভাবতেই আলো পেছন ফিরে তাকাতেই ভয়টা তার আরও বেড়ে গেল।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৩

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৩

তাই নিজেকে সামলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে অবাক হয়ে গেল। কারণ লোকটা এসেছে তার সাথে আরেকটা মেয়েও এসেছে। আলো বুঝতে পারছে না মেয়েটা কে? ভয়ের ছাপটা মেয়ের মুখে পরিলক্ষিত হয়েছে অনেকটা। আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর লোকটা মেয়েটার হাতটা জোরে ধরে আছে। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল সে কত অসহায়। বয়সও খুব বেশি হবে না এই তো পনের কী ষোল হবে। আলোর মধ্যে নীরবতা বিরাজ করছে। চিন্তা করছে এ মেয়েটি কে? আর এখানেই বা আনা হলো কেন? জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারছিল না। ঠাই চুপ হয়ে রইল।লোকটা মেয়েটার হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেল। রুমে নিয়ে যাওয়ার খানিক বাদেই আর্তনাদের চিৎকার আলোর কানে আসলো। আলোর বুকটা ফেটে যেতে লাগল। বুঝতে পারছিল এ দুনিয়ায় শুধু আলো একা না আরও অনেকেই আছে আলোর মতো। আলো ঘরে ঢুকে বসে বসে কাঁদতে লাগল। আজকের দিনটা সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেও আরেকটা মেয়ে সে একই যন্ত্রণায় পড়েছে। আলোর ইচ্ছা হচ্ছে লোকটাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে। কিন্তু সেটাও সে পারছে না। বয়স অল্প হলে কোনো কিছু করার ইচ্ছা জাগলেও সাহসের অভাবে পারে না। আলোর মতো চৌদ্দ বছর বয়সী মেয়ে সেজন্য এত অত্যচার সহ্য করেও প্রতিবাদ করতে পারছে না।

মেয়েটার চিৎকারের শব্দ আলোর কানে প্রখর হতে লাগল। আলোর বুকটা ফেটে যেতে লাগল। নিজেকে সামলে নিয়েও পারছিল না। কারণ আলো জানে এ কষ্টের মাত্রাটা একটা মেয়ের জন্য কতটা প্রখর।প্রায় এক ঘন্টা এমন আর্তনাদের পর রুমটায় এখন নীরবতা বিরাজ করছে। আলোর কানে কোনো শব্দই এখন আসছে না। আলো নিজের রুম থেকে বের হলো। বের হয়ে খেয়াল করলো লোকটাও পাশের রুম থেকে বের হয়েছে। আলো এবার বেশ সাহস করে লোকটাকে প্রশ্ন করে বলল

– মেয়েটা কে ছিল?

আলোর কথা শুনে লোকটা ক্ষেপে জবাব দিল

– তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি?

সেই সাথে নোংরা গালি তো আছেই। লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার রুচি আলোর হলো না। সে চুপ করে রুমের ব্যালক্যানিতে চলে গেল। মনটা বেশ অস্থির লাগছে তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল নীল সাদা আকাশে কালো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসার উপক্রম। আলোর জীবনটাও এ আকাশটার মতো কালো অধ্যায়ে ছেয়ে গেছে। কবে সে কালো অধ্যায় দূর হয়ে আলোকিত হবে সে অপেক্ষায়। তবে এটা যেন বৃথা অপেক্ষা। এর মধ্যে আলো আবারও দরজা লাগানোর আওয়াজ পেল।আলো বুঝতে পারল লোকটা বের হয়েছে। লোকটার চলে যাওয়া টের পেয়েই সে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হলো। তারপর পাশের রুমে গেল। পাশের রুমে যেতেই আলোর চোখ দুটো ছলছল করতে লাগল। নগ্ন একটা দেহ পরে আছে নিস্তেজ হয়ে। আলোর উপস্থিতি টের পেয়েই মেয়েটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল। মেয়েটাকে ভয় পেতে দেখে আলো তার কাছে গিয়ে আস্বস্থ করে বলল

– তুমি ভয় পেও না। আমিও তোমার মতো অত্যাচারের শিকার। দীর্ঘ দু বছর যাবত আমি এ অত্যাচার সহ্য করতেছি। আমি তোমাকে কিছুই করব না। আমাকে ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুমি বললে আমি কী তোমার কাছে আসব একটু।

আলোর কথাটা শুনেই মেয়েটা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

– আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে দিন। আমি আমার বাবা মায়ের কাছে ফেরত যেতে চাই।

– তুমি একটু বসো। হুট করে কোনো কিছুই আমি করতে পারব না। কারণ লোকটা তো তালা দিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে যায়। তুমি আপাতত একটু উঠো। আমি তোমাকে খাবার দিচ্ছি খেয়ে নাও। খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আগে শরীরটা ঠিক করো। তারপর দুজন মিলে বুদ্ধি করব। আচ্ছা তোমার নাম কী?

মেয়েটা ঢুক গিলে উত্তর দিল

– নীলা।

– বাহ্! বেশ সুন্দর নাম। যাইহোক তুমি উঠো।

আলোর কথা শুনে নীলা উঠতে নিলেও পারছিল না। সারা শরীরের যন্ত্রণা এতটা প্রখর যে সে শক্তিই পাচ্ছে না উঠার। আলো নীলার এরকম অবস্থা টের পেয়ে নীলার কাছে গিয়ে নীলাকে ধরে শুয়া থেকে বসালো। তখনও নীলা নগ্ন ছিল। তাই কাপড় গুলো পড়াতে নিয়ে আলো লক্ষ্য করল নীলার শরীরটা কামড়ের দাগে ভরে আছে৷ এত নির্মমতা দেখে আলোর চোখে পানি টলমল করছিল। আলো নিজেকে সামলে নিয়ে নীলাকে কাপড় পড়িয়ে দিল। তারপর নীলাকে বলল

– এবার আমি খাবার নিয়ে আসছি। আগে খেয়ে নাও।

– আমি কিছুই খাব না। আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করে দিন দয়াকরে। আমি বাবা মায়ের কাছে যেতে চাই। বাবা, মা অনেক দুশ্চিন্তা করবে। বাড়ির বাইরে পাঁচদিন যাবত। আমাকে দয়া করুন।

আলো নীলার কথা শুনে ভাবলো তাহলে নীলাকে কে এ অন্ধকার জগতে নিয়ে আসলো। ভাবনা টা আসতেই আলো চট করে বলল

– তাহলে তোমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে? আর লোকটার কাছেই বা আসলে কী করে।

আলোর প্রশ্নটা শুনতেই নীলা কাঁদতে লাগল,আর হাঁপাতে লাগল। আলো নীলাকে ধরে বলল

– সবকিছু বলতে হলে আর এখান থেকে পালাতে হলেও তোমাকে প্রথম খেতে হবে। কারণ ক্লান্ত শরীরে তুমি কিছুই করতে পারবে না।

কথাটা বলেই আলো রুমটা থেকে বের হয়ে নীলার জন্য খাবার আনল। নীলার পেটে তখন রাজ্যের সব ক্ষুধা যেন জড়ো হয়েছে। ভাতগুলো পেয়েই তাড়াহুড়ো করে খেতে লাগল। খাওয়ার এক পর্যায়ে ভাতগুলো গলায় আটকাল। নীলার অবস্থা দেখে আলো পানি বাড়িয়ে দিল। তারপর বলল

– আগে পানি খাও। আর আস্তে ধীরে খাও।

নীলা আলোর হাত থেকে পানিটা নিয়ে খেল। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে সমস্ত খাবার শেষ করল। খাবারটা শেষ করার পর নীলার একটু ভালো লাগতে শুরু করলো। শরীরটায় যেন শক্তি পাচ্ছিল। এবার আলো নীলাকে বলল

– বলো এবার কী হয়েছিল তোমার? আর এখানেই বা এসেছ কী করে?

নীলা ঢুক গিলল। হালকা গলায় বলল

– আমি আমার মা বাবার একমাত্র মেয়ে। বেশ আদরের। বাবা ছোটখাটো একটা চাকুরি করে। বাবার আয়ে আমরা বেশ ভালোই চলতে পারি। বলতে গেলে সুখী পরিবার আমরা। আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। রোজকার মতো আমার ছোট মামায় আমাকে স্কুলে নিয়ে যায় দিয়ে আসে। পাঁচদিন আগে আমার স্কুলের ফাংশনে মামা আমাকে নিয়ে যায়। মামায় আবার আনতে যায়। প্রতিদিন মামাকে বেশ স্বাভাবিক লাগলেও সেদিন মামার গতিবিধি আমার কাছে স্বাভাবিক লাগে নি। মামা আমাকে বাড়ির সোজা সাপটা রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে লাগল। আমি এরকম ঘুরতে দেখে মামাকে বললাম

– মামা এত ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছ কেন? সোজা সাপটা রাস্তা রেখে।

মামা মৃদু হেসে বলল

– এ রাস্তার সামনে মেলা হচ্ছে রে তোকে নিয়ে যাব।

আমি আবার মামাকে একটু ভয় গলায় বললাম

– সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তো। বাবা, মা তো বকবে।

– আরে বকবে কেন? আমি আছি তো।

কেন জানি না মামার ভাবভঙ্গি আমার ভালো লাগছিল না। আমি ভয়ও পাচ্ছিলাম। তবে নিজের আপন মামা তাকে সন্দেহ করার অবকাশ ও ছিল না। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামল। মামাকে তাড়া দিতে দিতে বললাম

– কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছ? রাস্তা তো শেষেই হচ্ছে না। রাত ও নেমে গেল। বাবা,মা চিন্তা করবে। চলো বাড়ি চলে যাই।

– আরে একটু পথ। এত চিন্তা কেন করিস বলতো।

মামার কথার প্রতি উত্তরে আমি কিছুই বললাম না। হালকা নিঃশ্বাস নিলাম শুধু। কিছুক্ষণ পরেই মামা আমাকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে যেতে লাগল। তখনই আমার টনক নড়ল। আমি মামাকে বেশ জোর গলায় বললাম

– আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ মামা।

মামা এবার তার আসল রূপ দেখাল। আমার মুখটা চেপে ধরে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেল। সেখানে আরও কয়েকজন ছিল। আমার মামা শুধু জোয়া খেলার টাকার জন্য তাদের হাতে আমাকে শপে দিল। তারা যে যার মতো আমাকে ভোগ করল। মুখটা বাঁধা ছিল। কথা বলতেও পারছিলাম না। আর্তনাদটা শুধু বুকের ভেতর হচ্ছিল। বুক ফেটে বের ও করতে পারছিলাম না। নিজের মামাও আমাকে ভোগ করলো। ছিঃ কতটা বিকৃত মস্তিষ্কে ভরা এ সমাজ। আগে টিভির পর্দায় এসব খবর শুনতাম। মাঝে মাঝে বিশ্বাস হত মাঝে মাঝে হত না। কিন্তু নিজের সাথে ঘটার পর বুঝতে পেরেছি এ দুনিয়ায় কোনো কিছুই অসম্ভব না।

সেদিন এত কষ্ট হয়েছিল বলে বুঝাতে পারব না। মামা সেখানে ক্ষ্যান্ত হননি। আমাকে বিক্রি করে দেয় এক পতিতালয়ে। আমি সেখান থেকে পালানোর অনেক চেষ্টা করেছি পারে নি। পাঁচদিন যাবত আমি অসহায় যন্ত্রণার গ্লানি বহন করে চলেছি। এরপর এই লোকটা পতিতালয় থেকে আমাকে কিনে আনল। তারপরের কাহিনি তো আপনি জানেনেই। আমাকে এবার বের হওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিন দয়াকরে।

নীলার কথা শুনে আলোর চোখে অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে বলল।

“এ পৃথিবীতে জঘন্য মানুষ গুলো ভালো মানুষের রূপ নিয়ে থাকে। মানুষ আর অমানুষের রূপ দেখতে একইরকম। তাই তাদের চেনা বড় দায়। হিংস্র জীব দেখলে আমরা আগেই সতর্ক হয়ে পড়তে পারি তাই বিপদের আশঙ্কা কম থাকে তবে অমানুষ আমাদের সাথে ঘুরলেও সতর্ক হতে পারি না। কারণ তাদের রূপ মানুষের মতোই হয়। তাই বিপদ আসলে মোকাবেলা করার শক্তিও থাকে না”

এদিকে নীলাকে পেয়ে আলোর একটু সাহস বাড়ল। মনে মনে পালানোর সিদ্ধান্ত নিল। তবে পালাবে কীভাবে সে উপায় তো নেই। তবে একটা চেষ্টা তো করা যায়। আলো নীলাকে বলল

– দরজা তো সবসময় বাইরে থেকে লাগানো থাকে। তবে আজকে আসুক উনি। আমি একটা ব্যবস্থা করব। একসাথে দুজনেই পালাব। এ নরক থেকে নিজেদের মুক্ত করব। এর আগে একা সাহস হয়ে উঠেনি। এখন তুমি আছো।

নীলা আলোর হাতটা ধরে বলল

– কীভাবে মুক্ত করব নিজেদের?

– উপায় একটা বের তো করবই। তুমি বিশ্রাম নাও।

নীলার ভেতরে খানিকটা স্বস্তি মিলল আলোর ভরসা মাখা কথা শুনে। নীলা মোলায়েম গলায় বলল আচ্ছা। তারপর শুয়ে পড়ল। আর আলো রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গেল। ভাবতে লাগল কী করা যায়। সারাদিন হাজারটা উপায় বের করছিল কীভাবে এ নরক থেকে বের হওয়া যায়। এর মধ্যেই আলোর কানে দরজা খোলার আওয়াজ আসলো। দরজা খোলার আওয়াজ টের পেয়েই আলো বুঝতে পারল লোকটা এসেছে। আলো নিজেকে সামলে নিয়ে লোকটার সামনে গেল। সামনে গিয়েই আলো বলে উঠল

– ড্রিংকস করবেন না? চলুন একসাথে করা যাক।

– আজকে তুই এত পিরিত দেখাচ্ছিস কেন?

– বয়স বেড়েছে তো, মানতে শিখে গেছি। আমার জন্মদিন তাই একটু দুজন একসাথে সময় কাটাতে চাই। সবসময় জোর করে আর কত? একটু না হয় দুজনের সম্মতিতে মিলিত হলাম কী বলেন?

– বাহ্! তোর তো বয়সের সাথে সাথে বু্দ্ধিও খুলেছে। যা তাহলে নিয়ে আয়।

আলো লোকটাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। মদের বোতলটা নিয়ে একের পর এক খাওয়াতে লাগল। খাওয়ানোর এক পর্যায়ে লোকটা যখন নেশার সাগরে ডুবে গেল। ঠিক তখনই চাবিটা বু্দ্ধি করে নিয়ে নিল। তারপর লোকটাকে শুইয়ে পাশের রুমে গিয়ে নীলাকে ডাক দিল। নীলাও চট জলদি উঠে পড়ল। নীল আর আলো মিলে তালা খুলে ঘর থেকে ঠিক যখনই বের হতে নিবে ঠিক তখনই আলোর হাতটা লোকটা চেপে ধরে চুল গুলো টেনে ধরে বলল

– তোর এত সাহস পালাতে চাচ্ছিস। কী ভেবেছিলে আমি নেশায় ডুবে থাকব। সারাদিন মদ খেলেও আমার নেশা হাঁটুর উপর উঠে না মা***। আর তুই আসছিস আমার সাথে পাল্লা দিতে।

নীলা বুঝতে পারছিল না কী করবে। থরথর করে কাঁপতে লাগল। আলো নীলাকে চেঁচিয়ে বলল

– নীলা চলে যাও। আমার কথা ভেবো না। আমি চাই না আমার মতো তোমার জীবনটা নষ্ট হোক। চলে যাও বলছি।

নীলা বুঝে উঠার আগেই দৌঁড় দিল। আর আলোকে ছেড়ে লোকটা নীলার পিছু নিতে গেলে আলো লোকটাকে ঝাঁপটে ধরল। বেশ দস্তাদস্তি হতে লাগল দুজনের মধ্যে। এর মধ্যে নীলা পালাতে সক্ষম হলো। আর এদিকে আলোকে ধরে লোকটা বেদরম পিটাতে লাগল। আলো একটা পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে লোকটাকে জোরে লাথি দিল। ডাইনিং টেবিল থেকে একটা প্লেট নিয়ে এলোপাতাড়ি মাথায় আঘাত করতে লাগল। আঘাতের একটা পর্যায়ে লোকটা মাটিতে আঁচড়ে পড়ল। আলো জানে না লোকটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে৷ বুঝে উঠার আগেই আলো দৌঁড় লাগাল। মনে মনে নীলাকে খুঁজতে লাগল। আলো নীলার কোনো হদিশ পেল না। তাই সামনের দিকে দৌঁড়ে এগুতে লাগল। রাত অনেক হয়েছে। শহরের রাস্তাগুলো বেশ ফাঁকা। আলো দৌঁড়ানোর এক পর্যায়ে হাঁপিয়ে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে রাস্তার এক কোণে বসলো। বসার মিনেট দুয়েক পরেই ভয়ে কেঁপে উঠল একটা আওয়াজ পেয়ে।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০২

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২

কারণ মা বলল-

– আজকে রাতে তোমার বিয়ে। রাতে প্রস্তুত থেকো।

মায়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। মনে হলো এটা আমার মা না ডাইনি। একে তো এত নোংরা একটা কাজ করেছে তার উপর এমন কথা বলতে উনার বিবেকে বাঁধল না। আমি মায়ের কথার জবাবে চিৎকার করে বলে উঠলাম

– তুমি কী আমার মা? কোনো মা তো তার সন্তানকে এত কষ্টের মধ্যে ফেলে না। আমাকে দয়া করো মা। আমি তোমার মেয়ে। এ বয়সে তুমি আমাকে কার সাথে বিয়ে দিবে? অল্প বয়স আমার। মা গো এ কষ্টে আমাকে ফেলো না।

– আমি যা বলব তাই হবে। আর শুন এতদিন তোকে বলেনি কারণ বলার প্রয়োজন মনে করিনি। আজকে বলছি আমি তোর মা না। তোর মা অন্যজন ছিল। আমার তো কোনো সন্তানেই নেই। সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।

আমি উনার মেয়ে না? মা এটা কী বলল। মায়ের কথাটা শুনে আমার বুকটা কম্পন দিয়ে উঠল। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম

– এসব কী বলছো মা? তুমি আমার মা না হলে কে আমার মা?

– আমার আগে তোর বাবার আরেক বউ ছিল। তোর জন্মের পর মারা গেছে। তুই আমার সৎ মেয়ে। আমি তোর সৎ মা। এতদিন বলেনি কারণ বলার মতো কোনো কারণ ছিল না। তুই ও কোনো ঝামেলা করিসনি তাই দয়া দেখিয়ে এসেছি। এখন আজকে তোর বিয়ে সেটা মাথায় রাখ। বয়স অল্প তো কী হয়েছে। তোর শরীর ঠিক থাকলেই হবে। বিয়ে কী আর বয়স দিয়ে হয় না। বিয়ে হয় শরীর দিয়ে। একদম চুপচাপ থাকবি। যা বলব তাই করবি।

– এতদিন তোমার কাজে মনে হত তুমি আমার মা না। আজকে তোমার কথায় তা প্রমাণ হলো। মা আমার বয়সটা অল্প। তবে ছোট থেকে তোমার নোংরামো দেখে বড় হতে হতে অনেক কিছু শিখেছি। আমি তোমার মেয়ে না তবে একটা মানুষ। মানবিক দিক ভেবে হলেও আমার সাথে এমন করো না। আর আমার মতো পিচ্চি মেয়েকে কে বা বিয়ে করবে।

– কেন কাল যে আংকেলটা তোর কাছে ছিল। সে তোকে পছন্দ করেছে। তোকে বিয়ে করলে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিবে৷ সুতরাং আমার কথার নড়চড় হবে না।

মায়ের কথা শুনে… মা না ডাইনি হবে সে। তার কথা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠল। সে নোংরা লোকটা নাকি আমার স্বামী হবে। অন্য কেউ হলে হয়তো মানতে পারতাম। মনে আশা নিয়ে থাকতে পারতাম যে ভালো কিছু ও হতে পারে জীবনে। এ নরক থেকে বের হতে পারব। কিন্তু সে আশার আলোও নিভে গেল। সামান্য পাঁচ লাখ টাকার জন্য আমার সাথে নোংরামো করল। আমার বুক ফেটে কান্না আসলো। কান্না জড়িত কন্ঠে অসহায় সুরে বললাম

– দয়াকরে এমন কাজ করো না। ঐ লোকটা একটা বাজে লোক। আমি পারব না উনাকে বিয়ে করতে। তার উপর তোমার সাথে ঐ লোকটার বাজে সম্পর্ক। আপন মা হও বা সৎ মা। মা তো তুমি। নিজের মায়ের যে লোকের সাথে বাজে সম্পর্ক তাকে বিয়ে করতে কীভাবে বলছো?বিয়ে করাতে চাচ্ছ বিয়ে করাও তবে অন্য কারও সাথে।

মা আমার চুলের মুঠি ধরে বলল

– বেশি বেড়ে গেছিস তাই না? তোকে যা বলব তাই করতে হবে। যা এবার গোসল করে নে।

বলেই মা চুলের মুঠিটা টেনে আমাকে আঁচরে ফেলে রুম থেকে চলে গেল।
আমি বসে বসে কাঁদতে লাগলাম। সারা শরীর ব্যথায় নীল হয়ে গেছে। শুয়া থেকে উঠতেই পারছিলাম না। নিজেকে সামলে নিয়ে গোসল করে নিলাম। তারপর নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে কাঁদতে লাগলাম । আমার নাম আলো হলেও আমার জীবনটা আধাঁরে ডুবে রয়েছে। আমি জানি না কবে সে আধাঁর গুচিয়ে এক চিলতে আলোর খুঁজ পাব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ঠিক তখন আমার মা এসে আমার দিকে খাবার বাড়িয়ে দিয়ে বলল

– খেয়ে নে। আর এসব ন্যাকামি কান্না বাদ দে।

আমি মায়ের কথা শুনে মায়ের পায়ে ঝাঁপটে ধরলাম। নিজেকে এত অসহায় এর আগে আমার কখনও লাগে নি। বাচ্চা একটা মেয়ে যার স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার কথা ছিল সে আজকে নিজেকে হায়ানার হাত থেকে বাঁচাতে মায়ের পায়ে ঝাঁপটে ধরেছে। আমার মা আমার হাত থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বুক বরাবর একটা লাথি দিয়ে বলল

– বলেছি তো একদম ন্যাকা কান্না করবি না। খাবার দিয়ে গেলাম খেয়ে নে।

বলেই আমার মা চলে গেল। আমি মেঝেতে পরে কাঁদতে লাগলাম। কিছুক্ষণ কেঁদে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে লাগলাম। নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে আবার বিড়বিড় করে বললাম আমি বাঁচতে চাই বলেই কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমার শরীর নেতিয়ে পড়ল। শ্বাস প্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। এসময় মরে গেলে হয়তো আমার জন্য সবচেয়ে ভালো হত। তবে আমি সেটাও পারছি না। কারণ এত সাহস আমার নেই। শরীরটা বেশ ক্লান্ত। সারা রাত অনেক কষ্ট হয়েছে। নিজের মনের মৃত্যু তো সে সাত বছর বয়সেই হয়েছে। এখন শুধু শরীরটা পড়ে রয়েছে। এ শরীরটার জন্য খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। পুরোপুরি শেষ করার সাহস ও পাচ্ছি না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে খাবারটা হাতে নিয়ে মুখে দিলাম। এ নরকের খাবার আমার গলা দিয়ে নামছে না। এখান থেকে পালাবার ও কোনো উপায় নেই। আর পালিয়ে যাবই বা কোথায়।

সারাটাদিন কাঁদতে কাঁদতে পার করলাম। সন্ধ্যায় ঐ লোকটা আসলো। এসে আমার কাছে বসে মাকে বলল

– ওকে শাড়ি পড়াও নি কেন? শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে এসো। আর কাজী আসছে। কাজীকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে বিয়ের জন্য। আগে থেকে সব স্যাটেল করে রেখেছি। কাজী আসতে আসতে শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে এসো।

আরে ডার্লিং চিন্তা করো না এখনি নিয়ে আসছি। মায়ের কথাটা শুনে ঘৃনায় বমি আসতে লাগল। যতই হোক আমি উনার মেয়ে আর আমাকেই বিয়ে দিচ্ছে তার প্রেমিকের সঙ্গে আবার আমার সামনেই বলা হচ্ছে ডার্লিং। কতটা নোংরা সম্পর্কে আমি জড়াচ্ছি। মনে মনে বলতে লাগলাম আল্লাহ গো এ নরক থেকে কবে মুক্তি পাব। আমার সহায় হও। মা আমার পাশে এসে আমার হাতটা টেনে ধরে ঘরে নিয়ে গেল। জোর করে শাড়ি পড়িয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর কাজী আসলো। সাথে আরও দুজন লোক।বুঝতে পারলাম তারা বিয়ের সাক্ষী। তাদেরও ভাড়া করে এনেছে। কাজীও কেমন সামান্য টাকার জন্য আমার মতো মেয়েকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে পড়াচ্ছে। কাজী যখন বিয়ে পড়ানো শুরু করলো তখন বুকটা আমার ফেটে যেতে লাগল। কলিজা দুভাগ হয়ে যেতে লাগল। কাজী হুট করে বলল

– কবুল বলো।

আমি কাজীর কথার কোনো উত্তর দিলাম না। চুপ হয়ে রইলাম। বারবার কাজী বলারও পরও আমি নিশ্চুপ। আমার নীরবতা দেখে মা চুল টেনে ধরল। বেদরম মার মারতে লাগল। শরীরের যন্ত্রণা এত প্রখর হলো যে আমি কবুল বলতে বাধ্য হলাম। ঘৃনিত হলেও সত্য যে সেদিন আমার মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।

বিয়ের পর লোকটা আমাকে নিয়ে আসে তার বাসায়। বড় একটা বাসা। দুতলা করা। বাসায় কেউ নেই আমি আর লোকটা ছাড়া। বাসায় এনেই আমার উপর হামলে পড়ে। অসহ্য যন্ত্রণার চিৎকার যেন তার কানে পৌঁছাল ও না। দিনের পর দিন এরকম যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে৷ প্রতিনিয়ত কষ্ট পেতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে মা আসে এ বাসায়, এসে ঐ লেকটার সাথে বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে থাকে। কতটা ঘৃনিত সম্পর্কে আমি আছি যেখানে মেয়ের স্বামীর সাথে মা থাকে। ভাবতেই গা টা ঘিনঘিন করতে থাকে। এরকম ঘৃনিত সম্পর্কের এক বছর পর মাত্র তের বছর বয়সে আমি মা হতে চলি। কিন্তু আমার বাচ্চাটাকে খুন করে আমাকে চিরতরে মা হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয় আমার ডাইনি মা আর ঐ লোকটা। কারণ তারা তো আমাকে ভোগের পন্য ভাবে। মাতৃত্ব হারানোর কষ্ট একটা মেয়ের জন্য কতটা প্রখর সেটা আমি জানি। তাও সেটা উপলব্ধি করেছিলাম মাত্র তের বছর বয়সে। আমার বয়সী মেয়েরা হেসে খেলে জীবন যাপন করে। আর আমি বাস্তবতার কষাঘাতে পড়ে মরছি৷ সারাদিন শুধু কষ্ট হয় আমার। আমার এ নরক জীবন থেকে হয়তো কখনো মুক্তি মিলবে না। কবে আমি মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারব জানি না। এ নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। কিন্তু প্রতিনিয়তই আমাকে এ নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে।

যন্ত্রণার আগুনে আরও এক বছর পুড়ে ১৪ তে পা রাখলাম। এ অল্প বয়সে কতটুকু কষ্ট সহ্য করেছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। রোজ রোজ লেকটার অত্যাচার শারীরিক যন্ত্রণা পাওয়া ছিল রোজকার রুটিন। জানি না এ জীবন থেকে আমি মুক্তি পাব কিনা। অন্ধকারে এ চিলতে আলোর দেখা কী আমার জীবনে মিলবে? কি হলো মিলবে বলো?

কথাগুলে আলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবিকে বলছিল। আলোর কথা বলার কোনো সঙ্গী নেই। এ বাসায় একা একাই থাকে। মাঝে মাঝে লোকটা আসে বাজার করে দিয়ে যায় আর নিজের মতো করে ভোগ করে চলে যায়। বাকিটা সময় আলো একাই থাকে। আর বেশির ভাগ সময় আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবির সাথে কথা বলে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আজকে তার ১৪ তম জন্মদিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়ের বর্ণণা করছিল আলো। আর জিজ্ঞেস করছিল নিজের প্রতিচ্ছবিকে এটা যে, অন্ধকারে এক চিলতে আলোর দেখা কী তার জীবনে মিলবে না? প্রশ্নটা বেশ কয়েকবার আয়নাকে করলো।এমন সময় আলো দরজা খোলার আওয়াজ পেল। আলোর আর বুঝতে বাকি রইল না ঐ লোকটা এসেছে৷ আলো ভয়ে কুকড়ে যেতে লাগল। কারণ আজকের দিনে অন্তত যন্ত্রণা সহ্য করতে সে চায় না। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে অবাক হয়ে গেল।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০১

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১

আমার বাবাকে নিজের মায়ের হাতে খুন হতে দেখেছি। আমার বয়সটা সেদিন অল্প ছিল। সাত বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে ছিলাম। চুপচাপ ছিলাম খুব। ছোট বেলা থকেই বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া চলত। মা পরকিয়ায় আসক্ত ছিল। আর বাবা সেটা মেনে নিতে পারত না। মাকে বারবার বললে মা উল্টো বাবার সাথে ঝামেলা শুরু করে দিত। মায়ের পরকিয়ার মূল কারণ ছিল টাকা। মা খুব উচ্চাভিলাষী ছিল। বাবার স্বল্প আয়ে মায়ের মনটা সবসময় ফিকে হয়ে যেত। বাড়তি টাকার জোগান দেওয়া বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই মা একের পর এক পরকিয়া করত টাকার জন্য। বাবা মাকে কিছু বললেই মায়ের মুখে একটা কথায় আসত

– কিছু দেওয়ার তো মুরোদ নেই শুধু বড় বড় কথা। আমি যা ইচ্ছা তাই করব তোমার তাতে কী?

এসব নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া চলত। প্রতিদিন বাসায় কোনো না কোনো আংকেল আসত। আমার জন্য চকলেট আইসক্রিম নিয়ে আসত। আমি ছোট ছিলাম বুঝতাম না। তবে এখন বুঝতে পারি ছোট বেলায় যাদের আমি আংকেল বলে ডাকতাম তারা সত্যিকার অর্থে কে ছিল।

সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। আমি ঘরে বসে বাবা আসার অপেক্ষা করছিলাম। বাবা একটা সময় আসেও, এসেই মাকে একটা চড় কষিয়ে দেয় আর বলে

– নষ্টামির মাত্রা এতই বেড়ে গেছে যে এখন মানুষ পর্যন্ত আমার কাছে তোমাকে নিয়ে যা তা বলে। আর তুমি আমার বন্ধুর সাথে নষ্টামি করছো? আমি যা পারি তোমাকে সব দেওয়ার চেষ্টা করি। আর সে তুমি কী না আমারেই বন্ধুর সাথে ছিঃ,ছিঃ।

মা ছিল বেপোরোয়া। পাল্টা জবাবে বলল

– কী এমন দাও তুমি। আমার যা ইচ্ছা আমি করব। তোমার বন্ধু তোমার অফিসের মালিক আর তুমি সাধারণ কর্মচারী ভুলে যেও না। আমার সাথে ঝামেলা করলে চাকুরীতে টান পড়বে তোমার।

বাবার বিষয়টা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ চাকুরিটা বাবার প্রয়োজন ছিল। চাকুরী চলে গেলে দাদা,দাদীর কাছে টাকা পাঠাতে পারবে না। সেদিন বাবা বিষয়টা জেনেও নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে নীরবে সবটা সহ্য করে। আর আমি চুপচাপ ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে এসব শুনতে থাকি। আমার জন্মদিন সেটা এত ঝগড়ার মধ্যে ভুলে যাই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদতে থাকি। তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাই।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে বাবা আর মায়ের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে। আমি ঘুম থেকে উঠেই বাবা মায়ের কাছে যাই। দুজনেই বেশ ঝগড়া করছে।বাবা মায়ের শরীরে হাত তুলছে আর মা বাবার শরীরে। দুজনেই বেশ দস্তাদস্তি করতে লাগল। একটা পর্যায়ে দরজার কলিং বেল বাজলো। মা দৌঁড়ে দরজা খুলল। বাবার বন্ধু হাসান সাহেব এসেছেন। যার সাথে মায়ের পরকিয়া চলছে আর যার অফিসে বাবা কাজ করে।হাসান সাহেব আসতেই বাবা তার কলারটা ধরে বলল

– নিজের বন্ধুর বুকে ছুরি মারতে তোর বিবেকে বাঁধল না?

হাসান সাহেব কলারটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন

– আমার কলার ধরেছিস তোর এত বড় সাহস? তোর মতো কাপুরুষের তো বিয়ে করায় ঠিক হয়নি। নিজের বউয়ের শখ আল্লাদ পূরণ করতে পারিস না আর আসছিস আমাকে যা তা বলতে। তোর বন্ধু বলেই তো তোর হয়ে তোর বউয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করছি।

কথাট শুনেই বাবা রেগে গেল। বাবা রেগে গিয়ে হাসান সাহেবকে মারতে নিলেই মা এসে বাবাকে গলা চেপে ধরে বলল

– প্রতদিন তোর সাথে অশান্তি একদম ভালো লাগছে না। আজকে একেবারেই তোকে শেষ করে দেবো।

তারপর হাসান সাহেবকে বলল

– ওর হাত পা ধরো।

হাসান সাহেবও মায়ের কথায় বাবার হাত পা চেপে ধরল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। একদম স্থির আর স্তবির হয়ে গেছিলাম। চুপ করে সবটা দেখতে লাগলাম। চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। মুখ দিয়েও কথা বের হচ্ছিল না। মা বাবার গলাটা চেপেই ধরে রেখেছে। আর আমার বাবা ছটফট করছে। বাবার গলা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো। একটা পর্যায়ে বাবা ছটফট বন্ধ করে দিল। হ্যাঁ আমার বাবা মারা গেছে।

বাবার লাশটা কী করেছিল জানি না। তবে সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমরা সেই বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় চলে যাই। বাবাকে আর দেখতে পারিনি। বাবার লাশ কোথায় ছিল বা লাশটা দাফন করা হয়েছিল কী না তাও জানি না। এখনও মাঝে মাঝে বাবার মুখের অবয়বটা ভেসে আসে চোখে।বাবার ছটফটানির দৃশ্যটা এখনও চোখে ভাসলে মনটা অস্থির হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কষ্ট এটাই এত অন্যায়ের পরও আমার মা বেশ রমরমা জীবনযাপন করছে। বাবা মারা যাওয়ার পর যেন মা আরও সুন্দর হয়ে গেছে। সে সাথে মায়ের পরকিয়ার সঙ্গীও বাড়তে লাগল। আগে একজন আসত।আর এখন অনেকজন আসে। ছোট থেকেই মায়ের এসব দেখে বড় হয়েছি আমি।

মায়ের জীবনটা মায়ের মতো করে সে নিজে সাজিয়ে নিয়েছিল। তবে আমার সে নরকে দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। মাকে ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না।আর আত্নহত্যা সেটা তো একটা নিছক কল্পনা কেবল।চাইলেও আত্নহত্যা করার সাহস ছিল না। তবুও যেভাবে জীবন যাচ্ছিল নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। তবে আমার বয়স যখন বারো হয় তখন আমার জীবনে সবচেয়ে বড় নরক নেমে আসে। মায়ের খুব কাছের একজন সেদিন বাসায় এসেছিল। মা তার সাথে রুমে বেশ অন্তরঙ্গতার সহিত শুয়ে ছিল। দুজনেই তখন মদের নেশায় ডুবে আছে। আমি তখন ডাইনিং টেবিলে পানি খতে যাই। পানি খেয়ে আসার সময় দরজাটা খোলা থাকার দরুণ আমার চোখ পড়ে লোকটার চোখে। আর মায়ের সাথে এভাবে দেখে লজ্জায় কষ্টে আমার ভেতরটা ফেটে যায়। আমি তাড়াহুড়ো করে চোখটা নামিয়ে নিজের রুমে চলে আসি। লোকটা আমাকে দেখে মাকে কী বলেছিল জানি না। আমি রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম কবে এ নরক থেকে বের হতে পারব।

এসব ভাবতে ভাবতেই যখন চোখটা বন্ধ হয়ে আসে ঠিক তখন নাকে একটা বিশ্রি গন্ধ আসতে লাগল। বুঝতে পারছিলাম মদের গন্ধ। এ গন্ধটা আমার সহ্য না হলেও এ গন্ধের সাথে আমি পরিচিত। কারণ মা প্রায়ই এটা খায়। ভেবেছি মা হয়তো পাশে এসেছে। তাই চোখটা খুললাম। চোখটা খুলতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠল একি! এটা তো মায়ের পাশের লোকটা আমার দিকে হিংস্র হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে লালসার ছায়া ভেসে উঠছে।আমি উনাকে দেখে নড়েচড়ে বসলাম। উনার থেকে একটু দূরে গিয়ে বললাম

– আপনি আমার রুমে কেন?

– মামনি তুমি তো আমার মেয়ের মতো তোমাকে একটু আদর করে দিয়ে যেতে এসেছি। আমার কাছে এসো সোনা মা আমার।

কতটা ঘৃনিত ছিল সে চাহনি। লোভী চোখে তাকিয়ে মা ডাকছে। আমি সেদিন বলিষ্ঠ গলায় বলে উঠলাম

– আপনি আমার রুম থেকে যান বলছি।

কিন্তু লোকটা আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমার হাতটা টেনে ধরে তার কাছে এনে বলল

– যেতে তো আসেনি মামনি। তোমার মা কে তোমার জন্য এক লাখ দেবো বলেছি। তোমাকে রেখে কী করে যাই বলো। তোমার শরীরের গন্ধ যে পাগল করে দিচ্ছে আমায়।

বয়স অল্প হলেও উনার কথার মানে আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আর আমার মা টাকার জন্য নিজের মেয়েকেও ভোগের পন্য বানাতে দ্বিধা করলো না। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে লোকটা থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে লোকটা আমাকে ঝাঁপটে ধরে। আমার অস্বস্থির পরিমাণ বেড়ে যায়। জোরে একটা চিৎকার করে উঠি। পাশের রুম থেকে মা ছুটে আসে। ভেবেছি মা হয়তো আমাকে কষ্ট পেতে দিবে না। তবে আমার ভাবনাটা মিথ্যা প্রমাণিত হলো তখন যখন মা এসে বলল

– একদম চেঁচাবে না। আংকেল যা বলে করো। প্রথম একটু কষ্ট হবে। পরে ঠিক হয়ে যাবে।

মায়ের কথার প্রতিবাদ করে বললাম

– মা আমি এসব পারব না। আমাকে মাফ করো। দয়াকরে এত কষ্টে ফেলো না।।তুমি যা মন চায় করেছো আমি নীরবে সহ্য করেছি কখনো তোমাকে কিছু বলি নি। তবে আজকে আমার সাথে এত বড় অন্যায় করো না। আমাকে মুক্তি দাও দয়াকরে।

আমার এমন কথা শুনে লোকটা মাকে উদ্দেশ্য করে বলল

– তোমার মেয়ে এভাবে চেঁচালে চলবে নাকি।

– আরে চিন্তা করো না। ওকে একটু মদ খাইয়ে দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে ডার্লিং।

বলেই মা আমার পাশে এসে মদের বোতলটা নিয়ে জোর করে মুখ চেপে খাওয়ায়ে দিল। আর লোকটা আমার শরীরের উপর হামলে পড়ল। আর মা আমাকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। লোকটা আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খেতে লাগল। পুরুষ মানুষ সে যে কতটা ভয়ানক সেদিন বুঝতে পেরেছি। মা মা ডেকে ডেকে আমার শরীরটাকে খুবলে খেয়েছে। আমি ব্যথায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে নিস্তেজ হয়ে গেলাম।

সকাল বেলা উঠেই দেখলাম আমার শরীরে কোনো কাপড় নেই। বিছানায় রক্তে মেখে আছে। পেটে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে। মাথাটা বেশ ঝিমুচ্ছে। সারা শরীরে নীল নীল দাগ ছোপ ছোপ হয়ে গেছে। কষ্টে বুকটা ফেটে গিয়েছিল সেদিন। নিজের অসহায়ত্বের মাত্রাটা টের পেয়েছিলাম। নিজের মা এমন করবে সেটা আশা করি নি। মায়েরা নাকি সন্তানের জন্য সব করতে পারে৷ তবে আমার মা সে যে এমন করবে বুঝতে পারিনি। বিছানায় শুয়েই কাঁদতে লাগলাম।

সেদিনেই যদি আমার যন্ত্রণার পরিসমাপ্তি ঘটত তাহলে হয়তো স্বস্থি মিলত। যন্ত্রণার শুরুই ছিল সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে স্তবির হয়ে গেলাম। মা আমার রূমে আসলো। মাকে দেখে ঘৃনায় বুকটা ফেটে যেতে লাগল। মা এসে আমার উলঙ্গ শরীরটা ঢেকে দিয়ে যা বলল তা শুনে রিতীমতো আমার শরীরটা কাঁপতে লাগল। কারণ মা বলল-

চলবে

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0

শেষ বিকেলের রোদ- শেষ পর্ব [হ্যাপি ইন্ডিং]
©শাহরিয়ার

গাড়িতে উঠে বসে সোহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওর ছলছল চোখ জোড়া। গাড়ির চলতে শুরু করলো পার্লারের উদ্দেশ্যে, আজ আমার মন ভালো নেই, মন ভালো নেই আকাশের আমি মন খুলে কাঁদতে না পারলেও বৃষ্টিরা থেমে নেই। সেইই রাত থেকে শুরু হয়ে এখনো থামার কোন নাম গন্ধও নেই। খুব ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মন খুলে একটু কাঁদার জন্য।

খালা মনি:- কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?

— কই নাতো, সবাইকে ছেড়ে নতুন ঠিকানায় যেতে হবে এটাই ভাবছি।

খালামনি:- শোন মন খারাপ করার কিছু নেই, বড় হয়েছিস বিয়েতো হবেই। আর এটাই নিয়ম।

— অদ্ভুত নিয়ম, কেন এমন নিয়ম থাকতে হবে? বিয়ে করতেই হবে এমন কোন কথা নেই, আর বাবা মায়ের পছন্দেই বা কেন বিয়ে করতে হবে। ভাবতে ভাবতে এক সময় পার্লারে চলে আসলাম। আগে থেকেই খালামনি বলে রেখেছিলো। তাই তেমন কোন সমস্যা হয়নি, পার্লারের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর হয়ে আসলো। নিজেকে একবার ভালো করে আয়নায় দেখে নিলাম অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন গল্পের মায়াবতী। আচ্ছা এই মন খারাপের সময়ে এমন সাঁজ সাঁজতে হবে কেন? লাল বেনারসী বিশাল ঘোমটা কেনই দিতে হবে? বরং পুরনো ছেড়া একটা জামা পরে বিয়ের আসরে বসা উচিৎ যেন সকলে দেখলে বুঝতে পারে হৃদয়টা ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে এই বিয়েটা।

খালা মনি:- ইস এতো বৃষ্টি কেন হতে হবে? চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি মনে হচ্ছে বৃষ্টি আরও বেড়ে যাবে।

— খালা মনির সাথে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, গাড়ির এক কোনে বসে আছি, ভাবছি বাবা মায়ের কথা ছোট বেলা থেকে এতোটা স্বাধীনতা দিয়ে কি করে পারলো এভাবে সব কেড়ে নিতে। কি করে পারলো সরাসরি বলে দিতে মনের মাঝে কেউ থাকলে তা মুছে ফেলতে। সরাসরি কি করে বলে দিলো ভুল করেও যেন কোন রকম উল্টাপাল্টা কথা কলর বিয়ে ভেঙে না দেই। তাহলে তারা সব চেয়ে খারাপ হবে। সবচেয়ে বড় কথা যে মানুষটাকে এতোটা ভালোবাসি সেই মানুষটাই কি করে পারলো বলতে বিয়ে করে সুখি হতে। এতোটা ভিতু মানুষকে আমি ভালোবেসেছি ভাবতেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে শুরু করলো। গাড়ি বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো। দরজায় কলিং বেল দিতেই মা এসে দরজা খুলে দিলো, কিন্তু মায়ের মন খারাপ। পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ। কারো মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ এমন হবার কারণ কি এটাই বুঝতে পারছি না। মা খালামনিকে বললো আমাকে ঘরে রেখে আসতে। খালামনি আমাকে নিয়ে ঘরে চলে আসলো। আমাকে রেখে বের হবে এমন সময় বললাম, খালামনি সবার মন খারাপ কেন?

খালামনি:- কি জানি বুঝতে পারছি না, তুই বস আমি জেনে আছি কি হচ্ছে।

— খালামনি চলে যেতে আমি বারান্দার জানালা খুলে বাহিরের বৃষ্টি দেখছি। খুব ইচ্ছে থাকার পরেও আজ বৃষ্টি স্পর্শ করতে পারছি না। দুম করে দরজা খোলার শব্দে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি মা। কিছু বলবে?

মা:- ইতস্তত করতে করতে বললো একটা সমস্যা হয়ে গেছে।

— অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে কি সমস্যা?

মা:- আরমানদের বাড়ি থেকে ফোন আসছিলো, তারা নাকি আসতে পারবে না। কোন এক কারণে আরমান এ বিয়ে করতে চাচ্ছে না। তারা ক্ষমা চাচ্ছে। এদিকে মেহমানরা আসতে শুরু করে দিয়েছে। এখন কি করবো এই চিন্তায় সকলে প্রচণ্ড টেনশনে আছি। মান ইজ্জত মনে হচ্ছে সব যাবে। তোর বড় চাচা আর বাবা বেশ কয়েকবার তাদের ফোন দিয়েও কোন কাজ হয়নি।

— মনে মনে এতো আনন্দিত হলাম যা বলে বুঝানোর মত না। নিজেকে একদম শান্ত রেখে তাহলে এখন কি হবে? আমি কি সব খুলে ফেলবো?

মা:- পাগল নাকি তুই? কিছু একটা ব্যবস্থা ঠিকই হবে তুই থাক, আমি নিচে যাচ্ছি মেহমানদেরকে সামাল দিতে হবে কিছু একটা করে।

— মা চলে যেতেই আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে আনন্দে নাচতে শুরু করলাম। কিন্তু আমি নাচছি কেন? যদি বাবা মা কোন ভাবে অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করে ফেলে? আর সব চেয়ে বড় কথা সোহানের সাথেতো আর কোন রকম সম্পর্ক রাখবোই না স্বার্থপর একটা। বিকেল হয়ে এসেছে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই রোদের একটা ঝিলিক এসে মুখে লাগলো। আমার সাথে সাথে শেষ বিকেলে রোদও হাসতে শুরু করছে। এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ ভিতু সোহান একটি বারের জন্যও আমার রুমে আসলো না। দীর্ঘ সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে রুমে এসে বসলাম। দরজায় টোকা পরতে যেয়ে খুলে দিতেই ছোট খালামনি ঘরে ঢুকে পরলো।

ছোট খালা:- যাক অবশেষে সমস্যার সমাধান হয়েছে।

— খালামনির মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম তবে কি আরমানদের বাড়ি থেকে ওরা আসবে? কি হয়েছে খালা মনি?

খালামনি:- তোর বিয়েটা অবশেষে হচ্ছে।

— মনটা এতো সময় যতটা ভালো ছিলো তার দিগুন খারাপ হয়ে গেলো। খালা মনির দিকে তাকাতেই

খালা মনি:- বললো ভাগিস নীলা আর সোহানের বিয়েটা আমরা আগে দেইনি।

— মানে কি বলতে চাচ্ছো একটু বুঝিয়ে বলো।

খালা মনি:- সবাই মিলে ঠিক করা হয়েছে তোর আর সোহানের বিয়ে দিবে।

— তোমরা কি মনে করো হ্যাঁ যখন খুশি যার সাথে খুশি আমার বিয়ে দিয়ে দিবে? আমার কোন কথা বলার অধিকার নেই নাকি? তোমাদের কথা মত আমাকে সব করতে হবে? এমন সময় সকলে ঘরে ঢুকে পরলো।

বড় চাচা:- আমাদের ভুল হয়েছে, আমরাতো তোর ভালোই চেয়েছিলাম। কিন্তু এমনটা হবে কখনো আশা করিনি। সন্তানরা অন্যায় করলে বাবা যেমন ক্ষমা করে দেয়। বাবা মা যদি অন্যায় করে তবে কি সন্তানদের উচিৎ নয় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া। আর যদি না পারিস তাহলে আমাদের সকলকে এক সাথে আত্মহত্যা করে মরতে হবে। সমাজের মানুষের নানান কথা শুনে রোজ রোজ মরার চেয়ে এক বারে মরে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো হবে।

— এভাবে কেন বলছো তোমরা?

বড় চাচা:- ভালো পাত্র থাকলে অবশ্যই তোকে তার সাথেই বিয়ে দিতাম কিন্তু এতো অল্প সময়ে ভালো পাত্র পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমার অপদার্থ ছেলের সাথেই তোকে বিয়েটা দিতে হচ্ছে আর কোন উপায় না পেয়ে।

— কিন্তু তোমার ছেলে কি রাজী আছে এই বিয়েতে?

বড় চাচা:- ওর মত অপদার্থের রাজী থাকা না থাকায় কিছু আসে যায় না।

— এটা মোটেও ঠিক না, একেতো আমার মতামতের বিরুদ্ধে তোমরা বিয়ে ঠিক করেছিলে এখন আবার উনার মত না নিয়ে আবার বিয়ে দিবে। তাছাড়া নীলার সাথে উনার বিয়ে দেবার কথা ছিলো। উনি যদি তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে থাকে কোন রকম।

বড় চাচা:- তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আকাশ আর আফরিনের সাথে কথা হয়েছে ওর কোন অমত নেই। আর তোর ফুপু ফোপা, আফরিন আকাশ সকলেই কিছুক্ষণের ভিতর চলে আসবে।

— আসছে মানে কখন রওনা হয়েছেন উনারা?

মা:- ওরা সকালেই রওনা হয়েছে, ওরা আলাদা আসছে। আচ্ছা তুই রেস্ট কর আমরা নিচে যেয়ে দেখি কি অবস্থা।

— সকলে চলে যেতেই ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে রইলাম। আমার অনেক খুশি হবার কথা থাকলেও খুশি হতে পারলাম না। কারণ যে মানুষ ভালোবাসার মানুষের কথা পরিবারকে বলতে পারে না তাকে কি করে মেনে নিবো এটাই ভাবছি এখন। দরজায় দুমদাম ধাক্কা পরছে তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে যেয়ে দরজা খুলতেই আফরিন আপু ভিতরে ঢুকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করলো

আফরিন:- তোর প্রেম তাহলে সফল হলো,

— সফল না ছাঁই আমারতো এখন ইচ্ছে করছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু বাবা মায়ের সম্মানের জন্য তা পারছি না।

আফরিন:- মানে কি? এভাবে কেন বলছিস?

— কারণ তোমার ভাইকে আমার এখন সহ্য হয় না, যে ছেলে তার প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে জেনেও চুপ করে থাকে তাকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না।

আকাশ:- ঘরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিতে দিতে কোথাও ভুল হচ্ছে বুঝলে শালিকা।

— কোথাও ভুল হচ্ছে না, আপনাদের সোহান ভাইয়া একজন স্বার্থপর মানুষ, যে শুধু নিজের সুখটাই খোঁজে বা বুঝে।

আকাশ:- সে যদি শুধু নিজের স্বার্থই বুঝতো তাহলে হয়তো এখন সত্যি সত্যি বর বেশে এখানে আরমান থাকতো।

— আরমান কেন থাকবে তারাতো নিজেরাই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।

আকাশ:- তারা বিয়ে ভেঙে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তুমি জানো না কেন ভেঙে দিয়েছে।

— মানে কি ভাইয়া বুঝিয়ে বলেন।

আকাশ:- তোমার আপুর সাথে বিয়ের পরেই, তোমার আর ভাইয়ার বিষয়ে আমি সব জেনে যাই। এরপর যখন আরমানের পরিবার তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখনি আমি ভাইয়াকে ফোন দেই। ভাইয়া আমার কাছ থেকে আরমানের নাম্বার নিয়ে কথা বলে। তখন আরমান আমার কাছে আসে আমিও আরমানকে বুঝিয়ে বলি আরমান সব শুনে আগেই বিয়েটা ভেঙে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাইয়া বললো এই বেকার অবস্থায় সে কি করে বাড়িতে সব জানাবে, তার চেয়ে বরং একটা নাটক সাজাই আমরা তিনজন মিলে। যে বিয়ের দিন দুপুরের দিকে আরমান ওর বাবাকে দিয়ে জানিয়ে দিবে আরমান কোন কারণে বিয়েটা করছে না। আর তখন বাড়ির লোকজন কোন উপায় না পেয়ে তোমার আর ভাইয়ার বিয়ে দিতে বাধ্য হবে।

— এতোক্ষণে আমার সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমি আপু আর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম আমিও একটু নাটক করবো ওর সাথে। তোমরা যে আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছো তা বলবে না।

আকাশ:- হাসতে হাসতে যা খুশি করো তবে বিয়েটা ভেঙে দিও না

— হাসতে হাসতে উহু বিয়ে ভেঙে দিবো না। তবে সেই রকম একটা মজা দেখাবো সোহানকে।

আফরিন:- তোদের যা ইচ্ছে হয় কর আমরা আমাদের যা দায়িত্ব ছিলো তা পালন করেছি। বলতে বলতে দু’জন রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

— আমি ভাবতাছি কি ভাবে সোহানকে শায়েস্তা করা যায়। আমাকে এভাবে বোকা বানিয়েছে সবাই মিলে ইস আমি কেন আপু বা আকাশ ভাইয়াকে ফোন দিলাম না, আসলেই আমি একটা মাথা মোটা ফুলটুসি আজ বুঝতে পারছি। রাত নয়টার দিকে কাজী এসেছে, আমার পাশে আফরিন আপু আর বান্ধবীরা বসে আছে। কিছু সময়ের ভিতরেই আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। আমাকে আপু আর বান্ধবীরা মিলে সোহানের ঘরে নিয়ে আসলো। পুরো খাট ফুল দিয়ে সাজানো। খাটের উপর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। আমাকে খাটে বসাতে বসাতে আপু বলতে শুরু করলো।

আফরিন:- ভাইয়ার ভালো গুন আছে বুঝলি ইকরা নিজের বাসর ঘর নিজেই কত সুন্দর করে সাঁজিয়েছে। আহা ফুলসজ্জা কি না কি হবে।

— আপুর কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিলো। এদিকে আপুর সাথে বান্ধবিরাও বলতে শুরু করলো। আপু দেখেন দেখেন আপনার বোন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

আফরিন:- ঘোমটা টেনে দিতে দিতে এভাবে বলোনাতো আমার বোনটা এমনিতেই লজ্জাবতী।

— উফ তোমরা যাওতো আমার এসব শুনতে সত্যিই লজ্জা লাগছে।

বান্ধবিরা:- লজ্জা না ছাঁই আমরা বুঝতে পারছি তোর আর তর সইছে না। বলেই আপুর হাত ধরে বের হচ্ছে আর হাসছে।

— সেই যে সোহানের সাথে দেখা হয়েছে সকালে এরপর আর দেখা হয়নি। কি করছে এখনো আসছে না কেন? রাত বেড়েই চলেছে একা একা ঘোমটা টেনে বসে আছি মেজাজটা কি পরিমাণ খারাপ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে করছে রুম থেকে বের হয়ে যেতে, কিন্তু আজ রাতে তা সম্ভব নয়, অন্য কোন দিন হলে এভাবে কেউ বসিয়ে রাখতে পারতো না। নানান রকম কল্পনায় যখন আমি ডুবে আছি ঠিক তখনি আকাশ ভাইয়া আর সোহানের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি ঘোমটাটা টেনে চুপ করে বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান ধরলাম। সোহান দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে আমার গায়ে হাত দিয়ে ডাক দিতেই লাফিয়ে উঠে খবরদার আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি।

সোহান:- অবাক চোখে তাকিয়ে কেন করবো না তুইতো আমার বউ এখন।

— বউ বললেই হয়ে গেলো? যে প্রেমিক তার প্রেমিকার কথা বাড়িতে বলতে পারে না তার বউ হওয়ার চেয়ে পুকুরে ডুব দিয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো। শুধু বাবা চাচার সম্মানের কথা ভেবে করতে পারিনি।

সোহান:- দেখ তুই জানিস না অনেক কিছুই, আমি তোকে সব বলছি।

— আমার সাথে কোন রকম কথা বলতে আসবে না যদি ভালো চাও। ইস কোথায় বিয়ের পর হানিমুনে বার্লিন শহরে যেতাম আর কোথায় তুমি একজন বেকার মানুষ। বার্লিনের রাস্তার পাশে কোন এক কফিশপে বসে কফি খেতে খেতে সদ্য বিয়ে করা বরের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভালোবাসায় হারিয়ে যেতাম, কত স্বপ্ন দেখেছি সব মুহুর্তে শেষ হয়ে গেলো। শেষে বিয়ে করতে হলো একজন প্রতারক প্রেমিককে যে কিনা বিয়ের সময় প্রেমিকার দায়িত্ব নিতে চাইনি।

সোহান:- দেখ বার্লিনে না নিয়ে যেতে পারলেও কক্সবাজারেতো নিতে পারি। সেখানের কোন এক বড় হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’জন সমুদ্রের গর্জনের সাথে সাথে কফির মগে চুমুক দিতেই পারি। হঠাৎ গর্জে উঠা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার স্পর্শ করতেই পারি।

— তোমার লজ্জা করে না এসব বলতে?

সোহান:- না কেন লজ্জা করবে আমি একজন সফল প্রেমিক যে কিনা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করেছি।

— কপাল জোড়ে করেছো বুঝলে, আরমান বিয়ে করেনি তাই করতে পেরেছো।

সোহান:- উহু আমরা প্লান করেছি তাই করতে পেরেছি। তোকে বলিনি কারণ এটা তোর জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম। তোর যদি বিশ্বাস না হয় আকাশ আর আফরিনকে জিজ্ঞাসা করতে পারিস।

— আমার কোন ইচ্ছে নেই তোমার সাজানো নাটক শোনার।

সোহান:- বিশ্বাস কর আমি কোন নাটক করছি না, তুই থাক আমি ডেকে নিয়ে আসছি বলেই হাঁটার জন্য উঠে দাঁড়াতেই।

— হাত ধরে টান দিতেই বুকের উপর গেল। খবরদার যদি রুম থেকে বের হইছো।

সোহান:- জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি খুব।

— মিথ্যা কথা যদি ভালোবাসতে তাহলে এতো কষ্ট দিতে পারতে না।

সোহান:- বিশ্বাস কর বাবা চাচারা কখনোই আমাদের সম্পর্ক এতো সহজে মেনে নিতো না। তুইতো জানিস তারা দু’জন কেমন?

— হুম জানিতো, তাই বলে একবারও আমাকে বলবে না তুমি এমন প্লান করছো।

সোহান:- বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু একটু ভয় ও পেয়েছিলাম। কথায় আছে না মেয়েদের পেটে কথা থাকে না। সেই ভয়ে তোকে আর বলা হয়নি।

— সোহানের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে শয়তান বান্দর কবে নিয়ে যাবে কক্সবাজার,

সোহান:- যাবোতো আমাদের জন্য আকাশ আর আফরিন ও যায়নি চারজন এক সাথেই যাবো বলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

— এই ছাড়ো না নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।

সোহান:- লাইটেরর সুইজ অফ করতে করতে কি করে নিঃশ্বাস বন্ধ হবে আমিতো আছি এখানে।

— এই অন্ধকারে আমার ভয় লাগে।

সোহান:- একটা কথা বলি তারপর লাইট অন করে দিবো।

— হুম বলো।

সোহান:- ইয়ে মানে ভালোবাসি তোমাকে।

— অনেক অনেক ভালোবাসি বলেই জড়িয়ে ধরলাম সোহানকে।

সমাপ্ত।

বি:দ্র:- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-২৮

0

শেষ বিকেলের রোদ-২৮ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— আমি রাগ করবো কেন? আমার রাগ করার কোন অধিকারই নেই বলেই হাঁটা শুরু করতে সোহান পেছন থেকে শাড়ির আঁচল ধরে টান দিলো। ছেড়ে দাও আমাকে কেউ দেখবে।

সোহান:- না ছাড়বো না, আমার সাথে চল তারপর ছাড়বো।

— বললামতো যাবো না,

সোহান:- শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়ে ঠিক আছে।

— সোহান নিজের রুমের দিকে চলে গেলো আমিও চলে আসলাম আম্মুর সাথে ঘুমানোর জন্য। দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেলো। আপু আর আকাশ ভাইয়া চলে গেলো তাদের বাড়িতে নতুন জীবন সাজানের জন্য। আর আমরাও চলে আসলাম ঢাকায়। সোহানের সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে গভীর রাত অব্দি ছাদে বসে গল্প করছি সকলের চোখের আড়ালে। এভাবেই কেটে গেলো আরও সাতটা দিন। রাতে ডিনার করতে বসছি এমন সময় বড় চাচা বাবাকে বলতে শুরু করলেন।

বড় চাচা:- বুঝলি আরমানদের বাড়ি থেকে ফোন আসছিলো।

— বড় চাচার কথা শুনে খুব অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।

বাবা:- কি বলে উনারা।

বড় চাচা:- উনারাতো উনাদের বাড়ির মেয়েকে আমাদের বাড়িতে দিতে চাচ্ছে আর আমাদের বাড়ির মেয়েকে উনাদের বাড়িতে নিতে চাচ্ছে।

বাবা:- এটাতো ভালো কথা তারপরেও আমরা ওদের দু’জনের সাথে কথা বলি, আফরিনের কাছেও খোঁজ খবর নিয়ে দেখি আরমানের সম্পর্কে।

বড় চাচা:- হ্যাঁ তাতো নিবোই, ওরা বলতাছে বিয়ের পর ইকরাকে নিয়ে আরমান জার্মানিতেই চলে যাবে। আর সোহান যদি জব করতে চায় করবে। যদি নিজে ব্যবসা করতে চায় তাও করতে পারে কিংবা ইউরোপের কোন দেশে গেলে সেখানেও পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে।

— কি সব নিয়ে কথাবার্তা বলছো তোমরা?

বাবা:- তোর আর সোহানের বিয়ের বিষয়ে কথা বলছি। সোহান বাড়িতে আসুক তারপর ওর সাথেও কথা বলি।

— আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না, আমার লেখাপড়া শেষ হবে তারপরেই বিয়ের বিষয়ে চিন্তা করবো।

বাবা:- এতো ভালো সম্পর্ক সব সময় আসে না। তোমার সাথে পরে কথা বলবো, যদি কোন রকম কারো সাথে রিলেশন থাকে তবে তা ভুলে যাও।

— কি সব কথাবার্তা বলছো এসব হুট করে বিয়ের কথা বললেই হলো। বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে আসলাম। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে সোহানকে ফোন দিলাম।

সোহান:- হ্যাঁ বল কি বলবি?

— তুমি কোথায়?

সোহান:- টিউশনিতে আছি কেন কি হয়েছে?

— তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, বাবা আর বড় চাচা বিয়ে ঠিক করতাছে।

সোহান:- কার বিয়ে?

— কার আবার আমাদের দু’জনের।

সোহান:- বাহ তাহলেতো ভালোই।

— কিসের ভালো? তোমার আর আমার বিয়ে মানে এই নয় যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।

সোহান:- তাহলে কি?

— তোমার সাথে নীলার আর আমার সাথে আরমানের বিয়ে ঠিক করতাছে তারা।

সোহান:- কি?

— যা শুনছো তাই, এতো কথা বলতে পারবো না, তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসো। বলেই ফোন কেটে দিলাম। মাথায় কোন কিছুই কাজ করছে না। হুট করে কি হচ্ছে। আর বাবা বড় চাচাই বা হঠাৎ বিয়ের জন্য এতো উঠে বসে লেগেছেন কেন? রাত দশটার সময় ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি সোহান আর আমি। সোহানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে কি করবে এখন তুমি?

সোহান:- কি করবো, না আমার বাবা কোন কথা শুনতে চাচ্ছে না তোর বাবা। এই অবস্থায় আমি কি করতে পারি বল?

— তোমাকে কিছু করতে হবে না। তোমার সামনে দিয়ে আমার বিয়ে হয়ে যাবে আর তুমি তা চেয়ে চেয়ে দেখো।

সোহান:- কি বলছিস এসব তুই? তোকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো বল?

— কেন পারবে না, তাছাড়া নীলা তোমাকে পছন্দও করে এমন না যে নীলা তোমাকে পছন্দ করে না।

সোহান:- ওহ আর তোকে যে আরমান পছন্দ করে? তাহলে তোরতো আরও বেশী খুশি হবার কথা।

— দেখো আমি আজ কোন ঝগড়া করতে চাচ্ছি না। তুমি সোজা বাড়িতে বলো তুমি আমাকে পছন্দ করো। আমরা একজন আরেক জনকে ভালোবাসি। আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমিও তা বললো।

সোহান:- তা সম্ভব নয়। এটা বললে বরং আরও রাগ করবে উনারা।

–তাহলে কি তুমি বলবে না তাদের আমাদের সম্পর্কের কথা?

সোহান:- কি করে বলবো আমি বল?

— ওহ ঠিক আছে তোমাকে বলতে হবে না, তুমি তোমার মত থাকো আর আমার সাথে কোন রকম কথা বলার চেষ্টা করবে না। বলেই সোজা ছাঁদ থেকে নেমে নিচে রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না করে দিলাম। মনে হতে লাগলো সোহানকে ভালোবাসাটাই আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল। যে মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা বলতে জানে না। পুরো পৃথিবী যেন থমকে যাচ্ছে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মনের সাথে যুদ্ধ করা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। সোহান একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে মেসেজ করে যাচ্ছে কোন কিছুর রিপ্লাই করার মত ইচ্ছে শক্তি আর মনের ভিতর বেঁচে নেই। দেখতে দেখতে রাত দিন সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেটে গেলো আরও সাতটা দিন, এই সাত দিনে সোহানের সাথে আমার তেমন কোন কথায় হয়নি, যতটুকু সম্ভব সোহানকে এড়িয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এক কথায় মায়া যতটুকু সম্ভব কাটিয়ে নেবার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। জীবনে হয়তো কোন দিনও ভুলতে পারবো না। কিন্তু মায়াতো কাটিয়ে নিতেই হবে। আজ হোক কাল হোক বিয়েটা ঠিকই আরমানের সাথে হবে। বাড়ির পরিবেশ আর বাবা চাচাদের কথা বার্তায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মাসের শেষের দিকে ডাইনিং এ বসে আছি সকলে, এর মাঝে বড় চাচা বলতে শুরু করলো।

বড় চাচা:- যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামি শুক্রবারই ইকরা আর আরমানের বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে। তার কিছুদিন পর নতুন তারিখ ঠিক করে সোহান আর নীলার বিয়েটাও ওরা করিয়ে দিতে চাচ্ছে।

বাবা:- এটাতো খুশির কথা, এর ভিতর কি উনারা আসবে আমাদের এখানে?

বড় চাচা:- না উনারা বিয়ের দিনই আসবে, তার আগে আসবে না। যেহেতু উনারা ছেলে মেয়েদের দেখেছেন আর আমরাও দেখেছি আর লেনদেনের কোন বিষয় নাই তাই উনারা সোজা বিয়ের আসরেই আসবে।

— আমার দু’চোখের কোনে জল চলে আসলো, নিজেকে সামলে চুপ করে খাবার টেবিল থেকে উঠতে যাবো এমন সময় বাবা ডাক দিয়ে বললেন তোমার বন্ধু বান্ধবিদের লিষ্ট দাও, কার্ড তৈরি করতে হবে এবং তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমি কোন রকমে সেখান থেকে চলে আসলাম।
ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে আপুকে ফোন দিলাম, আপু বললো আমরা কি করবো বল, ভাইয়াতো কোন কিছুই বলছে না, আমরা কিছু বলে দোষের ভাগী হবো বল। আমি বললাম কবে আসবে তোমরা?

আফরিন:-বরযাত্রীর সাথেই আসতে হবে আমাদের মামাও তাই বলেছে।

— ওহ আচ্ছা ভালো থেকো আপু তুমিই ভালো কাজ করেছো বিয়ের আগে কাউকে ভালো না বেসে। ফোন কেটে দিয়ে নিরবে দু’চোখের পানি ফেলছি। আরতো কোন উপায় নেই। রাত দশটা পনের মিনিট আবার ও সোহানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ছাঁদের একো কোনায়। আগামিকাল আমার বিয়ে। তুমি ভালো থেকো নিজের খেয়াল নিও। সময় মত ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বাড়ি থেকে বের হইও। কালকের পর থেকেতো আর আমি থাকবো না। তখন এসবের খেয়াল রেখো।

সোহান:- হুম তুই ও সুখি হইস।

— সোহানের চোখের কোনে জল জমে আছে হয়তো সোহানের সাথে আকাশের ও আজ মন খারাপ। গুগিগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে আসলাম। ঘরের দরজা লাগিয়ে শুয়ে আছি, বাহিরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশী ঝড় তুফান আমার হৃদয়ের ভিতর হচ্ছে। তা কেউ বুঝে না কাউকে বুঝাতে পারি না। নানান রকম চিন্তা করতে করতে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেও দেখতে পেলাম বৃষ্টি হচ্ছে।

মা:- তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে খেয়ে নে, কিছুক্ষণ পরেই তোর ছোট খালামনি চলে আসবেন তার সাথে পার্লারে যাবি রেডি হবার জন্য।

— তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি। মা চলে যেতেই আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিং এ মাকে ডাক দিলাম।

মা:- এখানে আয় নাস্তা করে নে।

— না খাবো না তুমি আসো, এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, যেয়ে দরজা খুলতেই দেখি ছোট খালামনি চলে এসেছেন। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলো। মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে ভালো আছি তুমি কেমন আছো? খালু আসলো না?

ছোট খালা:- তোর খালু পরে আসবে, কিছু মার্কেটিং করতে বের হইছে তোর জন্য।

মা:- দু’জনে নাস্তা করে তারপর বের হো।

— আমি রুমের দিকে যেতে যেতে মাকে বললাম খালাকে নাস্তা দাও। আমি খাবো না, অল্প সময় পর মা আর খালামনি একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে আমার রুমে এসে ব্যাগটা এগিয়ে দিতে দিতে বললো শাড়িটা খুলে দেখতো তোর পছন্দ হয় কিনা। ব্যাগটা হাতে নিয়ে যখন পরে আসবো তখন দেখবে কেমন লাগছে,পছন্দ অপছন্দের কিছু নেই তোমাদের পছন্দ হয়েছে তাতেই হবে। বলেই ছোট খালার হাত ধরে রুম থেকে বের হলাম। উদ্দেশ্য সোজা পার্লার, খালা মনি গেট খুলতেই সোহানের মুখোমুখি হলাম সোহানের দু’হাত ভর্তি নানান রকম ফুল। রাগে ইচ্ছে করছিলো সব একটা টান মেরে ছিড়ে ফেলে চিৎকার করে বলি প্রেমিকার বিয়েতে বাসর ঘর সাঁজানোর দায়িত্ব নিয়েছো তুমিতো সফল পুরুষ। নিজিকে সামলে নিয়ে মাথাটা নিচু করে সোহানকে পাশ কাটিয়ে খালামনির হাত ধরে এগিয়ে চললাম বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটার দিকে। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে জলে। কোন রকমে সে জল লুকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।

চলবে…