— এই কি বলতে চাও তুমি হ্যাঁ, আমি কখনোই এমনটা চাইনা বুঝলে এমনটা তোমার মনের মাঝে আছে। দু’জন ঝগড়া করছি এমন সময় বাহিরে গাড়ির হর্ণ বাজতে শুরু করলো, বর যাত্রী চলে এসেছে ঝগড়া থামিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম গেটের সামনে।
–সবাই মিলে বিয়ে বাড়ির গেট আটকিয়ে ধরলাম।
সেখানে অনেক রকম দুষ্টমি আর গেটে বর ঢোকার সকল আয়োজন শেষে বরযাত্রী বাড়ির ভিতর ঢুকলো। একদিকে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে আরেক দিকে বিয়ে হচ্ছে অবশেষে দু’জন কবুল বলার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করলো। সন্ধ্যার আকাশ আলোকিত হয়ে গেছে নানান রকম আতশ বাজিতে। মুগ্ধ হয়ে সে আকাশ দেখছি। হঠাৎ হঠাৎ বাজির শব্দে মাঝে মাঝে চমকে উঠছি। চারিদিকে সকলে হাসি খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার দু’চোখ সোহানকে খুঁজে ফিরছে কিন্তু কোথাও সোহানকে দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় গেলো কি করছে, এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকে হাত ধরে টান দিতেই ঘুরে তাকাতেই সোহানকে দেখতে পেলাম।
সোহান:- ফুলটুসি কি খুঁজতেছিস?
— তোমাকে খুঁজতেছি আর কাকে খুঁজবো?
সোহান:- চল ঐদিক থেকে হেঁটে আছি।
— বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো, আমি হাত ধরে হেঁটে চলেছি, দু’জন হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর হেঁটে চলে আসলাম। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সোহান:- আবার পেছনে ঘুরে কোথাও না, ইচ্ছে হলো হাঁটার তাই হাঁটতে আসলাম। এখন ঐখানে কান্নাকাটি শুরু হবে তাই একটু ফ্রেস হাওয়া খেতে আসলাম বুঝলি।
— তোমার যত সব ঢং চলোতো তাড়াতাড়ি সবাই আবার খুঁজবে। দু’জন কথা বলতে বলতে আবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। বাড়িতে তখন সত্যিই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে, আপুর বিদায়ের মুহুর্ত চলছে। কম বেশী বাড়ির সকলেরই মন খারাপ আপু সকলের কাছ থেকে কেঁদে কেঁদে বিদায় নিচ্ছে, আপুর কান্না দেখে নিজের চোখের কোনেও জল জমে গেছে। না অসহ্য লাগছে নিজের কাছে সত্যিই এতো দিনের মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে চলে যাওয়ার চাইতে বেদনার আর কোন মুহুর্তই হতে পারে না। আপু আমাদের সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো, নতুন ঠিকানায় স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। আস্তে আস্তে বাড়ি খালি হতে শুরু করলো। এক সময় দাওয়াত খেতে আসা সকল আত্মীয় স্বজনরা চলে গেলো। বাড়িতে এখনো নানান রকম বাতি জ্বলছে শুধু যার জন্য এতো আয়োজন সেই মানুষটাই নাই। ফুপুর ঘরের এক কোনে বসে কান্না করছে। ফুপা ফুপুকে বুঝানোর চেষ্টা করছে মেয়েদের বিয়ে হবে স্বামীর বাড়ি যাবে এটাই নিয়ম। বাড়িতে শুধু আমরাই আছি যারা ঢাকা থেকে এসেছি, রুমে এসে কেমন জানি একটা শূন্যতা অনুভব করলাম। এ কয়দিন আপুর সাথে ঘুমিয়েছি আজ আর আপু নেই, সেই শূন্যতায় এই মূহুর্তে অনুভব হচ্ছে বুঝতে পারছি। নানান রকম চিন্তা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো।
মা:- কিরে কত ঘুমাবি তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে নে নাস্তা করবি। আজ আবার আফরিনদের বাড়িতে যেতে হবে অনুষ্ঠানে।
— আমি উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম, ডাইনিং যেতেই দেখি সকলে বসে আছে। এক সাথে নাস্তা খেতে বসলাম। ফুপা ঐ বাড়িতে আমরা কতজন যাবো তার একটা লিষ্ট করলো। আমরা বাড়িতে যারা আছি তারা আর আশেপাশের আর কয়েকজন মুরুব্বি যাবে। এর ভিতর ফুপু বলতে শুরু করলো সে যাবে না।
বাবা:- কেন তোর আবার কি হলো?
ফুপু:- সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে, ওদের সাথে করে নিয়ে আসলে বাড়ি ঘর গুছিয়ে রাখবে কে?
বড় চাচা:- তাও ঠিক তাহলে তোর ভাবিও থাকুক তোর সাথে।
বড় চাচী:- হ্যাঁ আমার কোন সমস্যা নেই তাহলে আমরা ননত ভাবি দু’জন থাকছি তোরা যেয়ে নিয়ে আয়।
— যেমন কথা তেমন কাজ আমরাই দুপুরে রওনা হলাম সে বাড়ির দিকে। দুপুর দুইটার ভিতর আমরা সে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। আমরা সকলে আপুর কাছে চলে গেলাম। আপুর সাথে নানান রকম গল্প করলাম। রুমি আপু নানান রকম দুষ্টমি করছে আপুর সাথে। আকাশ ভাইয়া সেখানে আসতেই সকলের দুষ্টমি বন্ধ হয়ে গেলো।
আকাশ:- কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো আপনাদের?
রুমি:- সব কি আপনাকে বলতে হবে নাকি? আমাদের বান্ধবির সাথে কত রকম কথা হতে পারে তা আপনার শুনতে হবে কেন?
আকাশ:- বুঝছি আপুরা জিজ্ঞাসা করে খুব অন্যায় করে ফেলছি এখন মাফ করেন আমি যাচ্ছি আর আপনারাও তাড়াতাড়ি যেয়ে খেয়ে নিন।
— আকাশ ভাইয়া রুম থেকে বের হতেই আবার সকলের হাসির আওয়াজে সে রুম ফেটে যাবার উপক্রম হলো।
রুমি:- তুইতো খুব ভাগ্যবতীরে আফরিন এমন বোকা বর পাইছিস, তবে হ্যান্ডসাম বলতেই হবে। আমাদের ভাগ্যে যে কি আছে আল্লাহ জানে।
আফরিন:- তোদের ও ভালোই হবে যা এবার লাঞ্চ করে নে সকলে এক সাথে যেয়ে।
— তুমি যাবে না খেতে আপু?
আফরিন:- পরে যাচ্ছি তোর ভাইয়া আসুক এক সাথে যাবো।
রুমি:- বুঝছি বুঝছি খুব শিগ্রই ডজন খানিক বাচ্চা কাচ্চার জননী হও দোয়া করে দিচ্ছি।
— সকলে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম সোহান নীলার সাথে কথা বলছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। নিজেকে যতটুকু সম্ভব সংযত রেখে সেখান থেকে হাঁটা শুরু করলাম। নিজেকেই নিজে বলতে শুরু করলাম একজন মানুষ আরেক জন মানুষের সাথে কথা বলতেই পারে। আমিও তো কথা বলি। ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে চললাম লাঞ্চের জন্য। সকলের সাথে খেতে বসতেই সোহানও চলে আসলো আমার সামনা সামনি বসেই কিরে ফুলটুসি খেতে পারছিস না? দেখ কিভাবে খেতে হয়। বলেই খাওয়া শুরু করলো এমন ভাবে খাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে কতদিন না খেয়ে আছে, মনে মনে প্রচণ্ড রকম হাসছি আর সোহানের খাওয়া দেখছি। খাবার টেবিলেই আরমান এসে সবাই কে সালাম দিয়ে আমাদের পাশে বসলো। এবার সোহানের রিয়াক্ট দেখার জন্য আমি ওর দিকে তাকালাম। সোহানের কোন রকম রিয়াক্ট দেখতে পেলাম না ও সেই আগের মতই খেয়ে যাচ্ছে। সোহান আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে আর কথা বলে চলছে।
খাওয়া শেষ হতে সকলে টেবিল থেকে উঠে পরলাম।
আরমান:- সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো চলুন না আমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসবেন।
সোহান:- হ্যাঁ ঘুরে দেখা যায়,
— বলেই আমার দিকে তাকালো, যাও তোমরা ঘুরলে ঘুরে আসতে পারো আমি আপুর রুমে যাচ্ছি, যেয়ে দেখি আপু রেডি হলো কিনা।
আরমান:- আরে আসুন না দু মিনিট লাগবে আমাদের বাসায় যেতে।
— সবাই যাচ্ছে যাক অন্য আরেকদিন যাওয়া যাবে। বলেই আপুর রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আরমান সবাইকে নিয়ে ওদের বাড়ির দিকে রওনা হলো। আপুর রুমে যেয়ে নক করতেই আপু ভিতরে ঢুকতে বললো। ভিতরে ঢুকে আপুকে বললাম খেয়েছো কিনা?
— বাহ বাহ এতো ভালোবাসা জমে গেছে দু’জনের মাঝে এই একদিনে।
আফরিন:- হুম অনেক অনেক ভালোবাসা।
— আচ্ছা কি কি নিবে নিয়ে রেডি হও। সবাই আসলেই আমরা রওনা হবো, তা না হলে অনেক রাত হয়ে যাবে।
আফরিন:- আচ্ছা গুছিয়ে নিচ্ছি, তুই ও আমাকে সাহায্য কর।
— দু’জনে মিলে আপুর আর আকাশ ভাইয়ার জামা কাপড় গুছিয়ে নিলাম একটা ব্যাগের ভিতর। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর সকলে আরমানদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসলো। সবাই আসার কিছুক্ষণ পরেই আমরা রওনা হলাম ফুপুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাত আটটার দিকে ফিরে আসলাম এ বাড়িতে। রাতের খাবার শেষ করে সকলে গল্প করতে শুরু করলাম। আপুর সব বান্ধবীরাও এসেছে, দারুণ সময় কেটে যাচ্ছে গল্পে গল্পে। নানান রকম গল্প হচ্ছে ছোট বেলার গল্প প্রেমের গল্প। গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।
হঠাৎ করেই আপু বলে উঠলো তোর ভাইয়া খুব সুন্দর গান গাইতে পারে।
সোহান:- তাই নাকি তাহলেতো গান শুনতেই হবে। বলো বলো সকলে আজ তোমার গান শুনি।
আকাশ:- না ভাইয়া আজ না প্লীজ অনেক রাত হয়ে গেছে।
— ভাইয়া প্লীজ প্লীজ শুনান না একটা গান, সকলের অনুরোধে আকাশ ভাইয়া গান শুরু করলো। সকলে মুগ্ধ হয়ে গান শুনছি। এতো সুন্দর কণ্ঠ মুহুর্তেই সকলে মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে গেলাম। গান শেষ হতেই সকলে তালি দিয়ে বলে উঠলাম বাহ বাহ।
সোহান:- ভাই আমাকেও একটু শিখিয়ে দিওতো গান গাওয়াটা। যদি প্রেমিকাকে গান শুনিয়ে মন জয় করতে পারি।
আকাশ:- ভাইয়া কি যে বলেন না। আপনি অনেক স্মার্ট আর এতো সুন্দর করে কথা বলেন যে সব মেয়েরা ফিদা হয়ে যাবে মুহুর্তেই।
— ঠিক বলছেন ভাইয়া আমিও তাই বলে যে কোন মেয়েরা ফিদা হয়ে যায় মুহুর্তেই। যেখানে যায় সেখানেই মেয়েরা ঘিরে ধরে। এই যে আজ আপনাদের বাড়িতেও দেখলাম, মেয়েরা এমন ভাবে ঘিরে ধরেছিলো যে আমাদের সময় দিতেই পারছিলো না। এমন কি আপনাদের রুমেও গেলো না একটি বারের জন্যও।
সোহান:- দেখ এমন সব মিথ্যা কথা বলবি না খবরদার। কোন মেয়েরাই আমাকে ঘিরে ধরেনি।
— মিথ্যা বইলো না, আমার চোখ এড়াতে পারবে না।
সোহান:- তোর চোখে সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারছি ঢাকায় নিয়ে যেয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে।
— কথা বলতে বলতে ফুপা এসে বললো অনেক রাত হয়েছে সকলে ঘুমিয়ে পরো যার যার রুমে যেয়ে। আকাশ ভাইয়া আর আপু নিজেদের রুমে চলে গেলো। আমিও হাঁটা শুরু করলাম আম্মুর সাথে ঘুমাতে তার রুমের দিকে। হঠাৎ পেছন থেকে সোহান ডাক দিয়ে বললো তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। চল পুকুর ঘাটে যাই। আমি মাথা নেড়ে বললাম না যাবো না তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই।
সোহান:- বিশ্বাস কর আমার সাথে জোড় করে নীলা কথা বলছে।
— তাতে আমার কি আমি তোমাকে কিছু বলিনি। কিংবা তার জন্য তোমাকে কোন প্রশ্নও করিনি।
সোহান:- কিন্তু তুই রাগ করেছিসতো।
— আমি রাগ করবো কেন? আমার রাগ করার কোন অধিকারই নেই বলেই হাঁটা শুরু করতে সোহান পেছন থেকে শাড়ির আঁচল ধরে টান দিলো।
— কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠবো এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো দাঁড়াও দাঁড়াও। সকলে এক সাথে পেছনে ফিরে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম। আপুর সেই মোটা ফ্রেমের চশমা পরা কাজিন দৌঁড়ে আসছে আর বলছে দাঁড়াতে, কি পরিমাণ রাগ উঠেছে তা নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। তবুও নিজেকে যতটুকু সামলে রাখা যায় রাখলাম। মেয়েটা এসে বলতে শুরু করলো আমিও তোমাদের সাথে যাবো। কারো মুখে কোন কথা নেই, সে আমাদের সাথেই যাবে এমর সময় আপু বললো তুমি আমাদের সাথে যেয়ে কি করবে? আমাদের অনেক সময় লাগবে, তাছাড়া তুমিতো সেখানে রেডিও হবে না। আর আমরা আগে ডাক্তারের কাছে যাবো তারপর পার্লারে যাবো। আপুর কথা শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগলো, আমার যতটা ভালো লেগেছে হয়তো মেয়েটার ঠিক ততটাই খারাপ লেগেছে। সে মন খারাপ করে পেছনে হাঁটা শুরু করলো। আমরা তিনজন গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি রওনা হলো শহরের দিকে। সোহান সামনের সিটে আমরা দু’জন পেছনের সিটে বসেছি। গাড়ির জানালার গ্লাস হালকা করে নামিয়ে দিতেই বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেলো মাথার সব চুল।
সোহান:- পেছনে ফিরে তাকিয়ে, এই ঠাণ্ডা লাগবে এভাবে গ্লাস খুলে রাখিস না।
আফরিন:- কিছু হবে না বরং ভালোই লাগবে আরতো কয়েক মিনিটের ব্যাপার। চাইলে হিংসা না করে তুমিও গ্লাস নামিয়ে দিতে পারো।
সোহান:- ফুলটুসির সাথে থেকে বেশী পাকনা হয়ে গেছিস তাই না?
— আপু হাসছে, আমি রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম তোমাকে আমি কি করেছি?
সোহান:- আমাকে যা করার তা তো করেছিস সাথে আফরিনকেও নিজের মত কথা বলতে শিখিয়ে ফেলেছিস।
— তোমার বোনতো কচি খুকি কিছুই বুঝে না, জানে না, তাকে হাত ধরে ধরে শিখাতে হবে? আজ বিয়ে দিচ্ছো কয়েকদিন পর দেখবা ডজন ডজন ছেলেমেয়েরা যেয়ে তোমাকে মামা মামা বলে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে। এমন কথা শুনে দু’জনেই শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে
সোহান:- তোদের এমন প্লানের জন্যই দেশের জনসংখ্যা রাতারাতি দ্বিগুন হয়ে গেছে।
— কথা বলতে বলতে গাড়ি পার্লারের সামনে চলে আসলো। সকলে গাড়ি থেকে নামলাম। সোহান আমাদেরকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো তোদের হলে আমাকে ফোন দিস আমি বাহির থেকে ঘুরে আসি। আপু আবার দুষ্টমি করে বললো কেন আমাদের সাথে আসো তোমাকেও একটু সাজিয়ে দিবে। সোহান রাগান্নিত চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে গেলো। প্রায় তিন ঘন্টার মত সময় লাগলো দু’জনের তৈরি হতে ততক্ষণে দুপুর হয়ে এসেছে, রেডি হবার পর সোহানকে ফোন দিতেই সে জানালো আসেপাশেই ঘুরছে অপেক্ষা করতে এসেই আমাদের নিয়ে যাবে। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করতেই সোহান চলে আসলো। আমাদের দিকে এক নজর দেখে মুর্তির মত হা করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আফরিন:- এই ভাইয়া কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
সোহান:- লাল পরী আর নীল পরী দেখতাছি,
— এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে মুখে মাছি ঢুকবে।
সোহান:- মুখ বন্ধ করতে করতে ঢুকলে সমস্যা নাই, সুন্দরিদের দেখতে দেখতে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যাওয়া যায়।
— এসব ফাজলামো বাদ দিয়ে চলে জীবনে বহুবার দেখেছো আর বহুবার দেখতে পাবে যার কোন হিসেব নেই, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আপুর মেকআপ নষ্টরদ হয়ে যাবে।
সোহান:- হয়তো দেখতে পাবো কিন্তু আজকের মত কি আর পাবো বলতে বলতে নামতে শুরু করলো।
— রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললাম এর চেয়েও ভালো ভাবেও হয়তো দেখতে পারো। গাড়িতে উঠতেই গাড়ি এগিয়ে যেতে শুরু করলো বাড়ির পথে। পুরো রাস্তায় সোহান ফোনে আমাদের দু’জনের ছবি তুলতে তুলতে বাড়িতে এসেছে। আমি জানি ছবি তোলা শুধুই একটা বাহানা, ও আমাকে দেখার জন্যই মোবাইল হাতে নিয়ে এতো ছবি তুলেছে। বাড়িতে আসতেই আপুকে নিয়ে রুমের ভিতর ফ্যানের নিচে বসালাম। সোহান ওর রুমের দিকে চলে গিয়েছে, দুপুরের খাবার আমি আর আপু মায়ের হাতে খেয়ে রুমে বসে বসে গল্প করছি, বরযাত্রী আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে। এমন সময়
— বড় চাচীর দিকে তাকিয়ে আমাকে আবার ডাকছে কেন? তোমার ছেলের কাছে গেলে আমার সাজগোজ নষ্ট করে দিবে। আমি এখন যাবো না।
বড় চাচী:- দেখ পাগলী মেয়ে বলে কি, ও কি এতো বোকা যে আজ তোর সাজগোজ নষ্ট করে দিবে?
— তোমার ছেলের কোন বিশ্বাস নেই, বলতে বলতে ব্যাগ থেকে পাঞ্জাবীর প্যাকেটটা বের করে নিলাম।
আফরিন:- এটা কিসের ব্যাগরে?
— তোমার ভাইয়ের জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনেছি সেই ব্যাগ, বিয়ে বাড়িতে এসেছে সব শার্ট আর টিশার্ট নিয়ে।
বড় চাচী:- মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এজন্যই তোকে এতো ভালোবাসি। বাড়ির কার কি প্রয়োজন, সব খেয়াল তুই রাখিস।
— হয়েছেতো এখন আমাকে যেতে দাও। নয়তো তোমার ছেলেই আবার এখানেই চলে আসবে বলে রুমের ভিতর থেকে বের হয়ে সোহানের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। রুমে ঢুকতেই সোহান অপলক চেয়ে রইলো। কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো?
সোহান:- কি বলবো না বলবো সে পরে দেখা যাবে আগেতো তোকে দেখতে দে।
— খাটের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি পুরো খাট জুড়ে শার্ট প্যান্টের ছড়াছড়ি। সোহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম এসব কি?
সোহান:- এ জন্যই তো তোকে ডেকেছি কোনটা পরবো বুঝতে পারছি না।
— আজ বিয়ের দিন আর তুমি শার্ট পরবে?
সোহান:- কি করবো? পাঞ্জাবীতো নিয়ে আসি নাই, আর তুইও তো মনে করলি না একবার ও।
— আমি মনে করবো কেন? পাঞ্জাবী কি আমি পরবো? এতো বড় হয়েছো নিজের জিনিস নিজে গুছিয়ে নিয়ে আসতে পারো না? বলেই পাঞ্জাবীর ব্যাগটা সোহানের দিকে এগিয়ে দিলাম।
সোহান:- ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে কি আছে এর ভিতর?
— খুলেই দেখো।
সোহান:- ব্যাগটা খুলতেই ওয়াও! এতো সুন্দর পাঞ্জাবী।
— থ্যাংকিউ বলেই শরীর থেকে টিশার্ট খুলতে যাবে অমনিই বললাম তোমার কি শরম লজ্জা নেই, এতো বড় একটা মেয়ের সামনে তুমি খালি গা হচ্ছো।
সোহান:- বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি? যে জামা খুলতে পারবো না?
— তুমি মেয়ে মানুষ না তাতে কি আমিতো মেয়ে মানুষ যাও ওয়াশ রুমে যাও। সোহান ওয়াশ রুমে যেয়ে পাঞ্জাবী পরে আসলো। আমি এতো সুন্দর লাগছিলো সোহানকে বলে বুঝাতে পারবো না।
সোহান:- কিরে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?
— কই তোমাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।
সোহান :- সত্যি তোর চয়েজ আছে বলতেই হবে আয়তো সেল্ফি তুলি।
— আমি সোহানের পাশে দাঁড়াতেই সোহান বললো আরেকটু কাছে আয়, আমি একদম সোহানের বুকে মাথা রেখে দিলাম সোহান ছবি তুলে নিলো। দু’জন ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। লক্ষ করে দেখলাম আসে পাশের যারা ছিলো আমাদের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে, অনেকেতো আস্তে আস্তে বলেও দিচ্ছে দু’জন কে বেশ মানিয়েছে। কোন কথা না বলে সোজা আফরিন আপুর কাছে চলে আসলাম। আপুর পাশেই পরিবারের সকলেই বসে ছিলো। সবাই বললো তোরা দু’জন ওর পাশে বস আমরা বের হই, বাড়িতে মেহমানে ভরে গেছে, বলে একে একে সকলে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আমরা তিন জন বসে গল্প করছি।
সোহান:- বুঝলি ফুলটুসি আজ ওর আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না, দেখছিস কেমন একবার এদিক একবার সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে। ইস কখন আকাশের বাড়ির লোকজন আসবে, কখন কবুল বলে শ্বশুড় বাড়ি যাবে, ফুলে ফুলে সাজানো বাসর।
আফরিন:- ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু, আমার বিয়েটা হোক তারপরেই তোমাদের বিয়ের কথা বলছি তখন দেখবো কে তাড়াহুরো করে বাসর ঘরে যাবার জন্য, সারা রাত তোমাকে বাহিরে দার করিয়ে আমরাই ঘরের ভিতর ঢুকে ঘুমাবো।
— উফ কি শুরু করলে তোমরা, চলোতো তোমার স্টেজে যাবার সময় হয়েছে, হয়তো অল্প সময়ের ভিতর বরযাত্রীরা চলে আসবে। তিনজন হেঁটে চলে আসলাম ফুল দিয়ে সাজানো সুন্দর স্টেজটার সামনে। দু’জন মিলে ধরে আপুকে স্টেজে তুলে দিয়ে আপুর পাশে বসলাম। এক পাশে সোহান আর এক পাশে আমি দু’জনের চোখাচোখি হচ্ছে, কথা হচ্ছে মনে মনে সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম একদিন আমিও এভাবে লাল বেনারসি পরে এভাবে স্টেজে বসে রইবো, ভাবতাছি সেদিন যদি বর বেশে অন্য কেউ আসে তখন তোমার কেমন লাগবে, যদি এভাবে ঠিক স্টেজের কোনায় বসে থাকতে হয়?
আফরিন:- উফ কি সব কথা বলছিস? উল্টা পাল্টা কথা বলে আমার মনটা খারাপ করে দিসনা তো তোরা।
সোহান:- বলতে দে ওকে হয়তো আমাকে ওর ভালোই লাগে না আমাকে। হয়তো ও চায় অন্য কারো জন্য সাজতে, আসলে মনতো তার নিজের মতই চাইবে নিজের মতই চলবে আমরা কি তাদের আটকে রাখতে পারবো বল?
— এই কি বলতে চাও তুমি হ্যাঁ, আমি কখনোই এমনটা চাইনা বুঝলে এমনটা তোমার মনের মাঝে আছে। দু’জন ঝগড়া করছি এমন সময় বাহিরে গাড়ির হর্ণ বাজতে শুরু করলো, বর যাত্রী চলে এসেছে ঝগড়া থামিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম গেটের সামনে।
— সোহানের ডাকে তাকিয়ে দেখি আমি ডাইনিং ছেড়ে অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিছুটা লজ্জা নিয়ে আবার পেছন দিকে ফিরে এসে ডাইনিং এ ঢুকলাম। সকলে নাস্তা শুরু করে দিয়েছে আমরা দু’জন ও তাদের সাথে যোগ দিলাম। নাস্তার টেবিলে সকলে হাসি খুশি কথাবার্তা বলছে।
ফুপু:- তোর শরীর কেমন এখন?
— জ্বি ফুপু ভালো, টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তা করছি, হঠাৎ আপুর এক কাজিন বললো গান বাজছে নাচ হবে না? ঠিক সেই মুহুর্তে আপুর দু’জন বান্ধবী রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো নাস্তা শেষ হলেই নাচ শুরু হবে। আপনারা এতো গুলো মানুষ শহর থেকে এসেছেন আপনাদের নাচতো দেখবোই।
ফুপু:- আসো আসো তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নাও।
— সকলে এক সাথে নাস্তা শেষ করে ডাইনিং থেকে বের হলাম।
রুমি:- আফরিন তোর সব কাজিনদের নিয়ে উঠানের ঐ দিকে আয়, নাচ গান সেখানেই করবো।
আফরিন:- কিন্তু ঐ দিকটাতো ভেজা,
রুমি:- আরে কিছু হবে না একটু ঝাড়ু দিয়ে দিলেই হবে। আর কাদার ভিতর নাচ গানইতো মজা।
আফরিন:- আচ্ছা তোরা দু’জন যা আমি সবাইকে নিয়ে আসছি।
— আপু এসে আমাদের সবাইকে বাড়ির উঠানে ডেকে নিয়ে আসলো। বিশাল উঠান এরই মধ্য আপুর বান্ধবীরা ঝাড়ু দিয়ে অনেকটাই পরিষ্কার করে ফেলেছে। মোটামুটি ভালোই পরিষ্কার অবস্থা পানি জমা নেই কোথাও তবে কাদা মাটি ঠিকই বুঝা যাচ্ছে। আর এটাও বুঝা যাচ্ছে যে বা যারাই নাচানাচি করবে পরে যাবার সম্ভাবনা একশো ভাগই থাকছে। যে পরবে না এই কাদামাটিতে লাফিয়ে সেই ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী। আমি শিউর এই কাজটা আপুর বান্ধবীরা ইচ্ছে করেই করছে। যেন দু’চার জন পিচ্ছিলেয়ে পরে সবাই কে বিনোদন দিতে পারে সেজন্যই।
আফরিন:- ইকরা ভুলেও কিন্তু এই কাদা মাটিতে লাফাতে যাবি না। এমনিতেই তোর শরীরের অবস্থা ভালো না পরে গেলে শেষে কোমড়টা ভেঙে বসে।থাকতে হবে ঘরে।
— না না আমার পক্ষে নাচা সম্ভব নয়। তোমরাই নাচানাচি করো আমি বরং বসে বসে দেখবো। এমন সময় দুম করে আবারো সাউন্ড বক্সে বেজে উঠলো,
“হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে
হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে
সুরমা-কাজল পরাও কন্নার ডাগর নয়নে,
আলতা বিছপ রাঙা দুটি, রাঙা চরণে
ভরা কলস ছলাৎ ছলাৎ ডাঙা এ নিতল ।
হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে”
— সকলের চেহারাতেই আনন্দের ছাপ, সকলেই গানের তালে তালে হাত পা নাড়াচ্ছে, আপুর দুই বান্ধবী গানের তালে তালে নেচে চলেছে, এদিকে আশে পাশের বাড়ি থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আসতে শুরু করেছে নাচ দেখার জন্য। রুমি আপু আপুর কয়েকজন কাজিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো কাদার মাঝে নাচার জন্য, তারাও কোন রকমে হাত পা ছুড়ে নাচার চেষ্টা করছে। সেদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে কিছু সময়ের জন্য সোহানের দিক থেকে নজর কিছুটা সরে গিয়েছিলো। হঠাৎ করে গাঢ়ে কারো স্পর্শে চমকে উঠলাম। ঘুরে তাকিয়ে দেখি সোহান? ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম কি?
সোহান:-নাচবি নাকি তুই?
— মাথা নেড়ে তুমি যেয়ে নাচো, আমার এতো সখ নেই।
সোহান:- ঠিকতো শেষে আবার হিংসা করিস না,
— আমার বয়েই গেছে তোমার সাথে হিংসে করতে।
সোহান হাসতে হাসতে চলে গেলো আমিও নাচ দেখায় মনোযোগী হলাম। হঠাৎ করে সোহান আপুর দু’জন ছেলে কাজিন আর এলাকার ছোট ছোট ছেলে গুলোকে নিয়ে সেখানে নাচতে শুরু করলো। ওদের নাচ দেখে আস্তে আস্তে আপুর বান্ধবীরা থেমে গেলো। এবং এক সময় তারাও এসে সাইডে দাঁড়িয়ে সোহানদের নাচ দেখতে শুরু করলো। এর আগে গ্রামের বিয়ে কখনো দেখিনি শুধু শুনেছি যে অনেক মজা হয় আজ তা অনুভব করছি সত্যিই উপভোগ্যময়, দীর্ঘ সময় সকলে নাচ গান করে পুকুরে চলে গেলো, ছেলেরা এক পাশে আর মেয়েরা একপাশে গোসল করতে শুরু করলো, ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিলো, কতই না পুকুরে লাফিয়ে লাফিয়ে গোসল করছি, মন চাইলেও আজ পুকুরে নামতে পারছি না। গোসল শেষে সবাই মিলে এক সাথে খেতে বসেছি উঠানে। এরপর শুরু হলো নানান আয়োজন সন্ধ্যায় বর পক্ষের লোকজন আসবে আপুকে গায়ে হলুদ দিতে। সকলে মিলে হলুদ, মেহেদী বাটতে শুরু করেছে। সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি এতো সুন্দর পরিবেশ দেখে, মনে মনে লজ্জা লাগছে যখন ভাবছি আমার বিয়েতেও এমনটা হবে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আকাশ ভাইয়াদের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে তারা অলরেডি রওনা হয়ে গেছে হয়তো আর কিছুক্ষণের ভিতর তারা চলেও আসবে। এদিকে সোহানকে আজ বড্ড বিজি দেখাচ্ছে নানান রকম কাজে সবাইকে সাহায্য করছে আমার সাথে কথা বলার মত সময়ও কি ওর বের হয়না। ভাবতে ভাবতে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির লোকজন বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো। মুরুব্বিদের সাথে আকাশ ভাইয়ার ছোট বোন, আরমান, নীলা আরও অনেক অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা এসেছে। ছোট করে একটা স্টেজ সাজানো হয়েছে সেখানেই হলুদের শাড়ি পরে আপু বসে আছে। আকাশ ভাইয়ার বাড়ি থেকে আসা সকলেই হলুদের ড্রেস পরে আসছে। বেশ লাগছে একে একে সকলে আপুর মুখে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ পেছন থেকে,
আরমান:- বলে উঠলো কেমন আছেন? মন খারাপ নাকি?
— হ্যাঁ ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাচ্ছি, টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে এর মাঝে সকলকে নাস্তা খাবার জন্য ডাক দিলো, আরমানকে বললাম যেয়ে নাস্তা খেয়ে নিন।
আরমান:- হ্যাঁ আসুন আপনিও খেয়ে নিবেন।
— আপনারা খেয়ে নিন, আমি পরে খাবো। আরমান উনার আত্মীয়দের সাথে নাস্তা খাবার জন্য চলে গেলো। আমিও কিছুক্ষণ পর মেহমানদের খাবার ঠিক মত দেয়া হয়েছে কিনা দেখার জন্য সেদিকে গেলাম।
ফুপু:- কিরে মা তুই ও খেয়ে নে হালকা নাস্তা।
— না ফুপু আমার খিদে নেই, এর মাঝে বাহির থেকে বাবার ডাক শুনে ছুটে গেলাম। বাবা মা, চাচা চাচী সকলে চলে এসেছেন। আমি ছুটে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। সকলে মিলে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম। সবাইকে রুমে রেস্ট নিতে বলে আমি বের হয়ে ফুপুকে ডাক দিয়ে বললাম বাবা মা এসেছে।
ফুপু:- তুই এই দিকটা দেখ, আমি যেয়ে সকলের সাথে দেখা করে আসছি।
— ফুপু চলে যেতেই আমার নজর গেলো সোহানের দিকে। সোহান সকলকে খাবার পরিবেশন করছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই
সোহান:- জিজ্ঞাসা করলো কিছু বলবে?
— ঢাকা থেকে সবাই চলে এসেছে, তুমি কি দেখা করবে না?
সোহান:- দেখা করবো না কেন? মেহমান যাক তারপর দেখা করে আমরা ঐ বাড়িতে যাবো। তুই অপেক্ষা কর খাওয়ার পর্বটা শেষ হোক।
— আমিও এদিক সেদিক ঘুরে দেখছি কারো কিছু লাগবে কিনা। কিছুক্ষণের ভিতর মোটামুটি নাস্তার পর্ব শেষ হয়ে গেলো। মেহমানরা বের হতে শুরু করলো। সকলে বাড়িতে যাবার জন্য রেডি হলো, আরমান আমার কাছে এসে বললো আপনিও চলুন আমাদের সাথে। আপনারা যান আমরা পরে আসবো।
আরমান:- আমাদের সাথে গেলে আপনার ভালো লাগবে।
— সমস্যা নেই আপনারা যান আমরাও কিছু সময় পর আসছি, আর ঢাকা থেকে বাবা মা এসেছে এখনো ঠিক মত কথা বলা হয়নি।
আরমান:- ওহ আচ্ছা আপনার বাবা মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন না?
— আরমানের কথায় কিছুটা লজ্জাবোধ হলো, আমি বললাম উনারাতো রেস্ট নিচ্ছে বের হয়নি এখনো, চলুন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় নীলা আরমানকে ডাক দিলো বের হবার জন্য।
আরমান:- আচ্ছা এখন থাক পরে এক সময় পরিচিত হবো, এখন সকলে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে, আপনারও তাড়াতাড়ি ঐ বাড়িতে চলে আসুন।
— হ্যাঁ অবশ্যই, আরমান বিদায় নিয়ে চলে যেতেই আমি বাবা মায়ের রুমে ছুটে আসলাম। এসে দেখি সোহান আগে থেকেই সকলের সাথে কথা বলছে। আমি যেতেই বড় চাচা রেগে আমাকে বলতে শুরু করলো।
বড় চাচা:- তোদের কি আমরা কিছু লাগি না নাকি?
— কেন এমন করে বলছো তোমরাইতো আমাদের দু’জনের সব।
বড় চাচা:- তাহলে কি তোরা এমনটা করতে পারতি, অসুস্থ হলি দু’জনে অথচ একটি বারের জন্যও জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। সোহানের কথা বাদ দিলাম কিন্তু তুই কি করে পর করে দিলি?
— আমি ছুটে বড় চাচার বুকের উপর মাথাটা লাগিয়ে দিয়ে এমন করে বলতে পারলে তুমি।
বড় চাচা:- আমি বললেই দোষ আর তোরা অন্যায় করলে কোন ক্ষতি নেই তাই না?
— থাকবে না কেন একশো বার থাকবে হাজার বার থাকবে কিন্তু তোমরা কেন বুঝনা, তোমরা দূর থেকে চিন্তা করবে আমরা কি করে সামান্যতেই তোমাদের চিন্তায় ফেলে দেই বলো?
বাবা:- হয়েছে বেশ বড় হযে গিয়েছিস দু’জন দেখতে পাচ্ছি।
— কথা বলতে বলতে আফরিন আপু ঢুকে বলতে শুরু করলো তোরা এখনো তৈরি হলি না? সকলে তোদের জন্য অপেক্ষা করছে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তুই আর ভাইয়া। আমি আর সোহান বাবা মাকে বলে বের হয়ে এলাম। সোহান নিজের রুমে আর আমি আমার রুমে চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি হলুদেে জন্য নিয়ে আসা জামা কাপড় গুলো বের করে পরতে শুরু করলাম। খুব সুন্দর করে সেজেছি তবুও কি যেন কম কম মনে হচ্ছে ভাবতে ভাবতে বাহির হতেই। পেছন থেকে কেউ হাত ধরে টান দিতেই ফিরে তাকালাম।
সোহান:- কানের কাছে চুলে গোলাপ ফুলটা গেথে দিতে দিতে বললো এটা না দিলে মানাবে না। সাথে এই ফুলের মালাটা খোপায় দিতে হবে তবেই পারফেক্ট লাগবে।
— আমি অবাক হয়ে সোহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিই আমি মনে মনে ঠিক এই ফুল গুলোয় খুঁজতে ছিলাম। কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
সোহান:- এই ফুলটুসি কোথায় হারালি?
— তোমার ফুলের মাঝে হারিয়ে গিয়েছি, হারিয়ে যেতে চাই এখন তোমার হাতে হাত রেখে দূর বহু দূর। বলেই সোহানের দিক হাত বাড়িয়ে দিলাম।
— সোহান হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো, আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলাম।
সোহান:- এমন করে আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁট নয়তো পরে যাবি।
— পরবো না তুমি ধরে রেখেছো না? কি করে পরবো। আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
সোহান:- উহু তোকে খুব সুন্দর লাগছে ঠিক যেন আসমানের পরী মাটিতে নেমে এসেছে।
— ইস ঢং করো নাতো, কি সব বলো না তুমি।
সোহান:- সত্যি বলছি, আজ সব ছেলেরা তোর পিছু লাগবে রে।
— কথা বলতে বলতে সকলের সাথে যেয়ে যোগ দিলাম, গায়ে হলুদে যাবার জন্য দু’টো গাড়ি আনা হয়েছে ছেলেদের জন্য একটা আর মেয়েদের জন্য একটা গাড়ি, সোহান ছেলেদের গাড়িতে আর আমি যেয়ে মেয়েদের গাড়িতে বসলাম। আপুর কাজিনরা আর রুমি আপুরা এ গাড়িতে বসেছে।
রুমি:- ইস আমার মনেই ছিলো না ফুলের কথা, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ইকরা।
— ধন্যবাদ আপু তোমাদেরকেও খুব সুন্দর লাগছে,
ফারিয়া:- আপুর সেই মোটা ফ্রেমের চশমা পরা কাজিন, কোথায় পেলে ফুল? ইস আমাদের জন্যও নিয়ে আসতে।
— হুম ভুল হয়ে গেছে সোহানকে বলার দরকার ছিলো তোমাদের জন্যও নিয়ে আসতে। আসলে ব্যস্ততার মাঝে কি আর এতো কিছু মনে থাকে বলো।
ফারিয়া:- ওহ সোহান ভাই এনে দিয়েছে?
— হ্যাঁ ওইতো এনে দিলো। কথা বলতে বলতে গাড়ি এগিয়ে চলছে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির পথে, এদিকে ফারিয়া মুখ ভার করে বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে খুব কাছের কারো সাথে প্রচণ্ড রকম ঝগড়া হয়েছে যার কারণে এমন ভাবে বসেছে, রুমি আপুদের সাথে গল্প করতে করতে এক সময় আমাদের দু’টো গাড়িই ঢুকে পরলো আকাশ ভাইয়াদের বাড়ির ভিতর। বিশাল বড় বাড়ি বিশাল জায়গা জুড়ে লাইটিং করা হয়েছে। মিউজিক বেজে চলেছে, আমরা গাড়ি থেকে নামতেই আকাশ নীলা আরও কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাদের স্বাগতম জানিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকালো।বিশাল বড় করে স্টেজ বানানো হয়েছে, সেখানেই বসে আছে আকাশ ভাইয়া। তার চারিপাশে বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনরা ঘিরে রেখেছেন। একে একে সকলে এগিয়ে গেলো হলুদ দেবার জন্য আমি ছবি তুলছি প্রচণ্ড ভীর লেগে গেছে সেখানে, হঠাৎ করে কাপড়ের ভিতর দিয়ে পেটের উপর কারো স্পর্শে কেঁপে উঠি। মনে করি যে সোহান দুষ্টমি করছে, কিন্তু ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠি, অপরিচিত কেউ একজন যাকে এর আগে কখনোই দেখি নি, হাতে হলুদ লাগানো। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই তাকে বললাম কি সব অসভ্যতা করছেন।
— খিলখিল করে হাসতে হাসতে লোকটা বললো বিয়ে বাড়িতে এমটা হবেই সুন্দরি মেয়েদের সাথে, চলো নিরিবিলি কোথাও যাই অনেক মজা হবে।
— তার এমন নোংড়া ইঙ্গিতে মনে চাচ্ছিলো পা থেকে জুতা খুলে সোজা গালে চালিয়ে দিতে, কিন্তু লোক লজ্জার ভয়ে তা না করে তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। তাকে বললাম এ নোংড়া কথা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যেতে।
— রাগী রাগী ভাব নিয়ে তোমার খুব দেমাগ দেখছি, এখুনি সব ভেঙে চূরমার করে দিচ্ছি, বলেই হলুদ মাখা হাত নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরতেই, সোহান কোথা থেকে এসে দু’হাত চেপে ধরলো।
সোহান:- হাত দু’টো মোচড় দিয়ে খুব সখ মেয়েদের গায়ে হলুদ দেবার?
— ছেড়ে দে না হলে খুব খারাপ হবে তোর।
— লোকটার মুখ থেকে প্রচণ্ড রকম বাজে গন্ধ বের হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে লোকটা নেশা করেছে, আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম ছেড়ে দাও।
সোহান:- এক হাত ছেড়ে দিয়ে লোকটার মুখ বরাবর প্রচণ্ড জোড়ে থাপ্পর মেরে দিয়ে কি খারাপ করবি বল?
— চিৎকার চেঁচামেচিতে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেলো। সবাই জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে কি হয়েছে, এমন সময় ঐ লোকটাই চিৎকার করতে করতে বললো, একটুইতো হাত দিয়েছি বেশী কিছুতো করিনি, তবে সুযোগ পেলে ছাড়বো না। লোকজনের আর বুঝতে বাকি রইলো না ঘটনা কি ঘটেছে। আমি সকলের সামনে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করেছি। আরমান ঐ লোকটাকে মারতে মারতে সেখান থেকে বের করে দিলো। আকাশ ভাইয়া স্টেজ থেকে নেমে এসে ক্ষমা চাইলো।
সোহান:- আরে এ কি করছো? তোমার কোন দোষ নেই, আর উনি নেশায় ছিলো নেশার মাঝে নিজের সেন্স হারিয়ে এমনটা করেছে।
— সোহান আমাকে নিয়ে সাইডে চলে আসলো, ঐ বাড়িতে হলুদের পর্ব শেষ হতেই আমরা রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে উঠার সময় সোহান সবাইকে বলে দিলো এ বাড়িতে যা হয়েছে তা যেন ঐ বাড়িতে কাউকে না জানাই, বিয়ে বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি হবে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে আকাশ ভাইয়া আর আরমান ও দু’বার করে ফোন দিয়েছে, এবং বার বার দুঃখ প্রকাশ করেছে। সকলে বাড়িতে চলে আসলাম, দুমদাম মিউজিক বাজছে বাড়িতে, মুরুব্বিদের ভিড় সব কিছুর মাঝ দিয়ে নিজের রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে চলে আসলাম। মুখ চেপে ধরে কান্না করে দিলাম। কোথায় থেকে কি হলো বিয়ে বাড়িতে এমন জগন্য একটা ঘটনা ঘটে যাবে কোন ভাবেই ভাবতে পারি নাই। ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। আসতেই আপুকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখলাম।
আফরিন:- কিরে কেমন মজা করলি ঐ বাড়িতে?
— মুখে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলে হুম আপু অনেক মজা করেছি, ইস গ্রামে না আসলেতো জানতেই পারতাম না বিয়ে বাড়ি গুলোতে এতো মজা হয়।
আফরিন:- আর তোর দুলাভাইকে কেমন দেখলি? ছবি তুলিস নাই নাকি?
— ওহ দুলাভাইতো পুরো হিরোর মত ছিলো, মেয়েনা যে ভাবে ঘিরে রেখেছিলো চারিদিক থেকে তুমি দেখলে হিংসেয় মরে যেতে।
আফরিন:- থাক থাক আমার এতো হিংসা করে মরে মরার দরকার নেই, দেতো দেখি এখন কি কি ছবি তুললি।
— ওহ হ্যাঁ এই নাও ফোন, তুমি ছবি দেখো আমি সবার সাথে দেখা করে আসি বলে ফোনটা আপুর হাতে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। বাবা মাকে খুঁজতে বের করলাম।
— কই আমিতো ঠিকই আছি, জার্নি করে এসেছি তাই হয়তো এমন লাগছে।
বড় চাচী:- না নিশ্চই কিছু হয়েছে, সোহান কিছু বলেছে? শুধু আমাকে একবার বল, এই বিয়ে বাড়ি থেকেই ওকে বের করে দিবো।
— বড় চাচীর গলা জড়িয়ে ধরে উহু ও আমাকে কিছুই বলেনি, সত্যি বলছি তোমার ছেলে এখানে আসার পর আমাকে একটুও জ্বালায়নি, বরং অনেক অনেক কেয়ার করেছে।
বড় চাচা:- কই তোমরা বাড়িতে কত কাজ আর তোমরা এখানে বসে গল্প করছো, ইকরা তোর শরীর ভালো না যা মা গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে নে।
— সকলে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমিও রুম থেকে বেরিয়ে আমার রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে আসছে মনে হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে পরে যাবো, অনেক কষ্টে হেঁটে রুমে যেয়েই বিছানায় শুয়ে পরলাম।
আফরিন:- কিরে ঘুমিয়ে পরবি নাকি?
— চোখ বন্ধ অবস্থাতেই আপু আমার ভালো লাগছে না।
আফরিন:- তোর কি হয়েছো বলেই কপালে হাত দিয়ে একিরে তোরতো আবার জ্বর এসেছে ইস ডাক্তারের দেয়া ঔষধ গুলোও খাসনি। আমি পানি নিয়ে আসছি তুই শুয়ে থাক ঔষধ গুলো খেয়ে ঘুমাবি।
— অল্প সময়ের ভিতর আপু পানি আর ঔষধ আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি ঔষধ খেয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। একটা সময় ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মা পাশে বসে আছে। আমি উঠে বসতে বসতে জিজ্ঞাসা করলাম কখন এলে তুমি?
মা:- সারা রাত এ ঘরেই ছিলাম তুইতো বেহুশ হয়ে ছিলি, আর আমরা সারা রাত জেগে তোর মাথায় পানি দিয়েছি, শরীর মুছে দিয়েছে। ইস কি যে ভয় পেয়েছি, তার উপর বাহিরে যাবার মত কোন অবস্থাই ছিলো না, সারা রাত কি বৃষ্টিটাই না হয়েছে।
— চিন্তা কইরোনাতো মা আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি দেখছো না।
সোহান:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নে, পার্লারে যেতে হবে আফরিনকে নিয়ে সেই সাথে তোকেও ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসবো।
— আমি যেয়ে কি করবো তুমি সাথে গেলেইতো হবে।
সোহান:- বেশী কথা বলিস নাতো আমি কি পার্লারের ভিতর ঢুকবো নাকি? মেয়ে মানুষ তুই ঢুকবি তাছাড়া তোকেওতো টুকটাক রেডি সাজতে হবে আজ পার্লার থেকে। সব চেয়ে বড় কথা বাহির থেকে ঘুরে আসলে মন ভালো হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কোন শাড়ি পরবি নিয়ে বের হয়ে নে। বলে সোহান বের হয়ে গেলো রুম থেকে,
— আম্মুও বললো সোহান ঠিকই বলেছে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে যা পার্লার থেকে ঘুরে আয়। আমি উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে এসে ঔষধ খেয়ে ব্যাগ থেকে নীল রঙের শাড়িটা বের করলাম আর সোহানের জন্য কেনা পাঞ্জাবীটা এক বার বুকে জড়িয়ে আবার ব্যাগের ভিতর রেখে রুম থেকে বের হলাম। আপু আর সোহান আগে থেকেই রেডি হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আমাকে দেখে সোহান বলতে শুরু করলো তাড়াতাড়ি চল বাহিরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহ জানে কয় ঘন্টা লাগবে তোদের রেডি হতে ইস বসে বসে আমিতো বোরিং হয়ে যাবো।
আফরিন:- কেন কেন বোরিং হবে তুমি বরং বাহিরে এসে ঘুরবে ফিরবে মেয়েদের সাথে ইটিস পিটিস করবে।
সোহান:- থাক সাথেই দু’টো সুন্দরি আছে আর কয়টা লাগে শুনি?
— কথা বলতে বলতে গাড়িতে উঠবো এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলো দাঁড়াও দাঁড়াও। সকলে এক সাথে পেছনে ফিরে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম।
— দোকানের ভিতর ঢুকতেই ফুপা বলতে শুরু করলো তোরা দেখতো কোন শাড়িটা ভালো লাগে? দোকানি কয়েক রকম শাড়ি বের করে দিলো সকলে মিলে একটা হলুদ রঙ এর শাড়িই পছন্দ করলাম। সকলের জন্য এক রকম শাড়ি বেশ লাগছে ভাবতে। এর মাঝেই ফুপা বললো তোদেরতো হলো এখন ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী পছন্দ করতে হবে এক রঙের। সে দোকান থেকে শাড়ি গুলো নিয়ে অন্য আরেকটা দোকানের ভিতর ঢুকলাম। সেখান থেকে হলুদ রঙের কিছু পাঞ্জাবী কিনে দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম।
ফুপা:- তোমাদের কারো আর কিছু কেনার থাকলে কিনে নিতে পারো।
— সকলেই টুকটাক কেনাকাটা করে গাড়িতে যেয়ে বসলো। সোহান আমার দিকে তাকিয়ে ফুপাকে বললো আপনারা সকলে চলে যান আমি আমরা দু’জন কিছুক্ষণ পর আসছি।
ফুপা:- কেন তোরা আবার কি করবি?
সোহান:- আমরা আরও কিছু কেনাকাটা করবো।
ফুপা:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।
— গাড়ি চলে যেতেই সোহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম কি হলো সবার সাথে গেলে না কেন?
সোহান:- দু’জন মিলে ঘুরবো বলে।
— তোমার সাথে আমার ঘুরতে বয়ে গেছে।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আর কি আমি একাই ঘুরি বলেই হাঁটা শুরু।
— এই দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো? আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।
সোহান:- কেন আমার সাথে বলে যাবি না?
— তুমিতো অভিমানও বুঝ না, রাগ ভাঙাবে কি করে?
সোহান:- আমার ঐসব বুঝার সময় নেই, সুন্দর মেঘলা দিন, খোলা আকাশের নিচে বসে ফুটপাতের ঝাল ফুচকা খাবার মজাই আলাদা।
— কথা বলতে বলতে একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দু’প্লেট ফুচকার অর্ডার করে দু’জন চেয়ার টেনে বসলাম। অল্প সময়ের ভিতর ফুচকা চলে আসলো। ফুচকা খাচ্ছি সোহান তাকিয়ে আছে দেখে কিছুটা লজ্জা লাগছে। মুখ ফুসকে বলে ফেললাম এমন করে কেন তাকিয়ে আছো?
সোহান:- কি জানি কখনো এতো কাছে থেকে কাউকে খেতেতো দেখিনি।
— ওহ তাই না? বলতে বলতে সোহানের মুখের দিকে একটা ফুচকা তুলে ধরলাম।
সোহান:- আমি খাচ্ছিতো তুই খা।
— আমার হাতেরটায় বেশী টেস্ট আছে খেয়ে দেখো।
সোহান:- তাইনা?
— হুম তাইতো বলেই মুখে ঢুকিয়ে দিলাম ফুচকাটা।
সোহান:- হয়েছে এখন তুই খা আমি মুগ্ধ হয়ে তোর খাওয়া দেখি।
— এই মানুষজন হাসবে বুঝলে তোমার এসব কথা শুনলে।
সোহান:- তাতে আমার কি? আমিতো আমার প্রিয়সীকে দেখবো, অন্য কোন মানুষকেতো আর দেখবো না?
— আহা কত সখ, মুখে তুই তুই বলো সব সময় আর এখন প্রিয়সী।
সোহান:- তো তুই আমার ছোট তোকে তো তুই বলেই বলবো।
— তুমি আসলেই একটা পাগল, প্রমিকাকে কি কেউ তুই বলে নাকি? আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে কি তুমি তুই করে বলতে?
সোহান:- এই তোর জায়গায় অন্য মেয়ে আসবে কেন? অন্য মেয়েকে কি আমি ভালোবাসি নাকি?
— উফ চুপ করে খাওতো।
সোহান:- আচ্ছা চুপ।
— আমি ফুচকা খেয়ে চলছি আর সোহান সেই একই রকম তাকিয়ে আছে। আচ্ছা এতো ভালোবাসে আমাকে কই কখনোতো বুঝতে দেয়নি আগে। ওর চোখে এতো মায়া আমি আগে কেন বুঝিনি। যতই দেখছি ততই ঐ চোখের মায়ায় পরে যাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে দু’জন হাঁটতে শুরু করলাম। বাহিরে বাতাস হচ্ছে বাতাসে চুল গুলো এলেমেলো ভাবে উড়ছে। সোহান মাঝে মাঝে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দিচ্ছে। আমার ভীষণ রকম ভালো লাগছে অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করছে ওর প্রতিটা স্পর্শে। হঠাৎ করেই হাঁটতে হাঁটতে সোহান আমার হাতটা চেপে ধরলো। এই প্রথম সোহান এভাবে আমার হাত ধরে হাঁটছে। আমি মনে মনে বলছি আরও আগে কেন তুমি আমাকে ভালোবাসো বলোনি। আরও আগে কেন তুমি আমার হাতে হাত রাখোনি? কেন এতোটা কাছে এসে এক সাথে পাশে থেকে পথ চলোনি?
সোহান:- এই তুই কি কিছু বলছিস নাকি?
— আমি কিছু বললে তুমি বুঝ নাকি?
সোহান:- আমি বুঝতে চাইনা কোন কিছু, তবে তোর প্রতিটা অনুভবে মিশে থাকতে চাই। আমি বুঝতে পারি না হয়তো অনেক কিছুই, তবে তোকে সারা জীবন এমনি করে ভালোবেসে যেতে চাই।
— ওহ তাই না? ভালোবাসি কথাটা বলানোর জন্য আমাকে কত কি করতে হলো আর সে বলে এমনি করে সারা জীবন ভালোবাসবে।
সোহান:- হুম তা ঠিক বলেছিস আচ্ছা তুই ও তো বলতে পারতি ভালোবাসার কথাটা?
— আমি কি করে বলবো? মেয়েরা কি ভালোবাসার কথা আগে বলে নাকি? আর তাছাড়া তোমার মনের ভিতর যদি অন্যকারো বসবাস থাকতো তখন আমি কি করতাম?
সোহান:- আর তোর মনে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে কেমন হতো?
— নেই তো তাই না? হাঁটতে হাঁটতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। আশে পাশে কোন রিক্সাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহান:- এদিক সেদিক তাকিয়ে, চল কোথাও যেয়ে দাঁড়াই, না হলে পুরো ভিজে যাবো।
— ভিজলে ভিজবো কি হবে একদিন না হয় দু’জন এক সাথে ভিজলাম।
সোহান:- কিন্তু যদি জ্বর চলে আসলো?
— কিছু হবে না, হাঁটোতো তুমি বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দু’জন বৃষ্টিতে ভিজেই হাঁটছি জীবনের এতো গুলো বসন্তে আমি বহুবার বৃষ্টিতে ভিজেছি কিন্তু আজকের মত এতো আনন্দ আমি কোন দিনই পাইনি। হঠাৎ বেল বাজাতে বাজাতে একটা খালি রিক্সা পাশ কেটে যাবার সময় সোহান তাকে ডাক দিয়ে থামালো। দু’জন রিক্সায় উঠো বসলাম।
বৃষ্টিতে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে দু’জনের। টপটপ করে চুল বেয়ে পানি গালে পরছে। চোখের কাজল পানিতে লেপ্টে গেছে, শরীরের সাথে জামা গুলো ভিজে লেগে আছে। হঠাৎ সোহানের দিকে তাকাতেই লক্ষ করলাম সোহান অপলক আমার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ মেঘের গর্জনে সোহানকে জড়িয়ে ধরলাম।
সোহান:- কানের কাছে মুখ এনে আস্তে আস্তে এই কি করছিস? কেউ দেখলে কি ভাববে?
— জানি না কিছু কেউ দেখার মত আছে নাকি এখানে?
সোহান:- যে মেয়ে মেঘের একটা গর্জনে ভয় পায় সে মেয়ে আবার আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে কি করে এটাই ভেবে পাইনা।
— সোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কেন জানি তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগে না। আবার তোমার সাথে ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারি না। ভালোবাসা হয়তো এমনি।
সোহান:- কি জানি ভালোবাসার উপরতো আর আমি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করিনি। যে বলবো ভালোবাসা কেমন হয়।
— সোহানের বুক থেকে মাথা তুলে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো তুমি।
সোহান:- চোখে চোখ রেখে কি বলবো?
— ভালোবাসা কেমন হয়?
সোহান:- ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়া, যে মায়া সারা জীবনেও শেষ হয়না। রাগ অভিমান সব কিছুর পরেও প্রিয় মানুষটি কখনো অপ্রিয় হতে পারে না এই মায়ার কারণে। শত আবদার জুড়ে থাকে এই ভালোবাসার মানুষটি। অদ্ভুত ভালো লাগায় জড়িয়ে থাকে দু’জন মানুষ, এক জনের কষ্টে অন্য জনের কষ্ট হবার নামই হয়তো ভালোবাসা।
— এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি সোহানের দিকে, মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছি, একটা মানুষ কত সুন্দর গুছিয়ে ভালোবাসার কথা বলে। মনে মনে আমিতো তোমার প্রেমে মরেই যাবো। এতো সুন্দর করে ভালোবাসার কথা কেমনে বলো তুমি। সোহানকে প্রশ্ন করলাম তুমি নাকি জানো না ভালোবাসা কি তাহলে কি করে বললে এসব?
সোহান:- বের হয়ে আসলো ভিতর থেকে একা একা।
— একা একা আবার বের হয়ে আসে কি করে।
সোহান:- এই যে যেমন করে তুই দেখলি সুনলি জানলি তেমন করেই।
— ওহ তাই বুঝি?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আই লাভিউ বলো।
সোহান:- মানে কি? এখন তোকে ভালোবাসার কথা বলতে হবে কেন?
— সোহানের কাধে একটা হাত রেখে ঝুম বৃষ্টি তুমি আমি পাশাপাশি একই রিক্সায় বসে আছি , দু’জনের বসার মাঝে দূরত্ব থাকলেও যাতে মনের মাঝে কোন রকম দূরত্ব না থাকে তাই বলবে।
সোহান:- তো আমাকে বলতে হবে কেন তুই বললেও তো পারিস।
— চোখ দু’টো বড় বড় করে সেহানের দিকে তাকিয়ে বলবা কিনা বলো?
সোহান:- চোখের উপর চোখ রেখে এতো বড় বড় চোখ করছিস কেন? তোকে পেত্নীর মত লাগে চোখ বড় বড় করে তাকালে। বলেই হাসতে শুরু করলো।
— কি বললা তুমি আমাকে পেত্নীর মত লাগে? বলেই সাহস করে আজ প্রথম বারের মত সোহানের ঠোঁটে কিস করে দিলাম। মেঘের গর্জন বেড়েই চলছে। সোহান আমার দিকে চেয়ে রয়েছে, এদিকে ঠাণ্ডায় পুরো শরীর কাঁপতে শুরু হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান বুকের সাথে চেঁপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করলো। তোকে খুব ভালোবাসি, সব অবস্থায় তোকে অনেক সুন্দর দেখায়। সোহানের বুকে মুখটা চেপে ধরে বললাম তবে যে বলো আমাকে পেত্নীর মত লাগে।
সোহান:- ভেজা চুলে বিলি কাটতে কাটতে, তোকে রাগানোর জন্য বলি, রাগলে তোকে আরও বেশী সুন্দর লাগে।
— ওহ তাই না? বলেই সোহানের বুকের উপর উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে শুরু করলাম। আর বলতে শুরু করলাম আমাকে রাগাতে খুব মজা লাগে তাই না?
সোহান:- এই ব্যথা পাবো থাম।
— উহু থামবো না, তুমি এমন কেন বলতো বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহানের বুকে কাজলের কালো দাগ লেগে গেছে। তা দেখে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- পাগলের মত হাসছিস কেন?
— তোমার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখ কি অবস্থা বলেই হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এই যা শার্টটা নষ্ট হয়ে গেলো।
— রিক্সার হুটটা উঠিয়ে দিয়ে ভিজতে ভিজতে বললাম সমস্যা নেই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে, আর যতটুকু থাকবে আমি ধুয়ে দিবো।
সোহান:- চল হারিয়ে যাই দু’জন।
— কোথায় হারাবে?
সোহান:- দূর অজানায় নতুন কোন শহরে যে শহরে শুধু তুই আর আমি থাকবো। নতুন জীবন শুরু করবো। চারিদিকে সবুজ অরণ্য থাকবে। থাকবে ছোট ছোট দীঘি দীঘির চারপাশে থাকবে অসংখ্য নানান রকম ফুলের গাছ। সেখানে শুধুই থাকবে ভালোবাসা, হারাবি আমার সাথে?
— হুম আমিতো তোমার সাথে হারাতেই চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে চাই। নিবে তুমি আমাকে তোমার সাথে?বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, সোহান আমার দিকে চেয়ে আছে, কিছু বলতে যাবে তখনি রিক্সা চলে আসলো বাড়ির সামনে। সোহান রিক্সা থামাতে বললো। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে বাড়ির ভিতর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
— ঠিক স্বপ্নের মত একটি বিকেল কাটিয়ে ঘরে ঢুকছি। মনে হচ্ছে যেন যুগ যুগ ধরে এমনি একটি বিকেলের অপেক্ষায় আমি ছিলাম। ভেজা জামা চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ড্রেস চেঞ্জ করে বের হবার পরেই বুঝতে পরলাম যে শরীরের জ্বর জ্বর ভাব চলে আসছে, সেই সাথে ঠাণ্ডাও লেগে গেছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই বরং সময় যত বাড়ছে মনে হচ্ছে বৃষ্টিও বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই মোবাইলের হাতে নিতেই বড় চাচার ফোন দেখে কিছুটা চমকে উঠলাম।
ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে
বড় চাচা:- কেমন আছিস মা?
— জ্বি আমি ভালো আছি আপনারা সকলে কেমন আছেন?
বড় চাচা:- আমরাও সকলে ভালো আছি সোহানের ফোন বন্ধ পাচ্ছি তাই তোকে ফোন দিলাম।
— মনে হয় ফোনে চার্জ নেই তুমি লাইনে থাকো আমি যেয়ে ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি।
বড় চাচা:- আচ্ছা ঠিক আছে যা।
— দৌঁড়ে সোহানের রুমে যেয়ে ফোনটা দিয়ে বললাম বড় চাচা ফোন দিয়েছে। সোহান ফোনটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। অনেকটা সময় দু’জন কথা বলার পর লাইন কেটে দিলো। আমি জিজ্ঞাসা করলো?
সোহান:- তোকে কেন সব বলতে হবে?
— কি আজব তুমি বললে কি এমন ক্ষতি হবে?
সোহান:- সব বিষয়ে জানার এতো আগ্রহই কেন থাকবে তোর?
— হয়েছে আমার খুব ভুল হয়েছে আর কখনো কিছু জানতে চাইবো না মাফ করে দাও। বলেই ঘুরে চলে আসবো তখনি সোহান পেছন থেকে হাত টেনে ধরলো। কি হচ্ছে ছাড়ো আমাকে,
সোহান:- না ছাড়লে কি করতে পারবি? সব সময় এতোটা রাগ দেখাছ কেন?
— রাগ দেখাতে আমার বয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ছাড়ো না হলে কামড়ে দিবো, চিৎকার করবো, বাড়ির সব মানুষ জড়ো করবো।
সোহান:- আচ্ছা তাই বলেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে নে চিৎকার কর এই বৃষ্টির ভিতর তোর আওয়াজ যদি কারো কান অব্দি পৌঁছায় তো চিৎকার কর বলেই বিছানার উপর শুয়িয়ে দিলো।
— ওমনি ঘুরে সোহানের হাতে কামড় লাগিয়ে দিতেই সোহান আহ বলে চিৎকার করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এই সুযোগে বিছানা থেকে নামতে যাবো অমনি সোহান আবারও ধাক্কা মেরে বিছানায় শুয়িয়ে দেবার সাথে সাথে আমি ফুপু ফুপু বলে চিৎকার শুরু করলাম।
সোহান:- শক্ত করে দু’হাত চেপে ধরে চুপ করবি নাকি আমি চুপ করাবো?
— আমাকে ছাড়ো বলে দু’হাত ছুটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কোন ভাবেই পেরে উঠছি না।
করুণ চোখে সোহানের দিকে তাকালাম। সেখানে কোন রকম মায়া দেখতে পেলাম না বরং ভয়ংকর রকম রেগে আছে সে কিন্তু কেন আমি কামড় দিয়েছি তাই বলে কি? এদিকে মাথা প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে জ্বর বেড়ে গিয়েছে। সোহানের নিঃশ্বাসের শব্দ আমার কান অব্দি এসে পৌঁছাচ্ছে, অথচ আমি চিৎকার করার মত শক্তি পাচ্ছি না। ওকে বলতেও পারছি না আমার কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে।
— চোখ মেলে যখন তাকালাম রাত আনুমানিক দশটার মত বাজে, পাশেই আপু বসে আছে আমি উঠার চেষ্টা করবো,
আফরিন: শুয়ে থাক উঠতে হবে না। যা ভয় দেখিয়েছিলি।
— ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম আমি আফরিন আপুর রুমে, কিন্তু এ ঘরেতো আমি ছিলাম না, আপু আমি এ ঘরে কি করে আসলাম?
আফরিন:- তুই জ্ঞান হারানোর পর ভাইয়া তোকে কোলে করে নিয়ে এসে এই ঘরে শুয়িয়ে দিছে। এই বৃষ্টির ভিতরে তোর জন্য কত দৌঁড়াদৌঁড়ি করলো সে। ভিজে ভিজে ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঙ্গে করে তাকে নিয়ে এসেছে। তোকে চেক আপ করিয়েছে। দেখেছিস তোকে কত ভালোবাসে। আচ্ছা তোর খারাপ লাগছিলো তুইতো আমাকে বা ভাইয়াকে বলতে পারতি।
— আরে হঠাৎ করেই এমনটা হলো, আমি ফোন নিয়ে গেলাম কথা বলিয়ে দেবার জন্য ফেরার সময় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো তারপর আর কিছু মনে নেই।
আফরিন:- তুই রেস্ট কর আমি ভাইয়াকে যেয়ে বলে আসি তোর জ্ঞান ফিরেছে। আর তোর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।
— লাগবে না আপু, আমার খিদে নেই তোমরা খেয়ে নিও। আপু রুম থেকে বের হয়ে গেলো আমি দু’চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলাম, ইস কত ব্যথায় না পেয়েছে সোহান। ওকে কামড়ে দিয়েছি অথচ ও আমার জন্য এই বর্ষার রাতে ভিজতে ভিজতে ছুটে যেয়ে ডাক্তার নিয়ে এসেছে, হ্যাঁ এটাইতো ভালোবাসা। ভাবনা বেশী দূর এগোনোর আগেই তাতে ছেদ পরে কপালে কারো ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শে। চোখ মেলে তাকাতেই সোহানের মুখটা দেখতে পেলাম।
সোহান:- এখন কেমন লাগছে?
— উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে ভালো।
সোহান:- উঠতে হবে না, শুয়ে থাক কিছু খাবি?
— না কিছু খাবো না, তোমাকে ধন্যবাদ।
সোহান:- কেন?
— এই যে আমার জন্য কত কষ্ট করলে তাই।
সোহান:- ওহ তাই ধন্যবাদ দিয়ে কি ঋণ শোধ করতে চাস নাকি?
— এই সব কি বলো তুমি? আমি কি তা বলছি নাকি?
সোহান:- আচ্ছা শুয়ে ঘুমা আমি যাচ্ছি। বলে উঠে দাঁড়ালো।
— এই তোমাকে খুব ভালোবাসি,
সোহান:- জানি জানি,
— কি করে জানো?
সোহান:- যে মেয়ে জ্ঞান হারানোর পরেও শক্ত করে চেপে ধরে ভালোবাসি বলতে পারে সে নিশ্চই অনেক ভালোবাসে তা বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়।
— সত্যি করে বলোতো কিছু মিছু করোনিতো সে সুযোগে?
সোহান:- মানে কি? কিছুমিছু আবার কি? ওহ হ্যাঁ যেটা তখন করতে পারিনি ভাবছি এখন করবো।
— এই খবরদার বলছি আমার কাছে আসবে না নইলে চিৎকার করবো।
আফরিন:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কি হলো চিৎকার করবি কেন? চিৎকার না করে খেয়ে ঔষধ খা, তুই খাসনি বলে ভাইয়াও এখনো খায়নি।
— তোমার ভাইকে না খেয়ে থাকতে বলছে কে শুনি? শেষে অসুখ বাধলে সব দোষ আমার উপর চাপবে।
আফরিন:- উফ তোরা পারিস ও বটে, আচ্ছা তোদের দু’জনের কি একজনের ভাইরাস আরেক জনের গায়ে যায় নাকি?
সোহান:- মানে কি? তুই আবার এসব কি বলছিস?
আফরিন:- আরে ভাইয়া বুঝলে না, এই যে কয়দিন আগে তুমি জ্বরে পরলে আর আজ ওর জ্বর। এটাই বুঝালাম যে ছোঁয়াছে নাকি তোমাদের দু’জনের।
সোহান:- আরে না বাসায় ফিরার সময় ফুলটুসি খুব সখ করে বৃষ্টিতে ভিজেছে তাই এমন হুট করে জ্বর আসছে।
— সোহান আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলে আপু আমাকে খাবার বেড়ে দিলো। খেতে ইচ্ছে না করলেও আপুর জোরাজুরিতে আর না খেয়ে পারলাম না। খাবার খেয়ে ঔষধ খাওয়া শেষ হবার পরেই আপু ঘর থেকে বের হলো নিজে খাবার জন্য। বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ব্যাগ থেকে সোহানের দেয়া বই দু’টো বের করে নিয়ে আসলাম পড়ার জন্য। একটা বই খুলতেই ছোট কাগজে লেখা একটা চিরকুট বের হয়ে আসলো। তাতে লেখা।
“এই ফুলটুসি তোর বই খুব পছন্দ নারে? বই এতো পছন্দ করিস কেন? তোকে একদিন অনেক গুলো বই গিফট করবো যা পড়তে পড়তে তুই বুড়ি হয়ে যাবি।”
— হাসতে হাসতে আরেকটা বই খুলতে আরও একটা কাগজ বের হয়ে আসলো। তাতে লেখা
“তুই সারা জীবনই গাধাই থেকে যাবি, এতো কিছু বুঝিস অথচ ভালোবাসাটাই বুঝিস না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে মেরে মেরে বুঝাই আমিও খুব রোমান্টিক। তোর বইয়েরর গল্পের নায়কের চেয়েও বেশী রোমান্টিক। আমিও দেখতে অনেক সুন্দর মেয়েরা আমাকে দেখলেও ক্রাশ খায় বুঝলি, শুধু তুই বুঝস না। আচ্ছা শোন আমার লেখা এতো পড়তে হবে না তার চেয়ে বরং তুই গল্পের বই পড়।”
— হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে এমন লেখা শুধু পাগলরাই লেখতে পারে। যদিও লেখাটা কয়েকদিন আগেই লেখছে, এখন লেখলে নিশ্চই অন্য কিছু লেখতো হ্যাঁ জানিতো তুমি খুব রোমান্টিক পাগল। তাইতো এতো ভালোবাসি। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বই খুলে পড়তে শুরু করলাম। বই পড়তে পড়তে এক সময় আপু ঘরে চলে আসলো বই বন্ধ করে রেখে আপুর সাথে টুকটাক গল্প করতে শুরু করলাম। এমন সময় ফোনে মেসেজ আসলো, সোহানের নাম্বার থেকে, ছোট করে লেখা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর, কাল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এবাড়ি ও বাড়ি দৌঁড়াতে হবে শুভ রাত্রী। আমিও রিপ্লে দিলাম কেন দু’বাড়িতে সুন্দরি অনেক মেয়েই আছে তাদের সাথে প্রেম শুরু করবে নাকি? রোমান্টিক বয় লক্ষ মেয়েদের ক্রাশ। এভাবেই দু’জন দু’জনকে মেসেজ আদান প্রদান করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পরলাম।
আফরিন:- আমিতো ভোরে উঠছি আর এখন নয়টা বাজে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে নাস্তা খাবি।
— নয়টা বাজে আর তুমি আমাকে ডাকোনি?
আফরিন:- ভাইয়া নিষেধ করছে তাই ডাক দেইনি।
— তাই বলে নয়টা বেজে গেছে ডাকবা না।
আফরিন:- আচ্ছা উঠে পর তাড়াতাড়ি তাহলেই হবে।
— আচ্ছা তুমি বসো আমি এখুনি ফ্রেস হয়ে আসছি, আপুকে বসিয়ে তাড়াতাড়া ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আপুকে সাথে নিয়ে ডাইনিং এর দিকে হাঁটতে শুরু করছি অমনি প্রচণ্ড শব্দ করে গান বাজতে শুরু করলো।
সোহান:- সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো শুধু লাইটিং করলেই হবে নাকি বিয়ে বাড়ি? আজ বিয়ে বাড়ি বাড়ি মনে হচ্ছে, বিয়ে বাড়িতে নাচ হবে গান হবে তবেই মনে হবে বিয়ে বাড়ি কি বলিস তোরা?
আফরিন:- ধ্যাত ভাইয়া আমার ভীষণ লজ্জা করে বলেই দৌঁড় দিলো ডাইনিং এর দিকে।
সোহান:- হায় হায় নতুন বউ কেমনে দৌঁড়াচ্ছে দেখ দেখ চেয়ে।
— তুমিই চেয়ে দেখ, আমি যাচ্ছি খুব খুদা লেগেছে।
সোহান:- এই আমিও যাবো তোর জন্যইতো অপেক্ষা করছিলাম।
— আমার জন্য এতো অপেক্ষা করতে হবে কেন?
সোহান:- কারণ আমাদের দু’জনের বিয়ে হলে তখনতো তুই অপেক্ষা করবি খাবার টেবিলে খাবার বেড়ে আমার জন্য।
— সোহানের কথায় থমকে দাঁড়ালাম, সত্যিই কি আমাদের দু’জনের বিয়েটা হবে? আজও কি হবে নাকি হবে না। যে মানুষটাকে এতো ভালোবাসি সেই মানুষটাকে কি সারা জীবনের জন্য পাবো কিনা তা এখনো নিশ্চিৎ নয়। কারণ এই মানুষটাকে সত্যিই আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। শত প্রার্থনায় থাকা মানুষটাকে যে আমার সব কিছুর পরেও চাই। সব ব্যস্ততার শেষে এই মানুষটার বুকে মাথা রেখে আমি একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাই। ভালোবাসি সোহান বড্ড ভালোবাসি তোমাকে। ভাবতে ভাবতে এক’পা দু’পা করে এগিয়ে চলছি ডাইনিং এর দিকে।
— নাস্তার পর্ব শেষ হতেই আফরিন আপু আমাকে ডাক দিয়ে বললো আয়তো আমার সাথে রুম গুলো গুছিয়ে দেই। আমি সোহানের দিকে তাকিয়ে চোখ দু’টো বড় বড় তাকাতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমরা দু’জন রুম থেকে বের হয়ে গেস্টদের জন্য রুম গুলো গুছাতে শুরু করলাম। ঘর গুছাতে গুছাতে আপু প্রশ্ন করলো
আফরিন:- কাল এতো রাত পর্যন্ত বাহিরে কি করেছিস?
— কত রাত পর্যন্ত?
আফরিন:- আমিইতো প্রায় সাড়ে বারোটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম তারপর আর কত রাত বাহিরে ছিলি আমি কি করে বলবো।
— আপুকে জড়িয়ে ধরে পুকুর ঘাটে বসে ছিলাম তোমার ভাইয়ের সাথে। গতরাতটা ছিলো আমার জীবনের সব চেয়ে সেরা রাত।
আফরিন:- মানে কি? কিছু করছিস নাকি?
— আরে ধুর কে যে বলো না তুমি, কাল রাতে তোমার ভাই আমাকে প্রপোজ করছে।
আফরিন:- শক্ত করে চেপে ধরে সত্যি?
— হ্যাঁ আপু সত্যি বলছি।
আফরিন:- বাহ তাহলেতো হয়েই গেলো, খুব তাড়াতাড়ি তোদের বিয়েটাও খেতে পারবো মনে হচ্ছে।
— আগেতো তোমারটা খাই তারপর আমারটার চিন্তা, আগেতো চিন্তা করতাম কি করে সোহানের ভালোবাসা পাবো আর এখন চিন্তা হচ্ছে এই ভালোবাসা সারা জীবন আগলে রাখতে পারবোতো?
আফরিন:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা, কেন পারবি না শুনি?
— আসলে আপু, বাবা মাকে কোন না কোন ভাবে মানানো যাবে। কিন্তু বড় চাচা আর চাচীকে কোন ভাবেই হয়তো মানানো যাবে না। সব চেয়ে বড় কথা আমাদের রিলেশনের কথা যদি বাবা মা জানে তবে খুশি হবে। আর বড় চাচা চাচী জানলে ভয়ংকর রকম রাগ করবে। কেন জানি তারা সোহানকে দেখতে পায় না।
আফরিন:- আরে ঐসব কিছু না, দেখবি জানলে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
— হ্যাঁ আপু দোয়া কইরো তাই যেন হয়। আসলে ওর একটা চাকরি থাকলে আমার এতো টেনশন লাগতো না।
আফরিন:- বুঝছিরে দেখ তুই কোন চিন্তা করিস না দেখবি সব ভালোই ভালো হবে।
— আচ্ছা আপু তুমি ঘরে যাও আমি ওর রুম থেকে বই দু’টো নিয়ে আসি।
আফরিন:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি আছিস, তোরতো ভাইয়ার রুমে গেলে আর আসতে ইচ্ছেই করে না।
— শুধু শুধু আমাকে দোষ না দিয়ে, তোমার ভাইটাকেও একটু মানুষতো করতে পারো। সে যদি তার রুম থেকে না আসতে দেয় তাহলে আমি কি করে আসবো?
আফরিন:- হয়েছে হয়েছে সবই বুঝি আগে আমার বিয়ের ঝামেলাটা শেষ হোক তারপর তোদেরটা দেখতাছে।
— থাক থাক তুমি বরং এখন ফোনে আকাশ ভাইয়ার সাথে কোন এক রোমান্টিক শহরে হারিয়ে যাও। বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে সোহানের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম, বারান্দায় এসে বুঝতে পারলাম পুরো আকাশ মেঘে কালো হয়ে গিয়েছে যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি নামবে। আমি তাড়াতাড়ি পা বাড়ালাম সোহানের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজার সামনে যেয়ে নক করতেই সোহান বললো ভিতরে যাবার জন্য। আমি ভিতরে ঢুকতেই সোহান কিরে কিছু বলবি? তুমি আমাকে তুই তুই করে কেন বলছো?
সোহান:- তো কি আপনাকে আপনি আপনি করে বলতে হবে নাকি?
— মানে কি তুমি আমার সাথে এমন করে কেন কথা বলছোে আমি কিন্তু কান্না করে দিবো।
সোহান:- এই আমার সামনে নেকি কান্না করবি না। কেন এসেছিস তা বল।
— আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ তুই করে বলে?
সোহান:- তো তুই আমার ছোট তোকে কি আপনি করে বলবো?
— ধ্যাত আমি কি বলছি তুমি আমাকে আপনি করে বলো, একটু আদুরে তুমি করেওতো বলতে পারো।
সোহান:- কান টেনে ধরে ওরে আমার তুমিটারে, নাক বুচি ফুলটুসি কোথাকার ওরে নাকি তুমি করে বলতে হবে।
— উফ ছাড়ো ব্যথা লাগছে তোমার আমাকে তুমি করে বলতে হবে না, দেশে কত মানুষ আছে আমাকে তুমি করে বলার জন্য।
সোহান:- কথাটা শোনার সাথে সাথেই ধাক্কা মেরে খাটের উপর ফেলে দিয়ে, দু’হাত দিয়ে দু’হাতের কব্জি চেপে ধরে কতজন আছে শুনি তুমি করে বলার জন্য।
— বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে, টিনের চালায় টপটপ শব্দে বৃষ্টির পানি পড়ছে। হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে যাওয়ায় পুরো রুম অন্ধকার হয়ে এলো। সোহানের হাত থেকে একটি হাত ছাড়িয়ে ওর কলারটা টান দিয়ে ধরে মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে ভিজবে আমার সাথে? সোহানের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ হচ্ছে। আমি প্রশ্ন করলাম ভিজবে?
সোহান:- উঠার চেষ্টা করতে করতে না জ্বর এসে যাবে কাল বাদে পরশু বিয়ে। এখন জ্বর বাধানো যাবে না, তোর যত ইচ্ছে হয় ঢাকায় যেয়ে ভিজবি।
— বলেই উঠার চেষ্টা করতেই হাত দিয়ে কলার টেনে রাখার কারণে উঠতে পারলো না, বরং ঠোঁটের উপর এসে পরলো সোহানের ঠোঁট জোড়া। নিজের মানুষ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজেকে সামলে রাখা সত্যিই খুব কষ্ট কর। নিজেকে কখনো কখনো শত বাঁধা দিয়েও আটকে রাখা যায় না। সোহানের ভারী নিঃশ্বাসে আমার সমস্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে সোহানকে বিকের সাথে লেপ্টে নিতেই, দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ পেলাম। দ্রুত সোহানকে ছেড়ে দিয়ে দু’জনেই উঠে দাঁড়ালাম। যে এসেছিলো সে চলে গিয়েছে, আমি সোহানকে বললাম বই দাও।
সোহান:- ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে টেবিলে ড্রয়ার খুলে বই দু’টো বের করে হাতে দিয়ে ফুলটুসি ভালোবাসি।
— আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি এখন যেতে দাও আপু জানে আমি তোমার রুমে এসেছি আর এতো সময় একটা ঘরে থাকা অনেকেই খারাপ চোখে নিবে। যদিও আপু জানে আমরা একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু বাকিরাতো আর তা জানে না।
সোহান:- আচ্ছা যাবি যা কিন্তু যাবার আগে একটা দিয়ে যা না?
— কি দিবো বলতেই কারেণ্ট চলে আসলো আমি সোহানের নাকের উপর লিপিস্টকের দাগ দেখে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এমন করে হাসতেছিস কেন?
— তুমি যা চাইসো তা তোমার নাকের উপর লেগে আছে, ঐখান থেকেই নিয়ে নিও বলে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। রুমে এসে আপুকে না দেখে মনে মনে বললাম বেঁচে গেছি। বই দু’টো টেবিলের উপর রেখে ফ্রেস হবার জন্য ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলাম। ওয়াশ রুমে ঢুকার পর পরই আপুর ডাক শুনতে পেলাম। ভিতর থেকে উত্তর দিলাম।
আফরিন:- তাড়াতাড়ি বের হো মা ডাকছে।
— আসছি তুমি যাও, আপু চলে যেতে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ফুপুর রুমের দিকে রওনা হলাম। রুমে ঢুকতেই ফুপু কাছে ডেকে বসালেন, আমার কিছুটা ভয় আর শরম লাগতেছিলো এটা ভেবে যে ফুপু কি সে সময় সোহানের রুমের সামনে গিয়েছিলো নাকি? এক প্রকার লজ্জা পেয়েই মাথা নিচু করে ফুপুর সামনে বসে আছি।
ফুপু:- কিরে মা তোর কি মন খারাপ?
— কই নাতো ফুপু কেন ডাকছো বলো?
ফুপু:- কালতো গায়ে হলুদ, বিকেলে তুই সোহান তোর ফুপা আর উনার ভাই বোনের ছেলে মেয়েরা মিলে যেয়ে গায়ে হলুদের শাড়ি আর পাঞ্জাবী কিনে নিয়ে আসবি তাই তোকে আসতে বলেছি।
— মনে মনে একটা দীর্ঘশাস্ব ছেড়ে যাক বাবা বাঁচা গেলো ফুপু তাহলে কিছুই বুঝেনি। আমি মাথা নাড়িয়ে ফুপুর কথায় সম্মতি দিলাম। এরপর তিনজন মিলে অনেকটা সময় গল্প করলাম। তখনো মুশুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, আর আমরা তিন জন নানান রকম গল্প করে চলেছি। ফুপু আপুকে বুঝাচ্ছে বিয়ের পর মেয়েদের কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় ফুপু কিভাবে মানিয়ে নিয়েছে, এমন সব বিষয়ে ফুপু আপুকে বলছে সেই সাথে কথা গুলো আমাকেও বলছে। আপু গভীর মনোযোগে ফুপুর কথা শুনলেও আমি তার কথায় কেন জানি মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে এখন সোহানকে নিয়ে একরোখা মানুষ সে। কারো কোন কথাই শুনবে না। নিজের মত চলবে এই অবস্থায় পরিবারকে ওর কথা জানানোরও কোন উপায় নেই। দীর্ঘসময় ফুপুর সাথে সময় কাটালাম। আপুকে সঙ্গে নিয়ে রুমে ফিরে আসলাম। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে।
আফরিন:- কিরে তখন থেকে দেখছি তুই কি যেন ভাবছিস।
— কিছু না আপু, তুমি কি কোথাও বের হবে নাকি?
আফরিন:- আমি একা না তুই ও আমার সাথে বেন হবি।
— কোথায় যাবে?
আফরিন:- বেশী দূর না নাস্তা ছেড়ে পাশেআ যাবো আমার বান্ধবির বাসায় ওর সাথে কিছু কথা আছে বলতে বলতে আপু রেডি হয়ে নিলো। দু’জন চলে আসলাম ডাইনিং এ সেখানে সবাই বসে আছে, অল্প সময়ের ভিতর সোহানও এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলো। সোহান এক মনে আমার দিকে চেয়ে আছে। দেখে টেবিলের নিচ দিয়ে ওর পায়ে পা দিয়ে খোঁচা দিলাম। ইশারায় প্রশ্ন করলাম অমন করে তাকিয়ে আছে কেন?
সোহান:- মাথা নেড়ে বুঝালো কিছু না।
— মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া আপুর কাজিন সোহানের দিকে চেয়ে আছে দেখে অনেকটা বিরক্ত লাগছিলো। মেয়েটাকে মনে মনে অনেক গুলো গালি দিলাম, জীবনে মনে হয় ছেলে মানুষ দেখে নাই কেমন করে তাকিয়ে আছে বেহায়ার মত। নাস্তার পর্ব শেষ হতেই সকলে বের হলাম। আপু আর আমি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে ডেকে সোহান জিজ্ঞাসা করলো কোথাও যাচ্ছি কিনা।
আফরিন:- হ্যাঁ ভাইয়া একটা বান্ধবির বাসায় যাচ্ছি তুমি যাবে?
সোহান:- তোর বান্ধবির বাসায় যাবো না তবে আমিও একটু হেঁটে আসি। বাসায় বসে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে গিয়েছি।
— মনে মনে খুশিই হলাম ঐটা ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটার সামনে থেকেতো দূরে থাকবে সোহান।
সোহান:- কিরে ফুলটুসি কিছু ভাবছিস নাকি?
— কই নাতো কিছু ভাবছি না বলে সোহানের দিকে তাকালাম।
আফরিন:- আর বলো না ভাইয়া ও কি জানি ভাবে কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না। বলে শুধু কিছু না।
সোহান:- কি জানি তোর বোনের কই হইছে তুই খুঁজ নিয়ে দেখ, আমি আর কি বলবো।
আফরিন:- তোমাদের সমস্যা তোমরা বুঝ আমি আর কারো কাছে কিছু জানতে চাইবো না।
— উফ কি শুরু করলা তোমরা চলোতো যাই, কিছু হলেতো আমি বলবো যে আমার কিছু হইছে। কথা বলতে বলতে এগিয়ে চললাম আপুর বান্ধবির বাসার দিকে।
— আপুর বান্ধবির বাসার সামনে আসতেই আপু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?
সোহান:- না তোরা যা, আমি এদিক দিয়েই ঘুরিফিরি তোরা বের হলে এক সাথে বাসায় যাবো।
আফরিন:- কোথায় ঘুরবে তুমি? শেষে গ্রামের লোকজন নানান রকম কথা বলবে।
সোহান:- নানান কথা বলবে কেন? আমি কি চোর নাকি যে মানুষ উল্টা পাল্টা কথা বলবে?
আফরিন:- মানুষতো আর তোমাকে চিনে জানে না। তাই ভাবতেও পারে এসব।
— দু’জনের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলাম। সোহান রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো একটা চড় মেরে তোর সবকটা দাত ফেলে দিবো। এমন কথা শুনে আমার হাসির শব্দ আরও বেড়ে গেলো।
আফরিন:- থামতো তুই, ভাইয়া তুমি আমাদের সাথে চলো।
— আর কোন কথা না বলে তিনজন বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলাম। বাড়িতে ঢুকতেই আপুর বান্ধবী ছুটে এলো, সকলকে বসার জন্য চেয়ার এনে দিলো বসার জন্য। সকল মিলে গল্প করছি এমন সময় আন্টি চা নাস্তা নিয়ে এলেন। নাস্তা শেষ করে বের হয়ে আসার সময় আপু বার বার করে বলে আসলেন আগামিকাল সকালেই ঐ বাড়িতে যেয়ে নাস্তা করতে এবং সারা দিন ঐ বাড়িতেই থাকতে হবে। এসব বলে আমরা সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম।
সোহান:- এখন কি বাড়িতে যাবি তোরা?
আফরিন:- নয়তো কোথায় যাবো?
সোহান:- না মানে বাড়ি ভর্তি মেহমান আমার কেমন জানি লাগে?
— কেমন লাগে তোমার আমিতো দেখি বেশ ভালোই আপুর ঐ মোটা ফ্রেমের চশমা পরা কাজিনের সাথে চোখাচোখি করো।
সোহান:- রেগে তোর মাথা করি, পৃথিবীর সব মেয়েই আমার প্রমিকা আর আমি একাই তাদের প্রমিক হয়েছে এখন তো খুশি তুই?
— আমার খুশিতে বা কষ্টে তোমার কিছু আসে যায় কি?
সোহান:- না আমার কিছু আসে যায় না তবে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোর মোটা মাথাটা ফাঁটিয়ে দেই।
— ঢং দেখলে আর বাঁচি না।
আফরিন:- উফ তোমরা আবার শুরু করলে? আল্লাহ জানে তোমাদের বিয়ে হলে তারপর কি করবে।
সোহান:- এই ফুলটুসি মাথা মোটা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো তুই ভাবলি কি করে?
— আমিই তোমাকে বিয়ে করবো না। দেশে কি ছেলের অভাব পরছে যে তোমাকেই আমার বিয়ে করতে হবে।
সোহান:- সে দেখা যাবে আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাস কিনা। আর তোকেই বা কে বিয়ে করতে আসে তাও আমি দেখে নিবো।
— হ্যাঁ দেখে নিও তোমার চেয়ে ভালো ছেলেই আসবে। ঝগড়া করতে করতে তিনজন বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরলাম। সোহান ওর রুমের দিকে আমি আর আপু আমাদের রুমের দিকে এগিয়ে আসলাম।
আফরিন:- পারিস ও তোরা দু’জন।
— আরে আপু এটাই আমাদের ভালোবাসা।
আফরিন:- আচ্ছা তুই রেস্ট নে আমি গোসলটা সেরে ফেলি। তারপর তুই গোসল করিস বলতে বলতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো।
— বাবা মায়ের সাথে কথা হয়না ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিতেই আবারো দেখতে পেলাম আরমানের মিসকল। এতো ভালো সময় পার করছিলাম যে ফোনের দিকে নজর দেবার মত সময় পাইনি। আরমানকে ফোন ব্যাক করলাম।
আরমান:- ফোন রিসিভ করে কি ব্যাপার খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে?
— জ্বি কিছুটা ব্যস্ত, আসলে বিয়ে বাড়ি অনেক মেহমান কত রকম কাজকর্ম তাই ফোনটা কাছে রাখা হয়না। তারপর বলুন এতো বার ফোন দিয়েছেন আপনি ঠিক আছেনতো?
আরমান:- জ্বি আমি ঠিক আছি, আসলে আপনাদের ওখান থেকে বাসায় ফিরে কল দিলাম বলার জন্য যে বাড়িতে ফিরে এসেছি। ধরলেন না তাই আবারও সকালে ফোন দিয়েছিলাম।
— সরি আসলে ফোনের কাছে ছিলাম না, রাতে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম মাত্রই হাতে নিলাম বাবা মাকে কল দেবার জন্য। আপনার কল দেখে আগে আপনাকেই ফোন করলাম।
আরমান:- ধন্যবাদ ম্যাডাম আমাকে এতোটা প্রায়োরিটি দেবার জন্য।
— আরে কি যে বলেন না। তো কি করছেন?
আরমান:- তেমন কিছু না, আসলে বাংলাদেশে আপাতত খাওয়া আর ঘুরা ছাড়া আমার তেমন কাজ নেই। আপনি কি করছেন আর বাড়ির সবার কি অবস্থা?
— এইতো আপুর এক বান্ধবির বাড়ি থেকে মাত্রই বাসায় ফিরলাম, এখন ফ্রেস হবো। বাড়ির সকলেই ভালো আছে।
আরমান:- তাহলে কাল গায়ে হলুদে দেখা হচ্ছে কি বলেন?
— হ্যাঁ নিশ্চই, এভাবে আরও কিছু সময় কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে বাবাকে কল দিলাম। বাবা জানালো আগামি কাল সকালে সকলে রওনা দিবে সন্ধ্যার ভিতরেই চলে আসবে। বাবার সাথে কথা বলে ফোন রাখতে রাখতেই আপু গোসল শেষ করে বের হয়ে এলো।
আফরিন:- যা গোসল করে নে, লাঞ্চ করে আবার শপিং এর জন্য বের হতে হবে। আমি ডাইনিং এর দিকে যাচ্ছি।
— আপু চলে যেতেই আমি ওয়াশ রুমে চলে আসলাম। গোসল শেষে নতুন একটা জামা পরে ডাইনিং এ যেতেই আপু বললো সোহান ভাইয়াকে ডাক দেবার জন্য। আমি রুমের দরজায় নক করে কোন রকম সারা শব্দ না পেয়ে রুমে ডুকে দেখি সোহান ঘুমিয়ে আছে, মাথায় একটু শয়তানি বুদ্ধি আসলো যদিও সব সময়ই এমন হয়। আবার গতবারের কথা চিন্তা করে কিছুটা ভয়ও লাগলো। ভাবতে ভাবতে ভেজা চুল গুলো সোহানের মুখের উপর নিয়ে ধরলাম। কয়েক সেকেন্ডের ভিতর সোহান লাফিয়ে উঠে বসলো। ওর অবস্থা দেখে আমি হো হো করে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- এসব কি ধরণের ফাজলামো ফুলটুসি? আমি কতটা ভয় পেয়েছি তুই জানিস?
— হাসতে হাসতে এতো বড় ছেলে আবার ভয়ও পাও নাকি? তোমার আমার বিয়ে হলে প্রতিদিন তোমাকে এভাবে জাগাবো তখন ও কি এভাবে লাফিয়ে উঠবে নাকি?
সোহান:- তোকে বিয়ে করবো কখনোই না, তুই কখনোই বদলাবি না।
— কি আমাকে বিয়ে করবে না? থাকো তুমি তোমার মত আমি যাচ্ছি বলে ঘুরার সাথে সাথেই সোহান হাত ধরে টান দিয়ে খাটের উপর ফেলে দিলো।
সোহান:- এতো রাগ কোথায় থাকেরে তোর?
— যেখানে খুশি সেখানে থাকে তাতে তোমার কি ছাড়ো আমাকে। যাকে বিয়ে করবে তার সাথে এমনটা কইরো। আমাকে ছেড়ে ডাইনিং এ আসো লাঞ্চ করবে।
সোহান:- তোকে খুব সুন্দর লাগছে আজ অপূর্ব মায়াবতী লাগছে। খাবারতো খুব ঝাল হবে তার আগে একটু মিষ্টি মুখ করে নিলে মন্দ হয়না কি বলিস। বলেই একটা হাত দিয়ে চিবুক ধরে উপরের দিকে তুললো।
— দু’চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে পারছি সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটের খুব কাছে চলে এসেছে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম ছেড়ে দাও আমাকে। অনেকটা সময় পার হলেও যখন সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে স্পর্শ করলো না। তখন চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। সে চাহনিতে খারাপ কিছু নেই তবে গভীর মায়া আর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচণ্ড রকম লজ্জা লাগছিলো। একটা মানুষের চোখে এতোটা মায়া এতোটা নেশা থাকে আজ সোহানের এমন চাহনি না দেখলে আমি কখনো জানতেই পারতাম না। কোন সে মোহে চেয়ে ওর দিকে জানি না। যতই দেখছি মন ভরে যাচ্ছে, মনে মনে বলছি যখন তুমি সামনে থাকো মন ভরে দেখি, যখন তুমি দূরে থাকো দেখতে তোমায় পায় না চোখ বুকের মাঝে কিসের ব্যথা টনটন করে রোজ। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়, নিঃশ্বাসটা যে বন্ধ হয়ে যায়। এই অনুভুতিটাই কি সত্যি কারের ভালোবাসা নয়? সোহানের ফোনটা বেজে উঠতেই কল্পনার সকল জগৎ ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসলাম।
সোহান:- সালাম দিয়ে হ্যালো কে?
— কথপোকথনে বুঝতে পারলাম আরমানের বোন নীলা ফোন দিয়েছে, সব ভালোবাসা মুহুর্তেই উবে গেল, রাগে সমস্ত শরীর লাল হয়ে গেলো যখন সোহানকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলাম। জিদ্দে একটা ধাক্কা মেরে খাটের উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ডাইনিং এ আসতেই আপু সোহানের কথা জানতে চাইলো আমি বললাম ফোনে কথা বলতাছে একটু পরে আসবে। কথা শেষ হতে না হতেই সোহান চলে আসলো। সকলে মিলে খাওয়া শেষ করলাম। রুমে এসে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে রেডি হতে শুরু করলাম।
আফরিন:- কিরে গাল এমন ফুলিয়ে রাখছিস কেন?
— তো কি করবো তোমার ভাই কি সুন্দর হেসে হেসে ঐ নীলার সাথে কথা বলছিলো ফোনে, দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
আফরিন:- তো একটা মানুষ ফোন দিলে কি কথাও বলবে না?
— কথা বলতে তো নিষেধ করিনি, তার জন্য আমার সামনে হেসে হেসে কথা বলতে হবে?
আফরিন:- হাসতে হাসতে নে রেগে থাকিস না, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। রাগ করে থাকলে সাজলে পেত্নীর মত লাগবে।
— আপুর কথা শুনে হেসে দিয়ে বললাম কি সব বলো না তুমি।
আফরিন:- প্রেম রোগ কঠিন রোগ এ জন্যই কখনো কাউকে আর ভালোবাসা হয়ে উঠেনি, ভেবেই রেখে ছিলাম যখন বিয়ে করবো তখন বর কেই ভালোবাসবো।
— তুমি খুব ভাগ্যবতী আপু দেখবে আকাশ ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসবে।
আফরিন:- আর ভাইয়া বুঝি তোকে ভালোবাসে না?
— কি জানি বলতে পারি না। কথা বলতে বলতে সেজে নিলাম।
আফরিন:- আজ তোকে একদম পরীর মত লাগছে দেখতে, ভাইয়া তোর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারবে না দেখিস।
— হয়েছে তোমার ভাইয়ের দেখার জন্য কত মেয়ে আছে। অল্প সময়ের ভিতর ফুপা এসে ডাক দিতেই আমরা দু’জন রুম থেকে বের হয়ে এলাম। ফুপা বললো গেটের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে তাড়াতাড়ি যেয়ে গাড়িতে বসতে সকলে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। আপু আর আমি বাড়ির বাহিরে বের হতেই দেখতে পেলাম গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সকলে গাড়ির ভিতর বসে আছে সোহান সামনের সিটে বসে আছে ড্রাইবারের সাথে। পেছনের সিটে যেয়ে আপুর কাজিনদের সাথে বসলাম। সোহানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই গভীর মনোযোগ দিয়ে সে মোবাইল টিপে চলেছে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। একবারের জন্যও সে পেছনে তাকাচ্ছে না। ফুপা এসে সোহান ভাইয়ার সাথে সামনে বসতেই গাড়ি এগিয়ে চললো শপিং মলের দিকে। গাড়ির ভিতর সকলে মিলে গল্প করছে আমার কেন জানি কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বুকের ভিতর শূন্যতার হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। সব কিছু থেকেও মনে হচ্ছে কি যেন নেই। ভাবতে ভাবতে গাড়ি শহরের ভিতর ঢুকে পরলো। একটা শপিং মলের সামনে যেয়ে গাড়ি দাঁড়ালো। একে একে সকলে নেমে পরলাম গাড়ি থেকে। ফুপা এগিয়ে চললো শপিং মলের দিকে সাথে সকলে আমিও মাথা নিচু করে হাঁটতে শুরু করলাম। হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে হাত টেনে ধরতেই চমকে ঘুরে তাকালাম।
সোহান:- কিরে ফুলটুসি তুই এমন মুড অফ করে হেঁটে চলেছিস কেন?
— কই নাতো।
সোহান:- তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
— আমাকে সুন্দর লাগলেই কি কেউ দেখার মত আছে?
সোহান:- এই দেখিস কান্না করিস না। তাহলে এতো সুন্দর কাজল চোখের পানিতে লেপ্টে যাবে। তখন কিন্তু ভুত ভুত লাগবে।
— তাতে কারো কিছু আসে যায় না, আমাকে কেমন লাগলো তা নিয়ে কি কারো কোন মাথা ব্যথা আছে?
সোহান:- মাথা যদি থাকে তবে ব্যথাও করবে। কারো না থাকলেও আমার আছে।
— সেতো দেখতেই পাচ্ছি সেই যে গাড়িতে বসে ফোন টিপছিলে একটা বারও আমার দিকে তাকালে না।
সোহান:- তখনতো বলতি যে অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়েছি।
— হয়েছে আমার সামনে আর সাধু সাজতে হবে না। ফোনেতো কি রোমান্টিক ভাব নিয়ে কথা বলো, সে আমার দেখা হয়ে গেছে।
সোহান:- বেশী বুঝিস না আয়তো সেল্ফি তুলি।
— না তুলবো না।
সোহান:- জোড় করে হাত ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ছবি তুলতে শুরু করলো।
ফুপা:- একটা শাড়ির দোকানে ঢুকে কইরে ইকরা তাড়াতাড়ি আয় ফিতরে।
— সোহানের নিঃশ্বাসের শব্দ জোড়ে জোড়ে এসে কানে বিঁধছিলো। নিজের হার্টবিটের শব্দ সে শব্দের কাছে হেরে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান কপালে হাত দিতেই চোখ মেলে তাকালাম।সোহানের হাতে টিপের পাতা সেখান থেকে হয়তো কোন একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়েছে, এতো সময় কি ভেবেছি আর হলো এটা ভাবতেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠেছে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। সোহাত হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো ডাইনিং এর আয়নার সামনে, কপালের মাঝ বরাবর একটা কালো রঙের টিপ পরিয়ে দিয়েছে। বেশ লাগছে সুন্দর্য্য যেন বহু গুন বেড়ে গিয়েছে।
সোহান:- এখন তোকে খুব সুন্দর লাগছে।
— আমি সব সময় সুন্দর তোমার দেখার চোখটাই আসলে ঠিক নেই। তুমি থাকো আমি যাচ্ছি বলে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। বসার রুমে এসে আরমানের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম।
আরমান:- ধন্যবাদ,
— মুখে হাসি টেনে ইটস ওকে। এমন সময় সোহান রুমে এসে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমিও যেয়ে বসে সকলের সাথে টুকটাক কথা বলছি, আর এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে শুরু করলাম। হঠাৎ নজর পরলো নীল জামা পরা আরমানের বোনের দিকে, সে এক নজরে সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো ইচ্ছে করছিলো যেয়ে ঠাস করে একটা চর মেরে দিতে। কিন্তু তা করা সম্ভব নয়। তা নিরবে সব সহ্য করে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আপু এসে ইশারায় বললো বের হয়ে আসতে। আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম।
— আমি আর আপু মিলে সব খাবার নিয়ে এসে ডাইনিং এ গুছিয়ে রাখলাম। ডাইনিং থেকে বের হয়ে বসার রুমে যেয়ে ফুপাকে বললাম সবাই কে নিয়ে তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ যেয়ে খাবার খেয়ে নিতে। বলেই আবার বের হয়ে ডাইনিং এ আসলাম। অল্প সময়ের ভিতর একে একে সকলে ডাইনিং এ উপস্থিত হলো। এর ভিতর ফুপুও চলে আসলো ডাইনিং।
— সকলে চেয়ার টেনে বসতে শুরু করলো, আরমানের বোন যেয়ে বসলো সোহানের পাশে। খুব ক্লোজ হয়ে বসতে শুরু করলো। সোহান কিছুটা আন ইজি ফিল করলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। মনে মনে ভাবছি কেমন নির্লজ্জ মেয়ে ছেলে মানুষ দেখেছে কিনা ওমনি তার পাশে বসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে শুরু করলাম দু’জন মিলে। খাবার বেড়ে দেওয়া শেষ হতেই আকাশ ভাইয়া বলতে শুরু করলো তোমরা দু’জন ও বসে পরো।
আফরিন:- আপনারা খেয়ে নিন আমরা পরে বসবো।
আরমান:- ভাবি বসুন না আমাদের সাথে ভালো লাগবে।
আফরিন:- আজ না ভাইয়া অন্য আরেক দিন বসবো। আপনারা খেয়ে নিন আমরা এগিয়ে দিচ্ছি।
— সকলের খাওয়া শেষ হতেই তারা বাড়িতে যাবার জন্য বিদায় নিতে আসলো। সোহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলো আরমানের বোন সেখানে যেয়ে আরমানের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখতে শুরু করলাম।
নীলা:- ভাইয়া আমার নাম নীলা, আপনিতো আমার সাথে কথাই বলছেন না।
নীলা:- না মানে আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া যাবে? যদি না আপনার কোন সমস্যা থাকে।
সোহান:- না কোন সমস্যা নেই, নাম্বাটা হলো, ০১৭…
নীলা:- অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সোহান:- ইটস ওকে।
নীলা:- আচ্ছা তাহলে আজ আসি, ফোনে কথা হবে ভালো থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।
সোহান:- হ্যাঁ আপনিও।
নীলা:- আরেকটা কথা বলি, আপনি খুব সুন্দর আর স্মার্ট।
সোহান:- জ্বি ধন্যবাদ।
— নীলা ওর পরিবারের সবার সাথে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে একটু যাচ্ছে আর পিছু ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। মনে চাচ্ছে যেয়ে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে ফেলি। মনে মনে নিজেই নিজেকে বলছি এতো রাগ করা ভালো রা কন্ট্রোল কন্ট্রোল, হঠাৎ করে মনে পরলো সেদিনের কথা আমিতো এর চেয়ে অনেক বেশী গভীর ভাবে সেদিন আরমানের সাথে মিশে ছিলাম। আর তাও ইচ্ছে করে সোহান কে জ্বালানোর জন্য, তখন ওর মনেও এমনই আঘাত লেগেছে নিশ্চই, আর ঐ মেয়ে সামান্য কথা বলছে তা আমি সহ্য করতে পারছি না। ওরা বাড়ির ভিতর থেকে বের হতেই পুরো বাড়ি নিরবতায় ভরে। যে যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সকল নিরবতা ভেঙে ফুপু বলে উঠলো তোরা দু’জন আয় খেয়ে নিবি। আমি সোহানের দিকে তাকালাম সে উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিষ্কার আকাশে সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ ঝকঝক করছে। আমরা তিনজন চলে আসলাম ডাইনিং এ। ফুপু আমাদের দু’জনকে খাবার বেড়ে দিলো।
আফরিন:- মা তুমি খাবে না?
ফুপু:- নারে আজ আর খাবো না তোরা খেয়ে নে।
আফরিন:- অল্প একটু খেয়ে নিতে।
ফুপু:- না ভালো লাগছে না, তোরা খা পরে যদি খেতে ইচ্ছে করে তবে খেয়ে নিবো। তোরা খেয়ে প্লেট গুলো গুছিয়ে রেখে রুমে চলে যাস। আমি চলে গেলাম।
— আর কোন কথা না বলে ফুপু উঠে চলে গেলো। এদিকে আফরিন আপু আমাকে খোঁচাচ্ছে। আমি প্রশ্ন করলাম এমন করছো কেন?
আফরিন:- আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে মালাটা কোথায় পেলি?
— কেন তোমার লাগবে নাকি মালা?
আফরিন:- আরে ধ্যাত কোথায় পাইলি তাই জানতে চাইলাম।
— কোথায় আর পাবো তোমার ভাই এনে দিয়েছে, আচ্ছা আপু একটা কথা বলতো,
আফরিন:- কি কথা?
— না মানে তোমার ননদ গুলো এমন গায়ে পরা কেন?
আফরিন:- মানে বুঝলাম না বুঝিয়ে বল।
— মানে ঐ যে আরমানের বোনটা কেমন গায়ে পরে সোহানের সাথে কথা বলছিলো দেখোনি? কেমন করে যেয়ে পাশে বসে পরলো। আবার সবাই যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনো এসে একা একা কথা বলছিলো।
আফরিন:- আহা বলতেই পারে কথা বেয়াইন, বেয়াই কথা বলবে এটাইতো স্বাভাবিক তাই না? আর তোর এতোদিকে নজর দিতে হবে কেন?
— বারে চোখের সামনে পরলে নজর দিবো না? কথা বলতে বলতে হঠাৎ মনে পরলো সোহানের কাছে নতুন দু’টো বই আছে বলছে সবাই যাবার পর দিবে। তাই আর কথা না বলে দ্রুত খাবার খেয়ে আপুকে বললাম তুমি রুমে চলে যাও আমি সোহান ভাইয়ার সাথে দেখা করে পরে আসছি। ডাইনিং থেকে বের হয়ে সোজা সোহানের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ভিতর থেকে দরজা লাগানো বাহির থেকে নক করলাম ভিতর থেকে সোহান জানতে চাইলো কে। উত্তর দিলাম আমি।
সোহান:- দাঁড়া আসছি, দরজা খুলে দিয়ে কিরে কিছু বলবি?
— কিছু বলবি মানে কি? কি বলছিলা তুমি মনে নাই?
সোহান:- কি বলছিলাম আমি? মনে করতে পারছি না। বলতে বলতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলো।
— আমিও ওর পিছু পিছু ঢুকতে ঢুকতে বলতে শুরু করলাম করলাম তা মনে করতে পারবে কেন? নীল পরীর সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলবা তাহলে কি আর অন্যদের কথা মনে থাকবে নাকি?
সোহান:- নীল পরী কোথায়রে চলতো যেয়ে দেখি।
— একদম ফাজলামো করবি না আমার সাথে বলে দিচ্ছি ভালো হবে না।
সোহান:- কোথায় ফাজলামো করলাম? কেনরে তোর জ্বলে নাকি আমি কারো সাথে কথা বললে?
— আমার জ্বলবে কেন?
সোহান:- ওহ তাই বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নীলারা কত দূর গেছে একটা ফোন দেই।
— খবরদার ফোন দিবে না বলে হাতটা এগিয়ে ফোনটা নিতে যাবো।
সোহান:- ওমনি সোহান হাত চেঁপে ধরে কেন তোর নাকি জ্বলে না? বলে হাতটা মোচড় দিয়ে পেছন দিকে নিয়ে ঘাঢ়ের উপর মুখটা নামিয়ে নিয়ে আসলো।
— ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি আমার জ্বললেই তোমার কি আর না জ্বললেই তোমার কি? তুমি কি আমাকে বুঝ? তুমি আমাকে কখনোই বুঝ না।
সোহান:- তুইতো খুব বুঝিস ঐ অমুক তমুক কে আমাকে কি আর বুঝিস?
— তোমাকে কি বুঝবো আমি তুমি কে হে আমার?
কথাটা বলতে দেরী হলেও সোহান সেই অবস্থাতেই টেবিলের উপর চেঁপে ধরে হাতটা পেছনে রেখেই বলতে শুরু করলো আমি কে আজ তোকে বুঝাবো। ব্যথায় মনে হচ্ছিল হাত ভেঙে যাচ্ছি, চিৎকার করবো এমন শক্তিও গায়ে নেই। দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি টেবিলের উপর পরছে। আমি মৃদু স্বরে বললাম ছাড়ো আমাকে। হাতটা ভেঙেই ফেলবে নাকি?
সোহান:- ভেঙে গেলে যাবে, প্রয়োজনে আরেক জনের হাত জোড়া লাগিয়ে এনে দিবো পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে।
— সোহানের কথায় হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না, মুখ থেকে বের হয়ে গেলো ব্যথায় মরে যাচ্ছি।
সোহান:- সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিয়ে কোমর ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে এতো সহজে তোকে মারছি না আমি।
— তো কিভাবে মারবে খুব কষ্ট দিয়ে বুঝি?
সোহান:- আরও শক্ত করে চেঁপে ধরে মুখটা ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে কিভাবে যে মারবো নিজেই বুঝতে পারছি না।
— হয়েছে ঢং বাদ দাও আমাকে ছাড়ো, ঐ যে তোমার সুন্দরী নীল পরী বেয়াইন আছে তাদের সাথে ঢং করো গিয়ে। কথাটা বলা শেষ হবার আগেই সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে চেঁপে ধরলো।
— হয়েছে ঢং বাদ দাও আমাকে ছাড়ো, ঐ যে তোমার সুন্দরী নীল পরী বেয়াইন আছে তাদের সাথে ঢং করো গিয়ে। কথাটা বলা শেষ হবার আগেই সোহানের ঠোঁট আমার ঠোঁটকে চেঁপে ধরলো। দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো, অনুভুতিরা তখন সব শূন্যের খাতায়। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সোহানকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এক চুল ও সরাতে পারলাম না। এতো জোড়ে দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরে রেখেছে যে আমার নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। ভালোবাসার পরশ এতো কঠিন হয় নাকি? সত্যিইতো এটা একটা কঠিন শাস্তি। সোহান ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিতেই, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম। সোহান কোমর ছেড়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো।
সোহান:- জীবনে আর কোন দিন যদি উল্টা পাল্টা কথা বলছিস তবে তোকে..
— তবে কি করবে শুনি? আর আমার সাথে তুমি এমন করো কেন? কোন অধিকারে তুমি আমার সাথে এমনটা করলে বলো? আমি কি লাগি তোমার উত্তর দাও। সোহান প্রশ্ন শুনে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর বলতে শুরু করলো।
সোহান:- তুইতো হৃদয়ের ভাষা, চোখের ভাষা কোনটাই বুঝিস না। তোকেতো মুখ দিয়ে বলেই বুঝাতে হবে। তবে শোন আমি তোকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি আর এতোটাই ভালোবাসি যে তোর পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না। তোকে কেউ স্পর্শ করলে আমার শরীরে আগুন লেগে যায়। তোকে আমি আমার চেয়েও বেশী ভালোবাসি। সেই ছোট বেলা থেকেই তোকে আমি ভালোবাসি, যখন তুই ভালোবাসা কি বুঝতি না।তখন থেকে ভালোবাসি, কখনো তোকে বলিনি ভালোবাসি ভেবেছিলাম তুই বড় হয়েছিস এমনিতেই বুঝে যাবি কিন্তু তুই বুঝিস না।
— সোহানের ভালোবাসি কথা শুনে কখন যে দু’চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করেছে খেয়াল করিনি। এই ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য আমি কতকাল অপেক্ষায় ছিলাম তা জানি না। সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কত সময় সোহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলাম হিসেব নেই।
সোহান:- এই ছাড় চল বাহিরে যাবো।
— বাহিরে কেন?
সোহান:- আমার সাথে গেলেই বুঝবি।
— সোহান হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে আমি হেঁটে চলছি ওর সাথে। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে চলে আসলাম।
সোহান:- তাকিয়ে দেখ কত সুন্দর জ্যোৎস্না উঠেছে।
— আকাশে তাকিয়ে দেখি সত্যিই দারুণ জ্যোৎস্না উঠেছে। হাত ধরে দু’জন বসে পরলাম।
সোহান:- সারা জীবনতো ঘরের থাকি, ঘরেই থাকবো ভাবছি আজ সারা রাত দু’জন এখানে বসে জ্যোৎস্না বিলাস করবো তুই কি বলিস?
— আমি কি বলবো তুমি যা বলবে তাই হবে। ভালোবাসি যে তোমাকে আমি।
সোহান:- যদি হারিয়ে যাই কভু বহুদূর।
— আমি অপেক্ষা করবো, অনন্তকাল তোমার ফিরে আসার।
সোহান:- যদি কখনো ফিরে না আসি?
— তবুও অপেক্ষা করবো আমৃত্যু।
সোহান:- এতো ভালোবাসিস কই কখনোতো বলিস নি?
— কি করে বলবো তুমিওতো কখনো বলোনি আমাকে তুমি ভালোবাসো। একজন মেয়ে হয়ে কি করে আগে বলি নিজের মনের কথা?
সোহান:- ওহ তাই না যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ তোকে ভালোবাসার কথা বলতো তখন তুই কি করতি?
— কি আর করতাম রাজী হয়ে যেতাম বলে দিতাম আই লাভিউ টু।
সোহান:- কি?
— হা হা হা দুষ্টমি করলাম। এমনটা কোন দিনও হতো না। আর হ্যাঁ তোমাকে যদি দেখছি কোন মেয়ের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছো তাহলে তোমার খবর আছে।
সোহান:- মানে কি? আমি আবার কখন মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বললাম?
— বলোনি মানে? আজও ঐ যে নীল জামা পরা মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছো। আমি কি দেখিনি মনে করছো?
সোহান:- ওমা! কেউ যদি আমার সাথে ইচ্ছে করে এসে কথা বলে আমি কি তাকে বলবো আমার সাথে কথা বলতে এসো না? আর তাছাড়া ওরা মেহমান।
— মেহমান তো কি হয়েছে সে তো একজন মেয়ে নাকি? সেই আসার পর থেকেই দেখছি তোমাকে কেমন ঘুর ঘুর করে দেখছিলো।
সোহান:- আর তুই যে ছেলেদের সাথে কথা বলিস তখন?
— আমিতো তোমাকে জ্বালানোর জন্য এমনটা করি, যাতে তোমার মুখ থেকে ভালোবাসিটা শুনতে পারি। অবশেষে বললে তুমি ভালোবাসি।
সোহান:- ও তাই না, আমাকে জ্বালাতে খুব ভালো লাগে?
— উহু তোমাকে জ্বালিয়েতো নিজেও জ্বলে যাই।
সোহান:- তাই না?
— সোহানের বুকে মাথা রাখতে রাখতে হ্যাঁ তাইতো তুমি কখনো তা বুঝতে চাওনি।
সোহান:- আর তুই খুব বুঝিস তাই না ফুলটুসি।
— হ্যাঁ বুঝিতো তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইতো কারো সাথে কথা বললে তোমার জ্বলে।
সোহান:- এখন পারলে জ্বালাতো।
— উহু আর জ্বালাবো না এখন থেকে অনেক ভালোবাসবো।
সোহান:- দু’হাতে বুকের সাথে মাথাটা চেপে ধরে হুম এখন থেকে অনেক ভালোবাসবো।
— এখন ছাড়োতো আপু নিশ্চই অপেক্ষা করে আছে আমার ঘরে যাবার।
সোহান:- ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো এতো সময়ে।
— তুমি ঘোরার ডিম জানো, এখনো নিশ্চই আকাশ ভাইয়ার সাথে গল্প করছে।
সোহান:- তুই কি করে জানিস?
— আমি জানবো না কেন? এক সাথেইতো দু’জন ঘুমাই রাতে, আমিতো দেখি তারা কত সুন্দর রোমান্টিক গল্প করে রাত জেগে ফোনে।
সোহান:- ওহ তাই না?
— হ্যাঁ তাই, সবাইতো আর তোমার মত ঝগড়াটে না।
সোহান:- কি বললি আমি ঝগড়াটে? আসল ঝগড়াটেতো তুই।
— মোটেও না তুমি ঝগড়া করো।
সোহান:- ঝগড়া করি না, ঐটা অভিমান যা তুই বুঝিস না।
— কত যে অভিমান করতে পারো তাতো দেখতেই পারি। সব সময় ফুলটুসি এমন করবি না অমন করবি না। কারো সাথে কথা বলবি না। আরও কত কি। আর আসল কথাটাই বলতে পারো না।
সোহান:- আসল কথা কি?
— ঢং করো না তো। ছাড়ো এখন।
সোহান:- না ছাড়বো না সারা রাত এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবো।
— সামনে জড়িয়ে ধরে রাখার জন্য অনেক সময় পাবে।
সোহান:- হুম তা হয়তো পাবো কিন্তু এতো সুন্দর পরিবেশ কি পাবো? খোলা আকাশ জ্যোৎস্না রাত, পুকুর ঘাট কত সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ। যদি কবি হতাম তবে বিশালাকার এক কবিতা লেখে ফেলতাম।
— মানা করছে কে কবিতা লেখতে? তুমি যা বলো তাইতো ভালো লাগে তোমার বলা কথা কবিতার চেয়ে কোন কিছুতেইতো কম নয় আমার জন্য। সোহান বলতে শুরু করলো তাই না?
“খোলা আকাশের নিচে, নির্ঘুম রাত্রি জেগে আছে প্রিয়সী।
হালকা বাতাসে উড়ছে প্রিয়সীর খোলা চুল
আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়ে সে মাথা রেখেছে
বুকের মধ্যখানে।
যেখানে লুকিয়ে আছে তাকে না বলা হাজারো ভালোবাসার কথা।
প্রতিদিন ভাবি বলবো তাকে বলবো আমি ভালোবাসি।
হয়না বলা পারি না বলতে সেওতো কখনো বুঝে না।
আজ সাক্ষী আকাশ, সাক্ষী বাতাস
চিৎকার করে বলছি ভালোবাসি, ভালোবাসি
ভালোবাসি তোমাকে।”
— আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি সোহানের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা, গভীর রাত চারিদিকে নিরবতা, আমরা দু’জন বসে গল্প করে চলেছি মনে মনে ভাবছি এই রাত যেন কখনো শেষ না হয়। হাজার বছর এভাবে সোহানের বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই। আমিও চিৎকার করে বলতে চাই ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে। বিধাতা কি এতো সুখ সইবে আমার কপালে? ভাবতে ভাবতেই সোহান বলে উঠলো কিরে কি ভাবছিস? মাথা নেড়ে কিছু না।
সোহান:- কিছুতো ঠিকই ভাবতেছিস সত্যি করে বলতো কি ভাবতেছিস?
— সত্যি বলছি কিছু না, তোমার বুকে সারা জীবন থাকতে চাই সে অধিকার দিবেতো আমাকে?
সোহান:- আমিও যে চাই এমনি করে তোকে সারা জীবন বুকে জড়িয়ে রাখতে। এখন ঘরে চলে যা সত্যিই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
— আরও কিছুটা সময় সোহানের বুকে শুয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম, দু’জন এক সাথে হাঁটা শুরু করলাম সোহানকে বিদায় দিয়ে আমার রুমে আর সোহান ওর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আস্তে করে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতে দেখতে পেলাম আপু ঘুমিয়ে আছে, আপুকে না ডেকে আমি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। আজ যে আমার সব চেয়ে আনন্দের দিন আজ সোহান আমাকে ভালোবাসি বলেছে। সে আনন্দেই হয়তো দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। বার বার শুধু সোহানের কথাই মনে পরছিল। বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি শুধু রাত কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনের স্কিনে টাচ করতেই দেখতে পেলাম রাত সাড়ে তিনটা বাজে, সেই সাথে দেখলাম তিনটা মিসকল। ফোনের লক খুলতেই ভেসে উঠলো আরমানের নাম্বার। আজ কেন জানি আরমানের নাম্বারটা দেখে বেশ বিরক্ত লাগলো। ফোনটা রেখে দিলাম, সত্যিই সোহানকে জ্বালাতে যেয়ে কেন যে এই আরমানের সাথে কথা বলতে গেলাম। নানান রকম কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসলো। আফরিন আপুর ডাকে দু’চোখ মেলে তাকালাম।
আফরিন:- তাড়াতাড়ি উঠ মেহমান আসছে।
— কোন মেহমান কোথায় থেকে আসছে?
আফরিন:- আমার চাচা ফুপুরা এসেছে, উঠে ফ্রেস হয়ে নে আমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি। সকলে মিলে এক সাথে নাস্তা করবো।
— আচ্ছা, আপু যেতেই উঠে ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হতেই সোহানকে দেখতে পেলাম ডাইনিং এ ঢুকছে আমিও দৌঁড়ে ডাইনিং এর দিকে ছুটলাম।
— চোখ বড় বড় করে চেয়ার টেনে সোহানের পাশে বসলাম। আরে মনে মনে বলতে শুরু করলাম আজ তোমাকে একা পেয়ে নেই, তারপর মজাটা বুঝাবো। এমন সময় আপু সবাইকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। একে একে উনার চাচা ফুপু আর ফুপাতো ভাইবোনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। উনারাও ঢাকাতেই থাকে তবে কখনো দেখা হয়নি।
এদিকে সোহানের বা পাশে যেয়ে বসলো আফরিন আপুর চাচাতো বোন, চোখে ইয়া বড় চশমা লাগানো, দেখলে মনে হয় এই মেয়ে সারা দিন বই নিয়েই বসে থাকে আর কিছু বুঝে না। আমি হাতের কুনুই দিয়ে সোহানকে গুতা দিলাম। সোহান আড় চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশরার বুঝালাম যদি পাশে বসা মেয়ের দিকে তাকাও তাহলে তোমার খবর আছে। সোহান মুচকি মুচকি হাসছে আর আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে মনে বকা দিচ্ছি আর নাস্তা করছি।
ফুপু:- ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কি হয়েছে সোহানের আর তুই বা কেন আমাদের জানালি না?
— ফুপু শান্ত হও, তেমন কিছু হয়নি জ্বর এসেছিলো এখন স্বাভাবিক আছে।
ফুপু:- তাই বলে জানাতে হয় না?
— অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আর তোমাদের জানাই নি। আপু তোমাদের জানাতে চেয়েছিলো আমিই নিষেধ করছি। কথা বলতে বলতে ফুপা আর আপুও ঘরের ভিতর ঢুকলো।
ফুপা:- কি অবস্থা এখন তোমার?
সোহান:- জ্বি ফুপা এখন অনেক ভালো।
ফুপা:- তোমরা কি আমাদের পর মনে করো নাকি? শরীর অসুস্থ অথচ জানানোর মত মনে করো না।
— ছিঃ ফুপা এমনটা কেন বলছেন? হঠাৎ জ্বর আসছে রাতেই আপুর কাছ থেকে ঔষধ এনে ছিলাম ভেবে ছিলাম মাথায় পানি দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু জ্বর কমতে কমতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আর আপনাদের ডাক দেইনি।
আফরিন:- হয়েছে এখন তোমরা যাওতো, ভাইয়াকে রেস্ট নিতে দাও। আর তুই ঔষধ গুলো খায়িয়ে দে। আমরা নাস্তা বানাচ্ছি একটু পর এসে দু’জন নাস্তা খাবি।
— আচ্ছা তোমরা যাও, আমি এগুলো নিয়ে আসতেছি। সকলে চলে যাবার পর সোহানের দিকে ঔষধ এগিয়ে দিলাম। সোহান ঔষধ খাওয়ার পর আমি মগ গুলো নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবো এমন সময় সোহান হাত টেনে ধরলো।
সোহান:- সরি আর থ্যাংক্স।
— হাতটা ছেড়ে দাও তোমার সরি কিংবা থ্যাংক্স কোনটাই আমার দরকার নেই। তুমি কি ভাবছো সারা রাত তোমাকে সেবা যত্ন করছি মানেই আমি সব ভুলে গেছি? তুমি গতকাল আমার সাথে কেমন ব্যবহারটা করেছো। না আমি মোটে্র ভুলিনি কোন কিছুই।
সোহান:- দেখ আমি বুঝতে পারছি আমার ঐরকম রিয়াক্ট করা ঠিক হয়নি। আর কেন করছি তা আমি জানি না। তার জন্যই সরি বলছি। আর কখনো এমন করবো না।
— সে তোমার ব্যাপার তুমি কেন করছো তাও আমি জানতে চাই না। কিন্তু যা করছো তা আমি কোন দিনও ভুলতে পারবো না। হাতটা ছেড়ে দাও বলছি।
সোহান:- হাত ছেড়ে দিয়ে বেশতো যা, আমিও দেখবো তুই কতদিন রাগ করে থাকতে পারিস।
— আর কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রান্না ঘরে চায়ের মগ রেখে নিজের রুমে চলে আসলাম। টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি একুশটা মিস কল দিয়েছে আরমান। ফোন ব্যাক করতেই আরমান রিসিভ করলো।
আরমান:- কেমন আছেন আর আপনার ভাইয়া কেমন আছে?
— হ্যাঁ ভালো আছি আর উনিো সুস্থ আছেন কিন্তু আপনাকে কে বললো?
আরমান:- গত রাতেই আকাশ বলেছে তাইতো এতো বার ফোন দিলাম। বড় কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানার জন্য।
— ওহ আসলে ফোনটা কাছে ছিলো না তাই রিসিভ করতে পারিনি কিছু মনে করবেন না।
আরমান:- না না কি মনে করবো, আসলে আমার বুঝার দরকার ছিলো আপনি ব্যাস্ত আছেন না হলে অবশ্যই ফোন ধরতেন।
— জ্বি তাতো অবশ্যই, তারপর বলেন আপনার বাড়ির সকলে কেমন আছে, আর সারা রাত ঘুমানি নিশ্চই?
আরমান:- হ্যাঁ সকলেই ভালো আছে, আর হ্যাঁ রাতে ঘুমাইনি, আসলে ঘুম আসছিলো না।
— ওমা কেন? ঘুম কোথায় হারালো আপনার?
আরমান:- কোথাও হারায়নি, আসলে এখনো আবহাওয়ার সাথে এডজাস্ট করতে পারিনি। তাই ঘুমের একটু সমস্যা হচ্ছে।
— ওহ আচ্ছা তাই বলুন আমি ভাবলাম অন্যকোন সমস্যা।
আরমান:- অন্য কোন সমস্যা মানে? একটু বুঝিয়ে বলুন।
— ঐ যে আছে না গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারা রাত জেগে গল্প করা টাইপ।
আরমান:- সরি আমার তেমন কেউ নেই।
— যাক ভালো,
আরমান:- ভালো কেন?
— ভালো কারণ হচ্ছে কারো জন্য সারা রাত জেগে অপেক্ষা করতে হবে না। এটাই হচ্ছে ভালো,
আরমান:- হ্যাঁ তা ঠিকই বলেছেন আচ্ছা আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
— [মনে মনে হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি একজনকে] না তেমন কিছু না, এখনো তেমন কেউ আসেনি জীবনে।
আরমান:- যাক তাহলেতো আপনারও ভালোই।
— হ্যাঁ তা বলতে পারেন, কারো ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কারো সাথে দেখা করার জন্য দিন গুনতে হয় না। এভাবেই দীর্ঘ সময় আরমানের সাথে কথা হলো। ফোন রাখতেই আফরিন আপু রুমের ভিতর ঢুকে।
আফরিন:- কিরে তুই তোর কি নাস্তা খেতে হবে না নাকি?
— হ্যাঁ আপু এইতো যাচ্ছি চলো। বলে দু’জন রুম।থেকে বেরিয়ে এসে ডাইনিং এ বসলাম। সোহান ছলছল চোখে চেয়ে রয়েছে, মনে হচ্ছে এ বুঝি আকাশ বাতাস এক করে কান্না শুরু করবে। দেখেও না দেখার ভান ধরে নিজের মত করে নাস্তা করতে শুরু করলাম। মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছি সোহান একটু একটু করে রুটি ছিঁড়ে নিয়ে খাচ্ছে। মায়া লাগছে বড্ড মায়া লাগছে সোহানের জন্য, আচ্ছা যে আমাকে ভালোবাসে না তার জন্য কিসের এতো মায়া আমার? সেতো কখনোই আমার ভালোবাসা বুঝে না। সব সময় বকাবকি করতেই তার ভালো লাগে। ভাবতে ভাবতে নাস্তা শেষ করে টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে আসলাম। সারা রাত ঘুম না হওয়াতে শরীর কেমন জানি ক্লান্ত লাগতেছিলো। মুখে পানি দিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম। দুপুরে আপুর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।
আফরিন:- কিরে তুই ও কি অসুস্থ হয়ে পরলি নাকি আবার?
— না আপু সারা রাত ঘুমাইনি, তাই একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
আফরিন:- উঠে ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করতে আয়।
— হ্যাঁ আপু তুমি যাও আমি আসছি। আপু চলে যেতেই উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে শাওয়ার নিলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চুল গুলো টাওয়েলে পেঁচিয়ে রওনা হলাম ডাইনিং এর দিকে। ডাইনিং এ যেয়ে কোথাও সোহানকে দেখতে পেলাম না। আপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ভাইয়া কোথায়?
আফরিন:- বললো বাসায় ভালো লাগছে না, বাহির থেকে ঘুরে আসবে নাকি।
— আর খাবার কোথায় খাবে?
আফরিন:- বললো লাঞ্চ বাহিরে করে নিবে।
— মনে মনে বাহ খুব ভালো এখন বাহিরে ঘুরতে গেলেও আর জানাতে ইচ্ছে করে না ওর। আমিতো কেউ না আমাকে জানাবে কেন? অবশ্য আমারও বা দোষ কম কোথায়? নিজেইতো রাগ করে বসে ছিলাম। না ভালো লাগে না কিছু না পারি বলতে না পারি সইতে, এ যে কঠিন জ্বালা, যে জ্বালায় পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছি অথচ কাউকে বলতে পারছি না। কেউ দেখতেও পায় না সেই আগুন। এ আগুন শুধুই হৃদয় পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
ফুপু:- কিরে খাচ্ছিস না কেন? খাবার ভালো হয়নি?
— কই খাচ্ছিতো, আমার ফুপুর হাতের মত কেউ কি রান্না করতে পারে?
ফুপু:- ছেলেটার যে কি হলো হুট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যে গেলো না খেয়ে।
— তোমাদের ছেলে মনে হয় ছোট খোকা? খায়নি বাহিরে ভালো ভালো খাবার খেয়ে নিবে।
ফুপু:- এমন করে বলিস কেন? আসলে আজ আকাশদের বাড়ি থেকে মেহমান আসবে সন্ধ্যায় ছেলেটা নাই কেমন জানি লাগছে।
— চিন্তা করো না সন্ধ্যার আগেই দেখবা এসে হাজির হয়ে গেছে।
ফুপু:- আসলেই ভালো।
— আরে আসবে আসবে, না আসলে আমি কান ধরে নিয়ে আসবো চিন্তা কইরো না।
ফুপু:- আস্তো ফাজিল হচ্ছিস দিন দিন।
— হাসতে হাসতে খাবার খেয়ে আফরিন আপু আর আমি রুমে চলে আসলাম। বিছানায় শুয়ে মনে মনে ভাবছি কোথায় গেলো সোহান একা একা। কাউকে কিছু না বলে, খুব রেগেছে মনে হচ্ছে।
আফরিন:- এই ইকরা ঘুমিয়ে যাইসনা কিন্তু আবার।
— আরে না না ঘুমাবো না আর, শুয়ে রেস্ট নিচ্ছি এইটুকুই।
আফরিন:- হ্যাঁ এটাই ভালো ঘুমালে কাজ করবে কে? আজ অনেক কাজ কত রকম রান্না করতে হবে।
— হুম তাতো করতেই হবে। বিকেল হয়ে এলো অথচ সোহানের আসার কোন নামই নেই। এদিকে আকাশ ভাইয়াদের বাড়ি থেকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তারা রওনা দিয়ে দিছে। না আর ভালো লাগছে না এই অসুস্থ শরীরে ছেলেটা গেলো কোথায়। এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখি বাবা ফোন দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করে বাবাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো।
বাবা:- আমরা সকলে ভালো আছি তোরা দু’জন কেমন আছিস?
— আমরাও ভালো আছি বাবা তোমরা কোন টেনশন করো না।
বাবা:- সোহান কোথায়? ওকে জ্বালাসনাতো?
— বাহিরে বেড়াতে গেছে, জ্বালাবো কেন? এভাবে আরও কিছুক্ষণ কথা হবার পর ফোনটা কেটে রেখে দিলাম। মাঝে মাঝে বাবা মায়ের উপর প্রচণ্ড রাগ উঠে যায়। আমার চেয়ে তারা সোহানকেই মনে হয় বেশী ভালোবাসে, মনে হয় সোহানই তাদের পেটের সন্তান আর আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে আসছে। হয়তো বাড়ির বড় ছেলে কিংবা একমাত্র ছেলে বলেই এতোটা আদর সে পায়। সব কিছুর শেষেও মনটা ছটফট করছে ওর জন্য, কোথায় গেলো, কি করছে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে। ভাবতে ভাবতে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়ারা সকলে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে। দ্রুত বারান্দা থেকে রুমের ভিতর ঢুকে ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হলাম। বাড়ি ভর্তি মেহমান অথচ সোহান নেই, কেমনটা লাগে একটা ফোন দিবো কি দিবো না ভাবতে ভাবতে মেহমানদের সামনে চলে আসলাম। সালাম দিলাম।
আফরিন:- ও হচ্ছে আমার একমাত্র মামাতো বোন, ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছে।
— আকাশ ভাইয়া উনার বাড়ির সকলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম আরমান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। আর তার বাবা মাও বার বার আমার দিকেই দেখছে। আমি হাসি মুখে কোন রকম।নিজেকে সামলে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। রুমের দিকে এগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে ফোন দিলাম। কয়েকবার রিং বাজতেই সোহান ফোন রিসিভ করলো।
সোহান:- গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো কি বলবেন বলুন।
— ফাজলামো করো আমার সাথে? কবে থেকে তোমার বড় বোন হলাম যে আপনি করে বলতে শুরু করলে?
সোহান:- মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলাই উত্তম কাজ, আর বদলে যাওয়া মানুষের সাথে কথা বলার আগে বহুবার ভাবতে হবে, খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা ভাবনা করেইতো কথা বলতে হবে। বলেন এখন কেন ফোন দিছেন।
— তোমার চিন্তা ভাবনার নিকুচি করি আমি কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো বাড়িতে অনেক মেহমান। আর কে বদলে গেছে তা বাড়িতে ফেরার পর যখন চুল গুলো টেনে ছিড়বো তখনি বুঝতে পারবে। কথা বলে ফোন কেটে রুমের ভিতর থেকে বের হতে যাবো এমন সময় দরজার সামনে আসতেই বাহির থেকে ভিতরে ঢুকতে আসা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছিলাম।
— মাটিতে পরার ঠিক আগ মুহুর্তে বুঝতে পারলাম কারো হাত প্রচণ্ড রকম শক্ত ভাবে আমার কোমরের উপর অনুভব করলাম। কোন রকমে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম আরমান। চোখের উপর চোখ রেখে প্রশ্ন করলাম আপনি এখানে?
আরমান:- বাড়িটা হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম। কিন্তু আপনি এতো জোড়ে বের হচ্ছিলেন কেন? ভুত দেখে ভয় পেয়েছেন নাকি?
— জ্বি না ভুত দেখবো কেন? আপনারা এসেছেন তাই বের হচ্ছিলাম। আর দয়া করে হাতটা সরিয়ে নিলে খুশি হবো।
আরমান:- উফ সরি কিছু মনে করবেন না, খেয়াল করিনি।
— ইটস ওকে। আচ্ছা আপনি ঘুরে দেখুন আমি ওদিকে দেখি কি অবস্থা নাস্তা হলো কিনা, রান্না বান্নায় ফুপু আর আপুকে সাহায্য করতে হবে।
আরমান:- দেখা যেহেতু হয়ে গেলো চলুন না বাড়িটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবেন।
— সরি এখন পারছি না পরে এক সময় দেখবেন।
আরমান:- ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই, চলুন আমিও যাই একা একা ঘুরতে ভালো লাগবে না।
— কেন আকাশ ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতেন। আর চাইলে পুকুরের ঐদিকটায় যেয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভালো লাগবে।
আরমান:- আকাশ শ্বশুড় বাড়িতে এসেছে সকলের সাথে গল্প করছে, ঐখান থেকে ডেকে নিয়ে আসাটা ভালো দেখাবে না তাই আর ডাক দেইনি। একা একা কোন জায়গায় ভালো লাগবে না। চলুন আমিও ওদের সাথে যেয়ে আড্ডায় যোগ দেই।
— বেশতো চলুন।
আরমান:- হ্যাঁ চলুন।
— দু’জনে হাঁটা শুরু করলাম পাশাপাশি, আরমান বসার রুমে চলে গেলো আর আমি চলে আসলাম রান্না ঘরে ফুপু রান্না করছে, নাস্তা রেডি হয়ে গেছে আমি আর আপু নাস্তা নিয়ে সকলের সামনে এগিয়ে দিতে শুরু করলাম। নাস্তা দেয়া শেষ করে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। ফুপুকে রান্নায় সাহায্য করছি একটু পরেই আপুও চলে আসলো রান্না ঘরে।
ফুপু:- ছেলেটা এখনো আসলো না ইকরা ফোন দে না একবার। তোর ফুপাও একা একা কথা বলছে এতো গুলো মানুষের সাথে।
— চলে আসবে কিছুক্ষণের ভিতর কল দিয়েছিলামতো একবার।
আফরিন:- আচ্ছা আমি কল দিচ্ছি তোমরা বসো আমি ফোনটা নিয়ে আসতেছি।
— ফুপুর সাথে গল্প করছি আর রান্নায় সাহায্য করছি এর ভিতর আপু ফোন নিয়ে আবার রান্না ঘরে ফিরে আসলো। সোহানকে ফোন দিলো সোহান জানালো বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে দশ মিনিটের মত লাগবে।
ফুপু:- এক কাজ কর তোরা যেহেতু সোহান আসতেছে ওর জন্য নাস্তাটা নিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়। সারা দিন কি খেয়েছে না খেয়েছে, এখন যদি এসে ওদের সাথে কথাবার্তা বলতে বসে তাহলে হয়তো আর খাবার সময়ই পাবে না।
আফরিন:- হ্যাঁ ঠিকই বলছো তুমি দাওতো নাস্তার বাটিটা আমার হাতে দাও আমি যেয়ে দিয়ে আসি ভাইয়ার রুমে আর চা টা গরম করে ওর কাছে দাও ও যেয়ে দিয়ে আসবে। আমি নাস্তাটা রেখে যেয়ে দেখি ওনাদের কি অবস্থা।
— আপু নাস্তার প্লেট নিয়ে চলে গেলো, কিছু সময়ের ভিতরে ফুপু চা গরম করে মগে করে আমাকে দিয়ে বললো যা যেয়ে সোহানের রুমে রেখে আয়। চায়ের মগ নিয়ে সোহানের রুমে যেয়ে রেখে ঘুরতেই সোহান রুমের ভিতর ঢুকলো। কিছুটা চমকে উঠলাম।
সোহান:- কিরে তুই আমার ঘরে কি করছিস?
— কিছু না চা আর নাস্তা দিয়ে যেতে বললো ফুপু তাই নিয়ে আসছিলাম। তা নাহলে তোমার রুমে আসার আমার কি কোন প্রয়োজন আছে নাকি?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো আমিতো অপ্রয়োজনীও মানুষ হয়ে গেছি।
— তুমি সব সময় বেশী বুঝ, আমি কি এভাবে বলছি নাকি?
সোহান:- তো কিভাবে বলছিস?
— তুমি কখনোই কোন কিছু বুঝবে না।
সোহান:- বুঝিয়ে বললেই মানুষ সব বুঝেতে পারে, তুই কি বলিস তুই নিজেই বুঝিস না আর আমি কি বুঝবো?
— এখন তোমাকে বুঝানোর মত সময় আমার হাতে নেই, বাড়ি ভর্তি মেহমান তাড়াতাড়ি খেয়ে তাদের সাথে দেখা করো। ফুপা একা সেই কখন থেকে বসে তাদের সাথে কথা বলছে। বলেই রুম থেকে বের হতে যাবো এমন সময় বললো দাঁড়া, আমি ঘুরে আবার কি হলো?
সোহান:- পেছন থেকে হাত সামনে এনে বেলী ফুলের মালা এগিয়ে দিতে দিতে এটা তোর জন্য খোঁপায় বেশ মানাবে তোর।
— বাহ দারুণতো এটা আমার পছন্দ হইছে এই উপলক্ষে তোমাকে মাফ করা যায়। তারপরেও আপাতত মাফ করছি না। চুলের খোঁপায় ফুল গুঁজতে গুঁজতে বাড়ি ভর্তি মেহমান তাদের আগে বিদায় কর। এরপর বুঝবো তোমাকে ক্ষমা করবো নাকি শাস্তি দিবো।
সোহান:- ওহ তাই বুঝি আচ্ছা ঠিক আছে, দু’টো নতুন বই এনেছিলাম ভেবেছিলাম ফুলটুসিকে দিবো। থাক আর দিতে হবে না ভালোই হলো আমিই পড়বো।
— এই না না দাও এখুনি।
সোহান:- উহু এখন না সবাইকে বিদায় কর তারপর দিবো কিনা ভেবে দেখবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাক কি হয়। বলে রুম।থেকে বের হলাম। সোহানকে দেখলেই এক অন্য রকম ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। এই ভালো লাগাটাই যে আমার সারা জীবন চাই। ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে চলে আসলাম।
ফুপু:- সোহান এসেছে কি?
— হ্যাঁ ফুপু এসেছে।
ফুপু:- যাক ভালো হলো, নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি মেহমানদের সাথে দেখা করতে বলছিস তো?
— হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি উফ সারা দিন খালি সোহান সোহান আর সোহান, এই যে আমি একজন আছি আমার দিকেওতো একটু তাকাও।
আফরিন:- আহ্রে বেচারি, চিন্তা করিস না তোর দিকে তাকানোর জন্য কতজন আছে তারাই তাকাবে তোর দিকে।
— মানে কি? কি সব বলো না তুমি।
আফরিন:- মানে খুব সহজ, আমার এতো সুন্দরি মিষ্টি বোনটার দিকে কত ছেলে যে তাকাবে তার কি কোন হিসেব আছে?
— উফ আপু তুমিও না, আচ্ছা তোমরা থাকো আমি রুমে যাচ্ছি রান্না শেষ হলে আমাকে ডাক দিও আমি চলে আসবো।
ফুপু:- আচ্ছা যা আর যাবার আগে একবার সোহানের রুম হয়ে যাস, ওর আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করিস।
— আচ্ছা ঠিক আছে বলে রান্না ঘর থেকে বের হলাম। সোহানের রুমে সামনে যেতেই ও রুম থেকে বের হলো।
সোহান:- কিরে আবার কেন আসলি কোন কিছু লাগবে?
— না তোমার কিছু লাগবে কিনা জানার জন্য এসেছিলাম।
সোহান:- না লাগবে না, যা তুই যেয়ে ঐদিকটা দেখ ফুপুকে সাহায্য কর।
— লাগবে না ঐ দিকে আমি রুমে যাচ্ছি।
সোহান:- আচ্ছা শোনতো ওদের সাথে কি কোন মেয়ে আসছে নাকি অল্প বয়সী?
সোহান:- এমনি জানতে চাইলাম আর কি, আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
— খারাপ ও না ভালোও না একদম মদন মদন।
সোহান:- কি?
— হাসতে হাসতে তোমাকে সব পোষাকেই অনেক সুন্দর লাগে। তাড়াতাড়ি যাওতো তুমি বলেই হাঁটা শুরু করলাম নিজের রুমের দিকে। সোহান পেছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে রয়েছে। এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি, কিছুটা দূরে এসে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করলাম কি?
সোহান:- মাথা নেড়ে বুঝালো কিছুনা।
— হাসতে হাসতে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম। রান্না হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। তাই একটু সেঁজে নিলে মন্দ হয়না, আর এখনতো সোহান ও এসেছে ভাবতে ভাবতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই খোঁপায় গেঁথে রাখা বেলী ফুলের মালাটা চোখে পরলো। হাতে নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরতেই এর মিষ্টি ঘ্রাণে যেন মাতোয়ারা হবার অবস্থা। মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও সোহানের স্পর্শ লুকিয়ে আছে এই ফুলের মাঝে। হঠাৎ করেই মনে পরলো সত্যি সত্যিই তো আরমান আর আকাশের বোন এসেছে সোহান যদি তাদের সাথে, না না তা করতে দেয়া যাবে না। অবশ্য ছেলেদের কোন ভরসা নেই। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আবারও চুলের খোঁপায় ফুলের মালাটা গুঁজে দ্রুত রওনা হলাম ঐ রুমের দিকে। ভিতরটায় কেমন জানি ছটফট করছে কি যেন নেই কি যেন নেই, এমন মনে হচ্ছে নিজের কাছে। রুমের ভিতর ঢুকতেই সবার দৃষ্টি আমার দিকে পরলো। সকলে কথায় বিরতি টেনে এক নজর দেখে নিয়ে আবার গল্পে মনোযোগী হলো। এদিকে আরমান আর চোখে চেয়েই রয়েছে। আমি যেয়ে ফুপার পাশে বসে, ফুপাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু লাগবে কিনা।
ফুপা:- সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলো কারো কিছু লাগবে কিনা, চা বা নাস্তা।
— কারো কিছুই লাগবে না জানালো। হঠাৎ করে আরমান বলে উঠলো পানি খাবে। আমি সেখান থেকে উঠতে উঠতে সোহানের দিকে তাকালাম সোহান এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে থাকা আগের জিনিস গুলো ট্রেতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে মনে আরমানকে গালি দিতে দিতে ট্রে নিয়ে রান্না ঘরের সামনে রেখে আবার ফিরে আসলাম ডাইনিং এ। পানি নিয়ে ঘুরতেই পেছনে সোহান দাঁড়িয়ে আছে। একি তুমি এখানে কেন?
সোহান:- মুখের উপর আঙ্গুল দিয়ে চেঁপে ধরে, তোকে আজ নজরকাড়া সুন্দরি লাগছে, তাই কারো নজর যেনো না লাগে তাই কপালে কালি লাগিয়ে দিতে আসছি।
— উহু মোটেও এমনটা করবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।
সোহান:- হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো কেন কি করবি তাহলে শুনি?
— চিৎকার করবো পুরো বাড়ি চিৎকার করে মাথায় তুলে নিবো।
সোহান:- আরেকটু কাছে এসে একটা হাত চেঁপে ধরে আচ্ছা চিৎকার করবি? তাহলে আমি কি করবো বলেই হ্যাঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
— কি করছো ছাড়ো বলছি কেউ চলে আসবে বলেই সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহান:- তোর চিৎকার শুনবো চিৎকার কর।
— সোহানের বুকে মাথা রেখে পারবো না এখন চিৎকার করতে যেতে দাও পরে কথা বলবো।সোহান নিজের মুখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসতেই দুচোখ বন্ধ করে নিলাম।
সোহান:- বিছানার দিকে এগিয়ে এসে শক্ত করেহাত চেঁপে ধরে, এখনো কিছু করিনি তবে..
— ভয়ার্ত গলায় তবে কি?
সোহান:- একটা হাত ছেড়ে দিয়ে চুলের মুঠি ধরে, এগুলো কেটে ছোট ছোট করে দিবো।
— মানে কি কেন করবা এমনটা?
সোহান:- বাতাসে খুব বেশী উড়ে তাই কেটে দিবো।
— প্লীজ এমনটা করো না, আমি চিৎকার করবো।
সোহান:- মুখ চেঁপে ধরে চিৎকার করবি? চিৎকার কর দেখি তোর মুখে কতটা জোড় আছে।
— ছাড়ো আমাকে বলছি।
সোহান:- এই ঠোঁট নেড়ে নেড় কথা বলিস তাই না, আজ থেকে তোর ঠোঁট আর কাউকে দেখাতে পারবি না।
— প্লীজ ছাড়ো।
সোহান:- একদম চুপ, হাত মেলানোর অনেক সখ না আজ হাতই ভেঙে দিবো।
— তুমি কে হ্যাঁ? তুমি আমার কি হও? যে আমার সাথে এমন করছো?
সোহান:- কথাটা শোনার সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওহ তাইতো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি কেউ না। এখুনি বের হয়ে যা ঘর থেকে।
— আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাইনি।
সোহান:- বের হয়ে যা আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।
— আর কোন কথা হলো না, চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে এক দৌঁড়ে আপুর রুমে চলে আসলাম। কান্না যেন কোন ভাবেই থামাতে পারছিলাম না।
আফরিন:- ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এই কি হলো তোর কান্না করছিস কেন?
— কিছুনা এমনি বলেই চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলাম।
আফরিন:- আরে কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে বলবিতো। ছোট মানুষের মত কেঁদে চললে কি বুঝবো?
— আমাকে বকা দিছে আরও অনেক কথা বলছে।
আফরিন:- কে ভাইয়া?
— হুম
আফরিন:- কেন?
— আরমানের সাথে কথা বলার জন্য, হাত মিলিয়েছি তাই।
আফরিন:- ও আচ্ছা তাই নাকি তাহলেতো বেশ জ্বলছে ভাইয়া।
— তাকে জ্বালাতে গেলে যে আমি জ্বলে যাই আপু। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেলছি রাগের মাথায়।
আফরিন:- আরে ব্যাপার না, তবে কি জানিস এই কয়েকদিনে এটা বুঝতে পেরেছি ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে।
— ভালোবাসে না ছাঁই যদি ভালোবাসতো তাহলে সব সময় আমার সাথে এমন করতে পারতো। আর আস্ত একটা আনরোমান্টিক ছেলে সে। সব চেয়ে বড় কথা এতো দিনেও ভালোবাসি বলতে পারেনি।
আফরিন:- তাতে কি সব ভালোবাসা কি মুখে বলতে হয়? কিছু কিছু ভালোবাসা অনুভবে বুঝে নিতে হয়।
— সোহান নিজের রুমে বসে সাদা কাগজে লেখতেছে, তোমাকে অনেকে অনেক ভাবে ভালোবাসতে পারে, তবে আমার মত করে কেউ তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না। ভালোবাসার অধিকার সবার আছে নিজের মত করে আমিও তোমায় ভালোবাসি আমার মত করে। হয়তো বলতে পারি না, নয়তো তুমি কখনো বুঝতে পারো না আমার ভালোবাসা। দিনের পর দিন যাবে বসন্তের পর বসন্ত পার হবে, আমার ভালোবাসা ঠিক একই রকম থেকে যাবে যেমনটা ছিলো গত বসন্তে তেমনি রবে এই বসন্তে, ঠিক তেমনি আগামি বসন্তেও থাকবে একই রকম। ভালোবাসি আমি বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।
— বাসায় ফেরার পর থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে শুরু হয়েছিলো। সময়ের সাথে সাথে তা বেড়েই চলেছে বিকেল শেষে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অথচ এক বারের জন্যও আর দেখা হয়নি, কি করছে কিছু খেয়েছে কিনা কোন কিছুই জানা হয়নি। ওর সাথে কাছে যেতেও পারবো না। কি যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আফরিন আপুর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো আকাশ ভাইয়া ফোন দিয়েছে। আপু ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেলো। আমি আগের মতই বসে থেকে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনে চলছি।
আফরিন:- রুমে ঢুকতে ঢুকতে এই ইকরা তোর সাথে কথা বলবে।
— ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো ভাইয়া বলেন কেমন আছেন?
আরমান:- জ্বি আমি ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?
— ওহ সরি সরি আমি ভেবে ছিলাম আকাশ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। কথাটা বলেই আপুর দিকে তাকালাম। আপু ইশারায় বুঝালো সে কিছু জানে না।
আরমান:- না না কি মনে করবো, আর ফোন আকাশের কাছেই ছিলো আমি কেড়ে নিয়েছি। আসলে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। তারপর কি করছেন?
— তেমন কিছু না বৃষ্টি হচ্ছে রুমে বসে বসে বোরিং সময় পার করছিলাম এইতো। আপনারা দু’জন কি করছেন?
আরমান:- আমরাও বসে আছি, তবে বাসায় নয় বাসার সামনের টং এর দোকানে।
— ঐখানে কেন?
আরমান:- কারণ হচ্ছে এই বৃষ্টির দিনে টং এর দোকানে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে লাল চা খেতে বেশ লাগে। এক অসাধারণ অনুভুতি হয় কেন আপনিতো ঢাকায় থাকেন কখনো খাননি টং এর দোকানে বসে চা?
— জ্বি না, আসলে কখনো এভাবে খাওয়া হয়নি।
আরমান:- ওহ আচ্ছা, কখনো সময় হলে বলবেন এক সাথে বসে চা খাওয়া যাবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে যদি কখনো সুযোগ হয় অবশ্যই খাবো।
আরমান:- যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?
— হ্যাঁ নিশ্চই বলেন।
আরমান:- না মানে আকাশ ওর ফোন চাচ্ছে আপনার বোনের সাথে কথা বলবে। যদি আপনার ফোন নাম্বারটা দিতেন তাহলে মাঝে মাঝে কথা বলা যেতো।
— হ্যাঁ নিশ্চই নোট করে নিন ০১৭.. এটা আমার নাম্বার বলতে বলতেই আননোন নাম্বার থেকে কলো আসলো।
আরমান:- ফোনটা রিসিভ করেন ঐটা আমার নাম্বার। এই ফোন আকাশকে দিয়ে দিচ্ছি।
— আফরিন আপুকে তার ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে নিজেরটা রিসিভ করলাম। আর ও কিছু সময় আরমানের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। কেন জানি মনটা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো হয়ে গেলো। এদিকে বৃষ্টির গতি বেড়েই চলেছে থামার কোন নাম গন্ধও নেই। ফুপু চায়ের মগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে বললো আজ মনে হয় সারা রাতই বৃষ্টি হবে।
— চায়ের মগ হাতে নিয়ে মনে হয়, এখানেই চা নিয়ে আসলে যে?
ফুপু:- কি করবো আমি আর তোর ফুপা অনেক সময় আগেই চা খেয়েছি, এদিকে সেই কখন সন্ধ্যা হয়েছে, আর সোহান নিজের রুমে বসেই চা নাস্তা খাচ্ছে তাই ভাবলাম তোদের জন্যও চা নাস্তা রুমেই নিয়ে আসি।
আফরিন:- খুব ভালো করছো আম্মু, যেতে ইচ্ছে করছিলো না।
ফুপু:- তুই কিন্তু দিন অলস হয়ে যাচ্ছিস আফরিন, দু’দিন পর বিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে যেতে হবে নিজের সংসার হবে কত কাজ থাকবে তখন একবারও কি তা ভেবে দেখিস?
আফরিন:- জড়িয়ে ধরে ও আম্মু সারা জীবনইতো কাজ করে কাটাতে হবে। বাবার বাড়ি মানেইতো স্বাধীনতা শ্বশুড় বাড়িতে গেলেতো আর এই স্বাধীনতা পাবো না।
ফুপু:- পাগলী মেয়ে আমার। বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
— মা মেয়ের ভালোবাসা সত্যিই দেখার মত, সত্যিইতো ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি মা সারা দিনই কোন না কোন নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। সব সময় আমরা কি খাবো আমরা কি পরবো, কখন ঘুমালাম কখন ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হবে। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা। সব সময় এসব নিয়েই ভেবেছে কখনো নিজের জন্য তাকে ভাবতে দেখিনি। মেয়েদের জীবনটাই হয়তো এমন। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চায়ের মগটা হাতে নিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালাম। রিনঝিন শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে সাথে এক মগ চা বাহ ব্যাপারটা বেশ দারুণ। মনে মনে কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলাম
” ঝুম বৃষ্টি তুমি আমি এর এক পেয়ালা চা।
পাশাপাশি একই ছাদের নিচে বসে আছি।
দূর থেকে বহুদূর পর্যন্ত যতটুকু চোখ যাবে
শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি দেখা যাবে।
হঠাৎ দমকা হাওয়ায় এলোমেলে করে দিবে আমার খোলা চুল গুলো।
তুমি কি তখন স্পর্শ করবে আমাকে?
তুমি কি তখন আমার হাতে হাত রাখবে?
কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলবে
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে?”
আফরিন:- কি ভাবতেছিস একা একা দাঁড়িয়ে? সোহান ভাইয়ার কথা নাকি?
— উফ আপু সব সময় শুধু একই বিষয় নিয়ে কেন থাকো তুমি? নতুন কিছু ভাবো না কেন?
আফরিন:- হয়েছে আর নতুন কিছু ভাবতে হবে না। জানিতো তোর মনের মাঝে কি চলে।
— আকাশ ভাইয়া কি বললো?
আফরিন:- কি আর বলবে কেমন লাগলে ঘুরতে, সবাই কি করছি এই সব আর কি।
— ভালোতো বিয়ের আগেই তোমাদের প্রেম দেখি জমে উঠেছে।
আফরিন:- ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? আচ্ছা আরমান ভাইয়া কি বললো তোকে?
— কি আর বলবে কি করছি, কেমন আছি, বললো কোন এক বৃষ্টির দিনে দু’জন বসে এক সাথে চা খাবো। এইসব আর কি।
আফরিন:- বাহ বাহ তোর প্রেমে পরে গেলো নাকি? তাহলেতো ভালো করে খোঁজ নিয়ে জানতে হয়।
— আপু তুমিও না কি সব বলতে শুরু করলা? আমার কি আর কোন কাজ নেই যে শুধু প্রেম করে বেড়াবো?
আফরিন:- বিয়ে বাড়িতে এসেছিস মুহুর্ত গুলো উপভোগ কর। বলাতো যায় কাল যদি তোর বিয়ে হয়ে যায়, তখন আফসোস করবি হাতে যথেষ্ট্য সময় ছিলো মজা মাস্তি করার জন্য কিন্তু নিজের ব্যার্থতার জন্য তুই তা করতে পারিস নাই।
— ভাবনার জগৎ এ পরে গেলাম আপু কি বলতে চাচ্ছে, কি বুঝাতে চাচ্ছে আমাকে। সব কিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো, সোহান একা রুমে কি করছে একটা বারের জন্যও আর আমার সাথে দেখা করলো না। এতো রাগ আর জিদ ওর, ইচ্ছে করছে এখুনি ওর রুমে যেয়ে প্রশ্ন করি যদি আমাকে ভালো না বাসো তবে কেন এতো জ্বলছে তোমার?
আফরিন:- হ্যাঁ মা খাবো, তুমি যাও আমরা ফ্রেস হয়ে আসছি।
ফুপু:- চায়ের মগ গুলো গুছিয়ে নিতে নিতে তাড়াতাড়ি আয়, বলে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।
— আপু ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো ফ্রেস হবার জন্য। আমি মনে মনে একটু খুশি হলাম দীর্ঘ সময় পর সোহানকে দেখতে পাবো। আপু বের হতেই ওয়াশ রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসলাম।
দু’জন মিলে ডাইনিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
ডাইনিং এ এসে দেখি শুধু ফুপু আর ফুপা বসে আছে। মন খারাপ করেই ডাইনিং এ ঢুকে টেবিলে বসলাম।
আফরিন:- মা ভাইয়া কই খাবে না?
ফুপু:- পরে খাবে নাকি, ওর খাবার ঘরে দিয়ে আসতে বলছে, ওর শরীরটা নাকি ভালো লাগছে না।
— মনে মনে ভাবছি ভালোই ঢং করতে শিখেছে। কেন কি হলো আবার উনার?
ফুপু:- বলতে পারছি না তুই খেয়ে ওর খাবারটা ঘরে দিয়ে আয়।
— আমি কেন দিয়া আসবো? আস্তো একটা অলস ঢাকায় থাকলেও ডেকে ডেকে খাবার খাওয়াতে হয়।
ফুপু:- ছেলেরা এমনি হয়। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে যখন ঘরে বউ আসবে।
— বউ পাবে কোথায়? কে বিয়ে করবে ওকে।
ফুপু:- কি যে বলিস না, শিক্ষিত ছেলে দেখতে সুন্দর মেয়ের অভাব হবে নাকি?
— হবে হবে যখন মেয়ের পরিবার জানবে আস্ত একটা অকর্মা ছেলে, ঠিক মত যে নিজের যত্ন নিতে পারে না, সে বিয়ে করবে কি করে।
ফুপু:- সে তখন দেখা যাবে যখন বিয়ে হবে।
— আগেতো বিয়ে হয়ে নিক তারপর দেখবোনি।
ফুপা:- ভাবতাছি এবার তোর বাবা মা আর সোহানের বাবা মা আসলে বলবো তোদের দু’জনের জন্যও পাত্র-পাত্রী দেখবো।
— না না ফুপা প্লীজ এই কাজটা কইরেন না। তাহলে জীবন শেষ এমনিতেই ভালো আছি।
ফুপা:- আজ হোক কাল হোক তোদের সবারই বিয়ে হবে। আর মেয়েরা কখন যে বড় হয়ে যায় দেখতে দেখতে বুঝাই যায় না।
— টুকটাক কথা হচ্ছে আর ডিনার করছি কিন্তু কেমন জানি সব পানসে লাগছে সোহান নেই হয়তো সে জন্যই। অনেক কষ্ট করে প্লেটের খাবার গুলো শেষ করলাম। ফুপু প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে বললো সোহানের জন্য নিয়ে যেতে। খাবার নিয়ে যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে প্লেট হাতে তুলে নিলাম। এক’পা দু’পা করে এগিয়ে চললাম সোহানের ঘরের দিকে। দরজার সামনে এসে কয়েকবার নক করলাম ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ আসছে না। বুঝতে পেরেছি খুব রেগে আছে এখনো সোহান। বুঝে উঠতে পারছিলাম না খাবার নিয়ে চলে যাবো কিনা। আপুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু খাবার নিয়ে গেলেও ফুপু খারাপ ভাবে নিতে পারে ভাববে দু’জন ঝগড়া করেছি। ভাবতে ভাবতে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে আমি তোমার রুমে আসতে চাইনি কিন্তু ফুপু খাবার দিয়ে যেতে বললো তাই এসেছি। সোহান কোন কথা বললো না, তাই আবার বললাম তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? সোহান কোন রকম নড়া চড়া করছে না দেখে সোহানের পিঠে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে যেয়ে বড় ধরণের একটা ধাক্কা খেলাম সোহানের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আরও কয়েকবার ডাক দিলাম সোহান চোখ মেলে তাকালেও কোন কথা না বলে আবারও চোখ বন্ধ করে নিলো। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ফুপুকে জানাবো কিনা ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রুমে এসে দেখলাম আফরিন আপু আকাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। সেখানে যেয়ে আপুকে বললাম তোমার রুমে কি জ্বরের কোন ঔষধ আছে?
আফরিন:- হ্যাঁ আছেতো কেন তোর কি জ্বর আসছে নাকি?
— আমার জ্বর আসেনি সোহান ভাইয়ার জ্বর আসছে।
আফরিন:- বলিস কি বেশী জ্বর আসছে নাকি ভাইয়ার?
— হ্যাঁ ভালোই শরীর গরম দেখলাম।
আফরিন:- ফোনের লাইন কেটে দিয়ে বলিস কি, তুই দাঁড়া আমি ঔষধ বের করে নিয়ে আসি বলেই বারান্দা থেকে রুমের ভিতর ঢুকে ঔষধ বের করে নিয়ে এসে দিতে দিতে চল আমিও তোর সাথে যাচ্ছি।
— দু’জন মিলে আবারও সোহানের রুমে আসলাম।
আফরিন:- ভাইয়া এই ভাইয়া শুনছো?
— সোহান এক বার চোখ মেলে তাকালেও কোন কথা বললো না।
আফরিন:- তুই এক কাজ কর বালতি ভরে পানি নিয়ে আয়। আর একটা তোয়ালে নিয়ে আয়।
— দ্রুত ওয়াশ রুম থেকে বালতিতে করে পানি আর তোয়ালে নিয়ে আসলাম। সেগুলো রেখে দু’জন মিলে সোহানের মাথাটা ঘুরালাম।
আফরিন:- একটা পলিথিন দে মাথার নিচে তারপর পানি দে।
— ঘরের ভিতর কোথাও পলিথিন পেলাম না।
আফরিন:- তাহলে আস্তে আস্তে পানি দে যাতে বিছানা না ভিজে। নয়তো আবার সারা রাত ভেজাতেই ঘুমাতে হবে।
— আস্তে আস্তে পানি দিতে শুরু করলাম। আপুকে বললাম তুমি চলে যাও রুমে জ্বর কমলে আমি রুমে চলে আসবো।
আফরিন:- আমি কি মা বাবাকে জানাবো?
— না না তাহলে তারা চিন্তা করবে আর এমন আছে ঢাকাতেও ফোন দিতে পারে। তখন সকলেই চিন্তা করবে আবার তার চেয়ে বরং আজ রাতটা দেখি, যদি না কমে তখন কাল সকালে ফুপাকে বলবো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।
আফরিন:- ঠিক আছে আমি বলছি না, তবে যদি ভাইয়ার একটু ভালো লাগে তুই খাবার খাওয়াবি আর সাথে ঔষধটাও খাওয়াবি।
— তুমি চিন্তা করো না, আমি সব কিছু ঠিক মতই করবো।
আফরিন:- আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি।
— আপু চলে গেলো, আমি মাথায় পানি দিয়েই চলছি কিন্তু জ্বর কমছে না, তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জলপট্টি দিতে শুরু করলাম। রাত গভীর থেকে গভীর হতে চলেছে অথচ সোহানের জ্বর কমার কোন নাম নেই। এদিকে দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসছে বার বার। নিজের উপর নিজের খুব রাগ লাগছে, অযথাই ওকে রাগাতে যেয়ে এই বিপদ ডেকে এনেছি, ইচ্ছে করছে মারতে মারতে জিজ্ঞাসা করি একটু কষ্ট সহ্য করতে পারো না, তবে এতো কষ্ট কেন আমাকে দাও। শেষ রাতের দিকে সোহানের জ্বর অনেকটা কমে আসলো। সোহানের মাথাটা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে গায়ে উপর ভালো করে চাদর জড়িয়ে দিলাম। এদিকে আমার দু’চো প্রায় বন্ধ হয় হয় অবস্থা, মনে হচ্ছিল আর এক মুহুর্তও চোখ খুলে রাখতে পারবো না। সোহানের মাথার সাথে নিজের মাথাটা লাগিয়ে দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম। এক সময় পুরোপুরি ঘুমিয়ে গেলাম।
— সোহান দীর্ঘ সময় ধরে খুব আস্তে আস্তে ডেকে চলছে, শরীর এতোটাই দূর্বল যে জোড়ে ডাক ও দিতে পারছে না। ইকরা গভীর ঘুমে মগ্ন, সোহানের ডাক কোন ভাবেই পৌছাচ্ছে না ওর কানে। সোহান চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটু কাত হয়ে ইকরার মুখোমুখি হতেই, গরম নিঃশ্বাস লাগতে শুরু করলো ইকরার মুখে। অনেক কষ্টে সোহান একটা হাত ইকরার কাঁধ পর্যন্ত নিয়ে সোহান ধাক্কা দিতেই লাফিয়ে উঠে কি হলো কি হলো তোমার?
সোহান:- খুব আস্তে আস্তে পানি খাবো।
— টেবিলের উপর থাকা পানি গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বললাম কিছু খাবে?
সোহান:- গ্লাসের পানি শেষ করে, মাথা ঝাঁকিয়ে না, তুই তোর রুমে যেয়ে শুয়ে পর, সকাল হয়ে গেছে আমার শরীর এখন ভালো আছে। দরকার হলে আমি ডাক দিবো।
— জানালা খুলে দিতেই শোঁ শোঁ শব্দ করে ঘরের ভিতর বাতাস প্রবেশ করতে শুরু করলো, সারা রাতের বৃষ্টির শেষে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে, দাঁরুণ লাগছে বাহিরের পরিবেশটা, বাতাসে খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখের চারিদিক ছড়িয়ে পরলো। আমি সোহানের পাশে যেয়ে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম চা খাবে আমি বানিয়ে নিয়ে আসবো? আর একটু ঔষধ ও তো খাওয়া লাগবে না হলে শরীর আরো খারাপ হতে পারে।
সোহান:- ঠিক আছে বানিয়ে নিয়ে আয়।
— গত রাতের খাবারের প্লেট গুলো হাতে করে নিয়ে সোহানের রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে রওনা হলাম। প্লেট গুলো রেখে চুলায় পানি বসিয়ে দিলাম। পানি ভালো ভাবে গরম হতেই দুই কাপ চা বানিয়ে সাথে কয়েকটা বিস্কুট বাটিতে সাজিয়ে নিয়ে চলে আসলাম সোহানের রুমে। সোহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে দেখে বিছানার উপর ট্রে রেখে টেবিলটা টেনে আনতে যেয়ে টেবিলের উপর ছোট একটা সাদা কাগজ পেলাম। যেখানে বার বার করে লেখা খুব ভালোবাসি তোমাক। আমি কাগজটা সরিয়ে রেখে টেবিলটা টেনে খাটের কাছে নিয়ে চায়ের ট্রে তার উপর রেখে সোহানকে ডেকে তুললাম। সোহানের দিকে একটা চায়ের মগ এগিয়ে দিলাম আর একটা মগ আমি নিয়ে আবার সেই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। সারা রাত ঘুম হয়নি শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে, চায়ের মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছি এই লেখা গুলো কাকে লেখছে ও? আমাকে নাকি অন্য কাউকে? ভাবনাটা বেশী দূর এগিয়ে নিতে পারলাম না। দরজার সামনে থেকে ফুপুর ডাক শুনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলাম ফুপু দরজা ঠেঁলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে।
— নিঃশ্বাস জেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। সোহানের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট ছাড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করলাম। সোহান তখনো সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা হাত চেঁপে ধরে রেখেছে। আর মিটমিট করে হাসছে। সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই সোহান এক সাইডে পরে গেলো। অমনি উঠে যেয়ে সোহানের বুকের উপর বসলাম।
সোহান:- এই কি করছিস? ব্যথা পাবোতো।
— একটা হাত সোহানের গালের উপর রেখে ও তাই আর এতো সময় আমি ব্যথা পাইনি?
সোহান:- আমি তোকে কোন রকম ব্যথা দেইনি।
— ঠোটটা সোহানের মুখের খুব কাছাকাছি নিয়ে এসে আমিও তোমাকে কোন ব্যথা দিচ্ছি না। সোহানের মুখে কোন কথা নেই, ওর হার্টবিট খুব দ্রুত উঠা নামা করছে আমি স্পষ্ট সে শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে সোহানের কপালে। আমি ঠোট দু’টো ওর মুখের খুব কাছে নিতেই ও চোখ বন্ধ করে নিলো। আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে দিলাম একটা কামড় ওমনি সোহান আহ করে চিৎকার করে উঠলো। আমি হাসতে হাসতে ওর বুক থেকে নামতে যাবো অমনি দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।
— ছেড়ে দাও না হলে চিৎকার করবো।
সোহান:- তোর সে সাহস আছে?
— কিছু বলতে পারলাম না, নিরবে ওর বুকের মাঝে শুয়ে রইলাম। ঠিক কতটা সময় শুয়ে আছি বলতে পারবো না। বাহিরে কারো হাঁটার শব্দে দ্রুত উঠে বসলাম। সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চোখ বন্ধ করে আছে। আমি বললাম ছাড়ো আমাকে রুমে যাবো।
— নিচে নেমে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে উঠুক তুমিও উঠো হাঁটতে যাবো দু’জন মিলে।
সোহান:- তুই যা আমি পরে আসবো।
— কাছে থাকতে চাইয়া থাকতে পারি না, দূরে যেতে চেয়েও যেতে পারি না। ভালোবাসি বলতে চেয়েও পারিনা বলতে ভালোবাসি। চোখের সামনে নদী অথচ আমি তৃষ্ণার্থ পথিক। মনে মনে বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকতেই আফরিন আপু তাকিয়ে হাসতে শুরু করলো।
— এমন করে হাসতেছো কেন কি হইছে?
আফরিন:- ভাগিস কারো সামনে পরিসনি তা না হলে বুঝতি কি হয়েছে।
— মানে কি?
আফরিন:- সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে আয়না দেখি ঠোঁটের লিপস্টিক ঠিক করে নে তাড়াতাড়ি।
— আপুর কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা পরার অবস্থা তার মানে আপু বুঝে ফেলেছে এতো সময় কি হয়েছ, আপুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আপু মিটমিট করে হাসছে। আমি দৌঁড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম। আয়নায় তাকিয়ে দেখে ভীষণ রকম লজ্জা লাগছিল, দ্রুত মুখ ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।
আফরিন:- এ জন্যই বলি আমার বোন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোথায় হারিয়ে গেলো।
— আপু কি যে বলো না তুমি, আমিতো উনারে ঘুম থেকে উঠাতে গিয়েছিলাম।
আফরিন:- তো আমি কখন বললাম তুই কিস করতে কিংবা গোসল করতে গিয়েছিলি?
— তোমার মুখে কিছুই আটকায় না দেখতাছি।
আফরিন:- হাসতে হাসতে সত্যি বললেও দেখি দোষ। আচ্ছা এটা বল বলতে পেরেছিস?
— উহু পারিনি,
আফরিন:- মানে কি? এতো সময় এক সাথে এতো কিছু হচ্ছে আর তুই ভালোবাসি বলতে পারিস না।
— আমি কেন জানি ওর কাছে গেলে সব ভুলে যাই।
আফরিন:- ভুলে যাসনা তুই একজন নারী, অপরাধী বলিস আর কলংকিনী বলিস না কেন। যে যা বলবে তোকে বলবে। আর ছেলে মানুষ হলো ভ্রমর ফুলে মধু থাকা পর্যন্ত উড়ে আসবে, বনবন করবে মধু খাওয়া শেষে আবার উড়ে অন্য ফুলে চলে যাবে। তাই সাবধানে থাকবি আর নিজেকে সেফ রাখবি।
— হুম বুঝলাম বলেই আফরিনকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু সবাইতো আর এক রকম না বুঝলে। আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বলার সাহস পায়না।
আফরিন:- সেজন্যইতো বললাম তুই বল ওকে তোর মনের কথা।
— হুম আপু বলবো, এখন তুমি থাকো আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি বাহির থেকে।
আফরিন:- তাড়িতাড়ি আসিস, নাস্তা রেডি করবে কিন্তু মা।
— আচ্ছা চিন্তা করো না বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। সোহানের রুমের দিকে যাচ্ছি এমন সময় ফুপুর সাথে দেখা।
ফুপু:- কোথায় যাচ্ছিস?
— ভাইয়াকে ডেকে তুলতে, হাঁটতে বের হবো দু’জন।
ফুপু:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।
— আচ্ছা ফুপু বলে আবার হাঁটা শুরু করলাম, সোহানের দরজার সামনে যেয়ে ডাক দিতেই সোহান দরজা খুলে দিলো। কফি কালারের একটা বডি ফিটিংস টিশার্ট পরে বের হয়েছে। সুন্দর মানুষ দারুণ মানিয়েছে শরীরেরর সাথে টিশার্ট। টুকটাক কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির ভিতর থেকে বের হলাম। কোথায় যাবো ঠিক জানা নেই, গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। গ্রামের মানুষজন এখনো ঠিক মত ঘুম থেকে উঠেনি।
সোহান:- কোথায় যাবি?
— যেদিকে তোমার দু’চোখ যায় নিয়ে চলো আমাকে।
সোহান:- মানে কি?
— সব কিছুর কি মানে হয়?
সোহান:- তোর কথার কোন মানে খুঁজে পাইনা।
— আচ্ছা তাই না?
সোহান:- হ্যাঁ তাইতো, বললি হাঁটতে বের হবি, নিয়ে বের হলাম, এখন কোথায় যাবি সেটাই জানিস না।
— তাহলে কি বলবো? আমি কি গ্রামে এসে পরে থাকি নাকি যে এই জায়গা ঐজায়গা আমার চেনা আছে। হাঁটতে যেহেতু বের হইছি যতদূর হাঁটা যায় হাঁটবো।
সোহান:- বেশী দূর হাঁটা যাবে না।
— কেন?
সোহান:- ফুপু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলছে।
— বেশী দূর আর হাঁটতেও হবে না তোমাকে ঐযে নদী দেখা যাচ্ছে ঐখানে যেয়েই বসবো। হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশে ঘাসের উপর বসলাম দু’জন। আমি অপলক সোহানের দিকে তাকিয়ে আছি।
— কি করোনি তুমি? সকাল বেলা যা করলে তার পরেও বলবে কিছু করোনি? তারপরে আমার মুখের যে অবস্থা ছিলো মানুষতো বলে যে একটু ঠিকঠাক হয়ে রুম থেকে বের হতে। ভাগিস কেও দেখেনি, ঠোঁটের যা অবস্থা হয়েছিলো দেখলে আর রক্ষা ছিলো না।
সোহান:- আমি কি করে বলবো? আমিতো অন্ধকারে কিছু দেখি নাই। দেখলেতো বলতাম।
— তা দেখবে কেন? কত সুন্দরি সুন্দরি গার্লফ্রেন্ড আছে তোমার তুমিতো তাদেরকে দেখো।
সোহান:- তোমাকে আমার প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন। তোমাকে আমার প্রয়োজন সারা রাত জেগে গল্প করার জন্য প্রয়োজন, তোমাকে আমার প্রয়োজন নির্জন রাস্তায় এক সাথে পথ চলার জন্য প্রয়োজন।
— হুম চলো। কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই সোহানের ফোন বেজে উঠলো। আকাশ ফোন করেছে, দু’জনের কথোপকথনে যা বুঝলাম তা হলো আজ দুপুরে আমাদের কোথাও লাঞ্চের জন্য যেতে বলেছে।
আফরিন:- আমাকে যেতে হবে কেন? তোমরা দু’জন গেলেই পারো।
সোহান:- পাগলের সুখ মনে মনে ঢং না করে নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে দু’বোন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
— টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তার পর্ব শেষ করে আমি আর আপু রুমে চলে আসলাম। দু’জনে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে শাওয়ার দিলাম। বারান্দায় রোদে বসে চুল শুকাচ্ছি এমন সময় সোহান ফুপুকে বলতে শুরু করলো।
সোহান:- ফুপু দেখছো ফুলটুসি বড় না হলেও ওর চুল গুলো কিন্তু বেশ লম্বা হয়েছে।
ফুপু:- কেন ও বড় হয়নি?
সোহান:- কি জানি আমার কাছেতো সেই পিচ্ছিই মনে হচ্ছে।
ফুপু:- কি যে বলিস না, মেয়ে মানুষ দেখতে দেখতে বড় হয়ে যায়। আর বড় হবার পর আরেক জ্বালা বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়।
সোহান:- এটা অবশ্যই তুমি ঠিক বলছো ফুপু, আর কয়দিন পর ফুলটুসিকেও বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।
— হয়েছে থাক, আর আগে যেতে হবে না আপনাকে। আমার চুলেরর পেছনে এমনিতেই অনেক ছেলে ঘুরে, তখন বাড়ি পর্যন্ত ছুটে আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
সোহান:- ভালোতো এক সাথে তোদের দু’জনকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবো।
— মেজাজ গরম কইরো না। বলে সেখান থেকে উঠে রুমের ভিতর চলে আসলাম। বারোটার দিকে সোহান এসে বলে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হবার জন্য। আমি আর আপু দু’জনে রেডি হয়ে নিলাম। চুল হালকা ভেজা থাকার কারণে আর বাধলাম না। চোখে বেশ গাঢ় করে কাজল টেনে নিলাম। যদিও এতোটা গাঢ় করে আমি কাজল টানি না আজ কেন জানি ইচ্ছে হলো তাই এভাবে গাঢ় করে কাজল দিলাম। ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম সাদা রঙের একটা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান। দু’জন যেয়ে সামনে দাঁড়াতেই আপাতমস্তক দেখা শুরু করলো সোহান।
— এভাবে কি দেখো গিলে খাবে নাকি?
সোহান:- কিছু না চল।
— তিনজন হাঁটা শুরু করলাম। অনেকখানি হাঁটার পর একটা অটো রিক্সা পেলাম তিনজন তাতে উঠলাম সোহান উপরে আর আমরা দু’জন নিচে বসলাম। বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো উড়তে শুরু করলো। মাঝে মাঝেই চুল গুলো সোহানের মুখ স্পর্শ করছে তা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
— সোহান মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। বেশ উপভোগ করছি আমি ব্যাপারটা সোহানকে তা বুঝতে দিচ্ছি না। আমি আমার মত বসে আছি। হয়তো সোহানেরও ভালোই লাগছে না হলে এতো সময়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠতো এই ফুলটুসি ঠিক মত চুল গুলোও বেধে রাখতে পারিস না। অথবা ফুলটুসি তোর চুল গুলো কেটে দেয়া দরকার। আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম সোহান গালে হাত দিয়ে চুল গুলো আরও একবার সরিয়ে দিচ্ছে, তা তা খুব আস্তে আস্তে যেন আমি না বুঝতে পারি। আচ্ছা আমি বুঝলে কি এমন হতো? ভাবতে ভাবতে এক সময় রিক্সা শহরের ভিতরে প্রবেশ করলো।
সোহান:- আফরিন অমুক রেস্টুরেন্টটা কোথায়রে?
আফরিন:- এইতো ভাইয়া আর তিন চার মিনিট লাগবে।
সোহান:- আচ্ছা আসলে রিক্সা থামাতে বলিস।
আফরিন:- ঠিক আছে ভাইয়া।
— কয়েক মিনিটের ভিতর সেই রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসলাম যেখানে আগে থেকেই আকাশ ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাদের দেখেই এগিয়ে আসলো।
— সকলে মিলে খাবারের অর্ডার করলাম, আকাশ ভাইয়া বার বার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।
আফরিন:- বার বার বাহিরে তাকিয়ে কি দেখেন?
আকাশ:- আমার একটা ফ্রেন্ড আসার কথা, এখনো আসছে না তাই দেখছি তাকিয়ে।
— কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই আকাশী রঙের শার্ট পরা সুদর্শন ছেলে এগিয়ে আসতে আসতে বললো সরি সরি সবাইকে অপেক্ষা করালাম।
সোহান:- না না কোন সমস্যা নেই,
আকাশ:- ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দেই, ও হচ্ছে আরমান আমার বন্ধু, জার্মানিতে থাকে ওখানেই ওর নিজের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, আমার বিয়ে উপলক্ষে বাংলাদেশে আসা হয়েছে। আর আরমান উনি সোহান ভাইয়া, ও আফরিন তোর হবু ভাবি, আর ও হচ্ছে ইকরা তোর ভাবির ছোট বোন। এখন বল কি খাবি?
আরমান:- তোরা যা অর্ডার করেছিস তাই অর্ডার করলে হবে বলেই ইকরার দিকে তাকালো।
— খাবার রেখে বার বার চোখ এদিকেই চলে আসছে আরমানের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একবার নিজেই নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম শরীরের জামা ঠিক আছে কিনা। না সব কিছু ঠিকই আছে, তাহলে উনি কি আমাকে দেখছে? ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর লাগলেও মুখে হাসি ফুটিয়েই তার দিকে তাকাচ্ছি। এটা একটা সুযোগ সোহানকে রাগানোর জন্য। খাবার খেতে খেতেই আরমানকে বললাম আকাশী রঙের জামায় আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।
আরমান:- ওহ আপনার পছন্দের রঙ মনে হচ্ছে, ধন্যবাদ।
— হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের রঙ এটা বলেই সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান খাবার প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করছে কিছু খাচ্ছে না।
আরমান:- আমার ও খুব পছন্দ আকাশী রঙ।
— আচ্ছা জার্মানির কোথায় থাকেন?
আরমান:- জার্মানির রাজধানী বার্লিন এ থাকি আমি, খুব সুন্দর সিটি।
— ওহ আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে করেননি? ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন না কেন?
আরমান:- হাসতে হাসতে এখনো তেমন কাউকে পাইনি যাকে সাথে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।
— দোয়া করি খুব দ্রুত কাউকে পেয়ে যান, যাকে নিয়ে সারা জীবন একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দিতে পারেন। বলেই সোহানের দিকে তাকালাম সোহানের চেহারা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। জ্বলুক ওর জ্বলা দরকার। যে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারে না, তার শাস্তি পাওয়াই দরকার।
আরমান:- অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
— না না ঠিক আছে ধন্যবাদ লাগবে না শুধু বিয়ের দাওয়াত দিলেই হবে।
আরমান:- হ্যাঁ কেন নয়, আপনার মত স্মার্ট সুন্দরি একটা মেয়ে খুঁজে দিন, সাথে সাথেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিবো, রাজি হলেই পেয়ে যাবেন বিয়ের দাওয়াত।
— একটু ঢং এর সুরে আমার মত কি করে পাবো আমিতো এতজনই, চিন্তা করবেন না আমার চেয়েও আরও স্মার্ট সুন্দরি পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম, যে মেয়েকে প্রোপোজ করবেন সেই রাজি হয়ে যাবে। আচ্ছা প্রেমটেম করেন না?
সোহান:- এই তোর কি দরকার উনি প্রেম করে নাকি না করে তা দিয়ে?
— বারে আমার আবার কি দরকার থাকবে? দুলা ভাইয়ের বন্ধু মানে আমার বেয়াই আমিতো একটু দুষ্টমি করতেই পারি। জানতে চাইতেই পারি তার সম্পর্কে তাই নয় কি?
আরমান:- না না সমস্যা নেই ভাইয়া, আর ইকরা আমার কোন মেয়ে বন্ধুই নেই, আরতো গার্লফ্রেন্ড দূরের কথা।
— ওহ রিয়েলি, তাহলে আজ থেকে আমরা কি ভালো বন্ধ হতে পারি? বলেই হাতে থাকা চামচটা প্লেটের উপর রেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম আরমানের দিকে।
আরমান:- সাথে সাথে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যাঁ অবশ্যই কেন নয়।
— থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ,
আরমান:- বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাংক্স ওকে।
— হ্যাঁ ঠিক আছে, সোহানের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে কোন কথা না বলে উঠে বেসিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো, এদিকে আফরিন বার বার আমাকে চিমটি কেটে যাচ্ছে এমনটা না করার জন্য। আরমান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও রোমান্টিক লুক নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। সকলে খাওয়া শেষ করে কিছুটা সময় টেবিলে বসে গল্প করলাম। হঠাৎ আরমান বলে উঠলো চলুন না সকলে মিলে ঘুরে আসি কোথাও থেকে।
সোহান:- না ভাই আজ না, আজ প্রচণ্ড গরম পরেছে অন্য আরেকদিন ঘুরবো।
আরমান:- ভাইয়া বেশী দূর যাবো না, আর আমরা যেখানে যাবো সেখানে তেমন গরম ও লাগবে না বরং ভালো লাগবে। সামনেই একটা বিশাল উদ্যান আছে, চারিদিকে বড় বড় সবুজ গাছে ভরা। ওখানে গেলে ঠাণ্ডায় এমনিতেই মন শীতল হয়ে যাবে।
আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া জায়টা অনেক সুন্দর চলুন না ঘুরে দেখে আসবেন।
সোহান:- কিন্তু এ গরমে।
— কিছু হবে আর উনারা যেহেতু বলছে অল্প সময় লাগবে আর জায়গাটাও খুব সুন্দর তাহলে যেয়ে একবার দেখলেতো আর ক্ষতি নেই।
আরমান:- হ্যাঁ ভাইয়া যদি আপনার ভালো না লাগে তাহলে চলে আসবেন কোন সমস্যা নেই।
সোহান:- বেশ তাহলে চলো।
— সবাই এক সাথে রওনা হলাম, তবে আলাদা আলাদা রিক্সায়, আমি আর আপু এক রিক্সায়, আকাশ ভাই আর আরমান এক রিক্সায় আর সোহান একা এক রিক্সায়। রিক্সা চলতে শুরু করতেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো সোহানের ফোন থেকে খুব ঘুরার সখ না? আমি বুঝতে পারলাম সোহানের হৃদয়ে লাগছে, আমি ওকে আরও রাগানোর জন্য মেসেজ পাঠালাম কি যেন পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি। মেসেজ পাঠিয়ে মনে মনে হাসছি, সোহান এখন নিশ্চই আরও রেগে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে রিক্সা এগিয়ে চলছে নিজের গন্তব্যের দিকে। সোহান মেসেজের কোন রিপ্লাই দিচ্ছে না। এদিকে সামনের রিক্সা থেকে বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে আরমান। আমি আমার খোলা চুল গুলো মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে নেড়ে উড়িয়ে দেখাচ্ছি আরমানকে। প্রায় আধঘন্টা রিক্সা এভাবে চলার পর আমরা বিশাল এক উদ্যানের সামনে চলে আসলাম। সবাই যার যার মত রিক্সা থেকে নেমে পরলাম। তারপর উদ্যানের ভিতরে ঢুকতে শুরু করলাম। সত্যিই মুগ্ধ হবার মতই জায়গা।
আরমান:- দেখলেনতো কত সুন্দর জায়গা।
— হুম খুব সুন্দর জায়গা, মুগ্ধ হবার মতই, ছবিতে যেমনটা থাকে ঠিক তেমনি।
আরমান:- হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের জায়গা এটা, বাংলাদেশে থাকতে আমরা সব বন্ধুরা এখানেই ঘুরে বেশীর ভাগ সময় কাটিয়েছি।
— এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি সত্যিই যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। বিশাল বড় বড় সবুজ গাছ তার নিচ দিয়ে ছোট ছোট রাস্তা, অনেকটা দূরে একটা বিশাল বড় মাঠ অনেক ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে খেলে চলেছে। সবচেয়ে বেশী মজা লাগছে পায়ের নিচের শুক্ন পাতার ঝুন ঝুন শব্দ। আর সেই সাথে ঠাণ্ডা হিম শীতল বাতাস। অল্প সময়ে সুখের এক রাজ্যে হারিয়ে যাবার মত অবস্থা হবে যে কারো। হঠাৎ থমকা হাওয়ায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে এলো। হাত দিয়ে চুল গুলো সরাতে সরাতে আড় চোখে সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান মাথা নিচু করে হেঁটে চলছে। আমার কেন জানি ভীষণ রকম হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন মন খারাপ দেখে। প্রায় ঘন্টা খানিক সেখানে থেকে আমরা বিদায় নিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশে। সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম কি হলো তোমার কি মন খারাপ?
সোহান:- না,
— তাহলে কি হয়েছে?
সোহান:- মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করছে।
— ওহ আচ্ছা সহ্য করে থাকো বাসায় যেয়ে ঔষধ খেয়ে নিও।
সোহান:- হুম।
— প্রায় ঘন্টা খানিক রিক্সায় থাকার পর অবশেষে বাসায় এসে পৌছালাম।
— জীবনে প্রথম কোন পুরুষের ঠোটের স্পর্শে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। প্রাণপণ চেষ্টা করলাম নিজেকে সে ঠোটের স্পর্শ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে। একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছি। তখন শুধু চোখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া আর কোন উপায় আমি খোলা দেখতে পেলাম না। চোখের কোনে পানি চলে আসলো। গাল বেয়ে টপ করে পানি সোহানের গালে পরতেই সোহান আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ছাড়া পেতেই লাফিয়ে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। পেছন থেকে সোহান ডেকে চলছে। আমি একবারের জন্য ফিরে তাকালাম না সোজা এসে পুকুর ঘাটে বসলাম। দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পানি পরছে। কি হতে কি হয়ে গেলো কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না।
— দীর্ঘ সময় পুকুর ঘাটে বসে থেকে অবশেষে চোখের পানি মুছে ঘরে চলে আসলাম।
আফরিন :- কিরে এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন?
— মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে তুলে কই নাতো,
আফরিন:- কি হয়েছে সত্যি করে বলতো।
— আরে কিছু হয়নি, বাবা মায়ের সাথে দু’দিন কথা বলিনি তাই খারাপ লাগছে।
আফরিন:- ওহ এই ব্যাপার ফোন দে কথা বল, আমি রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছি দুপুরের জন্য রান্না করতে হবে।
— আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে শুরু করলাম আচ্ছা আমি কান্না করছি কেন? এটা সুখের কান্না নাকি দুঃখের আমিতো বরাবরই এমনটা চেয়েছি। সোহানের ভালোবাসা তবে কেন আজ এমন লাগছে। আর যা হয়েছে তার দোষ কি আমার নয়? ভাবতে ভাবতেই ফোনের মেসেজ বেজে উঠলো ফোনটা হাতে নিতেই সোহানের নাম্বার থেকে ছোট একটা মেসেজ যেখানে লেখা সরি। একটু হাসলাম আবার লজ্জাও লাগলো মনে মনে বলতে শুরু করলাম সরির বদলে কেন লেখলে না ভালোবাসি?
— দুপুরে খাবারে টেবিলে বসে আছি সোহান ফুপার সাথে বাহিরে গেছে অনেক মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। সোহানকে ছাড়া খেতে কেমন কেমন যেন লাগছিলো। হঠাৎ করেই ফুপু বলে উঠলো কিরে খাচ্ছিস না কেন?
— কই খাচ্ছিতো ফুপু।
ফুপু:- খাবার ভালো হয়নি?
— অনেক ভালো হইছে ফুপু।
আফরিন:- কিরে তার কথা মনে পড়ছে নাকি?
— কি সব বলো না তুমি আপু ফুপু শুনলে কি মনে করবে?
আফরিন:- আরে শুনবে না, এক কাজ কর তারে ফোন দিয়ে কথা বল।
— না দরকার নেই, খাওতো আমার খুব খুদা লেগেছে।
আফরিন:- কত যে খুদা লেগেছে তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
— আপু
আফরিন:- আচ্ছা খা আর কিছু বলবো না।
— লাঞ্চ শেষ করে রুমে আসতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
বাবা:- হ্যালো মা কেমন আছিস?
— ভালো বাবা তোমরা সকলে কেমন আছো আর কবে আসবে?
বাবা:- আমরাও সকলে ভালো আছি, বিয়ের আগের দিন চলে আসবো। সোহান কোথায় ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
— ওতো ফুপার সাথে বাহিরে গেছে বিয়ের কার্ড দেওয়ার জন্য হয়তো নেটওয়ার্ক পায় না তাই বন্ধ দেখাচ্ছে।
বাবা:- আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস আর সোহানকে জ্বালাবি না একদম, সারাদিনতো ছেলেটার সাথে ঝগড়া করিস।
— হ্যাঁ সব দোষতো আমার আর তোমাদের ছেলেতো খুবি ভালো, আমিই শুধু খারাপ।
বাবা:- দেখ মেয়ে কি বলে? এমনটা বলছি আমি।
— হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।
বাবা:- আচ্ছা রাখছি নিজের খেয়াল রাখিস।
— বাবার সাথে কথা বলে বিছানায় শুয়ে পরলাম। পাশে এসে আফরিন আপুও শুয়ে পরলো। দু’জন মিলে গল্প করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম।
— সন্ধ্যায় ফুপুর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম।
ফুপু:- ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আয় নাস্তা করবি। বলে ফুপু চলে গেলো। আমি আর আপু ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতেই দেখতে পেলাম সোহান মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার ও ওর দিকে তাকাতে কেমন জানি লজ্জা লাগছিলো। ফুপু সবাইকে নাস্তা খেতে দিলো। নাস্তা খেতে খেতে ফুপা বললো সোহানকে আজ নাস্তা বাড়িয়ে দাও, সারা দিন অনেক পরিশ্রম করছে।
সোহান:- কি যে বলেন না ফুপা আপনি, এটা কোন ব্যাপার হলো? আর দুপুরেতো দু’জন এক সাথেই লাঞ্চ করলাম।
ফুপা:- আরে বোকা ছেলে বুঝে না তোমার নাম আর আমাদের সকলের কাম। কি বলিস ইকরা?
— জ্বি ফুপা ঠিক বলেছেন বলেই সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান তখনো মাথা নিচু করে নাস্তা খাচ্ছিলো, এক বারের জন্যও এদিকে তাকাচ্ছিলো না দেখে রাগে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। আচ্ছা ফুপা বাহিরে কি খুব রোদ ছিলো নাকি আজ?
ফুপা:- কই নাতো কেন?
— না এমনি একজন মাথা নিচু করে খাচ্ছে মনে হচ্ছে রোদে চেহারা পুড়ে গেছে তাই মাথা নিচু করে রাখছে।
ফুপা:- ওহ আচ্ছা হয়তো ক্লান্ত লাগছে ওর সারা দিন জার্নি করছে।
— ওহ তাহলে কি আজ স্যারের হাত পা টিপে দিতে হবে মনে হয়।
ফুপু:- এই ইকরা কি সব বলছিস, সব সময় এতো লেগে থাকিস কেন ওর সাথে।
— কোথায় লেগে থাকলাম আমিতো ভালো কথা বললাম, আর আমি মাঝে মাঝেই দেইতো এমন করে তাইনা ভাইয়া।
সোহান:- কাশতে কাশতে হ্যাঁ দেয়তো মাঝে মাঝে।
— হ্যাঁ সমস্যা নেই আজও দিবো, বাবা ফোন দিয়েছিলো বললো তাদের ছেলেকে দেখে রাখার জন্য। আর যেহেতু ফোন দিয়ে বলেই দিয়েছে তখন কি আর সেবা না করে থাকতে পারি বলো তোমরা?
ফুপু:- হয়েছে এখন চুপ করে খাতো তোরা।
— সবার নাস্তা শেষ হতেই বললাম চা করে দিবো সবাইকে? বলতেই সোহান আমার দিকে তাকালো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে শুরু করলাম।
সোহান:- আমি চা খাবো না।
— বললেই হলো ফুপু তুমি বসতো আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি, দেখি চা না খেয়ে যেতে পারে কিনা। যদি এখান থেকে উঠছো তাহলে তোমার খবর আছে বলেই হাঁটা শুরু করলাম রান্না ঘরের দিকে। আর মনে মনে বলছি এতো ভিতুর ডিম একটা।
— অল্প সময়ের ভিতর চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম সবার দিকে চা এগিয়ে দিতে শুরু করলাম। সোহানের দিকে চা বাড়িয়ে দিতেই সোহান কাঁপা কাঁপা হাতে কাপটা ধরলো, আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম ভয় নেই মরিচ দেইনি।
— চা খাওয়া শেষ হতেই সবাই যার যার মত উঠে পরলাম। সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসলাম পুকুর ঘাটে। আমার পিছু পিছু সোহানও ছুটে আসলো।
সোহান:- এই তোর সমস্যা কিরে? তোকে সরি বলছি না?
— একটা সরিতে কি সব শেষ হয়ে গেলো?
সোহান:- তাহলে কি করতে হবে পায়ে ধরে মাফ চাইতে হবে?
— কি আজব আমি কি বলছি তুমি এমন করো?
সোহান:- তাহলে এমন করে খোঁচা মেরে কথা বলছিস কেন?
— তো কি করবো তুমি কি করছো তা কি ভুলে গেছো?
সোহান:- না ভুলে যাইনি, আর তা ইচ্ছে করে করিনি।
— তাহলে এখন ইচ্ছে করে করো।
সোহান:- মানে?
— মানে কি তুমি বুঝনা?
সোহান:- তোর মাথা কি ঠিক আছে?
— তোমার কি আমাকে পাগল মনে হয় বলেই সোহানের মুখোমুখি দাঁড়ালাম।
সোহান:- কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেখ ভালো হবে না কিন্তু।
— ভালো হবে না তো কি হবে?
সোহান:- আমি যাচ্ছি বলেই ঘুরে দাঁড়ালো।
— হাত ধরে টান দিয়ে এই কই যাচ্ছো তুমি? বলেই হাত ধরে আবার টান দিতেই কাত হয়ে গেলো সোহান।
সোহান:- ফুলটুসি ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
— সোহানের কাঁধের উপর হাত রেখে মুখটা সোহানের মুখের সামনে নিয়ে কি ভালো হচ্ছে না?
সোহান কিছু বলতে যাবে ওমনি পুকুর ঘাটের দিকে কারো আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত সোহানকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালাম।
আফরিন:- তোমরা দু’জন এখানে কি করো?
সোহান:- কিছু না এমনি দাঁড়িয়ে আছি আলো আঁধারিতে পুকুরের পানির ঢেউ দেখতে ছিলাম। তুই কোথায় যাচ্ছিস?
আফরিন:- এই যে এই ইকরা কে খুঁজতে বের হলাম। ঘরে আসেনি তাই ভাবলাম হয়তো তোমার ঘরে গেছে ওখানে গিয়েও পেলাম না তোমাদের কাউকে তাই ভাবলাম হয়তো এদিকে আসছো তাই এখানেই চলে আসলাম।
— ভালো করেছো এখানে এসেছো এখন তিনজন বসে গল্প করতে পারবো।
আফরিন:- এখানে এখন মজা হবে না গল্প করে অন্ধকার হয়ে আসছে, আরও কিছুক্ষণ পর পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে তখন মজা হবে। কখনো পুকুরের পানিতে চাঁদ দেখেছিস?
— নাতো কখনো দেখিনি,
আফরিন:- আজ চাঁদ উঠলে দেখতে আসিস এখন ঘরে চল।
— আপুর সাথে হাঁটছি আর মনে মনে বলছি আজতো চাঁদ দেখবোই তবে একা নয় সোহানের সাথে। ভাবতে ভাবতে তিনজন মিলে রুমে চলে আসলাম। রুমে আসতেই সোহানের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। বড় চাচা ফোন করেছো।
সোহান:- হ্যাঁ বাবা বলো, তারপর অনেকটা সময় দু’জন কথা বলে ফোনটা এগিয়ে দিলো।
— সালাম দিয়ে হ্যাঁ আমি ভালো আছি, কোন সমস্য্ হচ্ছে না, টুকটাক আরও অনেক কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। তারপর তিনজন মিলে গল্প করতে শুরু করলাম। আমিতো অপেক্ষায় আছি পূর্ণিমার চাঁদ উঠার। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে যেতেই চাচ্ছে না। সোহান কিছুটা ভয়ে আছে তা বুঝাই যাচ্ছে তবে আমি খুব মজা পাচ্ছি এ ভেবে জীবনে প্রথম বারের মত ভালোবাসার মানুষটা সাথে পুকুর ঘাটে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখবো।
— ফোনের স্কিনে চাপ দিতে দেখতে পাই রাত নয়টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট, গ্রামের জন্য এটাই অনেক রাত। যদিও বাড়ির গেট থেকে শুরু করে অনেকটা রাস্তা আর বাড়ির ভিতরের অনেকটা জুড়েই লাইটিং করা। উজ্জল আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে তবুও অভ্যাস বলে একটা কথা রাতের খাবার খেয়েই সকলে শুয়ে পরবে। ভাবতে ভাবতে সকলে মিলে খাবার টেবিলে চলে আসলাম। আমরা আসার আগেই ফুপা প্লেটে খাবার রেডি করে রেখেছেন।
ফুপা:- আয় আয় বস তোরা, যখন মনে চায় ঘুমাবে কিন্তু খাবার আগে খেয়ে হজম করতে হয় বুঝলে, তাহলে ভালো ঘুম হয়।
— সকলে মিলে এক সাথে উত্তর দিলাম হ্যাঁ। এরপর খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ হতেই আমি আর আফরিন আপু আমাদের রুমে আর সোহান সোহানের রুমে চলে আসলো। আসার পথে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভালোই আলোকিত হয়েছে চারিদিক। বেশ আনন্দ লাগলো দেখে। ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে দু’জন বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবছি কখন আপু ঘুমাবে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বুঝতে পারলাম আপু ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমি উঠে আস্তে করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বের হয়ে সোজা পুকুর ঘাটে চলে আসলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে কল করলাম।
সোহান:- হ্যালো কি হয়েছে তোর কোন সমস্যা?
— হুম অনেক সমস্যা ঘুম আসছে না। তুমি একটু আসো না, পুকুর ঘাটে বসে আছি।
সোহান:- এই সব ন্যাকামি বাদ দিয়ে ঘরে যাইয়া ঘুমা।
— তুমি আসবা নাকি আমি তোমার ঘরে চলে আসবো?
সোহান:- এই না না আসবি না, আমি আসতেছি।
— ফোন কেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন সোহান আসবে, এক দিকে অপেক্ষা অন্যদিকে ভয় ভয় ও লাগছে এতো কিছুর পরেও যদি সোহান আমাকে ভালো না বাসে? ভাবতে ভাবতেই সোহান পিছনে এসে দাঁড়ালো।
সোহান:- কি হইছে বল?
— অনেক কিছু হয়েছে, আপাতত আমার পাশে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখো। তাহলেই হবে,
সোহান:- তুই কি আমাকে জ্বালিয়ে মারবি?
— উহু ঘাড় মটকে মারবো।
সোহান:- আমার ঘুম পাচ্ছে যা যেয়ে ঘুমিয়ে পর।
— তুমি এতো পঁচা কেন?
সোহান:- আমি কিসের পঁচা, ভালোর জন্যই বলছি কয়দিন পর আফরিনের বিয়ে রাত জেগে বসে থাকলে চেহারা আর চেহারা থাকবে না।
— তুমি আস্তো একটা আনরোমান্টিক ছেলে।
সোহান:- এটা ঠিক বলেছিস। আচ্ছা রোমান্টিক হবার কোন টিপস জানা আছে তোর?
— আহা কি ঢং,
সোহান:- ঢং এর কি হলো? তুইতো সারা দিন রাত রোমান্টিক মুভি আর বই পড়িস আমাকে একটু রোমান্টিকতা শিখিয়ে দে।
— দেখ ভালো হবে না কিন্তু ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিবো।
সোহান:- এই না না খবরদার এমন কাজ করিস নে।
— তাহলে চুপ করে আমার পাশে বসে পরো।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে।
— সোহান বসতেই আমি ওর পাশে বসলাম। নিরব রাত চারিদিক থেকে ঝিঁঝিঁপোকা ডেকে চলেছে, সোহানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সে শব্দ শুনে চলেছি কারো মুখে কোন কথা নেই। কখনো কখনো নিরবতাও অনেক ভালো লাগে যেমনটা এখন আমার ভীষণ ভালো লাগছে। প্রিয় মানুষটির কাঁধে মাথা রেখে এভাবেইতো অনন্তকাল আমি কাটিয়ে দিতে চাই। সোহান তুমি কেন বুঝনা কত ভালোবাসি তোমাকে।
সোহান:- নিরবতা ভেঙে বলতে শুরু করলো, আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে ঘরের ভিতর যা ফুলটুসি।
— চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সত্যিই চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। তবুও সোহানের কাঁধে মাথা রেখে বললাম আসুক না বৃষ্টি থাকি না আরও কিছুটা সময় এই নিরলায়।
সোহান:- এই নিরব রাতে ঝুম বর্ষায় আজ মন হারাতে চায়। হোক না ঝড় তুফান, তবুও থাকবো দু’জন আজ নিরলায়।
— আরে বাহ তুমিতো কবি হয়ে গেলে।
সোহান:- হা হা হা চেষ্টা করছি আর কি, ভবিষৎ এ যদি কাজে লাগে।
— হুম হুম লাগবে লাগবে, আচ্ছা আরও কিছু শোনাও না।
সোহান:- কখনো কখনো কিছু কথা না বলা থাকাই ভালো, কখনো কখনো নিরবতার ভাষা জানতে না চাওয়াই ভালো। কখনো কখনো কিছু ভালোবাসার কথা না বলাই ভালো।
— আরে বাহ! তুমিতো দেখছি খুব রোমান্টিক হয়ে গেছো।
সোহান:- হয়েছে এবার যা ঘরে যা।
— আমি ফিরবো না ঘরে আমি থাকবো আজ বাহিরে, অজানা অনেক গল্প, না বলা অনেক কথা আজ শুনতে চাই। মুখ ফুটে চিৎকার করে বলতে চাই ভালোবাসি ভালোবাসি।
সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তুই চিৎকার করেই বলতে থাক, যদি তোর ডাক শুনে কেউ ছুটে আসে।
— চুপ একদম চুপ করে বসে থাকো কারো আসার দরকার নেই।
সোহান:- তুই কি আমাকে বৃষ্টিতে ভেজাবি?
— না বৃষ্টি আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। দু’জন আবারো নিরবে বসে রইলাম হঠাৎ করেই বাতাস শুরু হতেই সোহান উঠে দাঁড়িয়ে হাত টান দিয়ে বলতে শুরু করলো আর এক মুহুর্তও এখানে না। তাড়াতাড়ি চল না হলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। সোহানের পাশাপাশি হাঁটছি আর ভাবছি আজও সোহানকে বলতে পারলাম না, কিংবা ওর মুখ থেকে শুনতে পারলাম না ভালোবাসি শব্দটা। নিঃশব্দে হেঁটে চললাম ঘরের দরজার সামনে রেখে সোহান নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। আমি মুগ্ধ হয়ে অন্ধকারে সোহানের চলে যাওয়া দেখছি কয়েক পা হেঁটেই সোহান পেছনে ফিরে তাকিয়ে।
সোহান:- দারুণ মুহুর্ত উপহার দেবার জন্য তোকে ধন্যবাদ যদি কখনো সুযোগ হয় তবে আমিও তোকে ফিরিয়ে দিবো এমন একটি মুহুর্ত।
— বলেই সোহান আবার হাঁটা শুরু করলো, আমিও যে অপেক্ষা করছি তোমার সাথে প্রতিটা সুন্দর মুহুর্ত কাটানোর জন্য। ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকে ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই, আফরিন আপু বলতে শুরু করলো।
আফরিন:- কিরে কেমন কাটলো রোমান্টিক মুহুর্ত?
— কিসের রোমান্টিক মুহুর্ত?
আফরিন:- হয়েছে আর লুকাতে হবে না আমার কাছে, আমি তোর চেয়ে বয়সে বড় অতএব আমি অনেক কিছুই বুঝি।
— হয়েছে হয়েছে তোমার এতো কিছু বুঝতে হবে না, আর রোমান্টিক না ছাঁই, বৃষ্টি শুরু হলো বলে।
— তুমিও না আপু কি সব বলো দাঁড়াও আকাশ ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে হবে।
আফরিন: সত্যি বললেও দোষ তাহলে আর কি কিছুই বলা যাবে না।
— বিছানায় শুয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে, কি করবো বলো এখনো ভালোবাসি বলতেই পারিনি, আর ঐ হাবলাটাও আমার মনের কথা বুঝে না।
আফরিন:- আরে বুঝে বুঝে হয়তো কোন কারণে বলতে সাহস পাচ্ছে না।
— ভালোবাসি বলার জন্য কি এমন লাগে? আর আমিতো অপরিচিত কেউ না।
আফরিন:- এটাইতো সমস্যা অপরিচিত হলে সহজেই হয়তো বলে দিতে পারতো। কিন্তু খুব কাছের মানুষকে খুব সহজে কিছু বলা যায় নারে।
— দু’জন গল্প করতে করতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। রাত গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করলো। এক সময় দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো। গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পরলাম।
— খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো, আমি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম, আফরিন আপু তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। দরজা খুলে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা সোহানের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। তখনো ঠিকমত অন্ধকার কাটেনি। যদিও ফযরের আজান অনেক আগেই দিয়েছে কিন্তু মেঘলা আকাশ তাই চারিদিক অন্ধকার। নিঃশব্দে এগিয়ে যাচ্ছি যদি কেউ দেখে ফেলে তবে কি জবাব দিবো। সোহানের ঘরের সামনে এসে দরজায় হাল্কা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। সোহান রাতে দরজা না লাগিয়েই ঘুমিয়েছে, আমি চুপ করে রুমে ঢুকলাম। আরামে ঘুমাচ্ছে সোহান।
আস্তে আস্তে কয়েকবার ডাক দিলাম উঠলো না।
ঘুমন্ত অবস্থায় সোহানকে বেশ বোকা বোকা লাগে।
মাঝে মাঝেই ওকে সকালে ডাক দিতে এসে আমি একা একাই প্রচণ্ড হাসি। আর একটু জোড়ে ডাক দিতেই সোহান লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানার উপর।
সোহান:- তুই যাতো যা আমার ঘুম হয়নি ভালো আমি ঘুমাবো।
— তুমি যাবা নাকি পানি এনে ঢেলে দিবো।
সোহান:- খুব বেড়ে গেছিস কিন্তু যা বলছি।
— না যাবো না, এখুনি তোমাকে উঠাচ্ছি বলেই ওয়াশ রুমের দিকে দৌড়ে যেয়ে মগে করে পানি নিয়ে এসে যাবে নাকি ভিজিয়ে দিবো?
সোহান:- বলছি এখান থেকে যা পানি দিলে ভালো হবে না।
— সব ভালো মন্দ তুমি একাই বুঝ আমরা কিছু বুঝি না নাকি?
সোহান:- তুই সব কিছু এক লাইন বেশী বুঝিস এখন রুম থেকে যা নয়তো..
— নয়তো কি হ্যাঁ?
সোহান:- কিছু নাতো তুই যা বলছি মানে চলে যা।
— আমি না বলছি মানে তোমাকে না নিয়ে যাবো না বলেই পানির মগটা সোহানের দিকে এগিয়ে ধরতেই। সোহান বাধা দিতে চেষ্টা করলো। হাত ধরে টানাটানির এক পর্যায় দু’জনের শরীরের পানি ছিটে লাগলো। টানাটানির এক পর্যায় আমি বিছানায় পরে গেলাম। অমনি সোহান আমার দু’হাত চেঁপে ধরলো।
— উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি,
সোহান:- দু’হাত আরও জোড়ে চেঁপে ধরে না ছাড়ছি না। তোকে আজ
— ছাড়বে না কি করবে।
সোহান:- একটা হাত ছেড়ে দিয়ে চুলের মাঝে হাত রেখে ঠোঁটটা নিচে নামিয়ে ঠোঁটের সাথে চেঁপে ধরলো।