Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1522



শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৯

0

শেষ বিকেলের রোদ- ৯ম পর্ব
©শাহরিয়ার

— কিছু হবে না তুমি চিন্তা করো না। বলেই ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। কয়েক পা নামতেই পিছলে পরে যেতে লাগলাম। ওমনি সোহান আমার হাতটা টেনে ধরলো। আমি ঘুরে তাকাতেই

সোহান:- বলেছিলাম পরে যাবি এখন ফেলে দিবো?

— আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপলো, সাহস থাকলে ফেলে দেখো। সোহান রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে হাতটা ছেড়ে দিতেই আমি পানিতে পরে গেলাম। পানিতে পরেই আমি বাঁচাও বাঁচাো বলে চিল্লাতে শুরু করলাম যদিও কোমড় পানি সোহানকে বুঝতে দিলাম না। সোহান পানিতে লাফ দিয়ে বোকা বনে গেলো। আর আমি হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- রাগে গজগজ করতে করতে তুই কোন দিনও ভালো হবি না।

— পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে খারাপ ছিলাম কবে?

— সোহান:- ফুলটুসি ভালো হবে না আর একবার পানি দিলে।

— একশো বার দিবো হাজার বার দিবো কি খারাপ করবে তুমি।

— সোহান:- তবেরে বলেই হাত ধরে টান দিলো, সাথে সাথে সোহানের বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম।

— উফ ছাড়ো ব্যথা লাগছে।

— সোহান:- না ছাড়বো না কি করবি না ছাড়লে।

— চিৎকার করবো।

— সোহান:- তাতে আমার কি বলেই আরো জোড়ে বুকের সাথে চেঁপে ধরলো।

— ছাড়ো না কেউ চলে আসলে কি মনে করবো?

— সোহান:- কেউ চলে আসলে কি মনে করবে মানে?

— মানে সহজ ভাববে তুমি..

— সোহান:- হাত ছেড়ে দিয়ে এই থাম থাম আর আগে যেতে হবে না তোকে। আজকের মতো তোকে মাফ করে দিলাম।

— আহা ঢং আমি তোমাকে আজকের মত মাফ করে দিলাম বলেই বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উপড়ে উঠে মুখ বেংচি কেটে দ্রুত দৌড় দিলাম। সোহান বোকার মত হা করে তাকিয়ে রইলো।

— দৌড়ে তাড়াতাড়ি রুমে এসে সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আফরিন আপুকে ডাক দিলাম। আফরিন আপু ঘুম থেকে উঠে আমাকে এই অবস্থায় দেখে হা করে রইলো।

— কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?

আফরিন:- তুই এতো সকালে গোসল করছিস কেন?

— আর বইলো না সকাল সকাল সোহান ভাইয়া ফোন দিলো, দু’জনে পুকুর ঘাটে গিয়েছিলাম, ভাবলাম পানিতে মুখটা ধুয়ে নিবো ওমনি পিছলে পরে গেলাম। সাথে সাথে সোহান ভাইয়াও আমাকে তোলার জন্য লাফ দিয়ে পড়লো পুকুরে। ভাবলো আমি মনে হয় ডুবে যাচ্ছি যা বোকা বানিয়েছি আজকে। বলেি হাসতে শুরু করলাম।

আফরিন:- তোরা দু’জন পারিস ও বটে সারাদিন একজন আরেক জনের সাথে লেগে থাকতে। আচ্ছা তোর হবু দুলা ভাইয়ের খবর কি ঘুম থেকে উঠেছে?

— কি জানি আমরা যখন উঠেছিলাম তখনতো কেউ উঠেনি। তবে এখন মনে হয় উঠে গিয়েছে, এখন তুমি উঠে ফ্রেস হয়ে নেও।

আফরিন:- হুম তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আছি তারপর এক সাথে বের হবো।

— আচ্ছা যাও।

— আফরিন ফ্রেস হয়ে আসতেই দু’জন একসাথে রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে গেলাম ততক্ষণে ফুপুও ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে এসে নাস্তা বানাতে বসে গেছে। আমাদের দু’জনকে এক সাথে এতো সকালে দেখে ফুপু কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

ফুপু:- কিরে তোরা আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠলি ঘটনা কি?

আফরিন:- কোন ঘটনা নেই, ঘুম ভাঙলো তাই উঠে গেলাম। এখন তোমার অসুবিদা হলে আবার যেয়ে শুয়ে পরি।

ফুপু:- আমি কি তাই বলছি নাকি। উঠেছিস ভালোই হয়েছে, যা এখন দু’জন মিলে হেঁটে আয়। সকালের হাঁটা শরীরের জন্য ভালো।

আফরিন:- হ্যাঁ যাচ্ছি,

— দু’জন রান্না ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম উঠানে সোহান আর আকাশ ভাই দাঁড়িয়ে আছে। সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম আমরা ঘুরতে বের হচ্ছি তোমরা কি যাবে?

আকাশ:- কোথায় যাচ্ছো তোমরা?

আফরিন:- যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে যাবো। আপনাদের ইচ্ছে হলে আসতে পারেন না হলে থাকেন।

সোহান:- আকাশ তোমরা জীবন তেনাতেনা হয়ে যাবে ভাই এখনি কেমন দমকের সুরে কথা বলছে।

আফরিন:- ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু। তুমি কি বিয়ের আগেই তোমার বোনের সংসার ভাঙতে চাচ্ছো?

সোহান:- ছিঃ কি বলছিস এসব আমিতো যাস্ট দুষ্টমি করে এসব বলছিলাম।

আফরিন:- ওহ ভাইয়া এতো সিরিয়াস কেন তুমি? আমিও মজা করে বলেছি এখন চলোতো।

সোহান:- থাম থাম এই সকাল সকাল যদি আকাশকে সাথে নিয়ে আমরা বের হই, তাহলে মানুষ নানান রকম কথা রটাবে। তার চেয়ে বরং ঘরের ভিতর বসেই গল্প করি।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া ঠিক বলেছেন, গ্রামের মানুষ যা ঘটে তার থেকে অনেক বেশী রটিয়ে ফেলে। চলুন ঘরের ভিতরেই যাই।

— তার মানে বাহিরে ঘুরতে যেতে পারবো না?

সোহান:- না আজতো যেতে পারবি না তবে কাল সকালে যেতে পারবি।

— চারজন মিলে আবার ঘরের ভিতর ঢুকে পরলাম, মনে মনে সোহানের প্রশংসা করলাম এতো বছরে অবশেষে ওর বুদ্ধি হয়েছে, শুধু বুঝে না আমি তাকে ভালোবাসি।

আফরিন:- তোমরা বসো আমি যেয়ে দেখি আম্মুর নাস্তা রেডি হলো কিনা।

— আপু আমিও সাথে আসবো?

আফরিন:- আরে না তোরা বসে গল্প কর না। আমি যাবো আর আসবো, বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।

সোহান:- আকাশ বউয়ের কাছ থেকে যতটা না সাবধানে থাকবে তার চেয়ে শালির থেকে থাকতে হবে বুঝলে।

আকাশ:- কেন কেন ভাইয়া? শালিতো আমার সুন্দরি স্মার্ট আর ভদ্রও অনেক।

সোহান:- শোন শোন মানুষের বাহির দেখে ভিতরটা বুঝতে যেও না বুঝলে। এই মেয়ে যে কি করতে পারে তা শুধু আমি জানি, তাই তোমাকে আগে থেকেই সাবধান করে দিলাম।

— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি কি কি করতে পারি বলো বলো? আর কত বদনাম করবে আমার করো সমস্যা নেইতো। সময় মত যদি এর শোধ না নিছি তবে আমার নাম ইকরা নয়।

সোহান:- তোর নাম ইকরা হবে কেন? তোর নামতো ফুলটুসি।

— কিছু বলতে যাবো ওমনি ফুপু আর আফরিন নাস্তা নিয়ে রুমে ঢুকলো।

— চারজন এক সাথে নাস্তা করতে বসলাম। নাস্তা করতে করতে অনেক গল্প করলাম চারজন মিলে।
নাস্তা শেষ হতেই আকাশ বললো।

আকাশ:- ভাইয়া আমাকে আজকের মত যেতে হবে।

সোহান:- দুপুরের খাবার খেয়ে গেলে ভালো হতো না?

আকাশ:- না ভাইয়া, অন্য একদিন দু’জন মিলে এক সাথে লাঞ্চ করবো।

সোহান:- দু’জন কেন আমরা সকলেই করবো।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া বিয়ের আগে আপনারা এক সময় করে আসুন সকলে মিলে ঘুরাও হবে সাথে বাহিরে খাওয়াও হয়ে যাবে।

সোহান:- হ্যাঁ এটা ভালো বলছো, ঠিক আছে আজ তাহলে আর আটকাবো না যাও তবে আমাদের ফোনে কথা হবে কবে আমরা এক সাথে ঘুরছি।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া অবশ্যই।

— আকাশ ভাইয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি ভাবছি কিভাবে সোহানকে শাস্তি দেয়া যায় সব সময় সব জায়গায় আমাকে শুধু ছোট করা এমন মজা দেখাবো যে আর কখনো এমন করতে চাইবে না। কিন্তু কিভাবে করবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় আফরিন আপু ডাক দিয়ে বললো চল আমরা দু’জন ঘুরে আসি। কিছু দূরেই আমার বান্ধবির বাড়ি যেয়ে দেখা করে আসি তোর ভালো লাগবে।

— দু’জন রওনা দিলাম, সোহান বাহিরে যেতে দেখে বললো ফুলটুসি কোথায় যাস?

— তোমাকে বলতে হবে নাকি আমরা কোথায় যাই।

সোহান:- যা যা কেউ নিশ্চই অপেক্ষা করছে।

— করলে করবে তাতে তোমার কি? তুমি বসে থাকো ঘরের ভিতর একা একা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে পরলাম। প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর আপুর বান্ধবির বাড়িতে এসে পৌছালাম। আপুর বান্ধবির সাথে গল্প করছি এমন সময় উনার আম্মু এসে নানান রকম পিঠা দিলো। পিঠা খাচ্ছি আর গল্প করছি। উনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেলো গল্প করতে করতে তারপর দু’জন উনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সোহান দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে রাগানোর জন্য হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- কি মনে রঙ লেগেছে নাকি?

— তোমাকে বলতে হবে নাকি? আফরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম আপু তোমার বান্ধবির ভাইটা কিন্তু দারুণ স্মার্ট বলেই চোখ টিপ মারলাম।

সোহান:- বাহ বাহ তাহলেতো বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়ে আসলি, যদি সে আড্ডার রেশ কেটে থাকে তবে আমাকে এক কাপ চা করে খাওয়ালে ভালো হয় আর কি।

— খুব অবাক হলাম, সোহান না রেগে আমাকে উল্টো চা বানিয়ে আনতে বলে আমার মেজাজই খারাপ করে দিলো। রান্না ঘরে ঢুকে চা বানাতে বানাতে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ ওকে শাস্তি দেবার। চায়ের ভিতর কিছুটা গুড়া মরিচ দিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম সোহানের রুমে। চায়ের মগ সোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি কখন সোহান চায়ে চুমুক দিবে। অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এলো। সোহান মগে ঠোট লাগিয়ে চুমুক দিলো। আমার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো।

সোহান:- এটা কি দিলি চা না বিষ বলেই মুখ থেকে সব বের করে ফেলে দিয়ে ঝালে হা করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।

— আমি জোড়ে জোড়ে হেসে চলছি,

সোহান:- অনেক কষ্টে পানি নিয়ে আয় হাসি বন্ধ করে।

— পারবো না এটাই তোমার শাস্তি কথাটা বলে রুম থেকে দৌড়ে বের হবো ওমনি পেছন থেকে হাত ধরে টান দিতেই সোহানের উপর পরলাম। সোহান নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারলো খাটের উপর পরে গেলো বুকের সাথে চেঁপে নিয়ে। আমার ঠোটে হঠাৎই সোহান নিজের ঠোট লাগিয়ে কিস করতেই আমি দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৮

0

শেষ বিকেলের রোদ – ৮ম পর্ব
©শাহরিয়ার

–কথাটা বলতে বলতেই ধপাস করে বারান্দায় কারো পরে যাবার শব্দ হলো। আমরা একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে সেদিকে দৌড় শুরু করলাম।

— দৌড়ে বেড় হতেই দেখা গেলো হবু দুলাভাই মাটিতে পরে আছে। এমন অবস্থা দেখে হাসি চাপলেও হাসতে পারছি না। অনেক কষ্টে তা নিজের ভিতর চেঁপে রাখলাম। কিন্তু আফরিন আপু তা পারলো না হেসে দিলো। এমন সময় সোহান বের হয়ে কেমন অসভ্যরে তোরা? একজন মানুষ ভিজে মাটিতে পরে আছে আর তোরা হাসতেছিস? বলেই হাত বাড়িয়ে তাকে টেনে তুললো।

আফরিন:- হাসি থামিয়ে ভাইয়া কি করবো বলো, আচ্ছা পরিচয় হয়ে নেন দু’জনে।

সোহান:- ও হ্যাঁ আমি সোহান আফরিনের বড় ভাই।

–আমি আকাশ।

আফরিন– ভাইয়া উনি হলো এ বাড়ির হবু জামাই।

সোহান– তা ভাই তুমি কি আর দেশে কোন মেয়ে পেলে না? এই ফাজিল মেয়েকেই তোমার পছন্দ হলো। দেখছো এদের কি অবস্থা তুমি মাটিতে পরে আছো আর ওরা হেসে চলেছে।

— একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবে না। হেসে চলেছি মানে কি? এমন কাণ্ড ঘটলে যে কেউ হাসবে। আর সে যদি হয় দুলাভাই তাহলেতো কথাই নেই। বলেই হু হু করে হাসতে শুরু করলাম।

— এমন সময় ফুপু এসে কি শুরু করলি তোরা সরতো দেখি ওকে ঘরে আসতে দে। যেয়ে জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিক।

— আকাশ রুমে ঢুকে জামা চেঞ্জ করে নতুন একটা লুঙ্গী আর পাঞ্জাবী পরলো। ততক্ষণে নাস্তা রেডি করে ফুপু সবাইকে ডাক দিলো।

— সবাই এক সাথে নাস্তা খেতে বসেছি, ফুপু ফুপা কোথায়?

ফুপু:- তোর ফুপা দুপুরে বের হইছে এখনো আসেনি।

আফরিন:- পরিচয় করিয়ে দিলো ও হচ্ছে ইকরা আমার মামাতো বোন আর ভাইয়ার সাথেতো পরিচয় হয়েছে আপনার। আর ইকরা আপনাকে দেখতে চেয়েছিলো তাই আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এই বৃষ্টির ভিতর আপনি আসবেন ভাবতে পারিনি।

সোহান:- হবু শালি দেখার আবদার করেছে তাই ছুটে এসেছে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। কি ঠিক বলছি না আকাশ।

— হ্যাঁ ভাইয়া, আসলে এমন একটা পরিস্থিতে পরতে হবে তা ভাবতে পারিনি।

সোহান:- আরে কোন সমস্যা নেই বরং ভালোই হলো, তোমাকে দেখতে পেলাম। আর একা একা আমারও বোরিং লাগতো এই ফুলটুসির বকবক শুনতে হতো।

— বড় বড় চোখ করে সোহানের দিকে তাকিয়ে তোমাকে কতবার বলছি আমাকে ফুলটুসি বলবা না।

আকাশ:- ভাইয়া নামটাতো খুব সুন্দর। আফরিনের ও এমন একটা নাম দিলে কেমন হয়?

সোহান:- হু হু খুবি ভালো হয়। ওরতো একটা নাম আছে ছোট বেলায় সবাই সে নামে ডাকতাম মাথা মোটা।

আফরিন:- ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।

আকাশ:- বাহ বেশ সুন্দর কিন্তু নামটা।

আফরিন:- আচ্ছা শুনেন আজ মনে হয় আর বৃষ্টি থামবে না। এখানেই থেকে যান আপনি।

আকাশ:- এই না না কি বলো মানুষ কি মনে করবে?

সোহান:- কিছুই মনে করবে না। কে আসবে দেখতে তোমাকে এখানে, আর সব চেয়ে বড় কথা বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা জ্বর এসে যেতে পারে। তুমি বরং বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দাও। আজ বাড়িতে ফিরবে না এখানেই থাকবে।

— হ্যাঁ দুলাভাই বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দেন, শ্বশুড় বাড়ি মধুর হাড়ি সেই সাথে আছে সুন্দরি শালিকা।

সোহান:- হো হো সুন্দরি না পেত্নী ফুলটুসি।

আফরিন:- আচ্ছা ভাইয়া তোমরা সব সময় এভাবে ঝগড়ে লেগে থাকো কেন?

সোহান:- ঝগড়া কার সাথে আমার খেয়ে দেয়ে কি আর কোন কাজ নেই ওর সাথে ঝগড়া করতে যাবো।

— তোমার কাজ তো ঐ একটাই আমার সাথে ঝগড়া করা।

সোহান:- আচ্ছা যা ঝগড়া করবো না। আজ সারা দিন তোর হাতের চা খাওয়া হয়নি যা সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়।

ফুপু:- সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসে লাগবে না, আমি নিয়ে এসেছি সবার জন্য চা।

নাস্তার পর্ব শেষ করে সকলে মিলে আফরিন আপুর রুমে চলে আসলাম। ঝির ঝির বৃষ্টি সাথে প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে। থেকে থেকে বৃষ্টির শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে এক রকম সুন্দর অনুভুতির সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই মিলে গল্প করছি, নানান রকম গল্প। গল্পের মাঝে আমি মনোযোগি হতে পারছি না। আমার ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু এই রাত করে তা সম্ভব নয়। এদিকে সোহান নানান রকম হাসির কথা বলেই চলেছে।

সোহান:- এই ফুলটুসি ফুলটুসি, সোহানের ডাকে বাস্তবতায় ফিরে এসে হ্যাঁ বলো।

সোহান:- আমরা সবাই গল্প করছি তুই কোথায় হারিয়ে গেলি? কোন ভাবনায় কোন সে মানু্ষকে সঙ্গে নিয়ে?

কারো সঙেই না আমারতো ইচ্ছে করতাছে বৃষ্টিতে ভিজতে।

সোহান:- একা একা বৃষ্টিতে ভিজবি কেন বিয়ে করিয়ে দেই তাকে সঙে নিয়ে ভিজবি। প্রয়োজনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হানিমুনে চলে যাবি।

আরে বাহ তুমিতো আমার মনের কথা বলছো। আমারও খুব ইচ্ছে আমার যেদিন বিয়ে হবে সেদিন ঝুম বৃষ্টি হবে। সারা রাত বৃষ্টি হবে। আমি গভীর রাতে বরকে ডেকে বলবো চলো বৃষ্টিতে ভিজবো। আজ দু’জনে এক সাথে বৃষ্টি বিলাস করবো।

সোহান:- হাসতে হাসতে আর বেচারা বাসর ঘরে নতুন বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে মনের সুখে হার্ট ফেইল করবে।

তোমার মুখে কিছুই আটকে না?

সোহান:- আরে আমি দুষ্টমি করলাম। আচ্ছা চল তোকে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে নিয়ে আসি।

থাক এখন আমার আর ভিজতে হবে না। তবে কালকে দিনে বৃষ্টিতে ভিজবো নিশ্চিৎ থাকো।

সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে, নানান রকম গল্প করতে করতে রাত বাড়তেই থাকলো। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফুপা বাড়িতে ঢুকলো ভিজতে ভিজতে। ফুপু ফোন করে দিয়েছিলো ফুপাকে আকাশ ভাইয়া আমাদের বাসায় আছে। ফুপা আসার সময় আকাশ ভাইয়ার জন্য টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে আসছে। সাথে সবার জন্য মিষ্টি দই নিয়ে এসেছে। সবাই এক সাথে রাতের খাবার খাওয়ার পর ফুপু দই বের করে দিলো।

খাওয়া শেষ করে যে যার মত নিজেদের রুমে চলে আসলাম। আফরিন আর আমি শুয়ে শুয়ে গল্প করতাছি। আচ্ছা আপু তোমরা কি একজন আরেক জনকে আগে থেকে চিনতে?

আফরিন:- না কেন?

এমনি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা আপু তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?

আফরিন:- আরে না, ঐসব করার সময় কোথায়। আমারা গ্রামের মানুষ পরিবারের পছন্দেই বেশীর ভাগ বিয়ে হয়।

যাই বলো আপু আকাশ ভাইয়া কিন্তু অনেক সুন্দর। তোমাদের দু’জনকে বেশ মানাবে এক সাথে।

আফরিন:- তাই না, আচ্ছা এটা বল তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?

সত্যি বলতে একজনকে অনেক অনেক ভালোবাসি, কিন্তু কখনো বলতে পারিনি আর বাকি জীবনেও বলতে পারবো কিনা জানি না।

আফরিন:- কেন বলতে পারবি না?

কারণ আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে কিনা তাতো আমি জানি না। হয়তো আমার ভালোবাসাটা এত তরফাই হয়ে গেছে। আর একটা মেয়েতো একটা ছেলেকে যেয়ে বলতে পারেনা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আফরিন:- আচ্ছা ছেলেটা কেরে?

–আছে একজন যদি কোন দিন আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় তবে জানতে পারবে।

আফরিন:- শুধু জানলে চলবে? তাকে দেখবো আমার শ্বশুড় বাড়িতে নিয়ে এসে বেড়িয়ে যাবি। আমার বোন যে ছেলেকে ভালোবাসে সে ছেলে কতটা ভাগ্যবান তা দেখতে হবে না।

— সে ভাগ্যবান নাগো আপু আমি ভাগ্যবতী হবো তার ভালোবাসা পেলে, বলেই আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। অনেক রাত পর্যন্ত নানান বিষয়ে দু’জন গল্প করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম।

— খুব ভোরে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ মেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি সোহান, ফোন রিসিভ করতেই সোহান বলতে শুরু করলো।

সোহান:- এই ফুলটুসি তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি উঠে বাহিরে আয় আমি দাঁড়িয়ে আছি।

— কয়টা বাজে এতো ভোরে উঠবো।

সোহান:- ঠিক আছে তুই শুয়ে থাক আমি এই সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করি।

— এই না না থাকো আমি আসছি, বলেই ফোনটা কেটে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পরলাম। উড়নাটা গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম সোহান উঠানের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সেদিকে এগিয়ে যেতেই সোহান আমার হাত ধরে টানতে টানতে পুকুরের দিকে নিয়ে যেতে বলতে শুরু করলো।

সোহান:- শোন নতুন জামাই এসেছে, বিয়ে হয়নি হবে, দু’জন একটু গল্প করবে নিজেদের মাঝে তাতো হতে দিচ্ছিস না। বোনের সাথে সব সময় আঠার মত লেগে আছিস। এতো বড় মেয়ে কবে তোর একটু বুদ্ধি হবে বলতো?

— ওহ আমি আঠার মতো লেগে আছি আপুর সাথে? সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে কি করে আপুকে আমি একা ছাড়বো? আর আপুই কি আমাকে রেখে আকাশ ভাইয়ার সাথে গল্প করবে?

সোহান:- হয়েছে চুপ কর এতো জোড়ে কথা বললে বাড়ির সকলে জেগে যাবে। ঐদিকে তাকা বলে পুকুরেে দিকে ইশারা করলো।

— মুগ্ধ হয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছি, পুকুরের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে হিজল ফুল। এ এক অন্য রকম সুন্দর অনুভুতি এ এক অন্য রকম সুন্দর দৃশ্য। দু’জনে এক সাথে পাকা বাধাই করা ঘাটে বসলাম।

সোহান:- দারুণ না দৃশ্যটা।

— হুম অসাধারণ সুন্দর তুমি বসো আমি মুখটা একটা ধুয়ে নেই।

সোহান:- সাবধানে পিছিল থাকতে পারে সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে।

— কিছু হবে না তুমি চিন্তা করো না। বলেই ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৭

0

শেষ বিকেলের রোদ -৭ম পর্ব
©শাহরিয়ার

সবার সামনে আমাকে ফুলটুসি বইলো না প্লিজ।

— হাজার বার বলবো, যখন মন চায় তখন বলবো ফুলটুসি ফুলটুসি ফুলটুসি।

— তোমার যত বার খুশি ততবার বইলো এখন ঘুমাতে দাও। বলেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।

— সোহান তুই এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালে সারা রাত জ্বালাবে কে শুনি?

— মাফ করো আপাতত সারাদিন অনেক খাটুনি হয়েছে এখন ঘুম। যদি ঘুম ভেঙে যায় তখন জ্বালাবো। সোহান চুপ করে রইলো।

— রাত কয়টা বাজে জানা নেই, হঠাৎ ঘুম ভাঙতে অনুভব করি সোহান আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আমি জেগে গেছি তা বুঝাতে চাচ্ছি না সোহানকে, এই মুহুর্তটা নিশ্চই আমার জীবনের সেরা মুহুর্ত গুলোর একটি, আমার মাথা ওর কাঁধে আর ওর হাত আমার চুলে বিলিকেটে যাচ্ছে। আমি চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। অনেকটা সময় পর হাই তুলতে তুলতে চোখ মেলে তাকালাম।

— সোহান কি ঘুম ভেঙে গেলো?

— হুম মাথার ভিতর উঁকুনের বিরবিরে ঘুমটা ভেঙে গেলো। কেমন জানি বিলি কেটে যাচ্ছিলো ওগুলো।

সোহান কি বিলিকেটে যাচ্ছিলো?

– হুম, আচ্ছা কয়টা বাজে?

সোহান ঘড়িতে তাকিয়ে দেখ।

— থাক লাগবে না। বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে?

— সোহান কেন ভিজবি নাকি?

— হুর তুমি সব সময় এমন করো কেন? আমার সাথে লেগেই থাকো।

— সোহান আচ্ছা চুপ কোন কথা হবে না। বৃষ্টির শব্দ শুনতে দে।

— কাঁধের উপড় মাথা রেখেই মনে মনে বলছি তুমি শোন বৃষ্টির শব্দ আমিতো টুপটাপ এই বৃষ্টির মাঝে থেকেই তোমার ভালোবাসার শব্দটা অনুভব করতে চাই। হিম শীতল বাতাসে আবারো চোখ বন্ধ হয়ে এলো।

— সোহান এই তাড়াতাড়ি উঠ নামতে হবে।

— চলে এসেছি?

— সোহান হ্যাঁ তাড়াতাড়ি নাম নাহলে ট্রেন আবার ছেড়ে দিবে।

— দু’জন তাড়াহুরো করে ট্রেন থেকে নামলাম। সারা রাত বৃষ্টি হওয়াতে বাহিরে অনেক ঠাণ্ডা, বেশ কিছুটা পথ হেঁটে বের হতে হবে স্টেশন থেকে, দু’টো ব্যাগ সোহান দু’হাতে নিয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে বলতে শুরু করলো তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারিস না।

— পারিতো, কিন্তু যদি পরে যাই?

— সোহান অসহায়ের মত তাকিয়ে তুই আস্তে আস্তেই আয় আমি যাচ্ছি।

— একটা অটো নিয়ে রওনা হলাম ফুপুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাতাসে হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

— সোহান কিরে ফুলটুসি ঠাণ্ডা লাগে?

— হ্যাঁ, তাতো একটু লাগতেছেই।

— সোহান আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগতাছে। কত বছর পর গ্রামে আসলাম। সকালের মিষ্টি বাতাস সত্যিই উপভোগ করার মত।

— হ্যাঁ তা ঠিক বলেছো। তবে যাই বলো না কেন আগের মত মাটির রাস্তা না থাকায় বেঁচে গিয়েছো, না হলে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে করে হেঁটে যেতে হতো। তখন যে তোমার কি অবস্থা হতো।

— সোহান আমার কি হতো তা ভাবতে হবে না, তুই যে কতবার কাদায় পিছিল খেয়ে পরতি, আর কোমড় ভেঙে বসে থাকতি এটা চিন্তা কর।

— ভালোই হতো তখন কোলে তুলে নিয়ে যেতে।

— সোহান আমারতো আর কাজ নেই তোকে কোলে নিয়ে হাঁটতাম।

— হয়েছে নিতেতো আর হয়নি।

— সোহান হ্যাঁ চুপ করে বসে থাক এখন।

— প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ফুপুদের বাড়ির সামনে এসে অটো থামলো। গ্রামের বিয়ে বাড়ি বলে কথা কি সুন্দর করে সাঁজিয়েছে মনে হচ্ছে আজই বিয়ে অথচ এখনো বিয়ের সাত দিন বাকি। দোচালা টিনের বিশাল বাড়ি। চারিদিকে কত রকমের গাছগাছালি, এক নজড়ে কারো মন ভালো করে দেবার জন্য যথেষ্ট্য বাগির ভিতরে ঢুকতেই চোখ গেলো পুকুর পাড়ে। পুকুরে চারিদিকে কত সুন্দর হিজল গাছ গুলো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে আফরিন আপু দৌড়ে আসলো।

— আফরিন জড়িয়ে ধরে, কত দিন পর তোকে দেখলাম।

— তোমাকেও অনেক দিন পর দেখলাম, তুমিতো সুন্দরি হয়ে গেছো আপু।

— আফরিন হুর কি সব বলিস, কেমন আছো ভাইয়া তুমি?

— সোহান আমি ভালো আছি, ফুপা ফুপি কোথায়রে?

— আফরিন বাবা মা উনাদের রুমেই আছে, আসোতো আগে ভিতরে ঢুকো ফ্রেশ হও আমি বাবা মাকে ডাক দিচ্ছি। ততক্ষণে তোমরা আমার রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।

— ফ্রেশ হতেই ফুপাফুপু ঘরের ভিতর ঢুকলো। ফুপু এস জড়িয়ে ধরে দেখছো কত বড় হয়ে গেছে আমাদের মেয়েটা।

— ফুপা হ্যাঁ মেয়েদের বড় হতে কি সময় লাগে নাকি।

— ফুপু হ্যাঁ সোহানকে দেখো একদম নায়কের মত হয়েছে দেখতে।

— সোহান ফুপি সব বাদ দিয়ে আগে খেতে দাওতো কতদিন তোমার হাতের খাবার খাই না।

— তুমি আসলেই একটা খাদক।

— সোহান চোখ বড় বড় করে খবরদার তুই কিন্তু খেতে বসবি না আমার সাথে ফুপি ওরে খাবার দিবে না। সোহানের কথায় সকলে এক সাথে হেসে উঠলাম।

— ফুপা নে আয়তো তোরা দু’জনেই খাবি।

— সকলে মিলে যেয়ে ডাইনিং এ বসলাম। ফুপু আর আফরিন আপু আমাদের সকলের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। নানান রকম পিঠা মুড়ি। দেখেই জিবে জল এসে যায় অবস্থা। নিজেকে সামলে চুপ করে বসে রইলাম। ফুপু নানান রকম পিঠা দিয়ে পুরো প্লেট সাজিয়ে দিলেন। সোহান মনের আনন্দে খাচ্ছে আর বলছে আহ কি যে মজা ফুপু। আমারতো মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সারা জীবনের জন্য এখানে চলে আসি। তোমার হাতের মজার মজার সব খাবার খাওয়ার জন্য।

— ফুপু শোন পাগল ছেলে কি বলে, তোর মা আর বড় চাচী আমার চেয়ে কত ভালো রান্না করে। আমি নিজেইতো উনাদের কাছ থেকে রান্না করা শিখেছি। টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তার পর্ব শেষ করে নিলাম। সোহানকে একটা ঘরে থাকতে দিলো আর আমি চলে আসলাম আফরিন আপুর সাথে তার রুমে।

— লম্বা একটা ঘুম দিয়ে দুপুরের দিকে আফরিন আপুর ডাকে জেগে উঠলাম।

— আফরিন আর কত ঘুমাবি উঠে গোসল করে নে। তারপর খাবি।

— আপু পুকুরে গোসল করা যাবে না?

— আফরিন বলে কি এতো বড় মেয়ে নাকি পুকুরে গোসল করবে। এখন কেউ আর পুকুরে গোসল করি না।

— সোহান ভাইয়া কোথায় লাঞ্চ করছে?

— আফরিন না ভাইয়াতো বাবার সাথে সেই সকালে বের হইছে বাজার করার জন্য।

— আহ্রে বেচারা এমনিতেই সারা রাত ঘুমায়নি তার উপর আবার বাজারে গেছে কি যে হবে অবস্থা কে জানে। শেষে রাস্তায় পরে না থাকলে হলো ঘুমিয়ে।

— আফরিন আরে কিছু হবে না, দেখবি অল্প সময়ের ভিতর চলে আসবে ততক্ষণে তুই ও গোসল করে রেডি হয়ে নে।

— জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকতেই সোহানের কণ্ঠ শুনতে পেলাম বাহির থেকে আফরিন আপু বললো নে সোহান ভাইয়া চলে আসছে। তুই গোসল করে নে আমি ভাইয়াকে গোসল করতে বলতাছি সবাই এক সাথে লাঞ্চ করবো বলেই আফরিন রুম থেকে চলে গেলো।

— গোসল শেষ করে রেডি হয়ে ডাইনিং এ যেয়ে দেখি সকলে রেডি হয়ে বসে আছে। টেবিলে বসতেই নাকে বিরিয়ানির ঘ্রাণ আসলো। ফুপু আজ বিরিয়ানি রান্না করছো তাই না?

— ফুপু হ্যাঁ সোহানের খুব পছন্দ বিরিয়ানি তাই রান্না করেছি।

— ও সবতো উনার পছন্দেই হবে তাহলে আর কি না খেয়েই উঠে পরি।

— ফুপু থাপ্পর দিবো, এই দেখ তোর পছন্দের ইলিশ মাছের ডিম ভুনা করেছি।

— তাহলেতো আর না খেয়ে উঠছি না।

— সোহান খাবি খাবি আবার ভাব ও নিবি।

— তাতে তোমার কি।

— ফুপু ও থামতো তোরা খেয়ে নিজেদের রুমে যেয়ে রেস্ট নে।

— সকলে এক সাথে লাঞ্চ শেষ করে যার যার মত রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে আফরিন আপুকে বললাম আমার দুলা ভাই দেখতে কেমন?

— আফরিন ভালোই বিয়ের দিন আসবে দেখিস।

— কেন আগে দেখা করা যাবে না?

— আফরিন যাবে না কেন? ফোন দিলেই চলে আসবে দেখা করতে।

— তাই নাকি? প্লীজ আপু প্লীজ ফোন দাও না। দুলাভাইকে দেখবো।

— আফরিন আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি। ফোন রিসিভ করতেই সালাম দিয়ে কোথায় আছেন আপনি?

— তারপর তাকে সব খুলে বললো। এবং বললো আমি দেখতে চেয়েছি বিকেলে আসতে। কথোপকথনে বুঝতে পারলাম দুলা ভাই আসছে তার মানে আজ হবু দুলাভাইকে আজই দেখে নিচ্ছি। আফরিন আপুও তাই বললো।

— দুপুরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপসি, এমন সময় তরীর ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করতেই

— তরী কেমন আছিস? কখন পৌছালি?

— ভালো আছি সকালেই এসে পৌঁছেছি, দু’জনের অনেকটা সময় কথা হলো। কথা বলে ফোন রেখে দিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি কি করে সোহানকে ভালোবাসি বলা যায় আর ভাবতে ভাবতে দু’চোখের পাতা আবারও এক হয়ে গেলো।

— বিকেলে চোখ মেলে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, আফরিন আপু আমার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে, আজ মনে হয় আসবে না। কি রকম বৃষ্টি হচ্ছে।

— মন খারাপ করো না আজ আসবে না তো কি হইছে কাল আসবে।

— কথাটা বলতে বলতেই ধপাস করে বারান্দায় কারো পরে যাবার শব্দ হলো। আমরা একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে সেদিকে দৌড় শুরু করলাম।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৬

0

শেষ বিকেলের রোদ- ৬ষ্ঠ পর্ব
©শাহরিয়ার

— সোহান দেখ ভালো হবে না আমি মাকে ডাক দিবো।

— তুমি কি ডাক দিবে আমিই ডাক দিচ্ছি চা..

— ওমনি হাত দিয়ে মুখ চেঁপে ধরলো শুধু গোঙ্গানোর শব্দ বের হলো।

— সোহান তুই কি সবার মাইর খাওয়াবি আমাকে? বলে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।

— উফ তুমি এমন কেন? ব্যথা পাইনি বুঝি আমি?

— সোহান আমি তোকে ইচ্ছে করে ব্যথা দিতে চাইনি, তোর দোষেই তুই ব্যথা পেয়েছিস। একেতো সকাল সকাল ভিজিয়ে দিয়েছিস তার উপড় আবার চিৎকার করতে নিয়েছিলি।

— তো কি হইছে বলেই সোহানের বুকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসো সবাই নাস্তা করবে।

— ডাইনিং এ বসে সকলে নাস্তা করছি এমন সময় বাবার ফোনটা বেজে উঠলো।

— বাবা হ্যালো রাশেদা কেমন আছিস, বাড়ির সকলে কেমন আছে? খেতে খেতে অনেকটা সময় বাবা ফুপুর সাথে কথা বললো।

— বড় চাচা কি বললো রাশেদা?

— বাবা খুশির খবর আছে একটা

— বড় চাচা কি?

— বাবা আফরিনের বিয়ে ঠিক হইছে।

— বড় চাচা বলিস কি?

— বাবা জ্বি ভাইজান, রাশেদা বলতাছে আমাদের সকলকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য।

— বড় চাচা বিয়ে কবে?

— বাবা আগামি সপ্তাহের রবিবারে।

— বড় চাচা কিন্তু এতোদিন আগে তো যাওয়া সম্ভব নয়।

— বাবা রাশেদা বলতাছে আমরা আগে যেতে না পারলেও ইকরা আর সোহানকে পাঠিয়ে দিতে। এতে করে আফরিনের মন ভালো থাকবে।

— বড় চাচা এটা ভালো হবে আমরা না হয় আগামি শুকবার চলে গেলাম। আর অনেক বছর হলো ওরাও যায় না।

— মনে মনে অনেক খুশি হলাম কত বছর গ্রামে যাই না, সেই ছোট বেলায় গিয়েছিলাম। এখনো মনে পড়ে পুকুর ঘাটে সাঁরি সাঁরি হিজল গাছ। সারা রাত পুকুরের হিজলের ফুল পরে থাকে। সকালে দেখতে কি সুন্দর লাগে। সব চেয়ে বড় কথা সোহানকে খুব কাছ থেকে অনন্ত একটা সপ্তাহ পাবো।

— বাবা তাহলে রাতের ট্রেনের টিকিট কেটে নিয়ে আসি সোহান কি বলিস?

— সোহান তোমার যা ভালো মনে হয় করো। আমার কোন সমস্যা নেই। আমি আজ যেয়ে সবাইকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়ে আসবো।

— বাবা তাহলে আর কি তোরা সব গুছিয়ে রাখিস আমি বিকেলের ভিতর টিকেট নিয়ে চলে আসবো।

— নাস্তার পর্ব শেষে সবাই যে যার মত রুমে চলে আসলাম। অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে মনের ভিতর। তরীকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম গ্রামে যাবো বিয়ে খেতে এক সপ্তাহ ভার্সিটিতে আসবো না। এরপর নিজের সব জামা কাপড় গুছাতে শুরু করলাম। সোহানের কিনে দেওয়া কাঁচের শাড়ি আর কাঁচের চুড়িটা হাতে নিতেই ইচ্ছে জাগলো এর সাথে ম্যাচিং করে সোহানের জন্য একটা পাঞ্জাবী কেনা দরকার। তবে তা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখে দিবো। সোহান বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেই আমি মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিলাম। বললাম টুকটাক কেনাকাটা করতে হবে। মা টাকা দিতেই বেরিয়ে পরলাম বাড়ি থেকে।

— শপিং সেন্টারে এসে অনেক খোঁজাখুঁজির পর হালকা আকাশি রঙের একটা পাঞ্জাবী পেলাম। সাথে আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দুপুরের আগেই বাসায় ফিরে আসলাম। দুপুরে খাবার টেবিলে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার মনে আছে ছোট বেলায় আমরা গ্রামের পুকুরে কত মজা করে গোসল করছি?

— তুই বড় না আমি বড়? তোর মনে থাকলে আমার কেন থাকবে না? খবরদার আমার সাথে যাবি ভালো হয়ে থাকতে হবে কোন রকম উল্টা পাল্টা কিছু করবি না। পুকুরপাড়, বন জঙ্গল কোথায় যেতে পারবি না।

— আমার কি আর কাজ নেই, যে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবো?

— কথা কম বলে খেয়ে নে, নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে আমার গুলো গুছিয়ে দিবি।

— তুমি বড় না আমি বড়? তুমি যেহেতু বড় সেহেতু তোমার গুলো গুছিয়ে এসে আমার গুলো গুছিয়ে দিবে।

— কান টেনে ধরে বেশী পাকনা হয়ে গেছিস তুই ফুলটুসি, আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস।

— ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, বড় চাচী দেখ তোমার ছেলে আমাকে মারছে।

— সোহান ছাড় ওকে, তোর শরম লাগে না ওর গায়ে হাত তুলতে?

— কেন শরম লাগবে?

— কেন শরম লাগবে না? ও বড় হচ্ছে সেদিকে তোর খেয়াল আছে?

— ফুলটুসি আবার বড় হয় নাকি?

— না তুই শুধু বড় হতে পারিস হাতীর মত, আর সবাই ছোট থাকবে সারা জীবন।

— আমি কি তা বলছি নাকি? ওরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আমার রুমে এসে সব গুছিয়ে দিতে বলো আমি গেলাম।

— রুমে এসে সব জামা কাপড় গুছিয়ে নিলাম, জামা কাপড়ের মাঝে সোহানের জন্য কিনে নিয়ে আসা পাঞ্জাবীটাও রাখলাম। নিজের কল্পনার জগৎ এ পাঞ্জাবী পড়া অবস্থায় সোহানকে কল্পনা করলাম, একদম রাজ কুমারের মত লাগে সোহানকে। শাড়ি পরে ওর পাশে আমাকে বেশ মানাবে। আচ্ছা আমি যে এতো কিছু কল্পনা করি ওকে নিয়ে এতো ভাবি ওকি আমাকে নিয়ে ভাবে? নাকি ওর কল্পনাতে অন্য কারো ছবি আঁকে? নানান রকম চিন্তা নিয়ে ব্যাগটা এক সাইডে রেখে ওর রুমের দরজার সামনে এসে নক করলাম।

— ভিতরে আয় ফুলটুসি।

— রুমের ভিতর ঢুকে আচ্ছা আমি যে আসছি এটা তুমি কি করে বুঝলে? অন্য কেউও হতে পারতো। বলে তাকাতেই দেখতে পাই সোহান খালি গায়ে টিশার্ট পরতাছে।

— এই তুমি খালি গায়ে কেন? আর আমি এসেছি কি করে বুঝলে?

— কি আজব আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি খালি শরীরে থাকতে পারবো না? আর তুই ছাড়া যে অন্য কেউ এই সময় আসবে না এটা আমি ভালো করেই জানি।

— হয়েছে আর ঢং এর কথা বলো না, কি কি নিবে দাও।

— তোর যা যা মন চায় সব ব্যাগে ঢুকিয়ে নে।

— কি আজব তোমার কি কি লাগবে আমি কি করে বলবো?

— আলমারির ভিতর সব আছে প্যান্ট শার্ট টিশার্ট সব যেগুলো ভালো লাগে নিয়ে নে।

— তুমি এক কাজ করো তোমার পছন্দের খেয়াল রাখার জন্য একটা বিয়ে করে নাও।

— আমার মত বেকার কে বিয়ে করার জন্য মেয়েদের লাইন লেগেছে বাহিরে যেয়ে দেখে আয়।

–বাহিরে যেয়ে দেখতে হবে কেন? তোমার গার্লফ্রেন্ডকেই বিয়ে করে ফেলো।

— প্রচণ্ড শব্দ করে হাসতে হাসতে গার্লফ্রেন্ড সেটা আবার কিরে?

— জামা গুছাতে গুছাতে ফাজলামো কইরো না। কত মেয়ের সাথে যে রিলেশন আছে কে জানে।

— যেহেতু কেউ জানে না আর জানার দরকার ও নাই এখন চুপচাপ নিজের কাজ কর আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।

— ঘুমাও ঘুমিয়ে স্বপ্নের দুনিয়াতে হারিয়ে যাও।

— কেন তোর হিংসে হয়?

— আমার হিংসে হবে কেন তুমি ঘুমাও সারা রাত আমার বকবক শুনতে হবে।

— সেতো আমার জানা আছে তুই এখন যা ফুলটুসি।

— জামা কাপড় গুছিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। ব্যাগের ভিতর বই গুলো গুছিয়ে নিলাম। বিকেলে বাবা আর বড় চাচা এসে ট্রেনের টিকেট দিয়ে দিলো। সেই সাথে সোহানকে বলে দিলো আমাকে কোন রকম জ্বালাতন না করতে।

— সন্ধ্যার পর পর আমরা রওনা হয়ে গেলাম রেলস্টেশন এর উদ্দেশ্যে রাত আটটার ট্রেন। কতদিন পর লং জার্নিতে যাচ্ছি এই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। সব চেয়ে বেশী ভালো লাগছে ভালোবাসার মানুষটির সাথে যাচ্ছি। যদিও জানিনা ভালোবাসাটা এক তরফা কিনা। সোহানকে জিজ্ঞাসা করার সাহস ও আমার নেই।
তবে এবার আমাকে বুঝতে হবে জানতে হবে সোহানের মনে কেউ আছে কিনা। কিংবা সোহান কাউকে ভালোবাসে কিনা। সোহান চুপ করে বসে আছে সি.এন.জিতে, বাহিরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে বাহিরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছি, সোহান নিজের মত ফোন টিপে চলছে।

— সি.এন.জি থেকে নেমে যখন রেলস্টেশনে ঢুকতে ঢুকতে অনেকটা ভিজে গেলাম। ট্রেন আসতে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মত বাকি। সোহান দোকান থেকে টিসুর প্যাকেট এনে এগিয়ে দিতে দিতে তাড়াতাড়ি মাথা মুছে নে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।

— টিসুর প্যাক হাতে নিয়ে লাগবে না ঠাণ্ডা, তুমিও মুছে নাও মাথাটা বলে প্যাক থেকে একটা টিসু বের করে এগিয়ে দিলাম সোহানের দিকে। সোহান মাথা মুছতে শুরু করলো। মাথা মুছা শেষ করে আবার দোকানের দিকে এগিয়ে যেয়ে চিপস, আর জুসের প্যাকেট নিয়ে আসলো।

— আটটা তিন মিনিটে ট্রেন রওনা করলো আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। দু’জন পাশাপাশি সিটে বসে আছি আর সারা রাত এভাবেই থাকবো।
কি এক অসাধারণ রাত।

— চিপসের প্যাক খুলে চিপস খাওয়া শুরু করতেই সোহান কিরে এখনি সব খেয়ে শেষ করবি সারা রাত বাকি রয়েছে।

— কখন ঘুমিয়ে যাই ঠিক আছে? তার চেয়ে বরং খেয়ে নেই, নাহলে আমি ঘুমিয়ে পড়লেতো তুমি সব খেয়ে শেষ করবে।

— খা বেশী করে খা, খেয়ে খেয়ে ফুলটুসি থেকে ফুলবানু হয়ে যা।

— ফুলবানু কে তোমার গার্লফ্রেন্ড নিশ্চই?

— ফুলবানু তোর মাথা ফুলটুসির আপডেট ভার্সন হচ্ছে ফুলবানু।

— আচ্ছা আমার মাথা যেহেতু সেহেতু তোমার কাঁধে রাখি বলেই মাথা সোহানের কাঁধে রাখলাম।

— সোহান মাথাটা ফাটিয়ে দেই?

— উহু, তোমাকে একটা কথা বলি?

— বল

— সবার সামনে আমাকে ফুলটুসি বইলো না প্লিজ।

— হাজার বার বলবো, যখন মন চায় তখন বলবো ফুলটুসি ফুলটুসি ফুলটুসি।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৫

0

শেষ বিকেলের রোদ-৫ম পর্ব
©শাহরিয়ার

আমি পুরোপুরি শিহরিত হয়ে দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম। সোহান নিজের হাত ঠিক আমার কপাল বরাবর ধরে রেখেছে। অনেকটা সময়ে আর কোন স্পর্শ না পেয়ে আমি চোখ মেলে তাকালাম। শেষ বিকেলে অনেক রোদ উঠেছে সে রোদ সি এন জির গ্রীল বেদ করে ভিতরে এস আমার কপালে লাগছে সেখানেই হাত দিয়ে রেখেছে সোহান, এটা কি শুধুই রোদকে আটকানোর চেষ্টা নাকি তার ফাঁকে আমাকে একটু ছুঁয়ে দেবার প্রচেষ্টা? নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করলাম। চোখের উপর চোখ রেখে পারছি না বলতে ভালোবাসি পারছি না জানতে ও আমাকে ভালোবাসে কিনা। ভাবতে ভাবতে সি এন জি এসে থামলো ফারজুর বাড়ির সামনে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নেমে পরলাম সি এন জি থেকে।

— বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তরী ছুটে আসলো, সোহানের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া কেমন আছেন।

— সোহান হ্যাঁ ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

— তরী জ্বি ভাইয়া আমিও ভালো আছি, অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম।

— সোহান হ্যাঁ অনেক দিন আমাদের বাড়িতে আসো না তাই দেখা হয় না। বলতে বলতে সোহান ভিতরের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

— তরী তোকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে ইকরা। কিছু হইছে নাকি দু’জনের মাঝে?

— কি হবে দু’জনের মাঝে?

— তরী নেকামি করিস না, এতো হ্যান্ডসাম একজন মানুষ পাশে বসে ছিলো আর কিছুই হয়নি? আমি হলেতো..

— থাক আর আগে যেতে হবে না, তোর মনে যা হচ্ছে তার কোন কিছুই হয়নি।

— তরী তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।

— হবার দরকার নেই চল ভিতরে চল, কথা বলতে বলতে তরী আর আমি ভিতরে ঢুকলাম। সোহান একটা চেয়ারে বসে আছে ওর পাশে যেয়ে বসে কি হলো এমন উদাসী হয়ে বসে আছো কেন?

— সোহান কি করবো বল, খুদা লেগে গেছে, বেশি হাঁটা চলা করলে তা বেড়ে যাবে তাই চুপচাপ বসে আছি।

— তুমি কি এখানে খাবার জন্য এসেছো?

— সোহান তা নয়তো আর কি করবো?

— কি করবে মানে ঘুরবে ফিরবে সবার সাথে পরিচিত হবে মজা করবে।

— সোহান হয়েছে থাক এতো মজার দরকার নেই আমার, তুই যা না সবার সাথে পরিচিত হয়ে মজা কর যা।

— তুমি আমার সাথে যাবে কিনা বলো?

— সোহান উহু যাবো না।

— আমি উঠে দাঁড়িয়ে সোহানের হাত ধরে টান দিতেই আমার শাড়ির আঁচল সোহানের মুখের উপড় পরলো। আমি দ্রুত শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করে নিলাম। ভীষণ লজ্জা লেগে গেলো আমার।

— সোহান এতো বড় একটা মেয়ে শাড়িটাও ঠিক রাখতে পারিস না।

— শাড়ি ঠিক রাখতে পারি না মানে কি নিচু হয়ে তোমার হাত ধরতে যেয়ে সরে গেছে এই যা।

— সোহান হয়েছে হয়েছে এখন চুপ করে এখানে বসে থাকতো।

— দু’জন কথা বলছি এমন সময় তরী আসলো, ইকরা ফারজু তোদের দু’জনকে ডেকেছে এখন ছবি তোলা হবে।

— সোহান তোমরা যাও আমি এখানে ঠিক আছি।

— তরী ও ভাইয়া কি বলেন আসেনতো আমার সাথে বলেই হাত ধরে টানতে টানতে স্টেজের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

— রাগে জিদে কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো। না পারছি কিছু বলতে না পারছি সইতে। বাধ্য হয়ে ওদের পিছু পিছু আসলাম। সোহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, ওকে মজা দেখাতেই হবে এতো সময় আমি ডাকলাম আসলো না, আর তরী যেয়ে ডেকে আনতেই চলে আসলো। আমি একদম সোহানের শরীর ঘেঁসে দাঁড়ালাম, সোহানের ঐ পাশেই তরী দাঁড়ানো তাই সে নড়তেও পারছে না। আমি আরও একটু চেঁপে দাঁড়ালাম। সোহান কেঁপে উঠে আমার দিকে তাকালো আমি দেখেও না দেখার বান করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। সোহান খুব বিপদে পরেছে বুঝতে পেরে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে, সোহান মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি একটা হাত সোহানের কাঁধের উপর রাখলাম। সোহান আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমি ঈশারায় প্রশ্ন করলাম কি?

— সোহান কিছু না।

— ছবি তোলা শেষ হতেই যেন কোন রকম জান ফিরে আসলো সোহানের ভিতর, বেচারা ঘেমে ভিজে একাকার।

— সোহান স্টেজ থেকে নামতে নামতে শুধু বললো তোকে আজ বুঝাচ্ছি।

— আমি চোখ বড় বড় করে কি বুঝাবে?

— সোহান অপেক্ষা কর বুঝবি।

— খাওয়া শেষ হতেই তরী ছুটে আসলো, হাতে মোবাইল নিয়ে, আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো ভাইয়া আমাদের ছবি তুলে দেন।

— সোহান হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, ছবি তোলা শেষ হতেই তরী ফোনটা নিয়ে চলে গেলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন বুঝা গেলো সবাই নিজেদের মত ব্যস্ত ঠিক তখনি পকেট থেকে ফোনটা বের করে এই ফুলটুসি তোর আর আমার ছবি তুলি আয়।

— আমিতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে গেলাম।
কাছে যেয়ে ক্যামেরার দিকে মুখ করতেই আমি অনুভব করলাম সোহানের হাত আমার কোমড়কে জড়িয়ে ধরেছে। আমার সমস্ত দেহ কেঁপে উঠলো যখন ওর হাত আমার পেটের উপর আসলো, ও হাসি মুখে ছবি তুলছে আর আমি মনে মনে কাঁদছি। হঠাৎ করেই কোমড় ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে টান মেরে ওর বুকের সাথে চেঁপে ধরলো আমাকে। এক হাতে আমার পিঠ চেঁপে ধরেছে অন্য হাতে ছবি তুলছে। ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ করেই ওর মুখটা আমার কপালের কাছে নিয়ে আসে, এরপর কি হবে এটা ভেবেই আমি দু’চোখ বন্ধ করে নেই।

— ঠাণ্ডা বাতাসের অনুভুতিতে চোখ মেলে তাকাই, সোহান আমার কপালে পরে থাকা চুল গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছি। মনে মনে গাধা একটা। চোখে চোখ রেখে কিছু বলার মত সাহস পাচ্ছি না। আজ কি হয়েছে আমার বুঝতে পারছি না। হয়তো ওর প্রেমে পাগল হয়ে যাবো নয়তো মারা যাবো এমন অবস্থা আমার। আর ও আছে আমাকে রাগানোর নেশায়, ও আছে ছবি তোলার নেশায়। এগুলা ভাবতে ভাবতে অনুভব করলাম ও আমাকে সোজাসুজি ওর বুকের সাথে চেঁপে ধরে আমার কপালের সাথে ওর কপাল লাগিয়েছে। এমন অবস্থায় এই বুঝি আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখার মত আমার সাহস হচ্ছে না, হঠাৎ করেই জোড়ে গানের শব্দ কানে ভেসে আসতেই সোহান আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করলাম। ততক্ষণে তরী আরেক বার আমাদের কাছে চলে আসলো।

— তরী অনেক রাত হয়েছে আমি চলে যাচ্ছি তোর্ কখন যাবি?

— এইতো আমরাও চলে যাবো।

— তরী ভাইয়াকে নিয়ে একদিন আমাদের বাসায় আয়না বেড়িয়ে যাবি।

— হ্যাঁ যাবো, তরী আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সোহানের ঠোটে খেলে যাচ্ছে দুষ্ট হাসি। আমি রাগে ঐখান থেকে হাঁটা শুরু করলাম। সোহান আমার পিছু পিছু হাঁটছে। আমি স্টেজে যেয়ে ফারজুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

— সোহান আর আমি পাশাপাশি সি এন জিতে বসে, ঠিক মত ওর দিকে তাকাতে পারছি না আজ কেন জানি আমার ভীষণ রকম লজ্জা লাগছে।

— সোহান কি কেমন বুঝালাম?

— কি কেমন বুঝালে?

— সোহান একটু কাছে এগিয়ে বসে আবার বুঝাবো?

— খবরদার কাছে আসবেনা কিন্তু তাহলে চিৎকার করবো? আর আজ যা করছো তার মজা তুমি হারে হারে টের পাবে।

— সোহান আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাবে বলে আবার সরে বসলো। সারা রাস্তায় আর কোন কথা হলো না দু’জনের মাঝে। বাসায় এসে যে যার মত করে নিজেদের রুমে চলে আসলাম। শরীর খুব ক্লান্ত থাকায় বিছানায় শুয়ে অল্প সময়ের ভিতর ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙতেই মনে পরতে শুরু করলো গত কালকের বিয়ে বাড়ির সব ঘটনা। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম সোহানকে এবার আমি মজা দেখাবো যেমন ভাবনা তেমন কাজ ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ এসে বড় চাচীর কাছে জানতে পারলাম সোহান নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। বড় চাচী জিজ্ঞাসা করলো গতকাল কেমন মজা করলি।

— হুম খুব মজা করছি কিন্তু তোমার পোলাটা দিন দিন বদ হইতাছে।

— বড় চাচী বড় বড় চোখ করে কেন কি করলো বেকারটায়?

— আরে তেমন কিছু না, মানুষকি শুধু বিয়ে বাড়িতে খাবার জন্য যায় বলো, তোমার ছেলে যাওয়ার পর থেকেই শুধু খাই খাই শুরু করছিলো।

— কথা শুনে বড় চাচী হাসতে শুরু করলো, তুমি বসে বসে হাসো আমি যেয়ে উনাকে তুলে নিয়ে আসি। বলেই রওনা হলাম সোহানের রুমের দিক।
চুপিচুপি সোহানের ঘরের দরজা খুলে দেখি নিশ্চিন্তে সে ঘুমাচ্ছে। আমিও সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইলাম না। ওয়াশ রুমে যেয়ে মগে করে পানি নিয়ে এসে দিলাম মুখের উপড় ঢেলে ওমনি সোহান চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো। ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমি খাটের শেষ কোণায় বসে পরলাম। সোহান অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।

— ওমন করে কি দেখো?

— সোহান তুই এইটা কি করলি?

— কি করলাম? কখন থেকে ডাকছি তুমি উঠছো না দেখে পানি ছিঁটিয়ে দিলাম।

— সোহান এটাকে পানি ছিঁটানো বলে?

— হ্যাঁ নয়তো কি? মাত্র এক মগ পানি দিয়েছি, এক বালতিও দেইনি।

— সোহান তুই কিন্তু বেশী বেশী করছিস।

— কি বেশী বেশী করছি? বলেই সোহানের কাছাকাছি এগিয়ে গেলাম।

— সোহান কি বেশী বেশী করছিস তুই বুঝিস না?

— নাতো আমি কি বুঝবো গত রাতের কথা মনে নেই?

— সোহান গত রাতের কথা কি মনে থাকবে শুনি?

— ওমা! ভুলে গেলে তুমি? গতরাতে আমার সাথে কি কি করেছো?

— সোহান তুই কি এর বদলা নিতে চাচ্ছিস?

— যদি বলি হ্যাঁ।

— সোহান দেখ ভালো হবে না আমি মাকে ডাক দিবো।

— তুমি কি ডাক দিবে আমিই ডাক দিচ্ছি চা..

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৪

0

শেষ বিকেলের রোদ-৪র্থ পর্ব
©শাহরিয়ার

— নাস্তা শেষে সোহানকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাসা থেকে। একই রিক্সায় দু’জন পাশাপাশি বসেছি, আমার খোলা চুল গুলো বার বার উড়ে যেয়ে সোহানের মুখ স্পর্শ করে চলেছে। সোহান কিছু বলছে না মাঝে মাঝে হাত দিয়ে গাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে।

— সোহান এই তোর চুল বেঁধে আসতে পারিস না?

— চুল বাঁধবো কেন? এতো সুন্দর চুল বাতাসে উড়বে কারো মুখে যাবে এটাইতো নিয়ম।

— সোহান মানুষের মুখে যাবে এটা নিয়ম?

— হ্যাঁ কেন তুমি মুভিতে দেখো না, গল্পের বইয়ের ভিতর পড়নি কখনো?

— সোহান না তোর মত মুভিও দেখি না আর গল্পের বইও পড়ি না।

— গুনগুন করে কেমন আনরোমান্টিক পোলারে।

— সোহান কিছু বললি?

— দাত গুলো বের করে কি নাতো।

— সোহান সেই ভালো তুই কথা না বলে চুপ করে থাকলেই শান্তি বজায় থাকবে।

— মানে কি? এই আমি কি অশান্তি করি নাকি? তুমি এমন করে বলতে পারলে?

— সোহান এই দেখো নাকে কান্না শুরু হয়ে গেছে, আরে থাম থাম মানুষ দেখলে কি মনে করবে?

— মানুষ কি মনে করবে?

— সোহান ওরে আমার পিচ্চিটারে কিছুই বুঝে না। মানুষ এসে আমাকে গনধোলাই দিবে বুঝলি, এখন একদম চুপ করে বসে থাক।

— চুপ করে বসে আছি এমন সময় সোহান বলে উঠলো আচ্ছা ফুলটুসি তোর বান্ধবিকে কি গিফট করবি তা ঠিক করেছিস?

— নাতো মার্কেটে যেয়ে যা পছন্দ হবে তাই গিফট করবো।

— সোহান ওদের বিয়েটা কি পারিবারিক ভাবে হচ্ছে নাকি প্রেমের বিয়ে?

— বিয়েতো হচ্ছে পারিবারিক ভাবেই, তবে ওরা একে অপরকে আগে থেকেই ভালোবাসতো।

— সোহান ও আচ্ছা তাহলে ভালোই।

— হুম ভালোইতো, দু’জন কথা বলতে বলতে রিক্সা চলে আসলো শপিং সেন্টারের সামনে। দু’জনে রিক্সা থেকে নেমে ঢুকে পড়লাম শপিং সেন্টারের ভিতরে। অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করে দু’জনে মিলে গিফট পছন্দ করে কিনলাম।

— সোহান আচ্ছা ফুলটুসি বিয়ে বাড়িতে তুই কি পরে যাবি?

— আমি আবার কি পরে যাবো, বাসায় নতুন নতুন কত জামা আছে সেগুলো থেকে যেকোন একটা পরে যাবো।

— সোহান তুই যে মাথা মোটা আমি আগে থেকেই জানি বুঝলি ফুলটুসি। বান্ধবির বিয়েতে কেউ জামা পরে যায়? না মানে রেগুলার যেসব জামা পরিস আর কি সেগুলো পরে নাকি।

— তাহলে কি পরে যাবো?

— সোহান কি পরে যাবি মানে? শাড়ি পরে যাবি, সুন্দর করে সেঁজেগুজে শাড়ি পড়ে তারপর যাবি।

— তুমি সত্যিই পাগল হয়েছো, আমার এ জীবনে আমি কোন দিনও শাড়ি পরিনি। আর আমার কোন শাড়িও নেই।

— সোহান পরিস নি পরবি।

— কিন্তু আমার যে কোন শাড়ি নেই। আর আমাকে শাড়ি পরলে মোটেও ভালো দেখাবে না তা আমি বুঝতে পারি।

— সোহান তোকে কে বললো যে শাড়ি পরলে তোকে ভালো দেখাবে না? সব মেয়েকেই শাড়িতে খুব সুন্দর দেখায়।

— তার মানে তুমি রাস্তায় যে সকল মেয়েরা শাড়ি পরে হাঁটে তাদের দিকে চেয়ে থাকো?

— সোহান উফ তুই সব কিছু এক লাইন বেশী বুঝিস তবে কাজের জিনিসই বুঝিস না।

— কি আমি বুঝি কোনটা বুঝিনা আমি বলো?

— সোহান এই যে বিয়ে বাড়িতে কি সাঁজে যেতে হবে সেটাই বুঝিস না, বলেই হাত ধরে টান দিয়ে একটা শাড়ির দোকানের ভিতর ঢুকলো দু’জন।

— সোহান নিজে পছন্দ করে একটা আকাশি রঙের শাড়ি পছন্দ করে কিনে দিলো। সেই সাথে ম্যাচিং করে কাঁচের চুড়ি, আর একটা টিপের পাতা কিনে দিলো। শপিং করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো। দু’জন শপিং শেষ করে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো সেখানে যেয়ে দু’জনে লাঞ্চ শেষ করে রিক্সায় উঠতেই বৃষ্টি শুরু হলো।

— বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলাম টপটপ করে পানি পরছে।

— সোহান কোথাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেই মনে হয় ভালো হতো।

— কেন আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে না?

— সোহান বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগবে না কেন? কিন্তু জ্বর আসলে তখন এর সাজা বুঝতে পারবি।

— কি বুঝবো না বুঝবো তা জানি না, তবে এতোটুকু বুঝি যখন তোমার সাথে আমি থাকবো না তখন তুমি বুঝবে। কি ছিলাম তোমার আমি।

— সোহান এই থাকবি না মানে কোথায় যাবি?

— কোথাও যাচ্ছি না, তবে মেয়ে মানুষ যেহেতু সারা জীবনতো আর বাবার বাড়ি থাকবো না।

— সোহান তা ঠিক বলেছিস।

— দু’জনের মাঝে আর কোন কথা হলো না, চুপচাপ দু’জন চলে আসলাম বাড়িতে। নিজের রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বার বার নিজেকে দেখছি। সত্যিই আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি।

— সন্ধ্যার পর ছাঁদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি বৃষ্টির শেষে ঠাণ্ডা বাতাসে পুরো শরীর হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে, এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে যাচ্ছে মনের ভিতর। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কারো স্পর্শে কেঁপে উঠলাম পেছনে ফিরে দেখি সোহান।

— তুমি কিছু বলবে?

— সোহান হ্যাঁ আজতো তুই আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ালি না।

— ওহ সরি, বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই আর রুম থেকে বের হয়নি। তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।

— সোহাস পেছন থেকে হাত টেনে ধরে না থাক এখন যেতে হবে না। একটু পর ডিনার করবো।

— দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি আমার মনে হচ্ছে আমি সোহানকে ভালোবেসে ফেলেছি, কবে কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি এই মানুষটাকে তা আমার জানা নেই, হয়তো ফুলটুসি নামটাই সে আমায় ভালোবেসে দিয়েছে, এতোটা কাছাকাছি থেকেও আমি তাকে বলতে পারছি না ভালোবাসি। জানি না কোন দিনও বলতে পারবো কিনা, ও কি কখনো আমার অভিমানের ভাষা বুঝে না।

— সোহান ফুলটুসি কি ভাবছিস?

— কই কিছু নাতো,

— সোহান উহু তুইতো কিছু ভাবতাছিস আমি নিশ্চিৎ

— তুমি যদি বুঝতে আমি কি ভাবছি তাহলেতো ভালোই হতো [মনে মনে] এতো নিশ্চিৎ হলে কি করে?

— সোহান বকবক করা ফুলটুসি যেহেতু নীরব সেহেতু কিছু ভাবছে এটা ধরেই নেয়া যায়।

— নিচে চলো সবাই ডিনারে চলে আসছে এতো সময়ে নিশ্চই।

— সোহান হ্যাঁ চল।

— রাতের খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। টেবিলে চোখ রাখতেই দেখতে পেলাম নতুন দু’টো বই, বই খুলতেই বেরিয়ে আসলো চিরকুট।

“বেশী বেশী বই পড়বি আর রোমান্টিক হবি, এগুলো পড়া শেষ হলেই আমাকে বলবি আমি আবার নতুন বই কিনে দিবো ফুলটুসি”

— এই ছোট ছোট সারপ্রাইজ আমার সব চাওয়া গুলো তুমি বুঝ শুধু বুঝনা সোহান আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি এমন কেন? ভাবতে ভাবতে বই খুলে পড়তে শুরু করলাম।

— সকালে নাস্তার টেবিলে বড় চাচা বললো মা কখন যাবি তোরা বিয়ে বাড়িতে?

— রাস্তা কিছুটা দূরের আমরা বিকেলেই বেরিয়ে পড়বো।

— বড় চাচা আচ্ছা দেখে শুনে সাবধানে যাস।

— টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তার পর্ব শেষে সকলে যার যার মত চলে গেলো।

— দুপুরের খাওয়া শেষ করেই আমি নিজের রুমে চলে আসলাম। ব্যাগ খুলে শাড়িটা হাতে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে অনেকটা সময় বিছানায় শুয়ে রইলাম। তারপর দীর্ঘ সময় শাড়ি পরার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে মাকে ডাক দিলাম। মা আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

— এতো হেসো নাতো আমি কি কখনো শাড়ি পরছি নাকি?

— মা শোন প্রথম প্রথম শাড়ি পরতে গেলে এমন সমস্যা হবেই, কিন্তু শাড়ি পরা খুবই সহজ, এই দেখ এভাবে পরবি। বলে শাড়ি পরাতে শুরু করলো। কিছু সময়ের ভিতরেই শাড়ি পরা শেষ।হয়ে গেলো। আমি মাকে বললাম এবার তুমি বাহিরে যাও। মা চলে যেতেই আমি কাঁচের চুড়ি আর কালো একটা টিপ পরে নিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছি। আজ সত্যিই আমাকে অসাধারণ লাগছে। এই মুহুর্ত এই সুন্দর্য সবার আগে সোহানকে না দেখিয়ে যে আর থাকা যায় না, তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নিয়ে সোহানকে ফোন দিয়ে রুমে আসতে বললাম।

— সোহান দরজার সামনে এসে কিরে ফুলটুসি হলো তোর?

— ভিতরে ঢুকো,

— সোহান না তোর রুমে ঢুকবো না।

— চুরি করে যেহেতু ঢুকতে পারো, এখন আমি বলছি ঢুকতে পারবে।

— সোহান আস্তে করে দরজা ঠেলে ঘরের ভিতর ঢুকে অন্য দিকে তাকিয়ে বল কি বলবি?

— আমার দিকে তাকিয়ে দেখতো কেমন লাগছে?

— সোহান উহু তাকাবো না।

— তাকাও বলছি,

— সোহান অপলক তাকিয়ে রইলো মুখ থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছে না

— কিছুতো বলো,

— সোহান তোকে পরীর মত লাগছে, বলেই হাতটা কপালে লাগিয়ে টিপটা উঠিয়ে আবার লাগিয়ে দিয়ে এখন ঠিক আছে। এতো সময় এটা মাঝে ছিলো না।

— থ্যাংকিউ,

— সোহান আমিতো ভাবতাছি, বিয়ে বাড়িতে পাত্রীকে না দেখে সবাই তোকে দেখতে থাকবে।

— উফ তুমিও না কি সব বলো, চলো বের হবো দেরী হয়ে যাচ্ছে।

— সোহান হ্যাঁ চল।

— মা আর বড় চাচীর কাছে বিদায় নিয়ে দু’জনে বেরিয়ে পড়লাম।

— পাশাপাশি সিএনজিতে বসে আছি দু’জন সোহান অপলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি দেখেও না দেখার মত করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। আমি চাই ও আমাকে দেখুক অনুভব করুক ভালোবাসুক আমাকে। সোহান বুঝবে আমাকে ভালোবাসে এখনো যে ভালোবাসি কথাটা শুনিনি সে কথাটা আমি শুনতে চাই ওর মুখ থেকে।

— হঠাৎ গালে হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম।
বাস্তবতায় ফিরে এসে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহান আমার খুব কাছে বসে আছে।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৩

0

শেষ বিকেলের রোদ-৩য় পর্ব
©শাহরিয়ার

— রিক্সাওয়ালা মামার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম। রিক্সা ভাড়া দিয়ে এক দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতে যাবো অমনি দরজার সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।

— উফ বলে চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহান আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।

— দেখে চলতে পারো না?

— সোহান চোখ কপালে থাকলে কি আর দেখে চলা যায়রে ফুলটুসি? বলেই আমার কপালে হাত দিয়ে চশমাটা নামিয়ে চোখে পড়িয়ে দিলো।

— সকালে কোথায় ছিলে?

–সোহান তোকে বলতে হবে নাকি আমার?

— হ্যাঁ আমাকে বলতে হবে।

— সোহান তার আগে তুই বল এভাবে পাগলের দৌঁড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেছিলি কেন? পাগলা কুকুর তাড়া করছিলো?

— একদম ভালো হবে না উল্টা পাল্টা কথা বলবে না বলে দিলাম। কথাটা বলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বুঝতে পাড়লাম ধাক্কা লেগে পড়ে যাবার পর পায়ে ব্যাথা পেয়েছি। তাই চুপ করে সেখানেই বসে রইলাম ততক্ষণে সোহান উঠে দাঁড়িয়েছে।

— সোহান হাত বাড়িয়ে দিয়ে এভাবেই বসে থাকবি নাকি বাড়ির ভিতর ঢুকবি?

— অভিমান করে বললাম একাই উঠতে পারবো। তারপর আরেক বার উঠার চেষ্টা করেও বিফল হলাম।

— সোহান এবার নিজেই হাত ধরে টেনে তুলতে শুরু করলো।

— ব্যথায় উফ করে উঠলাম।

— দেখে চলতে পারিস না।

— আমি বোধয় আর হাঁটতেই পারবো না বলেই আবার মাটিতে বসে পড়লাম।

— সোহান এই তোর কি সত্যি সত্যি ব্যাথা লেগেছে?

— রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে তোমার সাথে কি আমি ইয়ার্কি করছি?

— সোহান না ঠিক তা না তবুও বলাতো যায়না।

— কি বলা যায় না?

— সোহান কিছুনা বলেই পাজা করে কোলে তুলে নিলো,

— এই কি করছো ছাড়ো আমাকে পড়ে যাবো বলেই আরও শক্ত করে সোহানের কাঁধ চেঁপে ধরলাম। (মনে মনে মজা বোঝ কেমন লাগে)

— সোহান বাড়ির ভিতর ঢুকতে ঢুকতে আচ্ছা ফুলটুসি তোকেতো অতটা মোটা দেখায় না যতটা তোর ওজন।

— কি বললা তুমি আমি মোটা আমার অনেক ওজন?

— সোহান কখন বললাম তুই মোটা? আমিতো বললাম

— থাক হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। আমি যেমন তেমনি ভালো।

— সোহান রুমের দরজার সামনে এসে ছোট মা ও ছোট মা।

— মা কিরে বাবা কি হয়েছে আর ওরো কোলে তুলে রাখছিস কেন?

— সোহান তোমার মেয়ে পাগলের মত কোথায় থেকে যেন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসে আমার গায়ের উপড় পড়লো। দেখতো ছোট মা আমার কোথাও লাগছে নাকি, কোথাও ফাটছে নাকি?

— মা তোরতো কোথাও লাগেনি,

— সোহান আমিও তো তাই বলি, আমার কোথাও লাগেনি কিন্তু তোমার মেয়ের কোমড় ভেঙেছে আমার উপড়ে পড়ে। নেও তোমার মেয়েকে ঘরে নিয়ে যাও বলে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।

— মা আমাকে ধরে ঘরে ঢুকাচ্ছে, সোহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই সে হেসে চলে গেলো।

— সন্ধ্যার দিকে পায়ের ব্যাথা কিছুটা কমার পর নিচে নেমে দেখি সোহান ঘরে নেই। আমি কিচেনে যেয়ে দুই মগ চা বানিয়ে নিয়ে ছাদে আসতেই সোহান আমাকে দেখে বলতে শুরু করলো কিরে তোর পা ভালো হয়ে গেছে?

— চায়ের মগ এগিয়ে দিতে দিতে তুমি কি চাও আমি পা ভেঙে সারা জীবন ঘরে বসে থাকি?

— সোহান আমি কখন তা বললাম?

— তাইতো মনে হয় তোমার কথা শুনে।

— সোহান চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে নারে আমার এমন কোন চাওয়া নেই।

— সরি!

— সোহান কেন?

— তোমার সাথে গতকাল আমার এমন ব্যবহার করা মোটেও উচিৎ হয়নি।

— সোহান তুই সরি বলবি কেন? সরিতো আমার বলা উচিৎ আসলেইতো এমন হুটহাট করে তোর রুমে যাওয়া আমার উচিৎ নয়।

— হয়েছে হয়েছে এতো কিছু বলতে হবে না এখন। তোমার দেয়া বই দু’টো আমার খুব পছন্দ হইছে। নতুন বই কবে দিবে তা বলো।

— সোহান কবে লাগবে তা বল?

— তার আগে বলো সকালে কোথায় গিয়েছিলে?

— সোহান আর বলিস না এক স্টুডেন্টের পরীক্ষা চলছে তাই খুব ভোরে উঠে ওকে পড়াতে চলে গিয়েছিলাম।

— স্টুডেন্ট ছেলে নাকি মেয়ে?

— সোহান আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ছেলে কেন?

— না এমনি। তা স্টুডেন্টের কোন বড় বোন আছে নাকি?

— সোহান আছেতো কেন কি করবি?

— ভাবতাছি ভালো একটা মেয়ে পেলে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবো।

— সোহান ও আচ্ছা তাহলে স্টুডেন্টের বড় বোনকে বলতে হবে তার স্বামীকে ছেড়ে তোর সাথে দেখা করার জন্য।

— আমার সাথে ফাজলামো করো বলেই কফির মগ রেখে সোহানের বুকে ঘুষি মারতে শুরু করলাম।

— সোহান এই কি করছিস ব্যাথা পাচ্ছিতো। বলতে বলতে দু’হাত চেঁপে ধরলো।

— ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছিতো।

— সোহান না ছাড়বো না, আমি ব্যাথা পাইনা যখন আমাকে মারিস?

— আমার এই নরম হাতের মারে তুমি ব্যথা পাও?

— সোহান ও তাই বুঝি?

— হ্যাঁ তাইতো দেখ দেখ কেমন লাল বানিয়ে ফেলেছো।

— সোহান হাতটা ছেড়ে দিয়ে আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু মনে রাখিস এরপর যদি আমার সাথে লাগতে আসিস তো খবর আছে।

— কি খবর করবে তুমি শুনি?

— সোহান তখনি টের পাবি কি খবর করি।

— সাহস আছে তোমার বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, বাতাসে আমার খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে সব চোখের সামনে এসে পড়লো।
সোহান হাত দিয়ে সেগুলে সরিয়ে দিতে দিতে বললো সব জায়গায় আর সবার সাথে সব রকম সাহস দেখাতে নেই।

— আমি অপলক সোহানের দিকে চেয়ে রইলাম, সে আস্তে আস্তে হেঁটে ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছে। আমি কফির মগ দু’টো হাতে নিয়ে আরও কিছুটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হতেই আমি দ্রুত নেমে পড়লাম ছাদ থেকে। রুমে এসে বই নিয়ে টেবিলে পড়তে বসলাম।

— রাতে মা এস খাবার জন্য ডাক দিলো, আমি বই গুলো গুছিয়ে ফারজুর বিয়ের কার্ডটা হাতে নিয়ে ডাইনিং এ চলে আসলাম। সেখানে বাড়ির সকলে উপস্থিত আছে। আমি কার্ডটা বাবার হাতে দিয়ে বললাম ফারজুর বিয়ে শুক্রবার।

— বাবা কার্ডটা খুলে হাতিয়ে দেখে কিন্তু মা আমিতো তোকে নিয়ে যেতে পারবো না। ঐদিন আমি আর তোর বড় চাচা একটু ব্যবসার কাজে বাহিরে থাকবো।

— তাহলে আমাকে কে নিয়ে যাবে?

— বড় চাচা কে আবার? এ বাড়িতে একজন বেকার ছেলে আছে তা কি ভুলে গেছিস? ওই তোকে নিয়ে যাবে।

— এভাবে কেন বলো তোমরা সব সময়? ভাইয়া কি ইচ্ছে করে বাড়িতে বসে থাকে? জব হচ্ছে না তাই বসে আছে।

— বড় চাচা মানুষ কি লেখাপড়া শেষে শুধুই জব করে? তারা কি ব্যবসা বানিজ্য কিছু করে না? কতদিন বলেছি আমাদের পারিবারিক এতো বড় ব্যবসা বুঝে নেবার জন্য সেতো তা নিবে না।

— হয়েছে হয়েছে এখন খাওতো তোমরা। সোহান মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে কোন কথা বলছে না। একটা মানুষের এতো ধৈর্য হয় কি করে তা আমার জানা নেই।

— বড় চাচা আমি টাকা রেখে যাবো ইকরাকে সঙ্গে নিয়ে যেয়ে ভালো দেখে গিফট কিনে নিয়ে আসবি কাল।

— সোহান জ্বি টাকা লাগবে না আমার কাছে টাকা আছে।

— বড় চাচা বিয়াদপ কোথাকার কত টাকা আছে তোর? কত কোটি টাকার মালিক?

— সোহান চুপ করে মাথা নামিয়ে বলতে শুরু করলো তোমার যা সব কিছুইতো আমার।

— বড় চাচা কিছুই দিবো না তোকে যা আছে সব ইকরাকে দিবো, এক কানা পয়সাও তুই পাবি না।

— বাবা বললেই হলো নাকি আমাদের যা আছে সবই সোহানের।

— সোহান দেখলেতো ছোট চাচ্চু তুমি ছাড়া এ বাড়িতে কেউ আমাকে দেখতে পারে না। বলতে বলতে খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।

— বড় চাচা তুই ও আছিস এই তোর আদরে আদরে ও এতোটা বাদর হয়েছে।

— বাবা হাসতে হাসতে ভাইজান ওইতো এই বংশের একমাত্র ছেলে সব কিছুইতো ওর জন্য।

— সকলের খাওয়া শেষ হলে আমি আর বড় চাচি মিলে সব কিছু গুছিয়ে রেখে যার যার রুমে চলে আসলাম। দরজা লাগিয়ে সোহানের দেয়া বই গুলো হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।

— সকালের নাস্তা শেষ হতেই বড় চাচা আমাকে বললো তোর বড় চাচীর কাছে আমি টাকা রেখে দিয়েছি, তুই সোহানকে নিয়ে যেয়ে গিফট কিনে নিয়ে আসিস। আমরা বেড়িয়ে গেলাম বলে বড় চাচা আর বাবা বাসা থেকে চলে গেলো।

— আমি যেয়ে সোহানের দরজায় কয়েক বার টোকা দিলাম ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ না পাওয়াতে দরজার লক মোচড় দিতেই দরজা খুলে গেলো। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সোহান ঘুমিয়ে আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম অনেকটা সময়, ঘুমন্ত অবস্থায় এতো সুন্দর লাগছে সোহানকে ইচ্ছে করে ওর কপালে আলতো করে ঠোটের পরশ বুলিয়ে দিতে। কি সব ভাবছি ভেবে নিজেরই লজ্জা লাগছে। আমি সোহানকে কয়েকবার ডাক দিতেই সোহান লাফিয়ে উঠলো।

— ঘুম থেকে উঠে ভুত দেখার মত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।

— এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?

— সোহান তুই কখন আসলি রুমে?

— কখন আবার যখন তুমি ঘুমিয়ে ছিলে, বাহির থেকে কতবার ডাকলাম উঠলে না, তাই ভিতরে ঢুকে ডেকে তুললাম।

— সোহান এই তোর লজ্জা ভয় কিছু নেই?

— কিসের লজ্জা ভয়?

— সোহান লুঙ্গী পড়ে শুয়ে আছি যদি ঠিক না থাকে? কিংবা যদি লাফিয়ে উঠে তোকে জড়িয়ে ধরি তখন কি হবে।

— হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা আমার হাসি দেখে রাগে সোহানের চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে যাচ্ছে। আমি সোহানের ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করতে করতে বললাম আর আমি যদি চিৎকার করি?

— সোহান কথাটা শুনে এক লাফে খাটের শেষ কর্ণারে যেয়ে বসে, এই তুই ঘরের বাহিরে যা তোকে কোন বিশ্বাস নাই।

— আমি হাসতে হাসতে বলতে শুরু করলাম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো, নাস্তা করে মার্কেটে যেতে হবে। আর আড় চোখে দেখছি সোহানের ভয়ার্ত মুখটা ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আমি আর দাঁড়ালাম না সেখানে।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০২

0

শেষ বিকেলের রোদ – ২য় পর্ব
©শাহরিয়ার

বই খুলতেই ছোট একটা চিরকুট বেরিয়ে আসলো তাতে লেখা,

“এখন থেকে তোর যে বই লাগবে আমাকে বলবি অন্য মানুষের বই আনতে হবে না”

— আমি মনে মনে বলি হয়েছে নিজেই বেকার তার কাছে বলবো আমার প্রয়োজনের কথা। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না সে কি করে বুঝলো বইটা আমার প্রয়োজন। সব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে আমি বইটা খুলে পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

— সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতেই তাড়াতাড়ি উঠে বই গুলো গুছিয়ে রেখে দরজা খুলে দেই।

— মা আর কত ঘুমাবি? তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে ভার্সিটিতে যেতে হবেতো। এতো বড় মেয়েকে এখনো ডেকে তুলতে হয় ভার্সিটিতে যাবার জন্য। আজ বাদে কাল বিয়ে দিতে হবে, সংসারের কাজতো ঠিক মত কিছুই শিখেনি তার উপর সুযোগ পেলেই শুধু ঘুম আর ঘুম, বকবক করতে করতে মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমিও সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।

— রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসে দেখি সোহান নাস্তার টেবিলে আসেনি, বড় চাচীকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সোহান ভাইয়া কোথায় নাস্তা খেতে আসেনি কেন?

— বড় চাচী কোথায় আর যাবে হয়তো ছাদে যেয়ে বসে আছে। আরতো কোন কাজ নেই।

— আমি হাসতে হাসতে আচ্ছা বড় চাচী তুমি বলোতো আমি যে তোমাকে কাল বললাম সোহান ভাইয়াকে বিয়ে দিয়ে দিতে, তুমি কেন তা বলে দিলে? তোমার পেটে কি কিছুই থাকে না।

— বড় চাচী কেন তোকে কি কিছু বলছে? শুধু বল কিছু বলে থাকলে ওরে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।

— আরে না কি বলবে আমাকে? তোমার ছেলের সেই সাহস কি আছে নাকি। কথা বলতে বলতে নাস্তা শেষ করে ডাইনিং থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে উঠে আসলাম। ছাদের শেষ কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে সোহান।

— কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

— এমনি, তুই ভার্সিটিতে না যেয়ে এখানে আসলি কেন?

— তোমাকে নাস্তার টেবিলে পেলাম না তাই আসলাম। এখন বলো নাস্তা না করে কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছো?

— মনটা ভালো নাই, আসলেই একটা জব খুব জরুরি দরকার।

— হয়েছে এসব নিয়ে মন খারাপ করে থাকতে হবে না তোমাকে। সময় হলেই হয়ে যাবে, এখন নিচে চলো নাস্তা করবে আমাকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।

— তুই যা আমি পড়ে নামছি,

— আচ্ছা ঠিক আছে আমি নেমে যাচ্ছি, আর শোন তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বই দু’টোর জন্য। আমি যেন ভার্সিটি থেকে এসে শুনি তুমি ঠিক মত খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছো, নাহলে…

— নাহলে কি?

— সেটা সময় হলেই বুঝবা, বলতে বলতে সেখান থেকে সোজা নেমে আসলাম। রিক্সা নিয়ে রওনা হলাম ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। ভার্সিটির গেটে আসতেই তরীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।

— তরী শুনেছিস ফারজুর বিয়ে ঠিক হয়েছে,

— সত্যি কার সাথে?

— তরী কার সাথে আবার আরিফ ভাইয়ের সাথে মানে যার সাথে ওর রিলেশন ছিলো তার সাথেই। শুনলাম আরিফ ভাইয়ের নাকি খুব ভালো একটা জব হয়েছে, তারপরেই ফারজুর বাসায় উনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। তারপর দুই পরিবারের মতামতে বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়ে গিয়েছে।

— বাহ তাহলেতো দারুণ হলো, কবে বিয়ে?

— তরী আগামি শুক্রবার বিয়ে। হয়তো আজ কালকের ভিতরেই বিয়ের কার্ড পেয়ে যাবি। তারপর বল তোর কি অবস্থা

— এইতো চলছে, রাসেল ভাইয়ের কি খবর? অনেক দিন ভার্সিটিতে আসতে দেখি না, ঝগড়া করেছিস নাকি তোরা দু’জন?

— তরী না ঝগড়া হবে কেন, আমিই আসতে মানা করেছি, কে কি মনে করবে তাই বলছি আমরা ভার্সিটির বাহিরেই দেখা করবো।

— ওহ আচ্ছা ভালোই করেছিস

— তরী এখন বল তোর কি খবর, কতদিন ধরে বলতাছি একটা প্রেমটেম করে ফেল তাতো করতেছিস না।

— উফ আবার শুরু করেছিস? তাড়াতাড়ি চলতো ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে। টুকটাক কথা বলতে বলতে দু’জন চলে আসলাম ক্লাশ রুমের ভিতর।

— বিকেলে ক্লাশ শেষ করে বাড়িতে ফেরার পথে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। হঠাৎ বৃষ্টিতে রিক্সায় আসায় ভিজে একাকার হয়ে গেলাম। বাসায় এসে দ্রুত নিজের রুমে চলে আসলাম, জামা।চেঞ্জ করতে শুরু করলাম এমন সময় হুট করে সোহান ঘরে ঢুকে পড়লো।

— ইস দরজাটা বন্ধ করে নিতে পারিস না।

— কথাটা শুনে আমি পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পাই সোহান অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবার অবস্থা। কোন কথা না বলে আমি দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে আসলাম। এতোটাই লজ্জা আর ভয় পেয়েছি যে জামা চেঞ্জ করতেও হাত পা সব কাঁপতে শুরু হয়ে গিয়েছে আমার। মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে অনেক কষ্টে জামা চেঞ্জ করে বের হলাম। বের হয়েই দেখতে পাই সোহান আমার বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ইচ্ছে করছে দুমধাম করে কিল ঘুষি মেরে বুকটা ফাটিয়ে ফেলি, কিন্তু তা করা সম্ভব না কারণ সোহানের শক্তির সাথে আমার পারা সম্ভব নয়। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সোহান চোখ মেলে তাকালো।

— সোহান কিরে ফুলটুসি এমন মুড অফ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমি কিছু দেখিনি বিশ্বাস কর।

— তোমাকে আমি কতদিন বলেছি আমার ঘরে যখন তখন আসবে না।

— দেখ ফুলটুসি সত্যি বলছি আমি কিছুই দেখিনি।

— আমি রাগে শরীর থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে ফেলে দিয়ে কি দেখবে দেখো।

— সোহান বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে থাপ্পর মারার জন্য হাত তুলেও তা নামিয়ে নিলো। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। মাথাটা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

— পুরো সন্ধ্যা নিজের রুমের ভিতর বসে রইলাম, নিজেকেই নিজে বকতে শুরু করলাম। কি থেকে কি হয়ে গেলো এতোটা বাজে ব্যবহার না করলেও পারতাম সোহানের সাথে। ওতো ইচ্ছে করে আর এমনটা করেনি। ভুলতো আমারও ছিলো আমি তাড়াহুরোয় দরজাও লাগাইনি আর ওয়াশ রুমেও যাইনি। যে করেই হোক সোহানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

— রাতে খাবার টেবিলে সোহানকে পেলাম না। সবার সামনে বড় চাচীকে জিজ্ঞাসাও করতে পারলাম না। এদিকে মনটে কেমন ছটফট করছে সোহানের জন্য। বিছানার এ পাশ ও পাশ করছি কিন্তু কোন ভাবেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না। সোহানকে কয়েকবার ফোন দিয়েও সুইচ অফ পেয়েছি। এসব কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসলো।

— সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলেও সোহানকে পেলাম না। বড় চাচীকে জিজ্ঞাসা করলাম সোহান ভাইয়া কোথায়?

— বড় চাচী বলতে পারছি না, সকাল থেকে দেখা হয়নি এখনো। হয়তো ঘুমাচ্ছে নয়তো কোন এক ফাঁকে ছাদে উঠে বসে আছে।

— আর কোন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে দ্রুত ছাদে চলে আসলাম। না সোহান আজ ছাদে আসেনি, তবে কি নিজের রুমেই শুয়ে আছে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিচে সোহানের রুমের সামনে এসে দরজায় কয়েকবার টোকা দিলাম। কিন্তু ভিতর থেকেও কোন সারা শব্দ না পেয়ে দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। সোহান ঘরের ভিতরেও নেই। তার মানে সোহান পুরো বাড়িতেই নেই। মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে গেলো, আমার উপর রাগ করেই এমনটা করছে সোহান সে আমি জানি বুঝি। ভাবতে ভাবতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।

— রিক্সায় বসে পুরো রাস্তায় সোহানকে খুঁজতে খুঁজতে ভার্সিটিতে ঢুকলাম। কোথাও ওর দেখা পেলাম না। ভার্সিটি ক্লাশ কোন কিছুই ভালো লাগছে না। সব কিছুই কেমন বিরক্তি কর মনে হচ্ছে।

— তরী কিরে তোকে আজ এমন দেখাচ্ছে কেন?

— কই কেমন?

— তরী কেমন জানি উদাসী উদাসী দেখাচ্ছে।

— কি যে বলিস না, আসলে মনটা ভালো নাই।

— তরী কেন কেন কি হয়েছে? বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি। বলেই হা হা করে হাসতে শুরু করলো।

— পারিস ও তুই জানিসতো আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই, তবুও অযথা কেন এসব বলিস। গতকাল বিকালে একটা ঘটনা ঘটে গেছে তাই মনটা খারাপ।

— তরী কি এমন ঘটনা ঘটলো যে তোর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো? পাত্র পক্ষ আসছিলো নাকি দেখার জন্য।

— উফ তুই ও না পারিসও, সোহান ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হইছে একটু।

— তরী উফ সোহান ভাইয়া হিরো, দেখলেই মনে হয় ক্রাশ খেয়ে গেলাম।

— আচ্ছা তাই ঠিক আছে রাসেল ভাইয়ের সাথে দেখা হোক তাকে সব বলছি।

— তরী পাগল নাকি তুই? যাই হোক আমি সত্যিই বলছি সোহান ভাইয়ের সাথে চাইলে তুই প্রেম।করতেই পারিস। আর না হলে কোন দিন আমার ব্রেকআপ হয়ে গেলে আমি ঠিকই তাকে প্রোপোজ করে বসবো।

— কি সব বলিস না, বাদ দে আমি চলে যাচ্ছি বলে ভার্সিটি থেকে বের হবো এমন সময় ফারজু আর আরিফ ভাইয়ের সাথে। অনেক দিনপর দেখা কেমন আছিস তুই।

— ফারজু আমি ভালো তোর খবর কি?

— আমিও ভালো আছি, আরিফ ভাইয়া কেমন আছে।

— টুকটাক কথা বলতে বলতে ফারজু ব্যাগের ভিতর থেকে ইনভাইটেশন কার্ড বের করে দিয়ে বললো। তাড়াতাড়ি যেন চলে আসি। কার্ডটা হাতে নিয়ে আমি রিক্সায় উঠলাম।

— কার্ডটা খুলতেই ওদের নাম দু’টো দেখতে দেখতে হঠাৎ কল্পনার জগৎ এ হারিয়ে গেলাম। যেখানে কার্ডে আমার আর সোহান ভাইয়ার নাম লেখা। দু’জন মিলে কার্ড দিয়ে বেড়াচ্ছি বন্ধু বান্ধবি আত্মীয় স্বজনদের। আর লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে রয়েছে সকলে নানান রকম কথা বলছে আমাদের নিয়ে শুনতে শুনতে কেমন জানি লজ্জা পাচ্ছিলাম।

— রিক্সাওয়ালা মামার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম। রিক্সা ভাড়া দিয়ে এক দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতে যাবো অমনি দরজার সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০১

0

শেষ বিকেলের রোদ – ১ম পর্ব
©শাহরিয়ার

কিরে ফুলটুসি এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছিস? কথাটা বলতে বলতে সোহান ভাইয়া আমার বিছানায় শুয়ে পড়লো।

— ভাইয়া তোমাকে কতবার বলছি না আমাকে এই নামে ডাকবে না।

— সোহান ভাইয়া তোর আর কোন নাম আছে নাকি?

— নাম নেই মানে কি?

— সোহান ভাইয়া আমিতো জানি তোর নাম ফুলটুসি।

— ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু আমি বড় হয়েছি মানুষের সামনে তুমি এখনো আমাকে ফুলটুসি ডাকো কেন? আমার কত সুন্দর একটা নাম আছে ইকরা।

— সোহান সুন্দর নাম না ছাঁই, ইকরা থেকে ফুলটুসি নামটাই সুন্দর তোকেতো আমি এই নামেই ডাকবো।

— কথা গুলো বলতে বলতে সোহান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি নির্বাক সোহানের দিকে চেয়ে রইলাম। হাজার বার বললে বা বুঝালেও সে আমার নাম ধরে ডাকবে না। সেই ছোট বেলা থেকেই আমাকে এই নামে ডেকে আসছে। সোহান ভাইয়ার মুখ থেকে এই নাম শুনতে যে আমার খারাপ লাগে তাও না। আমার মন বলে কেউতো একজন থাকা দরকার যে ভালোবেসে একটা নাম দিবে।

— মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠতেই আমার ধ্যান ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে

— তরী বলতে শুরু করলো কোথায় তুই? আজ ভার্সিটিতে আসার সময় বইটা নিয়ে আসিস।

— বইটা কাল দিলে হয়না? আমার এখনো পড়া হয়নি।

— তরী তুইতো জানিস বইটা আমার না যার বই তাকে ফেরৎ দিতে হবে।

— ঠিক আছে নিয়ে আসবো। বলে মন খারাপ করে ফোনটা কেটে দিলাম।

— ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে মন খারাপ করেই নাস্তার টেবিলে আসলাম। নাস্তা খেতে বসেছি এমন সময় সোহান ভাইয়া পাশে বসতে বসতে বললো কিরে ফুলটুসি তোর মন খারাপ কেন?

— রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম আমাকে যদি আর একবার এই নামে ডাকছো তো তোমাকে খুন করে ফেলবো।

— সোহান ভাইয়া এমন আচরণ মোটেও প্রত্যাশা করেনি। তাড়াতাড়ি টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি আর কোন কথা না বলে নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রিক্সায় বসে মনে মনে ভাবছি সোহানের সাথে আমার এমনটা করা মোটেও উচিৎ হয়নি। বিকেলে বাসায় ফিরে সরি বলে দিবো।

— বিকেলে বাসায় ফিরে সোহান ভাইয়াকে পেলাম না বড় চাচীকে জিজ্ঞাসা করলাম সোহান ভাইয়া কোথায়?

— বড় চাচী বলতে পারি না কোথায় গেছে, সেই সকালে বের হইছে এখনো ফিরেনি। বেকার ছেলে নিয়ে এই এক যন্ত্রনা।

— যন্ত্রনার কি হলো? সে কি ইচ্ছে করে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে নাকি? জব পাচ্ছে না তাই, চেষ্টারতো কোন কমতি রাখছে না। কথা গুলো বলে বড় চাচীর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।

— মন খারাপ করে বসে আছি, আমি জানি সোহান আমার উপর রাগ করেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম, অনেকটা সময় রিং বাজার পর ফোন রিসিভ করলো।

— হ্যাঁ ফুলটুসি বল,

— কোথায় তুমি?

— এইতো মাঠে বসে আছি কেন কিছু বলবি?

— না এমনি সারা দিন বাসায় আসোনি কেন?

— বাসায় এসে কি করবো? সবাইতো শুধু রাগ দেখায়, তার চেয়ে না খেয়ে মাঠের এক কোনে বসে থাকাই ভালো।

— এতো বড় হয়েছো লেখাপড়া শেষ করেছো একটা চাকরি নিতে পারো না? তাহলেইতো কেউ কিছু বলবে না। তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, কথা গুলো বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

— চোখের কোনে জল জমে গেছে, সত্যিইতো আমরা সবাই খুবি খারাপ ব্যবহার করি সোহানের সাথে, কখনো ওর দিকটা ভেবে দেখি না। ওতো আর ইচ্ছে করে বসে নেই বাসায়। প্রতি সাপ্তায় কোথাও না কোথাও ইন্টারভিউ দিয়েই চলেছে। এতো ভালো রেজাল্ট দেখতেও সুন্দর, কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে তবুও কেন জানি চাকরিটা অধরাই থেকে যাচ্ছে।

— কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে সোহান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করিনি। যখন পেছন থেকে এসে চশমটা টান দিয়ে খুলে বলতে শুরু করলো কিরে চোখে পোকা পড়েছে নাকি চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। বলেই চোখ মুছে দিতে শুরু করলো।

— কিছুটা অপস্তুত হয়েই বললাম অনেকটা সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম তাই এমন হয়েছে, তুমি দাঁড়াও আমি চা নাস্তা নিয়ে আসছি বলেই যখন সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখনি সোহান পেছন থেকে একটা হাত টান দিয়ে ফুলটুসি তোর জন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি।

— অবাক চোখে সোহানের দিকে তাকালাম, সে র্যাপিং পেপারে প্যাঁচানো একটা প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।

— কি আছে এর ভিতর বলে যখন খুলতে যাবো, ঠিক তখনি সে আবার আমার হাতটা চেঁপে ধরে বলতে শুরু করলো। এখুনি না রাতে খুলবি। আমি আর কোন কথা না বলে চলে নিচে নেমে চা নাস্তা বানিয়ে ছাঁদে উঠে এলাম, পশ্চিম কর্ণারের শেষ রেলিংটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান। সূর্য তখন ডুবি ডুবি করছে। আমি চা আর নাস্তা ছোট টেবিলটার উপর রেখে দু’টো চেয়ার হাতে নিয়ে সোহানের কাছে রেখে বললাম বসো।

— চায়ের মগ সোহানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললাম সরি ভাইয়া কিছু মনে করো না।

— কিসের জন্য সরি?

— ঐ যে সকালে তোমার সাথে চিল্লাইছি সে জন্য সরি।

— সোহান চায়ের মগে চুমুক দিয়ে দূর ফুলটুসি তোর উপর আমি কখনো রাগ করি? এই বাড়িতে একমাত্র তুইতো আছিস যে আমার এতোটা খেয়াল রাখে।

— হয়েছে যে দিন বিয়ে করে বউ নিয়ে আসবে তখন আর এসব মনে থাকবে না। তখন হয়ে যাবা বউ পাগলা বউ এর কথায় উঠবে বসবে।

— সোহান হাসতে হাসতে বিয়েতো হোক আগে তারপর বউ। তারপর দেখা যাবে কে কার কথা শুনে।

— হ্যাঁ হ্যাঁ দেখবোতো,

— আচ্ছা দেখিস এখন আমি নামছি, টিউশনিতে যেতে হবে। মাস শেষ হয়ে এসেছে না পড়ালে আবার বেতন দিতে চাইবে না।

— সারাদিন খাওনি, নাস্তাটা শেষ করে যাও।

— এখন আর খাবো না, তুই ভালোবেসে যতটুকু খায়িয়েছিস ততটুকুতেই পেট ভরে গেছে, কথাটা বলেই সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো, হঠাৎ থেকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো ফুলটুসি, তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ রাতে এক সাথে খাবো। আর প্যাকেটটা কিন্তু খুলবি না রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তবেই প্যাকেট টা খুলবি। আমি মাথা নেড়ে বুঝালাম ঠিক আছে, আমি আরও কিছুটা সময় আনমনে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর চায়ের মগ নিয়ে নিচে নেমে আসলাম।

— বড় চাচী ওকে খেয়ে যেতে বললি না।

— বলছিলাম, খায়নি রাতে এসে খাবে।

— তোর কথা ছাড়া আরতো কারো কথায় শুনতে চায় না ছেলেটা।

— কি যে বলোনা তুমি, সোহান ভাইয়ার মত ভালো একটা ছেলে তুমি পুরো মহল্লায় পাবে না।

— হো তোকে বলছে,

— বলছে কি? এখনকার ছেলেদের কত রকম চাহিদা, কত রকম আজেবাজে নেশা তার কোনটাই নেই তোমার ছেলের মাঝে। সেই কবে তোমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলতে পারবে? নিজে টুকটাক টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালায়, বরং টুকটাক সংসার খরচও দেয় তোমাদের। এমন একটা ছেলে কোথায় পাবে তুমি?

— হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস, সত্যিই এই দিক দিয়ে আমার ছেলেটা অনেক ভালো। আচ্ছা তুই বল তোর চাচারতো কম নেই, বললাম নিয়ে ব্যবসা করতে করবে না। বললাম তাহলে বিদেশ যা তাও যাবে না। তার এক কথা আজ হোক কাল হোক চাকরি একটা হবেই।

— এক কাজ করো তোমার ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দাও।

— বিয়ে দিবো ভালো মেয়ে কোথায় পাবো? আর বেকার ছেলেকে বিয়ে কে করবে?

— আরে সারা জীবনতো আর বেকার থাকবে না, আজ হোক কাল হোক চাকরি পাবেই, আর মেয়ের কি অভাব নাকি? আমাকে বলো আমার সব বান্ধবিদের এনে বাড়ির সামনে সিরিয়াল লাগিয়ে দিবো।

— হয়েছে হয়েছে থাম, এতো সিরিয়াল লাগাতে হবে না। বলতে বলতে বড় চাচী কিচেন থেকে বেরিয়ে পড়লো।

— আমিও চলে আসলাম নিজের রুমে, রুমটা গুছিয়ে গিফটের প্যাকেটটা টেবিলের এক কোনায় রেখে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। পড়াতে কেন জানি মন বসতে চাচ্ছিলো না। তবুও জোড় করেই পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম, হঠাৎই পেছন থেকে সোহান এসে কান টানতে টানতে বললো এই তুি মাকে কি বলেছিসরে?

— কান ছাড়ো ব্যথা লাগছে,

— সোহান কান ধরে রেখেই না ছাড়বো না, আগে বল আর কোন দিন এমন আজে বাজে বুদ্ধি দিবি তুই মাকে?

— প্লীজ ছাড়ো না অনেক ব্যথা পাচ্ছি, [সত্যিই ব্যথায় চোখে পানি চলে এসেছিলো]

— সোহান তাড়াতাড়ি কান ছেড়ে দিয়ে এই সরি সরি আমি তোকে ব্যথা দিতে চাইনি।

— আমি জোড়ে সোহানকে ধাক্কা দিতেই সোহান বিছানায় পড়ে যায়, পড়ে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে সোহান আমার একটা হাত ধরার কারণে আমিও সোহানের বুকের উপর পড়ে যাই। সোহান অপলক আমার দিকে চেয়ে আছে দেখে আমার প্রচণ্ড রকম লজ্জা লাগে। আমি দ্রুত উঠে দাঁড়াই।

— তোমাকে কত বার বলেছি আমার সাথে এমন করবে না।

— সোহান উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আমার কি দোষ তুইতো আমাকে ধাক্কা দিলি।

— হয়েছে হয়েছে তাড়াতাড়ি ঘর থেকো বের হও, তোমার শার্ট থেকে ঘামের গন্ধ আসছে, ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসো।

— সোহান নিজের জামায় নাক লাগিয়ে উহ সত্যিইতো, বলতে বলতে ইকরার রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।

— রাতে সকলে এক সাথে খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে আসলো। ঘরের দরজা লাগিয়ে এসে ইকরা টেবিলের কর্ণারে থাকা প্যাকেটটা নিয়ে খুলতে শুরু করলো। প্যাকেটটা খুলতেই ইকরা অবাক হয়ে গেলো তরীর কাছ থেকে পড়ার জন্য যেই বইটা নিয়ে এসেছিলো সেই বইটা সাথে আরও একটা বই। বই খুলতেই ছোট একটা চিরকুট বেরিয়ে আসলো তাতে লেখা,

“এখন থেকে তোর যে বই লাগবে আমাকে বলবি অন্য মানুষের বই আনতে হবে না”

আনন্দময় ভালোবাসা পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম_পর্ব

ট্রাকটা এগিয়ে আসতেছে নিশান আর রিমিদের রিকসা বরাবর।রিকসাওয়ালার পা ভয়ে থেমে গেছে।তিনি হা করে তাকিয়ে দেখছেন ট্রাকটাকে।রিমি ভয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে নিয়েছে সাথে নিশানকে জড়িয়ে ধরেছে।নিশানও থ ‌মেরে তাকিয়ে দেখছে সব।তাদের থেকে ২০ফুট দুরত্বে রয়েছে ট্রেনের লাইন।তার প্রায় ৩০ ফুট দুরে রয়েছে ট্রাকটা।বলতে গেলে তাদের থেকে মাত্র ৫০ফুট দুরত্বে অবস্থান করছে ট্রাকটা।নিশান, রিকসাওয়ালা,রিমি সবাই চোখ বন্ধ করে আছে।অপেক্ষা করছে কখন এসে গুড়িয়ে দেয় তাদের।

হঠাৎ খুব জোড়ে একটা শব্দ হয়।রিকসা থেকে ছিটকে পড়ে যায় রিমি আর নিশান।প্রচন্ডভাবে মাথায় আঘাত পায় নিশান।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে।এদিকে ছিটকে পড়ে রক্ত বের হতে শুরু করে রিমির পেটের কাটা অংশ থেকে।কিন্তু সে অজ্ঞান হয় না।কিন্তু প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা করতে শুরু করে তার পেট।রক্তে হাত ভিজে যায়।চোখের পানি নাকের পানি মিশে গেছে।রিমি খুব কষ্টে মাথাটা উপরে তুলে।কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাথার কারনে সে আর ঠিক থাকতে পারে না।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।এদিকে ট্রাক ড্রাইভারের লাশ পড়ে আছে।

___________________

চোখখুলে নিজেকে একটা সাদা বিছানার উপর আবিষ্কার করে নিশান।মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।নিশান মাথা তুলতে চাইলে পারেনা।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও যখন ব্যার্থ হয় তখন সে চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়।চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে উপরে থাকা ফ্যানটার দিকে।মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরঘুর করছে।রিমি কি বেঁচে আছে?নাকি নেই?রিহান কি চলে গেছে?নাকি এখনো যায়নি?আরো অনেক চিন্তা যোগ দিয়েছে এগুলোর সাথে।নিশান আরো একবার মাথা তোলার চেষ্টা করলেও পারেনা।চুপ করে সেখানেই শুয়ে থাকে।

কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর হঠাৎ একজন ডাক্তার আশে তার বিছানার পাশে।নিশান আলতো করে মাথাটা কাত করে ডাক্তারটার দিকে তাকায়।ডাক্তারটা হাসি মুখে বলে,
“এখন কেমন লাগছে নিশান সাহেব?”
নিশান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“কিছুটা ভালো?আচ্ছা এখানে আমার কেউ আসেনি?”
ডাক্তার আবারো তার হাসিটা মুখে রেখে বলে,”আপনার বোন-মা আর একটা ছেলে রয়েছে।আর আপনার পাশের এই মেয়েটা।নিন ওষুধটা খেয়ে নিন।”

নিশান আর কিছু না বলে ওষুধটা খেয়ে নেয়।ওষুধ খাওয়া হলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।নিশান শুয়ে শুয়ে মিলাতে থাকে তার পাশে মেয়ে।রিমি মনে হয়,আমার বোন মানে মিলি সাথে মা।কিন্তু ছেলেটা কে?রিহান নাকি?যদি রিহান হয় তাহলে ভালোই আর যদি অন্যকেউ হয় তাহলে শেষ আমি।

তার এসব ভাবনার মাঝে কেউ তাকে এসে জড়িয়ে ধরে।নিশান মাথা তুলতে না পারলেও চোখ তুলে তাকায়।মিলি এটা পাশে মা।মিলি মুচকি হাসি দিয়ে নিশানকে জিজ্ঞাসা করে,
“ভাইয়ু,এখন কেমন লাগছে?”
নিশান তার বাম হাতটা তুলে মিলির মাথার উপর রেখে চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলে,
“ভালো লাগছে বোনু।”

তাদের দুজনের মধ্যে ভাইয়ু আর বোনু শব্দটা আদিকাল থেকেই প্রচলিত।একজন অন্যজন খুব কম সময়ই এগুলো ছাড়া অন্যকিছু বলে সম্মোধন করে।নিশান এবার মুচকি হেসে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমার পাশের মেয়েটা কেমন আছে রে?”
মিলি অবাক হয়ে নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই মেয়েটাকে তুমি চেন নাকি?”

নিশান সাথে সাথে উত্তর দেয়,”চিনবো না কেন?অবশ্যই চিনি।”
এই কথার উত্তর মিলি দিতে পারেনা।সে চুপ করে গিয়ে মেয়েটার পাশে বসে।মেয়েটার জ্ঞান নিশানের আগেই ফিরেছে।১দিন আগে।মেয়েটা পেটে হাত দিয়ে আস্তে করে সরে গিয়ে মিলিকে হাসি মুখে বসতে বলে।‌মিলি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার নাম কি?”

মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“রি‌মি।”
মেয়েটা হাসি দিলেও সেই হাসিটা তার মুখে মানায় না।মিলি জানে এই মেয়েটা আর তার ভাইয়া একসাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে।কিন্তু তার ভাইয়া মেয়েটাকে চেনে এটা সে জানে না।মিলি ডাক্তারের কাছে শুনেছে এক্সিডেন্টের সময় ট্রাকের তেলের টেংকি হতে গরম তেল এসে পড়ে মেয়েটার মুখে।তাতে মেয়েটার সমস্ত মুখটা ঝলছে গেছে।

নিশান তার মাকে অনুরোধ করে তাকে তুলে বসিয়ে দিয়ে।তার মা তাকে তুলে বসিয়ে দেয়।নিশান তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”প্রতিদিন কথা বলতে বলতে পাগল করে দেয়া মানুষটা আজ একটা কথাও বলছে না।কারন কি?”
কিন্তু নিশানের মা কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে নিশানকে ধরে তার পাশে বসে থাকে।এই মুহুর্তে ভিতরে প্রবেশ করে ‌একটা ছেলে।রিহান..

রিমি পেটে হাত দিয়ে উঠে বসে রিহানকে দেখে চমকে ওঠে।তার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়।নিশান বসা অবস্তায় রিমিকে খুঁজতে থাকে।সে মনে করেছিল তার পাশে রিমি আছে কিন্তু তার পাশে তো মুখে এসিড পড়া ‌একটা মেয়ে।নিশান ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকায়।অবশেষে নিশান বুঝতে পারে এই মেয়েটাই রিমি।নিশান রি‌মির হাতের তিলটা দেখে চিনতে পারে।নিশান রিমির দিকে রিমি নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশান এবার রিহানের দিকে তাকায়।রিহান এক দৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে।

নিশান এবার রিহানকে তার পাশে ডাকে।রিহান তার পাশে যেতেই সে মিলিকে রিমির কাছ থেকে উঠতে বলে।মিলি উঠলে নিশান রিহানকে বসতে বলে রিমির বিছানায়।রিহান নাক কুঁচকায় রিমির দিকে তাকিয়ে।এতে রিমি আরো বেশি কষ্ট পায়।নিশান এবার রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এনি আপনার ওয়াইফ।”
নিশানের এই কথাটাতে উপস্তিত সবাই চমকে ওঠে শুধুমাত্র নিশান আর রিমি বাদে।রিহান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,”কি আবোল-তাবোল বলছেন?ওনাকে আমি চিনিও না।”
নিশান এবার কিছুটা জোরেই বলে,”ইনি আপনার ওয়াইফ রিমি।”

রিহান এবার রিমির পাশে গিয়ে দাড়ায়।রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে।রিহান এবার রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার স্ত্রীর পিঠে একটা বড় কালো দাগ রয়েছে।আপনি যদি আমার স্ত্রী হন তাহলে কালো দাগটা দেখান দেখি।”
রিমি সাথে সাথে তার পিঠটা এগিয়ে দেয় রিহানের দিকে।রিহান রিমির পিঠটা দেখে চমকে ওঠে।সে সাথে সাথে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কেন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলে?”
রিমি কিছু না বলে একটা ছেড়া কাগজ বের করে দেয়।রিহান গভীর মনোযোগ দিয়ে কাগজটা দেখে সাথে সাথে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।দুজনেই কাদছে।

নিশান বুজতে পারে না কাগজটাতে কি?সে মিলিকে কাগজটা তুলে দিতে বলে।মিলি কাগজটা তুলে দিলে নিশান গভীর মনোযোগ দিয়ে কাগজটা পড়ে।এটা টিউমারের রিপোর্টটা।ছিড়ে গেছে,কিন্তু রিমি এই রিপোর্টটা কই পাইলো?এদিকে এখনো রিহান আর রিমি কেদেই চলেছে।নিশান এবার তাদের থামতে বলে।রিহান রিমির পাশে বসে।নিশান রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আচ্ছা আপনি এই কাগজটা কই পাইলেন?”

রিমি এবার একটু মুচকি হেসে বলে,
“যখন দুম করে শব্দ হলো সবাই চোখ বন্ধ করে আছে। আমি চোখ খুলে দেখি একটা ট্রেন এসে বাসটাকে উড়িয়ে দিয়েছে।সেই বাসের একটা অংশ এসে আমাদের রিকসায় লাগলে আমরা সবাই উল্টে পড়ে যাই।তখন আপনার হাত থেকে এই কাগজটা পড়ে যায়।আমি সাথে সাথে কাগজটা নিজের শাড়ির আচলে রাখি।তাই ছিড়ে গেছে।তারপরই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।অজ্ঞান অবস্তায় কখন যে গরম তেল এসে আ‌মার মুখে পড়েছে জানিনা।

নিশান আর ওদিকে কোনো কথা না বাড়িয়ে রিহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আগে নিজের স্ত্রীর মুখে সব কথা শুনবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।মনে রাখবে নিজের স্ত্রী কখনো তোমার খারাপ চায় না।”
রিহান প্রতিজ্ঞা করে আজ থেকে সে রিমি সব কথা বিশ্বাস করবে।রিমি নিশানকে বার বার ধন্যবাদ দিতে থাকে।একপর্যায়ে নিশান আর মিলি ব্যচলার গানটা গাওয়া শুরু করে।গান গাওয়া শেষ হতেই মিলি তার মাকে বলে,
“মা তোমার ব্যচলার ছেলে কে এবার বিয়ে দিতে হবে তো?”

নিশানের না এবার নিশানের দিকে তাকায়।মুখ খুলে বলতে শুরু করে,
“বিয়ে দিব তোকে।মেয়ে কেমন দেখতে হবে?উচ্চতা কত,গায়ের রং কেমন,কি করে?ঝগড়া করতে পারে কি পারেনা….”

নিশান সাহায্যের আশায় মিলির দিকে তাকায়।মিলি হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেয়।কখন যে মুক্তি মেলে এই ঝামেলা থেকে বোঝা দায়…

সমাপ্ত…