Monday, July 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1519



তোমার জন্য সাইকো পর্ব-০৫

0

তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_৫

মধবয়ক লোকটি আরুশ এর রুমে ঢুকে বলে
শফিকুর জামান: কি ব্যাপার দাদুভাই কি নিয়ে এতো হাসি।
মধবয়াকো লোকটি আরুশ এর দাদু হয়
আরুশ: আরে buddy তুমি কখন এলে ?( কিছু টা ঘাভরে গিয়ে)
শফিকুর জামান: এই তো এখন আসলাম কিন্ত তুমি কি নিয়ে হাসছিলে কাউকে কি মনে ধরেছে দাদুভাই ( মুচকি হেসে)
আরুশ: আরে buddy কি যে বলো না আমি ওয়াসরুম এ গেলাম
( কথা টা বলে আরুশ চলে গেলো)
শফিকুর জামান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো কবে যে ছেলেটা একটু সুখের মুখ দেখবে ছোটো বেলায় মাকে হারিয়ে তারপর আর কাউকে তো ভালোবাসতে শিখল না কবে যে আমার দাদুভাই এর জন্য এমন মেয় আসবে যে ওকে জীবন দিয়ে ভালোবাসবে ওর সব কষ্ট দূর করে দিবে ।
কথাটা বলে শফিকুর জামান চলে গেলেন।
হ্যা আরুশ এর মা ওকে দুনিয়াতে আনতে গিয়ে পৃথিবীর মায়া তাগ করেন আর বাবা ব্যাবসা সামলাতে গিয়ে ওর দিকে তাকানোর ও টাইম পায়না । ছোটো বেলা থেকে আরুশ ওর দাদুর কাছে বড়ো হয়েছে ভলোবাসা বলতে ওর buddy কে বোঝে।

( আমি কনফিউজ নায়ক কাকে দেবো রোদকে ও ভালো লাগে আবার আরুশকে ও ভালো লাগে )

মুন ঘুম থেকে উঠে সোজা ছাদে চলে আসে ।
প্রতিদিন ওর ছাদে আসা একটা অভ্যাস ।
মুন ছাদে এসে কফি হাতে দাড়িয়ে আছে
আর একটু পর পর কফির ক্যাপে চুমুক দিচ্ছে
হটাৎ কে যেন মুনকে পিছন থেকে জড়িয়ে
ধরলো এমন ঘটনায় মুন ভয় পেয়ে
যায় আর হাতে থাকা কফি টা পরে যায়
মুন কিছুক্ষণ পর বুঝতে পরলো এটা কে এটা আর কেউ না সয়ন রোদ।
রোদ মুনকে ছাদে এসে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুন এর কাঁধে থুতনি রেখে বললো
রোদ: আরে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে আমিই তো আমি ছাড়া কেউ তোমাকে টাচ করতে পারবে না ( নেশা ভরা কণ্ঠে)
মুন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে
মুন: এসব এর মানে কি?
রোদ: কোন সব এর কথা বলছো বলো তো ( না জানার ভান করে)
মুন: কি সব বলছি আপনি বুঝতে পারছেন না নাকি বুজে ও না বুঝার ভান করবে
রোদ: আরে কি বলছ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না
মুন: আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেনো চারেন আমাকে ( নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে)
রোদ: আমি আমার জান কে ধরেছি তাতে তোমার কি।
আর এতো নড়লে ছাদ থেকে ফেলে দেবো
মুন: আপনি কি পাগল হলেন কি সব বলছেন ?রোদ: আমি একদম ঠিক আছি । তুমি ওতো কথা বলো কেনো দেখো ওই গেছে ২টা পাখি কি সুন্দর প্রেম করছে ঠিক আমাদের মতো।
মুন রোদের হাতের ইশারায় তাকিয়ে দেখে
একটা ডালে ২তো পাখি বসে আছে কি সুন্দর
লাগছে ওদের।
রোদ: দেখছ কত সুন্দর লাগছে ।
২জন কি সুন্দর প্রেম করছে আর তুমি
একটা আনরোমান্টিক মানুষ
মুন: আমি কি সেটা আপনাকে বলতে হবে না আপনি আমাকে ছাড়েন (বিরক্তি ভাব নিয়ে)
রোদ: উফফ এতো ছার ছার করছ কেনো । আমাকে রাগিও না নাহলে কিন্ত
মুন: নাহলে কি করবেন
রোদ: দেখাচ্ছি( বলে ঘাড়ে একটা জোরে কামর দিলো)
মুন: আহহ
রোদ: এবার বুজলে তো কি করতে পারি এটা just ডেমো ছিল আমাকে রাগলে কিন্ত ফল ভালো হবে না।( বলে ছেড়ে দিল)
মুন: আপনি একটা সাইকো।
রোদ: শুধু তোমার জন্য সাইকো(বলে চোখ টিপ মারলো )
মুন: 😒😒
রোদ: অভাবে তাকিও না আমার কিন্ত অনেক কিছু করতে মন চাসছে। যাই হোক
পড়াশোনা করতে দিছি ওটাই শুধু করবে
কোথাও যেতে ইসচা করলে
আমায় বলবে তোমার প্রতিটি নিশ্বাসে আমি থাকবো শুধুই আমি( কপালে কপাল রেখে)
মুন চোখ বন্ধ করে শুধু শুধু রোদের কথা শুনছে।
দোজনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা হলো
তারপর রোদ আবার বললো আমি আমার
ব্যাবহার করা কলম কাউকে দিতে
চাইনা আর সেখানে তো তুমি আমার
সব কিছু। উড়তে দিছি উরো কিন্ত
এমন কিছু করোনা যাতে তোমার
পায়ের শিকল পরিয়ে রাখতে হয়।
আর রোদ আহমেদ চৌধুরী সেটা খুব ভালো
করে পারে সেটা তো তুমি জানোই।
মুন: কিসের এতো অধিকার আমার উপর
আপনার ? কি হই
আমি আপনার?
রোদ: your my heart ,soul, life everything জানি তুমি বুজবে না যদি বুঝতে তাহলে
সেদিন ছেড়ে চলে যেতে না।
মুন: রোদ আমি
রোদ: আমি কোনো এক্সকিউজ চাইনি
(মুন কে থামিয়ে দিয়ে) যা বলছি
সেগুলো মনে রেখো
( বলে চলে গেলো)
আর মুন রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে
সেদিন এর জন্য কি রোদ এখন ও
আমার উপর রেগে আছে ।
আর রোদ এসব কি বলে গেলো
আমি ওর (তখনই নিচে থেকে রোদের আম্মুর ডাক পরলো)
মুন আর দেরি না করে চলে গেলো।
রাইমা চৌধুরী: কিরে কই ছিলি?
মুন: এই তো মামনি ছাদে ছিলাম।
কোনো কিছু কি দরকার?
রাইমা চৌধুরী: হা রে মা আমার বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে সেখানে আমাদের সবাইকে
যেতে হবে তাই কিছু কিনাকাটা করতে যাবো
তোকে নিয়ে
মুন: মামনি তুমি যাওনা আমার কোথাও
যেতে ভালো লাগছে না
রাইমা চৌধুরী: ওসব বললে তো শুনবো না
আমার সবাই যাবো তুই না গেলে হয়
তোকে যেতে হবে আমার সাথে আর কাল
আমরা শপিং এ যাবো তুই ও
যাবি আমার সাথে।
মুন: আসছ মামনি ।
আমি এখন আসি
রাইমা চৌধুরী: কি হয়েছে রে মা তোর
কি কোনো কারণে মন খারাপ
মুন: আরে না এমনি ভালো লাগছে না তুমি
শুধু শুধু চিন্তা করো না
রাইমা চৌধুরী: আচ্ছা শোন এই নে তোর পছন্দের পকরা
মুন তোর পকোড়া দেখে সেই খুশি
খুশিতে রাইমা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দেয়।
রাইমা চৌধুরী: আরে ছার পাগলী মেয়ে
মুন: তুমি না খুব ভালো।
রাইমা চৌধুরী: কার মামনি দেখতে হবে না
বলে দোজনে হেসে দিল
রাইমা চৌধুরী: এই কফি টা একটু রোদ কে
দিয়ে আয়না মা
মুন: মামনি কাজের লোকে বলো
রাইমা চৌধুরী: তুই রোদকে এতো ভয়
পাশ কেন বলতো
মুন: কি ভয় পাই
আচ্ছা তুমি দাও আমি দিয়ে আসছি
বলে কফির কাপ টা নিয়ে রোদের রুম এর দিকে গেলো।

আরুশ: উফফ আর কতক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকবো( বিরক্তি ভাব নিয়ে)
বাঁধন: ধুর আমার ও ভালো লাগছে না
রেহান: আজকে আসুক ওর খবর
করছি।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে ওখানে আবির চলে আসলো।
সবাই আবির এর দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে।
আবির: সরি রে একটু দেরি হয় গেলো
সবাই: একটু
আবির : আরে একটু না মেলা হয়ছে এবার চল
কেউ আর কথা না বাড়িয়ে ৪ বন্ধু মিলে ঘুরতে
চলে গেলো
এরা সবাই আরুশ এর বেস্টু । এক সাথে পড়ে
আর আরুশ কিন্ত মুনের ভার্সিটিতে পড়ে
তবে মুনের সনিয়র।

মুন রোদের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে
কি করবে বুঝতে পারছে না
শেষে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো
কিন্ত কোথাও রোদ কে পেলো না ফিরে আসার সময় হটাৎ কারোর কন্ঠ শুনে থেমে গেলো
কন্ঠ টা বারান্দা দিয়ে আসছে মুন উকি
মেরে দেখে রোদ ফোনে কার সাথে যেনো
কথা বলছে মুন ধির পায়ে এগিয়ে গেলো
রোদকে ডাকতে যাবে কিন্ত এমন
কিছু শুনলো যা শুনে মুনের মাথায়
আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
মুনের হাত থেকে কাপটা পড়ে গেলো

নিচের কথা গুলো সবাই পড়বেন plz♥♥

চলবে

তোমার জন্য সাইকো পর্ব-০৪

0

তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_৪
মুনসহ রুমা আর লামিয়া ও হেসে যাসছে। আরুশ তো মুন কে দেখতে ব্যাস্ত।হটাৎ মুন এর ডাকে ভাবনার ছেদ ঘটে।
মুন: এই যে মিস্টার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
আরুশ: না কোথাও না আপনার হাসিটা খুব সুন্দর
মুন কিছু বললো না।
তখন ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলো।
আরুশ: তো আপনারা খান আমি পরে এসে দেখা করে যাবো কেমন বাই
রুমা লামিয়া: বাই
আবার ৩বান্ধবী মিলে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে বিল দিয়ে ক্লাস এ চলে গেলো

রোদ: যাক মিটিং টা ভালো ভাবে হলো এখন মুনকে আনতে যেতে হবে । পাগলিটাকে কতক্ষন দেখি না
রুহি: স্যার আপনি কি এখন বের হবেন?
রোদ: হ্যা কেনো কোনো দরকার?
রুহি: স্যার আমাদের অফিসে একটু প্রবলেম হসছে আপনি যদি এই ফাইল গুলো একটু দেখতেন তাহলে কাজগুলো একটু এগিয়ে যেত
রোদ: যেগুলো জরুলি সেগুলো বাড়ি পাঠিয়ে দাও আমি দেখে নেবো আমার একটু কাজ আছে।
রুহি: স্যার এই ফাইল গুলো আজই দরকার খুব আর্জেন্ট।
রোদ: ওকে দাও ( বিরক্তি ভাব নিয়ে)
রুহি ফাইল গুলো একিয়ে দিলো।

মুন ক্লাস করে রোদের জন্য wait করছে । লামিয়া আর রুমা কে জোর করে পাঠিয়ে দেছে।
মুন এর এখন খুব রাগ হসছে কত কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ মুন এর সামনে কয়েকটা ছেলে এসে মুনকে ডিস্ট্রব করছে মুন ওদের থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে গেলো কিন্ত তাও ছেলেরা মুন কে বিরক্ত করে যাচ্ছে একটা ছেলে তো বাইক থেকে নেমে সোজা মুনের কাছে আসছিল যেই মুন এর হাত ধরতে যাবে ওমনি হিরোর মতো এসে মুন এর সামনে দাড়ালো আর মুন পিছন থেকে বুঝতে পারলো না ছেলেটা কে ।গায়ে হালকা গোলাপী রঙের শার্ট কালো প্যান্ট চোখে কালো সানগ্লাস। ঠোঁট গোলাপী ( আজ কাল সবার ঠোঁট গোলাপী শুধু আমার বাদে )
ছেলেটা চোখের সানগ্লাস খুলে মুনকে যারা ডিস্ট্রাব করছিল তাদের দিকে রাগী চোখে তাকালো ।( ছেলেটা কে হতে পারে বলেন তো থাক আমিই বলি)
মুন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তো অবাগ কারণ ছেলেটা আর কেউ না আরুশ ।ছেলেগুলো আরুশ কে আগে থেকে চেনে খুবই রাগী ছেলে ।
আরুশ কে দেখে ছেলে গুলো চলে গেলো আর আরুশ মুন এর দিকে ফিরে দেখে মুন খুব ভয় পেয়ে আছে অ্যারুশ মুনকে বললো
আরুশ: কি ব্যাপার ছুটি তো অনেক আগে হয়ছে তুমি এখন ওর এখানে কেনো( চোখ গরম করে)
মুন: না মানে আমাকে নিতে আসার কথা ছিল তাই wait করছিলাম তখন ওরা আসলো আর
আরুশ: হমম বুজলাম কিন্ত তোমার তো বোঝা উচিত এমনি তেই দিন কাল ভালো না একা এভাবে দাড়িয়ে থাকা কি ঠিক তোমার বান্ধবীরা কই যারা তোমার সাথে থাকে তাদের সাথে ও তো দাড়াতে পারতে আজ যদি আমি না আসতাম তো কি হতো বুঝতে পারছো কোনো আইডিয়া আছে তোমার( রাগী গলায়)
মুন কিছু বললো না ।মুন কে চুপ থাকতে দেখে আরুশ এর রাগ আর ও বেড়ে গেলো নিজের রাগ তাকে কন্ট্রোল করতে দেয়ালে একটা জোরে গুসি দিলো।তাতে তো মুন ভয়ে শেষ এমনিতেই খুব ভয় পেয়ে ছিল তারপর আরুশ এর এমন করতে প্রায় কেদে দেওয়ার মতো অবস্থা।আরুশ দেখলো যে মুন এর চোখে পানি জ্বলজ্বল করছে তাই নিজের রাগ তাকে কন্ট্রোল করে মুন এর গালে হাত দিতে গেলে মুন পিছিয়ে গেলো ।আরুশ বুঝতে পেরে মুনকে বললো।
আরুশ: ভয় পাওয়ার কিছু নেই কিছু হয়নি আমি তো আছি চলো তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসি।
মুন : (নিজেকে সামলে) না ঠিক আছে আমি যেতে পারব আমার গাড়ি এখনি চলে আসবে
আরুশ: যদি আসার হতো এতক্ষণে এসে যেতো তাই জেদ না করে আমার সাথে চলো
মুন: আমি যে( আর কিছু বলতে পারলো না আরুশ এর চোখ গরম করা দেখে একটা শুকনো ঢক গিললো)
আরুশ রোদের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে গেলো বাইকে স্টার্ট দিয়ে ( মুন এর দিকে তাকালো। মুন কোনো উপায় না পেয়ে উঠে পরলো)
গাড়ি চলছে আপন গতিতে মুন আর আরুশ এর মধ্য নিরবতা।

রোদ: বিরক্তি নিয়ে কাজ গুলো সেরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক দেরি হয়েগেছে । রোদ আর এক মহতু না দাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো। ফুল স্প্রিড এ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।

আরুশ মুনের বাড়ি সামনে এসে ব্রেক করলো মুন নেমে কিছু না বলে বাড়ির ভেতরে চলে গেল পিছন থেকে আরুশ ডাকছে সেদিকে মুন এর খেয়াল নেই।
আরুশ: আরে দাওয়ার যা চলে গেলো একটা thanks ও দিলো না ওকে কোনো সমস্যা না কাল দেখে নিবো ( বলে আরুশ চলে গেলো)
মুন ভিতরে এসে যেনো হাফ ছেড়ে বাচল ।নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হতে নিলো ।ফ্রেশ হয়ে বের হতে না হতে কেউ একজন ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। মুন সামনে তাকিয়ে ওর কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে কারণ সামনে রোদ দাড়িয়ে আছে আর ওর চোখ রক্তবন্য হয়ে আছে। রোদ ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো।
রোদ: আমার জন্য না দাড়িয়ে চলে আসলে কেনো( দাতে দাত চেপে)
মুন: আমি আসলে
রোদ: যা বলার ক্লিয়ার করে বলো ডাম ইট ( জোরে চিল্লিয়ে)
রোদের চিল্লানিতে মুন ভয়ে কেদে দিল ।
রোদ মুনের কান্না দেখে কিছু টা নরম হলো টা ও আবার জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল
রোদ: কি হলো কাদছো কেনো আমি কি তোমাকে বলেছি না মেরেছি যে কাদছো আমি শুধু একটা পশ্ন করছি তার ans আমার চাই ( শান্ত গলায়)
মুন তো কেডেই যাচ্ছে ।রোদ এবার মুন মুনের গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো ।মুন ও রোদের বুকে কেদে যাচ্ছে আর রোদ মুনকে সামলাচ্ছে মুন কিছুটা স্বাভাবিক হলে রোদ মুনকে আবার বলে
রোদ: এবার বলো কি হয়েছে আর তুমি কার সাথে আসছ ।দেখো মিথ্যে বললে তো জানো আমি কি করবো তাই কোনো রকম চালাকির করার চেষ্টা করো না।
মুন রোদের থ্রেট শুনে তোতাপাখির মতো সব বলে দিলো।রোদ সব শুনে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
রোদ: আজ যা হয়েছে হয়েছে নেক্সট টাইম থেকে তুমি আর কখনো একা বের হবা না গট ইট?
মুন: হম(নাক ডলতে ডলতে)
রোদ: গুড গার্ল এখন কিছু খেয়ে রেস্ট নাও।আর তোমার ভাবনা ও আমি তোমার সপ্ন ও আমি অন্য কারোর কথা কল্পনাতে ও এনো না(বলে চলে গেলো)
মুন বসে বসে রোদের কথা গুলো ভাবছে।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো

এদিক আরুশ নিজের ঘরে বসে বসে মুন এর কথা ভাবছে ।মুন এর হাসা।ওর কথা বলা ওর ভীত ভীত চেহেরা বারবার আরুশ এর মনে পড়ছে।
আরুশ: কি আছে ওই মেয়ের মাঝে যা আমাকে এত টানছে এতো মেয়ে দেখেছি কিন্তু ওর মতো কোনো মেয়ে দেখিনি( আনমনে এসব ভাবছে আর হাসছে)
হটাৎ সেখানে হাজির হলো একজন মধবয়স্কো লোক।

চলবে,

তোমার জন্য সাইকো পর্ব-০৩

0

তোমার জন্য সাইকো
Part_3
লেখিকা: নুসরাত জাহান অংকুর
সকালে,
মুন ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদ ওর পাশে চেঁয়ারে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমন্ত রোদকে দেখতে কি সুন্দর লাগছে ফর্সা চেহারায় গোলাপী ঠোট টা ফুটে উঠেছে।মুখে খুছা খুঁছা দাড়ি চুল গুলো সব সময় জেল দিয়ে রাখে কিন্ত আজকে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে
আছে যা মুনকে রোদের দিকে টানছে।হটাৎ মুন এর কালকের কথা মনে পড়তেই মুন এর গলা সুখিয়ে গেলো
মুন: কালকে রোদ যা রেগে ছিল আজ যদি প্রতিদিন এর মত আরো বেশি অপমানিত হতে হয় (এসব মনে মনে ভাবছে )
রোদ যে উঠে পড়েছে সেদিকে মুন এর খিয়াল নেই মুন ওর মতো ভেবে যাচ্ছে। রোদ মুনের দিকে তাকিয়ে দেখে কি যেনো ভাবছে রোদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুনকে বললো
রোদ: কি ব্যাপার কি এতো ভাবছো মন দিয়ে
(রোদের কথায় মুন এর ভাবনার ছেদ ঘটে)
মুন: নায়ায়া মানে আসলে
রোদ: ওতো মানে আসলে করতে হবে না তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডী হয়ে নিচে আসো ভার্সিটিতে যেতে হবে না
মুন: কি ব্যাপার রোদ কালকের ব্যাপার নিয়ে তো আমায় কিছু বললো না কি হলো( মনে মনে)
রোদ: কি ওতো ভাবচ তাড়াতাড়ি রেডী হতে নিচে আসো তাড়াতাড়ি ( এই বলে বেরিয়ে গেলো মুন এর রুম থেকে)
মুন: কাল সারারাত কি রোদ আমার ঘরে ছিল আজ বা এতো ভালো ব্যাবহার করলো কেনো সকাল সকাল কি কিছু খেয়েছে থাক বাবা ওতো ভেবে লাভ নেই তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নিচে যেতে হবে তাহলে যে আবার কি করবে ঠিক নেই।
মুন বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখে বিছানার পাশে টেবিল এ বাড়িতে পানি আর একটা কাপড় রাখা
মুন: তাহলে আমার কাল রাতে জ্বর হয়েছিলো আর রোদ ( ভেবেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো)
এইদিকে
রোদ: তোমাকে অনেক ছার দিছি এবার থেকে আমার ভালোবাসার বাঁধবো দেখি কত দূর পালাতে পারো my sweetheart (বলে বাথরুম এ চলে গেলো)
কিছুক্ষণ পর
মুন রেডী হয়ে নিচে নেমে দেখে সবাই বসে আছে মুন ও তাদের সাথে বসে পরলো।
নাহিল চৌধুরী: এখন কেমন আছো মামনি আগের থেকে শরীর ভালো লাগছে?
মুন: হা পাপ্পাই এখন ঠিক আছি
রাইমা চৌধুরী মুনকে খারাব বেড়ে দিতে দিতে বললো
রাইমা চৌধুরী: এবার থেকে আমার কথা মত চলতে হবে বেশি করে খেতে হবে শরীর কি অবস্থা করেছি সেদিকে খেয়াল আছে হমম?
মুন: উফফ মামনি আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয়নি তুমি ওতো চিন্তা করোনা তো ( মুন রোদের আব্বু কে পাপপাই আর রোদের আম্মুকে মামনি বলে ডাকে)
রাইমা চৌধুরী: আমি ছাড়া কে চিন্তা করবে বলতো আমার কথা তো কারোর কানেই যায়না
নাহিল চৌধুরী: আহা সকাল সকাল মেয়েটাকে বলছো কেনো আয় তো মামনি রোজ তোর মামনি তোকে খায়িয়ে দেয় আজ আমি তোকে খাইয়ে দেবো(বলে মুন এর মুখে খাবার দিলো আর মুন ও খেতে লাগলো)
তখন রোদ আসে আর এসে একটা চেয়ার টেনে বসে ।
রোদ: gd m9 everyone
নাহিল চৌধুরী: gd m9 ( মুনকে খায়ীয়ে দিতে দিতে)
রোদ: আব্বু মুনকে আজ থেকে আমি দিয়ে আসবো আর নিয়ে আসব
রোদের কথায় মুন ভিসুম খেলো)
রোদ: আছতে খাওয়া যায়না ( চোখ রাঙিয়ে)রোদের চোখ রাঙানো দেখে মুন শুকনো ঢুক গিললো
নাহিল চৌধুরী: অছতে মামনি নাও পানি খাও ( পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে)
রাইমা চৌধুরী: তুমি ঠিক করে খাওয়াতে পারণা মেয়েটা ভিসম খেলো।
মুন: আমি ঠিক আছি
নাহিল চৌধুরী: হা তো রোদ তুমি যেনো কি বলছিলে
রোদ: বলছি যে মুন কে নিয়ে ভরসা নেই এখন থেকে আমি ওকে ভার্সিটিতে দিয়ে যাবো আর নিয়ে আসবো।
নাহিল চৌধুরী: তুমি যদি ওকে নিয়ে যেতে চাও তো কোনো সমস্যা নেই কিন্ত ওর দেখে শুনে গাড়ি চালাবা
রোদ: ওকে আব্বু
মুন: আমি বলছি কি রোদের এতো কষ্ট করার কি দরকার আমি বাড়ির গাড়িতেই যেতে পার..(বাকিটা বলার আগেই মুনের রোদের দিকে নজর পড়ল আর মুন দেখলো যে রোদ চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে এটা দেখে মুন শুকনো ঢুক গিললো)
মুন: আল্লাহ জানে এখন আমার কি হবে( মনে মনে)
রোদ: আমার সাথে যেতে কি খুব সমস্যা হবে ।
নাহিল চৌধুরী: মামনি তুমি রোদ এর সাথে যাও রাস্তায় যদি কোনো সমস্যা হয়
মুন: ওকে প্যাপ্পাই
খাওয়া শেষ করে রোদ আর মুন বেরিয়ে পড়লো।মুন তো পড়েছে মহা বিপদে যেই লোকটাকে দেখে ভয় এখন থেকে নাকি তার সাথে যেতে হবে( জানালার দিকে মুখ করে এসব ভাবছে মুন)
রোদ একটু পর পর মুন এর দিকে তাকাচ্ছে হটাৎ নিরবতা ভেঙ্গে রোদ বললো।
রোদ: শরীর কি খারাপ লাগছে ওভাবে বসে আছো কেনো?
মুন: না তেমন কিছু না এমনি ভালো লাগছে না
রোদ: আমার সাথে থাকলে তোমার কোন সময় ভালো লাগে যাই হক ছুটির সময় আমাকে ফোন দিবা আমি এসে নিয়ে যাবো আবার মাতবরের মতো একা যেতে না বুঝতে পারছো আমি কি বলছি
মুন: হমমম ( এমন ভাবে বলছ যেনো আমি উনার বিয়ে করা বউ লাগি লুচু কোথাকার কথায় কোথায় শুধু আমায় ধমকাবে তোর বউ জুটবে না)
রোদ: গালি দেওয়া শেষ(ড্রাইভ করতে করতে)
রোদের কথায় মুন কিছু টা অপুস্তট হয়ে বললো
মুন: জি??( কিছু শুনে ফেলেনি তত)
রোদ: সব শুনে ফেলছি এতো জোরে কেউ মনে মনে ভাবে
মুন:( এর জ্বালায় কি কিছু ভাবা যাবে না)
রোদ : তোমার ভাবনায় সব কিছুতে শুধু আমি থাকবো তোমার সব কিছু শুধু আমায় ঘিরে থাকবে
মুন: বুজলাম না
রোদ: সময় হলে বুঝতে পারব এখন গাড়ি থেকে নামো ভার্সিটি এসে গেছে।
মুন তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ভার্সিটি চলে আসছে মুন তাড়াতাড়ি করে নেবে যেই দোর দেবে রোদের কথায় থেমে গেলো।
রোদ: কোথায় পালাছো আমি কি যেতে বলছি (মুন মাথা দিয়ে না বুঝালো)
রোদ: তাহলে চলে যাসছিলে কেনো এতো সাহস কে দেছে হম?
মুন: সরি আসলে..
রোদ: থাক আর কিছু বলতে হবে না শোনো যা বলছি ভার্সিটিতে যাও কিন্ত কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলতে পারবা না খুব দরকার না পরলে মেয়ে বন্ধু থাকবে কিন্ত ছেলে বন্ধু যেনো না দেখি নাহলে আমি কি করবো সেটা তোর জানোই । তোমার জন্য যেনো কাউকে জীবন হারাতে না হয় got it
মুন: হম আমি কি এখন যাবো ( ভয়ে ভয়ে)
রোদ: হমম যাবে আমার কথা গুলো যেনো মনে থাকে।
মুন: আচ্ছা (মুন চলে যেতে গেলে রোদ ওর হাত ধরে নিজের কাছে আনে)
মুন এর ২ গালে হাত দিয়ে বললো
রোদ: আমাকে ওতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তোমারই(বলে কপালে একটা ভলোবাসার পরশ একে দিল মুন ত পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে আজ সব কিছু অর্ট মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে)
রোদ: এবার যাও (রোদের বলতে দেরি কিন্ত মুন এর যেতে দেরি না এক সুটে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলো)
রোদ টা দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে মুন ভার্সিটির ভিতরে এসে হাফাতে লাগলো তখন কেউ একজন দৌড়ে এসে মুন কে জড়িয়ে ধরলো মুন বুজলো এটা কে তাই ও জড়িয়ে ধরলো।
রুমা: হাই মাম্না তোকে খুব মিস করছি
মুন: আমি ওর তোকে খুব মিস করছি (রুমা মুন এ বেষ্ট ফ্রেন্ড )
রুমা: কেমন মিস করছিস সে আমার জানা আছে (মুখ গোমড়া করে)
মুন: আরে সত্যি মিস করছি তোরা সারা আমার আছে কে বাই দা রাস্তা লামি কই( লামী মুন এর আর একটা বেষ্ট ফ্রেন্ড লামিয়া। মুন আর রুমা লামী বলে ডাকে আর রুমাকে রো বলে)
রুমা: ও তো
লামিয়া: এই তো আমি এখানে (দৌড়াতে দৌড়াতে)
মুন: এত দেরি হলো কেন ?
রুমা: ও তো রোজই দেরি করে আসে
লামিয়া: চুপ থাক ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিলো তাই
রুমা: রাতে বোফ এর লগে জানু,সোনা করে তো ঘুমাবে আবার সকালে উঠে
লামিয়া: তুই বেশি বগিস কেন বলতো হিংসা হয়নাকি
রুমা: তোকে দেখে পাগল এ হিংসা করবে যা ভাগ
মুন: হয়ছে তোদের এখন চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে ।
রুমা: হা চল ( এর পর ৩বান্ধবী মিলে ক্লাস এ গিয়ে ক্লাস করলো)
এদিকে
রোদ অফিস গিয়ে ওর কাজ করে হটাৎ ওর মুন এর কথা মনে পড়লো কাকে যেনো একটা ফোন করলো বললো
রোদ: ওর দিকে খেয়াল রেখো আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানিও
ওপাশ থেকে…..
রোদ: হম গুড ( বলে ফোনটা কেটে দিলো)
ফোন থেকে মুন এর ছবি বের করে দেখতে লাগলো কি মায়াবী চেহেরা
রোদ: কেনো তুমি আমার ভলোবাসা বোঝ না তোমায় নিয়ে আমার সব কিছু কবে তুমি আমাকে একটু বুজবে আমাকে বলবে ভালোবাসি আর কত অপেক্ষা করতে হবে তুমি যে আমার লাইফ এর মুন তোমায় ছাড়া তো আমি শূন্য ।
হটাৎ দরজায় নক পড়লো
রোদ: ফোনটা থুয়ে কাম ইন
রুহি: স্যার আজকে খান দের সাথে আমাদের একটা মিটিং আছে (রুহি রোদের পি এ)
রোদ: ওকে তুমি রেডী করো আমি আসছি আর আজ আমায় একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে
রুহি: ওকে স্যার
রোদ মিটিং এ চলে গেলো।

ক্লাস শেষ হওয়ার পর
রুমা: এই মুন চলনা কিছু খেয়ে আসি খুব খুদা লাগছে
মুন: আর কত খাবি খেতে খেতে তো মুটি হয়ে যাবি
রুমা: তোদের কথায় মুটা হবো না
লামিয়া: রাক্ষসী একটা
রুমা: তোর বাপের খাই
লামিয়া: বাপে যাবি না
রুমা: চাল হাট
মুন: উফফ তোরা থামতো আমি মরছি আমার জ্বালায় এরা আছে নিজেদের ঝগড়া নিয়ে( রাগী ভাব নিয়ে)
লামিয়া: ওর কথা বাদ দে তো তুই বল তোর কি hoyche অন্য দিন তো কথা বলিছ আজ চুপ কেন কি হইছে জানু?
মুন:কিছু হয়নী চল কিছু খেয়ে আসি ( এদেরকে রোদের কথাবলা যাবে না নাহলে টেনশন করবে হোয়ত ওটা আমার কল্পনা ছিল রোড ওমন করতেই পারে না হা ওটা আমার ভুল)
লামিয়া: তুই কবে ওর মতো খাওয়া শরু করলি?
রুমা: বেশি বগলে তোকেই খেয়ে ফেলবো
লামিয়া: রাক্ষসী
রুমা: যা ভাগ
মুন: উফফ তোরা থামতো চল (২জন কে টেনে কান্টিনে নিয়ে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে গল্প করতে লাগলো)
ওদের গল্পের মাঝে একটা ছেলে এসে বসলো(ছেলেটা দেখতে হিরো দের মতো আমাদের রোড ও কিন্ত হাজারো মেয়েদের ক্রাশ)
মুন, লামিয়া,রুমা একে অপরের দিকে তাকিয়ে
ছেলেটা: হাই আমি আরুষ
লামিয়া: আমি লামিয়া এ রুমা আর o মুন ( রুমা আর মুন এর দিকে তাকিয়ে) আর কিছু বলবেন
আরুস: আমি এখানে বসাতে কি আপনারা রেগে গেছেন
লামিয়া কিছু বলতে যাবে রুমা লামিয়াকে থামিয়ে দিয়ে
রুমা: আরে না তেমন কোনো কিছু না
অরুস: ওহ ভালো টা কেমন আছো?
রুমা: জি ভালো আপনি কেমন আছেন?
অরুস: হা ভালো টা তুমি কথা বলছো না কেনো?( মুন এর দিকে তাকিয়ে)
মুন কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না রোদ ওকে আজ যা বলছে তাতে
অরুষ: এই যে ম্যাডাম কোথায় হারিয়ে গেলেন
মুন: হা বলেন
আরুষ্: থ্যাংক গড আপনি ফিরে আসছেন আমি তো ভাবলাম আপনাকে হারিকেন দিয়ে খুঁজে আনতে হবে
আরূষ এর কথায় মুন ফিক করে হেসে দিল।আর অ্যারুষ অপলক নয়নে মুনের হাসি দেখছে

চলবে…

হ্যাপি রিডিং)

তোমার জন্য সাইকো পর্ব-১+২

0

তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর

Part_1+2

ভার্সিটির সবার সামনে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রোদ নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু রোদের সারার কোনো নাম নেই টানতে টানতে ভার্সিটির বাইরে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে সোজা বাড়িতে নিয়ে গেলো বাড়ি গিয়ে সবার সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলো দেলো অপিস্থিত সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি অনবরত কেদে যাচ্ছি (আসুন এবার পরিচয় দিয়ে দি আমি মুন চৌধুরী আর একটু আগে যে আমায় টেনে নিয়ে আসলো সে আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে রোদ আহমেদ।আমার বাবা মা নেই আমার বয়স যখন 17 তখন তারা মারা যায় তখন থেকে আমি আমার আব্বুর বন্ধ নাহিল আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি থাকি বাড়ির সবাই আমায় খুব ভালোবাসে শুধু রোদ বাদে জানিনা কেনো সব সময় আমাকে বকে ।রোদের আম্মু রাইমা চৌধুরী আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে ।বাকি কথা গল্প পড়লে জানতে পারবেন)
নাহিল চৌধুরী: কিরে রোদ তুই এভাবে মামনি কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলি কেন মামনির কতো ব্যাথা পেলো (কথা টা বলে আমার কাছে এসে আমাকে তুলে সোফায় বসি দিলো)
আমি তো কেদেই যাচ্ছি আর রোদ চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে
রাইমা চৌধুরী: হা রে বাবু তুমি মেয়ে তাকে এভাবে টেনে এনে ফেলে দিলে কেনো কি করছে ও
রোদ: সেটা ওকে জিজ্ঞেস করো ভার্সিটি তে কি যায় ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে কি শিখিয়েছো ওকে (চোখ বন্ধ করে বললো)
নাহিল চৌধুরী: কি হয়ছে রে মামনি রোদ এমন রেগে আছে কেনো? আমাকে বল মামনি
আমি: কিছু বলছি না শুধু কেদে যাচ্ছি
রোদ: ও কি বলবে আমি বলছি আজ ভাবলাম ওর তো কোথাও যাওয়া হয়না তাই ওকে নিয়ে একটি ঘুরতে ছেয়েছিলাম ওর ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি একটা ছেলে ওর ওরনা ধরে আছে আর ও
নাহিল চৌধুরী: ব্যাস ( রোদ কে থামিয়ে দিয়ে)
আমি আর কিছু শুনতে চাইনা আমি আমার মামনির কাছ থেকে শুনতে চাই বলতো মামনি কি হয়েছে ( আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই শুধু কেদে যাচ্ছি
রোদ: ও কি বলবে ওর বলার কোনো মুখ আছে যত তাড়াতাড়ি পারো ওকে বিয়ে দিয়ে দাও নাহলে আমাদের মানসম্মান কিছু রাখবে না
আমি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে সোজা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম ওখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এদিকে
নাহিল চৌধুরী: তোমাকে কেউ বলতে বলছে মেয়ে আমার তাই আমি বুঝবো কি করতে হবে কি না আমার মামনি কে আমি খুব ভালো করে চিনি।
রাইমা চৌধুরী: তোর বাবা তো ঠিক বলছে মুন ওমন মেয়ে না যেমন তুই ভাবছিস
রোদ: আমি ওত কিছু বুঝিনা ওকে চোখে চোখে রাখবে ( এটা বলে রোদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো)
নাহিল চৌধুরী: ছেলেটার যে কি হয় বুঝিনা মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার কেনো করে
রাইমা চৌধুরী: ছেলেটা যে খুব ভালোবাসে মুনকে হারাতে চায়না তাই তো এমন করে ও তুমি বুজবা না।
নাহিল চৌধুরী: যাই করুক আমার মামনির যদি কোনো রকম ক্ষতি হয় সেটা আমি মেনে নেবো না ( কথাটা বলে নাহিল চৌধুরী চলে গেলেন)
আর রাইমা চৌধুরী একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কিচেনে চলে গেলেন

এদিকে রুম এ এসে বাথরুম এ শাওয়ার এর নিচে বসে অনবরত কেদেই যাচ্ছে মুন তার যে বাবা মার কথা মনে পড়ছে ।
আজ যদি বাবা মা বেচে থাকতো তো কতোই না ভালো হতো।কেনো ছেড়ে চলে গেলে কেনো তোমাদের সাথে নিয়ে গেলে না। তোমাদের ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয় প্লিজ ফিরে এসো।

এসব ভাবতে ভাবতে চোখটা একদম বুঝে এলো

এদিকে
রোদ রেগে গাড়ি নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় গেলো
রোদ: কেনো মুন কেনো আমায় একটু বোঝো না । শুধু কি আমার রাগটাই দেখলে আমার ভালোবাসা কি কিছুই না তোমার কাছে। জানো তোমায় না খুব ভালোবাসি কিন্তূ সেদিনের কথা এখন ও আমার মনে পড়ে যখন
part_2

যখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে
অতীত
আজ নাহিল চৌধুরী তার পরিবার নিয়ে আমজাদ চৌধুরীর বাড়ি যাচ্ছে(আমজাদ চৌধুরী মুন এর আব্বুর নাম আর আয়েশা বেগম মুন এর আম্মুর নাম)
আমজাদ চৌধুরী আজ খুব খুশি বহুদিন পর তার কলিজার বন্ধুর সাথে দেখা হবে । মুন ৪ বছর এর বাচ্চা মেয়ে খেলা করে বেড়াচ্ছে।
আমজাদ চৌধুরী: কি হলো বেগম সাহেবা সব রেডী তো কোনো কিছুর যেনো কমতি না থাকে আজ আমার বন্ধু আসছে।
আয়েশা বেগম: হ্যা সব ঠিক আছে । ওরা কখন আসবে ফোন দিয়ে…
নাহিল চৌধুরী: আসবে না এসে গেছে ( ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে)
আমজাদ চৌধুরী: ওই তো আরে আসো আসো চৌধুরী বাড়িতে স্বাগতম (বুকে জড়িয়ে ধরে)
নাহিল চৌধুরী: ওই মিয়া চৌধরী কি একা তুই
আমজাদ চৌধুরী: আরে হা আমি তো ভুলেই গেছিলাম …টা ভাবী কেমন আছেন?
রাইমা চৌধুরী: জি ভালো আপনি কেমন আছেন?
আমজাদ চৌধুরী: আলহামদলিল্লাহ ভালো টা এই বুঝি আপনাদের রোদ (রোদের দিকে তাকিয়ে)
নাহিল চৌধুরী: হা এটাই রোদ । যাও বাবা আংকেল এর কাছে যাও
রোদের আমজাদ চৌধুরী কাছে যায় আমজাদ চৌধুরী রোদ কে অনেক আদর করে আর বাড়িটা ঘুরতে বলে। রোদ ও সব টা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
আয়েশা বেগম আর রাইমা চৌধুরী মিলে গল্প করে
আর দুই বন্ধু অনেক পর একসাথে গল্প জুড়ে দেছে
এদিকে রোদ ঘুরতে ঘুরতে একটা ঘরের সামনে গিয়ে দেখে ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো। দেয়ালটা বেবি পিঙ্ক রঙের করা বিছানার পাশে বড়ো বড় টেডিবিয়ার । রোদ ঘর টা দেখছে তখন পিছনে থেকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে খিল খিল করে হেসে ওঠে
রোদ তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে পিঙ্ক কালার এর ড্রেস পড়ে চুল গুলো ছোট ছোট ঝুঁটি করা মুখে হাত দিয়ে হাসছে রোদের খুব রাগ হলো
রোদ: এই মেয়ে কে তুমি আর এভাবে আমায় ভয় দেখলে কেনো যদি আমার কিছু হয়ে যেতো(রাগী ভাব নিয়ে)
মুন: এই তুমি এত ভিত কেনো ( বলে আবার হাসতে লাগলো)
রোদ: কি আমি ভীত তুমি তো আমাকে ভঁয় দেখালে
মুন: তুমি ভয় পেলে কেনো আর এটা তো আমার রুম তুমি কি করছো আমার রুম এ ( ভ্রু কুচকে )
রোদ: আমি তো এমনি দেখছিলাম।আমার নাম রোদ তোমার নাম কি?
মুন: আমার নাম মুন।তুমি আমার সাথে খেলা করবে আমার খেলার কেউ নেই
রোদ: নআয়া আমি খেলবো না তুমি আমায় ভয় দেখিয়েছো
মুন: সরি আমি আর ভয় দেখাবো না প্লিজ আমার সাথে খেলো( কিউট ফেস করে)
রোদের মায়া লাগলো কি মায়া ভরা দেখতে মেয়েটাকে
রোদ: তুমি তো একটা বাচ্চা মেয়ে
মুন: না আমি বাচ্চা না(কোমরে হাত দিয়ে)
রোদ: হা তুমি বাচ্চা
মুন: খেলতে হবে না আমার সাথে ( মুখ ভেংচি কেটে)
রোদ:( হালকা হেসে) আছা খেলবো কিন্ত এখন না পরে
মুন: আচ্ছা তুমি কার সাথে এসেছো
রোদ: আব্বু আম্মুর সাথে ।উপরে এসে বাড়ি টা ঘুরছিলাম
মুন: চলো আমি তোমাকে সব ঘুরিয়ে দেখছি (মুন ওর সব কিছু রোদকে দেখাতে লাগলো আর রোদ ও দেখছে মুন এখে একে সব কিছু দেখাতে লাগলো ওদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হলে গেলো )
কিছুক্ষণ পর ওরা নিচে চলে আসলো
আমজাদ চৌধুরী আর নাহিল চৌধুরী এখন ও গল্প করছে ( পোরানু বন্ধু বলে কথা)
আয়েশা বেগম আর রাইমা চৌধরী ওদের খেতে ডেকে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের যাওয়ার সময়
রোদ: তুমি আমাদের বাড়ি এসো আমার সব প্রিয় জিনিস তোমাকে দেখাবো।
মুন: আব্বু এর সাথে ঘুরে আসবো
রোদ: আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি টাটা
মুন: টাটা
( রোদ যাওয়ার আগে অনেক চকোলেট দিয়ে গেলো)
এভাবে প্রায় মুন আর রোদের দেখা হতো আর ফোন এ তো কথা হতোই রোদ আচতে আসতে মুন এর প্রতি দূর্বল হতে শুরু করে…..
মুন এর আব্বু বিজনেস এর জন্য দেশের বাইরে যাবে কয়েক বছর থাকবে মুন দের যাওয়ার দিন রোদের সে কান্না মুন কে কিছুতেই যেতে দেবেনা ছোটো মুন তো ওতো কিছু বোঝে না রোদ বারবার ওকে যাওয়ার জন্য বারন করছে কিন্ত মুন তো নতুন জায়গায় যাওয়ার জন্য ব্যাকুল রোদের কান্না ও সেদিন দেখে ও দেখেনি আর মুন তো ছোটো বাবা মাকে সারা থাকবে বা কি করে।সেদিন মুন একা যায়নি রোদের ভলোবাসা ও নিয়ে গিয়েছিল।তারপর মুন ওখানে গিয়ে যখন রোদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় রোদ কথা বলতে নারাজ ।মুন বড়ো হয় রোদ ও বড়ো হয় মুন দেশে ফিরে রোদের সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু রোদ ওকে চিনে ও না চিনার ভান করে ।রোদের বয়স্ যখন ২২ আর মুনের বয়শ যখন ১৭ তখন মুনের বাবা মা গাড়িতে আসার সময় অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায় তখন থেকে মুন রোদের বাড়িতে থাকে

বর্তমান
রোদ গাড়ির উপর বসে কথা গুলো ভাবছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
রোদের ধ্যান ভেঙ্গে ফোনের রিংটোন এর চোখ টা মুছে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে বাড়ি থেকে ফোন করছে নিজেকে ঠিক করে ফোনটা রিসিভ করে
রোদ: হ্যালো…
রাইমা চৌধুরী: রোদ তুই কোথায় এদিকে মুন তো সাওয়ার এর নিচে ভিজে শরীর একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়
রোদ: whaaat?? ওকে আমি এক্ষুনি বাড়ি আসছি (বলে ফোন টা কেটে দিল)
রোদ: মুন তুমি এটা কী করলে কেনো আমি নাহয় একটু বেশি বলেছিলাম তাই বলে কি তুমি এমন করবেন। যার জন্য তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে হলো তাকে তো আমি ছাড়বো না (কথাটা বলে কাকে যেনো ফোন করলো)
রোদ: বুঝতে পারছো কি করতে হবে
ওপাশ থেকে:………..
রোদ: গুড কাজ টা যেনো হয়ে যায় ।
ওপাশ থেকে…….
রোদ ফোনটা কেটে দিয়ে একটা রহিষজনিত হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে drive করতে লাগলো।
ওদিকে
মুন কে অনেক ডাকাডাকির পর যখন দরজা খুললো না তখন সা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে দেখে মুন এর এই অবস্থা রাইমা চৌধুরী উনার স্বামী মিলে ডক্টর ডাকেন
ডক্টর: মেয়েটা এভাবে এতো শীতে ভিজলো কেনো ?
রাইমা চৌধুরী: জানিনা ডক্টর কখনো এমন করে না
ডক্টর: আমি কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি আর রাতে কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন
নাহিল চৌধুরী: ওকে ডক্টর আমার বডিগার্ড আপনাকে পৌঁছে দেবে জন( জন বডিগার্ড এর নাম)
ডক্টর: ওকে mr. চৌধরী
রোদ এসে দেখে মুন বিছানায় শুয়ে আছে ঠোট ফাকাসে হয়ে গেছে মুখে সেই উজ্জ্বলতা নেই
রোদ: মুন কেমন আছে ডক্টর কি বলছে?( ব্যাস্ত হয়)
রাইমা চৌধুরী: মুন ঠিক আছে ডক্টর ওষুধ দেছে এখন ঘুমাচ্ছে দেখ রোদ যা হয়চে বাদ দে মেয়েটকে আর কষ্ট দিস না এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছে
রোদ: হুমমম তোমরা যাও আমি ওর সাথে আছি
রুমে থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো।রোদ ধির পায়ে মুন এর দিকে যাচ্ছে মুন এর পাশে বসে মুন এর কপালে নিজের গভীর ভাবে ছুয়িয়ে দিলো। রোদ দেখলো মুন এর খুব শীত লাগছে কাবার্ড থেকে কম্বল বের করে মুন এর গায়ে দিয়ে ওর পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো
রোদ: কেনো বোঝ না তোমায় যে খুব ভালোবাসি আমি তো তোমাকে ছেড়ে যায়নি তুমি গিয়েছিলে আমাকে ছেড়ে খুব কষ্ট দিছাও আমাকে এখন থেকে তোমাকে ও কষ্ট পেতে হবে তবে হ্যা তোমার কষ্ট টা শুধু আমি দেবো রেডী হয়ে নাও আমার love torture সহ্য করার জন্য (কথাটা বলে রোদ রহস্য জনিত হাসি দিয়ে মুন এর দিকে তাকিয়ে থাকলো)

চলবে….

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৪/শেষ পর্ব

আলো বাসায় প্রবেশ করতেই খানিকটা বিচলিত হয়ে গেল। কারণ বাসাটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। চারপাশে কিছু দেখতে পারছে না সে। আজকাল অন্ধকার দেখলে আলোর গা গুলায়। বুকের ভেতরটা শিউরে উঠে। ভয় ভয় গলায় আলো তানভীরকে উদ্দেশ্য করে বলল

– এত অন্ধকার কেন চারপাশ?

কথাটা আলো বলে উঠতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। পার্টি স্প্রে গুলো সাদা ধোঁয়ার মতো চারদিকে উড়তে লাগল। আলো বুঝে উঠতে পারছে না কী হচ্ছে। এর আগেই লক্ষ্য করল একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বাংলাদেশী না। কিন্তু মেয়েটি কে? আলো ভাবতে ভাবতেই মেয়েটি আলোর কাছে এসে ঠিক সামনে দাঁড়াল। অস্পষ্ট বাংলায় বলল

– কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা?

আলো চুপ হয়ে রইল। তার বোধগম্য হচ্ছে না কী ঘটছে। তানভীরের দিকে সে তাকালো। তানভীর তখন মৃদু হাসছিল। কৌতুহল চোখে জাহানারা সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

– আন্টি মেয়েটি কে? আর কিসের সারপ্রাইজ কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

জাহানারা সুফিয়া হাসতে হাসতে বলল

– এ হলো আমার বড় ছেলে সানীর বউ। সে বাংলাদেশী না। তার নাম এলিজাবেথ। তবে আমি তাকে নাম দিয়েছি সিথুন। আর তিনমাস আগে সানী বিয়ে করে সব অভিমানের পালা শেষ করে বাসায় ফিরে। তুমি তো তখন জেলে ছিলে তাই জানো না কিছু। আর এত পথ পেরিয়ে অন্ধকারে এক চিলতে আলোর মুখ দেখেছো তাই তোমাকে সিথুন সারপ্রাইজ দিয়েছে। মজার ব্যপার হচ্ছে সে তোমার জন্য একটা কেকও বানিয়েছি। আজকে আমরা সে কেক কেটে সিলেব্রেট করব।

জাহানারা সুফিয়ার কথা শুনে আলো খুশিতে স্তব্ধ হয়ে গেল। এত ভালোবাসা সে পাবে কখনও বুঝতে পারে নি। তার মনটা খুশিতে নাচতে লাগল। খুশির তাড়নায় মুখ দিয়ে কোনো কথায় যেন তার বের হচ্ছে না। শুধু চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এর মধ্যেই একজন বলে উঠল

– এটাই তাহলে সে আলো? যার কথা এ তিনমাসে মা আর তানভীরের মুখে এত শুনেছি।

আলো কন্ঠটা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখল একজন সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। আলোর বুঝতে বাকি রইল না উনিই হলেন তানভীরের বড় ভাই সানী। আলো সানীর দিকে তাকিয়ে নম্র গলায় বলল

– ভাইয়া কেমন আছেন?

– হ্যাঁ ভালো আছি। কিন্তু তুমি কী আমাকে চিনো?

– চিনি না তবে তানভীর ভাইয়া আর আন্টির মুখে এর আগে আপনার কথা শুনে আন্দাজ করেছি আপনি সানী ভাইয়া৷ আর সিথুন ভাবীকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।

আলোর কথা শুনে সানী মুচকি হাসলো সে সাথে সিথুনও।

জাহানরা সুফিয়া তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– যাও কেকটা নিয়ে এসো। আলো আর তুমি এক সাথে কেক কাটবে কারণ তুমি আলোকে এ বাসায় নিয়ে এসেছিলে।

পরক্ষণেই সিথুন আর সানীর দিকে তাকিয়ে বলল

– তোমরাও আলোর পাশে বসো।

কথাটা বলেই জাহানারা সুফিয়া একজন মধ্য বয়স্ক লোককে ইশারা করে বলল

– আলো উনি হলেন তানভীরের চাচা।

আলো তানভীরের চাচাকে সালাম দিল।।তানভীরের চাচা সালামের জবাবা দিয়ে আলোর পাশে এসে দাঁড়াল। মাথায় হাত বুলিয়ে দোআ করে দিল। জাহনারা সুফিয়া তখন হালকা গলায় বলল

– বাসায় একটা বিশেষ অনুষ্ঠান আছে তো তাই তানভীরের চাচা এসেছে। আগে কেকটা কাটো তারপর বলব কিসের অনুষ্ঠান।

জাহানারা সুফিয়ার কথাটা শুনে আলোর তর সইছে না। আলো ভাবতে লাগল এ বাসায় বিশেষ অনুষ্ঠান তানভীরের বিয়ে ছাড়া আর কী হতে পারে। কথাটা ভাবতেই আলোর বুকে তানভীরকে হারানোর বিয়োগ ব্যথা অনুভব করল। আলো বুঝতে পারলো এ কয়দিনে তানভীরকে সে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে। তাহলে কী তানভীরকে সে হারিয়ে ফেলবে? আলো নিজেকে আর সামলাতে পারল না। অস্থির গলায় বলল

– কী অনুষ্ঠান এখনি বলুন। তারপর নাহয় কেক কাটা যাবে।

জাহানারা সুফিয়া হাসতে হাসতে বলল

– তানভীরের বিয়ে।

কথাটা শুনেই আলোর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা টা ইতোমধ্যে টের পেল। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল

– কার সাথে?

আলোর প্রশ্নটা যেন সবাই এড়িয়ে গেল। জাহানারা সুফিয়া তাড়াহুড়ো করে বলল

– কেকটা কাটো এবার। এ সময় রাবু আবার কোথায় গেল। রাবু…রাবু…রাবু..

– জ্বি খালাম্মা।

– কাজের সময় কোথায় থাকো তুমি? তাড়াতাড়ি এসো। আর আসার সময় একটা ছুরি নিয়ে এসো। কেক কাটতে হবে।

– খালাম্মা আনতেছি।

বলেই রাবু দৌঁড়ে ছুরি নিয়ে আসলো। তানভীরের বিয়ের ব্যপার নিয়ে আলোর কষ্টটা প্রখর হলেও সে কষ্টটাকে হাসির আড়ালে চাপা দিয়ে কেকটা কাটলো। কেক কাটা শেষে সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিল। আলো আলোর রুমে গিয়ে খাটে হেলান দিল। তানভীরের বিয়ে কার সাথে সেটাই সে ভাবতে লাগল। আজকে আলো সব পেলেও তার কাছে মনে হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হারাতে যাচ্ছে। এমন সময় তানভীর কাশি দিয়ে আলোর রুমে প্রবেশ করলো। আলো কাশির আওয়াজ পেয়ে নড়েচড়ে বসে তানভীরের দিকে তাকাল। তানভীর হালকা গলায় আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– মুখটা এত ফ্যাকাশে কেন?, আর মন মরা হয়ে বসে আছো কেন? মন খারাপ নাকি?

আলো মাথা নেড়ে বলল

– না। আচ্ছা আপনার যে মেয়ের সাথে বিয়ে সে মেয়ের নাম কী?

তানভীর লাজুক গলায় বলল

– মিশকাত।

নামটা শুনতেই আলোর আশার আলো ধপাশ করে নিভে গেল। এতক্ষণ পর্যন্ত আলো আশা করছিল যে তানভীরকে নিয়ে হইতো একটা সারপ্রাইজ পাবে। তবে তানভীরের মুখে পাত্রীর নাম শুনার পর সে আশাটা থমকে গেল। কষ্টটা প্রখর হলো। তানভীরকে যে সে এত ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারে নি। তবে নিয়তি মেনে নেওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। মুখে যেন তার কষ্টের অন্ধকার নেমে আসলো। ভাঙ্গা গলায় বলল

– অভিনন্দন। আচ্ছা ভাবীর একটা ছবি কী দেখতে পারি?

– কেন দেখতে পারবে না। অবশ্যই দেখতে পারবে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায়।

বলেই পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা বের করে। মোবাইলটা চাপতে চাপতে বলল

– কোথায় যেন ছবিটা রেখেছিলাম। হ্যাঁ মনে পড়েছে। ওর জন্য মাই হার্ট লিখে একটা এলবাম বানিয়েছিলাম সেখানে রেখেছি। সত্যি বলতে কী মিশকাতকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে সবটা ভালোবাসা উজার করে দিলেও যেন মনে হবে ভালোবাসা দিতে পারে নি। বিশেষ ব্যপার হচ্ছে মিশকাতকে আমাদের পরিবারের সবাই খুব পছন্দ করেছে।

কথাগুলো তানভীর বলেই যেতে লাগল। আর আলোর চোখের কোণে কষ্টের পানি জমা হলো। তানভীরের প্রতি তার অনেক অভিমান জমেছে তবে সেটা প্রকাশ করার মতো অধিকার তার নেই। আলোর খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিল। এমন সময় তানভীর মোবাইলটা সামনে দিয়ে বলল

– এ হলো আমার হবু বউ।

আলো ছবিটা দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল।কারণ এটা তো আলোর ছবি। বিস্মিত গলায় তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনি হয়তো কোথাও ভুল করছেন। এটা তো আমার ছবি। আমার নাম তো মিশকাত না।

তানভীর এবার অট্ট হাসি দিয়ে বলল

– ইচ্ছা করেই নামটা ভুল বলেছিলাম কারণ তোমার এক্সপ্রেশন দেখার জন্য। তুমি আমাকে ভালোবাসো কী না সেটা বুঝার জন্য। তোমার ফ্যাকশে মুখ দেখে আমি নিশ্চিত হলাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো। আলো আমি তোমায় বড্ড ভালোবাসি। কালকে তোমার সাথে এনগেজমেন্টের ব্যবস্থা করব। বিয়ে নিয়ে হয়তো একটু ঝামেলা হতে পারে কারণ তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক না। আচ্ছা তুমি রাজি তো আমাকে বিয়ে করতে?

তানভীরের কথা শুনে আলোর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল আর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। এ যেন আলো ছায়ার খেলা। মৃদু গলায় আলো বলে উঠল

– আমিও আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।

আলোর কথাটা শুনে তানভীর আলোকে জড়িয়ে ধরে পরক্ষণেই ছেড়ে দিয়ে বলল

– আচ্ছা এখন গেলাম। অনেক কাজ বাকি। তুমি বিশ্রাম নাও কেমন।

আলো মাথা নাড়ল। তানভীর আলোর রুম থেকে বের হলো। আলোর শরীরটা ক্লান্ত। ঘুমে চোখটা এখন বুজে আসছে। তাই দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে গেল।

রাত ঠিক তিনটা একটা বিকট আওয়াজে সবার ঘুম ভাঙ্গলো। আওয়াজটা পেয়ে সবাই তাড়াহুড়ো করে উঠে ঘরের আলো জ্বালিয়ে ঘর থেকে বের হলো। লক্ষ্য করলো আওয়াজটা আলোর রুম থেকে আসছে। সবাই আলোর রুমে গিয়ে চমকে গেল। লক্ষ্য করল তানভীরের চাচা আলোর রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর আলো ছুরি নিয়ে মাথা নীচু করে বসে আছে। আলো জোরে জোরে দম নিচ্ছে। আলোকে এ অবস্থায় জাহানারা সুফিয়া দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠল

– তুমি কী ভাইজানকে খুন করেছো? তোমার জন্য আমরা সবাই এত কিছু করলাম আর তুমি ভাইজানকে মেরে দিলে? কীভাবে পারলে এমন করতে?

কথাটা শুনেই আলোও চেঁচিয়ে বলল

– হ্যাঁ আমি চাচাকে খুন করেছি। কারণ অমানুষগুলো মানুষের মুখোশ পরে থাকে।এদেরকে চেনা বড় কঠিন। রাত তখন আড়াইটা আমি ক্লান্ত থাকায় দরজা খুলেই ঘুমিয়ে পড়ি।।হুট করে মনে হলো কেউ একজন আমার হাত চেপে জড়িয়ে ধরেছে। আমি স্পর্শ পেয়েই উঠে দেখি চাচা।চাচাকে দেখে চেচাঁতে নিলে চাচা আমার মুখটা চেপে ধরে বলল

– আরে মা চেঁচিও না। একটু আদর করে চলে যাব। তোমাকে দেখে সামলাতে পারিনি নিজেকে। রুশির মতো একদম তুমি। রুশিকে যেভাবে আদর করেছি ঠিক সেভাবে করব। আর কাউকে কিছু বলো না।

বলেই আমাকে ঝাঁপটে ধরল। আমি ছুটাবার অনেক চেষ্টা করেও যখন পারছিলাম তখন কেক কাটার সে ছুরিটা হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে নিয়ে আঘাত করি উনাকে। সেদিন রুশি নিজের কাছে হেরে গেলেও আমাকে আমি হারতে দেইনি। তাই মানুষের মুখোশ পড়া অমানুষকে খুন করলাম। আমাকে পুলিশে দিতে চাইলে দেন। আমার কোনো আফসোস নাই। অন্তত বলতে তো পারব আমি এ অমানুষকে শেষ করতে পেরেছি।

আলোর কথা শুনে সবাই চুপ। তানভীরের চাচা এমন সেটা যেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। আবারও পুলিশকে খবর দেওয়া হলো। আলোকে ধরে নেওয়া হলো। পুলিশ রুশির বিষয়টা তদন্ত করে তানভীরের চাচার ডি এন এ টেস্ট করে নিশ্চিত করে যে রুশির পেটে তানভীরের চাচার সন্তানেই ছিল। অথচ সে সময়টায় তানভীরের চাচা সন্দেহের তালিকার বাইরে ছিল। তানভীরের পরিবার বড় একটা ধাক্কা খেল। সে সাথে রুশিকে নিয়ে হাজারও প্রশ্নের উত্তর মিললো। এদিকে আদালত আলোকে আইন হাতে তুলে নেওয়ার জন্য দু বছরের কারাদন্ড দিল।

তানভীর আজকে আলোকে দেখতে গেল। সেখানে আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– মারতে গেলে কেন? জোরে চিৎকার দিলে তো আমারা বাঁচাতে পারতাম তোমাকে। তোমারও সাজা হত না। তোমাকে ছাড়া থাকব কী করে?

আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– এছাড়া উপায় ছিল না। তুমি ভালো থেকো। আর অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী থেকো। আমার মতো খুনীর জন্য আর আপেক্ষা করো না। রুশিকে নিয়ে যে প্রশ্ন জমেছিল অন্তত সে প্রশ্নের উত্তর তো পেয়ছো।

– আমি তোমার জন্য জনম জনম অপেক্ষা করতে রাজি। এ তো মাত্র দুই বছর। আমি এ খুনীটাকেই চাই আলো। ভালোবাসি তোমায়।

আলো মৃদু গলায় বলল

– বাসায় যাও। আমি আসব আবার ফিরে তোমার কাছে অন্ধকারে এক চিলতে আলো খুঁজতে।

সমাপ্ত।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১৩

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা।
#পর্ব- ১৩

তাহলে কী আলো মারা গেল?? আলোকে ধরে হাসপতালে নেওয়া হলো।

এদিকে আজকে কেন জানি আলোর জন্য তানভীরের মনটা বেশি পুড়তে লাগল। চোখের কোণে কষ্টের লোনা জল জমতে লাগল। জমে থাকা কষ্টগুলো বাড়তে লাগল। ছুটে গিয়ে আলোকে দেখতে ইচ্ছা করল তার। তবে দেখার উপায় নেই। হাত পা যেন তার বাঁধা। নিজেকে বড্ড কাপুরুষ মনে হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে সে কিছুই করতে পারছে না।

আর জাহানারা সুফিয়া আলোকে পুলিশে দিয়ে দমে যায়নি। তিনি ইতোঃমধ্যে সকল প্রমাণ জোগাড় করেছেন। একজন এডভোকেটের সাথে কথা বলেছেন। যদিও সব প্রমাণ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল আরও কিছুদিন পর কিন্তু আজকে আলোর অবস্থা শুনে তিনি তাড়াহুড়ো করে এডভোকেট সাহেরা খান কে নিয়ে চলে গেলেন সেখানে। সেখানে গিয়ে এডভোকেট সাহেরা খান প্রথমেই অভিযোগ করেন যে একটি ১৪ বছরের মেয়ে যদি কোনো অন্যায় করে সেটা কিশোরী আইনে পড়ে। তাহলে তাকে রিমান্ডে কেন দেওয়া হলো। সাহেরা খানের এমন অভিযোগে জানানো হয় যেহেতু আলো বিবাহিত ছিল সেহেতু তারা বয়স দিয়েছিল ১৮ বছরের বেশি। সে অনুযায়ী তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক ধরা হয়। কিন্তু সাহেরা খান পাল্টা অভিযোগ দায়ের করল। একটি নিরাপরাদ মেয়েকে বিনা কারণে টর্চার করে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়ার জন্য।

আপাতত বিষয়টা পর্যবেক্ষণ চলছে। আর জাহানারা সুফিয়া অনুমতি নিয়ে আলোকে দেখতে গেল। হাসপাতালে আলোর নিথর দেহটা দেখে যেন তার মরে যাওয়া তিন বছরের মেয়েটার মুখটা চোখে ভেসে উঠল। জাহানারা সুফিয়ার প্রথম সন্তান ছেলে ছিল না। প্রথম সন্তান ছিল একটা মেয়ে। তবে রোড এক্সিডেন্টে মাত্র তিন বছর বয়সে মেয়েটা মরে যায়। আজকে আলোকে দেখে তার মেয়ে সায়রার কথা বেশ মনে পড়ছে । আলোর ঠিক পাশে গিয়ে বসলো। এর মধ্যে একজন ডাক্তার আসলো। জাহানারা সুফিয়া ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল

– আলোর অবস্থা কেমন আছে? আর কী জন্য এমন হয়েছিল?

ডাক্তার হালকা গলায় জবাব দিল

– রোগীর অবস্থা ভালো। তবে রেগীর বিষয়ে পারমিশন ছাড়া কাউকে কিছু বলা যাবে না।

এর মধ্যেই জাহানারা সুফিয়ার ডাক পড়ল। মাত্র ৫ মিনিটের জন্য তাকে দেখতে দেওয়া হয়েছিল। জাহানার সুফিয়া শেষ বার আলোর মুখের দিকে তাকালো। আলোর অসহায় মুখটা তার মনটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করছে। নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত করে কেবিন থেকে উনি বের হলেন।

বাসায় ফিরলেন দুপুর ২ টায়। সাধারণত এ সময়টাতে উনাকে বাসায় পাওয়া যায় না। কয়েক বছর পর উনাকে বাসায় আসতে দেখে তানভীরও খানিকটা বিস্মিত হলো। সে বিস্মিত গলায় মাকে বলল

– মা তুমি এই সময় বাসায় কেন? শরীর খারাপ?

– তেমন কোনো কারণ নেই। আলো অসুস্থ আলোকে দেখতে গেছিলাম। আলোকে দেখা শেষে সরাসরি বাসায় চলে আসলাম।

আলোর কথা বলতেই তানভীরের বুকে কম্পন দিল। মায়ের চোখের দিকে নিজের অশ্রুসিক্ত চোখটা রেখে ভাঙ্গা গলায় বলল

– আলোর কী অবস্থা এখন? আর আলোকে কী দেখতে যেতে পারব এখন৷ মা সত্যিই বিশ্বাস করো আলোকে আমার কাছে মিথ্যাবাদী খুনী মনে হয়নি। শুধু শুধু আলো কষ্ট পাচ্ছে ঐ অন্ধকার রুমে। ওর জীবনের আলোটা নিভে যাবে মা কিছু উপায় না বের করলে।

– তোমরা বাচ্চারা সবসময় অস্থির হয়ে একেকটা কাজ করো বলেই জীবনে অনেক ভুল করে বসো। আবেগ দিয়ে সবসময় সব কাজ হয় না। একটু বিবেক একটু ধৈর্য রাখা প্রয়োজন। আবেগী হলে জীবনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই পাবে না। আলোর ব্যবস্থা করে এসেছি৷ সব কিছু প্রমাণ জোগার করা হয়েছে। এখন বাকিটা আদালত সিদ্ধান্ত নিবে। সেদিন যদি আলোকে পুলিশে না দিতাম তাহলে এ মিথ্যা জালে আলোও ফেঁসে যেত সে সাথে আমরাও। এখন যা হবে ভালো হবে। সময় দরকার।

মায়ের কথা শুনে তানভীরের মুখটা একটু প্রশস্ত হলো। আলোর জীবনে আবার সব ঠিক হতে চলল। শান্তি লাগছে তার। কেন জানি না আলো মেয়েটাকে সে চরম ভাবে এ কয়দিনে অনুভব করেছে। হয়তো একেই বলে ভালোবাসা।

“ভালোবাসতে যুগ যুগান্তের পরিচয়ের দরকার পড়ে না। মাঝে মাঝে খনিকের দেখাতেও ভালোবাসার মাত্রা প্রখর হয়ে যায়।”

তানভীর মৃদু গলায় বলল

– সবকিছু যেন ভালোভাবে শেষ হয়।

বলেই নিজের রুমের দিকে এগুতে লাগল। জাহানারা সুফিয়া তানভীরকে পেছন ডেকে বলল

– আরেকটা সুসংবাদ আছে।

তানভীর পেছন ফেরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল

– কী সুসংবাদ?

– তোমার বড় ভাই সানী কল দিয়েছিল।কিছুদিনের মধ্যে সে বাড়ি আসবে। হয়তো তার ভেতরে জমে থাকা সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে৷ যেহেতু সে আসবে তাই তার পছন্দের সব বিষয়গুলো বাড়িতে এনে রাখো। ওর রুমটাও পরিপাটি করে রাখো। ঠিক আছে।

সানী আসছে শুনে তানভীরের মনটা আরও বেশি আনন্দিত হয়ে গেল। সানীর সাথে দেখা নেই সেই কত বছর যাবত।একসাথে দুটো ভালো খবর তার মনটাকে স্বস্তি দিল।

অপরদিকে আলোর অবস্থার উন্নতি ঘটল।রিমান্ড স্থগিত করা হলো। সে সাথে আলোর বিষয়টা আদালত সমস্ত প্রামাণ দেখার পর পুনরায় তদন্ত করতে বলা হয়েছে। একই সাথে নীলার মামাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়ার রায় দেওয়া হয়েছে।

নীলার মামাকে গ্রেফতার করা হলো রিমান্ডেও নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সমস্ত কিছু স্বীকার করেছে।নীলার মা, বাবা বিষয়টা জানার পর ভেঙ্গে পড়েছে। নীলার জীবনের পরিণতি এমন হবে তারা যেন এটা মানতেই পারছে না। তবে পরবর্তীতে নীলাকে কারা ধর্ষণ করেছে সে বিষয়টা এখনও ধোঁয়াশা আর আলোর মাকে কারা খুন করেছে সেটাও এখনও জানা সম্ভব হয়নি। নীলা আর আলোর মায়ের খুনের সময় আলো তানভীরের বাসায় ছিল সেটার প্রমাণ পেশ করার পর আলোকে দুটো খুনের থেকে পরিত্রাণ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে আলোর স্বামী আলোকে মাত্র বারো বছর বয়সে বিয়ে করেছে অর্থাৎ সেটা বাল্য বিবাহ গন্য হওয়ায় সে বিয়েকে বিয়ে বলে বিবেচনা করা হয়নি। দিনের পর দিন একটা কিশোরী মেয়েকে সে লোকটা ধর্ষণ করেছে। আর আলো নিজেকে বাঁচাতে হত্যার মতো জঘন্য কাজটা করতে বাধ্য হয়েছে।

মামলাটা আদালতে দীর্ঘ চারমাস চলার পর এসব প্রমাণিত হয়। আর সে সাথে আলোর মায়ের খুনী এবং নীলার খুনীকে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর আলোকে সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুক্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ চার মাস কঠোর লড়াইয়ের পর আজকে আলোর মুক্তি। আজকে আলো অন্ধকার জেল থেকে বের হয়ে আলোর মুখ দেখবে। জীবনের এক চিলতে আলোর খুঁজ হয়তো সে পেয়ে যাবে এবার।

আলোর জীবনের এ আলোর রেখাটা দেখা সম্ভব হয়েছে এডভোকেট সাহেরা খান,জাহানারা সুফিয়া আর তানভীরের জন্য। অন্ধকার কারাগার থেকে বের হয়ে আলো প্রথমেই জাহানারা সুফিয়ার কাছে এসে কেঁদে দিল। জাহানারা সুফিয়া আলোকে বুকে জড়িয়ে নিল। নিজের মৃত মেয়েকে যেন সে আবার ফিরে পেয়েছে। আর তানভীর পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের আর আলোর ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো অবলোকন করছিল। আলো এবার তানভীরের দিকে তাকিয়ে তার চোখে পুনরায় আটকে গেল। সত্যিই আলো সেদিন তানভীরের চোখ চিনতে ভুল করে নি। এ নিষ্পাপ চোখের চাহনিতে আলো ডুবে গেল। আর তানভীর সে তো আলোর চাহনিতে নিজেকে যেন বিলিয়ে দিল।জাহানারা সুফিয়া আলোকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল

-কী ব্যপার চুপ কেন?

আলো তানভীরের চোখ থেকে চোখটা সরিয়ে নিয়ে বলল

– না কিছু না আন্টি।

জাহানারা সুফিয়া পাশে দাঁড়ানো সাহেরা খানকে ইশারা দিয়ে বলল

– তোমার জন্য দীর্ঘ চার মাস উনি পরিশ্রম করেছেন। উনাকে কিছু বলো।

আলো সাহেরা খানের পাশে গিয়ে মৃদু গলায় বলল

– এ ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমাকে ভালোবেসে এটুকু সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।

সাহেরা খান আলোর কথা শুনে হালকা হেসে বলল

– আমার এতে কোনো ক্রেডিট নেই। সব ক্রেডিট মিসেস জাহানারা সুফিয়া মেডাম আর তানভীরের। তারা তোমার পাশে ছিল। হয়তো তাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই তোমার তবে যে সম্পর্ক তৈরী হয়েছে সেটা আত্মার সম্পর্ক। তাদেরকে সম্মান করো কেমন। আবার দেখা হবে। ভালে থেকো।

বলেই এডভোকেট সাহেরা খান চলে গেলেন। তানভীর আর জাহানারা সুফিয়া আলোকে নিয়ে বাসায় আসলো।

আলো বাসায় প্রবেশ করতেই খানিকটা বিচলিত হলো। কারণ

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১২

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১২

তানভীরের দিকে জাহানার সুফিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর কিছুটা কঠোর গলায় বলল

– এভাবে সব লুকানো তোমার উচিত হয়নি।এর আগে এসব বিষয় নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে সেটা তুমি নিজেও জানো।তাহলে এ কাজ কেন করলে?

জাহানারা সুফিয়ার কথায় তানভীর নিশ্চুপ। কোনোরূপ উত্তর সে দিচ্ছে না।জাহানারা সুফিয়া তানভীরের উত্তরের তোয়াক্কা না করেই শায়ানের দিকে এগুতে লাগল।শায়ানের ঠিক কাছে গিয়ে বলল

– বোন আছে বাসায়?

শায়ান ভয়ার্ত গলায় উত্তর দিল

– হ্যাঁ।

জাহানারা সুফিয়া কথাটা শুনে শায়ানের গালে জোরে কষিয়ে একটা থাপ্পর দিয়ে বলল

– তোমার বোনের সাথে তানভীর এমন করলে কেমন লাগত? এত বেহায়া নির্লজ্জ হতে বিবেকে বাঁধল না।ঘরে তোমার মাকে দেখো না? নিজের বোন মায়ের সাথে এমন হলে কী করতে। বেয়াদব ছেলে নিজেকে শুধরাও। চাইলেই তোমাকে পুলিশে দিতে পারতাম। তবে তোমাকে কিছু না করে ছেড়ে দিলাম। একবার শুধরনোর সুযোগ দিলাম। আমার চোখের সামনে থেকে যাও।আর কোনোদিন যেন তোমাকে আমার সামনে না দেখি।আর তোমার পরিবারকে এ বিষয়ে আমি অবগত করব।যাতে করে তারা শাসন করতে পারে।

শায়ান ভয়ার্ত গলায় বলল

– আন্টি বাবা, মাকে বলবেন না দয়াকরে। আমি ভুল শুধরে নিব।

– আমি কী করব নাকি করব না সেটার পারমিশন তোমার কাছ থেকে নিব না।সুতরাং তুমি এখন যেতে পারো।নাহয় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করব।

শায়ান আর কোনো কথা বলল না।চুপচাপ মাথা নীচু করে যেতে নিল। এমন সময় জাহানারা সুফিয়া তানভীরের পিছু ডাকল। শায়ান ডাকে সাড়া দিয়ে উনার দিকে তাকাল। উনি শায়ানকে কঠোর গলায় বলল

– আলোর পায়ে ধরে মাফ চেয়ে তারপর যাও। নাহয় পুলিশল দিব তোমায়।

শায়ান উনার কথায় ভয় পেয়ে আলোর পায়ের উপর পড়ে বলল

– আমাকে ক্ষমা করে দিন।এমন করাটা উচিত হয়নি। আপনি আমার বোনের মতো।

আলো কোনো কথা বলল না।পা টা ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানার উপর উঠে গেল। আর শায়ান কোনো কিছু না বলে মাথা নীচু করে চলে গেল।এদিকে তানভীর বুঝছে না কী করবে। জাহানারা সুফিয়া তানভীরের দিকে এবার তাকিয়ে বলল

– আমাকে বলো কেন এমন মিথ্যা বললে? ফাবিহার ঘটনার পর, রুশির ঘটনার পরও কী তোমার টনক নড়ে নি।তাহলে এমনটা কেন করলে? আমার কাছে কেন লুকালে বলো?

– মা আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি বিষয়টা কীভাবে নাও তাই। আমাকে ক্ষমা করে দাও।ভুলটা আমার তবে কারও বিপদ দেখলে ভালো লাগে না । মনুষ্যত্ব বলি দিয়ে বিনা সাহায্যে থাকতে পারি না।

– আলো কে? আলোর পরিচয় দাও।সমস্ত কিছু আমাকে খুলে বলো।

তারপর তানভীর আলোর সব ঘটনা তার মাকে বলল। জাহানারা সুফিয়ার নরম মনটা বিগলিত হলেও সে নিজেকে শক্ত করে জবাব দিল

– এখন পুলিশকে বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আগে পুলিশকে সব বলতে হবে।তারপর আলোর বিষয়টা ভালো করে জানতে হবে সে সঠিক বলেছে কী না। যদি সে সঠিক বলে থাকে তাহলে তাকে সাহায্য করব। আর মিথ্যা বললে তো জেলে পঁচে মরবে। তবে এখন পুলিশের কাছে সব বলতে হবে।নাহয় হিতে বিপরীত হবে। সবাই ভাববে এসব সত্যি আর এসবের সাথে আমরা জড়িত।এর আগের বার রুশির ব্যাপারটা নিয়ে কী হয়েছিল তো দেখেছিলে তো।এবার আর কোনো ভুল পদক্ষেপ আমি নিতে চাই না।

– কিন্তু মা আলোর তো দোষ নেই। কেন সে শাস্তি পাবে।

– দোষ না করলে সে মুক্তি পাবে। আমি প্রমাণ জোগার করব। তবে এখন তাকে পুলিশে দিতে হবে এছাড়া উপায় নেই।

বলেই আলোর কাছে গেল জাহানারা সুফিয়া। আলোর হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। যাবার বেলায় আলো তার পলকহীন ভাবে তাকানো চোখটা দিয়ে তানভীরের দিকে তাকালো।তানভীর শুধু নীরব দর্শকদের মতো দেখতে লাগল। নিজেকে সে সামলাতে পারছিল না।তবুও সামলে নিল।কারণ এখন চুপ থেকে দাঁত কামড়ি দিয়ে থাকা ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। জাহানারা সুফিয়া থানায় নিয়ে আলোর সব ঘটনা বলল। পুলিশ আলোকে আটক করে নিল।আর জাহানারা সুফিয়াকে বলল

– আমরা বিষয়টা তদন্ত করছি।সত্যি যেটা সেটাই বের করব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

জাহানারা সুফিয়া আর কোনো জবাব দিল না। চুপচাপ উঠে চলে গেল। তার মাথায় কী চলছে সেটা বুঝার উপায় নেই। এদিকে তানভীর চুপ হয়ে বসে আছে। শায়ান যে এমন স্বভাবের সেটা সে মানতে পারছে না
আর আলোর জীবনে সে বলেছিল অন্ধকার নামতে দিবে না আজকে সেই কাজটায় হলো। নিজেকে বেশ ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে। তানভীরের কাছে যদি একটা আলাদিনের চেরাগ থাকত তাহলে হয়তো সে দৈত্যের কাছে আলোর মুক্তি চাইতো। কিন্তু রূপকথার সে আলাদীনের প্রদীপ তো বাস্তবে আসবে না।

এদিকে আলোকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলা টা কোর্ট পর্যন্ত চলে গেছে। নিজের সৎ মা,নীলা আর নিজের স্বামীকে হত্যার দায় চাইলেও সে এড়াতে পারছে না।যদিও সে নিজের স্বামীর খুন করেছিল পরিস্থিতির শিকার হয়ে আর বাকিগুলো কে করেছে জানে না।তবে দোষ তার ঘাড়ে।জেলের অন্ধকার রুমে বসে চোখ বন্ধ করে চোখের জল ফেলছে। দুবেলা শুকনো রুটি জুটছে। সে সাথে বকা তো আছে। আলোর এক চিলতে আলোর আশাটা নিভে গেল ধুম করে। জেলে বসে নিজের জীবনের সব ইতিবাচক আশা গুলো মাটিচাপা দিয়ে দিল। জেলের অন্ধকার গলিতে পার করলো তিনদিন। কোর্ট ছয়দিনের রিমান্ড মন্জুর করেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

আলোকে নিয়ে গেল জিজ্ঞাসা বাদের জন্য। আলোর সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে আলোকে মৃদু গলায় একজন মহিলা বললেন

– বলেন খুন গুলো কেন করেছেন?

আলো মহিলাটাকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলল।তবে মহিলাটা নীলা আর আলোর মায়ের খুনের ব্যপারে কে খুন করেছে স্বীকার করছিল না বলে একের পর এক শারিরীক আঘাত করতে লাগল। আর জিজ্ঞেস করতে লাগল বাকি খুনগুলো কেন করেছে আর তার সাথে কারা জড়িত।আলোর উত্তর প্রতিবারেই এক। মাইরের আঘাতে আলোর ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। সারা শরীর টিলার মতো উঁচু নীচু হয়ে লাল হয়ে আছে। মাঝে মাঝে গরম পানির স্প্রে করা হচ্ছে। অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়া হচ্ছে।আলো আর পারছে না সহ্য করতে। সত্য বললেও কেউ বিশ্বাস করছে না।আলো বুঝাতেই পারছে না সে যা বলছে সত্য। আলোর মনে হচ্ছে এ লোকগুলো আলোকে শারীরিক ভাবে আঘাত করে পুরোপুরি জোর পূর্বক স্বীকারোক্তি নিতে চাচ্ছে।এক দিকে আলো যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না।অন্য দিকে বিনা কারণে নিজের ঘাড়ে আরও মৃত্যুর ভার নিতে চাচ্ছে না। আস্তে আস্তে আলো নেতিয়ে পড়ল।আজকের মতো আলোকে জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করা হলো। তবে কালকে আবার শুরু হবে আলোর উপর নতুন অত্যচার। তা হলো জোর পূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অত্যাচার।

এদিকে তানভীর ছটফট করতে লাগল। দুইবার থানায় গিয়েও আলোর সাথে দেখা করতে পারল না।কোর্ট আলোর সাথে কাউকে দেখা করার পারমিশন দেয়নি। সে জানে না তার মা কী করছে। মাকে কয়েকবার আলোর কথা জিজ্ঞেস করার পরও উনি তানভীরের কোনো জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। দিন কে দিন তানভীরের অস্থিরতা বাড়তে লাগল।

আর এদিকে আলোকে আজকে চতুর্থ দিনের মতো রিমান্ডে আনলো। আলোকে এবার ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে।যেভাবে পারছে যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। আলো কষ্টে একবার বলছে সে সবগুলো খুন করেছে তবে কারণ জিজ্ঞেস করলে কোনো কারণ বলতে না পারায় চলছে আরও অত্যাচার।আলোর বুকটা থরথর করে কাপঁছে। রিমান্ড শেষে আলো নীচে শুয়ে কাঁতরাতে লাগলো। হয়তো এর থেকে মরণ ভালো ছিল। আজকে আলোর ইচ্ছা করছে মরে যেতে তবে এখন যেন মরার উপায়ও এখানে পাচ্ছে না। ঠোঁট গাল কেটে আছে।সারা শরীর যন্ত্রণায় কাঁপছে। জীবনটা কেন এমন হলো কেন এত কষ্ট পাচ্ছে সে। সৃষ্টি কর্তার সাথে কথোপকথন করছে আর একের পর এক অভিযোগ দিচ্ছে। জীবনের কাঠ গড়ায় এসে সে নিঃশ্ব। এখনের জীবনের থেকে হয়তো আগের জীবনটা ভালো ছিল। দিনকে দিন যেন তার সুখের পাখি উড়ে গিয়ে অধঃপতন হচ্ছে। চোখটা লেগে এলো তার।

রাত তিনটায় যেন তার ঘুম ভাঙ্গলো।সে একটা আলোক রশ্নি দেখতে পেল। হাতটা দিয়ে যখনেই সে আলোক রশ্মিটা ধরতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই যেন সেটা মিলিয়ে যাচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করছে সে আলোক রশ্নিটা ধরতে তবে সে পারছে না। একটা সময় সে অন্ধকারে তলিয়ে গেল।

তার ঘুমটা ভাঙ্গলো। তার মানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল। তবে এখন তার সারা শরীর কাঁপছে। জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল। চোখগুলোতে অন্ধকারে ছেয়ে আসলো। নিস্তেজ হয়ে গেল একদম।

সকালে আলোকে দেখতে এসে আলোর অবস্থা দেখে একটু বিচলিত হলো পুলিশ। হাতটা ধরে দেখল ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাহলে কী আলো মারা গেল??

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১১

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১১

পরদিন সকালে আলো ঘুম থেকে উঠে খাট থেকে নামতে নিবে ঠিক এমন সময় তানভীর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে হাজির হলো। তানভীর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– নীলার মৃত্যুর আপডেট বের হয়েছে। তোমার মাকে কারা যেন খুন করেছে গতকাল। সবার ধারণা এটা তুমি করেছো। তোমাকে পুলিশ হন্নে হয়ে খুঁজছে। তোমার কোনো ছবি বাসায় খুঁজে পায়নি তাই প্রচার করতে পারছে না। তুমি দেখতে কেমন সেটাও কেউ বলতে পারছে না। কী যে হবে কে জানে।আর তোমার মাকেই বা কে খুন করলো? আর দুঃখিত তুমি করে বললাম। তুমি আমার বেশ ছোট তাই তুমি করে বলতেছি।

আলো অবাক চোখে তাকাল তানভীরের দিকে।নিজের মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে আলোর বুকটা অস্থির হয়ে গেল। সৎ মা হোক বা যাই করুক মা তো মা এই হয়। একটু কষ্ট অনুভব আলোর হচ্ছে। সে সাথে মাথায় প্রশ্ন জাগছে কে এ কাজটা করল। তার মায়ের শত্রু কে হতে পারে। পরক্ষণেই আবার ভাবলো এত পুরুষের সাথে তার মায়ের চলাফেরা সুতরাং তাদের কেউ হয়তো খুন করেছে। তবে সব বিষয়ে আলো না চাইলেও জড়িয়ে যাচ্ছে। অনিশ্চিত ক্ষীণ আশা নিয়ে আলো এখানে বসে আছে। আলো মৃদু সুরে তানভীরকে বলল

– তুমি করে বলেছেন আমি রাগ করেনি। আমি আপনার ছোট তুমি বলতেই পারেন। তবে সবকিছুতে না চাইতেও আমি জড়িয়ে যাচ্ছি। জানি না মাকে কে খুন করেছে।সবাই সবার কর্মফল পায় মাও পেয়েছে। মায়ের হাতে বাবা খুন হয়েছিল। আর আজকে মাকে অন্য কেউ খুন করেছে। সে যেমন করেছে ঠিক তেমনটায় ফিরে পেয়েছে। তবে সব জায়গায় আমি দোষী প্রমাণিত হচ্ছি। কী করব বুঝতে পারছি না। আলোর নিশানায় ছুটতে গিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। একটা কাজ করলে কেমন হয় পুলিশে গিয়ে যদি আমি সব বলি ভালো হবে না?

আলোর কথা শুনে তানভীর তীক্ষ্ণ গলায় বলল

– পাগল হয়ে গেছ নাকি? পুলিশের কাছে এখন গেলে বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাবে। কিছুদিন যাক।বুদ্ধি বের করি।কী করা যায় ভাবি।তারপর সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশে যাব।এর আগে ঘাপটি মেরেই বসে থাকতে হবে। একটু চুপচাপ থাকো আপাতত।আর মায়ের কানে কোনোভাবে কথা গুলো গেলে আর রক্ষা নাই। সুতরাং যা করতে হবে ভেবে চিন্তায়। তাদের কাছে তোমার কোনো ছবি নাই সুতরাং তোমার কাছে তারা সহজে আসতে পারবে না। আর এ সময়ের মধ্যে আমাদের সবকিছু চিন্তা করে বের করে নিতে হবে।সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে।একটু উনিশ বিশ হলে হিতে বিপরীত হবে।

মা আসলে স্বাভাবিক থাকবে একদম।আর বাকি ব্যবস্থা সময় মতো করা হবে। আর আজকে শায়ান আসবে। মা বলেছে দেখা করতে।আমি শায়ানকে তোমার ছবি দিয়েছি আর শায়ানের ছবিও তোমাকে দেখাব।মায়ের সামনে দুজনের আচরণ যেন একদম সাবলীল থাকে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে ধরা পড়ে যাও দুজনে। একদম এমন আচরণ করবে যাতে মা মনে করে তোমরা সত্যি সত্যি ভাই বোন।মনে থাকবে তো?

– জি মনে থাকবে।

– আমি গেলাম এক কাপ কফি খেয়ে আসি। তুমি কী কফি খাবে?

– আমি এসব খাই না।

– এসব মানে কী? যেভাবে বলছো মনে হয় আমি তোমাকে মদ খেতে প্রস্তাব দিয়েছি।

আলো তানভীরের কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত গলায় বলল

– আপনি একটু বেশিই বকেন। যেখানে আমি ছিলাম সেখানে দু মুঠো ভাত গিলতেও আমার কষ্ট হত। সেখানে চা কফি তো পরের ব্যপার। এখন সেগুলো না খেতে খেতে একটা অনীহা চলে এসেছে। তাই ভালো লাগে না।সব কথায় প্যাচাল পারা আপনার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারি বদঅভ্যাস বাঁধিয়েছেন আপনি।

– সে যাইহোক। তুমিও তো কম না।ইস্পাতের মতো তোমার মুখ চলতেই থাকে। কখন কী বলো হিসাব নেই৷ আমি গেলাম। মা আসলে মাকে সামলিও। এমন কিছু করবে না যাতে মা সন্দেহ করে।

– বুঝেছি তো। একথাটা কয়বার বলেছেন বলুন তো।আপনি যান গিয়ে কফি খান। আমার খারাপ লাগছে। জ্বরটা আবার আসবে কী না কে জানে।

– কী বলো। দাঁড়াও আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। নাস্তা খেয়ে এখনি ঔষধ খাবে।

– এখন আমি বসা থেকে দাঁড়াব?

– এ দাঁড়ানো সে দাঁড়ানো না।এত কথা বলো কেন? সবকিছুতে তোমার তর্ক। বসো চুপচাপ আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। শায়ান ও চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।

বলেই তানভীর রুম থেকে বের হলো। আর আলো নিঃশব্দ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চুপ করে বসে রইল। এর মধ্যেই তানভীরের মা রুমে প্রবেশ করলো।হাতে কী যেন নিয়ে।আলো তানভীরের মাকে দেখে একটু সোজা হয়ে বসে বলল

– আন্টি আপনি এত সকাল সকাল?

– গতকাল অনেক জ্বর ছিল তোমার। তাই সকাল সকাল দেখতে আসলাম জ্বর কমেছে কী না।এখন তো বেশ সুস্থ লাগছে।তোমার জন্য ডাবের পানি নিয়ে এসেছি। খেলে ভালো লাগবে।

তানভীরের মায়ের এমন মায়া ভরা কন্ঠস্বর শুনে আলো কেঁদে ফেলল।আলোকে কাঁদতে দেখে তানভীরের মা পাশে বসে আলোকে ধরে বলল

– কী হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন? খারাপ কী বেশি লাগছে?

তানভীরের মায়ের এমন সৌহার্দপূর্ণ কথায় আলো আরও জোরে কেঁদে দিল। অনেকদিন পর আলো বুঝতে পারছে মায়ের ভালোবাসা কী।এক মা থেকেও ছিল না। আরেক মাকে বুঝ হওয়ার আগেই হারিয়েছে। সব মিলিয়ে এত ভালোবাসা পেয়ে আলো আবেগ সামলাতে পারলো না।আলোকে কাঁদতে দেখে তানভীরের মা জড়িয়ে ধরে বলল

– কী হয়েছে তোমার।এভাবে কাঁদছো কেন? বেশি খারাপ লাগছে কী?

আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল

– মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে।তাই।

– আহারে কষ্ট পেও না।তোমার ভাই তো আজকে আসবেই।আর মায়ের সাথে কথা বললে আমার মোবাইল দিয়ে কথা বলো ভালো লাগবে।আপাতত ডাবের পানিটা খেয়ে নাও। তানভীর নাস্তা নিয়ে আসবে।তুমি খেয়ে নিও।আমি একটু বিশ্রাম নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হবো। কেঁদো না কেমন? আমি তো তোমার মায়ের মতো।

আলোকে তারপর নিজের কাছে এনে কপালে আলতো চুমু দিয়ে তানভীরের মা ডাবের পানিটা আলোর হাতে দিয়ে রুম থেকে বের হতে নিতে চাইবে এমন সময় তানভীর নাস্তা নিয়ে আলোর রুমে প্রবেশ করলো। তানভীরের মা তানভীরকে দেখে মৃদু গলায় বলল

– ওর একটু যত্ন নিও। হয়তো বাড়ির কথা মনে পড়ছে।

কথাটা বলেই উনি রুম ত্যাগ করলেন। আলো ডাবের পানিটা খেয়ে নিল। এর মধ্যে তানভীর খাবারটা বাড়িয়ে নিজের জন্য বানানো কফিতে চুমুক দিল। আর আলোকে বলল

– নাস্তাটা খেয়ে নাও

আলো আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ নাস্তাটা খেয়ে নিল। নাস্তা খাওয়া শেষ করতে না করতেই শায়ান আসলো বাসায়। শায়ান এসেই তানভীরকে ডাকতে লাগল। তানভীর আলোকে ইশারা করে বলল

– এখানে চুপচাপ বসো শায়ান এসেছে। মায়ের সামনে এমন ভাব ধরবে তোমরা দুজন দুজনকে চিনো। ঠিক আছে। যাতে বুঝতে না পারে তোমরা অপরিচিত।

বলেই রুম থেকে বের হলো। রুম থেকে বের হয়ে দেখল এতক্ষণে তানভীরের মা জাহানারা সুফিয়া শায়ানকে সোফার রুমে বসিয়ে নিজেও বেসেছে। তারপর শায়ানকে বলছে

– তোমার বোনের মনে হয় মন খারাপ। হয়তো মা, বাবার জন্য হয়তো মন খারাপ করছে।।তুমি একটু ওর কাছে যাও। গিয়ে দেখো কী বলে।

শায়ান মাথা নেড়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল

– আমি এখনি গিয়ে দেখে আসছি।

বলেই তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– আলোর রুমটা কোথায়?

তানভীর আলোর রুমটা দেখিয়ে বলল

– তুই আলোর সাথে গিয়ে কথা বল। আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি তোর জন্য।

বলেই রান্না ঘরের দিকে গেল।আর শায়ান আলোর রুমে এসে আলোর পাশে বসল। আলোকে দেখে সে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।বিকৃত হয়ে গেল। আলোর হাতটা চেপে ধরে বলল

– আমি জানি তানভীর তোমাকে রাস্তা থেকে নিয়ে এসেছে। যদি এখানে থাকতে চাও আমার কথা মতো যা করতে বলি করো। নায়হ আন্টিকে সব বলে দিব।

আলো ভয়ে কাঁপতে লাগল। হাতটা জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল

– কী বলতে চাচ্ছেন আপনি? আর উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না। আমি কিন্তু চিৎকার করব।

– চিৎকার করলে তুমিই ফেঁসে যাবা। শুধু শুধু নিজের বিপদ ডেকে এনো না। তোমাকে ছবিতে দেখেই তোমাকে পাওয়ার একটা বাসনা মনে জেগেছে। একটু জড়িয়ে ধরব শুধু। এখানে কেউ দেখবে না। আমি আর তুমি ছাড়া। আন্টি বাহিরে আর তানভীর রান্না ঘরে। একটু সময়ের ব্যপারেই তো। এটুকু না করলে সব বলে দেবো কিন্তু আন্টিকে।

– আপনি কী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন? আপনি যে এত কুৎসিত মনের সেটা কী তানভীর ভাই জানে।

– কেউ কিছু জানে না। আর জানবেও না। একটু জড়িয়ে ধরব প্লিজ। শব্দ করলে তোমারেই বিপদ।

বলেই শায়ান আলোকে জড়িয়ে ধরতে নিলে আলো আচমকা চেঁচিয়ে উঠে।।আলোর চেঁচানোতে জাহানারা সুফিয়া আর তানভীর দৌঁড়ে আসে। তানভীর আর জাহানারা সুফিয়াকে দেখে শায়ান একদম চুপ হয়ে বসে রইল। এমন ভাব ধরল সে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। এদিকে জাহানারা সুফিয়া আলোকে ভয় পেতে দেখে বেশ জোর গলায় বলল

– কী হয়েছে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলে কেন?

আলো আর সত্যিটা লুকাতে পারল না।ঢুক গিলতে গিলতে এই মাত্র ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলল। আলোর কথা শুনে তানভীর বুঝতে পারছে না কী করবে। শায়ান যে এমন মুখোশধারী সে বুঝতেও পারে নি এতদিন। আর তানভীরের মাকে সবটা সত্যি কীভাবে বলবে বা সামলাবে সেটাও বুঝতে পারছে না। এবার আলোর কথা শুনে তানভীরের দিকে জাহানার সুফিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১০

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।
#পর্ব-১০

তানভীর তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলল। দরজা খুলার সাথে সাথে আলোর ভয়টা বেড়ে গেল। কারণ একটা ২১-২ ৩ বছর বয়সী মেয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তানভীরকে দেখেই ভয়ে কুঁকড়ে খাটের উপরে থাকা কাঁথা মুড়ি দিয়ে তানভীরকে লক্ষ্য করে বলল

– যাও আমার কাছ থেকে চলে যাও। একদম কাছে আসবে না আমার। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ যাও।

তানভীর মেয়েটার কথা শুনে হালকা গলায় বলল

– ফাবিহা আস্তে চিল্লাও। আমি তানভীর।এত জোরে চিল্লাচিল্লি করো না।আমি তোমার কিছু করব না।মা বাইরে গেছে। মা আসলে তুমি যা চাও তাই দিবে। তুমি এখন এভাবে চিল্লাচ্ছিলে কেন?

তানভীরের কথা শুনে আলো বুঝতে পারলো মেয়েটার নাম ফাবিহা। কিন্তু মেয়েটা তানভীরের কথায় শান্ত হয়নি উল্টো ভয়ে চুপস যেতে লাগল।পাশে থাকা জিনিস পত্র তানভীরের দিকে ছুরতে লাগল। আর বলতে লাগল

– আমার কাছে আসবে না একদম। আমার অনেক কষ্ট হয়। যাও বলছি।

আলো বুঝতে পারছে না ফাবিহা কেন তানভীরকে এত ভয় পাচ্ছে। তাহলে কী তানভীর ওর সাথে এমন কিছু করেছে যাতে করে ফাবিহা তানভীরকে সহ্যই করতে পারছে না।এসব ভেবে আলোর মাথা ঘুরপাক খেতে লাগল। এদিকে তানভীর ফাবিহাকে কিছু না বলে আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– এখানে এসেছেন কেন? ঘর থেকে বের হোন। ঘরের দরজা লাগাব। সবকিছুতে এত কৌতুহল ভালো না।

আলো তানভীরের কথার কোনো জবাব না দিয়ে ঘরটা থেকে বের হয়ে ঘরের বাইরে দাঁড়াল। তানভীরও ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজাটা লাগিয়ে হনহন করে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। আলোর ভেতরে থাকা প্রশ্নগুলো আলোকে দুমরে মুচরে খাচ্ছে। তাহলে কী তানভীর ঐ মেয়েটাকে অত্যাচার করছে। এসব ভাবতে ভাবতেই সবটা সাহস সঞ্চয় করে তানভীরের পথ আটকে দিয়ে ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

– আপনি আমাকে বলুন মেয়েটা কে? আর কেনই বা চিৎকার করলো এভাবে? আর আপনাকে কেন এত ভয় পাচ্ছে? এর পেছনে কারণ কী?

তানভীর আলোর দিকে এগিয়ে গেল। আলো দু পা পেছালো।তানভীর আলোর বাহু ধরে তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আলো আরও কিছুটা সামনে এসে তানভীরের পথ রুখে দাঁড়িয়ে বলল

– কী হলো? না বলে কোথায় যাচ্ছেন? বলুন ঐ মেয়েটা কে? আপনাকে কেন ভয় পাচ্ছে? তার মানে ঐ মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে যার সাথে আপনি জড়িত।

তানভীর আলোর কথায় আলোর দিকে গর্জে তাকাল। আলো তানভীরের এমন রাগী চাহুনি দেখে খানিকটা পেছনের দিকে গেল।তানভীর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– ঘরে থাকা যে মেয়েটাকে দেখেছেন সে আমার আপন বোনের মতো।আমার খালাত বোন ফাবিহা। পিঠাপিঠি ছিলাম দুজন। তাই দুজনের খুনসুঁটিও ছিল প্রচুর। মেয়েটা মানসিক ভারসাম্যহীন দীর্ঘ তিন বছর যাবত। আর আপনি কী না তাকে নিয়েই আমাকে যা’তা বলছেন।

তানভীরের কথায় আলো চুপ হয়ে গেল। না জেনে কাউকে সত্যিই কিছু বলা উচিত না। আলো ভয়ে ভয়ে বলল

– আমি বুঝতে পারে নি।দয়াকরে কষ্ট নিবেন না। তবে উনি মানসিক ভারসাম্যহীন হলেন কী করে?

-কিছু জানোয়ারের জন্য।

আলো বিস্মিত হয়ে বলল

– মানে?

– ফাবিহা একটা ছেলেকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসত। তখন ফাবিহা ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ত। আমার কাছে সবকিছুই বলত। নিজের ভালোবাসার কথা, নিজের কথা সব। একটা সময় পর ফাবিহা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। জিজ্ঞেস করলে বলে তার প্রেমিক চায় না আমার সাথে সে কথা বলুক তাই কথা বলবে না। আমিও আর তার সিদ্ধান্তে দ্বিমত করেনি। চেয়েছি সে তার জায়গায় ভালো থাকুক। এরকম করে ফাবিহার সাথে আমার যোগাযোগ নেই অনেকদিন যাবত।প্রায় একবছর তো হয়ে যাবে। সে সময়টাতে রুশির সাথে দেখা। রুশির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত খারাপ সময় পার করি যে কীভাবে এক বছর ফাবিহার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম বলতে পারব না। এক বছর পর হুট করে জানতে পারি ফাবিহা অসুস্থ। আমি আর মা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ফাবিহা রেইপ হয়েছে। সেটা খালা জানতে পেরে খালা স্ট্রোক করে। সে ঘটনার পর খালা আর সুস্থ হয়নি পরপারে চলে যায়। আর ফাবিহার তখন জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফেরার পর ফাবিহা জানায় যে তার প্রেমিক তাকে ঘুরতে নিতে গিয়ে এক বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তার প্রেমিক সহ তাকে সাতজন মিলে রেইপ করে। কথাগুলো বলার পর ফাবিহা আরও জোরে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরবর্তীতে জ্ঞান ফেরার পর খালার খবর জেনে নিজেকে সে আর সামলাতে পারে নি।এক তো প্রিয়জন হারিয়েছে অন্যদিকে নিজের সব হারিয়েছে।সব মিলিয়ে সেদিনের পর থেকে সে আর স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারে নি।মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সে এখনও সে অতীতে ডুবে আছে। শুধু আমাকে না যেকোনো ছেলেকে দেখে সে চিৎকার করে উঠে। বাইরের আলো সহ্য করতে পারে না।

“মাঝে মাঝে মানুষ আঁধারে এমনভাবে ডুবে যায় তখন আলো তাদের সহ্য হয় না। তখন তারা আলোর কাছে আসার থেকে আঁধারের অতল সাগরে নিজেকে নিমজ্জিত করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।”

ফাবিহার ক্ষেত্রটাও এমন সে চাইলেও সে অতীত থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না।তার অতীত তাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। নিজের সবকিছু হারানোর প্রতিচ্ছবিটা তার চোখে দীর্ঘ তিন বছর যাবত প্রতিনিয়ত ভাসছে।

তানভীর কথা গুলো বলে আস্তে পায়ে আলোকে সরিয়ে ঘরের দিকে এগুতে লাগল। আলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে চুপ হয়ে রইল। নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে তার, তানভীরকে এত কিছু বলেছে তাই। সেই সাথে ফাবিহার করুণ পরিস্থিতির জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিটা মানুষেই নিজের জায়গায় কোনো না কোনো বিষয়ে কষ্টে আছে।

“মানুষের কষ্টের জায়গা ভিন্ন হলেও কষ্টের পরিমাণ সবার সমান। কষ্টের মাত্রাটা সবার কাছে তার জায়গা থেকে প্রখর।”

আলোর মনে হচ্ছে তানভীরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। ভাবতে ভাবতেই মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। এমন সময় তানভীর আলোর কাছে এসে বলল

– মাগরিবের আযান পড়ে গেছে। কখন যে, দিন পেরিয়ে গেল বুঝতে পারেনি। মা আসবে কিছুক্ষণ পর। আমি নামাজে যাচ্ছি। আর রাবু নানুকে বলে আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি। খাবারটা খেয়ে নিয়েন। মা আসলে মাকে বুঝিয়ে আপনার থাকার ব্যবস্থাটা করে দিব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

বলেই তানভীর যেতে লাগল। আলো তানভীরকে পিছু ডেকে বলল

-শুনুন।

-বলুন কী বলবেন?

– আপনাকে ঐ সময় ঐভাবে বলাটা উচিত হয়নি। জীবনে এত নেতিবাচক বিষয় ঘটেছে যে ইতিবাচক কিছু আশা করতে ভয় হয়। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আলোর কথা শুনে তানভীর খানিকটা পিছিয়ে বলল

– কিছু মনে করে নি আমি। আশা করি এরপর থেকে আপনার জীবনে যা ঘটবে সব ইতিবাচক। নামাজে গেলাম আপনি থাকুন। আর খাবারটা পেলে খেয়ে নিবেন।

আলো হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। তারপর নিজের ঘরে এসে অযু করে নামাজে দাঁড়াল। অনেকদিন যাবত আলো নামাজে দাঁড়ায়নি। জীবনের এত চরম পরিস্থিতিতে পরে স্বাভাবিক জীবন যাপনের নীতির বাইরে চলে গেছিল। রবের কাছে যে মন খুলে সব বলা যায় সেটাও ভুলে গেছিল। আজকে সে নামাজ আদায় করে হাত তুলে মনের মধ্যে জমে থাকা সব কষ্ট রবের কাছে বলল। তার খুব ভালো লাগছে এখন।বেশ শান্তি লাগছে এখন। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে জমে থাকা বড় পাথরটা নেমে গেছে।নামাজটা শেষ করে খাটের পাশে রাখা ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে বসতেই রাবু খাবার নিয়ে আসলো আলোর জন্য।খাবার টা আলোর দিকে বাড়িয়ে বলল

– কখন থেকে রান্না করে বসে আছি। মাত্র ছোট সাহেব বলল আপনারে খাবার দেওয়ার জন্য। আপনার হয়তো ক্ষুধা লাগছে অনেক তাই না?

আলো রাবুর হাত থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে রাবুকে মৃদু গলায় বলল

– খাবাবের কথা আমিই ভুলে গেছিলাম। আমার ক্ষুধা লাগেনি। বরং এখনও খেতে মন চাচ্ছে না।

– খালি পেটে থাইকেন না। খাইয়া লন।

আলো মাথা নাড়াল। রাবু রুম থেকে চলে গেল। আলোর প্লেটের ভাতে হাত নাড়তে লাগল। খাবারটা মুখে তুলতে তার একদম ইচ্ছা হচ্ছে না। কিন্তু এ মুহূর্তে না খেলে তানভীরের মা এসে জানলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখী হতে হবে। সে জন্য বেশ জোর করেই কয়েক লোকমা মুখে তুলে নিল।বাকিটা সে চাইলেও গিলতে পারছে না। আর যতটুকু খাবার ভেতরে গিয়েছে ততটুকু খাবার ও বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। আলো আর বাকিগুলো না খেয়ে হাতটা ধুয়ে শুয়ে পড়ল। শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে তার। কী করবে বুঝতে পারছে না। হুট করে শীত ও বেশি লাগছে।কম্বলটা মুড়ি দিয়ে মাথাটা কম্বলের ভতরে ঢুকিয়ে শুয়ে আছে। সারা শরীর কাপুঁনি দিচ্ছে তার। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কেন যে এমন লাগছে বুঝতে পারছে না।

এর মধ্যেই তানভীর কাশি দিয়ে আলোর রুমে প্রবেশ করল।আলোকে কাঁপতে দেখে আলোকে ধরে দেখল আলোর সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। তানভীর তাড়াহুড়ো করে আলোর মাথায় জলপট্টি দিতে লাগল।প্রায় আধা ঘন্টা ক্রমাগত জলপট্টি দেওয়ার ফলে আলোর জ্বরটা একটু নামল। এর মধ্যে তানভীরের মা চলে আসলো। তিনি এসেই আলোর কাছে আসলেন। লক্ষ্য করলেন আলোর জ্বর হয়েছে।তিনি নিজে আলোর পাশে বসে জলপট্টি দিল কতক্ষণ । তারপর ডাক্তারকে কল দিল আসার জন্য। তানভীর এ সুযোগে তার মাকে বলল

– মা আলো আর শায়ান একটা সাবলেটে থাকত। কেনো এক কারণে সাবলেটটা ছাড়তে হচ্ছে।শায়ান কোনো একটা মেসে উঠে যাবে। তবে আলোর থাকা নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। শায়ান বলছিল আমাদের বাসায় আলোকে কিছুদিন রাখতে।তুমি সম্মতি দিলে আমি শায়ানকে জানাব।

জাহানারা সুফিয়া আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল নিষ্পাপ চেহারার, মলিন মুখটা চোখ বন্ধ করে জ্বরের তীব্রতায় ভুগছে। আলোর প্রতি খানিক মায়া জন্মালো তার। সে তানভীরকে হালকা গলায় জবাব দিল

– থাকতে চেয়েছে থাকুক।বাসায় তো আর জায়গার অভাব নেই। কিছুদিনের জন্য সমস্যা হবে না আশাকরি। আর আলো কী খেয়েছে?

– হ্যাঁ মা খেয়েছে।

– আচ্ছা শায়ানকে একটা কল দাও তো। আলোর সম্পর্কে না জেনে তো চিকিৎসা করা যাবে না।ডাক্তার তো আলোর সম্পর্কে জানতে চাইবে।

তানভীর কোনো কথা না বলে শায়ানকে কল দিল।অবশ্য তানভীর আগে থেকেই শায়ানকে বুঝিয়ে রেখেছিল।তানভীরের কল পেয়ে শায়ানও বেশ নাটক করল। ঠিক তানভীর যেমনটা শিখিয়ে দিয়েছিল তেমনটা। জাহানারা সুফিয়া শায়ানের সাথে কথা শেষ করতেই ডাক্তার আসলো। ডাক্তার আলোকে দেখে বলল

– হুট করে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জ্বরটা হয়েছে।এটা একটু যত্নেই সেরে যাবে। আমি ঔষধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি নিয়ম করে খাওয়াবেন।

তানভীরের মা মাথা নাড়ল।ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে আলোকে নিজ হাতে খাইয়ে ঔষধ খাওয়ায়ে দিল। রাবুকে বলল আলোর সাথে থাকার জন্য। আর তানভীরকে বলল নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য।তানভীরও কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেল।

পরদিন সকালে আলো ঘুম থেকে উঠে খাট থেকে নামতে নিবে ঠিক এমন সময় তানভীর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে হাজির হলো।

অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-০৯

0

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৯

তানভীর আলোর কাছে এসে যা বলল তা শুনে রীতিমতো আলোর গা, হাত, পা আবার কাঁপতে লাগল। কারণ তানভীর আলোর কাছে এসে চাপা গলায় তাকে বলল

– যে মেয়েটার খবর শুনে আপনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন সে মেয়েটার মা,বাবার,খুঁজ পাওয়া গেছে। মেয়েটার নাম নীলা। আশ্চর্যের বিষয় হলো মেয়েটা বেশ কয়েকদিন যাবত নিখোঁজ ছিল। সবার ধারণা মেয়েটা তার প্রমিকের সাথে পালিয়েছে। তারপর হয়তো তার প্রেমিক তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। মেয়েটাকে শেষ দেখা যায় একটা পতিতালয়ে। সেখান থেকে মেয়েটাকে এক লোক কিনে নিয়ে যায়। সে লোকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সে লোকটাও মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। কে বা কারা যেন তাকে খুন করেছে। সেখানে নাকি লোকটা তার বউকে নিয়ে থাকত। তবে বউকে কেউ দেখে নি। কারণ বউ নাকি সবসময় ঘরে বসে থাকত। ধারণা করা যাচ্ছে এই নীলা মেয়েটাকে নিয়ে তার বউ আর লোকটার মধ্যে ঝামেলা হওয়ার এক পর্যায়ে তার বউ তাকে খুন করে পালিয়েছে আর নীলা মেয়েটাকে খুনের পেছনেও হয়তো সে লোকটার বউয়ের হাত রয়েছে। তবে কে সে মেয়ে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি কেউ। তদন্ত চলছে। কেইস টা নিয়ে বেশ মাতামাতি আর তুলপাড় শুরু হয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যমে। মেয়েরা কত বোকা একটা ছেলেকে বিশ্বাস করে কেন তার হাত ধরে চলে আসবে। এই দেখুন না এ মেয়েটার কী হাল হলো।

আলোর ভয়ে বুকটা ধুকধুক করতে লাগল। পালপিটিশান বেড়ে যাওয়ার উপক্রম। হঠাৎ করে হার্টবিট ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়াকে মেডিকেলের ভাষায় পালপিটিশান বলা হয়। আলো ঘামতে লাগল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

– এক গ্লাস পানি হবে।

তানভীর আলোর এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে পানি এনে তাকে দিল। আলো পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক ঢুকে সবটা পানি খেয়ে ফেলল। তার গা,হাত,পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল। সারা শরীর পুনরায় নিস্তেজ হতে লাগল। মানুষের ধারণা কতটা ভিত্তিহীন সেটা ভাবতে লাগল। সবাই ভাবছে নীলাকে খুন করার পেছনে আলোর হাত রয়েছে। অথচ কেউ জানে না নীলাকে নরক থেকে বের করতে আলো ঐ লেকটাকে খুন করেছে। সবাই ভাবছে নীলা প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। অথচ কেউ জানে না নীলা তার নিজের আপন মামা কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে। মানুষ একটা বিষয় যাচাই বাছাই না করেই সেটা নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেয়। আলোর ভয়ের মাত্রাটা প্রখর হতে লাগল। আলো কী ধরা পড়ে যাবে। নাকি আলোকে ভুল বুঝবে সবাই। এখন কী তানভীরকে কিছু বলা ঠিক হবে নাকি লুকাবে। দুয়ের মাঝে পড়ে যাওয়া বিষয়টা কাটিয়ে উঠা বেশ কষ্টদায়ক। আলো নিজেকে সামলালো। হালকা গলায় বলল

– এটা কী করে নিশ্চিত হলেন যে মেয়েটা তার প্রেমিকের সাথেই পালিয়েছে? এমনও তো হতে পারে এর বাইরে অন্য কারণ রয়েছে। না জেনে একটা বিষয় নিয়ে মন্তব্য করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

তানভীর ভ্রুটা কুচকে বলল

– বিষয়টা আমি না সাংবাদিকরা বলছে। আর আপনি এমন ভাব ধরছেন মেয়েটাকে আপনি চেনেন আর মেয়েটার নিখোঁজের কারণও জানেন।

তানভীরের কথাটা শুনে আলোর মুখটা আরও শুকনো হয়ে গেল। শীতের মধ্যেও বেশ ঘামতে লাগল। তবুও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলল

– চিনি বা না চিনি সেটা প্রশ্ন না। একটা মেয়ে বাসা থেকে নিখোঁজ মানেই কী প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে? এ মেয়েটার সাথে অন্যকিছু ও তো ঘটতে পারে। না জেনে এমন বলাটা মোটেও উচিত হচ্ছে না। আর তদন্ত না করেই ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া সাংবাদিকদের আর কোনো কাজ নেই। একটা লোক পতিতালয় থেকে মেয়ে কিনে আনবে তাকে নিয়ে বউয়ের মাঝে ঝামেলা হয়ে যদি লোকটাকে মেরেও ফেলে তার বউ, তাহলে তো অন্যায় কিছু করে নি। আর লোকটার বউ যে নীলাকে খুন করেছে সেটাও তো ভিত্তিহীন। সাংবাদিকদের কথা অনুযায়ী লোকটার বউ বাসা থেকে বের হত না। তাহলে তো সে মেয়ের বাইরের কারও সাথে যোগাযোগ থাকার কথা না।একটা মেয়ের বাইরের কারও সাথে যোগাযোগ নেই সে হুট করে একটা মেয়েকে বাইরের লোক দিয়ে ধর্ষণ করে খুন করাবে এটা কেমন কথা? কতটা যুক্তিসঙ্গত?

তানভীর আলোর কথা শুনে এবার একটু নির্বাক। আলোর কথায় যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে৷ তবে সামাজিক মাধ্যম আর সাংবাদিক তো আলোর কথায় লাফাবে না। তারা তাদের পথ অনুসরণ করবে৷ এখানে আলো বা তানভীর কী বলল তাতে তাদের কিছু যাবে আসবে না। তানভীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– আপনি তো উকিল হলে ভালো হবে। যুক্তি দিয়ে সব পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তবে আমাদের কথায় এখানে কিছু আসবে যাবে না। পুলিশ বিষয়টা তদন্ত করছে। ঐ মেয়েটাকে খুঁজে বের করার ব্যবস্থা নিয়েছে। দেখা যাক কী হয়।

তানভীরের কথা শুনে যদিও আলোর বুকটা ধুক করে উঠেছে। তবুও আলো মৃদু গলায় জবাব দিল

– পুলিশ আর কী করবে? তারা কিছুদিন বিষয়টা নিয়ে লাফালাফি করবে সে সাথে বাংলাদেশের জনগণও লাফালাফি করবে। আর একটা সময় পর বিষয়টা দমে যাবে। এ দেশে একটা বিষয় নিয়ে হুলুস্থুল শুরু হয় আবার বিচার কার্যকর হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা হচ্ছে হাস্যকর রম্য ব্যবস্থা। এখানে আইন মানেই নিরাপত্তা দানের পরিবর্তনে নিরাপত্তা কেড়ে নেয়া। এ দেশের পুলিশ কেমন সেদিনের রাতেই বুঝে গেছিলাম। যে পুলিশ একটা অপরিচিত মেয়েকে রাতের আধাঁরে নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে নিরাপত্তা কেড়ে নেয় সে আর যাইহোক মানুষ না। এদের উপর ভরসা করাও বোকামো।

তানভীর তার থুতুনীটা নিজের হাত দিয়ে মুষ্টি করে ধরে বলল

– তা ঠিক বলেছেন। তবে দেখা যাক বিষয়টা কতদূর যায়। আপনার শরীর কেমন এখন? মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত এখনও?

আলো চুপ হয়ে আছে৷ তানভীরের কথার কী জবাব দিবে সে বুঝতে পারছে না। একটা মিথ্যা চাপা দিতে আলোকে হাজারটা মিথ্যা বলতে হচ্ছে। এ মিথ্যার খেলা সামনের দিকে এগিয়ে নিতেও আলোর ইচ্ছা হচ্ছে না। আলো এটাও জানে নীলার বিষয়টা ঘাটলেই আলোর পরিচয় টা খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পেয়ে যাবে। তখন তানভীর বিষয়টা কীভাবে নেবে কে জানে। এর চেয়ে আগে বলে দেওয়ায় শ্রেয়। কিন্তু তানভীরকে সবটা বলার পর সে ও যদি ভুল বুঝে অথবা আলোর সরলতার সুযোগ নেয় সেটা ভেবে আলো কিছু বলতেও পারছে না।আলো শুধু ঘামছে। আলোর এমন অবস্থা দেখে তানভীরের কাছে আলোর বিষয়টা স্বাভাবিক লাগছে না। নীলার ব্যপারটাতেও আলোকে বেশ সিরিয়াস মনে হচ্ছে। তাহলে কী নীলার সাথে আলোর কোনো যোগ রয়েছে। তানভীরের মাথায় বিষয়টা আসতেই তানভীর বুদ্ধি করে আলোকে বলে উঠল

– ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী নীলার যেদিন মৃত্যু হয় সেদিন আপনাকে আমি এ বাসায় নিয়ে আসি। মানে গতকাল। তাহলে কী নীলার সাথে আপনার কোনো যোগ রয়েছে। আপনি এ পর্যন্ত যা বলেছেন সেটা কী সত্যি নাকি মিথ্যা? আপনার কথায় আমি কেন জানি কোনো সত্যতা খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে মুখে এক বলছেন ভেতরে অন্য পুষে রাখছেন। দেখুন আপনি কে বলেন তো?

কথাটা বলে তানভীর আলোর দিকে তীব্র সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। আলো ঢুক গিলতে লাগল। সারা শরীরে কোনো বল পাচ্ছে না। শত লুকাতে চাইলেও আলো আর কিছু লুকাতে পারবে না। কারণ আলো এখন যদি সত্যিটা না বলে তাহলে পরবর্তীতে এ মিথ্যা আলোর জীবনে অন্ধকার নামিয়ে আনবে। আলো তানভীরের চোখে তাকাল। এ নিষ্পাপ চোখে যেন আলো ভরসা খুঁজে পাচ্ছে। হলকা গলায় তানভীরকে আলো বলল

– নীলাকে আমি চিনি। সেদিন রাতে নীলা আর আমি দুজন একসাথে পালিয়েছিলাম। তারপর নীলা কোথায় যায় সেটা জানি না। নীলার যে এ পরিণতি হবে চিন্তাও করতে পারে নি।

আলোর কথা শুনে তানভীর বিস্মিত হলো৷ তাহলে কী আলো ঐ লোকটাকে খুন করেছে। তানভীরের এবার নিজেকে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে। আলো এত বড় সত্যি লুকিয়েছে সে সেটা মানতেই পারছে না। খকানিকটা কষ্টও পেয়েছে। কিছুটা অসংগতি নিয়ে আলোকে জিজ্ঞেস করল

– তাহলে আপনার প্রেমিকের ব্যপারটা,বাবা,মায়ের ব্যপার,বিয়ের ব্যপার টা কী মিথ্যা?

আলো মাথা নেড়ে জবাব দিল

– জি।

– তাহলে এত বড় মিথ্যা কেন বলেছিলেন?

– সেটারও কারণ আছে।

– আপনিই কী তাহলে ঐ লোকটাকে খুন করেছেন?

আলো চুপচাপ। কোনো জবাব দিচ্ছে না। আলোর নীরবতা দেখে তানভীর জোরে চেঁচিয়ে বলল

– কী হলো জবাব দিচ্ছেন না কেন? খুন করেছেন কী না বলুন? আপনার নীরবতা বলে দিচ্ছে আপনি খুনী।তার মানে একটা খুনীকে সাহায্য করছিলাম আমি? অর্থাৎ ঐ লোকটা আপনার স্বামী। নিজের স্বামীকে নিজে খুন করেছেন। কতটা হিংস্র আপনি।

কথাটা তানভীর শেষ করতে না করতেই আলো চেঁচিয়ে বলল

– হ্যাঁ আমি হিংস্র।আমিই আমার স্বামীকে খুন করেছি। কেন করেছি জানেন? না জেনে তো জোরে জোরে বুলি আওরাচ্ছেন। মানুষকে বলে ফেলা খুব সহজ। তার ভেতরের সব জেনে তাকে বলা উচিত।কতদূর চেনেন আমাকে? কী মনে হয় আপনার? চৌদ্দ বছরের একটা মেয়ে আমি৷ কিন্তু আমার কথা বার্তায় কখনও তা মনে হয় না। মনে হয় বেশ বড় আর ম্যাচুর আমি৷ কিন্তু সেটাও কীভাবে হয়েছি জানেন? কতটা আঘাত পেয়ে হয়েছি জানেন? আমার মতো মেয়ে কেন খুন করেছে জানেন? না জেনেই চেঁচিয়ে উঠলেন? তাহলে শুনোন।

এরপর আলো তার জীবনে ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়ের বর্ণণা করতে লাগল। একের পর এক তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের কথা বলে যেতে লাগল। কীভাবে তাকে একের পর এক কষ্ট দেওয়া হয়েছে কত নোংরা সম্পর্কে সে জড়িয়েছিল।কীভাবে সে সেখান থেকে বের হয়েছে। কীভাবে তার নীলার সাথে পরিচয় হয়। সবটা বলেই আলো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগল। আলোর বুক ফেটে কান্না আসছে। বুকের ভেতর জমে থাকা সকল কষ্ট কান্না হয়ে নামছে।

এদিকে আলোর কথাগুলো শুনে তানভীর নিশ্চুপ। এতটুকু মেয়ে এত কষ্ট সহ্য করেছে সেটা তার সরল মনকে বেশ নাড়া দিয়েছে। বুকের ভেতর কিছু একটা চেপে আছে মনে হচ্ছে কথা গুলো শুনে। তানভীর জানে না বিষয়টা সে কীভাবে সামলাবে। তানভীরের মা এসব জানলে কীভাবে নিবে বিষয়টা। সন্ধ্যায় তানভীরের মা আসলে কী করে তাকে বুঝাবে। তবে আপাতত তার মাকে কিছু বলা যাবে না। ভেবে চিন্তায় সময় বুঝে সবটা বলতে হবে। আপাতত আলোর থাকার ব্যবস্থাটা করতে হবে। এসব ভেবেই আলোর দিকে তাকিয়ে আলোর পাশে বসে মৃদু স্বরে বলল

– দুঃখিত আলো। আপনাকে এভাবে সবকিছু না জেনে বলা ঠিক হয়নি।

– সমস্যা নেই। মানুষ মাত্রই এমন। জেনে, না জেনে কিছু বলে দেওয়াতেই আনন্দ পায়। আমি কিছু মনে করেনি৷ এখন আপনার ইচ্ছা আমাকে সাহায্য করবেন নাকি ছুরে ফেলে দিবেন। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি আরও হলেও পারব। অন্ধকারে এক চিলতে আলোর খুঁজে বের হয়েছিলাম আমি আর নীলা। সেখানে নীলা অলরেডি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে আর আমি অনিশ্চয়তা নিয়ে এখানে বসে আছি। হয়তো আমার জীবনেও সে আলোর দেখা মিলবে না।

তানভীর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– অন্ধকারে এক চিলতে আলো হয়েই আপনার জীবনে থাকব। পথচলা বেশ কঠিন তবে দুজন মিলে সামনে এগুবো। রুশি ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো। রুশিকে বুঝে উঠার আগেই অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল আপনার ক্ষেত্রে সেটা হতে দিব না।

তানভীরের কথায় যেন আলো স্বস্তি পেল। চুপচাপ হয়ে বসে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস নিল। এর মধ্যেই আলোর কানে একটা মেয়েলি কন্ঠের চিৎকার ভেসে আসলো। আলো চমকে গেল চিৎকারটা পেয়ে। তানভীরও প্রস্তুত ছিল না এমন চিৎকারে। আলো আওয়াজটা লক্ষ্য করে দেখল আওয়াজটা উপরের ঘর থেকে আসছে। আলো ভাবতে লাগল চিৎকারটা কার? চিৎকারটা শুনেই বুঝা যাচ্ছিল কোনো মেয়েকে রুমে তালাবদ্ধ করে রেখেছে আর সে মেয়েটা রুমের দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ছে আর বলছে আমাকে বের করো। এ ঘরে থাকতে আমার একদম ইচ্ছা হচ্ছে না। তাহলে কী কোনো মেয়েকে তানভীর এনে আটক করে রেখেছে? আলোর ভয়ে গা শিউরে উঠল।কড়া সন্দেহের দৃষ্টিতে তানভীরের দিকে সে তাকাল। তানভীরের দিকে আলোর এমন চাহনি বেশ অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করল। তানভীর কোনো কথা না বলেই রুম থেকে তড়িঘড়ি করে বের হলো।বিষয়টা আলোর কাছে সন্দেহজনক লাগাতে সেও তানভীরের পিছু নিল। তানভীরও উপরের রুমের দিকে ছুটতে লাগল। আলোও ছুটতে লাগল তানভীরের পেছনে। এক পর্যায়ে তারা রুমের কাছে এলো। তানভীর তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলল।দরজা খুলার সাথে সাথে আলোর ভয়টা বেড়ে গেল। কারণ…