Saturday, July 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1510



Gangstar In Love Part-36+37+38

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 36

🧡🍂..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম আইরাতের হাত পিছনে মুড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে। আইরাতের চোখে চোখ রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে..

আব্রাহাম;; “ভালোবাসি” কথা কি কানে যায় না। ভালোবাসাতে সব থাকে অধিকার, রাগ, অভিমান, মায়া সব। কিন্তু এই সবকিছু পারি দিয়ে সেই ভালোবাসার মানুষ টার কাছেই থেকে যেতে হয়। হ্যাঁ, মানছি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমাকে তুলে এনে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি, জোর করে বিয়ে করেছি ইভেন তোমার বাবা মার কাছ থেকেও দূরে রেখেছি। আমি ভুল করেছি, তোমার ওপর অন্যায় করেছি। কিন্তু যখন কেউ ভুল কিছু করে তখন অন্যজনের এটা দায়িত্ব থাকে যে তার ভুল ঠিক করে তাকে শুদরিয়ে দেওয়া। কিন্তু না তুমি কি করেছ বলো ক্ষণে ক্ষণে সবসময় আমাকে শুধু ভুলই বুঝে এসেছো। কখনোই আমার ভিতর টা ঝুকে দেখতে চাও নি। আমার ভিতরে কি চলছে তা জানতে চাও নি। কখনো আমাকে ভালো পর্যন্ত বাসো নি। কিন্তু তবুও, তবুও আমি তোমাকে সেই পাগলের মতো করে ভালোবেসেই গেছি। (রক্তচক্ষু নিয়ে)

আজ আব্রাহামের কথায় বেশ কষ্ট হচ্ছে আইরাতের। আইরাতের আর সাধ্যি নেই আব্রাহামের সেই চোখের সাথে চোখ মেলানোর তাই সে তার চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো।

আব্রাহাম;; আর কতো আর কতো শত বার বলে বুঝাবো যে খুন করিনি আমি চাচ্চু-চাচিমা কে। মারি নি আমি তাদের। তুমি কি ভেবেছ তারা শুধুই তোমার বাবা মা হয় আমার কিছুই হয় না। তারা আমার চাচ্চু-চাচিমা এবং আমার শশুড়-শাশুড়ি। হ্যাঁ, এমন একসময় গিয়েছে যখন আমি তোমার বাবা কে প্রাণে মারতে চেয়েছিলাম। কেন চেয়েছিলাম তা তো বেশ ভালো করেই জানা আছে তোমার। কারণ তোমার বাবা লোভে পরে আমার পুরো পরিবার কে চোখের পলকে তছনছ করে দিয়েছিল। আমার ওপর তখন কি যাচ্ছিলো তা কি ভাবতে পারো তুমি। একটাবার আমার জায়গায় তুমি নিজেকে কল্পনা করে দেখো তো। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার পর আমি কেমন যেন পালটে গেলাম। জীবনের মানে বুঝতে শিখেছিলাম আমি। যেই আমি কিনা ঘৃণা করতাম ভালোবাসা নামক শব্দ থেকে সেই ভালোবাসাতেই আমি পরে গেলাম শুধু মাত্র তোমাকে পেয়ে। আর তুমি এই আমাকেই ভুল বুঝে বারবার আমার থেকে দূরে সরে যাও। এখনো আমারকে ভুল বুঝেই যাচ্ছো। আমার থেকে পালিয়ে বেড়াও। কেন আইরাত? (চোখের কোনায় পানি জমে গেছে)

আব্রাহাম আইরাতের মুখের কাছে মুখ এনে কথা গুলো বলছিলো। আব্রাহামের প্রতিটি নিঃশ্বাস আইরাতের ওপর পরছে। আইরাত কিছু বলছে না মুখ ঘুড়িয়ে রেখেছে। আইরাতের এমন নিশ্চুপ থাকাটা আব্রাহাম যেন মেনে নিতে পারছে না। তাই আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে চেপে ঝাকিয়ে বলল…

আব্রাহাম;; Speak up damn it!! (কিছুটা রেগে)

আইরাত মনে মনে;; কি করে বলি, কি করে বলি যে আমি আপনাকে কতোটুকু ভালোবাসি, কিন্তু আপনি নিজেই সেই ভালোবাসাকে ঘৃণায় পরিনত করিয়ে দিতে আমাকে বাধ্য করেছেন।

আইরাত;; প্লিপ্লিজ ছাছাড়ুন আআমাককে…

আব্রাহাম;; তা আর হচ্ছে না বেবি। ঠিক ১ বছর ৯ মাস ২২দিন পর তোমাকে খুঁজে পেয়েছি। এতো তাড়াতাড়ি করে কিভাবে ছেড়ে দিই বলো।

আইরাত;; (আইরাত কিছু না বলে অবাক চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়,, এই লোকটা সবকিছু খুটে খুটে হিসাব করে রেখেছে)

আব্রাহাম;; ওমন করে তাকিয়ে লাভ নেই, এখন যদি দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক ও হয়ে যায় তবুও আমি আব্রাহাম তোমাকে আর ছাড়ছি না। খুব না বলতে যে আমি একটা সাইকো, পাগল, ডেভিল। তো মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী তুমি এবার দেখবে যে এই সাইকো ঠিক কি কি করে। আর পাগলের পাগলামি তো সবেমাত্র শুরু জান। (এক চোখ মেরে)

আইরাত;; আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।

এই বলে আইরাত এক ঝটকায় আব্রাহামের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেই। রাগি চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আবার ঘুড়ে ওপরে বাসায় চলে যায়। আব্রাহামের আইরাতের এই লুক গুলো অনেক বেশি মিস করছিল। এই যে কথায় কথায় রেগে যাওয়া, চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকা, ঝগড়া করা, তার বাচ্চামো স্বভাবগুলো খুব বেশিই মিস করছিলো সে। এখন আইরাতকে তার জীবনে ফিরে পেয়ে সে যেন তার হাতে আকাশের সেই চাঁদ পেয়ে গেছে। আইরাত রেগে মেগে ওপরে চলে গেতেই আব্রাহাম তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। তারপর কাকে যেন ফোন করে…

আব্রাহাম;; Hlw..

___________;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; এই ফ্লাট এর কোণায় কোণায় সিকিউরিটি লাগিয়ে দাও। আইরাতের ওপর থেকে বিপদ এখনো চিরতরে যায় নি। আর আমার আইরাতের দিকে কেউ তার চোখ তুলেও তাকায় তা আমি কোন ভাবেই মেনে নিবো না। এক একটাকে জেন্ত মেরে ফেলবো।

__________;; স্যার, আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি এখনই তাদের বলে ফ্লাট এর চারপাশে লাগিয়ে দিচ্ছি।

আব্রাহাম ফোনে কথা বলে কেটে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের আশেপাশে সিকিউরিটি গার্ড লাগিয়ে দিতে বলে তার কারণ হচ্ছে দুলাল। দুলাল এখনো আইরাতের পিছু ছাড়েনি। আশরাফুল আহমেদ এবং আতিয়া আহমেদ কে মেরে ফেলার পর দুলাল পাগলের মতো করে আইরাতের পিছু লেগে গিয়েছিলো। জানে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো আইরাতকে। এতো দিন সে অনেক চেষ্টাও করেছে আইরাতের কাছে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু ভাগ্য এবং আল্লাহ তায়ালা দুটোই আইরাতের ওপর সহায় ছিলো যার জন্য সে পারে নি। কিন্তু যখন সে শুনে যে আইরাত মারা গিয়েছে তখন সে খোঁজ করা ছেড়ে দিয়ে এক শয়তানি হাসি হাসে কারণ সে যা চেয়েছিলো তা তো হয়েই গিয়েছে। আর আইরাতের কাল্পনিক মৃতুতে আব্রাহাম পুরো ভেংে পরেছিলো তাই সে আর বাকি কোন কিছুতে খেয়ালই করেনি। কিন্তু আব্রাহামের একজন যাসুস যখন আব্রাহামের কে খবর দেয় যে দুলাল আইরাতকে মেরে ফেলতে চেয়েছে এবং হন্ন হয়ে তার খোজও করেছে তখন আব্রাহামের মাথায় আগুন ধরে যায়। তাই তার কাছে এখন আইরাতের সুরক্ষাই প্রথমে।



দুলাল আরামে বসে বসে মদ পান করছিলো। তখন তার এক গুপ্তচর হুমড়ি খেয়ে এলো তার সামনে।

তমাল;; বস, বস ববস। (হাপাতে হাপাতে)

দুলাল;; হয়েছি কি, দৌড়িয়ে আসছিস কেন। কোন
পাগলা কুকুর কি পিছে পরেছে নাকি?

তমাল;; বস, তার থেকেও বেশি কিছু।

দুলাল;; খুলে বল..

তমাল;; বস, আমরা এতোদিন এক ভুল ধারণার ওপর ভরসা করে চলছিলাম।

দুলাল;; মানে? (কপাল কুচকে)

তমাল;; বস, আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে আইরাত বেচে আছে।

ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট ছিলো দুলালের মাথায় বাজ পরার জন্য। দুলাল সাথে সাথে দাড়িয়ে পড়লো। চোখ গুলো তার বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দুলাল রাগে গর্জে ওঠে বলল…

দুলাল;; কিহহহ,, কি বলছিস তুই (হাত থাকা মদের বোতল জোড়ে ঢিল দিয়ে)। মাথা ঠিক আছে তোর?

তমাল;; বস মাথা আমার একদমই ঠিক আছে আর আমি যা বলছি তা একদম সত্য।

দুলাল;; কিভাবে সম্ভব এটা, একটা মরা মানুষ আবার জেন্ত হয়ে কি করে ফিরে আসতে পারে।

তমাল;; বস মরেছিলোই কবে, আইরাত তো মরেই নি। এক্সিডেন্ট হওয়ার পর তাকে দুটো মেয়ে বাচিঁয়ে নেয়। আর বস আমাদের এক লোক আইরাতকে বাইরে দেখেছেও।

দুলাল;; (দুলাল ছুটে গিয়ে তমালের গালে এক কোষে চড় বসিয়ে দিলো) কতো বার বলেছি না যে আইরাতের নামও মুখে আনবি না। মেডাম বলে ডাকবি তাকে। ওর নাম মুখে আনার যোগ্যতা আছে তোর হ্যাঁ। নিজের লিমিটে থাক।

তমাল;; সরি বস, মাফ করে দিন (মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে)

দুলাল;; আইরাত তাহলে বেচে আছে। আমি এতোদিন ওকে না পেয়ে শুধু খুঁজেই গিয়েছি। তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছি কারণ, কারণ ও আমার হয়নি। কিন্তু এখন, এখন আমি ওকে আবার খুঁজবো শুধুই ওকে পাওয়ার জন্য। ও আমার হবে না তো কারোরই হবে না। ও যদি বেচে থাকে তাহলে ওকে আমার কেবল আমারই হতে হবে। সেই প্রথম থেকেই আইরাতের ওপর আমার নজর ছিলো। ও বেচে আছে এখন ও আমার হবে।

এই বলেই দুলাল শয়তানি অট্টহাসি তে ফেটে পরে।



আইরাত রেগে বোম হয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। গিয়েই ব্যাগটা কাধের ওপর থেকে নামিয়ে বিছানাতে ছুড়ে মারে। নিপা ফোনে গেমস্ খেলছিলো আর রাত্রি টিভি দেখছিলো, আইরাতকে এভাবে রেগে তেড়ে আসতে দেখে তারা বেশ অবাক। আইরাতকে আজ পর্যন্ত কেউ এভাবে রাগ করতে দেখেনি। নিপা ফোন থেকে তার নজর সরিয়ে আহাম্মকের মতো আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত সোফার ওপর দুহাত ভাজ করে ঠোঁট উল্টিয়ে বসে থাকে। রাত্রি আড়চোখে আইরাতকে দেখে যাচ্ছে। রাত্রি ভেবেছে যে একা একা বাইরে যাওয়াতে এতো রেগে আছে। তাই রাত্রি কিছুটা ভয়ে ভয়ে আইরাতকে বলে ওঠে।

রাত্রি;; কি হয়েছে আমার বেবিজানের?! (আইরাতের মুখের সামনে গিয়ে বেবি ফেইস বানিয়ে)

আইরাত এখনো কিছু না বলে সেই একই ভাবে বসে রয়েছে।

নিপা;; আসলে আমি না, আমি আর কি এইতো যাচ্ছিলামই নিচে। শুনলাম লিফট নাকি কাজ করছে না। তাই ভাবলাম যে জিনিসপত্র নিয়ে সিড়ি দিয়ে একা একা আসতে গেলে তো তোর সমস্যা হবে তাই আমি যাই ওই আরকি একটু হেল্প করতে। (কাচুমাচু করে)

আইরাত;; নিকুচি করেছে তোর হেল্পের। লাগবে না আমার কাউকে। তোরাই যা, তোরাই খা। (রেগে)

রাত্রি;; আচ্ছা বেবিজান হয়েছে টা কি বলবি তো। এভাবে রেগে এটম বোম হয়ে আছিস কেন!

আইরাত;; আব্রা…….. (আইরাত কিছুটা একটা বলতে যেয়েও বলে না, কেননা রাত্রি & নিপা কেউই জানে না যে আব্রাহামের সাথে আইরাতের কি সম্পর্ক। তারা ভেবেছে যে আইরাতের কেউ নেই। আর না ই আইরাত এই বেপারে তাদের কখনো কিছু বলেছে)

নিপা;; কি রে বল…

আইরাত;; আব.. মানে ওইতো লিফট, লিফট আরকি তাতেই মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গেছে। না তুই বল এই পাচঁ তালা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামা কি সম্ভব। এখন নয় আমি গেলাম কিন্তু আপনারা দুই মহারাণি যে আমাকে বাজারের এতো বড়ো একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন সেই জিনিসগুলো নিয়ে আমি আবার উপরে কি করে উঠবো শুনি।

রাত্রি;; যা ভেবেছিলাম যে এই লিফট নিয়েই রেগে আছে। দেখলি নিপু! (নিপার দিকে তাকিয়ে)

নিপা;; আচ্ছা হয়েছে চল এখন তিনজন একসাথেই যাই তাহলে সুবিধে হবে চল।

রাত্রি;; হ্যাঁ চল।

আইরাত;; ননা আরে দাঁড়া। (নিপার হাত ধরে আটকিয়ে)

নিপা;; আবার কি হলো!

আইরাত মনে মনে;; আব্রাহাম মনে হয় এখনো নিচে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। যে পরিমান ঘাড় বাকা লোক তিনি। এতো সহজে যাবে না।

আইরাত;; আসলে নিপু বলছিলাম কি যে একটু পর যাই। এখনতো লিফট বন্ধ, আর আমি দেখে এলাম যে কাজ চলছে তো খানিক বাদেই যাই। সিড়ি বেয়ে ওঠা-নামা চারটে খানিক কথা না কিন্তু।

নিপা;; কিন্তু দারোয়ান মামা না বললো যে লিফটের কাজ দুইদিন ভর চলবে।

আইরাত;; আরে না না আমি দেখে এলাম কাজ চলছে।

রাত্রি;; এটাও ঠিক আচ্ছা থাক তাহলে একটু পরেই যাই।

আইরাত যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো। এই সময় টুকু তে আব্রাহামও নিচ থেকে সরে পরবে আর লিফটও ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আইরাতের মনে শান্তি নেই। বার বার আব্রাহামের বলা কথাগুলো মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। যে ডেঞ্জারাস লোক উনি,, একবার যা বলে তা যেকোনো মূল্যে করেই ছাড়ে। আইরাত সারা ঘর পায়চারি করে যাচ্ছে। আইরাতের এতো অস্থিরতা দেখে রাত্রি বলে ওঠলো…

রাত্রি;; কিরে তুই এভাবে পায়চারি করছিস কেন? কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছিস নাকি?

আইরাত;; আরে কোথায় না, তেমন কিছুই না।

রাত্রি;; আমার তো মনে হয় না। আচ্ছা কয়েকদিন ধরে তোর হয়েছে টা কি বল তো বেবিজান..!

আইরাত রাত্রির পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

আইরাত;; তোরা থাকতে আমার কি কিছু হতে পারে বল। একদম ঠিক আছি আমি যাকে বলে ফিট এন্ড ফাইন। (একগাল হেসে দিয়ে)

রাত্রি;; হিহিহি।

রাত্রিও আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। সেই সময় নিপা আসে এবং জলদি করে তাদের রেডি হতে বলে বাইরে যাবে। আইরাত উঠে গিয়ে জানালার কাছে যায়। জানালা দিয়ে হালকা উকি দিয়ে নিচে দেখলো। আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো। নাহ, আব্রাহামকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আইরাত যেন প্রাণে বাচলো। তারপর তারা তিনজনেই তৈরি হয়ে বাইরে চলে গেলো।

কিন্তু বাইরে এক কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো আর গাড়ির ভিতর থেকেই আইরাতের ওপর কড়া নজর রাখছে আব্রাহাম। আইরাতকে দেখে মুখে এক প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে তার। বহুদিন পর আব্রাহাম এভাবে হাসলো। যেন জলজ্যান্ত একটা দেহ তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

তখন তার ফোনে call আসে।

আব্রাহাম;; বলো

রাশেদ;; স্যার, দুলালের একটা চেলা কে ধরে এনেছি কিন্তু মুখ দিয়ে এখনো কিছুই উগলাতে পারলাম না। আপনাকে ছাড়া কাজ হবে না।

আব্রাহাম;; আমিও দেখছি কিভাবে কিছু না বলে থাকতে পারে। আর আইরাতের ওপর নজর রাখো।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম ফোনে কথা বলা শেষ করে গাড়ি ঘুরিয়ে এক পুরনো গোডাউনের দিকে যেতে লাগলো।










🥀🥀চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 37

🤎🦋..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম ফোনে কথা বলা শেষ করে গাড়ি ঘুড়িয়ে এক পুরনো গোডাউনের দিকে যেতে লাগলো।

ব্লেক Rip প্যান্ট, হুয়াইট কালার টি-শার্ট, ডার্ক ব্লেক কালার জেকেট, হুয়াইট-ব্লেক কালারের কম্বিনেশনে সুজ, হাতে ওয়াচ, চাপ দাড়ি এবং কিছুটা লম্বা কপালের ওপরে পরে থাকা চুল আর হাতে থাকা রিভলবার❤️,, মাফিয়া যে মাফিয়াই।

আব্রাহাম গোডাউনের সাটার ওপরে তুলে হাতে রিভলবার ঘুড়াতে ঘুড়াতে ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে যেতেই দেখতে পেলো একজন যাকে চেয়ারের সাথে খুবই শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। চোখে-মুখে তার ভয় স্পষ্ট। কপালের শিরা দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেয়ে পরছে,, এবং তার চোখের পাশে বেশ কিছু অংশ কাটা যা থেকে রক্ত বেয়ে পরছে। আব্রাহাম খুব শান্তভাবে লোকটির সামনে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো। আব্রাহাম কিছু না বলে একধ্যানে রিভলবারের দিকে তাকিয়ে আছে এবং তা ডান হাতের আঙুল গুলোর মাঝে ঘুড়াচ্ছে। আব্রাহামের এমন শান্ত স্বভাব যেন লোকটার ভয় আরো দ্বীগুন করে দিচ্ছে। লোকটা একবার আব্রাহামের দিকে আর একবার রিভলবারের দিকে তাকাচ্ছে। আব্রাহাম এবার হুট করেই রিভলবার ঘুড়ানো বাদ দিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে লোকটির দিকে তাকালো। আব্রাহামের চোখ দেখে যেন তার আত্মা যায় যায় অবস্থা। আব্রাহামের চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুল্কি বের হচ্ছে। আব্রাহাম তবুও খুবই শান্ত কন্ঠে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো…

আব্রাহাম;; নাম কি তোর?

লোকটি;; ইক.. ইকবাল।

আব্রাহাম;; দুলালের জন্য কাজ করিস?

ইকবাল;; ননা না, কে এই দুলাল (ভয় পেয়ে)

আব্রাহাম;; হাহাহা,, খুব বিশস্ত লোক তো তোরা। সহজে নিজের মালিকের নাম স্বীকার করতে চাস না। বিশস্ত হো ভালো কথা কিন্তু ভালোর দিক দিয়ে হো। এগুলো অসৎ কাজের ক্ষেত্রে কেনোই বা হোস বলতো।

আব্রাহামের এমন হাসি তে লোকটির শরীরে যেন কাটা দিয়ে উঠলো। সবকিছু কেমন যেন শান্ত, ঠিক ঝড় আসার আগ মূহুর্তে যেমন থাকে তেমন। পিনপতন নীরবতা।

আব্রাহাম;; দেখ আমি মানুষ মারি, খুন খারাবা করি মানলাম কিন্তু আমি এতো টাও নির্দয় না যে কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ অব্দি দিবো না। প্রথমে বুঝাবো ভালোভাবে বলে দিলে ভালো আর তা না হলে..

আব্রাহাম এই টুকু বলে থেমে যায় তারপর লোকটির দিকে তাকায়, তাকিয়ে এক মেকি হাসি দেয়।

আব্রাহাম;; তুই যে দুলালের চামচা তা আমি জানি তো অযথা আমার টাইম ওয়েস্ট না করে শুরু কর।

ইকবাল;; সত্যি, দেখুন আমি সত্যি বলছি চিনি না আমি দুলাল নামে কাউকে।

আব্রাহাম আর কিছু না বলে তার হাতে একটা ছুরি নিলো, তা সামনে নিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলো। লোকটা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আব্রাহাম সোজা তার বাম হাতের আঙুলের নখের ওপর ছুরি বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে রক্ত ছিটে এলো, লোকটা চিল্লিয়ে উঠলো। আব্রাহাম লোকটির দিকে তাকিয়ে ছুরি দিয়ে তার আঙুলে মোচড় দিতে থাকলো। ছুরির সাথে আস্ত নখ উঠে এলো।

আব্রাহাম;; দেখ কোন তাল-বাহানা না করে বলে দে এতে তোরই ভালো। আর আগেই যদি বলে দিতি তাহলে এই কষ্ট টা তোকে আর ভোগ করতে হতো না। নে এবার জলদি মুখ খোল।

ইকবাল;; প্লপ্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন আমি কিছুই জানি না প্লিজ যেতে দিন আমাকে আমি আপনার কাছে হাত জোড় করছি।

আব্রাহাম;; আরে না না থাম, দেখ তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। আমার শত্রুতা তোদের বস দুলালের সাথে তো কেন মিথ্যে বলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছিস বলতো। নে এবার বলা শুরু কর।

ইকবাল;; আমি জানি নাহ।

আব্রাহাম;; রাশেদ.. (চিল্লিয়ে)

রাশেদকে ডাক দিতেই রাশেদ বড় এক পেকেট মরিচের গুঁড়ো আর লবণ নিয়ে এলো। তা দেখে লোকটার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।

আব্রাহাম আবার ছুরি টা হাতে নিলো। এবার আব্রাহাম লোকটির একদম হাতের মাঝ বরাবর ঘা বসিয়ে দিলো। এতে লোকটির হাত কেটে একদম ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো। লোকটির হাত এতোটাই বিচ্ছিরি ভাবে কেটেছে যে মাঝখানের দু আঙুল কেটে একদম পরেই গেছে। আব্রাহাম ছুরি টা হাত থেকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো এবং সেই মরিচের পেকেট পুরো টা ধরে সবগুলো গুঁড়ো তার হাতের ওপর ঢেলে দিলো। লোকটি গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে উঠলো। লোকটা একে তো আগে থেকেই আধা মরা ছিলো রক্তাক্ত অবস্থায় তার ওপর এগুলো। এসব দেখে আব্রাহামের পাশে থাকা গার্ডগুলো মাথা নিচু করে রেখেছে। আব্রাহামের ইশারা তে রাশেদ এসে লোকটির মুখ অনেক শক্ত করে বেধে দিলো। আব্রাহাম এবার লোকটির হাটুর সই করে শুট করে দিলো। জলধারার মতো করে রক্ত গড়িয়ে পরতে লাগলো। লোকটি এখন চিল্লাতেও পারছে না কারণ মুখ বাধা। ব্যাথা আর অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে লোকটি। এভাবে বেশকিছুক্ষন থাকার পর তার মুখ খুলে দেওয়া হলো।

আব্রাহাম;; মরেই তো গিয়েছিস আর বাদ বাকি টুকু মরতে না চাইলে ফটাফট বলে দে।

ইকবাল;; আমি বলছি, বলছি আমি।

আব্রাহাম;; বল।

ইকবাল;; আমিহ, আমি দুলালের জন্যই কাজ করি। আমি চুরি ডাকাতি করতাম। কিন্তু বস একদিন, বস একদিন একটা মেয়ের ওপর নজর রাখতে বলে, মেয়েটার ছবি আমাকে একবার দেখেয়েছিলো কিন্তু আমি ওই মেয়েকে কোথাও এতোদিন দেখতে পারিনি। কিন্তু গতকাল, গতকাল হুট করেই ওই মেয়েটিকে আমি দেখি। আমিও উনার কথা মতো মেয়েটার পিছু করতে থাকি। মেয়েটির নাম আইরাত, আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। বস আশরাফুল আহমেদের সাথে উনার মেয়েকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি। এর জন্য খুব করে তাকে খুজছিলো। আমরা জানতাম তিনি মারা গেছেন কিন্তু বস যখন জানতে পেরেছে যে তিনি বেচে আছেন তখন বস আবারও তার পিছু পরে যায়।

আব্রাহাম;; (কথা গুলো শুনে আব্রাহামের পা থেকে একদম মাথায় রক্ত উঠে যায়। হাত মুঠি বদ্ধ করে ফেলে) তাহলে এখন তোর বস কেন খুজছে, ওকে মেরে ফেলতে?!

ইকবাল;; না না মেরে ফেলতে নয় বস খুজছে কারণ বস তাকে ভালোবাসে,, যে করেই হোক উনাকে তার বানাতে চ……

লোকটি আর তার কথা শেষ করে উঠতে পারলো না তার আগেই আব্রাহাম আবার হাতে ছুরি নিয়ে লোকটার গলাতে একটানে চালিয়ে দিলো। রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে লোকটি। আব্রাহাম হাতে ছুরি নিয়ে রাগে ফুসছে। এতো কিছু করার পরও যেন আব্রাহামের রাগ থামলো না পুনরায় হাতে রিভলবার টা নিয়ে তাতে যতগুলো বুলেট ছিলো সবকটা লোকটির বুকে এবং পেটে ঢুকিয়ে দিলো। একদম ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো লোকটি। আব্রাহাম আবার শূন্য রিভলবারটা নিয়ে লোকটার মাথায় শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে আঘাত করলো। এক নিমিষেই তার মাথা ফেটে রক্তে চারিপাশ ভেসে যেতে লাগলো। আব্রাহামকে এখন কোন এক হিংস্র বাঘের থেকে কোন দিক দিয়ে কম লাগছে না। চেয়ার গুলো তুলে নিচে জোরে আছাড় দিলো। সাথে সাথেই তা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। রাগে থরথর করে কাপছে সে।

আব্রাহাম;; বেইমান, বিশ্বাসঘাতকের মুখে “ভালোবাসা” নামক শব্দ একদম বেমানান।

আব্রাহাম লোকটার কাছ থেকে দূরে সরে আসে। একহাত কোমড়ে ধরে অন্যহাতে নিজের মাথায় চুল শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। কোনভাবে রাগটাকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সে। তার বডিগার্ড রা আজ ভয়ে কাপছে কেননা এর আগে তারা আব্রাহামকে এমন করে কখনোই রাগতে দেখেনি।

আব্রাহাম;; যা জানার তা আমি জেনে ফেলছি। রাশেদ..

রাশেদ;; জ্বি, জ্বি স্যার (ভয় পেয়ে)

আব্রাহাম;; এই নর্দমার কীটকে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূরে ছুরে ফেলে আসো।

রাশেস;; জ্বি স্যার।

এই বলে আব্রাহাম হনহন করে গোডাউন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।








নিপা-আইরাত-রাত্রি বসে আছে এক কফিক্যাফের ভিতরে। তিনজন তিন কাজে ব্যাস্ত। নিপা তার কিছু ডিজাইন দেখছে, রাত্রি ফোন গুতাচ্ছে আর ছবি তুলতে ব্যাস্ত আর আইরাত আইসক্রিম খেতে।

তখনই আব্রাহাম এলো। যেহেতু আব্রাহামের লোকেরা আইরাতের ওপর কড়া নজরদারি রেখেছে তো আইরাত কোথায় কখন যাচ্ছে তা আব্রাহাম ক্ষণে ক্ষণে টের পায়। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেললো। সামনে তাকাতেই দেখলো আইরাতকে। কাচের দরজা ভেদ করে তাকে খুবই স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। একদম বাচ্চাদের মতো করে আইসক্রিম খাচ্ছে,, তার এলোমেলো চুলগুলো তাকে খুবই জ্বালাচ্ছে আর সে খানিক বিরক্তি নিয়ে তা সামলে নিয়ে আবার খাওয়াতে মনযোগ দিচ্ছে। আব্রাহাম তা দেখে এক মুগ্ধ হাসি হেসে দেয়।

নিপা;; এই তোরা শোন…

রাত্রি-আইরাত;;_______________

নিপা;; ওও হ্যালো,

কে শুনে কার কথা নিপা এই দিকে ডেকে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই কিন্তু রাত্রি ওর মন মতো একাধারে ছবি তুলেই যাচ্ছে আর আইরাত তো আইরাতই। নিপা এবার রেগে গেলো…

নিপা;; এই গাধার দল…

নিপার এমনভাবে ডাকাতে রাত্রি আইরাত দুজনই চমকে উঠলো। রাত্রি এতোটাই চমকে উঠেছে যে তার হাত থেকে ফোন সোজা নিচে পরে গেছে। আইরাতের মুখের আশেপাশে অনেক আইসক্রিম লেগে আছে। তা দেখে নিপা হেসে দিলো।

আইরাত;; কি হলো চিল্লালি কেন এভাবে?

নিপা;; হাহাহাহাহাহা😅…

রাত্রি;; এর মাথার তাড় গেছে, এই পাগল হয়ে গেছে।

নিপা;; আইরু তোর মুখ দেখ।

আইরাত তার ফোন বের করে ফোনের স্ক্রিনে তার ফেইস দেখলো। নিজে দেখে নিজেই বোকা বনে গেলো। আইরাত নিপার দিকে তাকিয়ে সবগুলো দাঁত বের করে দিলো এক হাসি। তারপর মুখ পরিষ্কার করে নিলো।

নিপা;; আচ্ছা শোন তোরা থাক আমার কিছু ডিজাইন সাবমিট করার আছে তো আমি যাই।

আইরাত;; আচ্ছা, Bye

নিপা;; Bye…

এই বলেই নিপা তাদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আইরাত তার আইসক্রিম শেষ করে ক্যাফে তে বিল মিটিয়ে আবার এসে বসে পরে। তখনই রাত্রি চিল্লিয়ে ওঠে..

রাত্রি;; হায়য়য়য়য়য়য় মে মারজাবা🥰

রাত্রির এমন করাতে আইরাত কপাল কুকচে রাত্রির দিকে তাকায়।

আইরাত;; হয়েছে টা কি!

রাত্রি;; এই দেখ এটা হচ্ছে “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী” কি পরিমাণ যে হ্যান্ডসাম উনি। দেখ দেখ ডিপি তে পিক আপ্লোড দিয়েছে কি যে সুন্দর লাগছে। আমি মনে হয় এবার ক্রাশ খেতে খেতেই মরে যাবো রে।

রাত্রির কথা শুনে আইরাতের মেজাজ চটে গেলো

আইরাত;; হুমম তো মরে যা না, কে বারণ করেছে।

রাত্রি তার ফোন ঘাটাঘাটি করছিলো তখন আব্রাহামের অফিসিয়াল পেজে তার ছবি দেখে এমন চিল্লিয়ে ওঠে। আর আইরাত একগাদা বিরক্তি নিয়ে রাত্রির এসবকিছু সহ্য করে যাচ্ছে। ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন আব্রাহাম দুম করে এসে আইরাতের পাশের সিটে বসে পরে।

আব্রাহাম;; এতোই যখন ক্রাশ তাহলে শুধু ফোনে কেন সামনাসামনিই দেখে নাও।

আব্রাহামকে দেখে আইরাতের চোখজোড়া যেন তার কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। ফাটা চোখে আইরাত তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাত্রি,, ও তো পারছে না এখানেই একদফা অজ্ঞান হয়ে পরে যেতে। আব্রাহাম আইরাতের এমন লুক দেখে ঠোঁট চেপে হাসছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে হালকা হাত তুলে বলল..

আব্রাহাম;; হে হাই

আইরাত;;___________

রাত্রি;; “আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম আহমেদ চৌধুরী”।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি (বাকা হেসে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে)

আব্রাহামকে দেখে আইরাত এক ঝটকায় বসা থেকে ওঠে পরে এবং রাগি চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; এই সাইকো টা এখানে আবার কি করে এলো আর কেনোই বা এলো (মনে মনে)

আইরাতকে এভাবে উঠে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে রাত্রি তার হাত ধরে টান দিয়ে আবার বসিয়ে দেয়।

রাত্রি;; বেবি ববেবিজান আআমাকে প্লিপ্লিজ একটু চিমটি কাট তো আসলে, আসলে আমি না বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমার সামনে দি গ্রেট আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী বসে আছে। বেবিজান আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না তো!!

আইরাত রাগ+বিরক্তি দুটোই নিয়ে রাত্রির দিকে তাকালো। রাত্রি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়েই আছে। আইরাত তা দেখে রাত্রির হাতে বেশ জোরেই একটা চিমটি কেটে দিলো। ব্যাথা পেয়ে রাত্রি চিল্লিয়ে উঠলো।

রাত্রি;; আআয়ায়াউউউচচচচচচ,, ইশশশশ এভাবে কেউ কাউকে মারে।

আইরাত;; তুই তো বললি।

রাত্রি;; হ্যহ্যহ্যালো, আমি আমি রাত্রি খান আর ও হচ্ছে আমার দিল কা টুকরা আইরাত। (অনেক বেশি এক্সসাইটেড হয়ে)

আব্রাহাম;; হেই বিউটিফুল লেডি ( রাত্রির দিকে তাকিয়ে)

রাত্রি;; oowww how cute!!

আব্রাহাম;; আমাকে চিনো?

রাত্রি;; আরেহহহ আপনাকে কেই বা না চিনবে। আপনি তো আমার পূর্ব জনমের ক্রাশ।

আব্রাহাম;; মনে হচ্ছে এখন আমিও ক্রাশ খাবো।

রাত্রি;; হাহাহা কি যে বলেন না (নেকামি)

আইরাত;; এহহহহহহ, ঢং দেখলে বাচি না (মনে মনে)

রাত্রি আর আব্রাহামের এমন ফ্লাট করা দেখে আইরাত মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে ঘুড়ে গেলো। আব্রাহাম শুধু আড় চোখে আইরাতের এমন কান্ড দেখছে আর মুখ চেপে হাসছে।

আব্রাহাম;; হেই গার্ল, আমরা এতো কথা বলছি কিন্তু তুমি এতো চুপচাপ কেন! (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)

আইরাত;; কারণ আমার আলতু ফালতু মানুষের সাথে কথা বলার মোটেও ইচ্ছে নেই।

রাত্রি;; যাহহ বাবা গেলো মান-সম্মান সব। আইরু বেবি প্লিজ তোর মুখ টা এখন একটু অফ রাখ প্লিজ আমার ক্রাশের সামনে আজ অন্তত আমার ইজ্জতের কাবাব বানাস না প্লিজ। (আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে কানে কানে বলে উঠলো)

রাত্রি;; আরে নাহ আব.. আসলে ও এমনই আর কি। কারো সাথে বেশি একটা কথা বলে না। আপনি ওর এমন আজগুবি কথায় কিছু মনে করবেন না (কথা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য মুখে জোরপূর্বক হাসি হেসে)

আব্রাহাম;; আরে না না কি বলো, কি মনে করবো। যে জিনিস গুলো নিজের নামে লেখা সেগুলো কথায় কিছু মনে করতে হয় না। (আইরাতের দিকে এক চোখে তাকিয়ে)

আইরাত বেশ করে বুঝতে পারলো যে আব্রাহাম কথাটা তার উদ্দেশ্যেই বলেছে। সে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। আর রাত্রি আব্রাহামের কথার আগা-মাথা কিছু না বুঝলেও তার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। রাত্রি আর আব্রাহাম সেই কখন থেকে লাগাতার বকবক করেই যাচ্ছে। আইরাতের মাথা ধরে গেছে এই দুই পাগলের পাল্লায় পরে। তারা তাদের মতো করে কথা বলেই যাচ্ছে হেসে হেসে আর তাদের মাঝখানে আইরাত নিরব দর্শকের মতো বসে আছে। কিন্তু আব্রাহাম রাত্রির সাথে কথা বললেও সারাক্ষণ আইরাতের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আর রাত্রি তো পারছে না আব্রাহামের গায়ে ঢলে পরতে যাতে করে আইরাত কিছুটা হলেও জ্বলছে। আইরাত আর সহ্য করতে না পেরে কাউকে কিছু না বলেই সোজা কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসে। রাত্রি আইরাতকে পিছন থেকে অনেকবার ডেকেও তার কোন সাড়া পায় না। অবশেষে আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; তো রাত্রি, আজ আমি আসি কেমন। অন্যদিক আবার দেখা হবে, ভালো থেকো আর হ্যাঁ তোমার ওই আধা পাগল কলিজার টুকরাটা কে দেখে রেখো ওকে।।

রাত্রি;; হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই (আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে)

আব্রাহাম রাত্রির সাথে কথা বলে চোখে আবারও সানগ্লাস পরে সেখান থেকে চলে আসে। আর রাত্রিও দৌড়ে আইরাতের পিছু পিছু চলে যায়।










💞💞চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 38

🤍🌸..
..
..
..
..
..

মেয়েরা আর যাই করুক না কেন নিজের হাসবেন্ডের ভাগ কাউকেই দেয় না। আর না ই তার ওপর কারো নজর দেওয়া সহ্য করতে পারে। আর কথায় আছে না যে “” Jealousy is the first sign of true love “”… তো এখন আমি শুধু তোমাকে জ্বলাবো। আমি বেশ ভালো করেই জানি যে তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো কিন্তু শুধু কিছু রাগ অভিমানের কারণে মুখ ফুটে বলছো না। কিন্তু সেই দিনও বেশি দূরে নেই যখন তুমি নিজে আমাকে ভালোবাসি বলবে জানপাখি। খুব তো বলতে যে ভালোবাসি না ভালোবাসি না। এখন আমি দেখবো যে তুমি কিভাবে না ভালোবেসে থাকতে পারো।

আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর আনমনেই কথা গুলো ভেবে যাচ্ছে। ড্রাইভ করে সে চৌধুরী ভবনের দিকে গেলো।

অন্যদিকে রাত্রি দৌড়ে দৌড়ে আইরাতের পিছু ছুটছে আর আইরাত একরাশ রাগ নিয়ে সোজা হেটেই যাচ্ছে।

রাত্রি;; আইরু আইরু বেবিজান একটু দাড়া না আরেএএএ শোন।

আইরাত;;______________

রাত্রি;; আরে আমার পুরো কথা টা তো শোন আইরু বেবিজান প্লিজ দাড়া, আমি আর পারছি না দাড়া আইরুউউউউ

আইরাত আরো জোড়ে হাটতে লাগলে রাত্রি দৌড়ে গিয়ে খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে…

রাত্রি;; উউউফফফফ এভাবে যাচ্ছিস কোথায়, কথা তো শুনে যাবি আমার নাকি (হাপাতে হাপাতে)

আইরাত;; কি করবো আমি দাঁড়িয়ে শুনি। তুই যা তোর ওই আব্রাহামের কাছে যা।

রাত্রি;; আরে বাবা আমি তো..

আইরাত;; ফ্লাট করছিলাম তাই না!!

রাত্রি;; হে আল্লাহহহ। আচ্ছা ওসব কথা এখন ছাড় তো।

আইরাত;; আমি বাড়ি যাবো এখনই।

রাত্রি;; আচ্ছা চল।

রাত্রি আইরাতের মুড অফ দেখে আর কিছু বললো না একদম বাড়ি চলে গেলো।

চৌধুরী ভবন………………….!!

আব্রাহাম;; বাপি (বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে)

আবির আহমেদ;; কিরে বাবা এসে পরেছিস!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আবির আহমেদ;; কিন্তু তুই যে একা, একা কেন তুই আইরাত মামনি কোথায়?

আব্রাহাম;; বাপিইইই (গলা জড়িয়ে ধরে)… বাপি আর মাত্র কিছুটা দিন খুব তাড়াতাড়িই আইরাত আমাদের সাথে থাকবে।

আবির আহমেদ;; তাই যেন হয় বাবা।

আব্রাহাম;; হতেই হবে। বাপি খিদে পেয়েছে আমার খুব আর আজকে আমি রাধবো।

হলরুমে আবির আহমেদ আর সাথে অয়নও বসে ছিলো কিন্তু আব্রাহামের এমন কথায় অয়নের যেন চোখ এখনই বেড়িয়ে আসবে। আবির আহমেদও কিছুটা কেশে আব্রাহামের দিকে তাকালো। কেননা আব্রাহাম এতোটা দিন রাতের বেলার কিছুই খেত না। বলতে গেলে তার জন্য রাতের খাওয়া এক প্রকার হারামই ছিলো। এলকোহল & সিগারেটই ছিলো তার রাতের আহার। কিন্তু আজ আব্রাহাম বললো খাবে তাও নিজে রেধে। এটা কিছুটা হলেও তার বাপি আর ভাইয়ের জন্য আশ্চর্যজনক।

আবির আহমেদ;; তুই আর রাতের খাবার…!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমিই বলছি যে আমি রাতের খাবার খাবো। এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?!

অয়ন;; মানে কিভাবে সম্ভব?

আব্রাহাম;; তুই চুপ কর, নিজে তো সারাদিনই খাস পেটুক কোথাকার।

আব্রাহামের কথায় অয়ন কিছু বললো না উল্টো হেসে দিলো। অন্যান্য দিন থাকলে অবশ্য দুজনের মধ্যে যুদ্ধ বেজে যেত। কিন্তু এতো বছর পর আজ আব্রাহাম তাকে এই নাম ধরে ডাকলো।
আব্রাহাম নাকি রাধবে আর কিছু না বলে তার বাপি কে বলে ওপরে চলে গেলো।

আবির আহমেদ;; অয়ন দেখেছিস আমার আব্রাহাম কতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে,, সেই আগের আব্রাহাম।

অয়ন;; সবকিছুই বউমনির কান্ড। বউমনি যদি না থাকতো তাহলে আমরা আর ভাইকে তার আগের রুপে দেখতে পারতাম না। বাপি, তুমি দেখো কালোর আধার এখন খুব তাড়াতাড়িই আমাদের পরিবার থেকে দূরে সরে যাবে আর বউমনি নিজেই সেই আলোর কিরণ হয়ে আসবে।

আবির;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম ফ্রেশ হয়ে এসে আবার সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। তার বাপি হাতে হাতে কাজ করে দিলে সোজা নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়। অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছুই দেখছে এবং আব্রাহামের লেগ পুল করছে। আব্রাহামের এমন ফুরফুরে মেজাজ দেখে আজ শুধু আবির আহমেদ-অয়ন না এমনকি বাসার সব স্টাফরাও চরম অবাক। কারণ রাগ যার নাকের ডগায় বসবাস করতো, মানুষ কিনা কথা টা পর্যন্ত বলতে ভয় পেত। আজ তাকে চাইলেও রাগানো যাচ্ছে না। আব্রাহাম অনেক হেসে হেসে কথা বলছে। বহুদিন পর এমন হাসি আব্রাহামের মুখে দেখা গেলো। মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে আব্রাহামের ভাংগা মন টা জোড়া লাগছে। আর তা সম্পূর্ণই আইরাতের জন্য। অবশেষে রান্না বান্না শেষ হলে আব্রাহাম সবকিছু টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে দিলো। তারা সবাই খেতে থাকলো। খাওয়ার মাঝখানেই আবির আহমেদ বলে উঠলেন…

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম..

আব্রাহাম;; বলো বাপি।

আবির আহমেদ;; সবসময় এভাবেই হাসিখুশি থাকবি। তোকে হাসিই মানায়। গোমড়া মুখ তোর ওপর একদমই বেমানান। আমার ডেসিং ছেলের চেহারাতে হাসিই ফুটে অন্য কিছু না।

আব্রাহাম;; 😊



দুলাল তার ঘরে শুধু একাধারে পায়চারি করেই যাচ্ছে। মুখে তার চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। হাতে ফোন নিয়ে কার কাছে যেন বারবার ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু ওপরপাশে ফোন না ধরাতে বিরক্তি নিয়ে আবার হেটেই যাচ্ছে।

দুলাল;; এই শালার বেটা ইকবাল ওর ফোন কেন ধরছে না!!

এই বলে দুলাল পুনরায় ফোন করে কিন্তু ফোন আবার সুইচ অফ বলছে। তখনই দুলালের ফোনে তমাল ফোন দিলো। দুলাল কপাল কুচকে ফোন ধরে বলে ওঠে..

দুলাল;; কিরে তুই এই সময়ে, কোন খবর আছে নাকি?

তমাল;; বস আপনি দ্রুত টিভি অন করুন।

দুলাল;; হয়েছে কি!

তমাল;; বস আপনি টিভি অন করুন তারপরই বুঝতে পারবেন।

দুলাল কিছুটা চিন্তা নিয়েই টিভি অন করলো। টিভি অন করার সাথে সাথেই খবরে ব্রেকিং নিউজে বলা হচ্ছে।
” ব্রেকিং নিউজ, নদীর ধারে পাওয়া গেছে এক বেওয়ারিস লাশ, যার কোন ঠিকানা বা পরিচয় পত্র কিছুই নেই”।

দুলালের খবর দেখে যেন তার মাথায় আগুন ধরে গেলো। কেননা লাশটা ইকবালেরই। লাশ টা বিচ্ছিরি অবস্থায় পরে আছে। যে কেউ দেখলে তার গা গুলিয়ে উঠবে। দুলাল অবাক চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিলো এবং ভাবছিলো যে এই রকম কাজ কে করতে পারে। ঠিক তখনই দুলালের ফোনে ফোন এলো। দুলাল ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার। ফোন রিসিভ করলে ওপর পাশ থেকে কন্ঠ ভেসে আসে..

দুলাল;; হ্যালো..

আব্রাহাম;; কিরে, কি ভাবছিস যে তোর এতো বিশ্বাসী একজন কে কেউ কিভাবে এমন করে মারলো! হাহাহা আমি মেরেছি।

দুলাল;; এইইইই কে তুই। এভাবে আমার লোকজন কে কেন মারছিস। কি চাস তুই? (রেগে)

আব্রাহাম;; তোর জান নিতে চাই আমার। তোকে নিজ হাতে খুন করতে চাই। এটা তো কেবল ট্রেইলার ছিলো ফুল পিকচার এখনো বাকি। তোর সাথে আমার কোন শত্রুতাই ছিলো না কিন্তু এর শুরু তুই নিজেই করেছিস। কিন্ত এর শেষটা করবো আমি। কি ভেবেছিস তুই! আমার জান আমার আইরাতের দিকে তোর নজর দিয়ে এতো সহজেই পার পেয়ে যাবি তুই। না, অনেক বড়ো ভুল করেছিস তুই দুলাল অনেক বড়ো। এর শোধ তোকে তোর জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হবে।

দুলাল;; এইই কেরে তুই, এভাবে ফোন করে আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস কেন, সাহস থাকলে আমার সামনে আয় তারপর নিজের ক্ষমতা দেখাস।

আব্রাহাম;; সামনে তো আমি আসবোই তাও খুব তাড়াতাড়ি। আর নিজের মৃত্যুকে তুই নিজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিস আসতে তো হবেই। এতোদিন যতোটুকু শান্তিতে থাকার থেকে নে কারণ এর পর তোর মরণের কাউন্ডাউন শুরু।

দুলাল;; তোকে তো আমি হ্যালো,, হ্যালো হ্যালো…

আব্রাহাম দুলালের কথা বলার আগেই ফোন কেটে দেয়। দুলালের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। রাগের বসে হাতে থাকা ফোন জোড়ে নিচে আছাড় মারে। খানখান হয়ে যায় ফোন মুহুর্তেই। ধপ করে সোফার ওপর বসে মাথা চেপে ধরলো সে।

আব্রাহাম তার ঘরে বসে থেকে এতোক্ষন দুলালকে হুমকি দিচ্ছিলো। তারপর ওয়াইনের এক আধো খাওয়া বোতল নিয়ে আবারও চুমুক দেওয়া শুরু করলো। খুব করে আইরাতের কথা মনে পরছে তার। খুব করে আইরাতকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু এখন চেয়েও কিছুই করতে পারবে না সে। আব্রাহাম এক চুমুকে তার পুরো ওয়াইন শেষ করে উঠে পরে। কালো এক হুডি পরে বের হয়ে পরে সে।



আইরাত নিপা রাত্রি তারা সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পরে। আইরাতের ঘুম না আসায় একটা বই সামনে নিয়ে পরা শুরু করে। পরতে পরতেই কখন যে ঘুমের ঘরে চলে যায় তা আইরাতের নিজেরও খেয়াল নেই।

কিন্তু ঘুমের মাঝেই আইরাত অনুভব করছে যে মুখের কাছেই কেউ ঝুকে বসে আছে। সে তার কপালে হাতের হালকা ছোয়া অনুভব করে। তাতে আইরাত কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। সে আর কেউ না আব্রাহাম নিজেই। আব্রাহাম আইরাতকে ছাড়া আর থাকতে না পেরে ছুটে আইরাতের ফ্লেটে চলে যায়। তারপর করিডর ডিংিয়ে সোজা আইরাতের রুমে ঢুকে পরে। গিয়েই দেখে আইরাত বিভর ঘুমে ঘুমন্ত। দেখেই আব্রাহামের কেমন জেন মায়া লাগতে শুরু করে। নিজের চোখের পিপাসা মিটাচ্ছে সে আইরাতের এই মায়াময় মুখখানা দেখে দেখে। আব্রাহাম একদম ধীর পায়ে আইরাতের পাশে গিয়ে বসে পরলো। আইরাতের মুখের দিকে ঝুকে গভীরভাবে তাকে দেখতে লাগে। আব্রাহাম আইরাতের সারামুখে তার চোখ বুলাচ্ছে। আইরাতের ঠোঁটগুলো কেমন যেন কাপছে যা আব্রাহাম কে আরো দৃঢ় ভাবে কাছে টানছে। আব্রাহাম আলতো করে তার সারা মুখে ফু দিয়ে দেয়। ঘুমের ঘোরেই আইরাত বুঝতে পারছে যে কেউ তাকে এক পলকে দেখেই যাচ্ছে। আইরাত হঠাৎ নিজের গলাতে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে। আব্রাহাম সাথে সাথে তার হাত সরিয়ে ফেলে এবং মুচকি হেসে ওঠে। আইরাতের হাত তার হাতে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে সে। সারারাত এভাবেই কাটিয়ে দেয় আব্রাহাম। এভাবেই আরো বেশ কিছুক্ষন আইরাতের পাশে থাকার পর যখন বাইরে প্রায় ভোরের আলো ফুটে ওঠে তখন আব্রাহাম আইরাতের কপালে এক গভীর চুমু দিয়ে আবার সেই করিডর দিয়েই চলে আসে।



সূর্যের কিরণ চোখে পররেই আইরাত তার চোখ-মুখ কুচকে ফেলে। মুখের ওপর হাত দিয়ে আলো আসতে বাধা দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকে সে। তারপর তার পাশে তাকাতেই দেখে রাত্রি আর নিপা বেঘোড়ে ঘুমোচ্ছে। আইরাত সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে পরে। বিছানাতে বসে দুহাত দিয়ে চোখ কচলাতে থাকে। আড়মোড়া ভেংে গায়ের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে যায় সে। নিজের জন্য এককাপ কড়া করে কফি বানিয়ে করিডরে চলে যায়। উস্কোখুস্কো চুলগুলোতে হাত দিয়ে কোন রকমে ঠিকঠাক করছে সে। মুখে কফির গরম চুমুক পরতেই চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললো সে। কিন্তু নিচ থেকে গাড়ির কান ফাটানো হর্নের শব্দে আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। পুনরায় শব্দ কানে ভেসে এলে আইরাত নিচে রাস্তার দিকে তাকায়। তাকিয়েই তার চোখ ছানাবাড়া। ফিক করে মুখের সব কফি বের হয়ে পরে। কাশি উঠে যায় একদম। কেননা নিচে আব্রাহাম তার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা এয়ায়য়ায়া বড়ো টেডিবিয়ার এবং অনেক গুলো লাভ সেপের বেলুন। আইরাত তীক্ষ্ণ চোখের আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারছে যে আইরাত রেগে গেছে। আর আইরাতের এমন ফেইস দেখে আব্রাহামের বেশ মজা লাগছে। আইরাতের রাগ আরো দ্বীগুন করার জন্য আব্রাহাম সেখান থেকেই তাকে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাই বলছে কিন্তু এবার আব্রাহাম চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগে…

আব্রাহাম;; Hay Babygirl,, Good Morning..!

আইরাত;; (শুধু রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আশেপাশে তাকাতাকি করছে)

আব্রাহাম;; আরে এভাবে আশেপাশে কি দেখছো এখানে আমি ছাড়া কেউ নেই। এখন শুনো তুমি জলদি করে নিচে নেমে এসো।

আইরাত;; কিহহহহহ, আপনার কি মাথা খারাপ নাকি। আমি যাবো নিচে তাও আপনার সাথে দেখা করতে লোকে কি বলবে!!

আব্রাহাম;; ওও মেলোড্রামা কুইন,, আমি বর হই তোমার। এতে লোকে কি বলবে আমি কেন শুনবো আজব তো। লিসেন, আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী কারো ধার ধারি না ওকে। সো জলদি নিচে নামো,Fast।

আইরাত;; না না একদম না আমি কোন মতেই নিচে যেতে পারবো না।

আব্রাহাম;; ঠিক আছে না আসলে আমিই ওপরে আসছি।

এই বলে আব্রাহাম ওপরে আসতে ধরে। তখন আইরাত জোড়ে চিল্লিয়ে আব্রাহামকে সেখানেই থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; এই না না না কি করছেন কি থামুন থামুন।

আব্রাহাম;; কি হলো তুমি তো বেবি নিচে নামতে পারবে না তাই আমিই আসছি।

আইরাত;; না না আপনার আসার কোন দরকার নেই প্লিজ আপনি আসবেন না তা না হলে কেলেংকারী বেধে যাবে প্লিজ।

আব্রাহাম;; তাহলে তুমি নিচে নামো এখনই জলদি।

আইরাত;; আচ্ছা আমি আসছি, আসছি।

আইরাত নিপা এবং রাত্রির দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে তারা এখনো ঘুম। এই সুযোগে আইরাত ঘর থেকে খুব সাবধানে ধীর পায়ে বেড়িয়ে পরে।










🌺🌼চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-34+35

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 34

💞💞..
..
..
..
..
..

In Chowdhury group & Industries…..
.
.
.
.
.

আব্রাহাম;; শহরের প্রতিটি জায়গায় জায়গায় খোঁজ করো। কোন একটা জায়গা যেন বাদ না যায়। আর হ্যাঁ প্রত্যেকটা হস্পিটালও খুব ভালোভাবে চেক করবে। গত দুই বছরের সব রেকর্ডস্ চেক করো। কখন কোন পেসেন্ট আসলো, নাম কি ইভেন ঠিকানা পর্যন্ত। আর সব ইনফরমেশন আমার চাই, Is it clear?!

_______;; Yes sir..

আব্রাহাম এতক্ষণ নিজের কেবিনে বসে ফোনে অস্থির হয়ে কথা বলছিলো। আব্রাহাম আবারও এসে বসে পড়লো। বসতেই ওপরে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। অয়নও আব্রাহামের কেবিনেই বসে বসে ফাইল দেখছিলো। আর আড় চোখে তার ভাইকে দেখছে। অয়ন এবার ফাইল গুলো বন্ধ করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…

অয়ন;; ভাই আবারও কি শুরু করলি তুই?

আব্রাহাম;; __________

অয়ন;; কেন এমন করছিস?

আব্রাহাম;; কি করেছি!

অয়ন;; কি করেছিস তুই জানিস না। পুরো ফোর্স যেখানে রাত-দিন এক করে খোঁজ করেও পায় নি আবার তুইও তোর যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে গেছিস তবুও বউমনিকে পাস নি। তাহলে কেন আবার এতো টা বছর পর এমন করছিস?!

আব্রাহাম;; অয়ন ট্রাস্ট মি, আমি আইরাতকে দেখেছি। আমি আমার নিজেকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু আইরাত, আমি আমার আইরাতকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল কোনদিনও করবো না। সেই চোখজোড়া, সেই ঠোঁট, সেই মায়াভরা মুখ আমি কোনভাবেই ভুলতে পারি না, পারবো না। কেন বিশ্বাস করছিস না যে আমি আইরাতকে দেখেছি। ও আছে।

আব্রাহামের কথায় এবার অয়নের রাগ উঠে গেলো। কারণ সে বুঝতে পারছে যে দিন দিন তার ভাইয়ের মাথা যাচ্ছে। একজন সুস্থ-বুঝমান মানুষের পক্ষে এমন আজগুবি কথা বলা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই না।

অয়ন;; Enough দাভাই, অনেক হয়েছে আর না। এমন ছেলেমানুষী করার মানে কি। তুই কি অবুঝ বুঝিস না কিছু, কেন এমন করছিস সত্যি টা তুইও জানিস আর আমরাও তাহলে কেন মেনে নিচ্ছিস না বলতো। মৃত একজন মানুষ যে কিনা এক বছরের বেশি হয় মারা গিয়েছে সে আবার কি করে ফিরে আসতে পারে বুঝা আমাকে তুই।

অয়নের “মৃত” কথাতে সেকেন্ডেই আব্রাহামের মাথায় রাগ চড়ে বসে। আব্রাহাম চেয়ারে বসে হাতে করে কাচের গ্লোব ঘুরাচ্ছিলো। অয়নের এমন কথায় ঠাস করে হাতে থাকা গ্লোবটা নিচে ছুড়ে মারে। সেটা টুকরো টুকরো হয়ে যায় সাথেই সাথেই। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে পরে…

আব্রাহাম;; অয়ন Mind your language,, যেটুকু বলেছিস সেখানেই থেমে যা। মানে কি তোর মৃত মানে কি। আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি আইরাতকে আর তা কোনভাবেই ভুল হবে না। যেই আমি কিনা হাজার হাজার মানুষ কে মারি তাকে অন্তত তুই মৃত আর জীবিত এর মধ্যে পার্থক্য শিখাস না। কোনটা হেলুসিনেশন আর কোনটা বাস্তব তা আমি অনেক ভালো করেই জানি। (রেগে)

অয়ন আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায় কেননা সে আব্রাহামকে রাগাতে চায় না। এখন রাগ উঠলেই উল্টো পাল্টা একটা কিছু করে বসবে। তাই যা করার তাকে তা করতে দেওয়ার ভালো। দেখা যাক এর শেষ পরিনতি কি হয়।
আব্রাহাম শুধু রাগে ফুসছে। সেখানে আর না দাঁড়িয়ে কেবিন থেকে দ্রুত হেটে বের হয়ে পরে। অয়ন আবারও সেখানে চুপ করে বসে পরে এবং ভিতরে থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে।

_____________________

আব্রাহাম সেখানে থেকে চলে এসে অফিসের করিডরে দাঁড়ায়। একহাত পকেটে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে,, এখন তার মাথায় শুধু একই ভাবনা যে করেই হোক আইরাতকে তার খুঁজে বের করতেই হবে। যাই হোক আইরাতকে তার সামনে চাই। আব্রাহাম সিগারেট জ্বালিয়ে তার মুখের কাছে ধরলো। খানিক বাদেই ফোন আসলো তার।

রাশেদ;; স্যার, Good news.. আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।

আব্রাহাম;; What!

রাশেদ;; স্যার, আমি সকল হস্পিটালের রেকর্ডস্ & সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি।

আব্রাহাম;; কি পেলে?

রাশেদ;; স্যার, স্যার আইরাত ম্যামকে এই হস্পিটালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে।

আব্রাহাম;; What, really! (অনেক চমকে + খুশি হয়ে)

রাশেদ;; জ্বি স্যার এবং এখানে একটা ফাইল ছিলো সেটা আইরাত ম্যামের নামেই। কিন্তু…

আব্রাহাম;; কিন্তু কি!

রাশেদ;; স্যার এই ফাইলে নিপা নামে একজনের সাইন আছে। আর আমি এগুলো হস্পিটালের রিসিপশনিস্ট এর কাছ থেকে পেয়েছি। দু বছর আগে যে ডাক্তার ছিলো তিনি বর্তমানে রিটায়ার্ড।

আব্রাহাম;; যাই হোক হস্পিটালের নাম কি?

রাশেদ;; স্যার “সিটি হস্পিটাল”।

রাশেদের বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের দৌড়িয়ে অফিস থেকে বের হতে দেরি না। আব্রাহামকে এভাবে দৌড়িয়ে বাইরে যেতে দেখে অফিসের সবাই অবাক। ড্রাইভার কে সাথে না নিয়ে নিজেই একা একা ড্রাইভ করে চলে যায়। অয়ন উপর থেকে নিচে দেখে যে আব্রাহাম দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। অয়ন কিছু না বলে ভিতরে চলে আসে। ঝড়ের গতিতে ড্রাইভ করে চলেছে আব্রাহাম। ১০ মিনিটের মধ্যে সিটি হস্পিটালে পৌঁছে যায়। আব্রাহাম যাওয়ার সাথে সাথে রাশেদ তার দিকে এগিয়ে আসে।

রাশেদ;; স্যার এসেছেন।

আব্রাহাম;; ফুটেজ কোথায়?

রাশেদ;; স্যার এদিকে আসুন।

রাশেদ আব্রাহামকে রিসিপশনের কাছে নিয়ে গেলো।

রিসিপশনিস্ট;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী Right!

আব্রাহাম;; You know me?!

রিসিপশনিস্ট;; আপনাকে কেই বা না চিনে,, So sir how can i help you?

আব্রাহাম;; Can i saw the CCTV footage and all patients paper from the last two years?!

রিসিপশনিস্ট;; Sure sir,, here you go..

আব্রাহামের সামনে গত দু বছরের সব সিসিটিভি ফুটেজ রাখা হলো। এতো গুলো ফুটেজ একসাথে দেখা খুবই মুশকিল।

আব্রাহাম;; আচ্ছা এখানে আইরাত নামে কোন পেসেন্ট এসেছিলো কি?

রিসিপশনিস্ট;; স্যার একটু চেক করে দেখতে হবে। Wait a minute…

আব্রাহাম;; হুমম

রিসিপশনিস্ট;; জ্বি স্যার এখানে প্রায় এক বছরেরও অনেক আগে একজন মেয়ে এসেছিল তার নাম আইরাত। আর এই হচ্ছে তার পেপার।

আব্রাহাম;; আচ্ছা তার সাথে আরো কে কে এসেছিলো বলতে পারবেন কি? (পেপার হাতে নিয়ে)

রিসিপশনিস্ট;; সরি স্যার, আমরা পেসেন্টের পারসোনাল এতো কিছু ঘাটাঘাটি করি না। কিন্তু উনার নামে যে পেপার রয়েছে সেখানে নিপা খান নামে একজনের সই আছে।

আব্রাহাম;; হুমম তা দেখেছি। আচ্ছা এই নিপা খানের এড্রেস টা কি দিতে পারবেন প্লিজ?

রিসিপশনিস্ট;; জ্বি স্যার। স্যার, উনার এড্রেস হচ্ছে “চার রাস্তার মোড়, রোড নং ১০২ এবং বাসা নং ৫৫।

আব্রাহাম;; Thank you so much for your information…

রিসিপশনিস্ট;; স্যার আসলে আপনাকে আটকানোর সাধ্য তো আর আমাদের নেই কিন্তু Sir if you Don’t mind can i ask you a question?

আব্রাহাম;; Yes

রিসিপশনিস্ট;; এই আইরাত নামে মেয়েটাকে আপনি এতো হন্ন হয়ে কেন খুজছেন। কে হয় উনি আপনার?

আব্রাহাম তার কথা শুনে মৃদু হাসে।

আব্রাহাম;; আমার পুরো অস্তিত্ব,, আমার বউ হয়।

রিসিপশনিস্ট;; ওহ আচ্ছা,, Have a happy life sir…

আব্রাহাম;; Yeah (মুচকি হেসে)।











নিপা;; কিরে তোরা কি করিস?

আইরাত;; আর বলিস না, কিছু পেন্ডিং কাজ পরে ছিলো তাই করে নিলাম।

নিপা;; রাত্রি কোথায়?

আইরাত;; ওর নাকি শরীর টা ভালো লাগছে না তাই সুয়ে আছে।

নিপা;; আবার হঠাৎ করেই কি হলো ওর?

আইরাত;; মাথা ব্যাথা।

নিপা;; ওহহ

আইরাত;; আচ্ছা শোন, আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে বুঝলি।

নিপা;; এই সময়ে বাইরে কেন?

আইরাত;; আসলে আমি না কিছু লেহেঙ্গার ডিজাইন দেখে এসেছিলাম, সেগুলোই নিতে যেতে হবে।

নিপা;; আচ্ছা যা, কিন্তু একাই যাবি?

আইরাত;; হ্যাঁ আমি বরং একাই যাই আর তুই রাত্রিকে দেখে শুনে রাখিস।

নিপা;; আচ্ছা যা সাবধানে যাস।

আইরাত;; ওকে জানু, লাপ্পিউ Bye…

আইরাত নিপার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।









অন্যদিকে আব্রাহাম প্রচুর স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। নিপার ঠিকানাতে যাচ্ছে সে। যেহেতু আইরাতকে হস্পিটালে নিপাই নিয়ে গিয়েছিলো তাহলে আইরাতের সাথে এখন সেই রয়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ আব্রাহাম জলদি করে তার পাওয়া জায়গায় চলে গেলো। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সামনে তাকাতেই দেখলো একটা বাড়ি রয়েছে। ৫৫ নাম্বার বাড়িই এটা। তবে বাড়িটাতে কেমন যেন একটা পুরনো পুরনো ভাব রয়েছে। আব্রাহাম এগিয়ে গেলো, গিয়েই আলতো করে দরজাতে টোকা দিলো। প্রথমে না খুললে, দ্বিতীয়বার আবার টোকা দিলে ভিতর থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বের হয়ে আসলো। আব্রাহাম তাকে দেখে খানিক অবাকই হলো।

আব্রাহাম;; আব…. আসলে এখানে কি নিপা নামে কেউ থাকে?

মহিলা;; নিপা! (মহিলাটি নিপা নাম শুনে কিছুটা ভাবতে লাগলো)

আব্রাহাম;; জ্বি নিপা, নিপা খান।

মহিলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ নিপা খান। আমি ওকে চিনি তো। আগে এখানেই থাকতো। তার সাথে আরো একটা মেয়ে থাকতো। তবে এখন আর এখানে থাকে না।

মহিলাটির কথায় আব্রাহামের মুখে হাসি ফুটে ওঠে সে ভাবে সে মেয়েটি আর কেউ না আইরাত। তাই তড়িঘড়ি করে আব্রাহাম তার ফোন বের করে আইরাতের ছবি মহিলাটির সামনে ধরে এবং বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; দেখুনতো এই মেয়েটি কিনা, নিপার সাথে কি এই মেয়টি ছিলো?

মহিলাটি আব্রাহামের কাছ থেকে ফোন টা আরো কাছে নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো।

মহিলা;; না না এই মেয়ে ছিলো না তো।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে ছিলো না! (মূহুর্তেই আব্রাহামের মুখের মৃদু হাসি খানা উবে গেলো)

মহিলা;; না তার সাথে মেয়ে ছিলো ঠিকই কিন্তু এই মেয়ে না। কি যেন নাম মেয়েটার (একটু ভেবে) ইশশ কি যেন কি যেন নাম,,,, হ্যাঁ রাত্রি। রাত্রি নাম ছিলো তার, নিপারই বোন হয় সে।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা, এখন তারা কোথায় থাকে তা কি বলতে পারবেন?

মহিলা;; না তা তো বলতে পারবো না।

আব্রাহাম;; জ্বি আচ্ছা, ধন্যবাদ।

মহিলা;; জ্বি।

আব্রাহাম কিছুটা হতাশ মুখেই ফিরে এলো মহিলাটির কাছ থেকে। এতো টা কাছে পেয়েও পেলো সে তার আইরাতকে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তো আব্রাহাম নয়। একবার যখন আইরাতকে সে দেখেছে তাহলে আকাশ-পাতাল এক করে হলেও তাকে খুঁজে বের করে আনবেই। আব্রাহাম ধীর পায়ে এসে আবার গাড়িতে ওঠে বসে পড়লো। দু হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলতে লাগলো সে। প্রতিনিয়ত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে যাচ্ছে সে আইরাতকে ভেবে কিন্তু এখন মনে হয় আবার সে তার ঘুমানোর কারণ খুঁজে পাবে। কিছু ছোট্ট বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের আওয়াজে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো সে। দেখলো যে বাচ্চারা আইসক্রিমের মিনি দোকানের সামনে খুশিতে লাফাচ্ছে। আব্রাহামের তৎক্ষনাত আইরাতের কথা মনে পরে গেলো। আইরাতও বাচ্চা দের অনেক পছন্দ করতো। বাচ্চাদের সাথে খেলা, দৌড়াদৌড়ি করা হয়েই থাকতো তার। নিজে তো বড়ো হয়ে গেছে কিন্তু তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাচ্চামো স্বভাবটা এখনো যায় নি। আব্রাহামের মুখে অনেকদিন পর এক দীর্ঘ হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে বাচ্চাগুলোর কাছে চলে যায়। বাচ্চাগুলো কে অনেক আইসক্রিম-চকলেট কিনে দেয়। বাচ্চাগুলোর তা পেয়ে খুশির যেন সীমা নেই। অনেক হাসছে আর লাফাচ্ছে। আব্রাহাম নিজেও তাদের সাথে বাচ্চা হয়ে গেছে। তাদের সাথে কথা বলছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।




আইরাত বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা তে উঠে পরে।

আইরাত;; মামা একটু জলদি যান প্লিজ।
রিকশাওয়ালা;; যে আপু এইতো আইসা পরছি।
আইরাত;; ব্যাস ব্যাস মামা এখানেই নামিয়ে দিন আমাকে।

আইরাত রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে আসে। আইরাত তাকিয়ে দেখে এটা রোড নং ১০২। আইরাত তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাকে যেন call দেয়। আইরাত কথা বলতে লাগে।

আইরাত;; তুলি, কোথায় তুই?

তুলি;; আরে এইতো এইতো এসে পরেছি আমি। তুমি কোথায় আছো?

আইরাত;; আরে আমি ১০২ নাম্বার রোডে এসে দাড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি আয়।

তুলি;; আমি দুইমিনিটের মধ্যে আসছি, তুমি ওখানে থেকো।

আইরাত;; আচ্ছা ঠিকআছে।

আইরাত ফোন কেটে দিয়ে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে আইরাত যার কাছ থেকে লেহেঙ্গার সব ডিজাইন নিতে এসেছে সে তুলি, তার বাসায় কখনো যায় নি। তবে এই তুলির সাথেই আইরাত কাজ করে। তাদের অনেক ছোট হয় তুলি। তার বাসাও ১০২ নাম্বার রোডেই।
আইরাত রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের ঠিক পিছনের রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম কিন্তু একে ওপরের চোখের অগোচরে। আব্রাহাম বাচ্চাদের সাথে আছে। আর আইরাত একরাশ বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কেন জানি আব্রাহামের ভিতরে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করছে। আগে তার আশেপাশে আইরাত থাকলে যেমন তার একটা শান্তি লাগলো এখনো ঠিক তেমিনই অনুভুতি কাজ করছে মনে। আব্রাহাম তার সামনে কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকালো। ডানে বামে বার বার দেখছে সে। এদিকে আইরাত তার হাতের ঘড়ি দেখছে আর সামনে তাকাচ্ছে। অল্প কিছু সময়ের পর তুলি দৌড়ে আইরাতের সামনে এসে দাড়ালো।

তুলি;; এইরে সরি সরি সরি সরি।

আইরাত;; এতো দেরি, তুই বলেছিলি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবি কিন্তু উল্টো আমাকেই তোকে ফোন করে ডেকে আনতে হলো।

তুলি;; সরি বোনু সরি আর হবে না তো।

আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে হয়েছে।

তুলি;; হুমম এবার চলো তাড়াতাড়ি।

আইরাত;; চল।

আইরাত চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আব্রাহাম পিছন ফিরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে কেউই নেই। আব্রাহাম পিছনে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু একটা বাচ্চা আব্রাহামের হাত ধরে টান দেওয়াতে আবারও সামনে ঘুড়ে তাকায়। বাচ্চাদের সাথে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে পরে।

আব্রাহাম;; হ্যালো রাশেদ

রাশেদ;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; আমি গিয়েছিলাম নিপা কে খুঁজতে কিন্তু এখন তিনি ওই বাসায় থাকেন না। বর্তমানে যে থাকেন তিনি নিপা কে চিনলেও আইরাত কে চিনেন না। তো এই নিপা এখন কোথায় থাকে তার ঠিকানা আমার চাই। তাও আবার একদিনের মধ্যেই।

রাশেদ;; স্যার আপনি কালকের মধ্যেই সব কিছু পেয়ে যাবেন।

আব্রাহাম রাশেদের সাথে কথা বলে গাড়ি সোজা বাসার দিকে নিয়ে নেয়।





In চৌধুরী ভবন..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম আসতেই লিজা গিয়ে মেইন দরজা খোলে দেয়। আব্রাহাম লিজাকে দেখে তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

আব্রাহাম;; বাপি বাড়ি এসেছে?
লিজা;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে দৌড়ে তার বাপির কাছে চলে যায়। গিয়ে দেখে তার বাপি আর অয়ন একসাথে বসে আছে।

আব্রাহাম;; বাপি

আবির আহমেদ;; এসব কি শুনছি আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; কি বাপি! (অবাক হয়ে)

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি…

আব্রাহাম;; বাপি, যা শুনেছ একদম ঠিক শুনেছ। আমার আইরাত, আইরাত ঠিক আছে। ইভেন আমি আইরাতকে নিজ চোখে দেখেছিও। আইরাতের এক্সিডেন্ট হয়, এক্সিডেন্ট হওয়ার পর নিপা নামে একজন তাকে হস্পিটালে নিয়ে যায়। আমি সব সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি বাপি। আমার আইরাত আছে বাপি। (তার বাপিকে জড়িয়ে ধরে)

আবির আহমেদ কে এবং অয়ন কে সবকিছু খুলে বলার পর তারা চরম অবাক হয়ে যায়। আবির আহমেদ ধপ করে বসে পরে। চোখ দিয়ে তার অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরে। অয়নও এই ভেবে অবাক হচ্ছে যে তার দাভাইয়ের কথাই ঠিক ছিলো।

অয়ন;; সরি দাভাই তোকে অবিশ্বাস করার জন্য।

আব্রাহাম;; (আব্রাহাম কিছু না বলে অয়নকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে)

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা, তুই এখন যেকরেই হোক যেভাবেই হোক আইরাত মাকে বাড়িতে নিয়ে আয়। আমার ঘরের লক্ষিকে ঘরে নিয়ে আয়। আমার বাড়িটা আবার তার প্রাণ ফিরে পাবে।

আব্রাহাম;; সেদিন আর বেশি দূরে নেই বাপি। খুব শীঘ্রই আইরাত এই বাড়ি চলে আসবে।

আব্রাহাম তার বাপি এবং অয়নের সাথে কথা বলে ওপরে তার ঘরে চলে আসে।











🌹🌹চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 35

💜💐..
..
..
..
..
..

সারারাত আব্রাহাম ঘুমোতে পারে নি, আইরাতের চিন্তায় চিন্তায় সারারাত নির্ঘুম পার করে দিয়েছে। চোখজোড়া বন্ধ করলেই আইরাতের সেই চেহারা চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে। ঠিক মতো না পারে খেতে, কাজ করতে, ঘুমোতে কিচ্ছু না। আইরাতকে না পাওয়া পর্যন্ত তার মনে-প্রাণে শান্তি নেই। অন্যান্য দিনের মতো আজও নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে লাগলো। সারারাত পার হওয়ার পর ভোরের দিকে চোখ লেগে আসে তার।
.
.
.

পরেরদিন~~

আব্রাহাম অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে ছিলো। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেংে যায় তার। ছোট ছোট চোখেই ফোন রিসিভ করে সে। ওপর পাশ থেকে রাশেদের কন্ঠ ভেসে আসলে দ্রুত উঠে পরে সে।

আব্রাহাম;; কোন খবর পেলে?

রাশেদ;; স্যার বলেছিলাম না যে করেই হোক আপনাকে সকালের মধ্যেই সকল খবর এনে দিবো। স্যার এই নিপা খান নামে মেয়ে একটা ফ্লাট নিয়ে থাকে। উনার ঠিকানা “বিসিক রোড, ফ্লাট নং ০৩”।

আব্রাহাম;; রাশেদ আমি বলে বুঝাতে পারবো না যে তুমি আমার কতো বড়ো একটা কাজ করে দিয়েছ। আমি রাখছি।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম উঠে ফ্রেশ হয়ে জলদি করে নিচে নেমে পড়লো। হলরুমে আসতেই অয়নের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।

অয়ন;; আরে দাভাই এতো জলদি জলদি কোথায় যাচ্ছিস?

আব্রাহাম;; অয়ন, আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বুঝলি। আজ আমি কোন ভাবেই অফিসে যেতে পারবো না প্লিজ তুই সবকিছু সামলে নিস।

অয়ন;; আচ্ছা ঠিকআছে তা তো বুঝলাম কিন্তু….

আব্রাহাম;; কোন কিন্তু না আমি যাই এখন আমার অনেক তাড়া আছে Bye..

আব্রাহাম এই বলে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত হেটে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরলো। আব্রাহাম কোন দিকে খেয়াল না করেই ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। প্রায় ২০ মি. পরে বিসিক রোড নামক জায়গায় এসে পরলো সে। ফ্লাট নং ৩ খুজতে লাগলো। কিছুটা সামনে এগোতেই দেখলো অনেক উঁচু একটা বিল্ডিং। সেদিকেই আব্রাহাম চলে গেলো, কিন্তু মুখে মাস্ক পরে।



রাত্রি;; ঘরে স্নেক্সস্ জাতীয় কিছুই নেই।

আইরাত;; আর আমার সব চোকলেট & আইসক্রিমও শেষ 😒

নিপা;; বলছিস কাকে, শেষ তো বাইরে গিয়ে নিয়ে আয় যা।

রাত্রি;; ননা ওই তো আমার না আসলে মাথা ব্যাথা। আর আমার কিছু কাজ ও আছে তাই আমি যেতে পারবো না।

আইরাত নিপার দিকে তাকালে নিপা সোজা অন্যদিকে ঘুড়ে যায়। আইরাত আহত দৃষ্টিতে রাত্রি এবং নিপার দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; এক একটা কাম চোর, সব কিছু আমাকেই করতে হবে বাহ ভালোই। বাইরেও যাবো আমি, বাজারেও যাবো আমি বাহ ভালো না। থাক তোরা দেখিস তোদের জন্য আমি কিছুই আনবো না সবকিছু নিজেই খেয়ে শেষ করে ফেলবো।

রাত্রি-নিপা;; 🤪

আইরাত তাদের দুজনকে বকতে বকতে কোন রকম চুল বেধে বাইরে বের হয়ে গেলো। নিপা আর রাত্রি হেসেই কুটিকুটি।



আব্রাহাম বিল্ডিং এর ভিতরে যেতেই বিল্ডিং এর কেয়ার টেকার আব্রাহামকে হাত দিয়ে আটকে দেয়। আব্রাহামের বেশ রাগ উঠে যায় এতে। রক্তচোখে কেয়ার টেকারের দিকে তাকায়।

কেয়ার টেকার;; Excuse me, আপনি কে আর এভাবে ভিতরে কেনো যাচ্ছেন?

আব্রাহাম কিছু না বলে মুখের মাস্ক টা হালকা করে খুলে…

আব্রাহাম;; আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আব্রাহামের নাম শুনতেই কেয়ার টেকারের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি করে হাত নামিয়ে দিয়ে বলল..

কেয়ার টেকার;; সসসরি সরি স্যার, আমি বুঝ বুঝতে পারি নি রেলি ভেরি সরি স্যার।

আব্রাহাম;; এটা ০৩ নাম্বার ফ্লাট!

কেয়ার টেকার;; জ্বি, জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; নিপা খান নামে কেউ এখানে থাকে?

কেয়ার টেকার;; নিপা খান,, জ্বি স্যার থাকেন। ওপরের পাচঁ তালায় তিনি থাকেন।

আব্রাহাম আর কিছু না বলে ভিতরে চলে আসে। সামনে এসে লিফট দেখতে পেলে আব্রাহাম পাচঁ তালার বাটনে প্রেস করে। কিন্তু কাজ করে না। পুনরায় প্রেস করলে আবারও কাজ করে না। অন্য লিফটে গেলে সেখানে দেখতে পায় ওপরে লেখা “Closed”। আব্রাহাম আর কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে হেটে ওপরে যেতে লাগে।

___________________

আইরাতও বেরিয়ে পরে লিফটের কাছে যায়। লিফটের বাটনে চাপ দিলে কাজ করে না। আইরাত বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। তখন ফ্লাটের দারোয়ান এসে দেখে যে আইরাত কোমড়ে হাত দিয়ে বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দারোয়ান;; আরে আইরাত আফা যে,,

আইরাত;; ওহ মামা এসেছ তুমি। ভালো করেছ, আচ্ছা লিফটের কি হয়েছে কাজ করছে না কেন?

দারোয়ান;; আফা লিফটের তো কাজ চলতাছে। দুইদিন এমনই থাকবো। করার কিছুই নাই এহন নিচে সিড়ি দিয়া যাতায়াত করতে হইবো।

আইরাত;; উউফফফ আল্লাহ। আচ্ছা মামা থাকো আমি গেলাম।

দারোয়ান;; আইচ্ছা আফা।

আইরাত সেখান থেকে এসে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগে। একদিকে আব্রাহাম সিড়ি দিয়ে ওপরে যাচ্ছে আর একদিকে আইরাত নিচে নামছে। কিন্তু আইরাতের ফোন আসায় সে আবার থেমে যায় এবং ফোনে কথা বলতে লাগে। আব্রাহাম দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে ওপরে যাচ্ছে। আইরাতের কথা বলা শেষ হলে ফোন রেখে আবার হাটা ধরে। আইরাত সোজা গিয়ে বামে যায়। আব্রাহামও তার দিক থেকে সোজা গিয়ে ডানে যায়, তারপর মোড় ঘোড়ে। আইরাত তার ব্যাগের ভিতরে দেখতে দেখতে সামনে যাচ্ছে। ব্যাগের দিকে নজর থাকাতে আইরাতের তার সামনে তেমন একটা খেয়াল ছিলো না। আরো সামনে এগোতেই একটা শক্ত কিছুর সাথে অনেক জোড়ে বারি খায়। বারি খাওয়ার সাথে সাথেই আইরাত তার মাথা চেপে ধরে “আহহ” করে ওঠে। মাথায় হাত দিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে কুচকে ফেলে। মাথা ডলতে থাকে সে। কিন্তু যার সাথে বারি খেয়েছে তার যেন দুনিয়া চারিদিকে চক্কর খাচ্ছে। মাথায় পুরো আকাশ ভেংে পরেছে তার। ফাটা চোখে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে। কারণ, আইরাত যার সাথে বারি খেয়েছে সে আর কেউ না স্বয়ং আব্রাহাম। আইরাতকে দেখে তার এক সেকেন্ড ও লাগে নি চিনতে। আব্রাহামের ভিতরে মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। দম নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। এক গভীর শ্বাস নিল এবং টপ করেই তার চোখ দিয়ে একবিন্দু পানি গড়িয়ে পরলো। আব্রাহাম পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে কিন্তু আইরাত এখনো তার মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

আইরাত;; ইশশশশশ,, আজকে সকালে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। পুরো দিন টাই মাটি। সেই সকাল থেকে কিছু না কিছু একটা আমার সাথে হয়েই যাচ্ছে। এই বাইরে যাও, তারপর লিফট নষ্ট আর এখন এই খাম্বা। এই কেরে দেখে শুনে হাটতে পারে না নাকি। আস্ত খাম্বা একটা।

আইরাত তো চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে। সামনে তাকিয়ে দেখছেও না যে কে দাঁড়িয়ে আছে। অবশেষে আইরাত তার সামনে তাকালো। তাকাতেই আইরাতের বুক টা কেমন ধুক করে উঠলো। কেননা আব্রাহাম যতই মাস্ক পরে থাকুক না কেন আব্রাহামের সেই নীলাভ চোখজোড়া আইরাতের খুব চিরচেনা। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আইরাত পুরো পুরি আব্রাহামকে এখনো চিনতে পারেনি। আইরাত এতোক্ষণ এতো বকবক করলো কিন্তু সামনে তাকাতেই তার বলতি যেন বন্ধ হয়ে গেলো। আইরাত আর কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে আবারও সামনে এগিয়ে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম, আব্রাহাম যেন একটা ঘোরের মাঝে রয়েছে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে সে মাত্রই আইরাতকে দেখেছে। তার জীবনের বেচে থাকার কারণ কে সে আবারও ফিরে পেয়েছে। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে থাকতে হিমশিম খেয়ে গেলো। যার জন্য কয়েক কদম পিছিয়েও গেলো। চোখে তার নোনা জল। কিন্তু সামনে তাকিয়ে আইরাতকে না দেখে আব্রাহামের হুশ ফিরে আসলো। আব্রাহাম আইরাতের পিছে ছুট লাগালো। আইরাত নিজের মতো করে যাচ্ছিলো। কিন্তু তখনই আব্রাহাম তীব্রবেগে আইরাতের সামনে এসে তার পথ আগলে ধরলো। আইরাত প্রচন্ড অবাক হয়ে সামনে তাকায়। আব্রাহামের চাহনি দেখে আইরাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। সবকথা দলা পাকিয়ে গলায় আটকা পরে গেছে। চেয়েও কিছুই বলতে পারছে না সে।

আইরাত;; ককে আআপনি, আর এএভাবে আমার পথই বা কেকেন আটকে ধরে রেখেছেন। সামনে থেকে সরুন। (খুব কষ্টে কথা টা বলল)

আব্রাহাম কিছু না বলে শুধু আইরাতকে দেখেই যাচ্ছে। যেন হাজার যনমের পিপাসা মিটাচ্ছে। এ যেন মরুভূমিতে এক ফোটা পানির আস্বাস। চোখজোড়া তে এক আলাদা শান্তি অনুভব হচ্ছে।

আব্রাহামকে কিছু বলতে না দেখে আইরাত আবারও বলে উঠলো…

আইরাত;; কি হলো কথা কি কানে যাচ্ছে না নাকি। পথ ছাড়ুন আমার।

আইরাতের কথা শুনে আব্রাহাম ধীরে ধীরে তার মুখের মাস্ক খুলে ফেললো। আইরাতের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে আব্রাহাম।

আব্রাহামকে দেখে আইরাত যেন আর নিজের মধ্যে নেই। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে তার। এতো দিন পর কি তাহলে তার কালো অতীত আবার সামনে এসে পরলো। আইরাতের হাত থেকে তার ব্যাগ নিচে পরে গেলো। হাত-পা একাধারে কেপেই যাচ্ছে তার। আইরাতের নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে তার সামনে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের এখন খুব করে ইচ্ছে করছে যেন আব্রাহামকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিন্তু সে অপারক। চেয়েও পারবে না সে, এক অজানা বাধন তাকে বাধা দিচ্ছে। আইরাত তাড়াহুড়ো করে তার চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো। নিচ থেকে তার ব্যাগ তুলে আবার সামনে হাটা ধরলে শুধু কয়েক কদমই যেতে পারে সে। আব্রাহাম তার আগেই খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেললো। হাত ধরে জোড়ে টান দিয়ে আবার নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আব্রাহাম সাথেই সাথেই আইরাতকে অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরে। এমন আকস্মিক কান্ডে আইরাত অবাক।

আব্রাহাম;; জাজাজানপাখি আমার,, আইরাত। (কথা বলতে পারছে না গলা ধরে আসছে তার)

আইরাত;;_________________

আব্রাহাম;; তুমি ঠিক আছো, আমার সামনে আছো। আমি জানতাম তোমার কিছুই হয় নি। তুমি একদিন না একদিন আমার কাছে ঠিকই ফিরে আসতে। কিন্তু জানো সবাই না শুধু শুধু আমাকে ভুল বোঝে। কেউ তোমার মতো করে আমাকে বুঝতেই চায় না। জানো জানপাখি তোমাকে আমি কতো জায়গায় খুঁজে বেড়িয়েছি। এমন কোন জায়গা নেই যে তোমাকে খুঁজি নি কিন্তু কোথাও পায় নি। এন্ড ফাইনালি আজ তোমাকে আমার সামনে পেয়েছি। তুমি ভাবতে পারবে না জানপাখি আজ আমি কতোটা খুশি। জীবনের পাতায় যদি আমার পাওয়া স্মৃতিময় কোন দিন থাকে তাহলে তা হলো আজকের দিন। আমি, আমি তোমাকে হারিয়ে আবারও খুজে পেয়েছি। আমি আমার বেচে থাকার মূলমন্ত্র পেয়ে গেছি। জানো তুমিহীন আমি এতোদিন পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা দিন, এক একটা রাত কি করে পারি দিয়েছি তা কেবল আমিই জানি। তুমি বিনা আমি শূন্য আইরাত, আমি নিঃস্ব। তুমি আছো বলেই আমি আছি। পারবো না আইরাত আমি পারবো না তোমাকে ছেড়ে বাচতে। প্লিজ ছেড়ে যেও না আর কখনো। তা না হলে আমি মরেই যাবো। ভালোবাসি জানপাখি। ভালোবাসি সবচেয়ে বেশি।

আইরাত কিছুই বলছে না শুধু চুপচাপ এই কথা গুলো শুনেই যাচ্ছে আর অগোচরে চোখের পানি ফেলছে।
আইরাত অনেক নড়াচড়া করতে শুরু করলো। ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক এদিক-ওদিক করছে সে। একসময় নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে অনেক জোড়ে ধাক্কা দিলো আব্রাহাম কে। আব্রাহাম তাতে কিছুটা পিছিয়েও গেলো। আইরাত রাগি দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো…

আইরাত;; হ্যাঁ আমি মরি নি, বেচে আছি আমি। কেন এতে খুশি হননি আপনি। নাকি আমাকেও আমার বাবা-মার সাথেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি। আর ভালোবাসা, ঠিক কোন ভালোবাসার কথা বলছেন আপনি। যে কিনা নিজের স্ত্রীর বাবা মাকে নিজ হাতে খুন করতে পারে সে অন্য যে কাউকেই খুন করতে পারে। আপনার ওপর একফোটা ভরসাও নেই আমার। আপনাকে তো আমি নিজ হাতে শুট করেছিলাম কিন্তু আপনার ভাগ্য ভালো যে আপনি প্রাণে বেচে ফিরেছেন। আর কি যানেন আমি এতোদিন পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি আপনার কাছ থেকে যেন আপনি আমার ধারে কাছেও না ঘেসতে পারেন। কিন্তু আপনি তো নাছড়বান্ধা ঠিক আমার পিছনে আবার এসে পরেছেন। কি চান এখন কি চান আপনি। এখন কি আমাকেও মারতে এসেছেন আপনি। আমার বাবা-মাকে মেরে কি খ্যান্ত হননি আপনি।

আইরাত এক নাগারে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের কথা গুলো শুনে অবাকের চরম পর্যায়। এই ভেবে যে আইরাত এখনো তার মনে এতো বড়ো একটা ভুল ধারণা বয়ে বেড়াচ্ছে। আর আইরাত এখন তাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করে।

আব্রাহাম;; আইরাত কি বলছ তুমি এসব। তুমি এখনো এই ভেবে বসে আছ। এতো বড়ো একটা ভুল ধারনা এখন নিয়ে আছ তুমি। এতো টা বছর ধরে। For god sake আইরাত এখন তো সত্য টা জানো তুমি।

আইরাত;; কি জানবো, কি জানবো আমি। কি সত্যি, কোন সত্যি জানার কথা বলছেন আপনি। আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি আপনাকে খুন করতে। এখন কি আমি আমার নিজ চোখকেও অস্বীকার করবো। প্লিজ আপনার কাছে আমি হাত জোর করছি আমাকে আপনি আমার হালে ছেড়ে দিন। আমি এখন যেমন আছি ভালো আছি। আপনার স্ত্রীর উপাধী নিয়ে আমি আর থাকতে চাই না। প্লিজ পথ ছাড়ুন আমার।
.
.
.

আইরাত চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আবারও আইরাতের হাত ধরে সামনে টেনে আনে। আইরাতের হাতগুলো পিছনে মুড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে। কোঠর চাহনি তে আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।













❤️🥀চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-32+33

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 32

🌿🌿🍃..
..
..
..
..
..

রাত্রির চিল্লা চিল্লিতে আইরাত জলদি বেরিয়ে Ash কালার একটা গোল জামা পরে রেডি হয়ে নিলো। আইরাত, রাত্রি & নিপা সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে ওঠে বাইরে বেড়িয়ে পড়লো।

রাত্রি;; এই দেখ তো সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে নিয়েছিস কিনা?

আইরাত;; ________________

রাত্রি;; কিরে

আইরাত;; ________________

রাত্রি;; এই বয়রা,, কোথায় হারিয়ে গেলি এই যে ডাকছি। আচ্ছা তোর কি হয়েছে বলতো?

আইরাত;; আরে ক ককই ননা তো কিকিছুই হয় নি। আর হ্যাঁ কি যেন বলছিলি, ওহ হুমম সব ঠিকঠাকই আছে।

রাত্রি;; কিছুতো একটা হয়েছে।

আইরাত;; তোর মুন্ডু হয়েছে গাধি (মাথায় বারি দিয়ে)

নিপা;; আচ্ছা শোন সেখানে গিয়ে কিন্তু এক মিনিটও দেরি করা যাবে না ঠিকআছে। সাথে সাথে কাজে লেগে যাবি। প্রচুর কাজ বাকি.. (ড্রাইভ করতে করতে)

আইরাত-রাত্রি;; যো হুকুম মহারানি..

নিপা;; চুপ থাক ফাজিলের দল।

এভাবেই সারা রাস্তা খুনশুটি করতে করতে তারা চলে গেলো। এক সময় বিয়ে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো। আইরাত-রাত্রি তড়িঘড়ি করে সকল জিনিসপত্র এক এক করে গাড়ি থেকে নামাতে লাগলো। গাড়ি থেকে নামতেই কনের বাবা হুমড়ি খেয়ে তাদের সামনে গেলো।

রফিকুল রহমান;; আরে এসে গেছো তোমরা, কিন্তু আজ এতো দেরি হলো যে!

রফিকুল রহমানের কথায় রাত্রি অগ্নি চোখে আইরাতের দিকে তাকালো। আইরাত বেপার টা বুঝতে পেরে চুপচাপ অন্য পাশে তাকিয়ে নখ খেতে লাগলো। এমন একটা ভাব নিল যেন সে কিছুই জানে না। অথচ দেরি হয়েছে তার জন্যই।

নিপা;; আরে চাচ্চু আর বলবেন না,, রাস্তায় এতো ঝনজাট যে কি বলবো। তাই একটু দেরি হয়ে গেলো আর কি। কিন্তু এখন এসে পরেছি তো চট জলদি সবকিছু গুছিয়ে ফেলবো।

রফিকুল রহমান;; হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো জানিই,, তোমাদের ওপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে। নাও নাও এবার জলদি ভিতরে এসো দেখি।

রফিকুল রহমান তাদের কাজের লোককে ডেকে এনে গাড়ি থেকে বাকি জিনিস গুলো ভিতরে নিয়ে যেতে বললেন। ভিতরে যেতেই তারা কাজে লেগে গেলো। বিয়ে বাড়ির কাজ বলে কথা শ্বাস নেওয়ার সময় টুকু নেই। আইরাত চলে গেলো পেন্ডেল সাজাতো এবং কোথায় কি ফুল বসবে তা দেখতে। রাত্রি সেই ফুল গুলো আনতেই আবার বাইরে চলে গেলো। আর নিপা বাগানের পাশে বসার সিট গুলো ডেকোরেট করতে চলে যায়। তাদের সাথে অন্যান্য কিছু স্টাফ রাও এসেছে কাজ করে দিতে কেননা এতো বড়ো বাড়ির কাজ তো আর তিনজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে তারা কিছুটা ঘাবড়ে আছে আইরাতকে দেখে। কাজের ক্ষেত্রে আইরাত একটু রাগি আর বদমেজাজি নামেই পরিচিত সবার কাছে। কোন কিছু হেরফের হওয়া চলবে না,, সবকিছুই পারফেক্ট হওয়া চাই তার।

আইরাত পেন্ডেলের কাছে চলে গেলো। গিয়েই তার মাথা ৪৪০° গরম। পেন্ডেলে লাগাতে বলেছিলো সাদা আর গোলাপি কালারের কাপড় আর এরা লাগিয়েছে সোনালী কালারের। আইরাত তো রাগে শেষ।

আইরাত;; আব্বে ওওও আকাল কে দুশমান। এই কি করেছ কি তোমরা হ্যাঁ।

রনি(একজন স্টাফ);; কেন আপু কোন সমস্যা হয়েছে?

আইরাত;; কিইইইই সমস্যা হয়েছে মানে। পুরো পেন্ডেলের থিম পালটে দিয়ে এখন বলছ যে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা!!

রনি;; আসলে আপু….

আইরাত;; কি আসলে আসলে করছ। আমি তোমাদের বলেছিলাম যে পেন্ডেল White & Pink কালারের কম্বিনেশনের হবে আর তোমরা কি করেছ পুরো টা সোনালী কালারের করে রেখে দিয়েছ। (অনেক রেগে)

রনি;; সরি আপু,, আচ্ছা আমরা আবার ঠিক মতো করে দিচ্ছি

আইরাত;; নাহ থাক, অনেক করেছো তোমরা যার নমুনা আমার দেখা হয়ে গেছে। এখন সরো দেখি আমাকে করতে দাও এমনিতেই হাতে সময় খুব অল্প।

আইরাত অনেক বকাঝকা করে তাদের সরিয়ে দিলো। তারপর নিজে ওপরে ওঠে সব কাজ করতে লাগলো। এরই মধ্যে রাত্রি সব ফুল নিয়ে এসে পড়লো। রাত্রি ফুলের বড়ো ঝুড়ি গুলো আনতে হিমশিম খাচ্ছে। রাত্রির একা করতে সমস্যা হচ্ছে বলে নিপা তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এলো।

নিপা;; আরে দে দেখি আমিও করছি।

রাত্রি;; না না থাক আমি একা করে নিতে পারবো তুই ভিতরে আইরাতকে দেখ পেন্ডেলের কাজ হচ্ছে কিনা!

নিপা;; আরে ওকে দেখতে হবে না। তুই জানিস না ও তিন চারজনের কাজ একাই করে নিতে পারে। কিন্তু কালার চয়েজে কিছু প্রবলেম হয়েছিলো বলে অনেক রাগারাগি করেছে।

রাত্রি;; হাহাহা,, তা আর নতুন কি। উলটা-পাল্টা কিছু একটা দেখলেই ওর মাথা নষ্ট।

নিপা;; 😅,, এবার তাড়াতাড়ি এগুলো নিয়ে এসে পড়।

রাত্রি-নিপা ভিতরে আসলে অর্ধেক ফুলগুলো দিয়ে দেয় গাড়ি সাজাতে এবং অন্য কাজে আর বাকি গুলো পেন্ডেলের কোণায় থোকা থোকা করে সাজানোর জন্য।
এভাবেই সবাই কাজ করতে থাকলো। সারাদিন অনেক তোড়ঝাপ করে কাজ শেষ হলো তাদের। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। কাজ শেষ করতেই এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো তিনজনেই। বাড়ির সবাই তাদের কাজ দেখে মহাখুশি। যেই দেখছে সেই খুশিতে ডগমগ। নিপা-রাত্রি-আইরাতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবথেকে বেশি সুন্দর হয়েছে বিয়ের পেন্ডেল। যেই দেখছে সেই বাহ বাহ করছে। তাদের কাজের বেশ সুনাম করলো সবাই। কাজ শেষে টেবিলে বসে আছে তারা।

রাত্রি;; উফফফফফ আমি শেষ। এই গরমে এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে কাজ করা যায় নাকি। ঘেমে নেয়ে একাকার। এই পানির বোতল এদিকে দে।

আইরাত;; নে ধর। যাই বলিস আমার থেকে বেশি কাজ করিস নি

রাত্রি;; কিইইই তুই, তুই এই কথা বলতে পারলি আইরু।

আইরাত;; অবশ্যই পারলাম।

রাত্রি;; তুই তো শুধু পেন্ডেলের কাজ করেছিস আর আমি তো এই কড়া রোদে বাইরে ঘুড়েছি।

নিপা;; এই তোরা দুইজন থামবি।

আইরাত;; আমি অনেক টায়ার্ড রে।

নিপা;; দাঁড়া তোর টায়ার্ড দূর করছি,চল।

আইরাত;; কোথায়?

নিপা;; ফুচকা খেতে।

আইরাত;; কিইইইইইইই ফুচকা😍

রাত্রি;; না চিল্লিয়ে চল।

নিপা;; তোরা একটু দাঁড়া আমি রফিকুল চাচ্চুর সাথে কথা বলে আসছি। তাকে বলে না গেলে আবার মন খারাপ করবেন।

আইরাত;; হুমম যা।

নিপা রফিকুল রহমানের সাথে কথা বলে সব কিছু বুঝিয়ে চলে আসে। তারপর তারা গাড়িতে উঠে চলে যায়।












অন্যদিকে,, আব্রাহাম তার প্রেস মিটিং শেষ করে বেড়িয়ে পরে। গন্তব্যহীন ভাবে ড্রাইভ করে লাগে সে। ড্রাইভ করতে করতে এক নদীর ধারে এসে পরে। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো সে। সবুজ মাঠ, আশে পাশে অনেক গাছ-গাছালি, তারই মাঝখানে
বয়ে চলেছে এক ছোট নদী। নদীতে সাদা পালকের হাসেঁরা সাতার কেটে বেড়াচ্ছে। আবার অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে। আবহাওয়া অনেক মোনমুগ্ধ। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। নেমে গাড়ির পাশেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। তার ওপরের কোর্ট টা খুলে কাধেই ডান হাতের দু আঙুল দিয়ে ধরে রইলো। এখান থেকে কিছুটা দূরে একটা কফি শপ আছে। ঠিক এখানেই এক বৃষ্টি ভেজা দিনে আব্রাহাম আইরাতকে দেখেছিলো ভিজতে। কে জানতো যে সেদিনের সেই দেখাটাই আব্রাহামের বাঁচা মুশকিল করে দিবে। আব্রাহাম আনমনেই কথা গুলো ভাবছে। এই স্মৃতি গুলোই দিনকে দিন আব্রাহামকে যেমন বাঁচিয়ে রেখেছে তেমনই ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে।
আব্রাহাম সেখানেই হাত ভাজ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে লাগলো।







আইরাত;; আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,,, এই থাম থাম এখানেই গাড়ি থামা বলছি।

নিপা;; আরে আরে হয়েছে কি, চিল্লাচ্ছিস কেন?

আইরাত;; আরে ফুচকায়ায়ায়ায়ায়া।

রাত্রি;; একে কে পাগলা গারদ থেকে ছাড়লো!

আইরাত;; চুপ থাক পেত্নি।

আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো ফুচকার দোকান চোখে পরতেই এভাবে চিল্লিয়ে ওঠে। আইরাত আর কাউকে কিছু না বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে পরে এবং দৌড়ে ফুচকার দোকানে চলে যায়।

নিপা;; রাত্রি তুই ও নেমে পর দেখি।

রাত্রি;; __________________

নিপা;; রাত্রি, এই রাত্রি।

পিছন থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিপা পিছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে রাত্রি নেই, নিপা আবার বাইরে তাকায় দেখে যে রাত্রিও অলরেডি নেমে চলে গেছে। নিপা অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে।

নিপা;; এই দুটো কে নিয়ে আমি কি যে করি।

নিপা ও গাড়ি সাইডে করে নেমে পরে।

আইরাত;; মামা, জলদি জলদি চার প্লেট ফুচকা বানাও। ঝাল অনেক অনেক বেশি দিবে।

রাত্রি;; ওয়েট, আমরা তো তিনজন তাহলে ফুচকা প্লেট চারটা কেন?

আইরাত;; তোদের জন্য দুটো আর আমার একার জন্য দুটো।

রাত্রি;; 😑

আইরাত;; মামা তাড়াতাড়ি।

আইরাত-রাত্রি-নিপা তিনজনেই একসাথে ফুচকা খেতে লাগলো। আইরাতের তো অন্য কোন দিকে হুশ ই নেই সে তার নিজের মন মতো খেয়েই যাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে।

নিপা;; বইন একটু আস্তে খা প্লিজ।

আইরাত;;______(খেয়েই যাচ্ছে)______

রাত্রি;; ওকে কিছু বলে লাভ নেই,, শুনবে না। তুই খাওয়া শুরু কর।

নিপা মগার মতো তাকিয়ে থাকে। ডান পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত নাক ডুবিয়ে খাচ্ছে বাম পাশে রাত্রিরও একই অবস্থা। নিপা হাসবে না কাদঁবে খুজে পায় না। সেও খেতে শুরু করলো।

খাওয়া শেষে এক একজন নাকের জলে চোখের জলে হয়ে গেছে। ঝালে এক একটার নাজেহাল দশা। ধীরে ধীরে পানি খেয়ে তারপর ঠিক হলো। তারা সবাই দাঁড়িয়ে আছে তেমন সময় হঠাৎ আকাশ মেঘলা হয়ে এলো।

রাত্রি;; কিরে আকাশ এমন হয়ে এলো কেন। বৃষ্টি হবে নাকি আবার!

নিপা;; একটু আগেই না দেখলাম সবকিছু ভালো এখন আবার কি হলো।

রাত্রি-নিপা কথা বলার মাঝেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলো। একদম মুশুলধারে বৃষ্টি। নিপা আর রাত্রি দৌড়ে এক ছাউনির নিচে চলে গেলেও আইরাত যায় না। সেই বৃষ্টির মাঝে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।

নিপা;; আরে আইরু তাড়াতাড়ি এদিকে এসে পড়। ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, আরে ঠান্ডা লেগে যাবে তো৷ শরীর খারাপ করবে তাড়াতাড়ি আয়।

রাত্রি;; বেবিজান প্লিজ দাঁড়িয়ে থাকিস না বৃষ্টিতে ওভাবে। এখানে আয়।

আইরাত;; আরে থাকি না এখানে। দেখ বৃষ্টিতে ভিজতে কত্তো ভালো লাগে। বৃষ্টির প্রতি টা ফোটা যেন মন ছুয়ে যায়। মন খোলে অনুভব করতে শিখ। এ যেন নতুন তালে জীবনকে বাচঁতে শেখায়। তোরাও আয় না দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তোরাও ভিজ।

নিপা;; না বাপু তুই ই ভিজ,, শখ নেই জ্বর-ঠান্ডা লাগানোর।

আইরাত;; তোরা যে রুচিবোধ ছাড়া মানুষ তা আমি আগে থেকেই জানতাম। না ভিজলি আমি তো ভিজবো।

আইরাতের এটা অনেক পুরনো স্বভাব। বৃষ্টি দেখলে আর কোন দিকে কোন হুশ জ্ঞান থাকে না তার। দুনিয়া উলটে গেলেও তাকে ভিজতেই হবে। নিপা আর রাত্রি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আইরাতের এই সব পাগলামি দেখতে থাকলো। আর আইরাত তো আইরাত ই। সে কোন দিক না ভেবে নিজের মনের সুখে ভিজেই যাচ্ছে। একবার রাস্তার এপাশ তো আবার রাস্তার ওপাশ। আইরাতের এসব বাচ্চামি দেখে নিপা আর রাত্রি গালে হাত দিয়ে বসে থাকে।





প্রচন্ড পরিমানে বৃষ্টি শুরু হলে নদীর আশেপাশের লোকজন সবাই জলদি উঠে চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে একই জায়গাতে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের ওপর বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোটা পড়াতে আব্রাহামের খেয়াল হয় যে অনেক জোড়ে সোড়েই বৃষ্টি নেমেছে। কিন্তু তাতেও যেন কোনরকম হেলদুল নেই তার। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে আব্রাহাম। আকাশ পানে তাকিয়ে বৃষ্টির পানিকে উপভোগ করতে লাগে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি যেন আইরাতের কথায় মনে করিয়ে দিচ্ছে তাকে। আব্রাহাম এবার গাড়ি থেকে কিছুটা দূর সরে আসে। জনমানব হীন রাস্তায় একা একা বৃষ্টিতে হাটতে লাগে। আব্রাহামের মাথার চুলগুলো ভিজে টপ টপ করে পানি ঝড়ছে। পানিতে গায়ের সাদা শার্ট টা শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে ধরেছে। এভাবেই হেটে এগিয়ে যেতে লাগলো আব্রাহাম। বেশকিছুটা এগিয়ে গিয়ে আব্রাহাম তার দুহাত মেলে দিয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লো। মুখখানা ওপরের দিকে তুলে দুহাত দুদিকে মেলে দিয়েছে সে। ঠিক আইরাতকে যেভাবে প্রথম দিন দেখেছিলো আজও আব্রাহাম ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আব্রাহামের জীবন থেকে আইরাতের চলে যাওয়ার পর, প্রত্যেক টা সময় যখনই বৃষ্টি হয় আব্রাহাম এভাবেই ভিজে। কোন এক মূহুর্ত মিস দেয় না। এটাও একটা পথ নিজের হারানো আইরাতকে অনুভব করার এবং নিজের চোখের জল বৃষ্টির ফোটায় বিসর্জন দেওয়ার।

ওদিকে আইরাত ও খুব করে ভিজছে। এবার নিপা সত্যি অনেক রেগে গেলো। রেগে চিল্লাতে থাকলো আইরাতের ওপর।

নিপা;; আইরাত দেখ এবার কিন্তু খুব বেশি বারাবারি হয়ে যাচ্ছে। তুই যে এভাবে ভিজেই যাচ্ছিস জ্বর আসলে তোর খবর আছে। এবার কি তুই বৃষ্টি থেকে ওঠে আসবি নাকি মার খাবি কোনটা?!

আইরাত;; এইরে ক্ষেপেছে,, এখন আর না যেয়ে উপায় নেই কি আর করার চলে যাই আর অনেকক্ষনই তো ভিজলাম। বাই-বাই বৃষ্টি (মনে মনে)

আইরাত;; আরে হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি।

আইরাত এসে পরবে কিন্তু তার আগে একবার পিছন ফিরে তাকায়। দেখে যে একটা বেশ লম্বাচওড়া লোক মাঝ রাস্তায় বৃষ্টিতে দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির অনেক জোড় থাকার ফলে তা স্পষ্ট ভাবে দেখা মুশকিল। আইরাত আবছা ভাবে দেখছে লোকটাকে। আইরাত লোকটির দিকে কিছুটা কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকলো। আইরাতের খুব ইচ্ছে করছে লোকটাকে দেখার কিন্তু বৃষ্টির তেজে তা দেখা প্রায় অসম্ভব।

নিপা;; আইরাত দেখ বৃষ্টি আরো জোড়ে নামছে প্লিজ তাড়াতাড়ি উঠে আয় নয়তো পরে বাড়ি যেতে পারবো না।

আইরাত লোকটির দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু তখন ওপর পাশ থেকে নিপার কড়া গলা ভেসে এলে আইরাত সেখান থেকে নিজের চোখ সরিয়ে দ্রুত চলে আসে। এ যেন দুজনের দেখা হয়েও দেখা হলো না। আইরাত দৌড়ে রাত্রি আর নিপার কাছে চলে আসে। আইরাতকে দেখে নিপার মাথায় হাত। ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আইরাত দাঁড়িয়ে নিজের কাপড় ঝাড়তে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

রাত্রি;; দেখো কান্ড,, এভাবে কেউ ভিজে। যদি তোর রাতে জ্বর এসেছে তো দেখিস কি করি।

আইরাত;; 🤪😝 কিছুই করতে পারবি না।

নিপা;; চল তো এক একটা জলদি গাড়িতে ওঠ।

রাত্রি-আইরাত আর কোন কথা না বলে সোজা গাড়ি তে উঠে বসলো। বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো তারা। কিছুক্ষন পরই আইরাত শীতে থরথর করে কাপতে লাগলো। রাত্রি তার বেগ থেকে একটা বড় টাওয়াল বের করে আইরাতের মাথা মুছে দিতে লাগলো। বাড়ির দিকে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।







In চৌধুরী ভবন…….

আবির আহমেদ;; নাহ, আমি বুঝতে পারছি না যে এই তীব্র বৃষ্টির মধ্যে ছেলেটা গেলো কোথায়?! (আব্রাহামের চিন্তায় চিন্তিত হয়ে)

অয়ন;; বাপি তুমি চিন্তা করো না হয়তো ভাই রাস্তায় আটকা পরেছে। বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে আসলেই ভাই এসে পরবে।

আবির আহমেদ;; আচ্ছা মানলাম রাস্তায় আটকা পরেছে কিন্তু ফোন, ফোন কি দোস করেছে। ও ফোন তুলছে না কেন?! (হাতে ফোন নিয়ে বারবার আব্রাহামের নাম্বারে call করে)

অয়ন;; বাপি তুমি আগে শান্ত হও প্লিজ।

অয়নের কথার মাঝেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসে। বাড়ির সিকিউরিটি মেইন গেট খুলে দিলে গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। গাড়ির শব্দ পেয়ে অয়ন বলে ওঠে….

অয়ন;; এই দেখো দাভাই বলতে বলতেই এসে গেছে। তুমিও না বাপি শুধু শুধু এতো চিন্তা করো, এতে উল্টো তোমারই শরীর খারাপ করে। এবার চল দেখি।

আবির আহমেদ;; হ্যাঁ হ্যাঁ চল।

অয়ন, আবির আহমেদ উঠে আব্রাহামের কাছে যেতে ধরবে তার আগেই আব্রাহাম ঘরের ভিতরে আসে পুরো ভিজা অবস্থায়। আব্রাহামকে এইভাবে দেখে আবির আহমেদ ও অয়ন বেশ অবাক হয়।

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম, তোর এই অবস্থা কেন। এভাবে ভিজলি কি করে, যদি জ্বর আসে তখন?!

আব্রাহাম;; __________________

অয়ন;; দাভাই তুই এভাবে কিন্তু কেন। তুই তো কখনোই বৃষ্টিতে ভিজিস না তাহলে আজ!

আব্রাহাম;; মন চাইলো তাই ভিজেছি।

অয়ন খেয়াল করলো যে আব্রাহামের চোখ ভীষণ ভাবে লাল হয়ে আছে এবং ফুলে আছে। অয়নের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আব্রাহাম নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হাজারো অশ্রুবিন্দু লুকানোর জন্যই মূলত বৃষ্টিতে ভিজেছে।

আব্রাহাম;; বাপি আসলে আমি আমার রুমে যাই। আমি ফ্রেশ হবো আর আমার ভালো ঠেকছে না,, I need rest…

আবির আহমেদ;; আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেতে আসিস।

আব্রাহাম;; না বাপি আমি কিছু খাবো না।

আবির আহমেদ;; তাহলে আমি স্টাফকে দিয়ে তোর রুমে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আব্রাহাম;; বাপি আমি খাবো না ক্ষিদে নেই। একা থাকতে দাও আমায় প্লিজ।

এই বলে আব্রাহাম দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে জোড়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আব্রাহাম চলে গেলে আবির আহমেদ ক্ষিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অয়ন তার বাপির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে…

অয়ন;; বাপি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। অন্ধকারের পর যেমন আলো আসে ঠিক তেমনই খারাপ সময়ের পর ভালো সময়ও আসে। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো।
আবির আহমেদ;; হুমমম। আমিও সেই ভালো সময়ের অপেক্ষায় আছি।
..
..
..
..
..

এদিকে আইরাত চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এলো। হাঁচি করতে করতে তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। রাত্রি বসে বসে খাতা কলম নিয়ে কি যেন একটা করছে। তখন আইরাত ওর পাশে এসে বসে পড়লো। আইরাত একমনে হাঁচি করেই যাচ্ছে। নাকের ডগা একদম টমেটোর মতো লাল করে ফেলেছে। চোখ অনেকটাই ফুলে গেছে।

আইরাত;; হাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াচ্ছিইইইইইই…..

রাত্রি;; আহায়ায়া, আস্তে বইন আস্তে। হাজার বার বারণ করেছি বৃষ্টির পানিতে ভিজিস না ভিজিস না,, কিন্তু না কে শুনে কার কথা। ইচ্ছে মতো ভিজলি এখন ঠেলা সামলা।

আইরাত;; এই এই তুই তুতুতুই হায়ায়ায়ায়াচ্ছি,, তুই চুচুপ করবি নাকি লাথি খাবি হায়ায়ায়ায়াচ্ছি। একদম রাগাবি ননানা আম হায়ায়ায়ায়ায়াচ্ছি।

রাত্রি;; হিহিহিহিহিহি,, আগের তো নিজেকে সামলা ধলা বিলাই।

আইরাত;; রাত্রিইইই,, হায়ায়ায়ায়াচ্ছি। ও আল্লাহ আমি শেষ গো।

নিপা;; যেমন কর্ম তেমন ফল। কথা তো একটুও শুনিস নি এবার বুঝ। (হাতে গরম স্যুপের বাটি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে) নে এবার তাড়াতাড়ি করে এটা খেয়ে নে। ভালো লাগবে।

আইরাত;;কিহ আরে না না আম আম হায়ায়ায়াচ্ছি, আমি এটা খেতে পারবো হায়ায়ায়ায়াচ্ছি না। অন অনেক বাজে খেতে হায়ায়ায়ায়াচ্ছি প্লিজ না।

নিপা;; আচ্ছা হয়েছে এবার চুপ কর আর কথা বলতে হবে না। চুপচাপ এটা খেয়ে নে। ঠান্ডার জন্য এটা খুবই ভালো।

আইরাত আর কোন কথা না বলে খেয়ে নিলো। তার পর রাতে তিনজন বসে গল্প করতে লাগলো। আগামী দুদিন তাদের কোন কাজ নেই,,তারা দুদিনের ছুটি পেয়েছে,, তো এই দুদিন কোথায় কোথায় ঘুড়তে যাবে, কি কি শপিং করবে তাই প্লেনিং চলছে তিনজনের মাঝে। এভাবেই গল্প করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেলো। নিপা-রাত্রি বেঘড়ে ঘুম। কিন্তু আইরাতের চোখে ঘুমের ছিটে ফোটাও নেই। আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে নিপা-রাত্রি ঘুম। আইরাত আস্তে করে উঠে করিডরে গিয়ে দাঁড়ালো। করিডরে বাইরের ল্যাম্প পোস্টের আলো এসে পরেছে,, হালকা হাওয়া বয়ে চলেছে। এতে করে আইরাতের এলোমেলো চুল গুলো উড়ে চলেছে। আইরাতের এখন না চাইতেও আব্রাহামের কথা ভাবছে। খুব বেশি মনে পরছে আব্রাহামের কথা। যাকে এতোদিন মৃত ভেবে আসছিলো,, আজকে তাকে একদম ঠিকঠাক ভাবে দেখেছে। হ্যাঁ নিজের চোখের সামনে না, দূর থেকেই কিন্তু দেখেছে তো। এটাই যেন মনের এক বড় শান্তি।

আইরাত;; কেন করলেন আপনি এমনটা। আমি আগের সবকিছু ভুলে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। একান্তই নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তা হতে দেননি। যাকে আমি ভালোবাসি সেই কিনা আমার বাবা-মার খুনি হয়ে দাঁড়ালো। এরপরেও কি করে আপন করে নেই আপনাকে। কখন যে আপনাকে ঘৃণা করতে করতে আপনাকেই সবথেকে বেশি ভালোবেশে ফেলেছি তা জানা নেই আমার। এক সময় বাধ্য হয়েছি আপনাকে শুট করতে। ভালোবাশি আব্রাহাম অনেক বেশিই ভালোবাসি আপনাকে। কিন্তু এই কথাটা আর আপনাকে বলে ওঠা হবে না আমার।

আইরাত এই কথাগুলো নিজের মনেই বলে বেড়াচ্ছে আর চোখের পানি ঝড়াচ্ছে।

ওদিকে আব্রাহাম অন্ধকার ঘরে নিজের সামনে আইরাতের এক বড় ছবি রেখে নিজেকে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে পরছে নোনাজল। এ আব্রাহামের রোজকার কাজ।

এভাবেই দুদিকে দুজনের অগোছালো রাত কেটে যাচ্ছে একে ওপরের শূন্যতায়……..।।





(আমাকে অনেকে বলেছেন যে এক্সট্রা পার্ট দিতে কিন্তু আমি দিতে পারি না কারণ আমি একটু ব্যাস্ত থাকি,, অনেক গুলা সরি তার জন্য 🙏। তাই আজকের পার্টটা অনেক বড় করে দিয়েছি❤️)






💚🌿চলবে~~~~~
.

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 33

🤎🦋..
..
..
..
..
..

পরেরদিন সকালে🌥️।।

সকাল হতেই রাত্রির ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে পরে সে। ঘুম ঘুম চোখে পাশে হাত দিতেই দেখলো যে সেখানে ফাকা। রাত্রি কিছুটা ভ্রু কুচকালো। ততক্ষণে নিপারও ঘুম ভেঙে গেছে। আইরাতকে না পেয়ে রাত্রি বলে ওঠলো…

রাত্রি;; কিরে আইরু কোথায় গেলো?

নিপা;; কোথায় আর যাবে এখানেই আছে দেখ।

রাত্রি;; কিন্তু ও তো এতো জলদি কখনো ঘুম থেকে ওঠে না তাহলে আজ কোথায় গেলো!?

রাত্রির কথার মাঝেই আইরাত তার হাতে করে তিন মগ কফি নিয়ে রুমে ঢুকলো।

আইরাত;; Good morning Girls (একটু জোড়েই বলে ওঠলো)

রাত্রি;; বলছি যে সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠেছে? (অবাক হয়ে)

আইরাত;; যেদিক দিয়ে রোজ ওঠে সেই দিক দিয়েই ওঠেছে। নে এবার কফি টা খা।

নিপা;; কিন্তু কখন উঠলি তুই টেরও পেলাম না।

আইরাত;; গরুর মতো করে ঘুমোলে কিভাবে টের পাবি। নে এবার খা।

নিপা;; হুমমম।

আইরাত তাদের দিকে কফির মগ এগিয়ে দিলো। তবে ঘুমোনোর কথা টা আইরাত এক প্রকার এড়িয়েই গেলো। কেননা কাল সারারাত সে তার চোখের পাতা এক করেনি। সারারাত জেগেই কাটিয়ে দিয়েছে আব্রাহামের কথা ভেবে ভেবে। আইরাত একমনে কফির মগে চুমুক দিয়ে চলেছে। তখন রাত্রি বলে ওঠলো…

রাত্রি;; আচ্ছা, আজকে আমরা কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো?

আইরাত;; যেখানে ইচ্ছে..

নিপা;; নাহ, আইরু তুই বল কোথায় যাবি!

আইরাত;; প্রথমে জমিয়ে শপিং, তারপর ঘুরাঘুরি- খাওয়া-দাওয়া এইতো।

রাত্রি;; I am so excited,, প্লিজ তোরা তাড়াতাড়ি চল।

নিপা;; আরে হ্যাঁ, সকালে হাল্কা কিছু ব্রেকফাস্ট করেই বের হবো।

রাত্রি;; ওকে।

এই বলে নিপা&রাত্রি ফ্রেশ হতে চলে গেলো। আইরাত চলে গেলো রান্নাঘরে কিছু একটা বানাতে। তারপর তারা খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে পরে। প্রথমেই তারা সোজা শপিংমলে ঢুকে পড়লো। অনেক কিছু কিনছে তারা। বিশেষ করে রাত্রি সে পারছে না সম্পূর্ণ দোকান কিনে নিতে। নিপা আর আইরাত ঝুমকা দেখতে লাগলো। সামনে আয়না রাখা,, আইরাত এক একটা ঝুমকা পরে পরে ট্রাই করে যাচ্ছে। নিপা ও একই কাজ করছে। ঝুমকা পরতে পরতেই হঠাৎ করে আইরাতের চোখ যায় একটা কাপলের ওপর। ছেলেটি পরম যত্নের সাথে মেয়েটির মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা লাজুক হেসে মাথা নিচু করে ফেলে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু তাদের মাঝে ভালোবাসা আছে গগনচুম্বী। আর তা তাদের দেখলেই বোঝা যায়। আইরাত তাদের দিকে একাধারে তাকিয়ে আছে। কেন জানি না আইরাতের তাদের দেখতে খুবই ভালো লাগছে। আব্রাহামের কথা আবারও হুট করেই মনে পরে যায় তার। আব্রাহাম ও ঠিক এভাবেই আইরাত কে ঘোমটা পরিয়ে দিত আর বলতো তাকে নাকি পুরো বউ বউ লাগছে। কখনো কখনো আইরাতের রাগ হলেও ভিতরে ভিতরে একটা ভালোলাগা কাজ করতো যা সে প্রকাশ করতো না। আইরাত তাদের দেখে মুচকি হাসে।

রাত্রি;; বেবিজান, কোথায় হারিয়ে গেলি। দেখ না এই দিকে।

আইরাত;; হে.. হ্যাঁ ওহ হুমম বল।

রাত্রি;; আমার ওপর কোনটা ভালো লাগছে বল না। তোর তো চয়েজ অনেক ভালো চুজ করে দে না প্লিজ। (একজোড়া কানের দুল নিজের কানের কাছে নিয়ে)

আইরাত;; হাহাহা,, তোকে সবকিছুতেই মানায়। যেটা খুশি নিয়ে নে।

রাত্রি;; আচ্ছা।

এভাবেই তারা তিনজন অনেক ঘুরাঘুরি করে শপিং করতে লাগলো।





অন্যদিকে…..

আব্রাহাম কে বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করা হয়েছে কিন্তু ভিতরে থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই। সব স্টাফরা দরজাতে অনেকবার নক করেছে কিন্তু দরজা খোলার নামই নেই। তখন দ্রুত অয়ন আসে। এসেই দেখে দরজার সামনে বেশ কয়েকজন স্টাফ দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন তাদের তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে সরে যেতে বলে। তারা সবাই সরে গেলে অয়ন দরজার সামনে গিয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আব্রাহামের রুমের দরজা খোলে দেয়। দরজা খোলার সাথে সাথে এক বিশ্রী গন্ধ নাকে ভেসে আসে। অয়ন তাকিয়ে দেখে রুমের ভিতরে আলোর রেশ টুকু নেই শুধুই অন্ধকার। অয়ন সকল স্টাফদের সেখান থেকে চলে যেতে বললে তারা চলে যায়। অয়ন এবার আব্রাহামের রুমের ভিতরে গেলো। ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথেই অন্ধকারে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলো। অয়ন “আহ্” শব্দ করে ওঠলো। হাতিয়ে হাতিয়ে সুইচ খুজে লাইট অন করে দিলো। পুরো ঘরে আলো জ্বলে উঠলে অয়ন দেখে যে আব্রাহাম গুটিসুটি মেরে সুয়ে আছে। সারা ফ্লোরে সিগারেটের পোড়া অংশবিশেষ পরে আছে। এক দমকা ধোঁয়া সারা রুম জুড়ে। অয়ন হাফ ছেড়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহামের পাশে বিছানার ওপর বসে পরে। অয়ন একটু কাত হয়ে দেখে যে আব্রাহাম দুহাত দিয়ে আইরাতের ছবি তার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আছে। অয়নের খুব মায়া হতে লাগে। নিজের চোখের সামনে এইসব কিছু মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় তার। অয়ন ধীরে ধীরে আব্রাহাম কে ডাক দিতে লাগলো।

অয়ন;; দাভাই…

আব্রাহাম;; হুমম (ঘুমের ঘোড়ে)

অয়ন;; দাভাই, এভাবে আর কতোদিন বলতো। নিজের কি হাল করে রেখেছিস একবার খেয়াল করেছিস। নিজের চোখের সামনে নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারি না আমি।

আব্রাহাম;; আমি ঠিক আছি অয়ন, একদম ঠিক আছি। ভালো আছি আমি (মুচকি হেসে)

আব্রাহাম আইরাতের ছবি পাশে রেখে বিছানা থেকে উঠে পরে।

অয়ন;; দাভাই…

আব্রাহাম;; অয়ন, “মায়া” নামক শব্দ টা কোন মাদকদ্রব্য বা নেশার থেকেও বেশি খারাপ। যে একবার এই মায়াতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সেই বুঝে এটা কি জিনিস। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে ভিতরে থেকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে এই “মায়া” নামক শব্দে।

অয়ন;; ভাই তুই কেন…..

আব্রাহাম;; অয়ন, আজ ইন্ডিয়া থেকে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাইন্ট আসবে। তাদের সাথে অনেক বড় একটা ডিল সাইন করতে হবে। তাই আমি কোনভাবেই দেরি করে চাই না। তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে সব ফাইল গুছিয়ে নে।

অয়ন;; আচ্ছা ভাই।

অয়ন আর কিছু না বলে চলে আসে কারণ সে জানে যে এখন আব্রাহামের সাথে কথা বলে কোন লাভই নেই। এখন চুপ থাকাটাই শ্রেয়। অয়ন চলে গেলো তার রুমে। রুমে গিয়ে সবকিছু গোছগাছ করতে লাগলো। আব্রাহাম টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।সারারাত সিগারেটের ধোঁয়ায় নির্ঘুম ভাবে কাটিয়েছে সে। তাই সকালের দিক দিয়ে চোখ লেগে এসেছিল।স্ট্রাফকে রুম পরিষ্কার করতে দিয়ে আব্রাহাম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পরে সে। ব্লেক পেন্ট, হুয়াইট কালার শার্ট, আর এশ কালারের সুট পরে রেডি হয়ে নিলো সে। আইনার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পরছে সে। চোখে-মুখে কোঠোর একটা ভাব। এখনের এই আব্রাহাম কে দেখলে কেউ বুঝবেই না যে সে ভিতরে থেকে এতোটা ভাংা। আব্রাহাম রেডি হয়ে নিচে হলরুমে চলে আসে। অয়নও সাথে সাথেই এসে পরে। আবির আহমেদ আজ তার বাড়িতে নেই। সে অনাথআশ্রমে আব্দুল কাদির এবং বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। তাই সকল স্টাফকে সবকিছু সঠিক ভাবে দেখতে বলে আব্রাহাম-অয়ন চলে গেলো। আর এছাড়াও বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে, যাতে করে কোন সমস্যা হবে না। আব্রাহাম-অয়ন গাড়ির ড্রাইভার কে বলে গাড়ি বের করতে বললো। গাড়ি পাকিং থেকে বের করলে তারা উঠে পরে। গাড়িতে বসে আব্রাহাম ল্যাপটপে মুখ গুজে দিয়ে বসে আছে। আর অয়ন, ও নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে। আব্রাহাম শুধু তার কথার প্রতিউত্তরে হু হা করছে। এক সময় অয়ন বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে…

অয়ন;; ভাই,

আব্রাহাম;; হুম

অয়ন;; ভাই প্লিজ দেখ এখন তো একটু রাখ। সারাদিন তো কাজের মধ্যেই ডুবে থাকিস এখনোও যাচ্ছিস মিটিং এ। বাট এই সময় টুকু তো একটু রাখ।

অয়নের কথা শুনে আব্রাহাম হাল্কাভাবে হেসে ওঠে। হাত থেকে ল্যাপটপ টা রেখে দেয় এবং অয়নের সাথে টুকটাক কথা বলতে থাকে। আব্রাহাম গাড়ির উইন্ডো খুলে দেয়। বাইরে থেকে আসা হাওয়াতে তার সামনে পরে থাকা চুল গুলো উড়ছে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম আর গাড়ি চলছে উদ্যম গতিতে। কিন্তু কিছুটা যেতেই গাড়ি থেমে যায় ট্রাফিক পুলিশের সিগ্নালে। সামনে অনেক গাড়ি জ্যামে আটকা পরে গেছে। তাই তাদের গাড়িকেও থামতে হয়েছে। আব্রাহাম বিরক্ত হয়ে আবার বাইরের দিকে তাকায়।

অয়ন;; অসহ্যকর, এই জ্যাম কখন শেষ হবে!







নিপা-আইরাত-রাত্রি খুব শপিং করার পর মল থেকে বেড়িয়ে পরে।

নিপা;; তো এখন কোথায়?

আইরাত;; রেস্টুরেন্টে…!

রাত্রি;; হুমম চল যাওয়া যাক।

আইরাত;; কিন্তু আমাদের তো রাস্তা পার হতে হবে।

রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা,, রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তায় প্রচুর পরিমানে জ্যাম থাকার ফলে তারা হাত ধরে আস্তে আস্তে রাস্তা পার হতে লাগে। সামনে এগোতে যাবে তখনই আইরাতের জুতোর ফিতা খুলে যায়। আইরাত তাদের হাত ছেড়ে দিয়ে খানিক ঝুকে জুতোর ফিতা লাগাতে থাকে। কিন্তু তার আগেই নিপা & রাত্রি রাস্তার ওপরপাশে এসে পরে।

নিপা;; কিরে আইরু কোথায়?

রাত্রি;; আরে,, ওই দেখ ও ওর জুতোর ফিতা লাগাচ্ছে।

নিপা;; তুই ওকে রেখে চলে আসলি কেন?

রাত্রি;; আরে ওই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলো। বেবিজান জলদি এপাশে এসে পর। (একটু জোড়ে ডাক দিয়ে)

রাত্রির ডাকে আইরাত মাথা তুলে তাকায়। হাতের ইশারাতে তাদের থামতে বলে। জুতোর ফিতা লাগিয়ে উঠে পরে। ডানে-বামে ভালোভাবে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরে আইরাত।

___________________

আব্রাহাম বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন দেখলো এক সাদা রঙের ওরনা উড়ছে। আব্রাহামের ধ্যান সেদিকে চলে গেলো। এক ঝাপটা বাতাস এসে ওরনা কারো মুখের ওপর পড়লো। আব্রাহাম চোখ ছোট ছোট করে সেদিকেই তাকিয়ে থাকলো। মুখের ওপর ওরনা পরার কারণে মুখখানা স্পষ্ট দেখা না গেলেও,, তার অবয়ব দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা ধীরে ধীরে তার হাত দিয়ে মুখের ওপর থেকে ওরনা টা সরিয়ে নিলো। পরমূহুর্তেই আব্রাহামের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। আকাশ বিস্ময়ী নয়নে আব্রাহাম তাকিয়ে আছে। কেননা মেয়েটি আর কেউ না আইরাত। আইরাতকে দেখেছে আব্রাহাম। হাত-পা কেমন যেন কাপতে শুরু করলো তার। চোখ যেমন সাথে সাথেই রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে তেমনই চোখের কোণে পানিও জমেছে। আইরাত হেটে ওপরপাশে চলে গেলো। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ট্রাফিক পুলিশের ইশারাতে সব গাড়ি এক এক করে যেতে শুরু করলো। আব্রাহামের গাড়ি ও সামনে চলে যেতে ধরলো। আব্রাহাম অস্থির হয়ে শুধু বাইরে তাকিতুকি করছে। গাড়ি জোড়ে স্টার্ট দিলে আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে…

আব্রাহাম;; Stop the car.. (চিল্লিয়ে)

আব্রাহামের কথায় গাড়ির ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে দেয়। অয়ন নিজেও কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায় আব্রাহামের এহেন কান্ডে।

অয়ন;; ভাই, কি হয়েছে হঠাৎ করে গাড়ি থামাতে বললি কেন?

আব্রাহাম;; (কিছু বলছে না শুধু অস্থির হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে)

অয়ন;; ভাই, হয়েছে কি তোর?

আব্রাহাম;; অঅয় অয়ন, আআয়ামি আমি..

অয়ন;; হলো কি! (বেশ চিন্তিত হয়ে)

আব্রাহাম;; অয়ন আমি, আমি আই আআইরা আইরাতকে দেখেছি।

অয়ন;; কিহ বউমনি, ভাই কি সব বলছিস তুই!

আব্রাহাম;; অয়ন, অয়ন অন্তত তুই তো আমায় বিশ্বাস কর। আমি সত্যি বলছি আমি আমার আইরাতকে দেখেছি।

অয়ন;; কোথায়?

আব্রাহাম;; এখানেই, একটু আগে রাস্তা পার হতে। অয়ন আমি দেখেছি আইরাত কে।

অয়ন;; ভাই, ওটা তোর মনের ভুল।

আব্রাহাম;; না অয়ন, আর যাই হোক আমি আমার আইরাতকে নিয়ে কখনোই কিছু ভুল দেখবো না।

অয়ন;; ভাই আমি বুঝতে পারছি কিন্তু…

অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম দ্রুতবেগে গাড়ি থেকে নেমে পরে। অয়ন আব্রাহামকে ডাকতে লাগে কিন্তু আব্রাহামের সে দিকে কোন হুশ নেই। সে রাস্তার মাঝখানে এসে চারিপাশে পাগলের মতো আইরাতকে খুজতে লাগে। অয়ন আর দেরি না ছুটে আব্রাহামের কাছে এসে পরে।

অয়ন;; দাভাই দেখ তুই ভুল কিছু একটা দেখেছিস।

আব্রাহাম;; এটা কখনোই সম্ভব না অয়ন। আমার চোখ আমার আইরাতকে চিনতে কখনোই কোন ভুল করতেই পারে না, এটা এককথায় অসম্ভব। আমার আইরাত আছে আর আমি নিজ চোখে দেখেছি।

অয়ন;; আচ্ছা ঠিকআছে মানলাম তুই আইরাত বউমনি কে দেখেছিস। এবার চল পরে সবকিছু দেখছি। দাভাই প্লিজ চল এখান থেকে।

আব্রাহাম আসতে না চাইলে অয়ন এক প্রকার জোড় করেই তাকে টেনে এনে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। আব্রাহাম গাড়ি তে বসে দুহাত দিয়ে তার মাথা চেপে ধরে।

আব্রাহাম;; অয়ন ভাই বিশ্বাস কর, আমি আইরাতকে দেখেছি, নিজ চোখে দেখেছি। আর আমি ওকে ভুল দেখতেই পারি না।

অয়ন;; আচ্ছা মানলাম। এবার চল

আব্রাহাম গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে মাথা আলতো করে সিটের সাথে রেখে দেয়। চোখজোড়া বন্ধ করে হাতের দু আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইভ করতে থাকে। আইরাতের মুখখানা ভাসছে তার সামনে। আজ আইরাতকে এতোদিন পর দেখতে পেয়ে পুরো পাগল হয়ে গেছে আব্রাহাম।

___________________

আইরাত;; এসেছি, এসেছি। আমি এসে গেছি।

রাত্রি;; হাত ছেড়েছিস কেন আমার?

আইরাত;; আরে আমার জুতোর ফিতা খুলে গিয়েছিলো তো। না লাগালে পায়ে হোচট খেয়ে পরে যেতাম তো।

নিপা;; আচ্ছা এখন হয়েছে তো। এবার ভিতরে চল।

তারা তিনজনেই রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে গেলো। খেয়ে দেয়ে, আরো ঘুড়াঘুড়ি করে বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরলো তারা।



আব্রাহাম-অয়ন অফিসে গেলো। নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নিয়ে সব কাজ করে যাচ্ছে আব্রাহাম। কিন্তু মনে-মস্তিষ্কে কোথাও শান্তি নেই, খুব অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে। মিটিং শেষে নিজের কেবিনে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে আব্রাহাম। আইরাতের কথা কোন ভাবেই মাথা থেকে সরছে না তার। সবাই যদিও বলেছিলো যে আইরাত মৃত। হাজার খোঁজাখোজির পরও কেউ তাকে খুজে পায় নি। পুলিশের কথা কে তোয়াক্কা না করে আব্রাহাম নিজে আইরাতকে তন্নতন্ন করে খুজেছে কিন্তু তবুও পায় নি। যদি আইরাত মারাই না যায় তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলো সে আর কেনই বা তার কাছ থেকে দূরে ছিলো। তবে কি আইরাতের বাবা-মাকে খুন করার ভুল বুঝাবুঝি আইরাত এখনও তার মনে বয়ে বেড়াচ্ছে। যে করেই হোক আইরাতকে তার খোঁজে বের করতেই হবে। অনেক দূরে দূরে থেকেছে আইরাতের কাছ থেকে সে। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম কিন্তু এখন আর না। যেকরেই হোক আইরাতের খোজ তার পেতেই হবে। আব্রাহাম এই সবকিছু নিজে নিজেই ভাবছে। তখন তার ফোন বেজে ওঠে…

আব্রাহাম;; হ্যালো, রাশেদ

রাশেদ;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; রাশেদ, পুরো শহর আবার খোঁজ করো। আমি মানি না যে আমার আইরাত নেই আর আজকের পর থেকে তো আরো মানি না। তন্নতন্ন করে খোঁজ করো সব জায়গাতে। এতে যে যাই বলুক I really Don’t care about that….

রাশেদ;; জ্বি স্যার,, আমি প্রতি সেকেন্ডের খবর আপনাকে দিতে থাকবো।

রাশেদের সাথে কথা বলে আব্রাহাম ফোন কেটে দিলো। মনের মধ্যে তার এক প্রকার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড় থামার না, একমাত্র আইরাতই পারে আব্রাহামের এই অশান্ত মনকে শান্ত করতে।










💟🌷চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-30+31

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 30

❤️🌹..
..
..
..
..
..

আবির আহমেদ আব্রাহামকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন। অয়ন গাড়ি পার্ক করতে গেছে। বাড়ির ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে সব স্টাফ রা একে একে আব্রাহামের সাথে কথা বলছে। কিন্তু এতে আব্রাহামের কোন সাড়াশব্দ নেই। সেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। যেন কারো কোন কথা তার কান দিয়ে যাচ্ছেই না। হঠাৎ আব্রাহামকে দেখে বাড়ির মালি দৌড়ে আসে।

রহিম(মালি);; আব্রাহাম বাপজান আপনে আসছেন। জানেন এতোদিন আপনার কথা বহুত মনে পরছে। আপনারে ছাড়া এই বাড়ি টা কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগে। এই দেহেন আপনে এখন আইসা পরছেন বাড়ি এহন ভরা ভরা লাগতাছে। কিন্তু যদি আইরাত আম্মাজান থাকতো তাইলে আরো…..

আবির আহমেদ;; আব… রহিম তুমি এখন যাও বাগানের কাজ শেষ করে বরং এসো ঠিকআছে।
রহিম;; জে আচ্ছা।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম চলো আমরা বসি। আজ সবকিছু তোমার পছন্দের করা হবে তুমি শুধু বল…

আবির আহমেদ আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলো কিন্তু এর মাঝেই আব্রাহাম সেখান থেকে উঠে সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে আসে। আবির আহমেদ তার যাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে এবং চশমা খুলে চোখের পানি টুকু মুছে ফেলে।

আব্রাহাম তার রুমের সামনে এসে থেমে যায়। পা যেন তার চলছে না। তবুও কাপা কাপা হাতে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। যেতেই সবার আগে চোখে পরে দেয়ালে টাংানো আইরাতের বড় হাসিমাখা ছবির দিকে। আব্রাহাম অসহায় ভাবে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই রুমটা ছিলো তো আব্রাহাম আইরাত দুজনেরই কিন্তু সবজিনিস ছিলো আইরাতের। আইরাত এটা প্রায় অপছন্দ করতো যে রুমে তার এতো জিনিস রাখার কি দরকার স্পেশালি ছবি। তখন আব্রাহাম আইরাতকে কাছে টেনে নিয়ে বলতো আমার সবকিছুতে তুমি থাকবে, শুধু তুমি আর তুমি। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের ছবির দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো ভাবছে হঠাৎ করেই ঠোঁটের কোণে হাসি এসে পড়লো তার। আব্রাহাম ছবিটির দিকে এগিয়ে গেলো,, হাতের নরম স্পর্শে আইরাতের মুখখানা ছুয়ে দিলো। এবার তার চোখ গেলো আইনার ওপর। আইরাত প্রায় ফ্রেশ হয়ে আইনার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিলে তার চুল মুছতো আর আব্রাহাম পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতো। আব্রাহাম পুরো ঘর দেখছে এবং আইরাতকে অনুভব করার চেষ্টা করছে। আর এইসব কিছুই যেন আব্রাহাম কে ভিতরে থেকে দুমড়ে-মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে। আইরাতহীন আব্রাহামের কোন অস্তিত্ব নেই। আব্রাহাম ভাবতেও পারে না যে আইরাত যার নামে নিজের সবকিছু লিখে দিয়েছিলো,, মন হেরে গিয়েছিলো যার কাছে, সে এখন আর তার জীবনে নেই। আব্রাহাম তার হাতে আইরাতের একটা ছবি নিয়ে নিচে বসে পড়লো।

আব্রাহাম;; জাজাজানপাখি, জানো আআমার না খুখুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া। আমি পারি না থাকতে। এই যে এখানে ঠিক এখানে ব্যাথা করে (বুকে আংগুল দেখিয়ে)। তুমি তো আমাকে এখানেই শুট করেছিলে তাই না। ব্যাথা তো তুমি দিয়েছো তাহলে ঠিক ও তুমিই করে দাও না। প্লিজ ফিরে এসো প্লিজ। জানো সবাই সবাই কি বলে তুতুমি নাকি তুমি নাকি আর নেই। কিন্তু আমি জানি মিথ্যা বলে তারা সবাই। তুমি আছো আমার কাছেই আছো। তুমি পারো না, তুমি পারো না আমাকে ছেড়ে যেতে। (আইরাতের ছবি বুকে জড়িয়ে পাগলের মতো কান্না করে)

এই মূহুর্তে আব্রাহামকে যে কেউ দেখলেই চোখের পানি ফেলবে। আইরাতকে হারিয়ে একদম ছোট বাচ্চার মতো আচরণ করছে আব্রাহাম। আইরাতের বিচ্ছেদ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না সে। এর থেকে মৃত্যু যন্ত্রণাও যেন অনেক সুখের। এভাবেই দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায় কিন্তু আব্রাহামের মধ্যে কোন উন্নতিই নেই। হস্পিটাল থেকে আসার পর দুজন নার্সকে রাখা হয় আব্রাহামের দেখা শোনা করার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম তাদের সোজা সাপ্টা মানা করে দেয়। আব্রাহাম এখন আর কান্না করে না আগের মতো। এখন অনেক টাই শক্ত হয়ে গেছে। রোজ অফিসে যায়, কাজ করে। আগের মতো হাসে না, বাপির অয়নের সাথে যে টুকু কথা বলে বাইরের মানুষের সাথে তার একবিন্দু ও বলে না। প্রচুর পরিমাণে রাগি, বদমেজাজি হয়ে গেছে আব্রাহাম। অনেকটা স্ট্রিট ফোরওয়ার্ড। এই সময়ের মাঝে হাজারো মেয়ে আব্রাহামের লাইফে আসার চেষ্টা করেছে কিন্তু আব্রাহাম তাদের এমন ভাবে ট্রিট করেছে যেন তারা কোন ফেক্ট ই না। তার জিনিসপত্রও এখন সবার থেকে আলাদা। ঘরে বেশিরভাগ জিনিসই সাদা-কালো। তার ঘর সম্পূর্ণ পালটে গেছে শুধু আইরাতের ছবি গুলো বাদে। ঘরের এমন একটা কোণা নেই যেখানে আইরাতের ছবি নেই। স্বভাব পালটে গেছে আব্রাহামের। যেই আব্রাহাম কিনা আগে ঝাল দেখলেই চিল্লা চিল্লি করা শুরু করতো সেই আব্রাহাম এখন তার খাবারে ঝাল না দেখলে চিল্লা চিল্লি শুরু করে দেয়। অনেকটা নির্মম, পাথর হ্রদয়ের মতো হয়ে গেছে এখন সে। বাড়ির সবাই এমনকি অফিসের সব স্টাফরা আব্রাহামকে দেখলে ভয়ে কাপাকাপি আরম্ভ করে দেয়। আমেরিকার মাফিয়া হিসেবে আব্রাহামের তেজ এবং জোর এখন আরও কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। খুবই পাশান ভাবে আব্রাহাম এখন মানুষ কে খুন করে। একবার ভাবে পর্যন্ত না। তবে এর মধ্যে আব্রাহাম আইরাতকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আইরাতকে সে খোঁজে নি কিন্তু ফলাফল সেই একই, নিখোঁজ বা মৃত। আবির আহমেদ ছেলের এমন অবস্থা দেখে আর নিরবে চোখের পানি ফেলে। আবির আহমেদ জানে যে আব্রাহামের পক্ষে আইরাতকে ভুলে অন্য কোন মেয়েকে পুনরায় তার জীবনে আনা অসম্ভব। তাই সে আব্রাহামকে কিছু বলেও না এই ভয়ে যে পাগলামি যদি আবার শুরু হয় তাহলে। নিজের চোখের সামনে ছেলের এমন বদলে যাওয়া খুব আঘাত দেয় তাকে। অয়ন ও নিজের ভায়ের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। অয়ন আব্রাহামের সম্পর্ক এখনও ঠিক আগের মতোই রয়েছে,, কিন্তু কোথায় যেন সেই আগের আব্রাহাম টা নেই। আব্রাহামের সব কিছু পালটে গেলেও একটা জিনিস সেই আগের মতোই রয়েছে তা হলো সারারাত আইরাতের ছবি দেখে এবং ছবির সাথে কথা বলে কাটিয়ে দেওয়া। সিগারেট & এলকোহল যেন আব্রাহামের এখন নিত্যদিনের সংগী।







৭ মাস পর_____________
..
..
..
..
..

~~🌹
Tere Bin Main Yun Kese Jiya, Kese Jiya Tere Bin.. Tere Bin Main Yun Kese Jiya, Kese Jiya Tere Bin💔…..

Le Kar Yaad Teri, Rate Hain Meri Kati
Le Kar Yaad Teri, Rate Hain Meri Kari🤎🦋

““Mujhse Baatein Teri, Karti Hain Chandni
Tanha Hain Tujh Bin Rate Meri,, Din Mere Din Ke Jese Nehi🌼
““Tanha Badan, Tanha Hain Ruh “ Naam Mere Ankhein Rahe″″ Aaja Mere Abb Rubaru Jina Nehi Bin Tere ~~~

~~Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaaa
Kese Jiya Tere Bin💔
Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaaa
Kese Jiya Tere Bin💔~~

Kaab Se Ankhein Meriiiiiiii
“““`Raho Main Teri Bichie
Kaab Se Ankhein Meriiiiiiii
Raho Main Teri Bichie ““““

Vule Se Hain Kabhi Tu Mill Jaye Kahi
Vule Naaaaaa Mujhse Baatein Teri
Bheegi Hain Har Pal Ankhein Meri 🍂

Kew Saans Loo“ Kew Main Jiyu,,
Jina Bura Sa Lagay
~Kew Hogaya Tu Bewafa Mujhko Bata De Mujhee🌸

~~Tere Bin Main Yun Kese Jiya 🥀,, Kese Jiya Tere Bin 🧡🍂
Tere Bin Main Yun Kese Jiya🍁, Kese Jiya Tere Bin🖤🥀~~~

“~Tere Bin, Tere Bin, Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaa,, Kese Jiya Tere Bin 💔🌹“`~

.
.
.
.
.
.
.
.
.

গভীররাতে হাতে গিটার নিয়ে, এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে, বুকের ক্ষতগুলো সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিয়ে ছাড়া গলায় গান গাইছে আব্রাহাম। গানের প্রত্যেকটা লাইনে যেন আইরাত কে না পাওয়ার কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে। সবকিছু যেন আইরাতের কথাই বলছে। গান এবং হারানোর বেদনা যেন সম্পূর্ণই আইরাতকে উৎসর্গ করা। মানুষের জীবনে আফসোস থাকেই। পদে পদে মানুষ আফসোস করে। একটা জিনিস না পেলে আমাদের আফসোস থাকে অন্যরকম যে “” পেলাম না, আমি জিনিসটা চেয়েও পেলাম না “”। কিন্তু কোনকিছু যখন আমরা পেয়ে হারিয়ে ফেলি তাতে বুকের ভিতর যা ক্ষত সৃষ্টি হয়,, তা মুখে বলা মুশকিল। তার আফসোস সারাজীবন নিরবে বুকে বয়ে বেড়াতে হয়। পেয়ে হারানোর কষ্ট আকাশ সমান। আর যদি হয় তা নিজের ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে তাহলে তা যেন এক বেচে থেকেও মৃত্যুর সমান। আর তা এখন আব্রাহাম হারে হারে টের পাচ্ছে।

আব্রাহাম উঠে গিয়ে করিডরে দাঁড়ালো হাতে রয়েছে জলন্ত সিগারেট। সব কষ্ট সেই দূর আকাশে ধোঁয়ার সাথে বের হয়ে যাচ্ছে। করিডরে এভাবে বেশকিছুক্ষন থাকার পর আব্রাহাম ভিতরে এসে পড়লো। আবার আইরাতের ছবি হাতে নিলো। বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। আব্রাহামের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এ এমন নতুন কিছু না,, এটা আব্রাহামের প্রতিদিনের কাজ। সেই আইরাতকে হারানোর পর থেকে কোন একরাত সে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারেনি। এভাবেই রোজ নির্ঘুম রাত কেটে যায় আব্রাহামের।


পরেরদিন সকালে🌄……

___________

আব্রাহাম গার্ডেনে জিম করছে। ঘাম তার পুরো শরীর দিয়ে বেয়ে পরছে। চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে তার, চোয়াল শক্ত, স্থির দৃষ্টি। প্রায় ১ ঘন্টা জিম করার পর সে ওঠে পরে। তার রুমে চলে যায়। সাদা একটা টাওয়াল জড়িয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।দেয়ালে একহাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আইরাতের স্নিগ্ধ মুখখানা সামনে ভেসে ওঠে আব্রাহামের। আইরাতকে নিয়ে পানির নিচে ভিজতে থাকা, আইরাতের ছোট বাচ্চাদের মতো করে পানি দিয়ে খেলা, আব্রাহাম-আইরাতের পানির নিচে এক সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সবই যেন আব্রাহামের চোখের পর্দায় এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। আব্রাহাম চট করে চোখজোড়া খুলে ফেলে। চোখে-মুখে ভালো করে পানি দিতে থাকে। ঘন্টা খানিক টানা সাওয়ার নেওয়ার পর আব্রাহাম বেড়িয়ে আসে। আইরাতের চলে যাওয়াতে আব্রাহাম A-Z পরিবর্তন হয়ে গেলেও, ভিতর থেকে শত টুকরো হলেও বাইরে থেকে কেউ তাকে দেখে বলবে না যে এই মানুষ টা এতো টা ভংগুর। ভিতরে আব্রাহাম যতাটুকু ভেংঙে পরেছে ঠিক বাইরে থেকে ততটুকুই স্ট্রং হয়ে গিয়েছে। আর তার এটিটিউড তো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। পেন্ট শার্ট, কোট, ওয়াচ, পরে নিচে ড্রোইং রুমে এসে পরে আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; Good morning বাপি
আবির আহমেদ;; Good morning
আব্রাহাম;; অয়ন কোথায় বাপি?
আবির আহমেদ;; ও তো মনে হয় ঘরে এইতো এখনই এসে পরবে তুই বোস,, ব্রেকফাস্ট করে নে।
আব্রাহাম;; হুমমম, তুমিও বোস আর খাওয়ার পর ঔষধ খেয়ে নিবে।
অয়ন;; শুভ সকাল বাপি-দাভাই। (জলদি এসে)
আব্রাহাম;; দেখ অয়ন তুই বেশ ভালো করেই জানিস যে আমি দেরি একদমই পছন্দ করি না,, বার বার একই কাজ কেন করিস (প্রচুর রেগে)
অয়ন;; না মানে দাভাই আসলে সরি। মানে রাতে কাজ করতে করতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম তো তাই সরি দাভাই।
আব্রাহাম;; বাপি আমার খাওয়া শেষ। তুমি ঠিকমতো ঔষধ খেয়ে নিবে আর নিজের খেয়াল রাখবে। আর তুই (অয়নের উদ্দেশ্যে) ১০ মি. টাইম দিচ্ছি খেয়ে দেয়ে সব ফাইল নিয়ে দ্রুত অফিসে আয়।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা আর কিছু খেয়ে যা, কি খেলি তুই।
আব্রাহাম;; না বাপি। Ba-Bye…

আব্রাহাম চলে গেলে আবির আহমেদ হতাশ ভাবে তাকিয়ে থাকে।

আবির আহমেদ;; আমি না কোন ভাবেই আমার মনকে বুঝাতে পারছি না যে আমার আব্রাহাম এভাবে পালটে গেছে। আব্রাহাম আর আগের মতো নেই।
অয়ন;; বাপি (জড়িয়ে ধরে) তুমি চিন্তা করো না তো। তুমি দেখো দাভাই একদিন ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে। আমাদের আগের আব্রাহাম হয়ে যাবে।
আরে এই দেখো আমি আবার লেট হয়ে গেলাম। বাপি এবার আমি যাই কেমন, নয়তো পরে দেখা যাবে যে আমার অফিস থেকে আমারই ভাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো (গালে চুমু দিয়ে) Bye বাপিইইইই।
আবির আহমেদ;; আরে পাগল ছেলে সাবধানে যা।

আব্রাহাম-অয়ন যাওয়ার পর আবির আহমেদ বাড়ির ভিতরে এসে এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

আবির আহমেদ;; অনেক বেশি মিস করি রে আইরাত মা তোকে। কেন যানি না আমার মন বলে তোর কিছুই হয়নি, তুই একদম ঠিক আছিস। যেখানেই থাকিস ফিরে আয় না মা। এসে আমার আব্রাহামের জীবন টাকে আবার আগের মতো গুছিয়ে দিয়ে যা না। আমার অসম্পূর্ণ পরিবারটাকে আবার সম্পূর্ণ করে দে মামনি। খুব প্রয়োজন তোর আব্রাহামের এবং আমার এই আধুরা পরিবারের। ফিরে আয় মামনি (আইরাতের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কেদে)।

আবির আহমেদ কথা গুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে সেখানে থেকে চলে গেলেন।



(সবাই আইরাতকে মৃত বললেও আসলেই কি আইরাত মারা গেছে। আর কখনো কি ফিরে আসবে না তার আব্রাহামের কাছে?!)





💖চলবে~~~~~
.

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 31

🌿🌿🌿..
..
..
..
..
..

২৯ জানুয়ারি……।

রাত্রি;; এইইইইইইইইইইইইইই….
______________________

রাত্রি;; বেবিজান, দেখ এবার যদি তুই ঘুম থেকে না উঠিস না তাহলে, তাহলে আমি তোকে কি যে করে বসবো আমি নিজেও জানি না। জলদি ওঠ।

__________;; হুমম, হুম হহুমম..

রাত্রি;; কি হুমম হুমম করছিস ওঠ। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো তো

_________;; তো কি হয়ে গেছে!?

রাত্রি;; হয়েছে কি মানে তুই জানিস না কি হয়েছে। বিয়ের এতো কাজ পরে আছে আর তুই কিনা এখনো পরে পরে ঘুমোচ্ছিস। বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে, সেখানের পেন্ডেলে কি আর কোন কালারের ফুল বসাবে তা সিলেক্ট করতে হবে, পুরো বাড়ি সাজানো বাকি এখনো কত্তো কাজ আর তুই কিনা বলছিস যে কি হয়ে গেছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি ওঠ নয়তো বকা খেতে হবে।

নিপা;; কিরে কাকের দল এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো রে।

রাত্রি;; আমি কি আর সাধে চিল্লাই,, দেখ কতো দেরি হয়ে গেছে আর এই মেডাম কিনা এখনো ঘুমোচ্ছে। হাতে আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। এর মধ্যে যেতে হবে তো।

নিপা;; আচ্ছা তুই যা, আমি দেখছি ওকে।

রাত্রি;; হ্যাঁ দেখ বাবা আমি আর পারিনা।

রাত্রি রেগে মেগে চলে গেলে নিপা বিছানার পাশে গিয়ে বসলো।

নিপা;; কিউটিপাই, (মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে)

_________;; হুমমম, দেখ প্লিজ এভাবে চিল্লাস না আর মাত্র পাচঁ টা মিনিট ঘুমোতে দে।

নিপা;; দেখ হাতে বেশি সময় নেই,, আমাদের রেডি হয়ে সেখানে যেতে হবে আবার সেখানে কতো কাজ। বুঝতে পারছিস তো তাড়াতাড়ি উঠে পর।

_________;; আরেএএএএএ,, ওঠেছি ওঠেছি। এই নে ওঠে পরেছি। বুঝি না তোদের ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাংগে কিভাবে আমি তো বেলা এগারোটার আগে ওঠতেই পারি না।

রাত্রি;; হ্যাঁ, কারণ আপনি নবাব সীরাজউদ্দৌলার বংশধর। (ঘরে এসে)

_________;; চুপ থাক বান্দরনী (কুশন দিয়ে রাত্রি কে ঢিল দিয়ে)

নিপা;; উফফ তোরা থাম তো,, কিউটিপাই তুই প্লিজ ওঠে রেডি হয়ে নে।

রাত্রি;; ভালো লাগছে না, টিভি অন কর তো।






রাত্রি টিভি অন করে কাজ করতে লাগলো। কিন্তু আমাদের ঘুমকুমারী এখনো বিছানাতেই বসে আছে। আর এই ঘুমকুমারী আর কেউ না আমাদের আইরাত। অনেক যুদ্ধ করে, বিপদ-আপদ পার করে আইরাত এই অবস্থায় এসেছে। অনেক খড় কাঠ পোড়াতে হয়েছে তাকে ঠিক হওয়ার জন্য। কিন্তু বাইরে ঠিক থাকেলেও কোথাও না কোথাও সেই ক্ষত দাগ টা রয়েই গিয়েছে মনের গহীনে। আইরাত তো সেদিনই মরে গিয়েছিলো যেদিন সে তার নিজ হাতে আব্রাহাম কে শুট করেছিলো। এখন শুধু কোনরকম দিন পার করে যাচ্ছে সে। বেচেঁ থাকাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল আইরাত কিন্তু এই রাত্রি & নিলা নামক দুই মেয়ে,, এরা আবার আইরাতকে বাচঁতে শিখিয়ে দিয়েছে। সব কিছু হারিয়ে এখন আইরাতের একমাত্র বেচেঁ থাকার সম্বল এই রাত্রি & নিপা।


Flashback🍃~~~
.
.
.
.

সেদিন আইরাতকে ট্রাক অনেক জোড়ে একটা ধাক্কা দেয় যার ফলে সে ছিটকে গিয়ে বেশ খানিক দূরে পরে। রক্তাক্ত পুরো রাস্তা। আইরাত মাঝ রাস্তায় পরে থাকে। কিন্তু বেশখানিক সময় পর একটা গাড়ি আসে। আইরাতকে এভাবে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে তারা তাদের গাড়ি থামিয়ে দেয়। সেই গাড়ি তে আর কেউ না এই রাত্রি আর নিপা ছিলো। তারা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে এবং দেখে যে আইরাত মাঝ রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। তারা আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাই না। অবশেষে তারা অন্য কোন উপায়-উপান্তর না পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আইরাতকে ধরে গাড়িতে তুলে নেয় এবং হস্পিটালের দিকে ছুট লাগায়। প্রায় ১৫ মি. পর তারা হস্পিটালে পৌঁছে যায়। ইমারজেন্সি ডাক্তার কে ডাকা হলে ডাক্তার জলদি এসে পরে। আইরাতের অবস্থা অনেক খারাপ দেখে দ্রুত তাকে ICU তে সিফর্ট করা হয়। রাত্রি এবং নিপা বাইরে খুব চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অজানা-অচেনা এক মেয়েকে এভাবে মাঝ রাস্তায় আধামরা ভাবে কি করে ছেড়ে দেবে তারা। আর মানুষ তো মানুষের জন্যই,, বিপদে মানুষ কাজে আসবে না তো আর কখন আসবে। আসলে এই রাত্রি এবং নিপা আপন খালাতো বোন হয়। কিন্তু তাদের সাথে তাদের পরিবারের তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই,, যার ফলে তারা ঠিক করে যে পরিবার থেকে বাইরে চলে আসবে এবং নিজেরা নিজেদের মতো করে থাকবে। রাত্রি-নিপা পেশাতে “Wedding Designer”।। তারা বিভিন্ন বাড়িতে বিয়ের পুরো ডিজাইন এরেঞ্জমেন্ট করে। একটা ফ্লেট নিয়ে তারা দুজনেই থাকে। তবে রাত্রি একটু দুষ্ট এবং চঞ্চল প্রকৃতির আর নিপা একদম শান্ত-ভদ্র। দুজনেই অনেক ভালো। তার জন্যই তো আইরাতকে আজ এভাবে পরে থাকতে দেখে তারা আইরাতের জান বাচাঁলো নয়তো আজকালকার লোকজন তো শুধু মাত্র তামাশা দেখে।

বেশ সময় পর ডাক্তার ICU রুম থেকে বের হলো। রাত্রি নিপা তড়িঘড়ি করে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার কে আইরাতের কথা জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার বলেন..
” উনার অবস্থা অনেক বেশিই সেন্সিটিভ। সারা শরীরে অনেক জখম রয়েছে, রক্তক্ষরণ ও অনেক হয়েছে, দেখেই বুঝা যায় যে তার অনেক বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে”।

এতে রাত্রি এবং নিপা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ডাক্তার তাদের জিজ্ঞেস করে “আইরাত আপনাদের কে হয়?!”
রাত্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিপা বলে ওঠে “বোন হয় আমাদের”।

ডাক্তার আর কিছু না বলে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। রাত্রি এবং নিপা বেশ চিন্তার সহিত বসে থাকে। আইরাতকে হস্পিটালে নেওয়ার পর দুইদিন পর্যন্ত তার কোন জ্ঞান ছিলো না। অজ্ঞান অবস্থা তে পরে ছিলো হস্পিটালের বেডে। একদিন রাত্রি-নিপা দুজনেই আইরাতকে হস্পিটালে দেখতে গেলে দেখে যে আইরাতের জ্ঞান ফিরে এসেছে। এতে রাত্রি-নিপা খুশি হলেও কিছুটা ভরকে যায় এই ভেবে যে যদি আইরাত তাদের চিনতে অস্বীকার করে দেয় এবং নিজেকে তাদের বোন বলে সীকৃতি দিতে মানা করে দেয় তাহলে। তারা তাড়াতাড়ি করে আইরাতের রুমে যায় গিয়ে দেখে আইরাত বেডে চুপচাপ বসে আছে জানালার দিকে মুখ করে। হাতে তার সুই পুশ করা এবং মাথায় বেন্ডেজ। ডাক্তার আইরাতের সাথে তাদের দেখা করতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তখন রাত্রি-নিপা আইরাতের পাশে বসে।

রাত্রি;; হাই, আমি রাত্রি আর ও হচ্ছে আমার বোন নিপা। তোমাকে আমরা রাস্তার মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে পাই। তারপর এখানে নিয়ে আসি।
নিপা;; নাম কি তোমার?
________________________
রাত্রি;; দেখো তুমি একদম ভয় পেয় না। তুমি এখানে সেফ আছো। তোমার নাম কি বলো!
আইরাত;; আআআমার নানাম, আই আই…..
নিপা;; হুমম হুমম বলো
আইরাত;; আমার নাম, আমার নাম নুজাইফা বিনতে আইরাত।
রাত্রি;; বাহহ অনেক মিষ্টি নাম তো ঠিক তোমার মতো।
নিপা;; আচ্ছা এবার তুমি বলো তো যে তোমার হয়েছিলো টা কি। তুমি ওভাবে রাস্তায় পরে ছিলে কেন। আর তোমার পরিবার-পরিজন তারা কোথায়?
আইরাত;; আম..আমার কেউ নেনেই।

আইরাতের কথায় রাত্রির চোখ দিয়ে একফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে।

নিপা;; তুমি আগে থাকতে কোথায়?

নিপার প্রশ্নে আইরাত কিছু বলে না শুধু চুপ করে বসে থাকে। নিপা তা বুঝতে পেরে প্রশ্ন করা বন্ধ করে দেয়।

রাত্রি;; জানো আইরাত আমরাও না ঠিক তোমার মতো,, আমাদের ও সবকিছু থেকেও নেই। আচ্ছা আইরাত যেহেতু তোমার কেউ নেই তাহলে আজ থেকে বরং তুমি আমাদের সাথেই থাকবে কেমন!!
নিপা;; Best Idea! এইটাই সব থেকে ভালো হবে। আমরা দুজন থেকে তিনজনে পরিণত হবো। তিন বোন হয়ে থাকবো আজ থেকে। কি আইরাত থাকবে তো আমাদের সাথে?!
আইরাত;; না মানে,, মানে আসলে আমি কি কিভাবে আপনাদের সাথে…..
রাত্রি;; আহা ওসব কিছু তুমি চিন্তা করো না তো। তুমি এখন অনেক অসুস্থ রেস্ট নাও। আর আমাদের সাথেই থাকবে তুমি।
নিপা;; আর এই কোন আপনি টাপনি চলবে না,, ডিরেক্ট তুই করে বলতে হবে কিন্তু।

রাত্রি-নিপার কথা তে আইরাত হেসে দেয়। এবং তাদের সাথেই থাকতে রাজি হয়ে যায়।

রাত্রি;; এইতো হেসেছে। আর শোন আজ থেকে আমি তোকে বেবিজান বলে ডাকবো কেমন। নিপা তুই কি বলে ডাকবি তা তুই ভেবে নিস।
নিপা;; হয়েছে তোর এবার থাম। তোরা থাক আমি একটু ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি ওকে….
রাত্রি;; আচ্ছা যা।

রাত্রি আইরাতের পাশে বসে তার সাথে গল্প করতে লেগে যায়,, এবং চেষ্টা করে আইরাতকে হাসানোর জন্য। আর নিপা চলে যায় ডাক্তারের কাছে।

নিপা;; ডাক্তার, আমরা আর কতোদিন পর আইরাতকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবো?
ডাক্তার;; আজ নয় তবে আপনারা উনাকে কাল বা পরশুর মধ্যে নিয়ে যেতে পারেন।
নিপা;; জ্বি আচ্ছা। আর কোন ফর্মালিটিস্ থাকলে আপনি আমায় দিয়ে দিন।
ডাক্তার;; জ্বি,, আপনি এখানে সাইন করে দিন।
নিপা;; Sure….

নিপা ডাক্তারের সাথে কথা বলে এবং সবকিছু দেখে শুনে এসে পরে। দুদিন পর তারা আইরাতকে হস্পিটাল থেকে নিয়ে এসে পরে। আইরাতকে নিয়ে তারা তাদের ফ্লেটে ওঠে। রাত্রি আর নিপা দিনরাত এক করে আইরাতের দেখা শোনা করে। এতে আইরাতের প্রায় মন খারাপ হয় যে কেন একজন পরের জন্য তারা এতোকিছু করছে। তখন নিপা ধমক দিয়ে আইরাতকে বলে যে “নিজের বোনের দেখভাল করলে বুঝি পরের দেখভাল করা হয়”। তখন আইরাত কিছু বলে না শুধু তাকিয়ে থাকে আর ভাবে যে দুনিয়া টা যত খারাপ মানুষে ভরা ঠিক তেমনই ভালো মানুষেও ভরা। দুইটার সংমিশ্রণে আজকার এই দুনিয়া। রাত্রি আর নিপা তো চলে যায় বাইরে কাজে বাসায় সারাদিন একা একা থাকতে হয় আইরাতকে। সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে এবং আগের সব স্মৃতি মনে করে কান্নায় বুক ভাসায়। কিন্তু আগের থেকে আইরাতের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন কিছুটা হলেও হাসে, কথা বলে। রাত্রি এবং নিপা প্রাণপন চেষ্টা করে আইরাত কে সবসময় হাসি-খুশি রাখার। কিন্তু যখন তারা বাসা থেকে চলে যায় তখন তো আইরাত একদম একা পরে যায়। নিপা আইরাতের এই কথা চিন্তা করে একদিন বলে ওঠে….
.
.
.
.
.

নিপা;; আইরু,
আইরাত;; হুমমম
নিপা;; তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে!
আইরাত;; সত্যি (কিছুটা খুশি হয়ে)
নিপা;; না মিথ্যে
আইরাত;; ☹️
রাত্রি;; কেনো জ্বালাচ্ছিস মেয়েটাকে বলে দে না..
নিপা;; হাহাহা আচ্ছা ঠিকআছে বলছি বলছি,,, আইরু কাল থেকে তুই ও আমাদের সাথে কাজে যাচ্ছিস। I mean weddings planer…
আইরাত;; Really?!
রাত্রি;; হ্যাঁ, আসলে আমাদের যে ওনার রয়েছে তিনি বলেছেন আরো একজনকে নিতে। তো আমি আর নিপা ভাবলাম যে তোকে নেই কারণ সারাদিন বাসায় বসে বসে তো বোর ই হোস তার থেকে আমাদের সাথে চল ভালো লাগবে আর ধীরে ধীরে কাজ ও শিখে যাবি। যাবি তো?

আইরাত আর কিছু না বলে সোজা দৌড়ে এসে রাত্রি এবং নিপা কে জড়িয়ে ধরে।

আইরাত;; আমি, মানে আমি কি যে বলবো আমার জানা নেই। Thank you yaar, thank you so much.. তোদের দুজনকেই অনেক অনেক Thank you আর এত্তো গুলা ভালোবাসা।
নিপা;; আরে ছাড় এবার দম বন্ধ হয়ে গেলো তো।
রাত্রি;; হ্যাঁ কাল থেকে সকাল সকাল ওঠে পরবে ঠিকআছে এভাবে বসে বসে খাওয়া আর চলবে না। (ভেংচি কেটে)
আইরাত;; কিইইই দাঁড়া তবে রে…..

এই বলেই আইরাত বালিশ নিয়ে রাত্রির পিছনে ছুটতে থাকলো। আর নিপা তাদের দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি। এভাবেই আইরাত তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে লাগে। সেই আগের আইরাতে রুপান্তরিত হয়। অনেক চঞ্চল, হাসি খুশি। শুধু মাঝে মাঝে হুট করেই আব্রাহামের কথা এবং পুরনো স্মৃতি মনে পরলে বুকের পাশটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তখন আর চোখের পানি কোন বাধা মানে না। কিন্ত রাত্রি-নিপা আছে না, তারা থাকতে কখনোই আইরাত চোখের জল ফেলে না। ইন ফেক্ট কোন কারণে যদি রাত্রি বা নিপার মন খারাপ থাকে তাহলে উল্টো আইরাত তাদের মন ভালো করে দেয়। এভাবেই চলছে আইরাতের জীবন। আজ প্রায় এক বছরের বেশি হবে আইরাত রাত্রি-নিপার সাথে থাকে।




Flashback শেষ ~~
.
.
.
.
.

আইরাত বসে বসে আগের দিনগুলোর কথাই ভাবছিলো কিন্তু সেই সময় রাত্রি আসে, এসে দেখে যে আইরাত এখনো পাগলির মতো হয়ে বিছানাতে বসে আছে। তা দেখে রাত্রি চিল্লিয়ে ওঠে…

রাত্রি;; আইরুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউ,, তুই কি উঠবি নাকি আমার হাতের মার খাবি (রেগে)
আইরাত;; (রাত্রি চিল্লানোতে আইরাত চমকে ওঠে) আরে মেরি মা,, যাচ্ছি যাচ্ছি এভাবে সকাল থেকে ষাঁড়ের মতো করে চিল্লাচ্ছিস কেন। গলার এতো জোর কেন তোর।
রাত্রি;; 😡😤

আইরাত বিছানা থেকে ওঠে বিছানা গোছাতে লাগে। গোছ-গাছ শেষ হলে আইরাত ওয়াসরুমের দিকে এগোতে ধরলেই টিভি তে বড়ো বড়ো করে ব্রেকিং নিউজ ওঠে আসে।

“” নিজের কোম্পানি ইউরোপ & রাশিয়া তে লঞ্চ করায় এবং নিজের জন্মদিন উপলক্ষে এক বড়ো ভিআইপি পার্টি থ্রো করেন টপ বিজনেসম্যাম মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী””।।

পুরো খবর টা কানের বাইরে দিয়ে গেলেও “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী” এই নামটি যেন আইরাতের কান ভেদ করে গিয়ে লাগলো। আইরাত জলদি ঘাড় ঘুড়িয়ে টিভির স্ক্রিনে তাকায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে আব্রাহাম বসে আছে। ঠিক আগের মতোই রয়েছে সে। সেই তীক্ষ্ণ চোখজোড়া, অগোছালো হয়েও গোছালো চুল, চাপদাড়ি। সেই আগের আব্রাহাম। আইরাত দ্রুত গিয়ে আজকের ক্যালেন্ডার দেখে। চোখের সামনে জলজল করে ওঠে আজকের তারিখ টা। আজ “২৯ জানুয়ারি” আব্রাহামের জন্মদিন। আইরাত আবার টিভির দিকে তাকায়,, চোখের কোণে তার বিন্দু পানি জমেছে। আজ কে আব্রাহামের জন্মদিন তা আইরাতের একদমই মনে নেই। আর মনে না থাকার ই কথা। কেননা যাকে সে নিজের জীবন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলেছে তার অন্য কোন চিহ্ন বা স্মৃতি নিজের মাথায় বা মনে বয়ে বেড়ানো হাস্যকর। আইরাত এক দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলে পিছন থেকে রাত্রি এসে বলে ওঠে…

রাত্রি;; ইনি হচ্ছেন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে টপ বিজনেসম্যাম। এন্ড সব মেয়েদের ক্রাশ।
আইরাত;; হুমম (লুকিয়ে চোখের পানি মুছে)
রাত্রি;; এভাবে তাকিয়ে কি দেখসিস নিজেও ক্রাশ খেয়েছিস তাই না, তাই না বল?!
আইরাত;; বাজে বকিস না তো। চেহারা দেখেছিস ওর। কালো বাদরের মতো লাগে। এর ওপর কে ক্রাশ খাবে। আর আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আসছে ক্রাশ খাওয়াইতে, সর এখান থেকে (ঝাড়ি দিয়ে)
রাত্রি;; তোর যে চয়েজ খারাপ তা এতো দিনে শিওর হলাম। দেখেছিস উনাকে আয় হায় কি কিউট, হ্যান্ডসাম, মে তো মার গায়ি।
আইরাত;; হা তো মার যা
রাত্রি;; চুপ কর। আমার ড্রিমবয় এই আব্রাহাম,, যদি একবার একটাবার উনি আমাকে প্রপোজ করতেন আমি তো প্রপোজ ও ঠিক ভাবে করতে দিতাম না আগেই রাজি হয়ে যেতাম।
আইরাত;; ইশশশশশ আল্লাহ রুচিবোধ এতো বাজে তোর। যাহ চোখের সামনে থেকে সর।
রাত্রি;; আমি না তুই যা ওয়াসরুমে,, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
আইরাত;; যাচ্ছি।


আইরাত ওয়াসরুমে গিয়ে কিছুটা জোড়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর নিচে বসে পরে। আইরাত ভেবে ছিলো আব্রাহাম আর নেই যার ফলে সে “খুনী” নামক বোঝা টা নিজের অজান্তেই নিজের মনে বয়ে বেড়াচ্ছিলো। কিন্তু না তার ধারনা ভুল। আব্রাহাম বেচে আছে। ঠিক আছে, আগের মতোই রয়েছে সে। আইরাত এগুলো ভাবছে আর একা একাই হেসে যাচ্ছে। কিন্তু তার সামনে আবার ও আব্রাহামের সেই হিংস্র মুখ, তার শার্টে লেগে থাকা রক্ত এবং তার বাবা-মার পাশে বসে থেকে হাতে ছুরির নির্মম দৃশ্য ভেসে ওঠে। সাথে সাথে আইরাতের মুখের হাসি খানা উড়ে যায়। আইরাত উঠে দাঁড়াতে লাগলে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আবার ঠিকঠাক মতো দাঁড়িয়ে সাওয়ারের নিচে চলে যায়। সাওয়ার অন করতেই ঠান্ডা পানি সব আইরাতের ওপর পরে। আইরাত তার মাথা ওপরে তোলে মুখে পানির ফোটা ফালাতে লাগে। এতে যেন আইরাতের চোখের পানি সব ধুয়ে যাচ্ছে। বুকের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে আসছে। আব্রাহাম কে আজ এতোদিন পর দেখার ফলে সব ক্ষত-ব্যাথা গুলো যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে তার।












🤎🍂চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-28+29

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 28

🍂🍂..
..
..
..
..
..

পুরো হাইওয়ে পুলিশের আন্ডারে। রেড লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে এর একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়া নিষেধ। রাস্তাঘাট সব বন্ধ। চারিদিকে চলছে পুলিশের টহল। ফরেন্সিক রিপোর্টের লোকেরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। লাশ যেখানে পরে ছিলো সেখানে সাদা কালি দিয়ে মার্ক করা রয়েছে। পুলিশ ফোর্সরা কিভাবে কি হলো তার খোঁজ করছে। পুলিশ এম্বুলেন্সের গাড়ি সব জায়গাতে। আইরাতের লাশ খুঁজে পাওয়া যায় নি। রাশেদ আব্রাহামকে অনেক খোঁজে অনেক বার Call দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। তবে আব্রাহামের গাড়িতে ট্রান্সমিটার থাকার ফলে আব্রাহাম কোথায় কখন যাচ্ছে তা খুব সহজেই যানা যায়। রাশেদ দেখে যে আব্রাহামের গাড়ি লাস্ট হাইওয়ের ওপর এসে থেমেছে। রাশেদ দ্রুত সেখানে যায়। গিয়ে দেখে রাস্তা রক্তে মাখামাখি আর সেখানে মৃত প্রায় অবস্থায় পড়ে আছে আব্রাহাম। রাশেদ দৌড়ে আব্রাহামের কাছে ছুটে যায়,, অনেক ডাকাডাকি করে কিন্তু লাভ নেই। আব্রাহাম অজ্ঞান কোন সাড়াশব্দ নেই। রাশেদ জলদি পুলিশ অফিসারদের, এম্বুল্যান্স এবং আবির আহমেদ- অয়নকে ফোন দেয়। প্রায় ৩০ মি. পর তারা সবাই এসে পড়ে। আবির আহমেদ রাশেদ কে এই অবস্থার কথা জিগ্যেস করলে রাশেদ সব কিছু তাদের খুলে বলে। সব কথা শুনে আবির আহমেদ এবং অয়নের মাথায় বাজ ভেংে পরে। রাস্তার মাঝে রক্ত লাগা একাটি রিভলবার ও পাওয়া যায়। আইরাত কে অনেক খোঁজের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ কোন খবর পায় না। পুলিশদের ধারণা হাইওয়ের নিচের জংগলের মাঝে আইরাত পরে গেছে, যেখান থেকে কারো পুনরায় ফিরে আসা এককথায় অসম্ভব। স্পেশাল সার্ভিস দের ও লাগিয়ে দেওয়া হয় আইরাতের খোঁজে কিন্তু ফলাফল শূন্য। যখন আইরাত কে এতো খোঁজার পরও পাওয়া যায় না তখন পুলিশ আইরাতকে মৃত ঘোষণা করে।

পুলিশ;; মিস্টারঃ আবির আহমেদ,
আবির আহমেদ;; জ্বি অফিসার, কোন খোঁজ পেলেন আমার আইরাত মামনির?
পুলিশ;; (মাথা নিচু করে মাথা থেকে টুপি খুলে) I am really very sorry sir,, আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ইভেন পুরো জংগল খোঁজা শেষ কিন্তু মিসেস.আইরাত কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা ব্যার্থ।
আবির আহমেদ;; না না অফিসার প্লিজ এভাবে বলবেন না। আমার ছেলেটা বেচে থেকেও মরে যাবে।
পুলিশ;; স্যার, আমরা দমে যাবো না। আবার আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো। কিন্তু এখন আমরা মিসেস আইরাতকে পাচ্ছি না।
অয়ন;; মানে কি অফিসার এসবের। বউমনি কে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি। আমরা কিছুই জানি না যত ফোর্সদের দরকার হয় আপনারা কাজে লাগান যত যাই করতে হয় আপনারা করুন, কিন্তু বউমনি কে যেভাবেই হোক আপনারা খুঁজে বের করুন।
পুলিশ;; Yes sir we will try our best…

এই বলে পুলিশ চলে যায়। আবির আহমেদ কেদে দিলেন। অয়ন কি বলে তার বাপিকে শান্তনা দিবে জানা নেই তার।

অয়ন;; বাপি, বাপি প্লিজ তুমি এভাবে কেদো না, ভেংগে পড়ো না এভাবে। এখন দাভাইয়ের তোমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কথার মাঝেই অয়নের ফোন এলো। অয়ন ফোন রিসিভ করলো…

অয়ন;; Hlw
………………….
অয়ন;; কিহহহ,,, না আমরা আমরা এখনই আসছি
আবির আহমেদ;; কি কি হয়েছে অয়ন
অয়ন;; বাপি প্লিজ তাড়াতাড়ি হস্পিটালে চলো। দাভাইয়ের অবস্থা অনেক বেশি ক্রিটিকাল।
আবির আহমেদ;; তাড়াতাড়ি চল।

আবির আহমেদ এবং অয়ন হন্তদন্ত হয়ে হস্পিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। প্রায় ১৫-২০ মি. পর তারা পৌঁছে গেলেন। এক প্রকার দৌড়েই তারা হস্পিটালের ভিতরে গেলেন। অয়ন পাগলের মতো করে ডাক্তার কে ডাকতে লাগলো। মূহুর্তেই সব ডাক্তার নার্স বেরিয়ে এলো।

অয়ন;; Doctor, Doctor আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর রুম কোনটা?
ডাক্তার;; Cool down Mr. Oyon Chowdhury… আমিই আব্রাহাম আহমেদ কে দেখছি। আমিই উনার ডাক্তার। আপনি আমার সাথে চলুন

অয়ন আবির আহমেদ ডাক্তারের সাথে যেতে লাগলো। আব্রাহামের রুমের সামনে এসে দাড়ালো তারা। রুমের গ্লাস দিয়ে আব্রাহামকে দেখা যাচ্ছে। আব্রাহামের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, হাতে সুই পুস করা। বেডে চুপ মেরে শুয়ে আছে। নিঃশ্বাস বারবার ওঠা নামা করছে তার। যেন শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
আবির আহমেদ আব্রাহামকে দেখে ফুপিয়ে কান্না করে দিলেন। অয়ন তার বাপি কে আস্তে করে ধরে নিয়ে বসিয়ে দিলেন। তার বাপি কে শান্তনা দিচ্ছে সে কিন্তু তারও যেন চোখের পানি আজ কোন বাধা মানছে না।
সেই সময় ডাক্তার অয়নের সামনে আসলেন।

ডাক্তার;; দেখুন আমি বুঝতে পারছি যে আপনারদের ওপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে। প্লিজ আপনারা এভাবে ভেংে পড়বেন না। ধৈর্য ধরুন। আল্লাহ আছেন তিনি সবকিছু ঠিক করে দিবেন। তবে আমরা যখন আব্রাহাম স্যার কে নিয়ে আসি সেই স্পট থেকে তখন তিনি আধো আধো ভাবে চোখ খুলেন। তিনি বারবার একই নাম নিচ্ছিলেন “আইরাত”। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি খুব ভয় পেয়ে আছেন। দেখুন বিজ্ঞান বলে যে “আমাদের মাথায় চোট লাগলে আমরা সাধারণত দুই ধরনের মানুষকে ভুলে থাকি,, ১. যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি ২. যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি”। কিন্তু এক্ষেত্রে আব্রাহাম স্যার মাথায় না তার হার্টে চোট পেয়েছে। এমনকি অনেক রক্তক্ষরণ ও হয়েছে। যার জন্য আমাদের এক্সট্রা রক্ত তার বডি তে দিতে হয়েছে। আমরা আব্রাহাম স্যার কে পুরোপুরি আমাদের আন্ডারে রেখেছি। যত বড় বড় স্পেশাল ডাক্তার ছিলো তারা সব এসেছেন। আপনারা একদমই চিন্তা করবেন না।

ডাক্তার কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে আসেন। কিন্তু অয়ন এবং তার বাপি কোনভাবেই আইরাতের চিন্তা তার মাথা থেকে সরাতে পারছে না।

সেই সময় সিনিয়ন একজন পুলিশ তাদের কাছে এলেন।

পুলিশ;; মিস্টার আবির আহমেদ এবং অয়ন আহমেদ চৌধুরী। আপনাদের জন্য একটি Bad News আছে।
অয়ন;; কি অফিসার?
পুলিশ;; আসলে আমরা তিনটে লাশ পেয়েছি। একটা লাশ কে চিনতে পারলেও আর বাকি গুলো চিনা যাচ্ছে না। কিন্তু মিস্টার আব্রাহামের বডিগার্ড রাশেদ বললেন যে এই লাশ নাকি আশরাফুল আহমেদ এবং তার স্ত্রীর। অর্থাৎ আপনার ভাইয়ের তো যদি আপনি দয়া করে তাদের পরিচয় টা ক্লিয়ারলি বলে দিতেন। আমি জানি এই সময়ে আপনারা তেমন পরিস্থিতি তে নেই কিন্তু তবুও।
আবির আহমেদ;; এসব কি বলছেন,, আশরাফুল আমার ভাই তারা কি কেউ বেচে নেই?
পুলিশ;; সরি স্যার তাদের অনেক বাজে ভাবে খুন করা হয়েছে।

পুলিশের কথা শুনে আবির আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। অয়ন তার বাপি কে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পুলিশের সাথে নিয়ে গেলেন।



অয়ন আবির আহমেদের সামনে তিন তিনটে লাশ সাদা কাপড়ে ঢাকা। সাদা কাপড় গুলোতে রক্ত লেগে আছে। আবির আহমেদ লাশ গুলোর পাশে ধপ করে বসে পরলেন। কাপা কাপা হাতে প্রথম লাশের কাপড় সরালেন। সরাতেই আবির আহমেদ অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরলেন।

আবির আহমেদ;; আশরাফুল ভাই আমার। আমি তোকে কখনই নিজের শত্রু ভাবিনি। আমি তো তোকে সেই কবেই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কেন এমনটা হলো। আমারে ছেড়ে যাস না ভাই। কথা বল, চোখ খোল। এতোদিন পর তোকে পেলাম তাও, তাও মৃ মৃত অবস্থায়। ফিরে আয় ভাই আমার কাছে (লাশকে ধরে কেদে) আতিয়া, আয়ুশ কথা বলো তোমরা। তোমরা সবাই ছিলে কিন্তু সবকিছু থেকেও আমার কিছুই ছিলো না।

অয়ন খুব কষ্টে তার বাপি কে লাশের পাশ থেকে টেনে তুলে আনলো। পুলিশকে তারা পরিচয় দিয়ে দেয় যে তারাই আবির আহমেদ চৌধুরীর ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী,, আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী – আতিয়া আহমেদ চৌধুরী এবং তাদের ছেলে আয়ুশ। তাদের মেয়ে নুজাইফা বিনতে আইরাতের এখনো কোন খোজ মিলে নি। কিন্তু আইরাতকে তারা প্রথমে নুজাইফা বিনতে আইরাত নামে পরিচয় দিলেও পরর্বতীতে তাকে আব্রাহামের স্ত্রী মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নামে পরিচয় দেন। সেই এক্সিডেন্ট স্পটে দুটো রক্তের সেম্বল পাওয়া গেছে। পুলিশদের ধারনা একটা আব্রাহামের আর একটা মেবি আইরাতের। আবির আহমেদের বয়ানে পুলিশরা এবার কনর্ফাম হলো যে এনিই আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী আতিয়া আহমেদ চৌধুরী। সব আইনি কাজ শেষ করে লাশগুলোকে আবির আহমেদ এবং অয়নের কাছে সপে দেওয়া হয়। তারা লাশগুলোর দাফন কার্য সব সম্পন্ন করলো। কিন্তু আব্রাহামের স্বাস্থ্যে কোন রকম কোন উন্নতি নেই। পুলিশ অফিসারা আইরাত কে টানা ১ সপ্তাহ লাগাতার খুজতে থাকে কিন্তু কোন খোঁজই পায় না। অবশেষে তারা আইরাতকে মৃত ঘোষণা করেন। আব্রাহাম ও হস্পিটালে ICU তে রয়েছে সেভাবেই শুয়ে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। জীবন মৃত্যুর মাঝে লড়াই করছে সে। আবির আহমেদ – অয়ন রোজ রোজ আব্রাহামকে দেখতে আসে এবং চোখের পানি বিসর্জন দেয়।










১ মাস পর…………

নার্স;; এই তোমরা শুনো (ওয়ার্ড বয় দের ডেকে) আব্রাহাম স্যার এর ওপর কড়া নজর রাখবে ঠিকাআছে। কখন কি হচ্ছে, স্যার এর Health এ কখন কি হচ্ছে সব ইনফরমেশন চাই ওকে।
ওয়ার্ড বয়;; জ্বি আপু ঠিক আছে কিন্তু আপু স্যার কি আসলেই কোনদিন সুস্থ হয়ে উঠবেন?!
নার্স;; চুপ থাকো, এভাবে কেন বলছো। ভুলে যেও না যে তোমরা কার নামে কথা বলছো। স্যার অবশ্যই সুস্থ হবেন। স্যার তো…………

নার্সের কথা শেষ না হতেই আব্রাহামের দিকে চোখ পড়লো। আব্রাহামের ডান হাতের কানি আংগুল নড়ছে। নার্স তা দেখে চমকে উঠলো। আর এক মূহুর্ত দেরি না করে নার্স দৌড়ে আব্রাহামের রুম থেকে বের হয়ে গেল এবং চিল্লিয়ে ডাক্তারকে ডাকতে লাগলো…

নার্স;; Doctor Doctor
ডাক্তার;; কি হয়েছে,, এটা হস্পিটাল এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?
নার্স;; স স স্যার, স্যার আব্রাহাম স্যার
ডাক্তার;; হুমম হয়েছে কি?
নার্স;; আব্রাহাম স্যার তার হাতের আঙুল নাড়িয়েছেন। স্যার নড়ছেন।
ডাক্তার;; What, seriously!!
নার্স;; Yes sir
ডাক্তার;; তাড়াতাড়ি চলো….



ডাক্তার এবং নার্স জলদি আব্রাহামের রুমে গেলো। কিন্তু দরজাতে গিয়েই থেমে পড়লো আর এগোতে পারলো না। ডাক্তার এবং নার্স গিয়ে দেখে আব্রাহাম তাকিয়ে আছে। বড় বড় ডাক্তার রা পর্যন্ত আব্রাহামের অবস্থা থেকে তাদের মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছিলেন যে আব্রাহাম আর সুস্থ হওয়ার নয়। কিন্তু সবার ধারনা ভুল প্রমাণ করে আব্রাহাম আজ চোখ মেলে তাকিয়েছে।

ডাক্তার;; It’s miracle,, It’s just a miracle….. আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি স্যার আপনি এভাবে আমাদের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবেন। We are so happy for you sir… আমি এখনই, আমি এখনই মিস্টার আবির আহমেদ এবং অয়ন স্যার কে ফোন দিচ্ছি।

ডাক্তার তাড়াহুড়ো করে আবির আহমেদ এবং অয়নকে ফোন দেয়।

অয়ন;; Hlw Oyon Ahmed speaking….
ডাক্তার;; স্যার স্যার আমি আব্রাহাম স্যার এর ডাক্তার বলছি
অয়ন;; কি দাভাইয়ের অবস্থা কেমন কোন খবর পেলেন?
ডাক্তার;; স্যার, আপনি বিশ্বাস করবেন না আজ কি হয়েছে স্যার
অয়ন;; কি হয়েছে, সবকিছু ঠিক আছে তো! (চিন্তিত হয়ে)
ডাক্তার;; স্যার, আব্রাহাম স্যার আজকে তার চোখ খুলে তাকিয়েছেন
অয়ন;; (অয়ন কিছু বলছে না, সোজা বসা দাঁড়িয়ে গেলো, চোখে-মুখে তার বিস্ময়ের ছাপ। কানে থাকা ফোনটি হাত থেকে তার নিচে পরে গেলো এবং চোখ থেকে একবিন্দু জল গড়িয়ে পরলো) আআ আমি, আআমি আসছি।

অয়ন দ্রুত বাইরে বের হয়ে গেলো অফিস থেকে। তার ব্লেজার পরতে পরতে গাড়িতে উঠে গেলো।
ড্রাইভার কে দ্রুত ড্রাইভ করে চৌধুরী ভবনের দিকে ছুটতে লাগলো।





In চৌধুরী ভবন…..

অয়ন;; বাপি জলদি চলো (বাড়ির ভিতরে দৌড়ে এসে)
আবির আহমেদ;; অয়ন বাবা কি হয়েছে তুই ঠিক আছিস তো,, এভাবে দৌড়ে আসচ্ছিস কেন, কি হয়েছে?
অয়ন;; বাপি, আমি এখন কিছু বলতে পারবো না সেই সময় নেই এখন তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি চলো।

আবির আহমেদ, অয়ন ঝড়ের গতিতে হস্পিটালে গিয়ে পৌঁছালেন।



ডাক্তার;; স্যার, স্যার আপনারা এসেছেন (দরজাতে আবির আহমেদ এবং অয়নকে দেখে)। প্লিজ জলদি চলুন।
আবির আহমেদ;; আচ্ছা ডাক্তার হয়েছে টাকি আমাকে কি কেউ কিছু বলবেন?!
ডাক্তার;; স্যার আপনি চিন্তা করবেন না,, খুশির খবর আছে আপনারা চলুন…


আবির আহমেদ অয়ন ডাক্তারের পিছু পিছু চলে গেলেন। গিয়ে জোড়েই আব্রাহামের রুমের দরজা খুলল এবং খুলে যা দেখল তাতে আবির আহমেদ অয়ন আসলে কি বলবে তা খুজে পাচ্ছে না। বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা ধাক্কা এসে লাগলো। কেননা তাদের সামনে আব্রাহাম বিছানাতে বসে আছে,,পিছনে বালিশের সাথে হালকা হেলান দিয়ে,, দৃষ্টি তার স্থির।






🧡🍁চলবে~~~~~
.

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 29

আব্রাহাম সাদা টি-শার্ট পরে বিছানাতে হেলান দিয়ে আধাশোয়া হয়ে রয়েছে। সামনের দিকে একাধারে তাকিয়ে আছে যেন আশপাশের কোন কিছুতেই তার মন নেই। তার বাপি ভাই এসেছে তাতেও তার কোনরকম কোন খেয়াল নেই। আবির আহমেদ ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে গেলো। আব্রাহামের পাশে বসে পড়লেন। আব্রাহামের গালে হাত রেখে বলতে লাগলেন…

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা আমার,, তুই তুই ঠিক হয়ে গেছিস। আমি জানতাম তুই একদিন ঠিক উঠে দাঁড়াবি। জানিস সব, সব ডাক্তার রা বলেছিল যে তুই আর তোর এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবি না। কারণ তোর, তোর মনে অনেক গভীর আঘাত লেগেছে। কিন্তু তারা ভুল। আব্রাহাম আমার ফিরে এসেছে আমার কাছে।

আবির আহমেদ আব্রাহামের সামনে বসে এগুলো বলছে এবং চোখের পানি ফেলছেন। আবির আহমেদ আব্রাহামের কপালে চুমু একে দিলেন।

অয়ন;; দাভাই, জানিস তোকে আমি এতো টা দিন কতো মিস করেছি। বাড়িতে, অফিসে, ক্লাবে সব সব জায়গায় তোকে মিস করেছি। তোকে ছাড়া আমারা অসম্পূর্ণ রে। কিন্তু এখন তুই আবার ফিরে এসেছিস। এখন আমরা আবার আমাদের আগের আব্রাহাম কে ফিরে পেয়েছি। দাভাই তোকে আমরা বলে বুঝাতে পারবো না যে আমরা কি পরিমান খুশি তোকে সুস্থ দেখে।
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ, আমরা আজই তোকে বাসায় নিয়ে যাবো। এখনই আমাদের সাথেই নিয়ে যাবো। ডাক্তার আমার আব্রাহামকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি তো?
ডাক্তার;; জ্বি জ্বি অবশ্যই।
আবির আহমেদ;; অয়ন তাড়াতাড়ি সবকিছুর ব্যাবস্থা কর, আমি এখনই আব্রাহামকে বাসায় নিয়ে যাবো।আব্রাহাম চলো (হাসোজ্জল মুখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে)
আব্রাহাম;; “আইরাত”

আবির আহমেদ এবং অয়ন তড়িঘড়ি করে আব্রাহাম কে নিয়ে যেতে ধরলে আব্রাহামের কথায় থ মেরে যায়। আব্রাহামের সেন্স আসার পর থেকে সর্বপ্রথম তার মুখ দিয়ে “আইরাত” নাম টাই উচ্চারিত হয়। আব্রাহামের কথা শুনে ডাক্তার সাহেব বলে উঠেন…

ডাক্তার;; এইতো এই নাম টাই “আইরাত” এই নাম টা আব্রাহাম স্যার কে যখন আমরা প্রথম আনি তখনও তিনি বলেছিলেন। আসলে কে এই আইরাত?

ডাক্তারের প্রশ্নে আবির আহমেদ এবং অয়ন কি বলেবে ভাষা খুঁজে পায় না। কেননা পুলিশ অফিসাররা তো আইরাতকে সেই কবেই মৃত ঘোষণা করেছেন। এই কথা টা তারা আব্রাহামকে কি করে বলবে বা কিভাবেই বা বুঝাবে যে তার আইরাত আর এই দুনিয়াতে নেই। সাহস হচ্ছে না আবির আহমেদ এবং অয়নের। সেই সময় আবার আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আই আআ আআইরাত।
ডাক্তার;; স্যার বলুন,, বলুন না স্যার কে এই আইরাত। বারবার আপনি তার নামই কেন নিচ্ছেন। সেইদিন আপনি এই নামটি নিয়েছিলেন আর আজ এতোদিন পরেও সেন্স আসার পর আপনি তারই নাম নিচ্ছেন। স্যার কে এই আইরাত?
আব্রাহাম;; আমার পুরো পৃথিবী। She is my life, i can’t even imagine a single day without her… আমি আইরাতের কাছে যাবো। আমাকে আমার আইরাত এনে দাও। যে করেই হোক, যেভাবেই হোক। নয়তো আমার বাচা মরা সবকিছুই সমান। আমার আইরাতকে চাই যে কোন মূল্যে।
আবির আহমেদ;; আব…আব্রাহাম দেখো আসলে,,
আব্রাহাম;; নাহ আমি কারো কোন কথাই শুনবো না। আমি কিচ্ছু জানি না। আমি ততক্ষণ ঠিক হবো না যতক্ষণ না আমাকে আমার আইরাত এনে না দাও তোমারা। ও বাপি, বাপি প্লিজ আমাকে আইরাত এনে দাও না। আমি ওকে ছাড়া নিঃস্ব। (পাগলের মতো কান্না করে)

আবির আহমেদ আব্রাহাম কে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু আব্রাহাম তো কিছুই বুঝছেই না উল্টো আরো পাগলামি শুরু করে দেয়। আব্রাহামের হাতে সুই পুশ করা ছিলো, সেলাইন দেওয়া ছিলো। সে তা সবকিছু একটানে ছিড়ে ফেলে দেয়। লন্ডভন্ড করে ফেলে সবকিছু। পুরো পাগলের মতো আচরণ করতে লাগে। মুখে তার একই কথা “আইরাত চাই আমার, আমাকে এনে দাও। আমি বাঁচবো না আইরাতকে ছাড়া। আইরাতকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি”। ডাক্তার-নার্স রা অনেক আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আব্রাহামের সাথে কেউ পেরে উঠছে না। সবকিছুর শেষে অয়ন নিজের ভাইয়ের এমন দশা সহ্য করতে না পেরে জোড়ে চিল্লিয়ে ওঠে…

অয়ন;; মরে গেছে আইরাত বউমনি।

অয়নের এই কথায় আব্রাহাম মূহুর্তে শান্ত হয়ে গেলো। যেন এক ঘূর্ণিঝড় থেমে গেছে। আব্রাহাম অশ্রুসিক্ত চোখে পিছনে ঘুড়ে অয়নের দিকে তাকায়। অয়নের খুব মায়া লাগে আব্রাহামের এই অবস্থা দেখে। সে জীবনেও ভাবেনি যে তারই চোখের সামনে সে তার ভাইয়ের এই করুণ দশা কোনদিন দেখবে। অয়ন নিজেও নিজেকে আর আটকাতে পারে না। আব্রাহামের সামনে চলে যায়।

অয়ন;; বউমনি নেই রে দাভাই। বউমনি আর নেই। চলে গেছে আমাদের ছেড়ে অনেক আগেই। বউমনি আর বেচে নেই। হাইওয়ে তে যখন তোকে রাশেদ ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে তখন আমাদের খবর দেয়। সাথে সাথে আমরা এবং পুলিশরা সেখানে যাই। পুলিশরা ইনভেস্টিগেশন করলে জানা যায় যে সেখানে বউমনিরও রক্তের সেম্বল পাওয়া যায় কিন্তু বউমনি কে কোথাও না। তারা বলে বউমনি হাইওয়ের নিচে জংগলে পরে গেছে। পুরো ৭ দিন বউমনি কে লাগাতার খুজে কিন্তু অবশেষে বউমনি কে না পেয়ে তারা বউমনি কে মৃত ঘোষণা করেন। (কান্নায় ভেংগে পড়ে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে)

অয়নের কথা গুলো শুনে আব্রাহামের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে। তার পুরো দুনিয়া অন্ধকার লাগছে। আব্রাহাম এক ঝটকায় অয়নকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে পিছাতে লাগে, পিছাতে পিছাতে পরে যেতে নিলে আবির আহমেদ এবং ডাক্তার তাকে ধরতে যায় কিন্তু আব্রাহাম তাদের থামিয়ে দেয়। আব্রাহামের চোখ-নাক-মুখ সব লাল হয়ে গেছে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগে। আইরাতের যে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তা ঝাপসা ভাবে আব্রাহামের চোখে ভাসতে লাগলো। কিন্তু পুরোপুরি খেয়াল নেই তার। মাথায় প্রেসার পরাতে আব্রাহাম তার মাথা চেপে ধরে।

আব্রাহাম;; না ননা নাহ,, তুতুতোমরা মিমিমিথ্যে বলছ আমায়। আয়ায়য়ামার আই আইরাত বেবেবেচে আছে। কো কোথাও যায় নি সে আমাকে ছেড়ে। আম আমি জানি আমা আমার আইরাত ও আমাকে খুখুব খুব ভালোবাসে খুব। সে কখনো আমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না। শুনেছ, শুনেছ তোমরা বেচে আছে আমার আইরাত বেচে আছে। ওকে যদি তোমরা কেউ আবার মৃত বলেছ তো আমি খুন করে ফেলবো সবাইকে। আমার আইরাত আমার ছিল,আছে আর থাকবে। ও ও ও আমাকে ছেড়ে আমার থেকে দূদূর যেতেই পারে না আমি জানি। আইরায়ায়ায়ায়াততততত।। (চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম আইরাতের নাম ধরে চিল্লিয়ে উঠলো। পুরো হস্পিটালে এই একই আওয়াজ বাজতে থাকে “আইরাত”। আব্রাহাম রুমের সবকিছু ভাংচুর করতে শুরু করলো। বিছানা পুরো উলোটপালোট করে দিয়েছে। প্রচন্ড হিংস্র লাগছে এখন আব্রাহামকে যেন কেউ এখন সামনে গেলেই তার জীবন শেষ। এই অবস্থা থেকে কেবল আর কেবল তাকে আইরাতই বের করতে পারতো কিন্তু সে তো নেই💔। যা আব্রাহাম কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। আব্রাহামের পাগলামো ধীরে ধীরে বাড়তে দেখে ডাক্তার বলে ওঠে…

ডাক্তার;; নার্স, নার্স জলদি উনাকে ধরার চেষ্টা করো। ওয়ার্ডবয় দের ডেকে আনো। উনি যেভাবে পাগলামি করতে শুরু করেছেন তাতে তার শরীর ভালো নয় বরং হিতে বিপরীত হবে। জলদি করো তোমরা।

ডাক্তারের কথায় সব নার্স এবং ওয়ার্ডবয় ছুটে এলো। তারা যথেষ্ট সাহস নিয়ে আব্রাহামকে ধরে ফেললো। ধরে বিছানাতে শুইয়ে দিলো।

ডাক্তার;; নার্স তাড়াতাড়ি করে ইঞ্জেকশনের ব্যাবস্থা করো। উনাকে শান্ত করানোর জন্য এখন ঘুমের ঔষধ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। মিস্টার আবির আহমেদ এবং অয়ন আপনারা প্লিজ দয়া করে বাইরে যান প্লিজ। আমি আপনাদের সাথে পরে কথা বলবো। আবাদত্ত আপনারা প্লিজ বাইরে যান। Nurse bring it fast…

ডাক্তারের কথা অয়ন আবির আহমেদ দ্রুত বাইরে বেরিয়ে পরলেন। আবির আহমেদ দরজার গ্লাস দিয়ে আব্রাহাম কে দেখতে লাগলেন। অয়ন উল্টো পাশে দাঁড়িয়ে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।
আব্রাহামকে সবাই চারপাশ দিয়ে ধরে রাখলে ডাক্তার তার হাতে ইঞ্জেকশন পুশ করে দেয়। আব্রাহাম ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়। পরিস্থিতি সবকিছু কোন্ট্রলে এসে পরে। আব্রাহামকে ঠিকঠাক মতো শুইয়ে দিয়ে নার্সরা এবং ডাক্তার রুমের বাইরে বের হয়ে আসে। বাইরে এসে দেখে আবির আহমেদ এবং অয়ন দুজনই মনমরা হয়ে বসে আসেন। ডাক্তার কে বাইরে আসতে দেখলে আবির আহমেদ দাঁড়িয়ে পরেন এবং ডাক্তার কে বলেন…

আবির আহমেদ;; ডাক্তার, ডাক্তার আমার আব্রাহামের এই অবস্থা কেন। ও তো অনেক বেশিই পাগলামি করছে। ডাক্তার আমার আব্রাহাম আবার ঠিক হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তো?!
ডাক্তার;; দেখুন মিস্টার আবির আহমেদ, আব্রাহাম স্যার সুস্থ আছেন কিন্তু আইরাত নামে এই মানুষটির জন্য তার হ্রদয়ে যা আছে তা অনেক গভীর পর্যায়ে রয়েছে। যা আমরা চাইলেও বের করে আনতে পারবো না। আব্রাহাম স্যার ঠিক আছেন কিন্তু এই আইরাত কে না পাওয়ার যে যন্ত্রণা তিনি তার বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন তা অনেক বেশি। এই আইরাতকে পেলে তিনি সুস্থ এর ওপরে সুস্থ হয়ে যাবেন। আচ্ছা এই আইরাত কি আব্রাহাম স্যার এর…………!!
আবির আহমেদ;; বউ, আইরাত আব্রাহামের বউ হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তারা দুজন আলাদা হয়ে যায় এবং আইরাত মামনি মারা যায়। অনেক বেশি ভালোবাসে আব্রাহাম আইরাতকে। এতোই ভালোবাসতো যে তার জন্য কারো জীবন নেওয়া বা দেওয়ার জন্যও কখনো পিছপা হতো না। কিন্তু আমার এতো দিন শুধু একটা ভয়ই কাজ করত মনে যে আব্রাহাম যখন উঠবে তখন আমাকে আইরাত মামনির কথা জিজ্ঞেস করলে আমি ওকে কি উত্তর দিবো। আজ আমার ভয় বাস্তবে রুপান্তরিত হলো। জানি না আব্রাহামের সামনে আমি কি নিয়ে যাবো,, কিভাবে বলবো যে তার আইরাত, তার আইরাত আর নেই (কেদে ওঠে)
ডাক্তার;; আপনি প্লিজ শান্ত হন। আমি বুঝতে পারছি আপনাদের পরিস্থিতি। কখন কি হয় আমরা কেউ বলতে পারি না। আপনি শুধু এটা জেনে রাখুন যে আল্লাহ তায়ালা কখনো কারো সাথে অমঙল করেন না। তিনি যা করেন সব ভালোর জন্যই করেন, ঠিক করেন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ধৈর্য ধরুন।
অয়ন;; ডাক্তার, আমরা দাভাইকে কখন বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি?
ডাক্তার;; দেখুন স্যারের তো এখন অবস্থা ভালো না আজ না হয় থাক আপনারা বরং আগামীকাল আব্রাহাম স্যারকে নিয়ে যেতে পারেন।
অয়ন;; হুমমমম
ডাক্তার;; আমি এবার আসি….

এই বলে ডাক্তার আবির আহমেদ এবং অয়নের কাছ থেকে চলে আসলো। অয়ন আলতো করে তার বাপি কে ধরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো।

আবির আহমেদ;; আমি কিভাবে আব্রাহামকে বলবো যে আইরাত মামনি নেই। আব্রাহাম একটা লাশ হয়ে বেচে থাকবে আইরাতকে ছাড়া। আইরাত কে সে ঠিক কতোটা ভালোবাসে তা মুখে বলা মুশকিল।
অয়ন;; বাপি, আমার দাভাই অনেক স্ট্রং তা কি তুমি জানো না। কিছুই হবে না ভাইয়ের তুমি দেখো।

অয়ন আবির আহমেদ কে বুঝাতে লাগলো। ওদিকে আব্রাহামকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। আইরাত যে তার জীবনে আর নেই তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে আব্রাহামের। যেন নিজ থেকে নিজের প্রাণ টা কেউ টান দিয়ে নিয়ে নিয়েছে।
আবির আহমেদ অয়ন সেইদিন হস্পিটাল থেকে এসে পরে।










পরেরদিন🍂……………

__________

আবির আহমেদ অয়ন দুজনই হস্পিটালে যায়। আজ আব্রাহাম কে হস্পিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। আব্রাহাম আবার বাড়িতে এসে পরবে। আবির আহমেদ এতে অনেক খুশি। বাড়িকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ঠিক যেভাবে আব্রাহামের পছন্দ। বাড়িতে সবকিছু রেডি করে রেখে তারা চলে যায় হস্পিটালের উদ্দেশ্যে।

In Hospital….

আবির আহমেদ অয়ন পৌঁছে যায় হস্পিটালে। ভিতরে এসেই দেখে আব্রাহাম উঠে বসে আছে এবং ডাক্তার তার পাশে দাঁড়িয়ে লেখালেখি করছেন। ডাক্তার তাদের দেখে মুচকি হেসে ভিতরে আসতে বললেন…

অয়ন;; Good morning দাভাই
আব্রাহাম;;_______________
অয়ন;; দাভাই তুই জানিস,, আজকে বাড়িতে গেলে তোর জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।
আব্রাহাম;; ______________
অয়ন;; নে এবার আর কতো চুপ মেরে বসে থাকবি উঠ দেখি। এবার বাড়ি যাওয়া যাক কি বলিস।
আব্রাহাম;; ______________
আবির আহমেদ;; আরে ও আর কি বলবে। তাড়াতাড়ি চল।

আব্রাহাম কারো কোন কথায় শুনছে না। শুধু চুপ হয়ে এক দৃষ্টিতে বসে থাকে। আবির আহমেদ অয়ন আব্রাহাম কে রেডি করিয়ে নিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার আব্রাহামের সব জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো।
বাইরে বেড়িয়ে এসে আব্রাহাম গাড়ি দেখলো।

আব্রাহাম;; গাড়ি…
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ বাবা এটা গাড়ি। তুমি না Car Racing এ কতো শত বার চেম্পিয়ান হয়েছ,, ভুলে গেলে। তোমার মতো Car & Bike খুব কম জনই রাইড করতে পারতো। ড্রাইভ করবে তুমি?

আব্রাহামের আগের সব কিছু মনে হতে লাগে। হাইওয়ে তে গাড়ির দ্রুত চালিয়ে যাওয়া এমনকি আইরাতকেও একটা গাড়ি অর্থাৎ ট্রাক এসে ধাক্কা মারা সব যেন কেমন আব্রাহামের মাথায় চক্কর কাটতে লাগে। আব্রাহাম মাথা হালকা ভাবে চেপে ধরে। অয়ন আব্রাহামের বেপার বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি করে তাকে ধরে ফেলে এবং গাড়িতে খুব সাবধানে বসিয়ে দেয়। আব্রাহাম ধীরে ধীরে মাথা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। বেশকিছুক্ষন সময় পর তারা চৌধুরী ভবনে এসে পরে।



চৌধুরী ভবন….

গাড়ি থামতেই আবির আহমেদ এবং অয়ন নেমে পরে। ড্রাইভার ও গাড়ির ডিকি থেকে সব জিনিসপত্র নামাতে শুরু করে। আব্রাহামকে নামতে না দেখে আবির আহমেদ গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম চুপ করে গাড়িতে বসে আছে। তা দেখে আবির আহমেদ হেসে আব্রাহামের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়…

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা, এইতো আমাদের বাড়ি। এবার চলো তাড়াতাড়ি নেমে পড়।

আব্রাহাম কিছুটা সংকোচ নিয়েই তার বাপির হাত ধরে নেমে পরে গাড়ি থেকে। নেমেই চোখ যায় সোজা চৌধুরী ভবনের দিকে। আব্রাহাম ভ্রু কুচকে বাড়ির দিকে তাকায়। অয়ন পিছন দিক দিয়ে এসে আব্রাহামকে বলে ওঠে…

অয়ন;; কিরে দাভাই ভিতরে চল…

আব্রাহাম আবার সামনে দিকে তাকালো। আব্রাহাম তার পা বাড়াতে নিয়েও আবার থেমে যায়। তার মনে কেমন যানি একটা ভয় কাজ করছে, যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও একপ্রকার বাধ্য হয়ে যেতে হলো তাকে। আব্রাহাম বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে এবং চারপাশে সবকিছুর ওপর নজর দিচ্ছে। এতে করে আইরাতের স্মৃতি যেন তার আরো বেশি মনে পরছে। কেননা এই বাড়ির অলিগলি, প্রত্যেকটা কোণা আইরাতের সাথে মিশে আছে। সবকিছুই যেন আইরাতের কথাই বলছে,, আইরাতের সাক্ষীই বহন করে যাচ্ছে। আইরাতের হাসি কান্না, রাগ, অভিমান, মায়া এই বাড়ি যেন আইরাতের সেই সবকিছু কেই ইংগিত করছে। যা আব্রাহামকে ভিতর থেকে আর বেশি অগোছালো করে ফেলছে।।








💙🌸চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-26+27

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 26

🤎🦋
..
..
..
..
..
আব্রাহাম-আইরাত এভাবেই কাটিয়ে দিলো বেশ কিছুদিন। আইরাত ও ইদানীং আব্রাহামের সাথে মিলেমিশে গেছে এখন আর আগের মতো রুড বিহেভ করে না কিন্তু তার মনের কোণে এক আকাশ অভিমান জোড় হয়ে আছে। কেননা আব্রাহাম আইরাতকে তার বাবা-মার সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয় না। পারমিশন ছাড়া বাইরে বের হতে দেয় না। এক প্রকার বন্দী জীবন কিন্তু কেন জানি না আব্রাহামের পাগলামি গুলো আইরাতের বেশ ভালো লাগে। আইরাত নিজেও জানে না যে কেন ভালো লাগে, আব্রাহাম আসেপাশে না থাকলে কেমন ফাকা ফাকা লাগে,, এই অনুভূতি কে ঠিক কি বলে জানা নেই আইরাতের। কিন্তু আব্রাহামের ওপর এখন তার ভালোলাগা, রাগ, অভিমান সবই কাজ করে। আব্রাহাম তার অফিসের কাজে ব্যস্ত। কিন্তু আইরাত কে ২৪ ঘন্টা নজরে রাখে সারাদিন জ্বালায়। আব্রাহামের জন্য আইরাত কিছুটা রান্না করাও শিখে গেছে কিন্তু আব্রাহাম তেড়ামি করলে ইচ্ছে করেই রান্নাতে ঝাল বেশি দিয়ে দেয় বা লবন বেশি দিয়ে দেয়।প্রায় ১ সপ্তাহ পর তারা সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এলো।





In চৌধুরী ভবন“““`

অয়ন; বাপি
আবির আহমেদ;; হুমমম
অয়ন;; বাপি আমরা এভাবে আর কতোদিন বউমনির কাছ থেকে সত্য লুকিয়ে রাখবো
আবির আহমেদ;; আমারও তো সেই একই কথা, কিন্তু আব্রাহাম মানছে না।
অয়ন;; দাভাই কেন মানবে না, after all বউমনির এটা জানার অধিকার রয়েছে।
আবির আহমেদ;; কিন্তু আমি ভাবছি যে আইরাত মামনি সত্য জানার পর কি করবে। সে যদি আমার আব্রাহাম কে রেখে চলে যায় তাহলে আব্রাহাম মরেই যাবে।
অয়ন;; বাপি তুমি বউমনির দিক টা ভাবছো না। ওরা বউমনি বাবা মা হয়। কেউ তাদের বাবা মাকে রেখে এতোটা দিন কি করে আলাদা থাকতে পারে। বাপি, বউমনি অনেক কিছু সহ্য করেছে আর না। আমরা যতদিন এই সত্যটা লুকাবো পরর্বতিতে বউমনির অভিমান আরো বাড়বে।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম না বলা পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারবো না অয়ন।
অয়ন;; একদিন না একদিন সবকিছু বউমনি জেনেই যাবে। তো তুমি কেন বলছ না যে বউমনি আর কেউ না বরং তোমারই আপন ছোট ভাই আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে, সেই আশরাফুল আহমেদ যে কিনা টাকা- সম্পদের এবং পাওয়ারের জন্য নিজেরই আপন ভাই এবং তার স্ত্রী কে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ভাগ্য আমাদের ওপর সহায় ছিলো যার জন্য বাপি তুমি, আমি আর দাভাই বেচে গেছি কিন্তু মা, মা তো পুড়ে ছাই হয়ে গেলো আমাদের সেই বাড়ির সাথেই। তোমার একমাত্র, তোমার সেই একমাত্র ভাইয়ের জন্য আমাদের পুরো পরিবার টা ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। আর বউমনি অন্য কেউ না আমাদেরই আপন চাচাতো বোন হয়। দাভাই প্রতিশোধের তারণায় ছুটলেও আইরাত বউমনিকে পাওয়ার পর তার ধারণা পুরোপুরি পালটে গেছে। কেন তুমি এই সত্য টা আইরাত বউমনি কে বলছ না, কেন?!

ঠিক সে সময় পিছনের দিক থেকে কিছু পড়ে ভেংে যাওয়ার প্রচন্ড আওয়াজ আসে। আবির আহমেদ এবং অয়ন সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়। তাকিয়েই তাদের আত্মা চমকে যায়। ভয়ে ভয়ে অয়নের মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে…

অয়ন;; বববউমনি,, তুতুতুমি
আবির আহমেদ;; আআআইরারাত..

আইরাত চা বানিয়ে ট্রে তে করে তার বাপির ঘরের দিকে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ অয়ন এবং আবির আহমেদের কথায় সে থেমে যায়, তারপর যা শুনে এতে আইরাত ভিতরে থেকে পুরো ভেংে পড়ে। তার হাত থেকে চায়ের ট্রে নিচে পড়ে যায়। বিকট শব্দ হয়। তখন আবির আহমেদ, অয়ন তাকিয়ে দেখে আইরাত তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। আইরাত কিছু বলছে না, যেন তার কান দিয়ে কারো কোন কথা যাচ্ছে না। সে মাত্রই কি শুনলো শুধু তা ভাবছে। আইরাতের চোখ দিতে টুপটুপ পানি পরছে। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে শুধু।

আবির আহমেদ;; আআআইরাত মামনি তুতুমি যা ভাবছো তা মোটেও না,, ভুভুল শুনেছ তুমি।
অয়ন;; বউমনি প্লিজ তুম..

অয়ন আইরাতের দিকে কথা বলতে বলতে এগুতে নিলে আইরাত সামনে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে পিছাতে লাগে সে। পিছনে কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নিতে আবার উঠে দাঁড়ায়। আবির আহমেদ, অয়ন আইরাতের কাছে যেতে ধরলে আইরাত দৌড়ে তার ঘরে চলে যায় এবং দরজা লাগিয়ে দেয়। আইরাতের পিছু পিছু তারাও যায়।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি দরজা খোল, কোন উলটা পালটা কাজ করিস না দরজা খোল মা
অয়ন;; বউমনি, বউমনি দরজা খোল। (দরজাতে জোড়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে) বউমনি প্লিজ ভুল বুঝ না দরজা খোল।
আবির আহমেদ;; অয়ন কি দরকার ছিলো এভাবে বলার, সময় বুঝে আইরাতকে সবকিছু একদিন বলা যেতো।
অয়ন;; তোমরা যদি আগেই বউমনি কে সব কিছু বলে সব মানিয়ে নিতে তাহলে আজ কখনোই এই দিন দেখতে হতো না বাপি।

এই কথা বলে অয়ন রেগে চলে আসে। আবির আহমেদ ও মন খারাপ করে চলে আসে। কিন্তু দেয়ালের ওপারে আইরাতের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আইরাত দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিচে বসে পরে। সে কল্পনাতেও কোনদিন ভাবে নি যে তাকে কখনো এমন কিছু একটার সম্মুখীন হতে হবে। আইরাত ঢুকরে কেদে ওঠে। তার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আইরাতের বাবা আশরাফুল আহমেদ আবির আহমেদের ছোট ভাই হয় এবং তার বাবা তারই বড়ো ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তাহলে কি তার বাবা একজন খুনি। আইরাতের এই কথা ভাবতেই বুক ভেংে কান্না আসে। কান্না করতে করতে নিজের একদম নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে। আবির আহমেদ অয়নও হতাশ হয়ে বসে আছে। আইরাতকে অনেক ডাকা হয়েছে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে ঘরের বাইরে আনার জন্য কিন্তু লাভ নেই সে দরজা খোলতে নারাজ। অবশেষে অনেকক্ষন এভাবে থাকার পর আইরাত উঠে দাঁড়ায়, চোখের পানি মুছে ফেলে। ঘরের দরজা খোলে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আইরাতকে বের হতে দেখে তার বাপি এবং অয়ন ছুটে আসে আইরাত কে আটকানোর জন্য। অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আইরাত কারো কথা কানে না তুলে একদম বাড়ির বাইরে চলে আসে। আইরাত বাড়ির ড্রাইভার কে বলে আব্রাহামের অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে । ড্রাইভার ও আইরাতের কথা মতো গাড়িতে উঠে চলে যায়। আইরাতের মনে অনেক ক্ষোভ জমে রয়েছে আব্রাহামের জন্য। কেন সে সবকিছু জানার পরও আইরাতকে কিছুই বলেনি আজ সবকিছুর জবাব চাই আইরাতের।









In Office……..

ল্যাপটপে মুখ গুজে দিয়ে বসে রয়েছে আব্রাহাম। মুখে রয়েছে এক গম্ভীর ভাব। সেই সময় দরজাতে টোকা পড়ল। আব্রাহাম এর নজর তাকিয়ে দেখে আবার কাজে মন দিলো

আব্রাহাম;; Come in
রাশেদ;; স্যার এইযে নতুন আরো একটা ডিলের পেপার (একটা ফাইল আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে)। আমি ডিলার কে বলে দিয়েছি আপনার যখন সময় হবে আপনি তখন উনার সাথে কথা বলে নিতে পারেন।
আব্রাহাম;; গুড, আচ্ছা কোন খবর পেলে?
রাশেদ;; জ্বি স্যার,, আপনি এবং ম্যাম দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর আশরাফুল আহমেদ আপনাকে তন্নতন্ন করে খুজেছে সব জায়গায়। কিন্তু পায় নি। উনি যেহেতু আপনাকে দেখেছেন তো আপনাকে মনেও রেখেছেন। তার সব চেলা পেলা দের লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু আপনার কাছে পৌঁছানোর সাধ্য তাদের নেই।
আব্রাহাম;; যে কাজ তিনি এতো দিনে পাননি তা আমি আজ নিজে করে দিবো। আমি আজ নিজে আমার শশুড় আব্বুর বাড়িতে যাবো। যা এতোদিন ভেবে এসেছিলাম তা আজ আমি করে দেখাবো।

এই বলে আব্রাহাম উঠে দাঁড়ালো। এবং অফিস থেকে বেড় হয়ে পড়লো। রাশেদ ও তার পিছু যাচ্ছে। আব্রাহাম রাশেদ গাড়িতে উঠে পড়লো। গন্তব্য নীড়মহল,,।।

অন্যদিকে আইরাতের গাড়ি ও আপন গতিতে যাচ্ছে। আইরাত শুধু কোন মতে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। নয়তো কান্না তার বাধ মানছে না। আব্রাহাম ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে নীড়মহলের দিকে যাচ্ছে। প্রায় বেশখানিক পর আব্রাহাম নীড়মহলের সামনে এসে পড়ল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই আব্রাহাম চরম অবাক হলো। বাড়ির সামনে দাড়োয়ান পরে রয়েছে রক্তাক্ত অবস্থাতে। আব্রাহাম তার হাতে Gun নিতে শক্ত করে চেপে ধরে। তার বেশ ঘোলাটে লাগছে সবকিছু। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে বাড়ির ভিতরে গেলে আর একদফা চমক খায়। বাড়ির ভিতরে সবকিছুই লন্ডভন্ড হয়ে আছে। জিনিসপত্র সবকিছু ভাংচুর, যাইচ্ছে অবস্থা। কাউকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

রাশেদ;; স্যার এসব কি?
আব্রাহাম;;……………..

আব্রাহাম কিছুই না বলে দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। গিয়ে দেখে যে আইরাতের বাবা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর পেটে ছুরিবিদ্ধ। রক্তে সারা ফ্লোর ভেসে গেছে। আব্রাহামের এসব দেখে মাথায় যেন আকাশ ভেংে পরে। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে কারো গোঙানোর শব্দে আবারও পিছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে যে আশরাফুল আহমেদের হাত হালকা ভাবে নড়ছে তিনি কিছু বলতে চাইছেন। আব্রাহাম তাড়াহুড়ো করে নিচে আশরাফুল আহমদের পাশে বসে পরে। আশরাফুল আহমেদ কিছু বলতে চাইছেন তাই আব্রাহাম তার কান উনার মুখের কাছে নিয়ে গেলো।

আশরাফুল;; আআআব্রাহাম আহমেমেমদ চৌধুরী
আব্রাহাম;;…………………….
আশরাফুল আহমেদ;; আমারই আপন ভাইয়ের ছেলে।

আব্রাহাম অবাক চোখে আশরাফুল আহমেদের দিকে তাকায়। তিনি জানলেন কি করে যে আব্রাহাম উনার ভাইয়ের ছেলে।
আশরাফুল আহমেদ;; তুমি, তুমি আমার বড়ো ভাইয়ের ছেলে। সেই ভাইয়ের ছেলে যাকে আমি কখনো ভাইয়ের চোখে দেখিই নি, কোনদিন সম্মান করিনি। এমনকি জানে মেরে ফেলতেও দুবার ভাবি নি। আব্রাহাম আমি সপ্নেও ভাবি নি যে আমাকে এমন দিন দেখতে হবে। আমার কর্মের ফল আমাকে এইভাবে ভোগ করতে হবে। আসলে খারাপের সাথে কখনোই ভালো হয় না। তার পরিণাম সবসময় ভয়াবহ। যেমনটা হলো আমার সাথে। আমি সবকিছু জানি বাবা। তুমি, আমার ভাই আবির আহমেদ, অয়ন বেচে আছো। আমি তোমাকে চিনতে পারিনি প্রথমে। বাবা আমাকে তুই, আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস যদিও আমি তোর ক্ষমার যোগ্য নই। তোর মাকে আমি তোর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছি। তোদের পরিবারকে আলাদা করে দিয়েছি। আজ আমার মৃত্যুর জন্য ও আমি এ দায়ী। মানুষ বলে কর্মের ফল মানুষ দুনিয়াতেই ভোগ করে। আজ আমার এই দসা আমার কাজের জন্যই। এই সবকিছু তো আমার সাথে হওয়ার ই ছিলো। সবই আমার ভাগ্যের লিখন। আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিস। (কেদে কেদে খুব কষ্ট করে কথাগুলো বলল)।

আব্রাহামের অজান্তেই চোখে পানি চলে এলো। আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; তোমাদের এই অবস্থা করলো কে আর কি করেই বা করলো?
আশরাফুল আহমেদ;; আমিও একদিন তোর বাবা আবির আহমেদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাম ঠিক তেমন, ঠিক তেমন ভাবেই কেউ একজন আমার সাথেও ছলনা করেছে। যাকে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম সেই, সেই আজ আমাকে ধোকা দেয়।
আব্রাহাম;; কে সে?
আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল, দুলাল আমার পক্ষে ষড়যন্ত্র করে। যার ফলে আজ আমার এই পরিনতি।





(কিছুক্ষন আগের ঘটনা)………

আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল, তুই ভুলে যাস না তুই কি ছিলি আর আজ কি হয়েছিস। পথের ভিকেরি ছিলি তুই, পথে পথে ভিক্ষে করে বেড়াতি। আর আজ নিজের দিকে চেয়ে দেখ আমার জন্য কি হয়েছিস। আমার এতো দয়া ধর্ম সব ভুলে গেলি (রেগে চিল্লিয়ে)
দুলাল;; আরে আস্তে, গলার জোড় তোমার একার না আমার ও রয়েছে।
আশরাফুল আহমেদ;; কি চাচ্ছিস তুই
দুলাল;; এখানে তোমার সুন্দর একখানা সাইন (একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে)
আশরাফুল আহমেদ;; আমি কখনোই আমার মাদক কারখানার পেপারে সাইন করবো না
দুলাল;; দেখ অযথা না করে লাভ নেই। সারাজীবন তো বেআইনি কাজই করে আসলে এখন একটু অবসর নাও। ভালোভাবে সাইন করে এখানে সেই কারখানা এবং সেখানকার জমি আমার নামে লিখে দাও
আশরাফুল আহমেদ;; কখনোই না
দুলাল;; আচ্ছা যাও না করলে এখন পরে করো কিন্তু তার আগে কিছু কথা তো শুনে যাও। তোমার জীবনের কিছু চরম সত্য।
আশরাফুল আহমেদ;; কি বলতে চাচ্ছিস তুই!
দুলাল;; “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী” এই ব্যক্তিটি ই সেদিন তোমার চোখের সামনে দিয়ে তোমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। সে আসলে কে জানো! আমেরিকান মাফিয়া, দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষ ই তা জানে। এবং সাথে সাথে তোমার বড়ো ভাই আবির আহমেদের ছেলে ও বটে মানে তুমি সম্পর্কে আব্রাহামের চাচ্চু লাগো। যে কিনা এতোদিন ভেবে এসেছিলো যে সে আর বেচে নেই। কিন্তু তুমি ভুল সে বেচে আছে। আর শুধু সে না তোমার ভাই আবির আহমেদ, অয়ন ও বেচে আছে।
আশরাফুল আহমেদ;; ককককি বলছিছিছিস তুতুতুই। বেবেবেচে আআছে মামানে।
দুলাল;; আরে আরে ভয় পেয়ে গেলে বুঝি। তারা ভুত না ভুত না মানুষই কিন্তু তুমি মারতে চেয়েছিলে বাট তারা মরেনি।
দুলালের কথা শুনে আশরাফুল আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তার কানকে সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। তাহলে সে এতোদিন কোন মিথ্যে কথার ওপর ভরসা করে এসেছিলো। আশরাফুল আহমেদের ভাবনাতে ছেদ পরে দুলালের কথায়।

দুলাল;; আর তোমার একমাত্র মেয়েও সেখানেই রয়েছে। এতোকিছু হতো না যদি তোমার মেয়ে এখানে থাকতো। তোমার মেয়ের মতো সুন্দরী মেয়ে থাকলে আর কি লাগে (বিশ্রী হেসে) ওকে নিয়ে চলে গেতাম।
আশরাফুল আহমেদ;; দুলাল (জোড়ে চিল্লিয়ে)
দুলাল;; বেশি চিল্লিয় না। ভুলে যেও না তোমার বউ এবং ছেলে এখনো আমার দখলে।
আশরাফুল আহমেদ;; ছেড়ে দে দুলাল ছেড়ে দে তাদের। তোর শত্রুতা আমার সাথে আমার বউ আর ওইটুকু ছোট বাচ্চা ছেলে তোর কি ক্ষতি করেছে। ছেড়ে দে যেতে দে ওদের।
দুলাল;; এতো কথার মানেই হয় না। শুনো আমি এতোটাও পাশান না। তুমি সুন্দর করে সাইন করে দাও বিনিময়ে নিজের জীবন আর বউ-বাচ্চাকে সহি সালামত ফিরে পাও।
আশরাফুল আহমেদ;; জানোয়ার, বিশ্বাসঘাতক, শুনে রাখ আমি মরে যাবো তবুও এই পেপারে সাইন করবো না কোনদিন ও না।
দুলাল;; আচ্ছা ঠিক আছে মরো তাহলে।

এই কথা বলার সাথে সাথে দুলাল উঠে এসে ছুরি নিয়ে সোজা আশরাফুল আহমেদের পেটে মেরে দেয়। আকশচুম্বী চিৎকার দিতে ওঠেন তিনি। দুলাল সাথে আতিয়া আহমেদ কেও মেরে রেখে যায় কিন্তু আয়ুশকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় না।





বর্তমান……

আশরাফুল আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা আমার কেউ রইলো নারে। আমার মেয়েটার ও কেউ থাকলো না। তুই আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস বাবা। দেখে রাখিস
আব্রাহাম;; তোমাদের, তোমাদের কিছুই হবে না। আমি এখনই হস্পিটালে নিবো তোমাদের কে। কিছু হতে দিবো না।

আব্রাহাম পাশে তাকিয়ে দেখলো আতিয়া আহমেদও রক্তাক্ত অবস্থাতে পড়ে আছে। আব্রাহাম আতিয়া আহমেদের কাছে ছুটে গেলো।

আব্রাহাম;; আম্মু, আম্মু প্লিজ চোখ খোলা রাখো। তোমাদের কিছুই হবে না। আমি হতে দিবো না। আমার আইরাত ভেংগে যাবে তোমাদের কিছু হলে। প্লিজ চোখ খোল আম্মু। (গালে হাত দিয়ে)

আশরাফুল আহমেদ;; না বাবা এখন আমাদের কাছে আর বেশি সময় নেয়। আমার পাপের ঘড়া ভরে গেছে। আমায় তুই ক্ষমা করে দিস। (কেদে)







আইরাতের গাড়ি দ্রুত অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। গাড়ি দাড়ানোর সাথে সাথে আইরাত এক দৌড়ে অফিসের ভিতরে চলে গেলো। আইরাতকে অফিসে দেখেই অফিসের সব স্টাফরা অবাক। কেননা অফিসের বিগ বসের বউ অফিসে এলে অবশ্যই কোন না কোন বড়সড় ফাংশনের ব্যাবস্থা করা হবে। কিন্তু আইরাত এভাবে হুট করেই চলে এলো। আইরাতকে দেখে রিসিপশনের মেয়েটি দ্রুত এগিয়ে এলো…

মেয়েটি;; ম্যাম আপনি এখানে হঠাৎ কোন কাজ?
আইরাত;; where is your boss?
মেয়েটি;; ম্যাম, আপনি বসুন কি নিবেন বলুন
আইরাত;; Answer me damn it, where is Abraham?
মেয়েটি;; মমম্যাম স্যার তো অফিসে নেই (অনেক ভয় পেয়ে)
আইরাত;; অফিসে নেই মানে কোথায় গিয়েছে?
মেয়েটি;; ম্যাম তা তো স্যারের পিএ প্লাবণই বলতে পারবেন।
আইরাত;; Take me to him
মেয়েটি;; Sure ma’am..

আইরাতকে প্লাবণের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।

মেয়েটি;; ম্যাম ইনি প্লাবণ।
আইরাতকে দেখে প্লাবণ তাড়াতাড়ি তার সামনে এলো।প্লাবণ;; আরে ম্যাম আপনি তাও আবার এই সময়?
আইরাত;; তোমার স্যার আব্রাহাম কোথায় আছে বলতে পারবে?
প্লাবণ;; জ্বি ম্যাম, স্যার তো নীড়মহলে গিয়েছেন

প্লাবণের কথা শুনে আইরাত অবাক। আইরাত তো এটাও জানে না যে আদৌ কি আব্রাহাম ঠিক মতো তার বাপি কে চিনে। আর আব্রাহাম নীড়মহলে এই সময় গিয়ে কি করছে। আইরাত আর কিছু না ভেবে কাউকে কোন কিছু না বলেই আবার দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে পরে এবং গাড়িতে উঠে পরে।

আইরাত;; ড্রাইভার, তাড়াতাড়ি নীড়মহলে চলো।
ড্রাইভার;; জ্বি মেডাম।

গাড়ি অনেক বেশি জোড়ে চলছে। এদিকে আইরাত কান্না করতে করতে চোখ রক্তবর্ণ করে ফেলেছে। বেশখানিক সময় বাদে গাড়ি নিড়মহলের সামনে এসে থামলো। আইরাত যত জোড়ে সম্ভব দৌড়ে ভিতরে গেলো। কিন্তু ভিতরে গিয়ে আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। সারাবাগানে রক্তে মাখামাখি। দোলনা ভেংে নিচে পড়ে আছে। কারো গোঙরানোর শব্দে আইরাত নিচের দিকে তাকালো। তাকিয়ে আইরাত ভয় পেয়ে বেশ পিছিয়ে গেলো এবং মুখে হাত দিয়ে দিলো। আইরাত শব্দ করে কেদে দিয়ে হুমড়ি খেয়ে বাড়ির দারোয়ানের সামনে বসে পরলো।

আইরাত;; দারোয়ান মামা, তোমার এই অঅবস্থা কি ক করে হলো। অনেক রক্ত যাচ্ছে তোমার তুমি তাড়াতাড়ি চলো হস্পিটালে যেতে হবে তোমার (কেদে)
দারোয়ান;; আইরাত মা তুমি এসেছ, মরার আগে তোমাকে এক নজর দেখতে পেয়েছি তাই অনেক রে মা।আমার কাছে বেশি সময় নেই মা। আব..আমিহ আমি…..
আইরাত;; না মামা প্লিজ তুমি এভাবে বলো না,, তোতোমার কিকছুই হবে না মামা দেখো। আমি তোমাকে….
দারোয়ান;; মা, মা তুমি আগে ভিতরে যাও বড়সাহেব বড়মেডাম এর কি জনি অবস্থা জানি না। আয়ুশকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তুমি আগে ভিতরে যাও মা তাড়াতাড়ি
আইরাত;;; কিহহ, মামা এসব কি বলছ তুমি পাপা আম্মুর কিছুই হবে না। ওওওরা ওরা ঠিক আছে আর আয়ুশ,, আয়ুশশশশশশশ…….. (চিল্লিয়ে)

আইরাত আর কিছু না বলে দৌড়ে বাড়ির দরজা দিয়ে ভিতিরে চলে যায়। আইরাতের হাপাতে হাপাতে – কানতে কানতে খারাপ দশা।



আশরাফুল আহমেদ;; আব্রাহাম, আমার তোমার ওপর বিশ্বাস আছে বাবা,, তুমি আমার মেয়েকে দেখো আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। (কান্নায় ভেংে পড়ে)
আব্রাহাম;; চাচ্চু তুমি ভয় পেয় না চাচ্চু তোমার কিছুই হবে না। তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে। চাচ্চু চাচ্চু প্লিজ কথা বলো, চাচ্চু।

আশরাফুল আহমেদ আর কোন কথা বলছেন না, চোখ বন্ধ করে ফেলেন তিনি। আব্রাহাম দেখে যে ছুরি টা খুব বাজে ভাবে আশরাফুল আহমেদের পেটে বিধে আছে। তাই আব্রাহাম তার হাত দিয়ে উনার পেটের ছুরিটা এক টানে তুলে ফেলে। এতে আব্রাহামের মুখে, হাতে, শার্টে অনেক রক্ত ছিটে লেগে যায়। এক ভিবৎস অবস্থা।
ঠিক সেইসময় বাড়ির মেইন দরজা খুলে আইরাত ভিতরে এলো। সামনে তাকাতেই যেন আইরাতের মাথায় বাজ পড়লো,, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় তার। সামনে তার আম্মু এবং পাপার লাশ পরে আছে এবং আব্রাহাম তার পাপার সামনে বসা হাতে তার ছুরি। চোখে-মুখে রক্তের ছড়াছড়ি। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কি রেখে কি করবে সে, কি ই বা জবাব দিবে আইরাতকে আব্রাহাম তা ভেবে পায় না। আইরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে ফ্যালফ্যাল করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; আআ আই আইরাত
আইরাত;;…………………..
আব্রাহাম;; তুতুমি এখানে কিকিকিকরে
আইরাত কোন কথা না বলে সেখানেই ধপ করে বসে পরে। চিৎকার দিয়ে অঝোরে কান্না করতে থাকে। আব্রাহাম হাতের ছুরি দূরে ফেলে দিয়ে দ্রুত আইরাতের কাছে আসে।

আব্রাহাম;; আইরাত (আইরাতের গালে হাত রেখে)
আইরাত;;………………(কান্না করেই যাচ্ছে)
আব্রাহাম;; আইরা………
আইরাত;; দূরে যান (অনেক জোড়ে চিল্লিয়ে) আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি। ছুবেন না আমায় আপনার ওই নোংরা হাতে। (আব্রাহামকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে)
আপনি আমায় তুলে নিয়ে গেছেন, আমাকে নিজের বাবা মার থেকে দূরে রেখেছেন, জোড় করে বিয়ে করেছেন, জোর করে নিজের অধিকার পর্যন্ত ফেলেছেন আমি নিরুপায় ছিলাম কিছুই বলতে পারিনি, কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমার বাবা মা তার ওপর আপনার চাচা চাচি আপনার এমন কি ক্ষতি করেছিলো যে আপনি ওদের মেরেই ফেললেন।

আব্রাহাম আইরাতের কথা শুনে অবাকের ওপর অবাক। সে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে

আইরাত;; প্রতিশোধ, তাইনা প্রতিশোধের জন্যই তো একমাত্র আমাকে বিয়ে করা আপনার। বিয়ে তো করে ফেলেছেন, নিন এবার আপনার প্রতিশোধ ও নেওয়া হয়ে গেলো। আমার বাবা মা কে খুন করে। পেয়েছেন শান্তি, যে প্রতিশোধের তারণায় এতোদিন জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছিলেন মিটেছে সেই প্রতিশোধ।
আব্রাহাম;; আইরাত তুমি ভুল বুঝ….(আইরাতের দিকে এগিয়ে)
আইরাত;; খুনি, আপনি একজন খুনি। আর যাই হোক একজন খুনিকে কখনোই ভালোবাসা যায় না। আপনি আমার বাবা-মার খুনি (আব্রাহামকে থামিয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে যেতে)

আইরাত আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে জলদি সেখান থেকে চল আসে। আব্রাহাম পিছন থেকে হাজার ডাকার পরও আইরাত পিছনে তাকায় না। আব্রাহাম আইরাতের এমন কথায় পাগল প্রায়। আইরাত কি তাহলে তাকে রেখে চলে যাবে।

আব্রাহাম রাশেদ কে লাশ দুটো সেখান থেকে নিয়ে এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলল। আব্রাহাম সেই অবস্থাতেই দৌড়ে আইরাতের পিছনে ছুটে গেলো।








❣️❣️চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 27

❤️🦋
..
..
..
..
..
আইরাতের জীবনে যে কোনদিন এমন কালো মেঘের ছায়া নেমে পরবে তা সে কখনো ভাবেই নি। হাসিখুশি একটা পরিবারকে মূহুর্তেই ঝড় এসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিলো। নিজের আপনজন, পরিবার পরিজন সবকিছু হারিয়ে আজ আইরাত দিশেহারা। কান্নার বাধ যেন আজ মানছেই না।

আইরাত তাদের বাড়ি থেকে অঝোর ধারায় কানতে কানতে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। আইরাতকে এভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে গাড়ির ড্রাইভার চিন্তিত হয়ে আইরাতের কাছে যায়। কিন্তু আইরাত কোন কথা না শুনে শুধু এগিয়েই যাচ্ছে।

ড্রাইভার;; ম্যাম, ম্যাম আপনি আপনার এই দশা কেন। কি হয়েছে ম্যাম
আইরাত;;…………………
ড্রাইভার;; ম্যাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আমাকে বলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি। ম্যাম প্লিজ দাঁড়ান

আইরাত কোন কথা না শুনেই সোজা গাড়ির ভিতরে ওঠে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। বাইরে গাড়ির ড্রাইভার খুব করে চেষ্টা করছে আইরাতকে থামানোর কিন্তু তার সব চেষ্টাই বিফলে যাচ্ছে। আইরাত গাড়ি নিয়ে চলে গেলো,, কান্না করতে করতে গাড়িতে বসে পাগলের মতো করে ড্রাইভ করে যাচ্ছে সে। আইরাত চলে যাওয়ার পর পরই আব্রাহাম ছুটে বাইরে এলো। ড্রাইভার কে বাইরে দেখে আব্রাহাম হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল…

আব্রাহাম;; মানিক, তোমার ম্যাম কোথায়?
মানিক(ড্রাইভার);; স্যার, আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি ম্যাম কে আটকাতে। তিনি গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন, কোথায় গেলেন তাও জানি না…
আব্রাহাম;; Ohh shit!!…

আব্রাহামের রাগে দুঃখে মাথা ফেটে যাওয়ার অপক্রম। আব্রাহাম আর দেরি না করে তার গাড়ি নিয়ে আইরাতের গাড়ির পিছনে ছুট লাগালো। আইরাত কোন দিক দেখছে না সে অবাধ্য হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আইরাত এতোই জোড়ে ড্রাইভ করছে যে সামনে কোথায় কি আছে তাও দেখছে না। আব্রাহাম ও আইরাতের পিছন পিছন পাগলের মতো করে ছুটছে। অনেক চেষ্টা করছে যেন ওভারটেক করে আইরাতের গাড়ির সামনে যাওয়া যায় কিন্তু পেরে উঠছে না। এভাবে অনেকক্ষন ড্রাইভ করার পর আইরাতের গাড়ি এসে থামলো এক হাইওয়ের ওপর। গাড়ি থামিয়েই আইরাত তার মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে কানতে লাগলো। আইরাতের অনেক রাগ হচ্ছে আব্রাহামের ওপর। একরাশ বিরক্তি এবং ঘৃণা কাজ করছে তার মনে। হঠাৎ আইরাত গাড়ির ভিতরের মিনি ড্রয়ার খুললো, দেখলো যে এখানে একটা রিভলবার রাখা। আইরাত সাথে সাথে তা হাতে নিলো। আইরাত তার সাইড ক্যামেরাতে দেখলো আব্রাহাম মাত্রই তার গাড়ি নিয়ে পিছনে থেমেছে। আইরাতের রাগ এখন চরম পর্যায়ে। সে তাড়াতাড়ি করে হাতে রিভলবার টা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। আব্রাহাম ও নামলো। পাগলের মতো করে আব্রাহাম আইরাতের কাছে গেলে আইরাত চট করে রিভলবার টা আব্রাহামের দিকে তাক করে ধরে। আব্রাহাম এক মূহুর্তের জন্য প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। আইরাতের চোখ গেলো আব্রাহামের পরনে থাকা শার্টের ওপর। রক্ত লেগে আছে তাতে।

আইরাত;; রক্ত, আপনার শার্টে রক্ত লেগে আছে যা আমার বাবা-মার। যার সাথে বিয়ে হয়েছে একদিন সে নিজেই আমার বাবা-মার খুনি হয়ে দাঁড়াবে আমি তা কল্পনাতেও ভাবিনি। আর আজ, আজ তা বাস্তবে পরিনত হলো। আপনি না আমায় বলতেন যে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু আজ আমার বাবা মাকে খুন করতে একবার ও কি আপনার হাত কাপলো না। আমি সব জানি। আমার বাবা আর আপনার বাবা আপন ভাই। এমনকি আমার বাবা আপনাদের প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছে কিন্তু আপনারা বেচে আছেন। আচ্ছা সবকিছু ভুলে নতুন করে কি শুরু করা যেত না, আপনার আর আমার জীবন কি নতুন করে একসাথে জড়ো করা যেত না। কিন্তু না আপনি না চান নি। আর চাইবেন ই বা কিভাবে প্রতিশোধ যে নেওয়ার ছিল আপনার আমার বাবা-মা কে হত্যা করে। আর আজ সবকিছু শেষ সব। সবকিছু শেষ করে দিয়েছেন আপনি। (আব্রাহামের দিকে রিভলবার তাক করেই)

আব্রাহাম;; ননা আইরাত, জান প্লিজ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না। তারা যেমন তোমার বাবা-মা ছিল আমার ও চাচ্চু চাচিমনি ছিলো। আমার শশুড় আব্বু আম্মু আমি তাদের কি করে, কি করে মারতে পারি। তোমার অনেক বড় Misunderstanding হয়েছে তুতুমি আআমার কথা ট……

আইরাত;; বেস, অনেক হয়েছে নাটক। অনেক শুনেছি আপনার কথা আর না। ভালোবাসা কি, কাকে বলে আমি কখনো জানতামই না। কিন্তু আপনার এইসব পাগলামি, কেয়ারিং সবকিছু কেমন যেন আমার মনে একপ্রকার জায়গা করে নিয়েছিলো। ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম আমি আপনাকে। কিন্তু আজ এক সেকেন্ডে আপনি আমার মনে আপনার জন্য সব অনুভূতিকে গলা চেপে মেরে ফেলেছেন। আপনার জন্য আমার মনে আজ শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা রয়েছে। I just hate you Mr. Abraham Ahmed Chowdhury…

আব্রাহাম;; আইরাত জানপাখি প্লিজ হাত থেকে রিভলবার টা ফেলে দাও প্লিজ,, লেগে যাবে তোমার। কষ্ট হবে তোমার বেবি প্লিজ ফেলে দাও ওটা…

আইরাত;; হাহাহাহা (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) বাহহ,, বেশ দারুণ বলেন তো আপনি। আপনি আমার হাতে রিভলবার দেখে ভয় পাচ্ছেন কেননা যদি আমার লেগে যায় তো। একে কি বলে যানেন “মেরে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া” আপনি তো আমার বেচে থাকার সব কারণ শেষ করেই দিয়েছেন এখন আবার আমার জন্যই এতো চিন্তা। নাটক ভালো করেন। আজকের পর থেকে আপনি কখনোই আমাকে আর পাবেন না। আমার জন্য আপনি তখনই মরে গেছেন যখন আপনি আমার বাবা-মাকে খুন করেছেন। খুনি আপনি। (পিছনের দিকে পিছাতে পিছাতে)

আব্রাহাম;; না না প্লিজ আইরাত এভাবে বলো না প্লিজ। আমি মরেই যাবো তুমিহীন। তুমি আমাকে একটাবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও। আমাকে তুমি মারো, কাটো, বকো যা ইচ্ছে করো তাও প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না আইরাত। আমি জেন্ত লাশ হয়ে যাবো, তুমিহীন আমি নিঃস্ব। আমি আমার বেচে থাকার নতুন আলো খুজে পেয়েছি তোমার মাঝে। আইরাত এভাবে আমারে একা ফেলে রেখে যেও না আমি পারবো না বাচতে আইরাত (পাগলের মতো অঝোর ধারায় কান্না করে)

আইরাত;; আমি আপনাকে না মারা পর্যন্ত আমার মনে শান্তি আসবে না। আমি প্রথমে আপনাকে মারবো তারপর নিজে মরবো। I hate you,, i just hate you… You ar the biggest mistake of my life Abraham..

আইরাত এই কথা গুলো বলছে আর আব্রাহামের দিকে গুলি তাক করে পিছিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম পুরো পাগল হয়ে গেছে। কান্না করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। আইরাতের পিছনে যাওয়া দেখে আব্রাহাম ধীরে ধীরে আইরাতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং বারবার আইরাতকে পিছাতে না বলছে।

আব্রাহাম;; আইরা….
আইরাত;; চুপ করুন। আপনার মুখে আমার নাম ও উচ্চারণ করবেন না। আপনাকে আমি আর আপনার পরিচয়ে চিনি না, আপনি আমার কাছে এখন শুধুই একজন খুনি, আমার বাবা-মার খুনি। আর একজন খুনির বেচে থাকার কোন অধিকার নেই।
আব্রাহাম;; আইরাত… (আইরাতের দিকে এগোতে ধরলে)

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগোতে ধরলে আইরাত চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে আব্রাহামকে Shoot করে দেয়। রিভলবারের মুখ থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। আইরাত চোখ খুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দ্রুতগতিতে গুলি লাগার ফলে আব্রাহাম কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।
আব্রাহাম এক নজর তার বুকের দিকে তাকিয়ে আবার আইরাতের সিকে তাকায়। চোখ দিকে চিকচিক একবিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। আইরাত জোরে জোরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে। তার চোখেও পানি। গুলিটা সোজা গিয়ে আব্রাহামের বুকের বা পাশে লেগেছে। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম আর রাস্তার প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আইরাত হাতে তার রিভলবার। আব্রাহাম এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; ভালোবেসে মরতেও রাজি। আর কয়জনের এমন ভাগ্য যে সে তার ভালোবাসার মানুষের হাতে মৃত্যুবরণ করবে। ভালোবাসি আইরা……….

আব্রাহামের পুরো কথা শেষ না হতেই ঝড়ের গতিতে একটা ট্রাক এসে আইরাতকে ছিটকে দূরে নিয়ে যায়।আইরাত পুরো রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আব্রাহামের চোখের সামনেই আইরাতের রক্তাক্ত দেহ পরে থাকে।

আব্রাহাম;; আইরায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াত..

আব্রাহামের মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হলো “আইরাত”। আব্রাহাম ও ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। আইরাতের কাছে হেটে আসার মতো শক্তি তার মধ্যে বাকি নেই। গুলিটা সোজা বুকে এসে লাগার কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। আব্রাহাম মাটিতে পরেই কাতরাতে থাকে। মুখ দিয়ে আইরাতকে ডাকার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আইরাত কে চেনার কোন উপায় ই নেই সারা শরীর রক্তে ভেসে গেছে। বুকে হাত দিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ বন্ধ করে ফেলে আব্রাহাম। এ যেন মৃত্যু যন্ত্রণা কেও হার মানাবে। আব্রাহামের মৃত্যুর থেকে তাকে যেন আইরাতের এই অবস্থা বেশি কষ্ট দিচ্ছে। আব্রাহামের দেহ ও এক সময় চুপ মেরে গেলো। রাস্তার দুপাশে পরে রয়েছে দুই নিথর দেহ। এক দেহে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়,ছেড়ে যাওয়ার ভয় অন্য দেহে শুধু ঘৃণা অার ঘৃণা। এই হাইওয়ে টাই একমাত্র জায়গা ছিলো। যা আব্রাহামের সুখ – দুঃখ সব কিছুর ভাগিদার ছিলো। সবকিছুর সাক্ষি ছিলো এই জায়গা। আজ ও সাক্ষি হলো কিন্তু দুইপ্রাণের আলাদা হওয়ার গল্প নিয়ে। দুইটি ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করার গল্প।









অন্যদিকে রাশেদ আইরাতের বাবা মার লাশ নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসে দারোয়ান কে আনেন কিন্তু তিনি রাস্তাতেই মৃত্যুবরণ করেন। আয়ুশকে সারা বাড়ি তে খুজে না পেয়ে বাড়ির পিছনে খোজার জন্য লোক লাগিয়ে দেয়। সেখানে আয়ুশের লাশ পাওয়া যায় রক্তাক্ত বিচ্ছিরি অবস্থায়। চেনের রাস্তা পর্যন্ত নেই। তারা আয়ুশের লাশ কেও নিয়ে চলে আসে। পুরো পুলিশ ফোর্সকে লাগিয়ে দেয় দুলাল কে খোজার জন্য। দুলাল কে খোজে পেলে সাথে সাথে ইনকাউন্টার করার আদেশ নেয়। সাথে তার চেলা পেলা কেও এরেস্ট করার জন্য বলা হয়।






❤️❤️চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-24+25

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 24

💜💜
..
..
..
..
..
সকাল🌄

————-

ধীরে ধীরে আইরাতের ঘুম ভেংগে গেলো। কিন্তু পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই বিছানা ফাকা। আইরাত কিছুটা কপাল কুচকালো কেননা সে প্রতিদিন উঠে দেখে যে পাশে আব্রাহাম ঘুমিয়ে আছে কিন্তু আজ সে নেই। আইরাত উঠে বসলো। তখনই আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলো। আইরাতকে ঘুম থেকে জেগে ওঠতে দেখে সে ফোন কেটে দিলো।

আব্রাহাম;; Good morning Beautiful……
আইরাত;;…………………..

আইরাত কোন কথা না বলে বিরক্তি নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে যেতে ধরতে আব্রাহাম পিছন থেকে তার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে এবং একটা এটিটিউড নিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাতকে টেনে আনার ফলে তার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মুখের ওপর উপচে পড়ে।

আব্রাহাম;; আমি কিছু বলেছি জান (হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে)
আইরাত;; (রাগে দাত কটমট করে আব্রাহামের দিকে তাকায়)
আব্রাহাম;; হায় তেরি তিরছি নাজার😉
আইরাত;; ছাড়ুন
আব্রাহাম;; (কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে সিটি বাজাতে থাকে)
আইরাত;; বয়রা নাকি আপনি কিছু বলছি তা কি শুনতে পারছেন
আব্রাহাম;; আমি সকালে মর্নিং উইস করেছিলাম উত্তর পাই নি।
আইরাত;; আসলে কি জানেন কোন একটা ছোট ইসু কে টেনে টেনে বড় করা আপনার অভ্যাস। এখন ছাড়ুন
আব্রাহাম;; We will go out of country today,, so get ready fast… ( আইরাতের গালে টুক করে একটা কিস দিয়ে চলে গেলো)
আইরাত;; আচ্ছা মানুষ তো, যখন ইচ্ছে এভাবে ধরবে যখন ইচ্ছে নিজের order জারি করবে আমি কি রোবট নাকি। এহহ বাইরে যাবে নিকুচি করেছে বাইরে যাওয়ার। (মনে মনে)

আইরাত রেগেমেরে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়েই তার চোখ ছানাবাড়া। আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেননা তার সামনে বিছানার ওপর কমছেকম ৩০-৩৫ জোড়া ড্রেস সাজানো।

আব্রাহাম;; এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি পেকিং শুরু করে দাও
আইরাত;; আমরা কি তাহলে সত্যি যাচ্ছি?! (অবাক হয়ে)
আব্রাহাম;; না আমরা তো সার্কাসে যাচ্ছি
আইরাত;; 😒😒
আব্রাহাম;; যত্তসব আজগুবি কথা। ৫ মি. এ যদি তোমাকে রেডি না পাই তাহলে কপালে শনি আছে।
আর শুনো এটা পরবে (একটা নেভি ব্লু কালারের গাউন তার ওপর সাদা স্টোনের কাজ করা হাতে ধরিয়ে)
আর সাথে white Stone এর ornaments… এখন আমি নিচে ওয়েট করছি জলদি এসো।

আব্রাহাম গড়গড় করে কথা গুলো আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে চলে গেলো। আইরাত বোকার মতো করে তাকিয়ে আছে। তার আর উপায় কি রেডি হয়ে নিলো নয়তো আসলেই কপালে শনি লাগিয়ে দিবে এই বান্দর।
আব্রাহাম নিচে দাঁড়িয়ে তার বাপি অয়নের সাথে কথা বলছিলো। বেশ খানিক সময় কেটে যায় কিন্তু আইরাতের আসার নাম গন্ধ ও নেই। আব্রাহাম শুধু সিড়ির ওপরে তাকাচ্ছে কিছুক্ষন পর পর এবং নিজের রাগ সামলাচ্ছে। নাহ, এবার আব্রাহামের বাধ ভেংগে গেছে কারো রেডি হতে এতো সময় লাগে। আব্রাহাম সবে মাত্রই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে ওপরে যাবে বলে কিন্তু তখনই ওপর থেকে কারো নেমে আসার আওয়াজ এলো। আব্রাহাম ওপরের দিকে তাকালো। তাকিয়ে যেন পরমূহুর্তেই সবকিছু ভুলে গেলো। একদমকা হাওয়া এসে আব্রাহামের বুক ছুয়ে গেলো। ওপর থেকে আইরাত নেমে আসলো। পরনে নেভি ব্লু কালার গাউন, হাতে চিকন সাদা স্টোনের কাজ করা চুড়ি, গলাতে সাদা সিম্পলের মধ্যে একটা নেক্লেস, চুলগুলো কিছুটা বাধা বাকি কিছুটা ছেড়ে দেওয়া, সাথে হালকা মেকাপ এককথায় কোন বারবি ডলের থেকে কম লাগছে না। আইরাত দেখলো যে আব্রাহাম একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে,, তা দেখে সে মাথা নিচু করে ফেললো। আইরাত নেমে এসে আব্রাহামের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। চলে যাওয়ার সাথে সাথে আব্রাহাম ক্ষুদ্র একটা শ্বাস নিলো এবং মুচকি হেসে উঠলো।

আবির আহমেদ;; আমার মেয়েকে যেন কারো নজর না লাগে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
আইরাত;; ধন্যবাদ বাপি
অয়ন;; ওও বউমনি গো, বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি যে কিউট লাগছে।
আইরাত;; 😅
আব্রাহাম;; তো যাওয়া যাক
আইরাত;; কিন্তু আমরা যাচ্ছি টা কোথায়?!!
আব্রাহাম;; ওটা তোমার জেনে লাভ নেই।
আইরাত;; আজব তো
আব্রাহাম;; আজব ই এবার চলো,, রাশেদ বাইরে গাড়ি পার্ক করো hurry up…
আইরাত;; হারামি (মনে মনে),,, আচ্ছা বাপি শুনো তোমার ঔষধগুলো ড্রোয়ারে রেখে দিয়েছি সময় করে খেয়ে নিবে। আর আমি লিজাকে বলে গিয়েছি যদি এসে শুনেছি যে তুমি আবার মিষ্টি খাবার খেয়েছ তাহলে….
আবির আহমেদ;; আরে বাবা ঠিকআছে ঠিকআছে খাবো না
আইরাত;; মনে থাকে যেন। অয়ন নিজের খেয়াল রেখো এবং বাপির ও। ভালো থেকো।
আবির আহমেদ;; তোরাও ভালো থাকিস এবং নিজেদের খেয়াল রাখিস।

আব্রাহাম-আইরাত তার বাপি এবং অয়নের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে। আইরাত ও আব্রাহামের পাশে বসা। আইরাতের অনেক কৌতুহল হচ্ছে তারা কোথায় যাচ্ছে তা জানার জন্য কিন্তু এই বেটা ঘাড় তেড়া তো কিছু বলে না। অবশেষে না পেয়ে আইরাত জিজ্ঞেস করেই ফেলল…

আইরাত;; আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?
আব্রাহাম;;………………
আইরাত;; বলুন না কোথায় যাচ্ছি!
আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়…
আইরাত;; 🤦‍♀️

আইরাত আর কোন কথা না বলে রেগে সোজা হয়ে বসে পড়লো। আব্রাহাম বাকা চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বেশকিছুক্ষন ড্রাইভ করার পর আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে দিলো। আব্রাহাম সুন্দর করে সানগ্লাস পড়ে নিলো এবং আইরাতের সামনে গিয়ে বললো

আব্রাহাম;; জানপাখি নেমে পড়ো

আইরাত নেমে পড়লো, তাকিয়ে দেখলো তারা Airport এ এসেছে। ওপরে সুন্দর করে বড় বড় করে লেখা “” বাংলাদেশ বিমানবন্দর ✈””। আব্রাহামদের পিছনের গাড়ি থেকে তার কিছু বডিগার্ড রা নেমে এলো। তারা গাড়ি থেকে সব জিনিসপত্র নামিয়ে নিলো। আব্রাহাম কিছুদুর দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছে। আইরাত একপাশে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। Airport এর প্রায় সব মেয়েরাই আব্রাহামের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর এই বেপারটা আইরাতের চোখ এড়ায়নি। ব্লেক পেন্ট, হুয়াট টি-শার্ট, এবং ওপরে স্কাই ব্লু কালারের জেকেট সাথে চাপদাড়িতে অনেক বেশিই Handsome লাগছে। মেয়েদের চোখ যেন নামছেই না, যে একবার তাকিয়ে আছে সে তাকিয়েই আছে। কিন্তু আব্রাহাম এসব কিছু তোয়াক্কা না করে নিজের মতো ফোন ঘাটছে। আইরাতের কেমন যানি সবকিছু অসহ্য লাগছে, তাই সে অন্যদিকে চখ ঘুড়িয়ে নিলো। চোখ ঘুড়িয়ে নেয়ার সাথ সাথে আইরাত খুশিতে মেতে উঠলো। সে এক দৌড়ে চলে গেলো।

বডিগার্ড;; স্যার গাড়ি থেকে সবকিছু নামানো শেষ এবং আপনাদের ফ্লাইটের সময় ও হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; হুমমম..জানপাখি চলো

ওপাশ থেকে কোন শব্দ না আসায় আব্রাহাম তাকায়, তাকিয়েই দেখে আইরাত সেখানে নেই। সেখানে নেই বলতে সেই জায়গার কোথাও নেই। আব্রাহাম কপাল কুচকে সেদিকে তাকায় আবার ডাক দেয়..

আব্রাহাম;; আইরাত,আইরাত।

এবার আব্রাহামের কেমন চিন্তা হতে লাগে। কোথায় গেলো মেয়েটা। আবার পালিয়ে গেলো না তো। আব্রাহাম সব জায়গায় খুজতে থাকে। বডিগার্ড দের বলে চারিদিকে তন্নতন্ন করে খুজতে। কিন্তু কোথাও নেই। আব্রাহামের এবার চিন্তা,রাগ সবকিছু চেপে বসে। আব্রাহাম আর একটু এগিয়ে গেলো সামনে কিন্তু না কোথাও নেই। আব্রাহাম পিছনে ঘুরে চলে আসতে নিলে কিছু ছোট বাচ্চাদের হাসির শব্দে আবার ফিরে তাকায়। দেখে যে আইরাত একটা ছোট আইসক্রিম পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে বাচ্চা দের সাথে হেসে হেসে আইসক্রিম খাচ্ছে। আব্রাহাম আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে।

আব্রাহাম;; হায় আল্লাহ (মাথায় হাত দিয়ে) এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করি।

আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি করে হেটে সেখানে যায়। কিন্তু আইরাত নিজের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে। এদিকে আব্রাহাম যে রাগি দৃষ্টিতে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার কোন খেয়ালই নেই।

আব্রাহাম;; আইরাত
আইরাত;;…………….
আব্রাহাম;; আইরাত (জোড়ে চিল্লিয়ে)

আইরাত চমকে পিছনের দিকে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম রেগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সত্যি বলতে আব্রাহামের এখন মোটেও রাগ পাচ্ছে না বরং প্রচুর হাসি পাচ্ছে। কারণ আইরাত আইসক্রিম দিয়ে নিজের গাল,ঠোট পুরোটা শেষ করে রেখেছে। আইরাত ডেবডেব করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; এগুলো কি
আইরাত;; এমা আপনি এগুলো চিনেন না আরে এটা আইসক্রিম, আইসক্রিম। আপনি তো খান না জানবেন কি করে (দাত বের করে হেসে)
আব্রাহাম;; এই মেয়ে এটা আইসক্রিম খাওয়ার সময়। আর কোথায় গেলে বলে যাবে না। এভাবে হুট করেই চলে আসতে কে বলেছে। জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। এখনো কি বাচ্চা আছো তুমি। এসব ছেলে মানুষী করার মানে কি আর এই নিজের কি হাল করে রেখেছো হ্যাঁ। দেখেছো নিজেকে জোকারের মতো লাগছে পুরা। (রেগে)

আইরাত কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো চোখে তার পানি টলমল করছে। আব্রাহাম কথা থামিয়ে দিলো সে বুঝতে পারলো যে আইরাতের চোখে পানি জমেছে। সে চুপ হয়ে গেলো। অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুললো সামনে তাকিয়ে আইরাতের বাহুতে টান দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। একহাতে কোমড় অন্য হাত আইরাতের মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো

আব্রাহাম;; আমাকে বলে যেতে, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছি আবার আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করেছো। এমন বাচ্চামো কেন করো বলতো। (আইরাতের মাথায় চুমু দিয়ে)

তারপর আইরাত কে তুলে চোখ মুখ মুছে দিলো। এবং আইরাতের হাত ধরে Airport এর ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো। আইরাত ও কোনরকম কোন কথা না বলে তার সাথে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে ফ্লাইটে উঠে পরে। তার আগে আব্রাহাম নিজের এবং আইরাতের পাসপোর্ট দেখায়। আইরাত তার পাসপোর্ট দেখে বেশ অবাক হয়।

আইরাত;; পাসপোর্ট, তাও আমার। আপনি আমার পাসপোর্ট কবে বানালেন?
আব্রাহাম;; তা তোমাকে বলার প্রয়োজনবোধ করি না।
আইরাত;; কালা হনুমান (মনে মনে)

আইরাত বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারা যে অনেক উচুতে রয়েছে তা আইরাত বুঝতে পারছে। সাদা মেঘগুলো দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে পাখি ও উড়ে চলেছে মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে। আইরাতের ভালোই লাগছে। তার পাশেই আব্রহাম বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এক ইংলিশ মেগাজিনে মুখ গুজে রেখেছে। আইরাত একগাদা বিরক্তি নিয়ে আবার জানালার দিকে থাকালো। এভাবে থাকতে থাকতে কখন যে আইরাতের চোখ লেগে এসেছে তা সে জানেই না। হুট করেই আব্রাহামের কাধের ওপর নিজের মাথা ছেড়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে পরেছে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের মাথায় একটা কিস দিয়ে আবার মেগাজিন পড়াতে মনোযোগ দেয়।

প্রায় অনেক সময় পর ফ্লাইট লেন্ডিং করলো। আইরাতেরও অনেক আগেই ঘুম ভেংগে গেছে। ঘুম থেকে উঠে দেখে সে আব্রাহামের কাধের ওপর শুয়ে আছে তাই তাড়াতাড়ি করে সরে আসে। আব্রাহাম তা দেখে বলে ওঠে

আব্রাহাম;; পুরোটা সময় আমার কাধের ওপর থেকেই এসেছ so relax…

আব্রাহাম বিমান থেমে নেমে এলো। আইরাত ও তার পিছু পিছু। কিন্তু ফ্লাইট থেকে নেমে আইরাতের চোখ কপালে। তারা এখন সুইজারল্যান্ড আছে।

আইরাত;; সুইজারল্যান্ড!!
আব্রাহাম;; Yes baby girl…
আইরাত;; আমরা সুইজারল্যান্ড কেন এলাম
আব্রাহাম;; হেই বেবি আমি জানি যে সুইজারল্যান্ড তোমার ড্রিম প্লেস তো এসে পড়লাম।
আইরাত;; আপনি কিভাবে জানলেন?
আব্রাহাম;; আমি তোমাকে যতটুকু চিনি তুমি নিজেও নিজেকে ততটুকু চিনো না বুঝলে জান (আইরাতের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে)

আইরাত সত্যি ভেবে পায় না যে আব্রাহাম তার বিষয়ে এতো বেশি কি করে জানে। যাই হোক আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে যেতে লাগলো। তারা আরো এক গাড়িতে উঠে গেলো। গাড়ি গিয়ে থামলো এক বড়সড় প্যালেসের সামনে। আইরাত শুধু দেখেই যাচ্ছে। সবকিছু অনেক সুন্দর। তারা ভিতরে গেলো। সকল স্টাফরা তাদের উষ্ণ অভিনন্দন জানালো। তারা একদম ভিতরে চলে গেতেই ফার্মাল গেটাপে একটা মেয়ে আসলো।

জুলি (মেয়েটি);; স্যার, এটা আপনাদের ঘরের চাবি এবং এখানে প্যালেসের সব ফাইল (একটা পেপারআপ আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে) ইভেন আপনি যেকোন ফাংশন অরগানাইজ করতে পারেন।
আব্রাহাম;; Thank u…
জানপাখি Let’s go..

আইরাত কোন কিছুই বলছে না শুধু পুতুলের মতো করে আব্রাহামের সাথে যাচ্ছে। আব্রাহাম চাবি দিয়ে তার রুমের দরজা খুলে ভিতরে গেলো। আইরাত ভিতরে গিয়ে আরো একদফা অবাক। সারাটা ঘর সাদা রঙের কিন্তু মাঝে মাঝে দু একটা জিনিস বেবি পিং কালারের। কিন্তু বাথরুম দেখে আইরাতের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। কারণ বাথরুম সম্পূর্ণ কাচের। বাইরে থেকে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়।

আইরাত;; রুমটা অনেক বেশি সুন্দর। কিন্তু বাথরুম এমন কেন?
আব্রাহাম;; কেমন?
আইরাত;; এতো কাচের তৈরি। মানে A-Z সব কিছু দেখা যায়। এটা কোন কথা
আব্রাহাম;; হাহাহা এই প্যালেসটা পুরোটাই আসলে হানিমুনের জন্য। তো এখানকার সবকিছু তো তেমনই থাকবে তাইনা জান
আইরাত;; না মানে, না আমি এখানে থাকবো না আপনি অন্য রুম দেখেন প্লিজ
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো এখানেই থাকবো আর তোমাকেও এখানেই থাকতে হবে।
আইরাত;; মানুষের কি রুচিবোধ বাবাহ।
আব্রাহাম;; তোমার মতো সবাই আনরোমান্টিক না ওকে…
আইরাত;; হাহ্ আসছে আমার রোমিও রে। আচ্ছা, আপনি কি এই পুরো প্যালেসটা বুক করেছেন?
আব্রাহাম;; কিনেছি
আইরাত;; মানে
আব্রাহাম;; মানে হলো এই যে আমি সুইজারল্যান্ড আসবো অনেক আগে থেকেই প্লেন ছিলো। আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে। তো আসার একদিন আগেই আমি এটা কিনে নিয়েছি।
আইরাত;; ওও আচ্ছা।
আব্রাহাম;; কেন পছন্দ হয়নি (আইরাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; জানি না (আব্রাহামের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে)

আইরাত বসে তার ornaments গুলো খুলতে লাগলো। আব্রাহাম ও তার জেকেট খুলে ফেললো। হঠাৎ আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিলো।

আইরাত;; আরে আজব এভাবে টানাটানি করছেন কেন।
আব্রাহাম;; ফ্রেশ হবো
আইরাত;; হ্যাঁ ভালো তো যান না
আব্রাহাম;; যাচ্ছি ই তো

এই বলে আব্রাহাম আইরাতকে কোলে নিয়ে সোজা বাথরুম ঢুকে পরলে আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে

আইরাত;; এইই এইই দাঁড়ান আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন
আব্রাহাম;; আমি এককথা বার বার বলতে পছন্দ করি না। বলেছি না যে সবসময় আমার সাথে ফ্রেশ হতে হবে তাই এখন চলো
আইরাত;; কিন্তু আমি ত….. আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

আব্রাহাম আইরাতকে তার কোল থেকে নামিয়ে সোজা সাওয়ার এর নিচে দাঁড় করিয়ে দেয় আর নিজেও আইরাতের সাথে গা ঘেসে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম সাওয়ার অন করে দেয়। যার ফলে দুজনের ওপরেই ঝড়ঝড় করে ঠান্ডা পানি পরে যায়। একে তো সুইজারল্যান্ড হিমশীতল কান্ট্রি, সবসময় আবহাওয়া প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। এমনকি এখনো হাড়কাপানো শীত, তার ওপর আব্রাহাম এভাবে আইরাতকে নিয়ে পানির নিচে দাঁড়িয়েছে যার ফলে আইরাত চিৎকার দিয়ে ওঠে। ভিজতে ভিজতে এখন দুজনের এমন অবস্থা যা বলার বাইরে। কিন্তু আব্রাহাম ঠাই দাঁড়িয়ে আছে যেন তার কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু আইরাত কাপতে কাপতে শেষ। আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আব্রাহাম সাওয়ার অফ করে দিয়ে একটা টাওয়াল এনে আইরাতের মাথা মুছে দিতে থাকে। তার পর চেঞ্জিং রুমে গিয়ে দুজনে চেঞ্জ করে এসে পরে।















অন্যদিকে In নীড়মহল…..

আতিয়া আহমেদ;; মেয়েকে চোখের সামনে থেকে একটা অজানা অচেনা ছেলে এসে এভাবে তুলে নিয়ে গেলো আর তুমি, তুমি হাতে হাত ধরে বসে আছো এভাবে। কেমন বাবা তুমি। বাড়ির ভিতর থেকে তুলে নিয়ে গেলো। না জানি আমার মেয়েটা কি করছে কেমন আছে। আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো আইরাতের বাবা
আশরাফুল আহমেদ;; আতিয়া মাথা ঠান্ডা করো। মেয়ে কি তোমার একার নাকি মেয়ে আমার ও চিন্তা আমার ও হয়। আমি তো দেশের সব জায়গাতেই লোক লাগিয়ে দিয়েছি এবং তারা তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার মেয়ের কিছুই হবে না, কিছুই হবে না। ভরসা রাখো আতিয়া।
আতিয়া আহমেদ;; কি শান্ত হবো আমি কি করে শান্ত হই,, মেয়েকে এভাবে নিয়ে গেলো। আমাদের এতো গুলো বডিগার্ড দের মেরে রেখে গেছে। আমাদের চোখের সামনে সব হয়েছে। সব কিছু থাকা সর্তেও তুমি কিছুই করছ না।

আতিয়া আহমেদ মেয়ের চিন্তায় প্রায় আধা মরা। নীড়মহল যেন এক মৃতবাড়িতে পরিনত হয়েছে। কারো মনেই শান্তি নেই। বাড়ির সবার একমাত্র চোখের মণি উধাও।






সুইজারল্যান্ড…

আব্রাহাম;; আমি সেদিন আইরাতকে তার বাড়ি থেকে সবার সামনে তুলে এনেছি এবং বাড়ি তে যত বডিগার্ড ছিলো সবাইকেই মেরে এসেছি। আমার মনে হয় না যে এতো কিছু করার পর আমার প্রিয় শশুড় আব্বু উরফে চাচাজান চুপ করে বসে থাকবেন। কারণ উনি চুপ করে বসে থাকার মতো মানুষ নন। তাই আমি বেশকিছুদিনের জন্য বাইরে চলে এসেছি। ইনফেক্ট কেউ জানেই না যে আমি কোথায় এসেছি বা কোথায় আছি। (ফোনে কথা বলতে বলতে)

………… জি স্যার, আপনি এইদিক কার জন্য একদম চিন্তা করবেন না বাকি কাজ সব আমি সামলে নিব।

আব্রাহাম;; হুমম কাজ শেষে বাকি টাকা তুমি তোমার হাতে পেয়ে যাবে।

………… জি স্যার, আপনার মেহেরবানি।

আব্রাহাম এতোক্ষন করিডরে থেকে ফোনে কথা বলছিল। ফোন কেটে দিয়ে রুমে গেলো। দেখলো যে আইরাত একদম শীতের কাপড়চোপড় পরে আছে তবুও একটু কাপছে। পাশেই হালকা তেজে আগুন জ্বলছে। বাইরে তুষারপাত হচ্ছে, আইরাত তা কাচের জানালা দিয়ে দেখছে। আব্রাহাম ফোন দিয়ে দুকাপ কফি অর্ডার করে। ৫-৬ মিন পর কফি এসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়…

আব্রাহাম;; হুমমম ধরো (কফির মগ আইরাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে)
আইরাত;; Thank you
আইরাত;; আচ্ছা আমরা কি ঘুরতে যাবো না?
আব্রাহাম;; একে তো এখনই শীতে থরথর করে কাপছ আবার বাইরে এই তুষারপাতের মধ্যে ঘুরতে যাবে।আইরাত;; না আমি যাবো ঘুরতে যাবো মানে যাবোই আব্রাহাম;; কাল আমরা একটা পার্টি তে যাবো রেডি থেকো।
আইরাত;; কোন পার্টি
আব্রাহাম;; আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের পার্টি। And we are the Chief Guests…
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
আব্রাহাম;; হুম এবার বলো রাতে কি খাবে।
আইরাত;; বিরিয়ানি
আব্রাহাম;; 🤨 Really!
আইরাত;; Any doubt?
আব্রাহাম;; Not at all…

———————–

আব্রাহাম স্টাফকে ফোন দিয়ে বিরিয়ানির কথা বলে দিলো। কিছুক্ষন পর তাদের রুমে খাবার দিয়ে গেলো। আইরাত তো বিরিয়ানির গন্ধে পাগল প্রায় বিকজ এটা ওর সবচেয়ে বেশি পছন্দের। আইরাত তাড়াতাড়ি করে নিজের প্লেট নিয়ে বসে পড়লো। আব্রাহাম আইরাতের কান্ড দেখে হাসবে না কাদবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

আব্রাহাম;; ওওও হ্যালো মিসেস, এভাবে ভুক্কারের মতো নিজের টা নিয়ে বসে পরলে কেন
আইরাত;; কিইইইইই আমি ভুক্কার। দেখুন বিরিয়ানির বেলায় কিছুই বলবেন না। আজ সকালে আইসক্রিমের জন্য যথেষ্ট বকেছেন কিন্তু বিরিয়ানি না খবরদার।
আব্রাহাম;; খাইয়ে দাও( আইরাতের সামনে বসে)
আইরাত;; নিজের হাতে কি হয়েছে
আব্রাহাম;; এই মেয়ে মুখে মুখে এতো কিথা বলো কেন। খাইয়ে দিয়ে বলেছি এখন খাইয়ে দিবে বেস
আইরাত;; এ আমি কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম খোদা (মনে মনে)
আব্রাহাম;; কাদো কাদো চেহারা বানিয়ে লাভ নেই। খাইয়ে দিতে বলেছি বেস খাইয়ে দিবে, দাও (ধমক দিয়ে)

আব্রাহামের ধমক শুনে আইরাত পারছে না কেদে দিতে। আর কোন উপায়-উপান্তর না পেয়ে আইরাত বাধ্য হয়ে আব্রাহামকে খাইয়ে দিতে লাগলো। সেদিন এভাবে আইরাতকে জ্বালিয়ে জ্বালিয়েই আব্রাহামের দিন গেলো।









💞💞চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part; 25

🍁🍂
..
..
..
..
..
আইরাত ঘুমিয়ে আছে। যাকে বলে বিভর ঘুম। কিন্তু আব্রাহাম আইরাতের আগে জেগে ওঠে পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত গুটিশুটি মেরে বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে। আব্রাহামের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি কাজ করে। আইরাতের এলোমেলো চুল গুলো নিয়ে সে আইরাতের মুখে, গালে, ঘাড়ে সুরসুরি দিতে থাকে। এতে আইরাত কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। আব্রাহাম মিটমিট করে হাসে। কিন্তু আব্রাহাম আর কোন কথা বলে আইরাতের ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয় এবং জামার নিচ দিয়ে হাত দেয়। আইরাত সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে। দেখে যে আব্রাহাম তাকে এভাবে ধরে আছে। আইরাত তাড়াতাড়ি করে লাফিয়ে ওঠে।

আইরাত;; একি কি করছেন আপনি?
আব্রাহাম;; রোমেন্স (আইরাতকে আবার টান দিয়ে শুইয়ে)
আইরাত;; দেখুন আমার এভাবে থাকতে একদম ভালো লাগে না, প্লিজ ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; ভালো না লাগলে করার কিছুই নেই, আমার তো ভালোই লাগে তাই আমি এভাবেই থাকবো।
আইরাত;; আজাইরা সব

কিছুসময় পর আব্রাহাম নিজেই আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আইরাত যেন প্রাণে বাচে। আইরাত ওঠে দেখে যে তার গায়ে ওরনা নেই সে আসেপাশে ওরনা খুজতে লাগে। কিন্তু পিছনে তাকিয়ে দেখে তার ওরনা আব্রাহামের হাতে পেচানো। আব্রাহাম তা নিয়ে পরম আবেশে ঘুমিয়ে আছে। আইরাত একটু তাকিয়ে চলে যায় ওয়াসরুমে। ওয়াসরুমে গিয়ে অনেক বড়ো বড়ো পর্দা নামিয়ে দিলো। আইরাত বের হয়ে দেখে আব্রাহাম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। আইরাত তা দেখে সোজা নিচে চলে আসে। নিচে আসতেই বাড়ির স্টাফরা একে একে আইরাতকে মর্নিং জানাচ্ছে আইরাত ও তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তখন কালকের সেই মেয়েটি জুলি আইরাতের কাছে এলো…

জুলি;; Good morning ম্যাম,
আইরাত;; Morning
জুলি;; ম্যাম খাবারে কি বানাবো
আইরাত;; যা ইচ (কথা শেষ না হতেই)
আব্রাহাম;; আজ তোমাদের ম্যাম রান্না করবে (আইরাতের পিছন থেকে সামনে এসে)

আইরাত মাত্রই বলবে কিন্তু আব্রাহাম আইরাতের পিছন থেকে এসে আইরাতকে রান্না করতে বলল। আইরাত তো রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; তোমাদের দরকার নেই আজ আইরাত রাধবে। আর আইরাত অনেক ভালো ও রাধতে পারে তাই না জানপাখি (আইরাতকে পিঞ্চ করে)
আইরাত;; আপনি কেন আদা-লবণ খেয়ে আমার পিছু লেগেছেন বলুন তো। রান্না যে আমি তেমন পারি না তা আপনার অজানা নয় কিন্তু তারপর ও আমাকে বলছেন রান্না করতে।
আব্রাহাম;; Listen তোমার রান্না যতই জঘন্য হোক না কেন, আমি খাবো। আমি খেতে পারলে তোমার সমস্যা কোথায়। Now go to the kitchen আর হ্যাঁ শুনো মাংস ভুনা রাধবে আমার জন্য, that’s my favourite…

আব্রাহাম নিজের মতো করে বলে চলে গেলো। এদিকে আইরাত তো রেগে মেগে শেষ এমনকি রাগের চোটে চোখ দিয়ে পানি পর্যন্ত বের হয়ে পরেছে। আইরাত আব্রাহামের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রান্নাঘরে গেলো। তার সামনে সবকিছুই সাজানো আছে এখন শুধু সে রাধবে।

আইরাত;; তুমি মাংস ভুনা রাধবে that’s my favourite (বেংজ্ঞ করে) দাঁড়া তোকে তোর মাংস ভুনা খাওয়াচ্ছি। আমাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করা তাই না,, রান্না পারি না জেনেও বার বার রান্না করতে বলা তাও বাড়িতে এতোগুলো স্টাফ থাকার পরেও। দাঁড়াও দাঁড়াও খাওয়াচ্ছি তোমাকে মাংস ভুনা। এমন ঝাল দিবো না যে একদম নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যাবে তখন বুঝবে মজা।

আইরাত রাগে রান্না করছে আর মুখে মুখে এইকথা গুলো বলছে। আইরাত রাগের বশে তরকারি তে এতোই ঝাল দিয়েছে যে তরকারি গাঢ় লাল রঙ ধারণ করেছে। দেখেই চোখে পানি আসছে। সেইসময় জুলি রান্নাঘরে আসলো এবং আইরাতের রান্না দেখে আতকে উঠলো…

জুলি;; ম্যাম এ আপনি কি করেছেন!
আইরাত;; কি করেছি
জুলি;; ম্যাম আপনি মাংসে এতো ঝাল দিয়েছেন আমারই কান্না পাচ্ছে, কিকরে খাবেন এটা
আইরাত;; নাহ, আমি তো খাবো না এটা খাবে তোমাদের স্যার,, স্পেশালভাবে তার জন্যই বানানো

জুলি মাংসের দিকে তাকিয়ে একটা বড়সড় ঢোক গিল। তার নিজেরই প্রাণ যেন যায় যায় এমন অবস্থা।
বেশকিছুক্ষন পর আইরাতের রান্না শেষ হলো। আইরাত খুব যত্নের সাথে মাংসের বাটি ডাইনিং টেবিলের ওপরে নিয়ে রাখলো। আব্রাহাম ওপর থেকে নিচে নেমে এলো এসেই আইরাতের দিকে তাকায়ে বলল…

আব্রাহাম;; হুমমম স্মেল তো অনেক ভালোই বের হয়েছে।
আইরাত;; খেতেও অনেক ভালো হয়েছে চান্দু, একবার খেয়েই দেখো (মনে মনে)

আব্রাহাম আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সোজা এসে টেবিলে বসে পড়লো।
আইরাত অনেক সুন্দর করে আব্রাহামকে খেতে দিলো।

আইরাত;; আরে বসে আছেন কেন খান খান (হেসে)
খা বজ্জাত কোথাকার বেশি করে খা(মনে মনে)

আব্রাহাম আইরাতের দিকে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। তার কেমন যেন ডাল মে কুছ কালা লাগছে।

আব্রাহাম;; কি বেপার আজ এতো ভালোভাবে কথা বলছো কেন বলত

আইরাত আব্রাহামের কোথায় ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

আইরাত;; কককই না না তো, আম আমি ঠিক আআছি, আপনি খান
আব্রাহাম;; তুমি খাবে না, তুমিও খাও
আইরাত;; এইরে সেরেছে, এখন আমি কি বলি(মনে মনে)
আইরাত;; না মানে আসলে আমি খাবো তো খাবো কিন্তু আপনার খাওয়ার পর,, মেয়েদের আগে খেতে নেই তো
আব্রাহাম;; সূর্য কোন দিক দিয়ে ওঠেছে আজকে
আইরাত;; আরে এতো কথা বলছেন কেন খান আপনি আমি এতো কষ্ট করে বানিয়েছি
আব্রাহাম;; হুমমম দেখি কি বানালে

আব্রাহাম প্রথম বাইট খেলো খাওয়ার সাথে সাথে চোখে পানি চলে এলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকালো দেখলো আইরাত তার সামনে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কিছুটা ঝুকেঁ আব্রাহামের সামনে গিয়ে বলল…

আইরাত;; আমি রেধেছি, খুব মজা তাইনা

আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারলো যে মাংসে ইচ্ছে করেই ঝাল দেওয়া হয়েছে। আব্রাহাম কোন কথা না বলে উল্টো আইরাতকে চোখ মারলো। আইরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আব্রাহাম বাকা হেসে লাগাতার খেয়েই যাচ্ছে। যেন এটার মতো অমৃত অন্য আর কিছুই নেই। আইরাত প্রায় অনেক টুকু মাংস আব্রাহামকে দিয়েছিলো আর যে পরিমান ঝাল দিয়েছে তাতে এই সম্পূর্ণ কারোরই পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। কিন্তু আইরাতকে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম সম্পূর্ণ খেয়ে উঠলো। খাওয়া শেষে আব্রাহাম শুধু এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। মাথা তুলে আইরাতের দিকে তাকালো।

আইরাত;; বাপ রে বাপ এই কি আদৌ মানুষ নাকি ভুত। মরিচের পেকেটে থাকা সবটুকু মরিচ দিয়েছি তাও এভাবে খেয়ে ফেললো। কিন্তু উনি তো এতো ঝাল খান ই না তাহলে কেমনে কি। আমি সিওর এই বেটা মানুষ না (মনে মনে)

আব্রাহাম আইরাতের মুখের সামনে তুরি বাজালো তাতে আইরাত তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো। আইরাত চমকে আব্রাহামের দিকে তাকালো। দেখলো যে আব্রাহামের চখ, মুখ, নাকের ডগা সব টমেটোর মতো লাল টুকটুকে হয়ে আছে কিন্তু তবুও তিনি কোন রিএক্ট করছেন না। আব্রাহাম এবার মাংসের বাটি টা আইরাতের সামনে এগিয়ে দিলো।
আইরাত বোকার মতো আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাতের প্রশ্নবদ্ধ ভাবে আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তাকে ইশারা করে এটা খাওয়ার জন্য। আইরাত কেদে দেয়, আব্রাহামের দিকে কান্না কান্না মুখ নিয়ে তাকালে আব্রাহাম হিংস্র চোখে তার দিকে তাকায়। একদিকে ঝাল আর একদিকে আব্রাহামের রাগ দুটোই যেন সমান। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে একটু মাংস মুখে দিলো। দেয়ার সাথে সাথে গগন বিদারি চিৎকার। আইরাত চোখের জলে নাকের জলে হয়ে গেছে। সারা টেবিলে পানি খুজে বেড়াচ্ছে। আব্রাহাম এবার ওঠে দাঁড়িয়ে আইরাতকে জোড় করে টেনে ওপরে নিয়ে যেতে লাগলো। আইরাত অনেক চিল্লাচ্ছে কিন্তু কে শুনে কার কথা আব্রাহাম তো তার মতো করেই আইরাতকে টেনে হিচড়ে ওপরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘরে আসার সাথেই আব্রাহাম আইরাতের বুক থেকে ওরনা টেনে খুলে ফেললো,, আইরাত একে তো ঝাল এ শেষ তার ওপর লজ্জায় অন্যদিক ঘুড়ে দাঁড়ালো। আব্রাহাম আইরাতকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে যেতে লাগলো। আইরাতকে কোল থেকে নামিয়ে সাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো। আব্রাহাম পাগল হয়ে গেছে ঝালে কিন্তু সহ্য করছে। সাওয়ার অন করে দুজনেই ভিজতে লাগলো। আব্রাহাম এক প্রকার জোড় করেই আইরাতের ঠোঁটজোড়া নিজের করে নেয়। ঝালে এবং রাগে আব্রাহাম আর কোন উপায় না পেয়ে আইরাতের ওপর সব ঝাড়ছে। আব্রাহাম পাগলের মতো করে আইরাতকে কিস করে যাচ্ছে। এই দিকে আইরাত কান্না করতে করতে শেষ প্রচন্ড শীত ও করছে। আব্রাহামের কিস গুলো কামড়ে পরিনত হচ্ছে। আইরাত হাজার ধাক্কাচ্ছে কিন্তু আব্রাহাম আইরাতকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে। ঠান্ডা পানিতে আইরাতের মুখ যেন আরো স্নিগ্ধ রুপ ধারণ করেছে। আব্রাহাম নিজের শার্ট একটানে খুলে ফেলে, আইরাতের জামার হাতা ছিড়ে ফেলে, বুকের দিকে ছিড়ে ফেলে। আব্রাহাম আইরাতের গলায়, ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়। আইরাত আর না পেরে আব্রাহামকে জোড়ে ধাক্কা দেয় যার ফলে সে কিছুটা পিছিয়ে যায়। আইরাত দৌড়ে চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম পিছনে থেকে আইরাতের কোমড় ধরে কাছে টেনে আনে এবং পিছনে জামার ফিতা টেনে ছিড়ে ফেলে। সে আইরাতকে আবার একদফা নিজের করে পায় কিন্তু আইরাত কখনোই আব্রাহাম কে মেনে নিতে পারে না।












আইরাত শীতে কাপছে আর চোখের পানি ফেলছে। কেন তার সাথে এমন হলো। যাকে সে কখনোই চায় নি তার সাথে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকতে হচ্ছে।

আব্রাহাম আইরাতের সামনে এসে দেখে যে সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। আব্রাহামের বুকে কেমন এক মোচড় দিয়ে উঠলো। আব্রাহাম আইরাতের পাশে তার কোমড় চেপে ধরে বসে পড়লো।

আব্রাহাম;; পরেরবার যেন এমন কিছু করার আগে আজকের দিনটা মনে থাকে ঠিকআছে জান (আইরাতের মাথায় চুমু দিয়ে)

আইরাত রাগ+বিরক্তি নিয়ে অন্য পাশে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। আব্রাহাম তার পাশ থেকে ওঠে পরে। আইনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; জানপাখি জলদি রেডি হয়ে নাও আমরা বাইরে যাবো
আইরাত;; আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না..
আব্রাহাম;; যাবে না!
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; যাবে না!
আইরাত;; না বললাম তো

আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

আব্রাহাম;; তুমি যাবে না আমার সাথে তাই না! (আইরাতের দিকে তাকিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে যাচ্ছে)
আইরাত;; এগিয়ে কেন আসছেন এভাবে (ঢোক গিলে)
আব্রাহাম;; কারণ তুমি যাবে না বেবি (আরো কাছে এগিয়ে এসে)
আইরাত;; এএএ না না আমি আমি যাবো, যাবো আমি। এভাবে ভয় দেখানোর মানে কি। আমি, আমি যাচ্ছি এবং আপনার সাথে যাবো
আব্রাহাম;; গুড, যাও রেডি হও

আইরাত দৌড়ে ওঠে চলে গেলো। আর আব্রাহাম হেসেই শেষ।

আব্রাহাম;; ডোজ টা ভালোই কাজ করে,, মাঝে মাঝে দিতে হবে।

আইরাত রেডি হয়ে এলো,, আজকে আইরাতকে বেশ স্মার্ট লাগছে। পরনে ব্লেক কালার পেন্ট, ক্রিম কালারের লং উইন্টার অফ সোল্ডার টপ, কিন্তু চুলগুলো ছেড়ে দেওয়ার ফলে কাধ বুঝা যাচ্ছে না, পায়ে ব্লেক হিল সুজ, কানে টপ এবং ঠোঁটে লিপস্টিক বেস ফাটাফাটি লাগছে আইরাতকে❤️
অন্যদিকে আব্রাহাম ও রেডি হয়ে নিলো। সে ও কম কিসে। পরনে ব্লেক কালার পেন্ট, ধবধবে সাদা শার্ট, শার্টের হাতা ফোল্ড করা, নীলাভ চোখ, চুল গুলো হালকা বড়ো বড়ো,, সামনের চুলগুলো কপালে উপচে পরছে, চাপদাড়ি,, হাতে ব্লেক ব্রেন্ডেড ওয়াচ, পায়ে ব্লেক সু। পুরাই কাতিলানা লুক❤️

আব্রাহাম পারফিউম দিচ্ছিল সেই সময় আইরাত এলো। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে এক ভ্রু উচু করে ফেললো।

আব্রাহাম;; আর কতো কতো লুক আছে তোমার
আইরাত;; মানে
আব্রাহাম;; You ar looking cool…
আইরাত;;……………..
আব্রাহাম;; Let’s go babe💕

আব্রাহাম-আইরাত গাড়িতে উঠে পরলো। গাড়ির ড্রাইভার ড্রাইভ করছে পিছনে আব্রাহাম আইরাত বসা। আব্রাহাম একদম আইরাতের সাথে লেপ্টে বসেছে। আইরাতের অসহ্য লাগলেও সহ্য করে যাচ্ছে। বেশখানিক সময় পর গাড়ি এসে থামলো এক বড়ো বাংলোর সামনে। ড্রাইভার নেমে আইরাতের সামনের দরজা খুলে দিলো। তারা নেমে পরলো। আইরাত-আব্রাহামকে সসম্মানে ভিতরে নেওয়া হলো। ভিতরে যেতেই একটা লোক এসে আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরলো। যদিও এটা সুইজারল্যান্ড কিন্তু লোকটিকে দেখে বুঝা যাচ্ছে না যে উনি বিদেশি, পুরো বাংলাদেশি।

সোহেল;; কেমন আছো আব্রাহাম, অনেক দিন পর তোমাকে দেখার ভাগ্য হলো। আমি চিফ গেস্ট হিসেবে তোমায় ডেকেছিলাম। তুমি যে সত্যি আসবে তা আমি ভাবতেও পারিনি,
আব্রাহাম;; আরে তুমি ডেকেছ আসতে তো হতোই।

আব্রাহাম ও সোহেলকে জড়িয়ে ধরলো এবং তার কানে কানে বলল…

আব্রাহাম;; আমি যে “আমেরিকান আন্ডারগ্রাউন্ড মাফিয়া” তা যেন ভুল করেও আইরাত টের না পায় ওকে (কানে ফিসফিসিয়ে)
সোহেল;; একদম পাবে না…

আব্রাহাম সোহেলকে ছেড়ে দাঁড়ালো।।

আব্রাহাম;; সোহেল, Met is my one & only beautiful wife Airat…
সোহেল;; Nice to met you মিসেস. আইরাত চৌধুরী। (আইরাতের সামনে হেন্ডশেকের মতো করে হাত এগিয়ে দিয়ে)

আইরাত সৌজন্যের খাতিরে হালকা হেসে হাত এগিয়ে দিতে চাইলে তার আগেই আব্রাহাম সোহেলের হাতে নিজের হাত থামিয়ে দেয় এবং হেসে উঠে। সোহের বেপার টা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি করে হাত নামিয়ে ফেলে এবং তাদের কে একদম ভিতরে নিয়ে যায়। এটা যে অনেক হাইফাই একটা পার্টি তা বুঝায় যাচ্ছে। অনেক মানুষজন এসেছে এখানে,, প্রায় সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপে এসেছে,, হাতে বিভিন্ন ধরনের ড্রিংকস। সোফট্ মিউজিক বাজছে তার তালে তালে অনেকে নাচছে। একটা কাপল ডেকোরেটেড টেবিলে গিয়ে আব্রাহাম-আইরাত বসে পড়লো। আইরাত তাকিয়ে তাকিয়ে পার্টি দেখছে কিন্তু আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঘুরে মুগ্ধ হয়ে মাথার কিনারে হাত রেখে তাকে দেখছে,, মুখে লেগে আছে মুচকি হাসি। আইরাত এবার আব্রাহামের দিকে তাকাল..

আইরাত;; এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে!
আব্রাহাম;; মায়া আছে,জাদু আছে, ভালোবাসা আছে এমনকি এখানেই আমি আমার নিজেকে হারিয়েছি। ও তুমি বুঝবে না…

আইরাত বেংচি কেটে আবার অন্যদিক তাকালো। তখন আব্রাহামের একটা বডিগার্ড এলো। আব্রাহামের কানে কানে কি যেন একটা কিছু বলে চলে গেলো।

আব্রাহাম;; জানপাখি তুমি এখানেই থেকো কেমন, আমি আসছি
আইরাত;; যেখানে খুশি যান আমার কি

আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে চলে গেলো। আসলে আব্রাহাম গ্রেট মাফিয়া হওয়ার জন্য প্রায় সব জায়গাতেই তার পাওয়ার এবং সুনাম রয়েছে। খানিক পূর্বে যে বডিগার্ড টি এসেছিলো সে আসলে বিভিন্ন রিভলবার, সাইলেন্সার, গান এর খবর নিয়ে এসেছিল। এক ডিলার এসেছে আব্রাহামের সাথে ডিল করার জন্য তাই আব্রাহাম কে যেতে হয়েছে। আব্রাহাম চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর আইরাতের চোখ যায় কিছু Foreign Police Officer দের ওপর। তারা তাদের হাতে বড়ো Gun নিয়ে বাড়ির আসেপাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। এতে আইরাতের টনক নড়ে। আইরাত ভাবে যে যদি এদের কাছ থেকে কিছু সাহায্য নেওয়া যায়, কোন ভাবে যদি এরা তাকে আব্রাহামের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে তাহলে। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত দ্রুত পায়ে হেটে গিয়ে Police Officer দের কাছে যেতে নিলো। হাটতে হাটতে আইরাত অনেক বড়ো এক করিডরে চলে এলো। সামনে গিয়ে দেখলো দুটো অফিসার দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; Hlw, hlw excuse me hlw…

আইরাত Police Officer দের ডাক দিলে তারা আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। অনেক সাহস নিয়ে আইরাত তাদের বলে ওঠে…

আইরাত;; Excuse me officer, can you help me out…?!
অফিসার;; Yes miss, tell us how can we help you!
আইরাত;; Actually i was kidnapped, and a guy forcefully took me to him… I want to go home plz help me
অফিসার;; What, who is he?
আইরাত;; He is Ab…..

আইরাত কিছু বলবে তার আগেই অফিসাররা আইরাতের পিছনে তাকালো এবং বলল..

অফিসার;; Good evening Sir (অতি সম্মানের সাথে)

পিছন থেকে অফিসারদের চলে যাওয়ার জন্য ইশারা এলে তারা সোজা চলে যায়। আইরাত অফিসারদের এভাবে হুট করে চলে যাওয়াতে কিছুটা ভরকে গেলো। ধীরে ধীরে আইরাত পিছন ঘুড়ে তাকলো। পিছনে তাকিয়ে আইরাতের প্রাণভোমরা পালিয়ে যায়। কারণ পিছনে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম পেন্টের পকেটে এক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর অন্য এক হাতে সেম্পেনের বোতল যা অর্ধেক খাওয়া। এখন আব্রাহামকে টোটালি মাফিয়া লাগছে। আব্রাহাম হাতে সেম্পেনের বোতল নিয়েই আইরাতের দিকে এগিয়ে এলো।

আব্রাহাম;; Are you lost Baby Girl !!
আইরাত;; Actually আমি, মানে আমি আসলে
আব্রাহাম;; তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, তুমি এখান থেকে যেতে চাও।
আইরাত;;……………………….
আব্রাহাম;; Speakup baby girl (আইরাতের থোতাতে ধরে মুখ ওপরে তুলে, রাগ কন্ট্রোল করছে কোনভাবে)
আইরাত;; Leave me
আব্রাহাম;; Never,, তুমি কি ভেবেছ তুমি ওই অফিসারদের কাছ থেকে সাহায্য চাইবে আর ওরা এতো ইজিলি তোমাকে হেল্প করবে তাও আবার আমার কাছ থেকে পালানোর জন্য হাহাহাহাহাহাহাহা (ডেভিল হেসে) Baby girl it can’t happen even in your imagination… so অযথা ব্যর্থ চেষ্টা করো না। কোন লাভ হবে না ওকে (আইরাতের মুখের কাছে মুখ এনে)

আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে আইরাতের ঠোঁটে চুমু একেঁ দেয় এবং আইরাতকে দিয়ে ভিতরে যেতে লাগলো।।।









💟🌷চলবে~~~~

Gangstar In Love Part-22+23

0

#Gangstar In Love 🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 22

❣️❣️
..
..
..
..
..
আব্রাহাম এক সময় ড্রাইভ করতে করতে চৌধুরী ভবনের সামনে চলে এলো

আব্রাহাম;; জানপাখি, আমরা এসে গেছি। চল নামো এবার
আইরাত;;…………(সামনে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে)………………….
আব্রাহাম;; জানপাখি
আইরাত;; আমি যাবো না
আব্রাহাম;; জলদি নামো
আইরাত;; (আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে) কি বলছি আপনি শুনতে পান না নাকি যাবো না আমি, যাবো না। আমাকে যেখান থেকে এনেছেন সেখানেই দিয়ে আসুন। আমি পাপার বাড়ি যাবো
আব্রাহাম;; একটা কথা কি যানো, তুমি না অনেক তেড়া প্রকৃতির
আইরাত;; আপনার থেকে বেশি না

আব্রাহাম অন্য দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে আবার আইরাতের দিকে তাকালো। আইরাতের বাহু ধরে টান দিয়ে গাড়ি থেকে নামালো। আইরাত এতে করে কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

আব্রাহাম;; তেড়া তো হতেই হবে। সমানে সমানে না মিললে কি চলে জান। আর জানো কি “কান টানলে মাথা আসে” (আইরাতের দিকে ঝুকে বাকা হেসে)
দেখো বাপি বাড়িতে তো কোনরকম তাল-বাহানা ছাড়ো ওকে।

আইরাত রাগি দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকালো আব্রাহাম আইরাতকে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো।

আব্রাহাম;; বাপি, বাপি
আবির আহমেদ;; আরে আব্রাহাম আইরাত মামনি এতো তাড়াতাড়ি এসে পরেছিস তোরা।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বাপি। আসলে আমি অন্য কিছু ভাবছি
আবির আহমেদ;; কি
আব্রাহাম;; না মানে বাপি তোমার বউমা আমাকে বলছিলো যে দেশে ঘুরতে তার নাকি একদমই ভালো লাগছে না। সে বাইরে যাবে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে আমরা হানিমুনে যাবো

আইরাত বিস্ফোরিত চোখে আব্রাহামের দিকে তাকালো। এই ছেলেতো দেখি মিথ্যা বলার মেশিন। দিন দুপুরে ডাহা মিথ্যা কথা বলছে। যে কিনা তার পাপার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসলো সে কিনা বলছে যে আইরাত হানিমুনে যেতে চেয়েছে। সম্ভব হলে আইরাত এখনই আব্রাহামের গলা টিপে মেরে ফেলতো।

আবির আহমেদ;; হাহাহাহাহা আচ্ছা তো এই কথা। আরে পাগল ছেলে বলার কি আছে তোর বউ তুই নিয়ে যা। যতদিন খুশি একসাথে ঘুরে আয়।
আইরাত;; কিন্তু বাপি,, তুমি তো একা বাসায় কি করে থাকবে। তোমাকে দেখবে কে
আবির আহমেদ;; আরে মামনি তুই চিন্তা করিস না অয়ন আছে তো ওকে বলবো অফিস থেকে কিছুদিন এর জন্য এসে পরতে। তোরা নির্দিধায় ঘুরে আয়।
আইরাত;; বাপি………
আবির আহমেদ;; না না কোন কথাই আমি শুনবো না। তোরা যা
আব্রাহাম;; শশুড়মশাই কে যেহেতু একবার বলে এসেছি যে হানিমুনে যাবো তো যাবো। কথা যখন দিয়েছি পূরণ তো করতে হবেই (আইরাতের কানে কানে ফিসফিস করে)

আইরাত রেগে বোম হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম সাথে সাথে চোখ মেরে দেয়। এতে আইরাত আরো চেতে যায়,, যেন কেউ আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
আইরাত আর কোন কথা না বলে তার বাপি দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে সিড়ি দিয়ে ওপরে চলে যায়। আব্রাহাম ও আইরাতের পিছু পিছু চলে যায়।
আইরাত রুমে ঢুকে পরলে আব্রাহাম এসে দরজা আটকে দেয়।
আইরাত ভ্রু কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়

আইরাত;; আসলে চাইছেন কি আপনি বলুন তো। আমার জীবন টা তো ছারখার করেই দিয়েছেন এখন আবার কেন এসব করছেন।
আব্রাহাম;; আমি বেশি কিছু চাইনি। শুধু চেয়েছি যে পুরনো কিছু স্মৃতি এবং তার যন্ত্রণা একজন দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিয়ে। কিন্তু মাঝখানে তুমি এসে তো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছিলে তাই এখন তোমাকে চাইছি।
আইরাত;; আপনার সাথে কথা বলার চেয়ে একটা পাগলের সাথে কথা বলা বেশ ভালো।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাহলে পাগলে পাগলে মিলবে ভালোই। (জেকেট খুলে শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে)
আইরাত;; কিইইইইই আমি পাগল। তাহলে আপনি তো একটা মিথ্যা বলার মেশিন। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপনি মিথ্যা বলেন। (আঙুল তুলে আব্রাহামের দিকে তেড়ে গিয়ে)

আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের দিকে ঘুরলো। আইরাত থেমে গেলো এবং ধীরে ধীরে আঙুল নামিয়ে নিলো। এবার আব্রাহাম ভ্রুজোড়া হাল্কা কুচকে ঠোঁটের কিণারে বাকা হাসি এনে আইরাতের দিকে এগোতে লাগলো।

আব্রাহাম;; আমি মিথ্যা বলার মেশিন তাইনা। (আইরাতের দিকে এগিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে)
আইরাত;; ননা মামামানে আআআমি আয়াসলে ততা ববলতে চাইনি।
আব্রাহাম;; তাহলে কি বলতে চেয়েছো বেবি।
আইরাত;; আল্লাহ রাগের মাথায় তো সব বলে দিয়েছি এখন যদি এই পাগল টা কিছু করে বসে তাহলে (মনে মনে)
আব্রাহাম;; জানপাখি ভয় পাচ্ছো কেন,, Come closer
আইরাত;; আয়ায়ামি ভভভয় পাপাচ্ছি ননা। আয়ার আপনি এভাবে এএএগিয়ে আসছেন কেকেকেন। প্লিজ দুদুরে যান আর ওপরের বোতাম গুলো লাগিয়ে নিন প্লিজ

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়েই যাচ্ছে। এগিয়ে যেতে যেতে আব্রাহাম আইরাতের একদম কাছে চলে গেলো। আইরাত ধপ করে বিছানাতে বসে পরলো। আব্রাহাম আইরাতের দুপাশে দুহাত রেখে আইরাতের দিকে বেশখানিক ঝুকে পড়লো। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। আব্রাহাম আইরাতের কানের চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো। আইরাতের কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে স্লো ভয়েসে বলতে লাগলো…

আব্রাহাম;; Baby girl,, আমি যা ই করি যা ই বলি তা সব তোমাকে পাবার জন্য, সবটাই তোমার জন্য। বড্ড ভালোবাসি যে।

আইরাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে। তবুও চুপ করে বসে আছে এছাড়া উপায় নেই তার।

আব্রাহাম;; আমরা হানিমুনে যাবো আর কোথায় যাবো তা সারপ্রাইজ, আর তুমি চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো আমার সাথে যাবেও, বাধ্য তুমি।

এই বলে আব্রাহাম আইরাতের ঘাড়ে গাঢ় চুমু দিয়ে চলে এলো। আইরাত কোন রকমে নিজেকে সামলে নিলো।

রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো।
আইরাত রুমে গিয়ে আইনার সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল খোলাতে বেস্ত হয়ে পরলো। কিন্তু পিছন থেকে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে আইরাত চমকে গেলো।

আব্রাহাম;; হুসসসসসসসসসস,, একদম নড়াচড়া করবে না যেভাবে আছ সেভাবেই থাকো আর কি কাজ করছ করতে থাকো।
আইরাত;; অসহ্যকর একটা মানুষ (মনে মনে)
আব্রাহাম;; মনে মনে বকাবকি করো আর যাই করো তুমি আমারই
আইরাত;; আচ্ছা প্লিজ ছাড়ুন, এভাবে ধরে থেকে কি কোন কাজ করা যায় নাকি (অনেক বিরক্তি নিয়ে)
আব্রাহাম;; করলেই করা যায়, আমি তো ছাড়ছি না। (আইরাতের ঘাড়ে নাক মুখ ডুবিয়ে)

অনেক কষ্ট করে আইরাত সেখান থেকে সরে গেলো।
ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে চলে গেলো। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আব্রাহামকে রুমে না পেয়ে এক শান্তির শ্বাস ছাড়লো। কিন্তু আব্রাহাম গেলো কোথায়। আইরাত উকি দিয়ে করিডোরে দেখল কিন্তু না সেখানেও আব্রাহাম নেই। আইরাত মুখ বাকিয়ে ভাবতে লাগলো যে পাগল টা গেলো কোথায়। কিন্তু ঠিক তখনই আব্রাহাম আইরাতের পিছন থেকে বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; আমাকে খুজছিলে বুঝি ( পিছন থেকে আইরাতের কানের কাছে এসে)

আইরাত অনেক চমকে যায় এবং পিছন ঘুরে আব্রাহামকে দেখে পরে যেতে নিলে আব্রাহাম আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে তুলে কাছে টেনে নেয়। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; Baby girl, আমাকে খুজছিলে তাই না। আমি জানি আমাকেই খুজছিলে (আইরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে)
আইরাত;; আমার বয়েই গেছে আপনাকে খুজতে। ছাড়ুন আমাকে
আব্রাহাম;; কোন ছাড়াছাড়ি হবে না। এখন এসো ঘুমাবে
আইরাত;; আপনি ঘুমান আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি
আব্রাহাম;; What did u say?
আইরাত;; আয়ায়ামি অন্য রুরুমে ঘুমাচ্ছি
আব্রাহাম;; পা ভেংগে ঘরে বসিয়ে রাখবো🙂
আইরাত;; 😒😒

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে জোড় করে বিছানাতে শুয়ে পরলো। আইরাত অনেক নড়ছে। আব্রাহাম বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বলল…

আব্রাহাম;; আর একবার নড়লে না বাসার ছাদে নিয়ে গিয়ে এই শীতে সারারাত দাঁড় করিয়ে রাখবো

আইরাত অসহায় মুখ বানিয়ে নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আইরাত আর কোন রাস্তা খুজে না পেয়ে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।








🥀🥀চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 23

🍁🍁
..
..
..
..
..

সকালবেলা আইরাতের ঘুম ভেংগে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে যেতে চাইলে সে পারে না। পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কোমড় অনেক শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। আইরাত উঠে যেতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আইরাত একটু থেমে আব্রাহামের দিকে ভালো করে তাকায়। এলোমেলো চুলে, হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁটজোড়া মুখে যেন মায়ার শেষ নেই। আইরাত ভাবতে লাগলো যে এই লোকটিই কি সেই যে কিনা আইরাত কে জোর করে তুলে এনেছে — বিয়ে করেছে। এই লোকটির ভিতরে যে আসলে কতটা রাগ ভরে আছে তা হয়তো এই চোখজোড়ালো মুখখানা দেখলে বুঝা যাবে না। আইরাত কেন জানি চোখই সরাতে পারছে না তার ওপর থেকে।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি কিছু একটা করে বসবো। নিজেকে সামলানো বড় দায়। আর এভাবে তাকিয়ে আছো যদি নজর লেগে যায় তো…(ঘুমিয়ে থেকে চোখ বন্ধ রেখেই)
আইরাত;; 😳😱,, আপনি মানে আপনি তাহলে জেগে আসছেন। ঘুমান নি!
আব্রাহাম;; আমি কখন বললাম যে আমি ঘুমাই নি। কিন্তু আমার বউ যেভাবে আমার দিকে কাতিলানা নয়নে তাকিয়ে আছে, এতে ঘুম না ভাংগে পারে।
আইরাত;; ছাড়ুন আমাকে আমি উঠবো (ঝটকানা মেরে)
আব্রাহাম;; আরে দাঁড়াও দেখি, আগে আমাকে আমার জিনিস দিয়ে যাও।
আইরাত;; আমি কি দিবো আর কোন জিনিস
আব্রাহাম;; It’s called Morning Kiss baby girl…
আইরাত;; কিহহ, সরুন বলছি (রেগেমেগে শেষ)
আব্রাহাম;; আয় হায় রাগলে কি কিউট ই না লাগে জানপাখি
আইরাত;; ফালতু যত্তসব

আইরাত ঝটকানা মেরে আব্রাহাম কে রেখে উঠে গেলো। আব্রাহাম মুচকি হেসে সেখানেই আবার সুয়ে পড়লো। আইরাত রেগে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষন পর আইরাত চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো। এসে দেখে আব্রাহাম সেই এখনো আগের জায়গাতেই সুয়ে আছে। আইরাত ভাবলো যে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। নাহ, আব্রাহাম চোখ বন্ধ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক তখনই আইরাতের মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। তার কাছে তো ফোন নেই যার ফলে সে তার পাপার সাথে যোগাযোগ ও করতে পারে না। আচ্ছা সে যদি আব্রাহামের ফোন দিয়ে তার পাপা কে Call করে তাহলে। হ্যাঁ, করা যায়। কিন্তু এই গন্ডার তার ফোন কোথায় রেখেছে। আইরাত সারা ঘর আস্তে আস্তে খুজা শুরু করলো। কিন্তু কোথাও ফোন পেলো না। হুট করেই তার মনে পড়লো যে আব্রাহাম প্রতিদিন রাতে কাজ করার পর তার ল্যাপটপ আর ফোন পাশে রেখেই ঘুমায়। ল্যাপটপ তো সোফাতে তাহলে ফোন তার কাছেই। যেই ভাবা সেই কাজ,, আইরাত গিয়ে আব্রাহামের পাশে দাঁড়ালো। একটু ঝুঁকে দেখলো ফোন আব্রাহামের বালিশের নিচে পড়ে আছে। আইরাত কি করবে ভেবে পায় না, ফোন নিবে কি নিবে না দোটানায় পরে যায়। যদি আব্রাহাম জেগে ওঠে তাহলে তো আইরাত শেষ। মানে এটা হচ্ছে কিছুটা সিংহের মুখে হাত দেওয়ার মতো। সিংহ যদি জেগে ওঠে তাহলে তাকে একদম জেন্ত মেরে ফেলবে। আইরাতের ভয়ে হাত কাপছে কিন্তু তবুও যথেষ্ট সাহস নিয়ে সে আব্রাহামের বালিশে হাত দিলো। বালিশ টা ইতিমধ্যে উঁচু ও করে ফেলেছে সে এখন শুধু ফোন টা হাতে আসার পালা। আইরাত চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেই না বালিশ টা আর একটু উঁচু করবে সাথে সাথেই আব্রাহাম খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে। আইরাত ভয়ে চমকে উঠে এবং দেয় এক চিৎকার। আব্রাহাম শয়তানি হেসে আইরাতকে একটানে তার ওপরে ফেলে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি হাসে। আইরাত পারে না ভয়ে কান্না করে দিতে। সে প্রচুর নড়াচড়া করছে আব্রাহামের ওপর থেকে উঠার জন্য কিন্তু আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের পেট কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।

আব্রাহাম;; ভেবেছো টা কি বলতো জানপাখি!!
আইরাত;;………………
আব্রাহাম;; আহারে পাপার দুলালি, এতোই মনে পরছিলো। আমাকে বলতে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন নেওয়ার মানে কি। নাকি অন্য কাউকে ফোন করে এখান থেকে পালানোর প্লেন হুমমম?!
আইরাত;; (আব্রাহামের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বিরক্তি নিয়ে অন্য পাশে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো)
আব্রাহাম;; (আইরাতের দিকে তাকিয়ে মন ভোলানো হাসি দিয়ে) কোন লাভই নেই। পারবে না পালাতে আর না ই আমার পারমিশন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতে।
আইরাত;; দয়া করে বলে দিন যে আপনার পারমিশন ছাড়া নিজের শ্বাস টুকু নিতে পারবো কিন (রেগে) …….

আব্রাহামের এবার আইরাতের চুলের দিকে চোখ গেলো। আইরাতের চুলগুলো ভেজা, টাওয়ালে জড়ানো। আব্রাহাম আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। আইরাতের চুল থেকে টাওয়াল টা খুলে নিলো। ওমনি ঝর ঝর করে চুলগুলো আইরাতের সামনে এসে পড়লো। এখন যেন এলোমেলো কেশে আইরাতকে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। চুলের ছিটেফোঁটা পানি আইরাতের ঠোঁটে-মুখে লেগে আছে। আব্রাহাম তো ঘায়েল আইরাতকে দেখে। সে আইরাতের গালে হাত রাখলো। আইরাত হাত সরিয়ে দূরে সরে যেতে চাইলে আব্রাহাম আবার জোড়ে টেনে কাছে নিয়ে আসে। আব্রাহাম আইরাত কে এবার তার নিচে ফেলে দেয়। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; কি করছেন টা কি প্লিজ ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; (আব্রাহামের কোনদিকে কোন হুস নেই, সে একাধারে আইরাতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে এবং গালে স্লাইভ করে যাচ্ছে)
আইরাত;; ছাড়তে বলেছি আমায়। ছাড়ুন প্লিজ অসস্তি লাগছে খুব
আব্রাহাম;; তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন বলতো।আমি তো কখনোই চাইনি যে আমার কপালে এমন আনরোমান্টিক একটা বউ জুটুক। দেখো আগেও বলেছি এখন ও বলছি আমাকে এইসব রোমান্টিক মূহুর্তে কখনো জ্বালাতন করবে না বুঝতে পেরেছো।
আইরাত;; কি আমি জ্বালাতন করি আর আপনি কি আপনি যে আমার জীবন টা তেজপাতা করে ছেড়েছেন তার বেলায় কিছুই না।
আব্রাহাম;; আরে বেবি ওয়েট এইটা তো কেবল ট্রেইলার ছিলো ফুল মুভি এখনো বাকি
আইরাত;; আপনি আসলেই একটা আবব….

আইরাত আর কিছুই বলতে পারলো না তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটজোড়া আকড়ে নিলো। আইরাত চোখ বড় বড় করে ফেললো। অনেক মুচড়া মুচড়ি করছে। কিন্তু আব্রাহাম এক হাতে আইরাতের দুহাত ওপরে শক্ত করে ধরে আছে আর একহাতে আইরাতের কোমড়ে স্লাইভ করে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে আইরাতের দম বন্ধ হওয়ার মতো,, কোন ভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। সে শক্তি তার নেই। এদিকে আব্রাহাম পাগল হয়ে গেছে, সে চোখ বন্ধ করে আইরাতকে অনুভব করছে। বেশ কিছুক্ষন সময় পর আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিলো। আইরাত আর এক মূহুর্ত না থেকে জলদি আব্রাহাম কে ধাক্কা দিয়ে তার নিচ থেকে উঠে যায়।

আব্রাহাম;; বলেছি না আমি আমার অধিকার ভালোভাবেই আদায় করে নিয়ে জানি। যদি সকালে ভালোই ভালোই আমাকে আমার Morning Kiss টা দিয়ে দিতে তাহলে এখন আমি এমন কিছু করতাম না। এটা তোমার তেড়ামি করার ফল। আর কথা রইলো ফোনের আমার মনে হয় না তার এখন কোন দরকার আছে।
আইরাত;; আপনার মতো ফালতু মানুষ আমি আমার পুরো জীবনে দেখেছি কিনা সন্দেহ।
আব্রাহাম;; তো এখন দেখে নাও 🥱

আইরাতের এখন মন চাইছে নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়তে। কার সাথে লাগতে গেছে সে। একটা পাগলের সাথে। বাপ রে বাপ ঘাট হয়েছে আইরাতের। চাপার সাথে পেরে ওঠা যায় না। আইরাত আব্রাহামের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত রুম ত্যাগ করে। আব্রাহাম তা দেখে হেসে লুটিপুটি।

আইরাত নিচে নেমে পড়লো। নিচে নেমে দেখে অয়ন কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। অয়ন দেখে আইরাত নিচে নেমে এসেছে তাই সে ফোন কেটে দেয়। অয়ন এগিয়ে যায় আইরাতের কাছে।

অয়ন;; Gd morning sweet ভাবি
আইরাত;; morning.. (হেসে)
অয়ন;; আচ্ছা ভাবি একটা কথা
আইরাত;; হুমম বলো
অয়ন;; আসলে আমার না সবকিছু আনকোমন পছন্দ,, মানে সবার থেকে আলাদা হতে হবে।
আইরাত;; যেমন!!
অয়ন;; মানে সবাই তো ভাবি ভাবি ডাকে তাই না কিন্তু আমি তোমাকে অন্য নামে ডাকবো।

আইরাত অয়নের কথা শুনে হেসে দেয়।

আইরাত;; তুমি যা খুশি ডাকতে পারো
অয়ন;; হুমমম🤔,, বউমনি। বউমনি বলে ডাকবো তোমায়
আইরাত;; আচ্ছা ডেকো😊। কিন্তু একটা কথা
অয়ন;; কি বউমনি?!
আইরাত;; আচ্ছা তোমরা একই ভাই তো মানে তুমি আর তোমার ভাই আসলেই ভাই তো!
অয়ন;; হাহাহাহাহা, হ্যাঁ গো বউমনি আমরা একই ভাই। কিন্তু কেন বলতো!
আইরাত;; না মানে তুমি এতো ভালো, কিন্তু তোমার ভাইটা এমন অদ্ভুত কেন। যাকে বলে ঘাড় তেড়া এবং বজ্জাত ও বটে। এমন কেন?
অয়ন;; হাহাহাহাহাহাহাহা😅
আইরাত;; 😐
অয়ন;; বউমনি দাভাই এমনই আগে থেকেই। কিন্তু এমনিতে অনেক অনেক ভালো। আর যদি ভালো না হতো তাহলে আমার জন্য এতো কিউট একটা বউমনি কোথা থেকে আনতো বলো
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে,, এবার বলো বাপি কোথায়?
অয়ন;; বাপি বাগানে বসে আছে।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা

এই বলে আইরাত রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলো। তা দেখে অয়ন তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো…

অয়ন;; আরে আরে বউমনি কোথায় যাচ্ছো?
আইরাত;; কেন রান্নাঘরে যাচ্ছি
অয়ন;; বউমনি প্লিজ যেও না, দাভাই যদি দেখে যে এতো গুলো কাজের লোক থাকার পরেও তুমি রান্নাঘরে গিয়েছ তাও আবার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তাহলে কি যে করবে আল্লাহ মালুম। সেইদিন তোমাকে রান্না ঘরে পাঠিয়েছে কারণ সেদিন তোমার বাড়িতে প্রথম দিন ছিল কিন্তু প্লিজ বউমনি আজ না।
আইরাত;; আরে এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন রিলেক্স। আমি বাপির জন্য চা বানাতে যাচ্ছি
অয়ন;; আমি লিজা কে বলছি ও বানিয়ে দিক, তুমি এসে পড়ো
আইরাত;; কি একদম না। আমি থাকতে বাপি কেন servant -এর হাতের চা খাবে। আর চা ই তো কিছু হবে না।
অয়ন;; আচ্ছা বানাও।

অয়ন আবার ও ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। আইরাত চলে গেলো রান্নাঘরে। চা বানিয়ে বাগানের দিকে যেতে লাগলো। আইরাত দেখলো যে তার বাপি চেয়ারে বসে বাড়ির মালিকে (যে বাগানের গাছপালা দেখা শোনা করে) বলছে গাছগুলোতে ঠিকঠাক মতো পানি দিতে। আইরাত এগিয়ে গেলো…

আইরাত;; শুভ সকাল বাপি
আবির আহমেদ;; মামনি, শুভ সকাল (আইরাত কে দেখে একগাল হেসে)
আইরাত;; এই নাও তোমার চা
আবির আহমেদ;; আরে মা তুই কষ্ট করে আনতে গেলি কেন,, অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতি
আইরাত;; আচ্ছা তোমরা সবাই এমন করছ কেন বলতো, আমি সেদিন পায়েস খারাপ বানিয়েছি মানলাম কিন্তু সবকিছু খারাপ বানাই না। আর চা তো যথেষ্ট ভালো বানাই।

আবির আহমেদ আইরাতের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন।

আবির আহমেদ;; না রে মা আসলে তা বলিনি। তুই রান্নাঘরে কেন গিয়েছিস বল তো যদি হাত পুড়ে যেত কোথাও তাহলে। আর কে বলেছে যে তুই ভালো রাধতে পারিস না। তুই অনেক ভালো রান্না পারিস।
আইরাত;; আচ্ছা এবার চা খাও

অয়ন ও এসে পড়লো তখন। আইরাত তার বাপি, অয়ন কে চা দিলো।

আবির আহমেদ চা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে থমকে গেলেন। আইরাত ও তার বাপির দিকে তাকালো। (আরে না এবার চা বাজে হয়নি আইরাত শুধু তার বাপির চায়ের কাপে চিনি দেয়নি)

আইরাত;; তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। আমি গত দুইদিন বাসায় ছিলাম না এর জন্য ইচ্ছে মতো মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়েছ। যার ফলে সুগার লেভেন অনেক হাই হয়ে গিয়েছে তোমার। লিজা আমাকে সবই বলেছে। এখন থেকে মিষ্টি জাতীয় জিনিস সব বন্ধ।

আবির আহমেদ অসহায় মুখে আইরাতের দিকে তাকালো।

আবির আহমেদ;; মামনি এতো রীতিমত একটা টর্চার,, চিনি ছাড়া চা খাবো কি করে
আইরাত;; খেতে শিখো,,
অয়ন;; বাপি ও বাপি এই দেখো চিনি চিনি (সুগার কিউব হাতে নিয়ে)
আবির আহমেদ;; চুপ কর বাদর ছেলে
আইরাত-অয়ন;; হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা….

এভাবেই সবাই খুনশুটি শেষে বাসায় চলে এলো। অয়নকে বলা হয়েছে আইরাত-আব্রাহাম কিছুদিনের জন্য বাইরে যাবে তাই বাড়িতে থাকতে এবং অফিসের সব কাজ বাড়িতে বসেই করতে। এতে অবশ্য তারই ভালো হয়েছে। সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করা হলো। সেফদের আইরাত টুকটাক হেল্প ও করে দিলো। Servant রা খাবার টেবিলের ওপর সাজাতে লাগলো। আইরাত চলে গেলো সবাইকে ডাকতে। আবির আহমেদ, অয়ন সবাই টেবিলে এসে বসে পড়লো।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি, আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;; বাপি আসলে উনি তো মনে হয় এখনো ঘুমোচ্ছে ।
আবির আহমেদ;; এখনো ঘুম, আব্রাহাম তো এতো বেলা করে ঘুমোয় না। আচ্ছা মামনি তুমি ওকে ডেকে আনো।
আইরাত;; আব..আচ্ছা বাপি (কিছুটা সংকোচ নিয়ে)

আইরাত ওপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। ভাবলো দরজা ভিতরে থেকে বন্ধ করা তাই নক করলো কিন্তু তাতে দরজা একটু ফাকা হয়ে গেলো। দরজা তার মানে খোলা। আইরাত ভিতরে গেলো। কিন্তু দেখলো বিছানা ফাকা, করিডোরেও নেই। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে আইরাত পিছনে তাকালো। দেখলো যে আব্রাহাম সাদা একটা টাওয়াল পেচিয়ে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলো। জিম করা সাদা বডিতে পানির বিন্দুগুলো যেন মুক্তোর মতো লেগে আছে। আইরাত থ মেরে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম এগিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো। বলতে গেলে আইরাতকে এক প্রকার ইগনোর ই করলো। আইরাত ঝট করে তার মাথা নামিয়ে ফেললো। আব্রাহাম আইনার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। আইরাতের uneasy ফিল হচ্ছে দেখে আব্রাহাম বলল..

আব্রাহাম;; কিছু কি বলবে
আইরাত;; না মানে আসলে
আব্রাহাম;; না মানে আসলে এইসব বাদ দাও বলো কি বলবে
আইরাত;; খাবার রেডি আপনি নিচে চলে আসুন

এই কথা বলে আইরাত আর এক সেকেন্ড সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলে, আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে আইরাত কে টেনে নিয়ে আইনার সামনে দাঁড় করিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; এতো রাগ!?
আইরাত;;……………. (আইরাত রাগে লজ্জায় কিছু আর বলতে পারছে না)
আব্রাহাম;; বেবি এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন, গাল দুটো তো একদম টমেটো হয়ে গেছে। মন চাইছে এখনই খেয়ে ফেলি

আইরাত চট করে মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম লোভাতুর দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। আব্রাহাম পিছন থেকে আইরাতের গালের সাথে তার গাল লাগিয়ে দেয়। আইরাত সিউরে উঠে এবং চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম এক মনে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে এবং মুচকি হাসছে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কি আছে এমন তোমার মাঝে যা এতো করে আমাকে তোমার কাছে টানে। ভালোবাসি জানপাখি ভালোবাসি।

আইরাত শুধু চুপ করে কথা গুলো শুনছে। আব্রাহামের কথা গুলো আইরাতের মনে গিয়ে বিধছে। কিন্তু পরক্ষনেই তার ওপর করা অত্যাচার গুলো, তার আম্মু ভাই কে কিডন্যাপ করে আনা, তার পাপাকে এতো হয়রানি করানো সবই যেন তার চোখের দেয়ালে ভেসে ওঠে। সাথে সাথে আইরাত চোখ মেলে তাকায়। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আবার ও বাধা দেয়। আইরাতের গালে কিস দিয়ে দেয় এবং তার মাথা ঝাড়ি দেয় যার ফলে চুলের পানি গুলো সম্পূর্ণ আইরাতের চোখে মুখে এসে পড়ে। আইরাত অনেক রেগে যায়। এক টানে আব্রাহামের থেকে দূরে চলে যায়।

আইরাত;; খাওয়ার হলে নিচে চলে আসুন নয়তো ঘরেই বসে থাকেন (রেগে বোম হয়ে)

আইরাত এই বলে হনহন করে ঘর থেকে চলে যায়। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম হেসে রেডি হতে থাকে। আইরাত এসে সোজা খাবার টেবিলে বসে পড়ে।

অয়ন;; দাভাই কোথায় বউমনি?
আইরাত;; আসছে..

কিছুসময় পর আব্রাহাম চলে এলো। আইরাত তা দেখে একটু তাকিয়েই ছিলো। ব্লেক পেন্ট, সাদা শার্টে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে। আইরাত সোজা হয়ে বসে পড়লো। আব্রাহাম এসে আইরাতের পাশে বসে পড়লো।

আব্রাহাম;; Good morning বাপি, অয়ন।
আবির আহমেদ;; morning, morning.
অয়ন;; তোরা না বাইরে যাবি
আব্রাহাম;; আজ না কাল
অয়ন;; ওহ আচ্ছা।

সবাই যার যার মতো করে খাওয়া শুরু করলো কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহাম ই। সে টেবিলের নিচে পা দিয়ে আইরাতের পা চেপে ধরলো। আইরাতের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সে চোখ রাংিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম এমন একটা ভাব ধরলো যেন কিছুই হয় নি। সে তার আপন মনে খেতে লাগলো। আইরাত রাগে না পারছে খেতে আর না পারছে সবার সামনে কিছু বলতে।

আইরাত;; কি করছেন টা কি (ফিসফিস করে)
আব্রাহাম;; কি আবার করছি দেখছ না, খাচ্ছি
আইরাত;; হায় আল্লাহ তুইলা নেও আমারে, শালা খবিশের বাচ্চা কালা বান্দর (মনে মনে)
আমি তা বলি নি আপনি নিচে কি করছেন, পা ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; না
আইরাত;; কি
আব্রাহাম;; না বলেছি…
আইরাত;; দেখুন প্লিজ ছাড়ুন সবাই আছে এখানে, কেউ দেখে ফেলবে তারপর ইজ্জতের কাবাব। প্লিজ ছাড়ুন
আব্রাহাম;; ওকে যাও ছাড়লাম (আইরাতের পা সত্যি ছেড়ে দিয়ে)
আইরাত;; যাক বাবা বাচঁলাম কিন্তু এই হনুমান টা এতো ভালো হলো কবে থেকে (মনে মনে)

আব্রাহাম আবার সাথে সাথেই তার পা দিয়ে আইরাতের পায়ে জোড়ে চাপ দিলো। আইরাতের কাশি ওঠে গেলো যাকে বলে একদম নাকে মুখে হয়ে গেলো।

অয়ন;; বউমনি..
আবির আহমেদ;; আরে মা আস্তে, আব্রাহাম পানি দে পানি দে
অয়ন;; বউমনি ধীরে ধীরে খাবে তো

আইরাতের একাধারে কাশি উঠেই যাচ্ছে। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে আইরাতের সামনে পানি ধরলো। আইরাত পানি খেতে লাগলো।

আবির আহমেদ;; হয়েছে কি এভাবে কাশি উঠলো কেন,, খাবারে ঝাল বেশি হয়েছে নাকি
আব্রাহাম;; না বাপি আসলে মশা, ওই তো মশা কামড়িয়েছে তাই হুট করেই কাশি এসে পরেছে।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে পানি খাচ্ছে। মানে মানুষ কি পরিমাণ মিথ্যা কথা বলতে পারে তাই ভাবছে সে। আইরাত ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেলো। সবাই যার যার খাওয়া ও খেয়ে উঠলো।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি
আইরাত;; জি বাপি
আবির আহমেদ;; মামনি তোকে আমার কিছু দেওয়ার ছিলো, একটু আমার ঘরে আসিস
আইরাত;; ঠিকআছে বাপি

লিজা এবং বাকি সার্ভেন্টরা টেবিল পরিষ্কার করতে লাগলো। আব্রাহাম-অয়ন খেয়ে উঠে একসাথে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো। আইরাত তার বাপির ঔষধগুলো নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো।

আইরাত;; বাপি আসবো
আবির আহমেদ;; আয় মা ভিতরে আয়।

আইরাত গিয়ে দেখে তার বাপি তার সামনে একটা বাক্স নিয়ে বসে আছে।

আইরাত;; কি করছ তুমি বাপি
আবির আহমেদ;; কিছু না এইতো এমনি বসে ছিলাম
আইরাত;; আচ্ছা এখন এই ঔষধগুলো তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও দেখি।

আবির আহমেদ তার ঔষধ গুলো খেয়ে নিলেন।

আবির আহমেদ;; মামনি, আসলে আমি তোকে কিছু দিতাম। তুই নিবি তো?
আইরাত;; এমন করে কেন বলছ বাপি। বাবা মেয়েকে কিছু দিলে মেয়ে কি তা নিতে অস্বীকার করে নাকি। অবশ্যই নিবো

আবির আহমেদ বাক্স টি খুললেন এবং তা থেকে একজোড়া White Platinum এর সুন্দর কাজ করা চুড়ি বের করলেন।

আবির আহমেদ;; মামনি এই চুড়ি গুলো আমি তোর শাশুড়ী মাকে বানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে খুব যত্নে খুলে রেখেছিলো তার ছেলের বউকে দিবে বলে। সে তো আর নেই আমাকে রেখে কবেই চলে গিয়েছে তাই আজ আমি দিচ্ছি কিন্তু আমার ছেলের বউকে নয় বরং আমার মেয়েকে। কিরে মা নিবি তো!?

আইরাতের চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু মুখে হাসি ফুটছে। সে কখনো ভাবে নি যে তার পাপা আম্মু ছাড়াও সে কোন দিন এতো ভালো একটা ফ্যামিলি পাবে। আইরাত আর দেরি না করে সাথে সাথে তার বাপির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো

আইরাত;; বাপি পড়িয়ে দিবে?

আবির আহমেদ খুব খুশি হলেন। চোখের কোণের পানি মুছে তিনি আইরাতের হাতে চুড়িগুলো পড়িয়ে দিলেন।

আবির আহমেদ;; অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোকে। তোর পছন্দ হয়েছে তো?
আইরাত;; ভীষণ, ভীষণ পছন্দ হয়েছে বাপি।

আইরাত হাসিমুখে তার বাপি কে জড়িয়ে ধরলো তার বাপি ও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এভাবেই সেইদিন গেলো। দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত।











🤎রাত“““““

সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম-আইরাতের মাঝে কোন কথা নেই। আইরাত নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। আব্রাহাম বিছানাতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর মাঝেমধ্যে আড় চোখে আইরাত কে দেখে যাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামকে তোয়াক্কা না করে সোজা বিছানাতে এসে চাদর আর একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেলো। আব্রাহাম এমন ভাব করলো যেন সে কিছুই দেখছে না। আইরাত আর একটা কথা না বলে সোফায় এসে শুয়ে পড়লো। আব্রাহাম এবার সত্যি রেগে গেলো…

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এটা
আইরাত;;…………..
আব্রাহাম;; I am talking to you, stupid…
আইরাত;; আজব তো, কি হচ্ছে মানে কি দেখছেন না কি হচ্ছে ঘুমোচ্ছি আমি
আব্রাহাম;; অন্ধ তো নয় আমি যে তুমি ঘুমাচ্ছো আর আমি দেখছি না। কিন্তু সোফায় কি করো তুমি
আইরাত;; আমি আপনার সাথে বিছানাতে ঘুমাবো না
আব্রাহাম;; সাহস টা আজকাল একটু বেশিই বেড়ে গেছে দেখছি,, কিছু বলছি না তার মানে এই না যে পার পেয়ে গেছো..চুপচাপ এখানে এসে শুয়ে পড়ো
আইরাত;; যাবো না মানে যাবো না
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন এসো না,, আমি ও দেখছি কিভাবে তুমি সোফাতে ঘুমাও।
আইরাত;; দেখে নিয়েন।

আইরাত মাত্রই চোখ বন্ধ করেছে ঘুমানোর জন্য কিন্তু কোথা থেকে এক বালতি পানি আইরাতের ওপর ঝপঝপ করে পরে গেলো। আইরাত চিল্লিয়ে উঠে পড়লো। তাকিয়ে দেখে বালতি নিচে রেখে আব্রাহাম হাত ভাজ করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত তো রেগে ফেটে যাচ্ছে।

আইরাত;; আপনি কি মাথা মোটা না পাগল, এই শীতের রাতে কেউ এভাবে কারো ওপর পানি ফেলে😡
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো আমারও তো সেই একই কথা যে এই শীতের রাতে বউ ছাড়া একা কিভাবে থাকবো।
আইরাত;; তাই বলে আপনি এভাবে পানি ফেলে দিবেন আজব,, কি ধরনের ফাজলামি এটা
আব্রাহাম;; কোন ফাজলামি না,, তোমাকে তো আমার সাথে বিছানাতেই ঘুমোতে হবে তা তুমি যা ই করো।আর কথায় আছে না “ঘি সোজা আঙুলে না উঠলে, আংুল বাকা করতে হয়” তাই আমিও একটু বাকা করে দেখলাম। And it really works… এবার তাড়াতাড়ি করে ওঠে পড়ো আমি Servant কে বলছি সব ক্লিন করে দিতে আর তুমি change করে শুতে আসো।

আইরাত ধীরে ধীরে ওঠে Changing room এ চলে গেলো। শীতে কাপতে কাপতে তার অবস্থা নাজেহাল সাথে হাচিঁ তো আছেই। আব্রাহাম sarvant দের ডেকে রুম ক্লিন করে নিলো। আইরাত ভেজা চুল মুছতে মুছতে ঘরে এলো। এসে দেখে আব্রাহাম আবার ও ল্যাপটপে মুখ গুজে রয়েছে। এতে আইরাতের রাগ দিগুণ বেড়ে গেলো।

আইরাত;; আমার যদি ঠান্ডা বা জ্বর এসেছে তাহলে আপনাকে আমি কি যে করবো আমি নিজেও জানি না (হাচিঁ দিতে দিতে)
আব্রাহাম;; আরে গাধা মেয়ে জানোই তো না যে আমাকে কি করবে তাহলে করবে কিভাবে, আগে জানো
আইরাত;; অসহ্যকর

আব্রাহাম এবার ল্যাপটপ তার পাশে রেখে উঠে গিয়ে আইরাতের কাছে গেলো। আইরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটানে কোলে তুলে নিলো। আইরাত বোকা বলে গেলো।

আইরাত;; আপনি..
আব্রাহাম;; একদম চুপ।

আইরাত বুঝলো যে এর সাথে কথা বলে কোন লাভই নেই তাই চুপ হয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে বিছানার ওপর শুইয়ে দিলো। তারপর নিজেও এসে আইরাতের গলায় মুখ গুজে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

আইরাত ও তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো…..।










💙চলবে~~~~

Gangstar In Love Part-20+21

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 20

🧡🍂
..
..
..
..
..

আইরাত-আব্রাহাম নিচে নেমে এলো। আবির আহমেদ তাদের দেখে বলল…

আবির আহমেদ;; কিরে তোরা উঠে পরেছিস।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বাপি।
আবির আহমেদ;; হুমম ভালো করেছিস, এখন তোরা কি খাবি তাড়াতাড়ি বল তো দেখি
আব্রাহাম;; না বাপি,, আজকে আইরাত রান্না করবে

আইরাত চুপ করে ছিলো কিন্তু আব্রাহাম এর কথা শুনে তার ঘাম ছুটতে লাগলো। কেননা আইরাত কখনো রান্না করা তো দূর কোনদিন রান্নাঘরেই পা রাখেনি, তো এখন রান্না করবে কি করে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো আব্রাহামের দিকে তাকালো।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই জান। রান্না তোমাকে করতেই হবে । এই বাড়ির একটা নিয়ম আছে তা হলো বিয়ের পরের দিন নতুন বউ এর হাতে মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে হবে।
আবির আহমেদ;; কিন্তু আব্রাহাম আইরাত কিভ….
আব্রাহাম;; না বাবা ও পারে কি পারে না তা পরের আলাপ। যে করেই হোক ওকেই আজ রান্না করতে হবে।
আইরাত;; কি কিন্তু আমি তেমন পারি না,, খাওয়ার ও যোগ্য হবে কিনা জানি না
আব্রাহাম;; যেমনই হোক আমরা আমি খাবো আর তুমি রাধবে। Now go fast…

তখনই অয়ন হাটতে হাটতে ড্রোইং রুমে এলো।

অয়ন;; Good morning everyone… কি হয়েছে রে দাভাই,, সবার মুখ এমন হয়ে আছে কেন। Specially আমার কিউট ভাবির।
আব্রাহাম;; আজ তোর ভাবি আমাদের রান্না করে খাওয়াবে
অয়ন;; ওয়াও ভাবি তুমি রান্না করতে জানো,, তাহলে তো ভালোই হবে। ভাবির হাতের রান্না বলে কথা

আইরাত কান্না কান্না মুখ করে অয়নের দিকে তাকালো। বেচারি পারছে না আব্রাহাম এর মাথা নেড়ো করে দিতে।

আইরাত;; কুত্তা,বিলাই,গরু,হারামজাদা,বান্দর, জীবন টা আমার তেজপাতা করে ছারলো। বলছি রান্না পারি না তবুও সবার সামনে আমার মান-সম্মান এর ফালুদা করার জন্য রান্না করতে বলছে আমাকে। দেখে নিবো তোকে গন্ডার (মনে মনে)

আব্রাহাম;; কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন আরে যাও।
আইরাত;; যা যাযাচ্ছি।
আব্রাহাম;; জেসিয়া(কাজের মেয়ে) তোমার ম্যাম কে রান্নাঘর টা দেখিয়ে দাও তো
জেসিয়া;; জি স্যার

জেসিয়া আইরাতকে রান্না ঘর দেখিয়ে দিলো। আইরাতের তো রান্নাঘরে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম। কি করবে কি করবে না কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে। কে কি খেতে ভালোবাসে তাও সে জানে না।

আইরাত;; আব..জেসিয়া
জেসিয়া;; জি ম্যাম
আইরাত;; তোমার স্যার কি খেতে বেশি পছন্দ করেন?
জেসিয়া;; ম্যাম স্যার মিষ্টি জাতীয় এর মধ্যে পায়েস খেতে বেশি ভালোবাসেন।
আইরাত;; ওহহ পায়েস।

আইরাত ভাবতে লাগলো পায়েস তো সে ঠিক ভাবে রান্না করতে পারে না। আগে মা কে দেখতো পায়েস বানাতে তখন একটু আকটু দেখেছিল। কিন্তু কিভাবে বানায় তা তো সম্পূর্ণ সে জানে না। যতটুকু যানে তত টুকুই বানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত লেগে পরলো পায়েশ বানাতে। আর ভাবলো জেসিয়ার কাছ থেকে একটু হেল্প নিবে। আইরাত যেই তার পাশে তাকালো দেখলো আব্রাহাম তার পাশে দুহাত ভাজ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।

আব্রাহাম;; আরে cool baby আমিই তো তোমার জামাই। এতে এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
আইরাত;; এভাবে হুট হাট করে সামনে এসে পরলে তো ভয় পাবোই নাকি।
আব্রাহাম;; Anyway listen,, কারো কাছ থেকে হেল্প নেয়ার ট্রাই ও করবে না তুমি নিজে বানাবে।
আইরাত;; 😒😒

আব্রাহাম রান্না ঘর থেকে সরে এলো। আইরাতের মাথায় কিছুই ধরছে না কি থেকে কি করবে।। তবুও আল্লাহ আল্লাহ করে রান্না করলো। প্রায় ১ ঘন্টা পর আইরাতের পায়েস রেডি হয়ে গেলো। কিন্তু আইরাতের মুখে ১২ টা বেজে রয়েছে। সামনে পায়েস নিয়ে মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সময়ই জেসিয়া দৌড়ে এলো।

জেসিয়া;; ম্যাম, কি হয়েছে
আইরাত;; কি আর হবে
জেসিয়া;; না মানে এমন পুড়ার মতো গন্ধ বের হয়েছে কি

আইরাত অসহায় দৃষ্টিতে জেসিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। জেসিয়া বুঝতে পারলো যে এই গন্ধ আর কারো না বরং আইরাতের সুস্বাদু পায়েসের । জেসিয়া ও কিছু না বলে হাবলাকান্তের মতো দাড়িয়ে রইলো।

আইরাত;; কি যে বানালাম তা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানেন। আদৌ খাওয়া যাবে কিনা।

আইরাত ভয়ে ভয়ে ট্রে তে করে তিন বাটি পায়েস নিয়ে গেলো ড্রোইং রুমে।

আইরাত;; আল্লাহ প্লিজ প্লিজ যেন খাওয়ার মতো হয়। প্লিজ যেন ভালো হয়।

আইরাত ধীরে ধীরে ড্রোইং রুমে গেলো।

অয়ন;; আরে এইতো ভাবি এসে পরেছে, দাও দাও ভাবি খেতে দাও দেখি

আইরাত সাবধানে পায়েসের ট্রে টা ডাইনিং টেবিলের ওপরে রাখলো। আইরাত প্রথমে আবির আহমেদ মানে তার বাপির এর দিকে একটা পায়েসের বাটি এগিয়ে দিল। তার পর অয়নের দিকে। শেষে আব্রাহাম কে দিল। আইরাত তার মুখে জোড় পূর্বক হাসি টেনে সবার উদ্দেশ্যে বলল…

আইরাত;; নিন খান…
আবির আহমেদ;; আমার মামনি রান্না করেছে বলে কথা খেতে তো হবেই

এই বলে আবির আহমেদ পরম আবেশে পায়েস মুখে দিলেন। আইরাত চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহ আল্লাহ করছে। কিন্তু হলো তার উল্টো টা। আবির আহমেদ পায়েস মুখে পুরেই থ মেরে বসে রইলেন। অয়নের ও সেই একই অবস্থা। আবির আহমেদ কোনরকমে মুখের পায়েস টুকু খেয়ে নিলেন এবং আইরাতের উদ্দেশ্যে বললেন…

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি মানে বলছিলাম কি যে আমার না আমার আসলে ইদানীং ডাইবেটিক্স টা একটু বেশি বেড়ে গেছে, আর পায়েস তো মিষ্টান্ন খাবার তো আমি না মা আর পারবো না। আমি এবার উঠি কেমন।

এই বলে আবির আহমেদ এক প্রকার দৌড়েই ওপরে নিজের রুমে চলে গেলেন। আইরাত বোকার মতো তার বাপির দিকে তাকিয়ে রইলো। অয়নের দিকে তাকিয়ে দেখলো অয়ন মুখে পায়েস নিয়ে মূর্তির মতো বসে আছে।

অয়ন;; ভাভাভাবি আমার না অফিসে যেতে হবে বুঝলে আমি যাই হে আমার না পেপেট ভরে গেছে।

এই বলে অয়নও একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো। যাওয়ার আগে ফাটা চোখে একবার আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে গেলো। কেননা আব্রাহাম এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয় নি। সে তার মনের সুখে একাধারে খেয়েই যাচ্ছে।

আইরাত;; আচ্ছা কি হলো আমি না কিছুই বুঝতে পারলাম না
আব্রাহাম;; কি হলো
আইরাত;; বাপি আর অয়ন এভাবে চলে গেলো কেন। আমি তো জানি যে পায়েস অনেক বাজে হয়েছে খেতে (মাথা নিচু করে মন খারাপ করে)
আব্রাহাম;; চুপপপপ,, বেশি বুঝ কেন এতো কে বলেছে যে পায়েস খেতে বাজে হয়েছে। In fact আমি আমার পুরো জীবনে এমন পায়েস খাই নি। যদি বাজেই হতো তাহলে আমি খাচ্ছি কি করে বলত
আইরাত;; তাই, তাহলে আমিও একটু খেয়ে দেখি তো
আব্রাহাম;; এই না না, একদম এগুলোতে হাত দিবে না। এইসব টাই আমার। আমি খাবো।
আইরাত;; এখানে এক বোল পায়েস, আপনি এই পুরোটা খেতে পারবেন (অবাক হয়ে)
আব্রাহাম;; অবশ্যই পারবো।
আইরাত;; না আমি খেয়ে দেখবোই কেমন হয়েছে
আব্রাহাম;; না বলেছি

কিন্তু কে শুনে কার কথা। আইরাত জোর করে এক চামোচ পায়েস তার মুখে পুরে নিলো। পায়েস খেয়েই আইরাতের চোখ বেড়িয়ে আসার মতো অবস্থা। আইরাত দৌড়ে বেছিং এ চলে গেলো এবং কাশতে লাগলো। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে আইরাতের পিঠে এবং মাথায় হাতিয়ে দিতে লাগলো। আইরাতের কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ। আইরাত পরে উঠে গিয়ে টেবিলে বসল

আব্রাহাম হেসে আইরাতের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। আইরাত পানি খেতে খেতে আব্রাহাম কে বলে উঠলো…

আইরাত;; এইটা খাদ্য না কুখাদ্য। আপনি কি বলেন তো!!
আব্রাহাম;; তোমার জামাই। (চোখ টিপ দিয়ে)
আইরাত;; আরে মানে এই কুখাদ্য আপনি কিভাবে খাচ্ছেন। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। প্লিজ আপনি রাখেন তো নইতো পরে শরীর খারাপ হবে।
আব্রাহাম;; এই খবরদার আমার বউ এর রান্না কে কুখাদ্য বলবে না। নয়তো মুখ সেলায় করে দিব বলে দিচ্ছি। আর আমি খেতে পারলে তোমার সমস্যা টা কোথায়। চুপ করো আমাকে খেতে দাও।
আইরাত;; 🤐

আইরাত টেবিলে বসে শুধু অবাক হয়ে আব্রাহাম কে দেখে যাচ্ছে। মানে এই কুখাদ্য উনার হজম হচ্ছে কি করে। আইরাত কে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম পুরো এক বোল পায়েস খেয়ে উঠলো।

আব্রাহাম;; Honestly speaking, আমি আমার পুরো লাইফে এমন ফাটাফাটি পায়েস কখনোই খাইনি। It was just amazing

আইরাতের মাথা ঘুরাচ্ছে আব্রাহামের এইরকম কথা শুনে।
আইরাত আর কিছু না বলে সোজা ওপরে চলে গেলো। আইরাত জানালার কাছে বসে আছে মন মরা হয়ে। এতো টা দিন কেটে গেল কিন্তু পাপা মা আয়ুশের সাথে তার একদম দেখা নেই। চোখের কোণে পানি জোড় হতে লাগলো। আব্রাহাম রুমে এলো। রুমে গিয়ে দেখল আইরাত জানালার কাছে বসে আছে। রুমে কারো উপস্তিতি টের পেয়ে আইরাত পিছন ঘুরে তাকালো। দেখলো আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কোন কথা না বলে আইনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,, আইনার সামনে গিয়ে নিজের চুল আচরাতে লাগলো। আব্রাহাম এক ভ্রু উঁচু করে আইরাতের দিকে তাকালো। মানে আইরাত এমন একটা ভাব করলো যেন সে আব্রাহাম কে দেখেই নি। আব্রাহাম আইরাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আইরাতের কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে আব্রাহাম তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আইরাতের এই ছোয়া যেন অসহ্যকর লাগছে। আব্রাহাম আইরাতের কাধের চুলগুলো সরিয়ে কাধে তার নাক ঘসতে লাগলো। আইরাত হাতে তার ওরনা খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আব্রাহাম;; জানপাখি তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও।
আইরাত;;………………………….
আব্রাহাম;; আমরা বাইরে বের হবো
আইরাত;; ক ক কোথায় যাবো
আব্রাহাম;; দুচোখ যেদিকে যায়
আইরাত;; আমি যাবো না
আব্রাহাম;; কি বললে

আইরাত মুখ তুলে আইনাতে তাকালো। আইনাতে আব্রাহামকে দেখে আইরাতের প্রান পাখি উড়ে গেলো। হিংস্র বাঘের মতো আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; কি বললে জানপাখি আবার বল
আইরাত;; না না না মানে আআমি যাবো তো যাযাবো।
আব্রাহাম;; That’s like a good girl… এখন জলদি তৈরি হয়ে নাও। আর শুনো এইসব জামা কাপড় পরা চলবে না
আইরাত;; তাহলে পরবো টা কি?
আব্রাহাম;; ওয়েট
এই বলে আব্রাহাম তার কাবার্ট থেকে একটা কালো কালারের ওপর সাদা স্টোনের কাজ করা শাড়ি বের করে দিলো।
আব্রাহাম;; তুমি এটা পরবে।
আইরাত;; কিইইইইইই, শাড়ি
আব্রাহাম;; কানের মাথা খেয়েছো নাকি
আইরাত;; না মানে আমি তো কখনো শাড়ি পড়িনি
আব্রাহাম;; Oh i see তাহলে আমার কাজ তো আরো সহজ হয়ে গেলো।
আইরাত;; মামামানে
আব্রাহাম;; মানে, শাড়ি তো তুমি পরতে পারো না। তাই আমি নিজে তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। (আইরাতের কোমড় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; কিহহহহ হায় আল্লাহ না না থাক আমি নিজেই পরে নিব (আব্রাহামের কাছ থেকে ছুটার চেষ্টা করে)
আব্রাহাম;; R u sure?!
আইরাত;; হুম হুম আমি শিওর
আব্রাহাম;; Ok then get ready within 10 mins
আইরাত;; আরে এতো কম সময়ে আমি শাড়ি পরবো কি করে
আব্রাহাম;; তা তো আমি জানি না কিভাবে কিন্তু তোমাকে ১০মি. এর ভিতরেই রেডি হতে হবে।
আইরাত;; কিন্ত আব…

আইরাত আর কিছু বলার আগেই আব্রাহাম হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে পরলো।

আইরাত;; খাটাস কোথাকার, হাহ্

আইরাত আব্রাহাম কে ১০১ টা গালি দিয়ে শাড়ি পরতে শুরু করলো। কিন্তু আইরাতের যে এই যনমে আর শাড়ি পরে উঠা হবে না তা আইরাত বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। আইরাত একবার শাড়ি পরছে পরে দেখা
যাচ্ছে যে আঁচল ছোট হয়েছে,, আবার কুচি খুলে যাচ্ছে। মানে একদম নাজেহাল অবস্থা।

আইরাত;; বাপ রে বাপ শাড়ি ও কি মানুষ পরে নাকি। বিরক্তিকর একটা জিনিস। শাড়ি তো কোন ভাবেই সামলাতে পারছি না এখন কি করবো।

অন্যদিকে ১০ মি. এর জায়গায় ২০মি. হয়ে গেছে কিন্তু আইরাতের বের হওয়ার কোন নাম ই নেই। আব্রাহামের রাগে মাথা ফাটার মতো অবস্থা। সে শুধু রাগে ফুসছে আর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে আর না দাঁড়িয়ে থেকে আব্রাহাম তার রুমে চলে গেলো। রুমের গিয়ে ঠাসস করে দরজা খুলে দিলো। গিয়ে দেখলো আইরাত নিচে কোন রকম শাড়ি পেচিয়ে ওপরের পুরো অংশ হাতে নিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। আব্রাহামের আইরাত কে দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো। আইরাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আব্রাহাম;; আগেই বলেছিলাম যে শাড়ি পরতে পারবে না আমি পরিয়ে দিই কিন্তু না কথা শুনোনি। এখন দেখ তো নিজের কি হাল করে রেখছ।
আইরাত;; 😔😔
আব্রাহাম;; Don’t be sad baby girl… তোমার এই জামাই আছে কি করার জন্য হুমম। এদিকে এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।

আইরাত আর কোন কথা না বলে সোজা দাঁড়িয়ে রইলো। আব্রাহাম খুব যত্ন করে আইরাত কে শাড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো। মাঝে মাঝে শয়তানি করে আইরাতের পেটে, পিঠে কোমড়ে ছুয়ে দিচ্ছে। আর আইরাত তা বিরক্ত নিয়ে সহ্য করে যাচ্ছে।

৭-৮ মি. পর আব্রাহাম আইরাত কে শাড়ি পরিয়ে দিল।

আব্রাহাম;; Here you go baby girl..

আইরাত আইনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। সত্যি অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। আব্রাহাম আইরাত থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ালো।

আইরাত;; আপনি এতো সুন্দর শাড়ি পরানো কোথা থেকে শিখেছেন?
আব্রাহাম;; এই ধরো, girlfriend দের পড়িয়ে দিতে দিতে
আইরাত;; মানে কি
আব্রাহাম;; মানে আমি মাঝে মাঝে আমার girlfriends দের শাড়ি পরিয়ে দিতাম তো ওদের পরিয়ে দিতে দিতেই শিখে গেছি।
আইরাত;; ভালো করেছেন তাহলে ওদের কেই পড়িয়ে দিতেন আমাকে কেন দিলেন।
এই বলে আইরাত আবার আইনার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল বাধতে লাগলো। কিন্তু আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের চুলগুলো খুলে দিলো। এতে আইরাত রেগে গেলো।

আইরাত;; এটা কি হলো
আব্রাহাম;; আমার সামনে কখনোই নিজের চুল বাধবে না ঠিক আছে। সবসময় খুলে রাখবে
আইরাত;; আমার নিজের ওপর তো আপনার অধিকার ফেলেই দিয়েছেন। এখন কি আমার ইচ্ছের ওপর ও আপনার রাজত্ব চলবে। আমার ইচ্ছের কি কোন মূল্য নেই।

আইরাত এই কথা বলেই দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। আর আব্রাহাম ওকে দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। আইরাত সোজা তার বাপির ঘরে চলে গেলো।

আইরাত;; বাপি আসবো
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ রে মা আয় আয়
আইরাত;; এই নাও
আবির আহমেদ;; কি
আইরাত;; তোমার ঔষধ। তুমি তো নিজে মনে করে খাবে না তাই আমাকেই নিয়ে আসতে হলো।
আবির আহমেদ;; হাহাহা,, আমার তোর হাতে না খেলে সবকিছুই কেমন যেন পানসে পানসে লাগে রে
আইরাত;; তাহলে আজ সকালে আমার হাতের পায়েস খেলে না কেন?

আবির আহমেদ এবং আইরাত উভয়ই জোড়ে হেসে দিলো।

আবির আহমেদ;; আচ্ছা মামনি কোথাও যাচ্ছিস তোরা?
আব্রাহাম;; Yeap বাপি (ঘরে প্রবেশ করে)
আবির আহমেদ;; ওহ ভালো করেছিস। যা আইরাত কে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয় এতে ভালো লাগবে তোদের দুজনের ই। আইরাত মা তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আইরাত;; 😊
আব্রাহাম;; হুমম বাপি তাহলে তুমি থাকো। আমরা বের হই কেমন। আর নিজের খেয়াল রেখো।

আব্রাহাম-আইরাত তাদের বাপির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো। তারা গাড়িতে উঠে পরলো। কিন্তু আইরাত করলো উল্টো কাজ। সে সোজা গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। এতে আব্রাহামের মেজাজ পুরো চটকে গেলো।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে তোমাকে কি আমার ড্রাইভার মনে হয় নাকি?
আইরাত;; মানে
আব্রাহাম;; মানে তুমি পিছনে গিয়ে বসেছ কেন। সামনে এসে বসো চুপচাপ।
আইরাত;; না আমি সামনে বসবো না, এখানেই আমি ঠিক আছি

আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। পিছনের গাড়ির দরজা খুলে আইরাতকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আইরাতকে কোলে তুলে নিলো। তারপর আইরাত কে সামনে নিয়ে এসে সোজা সিটে বসিয়ে দিল।

আইরাত;; আম..
আব্রাহাম;; হোপ, Not a single word ok.. নইতো এখানেই কিছু একটা করে বসবো।

আইরাত আর কিছুই না বলে ভিজে বেড়ালের মতো করে বসে পড়লো। কারণ সে জানে যে আব্রাহামের বিশ্বাস নেই যখন তখন যা ইচ্ছে করে দিতে পারে।
















আব্রাহাম এক মনে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে বেস্ত। বাতাসে তার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে। আইরাত তা সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে নেশা লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। তখন আইরাত খেয়াল করল যে এই রাস্তা টা তার খুবই চেনা। সে আব্রাহামের দিকে তাকালো আব্রাহাম সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করাতে বেস্ত।

বেশ কিছুক্ষন ড্রাইভ করার পর আব্রাহাম এক বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। আইরাত অবাক চোখে আব্রাহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা যে বাড়ির সামনে আব্রাহাম তার গাড়ি থামিয়েছে সে বাড়ি আর কারোর না বরং আইরাতের নিজের বাবার বাড়ি।

আইরাত;; এটা তো পাপার বাড়ি। আব্রাহাম আমাকে এখানে নিয়ে আসলো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আর আব্রাহাম আমার পাপার বাড়িই বা কিভাবে চিনলো (মনে মনে)

আইরাত তার ভাবনার জগৎ এ ডুবে ছিলো কিন্তু আব্রাহামের ডাকে তার হুশ ফিসলো।

আব্রাহাম;; Come baby girl (আইরাতের পাশের দরজা খুলে আইরাতের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে)

আইরাত আব্রাহামের হাতে হাত না দিয়ে কোন কথা না বলে সোজা গাড়ি তগেকে নেমে পরলো।

আব্রাহাম;; জানপাখি, তোমার পাপার বাড়ি। আসলে আমি তোমাকে Surprise দিতে চেয়েছিলাম এখানে এনে। আর দেখো দিয়েও দিলাম। আমি আজকে তোমাকে তোমার পাপার বাড়িতে রেখে যেতে এসেছি। কিন্তু কাল সকালেই আমি এসে পরবো তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে।

আব্রাহামের কথা বলতে দেরি কিন্তু আইরাতের দৌড় দিয়ে তার পাপার বাড়িতে যেতে দেরি না। আইরাত শুধু আব্রাহামের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
আব্রাহাম তার পেন্টের পকেটে দুহাত গুজে দিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের কোণে ঝুলছে তার বাকা হাসি।।।।
..
..
..
..
..
..
🌼💛চলবে~~~~~
.
.
.
.
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 21

💜💐
..
..
..
..
..
আব্রাহাম গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে একাধারে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে তার গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

আইরাত এক দৌড়ে তার বাড়ির সামনে চলে গেলো। আইরাত অস্থির হয়ে সদর দরজাতে ধাক্কাতে শুরু করলো। দরজাতে ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে বাড়ির কাজের মেয়ে লিজা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে আইরাত কে দেখে লিজা অবাক হয়ে গেলো।

লিজা;; আরে আইরাত আফা আপনে, এতোদিন পর কেমনে আইলেন এনে

আইরাত লিজার কথার উত্তর না দিলে দৌড়ে ড্রোইং রুমে চলে এলো। চিৎকার করে আইরাত তার পাপা মা এবং ছোট ভাই আয়ুশ কে ডাকতে লাগলো। চিল্লানোর আওয়াজ শুনে আইরাতের পাপা আশরাফুল আহমেদ এবং আতিয়া আহমেদ জলদি নিচে নেমে পরলেন। আশরাফুল আহমেদ মেয়ে কে দেখে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামলেন। আইরাত তার পাপা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং কান্না করে দেয়। আশরাফুল আহমেদেরও একই অবস্থা। তিনি ও মেয়েকে ধরে কেদে দিলেন। আজ এতোদিন পর মেয়ে কে দেখে যেন তিনি তার হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছেন।

আইরাত;; পাপা (কেদে কেদে)
আশরাফুল আহমেদ;; মা আমার কোথায় ছিলি তুই এতোদিন। কতোই না খুজেছি তোকে, সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু কোথাও পাই নি। তুই জানিস তোর জন্য কতটা চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের। কলিজাতে পানি ছিলো না। কোথায় আছিস, কি করছিস সারাদিন এসবই মাথায় ঘুরপাক খেত। খুব মনে পরেছে রে মা তোর কথা খুব মনে পরেছে।
আইরাত;; হ্যাঁ পাপা আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি।

সেইসময় আইরাতের মা আতিয়া আহমেদ দৌড়ে এলেন। আইরাত কে দেখে তিনি কাছে টেনে জড়িয়ে নিলেন এবং চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।

আতিয়া আহমেদ;; এক একটা দিন যেন বুকে পাথর রেখে কাটিয়েছি আমরা। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই আমাদের ছেড়ে। বাড়ি টা পুরো ফাকা হয়ে গিয়েছিলো তোকে ছাড়া।
আইরাত;; আম্মু, আমিও তোমাদের কাছে আসার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি পাই নি। আর তোমাদের, তোমাদের কোন ক্ষতি হয় নি তো। তোমরা ঠিক আছো তো। আয়ুশ ঠিক আছে তো

আতিয়া আহমেদ কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আশরাফুল আহমেদ তাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললেন, যেন আয়ুশের এবং আতিয়া আহমেদের কিডনেপ হওয়ার কথা আইরাত কে না বলে তাহলে মেয়ে টা আরো ভয় পেয়ে যাবে। এই কাজ কে করেছে তা জানার জন্য আশরাফুল আহমেদ লোক লাগিয়ে দিয়েছেন। আর বড়ো কথা হচ্ছে আতিয়া আহমেদ এবং আয়শের কোন ক্ষতি হয়নি তারা একদম ঠিক আছে।

আতিয়া আহমেদ;; ননা আমরা, আমরা ঠিক আছি রে মা। আমাদের আবার কি হবে।

আইরাত তার মায়ের দিকে তাকালো যেন আইরাতের তার মায়ের কথা কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়ুশ দৌড়ে আইরাতের কাছে আসে।

আয়ুশ;; আপিইইইইইই
আইরাত;; আয়ুশ

আইরাত দৌড়ে গিয়ে আয়ুশ কে জড়িয়ে ধরে কোলে তোলে নেয়। গালে, কপালে হাজার চুমু দিতে থাকে।

আয়ুশ;; আপি, আপি তুমি আমাদের রেখে বার বার কেন চলে যাও, জানো আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না, তুমি চলে গেলে আমার সাথে মারামারি কে করবে বলো, আমার সাথে খেলবে কে। আপি আমি না তোমার জিনিসে আর হাত দিবো না তোমাকে আর জ্বালাবো না তবুও তুমি আর আমাদের রেখে যেও না প্লিজ।
আইরাত;; না সোনা এইতো আমি এখানে এসে পরেছি। আমি আর কোথাও যাবো না কোথাও না (কেদে দিয়ে)
আয়ুশ;; আপি কেদো না, তোমাকে মানায় না (ছোট ছোট হাত দিয়ে আইরাতের চোখের পানি মুছে দিয়ে)

আইরাত মুচকি হেসে আয়ুশের হাতে চুমু একে দিলো। এবার আতিয়া আহমেদ আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো।

আতিয়া আহমেদ;; আইরাত মা
আইরাত;; হুমমম
আতিয়া আহমেদ;; তুই এতোদিন কোথায় ছিলি মা। আর তুই, তুই শাড়ি পরে আছিস কেন।
আশরাফুল আহমেদ;; মামনি ওই ছেলেটা তোকে আবার তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাই না। সেদিন, সেদিন যখন তোর রুমের দেয়ালে রক্ত দেখিছিলাম কি পরিমাণ যে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা তা তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। মা তুই ঠিক আছিস তো
আইরাত;; সবাইকে আগেই কিছু বলা যাবে না। তাহলে পাপা হুলুস্থুল কান্ড বাজিয়ে দিবেন। ধীরে ধীরে সবকিছু সামলাতে হবে (মনে মনে)
আতিয়া আহমেদ;; আইরাত কি হলো মা বল
আইরাত;; না না মামামানে আআম্মু আসলে আমাকে সেদিন আমার রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আজ আমি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
আশরাফুল আহমেদ;; মা তুই নিশ্চিন্তে থাক। তোর পাপা যতদিন বেচে রয়েছে ততদিন তোর কিছুই হতে দিবে না। তুই এখন থেকে এখানেই থাকবি আমি বাড়ির বাইরে আরো কড়া নজরদারির ব্যাবস্থা করছি। আতিয়া তুমি মেয়ে কে নিয়ে ভিতরে যাও।
আতিয়া আহমেদ;; আইরাত মা তুই তোর ঘরে চলে যা, ফ্রেশ হয়ে নে।
আইরাত;; আচ্ছা আম্মু।

এই বলে আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আইরাত যেন এক সস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো। পুরো রুমে চোখ বুলালো। নাহ, কোন একটা জিনিস এদিক থেকে ওদিক হয়নি আগে যেমন ছিলো এখনও তার ব্যতিক্রম নয়। আইরাত ধীরে ধীরে তার বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লো। বিছানার ঠিক সামনেই তার একটা হাস্যজ্জোল ছবি রয়েছে কিন্তু এখন এই হাসিটাই যেন আইরাতের চেহারা থেকে চলে গিয়েছে। আইরাত উঠে তার ঘরের সবগুলো জিনিসই হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখলো। বহুদিন পর আজ সে নিজেকে অনুভব করতে পারছে। আইরাত তার কাবার্ট থেকে সাদা কালারের একটা চুড়িদার নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর আইরাত ফ্রেশ হয়ে এলো। ভেজা চুলের পানি গড়িয়ে পরছে। আইরাত আইনার সামনে গিয়ে চুল শোকাতে লাগলো। আইরাত এবার আইনার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ভালো ভাবে দেখে নিলো। আজকে ঠিক তাকে সেই আগের আইরাতের মতো লাগছে। আগের সেই চঞ্চল আইরাত। কিন্তু ইদানীং সেই আগের আইরাত কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আইরাত মুচকি হাসলো। তখনই দরজাতে কারো নক করার শব্দ এলো। আইরাত ভিতরে আসতে বললে আতিয়া আহমেদ হাতে খাবার নিয়ে ভিতরে এলেন।

আইরাত;; আম্মু তুমি এতো কষ্ট করে কেন আনতে গেলে বলত আমাকে ডাকতে আমি নিচে চলে এতাম।
আতিয়া আহমেদ;; না আমিই এসে গেলাম। এখন এদিকে আয় দেখি তোকে খাইয়ে দিই। আগে তো আমার হাতে খাওয়ার জন্য কতো জেদ করতি কিন্তু আমিই খাইয়ে দিতাম না তখন তোর পাপা খাইয়ে দিত। আর এখন, এখন আমি চেয়েও পাই না

এই বলেই আতিয়া আহমেদ কেদে উঠেলেন।

আইরাত;; আহা মা। আচ্ছা কান্না করছো কেন। আমি এতোদিন পর এসেছি আর এসেই তোমার এই কান্নাকাটি শুরু। ভালো লাগছে না কিন্তু বলে দিলাম কান্না থামাও। নয়তো আমি খাবোও না বলে দিচ্ছি।

আতিয়া আহমেদ তাও তার কান্না থামাতে পারছেন না।

আইরাত;; আচ্ছা আম্মু এতো কান্না করছো কেন বলতো। পাপা কি তোমাকে আগের মতো ভালোবাসে না নাকি (তার মাকে চেতানোর জন্য)
আতিয়া আহমেদ;; কি বললি, দিবো না একটা। শয়তানি গেলো না তোর
আইরাত;; হাহাহাহাহাহাহাহাহা, রেগো না গো মা জননী একটু মজা করলাম
আতিয়া আহমেদ;; হয়েছে হয়েছে নে এবার এদিকে আয় খাইয়ে দিই।

আতিয়া আহমেদ আইরাতকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়া শেষে আতিয়া আহমেদ আইরাতকে শুয়ে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেলেন।
কিন্তু আইরাতের যে কোন ভাবেই ভালো লাগছে না। সে শুধু আব্রাহামের চিন্তা করছে। আব্রাহাম তো বলেছে যে আগামীকালই সে আবার আসবে তাকে নেয়ার জন্য। আব্রাহাম যদি কাল এসে আবার কোন কান্ড বাধিয়ে ফেলে তখন কি হবে। আব্রাহাম যে আইরাতকে জোড় করে বিয়ে করে ফেলেছে তাও তো সে তার পাপা আম্মু কে বলে নি। তারা যদি জেনে যায় তাহলে কি হবে। আইরাতের চিন্তাতে কোনভাবেই ভালো ঠেকছে না। চিন্তা যেন তার মাথা চেপে ধরেছে। হঠাৎ করেই আইরাতের মনে পরলো যে অনেক দিন যাবত তাদের বাসার ছাদে যাওয়া হয় না। আইরাত উঠে গিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো এই ভেবে যে যদি কিছুটা ভালো লাগে। যাওয়ার আগে লিজা কে বলে গেলো ছাদে যাতে এক গ্লাস কফি দিয়ে যায়। আইরাত ছাদে চলে গেলো। তার ছাদেও অনেক গাছ রয়েছে, সবগুলোই তার শখের। আইরাত ছুয়ে ছুয়ে গাছের ফুলগুলো দেখতে লাগলো। গাছগুলোতে পানিও দিয়ে দিলো। তারপর লিজা এসে কফির মগটা আইরাতকে দিয়ে গেলো। আইরাত মগটা নিয়ে ছাদের এক কিনারে চলে গেলো। পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি লগ্নে আকাশ টা তার আপন সাজে সেজেছে। তাতে আবার ডুবন্ত সূর্য। হালকা হাওয়া বয়ে চলেছে চারিপাশে। সেই হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইরাত। কিন্তু বেশ খানিক দূরে থেকে আইরাতকে ঘোর লাগা নয়েনে দেখে যাচ্ছে একজন। সে আর কেউ না বরং আব্রাহাম নিজে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে তার আইরাতকে। আজ তার আইরাতকে সেই প্রথম দিনের মতো লাগছে, মায়াবতী। ছাদে এসে মন-মেজাজ দুটোই যেন ফুরফুরে হয়ে গেলো আইরাতের। সন্ধ্যে নেমে এলে আইরাত আবার চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে নিচে চলে এলো।
আইরাত নিচে নেমে এলে আশরাফুল আহমেদ তাকে ডাক দেন।

আশরাফুল আহমেদ;; আইরাত মামনি, কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস তুই
আইরাত;; না পাপা কোথাও না এইতো একটু ছাদে গিয়েছিলাম আরকি
আশরাফুল আহমেদ; এদিকে আয় মা একটু পাপার কাছে বোস

আইরাত হেসে তার পাপার কাছে চলে গেলো। সোফার ওপর বসে তার পাপাকে জড়িয়ে ধরলো।

আইরাত;; পাপা
আশরাফুল আহমেদ;; বলো মামনি
আইরাত;; অনেক মিস করেছি তোমাকে
আশরাফুল আহমেদ;; আমিও রে মা আমিও

এই বলে বাবা-মেয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে আড্ডা দিল।
রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে যে যার ঘরে চলে গেল।
আইরাত বিছানাতে বসে বসে বই পরছিলো তখন আতিয়া আহমেদ তার ঘরে এলো।

আতিয়া আহমেদ;; কি করছিস মা
আইরাত;; আরে আম্মু এসো এসো
আতিয়া আহমেদ;; ঘুমাবি না

আইরাত তার পাশে বই রেখে তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। আতিয়া আহমেদ হেসে আইরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আইরাতের খুব করে কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে তা পারবে না। আজ অনেকদিন পর আইরাত শান্তি খুজে পেয়েছে তার মায়ের কোলে। আসলে মা এমনই হয় যতই কষ্ট থাকুক, চিন্তা-ভাবনা থাকুক না কেন মায়ের কোলে মাথা রাখার সাথে সাথেই যেন সবকিছু গায়েব হয়ে যায়। আইরাত পরম আবেশে তার চোখ বন্ধ করে নিলো।

আইরাত;; আম্মু, আজ যদি আমি তোমার কোলেই ঘুমাই না বলবে আমায় (অশ্রুসিক্ত চোখে)
আতিয়া আহমেদ;; সন্তানদের জন্য মায়ের মুখ থেকে কখনোই “না” শব্দ বের হয় না রে (আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে) তুই ঘুমা আমি তোর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।

আইরাত তার মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে আবার চোখ বন্ধ করে নেই। একসময় আইরাত ঘুমের ঘোরে হারিয়ে গেলো। আতিয়া আহমেদ মেয়েকে বালিশে শুয়িয়ে দিয়ে চলে এলেন।


















সকালে🌥️⛅🌤️…………………

সূর্যের কিরণ পর্দা ভেদ করে চোখে আসতেই চোখ-মুখ কুচকে নিল আইরাত। হাত দিয়ে সামনে আলো ঢাকার চেষ্টা করলো আইরাত কিন্তু লাভ নেই। পুরোপুরি চোখ খুলে দেখলো সকাল হয়ে গেছে আইরাত ধীরে ধীরে উঠে পরলো। উঠেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আচরাতে বেস্ত হয়ে গেলো আইরাত। হুট করেই তার মাথায় এলো আজকে তো আব্রাহামের তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। এটা ভাবতেই আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। সে শুধু আল্লাহ কে ডাকছে যাতে আজ উলটা পালটা কিছু একটা না হয়। তখন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন আতিয়া আহমেদ। ভিতরে এসেই আতিয়া আহমেদ ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।

আতিয়া আহমেদ;; এই আমি কাকে দেখছি,, এই আমাকে কেউ একটু চিমটি কাট তো
আইরাত;; কি হয়েছে আম্মু (হাবলার মতো তার মার দিকে তাকিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; না মানে তুই উঠেছিস ঘুম থেকে এতো সকালে তাও কোন প্রকার কোন যুদ্ধ ছাড়া। আমার না কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না

আতিয়া আহমেদের কথা শুনে আইরাত ফিক করে হেসে দিলো।

আইরাত;; ও মা, এটা আমি আমি আমি গো তোমার মেয়ে আইরাত। আর এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে শুনি আমি কি তাড়াতাড়ি উঠতে পারবো না নাকি
আতিয়া আহমেদ;; না ঠিক তা না। আসলে আমি ডেকে না তুললে তো তুই উঠিস ই না। কিন্তু আজ তার উল্টো টা তাই একটু অবাক হলাম আরকি
আইরাত;; হিহিহি আম্মু এটা তোমার মেয়ে বুঝলে। তোমার মেয়ের পক্ষে সব কিছুই সম্ভব ( কিছুটা ভাব নিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; হয়েছে আর বড়ো বড়ো কথা বলতে হবে না। তোর বাপি, আয়ুশ সবাই নিচে বসে অপেক্ষা করছে তোর জন্য এবার তাড়াতাড়ি চল।
আইরাত;; তুমি যাও আমি আসছি।

আতিয়া আহমেদ আইরাতের ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর আইরাত নিচে চলে এলো।

আইরাত;; Good morning papa
আশরাফুল আহমেদ;; Very good morning মামনি
আয়ুশ;; Good morning apiii
আইরাত;; morning ভাইটু
আশরাফুল আহমেদ;; আইরাত মামনি দেখ সব তোর পছন্দের খাবার আজকে রান্না করেছে তোর মা
আয়ুশ;; হ্যাঁ হ্যাঁ আপি আসতেই সবাই আমাকে ভুলে গেছে 🙁

সবাই আয়ুশের কথা শুনে হেসে দিল।

আইরাত;; একদম না কে বলেছি শুনি। আমার ভাইটা সবার থেকে বেশি স্পেশাল তাকে কি করে ভুলা যায় (আয়ুশকে কোলে বসিয়ে)
আতিয়া আহমেদ;; নে খাওয়া শুরু কর।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষে ড্রোইং রুমে বসে গল্প করতে লাগলো।

আইরাত;; পাপা তোমারা বসো আমি একটু ওপর থেকে আসছি
আশরাফুল আহমেদ;; আচ্ছা ঠিক আছে।

আইরাত ওপরে চলে গেলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর নিচ থেকে চিল্লা চিল্লির আওয়াজ কানে এলো আইরাতের।

আইরাত;; নিচে এতো আওয়াজ কিসের। কি হচ্ছে?!

আইরাত বেশ চিন্তিত হয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলো। নিচে নেমে গিয়েই আইরাতের মরণদশা লেগে গেলো। সে গিয়ে দেখলো আব্রাহাম ড্রোইং রুমে সোফার ওপরে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। আতিয়া আহমেদ আয়ুশ কে নিয়ে এক কিণারে দাঁড়িয়ে আছেন এবং আশরাফুল আহমেদ আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে চিল্লাচ্ছনে। কিন্তু আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে যেন এখানে এখন কিছুই হচ্ছে না। আইরাতের ভয়ে আগেই হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আশরাফুল আহমেদ যে এতো করে আব্রাহামের ওপর চিল্লাচ্ছেন তা যেন আব্রাহামের কানেই ঢুকছে না।

আব্রাহাম;; আহা শশুড় আব্বু এতো চিল্লাচ্ছো কেন। কানের পর্দা তো ফেটে যাবে (বিরক্তি নিয়ে)
আশরাফুল আহমেদ;; তো চিল্লাবো না তো কি করবো হে। কে তুমি এভাবে না বলে কয়ে হনহনিয়ে ভিতরে চলে এলে কেন। আর আমার বডিগার্ডরা কোথায় তারা তোমাকে ভিতরেই বা ঢুকতে দিল কি করে
আব্রাহাম;; Come on শশুড় আব্বু তুমি কি ভাবো টাকা পয়সা শুধু তোমার একারই আছে নাকি।
আশরাফুল আহমেদ;; কে তুমি। কেন এসেছো এখানে কি চাই। আর কি কখন থেকে সেই শশুড় আব্বু শশুড় আব্বু লাগিয়ে রেখেছো শুনি!

আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ গিয়ে ঠেকলো সিড়ি তে দাঁড়িয়ে থাকা আইরাতের ওপর। সাথে সাথে আব্রাহামের মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

আব্রাহাম;; There she is.. My love (আইরাতের দিকে আংুল তুলে দেখিয়ে)

সবাই আইরাতের দিক তাকালো। আইরাতের আত্মা ধুক করে উঠলো।

আব্রাহাম;; আমি কি চাই,, আমি ওকে চাই। আমার জানপাখিকে চাই আমার। ওকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আর জানপাখি কি তোমাদের বলেনি যে ওর আর আমার মাঝে কি সম্পর্ক!!
আশরাফুল আহমেদ;; মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি

আইরাত আর না পেরে দৌড়ে ওপরে যেতে নিলে আব্রাহাম ঝড়ের গতিতে গিয়ে খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; আরে আরে কোথায় যাচ্ছো জানপাখি। আমার থেকে পালিয়ে লাভ নেই। তুমি যেখানেই যেভাবেই থাকো না কেন আমি ঠিক তোমাকে ধরে ফেলবো। আর তুমি কি জানো না যে আজ আমি তোমাকে নিতে আসবো। কাল তো বলেই দিলাম বেবি

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে ঢোক গিলল। এবং তার পাপা আম্মুর দিকে তাকালো কেননা সে বলেছে যে পালিয়ে এসেছে আব্রাহাম তাকে এখানে দিয়ে গেছে তা আইরাত কাউকেই বলেনি।

আইরাত;; দেখুন প্লিজ হাত ছাড়ুন। সবাই দেখছে আর আমি যাবো না আপনার সাথে প্লিজ হাতটা ছাড়ুন আমার। (হাত মুচড়িয়ে)

আব্রাহামের আইরাতের না যাওয়ার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো। রেগে গেলো মূহুর্তেই। আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে একটানে আইরাতকে কোলে তুলে নিল। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক ছুটাছুটি করছে কিন্তু আব্রাহামের সাথে পেরে উঠছে না।

আশরাফুল আহমেদ দ্রুত পায়ে আব্রাহামের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং রেগে বলে উঠলেন।

আশরাফুল আহমেদ;; এই এই বদমাইশ ছেলে ছাড়ো আমার মেয়েকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে।
আব্রাহাম;; হানিমুনে যাচ্ছি, যাবে তুমি।

আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে আবার সামনে হাটা ধরলো। এবার আশরাফুল আহমেদ বাধা দিতে চাইলে আব্রাহামের গার্ডস্ রা তাকে আটকিয়ে দেন।

আব্রাহাম আইরাতকে কোলে তুলে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো। আইরাত অনেক লাফাচ্ছে বাচার জন্য। কিন্তু বাইরে এসেই আইরাতের মুখ হা হয়ে গেলো । কারণ আইরাতের পাপার সব গার্ডস্ রা অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে আছে আর চারিদিকে শুধু আব্রাহামের বডিগার্ড সবাই হাতে গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম বাকা হেসে আইরাতকে কোলে করে এনে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
আব্রাহাম আইরাতের দিক অনেক টা ঝুকে বলতে লাগলো….

আব্রাহাম;; যদি তুমি সুন্দর করে ভালোভাবে এসে পরতে তাহলে আজ আমাকে আর এতোসব নাটক করতে হতো না, এবার কোন রকম লাফালাফি ছাড়া মুখ বন্ধ করে বসো।

এই বলে আব্রাহাম টুক করে আইরাতের গালে কিস করে দিল। আইরাত রেগেও গেলো সাথে লজ্জাও পেল। আব্রাহাম গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগলো………
..
..
..
..
..
..
..
..
..
💚☘💚চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-18+19

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 18

❤️❤️
..
..
..
..
..
১ঘন্টা পর আইরাতকে সম্পূর্ণ বধূবেশে সাজানো হলো। দুধে আলতা গায়ের রংে লাল টুকটুকে লেহেংগা যেন ফুটে উঠেছে। পুরো পুতুলের মতো লাগছে আইরাতকে। যেন কোন হুর পরি কেও হার মানাবে। মেয়েরাও আইরাতের সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

১ম মেয়ে;; ম্যাম, আপনাকে কি পরিমাণ যে সুন্দর লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
২য় মেয়ে;; স্যার আজকে আপনার থেকে চোখ ই ফেরাতে পারবেন না।

কিন্তু আইরাত এই সব কথায় কোন খেয়াল নেই। সে মূর্তির ন্যায় বসে আছে,, যেন তার মাঝে কোন অনূভুতি নেই। পাথর হয়ে গেছে সে। এ যেন নিজের বিরুদ্ধে করা এক যুদ্ধ। কিন্তু আইরাত অসহায় তার করার কিছুই নেই। ভাগ্যের লিখন না চাইলেও মেনে নিতে হবে।








অন্যদিকে….

আব্রাহাম রেডি হচ্ছে। লাল-সাদা কারুকাজ করা শেরওয়ানি তে আব্রাহাম কে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে। জিম করা বডি তে শেরওয়ানি দারুন মানিয়েছে। কারো ঘায়েল হওয়ার জন্য আব্রাহাম কে এক নজর দেখাই যথেষ্ট। আব্রাহাম বোতাম লাগাচ্ছিল সেই সময় অয়ন ঘরে প্রবেশ করলো।

অয়ন;; এইটা কি আমার দাভাই?!
আব্রাহাম;; Any doubt?
অয়ন;; না মানে like seriously এটা তুই দাভাই
আব্রাহাম;; না, তোর ভাবির জামাই আমি
অয়ন;; ভাই, আমি বুঝাতে পারবো না তোকে কি পরিমাণ Handsome দেখাচ্ছে। বিয়ে তে তো সব মেয়ে তোকে দেখবে
আব্রাহাম;; আহা, আমি already অন্য কারো নামে বুক হয়ে গিয়েছি তো তাকিয়ে থেকেও লাভ নেই।
অয়ন;; হুমম হুমম তা তো বুঝলাম। এখন কি তোর হলো
আব্রাহাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে। আচ্ছা বাপি কোথায় দেখছি না যে
আবির আহমেদ;; এই তো আমি এখানে। (ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে)
অয়ন;; বাপি দেখো তো তোমার ছেলে কে চিনতে পারো কিনা
আবির আহমেদ;; না চিনার কি আছে। আমার ছেলেকে কবে না সুন্দর দেখা গেছে বল। He is always Mr. Perfect…..
আব্রাহাম;; Thanks বাপি।
আবির আহমেদ;; নে তোরা এবার নিচে চল সবাই তো অপেক্ষা করছে।
অয়ন;; হুমম চলো।

আবির আহমেদ-অয়ন-আব্রাহাম সবাই নিচে নেমে এলো। অনেক জাকজমক ভাবে আব্রাহাম দের বাড়ি টা সাজানো হয়েছে। অসাধারণ সুন্দর লাগছে। যেন কোন রাজবাড়ী। তারা নিচে নেমে এলে সবাই আব্রাহামের সাথে কথা বলছে এবং অভিনন্দন যানাচ্ছে। আব্রাহাম সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে এক মেয়ে দৌড়ে এসে আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে আব্রাহাম আগেই একটু সরে দাড়ায়।

সনিয়া(মেয়েটি);; Hay আব্রাহাম জান কেমন আছো। আজকে তোমাকে দেখে আর এক দফা চমক খেলাম। কেন যে বার বার তোমার প্রেমে পরি।
আব্রাহাম;; Sorry সনি এখন প্রেমে পরেও লাভ নেই বিকজ আমি অন্য কারো নামে লেখা
সনিয়া;; হ্যাঁ তা তো বুঝতেই পারছি। তোমার সাথে কতোদিন পর দেখা কিন্তু দেখ না আমার কি ফাটা কপাল দেখা তো হলো বাট তোমার বিয়ের দিন।
অয়ন;; তোকে আসতেই কে যেন বলেছিলো,, চিপকু একটা (ফিসফিস করে)
সনিয়া;; অয়ন, তুমি কি কিছু বললে
অয়ন;; আরে কয় না না আমি কি বলব (মুখে জোড় পূর্বক হাসি টেনে)
সনিয়া;; তো আব্রাহাম তোমার বউ কোথায় না মানে একটু দেখতাম আর কি। যেখানে সব মেয়ে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর প্রেমে হাবুডুবু খায় আর আব্রাহাম পাত্তা পর্যন্ত দেয় না,, সেখানে এমন কোন মেয়ে আসলো যে আব্রাহাম কে পাগল বানিয়ে দিলো একটু তো দেখতে হয় তাই না (ব্যাংগ করে)
আব্রাহাম;; আরে একটু কেন পুরোপুরি দেখো। আর কথা রইলো আমার আইরাতের তাহলে সে সবার থেকে একদম আলাদা। ওর মাঝে যা আছে তা আর কারো মাঝেই নেই। আর কেউ ওর জুতোর যোগ্য ও হবে না।

আব্রাহামের কথায় অয়ন হেসে দিলো। সনিয়া রাগে ফুসছে।

ঠিক তখনই মেয়েরা আইরাত কে উপর থেকে নিচে নিয়ে আসলো। আইরাতকে সিড়ি দিয়ে নামানো হচ্ছে। আব্রাহাম পিছনে তাকালো। তাকিয়ে যেন সে ৪৪০ভোল্ট এর ঝটকা খেলো। চোখ সরানোর নাম ই নেই আব্রাহামের। Heartbeat যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য মিস গেলো। অপলহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে আব্রাহাম। যেন তার উপর কোন জাদু করা হয়েছে।

আব্রাহাম;; এতো সুন্দর লাগছে কেন। আমি তো পাগল হয়ে যাবো। এই এক মেয়ের প্রেমে যে আর কতো শত বার পরতে হবে আমাকে। (মনে মনে)

আব্রাহাম কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অয়ন আব্রাহামকে হালকা ধাক্কা দিলো। ধাক্কা খেয়ে আব্রাহামের হুস ফিরে আসলো।

অয়ন;; দাভাই এখন তো একটু দেখা অফ কর। নইতো ভাবিকে তোর ই নজর লেগে যাবে।
আব্রাহাম;; (অয়নের পেটে গুতো মেরে) আজকাল খুব বেশি বকিস তুই। আর আমার বউ হয় আমার নজর লাগবে না তো কার লাগবে।

এদিকে সনিয়া ও হা করে তাকিয়ে আছে। সে ভাবতেও পারে নি যে সত্যি আব্রাহামের হবুবউ এতোটা সুন্দরী হবে।

সনিয়া;; আব্রাহাম আমার ধানণা ভুল। সত্যি তোমার বউ কোন পরির থেকে কম না।
আব্রাহাম;; I know that better then you…
সনিয়া আর কিছু বলল না।

আইরাত কে নিচে নিয়ে এলে আবির আহমেদ তার দিকে এগিয়ে যায়।

আবির আহমেদ;; আমার মামনি টার ওপর যেন কারো নজর না লাগে (মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
আইরাত জোড় করে মুখে হালকা হাসি নিয়ে এলো।
অয়ন;; ওহহ আমার পেয়ারি ভাবি,, আমার ভাইকে কি আজ মেরে ফেলার প্লেনিং করেছ।

আইরাত কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলল।
আবির আহমেদ;; তুই থামবি। যা সবাইকে বসতে বল।
অয়ন;; যাচ্ছি বাপি

আইরাতকে আব্রাহামের পাশে বসিয়ে দেওয়া হয়। দুইজনকে পাশাপাশি একসাথে বসিয়ে দিয়ে আবির আহমেদ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

আবির আহমেদ;; তোদের দুইজনকে একসাথে অনেক সুন্দর মানায়। যাকে বলে একে অন্যের জন্য তৈরি। আল্লাহ তোদের দুজনকে সবসময় সুখি রাখুক।
আব্রাহাম;; Love you বাপি
আবির আহমেদ;; Love you too বাবা।

আবির আহমেদ তাদের থেকে দূরে সরে আসলেন। এইবার আব্রাহাম আইরাতের দিকে ভালোভাবে তাকালো। আব্রাহাম কে যেন আজ তার চোখ পকল ফেলতে মানা করছে। মনের ভিতর কেমন হাতুড়ি পিটাতে শুরু করেছে তার। আব্রাহাম বাকা হাসলো। কিন্তু এতোকিছুর মাঝে আইরাত পুতুলের মতো বসে আছে। সে কোনকিছুই অনুভব করতে পারছে না। সে যেন এক কাঠের পুতুল হয়ে গেছে যার যেভাবে ইচ্ছে সে সেভাবে চালাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের কানের কাছে গিয়ে হালকা করে বলে উঠলো

আব্রাহাম;; তোমাকে আমি নিষেধ করেছি না জানপাখি এভাব আমার সামনে আসবে না নিজের ওপর কোন কোট্রোল থাকে না। আমি সত্যি আর পারছি না মন চাইছে এখনই তোমাকে নিজের করে পেতে।

আইরাতের চোখ দিয়ে টুপ করে পানি গড়িয়ে গেলো যা আব্রাহামের চোখ এড়ায়নি

আব্রাহাম;; বেবি তোমাকে না মানা করেছি যে আমাদের বিয়ের দিন তোমার চোখে যেন আমি কোন পানি না দেখি তাহলে এসব কি হুমম!

আইরাত অসহায়ের মতো আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই আইরাতের চোখে পানি আলতো করে মুছে দিলো।

আইরাত;; আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এসব এখন আমার সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। তাহলে কি শেষ রক্ষা আমার আর হবে না। তুলে দিবো নিজেকে স্বামী নামক এই মানুষ টার কাছে। কিন্তু ওনাকে আমার মনে স্বামীর জায়গা আমি কখনোই দিতে পারবো না। উনি আমার দর্বলতার সূযোগ নিয়েছেন। আমাকে Blackmail করে নিজের করে নিচ্ছেন তিনি। আমি করবো না বিয়ে। আল্লাহ সাহায্য করো আমায়। (মনে মনে)

অয়ন;; আরে কি হলো,, কাজি কে ডাকো।
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ হ্যাঁ উনি আসছেন।

আইরাত এবার মাথা তুলে তাকালো। তার বুকের ভিতর যেন ঢাক–ঢোল সব একসাথে পিটাচ্ছে। যতো সময় যাচ্ছে তার ভয় যেন তত তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। তাহলে যা সে চায় না তাই কি তার সাথে হতে যাচ্ছে।

কাজি কে ডাকা হলো,, কাজি এসে আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসলেন।
কাজি আব্রাহাম-আইরাতকে দেখেই “মাশাআল্লাহ” বলেলেন। কাজি তাদের সামনে কাবিননামা রাখলেন। আব্রাহামকে বলা হলো কবুল বলার জন্য,, আব্রাহাম এক সেকেন্ড দেরি না করে কবুল বলে ফেলল এবং কাবিননামাতে সই ও করে দিলো। এবার আইরাতের পালা। কাজিসাহেব আইরাতকে বললেন কবুল বলে সই করার জন্য। কিন্তু আইরাতের কান দিয়ে যেন কারো কোন কথা যাচ্ছে না। সে এক ধ্যানে কাবিননামার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাতের সামনে শুধু আব্রাহামের সেই হিংস্র চেহারা বার বার আসছে। বড় কথা যাকে ভালোবাসে না তার সাথে সে একই ছাদের নিচে কিভাবে থাকবে,, কি করে কাটাবে সে তার পুরোটা জীবন। আইরাতের মনে আব্রাহাম কে নিয়ে যদি কোন অনুভূতি থেকে থাকে তা হচ্ছে শুধু ঘৃণার শুধুই ঘৃণার।
কাজি আবার ও আইরাতকে কাবিননামা তে সই করতে বললে আইরাত এবার একেবারে বসা থেকে উঠে পরে। সবাই অবাক চোখে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম কিছুটা সন্দেহ এর চোখে আইরাতের দিকে তাকালো। আইরাত এবার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হাতে কাবিননামা নিয়ে একটানে ছিড়ে ফেলে। সবাই আইরাতের এমন কান্ডে অবাকের শেষ পর্যায়।
আইরাত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে উঠলো। আব্রাহাম রাগে দাত কটমট করেছে। চোখ মূহুর্তের মধ্যেই রক্তবর্ণ ধারণ করেছে তার।

আর কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আব্রাহাম উঠে আইরাতের হাত ধরে টেনে অন্য এক রুমে নিয়ে গেলো। আইরাত হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে আর কান্না করছে কিন্তু এসব এর কিছুই আব্রাহাম তোয়াক্কা না করে আইরাত কে রুমে টেনে নিয়ে গিয়ে সোজরে দরজা লাগিয়ে দিলো।

ঠাসসসস করে আব্রাহাম আইরাতের গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। আইরাত সোজা গিয়ে নিচে পরলো। থাপ্পর টা এতোই জোরে লেগেছে যে আইরাত গালে হাত দিয়ে এবার জোরে শব্দ করে কান্না করে দিল। আব্রাহাম আইরাতের চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল। আব্রাহাম আইরাতের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল

আব্রাহাম;; না করেছিলাম,, না করেছিলাম না আমি তোকে যে বিয়েতে সবার সামনে যেন কোনপ্রকার কোন তামাশা না করতে। শুনিস নি তুই শুনিস নি। কেন এমন করলি বল। তুই কি ভেবেছিস যে তুই এই সব করে আমার থেকে পার পেয়ে যাবি, না কখনোই তা হবে না। তুই আমার হবি না, কিন্তু আমি তোকে জোর করে নিজের বানিয়ে নিবো। তুই আমার,, তা তুই চাইলেও আর না চাইলেও। তোকে যে কোন মূল্যে আমার হতে হবে বুঝতে পেরেছিস তুই (জোরে চিল্লিয়ে)

আইরাত;; আহহহ, প্লিপ্লিজ ছাড়ুন আআমায়। আমার খুখুব লালালাগছে। প্লিজ ছাড়ুন আমাকে
আব্রাহাম;; তা আর হচ্ছে না Baby girl….
দেখো তো এটা কে চিনো কিনা

আব্রাহাম আইরাতের সামনে ফোন ধরলো ,, তারপর একটা ভিডিও অন করলো। আইরাত কান্না করতে করতে চোখ নাক মুখ সব ফুলিয়ে ফেলেছে। ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে অন্ধকার এক রুমে চেয়ারের সাথে কাউকে শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। আইরাত ভিডিও এর দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই সেই অন্ধকার রুমে হাল্কা আবছা আলো এলো। ভিডিও তে একটা ছোট বচ্চা কে এবং একজন মহিলাকে বেধে রাখা হয়েছে। কিন্তু মুখ পরিস্কার করে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দুম করে ওপর থেকে আলো এসে বাচ্চাটির এবং সেই মহিলার মুখে পরলো। সাথে সাথে আইরাত চিল্লিয়ে উঠলো….

আইরাত;; আয়ুশশশশশশশশ,, আম্মুউউউউউউউ
আব্রাহাম;; হ্যাঁ ঠিক ধরেছো আমার শালাবাবু এবং আমার শাশুড়ি মা
আইরাত;; আয়ুশ আর আম্মু এএএএই অবস্থায় এখানে কেন, কিভাবে এলো এখানে?
আব্রাহাম;; কিভাবে আর আনবে আমি তুলে এনেছি
আইরাত;; কিকিকিন্তু কেন,,ওরা কি ক্ষতি করেছে আপনার
আব্রাহাম;; ক্ষতি তো করেনি। কিন্তু তোমার জন্যই ওদেরকে তুলে আনা হয়েছে।

আইরাত রাগি+কান্নারত চোখে আব্রাহামের দিকে তাকালো।

আব্রাহাম;; দেখো Baby girl,, তোমার ভাই-আম্মু মানে আমার ও ভাই-মা,, তাই আমি চাইলেও ওদের কোন ক্ষতি করতে পারবো না। কিন্তু তুমি যদি আমাকে বাধ্য করো তাহলে আমি অনেক কিছুই করতে পারি। তাই চুপচাপ বিয়ে টা করে নাও নইতো তোমার প্রানপ্রিয় ভাই আর মা পরের দিনের ভোরের আলো দেখতে পারবে না,, বুঝতে পেরেছো জানপাখি।

আইরাতের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো। সে যা শুনলো তা কি ঠিক। এখন আইরাত যে একদম পাথর হয়ে গেলো। আইরাত তার সামনে আর কোন পথই যে খুজে পাচ্ছে না। আইরাতের হাত পা সব কাপছে থর থর করে।

আইরাত;; আআআপনি আপনি পশুর থেকেও নিকৃষ্ট। মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারে তা আপনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। আপনি আমাকে পেতে পারেন জোর করে কিন্তু আমার ভালোবাসা আর আমার মনে জায়গা করে নিতে আপনি কখনোই পারবেন না, কখনোই না। I hate you i just hate you সবথেকে বেশি ঘৃণা করি আমি আপনাকে।

আব্রাহাম;; সমস্যা নেই তোমার এই ঘৃণা কে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে নিব। এবার বাইরে গিয়ে চুপচাপ কোন রঙ ঢং না করে বিয়ে করে নাও আমাকে নইতো…………….

এই বলে বাকা হাসি দিয়ে আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো।
বাইরে এসে দেখে সবাই কানাঘুসা শুরু করে দিয়েছে। তা দেখে আব্রাহাম বলে উঠলো

আব্রাহাম;; Silence everyone,,,
সবাই চুপ হয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; আসলে আমার একমাত্র বউ আইরাতের একটা রোগ রয়েছে। আর তা হলো কাগজ ছেড়া। মানে যখন ওর রাগ উঠে যায় তখন তার সামনে কি কাগজ রয়েছে আদৌ তা গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা সে খেয়াল করে না শুধু ছিড়ে ফেলে।

আইরাত যেন আব্রাহামের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। মানে কি বলছে ও। শেষে কিনা আব্রাহাম সকলের সামনে তাকে পাগলের উপাধি দিলো।

আব্রাহাম;; এতো অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আমার বউ যেমন ই হোক আমার। একটা কাবিননামা ছিড়েছে আরো হাজারটা কাবিননামা আনবো আমি। বাপি, কাবিননামার ব্যবস্থা করো তাড়াতাড়ি

আবির আহমেদের কেমন যেন সবকিছু ঘোলাটে লাগলো। কিন্তু তবুও তিনি হেসে বললেন…

আবির আহমেদ;; হ্যাঁ আনছি

কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার এক কাবিননামা আনা হলো। আব্রাহাম তিনবার কবুল বলে সই করে দিলো।
কাজিসাহেব আইরাত কে কবুল বলতে বলল,, কিন্তু তখন আবির আহমেদ আইরাতের কাছে গেলেন এবং আইরাতের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে আইরাত কে জিগ্যেস করল…

আবির আহমেদ;; আইরাত মা আমার
আইরাত মাথা তুলে তার বাপির দিকে তাকালো
আবির আহমেদ;; মামনি, তুই এই বিয়ে তে রাজি তো? মানে তুই খুশি আছিসতো। আজ তোর বাবা এখানে থাকলে তোকে হয়তো এই একই প্রশ্ন করতো। আমি তো তোর বাবাই তাই আমি ই জিগ্যেস করলাম। মামনি তুই এই বিয়েতে খুশি তো?!

আইরাতের চোখের পানি যেন আর কোন বাধ মানছে না। আইরাতের চিল্লিয়ে তার বাপি কে বলতে ইচ্ছে করছে যে “না বাপি না রাজি নই,, এই বিয়ে তে খুশি নই আমি। নিজের ওপর জোর করে, নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে এই বিয়ে তে হ্যাঁ বলতে হয়েছে। নিজের পরিবারের ভয়েতে তাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে আজ”। কিন্তু না আইরাত তা পারবে না এক অজানা শিকলে আটকা পরে গেছে আইরাত।

আইরাত অগচোরে তার বাপির কাছ থেকে চোখের পানি মুছে ফেলল। এবং মুখে কৃত্রিম হাসি হেসে আইরাত তার বাপি কে বলল……

আইরাত;; না বাপি আমি এই বিয়ে তে অনেক খুশি,, রাজি আমি এই বিয়েতে। আমি আমার মতে এই বিয়ে করছি। অনেক খুশি আমি।

আব্রাহাম আইরাতের কথা শুনে বাকা হাসি হাসলো।এক প্রশান্তির হাসি হাসলো আব্রাহাম।

আবির আহমেদ মুচকি হেসে আইরাতের কপালে চুমু একেঁ দিয়ে সরে দাড়ালেন।

এরপর আইরাত ইসলাম এবং আইনের বিধান অনুযায়ী তিনবার কবুল বলে কাবিননামাতে সই করে সম্পূর্ণ রুপে আব্রাহামের হয়ে গেলো।
..
..
..
..
..
..
..
..
🤎🤎চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#Part__ 19

🤎🦋
..
..
..
..
..
এরপর আইরাত ইসলাম এবং আইনের বিধান অনুযায়ী তিনবার কবুল বলে কাবিননামাতে সই করে সম্পূর্ণরুপে আব্রাহামের হয়ে গেলো।

আব্রাহামের খুশির যেন আজ সীমা নেই। আইরাতকে সে আজ তার আপন করে পেয়েছে। নিজের অধাংগীনি। আইরাতের ওপর এখন তার, কেবল তারই অধিকার। আইরাত আর তার কাছ থেকে কোথাও পালাতে পারবে না। কিন্তু একদিকে যেমন আব্রাহামের খুশির কোন কুল কিনারা নেই অন্যদিকে ঠিক তেমনই আইরাতের কষ্টের কোন সীমা নেই। সে এতোদিন বলির পাঠা ছিলো কিন্তু আজ সে কুরবানিও হয়ে গেছে। ভীষণভাবে বাবা-মার কথা মনে পরছে আইরাতের। ভয়ে যেন তার অন্তর আত্না এখনো কাপছে। আব্রাহাম তার আম্মু আর ভাই এর কোন ক্ষতি করে দিল না তো। ওদের কিছু হয়ে গেলে আইরাত নিজেকে শেষ করে দিবে। এইসব ভাবনাতেই মগ্ন রয়েছে আইরাত। ঠিক সেই সময়ই কাজিসাহেব বলে উঠলেন…

কাজি;; আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আজ থেকে আপনারা স্বামী-স্ত্রী। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জুটিকে সর্বদা খুশি রাখুক।

আব্রাহাম আইরাত এসে তাদের বাপি আবির আহমেদ কে সালাম করলো। আবির আহমেদ আইরাত কে জড়িয়ে ধরলেন। আইরাত এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলো না কান্না করে দিলো।

আবির আহমেদ;; কাদিস না মা। আজ থেকে তোর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

আইরাত তার বাপি কে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালো। তারপর ধীরে ধীরে বিয়ের কার্য শেষ হলো। সবাই একে একে চলে যেতে লাগলো। বাসায় থেকে গেলো শুধু আব্রাহামের কিছু বন্ধু বান্ধব। মেয়েরা এসে আইরাত কে নিয়ে গেলো। আইরাতকে অন্য একটা রুমে বসিয়ে দিয়ে তারা চলে গেলো বাসর ঘর সাজাতে। সবাই ছাদে বসে আছে কিন্তু আব্রাহাম তার ফোনে আইরাতের ছবি দেখছে।

অয়ন;; দাভাই বিয়ে তো করেই নিয়েছিস। এখন আর ভাবির ছবি দেখে কি করছিস বল তো।
আব্রাহাম;; আমার জানপাখি কে হাজার যনম দেখলেও আমার মন ভরবে না।

ঠিক তখন ছাদে আবির আহমেদ এলো। তাকে দেখে কিছু টা গম্ভীর লাগছে। আবির আহমেদ বলে উঠলেন…

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম..
আব্রাহাম;; আরে বাপি এসো এসো।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম আমি তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই। আমার রুমে এসো।
আব্রাহাম;; ঠিক আছে বাপি

আব্রাহাম তার বাপির দিকে কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। কেননা তিনি কখনোই আব্রাহাম কে তার নাম ধরে ডাকেন না,, যখন কিছু সিরিয়াস বিষয় থাকে একমাত্র তখনই তিনি আব্রাহাম কে তার নাম ধরে ডাকেন।

আব্রাহাম সেখান থেকে উঠে এসে তার বাপির ঘরে চলে গেলো। আব্রাহাম গিয়ে দেখলো তার বাপি দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আব্রাহাম;; বাপি কিছু বলবে
আবির আহমেদ;; হ্যাঁ বলবো।
আব্রাহাম;; হুমম বলো
আবির আহমেদ;; আমি এতো দিন তোমাকে কিছু বলিনি,, ভেবেছিলাম তুমি হয়তো সময় বুঝে একদিন ঠিক ই আমাকে বলবে কিন্তু তুমি তা বলো নি। আর আজকে আমি না বলে আর থাকতে পারলাম না।
আব্রাহাম;; বাপি তুমি কি বলতে চাচ্ছো?
আবির আহমেদ;; তুমি কেন আমার কাছ থেকে সত্যি টা লুকালে আব্রাহাম?
আব্রাহাম;; কোন সত্যি বাপি!
আবির আহমেদ;; আইরাতের সত্যি।
আব্রাহাম;; বাপি
আবির আহমেদ;; আইরাত যে কন এতিমখানাতে বড়ো হয় নি তা আমি জানি। ইভেন এটাও জানি যে আইরাতের আসল পরিচয় কি

আবির আহমেদ এর কথা শুনে আব্রাহাম বেশ অবাক হলো

আব্রাহাম;; বাপি তুমি।
আবির আহমেদ;; নুজাইফা বিনতে আইরাত আর কারো না বরং আমার ই ছোট ভাই এর মেয়ে তাই তো
আব্রাহাম;;…………………….
আবির আহমেদ;; তুমি যখন আইরাত কে প্রথম এই বাড়িতে নিয়ে আসো আমি সেইদিন ই আইরাত কে চিনে ফেলি। আইরাত কে আমি ছোট বেলা থেকে দেখেছি আব্রাহাম আমার মামনি কে আমি কখনোই চিনতে ভুল করবো না। কিন্তু আরো একটু সিওর হওয়ার জন্য আমি যখন আইরাত কে জিগ্যেস করি যে তোমার বাবা-মা আছে কি তখন আইরাত হ্যাঁ বলে। আইরাত বলে তার বাবার নাম আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং মার নাম আতিয়া আহমেদ চৌধুরী । বেস আমার সন্দেহ দূর হয়েছে। তুমি কেন আমায় আগে বলোনি?

আব্রাহাম;; বাপি তেমন না আমি তোমাকে সব কিছু বলে বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার কিছুটা সময় এর
প্রোয়জন ছিলো।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম আমি কিছু বুঝতে পারছি না, তুমি কেন আইরাত কে বিয়ে করলে। তার ওপর আইরাতের বাড়ির কাউকে খবর না দিয়েই।
আব্রাহাম;; বাপি ভালোবাসি আমি আইরাত কে। বাচতে পারবো না ওকে ছাড়া, ও কার মেয়ে কি করে তাতে আমার বিন্দু পরিমাণ কিছু যায় আসে না আমি আইরাত কে ভালোবাসি আর ওকে আমার সারাজীবন এর জন্য চাই বেস আমি আর কিছু জানি না। আর তোমার কি মনে হয় আইরাতের বাড়ির কাউকে খবর দিলে ওরা আইরাত কে আমার কাছে বিয়ে দিতো তাতে আমার যতই নাম-খ্যাতি, অঢেল সম্পত্তি থাকুক না কেন। আমি জানি আইরাতের বাবা আমাদের জানে মারতে চেয়েছে আমি তার প্রতিশোধ ও নিব বলেছিলাম। কিন্তু বাপি বিশ্বাস করো আমি প্রতিশোধের তাড়নায় আইরাত কে বিয়ে করি নি। আমি ভালোবাসি ওকে,, i need her……

আবির আহমেদ আব্রাহামের দিকে এগিয়ে এলেন এবং তার গালে হাত রেখে বলতে লাগলেন……..

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম, আমি আমার ছেলের ওপর সব থেকে বেশি বিশ্বাস করি। এবং আমি জানি যে আমার ছেলে কখনো কোন ভুল কাজ করতেই পারে না। আইরাত আমার পুত্রবধূ না, আমার মেয়ে।
আব্রাহাম;; অনেক বেশি ভালোবাসি বাপি ওকে আমি। কবে যে এতো করে ভালোবেসে ফেললাম আমি আইরাত কে জানি না। কিন্তু আমি এইটুকু জানি যে ওকে না পেলে আমি মরেই যাবো। (তার বাপি কে জড়িয়ে ধরে)
আবির আহমেদ;; হাহাহা পাগল ছেলে আমার,, নে এবার তো ঘরে যা মেয়েটা তোর জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো।

আইরাত কে মেয়েরা বাসর ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রেখে এলো।

আইরাত বিছানার ওপর পুতুলের মতো করে বসে আছে। তার মাথায় শুধু মাত্র তার আম্মু আর ভাই এর কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নিরবে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। আব্রাহাম তার বাপির ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। সে তার ঘরে ঢুকতে যাবে সাথে সাথে অয়ন এবং আব্রাহামের কিছু বন্ধু তার পথ আগলে দাঁড়ালো।

অয়ন;; আ আ দাড়া দাভাই দাড়া, এতো তাড়া কিসের?
আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এসব
অয়ন;; না মানে কিছু তো হয় নি
আব্রাহাম;; তাহলে রাস্তা থেকে সরে দাড়া, ভিতরে যেতে দে আমায়
অয়ন;; আরে ভাই দাড়া, আগে আমাদের পাওনা টা তো দিয়ে যা
আব্রাহাম;; পাওনা মানে কিসের পাওনা?
অয়ন;; ভিতরে বউ এর কাছে যাওয়ার আগে আমাদের পাওনা দিয়ে যা ৩০ হাজার, তারপর বউ এর কাছে যা
আব্রাহাম;; কিইইই, এখন নিজের বউ এর কাছে যাওয়ার আগে তোদের টাকা দিতে হবে,।
অয়ন;; আজ্ঞে হ্যাঁ
আব্রাহাম;; কি আজব
অয়ন;; কোন আজব টাজব না টাকা দাও টাকা দাও
আব্রাহাম;; বাপি তুমি কিছু বলছো না ওদের
আবির আহমেদ;; আমার বলার কিছুই নেই,, তোর ভাই যে কি পরিমান তেড়া তা তুই জানিস সো বলেও লাভ নেই
অয়ন;; দেখলি ভাই, বাপি ও বলছে দিয়ে দিতে দে দে এখন তাড়াতাড়ি টাকা বের কর আর বউ এর কাছে যা
আব্রাহাম;; আজ আর তোকে কিছু বললাম না, পরে দেখে নিবো
অয়ন;; 😁😁

আব্রাহাম বিরক্তি নিয়ে অয়ন এবং তার বন্ধু দের ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দিলো।
অবশেষে আব্রাহাম তার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। ঘরে কারো আসার আওয়াজ পেয়ে আইরাত আরো গুটিসুটি মেরে বসলো। আজ ঘরটা একদম আব্রাহামের মনের মতো করে সাজানো হয়েছে। ডার্ক রেড রোজ এবং বেলীফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছে পুরো ঘর। ঘরের মধ্যে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে আইরাত। আব্রাহামের মন যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে আইরাত কে দেখে। আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসে পড়লো। আইরাতের ঘোমটা সরিয়ে দিলো। আইরাতের চেহারা দেখে আব্রাহামের বুকের ভিতরে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। কান্না করতে করতে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে নিজের। আব্রাহাম আলতো করে ফু দিয়ে আইরাতের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আইরাত কেপে উঠলো। আব্রাহাম খেয়াল করলো আইরাতের ঠোঁটজোড়া কাপছে। আব্রাহামের কেমন নেশা হতে লাগলো। সে ক্রমাগত আইরাতের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আইরাত সহ্য করতে না পেরে আব্রাহাম কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বিছানার নিচে নেমে পড়লো। আইরাতের এমন কান্ডে আব্রাহাম রাগ করতে চেয়েও পেলো না। কেননা আব্রাহাম বুঝতে পারছে যে আইরাতের ওপর দিয়ে যা গিয়েছে তা সত্যিই কষ্টদায়ক। আব্রাহাম উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।

আব্রাহাম;; আইর….
আইরাত;; একদম না, একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না আপনি। আপনি একজন খুনি, কিডনেপার আপনি। অনেক সহ্য কিরেছি আমি কিন্তু আর না। বাধ্য হয়েছি আপনাকে বিয়ে করতে কিন্তু তাতে যদি আপনি ভেবে থাকেন যে আপনাকে আমি মেনে নিয়েছি তাহলে আপনি ভুল।
আব্রাহাম;; জানপাখি তুমি আমাকে ভুল বুঝ না আমি…
আইরাত;; আপনি, আপনি আমার মা ভাইকে আটকে রেখেছেন
আব্রাহাম;; না বেবি তারা এখন আর আটক নেই। তাদেরকে সাবধানে আমার লোকেরা বাসায় দিয়ে এসেছে। They ar now totally safe & sound
আইরাত;; কিন্তু আপনি কি করেছেন, আপনি আমাকে Blackmail করেছেন। আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছেন আপনি।
আব্রাহাম;; না জানপাখি, ভালোবাসি আমি তোমায় (এই কথা বলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো)
আইরাত;; Stop right there…. (এই বলে আইরাত তার পাশে থাকা কাচের বোতল নিয়ে টেবিলের ওপর বারি দিল। তাতে অর্ধেক বোতল ভেংে গেলো)
একদম কাছে এগোবেন না আমার নয়তো,, নয়তো আমি উলটা পালটা কিছু একটা করে ফেলবো বলে দিচ্ছি (ভাংা কাচের বোতল আব্রাহামের দিকে তাক করে)
আব্রাহাম;; আআআইরাত Baby girl প্লিপ্লিজ প্লিজ কাচের বোতলটা হাত থেকে ফেলে দাও, লেগে যাবে তোমার হাতে। ব্যাথা পাবে তুমি। হাত থেকে রেখে দাও বেবি (ভয় পেয়ে)
আইরাত;; না, রাখবো না আমি। আপনি আর একবিন্দু ও আমার কাছে আসবেন না নয়তো আমি নিজেকে শেষ করে দিবো বলে দিচ্ছি
আব্রাহাম; নননা না আইরাত প্লিজ এমন করো না, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না জানপাখি। প্লিজ ফেলে দাও ওটা।

আইরাত এখনও সেই কাচের বোতল আব্রাহামের দিকে তাক করে রেখেছে। আব্রাহাম শুধু ভয় পাচ্ছে যে আইরাত পাগলামি তে নিজের যেন কোন ক্ষতি করে না বসে। আব্রাহামের ভয় এই একটাই। কিন্তু হঠাৎ করে আব্রাহাম আইরাতের ভাই এর কথা তুললো

আব্রাহাম;; আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি যাবো না তোমার কাছে। কিন্তু আমাকে একটা কথা বলো তো জানপাখি।
আইরাত;;……………………………….
আব্রাহাম;; আয়ুশ মানে তোমার ভাই কোন স্কুলে যেন পরে
আইরাত;;……………………………….
আব্রাহাম;; আরে বলো বলো।
আইরাত;; আইডিয়াল স্কুল & কলেজ। কিন্তু কেন
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি যখন আজকে ওকে আনতে গিয়েছিলাম তখন তো ও এক অন্য স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল
আইরাত;; অন্য স্কুল মানে। আয়ুশ অন্য স্কুলের সামনে কি করছিলো
আব্রাহাম;; তা তো তোমার ভাই ই যানে

আইরাত কিছুটা চিন্তিত হয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেলো এবং হাতে থাকা কাচের বোতল টাও হাল্কা হয়ে গেলো। আব্রাহাম তা খেয়াল করে এক ঝটকায় আইরাতকে পেছন থেকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আইরাতের হাত থেকে খুব সাবধানে কাচের বোতল টা কেড়ে নিলো আব্রাহাম এবং দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো। আইরাতকে বিছানার ওপর এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।

আব্রাহাম;; খুব বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে তাই না। এখন যদি কোন ভাবে হাতের ভিতর কাচ লেগে যেত তাহলে কষ্ট টা কার হতো শুনি। Listen baby girl একটা কথা তুমি তোমার মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নাও যে আমি আব্রাহাম বেচে থাকতে তুমি এই যনমে আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না। তুমি আমার নামে লেখা আর এখন তো তোমার ওপর আমার পুরো অধিকার ও আছে। আর জানপাখি আজ আমাদের বাসর রাত,, আমি কোন ভাবেই এই রাত টাকে নষ্ট করতে চাই না।

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর আইরাত শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের আরো কাছে এসে পরলে আইরাত বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে পরে।

আইরাত;; একবার বললে শুনতে পান না আপনি। আমি না করেছি আপনাকে আমার কাছে একদম আসবেন না৷ ছুবেন না আমায় আপনি। বিয়ে করেছেন ঠিক আছে কিন্তু আমার ওপর বউ এর অধিকার কখনোই ফেলাতে আসবেন না আপনি,, কখনোই না।
আব্রাহাম;; দেখো জনপাখি আজ আমাদের বাসর রাত। আর আমি এতো টাও ভালো না যে তুমি আমাকে কাছে আসতে না করলে আর আমি আসবো না। নিজের অধিকার টা আমি খুব ভালো করেই আদায় করতে নিতে জানি। Come on baby girl,, কাছে আসো অযথা আমার মুডের বারো টা বাজিয়ো না তো।

আইরাত;; নাহ,, আসবো না। আপনি আমার শরীর পেতে পারেন কিন্তু ভালোবাসা কখনোই পাবেন না। (আরো কিছুটা দূরে গিয়ে)

এবার আব্রাহামের রাগ উঠে গেলো। অনেক চেষ্টা করেছে সে রাগ না করার, নিজের রাগকে সামলে নেয়ার কিন্তু এখন তার ধৈর্য ভেংে গেছে। আব্রাহাম আইরাতের কাছে গিয়ে আচকমা আইরাতের হাত ধরে টান দেয়,, আইরাত সোজা একদম আব্রাহামের বুকে এসে পরে। আইরাত অনেক ছুটাছুটি করছে আব্রাহামের কাছ থেকে দূরে সরার কিন্তু পারছে না।

আব্রাহাম;; Baby girl এখন তোমার শরীর পেলেই হবে। আর এতো ছটফট করো না তো এনার্জি নষ্ট হবে তখন রোমেন্স করবে কিভাবে হুমমম?!

আইরাত ফাটা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম আর এক মূহুর্ত দেরি না করে আইরাতের ঠোঁট জোড়া আকড়ে নিলো। পাগলের মতো করে চুমু দিতে লাগলো। আইরাত তার দুহাত দিয়ে আব্রাহামের বুকে ধাক্কাচ্ছে সরানোর জন্য কিন্তু আব্রাহামের সাথে সে পেরে উঠবে না। আব্রাহাম আইরাত এর গলায় মুখ ডুবালো। আইরাতের শরীর যেন হীম হয়ে আসতে লাগলো। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না তার। এক আলাদা অনূভুতি কাজ করছে নিজের মাঝে। কিন্তু তবুও আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রানপ্রনে চেষ্টা করছে। আব্রাহাম আইরাতের সব গহনা খুলে ফেলল। এক টানে লেহেংার পিছনের ফিতা খুলে দিলো। আইরাত পারছে না এসব সহ্য করতে,, নোনাজলের ধারা বয়ে যেতে লাগলো চোখ দিয়ে। কিন্তু আব্রাহামের আজ অন্য কোথাও হুশ-খেয়াল নেই। সে আজ আইরাতে মগ্ন। আইরাতের নেশাতে আবধ্য সে। এই নেশা যেন কেটে ওঠার নয়। আব্রাহাম তার কাজ চালিয়েই যাচ্ছে,, পিছপা হলো না সে তার কাজ থেকে।

এক সময় আইরাত ঘুমিয়ে গেলো। আব্রাহাম ও তার পাশে সুয়ে পড়লো। আইরাত ঘুমে কাতর। আব্রাহাম মায়াভরা চোখে ঘুমন্ত আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; Sorry baby really very sorry… আমি তোমার অমতে তোমাকে নিজের করে নিতে চাইনি কিন্তু কি করবো বল তোমাকে হারানোর ভয়ে সব সময় ভীত থাকি আমি। এই ভয় সবসময় পিছু করে বেড়ায় আমাকে। তুমি যদি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাও। কেন জানি না মাথায় এই চিন্তা টা বার বার আসে। আমি চাইনা, আমি চাইনা তোমাকে হারাতে জানপাখি তাই তোমাকে নিজের করে নিলাম। এখন তোমাকে হারানোর চিন্তা অনেক টাই কমে গেছে আমার। ভালোবাসি জান ভালোবাসি অনেক বেশি। আইরাতের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে আব্রাহাম উঠে করিডরে চলে এলো। ঘরে আর আসেনি সে কাল রাতে।বাকি রাত টুকু সে সেখানেই কাটিয়ে দিলো।















পরেরদিন সকালে🌄🌅,,,,,,,,,,,

আইরাতের ধীরে ধীরে চোখ খুলে এলো, নড়েচড়ে উঠলো সে। পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ ই নেই। আইরাত নিজের দিকে তাকালো সাথে সাথে তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। রাগে-লজ্জায় আইরাতের মাথা কাটা যাচ্ছে। আইরাত উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো সে। কান্না আসছে আইরাতের খুব। তবুও খুব কষ্টে আইরাত উঠে গিয়ে নিজেকে কোন রকমে ঢেকে নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ওয়াসরুমে গিয়ে সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে অঝোড়ে কাদতে লাগলো সে। আব্রাহাম দেখল সকাল হয়ে গেছে। আইরাতের কথা মাথায় আসতেই সে দ্রুত তার ঘরে চলে গেলো। ঘরে গিয়ে আব্রাহাম দেখল বিছানা খালি কেউ নেই। আব্রাহাম বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। আইরাত কে খুজতে লাগলো। ঠিক সেই সময় ওয়াসরুম থেকে কান্নার শব্দ ভেসে এলো। আব্রাহাম গিয়ে দেখলো দরজা লাগানো না ভালোভাবে,, তাই আব্রাহাম দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলো। আব্রাহাম ভিতরে গিয়ে দেখলো আইরাত সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে তার নিচে বসে ঢুকরে কান্না করছে। আব্রাহামের খুব মায়া হতে লাগলো দেখে। আব্রাহাম আর না দাঁড়িয়ে থেকে আইরাতের কাছে চলে গেলো। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে অবাক হয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে কোলে করে নিচ থেকে তুলে নিল। কিছুক্ষন পর আইরাত কে ফ্লোরে দাঁড় করিয়ে দিলো আব্রাহাম। আইরাত পরে যেতে নিলে আব্রাহাম আইরাতের কোমড় ঝাপটে ধরে। আইরাত না চাওয়া সর্তেও আব্রাহামের কাধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আইরাত এমনিতেই দুধ এর মতো ফর্সা তার মধ্যে ওপর থেকে ঠান্ডা পানি অনেকক্ষন যাবত গায়ে পরার কারণে শরীর আরো সাদা হয়ে গেছে। আব্রাহামের সাদা শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেগে গেছে। গায়ের সিরা সিরা সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠেছে।ফিট বডিতে তে ভিজা সাদা শার্ট যেন অপরুপ মানিয়েছে। কেউ ই কোন কথা বলছে না। আব্রাহাম আইরাতের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে দুহাত দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে সাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আব্রাহামের চোখ হঠাৎ গিয়ে ঠেকলো আইরাতের গলাতে। সাদা গায়ে দুটো কালো তিল যেন ফুটে ওঠেছে। আব্রাহাম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। আব্রাহাম আইরাতকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে মুখ ডুবালো তার গলাতে। আইরাত সিওরে উঠলো। আব্রাহাম বলে উঠলো….

আব্রাহাম;; আজ থেকে, এখন থেকেই অভ্যাস করে নাও জান। প্রতিদিন এভাবেই ফ্রেশ হতে হবে তোমাকে। আমাকে ছাড়া ফ্রেশ হওয়া একদম যাবে না বুঝেলে। হলেও আবার তুলে এনে জোড় করে করাবো।

এভাবেই দুজন একসাথে বেশকিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
🍂🧡চলবে~~~~~