Gangstar In Love Part-34+35

0
2744

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 34

💞💞..
..
..
..
..
..

In Chowdhury group & Industries…..
.
.
.
.
.

আব্রাহাম;; শহরের প্রতিটি জায়গায় জায়গায় খোঁজ করো। কোন একটা জায়গা যেন বাদ না যায়। আর হ্যাঁ প্রত্যেকটা হস্পিটালও খুব ভালোভাবে চেক করবে। গত দুই বছরের সব রেকর্ডস্ চেক করো। কখন কোন পেসেন্ট আসলো, নাম কি ইভেন ঠিকানা পর্যন্ত। আর সব ইনফরমেশন আমার চাই, Is it clear?!

_______;; Yes sir..

আব্রাহাম এতক্ষণ নিজের কেবিনে বসে ফোনে অস্থির হয়ে কথা বলছিলো। আব্রাহাম আবারও এসে বসে পড়লো। বসতেই ওপরে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। অয়নও আব্রাহামের কেবিনেই বসে বসে ফাইল দেখছিলো। আর আড় চোখে তার ভাইকে দেখছে। অয়ন এবার ফাইল গুলো বন্ধ করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…

অয়ন;; ভাই আবারও কি শুরু করলি তুই?

আব্রাহাম;; __________

অয়ন;; কেন এমন করছিস?

আব্রাহাম;; কি করেছি!

অয়ন;; কি করেছিস তুই জানিস না। পুরো ফোর্স যেখানে রাত-দিন এক করে খোঁজ করেও পায় নি আবার তুইও তোর যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে গেছিস তবুও বউমনিকে পাস নি। তাহলে কেন আবার এতো টা বছর পর এমন করছিস?!

আব্রাহাম;; অয়ন ট্রাস্ট মি, আমি আইরাতকে দেখেছি। আমি আমার নিজেকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু আইরাত, আমি আমার আইরাতকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল কোনদিনও করবো না। সেই চোখজোড়া, সেই ঠোঁট, সেই মায়াভরা মুখ আমি কোনভাবেই ভুলতে পারি না, পারবো না। কেন বিশ্বাস করছিস না যে আমি আইরাতকে দেখেছি। ও আছে।

আব্রাহামের কথায় এবার অয়নের রাগ উঠে গেলো। কারণ সে বুঝতে পারছে যে দিন দিন তার ভাইয়ের মাথা যাচ্ছে। একজন সুস্থ-বুঝমান মানুষের পক্ষে এমন আজগুবি কথা বলা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই না।

অয়ন;; Enough দাভাই, অনেক হয়েছে আর না। এমন ছেলেমানুষী করার মানে কি। তুই কি অবুঝ বুঝিস না কিছু, কেন এমন করছিস সত্যি টা তুইও জানিস আর আমরাও তাহলে কেন মেনে নিচ্ছিস না বলতো। মৃত একজন মানুষ যে কিনা এক বছরের বেশি হয় মারা গিয়েছে সে আবার কি করে ফিরে আসতে পারে বুঝা আমাকে তুই।

অয়নের “মৃত” কথাতে সেকেন্ডেই আব্রাহামের মাথায় রাগ চড়ে বসে। আব্রাহাম চেয়ারে বসে হাতে করে কাচের গ্লোব ঘুরাচ্ছিলো। অয়নের এমন কথায় ঠাস করে হাতে থাকা গ্লোবটা নিচে ছুড়ে মারে। সেটা টুকরো টুকরো হয়ে যায় সাথেই সাথেই। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে পরে…

আব্রাহাম;; অয়ন Mind your language,, যেটুকু বলেছিস সেখানেই থেমে যা। মানে কি তোর মৃত মানে কি। আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি আইরাতকে আর তা কোনভাবেই ভুল হবে না। যেই আমি কিনা হাজার হাজার মানুষ কে মারি তাকে অন্তত তুই মৃত আর জীবিত এর মধ্যে পার্থক্য শিখাস না। কোনটা হেলুসিনেশন আর কোনটা বাস্তব তা আমি অনেক ভালো করেই জানি। (রেগে)

অয়ন আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায় কেননা সে আব্রাহামকে রাগাতে চায় না। এখন রাগ উঠলেই উল্টো পাল্টা একটা কিছু করে বসবে। তাই যা করার তাকে তা করতে দেওয়ার ভালো। দেখা যাক এর শেষ পরিনতি কি হয়।
আব্রাহাম শুধু রাগে ফুসছে। সেখানে আর না দাঁড়িয়ে কেবিন থেকে দ্রুত হেটে বের হয়ে পরে। অয়ন আবারও সেখানে চুপ করে বসে পরে এবং ভিতরে থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে।

_____________________

আব্রাহাম সেখানে থেকে চলে এসে অফিসের করিডরে দাঁড়ায়। একহাত পকেটে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে,, এখন তার মাথায় শুধু একই ভাবনা যে করেই হোক আইরাতকে তার খুঁজে বের করতেই হবে। যাই হোক আইরাতকে তার সামনে চাই। আব্রাহাম সিগারেট জ্বালিয়ে তার মুখের কাছে ধরলো। খানিক বাদেই ফোন আসলো তার।

রাশেদ;; স্যার, Good news.. আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।

আব্রাহাম;; What!

রাশেদ;; স্যার, আমি সকল হস্পিটালের রেকর্ডস্ & সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি।

আব্রাহাম;; কি পেলে?

রাশেদ;; স্যার, স্যার আইরাত ম্যামকে এই হস্পিটালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে।

আব্রাহাম;; What, really! (অনেক চমকে + খুশি হয়ে)

রাশেদ;; জ্বি স্যার এবং এখানে একটা ফাইল ছিলো সেটা আইরাত ম্যামের নামেই। কিন্তু…

আব্রাহাম;; কিন্তু কি!

রাশেদ;; স্যার এই ফাইলে নিপা নামে একজনের সাইন আছে। আর আমি এগুলো হস্পিটালের রিসিপশনিস্ট এর কাছ থেকে পেয়েছি। দু বছর আগে যে ডাক্তার ছিলো তিনি বর্তমানে রিটায়ার্ড।

আব্রাহাম;; যাই হোক হস্পিটালের নাম কি?

রাশেদ;; স্যার “সিটি হস্পিটাল”।

রাশেদের বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের দৌড়িয়ে অফিস থেকে বের হতে দেরি না। আব্রাহামকে এভাবে দৌড়িয়ে বাইরে যেতে দেখে অফিসের সবাই অবাক। ড্রাইভার কে সাথে না নিয়ে নিজেই একা একা ড্রাইভ করে চলে যায়। অয়ন উপর থেকে নিচে দেখে যে আব্রাহাম দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। অয়ন কিছু না বলে ভিতরে চলে আসে। ঝড়ের গতিতে ড্রাইভ করে চলেছে আব্রাহাম। ১০ মিনিটের মধ্যে সিটি হস্পিটালে পৌঁছে যায়। আব্রাহাম যাওয়ার সাথে সাথে রাশেদ তার দিকে এগিয়ে আসে।

রাশেদ;; স্যার এসেছেন।

আব্রাহাম;; ফুটেজ কোথায়?

রাশেদ;; স্যার এদিকে আসুন।

রাশেদ আব্রাহামকে রিসিপশনের কাছে নিয়ে গেলো।

রিসিপশনিস্ট;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী Right!

আব্রাহাম;; You know me?!

রিসিপশনিস্ট;; আপনাকে কেই বা না চিনে,, So sir how can i help you?

আব্রাহাম;; Can i saw the CCTV footage and all patients paper from the last two years?!

রিসিপশনিস্ট;; Sure sir,, here you go..

আব্রাহামের সামনে গত দু বছরের সব সিসিটিভি ফুটেজ রাখা হলো। এতো গুলো ফুটেজ একসাথে দেখা খুবই মুশকিল।

আব্রাহাম;; আচ্ছা এখানে আইরাত নামে কোন পেসেন্ট এসেছিলো কি?

রিসিপশনিস্ট;; স্যার একটু চেক করে দেখতে হবে। Wait a minute…

আব্রাহাম;; হুমম

রিসিপশনিস্ট;; জ্বি স্যার এখানে প্রায় এক বছরেরও অনেক আগে একজন মেয়ে এসেছিল তার নাম আইরাত। আর এই হচ্ছে তার পেপার।

আব্রাহাম;; আচ্ছা তার সাথে আরো কে কে এসেছিলো বলতে পারবেন কি? (পেপার হাতে নিয়ে)

রিসিপশনিস্ট;; সরি স্যার, আমরা পেসেন্টের পারসোনাল এতো কিছু ঘাটাঘাটি করি না। কিন্তু উনার নামে যে পেপার রয়েছে সেখানে নিপা খান নামে একজনের সই আছে।

আব্রাহাম;; হুমম তা দেখেছি। আচ্ছা এই নিপা খানের এড্রেস টা কি দিতে পারবেন প্লিজ?

রিসিপশনিস্ট;; জ্বি স্যার। স্যার, উনার এড্রেস হচ্ছে “চার রাস্তার মোড়, রোড নং ১০২ এবং বাসা নং ৫৫।

আব্রাহাম;; Thank you so much for your information…

রিসিপশনিস্ট;; স্যার আসলে আপনাকে আটকানোর সাধ্য তো আর আমাদের নেই কিন্তু Sir if you Don’t mind can i ask you a question?

আব্রাহাম;; Yes

রিসিপশনিস্ট;; এই আইরাত নামে মেয়েটাকে আপনি এতো হন্ন হয়ে কেন খুজছেন। কে হয় উনি আপনার?

আব্রাহাম তার কথা শুনে মৃদু হাসে।

আব্রাহাম;; আমার পুরো অস্তিত্ব,, আমার বউ হয়।

রিসিপশনিস্ট;; ওহ আচ্ছা,, Have a happy life sir…

আব্রাহাম;; Yeah (মুচকি হেসে)।











নিপা;; কিরে তোরা কি করিস?

আইরাত;; আর বলিস না, কিছু পেন্ডিং কাজ পরে ছিলো তাই করে নিলাম।

নিপা;; রাত্রি কোথায়?

আইরাত;; ওর নাকি শরীর টা ভালো লাগছে না তাই সুয়ে আছে।

নিপা;; আবার হঠাৎ করেই কি হলো ওর?

আইরাত;; মাথা ব্যাথা।

নিপা;; ওহহ

আইরাত;; আচ্ছা শোন, আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে বুঝলি।

নিপা;; এই সময়ে বাইরে কেন?

আইরাত;; আসলে আমি না কিছু লেহেঙ্গার ডিজাইন দেখে এসেছিলাম, সেগুলোই নিতে যেতে হবে।

নিপা;; আচ্ছা যা, কিন্তু একাই যাবি?

আইরাত;; হ্যাঁ আমি বরং একাই যাই আর তুই রাত্রিকে দেখে শুনে রাখিস।

নিপা;; আচ্ছা যা সাবধানে যাস।

আইরাত;; ওকে জানু, লাপ্পিউ Bye…

আইরাত নিপার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।









অন্যদিকে আব্রাহাম প্রচুর স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। নিপার ঠিকানাতে যাচ্ছে সে। যেহেতু আইরাতকে হস্পিটালে নিপাই নিয়ে গিয়েছিলো তাহলে আইরাতের সাথে এখন সেই রয়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ আব্রাহাম জলদি করে তার পাওয়া জায়গায় চলে গেলো। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সামনে তাকাতেই দেখলো একটা বাড়ি রয়েছে। ৫৫ নাম্বার বাড়িই এটা। তবে বাড়িটাতে কেমন যেন একটা পুরনো পুরনো ভাব রয়েছে। আব্রাহাম এগিয়ে গেলো, গিয়েই আলতো করে দরজাতে টোকা দিলো। প্রথমে না খুললে, দ্বিতীয়বার আবার টোকা দিলে ভিতর থেকে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বের হয়ে আসলো। আব্রাহাম তাকে দেখে খানিক অবাকই হলো।

আব্রাহাম;; আব…. আসলে এখানে কি নিপা নামে কেউ থাকে?

মহিলা;; নিপা! (মহিলাটি নিপা নাম শুনে কিছুটা ভাবতে লাগলো)

আব্রাহাম;; জ্বি নিপা, নিপা খান।

মহিলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ নিপা খান। আমি ওকে চিনি তো। আগে এখানেই থাকতো। তার সাথে আরো একটা মেয়ে থাকতো। তবে এখন আর এখানে থাকে না।

মহিলাটির কথায় আব্রাহামের মুখে হাসি ফুটে ওঠে সে ভাবে সে মেয়েটি আর কেউ না আইরাত। তাই তড়িঘড়ি করে আব্রাহাম তার ফোন বের করে আইরাতের ছবি মহিলাটির সামনে ধরে এবং বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; দেখুনতো এই মেয়েটি কিনা, নিপার সাথে কি এই মেয়টি ছিলো?

মহিলাটি আব্রাহামের কাছ থেকে ফোন টা আরো কাছে নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো।

মহিলা;; না না এই মেয়ে ছিলো না তো।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে ছিলো না! (মূহুর্তেই আব্রাহামের মুখের মৃদু হাসি খানা উবে গেলো)

মহিলা;; না তার সাথে মেয়ে ছিলো ঠিকই কিন্তু এই মেয়ে না। কি যেন নাম মেয়েটার (একটু ভেবে) ইশশ কি যেন কি যেন নাম,,,, হ্যাঁ রাত্রি। রাত্রি নাম ছিলো তার, নিপারই বোন হয় সে।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা, এখন তারা কোথায় থাকে তা কি বলতে পারবেন?

মহিলা;; না তা তো বলতে পারবো না।

আব্রাহাম;; জ্বি আচ্ছা, ধন্যবাদ।

মহিলা;; জ্বি।

আব্রাহাম কিছুটা হতাশ মুখেই ফিরে এলো মহিলাটির কাছ থেকে। এতো টা কাছে পেয়েও পেলো সে তার আইরাতকে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তো আব্রাহাম নয়। একবার যখন আইরাতকে সে দেখেছে তাহলে আকাশ-পাতাল এক করে হলেও তাকে খুঁজে বের করে আনবেই। আব্রাহাম ধীর পায়ে এসে আবার গাড়িতে ওঠে বসে পড়লো। দু হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলতে লাগলো সে। প্রতিনিয়ত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে যাচ্ছে সে আইরাতকে ভেবে কিন্তু এখন মনে হয় আবার সে তার ঘুমানোর কারণ খুঁজে পাবে। কিছু ছোট্ট বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের আওয়াজে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো সে। দেখলো যে বাচ্চারা আইসক্রিমের মিনি দোকানের সামনে খুশিতে লাফাচ্ছে। আব্রাহামের তৎক্ষনাত আইরাতের কথা মনে পরে গেলো। আইরাতও বাচ্চা দের অনেক পছন্দ করতো। বাচ্চাদের সাথে খেলা, দৌড়াদৌড়ি করা হয়েই থাকতো তার। নিজে তো বড়ো হয়ে গেছে কিন্তু তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাচ্চামো স্বভাবটা এখনো যায় নি। আব্রাহামের মুখে অনেকদিন পর এক দীর্ঘ হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে বাচ্চাগুলোর কাছে চলে যায়। বাচ্চাগুলো কে অনেক আইসক্রিম-চকলেট কিনে দেয়। বাচ্চাগুলোর তা পেয়ে খুশির যেন সীমা নেই। অনেক হাসছে আর লাফাচ্ছে। আব্রাহাম নিজেও তাদের সাথে বাচ্চা হয়ে গেছে। তাদের সাথে কথা বলছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।




আইরাত বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা তে উঠে পরে।

আইরাত;; মামা একটু জলদি যান প্লিজ।
রিকশাওয়ালা;; যে আপু এইতো আইসা পরছি।
আইরাত;; ব্যাস ব্যাস মামা এখানেই নামিয়ে দিন আমাকে।

আইরাত রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে আসে। আইরাত তাকিয়ে দেখে এটা রোড নং ১০২। আইরাত তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাকে যেন call দেয়। আইরাত কথা বলতে লাগে।

আইরাত;; তুলি, কোথায় তুই?

তুলি;; আরে এইতো এইতো এসে পরেছি আমি। তুমি কোথায় আছো?

আইরাত;; আরে আমি ১০২ নাম্বার রোডে এসে দাড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি আয়।

তুলি;; আমি দুইমিনিটের মধ্যে আসছি, তুমি ওখানে থেকো।

আইরাত;; আচ্ছা ঠিকআছে।

আইরাত ফোন কেটে দিয়ে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে আইরাত যার কাছ থেকে লেহেঙ্গার সব ডিজাইন নিতে এসেছে সে তুলি, তার বাসায় কখনো যায় নি। তবে এই তুলির সাথেই আইরাত কাজ করে। তাদের অনেক ছোট হয় তুলি। তার বাসাও ১০২ নাম্বার রোডেই।
আইরাত রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের ঠিক পিছনের রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম কিন্তু একে ওপরের চোখের অগোচরে। আব্রাহাম বাচ্চাদের সাথে আছে। আর আইরাত একরাশ বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কেন জানি আব্রাহামের ভিতরে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করছে। আগে তার আশেপাশে আইরাত থাকলে যেমন তার একটা শান্তি লাগলো এখনো ঠিক তেমিনই অনুভুতি কাজ করছে মনে। আব্রাহাম তার সামনে কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকালো। ডানে বামে বার বার দেখছে সে। এদিকে আইরাত তার হাতের ঘড়ি দেখছে আর সামনে তাকাচ্ছে। অল্প কিছু সময়ের পর তুলি দৌড়ে আইরাতের সামনে এসে দাড়ালো।

তুলি;; এইরে সরি সরি সরি সরি।

আইরাত;; এতো দেরি, তুই বলেছিলি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবি কিন্তু উল্টো আমাকেই তোকে ফোন করে ডেকে আনতে হলো।

তুলি;; সরি বোনু সরি আর হবে না তো।

আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে হয়েছে।

তুলি;; হুমম এবার চলো তাড়াতাড়ি।

আইরাত;; চল।

আইরাত চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আব্রাহাম পিছন ফিরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে কেউই নেই। আব্রাহাম পিছনে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু একটা বাচ্চা আব্রাহামের হাত ধরে টান দেওয়াতে আবারও সামনে ঘুড়ে তাকায়। বাচ্চাদের সাথে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে পরে।

আব্রাহাম;; হ্যালো রাশেদ

রাশেদ;; জ্বি স্যার

আব্রাহাম;; আমি গিয়েছিলাম নিপা কে খুঁজতে কিন্তু এখন তিনি ওই বাসায় থাকেন না। বর্তমানে যে থাকেন তিনি নিপা কে চিনলেও আইরাত কে চিনেন না। তো এই নিপা এখন কোথায় থাকে তার ঠিকানা আমার চাই। তাও আবার একদিনের মধ্যেই।

রাশেদ;; স্যার আপনি কালকের মধ্যেই সব কিছু পেয়ে যাবেন।

আব্রাহাম রাশেদের সাথে কথা বলে গাড়ি সোজা বাসার দিকে নিয়ে নেয়।





In চৌধুরী ভবন..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম আসতেই লিজা গিয়ে মেইন দরজা খোলে দেয়। আব্রাহাম লিজাকে দেখে তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

আব্রাহাম;; বাপি বাড়ি এসেছে?
লিজা;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে দৌড়ে তার বাপির কাছে চলে যায়। গিয়ে দেখে তার বাপি আর অয়ন একসাথে বসে আছে।

আব্রাহাম;; বাপি

আবির আহমেদ;; এসব কি শুনছি আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; কি বাপি! (অবাক হয়ে)

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি…

আব্রাহাম;; বাপি, যা শুনেছ একদম ঠিক শুনেছ। আমার আইরাত, আইরাত ঠিক আছে। ইভেন আমি আইরাতকে নিজ চোখে দেখেছিও। আইরাতের এক্সিডেন্ট হয়, এক্সিডেন্ট হওয়ার পর নিপা নামে একজন তাকে হস্পিটালে নিয়ে যায়। আমি সব সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছি বাপি। আমার আইরাত আছে বাপি। (তার বাপিকে জড়িয়ে ধরে)

আবির আহমেদ কে এবং অয়ন কে সবকিছু খুলে বলার পর তারা চরম অবাক হয়ে যায়। আবির আহমেদ ধপ করে বসে পরে। চোখ দিয়ে তার অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরে। অয়নও এই ভেবে অবাক হচ্ছে যে তার দাভাইয়ের কথাই ঠিক ছিলো।

অয়ন;; সরি দাভাই তোকে অবিশ্বাস করার জন্য।

আব্রাহাম;; (আব্রাহাম কিছু না বলে অয়নকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে)

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা, তুই এখন যেকরেই হোক যেভাবেই হোক আইরাত মাকে বাড়িতে নিয়ে আয়। আমার ঘরের লক্ষিকে ঘরে নিয়ে আয়। আমার বাড়িটা আবার তার প্রাণ ফিরে পাবে।

আব্রাহাম;; সেদিন আর বেশি দূরে নেই বাপি। খুব শীঘ্রই আইরাত এই বাড়ি চলে আসবে।

আব্রাহাম তার বাপি এবং অয়নের সাথে কথা বলে ওপরে তার ঘরে চলে আসে।











🌹🌹চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 35

💜💐..
..
..
..
..
..

সারারাত আব্রাহাম ঘুমোতে পারে নি, আইরাতের চিন্তায় চিন্তায় সারারাত নির্ঘুম পার করে দিয়েছে। চোখজোড়া বন্ধ করলেই আইরাতের সেই চেহারা চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে। ঠিক মতো না পারে খেতে, কাজ করতে, ঘুমোতে কিচ্ছু না। আইরাতকে না পাওয়া পর্যন্ত তার মনে-প্রাণে শান্তি নেই। অন্যান্য দিনের মতো আজও নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে লাগলো। সারারাত পার হওয়ার পর ভোরের দিকে চোখ লেগে আসে তার।
.
.
.

পরেরদিন~~

আব্রাহাম অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে ছিলো। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেংে যায় তার। ছোট ছোট চোখেই ফোন রিসিভ করে সে। ওপর পাশ থেকে রাশেদের কন্ঠ ভেসে আসলে দ্রুত উঠে পরে সে।

আব্রাহাম;; কোন খবর পেলে?

রাশেদ;; স্যার বলেছিলাম না যে করেই হোক আপনাকে সকালের মধ্যেই সকল খবর এনে দিবো। স্যার এই নিপা খান নামে মেয়ে একটা ফ্লাট নিয়ে থাকে। উনার ঠিকানা “বিসিক রোড, ফ্লাট নং ০৩”।

আব্রাহাম;; রাশেদ আমি বলে বুঝাতে পারবো না যে তুমি আমার কতো বড়ো একটা কাজ করে দিয়েছ। আমি রাখছি।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম উঠে ফ্রেশ হয়ে জলদি করে নিচে নেমে পড়লো। হলরুমে আসতেই অয়নের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।

অয়ন;; আরে দাভাই এতো জলদি জলদি কোথায় যাচ্ছিস?

আব্রাহাম;; অয়ন, আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বুঝলি। আজ আমি কোন ভাবেই অফিসে যেতে পারবো না প্লিজ তুই সবকিছু সামলে নিস।

অয়ন;; আচ্ছা ঠিকআছে তা তো বুঝলাম কিন্তু….

আব্রাহাম;; কোন কিন্তু না আমি যাই এখন আমার অনেক তাড়া আছে Bye..

আব্রাহাম এই বলে আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত হেটে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরলো। আব্রাহাম কোন দিকে খেয়াল না করেই ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। প্রায় ২০ মি. পরে বিসিক রোড নামক জায়গায় এসে পরলো সে। ফ্লাট নং ৩ খুজতে লাগলো। কিছুটা সামনে এগোতেই দেখলো অনেক উঁচু একটা বিল্ডিং। সেদিকেই আব্রাহাম চলে গেলো, কিন্তু মুখে মাস্ক পরে।



রাত্রি;; ঘরে স্নেক্সস্ জাতীয় কিছুই নেই।

আইরাত;; আর আমার সব চোকলেট & আইসক্রিমও শেষ 😒

নিপা;; বলছিস কাকে, শেষ তো বাইরে গিয়ে নিয়ে আয় যা।

রাত্রি;; ননা ওই তো আমার না আসলে মাথা ব্যাথা। আর আমার কিছু কাজ ও আছে তাই আমি যেতে পারবো না।

আইরাত নিপার দিকে তাকালে নিপা সোজা অন্যদিকে ঘুড়ে যায়। আইরাত আহত দৃষ্টিতে রাত্রি এবং নিপার দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; এক একটা কাম চোর, সব কিছু আমাকেই করতে হবে বাহ ভালোই। বাইরেও যাবো আমি, বাজারেও যাবো আমি বাহ ভালো না। থাক তোরা দেখিস তোদের জন্য আমি কিছুই আনবো না সবকিছু নিজেই খেয়ে শেষ করে ফেলবো।

রাত্রি-নিপা;; 🤪

আইরাত তাদের দুজনকে বকতে বকতে কোন রকম চুল বেধে বাইরে বের হয়ে গেলো। নিপা আর রাত্রি হেসেই কুটিকুটি।



আব্রাহাম বিল্ডিং এর ভিতরে যেতেই বিল্ডিং এর কেয়ার টেকার আব্রাহামকে হাত দিয়ে আটকে দেয়। আব্রাহামের বেশ রাগ উঠে যায় এতে। রক্তচোখে কেয়ার টেকারের দিকে তাকায়।

কেয়ার টেকার;; Excuse me, আপনি কে আর এভাবে ভিতরে কেনো যাচ্ছেন?

আব্রাহাম কিছু না বলে মুখের মাস্ক টা হালকা করে খুলে…

আব্রাহাম;; আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আব্রাহামের নাম শুনতেই কেয়ার টেকারের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি করে হাত নামিয়ে দিয়ে বলল..

কেয়ার টেকার;; সসসরি সরি স্যার, আমি বুঝ বুঝতে পারি নি রেলি ভেরি সরি স্যার।

আব্রাহাম;; এটা ০৩ নাম্বার ফ্লাট!

কেয়ার টেকার;; জ্বি, জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; নিপা খান নামে কেউ এখানে থাকে?

কেয়ার টেকার;; নিপা খান,, জ্বি স্যার থাকেন। ওপরের পাচঁ তালায় তিনি থাকেন।

আব্রাহাম আর কিছু না বলে ভিতরে চলে আসে। সামনে এসে লিফট দেখতে পেলে আব্রাহাম পাচঁ তালার বাটনে প্রেস করে। কিন্তু কাজ করে না। পুনরায় প্রেস করলে আবারও কাজ করে না। অন্য লিফটে গেলে সেখানে দেখতে পায় ওপরে লেখা “Closed”। আব্রাহাম আর কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে হেটে ওপরে যেতে লাগে।

___________________

আইরাতও বেরিয়ে পরে লিফটের কাছে যায়। লিফটের বাটনে চাপ দিলে কাজ করে না। আইরাত বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। তখন ফ্লাটের দারোয়ান এসে দেখে যে আইরাত কোমড়ে হাত দিয়ে বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দারোয়ান;; আরে আইরাত আফা যে,,

আইরাত;; ওহ মামা এসেছ তুমি। ভালো করেছ, আচ্ছা লিফটের কি হয়েছে কাজ করছে না কেন?

দারোয়ান;; আফা লিফটের তো কাজ চলতাছে। দুইদিন এমনই থাকবো। করার কিছুই নাই এহন নিচে সিড়ি দিয়া যাতায়াত করতে হইবো।

আইরাত;; উউফফফ আল্লাহ। আচ্ছা মামা থাকো আমি গেলাম।

দারোয়ান;; আইচ্ছা আফা।

আইরাত সেখান থেকে এসে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগে। একদিকে আব্রাহাম সিড়ি দিয়ে ওপরে যাচ্ছে আর একদিকে আইরাত নিচে নামছে। কিন্তু আইরাতের ফোন আসায় সে আবার থেমে যায় এবং ফোনে কথা বলতে লাগে। আব্রাহাম দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে ওপরে যাচ্ছে। আইরাতের কথা বলা শেষ হলে ফোন রেখে আবার হাটা ধরে। আইরাত সোজা গিয়ে বামে যায়। আব্রাহামও তার দিক থেকে সোজা গিয়ে ডানে যায়, তারপর মোড় ঘোড়ে। আইরাত তার ব্যাগের ভিতরে দেখতে দেখতে সামনে যাচ্ছে। ব্যাগের দিকে নজর থাকাতে আইরাতের তার সামনে তেমন একটা খেয়াল ছিলো না। আরো সামনে এগোতেই একটা শক্ত কিছুর সাথে অনেক জোড়ে বারি খায়। বারি খাওয়ার সাথে সাথেই আইরাত তার মাথা চেপে ধরে “আহহ” করে ওঠে। মাথায় হাত দিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে কুচকে ফেলে। মাথা ডলতে থাকে সে। কিন্তু যার সাথে বারি খেয়েছে তার যেন দুনিয়া চারিদিকে চক্কর খাচ্ছে। মাথায় পুরো আকাশ ভেংে পরেছে তার। ফাটা চোখে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে। কারণ, আইরাত যার সাথে বারি খেয়েছে সে আর কেউ না স্বয়ং আব্রাহাম। আইরাতকে দেখে তার এক সেকেন্ড ও লাগে নি চিনতে। আব্রাহামের ভিতরে মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। দম নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। এক গভীর শ্বাস নিল এবং টপ করেই তার চোখ দিয়ে একবিন্দু পানি গড়িয়ে পরলো। আব্রাহাম পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে কিন্তু আইরাত এখনো তার মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

আইরাত;; ইশশশশশ,, আজকে সকালে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। পুরো দিন টাই মাটি। সেই সকাল থেকে কিছু না কিছু একটা আমার সাথে হয়েই যাচ্ছে। এই বাইরে যাও, তারপর লিফট নষ্ট আর এখন এই খাম্বা। এই কেরে দেখে শুনে হাটতে পারে না নাকি। আস্ত খাম্বা একটা।

আইরাত তো চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে। সামনে তাকিয়ে দেখছেও না যে কে দাঁড়িয়ে আছে। অবশেষে আইরাত তার সামনে তাকালো। তাকাতেই আইরাতের বুক টা কেমন ধুক করে উঠলো। কেননা আব্রাহাম যতই মাস্ক পরে থাকুক না কেন আব্রাহামের সেই নীলাভ চোখজোড়া আইরাতের খুব চিরচেনা। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আইরাত পুরো পুরি আব্রাহামকে এখনো চিনতে পারেনি। আইরাত এতোক্ষণ এতো বকবক করলো কিন্তু সামনে তাকাতেই তার বলতি যেন বন্ধ হয়ে গেলো। আইরাত আর কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে আবারও সামনে এগিয়ে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম, আব্রাহাম যেন একটা ঘোরের মাঝে রয়েছে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে সে মাত্রই আইরাতকে দেখেছে। তার জীবনের বেচে থাকার কারণ কে সে আবারও ফিরে পেয়েছে। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে থাকতে হিমশিম খেয়ে গেলো। যার জন্য কয়েক কদম পিছিয়েও গেলো। চোখে তার নোনা জল। কিন্তু সামনে তাকিয়ে আইরাতকে না দেখে আব্রাহামের হুশ ফিরে আসলো। আব্রাহাম আইরাতের পিছে ছুট লাগালো। আইরাত নিজের মতো করে যাচ্ছিলো। কিন্তু তখনই আব্রাহাম তীব্রবেগে আইরাতের সামনে এসে তার পথ আগলে ধরলো। আইরাত প্রচন্ড অবাক হয়ে সামনে তাকায়। আব্রাহামের চাহনি দেখে আইরাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। সবকথা দলা পাকিয়ে গলায় আটকা পরে গেছে। চেয়েও কিছুই বলতে পারছে না সে।

আইরাত;; ককে আআপনি, আর এএভাবে আমার পথই বা কেকেন আটকে ধরে রেখেছেন। সামনে থেকে সরুন। (খুব কষ্টে কথা টা বলল)

আব্রাহাম কিছু না বলে শুধু আইরাতকে দেখেই যাচ্ছে। যেন হাজার যনমের পিপাসা মিটাচ্ছে। এ যেন মরুভূমিতে এক ফোটা পানির আস্বাস। চোখজোড়া তে এক আলাদা শান্তি অনুভব হচ্ছে।

আব্রাহামকে কিছু বলতে না দেখে আইরাত আবারও বলে উঠলো…

আইরাত;; কি হলো কথা কি কানে যাচ্ছে না নাকি। পথ ছাড়ুন আমার।

আইরাতের কথা শুনে আব্রাহাম ধীরে ধীরে তার মুখের মাস্ক খুলে ফেললো। আইরাতের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে আব্রাহাম।

আব্রাহামকে দেখে আইরাত যেন আর নিজের মধ্যে নেই। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে তার। এতো দিন পর কি তাহলে তার কালো অতীত আবার সামনে এসে পরলো। আইরাতের হাত থেকে তার ব্যাগ নিচে পরে গেলো। হাত-পা একাধারে কেপেই যাচ্ছে তার। আইরাতের নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে তার সামনে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের এখন খুব করে ইচ্ছে করছে যেন আব্রাহামকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিন্তু সে অপারক। চেয়েও পারবে না সে, এক অজানা বাধন তাকে বাধা দিচ্ছে। আইরাত তাড়াহুড়ো করে তার চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো। নিচ থেকে তার ব্যাগ তুলে আবার সামনে হাটা ধরলে শুধু কয়েক কদমই যেতে পারে সে। আব্রাহাম তার আগেই খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেললো। হাত ধরে জোড়ে টান দিয়ে আবার নিজের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আব্রাহাম সাথেই সাথেই আইরাতকে অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরে। এমন আকস্মিক কান্ডে আইরাত অবাক।

আব্রাহাম;; জাজাজানপাখি আমার,, আইরাত। (কথা বলতে পারছে না গলা ধরে আসছে তার)

আইরাত;;_________________

আব্রাহাম;; তুমি ঠিক আছো, আমার সামনে আছো। আমি জানতাম তোমার কিছুই হয় নি। তুমি একদিন না একদিন আমার কাছে ঠিকই ফিরে আসতে। কিন্তু জানো সবাই না শুধু শুধু আমাকে ভুল বোঝে। কেউ তোমার মতো করে আমাকে বুঝতেই চায় না। জানো জানপাখি তোমাকে আমি কতো জায়গায় খুঁজে বেড়িয়েছি। এমন কোন জায়গা নেই যে তোমাকে খুঁজি নি কিন্তু কোথাও পায় নি। এন্ড ফাইনালি আজ তোমাকে আমার সামনে পেয়েছি। তুমি ভাবতে পারবে না জানপাখি আজ আমি কতোটা খুশি। জীবনের পাতায় যদি আমার পাওয়া স্মৃতিময় কোন দিন থাকে তাহলে তা হলো আজকের দিন। আমি, আমি তোমাকে হারিয়ে আবারও খুজে পেয়েছি। আমি আমার বেচে থাকার মূলমন্ত্র পেয়ে গেছি। জানো তুমিহীন আমি এতোদিন পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা দিন, এক একটা রাত কি করে পারি দিয়েছি তা কেবল আমিই জানি। তুমি বিনা আমি শূন্য আইরাত, আমি নিঃস্ব। তুমি আছো বলেই আমি আছি। পারবো না আইরাত আমি পারবো না তোমাকে ছেড়ে বাচতে। প্লিজ ছেড়ে যেও না আর কখনো। তা না হলে আমি মরেই যাবো। ভালোবাসি জানপাখি। ভালোবাসি সবচেয়ে বেশি।

আইরাত কিছুই বলছে না শুধু চুপচাপ এই কথা গুলো শুনেই যাচ্ছে আর অগোচরে চোখের পানি ফেলছে।
আইরাত অনেক নড়াচড়া করতে শুরু করলো। ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক এদিক-ওদিক করছে সে। একসময় নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে অনেক জোড়ে ধাক্কা দিলো আব্রাহাম কে। আব্রাহাম তাতে কিছুটা পিছিয়েও গেলো। আইরাত রাগি দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো…

আইরাত;; হ্যাঁ আমি মরি নি, বেচে আছি আমি। কেন এতে খুশি হননি আপনি। নাকি আমাকেও আমার বাবা-মার সাথেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি। আর ভালোবাসা, ঠিক কোন ভালোবাসার কথা বলছেন আপনি। যে কিনা নিজের স্ত্রীর বাবা মাকে নিজ হাতে খুন করতে পারে সে অন্য যে কাউকেই খুন করতে পারে। আপনার ওপর একফোটা ভরসাও নেই আমার। আপনাকে তো আমি নিজ হাতে শুট করেছিলাম কিন্তু আপনার ভাগ্য ভালো যে আপনি প্রাণে বেচে ফিরেছেন। আর কি যানেন আমি এতোদিন পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি আপনার কাছ থেকে যেন আপনি আমার ধারে কাছেও না ঘেসতে পারেন। কিন্তু আপনি তো নাছড়বান্ধা ঠিক আমার পিছনে আবার এসে পরেছেন। কি চান এখন কি চান আপনি। এখন কি আমাকেও মারতে এসেছেন আপনি। আমার বাবা-মাকে মেরে কি খ্যান্ত হননি আপনি।

আইরাত এক নাগারে কথা গুলো বলেই যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের কথা গুলো শুনে অবাকের চরম পর্যায়। এই ভেবে যে আইরাত এখনো তার মনে এতো বড়ো একটা ভুল ধারণা বয়ে বেড়াচ্ছে। আর আইরাত এখন তাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করে।

আব্রাহাম;; আইরাত কি বলছ তুমি এসব। তুমি এখনো এই ভেবে বসে আছ। এতো বড়ো একটা ভুল ধারনা এখন নিয়ে আছ তুমি। এতো টা বছর ধরে। For god sake আইরাত এখন তো সত্য টা জানো তুমি।

আইরাত;; কি জানবো, কি জানবো আমি। কি সত্যি, কোন সত্যি জানার কথা বলছেন আপনি। আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি আপনাকে খুন করতে। এখন কি আমি আমার নিজ চোখকেও অস্বীকার করবো। প্লিজ আপনার কাছে আমি হাত জোর করছি আমাকে আপনি আমার হালে ছেড়ে দিন। আমি এখন যেমন আছি ভালো আছি। আপনার স্ত্রীর উপাধী নিয়ে আমি আর থাকতে চাই না। প্লিজ পথ ছাড়ুন আমার।
.
.
.

আইরাত চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আবারও আইরাতের হাত ধরে সামনে টেনে আনে। আইরাতের হাতগুলো পিছনে মুড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে। কোঠর চাহনি তে আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।













❤️🥀চলবে~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে