Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1509



সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৩

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক

ভালোবাসার কী কোন সংজ্ঞা হয়?
আমার মনে হয় হয় না। এবং এই ভালোবাসাকে কোন শৃঙ্খলেও আবদ্ধ করা যায় না। ভালোবাসা নিষেধ মানে না, অবজ্ঞা মানে না,জাত পাত ধর্ম কোনটাই না!
অফিসে আমি যে চেয়ারটায় বসি তার পাশের চেয়ারে বসে পিয়ালী সরকার।হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দেখতে ভীষণ স্মার্ট। মিষ্টি করে কথা বলে। বয়স পঁচিশের কম নয়। বিয়ে করেনি। বিয়ে নাকি সে কোনদিন করবেও না।
এই পিয়ালীর প্রধান কাজ হলো অফিসের কাজ ফেলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা ‌।আমি কিন্তু তার তাকিয়ে থাকাটা বুঝি। কিন্তু ওকে বুঝতে দেই না।
এই জন্য পিয়ালীর খুব অভিমান হয়। মাঝেমধ্যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দেয় পর্যন্ত। কিন্তু তিনদিনের বেশি আর কথা না বলে থাকতে পারে না। তারপর নিজে থেকেই কথা বলতে আসে।বলে,’ফাহাদ ভাই, আপনি কী হিন্দুদের অপছন্দ করেন?’
ওর কথা শুনে আমি ভীষম খাই।অবাক হয়ে বলি,’এমন কথা বলছো কেন পিয়ালী?’
পিয়ালীর চোখ টলমল করে। ঠোঁটের গোলাপী পাপড়ি তিরতির করে কাঁপতে থাকে বন পাতার মতো।সে আর কথা বলে না। চুপচাপ ডেক্সটপে চোখ রাখে।কী বোর্ডে কী যেন টাইপ করে!
এর আগে একবার আরো অদ্ভুত কান্ড করেছিলো পিয়ালী।সে আমার সাথে একটা উদ্যানে ঘুরতে বেরিয়েছিল।আর বিকেলের মৃদু বাতাসে কাঠ গোলাপের গাছের নীচে বসে আমায় বলেছিল তার ভালোবাসার কথা।সে যাকে ভালোবাসে সেই পুরুষ বিবাহিত। এবং পুরুষটির একটি সন্তান আছে।তখনই আমি কিছুটা আন্দাজ করে ফেলেছিলাম পিয়ালী কাকে ভালোবাসে আসলে! কিন্তু এই বিষয়ে তাকে কিছু ঘাঁটাইনি!
এই নিয়েও তার অনেক ক্ষোভ আমার প্রতি।কেন তাকে আমি একবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলাম না কোন পুরুষের জন্য তার এই ভালোবাসা!
সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলেছিল,’আপনি কী আমার প্রতি বিরক্ত ফাহাদ ভাই?যদি বিরক্ত হোন তবে চাকু্রিটা আমি ছেড়ে দিবো। আপনার সামনে কখনো পড়বো না আর!’
বলে হনহন করে হেঁটে আমায় ফেলে রেখেই সে একা চলে গিয়েছিল।
***
আজ সকালবেলা নীলা উঠে রান্নাবান্না করেছে। তারপর আমায় ডেকে নিয়ে আমার সাথে খেতে বসেছে। খেতে বসে সে হঠাৎ করে বললো,’ফাহাদ,আমি আজ মানহাকে নিয়ে ওর নানা বাড়ি যাবো। কদিন থেকে আসবো!’
ওর কথা শুনে আমি ভীষম খাই।নীলা দ্রুত জলভরা গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।আমি সেই গ্লাস তুলে নিয়ে এক চুমুকেই সবটুকু পানি খেয়ে ফেলি।
মানহা তখন বলে,’বাবা যাবে না মা?’
নীলা বলে,’না।আমি আর তুমি যাবো। বাবার অনেক কাজ।যেতে পারবে না এবার।’
নীলার কথাটা শুনে ভীষণ রকম কষ্ট পাই আমি।এর আগে আমায় ছেড়ে সে কোথাও যেতে পারতো না। গিয়ে থাকতে পারতো না। এরজন্য ওর বন্ধুরা ওকে কত কী বলে! হাসাহাসি করে পর্যন্ত!বলে বর পাগলি মেয়ে!
নীলাও তখন শক্ত করেই বলতো,বরের জন্য পাগল হবো না তো পরের জন্য পাগল হবো ?
এই নীলার আজ কতো পরিবর্তন!

অফিসের সময় হয়ে এলে নীলা আমার হাতে টিফিন ক্যারিয়ারের বাটি তুলে দিয়ে বলে,’বাইরের খাবার খেও না।আমি ফ্রিজে তিন চারদিনের জন্য তরকারি রান্না করে রেখে যাচ্ছি। তুমি শুধু ভাত রান্না করবে। ইচ্ছে হলে একটু সবজি বেজে নিবে।রুটি খেতে চাইলে করে নিবে।’
আমি মাথা কাঁত করে বলি,’ঠিক আছে।’
চলে যাওয়ার আগে নীলার হাতে টিপ আর চুড়ির প্যাকেটটা তুলে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেন জানি দিতে পারি না।সাহস হয় না!ভয় ভয় লাগে।মনে হয় এই নীলা আমার অপরিচিত কেউ!
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মানহাকে একটু কোলে টেনে নেই।আদর করি।কপালে চুমু খাই। তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে নীলার হাতে ধরিয়ে দেই।বলি,’মানহা এটা ওটা খেতে চায় কিনে দিও।আর তুমিও—
কথাটা শেষ করতে পারি না। হঠাৎ মনে হয় আমার শেষের কথাটা বলা উচিৎ হয়নি!
তারপর মানহাকে টা টা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসি।
***
অফিসে বসে আছি ভার মুখে। কিছুই ভালো লাগছে না।কফি বরফ হয়ে গেছে।আমি ছুঁয়েও দেখিনি কাপ।আমি শুধু ভাবছি, এমন ফুলের মতো সুন্দর একটা সংসার কীভাবে হঠাৎ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে?নীলা কীভাবে এমন বদলে যেতে পারে?ওর যদি আগে সম্পর্ক থাকবেই তবে ছেড়ে এলো কেন? ছেড়ে এসে আমাকেই বা কেন ওর মায়ায় জড়ালো?আর এখন আবার আমায় ছেড়ে ওর কাছেই চলে যেতে চাচ্ছে কেন!এটা কী পুতুল খেলা! আমার কী কষ্ট হয় না! খারাপ লাগে না!
আর মানহার? আমার লক্ষ্মী মেয়েটার কী হবে?
আমায় এভাবে চুপচাপ মুখ ভার করে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখে পিয়ালী এসে দাঁড়ালো আমার টেবিলের সামনে। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’ফাহাদ ভাই, আপনার কী কোন কারণে মন খারাপ?’
আমি হাসার চেষ্টা করে বলি,’না তো। কেন আমায় দেখে কী এমন মনে হচ্ছে?’
‘হ্যা হচ্ছে।’
আমি আর কোন কথা বলি না। আবার চুপ হয়ে যাই।
পিয়ালী এবার বলে,’চলুন না আজ বিকেলে আমরা ঘুরতে যাই!’
আমি বলি,’অফিসে তো অনেক কাজ!’
‘পরে একদিন আপনাকে আমি হেল্প করবো। আপনার অর্ধেক কাজ আমি করে দিবো। তবুও চলুন আজ ঘুরতে বের হই!প্লিজ প্লিজ আর না বলবেন না!’
পিয়ালীর অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি। তাছাড়া আমারও মন খারাপ ছিল ‌।একটু অবসরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সময়টা আমি বদলে দেই।বলি,’পিয়ালী,কাল তো ফ্রাইডে।চলো আগামীকাল বের হই। সোনারগাঁ থেকে ঘুরে আসি।’
পিয়ালী ওর সাদা দাঁত বের করে হেসে বলে,’ওকে।’
***
আমি আর পিয়ালী বসে আছি সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরের লেকটার কাছে।পিয়ালী আমার কাছ থেকে বারবার জানতে চাইছে, আসলে আমার কী হয়েছে! কেন আমি অফিসে একদিন আসিনি। আবার এরপর দিন আসার পর থেকেই মন খারাপ কেন আমার!
আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দেই না।এড়িয়ে গিয়ে বলি,’পিয়ালী, তুমি কাকে ভালোবাসো বলবে?’
পিয়ালী এই কথা শুনে কেমন বোকার মতো হয়ে উঠে।তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠে।দ্রুত চোখ নীচ দিকে নামিয়ে নরম গলায় বলে,’আপনাকে বলে আর সমস্যা বাড়াতে চাই না!’
আমি বলি,’সমস্যা কী?বলো না!বললে তো দোষ নেই!আমি তো আর সেই পুরুষকে গিয়ে খুঁজে বের করে বলবো না তোমার কথা!’
পিয়ালী তখন কী যেন বলতে ঠোঁট খুলছিলো।আর তখনই অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। আমাদের দুজনকে পাশ কাটিয়ে এক জোড়া ছেলে মেয়ে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। ছেলেটাকে আমি চিনি তমাল।মেয়েটা আমার স্ত্রী।নীলা।
ওরা আমাদের দেখে না। কিন্তু পিয়ালী ঠিক দেখে ফেলে নীলাকে এবং চিনেও ফেলে।পিয়ালী সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ডেকে উঠে,’এই নীলা ভাবী?’

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০২

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক

আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু রাত করে বাসায় ফিরি আমি। এমনিতেই আমার মন খুব খারাপ।গা ভর্তি রাগ।এই রাগ এবং মন খারাপ যেন নীলা বুঝতে না পারে এই জন্য অদ্ভুত একটা কাজ করি আমি।মোড়ের যে কসমেটিক্স এর বড় দোকানটা আছে ওখান থেকে নীলার জন্য এক প্যাকেট বাহারি রঙের টিপ কিনি।আর এক ডজন কাঁচের চুড়ি। এইগুলো নীলা খুব পছন্দ করে। কিন্তু বাসায় ফিরে গিয়ে অবাক হই আমি।মানহা কাঁদছে।গলা ছেড়ে কাঁদছে।টিপ আর চুড়ি পকেটেই পড়ে থাকে।বের করি না। আমাকে দেখেই মানহা এসে আমায় আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
আমি তখন হাঁটু গেড়ে বসে মানহাকে কাছে টেনে নেই। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলি,’কী হয়েছে মা? কাঁদছো কেন?’
মানহা তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,’মা মেরেছে।’
মানহার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমি ভীষণ রকম অবাক হই।কী বলছে এটা মানহা!যে মেয়েকে নীলা আজ অবধি একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি সেই মেয়েকে সে মারে কী করে!
মানহাকে কোলে তুলে নিয়ে আমি নীলার কাছে যাই। নীলা বিছানায় শুয়ে আছে।সিলিঙে চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আনমনে কী যেন ভাবছে!
আমার পায়ের শব্দ পেয়েও তার ভাবান্তর হলো না। হয়তোবা সে পায়ের শব্দ শুনতেই পায়নি!
আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,’ও কী করেছিলো?’
নীলা ঈষৎ কেঁপে উঠে আমার গলা শুনে। হঠাৎ করে কারোর গলা শুনলে এমন হওয়ার কথাই।
নীলা আমার কথার উত্তর দিলো না।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,’মানহা কী করেছিলো?’
নীলা তখন বিরক্ত মুখে আমায় পাল্টা প্রশ্ন করে বলে,’আমার মেয়েকে আমি মেরেছি এর জন্য কী তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে?’
আমি এবারও অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যাই !ভেবেও পাই না যে নীলার আচরণ এমন কর্কশ হতে পারে কীভাবে?

নীলার সাথে আমি কথা বাড়াই না।সে হোক ভদ্রতার খাতিরে অথবা আমাদের সম্পর্কের সম্মানের খাতিরে। চুপচাপ আমি মানহাকে নিয়ে বেলকনিতে চলে যাই। ওখানে গিয়ে মানহাকে বলি,’কী হয়েছিল মা? তোমার মা তোমায় মেরেছে কেন?’
মানহার কান্না তখন থেমেছে।সে বললো,’মাকে বলেছিলাম নুডুলস করে দিতে।মা করে দেয়নি।আমি তখন মার হাত ধরে টেনে বলেছিলাম না দিলে মানবো না।দিতে হবে। তখন মা আমার গালে দুটো চড় মেরেছে!’
কথাগুলো বলে মানহা আবার কাঁদতে শুরু করেছে ‌।
মানহা আমার কোলে।তার মুখটা আমি আমার বুকের সাথে চেপে ধরে বললাম,’আর কাঁদে না পাপ্পা।আমি তোমার জন্য এক্ষুনি নুডুলস করে দিবো!চলো আমরা এখন কিচেনে যাই!’
মানহাকে নিয়ে কিচেনে গিয়ে দেখি ঘরে কোন সবজি নাই।এমনকি পিঁয়াজ কাঁচা মরিচটাও নাই। সন্দেহ বশত ভাত শালুনের হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দেখি নীলা কিছুই রান্না করেনি। তারপর ওর জন্য সকালে ঢেকে রেখে যাওয়া খাবারটা দেখলাম খেয়েছে কিনা।দেখি ওটাও খায়নি।নীলা তবে আজ সারাদিন কিছুই খায়নি!
খাইনি তো আমিও। সেই যে সকাল বেলা খেয়েছিলাম দু নলা। তারপর সারাদিনে তিনগ্লাস বরফ শীতল পানি আর একটা সিগারেট। এছাড়া আর কিছু খাইনি। এমনিতে অফিসে যাওয়ার সময় রোজ নীলা টিফিন ক্যারিয়ারে করে আমার জন্য দুপুরের খাবার দিয়ে দেয়।আর বারবার নিষেধ করে দেয়, বাইরে কিন্তু কিচ্ছু খাবে না বললাম। অসুখ বাঁধাবে পরে।আজ অফিসে যাওয়ার সময় সে বলেওনি আমার শরীর ভালো না। দুপুরের খাবারটা তুমিই টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিয়ে যাও!
আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু এখন আর রাগ করতে পারছি না নীলার উপর।আমি জানি নীলার উপর রাগ করাটা আমার খুব বড় বোকামি হবে।কারণ ও যে পরিস্থিতিতে আছে ওখানে কিছুতেই ভালো থাকা যায় না!
তমাল ছেলেটার সাথে মনে হয় অনেক আগে থেকেই রিলেশন ছিল নীলার। তারপর হয়তোবা কোন একটা কারণে ওরা দূরে ছিল।সম্পর্ক থেমে গিয়েছিল।আর তখনই আমার সাথে বিয়েটা হয়ে যায় নীলার। কিন্তু নীলা এ পর্যন্ত কিছুই বলেনি এ বিষয়ে। কিংবা ওকে দেখে কোন ভাবেই আমি অনুমানও করতে পারিনি যে নীলার একটা সম্পর্ক ছিল। কিংবা আছে!
আমার বেশি খারাপ লাগছে মানহার জন্য।এতো লক্ষ্মী একটা মেয়ে হয়েছে।দেখতেও যে কী মায়াবতী! নীলা যদি তমালের সাথে চলে যেতে চায় তবে আমি তাকে কিছুতেই বাঁধা দিবো না। বাঁধা দেয়ার অধিকার আমার নাই! ভালোবাসায় বাঁধা হলে যে পাপ বাড়ে! দুজন মানুষের মন কষ্ট পায়।অমি কীভাবে নীলাকে কষ্ট দিবো!
কিন্তু মানহা? আমার লক্ষ্মী মামণি টার কী হবে? মাকে ছাড়া কিংবা বাবাকে ছাড়া দুজনের একজনকে ছাড়া ওর বড় হওয়াটা তো খুব কষ্টের হবে!বড় হয়ে কী মানহা এর জন্য আমায় দোষ দিবে না?বলবে না,বাবা তোমাদের দুজনের জন্য আমার ফুলের মতো সুন্দর জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।আমি পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও দোযখের শাস্তি ভোগ করছি!

হঠাৎ আমার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গালের উপর গড়িয়ে পড়ে।মানহা আমার কোলে বসে আছে তখনও।সে আমার চোখ থেকে জল পড়তেই তার ছোট্ট হাত দিয়ে গালের জল মুছে দেয়। তারপর কিছু না বলে বোকার মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওকে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার কী যে খারাপ লাগে! ভেতরে কী যে তোলপাড় শুরু হয়!মনে হয় চিৎকার করে কাঁদি!গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে মরে যাই!

কিচেন থেকে মানহাকে কোলে করে নিয়েই বাইরে যাই। কিছু বাজার করে আনতে হবে।নীলা যদি ঠিক থাকতো তবে সে আরো তিনদিন আগেই লিস্ট করে ফেলতো বাজারের।
মানহাকে নিয়ে গেট পেরিয়ে বাইরে যেতেই সে বলে,’বাবা আমরা বের হয়েছি কেন?’
আমি থমথমে গলায় বলি,’মা,ঘরে তো বাজার নেই। বাজার করতে বের হয়েছি।’
মানহা আর কিছু বলে না।চুপ হয়ে থাকে।
আমি হাঁটছি। রাস্তার এক পাশ দিয়ে মানহাকে কোলে নিয়ে হাঁটছি।
একটু পর মানহা বললো,’বাবা,মা একটুও ভালো না। তুমি শুধু ভালো!’
আমি বললাম,’ছিঃ এসব বলে না মানহা!মা তো বাবার চেয়েও ভালো হয়।মার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। বুঝলে?’
মানহা হঠাৎ এই বিষয়টা কেটে গেল। তারপর হুট করে বলে উঠলো,’বাবা,মা তোমাকেও পাপ্পা দেয় আর ওই আঙ্কেলকেও পাপ্পা দেয় কেন?’
আমি মানহাকে কী বলবো না বলবো কিছুই বুঝতে পারি না!ও তো ছোট মানুষ।ছোট মানুষের মনে তো কত প্রশ্নই জাগে।ওরা নতুন যা দেখে তাতেই ওদের মনে প্রশ্ন জাগে। এটা তো ওর দোষ না!
এবার নীলার প্রতি আমার সামান্য রাগ হয়!মনে মনে আমি বলি, এসব কী ছোট্ট মেয়েটার সামনেই করতে হয়!একটু আড়ালে গেলে হয় না!
মনে মনে কথাটা বলতে গিয়েও আমার ভেতরটা খা খা করে উঠে কেমন! খুব কষ্ট হতে শুরু করে বুকের ভেতর।একটা হারানোর ভয় এসে ঘিরে ধরে আমায়! তারপর মনে হয় আমার, নীলাকে আমি এই অত বছরের সংসারেও কোনদিন ভালোবাসি বলিনি।নীলাও বলেনি। তবুও ওর জন্য অত কষ্ট হয় কেন? নাকি একসাথে সংসার করলে ভালোবাসি কথাটা বলতে হয় না?আপনা আপনি এসব তৈরি হয়ে যায়!

বাজার করে মানহাকে নিয়ে ফিরে আসি।মানহার হাতে আইসক্রিম। নীলারও খুব প্রিয় আইসক্রিম। তাছাড়া আজ বেশ গরমও পড়েছে। নীলার জন্যও একটা আইসক্রিম কিনেছি। আইসক্রিমের প্যাকেট নীল। নীলার এই রংটা ভীষণ ভীষণ প্রিয়!
বাসায় ফিরে আমি মানহাকে বলি,’মা, তোমার মার কাছে এই আইসক্রিমটা দিয়ে আসো।বলবে তুমি কিনে এনেছো!’
মানহা বলে,’মা যদি আবার মারে?’
আমি মৃদু হেসে বলি,’একটুও মারবে না।আদর করবে তোমায় দেখো!’
মানহা নীলার কাছে আইসক্রিম নিয়ে গেল।আমি বেলকনি থেকে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে বড় কাঁচের গ্লাসের খোলা ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখছি নীলা কী করে!
মানহা তার মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ও যে হাতে আইসক্রিম ধরেছে সেই ছোট্ট হাতটা ওর মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’মা,দেখো তোমার জন্য আমি আর বাবা আইসক্রিম কিনে এনেছি!’
নীলা অনেকক্ষণ ধরে ওর দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। তারপর একটানে মানহাকে ওর বুকের ভেতর নিয়ে গিয়ে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে!

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০১

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক

‘বাবা,জানো মার কাছে রোজ একটা আঙ্কেল আসে দেখা করতে।কালও এসেছিল।ওই আঙ্কেল খুব ভালো। একেবারে তোমার মতো।মার কপালে একটা পাপ্পাও দিয়েছে কাল।আর মাকে বলেছে কী জানো? তাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ড চলে যাবে রোজার ঈদের পর! আমাকেও নাকি সাথে করে নিবে।আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে ওদের সাথে যাবো না বাবা!’
কথাটা বলছিলো আমার তিন বছরের মেয়ে মানহা।শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল।চোখ কেমন জ্বলতে শুরু করলো।সারা শরীর কেন জানি হঠাৎ করে থরথর করে কাঁপছে।কী বলছে এসব মানহা!
আমি দ্রুত হাঁটু গেড়ে বসে মানহার দু গালে দু হাতে নরম করে চেপে ধরি। তারপর বলি,’মানহা, তুমি মিথ্যে বলছো তাই না?’
মানহা তখন বড়দের মতো করে রাগ দেখিয়ে বলে,’আমি কখনো মিথ্যে বলি না। মিথ্যে বললে আল্লাহ জিভ কেটে ফেলবেন ধারালো কাঁচি দিয়ে।তুমিই তো শিখিয়েছো বাবা। তুমি বলো নি আল্লাহ মিথ্যেবাদীদের একদম পছন্দ করেন না?’
ছোট্ট একটা মেয়ের কথা শুনে আমার ভেতরটা হো হো করে কেঁদে উঠে। তবে আমার কন্যা মানহা ভুল কিছু বলছে না।সব সত্যি। আমার স্ত্রী নীলা আমায় ঠকাচ্ছে!অথচ আমি এর কিছুই জানি না!

আমি মানহাকে বুকের কাছে টেনে নেই। তারপর বলি,’মানহা,ওই আঙ্কেলটা কখন আসে মা?’
মানহা তখন বলে,’তুমি তখন অফিসে থাকো।আসরের আজানের পর।’
আমি মানহাকে কাছে টেনে আদর করি। তারপর বলি,’আমার কাছে যে এসব বলেছো তা কিন্তু মাকে বলো না আবার। তোমার মা তো রাগী মেয়ে।সে এসব শুনলে রেগে গিয়ে তোমায় আর আমায় দুজনকেই মারবে।’
মানহা তখন আমার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বললো,’মা এখন ঘুমে। আমিও গিয়ে মার পাশে ঘুমিয়ে পড়ি বাবা। তবে আর মা কিছুই বুঝবে না!’
একটা ছোট্ট মেয়ে আমার। মাত্র তিন বছর বয়স তার।এই অতটুকু মেয়ে অতকিছু বুঝে কীভাবে!কী সূক্ষ্ম জ্ঞান তার! এমন একটা লক্ষ্মী মেয়েকে রেখে কীভাবে নীলা এসব করে!কার সাথে করে? আমার ভীষণ খারাপ লাগে। কান্না আসতে চায় বুকের পাঁজর ইঁছড়ে।আমি তবুও কান্নাকে প্রশ্রয় দেই না। পুরুষ মানুষের যে প্রকাশ্যে কখনো কাঁদতে নেই!

এখন সকাল ছ’টা বাজে।নীলা শরীর খারাপের অজুহাতে ঘুম থেকে উঠেনি। হয়তোবা তার শরীর সত্যি সত্যি খারাপ।অথবা সে বাহানা করছে।সে যায়হোক।আজ আমি অফিস যাবো ঠিক কিন্তু আসরের আজানের ঠিক আগে আগে ফিরে আসবো।আর ততোক্ষণ বাসার কাছে মোড়ের চায়ের স্টলে বসে অপেক্ষা করবো ওই লোকটার জন্য।দেখবো কে এসে দেখা করে যায় নীলার সাথে!

নীলার সাথে আমার বিয়ের ছ’বছর হয়েছে।এই ছ’বছরের কোনদিন তার কাছ থেকে এমন কোন আচরণ আমি পাইনি যেখানে তাকে সন্দেহ করা যায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবৎ ও জানি কেমন হয়ে গেছে। সেদিন রাতে হঠাৎ তার কাছে যেতে চাইতেই ও আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।এর আগে কখনো এমন হয়নি। পরদিন সকাল বেলা অফিস যাওয়ার আগে ওকে বললাম,’নীলা তোমার কী হয়েছে বলো তো? গতরাতে এমন করলে কেন?’
এই একটা সামান্য কথায় তার সে কি রাগ! একেবারে হো হো করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,’আমি চলে গেলেই ভালো হবে তোমার।এখান থেকে চলে যাবো আমি।থাকবো না তোমার সাথে!’
কী অদ্ভুত ধরনের আচরণ।সত্যি বলতে আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু চিন্তা করছিলাম। ভাবছিলাম কেন এমন করছে সে!আজ সকালে মানহা যখন আমার সাথে ঘুম থেকে উঠে গেল তখন মানহা নিজেই বললো,’বাবা চলো আমরা ছাদে যাই। সকাল দেখবো।’
আমি তখন নীলাকেও ডাকলাম। বললাম,’নীলা চলো ছাদে গিয়ে সকাল হওয়া দেখি!’
নীলা তখন ঘুম জড়ানো গলায় বললো,’আমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি যাও তো মানহাকে নিয়ে।ডিস্টার্ব করো না প্লিজ!’
আমি আর কথা বাড়ালাম না তখন।মানহাকে কোলে করে নিয়ে সোজা ছাদের উপর উঠে গেলাম। তারপর গিয়ে দাঁড়ালাম নীলার গোলাপ বাগানের কাছে।মানহা ওখানে দাঁড়িয়েই এসব বললো আমার কাছে।

অফিসে যেতে হয় সকাল নটায়।নীলা আজ উঠবে বলে মনে হয় না। রান্নার কাজ আমাকেই করতে হবে।ভাগ্যিস ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় মেসে ছিলাম দু’বছর। তখন মাঝেমধ্যে বুয়া আসতো না।মাসের চার পাঁচদিন আমরা বন্ধুরা মিলেই রান্না করতাম। প্রথমে ডিম বাজি আর আলু ভর্তা করাটা শিখেছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে সবকিছু শিখে ফেলেছি।ইন্টারমিডিয়েট জীবন শেষ হয়েছে বহু বহু বছর আগে।প্রায় বারো বছর। এরপর আর রান্নার ধারে কাছেও যাইনি।যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু আজ যেতে হচ্ছে।আমি না হয় কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে ফেলতে পারবো কিন্তু মানহার তো খেতে হবে।ওর জন্য স্যুপ করতে হবে।নীলাও তো ঘুম থেকে উঠে খেতে চাইবে ‌।

রান্নাবান্না শেষ করে মানহাকে স্যুপ খাইয়ে দিলাম। নীলা তখনও বিছানা থেকে নামেনি। ঘুমাচ্ছে। অনেক অনেক দিন পর এই বাসায় একা একাই খেতে হলো আমার। খাওয়া শেষ করে জামা-প্যান্ট পরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম। কিন্তু বাসার গেট পেরিয়েই সিদ্ধান্ত নিলাম আজ অফিসে যাবো না।এই দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে এলোমেলো ভাবে ঘুরবো।ঘুরতে ঘুরতে যখন প্রচন্ড তেষ্টা পেয়ে যাবে তখন যাবো একটা রেস্টুরেন্টে।বলবো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিতে। সেই ঠান্ডা পানি আমি মুখের কাছে নিবো। কিন্তু পান করবো না! নিজেকে নিজেই কষ্ট দিবো।এটাই আজ আমার জন্য একটা গেইম।এই গেইমে আমাকে জিততে হবে।জিততেই হবে।কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমায় অর্জন করতে হবে।করতে হবেই!

গেইমে হেরে গিয়েছি আমি।তেষ্টায় মনে হয়েছিল মরে যাবো আমি।আর ওয়েটার এনে দিয়েছিল তখন বরফের কুচি দেয়া ঠান্ডা পানি।পানি দেখে সব ভুলে গিয়েছিলাম আমি।ঢকঢক করে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম!

আসরের আজানের সময় ঘনিয়ে এসেছে।আমি এবার গিয়ে চুপচাপ বসে পড়লাম মোড়ের মতি মিয়ার চায়ের স্টলে। ওখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় আমাদের বাসার সামনের গেট।গেট দিয়ে কেউ ভেতরে ঢুকলেই স্পষ্ট দেখা যাবে।আর তখনই আমি পেছন পেছন যাবো। গিয়ে যদি ওদেরকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখি তবে আমি কিছুই বলবো না। একটা টু শব্দ পর্যন্ত করবো না। ওই লোকটাকে সুন্দর মতো বলবো চলে যেতে। তারপর নীলার সাথে কথা বলবো আমি। নীলাকে শুধু একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো,কেন ঠকালে আমাদের?কী দোষ ছিল আমার তিন বছরের মেয়ে মানহা আর আমার?

আসরের আজান হয়ে গেছে। আমার শরীর কেমন কাঁপছে। ঘটনা এক্ষুনি ঘটবে বলে মনে হচ্ছে।
হ্যা তাই হলো। আজানের ঠিক পাঁচ মিনিট পর একটা ফর্সা পাতলা দেহী ছেলে যার পরনে মেরুন রঙা পাঞ্জাবি,সাদা পাজামা সে ঢুকলো গেট দিয়ে ভেতরে।আর তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর আমি ঢুকলাম।ওরা ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়েছে।আমি দরজার কাছে কান পাতলাম।
নীলার কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি।নীলা বলছে,’তমাল,কেন ফিরে এলে তুমি বলো?কেন আমার ছ’বছরের সুন্দর একটা সংসার এলোমেলো করে দিলে? জবাব দাও?’
তমাল কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে,’আমি কিচ্ছু জানি না নীল।আমি শুধু এটা জানি যে তুমি আর কারোর নয়। শুধু আমার।শুধুই আমার। তুমি ওকে ডিভোর্স দিবে।ফাহাদের সাথে আর থাকবে না বুঝলে?’
নীলা বললো,’কীভাবে এটা করবো বলো? ফাহাদ আমায় ছাড়া থাকতে পারবে না!’
তমাল রাগের গলায় বললো,’তার মানে তুমি এখন আমায় আর ভালো বাসো না?ফাহাদকে ভালোবেসে ফেলেছো?’
নীলা কেঁদে ফেললো।সে কাঁদতে কাঁদতে বললো,’তমাল,আমি বুঝতে পারছি না কিছু। কিন্তু ওকে আমি ডিভোর্স দিতে পারবো না!’
তমাল বললো,’তবে আমি মরবো।সোইসাইড করবো আজ রাতেই।’
নীলা আরো জোরে জোরে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,’না। এমন করবে না তুমি।তমাল তুমি আমায় আরো তিনটা মাস সময় দাও।আমি একটু ভেবে দেখি!’
একটু চুমু খাওয়ার শব্দ হলো। হয়তোবা তমাল নীলাকে অথবা নীলা তমালকে চুমু খেয়েছে। তারপর তমাল বললো,’আমি তোমায় সময় দিচ্ছি। কিন্তু জবাব যেন একটাই হয়। তুমি শুধু আমার।ফাহাদের না।মাইন্ড ইট আমার স্যুইটি নীল!’
তারপর, তারপর ওখানে আর আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। শরীর থরথর করে কাঁপছিলো।রাগ উঠে যাচ্ছিল খুব। হয়তোবা ওখানে থাকলে নিজেকে সংবরণ করতে পারতাম না। খারাপ কিছু করে বসতাম রাগের বশে।তাই খারাপ কিছু যেন না ঘটে সেইজন্য খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে আসি আমি মতি মিয়ার চায়ের স্টলে। এসে বেঞ্চির উপর পা ঝুলিয়ে বসে একটা সিগারেট কিনে নেই।দেয়াশলাই দিয়ে সেই সিগারেট জ্বালাই। তারপর পাগলের মতো টানতে থাকি। কোনদিন সিগারেট খাইনি আমি।এই প্রথম। জীবনের প্রথমবার। আমার হঠাৎ কী হয়ে গেল?আমি এমন পাগলামি করছি কেন?

#চলবে

Gangstar In Love Part-50 and Last Part

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 50 {Last part}

💐💙💐..
..
..
..
..
..

সকাল থেকেই সবাই প্রচুর পরিমানে ব্যাস্ত বিয়ের তোড়জোড় নিয়ে। বিয়ের পেন্ডেল অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তবে অয়ন আর রাত্রির মাঝে ঝগড়া লেগে গেছে ফুল নিয়ে। মানে ডেকোরেশনে কোন ফুল দিবে তা নিয়ে। নিপার পছন্দ বেলি ফুল আর নিরবের পছন্দ স্টার গেজেজ ফুল। এখন ডেকোরেশনে কি ফুল ব্যাবহার করবে তা নিয়ে ঘটলো বিপত্তি।

অয়ন;; পুরো ডেকোরেশনে তো স্টার গেজেজ ফুলই ইউজ করা হবে।

রাত্রি;; মামার বাড়ির আবদার,, বেলি ফুল ইউজ করা হবে। তুমি দেখেছ বেলি ফুলের কি সুন্দর স্মেল,, আহহহহহ মনে হয় ডুবে যাই।

অয়ন;; হ্যাঁ তো ডুব না, কেন বারণ করেছে। কিন্তু পুরো ডেকোরেশন স্টার গেজেজ ফুলেরই হবে।

রাত্রি;; মোটেও না। বেলি ফুলের।

অয়ন;; স্টার গেজেজ ফুলের।

রাত্রি;; বেলি ফুলের।

অয়ন;; স্টার গেজেজ ফুলের।

রাত্রি;; বেলি ফুলের।

আইরাত;; সবাই চুউউউউউউউউউউপ।

অয়ন আর রাত্রি এমন ঝগড়াতে অতিস্ট হয়ে আইরাত তাদের দুজনকেই থামিয়ে দিলো। রাগে ফুসছে আইরাত। সারাক্ষণ শুধু ঝগড়াই করে কাজের কোন নাম নেই। যাদের বিয়ে তাদের তো কিছু বলার সুযোগ টুকু দিচ্ছে না বরং উল্টো তারাই মিলে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে। তারা ঝগড়া করছে বাকি সবাই নির্বাক দর্শকের মতো দেখছে। তাই আইরাত আর না পেরে তাদের থামতে বললো।

আইরাত;; কি সারাটাক্ষণ বাচ্চাদের মতো লেগে থাকিস তোরা বল তো। ফুল গুলো এদিকে দে দেখি কারোর কিছুই করতে হবে না। যা করার আমিই করছি। আর কোন একটা ফুলের ডেকোরেশন হবে না দুটো ফুলের কম্বিনেশনেই ডেকোরেশন হবে।

আইরাতের ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেলো। তারপর আইরাত সার্ভেন্টদের সাহায্য নিয়ে ফুলের ঝুড়ি গুলো নিয়ে বিয়ের আসর অর্থাৎ যে জায়গাতে বর-বউ বসবে ঠিক সেখানে চলে গেলো। কাজে মনোযোগ দিলো আইরাত। বেলি ফুল দিয়ে উপরে অনেক বড় করে একটা থোকা বাধা হলো ঠিক সবার মাথার মাঝ বরাবর। তার মাঝ খানে কয়েকটা স্টার গেজেজ ফুল। তারই চারিপাশে স্টার গেজেজ ফুল দিয়ে সাজানো। সিড়ি গুলোর রেলিং-এ স্টার গেজেজ আর বেলি ফুল মিক্স করে সাজানো হয়েছে। এভাবে পুরো পেন্ডেলই সাজানো হয়েছে। পুরো প্লেন আইরাত করেছে। কাউকে কোন কাজের ধারে কাছেও আসতে দেয় নি সে। প্রায় ৩ ঘন্টা পর কাজ শেষ হলে। সবকিছু শেষে আইরাত দাঁড়িয়ে এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে এবং বা হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে। এখন যেই পেন্ডেলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে সেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো পিক তুলে সোজা ফেইসবুকে আপ্লোড দিয়ে দিচ্ছে। সবাই প্রশংসার ডালা নিয়ে বসলো আইরাতের। সত্যি অনেক সুন্দর সাজানো হয়েছে।

অয়ন;; ওয়াও বউমনি তুমি এতো সুন্দর করে সাজালে।

রাত্রি;; তো সুন্দর করে সাজাবে না,, তোমার মতো অকম্মার ঢেকি নাকি।

অয়ন;; এইইইই

আইরাত;; আহা বাবা ছাড় না এখন এসব।

নিরব;; আমি তো চোখই সরাতে পারছি না।

নিপা;; সিরিয়াসলি আইরু অনেক বেশিই সুন্দর হয়েছে।

সবার কথা মাঝে আব্রাহাম চলে এলো। আইরাতের এইসব কান্ড এবং সবার কথা শুনে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; দেখতে হবে না বউ কার, সবকিছু তো সুন্দর আর স্পেশাল হতেই হবে।

এবার তাদের মাঝে আবির আহমেদ এসে পড়লেন।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি জলদি যাও সময় হয়ে আসছে আর কাজ সব প্রায় শেষের দিকে।

অয়ন;; শেষের দিকে না বাপি সব শেষই।

আবির আহমেদ;; হ্যাঁ তাই তো, এবার সবাই যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

আব্রাহাম;; মেয়েরা এসে পরেছে। আইরাত নিপাকে নিয়ে ভিতরে যাও। আর নিরব অয়ন তোরাও চল আমার সাথে।

এই কথা বলে আব্রাহাম চলে যায়। আইরাত, রাত্রি আর নিপাও চলে যায় তাদের ঘরে। সাজানোর জন্য যে মেয়েরা এসেছিলো তারা নিপা কে সাজানোর কাজে লেগে পরে। বিয়ে বাড়িতে ধীরে ধীরে মানুষের আনাগোনাও বেড়ে যায়। বেশ খানিক সময় নিয়ে নিপা কে সাজানো হয়। অবশেষে সাজানোর কাজ শেষ হয়। রাত্রিও প্রায় রেডি হয়ে গেছে। নিপাকে আজ একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। সাথে ভারি সাজ, বউ বলে কথা। অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে নিপা কে। রাত্রি হালকা গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা পরেছে সাথে বেশ ভালোই সাজ। কিন্তু আইরাত রেডি হওয়ার আর সময় পাচ্ছে কোথায়, কাজের চাপ দৌড়াদৌড়ি তেই সময় কেটে যাচ্ছে। তারপর তাদের ঘরে আবির আহমেদ এসে পরলেন। সবাই রেডি কিন্তু আইরাত সবকিছু দেখছে, নিপার সাহায্য করছে, আইরাতকে সবাই বলছে জলদি রেডি হয়ে নিতে কিন্তু সে কাজ করেই যাচ্ছে। আবির আহমেদ আইরাতকে দেখে তড়িঘড়ি করে বলে উঠলেন…

আবির আহমেদ;; আরে আইরাত মামনি তুমি এখনো রেডি হও নি। তাড়াতাড়ি করো সবাই তো এসে গেছে।

আইরাত;; হ্যাঁ বাপি এইতো আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।

আইরাত বসে পরলো রেডি হতে। অন্যদিকে নিরবকে আব্রাহাম আর অয়ন মিলে রেডি করিয়ে দিচ্ছে। লাল-সাদা শেরওয়ানি তে নিরবকে বর বেশে অনেক মানিয়েছে। অয়ন ব্রাউন কালারের একটা পাঞ্জাবি পরে নিলো তাকেও বেশ লাগছে। আব্রাহাম ধূসর রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। নিরব আব্রাহামকে দেখে বলে ওঠলো..

নিরব;; বর আমি কিন্তু সবথেকে বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে ভাই,, মেয়েরা আজ তোমাকে গিলে না ফেললেই হয়।

আব্রাহাম;; গিলবে না কারণ আমার বাঘীনি আছে তো। সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলবে।

অয়ন;; গ্যাংস্টারের বউ বলে কথা।

অয়নের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। তারপর নিরবকে নিয়ে নিচে নেমে পরে। এবার আইরাতও পুরোপুরি রেডি হয়ে নিয়েছে।

নিপা;; সব লুকেই এতো যে কিউট লাগে তোকে। এমনিতেই পুতুল এর মধ্যে আরো সুন্দর লাগছে।

রাত্রি;; বুঝো না এর জন্যই তো আব্রাহাম ভাই আইরুর প্রেমে একদম লাট্টু হয়ে গিয়েছিলো।

আইরাত;; আরে ধুর কি শুরু করলি তোরা। তাড়াতাড়ি নিচে চল সবাই অপেক্ষা করছে।

সবাই এক এক করে নিচে চলে আসে। নিপার মাথার ওপর গাঢ় লাল রঙের ওরনা দিয়ে ছাওনির মতো করে ধরা হয়েছে। নিপা কে তো আইরাত আর রাত্রির নিয়ে আসার কথা ছিল কিন্তু আইরাতের একটা কাজ পরে যায় যার ফলে সে নিপাকে নিয়ে নিচে নামতে পারে না। তার বদলে এক পাশ দিয়ে রাত্রি আর অন্য পাশ দিয়ে নিপার এক ফ্রেন্ড ওরনা ধরে। আর ওরনার নিচে নিপা ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। নিরব ফাটা চোখে নিপার দিকে তাকিয়ে আছে। নিপাতে হারিয়ে গেছে সে। নিরবের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আব্রাহাম আর অয়ন ফিক করে হেসে দিলো। আব্রাহাম তার কাধ দিয়ে নিরব কে ধাক্কা দিয়ে বলে..

আব্রাহাম;; আর কিছুক্ষন বাদে তোরই হয়ে যাবে এখন যদি এভাবে দেখতে থাকিস না তাহলে তোর বউয়ের ওপর তোর নিজেরই নজর লেগে যাবে।

নিরব;; না মানে..

অয়ন;; চোখ নামা বাদর।

নিরব;; নিজের বউ কে দেখলেও দোষ 😑

এবার রাত্রি কে দেখে অয়ন থেমে যায়। এক নয়নে তাকিয়ে থাকে। রাত্রি চোখ তুলে দেখে যে অয়ন তার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। তা দেখে রাত্রি অয়নকে এক চোখ মেরে দেয়। সাথে সাথেই অয়নের কাশি ওঠে পরে। রাত্রি মুখ চেপে হাসে। কিন্তু আব্রাহামের অস্থির মন তো আরো জোড়ে হাতুরি পেটাচ্ছে কারন সবাই থাকলেও আইরাত নেই। আব্রাহামের এবার রাগ হচ্ছে আবার বিরক্তিও লাগছে।

আব্রাহাম মনে মনে;; এই মেয়ে কে আমি কি যে করবো সবাই নিচে নামছে তাহলে ও কোথায় ওই কেন নামছে না। আমার যে আর ভালো লাগছে না।

নিপা রাত্রি নিচে নেমে পরলে,, আব্রাহাম তাদের সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে।

আব্রাহাম;; নিপা আইরাত কোথায়?

রাত্রি;; আয়য় হায়য়য়য় ভাই আপনার যেন আর তোর সইছে না।

আব্রাহাম;; সইবেই না তো কখন থেকে দেখছি না ওকে।

নিপা;; ভাই মাত্র ২ ঘন্টা হয়েছে।

আব্রাহাম;; ২ ঘন্টা আমার কাছে ২ বছরের সমান।

রাত্রি;; হাহাহা আরে ভাইয়া আসছে আপনার প্রাণপাখি চিন্তা করবেন না।

নিপা আর রাত্রি চলে গেলো। আব্রাহাম এখনো মুখ লটকিয়ে বসে আছে। অবশেষে কিছুটা দূর এসে সে কোল্ড ড্রিংস্ খেতে থাকে। কিছু সময় পর রাত্রি আইরাত বলে চিল্লিয়ে ওঠে। আব্রাহাম তা শুনতে পেরে ঘুড়ে তার পেছনে তাকায় দেখে যে আইরাত নিচে নামছে। আইরাতের পরনে নেভি ব্লু কালারের লেহেঙ্গা, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, হাত ভরতি চুড়ি, কানে ঝুমকা তার সাথে বেশ সাজ। আব্রাহাম সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে মুচকি হেসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক প্রিটি লাগছে ওকে দেখে। আব্রাহাম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আইরাত নিচে নেমে এলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক হাত এগিয়ে দেয়। আইরাত হেসে আব্রাহামের হাতে তার হাত রাখে। তাদের দেখে নিরব বলে ওঠে..

নিরব;; যত যাই বলো না কেন বেস্ট কাপল তোমরাই।

আব্রাহাম;; আচ্ছা হয়েছে এবার তুই যা। কাজি আসার সময় হয়ে গিয়েছে।

সবাই নিরব আর নিপার পাশে বসে আছে। কাজি এখনো আসে নি। তবে এসে পরবে। সবাই আড্ডা দিতে ব্যাস্ত কিন্তু এরই মধ্যে একটা ছেলে আইরাতের দিকে বাজে নজরে তাকিয়ে আছে। আর তার এই নজর অনেক ক্ষন যাবত আইরাতের ওপর স্থির। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে আড্ডার মাঝ খান থেকে আইরাতকে ডেকে নিয়ে যায়। আইরাত তার সাথে চলে যায়। স্টোররুমে কিছু একটা রাখার জন্য ডেকেছিলো। স্টোর রুম থেকে ফিরে আসার সময় হঠাৎ আইরাতের হাত ধরে কেউ টানাটানি শুরু করে দেয়। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য চিল্লাতে থাকে। এদিকে আইরাত কে অনেকক্ষন ধরে আব্রাহাম দেখছে না। একটা মেয়ে এসে যে আইরাতকে নিয়ে গেলো আর তো ফিরে আসলো না। এবার আব্রাহামের কেমন যেন খটকা লাগতে লাগে। আব্রাহাম সবাইকে বলে ওপরের দিকে যায়। সামনে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেতেই আব্রাহাম কারো চিল্লানোর আওয়াজ পায়। আব্রাহাম সেদিকে এগিয়ে যায়। এগোতেই আব্রাহাম শুনতে পায় আইরাত তার নাম ধরে চিল্লাছে “আব্রাহাম”। আব্রাহাম দেখলো যে ছেলেটি আইরাতের হাত ধরে টানছে। আব্রাহামের রাগে শরীর লাল হয়ে গেলো। আব্রাহাম এক লাথি দিলো ছেলেটির বুকে। ছেলেটি ছিটকে দূরে সরে গেলো। এমন ভাংচুরের শব্দ শুনে সবাই ঘাবড়ে গেলো। সবাই একসাথে ওপরের দিকে চলে আসে। আব্রাহাম ছেলেটাকে বেধরক ভাবে মারতে লাগলো। মারতে মারতে একদম আধা মরা করে দিয়েছে। যে হাত দিয়ে আইরাতের হাত ধরেছিলো সেই হাত একদম ভেংে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে আব্রাহাম। ছেলেটি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে বারবার মাফ চাচ্ছে কিন্তু আব্রাহামের রাগ থামার নাম নেই। আইরাত বেশ ভয় পেয়ে আছে এখন। সে আব্রাহামের রাগ সম্পর্কে খুব ভালোই যানে। কি পরিমান যে হিংস্র হয়ে ওঠে আব্রাহাম তা হয়তো আইরাতের থেকে বেটার আর কেউ জানে না। ছেলেটিকে মারতে মারতে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ছেলেটি কথাও বলতে পারছে না। রক্তে নাক মুখ সব ভেসে গেছে। আব্রাহামের হাতের ছাল উঠে গেছে ঘুষি মারতে মারতে। অবশেষে অয়ন আর নিরব মিলে আব্রাহাম কে টেনে তুলে আনে।

আব্রাহাম;; সর তোরা সবাই, ছেড়ে দে আমাকে। ওই জানোয়ার জানে না যে ও কার ওপর নজর তুলে তাকিয়েছে। ওকে আমি জানে মেরে দিবো।

আইরাত;; প্লিপ্লিজ এএএবার থামুন প্লিজ, মাফ করে দিন ওকে মারা যাবে তো। (ভয়ে)

আব্রাহাম এবার অয়ন আর নিরব কে সরিয়ে আইরাতের কাছে গিয়ে তার দুহাত দিয়ে আইরাতের গালে ধরে বলে ওঠলো।

আব্রাহাম;; জানপাখি আমি কি করে মেনে নিবো যে তোমার দিকে কেউ বাজে নজরে তাকিয়েছে। তুমি আমার তোমাকে দেখার অধিকার শুধুই আমার রয়েছে। আর এই কুলাংগার গুলো থেকে তোমাকে রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব আর তুমি কেন একা একা আসতে গেলে এখানে বল তো। অনেক চিন্তা হয় তোমাকে নিয়ে। ভালোবাসি তো অনেক বেশিই।

এই বলে আইরাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে আব্রাহামের হাত দিয়ে রক্ত পরছে যখম হয়ে গিয়েছে। আব্রাহামের হাত তাড়াতাড়ি করে নিজের হাতের মুঠোয় এনে বলে ওঠে…

আইরাত;; একি আপনার হাতেও তো অনেক ব্যাথা পেয়েছেন ,চলুন হাতে ব্যান্ডেজ করে দিবো।

আব্রাহাম;; ________________

আইরাত;; কি হলো চলুন।

আব্রাহাম;; অয়ন, এই কুকুরের বাচ্চা কে দূরে ফেলে দিয়ে আয়।

অয়ন;; জ্বি দাভাই।

আইরাত এক প্রকার টেনেই আব্রাহামকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো। অয়ন বডিগার্ড দের ডেকে এনে ওই ছেলেটিকে বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। আব্রাহাম কে আইরাত তার ঘরে নিয়ে যায়। বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়।

আইরাত;; আপনি বসুন আমি ফাস্ট এয়িড বক্স নিয়ে আসছি।

আইরাত গিয়ে বক্স নিয়ে আসে আবার আব্রাহামের সামনে বসে পরে। আব্রাহামের হাত টা নিজের কাছে নিয়ে খুব যত্নের সাথে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। ব্যাথা পেয়েছে আব্রাহাম কিন্তু চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে আইরাত। মলম লাগাতে গিয়ে নিজেই চমকে উঠছে তো আবার জোড়ে জোড়ে ফু দিচ্ছে। আব্রাহাম পলকহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাতের এই সব কান্ডে আব্রাহাম হেসে দেয়। আইরাতের তা দেখে মুখ চুপসে যায়।

আইরাত;; এতো ব্যাথা পেয়েছেন তবুও হেসে যাচ্ছেন। ভুতে ধরেছে নাকি?!

আব্রাহাম এবার আইরাতকে তার সামনে থেকে হাত ধরে টেনে এনে নিজের উরুর ওপর বসিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; এতো টেনশন করতে হবে না জানপাখি, আমি ঠিক আছি।

আইরাত;; তা বুঝলাম কিন্তু এভাবে কি কেউ কাউকে মারে!!

আব্রাহাম;; দোয়া করো যে ওকে জানে মেরে ফেলিনি।

আইরাত;; আপনি কি জীবনেও ভালো হবেন না।

আব্রাহাম;; এমনিতে আমি যথেষ্ট ভালো আছি কিন্তু তোমাকে কেউ কোন ক্ষতি করুক তো তার বেলায় আমার থেকে খারাপ কেউই হবে না, মাথায় রেখো।

আইরাত;; আচ্ছা হয়েছে বুঝলাম এবার নিচে চলুন সবাই আমদের জন্য অপেক্ষা করছে। কাজিও এসে পরেছে বিয়ে পরানো শুরু হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাত আব্রাহাম নিচে চলে যায়। কাজিও এসে পরে বিয়ে পরানো শুরু হয়। বিয়ে শেষ হলে সবাই নিপা এবং নিরব কে অভিনন্দন জানায়। নিপা কে তার ঘরে দিয়ে আসে আইরাত আর রাত্রি। তবে নিরবের তার বাসর ঘরে ঢোকার আগে অয়ন, রাত্রি আর আইরাত বাধ সাধে।

আইরাত;; এই এই দাড়ান কোথায় যাওয়া হচ্ছে এতো জলদি!?

নিরব;; আসলে আমি তো ভাবি…

রাত্রি;; এতো তাড়াতাড়ি বাসর ঘরে যাওয়া হচ্ছে না।

নিরব;; কিন্তু কেন?

অয়ন;; আগে আমাদের পাওনা টা দিয়ে যা ভালো ভাবে।

নিরব;; কিহহ অয়ন তুইও শেষে কিনা..

অয়ন;; জ্বি 😁😁

আইরাত;; হয়েছে হয়েছে এবার বের করো ২৫ হাজার দ্রুত। যত দ্রুত টাকা দিবে তত দ্রুত বউ পাবে।

নিরব;; কিহহ ২৫ হাজার, মানে একটু বেশি হয়ে গেলো না।

অয়ন;; ছিহ মান সম্মান আর রাখলি না, ২৫ হাজার একটা বেপার হলো তাড়াতাড়ি দে বলছি।

তখন আবির আহমেদ আর আব্রাহাম এসে পরে সেখানে। নিরব আব্রাহাম কে দেখে অসহায় ভংিতে বলে ওঠে…

নিরব;; আব্রাহাম ভাই প্লিজ তুমি তো কিছু বল এরা আমাকে একদম লুটে নিলো।

আব্রাহাম ;; আমি আর কি বলবো,, বলেও লাভ নেই। এরা তোকে ছাড়ছে না সুতরাং টাকা দিয়ে বিদায় করাই ভালো তাই না।

নিরব আর কি করবে কোন উপায় নেই তাই টাকা দিয়ে তাদের বিদায় দিলো। তারপর আইরাত আর রাত্রি নিরবকে ঠেলে রুমের ভিতরে পাঠিয়ে দিলো। নিরব নিপার কাছে চলে গেলো। আইরাত সব টাকা অয়ন আর রাত্রি কে দিয়ে চলে গেলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে তাই যে যার যার ঘরে চলে গেলো। আইরাত তার ঘরে চলে এলো। ঘরে গিয়েই আইনার সামনে বসে পরলো। তারপর এক এক করে নিজের গহনা খুলতে লাগলো। তখনই আব্রাহাম তার ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। আসতেই দেখে আইরাত বসে এক এক করে ornaments খুলছে। আব্রাহাম ফোন টা পাশে রেখে আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো। আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আইরাত আইনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আবার নিজের চুড়ি খোলাতে মন দেয়। আইরাতের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয় আব্রাহাম। আইরাত এখনো তার মাথা নিচু করে আছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে। আইরাত এবার অশ্রুসিক্ত নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাতের চোখে পানি দেখে আব্রাহামের বুকের পাশে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। আইরাতের এবার কান্নার বেগ বেড়ে যায়,, কেঁপে ওঠে সে। আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাতকে নিজের সমস্ত দিয়ে আলিঙ্গন করে নেয়। আব্রাহান আইরাতকে কিছু বলে না,, শুধু চুপচাপ আইরাতকে জড়িয়ে ধরে থাকে। কেননা আব্রাহাম জানে আইরাতের এই অশ্রুর কারণ। আসলে কারণ টা সে নিজেই। আইরাত আর আব্রাহামের বিয়ের সময় কিছুই আইরাতের মন মতো হয়নি। যা হয়েছে তা এক প্রকার বাধ্যতা ছিলো। সত্যি আইরাত আজ অনেক বেশিই কানছে, একদম হিচকি ওঠে গিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতের কাপড় পালটে দিলো। তারপর পাজাকোলে করে নিয়ে এসে আইরাতকে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। নিজের বুকে আইরাতকে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় বিলি কেটে দিতে থাকে। আইরাত আব্রাহামের বুকে মাথা রেখেই কখন যে ঘুমের ঘরে পাড়ি জমিয়েছে তা সে নিজেও জানে না। কিন্তু আব্রাহাম এবার ভাবতে থাকে যে আজ নিপা আর নিরবের বিয়ের এতো কিছু করে আইরাতের নিজের বিয়ের কথা মনে পরে গেছে। যেখানে আইরাতের বিয়ে বলতে কিছুই হয় নি। শুধুমাত্র কাগজে কলমে হয়েছিলো মনের দিক থেকে হয়নি। আইরাতের আজকে ঠিক কেমন ফিল হয়েছিলো আব্রাহাম তা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আব্রাহামের মাথায় একটা আইডিয়া কাজ করে। তারপর আব্রাহাম প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে আইরাতের মাথায় গভীর চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।



পরেরদিন সকালে আইরাতের ঘুম ভেংে যায়। উঠে দেখে তার পাশে আব্রাহাম নেই। আইরাত তার এলোমেলো চুল গুলোতে হাতিয়ে ঘরের আশে পাশে তাকায়। কিন্তু না আব্রাহাম কোথাও নেই। আইরাত ভাবে হয়তো কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাইরে চলে গিয়েছে। কিন্তু যতোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হোক আইরাতকে সবসময় বলেই যেত কিন্তু আজ গেলো না। এতে আইরাতের কিছুটা মন খারাপ হলো। তবুও ইনিয়েবিনিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে চলে গেলো দেখলো যে সবাই একসাথে বসে কথা বলছে। আইরাতকে দেখে সবাই খুশি হয়ে গেলো। সেও তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। কিন্তু কোথা থেকে যেন আব্রাহাম এসে আইরাতকে বলতে শুরু করলো যে…

আব্রাহাম;; আইরাত যাও কিছু রান্না করে নিয়ে আসো সবাই আজ তোমার হাতের খাবার খাবে।

আইরাত;; জ্বি আ.. আচ্ছা।

আইরাত মলিন হেসে রান্নাঘরে চলে গেলো। ভাবতে লাগলো যে আব্রাহাম সকাল থেকেই কোন কথা বলছে না। এখন এসেও কোন কথা বললো না সোজা রান্নাঘরে চলে আসতে বললো তাকে। যে কিনা রান্নাঘরের নাম শুনে রেগে বোম হয়ে গেতো সেই কিনা আইরাতকে আজ নিজে রান্নাঘরে যেতে বললো। আচ্ছা যাই হোক আইরাত সবার জন্য রান্না করতে লাগলো। এই সুযোগে আব্রাহাম সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; আমি আবার বিয়ে করবো।

আব্রাহামের এমন কথায় অয়নের কাশি উঠে পরলো। বাকি সবাইও আব্রাহামের কথায় বেশ অবাক। মানে হঠাৎ আব্রাহামের এমন বিয়ের শখ জাগলো কেন!.

অয়ন;; মানে কি বলছিস কি তুই দাভাই?!

আব্রাহাম;; যা এইমাত্র শুনেছিস তাই।

নিরব;; আর ইউ জোকিং ভাই!?

আব্রাহাম;; নট এট অল। আই এম টু মাচ সিরিয়াস। আমি বিয়ে করবো তো করবোই।

আবির আহমেদ;; কিন্তু পুনরায় বিয়ে কিভাবে সম্ভব, তুই পাগল হয়েছিস আব্রাহাম?!

আব্রাহাম;; পাগল আমি না বরং তোমরা হয়েছ আমি অন্য কাউকে না, আমি আইরাতকেই আবার বিয়ে করতে চাই। কিন্তু এই কথা যেন আইরাত ভুল করেও টের না পায়।

এবার যেন সবাই এক স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

রাত্রি;; আরে এটা তো ভালো কথা কেননা আইরাতের বিয়ে হয়েছে একটা খারাপ পরিস্থিতিতে। কিন্তু এখন যখন সবকিছুই ঠিক হয়ে গেছে তাহলে কেননা সবকিছু আবার নতুন রুপে শুরু করা যাক।

নিপা;; অবশ্যই তাই।

নিরব;; তো ভাই কবে থেকে শুরু হচ্ছে বিয়ের সবকিছু?!

আব্রাহাম;; আজকে থেকেই এখন থেকেই।

অয়ন;; যো হুকুম দাভাই।

এই সময়ে আইরাতও চলে আসে সবার জন্য নাস্তা নিয়ে। এখন সবাই এমন একটা ভাব ধরে যেন এতো ক্ষন কেউ কিছুই বলে নি, কিছুই জানে না। একদম চুপচাপ। আইরাত সবাইকে খেতে দিয়ে নিজেও আব্রাহামের পাশে বসে পরে। কিন্তু আইরাতের মুখে আজ তেমন কোন হাসি নেই। মনটা কেমন যেন ভার ভার তার। সবার খাওয়ার মাঝেই আইরাত তার খাবার হাফ খেয়েই ওঠে পরে। আবির আহমেদ আইরাতকে আটকাতে চাইলে আব্রাহাম তার হাতের ইশারাতে তাকে থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম এবার আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকায়। আব্রাহাম বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আইরাতের মনে এখন কি চলছে। তবুও মুখ বুজে থাকে সে। কারণ সামনে আইরাতের জন্য এক বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে চলেছে। আব্রাহাম খেয়ে দেয়ে আর আইরাতের সাথে কোন কথা না বলেই কাজে বাইরে চলে যায়। এদিকে আব্রাহাম স্টাফদের, অয়ন, নিরব, রাত্রি আর নিপা কে বলে যায় সবকিছু ঠিকঠাক মত দেখাশুনা করতে। আর আইরাত যদি জিজ্ঞেস করে যে এতো আয়োজন কিসের তাহলে তাকে বলতে যে আব্রাহাম ছোট খাটো একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছে তাই। তারা কাজে লেগে পরে কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে আইরাত আজ সারাদিন তার ঘর থেকেই বের হয় না,, সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে। শুধু বাপির ঔষধ দেওয়ার টাইমে নিচে এসে দুবার ঔষধ দিয়ে গেছে এই আর কি। অবশেষে আব্রাহাম বাইরে থেকে জলদি এসে পরে। সবার কাছে জানতে পারে যে আইরাত নাকি তার প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বাইরেই বের হয়নি। কিন্তু এর মাঝে রাত্রি আর নিপা রুমে গিয়ে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়ে এসেছে। আব্রাহাম কিছুই বলে না যেন এমন হবে এটা তার জানাই ছিলো। ধীরে ধীরে দিন গড়িয়ে রাত হয়। এদিকে বিয়ের কাজও শেষ। কম সময়ের মাঝেও কিন্তু চৌধুরী বাড়ি কম সুন্দর করে সাজানো হয়নি। চৌধুরী বাড়িকে দেখতে একটা প্যালেসের মতো লাগছে। আর সবকিছুই করা হয়েছে আইরাতের পছন্দের। আইরাতের পছন্দ Dark Red Rose🌹🥀। আব্রাহাম সেগুলোই মাথায় রেখে থিম সাজিয়ে গেছে। আব্রাহাম আর সময় নষ্ট না করে চলে যায় রেডি হওয়ার জন্য। আইরাত বসে বসে তার ফোনে গেমস্ খেলছিলো কিন্তু তখনই হুটহাট করে ২-৩ জন মেয়ে সাথে রাত্রি আর নিপাও এসে পরে। আইরাত তাদের দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। তবে আইরাতকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিপা বলে ওঠে…

নিপা;; আইরু তাড়াতাড়ি ওঠে এটা পরে নে।
(আইরাতের সামনে একটা Ash & White কালারের অপরুপ সুন্দর কাজ করা ভারি লেহেঙ্গা দিয়ে)

আইরাত;; কিন্তু কেন? (বেশ অবাক হয়ে)

রাত্রি;; ওফফ ফো এতো কথা বলিস না তো বেবিজান প্লিজ তাড়াতাড়ি ওঠ এটা পরে নে।

আইরাত;; আহা বাবা বুঝলাম পরতে হবে কিন্ত কেন বলবি তো,, আর তোরা এভাবে সেজেছিস কেন,, আর এই মেয়ে গুলো কারা???

নিপা;; আরে থাম একটু শ্বাস নিতে দে বইন। এতো শত প্রশ্নের জবাব পরে তুই একাই পেয়ে যাবি। এখন আপাতত নিজের মুখ টা বন্ধ রাখ আর এগুলো পরে নে।

আইরাত আর তাদের সাথে না পেরে লেহেঙ্গা টা পরেই নিলো। আইরাতকে টেবিলে বসিয়ে দেওয়া হলো মেয়েরা তাকে সাজাচ্ছে,, আইরাতের হাত ভরতি সাদা পাথরের চুড়ি, কানে ঝুমকো, গলায় নেকলেস, কপালে টিকলি মানে এক কথায় কোন হুর পরি কেউ হার মানাবে,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে আইরাতকে ❤️।

আইরাত তৈরি হয়ে রাত্রি আর নিপার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। নিপা আইরাতের পেছনে কালো টিকা লাগিয়ে দিলো যেন কারো নজর না লাগে। তারপর আইরাতকে নিয়ে নিচে যাওয়া হলো। নিচে গেতেই আইরাত অবাকের চরম পর্যায় কারণ বাড়ি পুরো বিয়ে বাড়ি লাগছে। আর আজ যেহেতু আইরাত তার রুমের বাইরেই আসে নি তো এই সবকিছুর কিছুই জানে না সে। কিন্তু নিচে গিয়ে আইরাত যেই না আব্রাহামকে দেখলো বর বেশে আইরাত তখন চট করেই তার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনা-আপনি পেয়ে গেলো। আব্রাহাম নিচে আইরাতের অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের পরনে সাদা কালারের পেন্ট আর Ash & white কালারের কম্বিনেশনে শেরওয়ানি, হাতে সোনালী কালারের ঘড়ি, শেরওয়ানির ওপরের দুটো বোতাম খোলা, নীলাভ চোখ, কপালেও ওপর পরন্ত চুল, সাথে চাপদাড়ি, মন না হেরে কেউ কি আর থাকতে পারবে ❤️। আইরাতের আসার শব্দ শুনে আব্রাহাম ওপরের দিকে তাকায়। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। যেন হাজার বছর এই মুখখানার দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মন ভরবে না। মাথায় কাপড় ধরে আইরাতকে আনা হলো। সামনে এগিয়ে যেতেই কাজিকে আইরাতের চোখে পরে। এবার আইরাতের বুকের ভেতর টা কেমন ধক করে ওঠে। আইরাত না চাইতেও তার চোখেও কোণে হালকা পানি জোড় হয়। আইরাত নিপার দিকে অবাক নয়নে তাকায়। নিপা আইরাতকে আস্থা দিয়ে মুচকি হাসে।

আইরাত আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারেনি যে আব্রাহাম তাকে এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ দিবে সাথে বাকিরাও। আইরাতকে নিয়ে আব্রাহামের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। এবার আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম আড়চোখে দেখে যে আইরাত তার দিকে তাকিয়ে আছে। খানিক বাদে আব্রাহামও তার দিকে তাকায়। আইরাত সাথে সাথেই একগাল হেসে দেয়। সারাদিন পর আইরাত এখন হেসেছে। আব্রাহামের মনে এতোক্ষণে শান্তি লাগলো। এ যেন কাঠ ফাটা রোদে এক ফোটা পানির সমান। আব্রাহাম সাথে সাথে তার বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে দিলো এবং আইরাতের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো “” হায়য়য় কোয়ি তো রোক লো””। আইরাত এবার লজ্জা মাখা হাসি হাসে। কাজি তাদের কবুল বলতে বললে তিনবার কবুল বলে পুনরায় আইরাত-আব্রাহামের বিয়ে হয়ে যায়। এবার আইরাত তার রুমে চলে যায়। রাত বেশ গভীর হয়েছে। কিন্তু আইরাত তার ঘরে একটু জলদিই চলে গেছে। অয়ন, রাত্রি, নিরব, নিপা ভাবে যে আব্রাহামকে আটকিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। কিন্তু হলো তার উল্টো টা। তারা সবাই আব্রাহামের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে অনেক অবাক। কেননা দরজার সামনে বড়োসড় করে লেখা আছে যে “” আমি জানি তোরা টাকা নেওয়ার জন্য আমাকে ঠিক আটকাবি কিন্তু আমি এটার সুযোগ দিব না, পাশে দেখ একটা খাম রয়েছে আর সেখানে ৪০ হাজারের মতো আছে,, তোরা নিয়ে নে, আর হ্যাঁ শয়তানের দল ভুলেও দরজার পাশে কান পেতে থাকবি না যে যার যার ঘরে যা, গুডবায়””

এটা দেখে অয়ন বলে ওঠে…

অয়ন;; দাভাই এতো বেশি স্মার্ট কেন!? 😕

নিপা;; কারণ উনি আর কেউ না বরং আমেরিকান গ্যাংস্টার মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আব্রাহামের এমন কাজে তাদের সকলেই বেয়াক্কেল হয়ে গেলা। তারা ভাবতেও পারেনি যে আব্রাহাম তাদের সাথে এমন কিছু একটা করবে। কিন্তু তারা হেসেই খুন। অবশেষে তারা সবাই চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম ঘরের ভিতরে গিয়ে প্রচুর অবাক। কারণ ঘরের কোথাও কোন আলোর রেশটুকু নেই। শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। আব্রাহাম সুইচ অফ অন করছে বারবার কিন্তু তাতেও কোন লাভ নেই। আব্রাহাম সামনে এক কদম পা রাখতেই হঠাৎ করেই তার সামনে এক পলশা আলো জ্বলে ওঠে। মোমবাতি জ্বলছে, তার আলোতেই আইরাতের সুনিপূণ মুখখানা দেখা যাচ্ছে। আইরাত ধীরে ধীরে মুখ তুলে চোখ মেলে তাকায় আব্রাহামের দিকে। পুরো ঘর অন্ধকার তাতে মোমবাতির আলো যেন ঘরকে রাঙিয়ে তুলেছে। অনেক গুলো বেলুনও আছে ঘরে সাজানো। তবে চারিদিক মোমের আলোয় আলোকিত। তাতে আইরাতের মুখ জ্বলজ্বল করছে। আইরাত ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহামের সামনাসামনি দাড়াঁতেই ঘরের প্রতিটা কোণায় মোমবাতি জ্বলে ওঠে। সারা রুমে আলো জ্বলছে। এবার আইরাতকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়ের পোশাক সে ছেড়ে ফেলেছে। তা ছেড়ে একটা নেটের লাল টুকটুকে শাড়ি পরেছে। তাতে কিছু পাতা এবং পুতির সংমিশ্রণ রয়েছে। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। আইরাতের প্রতিটা অঙ্গ বেশ ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে। সে তার মুখের সামনে মোমবাতি টা নিয়েই আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আব্রাহামের এখন তো নাজেহাল অবস্থা। সে কি বলবে খুজে পায় না। বাক্যহীন হয়ে গেছে সে। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে তার কল্পনাতেও কখনো ভাবেনি যে আইরাত তাকে এভাবে এরকম করে চমকে দিবে। আইরাতকে এই ভাবে দেখে সে নিজের ওপর প্রতি সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণ হাড়াচ্ছে। নিজেকে এই পরিস্থিতিতে ঠিক রাখা খুব কঠিন, খুবই কঠিন। আব্রাহাম আইরাতের হাত থেকে মোমবাতি টা নিয়ে টেবিলেও পাশে রেখে দেয়। আইরাতের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোমাড় জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; মানা করেছি না কতো বার, যে এভাবে কখনো আমার সামনে আসবে না। নিজেকে সামলাতে পারি না। মাথা তো আমার খারাপ করেই দিয়েছো এখন কি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো। আইরাত তোমাকে ঠিক কতো টা আবেদনময়ী লাগছে তাকি তুমি জানো!!

আইরাত;; __________________।

আব্রাহাম;; আইরাত, আমি আজ তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে কি আমায়?

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; আজ আমি তোমাকে সম্পূর্ণ রুপে আমার করে নিতে চাই। শুধুই আমার। এবার থাকবে না কোন বাধা, থাকবে না কোন অমত। শুধু থাকবে ভালোবাসা আর আমরা দুজন মিলে এক। আমাকে কি দিবে সেই সুযোগ আইরাত, আজ সম্পূর্ণভাবে কি হবে তুমি আমার আব্রাহামের আইরাত?!

আব্রাহামের প্রতিটা কথায় আইরাত কেপে কেপে ওঠে।মনের ভেতরে কেমন যেন ঝড় বয়ে যায় তার। আইরাত ধীরে ধীরে আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার উত্তরের আশায় এখনো আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত আর কিছুই না বলে মুচকি এক হাসি দিয়ে সোজা আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আইরাতের সম্মতি বুঝতে পেরে। তাকে পাজাকোলে তুলে নিলো। বিছানার ঠিক মাঝখানে শুইয়ে দিলো। আইরাতের ঠোঁটের সাথে আব্রাহাম তার ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আইরাতের শাড়ির আচল সরিয়ে দিলো গায়ের ওপর থেকে। আব্রাহাম আইরাতের গলাতে মুখ ডুবায়। নিজের শেরওয়ানি খুলে ফেলে সে। শুরু হয় আব্রাহাম-আইরাতের নতুন এক প্রেম কাহানি 🌷।


৭ বছর পর~~““

দিনগুলো পেরিয়ে গেছে। সময় তার আপন গতিতে চলে গেছে। সাথে অনেক গুলো বছরও কখন যে চোখের পলকে পেরিয়ে গেছে তা কেউ টেরই পায় নি। আবির আহমেদ, আব্রাহাম,আইরাত,অয়ন,রাত্রি,নিরব, নিপা,রাশেদ সবাই একই বাসাতে একসাথে থাকে। মাঝখানে রাত্রি আর অয়নের বিয়েও হয়ে যায় অনেক ধুমধাম করে। আব্রাহাম আর আইরাতের জমজ দুটো ছেলে-মেয়ে হয়েছে। ছেলে আতিফ আহমেদ চৌধুরী আর মেয়ে আরুশি আহমেদ চৌধুরী। দুজনই ভারি মিষ্টি দেখতে। মেয়ে হয়েছে আব্রাহামের আদরের দুলালি আর ছেলে মায়ের আদরের শালিক। নিপা আর নিরবের একটা ছেলে হয়েছে নাম রোদ, আর অয়ন রাত্রির একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে নাম প্রভা। চার ভাই বোন মিলে সারাক্ষন বাড়িকে মাথায় তুলে রাখে। সবার চোখের মণি এরা, বাড়ির প্রাণ। তবে মাঝে মাঝে বাচ্চাকাচ্চাদের অত্যাচারে আইরাত ক্লান্ত হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই সবার হাসি মুখ দেখলে পরাণ জুড়িয়ে যায়। আতিফ আর আরুশিকে দেখলে নিপা নিরব, রাত্রি আর অয়নের মন ভরে যায়। আব্রাহাম আর আইরাতের ক্ষেত্রেও নিপা-নিরব আর অয়ন-রাত্রির বাচ্চাদের দেখলে একই অবস্থা। একে ওপরের জীবন। আইরাত,রাত্রি,নিপা তিনজন মিলে জমিয়ে সংসার করছে। চার নাতি-নাতনীদের পেয়ে আবির আহমেদ যেন ধন্য। এদের কে ঘিড়েই আবির আহমেদ-এর পুরো দুনিয়া। আব্রাহাম আর আইরাত এখনো আগের মতোই রয়েছে। ভালোবাসা যেন তাদের মাঝে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এখনো যে কেউ দেখলে ভাববে যে নতুন বিয়ে করা কাপল এরা। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের চোখে হারায়। এখনো আব্রাহাম সেই একই রকম হ্যান্ডসাম আর পারফেক্ট রয়েছে। আর আইরাত তো মনে হয় দিন দিন সুন্দর হচ্ছে। আইরাত-আব্রাহাম হয়ে রইলো একে ওপরের পরিপূরক হিসেবে 💞।

আব্রাহাম;; মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী!!
আইরাত;; জ্বি বলুন চৌধুরী
আব্রাহাম;; ধন্যবাদ আমার জীবনকে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য,, ভালোবাসা কাকে বলে বুঝানোর জন্য, এতো গুলো খুশি আমাকে দেবার জন্য, ভালোবাসি।
আইরাত;; ভালোবাসি অনেক বেশি।

সমাপ্ত~~~?

Gangstar In Love Bonus Part+49

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

{বোনাস পার্ট ❤️}

..
..
..
..
..

দিন যেতে থাকে, সময় পার হতে থাকে৷ বিয়ের দিনও এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। সবাই মিলে জমিয়ে বিয়ের আয়জোন করছে। আইরাত,নিপা,রাত্রি তো পারছে না পুরো শপিংমল বাসায় তুলে নিয়ে আসতে। আর তাদের পিছনে নিরব,অয়ন লাগাতার খেটেই যাচ্ছে। ইভেন রাশেদও। ছেলেদের দশা এক প্রকার নাজেহাল। আব্রাহাম প্রথমে তাদের সাথে যেতে না চাইলেও আইরাতের তার উল্টো পাল্টা কাজে এক সময় বাধ্য করে তাদের সাথে যেতে। আব্রাহাম বলেছিলো যে অযথা এই গরমে বাইরে শপিং এ যাওয়ার চেয়ে বরং সব ডিজাইনার কে বাসাতেই ডাকুক কিন্তু না তা হবে না। আইরাত ভেংচি কেটে বলে যে বিয়ের শপিং বাইরে গিয়ে করাতে যতটা মজা তা বাসায় বসে থেকে নেই। এখন কি আর করার আইরাতের জেদের কাছে তাকে হার মানতেই হলো। এখন তারা সবাই আছে এক বড়সড় শপিংমলে। পিছনে অয়নের কাছে এবং রাশেদের কাছে সবগুলো শপিং ব্যাগ। এতোই ব্যাগ যে তাদের মুখ অব্দি দেখা যাচ্ছে না।তবুও নাকি তাদের কেনাকাটাই এখনো শেষ হয়না।

আইরাত;; তো রাত্রি আর কি কি কেনা বাকি রইলো?

রাত্রি;; আরে মেইন জিনিসই তো কেনা হয়নি।

আইরাত;; লেহেঙ্গা!

নিপা;; অয়ন ভাইয়া গাড়ি বের করো।

অয়ন;; কিহহ আরো।

রাত্রি;; এই কিসের আরো এইটুকুতেই হাপিয়ে গেলে হবে! চলো

নিপা;; নিরব কোথায় ওকে যে দেখছি না।

রাশেদ;; মেডাম নিরব ভাই তো ব্যাগ গুলো রাখতে গিয়ে আর ফিরেই আসেনি।

নিপা;; ও সিওর পালিয়েছে। দেখেছো কান্ড নিজের বিয়ে আর নিজেই এভাবে কাজে ফাকি দিচ্ছি ওকে তো আমি।

আইরাত;; আমার চৌধুরী কোথায় ওকেও তো দেখছি না।

রাত্রি;; আরে না না আব্রাহাম ভাই তোকে ছেড়ে কোথাও যাবে না সামনে তাকিয়ে দেখ ফোনে কথা বলছে।

আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম আসলেই ফোনে কথা বলছে। ফোন কেটে দিয়ে তাদের কাছে আসতে থাকে। কিন্তু আসার সময়ই একটা মেয়ের সাথে আব্রাহামের ধাক্কা লাগে। মেয়েটি যে আব্রাহাম কে ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়েছে তা যে কেউ বুঝবে। আর এগুলো আইরাতের চোখ এড়লো না। মেয়েটি এখন ঢং করে আব্রাহামকে সরি বলছে। আব্রাহামও তার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মলিন হেসে It’s ok বলছে। মেয়েটি যে চিপকু আর বেহায়া তা মেয়েকে দেখলেই বুঝা যায়। আইরাত তো রাগে জ্বলে পুড়ে বোম হয়ে যাচ্ছে। নিপা আর রাত্রি শুধু ভয়ে তাকিয়ে আছে। একবার আব্রাহামের দিকে তো আর একবার আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। বিকজ আইরাত সহজে রাগে না আর একবার যদি রেগে যায় তাহলে দুনিয়া উলটে ফেলে। রাশেদ আর অয়নও এতো গুলো ব্যাগ নিয়ে বোকার মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই মেয়েটি এবার অতিরিক্ত করে ফেলেছে। তার পার্স থেকে টিসু বের করে আব্রাহামের কোর্টে পরে থাকা জুস মুছে দিচ্ছে। আব্রাহাম লাগবে না বললেও সেই মেয়ে গায়ে পরে পরে আব্রাহামের কাছে যাচ্ছে। এতে তো আইরাতের মাথা ফেটে গেলো রাগে। আইরাত আর দাঁড়িয়ে না থেকে জোড়ে জোড়ে কদম ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে সেই মেয়েটির পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো। ওই মেয়েটি আব্রাহামের ওপর এতোই লাট্টু ছিলো যে তার পিছনে যে কেউ আছে তা সে খেয়ালই করেনি।

মেয়েটি;; সরি সরি সত্যি অনেক সরি, আমি বুঝতে পারনি যে এমন কিছু একটা হবে। আপনার কোথাও লাগে নি তো। আপনার কোথাও লাগলে আমি খুব কষ্ট পাবো।

আব্রাহাম;; না ঠিক আছে প্রব্লেম নেই।

মেয়েটি;; না না দাড়ান আমি আর একটু পরিষ্কার করে দিই।

আইরাত;; নাহ থাক, আপনার আর মেহনত করতে হবে না,, উনার কোর্ট পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য উনার বউ আছে।

আইরাতের এমন কথায় মেয়েটি চমকে পিছনের দিকে তাকায়। মেয়েটি একবার আইরাতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নেই।

মেয়েটি;; কে আপনি?

আব্রাহাম;; ও আ…

আইরাত;; আপনি এতোক্ষন যার গায়ে পরে কথা গুলো বলছিলেন, চিপকাচ্ছিলেন আমি তারই একমাত্র বউ হই। আর বউ যেহেতু এসে গেছে তাহলে আর কোন বাইরের মেয়ের দরকার নেই আমি মনে করি,, আপনি আসতে পারেন।

আইরাতের এমন কথায় নিপা রাত্রি অয়ন রাশের সবাই হেসে দেয়। আর আব্রাহাম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কারণ আইরাত কে সে এভাবে কারো সাথে কথা বলতে এর আগে কখনোই দেখে নি। মেয়েটি এতে বেশ অপমানিত বোধ করলো তারপর পরিবেশ রক্ষার্থে মলিন হেসে যেতে ধরলে আইরাত আবার বলে ওঠে…

আইরাত;; এই যে মিস চিপকু শুনুন

মেয়েটি সাথে সাথে পিছনে ঘুড়ে।

আইরাত;; আল্লাহ দু-দুটো চোখ দিয়েছে। দয়া করে প্লিজ তাদের ব্যবহার করতে শিখুন। আগে থেকে সামনে কে কোথায় আছে কি করছে তা প্লিজ দেখে চলবেন। এবার আপনি যান।

মেয়েটি এতে তেলে বেগুনে জ্বলে গেলো। এক ঝটকানা মেরে চলে গেলো। আবার আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকালো। আইরাত যে রেগে আগ বাবুলা হয়ে আছে তা তার চাহনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আব্রাহাম আবার চোখে সানগ্লাস পরে চলে আসতে নিলে আইরাত তাকে আটকে দেয়।

আইরাত;; এই দাঁড়ান,,

আব্রাহাম;; ____________

আইরাত;; মেয়েটি কে?

আব্রাহাম;; আমি কি করে জানবো মেয়েটি কে। ওকে আমি চিনি নাকি!

আইরাত;; তাহলে এতো গায়ে পরছিলো কেন?

আব্রাহাম;; আজব, দেখেছে যে একজন সুন্দর ছেলে আসছে তাই গায়ে পরেছে এতে ক্ষতি কি।

আইরাত;; ওহহহ আচ্ছা আচ্ছা ক্ষতি কি তাই না। ক্ষতি হয়েছে কিনা জানি না তবে এখন ক্ষতি আমি করবো।

আব্রাহাম;; কি করবে কি তুমি?

আইরাত;; না এখন তো কিছুই করবো না কিন্তু এর পরেরবার থেকে যদি দেখেছি যে অন্য কোন মেয়ের সাথে মিশতে বা কথা পর্যন্ত বলতে তো একদম জানে মেরে ফেলবো বলে দিচ্ছি (আঙুল তুলে আব্রাহামের কাছে তেড়ে এসে)

আব্রাহাম;; আরে আমার কি দোষ! সরো আমি যাবো।

আব্রাহাম আইরাতকে টপকে সাইড দিয়ে চলে যেতে ধরলেই আইরাত আবার থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; এইই দাড়ান।

আব্রাহাম;; আবার কি!

আইরাত;; খুলুন।

আব্রাহাম;; What! খুলবো মানে কি খুলবো?

আইরাত;; ওপরের কোর্ট খুলুন।

আব্রাহাম;; আরে কিন্তু কেন খুলবো?

আইরাত;; বিকজ ওই মেয়েটা এতে জুস ফেলে দিয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে নেকামি করে টিসু দিয়ে এতে মুছার বাহানা দিয়ে আপনার কাছে এসেছে। আর এতো কিছু তোকে কেন বলতে হবে হ্যাঁ তোকে খুলতে বলেছি তুই কোর্ট খুলবি ব্যাস,, ওই মেয়ে তোকে ধরবে কেন?

আইরাত যেন রেগে শেষ, আব্রাহাম ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। এটা সে আইরাতের কোন রুপ দেখছে।
শুধু আব্রাহাম না এমনকি বাকি সবাই আইরাতের এমন রাগ দেখে ভরকে গেছে। আব্রাহাম বুঝতে পারলো যে এখন যদি সে তার কোর্ট না খুলে তাহলে বিপত্তি হবে কপালে শনি লাগিয়ে দিবে সে। তাই আব্রাহাম আর কোন শব্দ না করে চুপচাপ কোর্ট টা খুলে দিলো। আইরাত টান দিয়ে তা হাতে নিয়ে নিলো। ভ্লু কালার কোর্ট টা খুলে নিলে আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে এক নজর তাকালো। নাহ, এখনো আব্রাহামকে সাদা পেন্টে আর Ash কালার শার্টে কম সুন্দর লাগছে না। এখন যেন আরো বেশি সুদর্শন লাগছে, বেশ মানিয়েছে বডিতে। এবার আইরাত পারছে না কেদে দিতে। কাদো কাদো ফেইস নিয়ে আব্রাহামের সামনে গিয়ে বলে ওঠলো….

আইরাত;; এই চৌধুরী কে বলেছে এতো বেশি সুন্দর হতে হুমম সবকিছুতেই এতো বেশি হ্যান্ডসাম কেন লাগে। সবাই কেমন শকুন চোখে তাকিয়ে থাকে।

আব্রাহাম;; তুমি কি পাগল হলে আইরাত।

আইরাত;; না কিছু না।

এই বলে আইরাত আব্রাহামের ভ্লু কালার কোর্ট টা নিয়ে সামনে হাটা ধরলো। আব্রাহাম আর কোন উপায় না পেয়ে আইরাতের পিছন পিছন যেতে লাগে। অয়ন,রাত্রি,নিপা,নিরব,রাশেদ সবাই গাড়িতে ওঠে পরে। আব্রাহাম বসেছে ড্রাইভিং সিটে। আইরাত আব্রাহামের পাশে বসতে গিয়েও আবার বসে না। সে গাড়ি থেকে ওঠে যায়।

নিপা;; আইরু কোথায় যাচ্ছিস?

আইরাত;; আসছি।

সবাই আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর আইরাত গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা আব্রাহামের ভ্লু কালারের কোর্ট টা একটা নর্দমায় ফেলে দেয়। আইরাতের এমন কান্ডে সবাই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

অয়ন;; দাভাই এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। তোর বউ তো তোর মতোই হবে তাই না। মিসেস. সাইকো।

আব্রাহাম;; আসলে ঠিক বলেছিস।

আইরাত এবার গিয়ে গাড়িতে বসে পরে আব্রাহামের পাশে। সবাই আইরাতের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে আছে তা দেখে আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; কি এভাবে সবাই তাকিয়ে আছো কেন, আমি কি কোন এলিয়েন নাকি। নিজের জামাইয়ের ওপর অন্য কোন মেয়ের নজর বা স্পর্শ কোনটাই আমি সহ্য করবো না। তাই ওটা ফেলে দিয়ে এসেছি। এতে এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে।

__________________________

আইরাত;; এই চৌধুরী চলো তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গা কিনতে হবে তো।

তারপর সবাই চলে গেলো লেহেঙ্গা কিনতে। আইরাত,নিপা,রাত্রি বসে আছে তাদের সামনে হাজারো রকমের লেহেঙ্গার ডিজাইন রয়েছে। কিন্তু কোনটাই যেন তাদের চোখে পরছে না। এদিকে আব্রাহাম, অয়ন, নিরব, রাশেদ সবাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। অবশেষে নিপার জন্য একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা নিলো। হলুদের জন্য একটা অফ হুয়াইট কালারের লেহেঙ্গা,, রাত্রি আর নিপাও সেম লেহেঙ্গা নিলো হলুদের জন্য। আইরাত বিয়ের দিনে পরার জন্য একটা Ash & white কালারের মিক্স লেহেঙ্গা নিলো। তার মধ্যে সালা স্টোনের কাজ করা। রাত্রি সাদা কালারের মাঝে হলুদ কালারের একটা লেহেঙ্গা নিলো। আরো অনেক গুলো লেহেঙ্গা কিনে নিলো। এদের এতো কেনাকাটা দেখে নিরব বলে ওঠে…

নিরব;; আমি বুঝি না মেয়েদের এতো শপিং কেন করতে হয়?

অয়ন;; কারণ মেয়েরা এটা করতেই ভালোবাসে। তুই বউমনি আর রাত্রির অবস্থা দেখেছিস সবাইকে কেমন এক দৌড়ের ওপর রেখেছে।

আব্রাহাম;; আইরাত যেভাবে বিয়ের জন্য এতো কিছু করছে i wish সে নিজের বিয়েতে এমন কিছু করতো।

আব্রাহামের কথা শুনে অয়ন আর নিরব হেসে দেয়।

সারাদিন গড়িয়ে রাতের বেলায় তারা বাড়ি ফিরলো। এখন তারা কম বেশি সবাই অনেক ক্লান্ত। বাসায় এসেই যে যার ঘরে চলে গেলো। আব্রাহাম সোজা তাত ঘরে চলে যায়। গিয়েই দেখে তার আগে আইরাত তার রুমে গিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকায়।

আব্রাহাম;; এখানে কি করছ তুমি?

আইরাত;; আরে যে যার যার ঘরে চলে গিয়েছে তাহলে আমি আমার ঘরে আসবো না।

আব্রাহাম;; এটা তোমার ঘর কবে থেকে হলো?

আইরাত;; যেদিক থেকে আপনি আমায় বিয়ে করেছেন (বসা থেকে উথে আব্রাহামের কাছে এসে তার কাধ জড়িয়ে ধরে)

আব্রাহাম;; ছাড়ো।

আইরাত;; কেন ছাড়বো?

আব্রাহাম;; কারণ আমি তোমাদের চক্করে অওরে অনেক বেশি টায়ার্ড। আমি ফেশ হতে যাবো।

আইরাত;; আমিও যাবো।

আব্রাহাম;; Seriously!! ( এক ভ্রু উচু করে)

আইরাত;; হ্যাঁ

আইরাতের বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের আইরাতকে টেনে ওয়াসরুমের ভিতরে নিয়ে গেতে দেরি না। আইরাতকে ওয়াসরুমের ভিতরে নিয়ে গেতেই আব্রাহাম একটানে আইরাতের ওরনা খুলে ফেলে দেয়। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আইরাত অন্য কিছু বলার সময় সুযোগ কিছুই পাচ্ছে না। আব্রাহাম তাকে নিয়ে সাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দেয়। দুজন একসাথে ভিজতে লাগে। আব্রাহাম আইরাতের পাশে দেয়ালে একহাত দিয়ে ভর করে আছে। আর অন্য হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে আছে। আইরাতের মুখ,চোখ, ঠোঁট বেয়ে বেয়ে পানি পরছে। গোলাপী ঠোঁট দুটো যেন পানির শীতল স্পর্শ পেয়ে আরো বেশি গোলাপী হয়ে গেছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে অপলোক চোখে তাকিয়ে আছে। এবার আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের ঠোঁটের ওপর। আইরাতের ঠোঁট গুলো প্রচুর কাপছে। আর তা দেখে আব্রাহাম একদম কন্ট্রোললেস হয়ে গেলো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না সে। ডুবিয়ে দিলো নিজের ঠোঁট আইরাতের ঠোঁটের মাঝে। আইরাত আব্রাহামের ছোয়া পেয়ে কেপে ওঠলো। আব্রাহামের শার্টের কলার খামছে ধরলো। আব্রাহাম আইরাতের উন্মুক্ত পেট জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে। প্রায় ১৫ মিনিট পর নিজের থেকে আইরাতকে কে ছেড়ে দিলো আব্রাহাম। তারপর আর কোন কথা না বলে নিজে চলে গেল কাপর চেঞ্জ করতে। আইরাতও ফ্রেশ হয়ে চলে এলো।



অন্যদিকে অয়ন রাত্রিকে ফোনের ওপর ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু রাত্রির ফোন ধরার নাম নেই। রাত্রি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফোন বেজে চলেছে তা দেখে রাত্রি তাড়াতাড়ি করে ফোন তুলে দেখে অয়ন ফোন করেছে। রাত্রি রিসিভ করে।

অয়ন;; এই কোথায় তুমি কতো বার ফোন দিলাম।

রাত্রি;; না আসলে আমি ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম তো তাই।

অয়ন;; আচ্ছা এখন জকদি করে ছাদে চলে এসো।

রাত্রি;; কি এতো রাতে এখন ছাদে যাবো!

অয়ন;; হুমম এখনই আসবে প্লিজ জলদি এসো।

রাত্রি;; আচ্ছা বাবা ঠিকআছে আসছি আমি।

অয়ন এই বলেই ফোন কেটে দেয়। রাত্রি সোজা ছাদে চলে যায়। ছাদের একদম মাঝখানেই আসতেই রাত্রির চোখ ছানাবাড়া হয়ে গেলো। কারণ তার সামনে অনেক গুলো মোমবাতি দিয়ে লাভ সেপ সাজানো। আশে পাশে অনেক গুলো বেলুনও রাখা আছে। রাত্রি এগুলো তার মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো। তখনই অয়ন ধীর পায়ে রাত্রির পিছনে এসে এক হাটু ভাজ করে দাঁড়ায়।

অয়ন;; রাত্রি..

অয়নের ডাকে রাত্রি চমকে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে অয়ন হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল আর বেলুন নিয়ে বসে আছে।

অয়ন;; রাত্রি আমি জানি না আমি ঠিক কি বলে শুরু করবো। তবে হ্যাঁ আমি এটা স্বীকার করছি যে আমি অয়ন প্রেমে পরেছি। যখন তোমার সাথে প্রথম দেখে হলো তোমার এই মায়া ভরা মুখে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম। মানলাম আমাদের ঝগড়া হয়েছিলো কিন্তু বিশ্বাস করো সেদিন রাতে আমি এই দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। তারপর ধীরে ধীরে তোমার সাথে দেখা করা,, তারপর তা বন্ধুত্তে রুপ নেওয়া,, আর তা আমার মনে কখন যে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার জন্ম হলো নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি। অবশেষে শুধু এটাই বলবো যে ভালোবাসি রাত্রি,, আমি তোমাকে ভালোবাসি রাত্রি,,অনেক বেশিই ভালোবাসি। I LOVE YOU Ratri❣️,, will you accept me?!

অয়ন যে এই মূহুর্তে এমিন কিছু একটা করে বসবে তা রাত্রির ধারনার অনেক বাইরে ছিলো। সে ভাবতেও পারেনি যে অয়ন তাকে এভাবে প্রোপজ করবে। খুশিতে রাত্রির চোখ দিয়ে পানি পরছে। মুখ দিয়ে কোন কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না। তবুও খুব কষ্টে বলে ওঠলো..

রাত্রি;; YES,, হ্যাঁ অয়ন ভালোবাসি আমিও।

ব্যাস আর কি লাগে অয়ন সে আসমানের চাঁদ পেয়ে গেলো। রাত্রি ফুল আর বেলুন গুলো তার হাতে নিলো।অয়ন এক লাফে দাঁড়িয়ে রাত্রি কে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের খুশির যেন কোন সীমা নেই। অয়ন রাত্রিকে রাত্রি অয়নকে জড়িয়ে ধরেই আছে তাদের আশে পাশে যেন কোন খেয়াল নেই। ঠিক তখনই সবাই ছাদে এসে পরলো। মানে আব্রাহাম,আইরাত,নিপা,নিরব সবাই ভেবেছে যে আড্ডা দিতে ছাদে যাওয়া যাক। তারা রাত্রি আর অয়নকে বাসায় অনেক খুজেছে কিন্তু পায়নি। কিন্তু ওপরে ছাদে এসেই দেখে এই কান্ড। রাত্রি আর অয়নকে এই অবস্থায় দেখে সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো। এবার আইরাত তাদের দেখে হাল্কা কেশে উঠলো। কিন্তু তাতেও তাদের কোন ভ্রুক্ষেও নেই। এবার একদিকে আইরাত আর নিপা আর অন্যদিকে আব্রাহাম আর নিরব দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত এবার দুহাত ভাজ করে বলে ওঠে..

আইরাত;; বলি যে এতো রাতে এখন রোমান্স করা বাদ দিলে চলে না। নাকি এখনো করতে হবে। অনেক তো হলো এবার তো একে ওপরকে ছেড়ে দাও।

অয়ন;; না অনেকদিন পরে পেয়েছি আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।

আইরাত;; অয়ন,, ছেড়ে দাও সবাই কিন্তু সবকিছু বিনে পয়সায় দেখছে। যাকে বলে বিনে পয়সায় ফ্রি মুভি। (অয়নের একটু কাছে গিয়ে)

আইরাতের গলা পেয়ে এবার অয়নের হুস ফিরলো। অয়ন আর রাত্রি তড়িঘড়ি করে একে ওপরকে ছেড়ে দিলো। রাত্রি তো পারছে না এখনই লজ্জায় মাটির নিচে লুকিয়ে পরতে। একদম লজ্জায় কুকড়িয়ে গেছে সে। অয়নও বেশ লজ্জা পেয়েছে। তা দেখে আইরাত বলে ওঠে।

আইরাত;; হয়েছে হয়েছে এখন আর লজ্জা পেতে হবে না আমরা যা দেখার দেখে ফেলেছি। এবার তাড়াতাড়ি চল।

নিপা;; আসলে আমি কি ভাবছি জানো নিরব আর আমার বিয়ের আয়োজন ছেড়ে এই দুটোর বিয়ের আয়োজন শুরু কর।

নিরব;; কথা অবশ্য মন্দ বলোনি।

আব্রাহাম;; তো লাভ বার্ডস্ আপনাদের প্রেম ট্রেম শেষ হলে এখন সবার একসাথে বসা যাক কি বলো।

অয়ন;; আহা দাভাই প্লিজ তুই অন্তত আমাকে এভাবে লজ্জাতে ফেলিস না।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তুমি করে বেড়াবে আর আমরা বললেই দোষ।

রাত্রি;; আব্রাহাম ভাই।

আব্রাহাম;; আচ্ছা শালিকা আচ্ছা আর বলবো না।

আইরাত;; নাও এবার সবাই কফি খাও চলো।

সবাই কফি হাতে নিয়ে ছাদে বসে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো। আগামীকাল নিপার হলুদ সন্ধ্যা। তাই এখন থেকেই সবাই তার তড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। আজ রাতে তো আর সবার ঘুম নেই। আইরাত ছাদে সবার সাথে কফি খাচ্ছে আর হেসে খেলে কথা বলছে। চাদের আলোতে আইরাতের সৌন্দর্য যেন হাজার গুন বেড়ে গেছে৷ আইরাতের এই হাসি মুখের ওপরই আব্রাহাম তার মন হেরে বসেছে। দমকা হাওয়াতে আইরাতের চুলগুলো লাগামহীন ভাবে উড়ছে। আব্রাহাম যেন চোখে ফেলতেই ভুলে গেছে। সবকিছু ভুলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে মায়াময় চোখে তাকিয়ে আছে। দিলের ধুকপুক তার এখন হাজার গুণ বেড়ে গেছে।











💙💐চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 49

🍁🍂..
..
..
..
..
..

আজ নিপার মেহেন্দি & হলুদ সন্ধা💞। বাড়ির চারিদিকে অনেক হৈ-হুল্লোড়। নিপার বান্ধবীরা,নিরবের বন্ধু, আব্রাহামের অফিসের কলিগরা আরো অনেকে বিয়েতে এসেছে। চারিদিকে খুশির আমেজ বয়ে বেড়াচ্ছে। আবির আহমেদও সবার কাজ দেখাশুনা করছেন। সারারাত কেউ ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। সবাই কাজে ব্যাস্ত ছিলো। আজ সকালে আইরাত আর রাত্রি নিপাকে ঘুম থেকে এক প্রকার টেনে তুলেছে। সেই সকাল থেকেই নিপা কে তারা দুজন মিলে সাজাচ্ছে। ওদিকে নিরবের তো হাওয়া টাইড করে রেখেছে অয়ন আর আব্রাহাম। এক সময় পার্লার থেকে মেয়েরা এসে পরে নিপা কে মেহেদী পরানোর জন্য। আইরাত রাত্রিও অনেক সুন্দর করে সেজেছে। তবে মেহেদীর ফাংশনে ছেলেরা Not Allowed। মেহেদী পরানোর পর ছেলে মেয়ের হলুদ একসাথেই করা হবে কারণ উভয়ের বিয়ে তো একই বাসায় হচ্ছে। নিপা কে মেহেদীর জন্য একটা মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে সাথে হালকা কিছু ornaments অনেক কিউট লাগছে ওকে। রাত্রি পরেছে হালকা সবুজ কালারের লেহেঙ্গা,, সাথে হালকা সাজ। রাত্রি কাজ কম টই টই করে বেশি ঘুড়ছে আর আইরাতের বকুনি শুনছে। আর আইরাত,, আইরাত পরেছে মেরুন কালারের লেহেঙ্গা তাতে সাদা স্টোন,, হাতে সাদা পাথরের মোটা চুরি,, হালকা-ফুলকা সাজ ব্যাস আইরাত তৈরি❤️। তাদের সবাইকেই অনেক সুন্দর লাগছে। ছেলেরাও বেশ সুন্দর করে রেডি হয়েছে। নিরব পরেছে কমলা কালারের পাঞ্জাবি, অয়ন গ্রে কালারের পাঞ্জাবি আর আব্রাহাম সাদা ধবধবে পায়জামা আর আইরাতের সাথে মেচ করে মেরুন কালারের পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির ওপরের বোতাম দুটো খোলা,, হাতে ব্লেক ঘড়ি, মুখে বাকা হাসি, চাপ দাড়ি ❤️ বেশ লাগছে তাদের দেখতে।বাইরে থেকে মেয়েরা নিপা কে মেহেদী লাগানোর জন্য এসে পরলে আইরাত আর রাত্রি দ্রুত নিপা কে নিয়ে হলরুমে বসিয়ে দেয় সবার মাঝে। মেয়েরা মেহেদী পরানো শুরু করে। কিন্তু এখন ঘটলো আরো এক ভেজাল। ছেলেদের মেহেদী ফাংশনে আসতে মানা করলেও তারা তো আসবেই আর এই সকল টাই ছিলো আব্রাহামের প্লেন। আইরাতকে ছাড়া বা ওকে দেখা ছাড়া নাকি তার এক মূহুর্তও চলবে না। তাই ছেলেরা সবাই প্লেন করে যে তারা লুকিয়ে লুকিয়ে মেহেদীর ফাংশনে যাবে। কিন্তু আইরাত যদি তাদের একবার হাতে-নাতে ধরে ফেলে তাহলে কেল্লাফতে। নিপা কে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার দুপাশে আইরাত আর নিপা বসে আছে। তাদের সামনেই তাদের বান্ধবীরা নাচছে।

অয়ন;; দাভাই আমরা কখন যাবো?

আব্রাহাম;; সবুড়ে কিন্তু মেওয়া ফলে।

নিরব;; ইশশ আমিই সেই হতভাগা যে তারই বিয়ে আর সেই কিনা সকাল থেকে তার বউকে দেখতে পারছে না ধুর।

অয়ন;; বউ এখনো হয়নি হবে।

নিরব;; কবে হবে রে ভাই😭

আব্রাহাম;; এই ছাগলের দল চল তাড়াতাড়ি।

নিরব;; কিন্তু কোথায়?

আব্রাহাম;; রাস্তা পেয়ে গেছি চল জলদি।

অয়ন;; ভাই তুই কি পিছনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি বের করেছিস। সেখানেও কিন্তু মেয়েরা আছে ধরা খেয়ে যাবো।

আব্রাহাম;; হাহ্, আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী এতো কাঁচা কাজ করে না বুঝলি। আমরা স্টোর রুমের ওপর দিয়ে যাবো।

নিরব;; মানে?

আব্রাহাম;; আরে গাধা, মানে স্টোর রুমের ওপরে একটা ডিকি রয়েছে সেটা দিয়ে সোজা ছাদে যাওয়া যেত। তো এখন আমরা ছাদে যাবো আর সেই ডিকির ভিতর দিয়ে স্টোর রুমে ঢুকে পরবো। আর স্টোররুম তো বাসাতেই তাই না। তারপর সেখান থেকে যার যার বউকে মনভরে দেখো।

অয়ন;; ওয়াহহহ এই না হলো আমার দাভাই।

আব্রাহাম;; আর তোরা হলি এক একটা গরু চল (অয়নের মাথায় গাট্টা মেরে)

তারা তিনজনেই চলে গেলো ছাদে। ছাদ থেকে স্টোররুমের ভিতর দিয়ে বাসাতে চলে গেলো। চারিদিকে এতো মানুষ, বিশেষ করে এতো মেয়ে যে অয়ন আর নিরব তাদের ধাক্কা খেতেই খেতেই শেষ। কিন্তু আব্রাহাম এই সব তোয়াক্কা না করে সামনে এগিয়ে গেলো। ওপরের তলা থেকে নিচে দেখছে। অয়ন আর নিরবও আব্রাহামের দুপাশে এসে দাড়ালো। অয়ন আর নিরব আসতেই তাদের চোখ যেন জুড়িয়ে গেলো। কারণ নিচে নিপা আর রাত্রি বসে আছে। নিপা দুহাত ভরে মেহেদী দিয়ে বসে আছে আর রাত্রি গানের তালে তালে দুলছে। কিন্তু আব্রাহাম কপাল কুচকে বারবার নিচে সব জায়গাতে তাকাতাকি করছে। কারণ তার প্রাণভোমরা অর্থাৎ আইরাত সেখানে নেই। সবাই সেখানে আছে কিন্তু আইরাত নেই, তার তো এখানেই তাদের সাথে থাকার কথা তাহলে যাবে কোথায়। আব্রাহাম কেমন ছটফট করতে লাগলো।

নিরব;; আহা, ওই যে আমার বউটা সেখানে বসে আছে। ইশশ কি সুন্দর লাগছে দেখতে, আবার প্রেমে পরে গেলাম আমি। মন চাইছে এখনই বিয়ের কাজ টা সেরে ফেলি। শুভ কাজে দেরি কেন!

অয়ন;; তোর তো তাও বিয়ে হচ্ছে। আমার যে কবে হবে। ওই যে আমার রাত্রি বসে আছে। আচ্ছা ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।

একে তো আব্রাহাম আইরাতকে না পেয়ে তার মাথা খারাপ তার ওপর এই দুজনের এমন আজাইরা কথাতে আব্রাহামের মেজাজ যেন ৪৪০° ঘুড়ে গেলো। আব্রাহাম আর না পেরে দুজনের কান জোড়ে টেনে ধরলো। তারা ব্যাথা পেয়ে শব্দ করে দিলো।

নিরব;; উফফ ভাই ছাড়ো প্রচুর লাগছে।

অয়ন;; দাভাই প্লিজ ছাড় না অনেক বেশি লাগছে কিন্তু ছাড়।

আব্রাহাম;; আমি তোদের এখানে নিয়ে এসেছি কি এইসব পেচাল শুনার জন্য। এমনিতেই আইরাত কে কোথাও দেখতে পারছি না তার পরেও তোরা…. আসলে তোদের আনাই আমার ভুল হয়েছে।

অয়ন;; আচ্ছা এবার ছাড় আর বলবো না ছাড়।

ওদের কাকুতিমিনতি তে আব্রাহাম তাদের ছেড়ে দিলো। নিরব আর অয়নও একদম চুপ হয়ে গেলো আর কোন কথা বলছে না। দুজনই দাঁড়িয়ে তাদের কানে হাত দিয়ে ডলতে থাকে। এবার অয়ন আর নিরব চুপচাপ নিপা আর রাত্রি কে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু আব্রাহাম মুখ লটকিয়ে রয়েছে। আইরাত এখনো আসছে না গেলো কোথায়!! এদিকে আইরাত তার হাতে বড় একটা ফুলের ডালা নিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখে পরে আব্রাহাম,অয়ন আর নিরব কে। আইরাত থেমে যায়। পেছন দিকে হেটে এসে আবার ডান দিকে তাকায়। দেখে যে আসলেই তারা তিনজন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত প্রথমে রেগে যায় এই ভেবে যে তাদের এখানে আসতে বারণ করার পরও তারা লুকিয়ে এসেছে। আইরাত তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে ফুলের ডালা টা নিচে রাখে। তারপর দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পরে। অয়ন আর নিরবের কাধে আলতো করে থাপ্পড় দেয়। তারা পিছনে তাকাতেই আতকে ওঠে। কেননা আইরাত দুহাত ভাজ করে তাদের দিকে ভ্রু গুলো উচু করে তাকিয়ে আছে। অয়ন আর নিরব কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত তাদের হাতের ইশারায় চুপ করিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তারা দ্রুত চলে যায়। এবার আইরাত হাত পিছনে নিয়ে ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহামের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু তা আব্রাহাম টেরও পায় না।

আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না আমার। আইরাত কোথায় আমি তো ওর জন্যই এলাম আর ওই নেই। বাকি সবাই আছে। ধুর ছাই। এই মেয়েটা যে সারাদিন কোথায় ঘুড়ে বেড়ায়। খালি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া কেন একটা জায়গায় কি চুপ করে বসা যায় না। এখানে বসে থাকলে কি হতো না খালি সারা বাড়ি ঘুড়ে বেড়াবে। আমি তো শুধু রাগ করার অভিনয় করছি মাত্র হায় আল্লাহ এই মেয়ে সেই অভিনয়কে সত্যি সত্যি মনে না করে নিলেই হয়।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা অভিনয়!!

আব্রাহাম;; অবশ্যই অভিনয় আমি কি আমার জানপাখির সাথে রাগ করতে পারি নাকি।

কথা টা বলার পরমুহূর্তেই আব্রাহামের হুস ফিরলো যে সে কাকে কি বলছে। পিছে ফিরে দেখে যে আইরাত তার দিকে ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তা দেখে ভরকে যায়। এখন সে ঠিক কি বলবে তাও মাথায় আসছে না। তবুও আমতা আমতা করে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; না আসলে অভিনয় না, মানে না ধুর কি যা তা বলছি আমি। শুনো তুমি যা ভাবছো তা একদমই না

আইরাত;; ওহ তাই নাকি তো কি ভাবছি আমি (আব্রাহামের আরো কাছে এসে)

আব্রাহাম;; তুমি উলটা পাল্টা ভাব……

আব্রাহামের আর কিছু বলার আগেই দুই তিনজন মেয়ে ছুটে এলো। এসেই আইরাতের পাশে দাঁড়িয়ে গেল।

১ম মেয়ে;; আরে আরে আব্রাহাম ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন, আপনি জানেন না যে এখানে ছেলেদের আসা মানা।

২য় মেয়ে;; আরে হয়তো আইরাত আপুর ভালোবাসায় ছুটে এসেছে।

৩য় মেয়ে;; কিন্তু এটা তো ঠিক না এটা চিটিং। আইরাত আপি তুমি কিছু বলছো না, এই নিয়ম তো তুমিই বানিয়েছিলে তাই না।

মেয়েদের কথা শুনে আব্রাহাম একহাত কোমড়ে রেখে আর একহাত দিয়ে কপালে স্লাইভ করতে থাকে।

আইরাত;; আস্তে আস্তে, আমি জানি ছেলেদের আসা মানা। আর আমি তা সামলে নিবো এখন তোরা যা।

আইরাতের কথায় সবাই চলে গেলো এবার আইরাত আব্রাহামের কাছে এসে বলা শুরু করে…

আইরাত;; তো মিস্টার. চৌধুরী এগুলো কি হ্যাঁ, এটা কিন্তু একদমই ঠিক না।

আব্রাহাম;; কোনটা একদম ঠিক না।

আইরাত;; প্রথমত আপনি যে আমার সাথে রেগে থাকতে পারবেন না তা আমি জানি তবুও অযথা রেগে থাকার ভান করা আর দ্বিতীয় এভাবে মেয়েদের ফাংশনে লুকিয়ে আসা।

আব্রাহাম;; Hay, আমার না তোমার কাছ থেকে শুনতে হবে না যে আমি কি করবো আর কি করবো না বুঝলে।

আইরাত;; কিন্তু এখানে আসা চলবে না বুঝলেন। যান এখান থেকে জলদি।

আব্রাহাম;; আমার বয়েই গেছে এখানে থাকার।

আইরাত;; হ্যাঁ তা তো দেখতেই পারছিলাম এতোক্ষন যে আমাকে দেখতে না পেয়ে কি হাল হয়েছিলো আপনার।

আব্রাহাম;; শেষ হয়েছে আমার পিছু লাগা?!

আইরাত;; তা তো সারাজীবনেও হবে না। কিন্তু এবার এখান থেকে যান..

আব্রাহাম;; কিন্তু…

আইরাত;; যান চৌধুরী Rules are rules…

আব্রাহাম;; ওকে ফাইন, বাট একটা কথা।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; তুমি মেহেদী পরবে না।

আইরাত;; কিহহ কিন্তু কেন?

আব্রাহাম;; আমি পরতে মানা করেছি তাই।

আইরাত;; এইটা কিন্তু একদম ঠিক না, আমার মেহেদী অনেক পছন্দের আর আপনি এইটাই পরতে মানা করছেন। প্লিজ পরতে দিন না প্লিজ।

আব্রাহাম;; না বলেছি। মানে না।

আব্রাহাম মুখে একটা ভাব নিয়ে চলে গেলো। আব্রাহাম চলে গেলে আবার হুট করেই এসে আইরাতের গালে টুক করে একটা কিস দিয়ে যায়। এবার আব্রাহাম সোজা বাইরে চলে যায় পিছনে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু আইরাত তার গালে যেখানে চুমু দিয়েছিলো সেখানে হাত দিয়ে আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হাসছে। কিছুক্ষন এভাবে থেকে পরে আইরাতও সেখান থেকে চলে এসে নিচে নেমে পরে। নিপার হাতের মাঝে নিরবের নাম লিখে দিয়েছে। রাত্রির ক্ষেত্রেও অয়ন নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উল্টো টা হলো আইরাতের বেলায়। আইরাত মেহেদী পরতে চাইছে না।সবাই অনেক জোর করছে পরার জন্য কিন্তু আইরাত পরছে না কারণ একটাই আব্রাহাম বারণ করেছে তাকে মেহেদী পরতে। কিন্তু কেন যে বারণ করলো তাই আইরাতের মাথায় ঢুকছে না।

মেয়ে;; ম্যাম প্লিজ মেহেদী পরে নিন। বিয়ের ফাংশন এটা না পরলে কেমন দেখায় সবাই পরেছে।

আইরাত;; না আমি পরবো না।

মেয়ে;; কিন্তু পরলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।

নিপা;; আইরু কি করছিস কি বল তো কেন পরবি না মেহেদী আরে পরে ফেল ভালো লাগবে।

রাত্রি;; বেবিজান পরে নে মানাবে তোকে প্লিজ পরে নে।

আইরাত;; না না আমি কোনভাবেই মেহেদী পরবো না।

নিপা;; কিন্তু কেন?

আব্রাহাম;; কারণ আমার বউকে আমি নিজে মেহেদী পরিয়ে দিবো।

সবার পিছন থেকে আব্রাহাম এসে এই কথা বলে ওঠলো। সবাই ডেবডেব করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাত্র;; কিন্তু..

আব্রাহাম;; আমি জানি যে এখানে ছেলদের আসা বারণ কিন্তু এখন আমি আমার বউ এর জন্য এসেছি। আর এবার যদি কেউ কিছু বলেছে তো তার একদিন কি আর আমার যত দিন লাগে।

সবাই আর কিছু বললো না। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে যে “”তাহলে এই ছিলো জনাবের মনে, নিজে তার হাতে আমাকে মেহেদী পরিয়ে দিবে বলে আমাকে ওদের কাছ থেকে মেহেদী পরতে বারণ করেছিলো, আয় হায়ায়ায় আমার জামাই””

আব্রাহাম আইরাতের সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে। পাশে থাকা মেহেদীর ডালা থেকে মেহেদী নিয়ে নেয় তার হাতে। আইরাতের দিকে তাকাতেই আইরাত একগাল হেসে তার ডান হাত সামনে বাড়িয়ে দেয়। আব্রাহাম খুব সুন্দর আর যত্নের সাথে আইরাতকে মেহেদী পরিয়ে দিতে থাকে। আইরাত-আব্রাহামের এমন রোমান্টির সিন দেখে নিপা বলে ওঠে।

নিপা;; কেউ কি দেখে মনে করবে যে এটা আমাদের বিয়ে, সবাই ভাববে এটা তোমাদের বিয়ে আর তোমরা বর-বউ।

নিপার কথা শুনা আব্রাহাম সহ বাকি সবাই হো হো করে হেসে দেয়। আইরাতের দুহাত ভরে মেহেদী দেওয়া শেষ হলে আব্রাহাম আইরাতের বাম হাতের ঠিক মাঝ বরাবর করে “আব্রাহাম” নাম টি লিখে দেয়। আইরাতের সেদিকে নজর পরতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু সবাই আব্রাহামের কান্ড দেখে অবাক বিশেষ করে আইরাত কেননা আব্রাহাম যে এতো সুন্দর করে মেহেদী পরাতে জানে তা আইরাতের একদম জানা ছিলো না। শুধু আইরাত না বাকিরাও অনেক বেশি অবাক। তা দেখে নিরব বলে ওঠে…

নিরব;; আব্রাহাম ভাই তোমার একটু চরণধুলি দাও,, না মানে আর কি কি পারো তুমি,, আর এমন কি টেলেন্ট বাকি আছে তোমার মাঝে বলো না।

আব্রাহাম;; তোদের দ্বারা হবে না ভাই ছেড়ে দে।

নিপা-রাত্রি;;😅😅



এভাবেই খুব মজা করে মেহেদীর ফাংশন শেষ হলো। এখন আর কিছুটা সময় পর হলুদের ফাংশন। এখন ছেলে মেয়েদের আর আলাদা করে দেওয়া হয়নি। নিরব আর নিপার একসাথেই হলুদ শেষ করা হবে। আব্রাহাম অয়ন মিলে নিরবকে রেডি করাচ্ছে। নিরবকে স্কাই ব্লু কালারের শেরওয়ানি পরানো হয়েছে। অয়ন বাদামি কালারের আর আব্রাহাম Ash কালারের শেরওয়ানি পরেছে। অন্যদিকে নিপাকে সাদা হলুদের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে সাথে ফুলের গহনা। রাত্রি গোলাপি কালারের আর আইরাত নেভি ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। আজ শুধু বাটি ভরে ভরে হলুদ আনা হচ্ছে। তবে আজ আর ঘরে না বরং বাগানের বাইরে অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে আর এগুলো আইরাত আর রাত্রি নিজে সামলিয়েছে। নিরব আর নিপা কে একটা নিচু টেবিলের ওপরে একসাথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার প্রথমে বড়রা তাদের হলুদ লাগায়। আবির আহমেদ তাদের দুজনকেই হলুদ লাগিয়ে আর্শিবাদ করে দেয়। নিরব আর নিপার মাথার ওপরে একটা লাল কালারের ওরনা দুদিক থেকে ধরে আছে অয়ন আর রাত্রি। এবার আব্রাহাম এসে নিরব কে হলুদ দিয়ে একদম মাথা চোখ মুখ ডুবিয়ে দিলো। আব্রাহাম নিপার কাছে গিয়ে কপালে আর গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো। নিপাও মজা করে আব্রাহাম কে কিছুটা হলুদ লাগিয়ে দিলো। অয়ন এসে হলুদের বাটি পুরো নিরবের মুখে ঠেসে ধরে। শুরু হয় দুজনের মধ্যে হলুদ নিয়ে যুদ্ধ। অয়ন গিয়ে নিপা কেও হলুদ লাগিয়ে দেয়। এবার আইরাত আর রাত্রির পালা। তারাও গিয়ে নিরব কে হলুদ দিয়ে ভরিয়ে দিলো। আর নিপার কথা না হয় বাদই দিলাম রাত্রি আর আইরাত নিপা কে হলুদ দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে পুরা। নিপাও কম কিসে সেও হলুদ দিয়ে দেয় তাদের। কিন্তু এবার অয়ন হলুদ নিয়ে রাত্রির পিছনে ছুট লাগায়। রাত্রিও বাচার জন্য এদিক ওদিক ছুটে চলেছে। আর তাদের কান্ড দেখে সবাই হেসেই শেষ। কিন্তু একটা মেয়ে এসে হঠাৎ করেই আইরাতকে ডেকে নেয়। আইরাত তার সাথে চলে যায়। কাজ শেষ করে ফেরার পথে হুট করেই কেউ আইরাতকে টেনে নিয়ে এক ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। আইরাতের মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আইরাত এবার কোন ছটফট করে না কারণ এই ছোয়া তার খুবই চেনা। এটা আব্রাহামের ছোয়া, কারণ আব্রাহাম ছাড়া এমন কাজ কেউ করতেই পারে না। আইরাত চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আব্রাহামই। আব্রাহাম ধীরে ধীরে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। আইরাত ভাবে আব্রাহাম তাকে কিস করবে কিন্তু আইরাতের ধারনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আব্রাহাম আইরাতের গালের সাথে তার গাল ঠেকিয়ে দেয়। এতে আব্রাহামের গালে থাকা হলুদ আইরাতের গালে লেগে যায়। এভাবেই আব্রাহাম আইরাতের দুগালেই তার গাল থেকে হলুদ লাগিয়ে দেয়। আইরাত তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। আব্রাহাম তার দুহাত দিয়ে আইরাতের দুপাশে ভর করে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। এবার আব্রাহাম নিজের গাল উঠিয়ে আইরাতের একদম কাছে গিয়ে তার চোখে চোখ রাখে। আব্রাহামের হাতে থাকা হলুদ আইরাতের পেটে এবং কোমড়ে লাগিয়ে দেয়। আইরাত কেমন শিউরে ওঠে। দুহাতের হলুদ দিয়ে আইরাতের পেট কোমড় একদম শেষ করে দেয় আব্রাহাম। যাওয়ার আগে আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে চলে যায়। আইরাত লজ্জায় কুকড়ে যায়। পরিশেষে নিজেও আবার নিচে নেমে যায়।

আজ হলুদের কাজ শেষ কাল সকালেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে।










🖤🦋চলবে~~~~~
.

Gangstar In Love Part-47+48

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 47

💚🌿..
..
..
..
..
..

তুমুল গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আইরাত। তার সাথে গান তো আছেই “সাকি সাকি”। গানের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে সে। তার এমন কান্ড দেখে রাত্রি আর নিপা হাবার মতো করে বসে আছে। রাত্রি একবার আইরাত আবার একবার তার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আর নিপা মুখে একটা পানসে ভাব এনে রেখেছে।

আইরাত;; সামনে বিয়ে আর বউ নাকি এমন মুখের বারো টা বাজিয়ে রয়েছে। বলি যে একটু হাস, হাসলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

নিপা;; আমি তোর কান্ড দেখছি। বিয়ে আমার কিন্তু ধুম ধারাক্কা বাজাচ্ছিস তোরা।

আইরাত;; এইটা হচ্ছে “যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই”।

রাত্রি;; আইরু তোর মতো হলেও তো ভালো হতো।

আইরাত;; মানে বুঝলাম না!

রাত্রি;; মানে আব্রাহাম ভাই তোকে যেভাবে তুলে এনে বিয়ে করেছে ওয়াও কি রোমান্টিক বেপার।

আইরাত;; তখনকার সিচুয়েশন টা আলাদা ছিলো একদম আলাদা। আর সেই সময়ে যদি তুই থাকতি তাহলে হয়তো বেপার টা তোর কাছেও তেমন সুবিধের হতো না।

রাত্রি;; হুমম বুঝলাম, কিন্তু এখন আমরা যাচ্ছি কোথায়?

আইরাত;; আমরা না আমি, তোদের আমি বাইরে সেই কফিশপে নামিয়ে দিবো। সেখানে নিরব ভাইয়া আছে। আর অয়ন এখন অফিস থেকে সেই কফিশপেই যাচ্ছে, এদিকে তোরাও যাচ্ছিস তারপর তোরা সবাই মিলে একসাথে এসে পরিস চৌধুরী ভবনে।

নিপা;; আর তুই?

আইরাত;; আরেহ আমি তো এখন আমার চৌধুরীর কাছে যাবো। সে তার অফিসে যায় নি একটা মিটিং ছিলো তা বাসা থেকেই সামলে নিয়েছে আর বাকি কাজ গুলো অয়ন এবং মেনেজার সামলে নিয়েছে। সো আব্রাহাম বাসাতেই আছে।

রাত্রি;; আহা ভালোবাসার অভাব নেই দেখছি।

আইরাত;; আবার জিগায়!

নিপা;; আচ্ছা হয়েছে আইরু তাহলে এবার তাড়াতাড়ি আমাদের নামিয়ে দে।

আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত আবার গান ছেড়ে দিল। তার বেশ খানিক সময় পর আইরাত নিপা আর রাত্রিকে কফিশপের কাছে নামিয়ে দিল। নামিয়ে দিয়ে চৌধুরী ভবনের দিকে গাড়ি ঘুড়িয়ে চলে গেলো। এক সময় গাড়ি চৌধুরী ভবনের মেইন গেটের কাছে এসে থেমে গেলো। আইরাত তাকিয়ে দেখে যে আজ বাইরে কোন গার্ড নেই। তা দেখে এক শান্তির হাসি হাসে, কেননা আজ অহেতুক কোন শয়তানি কাজ করতে হবে না তাকে। আইরাত গেটের ফাক দিয়েই ভিতরে এক নজর দেখে নিলো। আবার গাড়িতে বসেই ভাবতে লাগলো যে আজ আবির আহমেদ চৌধুরী বাড়িতে আছেন। জানি না আইরাতকে দেখে উনি কি রিয়েকশন দিবেন। তবুও আইরাত এক গভীর শ্বাস ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে নেমে পরে। গেটের কাছে দাঁড়াতেই আইরাতকে দেখে বাগানের মালি এক প্রকার দৌড়ে এলো।

রামু;; আরে আইরাত আম্মাজান যে, আপনারে কতটা দিন পরে যে দেখবার পাইলাম।

আইরাত;; জ্বি রামু কাকা। কেমন আছেন আপনি?

রামু;; জ্বি আম্মাজান বহুত ভালাই আছি, তা আপনে কেমন আছেন?

আইরাত;; আলহামদুলিল্লাহ ভালো রামু কাকা।

রামু;; আরে আম্মাজান আপনে বাহিরে খারায় আছেন কেন, ভিতরে আসেন ভিতরে আসেন।

এই কথা বলে রামু তড়িঘড়ি করে করে গেট খুলে দেয়। আইরাত হেসে ভিতরে চলে আসে।

আইরাত;; কাকা,

রামু;; জ্বি আম্মাজাম।

আইরাত;; বাপি বাড়ি আছে?

রামু;; জ্বি আম্মাজান উনি আজকে বাড়িতেই আছেন, কিন্তু উনি ইদানীং কেমন জানি শুকায় গেছেন, মুখে হাসি নাই আগের মতো। বিশেষ কোন কারণ ছাড়া কথাও ঠিকঠাক বলেন না। শুধু আব্রাহাম বাবার কারণে উনি এখন মাঝে মাঝে হাসে। আপনার কথা অনেক বেশি মনে করেন উনি। আসলে নিজের কোন মেয়ে নাই তো তাই আপনারে নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে। এতোদিন তো আপনে ছিলেন না কিন্তু এইযে আপনি আইসা গেছেন না এখন সব কিছু আগের মতো ভালা হইয়া যাইবো।

আইরাত;; হ্যাঁ কাকা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবার। (হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে)
কাকা তাহলে আমি ভিতরে যাই কেমন!

রামু;; জ্বি আম্মাজান আপনি যান।

এই কথা বলে আইরাত চলে যায়।



বেলা বাজে ১১ টা কিন্তু আব্রাহামের এখনো ঘুম থেকে ওঠার কোন নামই নেই। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। আবার সকালে মিটিং ছিলো তা এটেন্ড করার পর হালকা একটু ঘুমিয়েছে। সাদা ধবধবে বিছানাতে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে আব্রাহাম। কালো পেন্ট পরে আছে, বাট বডিতে কোন কাপড় নেই। চুলগুলোও অগোছালো হয়ে আছে। মুখের মায়ার যেন শেষ নেই। খুব বেশি সুন্দর লাগছে তাকে। তখনই আইরাত আব্রাহামের ঘরে ঢুকে পরে। ঘরে গিয়েই দেখে আব্রাহামের এই অবস্থা। আইরাত মুখে হাত দিয়ে হেসে দেয়। হাতে থাকা কফিটা বেডের পাশের টেবিলে রেখে দেয়। আইরাত বেশ ভালো করেই জানে যে ঘুম থেকে ওঠে আব্রাহাম কড়া কফি খায় তা না হলে নাকি তার সারাদিন কেমন বোরিং লাগে। আইরাত কফিটা রেখে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। কিছুটা ঝুকে আব্রাহামের মুখের দিকে তাকায়। মুচকি ভাবে হেসে ওঠে সে। আবার আব্রাহামের মুখের কাছে ঝুকে গালে একহাত ঠেকিয়ে তাকিয়ে থাকে। পুরো বাচ্চা লাগছে আব্রাহামকে। বালিশে বেশি ভর দিয়ে শুয়ে থাকার কারণে দুগালের মাংস চেপে এসেছে। যার ফলে তার ঠোঁট দুটো ছোট হয়ে এসেছে। হালকা গোলাপি ঠোঁটে ভাজের দিকে তাকিয়ে আছে আইরাত। চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। আইরাত তার হাত দিয়ে চুল গুলো তে মিলিয়ে দেয়। তাতে যেন আব্রাহাম আরাম পেলো। সে আরো আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে নিলো। এতে আইরাত কপাল কুচকে সোজা হয়ে বসলো। কারণ আইরাত আব্রাহামকে জাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ইনি কি মাথায় হাতের ছোয়া পেয়ে আরো আরাম করে ঘুমোচ্ছেন।

আইরাত;; কি অদ্ভুত, আমি চাচ্ছি যে ঘুম থেকে ওঠে পরুক কিন্তু না হচ্ছে তার বিপরীতে। দাড়ান ঘুম ছুটাচ্ছি আপনার।

এই বলে আইরাত তার হাত আব্রাহামের কানের কাছে নিয়ে গেলো। হাতে পরনে থাকা চুড়ি গুলো আব্রাহামের কানের কাছে নিয়ে বাজাতে থাকলো। ঝনঝন শব্দ হতে থাকে। এতে আব্রাহাম বেশ বিরক্তিবোধ করলো। সে তার মাথা ওপরপাশে ঘুড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। এবার আইরাতের মেজাজ গেলো চটে। রাগ নিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই আইরাতের চোখ পড়লো গরম গরম কফির মগের ওপর। আইরাত আবার শয়তানি হাসি হাসে। কফির মগটা আইরাত হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে আব্রাহামের বাম হাত টা তুলে ফেললো। তার হাতের এক আঙুল তুলে কফির গরম মগের ভিতরে চেপে ধরে। ২-৩ সেকেন্ড গেতেই আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে তার হাত সরিয়ে নেই। আর আইরাত এক ঝটকাতে সেখান থেকে উঠে গিয়ে দূরে সরে দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে তুমি কি পাগিল নাকি?!

আইরাত;; আপনিই না বলতেন যে পাগলের বউ তো পাগলই হতে হবে তাহলে করলাম না হয় একটু পাগলামি। তাতে ক্ষতি কি হুমম

আব্রাহাম;; ওহহ গড আমি এই কার পাল্লায় পরেছি। আর এই তুমি আমার ঘরে কি করছ বের হও এক্ষুনি।

আইরাত;; এহহহহ বের হও এক্ষুনি (বেংগ করে) ভুলে যাবেন না এটা আমারও ঘর। যতটা আপনার ততটাই আমার বুঝলেন।

আব্রাহাম;; তোমার ঘর তাই না, তো আছে কোন প্রমাণ তোমার আছ।

আইরাত;; আমি নিজেই প্রমাণ। আমি আপনার বিয়ে করা বউ আর কি চাই আপনার।

আব্রাহাম;; মুক্তি চাইতে মুক্তি দিয়ে দিয়েছি তোমাকে আর কি চাও আর কামন ইয়ার আমি অন্তত তোমার মতো বেহেনজি কাউকে বিয়ের করে নিজের বউ বানাবো না। (আইনার সামনে দাঁড়িয়ে)

আইরাত;; ওইইইই আপনি কি বললেন আমি, আমি বেহেনজি।

আব্রাহাম;; হুমমম একদম।

আইরাত;; মুখ সামলে কথা বলবেন বলে দিচ্ছি নয়তো….

আব্রাহাম এবার এক নিমিষেই আইরাতের কাছে গিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আইরাতের এতোক্ষণে হুস ফিরলো যে আব্রাহামের গায়ে কোন কাপড় নেই। কালো পেন্টে জিম করা ফর্সা বডি বেশ ভালো মানিয়েছে। এভাবেই আইরাতের কাছে আসাতে আব্রাহামের সামনে থাকা চুলগুলো কপালে ঠেকে যায়। আব্রাহাম অনেক ঝুকে চোখ ছোট ছোট করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছ। আইরাত যেই দেখলো যে আব্রাহামের গায়ে কোন কাপড় নেই সেই সাথে সাথেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।

আব্রাহাম;; তা না হলে কি করবে শুনি?!

আইরাত;;____________

আব্রাহামের এমন নেশা ধরানো কথায় আইরাত কিছুই বলে না শুধু নিচের দিকে চোখে নিয় তাকিয়ে থাকে। লজ্জায় গাঢ় লাল হয়ে গেছে সে। আব্রাহামের এভাবে আইরাতকে ধরায় এবার আইরাতের কাধে থাকা তার ওরনা কাধের বেশ নিচে নেমে পরে। তার কাধখানা উন্মুক্ত হয়ে যায়। আব্রাহানের চোখ পরক্ষণেই সেখানে যায়। বুকের ঠিক ওপরের তিল টায় চোখ আটকে যায় আব্রাহামের। নেশা না করেও আব্রাহামের কেমন নেশা ধরে যায়। আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে আছে। আইরাতের সামনের অবাধ্য ভাবে খুল নিচে পরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের কানের কাছ গিয়ে ধীরে ধীরে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; মুখ সামলে কথা না বললে কি করবে বলো।

আইরাত;; ক্কি কিছু কিছু না, আপনি প্লিপ্লিজ আমাকে ছেছেড়ে দা…….

আইরাত আর কিছু বলে ওঠতে পারে না। আব্রাহাম আর তার লোভ সামলাতে না পেরে, আইরাতকে আর কিছু একটা বলার সুযোগ না দিয়েই তার গলাতে মুখ ডুবায়। কোমড় চেপে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে আইরাতকে। আইরাতও তার এক হাত আব্রাহামের কাধের ওপর রাখে। আইরাত এবার কোন বাধা দেয় না। সে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম যেন হাজারো বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। নাক মুখ সব ডুবিয়ে দিয়েছে সে আইরাতের ঘাড়ে।

আইরাত চেয়েও আব্রাহামকে নিজের থেকে দূরে সরাতে চাইছে না। থাক না সময় টা এমনই। প্রায় অনেক সময় পর আব্রাহাম আইরাতের কাধ থেকে মুখ সরিয়ে নেই। সামনে তাকিয়ে দেখে যে আইরাত এখনো তার চোখ জোড়া বন্ধ করেই আছে। লজ্জার ফলে আব্রাহামের সাথে ঠিক মতো চোখও মিলাতে পারছে না সে। আব্রাহাম এবার আইরাত কে ছেড়ে দূরে সরে গেলো। আব্রাহাম এবার টেবিলে থাকা কফিটা হাতে নিতে উল্টো দিকে ঘুড়ে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; এবার ছেড়ে দিলাম পরেরবার আর ছাড়ছি না।

আইরাত;; ছেড়ে আর কোথায় দিলেন (ফুসফিস করে)

আব্রাহাম;; কিছু বললে!?

আইরাত;; না না কোথায় কি বললাম, আচ্ছা আপনি তো ঘুম থেকে ওঠে পরেছেন এবার আমি নিচে যাই।

আব্রাহাম;; দাড়াও, আগে বলো তুমি এখানে কি করে এলে।

আইরাত;; বারে আমার বাপির বাড়ি আমি আসবো না এ কেমন কথা।

আব্রাহাম;; বের হও রুম থেকে।

আইরাত;; যাবো না।

আব্রাহাম;; খুব তো তেড়া তুমি।

আইরাত;; (আব্রাহামের কাছে গিয়ে টুক করে তার গালে চুমু দিয়ে) আপনার থেকে বেশি না চৌধুরী।

আব্রাহাম;; তবে রে…

আব্রাহাম আইরাতের পিছু নিলে আইরাত খিলখিল করে হেসে দৌড় দেয়। কিন্তু আবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আব্রাহামকে বলে ওঠে।

আইরাত;; এই যে চৌধুরী…

আব্রাহাম তার দিকে এক ভ্রু উচিয়ে তাকায়।

আইরাত;; একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি।

আব্রাহাম;; আবার কি!

আইরাত;; আপনাকে না খালি গায়ে অনেক বেশিই হ্যান্ডসাম লাগে।

আইরাত এই কথা বলে আব্রাহাম কে বেংগ করে চলে যায়। আইরাত চলে গেতেই আব্রাহাম জোড়ে হেসে দেয়। আব্রাহাম ভাবতেও পারেনি যে সকাল সকাল উঠেই তাকে আইরাতের এই সব পাগলামো কান্ড দেখতে হবে। তবে দেখে ভালোই হয়েছে। আজ পুরো দিন আব্রাহামের অনেক ভালো কাটবে। আব্রাহাম হেসে একটা সাদা টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

কিছুক্ষন আগে~

আইরাত যখন সিড়ি বেয়ে বাড়ির ভিতিরে যায় তখনই আইরাতের চোখ যায় বাগানে বসে থাকা তার বাপি আবির আহমেদ চৌধুরীর দিকে। মুখের সামনে বই ধরে খুব গম্ভীর ভাবে বসে আছে। আইরাত দেখলো যে পাশেই চা রাখা আছে চায়ের পাশেই কাপ ভরে চিনি রাখা আছে কিন্তু তার বাপির সেটার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো করে বই পরেই যাচ্ছে। আইরাত খানিক ভাবতে লাগলো যে যিনি আগে আইরাতের হাতের চা এর জন্য দিনরাত এক করে ফেলতো, বাড়ি মাথায় করে নিত সে চা পাশে রেখে বই পরছে। চা এক সময় ঠান্ডাই হয়ে গেলো। যিনি চা খাওয়ার সময় চিনি চিনি করে আইরাতের কাছে বাহানা করতো সে আজ তার দিকে তাকিয়েও দেখছে না। সবকিছু আইরাতের জন্য। তার বাপি এখনো আইরাতের জন্য অপেক্ষা করছে। আইরাত ধীর পায়ে তার বাপির দিকে এগিয়ে যায়। পিছনে দাঁড়িয়ে দেখে তার বাপি হুমায়ুন আহমেদ এর -অপেক্ষা বইটা খুব মনোযোগ দিয়ে পরছে। আইরাত তার দুহাত পিছনে রেখে কিছুটা ঝুকে তার বাপির পাশে গিয়ে বলে ওঠে।

আইরাত;; বাপি, কার জন্য অপেক্ষা করছ তুমি?!

আইরাতের কন্ঠস্বরকে চিনতে আবির আহমেদ এর একটুও ভুল হয়নি। আইরাতের কন্ঠ শুনে তিনি পিছন ফিরে তাকালো। আইরাতকে দেখে আবির আহমেদ কোন কিছু বললো না। খুব শান্ত ভাবেই আবির আহমেদ তার চেয়ার থেকে ওঠে দাড়ালো। আস্তে করে আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।

আবির আহমেদ;; আআআইরা আইরাত মা আমার।

আইরাত;; হ্যাঁ বাপি আমি তোমার মেয়ে আইরাত।

আবির আহমেদ;; আইরাত মা আমার।

এই কথা বলেই আবির আহমেদ আইরাতকে নিজের বাহুতে জড়িয়ে ধরলেন। অঝোরে কান্না করতে লাগলেন তিনি। আইরাতেরও চোখের পানির শেষ নেই। আবির আহমেদ যেন এতোদিনে তার প্রাণে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। আইরাত কে নিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলে৷ তিনি।

আবির আহমেদ;; মা রে কোথায় ফেরে রেখে চলে গিয়েছিলি তুই। জানিস তোকে কতো করে খুজেছি আমরা। কিন্তু কিন্তু যেদিন আব্রাহামের মুখে তোর কথা শুনলাম সেদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন ঠিক ফিরে আসবি। আমার ঝরে পরা পরিবারকে তুই একদিন ঠিক জোড়া লাগিয়ে দিবি। আমার পরিবার এক হবে। আজ আমার মন বলছে আমি ঠিক আছি আমার ধারণা একদম ঠিক। অনেক মনে পরেছে রে তোর কথা, অনেক। আর আমার ছেলে টার যে কি হাল হয়েছিলো তোকে ছাড়া তা আর মুখে বলতে। কিন্তু এখন আমার চিন্তা নেই কারণ তুই এসে গেছিস। আমার ঘরের লক্ষী চলে এসেছে। আর যাস না মা আমাদের ছেড়ে আএ দূরে যাস না। (খুব করে কেদে)

আইরাত;; না বাপি আমি আর কোত্থাও যাবো না। কখনো না। আমি আমার এই বাপির কাছেই থাকবো সবসময়। আচ্ছা বাপি আব্রাহাম কোথায়?

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম তো ওর ঘরে,

আইরাত;; আচ্ছা বাপি আমি এখন উনার ঘরে যাচ্ছি কেমন। আর শুনো অয়ন আসছে বুঝলে আর সাথে নিরব ভাই ও।

আবির আহমেদ;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা,

আইরাত;; বাপি আরো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য!!

আবির আহমেদ;; কি মামনি?

আইরাত;; Guess what?

আবির আহমেদ;; নাহ মাথায় আসছে না মামনি তুই ই বলে দে না!!

আইরাত;; অয়ন আর নিরব ভাইয়া আসছে কিন্তু সাথে তাদের দুজনের হবু বউদেরও নিয়ে আসছে।

আবির আহমেদ;; কিহ

আইরাত;; যা শুনেছ তাই।

আবির আহমেদ;; আচ্ছা আজকে কি কোন স্পেশাল ডে!! নয়তো আমি আজকে এতো গুলো সারপ্রাইজ একসাথে পাচ্ছি কেন।

আইরাত;; কারণ, এখন সবাই একসাথে থাকবে। আর কোন বিপদ আপদ আমাদের ধারে কাছেও আসতে পারবে না (তার বাপিকে জড়িয়ে ধরে)

আবির আহমেদ;; আচ্ছা মা বুঝেছি। এবার তুই যা আব্রাহামের ঘরে আর আমি এদিকে সব কিছু আয়োজন করে নিচ্ছি।

আইরাত;; আচ্ছা বাপি।

এই কথা বলে আইরাত ওপরের ঘরে অর্থাৎ আব্রাহামের রুমে চলে যায়।


চৌধুরী ভবনকে মোটামুটি ভালোই সাজানো হয়েছে। কেননা আজ ছোট খাটো একটা Family get-together আছে।

খানিক বাদেই অয়ন রাত্রি, নিপা আর নিরব এসে পরে। আইরাত তাদের দেখে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে থাকে। তাতপর সবাই বসে পরে। তখনই আবির আহমেদ চলে আসে। নিরব গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। সবার মাঝেই একটা ভালো আমেজ বসবাস করছে। কিন্তু কোথায় কি যেন একটা নেই আর তা হলো আব্রাহাম। হুমমম আব্রাহাম নেই। আইরাত তাদের বলে ওঠে গিয়ে আব্রাহামের ঘরে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহাম ব্লেক কালার পেন্ট পরে, নেভি ভ্লু কালার একটা শার্ট পরে আইরাত সামনে দাঁড়িয়ে বডি তে পারফিউম দিচ্ছে। শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করা। মাথার চুলগুলো উড়ছে মুখে চাপদাড়ি। আইরাত আব্রাহামকে দেখে একদফা ক্রাশই খেয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে দেখেও না দেখার ভান করে। আইরাত এবার আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে।










🥰🥰চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 48

🍃🍃..
..
..
..
..
..

আইরাত সোজা এসে আব্রাহামকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আয়নাতে দেখে যে আইরাত তাকে জড়িয়ে ধরে তার কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আব্রাহামের এখন অনেক ইচ্ছে করছে যে আইরাতকে নিজের সামনে এনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরার। কিন্তু সে এখন তা করবে না। আয়নার দিকে তাকিয়েই সে মুচকি হেসে উঠে। আবার কোঠর গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এসব!

আইরাত;; ______________

আব্রাহাম;; কিছু বলছি তোমায়।

আইরাত;; ইশশশ এতো বেশি কথা বলেন কেন, কানা নাকি আপনি দেখছেন না কি হচ্ছে। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে আছি।

আব্রাহাম;; এভাবে হুট করেই যে কারো রুমে ঢুকতে নেই আর এমন করে জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা। সামান্য টুকু ম্যানার্স নেই তাই না।

আইরাত;; এইই আমি যথেষ্ট ম্যানার্স জানি কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে কোন কিছুই কাজ করে না।

আব্রাহাম;; কে হই আমি তোমার যে এতো অধিকার খাটাও?

আইরাত;; কিইই এতো বড়ো কথা, কে হন আপনি আমার! আপনি জানেন না কে হন আপনি আমার?

আব্রাহাম;; যদি আমি জানতাম তাহলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম।

আইরাত এবার আব্রাহামের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।

আইরাত;; এই যে চৌধুরী শুনে রাখুন আপনি আমার সবকিছু, আমার পুরো দুনিয়া। আপনি আমার, শুধুই আমার।

আব্রাহাম;; (এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে) অনেক হয়েছে নাটক এবার সামনে থেকে সরো।

আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে সামনে থেকে সরিয়ে নিজের কলার ঠিকঠাক করতে লাগে। কিন্তু আইরাতের মুখে বারো টা বেজে গেছে। সে কপাল কুচকে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের এই মূহুর্তে আইরাতের এমন ফেইস দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে কিন্তু তা কোন মনে দমিয়ে রাখছে।

আইরাত;; সবাই আপনার জন্য নিচে অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি এসে পরুন।

এই কথা বলার পর আইরাত সেখানেই আবার দাঁড়িয়ে থাকে এই ভেবে যে যদি আব্রাহাম তার সাথে কোন কথা বলে। কিন্তু আব্রাহাম তা টের পেয়ে যায়। সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে আবারও নিজে তৈরি হওয়াতে মনোযোগ দেয়। এমন একটা ভাব ধরে যেন তার পাশে কেউই নেই। আব্রাহামের এমন বেপরোয়া ভাব দেখে আইরাতের যেন ধীরে ধীরে রাগ হচ্ছে। এমন ভাবে নিজেকে রেডি করছে যেন আজ তার বিয়ে হাহ্। আইরাত এক ভেংচি কেটে রেগে চলে যায়। যাওয়ার সময় দরজা সজোরে লাগিয়ে রেখে যায়। ঠাসসস করে শব্দ হয়। আইরাত যাওয়ার পর আব্রাহাম বাকা চোখে সেদিকে তাকায়। সে বেশ বুঝতে পারছে যে আইরাত রেগে গেছে। আব্রাহামের আর কি হাসতে হাসতে লুটপাট। আইরাত নিচে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে দিয়ে সোফায় বসে পরে। আইরাতের এভাবে নিচে নামায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাতের এমন মেজাজ দেখে আবির আহমেদ ওপরের ঘরের দিকে তাকায়। তিনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন। আইরাতকে বলে ওঠে…

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি কি হয়েছে এভাবে মুখ ফুলিয়ে আছ কেন?

আইরাত;; না বাপি তেমন কিছুই না এমনি।

আবির আহমেদ;; আব্রাহাম কোথায়! সে আসেনি?

আইরাত;; আসছে (মুখ অন্যদিক ফিরিয়ে)

এবার আবির আহমেদের ধারণা স্পষ্ট হলো যে আব্রাহামের সাথেই তার কিছু হয়েছে। সবার মাঝ থেকে অয়ন বলে ওঠলো…

অয়ন;; বউমনি!

আব্রাহাম;; হুমমম বলো।

অয়ন;; বউমনি প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে প্লিজ সবার জন্য কিছু বানাও না।

আবির আহমেদ;; না না থাক এতো কষ্ট করে এখন আর রান্নাঘরে যেতে হবে না আমি কোন এক স্টাফ কে বলে দিচ্ছি।

আইরাত;; বাপি, কিছু হবে না আমাকে যেতে দাও। আর এখন আমি রান্না শিখে নিয়েছি আগের মতো আর বাজে হয় না। খেতে পারবে।

আইরাতের কথা শুনে ঘরে থাকা সবাই হেসে দিলো।

আবির আহমেদ;; না রে মা না আমি আসলে তা বলিনি।

আইরাত;; 😒

আবির আহমেদ;; বলছিলাম যে এই গরমে তুই রান্না করতে যাবি একা একা।

রাত্রি;; না না আংকেল একা কেন আমি আর নিপু যাচ্ছি তো আইরুর সাথে।

নিপা;; জ্বি আংকেল এইতো যাচ্ছি।

আইরাত;; না কারো কোথাও যেতে হবে না। আমি একাই রাখবো (ওপরে আব্রাহামের রুমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)

রাত্রি;; পারবি তো!

আইরাত;; আইরাত পারে না এমন কিছুই নেই।

নিপা;; এখন শুধু রান্না টা করতে পারলেই হলো। (মুখ টিপে হেসে)

আইরাত;; থাপ্পর খাবি একটা ফইন্নি।

এই বলে আইরাত আবার এক নজর সিড়ির দিকে তাকিয়ে রেগে রান্না ঘরে চলে যায়। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে পরলো আরো এক বিপদে। কে কি খাবে তা তো কিছুই শুনে এলো না তাহলে এখন কি রাধবে। রান্নাঘরের ডেস্কের ওপরে হাত রেখে ভাবতে লাগলো সে। পরক্ষণেই মনে পরলো “বিরিয়ানি” এর কথা। এটা সবারই পছন্দের। তো যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত লেগে পরলো বিরিয়ানি রান্নার কাজে।
তার বেশ খানিক পরই আব্রাহাম নিচে ড্রইংরুমে নেমে এলো।

আব্রাহাম;; Hay what’s up guy”s!! (সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)

নিরব;; আব্রাহাম ভাই। (উঠে আব্রাহামের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে)

আব্রাহাম;; কেমন আছিস তুই?

নিরব;; অনেক ভালো ভাই, তুমি কেমন আছ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ ভালোই।

আবির আহমেদ;; এই তোর সময় হলো আসার!

আব্রাহাম;; কেন বাপি কি হয়েছে?

আবির আহমেদ;; সবাই এখানে অপেক্ষা করছে আর তোর কিনা এতো দেরি আসতে।

আব্রাহাম;; সরি বাপি। আচ্ছা তো নিরব এখন কি তোকে নাম ধরে ডাকবো নাকি জামাই বলে ডাকতে হবে কোনটা?

নিরব;; আর আমারও এখন থেকে আইরাতকে ভাবি বলে ডাকতে হবে।

অয়ন;; তা তো ডাকবি কিন্তু দাভাই নিরবকে এখন জামাই বলেই ডাক।

আব্রাহাম;; এই তুই চুপ কর, তোরও খবর আছে সবকিছু জানি আমি।

অয়ন;; না মানে আসলে দাভাই।

আব্রাহাম;; থাক অনেক হয়ে না মানে আর বলতে হব্র না।

অয়ন;; 😁

আব্রাহাম;; তো নিপা রাত্রি তোমরা কেমন আছ?

নিপা;; জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।

রাত্রি;; ভালো আর থাকলাম কোথায় ভাইয়া!

আব্রাহাম;; ওমা কেন শালিকা?

রাত্রি;; প্রথমত আগে যদি জানতাম যে আপনি আমার বোনের জামাই তাহলে আপনার ওপর আমি জীবনেও ক্রাশ খেতাম না, কিন্তু না জানার ফলে আপনি আমার পূর্ব জনমের ক্রাশ। আর দ্বিতীয় এখন শুধু ক্রাশ না যে আমার প্রেমে বা আমি যার প্রেমে এক প্রকার হাবুডুবু খাচ্ছি তাদের দুজন থেকে কেউই কাউকে বলতে পারছি না।

রাত্রির এমন কথা শুনে আব্রাহাম ফিক করে হেসে দেয় সাথে বাকিরাও। কিন্তু অয়নের তো বারো দুগুণে চব্বিশটা বেজে গেলো। এসি থাকার পরেও ঘেমে নেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে। ফাটা চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে অয়ন ভেবেছে রাত্রি অন্যজনকে ভালোবাসে।

অয়ন;; ক্কি কি বববললে তুতুমি ভালোবাস তুতুমি কিন্তু কাকাকে?

নিপা;; আরে ভাই আস্তে আস্তে,, পরের টা পরেই জেনো এতো আগে জেনে কি করবে।

অয়ন;; না মানে..

রাত্রি;; কি না মানে, চুপ থাকো তুমি।

অয়ন;; ☹️😞

নিরব;; আরে অয়ন সবুড়ে মেওয়া ফলে সুতরাং ধৈর্য ধর।

সবার এতো কথার মাঝেও আব্রাহামের মনে যেন শান্তি নেই। বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে সে। তার দুচোখ যেন শুধু আইরাতকেই খুঁজে যাচ্ছে। সবাই এখানে তাহলে আইরাত কোথায় মেয়েটা গেলো কই। আব্রাহাম আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললো…

আব্রাহাম;; বাপি..

আবির আহমেদ;; হুমমমম

আব্রাহাম;; না আসলে বলছিলাম কি যে আইরাত কোথায়?

আবির আহমেদ;; না আমি কি করে বলবো, তোমার বউ তুমি খবর রাখো না।

আব্রাহাম;; ধুর বাপি ঢং না করে বলো তো।

আবির আহমেদ;; পাজি ছেলে আগে তুই বল, তুই কেন আমার মেয়েটাকে বকেছিস এখানে এসেও মুখ লটকিয়ে বসে ছিলো।

আব্রাহাম;; আরে না বাপি আমি কেন ওকে বকতে যাবো।

আবির আহমেদ;; হুমমম হয়েছে বুঝছি।

আব্রাহাম;; আচ্ছা বাপি বলো না আইরাত কোথায় ভালো লাগছে না ওকে ছাড়া। প্লিজ বলো।

আবির আহমেদ;; আমি জানি না তোর বউ তুই খুঁজে বের করে নে।

আব্রাহাম;; বাপি🙁

আবির আহমেদ;; হাহাহাহাহা,, আচ্ছা যা আইরার রান্নাঘরে আছে।

আব্রাহাম;; কিহহ বাপি তুমি ওকে আবার রান্নাঘরে পাঠিয়েছ। যদি কিছু হয়ে যায় হাত পা পুড়ে যায় তাহলে। বাপি তুমিও না…

আবির আহমেদ;; আরে নাহ আমার দোষ নেই আইরাত নিজেই জিদ করেছে।

আব্রাহাম;; আমি যাচ্ছি।

এই বলেই আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে সেখানে থেকে চলে যায় কিচেনে। কিন্তু সেখানে গিয়েই আব্রাহামের পা থেমে যায়। চোখ সামনে আটকে যায় তার। কেননা সামনে আইরাত তার ওরনা কোমড়ে বেধে রান্না করছে। চুলগুলো পিছনে বাধা, কিন্তু সামনে কিছুটা চুল এলোমেলো হয়ে বের হয়ে আছে। এই গরমে তার ওপর রান্না করার ফলে প্রচুর ঘেমে গেছে সে। কপালে, গলায়, ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। মাঝে মাঝে সে তার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল মুছে যাচ্ছে। চুল গুলো ঠিক করছে কিন্তু সেগুলো অবাধ্য, আবার সামনে এসে পরছে। কোমড়ে ওরনা বেধে রেখেছে সে কিন্তু তাতেও সেখানকার খানিক কাপড় উঠে গিয়ে কোমড়ের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। আর আব্রাহাম মুগ্ধ নয়নে আইরাতকে দেখে যাচ্ছে। এখন এই মূহুর্তে আইরাতকে দেখে পুরো দমে একজন টিপিকাল ওয়াইফ লাগছে। আইরাতকে এই রুপে দেখে আব্রাহামের পক্ষে নিজেকে আটকে রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর কন্ট্রোলে রাখতে পারছে না সে। আব্রাহাম ধীর পায়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত তার রান্না করাতে এতো টাই মগ্ন হয়ে ছিলো যে আশে পাশে তার কোন খেয়ালই নেই। আব্রাহাম এসে আইরাতের পিছনে দাঁড়িয়ে পরে। এক নয়নে আইরাতের গলার দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা গলাতে ঘামের বিন্দু গুলো যেন মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। আব্রাহামের কেমন নেশা ধরে যায়। সে আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় ঝাপ্টে ধরতে আর তার ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষতে থাকে। আব্রাহামের এমন আচমকা কান্ডে আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে। হাতে থাকা ঘুটনি টা নিচে পরে যায়। আইরাত চিল্লিয়ে উঠলে আব্রাহাম হাত দিয়ে তার মুখ ধরে ফেলে। আইরাত বেশ ভয় পেয়ে যায় যার ফলে সে ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে থাকে।

আইরাত;; আব.. আব্রাহ…

আব্রাহাম;; হুশশশশশ.. চুপ

আইরাত;; আআপনি এএএখানে..

আব্রাহাম;; কি করছ এখানে তুমি হুমমম,, রান্নাঘরে আসতে বারণ করেছিলাম না তোমায় তার পরেও এসেছ?

আইরাত;; না মানে আসলে সবাই বললো যে আমার হাতের বানানো কিছু একটা খাবে তাই চলে এলাম বানাতে। (খুব কষ্টে বললো কথাটা)

আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাতকে ধরে সেখানে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। কোমড়ে স্লাইভ করছে আইরাতের। আইরাত আব্রাহামের এমন করাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আব্রাহামকে ছাড়তে বললে ছাড়ছেও না। কি আর করার সেভাবেই রান্নার কাজ সব শেষ করলো।

আব্রাহাম;; তো কি রান্না করছো।

আইরাত;; বিরিয়ানি।

আব্রাহাম;; হুমম

এই বলে আব্রাহাম চলে গেলো। আইরাত অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে

আইরাত;; যাহ বাবা, না মানে বিরিয়ানির কথা শুনলে যার কিনা খুশির সীমা থাকে না সে আজকে বিরিয়ানির নাম শুনেও শুধু “হুমম”। কিছুই বললো না অনেক আজব তো। ধুর আমার রান্না তো শেষ এখন আমি যাই। আইরাত বিরিয়ানি এনে টেবিলে স্টাফদের সাহায্য নিয়ে সাজিয়ে দিলো।

অয়ন;; ওয়াও বউমনি স্মেল জাস্ট আমেজিং। তাড়াতাড়ি খেতে দাও।

আইরাত;; স্মেল তো ভালো এখন শুধু খেতে ভালো হলেই হলো।

নিরব;; আরে ভাবি তুমি এতো চিন্তা করছ কেন বলতো,, আমাদের একমাত্র ভাবি রান্না করেছে তো অবশ্যই ভালো হবে, হতেই হবে।

আইরাত;; বাপি, আসো খেতে বসো। রাত্রি নিপু তাড়াতাড়ি আয়।

রাত্রি;; আসছি বেবিজান।

আইরাত;; আর এইযে চৌধুরী.. আপনাকে কি খাবার টেবিলে আসার জন্য আলাদা ভাবে ইনভিটেশন দিতে হবে নাকি!!

আব্রাহাম;; No need, i am coming…

আইরাত মনে মনে;; আমেরিকান ইংরেজের বাচ্চা।

সবাই খাবার টেবিলে বসে পরে। সবাইকে আইরাত নিজ হাতে খাবার সার্ভ করে দেয়। আইরাতকে তাদের সাথে খেতে বসতে বললে সে বসে না এই ভেবে যে যদি উল্টা পালটা হয় তো। সবাই খাবার মুখে দেয়। কিন্তু আইরাত খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ফিংগার ক্রোস করে চোখ খিচে বন্ধ করে থাকে৷ সবাই খাবার মুখে দিয়েই থ মেরে যায়। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। সবাই এক লোকমা খাবার মুখে তুলে চুপ মেরে বসে থাকে। সবার এমন রিয়েকশন দেখে আইরাতের তো কাদো কাদো অবস্থা। আইরাত ভাবতে থাকে যে নিশ্চিত খাবার জঘন্য খারাপ হয়েছে তাই সবার এমন সশা। আচ্ছা এখন যদি সবাই মিলে আইরাতকে গনপিটুনি দেয় তাহলে কি হবে। কিন্তু আইরাতের ভাবনাতে ছেদ ঘটিয়ে অয়ন বলে ওঠে।

অয়ন;; বউমনি ফাটাফাটি হয়েছে।

নিরব;; ভাবি আমি আমার পুরো লাইফে এমন বিরিয়ানি খাই নি। কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তোমাকে।

নিপা;; আইরু ফাটিয়ে দিয়েছিস পুরা।

রাত্রি;; তুই এতো ভালো রান্না করে থেকে শিখলি।

আবির আহমেদ;; আমি তো আরো নিবো।

সবাই তো আইরাতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তা দেখে আইরাত যেন এক বিশ্বজয় করা হাসি দিলো। সবাই আইরাতের রান্না খেয়ে অনেক কিছুই বললেও আব্রাহামের কোন সাড়াশব্দ নেই। সে তার মনের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে। আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত তা দেখে আইরাতের মেজাজ বিগড়ে গেলো তবুও চুপ থাকলো।



সবাই সবকিছু শেষে আবার একসাথে বসে পরলো। এবার নিরব আর নিপার বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু দুঃখের বেওয়ার হলো এই যে নিরবের বাবা-মা বলতে কেউ নেই তারা মারা যায় যখন নিরব খুব ছোট ছিলো। কিন্তু আবির আহমেদ, আব্রাহাম,আইরাত,অয়ন,রাত্রি, নিপা এদের সবাইকে পেয়ে যেন নিরবের পিরিবার পূর্ণ হয়ে গেছে। নিরব নিপার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো ১৮ই আগস্ট। ধীরে ধীরে চৌধুরী বাড়িতে বিয়ের আমেজ বয়ে যায়। ধুম পরে গেলো নিরব-নিপার বিয়ের। এর মাঝেই অয়ন রাত্রির প্রেমে আরো গভীর ভাবে পরছে। আর আইরাত তো পুরো বাড়িকে মাতিয়ে রাখছে আর আব্রাহামকে জ্বালানো যে তার নিত্য দিনের কাজ। তারাও ধিরে ধিরে কাছে আসছে,,,

(কাল প্রচুর মাথা ব্যাথা ছিলো তাই গল্প দিতে পারিনি তবে আজকে বিকেলে একটা বোনাস পার্ট দেয়া হবে😊)











🤎🖤চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-45+46

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 45

💙💐..
..
..
..
..
..

পরেরদিন সকালে🌅~

জোরে গানের আওয়াজে রাত্রি আর নিপার ঘুম ভেংে যায়। নিপা একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে যায়।

নিপা;; কে রে এই সাজ সকাল বেলা এভাবে উদুম ভাবে গান বাজাচ্ছে,,, উফফফ কানের বারো টা বাজিয়ে দিলো রে।

নিপা বিছানা ছেড়ে গানের শব্দ অনুসরণ করে সেদিকেই এগিয়ে গেলো। নিপা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কারন গানের শব্দ রান্নাঘর থেকে আসছে। নিপা তার এলোমেলো চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলো। গেতেই তার চোখ চড়কগাছ। কেননা আইরাত কিচেন এপ্রোন পরে চুলগুলো বেধে হাতে একটা ফ্রাইপেন নিয়ে তাতে ডিম ভাজছে। তার সাথে তুমুল গান বাজাচ্ছে আর নেচে যাচ্ছে। নিপা আইরাতের এমন অবস্থা দেখে হাসবে না কাদবে খুজে পাচ্ছে না। আইরাতের হঠাৎ চোখ যায় নিপার ওপর। দেখে নিপা পাগলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত নিপাকে দেখে এক ভেটকি দেয় দাতঁ বের করে। নিপা আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে কপালে, গলায় হাত দেয়। আইরাত অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে।

নিপা;; আচ্ছা হয়েছে কি তোর,, তুই ঠিক আছিস তো?

আইরাত;; আরে ঠিক আছি মানে 100% ঠিক আছি, যাকে বলে একদম বিন্দাস।

নিপা;; তাহলে তুই এই সকাল সকাল এগুলো…!

আইরাত;; আরে বেবি চিল, এমন গোমড়া মুখ করে রাখলে হয় নাকি। সবসময় ফুরফুরে মেজাজে থাকবি এই আমার মতো।

নিপা;; হ্যাঁ হ্যাঁ তা তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

আইরাত;; আজ ব্রেকফাস্ট আমি নিজে বানিয়েছি, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

নিপা;; আইরু

আইরাত;; বলো বেবি।

নিপা;; সবসময় এমন হাসি খুশি থাকবি (আইরাতকে তার দিকে ঘুড়িয়ে দুগালে হাত রেখে)

আইরাত;; হুমমমম 😊,, এবার জলদি চল।

রাত্রি;; এইযে দেহো আইসা গেছি।

আইরাত;; এগুলো কি ভাষা?

রাত্রি;; খাটি বাংলা।

আইরাত;; দারুন 😅

সবকিছু গুছিয়ে তারা সবাই খেতে বসলো। খাওয়ার মাঝেই নিপা বলে ওঠলো…

নিপা;; আচ্ছা আজকে না আমাকে একটু নিরবের সাথে দেখা করতে যেতে হবে।

রাত্রি;; আয়য়য় হায়ায়ায় টুরু লাভ।

নিপা;; চুপ কর, আমাকে বলছিস টুরু লাভ নিজের ভান্ডা ফুটো করে দিই!!

আইরাত;; তোরা কি বলছিস আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

নিপা;; আচ্ছা আমি ঢুকিয়ে দিচ্ছি।

রাত্রি;; নিপু দেখ বেশি বারাবারি করছিস কিন্তু তুই যেমন টা ভাবছিস তেমন টা না আসলে।

নিপা;; মুখ অফ কর পেত্নি। এই এই আইরু জানিস আমাদের রাত্রি না প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

আইরাত;; কিইইইইইইইইইইই

নিপা;; আজ্ঞে জ্বি,

আইরাত;; তো কে এই মহান ব্যাক্তি যার প্রেমে আমাদের রাত্রি হাবুডুবু খাচ্ছে?!

নিপা;; আসলে উনি হচ্ছেন আপনার হাসবেন্ডের ছোট ভাই উরফে আপনার দেবর অয়ন আহমেদ চৌধুরী।

আইরাত;; হাহাহা, আমার আগে থেকেই এই দুটোর ওপর সন্দেহ ছিলো। সারা দিন রাত ফোনে একে অন্যের সাথে কথা বলবে, রোজ দেখা করবে। ভাই ঘাবলা যে এদের মাঝে আছে তা আগে থেকেই জানতাম। তো মিস রাত্রি খান কতো দিন ধরে চলছে এইসব।

রাত্রি;; আরে ধুর কিসের কতোদিন,, এখনো তো বলাই হলো না যে কতোটা ভালোবাসি অয়নকে।

নিপা;; এই হলো গোয়ালের গাধা আই মিন গাধি।

রাত্রি;; 😟☹️

আইরাত;; আরে সোজাসাপটা বলে দে না যে ভালোবাসিস।

রাত্রি;; এহহহহ আসছে, আমি কেন বলতে যাবো ওই আমাকে বলবে।

আইরাত;; তাহলে তো তোকে অপেক্ষা করতে হবে।

রাত্রি;; কিন্তু..

আইরাত;; কিন্তু কি!

রাত্রি;; যদি অয়ন অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে!

আইরাত;; এটা কখনোই সম্ভব না কারণ আমি যতটুকু অয়ন কে চিনি তাতে তার পক্ষে এই সব প্রেম ট্রেম করা কখনোই সম্ভব না। বলতে পারিস সে আব্রাহামের মতো আসলে দুই ভাই তো একই রকমের।

রাত্রি;; কিন্তু যদি সে আমাকে ভালো না বাসে তাহলে কি হবে?

আইরাত;; এমন প্রশ্নই আসে না, অয়ন অনেক চাপা স্বভাবের,, যদি কাউকে তার ভালো না লাগে তাহলে বলে দেয় আর তার সাথে তেমন একটা কথাও বলে না কিন্তু তোর ক্ষেত্রে হয়েছে অন্যটা। তোর সাথে তো সারাদিনই চিপকে থাকে।

রাত্রি;; আরে ধুর এভাবে বলছিস কেন 🙈

নিপা;; আহা লজ্জা বতি লতা।

আইরাত;; এইসব লজ্জা টজ্জা না ছার আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অয়নকে বলে দে।

রাত্রি;; হুমমমম

আইরাত;; আচ্ছা আমি একটু আজ আমার চৌধুরীর কাছে যাবো।

রাত্রি;; ওহহহ।

নিপা;; রাত্রি রেডি হয়ে যা আমার সাথে তুইও যাবি।

রাত্রি;; ওমা আমি কেন যাবো নিরব ভাইয়া আর তোর মাঝে,, আমি বাবা কাবাবের ভিতরে হাড্ডি হতে চাই না।

নিপা;; অয়নও আসছে।

রাত্রি;; হ্যাঁ তো কি,,,, কিহহ অয়নও আসছে!!

নিপা;; হুমমম আমি আসতে বলেছি।

রাত্রি;; অনেক ভালো করেছিস,, আমি গেলাম এখনই রেডি হতে।

আইরাত;; আরে কিন্তু তোর খাবার টা…… যাহ বাবা চলে গেলো।

অয়নের নাম শুনতেই রাত্রি খাবার ছেড়ে দৌড়ে রেডি হতে চলে গেলো। রাত্রির এমন কান্ডে নিপা আর আইরাত জোরে হেসে ওঠলো।

রাত্রি আর নিপা চলে গেলো অয়ন আর নিরবের সাথে দেখা করতে। এদিকে আইরাতও চৌধুরী ভবনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
আইরাত একমনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আর সেখানে আব্রাহাম তাকে দেখে কি রিয়েক্ট করবে তাই ভাবছে সে। বেশ অনেক সময় পর আইরাত তার গাড়ি নিয়ে চৌধুরী ভবনের সামনে চলে গেলো। আইরাত গাড়ি নিয়ে, সামনে তাকাতেই দেখে বিশাল দেহি দু-দুটো বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে হাতে তাদের ইয়ায়ায়া বড়ো বন্দুক। অন্য সময় হলে সেই বডিগার্ড গুলো সসম্মানের সাথে মেইন গেট খুলে দিত কিন্তু আজ তারা আইরাতকে দেখার পরও সেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। এতে আইরাতের বেশ রাগ হলো। আইরাত ছোট ছোট চোখে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তাদের সামনে গিয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; গেট খুলো।

বডিগার্ড;; __________

আইরাত;; কথা কি কান দিয়ে ঢুকে না, গেট খুলো।

বডিগার্ড;; সরি ম্যাম স্যারের কড়া অর্ডার আপনাকে যেন ভিতরে ঢুকতে না দেওয়া হয়।

আইরাত;; কিহহহহহ,, এতো বড় কথা। তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার। তোমরা জানো আমি কে।

বডিগার্ড;; ম্যাম এখন এই সময়ে আমরা আপনাকে চিনতে পারছি না। আমরা দুঃখিত।

আইরাত;; একবার ভিতরে যেতে পাই তারপর সবার আগে তোমাদের ওই স্যারের মাথা ফাটাবো তারপর তোমাদের মাথা ফাটাবো। এতো বড় কলিজা আমাকে কিনা বলে ভিতরে যেতে মানা করেছে,,
আব্রাহামের বাপের বাড়ি নাকি 😤,, ওহ না কি বলছি আমি আব্রাহামের বাবার বাড়িই তো😑। উফফ এবার মনে হচ্ছে আমি নিজেই এদের পাল্লায় পরে পাগল হয়ে যাবো। ধুর ছাই।

আইরাত মুখ গোমড়া করে, কপাল কুচকে গাড়ির ওপরে উঠে বসে পরে। বাচ্চাদের মতো করে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে, ঠোঁট উল্টিয়ে গাড়ির ডিকির ওপর বসে আছে। মনে মনে আব্রাহামের পুরো চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে সে। আর আইরাতের এই সবকিছুই আব্রাহাম খুব করে পর্যবেক্ষণ করছে করিডর থেকে, আইরাতের কান্ড দেখে মুচকি হাসছে সে আর আরামছে কফি খাচ্ছে। আইরাত অনেক ক্ষন ধরে বসে আছে এবার সে বোর হয়ে নিজের নখ কামড়াতে থাকে। এইবার আইরাতের মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি কাজ করে। পাশে তাকিয়ে দেখে কিছু ছেলেমেয়ে খেলা করছে। আইরাত গাড়ির ডিকি থেকে ফট করে নেমে পরে এবং সেই বাচ্চাগুলোর দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত সেই বাচ্চাগুলোকে অনেক গুলো চকলেট দেয় আর বলে যে আব্রাহামের বাড়ির পিছনের বাগান থেকে অনেক গুলো ফুল তুলে আনতে কেননা আব্রাহাম তার বাগান কে খুব ভালোবাসে। কখনোই কাউকে কোন ফুল ছিড়তে দেয় না। এই বাগানটা আব্রাহামের নিজের হাতে তৈরি এবং খুব শখের। আর আইরাত এটাও জানে যে তার বাগানের গাছ গুলোতে কেউ হাত দিলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিবে। ছেলেমেয়ে গুলোকে আইরাত অনেক গুলো চকলেট দিয়ে ঠিক যেভাবে যেভাবে করতে বললো তারা ঠিক সেভাবেই করে যাচ্ছে। তাদের চলে গেতেই আইরাতের মুখের কোণে ফুটে ওঠে বিশ্বজয় করা হাসি। নিজের দুহাত ভাজ করে বলতে শুরু করে।

আইরাত;; হিহিহি,, এবার দেখি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আপনি কি করেন।

বাগানে গিয়ে বাচ্চাগুলো ইচ্ছে মতো ফুল ছিড়তে থাকে। বাগানের পাশেই কাজ করছিলো বাগানের মালি। বাচ্চাদের হাসাহাসির শব্দ শুনে সেদিকে গেলে তিনি দেখতে পান অনেক গুলো বাচ্চা একসাথে ফুল তুলছে। তা দেখে মালি তাদের দিকে তেড়ে এলো। বাচ্চাগুলোও হো হো করে হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো। মালি কাকুও তাদের। পিছনে ছুটছে। মালি কাকু এবার মেইন গেট খুলে তাদের ধাওয়া করছে। বডিগার্ড রা তাদের মতো করেই দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাস এইতো সুযোগ। আইরাত এবার ইচ্ছে করেই তার গাড়িতে উল্টো পাল্টা কিছু একটা করে রাখলো। যার ফলে গাড়ির সামনের ডিকি দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। আইরাত এবার ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে বডিগার্ড দের ডাক দিলো।

আইরাত;; এই যে বিশাল দেহি মানুষ গুলো একটু শুনবেন।

আইরাতের এমন ডাকে তারা বোকা বনে গেলো। তবুও বলে উঠলো।

বডিগার্ড;; জি ম্যাম বলুন।

আইরাত;; আসলে বলছি কি যে মানলান তোমাদের স্যার আমাকে ভিতরে যেতে মানা করেছে কিন্তু আমাকে একটু হেল্প তো করতেই পারো নাকি!!

বডিগার্ড;; জ্বি ম্যাম বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।

আইরাত;; দেখো না আমার গাড়ি থেকে কিভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছে,, প্লিজ একটু দেখো কি হয়েছে।

বডিগার্ড;; জ্বি ম্যাম এখনই দেখছি।

বডিগার্ড রা আইরাতের গাড়ির কাছে এসে কি হয়েছে তা দেখতে থাকলো।

আইরাত মনে মনে;; এইতো সুযোগ এখনই আমাকে ভিতরে যেতে হবে,, মানে মানে এখন এখান থেকে কেটে পরি।

বডিগার্ড রা গাড়ি দেখতে থাকলে আইরাত ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে থাকে। গেটের প্রায় কাছে চলে এলে আইরাত উল্টো দিক হয়ে দেয় এক দৌড়। দৌড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পেরে বডিগার্ড রা পিছনে তাকায় দেখে যে আইরাত সেখানে নেই। তার মানে ভিতরে চলে গেছে। দুজন বডিগার্ডই এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে…

বডিগার্ড১;; আমরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম যে আইরাত ম্যাম আসলে কার বউ মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী স্যারের বউ। সাইকো তো হবেই। ম্যাম কিভাবে গাধা বানিয়ে ভিতরে চলে গেলো দেখলি। বুঝতেই পেলাম না।

বডিগার্ড২;; কি আর করার এখন তো ম্যাম ভিতরেই চলে গিয়েছেন।

আইরাত একদৌড়ে বাড়ির ভিতরে হলরুমে চলে গেলো। কিন্তু আজব কেউই নেই ঘরের ভেতরে। সব গেলো কই। আইরাত এইসব কিছু ভাবতে লাগলো আর গলা ফাটিয়ে বলতে লাগলো।

আইরাত;; হ্যালো, কেউ কি আছে।

এভাবে বেশ কয়েকবার ডাকার পরও যখন কেউ কোন সাড়া দিলো না তখন আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে পাশে থাকা এক বড়ো কাচের ফুলদানি তুলে নিলো। হাতে সেই ফুলদানি নিয়ে হলরুমের মাঝ বরাবর এসে দাড়িয়ে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে বন্ধ করে সমস্ত শক্তি দিয়ে ফুলদানি দিল এক আছাড়। সাথে সাথেই বিকট শব্দে ফুলদানি ভেংে চুরমার হয়ে গেলো। আইরাত দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরে। আব্রাহাম তার রুমে ল্যাপটপে কাজ করছিলো কিন্তু ড্রইংরুম থেকে এমন বিকট আওয়াজ আসাতে দ্রুত ল্যাপটপ রেখে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। নিচে নামতেই দেখে সারা ফ্লোরে কাচ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে এটা আইরাতের কাজ ছাড়া আর কারোরই না। আব্রাহাম নিচে গিয়েই থেমে পরে কারণ আইরাত তাকে দেখে একগাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামকে দেখে আইরাত বলে উঠলো…

আইরাত;; হাই মাই হেন্ডসাম মাফিয়া সাইকো (একহাত তুলে)

আব্রাহাম;; ড্রামাকুইন একটা।

আব্রাহাম ওপরে উঠে চলে যেতে নিলে আইরাত দৌড়ে আব্রাহামের সামনে এসে হাত দিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়।

আইরাত;; আরে আরে, যাচ্ছো কোথায়?

আইরাত এই প্রথম আব্রাহামকে তুমি বলে সম্বোধন করলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; আপনি এমন কেন বলুনতো, বউকে কেউ এভাবে একা ফেলে রেখে যায়? (কোমড়ে হাত রেখে)

আব্রাহাম চারিদিকে বিরক্তি নিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে আইরাতকে বলে ওঠে।

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এইসব?!

আইরাত;; সাইকোগিরি, (আব্রাহামের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে) আপনিই না বলতেন যে সমানে সমানে না মিললে চলে না। আর আপনি যেহেতু সাইকো তো আপনার বউকেও তো সাইকো হতে হবে তাই না।

আব্রাহাম;; এটা আবার কি নতুন ড্রামা শুরু করলে তুমি? আর তুমি ভিতরে এলে কি করে বাইরের গার্ড গুলো কিভাবে আসতে দিলো।

আইরাত;; ওহ হো আপনিও না, আপনার কি মনে হয় যে ওদের মতো ছোট খাটো গার্ড আমাকে মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীকে আটকাতে পারবে। হ্যাঁ মানলাম যে তারা দেখতে বিশাল কিন্তু আমার কাছে ছোটই।

আব্রাহাম;; আলতু-ফালতু বকা বন্ধ করো আর রাস্তা ছাড় ওপরে যাবো। আমি কোন পাগলের সাথে কথা বলতে চাই না।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের পাশ ঠেলে ওপরে চলে যেতে নিলো। আইরাত আব্রাহামের বাম হাত ধরে থামিয়ে দিলো। আব্রাহাম একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আইরাতের দিকে তাকালো।

আইরাত;; প্লিজ ক্ষমা করে দিন না আমাকে, আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল। প্লিজ এভাবে আর দূরে দূরে থাকবেন না।

কথাগুলো বলতে বলতে আইরাতের চোখে পানি জোড় হয়ে গেলো। চোখে পানি দেখে আব্রাহামের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। পরক্ষনেই আব্রাহাম চোখ সরিয়ে নিলো আইরাতের কাছ থেকে। হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে ওপরে চলে গেলো। আব্রাহামের পিছু পিছু আইরাতও দৌড়ে ওপরে যেতে থাকলো।

আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন প্লিজ এভাবে চলে যাবেন না। সরি তো। অনেক বেশি সরি আর এমন হবে না। আব্রাহাম প্লিজ থামুন আব্রাহাম।

আইরাত আব্রাহামকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু ছুটতে লাগে। কিন্তু আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে সে তার মতো করে ওপরে যেতে লাগে। আব্রাহাম এক সময় তার রুমের ভিতরেই চলে গেলো। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে আব্রাহামকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আইরাত;; থামতে বলছি না আপনাকে, কথা কেন শুনেন না আপনি বলুন তো, আচ্ছা সরি বলছি তো আর এমন টা হবে না। আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না আমাকে। আব্রাহাম প্লিজ।

আব্রাহাম এবার আইরাতকে ঘুড়িয়ে সামনে এনে দাড় করিয়ে দিলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগোতে থাকে। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে পিছাতে থাকে। আব্রাহাম যত আইরাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আইরাত তত পিছিয়ে যাচ্ছে। এবার আইরাতের কেমন যেন মনে হচ্ছে।

আইরাত;; আআআপনি এএমন ভাভাবে এগিয়ে আসছেন কেকেন?!

আব্রাহাম কোন কথা না বলে লাগাতার আইরাতের দিকে এগিয়েই আসছে, দৃষ্টি তার আইরাতে স্থির। আইরাত মাথা নিচু করে পিছিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আব্রাহামের সামনে এগোনো থেমে যায়। আইরাত তা বুঝতে পেরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আব্রাহামের এমন কান্ডে আইরাত পুরো বেআক্কেল হয়ে যায়। পরক্ষনেই আইরাত খেয়াল করে যে আইরাত আব্রাহামের রুমের বাইরে চলে এসেছে। আর আব্রাহাম মূলত তাকে তার রুম থেকে বাইরে বের করার জন্যই এমন করে তার দিকে এগিয়ে আসছিলো। এখন আইরাত বাইরে আসতেই আব্রাহাম ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আইরাতের এবার রাগে মাথায় আগুন ধরে গেলো। আইরাত জোড়ে তার দরজায় থাপরাতে লাগে।

আইরাত;; আব্রাহাম এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না, আপনি এভাবে আমাকে রুম থেকে বের করে দিতে পারেন না। আব্রাহাম দরজা খুলুন। আব্রাহাম।

আইরাত বেশ বুঝতে পারলো যে আব্রাহাম অনেক রেগে আছে তার থেকে। আইরাত এবার রাগ নিয়ে দরজাতে কিল ঘুষি লাথি যা পারে সব দিতে থাকলো। আইরাত বুঝে গেলো যে আব্রাহাম এখন আর কোন ক্রমেই দরজা খুলবে না।

আইরাত;; আপনি দরজা খুলবেন না তাই তো আচ্ছা ঠিকআছে না খুললেন,, আমিও দেখবো যে আপনি কিভাবে দরজা না খুলে থাকেন। আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না এখানেই থাকবো আমি। দেখি আপনি কি করতে পারেন। আপনি ঘাড় তেড়া তো আমিও ঘাড় তেড়ার বউ। আমি এখানেই বসে থাকবো দেখি আপনি কি করতে পারেন, হাহ্।

আইরাত আর কিছুই না বলে ঘরের পাশে থাকা সোফার ওপরে পা গুটিয়ে বসে পরলো। গালে দুহাত দিয়ে মুখ চুপসে বসে আছে সে। আর খানিক পরে পরেই আব্রাহামের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আর আব্রাহাম আইরাতের এই সকল পাগলামো কথা ঘর থেকে শুনছিলো আর চাপা হাসি হাসছিলো। সত্যি বলতে আব্রাহাম কোন রাগই করে নি আইরাতের থেকে কিন্তু সে শুধু দেখতে চায় যে আইরাত আব্রাহামের প্রেমে কতোটুকু পাগলামি করতে পারে আর কি পর্যায়ে যেতে পারে। আব্রাহাম তার পিছনে তাকিয়ে বাকা হেসে আবার ল্যাপটপে কাজ করাতে মন দেয়। সামনেই আইরাতের ইয়ায়ায়ায়া বড়ো এক ছবি রাখা।











❣️❣️চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 46

🖤🥀..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম ওর মতো করে কাজ করেই যাচ্ছে। কাজের ওপর তার গভীর মনোযোগ। আর ওদিকে বসে থাকতে থাকতে আইরাতের কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। বার বার আইরাত অসস্থি নিয়ে আব্রাহামের ঘরের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আব্রাহামের তো বের হওয়ার নামই নেই। অবশেষে আইরাত চিল্লিয়ে বলে ওঠে…

আইরার;; এই যে চৌধুরী শুনছেন, আমি কিন্তু আর বসে থাকতে পারছি না,, পিঠ-কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো আমার। প্লিজ দরজা টা খুলুন না দয়া করে।

______________________

ওপর পাশ থেকে কোন আওয়াজই এলো না। আইরাত আবার মুখ লটকিয়ে বসে রইলো। প্রায় ঘন্টা খানিক পার হয়ে গেলো কিন্তু এবার আইরাতের কোন সাড়াশব্দ নেই। এবার আব্রাহামের খেয়াল হলো যে সময় তো অনেক চলে গিয়েছে আর আইরাত যে পরিমান বকবক করে এতোক্ষণ তো চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে ও না তাহলে। আব্রাহাম এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১ ঘন্টার ওপর হবে আইরাতের কোন কথা কানে আসছে না। এবার আব্রাহাম কপাল কুচকে দরজার সামনে চলে গেলো। একবার ভাবতে লাগলো যে দরজা খুলবে কি খুলবে না। কিন্তু ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে এক সময় সে দরজা খুলেই দিলো। দরজা খুলার পর বাইরে কাউকে না দেখতে পেয়ে আব্রাহাম আরো অবাক হলো। কিন্তু নিজের সামনে একটা ব্রাউন কালারের বক্স দেখতে পেলো। কেউ তো এখানে নেই তাহলে এখানে এই বক্স কে রেখে গেলো। এইটা নিশ্চয় আইরাতের কাজ আব্রাহাম তা বুঝতে পেরে একহাত কোমড়ে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে কপালের উপরের অংশ স্লাইভ করতে থাকে। তার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। আচ্ছা দরজা না খুলার জন্য আইরাত তার ওপর কোন রিভেঞ্চ নিচ্ছে না তো আবার। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর আব্রাহাম সেটা খুলে ফেললো। কিন্তু এবার ঘটলো বিপত্তি। আইরাতের রাখা সেই বক্সটি খোলার সাথে সাথেই ফট করে স্প্রিং-এর সাহায্যে
এক ব্যাঙের মাথা ওপরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেটা আব্রাহামের মুখের কাছে আসতেই আব্রাহাম চট করে তার ডান হাত দিয়ে ব্যাঙের মাথা ধরে ফেলে। এবার সে তার ঘাড় হাল্কা কাত করে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে যে আইরাতের মতো পাগল মেয়ে মনে হয় খুব কমই রয়েছে। আব্রাহামের চোখ যায় এবার বক্সের পাশে থাকা একটা সাদা চিরকুটের ওপর। আব্রাহাম ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে থাকে,, চিরকুট টা চোখের সামনে নিয়ে সামনে-পিছনে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। তারপর সেটা খুলে দেখে তাতে কালো কালি দিয়ে বেশ সুন্দর করে লেখা “” কি ভেবেছেন, আজ দরজা খুললেন না দেখেই কি পার পেয়ে যাবেন কখনোই না চৌধুরী, এখন তো চলে গেলাম কিন্তু পরে আবার আসবো। এতোদিন আপনি পাগলামি করেছেন আমি শুধু দেখে গেছি আর এখন আমার পালা। আমি পাগলামি করবো আর আপনি দেখবেন। পিকচার তো সবে শুরু আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া আর হ্যাঁ চৌধুরী আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা I Love You ❤️ ভালোবাসি চৌধুরী আপনাকে””।

চিঠি টা পরা মাত্রই আব্রাহামের চোখে-মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। আব্রাহামের মুখে তার অজান্তেই হাসির রেশ ফুটে ওঠে। আব্রাহাম কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু আব্রাহাম আবার তার হাসি থামিয়ে এক নয়নে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত এই প্রথম থাকে ভালোবাসি বলছে যদিও আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো যে আইরাত তাকে ভালোবাসে কিন্তু নিজের মুখ ফুটে কখনোই বলে ওঠা হয়নি। কিন্তু আজ আইরাত তাও বলে দিয়েছে। আব্রাহাম তার বাম হাত দিয়ে তার মাথার পিছনের চুলগুলো তে ঝারা দেয়। বাইরে থেকে সেই ব্যাঙের মাথা আর চিঠি তা নিয়ে ঘরে এসে গেলো। টেবিলের ওপরে সেই বক্স টা রেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার হুট করেই হেসে দেয়। এবার সেখান থেকে উঠে গিয়ে করিডরে এসে দাঁড়ায়। মুখ থেকে তার যেন হাসি সরার নামই নিচ্ছে না। মুচকি হাসি লেগেই আছে তার ঠোঁটের ভাজে।



অয়ন;; নিপা তোমরা কোথায়, আমি আর নিরব তোমাদের জন্য বসে অপেক্ষা করছি প্লিজ জলদি এসে পরো!!

নিপা;; আরে এইতো এসে পরেছি রাস্তায় আছি আর মাত্র ৫ মিনিট।

অয়ন;; আচ্ছা মানে আসলে রাত্রি কোথায়?

নিপা;; আহা মজনু আছে আছে রাত্রিও আছে ওকে নিয়েই আসছি।

অয়ন;; আরে ধুর কিযে বলো না তেমন কিছুই না।

নিপা;; এই একদম চুপ,, দুই শয়তানকেই বেশ ভালো করে চেনা আছে। আর সত্যি টা আমরা সবাই জানি। এখন কেবল মুখ দিয়ে বলা বাকি একে ওপরকে।

অয়ন;; সেটাও বেশি দেরি নেই।

নিপা;; হাহাহাহা, আচ্ছা রে ভাই আসছি আমরা কেমন এখন রাখি।

অয়ন;; ওকে বইনা।

নিপার সাথে কথা বলে অয়ন ফোন কেটে দেয়। নিপা আর রাত্রি যাচ্ছে তাদের সাথে দেখা করতেই। বেশ খানিক সময় পর তারা তাদের জায়গায় এসে গেলো। তারা মূলত একটা রেস্তোরাঁয়। তারা আসতেই নিরব নিপা কে দেখে এগিয়ে গেলো। এবং অয়ন সেখানে টেবিলেই দাঁড়িয়ে গেলো রাত্রি কে দেখে। তারা এসে টেবিলে বসে পরলো।

নিরব;; তো আসতে কোন কষ্ট হয়নি তো?

রাত্রি;; না ভাইয়া একদম না।

নিপা;; তো কি খবর তোমাদের?

নিরব;; অনেক ভালো, তোমরা বলো কি খবর?

রাত্রি;; বেশ ভালো, আর সামনে তো আরো ভালো হতে চলেছে কেননা সামনে আপনাদের বিয়ে বলে কথা।

নিরব;; তা আর বলতে।

নিপা;; আরে অয়ন তুমি কিছু বলছ না কেন, এতো চুপচাপ আজ?!

অয়ন;; ___________(এক চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়েই আছে)

নিপা;; অয়ন, অয়ন।

অয়ন;; আব.. হ্যাঁ হ্যাঁ হুমম নিপা বলো।

নিরব;; কোথায় হারিয়ে গেলি ভাই!

অয়ন;; আরে নাহ নাহ কোথাও না।

রাত্রি;; গিয়ে দেখো কোন জানি গফ এর কথা ভাবছে।

অয়ন;; এইইই একদম উল্টো পাল্টা কথা বকবে না আমার ওইসব গফ টফ নেই।

রাত্রি;; তাহলে এতো ভাবনা কিসের হুমম বলো!

অয়ন;; সব তোমাকে কেন বলবো?

রাত্রি;; না বললে আমার শুনার জন্য বয়েই গেছে।

নিপা;; এই নাও আবার শুরু এইই থাম।

রাত্রি;; আচ্ছা ভাইয়া বিয়ের প্লেন কি বলেন…!

নিরব;; আগামীকাল আমরা আবির আহমেদ আংকেলের বাসায় যাবো।

নিপা;; মানে আব্রাহাম ভাইয়ের বাড়ি!

নিরব;; হুমমম ওয়েট আইরাত কোথায়? আসেনি আজ?

রাত্রি;; ভাইয়া সে আব্রাহাম ভাইয়ের কাছেই গেছে।

অয়ন;; কিহ দাভাইয়ের কাছে!?

রাত্রি;; হুমমম আর নিরব ভাইয়া আপনি তো তাদের পুরো বেপার টা জানেনই নতুন করে আর বলার কিছুই নেই।

নিরব;; হ্যাঁ তা তো জানি। এখন শুধু আব্রাহাম ভাইয়ের রাজি হলেই হলো।

নিপা;; আমার মনে হয় না আব্রাহাম ভাই এতো তাড়াতাড়ি রাজি হবে। আইরাতকে ভাইয়া মাত্রার থেকে বেশি ভালোবাসে জানি কিন্তু দুজনই তো আর বাকা কম না। দুটোই সমান।

অয়ন;; যাই হোক আমি এখন শুধু এইটাই চাই যে আমার দাভাই আর বউমনি একসাথে থাক ভালো থাক।

রাত্রি;; আয় হায়ায়ায় শেষে কিনা আমার ক্রাশই আমার বোনের বিয়ে করা বর বের হলো,, হায় আমার ফাটা কপাল ( কপালে হাত দিয়ে)

অয়ন;; এই মেয়ে তুমি কি বললে!

রাত্রি;; কোথায় কি বললাম!

অয়ন;; আমার দাভাই তোমার ক্রাশ, লজ্জা করে না একজন বিবাহিত ছেলের ওপর ক্রাশ খেতে।

রাত্রি;; আরে আমি কি তখন জানতাম নাকি!

অয়ন;; হয়েছে হয়েছে।

নিপা;; আল্লাহর ওয়াস্তে তোরা থাম প্লিজ। তোদের ঝগড়াতে জীবন যাবো।

রাত্রি;; ধুর খিদে পেয়ে গেলো এই বাদরের চক্করে। নিরব ভাইয়া…

নিরব;; জ্বি বলেন শালিকা।

রাত্রি;; এখন কি খাবার অর্ডার দিবেন নাকি না খাইয়ে মারবেন!?

নিরব;; এমা ছি ছি এগুলো কি বলো আমি এক্ষুনি বলছি।

রাত্রির এমন পাগলামো কথাতে অয়ন মুচকি হেসে দেয়। তারপর তারা খেতে থাকে আর জমিয়ে আড্ডা দেয়। তারপর বের হয়ে পরে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে নিরব নিপা কে ছাড়তে না চাইলেও রাত্রি আর অয়নের চাপা বাজিতে ছেড়ে দেয়। আল্লাহ জানেন বিয়ের দিন এদের জন্য পাত্র আর পাত্রী পক্ষের কি হাল হয় তার ওপর আইরাত বোম🔥 তো আছেই।

আইরাত তার বাসায় গিয়ে গরম গরম কফি খাচ্ছে আর ভাবছে যে কাল কি করা যায়। নিপা আর রাত্রি তাদের বলে দিয়েছে যে তারা কাল চৌধুরী ভবনে যাচ্ছে। আর আইরার তো আব্রাহামকে চৌধুরী ছাড়া এখন ডাকেই না। আইরাত ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুলে বার বার হাত দিচ্ছে আর আব্রাহামের করা সেইসব পাগলামির কথা ভাবছে। আগে কতো সাইকোই না ছিলো কিন্তু এখন একদম গোমড়া মুখো। আচ্ছা বেপার নাহ বেপার নাহ এখন নিজের করা পাগলামি তে তার চৌধুরীকে পাগল করবে। আইরাত এই সব কিছু নিজের মনে ভাবছে আর হেসে যাচ্ছে। তখনই রাত্রি আসে দেখে যে আইরাত এভাবে নিজের মনে মনেই হেসে যাচ্ছে। রাত্রি তা দেখে নিজের গলা খাকাড়ি দেয়। আইরাত নিজের পাশে তাকিয়ে দেখে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে আইরাত রাত্রির হাত ধরে টেনে এনে নিজের পাশ ঘেষে বসিয়ে দেয়।

রাত্রি;; তো মনে মনে এতো কি মনকলা খাওয়া হচ্ছে শুনি?!

আইরাত;; আরে ধুর কিছু না।

রাত্রি;; আব্রাহাম ভাইয়ের কথা বুঝি!

আইরাত;; হুমমম,, জানি না কি হবে আব্রাহাম অনেক বেশিই রাগ করে আছে আমার ওপর। কথা পর্যন্ত ঠিক ভাবে বলে না। (মন খারাপ করে)

রাত্রি;; আরে বেবিজান মন খারাপ করিস না তো। যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে রাগ, অভিমান, তিক্ততা সবই থাকে কিন্তু এই সামান্য জিনিস গুলো না ভালোবাসার কাছে খুবই ঠুনকো। আব্রাহাম ভাই তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে নিজের থেকেও বেশি আর কি কিছু দিনের জন্য একটু রাগ করলো আর তাই তুই এতে এতো মন খারাপ করে রেখেছিস। চেয়ার আপ বেবি।

আইরাত;; কিন্তু সবই তো আমার জন্যই হয়েছে,, আমিই আব্রাহামকে সবসময় ভুল বুঝে গেছি।

নিপা;; নাহ একদম না, তোর দিক থেকে ভাব, তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো এই একই কাজ করতো। কারণ তোর ওপর দিয়ে যা গেছে তা অনেক কিছু। তুইও তোর দিক দিয়ে ঠিক আছিস। নিজের বাড়ি থেকে তুলে আনা, বাবা-মার কাছ থেকে দূরে থাকা, বিয়ে করা আবার তুই ভেবেছিলি আব্রাহাম ভাই খুন করেছে তোর বাবা মাকে। যদিও তা তোর ভুল ধারনা ছিলো। মানলাম আব্রাহাম ভাই তোর ওপর অন্যায় করেছে কিন্তু ভাই তার শাস্তি পেয়ে গেছে আর তা হচ্ছে তোর থেকে দু-দুবছর দূরে থাকা। ভাই এতো টা দিনের জন্য তোর থেকে দূরে থেকেছিলো যাকে সে নিজের অস্তিত্ব ভাবতো তার কাছ থেকে দূরে থেকেছে যা আব্রাহাম ভাইয়ের জন্য যথেষ্ট শাস্তি ছিলো। হ্যাঁ অবশ্য ভুল তোরও ছিলো কিন্তু তুই তা বুঝতে পেরেছিস আর এখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুই শুধু তোর সাইকো বরের সাইকো বউ হয়ে থাক ( পাশের রুম থেকে এসে আইরাতের পাশে বসে কথা গুলো বলে ওঠলো)

আইরাত;; অবশ্যই তা আর বলতে।

রাত্রি;; কিন্তু লাড্ডু তো এখন আমাদের নিপুর মনে ফুটছে কারণ সামনে তো তার বিয়ে।

নিপা;; ধুর এভাবে কি বলছিস।

আইরাত;; কেন লজ্জা লাগছে বুঝি। বাসর ঘরের কথা চিন্তা করে।

রাত্রি;; হ্যাঁ তাই হবে আমি সিওর।

নিপা;; কি বললি হারামিরা দাড়া দেখাচ্ছি মজা।

আইরাত-রাত্রি;; দৌড়া, দৌড়া।

নিপাকে এভাবে কথা বলে জ্বালানির জন্য নিপা আইরাত আর রাত্রির পিছনে বালিশ নিয়ে দৌড়াতে লাগলো আর তারা ছুটতে লাগলো এদিক ওদিক। শুরু হলো তাদের তিনজনের মাঝে খুনশুটি।










🌿🌿চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-43+44

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 43

🧡🍂..
..
..
..
..
..

আইরাতকে তারা টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকে, আইরাত তাদের কাছ থেকে ছুটার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হয় না। আব্রাহাম তাদের গাড়ির পিছনে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছে। আব্রাহামের আর বুঝতে বাকি নেই যে যারা আইরাতকে তুলে নিয়ে গেছে তারা দুলালেরই লোক ছিলো। রাগে কটমট করছে সে। কিন্তু তাদের গাড়ি বেশ বাকা ভাবে চলছে এলোমেলো ভাবে। আরো বেশ কিছুক্ষন ড্রাইভ করার পর তাদের গাড়ি উল্টো ইউ ট্রার্ন নিয়ে চলে গেলো। এতে করে তাদের গাড়ি আব্রাহামের চোখের আড়াল হয়ে গেলো। আব্রাহামের মাথায় এখন আগুন জ্বলছে। তবে বেশ ভালো করেই জানে যে এই গাড়ি কোথায় গিয়েছে তা হলো “বাগানভিলা”। কেননা দুলালের সব অপকর্ম সেই জায়গাতেই হয়। আব্রাহাম সেই জায়গার রাস্তা ধরলো। হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠলে কানে থাকা ব্লুটুথ অন করে কথা বলতে থাকে আব্রাহাম।

আইরাত;; আহহ কি করছেন কি আপনারা প্লিজ ছাড়ুন আমাকে, এভাবে তুলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

দুলাল;; আমার কাছে জানেমান।

আইরাত;; দুলাল, আপনি? (অবাক হয়ে)

দুলাল;; হ্যাঁ আমি, কেন তুমি কাকে আশা করেছিলে!

আইরাত;; আপনি আমাকে এভাবে ধরে আনলেন কেন, যেতে দিন আমাকে প্লিজ।

দুলাল;; তা আর হচ্ছে না জানেমান।

আইরাত;; ছিহ, আপনি আমার বাবার কতো বিশ্বাসী একজন ছিলেন আপনি কোনোদিন এমন কাজও করবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি।

দুলাল;; আমি শুধু এই কাজ না আরো অনেক কিছুই করেছি।

আইরাত;; ছাড়ুন আমাকে।

দুলাল;; কোন কথা বলবি না চুপ করে বোস।

দুলালের ধমকে আইরাত ভয় পেয়ে গেলো, চুপ হয়ে গেলো সে।

ওদিকে নিপা আর রাত্রি চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছে, আইরাত কখনো তাদের না বলে কোথাও যায় না কিন্তু আজ গিয়েছে আর অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু তার আর আসার নাম নেই। আবার ফোন করলে ফোনও ধরছে না। এখন বেশ চিন্তা হচ্ছে তাদের। রাত্রি আর কোন উপায় না পেয়ে অয়নে কে ফোন দিলো। রাত্রির call দেখে অয়ন মুচকি হেসে রিসিভ করে।

অয়ন;; হ্যালো রাত্রি,,

রাত্রি;; অয়ন, অয়ন (বেশ ঘাবড়ে গিয়ে)

অয়ন;; রাত্রি কি হয়েছে তুমি এমন করছ কেন সবকিছু ঠিক আছে তো?

রাত্রি;; অয়ন, আইরু

অয়ন;; বউমনি (ফিসফিস করে)
কি হয়েছে আইরাতের?

রাত্রি;; আইরাত সেই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু এখনো বাসায় আসার কোন নাম গন্ধ নেই, ফোনও অফ দেখাচ্ছে খুব চিন্তা হচ্ছে।

অয়ন;; আচ্ছা শুনো আমি আসছি প্লিজ তোমরা চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাত্রি;; আচ্ছা।

অয়ন আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে সোজা রাত্রিদের ফ্লেটে চলে যায়। গিয়ে দেখে নিপা চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে কান্না করতে করতে,, রাত্রিও অনেক টাই ভয় পেয়ে আছে। অয়নকে দেখে রাত্রি দৌড়ে তার কাছে যায়।

রাত্রি;; অয়ন তুমি এসেছ,, দেখো না আইরু…

অয়ন;; রাত্রি প্লিজ কুল ডাউন,, কিছুই হবে না এভাবে ভেংে পরো না। এতো তাড়াতাড়ি এভাবে ভয় পেলে চলে। তুমি প্লিজ আ……

অয়নের কথার মাঝেই তার ফোন বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের ফোন, তড়িঘড়ি করে ফোন ধরতেই ওপর পাশ থেকে আব্রাহাম রেগে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; অয়ন, ৫ মিনিটের মধ্যে দুলালের “বাগানভিলা” তে চলে আয়। Move fast….

অয়ন;; আসছি ভাই।

আব্রাহামের এমন গর্জে কথা বলাতে অয়ন বেশ বুঝতে পারলো যে আব্রাহাম জানে আইরাত কোথায় আছে। অয়ন তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে রাত্রি কে বলে ওঠলো…

অয়ন;; রাত্রি আমি যাচ্ছি ওকে, আর তুমি প্লিজ ভয় পেয় না, আইরাতকে নিয়ে আসবো আমরা। নিজের এবং নিপার খেয়াল রেখো বায়।

রাত্রি;; কিন্তু তুমি এভাবে কো……

রাত্রির কথা বলার আগেই অয়ন দ্রুত পায়ে নেমে গেলো। রাত্রি গিয়ে নিপার পাশে বসে পড়লো।

দুলাল কিছুক্ষণ পরই তার আস্থানায় পৌঁছে গেলো। আইরাতের একহাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বাইরে বের করে দিলো। আইরাত এখনো ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে কিন্তু দুলাল তাকে জোর করে নিয়েই যাচ্ছে। আইরাতকে এক ঘরের ভিতরে এনে ধাক্কা দেয়। আইরাত তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে ধরে কিন্তু আবার কিছু একটা হাত দিয়ে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘর বেশ অন্ধকার, অনেক ধুলোবালি দিয়ে ভরা, অন্ধকার ঘরের মাঝখানে হলুদ এক বাতি জ্বলছে। আইরাত এইসব কিছুই দেখে নাক ছিটকালো। তখন দুলাল পিছন থেকে এসে আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে এক চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আইরাত এখন অনেক চিল্লাচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু দুলালের ধমকে আবার চুপ হয়ে যায়, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অঝোড় ধারায় পানি। চেয়ারের সাথে বেশ শক্ত করেই আইরাতকে বেধে দেওয়া হয়। বাধার পর দুলাল আইরাতের দিকে কিছুটা ঝুকে বসে আইরাত তীব্র ঘৃণা আর রাগ নিয়ে অন্যপাশে তাকায়। তা দেখে দুলাল হেসে দেয়। কিছুদুর গিয়ে দুলাল বলে ওঠে….

দুলাল;; এভাবে নাক ছিটকে লাভ নেই, এখন থেকে তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। একমাত্র তোমাকে পাবার জন্য, একমাত্র তোমাকে পাবার জন্যই এতোদিন এইসব নাটক করা তোমার বাবার সাথে। এতোদিন বিশ্বাসী ব্যাক্তি হওয়ার ভন্ডামি করে চলেছি আমি। আগে যদি আমি জানতাম যে আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর এতো সুন্দরী একটা মেয়ে আছে তাহলে আমি আরো আগেই সব কাহানি শেষ করে দিতাম।

আইরাত;; মা মামানে!

দুলাল;; ওহ হো জানেমান তুমি এখনো মানেই বুঝতে পারো নি আমার কথার,, আচ্ছা বেপার নাহ আমি আছি তো বুঝিয়ে দিচ্ছি।

দুলালের এমন গা ছাড়া কথায় আইরাত কপাল কুচকে তার দিকে তাকায়। দুলাল আবার বলতে শুরু করে।

দুলাল;; তোমার প্রিয় পাপা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং আম্মু আতিয়া আহমেদ চৌধুরী তাদের আর কেউ না বরং এই আমি মেরেছি আমি।

দুলালের কথায় আইরাতের মাথায় যেন পুরো আকাশ ভেংে পরে,, অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে আইরাত, যেন চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে সে। আইরাত হড়বড়িয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; কি বববলেছেন আআপনি কি কককরে…

দুলাল;; হ্যাঁ, তোমার পাপা-আম্মু কে আমিই মেরেছি এই আমার নিজ হাত দিয়ে।

দুলাল হুট করেই একদম আইরাতের কাছে এসে পরে আইরাত সাথে সাথে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

দুলাল;; দেখো, দেখো এই যে নিজ হাত দিয়েই তাদের খুন করেছি আমি। কিসের জন্য জানো জানেমান শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য আর সম্পত্তির জন্য কিন্তু সম্পত্তির ওপর তেমন লোভ না থাকলেও তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে বড়ো লোভ। আশরাফুল আহমেদকে আমি প্রথমে ভালোয় ভালোয় সম্পত্তির পেপারে সাইন করতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি করেন নি। আমি এটাও বলেছিলাম যে আমাকে যেন তার একমাত্র মেয়ের সাথে বিয়ে দেয় কিন্তু তার বদলে তিনি কি করেছেন জানো, আমাকে কুকুরের মতো বেধরক মেরেছেন। সেইদিন, সেইদিন থেকেই আমার মনের মধ্যে জেদ আরো বেড়ে যায় যে দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো কিন্তু না তা আর হলো কই। কোথা থেকে যেন এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নামে লোকটা উড়ে এসে জুড়ে বসলো। তারপর তোমাকে তুলে নিয়ে গেলো বিয়েও হয়ে গেলো তোমাদের। আমার মনে হলো তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, পাগল পাগল হয়ে গেলাম আমি। কিন্তু আমার কাছে আরো একটা চান্স ছিলো আর তা কি জানো জানেমান। তোমার সেই ভুল ধারণা যে তোমার বাবা-মাকে আব্রাহাম চৌধুরী মেরেছে। আসলে তা ভুল আব্রাহাম কখনোই কিছুই করেনি। আব্রাহাম নির্দোস। তোমার So called husband নির্দোস। তবে আইরাত তুমি আব্রাহামেরও সম্পূর্ণ পরিচয় জানো না। তা কি জানো?! আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী একজন #আমেরিকান গ্রেট মাফিয়া। অল আন্ডারগ্রাউন্ড প্রায় তার হাতের মুঠোয় থাকে। একজন মাফিয়া তোমার স্বামী। আর আমি যখন তোমার বাবা-মাকে পাশান ভাবে জানে মেরে দেই তার খানিক বাদেই আব্রাহাম সেখানে পৌঁছায় এবং গিয়ে তাদের লাশ খুজে পায়। তোমার পাপা আশরাফুল চৌধুরীর পেটে বাজে ভাবে ছুরি ঢুকে ছিলো তাই তা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে তুলে আনতে যায় তখনই রক্তে তার চোখ-মুখ একাকার হয়ে যায়,, হাতে ছুরি থাকে, শার্টে লেগে থাকে তরতাজা রক্ত ব্যাস পারফেক্ট একজন খুনির প্রতিবিম্ব হওয়ার জন্য। এইটুকুই কাফি আর তখন তুমিও চলে এলে। এইবার জমলো খেলা। আব্রাহামের তোমাকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করার জন্য, তোমাকে তোমার বাবা-মা-ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য তুমি তো আব্রাহামের ওপর আগে থেকেই ক্ষেপে ছিলে তার ওপর ওইদিন তোমার বাবা-মার লাশের পাশে আব্রাহামকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে ভেবে নিলে যে সেই তাদের খুনি। পরবর্তীতে আব্রাহামের ওপর গুলিও পর্যন্ত তুমি চালালে। যখন আমি এইসব শুনলাম তখন ভাবলাম যে যাক তাহলে তোমার আমার পথের মাঝের কাটা আমার বিনা পরিশ্রমে সরে গেছে কিন্তু না আমি আবারও ভুল ছিলাম (রেগে দেয়ালে চড় দিয়ে)। আব্রাহামকে গুলি করার পর নাকি, পর নাকি আর তোমাকেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এই তো আমার প্রাণে পানি থাকলো না তার কারণ আমি তো শুধু তোমাকেই নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম। এখন যদি তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে কেমন হলো। কারণ তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। তুমি যদি আমার না হও তাহলে কারোরই হতে পারবে না। আমি জানি না কেন তবে আমি আমার মনকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারছিলাম না যে তুমি আর নেই। এর জন্য আমি পুরো ১টা বছর শহরে তন্নতন্ন করে তোমাকে খুজে গিয়েছি। কিন্তু ফলাফন ছিলো শূন্য। কিন্তু একদিন, একদিন আমার এক লোক বাইরে তোমাকে দেখতে পায় যা আমি জেনে যাই৷ আবার আমার আশার আলো ফুটে ওঠে। আবার আমি তোমাকে খোঁজার জন্য রাতদিন এক করি। পেয়েও যাই। কিন্তু ওইযে ওই আপদ টা আব্রাহাম ওই আবার এসে আমার রাস্তা তে বাধ সাধলো। কিন্তু আজ হাহাহা, আজ আর তা হয়নি জানেমান আজ আমি সুযোগ বুঝে তোমাকে তুলে এনেছি আমার কাছে। (অট্টহাসি তে ফেটে পরে)। এবার, এবার তোমাকে আমার হতে আর কেউ আটকাতে পারবে না আর কেউ না, তুমি আমার আইরাত তুমি আমার।

দুলালের কথায় আইরাতের পুরো দুলিয়া ঘুরে গেলো। সে সপ্নেও ভাবেনি যে এমন কিছু একটা হবে তার সাথে। তাহলে, তাহলে আব্রাহাম তাকে এতোদিন যা যা বলে এসেছে তার সবকিছুই ঠিক ছিলো, সত্য ছিলো। আব্রাহাম বারবার আইরাতকে বলে গেছে যে সে কিছুই করে নি কিন্তু আইরাত কখনোই আব্রাহামকে বুঝে উঠতে পারেনি, আসলে আইরাত তাকে বুঝতে চায়নি। আর আজ যখন সকল সত্য আইরাতের চোখের সামনে এলো তখন সে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ঠিক কতটা অন্যায় করেছে সে আব্রাহামের ওপর তা আজ আইরাত হারে হারে টের পাচ্ছে। বেচেঁ থাকার ইচ্ছেটাই কেমন যেন মরে গেছে আইরাতের। নিজের ওপর নিজেরই এখন অস্বাভাবিক রাগ হচ্ছে তার। কেন আব্রাহামকে ভুল বুঝলো তার কথার কোন মূল্য দিলনা আইরাত, আর আজ এর জন্য আইরাতকে আফসস করতে হচ্ছে। দুলালের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইরাত। গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না,, এক বড়ো আঘাত পেয়েছে সে। সত্য জানার পর ভিতর থেকে এক ধাক্কা খেয়েছে সে যার ফলে আর কোন কথাই গলা দিয়ে বেরুচ্ছে না। সবকিছু চারিপাশে কেমন যেন থমকে গেছে। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না আইরাত।

আইরাত;; জানোয়ার, ছোট লোক। তুই কি ভেবেছিস আমাকে এভাবে তুলে আনলেই সবকিছু তুই পেয়ে গেলি নাহ ভুল তুই। আমি জানি আব্রাহাম এখানে আসবে, আমাকে একা এভাবে ফেলে আব্রাহাম কোথাও যাবে না। না ই আমি কখনো তোর ছিলাম আর না ই কখনো হবো। এই ভুল ধারণা তুই যত তাড়াতাড়ি তোর মন থেকে বের করে দিবি ততই তোর পক্ষে ভালো হবে। আর শুনে রাখ তোর মতো জানোয়ারকে আমি কেন পৃথিবীর কোন মেয়েই ভালোবাসতে পারবে না।

আইরাতের এমন কথায় দুলাল অনেক রেগে গেলো। তার পাশে কাচের কিছু বোতল পরে ছিলো তা তুলে সজোড়ে ঢিল মারলো। আইরাত তা দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো। দুলাল আইরাতের দিকে তেড়ে এসে বলল…

দুলাল;; জানেমান অনেক বেশিই বকবক করো তুমি এবার নিজের মুখটা একটু বন্ধ রাখো।

এই বলে দুলাল আইরাতের মুখ বেধে দিলো। আইরাত অনেক চেচাচ্ছে কিন্তু কোন কিছুই আর শোনা যাচ্ছে না মুখ বাধার ফলে। দুলাল আইরাতের মুখ বেধে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো ঠিক তখনই ঘরের মাঝে থাকা বাতি টা ঠাসসস করে ফেটে গেলো। সজোড়ে এক আওয়াজ হলো। এতক্ষন যত টুকু আলোর দেখা ছিলো বাতি ফেটে যাওয়াতে সেটুকুও আর থাকলো না। পুরো ঘর অন্ধকার, পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। এবার এক কন্ঠস্বর ভেসে এলো…

আব্রাহাম;; “যদি কিছু মন-প্রাণ দিয়ে চাস এবং পাওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে তা তুই একদিন না একদিন ঠিকই পাবি কিন্তু অবশ্যই সেটা বৈধ হতে হবে”
কিন্তু দুলাল তুই পাসনি কারণ কি জানিস সেটা অবৈধ ছিলো, যার ওপর তোর কোনপ্রকার কোন অধিকার না ছিলো আর না আছে। আইরাত আমার বিয়ে করা বউ তার দিকে তোর কুনজর পরেছে। আমি তোকে আগেও অনেক বার সাবধান করেছি, তোর পাঠানো সব কুকুরদেরও বলেছি যে আমার আইরাতের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবি কিন্তু তোরা থাকিস নি। ওইযে একটা কথা আছে না “লাতো কে ভুত বাতো ছে নেহি মানতে” It’s like that.. ভেবেছিলাম তোর মতো ক্ষুদ্র কীটকে ওয়ার্নিং দিলেই চলে যাবে কিন্তু না তুই তো এবার তোর ওকাদ এবং যোগ্যতার বাইরে চলে গিয়েছিস,, তুই তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। এবার তোকে মরতে হবে।

আব্রাহাম এই কথা গুলো অন্ধকারে থেকেই বলছিলো। আর ঘরের সেই বাতিটা আব্রাহামই গুলি করে ফাটিয়ে দিয়েছিলো। আব্রাহামের কন্ঠ শুনে আইরাতের প্রাণে প্রাণ চলে এলো। দুলাল শুধু এদিক ওদিক খুজে চলেছে আব্রাহামকে।

দুলাল;; বাহহ এখন তো দেখি লাইলির মজনুও এসে পরেছে। তো অন্ধকারে কেন সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল।

দুলালের কথায় আব্রাহাম কিছু বললো না। এবার ঘরের চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। সবকিছুই এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকায় হুট করেই চারিদিকে এভাবে আলো জ্বলে ওঠাতে আইরাত চোখ মুখ কুচকে ফেললো। দুলাল শুধু অবাক হয়ে তার চারদিকে আব্রাহামকে খুঁজে যাচ্ছে। আব্রাহাম তখন দুলালের পিছন দিক থেকে ডাক দিলো…

আব্রাহাম;; ওদিকে কি দেখছিস এদিকে দেখ, আমি এখানে।

দুলাল আব্রাহামের দিকে তাকালো। দেখলো যে আব্রাহামের কোন হেলদুল নেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে দুলাল বলে ওঠে৷

দুলাল;; ভালোভাবে বলছি চলে যা।

আব্রাহাম দুলালের কথা শুনে বাকা হাসি হাসে।

আব্রাহাম;; দেখ, লাস্টবারের মতো বলছি আইরাতকে ছেড়ে দে, তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই অযথা শত্রুতার হাত বাড়িয়ে নিজের মরণ নিজে ডেকে আনিস না।

দুলাল;; হাহা, মামার বাড়ির আবদার নাকি। আইরাত শুধু আম….

দুলাল বাকি কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আব্রাহাম দুলালের বুকে জোরে এক লাথি দিলো। দুলাল তা সামলাতে না পেরে পিছনে থাকা দেওয়ালের সাথে বারি খেলো। এতে দেওয়ালে থাকা চকচকে কাচগুলো একদম দুলালের বুকে পেটে পিঠে ঢুকে গেলো,, শরীরের এপাশ-ওপাশ হয়ে গেলো। দুলালের মুখ দিয়ে খানিক রক্তও বের হয়ে পরলো। দুলাল আব্রাহামের দিকে আবার কোন রকমে এগিয়ে যেতে ধরলে আব্রাহাম এবার দুলালের শার্টের কলার ধরে আব্রাহামের মাথা দিয়ে তার মাথায় সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করে। এতে দুলালের দিন-দুনিয়া সব অন্ধকার হয়ে গেলো। মাথা ফেটে গেছে তার। মাথার চিপ বেয়ে রক্ত ধারা বয়ে যেতে লাগলো। এবার আব্রাহাম তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে ফেলে দিলো। আব্রাহাম তার বুকের ওপর তার পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখে দিলো। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা লম্বা লোহার শিক রাখা, এক থাবাতে সেটা আব্রাহাম তার হাতে নিয়ে নিলো। হাতে নিয়ে দুলালের একদম বুকের বাম পাশ বরাবর ঢুকিয়ে দিলো। প্রচন্ডভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলো সে। রক্ত ছিটে এলো। সারাঘরে বয়ে গেলো রক্তের বন্যা। দুলাল গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে। আব্রাহাম সেভাবেই দুলালের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই এবার তার মাথায় আইরাতের খেয়াল আসে। সে ঘাড় বাকিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত যেন পাথর হয়ে গেছে। তার মধ্যে আদৌ প্রাণ নামক কিছু আছে কিনা তা বুঝা বড়ো দায়। ফাটা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত জানে যে আব্রাহামের রাগ বরাবরই একটু বেশি কিন্তু আব্রাহামের এই রুপ, এই রুপ যেন আইরাতের কল্পনারও বাইরে ছিলো। আইরাত কখনো ভাবেনি যে আব্রাহাম তার সামনে কোনদিন এইভাবেও আসবে। দুলাল যেভাবে আইরাতকে তুলে নিয়ে এসেছিল তাতে আইরাত ভয় পেয়েছিলো। কিন্তু পরে যখন আব্রাহাম এলো যেন আইরাত নিজের জীবন ফিরে পেয়েছে এমন মনে হলো। কিন্তু এখন, এখন আইরাতের উল্টো আব্রাহাম কে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাপছে আইরাতের। মুখ বন্ধ থাকাতে কিছু বলতেও পারছে না সে। আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা বুঝতে পারলো। কিন্তু এবার হলো তার বিপরীত। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে থামার বদলে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠলো। আব্রাহামের রাগ যেন এখন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেছে। আব্রাহাম এবার দুলালের দিকে তাকালো দেখলো দুলালের মাঝে এখনো জীবন বাকি আছে। আব্রাহাম তা দেখে সেই লোহার শিকটা তার হাত দিয়ে একটানে তুলে ফেললো। দুলাল আবার চিল্লিয়ে ওঠে। এবার আব্রাহাম সেই শিকটা সোজা দুলাল ডান চোখে ঢুকিয়ে দেয়, চোখ বেড়িয়ে আসে,, এবার আর আইরাত তার নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না মাথা ঘুড়িয়ে অন্যপাশ তাকিয়ে থাকলো। আব্রাহাম আবার শিকটা তুলে এবার বাম চোখের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো। শিকটা মুচড়াতে থাকে। এবার শিক তুলে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় সে। এক হাটু ভাজ করে দুলালের পাশে বসে পরে আব্রাহাম। দুলালের বুকে যেখানে শিক ঢুকানো হয়েছিল সেই ক্ষত স্থানে দুহাত দিয়ে নিজের পুরো শক্তি দিয়ে তার বুক একদম ছিড়ে ফেলে আব্রাহাম। দুহাত দিয়ে দুলালের দেহ টাকে একদম ক্ষত বিক্ষত করে ফেলেছে সে। পুরো সাইকোর মতো আচরণ করছে আব্রাহাম। কেউ এখন আব্রাহামকে দেখলে নিশ্চিত জ্ঞান হারাবে। প্রচুর পরিমাণে হিংস্র লাগছে তাকে দেখতে। আইরাত এবার আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না ভয়ের চোটে জোরে কান্নাই করে দিলো। আব্রাহামের যত রাগ আছে তার সবটুকুই দুলালের ওপর ঢেলে উঠে দাড়ায় সে। দুলাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। আব্রাহামের তেজ তবুও থেকেই যায় অবশেষে রাগ সামলাতে না পেরে দুলালের লাশকে নিজের পা দিয়ে বেশ জোরে এক লাথি দেয় এবং দুলালের ক্ষত বিক্ষত লাশ দূরে গিয়ে পরে। দুলালের লাশ দেখে যে কেউ ভাববে যে তাকে কোন এক জংলী জন্তু মেরে খুবলে খুবলে খেয়েছে।

আব্রাহাম;; তোর ওই অপবিত্র রক্তে আমি নিজের হাত অপবিত্র করতে চাই না।

এই বলে নিজের হাত পরিষ্কার করে নিলো। তারপর সে আইরাতের কাছে এগিয়ে যায়।











❤️❤️চলবে~~~~~
.

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 44

🤎🦋..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত এখনো ভয়ে চোখ মুখ কুচকে মাথা নিচু করে আছে। আব্রাহাম তার দুহাত ভাজ করে আইরাতের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। আজ এই প্রথম আইরাতের চোখে আব্রাহাম তার জন্য এতো ভয় দেখছে। আশেপাশে আর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আইরাত পিটপিট পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকাতেই আব্রাহামের ভাজ করা দুহাত চোখে পরে। মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম অগ্নি চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে কিছুটা ঝুকে একে আইরাত সাথে সাথেই আবার চোখ কুচকে মাথা নিচু করে ফেলে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাতের বাধন খুলে দিতে থাকে। আইরাত অবাক চোখে শুধু আব্রাহামের কান্ড দেখে যাচ্ছে ,, সে লোকটা একটু আগেই পশুর থেকেও হিংস্র আর ভয়ংকর ছিলো আর এখন কিনা তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে তার থেকে বেশি কেয়ার আর কেউই করতে পারবে না। বাধন খুলে দেওয়ার পর আব্রাহাম আইরাতের বসে থাকা চেয়ারের পাশে দুহাত দিয়ে আইরাতের বেশ কাছে ঝুকে বসলো,, আইরার মাথা এখনো নিচু করেই বসে আছে। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে আইরাত তার ভয়ে এখনো থরথর করে কাপছে। আব্রাহাম ক্ষীণ নিঃশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। আইরাত যেন এবার তার বুক-মন ভরে শ্বাস নিচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর আড়চোখে আব্রাহামকে দেখে যাচ্ছে। এবার আব্রাহাম বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; চলো এখান থেকে।

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; চলো,,

আইরাত;; আআপনি এএএভাবে দুদুদলালকে মেমেরে ফেললেন!

আব্রাহাম চলে যেতে নিয়েছিলো আইরাতের এমন প্রশ্নে আব্রাহাম আবার পিছন ফিরে তাকায়।

আব্রাহাম;; কেনো তোমার বুঝি ওর জন্য খুব খারাপ লাহছে (এক ভ্রু উচু করে)

আইরাত;; আমমি ততা বলিনি আসলে..

আব্রাহাম;; এখন আমি কাকে কিভাবে মারবো তার কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে। মাফিয়া আমি, এই সব খুন খারাবা না করলে আমার মাথা ঠিক থাকে না and It’s not a big deal… Now come… (দাতেঁর চোয়াল শক্ত করে)

আব্রাহাম এই কথা বলেই আর এক মূহুর্ত আইরাতের জন্য না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। আইরাত এই প্রথম দেখলো যে আব্রাহাম তার সাথে এতো রুড ভাবে কথা বলছে। এতে আইরাতের বেশ খারাপ লাগে এতে,, আর আব্রাহামকে এতোদিন ভুল বুঝার জন্য তার ওপর করা অন্যায়ের জন্য, তার থেকে দূরে থাকার জন্য এখন আইরাতের মাঝে বেশ অনুশোচনা কাজ করছে। আইরাত আব্রাহামকে এভাবে চলে যেতে দেখে নিজের আশেপাশে চোখ বুলায়। প্রচুর ভয়ানক লাগছে এখন এই ঘরটা। হুট করেই আইরাতের চোখ যায় ঘরে পরে থাকা রক্তাক্ত-ক্ষত বিক্ষত দুলালের লাশ টা। আইরাতের গা কেমন শিউরে উঠে,, গুলিয়ে যায় সবকিছু। ভয় পেয়ে এক দৌড় দিয়ে আইরাত দ্রুত সেই ঘর ত্যাগ করে। বাইরে যেতেই দেখে আব্রাহাম অয়নের সাথে কথা বলছে। তার মানে অয়নও এখানে এসে পরেছে।

আব্রাহাম;; আমি এখন ওকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি, ট্রাই করবো যেন বেশি একটা ভয় না পায়।

তখনই আব্রাহামের সব বডিগার্ড রা এসে পরলো। দুলালের চেলাদেরও তারা ধরে নিয়েছে। তারা এখন আধা মরা, জীবন মরণের মাঝে ঝুলছে।

অয়ন;; আচ্ছা দাভাই, আর বউমনি তো…

আব্রাহাম;; কোন কথা না অয়ন, ও থাকতে চায় না আমার কাছে, ভয় পায় আমাকে দেখে ও ঘৃণা করে। আমি আর কিছুই করবো না ওকে ওর মতো করে ছেড়ে দিবো। শুধু এইটা যেনে রাখ আমি ওকে অনেক বেশিই ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আইরাত একদিন নিজে আমার কাছে ফিরে আসবে। আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো।

অয়ন;; দাভাই…

আব্রাহাম;; অয়ন তোর কাজ এইটুকুই ছিলো বডিগার্ড র’ এসে গিয়েছে এবার তুই রাত্রির কাছে যা, তাদের গিয়ে বল যে আইরাত একদম ঠিক আছে। আমরা একটু পরেই এসে পরবো।

অয়ন;; ঠিকআছে ভাই।

অয়ন মুচকি হেসে আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও তাকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। অয়ন আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে তারপর চলে যায় রাত্রিদের ফ্লেটে। আইরাত তাকিয়ে দেখে যে আব্রাহামের সকল বডিগার্ডরা গাড়ি থেকে ঘাড় ধরে এক এক করে দুলালের সাথে যারা কাজ করতো তাদের নামাচ্ছে।তাদের অবস্থা অনেক বেশিই খারাপ। আইরাত দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আএ এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। আইরাত ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাতকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেও আব্রাহাম না দেখার ভান করে। আইরার তার একদম কাছে চলে আসলে আব্রাহাম কোঠর গলায় বলে উঠে..

আব্রাহাম;; গাড়িতে ওঠো।

আইরাত;; (আইরাত কিছু না বলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, আজ কেন জানি আব্রাহামের সব কথা গুলো তার পাথর সমান লাগছে)

আইরাতকে কিছু বলতে না দেখে আব্রাহাম এবার নিজেই গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পরে। আব্রাহামের এমন হুটহাট চলে যাওয়াতে আইরাত বোকা বনে গেলো।

আইরাত মনে মনে;; কি লোক রে বাবা দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না। আইরাত আবার তার পাশে তাকিয়ে দেখলো আব্রাহামের বডিগার্ড গুলো দুলালের লাশ ধরে ধরে আনছে। আর দুলালের লাশ থেকে তার মাংস গুলো সব খয়ে খয়ে পরছে,, ইশশশশশ কি ভিবৎস দৃশ্য। আইরাত এই সবকিছু আর না দেখতে পেরে দ্রুত গিয়ে আব্রাহামের পাশে বসে পরলো।





অন্যদিকে, অয়ন জলদি গাড়ি ঘুড়িয়ে রাত্রির কাছে চলে যায়। ওপরে রাত্রির ঘরে চলে গেলে কলিংবেল বাজানোর আগেই রাত্রি হুড়মুড় করে দরজা খুলে দেয়। অয়ন রাত্রি কে দেখে চুপ হয়ে যায়। অয়নের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রাত্রির তা দেখে কলিজা শুকিয়ে গেলো। রাত্রিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিপাও জলদি করে ছুটে এলো। রাত্রি তাড়াতাড়ি করে অয়নের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

রাত্রি;; অয়ন, একা কেন তুমি? তুমি না বললে আইরু কে নিয়েই আসবে তাহলে আইরু কোথায়? (অয়নের আশে পাশে তাকাতাকি করে)

অয়ন;; বউমনি, আইরাত বউমনি।

অয়নের এমন কথায় রাত্রি বেশ অবাক হয়ে গেলো।

রাত্রি;; বউমনি! বউমনি মানে?!

অয়ন;; রাত্রি-নিপা, আমি ঠিক জানি না যে আমি কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবো। আর কিভাবেই বা বলবো কিন্তু এমন অনেক কিছুই আছে যা তোমাদের অজানা।

নিপা;; কি বলছ তুমি এইসব অয়ন?

অয়ন;; প্লিজ নিপা ভুল বুঝবে না কিন্তু সত্য জানার পর হয়তো তোমরা অনেক বড়সড় একটা ঝটকা খেতে পারো কিন্তু এই সত্য তোমাদের মেনে নিতেই হবে।

রাত্রি;; অয়ন প্লিজ কিথা ঘুড়িয় না সোজাসোজি বলো।

অয়ন;; নিপা-রাত্রি আইরাত কোন অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠে নি। আইরাতের পুরো নাম নুজাইফা বিনতে আইরাত আর আইরাত আব্রাহামের দাভাইয়ের বউ। মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

নিপা;; অয়ন কি বলছ এইসব, আইরাত কিভাবে আব্রাহামের?!

অয়ন;; বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। আইরাত আব্রাহাম দাভাইয়ের বিয়ে করা বউ এবং আমার বউমনি হয়। আইরাত রাজনৈতিক নেতা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং আতিয়া আহমেদ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। আর এই আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী আর আমাদের বাপি আবির আহমেদ চৌধুরী আপন ভাই। সম্পর্কে আব্রাহাম দাভাই, আইরাত বউমনি এবং আমি আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাইবোন। কিন্তু আইরাত বউমনির বাবা আমাদের পুরো পরিবার কে ধ্বংস করে দেয় একমাত্র সম্পত্তি এবং শক্তির লোভে। আব্রাহাম দাভাই আইরাত বউমনি কে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে এবং জোর করে এনে বিয়ে পর্যন্ত করে। কিন্তু দুলাল নামে এক জানোয়ার আইরাত বউমনির ওপর নজর দেয়। আশরাফুল আহমেদ এবং আতিয়া আহমেদ কে এই দুলাল মেরে ফেলে। তখন আব্রাহাম দাভাই তাদের লাশের কাছে গিয়ে তাদের বাচানোর চেষ্টা করে আর তখনই আইরাত বউমনি এসে সবকিছু ভুল বুঝে, ভুল বুঝে যে আব্রাহাম দাভাই বউমনির বাবা-মা কে খুন করে। তারপর রাগ-ক্ষোভে বউমনি দাভাইয়ের ওপর গুলিও চালায়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখো আচমকা তখন এক ট্রাকের সাথেই আইরাত বউমনির এক্সিডেন্ট হয়। আর তখনই তোমরা বউমনিকে রাস্তায় অভাবে খুঁজে পাও। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বউমনিকে খুজিনি কিন্তু কোথাও পাইনি। আর যখন পেলাম তখনও বউমনি নিজের মনে ভাইয়ের জন্য ভুল ভাবনা আর একরাশ ঘৃণা নিয়ে বসে ছিলো। আইরাত বউমনি কে না পেয়ে আমার ভাই কেমন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ এই দুলালই আইরাত বউমনি কে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু আব্রাহাম ভাই দুলালকে আজ খুন করেছে নিজ হাতে কারণ সে আব্রাহাম ভাইয়ের কলিজাতে হাত দিয়েছে।

~~

অয়নের পুরো কথা শুনে নিপা ধুপ করে বিছানাতে বসে পরে এবং রাত্রির চোখ দিয়ে টপ করে পরে।

নিপা;; আমার কেন যেন সবকিছু কাল্পনিক লাগছে, কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।

রাত্রি;; আমি খুশি যে আইরাতেরও পরিবার আছে সব আছে কিন্তু আইরাত একটাবারের জন্য কি আমাদের বলতে পারেনি।

অয়ন;; রাত্রি (রাত্রির গালে নিজের দুহাত রেখে)
রাত্রি প্লিজ দেখো যা হয়েছে হয়েছেই প্লিজ সবকিছু এবার মেনে নাও।

রাত্রি;; হ্যাঁ তাইতো।

নিপা;; আইরাত কোথায় অয়ন?

অয়ন;; আব্রাহাম দাভাই তাকে নিয়ে আসছে।

নিপা;; ওহহ্

অয়ন;; তোমারা থাকো আমি আসি এবার। রাত্রি নিজের খেয়াল রেখো এন্ড প্লিজ আইরাত এলে সব বুঝে নিও। নিপা আমি যাই।

নিপা;; হুমমম।

অয়ন তাদের সবকিছু বলে দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। কিন্তু রাত্রি আর নিপা যেন এখনো এক ঘোরের মাঝে আছে। অয়নের বলা সব কথাগুলো তাদের কানে বাজছে।

ওদিকে আব্রাহাম আর আইরাত গাড়িতে করে যাচ্ছে। আজ আইরাতের মন মেজাজ শান্ত নেই। কেমন যেন ছটফট করছে আইরাত। অন্যান্য দিন আব্রাহাম বারবার আইরাতের দিকে তাকায় আর কথা বলে কিন্তু আজ, আজ যেন কেউ মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আইরাত বারবার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে সে বারবার চাইছে যে আব্রাহাম যাতে তাকে কিছু বলে কিন্তু না আব্রাহাম কোন কিছুই না বলে একদম সোজা তাকিয়ে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে।চোখজোড়া তার সামনে একদম স্থির। যেন নিজের মাঝে কোন অনূভুতি নেই। আইরাত আব্রাহামের এমন বিহেভ সহ্য করতে পারছে না। তাই আইরাত এবার কান্না করে দিলো। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পেলো যে আইরাত তার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে কানছে কিন্তু তাতেও যেন আব্রাহামের কোন হুশ খেয়াল নেই সে তার মতো করেই গাড়ি লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে। আইরাত এবার সামনের দিকে ঘুড়ে বসে থাকলো কোন কথায় যেন তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। আব্রাহাম কে সে কি বলবে, কি বলে নিজের ভুল ভাংবে তা আইরাতের জানা নেই। কিন্তু নিজের ভিতরে যে অনুশোচনা সে বয়ে বেড়াচ্ছে তা আর নিজের ভিতরে দমিয়ে রাখা কোন ক্রমেই সম্ভব না তার পক্ষে। কিন্তু আব্রাহামের এমন ভয়ানক রুপ দেখার পর আইরাতের আর সাহস হচ্ছে না আব্রাহামকে কিছু বলার যদি আব্রাহাম আইরাতের ওপরে ক্ষেপে যায় তাহলে। আইরাত এইসব ভেবেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে চলেছে।

প্রায় ২৫ মিনিট পরে আব্রাহাম হঠাৎ করেই জোড়ে ব্রেক কষে গাড়ি থামায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়, কিন্তু নাহ্ এইবারও আব্রাহামের কোন হেলদুল নেই সেই একই ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনে হচ্ছে কোন পাথর। আইরাত কিছু না বুঝেই আব্রাহামের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম তা দেখে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আমরা এসে পরেছি।

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে গাড়ির জানালা বাইরে সম্পূর্ণ তাকিয়ে দেখলো যে তারা তাদের ফ্লেটের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; ________________

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; আব.. আআমি

আব্রাহাম;; বাসার সামনে এসে পরেছি গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি (হিচকি তুলে)

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামতে বলেছি শুনতে পাও না তুমি!!

আব্রাহামের এমন ধমকে আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। পুনরায় আর আইরাতের কোন কথা বলার সাহস হলো না। ঘটঘট করে আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে। নেমে গাড়ির বাইরে আব্রাহামের পাশে জানালার কাছে এসে দাড়ালো আইরাত। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;;।”আজ থেকে তুমি মুক্ত, তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি চাইছিলে তাই না, নাও দিয়ে দিলাম আমি আমার কাছ থেকে তোমাকে মুক্তি, তোমার ওপর আমার আর কোন অধিকার থাকলো না, আজ থেকে তুমি মুক্ত আইরাত”।


আব্রাহাম এই কথা গুলো এক নাগারে বলে গেলো শেষের কথাটা বলার সময় আব্রাহাম এক নজর আইরাতের দিকে তাকায় কিন্তু পরক্ষণেই আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আর আইরাত সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। আব্রাহাম এভাবে তাকে রেখে চলে গেলো। আব্রাহামের প্রতিটি কথা যেন আইরাতের ভিতরে একদম দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে আইরাতের ভেতরটা একদম ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলছে। আইরাত বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে স্থিরভাবেই চোখের পানি ফেলতে লাগলো। তারপর আপনমনে সামনে এগিয়ে ভিতরে চলে যেতে লাগে।

আইরাত ওপরে ওঠে ভিতরে গেতেই নিপা বলে ওঠে…

রাত্রি;; এসেছিস?!

আইরাত;;____________

রাত্রি;; আইরু মানলাম তোকে একদিন ওভাবে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছি কিন্তু বিশ্বাস কর কখনোই তোকে পর মনে করিনি,, নিজের বোনের চেয়েও ঊর্ধ্বে ভেবেছি তোকে।

আইরাত;;_____________

নিপা;; তোকে কতটা নিজের ভেবেছি তা কেবল আমরাই জানি। কিন্তু তুই, তুই কি করেছিস আইরাত। আমরা তোকে কতো জিজ্ঞেস করেছি যে কি তোর আসল পরিচয় কিন্তু তুই আমাদের বলিস নি। একটা বার কি আমাদের তোর সত্য জানানোর প্রয়োজনবোধ করিসনি তুই। এতো টাই পর হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।

রাত্রি আর নিপার এই কথা গুলো আর মেনে নিতে পারছে না আইরাত তাই আর কিছু না বলে আইরাত সোজা তাদের শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো এবং অঝোর ধারায় কেদে দিলো।

আইরাত;; নারে তোরা কেউই আমার পর না। না ই কখনো ছিলি আর না ই কখনো হবি। তোরা আমার কাছে যে ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল আমিই জানি। তোদের আমি পর কখনো ভাবতেই পারিনা। আমি অনেক ভেবেছি যে তোদের সত্য টা বলে দিই কিন্তু আমার ভয় করতো এই ভেবে যে যদি তোরা আমাকে ভুল বুঝে আমার ফেলে চলে যাস তাহলে। তোদের অনেক ভালোবাসি রে অনেক বিশ্বাস কর। (ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে)

আইরাতের নাজেহাল অবস্থা দেখে রাত্রি আর নিপা আইরাতকে ছেড়ে দাঁড়ালো। নিপা আর রাত্রি আইরাতকে শান্তনা দিয়ে চুপ করানোর অনেক চেষ্টা কিরছে

রাত্রি;; আচ্ছা ব্যাস ব্যাস হয়েছে এইবার হয়েছে প্লিজ থাম চুপ কর। একটু শান্ত হো।

নিপা;; আইরু শান্তি হো।

নিপা আর রাত্রি অনেকক্ষণ চেষ্টা করে আইরাতকে চুপ করালো।




রাতে🌃~~

আইরাত বারান্দায় হাত-পা জোড়সড় করে বসে আছে। দুহাতের ভাজে নিজের মুখ লুকিয়ে রেখেছে। বারবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে সে। নিপা আর রাত্রি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভই নেই। আইরাত এখন যে পরিস্থিতি তে রয়েছএ তাতে করে তাকে একা থাকতে দেওয়াই উত্তম। আইরাত অনেকক্ষণ যাবত কান্না করে বুক ভাসানোর পর মুখ উঁচু করে তাকায়। চোখের পানি মুছে চোখ মুখ শক্ত করে তাকায়। এবং সিন্ধান্ত নেয় যে কালকেই আব্রাহামের বাড়িতে যাবে চৌধুরী ভবনে।

আইরাত;; অনেক হয়েছে আর না। অনেক দূরে দূরে আমি থেকেছি আর আপনাকেও কষ্ট দিয়েছি আর না। এখন আপনি আমার পাগলামি দেখবেন।











❤️❤️চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-41+42

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 41

🍁🍁🍁
..
..
..
..
..

“বস, বস” (চিৎকার দিয়ে)

এমন চিৎকারের শব্দে দুলাল দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। এসেই দেখে যে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে বসে কাতরাচ্ছে। দুলাল জলদি নিচে নেমে এসে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে।

দুলাল;; রুবেল হয়েছি কি, তোর এই হাল কিভাবে হলো?

রুবেল;; বস, বস আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আমার এই হাল করেছে। তিনি আমাকে ধমিয়েছেন যেন আমি আপনাকে বলি যে আইরাত মেডামের পিছু ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

দুলাল;; কিন্তু…

রুবেল;; বস তিনি আপনাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।

দুলাল;; আমি তোকে দেখে নিবো আব্রাহাম চৌধুরী। এতো কিছু করছি আর আমি কিনা এতো সহজেই আইরাতের পিছু ছেড়ে দিবো কখনই না।

রুবেল;; বস, বস।

দুলাল;; আচ্ছা শোন তুই আগে হস্পিটালে যা নয়তো আর তোর বেচে থেকে কাজ নেই। তোর অবস্থা অনেক খারাপ।

দুলাল জলদি করে তার বাকি কিছু লোকদের কে ডেকে নিয়ে রুবেলের সাথে হস্পিটালে পাঠিয়ে দিলো।

দুলালের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ঠিক তখনই দুলাল তার বাড়ির বাইরে অনেক বেশি হৈচৈ এর আওয়াজ শুনতে পেলো। দুলাল তার বারান্দায় চলে গেলো। নিচে তাকিয়ে দেখে তার বাড়ির বাইরে অনেক গুলো সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছে। তারা পারছে না দরজা ভেংে ভিতরে ঢুকে পরতে। তখন তমাল তাড়াতাড়ি করে দুলাল কে ডেকে নিচে নামিয়ে আনলো। টিভি তে আজকের ব্রেকিং নিউজ দেখে দুলাল তার মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পরলো।


আব্রাহাম সোফায় বসে ল্যাপটপে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। কোথাও কোন খেয়াল নেই। ল্যাপটপের ওপর চোখ রেখেই পাশে থাকা গরম ধোঁয়া ওঠানো কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে থাকলো। কাজের মাঝেই হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে, এক নজর ফোনের দিকে তাকিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো।

আব্রাহাম;; কি হলো?

রাশেদ;; স্যার আমাদের কাছে একটা ভিডিও ক্লিপ আছে আর এই ভিডিও তেই সবকিছু বন্দী হয়ে রয়েছে। কোন ভাবেই যদি এটা মিডিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে দিই তাহলে কাল অব্দি সব তোলপাড় হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; আর এটাই আমি চাই। কাল পর্যন্ত যেন সবকিছু হয়ে যায় ওকে!

রাশেদ;; জ্বি স্যার অবশ্যই।

আব্রাহাম ফোন রেখে মুচকি হাসে,,

আব্রাহাম;; এখন শুধু কাল সকাল হওয়ার অপেক্ষা।

আব্রাহাম আরো বেশ কিচ্ছুক্ষন কাজ করে অবশেষে আইরাতের একটি ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

~~

পরেরদিন সকালে🌅 ~~

নিপা-আইরাত-রাত্রি তারা রেডি হচ্ছে কারণ আজকে তাদের নিরবের সাথে দেখা করার কথা। আইরাত আর রাত্রি একটু বেশিই এক্সসাইটেড। তারা রেডি হচ্ছে আর মাঝে মাঝে নিরবের কথা বলে নিপা কে লজ্জায় ফেলছে। আর নিপা এগুলোর বাদরামি সহ্য করছে।

রাত্রি;; এই নিপু আজ আর সিম্পলভাবে যাস না কেমন একটু সেজেগুজে যা, আফটার অল আমাদের হবু দুলাভাই আসবে বলে কথা।

নিপা;; চুপ কর, জাস্ট দেখা করতে যাচ্ছি তাও তোদের নিয়ে,, বিয়ে না আজ আমার যে এতো করে সাজতে হবে।

আইরাত;; বিয়ে না কিন্তু হতে কতক্ষন। ভাজ্ঞিস, বলেছিলি যে তোর রিলেশন আছে যদি বিয়ে করার পরে বলতি তখন কি হতো! (কানের দুল পরতে পরতে)

রাত্রি;; একদম ঠিক বলেছিস।

নিপা;; কেন এভাবে তোরা লেগ পুল করছিস আমার, আমি বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সুযোগই পেয়ে ওঠি নি আর কাল তো সব বলেই দিলাম।

আইরাত;; হাহা, আচ্ছা বুঝলাম এবার চল তাড়াতাড়ি।

তারা তিনজনেই বের হয়ে পরলো। নিরবের একটা কফিশপে আসার কথা সাথে নাকি নিরবের আরো একটা ফ্রেন্ড আসবে। কোন মতেই আজকে দেরি করতে চায় না তাই তারা জলদি করে বের হয়ে পরে।

~~

চৌধুরী ভবন““

অয়ন;; দাভাই, দাভাইইইইইই ( হলরুম থেকে জোড়ে চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম তার ঘরে এক্সারসাইজ করছিলো হুট করেই অয়নের এমন গলা ফাটা ডাকে আব্রাহাম তার ঘামে ভেজা শরীর মুছে সিড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; কিরে কি হয়েছে এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?

অয়ন;; দাভাই টিভি তে দেখ আগে।

আব্রাহাম কপাল কুচকে টিভির দিকে তাকায়, তাকিয়েই সাথে সাথে তার মুখের কোণে এক চিলতে বাকা হাসি ফুটে ওঠে। কেননা টিভি তে দেখাচ্ছে যে দুলালের বাড়ির সামনে মিডিয়ার লোকরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পরছে। সবার একই প্রশ্ন “ভিডিও ক্লিপে যা দেখাচ্ছে তা কি সব সত্যি, দুলাল কি সব অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত?”। গতকাল রাশেদ আব্রাহামকে যে ভিডিও এর কথা বলছিলো সেটা দুলালের অপকর্মের ঘটনার সাক্ষী। সেখানে দুলালকে এক মেয়ে পাচারকারীর সাথে হাত মেলাতে দেখা যায়। দুলাল সব খারাপ কাজের সাথে যুক্ত আছে যা এতোদিন সকল মিডিয়া বা দেশের বড়ো বড়ো নেতাদের অজানা ছিলো। নিজের অবৈধ টাকার জোরে আজ পর্যন্ত এইসবকিছুই করে এসেছে দুলাল। কিন্তু আব্রাহামের কিছু লোক দুলাল এবং তার সকল কথপোকথন একটা ক্যামেরাতে রেকর্ড করে ফেলে। আর রাতেই রাশেদ আব্রাহামকে ফোন করে সবকিছুর খবর বলে দেয়। টিভি তে দেখা যাচ্ছে সবাই দুলালের ওপর কঠোর প্রশ্ন ছুড়ে মারছে। “” মিস্টার দুলাল কি এইসব বাজে কাজের সাথে অনেক আগেই থেকেই জড়িত?, মেয়ে পাচার, কালোবাজারি, ঘুষ আরো কি কি এর সাথে জড়িত আছেন তিনি? তিনি অসহায় মেয়েদের কোথায় পাচার করেন আর তার বদলে কি তিনিও কি টাকা পান?””। এমন আরো হাজারো হাজারো প্রশ্ন করা হচ্ছে দুলালকে। বাড়ির দারোয়ান কোন রকম করে সব মিডিয়া কে ঠেলেঠুলে বাইরে বের করে দিচ্ছেন। এরই মাঝে কয়েকজন লোক রাস্তা থেকে ইট তুলে দুলালের বাড়ির জানালাতে ছুড়ে মারছে,, টাস টাস করে এক একটার জানালার কাচ ভেংে যাচ্ছে। আর ভিতরে দুলাল বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। সে এটাই ভেবে কূল পাচ্ছে না যে এতো সুরক্ষা দেওয়ার পরেও তার এই গোপন ভিডিও কি করে ফাস হলো।
এগুলো সব কিছুই টিভি তে বড়ো বড়ো অক্ষরে ব্রেকিং নিউজে দেখানো হচ্ছে। আব্রাহাম তাই দেখছে, আব্রাহাম খুব আরাম করে বসে পায়ের ওপর পা তুলে জুস খেতে থাকে আর এইসব দেখতে থাকে। অয়নের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই সবকিছুই তার ভাইয়ের কাজ।

অয়ন;; দাভাই, এইসব কিছুই তোর কাজ তাই না?

আব্রাহাম;; কি মনে হয়! (জুস খেতে খেতে)

অয়ন;; হাহাহা,, তুই পারিস ও বটে ভাই।

আব্রাহাম;; পাথরের সাথে বারি খেতে আসলে ব্যাথা টা কিন্তু সে নিজেই পাবে পাথর না। দুলাল নিজের কিয়ামত নিজে ডেকে এনেছে।

অয়ন;; এই না হলো আমার দাভাই।

আব্রাহাম;; হুমম হয়েছে, আচ্ছা তুই কি কোথাও যাচ্ছিস নাকি?

অয়ন;; হ্যাঁ, ওইতো একটু বাইরে যেতে হবে দেখা করতে।

আব্রাহাম;; দেখা করতে! কার সাথে?

অয়ন;; নিরবের সাথে, অনেকদিন পরে আসছে তো তাই দেখা করতে বললো।

আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা ভালো তো জলদি বের হয়ে পর।

অয়ন;; তুই যাবি না?

আব্রাহাম;; আমি খানিক বাদেই বের হবো। আর এই নে গাড়ির চাবি (চাবি অয়নের দিকে হালকা ঢিল দিয়ে)

অয়ন;; আচ্ছা।

অয়ন গাড়ি নিয়ে বাইরে চলে গেলো। আসলে নিরব আর অয়ন সেই স্কুলের ফ্রেন্ড,, তাদের মাঝে বন্ধুত্ব অনেক গভীর। নিরবের সাথে আব্রাহামেরও সম্পর্ক বেশ ভালোই। এতোদিন নিরব কাজের চাপে পরে অয়ন আর আব্রাহামের সাথে দেখা করতে পারে নি। কিন্তু আজ সময় পেয়ে একেবারে অয়ন আর রাত্রি নিপা আইরাতের সাথে দেখা করবে। দ্রুত গতিতেই অয়ন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন পর অয়ন নিরবের বলা জায়গাতে এসেও পরে। কিন্তু নিরব কে কোথাও না দেখতে পেরে অয়ন ফোন লাগায়।

অয়ন;; নিরব কোথায় তুই? আমি দাঁড়িয়ে আছি।

নিরব;; দোস্ত সরি, আমি রাস্তায় আছি আর এখানে অনেক জ্যাম। গাড়ি সব আটকে গেছে আর কিছুক্ষন সময় দে আমি আসছি।

অয়ন;; এটা তোর নতুন কিছু না কখনোই সময় মতো আসিস না তুই,, দেরি তো তোকে করতেই হবে। প্লিজ জলদি আয়।

নিরব;; আচ্ছা বাবা আচ্ছা এখন রাখছি।

ওদিকে নিপা-আইরাত আর রাত্রি এসে পরে। তারা এসে দাড়িয়ে থাকে কিন্তু নিরবের দেখা নেই। নিপাও তখন নিরবকে ফোন দিয়ে জানতে পারে যে সে গাড়িতে আটকে পরেছে জ্যামের কারণে তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। নিপা কথা বলে ফোন কেটে দেয় আবার সামনে এগুতে লাগে তারা। কিন্তু এবার আইরাত তাদের থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; ওহহহ নোওওওওও।

রাত্রি;; কি হয়েছে?

আইরাত;; আরে আজ সকালে স্যার আমাকে ফোন করে আরো কিছু নিউ কালেকশন আনতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তো একদম ভুলে গেছি। আনতে বলেছিলো সেই সকাল ১০ টায় আর এখন বাজছে ১০;৪৫। এখন কি হবে!?

রাত্রি;; কি ভুলো মন তোর। আমাকে একটা বার বলতি আমি মনে করিয়ে দিতাম। এখন কিভাবে যাবি।

আইরাত;; এখন গেলেও আমি পাবো। আচ্ছা এককাজ করি আমি এখন চলে যাই ডিজাইন গুলো নিয়েই দ্রুত এসে পরবো আর বেশি সময়ও লাগবে এই যাবো আর আসবো।

রাত্রি;; একা যাবি?

আইরাত;; নিপু তুই চল না আমার সাথে। নিরবের আসতে তো দেরিই আছে। ততক্ষণে আমরা গিয়ে আবার এসে পরতে পারবো।

নিপা;; হ্যাঁ তাই ভালো হবে আমিই যাই। রাত্রি শোন তুই ভিতরে গিয়ে টেবিল নং ৭ এ বোস আমি আইরু গিয়ে জলদি করে সেগুলো নিয়ে আসে কেমন!!

রাত্রি;; আচ্ছা যা বাট প্লিজ জলদি আসবি।

আইরাত;; আচ্ছা ঠিকআছে।

আইরাত আর নিপা রাত্রিকে কফিশপের ভিতরে যেতে বলে তারা আবার তাদের কাজে চলে যায়। রাত্রি ভিতরে গিয়ে ৭নং টেবিলে বসে পরে। অন্যদিকে অয়নও ধীরে ধীরে কফিশপের ভিতরে চলে আসে। নিরব তাকে বলেছিলো যে ৭ নং টেবিল তাদের জন্য বুক করা আছে। কিন্তু অয়ন তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা মেয়ে বসে আছে। এতে অয়ন কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। পরক্ষণেই তার মনে পরে যে এই হয়তো নিরবের গার্লফ্রেন্ড। অয়ন মুচকি হেসে সেদিকে যেতে থাকে। অয়ন গিয়ে মেয়েটির পিছনে দাঁড়িয়ে পরে….

অয়ন;; এক্সকিউজ মি. মিস।

অয়নের ডাকে রাত্রি হালকা চকমে উঠে, মাথা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালে বেকুব বনে যায়। অয়নেরও মুখে লেগে থাকা হাসি টা মূহুর্তেই উধাও হয়ে যায়। অয়ন একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। রাত্রির বারবার এই একই লোকের সাথে দেখা হওয়াতে মেজাজ বিগড়ে যায়। তাই রাত্রি এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে পরে এবং অবাক হয়ে বলতে থাকে…..

রাত্রি;; আপনি!

অয়ন;; তুমি?

রাত্রি;; আপনি এখানে কি করছেন?

অয়ন;; তুমি এখানে কি করছো?

রাত্রি;; এই প্রশ্ন টা তো আমার!

অয়ন;; আমারও ঠিক একই প্রশ্ন।

রাত্রি;; এটা একটা কফিশপ তো অবশ্যই এখানে কফি খেতে এসেছি।

অয়ন;; আর আমি তো হাওয়া খেতে এসেছি তাই না!

রাত্রি;; যা খাওয়ার খান সেটা আপনার বেপার। আচ্ছা By any chance, আপনি আমাকে ফলো টলো করছেন না তো?

রাত্রির এমন হুটহাট প্রশ্নে অয়ন নিজেই বোকা হয়ে গেলো। এখন তার কি বলা উচিত ঠিক তাও মাথায় আসছে না তার।

অয়ন;; মানে কি, আমি ফলো করবো তাও আবার তোমার মতো পাগলকে। মানে আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না যে আমি তোমার মতো একটা তাড় ছেড়া মেয়েকে ফলো করবো আর দুনিয়াতে কি মেয়েদের অভাব পরেছে নাকি।

রাত্রি;; কিইইইইইইইইইই,, যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা। আমি পাগল, তাড় ছিড়া?!

অয়ন;; সত্য সবসময় তেতোই লাগে। (ভেংচি কেটে)

রাত্র;; ওই বেটা বেশি সাহস হইছে তাই না কিছু বলছি না তার মানে এই না যে যখন যা খুশি তাই মুখ দিয়ে বের করে ফেলবেন।

অয়ন;; বাধ্য করেছো তুমি আমায় বলতে।

রাত্রি;; তবে রে…

লেগে গেলো অয়ন আর রাত্রির মধ্যে তুমুল ঝগড়া। যেন কুকুর & বিড়াল ঝগড়া করছে। তখনই অয়নের পাশ দিয়ে নিরব আর রাত্রির পাশ দিয়ে নিপা-আইরাত চলে এলো। এসেই দেখে পুরো টেবিলে যা ইচ্ছে তাই একটা অবস্থা। একদম লেজে গবরে হয়ে গেছে। অয়ন আর রাত্রি একে ওপরের পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে, কেউ কাউকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। নিরব আর নিপা-আইরাত চুপচাপ শুধু দেখে যাচ্ছে। সবকিছু তাদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিরব এগিয়ে গেলো।

অয়ন;; ডিসগাস্টিং, তোমার মতো ঝগড়াটে মেয়ে আমি আমার পুরো জীবনে আর একটাও দেখি নি।

রাত্রি;; হ্যাঁ তো এখন দেখে নিন না। আর আমাকে ঝগড়াটে বলছেন আপনি নিজে কি ফালতু লোক একটা।

অয়ন;; তোমাকে তো।

নিরব;; অয়ন ভাই আমার থাম থাম প্লিজ থাম।

অয়ন;; ওহহ নিরব, এসে পরেছিস তুই যাক ভালোই হয়েছে। দেখ না কোথা থেকে কোন এক মেয়ে এসে আমার সাথে এমন ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছে।

রাত্রি;; আর নিজে তো দুধে ধোঁয়া তুলসিপাতা তাইনা।

অয়ন;; তুমি…

নিরব;; অয়ন কি করছিস তুই প্লিজ থাম।

অয়ন;; ধুর কি থামবো এই মেয়ে পুরো মুডের বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে আমার। আর নিরব তুই, তুই কিনা এই মেয়ের সাথে এতোদিন রিলেশনে ছিলি। মানে কি, How is this possible?! তুই ওকে কি করে সামলাস ভাই। আমার তো ৫ মিনিটেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই সব চিপ মেয়েদের না আমি ভালো করেই চিনি, যত্তসব।

রাত্রি;; ওইইই তুই কি বললি, চিপ আমি চিপ। চিপ হবে তোর বউ। এতোক্ষন অনেক আপনি আপনি করেছি কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুই রেস্পেক্ট দেওয়ার মানুষই না,, কালা বাদর কোথাকার।

অয়ন;; নিরব দেখেছিস দেখেছিস তুই, কিভাবে গায়ে পরে ঝগড়া করছে মেয়েটা, আর তুইতুকারি করছে। তুই এর সাথে রিলেশন ওহহ গড। ভাই আমি তোর কাছে হাত জোড় করছি তুই যদি প্রাণে বাচতে চাস তাহলে এখন এই মূহুর্তে তুই এই মেয়ের সাথে ব্রেকাপ করবি এখনই।

নিরব;; আরে অয়ন কিন্তু আমার কথ….

অয়ন;; না না না আমি কোন কথাই শুনবো না আমি তোকে এমন একটা জংলি বিড়ালের কাছে ছেড়ে যেতে পারি না। তুই এখনই ব্রেকাপ করবি এখনই।

নিরব;; আরে আরে থাম কথা শোন আমার, আমি এই মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিলাম না এটা ওই মেয়ে না।

অয়ন;; হ্যাঁ আমিও তো তাই বলছি,, কিহহহহহহ?

নিরব;; হ্যাঁ।

অয়ন;; তুই এই মেয়ের সাথে রিলেশনে নেই,, সেটা এই মেয়ে না?

নিরব;; একদম না।

অয়ন;; তাহলে?

নিরব;; সামনে তাকিয়ে দেখ ওই যে নিপা দাঁড়িয়ে আছে, আর এই হচ্ছে রাত্রি আর নিপার পাশের জন আইরাত।

অয়নের কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো লাগছে। অয়ন আইরাতের দিকে তাকায়, আইরাতও অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন বেশ ভালো করেই জানে যে এরা কেউই জানে না যে আইরাত আব্রাহামের বউ। আর আইরাতও জানে যে অয়ন তাদের কিছুই বলবে না। তাই তারা স্বাভাবিক ভাবেই আচরণই করলো। অয়নের ভাবনাতে ছেদ ঘটিয়ে রাত্রি চিল্লিয়ে বলে উঠলো…

রাত্রি;; আসলেই একটা মাথামোটা লোক।

রাত্রি এই কথা বলে আবার বসে পরে। অয়ন রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিরব অয়নের হাত ধরে থামিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। নিপা-আইরাত এসে টেবিলে রাত্রির পাশে বসে পরে। নিরব আর অয়নও একপাশে বসে পরে।

নিরব;; অয়ন, এই হচ্ছে নিপা যাকে আমি ভালোবাসি।আর এই হচ্ছে রাত্রি আর আইরাত। রাত্রির সাথে তো তোর আর কিছু পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না কারণ এই পর্যন্ত অনেক বেশি পিরিচিত হয়ে গেছিস তোরা।

অয়ন রাত্রির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে একটা বড়ো হাসি দেয়। আইরাত তা দেখে নিজেও হেসে দেয়।
তারা এখন একে ওপরের সাথে কথা বলতেই ব্যাস্ত হয়ে পরে। মাঝে মাঝে অয়ন আর রাত্রির চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে আর দুজনই রাগে ফুসছে। এবার আসে খাবার অর্ডার দেওয়ার পালা। রাত্রি তা দেখে বলে ওঠে…

রাত্রি;; আমি অর্ডার করবো আমি।

অয়ন;; পেটুক একটা খালি খাই খাই।

রাত্রি;; ওইই মিয়া আপনি কি বললেন আমি পেটুক।

অয়ন;; অবশ্যই তাই আর তার নমুনা বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে।

রাত্রি;; আপনাকে তো আমি….

আইরাত;; সবাই চুউউউউউউউউউউউউউউপ!! একদম চুপ সবাই।

এবার খাবারের অর্ডার নিয়ে অয়ন আর রাত্রির মাঝখানে ঝগড়া লাগতে দেখলে আইরাত এক ধমক দিয়ে দুজনকে চুপ করিয়ে দেয়। কেননা এমনিতেও এদের চক্করে কান দুটো একদম ঝালাপালা হয়ে গেছে আর না। আইরাতের এমন ধমকে তারা সবাই একদম চুপসে গেলো।

আইরাত;; এভাবে দুজন দুজনের পিছে পরে আছো কেন। ঝগড়া কি সবসময় করতেই হবে নাকি আজব। এই রাত্রি মেনু দে কাউকে অর্ডার করতে হবে না আমি বলছি।

রাত্রি আর কিছু না বলে চুপচাপ মেনু আইরাতের দিকে এগিয়ে দিল। আইরাত মেনু দেখে বেশ কিছু খাবারের কথা বলে দিলো। তারপর তারা খেয়ে দেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে লাগলো।


আব্রাহাম এখন নিজেও তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। উদ্দেশ্য সেই প্রিয় হাইওয়ে। আব্রাহাম হাইওয়ে তে চলে গেলে গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের ফোনটা বের করে আইরাতকে ফোন দেয়।

আইরাত নিপা নিরব রাত্রি অয়ন তারা সবাই হেসে হেসে কথা বলছিলো কিন্তু কথার মাঝেই আইরাতের ফোন বেজে ওঠে। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের ফোন। আইরাত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোন কেটে দেয়। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারে যে আইরাত তার ফোন কেটে দিয়েছে, আব্রাহামের রাগ হতে লাগে। আব্রাহাম আবারও ফোন দেয় আইরাতের কাছে। এবার আইরাত ফোন ধরে। টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে কথা বলতে থাকে আইরাত।

আইরাত;; কি হয়েছে বার বার ফোন কেন দিচ্ছেন?

আব্রাহাম;; এই মেয়ে, মানুষ ফোন কেন করে! আর আমার বউ কখন ফোন দিবো কি না দিবো তা কি আমার তোমার কাছ থেকে জানতে হবে।

আইরাত;; 🤦‍♀️

আব্রাহাম;; এখন শুনো তাড়াতাড়ি করে হাইওয়ে এসে পরো।

আইরাত;; কি এখন, এই সময় হাইওয়ে তে কেন?

আব্রাহাম;; তোমাকে আমি উল্টো প্রশ্ন করতে বলি নি, আর না ই তোমাকে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন আমি মনে করি। আসতে বলছি আসবে ব্যাস, আর কোন কথা না। আর যদি কোন তামাশা চাও তাহলে সেটাই বলে দাও আমি তোমাকে গিয়ে তুলে নিয়ে আসি। তুমি কোথায় আছো তা কিন্তু বেশ ভালো করেই জানি আমি। আমার আসতে শুধুমাত্র দু মিনিট লাগবে।

আব্রাহমের এমন মিষ্টি থ্রেট দেওয়াতে আইরাতের হোস উড়ে যায়। কারণ আব্রাহাম যে আসলে কেমন তেড়া প্রকৃতির লোক তা আইরাতের থেকে আর ভালো কেউই জানে না। তাই আইরাত আমতা আমতা করে বলে উঠলো…

আইরাত;; সবসময় এতো ব্লেকমেইল কেন করেন,, আসছি তো আমি😒

আব্রাহাম;; That’s like a good girl,, love you…

আইরাত ফোন কেটে দিয়ে কোন রকমে নিপা নিরব রাত্রি আর অয়নকে অনেক কিছু বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজের কথা বলে সেখান থেকে কেটে পরে। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আইরাত এক রিকশা তে উঠে পরে এবং চলে যায় হাইওয়ের উদ্দেশ্যে।










🌿🍃চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer;; Tamanna Islam

#part__ 42

💛🌼..
..
..
..
..
..

আইরাত একসময় হাইওয়েতে পৌঁছে গেলো। অনেক রোদ ওঠেছে যাকে বলে একদম কাঠ ফাটা রোদ। আইরাত মাথায় হাত দিয়ে মুখে রোদ আসা থেকে আটকাচ্ছে। আইরাত কিছুটা সামনে চলে গেলে একটা কালো গাড়ি দেখতে পায় তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এইটা আব্রাহামেরই গাড়ি। গাড়ি যেহেতু এখানে আছে তাহলে আব্রাহামও এখানেই রয়েছে। আইরাত আবারও সামনে হেটে যেতে লাগলো। হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে চলে এলো।

আইরাত;; এই লোকটা এতো অদ্ভুত কেন বুঝি না। আমাকে এখানে এই সময় ডেকে এনে নিজেই উধাও। অসহ্যকর।

আইরাত বেশ বিরক্তি নিয়ে এবং আব্রাহামকে হাজার টা গালি দিয়ে পিছনে ঘুড়তে নিলেই আচমকা আব্রাহামকে দেখে ভরকে যায়। চিল্লিয়ে নিচে পরে যেতে ধরলে আব্রাহাম একহাতে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম ঠাই দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে একহাতে আইরাতকে ঝাপটে ধরে আছে। আইরাত চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আব্রাহাম মুগ্ধ হয়ে আইরাতের এই ভয়ার্ত মুখখানা দেখছে। বেশ ভালো লাগছে তার। আব্রাহামের নিজের ভিতরে এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে যখনই সে আইরাতের কাছে থাকে। পরে যাওয়ার আভাস না পেয়ে আইরাত পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে এবং এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এখনো তার দিকে এক নয়নে তাকিয়েই আছে। আইরাত তা খেয়াল করে মাথা নিচু করে ফেলে। তার অবাধ্য চুলগুলো বারবার সামনে এসে পরছে। আব্রাহাম তার আরেক হাত দিয়ে আইরাতের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আব্রাহাম ক্রমশ আইরাতের মুখের কাছে এগিয়ে আসছে। আইরাতের শ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আব্রাহাম এবার তার দুহাত দিয়ে আইরাতের দুগাল জড়িয়ে ধরে। আইরাত আব্রাহামের হাতের ওপর তার হাত রেখে দেয়। তার দিকে আরো ঝুকে এলে আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে এবং আইরাতের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। আইরাত তা দেখে কিছুটা গলা ঝাড়ি দেয় তাতে আব্রাহামের হোস ফিরে আসে। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আইরাতও ঠিক হয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে লজ্জায় আইরাতের গাল দুটো ঠিক টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। আব্রাহাম তো এই লজ্জা মাখা মুখের ওপরই ফিদা। আব্রাহাম এবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; আমাকে খুজছিলে বুঝি!

আব্রাহাম;; ননা মামানে না আসলে,, হাহ্ আমার বয়েই গেছে আপনাকে খোজার।

আব্রাহাম;; মানুষের কথায় কখন জড়তা কাজ করে জানো যখন সে কারো কাছে ধরা পরে যায়। তোমার কথায় জড়তা আছে জান। আমি জানি তুমি আমাকেই খুজছিলে।

আইরাত;; হ্যাঁ খুজছিলাম তো, খুজবো না আমাকে এখানে ডেকে আপনি নিজেই নেই।

আব্রাহাম;; তোমার আব্রাহাম তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না জান। (আইরাতকে ঘুড়িয়ে পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে)

আইরাত;; ছাড়ুন তো মানুষ আছে দেখছে তারা।

আব্রাহাম;; দেখুক তাতে কার কি। আমার বউ আমার সম্পত্তি যা খুশি করবো।

আইরাত এবার আব্রাহামের কথা শুনে হেসে দেয়। কিন্তু তা আব্রাহামের চোখে পরতে দেয় না। আব্রাহাম এবার আইরাতকে ছেড়ে দিয়ে তার হাত ধরলো। আইরাত তার হাতের দিকে তাকালো। আব্রাহাম খুব যত্নের সাথে তার হাত ধরে আছে। এভাবে হাত ধরাতে আইরাত অনেক শান্তি আর সেইফ মনে করে। এক আস্থা আছে এভাবে আব্রাহামের হাত ধরাতে। আব্রাহাম সবসময় এভাবেই আইরাতের হাত ধরে। আইরাত হঠাৎ মনে পরে যে ঠিক এভাবেই আব্রাহাম তার হাত ধরে তার বাপির বাড়ি থেকে এনেছিলো। কিন্তু তখন আইরাতের ভিতরে কোন ভয় কাজ করেনি বরং এক আলাদা শান্তি অনুভব হয়েছিলো। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। আব্রাহামের হাতে যেন আইরাতের হাতটা খুব করে মানিয়েছে। আইরাত তার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি এক হাসি দেয় যা আব্রাহামের চোখ এড়ায় না।

আব্রাহাম;; সামনে এগুনো যাক!

আইরাত;; (আইরাত কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায় যার মানে হ্যাঁ)

আব্রাহাম আর আইরাত নদীর কিণার দিয়ে বসে পরলো। আব্রাহাম আইরাত পাশাপাশি বসে আছে। নদীতে ছোট ছোট সাদা পালকের হাসেরা ভেসে বেড়াচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের পাশে কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সে টেনে আইরাতকে আরো কাছে নিয়ে এসে বসলো। আইরাত এক পলক আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। আব্রাহাম আইরাতকে আঙুল দিয়ে সামনে দেখাচ্ছে এবং হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথা বলছে। আইরাত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে আব্রাহামের সবকিছুই খেয়াল করে যাচ্ছে। কেন জানিনা আইরাতের আজ মন সায় দিচ্ছে না আব্রাহামের কাছ থেকে চোখ সরাতে। আব্রাহামকে আজ বেশ সুদর্শন লাগছে। ফর্সা মুখে খোচাখোচা চাপদাড়ি, কপালের সামনে পরে থাকা চুল, ফিটফাট বডি,মুখে ঘায়েল করা হাসি। চোখজোড়া বেহায়ার মতো আব্রাহামের দিকে তাকিয়েই আছে। নিজের অজান্তেই আইরাত তার মাথাটা আব্রাহামের কাধে আলতো করে ছেড়ে দিলো। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত তার কাধে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে,, আব্রাহাম তা দেখে মুচকি হেসে আইরাতের কপালে চুমু একে দেয়, আবার সামনে তাকিয়ে থাকে আব্রাহাম। মন চাইছে সময় যেন এখানেই থেমে যায়। দুনিয়ার সব শান্তি যেন এখন এখানে এসে ভর করেছে।

এভাবেই দিন যায়, সময় যায়। আইরাত আব্রাহাম এখনো সেভাবেই রয়েছে। আব্রাহাম প্রতিনিয়ত আইরাতকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ছেড়েছুড়ে যেন এখন এটাই আব্রাহামের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইরাতকে এভাবে বিরক্ত করতে আব্রাহামের যেন বেশ ভালো লাগে। কিন্তু আইরাত যখন একটু তেড়ামি করে তখন আব্রাহাম তার লাভ টর্চার শুরু করে। নিপা আর নিরবের সম্পর্কও দিন দিন গভীর হচ্ছে। একসময় তাদের বিয়ের কথা বার্তাও হয়,, বিয়ের দিন তারিখ সবকিছুই একদম ঠিকঠাক হয়ে যায়। এতে রাত্রি আর আইরাতের খুশির যেন কোন সীমা নেই। রাত্রি আর অয়নের মাঝেও এখন তিক্ততা কিছুটা কমে এসেছে। তারা আর আগের মতো একজন আরেকজনের গায়ে পরে ঝগড়া করে না। কিন্তু এখনো কম না মাঝে মাঝে বেধেই যায় ঝগড়া। কিন্তু ঝগড়া বা রাগ করে কেউ দূরে থাকতে পারে না খানিক বাদেই আবার মিশে যায়। তারা এখন অনেক ভালো বন্ধু।



৭ দিন পর🍃🍃…

আইরাত ঘুমিয়ে আছে, গভীর ঘুম। কিন্তু ঘুমের ঘোড়েই আইরাতের সামনে বারবার তার আম্মু পাপার মৃতদেহ ভেসে ওঠছে। সেই রক্তাক্ত দৃশ্য বারবার আসছে। আব্রাহামের ছুরি নিয়ে তার পাপার লাশের সামনে বসে থাকা সারা গায়ে রক্ত দিয়ে নাজেহাল অবস্থা,, হিংস্র-ভিবৎস সেই চেহারা চোখের সামনে এসে পরে। আইরাত ঘুমের মধ্যেই এগূলো দেখছে আর ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। এভাবে আর না থাকতে পেরে আইরাত এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে ঘুম থেকে ওঠে পরে।
ঘুম থেকে ওঠে দেখে রুমের মধ্যে কেউ নেই। পুরো রুম ফাকা। আইরাত পুরো ঘরে একবার চোখ বুলায়। একদম ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সে। আইরাত বুঝতে পারে যে এটা একটা খারাপ সপ্ন ছিলো। সে চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে বিছানাতে বসে থাকে। হঠাৎ মনে পরে আজকের কথা। আইরাত দ্রুত করে তার ফোন অন করে দেখে আজ ২৫ জুলাই,, এইদিনই আইরাতের আম্মু-পাপা মারা যায়। আজ তাদের মৃত্যুবার্ষীকি। আইরাত ফোন রেখে আবারও মাথা চেপে ধরে, হাতজোড়া দিয়ে মুখখানা ঢেকে রাখে। মুখ থেকে হাত সরাতেই আইরাতের চোখ মুখ নাক সব লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে টুপ করে পানি গড়িয়ে পরে। গত দুবছর ধরে সবার অগোচরে আইরাত এই দিনে তার আম্মু পাপার কবরে গিয়েছে। এতোদিন তো সে ভাবতো যে আব্রাহামও এই দুনিয়া তে নেই কিন্তু তার ধারনা ভুল ছিলো। এতে আইরাতের খুশি হওয়ার কথা না বিষন্ন হওয়ার কথা তা আইরাতের জানা নেই। কিন্তু আজ কেন যেন খুব খারাপ লাগছে তার।না চাইতেও বারবার তার বাবা-মার মৃত্যুর কথা মনে পরছে যা তার বুকে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণা কে দ্বীগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আইরাত কিছুক্ষন এভাবেই বসে থেকে গায়ের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে উঠে পরে। তারপর রান্না ঘরে চলে যায়।
রাত্রি আর নিপা বাইরে গিয়েছিলো, বাসায় আসার পর আইরাতকে রুমে দেখতে না পেরে তারা আরো ভিতরে চলে যায়। রান্নাঘর থেকে টুক টাক শব্দ আসাতে তারা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আইরাত খাবার বানাচ্ছে। আজ অনেক চুপচাপ সে।

রাত্রি;; বেবিজান ঘুম থেকে উঠে পরেছিস!

আইরাত;; হুমম

রাত্রি;; আসলে না আমরা একটু বাইরে গিয়েছিলাম বুঝলি তুই তো গভীর ঘুমে ছিলি তাই আর তোকে ডাক দেয়নি।

আইরাত;; হুমম

নিপা;; তুই হুট করেই রান্নাঘরে যে কি বানাচ্ছিস?

আইরাত;; পাস্তা, তোদের না পছন্দের!

নিপা;; তা তো পছন্দেরই কিন্তু আজ কেমন যেন কোথায় একটা কিছু নেই।

আইরাত এবার নিপার দিকে ঘুড়ে তাকালো। নিপা দেখলো আইরাতের চোখ নাক মুখ অস্বাভাবিক ফুলে আছে যাতে করে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে কেদে কেদে সাগর করেছে আইরাত। আর নিপা তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে।

আইরাত;; আব… কোথায় কি নেই,, কি কম পরলো!

নিজের আশেপাশে খোঁজাখোজি করে আইরাত এগুলো বলছে। তখনই নিপা আইরাতের বাহু ধরে নিজের কাছে আনলো।

নিপা;; আইরাত কি হয়েছে তোর,, কান্না করেছিস কেন?

আইরাত;; কি কককই না তো একদম না, আআরে আমি আমি কেন কান্না করতে যাবো ধুর। (চোখ মুছে)

নিপা;; দেখ তুই অন্তত আমাকে মিথ্যা বলিস না, বেশ বুঝা যাচ্ছে যে কান্না করে করে বুক ভাসিয়েছিস। এখন বল কি হয়েছে।

আইরাত কিছু না বলে মুচকি হেসে নিপাকে জড়িয়ে ধরে। নিপা তার কাধে তরল কিছু একটা অনুভব করে। নিপা বুঝতে পারে যে আইরাত কান্না করছে। রাত্রি ও আইরাতকে এমন করতে আগে কখনোই দেখেনি। তারপর তারা আইরাতকে নিয়ে ঘরে বসিয়ে দেয়। আইরাতের মন অনেক খারাপ দেখে তারা কেউ আর আইরাতকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। আইরাতও চুপ হয়ে যায়।

..
..

বিকেলবেলা আইরাত তার বাসা থেকে বের হয়ে পরে। রাত্রি আর নিপা তার সাথে বের হতে চাইলে আইরাত তাদের থামিয়ে দেয় আর বলে তার একা কিছু সময় দরকার, একা থাকতে চায় সে কিছুক্ষন। তারা আইরাতকে আর কিছু বলে না আইরাতের বেপার টা বুঝতে পেরে তাকে একাই যেতে দেয়। জনমানুষ নেই প্রায় শূন্য একটা রাস্তার কিণার দিয়ে হেটে চলেছে আইরাত। আনমনে হয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। মন-মস্তিষ্কে শুধু সেই মর্মান্তিক দিনের ঘটনা টাই বয়ে বেড়াচ্ছে৷ আইরাত লাগাতার হেটেই যাচ্ছে। ঠিক তখনই আব্রাহাম কাজ শেষ করে গাড়ি করে আসছিলো। আইরাতকে চোখে পরে আব্রাহামের। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে খানিক অবাকই হয়। কেননা আইরাত কখনো এমন একা আর এই রাস্তাতে আসে না তবে আজ কেন!! আব্রাহাম তাকিয়েই আছে আইরাতের দিকে, আব্রাহামের গাড়ি আইরাতকে ছাড়িয়ে চলে গেলে আব্রাহাম আবার গাড়ি ঘুরিয়ে আইরাতের সামনে নিয়ে যায় এবং আইরাতকে আটকে দেয়। এভাবে হঠাৎ করেই গাড়ি আইরাতের সামনে ব্রেক কষাতে আইরাত কিছুটা ঘাবড়ে যায়। এতে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সে। কপাল কুচকে সামনে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম তার সিট বেল খুলে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসছে। আব্রাহাম যট করে গাড়ি থেকে নেমে সোজা আইরাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। আব্রাহাম একদম আইরাতের মুখের সামনে এসে দাড়িয়েছে। আইরাত দুহাত ভাজ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আইরাতের এমন বেখেয়ালি ভাবটা আব্রাহামের মোটেও ভালো লাগলো না তাই সে কড়া গলায় বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; তুমি কি পাগল আইরাত?

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; একা কেন এমন জনমানবহীন রাস্তায় বের হয়েছ। বলেছ আমাকে একবার ও!?

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; আর মুখের এই কি হাল করে রেখেছ হ্যাঁ, নাক মুখ এমন ফুলে আছে কেন, কান্না করেছ কেন কি হয়েছে জান তোমার, কেউ কি কিছু বলেছে তোমাকে?
বেবি প্লিজ এমন চুপ করে থেকো না তো আমার খারাপ লাগে প্লিজ কিছু তো বলো। (আইরাতের গালে হাত রেখে)

আইরাত;; কি কি বলবো আমি, আপনি বলার জন্য আর কি অবশেষ রেখেছেন। (হাত সরিয়ে)

আব্রাহাম;; মানে?

আইরাত;; আজ ২৫ জুলাই মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী। আমার আম্মু-পাপার মৃতুদিন। কিছু কি মনে পরে আপনার? ঠিক আজকেও দিনেই আমার বাবা-মাকে খুন করেছিলেন আপনি। আর আমি, আমিই কিনা তার বিয়ে করা বউ।

আইরাতের কথায় আব্রাহাম টোটালি শকড্। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে কপালে স্লাইভ করে আবার বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আইরাত কেন ভুল একটা ধারণা বয়ে বেড়াচ্ছো তুমি,, আর কতো আর কতো টা দিন পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝবে তুমি। প্লিজ এখন তো আমার সম্পর্কে তোমার এই ভুল ধারণা টা পাল্টাও প্লিজ।

আইরাত;; এটা কোন বানোয়াট কাহিনি না। এটা আমার স্ব চোখে দেখা সত্য।

আব্রাহাম;; আইরাত আমরা যা চোখে দেখি তা সবসময় সত্য হয়না। প্লিজ বুঝো।

আইরাত;; যথেষ্ট হয়েছে এবার থামুন। আমি আর যাই হোক নিজের আম্মু-পাপার খুনির সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে পারবো না। আমার পক্ষে আপনাকে মেনে নেওয়া এককথায় অসম্ভব। আমি না ই কখনো আপনাকে ভালোবেসেছিলাম আর না ই কখনো ভালোবাসবো।

আব্রাহাম;; আইরাত… (আইরাতের দিকে এগিয়ে যেতে ধরে)

আইরাত;; ব্যাস (হাত দিয়ে আব্রাহামকে থামিয়ে দিয়ে) আমি মুক্তি চাই, শুনেছেন আপনি আমি মুক্তি চাই,, মুক্তি চাই আমি আপনার কাছ থেকে। আমি আর আপনাকে সহ্য করতে পারছিনা।

এই কথা টা বলতে আইরাতের গলা প্রচুর ধরে আসছিলো কারণ আইরাতও কিন্তু আব্রাহামকে কম ভালোবাসে না কিন্তু এক কালো পর্দা আইরাতের মনে বাসা বেধে রেখেছে। নিজের বুকের ওপর পাথর রেখে এই কথা টা আব্রাহামকে বলতে হয়েছে আইরাতের। আইরাতের ভাষা মতে একজন খুনির সাথে একই ছাদের নিচে কোন মূল্যেই থাকা যায় না। আর যদি সেটা হয় নিজের বাবা মায়ের তাহলে তো কথায় নেই। আব্রাহামকে এটা বলে তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আইরাত পিছন ঘুড়ে চলে আসে। আব্রাহাম ভাংগা মন নিয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে তার। ওদিকে আইরাতের চোখের পানিও যেন আজ কোন বাধা মানছে না। চোখের পানি মুছতে মুছতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু পথের মধেই একটা গাড়ি এসে আইরাত কে টেনে হিচড়ে গাড়ির ভিতরে তুলে নেয়। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক ছুটাছুটি করেও কোন লাভই হয় না। অবশেষে আইরাতকে গাড়িতে তুলে তারা নিয়ে যায়। আব্রাহাম আকাশ সমান রাগ নিয়ে সেই গাড়ির দিকে দৌড়ে যায়। কিন্তু তার আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে। আব্রাহাম রাগে গর্জে ওঠে। আব্রাহামও তার গাড়ি নিয়ে সোজা সেই গাড়ির পিছনে ছুট লাগায়।













🤎🍂চলবে~~~~~

Gangstar In Love Part-39+40

0

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 39

💜💐..
..
..
..
..
..

আইরাত হুড়মুড়িয়ে নিচে নেমে পরলো। আইরাতকে নিচে নামতে দেখে আব্রাহাম বড়ো একটা হাসি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আইরাত আব্রাহামের সামনে এসে দাড়িয়ে পরতেই আব্রাহাম দুহাত প্রশারিত করে আইরাতকে সম্পূর্ণ ঘিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আইরাত পুতুলের মতো করে দাঁড়িয়ে থাকতে লাগলো। কিছু সময় পর আইরাত আব্রাহামের বুকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগি আর কিছুটা চিন্তা নিয়ে আব্রাহামকে বলে উঠলো…

আইরাত;; আচ্ছা আপনি শুরু করেছেন কি কয়েকটা দিন ধরে বলুন তো!

আব্রাহাম;; আমি আবার কি শুরু করলাম

আইরাত;; ওহ আপনি কি শুরু করেছেন আপনি তা জানেন না তাই না! (দুহাত ভাজ করে)

আব্রাহাম;; একদম না (আইরাতের দিকে ঝুকে)

আইরাত;; এই যে আমি যেখানে যেখানে যাবো ঠিক সেখানেই টপকে পরা, আমাকে ফলো করা, নিজের লোকজন কে দিয়ে আমার ওপর নজর রাখা, আমার বাসার সামনে এসে এভাবে রোমিও এর মতো করে দাঁড়িয়ে থাকা আরো কতো কি কি। এগুলো করছেন কেন, কেন এভাবে জ্বালাচ্ছেন আমায়?

আব্রাহাম;; এটার উত্তর আমার থেকে তুমি ভালো জানো বেবি।

আইরাত;; ওহ তাই না। (মেকি হেসে)

আব্রাহাম;; Yeap…

আইরাত;; শুনে রাখুন আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমি আপনার জীবনে আবারও ফিরে যাবো তো For your kind information let me tell you that i am not coming back in your life…

আইরাত প্রথমে মেকি হেসলেও, পরে আঙুল তুলে আব্রাহামের দিকে তেড়ে এসে কথা গুলো বললো। আব্রাহাম বাকা হেসে আইরাতের দিকে এগিয়ে বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; ওহ তাই নাকি।

আইরাত;; হ্যাঁ একদম তাই।

আব্রাহাম;; Are you challenging me?!

আইরাত;; ধরে নিন তাই ই।

আব্রাহাম;; আমি কখনো হারতে শিখি নি।

আইরাত;; কিন্তু এখন শিখে নিন।

আব্রাহাম;; আচ্ছা পরের টা পরে দেখা যাবে এখন তুমি আগে আমার কাছে এসো।

আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম আইরাতকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে যায়। আইরাতের চুলগুলোর মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়। ধীর কন্ঠে আইরাতকে বলতে থাকে…

আব্রাহাম;; জানপাখি মনে আছে তোমার, আগে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন তুমি ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুলে আইনার সামনে এসে দাড়াতে তখন আমি তোমাকে এভাবেই পিছন থেকে ধরে তোমার চুলে মুখ গুজে দিতাম।

আইরাত;; __________________

আব্রাহাম;; আমি জানি সবকিছুই তোমার মনে আছে কিন্তু মুখে কিছুই বলো না প্রবলেম নেই খুব তাড়াতাড়ি এই মুখ দিয়েই আমি সবকিছু বের করবো।

আইরাত চোখ বন্ধ করে আব্রাহামের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলো কিন্তু আব্রাহামের পরের কথা গুলো শুনে আইরাত চেতে গেলো। আব্রাহামকে টেনে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো।

আইরাত;; এই যে হ্যালো মিস্টার. এটা আপনার বেডরুম না ওকে এটা মেইন রোড।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো কি!

আইরাত;; মানে তো কি মানে কি। আপনার একবিন্দু চিন্তাও নেই তাই না। লজ্জা শরমের মাথা তো সেই কবেই খেয়েই ফেলেছেন। সরুন আমি ওপরে যাবো।

আব্রাহাম;; এতো বেশি তো বকবক করতে বলিনি। মানে আমার কাছ থেকে দূরে থেকে না ইদানীং অনেক বেশি মুখ চলেছে তোমার, আর এই মুখ কিভাবে বন্ধ করতে হয় সেটাও জানি। এখন নিজের বাকওয়াস বন্ধ করো আর এগুলো সুন্দর করে নিয়ে যাও।

আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাতের হাতে সেই লাভ সেপ বেলুন গুলো ধরিয়ে দিলো আর এত্তো বড়ো এক টেডিবিয়ার আইরাতের ওপর দিয়ে দিলো। টেডিবিয়ার ঠিকঠাক সামলাতে না পেরে আইরাত কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো আর বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে এসে টুক করে আইরাতের গালে চুমু বসিয়ে দিলো। তাতে তো আইরাত অবাকের ওপর অবাক। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; হেই বেইবি এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো I know that i am too much handsome.. (একটু ভাব নিয়ে)

আইরাতের মেজাজ গেলো আরো চটে, আইরাত আর কিছু না বলে এক ঝটকা মেরে পিছন ফিরে ধুম ধাম পা ফেলে চলে গেলো। আইরাতের এভাবে ঝটকা মারাতে আইরাতের চুলগুলোর বারি লাগে আব্রাহামের মুখে। আইরাত যাচ্ছে তাকে দেখে পুরো বাচ্চা মনে হচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। আইরাত ওপরে চলে গেলে আব্রাহামও গাড়িতে ওঠে সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত মুখ-মন্ডলে একছাপ বিরক্তি নিয়ে ওপরে নিজের ঘরের সামনে এসে পরলো। কলিংবেল চাপার জন্য হাত বাড়ালে তার আগেই নিপা এসে দরজা খুলে দেয়। সামনে আইরাতকে এতো গুলো বেলুন আর এতো বড়ো টেডিবিয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাত্রি নিপা সবাই অবাক। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। সবার মাঝে এখন সাইলেন্ট মুড বিদ্ধমান। এভাবে কয়েক মিনিট সবাই চুপচাপ থাকার পর রাত্রি বিছানা থেকে সোজা দৌড়ে আইরাতের সামনে এসে তার ওপর থেকে টেডিবিয়ার সরিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। রাত্রির এমন কান্ডে আইরাত আরো একদফা অবাক।

রাত্রি;; Thank you Thank you Thank you sooo much বেবিজান।

আইরাত;; ________________ (অবাক হয়ে কপাল কুচকে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে)

রাত্রি;; তোর মনে ছিলো বেবিজান।

আইরাত মনে মনে;; এই কি পাগল হলো নাকি আর এভাবে থ্যাংকস্ দিচ্ছে কেন।

রাত্রি;; এতো গুলো জিনিস এনেছিস তুই ওয়াও বেবি থ্যাংক ইউ।

আইরাত;; না মানে..

রাত্রি;; দেখেছিস আইরুর ঠিকই মনে আছে আমার বার্থডের কথা। আজ যে আমার বার্থডে তা মনে রেখেই এতো গুলো জিনিস আনতে গিয়েছিলো এতো সকাল সকাল। আর তুই দেখ ভুলাক্কার কাহি কি। তোর কিছুই মনে নেই (নিপার দিকে তাকিয়ে)।

নিপা;; হয়েছে হয়েছে।

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটাই আরকি হ্যাঁ সেটাই। তো তোর বার্থডে আর আ আমি মনে রাখবো না তা কি করে হয় বল। (জোড় পূর্বক হেসে) নে নে এগুলো ধর।

আজ রাত্রির জন্মদিন কিন্তু সত্যি বলতে তা নিপা আইরাতের কারোরই খেয়াল ছিলো না। নিপা & রাত্রি যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন আইরাতকে পাশে না দেখে ভাবে যে সে ওয়াসরুমে হয়তো। কিন্তু আইরাত যখন বাইরে থেকে এলো এবং হাতে এতো কিছু তখন রাত্রি ভাবলো যে তার যে জন্মদিন তা আইরাতের মনে ছিলো এবং তার জন্যই এগুলো নিয়ে এসেছে। এখন আইরাতই বা আর কি বলবে। সে সত্যি কথা বলে রাত্রির মন খারাপ করে দিয়ে চায় না। আর আব্রাহামের কথা বললে তার নিজেরই প্রবলেম হবে তাই যে যা ভাবছে তাই নিয়েই থাকুক।

রাত্রি অনেক বেশি খুশি হয়ে সেগুলো হাতে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো। আইরাত রাত্রি কে দেখে হাসছে আর ভাবছে যে “মেয়েটা কতো সিম্পল, আর সহজ-সরল মনের”। আর কথা না বাড়িয়ে সেগুলো কে রেখে দিয়ে তারা তিনজনেই রেডি হয়ে বাইরে চলে গেলো কারণ আজকে তাদের আরো একটা বিয়ের প্লেন করতে হবে। তবে এটা এক নেতার মেয়ের বিয়ে।






আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে তার বাসায় চলে এলো। গার্ডকে গাড়ি পার্ক করতে বলে নিজে বাসার ভিতরে চলে এলো। এসেই দেখে অয়ন টিভিতে ফুটবল মেচ দেখছে আর খাচ্ছে। আব্রাহাম অয়নের পিঠে মারে এক চাপড়। তাতে অয়ন চমকে উঠে। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে অয়ন কেক খাচ্ছিলো আর তার এভাবে চাপড় দেওয়াতে কেক মুখের বাইরে লেগে যায়। আব্রাহাম তা দেখে মুখে হাত রেখে হেসে দেয়। অয়ন মগার মতো করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

অয়ন;; এই তুই এটা কি করলি?!

আব্রাহাম;; কি করেছি।

অয়ন;; না না আব্রাহাম চৌধুরী আপনি কি কিছু করতে পারেন নাকি,

আব্রাহাম হাসতে হাসতে সোফায় বসে পরলো। আর অয়ন টিসু এনে মুখ মুছে ফেললো। আব্রাহাম অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে অয়নকে বলে উঠলো।

আব্রাহাম;; আচ্ছা শোন, একটু পর রেডি হয়ে যাস।

অয়ন;; কেন?

আব্রাহাম; আমরা বিয়েতে যাবো।

অয়ন;; কিন্তু কার?

আব্রাহাম;; নেতা মিজান ইসলামের মেয়ের বিয়ে। আর আমাদের স্পেশাল ভাবে ডেকেছেন উনি।

অয়ন;; আমি না বুঝি না তোর আসলে হয়েছে কি ভাই। মানে তুই তো কখনোই কারো বিয়ের ফাংশন এটেন্ড করিস না তাহলে?

আব্রাহাম;; কিন্তু এখন করবো। আর মিজান ইসলাম নিজে আমার অফিসে এসে ইনভিটেশন দিয়ে গেছেন, আর এতো করে যখন বলেছেন তাহলে না কিভাবে করি বল।

অয়ন;; হুমম তাও ঠিক।

আব্রাহাম;; আচ্ছা শোন তুই জলদি তৈরি হয়ে নিস কেমন। আর বাপি কোথায়?

অয়ন;; বাপি তো আশ্রমে গিয়েছে। বাসায় নাকি ভালো লাগছিলো না তাই বাপি কে আমি রাশেদের সাথে আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আব্রাহাম;; যাক ভালো করেছিস। আমি ওপরে গেলাম।

আব্রাহাম & অয়ন বেশ খানিক সময় পর রেডি হয়ে নিচে নেমে পরে। আব্রাহাম আজ পরেছে সাদা পেন্টের সাথে ব্রাউন কালারের শার্ট যা বডিতে দারুন মানিয়েছে, হাতে ব্লেক কালারের ঘড়ি, আর সেই ক্রাশ খাওয়া মুখখানা। আর অয়ন ব্লেক পেন্ট আর খয়েরি কালারের শার্ট। অয়ন আব্রাহামকে দেখে বলে ফেলে..

অয়ন;; বাবাহ, আজ সাদা-কালো রেখে ব্রাউন, বেপার কি?

আব্রাহাম;; তোর মাথা ছাগল চল তাড়াতাড়ি।

অয়ন;; যাচ্ছি তো।

অয়ন & আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে পরে। গাড়ি উদ্যম গতিতে যেতে থাকে।

..
..
..
..

আইরাত;; এই এই তোরা তাড়াতাড়ি কর, সময় কিন্তু আর বেশি নেই। সময়ের সাথে সাথে হাত-পা চালা। সবাই চলে এলো বলে।

কাজ প্রায় শেষ এখন শুধু আইরাত সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে যে সবকিছু একদম ঠিক আছে কিনা। হ্যাঁ, আইরাত আর অন্য কারো না বরং এই মিজান ইসলামের মেয়ের বিয়ের প্লেনিং করতেই এসেছে আর আব্রাহাম কেউ এখানে চিফ গেস্ট হিসেবে ডাকা হয়েছে। আর আব্রাহাম আগে থেকেই জানে যে আইরাত এই বিয়ের প্লেনার তাই এতো করে এই বিয়েতে যাওয়া নয়তো অয়নের কথাই ঠিক ছিলো যে আব্রাহাম সহজে কারো বিয়েতে যায় না যদি যেটা নিজের কাছের কারো বিয়ে বা দরকারে না হয়। আর আজ যেহেতু আইরাত এই বিয়ের সবকিছুই নিজের হাতে সামলাচ্ছে তাহলে আব্রাহাম কি করে না যেয়ে থাকতে পারে। সব কাজ টাজ শেষ করে আইরাত কিছুটা আরামের নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু নিপা আর রাত্রির আরো কিছু কাজ বাকি থাকায় তারা করেই যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মানুষের আনাগোনাও বেড়ে চলেছে। আফটার অল বিয়ে বাড়ি বলে কথা।

এদিকে প্রায় আধা ঘন্টা পর আব্রাহাম অয়ন বিয়ে বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। আব্রাহামকে আসতে দেখেই মিজান ইসলাম তড়িঘড়ি করে আব্রাহামের সামনে এসে পরলেন। তারা সবাই আব্রাহামকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন, এতো বড়ো বিজনেস আইকন। আব্রাহাম অয়নকে গাড়ি বাইরে পার্ক করে রেখে আসতে বলে তারপর নিজে ভিতরে চলে যায়। আব্রাহাম বেশ ভিতরে গেলে আইরাত তাকে দেখতে পায়। আইরাত মনের আনন্দে ঠান্ডা পানি খাচ্ছিলো কিন্তু আব্রাহামকে দেখে কাশি উঠে পরে। মিজান ইসলাম তার সাথে অনেক হেসে খেলে কথা বলছে আব্রাহামও তাই। দেখে মনে হচ্ছে তাদের মাঝে সম্পর্ক অনেক ভালো। কিন্তু আইরাত খেয়াল করলো যে আশেপাশের সবগুলো মেয়েই কেমন ফাটা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্লজ্জ সব কটা মেয়ে। পরপুরুষ দেখলেই কি এভাবে তাকিয়ে থাকতে হয় নাকি। মনে হচ্ছে এখনই আব্রাহামকে গিলে খাবে। আইরাত রাগ করে টেবিলের ওপর অনেক জোড়ে পানির বোতল টা রেখে দেয়।

আইরাত;; এই লেজ ছাড়া বাদর এখানে এলো কি করে। আর এখানেই বা তার কি কাজ। আমি যতদুর জানি উনি বিয়ে শাদিতে তেমন যান না তাহলে এখন এখানে কি করছে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে বাচাও। আমি যেখানে যাই এই হতোচ্ছাড়া টারও কি সেখানেই যেতে হয়। এর থেকে সামধানে থাকতে হবে, একবার দেখে ফেললে আমি শেষ।

আইরাত এই কথা বলে সেখানে থেকে উঠে পরে চলে যায়।

রাত্রি পরে আছে এতো গুলো ফুল নিয়ে। আজ সারাদিন তার ফুলের ঝাকা বয়ে বয়েই বেড়াতে হয়েছে। একগাদা ফুল। কখন যে এগুলো বয়ে আনা শেষ হবে। রাত্রি এগুলোই একমনে বিরবির করে যাচ্ছে আর ফুলের ঝাকা নিয়ে যাচ্ছে। ফুলের ঝাকাতে অনেক গুলো ফুল থাকায় আর ঝাকার সাইজ অনেক বড়ো হওয়াতে নিজের সামনে কিছুই দেখতে পারছে না রাত্রি। শুধু কোনরকমে হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে।
অয়নও গাড়ি পার্ক করে গাড়ির চাবি হাতের আঙুলে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে আর সিটি বাজিয়ে সামনে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই তার ফোনে একটা এসএমএস আসে তাই সে তার ফোন দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে যেতেই কিছু একটার সাথে বারি খেয়ে সোজা নিচে পরে যায়। সে আর কেউ না রাত্রিই ছিলো। এভাবে আকষ্মিক কান্ডে তারা হুমড়ি খেয়ে একে ওপরের ওপর পরে যায়। ওপর থেকে সবগুলো ফুল এসে সোজা তাদের ওপর পরে। রাত্রি অয়নের দিকে, অয়ন রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনই কোন কিছুইর আগামাথা বুঝতে পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো। দুজনই চুপ করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই অয়নের হুস আসে এবং তাকে এমন একটা অবস্থাতে খুজে পায়। অয়ন দ্রুত করে রাত্রির ওপর থেকে সরে যায়। রাত্রিরও এতোক্ষনে হুস আসে এবং নিজের কোমড়ে বেশ ব্যাথা অনুভব করে। তাই সে চিল্লিয়ে ওঠে। অয়ন সিচুয়েশন বুজতে পেরে ওঠার জন্য রাত্রির দিকে নিজের একহাত বাড়িয়ে দেয়। রাত্রি তার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার রাগ নিয়ে নিজে একাই উঠে পরে। একহাত কোমড়ে দিয়ে বলে ওঠে…

রাত্রি;; ও আল্লাহ গো,, ওওও মায়ায়া রেএএ আমার কোমড় টা শেষ। ওইই কানা গরু,,

রাত্রির এমন অদ্ভুত ডাকে অয়ন তার দিকে তাকায়।

রাত্রি;; এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আপনাকেই বলছি। বলি যে চোখ দুটো কোথায় রাখেন হুমম। দেখে শুনে হাটতে পারেন না নাকি।

অয়ন;; এই যে মিস এক্সকিউজ মি. আপনি আমাকে বলছেন কেন। আপনি আপনার চোখ কোথায় রাখেন আপনি নিজেও তো বেখেয়ালি ভাবে হাটছিলেন নাকি।

রাত্রি;; আপনি না আসলেই কানা আপনি দেখেন নি যে আমার সামনে কতো বড়ো একটা ফুলের ঝাকা ছিলো তারপরেও কিভাবে দেখবো।

অয়ন;; তাহলে তো ভুলটা অবশ্যই আপনার।

রাত্রি;; এহহহ, মামার বাড়ির আবদার বললেই হলো নাকি। আপনি একটা কানা।

অয়ন;; হ্যাঁ আপনি কতটুকু ভালো তা দেখলেই বুঝা যায়। স্টুপিড কোথাকার।

রাত্রি;; আপনার সাথে কথা বলে নিজের সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয় না।

অয়ন;; তো আপনার সাথে কথা বলতে কে চেয়েছে। যান যান।

রাত্রি;; কিরে বাবা পাগল ছাগল সব কোথা থেকে উঠে আসে।

অয়ন;; কি আব….

অয়নকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাত্রি অন্য আরো একটা ফুলের ঝাকা নিয়ে চলে গেলো। আর অয়ন বেকুবের মতো করে তাকিয়ে রইলো।

অন্যদিকে আইরাত শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যে কোন ভাবেই যেন সে আব্রাহামের সামনে না পরে তাহলে আর নিস্তার নেই। হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। আর বার বার নিজের পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। এভাবে যেতে যেতেই হুট করেই কারো সাথে অনেক জোড়ে একটা বারি খায়। মাথায় হাত দিয়ে নিচ দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার হাত শক্ত করে ধরে টেনে অন্ধকার এক রুমে নিয়ে যায়। সেই ব্যাক্তি টি কে তা দেখারও সময় টুকু পায় না সে। তার আগেই রুমে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে দুহাত জোড়ে করে চেপে ধরে আইরাতের।











💙💙চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 40

🌿🌿..
..
..
..
..
..

সেই লোকটির মুখ দেখার আগেই আইরাতের হাত ধরে এক অন্ধকার রুমে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। রুমটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরা। আইরাত চিৎকার দিতে ধরলে লোকটি এক হাত দিয়ে তার দুহাত এবং অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। আইরাত শুধু বুঝতে পারছে যে তার সামনে ঠিক খাম্বার মতো একটা লম্বাচওড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। মুখ চেপে রাখার ফলে সে শুধু উমম উমম করে যাচ্ছে। এমন অন্ধকার ঘরে অচেনা এক লোক তাকে এভাবে ধরে আছে। আইরাতের ভয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু এবার আইরাত নিজের মুখের ওপর গরম নিঃশ্বাস পরার আভাস পেলো। লোকটি যে ক্রমশ তার মুখের দিকে এগিয়ে আসছে তা আইরাত হারে হারে টের পাচ্ছে। লোকটি একদম তার কাছে চলে এসেছে। আইরাতের গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে দেয়। যার ফলে লোকটির গালে থাকা চাপ দাড়ি আইরাতের গালের সাথে ঘষা খায়। এতে আইরাতের কিছুটা সন্দেহ জাগে। কানের কাছে গিয়ে লোকটি বলে ওঠে….

“” যতই পালাই পালাই করো না কেন, তুমি এই জনমে আর পালাতে পারবে না আমার কাছ থেকে। তুমি ভাবলে কি করে যে আমি যেহেতু এখানে এসেছি তাহলে তোমাকে না ধরেই কি করে ছেড়ে দিবো, আমার কাছ থেকে তোমার নিস্তার নেই বেবিগার্ল “”

আইরাত এবার চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। কারণ কন্ঠ টা তার খুবই চেনা। আর এইভাবে কথা মাত্র একজনই বলতে পারে সে আব্রাহাম। হ্যাঁ আব্রাহাম। আইরাত এবার রেগে কিছু একটা বলবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঘাড়ে নিজের নাক-মুখ ডুবিয়ে দিলো। আইরাতের শরীরে কেমন যেন একটা অনুভব হলো। গায়ের শিরদাঁড়া গুলো কেমন চমকে উঠলো। পুরো জমে গেছে সে, চেয়েও কিছু করতে পারছে না কারণ সে সম্পূর্ণভাবে আব্রাহামের হাতে বন্ধী। আব্রাহাম নিজের চোখ বন্ধ করে পরম আবেশে আইরাতের গলাতে নাক ঘষে যাচ্ছে, আব্রাহাম এবার আইরাতের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে তার পেট আর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আইরাত তার হাত মুচড়ামুচড়ি করতে শুরু করলে আব্রাহাম তাকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। এবং আইরাতের গায়ের সুগন্ধ নিতে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কি আছে এমন তোমার মাঝে!

আইরাত;;______________

আব্রাহাম;; তোমার এই ঘ্রাণ আমি কতো করে মিস করেছি জানো তুমি। এলকোহল & মাদকদ্রব্য থেকেও বেশি নেশাক্ত তোমার শরীরের এই ঘ্রাণ।

আইরাত;; প্লিপ্লিজ ছাছাড়ুনন, আম আমার দদদম বন্ধ হয়ে আসছে।

আব্রাহাম;; আহা একদম না।

আব্রাহাম নেশাগ্রস্ত ভাবে আইরাতের গলাতে এখনো মুখ ডুবিয়ে দিয়ে আছেই। আইরাতের তো জীবন যায় যায় অবস্থা সহ্য করতে পারছে না আর এইসব। আব্রাহাম তার মুখ খানা আর একটু ঘষা দিলে তার খোচাখোচা দাড়ি গুলো আইরাতের গলাতে বিধে পরে। এবার আইরাত আব্রাহামকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। সে তার গলাতে হাত দিয়ে এখনো হেসেই চলেছে। হঠাৎ ঘরের বাতি জ্বলে উঠে। আব্রাহাম চোখ ছোট ছোট করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; আমার অনেক সুড়সুড়ি লাগে তো। (হাসতে হাসতে)

আব্রাহাম;; কবে বড়ো হবে তুমি!

আইরাত;; এই আমি যথেষ্ট বড়ো আছি, কিন্তু আমার প্রচুর সুড়সুড়ি আছে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তা আমি খুব ভালোভাবেই জানি।

আইরাত;; এই দাঁড়ান, আপনি এতো অসভ্য কেন। এভাবে একটা মেয়েকে টেনে হিচড়ে এমন অন্ধকার একটা রুমে নিয়ে এসে এমন অসভ্যতামি করছেন কেন!

আব্রাহাম;; আচ্ছা জি! এখন নিজের বউয়ের সাথে রোমেন্স করা বুঝি অসভ্যতামি। (আইরাতের দিকে এগিয়ে এগিয়ে)

আইরাত;; এই সেখানেই থামুন একদম আগে এগুবেন না বলছি। তা না হলে….

আব্রাহাম;; তা না হলে কি?

আইরাত;; আব..আমি আমি চিল্লাবো।

আব্রাহাম;; আরে এই বেপার আচ্ছা চিল্লাও, যতো খুশি চিল্লাও। হেল্প লাগলে বলো আমিও তোমার সাথে একটু চিল্লাই বিকজ তোমার যে গলার আওয়াজ কেউই শুনবে না।

আইরাত;; কিইইই!

আব্রাহাম;; জ্বিইইইই,, আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো যে এইটা বিয়ে বাড়ি গানের সাউন্ড শুনেছো, তোমার কি মনে হয় যে আমি বাদে অন্য কেউ তোমার গলার আওয়াজ শুনতে পারবে জান।

আইরাত;; দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে যেতে দিন।

আব্রাহাম;; আচ্ছা যাও।

আইরাত;; সত্যি!

আব্রাহাম;; হুমম হুমম সত্যি You can go.. (দুহাত ভাজ করে একপাশে দাঁড়িয়ে)

আইরাতের কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে কিন্তু তবুও গুটি গুটি পায়ে সে দরজার কাছে যেতে থাকে। দরজার একদম কাছে গিয়ে বাইরে এক পা দিতে গেলেই সাথে সাথে আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ফেলে। এতে আইরাত কিছুটা চমকে উঠে। আব্রাহাম তাকে জোড়ে টান দিয়ে পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে,, আইরাতের কাধে নিজের থুতা রেখে দেয়। পেট জড়িয়ে ধরে আবার বলে উঠে…

আব্রাহাম;; এখন না হয় ছেড়ে দিলাম কিন্তু পরে কিভাবে বাঁঁচবে আমার কাছ থেকে জানপাখি।

আইরাত কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে কারণ এর উত্তর জানা নেই তার। আইরাত খেয়াল করে যে ধীরে ধীরে আব্রাহামের হাত ঢিলা হয়ে আসছে আইরাত সেই সুযোগ বুঝে আব্রাহামের হাত সরিয়ে এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত দৌড়ে চলে গেলে আব্রাহাম এক হাত পকেটে রেখে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত জলদি করে হলরুমে চলে আসে। হলরুমে আসতেই দেখে নিপা আর রাত্রি তার জন্য বসে অপেক্ষা করছে। আইরাতকে এভাবে হাপিয়ে হাপিয়ে আসতে দেখে নিপা তার দিকে এগিয়ে যায়।

নিপা;; কিরে তুই এভাবে হাপাচ্ছিস কেন আর কোথায় গিয়েছিলি তুই? আমি আর রাত্রি সেই কখন থেকে খুঁজে চলেছি তোকে।

আইরাত;; হুমম।

নিপা;; কি হুমম, কোথায় ছিলি?

আইরাত;; আরে শ্বাস তো নিতে দে মেরি মা।

রাত্রি;; আচ্ছা শোন মিজান আংকেল তাড়াতাড়ি আমাদের যেতে বললো, চল কাজি এসে পরেছে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে তো।

নিপা;; হ্যাঁ আসছি, আইরু চল।

আইরাত;; হুমম।

আইরাত তার আশেপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে খুব সাবধানে বিয়ের মন্ডপের কাছে চলে যায়। তার পাশেই রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকে। খুব সুন্দর করে সবকিছু এবং বিয়ের পেন্ডেল টা ডেকোরেট করা হয়েছে। একদম চোখ ধাধানো সুন্দর, যে কারোরই নজর কেড়ে নিবে। একপাশে কণে কে বসানো হয়েছে ওপরপাশে বরকে। আর বাকি সবাই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কাজি ধীরে ধীরে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আইরাত এই সবকিছুই অনেক খেয়াল করে দেখছে। মূলত এখন তার এবং আব্রাহামের বিয়ের কথা মনে পরছে। ঠিক এভাবেই ধুম ধাম করে তাদের বিয়ে টাও হয়েছিলো কিন্তু তাতে আইরাতের কোন মতামত ছিলো না। কাজি যখন কণে কে কবুল বলতে বললো তখন আইরাতকে জোড় করে কবুল বলানোর দৃশ্যটা তার চোখের দেয়ালে ভেসে ওঠে। চোখজোড়া না চাইলেও অশ্রুতে ভিজে উঠলো। ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে আইরাত। এরই মাঝে আব্রাহাম আইরাতের ঠিক পিছনে এসে দাড়িয়ে পরে। আব্রাহাম দেখে যে আইরাত এক নয়নে বিয়ের আসরের দিয়ে তাকিয়ে আছে, চোখে তার নোনাজল চিকচিক করছে। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারলো যে আইরাতের এখন তার বিয়ের কথাগুলোই মনে ভাসছে। আব্রাহাম আইরাতের হাত চেপে ধরে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে অন্যপাশে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাত ছোটার জন্য হাত মুচড়াচ্ছে। আব্রাহাম তখন বলে ওঠে..

আব্রাহাম;; এখানে অন্তত কোনরকম কোন সিন ক্রিয়েট করতে না চাইলে চুপচাপ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো নয়তো তুমি বেশ ভালো করেই জানো যে আমি কি কি করতে পারি।

আইরাত;; আপনি আসলেই একটা ফালতু, হাত ছাড়ুন আমার।

আব্রাহাম;; Just keep your mouth shut baby!!

আইরাত;; উফফ অসহ্য,, আমি..

আব্রাহাম;; ভালোবাসি তোমায়।

আইরাত;; 😒

আইরাত বাধ্য হয়ে আব্রাহামের সাথে সেখানেই দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু ওদিকে রাত্রির এতো টাই বিয়ের দিকে নজর ছিলো যে পাশ থেকে যে আইরাত সরে গেছে তা সে খেয়ালই করেনি। আইরাত চলে গেলে কিছুক্ষণ পর সেখানে অয়ন এসে দাড়িয়ে পরে। রাত্রি তো তার পাশে তাকায় নি পর্যন্ত, সে ভেবেছে যে তার পাশে এখনো আইরাতই আছে। তাই রাত্রি বলে ওঠে..

রাত্রি;; বেবিজান, দেখ দেখ সবকিছু কেমন সুন্দর লাগছে। আর দেখ না বর কেমন চোখে কণের দিকে তাকিয়ে আছে,, ইশশশস কি রোমান্টিক রে বেবি। (অয়নের শার্ট ধরে টেনে)

রাত্রি তো নিজের মতো করে বকবক করেই চলেছে, কিন্তু অয়ন তার পাশে তাকিয়ে দেখে যে একটু আগে যে মেয়ের ওপর পরে গিয়েছিলো এবং ঝগড়া হয়েছিলো এটা আর কেউ না সেই মেয়েটিই, অয়ন রাত্রির দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার হাতের দিকে তাকায়। দেখে যে রাত্রি বাচ্চাদের মতো করে অয়নের শার্টের হাতা ধরে টানছে আর বর-কণের দিকে তাকিয়ে এগুলো বলে যাচ্ছে। অয়ন কিছু বলছে না শুধু রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে। ওপরপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ না আসাতে রাত্রি আবারও শার্ট টেনে বলে ওঠে…

রাত্রি;; কিরে কিছু বলছিস না যে, তুই তো নিজেই সবকিছু করেছিস তাহলে কিছু তো বল!

________________

রাত্রি;; বোবা হয়ে গেলি নাকি…..

রাত্রি এবার তার পাশে তাকায়, পাশে তাকাতেই তার তো আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। অয়ন তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। রাত্রি ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে হাবলাকান্তের মতো করে, অয়ন তার হাতের দিকে তাকালে রাত্রিও অয়নের চোখ অনুসরণ করে তার হাতের দিকে তাকায় দেখে যে শার্টের হাতা খামছে ধরে আছে। রাত্রি তাড়াতাড়ি করে তার হাত সরিয়ে ফেলে। আসলে সে ভেবেছিলো যে তা হয়তো আইরাতের জামার হাতা কিন্তু তাকিয়ে দেখে তা পুরোই উলটা। রাত্রি শুকনো একটা ঢোক গিলে। অয়ন কিছু বলে না শুধু তাকিয়ে থাকে। তার রাত্রির এই মুখের হাল দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে কিন্তু এখন হাসা যাবে না। রাত্রি তার হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছে আর মনে মনে নিজেকেই একশ একটা গালি দিচ্ছে। সেখানেই কিছুক্ষন রাত্রি আর অয়ন দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু আড়চোখে একে ওপরকে দেখেই যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে রাত্রি সেখান থেকে কেটে পরে। যেনো সে নিজের প্রাণে বাঁচলো। রাত্রির এভাবে চলে যেতেই অয়ন হেসে ওঠে।

অয়ন;; হাহাহা😅, মেয়েটা পুরো পাগল।

ওদিকে আইরাত খুব কষ্টে নিজের কাছ থেকে আব্রাহামকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসে।

বিয়ে-শাদি সবকিছু শেষ হলে নিপা-আইরাত-রাত্রি চলে আসে। তারা তিনজন বাইরে বের হয়ে নিজেদের গাড়িতে ওঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু আব্রাহাম তো আর জানে না যে আইরাত বিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছে পরে সে জানতে পারে যে তারা চলে গেছে। এখন কেমন যেন আব্রাহামের কাছে সবকিছু বিরক্তিকর ঠেকছে। তাই আব্রাহাম কোন রকমে মিজান ইসলামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। বাইরে বের হতেই দুটো কালো গাড়ি আব্রাহামের চোখে পরে। আব্রাহাম সেদিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। কিছুক্ষন পর গাড়ি গুলোকে চলে যেতে দেখলে আব্রাহামের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে সেগুলো আর কেউ না বরং দুলালের চামচারা ছিলো যারা আইরাতকে ফলো করছে। আব্রাহামের মাথায় আগুন ধরে যায়। আব্রাহাম আর এক মূহুর্ত দেরি না করে অয়নকে সাথে নিয়ে গিয়ে সেই গাড়ি গুলোর পিছু করতে থাকে। অনেক সময় গাড়ির পিছু করার পর আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে তার রিভলবারটা বের করে। খুব সুক্ষ্মভাবে একটা গাড়ির পিছনের দু চাকাতে শুট করে দেয়। ফলে গাড়ি ব্রেক ফেইল করে একটা বড়োসড় খাম্বার সাথে বারি খায়। সামনের ডিকি থেকে ধোয়া উড়তে থাকে। গাড়ি বেশ ভালোই ডেমেজ হয়ে যায়। কিন্তু তবুও গাড়ি থেকে কেউ নামছে না দেখে আব্রাহাম নিজেই গাড়ি থেকে নেমে পরে তাদের গাড়ির সামনে চলে যায়। গিয়ে দেখে যে যেই লোকটা ড্রাইভ করছিলো তার মাথাতে গাড়ির ফ্রোন্ট গ্লাস ভেংে একদম মাথার ভিতরে ঢুকে গেছে, রক্ত ঝরে পরছে। ঠিক সেই সময়ই কেউ একজন তার হাত ধরে কোন রকমে গাড়ি থেকে নেমে পরে। তার হাতেও কাচ বিধে আছে যা থেকে অনরগল রক্ত ঝরছে। সামনে তাকিয়ে আব্রাহামকে দেখে দৌড়ে চলে যেতে চাইলে পিছন থেকে অয়ন এসে তাকে ধরে ফেলে। ঘাড় ধরে নিয়ে আব্রাহামের সামনে দাড় করিয়ে দেয়। আব্রাহাম শান্ত গলাতেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কেন এখানে এসেছিস?

__________________

আব্রাহাম;; দেখ সত্যি সত্যি সবকিছু বলে দে তাহলে প্রাণে বেঁচে যাবি নয়তো তোর জীবন আজ এখানেই ইন্না-লিল্লাহ। ( লোকটির মাথায় রিভলবার তাক করে)

লোকটি;;; না না না আমি বলছি, বলছি। আমি, আমি দুলালের পাঠানো লোক, তার কথাতেই কাজ করি। তিনি আইরাত মেডামের ওপর নজর রাখতে বলেছিলেন তাই তার পিছু করতে করতে এসে পরেছি।

আব্রাহামের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। রাগ সামলেতে না পেরে আব্রাহাম লোকটির অন্য আরেক হাতেও শুট করে দিলো। লোকটি চিল্লিয়ে ওঠে। আব্রাহাম লোকটির কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার ধরে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; শোন তোকে আধা মরা অবস্থায় ছেড়ে দিলাম। এখন তুই তোর দুলাল বসকে গিয়ে বলিস যে যদি নিজের জীবনের প্রতি তার বিন্দুমাত্র মায়া থেকে থাকে তাহলে যেন আমার আইরাতের দিক থেকে ওর নজর সরিয়ে ফেলে নয়তো দিন দুপুরে তাকে কুকুরের মৃত্যু মরতে হবে। নে এবার চোখের সামনে থেকে দূর হো।

আব্রাহাম লোকটিকে ছেড়ে দিলে লোকটি প্রানপণে দৌড় লাগিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম তার রিভলবার পকেটে ঢুকিয়ে গাড়িতে ওঠে পরে।

অয়ন;; দাভাই আমার কিছুই ঠিক লাগছে না, বউমনি কে এতো চোখে চোখে রাখছি আমরা কিন্তু তবুও যদি কিছু গড়বড় হয়ে যায়। আমার মন সায় দিচ্ছে না।

আব্রাহাম;; অয়ন তোর দাভাইয়ের ওপর তোর বিশ্বাস নেই!?

অয়ন;; কিযে বলো না দাভাই আমার নিজের ওপরও ততো টুকু বিশ্বাস নেই যতটা তোমার ওপর আছে।

আব্রাহাম;; তাহলে বেফিকার থাক, কিছুই হবে না। আর দুলাল হাহ্ ও আমার কাছে তুচ্ছ একটা মশার সমান।

অয়ন;; তাহলে দাভাই কেন তুই ওকে একেবারেই শেষ করে দিচ্ছিস না বলতো!?

আব্রাহাম;; That’s the game bro, আসলে কি জানিস সমানে সমানে না মিললে খেলা জমে না, হোক সেটা বন্ধুত্ব বা শত্রুতা। দুলাল ঠিক কার সাথে টক্কর নিতে এসেছে তা সে নিজেও জানে না। তো আমি দেখি ও কতো দূর কি করতে পারে।

অয়ন;; তুই একটা মাস্টার মাইন্ড ভাই, তোর মাথায় কখন কি চলে তা বলা খুবই মুশকিল।

অয়নের কথা আব্রাহাম মুচকি হাসে। ড্রাইভ করে একসময় বাড়ি চলে আসে তারা।





অন্যদিকে নিপা-আইরাত-রাত্রিও তাদের ফ্লেটে চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে তারা খাবার টেবিলে বসে পরে। নিপা তাকিয়ে দেখে রাত্রি আর আইরাত তাদের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে। গলা ঝেড়ে হঠাৎ করেই নিপা সংকোচ নিয়ে বলে ওঠে…

নিপা;; আসলে বলছিলাম কি..

আইরাত;; হুমম কি,,

নিপা;; না মানে তোদের সাথে আমার না কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো আরকি।

আইরাত;; হুমমম শুনছি তো বলে ফেল।

নিপা;; আসলে আমি না এমন কিছু একটা করতে চাইনি তোদের অনেক দিন আগেই বলে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি সেই সুযোগ টাই পায়নি কখনো।

রাত্রি;; সিরিয়াস কিছু একটা মনে হচ্ছে বেপার কিরে?

নিপা;; অনেক বেশি সরি রে তোদের আসলে আমি কিভাবে বলবো কোথা থেকে শুরু করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

আইরাত;; নিপু, কি হয়েছে বল তো এবার কিন্তু আমাদের বেশ চিন্তা হচ্ছে। প্লিজ এভাবে ভয় দেখাস না, কি হয়েছে বল।

নিপা;; আগে প্রমিস কর তোরা দুজন যে আমার ওপর রাগ করবি না কোন প্রকার কোন অভিমান করবি না। আর আমাকে মাফ করে দিবি।

রাত্রি;; এগুলো কি বলছিস তুই নিপু বোন হোস তুই আমাদের তুই যত বড়ো ভুলই করে থাকিস না কেন তা আমরা ভুলে যাবো এতে ক্ষমা করার কি আছে প্লিজ সব কিছু খুলে বল আমাদের।

আইরাত;; নিপু প্লিজ বল, ভয় লাগছে এখন কিন্তু।

নিপা;; Actually i am in love with a guy.. (চোখ বন্ধ করে একদমে কথা টা বলে উঠলো)

আইরাত;; হ্যাঁ তো কি হয়েছে….

রাত্রি;; হুমমম।

রাত্রি আর আইরাত দুজনই খাচ্ছিলো আর নিপার কথা শুনছিলো কিন্তু পরমুহূর্তেই তারা খাওয়া থামিয়ে দিলো।এবং মনে পরলো যে নিপা মাত্রই তাদের কি বলেছে। রাত্রি আর আইরাত দুজন একে ওপরে মুখ তাকাতাকি করছে। সাথে সাথেই তারা দুজন চিল্লিয়ে উঠলো।

রাত্রি-আইরাত;; কিইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই!!

নিপা;; হ্যাঁ (মাথা নিচু করে)

আইরাত;; ওও আল্লাহ! মেয়ে বলে কি, নিপু Is it true?!

নিপা;; হুমমম।

রাত্রি;; আল্লাহ গো ক্ষনে ক্ষনে আর কি কি যে শুনতে হবে।

আইরাত;; তো কবে থেকে চলছে এইসব?

নিপা;; বেশি না বেশি না মাত্র ৬ মাস😁।

নিপার কথা শুনে আইরাতের খাওয়া পুরোপুরি থেমেই গেলো মাথায় হাত চলে গেলো তার। আর রাত্রি তো পারছে না এখন তার চেয়ার থেকে উলটে পরে যেতে।

আইরাত;; তুই আমাদের বোন নামে কলংক। ৬-৬ টা মাস যাবত তোর চক্কর চলছে আর আমাদের বলার প্রয়োজনবোধ করিস নি তুই। এমনকি আমরা টের পর্যন্ত পাই নি। তাহলে তুই দেখা করতে যেতিস ফোনে কথা বলতিস তখনও টের পায়নি আমরা। আমরা তো ভাবতাম যে তুই কোন এক ক্লায়িন্টের সাথে কথা বলছিস।

রাত্রি;; আর এই হচ্ছে তার ক্লাইন্টের নমুনা দেখ দেখ দেখে নে।

আইরাত-রাত্রি উঠে এসে নিপার দুপাশে দাঁড়িয়ে পরলো। দুজনই তাদের কোমড়ে হাত দিয়ে রেখেছে। যেন কোন পুলিশ তাদের অপরাধী কে ধরে এনেছে। নিপা পারছে না কেদে দিয়ে।

আইরাত;; নাম কি ওর?

রাত্রি;; কোথায় থাকে?

আইরাত;; কি করে?

রাত্রি;; বাসায় কে কে আছেন?

আইরাত;; ছেলের কোন এক্স টেক্স নেই তো আবার হুমম বল বল?

রাত্রি;; কিরে বল।

আইরাত;; কিছু বলছিস না কেন? বল হারামি!

নিপা;; ওমায়ায়ায়ায়ায়ায়া আমি এই কাদের পাল্লায় পরলাম গো। কাদের কি বলে দিলাম। ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি।

আইরাত;; কোন ছাড়াছাড়ি নেই এখনই সবকিছু বলবি আমাদের বল।

নিপা;; আরে বলার সময়টুকু তো দিবি নাকি। দুই শাকচুন্নির মতো করে দুপাশে দাঁড়িয়ে আছিস। সামনে গিয়ে বোস সবকিছু বলছি।

আইরাত আর রাত্রি আবার তাদের জায়গায় গিয়ে বসে পরে। তবে আইরাত যাওয়ার আগে নিপার পিঠে ঠাসস করে একটা চড় মেরে যায়। নিপা “উফফ” করে ওঠে। তারা সামনে গিয়ে বসলে নিপা এক এক করে সবকিছু খুলে বলতে থাকে।

নিপা;; ছেলের নাম নিরব, পেশাতে একজন ডাক্তার। পুরো দুবছর আমার পিছনে ঘুরঘুর করেছে অবশেষে তাকে মেনে নিলাম।

রাত্রি;; ওহহহ এই তাহলে সেই নিরব যাকে তুই বার বার রিজেক্ট করতি।

আইরাত;; হুমমম বুঝেছি বুঝেছি। এই মেডাম নিরবকে রিজেক্ট করতে করতে কখন যে নিরবেই সেই নিরবের প্রেমে পরে গেছে তা তিনি নিজেও জানেন না। কি তাই তো? (নিপার দিকে তাকিয়ে)

নিপা;; হ্যাঁ (লজ্জা পেয়ে)

আইরাত;; আয় হায়ায়, দেখো দেখো ছুপা রুস্তাম এখন কিভাবে লজ্জা পাচ্ছে।

রাত্রি;; থাক থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবে না, যা করার তা তো করেই ফেলেছো পেয়ারি বেহনা।

আইরাত হেসে দিয়ে উঠে গিয়ে নিপার গাল টেনে দেয়।

আইরাত;; আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছেই এখন কিন্তু ট্রিট দিতে হবে। আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।

রাত্রি;; তা আর বলতে।

নিপা;; আহা আচ্ছা বাবা আচ্ছা সবই পাবি। কিন্তু এবার আমার কাছেও একটা জিনিস আছে।

রাত্রি;; কি কি?

নিপা উঠে গিয়ে বেশ বড়োসড় একটা বক্স সাবধানে নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রেখে দিলো। সাথে একটা মোম আর বেশ কিছু পার্টি স্প্রে। বক্স টা খুলতেই রাত্রির চোখ গোল গোল হয়ে গেলো। কেননা বক্সে ইয়ায়ায়ায়া বড় একটা চকলেট কেক। রাত্রি তা দেখে লাফিয়ে উঠলো।

নিপা;; আমার বোনের বার্থে আমি কি করে সেলিব্রেশন না করি হুমম। মানলাম যে সকালে একদম মনে ছিলো না কিন্তু ভাবলাম যে এখন এটা নিয়ে গিয়ে তোদের সারপ্রাইজ দি।

আইরাত;; কখন কিনলি এটা তুই?

নিপা;; বিয়ের সময় যখন ফুল আনতে গিয়েছিলাম তখনই এনে রেখেছি। তো কেমন লাগলো?

রাত্রি;; অনেককককক বেশি সুন্দর।

নিপা;; নে এবার তাড়াতাড়ি কেক টা কেটে খাইয়ে দে।

রাত্রি আর দেরি না করে চাকু নিয়ে এলো। নিপা মোম গুলো এক এক করে কেকের ওপর সাজিয়ে দিলো, আইরাত মোম জ্বালিয়ে দিলো। রাত্রি এসে ফু দিয়ে সব মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে কেক কেটে দিলো সাথে সাথে নিপা আর আইরাত হেপি বার্থডে বলে চিল্লিয়ে ওঠলো। আইরাত জোড় করে সবার ওপর এবং পুরো ঘরে স্প্রে করে দিলো। রাত্রি প্রথমে আইরাতকে তারপর নিপাকে কেক খাইয়ে দিলো। আইরাত দুষ্টমি করে কিছুটা কেক নিপা আর রাত্রির গালে নাকে মাখিয়ে দিলো। নিপা আর রাত্রিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রি নয় তারাও আইরাতকে একদম কেক দিয়ে শেষ করে দিলো। এভাবেই কেক কেটে সব খুনশুটি শেষ করে তারা ফ্রেশ হয়ে এলো। বারান্দায় বসে তিনজন মিলে আড্ডা দিচ্ছে, তিনজনের হাতে তিন কাপ কফির মগ। খাচ্ছে আর গল্পে মেতে ওঠেছে। তখনই আইরাতের ফোনে call আসে আইরাত ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার, তাই কিছুটা কপাল কুচকে তাকায় সেদিকে। আইরাত কফির মগটা রেলিং এর ওপর রেখে কিছুটা দূরে এসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।

আইরাত;; হ্যালো,,

আব্রাহাম;; আমাকে না বলেই কোন সাহসে বিয়ে বাড়ি থেকে একা চলে এসেছো আইরাত?

আব্রাহামের কন্ঠ শুনে আইরাত চমকে ওঠে। কেননা আব্রাহাম বেশ কঠিন স্বরে কথা বলছে। আব্রাহাম সাধারণত এভাবে তার সাথে কথা বলে না কিন্তু যখন কোনকিছু নিয়ে বেশি সিরিয়াস বা রেগে থাকে তখনই এভাবে কথা বলে।

আইরাত;; আপনি আমার ফোন নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?

আব্রাহাম;; আমি যা বলছি তার উত্তর দাও, কেনো আমাকে না বলে একা চলে এসেছ?

আইরাত;; আরে আজব তো আমি আপনাকে কেন জবাবদিহি করবো আর একা কোথায় নিপা আর রাত্রি ছিলো তো আমার সাথে।

আব্রাহাম;; তাই বলে তুমি আমাকে একটা বার বলবে না। জানো কতোটা টেনশন হয় আমার। আমাকে তো বুঝবে না শুধু পারো আমাকে টেনশনের মধ্যে ফেলতে।

আইরাত;; আপনাকে বলার কোন প্রয়োজন মনে করিনি আমি। এখন রাখুন।

আব্রাহাম;; প্রয়োজন আছে কি নেই তা হারে হারে টের পায়িয়ে দিবো তোমাকে মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আব্রাহাম আইরাতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। আইরাত কান থেকে তার ফোন সরিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে আবার বারান্দায় চলে যায় এবং গল্প করতে শুরু করে। এদিকে আব্রাহাম তার রকিং চেয়ারে বসে আছে হাতে এক আধা খাওয়া Whiskey এর বোতল।










🌸🌼চলবে~~~~~