Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1508



ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৫

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৫ : #A_kiss
লেখিকা : #Lucky

ইথান এবার বাধ্য হয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
সে রেগে গেছে।
আমি মুচকি হেসে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
সে সামনে দাড়িয়ে থাকা মহিলাগুলোকে দেখে একটু অসস্তিতে পরে গেল। কারণ তারা মিটমিটিয়ে হাসছে।
“এই মেয়ের নেশা চড়ে গেছে।” নিজের কপাল চাপড়ে বলল এক মহিলা।
ইথান একটু ইতস্তত করে তাকে বলল, আপনি একটু ওর শাড়িটা চেঞ্জ করিয়ে দিতে পারবেন?
“তোমার বউ, তুমি করাও বাপু। বউয়ের এত্তটুকু সেবাও কত্তে পারবে নাকো? আমার সোয়ামি ত আমার জন্য কত কি করে। ছেলে মানুষ আজকাল অনেক বেহুদ্দা হয়ে যাচ্ছে। বউ তাদের সেবা কব্বে কিন্তু তারা কব্বে না। মানসম্মেন চলে যাবে!”
ইথান থ মেরে রইল। কি বলবে বুঝতে পারল না।
“চুপ ঘষেটি বুড়ি কোথাকার। সে যথেষ্ট করে আমার জন্য। এই শাড়ি সে-ই পড়িয়েছে আমাকে। আর দরকার হলে সে নিজেই চেঞ্জ করে দিবে। কোনো কাউকে লাগবে না আমার।” চোখ রাঙিয়ে বললাম আমি।
ওই মহিলা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আর ইথান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
অন্যদিকে বাকি সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে।
“সত্যিই এখন ঠান্ডা লাগছে।” কাপা গলায় বললাম আমি।
সাথে সাথে ইথান আমাকে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,”কেনো যে কথা শোনো না আর উল্টাপাল্টা করো। আমার উচিতই হয়নি তোমার কথায় এখানে আসা।”
ওনার কথা শেষ হতে না হতেই আমি একহাত দিয়ে তার গাল স্পর্শ করে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলাম।
উনি আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালেন। যদিও কিছু বললেন না তবে তার হৃদ স্পন্দন যে দ্রুত গতিতে চলছে তা বুঝতে পারলাম।
আমি মৃদু হেসে আবার ওনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
উনি আমাকে কাঠের চেয়ারটার উপর বসিয়ে ওনার গলা থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলেন।
হাত ধরে কিছু আন্দাজ করেই উনি আমার কপালে হাত দিলেন।
“তোমার আবার জ্বর আসবে।” মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে বলল ইথান।
আমি অনেক কষ্টে খুলে রাখা চোখে ওনার দিকে তাকালাম। শরীর ঠান্ডায় মৃদু কাপছে আমার।
“তোমাকে চেঞ্জ করিয়ে কি পড়াবো আমি?” ইথান অস্থির চোখে এদিকে ওদিকে ঘুরে তাকিয়ে খুজতে খুজতে বলল।
আমি একপলক তার দিকে তাকিয়ে তারপর হাতের এক আঙুল তার বুকে ঠেকিয়ে দিয়ে বললাম, “এইটা।”
ইথান চোখ কুঞ্চিত করে আমার হাতের দিকে তাকালো।
আমি চেয়ারে গা হেলিয়ে দিলাম। মাথা ঝিম ঝিম করছে।
উনি আর দেরি না করে দরজা বন্ধ করে হেরিকেনের আলো হালকা সীমিত করে নিলেন।
আর সত্যি সত্যিই আমার শাড়ি বদলে দিয়ে নিজের শার্ট পড়িয়ে দিলেন।
তারপর আমাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে উঠে যেতে লাগলেন।
তখনি আমি আলতো করে তার হাত ধরে নিয়ে বললাম, আমাকে রেখে কেনো যাচ্ছেন?
“তোমার গায়ে জ্বর আসছে তাই একটা ব্লাংকেটের আনিয়ে রাখতে হবে।” বলল ইথান।
“না, আপনি এখন আমার কাছে থাকবেন।” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“বাট…”
“থাকুন না!”
ইথান আর কথা না বাড়িয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। আমি মৃদু হেসে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথান আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখল।
আমি তখন ইথানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। এতে সেও একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু হাসলো। আর আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল।
.
সকালে ঝলমলে রোদ চোখে পরতেই চোখ হালকা খুললাম।
খুলেই কপালে ঠান্ডা কাপড়ের মত কিছু আচ করতে পারলাম। এদিকে ঠোঁটও পুরো শুকিয়ে গেছে। অনেক পানি পিপাসাও পেয়েছে।
অল্প সময় নিয়ে পুরোপুরি চোখ খুললাম। তারপর গায়ের চাদরটা হালকা সরিয়ে কপাল থেকে একটা কাপড় হাত দিয়ে নামালাম আর নিজের চোখের সামনে ধরলাম।
‘জ্বর এসেছিলো নাকি কালও?’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম।
পরক্ষণেই নিজের লম্বা হাতার মেরুন টি-শার্টের দিকে চোখ পরতেই চোখ গোল হয়ে গেল আমার।
তখনি চোখের সামনে কাল রাতের কিছু মুহুর্ত ভেসে উঠল। উনি নিজে আমার শাড়ি বলদে ছিলেন?
তেমনই ত মনে হয়!
আমি লজ্জায় নুয়ে গেলাম।
আমি কিছু উল্টাপাল্টা বলেছি বা করেছি কি?
যদিও সম্পূর্ণ ভাবে সবটা মনেই পড়ছে না।
ভাবতে ভাবতেই ইথান ঘরে ঢুকলো।
তার গায়ে শার্ট নেই।
ওকে দেখার সাথে সাথে আমি উঠে বসে গায়ের চাদরটা খামচে ধরলাম। আর একটা ঢোক গিলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
অনেক বেশিই লজ্জা লাগছে।

উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার দিকে ঝুকলেন আর এক হাত দিয়ে আমার কপাল স্পর্শ করলেন।
মুর্হুতেই সারা শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেল।
“জ্বর এখন হালকা আছে।” বলল ইথান।
আমি চোখ তুলে তাকাতে পারলাম না।
ইথান মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে আমার মুখটা নিজের দিকে তুলে ধরল।
আমি চোখ বড়সড় করে ইথানের দিকে তাকালাম।
“তোমার গাল লাল হয়ে গেছে।”
আমি সাথে সাথে ওনার হাত সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। নিঃশ্বাস অতি দ্রুত গতিতে চলতে লাগল।
ইথান সেই মুচকি হাসির সাথেই বলল “রেডি হও। ষোলো ঘন্টা পেরিয়ে উনিশ ঘন্টা বিশ মিনিট চলছে।”
শোনার সাথে সাথে আমি আহত চোখে তাকালাম।
“আপনার ত… তাহলে চলে যেতে হবে! আরো আগে বের হবার কথা ছিলো না?” নীচু আওয়াজে বললাম।
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল “কথা ত ছিলো। যাই হোক, তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপরই বের হয়ে যাব।”
আমি মন মরা হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আচমকা ইথান আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
আমি মুখে হাসির আভা টেনে মাথা নিচু করে নিলাম।
“কাল তোমার এই লজ্জা কোথায় ছিল?” বলল ইথান।
চমকে গেলাম আমি ইথানের কথাটা শুনে।
কাল কি কি করেছি আমি!
ইথান উঠে গিয়ে চেয়ার থেকে ব্লাউজ পেটিকোট আনলো। আর আমার সামনে রেখে বলল, এগুলো পড়ো। তারপর ত শাড়ি আমাকেই পড়াতে হবে।
“আ…আমি একাই পড়ব। আ..আপনি বাহিরে গিয়ে দাড়ান।” এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম আমি।
“কেনো?” দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ইথান।
আমি দ্বিধায় পরে গেলাম। এমনিই লজ্জা লাগছে তার উপর আরো লজ্জা দিতে চাচ্ছেন উনি।
“আপনি যান ত।”
আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
উনি মৃদু হেসে আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে দরজা এগিয়ে দিলেন।
আমি দ্রুত কোনো রকমে শাড়ি পরে নিলাম। যদিও কুচিটা হয়নি।
তাও যা হয়েছে তা-ই যথেষ্ট।
আমি দরজা খুলে বাহিরে এলাম। আর সাথে সাথেই মেজাজ বিঘড়ে গেল।
ইথান ওর এক হাত কোমড়ে রেখে অন্যহাতে মোবাইল ধরে কিছু করছে। আর তার থেকে একটু দূরে কতগুলো মেয়ে ইথানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
এসব মেয়েদের কি লজ্জা শরম নেই! অন্যের বরের দিকে তাকায়!
আমি দ্রুতই ইথানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম আর অভিমানী সুরে বললাম, এখনে কি করছেন আপনি? এখনি রুমে ঢুকেন।
সে তার ফোনের দিকেই গভীর মনোযোগ দিয়ে বলল, হ্যা আসছি।
আমি রেগে ঝট করে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিলাম।
“কি করছ তুমি?” অবাক হয়ে বলল ইথান।
আমি তাকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে পিঠে আমার হাত দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে বললাম, “এখনি রুমে যাবেন।”
তারপর পিছনের মেয়েগুলোর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।
তারা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে অন্যদিকে তাকালো।
রুমের ভিতরে ওনাকে নিয়ে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম আর তবেই সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
তারপর ওনার দিকে ঘুরে চোখ পাকিয়ে বললাম, “আপনাকে বাহিরে ফ্যাশন শো করতে বলেছি?”
ইথান না বুঝে প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো।
“অন্য মেয়েরা হা করে ছিলো সেদিকে খেয়াল ছিল? এরপর থেকে আর কোনো দিন অন্য মেয়েদের সামনে এভাবে যাবেন না। শুধুমাত্র আমার সামনে এভাবে থাকবেন। আর কারো না।” ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে আমি দম নিলাম।
কথা শেষ হতেই উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আর পিছাতে লাগলাম।
“ক…কি?”
উনি উত্তর না দিয়ে এগুতেই লাগলেন।
পিছিয়ে যেতে যেতে এক পর্যায়ে দরজাটায় পিঠ ঠেকে গেলো।
উনি আমার দুইপাশে দুই হাত রেখে আমার দিকে ঝুকতেই আমি চোখমুখ শক্ত করে বন্ধ করে নিলাম।
“এভাবে দেখতে চেয়েছো, তাহলে এখন চোখ বন্ধ করে আছ কেনো?” বাকা হাসির সাথে বলল ইথান।
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ খুললাম আর আমতা আমতা করে বললাম, “আমি ত…।”
ইথান আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে সরে দাড়ালো।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথান আমার শাড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে ফেলল।
“কি?” বললাম আমি।
“জানতাম পারবা না।” বলতে বলতে ইথান আমার কাছে এসে দাড়িয়ে কুচিটা খুলে দিল।
আমি লাজুক চোখে ওর দিকে তাকালাম।
সে সুন্দর করে কুচিটা ঠিক করতে লাগল। তবে এবার ইউটিউব ছাড়াই। তবে বেশ ভালই হলো। কিন্তু সে কুচি গুজে দেওয়ার আগেই আমি অপ্রস্তুত হয়ে সেটা তার হাত থেকে নিয়ে নিজে গুজে নিলাম।
তারপর এক মুহুর্ত না থেমে দ্রুত গতিতে বাহিরে বের হয়ে যেতে যেতে বললাম, আপনার শার্ট চেয়ারের উপরে।
বলতে গেলে হালকা লজ্জা সেই সকাল থেকে ভর করে আছে।

“কিরে মুখপুরি, এমন লাল নীল অবস্থা ক্যান তোর?” বলল ঠাকুমা।
আমি আড়চোখে ঠাকুমার দিকে তাকালাম।
তারপর একটু ভাব নিয়ে বললাম, কই না ত!
“তোর লজ্জাশরম অনেক কম ছেমড়ি। ছাইপাঁশ গিলে পোলাডার সাথে কি কি -ই না করছস তুই!” ঠাকুমা কপাল চাপড়ে বলল।
আমি হা হয়ে প্রশ্ন করলাম, কি করেছি?
“কি করস নাই! মধ্যরাত অব্দি ত জালাইছসই। পরে শেষ রাতে বমিও করছস। তারপর শুরু হলো জ্বর। ছেলেটাকে ঘুমোতে আর দিলি কোথায়!”

শুনে আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
সারারাত এগুলো করেছেন উনি না ঘুমিয়ে!
এখন এই ক্লান্ত শরীরে চিটাগং যাবেন?
চিন্তা করেই আমার মন কেমন করতে লাগল।

গাড়িতে বসে আমি ইথানের দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
“কি হয়েছে?” ড্রাইভ করতে করতে আমার দিকে একপলক তাকালো সে।
“আপনি কাল আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন তাই না? আমি ঘুমোতেও দিই নি আপনাকে!” চোখ নামিয়ে দোষী গলায় বললাম।
“ঘুমোতে ত তুমি আমাকে সেই দুই রাত দেওনি যেই দুই রাত তুমি আমার থেকে দূরে ছিলে।” সহজ গলায় বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
সে আড়চোখে তাকিয়ে বলল, কি?
আমি লাজুক হেসে না সূচক মাথা নাড়লাম।

উনি আলতো হেসে আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নিলেন। আর এক হাতে ড্রাইভিং করতে লাগলেন।
আমি হালকা চমকে গেলাম। তবে অনেক বেশিই ভালো লাগা কাজ করছে। কিন্তু আবার ওনার ছেড়ে যাবার কথাও কষ্ট দিচ্ছে।
আমি তার হাতটা শক্ত করে ধরলাম। আর অনুনয় করে বললাম,”আমাকে প্লিজ নিয়ে যান!”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু স্বরে বলল, আমি চাইলেও পারবো না। তোমার মা আগেই বলেছে যে তুমি জানলেই জেদ করবা। আর যেহেতু তুমি অসুস্থ তাই আমি নিজেই তোমার মা কে বলেছি যে তোমাকে আমি নিয়ে যাব না। তাই আমাকে রিকুয়েষ্ট করেও লাভ হবে না।
ওনার কথা শেষ হতে না হতেই আমি ভ্যা করে কেদে দিলাম।
সাথে সাথে ইথান চমকে ব্রেক কষে দিলো।
“আপনি অনেক খারাপ। আমাকে না বলে কেনো সিদ্ধান্ত নিলেন?” কাদতে কাদতে বললাম আমি।
ইথান আমার কান্ড দেখে হেসে দিলো।
আমি কান্না থামিয়ে হালকা নাক টেনে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে তাকালাম। আর রাগ মিশ্রিত গলায় বললাম, “হাসি পাচ্ছে আপনার?”
ইথান ঠোঁট আলতো করে কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো।
আমি কটমট নজরে তাকিয়ে তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আর তার হাতের মুঠোয় থাকা নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।
যদিও ব্যর্থ চেষ্টা। কারণ সে ছাড়ছেই না।
আমি অভিমানী সুরে বললাম, “এখন ধরে রেখেছেন কেনো? একটু পরে ত ছেড়ে দিয়ে চলেই যাবেন! তখন ত আর ধরে রাখতে ইচ্ছে করবে না।”
আমার কথা শেষ হতেই সে আমার গালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
আমি হালকা শিউরে উঠে বড়সড় চোখ করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এটাও অনেক অপ্রত্যাশিত ছিলো।
ইথান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ফিরে এসে এক সেকেন্ডও ছাড় দেব না তোমাকে। মনে রেখো।
আমি চোখ বন্ধ করে শাড়ি খামচে ধরলাম। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি এসে থেমেছে।
সে সরে গিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আর ইনিয়েবিনিয়ে তাকে দেখে যেতে লাগলাম।
সে মৃদু হাসির সাথে এক হাতে ড্রাইভিং করছে। আর অন্য হাত দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৩+১৪

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব-১৩+১৪ #miss_you_to_the_moon_and_back
লেখিকা : #Lucky

”দরজা আটকাচ্ছেন কেনো?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
“বলা ত যায় না, রাতে তোমার আবার কি করতে ইচ্ছে হয়! তুমি ত সুযোগ এর অপেক্ষা করতেই থাকো।” বলল ইথান।
উনি আমাকে নিয়ে আবার মজা করছেন। আসলে মজা না অপমান করছে।
আমার গা জ্বলে গেলেও আমি কিছু না বলে শুয়ে পরলাম। জীবনেও যাব না ওনার কাছে৷ এমন প্রতিশোধ নিব আমি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলাম যে আমি ইথানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা গুজে আছি।
নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না!
শেষ পর্যন্ত আবার আমিই এসে তার বেডে শুয়ে পরলাম?
আমি মাথা তুলে ইথানের দিকে তাকালাম। সে ঘুমে ব্যস্ত।
তার ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে আমার কেটে পরা উচিত। নাহলে আরেক দফা মজা নেবে।
কিন্তু আমার ত কেটে পরতেও ইচ্ছে করছে না।
কি সুন্দর জড়িয়ে ধরে আছে সে। এভাবেই থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি মৃদু হেসে ইথানের মুখের দিকে তাকালাম।
কি শান্তিতেই না ঘুমাচ্ছে।
আমি মৃদু হাসির সাথে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
খানিক বাদে ইথান নড়েচড়ে চোখ খুলল।
সাথে সাথে আমার হাসি গায়েব হয়ে গেল।
আর আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
ইথান স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকেই তাকিয়ে রইল। তারপর ওর এক হাত দিয়ে আলতো করে আমার গাল স্পর্শ করল।
আমি অবাক হয়ে ইথানের চোখের দিকে তাকালাম।
হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলতে লাগল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। আর নিজের অজান্তে ওর ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিলাম।
তারপর নিজের চোখটা শক্ত করে বন্ধ করে ফেললাম।
ওর নিঃশ্বাস আমার মুখে পরতেই আমি ওর কাধের কাছের জামাটা আঁকড়ে ধরলাম।
ঠিক তখনি উল্লুক মার্কা এক নার্স এসে দরজায় নক করলো আর বলল, “এটা লক হলো কিভাবে!”
তাই ঝট করে ইথান এক হাত ধরে টেনে আমাকে বসিয়ে দিল আর নিজেও বসে পরলো।
দুইজনেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম।
আমি চোখ নামিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম। অল্প অল্প লজ্জাও লাগছে। কিন্তু যা হচ্ছিলো তা হতে দিলে কি হত!
নার্সের বাচ্চা নার্স। ওকে কেউ পারমানবিক বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিত!
ইথান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
নার্সটা রুমে ঢুকে একবার আমার আর একবার ইথানের দিকে তাকাতে লাগল।
এমন ভাব করছে যেন দরজা আটকে আমরা কি করছিলাম সবই সে বুঝতে পারছে।
অসভ্য।
“আপনার কোনো কাজ আছে?” কপাল কুচকে বলে ফেললাম আমি।
“চেক আপ করার জন্যই। ফিভার।” একটু মেকি হেসে বলল নার্সটা।
শুনেই বিরক্ত লাগছে আমার। সুন্দর একটা মূহুর্ত নষ্ট করে চেক আপ করতে এসেছে।
আমি এক পলক ইথানের দিকে তাকালাম। সে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
“ইয়া সিওর।” বলে ইথান নিজের বেডে গিয়ে বসলো।
তখনি খেয়াল হলো যে আমি নিজের বেডেই ছিলাম। ইথান আমার বেডে এসেছিলো।
আমি ইথানকে কিছু বলার আগেই নার্সটা বলল, ম্যাম পালস চেক করব।
আমি নার্সের দিকে হাতটা এগিয়ে দিলাম। তখনি আমার মা হন্তদন্ত করে এসে কেবিনে ঢুকল।
আমি অনেক বেশিই অবাক হলাম।
তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগল। কারণ মায়ের মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
হয়তো আমার অসুস্থতার কথা শুনে।
মা দ্রুত এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিল। প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে সে।
আমার এই সামান্য জ্বর জিনিসটাকে সে এত সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছে বলার মত না।
আমাকে হারানোর ভয় সে বরাবরই পায়।
বাবা মারা যাওয়ার পর একমাত্র আমিই তার সব।
আর ছোট থেকে আমিও অনেক দুর্বল ছিলাম।
ঘন ঘন অসুস্থও হতাম। এজন্য সে আরোই চিন্তা করে।
“মা আমি একদম ঠিক আছি। দেখো।” আশ্বাস দিয়ে বললাম আমি।
মা আমাকে ছেড়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলল,”কত শুকিয়ে গেছিস! তাও বলিস ঠিক আছি?”
আমি কিছু বলার আগেই নার্সটা বলল,”উনি এখন সুস্থই আছে। শুধু একটু দুর্বল। খাওয়া দাওয়া ভাল মত করলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
“মনে হচ্ছে সুস্থ কিন্তু আসলে তা না। ছোট বেলা থেকেই এমন। একটু অসুস্থ হলে সারতে অনেক সময় লাগে।” অস্থির হয়ে বলল মা।
এখন তাকে বোঝানো দায়। তার চিন্তা যা বলছে সেটাই সঠিক তার কাছে। হাজার বললেও বুঝবেই না।
তার মুখটা দেখেই মায়া লাগছে।
আমি মায়ের দুই গাল আমার দুই হাতে নিয়ে বললাম, “নিজের কি অবস্থা করেছ এটা? এত টেনশন নেওয়া ঠিক না।”
“বাড়ি নিয়ে যাব তোকে আমি। বলেছি স্বর্নাকে আমি। আমার চোখের সামনে সুস্থ হবি তারপর আবার শশুড়বাড়ি দিয়ে আসবো।” জলে চোখ ভিজে এসেছে কথা বলতে বলতে মায়ের।
স্বর্না মানে ত ইথানের মা। যেহুতু পারমিশন পেয়েই গেছে সেহেতু মা আমাকে বাসায় না নিয়ে ছাড়বেই না।
“উফ মা। আচ্ছা আচ্ছা, কেদো না। যাব আমি।” চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম আমি।
“আজই নিয়ে যাব।” হালকা হাসির আভা নিয়ে বলল মা।
“হ্যা বাবা হ্যা, আজই নিয়ে যেও।” নরম গলায় বললাম আমি।
মা এবার যেন একটু সস্তি পেল।
কিন্তু এতটুকু সময়ে একজনের কথা ত আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সেটা হলো ইথান।
মনে পরতেই ওর দিকে তাকালাম।
সেও আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
কত দিনের জন্য যাচ্ছি তাও ত জানিনা। আর এই মহাশয় আমাকে মিস করবে কি না জানিনা কিন্তু আমি ত মিস করবো।
“তুমিও অসুস্থ হয়ে গেছ?” মা ইথানকে দেখে অবাক হয়ে বলল।
“আমি সুস্থই আছি। একটা বেড লাগত তাই এভাবে ভর্তি হয়ে গেলাম।” মৃদু হেসে বলল ইথান।
আমার মা হেসে দিলো।
“আমি কয়েকদিনের জন্য ওকে নিয়ে যাই!” আমার মা বলল ইথানকে।
“সিওর।” গাম্ভীর্য ধরে রেখেই স্বাভাবিক ভাবে বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। সে নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
বাহ! কি সুন্দর হ্যা বলে দিলো!
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। প্রচন্ড বিরক্তি কাজ করছে এখন।
“রেডি হয়ে নে।” বলল মা।
নার্সটা আমার পরনের জামাটা দিয়ে গেল। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই হস্পিটাল ড্রেস বদলে, সেটা পরে রেডি হয়ে গেলাম।
আমি বের হবার পর উনি রেডি হয়ে গেলেন।
উনি নিজেও রিলিজ হবেন।

পুরো সময়টা আমি ইথানের দিকে আর তাকালামই না। মায়ের সাথে সাথেই রইলাম। রাগ হচ্ছে প্রচুর।
গাড়িতে আগে আগে উঠে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সীটে মাথা হেলিয়ে দিলাম।
মা গাড়িতে ঢুকে বসতে বসতে বলল, “কিরে তুই ওকে কিছু বলবি না যাওয়ার আগে?”
আমি আগে থেকেই চোখ বন্ধ করে ছিলাম। তাই এখন এমন ভান করে রইলাম যেন ঘুমিয়ে গেছি।
মাও আর কিছু বলল না।
.
বাসায় এসে এখন উঠতে বসতে কিছুই ভাল লাগছে না। মা এনেছে আমাকে সুস্থ করতে। কিন্তু ইথানকে মনে করে করে আমি ত উলটো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
না খেতে ভালো লাগছে, আর না ঘুমোতে।
মা মনে করছে আমি প্রচন্ড রকমের অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার রুচি নেই খাওয়ায়।
এদিকে ইথানকে যে ফোন দিব নিজের ফোনও রেখে এসেছি।
একদিন ত হতে চলল। আর সহ্য হচ্ছে না। তার কি আদৌ আমাকে মনে পরে!
“তোর কি হয়েছে বল ত! এমন হলে ত স্যালাইন দিতে হবে।” বলল মা।
আমি মায়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলাম, “ওই বাড়িতে কবে ফিরে যেতে বলেছে আন্টি?”
“স্বর্না? সে ত বলেছে যত ইচ্ছা থাকুক। এত টেনশন করিস না। সে বকা দিবে না।” বলল মা।
ধুর শাশুড়ী ত বলবেই। অসহ্য।
আমি একটু অসস্তির সাথেই ইনিয়েবিনিয়ে বলতে লাগলাম, “না মানে, আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে…. মানে…।”
মা এবার বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলল, “ওহহহ, তাই ত বলি একদিনো হতে পারলো না, মেয়ে আমার শশুড়বাড়ি ফিরতে চায় কেন?”
আমি লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
“ইথান ফোন করেছিলো। তুই ঘুমাচ্ছিলি বিকেলে যখন ঠিক তখন। তাই আর ডাকতে মানা করেছিলো।” মৃদু হেসে বলল মা।
আমি শুনে হা হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
ইস তখনি ঘুমাতে হলো! অবশ্য সারারাত না ঘুমালে দুপুরে ত ঘুম আসবেই।
“আগের দিন করেছিল তখন গোসলে ছিলি। আমিই ভুলে গিয়েছিলাম বলতে। তখন ত আর বুঝি নি আমার পিচ্চি মেয়ের এখন স্বামীর কথা এত মনে পরতে পারে।” মৃদু হেসে আমার গাল টেনে দিয়ে বলল মা।
আমি মাথা নিচু করেই রইলাম।
“নে ফোন। তবে রাতে ফোন দিস। এখন ত অফিসে মনে হয়।” মা ফোনটা এগিয়ে দিলো।
আমি মায়ের ফোনটা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম।
রাতে মা ঘুমিয়ে যাবার পর আমি আস্তে আস্তে উঠে নিজের রুমে এলাম। তারপর বিছানায় বসে ইথানকে ফোন দিলাম।
যতই হোক মায়ের পাশে শুয়ে কথা বলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ হবেনা।
ফোন রিং হতেই ইথান ধরে নিলো। যেন সে ফোনের অপেক্ষাই করছিলো।
“এত রাতে ফোন করেছেন, কিছু কি হয়েছে?” ইথান উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল।
মায়ের ফোন দিয়ে ফোন করায় উনি মনে করেছেন এটা মা।
তবে তার আওয়াজ শুনে এই কয়েক ঘন্টার অস্থিরতা সব চলে গেল।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আর নিরব রইলাম।
“এরিন।” শীতল গলায় বলল ইথান।
সাথে সাথে আমি চোখ খুললাম। এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল সারা শরীরে। আর চোখের কোণে অল্প জলও এসে পরেছে। কেন তা জানিনা।
“কি হয়েছে!” মৃদুস্বরে বলল ইথান।
“অনেক কিছু হয়ে গেছে, আমি অনেক অনেক অনেক মিস করছি আপনাকে।” কাদো কাদো গলায় বললাম আমি।
প্রতিউত্যুরে ওপাশ থেকে ইথান কিছুই বলল না।
“আপনি অনেক খারাপ। আসার সময় আমাকে একবার আটকানও নি। আর আটকাবেনই বা কেনো! আপনি ত আমাকে মিসই করেন না।” অভিমানী সুরে বলে গেলাম আমি।
ইথান এবারো কিছু বলল না।
“চুপ করে আছেন কেন?” একটু তেজী গলায় বললাম আমি।
ইথান মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো, “তোমার মা যেভাবে টেন্সড হয়ে গেছিলো তাতে আমি কি করে বাধা দিতাম? তাছাড়া তুমি নিজেই যেতে চেয়েছো।”
আমি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বললাম, “হ..হ্যা, ব…বলে ত ছিলাম। তা…তাও আপনার ত মানা করা…উ….উচিত ছিল।”

“আরকি ঘুরে ফিরে সব দোষ আমারই!” একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল ইথান।
“হ্যা আপনারই।” বলেই আমি মুচকি হেসে মাথা নিচু করলাম।
“কবে আসবা তুমি?”
এই সামান্য প্রশ্নটা যেন আমার মনের মধ্যে তোড়পাড় শুরু করে দিল। ইচ্ছে করছে এখনি ছুটে চলে যাই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, “যদি না আসি?”
“মানে?” উনি প্রশ্নসূচক কন্ঠে বললেন।
আমি আরেকটু শয়তানি করার জন্য বললাম, “মা বলেছে এক মাস অব্দি ত থাকতেই হবে।”
“কিন্তু আমাকে যে বলল কাল চাইলে কালই আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারবো!” মুচকি হাসির সাথেই বললেন উনি।
“মিথ্যা কথা।” কটাক্ষ করে বললাম আমি।
“কালই বুঝতে পারবা মিথ্যা না সত্যি।”
এই কথটা শোনার সাথে সাথে আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল।
“আপনি…আমাকে… নিয়ে কেনো যেতে চান?” থেমে থেমে বললাম আমি।
“Because I miss you to the moon and back.” মৃদুস্বরে বলল ইথান।
আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফ্রিজড হয়ে গেলাম।
“See you tomorrow. Good night.”
ফোন কাটার পর আমি খুশিতে লাফাতে লাগলাম।

সকাল হওয়ার অপেক্ষাই করছিলাম আমি। কিন্তু সে এখনো আসে নি।
ধুর ভাল্লাগে না।
কখন যে আসবে!
অপেক্ষা করতে করতে বিকেল গড়িয়ে গেল।
এখন সত্যিই রাগ লাগছে। সাথে অভিমানও হচ্ছে।
উনি কি আসবেনই না!
মিথ্যা কেনো বললেন তাহলে!
আমি মুখ ফুলিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। আর দুই হাত দিয়ে হাটু জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে রাখলাম।
অনেক সময় পর দরজা আটকানোর আওয়াজ কানে আসতেই আমি অবাক হয়ে মাথা তুললাম।
সাথে সাথে আমার অবাক হওয়ার মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
ইথান দরজার কাছে বুকে হাত গুজে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার মেরুন রঙের শার্টে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। সে আমার দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি অবাক হলেও পরক্ষণেই নিজের চোখ মুখ শক্ত করে নিলাম।
এতক্ষণে তার আসার ইচ্ছে হয়েছে!
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম।
“কি হয়েছে?” উনি ভাবলেশহীন ভাবে প্রশ্ন করলেন।
আমার গা রিরি করে জ্বলে উঠল। আমি কোনো উওর দিলাম না এমনি ঘুরেও তাকালাম না।
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমার সামনে এসে বসল।
আমি চোখ পাকিয়ে তাকালাম তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
“কাল আসব বলেছি তাই খুশিতে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিলে। আর এখন আমি এসেছি, কিন্তু মুখ ফুলিয়ে আছ?”
আমি কিছুই বললাম না। আর তাকালামও না।
“ওকে, যেহেতু কথাই বলবা না, চলে যাচ্ছি আমি।” বলেই ইথান উঠে দাড়ালো।
সাথে সাথে আমি অস্থির হয়ে ওর হাত ধরে নিলাম।
তার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে যে, সে জানত আমি তাকে আটকাবই।
“হাসবেন না একদম রাগ করেছি আমি।” আমি ওর হাত ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
ইথান আবার আমার সামনে বসতে বসতে বলল,”কেনো?”
এমন ভাব করছে যেন আমার রাগ করাটা উচিত না।
“দেরি করেছেন কেনো? সকাল থেকে বসে আছি।” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
“আমি ত বলিনি আমি সকালে আসবো!” ইথান কুঞ্চিত চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
আমি রেগে ফুলতে লাগলাম। ভালই মজা নিচ্ছে আমার।
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আর বললাম, “যাবই না আমি আপনার সাথে।”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”একচুয়ালি আমি তোমাকে নিয়ে যেতে আসিনি।”
আমি শোনার সাথে সাথে হতবুদ্ধি হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
“একটা কাজে দুই সপ্তাহের জন্য আমাকে আজই চিটাগং যেতে হত। আমি সেটা কালকে পিছিয়ে নিয়েছি। সো আমার কাছে বেশি সময় নেই।”
শুনেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি মাথা হালকা নিচু করে নিলাম।
উনি দেখেই বুঝতে পারলেন। তাই আমার দুই গাল উনি নিজের হাতে আলতো করে ধরে নিয়ে সিরিয়াস হয়ে বললেন, “খুব দরকার না হলে আমি যেতাম না। আর তোমাকে নিয়ে যেতে পারলে অবশ্যই নিয়ে যেতাম। কিন্তু সারাদিন আমি এত বিজি থাকবো যে তোমার খেয়ালও রাখতে পারব না। এমনিও তুমি এখনো পুরোটা সুস্থ না। তাছাড়া আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।”
“আমি এখন পুরোই সুস্থ।” অভিমানী সুরে বললাম আমি।
“তোমার গা এখনো গরম।” ভ্রু উঁচু করে বলল ইথান।
আমি সাথে সাথে ইথানের হাত আমার গাল থেকে সরিয়ে নিয়ে বললাম, “একদম না। আমি সুস্থ সত্যি বিশ্বাস করেন। আমি যেতে পারব।”
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”না।”
“তাহলে আমি পিছু নিয়ে নেব আপনার।” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“না মানে না।” রেগে গেল ইথান।
“প্লিজ আমি যাব। অসুস্থ হব না।” মিনতিপূর্বক বললাম। কিন্তু ইথান বিশ্বাস করল না। কারণ গালে হাত দিয়েই বুঝে গেছে সে।
ইস! এই জ্বরটাকে পিটিয়ে বিদায় করতে পারতাম। তাহলে হানিমুনে যাওয়া যেত।
“চুপচাপ শুয়ে পরো।” বলতে বলতে ইথান আমার গায়ে কম্বল টেনে দিতে লাগল।
এখন শুয়ে টাইম নষ্ট করব? অসম্ভব!
আমি ইথানের হাত ধরে থামিয়ে দিলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি একটু মুড নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি তাহলে আর কত ঘন্টা আছেন?”
“মানে?!”
“মানে আপনি চলে যাবেন কত ঘন্টা পরে?”
ইথান নিজের হাতের ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বলল, “ষোলো ঘন্টা বলা যায়। কেনো?”
আমি এক হাত দিয়ে ইথানের শার্টের কলারটা চেপে ধরে ওনাকে হালকা টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলাম।
উনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
“তাহলে এই ষোল ঘন্টা আপনি শুধু আমার কথা শুনবেন। শুধু আমার কথা। তার বিনিময়ে আমিও আপনার কথা একান্ত বাধ্য মেয়ের মত মেনে নেবো। Deal?” ঠোঁটের কোনে বাকা হাসির সাথে বললাম।
ইথান কুঞ্চিত চোখে আমার ধরে রাখা শার্টের কলারের দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো।
“কিহলো! জলদি জলদি রাজি হন। নাহলে আমিও আপনার…।”
“Deal.” আমার কথা শেষ হবার আগেই বলে দিল ইথান।
আমার মুখে সঙ্গে সঙ্গে একটা হাসি চলে এলো। কারণ এই ষোলো ঘন্টায় আমি ওনাকে এমন জ্বালাতে চাই যা ষোলো বছরেও ওনাকে কেউ জ্বালাতে পারবে না।
দরজায় কিছু একটা বাড়ি লাগার মত আওয়াজ হতেই আমরা দুজনে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম।
“সরি সরি ভুল সময়ে এসে গেছি।” বলেই আলিয়া তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেল।
আমি সাথে সাথে ইথারের কলার ছেড়ে দিলাম।
সে হয়ত দরজার কাছে এসে আমাদের এভাবে দেখে ভুল বুঝেছে। তাই হয়তো তাড়াহুড়োতে প্রথমবার দরজায় বাড়ি খেয়েছে।
ভুল বুঝারই কথা। ইথানের কলার টেনে ধরার কারণে সে একদম আমার দিকে ঝুকে ছিলো।

ইথান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলল, “রেস্ট নেও।”
“উহু। এখন রেস্ট নেব না। তাছাড়া এই ষোল ঘন্টায় আপনার কোনো হুকুম চলবে না। চলবে আমার হুকুম। তাহলে এখন আপনার প্রথম টাস্ক।” দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম আমি।
“কি?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
হস্পিটালে আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ বাছা।
এখন ত তোমার রাতদিন করব ভাজাভাজা।
মনে মনে বললাম আমি।

(চলবে…)

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা (২)
#পর্ব_৩ : #ষোলো_ঘন্টা
লেখিকা : #Lucky

“শাড়ি সুন্দরভাবে পড়াবেন।” বললাম আমি।
ইথান কুচি ঠিক করতে করতে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছি।
মনে মনে ঠিক করেছি জীবনেও শাড়ি পড়া শিখব না। ইথানকে দিয়েই পড়াবো।
কত মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছে। দেখেই মন ভরে যায়।
আজও ইউটিউব দেখেই পড়াচ্ছে।
আশা করি আরো কয়েকবার পড়ালে আর ইউটিউব দেখতে হবেনা ওনার।
“জলদি করেন এত সময় কেন নিচ্ছেন? পাঁচ মিনিটের বেশি হয়ে গেলে হবে না।”
ইথান কড়া নজরে আমার দিকে তাকালো।
আমি নিজের হাসি ঠোঁট চিপে থামিয়ে রেখে ভাব নিয়ে বললাম, “এটুকুতেই হাপিয়ে গেলেন! এখনো পনেরো ঘন্টা আটচল্লিশ মিনিট ছয় সেকেন্ড বাকি। সাথে নিয়ে গেলে এত কিছু হত না। ভেবে দেখুন।”
“না মানে না।” নিজের হাটু ভাজ করে কুচির দিকে মনোযোগ রেখে বলল ইথান।
“ঘাড় ত্যাড়া একটা।” বিড়বিড় করে বললাম আমি।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “তোমার ভাল চাওয়াই ভুল হয়েছে আমার।”
“হ্যা হয়েছেই ত। ভাল চাইতে বলেছি?” কটাক্ষ করে বললাম আমি।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আবার কুচি ঠিক করতে লাগল।
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “আপনার কিছু করতে ইচ্ছে করে না?” আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“যেমন?” কুচিতে সেফটি পিন মারায় মনোযোগ রেখে বলল ইথান।
“যেমন আমাকে…।”
কথা শেষ হবার আগেই ইথানের ফোন বেজে উঠল।
উফ কি অসহ্য।
গুরুত্বপূর্ণ টাইমেই এগুলোর আসতে হবে! একবার নার্স আসে, একবার আলিয়া আসে, একবার ফোন আসে।
ইথান ফোনের দিকে তাকিয়ে কুচিটা নিজেই গুজে দিল।
সাথে সাথে আমি কেপে উঠলাম।
উনি নিজেও বুঝতে পেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলেন।
“শেষ।” বলে উনি নিজের ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
সেই ফাকে আমি চুল ঠিক করে নিলাম।

তারপর ওনার কথা শেষ হতেই বললাম,”গাড়ি বের করেন, যান।”
“Why?”
“কোনো কারণ জানানোর নেই। আমি যা বলব তাই-ই করবেন, কোনো প্রশ্ন ছাড়া।”

আমি ওনার পাশের সিটে বসলাম। আমার পড়নে কালো ব্লাউজের সাথে মেরুন রঙের শাড়ি।
আর ওনার গায়ে সেই মেরুন রঙের শার্ট।
“কোথায় যাব আমরা?” সীটবেল্ট বাধতে বাধতে বললা ইথান।
“গ্রামে।”
“গ্রামে? কেনো?”
“হাওয়ায় ভাসতে। সময় নষ্ট একদমই করতে চাইনা। দ্রুতো চলুন।”
“তুমি এমনিই অসুস্থ, তার উপর কি শুরু করেছ?” ইথান রেগে বলল।
“আপনি কথা দিয়েছেন আমার সব কথা শুনবেন।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
“যদি অসুস্থ হও এসব করে তাহলে সিরিয়াসলি আমি তোমাকে ওখানেই ফেলে রেখে আসব।” ইথান রাগী চোখে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
এসব কথা আমি গায়ে মাখালাম না। কারণ যে কিনা “I miss you to the moon and back” কথাটা বলেছে সে এমনটা করতেই পারবে না।

গন্তব্যে পৌছাতে আমাদের দুইঘন্টা মত সময় লাগলো।
জ্যাম না থাকলে এত সময় লাগে না।
গাড়িটা একটা পুরাতন গ্যারেজে রেখে আমরা গ্রামের পথে হাটতে লাগলাম।
চারিদিকে সবুজে ভরা। এজন্যই গ্রাম আমার এত পছন্দ। গাড়ি পেপু শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায় শহরে।

আমি উপচে পরা খুশিতে বললাম, “আজ রাতে আমরা এখানেই থাকবো।”
“মানে? এখানে তোমার রিলেটিভ আছে কোনো?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
“কেনো খোলা মাঠে ঘুমাবো।”
“আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যে তুমি নতুন পাগলামি শুরু করবা।”
“ষোলো ঘন্টা আপনার কিছুই করার নেই। এখন আসুন আমার সাথে।” একটু ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“কোথায় যাব আবার! আর তুমি সিরিয়াসলি এখানে থাকতে চাও আজ?” অবাক হয়ে বলল ইথান।
“হ্যা। এত টেনশন কেন করছেন! আমরা ভোরেই ফিরে যাব আবার।”
ইথান আর কিছু বললো না।
দুইজন একসাথে একটা সরু রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম আর ওনার দিকে তাকাতে লাগলাম।
সেও আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে নিলো।
সাথে সাথে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম আর হালকা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
“তুমি লজ্জাও পাও?”
শুনেই আমি রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললাম, “মানে কি বলতে চাচ্ছেন?! আমার লজ্জা নেই?”
“I Just asked. সেরকম কিছু ত বলিনি।” ভ্রু উঁচু করে এমন ভঙ্গিতে বলল যেন আমিই ভুল বুঝেছি।
“হাত ছাড়েন, কথা বলেবেন না আমার সাথে। যান।” মুখ ফুলিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম।
কিন্তু সে ছাড়লো না।
মৃদু হাসির সাথে হাত ধরেই রইল।
কিন্তু আমি ত হাত ছাড়াবই। আমাকে অপমান করেছেন উনি।
কিন্তু হাত আর ছাড়াতেই পারছি না। তবে চেষ্টা করতে ব্যস্ত হয়ে রইলাম।
হঠাৎই উনি আমার কাছে চলে এলেন।
সাথে সাথে আমার বুকের ভিতরে ধুকপুক শুরু হয়ে গেল।
আমি চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।
ইথান অন্য হাত দিয়ে আমার গালের পাশ দিয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল।
আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
উনি ওই হাত দিয়ে আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন,”চলো এখন। নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা?”
“আহ লাগছে।” ভ্রুকুটি করে বলেই আমি গাল থেকে ওনার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের গাল ঘষতে লাগলাম।
উনি চোখের ইশারায় সামনে এগুতে বললেন।
আমরা দুজন দুজনের হাত ধরেই এগিয়ে যেতে লাগলাম।

ছোট বেলা থেকে আমি অনেক বার এসেছি এই গ্রামে। তাই মোটামুটি অনেকজনকেই চিনি।
তাই রাস্তায় অনেক জনের সাথেই কথা হলো। এটা আমার মায়ের গ্রাম। যদিও মায়ের নিজেদের বাড়িটা আজ নেই। জমিটা ফাঁকা পরে আছে।

আমরা পরিচিত এক মহিলার বাসায় এসে থামলাম। তিনি অনেক বয়স্ক। আমার নিজের ঠাকুমার মতই তিনি।
দেখা হওয়ার সাথে সাথেই আমি তাকে জড়িয়ে ধরে নিলাম। সে আমাকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেল।
“তোর বর?” ইথানের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি।
আমি মৃদু হেসে মাথা নাড়লাম।
ইথান মৃদু হেসে ঠাকুমার দিকে এগিয়ে আসতেই ইথানকে তিনি জড়িয়ে ধরে নিলেন।
ইথান একটু অবাক হয়ে ওনার পিঠে হাত রাখল।
.
আজ গ্রামে থেকে যাওয়ার বিষয় নিয়ে বেশি কাঠখড় পোহাতে হলো না। ঠাকুমার সামনে বললাম থাকার কথা।
ঠাকুমাও বলল যে আজ উনি ছাড়বেন না আমাদের।
ইথানকেও তাই রাজি হতেই হলো।
সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। একটা হেরিকেন ঘরের মধ্যে জ্বলিয়ে রাখা আছে। গ্রামেই এটা দেখা যায়। কি সুন্দর পরিবেশই না তৈরি হয়েছে। অন্ধকারে টিমটিমে আলোর হারিকেন।
আপাতত আমি মেঝেতে পাতানো বিছানায় বসে বাদাম চিবুচ্ছি। খাট নেই। আর ইথান একটা কাঠের চেয়ারে বুকে হাত গুজে বসে কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এভাবে তাকালেও লাভ নেই। আজ রাতে এখানে থাকা ত লাগবেই। কিচ্ছু করার নেই। তাছাড়া ষোল ঘন্টার দোহাই ত আছেই। তাই সে মানতে বাধ্য।
আমার মিটমিটে হাসি দেখে সে রাগমিশ্রিত চোখ তাকিয়ে বলল,”What’s so funny?”
আমি কিছু না বলে বাদাম খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।
বেচারা হাত দিয়ে আশেপাশের মশা তাড়াতে তাড়াতে ঘরটায় চোখ বুলিয়ে নিল।
তার যে প্রচুর গরম লাগছে তা বুঝাই যাচ্ছে। আমার নিজেই ত লাগছে। তবে অত বেশি না।
উনি উপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে ফেললেন।
“ফ্যান নেই।” বললাম আমি।
“অদ্ভুত। এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি আছে, তাও তারা লাইন নেয় নি!” ইথান বলল।
“লাইন নিলে বিল দিতে হবে। সবাই কি আপনার মতো বড়োলোক?”
ইথান আমার দিকে তাকালো কিন্তু আর কিছু বলল না। হয়তো বুঝেছে কেন নেয় নি লাইন।
“বেশি গরম লাগলে গোসল করে নেন৷ পুকুর আছে।আবার কল পাড়েও করতে পারেন চাইলে৷ ঠান্ডা পানি। গরম পালিয়ে যাবে। তবে বাথরুম নেই। এমনি শুধু টয়লেট আছে। আপনার যদি টয়লেট পেয়ে থাকে যেতে পারেন..।
” চুপচাপ নিজের কাজ করো।” তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল ইথান।
আমি হাসি আটকে বাদাম ছিলতে লাগলাম।
সে বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে তাকালো।
“বেশি গরম লাগলে সিমাদের বাসায় যান। বাথরুম আছে ওদের গোসল করতে পারবেন শান্তিতে। আমি গামছা দিচ্ছি।” বললাম আমি।
“গামছা!”
“এখানে তোয়ালে নিয়ে কেউ বসে নেই। পরিষ্কার টাই দেব। বেশি সন্দেহ হলে গামছা ধুয়ে নিবেন।”
উনি আর কিছু বললেন না। অতিরিক্ত গরম লাগছে হয়তো।
আমি তাকে ঠেলে সিমাদের বাসার বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে এলাম।
তারপর বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সিমাদের বাড়ির উঠোনের সামনে সব বাপ দাদারা বসে গল্প করছে সাথে বোতল থেকে ঢেলে ঢেলে কি যেন খাচ্ছে। পরক্ষনেই মনে পড়ল। যা খাচ্ছে তা নাকি কি একটা ফল দিয়ে বানায়। খেতেও নাকি মজা আর খেলে মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়।

ছোট বেলায় মায়ের অগোচরে একবার একটু খাওয়ার জন্য নিয়েছিলাম। কিন্তু ধরা পরে গেলাম এই ঠাকুমার কাছে।
তারপর খেলাম কান মলা। তবে আজ সুযোগ হাতছাড়া করবই না।
আমি এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে বসে পরলাম।
তারা প্রত্যেকে অনেক ফুরফুরে মেজাজে গল্প করছিল। আমাকে দেখে আমাকেও গল্পে নিয়ে নিল।
তাদের সাথে কথার ফাকে আমিও এক গ্লাস খেয়ে নিলাম।
এত স্বাধ যা বলার বাহিরে।
তাই আমি আরো নিলাম। নিতে নিতে এক বোতল খেয়ে নিলাম।
তারপর ওদের থেকে আরো একটা বোতল চুরি করে নিয়ে কেটে পরলাম।
সত্যিই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আমি দুনিয়ায় সব থেকে সুখী মানুষ।
এবার আমি চাই এই বোতলটাও খেতে।
তবে ইথানের সাথে।
আমি মেঝের বিছানায় বসে এদিক ওদিক হেলতে হেলতে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ইথান মাথা মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলল, পাগলের মতো করছ কেনো?
আমি বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বললাম, এই দেখুন কি এনেছি!
“কি?”
“জুস।”
ইথান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আমার কাছে এগিয়ে দুই পায়ে ভর দিয়ে বসল। তারপর বোতলের দিকে তাকিয়ে তার কুচকে থাকা কপাল সোজা হয়ে গেল।
“তুমি এসব কোথায় পেয়েছ?” অবাক হয়ে বলল ইথান।
আমি হাত উঁচু করে বামদিকে ইশারা করে বললাম, ওইদিকে।
“এখনি ফেরত দিবা। চলো।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেই ইথান হাত বাড়ালো বোতলের দিকে।
আমি সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের মত করে বললাম,”না।”
তারপর চোখ বন্ধ করে বোতলটা জড়িয়ে ধরে নিলাম।
ইথান কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি এগুলো অলরেডি খেয়েও নিয়েছ?”
আমি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম তারপর হেলেদুলে বললাম, “এখন আপনিও খাবেন। একসাথে খাব। মজা হবে। তারপর আকাশে উড়ব।”
“Shut up.” ধমক দিয়ে বলল ইথান।
আমি লাফিয়ে উঠে ওর দিকে তাকালাম। পরক্ষণেই ভ্যা করে কেদে দিলাম।
ইথান চমকে আমার মুখ চেপে ধরে গলার স্বর নামিয়ে বলল, “কি শুরু করেছ!”
আমি এক হাত দিয়ে মুখ থেকে হাতটা নামিয়ে নিয়ে বললাম, “তাহলে আপনিও খান।”
“অসম্ভব।”
সাথে সাথে আমি আবার ভ্যা দিয়ে কান্না জুড়ে দিলাম।
সাথে সাথে আবার ইথান আমার মুখ চেপে ধরল আর রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল, “কয় গ্লাস খেয়েছ? হিতাহিত জ্ঞান ত কিছুই ছিলো না, এখন ত আরোই নেই। একটা টু শব্দ করলে খবর আছে তোমার।”
ইথান আমার মুখ ছেড়ে উঠে দাড়ালো।
আমি মুখ ফুলিয়ে বোতলটা খুলতে লাগলাম।
ইথান এক থাবা দিয়ে এবার বোতলটা নিয়েই গেল।
সাথে সাথে আমি রেগে হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলাম আর বললাম, অনেক খারাপ আপনি। দিন ওইটা।
“What the hell! কি শুরু করেছ!”
“দিন দিন দিন। অইটা আমার।” জোড় গলায় বলতে বলতে আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম।
ইথান বোতলটা রেখে এগিয়ে এসে আবার আমার মুখ চেপে ধরল।
ফলতঃ আমি তার হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।
“উফ।” বলে ইথান হাত সরিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে বললাম, “ষোল ঘন্টা আপনি আমার কথা শুনবেন বলেছেন। তাও শুনছেন না। আমি কিন্তু আপনার সাথে কাল যাবই।”
“হ্যা তোমার কথামতো এসব খাই তারপর টাল হয়ে থাকি?! এটাই চাচ্ছ?”
“হ্যা।” প্রশান্তি হাসি দিয়ে বললাম।
“কোনোদিনো না।”
শোনার সাথে সাথে আমি বোতলটা এক হাতে ধরে হেলেদুলে উঠে দাড়ালাম আর বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
এতে ইথান খপ করে আমার হাত ধরে নিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,”কোথায় যাচ্ছ?”
“যেদিকে দুইচোখ যায় সেদিকে।” বলতে বলতে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পারলাম না।
“পাগলামি বন্ধ করো। কত গুলো খেয়েছো তুমি?”
কথার ফাকে ইথানের হাত আলগা হতেই আমি ছুটে বাহিরে বের হয়ে গেলাম।
ইথানও একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার পিছনে বের হলো।
আমি উঠানের এক কোনায় গিয়ে ধপ করে বসে পড়লাম।
ইথান আমার পাশে এসে দাড়িয়ে হতাশ গলায় বলল, “কি শুরু করেছ?”
“এখানে বসেন।” আমি পাশের জায়গা দেখিয়ে দিলাম।
উঠানের অপর কোনে বসা ঠাকুমা আর কয়েকজন মহিলা মিটমিটিয়ে হাসছে। এতে ইথান আরো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরে গেছে।
বিব্রতবোধ করতে করতে সে বসলো।
আমি তার দিকে ঘুরে বোতলটা খুলতে খুলতে বললাম, এখন আপনার পালা। অনেক মজা বিশ্বাস করেন।
ইথান কিছু না বলে সরু চোখে তাকিয়ে রইল।
“কি!” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
“চুপচাপ রুমে আসো।” ঠান্ডা গলায় বলে ইথান আমার এক হাত ধরল।
“আর না গেলে?” মুচকি হেসে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললাম।
সে একটা নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালো।
আমিও খপ করে তার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে নিলাম।
ইথান অবাক হয়ে সরু চোখে আমার দিকে তাকালো।
“এই ইথান আপনি এত হট কেনো?” কন্ঠের খাদ নামিয়ে বললাম আমি।
এটুকুতেই তার অবাক হওয়ার মাত্র বেড়ে গেলো।
“আপনাকে না মাঝে মাঝে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।” ঠোঁট উলটে বলে তাকে আরো কাছে টেনে নিলাম।
আর অন্য হাত দিয়ে তার গাল স্পর্শ করলাম।
ইথান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হালকা এগিয়ে যেতেই উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “কি?”
সাথে সাথে আমি এক আঙুল ওনার ঠোঁটের উপরে রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিলাম।
সে বাকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

“লজ্জাশরমের মাথা খাইছস ছেমড়ি?” বলল সেই ঠাকুমা।
সাথে সাথে ইথান নিজের কলার ছাড়িয়ে নিল আর ঠোঁটের উপর থেকে আমার হাতও সরিয়ে দিল।
আমি বিরক্ত হয়ে ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে বললাম, “উফ, আমার রোম্যান্সে এত মানুষ হাত পা ঢুকায় কেন?”
“যা করার ঘরের দরজা লাগাই কর ছেমরি।” রসিকতা করে বলল ঠাকুমা।
“আমি এখানেই করব।” চোখ পাকিয়ে বললাম।
“উল্টাপাল্টা বকা বন্ধ করো আর রুমে চলো।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালাম আর করুন গলায় বললাম, “পানি খাব।”
“হ্যা রুমে চলো দিচ্ছি।”
“না কলের ঠান্ডা ঠান্ডা পানি খাব।”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল “চলো।”

কলের কাছে এসে আমি কলের মুখে হাত পেতে রইলাম।
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে কল চাপতে লাগল।
আমি পানি খেতে খেতে কলের নিচে মাথা পেতে দিলাম।
আর মুহুর্তেই মাথা সহ শরীরের অর্ধেক ভিজে গেল।
ইথান আমার এমন কাজে রেগে গেল আর এক হাত ধরে আমাকে হালকা সরিয়ে নিয়ে এলো।
“জ্বর এখনো পুরো ঠিক হয়নি তোমার। এরমধ্যেই কি শুরু করেছ?”
আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, “উফ! থামলেন কেনো? গরম লাগছিলো অনেক। আমি আরো গোসল করব।”

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১২

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব-১২: #অপ্রকাশিত_ভালোবাসা
লেখিকা : #Lucky

জ্ঞান ফিরতেই এক অদ্ভুত ঘ্রাণ নাকে আসতে লাগল। অনেক কষ্টে চোখ খুলতেই ঘোলাটে ভাবে তাকিয়ে চারিদিক অচেনা মনে হলো।
দৃষ্টি স্বচ্ছ হতেই বুঝলাম আমি হস্পিটালে। হাতের ডান দিকে তাকাতেই দেখলাম স্যালাইন চলছে। আর ক্যানুলা করা সেই হাতটা ইথান তার দুইহাত দিয়ে ধরে রেখে ঘুমোচ্ছে।
তার অগোছালো চুলগুলো আর শুকনো মুখই বলে দিচ্ছে সে অনেক ক্লান্ত।
কিন্তু আমি ত তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ খুলে এই জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করছি কেন?
নাকি রাতে জ্বর বেড়ে গিয়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম?
এটা ছাড়া আর কি-ই বা হবে!
আমার জন্য তার অবস্থা নাজেহাল।
কিন্তু আমি কয়দিন ধরে হস্পিটালে?
ইথানের দিকে দেখে মনে হচ্ছে কয়েক মাস ধরে। যদিও তা না।
হয়তো গতরাতেই কিছু হয়েছিল।
আমি বাম হাত দিয়ে তার চুলগুলো গুছিয়ে দিতে লাগলাম। আর তখনি একটা নার্স কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “ও.. আপনি উঠেছেন?”
আমি চমকে তাকে ইশারায় চুপ করতে বললাম কারণ ইথান ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু ইথান নড়েচড়ে চোখ খুলল।
এদিকে নার্স না বুঝে তাকিয়ে আছে।
ইস ওনার ঘুমটা নষ্ট করলো এই নার্সটা!
ইথান দ্রুত মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো।
আমার হাতটা এক হাত দিয়ে ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে আমার কপাল স্পর্শ করল। আর ব্যস্ত হয়ে বলল, “এখন ঠিক আছো? আমি বার বার বলেছিলাম ডাক্তার ডাকি। তোমার কথা শোনাই উচিত ছিল না আমার।”
আমি শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে তার ব্যাকুলতা দেখছি।
“জ্বর ত এখনো আছে।” ইথান বলল।
তারপর নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন মেডিসিন আছে কোনো?
নার্স এত সময় টাশকি খেয়ে আমাদের দেখছিল। ইথানের কথায় তার হুস হলো।
“স্যালাইন দিব আরেকটা। আর জ্বরের জন্য এখন ট্যাবলেট খেলেই হবে।” নার্স বলল।
“Yeah sure.” বলে ইথান উঠে যেতে লাগল। সাথে সাথে আমি তার হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কি?”
“আমার সাথেই থাকেন প্লিজ।” অনুনয় করে বললাম আমি।
“যাচ্ছি না। ওই সাইডে এসে দাড়াচ্ছি।” বলল ইথান।
ইথান এক পাশে সরে বুকে দুই হাত গুজে দাড়ালো।
নার্সটা মুচকি হেসে অন্য একটা স্যালাইন চালু করতে করতে বলল, “আপনার হাসবেন্ড ত অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিল। আর সারা রাত জেগেও ছিল আপনার জন্য। জলপট্টিও দিয়েছে। আপনার অনেক জ্বর ছিলো। একশো চারের বেশি।”
আমি হতবাক হয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে অপ্রস্তুত হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলো। কারণ কেউ যে এভাবে তার করা সবকিছু বলে দেবে সে বুঝতেও পারেনি।
আমি মৃদু হেসে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
নার্সটা স্যালাইন চালু করে দিয়ে আমার কানের পিছনে থার্মোমিটার ধরে জ্বর মেপে নিলো।
“এখন একশো। আশা করি জলদিই সুস্থ হয়ে যাবেন।” বলে নার্সটা চলে গেল।
ইথান আবার আমার পাশে এসে বসলো।
“আপনি বাসায় যান। আপনার ত সারারাত ঘুম হয়নি আমার জন্য!” বললাম আমি।
“আমি ঠিক আছি।” ইথান সরু চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে ইথানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠোঁটটাও শুকিয়ে যাচ্ছে ওর। তাই বার বার জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে।
আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”কি?”
আমার কেন জানি সন্দেহ হলো তাই আমি হাত বাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করলাম।
সাথে সাথেই চমকে গেলাম।
ওর শরীরেও জ্বর। বলতে গেলে অনেক জ্বর। গা পুড়ে যাচ্ছে।
“আপনার মাথা খারাপ! এত জ্বর আপনার তাও বসে আছেন?” আমি রেগে বলে উঠলাম।
ইথান অবাক হলো।
এতেই বুঝে গেলাম যে সে বুঝতেও পারেনি তার জ্বর।
“আমার আপনাকে রাতে জড়িয়ে ধরাই উচিত হয়নি। আমার জন্য আপনার জ্বর হয়ে গেল।” আমি অস্থির হয়ে গেলাম।
“ডোন্ট প্যানিক। আমি ঠিক আছি।” ইথান আমাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল।
“না নেই আপনি। এখনি ভর্তি হবেন। এখনি মানে এখনি।” বিচলিত হয়ে বললাম আমি।
.
শেষমেশ ওনাকেও হস্পিটালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। প্রথমে ত অন্য কেবিনে দিতে চাচ্ছিলো।
কিন্তু আমিই দিলাম না।
আমার কেবিনেই পাশাপাশি আরেকটা বেডে তাকে নিয়ে এলাম।
এখন শান্তি লাগছে। হস্পিটালের হালকা নীল কাপড়ে তাকে দেখতে দারুন লাগছে।
ইথান নিজের বেডে বসে আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। এদিকে দিবা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি মহাতৃপ্তিতে আছি।
“জীবনেও হস্পিটালাইজড হতে হয়নি আমার।” বলল ইথান।
“এখন দেখেন কেমন লাগে! সামান্য জ্বরের জন্য আমাকে তুলে হস্পিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন।” একটু ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“তোমার সেন্সই ছিল না।” রেগে বলল ইথান।
“আর বলো না! বলতে গেলে তোমার বর পাগোলই হয়ে গিয়েছিলো।” দিবা মুচকি হেসে বলল।
আমি ভ্রু উঁচু করে ইথানের দিকে তাকালাম।
“তোর কোনো কাজ নেই?!” ইথান চোখ পাকিয়ে বলল দিবাকে।
“না নেই।” ইথানকে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল দিবা।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “শোনো, রাতে সে তোমার পাশ থেকে নড়লই না। আরে বাবা! আমি ত এসেছি এজন্যই যাতে ও একটু ঘুমাতে পারে। কিন্তু না! সে-ই থাকবে তার বউয়ের কাছে। কি যে বলব!”
ইথান কড়া চোখে তাকিয়ে আছে দিবার দিকে। কিন্তু দিবা গায়ে মাখাচ্ছে না।
“কত ভাব! আমার সাথে কারো রিলেশন নেই। কিন্তু আমি ত জানি, বাগানে কিছু-মিছু চলছিলো। শেষ পর্যন্ত বিয়ে ত করলই। তুমিই বলো ছিলো না রিলেশন?” দিবা ভ্রু উঁচু করে বলল আমাকে।
ইথান বিরক্ত হয়ে গায়ে চাদর টেনে নিয়ে শুয়ে অন্যদিকে ঘুরলো।
“এখন রাগ দেখাচ্ছে দেখো! এত ভালোবাসা কিন্তু মুখে প্রকাশ করেতেই চায় না।” নিরলস ভাবে তাকিয়ে বলল দিবা।
“ভালোবাসার যত গভীর তার প্রকাশ তত কম।” আমি ইথানের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তে বলে উঠলাম।
দিবা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ইথান শুনেছে কিন্তু ঘুরে তাকায় নি।
তবে না তাকালেও আমার মন বলছে যে সে মৃদু হেসেছে।
বলার পরেই একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম। তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো আমি।”
দিবা একটু মুচকি হাসল। তারপর বলল, “আমি যাচ্ছি তাহলে বাসায়। মাসি এসে যাবে এখনি। রাতে ত অনেক বুঝিয়ে বাসায় রেখে এসেছি। এসে এখন দুইজনকেই হস্পিটালে ভর্তি দেখে হা হয়ে যাবে।”
বলতে বলতেই ইথানের মা ঢুকল।
সে সত্যিই আমাকেসহ ইথানকে হস্পিটালে ভর্তি দেখে হা হয়ে গেল।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ইথান এখনো ঘুমোচ্ছে। ইথানের মা দুপুর বারোটার দিকে আমাদের খাবার খাওয়া শেষ করিয়ে তবেই ফিরে গেছেন।
তারপর থেকেই সে ঘুমোচ্ছে। আর আমি বসে বসে বোর হচ্ছি।
একটু আমার দিকে ফিরে ঘুমালে কি হত?
অন্তত পক্ষে মুখ টা ত দেখতে পেতাম।
হঠাৎই মনে হলো ওনার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলেই ত হয়।
আমার হাতে আপাতত স্যালাইন চলছে না শুধু ক্যানুলাটা করে রাখা। শরীর এখনো দুর্বল বলে রাতে আবার হয়তো স্যালাইন দিবে।
আমি নিজের বেড থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম।
সে শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। যাক তাও সব ক্লান্তি দূর ত হয়েছে।
আমি অনেক সামলে গুটিশুটি হয়ে তার পাশের অল্প জায়গায় শুয়ে পরলাম। আর তাকে দেখতে লাগলাম।
ভেবেই অবাক লাগে যে ইথান এখন আমার।
পুরোপুরিভাবে শুধু আমার। অন্য কারো না।
ভাবতে ভাবতেই আমার অবাধ্য হাত তার গাল ছুয়ে দিলো।
ইথান তাও ঘুমেই ব্যস্ত।
আমি মৃদু হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলাম।
তখনি ইথান কপাল কুচকে ফেলে আস্তে আস্তে চোখ খুলল। তারপর সরু চোখে আমার চোখের দিকে তাকালো।
আমি অনেক বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
“আ…আমি…।” এটুকু বলেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
“হস্পিটালও বাদ রাখতে চাচ্ছ না!” মুচকি হেসে বলল ইথান।
“আ…আমি ত…।” এটুকু বলেই আমি একটু সরে যেতে চাইলাম। কিন্তু বেডটা যে অনেক ছোট সেটাই খেয়াল ছিল না। তাই পরে যাওয়ার মতো অবস্থা হতেই নাক মুখ কুচকে ফেললাম।
কিন্তু ইথান আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো।
আপাতত আমি নাকমুখ কুচকে তার কাধের কাছের জামাটা হাতের মুঠোয় ধরে আছি।
“বেড অত বড় না।” বলল ইথান।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম। তার মুখে দুষ্টু হাসি।
“আমার বেডে কি করছ?” ভ্রু উঁচু করে বলল ইথান।
আমি ঝট করে জামাটা ছেড়ে দিয়ে বললাম, “ভুল করে এসে পরেছি।”
“Lame excuse.” মুচকি হেসে বলল ইথান।
অসহ্য! ধরা পরে যাই শুধু।
আমি নিজেকে সামলে ভ্রুকুটি করে বললাম, “আপনি বেশি বুঝবেন না, আমি ভুল করেই এসেছিলাম।”
তার মুখে এখনো মৃদু হাসি বিদ্যমান। মানে আমাকে ধরা পরতে দেখে তার মহা আনন্দ লাগছে। কিন্তু আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।
দিন আমারো আসবে।
আমি কপাল কুচকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
তখনি উনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিলেন।
আমি চমকে উঠলাম আর ওর কাধের কাছের শার্টটা আবার শক্ত করে ধরে নিলাম।
আর বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।

“তোমার বিখ্যাত ডায়লগ দিবা না- ‘আমি এখনো রেডি না’?!” বলেই ইথান হেসে দিল।
আবার অপমান করলেন উনি আমাকে!
“ভুল করেই এসেছি আমি। যত্তসব। ছাড়ুন আমাকে।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
ইথান সত্যি সত্যিই আমার কোমড় থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো।
“ছাড়তে বললাম আর ছেড়ে দিলেন?” আমি হা হয়ে বলে ফেললাম।
“ত?” ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
তারপর উপহাসের সুরে বলল, “তুমি নাকি ভুল করে চলে এসেছো! এখন যেতে দিচ্ছি যাচ্ছও না!”
আমি কটমট নজরে ইথানের দিকে তাকালাম।
“আপনি অনেক ফালতু। দুনিয়ায় ফালতু।” বলেই আমি উঠে বসে নামতে গেলাম।
তখনি ইথান আমার হাত ধরল।
যদিও মনের মধ্যে এক ভালো লাগা কাজ করলো কিন্তু সেটাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম, “এখন কেন আটকাতে চাচ্ছেন?”
“এটাই বলার জন্য যে আমাকে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিয়ে যাও।” হাসি আটকে রেখে বলল ইথান। তারপর আমার হাত ছেড়ে দিল।
দেখেই বুঝলাম উনি মজা নিচ্ছেন আমার সাথে?
আমি মুখ ফুলিয়ে তার বেড থেকে নেমে নিজের বেডে চলে গেলাম।
উনি এখনো হাসছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি।
হেসে রাখেন। এরপর আমার হাসার পালা। আপনি শুধু অপেক্ষা করতে থাকেন মিস্টার।
“তোমার মেবি আমার বেডটা বেশি পছন্দ, এক্সচেঞ্জ করবা?” বলল ইথান।
আমি রাগে ফুলতে ফুলতে গায়ে চাদর টেনে নিয়ে নিজেকে ঢেকে নিলাম।
.
আমি রাতের খাবারের সময়ও তার সাথে কোনো কথা বললাম না।
আমি এখনো রেগেই আছি।
কিন্তু তাকে দেখো! বিষয়টা গায়েই মাখাচ্ছে না!
তবে তার ঠোঁটের মৃদু হাসি জানান দিচ্ছে যে সে এগুলোতে বেশ মজা পাচ্ছে।
আমার এখন প্রচুর বিরক্ত লাগছে।
ফোনটা শশুড়বাড়িতেই পরে আছে৷ নাহলে সত্যি আমি ব্লক খুলে মৃদুলের সাথে প্রেমালাপ করতে শুরু করে দিতাম।
আমি লাইট অফ করে নিজের মত ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। এবার আমিও পাত্তা দিব না।
কাচের জালানা দিয়ে বাহিরের হালকা আলো ঢুকে কেবিনটা হালকা আলোকিত করেছে।
ইথান বিছানা থেকে উঠে কেবিনের দরজার কাছে গেল।
আমি তার দিকে অত খেয়াল করছি না এমন ভান করে নিজের চাদরটা গায়ে দেওয়ার জন্য ঠিক করতে লাগলাম।
হঠাৎই ইথান কেবিনের দরজা লক করে দিলো।

(চলবে…)

সে ফিরে আসবেই পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#১০ম_এবং_শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নীলা কান্নাভেজা গলায় বললো ,’তমাল এতো দিন মালোয়েশিয়ার একটা জেলে বন্দী ছিল।সে মালোয়েশিয়া গিয়েছিল ওখানে টাকা ইনকাম করে সে ইউরোপিয়ান কোন কান্ট্রিতে যাবে বলে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। মিথ্যে একটা খুনের মামলায় তাকে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে।যখন প্রমাণ হয় সে নির্দোষ তখন ছাড়া পায়। এবং ওখানে কিছুদিন কাজ করে কিছু রোজগার করে। তারপর দেশে ফিরে এসে দেখে তার মা আর নাই।মরে গেছে। তারপর সে আমার খুঁজে এলো। কিন্তু বাসায় সেদিন মা ছিল না।তাই মার সাথে ওর দেখা হলো না।সে তখন অন্য কারোর কাছ থেকে জানতে পারলো যে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এবং সে এখানকার বাসার ঠিকানা খুঁজে বের করেছে। তারপর সে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।আর আমার কাছে এসে আমায় দেখে সে পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করলো।সে বলতে লাগলো, কীভাবে আমি সবকিছু ভুলে গেলাম! কীভাবে ওকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারলাম! এবং সত্যি বলতে ওকে দেখে আমিও পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। আমার তখন মনে হয়েছিল আমার পায়ের নীচে কোন মাটি নাই!’
নীলা কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে।আমি জানি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে! আপনি হয়তোবা ভাবছেন এতো কিছুর পরেও কীভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারে?
হ্যা পারে। এবং অনেকেরই এমন অতীত থাকে। ভুল বোঝে কিংবা কোন পরিস্থিতির কবলে পড়ে তার ভালোবাসার মানুষটা দূরে সরে যায়। তারপর অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায় ভালোবাসার মানুষ হারানো ছেলেটি কিংবা মেয়েটির! তারপর অনেক অনেক দিন পর তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে আবার দেখা হলে, ওদের ভুল বোঝাবুঝি দূর হলে তখন ওরা খুব অসহায় হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে তারা একটা ভরসার হাত চায়। সান্ত্বনা দেয়ার মতো একটা মানুষ খুঁজে।সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো একজন কাছের মানুষের খুব প্রয়োজন হয় তখন।
নীলাকে আমি গ্রহণ করতে না পারতাম। কিন্তু এতে আমি ভালো ফল পেতাম না কিছুতেই।মানহার জীবনটা নষ্ট হতো। আমার এবং নীলার জীবনটাও।’
নীলা আবার বলতে শুরু করলো।সে বললো,’তমাল প্রথম প্রথম খুব পাগলামি করেছে।সে বলেছে আমায় ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবে না। ওকে দেখে আমিও ভেঙে পড়েছিলাম।মনে হয়েছিল আমি দুটানাই পড়ে গেছি।মনে হয়েছিল আমার জীবনটা নষ্ট হতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষদিন তমাল নিজেই আমায় বললো,’তার এক বন্ধু সুইজারল্যান্ড থাকে। খুব দ্রুত সে ওখানে চলে যাবে। তাছাড়া সে চায় না আমার সুন্দর সংসারটা নষ্ট করতে। আমিও তাকে বলেছিলাম, তুমি মৃত জানতাম বলেই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।আমি যদি জানতাম তুমি বেঁচে আছো তবে কারোর ক্ষমতা ছিল না অন্য কোথাও আমায় বিয়ে দিয়ে দেয়ার!’
আমি বললাম,’নীলা সব বুঝতে পেরেছি।’
নীলা বললো,’আমি কী তোমার কাছে মাফ পাবো?’
আমি ওর একটা হাত মুঠো করে ধরলাম। তারপর বললাম,’তুমি ভুল নয়। এবং আমিও ভুল নয়।তমালও ভুল নয়।সবাই পরিস্থিতির শিকার। পরিস্থিতি আমাদের সাথে খেলা খেলেছে।এর জন্য কেউ কারো কাছে মাফ চাওয়ার কিছু নাই!’
নীলা স্বর্দি বসা গলায় বললো,’তুমি খুব ভালো।’
আমি ওর দিকে আধো অন্ধকারে তাকিয়েই বললাম,’তুমিও।’
তারপর আমাদের কাছে মা এলেন। এসে আরেকটা চেয়ারে বসলেন। তারপর মা নীলাকে বললেন,’নীলা, তুমি কী তোমার মাকে খুব ভালোবাসো?’
নীলা বললো,’তেমন না।কারণ ছোট বেলা থেকেই মাকে দেখে এসেছি দাদুর সাথে খারাপ আচরণ করতে। বারবার মা তাদের বংশের গৌরব গাঁথা গাইতেন আর দাদুকে হেনস্থা করতেন। লজ্জা দিতেন। লজ্জা দেয়ার কারণ দাদু ছিলেন সামান্য দর্জি। কিন্তু ভাগ্য গুণে বাবা পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণীর একটা জব পেয়ে যান। তারপর আমাদের দিন ঘুরে যায়।আর মার সাথে বাবার বিয়েটা হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের পর মা কখনোই সন্তুষ্ট ছিলেন না। আমাদের সব আত্মীয় স্বজনেরাই গরীব ছিল।ফুপুরাও।এই জন্য মা তাদের সহ্য করতে পারতেন না।মার বড়লোকী ধাত ছিল।মার এই ধাতটা আমার খুব বেশি অপছন্দের ছিল!’
মা এবার নীলাকে বললেন,’মাকে অপছন্দ করো বলেই কী তোমার মনে হয় যে তোমার বাবাকে তোমার মা হত্যা করেছেন?’
নীলা খানিক সময় চুপ রইলো। তারপর বললো,’অপছন্দের কারণে না ঠিক। আমার এটা এমনিই মনে হয়েছে।’
মা এবার বললেন,’আমি তোমার কথা শুনে বুঝতে পারছি তোমার মা ভয়াবহ ধরণের মহিলা।বড়লোকী স্বভাব কিংবা সমাজে তার আভিজাত্য ধরে রাখবার জন্য তিনি তোমার গরীব প্রেমিককেও হত্যা করতে গুন্ডা ভাড়া করেছিলেন।এতেই প্রমাণিত হয় তিনি কতোটা ভয়াবহ ধরণের মহিলা। কিন্তু এর জন্য এটা ধারণা করা ঠিক না যে তোমার মা তোমার বাবাকে হত্যা করেছেন। বরং এটা হতে পারে যে তোমার মাই সম্পূর্ণ রকম দায়ী তোমার বাবার মৃত্যুর জন্য!’
মার কথা শুনে নীলা কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু এর আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম,’মা,আমরা একটা কাজ করলে এটা সহজে বুঝতে পারবো।জানতে পারবো আসল কাহিনী। আগামীকাল আমি আর নীলা মার সাথে দেখা করতে যাবো।আর গিয়ে এক এক করে তমালের বিষয়ে সব বলবো। এমনকি শেষ মুহূর্তে বলবো, আপনি বাবার খুনি।এটাও আমরা জানি। তখন সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। উনার উত্তর শুনেই অনুমান করা যাবে সত্যিটা।আর উনি যদি সত্যি সত্যি বাবার খুনি হন তবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আদালতে তার নামে নীলা নিজে বাদী হয়ে মামলা করবে!’
মা বললেন,’আচ্ছা তাই হোক।’
নীলাও এ কথায় সম্মতি দিল।

পরদিন সকাল বেলা আমরা চলে গেলাম মার কাছে।মা আমাদের দেখেই কেমন ভয় পেতে শুরু করলেন।কথা বলতে গিয়ে দলা পাকিয়ে ফেলেন।অন্য কোন সময় তার কাছে গেলে তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠতেন। নীলার সাথে কতো গল্প করতেন।মানহাকে কোলে করে নিয়ে সারা বিকেল ছাদে হাঁটতেন।ওর সাথে মজার মজার কথা বলতেন। কিন্তু এবার তিনি আমাদের সাথে যা করছেন তা খাপছাড়া।
নীলা সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ মাকে বললো,’মা তোমার সাথে আমার কথা আছে!’
মা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,’কিসের কথা! কোন কারণে কী তুই আমায় সন্দেহ করছিস।তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই আমার প্রতি ক্রোদ্ধ!’
মার এই আচরণে আরো পরিস্কার হওয়া গেলো যে তিনি অনেক কিছুই লুকোতে চাইছেন।তার অপরাধ। অপরাধ‌ প্রকাশ হওয়ার ভয়ে তিনি খাপছাড়া আচরণ করছেন। হয়তোবা তিনি ভাবছেন এসব আচরণ করলে তাকে আমরা নির্দোষ মনে করবো। কিন্তু তিনি এটা বুঝতে পারছেন না যে এইসব আচরণই তার জন্য কাল হচ্ছে। তিনি নিজে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন জালের ভেতর!
নীলা মার কথা শুনে হেসে ফেললো। হেসে বললো,’কোথায় সন্দেহ করেছি তোমায়?আমি তোমায় শুধু বলেছি তোমার সাথে কথা আছে।এতোটুকুই তো!’
মা তখন অস্থির হওয়া গলায় বললেন,’ফাহাদ ওইদিন আমাদের বাসায় এসেছিল মানহাকে নিয়ে।তুই নাকি বাসা থেকে রাগ করে কোথায় চলে গিয়েছিলে।সে এসে বললো ওই ছোট লোকের বাচ্চা তমাল তোর কাছে ফিরে এসেছে।আমি তখন বললাম,তমাল তো খুন হয়েছিল।এতে ফাহাদ আমায় সন্দেহ করেছে।’
মা কথাগুলো বলে কাঁপছেন থরথর করে।
নীলা বললো,’রাখো তো তোমার তমাল ফমালের কথা।তমাল মরে গেছে সেই কবে।মৃত মানুষ আবার জীবিত হয় কী করে ? ফাহাদ তোমার সাথে মজা করেছে। আসলে তমালের বিষয়ে সে সব জেনে গেছে। কিন্তু এছাড়াও আরেকটা বিষয় সে জেনেছে।’
মা তখন নীলার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে বললেন,’কী বিষয়ে জেনেছে?’
‘তুমি তমালকে গুন্ডা দিয়ে খুন করিয়েছো।’
মার জবান যেন মুহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল! আর তার কপাল ঘামতে লাগলো খুব করে। তিনি আঁচল দিয়ে বারবার তার কপালের ঘাম মুছছেন।ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বললেন,’তোর জামাই একটা বদের হাড্ডি। সবকিছু নিয়ে মজা করে।এটা নিয়েও মজা করছে তাই না? কিন্তু ওকে বলে দিস আমি এইসব নোংরা মজা মাস্তি পছন্দ করি না!’
নীলা তখন হেসে বললো,’মজা নয়।এটা আমিও জানি। তুমি যে সকল গুন্ডাদের ভাড়া করেছিলে তারা আমার কাছে বলেছে।’
মা তখন উদ্ভট আচরণ করতে শুরু করলেন। নীলার গালে তিনি রাগে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,’তুই পাগল হয়ে গেছিস!তাই আবোল তাবোল বকছিস! নিজের জন্মদাত্রী মাকে তুই দোষারোপ করছিস।একটা ছোট লোকের বাচ্চার খুনের জন্য আমাকে দোষ দিচ্ছিস!’
নীলা তখন বললো,’শুধু একটা খুন নয়।তুমি দুটো খুন করেছো।’
মা চমকে উঠে বললেন,’মানে?’
‘তমাল এবং বাবাকে।’
মার রাগ তখন দেখে কে। তিনি হামলে এসে পড়েছেন নীলার উপর। নীলার গলা চেপে ধরে বলছেন,’তোর সাহস বেড়েছে।যা তা বলছিস। তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।’
আমি অন্য ঘরে ছিলাম। ওখান থেকে সব শোনা যাচ্ছিল। এবার নীলা ঝুঁকির মুখে।আমি তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে দৌড়ে এলাম।আর মার কাছ থেকে নীলাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,’মা আপনি অত নীচ! ছিঃ! নিজের অপরাধ ঢাকতে এবার নিজের মেয়েকেও শেষ করে দিতে চাচ্ছেন।’
মা এবার কাঁদতে শুরু করলেন।
নীলাও কাঁদতে শুরু করলো।
নীলা কাঁদতে কাঁদতে বললো,’আমি থানায় যাবো। সবকিছু বলে দেবো পুলিশের কাছে।’
মা তখন নীলার একটা হাত খপ করে ধরে ফেললেন।আর বললেন,’আল্লার কসম!আমি শুধু তমালকে খুন করার জন্যই গুন্ডা ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু গুন্ডাদেরকে না করে দিয়ে তোর বাবা নিজেই ওকে খুন করেছিলো।এই ঘটনার পর তোর বাবা আবার আমায় ডিভোর্স দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। তোকে না শুনিয়েই আমাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হয়েছে। এমনকি সে আমায় মেরেছেও।’
নীলা এবার সোজা বলে দিলো,’এই জন্য তুমি বাবাকে মেরে ফেলেছিলে।যেন আর তোমাকে ডিভোর্সী হতে না হয়?’
মা এবার কাঁদতে শুরু করলেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন,’এটা সত্য যে আমি তোর জীবন থেকে তমালকে সরিয়ে দিতে গুন্ডা ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু তোর বাবা কীভাবে যেন এটা জেনে ফেললো।আর তখন তোর বাবা আমায় বললো সে নিজেই তমালকে খুন করবে। তারপর একদিন বাসায় এসে বললো তমালকে সে খুন করেছে। কিন্তু এরপর থেকেই তোর বাবা আমার সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে দেয়।কেন এমন করে আমি কিছু জানি না! তাছাড়া তোর বাবাকে আমি কেন মারবো? নিজের স্বামীকে কী কেউ মেরে ফেলতে পারে!’
নীলার চিকন বুদ্ধি দেখে আমি অবাক হই।সে হুট করে তখন মাকে বলে,’আসল কথা হলো বাবা যে তমালকে খুন করেনি তা তুমি জেনে গিয়েছিলে।বাবা শহর থেকে তমালকে পালিয়ে যেতে হেল্প করেছিল। তাছাড়া বাবা তোমায় এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জন্য ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলো। তুমি তখন নিজের সম্মান বাঁচাতে বাবাকে খুন করো!’
মা স্বীকার করতে চান না কিছুতেই। তিনি বলেন,’তোর কানে কেউ বিষ দিয়েছে।’
কিন্তু নীলাও দমবার পাত্রী নয়।সে বলে,’তুমিই বাবার খুনি। আমার কাছে উপযুক্ত প্রমাণ আছে।প্রমাণ হাজির করলেই বুঝতে পারবে সবকিছু।’
মা তখন মুখ ফসকে বলে ফেললেন,’এটা মিথ্যা কথা।প্রমাণ কী করে থাকবে? রুমের দরজা তখন বন্ধ ছিল।আমি আর ও ছাড়া ঘরে আর কেউ ছিল না!’
কথাটা বলতে শুরু করে মা হঠাৎ থেমে যান।
আর কিছু বলতে পারেন না তখন।
নীলা আর আমি বুঝে যাই মুহূর্তে সবকিছু।বুঝে ফেলি আমরা মা-ই এসবের মূল।তমালকে তিনি খুন করতে চেয়েছিলেন বংশীয় গৌরব রক্ষা করতে।আর বাবাকে খুন করলেন নিজের সম্মান রক্ষা করতে।

মায়ের পায়ের নিচে বেহেস্ত কথাটা সত্য কিন্তু সব সময় নয়। নীলার মাও এই পর্যায়ে পড়েন। নীলা তাই তার মাকে মা-ই মানেনি। একজন ভয়ংকর খুনির জন্য তার মায়া হয়নি।সে তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো আদালতে ।মামলায় নীলা জিতেছে। খুব সহজেই প্রমাণিত হয়েছে তমালকে তার মা খুন করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।আর তার স্বামীকে তিনি শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এই জন্য আদালত মাকে শাস্তি দিয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ড এখনও কার্যকর হয়নি।মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে নীলা আর আমি একটা নফল রোজা রাখবো।এতিম মিসকিনদের দাওয়াত করে খাওয়াবো।আর বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবো।

(কাল্পকিন গল্প। বাস্তবতার সাথে মিলাতে যাবেন না কেউ!)

—সমাপ্ত—

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৯

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৯ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



সন্ধ্যা ছ’টার দিকে ডাক্তার এসে আবার দেখে গিয়েছেন মানহাকে।জোর করেই দু বার ওকে অষুধ খাইয়েছি। এই জন্য তাপটা এখন কম। তাছাড়া আমি ওকে জানিয়েছি ওর দাদুর আসার সংবাদটা।বলেছি,’মানহা, তোমার দাদু আসছেন আজ। দাদু এসে তোমার মাকে খুঁজে বের করবেন। তুমিও তোমার দাদুর সাথে মাকে খুঁজতে যাবে।’
মানহার শুকনো মুখে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো।
আমি ওর গালে আলতো স্পর্শ করে বললাম,’মা, তুমি খুঁজতে যাবে না দাদুর সাথে তোমার মাকে?’
মানহা নিচু স্বরে বললো,’যাবো।’
আমি তখন তার জন্য এক গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে এলাম।আর ওর কাছে এসে বললাম,’মাকে খুঁজতে গেলে তো তোমার হাঁটতে হবে। এখন তো তুমি খুব দূর্বল।এই শরবতটা যদি খাও তবে শক্তিশালী হয়ে যাবে তুমি। তখন আর মাকে খুঁজতে কষ্ট হবে না!’
মানহার মুখে শরবতের গ্লাস তুলে দিলাম।মানহা একটু খেয়েই বলছে,’বিচ্ছিড়ি লাগে!লবণের চেয়েও তিতে!’
আমি তখন বললাম,’এটা না খেলে কিন্তু তোমার দাদু তোমায় সাথে করে নিবেন না!’
মানহা তখন জোর করেই শরবতটা গিললো।ওর চোখে আনন্দের ঝিলিক। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি।মনে আশা! মাকে সে খুঁজে বের করবেই!
এবং এই মুহূর্তে আমার আরেকটি কথা মনে পড়ছে। নবীজী সাঃ এর যুগের কথা। কয়েকটি দুষ্ট ছেলে বাসা থেকে পাখির ছানা নিয়ে এসেছিল নিজেরা পোষ মানাবে বলে ওদের।আর তখন ছানাদের মা পাখিটা ছেলেদের মাথার উপর দিয়ে বারবার ছক্কর দিচ্ছিলো আর চিৎকার করছিলো শুধু। নবীজী সাঃ তখন ছেলেদের কাছে এলেন। এবং বললেন, ছানাগুলো বাসায় রেখে এসো।ছেলেরা বললো,আমরা তো ওদের পোষ মানাতে এনেছি!
নবীজী সাঃ শুনে বললেন,বাবারা, তোমাদের মায়ের কাছ থেকে যদি তোমাদের কেউ কেড়ে নেয় তখন তোমাদের কী কষ্ট হবে না?তোমরা কী তখন মা ছাড়া থাকতে পারবে?
ছেলেরা একসাথে জবাব দিলো, খুব কষ্ট হবে। আমরা কেউই মা ছাড়া থাকতে পারবো না।কারণ আমাদের মা আমাদেরকে খুব বেশি ভালোবাসেন! আমরাও আমাদের মা’দের খুব ভালোবাসি।
নবীজী সাঃ তখন ছেলেদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, এই জন্যই বলেছি তোমরা পাখির ছানাদেরকে ওদের বাসায় রেখে এসো।ওরা ওদের মায়ের কাছে থাকুক। মাকে ছাড়া ওদের থাকতে খুব কষ্ট হবে।ওরা তোমাদের মতই। ওদেরও জীবন আছে। ওদের মায়েরাও ওদেরকে খুব বেশি ভালোবাসে!
আমি কী করলাম এটা!কী করলাম!মানহাকে ওর মায়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম!

মাগরিবের নামাজ পড়ে মানহার কাছে এসে বসেছি।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।মানহা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,’বাবা,দাদু কখন আসবে?’
আর ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।
আমার উঠার আগেই মানহা বিছানা থেকে উঠে যেতে চাইলো। কিন্তু ওর শরীরের দূর্বলতার জন্য উঠতে পারলো না।আমি জানি মা এসেছে।তাই মানহাকে কোলে করে নিয়ে দরজার কাছে গেলাম।আর এক হাতে দরজার ছিটকিনি খুলে দিতেই চমকে উঠলাম।মা এসেছেন। এবং তার সাথে নীলা।মানহার মা নীলা। আমার প্রিয়তম স্ত্রী!
মানহা ওর মাকে দেখেই এক লাফে ওর কোলে উঠে গেল। তারপর নীলার বুকে তার মুখ গুঁজে রাখলো। মানহা অসুখে নেতিয়ে পড়েছিল।শরীরে এতোটুকুও শক্তি ছিল না তার। কিন্তু মাকে পাওয়ার পর তার গায়ে অত শক্তি এলো কী করে!
নীলা কাঁদছে।মানহাকে কোলে তুলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে।মা বললেন,’হয়েছে। এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো। আগে ঘরে যাও।ফ্রেস হও।মেয়েরে সুস্থ করো। এরপর কান্নাকাটি করার অনেক সময় পাইবা!’
নীলা চোখ মুছলো। তারপর মানহাকে বুকে চেপে ধরে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
মা বললেন,’মাগরিবের ওয়াক্ত আছে কি না দেখ তো!’
আমি ঘড়ি দেখলাম। ওয়াক্ত চলে গেছে।
মাকে বললাম,’না মা ওয়াক্ত নাই।’
মা বললেন,’ঠিক আছে।কাজা পড়তে হবে। আচ্ছা শোন,তুই বেলকনিতে বস।আমি হাতমুখ ধুয়ে আসতেছি।তোর সাথে কথা আছে।’
আমি বললাম,’জ্বি আচ্ছা।’

সন্ধ্যা সাতটা ত্রিশ মিনিট।আমি আর মা বসে আছি বেলকনিতে।নীলা মানহাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।
মা বললেন,’এখনও কী নীলার প্রতি রাগ আছে?’
আমি সহজ গলায় বললাম,’না নাই।’
মা অবাক হয়ে বললেন,’অন্য একটা ছেলের সাথে নিজের স্ত্রী একসাথে ছিল।এ নিয়ে কতকিছু হলো।আর তুই সব ভুলে গেলি!রাগ পর্যন্ত নাই?’
‘না নাই। ‘
‘নাই কেন?’
‘মানহার জন্য। আমার এখন মনে হচ্ছে আমাদের সন্তানের জন্য আমাদের দুজনকেই সেক্রিফাইস করতে হবে।’
‘এটা আগে বোঝা উচিৎ ছিল। এখন থেকে কোন কিছু করার আগে হাজার বার ভেবে নিবি। শুধু নিজের কথা ভাববি না। সংসারের সবার কথা ভাববি। তারপর ডিসিশন নিবি!’
আমি বললাম,’জ্বি আচ্ছা।’
মা এবার বসা থেকে উঠে গিয়ে বললেন,’তোকে একটা কঠিন কাজ করতে হবে। যদিও এটা করতে তোর কষ্ট হবে। কিন্তু কাজটা তোর করতেই হবে।আমি গিয়ে নীলাকে পাঠাচ্ছি।ওর সাথে কথা বল। আগে তোদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হোক। তারপর কঠিন কাজটার কথা ও নিজেই বলবে!’
আমি মাথা কাত করে সম্মতি জানালাম।

মা উঠে যাওয়ার খানিক পর নীলা এসে দাঁড়ালো আমার পাশে।আমি ওকে বসতে বললাম। নীলা বসলো আমার পাশের চেয়ারে। আমার পাশে সে অনমনা হয়ে বসে আছে।
আমি ওর একটা হাত ধরে বললাম,’সরি নীলা!’
নীলা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কেঁদে ফেললো। তারপর কান্নাভেজা গলায় সে বললো,’আমিও সরি ফাহাদ! আমার উচিৎ ছিল তোমার কাছে আগেই সব ভেঙ্গে বলা। কিন্তু কীভাবে ভেঙে বলবো বলো। তোমার সাথে বিয়ের আরো দু বছর আগে থেকে জেনে এসেছি তমাল নেই।খুন হয়েছে কারোর হাতে। এমনকি তার লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি!যা পাওয়া গেছে তা ছাই। পুড়ে থাকা হাড্ডি।
তারপর হঠাৎ এসে সে হাজির।তাও কতো কতো বছর পর! এমন অবস্থায় কে ঠিক থাকতে পারে বলো?’
আমি শান্ত গলায় ওকে জিজ্ঞেস করলাম,’তমালের সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক ছিল একটু বলবে!’
নীলা বলতে শুরু করলো এবার।সে বললো,’তমালরা আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো।ওর বাবা ছিল না।মা গার্মেন্টসে কাজ করে ওকে পড়াশোনা করাতো। তমালের তখন সদ্য মাস্টার্স কমপ্লিট হয়েছে।আর ও তখন জবের পড়াশোনা বাদ দিয়ে উঠে পড়ে লেগেছিল ইউরোপিয়ান কান্ট্রি গুলোতে সেটেল্ড হওয়ার জন্য। যদিও তার জন্য এটা খুব কঠিন ছিল। ওদের হাতে পয়সা কড়ি ছিল না। কিন্তু ওর বিশ্বাস ছিল ও ওখানে যেতে পারবে।আর সে আমায় বলতো ওখানে যেতে পারলেই মা তার কাছে আমায় বিয়ে দিতে আর কোন মানা করবেন না।
এই তমালের সাথে কীভাবে যেন আমার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। গভীর সম্পর্ক। তারপর মা একদিন আমাদের ছাদের উপর দেখে ফেললেন। দেখে ফেলার পর মা আমায় খুব শাসালেন। কিন্তু আমি তার বারণ শুনলাম না। এরপর তমালের মাকে বাসা থেকে বের করে দিলেন মা।তমালরা তখন গিয়ে উঠলো আমাদের বাসার পাশের এক বাসায়। আমাদের সম্পর্ক তখনও কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। বরং একজনের প্রতি অন্যজনের টান বেড়েছে।আমরা দুজন বাইরে ঘুরাফেরা করতাম।কলেজ ফাঁকি দিয়ে রিক্সা করে সারা শহর ঘুরে বেড়াতাম তমালের সাথে। একদিন মার চোখে আবার ধরা পড়ি।মা সে রাতে আমায় খুব মারধোর করেন। মারতে মারতে বলেন ওকে ভুলে যেতে। কিন্তু আমি দমে যাই না।সাহস করে বলি,মরে গেলেও ওকে ভুলতে পারবো না!
এরপর আবার সাহস করে ওর সাথে দেখা করি। মিশতে থাকি।মা শাসন করলে আমি সরাসরি মাকে বলি,আমায় যদি মেরেও ফেলো তবুও ওকে ভুলা সম্ভব না।
মার রাগ তখন আরো বাড়ে। তিনি কসম কেটে বলেন,এই ফকিরনীর বাচ্চাকে শহর ছাড়া না করে তিনি ঘুমাতে যাবেন না!
কিন্তু মা ওকে শহর ছাড়া করতে পারেন না।তমালও দমে যাওয়ার পাত্র ছিল না। মা ওদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বললে তমাল কঠিন গলায় মাকে ধমকি দেয়।বলে,শহর কী আপনার কেনা নাকি যে আপনি বললেই চলে যেতে হবে?
এই কথা মা কিছুতেই সহ্য করতে পারেননি। তিনি এর প্রতিশোধ তুলতে চাইলেন আমার থেকে।সে রাতে তিনি প্রচণ্ড রকম মারলেন আমায়।আর বললেন, জীবনের জন্য ওকে ভুলে যেতে। কিন্তু আমি মাকে এক কথায় বললাম। বললাম,এটা সম্ভব না।
মা তখন বললেন,সম্ভব আমি করবোই করবো।

সে রাতে গোপনে বাবা আমার সাথে কথা বলেছিলেন।বাবা আমায় সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন ঠিক ভাবে পড়াশোনা করতে।আর তমালকে বলতে সেও যেন ভালো করে চাকরির জন্য পড়াশোনাটা করে।ওর চাকরি হলে বাবা আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবেন।
কিন্তু এর সপ্তাহ খানেক পরই তমাল খুন হয়ে যায়।কে বা কারা তাকে খুন করেছে তা জানা যায়নি।হত্যা করার পর প্রমাণ যেন না থাকে এই জন্য লাশ একটা পরিত্যক্ত ভবনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল একেবারে।যার জন্য তাকে চিনতে পারা যায়নি। এমনকি সে রাতের পর তার মাকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি!

তমাল খুন হওয়ার পর আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। সারাদিন কান্নাকাটি করি। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেই।বাবা এতে খুব ভেঙে পড়েন।
তমাল খুন হওয়ার ঠিক তিনদিন পর বাবা সোইসাইড করে মারা গেলেন।মা তখন আমায় বললেন,’শুধুমাত্র তোর জন্য তোর বাবা মারা গেলো।তোর বাবা মেনে নিতে পারেনি তোর এই সম্পর্ক।তুই এমন এক ছেলেকে ভালোবেসেছিলে যে ছিল গুন্ডা।গুন্ডা বলেই ওকে এভাবে মেরে ফেলে রেখেছে। এখন কী তুই আমাকেও মারতে চাস?আমি তো মা!তোর এমন অবস্থা দেখে আমি ভালো থাকবো কীভাবে বল!’
মার কথা শুনে আমার খারাপ লাগে।আর ধিরে ধিরে বুকের ভেতর কষ্ট চাপা দিয়ে মাকে বুঝাই আমি ঠিক আছি।আমি ভালো আছি। এরপর দু বছর কেটে গেলে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়।আমরা অনেক অনেক দিন ধরে সংসার করি।সুখেই দিন কাটাই। মানুষ জীবিত মানুষকে সহজে ভুলতে পারে না। কিন্তু মৃত মানুষকে সহজে ভুলে যায়। আমিও প্রায় ভুলে যাই তমালকে। কিন্তু কদিন আগে হুট করে যখন ও আমার বাসায় চলে আসে তখন ভীষণ অবাক হই।আর সবকিছু শুনে কী করবো না করবো কিছুই বুঝতে পারি না! নিজেকে আমি হারিয়ে ফেলি অতীতে।আর আমি চলে যাই একটা ঘোরের ভেতর!’
নীলার চোখ ভরে উঠেছে জলে।সে শাড়ির আঁচল দিয়ে তার চোখের জল মুছলো।
আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম,’একটা মৃত মানুষ অত অত বছর পর হঠাৎ জীবিত হয়ে তোমার কাছে ফিরে এলো কী করে?’
নীলা বললো,’ও সেদিন মরেনি। কিন্তু মা পরিকল্পনা করেছিলেন ওকে মেরে ফেলবার জন্য। কিছু গুন্ডাও নাকি ভাড়া করে ফেলেছিলেন তিনি।বাবা সবকিছু জেনে ফেলেন।
এবং মাকে থামানোর জন্য তিনি মার কাছে বলেন তিনি তমালকে নিজে খুন করবেন।এর জন্য গুন্ডা ভাড়া করার কোন প্রয়োজন নাই।গুন্ডাদের মাধ্যমে এসব করালে রিস্ক থাকে।ধরা পড়লে কার জন্য এই কাজ করেছে তার নাম বলে দেয় পুলিশের কাছে!
মা শুনে নাকি খুব এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলেন তখন।আর বাবা অপেক্ষা করছিলেন এলাকায় কবে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে সেদিনটির জন্য।আমরা শহরে যে জায়গাটায় থাকি ওখানে কদিন পর পর খুন খারাবি হয়। মানুষের লাশ পাওয়া যায় ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে, পরিত্যক্ত ভবনে,ড্রেনে, পঁচা পুকুরে। আমাদের এখানে সস্তায় খুনি ভাড়া পাওয়া যায়।
বাবা আগে থেকেই সবকিছু বলে রেখেছিলেন তমাল আর তার মাকে।যেদিন কোন খুনের ঘটনা ঘটবে সেদিনই ওদের শহর ছেড়ে সড়ে যেতে হবে। এবং কোথায় যেতে হবে তাও বাবা ঠিক করে রাখলেন আগে থেকেই। এরপর খুব দ্রুত একটি ভয়াবহ খুনের ঘটনা ঘটে গেলো। এমনকি খুন হওয়া লাশ পুড়ে যাওয়ার কারণে চেনা যাচ্ছিলো না এটা কে। এই সুযোগটাই বাবা কাজে লাগালেন।তমাল আর তার মাকে ইশারা করলেন শহর ছেড়ে চলে যেতে।ওরা দ্রুত কেটে পড়লো।আর বাবা মার কানে ফিসফিস করে বললেন,কাজ শেষ। তমাল খতম। এই ঘটনার ঠিক তিনদিন পরই বাবা মারা যান।বাবা মারা যান গলায় রশি পেঁচিয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে তেমন শোক করতে দেখিনি। তখন কিছু বুঝিনি। কিন্তু তমাল সবকিছু খুলে বলার পর এখন সন্দেহ হচ্ছে। সন্দেহ নয় এটা মনে হয় সঠিক ধারণাই। আমার মনে হচ্ছে বাবা সোইসাইড করেননি। আমার মনে হয় মা পরিকল্পনা করে বাবাকে খুন করেছিলেন!
নীলা কাঁদছে। খুব করে কাঁদছে ও।
ওর কথাগুলো শুনে আমার গা কাটা দিয়ে উঠেছে।আমি এবার নীলাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম,’বাবাকে মা খুন করতে যাবেন কেন?আর বাবা যখন জেনে গিয়েছিলেন মা গুন্ডা ভাড়া করেছেন তখন তিনি মাকে কিছু বলেননি কেন?আর তমাল যেহেতু খুন হয়নি তবে ও এতো বছর তোমার কাছে আসেনি কেন? এখন হঠাৎ করে এলো কেন?ও এতো দিন কোথায় ছিল লুকিয়ে?’
নীলা কান্নাভেজা গলায়——

(গল্পটা সিরিয়াসলি নেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। এবং বাস্তবতার সাথে মিলানোরও কোন প্রয়োজন নাই। এটাকে শুধুমাত্র গল্প হিসেবেই নিন।এমনও কী হতে পারে?চরম হাস্যকর, লেইম পর্ব একটা, আবোলতাবোল লিখলেই গল্প হয়ে যায় না এসব বলারও প্রয়োজন নাই। এটাকে জাস্ট কাল্পনিক একটা কাহিনী হিসেবেই পড়ুন।)

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৮

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৮ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



রাতে মানহার গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো।ঠান্ডাও লেগে বসেছে ঝাঁকিয়ে। এখনও মা মা করছে মেয়েটা।
আচ্ছা আমি কী করবো বলুন তো?
আত্মীয় স্বজন সহ ওর সব বন্ধুদের বাসায় খুঁজ করেছি। কোথাও নীলা নেই।কেউ তার খবর জানে না। এদিকে তমালের ঠিকানাও আমি জানি না।
মানহার জন্য আমি কী করবো এখন?মেয়েটা তো মা মা করে শেষ হয়ে যাচ্ছে!
একটু আগে ডাক্তার এসেছিলেন বাসায়। তিনি অষুধ পত্তর দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু যাওয়ার সময় বলে গিয়েছেন,’অষুধ পত্তরে তো কাজ হবে না বাবা। মেয়ের মা ছাড়া মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে না কিছুতেই!আর তুমি তো ওকে জোর করেও কিছু খাওয়াতে পারবে না। এমনকি অষুধও না। তোমার মেয়ে খুব জেদি!’
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর মাকে ফোন করেছিলাম। শাশুড়ি মা নয়। আমার নিজের মাকে।
মা আমার গলা শুনেই আন্দাজ করে ফেললেন কিছু একটা। তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠে বললেন,’কী হয়েছে বাবা? কোন সমস্যা?’
আমি ধরা গলায় বললাম,’মা মানহার অবস্থা ভালো না! কিছু খাচ্ছে ধাচ্ছে না। সারাদিন মা মা করে কাঁদছে!’
মা স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,’নীলা কোথায়?কী হয়েছে?ঝগড়া করেছিস তোরা?’
আমি মার কাছে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না।মাও অসুস্থ।তার হার্টের সমস্যা। মাকে কী টেনশন দেয়া উচিৎ? তবুও সবকিছু মার কাছে খুলে বললাম।
মা শুনে শান্ত গলায় বললেন,’কেন ওর কথাগুলো শুনিসনি তুই?কেন?রাগের মাথায় কোন কিছু করা কী ভালো?ধর তুই মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছিস।আজ অংক পরীক্ষা।তো হলো কী তোর কোন অংকই মনে পড়ছে না।মনে হচ্ছে তুই কিছুই পারবি না! এখন কী করবি তুই? রেগেমেগে আগুন হয়ে খাতা ছিঁড়ে খুঁড়ে হলের ভেতর ফেলে রেখে আসবি?
মোটেও না। এটা করলে সারা জীবন তোকেই পস্তাতে হবে। তোকে যা করতে হবে তা হলো ঠান্ডা মাথায় বসে ভাবতে হবে।মনে করতে হবে সবকিছু। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আস্তে আস্তে তখন দেখবি সবকিছু সহজ হয়ে উঠছে।তুই সবকিছুই পারছিস!আর এটা তো তোদের জীবন। নীলা তোর স্ত্রী। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি সম্পর্ক ওর সাথে তোর!ওর সাথে এমন করাটা তোর খুব ভুল হয়েছে!’
আমার খুব খারাপ লাগছে।কান্না পাচ্ছে। নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।আমি অসহায়ের মতো করে মাকে বললাম,’মা আমি কী করবো বলুন তো! আমার আর সহ্য হচ্ছে না।মেয়েটাও মা মা করতে করতে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে।জ্বর উঠেছে গা কেঁপে।ঠান্ডাও লেগেছে। এখনও মা মা করছে।সিরাপটা পর্যন্ত মুখে তুলছে না।’
মা তখন কঠিন গলায় বললেন,’বাবা হওয়া কোন সহজ কাজ না রে ফাহাদ!বড় কঠিন কাজ! এখন তোরা বড় হয়েছিস। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাই রয়ে গেছিস!তোর ছোট্ট একটা ভুলের কারণে তোর মেয়েটা ঝুঁকির মুখে! নীলা যদি রাগ করে কোথাও চলে যায়,আর না ফিরে তখন মেয়েকে কী জবাব দিবি তুই?আর তোর কাছ থেকে মানহার অবস্থা শুনে তো মনে হচ্ছে ও ঝুঁকিতে আছে। আচ্ছা আল্লাহ না করুন ওর যদি কিছু হয়ে যায় তখন তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি কোন ভাবে?’
মার কথাগুলো আর ভালো লাগছে না।আমি ফোন রেখে দিয়ে কাঁদতে বসেছি।চোখ থেকে টপটপ করে জল‌ গড়িয়ে পড়ছে আমার!নির্বোধ বালকের মতো দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আর ভাবছি,একটা ভুল তিন তিনটে জীবন এলোমেলো করে দিতে পারে কীভাবে!

মানহা জ্বর নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি খুব সাবধানে ওকে ঘুমে রেখেই ড্রপার দিয়ে ওর মুখে সিরাপ পুরে দিলাম।মানহা টের পেলো না।ওর শরীর খুব গরম হয়ে গেছে।কপালে জলপট্টি দেয়া প্রয়োজন। শরীরটাও ঠান্ডা পানি দিয়ে একটু মুছে দিলে ভালো হবে।তাপটা কমবে।

মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎ দূর্বল গলায় মানহা বলতে লাগলো,’মা,মা পানি খাবো!’
আমিও তখন আধঘুমে। বসে বসেই ঝিঁমুচ্ছিলাম। মেয়েকে এমন অসুখে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে পারিনি বলেই বসে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন কিছুটা তন্দ্রাভাব আমার চোখেও এসেছিল।তাই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।মানহার দূর্বল আর শুকনো গলা শুনে ঝট করে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আমি তাড়াহুড়ো করে তৎক্ষণাৎ বিছানা থেকে নেমে ওর জন্য গ্লাস ভর্তি ঠান্ডা পানি নিয়ে এলাম।
মানহা পানি মুখে নিয়েই হড়হড় করে বমি করে দিলো। পেটে তো আর কিছু নাই। সামান্য পানিই বের হয়েছে বমি হয়ে।
এবার মানহা কেমন ছটফট করছে।বলছে,’মা,ও মা শরীর জ্বলছে!’
আমার তখন হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় একটি হাদীসের কথা। আমাদের নবী সাঃ ওখানে মায়ের অধিকারের কথা তিনবার বলেছেন।আর বাবার কথা বলেছেন একবার। আগে এই কথাটির গুরুত্ব বুঝিনি। একবার এ নিয়ে তর্কও করেছিলাম মার সাথে। বলেছিলাম,বাবারা যেখানে অর্থনৈতিক সবকিছুর যোগান দেয়, সংসারের দেখভাল করে, ছেলে মেয়ের ভরণপোষণের সব দায় দায়িত্ব নেয় সেখানে মার অধিকার বেশি হয়ে গেলো কী করে?
কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি সবকিছু। মায়ের হাতের শীতল স্পর্শ কিংবা মায়ের ওমের মতো পৃথিবীর আর কোন আরামদায়ক বস্তু নেই।এমনকি জান্নাতের মূ্ল্যও মায়ের চেয়ে কম।কম বলেই মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।আমি কী করলাম এটা! একটা ছোট্ট সন্তানকে তার জান্নাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি। আল্লাহ আমায় এর জন্য কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। কিছুতেই না!

সে রাতে আমার আর ঘুম হয় না।মানহার ছটফটানি আমার বুকের ভেতর ঝড় তুলে।ওর দিকে তাকিয়ে থাকি আমি বোকার মতো।মানহা এখন আর মা মা বলছে না।তার শরীর অতি দূর্বল হয়ে পড়ছে।কথা বলার কিংবা কাঁদার আর শক্তি নেই তার শরীরে!
আমি কিচেনে গিয়ে ওর জন্য নুডুলস করে নিয়ে আসি।ও স্যুপ আর নুডুলস খুব পছন্দ করে।নুডুলস করেছি এই জন্য যে জ্বরের মুখে হয়তোবা ঝালটা ওর ভালো লাগবে। কিন্তু নুডুলস করে এনে ওর মুখে দিতেই ও মুখ সরিয়ে নিয়ে বললো,’তিতে।বাজে লাগছে!’
আমি ওকে সান্তনা দেই।বলি ,’মা একটু খাও শুধু।খেলেই সুস্থ হয়ে যাবে।’
মানহা দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে,’খাবো না।’

রাত কাবার হয়ে এলে মানহা আবার ঘুমিয়ে পড়ে।ওর দিকে তাকানো যায় না।পরীর মতো ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটার চেহারার কী হাল হয়েছে! চোখের নীচে কেমন কালি জমে গেছে।মুখটা মলিন হয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে জন্মরোগা মেয়ে!
আমি ওর ঘুমন্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলি,’মা আমি শিগগির তোমার মাকে খুঁজে বের করবো। এমনকি সে যদি সুদূর সুইজারল্যান্ড চলে যায় ওখানেও যেতে আমি রাজি। তোমার মাকে আমি তোমার কাছে ফিরিয়ে আনবোই আনবো!সে ফিরে আসবে। শিগগির ফিরে আসবে!

ফজরের আজান হলে আমি উঠে অজু করি।বহু বহুদিন পর ফজরের নামাজ পড়তে বসি।মনে প্রশান্তির এক ঢেউ খেলে যায় তখন। নামাজ শেষে খোদার দরবারে কেঁদে কেঁদে আর্জি পেশ করি।বলি,’হে রহমান অর রহিম।তুমিই তো পৃথিবীর মানুষদের পালনকর্তা।তুমিই রোগ নিরাময়কারী।তুমিই তো ভাঙ্গা হৃদয়, আর ভাঙ্গা সংসারের জোড়া দানকারী! মাবুদ গো, আমার ছোট্ট মেয়েটা অসুখের দখলে ছটফট করছে।ওর মাকে আমি দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে নিরাময় দান করো। এবং তুমি দ্রুত তার মাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে এনে দাও। আমি ভুল করেছি।আমি পাপিষ্ঠ। আমার পাপের শাস্তি তুমি আমার পবিত্র, মাসুম মেয়েটাকে দিও না!’
দোয়া শেষ হতেই হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। মুহূর্তে আমার ভেতরটা কেমন নাড়া দিয়ে উঠে।ডিসপ্লেতে তাকিয়ে দেখি মা ফোন করেছেন। ফোন রিসিভ করতেই মা ও পাশ থেকে বলেন,’তুই তো অত সকালে সজাগ থাকস না। আজ সজাগ কীভাবে? কল দেয়ার আগেই রিসিভ করে ফেললি!’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,’মা,আজ নামাজ পড়ছি।’
মা তখন খানিক হেসে বললেন,’যা তোর অপরাধ কিছুটা মার্জনা করা গেলো।আজ আটটার ট্রেনে করে তোর বাসায় আসছি ইনশাআল্লাহ!’
কেন আসছেন হঠাৎ করে? আগে বলেননি কেন আসবেন?এসব বলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এসবের কিছুই বলতে পারলাম না আমি। কেন জানি আমার ভীষণ ভীষণ কান্না পেয়ে গেল। মোবাইল ফোন গালে চেপে রেখেই আমি কেঁদে উঠলাম।


#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৭

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



মা এবার চুপ হয়ে যান। তাকে কেমন ভীত দেখায়। চেহারা মলিন হয়ে আসে।
আমি তাকে তাড়া দেই। আবার বলি,’মা ও মরে গেলে ফিরে আসতে পারে কীভাবে?’
মা এবার কাঁপা কন্ঠে বললেন,’ও কী সত্যিই তমাল?’
‘হ্যা সত্যিই তমাল।নীলা ওকে তমাল নামেই সম্বোধন করেছে।’
মা এবার বললেন,’তমালের চেহারার গড়ন বল তো?ও দেখতে কেমন!’
‘অতকিছু বলতে পারবো না মা। শুধু এটা জানি নীলাকে ও নীল বলে ডাকে।আর ও সব সময় পাঞ্জাবি পরে।দেখতে চিকনা টাইপের!’
মা এবার একটা ধাক্কার মতো খেলেন।মার চেহারা এখন আরও বেশি ভীতসন্ত্রস্ত দেখা যাচ্ছে।
তিনি বললেন,’একটু পানি।পানি খাবো!’
আশেপাশে কাজের বুয়া নাই।কাজের বুয়াকে তিনি আজ সকাল সকাল ছুটি দিয়ে দিয়েছেন।কাজের বুয়ার সামনে নিজের মেয়ের সম্পর্কে এইসব কথা নিয়ে আলোচনা করা যায় না।করলে সর্বনাশ হবে।এইসব কথায় তারা লেজ মাথা কান এবং ঠোঁট লাগিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি প্রচার করবে।
আমি উঠে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে গ্লাস ভরে মার জন্য পানি নিয়ে এলাম।মার হাতে সেই গ্লাস তুলে দিতেই মা এক চুমুকে সবটুকু পানি খেয়ে সাবাড় করে ফেললেন। তারপর মেঝেতে ঝনাৎ শব্দ তুলে খালি গ্লাসটা রেখে বললেন,’এটা কীভাবে সম্ভব বাবা?যেখানে নীলার বাবা নিজের হাতে খুন করেছে তমালকে!’
কথাটা বলে হঠাৎ থম মেরে গেলেন মা। এবার তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি এভাবে খুনের বিষয়টা আমার কাছে বলতে চাননি। কিন্তু মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। এখন তিনি অনুশোচনায় ভুগছেন!
এবার তো আমি নিজেই রিতিমত ভয় পাচ্ছি। বিষয়টা অবশেষে খুন পর্যন্ত গড়িয়ে পড়লো!
তবে কী একটা ছোট্ট ঘটনার ভেতরেও সুপ্ত থাকে অনেক বড় বড় ঘটনা?
মা এবার কথা ঘুরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করেন।বলেন,’না খুন করেনি তোমার শশুর। ভুল বলছি।
ও টাইফয়েডে মারা গিয়েছিল। কিন্তু নীলা সন্দেহ করেছিল ওর বাবা ওকে খুন করেছে!’
আমি এবার হেসে ফেলি। হেসে বলি,’মা, আমার তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটাও মিথ্যে বলে না এই ভয়ে যে মিথ্যে বললে আল্লাহ কাঁচি দিয়ে তার জিভ কেটে ফেলবেন!আর আপনি চুল পাকা বৃদ্ধা হয়েও কী করে অবলীলায় এইসব মিথ্যে বলে যাচ্ছেন!কেন আমার কাছে সব লুকোতে চাচ্ছেন বলুন তো? আপনি লুকিয়ে রাখলেও আমি কিন্তু সব কথা বের করে ফেলবো। তখন আপনি অসম্মানিত হবেন। তখন আর আপনাকে আমি শাশুড়ি হিসেবে এতোটুকুও সম্মান করবো না। ভালো আচরণ তো দূরে থাক সবচেয়ে যে নোংরা আচরণ আছে তাই করবো আপনার সাথে!’
মা এবার একটু চমকে উঠলেন। তিনি এখনও সবকিছু লুকোতে চাচ্ছেন। বলছেন,’তুমি আমার কাছে কেন এসেছো বল তো?তমাল কে তা আমি জানি নাকি ?এই বিষয়ে আর একটা কথাও আমার সাথে বলবে না! আমার তো মনে হয় তুমি নিজেই নীলাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছো। আরেকটা বিয়ে করতে চাও তাই না?আমি কিন্তু সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো না।মামলা করবো তোমার নামে!’
মার এই আচরণগুলো খুবই হাস্যকর! শিশুসুলভ।কেউ কেউ এই আচরণগুলোকে ধৃত চোরদের আচরণও বলে থাকেন। অর্থাৎ কোন চোর ধরা পড়ে গেলে হাজার হাজার মিথ্যে বলে, একেকবার একেক ধরনের কথা বলে বাঁচার চেষ্টা করে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে। এমনকি যে তাকে ধরলো তার নামেও অনেক সময় চোরির অপরাধ দিয়ে বসে!মাও ঠিক এই কান্ডগুলিই করছেন আমার সাথে!আমি জানি তার কাছ থেকে এখন কোন সঠিক তথ্যই পাওয়া যাবে না। সঠিক তথ্য পেতে হলে তমাল এবং নীলাকে আমার প্রয়োজন। কিন্তু ওদের আমি কোথায় খুঁজে পাবো!

মানহাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়ি।মানহা এখনও কিছু খেতে চাচ্ছে না।ওর সেই একটাই কথা।একটাই বাণী।
‘মা কখন আসবে?বাবা, তুমি খুব খারাপ! মাকে তুমি তাড়িয়ে দিয়েছো!’
এবার আমার কান্না পায় খুব। মেয়েটার লাল টুকটুকে মুখটা শুকিয়ে অতটুকু হয়ে গেছে। চোখ দুটো ফুলে গেছে একটানা কাঁদার কারণে।
আমি ওকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠি এবার। নিজের উপর খুব রাগ হতে থাকে আমার।রাগ হয় এই জন্য যে কেন আমি তার কথাগুলো শুনলাম না।ও তো খুব করে চেয়েছিল তার কথাগুলো যেন আমি শুনি। অনুরোধ করেছিল।অনুনয় করেছিল।আমি তো শুনতেই চাইনি। উল্টো তাকে তাড়িয়ে দিয়েছি।
এখন মানহাকে কীভাবে বোঝ দিবো?মেয়েটা আমার নীলাকে ছাড়া মুখে কিছুই তুলবে না! কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাবে!
মানহা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।কথা বলে না।
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ধরা গলায় বলি,’মা,একটু স্যুপ খেয়ে নেও কেমন? তারপর তোমাকে নিয়ে তোমার মাকে আনতে যাবো!’
মানহা বসে যাওয়া গলায় বললো,’মা কোথায়?’
আমি বললাম,’ওর বন্ধুর বাসায়। তুমি আগে খাও। তারপর তোমায় নিয়ে ওর কাছে যাবো।’
মানহা তখন বললো,’আমি মার কাছে গিয়ে খাবো। এখানে খাবো না। এক্ষুনি মার কাছে নিয়ে যাও বাবা। এক্ষুনি নিয়ে যাও।’
মানহার গলা ভেঙ্গে গেছে একটানা কাঁদার কারণে। এই ভাঙ্গা গলা নিয়েই সে আবার কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।
কী ভয়াবহ বিপদেই পড়লাম আমি।এর থেকে উতড়াবো কী করে?আমি তো কোন পথ দেখছি না!
আচ্ছা তমালের সাথে তো আবার চলে যায়নি নীলা? ওদের তো সুইজারল্যান্ড চলে যাওয়ার কথা ছিল!
এবার আমি ঘরের কাগজ পত্র ঘাঁটতে থাকি। খুঁজে দেখতে থাকি কোথাও তমালের নম্বর আছে কি না!তমাল সম্পর্কে কোথাও কোন কিছু লিখা আছে কি না। কিন্তু কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া গেল না। অবশেষে ব্যর্থ পরাজিত মানুষের মতো এসে বসলাম মানহার সামনে। আবার ওকে দরদ মাখা গলায় বললাম,’মা,খেয়ে নাও প্লিজ!না খেলে তো তুমি বাঁচবে না!অসুখ করে ফেলবে তোমার!’
মানহা তখন রাগের গলায় বললো,’আমার কাছে তুমি আর আসবে না। তোমাকে আর কখনো আমি বাবা বলে ডাকবো না।’
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চাই।ও তখন আমার হাত দূরে সরিয়ে দেয়।আমি সরাতে না চাইলে ও নিজেই এখান থেকে উঠে চলে যায় ও ঘরের দিকে।আর বলে,’আমার কাছে আসবে না তুমি। তুমি একদম ভালো না। তুমি খুব পঁচা! খুব পঁচা!’
মানহা রাগে থরথর করে কাঁপছে।
ছোট্ট একটা মেয়ের অত রাগ হতে পারে!
আমি ওকে বুঝাতে চাই।বলি,’মা, এমন করো না তুমি! তোমার মা আজ বিকেলেই এসে যাবে।’
মানহা আর কথা বলে না।ও ঘরে গিয়ে খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে করুণ গলায় কাঁদতে শুরু করে!


ভুলটা কার তা আমি বুঝতে পারি না!
নীলাকে আগে দোষ দিতাম।ওকেই অপরাধী মনে করতাম। কিন্তু এখন আর ওকে দোষ দিতে পারছি না। এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কেন নীলার কথটা শুনলাম না আমি।কী হতো একটিবার ওর কথাগুলো শুনলে!
তারপর তমালকে নিয়ে ভাবি।ভাবি নীলার মাকে নিয়ে।তমালের সাথে নীলার কী সম্পর্ক ছিল। ওদের কী বিয়ে হয়েছিল আগে?যদি বিয়ে হয়ে থাকে তবে তমালকে খুন করলো কেন নীলার বাবা? আবার নীলার মা আমার কাছে সবকিছু লুকোতে চাইছে কেন?
এইসব কথা জানতে না পারলে ঘোর কাটবে না কিছুতেই! কিন্তু এইসব কিছু জানতে হলে নীলাকে প্রয়োজন।নীলাই বলতে পারবে সবকিছু। হয়তোবা এই কথাগুলোই সে আমায় বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি শুনিনি।শুনতে চাইনি!
তমালকে পাওয়া গেলেও কাজ হতো। কিন্তু ওর বাসার ঠিকানা আমি জানি না। কোথায় গিয়ে ওকে খুঁজবো?বাইরেও বেরুতে পারছি না।মানহা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়ে আছে! ওর দিকে তাকালে বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।বুক ছিঁড়ে কান্না আসে। উথাল পাতাল সেই কান্না!
এভাবে আর কতোক্ষণ?কতো টা সময়?মানহা নীলাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কিছুতেই না।
আমি নীলাকে গিয়ে কোথায় খুঁজবো? কোথায় খুঁজে পাবো?
মা ছাড়া বাবা ছাড়া একটা সন্তানের বেড়ে উঠা কতটা কঠিন ,বেড়ে উঠার এই পথটা কতটা পঙ্কিলময়,কর্দমযুক্ত,কন্টকাকীর্ণ তা কে বুঝবে!

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৬

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



আমি নীলাকে রাগত স্বরে বললাম,’তোমায় না বলেছিলাম আমার সামনে কখনো পড়বে না।কেন তবে আবার সামনে এসেছো আমার? কেন?’
নীলা আমার পথরোধ করে দাঁড়িয়ে গেল তখন।আর আমায় বললো,’তুমি আমার হাসব্যান্ড।তুমিই আমার এই পৃথিবীর সব। তোমার সামনে আসবো না তো আমি কার সামনে যাবো! তোমায় ছাড়া আমার যাওয়ার আর জায়গা কোথায় বলো?’
ওর কথা শুনে আমার রাগ আরো বাড়ছে।রাগে কাঁপতে কাঁপতে আমি বললাম,’আমি তোমার সব তাই না?আমায় ছাড়া তোমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নাই তাই না? তো তমাল তোমার কে?’
নীলা এবার চুপ হয়ে যায়।তার গলায় এসে দলা পাকিয়ে কথাগুলো আটকে যায় কেমন!
আমি ধমক দিয়ে বলি,’বলো তমাল তোমার কে?তমালের সাথে কিসের সম্পর্ক তোমার?’
নীলা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,’ওর নাম আর বলো না প্লিজ! আমার সামনে ওর নাম বলো না!’
নীলা কাঁদতে শুরু করেছে। খুব করে কাঁদছে ও।
এইসব কান্না দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে না।রাগ হচ্ছে। এখনও তমালের জন্য ওর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক একটা।ওর উপযুক্ত শাস্তি একটাই।ডিভোর্স।আমি তাকে ডিভোর্স দিবো!
নীলা কাঁদতে কাঁদতে আবার বলে,’ফাহাদ, ওর বিষয়ে অনেক কথা আছে।ব্যপারটা সহজ নয়। এবং আমি ইচ্ছে করলেই এখন শান্ত থাকতে পারছি না। কিন্তু তোমায় কথা দিলাম আমি তোমায় ঠকাবো না। তোমার সাথে প্রতারণা করবো না।আমি শুধু তোমারই আছি।আমায় ভুল বুঝো না তুমি। খুব শিগগিরই সব খুলে বলবো আমি!’
আমি এবার ওকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম আমার সামনে থেকে।
নীলা তাল সামলাতে না পেরে বারান্দার গ্রিলে গিয়ে পড়লো। পড়ে গিয়ে কপালের একটা পাশ সামান্য কেটে গেল ওর।আমি রাগে আর তখন ঘরের ভেতর গেলাম না।হন হন করে হেঁটে বাইরের দিকে ছুটে গেলাম।

বাসায় আবার ফিরলাম ঠিক তিন ঘণ্টা পর। তখন বিকেল।রোদের প্রখরতা কমেছে। বাইরে হলুদ মিষ্টি আলো। বাসায় ফিরে আমি অবাক হলাম। নীলা বাসায় নেই।মানহাও নেই। দরজা বাইরে থেকে লক করা।
রাগে শরীরটা আমার খিটখিট করে উঠলো।ওর ফোনে ফোন করলে ও ফোন রিসিভ করলো না।
সারাটা বিকেল বারান্দায় বসে রইলাম।
নীলা ফিরলো সন্ধ্যা বেলায়।ও ফিরতেই আমি বললাম,’কোথায় গিয়েছিলে?’
নীলা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,’তমাল ডেকেছিলো একটু।এটাই শেষ যাওয়া।আর যাবো না কখনো।ওর সাথে আর দেখা করবো না!’
ওর মুখে তমালের নাম শুনে আমার রাগ আরো প্রখর হয়ে উঠলো। নীলার গায়ে কোনদিন আমি হাত তুলি নি। এবং স্ত্রীর গায়ে স্বামীর হাত তুলা আমার কাছে নোংরা একটি কাজ বলে মনে হয়! এই কথা ভাবতেও আমার ঘেন্না হয়। কিন্তু আজ আমার কী হলো জানি না। নীলাকে মানহার সামনেই ইচ্ছে মতো মারলাম।নীলা কাঁদেনি। চুপচাপ শুধু একটা কথাই বলে গেছে,’তুমি আমার কথাগুলো শুনো আগে। তারপর তোমার ভুল ভেঙ্গে যাবে!’
আমি এবার এক ধাক্কায় ওকে বারান্দার বাইরে নামিয়ে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম ওর মুখের উপর।আর বললাম,’তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক আমি ছিন্ন করলাম। তোমার মতো পাপীর উপযুক্ত স্থান জাহান্নাম।যাও এখন তুমি জাহান্নামে যাও।যে সকালে ক্ষমা চেয়ে বিকেল বেলা আবার তমালের সাথে দেখা করতে চলে যায় তার কী কথা শুনবো আমি!’
নীলা দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো।আর কাঁদতে লাগলো খুব করে।
আমি ওকে ধমক দিয়ে বললাম,’এভাবে ভিকেরির মতো দাঁড়িয়ে থেকে দরজায় টোকা দিয়ো না। ভালোই ভালোই চলে যাও বলছি। তুমি না গেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসবো!’
নীলা তখন কাঁদতে কাঁদতে আমায় অনুনয় করে বললো,’আমার কথাগুলো তুমি একবার শুনো প্লিজ! কেন ওর কাছে গিয়েছিলাম তা শুনো!’
আমি রাগে গর্জন করে উঠে বললাম,’কেন গিয়েছিলে তা আমি ভালো করেই জানি। নিজের বাসায় ওকে ডেকে এনে যে মেয়ে চুমু খায় বাইরে গিয়ে ওর সাথে এই মেয়ে কী করে না করে তা আমার ভালো জানা আছে। এখন যাও।ওর কাছেই যাও। আমার ঘরের দরজা তোমার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।আর এরপরেও যদি তুমি আমার কথা না শুনো তবে আমি তোমায় আমার মুখেই তিনবার তালাক বলতে বাধ্য হবো।’
নীলা আর দাঁড়িয়ে রইলো না আমার এই কথা শুনে।তার তখন আর করার কিছুই ছিলো না। কাঁদতে কাঁদতে সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল বাইরের দিকে।

মানহা কিছুই বুঝতে পারছে না।সে বোকার মতো তাকিয়ে এতোক্ষণ সবকিছু দেখে গেছে। কিন্তু রাত হলেও যখন ওর মা বাসায় ফিরলো না তখন সে কাঁদতে শুরু করলো।
আমি ওকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনছে না। কোন জল খাবারও মুখে তুলছে না।রাতে না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই সে ঘুমে ঢলে পড়লো।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আবার মানহা তার মাকে খুঁজতে লাগলো। কিচেনে, ওয়াশরুমে, বেলকনিতে কোথাও সে তার মাকে খুঁজে না পেয়ে আমার কাছে এসে কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করলো,’বাবা,মা কোথায়?’
আমি ওকে সান্তনা দিলাম। বললাম,’ওর বন্ধুর বাড়ি গেছে।’
মানহা বললো,’কখন ফিরবে?’
‘তাড়াতাড়ি এসে যাবে মা। তোমার জন্য স্যুপ করে দিচ্ছি খাও।’
আমি স্যুপ করে কাঁচের গ্লাসে করে ওর জন্য নিয়ে এলাম।সে স্যুপ ভর্তি গ্লাস আমার হাত থেকে নিয়ে মেঝেতে ঢিল মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেললো। তারপর আমায় রাগী রাগী গলায় বললো,’বাবা, তুমি ভালো না। তুমি পঁচা। তুমি খুব পঁচা। মাকে তুমি মেরেছো।বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছো। আমিও চলে যাবো বাসা থেকে। এখানে আর থাকবো না।’
কী ভয়ংকর বিপদে পড়ে গেছি আমি। পরপর দুদিন মেয়েটার কোন খাওয়া দাওয়া নাই।এতো মহা মুশকিল! মেয়ে শুধু কাঁদে।ওর শরীর খুব দূর্বল হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এবার কোন বড় অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবে।
অপারগ হয়ে নীলাকে ফোন করি আমি। কিন্তু নীলার ফোন বন্ধ। এদিকে মানহার অবস্থা ভালো না। কোন কিছু খাচ্ছে না।কান্নাও কিছুতেই বন্ধ করছে না। তৃতীয় দিন সকাল বেলা ওকে নিয়ে গেলাম ওর মামা বাড়ি। ওখানে যাওয়ার পর পড়লাম আরেক বিপদে। নীলা ওখানে যায়নি।মানহার নানু জিজ্ঞেস করলেন,’কী হয়েছে? নীলা কোথায় গেছে?’
আমি কী বলবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না।
মানহা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,’বাবা মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। মাকে অনেক মেরেছেও।’
আমার শাশুড়ি কথাটা শুনে হা হয়ে গেলেন একেবারে। তারপর ভয়ে ভয়ে বললেন,’ফাহাদ,এসব কী বলছে মানহা? নীলা এখন কোথায়?কেন এমন করেছো ওর সাথে? নীলার কী দোষ ছিল? আমায় কেন আগে জানালে না কিছু?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’মা, আপনার মেয়ে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।’
মা তখন ঝাঁজালো গলায় বললেন,’বলতে তো হবেই।সব বলতে হবে।আর আমার মেয়েকে বের করে এনে দিতে হবে। নয়তো এর ফল ভয়াবহ হবে ।আমি তোমায় সহজে ছেড়ে দিবো না। তাছাড়া মানহার যা অবস্থা এতে যে আরেকটা ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে তা আমি টের পাচ্ছি আগে ভাগেই। এখন বলো আমার মেয়ের অপরাধ কী ছিল? কেন এসব করেছো তুমি?’
আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। তমালের সাথে ওর ঘটে যাওয়া বিষয়টা খুলে বললাম।
মা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেললেন।আর আটকে আসা গলায় বললেন,’তমাল!তমাল কোথা থেকে এলো?ও তো সাত বছর আগেই খুন হয়েছে।’
মার মুখ থেকে এই কথা শুনে আমার শরীরের সবগুলো রুমকূপ কাঁটা দিয়ে উঠলো।মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত সবটা শরীর ঘামে ভিজে যেতে লাগলো।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’মা কী বললেন আপনি ?তমাল খুন হয়েছে মানে?কে খুন করেছিল ওকে?আর কেনইবা খুন করা হয়েছিল?তমাল আসলে কে? নীলার সাথে ওর কী সম্পর্ক?আর ও যদি সাত বছর আগেই খুন হয়ে থাকে তবে ফিরে এলো কীভাবে আবার? ‘

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৫

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



তড়িঘড়ি করে এসে দরজা খুলতেই দেখি বাইরে নীলা দাঁড়িয়ে আছে।ওর কোলে মানহা।
নীলাকে দেখে আমার গা শিরশির করতে লাগলো।রাগে সাড়া শরীর কাঁপছে। ইচ্ছে করছে ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেই!
আমি কিছু বলার আগেই মানহা ওর মার কোল থেকে এক লাফে আমার কোলে এসে গেলো। তারপর বললো,’বাবা,তোমায় নিয়ে আমি একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি!’
আমি নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করে বললাম,’কী স্বপ্ন দেখেছো মা?’
মানহা বললো,’তুমি ঘরে আরেকটা নতুন মা এনেছো আমার জন্য।’
নীলা তখন মানহাকে ধমক দিলো।বললো,’বানিয়ে কথা বলা বন্ধ করো!’
মানহা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,’আমি মিথ্যা কথা বলি না। মিথ্যে বললে আল্লাহ জিভ কেটে দেয় কাঁচি দিয়ে।’
মানহাকে আমি বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলাম।আর মনে মনে বললাম, আহ্ নীলা আহ্!এটা কী করলে তুমি! একটা সুন্দর ঘর। একটা সুন্দর চড়ুই পাখির সংসার। আমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে।যে কি না বুলি নেয়া তোতার মতো মিষ্টি করে কথা বলে। এইসব কিছুকেই তুমি অবহেলা করে অন্য একটা ছেলের হাত কী করে ধরলে? তোমার কপালে ডিভোর্সের চেয়ে ভালো কিছু নেই! তুমি ওটারই যোগ্য। তোমার প্রাপ্য আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিবো।দু তিনটে দিন যাক।
তারপর আমি অপেক্ষা করি মানহার জন্য।মানহাকে দুপুরে ঘুম পাড়াবো।ও ঘুমিয়ে গেলে নীলাকে ডেকে নিবো বেলকনিতে। তারপর জিজ্ঞেস করবো সবকিছু।মানহার সামনে আমি এসব করতে পারবো না।এতে মেয়ের মনে খারাপ ধারণার জন্ম নিবে।ওর ছোট্ট সুন্দর ভাবনার জগতটা কুৎসিত হয়ে যাবে। মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে ধীরে ধীরে!

নীলা কিছু একটা বলে ফেলতে চাচ্ছে বারবার। একবার বলেও ফেললো,’ফাহাদ, তোমার সাথে আমি সবকিছু খুলে বলতে চাই!’
আমি ওকে চুপ করিয়ে দেই।বলি অপেক্ষা করো।মেয়ের সামনে এসব নিয়ে কথা বলা যাবে না।
নীলার মুখটা দেখি তখন মলিণ হয়ে যেতে। চিন্তার ছাপ পড়ে আছে ওর চেহারায়।এর আগে ওকে কখনো এতো চিন্তিত দেখিনি আমি!
ওকে এভাবে দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু রাগও প্রশমিত হয় না। বারবার কেবল মনে হতে থাকে,ও কী করে আমার সাথে প্রতারণা করলো!সব মেনে নিতে পারি কিন্তু এটা না। কিছুতেই না! তাছাড়া ওরা আমার চোখের সামনে পড়েছে। একসাথে।কী বিচ্ছিরি এবং ভয়ংকর ব্যাপার!

মানহা দুপুর গড়িয়ে এলেই ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর আমি নীলাকে ডেকে নিয়ে যাই বেলকনিতে।
নীলা কিছু বলার আগেই আমি বলি,’আমার সাথে তুমি সব বলো কিন্তু এটা কখনো বলো না যে আমি তোমায় যেন আবার বিশ্বাস করি আর ডিভোর্সের চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলি!’
নীলা কথাটা শুনে কেমন কেঁপে উঠে। তারপর কান্না কান্না চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকায়। এমনিতে ওর এমন চোখ দেখলে আমার ভীষণ মায়া হতো। কিন্তু আজ মোটেও হচ্ছে না। বরং রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওকে মেরে ফেলতে গলা টিপে!
নীলা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,’ফাহাদ, আমায় তুমি অবিশ্বাস করো না।আমি তোমাকে ঠকানোর কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। কিছুতেই না!’
আমি ওর কথা শুনে হাসি। হেসে বলি,’তুমি আমায় এখনও ঠকাওনি তাই না? আমার স্ত্রী হয়ে তুমি অন্য একটা ছেলের কপালে চুমু খেয়েছো এটাকে কী বলে?আমায় ধোঁকা দেয়া বলে না? বিশ্বাসঘাতকতা বলে না?আর আমায় ছেড়ে সুইজারল্যান্ড যাওয়াল ডিসিশন? আচ্ছা এসব কিছু বাদ দিলাম। গতকাল যে তুমি ওই ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বের হলা? আমার নিজের চোখের সামনে দিয়ে ওর সাথে হাঁটতে লাগলে লেকের পাড় ধরে। আমার কলিগের সামনে পড়ে আমার মান সম্মান ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিলে!’
নীলা কান্নাভেজা গলায় বলে,’ফাহাদ, তুমি আমার সবটা কথা শুনো। আমার সব কথা না শুনলে তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না!’
আমি ওকে ধমক দেই।বলি,’আর একটা কথাও না। তোমার কোন কথাই আমি শুনবো না! তুমি একটা নষ্টা! নোংরা একটা মেয়ে। আমার নিজের প্রতি ঘেন্না হচ্ছে খুব।এই এতো দিন একটা নষ্টা মেয়ের সাথে সংসার করেছি আমি।এক বিছানায় রাত যাপন করেছি। আমার সন্তান তোমার গর্ভে দিয়েছি। আমার সন্তান তোমার মতো অপবিত্র একটা মানুষের দুধ পান করে বেড়ে উঠেছে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
নীলা আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে। তারপর বলে,’কসম করে বলছি আমি তমালের সাথে খারাপ কিছু করিনি!’
আমি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,
‘তো ভালো কী করেছো ওর সাথে?আমায় মিথ্যে বলে বাবার বাড়ি গিয়ে কোথায় থেকেছো সারাদিন? কোথায়?, বয়ফ্রেন্ড নিয়ে হোটেলে তাই না?নষ্টামি করেছো! ছিঃ! ওয়াক থু! তোমার মতো ইবলিশ একটা মেয়ের উপর আল্লাহর লানত নাজিল হবে! নিজের নিষ্পাপ একটা শিশুকে ঠকিয়েছো তুমি! তোমাকে আর আমি আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না। এখান থেকে যাও এখন বলছি!’
নীলা আমার হাতটা ধরে বললো,’ফাহাদ এমন করো না প্লিজ! আমার সবকথা তুমি শুনো। তারপর যদি তোমার মনে হয় আমি অপরাধী তবে তুমি আমায় যা ইচ্ছা তাই করো!’
আমি ওর কাছ থেকে আমার হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলাম। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলাম রাস্তার দিকে।না ওর সাথে আর সম্ভব না। ওকে আর কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না।প্রতারক একটা!আর সবচেয়ে বড় সত্য হলো মানুষের মনের বিশ্বাস কারোর প্রতি একবার উঠে গেলে তা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব!আমি নীলার কোন কথার উপরই আর বিশ্বাস করতে পারছি না!

বড় রাস্তার একপাশে এলোমেলো হাঁটছি। অফিসের এক কলিগের কাছে ফোন করে জেনেছি পিয়ালীর বিষয়ে।পিয়ালী আজ অফিসে আসেনি।কী সর্বনাশের কথা!সে কী তবে চাকুরিটা ছেড়েই দিবে?
না এটা হতে পারে না।শুনেছি ওর পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ একজনই। শুধু পিয়ালী।তার বাবা মৃত্যুশয্যায় পড়ে আছে বিগত তিন বছর ধরে।মা অসুস্থ বাবাকে টানতে টানতে নিজেও রোগী হয়ে গেছে।পিয়ালী সরকার ছাড়া তাদের আর কেউ নাই।পিয়ালী চাকরি ছেড়ে দিলে ওদের সংসার খাওয়া পরা চলবে কী করে? বাবার অষুধ কী করে আসবে?
দুপুরের কাঠফাঁটা রোদের ভেতর আমি একটা রিক্সা ডেকে নেই।পিয়ালীদের বাসার ঠিকানা জানি না। অফিসে গিয়ে জেনে আসবো।
অফিসে যাওয়ার পর আমার আরেক কলিক সোহাইল রহমান বলে,’ফাহাদ ভাই,পিয়ালী হঠাৎ জবটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে কেন বলুন তো?’
আমি বোকার মতো ওর দিকে তাকিয়ে বলি,’মানে?কী বলছো এসব?কে বলেছে তোমায়?’
‘ও ফোন করেছিল আমায়। ফোন করে বলেছে।’
‘আরো কিছু বলেছে নাকি? চাকরি কেন ছেড়ে দিবে এসব?’
‘না এসব বলেনি। জিজ্ঞেস করেছে শুধু ভাঙতি মাসের স্যালারিটা পাবে কি না!’
অজান্তেই আমার ভেতর থেকে একটা শব্দ গলা বেয়ে বেরিয়ে আসে। উফ্ শব্দ করে আমি চেয়ারটার উপর বসে পড়ি। তারপর বলি,’ওর নম্বর তো বন্ধ।তোমায় ফোন করলো কীভাবে তাহলে?’
‘অন্য একটা নম্বরে।’
‘নম্বরটা দেও তো আমায়!’
সোহাইল নম্বর দিলো।
কিন্তু এই নম্বরও বন্ধ।বন্ধ করে ফেলেছে।আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম,’সোহাইল,ওর বাসার ঠিকানাটা ম্যানেজ করে দাও।’
সোহাইল পাঁচ মিনিটেই ঠিকানা বের করে ফেললো। ওদের বাসা নারায়ণগঞ্জ এর সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরে। কালী মন্দিরের ডান পাশে যে সরু রাস্তা গিয়েছে।ওই রাস্তার উত্তরের প্রথম বাসাটায় ওরা থাকে।
সোহাইল আমার কাছে ঠিকানা দিয়ে বললো,’যাবেন নাকি ওদের বাসায়?’
আমি বললাম,’হুম।’
‘আমিও যাবো।একটু বসুন।কাজটা গুটিয়ে নেই। আপনি আজ আসেননি।কাজের চাপ অনেক।’
আমি সোহাইলের পিঠে হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। তারপর শান্ত গলায় বললাম,’তুমি থাকো।পরে না হয় একসাথে যাবো। আগে আমি গিয়ে দেখে আসি কী অবস্থা!কেন চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে?’
সোহাইল বললো,’ঠিক আছে ফাহাদ ভাই।’

ঘড়িতে বিকেল তিনটে বাজে।আমি দাঁড়িয়ে আছি পিয়ালীদের বাসার সামনে। ওদের বাসার গেটে মস্ত এক তালা ঝুলে আছে।আর গেটের স্টিলের দরজায় দুটো সাদা কাগজ লাগানো।কাগজে লিখা’ To Let’.আর কাগজের একেবারে নীচে লিখা’contruct no: 01714——–
আমি তড়িঘড়ি করে কাগজের নম্বর তুললাম আমার ফোনে। তারপর কল দিলাম ওই নম্বরে।মনে বড় আশা ছিল পিয়ালী ফোন রিসিভ করবে। কিন্তু ফোন রিসিভ করলো এক বয়স্ক পুরুষ।সে ফোন রিসিভ করে বললো,’কে?কে বলছেন?’
আমি জিজ্ঞেস করলাম,’এখানে পিয়ালী আছে?’
খসখসে গলার ভদ্রলোক বললেন,’পিয়ালীরা আজ বাসা ছেড়ে চলে গেছে।ওরা আমার বাসায় ভাড়া থাকতো।’
আমি দ্রুত জিজ্ঞেস করলাম,’আঙ্কেল,ওরা কোথায় গিয়েছে জানেন?’
ভদ্রলোক বললেন,’জানি না।’

******
বাসায় ফিরেছি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে।পিয়ালীর জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজকে কেন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে। কিন্তু বাসায় ফিরে মন আরও খারাপ হয়ে গেল। নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই আমার গা জ্বলে উঠলো। আমি—–

#চলবে

সে ফিরে আসবেই পর্ব-০৪

0

#সে_ফিরে_আসবেই
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক


নীলা হকচকিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই আমায় দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কেমন হা করে তাকিয়ে থাকে।পাশে বসা পিয়ালীকে দেখেও অবাক হতে পারে! কারণ সে জানে আমার কোন মেয়ে বন্ধু নাই। এবং পিয়ালী আমার শুধুই কলিগ। ওকে নিয়ে এখানে আমি ঘুরতে আসবো তা কল্পনায়ও ভাবেনি সে হয়তোবা।ঘুরতে আসবো জানলে সে এদিকে কখনোই আসতো না!
পিয়ালীর সাথে ওর দু’দিন কথা হয়েছে মাত্র।তাও কয়েকমিনিট।আমার ভরসা তখন একটাই।পিয়ালীকে আমার উল্টাপাল্টা কিছু বুঝাতে হবে।ও যে নীলা তা কিছুতেই তাকে বুঝতে দেয়া যাবে না।
নীলা পেছনে আসবে কী আসবে না বুঝতে পারছে না। ওদিকে তমালও ওকে তাড়া করছে। ওদের হাতে সময় কম। হয়তোবা ওরা অনেক হাঁটাহাঁটি করবে। অনেক অনেক গল্প করবে। সমস্যা হলো তমাল আমায় চেনে না।চিনলে অবস্থা ভয়াবহ হতো। নীলার সঙ্গে সেও কাঁঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।কী করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারতো না!
নীলাকে আমি হাত ইশারায় বললাম চলে যেতে।
নীলা চলে গেল।নীলা চলে গেলে পিয়ালী আমায় বললো,’ভাবী এলো না যে?আর ভাবী কার সাথে ঘুরছে?’
আমি তখন কষ্ট করেই হা হা হা করে শব্দ করে হেসে উঠলাম।
পিয়ালী অবাক হয়ে বললো,’হাসছেন কেন এভাবে?’
আমি হাসতে হাসতেই ওকে বললাম,’তুমি যাকে নীলা বলে ডেকেছো সে নীলা না।’
তারপর আবার হেসে উঠলাম।
‘হা হা হা’
পিয়ালী বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তবে ও কে?দেখতে তো একেবারেই ভাবীর কপি!’
আমি হেসে বললাম,’এটা ওই ছেলের গার্লফ্রেন্ড।’
পিয়ালী অবাক হলো।বললো,’কী আশ্চর্য!একদম মিল । আচ্ছা আপনি অবাক হোননি কেন ওই মেয়েকে দেখে ফাহাদ ভাই?’
আমি তখন বলি,’কারণ ওর সাথে আমার স্ত্রীর একশো টারও বেশি অমিল পেয়েছি এই জন্য অবাক হইনি!’
‘কোথায় অমিল দেখলেন আপনি আমি তো দেখিনি!’
‘তুমি দূর থেকে দেখেছো। দূর থেকে সত্যটা সব সময় দেখা যায় না।আসলকে নকল আর নকলকে আসল দেখা যায় অনেক সময়।’
পিয়ালী এবার বললো,’আচ্ছা ঠিক আছে। এখন এসব ফিলোসফি মার্কা কথাবার্তা বাদ দিয়ে ভালো কথা বলুন।’
‘ভালো কথা কী বলবো? কোন ধরনের কথাকে ভালো কথা বলে?’
পিয়ালী লজ্জামাখা গলায় বললো,’
‘ভালোবাসার কথা বলুন। ভালোবাসার কথাকে ভালো কথা বলে।’
বলে পিয়ালী খানিক লজ্জার ভান করে।
আমি তখন বলি,’পিয়ালী তুমি একটা বিয়ে করে ফেলো। এভাবে একা একা থেকে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো!কষ্ট পাচ্ছো!’
পিয়ালী তখন কেঁদেই ফেলে প্রায়। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বলে,’আপনার অত শিখিয়ে দিতে হবে না আমি কী করবো না করবো সেই বিষয়ে।সব সময় আপনি এমন করেন। আপনার সাথে কথা বলতে আসলেই এটা ওটার অযুহাত। কোথাও ঘুরতে বেরুলে কথা বলতে ভুলে যান।চুপ করে থাকেন।যেন আপনি কথা বলতেই জানেন না। আসলে আপনি চান না আপনার সাথে আমি থাকি।কথা বলি।আমি জবটা ছেড়ে দিবো। কাল থেকে আর আসবো না অফিসে। আপনিও আমায় কিন্তু খুঁজতে যাবেন না খবরদার। আপনার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নাই! আপনি আমার কেউ না। আমিও আপনার কেউ না!’
কথাগুলো বলে পিয়ালী ঝট করে উঠে পড়ে। তারপর দ্রুত হাঁটতে থাকে।আমি দৌড়ে এসে ওকে থামাতে চেষ্টা করি।সে তখন অদ্ভুত আচরণ করে।বলে,আমায় থামাতে চাইলে আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জমা করবো!’
আমি তবুও তার সামনে পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে যাই।ও আমায় তখন ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে যায়।আমি পেছন থেকে ডাকতে থাকি।সে একবারের জন্য তাকিয়েও দেখেনি পর্যন্ত।

বাসায় ফিরে নিজেকে আমার হঠাৎ কাপুরুষ মনে হতে থাকে।ক্রোদ্ধ হই নিজেই নিজের প্রতি।মনে হয় আমি কেন সবকিছু দেখার পরেও চুপ করে আছি এভাবে।আর আজ যা দেখলাম এতে তো এটাই প্রমাণিত হয় যে নীলা আমার সাথে প্রতারণা করছে। এরকম একটা প্রতারকের সাথে আর ঘর করা যায় না!
আমি সঙ্গে সঙ্গে নীলাকে ফোন দেই।
নীলা ফোন রিসিভ করে না।রিসিভ করে মানহা।
সে বলে,’বাবা, তোমার জন্য খুব খারাপ লাগছে।’
আমি তখন তাকে বলি,’শিগগির তোমাকে আমার কাছে দিয়ে যাবে ওরা এসে মা। তুমি এখন তোমার মার কাছে দেও!’
মানহা তখন নীলাকে ডেকে ওর হাতে ফোন দেয়।
নীলা ওপাশ থেকে বলে,’ফাহাদ, তুমি কিছু বলো না প্লিজ!আমি সবকিছু খুলে বলবো তোমায়। তুমি আমায় একটু সময় দাও প্লিজ!কটা দিন সময় দাও।’
আমি তখন হেসে উঠি।বলি,’অনেক বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়। তুমি অলরেডি আমার বিশ্বাস নিয়ে অনেক বড় একটা গেইম খেলে ফেলছো। এরপর আরো সুযোগ দিলে আমার সর্বনাশ হবে।আমি আর পারবো না।সরি নীলা! আমায় এখন স্ট্রং হতে হচ্ছে।আমি ডিসিশন নিয়েছি তোমার সাথে আর সংসার করবো না।ডিভোর্স দিবো তোমায়। এবং আগামীকাল সকাল সকাল তুমি আমার মেয়েকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে।মনে রাখবে,মানহা যেন দুপুরের আগেই এসে আমার বাড়ি পৌঁছায়!’
নীলা সবকিছু শুনে খানিক সময় চুপ থাকে। তারপর বলে,’ফাহাদ, তুমি এমন করছো কেন? তুমি আমায় ভুল বুঝছো!আমি সব‌ খুলে বলবো তোমায়।আমায় একটু সময় দাও প্লিজ!’
আমি আবার হাসি।হা হা হা করে হাসি।হাসির পর বলি,’নীলা,আমায় আর বোকা বানাতে পারবে না তুমি। তোমাকে সেই সুযোগ আর দেয়া হবে না।তোমায় আমি ডিভোর্স দিবো এটাই ফাইনাল। তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছো। তাছাড়া আমার কলিগও আজ তোমায় দেখেছে!আমি জবাই হয়ে গেছি!’
নীলা তখন কী যেন বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি ওর ফোন কেটে দিলাম।
তারপর শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম ।

রাতে মেসেঞ্জারে ঢুকে ভাবলাম পিয়ালীর সাথে কথা বলবো। ওকে সরি বলবো। কিন্তু ফেসবুক মেসেঞ্জারে ওকে পাওয়া গেল না।ওর আইডি ডিএক্টিভ করে রেখেছে। হোয়াটসঅ্যাপেও নাই। অবশেষে ওর নম্বরে ফোন করলাম।ওপাশ থেকে সুইচ অফ বলছে। এবার আমার খারাপ লাগছে। খারাপ লাগছে এই জন্য যে মেয়েটা শুধু শুধু আমায় ভুল বুঝছে।আমি কী করে আমার স্ত্রী আর সন্তান রেখে ওর সাথে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে তুলি!এটা কী আদৌও সম্ভব!

পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে বেলা হয়।দশটা বাজে। অফিসে আর যাওয়া হয় না। বিছানা থেকে নামতে যাবো আর তখন কলিং বেল বাজে। বাইরে মানহার গলা।
‘বাবা দরজা খোলো তাড়াতাড়ি!’

#চলবে