Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1507



তুমি শুধু আমার পর্ব-০৫

0

#তুমি_শুধু_আমার❤(3 characters)
#part:05
#Writer:#TanjiL_Mim❤
.
.
🍁
আরিয়ান আমার এতটাই কাছে এসেছে যে তার নিশ্বাসে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠছে!!আমি অসস্তির শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি মনে হচ্ছে এখনি হয়তো শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে আমার!!কিন্তু কথা হলো হর্ঠাৎ করে এমন কাজ কেন করলেন উনি!! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!!হর্ঠাৎ আরিয়ান বললঃ
!
কাল রাতে তুমি কার টিশার্ট পরেছিলে!!
!
ওনার এমন আহামকের মতো একটা প্রশ্নের কী জবাব দেওয়া উচিত বুঝতে পারছি না!!
!
কী হলো কথা বলছ না কেন??(দমক দিয়ে)
!
আরিয়ানের দমকে আমি পুরো কেঁপে উঠলাম!!আমতা আমতা করে বললামঃ
!
কার্ র টিশার্ট পরেছি জানি না মিতু নিয়ে এসেছিল আর ওটা আমার হাতে দেয় তাই পড়েছিলাম!!বিশ্বাস করুন যদি জানতাম ওটা আপনার তাহলে কখনোই পরতাম না!!!সরি ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে আমি আপনার টিশার্ট সোয়াবিন তেল ইয়ে মানে থুক্কু না মানে সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দিব!!প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছাড়েন আমার প্রচুর ভয় করছে সাথে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে!!! যেকোনো মুহূর্তে আমি মরে যেতে পারি!!!(কাঁপা কাঁপায় গলায়)
!
আমার কথা শুনে আরিয়ান আরো কাছে চলে এসে বললঃ
!
তাই নাকি!!
!
এই রে খাইছে (চোখ বন্ধ করে) প্লিজ প্লিজ ভাইয়া যেতে দিন ভুল হয়ে গেছে সরি সরি সরি!!!আর কোনোদিন এই ভুল হবে না!!
.
.
🍁
কিছুক্ষণ পর……..
ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখলাম সামনে কেউ নেই!!আরিয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!!আর আমি বোকার মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে!!পরক্ষণেই কিছু মনে পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম!!
!
এদিকে আরিয়ান মীমের এমন কান্ড দেখে হাসল!!
.
.
.
🍁
টুলের উপর দাঁড়িয়ে দরজার সামনে ফুল লাগাচ্ছে
মিতু!!আর সোফায় ফোন গুতাচ্ছে আবির!!অবশ্যই তার কোনো খেয়াল নেই যে ওখানে কেউ কিছু করছে কিনা!!তানিশা তার আম্মুর সাথে কাজ করছে!!
.
.
.
🍁
এদিকে রোহান কিছু একটা খুজতে খুজতে নিচে চলে এসেছে!!আবিরকে জিজ্ঞেস করলঃ
!
-দোস্ত তুই কী আমার টিশার্টটা দেখেছিস কখন থেকে খুজছি কিন্তু পাছনি না!!
!
আবিরঃ না তো!!ওদিকটা খুঁজে দেখ!!
!
হর্ঠাৎ রোহান মিতুর দিকে চোখ গেল!!কিন্তু কিছু না ভেবেই সে তার কাজ করতে লাগল!!!
.
.
.
🍁
এদিকে মিতু খুব সুন্দর করেই তার কাজ করতে লাগল!!হর্ঠাৎ মিতু দেয়ালে একটা আরশোলা দেখতে পেল!!যা দেখে সে জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে টুল থেকে নেমে সামনের ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে দিল!!
.
.
🍁
রোহান হর্ঠাৎ করে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরাতে কিছুটা ঘাবড়ে যায়!!তারপর মিতুকে দেখে ঠিক কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না সে!!রোহান মিতুকে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছেঃ
!
মিতু কাঁপা কাঁপা গলায় দেয়ালের দিকে হাত দিয়ে বললঃ
!
আরশোলা!!আমার খুব ভয় করে!!!
!
মিতুর এমন একটা শুনে রোহান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না!!!
.
.
.
🍁
সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম এমন সময় মিতুর চিৎকার শুনে আর সামনের দৃশ্য দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছি!!এক জ্যাকলি এখানে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা!!আমার সাথে সাথে তানিশা আর আবিরও যে কিছু বুঝতে পারছে না তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি!!!তারাও হয়তো অতি আগ্রহের সাথে মিতুর চিৎকারের কারন টা জানতে চাচ্ছে!!
.
.
.
🍁
খুব শক্ত করে মিতু রোহানকে জড়িয়ে ধরে আছে!!কারন তার ভয়ে হাত পা খুব কাঁপছে!!রোহান সেটা বুঝতে পেরে মিতুর মাথায় হাত দিয়ে বললঃ
!
আরশোলা চলে গেছে!!তারপর কানের কানে মুখ এসে আস্তে করে বললঃ
মিস ঝগড়ুটে তুমি যে সামন্য একটা আরশোলা দেখে এইভাবে ভয় পাও জানতাম না তো!!আর এই ভাবে জড়িয়ে ধরলে যে কোনো মুহূর্তে খুন হয়ে যেতে পারি আমি!!!
!
মিতু মিস ঝগড়ুটে নামটা শুনে হয়তো এতক্ষণ পর বুঝতে পারল সে কাকে জড়িয়ে ধরেছে!!মিতু আস্তে করে মাথা তুলে রোহান দেখে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার!!তৎক্ষনাৎ মিতু রোহানকে ছেড়ে দেয়!!সরি বলে এক দৌড়ে ওখান থেকে উপরে চলে যায়!!আমাকে দেখেও কিছু না বলেই চলে যায়!!!
!
মিতুর এমন কান্ড তানিশা বুঝতে পারলেও আবির যে কিছু বুঝতে পারে নি তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে!!
.
.
.
🍁
রোহান মুচকি হেসে একটা বাক্যই বের করলোঃ “পাগলী একটা”
তারপর সে যা খুঁজতে ছিল আবার খুঁজতে লাগল!!
.
.
🍁
আমি তাকিয়ে আছি রোহান ভাইয়ার দিকে আসলে সে কি খুঁজছে বুঝতে পারছি না!!প্রায় আধা ঘণ্টা যাবৎ খুজছে!!তাই ভাইয়ার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী খুজছেন!!
!
রোহানঃ টিশার্ট
!
ওনার মুখে টিশার্ট এর কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম আমি!!কিন্তু কিছু না বলেই উপরে চলে আসলাম!!!
.
.
.
🍁
-রুমে
বিছানায় বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে মিতু!!লজ্জায় তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে!!কি করে পারল সে একটা ছেলেকে এইভাবে জড়িয়ে ধরতে না জানি কি ভাবল ছেলেটা তাকে!!এই মুহুর্তে তার ইচ্ছে করছে ওই আরশোলাটা কিছুক্ষন বকা দিতে!!আর সময় পেল না সামনে আসতে!!একটা রামছাগল!!তোর কোনোদিনও বিয়ে হবে না হুহ!!
!
কার বিয়ে হবে না!!
!
মিতুঃআরশোলার
!
কেন ও কি করল ও!!
!
তুই দেখলি ওর জন্যই তো ওই কানা বাদর টাকে জড়িয়ে ধরা লাগল!!
!
এতক্ষণ পর বুঝতে পারলাম মিতুর রোহানকে জড়িয়ে ধরার কাহিনীটা!!!
!
মিতুঃদেখিস ওই আরশোলার কোনোদিন বিয়ে ওর গার্লফেন্ড ওকে খুব মারবে!!
!
মিতু এমন একটা কথা শুনে উচ্চ স্বরে হেসে দিলাম আমি!!হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরলাম!!হাসি যে থামছেই না!!তারপর বললামঃ
!
ওটা যে ছেলে ছিল তা তুই বুঝলি কিভাবে!!!
!
মিতু আমার কথা শুনে ভাবতে শুরু করল!!!ঠিকই তো ওটা যে ছেলে ছিল তা কিভাবে বুঝলাম!!!
!
মিতুর কথা শুনে হাসতে হাসতে টিশার্ট নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে!!!
.
.
.
🍁
টিশার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আরিয়ানের সামনে সে দেখেও না দেখার মতো মোবাইল টিপছে!!এই মুহুর্তে আমার খুব বিরক্ত লাগছে কতোক্ষন যাবৎ টিশার্টটা ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে আসলাম কিন্তু তার কোনো হেল দোল নেই অদ্ভুত তো!!এমন সময় রুমে ঢুকলেন রোহান ভাইয়া আমার হাতে টিশার্ট দেখে বললঃ
!
এই তো আমার টিশার্ট তুমি কোথায় পেলে!!!
!
ওনার এমন কথা শুনে আমি যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছাম!!!! টিশার্ট টা রোহানের তবে আরিয়ান কেন এমন করল টিশার্টের জন্য!!রোহান আমার হাত থেকে টিশার্ট টা নিয়ে চলে গেলেন নিচে!!আর আমি হাবলার মতো শুধু তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে!!!
.
.
.
🍁
একবুক সাহস নিয়ে আরিয়ানের সামনে দাঁড়ালাম আমি বললামঃ
!
এটা কি হলো টিশার্ট রোহান ভাইয়ার তবে আপনি তখন ওমন করলেন কেন???
!
আরিয়ানঃচুপ……….
!
আরে কি হলো কথা বলছেন না কেন????
!
কিছু হয় নি তুমি যাও (দমক দিয়ে)
!
ওনার দমক শুনে কেঁপে উঠে আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলাম!!কিন্তু ব্যাপারটা কিছুই আমার মাথা ডুকলো না!!!
!
—-(😁কেউ বুঝলে আমাকে কমেন্ট করে বইল ওকে😁)—-
.
.
.
🍁
আজকে কাব্য ভাইয়ার গায়ে হলুদ!!পুরো বাড়িটাই খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে!!পুরো পরিবেশটাই আনন্দময় উঠেছে!!!খুব সুন্দর করেই সাজানো হয়েছে কাব্য ভাইয়াকে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি তে খুব অপরূপ লাগছে তাকে!!!!
.
.
আজকে আমরা তিনজনই শাড়ি পরেছি!!তবে আমি তানিশা আর মিতুর মতো ওতো ভাড়ি মেকাপ করি নি!!কারন এই সাজগাজ আমার খুব একটা পছন্দ নয়!!তারপরও হালকা চোখ কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক!!এতে আমার সাজ শেষ!!
!
ওদের দুজনকেই খুব সুন্দর লাগছে!!আমার ইচ্ছে করছে ওদের দুজনকে একসাথে বিয়ে করে নেই😂
!
কাব্য ভাইয়ার পাশে বসে আছে আরিয়ান,রোহান আর আবির!!তাদেরকেও খুব সুন্দর লাগছে তারা তিনজনই পাঞ্জাবি পরেছে!!!
!
সে যাই হোক অদ্ভুত ব্যাপার হলো তাদের তিনজনের হাতেই এক বাটি করে হলুদ বাটা কিন্তু এগুলো দিয়ে করবে আল্লা মালুম!!!
!
একে একে সবাই কাব্য ভাইয়াকে হলুদ লাগিয়ে দিল!!মিতু তানিশাসহ আরো কিছু মেহমানরা!! এখন আমার পালা!!কিন্তু কথা হচ্ছে আমি শাড়ি পরে হাঁটতেই পারছি না!!কোনো ভাবে আস্তে আস্তে গেলাম কাব্য ভাইয়ার কাছে!!তারপর হালকা একটু হলুদ লাগিয়ে চলে আসতে যাবো এমন সময় শাড়ি পেঁচিয়ে পরে যেতে নিলাম আমি!!ভয়ে দু-চোখ বন্ধ করে ফেললাম!!হর্ঠাৎ মনে হলো আমি শুন্যে ভাসছি এর মানে আমি পরি নি কেউ কোলে তুলে নিয়ে!!আস্তে করে চোখ খুললাম আমি!!আমার ঠিক সামনে চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছেন আরিয়ান,তার পাশে রোহান আবিরসহ সবাই তবে কথা হচ্ছে এরা কেউ যখন আমাকে ধরে নি তবে ধরল কে???
!
#চলবে…………

তুমি শুধু আমার পর্ব-০৪

0

#তুমি_শুধু_আমার❤(3 characters)
#part:04
#Writer:#TanjiL_Mim❤
.
.
🍁
মিতুর চিৎকারে লাফ দিয়ে উঠলাম আমি……
তক্ষৎনাত তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম!!এসে যা দেখলাম তা দেখে আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম………..
!
কারন সামান্য একটা আরশোলা দেখে এইভাবে কেউ চিৎকার দেয়!!মিতু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল যা দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না!!তারপর
!
মিতুর মাথায় একটা চাটি দিয়ে বললাম এইভাবে কেউ চিৎকার দেয় বোকা মাইয়া!!কতোটা ভয় পাইছিলাম আমি বলতো!!এর ভিতর তানিশা আসলো রুমে দৌড়ে…
!
তানিশাঃএই কি হয়েছে!!ও ওভাবে চিৎকার দিল কেন??
!
আর বলিশ না একটা আরশোলা দেখে!!
!
তানিশাঃএ্যা
এদিকে মিতু এত শক্ত করে ধরে আছে আমি নড়তে পারছি না!!তাই বললাম
!
বোইন আরশোলা চলে গেছে এখন ছাড় আমায়!!আমার কথায় মিতু আমায় ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকালো সত্যি সত্যি আরশোলা চলে গেছে!!ভেবে এক সস্তির নিশ্বাস নিল!!
!
এদিকে আমি আর তানিশা মুখ চেপে হাসছি!!যা দেখে মিতু রেগেমেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!!ও যাওয়াতে আমরা আরো উচ্চ স্বরে হাসলাম!!
!
দু-জনেই বললামঃবোকা মাইয়া!!😂
.
.
.
🍁
খাবার টেবিলে বসে আছি আমি!!আমার ঠিক সামনে বসে আছে লাল হনুমান!!তার বামপাশে কাব্য ভাইয়া তারপর আবির তারপর রোহান তার পাশে ঝগড়ুটে ইয়ে থুক্কু মিতু আমার এদিকে আছে তানিশা তার পাশে কাব্য এভাবেই গোল হয়ে বসে আছি সবাই!!দেন আন্টি সবাইকে খাবার সাফ করছে আর একে একে কাব্য ভাইয়ার বন্ধুদের সাথে আলাপ করে দিচ্ছে!!কিন্তু আন্টি তো আর জানে আমরা এদের অনেক আগে থেকেই জানি!!
এভাবে কথা বলতে বলতে চলে গেল দুপুরটা!!
.
.
.
🍁
সন্ধ্যা ৮ঃ০০টা_
রুমের ভিতর বসে আছি আমি,তানিশা আর মিতু!!কালকে কাব্য ভাইয়ার গায়ে হলুদ!!তাই অনেক টাই এক্সাইটেড আমরা!!এর ভিতর আমার মোবাইলটা বেজে উঠল!!উপরে আম্মুর নাম দেখে মুচকি হাসলাম!!তারপর কিছুক্ষন আম্মুর সাথে কথা বলে!!সবাই মিলে ডিনার করে চলে আসলাম রুমে!!
.
.
.
🍁
রাত ১২ঃ০০টা_
অনেকটাই বোর হচ্ছি আমি!!ঘুম আসছে না!!আসলে বিয়ে বিয়ে কথাটা শুনতেই অফুরন্ত ভালো লাগা শুরু হয় মনে!!আমার পাশে শুয়ে আছে মিতু হাতে ফোন নিয়ে গুতাচ্ছে !!ওর পাশে তানিশা সেইম কাজ করছে!!ওদেরও যে ঘুম আসছে না বুঝতে পেরেছি আমি!!ঠাসস করে মিতুর মাথায় একটা চাটি মারলাম!!সাথে সাথে মিতু বললঃ
!
কী হয়েছে….
!
ভালো লাগছে না বোরিং লাগছে কি করা যায়!!
!
তানিশাঃআমারো!!
!
মিতু কিছুক্ষন কিছু একটা ভেবে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে!!বাহিরে চলে গেল!!আর আমরা ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম………
.
.
বেশ কিছুক্ষন পর…….
মিতু তিনটে লুঙ্গি আর তিনটে টিশার্ট নিয়ে রুমে ঢুকলো যা দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার আর তানিশার
!
দু-জনেই একসাথে বললামঃএগুলো দিয়ে কী হবে!!!
!
মিতুঃপার্টি হবে মাম্মা…..
!
তানিশাঃমানে…..
!
মিতুঃ মানে হলো…
.
.
তারপর মিতু মোবাইল লাউড স্পিকার দিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স গানটা অন করল!!!এইবার বুঝতে পারলাম!!মিতুর মানেটা আসলে কী???
!
দেন আমরাও খুশি মনে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম!!তারপর দরজা বন্ধ করে!!তিনজনেই জামার উপরেই লুঙ্গি আর টিশার্ট পরে নিলাম!!কিন্তু কথা হলো এগুলো পেলো কোথায়!!নিশ্চয়ই কাব্য ভাইয়ার!!
.
.
.
তারপর আর কী…..
তিনজন মিলে চোখে কালো চশমা পরে মোবাইল গান বাজিয়ে শুরু করলাম উড়াধুরা ড্যান্স!!!
.
muso ko dora raunma guma k
Anar k jasa chasma laga k
Kokonat ma lasci mila k
aja o sara mud o bana k
all the rajni ba o lara va on the rasna gan o lara va…..
O lungi dance lungi dance lungi dance 😂
!
-দেন এই লাইনটার সময় তিন জনেই লুঙ্গি নিয়ে নাচা নাচি শুরু!!😂
.
.
.
.
🍁
আমাদের পাশের রুমেই শুয়ে আছে আরিয়ান!!ফোন নিয়ে ফেসবুকই করছে!!আর রোহান বক বক করছে!!আর আবির চুপচাপ রোহানের কথার সাথে তাল মিলাচ্ছে!!হর্ঠাৎ আরিয়ান বললঃ
!
থাম শুনতে পাছসিস….
!
রোহানঃকি শুনবো
!
আরিয়ানঃমিউজিক বাজছে….
!
আবিরঃহুম শুনছি তো কেউ লুঙ্গি ড্যান্স গান শুনছে!!
!
রোহান একটু কান খাড়া করে শুনতে চাচ্ছে!!
তারপর রোহানও শুনতে পেয়ে বলল……
!
হুম!!মনে হয় পাশের রুম থেকে কিন্তু এতরাতে এই গানটা কারা শুনছে!!
!
আরিয়ানঃআচ্ছা কাব্য কই???
!
আবিরঃআর বলিস ছাদে গেছে ভাবির সাথে কথা বলতে???
!
আরিয়ান আর রোহান দুজনেই আবিরের কথা শুনে হেসে দিল!!তারপর তিনজন একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!!এক জ্যাকলি কি হচ্ছে তা বুঝতে চাচ্ছে তারা!!!
.
.
🍁
all the rajni ba o lara va on the rasna gan
O lungi dance lungi dance lungi dance 😂
তানিশা আমি একসাথে কাপল ড্যান্সের মতো নাচছি আর মিতু এক হাতে একটা পানির বোতল নিয়ে নাচছে…….
.
.
🍁
তানিশার রুমের দরজার সামনে কান পেতে রয়েছে ,আবির,রোহান আর আরিয়ান দাড়িয়ে আছে!!তারা বুঝতে পেরেছে ভিতরে তিনজনই লুঙ্গি ড্যান্স গানে নাচছে!!এসব শুনে রোহান…..
!
চল মামা আমরাও নাচি……
রোহানের কথা শুনে আরিয়ান আর আবির দুজনেই হালকা হাসলো…….
.
.
🍁
অনেকক্ষন পর নাচতে নাচতে তিনজনেই কান্ত হয়ে বসে পরলাম!!ওদের বললাম দোস্তরা খালি মুখে পার্টি জমে না!!কোক টোক হলে ভালো হতো!!
!
তানিশাঃআমাদের ফ্রিজে আছে দাঁড়া আমি নিয়ে আসি!!তবে একা যাবো না তোদের মধ্যে একজন আয় আমার সাথে!!ওর কথা শুনে আমি বললামঃ
!
মিতু তুই যা!!মিতুও আর কিছু না বলে লুঙ্গি আর টিশার্ট খুলে চলে যেতে নেয়!!দরজা খুলতে গেলে রোহান আর আবির ছিটকে পড়ে যায় নিচে!!
!
আর আমরা হা হয়ে তাকিয়ে রয়েছি তাদের দিকে!!
!
এদিকে নিজেদের অবস্থা বুঝতে পেরে কি করব বুঝতে না পেরে তাড়া তাড়ি করে লুঙ্গি খুলে ফেললাম!!টিশার্ট পড়া আছি!!
মিতু বললঃ
!
আপনারা এখানে!!
.
.
তাঁরাও পড়ে গেল বিপদে এখন কি বলবে!!
!
রোহানঃ এত রাতে লাউড স্পিকার দিয়ে কেউ গান শুনে!!!
!
মিতুঃতাতে কি হইছে!!
!
রোহানঃকি হইছে মানে আমাদের ঘুমের ১৩টা বাজিয়ে বল কি হইছে!!(ঠাহা মিথ্যা কথা)
তা কি করছ!!
!
মিতুঃআমরা যাই করি আপনাদের কি হুহ!!এখান থেকে যান!!
এর ভিতর কাব্য চলে আসল!!
!
কাব্যঃকি হয়েছে তোরা এতরাতে এই এখানে কি করছিস!!
!
তানিশাঃইয়ে মানে কিছু না ভাইয়া আমরা পানি খেতে নিচে যাচ্ছিলাম তখন ভাইয়াদের দেখলাম আরকি!!!
!
এদিকে লজ্জায় সামনে যেতেও পারছি না আমি!!তাই চুপ করে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছি!!!
.
.
.
🍁
এদিকে আরিয়ান আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে!!কিন্তু কেন বুঝতে পারছি না!!কোনোভাবে শার্টটা তার নয় তো!!এই রে নিশ্চয় শার্ট ওনার তাই এভাবে তাকিয়ে আছে!!
.
.
.
🍁
তানিশা আর মিতু বিভিন্ন কথা বলে শেষ মেশ তাড়ালো তাদের!!সাথে সাথে আমিসহ ওরাও সস্তির নিশ্বাস ফেললো!!তারপর আরকি আমাদের পার্টি ওখানেই সমাপ্ত!!!
!
তারপর তিনজনে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম!!
.
.
.
🍁
সকাল ১০ঃ০০টা__
সূর্যের আলো মুখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল আমার!!চোখ খুলে ওদের কাউকে না দেখে অবাক হলাম!!পরে ভাবলাম হয়তো নাস্তা করতে গেছে!!!
!
তারপর আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে যাবো!!এমন সময় কেউ হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দেয়ালে সাথে চেপে ধরে মুখ চেপে ধরল
-আর আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে……
.
.
#চলবে…………

তুমি শুধু আমার পর্ব-০৩

0

#তুমি_শুধু_আমার❤(3 characters)
#part:03
#Writer:#TanjiL_Mim❤
.
.
🍁
টপ টপ করে পানি পড়ছে মিতুর চুল থেকে!!দেয়ালের সাথে চেপে ধরার কারনে তার ভেজা চুলে পিটপুরো ভিজে গেছে!!এদিকে রোহান মিতুর মুখ চেপে ধরে বললঃ
!
মিস ঝগড়ুটে তুমি এখানে কি করছ???আর এইভাবে চেচিয়ে আমার মানসম্মান এর ফালুদা বানাচ্ছো কেন??
!
এদিকে মিতু শুধু উম উম করে আওয়াজ করছে যার অর্থ মুখ থেকে হাত সরান!!
!
রোহান মিতুর এমন উম উম শব্দ শুনে মিতুর মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়!! মিতু ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে থাকে!!এক পর্যায়ে একটু সুস্থ হয়ে চেচিয়ে উঠে রোহানের উপরঃ
!
এই যে মিস্টার কানা বাঁদর আপনি এখানে কি করছেন আর এতক্ষণ কেউ মুখ চেপে ধরে আর একটু হলে তো শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যেতাম!!আর মুখ চেপে ধরলেন কেন??
!
তা হলে কি করতাম আমি!! তুমি যেভাবে চেচিয়ে উঠছিলে সবাই জানলে কি হতো বল তো!!??সে যাই হক বাদ দেও আগে বল এখানে কি করছ!!!
!
আরে আমরা তো তানিশার ফ্রেন্ড কাব্য ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আসছি!!!
!
ও তার মানে কাব্য তোমাদের আনতে গিয়েছিল!!!
!
হু!!
!
তা যাই বলো এই মুহুর্তে তোমাকে যা লাগছে না!!রোহান মিতুকে এমন একটা কথা বলল যা শুনে মিতু ঠাসসস.. করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিল রোহানের গালে!!!
!
রোহান গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে মিতুর দিকে!!
.
.
.
🍁
এতক্ষণ মুখ চেপে ধরায় আমার শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো!!এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছি!!সেই কতক্ষন যাবৎ আরিয়ান আমার মুখ চেপে ধরে আছে!!ছাড়ছেও না আর কিছু বলছেও না!!সে আমার এতটাই কাছে চলে এসেছে যে তার নিশ্বাস এসে পরছে আমার মুখে উপর!!একে তো অসস্তিতে পরে গেছি তার ভিতর ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে!!বুকের ভিতর চিন চিন করছে!!তাকে আমি এতক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিলাম ভাবতেই ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে আমার না জানি এই লাল হনুমান আমার সাথে কি করে!!আমার ভাবনায় ছেদ কেটে আরিয়ান বললঃ
!
ইস্টুপিট মেয়ে চেচিয়ে কি আমার সম্মানের ফালুদা বানাতে চাইছো!!এই ভাবে যদি কেউ এক রুমে শুয়ে আছি দেখে ফেলে কী ভাববে বুঝতে পারছো তুমি!!!বোকা মেয়ে কোথা কার আর এখানে কি করছো??
!
ওনার কথায় আমিও ভাবলাম ঠিকই তো কেউ যদি দেখে ফেলে কী ভাববে আমাদের!!
!
কি হলো কথা বলছো না কেন??
!
উম উম আওয়াজ করে চলছি আমি যার অর্থ মুখে হাত দিয়ে রাখলে আমি বলবো কিভাবে??
!
হয়তো উনি আমার উম উম শব্দের মিনিং বুঝতে পেরে হাত উঠেয়ে ফেলল আমার মুখ থেকে!!
!
তারপর ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলামঃ
!
আপনার নামে আমি থানায় কেস করব এইভাবে কেউ এতোক্ষণ চেপে ধরে নাকি আর কিছু্ক্ষন এই ভাবে রাখলে আমি তোবমরেই যেতাম!!!লাল হনুমান জানি কোথাকার??বলেই মুখে কামড় দিলাম আমি!!এই রে গালতি সে মিস্টেক হও গেয়া!!ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছি!!!
!
এদিকে আরিয়ান চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে??
!
ইয়ে মানে সরি ভাইয়া আসলে গালতি সে মিস্টেক হও হেয়া!!মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে!!বলে আরিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দিলাম এক ধাক্কা!!তার বিছানা থেকে উঠে দিলাম এক দৌড়!!আমায় আর পায় কে???
!
এদিকে আরিয়ান আমার এমন কাজে পুরো বোকা বনে গেল সে হয়তো ভাবে নি এত বড় একটা মেয়ে এইভাবে দৌড়ে চলে যাবে!!পরক্ষণেই মুচকি হাসি দিল আরিয়ান!!!
.
.
🍁
আরিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে রোহান ভাইয়াকে তার পাশের রুম থেকে বেরোতে দেখে বেশ অবাক হলাম!!সবচেয়ে বড় কথা সে তার বাম গালে হাত দিয়ে বেরিয়ে এল রুম থেকে!!আমাকে দেখে কিছু না বলেই পাশ কেটে চলে গেল আরিয়ানের রুমে!!!
.
.
.
🍁
আরিয়ানঃকি হলো তুই গালে হাত দিয়ে আছিস কেন??
রোহানঃআর বলিস ভুল করে তোর রুম ভেবে ওই ঝগড়ুটে টার রুমে চলে গিয়েছিলাম!!আমি তো ভেবে ছিলাম হয়তো তুই ওয়াশরুমে গোসল করছিস তাই আমি বসে ছিলাম বিছানায়!!কিছুক্ষন পর ঝগড়ুটে টা ওয়াশরুম থেকে বের হলো যা দেখে আমিও খুব অবাক হলাম আর ও!!ও কিছু বুঝতে না পেরে দিল এক চিৎকার সাথে সাথে ওর মুখ চেপে ধরলাম!!!
!
আরিয়ান ভাবলোঃতার মানে তখন মিতু চিৎকার দিয়ে ছিল!!
!
আরিয়ানঃতা তার জন্য তোকে মেরে ছে??
!
রোহানঃ না
!
আরিয়ানঃতবে
!
রোহানঃবলা যাবে না!!!
.
.
.
🍁
মিতু বলা যাবে না মানে আর কি এমন বলল যে তুই রোহান ভাইয়াকে থাপ্পড় মেরে দিলি!!আর ভাইয়াটা তো ইচ্ছে করে আসে নি রুমে!!!ভুল করে চলে এসেছে!!
!
মিতুঃআচ্ছা শোন!!আমি তো গোসল করে জাস্ট বেরিয়ে ছিলাম!!অভদ্রতা বলে আমাকে নাকি হট দেখাচ্ছে তাই থাপ্পড় দিয়ে দিয়েছি
!
কি???বলে হাসতে হাসতে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে!!গোসল করতে আর মিতু আমার যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল!!রাগে আর শরীর পুরো জ্বলে যাচ্ছে বাদর টা বলে না কি ছিঃ ছিঃ…..
.
.
🍁
আরিয়ানঃwhat…. বোক্কা ছেলে এইভাবে কেউ বলে ঠিকই আছে তোকে থাপ্পড় মেরেছে!!বলদ একটা???
!
রোহানঃহ এখন সব দোষ আমার!!আচ্ছা শোন দেখলাম ওই মেয়েটা তোর রুম থেকে বের হলো কাহিনী কি মামা???
!
আরিয়ানঃকাহিনী কিছু না তুই যেমন ভুল করে আমার রুম ভেবে মিতুর রুমে চলে গিয়েছিলি!!ও তেমন ভুল করে মিতুর রুম ভেবে আমার রুমে চলে আসে!!আচ্ছা ওরা এখানে কি করছে!!
!
রোহানঃওরা তানিশার ফ্রেন্ড!!কাব্য ওদেরই আনতে গিয়েছিল বলে রোহান চলে যায় ওয়াশরুমে!!
!
এদিকে আরিয়ান কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে!!
.
.
.
🍁
তানিশার আম্মুঃ তানিশা যা উপরে গিয়ে কাব্যসহ ওদের কেউও ডেকে আন অনেক সময় হয়ে গেছে খাবার খাবে না নাকি!!সবাইকে একসাথে খেতে দিব!!!
!
তানিশাঃআচ্ছা আম্মু!!বলে চলে যায় কাব্যকে ডাকতে তানিশা!!!
.
.
.
🍁
আবিরঃদোস্ত,অনেকটা সময় হয়ে গেছে চল এখন যাই নিচে গিয়ে দেখি সবাই কি করছে!!
!
এর ভিতর কাব্যের ফোন আসে উপরে রাইসার নাম দেখে মুচকি হাসি দিল সে!!!আবিরকে বললঃ
!
তুই যা আমি একটু কথা বলে আসছি তোর ভাবির সাথে!!
!
আবিরও আর কিছু না বলে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে চলে আসতে নিল নিচে!!!
.
.
.
🍁
নিচের দিক তাকিয়ে ভীড় ভীড় করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তানিশা!!কারন কাব্যের সাথে আবিরও আছে!!নানা কিছু ভেবে নিচের দিকে তাকিয়ে উপরে উঠতে লাগল তানিশা!!
!
ওদিকে আবিরও মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিচে লামতে লাগল!!
!
দুজনেরই ভুলের কারনে দুজনের সাথে দুজনের ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নেয় তানিশা!!!!এমন একটা পরিস্থিতিতে পরবে সে হয়তো ভাবতেও পারে নি!!তাই ভয়ে সে তার চোখ বন্ধ করে ফেলে!!হর্ঠাৎ কেউ তার কোমড় শক্ত চেপে ধরেছে অনুভব করাতে আস্তে আস্তে চোখ খুললো তানিশা!!সামনে আবিরকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে!!পরক্ষণেই মনে মনে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার!!কিন্তু আবির তার সেই আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে বললঃ
!
চোখ কোথায় নিয়ে ঘুরো!!আর একটু সাবধান হতে পারো না!!
!
দোষ টা দুজনেরই ছিল!! তারপরও তানিশা তা কিছু না বলে বললঃ
!
সরি ভাইয়া আসলে আম্মু আপনাদের ডাকতে বলেছিল তাই ডাকতে এসে ছিলাম…….
!
আবিরঃকাব্য কিছুক্ষন পর নামবে ও ভাবির সাথে কথা বলছে!!বলে তানিশাকে ছেড়ে একাই চলে গেল!!!
!
আর তানিশা হাবলার মতো তাকিয়ে রইল আবিরের যাওয়ার পানে!!
!
তারপর পরক্ষণেই কিছু না ভেবে মুচকি হেসে সেও নিচে চলে এল ……
.
.
.
🍁
মিতুর চিৎকারে লাফ দিয়ে উঠলাম আমি……
তক্ষৎনাত তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম!!এসে যা দেখলাম তা দেখে আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম………..
.
.
#চলবে………
!
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!]

তুমি শুধু আমার পর্ব-০২

0

#তুমি_শুধু_আমার❤(3 characters)
#part:02
#Writer:#TanjiL_Mim❤
.
.
Disko dewbani….o ho a ha
(students of the year movier song)লাউডস্পিকারে আওয়াজ দিয়ে দরজা বন্ধ করে রুমের মধ্যে উড়াধুড়া ড্যান্স দিচ্ছে তানিশা!!এর দুটো কারন একটা তার বন্ধুরা আসছে আর তার প্রিয় ভালোবাসার মানুষ আসবে!!!তানিশা আবিরকে সেই চারবছর থেকে ভালোবাসে!!কিন্তু সাহস করে এখনো বলতে পারে নি!!কিন্তু এইবার সে পন করেছে সে বলেই ছাড়বে!!এই খুশিতে সে ঘরের ভিতর দরজা বন্ধ করে ড্যান্স করছে!!এর ভিতর দরজার অপরপাশে দরজায় বারি দিল তানিশার আম্মু!!কিন্তু ঘরের ভিতর এতটাই আওয়াজ কেউ যে তার দরজা ধাক্কা দিচ্ছে তা হয়তো তানিশার কান পর্যন্ত যাচ্ছে না!!তানিশার আম্মু দরজা ধাক্কা দিতে দিতে এক পর্যায়ে কান্ত হয়ে চলে যায়!!
.
.
🍁
চারদিকের সবুজের সমারোহ মাখা পরিবেশ দেখে মনটা যেন প্রফুল্ল হয়ে গেল আমার!!ট্রেন ভ্রমণ করা আমার সবচেয়ে প্রিয়!!এই ভ্রমণ আমার কাছে খুব ভালো লাগে!!বাহিরের পরিবেশটা সত্যি খুব সুন্দর ও সবুজ সমারোহে ঘেরা!!প্রায় ১ ঘন্টা যাবৎ ট্রেনে বসে আছি আমরা!!মিতুর মুখ এখনো ঘোমরা হয়ে আছে!!এর একটাই সামনে বসা ছেলেটি!!আর ছেলেটি হলো রোহান!!মিতু এমনিতে খুব একটা রাগারাগি করা পছন্দ করে না!!কিন্তু হর্ঠাৎ রেগে গেলে তাকে থামানো খুব টাফ!!তার উপর রোহান তাকে ঝগড়ুটে বলেছে!!!এতে তো তার মেজাজ আরো বিগরে রয়েছে!!!আমার সামনে বসা হলো ধলা হনুমান!!আমাদের সামনে যে কয়জন ছেলে বসা সবাই বেশ সুন্দর ও হ্যান্ডসাম!!কিন্তু কথা হচ্ছে আমার সামনে যে ধলা হনুমান টা বসা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুবই রাগি!!তার পাশে রয়েছে রোহান নামক ছেলেটি তাকে দেখতে সুন্দর তবে তার ফেস দেখে বোজা যাচ্ছে খুব হাসিখুশি আর ফানি টাইপের একটা ছেলে!!কারন এতক্ষণ ছেলেটি আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে প্রায় সবাইকেই হাসাচ্ছে আর মিতুকে প্রচুর রাগাচ্ছে!!আর এতে মিতু প্রচুর বিরক্ত!!আর তার পাশে বসে আছে চশমা পড়া একটা ছেলে!!প্রায় মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে মোবাইলে কিছু একটা করছে!!তাকে দেখে মনে হচ্ছে হয়তো কোনো ভার্সিটির স্যার!!হর্ঠাৎ রোহানের কথায় ভাবনা থেকে বের হলাম আমি!!কারন ছেলেটি ধলা হনুমানটাকে বলছেঃ
!
আচ্ছা আরিয়ান তোর গায়ের উপর নাকি কোনো এক মেয়ে পড়ে গিয়েছিল তা মাম্মা কেমন ফিল হলো!!
!
ছেলে এমন একটা কথা শুনে আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না!!এদিকে আরিয়ান রোহানের কথা শুনে আমার দিকে বড় বড় করে তাকালো যা দেখে আমার প্রান যায় যায় অবস্থা!!তাই আমি মুখ গুড়িয়ে নিলাম বাহিরের দিকে!!আর এদিকে মিতু তাদের কথা শুনে হাসি চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!!!
!
আরিয়ানঃতুই থামবি
!
রোহানঃআরে মামা বল না কেমন ফিল হলো!!তুই যদি রাজি থাকিস মেয়েটিকে আমাদের ভাবি বানাতে কোনো আপওি নেই!!প্রথম বার কোনো মেয়ে তোর গায়ের উপর পরল এগুলা ভাবা যায়!!
!
ছেলেটির কথা শুনে মিতু তার হাসি আর ধরে রাখতে পারল না!!ফ্যাল ফ্যাল ৩২ফাটি দাত বের করে হেসে দিল!!
!
এদিকে আমার ইচ্ছে করছে মাটি ফাকঁ করে নিচে চলে যেতে!!এই মুহুর্তে আমি পড়ে গেলাম অসস্তিতে!!কি করব কিছুই বুঝতে না পেরে ধাপ করে উঠে চলে আসলাম ওখান থেকে!!আর সবাই হয়তো আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল!!!
!
আরিয়ানঃশালা,তুই একটা বলদ
!
রোহানঃযাক বাবা আমি কি করলাম,আর ওই মেয়েটা ওভাবে চলে গেল কেন???
!
আরিয়ান কিছু বলার আগেই মিতু বলে উঠলঃ
!
এই মিস্টার কানা চশমা কোথায় কি বলতে হয় ঠিক ভাবে বুঝতে শিখেন নাই!!কোথা কার পাগল জানি!!
!
রোহানঃএই মিস ঝগড়ুটে আপনি আমাকে পাগল বললেন কেন??
!
মিতুঃপাগল কে পাগল বলব না তো কি করব এক নাম্বার ছাগল কোথাকার!!
!
রোহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিতুও হন হন চলে আসল ওখান থেকে আমাকে খুজতে!!
!
এদিকে রোহান হ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে রইল মিতুর দিকে!!
!
রোহানঃআচ্ছা আমি কি বললাম যে ওই মেয়েটা আমাকে পাগল বলল!!!
!
রোহানের কথায় আরিয়ান তার হাসির বাধ ভেঙে দিয়ে হাসতে লাগল!!কিছুতেই আরিয়ান তার হাসি হামাতে পারছে না!!
!
এদিকে আবির আর রোহান হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে আরিয়ানের দিকে!!কারন তারা ঠিক বুঝতে পারছে না আরিয়ানের হাসার কারনটা!!
!
এক পর্যায়ে আরিয়ান তার হাসি থামিয়ে বললঃতুই যে মেয়েটাকে ভাবি বানাতে চাইছিলি প্রথম মেয়েটা সেই মেয়েটাই ছিল!!ওই পড়ে গিয়েছিল আমার উপর!! আর মেয়েটা ইচ্ছে করে পড়েনি এটা just a accident!!বলে আবার হেসে দিল আরিয়ান!!
!
এদিকে রোহান তার কথা শুনে পুরো বোকা বনে গেল!!কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না!!এদিকে আরিয়ান আর আবির দুজনেই হাসছে আর তাদের মাঝখানে রোহান গালে হাত দিয়ে বসে পরল!!!
.
.
🍁
ট্রেনের দরজার দিক থেকে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি আমি!!আর শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছি!!কেন জানিয়া খুব আনিজি ফিল হচ্ছে আমার!!এখন আমি আবার ওখানে গিয়ে কিভাবে বসব!!ভাবতেও কেমন লাগছে আমার!!হর্ঠাৎ কারো কাঁধে হাত রাখার স্পর্শে পিছনের দিকে তাকালাম আমি!!মিতুকে দেখি দাঁত বের করে হাসছে যা দেখে আরো বিরক্ত লাগছে আমার!!
!
তুই তোর হাসা বন্ধ করবি!!
!
ওকে সরি সরি দোস্ত!!তা উঠে এলি কেন??
!
তাহলে কি করতাম ওরা মজা নিচ্ছিল আর বসে বসে শুনতাম!!
!
তাতে কি হয়েছে তোকে ভাবি বানাতে চাইছিল!!খারাপ কি কতো সুন্দর দেখতে বলত ভাইয়াটাকে!!
!
চুপ বান্দর তুই চেহারা দেখলি চোখ দেখছ কি লাল হয়ে গেছিলো ও তো এক নাম্বার লাল হনুমান!!বাবা কতো যেন রাগি!!হুহ বাদ দে!!
!
আচ্ছা শোন তানিশাকে ফোন দিয়েছিলি গাড়ি পাঠাবে তো!!নাকি ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে!!
!
তা তো জানি না!!আর ভাইয়া কি আসবে ভাবতে পারছিস ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আমরা যাচ্ছি!!অনেক মজা করব ঠিক আছে!!
!
মিতুঃতা আবার বলতে দেখবি লুঙ্গি ড্যান্স দিবো তিনজন মিলে বলে দুজনেই হেসে দিলাম!!!
আচ্ছা চল গিয়ে বসি কতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকব এখনও দু-ঘন্টার মতো লাগবে চল!!
!
আমি কিছু না ভেবে চুপচাপ চেল আসলাম আমাদের সীটে!!
.
.
🍁
সীটে এসে বসতেই রোহান ভাইয়া বলল
!
সরি,আমি আসলে বুঝতে পারি নি ওটা তুমি ছিলে!!
!
it’s okk ভাইয়া!!
!
তারপর সবাই নীরবতার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিলাম ২ ঘন্টা!!!!তবে এই দু’ঘন্টায় অনেকবার ই রোহান আর মিতুর ভিতর ঝগড়া করতে করতেই গেল!!!
.
.
.
🍁
২ঘন্টা পর………
চট্টগ্রাম রেল-স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর মিতু!!আর ওই ভাইয়াগুলো অনেক আগেই চলে গেছে!!তবে যাওয়ার আগে রোহান আর একবার ঝগড়ুটে বলে গেছে মিতুকে!!যাতে করে তার মুড অফ হয় আছে!!
!
প্রায় ১৫ মিনিট যাবৎ দাঁড়িয়ে থাকার পরে তানিশার ভাই কাব্য ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেললাম!!তারপর ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে গাড়িতে বসে পরলাম!!আমরা বসতেই গাড়ি চালাতে শুরু করল কাব্য ভাইয়া!!তারপর গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে!! এখানে আসার মূল কারণ হলো কাব্য ভাইয়ার বিয়ে!!
.
.
.
🍁
তানিশাদের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোহান,আবির আর আরিয়ান!!!দরজায় টোকা দিতেই তানিশার আম্মু দরজা খুলে দেয়!!সাথে সাথে তারা আন্টিকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরল তিনজনেই!!আন্টিও খুব খুশি হয়ে তাদের ভিতর ঢুকে বসতে বলল!!
!
এর ভিতর একটা রুমের ভিতর থেকে খুব সুন্দর ভাবে পরিপাটি হয়ে বেরিয়ে আসল তানিশা!!ভাইয়াদের সালাম দিয়ে একে একে সবাইকে পানি দিল!!এরভিতর রোহান বললঃ
!
কাব্য কোথায়??
!
তানিশাঃভাইয়া আমার দুজন বন্ধুকে আনতে গেছে এক্ষুনি এসে পরবে!!বলে একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় তার রুমে!!
.
.
🍁
রোহানঃ চল তাহলে কিছুকক্ষন ছাদে গিয়ে ঘুরে আসি!!
!
আরিয়ানঃতোরা যা আমি কিছুক্ষন ঘুমাবো!!আরিয়ান আর কিছু না বলে তার ব্যাগ নিয়ে চলে যায় রুমে!!
!
তারপর রোহান আর আবির চলে যায় ছাদে!!
.
.
.
🍁
দরজার কলিং বেল বাজার আওয়াজ শুনে রুম থেকে দৌড়ে বাহিরে চলে আসে তানিশা খুশিতে তার মুখ জ্বল জ্বল করছে!!দরজা খুলে মীমকে আর মিতুকে দেখে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল তানিশা!!ওরাও জড়িয়ে ধরল তানিশাকে!!এর ভিতর তানিশার আম্মু এসে কাব্যকে বলল তোর বন্ধুরা এসেছে এটা শুনে কিছুটা অবাক হলো কাব্য কারন তার বন্ধুদের তো কালকে আসার কথা!!কাব্য হাসি দিয়ে বললঃ
!
কোথায় হারামিগুলা!!
!
তানিশাঃভাইয়া ছাদে আছে যাও তুমি!!তানিশার কথা শুনে আবির আর দুই মিনিট অপেক্ষা না করে দৌড়ে চলে যায় ছাদে!!!
.
.
🍁
মিতুঃআন্টি আমি কিছুক্ষন পর খাবো,আগে গোসল করতে হবে প্রচুর টায়াড আমি!!
!
তানিশার আম্মুঃআচ্ছা তবে তুই গিয়ে গোসল করে আয়!!
!
মিতুও আর কিছু না চলে আমার আর ওর ব্যাগ নিয়ে চলে যায় উপরের রুমে!!
তারপর আমি কিছুক্ষন বসে রইলাম তানিশা আর আন্টির কাছে!!
.
.
.
🍁
ছাদে আবির আর রোহানকে দেখে ঝাপটে ধরল কাব্য!!হারামিগুলা তোরা নাকি কালকে আসবি
!
আবিরঃকেমন দিলাম বল এগুলো সব আরিয়ানের প্লান!!তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার! জন্য!
!
কাব্যঃতা আরিয়ান কই!!
!
রোহানঃও কিছুক্ষন ঘুমাবে তুই গিয়ে এখন আমাদের জন্য সরবত বানিয়ে নিয়ে আয় তারপর আরিয়ানকে খুজবি নে!!
!
কাব্যঃতুই আর সুদরাবি না!!
!
বলেই তিনজন একসাথে হেসে দিল!!!
.
.
.
🍁
আমাদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি!!তানিশা আন্টির সাথে কাজ করছে!!এই মুহুর্তে একটু না ঘুমালে চলবেই না আমার মাথা জিম জিম করছে অসম্ভব!!
!
রুমের ভিতর মিতুকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলাম আমি!!কারন ও তো বলছিলো গোসল করতে যাবে এত তাড়াতাড়ি গোসল করা হলে গেল!!
!
আমি গিয়ে দৌড়ে ঝাপটে ধরলাম মিতুকে বললামঃ
!
তুই নাকি গোসল করতে যাবি এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল!!
!
এদিকে আরিয়ান হর্ঠাৎ কেউ তাকে ঝাপটে ধরাতে চোখ খুলে তাকালো!!মেইলি কণ্ঠ শুনে কিছুটা অবাক হলো সে!!
.
.
.
🍁
রোহানঃদোস্ত তোরা বস আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি!!
!
কাব্য আর আবিরঃওকে যা আমরাও কিছুক্ষন পর আসছি!!!
তারপর চলে আসে তাদের রুমে রোহান!!
!
রুমে ঢুকে আরিয়ানকে না দেখে কিছুটা অবাক হলেও রোহান পরক্ষণেই ওয়াশরুম থেকে ঝর্ণার আওয়াজ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারল হয়তো আরিয়ান গোসল করছে!!
!
রোহানঃদেখছো ঘুমানোর কথা বলে গোসল করতে গেল!!!বলে বসে পরল বিছানায় দরজা আটকে!!!
.
.
.
🍁
মিতু তোর শরীর এত শক্ত লাগছে কেন আর এই ভাবে কাথা মুড়ি দিয়ে আছিস কেন!!তুই নাকি গোসল করতে যাবি !!তা গোসল করে জ্বর আসলো নাকি!!বলে কপালে হাত দিলাম মিতুর কিন্তু না কপাল ঠিকই আছে!!কই না তো জ্বর আসে নি তবে!!হয়তো এমনি ভেবেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম মিতুকে!!
!
এদিকে আরিয়ান পড়ে গেল অসস্তিতে!!কি করবে বুঝতে পারছে না সে!!!
!
হর্ঠাৎ কারো চিৎকার শুনে লাফ দিয়ে বসে পরলাম আমি!!মিতু কে চিৎকার দিল বলত!!
!
আরিয়ানঃভূতে
!
ভূত!! কি বোকার মতো কথা বলছিস আর তোর কন্ঠ এমন ছেলে ছেলে লাগছে কেন??বলে
!
পিছনে তাকিয়ে আরিয়ান দেখে ভূত দেখার মতো ভেবে এক চিৎকার দিতে যাব তার আগেই আমার মুখ চেপে বিছানার সাথে চেপে ধরল আরিয়ান!!
.
.
.
🍁
রোহান মিতুর মুখ চেপে ধরে এই চিৎকার করছ কেন??
এখন কারনটা বলা যাক কিছুক্ষন আগে মিতু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রোহানকে দেখতে পেয়ে এক চিৎকার দিল সাথে সাথে রোহান মুখ চেপে ধরল মিতু!!দেয়ালে সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে রোহান আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিতুর দিকে!!!
!
(এদিকে আরিয়ান মিমকে আর ওদিকে রোহান মিতুকে চেপে ধরে আছে!!আর দুজনেই চোখ বড় কর তাকিয়ে দুজনের দিকে)
!
#চলবে…………
!
❤[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!!]

তুমি শুধু আমার পর্ব-০১

0

#তুমি_শুধু_আমার❤[3 character]
#part:01
#Writer:#TanjiL_Mim
!

-এই স্টুপিড মেয়ে,চোখে কি দেখতে পাও না
!
-হর্ঠাৎ নিচে পড়ে থাকা একটা ছেলের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা কেঁপে উঠলাম আমি!!তবে এই মুহুর্তে হয়তো তার জায়গায় আমি থাকলেও সেইম ভাবেই রেগে যেতাম!!কারন ছেলেটির গায়ের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেছি আমি!!আর এই মুহুর্তে ছেলেটির বুকের উপর শুয়ে আছি আমি!!!ঘটনার স্থানে চারিদিকে মানুষ পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের উপর!!ছেলেটি কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি!!
!
-এই ডাফার মেয়ে উঠো বলছি আমার উপর থেকে
!
-ছেলেটির কথায় ভরকে গিয়ে তাড়াতাড়ি উঠতে লাগলাম আমি!!এরই ভিতর আমার বেস্টু মিতু এসে পৌঁছালো ঘটনা স্থানে এসে বলল কি হয়েছে!!
!
আমি তানজিল মীম!!অর্নাস ১ম বর্ষের ছাএী!!আর আমার বেস্টু মিতু!!এই মুহুর্তে আমার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠেছি!!কিন্তু ট্রেনে প্রচুর ভীড় থাকায় আমি আমার হাতের ব্যাগটা নিয়ে ট্রেনের ভিতরে উঠলাম!!আর মিতু গিয়েছিল একটা ঠান্ডা কোক আনতে দোকানে যার কারনে তার ব্যাগটাও আমার হাতে দিল!!যার ফলে আরো ভাড়ি হয়ে গেল হাত!!দু-হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে ধীর গতিতে চলতে লাগতাম আমাদের সীটের কাছে!!কিন্তু হর্ঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দেয় যার ফলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই আমি একটা ছেলের গায়ের উপর!!
!
আমার কথা শুনে মিতুর রিয়েকশন কেমন হবে যানা নেই আমার!!তবে ছেলেটি যে খুব রেগে গেছে তা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি!!ছেলেটি দেখতে প্রচুর ফর্সা,চুলগুলো খাড়া খাড়া, পরনে ব্লাক টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স সব মিলিয়ে দেখতে অসম্ভব সুন্দর যাকে বলে ক্রাশ খেয়ে হুমড়ি খাওয়ার মতো!!কিন্তু এই মুহুর্তে তার চোখ পুরো লাল হয়ে রয়েছে!!যা দেখে আমার প্রান যায় যায় অবস্থা!!কিন্তু আমার তো কোনো দোষ ছিল না!!তাই এক বুক সাহস নিয়ে ছেলেটিকে বললামঃ
!
সরি ভাইয়া আসলে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দেয় যার ফলে আমি পড়ে যাই!!ইচ্ছে করে পড়ি নি!!বিশ্বাস করুন!!
!
ছেলেটি আর কিছু না বলে ভীড় ভীড় করতে করতে ট্রেন থেকে নেমে গেল!!যা দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম!!
!
এদিকে মিতুর মাথায় একটা চাটি মারলাম আমি!!যার কারন সে এখনো ভীড় ভীড় করে হাসছে ছেলেটি যেতে এখন উচ্চ স্বরে হাসছে!!!!ইচ্ছে করছে একটা থাপ্পড় দিয়ে উল্টে ফেলে দেই!!
!
তাই রেগে গিয়ে চেচিয়ে উঠলাম আমি!!আমার চেঁচানোতে চুপ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পরল!!
!
তারপর বললাম যা হয়েছে তোর জন্য হয়েছে
!
মিতুঃ যাক বাবা তুমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলি এতে আমার দোষ কোথায়??
!
তোর দোষ কোথায় মানে তুই যদি আমার সাথে আসতি তাহলে হয়তো এমনটা হতো না!! তা যার জন্য গেছিলি নিয়ে এসেছিস!!
!
এই রে না আনি নি দাড়া!! আসলে তখন শুনলাম এখানে চেচামেচি হচ্ছে তাই দৌড়ে এখানে আসলাম!!আচ্ছা তুই বস আমি নিয়ে আসছি!!বলে চলে গেল মিতু!!
!
আমি চুপচাপ ব্যাগ গুলো রেখে বসে পরলাম আমাদের সীটে!!!এর মধ্যে সেই ছেলেটি এসে বসে পরল আমার ঠিক সামনের প্লাটফর্ম এ যা দেখে আমার বুক ধড়ফড় ধরফড় করছে!!না জানি দেখে কি করে আমার সাথে!!চুপ করে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছি আমি অপেক্ষা কখন মিতু আসবে!!
.
.
🍁
একটা কোকের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতু!!তার ঠিক উল্টো দিকে দু-হাত দূরে ফোনে কথা বলছে রোহান!!তার উদ্দেশ্য হলো তার বন্ধুরা ঠিক কোথায় আছে তা জানা!!হর্ঠাৎ করে মিতু তার ওড়না কেউ টান দিচ্ছে এমন অনুভব করছে!!এই মুহুর্তে তার রাগ আসমান সমতুল্য হয়ে গেছে!!কারন দোকানদার তাকে প্রায় ১৫ মিনিট যাবৎ দাড় করিয়ে রেখেছে এই রোদের ভিতর!!যাতে সে চরম বিরক্ত!!তার উপর আবার ওড়না টান লাগল মিতু সামনের একটা ছেলেকে দেখে আরো মেজাজ বিগড়ে গেল!!মিতু ছেলেটির কাছে গিয়ে বলল এই মিস্টার কানা চশমা!![কারন ছেলেটির চোখে কালো চশমা পরা ছিল!!]
চোখ কি পকেট নিয়ে ঘুরতে আছে!!মিতুর কথায় ছেলেটি ফোন রেখে মিতুর দিকে তাকালো কিন্তু মিতুর কথার আগা মাথা কিছু না বুঝে বললঃ
!
কি হয়েছে
!
কি হয়েছে মানে আমরা ওড়না ধরে টানছেন কেন
!
What……..
!
আপনার what আপনার পকেটে রাখেন রাস্তার মধ্যে অসভ্যতামি করতে লজ্জা করে না!!!
!
এই যে মিস আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন
!
তাহলে কি আমি মিথ্যে কথা বলছি!!
!
দেখুন হয়তো কোথায়ও একটা ভুল বোঝা বুঝি হচ্ছে
!
এই নিয়ে মিতু আর রোহান ভিতর কথা কাটা কাটি হচ্ছে!!এর ভিতর আবির চলে আসে এবং আবির হলো রোহানের বন্ধু!!ও আর একটা কথা গল্পের প্রথম ছেলেটার নাম হলো আরিয়ান!!আবির এসে কি হলো আরিয়ানকে পেয়েছিস!!
!
রোহানঃহুম পেয়েছি ও ওই ট্রেনে উঠেছে!!কিন্তু দেখ মিস ঝগড়ুটে বলছে আমি নাকি ওর ওড়না ধরে টানছি কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এমন কিছুই করি নি!!রোহান তার হাত উঠানোর পড়ে দেখল তার হাতের ঘড়ির সাথে মিতুর ওড়না আটকে গেছে!যা দেখে রোহান বললঃদেখছো দোস্ত আমার ঘড়ির সাথে আটকে গেছে আমার কোন দোষ নেই!! এই ঝগড়ুটে শুধু শুধু ঝগড়া করছে আমার সাথে!!
!
ছেলেটির কথায় মিতু আরো রেগে যায় এই আপনি ঝগড়ুটে কাকে বলছেন!!
!
রোহানঃ ঝগড়ুটে কে ঝগড়ুটে বলছি কখন থেকে ঝগড়া করেই যাচ্ছে!!
!
আবার রোহান এর ভিতর ঝগড়া লেগে যায় যা দেখে আবির ওদের গিয়ে চুপ করতে বলে!!আর বলে তোদের ঝগড়ায় ট্রেন চলে যাবে আবিরের কথায় মিতুর মাথায় ট্রেনে মিম একা আছে ভেবেই আর কিছু না বলেই হন হন করে কোকের দোকানের সামনে গিয়ে কোক নিয়ে চলে যায়!!!
!
আর এদিকে হাবলা কান্তের মতো মিতু চাওয়ার পাবে তাকিয়ে থাকে রোহান আর আবির!!তার তাদের বন্ধু আরিয়ানের খুঁজতে ট্রেনে উঠল!!!!
.
.
🍁
প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ বসে আছি জানালার দিকে মুখ করে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয় গেছে!!!এর ভিতর মিতু চলে আসে ওকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠল আমার!!ওকে দেখে বললাম এতক্ষন কি করেছিলি এত দেড়ি হলো কেন??
!
আর বলিস দোকানের সামনে একটা ছেলের সাথে জগড়া হয়ে যায় আমার!!তারপর পুরো ঘটনার বলল আমার যা শুনে আমি হাসতে হাসতে প্রায় পেট ব্যাথা হয়ে এসেছে!!!যা দেখে মিতু ওয়াশরুমের দিকে গেল!!
!
কিছুক্ষণের ভিতর আমাদের প্লাটফর্মে আরো দুটো ছেলে আসল!!যা দেখে সামনে বসে থাকা ছেলেটি উঠে হেসে জড়িয়ে ধরল ওদের আর বললঃ
!
হারামিগুলা এতক্ষণ কোথায় ছিলি তোরা কতক্ষণ যাবৎ বসে আছি!!তাদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠল তার বলিস একটা ঝগড়ুটের সাথে ঝগড়া করে এসেছি এত করে বললাম আমি কিছু করিনি তারপরও সেই পা তুলে ঝগড়া করতে লাগল!! ছেলেটার কথা শুনে আমি যেন অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছি এর মিতু এসে সামনে দাঁড়ালো আর এদিকে ছেলেটি বকবক করেই যাচ্ছে তার সাথে থাকা ছেলেটি এত করে বলছে চুপ কর কিন্তু ছেলেটির কান পর্যন্ত মনে পৌঁছাচ্ছে না!!আর তাদের এমন কান্ড দেখে বুঝে গেছি হয়তো ওনারা মিতুর কথাই বলছে!!!
!
এর ভিতর ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল আপনি আবার আমাকো ঝগড়ুটে বলছেন!!মিতুর কথায় ছেলেটি কিছু ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে থাকালো!!পিছনে মিতুকে দেখতে পেয়ে আর কিছু না বলে আমতা আমতা করে বলল তুমি!!
!
মিতুঃআমি যদি ঝগড়ুটে হই তাহলে আপনি কি আপনি হলে একটা কানা বাঁদর!!এই নিয়ে দুজনের ভিতর ঝগড়া শুরু হয়ে যায়!! এর ভিতর আমি গিয়ে মিতুকে ধরে চুপ করতে বললাম!!বহুত কষ্টে চুপ করালাম!!তারপর ছেলেগুলোও চুপ করে বসে পরল যার যার সীটে!!
!
এর ভিতর ট্রেন চলতে শুরু করল তাদের আপন গতিতে………..
!
#চলবে………..

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_২০ : #অপূর্ণতাতে_পূর্ণতা
লেখিকা : #Lucky

“শাড়ি পড়িয়ে দিন।” আমি ইথানের সামনে শাড়ি ধরে বললাম।
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু হাসলেন।
“তুমি নিজে শিখবা না?”
“আপনি আছেন কি করতে?!” ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বললাম।
“আমি না থাকলে? তখন?” শাড়ি গুছিয়ে নিতে নিতে বললেন উনি।
মুহুর্তেই আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

উনি কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল করলেন।
“সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো?” বলেই উনি মৃদু হাসলেন।
আমি রেগে গিয়ে বললাম,”ফালতু মজা কেন করেন আপনি?”
“আজ কিজন্য শাড়ি পড়বা? শাড়ি পড়ে ত উলটে উলটে পড়ো।” কথা ঘুরাতে বললেন উনি, তা আমি ভালই বুঝলাম।
“শাড়ি পড়ে নিরবের সাথে পালিয়ে যাব ত, তাই। উল্টে পড়বো না। নিরব ঠিক সামলে নেবে।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম আমি।
উনি কড়া নজরে আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলেন।
আমি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
“ক..কি করছেন? ইভান এসে যাবে।”
“কার সাথে পালিয়ে যাবা?” কটাক্ষ করে বললেন উনি।
“নিরবের সাথে।” মুচকি হেসে বললাম আমি।
সাথে সাথে উনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিলেন।
“পাগল হয়ে গেছেন? ছাড়ুন।” দরজার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম আমি।
“তোমাকে না মানা করেছিলাম ওই ছেলের কথা তুলতে? বিয়ের চার বছর হয়ে গেছে এখনো ওর কথা তোলো!” সরু চোখে তাকিয়ে বললেন উনি।
“কেনো? জেলাস আপনি?” পরপর দুইবার পলক ফেলে বললাম আমি।
উনি রেগে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না।
“আমি কি এভাবেই থাকবো? শাড়ি পড়াবেন না?” ভ্রুকুটি করে বললাম।
“নিজে পড়ো।” বলেই উনি শাড়ি নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরলেন চলে যাওয়ার জন্য।
“আমি বরং নিরবকে ফোন দিই। ও ঠিক পড়িয়ে দিবে।” আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ওনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।
উনি থেমে দাড়িয়ে কড়া নজরে তাকিয়ে আমার দিকে ঘুরলেন।
“কি বললা?”
“আপনার দোষ। আপনি আর জীবনেও যদি বলেন এমন কথা তাহলে আপনার খবর আছে।” আমিও কড়া নজরে তাকিয়ে বললাম।
উনি সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন।
“তাড়াতাড়ি। এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেল।” তাড়া দিয়ে বললাম আমি।
উনি ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসলেন।

আজ ওনার আমাদের ঘুড়তে নিয়ে যাওয়ার কথা। ইদানীং ওনার ব্যস্ততার কারণে হয়েও উঠেনা। কিন্তু আজ যেহেতু উনি নিজেই নিয়ে যেতে চেয়েছেন তাই দেরি করা চলবে না।
কিন্তু দেরি হয়েই গেল।

বিশেষ করে আমি দেরি করে আসার কারণে তারা, অর্থাৎ বাবা ছেলে দুইজনই কপাল কুচকে ফেলল।
আমি ইথানের পাশের সিটে বসে সিট বেল্ট বাধতে বাধতে কটাক্ষ করে বললাম, “এভাবে দেখার কি আছে?”
“আধা ঘন্টা বসে ছিলাম আমরা।” গাড়ির জালানায় হাত ভাজ করে রেখে বলল ইথান।
“yep. Always late.” হাত দুটো বুকে গুজে পিছন থেকে সুর মিলালো ইভান।
আমি একবার ইথান আর একবার ইভানের দিকে তাকাতে লাগলাম।
ইথান ত ছিলই সাথে এখন ইভানও যোগ হয়েছে। যবে থেকে ইভান কথা বলা শুরু করেছে আমার জীবন ভাজাভাজা হয়ে গেছে। তিন বছরের ছেলের এত ভাব!
যেমন বাপ তেমন ছেলে।
এরা দুই বাপ ছেলে মিলে আমাকে হেনস্তা করতে সর্বদা প্রস্তুত।
“অসহ্য।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
তারা দুইজনেই হাসতে লাগল। ভালই মজা নিচ্ছে আমার!
তবে তাদের দেখে আমিও মুখ ফুলিয়ে রাখতে পারলাম না। কোনোদিনো পারিও না। তাই আমিও হেসে ফেললাম।

কিন্তু এই সুন্দর মুহুর্ত যে নিমেষে শেষ হয়ে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসার সময় আমি আইচক্রিম কেনার জন্য নামলাম।
ইথান নিজেই আনতে চাইলেও ওদের বসতে বলে আমিই রাস্তার ওপাড়ে গেলাম।
তবে কিনে ফিরে আসার সময় খেয়াল না করার কারণে একটা সি এন জি এর সামনে পরে গেলাম। এমন বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছিলো যে আরেকটু হলেই চাপা লেগে যেত। অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম।

তবে আমার অবস্থা খেয়াল করে ওপাশ থেকে ইথান আর ইভান দুইজনই ঘাবড়ে গেল। আর ইথান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গেল।
আমি ইশারায় আসতে হবে না বুঝানোর আগেই সে রাস্তার দিকে খেয়াল না করেই আমার দিকে আসতে যেতেই উল্টোদিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটা বাসের সাথে তার ধাক্কা লেগে গেল।
মুহুর্তের মধ্যে আমার সারা শরীর শিথিল হয়ে গেল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের চোখের সামনে ঘটলেও তা বিশ্বাস করতেই পারলাম না।
.

.
সেই ঘটনার পর দশ বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনো মেনে নিতে পারি না। তাও মানিয়ে নিতে হয়।
মনে হয় যেন এইত সেদিনই সব ঠিক ছিলো। কিন্তু এভাবে কিভাবে সব শেষ হয়ে গেল?
এখনো সব আগের মতই আছে। তার শার্টগুলো, তার ঘড়ি, তার ব্যবহৃত সব জিনিস, এমনকি তার ফুলদানিটাও যত্নে নিজের কাছেই রাখা আছে। শুধু সে-ই নেই।
চিন্তা করেই চোখের কোনে জল চলে এলো।

“mom! এখনো হয়নি?” বলতে বলতে রুমে ঢুকল ইভান।
আমি হালকা চমকে ইভানের দিকে তাকালাম। আর সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে একহাতে চোখের জল মুছে নিলাম।
ইভান একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে হাটু ভাজ করে আমার কুচিটা ধরে ধরে ঠিক করে দিতে লাগলো।
আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম।
“তুই এসব কবে শিখলি!”
“ইউটিউব। তোমার কুচির কি যে অবস্থা!” বলতে বলতে সে কুচি করতে লাগলো।
আবার আমার চোখের কোনে জল চিকচিক করতে লাগলো, তবে সাথে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসিও চলে এলো।
সে আমাকে কথা দিয়েছিলো আমাকে একা রেখে যাবেনা। সত্যিই তাই। সে আমাকে একদম একা রেখে যায়নি। একদম না।
এত সুন্দর একটা ছেলে আমাকে দিয়ে গেছে!
“Don’t cry.” আমার দিকে না তাকিয়েই বলল ইভান।
আমি দ্রুত চোখের জল মুছে নিলাম।
আজ ওর জন্মদিনের দিন আমার কারণে ওর মন খারাপ করাতে চাই না। তাই কাঁদলে চলবে না।

তবে এটা মানতেই হবে যে সেদিনের পর থেকে ইভান হঠাৎই বড় হয়ে গেছে। যেন আমার সব দায়িত্ব ইথান ওকেই দিয়ে গেছে। এত ছোটো থেকেই এত দায়িত্ব বোধ আমি জীবনেও দেখিনি। ইভান আছে বলেই মনে হয় আমি একেবারে একা হয়ে যাই নি।
“কি?” ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল ইভান।
“কিছুনা।” মিষ্টি হাসির সাথে বলেই আমি কুচিটা গুজে নিলাম।
“নিচে চলো তাহলে।”
“তু যা আমি আসছি।”
“উহু, একা রেখে গেলে দেখা যাবে কেঁদে রুম ভাসিয়ে দিয়েছ। যেদিন প্রথম খাইয়ে দিয়েছিলাম সেদিনই কেমন হাউমাউ করে কাঁদছিলে! আজ না জানি আবার কি করো!” বাকা হাসির সাথে বলল ইভান।
আমি সরু চোখে তাকিয়ে ওর মাথায় আস্তে করে মেরে বললাম, “আমাকে জ্বালাচ্ছিস আবার!”
ইভান মাথা ঘষতে ঘষতে মুচকি হেসে বলল, “জ্বালাচ্ছি না। বুঝাতে চাচ্ছি যে আমি এখন আর বাচ্চা নেই। থার্টিন চলছে এখন।”
আমি হেসে ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম, “হ্যা তাই-ই ত। থার্টিন চলছে, ফোর্টিন হয়ে যাবে আজ। কত বড় হয়ে গেছে ছেলে আমার।”
“এখন চলো। তোমার প্রিয় খাবার অপেক্ষা করছে।”
ইভান আমাকে হাতে ধরে নিয়ে বের হতে হতে বলল।

আমি চিন্তা করতে লাগলাম যে আজ ইথান থাকলে কেমন হত?
একটা সম্পুর্ন পরিবার হত, তাইনা?
কিন্তু হয়তো ভাগ্য তা চায় না। মাঝে মাঝে অপূর্ণতা-তেই পূর্ণতা খুঁজে নিতে হয়।
যেমন আমার অপূর্ণতার পূর্ণতা হলো আমার ইভান।
আর ইথান ত আমার মনের মধ্যেই আছে। সবসময় আছে।
সবসময়।
💕💕

দু’চোখের বরষ হয়ে মিশে আছো বলে তাই
তোমারে খুঁজিতে তাই নয়ন মেলিনা

জীবন মরুভূমে একাকী তরুর মত
অসহায় শাখা মেলে আকাশে চেয়েছি কত
বরষার মত এলে
ভরে দিলে ফুলে ফলে
শিকড়ে মিশেছো বলেই তাই চলিনা।

নদী কুলু কুলু জানে
বনানীও মর্মরে
হৃদি জানে স্পন্দনও
আঁখি ঝরঝর ঝরে
ভাষাহীন ভাষা দিয়ে
হৃদয়ে ভরেছো হিয়ে

কথার ছলনা দিয়ে তাই চলিনা …

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা~
দু’চোখের বরষ হয়ে মিশে আছো তাই
তোমারে খুঁজিতে তাই নয়ন মেলিনা।

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা

ভালোবাসি বলে তাই~
ভালোবাসি~
বলি~~~
না ~~

(সমাপ্ত)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৯

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৯ : #তুমি_আমি_আর_সে
লেখিকা : #Lucky

আমি আল্ট্রাসোনোর রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে নিজের পেটে হাত রাখলাম। মুখে আলতো হাসি চলে এলো।
তিন মাসের সময়ে একবার আল্ট্রাসোনো করিয়ে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই বলা হয়েছিলো। সেটা করতেই আসা। আজকালের মধ্যেই তিনমাস হয়েই যাবে।
“সব ঠিক আছে কিন্তু…।” ডাক্তার এতটুকু কথা শুনেই আমি ঘাবড়ে তার দিকে তাকালাম।

“আপনাদের নিজেদের ফিলিংস কন্ট্রোল করা উচিত। তিন মাস অব্দি।” বলল মহিলা ডক্টর টা।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, মানে?
তবে প্রশ্ন করার পরো মুহুর্তে বুঝলাম উনি কি বলতে চাইছেন।
সাথে সাথে লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলাম।
মহিলাটা স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “বাচ্চা ঠিক আছে। তাছাড়া এখন আর সমস্যা নেই। তবে লাস্ট তিন মাস অবশ্যই…।”
আমি এত লজ্জা পাচ্ছি বলে উনিই মৃদু হেসে চুপ হয়ে গেলেন।
ভাগ্যিস ইথান একটু আগে ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে গেছে। নাহলে কি একটা অবস্থা হত।
আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে তার চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলাম। সাথে সাথেই ইথানের সাথে ধাক্কাও খেলাম। আর উনি আমাকে দুই হাতে ধরে নিলেন।
“কি হয়েছে? এভাবে ছুটছ কেনো? পরে গেলে কি হতো?” আমাকে শাসিয়ে বলল সে।
“ক…কিছু হয়নি, সব ঠিক আছে। চলুন বাসায় যাব।” এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম আমি।
উনি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন, “কি বলেছে? কোনো প্রবলেম?”
“উফ, সব নরমাল আছে। চলুন ত!” বলেই আমি ওনাকে ঠেলতে লাগলাম।

“কি লুকাচ্ছো?” গাড়িতে বসে তীক্ষ্ণ চাহনির সাথে বলল ইথান।
সে মনে করছে কি না কি হয়ে গেছে আবার।
“কি হবে?”
“তুমি বলবা নাকি আমি নিজে যাব ডক্টরের কাছ থেকে শুনতে?”
আমি এবার একটু মজা করার জন্য ঠোঁট উলটে বললাম, “আসলে…।”
“আসলে?” চিন্তার ছাপ চলে এলো তার মুখে।
আমি হাসি চেপে রেখে তার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার দুই বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন,”এরিন প্লিজ বলো, you will be ok right?”
উনি অনেক বেশিই উদ্ধিগ্ন হয়ে গেলেন।
আমি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “হ্যা বাবা হ্যা। আমার কি হবে? সব ঠিকই আছে। আমি ত মজা করছিলাম।”
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
“আপনি কি মনে করেছেন? আমার কিছু হয়ে যাবে?”
“তোমার কিছু হবে না।” বলতে বলতে উনি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আমার কাধে ঠোঁট ছুয়ে দিলেন।

.
আমি আয়নার ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখতে লাগলাম। নয়টা মাস শেষ হয়েও গেছে। আর এখন ত আমি অনেক মটু মটু লাগে। কিন্তু এতে কারো কিছু যায় আসেনা। আমাকে আরো মোটা কিভাবে বানাবে সেই ধান্ধায় থাকে সবাই।
“কি হয়েছে? মুখটা এমন করে রেখেছ কেনো?” আমার পিছনে দাড়িয়ে ভ্রু উঁচু করে বলল ইথান।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসেলাম। কারণ তাকে অনেক বার, অনেক ভাবে বলেছি এতগুলা খাব না। তাও সে জোর করে।
বলেছিলো আর জোর করবো না। কিন্তু কাজের সময় উলটা।
ইথান আমার পাশে এসে বসে বলল, “মোটা হয়ে যাচ্ছি! এটাই বলতে চাও ত?”
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম।
উনি আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন, “আর মাত্র কয়েকদিন। তারপর ত তুমি, আমি আর সে।”
আমি প্রশান্তির হাসি দিয়ে ওনার বুকে মাথা গুজে দিলাম।
“আমাদের ছেলে হলে তার নাম ইভান দিব।” বললাম আমি।
“আর মেয়ে হলে?”
“মেয়ে হলে!…..ইভা?”

.
চোখের পলকে সেই দিনটাও চলে এলো। সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত কিন্তু তার জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টটাও সহ্য করতে হবে।
তবে এই কষ্ট পরবর্তী খুশির কাছে কিছুই না। কিন্তু অনেক ভয়ও লাগছে।
লেবার পেইন এর জন্য ব্যথায় কুকিয়ে যাচ্ছি আমি।
আমি তার হাতের কাছের শার্টটা নিজের হাতে খামচে ধরে বললাম, “আমার খুব ভয় লাগছে।”
“Don’t get nervous. সব ঠিক হয়ে যাবে।” আমার হাত নিজের দুইহাতে ধরে উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন উনি।

“রিল্যাক্স।” আমার অশান্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি।
আমার জন্য উনি নিজেই যেন কষ্ট পাচ্ছেন।
আমাদের দেশের সব নিয়মের মধ্যে এই একটা নিয়ম যা আমার একদমই পছন্দ না, তা হলো ডেলিভারির সময় স্বামী ওটিতে ঢুকতে পারবে না।
যদিও একমাত্র সে থাকলেই ত আরো সাহস পাওয়া যায়।
এজন্যই হয়তো উনি নিজের পরিচিত ডক্টরের হস্পিটালেই আমাকে ভর্তি করিয়েছেন। যাতে উনি নিজেও আমার সাথে এই মুহুর্তে আমার পাশে থাকতে পারেন।
কারণ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মানেই ত সবসময় সব কিছুতে পাশে থাকা। তাই নয় কি?
আর সত্যিই তাই। উনি পাশে আছেন বলেই আমার ভয় অনেকটা কম লাগছে।
.
.
অবশেষে আমাদের ছোট্ট একটা ইভান হলো। দেখতে হয়েছে পুরোই ওনার মত। সবাই ত তাই বলছে।
“আমার মত দেখতে হয়নি কেন?” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
ইথান মৃদু হেসে বলল, “সেটাই। এখন?”
“এখন তাহলে আমার মত হবে এমন একটা বাচ্চা লাগবে।” প্রফুল্লচিত্তে বললাম আমি।
শুনেই ওনার কাশি শুরু হয়ে গেল।
“কি হলো আপনার আবার?” ভ্রুকুটি করে বললাম আমি।
“পরে পরে।”
“না, এখন এখন। আমার মত দেখতে হবে সে।” বলতে বলতে কুঞ্চিত ভ্রু আরো কিঞ্চিৎ কুচকে নিলাম।
“আর সেও আমার মত দেখতে হলে?”
“তাই তো!” হতাশ হয়ে গেলাম আমি।
“তাহলে তোমার মত দেখতে না হওয়া অব্দি বেবি নিব আমরা।” মুচকি হেসে বললেন উনি।
শুনে আমার চোখ গোল হয়ে গেল। সাথে লজ্জাও পেলাম।
“এখন চুপ করে আছ কেনো?” বলেই উনি আমার দিকে ঝুকলেন।
আমি লজ্জায় ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনি ইভান কেদে উঠল।
আমরা দুইজনই চমকে তার দিকে তাকালাম।
“কাদছে। কোলে নিন।” আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম।
ইথান নিজের ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে ইতস্তত করে বলল, “আসলে.. আমি জীবনেও কোনোদিনো বাচ্চা কোলে নিই নি।”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, “মানে? তাহলে এখন?”
“তুমি? তুমি নেও?”
“আমিও ত নেই নি জীবনেও!” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
তারপর দুইজনই ইভানের দিকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তাকালাম। আর পরক্ষণেই আমরা দুইজনেই হেসে উঠলাম।
.
ছেলে বড় করতে আমাদের দুইজনকেই অনেক কাঠ খড় পুড়তে হলো।কারণ…বলতে গেলে আমরা দুইজনেই এই বিষয় গমলেট।
তবে সব ঠিকই সামলে নিলাম। এতে করে সব অমলেটর মত সহজ হয়েও গেল।
অর্থাৎ ‘তুমি, আমি আর সে’ নামক সংসার ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে গেল৷

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৮

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৮ : #প্রেগন্যান্ট
লেখিকা : #Lucky

এখন কি আমার ডিভোর্সটা হয়েই যাবে! কিন্তু আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম কিভাবে?
আমি ভয়ে ভয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আ…আমি সত্যি কিছু করিনি। এ…এসব মিথ্যা কথা। বিশ্বাস করেন।” বলতে বলতে কেদে দিলাম।

আমার কান্না দেখে ডাক্তার ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
“এরিন, চুপ করো।” বিরক্ত হয়ে বলল ইথান।
আমি কেদেই যেতে লাগলাম।
এক পর্যায়ে ইথান শক্ত মুখ করে তাকিয়ে আমার হাত ধরল আর বলল, “আসো আমার সাথে।”
উনি আমাকে কেবিনের বাহিরে নিয়ে এলেন।
আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যেতে লাগলাম।
“চুপ করতে বলেছি তোমাকে।”
ওনার কথায় আমি আরোই কান্নার বেগ বেড়ে গেল।
উনি আমাকে একটা ফাঁকা রুমের মধ্যে নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়ালেন আর কপাল কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“আ..আমি সত্যিই জানিনা। আ…আমি… কিছু করিনি। বাচ্চা কিভাবে…।” কাদতে কাদতে বললাম আমি।
“Shut up.” এক ধমক দিলো ইথান।
আমি প্রায় লাফিয়েই উঠলাম। আর অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রাখলাম।
“কি কখন থেকে ভ্যা ভ্যা করে কেদেই যাচ্ছ। সমস্যা কি তোমার?!” চোখ পাকিয়ে বলল ইথান।
উনি এভাবে বকছেন এটা মোটেও ভালো লাগলো না আমার। আমি ছলছল চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আপনি বিশ্বাস করেন আমি সত্যিই জানিনা বাচ্চা কিভাবে এলো।”
“বাচ্চা কিভাবে এলো মানে! বাচ্চা আমাদের। তোমার আর আমার।” ভ্রুকুচকে বলল ইথান।
শোনার সাথে সাথে দ্বিতীয় বারের মত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
“আ… আমাদের হবে কিভাবে! আপনি ত এখনো আমার…” প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
তারপর চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলাম আর মুখের উপর এক হাত দিলাম।
সে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “কি?”
“ওগুলো স্বপ্ন ছিলো না?” থ মেরে দাঁড়িয়ে বললাম আমি।
“কোনগুলো স্বপ্ন ছিল না? কি উল্টোপাল্টা বলছ?” কপাল কুচকে বলল ইথান।
“গ্রামে… ওইদিন রাতে…।” বিড়বিড় করে এতটুকু বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম।
উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার চোখের জল মুছে দিলেন। আমি এখনো ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
“তুমি…” ইথান কথা শেষ করার আগেই একটা নার্স এসে রুমে ঢুকলো আর বলল, “আপনাদের রিপোর্টটা নিয়ে যান। পরবর্তী পেসেন্ট ঢুকবে চেম্বারে।”
|
গাড়িতে বসে আমি হা হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি সত্যিই মা হতে চলেছি! এত জলদি! বিষয়টা ঠিক হজম হচ্ছেনা।
কিভাবে কি হয়ে গেল!
ইথান সিট বেল্ট বাধতে বাধতে বলল, “এখন বলো কাদছিলে কিসের জন্য? বাচ্চা কিভাবে এলো ব্লা ব্লা… এসব ফালতু কথা বলছিলা কেনো?”
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“আর কোনগুলো স্বপ্ন ছিলো না?” প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
উনি বুঝতে পেরে আমার এক হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন, “Don’t tell me, তোমার মনেই নেই কি হয়েছিল!”
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে বললাম “আ… আমার…।”
তারপরই নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম,”আ…আপনি যে আমার ওই অবস্থার সুযোগ নেবেন এটা আমি জানব কিভাবে!”
“হোয়াট? সুযোগ? আমি?” ভ্রুকুটি করে বলল ইথান।
“ত…তো আর কে?”
ইথান আমাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিতেই আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“For your kind information, ১৬ ঘন্টা তুমি যা বলবা আমি সেটাই করতে বাধ্য ছিলাম। আর সেদিন রাতে তুমি নিজেই বলেছিলা যে আমি যেন তোমাকে…।”
আমি চমকে ইথানের মুখের উপর এক হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলাম।
“আ…আপনাকে এসব বলতে বলেছি?”
ইথান আমার হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে ভ্রু উঁচু করে বলল, “By the way, তুমি আবার এই ধরনের স্বপ্নও দেখো!”
“আপনাকে আমি চুপ করতে বললাম না।” চোখ মুখ কুচকে বললাম আমি।
তারপর লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
উনি আবার আমার এক হাত ধরে ওনার দিকে ঘুরালেন।
কিন্তু আমি ওনার চোখে চোখ মিলাতে পারলাম না।
উনি মৃদু হেসে আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলেন।
আমি ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
“সরি। আসলে তুমি এত জলদি প্রেগন্যান্ট হও এটা আমি চাইনি। বাট এখন ত কিছু করারও নেই।” একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল ইথান।
“আমি অনেক খুশি। অনেক অনেক অনেক।” বললাম আমি।
তারপর মুখ তুলে ইথানের দিকে তাকালাম।
“কিন্তু তোমার মা যদি এখন বলে বেবি হওয়া অব্দি তার কাছে থাকতে?” হতাশ চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
ওনার অবস্থা দেখে আমি নিজের হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করে বললাম,”তাহলে আর কি! থাকবো আমি। এর আগের বার যেমন পারমিশন দিয়েছেন এবারো দিয়ে দিবেন।”
উনি সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন।
আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
“তাহলে তোমার মা কে জানানোর দরকার নেই।”
আমি হা হয়ে বললাম, “মাকে জানাবো না!”
“আমি তোমাকে আমার কাছেই রাখবো।” বলল ইথান।

বাসায় এসে নিজের শাশুড়ীকে জানাতে না জানাতেই উনি খুশিতে পুরো বাড়ি মাথায় করে ফেললেন।
তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললেন, “এত ভাল খবরটা তোমার মাকে জানিয়েছ?”
আমি শুধু আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
“এখনি জানাতে হবে না।” হুট করে বলল ইথান।
ইথানের মা হতবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, “কেনো? জানাবো না কেনো?”
“আমি জানাবো সেটা বলতে চাচ্ছেন উনি।” মুচকি হেসে বললাম আমি।
“অহ আচ্ছা। জানাও জানাও। আমি অনেক খুশি আজ।” বলতে বলতে ইথানের মা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
.
আমি রুমে এসে বসতে না বসতেই ইথান বলল, “জানাতেই হবে?”
“ত জানাবো না? না জানালে কেমন একটা বিষয় হবে!” ভ্রুকুটি করে বললাম আমি।
উনি কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না।
আমি হাসি মুখে চেপে রেখে ফোন হাতে নিলাম।
সে আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইল। আমি খুব একটা পাত্তা না দেওয়ার ভান করে মাকে ফোন দিলাম।
মা ফোন ধরে হ্যালো বলার সাথে সাথেই আমি বললাম, “মা আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু আমি ইথানের সাথেই থাকবো।”
ইথান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
“কি?” অবাক হয়ে বলল মা।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
“সত্যি?” খুশিতে বলল মা।
“হুম।” মৃদুস্বরে বললাম আমি।
“সবাইকে জানাচ্ছি আমি। আর, কবে আসবি তুই?”
“আসবো মানে?” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
মা হেসে দিল আর বলল, “আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস বেশি করে। তুই এমনিই দুর্বল। তোকে এখানে নিয়ে এলেই বেশি ভাল হত।”
“উফ তুমি বেশি চিন্তা করো, আমি কি বাচ্চা?”
“হ্যা তাই-ত, তুই ত এখন বাচ্চার মা হতে চলেছিস।” বলতে বলতে মা হেসে দিলো।
“রাখছি আমি।” লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিলাম আমি।

“কি বলেছে? তোমাকে নিয়ে যাবে?” ফোন কাটার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে বলল ইথান।
“হ্যা নিয়ে যাবে।” মিথ্যা বললাম আমি।
শুনে ওনার মুখের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
“আমি চাই না তুমি যাও। আমি যথেষ্ট খেয়াল রাখতে পারবো তোমার। তাছাড়া আমার মা ত আছেই।” সিরিয়াস হয়ে বলল সে।
আমি চোখ পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান কোনো উওর না পেয়ে মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে বলল, তোমাকে বলে কি হবে! তুমি ত নিজেই যেতে চাও।
আমি ঠোঁট চিপে হেসে তার এগিয়ে গেলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
“আমি যাব না। আপনার কাছেই থাকবো।”
উনি একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
.
তবে প্রেগন্যান্ট হবার জন্য আমাকে এখন বেশি বেশি খেতে হচ্ছে। তার উপর বাসায় যেন মা আমাকে ফেরত না নিয়ে যায় তারজন্য তার চেয়েও বেশি খাওয়াতে চায় ইথান।
মাঝখান থেকে আমি এত খেতে খেতে কিনা কুমড়োর মত ফুলে যাই।
তবে তাতে তার কিছু যায় আসে না। তার বক্তব্য হলো খেতে হবে।
গোসল করতে গিয়েও ধমক খেতে হয়। দুই মিনিটে গোসল করে বের হতে হবে।
বৃষ্টি থেকে কয়েকশ মাইল দূরে থাকতে হবে আরো কত কি!
এগুলো সবই শুনছি। কারণ ইথানের সাথে এখন ইথানের মাও উঠে পরে লেগেছে।

.

“রাগ করে আছেন এখনো?” কোমল চাহনির সাথে বললাম আমি।
সে নিজের ফাইল নিয়ে ব্যস্ত রইল। আমার দিকে তাকালোও না।
আমি সামান্য একটা দোষ করেছি সেটা হলো আজ গোসল করতে পাঁচ মিনিটের বেশি লেগেছে। তবে তার কাছে এটা মহাভারত অশুদ্ধ হবার মত।
উনি তিন চার বার নক করেছিলেন। আর বলেছিলেন, জলদি বের হও।
আমি তাও বের হইনি।
বরং ঝাঝালো গলায় বলেছিলাম, “খাওয়ানোর সাথে সাথে এখন গোসলও আপনিই করিয়ে দিয়েন। আর ভাল্লাগে না। আমি শ্যাম্পু করব না, নাকি? মাত্র পাঁচ মিনিটে কে গোসল করে বলেন ত! আমি কালই মায়ের বাসায় যাচ্ছি। বুঝবেন তখন।”
“ওকে ফাইন, যাও।” রেগে এতটুকু বলার পর আর কোনো কথাই বলে নি।
শুক্রবার ছিল আজ। উনি সকালে বাহিরে গিয়েছিলেন বলে আমি মনে করেছি আজও কাজ আছে। কিন্তু না আজ কাজ ছিলো না। গোসলের মধ্যেই এসে হাজির।
এখন কত সময় মুখ ফুলিয়ে রাখবে বলা যায়না। একবার রাগ করলে সহজে তার রাগ ভাঙ্গানো যায় না।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে ওনার সোজাসুজি বালিশে হেলান দিয়ে ওনার কোলের উপর পা উঠিয়ে দিলাম। ওনার কোলের উপরেই ওনার ফাইল ছিল। বলতে গেলে এখন তার উপরেই আমার পা আছে।
উনি অবাক হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
“কথা বলছেন না কেনো? এত রাগ ভাল না।” মৃদু হেসে বললাম আমি।
“পা সরাও।” গম্ভীর গলায় বলল সে।
“সরাবো না।”
উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন।
“আমি ভয় পাইনা।” বলতে বলতে আমি পা স্লাইড করে ওনার গলার কাছে নিয়ে গেলাম।
উনি এবার আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার কাছে চলে এলেন।
সাথে সাথে আমি ঘাবড়ে গেলাম।
“ভয় নাকি পাও না?” মৃদুস্বরে বললেন উনি।
“পাই না ই ত!” বলেই আমি ওনার ঠোঁটে কিস করে দিলাম।
উনি অনেক বেশিই অবাক হয়ে গেলেন।
“এখন সরুন ত, ওয়াসরুমে যাব।” বলেই আমি ওনাকে সরিয়ে উঠে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম।
আর দ্রুত দরজা আটকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। কারণ মহা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছি আজ আমি।
.
এলমার বিয়ের কারণে আজ সারাদিন অনেক ব্যস্ততা গেছে। সব অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। তাছাড়া আমার জন্য উনি গাড়ি যতদূর সম্ভব আস্তে চালিয়েছেন। এজন্য আরোই দেরি হয়েছে।
বাসার সামনে আসতে না আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ইথান আমাকে কড়াভাবে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
হয়তো ছাতা আনআর জন্য। আমি বাধ্য মেয়ের মত বসে রইলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই তিন মাস হয়ে যাবে।
তারপর আরকিছু মাস। সত্যিই একটা অন্যরকম অনুভূতি।
ইথান গাড়ির দরজা খুলে বলল, সাবধানে আসো।
আমি তার দিকে তাকালাম। অনেকটাই ভিজে গেছে সে। কিন্তু ভিজে গেলে এত সুন্দর লাগে কেনো ওনাকে! আমি হা করে তাকিয়েই রইলাম।
“কি হলো? আসো।” প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল সে।
আমি নিজেকে সামলে গুটিশুটি মেরে বেরিয়ে এলাম। সে আমাকে আগলে বাসার মধ্যে নিয়ে এলো। একটুও ভিজতে দিলো না। পুরোটুকু সময় আমি তাকে দেখে যেতে লাগলাম।
আমাকে বিছানায় বসতে বলে উনি চেঞ্জ করতে চলে গেলেন।
খানিক বাদেই একটা ট্রাউজার পরে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন।
ওনাকে দেখেই আমার হার্টবিট অনেক বেড়ে যেতে লাগল। উফ, এত সুন্দর কেউ হয়!
উনি আলমারি খুলে নিজের শার্ট খুজতে লাগলেন।
আমার কি হলো জানিনা আমি এগিয়ে গিয়ে ওনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
উনি একটু অবাক হলেন আর নিজেকে ছাড়িয়ে আমার দিকে ঘুরলেন। তারপর উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন, “খারাপ লাগছে? তাহলে বিছানায় গিয়ে রেস্ট নেও। সারাদিন একটুও রেস্টই নেও নি।”
আমি তার কথায় কান না দিয়ে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাড়িয়ে তার কাধে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুয়ে দিলাম।
উনি অবাক হয়ে আমার চোখের দিকে তাকালেন আর বললেন, “প্রেগন্যান্ট তুমি এখন।”
“তো?” বলতে বলতে আমি ওনার গলায় ঠোঁট ছুয়ে দিলাম।
উনি হুট করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে বললেন, “এখন না।”
“এখনি।” বলেই আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরে গলায় আলতো করে কামড় বসিয়ে দিলাম।
উনি মৃদু হেসে আমার কাছে চলে আসলেন।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৭

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৭ : #জেলাসি
লেখিকা : #Lucky

উনি আমার হাতটা ওনার এক হাত দিয়ে ধরে নিজের মুখ থেকে সরিয়ে নিলেন।
আর অন্যহাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করলেন।
আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
উনি কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে একদম কাছে টেনে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে তার চোখের দিকে তাকালাম। তবে সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।
নিঃশ্বাসও ভারি হয়ে এলো।
উনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে ওনার কাধের কাছের শার্ট খামচে ধরলাম।
তবে সাথে সাথেই আমি ওনার কাধে হাত দিয়ে ঠেলে ওনাকে সরিয়ে দিলাম আর তারপর নিজের মুখটা এক হাতে ঢেকে চোখ মুখ কুচকে ফেললাম।
কারণ মুহুর্তেই খারাপ লাগতে লাগল।
“Are you ok?” উনি বুঝতে পেরে বললেন।
ওনার কথা শেষ হতে না হতেই আমি ওনার গায়ের উপর বমি করে দিলাম।
উনি তাতে একটুও রিএক্ট করলেন না।
“এখন ঠিক আছো?” চিন্তিত হয়ে বললেন উনি।
না সূচক মাথা নেড়ে আমি কেদে দিলাম।
“কাদছ কেনো?” অস্থির হয়ে বললেন উনি।
“আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম জোর করে এতগুলো খেলে আমি বমি করে দিব। বমি করতে একদম ভালো লাগে না আমার।” মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম আমি। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল।
উনি আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললেন “ওকে রিল্যাক্স, আর জোড় করব না।”
.
সুস্থ হতে বেশ সময় লেগে গেল। জ্বর এখন হালকা পাতলা হলেও এই বমি আর মাথা ঘোরার সমস্যাটা বেশি বাড়তে লাগল।
উনি এই কয়েক দিনে আমার প্রচুর খেয়াল রেখেছেন। বলতে গেলে এখন একটু ভাল আছি।
উনি আজ দরকারি কাজের কারণে একটু অফিসে গেছেন। আর যাওয়ার আগে সময় মতো খাওয়ার আর রেস্ট নেওয়ার হুকুম দিয়ে গেছেন।

সব মানলেও এই রেস্ট নেওয়া আর ভালো লাগছেনা।
আমি ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসে টিভি অন করলাম।
বাসায় রান্নাবান্নার তোড়জোড় চলছে।
কে আসবে কে জানে! এমনিও আমাদের বাসায় অতিথি আসার ক্ষান্তি নেই।
খানিক বাদেই কলিং বেল বাজলো।
আলিয়া তাড়াহুড়ো করে গিয়ে খুলে দিল।
আমি কারা এসেছে দেখার জন্য তাকালাম।
সেজো মাসি আর কাজিনরা এসেছে। আমি খুশির সাথে এগিয়ে গেলাম।
“হায় রে তুই ত অনেক শুকিয়ে গেছিস! কেনো ঠান্ডা লাগাস বল ত!”
আমি প্রত্যুত্তরে শুধু হাসলাম।
“তোমারা আসবে আমি জানতামই না। যাইহোক নিরব আসে নি?” বললাম আমি।
তখনি পিছন থেকে কেউ মাথায় আলতো করে বারি দিলো।
আমি মাথায় হাত দিয়ে ঘুরে তাকালাম।
“তুই! দরজা ছাড়া ঢুকলি কিভাবে!” অবাক হয়ে গেলাম আমি।
“ম্যাজিক।” হাস্য উজ্জল মুখে বলল নিরব।
“ম্যাজিক না ছাই।” মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি।
“ভিতরে আয় আগে সবাই।” এগিয়ে আসতে আসতে বলল মা।
.
আমি সোফায় বসে চানাচুর চিবুতে চিবুতে সবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এখনি ফ্রেস হয়ে সবাই আসবে। কতদিন পর সবাই একসাথে। বাহিরের দেশে থাকে বলে পাঁচ বছরে একবার দেখা হয়।
আচমকা নিরব এক টান দিয়ে আমার হাত থেকে চানাচুরের প্লেট নিয়ে নিলো।
আমি কয়েক সেকেন্ড হা হয়ে তাকিয়ে তারপর চোখ পাকিয়ে বললাম, “উফ, আবার শুরু তোর আমাকে জ্বালানো!”
“বিয়ে করেছিস তবে বউ বউ লাগছে না।” আমাকে একটু ভালো করে দেখে বলল নিরব।
“বউ বউ লাগা লাগবে না। এদিকে দে প্লেট।”
আমি প্লেট নিতে গেলেই ও আমার হাতটা ধরে নিয়ে ভনিতা করে বলল, “কেম্নে বিয়ে করে নিলি আমাকে একা ফেলে!”
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, “চুপ করবি?”
“তোর না আমাকে বিয়ে করার কথা!”
“তুই কেনো এসেছিস বল ত! অসহ্য একটা।” বিরক্ত হয়ে বললাম আমি।
“অহ এখন অসহ্য! ছোটো বেলায় পুতুল খেলার সময় কি বলতি মনে নেই?”
তারপর নিরব আমাকে ভেঙ্গিয়ে বলল, “আমরা বড় হয়ে বিয়ে করবো ওকে? কত জনকে যে এভাবে প্রপোজ করেছিস ঠিক আছে!?”
নিরব জোরে জোরে হাসতে লাগল।
“অসহ্য।” বলেই আমি অন্যদিকে তাকালাম। আর সাথে সাথেই আমার চোখ পড়লো ইথানের চোখে।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
ওনাকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
কখন এসেছে উনি! তার চেয়েও বড় বিষয় কি কি শুনেছে উনি।
আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিরব প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ঘুরে তাকালো।
ইথানকে দেখে নিরব ভ্রু উঁচু করে একবার আমার একবার ইথানের দিকে তাকিয়ে চট করে আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল, “এটাই আমার সতিন না! একেও কি ওইভাবেই প্রপোজ করেছিলি?”
“চুপ করবি তুই?” দাতে দাত চিপে বললাম আমি।
ইথান কয়েক সেকেন্ড শক্ত মুখ করে তাকিয়ে তারপর উপরে চলে গেল।
আমি শুকনো মুখ করে শুধু তার যাওয়া দেখলাম। আজ আরেকটা ঝড় আসবে।
ইথান যাওয়ার সাথে সাথে আমি সজোরে নিরবের মাথায় একটা বাড়ি মারলাম।
নিরব মাথা ঘষতে ঘষতে হা হয়ে বলল, “আজব! আমাকে মারছিস কেনো! আমি ত সতিনকে মেনে নিয়েছি। সতিন আমাকে না মানলে আমার কি দোষ।”
কথাটা বলেই নিরব হেসে দিলো।
আমি দাত কিরমির করে কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না।
চুপচাপ চিন্তা করতে লাগলাম উপরে যাব, কি যাব না!
নিরব চানাচুরের প্লেট নিয়ে খেতে বসে গেলো।
ওর দিকে রাগী চোখে একপলক তাকিয়ে তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম।
ঘরে ধীর পায়ে ঢুকতেই ওনাকে একদম সামনে পেলাম। এতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
উনি থমথমে মুখে তাকিয়ে টাই টা খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি শুকনো ঢোক গিলে পিছিয়ে গেলাম।
“আ…আসলে আ…আমি…”
“আসলে তুমি? কি?” ঠান্ডা গলায় বলল ইথান।
আমার পিঠ দেয়ালে এসে ঠেকলো। আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে লাগলাম।
“Random ছেলেদের এভাবে প্রপোজ করেছো তুমি?”
“ত…তখন ত…ছোটো ছিলাম আমি।” চোখ নামিয়ে বললাম আমি।
“এত ছোট বয়স থেকেই বিয়ের জন্য লাফালাফি করতা!”
“লাফালাফি বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন!” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
ইথান আমার দুইপাশে হাত রেখে ভ্রুকুটি করে বলল, “আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো?”
“হ্যা, তো?”
ইথান সরু চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি মুচকি হেসে ইথানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর কানেকানে বললাম, “চুপচাপ স্বীকার করেন যে আপনি জেলাস।”
“Why would I be jealous?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেই সে সরে গেল।
ধরে পরে গেলে যা হয়।
আমিও ভাব নিয়ে বললাম, “তাহলে আমি কত জনকে প্রপোজ করেছি, না করেছি তাতে আপনার কি!”
সে শুধু একবার কড়া চোখে তাকালো।
আমি কিছুই জানিনা ভান করে তাকিয়ে রইলাম আর হাসিটা অনেক কষ্টে আটকে রাখলাম।
সে ফ্রেস হতে চলে গেল।

রাতে খাবার টেবিলে হলো আরেক কাহিনী।
নিরব আগেভাগে এসে আমার পাশে বসে পড়লো।
আমি শুধু একবার ইথানের দিকে তাকালাম।
সে আমার দিকে একটা শীতল চাহনি দিয়ে আমার সোজাসুজি অন্য একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
“আহারে কি শুকিয়ে গেছিস, বেশি বেশি খা।” বলেই নিরব দুইটা মাছ তুলে আমার প্লেটে দিল।
মনে মনে নিরবকে তুলে আছাড় মারার ইচ্ছে হলেও কিছু বললাম না। দুটো মাছ আমি কোনোদিন খাইনা।
একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “তুইও খা।”
তারপর ইথানের দিকে তাকালাম।
সে শক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ সে যে জ্বলছে তা আমি ভালই টের পেলাম।
যা করছি তার জন্য পরে পস্তাবো কিনা জানিনা, তবে তাকে এখন ইচ্ছা মত জ্বালাতে ইচ্ছে করছে।
আমি ইচ্ছে করেই নিরবের সাথে গল্প জুড়ে দিলাম।

আচমকা সে অর্ধেক খাবার রেখে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
সবাই অবাক হয়ে তাকালো।
“I’m done.” আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেই সে চলে গেল।
আমার মা কি হয়েছে বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকালো।
আমি একটা ঢোক গিলে শুকনো মুখ করে তার চলে যাওয়া দেখলাম। তারপর একটু হাসার চেষ্টা করে মাকে বললাম, “ম…মনে হয় কাজ আছে তার।”
“অহ আচ্ছা।” সুর টেনে ভ্রু উঁচু করে বলল নিরব।
আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম।
ও ফিসফিস করে আমার কানে কানে বলল, “ধুর, সতিন বেশি জেলাস, এমন সতিন নিয়ে সংসার করা অনেক জ্বালা। ভাবলাম তোর সাথে এবার বিয়েটা করে সতিন নিয়ে সংসার করব! সেটার শখ মিটে গেল মাত্র।”
“চুপ কর।” বলেই আমি আস্তে করে ওর মাথায় বাড়ি দিলাম।
নিরব মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। এ অবস্থায়ও সে মজা করছে।
ওদিকে ইথান এখন আমার কি করে কে জানে!
আমি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম।
“শোন টিপস দিই। ১০০% কাজ হবে। রুমে যা, গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধর, সাথে একটা কিস, সব রাগ ঠান্ডা হয়ে যাবে।” নীচু আওয়াজে বলে নিরব উঠে গেল।
ওর এসব ফালতু টিপস আমি ট্রাই করার মত সাহসই পাব না, আর কাজ করা ত দূরেই থাক!
আমি সাহস যুগিয়ে রুম পর্যন্ত এলাম। যদিও এতেই ইনিয়েবিনিয়ে আমার বিশ মিনিট সময় লেগে গেল।

একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকে এলাম।
রুম আবছা অন্ধকারে ভরা। এর মধ্যে সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু করতে ব্যস্ত ছিল।
তবে আমার উপস্থিতি টের পেয়েও তাকালো না।
তারমানে রাগ মাথার উপর অব্দি উঠে আছে।
আমি গুটিগুটি পায়ে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালাম।
তারপর একটু গলা ঝেড়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না।
“ইথান আমি…” আমার কথা শেষ হবার আগেই সে সেখান থেকে সরে বিছানার দিকে গেল।
তারপর নিজের মত এক সাইডে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরল।
আমি যে তার সাথে কথা বলছিলাম, তা সে যেন শুনতেই পায়নি!
আমি বাকা চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম। তারপর তার পাশে গিয়ে শুয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
“হাত সরাও।” রাগী স্বরে বলল ইথান।
“রাগ করেছেন?” আমি কোমলভাবে বললাম।
উনি হুট করে আমার হাতটা সরিয়ে দিলেন। এতে আমিও আবার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে দোষী গলায় বললাম, “ভুল হয়ে গেছে আর হবে না। আপনাকে আর জ্বালাবো না।”
উনি কিছুই বললেন না।
তাই আমি ওনাকে একপ্রকার টেনে নিজের দিকে ঘোরালাম।
সে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল, “এখন কেন এসেছো? গল্প করা শেষ?”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম, “বললাম ত আর গল্প করব না।”
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার অন্যদিকে ফিরতে গেলেন। সাথে সাথে আমি তার শার্টের কলার হাতের মুঠোয় ধরে নিলাম।
উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার আবার হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর থমথমে গলায় বললেন, “এখন খারাপ লাগছে না? আমি খাওয়াতে গেলেই ত তোমার যত খারাপ লাগা শুরু হয়ে যায়।”
উফ, কয়েক মিনিটেই এই ছেলে এত জেলাস হয়ে গেছে! এখন ঠান্ডা হতে কত সময় নিবে কে জানে!
তাই আমি আর কিছু না বলে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, “গুড নাইট।”
|
|
“রেডি হও।” উনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, “কোথায় যাব?”
“বাসায়। তোমাকে বাসায় রেখে তারপর আমি অফিস যাব।”
যা বুঝলাম তা হলো, ওনার জেলাসির কারণে এখন উনি আমাকে আর নিজের বাসায় রাখবেন না।
“আপনি সন্দেহ করেন আমাকে যে আমি পালিয়ে যাব নিরবের সাথে?” কটাক্ষ করে বললাম।
“বলা যায় না, এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য করতেও পারো।” শক্ত মুখ করে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি হা হয়ে গেলাম।
“আপনার মাথা ঠিক আছে?”
“আমার ঠিকই আছে। সমস্যা তোমার মাথায়। জলদি রেডি হয়ে নিচে আসো।” বলতে বলতে সে বেরিয়ে গেল।

আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে রেডি হওয়ার জন্য মনস্থির করে নিলাম। কারণ সে এখন মানবেই না। রাগ এখনো নাকের ডগায় রেখে দিয়েছে সে।
রেডি হয়ে বের হতেই মাথা ঘুরে উঠলো। আমি ব্যালেন্স রাখতে না পেরে ড্রেসিং টেবিলটা আঁকড়ে ধরে আস্তে আস্তে মেঝেতে বসে পরলাম।
দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে ড্রেসিং টেবিলে মাথা রাখলাম।
হঠাৎ হঠাৎ এত শরীর খারাপ হওয়ার বিষয়টা আর ভালো লাগছে না।
অনেক দিন ত হলো! আর কত!
আমার চোখে জল চলে এলো।

“কি হয়েছে তোমার?” বলতে বলতে ইথান দ্রুত আমাকে কাছে এগিয়ে এল।
আমি মাথা তুলে কাদো কাদো চোখে তার দিকে তাকালাম তারপর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
“তোমার আবার খারাপ লাগছে?”
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
উনি আমার মুখটা তুলে ধরে চোখের জল মুছে দিলেন আর বললেন, “It’s ok. সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার আগেই ডক্টর দেখানো উচিত ছিল। আজই দেখাবো।”
“আজই? কাল হ…..।”
“তোমার থেকে advice চাইনি আমি।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কথার মধ্যেই উনি বলে উঠলেন।
আমি আর কিছু বললাম না।
কারণ বলে লাভ হবে না।
.
অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রকার টেস্ট করে ফেলা হলো।
আপাতত এক মহিলা ডক্টরের সামনে বসে আছি। আমার পাশেই ইথান বসে আছে। ডক্টর মহিলাটা নার্সের দিয়ে যাওয়া রিপোর্ট খুলে বসেছেন।
“সিরিয়াস কিছু?” ইথান বলল।
যদিও রিপোর্ট আমার তবে ইথানকে দেখে মনে হচ্ছে ওর রিপোর্ট। কারণ সে যথেষ্ট টেনশনে পরে গেছে।
এদিকে আমার মোটেও টেনশন হচ্ছে না।
“ভয়ের কিছুই ত নেই। বরং ভালো খবর। আপনি প্রেগন্যান্ট। মা হতে চলেছেন আপনি।” হাসিমুখে বলল ডক্টরটা।
শোনার সাথে সাথে আমার হাতে থাকা ফোনটা ধপ করে নিচে পরে গেল।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে ডাক্তারটা মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আসলে এদের সমস্যা কি সেটাই ত বুঝিনা। নার্স এসে রোম্যান্সে বাধা দেয়।
আর ডাক্তার উল্টাপাল্টা বলে সংসারই ভেঙে দিতে চায়। কিছু না করে বাচ্চা কি উড়ে উড়ে আসবে?
কোথা থেকে গাজা খেয়ে পাস করেছে কে জানে!
এখন আবার আমার সংসারে আগুন দিতে চাচ্ছে।
“ক কি সব উল্টাপাল্টা বলছেন?” আমি সাহসী ভঙিতে বলতে চেষ্টা করলাম।
উনি রিপোর্টটা আমার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললেন,”হ্যা, তিন সপ্তাহ প্রায়। এজন্যই আপনার এমন বমি হচ্ছে আর মাথা ঘুড়ছে।”
আমি রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম।
রিপোর্ট ত তাই বলছে।
এখন কি আমার ডিভোর্সটা হয়েই যাবে! কিন্তু আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম কিভাবে?
আমি ভয়ে ভয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আ…আমি সত্যি কিছু করিনি। এ…এসব মিথ্যা কথা। বিশ্বাস করেন।” বলতে বলতে কেদে দিলাম।

(চলবে…)

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১৬

0

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৬ : #মেরুন_রঙের_শার্টটা
লেখিকা : #Lucky

উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, “I will be back soon.”
আমি কিছু না বলে আর পিঠের শার্ট খামচে ধরে রইলাম। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
যেতে দিতেই ইচ্ছে করছে না।
কিন্তু ওনাকে আটকাতেও চাইনা। কারণ আমি জানি কাজটা গুরুত্বপূর্ণ না হলে উনি এই অবস্থায় আমাকে রেখে যেতেই পারতেন না।
উনি নিজের হাতের বাধন আলগা করে মৃদুস্বরে বললেন, “I’ll miss you.”
আমি ওনাকে ছেড়ে হালকা সরে দাড়ালাম কিন্তু মাথা নিচু করে রইলাম।
বহু কষ্টে চোখের পানি চোখের কোনেই আটকে রেখেছি। উনি দেখলে মন খারাপ করে ফেলবেন।

কিন্তু উনি আমার মুখটা তুলে ধরলেন। অর্থাৎ শেষ অব্দি ধরা পরেই গেলাম।
আমি ওনার চোখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। তখনি চোখের পানিগুলো গড়িয়ে পরলো।
উনি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আমার চোখের পানি মুখে দিলেন।
“তাড়াতাড়ি আসবেন।” আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
“হুম।” মাথা নাড়ল ইথান।
“আর অন্য মেয়ের থেকে এক কিলোমিটার দূরে থাকবেন।” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম।
ইথান নিঃশব্দে হাসলো।
“মজা করছি না আমি।” কড়া চোখে তাকিয়ে বললাম।
“তুমি ত এখান থেকে দেখতেই পাবা না!” আমাকে রাগাতে বলল ইথান।
“দূরে থাকবেন।” আমি মুখ ফুলিয়ে তার বুকে কিল বসিয়ে দিলাম।
“থাকবো। কিন্তু তার বদলে আমি কি পাব?” বলতে বলতে ইথান আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
আমি চমকে পিছিয়ে যেতে লাগলাম।
“ক…কি চান আ..আপনি??”
বলতে বলতেই উনি আমার কাছে এসে পরলেন।
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।
সে আমার দিকে ঝুকে আমার কপালে গভীর ভালোবাসার পরশ একে দিল।
আমি মুচকি হেসে তার দিকে তাকালাম।
“Take care.” আমার গালে এক হাত রেখে মৃদুভাবে বলল ইথান।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
উনি সরে দাড়াতে গেলেই আমি তার হাত ধরে নিলাম আর বললাম, একটা জিনিস চাইব। দেবেন?
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইশারায় বলল কি?
আমি এগিয়ে গিয়ে তার গায়ের মেরুন রঙের শার্টটার বোতাম খুলতে লাগলাম।
“কি করছ তুমি?” সে অনেক বেশিই স্তম্ভিত হয়ে গেল।
আমি কিছু না বলে শার্টের বোতাম খুলতে মনোযোগ দিলাম।
“এখন? মাথা ঠিক আছে তোমার?” বলেই ইথান আমার হাত সরিয়ে দিলো আর বোতাম আটকাতে লাগলো।
সাথে সাথে আমি চোখ পাকিয়ে তার হাত ধরে নিয়ে বললাম, “উফ! আপনার এই মেরুন রঙের শার্টটা লাগবে আমার।”
সে এবার প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“কেনো আপনি কি ভেবেছিলেন!” হাসি আটকে রেখে বললাম আমি।
উনি সরু চোখে তাকিয়ে তারপর নিজের শার্ট খুলতে লাগলেন।
আমি আড়চোখে তাকে দেখে যেতে লাগলাম।
“নেও।” বলেই সে সেটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের ল্যাগেজ খুলল।
সেই ফাঁকে আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের ফোনটা নিলাম। তারপর ক্যামেরা অন করলাম। আর তার শার্ট পরার সময় তার কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম।
যদিও সে বুঝতে পারল তাও কিছু বলল না।
|
|
উনি চলে যাওয়ার মুহুর্ত থেকে সবকিছু আবার অসহ্য লাগতে লাগল।
এতগুলো দিন কিভাবে গুনে শেষ করব কে জানে!
এখনি ত মন কেমন করছে। কিছুতে মন বসতেই চাচ্ছে না।
মাত্র দশ মিনিটও হয়নি উনি গেছেন। এর মধ্যেই যদি এমন হয়!
বিছানায় বসে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম। সাথে সাথে ফোনটা বেজে উঠল।
আমি বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালাম। এই সময় কাস্টমার কেয়ার থেকেই সাধারণত কল আসে।
কিন্তু না! স্ক্রিনে বড় বড় করে ইথান লেখা ভেসে উঠেছে। অর্থাৎ সে ফোন করেছে।
দশ মিনিটের মাথায় যে সে ফোন করতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
আমি দ্রুতো ফোন তুলে কানে দিলাম।
“আপনি এত জলদি ফোন করবেন ভাবতেও পারিনি।” বললাম আমি।
“কারণ অতিরিক্ত বিজি হবার আগে তোমাকে পুরো সময়টা দিতে চাই।”
আমি বলার মত আর কিছু পেলাম না। যতই ওনাকে দেখছি অবাক হচ্ছি।
এই কি সেই ইথান!
“কি?”
ইথানের আওয়াজে আমার হুস হলো।
“আপনি ড্রাইভিং করছেন না?”
“হ্যা। কেনো?”
“আপনি জানেন না ড্রাইভিং করতে করতে ফোনে কথা বলতে হয় না।” শাসনের সুরে বললাম।
“তাইলে রেখে দেব?”
একটু মন খারাপ হয়ে গেলেও আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “হ্যা। যত কথা গিয়ে বলবেন। একদম কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাবেন না।”
“ব্লুটুথ ইউজ করছি কোনো সমস্যা হবে না।” আশ্বাস দিয়ে বলল ইথান।
“তাও…”
“ভয় নেই এক্সিডেন্ট হবে না।” মজা করে বলল ইথান।
“উল্টোপাল্টা কথা কেনো বলছেন?” রেগে গেলাম আমি।
ইথান শুধু নিঃশব্দে হাসল। তাতে আমার রাগ কমলো না। বরং গলা ভিজে এলো।
“কেনো বললেন এভাবে? আ…আমার বাবাও এ…এভাবে…।” আমি আর বলতে পারলাম না।
ইথান বুঝতে পেরে গাড়ি ব্রেক কষলো আর ব্যস্ত হয়ে বলল,”ওকে রিল্যাক্স আর বলব না। সরি।”
যদিও সে সামনে নেই তাও বুঝলাম যে সে অনেক বেশিই সিরিয়াস হয়ে গেছে। আমার সামনে থাকলে হয়ত আমাকে জড়িয়েও ধরে নিত।
আমি চোখের কোনের পানি মুছতে মুছতে অল্প শব্দ করে হেসে দিলাম।
সেও একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার মত হাসলো।
“তোমাকে একা রেখে আমি কোথাও যেতে চাই না। I want to be with you forever.” শান্ত গলায় বলল ইথান।
“আমাকে রেখে গেলেন কেনো তাহলে?” একটু ভাব নিয়ে বললাম।
“সকালে ত সব বললামই। তাছাড়া তোমাকে একশোবার explain করে বললেও তুমি আমারি দোষ দিবা, i know. কিন্তু চলে এসেছিলে ত নিজে আগে। মনে নেই?” একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল ইথান।
আমি গলার স্বরে কোমলতা মিশিয়ে বললাম, “জলদি আসবেন। আর গাড়ি চালানোর সময় কারো সাথে কথা বলবেন না। প্লিজ।”
“yeah yeah.”
“টাটা, আর……. আমি রাতে আপনার কলের জন্য অপেক্ষা করবো।” নীচু আওয়াজে বলেই লজ্জায় ফোন কেটে দিলাম।
তারপর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।

জ্বর রাতের দিকে আবার বাড়তে লাগল। সত্যিই উনি আমায় রেখে গিয়ে ঠিকই করেছেন। নাহলে উনি শুধু শুধু আমার জন্য নিজের কাজও করতে পারতেন না।
তবে অসুস্থতার কথা ওনাকে জানালাম না। মাকেও জানাতে বারণ করে দিলাম।

মাকে আগেই বলেছিলাম আমি আজ একা ঘুমাব। প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে জোরাজুরিতে রাজি হলো।
রাতে বেশ দেরি করেই উনি আমাকে ফোন করলেন। সাথে সাথে যেন মনের মধ্যে প্রশান্তিতে ভরে গেল।

“আপনার কথা অনেক মনে পরছিলো।” বললাম আমি।
“মনে পড়লে ত ফোন দেওয়া উচিত ছিল।” উনি মজা করে বললেন।
“আপনি বিজি মনে করে আমি আর…।”
“কাল থেকে বিজি। মাত্র পৌছালাম।”
“তাহলে ত আপনার আগে রেস্ট নেওয়া উচিত। আমাকে কেনো ফোন করলেন? এখনি রাখেন।” ব্যস্ত হয়ে বললাম আমি।
“Strange! গাড়িতে বসে ফোন দিতে পারবো না, পৌছেও ফোন দিতে পারবো না! কি চাচ্ছ তুমি?” গম্ভীর গলায় বলল ইথান।
আমি মুখ খুলে কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না।
“কথা বলছ না কেনো?”
“আমি মনে করলাম আপনি অনেক কান্ত তাই বলেছিলাম।” মিনমিনে গলায় বললাম আমি।
“তুমি কি অসুস্থ?” ধরে ফেলল ইথান।
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
আমি ত বুঝতে দেওয়ার মত কিছু করিনি। আর বুঝতে পারার কথাও ত না!
“কই! আমি ঠিকই আছি।” আরেকটু ভাল থাকার ভান করে বললাম।
“সত্যি?” সিরিয়াস হয়ে গেল ইথান।
“হ্যা সত্যি। ভুল মনে হচ্ছে আপনার। আমি একদম ঠিকই আছি।” আমতা আমতা করে বললাম আমি।
তারপর আরো বললাম, “আজ অনেক ক্লান্ত আপনি। কাল কথা বলবো।”
উনি আমার কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে গেলেন। কারণ ওনার এখনো সন্দেহ হচ্ছে যে আমি অসুস্থ।

ভোর রাতের দিক থেকে অসুস্থতা ভালোই টের পেলাম।
মাঝে মাঝে আমি ভুলেই যাই যে আমার একবার জ্বর হলে সেটা আর ছাড়ার মত না, তাই জন্যই ত ভুলে গিয়েই ত ঠান্ডা লাগাই। এবারো ঠিক তাই হলো।
উনি চলে যাওয়ার চার পাচ দিন পর অব্দি একটু ভালো থাকলেও তারপর থেকে অবস্থা আবার খারাপের দিকে চলে গেলো।
এখন সত্যিই মনে হচ্ছে যে ঠান্ডা লাগানো উচিত ছিল না।


গুনে গুনে ১২ দিন শেষ হয়েছে। আপাতত অনেক বেশিই মিস করছি ওনাকে।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বেলকোনির দোলনায় উঠে বসলাম।
শরীর এখনো অনেক দুর্বল। জ্বর আবার আসবে হয়তো।
ওনার সাথে অনেক বাহানায় দুইদিন কথা বলিনি। অনেক অসুস্থ ছিলাম। তাছাড়া উনি বুঝে গেলেও সমস্যা।
তবে আজ রাতে ফোন দিতেই হবে।
চিন্তা করতে করতে দোলনায় দুইপা হাটুভাজ করে উঠিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে পরলাম।

বিকেলে ঘুম থেকে হালকা সজাগ হতেই মনে হলো কেউ আমার পাশে বসে সামনের দিকে ঝুকে আছে।
দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ ইথান এসেছে?!
আমি সোজা হয়ে বসতে বসতেই সে আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
“আ…আপনি!” এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? হা হয়ে গেলাম আমি।
“এখানে ঘুমাচ্ছো কেনো? আর তুমি আমাকে কিছু জানানোর প্র‍য়োজন মনে করোনি?” সে রেগে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি চোখে বড়বড় পলক ফেলে তাকে দেখতে লাগলাম। মনে ত হচ্ছে বাস্তবই। তবে সপ্নও হতে পারে।
আমি হাত বাড়িয়ে তার গাল স্পর্শ করতে গেলাম কিন্তু সে মুখটা সরিয়ে নিয়ে রাগমিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বলল,”I Won’t forgive you this time.”
আমি মৃদু হাসলাম। কারণ এতদিন পর এখন সবই ভাল লাগছে। তার বকা শুনতেই যেন ইচ্ছে করছিলো।
রেগে গেলে কত্ত কিউট ই না লাগে তাকে।

“হাসছ কিসের জন্য?” আরো রেগে গেল সে।
“আপনাকে অনেক মিস করেছি আমি।” মৃদুস্বরে বললাম।
এতে তার মুখোভাবের পরিবর্তন হলোনা।
বরং বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আমি নিজের গায়ের থেকে কম্বলটা হালকা সরালাম। হয়তো ঘুমানোর পর সে ই গায়ে দিয়ে দিয়েছিল।
আমি হাসিমুখে বললাম, “কখন এসেছেন?”
সে কিছু না বলে উঠে দাড়ালো আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
“চলে যাব এখনি, তুমি যেহেতু জানানোর প্রয়োজন মনে করো না, তাহলে আমি তোমার কাছে থেকে কি করব!”
বলেই ইথান বেলকোনি থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি আগের চেয়ে এখন আরো বেশি হা হয়ে গেলাম।
যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর!
আমি কম্বল কোনমতে সরিয়ে পা নিচে নামাতে না নামাতেই সে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি রীতিমতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
সে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকালো।
“আ..আপনি যান নি?”
সে কোনো উওর না দিয়ে আমায় বিছানার নিয়ে এসে বসালো।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকাতে লাগলাম। সে আমার গায়ে কম্বল টেনে দিতে দিতে বলল, শুয়ে পরো।
রেগে আছে তা বুঝা যাচ্ছে। তবে সেই রাগের মধ্যেও খেয়াল রাখছে।
ইথান উঠে দাড়াতেই আমি ওর হাতটা ধরে নিয়ে রিনরিনে গলায় বললাম, “ভুল হয়ে গেছে।”
সে তেমন পাত্তা না দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
আমি ঠোঁট উলটে বসে রইলাম।
উফ সব দোষ এই জ্বরের।
সে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। তবে আমার দিকে তাকালো না।
আমি তার মতিগতি দেখতে লাগলাম।
সে আমার দিকে একপলক তাকাতেই আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
সে শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ালো।
আমি একবার তার দিকে আর একবার মেঝের দিকে তাকাতে তাকাতে বললাম, “কি?”
“খাওয়া দাওয়া বন্ধ রেখেছ কেনো?” শক্ত মুখে বলল ইথান।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
নিশ্চয় মা উল্টাপাল্টা বলেছে। আসলে আমি ত রুচিই পাচ্ছিনা। খেলেই বমি করে দিই।
ইথান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি বোকা সেজে বসে রইলাম।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে খাবার নিয়ে হাজির হয়ে গেল।
“এতগুলো কে খাবে?” চোখ রসগোল্লার মত করে বললাম আমি।
“তুমি।” বলতে বলতে সে আমার সামনে প্লেট ধরল।
আমি কাদো কাদো চোখে তার দিকে তাকালাম।
তবে লাভ হলো না।
সে শক্ত মুখ আরো শক্ত করে ফেলল।
অর্থাৎ এসব গিলতেই হবে আমার।
নেও ঠেলা। এতদিন মায়ের অত্যাচার ত ছিলই, এখন মা সহ বরের অত্যাচারও শুরু।
.
অনেক কষ্টে খেলাম। খেয়েছি কিন্তু কখন বমি করে দিব বলা যায় না।
আপাতত বিছানায় হেলান দিয়ে তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছি। তবে তিনি তার নিজের অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত।
অসহ্য লাগছে আমার।
অনেকক্ষণ হলো সে আমার দিকে তাকায়ও নি।
আমি আর না পেরে উঠে তার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
লেপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে আমাকে দেখেই সে কপাল কুচকে ফেলল।
“রেস্ট নিতে বলেছি।”
“নেব না।”
সে কটমট চাহনির সাথে কিছু বলে ওঠার আগেই আমি সেদিনের মতো তার কোলে বসে পড়লাম। আর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
সে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে বসে রইল কিন্তু কিছুই বলল না। পরে আবার নিজের কাজ করতে লাগল।
আমি মুচকি হেসে তাকে জ্বালানোর জন্য জড়িয়ে ধরে নড়াচড়া করতে লাগলাম।
“কি শুরু করেছ?” থমথমে গলায় বলল ইথান।
“কই কিছু না ত।” ঠোঁটে ঠোঁট চিপে বললাম আমি।
তবে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আমি আবার ওনাকে জ্বালাতে লাগলাম।
“এসব করে কোনো লাভ হবে না।” বলল ইথান।
আমি মাথা তুলে মৃদু হেসে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমি জানি হবে।”
“হবে না।”
“হবে।”
“হ…” ইথান কথাটা শেষ করার আগেই আমি এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরলাম আর বললাম, “হবে মানে হবেই।”
বলেই একগাল হাসি দিলাম।
সে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছু সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
হার্টবিট আবার বেড়ে যাচ্ছে।
উনি আমার হাতটা তার এক হাত দিয়ে ধরে নিজের মুখ থেকে সরিয়ে নিলেন।
আর অন্যহাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করলেন।
আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
উনি কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে একদম কাছে টেনে নিয়ে এলেন।
আমি চমকে তার চোখের দিকে তাকালাম। তবে সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।
নিঃশ্বাসও ভারি হয়ে এলো।

(চলবে…)