Gangstar In Love Part-22+23

0
3135

#Gangstar In Love 🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 22

❣️❣️
..
..
..
..
..
আব্রাহাম এক সময় ড্রাইভ করতে করতে চৌধুরী ভবনের সামনে চলে এলো

আব্রাহাম;; জানপাখি, আমরা এসে গেছি। চল নামো এবার
আইরাত;;…………(সামনে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে)………………….
আব্রাহাম;; জানপাখি
আইরাত;; আমি যাবো না
আব্রাহাম;; জলদি নামো
আইরাত;; (আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে) কি বলছি আপনি শুনতে পান না নাকি যাবো না আমি, যাবো না। আমাকে যেখান থেকে এনেছেন সেখানেই দিয়ে আসুন। আমি পাপার বাড়ি যাবো
আব্রাহাম;; একটা কথা কি যানো, তুমি না অনেক তেড়া প্রকৃতির
আইরাত;; আপনার থেকে বেশি না

আব্রাহাম অন্য দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে আবার আইরাতের দিকে তাকালো। আইরাতের বাহু ধরে টান দিয়ে গাড়ি থেকে নামালো। আইরাত এতে করে কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

আব্রাহাম;; তেড়া তো হতেই হবে। সমানে সমানে না মিললে কি চলে জান। আর জানো কি “কান টানলে মাথা আসে” (আইরাতের দিকে ঝুকে বাকা হেসে)
দেখো বাপি বাড়িতে তো কোনরকম তাল-বাহানা ছাড়ো ওকে।

আইরাত রাগি দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকালো আব্রাহাম আইরাতকে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো।

আব্রাহাম;; বাপি, বাপি
আবির আহমেদ;; আরে আব্রাহাম আইরাত মামনি এতো তাড়াতাড়ি এসে পরেছিস তোরা।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বাপি। আসলে আমি অন্য কিছু ভাবছি
আবির আহমেদ;; কি
আব্রাহাম;; না মানে বাপি তোমার বউমা আমাকে বলছিলো যে দেশে ঘুরতে তার নাকি একদমই ভালো লাগছে না। সে বাইরে যাবে। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে আমরা হানিমুনে যাবো

আইরাত বিস্ফোরিত চোখে আব্রাহামের দিকে তাকালো। এই ছেলেতো দেখি মিথ্যা বলার মেশিন। দিন দুপুরে ডাহা মিথ্যা কথা বলছে। যে কিনা তার পাপার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসলো সে কিনা বলছে যে আইরাত হানিমুনে যেতে চেয়েছে। সম্ভব হলে আইরাত এখনই আব্রাহামের গলা টিপে মেরে ফেলতো।

আবির আহমেদ;; হাহাহাহাহা আচ্ছা তো এই কথা। আরে পাগল ছেলে বলার কি আছে তোর বউ তুই নিয়ে যা। যতদিন খুশি একসাথে ঘুরে আয়।
আইরাত;; কিন্তু বাপি,, তুমি তো একা বাসায় কি করে থাকবে। তোমাকে দেখবে কে
আবির আহমেদ;; আরে মামনি তুই চিন্তা করিস না অয়ন আছে তো ওকে বলবো অফিস থেকে কিছুদিন এর জন্য এসে পরতে। তোরা নির্দিধায় ঘুরে আয়।
আইরাত;; বাপি………
আবির আহমেদ;; না না কোন কথাই আমি শুনবো না। তোরা যা
আব্রাহাম;; শশুড়মশাই কে যেহেতু একবার বলে এসেছি যে হানিমুনে যাবো তো যাবো। কথা যখন দিয়েছি পূরণ তো করতে হবেই (আইরাতের কানে কানে ফিসফিস করে)

আইরাত রেগে বোম হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম সাথে সাথে চোখ মেরে দেয়। এতে আইরাত আরো চেতে যায়,, যেন কেউ আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
আইরাত আর কোন কথা না বলে তার বাপি দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে সিড়ি দিয়ে ওপরে চলে যায়। আব্রাহাম ও আইরাতের পিছু পিছু চলে যায়।
আইরাত রুমে ঢুকে পরলে আব্রাহাম এসে দরজা আটকে দেয়।
আইরাত ভ্রু কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়

আইরাত;; আসলে চাইছেন কি আপনি বলুন তো। আমার জীবন টা তো ছারখার করেই দিয়েছেন এখন আবার কেন এসব করছেন।
আব্রাহাম;; আমি বেশি কিছু চাইনি। শুধু চেয়েছি যে পুরনো কিছু স্মৃতি এবং তার যন্ত্রণা একজন দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিয়ে। কিন্তু মাঝখানে তুমি এসে তো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছিলে তাই এখন তোমাকে চাইছি।
আইরাত;; আপনার সাথে কথা বলার চেয়ে একটা পাগলের সাথে কথা বলা বেশ ভালো।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাহলে পাগলে পাগলে মিলবে ভালোই। (জেকেট খুলে শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে)
আইরাত;; কিইইইইই আমি পাগল। তাহলে আপনি তো একটা মিথ্যা বলার মেশিন। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপনি মিথ্যা বলেন। (আঙুল তুলে আব্রাহামের দিকে তেড়ে গিয়ে)

আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের দিকে ঘুরলো। আইরাত থেমে গেলো এবং ধীরে ধীরে আঙুল নামিয়ে নিলো। এবার আব্রাহাম ভ্রুজোড়া হাল্কা কুচকে ঠোঁটের কিণারে বাকা হাসি এনে আইরাতের দিকে এগোতে লাগলো।

আব্রাহাম;; আমি মিথ্যা বলার মেশিন তাইনা। (আইরাতের দিকে এগিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে)
আইরাত;; ননা মামামানে আআআমি আয়াসলে ততা ববলতে চাইনি।
আব্রাহাম;; তাহলে কি বলতে চেয়েছো বেবি।
আইরাত;; আল্লাহ রাগের মাথায় তো সব বলে দিয়েছি এখন যদি এই পাগল টা কিছু করে বসে তাহলে (মনে মনে)
আব্রাহাম;; জানপাখি ভয় পাচ্ছো কেন,, Come closer
আইরাত;; আয়ায়ামি ভভভয় পাপাচ্ছি ননা। আয়ার আপনি এভাবে এএএগিয়ে আসছেন কেকেকেন। প্লিজ দুদুরে যান আর ওপরের বোতাম গুলো লাগিয়ে নিন প্লিজ

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়েই যাচ্ছে। এগিয়ে যেতে যেতে আব্রাহাম আইরাতের একদম কাছে চলে গেলো। আইরাত ধপ করে বিছানাতে বসে পরলো। আব্রাহাম আইরাতের দুপাশে দুহাত রেখে আইরাতের দিকে বেশখানিক ঝুকে পড়লো। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। আব্রাহাম আইরাতের কানের চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো। আইরাতের কানের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে স্লো ভয়েসে বলতে লাগলো…

আব্রাহাম;; Baby girl,, আমি যা ই করি যা ই বলি তা সব তোমাকে পাবার জন্য, সবটাই তোমার জন্য। বড্ড ভালোবাসি যে।

আইরাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে। তবুও চুপ করে বসে আছে এছাড়া উপায় নেই তার।

আব্রাহাম;; আমরা হানিমুনে যাবো আর কোথায় যাবো তা সারপ্রাইজ, আর তুমি চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো আমার সাথে যাবেও, বাধ্য তুমি।

এই বলে আব্রাহাম আইরাতের ঘাড়ে গাঢ় চুমু দিয়ে চলে এলো। আইরাত কোন রকমে নিজেকে সামলে নিলো।

রাতে সবাই খেয়ে দেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো।
আইরাত রুমে গিয়ে আইনার সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল খোলাতে বেস্ত হয়ে পরলো। কিন্তু পিছন থেকে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে আইরাত চমকে গেলো।

আব্রাহাম;; হুসসসসসসসসসস,, একদম নড়াচড়া করবে না যেভাবে আছ সেভাবেই থাকো আর কি কাজ করছ করতে থাকো।
আইরাত;; অসহ্যকর একটা মানুষ (মনে মনে)
আব্রাহাম;; মনে মনে বকাবকি করো আর যাই করো তুমি আমারই
আইরাত;; আচ্ছা প্লিজ ছাড়ুন, এভাবে ধরে থেকে কি কোন কাজ করা যায় নাকি (অনেক বিরক্তি নিয়ে)
আব্রাহাম;; করলেই করা যায়, আমি তো ছাড়ছি না। (আইরাতের ঘাড়ে নাক মুখ ডুবিয়ে)

অনেক কষ্ট করে আইরাত সেখান থেকে সরে গেলো।
ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে চলে গেলো। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আব্রাহামকে রুমে না পেয়ে এক শান্তির শ্বাস ছাড়লো। কিন্তু আব্রাহাম গেলো কোথায়। আইরাত উকি দিয়ে করিডোরে দেখল কিন্তু না সেখানেও আব্রাহাম নেই। আইরাত মুখ বাকিয়ে ভাবতে লাগলো যে পাগল টা গেলো কোথায়। কিন্তু ঠিক তখনই আব্রাহাম আইরাতের পিছন থেকে বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; আমাকে খুজছিলে বুঝি ( পিছন থেকে আইরাতের কানের কাছে এসে)

আইরাত অনেক চমকে যায় এবং পিছন ঘুরে আব্রাহামকে দেখে পরে যেতে নিলে আব্রাহাম আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে তুলে কাছে টেনে নেয়। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; Baby girl, আমাকে খুজছিলে তাই না। আমি জানি আমাকেই খুজছিলে (আইরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে)
আইরাত;; আমার বয়েই গেছে আপনাকে খুজতে। ছাড়ুন আমাকে
আব্রাহাম;; কোন ছাড়াছাড়ি হবে না। এখন এসো ঘুমাবে
আইরাত;; আপনি ঘুমান আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি
আব্রাহাম;; What did u say?
আইরাত;; আয়ায়ামি অন্য রুরুমে ঘুমাচ্ছি
আব্রাহাম;; পা ভেংগে ঘরে বসিয়ে রাখবো🙂
আইরাত;; 😒😒

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে জোড় করে বিছানাতে শুয়ে পরলো। আইরাত অনেক নড়ছে। আব্রাহাম বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বলল…

আব্রাহাম;; আর একবার নড়লে না বাসার ছাদে নিয়ে গিয়ে এই শীতে সারারাত দাঁড় করিয়ে রাখবো

আইরাত অসহায় মুখ বানিয়ে নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আইরাত আর কোন রাস্তা খুজে না পেয়ে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।








🥀🥀চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 23

🍁🍁
..
..
..
..
..

সকালবেলা আইরাতের ঘুম ভেংগে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে যেতে চাইলে সে পারে না। পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কোমড় অনেক শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। আইরাত উঠে যেতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আইরাত একটু থেমে আব্রাহামের দিকে ভালো করে তাকায়। এলোমেলো চুলে, হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁটজোড়া মুখে যেন মায়ার শেষ নেই। আইরাত ভাবতে লাগলো যে এই লোকটিই কি সেই যে কিনা আইরাত কে জোর করে তুলে এনেছে — বিয়ে করেছে। এই লোকটির ভিতরে যে আসলে কতটা রাগ ভরে আছে তা হয়তো এই চোখজোড়ালো মুখখানা দেখলে বুঝা যাবে না। আইরাত কেন জানি চোখই সরাতে পারছে না তার ওপর থেকে।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি কিছু একটা করে বসবো। নিজেকে সামলানো বড় দায়। আর এভাবে তাকিয়ে আছো যদি নজর লেগে যায় তো…(ঘুমিয়ে থেকে চোখ বন্ধ রেখেই)
আইরাত;; 😳😱,, আপনি মানে আপনি তাহলে জেগে আসছেন। ঘুমান নি!
আব্রাহাম;; আমি কখন বললাম যে আমি ঘুমাই নি। কিন্তু আমার বউ যেভাবে আমার দিকে কাতিলানা নয়নে তাকিয়ে আছে, এতে ঘুম না ভাংগে পারে।
আইরাত;; ছাড়ুন আমাকে আমি উঠবো (ঝটকানা মেরে)
আব্রাহাম;; আরে দাঁড়াও দেখি, আগে আমাকে আমার জিনিস দিয়ে যাও।
আইরাত;; আমি কি দিবো আর কোন জিনিস
আব্রাহাম;; It’s called Morning Kiss baby girl…
আইরাত;; কিহহ, সরুন বলছি (রেগেমেগে শেষ)
আব্রাহাম;; আয় হায় রাগলে কি কিউট ই না লাগে জানপাখি
আইরাত;; ফালতু যত্তসব

আইরাত ঝটকানা মেরে আব্রাহাম কে রেখে উঠে গেলো। আব্রাহাম মুচকি হেসে সেখানেই আবার সুয়ে পড়লো। আইরাত রেগে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেশ কিছুক্ষন পর আইরাত চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো। এসে দেখে আব্রাহাম সেই এখনো আগের জায়গাতেই সুয়ে আছে। আইরাত ভাবলো যে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। নাহ, আব্রাহাম চোখ বন্ধ করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক তখনই আইরাতের মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। তার কাছে তো ফোন নেই যার ফলে সে তার পাপার সাথে যোগাযোগ ও করতে পারে না। আচ্ছা সে যদি আব্রাহামের ফোন দিয়ে তার পাপা কে Call করে তাহলে। হ্যাঁ, করা যায়। কিন্তু এই গন্ডার তার ফোন কোথায় রেখেছে। আইরাত সারা ঘর আস্তে আস্তে খুজা শুরু করলো। কিন্তু কোথাও ফোন পেলো না। হুট করেই তার মনে পড়লো যে আব্রাহাম প্রতিদিন রাতে কাজ করার পর তার ল্যাপটপ আর ফোন পাশে রেখেই ঘুমায়। ল্যাপটপ তো সোফাতে তাহলে ফোন তার কাছেই। যেই ভাবা সেই কাজ,, আইরাত গিয়ে আব্রাহামের পাশে দাঁড়ালো। একটু ঝুঁকে দেখলো ফোন আব্রাহামের বালিশের নিচে পড়ে আছে। আইরাত কি করবে ভেবে পায় না, ফোন নিবে কি নিবে না দোটানায় পরে যায়। যদি আব্রাহাম জেগে ওঠে তাহলে তো আইরাত শেষ। মানে এটা হচ্ছে কিছুটা সিংহের মুখে হাত দেওয়ার মতো। সিংহ যদি জেগে ওঠে তাহলে তাকে একদম জেন্ত মেরে ফেলবে। আইরাতের ভয়ে হাত কাপছে কিন্তু তবুও যথেষ্ট সাহস নিয়ে সে আব্রাহামের বালিশে হাত দিলো। বালিশ টা ইতিমধ্যে উঁচু ও করে ফেলেছে সে এখন শুধু ফোন টা হাতে আসার পালা। আইরাত চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেই না বালিশ টা আর একটু উঁচু করবে সাথে সাথেই আব্রাহাম খোপ করে আইরাতের হাত ধরে ফেলে। আইরাত ভয়ে চমকে উঠে এবং দেয় এক চিৎকার। আব্রাহাম শয়তানি হেসে আইরাতকে একটানে তার ওপরে ফেলে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি হাসে। আইরাত পারে না ভয়ে কান্না করে দিতে। সে প্রচুর নড়াচড়া করছে আব্রাহামের ওপর থেকে উঠার জন্য কিন্তু আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের পেট কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে।

আব্রাহাম;; ভেবেছো টা কি বলতো জানপাখি!!
আইরাত;;………………
আব্রাহাম;; আহারে পাপার দুলালি, এতোই মনে পরছিলো। আমাকে বলতে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন নেওয়ার মানে কি। নাকি অন্য কাউকে ফোন করে এখান থেকে পালানোর প্লেন হুমমম?!
আইরাত;; (আব্রাহামের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বিরক্তি নিয়ে অন্য পাশে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো)
আব্রাহাম;; (আইরাতের দিকে তাকিয়ে মন ভোলানো হাসি দিয়ে) কোন লাভই নেই। পারবে না পালাতে আর না ই আমার পারমিশন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতে।
আইরাত;; দয়া করে বলে দিন যে আপনার পারমিশন ছাড়া নিজের শ্বাস টুকু নিতে পারবো কিন (রেগে) …….

আব্রাহামের এবার আইরাতের চুলের দিকে চোখ গেলো। আইরাতের চুলগুলো ভেজা, টাওয়ালে জড়ানো। আব্রাহাম আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। আইরাতের চুল থেকে টাওয়াল টা খুলে নিলো। ওমনি ঝর ঝর করে চুলগুলো আইরাতের সামনে এসে পড়লো। এখন যেন এলোমেলো কেশে আইরাতকে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের চুলগুলো সরিয়ে দিলো। চুলের ছিটেফোঁটা পানি আইরাতের ঠোঁটে-মুখে লেগে আছে। আব্রাহাম তো ঘায়েল আইরাতকে দেখে। সে আইরাতের গালে হাত রাখলো। আইরাত হাত সরিয়ে দূরে সরে যেতে চাইলে আব্রাহাম আবার জোড়ে টেনে কাছে নিয়ে আসে। আব্রাহাম আইরাত কে এবার তার নিচে ফেলে দেয়। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; কি করছেন টা কি প্লিজ ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; (আব্রাহামের কোনদিকে কোন হুস নেই, সে একাধারে আইরাতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে এবং গালে স্লাইভ করে যাচ্ছে)
আইরাত;; ছাড়তে বলেছি আমায়। ছাড়ুন প্লিজ অসস্তি লাগছে খুব
আব্রাহাম;; তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন বলতো।আমি তো কখনোই চাইনি যে আমার কপালে এমন আনরোমান্টিক একটা বউ জুটুক। দেখো আগেও বলেছি এখন ও বলছি আমাকে এইসব রোমান্টিক মূহুর্তে কখনো জ্বালাতন করবে না বুঝতে পেরেছো।
আইরাত;; কি আমি জ্বালাতন করি আর আপনি কি আপনি যে আমার জীবন টা তেজপাতা করে ছেড়েছেন তার বেলায় কিছুই না।
আব্রাহাম;; আরে বেবি ওয়েট এইটা তো কেবল ট্রেইলার ছিলো ফুল মুভি এখনো বাকি
আইরাত;; আপনি আসলেই একটা আবব….

আইরাত আর কিছুই বলতে পারলো না তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটজোড়া আকড়ে নিলো। আইরাত চোখ বড় বড় করে ফেললো। অনেক মুচড়া মুচড়ি করছে। কিন্তু আব্রাহাম এক হাতে আইরাতের দুহাত ওপরে শক্ত করে ধরে আছে আর একহাতে আইরাতের কোমড়ে স্লাইভ করে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে আইরাতের দম বন্ধ হওয়ার মতো,, কোন ভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। সে শক্তি তার নেই। এদিকে আব্রাহাম পাগল হয়ে গেছে, সে চোখ বন্ধ করে আইরাতকে অনুভব করছে। বেশ কিছুক্ষন সময় পর আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিলো। আইরাত আর এক মূহুর্ত না থেকে জলদি আব্রাহাম কে ধাক্কা দিয়ে তার নিচ থেকে উঠে যায়।

আব্রাহাম;; বলেছি না আমি আমার অধিকার ভালোভাবেই আদায় করে নিয়ে জানি। যদি সকালে ভালোই ভালোই আমাকে আমার Morning Kiss টা দিয়ে দিতে তাহলে এখন আমি এমন কিছু করতাম না। এটা তোমার তেড়ামি করার ফল। আর কথা রইলো ফোনের আমার মনে হয় না তার এখন কোন দরকার আছে।
আইরাত;; আপনার মতো ফালতু মানুষ আমি আমার পুরো জীবনে দেখেছি কিনা সন্দেহ।
আব্রাহাম;; তো এখন দেখে নাও 🥱

আইরাতের এখন মন চাইছে নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়তে। কার সাথে লাগতে গেছে সে। একটা পাগলের সাথে। বাপ রে বাপ ঘাট হয়েছে আইরাতের। চাপার সাথে পেরে ওঠা যায় না। আইরাত আব্রাহামের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত রুম ত্যাগ করে। আব্রাহাম তা দেখে হেসে লুটিপুটি।

আইরাত নিচে নেমে পড়লো। নিচে নেমে দেখে অয়ন কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। অয়ন দেখে আইরাত নিচে নেমে এসেছে তাই সে ফোন কেটে দেয়। অয়ন এগিয়ে যায় আইরাতের কাছে।

অয়ন;; Gd morning sweet ভাবি
আইরাত;; morning.. (হেসে)
অয়ন;; আচ্ছা ভাবি একটা কথা
আইরাত;; হুমম বলো
অয়ন;; আসলে আমার না সবকিছু আনকোমন পছন্দ,, মানে সবার থেকে আলাদা হতে হবে।
আইরাত;; যেমন!!
অয়ন;; মানে সবাই তো ভাবি ভাবি ডাকে তাই না কিন্তু আমি তোমাকে অন্য নামে ডাকবো।

আইরাত অয়নের কথা শুনে হেসে দেয়।

আইরাত;; তুমি যা খুশি ডাকতে পারো
অয়ন;; হুমমম🤔,, বউমনি। বউমনি বলে ডাকবো তোমায়
আইরাত;; আচ্ছা ডেকো😊। কিন্তু একটা কথা
অয়ন;; কি বউমনি?!
আইরাত;; আচ্ছা তোমরা একই ভাই তো মানে তুমি আর তোমার ভাই আসলেই ভাই তো!
অয়ন;; হাহাহাহাহা, হ্যাঁ গো বউমনি আমরা একই ভাই। কিন্তু কেন বলতো!
আইরাত;; না মানে তুমি এতো ভালো, কিন্তু তোমার ভাইটা এমন অদ্ভুত কেন। যাকে বলে ঘাড় তেড়া এবং বজ্জাত ও বটে। এমন কেন?
অয়ন;; হাহাহাহাহাহাহাহা😅
আইরাত;; 😐
অয়ন;; বউমনি দাভাই এমনই আগে থেকেই। কিন্তু এমনিতে অনেক অনেক ভালো। আর যদি ভালো না হতো তাহলে আমার জন্য এতো কিউট একটা বউমনি কোথা থেকে আনতো বলো
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে,, এবার বলো বাপি কোথায়?
অয়ন;; বাপি বাগানে বসে আছে।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা

এই বলে আইরাত রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলো। তা দেখে অয়ন তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো…

অয়ন;; আরে আরে বউমনি কোথায় যাচ্ছো?
আইরাত;; কেন রান্নাঘরে যাচ্ছি
অয়ন;; বউমনি প্লিজ যেও না, দাভাই যদি দেখে যে এতো গুলো কাজের লোক থাকার পরেও তুমি রান্নাঘরে গিয়েছ তাও আবার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তাহলে কি যে করবে আল্লাহ মালুম। সেইদিন তোমাকে রান্না ঘরে পাঠিয়েছে কারণ সেদিন তোমার বাড়িতে প্রথম দিন ছিল কিন্তু প্লিজ বউমনি আজ না।
আইরাত;; আরে এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন রিলেক্স। আমি বাপির জন্য চা বানাতে যাচ্ছি
অয়ন;; আমি লিজা কে বলছি ও বানিয়ে দিক, তুমি এসে পড়ো
আইরাত;; কি একদম না। আমি থাকতে বাপি কেন servant -এর হাতের চা খাবে। আর চা ই তো কিছু হবে না।
অয়ন;; আচ্ছা বানাও।

অয়ন আবার ও ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। আইরাত চলে গেলো রান্নাঘরে। চা বানিয়ে বাগানের দিকে যেতে লাগলো। আইরাত দেখলো যে তার বাপি চেয়ারে বসে বাড়ির মালিকে (যে বাগানের গাছপালা দেখা শোনা করে) বলছে গাছগুলোতে ঠিকঠাক মতো পানি দিতে। আইরাত এগিয়ে গেলো…

আইরাত;; শুভ সকাল বাপি
আবির আহমেদ;; মামনি, শুভ সকাল (আইরাত কে দেখে একগাল হেসে)
আইরাত;; এই নাও তোমার চা
আবির আহমেদ;; আরে মা তুই কষ্ট করে আনতে গেলি কেন,, অন্য কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতি
আইরাত;; আচ্ছা তোমরা সবাই এমন করছ কেন বলতো, আমি সেদিন পায়েস খারাপ বানিয়েছি মানলাম কিন্তু সবকিছু খারাপ বানাই না। আর চা তো যথেষ্ট ভালো বানাই।

আবির আহমেদ আইরাতের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন।

আবির আহমেদ;; না রে মা আসলে তা বলিনি। তুই রান্নাঘরে কেন গিয়েছিস বল তো যদি হাত পুড়ে যেত কোথাও তাহলে। আর কে বলেছে যে তুই ভালো রাধতে পারিস না। তুই অনেক ভালো রান্না পারিস।
আইরাত;; আচ্ছা এবার চা খাও

অয়ন ও এসে পড়লো তখন। আইরাত তার বাপি, অয়ন কে চা দিলো।

আবির আহমেদ চা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে থমকে গেলেন। আইরাত ও তার বাপির দিকে তাকালো। (আরে না এবার চা বাজে হয়নি আইরাত শুধু তার বাপির চায়ের কাপে চিনি দেয়নি)

আইরাত;; তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। আমি গত দুইদিন বাসায় ছিলাম না এর জন্য ইচ্ছে মতো মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়েছ। যার ফলে সুগার লেভেন অনেক হাই হয়ে গিয়েছে তোমার। লিজা আমাকে সবই বলেছে। এখন থেকে মিষ্টি জাতীয় জিনিস সব বন্ধ।

আবির আহমেদ অসহায় মুখে আইরাতের দিকে তাকালো।

আবির আহমেদ;; মামনি এতো রীতিমত একটা টর্চার,, চিনি ছাড়া চা খাবো কি করে
আইরাত;; খেতে শিখো,,
অয়ন;; বাপি ও বাপি এই দেখো চিনি চিনি (সুগার কিউব হাতে নিয়ে)
আবির আহমেদ;; চুপ কর বাদর ছেলে
আইরাত-অয়ন;; হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা….

এভাবেই সবাই খুনশুটি শেষে বাসায় চলে এলো। অয়নকে বলা হয়েছে আইরাত-আব্রাহাম কিছুদিনের জন্য বাইরে যাবে তাই বাড়িতে থাকতে এবং অফিসের সব কাজ বাড়িতে বসেই করতে। এতে অবশ্য তারই ভালো হয়েছে। সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করা হলো। সেফদের আইরাত টুকটাক হেল্প ও করে দিলো। Servant রা খাবার টেবিলের ওপর সাজাতে লাগলো। আইরাত চলে গেলো সবাইকে ডাকতে। আবির আহমেদ, অয়ন সবাই টেবিলে এসে বসে পড়লো।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি, আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;; বাপি আসলে উনি তো মনে হয় এখনো ঘুমোচ্ছে ।
আবির আহমেদ;; এখনো ঘুম, আব্রাহাম তো এতো বেলা করে ঘুমোয় না। আচ্ছা মামনি তুমি ওকে ডেকে আনো।
আইরাত;; আব..আচ্ছা বাপি (কিছুটা সংকোচ নিয়ে)

আইরাত ওপরে নিজের ঘরে চলে গেলো। ভাবলো দরজা ভিতরে থেকে বন্ধ করা তাই নক করলো কিন্তু তাতে দরজা একটু ফাকা হয়ে গেলো। দরজা তার মানে খোলা। আইরাত ভিতরে গেলো। কিন্তু দেখলো বিছানা ফাকা, করিডোরেও নেই। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে আইরাত পিছনে তাকালো। দেখলো যে আব্রাহাম সাদা একটা টাওয়াল পেচিয়ে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলো। জিম করা সাদা বডিতে পানির বিন্দুগুলো যেন মুক্তোর মতো লেগে আছে। আইরাত থ মেরে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম এগিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো। বলতে গেলে আইরাতকে এক প্রকার ইগনোর ই করলো। আইরাত ঝট করে তার মাথা নামিয়ে ফেললো। আব্রাহাম আইনার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। আইরাতের uneasy ফিল হচ্ছে দেখে আব্রাহাম বলল..

আব্রাহাম;; কিছু কি বলবে
আইরাত;; না মানে আসলে
আব্রাহাম;; না মানে আসলে এইসব বাদ দাও বলো কি বলবে
আইরাত;; খাবার রেডি আপনি নিচে চলে আসুন

এই কথা বলে আইরাত আর এক সেকেন্ড সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলে, আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে আইরাত কে টেনে নিয়ে আইনার সামনে দাঁড় করিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; এতো রাগ!?
আইরাত;;……………. (আইরাত রাগে লজ্জায় কিছু আর বলতে পারছে না)
আব্রাহাম;; বেবি এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন, গাল দুটো তো একদম টমেটো হয়ে গেছে। মন চাইছে এখনই খেয়ে ফেলি

আইরাত চট করে মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম লোভাতুর দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। আব্রাহাম পিছন থেকে আইরাতের গালের সাথে তার গাল লাগিয়ে দেয়। আইরাত সিউরে উঠে এবং চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম এক মনে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে এবং মুচকি হাসছে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কি আছে এমন তোমার মাঝে যা এতো করে আমাকে তোমার কাছে টানে। ভালোবাসি জানপাখি ভালোবাসি।

আইরাত শুধু চুপ করে কথা গুলো শুনছে। আব্রাহামের কথা গুলো আইরাতের মনে গিয়ে বিধছে। কিন্তু পরক্ষনেই তার ওপর করা অত্যাচার গুলো, তার আম্মু ভাই কে কিডন্যাপ করে আনা, তার পাপাকে এতো হয়রানি করানো সবই যেন তার চোখের দেয়ালে ভেসে ওঠে। সাথে সাথে আইরাত চোখ মেলে তাকায়। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আবার ও বাধা দেয়। আইরাতের গালে কিস দিয়ে দেয় এবং তার মাথা ঝাড়ি দেয় যার ফলে চুলের পানি গুলো সম্পূর্ণ আইরাতের চোখে মুখে এসে পড়ে। আইরাত অনেক রেগে যায়। এক টানে আব্রাহামের থেকে দূরে চলে যায়।

আইরাত;; খাওয়ার হলে নিচে চলে আসুন নয়তো ঘরেই বসে থাকেন (রেগে বোম হয়ে)

আইরাত এই বলে হনহন করে ঘর থেকে চলে যায়। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম হেসে রেডি হতে থাকে। আইরাত এসে সোজা খাবার টেবিলে বসে পড়ে।

অয়ন;; দাভাই কোথায় বউমনি?
আইরাত;; আসছে..

কিছুসময় পর আব্রাহাম চলে এলো। আইরাত তা দেখে একটু তাকিয়েই ছিলো। ব্লেক পেন্ট, সাদা শার্টে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে। আইরাত সোজা হয়ে বসে পড়লো। আব্রাহাম এসে আইরাতের পাশে বসে পড়লো।

আব্রাহাম;; Good morning বাপি, অয়ন।
আবির আহমেদ;; morning, morning.
অয়ন;; তোরা না বাইরে যাবি
আব্রাহাম;; আজ না কাল
অয়ন;; ওহ আচ্ছা।

সবাই যার যার মতো করে খাওয়া শুরু করলো কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহাম ই। সে টেবিলের নিচে পা দিয়ে আইরাতের পা চেপে ধরলো। আইরাতের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সে চোখ রাংিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। আব্রাহাম এমন একটা ভাব ধরলো যেন কিছুই হয় নি। সে তার আপন মনে খেতে লাগলো। আইরাত রাগে না পারছে খেতে আর না পারছে সবার সামনে কিছু বলতে।

আইরাত;; কি করছেন টা কি (ফিসফিস করে)
আব্রাহাম;; কি আবার করছি দেখছ না, খাচ্ছি
আইরাত;; হায় আল্লাহ তুইলা নেও আমারে, শালা খবিশের বাচ্চা কালা বান্দর (মনে মনে)
আমি তা বলি নি আপনি নিচে কি করছেন, পা ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; না
আইরাত;; কি
আব্রাহাম;; না বলেছি…
আইরাত;; দেখুন প্লিজ ছাড়ুন সবাই আছে এখানে, কেউ দেখে ফেলবে তারপর ইজ্জতের কাবাব। প্লিজ ছাড়ুন
আব্রাহাম;; ওকে যাও ছাড়লাম (আইরাতের পা সত্যি ছেড়ে দিয়ে)
আইরাত;; যাক বাবা বাচঁলাম কিন্তু এই হনুমান টা এতো ভালো হলো কবে থেকে (মনে মনে)

আব্রাহাম আবার সাথে সাথেই তার পা দিয়ে আইরাতের পায়ে জোড়ে চাপ দিলো। আইরাতের কাশি ওঠে গেলো যাকে বলে একদম নাকে মুখে হয়ে গেলো।

অয়ন;; বউমনি..
আবির আহমেদ;; আরে মা আস্তে, আব্রাহাম পানি দে পানি দে
অয়ন;; বউমনি ধীরে ধীরে খাবে তো

আইরাতের একাধারে কাশি উঠেই যাচ্ছে। আব্রাহাম তাড়াতাড়ি করে আইরাতের সামনে পানি ধরলো। আইরাত পানি খেতে লাগলো।

আবির আহমেদ;; হয়েছে কি এভাবে কাশি উঠলো কেন,, খাবারে ঝাল বেশি হয়েছে নাকি
আব্রাহাম;; না বাপি আসলে মশা, ওই তো মশা কামড়িয়েছে তাই হুট করেই কাশি এসে পরেছে।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে পানি খাচ্ছে। মানে মানুষ কি পরিমাণ মিথ্যা কথা বলতে পারে তাই ভাবছে সে। আইরাত ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেলো। সবাই যার যার খাওয়া ও খেয়ে উঠলো।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি
আইরাত;; জি বাপি
আবির আহমেদ;; মামনি তোকে আমার কিছু দেওয়ার ছিলো, একটু আমার ঘরে আসিস
আইরাত;; ঠিকআছে বাপি

লিজা এবং বাকি সার্ভেন্টরা টেবিল পরিষ্কার করতে লাগলো। আব্রাহাম-অয়ন খেয়ে উঠে একসাথে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো। আইরাত তার বাপির ঔষধগুলো নিয়ে তার ঘরে চলে গেলো।

আইরাত;; বাপি আসবো
আবির আহমেদ;; আয় মা ভিতরে আয়।

আইরাত গিয়ে দেখে তার বাপি তার সামনে একটা বাক্স নিয়ে বসে আছে।

আইরাত;; কি করছ তুমি বাপি
আবির আহমেদ;; কিছু না এইতো এমনি বসে ছিলাম
আইরাত;; আচ্ছা এখন এই ঔষধগুলো তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও দেখি।

আবির আহমেদ তার ঔষধ গুলো খেয়ে নিলেন।

আবির আহমেদ;; মামনি, আসলে আমি তোকে কিছু দিতাম। তুই নিবি তো?
আইরাত;; এমন করে কেন বলছ বাপি। বাবা মেয়েকে কিছু দিলে মেয়ে কি তা নিতে অস্বীকার করে নাকি। অবশ্যই নিবো

আবির আহমেদ বাক্স টি খুললেন এবং তা থেকে একজোড়া White Platinum এর সুন্দর কাজ করা চুড়ি বের করলেন।

আবির আহমেদ;; মামনি এই চুড়ি গুলো আমি তোর শাশুড়ী মাকে বানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে খুব যত্নে খুলে রেখেছিলো তার ছেলের বউকে দিবে বলে। সে তো আর নেই আমাকে রেখে কবেই চলে গিয়েছে তাই আজ আমি দিচ্ছি কিন্তু আমার ছেলের বউকে নয় বরং আমার মেয়েকে। কিরে মা নিবি তো!?

আইরাতের চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু মুখে হাসি ফুটছে। সে কখনো ভাবে নি যে তার পাপা আম্মু ছাড়াও সে কোন দিন এতো ভালো একটা ফ্যামিলি পাবে। আইরাত আর দেরি না করে সাথে সাথে তার বাপির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো

আইরাত;; বাপি পড়িয়ে দিবে?

আবির আহমেদ খুব খুশি হলেন। চোখের কোণের পানি মুছে তিনি আইরাতের হাতে চুড়িগুলো পড়িয়ে দিলেন।

আবির আহমেদ;; অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোকে। তোর পছন্দ হয়েছে তো?
আইরাত;; ভীষণ, ভীষণ পছন্দ হয়েছে বাপি।

আইরাত হাসিমুখে তার বাপি কে জড়িয়ে ধরলো তার বাপি ও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এভাবেই সেইদিন গেলো। দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত।











🤎রাত“““““

সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম-আইরাতের মাঝে কোন কথা নেই। আইরাত নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। আব্রাহাম বিছানাতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর মাঝেমধ্যে আড় চোখে আইরাত কে দেখে যাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামকে তোয়াক্কা না করে সোজা বিছানাতে এসে চাদর আর একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেলো। আব্রাহাম এমন ভাব করলো যেন সে কিছুই দেখছে না। আইরাত আর একটা কথা না বলে সোফায় এসে শুয়ে পড়লো। আব্রাহাম এবার সত্যি রেগে গেলো…

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এটা
আইরাত;;…………..
আব্রাহাম;; I am talking to you, stupid…
আইরাত;; আজব তো, কি হচ্ছে মানে কি দেখছেন না কি হচ্ছে ঘুমোচ্ছি আমি
আব্রাহাম;; অন্ধ তো নয় আমি যে তুমি ঘুমাচ্ছো আর আমি দেখছি না। কিন্তু সোফায় কি করো তুমি
আইরাত;; আমি আপনার সাথে বিছানাতে ঘুমাবো না
আব্রাহাম;; সাহস টা আজকাল একটু বেশিই বেড়ে গেছে দেখছি,, কিছু বলছি না তার মানে এই না যে পার পেয়ে গেছো..চুপচাপ এখানে এসে শুয়ে পড়ো
আইরাত;; যাবো না মানে যাবো না
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন এসো না,, আমি ও দেখছি কিভাবে তুমি সোফাতে ঘুমাও।
আইরাত;; দেখে নিয়েন।

আইরাত মাত্রই চোখ বন্ধ করেছে ঘুমানোর জন্য কিন্তু কোথা থেকে এক বালতি পানি আইরাতের ওপর ঝপঝপ করে পরে গেলো। আইরাত চিল্লিয়ে উঠে পড়লো। তাকিয়ে দেখে বালতি নিচে রেখে আব্রাহাম হাত ভাজ করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত তো রেগে ফেটে যাচ্ছে।

আইরাত;; আপনি কি মাথা মোটা না পাগল, এই শীতের রাতে কেউ এভাবে কারো ওপর পানি ফেলে😡
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো আমারও তো সেই একই কথা যে এই শীতের রাতে বউ ছাড়া একা কিভাবে থাকবো।
আইরাত;; তাই বলে আপনি এভাবে পানি ফেলে দিবেন আজব,, কি ধরনের ফাজলামি এটা
আব্রাহাম;; কোন ফাজলামি না,, তোমাকে তো আমার সাথে বিছানাতেই ঘুমোতে হবে তা তুমি যা ই করো।আর কথায় আছে না “ঘি সোজা আঙুলে না উঠলে, আংুল বাকা করতে হয়” তাই আমিও একটু বাকা করে দেখলাম। And it really works… এবার তাড়াতাড়ি করে ওঠে পড়ো আমি Servant কে বলছি সব ক্লিন করে দিতে আর তুমি change করে শুতে আসো।

আইরাত ধীরে ধীরে ওঠে Changing room এ চলে গেলো। শীতে কাপতে কাপতে তার অবস্থা নাজেহাল সাথে হাচিঁ তো আছেই। আব্রাহাম sarvant দের ডেকে রুম ক্লিন করে নিলো। আইরাত ভেজা চুল মুছতে মুছতে ঘরে এলো। এসে দেখে আব্রাহাম আবার ও ল্যাপটপে মুখ গুজে রয়েছে। এতে আইরাতের রাগ দিগুণ বেড়ে গেলো।

আইরাত;; আমার যদি ঠান্ডা বা জ্বর এসেছে তাহলে আপনাকে আমি কি যে করবো আমি নিজেও জানি না (হাচিঁ দিতে দিতে)
আব্রাহাম;; আরে গাধা মেয়ে জানোই তো না যে আমাকে কি করবে তাহলে করবে কিভাবে, আগে জানো
আইরাত;; অসহ্যকর

আব্রাহাম এবার ল্যাপটপ তার পাশে রেখে উঠে গিয়ে আইরাতের কাছে গেলো। আইরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটানে কোলে তুলে নিলো। আইরাত বোকা বলে গেলো।

আইরাত;; আপনি..
আব্রাহাম;; একদম চুপ।

আইরাত বুঝলো যে এর সাথে কথা বলে কোন লাভই নেই তাই চুপ হয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে বিছানার ওপর শুইয়ে দিলো। তারপর নিজেও এসে আইরাতের গলায় মুখ গুজে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

আইরাত ও তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো…..।










💙চলবে~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে