বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1156



হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২২

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২২
#আরিশা অনু

-রাত ৯:১৫ এখনো অনন্যা বাসায় ফেরেনি। কখনো তো এত দেরি করেনা একা একা বসে কথাগুলো ভেবে চলেছেন অনন্যার আম্মু তখন ই রুহি এসে পাশে বসলো…..

-নানু নানু আম্মু বাসায় আসেনা কেনো তুমি ফোন দাওনা আম্মু কে….

-সোনা অনেক বার ফোন দিয়েছি তোমার আম্মু কে ফোন তুলছে না তোমার আম্মু….

-আম্মু কোথায় গেলো আমায় রেখে কথাটা বলেই রুহি কান্না শুরু করলো….

-সোনা নানু আমার কান্না করেনা আম্মু চলে আসবে বাসায় কথাটা বলে বুকে চেপে ধরলাম রুহিকে।আমার ও যে এবার ভয় লাগছে এত দেরি তো কখনো করেনা অনন্যা।ঠিক আছে তো আমার মেয়েটা? এসব কি ভাবছি আমি অবশ্যই ঠিক আছে আমার অনন্যা তবুও মায়ের মন তো অস্থির হবেই।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফোন বেজে উঠলো….!!!

-অনন্যার ফোন থেকে ফোন এসছে। দ্রুত ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কেউ সালাম দিল…..

-আসসালামু আলাইকুম।আমি রোহান বলছি….

-রোহান এত রাতে অনন্যার ফোন দিয়ে কথা বলছে ঠিক আছে তো আমার মেয়েটা অজানা এক শঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠলো আমার। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে উওর দিলাম,,,

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।হ্যাঁ বল বাবা তুমি হঠাৎ ফোন দিলে? আর অনন্যা কোথায় ও ঠিক আছে তো বাবা কথাগুলো একটানা বলে থামলেন অনন্যার মা….

-জ্বী ঠিক আছে সব শুধু অনন্যার ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তবে তেমন সিরিয়াস কিছু না।আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি আপনি চলে আসুন কথাটা বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল রোহান….

-অনন্যার এক্সিডেন্ট হয়েছে কথাটা শুনেই মাথা ঘুরে উঠলো আমার। ঠিক নেই আমার মেয়েটা। আজ যদি খারাপ কিছু করে থাকে রোহান আমার মেয়েটার সাথে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবো না আমি।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুহির ডাকে হুস ফিরলো আমার….

-নানু আমার আম্মু কোথায় কে ফোন করেছিল আম্মু আসবেনা নানু কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলল রুহি….

-রুহি সোনা কাঁদেনা আমরা আম্মুর কাছে যাব এখন চলো চলো খেয়ে রেডি হয়ে নি তাড়াতাড়ি…

-না আমি আম্মুর কাছে যেয়ে খাব…..

-জেদ করেনা সোনা একটু খেয়ে নাও তারপর আমরা রেডি হয়ে আম্মুর কাছে যাব…..

-না না না আমি আম্মুর কাছে যাব বলে হাত পা ছুড়ে কাঁদতে শুরু করল রুহি….

-বাধ্য হয়ে রুহিকে তৈরি করে দিলাম আর আমাদের তিনজনের কিছু ড্রেস প্যাকিং করে নিলাম….

-একটু পর একটা গাড়ি আসলো মনে হাজারো ভয়, সংশয় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আল্লার নাম করে……
.
.
.
.
.
-তৃধা ফোন আনার পর অনন্যার আম্মুকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বললাম।গাড়ি অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আমি।যতদিন অনন্যা পুরোপুরি সুস্থ না হয় এখানেই থাকবে।এখনো মেয়েটার জ্ঞান ফেরেনি আঙ্কেল বলেছিল ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে আজ রাতে আর জ্ঞান ফিরবেনা ওর।থাক শান্তিতে ঘুমাক একটু মেয়েটা। অনন্যার পাশে বসে ওর হাতটা ধরে রেখে কথাগুলো ভাবছিল রোহান হঠাৎ কলিংবেল এর আওয়াজ এ ঘোর ভাঙল ওর….

-অনন্যাকে রেখে নিচে গেলাম ততক্ষণে তৃধা দরজা খুলে দিয়েছে….

-কাকে চাই? এটা ভদ্র লোকের বাসা হুট হাট বলা নেই কওয়া নেই গুষ্টিশুদ্ধু এসে হাজির।এটা কি অনাথ আশ্রম নাকি বৃদ্ধাআশ্রাম যে ইচ্ছা হল আর চলে আসলেন? যতসব ছোট লোকের দল একটু সুযোগ পেলেই দলবল নিয়ে হাজির হয়ে যায়।বেরিয়ে যান এখনি বের হন বলছি তৃধা কথাগুলো এক নাগাড়ে অনন্যার মাকে বলল…..

-তৃধার চিৎকার শুনে রোহান ততখনে দরজার সামনে চলে এসেছে…..

-কার পারমিশনে তুমি ওদেরকে বের করে দিচ্ছ তৃধা? ভুলে যেওনা বাসাটা আমার ধমক দিয়ে কথা গুলো তৃধাকে বলল রোহান….

-তারপর অনন্যার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল আপনি ভেতরে আসুন….

-রোহান তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা রাগে গজ গজ করতে করতে তৃধা বলল….

-আমি সব পারি তৃধা যাও উপরো যাও এখন।
রাগে গজ গজ করতে করতে তৃধা উপরে চলে গেল….

-হঠাৎ রোহানের চোখ গেল ভয়ে কুঁকড়ে থাকা রুহির দিকে।তৃধার ধমক শুনে মেয়েটা বেশ ভয় পেয়েছে তাই সে এখন নানুর গলা জাপটে ধরে নানুর বুকে আশ্রয় নিয়েছে।এতটাই ভয় পেয়েছে মেয়েটা পারলে নানুর বুকের ভেতর ঢুকে যেত…

-রুহিকে দেখে হালকা হেসে দুহাত বাড়িয়ে দিল রোহান কোলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এতে যেন মেয়েটা আরো ভয় পেয়ে নানুর বুকে মুখ লুকালো….

-হাজার অপমান সহ্য করে আবারো মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকলেন মিসেস শাহেলা জামান(অনন্যার মা)।চাইলে কঠিন ভাষায় কিছু কথা শুনিয়ে দিতে পারতেন তৃধাকে তারপর ও নিজেকে শান্ত রাখলেন এইভেবে যে কুকুরের কাজ কুকুর করেছে তাই বলে তার সাথে তাল মেলানো নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুনা। সেজন্য চুপচাপ শুনে গেলেন মিসেস শাহেলা জামার।আর এমনিতে ও মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে তিনি এসময় ঝগড়া করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। তাই রোহান কে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলেন অনু কোথায়….?
.
.
.
.
Continue…..

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২১

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২১
#আরিশা অনু
-অজানা এক ভয় যেন বুকের ভেতরটা খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে। যতই মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি অনন্যা ঠিক আছে ততই মনটা উতলা হয়ে উঠছে আমার।যত এগিয়ে চলেছি অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে আমার।অবশেষে জ্যাম ঠেলে দীর্ঘ একঘন্টা পর এসে পৌঁছালাম হাসপাতালে এসে।

-গাড়িটা পার্কিং এ রেখে এগিয়ে চললাম হাসপাতালের ভেতরে।মাথা গরম হচ্ছে এখন আমার যত সামনে যাচ্ছি তত। ওরা আমার অনুকে একটা সরকারী হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়েছে।চারপাশে নোংরা অবস্থা দেখে মাথা আগুন হচ্ছে তাও চুপচাপ সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।

-এক পা এক পা করে যতই এগোচ্ছি ততই বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথাটা যেন বেড়েই চলেছে।অনুভূতি গুলো যেন বার বার আজ বলতে চাইছে হারিয়ে যায়নি আমরা তোমাদের অভিমানের ধুলোয় ঢাকা পড়ে ছিলাম এতদিন।অভিমানের ধুলা আজ সরে গেছে তাই আমরা ও সাড়া দিতে শুরু করেছি…..!!!

-একটা বড় রুমের ভেতরে অনেক গুলো বেড রাখা সারি সারি।আর বেড গুলোতে অনেক অসহায় মানুষ এসে বাঁচার জন্য আশা গুনছে হয়তো।কেউ কেউ মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে তো কেউ প্রিয় মানুষটার পাশে বসে তার সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠেছে। অদ্ভুত এক পরিবেশ। অনেকে বাঁচার আশা নিয়ে আসলে ও শেষমেশ মৃত্যু নামক অমোঘ সত্যের কাছে হার মেনে পাড়ি জমাচ্ছে ওপারে তো কেউ মৃত্যু সজ্জায় থেকেও উপরওলার অশেষ রহমতে হাসি মুখে বাসায় ফিরছে স্বজনদের সাথে।আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারে।

-এতক্ষণ অনন্যা কে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল রোহান এ রুম থেকে ও রুম আর আশেপাশের ঘটনাগুলো খেয়াল করছিল।একটু পর একটা রুমে যেয়ে সারি সারি বেড গুলোর দিকে খেয়াল করতেই দ্বিতীয় সারির কর্নারের বেডটাই অনন্যাকে দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো রোহানের।

-দৌঁড়ে অনন্যার কাছে চলে গেলাম।গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে আমার অনন্যা মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা হাতে ও ব্যান্ডেজ করা।বাম হাতে স্যালাইন চলছে মুখে অক্সিজেন দেয়া শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার জানটার।ওকে এই অবস্থায় দেখে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলাম না।দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।ওর যে অবস্থা তাতে করে ওকে কেবিনে রাখা উচিৎ এখন বাট তা না রেখে এরা আমার অনন্যাকে পাবলিক প্লেসে রেখে ট্রিটমেন্ট করাচ্ছে।রাগে ইচ্ছা করছে এখন সব কটাকে খুন করে ফেলাই…

-নিজেকে ঠান্ডা করে অনন্যাকে যারা এখানে এনেছিল তাদের সাহায্যে হাসপাতালের সব ফর্মালিটিস মেনে রিলিস করিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম অনন্যাকে নিয়ে।ওরা ছাড়তে চাইছিলনা এই অবস্থায় অনন্যাকে তারপর ও জোর করে বের করে আনলাম। ডক্টর আঙ্কেলকে ফোন দিলাম আসার সময়।অনন্যার সেফটির কথা মাথায় রেখে একজন নার্সকে সাথে এনেছি যদি রাস্তায় আবার কিছু হয়।এখনো অজ্ঞান অনন্যা মুখটার দিকে তাকালে আমার চোখটা ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে বার বার।কত কষ্ট দিয়েছি মেয়েটাকে আমি এতদিন।

-অবশেষে প্রায় এক ঘন্টা পর বাসায় এসে পৌঁছালাম। গাড়ি সাইডে রেখে গাড়ি থেকে নেমে এসে অনন্যাকে কোলে তুলে নিলাম আর নার্সকে বললাম আমার সাথে আসতে…..

-মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে কত কষ্ট ই না পেয়েছে আমার জানটা আজ।মায়াবি মুখটার দিকে আজ তাকানো যাচ্ছেনা খুব কষ্টে চোখের জল আটকে ভেতরে গেলাম….

-মামা,মামী,তৃধা, ডক্তার আঙ্কেল ও এসে বসে আছে দেখছি ড্রয়িংরুমে। সেদিকে খেয়াল না করে অনন্যা কে নিয়ে সোজা আমার রুমে চলে আসলাম।ওকে বেডে শুইয়ে দিলাম। সকাল থেকে আমার জানটাকে আজ কত কাজ ই না করিয়েছি আমি ভাবতেই আবার রাগ উঠল নিজের উপর। একটু পর ডক্তর আঙ্কেল আসলো রুমে….!!!

-রোহান এসব কি করে হল বউমার।(ডক্তর আঙ্কেল রোহান অনন্যার সম্পর্কে সব কিছু জানে।উনি রোহানের বাবার ফ্রেন্ড তাই অনন্যাকে বউমা বললেন)

-আঙ্কেল এসব কথা পরে হবে আগে অনুকে দেখো প্লিজ অস্থির হয়ে কথাটা বললো রোহান….

-সবকিছু চেক করে বললাম দেখ রোহান মাথা থেকে ব্লিডিং হয়েছে আর অনন্যা আগে থেকেই অনেকটা উয়িক তার উপর এক্সিডেন্ট বুঝতেই পারছো কোন অবস্থায় আছে এখন ও কথাগুলো বলে থামলেন আঙ্কেল ….!!

-হ্যাঁ আঙ্কেল আমি সব বুঝতে পারছি বাট এখন কি করবো বেশি প্রবলেম হলে ওকে আজ রাতেই হসপিটালে এডমিট করাবো আঙ্কেল তারপর ও যেন অনন্যা ঠিক হয়ে যায় একরাস ভয় নিয়ে কথাগুলো বলল রোহান…..!!

-শান্ত হও রোহান ভয়ের কোনো কারন নেই শুধু এখন অনন্যার ঠিকমত খাওয়াদাওয়া,মেডিসিন, বিশ্রাম এগুলোর প্রয়োজন। আর হ্যাঁ মানুষিক চাপ যেন একদম না দেওয়া হয় অনন্যাকে তাহলে হিতে বিপরীত কিছু হতে পারে কারন আঘাত টা কিন্তু মাথায়। তাই এই বিষয়ে একটু খেয়াল রাখবা।আর আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব বউমাকে কেমন টেনশন করোনা একদম…..!!!

-তারপর ডক্তর আঙ্কেল চলে গেলেন আর আমি এগিয়ে যেয়ে বেডের একপাশে বসে অনন্যার একহাত আমার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আমার মুখটা এগিয়ে নিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।তারপর আগের মত বসে রইলাম…..!!!

-কিছুক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে থাকার পর আবিষ্কার করলাম অনন্যা আমার দেয়া শাড়ি আর গয়নাগুলো পরে আছে।কোনো সাজ নেই তারপর ও শুধু শাড়ি গহনাই অপরূপ লাগছে আমার জানটাকে আজ।হঠাৎ করে ওর হাত টার দিকে চোখ যেতেই তখনকার রক্ত মাখা হাতটার কথা মনে পড়তে আবার বুকটা কেঁপে উঠলো।ব্যান্ডেজ করা হাতটাই আলতো করে একটা চুমু দিলাম। কত কষ্ট ই না পেয়েছে আজ আমার জানটা তারপর আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম…..!!!
.
.
.
-মম আজ এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ি।কত কষ্ট করে রোহান কে আমার করে নেওয়ার সব প্লান করে ফেলেছিলাম। তুমি আমার সব প্লানে পানি ঢেলে দিলে তুমি আদেও আমার মম কিনা সত্যিই ডাউট হচ্ছে এখন আমার একরাশ ক্ষোব নিয়ে কথাগুলো তৃধা ওর মাকে বলল….!!!

-ন্যাকা কান্না কেঁদে মিসেস তমসা রহমান (তৃধার মা) বললেন তৃধা তুই তোর মমকে ডাউট করছিস।রোহান ছেলেটা যে কি তুকতাক করেছে তোকে আল্লাহ ই ভালো যানে। যখন থেকে বড় হয়েছিস এই রোহান রোহান করে মাথা খারাপ করেছিস কিন্তু রোহানের তাতে কিছু যায় আসেনা…..!!!

-মম তুমি আর একটা বাজে কথা বললে আমি সত্যিই ভুলে যাব যে তুমি আমার মম….

-তুই এটা বলতে পারলি একবারো কথাটা বলতে তোর মুখে বাধলোনা ন্যাকা কান্না করতে করতে তমসা রহমান কথাটা বললেন……

-মা-মেয়ের ন্যাকামি আর দেখতে না পেয়ে মিস্টার তুষার রহমান এবার রেগে উঠে বললেন আহ্ থামবে তোমরা।রোহান যে বাসায় আছে সেটা কি ভুলে গেছো।দিন দিন হুসবুদ্ধি কি সব লোপ পাচ্ছে তোমাদের….

-বাবার কথায় হুস ফিরলো তৃধার আর একটু হলে বড় সড় ভুল করতে যাচ্ছিল ও। এতক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে তিনজন মিলে এসব কথা বলছিল….

-একটু পর রোহান অনন্যার ফোনটা নিয়ে তৃধাকে ওর রুমে ডাকলো…..
.
.
.
.
.
Continue…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২০

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২০
#আরিশা অনু
-দশ মিনিটের ভেতরে বাসায় পৌঁছে যাব কিন্তু এই জ্যামের জন্য বার বার গাড়ি দাঁড়াচ্ছে আর লেট হয়ে যাচ্ছে।এদিকে কেমন যেন অস্থির লাগছে আমার বার বার মনে হচ্ছে অনন্যা ঠিক আছে তো..? ওর আবার কিছু হলনা তো উফ্ আজ টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাবে দেখছি একা একা গাড়িতে বসে কথা গুলো ভেবে চলেছে রোহান এতক্ষণ।গাড়ি কখন চলতে শুরু করেছে এটা এতক্ষণে খেয়াল হল ওর।যাক আর কিছু খনের মধ্যে বাসায় পৌঁছাতে পারবে এটা ভেবে একটু অস্থিরতা কমলো রোহানের…..
.
.
.
.
-আনমনে ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে এসে পৌঁছেছি খেয়াল ই করিনি আমি। যখন খেয়াল হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে গাড়িটা সজোরে ধাক্কা দিয়ে সাঁ সাঁ করে আপন গতিতে চলে গেল সামনের দিকে।একবারো দেখার চেষ্টা করলোনা যে মানুষটা কে ধাক্কা দিলাম সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।এরা এমনি অন্যকে মেরে নিজে যে কি সুখ পাই বুঝিনা।গাড়ির ধাক্কায় পাকা রাস্তার উপর পড়ে হাতে আর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি।মাথা দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছি এখন।চোখগুলো যেন ঝাঁপসা হয়ে আসছে।চারদিক থেকে মানুষের হই-হুল্লোড়ের শব্দ ভেষে আসছে কানে অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারছিনা।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জ্ঞান হারালো অনন্যা…..

-কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িটা আবার থেমে গেল মেজাজ খারাপ হচ্ছে তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আবার গাড়ি থামালে কেন…..

-স্যার সামনে একটা এক্সসিডেন্ট হয়েছে রাস্তার উপর মানুষের জটলা তাই গাড়ি থামালাম…..

– এক্সসিডেন্ট এর কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠলো। তারপর গাড়ির গ্লাসটা নিচে নামিয়ে বাইরে তাকালাম।একটা হাত আর ঝুলে থাকা কমলা রংয়ের শাড়ির আঁচলটার কিছু অংশ দেখে বুকের ভেতরটাই উথাল পাথাল হতে শুরু করে দিল আমার।এতক্ষণে বুঝলাম একটা মেয়ের এক্সসিডেন্ট হয়েছে।মেয়েটাকে রাস্তা থেকে তুলে সবাই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তখন ওর নিচে ঝুলে থাকা হাতটার দিকে আমার নজর যাই।হাতটা বেয়ে টপটপিয়ে রক্ত পড়ছে। এটা দেখে আরো খারাপ লাগছে আমার।মুখটা দেখতে পাইনি কারন এত মানুষ এসে ভীড় করেছে যে গাড়ির ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে না।

-হাতটা দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো কারন আমি অনন্যার জন্য এমন দুইটা চুড়ি কিনে এনেছিলাম।আর সেম চুড়ি ঐ মেয়েটার হাতে ও ছিল।উফ্ আর কিছু ভাবতে পাচ্ছিনা আমি। মাথা ঘুরাচ্ছে এবার আমার।অনন্যা তো এখন বাসায় সো এসব কেন ভাবছি আমি।রাস্তা ক্লিয়ার হতেই ড্রাইভার কে বললাম দ্রুত গাড়ি চালাও……

-পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেন আজ অনেক দীর্ঘ পথ বলে মনে হচ্ছে আমার।অবশেষে বাসায় এসে পৌঁছালাম।দ্রুত যেয়ে কলিংবেল চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম।অনন্যা কে না দেখা পর্যন্ত আমার ভেতরের অস্থিরতা কিছুতেই কমবে না।উফ্ এই দরজা খোলেনা কেন কেউ।মেজাজ টা চরম আকারে খারাপ হচ্ছে এখন আমার।আবার কলিং দিতে যাব তখন ই দরজাটা খুট করে খুলে গেল….

-উপরে না তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম এই মেয়ে কোথায় থাকো তুমি। কখন বেল দিয়েছি আর এখন দরজা খুলছো।যানো আমার কত টে-ন- শ কথাগুলো বলতে বলতে মুখ উপরে তুলে তৃধাকে দেখে থেমে গেল রোহান।তারপর বললো তুমি?

-হ্যাঁ আমি উপরে ছিলাম তাই আসতে লেট হল…

-ওহ!মামা মামি কোথায় কথাটা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো রোহান….

-তৃধার সাথে কথা বললে ও দুচোখ যেন বার বার অনন্যা কেই খুঁজে বেড়াচ্ছে….

-সামনে এগোতেই মামা মামিকে দেখে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ। জিজ্ঞেস করলো রোহান।

-আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন মামা-মামি.?আসতে কোনো প্রবলেম হয়নি তো?স্যরি আমি আপনাদের এয়ারপোর্টে নিতে যেতে পারিনি।বের হব তখন হঠাৎ একটা মিটিংএর জন্য যেতে পারিনি কথাগুলো বলে থামলো রোহান…..

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছি বাবা আর আমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তুমি যাও উপরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা কথা গুলো বলল মামা….

-ঠিক আছে যাচ্ছি।তৃধা অনন্যা কে এক গ্লাস পানি নিয়ে আমার রুমে আসতে বলো তো কথাটা বলে উপরের দিকে চলে যাচ্ছিল রোহান তখন হঠাৎ তৃধার কথায় থেমে গেল…।

-এতক্ষণ এই ভয়টাই পাচ্ছিল তৃধা।অনন্যার কথা জিজ্ঞেস করলে কি উওর দেবে ও।তারপর ও ভয়ে ভয়ে বলল অনন্যার কি যেন একটা কাজ পড়ে গিয়েছে বলল তাই তাড়াহুড়া করে আমায় বলে বাসায় চলে গেছে ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলে থামল তৃধা……!!!

-কথাটা যেন ঠিকমত হজম হলনা রোহানের তাই উপরে যেতে নিয়েও আবার পেছন ফিরে তাকাতেই সোফার উপরে রাখা অনন্যার ব্যাগ আর ফোনের দিকে চোখ পড়লো রোহানের।এবার মনের ভেতরের সন্ধেও টা আরো গাড়ো আকার ধারন করলো।ভয়,আতঙ্ক,টেনশন সব যেন একসাথে বাসা বাধতে শুরু করেছে এখন রোহানের মাঝে….

-দেরি না করে তৃধাকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললাম কি হয়েছে সত্যি কথা বল তৃধা অনন্যা কোথায়? কি হল উওর দাওনা কেন কি জিজ্ঞেস করেছি তোমায় আমি কোথায় অনন্যা…?

-রোহান আমার বলা মিথ্যাটা ধরে ফেলেছে তাই ভয়ে ভয়ে রোহানকে সব খুলো বললাম এখন যদি রোহান আমায় ভুল বুঝে কি হবে তাহলে আমার।রোহান মম জানতোনা তখন তাই এই ভুল করেছে। প্লিজ রোহান তুমি রাগ করোনা সব ঠিক আছে অনন্যা ও বাসায় চলে….তৃধা কথা শেষ করার আগেই রোহান বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো আবার….

-রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এখন আমার।ইচ্ছা করছে সবকিছু ভেঙেচুরে শেষ করে ফেলি। ড্রাইভারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আবার।এতক্ষণ যে অস্থিরতা কেন হচ্ছিল তা এখন বুঝলাম। তার মানে রাস্তায় যে মেয়েটা একটু আগে এক্সসিডেন্ট করেছে সে আর কেউ নয় আমার অনন্যা ছিল ওটা।ওর হাত দিয়ে টপটপিয়ে রক্ত পড়ার দৃশ্যটা মনে আসতেই মাথা ঘুরে উঠলো আমার।চোখদুটো ও ঝাঁপসা হয়ে উঠছে। কত কষ্ট ই না পেয়েছে আমার অনন্যা ওর এতকাছে থেকেও আমি কেন বুঝতে পারলাম না।বুকের ভিতর টা ছিড়ে যাচ্ছে এখন অজানা এক যন্ত্রনায়…..।

– দ্রুত গাড়ি চালিয়ে অনন্যা যেখানে এক্সসিডেন্ট করেছে ঐখানে যেয়ে গাড়ি থামালাম।আশেপাশের মানুষের কাছথেকে হাসপাতালের নাম জিজ্ঞেস করে নিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চললাম অনন্যার কাছে….!!!
.
.
.
.
.
Continue….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৯

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৯
#আরিশা অনুু
-দরজা খুলে দেখি দারোয়ান চাচা দাঁড়িয়ে আছে তাই চাচাকে বললাম কিছু বলবেন চাচা…?

-হ মা রোহান বাবা ফোন করছিল আমারে কইলো আপনে যেন তার ফোন খান ধরেন।রোহান বাবা অনেক খন থাইকা আপনারে ফোন দিতাছে কইলো তাই আমি আপনেরে কইতে ছুইটা আইলাম কথাগুলো বলে দারোয়ান চাচা থামল…!

-আচ্ছা চাচা আমি এখনি স্যারকে ফোন দিচ্ছি। তারপর দারোয়ান চাচা চলে গেল আর আমি বের হলাম ফোন খুঁজতে।ফোন কিচেনে ফেলে এসেছি আর কখন যে ফোনটা সাইলেন্ট হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ফোনটা হাতে নিয়ে তো আমার মাথা ঘুরে উঠল ৫১+ মিসকল উঠে আছে আজ আমি শেষ।তাড়াহুড়া করে রোহানকে ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে সাথে সাথে ফোন রিসিভ করল যেন আমার ফোনের আশায় অধীর আগ্রহে বসে ছিল এতক্ষণ রোহান তারপর কথা বলতে শুরু করল ও……!!!

-অনন্যা তুমি ঠিক আছো তো?কি হয়েছে তোমার কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ যানো কত টেনশন হচ্ছিল আমার? এই মেয়ে চুপ করে থাকলে কানের নিচে দুইটা থাপ্পড় লাগাবো কিন্তু এখন।আমায় টেনশন না দিলে শান্তি হয়না তোমার।বেয়াদপ মেয়ে কতবার বলেছি ফোন সবসময় কাছে রাখবা। বেঁচে গেছো এখন আমার হাতের কাছে নাই হাতের কাছে থাকলে থাপ্পড় দিয়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দিতাম আমি এখন ভয়ার্ত কন্ঠে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল রোহান…..

-রোহানের কেয়ারিং গুলো বলে দেয় ও এখনো আমায় নিয়ে কতটা ভাবে।মুখে কখনো বলবেনা ভালোবাসি অথচ এক মুহুর্ত আমায় ছাড়া চলতে পারবেনা। আসলে অনুভূতি গুলো হারায়নি অভিমান নামক এক ধোয়াশা এসে ভর করেছে অনুভূতির উপর।এতখন মনে মনে ভাবছিলাম এগুলো তারপর আমি বললাম স্যার আমি বুঝতে পারিনি ফোন কখন সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিল তা।আর আমি ফোন কিচেনে রেখে খাবার রেডি করছিলাম টেবিলে কথাগুলো বলে থামল অনন্যা…..

……………

-হ্যালো হ্যালো স্যার হ্যা…… যাহ্ ফোন কেটে দিল আজব মানুষতো এখনো সেই আগের মত হিটলার ই রয়ে গেছো কথাটা বলে হাসলো অনন্যা।আরে আমি তো রেডি হব এসে জদি দেখে এখনো এই ড্রেস পরে আছি তাহলে নির্ঘাত খুন করে ফেলবে পাগলটা আমায়। তাই ভাবাভাবি বাদ দিয়ে রুমের দিকে এগোলাম আমি,,,

-আবার ফোন সাইলেন্ট ফোনের কি হাত পা গজাইছে যে একা একা সাইলেন্ট হয়ে যায় মেজাজ টাই খারাপ করে দিয়েছে এই মেয়ে। যেয়ে নি একবার বাসায় আজ মজা দেখাব তোমার।ফাজিল মেয়ে আমায় টেনশনে রাখা বার করবো আজ তোমায় আমি। ফোন রেখে একা একা অনন্যা কে বকে যাচ্ছে রোহান।একেতো এই জ্যামের মধ্যে গাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে তার উপর বাড়তি টেনশন মেজাজ টা দ্বিগুণ খারাপ করে দিয়েছে পাজি মেয়েটা…..!!!

-সারা গা থেকে মসলার গন্ধ বের হচ্ছে এখন আবার গোছল করা লাগবে তাই আলমারি থেকে শাড়িটা বের করলাম।শাড়ির ভাজ খুলতেই একটা গহনার বক্স চোখে পড়লো।আশ্চর্য শাড়ির ভেতরে এটা কেমন করে আসলো।ভয়ে ভয়ে বক্সটা খুললাম দেখি একটা চিরকুট রাখা আছে ভেতরে। শাড়ি আর গহনার বক্সটা রেখে চিরকুট টা খুললাম।চিরকুট টাতে লেখা আছে…….

***বউপাখি শাড়ির সাথে এটা পরবা কেমন******

(রোহান)

-পাগল টা পারেও বটে পাগলামি করতে।তারপর শাড়িটার ভাজ খুললাম।আঁচলটা নেটের তার উপর কালো সুতার ছোট ছোট ফুলের কাজ আর উপর নিচের পাড়টা কালো লেশ দিয়ে বাধানো।মূলত পুরো শাড়িটা কালো আর কমলা কালারের কম্বিনেশন তৈরি।খুব সুন্দর লাগছে শাড়িটা দেখতে।এরপর গয়নার বক্সটা খুললাম।চেইনের সাথে কালো পাথরের একটা সিম্পল পেন্ডেন , দুইটা কালো পাথরের কানের দুল আর দুইটা চুড়ি অসম্ভব সুন্দর লাগছে এগুলো চয়েস আছে পাগোলটার।তারপর ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে শাওয়ার নিতে গেলাম……

-শাওয়ার নিয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং এর সামনে যেতেই মিরোরে ঝুলানো তখনকার চিরকুট টা দেখে আবার হেসে ফেললাম।তারপর চুলটা মুছে ঝটপট রেডি হয়ে নিলাম।শুধু গহনা গুলো পরে নিলাম আর চুলটা সিঁথি করে ছেড়ে রাখলাম।সাজুগুজু বলতে এটুকুই।রেডি হয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত যেতেই কলিংটা বেজে উঠলো। ওই মনে হয় রোহানরা চলে এসেছে।মামা-মামি আমায় এখানে দেখে কি রিয়েক্ট করবে কি জানি।তারপর ও ভয়ে ভয়ে যেয়ে দরজাটা খুললাম……

-আমাকে দেখেই মামির মুখে যেন আমাবস্যার অন্ধকার নেমে এল সাথে সাথে উনি বলে উঠলেন….

-এই অপয়া মেয়ে এখানে কি করছে? কোন সাহসে এবাড়িতে আবার ঢুকেছে কে ঢুকতে দিয়েছে একে? এই মেয়ে বেরিয়ে যাও এবাড়ির ত্রিসিমানাই যেনো আর কখনো তোমায় না দেখি কথাগুলো বলতে বলতে হাত ধরে টেনে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিল মামি…..

-আহ্ মম কি করলে এটা তুমি।ও এবাড়িতে নিজে থেকে আসেনি রোহান ওকে এনেছে কথাটা বলে থামলো তৃধা……..

-কিহ্ রোহানের কি নাক লজ্জা নেই আবার এই বেয়াদপ মেয়েটাকে টেনে বাড়ি তুলেছে….

-আহ্ মম তুমি যা জানোনা তা নিয়ে কথা বলনাতো।শুনো আগে ঘটনা কি তারপর এক এক করে তৃধা ওর মা-বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলতে শুরু করল….

-আরো একবার এবাড়ি থেকে বের করে দিল আমায় আর কত অপমান সহ্য করবো আমি?আর সত্যি সহ্য করতে পারছিনা আমি। ইচ্ছে করছে এখনি আত্মহত্যা করি।দুচোখ ভেঙে জল গড়িয়ে পড়ছে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে এখন।কেনো কেনো কেনো এমন হবে আমার সাথে বার বার বিনা অপরাধে সব শাস্তি আমায় কেনো পেতে হবে? একা একা রাস্তা দিয়ে আনমনে হেটে যেতে যেতে কথাগুলো ভেবে চলেছে অনন্যা।ব্যাগ ফোন সব ওবাড়িতে সোফার উপর পড়ে আছে তাই হেটে হেটে বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আপাতত…..

-হাজার ভাবনা চিন্তার মধ্যেদিয়ে কখন যে রাস্তার মাঝখানে এসে পড়েছে সে খেয়াল অনন্যার নেই।যখন খেয়াল হল ওর গাড়িটা তখন খুব কাছে চলে এসেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ধাক্কায় ছিটকে রাস্তার উপর পড়ে গেল অনন্যা….
.
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৮

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৮
#আরিশা অনু

–আরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলনা শয়তান ব্যাটা একটা রোহান কে বকা দিতে দিতে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল অনন্যা….

–অনেক গুলো বছর পর আবার এই আলমারিটা স্পর্শ করছে অনন্যা।একটা সময় রোহান আর ওর ড্রেস গুলো পাশাপাশি খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখতো অনন্যা আর এখন অনুমতি নিয়ে আলমারি খুলতে হচ্ছে ভাবতেই চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো অনন্যার। আলমারি খোলার পর অপজিটে রোহানের ড্রেসগুলো দেখে কান্নার জোর আরো বেড়ে গেল আমার।গুছিয়ে রাখা কাপড় গুলোর উপর থেকে একটা টি শার্ট উঠিয়ে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বেডের উপর বসে পড়লাম।সেই চেনা গন্ধে ভরে আছে টি-শার্ট টা। পুরো রুম জুড়ে কতনা স্মৃতি জড়িয়ে আছে সব যেন চোখের সামনে ভাসছে আমার।

— এইতো সেদিনের ঘটনা বারান্দায় দাড়িয়ে রোহান আর আমি এক মগ কফি শেয়ার করে খেতাম।কি এক বাহানা ছিল ওর কফির মগে প্রথম চুমুক আমায় দিতে হবে তারপর আমি ঠিক যেখানে ঠোঁট ছুয়েছি সেখানে ঠোঁট রেখে পাগোলটা কফি খেত ওর ভাষায় এতে নাকি ভালোবাসা দ্বিগুন হয়। পাগলটা পারেও এক এক সময় এক এক টা পাগলামি করতে।অতিতের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কান্না চোখে হেসে ফেললো অনন্যা। তারপর হঠাৎ রান্নার কথা মাথায় আসতে তাড়াহুড়া করে বেড ছেড়ে উঠে পড়লো ও….

–কাজ করতে করতে হঠাৎ ল্যাপটপের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম অনন্যা আমার একটা টি-শার্ট বুকে চেপে ধরে কাঁদছে।খুব খারাপ লাগছে ওকে এভাবে দেখে।কেনো অনন্যা কেনো এমন প্রতারনা করলে আমার সাথে তুমি? কোন সুখ টার অভাব আমি রেখেছিলাম তোমার যার জন্য আমায় এভাবে ঠকালে।জানি কোনো উওর তোমার কাছে নেই ক্ষনিকের মোহে পড়ে তুমি আজ সব হারিয়েছো অনন্যা।তোমার পাপের শাস্তি তুমি হাড়ে হাড়ে দেখতে পাবে এবার।প্রতিটা দিন আমি যে ভাবে জ্বলেছি দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি তোমাকে তার দ্বিগুণ কষ্ট যদি আমি ফেরত না দিয়েছি তো আমার নাম ও রোহান খান না।তারপর সব ভাবনা বাদ দিয়ে আবার কাজে মন দিল রোহান……,,

–এতক্ষণ অতিতের ভাবনায় ডুবে ছিলাম মনেই ছিলনা যে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ খেয়াল হতেই বেড ছেড়ে উঠে আলমারির দিকে এগোলাম।টি-শার্ট টাই আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে ভাজ করে আবার আগের জায়গায় রেখে দিলাম।আলমারির ডান সাইডে তাকাতেই কনফিউজড হয়ে গেলাম কারন এখানে দুইটা ড্রেস রাখা আছে। সবুজ আর সাদার কম্বিনেশনে একটা সেলোয়ার আর কমলা কালারের একটা শাড়ি বুঝতে পারছিনা কোনটা পরবো…..

–ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ড্রেসগুলোর উপর একটা কাগজ পড়ে আছে কৌতুহল নিয়ে কাগজটা হাতে নিলাম।কাগজের ভাজটা খুলে দেখি তাতে লেখা আছে…..

…………শাওয়ার নিয়ে সেলোয়ার টা পরবা তাহলে রান্নার সময় কমফোর্টেবল হবে।আর হ্যাঁ রান্না শেষে ফ্রেশ হয়ে অবশ্যই শাড়িটা পরবা…..

(রোহান)

–রোহানের পাগলামি দেখে হেসে ফেললাম পাগল টা এখনও কত কেয়ার করে আমার।তারপর ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে সেলোয়ার টা নিয়ে এগোলাম শাওয়ার নিতে……

–শাওয়ার শেষে মাথা মুছতে মুছতে এসে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়ালাম।শাওয়ার নিয়ে অনেকটা হালকা মনে হচ্ছে এখন।হঠাৎ মিরোরের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম একটা হলুদ কালারের কাগজ আটকানো মিরোরের সাথে।তাতে কিছু লেখা।খেয়াল করে দেখলাম কাগজ টাই লেখা আছে…..

……..চুলদিয়ে যে টপটপিয়ে পানি পড়ছে সেদিকে খেয়াল আছে আপনার ম্যাম।এখনও সেই পাগলিটাই রয়ে গেছ। ভালোকরে চুলটা মুছে ফেলো নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে কিন্তু……

(রোহান)

–চিঠিটা পড়ে চুলের দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি চুল দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে বাট ও এটা আগে থেকে জানলো কি করে?পাগলটার পাগলামি গুলো দেখে খুশিতে কেঁদে ফেললাম।এখনো সেই আগের মত পাগল টাই রয়ে গেছে।তারপর মাথাটা ভালোকরে মুছে ভেজা শাড়িটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এগোলাম কিচেনের দিকে।

–কিচেনে এসে ফ্রিজ খুলে মাথা আমার পুরো হ্যাং হয়ে গেল।সবজি,মাছ,মাংশ আরো কত কি এই সব এখন আমায় রান্না করতে হবে নাকি। ও আল্লাহ এমনিতেই আমার মাজা ব্যাথা করছে তারপর আবার এইসব একলা হাতে কাটাকাটি রান্না করতে করতে আমি নির্ঘাত মারা পড়বো আজ।একা একা বক বক করছিলাম আর সবজি গুলো নিয়ে টেবিলের উপর রাখছিলাম হঠাৎ সামনে দেয়ালের দিকে চোখ যেতেই দেখি লম্বা একটা কাগজ লটকানো ওয়ালের সাথে। কাগজটাই লেখা আছে…..

…………অনুসোনা আজ রান্না করবা বিরিয়ানি,রোস্ট, চিলি চিকেন,চিংড়ি মাছের মালাইকারি,কাতলা মাছের কালিয়া,সরষে ইলিশ,ছোট চিংড়ি দিয়ে শাক ভাজি আর সালাদ ব্যাস এগুলো।আর হ্যাঁ অবশ্যই সাবধানে রান্না করবা কিন্তু পাখি………..

(রোহান)

–এত্তবড় লিস্ট দেখেতো আমার মাথায় ঠাডা পড়ল।ওরে জালিমের ঘরের জালিম এই ছিল তোর পেটে পেটে এতক্ষণ আলগা পিরিত দেখালি এই লিস্ট ধরাই দিবি বলে।আর কিছু বাকি ছিল কি তোর লিস্টের। মনডা চাইছে আজ সত্যি তোর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে একা একা রোহান কে বকে যাচ্ছে অনন্যা আর কাজ করছে…….

–ওদিকে রোহান অনন্যার কথাশুনে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। অনুসোনা সবে তো শুরু আগে আগে দেখো কিয়া হোতাহে বলে রোহান আবার হাসতে লাগলো…..
.
.
.
.
.
—রান্না শেষ করতে করতে মাগরিবের আজান পার হয়ে গেছে।আমার এখন নাকের জল চোখের জল এক হওয়ার অবস্থা। কত দ্রুত যে সব কাজ করেছি তা শুধু একমাএ আমি জানি…..

–ওরা যে কোনো মুহুর্তে এসে যেতে পারে। মাঝে রোহান কয়েকবার ফোন করে জিজ্ঞেস ও করেছে রান্না শেষ হইছে কিনা।খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে যাব তখনি কলিংবেল বেজে উঠল। ফ্রেশ হওয়া আর হলনা ওরা বোদহয় এসে গেছে তাই মাজায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা খুলে ঠিক করতে করতে এগোলাম দরজার দিকে…..
.
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৭

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৭
#আরিশা অনু

–বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেল।খুব ক্লান্ত লাগছে তাই রুহিকে ফ্রেশ করে দিয়ে আমি ও ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর বেডে গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখে…..

–মাগরিবের আজান কানে আশাই ঘুম ভেঙে গেল আমার।তাই বেড ছেড়ে উঠে পড়লাম।ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম তারপর রুহিকে পড়তে বসালাম।অনেকদিন পর মনটা আজ ফুরফুরে লাগছে।হঠাৎ রোহানের কথা মনে পড়ে গেল আরে আমার ফোনটা তো সাইলেন্ট করা এখনো। আমার একটুও খেয়াল নেই ফোনের কথা কে জানে রোহান আবার ফোন দিল কি না।রুহিকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে আমি রুমে আসলাম..

–রুমে এসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম।ফোন চেক করে দেখি রোহান ৪০+ ফোন দিয়েছে আমার মাথায় এবার বাঁচ পড়ল। না জানি কাল কোন শনি অপেক্ষা করছে আমার জন্য আবার।ভয়ে ভয়ে রোহানকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর ও রিসিভ করলো….

–আসসালামু আলাইকুম।স্যার আমি অনন্যা বলছি। স্যরি স্যার আমার ফোনটা কখন সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি।প্লিজ স্যার এবারের মত আমায় ক্ষমা করে দিন।আর কখনো এমন ভুল করবোনা কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামল অনন্যা…..

–ওয়ালাইকুম আসসালাম।মিসেস অনন্যা প্রথমত আমার চোখ আছে আপনি যখন ফোন দেন আপনার নাম টা আমার ফোনের স্কিনে স্পষ্ট ভাবে ভেষে ওঠে তাই ফালতু সময় নষ্ট করে আপনার নাম বলা লাগবে না।আর দ্বিতীয়ত আপনার কাছে আমি কোনো ব্যাখ্যা শুনতে চাইনি যে এত পক পক করছেন।যাই হোক কাল সকাল আটটার মাঝে আপনাকে আমার বাসায় দেখতে চাই কথাটা বলেই ঠাঁস করে ফোনটা কেটে দিল রোহান।তারপর কিছু সময়ের জন্য ফোনটা অফ করে দিল কারন ও জানে এত দ্রুত আসতে বলাই অনন্যা আবার ফোন দেবে ওকে তাই ফোনটা অফ করে রাখলো…..

–আরে সকাল আটটাই মানে কি এত সকালে কি করে যাব আমি। আর রুহিকে স্কুল এ নামিয়ে তারপর না আমি যাব। আজব তো আরে এ ফোনটা ও অফ করে দিয়েছে শয়তান লোক একটা। বিড় বিড় করে রোহান কে গালি দিতে দিতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো অনন্যা….

–সকালে ফজরের আজানে ঘুম ভাঙল অনন্যার। উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামায আদাই করে নিলাম।কিছুক্ষণ পরে কিচেনে যেয়ে ভাত চাপালাম কারন আজ দ্রুত ওবাড়িতে যেতে হবে।লেট হলে রোহান আবার লংকা কান্ড বাধিয়ে দেবে সাথে তৃধা কূটনি তো আছেই।তৃধার কথা মনে পড়তেই বুকচিরে বেরিয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস। দ্রুত রান্না শেষ করলাম ততক্ষণে আম্মু ও কিচেনে চলে এসেছে…..

–কিরে মা আজ এত দ্রুত রান্না শেষ করলি সকাল করে বের হবি নাকি আজ আম্মু আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল….

–হ্যাঁ আম্মু আজ সাত টার সময় বেরোনো লাগবে কাল যাইনি বলে আজ দ্রুত যেতে বলেছে……

–তো আমায় আগে বলবিনা এটা তাহলে আমি সকাল করে উঠে রান্না টা করে রাখতাম….

–ঠিক আছে আম্মু সমস্যা না আমার চিন্তা হচ্ছে রুহিকে নিয়ে।মেয়েটাকে আজ স্কুল এ কে দিয়ে আসবে তাই ভাবছি….

–আমি আছি কি করতে তুই একদম চিন্তা করিস না আমি ওকে স্কুল এ দিয়ে আসবো তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে….

–উফ্ আম্মু বাঁচালে আমায় আমি তো রাত থেকে টেনশনে আছি এটা নিয়ে….

–পাগলি মেয়ে আমার যা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আয় আমি খাবার দিচ্ছি….

–ঠিক আছে আম্মু বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল অনন্যা….

–ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম রোহানের বাসার উদ্দেশ্যে।কি জানি আজ আবার কোন শনি আছে আমার কপালে।প্রতিদিন তো কোনো না কোনো অঘটন লেগেই থাকে আজ আবার কি হতে চলেছে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে অনন্যার….

–একদম সকাল হওয়ায় আসতে কোনো সমস্যা হয়নি আজ কারন এত সকালে জ্যামের কোনো ভয় থাকেনা। অন্যদিন যেখানে ৩০-৪০ মিনিট লেগে যাই আজ সেখানে ২০মিনিটে চলে এসেছে অনন্যা।আর সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া ও যেন চারপাশটা আরও স্নিগ্ধা করে তুলেছে আজ।সাথে মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলেছে বেশ লাগছে পরিবেশটা অনন্যার আজ।তারপর সব ভাবনা চিন্তা কে একপাশে ফেলে রেখে এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে অনন্যা….

–দরজার সামনে যেয়ে কলিংবেল দিতে দেরি হলেও ওপাস থেকে রোহানের দরজা খুলতে এক সেকেন্ড ও দেরি হলনা।মনে হল ও যেন আগে থেকেই অনন্যার জন্য দরজার অপাশে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।অনন্যা কিছুটা অবাক হলেও বুঝতে দিলনা রোহান কে সেটা।তারপর রোহানকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

–স্যার আজ এত তাড়াতাড়ি আসতে বললেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি কথাটা বলে থামলো অনন্যা…..

–অনন্যার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে রোহান বললো এতকথা শোনার সময় নাই। সন্ধায় মামা-মামি আসবে কানাডা থেকে তাই পুরো বাড়ি সন্ধার আগে আমার পরিষ্কার চাই।কোনো কিছু যেন এদিক ওদিক না দেখি আমি। আর হ্যাঁ এখন বাসার সব কাজের লোক ছুটিতে আছে সুতরাং সব কাজ তুমি একা করবা।কোনো কিছু যেন কমতি না থাকে। আর রান্নাটা ও করে রাখবা সন্ধার আগে ওরা এসে খাবে এখানে।আর যতদিন ওরা এখানে থাকবে ওদের সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার উপরে।সুতরাং কোনো রকম কমপ্লেইন যেন না শুনি আমি।একটানা কথাগুলো বলে সোজা উপরে চলে গেল রোহান আর এদিকে অনন্যা সব শুনে হা করে দাঁড়িয়ে রইলো বোকার মত….

–সারা বাড়িতে কম করে হলেও পাঁচটা রুম সাথে বারান্দা, কিচেন, ড্রয়িং, ছাদ এসব আমি একা হাতে কখন গোছাবো মাথার তার কি সব এক সাথে কেটে গেছে এর।আজ কেন কাল সারাদিন গোছালে ও তো শেষ হবেনা তার উপর রান্না না যানি কত রকমের করা লাগবে আজ….

–উফ্ এখন ইচ্ছা করছে হারামিটাকে ধরে গরম পানিতে চুবাই।শয়তান,এনাকন্ডা,অক্টোপাস, কান লম্বা হাতি একটা মনে মনে এক ঝুড়ি গালি দিতে দিতে সিঁড়ি বেয়ে এগোলাম ঝাড়ু হাতে উপরের দিকে…..

–টানা তিন ঘন্টা ধরে সব রুম পরিষ্কার করলাম এবার সব মোছার পালা।অলরেডি আমার মাজার বারোটা বেজে গেছে।তারপর সব রুম গুলো মুছে বের হতে হতে প্রায় তিনটা বেজে গেছে এদিকে আমার সারা গা ব্যাথায় অবস্থা খারাপ….

–আর গা হাত পায়ের যে অবস্থা তাতে গোছল না করলে ও তো উপায় নাই। কিন্তু সাথে তো কোনো ড্রেস ও নিয়ে আশিনি আমি কি করি এখন শাওয়ার নিয়ে পরবো টা কি একা একা কথা গুলো বলে চলেছে অনন্যা….

–অফিসে বসে বসে অনন্যার কান্ড দেখছে আর হেসে মরছে রোহান।বেচারি আমার সাথে গেম খেলার ঠেলা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে তুমি।রুম পরিষ্কার করা তো শেষ এবার রান্নার পালা বাট ওভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছে ও হুম একটা ফোন করে দেখি তারপর রোহান ফোন দিল অনন্যাকে…..

–অনন্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল কি করা যায় তখনি রোহানের ফোন আসলো।খচ্চর, বদমাশ ব্যাটা এতক্ষণ ধরে গরু খাটুনি খাটিয়ে এখন আবার ফোন দিয়ে আলগা পিরিত দেখানো হচ্ছে তাইনা।রাগে গজ গজ করতে করতে ফোন রিসিভ করলো অনন্যা…

–কি করছো কাজ সব শেষ হয়ে গেছে তো হাতে কিন্তু সময় নাই বেশি কথাগুলো বলে থামলো রোহান….

–না আপনার জন্য কিছু বাকি রেখেছি বাসায় এসে বাকি কাজটা করে নিন ঝাঁঝালো কন্ঠে উওর দিল অনন্যা….

–রোহানের এখন প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে তারপর ও হাসি চেপে রেখে বললো মিসেস অনন্যা আপনি কি ভুলে গেছেন কার সাথে কথা বলছেন..?যাই হোক কাজ শেষ হলে শাওয়ার নিয়ে রান্না করতে যাবেন দ্রুত। আর হ্যাঁ আপনার ড্রেস আমার আলমারির ভেতরে ডান সাইডে রাখা আছে ওখান থেকে নিয়ে তারপর শাওয়ারে যাবেন কথাগুলো একটানা বলে অনন্যাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল রোহান….
.
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৬

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৬
#আরিশা অনু
–আজ রুহির স্কুল এ ফাস্ট পরিক্ষা মেয়েটা এর আগে কখনো পরিক্ষা দেয়নি তাই ভয় পাচ্ছে।ভাবছি আজ ছুটি নেব আর রুহির সাথে ওর স্কুল এ যাব।মেয়েটাকে একটু ও সময় দিতে পারিনা আজকাল।আর সারাদিন রোহানের বাসায় কাজ করতে করতে ও অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় তাই বাসায় এসে কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ি।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিলাম তারপর রোহান কে ফোন দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ও ফোন রিসিভ করলো…

–আসসালামুআলাইকুম।স্যার আমি অনন্যা বলছি…..

–ওয়ালাইকুমআসসালাম।হ্যাঁ বলো অনন্যা….

–স্যার আজ আমার ছুটি লাগবে বললো অনন্যা…..

–হঠাৎ ছুটি কেনো জিজ্ঞেস করলো রোহান…?

–কি বলবো এখন বুঝতে পারছি না তাই বললাম আমার শরীরটা একটু খারাপ তাই আজ যদি ছুটি দিতেন তাহলে একটু ভালো হতো কথাটা বলে থামলো অনন্যা…..

–অনন্যার শরীর খারাপ শুনে বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠলো।কি হল ওর আবার তাই ভাবনা বাদ দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোমার অনন্যা…?

–ডক্তর দেখিয়েছো তো..?খুব বেশি অসুস্থ কি..?
আমি কি ডক্তর পাঠাবো..?এই মেয়ে কথা বলো না কেন হ্যাঁ। আমার টেনসন হচ্ছে তো প্লিজ কিছু বলো একদমে কথা গুলো বলে থামল রোহান…..

–আমার সামান্য অসুস্থতার কথা শুনে রোহানের পাগলামি গুলোই বলে দিচ্ছে যে ও কতটা ভালোবাসে আমায়।তারপর ওকে বললাম ঠিক আছি আমি স্যার এত টেনশন করার মত কিছু হয়নি।তারপর আর দু একটা কথা বলে ফোন রাখলাম….

–রুহিকে রেডি করে দিলাম আর আমিও রেডি হয়ে নিলাম।ভাবছি ওর পরিক্ষা শেষে ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হব আজ।মেয়েটা স্কুল থেকে বাসায় এসে একা একা বোর হয় তাই আজ একটু ঘুরতে নিয়ে যাব ওকে।তারপর আম্মুকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম….
.
.
.
.
.
–অনন্যার হঠাৎ কি হল খুব বেশি অসুস্থ কিনা কে জানে উফ্ এত টেনশন হচ্ছে এখন আমার কে জানে মেয়েটা কি করছে এখন।ডক্টর দেখিয়েছে কিনা কে জানে। ও যা কেয়ারলেস কে জানে ঠিক মত মেডিসিন নিচ্ছে কি না টেনশনে আমার মাথা ধরেছে এখন।আচ্ছা একটা ফোন দেব কি? হুম ফোন দিয়ে দেখি কি করছে মেয়েটা। নাহ্ ফোন ও তো ধরছে না এই মেয়ে কি জানেনা যে আমি ফোন দেব।কতবার ফোন দিলাম কোনো খবর ই নাই। এতক্ষণ ধরে একা একা কথাগুলো বলে যাচ্ছে রোহান…..!!!

–একটু আগে রুহির পরিক্ষা শেষ হয়েছে তাই ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্কুল থেকে।আম্মুকে আগেই বলে দিয়েছিলাম যে রুহিকে নিয়ে ঘুরতে যাব আজ।তারপর একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লাম মা মেয়ে…..

–আম্মু আমরা কোথায় যাব এখন অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো রুহি….

–এইতো আজ আমার সোনামা টা কে নিয়ে শিশু পার্কে যাব এখন…

–সত্যি আম্মু…?

–হুম সত্যি তারপর আমার মার পছন্দের সব খাবার ও খাব আজ আমরা কথাটা বলে থামলো অনন্যা……

–ইয়ে কি মজা কি মজা আজ আমরা ঘুরতে যাব বলে আনন্দে লাফিয়ে উঠল রুহি।আমার আম্মু বেস্ট আম্মু বলে অনন্যা কে জড়িয়ে ধরলো রুহি….

–অনেক দিন পর রুহিকে এমন আনন্দ করতে দেখে চোখে পানি এসে গেল আমার।এত অল্পতে আমার মেয়েটা কত খুশি তারপরও ওকে এটুকু সময় দিতে পারিনা আমি কথাটা ভাবতেই দুচোখ ভেঙে কান্না আসছে এখন আমার। তারপর ও রুহির কথা ভেবে নিজেকে সামলে নিলাম…..

–শিশুপার্ক থেকে ঘুরে এসে একটা রেস্টুরেন্ট এ ডুকলাম। মা মেয়ে খেয়ে আম্মুর জন্য কিছু খাবার নিলাম তারপর বেরিয়ে পড়লাম বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুদূর আসার পর রাস্তার পাশে ফুসকা ওয়ালাকে দেখে রুহি ফুসকা খাওয়ার বাইনা ধরলো।কি আর করবো বাধ্য হয়ে মেয়ের আব্দার মেটাতে মাঝ রাস্তায় নেমে পড়লাম ফুসকা খেতে।সত্যি বলতে বেপারটা আমি নিজেও উপভোগ করছি। আগে যখন আমি আর রোহান এক সাথে থাকতাম প্রায় ই রাতে আমি ফুসকা খাওয়ার বাইনা ধরতাম। আর আমার জেদ এর কাছে হার মেনে রোহান নিয়ে আসতো আমায় ফুসকা খাওয়াতে।সবথেকে মজার ব্যাপার ছিল একপ্লেট ফুসকা ভাগ করে খাওয়ার সময়টা।যখন ই আমরা ফুসকা খেতে আসতাম তখন ই ফুসকা ওয়ালা মামাকে বলতাম আমাদের দুজনের ফুসকা যেন এক প্লেট এ দেয়।এমন একটা সময় ছিল যখন মামা কে বলাও লাগতো না মামা আমাদের দেখেই একপ্লেটে ফুসকা দিয়ে দিত।তবে আরও একটা মজার ব্যাপার ছিল ফুসকা খাওয়ার সময় রোহান আমায় খাইয়ে দিত নিজে হাতে আর আমি ও ওকে খাইয়ে দিতাম।সব সময় এই নিয়মটা রোহানের কাছে বাধা ছিল যেন।আমি মাঝে মাঝে যেদিন মজা করে বলতাম নিজে হাতে খাও জনাব সেদিন নাক ফুলিয়ে মুখ বাঁকা করে বসে থাকতো।আর আমি হেসে উঠতাম ওর কান্ডগুলো দেখে….

–বসে বসে এতখন উপরের কথা গুলো একমনে ভাবছিলাম তখন ই ফুসকা ওয়ালা মামার ডাকে হুস ফিরল আমার……

–আরে আফা আপনে এতবছর কই আছিলেন?স্যার আসেনাই আপনার লগে? এই বাচ্চাডা কেডা আপনের মাইয়া বুঝি কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামল ফুসকা ওয়ালা….

–লোকটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি আরে এত সেই ফুসকা ওয়ালা মামা।তারপর মামার সাথে কথা বললাম রুহিকে পরিচয় করিয়ে দিলাম ওনার সাথে।আর টুকটাক কথায় জমে উঠল তিন জনের এই ছোট দল টা…
.
.
.
.
.
–অনন্যা কেমন আছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি খুব টেনশন হচ্ছে এদিকে ফোন টা ও ধরলো না।শরীর কি বেশি খারাপ হয়ে গেল ওর উফ্ কি মুশকিলে পড়া গেল।এদিকে কোনো কাজে ও মন বসছেনা আজ তাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অফিস থেকে……

–কিছুদূর আসার পর হঠাৎ চোখ গেল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ফুসকার গাড়িটার দিকে আর তার পাশে একটা বেঞ্চে বসে আছে অনন্যা আর সেদিনের সেই বাচ্চা মেয়েটা।ওরা খুব হেসে হেসে ফুচকা ওয়ালার সাথে কথা বলছে।মেয়েটা এত কিউট আর মায়াবি যে ইচ্ছা করছে এখনি যেয়ে কোলে তুলে নিয়ে আদর করি…..

–হঠাৎ খেয়াল হল রোহানের অনন্যা বলেছিল ও অসুস্থ তাহলে এখানে কি করছে ও….?

–এতক্ষণ এ বুঝলাম তার মানে অনন্যা আমায় মিথ্যা বলেছিল। আসলে ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল। আমি টেনশন করব জেনেও আবার আমায় মিথ্যা বললো ও।আর আমি কিনা গাধার মত সেই সকাল থেকে ওর জন্য চিন্তা করে যাচ্ছি আর ও এখানে দিব্বি মজায় আছে…..

–মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এবার আমার এখন ইচ্ছা করছে যেয়ে ওর চুলের মুঠি ধরে ঠাঁস ঠাঁস করে কয়টা চড় বসিয়ে দি।আর কত খেলবে ও আমার ইমোশন গুলো নিয়ে।তারপর নিজের রাগ কন্ট্রোল করলাম অনেক কষ্টে।খুব সখ না তোমার গেম খেলার অনন্যা কাল তোমায় বোঝাবো গেম কারে কয়।আমার সাথে গেম খেলার স্বাদ কাল মেটাবো তোমার।সাত জন্মে ও ভুলতে পারবানা এমন অবস্থা করবো তোমার আমি। এতক্ষণ গাড়ি এক সাইডে থামিয়ে অনন্যাকে দেখছিল আর একমনে কথাগুলো বলছিল রোহান।তারপর রাগে রাগে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল রোহান…..!!!
.
.
.
.
.
Continue….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৫

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১৫
#আরিশা অনু

–খাবারটা মুখে দিয়ে রোহান এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো ভয়ে আমার আত্মা কেঁপে উঠল।চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে ওর তারপর ও খেয়ে চলেছে।বুঝতে পারছিনা খাবারে কি কোনো প্রবলেম হল কিনা।তখন তাড়াহুড়ায় খাবার কেমন হয়েছে চেক করতে ভুলে গিয়েছিলাম আমি।তারপর ভয়ে ভয়ে রোহান কে জিজ্ঞেস করলাম স্যার খাবার কেমন হয়েছে….?

–এখনও কিছু বলছে না চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে ও এদিকে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে ওর তবেকি খাবারে ঝাল বেশি হল।উফ্ আমার নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন কেন যে খাবার গুল চেক করলাম না তখন।কি করব বুঝতে পারছিনা তাই চেয়ার টেনে বসে একটা প্লেট এগিয়ে নিয়ে এক পিচ মাংশ উঠিয়ে নিলাম।মাংশটা একটু মুখে দিতেই বুঝলাম যে প্রবলেম টা কোথায়।আমার পুরো মুখ জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে এখন আর রোহান জেদ ধরে পুরো খাবার টা খেয়ে যাচ্ছে…..

–বেচারা এমনিতে ঝাল সহ্য করতে পারেনা তার উপর আজ অসম্ভব ঝাল হয়েছে তরকারিতে তাও আমার উপর রাগ করে খেয়েই চলেছে তখন থেকে।ঝালের চোটে মুখ, নাক, কান সব টমেটোর মত লাল হয়ে গেছে ওর।কি করবো বুঝতে পারছিনা তারপর বললাম রোহান প্লিজ আর খেওনা। আমার কথা না শুনে আবার খেতে শুরু করলো রোহান।এই ছেলে কথা শুনবেনা আমার তাই বাধ্য হয়ে খাবারে পানি ঢেলে দিলাম না যানি এবার কোন শনি আছে আমার কপালে……,,,

–ভেবেছিলাম অনেক বছর পর অনন্যার হাতের খাবার খাব। খুব আশা নিয়ে ওকে বলে ও ছিলাম রান্না করতে বাট ও যে এমনটা করবে আমার সাথে কখনো ভাবতেই পারিনি আমি।অনন্যাকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য খাবারে ঝাল হওয়ার সত্ত্বেও এতখন খেয়ে যাচ্ছিলাম। ও বারন করার পর ও ওর কথা না শুনে খেয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু ও খাবারে পানি ঢেলে দিল। এবার আমার রাগটা চরম পর্যায়ে উঠে গেল চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় বসিয়ে দিলাম অনন্যার গালে।কি ভেবেছো কি তুমি হ্যা যা মন চাইবে তাই করবা আর আমি কিছু বলবোনা তোমায়।অনেক আশা নিয়ে এতবছর পর তোমার হাতের খাবার খেতে চেয়েছিলাম আর তুমি কি করলে রিভেঞ্জ নিলে…..?

–বাহ্ অনন্যা বাহ্ জবাব নেই তোমার আসলে আমিতো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুমি সেই মেয়ে যাকে কিনা আমি নিজের সবকিছু দিয়ে ভালোবেসে ও মন পাইনি। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভালোবেসেছিলাম আর তুমি তার প্রতিদান স্বরুপ আমার সাথে দিনের পর দিন প্রতারনা করে গেছ।এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিলে যে অবৈধ সম্পর্কে ও জড়িয়ে ছিলে।আমি তো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুমি একটা নষ্টা মেয়ে।আর আজ আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর ও কি করে তোমার কাছে ভালো কিছু আশা করি।তুমি যে ঝালের পরিবর্তে আমার খাবারে বিষ মিশাও নাই এটাই তো আমার সৌভাগ্য…..,,,,,,

–তবে একটা কথা মনে রেখো অনন্যা আজ যেটা করলে তুমি এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে তোমায় আর সেটা খুব শিগ্রই।তারপর অনন্যা কে রেখে উপরে চলে আসলাম।ঝালে পুরো মুখে আগুন ধরে গেছে আমার চিৎকার করতে মন চাইছে এখন।কি করে এমন করলো আমার সাথে যেখানে ও যানে আমি ঝাল একদম সহ্য করতে পারিনা।ঝালের জ্বালায় মাথা ঘুরছে আমার এখন তাই দ্রুত ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে পড়লাম….!!!

–রোহান একটা বার আমার কথা শুনতেও চাইলো না আমি তো ইচ্ছা করে ওর খাবারে ঝাল মিশায়নি। কি করে এত ঝাল হল তাও বুঝতে পারছিনা আমি। আর ও এতটাই নিচে নেমে গেছে আজ যে আমার গায়ে হাত তুলতে ও একটা বার বাধলোনা ওর।আর কি বললো আমি নষ্টা মেয়ে উফ্ আর কত নোংরা কথা শুনতে হবে আমায় আর কত ধর্যের পরিক্ষা নেবে আল্লাহ…?

–রোহান চড় মারাতে যতটা না আঘাত পেয়েছি আমি ওর মুখে নষ্টা শব্দ টা শুনে তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি আজ আমি।আর কত অপমান বঞ্চনা সহ্য করবো আমি।সত্যি আর এগুলো নিতে পারছিনা বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার এখন।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে ছিহ্ এতটা নোংরা মানুষিকতা তৈরি হয়েছে রোহানের আমার প্রতি। এতক্ষণ অনন্যা দাড়িয়ে দাড়িয়ে উপরের কথা গুলো ভাবছিল হঠাৎ পেছন থেকে কার ডাকের আওয়াজ আসলো যেন তাই দ্রুত চোখ মুছে পিছনে তাকিয়ে দেখে তৃধা দাড়িয়ে আছে আর হাসছে…..!!!

–আরে অনন্যা তোমার গালে এটা কিসের দাগ..?
ইশ্ পুরো পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে আছে গালের উপর রোহান কিন্তু এটা একদম ঠিক করেনি আজ।অবশ্য তোমার গালের নকশা বদলে দেওয়ার পিছনে আমার ভূমিকাটা কিন্তু অন্যতম ছিল আর রোহান তো আমার কাজটাই সামান্য একটু হেল্প করল মাএ। সো তুমি চাইলে আমাকে থ্যাংকস দিতে পারো অনন্যা কথাগুলো বলে থামলো তৃধা…..!!!

–কি বলছে এই মেয়ে আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছেনা তাই তৃধাকে বললাম কি বলতে চাও সোজাসুজি বলো তৃধা এত নাটকিয়তার কোনো প্রয়োজন নেই…..,,,,

–আরে বেবি কুল ডাউন এত অল্পতে ধৈর্য হারা হলে চলবে নাকি এখনো তো আসল টুইস্ট বাকি আছে…..,,,

–টুইস্ট কিসের টুইস্ট তৃধা নেকামি না করে কি বলবে সরাসরি বলো কথাটা বলে থামলো অনন্যা….,,,

–আরে অনন্যা বেবি এত উতলা হওয়ার কি আছে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো তৃধা…..!!!

–রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে এখন আমার তারপর ও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম তৃধার মুখ থেকে সত্যিটা শোনার জন্য। কারন আমার বোঝা হয়ে গেছে এই সব ঘটনার পেছনে এই মেয়ে ছাড়া আর কারো হাত থাকতে পারেনা। কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ তৃধার কথায় ধ্যান ভাঙল আমার….,,,,

–আরে অনন্যা বেবি তুমি একদম ঠিক ধরেছ খাবারে ঝাল মেশানোর পুরো ক্রেডিট টা তো আমারি কথাটা বলে একটা শয়তানি হাসি দিল তৃধা…..,,,

–শুনতে চাওনা কিভাবে এই ম্যাজিক টা করলাম আমি?হুম অবশ্যই শোনাব তোমায় বেবি….

–তুমি যখন ফ্রেশ হতে গিয়েছিল তখন ই আমি কিচেনে আসি এসে দেখি রুমকি ও নেই সেই ফাকে রেড চিলি পাওডার আচ্ছা মত মিশিয়ে দিলাম।আহ্ কি শান্তি যে লাগছিল যখন রোহান তোমায় ঠাটিয়ে দুইটা দিল ।উফ্ তখনতো আমার মন চাইছিল আনন্দে রোহানকে জড়িয়ে ধরে দুইটা পাপ্পি দি। এই অনন্যা বেবি তোমার রাগ হচ্ছে না? আমায় কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা করছে এখন তোমার তাইনা?হা হা আমার কিন্তু খুব মজা লাগছে তোমার এই ফেসটা দেখতে এখন…..,,

–হঠাৎ তৃধা শুর পাল্টে বললো বলেছিলাম না রোহানের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে ও তোমার খবর আছে আজ শুধু সাবধান করলাম নেক্সট টাইম এক ভুল দ্বিতীয় বার করলে তোমার এমন অবস্থা করবো যে আয়নায় নিজের মুখ দেখতে ও ভয় পাবা তারপর তৃধা ওখান থেকে চলে গেল……,,,

–খুব রাগ উঠছে এখন আমার কেন আমি এই কাল নাগীনির কথা ভুলে গেলাম।আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।আমার বোকামির জন্য রোহান আবার আমায় ভুল বুঝলো অনন্যা নিজেকে বকতে বকতে কথা গুলো বললো….,,,

–দিনগুলো এভাবে চড়াই উতরাই করে পেরিয়ে যাচ্ছিল।যখনি অনন্যা রোহান কাছাকাছি আসে মাঝখানে তৃধা এসে রোহানের মন বিষিয়ে দেয়। তারপর ও অনন্যা রোহানকে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে এটাই ওর জন্য শান্তি…..,,,
.
.
.
.
Continue…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৪

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৪
#আরিশা অনু
–রুম থেকে বেরিয়ে অনন্যা কে সারা বাড়ি খুজলাম বাট কোথাও পেলাম না।হঠাৎ খেয়াল হলো ওতো আগে একটু রেগে গেলেই ছাদে চলে যেত আজও গেল না তো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো রোহান। তারপর সব চিন্তা বাদ দিয়ে আগালাম ছাদের দিকে……!!

–একটু পর ছাদে যেয়ে দেখি অনন্যা ফ্লোরে বসে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠলো আমার। আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে যেয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম।তারপর দুহাত দিয়ে ওর মুখটা উপরে তুললাম। ওর মুখটা দেখে বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে পুরো চোখমুখ লাল করে ফেলেছে মেয়েটা…..!!!

–মুখ তুলে আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে খুব খারাপ লাগছে ওকে এভাবে দেখে। তারপর ও উঠে দাঁড়িয়ে কিছু না বলে চলে গেলো আর আমি চুপচাপ আগের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। সব ভাবনা বাদ দিয়ে আগালাম নিচের দিকে……,,,

–ছাদে বসে কাঁদছিলাম কখন যে রোহান এসেছে খেয়াল ই করিনি আমি।একটু পর ও যখন আমার মুখটা ওর দুহাত দিয়ে উপরে তুললো তখন দেখলাম আমি।ও কিছু বলার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে ছাদ থেকে চলে আসলাম। নতুন করে আর কিছু শোনার ইচ্ছা নাই আমার। নীচে এসে সোজা কিচেনে ঢুকলাম। দুপুরে যেহেতু রোহান খেতে আসবে তাই এখন থেকে সব রেডি করে রাখা ভালো তাহলে রান্না করার সময় কোনো কিছু খুঁজতে হবেনা আর…..,,,

–সবকিছু ঠিকঠাক করছিলাম তখন একটা মেয়ে ডাকতে আসলো। এতোক্ষন মেয়েটাকে আমি দেখিনি এই মাত্র দেখলাম…..!!!

–নতুন আফা আপনারে রোহান স্যার ডাকতাছে জলদি আহেন,,,,,

–ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি বললো অনন্যা….,,,

–আচ্ছা আফা তারপর মেয়েটা চলে গেল…..!!!

–ইচ্ছা না থাকার সত্ত্বেও আগালাম ড্রয়িং রুমের দিকে। এসে দেখি রোহান সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন করছে। কি বলবো বুঝতে পারছিনা তারপরও বললাম স্যার কিছু বলবেন….???

–হ্যাঁ বলবো বলে মাথাটা তুলে অনন্যার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম বসো। অনন্যা কিছু না বলে চুপচাপ আমার পাশে বসে পড়লো…!!!

–শোনো আজ বিরিয়ানি রান্না করবা সাথে গরুর মাংসের ঝাল, চিকেন ফ্রাই করবা আর সালাদ করবা। উফ্ কতদিন যে তোমার হাতে এগুলো খাইনা বলে থামলো রোহান। হঠাৎ ওর হুস ফিরলো অনন্যার দিকে তাকিয়ে মনে মনে নিজের পাগলামির কথা ভেবে হেসে উঠল রোহান। তারপর অনন্যার সাথে কথা বলা শেষ করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো রোহান….,,,

–এখনো সেই আগের মত পাগলামিটা আছে, হালকা হেসে কথাটা বলে উঠলো অনন্যা তারপর রান্নার সবকিছু তৈরি করতে এগলো কিচেনের দিকে…..!!!

–আবার পিরিত জমে উঠেছে দেখছি নতুন করে বাট স্যরি রোহান বেবি অনন্যার হাতের খাবার যে তোমার খাওয়া হবেনা আজ। অনন্যা আজ যা রান্না করবে তা খাওয়ার পর তুমি সাত জন্ম পর্যন্ত মনে রাখবা আর সেই ব্যবস্থা আমি নিজে করবো বলে শয়তানি হাসি দিল তৃধা। এতোক্ষণ রোহান আর অনন্যার কথাগুলো আড়াল থেকে শুনছিল তৃধা তারপর হাসতে হাসতে উপরে চলে গেল ও…!
.
.
.
.
–অফিসে এসে কোনো কাজে মন বসছে না রোহানের। আর তাই ল্যাপটপ অন করে দেখতে লাগলো অনন্যা কি করছে। অনন্যা যাতে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলতে পারে সে জন্যই রোহান বাসায় কাজ দিয়েছে অনন্যা কে….

–এতোক্ষণ ধরে উপরের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খেয়াল করলাম অনন্যা আজ কলাপাতা কালারের শাড়ি পরেছে সাথে হালকা সাজ বেশ মানিয়েছে ওকে এই সাজে। ইশ্ বাসায় থাকতে এটা খেয়াল যে কেন করলাম না তাহলে সামনে থেকে দুচোখ ভরে দেখতে পেতাম তখন। অবশ্য তখন কান্নাকাটি করে চোখ মুখের যে হাল করেছিল মেয়েটা তাতে ওর মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকানোর মত ক্ষমতা ছিলনা আমার……,,,

–আজ আবার কোমরে শাড়ি গুজে রান্নায় লেগে পড়েছে পাগলিটা পাক্কা গিন্নি গিন্নি লাগছে ওকে এখন। উফ্ কখন যে লাঞ্চ টাইম হবে আর বাসায় যেয়ে অনন্যার হাতের রান্না খাবো।কতদিন পর ওর হাতের বিরিয়ানি,গরুর মাংস, চিকেন ফ্রাই খাব ভাবতেই জ্বিভে জল চলে আসছে আমার। এতোক্ষণ রোহান অফিসে বসে বসে এগুলো ভাবছিল তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে আবার কাজে মন বসালো…..,,,

–উফ্ আর কিছুক্ষন পর রোহান বাসায় আসবে অথচ আমার রান্না এখনো বাকি সেই সকালে এসে কিচেনে ঢুকেছি কিন্তু এখনো রান্নাটা শেষ করতে পারলাম না। আর দশ মিনিটের মধ্যে সব কমপ্লিট হয়ে যাবে তারপর সব খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে আমি ফ্রেশ হতে যাব। অনেকক্ষণ ধরে কিচেনে থাকায় ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি অসস্তি লাগছে এখন…..।

–কিছুক্ষন পর রান্না শেষ করে সবকিছু টেবিলে গুছিয়ে রেখে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আর রুমকি কে বলে গেলাম কিচেনের বাকি কাজগুলো সেরে ফেলতে। ওহ্ রুমকি হচ্ছে সেই মেয়েটা যে আমায় সকালে ডাকতে এসছিল। ইতিমধ্যে রুমকির সাথে বেশ ভাব জমে গেছে আমার। মেয়েটা বেশ চটপটে স্বভাবের খুব সহজে যে কোনো মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে মেয়েটার মাঝে।সকাল থেকে আমার সাথে আছে কখন কোনটা লাগবে মুখফুটে বলার আগেই এগিয়ে দিয়েছে মেয়েটা।খুব ভালো মেয়েটা….,,,

–ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রোহান চলে এসেছে তাই ওকে ফ্রেশ হতে বলে আমি টেবিলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তাই চেক করতে আসলাম….!!!

–একটু পর রোহান ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসলো। আমিও হাসিমুখে খাবারগুলো ওর প্লেটে বেড়ে দিলাম। খাবার মুখে নিয়ে ও এমন ভাবে তাকালো আমার দিকে যে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো ভয়ে…..!!!
.
.
.
.
.
Continue

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৩

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৩
#আরিশা অনু
–সকাল থেকে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে কত বছর পর আমার চিরচেনা সেই বাড়িটাই যাব আবার।কখনো ভাবিনি আবার ওবাড়িতে পা রাখতে পারবো।রোহান আমার সাথে আবার কোন নতুন গেম খেলতে চলেছে কে যানে।তার উপর আবার তৃধা নামক ডাইনি টা ও এসে জুটেছে। কি কি নাটক যে দেখতে হবে আমায় আল্লাহ ই ভালো যানে……!!!

–সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।আজ কলাপাতা কালারের একটা শাড়ী পরেছি সাথে হালকা মেকাপ,ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক, চোখে হালকা করে কাজল পরেছি,কপালে স্টোন এর সাদা টিপ, কানে একজোড়া সাদা টপ, আর হাতে সাদা পাথরের একজোড়া চুরি, আর চুলগুলো হাত খোপা করেছি ব্যাস রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম…!!!

–মাশাআল্লাহ আজ আমার মেয়েটাকে তো কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না।অনেক দিন পর তোকে সাজতে দেখলাম।খুব সুন্দর লাগছে আমার সোনা মাকে আজ ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াতেই আম্মু কথাটা বলে উঠলো…..!!!

–আম্মু কি যে বলনা তুমি তোমার মেয়ে পরীনা বরং একটা পেত্নি…..!!

— আমার কথায় রুহি আর আম্মু হেসে উঠলো তারপর রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে…..!!!

–রুহিকে স্কুল এ দিয়ে আমি রওনা দিলাম আমার পাঁচ বছর আগে ফেলে আসা সেই পুরোনো ঠিকানাই….!!!

–আধা ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম রোহানের বাসায়…!!!

–দরজার সামনে দাঁড়াতেই পাঁচ বছর আগের সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল আমার….!!!

–এমনি ঝড় বৃষ্টির রাতে রোহান আমায় বাসা থেকে বের করে দিয়ে ছিল।হাজার বার ওকে বলেছিলাম সব মিথ্যা তৃধা আমাদের আলাদা করার জন্য এসব করেছে। কিন্ত রোহান আমার একটা কথাও শুনেনাই।হাজার বার দরজা ধাক্কা দিয়ে ছিলাম যেন আজকের রাতটা অন্তত আমায় থাকতে দেই কিন্তু আমার কোনো কথা ই শুনিনি রোহান সেদিন।একটা বার ভাবে ও নাই যে এই দুর্যোগ মাথায় কোথায় যাব আমি।দরজার এপারে বসে অনেকখন কেঁদেছিলাম আমি।সেদিনি হয়তো সুইসাইড করতাম যদিনা আমার মাঝে রুহি থাকতো।হ্যাঁ তখন রুহি আমার মাঝে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে।এই খুশির খবরটা আমি যানতে পারি যেদিন সেইদিন ই এবাড়িতে আমার শেষ দিন ছিল।এতখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবছিলাম আর দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।হঠাৎ তৃধার ডাকে আমার হুস ফিরলো।দেখি ও দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে সামনে আমায় দেখে বললো….!!!

–আসুন মহারানী ভেতরে এসে আমাকে ধন্য করুন।নাটক দেখলে গা জ্বলে যায় আমার।আর কত কলা দেখাবি রে বাপু।যাও উপরে যেয়ে রোহানের যা যা লাগবে এগিয়ে দাও।তবে খবরদার আমার রোহানের কাছে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে ও খুন করে ফেলবো তোমায়।সো সাবধান মনের ভুলেও যেন রোহানের আসে পাসে না দেখি।কাজ শেষ করেই কেটে পড়বা কথা গুলো এক দমে বলে গট গট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল তৃধা…..!!!

–কি অদ্ভুত না স্বামী আমার আর অধিকার অন্য কারো। চোখ মুছে এগলাম আমরা আগে যে রুমে থাকতাম সে রুমের দিকে।আমার বাড়ি আমার সবকিছু কিন্তু সেসব শুধু নাম মাএ। আমার আর কোনো অধিকার নেয় এসবে।রোহানের রুমের সামনে যেয়ে দরজায় নক করলাম কোনো সাড়া পেলাম না।আবার নক করলাম আবারো সবকিছু নিশ্চুপ কারো কোনো সাড়া পেলাম না তাই এবার দরজা হালকা করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।ভেতরে যেয়ে দেখি রোহান রুমে নেই…..!!!

–আজ প্রায় পাঁচ বছর পর এই রুমে পা রাখলাম অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে রুমের ভেতর।খুব অদ্ভুত লাগছে এটা দেখে যে রোহানের আর আমার একসাথে তোলা বিয়ের একটা ছবি বেডের সামনের ওয়ালে রাখা ছিল। পাঁচ বছর আগে যে ভাবে ছিল এখনো ঠিক সেভাবেই রাখা আছে।ও হ্যাঁ আরও একটা জিনিস এখন আগের জায়গায় আছে সেটা হল আমার প্রিয় বুক শেলফ্। আমার বরাবরের অভ্যাস ছিল অবসরে বই পড়া তাই সখ করে রুমের ডান সাইডে জানালার পাশে বুক শেলফ্ টা রেখেছিলাম আর পাসে ছোট্ট একটা টেবিল এগুলো এখনো ঠিক জায়গাতে আছে বাট রোহান কোথায় গেল…?

–বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে তাহলে হয়তো ও শাওয়ার নিচ্ছে। কি পাগল ছেলেরে বাবা ড্রেস গুলো বের না করেই শাওয়ারে চলে গেছে। ওর এই বাজে অভ্যাসটা এত বছরে ও চেঞ্জ হলোনা দেখছি….!!!!

–তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে আলমারি থেকে ওর ড্রেসগুলো বের করে রেখে বারান্দায় গেলাম।ফুলগাছ গুলো আধামরা অবস্থায় পড়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পানি দেওয়া হয়না।রোহান তো এত অগোছালো ছিলনা কখনো ও তো অপরিষ্কার একদম পছন্দ করতো না।সময়ের সাথে সাথে ও হয়তো নিজেকে বদলে নিয়েছে বা সময় বাধ্য করেছে বদলে যেতে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপরের কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি দরজা খোলাম আওয়াজ হল মনে হয় রোহান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। আর কিছুখন ওয়েট করি ও চেঞ্জ করে নিলে তারপর রুমে যাব আমি…….!!!

–আরে এখানে ড্রেসগুলো কে বের করে রাখলো আমি তো রাখিনি তবেকি তৃধা রেখে গেল আশ্চর্য তো। কিন্ত তৃধা যে মেয়ে ও কখনো আমার ড্রেস বের করে দেবে বলে তো মনে হয়না।
এসব ভাবতে ভাবতে ড্রেস পরছিলাম তখন ই তৃধা নক না করে হুট করে রুমে ঢুকে পড়লো…..!!

–উফ্ কি লাগছে তোমায় রোহান ইচ্ছা করছে আজ ই বিয়েটা করে ফেলি বলে জড়িয়ে ধরলো তৃধা রোহান কে….!!!

–তৃধাকে কিছু বলতে যাব তখন ই বারান্দায় চোখ গেল। দেখি অনন্যা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে ওর।ওকে কষ্ট দেওয়ার এই একমাএ সুযোগ তাই অনন্যা কে দেখেও না দেখার ভান করে তৃধাকে বললাম হ্যাঁ সোনা খুব দ্রুত আমরা বিয়ে করে ফেলবো…..!!!

–তৃধাকে আর পায় কে এখন লাফদিয়ে রোহানের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরি গলায় বলতে শুরু করলো সত্যি জান আমারা বিয়ে করব…?কবে বিয়ে করবো বলনা প্লিজ……!!!

–তৃধার ন্যাকামি সহ্য না হলেও দাঁতে দাঁত চেপে রোহান উওর দিল খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবো আমরা তৃধা সোনা…..!!!

–তৃধা আহ্লাদে গদ গদ হয়ে বললো সত্যি তো এবার আর পালটি মারবা না তো বলে রোহানের গলা ছেড়ে সামনে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর….!!!

–রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে অনন্যার দিকে এগিয়ে যেয়ে বললাম কি নিলজ্জ মেয়ে তুমি হ্যাঁ। আমাদের রোমাঞ্চ দেখছিলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতখন।তোমার মত বেসরম বেহায়া মেয়ে আর দুটো দেখিনি আমি।বেরিয়ে যাও এখনি এই রুম থেকে।এটা শুধু আমার আর রোহানের রুম। নেক্সট টাইম রুমে ঢোকার আগে অনুমতি নিয়ে তারপর ঢুকবা নয়তো খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। আরো কিছু বলার ইচ্ছা থাকলে ও রোহান কে দেখে আর কিছু বললো না তৃধা।অনন্যা কে রুম থেকে বের করে দিয়ে আবার এগোলো রোহানের দিকে……!!!

–রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে আসলাম।এতটা নিচে কি করে নামলো রোহান।আমার এত বছরের #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো আবার নতুন করে জেগে উঠতে শুরু করেছিল। ভেবেছিলাম রোহান হয়তো ওর নিজের ভুলগুলো বুঝতে পাবে এবার।কিন্ত আজ নিজের চোখের সামনে যেটা দেখলাম এরপর রোহানের প্রতি আর কোনো অনুভূতি থাকা আমার জন্য পাপ।এতটা বছর যার কথা ভেবে এত অপমানের পরও ওকে আবার কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে এসেছি সেটা আজ সম্পূর্ণ মিথ্যা হয়ে গেল…..!!!

–এই মুহুর্তে আমার ভেতর দিয়ে যে কি বয়ে যাচ্ছে কাউকে এটা বোঝাতে পারবোনা আমি।সব থেকে বেসি কষ্ট লাগলো রোহানের বলা কথা গুলোয়। কি কি বললো যেন ও তৃধা কে। আর তৃধা কি বললো এটা আমার আর রোহানের রুম তারমানে ওরা এক রুমে থাকে ছিহ্ এতটা জঘন্য কি করে হলে রোহান…..??

–এটা আমার রোহান কখনো হতে পারেনা। আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি মাথাটা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। দুহাতে মুখ চেপে ধরে ছাদের উপর বসে কাঁদতে লাগলাম আমি।এগুলো দেখানোর জন্যই কি রোহান আমায় বাসায় আসতে বলেছে…?

–আমি সত্যিই পারবোনা এগুলো দেখতে। আর কত সহ্য করবো আমি আল্লাহ এর থেকে প্লিজ আমায় তুলে নাও।নিজের ভালোবাসার মানুষটা কে যে এভাবে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে পারবোনা আমি।এগুলো ভাবতে ভাবতে দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো অনন্যা….!!!
.
.
.
.
Continue….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১২

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-১২
#আরিশা অনু

–তারপর সব ভাবনা বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম যা আছে কপালে তাই হবে।অবশ্য নতুন করে অঘটন হওয়ার আর কি বাকি আছে।আমার রোহান কে তো আগেই কেড়ে নিয়েছে আমার থেকে ও।নতুন করে আর কিছু হারানোর মত নেই আমার…..

–কাজ করছিলাম তখন ই কে যেন দরজায় নক করলো ভিতরে আসতে বললাম দেখি নিপা আর রিসব এসছে। তারপর ওদেরকে বসতে বললাম…!!!

–এখন শরীর কেমন তোমার বললো রিসব…

–ঠিক আছি এখন আমি…

–ঠিকমত খাওনা নাকি হুম বললো নিপা…

–হুম নিপা ঠিক বলেছে এখন থেকে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবা অনন্যা বললো রিসব…!!!

–আচ্ছা অনন্যা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তোমাকে বলবো কি..?

–আরে নিপা বলে ফেল এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে….!!!

–আসলে তখন তৃধা ম্যাম বলছিল তুমি স্যারের লাইফটা নষ্ট করে দিয়েছো এটা বলার মানেটা ঠিক কি বুঝলাম না কথাটা বলেই থামলো নিপা….?

–নিপার কথার কি উওর দিব আমি। ওকে কি করো বুঝায় যে রোহান আমার কে।আর তৃধা নামক শকুন টা কেন এগুলো বললো সেটা ই বা কি করে বোঝাবো এদের।কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা আমি কি উত্তর দিব এখন।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। রোহান ওর কেবিনে যেতে বললো এখনি তাই নিপা আর রিসব কে বলে আমার কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম।আজ তো রোহানের ফোন বাঁচিয়ে দিল কিন্ত আবার যখন ওরা প্রশ্ন করবে তখন কি উত্তর দেব আমি ওদের….?
.
.
.
.
.
–অনন্যা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে আমার।তখন ও রাগ করে ঐ ভাবে চলে আসল খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।আমার একদম উচিৎ হয়নি ওকে ওইভাবে অপমান করা।কাজের বাহানায় একবার ওর কেবিয়ে যেয়ে দেখে আসবো ওকে।যাব বলে যখনি ওর কেবিনের দিকে তাকালাম আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার।আজ আবার ঐ রিসবের বাচ্চা অনন্যার কেবিনে গেছে ইচ্ছা করছে এখন যেয়ে খুন করে ফেলি ঐটা কে।বাট না তাড়াহুড়া করা যাবেনা একদম।এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপ ও মরবে আবার লাঠি ও ভাংবেনা।

–অনেক ভেবে একটা উপায় খুঁজে পেলাম তারপর অনন্যা কে ফোন করে আমার রুমে আসতে বললাম।একটু পর নক করার শব্দ হল বুঝলাম অনন্যা চলে এসেছে তাই ভেতরে আসতে বললাম ওকে…..!!!

–স্যার কিছু বলবেন বলে দাঁড়িয়ে রইলো অনন্যা….!!

–বলার জন্যই তো ডেকেছি মিসেস অনন্যা।এখন দাঁড়িয়ে না থেকে বসুন।আর আপনার শরীর কেমন আছে। এখন কি আর প্রবলেম হচ্ছে বললো রোহান….!!

–ইচ্ছা না থাকার সত্যেও বললাম ঠিক আছি আমি।তৃধা ম্যাডাম কোথায় ওনাকে দেখছিনা যে…?

–তৃধা চলে গেছে বললো রোহান….!!

–ওহ্ তো আপনারা বিয়ে কবে করছেন রোহানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো অনন্যা..?

–প্রতিউত্তর এ রোহার ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন মিসেস অনন্যা।তারপর ফাইল দেখায় মন দিল রোহান…!!

–অনেকখন ধরে বসে আছি চুপচাপ রোহান কিছু বলছে ও না আর আমি ও যেতে পারছি না এখান থেকে।এবার সত্যি বিরক্ত লাগছে আমার তাই ওকে বরলাম স্যার আমায় ডাকলেন অথচ কিছু বলছেন ও না যে…..!!!

–ফাইল দেখার বাহানায় এতখন অনুকে দেখছিলাম আমি। হঠাৎ ওর কথায় হুস ফিরলো আমার তাই বললাম হ্যা মিসেস অনন্যা আপনাকে কিছু বলার আছে…..!!!

–কি বলবে রোহান বুকের ভেতরটা অজানা শঙ্কায় কাঁপছে আমার তারপর ও বললাম জ্বী স্যার বলুন….!!!

–কাল থেকে আপনার আর অফিসে আসা লাগবেনা মিসেস অনন্যা কথাটা বলে থামলো রোহান আর অপেক্ষা করতে লাগলো অনন্যার রিএকশন টা দেখার জন্য….!!!

–রোহানের কথাটা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।কি বলছে ও এসব কেন বলছে।আবার কি তাহলে ওর থেকে দূরে করে দিতে চাইছে আমায় অবশ্য ওর কাছে ই বা ছিলাম কবে আমি।এতদিন কাছে না যেতে পারলে ও সামনে থেকে ওকে দেখতে পেতাম এখন কি সেটুকু ও আমার ভাগ্যে নেই?আমার সাথে কেন সবসময় এমনটা হয় আল্লাহ।বুকের ভেতরটাই আবার প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়েছে। তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম সত্যিই কি আমি আর কাল থেকে অফিসে আসবো না….??

–নাহ্ আসবা না কথাটা বলে ঠৌঁট চেপে হাসতে লাগলো রোহান……!!!

–ঠিক আছে আসবোনা আর বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই রোহান ডেকে উঠল….!!

–একি কোথায় যাচ্ছ তুমি আমার কথা এখনো শেষ হয়নি বসো বলছি কথাটা বলে থামলো রোহান…..!!!

–এখন আর বসে কি হবে কাল থেকে তো আর অফিসেই আসা লাগবে না মন খারাপ করে বললো অনন্যা…..!!

–রোহান আবারো হেসে বললো তুমি সবসময় এত বেশি কেন বুঝো?একটু কম বুঝলে কি হয় হুম….??

–কি বলবেন বলুন আমি বাসায় যাব….!!

–বাসায় যাওয়ার অনেক তাড়া দেখছি আপনার আজ।ব্যাপার কি আপনার সো কল্ড হাসবেন্ড এর সাথে ঘুরতে যাওয়ার প্লান আছে নাকি আজ আবার কথাটা অনেক ক্ষোব নিয়ে বললো রোহান……!!!

–এমনিতেই বিনা নোটিশে চাকরিটা নিয়ে নিল তারপর আবার উল্টা পাল্টা কথা বলছে। মেজাজ এবার চরম আকারে খারাপ হয়ে গেল আমার তাই বললাম মি.রোহান খান আমি কার সাথে ঘুরবো ফিরবো সেটা ভাবা বাদ দিয়ে নিজের চরকায় তেল ঢালুন আর দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দিন কথাটা বলে থামলো অনন্যা…..!!!

–ওকে মিসেস অনু আমার ও অনেক কাজ পড়ে আছে আপনার মত একটা স্টুপিড কে নিয়ে ভাবার সখ নেই আমার বললো রোহান….!!!

–ভদ্র ভাষায় কথা বলুন মিস্টার রোহান আমি আপনার বিয়ে করা বউ না যে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবেন আমার সাথে কথাটা বলেই জিব্বাই কামড় দিল অনন্যা…..!!!

–কি বললেন মিসেস অনন্যা আপনি আমার বিয়ে করা বউ নন—? ও হ্যাঁ আমি তো এটা ভুলে ই গিয়েছিলাম যে পতিতাদের আবার বিয়ে টিয়ে তে কিছু আসে যাই না।তাদের কাছে যখন যে যাবে তখন তাকে নিয়ে খুশি থাকে এরা।অবশ্য আপনি পতিতাদের কে ও হার মানান মিসেস অনন্যা আপনি তো আরো দশ কদম এগিয়ে। নয়তো কি আর ঘরে স্বামী রেখে বাইরে অন্য পুরুষের সাথে ফুর্তি করে বেড়ান রাগে রাগে কথাগুলো বলে থামলো রোহান….!!!

–রোহানের বলা প্রতিটা শব্দ কলিজায় যেয়ে তীরের মত আঘাত করলো আমার তারপর ও চুপ থাকলাম।সত্যি এবার আর একবিন্দু বাঁচার ইচ্ছা নাই আমার। শুধু মাএ আমার মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে আছি আমি নয়তো আজ ই সুইসাইড করতাম আমি।চিৎকার করে গলা ছেড়ে কাঁদতে মন চাইছে এখন আমার। যাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসলাম সে কিনা আজ এই প্রতিদান দিল।এর থেকে হয়তো আমার মারা যাওয়ায় ভালো ছিল।না চাইতে ও দুচোখ দিয়ে টপটপ করে লোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার…..!!!

–অনন্যা কিছু বলছেনা দেখে আমি প্রসজ্ঞ পাল্টাতে বললাম কাল থেকে তুমি অফিসে নয় বরং আমার বাসায় যেয়ে আমার সব কাজ করে দিবা।আমার যখন যেটা লাগবে এগিয়ে দিবা। দুপুরে এখন থেকে বাসায় খাব আমি সো আমার জন্য রান্না ও করবা। আর আমি যখন যেটা করতে বলবো তখন সেটা করবে।এর বাইরে কোনো কাজ করলে খারাপ কিছু হলে তার জন্য আমি দায়ি থাকবো না কথাটা বলে থামলো রোহান…….!!!

–একটা ঝামেলা যেতে না যেতে আর একটা শুরু।আমি ওর বাসায় যেয়ে কি তৃধা আর ওর প্রেম লিলা দেখবো নাকি।অনেক কিছু বলার থাকলে ও এই মুহুর্তে ওর সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই।আর হাজার বলেও কোনো কাজ যে হবেনা এটা ও খুব ভালো করে যানি আমি তাই আগের মত চুপচাপ বসে থাকলাম……!!!

–অনন্যা কোনো কথা বলছেনা দেখে আমি আবার কথাবলা শুরু করলাম।আমি আগের বাসাতেই থাকি তাই কাল ঠিক সময় যেন বাসায় আসা হয়। এখন আপনি বাসায় যেতে পারেন বলে থামলো রোহান…!!

–কোনো কথা না বলে উঠে চলে আসলাম। ভাবছি আমার ফেলে আসা সংসার টা কি এখনো আগের মত গোছানো আছে নাকি সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে…..??
.
.
.
.
.
Continue…

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১১

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১১
#আরিশা অনু

–অনুুউউউউ।মেয়েটার কি হল আবার দৌঁড়ে ওর কাছে গেলাম।ওর মাথাটা কোলের মধ্যে নিয়ে ডাকতে লাগলাম ওকে।অনু কি হয়েছে তোমার প্লিজ চোখ খোলো। এই মেয়ে কথা বলনা কেন।উফ্ কেনো যে এসব বলতে গেলাম ওকে নিজের উপরি মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন আমার……!!!

–নিপা দ্রুত ডক্টর কে কল করো…!!!

–জ্বী স্যার….!!!

–অনন্যা কোলে তুলে নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে এগলাম। গেস্ট রুমে নিয়ে যেয়ে সোফায় শুইয়ে দিলাম ওকে। একটু পর ডক্টর আসলো….!!!

–ডক্টর সবকিছু দেখার পর বললো প্রেশার অনেক লো আর হঠাৎ কোনো মানসিক আঘাত পেয়েছে হয়তো উনি তাই সেন্স হারিয়েছেন তবে চিন্তার কোনো কারন নেই।ঠিকমত রেস্ট নিলে আর মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।তারপর ডক্তর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে চলে গেলেন…!

–একটু পর অনন্যার সেন্স ফিরে আসলো।উফ্ এতখন খুব ভয়ে ছিলাম ওকে নিয়ে…..!!!

–তখন পড়ে যাওয়ার পরে আর কিছু মনে ছিলনা আমার।এখন চোখ খুলে দেখি একটা রুমে শুয়ে আছি। আর রোহান আমার একটা হাত ওর দুহাতের মুঠোয় নিয়ে করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন এখনি কেঁদে ফেলবে।আরোও একটু সামনে তাকাতে দেখি তৃধা অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।এখন একটু একটু করে সবকিছু মনে পড়ছে আমার।হঠাৎ রোহান আর তৃধাকে তখন ঐ ভাবে দেখেছিলাম সেটা মনে পড়তেই ধড়ফড় করে ঠেলে উঠে বসলাম আমি।বুকের ভেতরটা যেন যন্ত্রনায় ছিড়ে যাচ্ছে আবার….!!!

–একি অনু তুমি উঠছো কেনো। তোমার শরীর এখনো ঠিক হয়নি শুয়ে থাকো তুমি।অনন্যা কে উঠে বসতে দেখে রোহান কথাটা বললো…!!!

–স্যার আমি একদম ঠিক আছি।আমার মত সামান্য এটা স্টাফ এর জন্য এত চিন্তা করা লাগবে না আপনার।তারপর সোফা থেকে উঠে পড়লাম। উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে মাথার ভেতর টা আবার ঘুরে উঠল।পড়ে যাচ্ছিলাম তখন রোহান ধরে ফেললো আমায় ……!!!

–অনন্যা তোমায় বললাম না তুমি রেষ্ট নাও।দেখলে তো কি হতে যাচ্ছিল আবার বললো রোহান….!!!

–নিজেকে সামলে নিয়ে রোহানের কথার উওর দিলাম স্যার আমি একদম ঠিক আছি।তারপর রুমথেকে চলে এসে নিজের কেবিনে ডুকলাম..!!

–চেয়ারে বলে ভাবতে লাগলাম তৃধার কথা।এই মেয়েটার জন্যেই আজ আমি রোহানের থেকে আলাদা…..!!!

–তৃধা রোহানের মামাতো বোন।রোহান কে ও ভালোবাসে।হঠাৎ করে রোহানের আর আমার বিয়ে হয়ে যায়।তৃধা এটা শুনে আমাদের আলাদা করার জন্য রিতিমত পাগল হয়ে উঠেছিল।আর শেষমেস ও ওর চক্রান্তে সফল ও হয়….!!!

–আলাদা করে দিল চিরদিনের জন্য আমাকে আমার রোহানের থেকে।বার বার রোহান কে বলেছিলাম এসব মিথ্যা কিন্ত রোহান কিছুতেই আমায় বিশ্বাস করেনি সেদিন ভাবতে ভাবতে চোখে পানি জমা হল আবার।হঠাৎ সামনে চোখ পড়তেই দেখি তৃধা অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর আমাকে বললো…..!!!

–খুবতো নাটক করতে পারো তুমি বাহ্ সুন্দর করে মাথা ঘুরে পড়ার নাটক করলে।অবশ্য এই সুযোগে রোহানের কোলেও উঠলে পারলে।তোমার মত নিলজ্জ বেহায়া মেয়ে আর দুটো দেখিনি আমি।আজ কত খেল দেখাবে বাপু এবার তো ওর ঘাড় থেকে নামো একরাশ খোব নিয়ে কথাটা বললো তৃধা…….!!!

–আমি কোনো নাটক করিনি তৃধা নাটক তো তুমি করে ছিলে সেদিন।তোমার সাজানো নাটকের জন্য আজ রোহান আমার থেকে দূরে সরে গেছে।আর কত খেল দেখাবা তুমি?আমাকে বেহায়া বল তুমি তো বেহায়া কে ও ছাড়িয়ে গেছ……..!!!

–রাগে গজ গজ করতে করতে তৃধা বলে উঠলো কি বললে তুমি আমি বেহায়া? তবে এবার দেখো তোমার কি হাল করি আমি। শুধু দেখতে থাকো তৃধাকে বেহায়া বলার রিভেঞ্জ কি করে নি তোমার থেকে আমি জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। তারপর বেরিয়ে আসলাম অনন্যার কেবিন ছেড়ে….!!!

–আবার কোন নাটক করবে এই মেয়ে কে যানে।একবার নাটক করে তো আমার পুরো জীবনটাই ওলট পালট করে দিয়েছে।কথাগুলো ভাবতেই অনন্যার বুকচিরে বেরিয়ে আসলো একরাস দীর্ঘশ্বাস…….!!!
.
.
.
.
.
Continue….
।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১০

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১০
#আরিশা অনু
–অনন্যার সাথে আমার পরিচয়টা হয় ভার্সিটি তে।ও তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ পড়তো আর আমি মাস্টার্স এ ছিলাম।একদিন ও তাড়াহুড়া করে ক্লাসে যেতে যেয়ে আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছিল তখন আমি ওকে ধরে ফেলি।ও প্রচুর ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।একদম বাচ্চাদের মত করে চোখ কুঁচকে ছিল ও।কিউটের ডিব্বা লাগছিল একদম ওকে।তারপর থেকেই অনন্যাকে দেখলে অদ্ভুত এক ফিলিংস কাজ করতো আমার ভিতরে।একদিন হুট করেই ওকে প্রপোজ করে বসি।ও কিছুদিন সময় চাই।ভেবেছিলাম ও না করে দেবে কিন্ত আমাকে অবাক করে দিয়ে ও হ্যাঁ বলে দিল।তারপর কিছুদিন পর দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে আমাদের বিয়ে হল….!!!

–খুব সুখেই কাটছিল আমাদের দিন গুলো।বিয়ের আগে প্রেম করার তেমন সময় হয়নি তাই বিয়ের পরেই প্রেম করতাম দুইটা মিলে।অদ্ভুত ভাবে বুঝে ফেলতাম ও আমার আসে পাশে থাকলে।সারাদিন ও বাসায় সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি অফিস নিয়ে ব্যস্ত। তবে একটু পর পর পাগলি টা ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করতো কি করছি, খেয়েছি কিনা।কি এক বাইনা ওর সকালে, দুপুরে, রাতে একসাথে খাবে বলে বাইনা ধরে বসে থাকতো মেয়েটা।আমার হাজার লেট হলেও না খেয়ে বসে থাকতো যখন আমি খেতে বসতাম ও ঠিক তখন ই খেতে বসতো।মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যেতাম ওর অদ্ভুত অদ্ভুত সব পাগলামি দেখে।
তবে অনন্যার এক কথা বাসায় কোনো কাজ করা যাবেনা।যা কাজ সব অফিসে বসে করতে হবে আর বাসায় পুরো সময়টা শুধু ওর। পাগলিটা পারেও পাগলামি করতে।

–সুখের স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের শব্দে হুস ফিরলো আমার। ফোনের স্কিন এ তাকিয়ে মাথায় আবার রক্ত উঠে গেল…..!!!
.
.
.
.
–তমালের সাথে আড্ডা দিতে দিতে প্রায় সন্ধা হয়ে গিছিল তাই ও আমাকে আর রুহিকে নামিয়ে দিয়ে গেল।ওকে বললাম একদিন ভাবিকে নিয়ে বেড়াতে আসতে।তারপর বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আসার সময় আম্মুর জন্য ও খাবার এনেছিলাম সেগুলো ফ্রিজে উঠালাম….!!!

–সারাদিন রুহিকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে রোহানের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম।ওর কথা মনে হতেই ফোন হাতে নিলাম।ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে উঠার অবস্থা এখন।রোহান ৪২ বার কল দিয়েছে।ও মাই গড আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল বলে কিছু বুঝতে পারিনি।এত বার কল দিল ওর আবার কিছু হলোনা তো।ভাবতেই বুকটা ধরে এলো তাড়াতাড়ি করে ফোন দিলাম ওকে….!!!

–অনন্যা ফোন দিয়েছে মাথা আগুন হয়ে আছে এমনিতে তারপর আবার ওর ফোন রাগে রাগে ফোন কেটে দিলাম।একটু পর আবার ফোন দিলো ও।এবার রাগে রাগে আমার ফোনটাই আঁছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললাম।কাল থেকে তোমার জীবনের নরকিয় দিন শুরু অনন্যা….!!!

–উফ্ বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে অনেক রেগে গেছে ও। অবশ্য রেগে যাওয়ারি কথা এতবার ফোন দিয়েছে বেচারা আর আমি একবারো রিসিভ করলাম না।বাট আমি তো যানতাম না যে ফোন সাইলেন্ট হয়ে আছে তাহলে এখানে আমার ই বা কি দোষ….!!!

–চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত ঘুমাতে পারিনি আমি। পরদিন খুব সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে নিলাম।আর রুহিকে ও রেডি করে দিলাম…..!!!

–কি রে মা আজ এত তাড়াহুড়া করছিস যে কিছু হয়েছে কি….?

–না আম্মু কিছু হয়নি আজ একটা মিটিং আছে তাই এত জলদি করছি।আম্মুকে মিথ্যা বললাম নয়তো রোহানের কথা শুনলে আবার কি ভাববে কে যানে…..!!!

–ও তোর মিটিং আছে এটা আগে বলবি না। আচ্ছা সাবধানে যাস মা….!!!

–ঠিক আছে আম্মু আল্লাহ হাফেজ।

–তারপর রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে।মনটা পড়ে আছে রোহানের কাছে। কেনো যেন মনটা বড় অস্থির লাগছে আজ। ও ঠিক আছে তো..?

–উফ্ ঠিক কেন থাকবে না অবশ্যয় ঠিক আছে কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি আমি….!!!

–রোহানের চিন্তায় রুহি কি কি যেন বলছিল আমায় কিচ্ছু মাথায় ঢুকলোনা আমার।তারপর রুহিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি ছুটলাম অফিসে…!!!

–অফিসে ঢুকে আগে রোহানের কেবিনে ছুটলাম কে যেন পেছন থেকে ডাকছিল আমায় বাট সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলনা আমার।রোহানের কেবিনের দরজা খোলার পর আমার মাথায় যেন বাঁচ পড়লো।অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম তৃধা…!!

–তৃধা রোহানের গলা জড়িয়ে ধরে কি কি যেন বলছিল ওকে।আমায় দেখে ওরা আমার দিকে তাকিয়ে পড়লো।তৃধা রোহানের গলা ছেড়ে আমার সামনে এসে বলতে শুরু করলো….!!!

–এই মেয়ে তুমি এখানে কেনো? একবার রোহানের লাইফ হেল করে শান্তি হয়নি তোমার? আবার এসছো বেয়াদব, বেহায়া মেয়ে একটা।তোমার মত থার্ডক্লাস মেয়ে আর দুইটা দেখিনি আমি।বেরিয়ে যাও এখনি এই অফিস ছেড়ে।আর কখনো যেন রোহানের ত্রিসিমানায় তোমায় না দেখি….!!!

–তৃধা কুল ডাউন বেবি এত উত্তেজিত হয়োনা তো।আর মিসেস অনন্যা আপনার কোনো কমন সেন্স নাই?বসের কেবিনে ঢুকলে গেলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয় এটা কি ভুলে গেছেন আপনি?

–আর মিস নিপা আপনাই আমি বলেছিলাম না আমি না বলা পর্যন্ত মিসেস অনন্যা কে আমার কেবিনে ঢুকতে দেবেন না…..?

–স্যরি স্যার আমি কিছু বলার আগেই ম্যাম কেবিনে ঢুকে পড়েছে আমি বার বার করে ওনাকে ডাকলাম কিন্ত উনি কিছু না শুনেই….!!!

–মিসেস অনন্যা নেক্সট টাইম আমার কেবিনে আসার আগে ভদ্রতার সহিত অনুমতি নিয়ে তারপর আসবেন। নাউ গেট লস্ট……!!!

–মনেহচ্ছে পা দুটো যেনো কেউ আঁকড়ে ধরে রেখেছে বুঝতে পাছিনা পা নাড়াতে কেন পারিনা।শ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে এখন আমার। তৃধার কথায় যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার তিনগুন বেশি ব্যাথা পেয়েছি রোহান কে আর তৃধাকে ঐ অবস্থায় দেখে। আর রোহানের বলা প্রতিটা কথা তো তীরের মত আমার বুকে যেয়ে বিধেছে…!!!

–কেনো যানি মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শ্বাস নিতে ও প্রচুর কষ্ট হচ্ছে,হাজার চেষ্টা করেও ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিনা আমি।কেউ যেন গলাটা খুব জোরে চেপে ধরেছে। বুকের ভেতরে ও প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে আমার। চোখের সামনে সবকিছু ঝাঁপসা হয়ে আসছে । যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে আমার পুরো পৃথিবী।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে এখন।মনে হচ্ছে যেনো এখনি মারা যাব। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলাম।আর কিছু মনে নেই আমার….!!!
.
.
.
.
Continue….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৯

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৯
#আরিশা অনু

–আজ ছুটির দিন।রোহানকে আজ সারাদিন দেখতে পাবোনা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল।কত পাগলামি ই না করে ও আজকাল।মুখ ফুটে বলবেনা একবার যে এখনো আগের মত ভালোবাসি পাগলি।অথচ চোখের সামনে থেকে এক সেকেন্ড নড়তে ও দেবেনা কোথাও।কি এক নিয়ম বের করেছে ওনার কেবিনে বসে কাজ করা লাগবে।এতে অবশ্য বাকিরা যে খারাপ কিছু ভাবতে বাদ রাখেনি তা আমি সেদিন নিপার কথায় বুঝে গেছি।কিন্ত কে কি ভাবলো তাতে কিছু যায় আসেনা আমার।এতবছর পর যে রোহান কে সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছি এটাই বা কম কিসে।ওকে দেখার এতবছরের তৃষ্ণা যে আজ এত কাছ থেকে মিটছে এটাই বা কম কিসে আমার জন্য।আমি তো ওকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম….!!

এখানে আসার পর থেকে একটা দিন ও রুহিকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাইনি তাই ভাবছি ওকে নিয়ে আজ একটু ঘুরতে বের হব….!!!

রুহি সোনা রেডি হয়ে নাও আজ আমরা ঘুরতে যাবো।অনেক চকলেট,আইসক্রিম কিনে দেব আজ আমার সোনামা টা কে…..!!!

–সত্যি আম্মু আমরা আজ ঘুরতে যাব….!!!

–হ্যাঁ সোনা মা ঘুরতে যাব….!!!

–আচ্ছা আম্মু আমি নানু কে বলে আসি বলে রুহি দৌড়ে বেরিয়ে গেল।পাগলি মেয়ে একটা হয়েছে আমার….!!!

–তারপর আমি ও আম্মুর কাছে গেলাম যেয়ে দেখি পাকা বুড়ি আম্মুকে বলছে…!!!

–নানু নানু রেডি হয়ে নাও আমরা ঘুরতে যাব…!!

–তাইনাকি আজ আমার নানুভাই ঘুরতে যাবে এটা তো খুব ভালো কথা….!!!

–শুধু আমি না তুমি ও যাবা আমাদের সাথে…!!!

–না সোনা আমি যাবনা তুমি আম্মুর সাথে যেয়ে ঘুরে আসো….!!

–কেনো আম্মু তুমি ও চল না আমাদের সাথে সবাই মিলে ঘুরে আসি….!!!

–না রে মা তোরা যা ঘুরে আস…!!!

–তুমি আমাদের সাথে আসলে আরো ভালো হত..!!!

–তারপর রুহিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম….!!!
.
.
.
.
.
–আজ ছুটির দিন সারাদিন অনন্যা কে দেখতে পাবনা।খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ওকে। উফ্ কি করছে মেয়েটা কে যানে।একটা ফোন দি দেখি কি করছে ও।

উফ্ ফোন ধরেনা কেন এই মেয়ে মেজাজ টাই খারাপ করে দেয়।বাসার ঠিকানা টা ও যানিনা যানলে একটু ঘুরে আসা যেত।ধ্যাৎ কিছুই ভালো লাগছে না।বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছি যাই বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি…!!!
.
.
.
.
–ঘুরতে ঘুরতে বিকাল হয়ে গেল রুহিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ আসলাম। আইসক্রিম,নুডলস্ আর বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। আমার বাচ্চাটার প্রিয় খাবার যে এগুলো….!!!

–আরে অনন্যা তুই এখানে….!!!

–হঠাৎ আমার নাম ধরে কেউ ডাকলো পিছন ফিরে দেখি তমাল দাঁড়িয়ে আছে।তমাল আমার ছোট বেলার বন্ধু। এতবছর পর ওর সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। অবশ্য আজকাল সব কিছু হুট হাট করেই হচ্ছে আমার সাথে।তারপর ওর সাথে কথা বলা শুরু করলাম…..!!!

–আরে তমাল কেমন আছিস। কত বছর পর দেখা হল। আন্টি, আঙ্কেল কেমন আছে রে…?

–ভালো আছি। আম্মু, আব্বু ও ভালো আছে। তুই কেমন আছিস রে।কত খুঁজেছি তোকে কোথাও পাইনি। ওই দিনটার পর সত্যিই খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে রে।আমার ভুলের জন্য বিনা দোষে শাস্তি পেলি তুই….!!!

–আহ্ বাদ দে তো এসব কথা যা হয়ে গেছে তা মনে করে আর লাভ নাই।আর আমি আছি এক রকম।আই তোকে একজনের সাথে পরিচয় করাই।

–আমার মেয়ে রুহি।আর রুহি মা এটা তোমার তমার আঙ্কেল। আঙ্কেল কে সালাম দাও মা…!!

–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল….???

–ওয়ালাইকুম আসসালাম।রুহিকে কোলে নিয়ে বললাম বাহ্ আমার মামুনি টা তো অনেক বড় হয়ে গেছে…..!!!

–তারপর তিনজন মিলে টুকটাক কথা বলে আড্ডা শুরু করে দিলাম…..!!!
.
.
.
.
–অনেকখন ঘোরা ফেরার পর একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম কফি খেতে।চেয়ার টেনে বসতেই সামনের টেবিলের দিকে চোখ আটকে গেল আমার। অনন্যা আর তমাল সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে। আর মেয়েটা অনন্যাকে আম্মু ও বলছে।তারমানে সেদিন অফিসে যে মেয়ের কথা তুলেছিল সেটা সত্যি।আর অনন্যা সেদিন আবার আমায় মিথ্যা বলে ঠকিয়েছে।এটা তাহলে অনন্যা আর তমালের মেয়ে।কিন্ত মেয়েটা দেখতে পুরো আমার মত কেন লাগছে।ওর চোখ,নাক,মুখ বার বার বলে দিচ্ছে ও আমারি অংশ।বাট আমার মেয়ে হলে অনন্যা লুকালো কেনো সেদিন আমার কাছে।

–নাহ্ কিচ্ছু ডুকছে না মাথায়।মাথার ভিতরটা বন বন করছে এখন।অনন্যা আবার আমার সাথে প্রতারনা করলো।নাহ্ কিছুতেই ক্ষমা করবো না ওকে আর।আজকের পর তোমার জীবনটা নরক করে তুলবো আমি অনন্যা….!!!

–মাথাটা আগুন হয়ে গেছে আমার।ড্রাইভ করছি আর চোখটা ঝাঁপসা হয়ে উঠছে বার বার।এতটা নিকৃষ্ট কেনো তুমি।আইনত এখনো আমার স্ত্রী তুমি অনন্যা আর এটা জানার সত্যেও আবার তমাল কে বিয়ে করলে আর বাচ্চা ও উফ্ আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি….!!!

–কেউ যেন গলাটা খুব জোরে চেপে ধরেছে আমার শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে এখন।

–বাসায় এসে ওর রেখে যাওয়া সব জিনিস পুড়িয়ে ফেললাম।ওর আর আমার বিয়ের সব ছবি এতদিন স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে ছিল যখন ওকে খুব মিছ করতাস তখন দেখতাম এগুল কিন্ত আজ ও যেটা করলো তারপর আর এগুলো বাঁচিয়ে রাখার কোনো মানে হয়না।

–আবার রুমের সবকিছু ভেঙে তছনছ করলাম।এ্যালবাম টা পোড়াতে যেয়েও পারলাম না বুকে জড়িয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লাম।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে এখন আমার।মা-বাবাকে খুব ছোট থাকতে হারিয়েছি আমি।ফুপুর কাছে বড় হয়েছি।যখন ভার্সিটি তে ভর্তি হলাম তখন কাউকে ভালো করে চিনতাম না।আমি আবার অতটা মিশুক ছিলাম না তাই আমার বন্ধুর সংখ্যা কম ছিল সবসময়….!!!
.
.
.
.
.
Continue….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৮

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৮
#আরিশা অনু

–ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বললাম বাসায় যাওয়ার আগে অবশ্যই ডক্টর কে দেখিয়ে যাবা।আর নেক্সট টাইম যেন এসব পাগলামি করতে না দেখি।তারপর ওর পাশ থেকে উঠে যেয়ে কাজে মন দিলাম….!!!

–পাগলি আমায় শাসিয়ে গেল যাতে ডক্তার দেখায়। এখনো সেই আগের মত কেয়ার করে আমার।এসব ভাবতে ভাবতে অতীতে ডুব দিলাম…
.
.
.
.
–রোহান তুমি কিচেনে কি করছো…??

–এইতো আমার অনুসোনার জন্য তার ফেভারিট পাসতা রান্না করছি….!!!

–কিচ্ছু করা লাগবে না বের হও তুমি আগে কিচেন থেকে।এখনি হাত পুড়ে যাবে তোমার….!!!

–আরে কিছু হবেনা তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো।ওর সাথে কথা বলতে বলতে পাসতা সিদ্ধ করে নামাচ্ছিলাম তখন ই গরম পানি এসো আমার হাতে পড়লো আর আমি আহ্ করে উঠলাম….!!!

–রোহানননন কি করলে এটা বলেছিলাম না হাত পুড়ে যাবে।দৌড়ে যেয়ে ওর হাতে ঠান্ডা পানি ঢাললাম।অনেকটা পুড়ে গেছে। হাতটা লাল হয়ে আছে। কত বার বললাম তোমায় কিচেন থেকে বের হও রান্না করা লাগবে না। আমার একটা কথাও তুমি শুনোনা কেনো হ্যাঁ….??

–অনুসোনা আমি ঠিক আছি তুমি টেনসন করোনা।পাগলিটা এক নাগাড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর বকে যাচ্ছে আমায়।হাসি পাচ্ছে আমার ওর পাগলামি দেখে….!!!

–কিচ্ছুঠিক হয়নি চুপকরে এখানে বসে থাকবা।বেড থেকে নামলে আজ পা ভেঙে রেখে দেব বলে দিলাম।ওকে বকা দিলাম আচ্ছামত পাজিটা একটা কথা শুনেনা আমার।তারপর ডক্টর আঙ্কেল কে ফোন দিলাম উনি এসে দেখে গেলেন আর মলম দিয়ে গেলেন একটা।

–পাগলিটা সেদিন আমায় তিনবার ই নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছিল। বেড থেকে নামতে ও দেয়নি।আর কিচেনের ত্রিসিমানাই তো যেতেই দেইনি আর….!!!

–ভাবনার ঘোর ভাঙল অনুর ডাকে….!!!
.
.
.
.
–স্যার….??

–হ্যাঁ অনন্যা কিছু বলবা…?

–হ্যাঁ লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে আপনি খাবেন না….?

–কাটা হাত টার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বললাম আজ মনে হয় আর খাওয়া হবেনা…!!!?

–রোহান না খেয়ে থাকবে এটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।কিছু না বলে আমার কেবিনে চলে গেলাম আমার টিফিনটা আনতে….!!!?

–যাহ্ চলে গেল?আমি আরো ভাবলাম ও হয়তো খাইয়ে দেবে।অনেকদিন পর আবার ওর হাতে খেতে পারবো। এটা মনে হয় আমার কপালে নেই।মন খারাপ করে বসে এগুলো ভাবছিলাম তখন ই অনন্যা একটা টিফিন নিয়ে কেবিনে ঢুকলো……!!!?

–টিফিন খুলে খাবারটা নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরলাম আর বললাম নিন হা করুন।ও এখনো হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হয় বিশ্বাস করতে পারছে না যে সত্যি আমি ওকে এতকিছুর পর ও খাইয়ে দিচ্ছি।তাই আবার বললাম কি হল হা করো……??

–সত্যি যে অনন্যা আমায় খাইয়ে দিতে চাইছে এটা তো আমার বিশ্বাস ই হচ্ছেনা।যাই হোক ভাবাভাবি বাদ দিয়ে আগেতো ওর হাতে খাই।কত বছর পর আবার ওর হাতে খাচ্ছি।খাবার গুলোও যেন অমৃত হয়ে গেছে ওর হাতের ছোয়ায়।খেতে খেতে বললাম তুমি খাও। তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না….!!!

–আমি পরে খেয়ে নেব আপনি আগে খেয়ে নিন…!!!

–না তুমি এখনি আমার সাথে খাবে নইলে আমি ও খাবোনা আর এই বলে দিচ্ছি….!!!

–উফ্ রোহান আগের মত জিদ্দি আছো এখনো।মেয়ের বাবা হয়ে গেছো এখন তো জিদটা একটু কমাও কথাটা বলেই আমার হুস ফিরলো।কি বলছি আমি এসব রোহান কে।নাহ্ রুহি শুধু আমার মেয়ে আর কারো না।আমি রুহিকে কিছুতেই রোহানের সামনে আনবো না তাহলে রোহান রুহিকে ও আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে।মরে যাবো আমি রুহিকে ছাড়া।ওকে আঁকড়ে ধরেই তো বেঁচে আছি এতগুলো বছর.!!

–ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম কি বললে মেয়ের বাবা মানে। আমার মেয়ে আছে নাকি আবার….?

–না না নেইতো এতদিন আমরা একসাথে থাকলে হত আর কি তাই বললাম।মিথ্যা বলে ওর থেকে রুহির কথা আড়াল করলাম।নয়তো ও আবার আমায় নিঃস্ব করে ছাড়তো….!!!

–ওহ্ তাই বলো আমি ভাবলাম….!!!

-ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম কি ভাবলে…?

–নাহ্ কিছুনা……!!!
.
.
.
.
–দিনগুলো এভাবেই দুষ্টু মিস্টি সময়ের মধ্য দিয়ে পার হয়ে যেতে লাগলো।এখন আর রোহান অনন্যার উপর তেমন রাগ দেখাই না।তবে বেশি বেশি ফাইল ধরিয়ে দিয়ে ওর সামনে বসিয়ে কাজ করাই। যাতে অনন্যা আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না পারে।আর রোহান ও তার অনুসোনা কে চোখের সামনে সব সময় দেখতে পাই।এ যেন নতুন প্রেমে পড়ার মত অনুভূতি…!!?

–অনন্যা ও যে ব্যাপার গুলো উপভোগ করেনা তা নয়। ও ও সুযোগ খুঁজে আঁড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে তার প্রিয় মানুষটা কে।যেন নতুন প্রেমে পড়া কপোত কপোতির মত চোখে মুখে লজ্জার ভাজ। অথচো প্রিয় মানুষ টা কে দুচোখ ভরে দেখার তিব্র আকাংক্ষা। সব মিলিয়ে দুজনেয় অনেক ভাল সময় পার করছে…!!

–রোহানের অবস্থা ও যেন আগের মত হয়ে উঠেছে। আজকাল অনন্যা ছাড়া নিজেকে অচল অচল লাগে তার।অফিস টাইম শেষ হওয়ার পর ও মাঝে মাঝে অনন্যাকে কাজের বাহানায় আটকে রাখে রোহান। পাগল মনটা যে কিছুতেই তার অনুসোনা কে ছাড়তে চাইনা।#হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো আবার পূর্ণ মাত্রায় সাড়া দিতে শুরু করেছে আজকাল। রোহান হয়তো সবভুলে আবার তার অনুসোনা কে তার করে নেওয়ার চিন্তায় মগ্ন হয়ে উঠেছে….!!!

— এদিকে সময় ও এগিয়ে চলেছে তার আপন গতিতে।কিন্তু কথায় বলেনা সুখের সময় বড় স্বংকিন্ন তাই হয়তো সুখের দিনটা আর বেসিদিন স্থায়ি হলোনা ওদের জীবনে।সব বিপত্তি ঘটলো সেদিন বিকালে……!!!
.
.
.
.
.
Continue…

(কি বিপত্তি ঘটলো জানতে হলে পাশে থাকুন?)

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৭

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৭
#আরিশা অনু

-বাসায় এসে রুমে যেয়ে ইচ্ছা মত ভাংচুর করলাম।কি করে এত নোংরা কথা বললাম আমি অনুকে।ছিহ্ এখন নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃনা হচ্ছে আমার।আর ওখানে তো শুধু রিসভ ছিলনা নিপা ও সাথে ছিল তারপর ও এতবড় কথা কি করে বললাম আমি ওকে।মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে।ও কাঁদছিল তখন চোখদিয়ে পানি পড়ছিল ওর তারপর ও ওর চোখের পানিতে আমার মন গলেনি। এত নিষ্ঠুর কি করে হলাম আমি।যে আমি অনুর চোখের জল সহ্য করতে পারতাম না সেই আমিই আজ কাঁদাচ্ছি ওকে।উহ্ হাতটা ও কেটে গেছে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে হাতদিয়ে।আচ্ছা এত কথা শোনানোর পরও আমায় এই অবস্থায় দেখেও কি অনু ঠিক থাকতে পারতো নাকি আবার আগের মত আমার ব্যাথায় কেঁদে ফেলতো….?

-কি যানি কি করছে মেয়েটা এখন খুব ইচ্ছে করছে ওর সাথে একটা বার কথা বলতে কিন্তু ওর ফোন নম্বর তো আমার কাছে নাই কি করি এখন।হুম পেয়েছি নিপার থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দিলাম ওকে……!!!

-দুইবার রিং হয়ে কেটে গেল বাট ও ফোন ধরলো না উফ্ খুব অসস্তি হচ্ছে এখন। কি যানি পাগলিটা কি করছে।আগেতো একটু বকা দিলেই কেঁদে কেটে নাক ফুলিয়ে বসে থাকতো খেতে ও চাইতো কতো কষ্ট করে বুঝিয়ে সুজিয়ে খাইয়ে দিতাম ওকে।তবে কি আজ ও না খেয়ে নাক ফুলিয়ে বসে আসে আমার পাগলি টা….?

-বাসায় আসার পর থেকে অনুর চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।ঐ ঘটনার পর রাগ করে কানাডা চলে গিয়েছিলাম।এত বছর বাইরে থেকে দেশে এসেই যে অনুকে দেখতে পাবো সত্যি যানতাম না আমি।ঘুমিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো যেন আবার নতুন করে জাগ্রত হতে শুরু করেছে।কেন এমন সুখের সংসারে আগুন লাগালে তুমি।কোন সুখ টার অভাব রেখেছিলাম আমি না চাইতেই তোমার সব চাওয়া পাওয়ার খেয়াল রেখেছি আমি।হাজার ব্যস্ততার মাঝে ঘুরতে নিয়ে গেছি, সময় দিয়েছি, গাড়ি,বাড়ি কোনাটার কমতি কি রেখেছিলাম আমি?তারপর ও কেনো ঐ ছেলেটার সাথে তুমি…উহ্ দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার আবার।আবার মাথার রক্ত রাগে তগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে।নাহ্ কিছুতেই তোমায় সুখে থাকতে দেবনা আমি।এতগুলো বছর যে যন্ত্রনার মাঝে ডুবে আছি আমি এখন থেকে তার দ্বিগুন যন্ত্রনা তোমায় দেব অনু তৈরি থেকো….!!!(রোহান)

-আম্মু আম্মু তোমার ফোন কে যেন ফোন দিছিলো আমি ধরার আগেই কেটে গেলো।আচ্ছা সোনামা কই দেখি কে ফোন দিল।বারান্দায় বসে রোহানের বলা কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম তখন ই রুহি ফোন নিয়ে আমার কাছে আসলো।একটা অচেনা নম্বর থেকে দুইবার কল এসছে কে যানি কে ফোন দিল আবার।ভাবনা বাদ দিয়ে উঠে পড়লাম। মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারদিকে তাই উঠে অজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষ করে এসে রুহিকে পড়াতে বসলাম।(অনন্যা)

-আম্মু যানো স্কুলে আমার অনেক ফ্রেন্ড হয়েছে আজ। সবাই অনেক ভালো।আর রুফাইদা তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ও আমার পাশে বসেছিল আজ।আমায় চকলেট ও দিয়েছে। যানো ওর বাবা এসেছিল ওকে নিতে। আমায় অনেক আদর করেছে আঙ্কেল।আচ্ছা আম্মু সব বাবারা কি এমন করে আদর করে..?আচ্ছা আমার বাবা আমায় আদর করেনা কেনো আম্মু…..?(রুহি)

-রুহির কথায় আম্মু আমি দুজনেই কেঁদে ফেললাম।আজ আমার বাচ্চাটার বাবা থেকেও নেই। না যানি আমার সোনাটা কে আর কতদিন বাবা ছাড়া থাকতে হবে।কেনো রোহান কেনো সত্যিটা না জেনে আমায় ভুল বুঝলে? তোমার অনুর উপর এটুকু ভরষা কি ছিলনা তোমার?তারপর কোনো রকম চোখ মুছে রুহিকে বললাম সোনামা তুমি যেদিন বড় হবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেদিন তোমার বাবা নিজে এসে তোমায় নিয়ে যাবে। এখন পড়ায় মন দাও তো বাবু…!(অনন্যা)

-তারপর রুহির পড়ানো শেষ করে ওকে খাইয়ে দিলাম আর নিজেও খেয়ে নিলাম।টুকটাক কাজগুলো গুছিয়ে আম্মুকে মেডিসিন দিয়ে রুমে আসলাম।রুমে এসে দেখি রুহি শুয়ে পড়েছে তাই আমিও পাশে শুয়ে পড়লাম।

-সকালে নামাজ পড়ে আম্মুকে রান্নায় একটু হেল্প করে রেডি হয়ে নিলাম। কারন আজ আবার লেট হলে হাজার টা কুকথা শোনাবে রোহার আমায়।তাই রুহিকে নিয়ে সকাল করেই বেরিয়ে পড়লাম।
আসার সময় বাড়ি ওয়ালা আন্টির সাথে দেখা হলো ওনাকে সালাম দিয়ে ভিতরে যেতে বলে আমি রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।

-রুহিকে স্কুল এ দিয়ে আমি অফিসে চলে আসলাম।আজ নয়টা বাজার পাঁচ মিনিট আগেই এসে পৌছে গেছি।আমায় দেখে নিপা আর রিসভ এগিয়ে আসলো….!!(অনন্যা)

-স্যরি অনন্যা কাল আমাদের জন্য না জানি স্যার কি কি শুনিয়েছে তোমায়।পরে যে স্যরি বলবো তার আগে তুমি চলে গিছিলে তাই আর বলা হয়নি(নিপা,রিসভ)

-ইটস্ ওকে গাইজ এত চাপ নেওয়ান কিছু নাই বাদ দাওতো।কখন আসছো তোমরা। (অনন্যা)

-এইতো একটু আগে এসে পৌঁছালাম।( নিপা)

-আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি কেবিনে যাই নয়তো ষাড়টা এসে আবার ঝাড়ি দেবেনে আমায়।(অনন্যা)

-হা হা হা ভালো নাম দিয়েছো লাল কচ্ছপ আর ষাড়। স্যার শুনলে তোমার সাথে সাথে আমাদের ও বারোটা আট বাজাবে(রিসভ)

-বারোটা আট শুনে আবার সবাই একসাথে হেসে উঠলো তখন ই রোহান অফিসে এসে ঢুকলো আর ওদের হাসতে দেখে ফেললো।তবে আজ কিছু না বলে সোজা ওর কেবিনে চলে গেল।

-বাপরে ষাড়ের নাম করতে করতে হাজির তোমরা থাকো আমি যাই নয়তো আবার আমার চৌদ্দটা বাজাবে।তারপর ওদের রেখে কেবিনে চলে আসলাম আর কাজে মন দিলাম….!!(অনন্যা)

-কাল এতকিছু বলার পর ও আজ আবার ঐ ছেলেটার সাথে হাসাহাসি করছে। মেজাজ টা খারাপ হলেও মুখে সেটা প্রকাশ করলাম না সোজা রুমে চলে আসলাম।দাঁড়াও তোমার পাখা গজানো বার করছি আমি আজ।তারপর ওকে ফোন দিয়ে আমার কেবিনে আসতে বললাম…!!(রোহান)

-উফ্ দুমিনিট আসতে না আসতে ডেকে পাঠিয়েছে।যদি সাধ্য থাকতো তাহলে আর কখনোই ওর অফিসে আসতাম না।তারপর ভাবাভাবি বাদ দিয়ে ওর কেবিনের দরজায় যেয়ে নক করলাম….!!!(অনন্যা)

-এসে গেছে মহারিনী আজ তোমার কপালে শনি বিরাজ করবে।সব পাখা যদি না ছেটে দিয়েছি না তো আমার নাম ও রোহান খান না। তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে ওকে ভেতরে আসতে বললাম…(রোহান)

-স্যার কিছু বলবেন….? (অনন্যা)

-ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। তখন আসার সময় খেয়াল না করলেও এখন ওর ফোলা চোখ মুখ বলে দিচ্ছে যে কাল খুব কেঁদেছে ও ।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ইয়েস মিসেস অনন্যা ডেকেছি।আগে থেকে আনিয়ে রাখা দশটা ফাইল ওকে দিয়ে বললাম আজকের মধ্যে এই কাজগুলো করে দেবেন আমায়…!!!(রোহান)

-এতগুলো ফাইল একসাথে দেখে মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আর দিন তো দূরে মরুক রাত বারোটা পার হয়ে যাবে এত ফাইল দেখতে দেখতে এগুলো ভাবছিলাম তখন ও ডেকে উঠলো…!!!(অনন্যা)

-মিসেস অনন্যা আপনি কি সারাদিন হা করে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি এবার কাজ করবেন…?(রোহান)

-শয়তান,বন বিড়াল,টিকটিকি,অক্টোপাস, কুমির মনে মনে এক ঝুড়ি গালি দিয়ে ফাইলগুলো নিয়ে চলে আসছিলাম তখনই আবার ডাকদিল হারামিটা…..!!!!(অনন্যা)

-একি কোথায় যাচ্ছো তুমি….?(রোহান)

-কোথায় আবার আমার কেবিনে যাচ্ছি…(অনন্যা)

-তোমাকে যেতে বলেছি আমি?চুপচাপ এখানে বসে কাজ করো।কি হলো আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছো বসতে বললাম না….(রোহান)

-উহ্ এখন মনটা চাইছে কাঁচা তেতুলের মত লবন মরিচ মিসিয়ে এইটাকে কড়মড় করে চিবিয়ে খাই।শয়তানের হাড্ডী একটা আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে ছাড়ল।তারপর যেয়ে চেয়ার টেনে বসে কাজ মন দিলাম…(অনন্যা)

-হা হা হা ওর রেগে লাল হয়ে যাওয়া ফেসটা দেখে ঠোঁট চেপে হাসছিলাম এতখন।ওর কেবিনে যেতে দিলাম না কারন আজ আবার যাতে রিসভের সাথে আড্ডা না দিতে পারে তাই।এসব ভাবতে ভাবতে হাতটা সরিয়ে আনছিলাম তখন ই কাটা হাতটা টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে গেল আর ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলাম আমি.(রোহান)

-কাজ করছিলাম তখন হঠাৎ রোহান আহ্ করে উঠলো।মুখতুলে তাকিয়ে দেখি ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার। দৌঁড়ে যেয়ে হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলাম।হাতে ব্যান্ডেস করা তারমানে আগে থেকেই কেটেছে।

-রোহান হাত কি করে কাটলো।এত কেয়ারলেস কেন তুমি।একটু ও কি নিজের খেয়াল রাখতে পারনা তুমি।আজ ও বাচ্চাদের মত বেখেয়ালি রয়ে গেছ। কি হল বল কি করে কাটলো হাতটা। কাল তো ঠিক ছিল প্লিজ বল আমায়।….!!!(অনন্যা)

-কাল তোমায় এই হাত দিয়ে কষ্ট দিয়েছিলাম না তাই শাস্তি দিয়েছি এই হাতকে…!!!(রোহান)

-উফ্ তুমি কি পাগল।কি করেছো তুমি এসব।ফাস্ট এইড কোথায় রাখছো।উফ্ কত রক্ত বের হচ্ছে। আমি ডক্টর কে কল করি আগে…!!!(অনন্যা)

-শান্ত হও অনু ডক্তার কে কল করা লাগবে না দ্বিতীয় ড্রয়ারে দেখ ফাস্ট এইড রাখা আছে…!!

-পাগলি টা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে আর আমার হাত ব্যান্ডেস করে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে ফু দিচ্ছে যেন ওর হাতে ব্যাথা করছে।এখনো ঠিক আগের মত পাগলিটাই রয়ে গেছে…!!(রোহান)
.
.
.
.
Continue…..

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৬

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৬
#আরিশা অনু
“””অফিসের প্রত্যেকটা কোনায় সি সি ক্যামেরা লাগানো।তাই ল্যাপটপে দেখলাম অনন্যা শাড়ির আচল কোমরে গুজে রান্না করছে ঠিক যেমন আগে করতো।আজ একদম পাক্কা গিন্নি গিন্নি লাগছে ওকে।

“””যখন আমরা একসাথে থাকতাম তখন হাজার টা কাজের মানুষ থাকলে ও নিজে হাতে আমার জন্য রান্না করতো।আর আমি সুযোগ পেলেই দুষ্টামি করতাম। কতনা সুখের ছিল সেই দিন গুলো।কেনো অনন্যা কেনো এমন প্রতারনা করলে আমার সাথে।আমি তো তোমায় নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলাম।আমায় বললে হত হাসতে হাসতে জীবন টা ও তোমার হাতে তুলে দিতাম।কিন্ত তুমি আমার সাথে বেঈমানি কেন করলে….???

“””একা একা এতখন এগুলো একমনে ভেবে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ দরজায় টোকা দিল কেউ। হয়তো ও চলে এসেছে….!!!(রোহান)

“””রোহানের প্রিয় ব্লাক কফি আর নুডলস্ রান্না করেছি ওর জন্য।কত বছর পর আবার ওর প্রিয় খাবার গুলো নিজে হাতে রান্না করলাম।ভাবতেই মনটা আবার ভালো হয়ে গেল। খাবার গুলো নিয়ে আসছিলাম তখন দেখলাম সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।অবশ্য অবাক হওয়ার ই কথা কেউ যে তার পি.এ কে দিয়ে রান্না ও করাই এটা হয়তো আজ প্রথম দেখলো সবাই।তারপর আমি আর খেয়াল না করে রোহানের কেবিনে যেয়ে নক করলাম…. নক নক নক?!!!(অনন্যা)

“””ভেতরে আসুন মিসেস অনু….!!!(রাহান)

“””আবার ওই নামটা শুনে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।কেনো যে এমন হলো বুঝলাম না।তারপর ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ভেতরে যেয়ে বললাম স্যার আপনার খাবার…!!(অনন্যা)

“‘”হুম এখানে আনুন….!!!(রোহান)

“””কেমন যেন লাগছিল ওর কাছে যাওয়ার পর অজানা এক অনুভূতির সন্ধান পাচ্ছিলাম আমি। তারপর খাবার গুলো ওর টেবিলে রেখে চলে আসছিলাম তখন ই ও ডাক দিল…!!!(অনন্যা)

“””মিসেস অনু আপনি কোথায় যাচ্ছেন?আপনাকে কি আমি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি?(রোহার)

“””না….!!!!(অনন্যা)

“””তাহলে যাচ্ছেন কেনো মিসেস অনু?বাই দ্যা ওয়ে আমাকে নুডলস্ টা খাইয়ে দিন তো মুচকি হেসে বললাম…!!(রোহান)?

“””এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার তাই বললাম মিস্টার রোহান খান প্রথমত আমার নাম অনন্যা নট অনু ওকে?আর দ্বিতীয়ত আমি আপনার বৌ না যে খাইয়ে দেবো।পারলে নিজে হাতে খেয়ে নিন বলে রাগে গজ গজ করতে করতে ওর কেবিন ছেড়ে আমার কেবিনে চলে আসলাম।

“””কি ভেবেছে কি ও প্রথমে অপমান করবে তারপর আবার আদিখ্যেতা করবে।আর সহ্য করবোনা আমি অনেক হয়েছে…!!!(অনন্যা)?

“””অনুর রাগ দেখে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ।এখনো সেই আগের মত পাগলি টাই আছে।তারপর ভাবাভাবি বাদ দিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম।?

“””কফিতে চুমুক দিয়ে বুঝলাম ওর এখনো মনে আছে যে আমার কেমন কফি পছন্দ। তারপর নুডলস্ টা খেলাম।ওর হাতের রান্নার স্বাদ যেন অন্য সবার থেকে আলাদা।বহু বছর পর আবার খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলাম…..!!!(রোহান)

“””হ্যালো ম্যাম(নিপা,রিসভ)

“””কাজ করছিলাম তখন হঠাৎ রিসব আর নিপা আসলো।রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম আবার ম্যাম বলছো…(অনন্যা )?

“””ওকে ওকে কুল রাগ করনা মজা করে বললাম তো…!!(নিপা)

“””নাক ফুলিয়ে বললাম এটা নিয়ে আবার কিসের মজা শুনি…?(অনন্যা )

“””আচ্ছা হইছে আর রাগ করা লাগবে না।এবার বলতো হঠাৎ স্যারের জন্য এসব কেনো…?(নিপা)?

“””হুম বলো বলো….?(রিসভ)

“””এখন বুঝলাম ওরা কেনো এসছে ।তাই বললাম ও হ্যালো আমার কোনো সখ নাই এসবের হ্যাঁ। স্যার বলছিল বলে করেছি।লাল কচ্ছপ একটা। আমার জীবনটা তেজপাতা করে ছাড়বে মনে হচ্ছে এবার…..!!(অনন্যা )?

“””হা হা হা হা লাল কচ্ছপ বলে রিসব আর নিপা হেসে উঠলো জোরো। ওদের হাসি দেখে আমি ও হেসে ফেললাম।তারপর টুক টাক কথা বলে আড্ডায় মেতে উঠলাম তিনজনে…!!!?

“””খেতে খেতে হঠাৎ অনন্যার কেবিনে চোখ গেল। দেখলাম রিসবের সাথে হেসে হেসে খুব ঢং করে কথা বলছে।মেজাজ আবার বিগ্রে গেল আমার তাই উঠে ওর কেবিনে গেলাম….!!!(রোহান)?

“””উফ্ আর হাসতে পারছি না আমি তোমরা এত মজার মানুষ সত্যিই যানতাম না হা হা হা….!!(অনন্যা)

“””উহু তো আমাদের কি তোমার গোমড়া মুখো মনে হয়…?(রিসব)

“””গোমড়া মুখো শুনে আবার সবাই জোরে হেসে উঠলো,,,?

“””হাসতে হাসতে হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই আমার কলিজা কেঁপে উঠলো।রোহান দাড়িয়ে আছে চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে,,,,

“””রোহান কে দেখে নিপা আর রিসভ চলে গেল আর আমি পড়লাম মাইনকা চিপাই আল্লাহ বাঁচাও আমায় এই রাক্ষস এর হাত থেকে….!!(অনন্যা)

“””নিপা আর রিসভ চলে গেলে অনন্যার দিকে এগিয়ে গেলাম….

“”” ওর কাছে যেয়ে হাতটা জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম।ও বেথায় আহ্ করে উঠলো বাট সেদিকে কোনো খেয়ালই নাই….(রোহান)

“””আহ্ রোহান লাগছে আমার হাতে কি করছো তুমি….??(অনন্যা) ?

“””আমি তখন খাইয়ে দিতে বললাম বলে গায়ে ফোসকা পড়লো না।আর এখানে এসেতো দিব্বি রিসভের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াচ্ছো তার বেলা কিছু না….??

“””এখনো পূরনো অভ্যাস চেঞ্জ করতে পারনি না??

“””ছেলে দেখলেই তারসাথে ঢলাঢলি করা লাগে,অবশ্য তোমার মত পতিতার দ্বারা সব সম্ভব বলে ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসলাম। মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেছে কি বলছি কিচ্ছু যানিনা আমি রাগে রাগে অফিস থেকে বেরিয়ে আসলাম…..!!!(রোহান)?

“””রোহার ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লাম। কি বললো ও আমি পতিতা ছিহ্ এতটা জঘন্য কি করে হলো ও।আজ আবার ওর প্রতি ঘৃনাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল।?

“””খুব খুব কান্না পাচ্ছে অসহ্য লাগছে এখন আমার তাই অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে আসলাম……!!!

“””বাসায় এসে সোজা শাওয়ারে গেলাম তারপর শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে অনেক খন কাঁদলাম…!!(অনন্যা) ?

“””সোনামা তোর কি হয়েছে বলতো? চোখমুখ ফুলে গেছে কেঁদেছিস আবার(আম্মু)

“””আম্মুকে সবকিছু খুলে বললাম তারপর আবার কান্নায় ভেঙে পড়লাম….!(অনন্যা)?

“””কাঁদিসনা সোনা মা তুই এভাবে কাঁদলে রুহির কি হবে বলতো।রুহির জন্য হলেও তোকে ঠিক থাকতে হবে সোনা…!!!(আম্মু)

‘”””বিনা দোষে আর কত অপমান সহ্য করবো আম্মু আমি যে আর পারিনা। এভাবে চলতে থাকলে সত্যি আমি মরে যাব আম্মু…(অনন্যা)

“”””ছিহ্ সোনা মা এমন বলতে নাই।চল তোকে খাইয়ে দি….( আম্মু)

“”””তারপর আম্মুর হাতে খেয়ে আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম আর আম্মু আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো।শুয়ে শুয়ে ভাবছি এ কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি?চোখের কোনা বেয়ে আবার নোনা জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো…….!!!(অনন্যা)?
.
.
.
.
Continue,,,,

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-৫

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-৫
#আরিশা অনু

“””একটু পর নিপা এসে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে গেল তাই সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম…!!!(অনন্যা)

“””ধ্যাৎ কোনো কাজে ই মন বসছে না আমার।বার বার বেহায়া চোখটা অনন্যার কেবিনের দিকে যাচ্ছে।

“””ওর কেবিনটা আমার কেবিনের সামনে হওয়ায় দেখতে সুবিধা হচ্ছে।

“””আবার কেনো যেনো এতদিন পর #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি টা সাড়া দিতে শুরু করেছে,এ যেনো নতুন প্রেমে পড়ার মত এক নতুন অনুভূতি..!!

“””একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আমি পাগলি টা কাজের ফাঁকে ফাঁকে কলম টা মুখে দিয়ে কি যেন ভাবছে তারপর আবার কাজ করছে…!!

“””আর এসবের ভিতরে ওর অবাধ্য খোলা চুল গুলো বার বার মুখের উপর এসে পড়ে মুখটা ঢেকে দিচ্ছে, আর ও খুব যত্ন করে চুলগুলো আবার কানের পেছনে গুজে দিচ্ছে।

“””একটু পর পর চুলগুলো কানের পেছন থেকে আবার বেরিয়ে আসছে আর ও ঠিক করছে,চুলগুলো ও যেনো দুষ্টামি তে মেতে উঠেছে ওর সাথে।আর খোলা চুলের ভিড়ে ওর ফর্সা লম্বা নাকটা যেন বার বার উঁকি দিচ্ছে, সব মিলিয়ে যেন অদ্ভুত এক সুন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে । খুব ইচ্ছা করছে ওর অবাধ্য চুলগুলো কে নিজে হাতে ঠিক করে দিয়ে ওর মুখটা দুচোখ ভরে দেখে এত বছরের তৃষ্ণা মেটায়….!!!

“””এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে অতিতের ভাবনায় ডুব দিলাম।
.
.
.
.
.
“””রোহাননননন…!!!(অনন্যা)

“””উফ্ এত জোরে কেউ চিৎকার করে কি হয়েছে কি বলো…?(রোহান)

“””চিৎকার কি আর সাধে করি সেই কখন থেকে ডাকছি তোমায় আর তুমি হা করে তাকিয়ে আছো আমার মুখের দিকে।কি দেখো এত হা করে হ্যাঁ। একবারো তাকিয়ে দেখেছো কতবড় চাঁদ উঠেছে আজ।আর চারপাশ টা ও জোৎস্নার আলোয় কত সুন্দর লাগছে।

“””না জানি আজ কত কপোত-কপোতি জোৎস্নার আলোয় তাদের ভালোবাসাকে নতুন করে ভিজিয়ে নিচ্ছে।ইস্ কত রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ ভেবে দেখেছো তুমি….?(অনন্যা)

“””আমার সামনে যে চাঁদটা আছে আগে তাকে দেখা শেষ করি তারপরে বাকি সব কথা ভাববো।(রোহান)

“””ইস্ তোমার সব সময় বাজে কথা।তারপর রোহানের কাঁধে মাথা রেখে ওর একহাত শক্ত করে ধরে চাঁদ দেখতে লাগলাম।এখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ বলে মনে হচ্ছে আমার….!!!(অনন্যা)

“””অনুসোনা…..?(রোহান)

“””হুমমম….(অনন্যা)

“””ভলোবাসি….!!!(রোহান)?

“””কাঁধথেকে মাথাটা তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম আমিও…..!!!(অনন্যা) ?

“””হালাকা রাগ দেখিয়ে বললাম আমিও কি হুম….???(রোহান)?

“””এবার ঠোঁটের হাসিটা আর একটু বাড়িয়ে বললাম……

ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি

“””এবার হয়েছে স্যার…..??(অনন্যা) ?

“””কিছুনা বলে ওকে কাছে টেনে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম….

ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি

অনেক বেশি ভালোবাসি ম্যাম…(রোহান)?
.
.
.
.
.
“””হঠাৎ ফোনের শব্দে চিন্তার জগৎ ছেড়ে বেরিয়ে আসলাম।তারপর কথা বলা শেষ করে অনুকে ফোনকরে আমার কেবিনে ডাকলাম।(রোহান)

“””শয়তান টার ডাক পড়েছে কি জানি কি বলবে আবার।তারপর ভাবাভাবি বাদ দিয়ে ওর কেবিনে যেয়ে বললাম স্যার আসবো….?(অনন্যা) ?

“””আসো…!!!(রোহান)

“””ভিতরে এসে কিছুনা বলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম…!!!(অনন্যা) ?

“””মিসেস অনু আমার জন্য এককাপ কফি আর হালকা কোনো খাবার রান্না করে আনুন তো ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম।একবার আঁড় চোখে ওরদিকে তাকালাম বেশ অবাক হয়েছে বেচারিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে….!!(রোহান)?

“””এতবছর পর রোহানের মুখ থেকে মিসেস অনু ডাকটা শুনে চোখে পানি এসে গেল।?তারপর ও নিজেকে সামলে নিলাম। রোহান হঠাৎ এমন কিছু করতে বলবে ভাবিনি।একবার ভাবলাম বারন করে দেব তারপর আবার ভাবলাম এতবছর পর ও আমার হাতের খাবার খেতে চেয়েছে বারন করি কি করে। তাই বললাম ঠিক আছে স্যার।তারপর ওর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলাম।(অনন্যা)?

“””আরে এত সহযে মেনে নিল।আমি তো ভাবছিলাম ও বারন করে দেবে।যাই হোক এতবছর পর আবার ওর হাতের খাবার খেতে পারবো ভেবে খুব ভালো লাগছে।(রোহান)?

“””বললাম তো ঠিক আছে বাট ক্যান্টিন টা কোথায় সেটা তো জানিনা।?ইয়েস নিপার থেকে জেনে নি।

“””তারপর নিপার থেকে যেনে নিয়ে এগলাম রোহানের জন্য খাবার রান্না করতে।অনেকগুলো দিন পর আবার নিজে হাতে ওর জন্য রান্না করবো ভাবতেই খুশিতে মনটা ভালো হয়ে গেল।(অনন্যা)?
.
.
.
.
.
Continue……

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৪

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৪

#আরিশা অনু

“””স্যার আসবো বলতেই উনি হাত দিয়ে ভেতরে যেতে ইশারা করলেন।পেছন ফিরে ফোনে কথা বলছে তাই মুখটা দেখতে পেলাম না….!!!

“””অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে আমার। বুকের ভিতর টাই যেন কাল বৈশাখি ঝড় উঠেছে।

“””আগে যখন রোহান আমার আশে পাশে থাকতো তখন এমন অনুভব হতো।এতবছর ওর থেকে দূরে থেকে অনুভূতি গুলো ও কেমন যেন মরে গিয়েছিল।কিন্ত আজ আবার হঠাৎ এমন কেন মনে হচ্ছে যে ও আমার আশে পাশে আছে?

“””কিছু বুঝতে পারছি না তবে কি রোহান আবার ফিরে আসলো?মাথার ভেতর টা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আমার।

“””আর এই লোকটার কথাবলা কখন শেষ হবে কে যানে? এমনিতেই অসস্থি হচ্ছে আমার তারপর কতখন দাঁড় করিয়ে রাখবে কে যানে..?

“””তার উপর আজ আসতে ও লেট হয়ে গেছে না যানি কি কি শুনতে হবে এখন আমার….!!

“””তুমি এখানে… অস্পষ্ট স্বরে কেউ যেন কথাটা বলে উঠলো….?

“””এতখন দাঁড়িয়ে উপরের কথা গুলো ভাবছিল অনন্যা হঠাৎ কারো কথা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে গেল সে…!!!

“””মুখদিয়ে কোনো কথা ই যেনো বের হচ্ছে না দুজনের।

“””কতগুলো বছর পর রোহান কে দেখছি। এভাবে হুট করে যে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।অনেক শুকিয়ে গেছে ও।একটু ও যে নিজের খেয়াল রাখেনা তা ওকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।

“””অভিমানে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নোনা জল পড়ে চলেছে।ও জলভরা চোখে এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর দৃষ্টির মাঝে আমি হাজার হাজার অভিযোগ,অনুযোগ দেখতে পাচ্ছি বাট মুখদিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পাচ্ছি না।শুধু নিরবে দৃষ্টি দিয়ে যেনো দুজন দুজনার মনের সব কথা পড়ে ফেলছি। (অনন্যা)
.
.
.
.
“””এত বছর পর দেশে এসে অনন্যা কে যে এভাবে দেখতে পাবো বুঝতেই পারিনি।

“””মেয়েটা যে একটু ও নিজের খেয়াল রাখেনা তা ওকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।অনেক শুকিয়ে গেছে খাওয়া দাওয়া যে একদম করেনা মনে হচ্ছে। চোখের নিচে ও কালি পড়েছে।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।দেখে মনে হচ্ছে কাল রাতে ও ঠিক মত ঘুমায় নি মেয়েটা।ওর দু চোখ বার বার বলছে কেনো রোহান কেনো এভাবে আমায় দূরে সরিয়ে দিলে।চোখে চোখে হাজার টা কথা বলে ফেলছি দুজন কিন্ত মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হচ্ছেনা।উফ্ ওর চোখের জল আমি কেনো সহ্য করতে পারিনা।অসহ্য লাগছে ওকে এভাবে দেখতে।কাঁদছে ও আর আমার ভিতর টা গুড়িয়ে যাচ্ছে।

“””হঠাৎ ওর করা প্রতারনার কথা মনে হতেই মাথা গরম হয়ে গেল।কিন্তু ও এখানে কেন?তারমানে কি ও আমার নতুন পি.এ?যদি তাই হয় তাহলে ওর জীবন টা হেল করে ছাড়বো আমি।রোহান খান কে ঠকানোর চরম মুল্য দিতে হবে তোমায় অনন্যা। সেদিন হয়তে ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্ত আজ কিছুতেই ছাড়বোনা আমি…..!!!

“””তারপর সব চিন্তা বাদ দিয়ে কথা বলা শুরু করলাম ওর সাথে।(রোহান)

“””হেটে যেয়ে চেয়ারে বসলাম তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললাম মিস অনন্যা আপনি এখন বসতে পারেন।

“””বাই দি ওয়ে এখন কয়টা বাজে..?(রোহান)

“””কোনো রকম দুচোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে উওর দিলাম ৯:১০…!!!(অনন্যা)

“””অফিস টাইম কয়টাই শুরু আপনি জানেন না..?নাকি বয়ফ্রেন্ড দের টাইম দিতে দিতে অফিস টাইম কয়টা থেকে সেটা ভুলে গেছেন (রোহান)

“”” প্রথমত আমার পারসোনাল ম্যাটারে নাক গলানোর কোনো অধিকার আপনার নাই।আর দ্বিতীয়ত লেট হওয়ার জন্য স্যরি…!!!(অনন্যা)

“””প্রথম দিন থেকেই স্যরি না জানি বাকি দিনগুলো কি করবেন।যাই হোক আপনি নিশ্চয় যানেন যে আমার নিউ পি.এ আপনি…?(রোহান)

“””নাহ্ যানতাম না আর আগে যানলে আপনার সামনে অন্তত কখনো আসতাম না।যাই হোক কাল এসে আমি আমার রেজিগনেশন লেটার টা দিয়ে যাব।(অনন্যা)

“””মিস অনন্যা আপনি জবে জয়েন করার আগে সব পেপার পড়ে সাইন করেছিলেন? নাকি না দেখেই সাইন করে দিয়েছিলেন? যাই হোক আপনার অবগতির জন্য আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি এই অফিসের প্রত্যেক টা স্টাফ আগামি ছয় মাসের আগে জব ছাড়তে পারবে না।যারা জবে আছে তারা প্রত্যেকে কন্টাক্ট পেপারে সাইন করে তারপর জবে জয়েন করেছে।আপনি চাইলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন সবার কাছে।আর যারা ছয় মাসের আগে জব ছেড়ে দেবে তারা আগে অফিসের একাউন্ট আগে দশ লাখ টাকা জমা দিয়ে জব ছেড়ে দিতে পারে সেক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নাই।

“””এতখন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললাম অনন্যা কে।আড় চোখে একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারির মুখটা শুকিয়ে গেছে আমার কথা শুনে।আমি জানি ও এতগুলো টাকা কখনো ম্যানেজ করতে পারবে না। ভাজ্ঞিস কন্টাক্ট পেপারে সাইন করিয়েছিলাম নয়তো ওকে আটকাতে পারতাম না।(রোহান)

“””উফ্ এটা কোন গেড়াকলে পড়লাম আমি আগে ভাবছিলাম অন্তত ছয়টা মাস জব যাওয়ার কোনো ভয় থাকবে না এটা ভেবে কন্টাক্ট পেপারে সাইন করেছিলাম কিন্ত আগে যদি যানতাম এটা রোহানের অফিস তাহলে মরে গেলেও এখানে জব করতাম না।(অনন্যা)

“””কি হল মিস অনন্যা আপনি কি সারাদিন ধরে এখানে বসে ভাববেন বলে ঠিক করেছেন?

“””আমার এখনি আন্সার চাই আপনার মত বসে বসে খেলে আমার চলে না।কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিল তারপর ও বললাম।(রোহান)

“””রোহানের এমন রুড বিহেভ এ আমার চোখে পানি এসে গেছে তারপর ও খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকে বললাম….

“””প্রথমত আমি মিস নই মিসেস অনন্যা,আর দ্বিতীয়ত আমি জবটা করবো। আসা করছি আপনি আপনার আন্সার পেয়ে গেছেন…!!(অনন্যা)

“””কিছু না বলে মুচকি হাসলাম শুধু। আমি জানতাম যে ও জবটা ছাড়বে না।তারপর নিপাকে ফোন দিয়ে কেবিনে আসতে বললাম…!!
(রোহান)

“””স্যার আসবো…..?(নিপা)

“””এসো নিপা ….!!!

“””মিস অনন্যা কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে ওনার কেবিন টা দেখিয়ে দাও….(রোহান)

“””জ্বি স্যার দিচ্ছি।আসুন ম্যাম…(নিপা)

“””আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে নিপার সাথে চলে আসলাম…আসার আগে একবার রোহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমি যে ফাইলটা নিয়ে এসছিলাম সেটা দেখছে ও….

“””ম্যাম ও রিসভ(নিপা)

“””হ্যালো ম্যাম (রিসভ)

“””মাথা নাড়িয়ে হাই বললাম।তারপর বললাম দেখুন আমায় প্লিজ ম্যাম বললেন না। অনন্যা বলে ডাকবেন সবাই।আমরা সবাই এখানে বন্ধুর মত সুতরাং আমি চাইনা কেউ আমায় আলাদা চোখে দেখুক।(অনন্যা)

“””কিন্ত ম্যাম এটা কি করে হয়। আর আপনি তো আমাদের সিনিয়র…..!!!(নিপা)

“””আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা ম্যাম বলা যাবেনা ব্যাস।(অনন্যা)

“””অনন্যার পাগলামি দেখে সবাই হেসে দিল আর ওর ব্যবহারে মুগ্ধ ও হল সবাই।ও এত সহযে সবাইকে আপন করে নেবে সেটা কেউ ভাবতেও পারিনি…!!!

“””তারপর সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিজের কেবিনে চলে আসলাম।ছয়মাস এই কেবিন টাই থাকতে হবে আমায়।রোহানের হাজার কটু কথা সইতে হবে।না যানি আরো কত যন্ত্রনার সম্মুখীন হতে হবে আমায়……!!!
.
.
.
.
Continue………

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-৩

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-৩

#আরিশা অনু

“””সত্যি এত সুখ সইনি আমার কপালে।হঠাৎ করে আসা এক কাল বৈশাখি ঝড় আমার পুরো জীবন টা কে ওলোট পালট করে দিয়ে গেছে।

“””এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ টা লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি আমি।

“””চারদিকে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙল আমার।ভাবতে ভাবতে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি।

“””তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে কিচেনে গেলাম।আম্মু এখনো ঘুম থেকে উঠিনি।তাই আমি রান্না টা চড়ালাম।

“””কিরে সোনা মা আজ এত দ্রুত ঘুম থেকে উঠলি রাতে ঠিকমত ঘুমাস নি।(আম্মু)

“””রান্না করছিলাম তখন আম্মু এসে কথাটা বলল।

“””হ্যাঁ আম্মু ঘুমিয়েছি তো।আজান দিতেই ঘুমটা ভেঙে গেল তাই ভাবলাম আজ রান্না টা আমি করি।(অনন্যা)

“””আচ্ছা বাকিটা আমি দেখছি তুই যা রুহিকে ঘুম থেকে ওঠা।(আম্মু)

“””ঠিক আছে আম্মু যাচ্ছি।

“””কিচেন থেকে এসে রুহি কে তুলে ফ্রেশ করে রেডি করে দিলাম।মেয়েটা ঠিক ওর বাবার মত হয়েছে একটা কাজ নিজে নিজে করতে পারেনা।রুহিকে তৈরি করতে করতে অতীতের ভাবনাই ডুব দিলাম….!!!
.
.
.
.

“””অনু অনুুউুউুউু……..(রোহান)

“””রোহানের চিৎকার শুনে দৌড়ে কিচেন থেকে রুমে আসলাম।আহ্ এত চিৎকার কর কেন।সব কিছু তো রেডি করে রাখছি। তারপর ও এত চেঁচামেচি কিসের।(অনন্যা)

“””তোমাকে কতবার বলছি আমি যতখন বাসায় থাকবো আমার সামনে থাকবা।তুমি আমার কথা শোনো…??(রোহান)

“””আহারে আমার তো আর কাজ নাই সারাদিন মহারাজার সামনে বসে দাসি গিরি কর…!!(অনন্যা)

“””কি বললে তুমি দাসি গিরি করাই আমি তোমায় দিয়ে…?

“””উফ্ একটু কিছু পাইলেই হয়।বল এত ডাকছিলে কেনো..?

“””আগে আমার উওর দাও দাসি গিরি করাই তোমায় দিয়ে আমি…!!!

“””উহু মজা করে বলছি সিরিয়াস কেন হও।এখন বল তো ডাকলে কেনো…??

“””আমার শার্টের বোতাম কে লাগিয়ে দেবে,টাই কে পরিয়ে দেবে শুনি?

“””উফ্ একটা দিন ও কি নিজে করতে পারোনা তুমি….??

“””না পারিনা এখন চুপচাপ কাজ কর।

“””হুম রেডি এবার যাও…..

“””আরে আরে করছো টা কি রোহান এভাবে বাচ্চাদের মত জড়িয়ে ধরে আছো কেন। দেরি হয়ে যাবে তোমার অফিসে যেতে।

“””যাক দেরি হয়ে সারাদিন তো আর তোমায় দেখতে পাব না, আবার সেই রাতে বাসায় আসার পর দেখবো।

“””হয়ছে অনেক পাগলামি করছো এবার যাও..!!

“””হু আমার পাগলিটার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে আসলাম বাসা থেকে…!! (রোহান)

“””পাগল টা পরেও বটে প্রতিদিন নতুন নতুন পাগলামি করে ও।(অনন্যা)
.
.
.
.
.
“””আম্মু আম্মু…???( রুহি)

“””হঠাৎ রুহির ডাকে চমকে উঠলাম আমি তারপর বললাম হ্যাঁ সোনা মা বল।

“””চল দেরি হয়ে যাচ্ছে তো আমার নতুন স্কুল এ আমি সবার আগে যাব।(রুহি)

“””রুহির কথায় হালকা হেসে বললাম হ্যাঁ সোনা মা চল।

“””তারপর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম বাসা থেকে।

“””রুহিকে স্কুল এ রেখে আমিও চললাম অফিসের দিকে।আজ নতুন অফিসে আমার প্রথম দিন কি জানি সবায় কেমন হবে।ভাবতেই নার্ভাস লাগছে আমার।

“””উফ্ অফিসে পৌঁছাতে লেট হয়ে গেল একটু।

“””অফিসে এসে দাড়ানোর সাথে সাথে একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো।

“””আপনি অনন্যা ম্যাম রাইট…?(নিপা)

“””জ্বি।(অনন্যা)

“””আমি নিপা আপনার কলিগ।আপনার আসতে এত লেট হল যে।(নিপা)

“””আসলে একটু লেট হয়ে গেল।(অনন্যা)

“””আচ্ছা ঠিক আছে এখন আপনি আগে স্যারের কেবিনে যান। স্যার এসেই আপনাকে খুঁজছিল।আপনি তো ওনার নতুন পি.এ।আপনার আরও আগে আসা উচিৎ ছিল।স্যার এমনিতে খুব ভালো তবে লেট করা একদম পছন্দ করেনা।

“””যাই হোক আপনি এই ফাইটা নিয়ে স্যারের কেবিনে চলে যান।(নিপা)

“””নিপা কে ধন্যবাদ দিয়ে ফাইলা টা নিয়ে এগিয়ে গেলাম স্যারের কেবিনের দিকে।

“””যত এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছি ততই যেন অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে আমার মাঝে।

“””বহু বছর পর আবার সেই #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির খোঁজ পাচ্ছি আমি।আবার যেন নতুন করে ফিল করছি কেনোকিছু যেমন টা ও আশে পাশে থাকলে করতাম…..!!!

“””ভাবতে ভাবতে স্যারের কেবিনের সামনে এসে পড়লাম। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজায় হালকা টোকা দিয়ে বললাম…….

“””স্যার আসবো…..?
.
.
.
.
Continue