হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৩
#আরিশা অনু
–সকাল থেকে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে কত বছর পর আমার চিরচেনা সেই বাড়িটাই যাব আবার।কখনো ভাবিনি আবার ওবাড়িতে পা রাখতে পারবো।রোহান আমার সাথে আবার কোন নতুন গেম খেলতে চলেছে কে যানে।তার উপর আবার তৃধা নামক ডাইনি টা ও এসে জুটেছে। কি কি নাটক যে দেখতে হবে আমায় আল্লাহ ই ভালো যানে……!!!
–সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে রেডি হয়ে নিলাম।আজ কলাপাতা কালারের একটা শাড়ী পরেছি সাথে হালকা মেকাপ,ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক, চোখে হালকা করে কাজল পরেছি,কপালে স্টোন এর সাদা টিপ, কানে একজোড়া সাদা টপ, আর হাতে সাদা পাথরের একজোড়া চুরি, আর চুলগুলো হাত খোপা করেছি ব্যাস রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম…!!!
–মাশাআল্লাহ আজ আমার মেয়েটাকে তো কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না।অনেক দিন পর তোকে সাজতে দেখলাম।খুব সুন্দর লাগছে আমার সোনা মাকে আজ ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াতেই আম্মু কথাটা বলে উঠলো…..!!!
–আম্মু কি যে বলনা তুমি তোমার মেয়ে পরীনা বরং একটা পেত্নি…..!!
— আমার কথায় রুহি আর আম্মু হেসে উঠলো তারপর রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে…..!!!
–রুহিকে স্কুল এ দিয়ে আমি রওনা দিলাম আমার পাঁচ বছর আগে ফেলে আসা সেই পুরোনো ঠিকানাই….!!!
–আধা ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম রোহানের বাসায়…!!!
–দরজার সামনে দাঁড়াতেই পাঁচ বছর আগের সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল আমার….!!!
–এমনি ঝড় বৃষ্টির রাতে রোহান আমায় বাসা থেকে বের করে দিয়ে ছিল।হাজার বার ওকে বলেছিলাম সব মিথ্যা তৃধা আমাদের আলাদা করার জন্য এসব করেছে। কিন্ত রোহান আমার একটা কথাও শুনেনাই।হাজার বার দরজা ধাক্কা দিয়ে ছিলাম যেন আজকের রাতটা অন্তত আমায় থাকতে দেই কিন্তু আমার কোনো কথা ই শুনিনি রোহান সেদিন।একটা বার ভাবে ও নাই যে এই দুর্যোগ মাথায় কোথায় যাব আমি।দরজার এপারে বসে অনেকখন কেঁদেছিলাম আমি।সেদিনি হয়তো সুইসাইড করতাম যদিনা আমার মাঝে রুহি থাকতো।হ্যাঁ তখন রুহি আমার মাঝে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে।এই খুশির খবরটা আমি যানতে পারি যেদিন সেইদিন ই এবাড়িতে আমার শেষ দিন ছিল।এতখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবছিলাম আর দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।হঠাৎ তৃধার ডাকে আমার হুস ফিরলো।দেখি ও দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে সামনে আমায় দেখে বললো….!!!
–আসুন মহারানী ভেতরে এসে আমাকে ধন্য করুন।নাটক দেখলে গা জ্বলে যায় আমার।আর কত কলা দেখাবি রে বাপু।যাও উপরে যেয়ে রোহানের যা যা লাগবে এগিয়ে দাও।তবে খবরদার আমার রোহানের কাছে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে ও খুন করে ফেলবো তোমায়।সো সাবধান মনের ভুলেও যেন রোহানের আসে পাসে না দেখি।কাজ শেষ করেই কেটে পড়বা কথা গুলো এক দমে বলে গট গট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল তৃধা…..!!!
–কি অদ্ভুত না স্বামী আমার আর অধিকার অন্য কারো। চোখ মুছে এগলাম আমরা আগে যে রুমে থাকতাম সে রুমের দিকে।আমার বাড়ি আমার সবকিছু কিন্তু সেসব শুধু নাম মাএ। আমার আর কোনো অধিকার নেয় এসবে।রোহানের রুমের সামনে যেয়ে দরজায় নক করলাম কোনো সাড়া পেলাম না।আবার নক করলাম আবারো সবকিছু নিশ্চুপ কারো কোনো সাড়া পেলাম না তাই এবার দরজা হালকা করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।ভেতরে যেয়ে দেখি রোহান রুমে নেই…..!!!
–আজ প্রায় পাঁচ বছর পর এই রুমে পা রাখলাম অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে রুমের ভেতর।খুব অদ্ভুত লাগছে এটা দেখে যে রোহানের আর আমার একসাথে তোলা বিয়ের একটা ছবি বেডের সামনের ওয়ালে রাখা ছিল। পাঁচ বছর আগে যে ভাবে ছিল এখনো ঠিক সেভাবেই রাখা আছে।ও হ্যাঁ আরও একটা জিনিস এখন আগের জায়গায় আছে সেটা হল আমার প্রিয় বুক শেলফ্। আমার বরাবরের অভ্যাস ছিল অবসরে বই পড়া তাই সখ করে রুমের ডান সাইডে জানালার পাশে বুক শেলফ্ টা রেখেছিলাম আর পাসে ছোট্ট একটা টেবিল এগুলো এখনো ঠিক জায়গাতে আছে বাট রোহান কোথায় গেল…?
–বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে তাহলে হয়তো ও শাওয়ার নিচ্ছে। কি পাগল ছেলেরে বাবা ড্রেস গুলো বের না করেই শাওয়ারে চলে গেছে। ওর এই বাজে অভ্যাসটা এত বছরে ও চেঞ্জ হলোনা দেখছি….!!!!
–তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে আলমারি থেকে ওর ড্রেসগুলো বের করে রেখে বারান্দায় গেলাম।ফুলগাছ গুলো আধামরা অবস্থায় পড়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পানি দেওয়া হয়না।রোহান তো এত অগোছালো ছিলনা কখনো ও তো অপরিষ্কার একদম পছন্দ করতো না।সময়ের সাথে সাথে ও হয়তো নিজেকে বদলে নিয়েছে বা সময় বাধ্য করেছে বদলে যেতে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপরের কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি দরজা খোলাম আওয়াজ হল মনে হয় রোহান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। আর কিছুখন ওয়েট করি ও চেঞ্জ করে নিলে তারপর রুমে যাব আমি…….!!!
–আরে এখানে ড্রেসগুলো কে বের করে রাখলো আমি তো রাখিনি তবেকি তৃধা রেখে গেল আশ্চর্য তো। কিন্ত তৃধা যে মেয়ে ও কখনো আমার ড্রেস বের করে দেবে বলে তো মনে হয়না।
এসব ভাবতে ভাবতে ড্রেস পরছিলাম তখন ই তৃধা নক না করে হুট করে রুমে ঢুকে পড়লো…..!!
–উফ্ কি লাগছে তোমায় রোহান ইচ্ছা করছে আজ ই বিয়েটা করে ফেলি বলে জড়িয়ে ধরলো তৃধা রোহান কে….!!!
–তৃধাকে কিছু বলতে যাব তখন ই বারান্দায় চোখ গেল। দেখি অনন্যা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে ওর।ওকে কষ্ট দেওয়ার এই একমাএ সুযোগ তাই অনন্যা কে দেখেও না দেখার ভান করে তৃধাকে বললাম হ্যাঁ সোনা খুব দ্রুত আমরা বিয়ে করে ফেলবো…..!!!
–তৃধাকে আর পায় কে এখন লাফদিয়ে রোহানের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরি গলায় বলতে শুরু করলো সত্যি জান আমারা বিয়ে করব…?কবে বিয়ে করবো বলনা প্লিজ……!!!
–তৃধার ন্যাকামি সহ্য না হলেও দাঁতে দাঁত চেপে রোহান উওর দিল খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবো আমরা তৃধা সোনা…..!!!
–তৃধা আহ্লাদে গদ গদ হয়ে বললো সত্যি তো এবার আর পালটি মারবা না তো বলে রোহানের গলা ছেড়ে সামনে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর….!!!
–রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে অনন্যার দিকে এগিয়ে যেয়ে বললাম কি নিলজ্জ মেয়ে তুমি হ্যাঁ। আমাদের রোমাঞ্চ দেখছিলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতখন।তোমার মত বেসরম বেহায়া মেয়ে আর দুটো দেখিনি আমি।বেরিয়ে যাও এখনি এই রুম থেকে।এটা শুধু আমার আর রোহানের রুম। নেক্সট টাইম রুমে ঢোকার আগে অনুমতি নিয়ে তারপর ঢুকবা নয়তো খারাপ হবে বলে দিচ্ছি। আরো কিছু বলার ইচ্ছা থাকলে ও রোহান কে দেখে আর কিছু বললো না তৃধা।অনন্যা কে রুম থেকে বের করে দিয়ে আবার এগোলো রোহানের দিকে……!!!
–রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে আসলাম।এতটা নিচে কি করে নামলো রোহান।আমার এত বছরের #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো আবার নতুন করে জেগে উঠতে শুরু করেছিল। ভেবেছিলাম রোহান হয়তো ওর নিজের ভুলগুলো বুঝতে পাবে এবার।কিন্ত আজ নিজের চোখের সামনে যেটা দেখলাম এরপর রোহানের প্রতি আর কোনো অনুভূতি থাকা আমার জন্য পাপ।এতটা বছর যার কথা ভেবে এত অপমানের পরও ওকে আবার কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে এসেছি সেটা আজ সম্পূর্ণ মিথ্যা হয়ে গেল…..!!!
–এই মুহুর্তে আমার ভেতর দিয়ে যে কি বয়ে যাচ্ছে কাউকে এটা বোঝাতে পারবোনা আমি।সব থেকে বেসি কষ্ট লাগলো রোহানের বলা কথা গুলোয়। কি কি বললো যেন ও তৃধা কে। আর তৃধা কি বললো এটা আমার আর রোহানের রুম তারমানে ওরা এক রুমে থাকে ছিহ্ এতটা জঘন্য কি করে হলে রোহান…..??
–এটা আমার রোহান কখনো হতে পারেনা। আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি মাথাটা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। দুহাতে মুখ চেপে ধরে ছাদের উপর বসে কাঁদতে লাগলাম আমি।এগুলো দেখানোর জন্যই কি রোহান আমায় বাসায় আসতে বলেছে…?
–আমি সত্যিই পারবোনা এগুলো দেখতে। আর কত সহ্য করবো আমি আল্লাহ এর থেকে প্লিজ আমায় তুলে নাও।নিজের ভালোবাসার মানুষটা কে যে এভাবে অন্যের হয়ে যেতে দেখতে পারবোনা আমি।এগুলো ভাবতে ভাবতে দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো অনন্যা….!!!
.
.
.
.
Continue….