হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২০

0
2102

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-২০
#আরিশা অনু
-দশ মিনিটের ভেতরে বাসায় পৌঁছে যাব কিন্তু এই জ্যামের জন্য বার বার গাড়ি দাঁড়াচ্ছে আর লেট হয়ে যাচ্ছে।এদিকে কেমন যেন অস্থির লাগছে আমার বার বার মনে হচ্ছে অনন্যা ঠিক আছে তো..? ওর আবার কিছু হলনা তো উফ্ আজ টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাবে দেখছি একা একা গাড়িতে বসে কথা গুলো ভেবে চলেছে রোহান এতক্ষণ।গাড়ি কখন চলতে শুরু করেছে এটা এতক্ষণে খেয়াল হল ওর।যাক আর কিছু খনের মধ্যে বাসায় পৌঁছাতে পারবে এটা ভেবে একটু অস্থিরতা কমলো রোহানের…..
.
.
.
.
-আনমনে ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে এসে পৌঁছেছি খেয়াল ই করিনি আমি। যখন খেয়াল হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে গাড়িটা সজোরে ধাক্কা দিয়ে সাঁ সাঁ করে আপন গতিতে চলে গেল সামনের দিকে।একবারো দেখার চেষ্টা করলোনা যে মানুষটা কে ধাক্কা দিলাম সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।এরা এমনি অন্যকে মেরে নিজে যে কি সুখ পাই বুঝিনা।গাড়ির ধাক্কায় পাকা রাস্তার উপর পড়ে হাতে আর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি।মাথা দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছি এখন।চোখগুলো যেন ঝাঁপসা হয়ে আসছে।চারদিক থেকে মানুষের হই-হুল্লোড়ের শব্দ ভেষে আসছে কানে অথচ চোখ মেলে তাকাতে পারছিনা।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জ্ঞান হারালো অনন্যা…..

-কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িটা আবার থেমে গেল মেজাজ খারাপ হচ্ছে তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আবার গাড়ি থামালে কেন…..

-স্যার সামনে একটা এক্সসিডেন্ট হয়েছে রাস্তার উপর মানুষের জটলা তাই গাড়ি থামালাম…..

– এক্সসিডেন্ট এর কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠলো। তারপর গাড়ির গ্লাসটা নিচে নামিয়ে বাইরে তাকালাম।একটা হাত আর ঝুলে থাকা কমলা রংয়ের শাড়ির আঁচলটার কিছু অংশ দেখে বুকের ভেতরটাই উথাল পাথাল হতে শুরু করে দিল আমার।এতক্ষণে বুঝলাম একটা মেয়ের এক্সসিডেন্ট হয়েছে।মেয়েটাকে রাস্তা থেকে তুলে সবাই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তখন ওর নিচে ঝুলে থাকা হাতটার দিকে আমার নজর যাই।হাতটা বেয়ে টপটপিয়ে রক্ত পড়ছে। এটা দেখে আরো খারাপ লাগছে আমার।মুখটা দেখতে পাইনি কারন এত মানুষ এসে ভীড় করেছে যে গাড়ির ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে না।

-হাতটা দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো কারন আমি অনন্যার জন্য এমন দুইটা চুড়ি কিনে এনেছিলাম।আর সেম চুড়ি ঐ মেয়েটার হাতে ও ছিল।উফ্ আর কিছু ভাবতে পাচ্ছিনা আমি। মাথা ঘুরাচ্ছে এবার আমার।অনন্যা তো এখন বাসায় সো এসব কেন ভাবছি আমি।রাস্তা ক্লিয়ার হতেই ড্রাইভার কে বললাম দ্রুত গাড়ি চালাও……

-পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেন আজ অনেক দীর্ঘ পথ বলে মনে হচ্ছে আমার।অবশেষে বাসায় এসে পৌঁছালাম।দ্রুত যেয়ে কলিংবেল চেপে দাঁড়িয়ে রইলাম।অনন্যা কে না দেখা পর্যন্ত আমার ভেতরের অস্থিরতা কিছুতেই কমবে না।উফ্ এই দরজা খোলেনা কেন কেউ।মেজাজ টা চরম আকারে খারাপ হচ্ছে এখন আমার।আবার কলিং দিতে যাব তখন ই দরজাটা খুট করে খুলে গেল….

-উপরে না তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম এই মেয়ে কোথায় থাকো তুমি। কখন বেল দিয়েছি আর এখন দরজা খুলছো।যানো আমার কত টে-ন- শ কথাগুলো বলতে বলতে মুখ উপরে তুলে তৃধাকে দেখে থেমে গেল রোহান।তারপর বললো তুমি?

-হ্যাঁ আমি উপরে ছিলাম তাই আসতে লেট হল…

-ওহ!মামা মামি কোথায় কথাটা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো রোহান….

-তৃধার সাথে কথা বললে ও দুচোখ যেন বার বার অনন্যা কেই খুঁজে বেড়াচ্ছে….

-সামনে এগোতেই মামা মামিকে দেখে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ। জিজ্ঞেস করলো রোহান।

-আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন মামা-মামি.?আসতে কোনো প্রবলেম হয়নি তো?স্যরি আমি আপনাদের এয়ারপোর্টে নিতে যেতে পারিনি।বের হব তখন হঠাৎ একটা মিটিংএর জন্য যেতে পারিনি কথাগুলো বলে থামলো রোহান…..

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছি বাবা আর আমাদের আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তুমি যাও উপরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা কথা গুলো বলল মামা….

-ঠিক আছে যাচ্ছি।তৃধা অনন্যা কে এক গ্লাস পানি নিয়ে আমার রুমে আসতে বলো তো কথাটা বলে উপরের দিকে চলে যাচ্ছিল রোহান তখন হঠাৎ তৃধার কথায় থেমে গেল…।

-এতক্ষণ এই ভয়টাই পাচ্ছিল তৃধা।অনন্যার কথা জিজ্ঞেস করলে কি উওর দেবে ও।তারপর ও ভয়ে ভয়ে বলল অনন্যার কি যেন একটা কাজ পড়ে গিয়েছে বলল তাই তাড়াহুড়া করে আমায় বলে বাসায় চলে গেছে ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলে থামল তৃধা……!!!

-কথাটা যেন ঠিকমত হজম হলনা রোহানের তাই উপরে যেতে নিয়েও আবার পেছন ফিরে তাকাতেই সোফার উপরে রাখা অনন্যার ব্যাগ আর ফোনের দিকে চোখ পড়লো রোহানের।এবার মনের ভেতরের সন্ধেও টা আরো গাড়ো আকার ধারন করলো।ভয়,আতঙ্ক,টেনশন সব যেন একসাথে বাসা বাধতে শুরু করেছে এখন রোহানের মাঝে….

-দেরি না করে তৃধাকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললাম কি হয়েছে সত্যি কথা বল তৃধা অনন্যা কোথায়? কি হল উওর দাওনা কেন কি জিজ্ঞেস করেছি তোমায় আমি কোথায় অনন্যা…?

-রোহান আমার বলা মিথ্যাটা ধরে ফেলেছে তাই ভয়ে ভয়ে রোহানকে সব খুলো বললাম এখন যদি রোহান আমায় ভুল বুঝে কি হবে তাহলে আমার।রোহান মম জানতোনা তখন তাই এই ভুল করেছে। প্লিজ রোহান তুমি রাগ করোনা সব ঠিক আছে অনন্যা ও বাসায় চলে….তৃধা কথা শেষ করার আগেই রোহান বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো আবার….

-রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এখন আমার।ইচ্ছা করছে সবকিছু ভেঙেচুরে শেষ করে ফেলি। ড্রাইভারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আবার।এতক্ষণ যে অস্থিরতা কেন হচ্ছিল তা এখন বুঝলাম। তার মানে রাস্তায় যে মেয়েটা একটু আগে এক্সসিডেন্ট করেছে সে আর কেউ নয় আমার অনন্যা ছিল ওটা।ওর হাত দিয়ে টপটপিয়ে রক্ত পড়ার দৃশ্যটা মনে আসতেই মাথা ঘুরে উঠলো আমার।চোখদুটো ও ঝাঁপসা হয়ে উঠছে। কত কষ্ট ই না পেয়েছে আমার অনন্যা ওর এতকাছে থেকেও আমি কেন বুঝতে পারলাম না।বুকের ভিতর টা ছিড়ে যাচ্ছে এখন অজানা এক যন্ত্রনায়…..।

– দ্রুত গাড়ি চালিয়ে অনন্যা যেখানে এক্সসিডেন্ট করেছে ঐখানে যেয়ে গাড়ি থামালাম।আশেপাশের মানুষের কাছথেকে হাসপাতালের নাম জিজ্ঞেস করে নিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চললাম অনন্যার কাছে….!!!
.
.
.
.
.
Continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে