বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1155



অসমাপ্ত ভালোবাসা

2

অসমাপ্ত ভালোবাসা

কাউকে ভালোবাসো?

–হুমম ভালোবাসি.

কাকে ভালোবাসো?

–যে সারাটা মূহুর্ত অবহেলা করছে।

তাহলে কেনো ভালোবাসো?

–তাকে ভালোবাসাটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।সারাক্ষন তার কথা ভাবাটা আমার প্রতিটা সময়ের অংশ হয়ে গেছে।

সে কি ভালোবাসে তোমাকে?

–ভালোবাসলে অবহেলায় হারাতো না।

তাহলে তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও।তোমার থেকে ভালো কাউকে পাইছে হয়তো।

–হয়তো।

আচ্ছা মানুষটা কে?

–কেউ না।

বলবে না?

–এটা জানানোর সময় আসেনি।

আচ্ছা বলতে হবে না।

–হুমম আজ এখানেই শেষ।আবার কোনোদিন বাকিটা বলবো।

অসমাপ্ত ভালোবাসা??

একরাতেরবউ পর্ব শেষ 

0

একরাতেরবউ পর্ব শেষ
Written by Avantika Anha
সেদিনের পর আরাভের সাথে আর দেখা হলো না। কোনো ভাবেই না। আমি বুঝে নিলাম যে সে তার কথা রাখছে। আমি আরাভের প্রতি কিছুটা দূর্বল আমিও জানি। কিন্তু আমি ওকে ঘৃণা করি অনেক এটাও আমি জানি। তাই আর কিছু না ভেবে আমি ভেবে নিয়েছিলাম নিজের পায়ে দাড়িয়েই সারাজীবন কাটিয়ে নিবো। কিন্তু সমস্যা ঘটলো আরেক জায়গায়। বাড়ির অনেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। কোনো মতেই বিয়ে আটকানো যাচ্ছিলো না। এক দিন হঠাৎ নিজের মাথায়ই এলো। “আমি কেনো লুকিয়ে বাচঁতেছি? আরাভ কি তার ভুলের শাস্তি পাবে না?” এসবই আমার মাথায় ঘুরতেছিলো। এমন সময়ই মিমির কল আসলো,
.
আমি- বল।
মিমি- কই আছিস?
আমি- বাড়িতে কেন?
মিমি- একটু ক্যাফেতে আয় এখনি।
আমি- পারবো না এখন।
মিমি- আয় প্লিজ। একটা জরুরী জিনিস দেখাবো আয়।
আমি- ওকে আসছি।
.
তাড়াতাড়ি কোনোমতে স্কার্ফ বেঁধে ক্যাফেতে গেলাম। ঢুকতেই সামনের দিকে আরাভকে দেখলাম। একটা মেয়ের সাথে বসে আছে। আমাকে লক্ষ্য করলো আরাভ। একবার তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো। আমি আশেপাশে কোথাও মিমিকে পেলাম না। রাগ উঠতে লাগলো। তাই ফিরে যেতে লাগলাম। কারণ আমার জানা আছে আরাভ কোনোদিন ভালো হবে না। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন আমাকে ডাক দিলো। দেখলাম সে আর কেউ নয় রিয়াদ। (সম্পর্কে মিমির কেমন জানি কাজিন। সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি তো তাকে আগেই না বলে দিয়েছিলাম। তাহলে আমাকে এখানে সে-ই ডেকেছে।)
.
আমি এগিয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম আরাভ এবার আমার দিকে‌একবার ঘুরলো। আমি তাকাতেই চোখ সামনে নিলো।
.
আমি- জ্বী বলুন কি দরকারে?
রিয়াদ- না মানে। চিন্তা করো না ভালোবাসার দাবি নিয়ে না অন্য কারণে তোমাকে ডাকা।
আমি- ব্যাপার না বলুন কি দরকার?
রিয়াদ- আসলে একটা প্রোগ্রাম আছে। আমাদের ব্যাচ করবে। তো কিছু স্থানীয় লাগবে স্টুডেন্ট হেল্প এর জন্য। প্লিজ হেল্প করো। আমি জানি তুমি এসব পারো ভালো। তাই ডাকা।
আমি- কিন্তু ভাইয়া।
রিয়াদ- কোনো কিন্তু না প্লিজ।
আমি- আচ্ছা আমি রাজী।
রিয়াদ- থেংকু। অনেক বেশি।
.
আমি আর রিয়াদ ভাইয়া আরো কথা বললাম। কিন্তু বুঝলাম না এতোক্ষণ আরাভ আর তার গার্লফ্রেন্ড এর এতো কথা হচ্ছিলো, হাসি-ঠাট্টা হচ্ছিলো তা থেমে গেছে। আরাভ বারবার ঘুরছে। এক মুহূর্তে আরাভ উঠে আমার দিকে এলো। আর তার গার্লফ্রেন্ড তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আমি তাকিয়েও তাকালাম না।
.
আরাভ- আনহা।
আমি- জ্বী বলুন। (কথা না বললে রিয়াদ ভাইয়া খারাপ ভাববে তাই জবাব দিলাম)
আরাভ- একটু কথা ছিলো তোমার সাথে।
আমি- কি কথা?
আরাভ- ওই যে প্রজেক্ট এর ব্যাপারে।
আমি- কোন প্রজেক্ট?
আরাভ- ধর্ষণের উপর যেটা।
আমি- ধর্ষণ শুনেই বুঝে গেলাম ও কি বোঝাতে চাচ্ছে।
.
আমি- পরে কথা হবে প্রোগ্রাম নিয়ে তাহলে আপনার সাথে আজ আসি। (রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
রিয়াদ- আচ্ছা।
.
.
আমি উঠে আরাভের সাথে হাটতে লাগলাম।
.
আমি- বলুন কি দরকার?
আরাভ- গাড়িতে উঠো।
আমি- নাহ।
আরাভ- কেন?
আমি- আমার গাড়িতে বমি পায়।
আরাভ- আগে তো পাইতো না।
আমি- এখন পায়।
আরাভ- প্রেগনেন্ট নাকি?
আমি- হুমম কোনো সমস্যা ? (আন্দাজি বললাম)
আরাভ- মজা ভালোই শিখেছো। আচ্ছা চলো হাটি।
আমি- যা বলার জ্বলদি বলুন।
আরাভ- ছেলেটা কে?
আমি- হয় কেউ।
আরাভ- মিশিও না ভালো না মনে হয়।
আমি- আমার ব্যাপার আপনার গফকে নিয়ে কি আমি কিছু বলেছি?
আরাভ- বেশি কথা না। যা বলছি তাই।
আমি- শুনেন আমি আপনার কথা মানতে বাধ্য নই।
আরাভ- বাধ্য।
আমি- অধিকার নাই আপনার ওকে?
আরাভ- অধিকারের প্রশ্ন আসছে কেন?
আমি- সো আমি আপনার কথা শুনবো কেনো? কে আপনি? আমার কে হন? যাস্ট এ্যা ব্লাডি বডি লাভার।
আরাভ- yahhh i am that.
আমি- get away okay? u are not related with me. n i don’t wanna see your face again.
আরাভ- বেশি বলিও না আনহা আমার রাগ বেড়ে যাচ্ছে।
আমি- তো আমি কি করবো? বাই আমার লেট হচ্ছে।
.
.
এই বলে কয়েক পা এগোতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। আরাভ তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। রিপোর্টে জানা গেলো আমি প্রেগনেন্ট। আরাভ ভালো করেই বুঝলো বাচ্চাটা ওর। রিপোর্ট শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। আর যাই হোক আমি আমার সন্তানকে মারতে পারবো না এটা আমি ভালো করেই জানি। তাই ভাবতে লাগলাম কি করবো সামনে। হসপিতালের বেডে বসেই আমি এসব ভাবছিলাম।
.
আরাভ- আনহা।
আমি- আমাকে কিছু বলতে হবে না।
আরাভ- আনহা বিয়ে করবা?
আমি- (আরাভের এই কথা শুনে আমি অবাক)
আরাভ- কি হলো বলো।
আমি- হঠাৎ বিয়ে?
আরাভ- আর যাই হোক আমি আমার সন্তানকে তো অস্বীকার করতে পারবো না। আর আমি চাই না আমার সন্তান মা অথবা বাবা কাউকে ছাড়া থাকুক।
আমি- আচ্ছা ভাবা যাবে।
.
সেদিন কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েই আমি চলে আসলাম। কারণ আমাকে ভাবতে হবে কি করবো সামনে। রাতে ঠিক করলাম আরাভকে আমি বুঝায় ছাড়বো সঠিক কি আর ভুল কি? সোজা রাস্তা বুঝবে না। তাই উল্টা রাস্তা।
.
পরেরদিন সকালে কলেজ যাচ্ছিলাম। এমন সময় আরাভ কার নিয়ে আমার সামনে এলো। আসতেই,
আমি- সমস্যা কি আপনার?
আরাভ- না মানে এই অবস্থায় হেটে যাওয়ার কি দরকার?
আমি- অহ হুমমম। চলেন আজ আর কলেজ করবো না আপনার সাথে ঘুরবো।
আরাভ- সিরিয়াস?
আমি- জ্বী। বিয়ে কবে করছেন?
আরাভ- তুমি বলো এখনি রাজী আমি।
আমি- না আগে প্রস্তাব দেন।
.
গাড়িতে ওর পাশে বসতেই, আরাভের হাত ধরলাম। আরাভ অবাক কারণ আমি এরকম করি না।
আমি- (হাতটা পেটে রাখলাম) এখানে আপনার বেবি আছে।
আরাভ- (বেশ কিছু সময় হাত দিয়ে রাখলো)
.
এভাবে আরো কিছু কাজ করতে লাগলাম কিছুদিন। যেমন প্রতি রাতে কথা বলা। বাচ্চাটাকে নিয়েই বেশি কথা বলতাম। আরাভ আগেই আমার প্রতি দূর্বল ছিলো। ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু এখন আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়তে লাগলো। আমার চাওয়া মতোই সবকিছু হচ্ছিলো। আরাভকে আমি বাচ্চাটার প্রতি ইমোশনাল করতে লাগলাম।
প্রায় ১০ দিন পর, আরাভ এখন আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। প্রায় টাইমে একা পেলে আমার পেটে মাথা রাখে বা হাত রেখে বাচ্চাটাকে ফিল করে।
.
একদিন,
আরাভ- আনহা কাল কখন দেখা করবা?
আমি- কেন?
আরাভ- শুনো ভাবছি কাল প্রস্তাব পাঠাবো।
আমি- কীসের?
আরাভ- কীসের মানে আমাদের বিয়ের।
আমি- আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো? আর কাল আমি বিজি থাকবো।
আরাভ- কেন? আর কি বলো এসব?
আমি- কাল এপোয়েন্টমেন্ট আছে। আমি বাচ্চাটা নষ্ট করবো।
আরাভ- আনহা পাগল হয়েছো?
আমি- না তো। একটা ধর্ষকের পাপের ফলকে আমি আমার পেটে রাখবো কেন? (কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিলো)
আরাভ- আনহা এভাবে বলো না। বাচ্চাটার কি দোষ?
আমি- আমার কি দোষ ছিলো?
আরাভ- আমি তো বিয়ে করছি। আর আমি ভুল করছি আগেই তো সরি বলছি।
আমি- সরি বললে সব মিটে?
আরাভ- না কিন্তু।
আমি- আচ্ছা আমারটা মানলাম। ওই মেয়েগুলো কি করেছে আগের গুলো?
আরাভ- ওরা একটাও ভালো না। ওদের শাস্তি দিয়েছি।
আমি- অধিকার কে দিলো আপনাকে?
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- জানি জবাব নাই। ওদের শাস্তি আপনি দিয়েছেন। আর আপনাকে শাস্তি আমি দিবো। কাল আমি বাচ্চাটা নষ্ট করবো। আর সামনে আমার বিয়ে আপনার দাওয়াত রইলো।
.
কথাটা বলে চলে এলাম। তারপর রাতে আরাভের মাথা গরম হয়ে ছিলো। ও পাগল প্রায় হতে লাগলো। কিন্তু ও নিজের ভুল বুঝে গেলো। এক রাতেই। সে ঠিক করলো বাচ্চাটাকে সে নষ্ট হতে দিবে না। সবগুলো মেয়েকে ফোন করে মাফ চাইলো। কেউ কেউ মাফ করলো কেউ কেউ গালি দিলো। আরাভ কিছু বললো না। নামাযে দাড়ালো। ক্ষমা চাইলো আল্লাহ এর দরবারে।
.
পরেরদিন সকালেই আনহাদের বাড়ির বাইরে গেলো। কিন্তু তালা পেলো। প্রায় ৩দিন পর আমি বাড়ি ফিরলাম। পুরো পরিবার গ্রামে গিয়েছিলাম। বাড়ির সামনে যেতেই দেখলাম রাস্তার এক কোণে আরাভ দাড়িয়ে চোখে পানি। লাল হয়ে আছে। ভালো করেই বুঝলাম চিন্তায় ছিলো সে। আরাভ এগোতে গিয়েও এগোলো না বাবা মাকে দেখে। আম্মু আব্বু ঢুকতেই,
.
আমি- কি হয়েছে এই অবস্থা যে?
আরাভ- আনহা আমাকে ক্ষমা করে দেও। (পায়ে পড়ে)
.
আরো অনেক কথা বলে মাফ চাইলো।
আমি- উঠুন।
আরাভ- মাফ করো।
আমি- বাদ দেন।
আরাভ- প্লিজ ক্ষমা করো।
আমি- মাফ করেছি।
আরাভ- সত্যি?
আমি- হুমম। ওই মেয়েগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভালোই করলেন।
আরাভ- তুমি ওদের খোঁজ কীভাবে পেলে?
আমি- এইতো এমনি চিনে রাখছিলাম। আচ্ছা বাদ দেন বাড়ি ফিরুন।
আরাভ- না আমি যাবো না।
আমি- ওহো। তাহলে তো বিয়েটা মে বি হবে না।
আরাভ- মানে কার বিয়ে?
আমি- আপনার আর আমার। না মানে এই অবস্থায় পরিচয় করালে আম্মু তো ঝাটা পিটা করবে আপনাকেও আমাকে।
আরাভ- আনহা। (চোখ দেখেই বুঝলাম প্রশ্ন করছে সত্যি কি তাই?)
আমি- সত্যিই তা। জ্বলদি আসেন আরো দেরি করলে পেটের পুচকু বড় হতে লাগবে। তখন মানুষও জেনে যাবে।
আরাভ- বাচ্চাটা নষ্ট করো নি?
আমি- বাহ রে আমার বাচ্চাকে নষ্ট করবো কিনু হু? আমার বাবু এটা।
আরাভ- আই লাভ ইউ।
আমি- ওই‌ ওই নোংরা মানুষ গোসল কইরা আয়। হনুমান কোনেকার।
আরাভ- এই হনুমানটাকেই পাবা।
আমি- উহু। পরিষ্কার করে নিবো।
.
সেদিন‌ আরাভ তার বাবাকে নিয়ে আসে। পরিবারের সবাই রাজী হয়। অনেক চেষ্টার ফলে। বিয়ের পরে সব জানায় দিয়েছিলাম কেন এমন হলো? এই সেই। ধীরে ধীরে আরাভ ভালো মানুষে পরিণত হলো। হয়তো শাস্তি কম হলো। কিন্তু ওকে ভালো মানুষ করে তুললাম। আরাভ আর আনহার মেয়ে হলো। নাম রাখা হলো আরোভি।
.
#সমাপ্ত#

একরাতেরবউ পর্ব ১০ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ১০
Written by Avantika Anha
অদ্রি- কি রে কই ছিলি? এতো হ্যান্ডসাম পোলার লগে সময় কাটায় এলি। কেমন কাটলো?
আমি- বাবু জুতা খাবা?
অদ্রি- ওহো আমি বললেই দোষ। বাকীরাও বলছে।
আশা- বাহ রে আমরা কখন বললাম?
আমি- বাবু তোমাদের প্রত্যেকটারেই চিনি আর সাধু সাজতে আইসো না।
আশা- ওলে ওলে। এবার বল কেমন কাটালি?
আমি- দাড়া সবাই বলতেছি।
আশা- ওকে। ওই সবাই দাড়া।
.
সবাই দাড়ানোর পর,
আমি- আমি এরাম সময় কাটাইছি।
.
পাশে একটা লাঠি ছিলো। নিয়া সব গুলোর পিছনে দৌড়। সবগুলোর চিল্লাচিল্লিতে স্যার এসে বকা দিলো আবার আমাকে। কারণ প্রথমেই আমি হারায় গেছি। প্রচুর বকা দেওয়ার পর স্যার চলে গেলো। স্যার যাওয়ার পর,
আমি- শয়তান্নিগুলো তোদের জন্য আমি বকা খাইলাম।
অদ্রি- ও মনু তুমি ঘুরে আসবা। আর আমাদের দোষ।
আমি- আই হেট ইউ। গেলাম আমি।
.
ওখান‌ থেকে চলে আসলাম সবাই। কারণ বৃষ্টির জন্য বেশি আগানো গেলো না। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। সবাই যে যার মতো মজা করতে লাগলাম। কেউ ছবি তুলতে লাগলো। কেউ ঘুমাতে চলে গেলো। বাইরে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলো। আমার ভালো লাগছিলো। ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরতে লাগলাম। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছোঁয়া মনকে শান্ত করে। হঠাৎ আরাভের ফোন আসলো, কিন্তু আমি ধরলাম না। অনেক কয়েকবার এলো তাও কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলাম। আবারো আমি বৃষ্টির ফোটাদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম। কিছু সময় পর বেলকোনির বাইরে আরাভকে দেখলাম। আমি অন্য দিকে তাকালাম। আরাভ ওদিকটায় গিয়েও ইশারায় আমাকে বাইরে আসতে বললো।
.
আমি ভিতরে চলে আসলাম। বৃষ্টির পরিমাণ হঠাৎই বেড়ে গেলো। হয়তো আবহাওয়া একটু বেশিই খারাপ তাই বৃষ্টি কমছে না। প্রায় ৪০ মিনিট পর আমি আবার বেলকোনিতে দাড়ালাম। দেখলাম আরাভ এখনো সেখানেই দাড়িয়ে। এখনো আমাকে ইশারায় ডাকছে। আমো তাকে ফিরে যেতে বললাম ইশারায়। আর আরো বললাম আমি যাবো না। আরাভ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সে যাবে না। আরো কিছু সময় পর আমি নিজেই নিচে নেমে গেলাম। ছাতা হাতে তার কাছে যেতেই,
.
আমি- এভাবে ভিজার মানে কি?
আরাভ- ভালো করে আসলে কি হয়?
আমি- আমি কেন আসবো?
আরাভ- আমি বলেছি তাই।
আমি- আপনি আমার কে?
আরাভ- কেউ না।
আমি- তো?
আরাভ- তো তো কিছু না।
আমি- হয়েছে আমি উপরে গেলাম।
আরাভ- না।
আমি- কেন?
আরাভ- আমি গান শুনবো।
আমি- আমি গান পারি না।
আরাভ- তা আমি ভালো করেই জানি তুমি পারো কিনা।
আমি- পারি না।
আরাভ- ভালো করে গান গাবা নাকি আমি সারাদিন এখানে দাড়িয়ে থাকবো।
আমি- ব্লাকমেইল করছেন?
আরাভ- যা ভাবো।
আমি- ফাইন থাকুন।
.
এইটুকু বলে ১০-১৬ পা আগালাম। তারপর পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ দাড়িয়ে আছে। আমি জানি সে অনেক রাগী। আমি তাকাতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। রাগও চড়তে লাগলো আমার। তবুও ফিরে গেলাম।
আমি- ওকে গান শুনাবো। ভিতরে চলুন।
আরাভ- কই?
আমি- হোটেলের রুমে।
আরাভ- কার রুমে আমারটায় নাকি?
আমি- না আমার টায়। (তার রুমটার কাছে স্যার এর রুম তাই)
আরাভ- ওকে বেবি চলো।
.
আমি আরাভকে নিয়ে রুমের দিকে এগোতে লাগলাম। তখনি পরিচিত এক ফ্রেন্ডকে ওদিক দিয়ে যেতে দেখেই আরাভকে নিয়ে এক ফাঁকে লুকালাম। মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে তাই লুকালাম। যদিও আরাভ আর আমি বেশি কাছাকাছি ছিলাম না। কিন্তু ওর পারফিউমের স্মেল আমার নাকে আসছিলো। আরাভের পারফিউমের স্মেল অনেক ভিন্ন। মিষ্টি ধরনের, কিছুটা কড়া কিন্তু সব মিলিয়ে সেই লাগে। মাতাল করা স্মেল। আমি আরাভের দিকে তাকিয়ে আছি। ভিজে গেলেও স্মেলটা এখনো আছে আর সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করার বিষয় তার বুকে লোম আছে। আমি তা-ই ভালো করে দেখছিলাম। কেন দেখছিলাম নিজেও জানি না। আরাভের চোখ আমার দিকে পড়তেই আমি সরিয়ে নিলাম। কারণ কিছুটা লজ্জার পরিস্থিতি আছে।
.
আমি- চলে গেছে। চলুন।
আরাভ- কি দেখছিলে?
আমি- না কিছু না। যাবেন কি না?
আরাভ- ওকে।
.
আরাভ আমার রুমে আসতেই, ওকে গামছা দিলাম আমার। ও মাথা মুছতেছিলো। এমন সময় মাথায় এলো,
আমি- কাপড় পাল্টাবেন কেমনে? মাথায়ই তো আসে নি।
আরাভ- লাগবে না।
আমি- গান শুনাবো না।
আরাভ- ওকে ৫ মিনিট ওয়েট।
.
আরাভ বের হয়ে গেলো। আমার প্রশ্ন সে কেন এমন করছে? সে কি জানে না আমি কেন তাকে ইগনোর করার চেষ্টায়। সবটা কেড়ে কি এখন মনের দিক দিয়েও কষ্ট দিতে চায় সে? এসব প্রশ্নই আমার মাথায় ঘুরছে। আরাভ চলে এলো।
.
আমি- এতো জ্বলদি?
আরাভ- বললাম না গান শুনবো। আর আমার জেদ প্রচুর যা চাই তা করি। যেমন তোমাকে চেয়েছিলাম। পেয়েছি।
আমি- হাহা। শারীরিক ভাবেই শুধুই।
আরাভ- যাই হোক।
আমি- হাহা। স্বার্থপর আপনি। নিজের চাওয়া পূরণে সব করতে পারেন।
আরাভ- ঠিক ধরেছো। স্বার্থপর আমি। এখন গান শুনাও।
আমি- বসুন।
.
আমার পাশে বসতে লাগলেই বলি,
আমি- ওদিকে বসুন।
আরাভ- ওকে। (কিছুটা কষ্ট লাগলো)
আমি- কষ্ট পেলেও কিছু করার নাই। আপনি যা করেছেন তারপর পাশে?
আরাভ- ওকে দূরেই আছি। শুরু করো।
.
আমি গান ধরলাম,
আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার দিনগুলো সব

রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

তুমি চোখ মেললেই

ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,

ভোরের শিশির ঠোট ছুঁয়ে যায়

তোমার ভালবেসে।

আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার ক্লান্ত মন

ঘর খুঁজেছে যখন,

আমি চাইতাম পেতে চাইতাম

শুধু তোমার টেলিফোন।

ঘর ভরা দুপুর

আমার একলা থাকার সুর,

রোদ গাইতো আমি ভাবতাম

তুমি কোথায় কতদুর।

আমার বেসুর গিটার

সুর বেঁধেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার একলা আকাশ

রাত চিনেছে তোমার হাসি হেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

অলস মেঘলা মন

আমার আবছা ঘরের ঘরের কোণ

চেয়ে রইতো ছুটে চাইতো

তুমি আসবে আর কখন।

শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক

ধুলো মাখা বইয়ের তাক,

যেন বলছে যেন বলছে

থাক অপেক্ষাতেই থাক।

আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার দিনগুলো সব

রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আরাভ- তুমি ভালো গান করো।
আমি- ধন্যবাদ।
আরাভ- হুম।
আমি- এবার আসুন।
আরাভ- বের করে দেও?
আমি- ধরে নেন তাই।
.
আরাভ উঠে যেতে লাগলো। যাওয়ার আগে,
আরাভ- আমি জানি না কেন এমন করি? কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে হয় করে ফেলি। জানি কষ্ট দেই তোমাকে প্রচুর। কিন্তু আজ থেকে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ইচ্ছা পূরণের জন্য। আসলে তোমার গানটা রেকর্ড করে নিলাম। এরপর থেকে শুনবো। ক্ষমা করো আমাকে। জানি পারবে না।
.
আরাভ চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আল্লাহ জানে এই ছেলে কি? আর কি চায় আমার কাছে?
.
তারপর আরো সময় কেঁদে কাটালাম।
.
.
কিছু সময় পর বের হলাম। সেদিন খাবার টেবিলে,
.
অদ্রি- আনহা।
আমি- বল।
অদ্রি- তোর আর ওই নাসিরের মাঝে কিছু আছে?
আমি- কে নাসির? (ভুলে গেছিলাম আরাভ নাসির সেজে আছে)
অদ্রি- দেখেছিলাম। বৃষ্টির মাঝে তোকে।
আমি- না ভাইয়াটা ভিজছিলো। আমি বাইরে ছিলাম। তাই কাছে গেছিলাম।
অদ্রি- সত্যি?
আমি- হুমম।
অদ্রি- ওকে রে।
.
আর কথা বাড়ালাম না। নইলে সন্দেহ করবে। আমি মিথ্যা বলেছি আমি জানি।
তারপর আর কয়েকটা দিন কেউ কারো সাথে কথা বললাম না। দুজনেই দুজনের মতো থাকতে লাগলাম। এমনটা যেন কেউ কাউকে চিনি না। ট্রিপ থেকে ফেরার পথেও দুজন আলাদা বসলাম কেউ কারো দিকে তাকালাম না।

.
.
চলবে…..

একরাতেরবউ পর্ব ৯ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ৯
Written by Avantika Anha
বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো। ফোটা ফোটা বৃষ্টি ছিটকে আসতে লাগলো আমাদের দিকে। অনুভূতি টা ভিন্ন। মনে হচ্ছে প্রকৃতি নতুন ভাবে উজ্জীবিত হচ্ছে।
আরাভ- আনহা একটু চেপে দাড়াও বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে।
আমি- কেন সুযোগ কাজে লাগাবেন?
আরাভ- (জবাব দিলাম না)
.
আমি আরাভের দিকে তাকালাম। সে চুপ করে অন্য দিকে ঘুরলো। আরো বেড়ে গেলো বৃষ্টির বেগ।
.
আরাভ- এগিয়ে এসো এদিকটায়। বৃষ্টি কম পড়বে। আমি সরে যাচ্ছি।
আমি- না।
আরাভ- আসো আমি তো যাচ্ছি। (আরাভ সরতে লাগলো)
আমি- দাড়ান।
আরাভ- কেন? তোমার সমস্যা হবে না।
আমি- থাক যাইয়েন না আমি আসছি আপনার ওদিক।
আরাভ- না।
আমি- যা বলছি শুনলে প্রব্লেম?
.
আমি আরাভের দিকে এগিয়ে গেলাম। বেশি না শুধু আমার হাত তার হাত স্পর্শ করছিলো। আরাভ আড়চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো, যদিও আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। বৃষ্টির চেয়েও বেশি আরাভের ভালো লাগছে আনহার দিকে তাকিয়ে থাকতে। প্রকৃতির মতো আনহাকেও সজীব লাগছিলো। বৃষ্টির মাঝে আনহার চুলও অনেকটা ভিজে গিয়েছে। কিছু চুল সামনে চলে আসলো। আরাভের প্রচুর ইচ্ছা হচ্ছে চুল গুলো কানের পাশে আটকে দিতে। মনে হচ্ছে এক ঘোর আরাভকে আনহার দিকে টানছে। নিজের অজান্তেই আরাভ আনহার চুল গুলো সরিয়ে দিলো। হঠাৎ স্পর্শে কিছুটা চমকে উঠলাম।
.
আমি- আ.
.
কিছু বলতে যাবো কিন্তু আরাভ ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বললো। আরাভের মাথায় এখন কিছু কাজ করছে না। শুধুই আনহা তার মাথায়। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভের চোখের দিকে তাকিয়ে আমিও কিছুটা ঘোরে জড়াতে লেগেছিলাম। হঠাৎ জোড়ে একটা বিদ্যুৎ চমকালো। ঘোর কেটে গেলো দুজনেরই।
.
আরাভ- সরি।
আমি- ইটস ওকে।
.
মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ বেড়ে গেলো।
আমি- ভয় করছে?
আরাভ- হুমম কিছুটা।
আমি- চিন্তা করবেন না কিছু হবে না। ক্ষুধা লাগছে?
আরাভ- নাহ।
আমি- কেমনে কি আমারই তো কতো ক্ষুধা লাগছে।
.
আমি একটা চিপসের প্যাকেট বের করলাম। ছিঁড়ে খেতে লাগলাম।
আমি- খাবেন?
আরাভ- না।
আমি- হুসস খান বৃষ্টি কখন যে থামবে কে জানে?
আরাভ- আচ্ছা।
.
আমি আর আরাভ শেয়ার করে খেলাম। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়।
আমি আরাভকে পানি খেতে দিলাম কিন্তু সে বোতলে মুখ লাগালো।
.
আমি- ওইইইই বান্দর পোলা।
আরাভ- মানে?
আমি- শয়তান, ইতর।
আরাভ- কিহ?
আমি- তুই আমার বোতলে মুখ লাগাইলি কেন?
আরাভ- সরি ভুলে গেছিলাম।
আমি- আমার বোতল।
আরাভ- প্রব্লেম কই?
আমি- আমার একটা মাত্র বোতল আনছি।
আরাভ- ধুয়ে নিও।
আমি- ইউ ধর্ষণ করলেন আমার বোতলকে।
আরাভ- কিহ? বোতল ধর্ষণ?
আমি- ইউ রেপিস্ট। আমারে তো করলেনই আমার বোতল রেও। আমার বোতল রে।
আরাভ- আনহা বাচ্চামীর লিমিট আছে।
আমি- আপনার লিমিটের গুষ্টি কিলাই। আনার বোতলে মুখ লাগাইলেন কেন?
আরাভ- চুপ একদম চুপ। ভুলে যাবা না। ধর্ষণ হোক আর যাই হোক। আমার ঠোঁট তোমার ঠোঁটকে এমনিও স্পর্শ করছে।
.
আমি ভুলে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য বিষয়টা। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুটা সরে দাড়ালাম আরাভের থেকে। আরাভ বিষয়টা লক্ষ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না। কিছু সময় পর বৃষ্টি থেমে গেলো। আনহা বা আরাভ কেউই এতোক্ষণ একে অপরের সাথে কথা বললো না।
.
আরাভ- আনহা থেমে গেছে বৃষ্টি।
আমি- হু চলুন।
আরাভ- তোমার কাছে এক্সট্রা কাপড় নাই?
আমি- ইয়ে মানে না ভুলে গেছি।
আরাভ- এখানে দাড়াও আমি বাহিরে একটা কাপড়ের দোকান দেখেছি কিছু আনছি কিনে।
আমি- না মানে একা থাকবো আমি?
আরাভ- কেন? ভয় পাও?
আমি- না না একদম না। আনহা কিছু ভয় পায় না। (যদিও ভয় পাচ্ছি)
আরাভ- তা তোমার চেহারা দেখেই বুঝা যায়। যাই হোক বাইরে কিছু লোক দেখলাম। আর তোমার জামা অনেকটা ভিজে গেছে। যা অনেকের নজর কেড়ে নিবে তাই বলেছি।
আমি- (আর কোনো কথা বললাম না)
.
আরাভ আগাতে লাগলো।
.
আমি- মি. আরাভ।
আরাভ পিছন ফিরে- কি?
আমি- তাড়াতাড়ি আসিয়েন।
.
আরাভ তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলো। কিছু সময় পর আরাভ ফিরে এলো। এসে ওই জায়গায় আর আনহাকে খুঁজে পেলো না। আরাভের চিন্তা বেড়ে গেলো। আরাভ আনহাকে খুঁজতে লাগলো। ওর চিন্তা বেড়ে গেলো। আনহা.. আনহা..বলে ডাকতে লাগলো।
.
কিছুদূর এগিয়ে আরাভ আনহাকে খুঁজে পেলো। ও একা ছিলো না। ওর কোলে ছিলো একটা খরগোশের বাচ্চা। আরাভ বুঝে গেলো আনহা কি কারণে ওখান থেকে এদিকে আসলো। আরাভের প্রচুর রাগ হলো। ও গিয়েই,
আরাভ- প্রবলেম কি তোমার হা? মাথায় কি সমস্যা আছে? পাগল তুমি?
আমি- না মানে।
আরাভ- চুউউউউপ।
আমি- আরে।
আরাভ- কেন আসছো এখানে? বেশি ঢং? অল টাইম বাচ্চামি আজব।
আমি- হইছে?
আরাভ- না।
আমি- হুসসস। গালি দিচ্ছেন ভালো করে দেন। পাগল না পাগলি হবে।
আরাভ- দূররররর।
আমি- ওকে।
.
কিছু সময় আরাভ চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো আমার দিকে। কিন্তু আমি খরগোশের বাচ্চাটার সাথে খেলতে লাগলাম। আরাভ ভালো করেই বুঝলো আমাকে বকেও লাভ নাই। তাই জামাটা এগিয়ে দিলো।
আরাভ- নাও এটা পড়ে নেও।
আমি- এডি কি?
আরাভ- গাউন একটা সুতি।
আমি- ওড়না আনছেন?
আরাভ- হনা স্কার্ফ পাইছি। নেও।
আমি- বাহ আপনার তো চয়েজ আছে। কই শিখলেন? (গাউনটা দেখে)
আরাভ- এতো গফ ছিলো। শিখা কোনো ব্যাপার?
আমি- ওহো ভুলে গেছিলাম সরি সরি।কিন্তু…
আরাভ- কি?
আমি- পাল্টামু কোনে?
আরাভ- এখানেই কোনো গাছের আড়ালে।
আমি- থাক কাপড় শুকিয়ে গেছে প্রায়।
আরাভ- যা বলছি করো।
আমি- না।
আরাভ- যদি না করো আমি জোর করে পড়িয়ে দিবো।
আমি- এ্যা।
আরাভ- জ্বী আর এটা কোনো ব্যাপার না আমার কাছে।

.
.
আর কিছু বললাম না কারণ সত্যি ভরসা নাই ভাবলাম। তাই জামাটা হাতে নিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম। বের হয়েই,
আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ আনহাকে মেরুন রংটা মানিয়েছে।
.
আমি- হইছে? সবসময় এক রকম।
আরাভ- যাই ভাবো। কিন্তু ভালোই চাই তোমার।
আমি- যদি তা হতো আমাকে এমন পরিস্থিতিতে আনতেন না। আর আজ আমার ইজ্জত রক্ষিত থাকতো।
.
আরাভ জবাব দিলো না। তাই আমিই বললাম, “চলুন যাওয়া যাক।”
.
.
কিছু দূর গিয়ে ওদের সবাইকে পেলাম। বৃষ্টির জন্য তারাও আগাতে পারে নি। আর সবার ক্ষুধা লাগছিলো বলে খাচ্ছিলো। তাই ধরতে পেরেছিলাম। আমরাও কিছুটা খেয়ে নিলাম। অনেক বকা শুনতে হলো দুজনকেই।
.
চলবে……

একরাতেরবউ পর্ব ৮ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ৮
Written by Avantika Anha
আমি খুশিই হলাম যে তার থেকে দূরে। যতো সময় সবার মাঝে থাকি পুরো স্মৃতি আমার সাথে যা হয়েছে ভুলে থাকি কিন্তু আবার একা হলেই সব মনে পড়ে যায়। সবাই ব্যস্ত হলো কিছুটা কাজে এদিকে আমি একা এক কোণে দাড়িয়ে আছি। ভাবছি, “গত রাতে কেন আমি তার কাছে গেলাম? আমি কি তার মায়ায় জড়াচ্ছি?”
.
আমার সামনে দিয়ে আরাভ গেলো। কিন্তু তাকালো না। লক্ষ্য করতে লাগলাম আরাভও। ভালোই হলো আমি তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। কিছু সময় হোটেলে থেকে আমরা বের হলাম ঘুরতে। আমি সামনের দিকে হাটছি আর আরাভ আমার থেকে কিছুটা দূরে। এক পলক পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে। আমি সামনে তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম কোণে একটা পাখি আটকে আছে। ভাবলাম তাড়াতাড়ি ছাড়িয়েই আবার তাদের পিছু ধরবো। কিন্তু পাখিটা ছাড়াতে গিয়েও পারছিলাম না। হঠাৎ কে যেন এসে সাহায্য করলো। পাখিটাকে উড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখি সে আর কেউ নয় আরাভ।
.
আমি- এখানে যে?
আরাভ- দেখলাম তুমি গ্রুপ থেকে বের হয়ে এসেছো তাই দেখতে এলাম।
আমি- ও আচ্ছা ধন্যবাদ সাহায্যের জন্য।
.
এইটুকু‌ বলে চলে যেতে লাগলাম পা পিছলে গেলো। আরাভ ধরে ফেললো। আবারো ওর স্পর্শে আমার কেমন একটা অনুভূতি হলো। তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাড়ালাম।
আমি- আবারও ধন্যবাদ।
আরাভ- আনহা।
আমি- বলুন।
আরাভ- আমার থেকে কি দূরে থাকতে চাও?
আমি- হুম।
আরাভ- কেন?
আমি- জানেন না?
আরাভ- সেদিন কেন ওমন করলাম জানি না।
আমি- তাই নাকি? তাহলে আগের গুলো?
আরাভ- তোমাকে তাদের কথা কে বলেছে?
আমি- বলেছে যেই হোক সত্য তো এটা আমিও জানি।
আরাভ- হুমম সত্যি কিন্তু ওরা ওগুলোই ডিজার্ভ করে।
আমি- আচ্ছা আর আমি?
আরাভ- জানি না।
আমি- বাহ দারুণ। না জেনে আপনি একটা মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করলেন।
আরাভ- হুম।
আমি- ভালোই তো।
আরাভ- আই এম সরি।
আমি- আপনার সরি দিয়ে কি আমি পবিত্র হবো?
আরাভ- না। তোমার কি লাগবে?
আমি- বিয়ে করুন আমাকে।
আরাভ- সরি আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না।
আমি- তাহলে এতো কথার মানে হয় না। আপনি আপনার মতো থাকুন। দয়া করে দূরে থাকুন। আর এতো কাছে আসতে হলে একেবারে আপন করুন।
.
আরাভ কোনো জবাব দিলো না। জানি থাকবেও না। আমি ওর মতো একজনের সাথে থাকতে পারবো না নিজেও জানি। কিন্তু কেন এমন করে কথা গুলো বললাম আমি নিজেও জানি না। আমি তাড়াতাড়ি হেটে সামনে গেলাম। কিন্তু আমাদের দলের কাউকে পেলাম না। একটু জোড়ে হেটেও পেলাম না। না পেরে কল দিতে গিয়ে দেখি নেটওয়ার্ক নাই। পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভও নাই। “তার মানে কি ও সত্যি চলে গেছে? এখন আমি একা কি করবো?” এসব প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছিলো। চারপাশে সব অচেনা চিন্তা বাড়তে লাগলো। আশেপাশে জিজ্ঞেস করে অগত্যা সামনে এগোতে লাগলাম। কেন যেন একা লাগছিলো।
.
সামনের রাস্তা গুলো ফাঁকা লাগতে লাগলো। কিছুটা ভয় তাই আমি একটা কিটক্যাট খেতে লাগলাম আর সেই সাথে আমি ফোনে নেটওয়ার্ক খুঁজতে লাগলাম। আশে পাশে তাকিয়ে একটু বেশিই ফাঁকা লাগতে রাখলো। সামনে দুইটা রাস্তা পেলাম।সাইন পেলাম না কোথাও তাই আন্দাজ করে এক রাস্তায় হাটা ধরলাম। হঠাৎ সামনে সাপ দেখতে পেলাম। এমনি আমার এসব প্রাণী আজব লাগে+ভয়ও। আমি চুপচাপ দাড়িয়ে গেলাম। নড়ার শক্তি হারিয়ে গেলো। সাপটা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি আর অপেক্ষা না করে আম্মু বলে দৌড় দিলাম উল্টা দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে এক মুহূর্তে একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি আরাভ। ভয়ের কারণে আরাভকেই জড়িয়ে ধরলাম।
.
আরাভ- শান্ত হও।
আমি- (কান্না পেলো)
আরাভ- আরে পাগলি মেয়ে এতো কিভাবে কাঁদো?
আমি- আমি কাউকে পাচ্ছি না।
আরাভ- জানি ওরা সামনে এগিয়ে গেছে।
আমি- আপনি কিভাবে জানলেন?
আরাভ- তুমি যাওয়ার পরপরই ওদের কল দিলাম তখন শুনলাম। স্যার বকা দিলো এতো কেয়ারলেস হওয়ার জন্য। কোনো মতে বুঝালাম।
আমি- কিন্তু কিভাবে জানলেন আমি এখানে? পিছনে তো আপনাকে পেলাম না।
আরাভ- আমি তো আর তোমার মতো গাধা না। শুনেই তোমাকে খুঁজতে লাগলাম। আশাপাশে তোমার খোঁজ করলাম পিক দেখিয়ে তোমার তখন বললো।
আমি- আমার পিক কই পেলেন?
আরাভ- জানার কথা না।
আমি- বলুন।
আরাভ- তুলেছি লুকিয়ে।
আমি- মানে?
আরাভ- হুম।
আমি- আর যে কি কি করছেন আল্লাহ জানে।
আরাভ- মে বি। বাই দা রাস্তা আমাকে জড়িয়ে ধরে কি ভালো লাগছে নাকি?
.
আমি তাড়াতাড়ি আরাভকে ছেড়ে দিলাম। ভয়ের কারণে ওকে জড়িয়ে ধরছিলাম।
আমি- পিছনে তো দুটো রাস্তা ছিলো। কিভাবে বুঝলেন?
আরাভ- তুমি যে উবু দশ বিশ করে বেশিরভাগ কাজ করো জানা ছিলো। আর প্রথমের টা দশ ধরলে তো …. বুঝলা কেমনে জানলাম?
আমি- ভাই আমারে ইট্টু টিপস দিবেন?
আরাভ- আসো বৎস।
আমি- ফুটেন আমি কোনোদিন আপনার হেল্প নিবো না। যে আমার শরীর নিয়ে খেলেছে। তার কাছে আমি কিছুই শিখবো না।
আরাভ- হুমমম। এখন যাই হোক একা যাবা নাকি আমার সাথে?
আমি- একা যাবো। কিন্তু কোনদিকে যাবো যাস্ট একটা হেল্প বলেন?
আরাভ- আগের রাস্তায়।
আমি- ওকে।
.
সাহস নিয়ে আগাতে লাগলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো। সাধারণত যা হয় ভয় পেয়েছে একজন। কিন্তু আনহা না আরাভ ভয় পেয়েছে। আমি পিছনে ঘুরে দেখি আরাভের মুখের অবস্থা হাইস্যকর।
আমি- কিচ্চে এরাম করে দাড়ায় কেন?
আরাভ- আমি বিদ্যুৎ চমকানো ভয় পাই।
আমি- কিতা? সত্যি? এতো বড় হয়ে ভয় পান হিহিহি।
আরাভ- না মানে।
আমি- হায়রে যে ছেলে এতো মেয়ের শরীর নিয়ে খেলতে ভয় পেলো না। সে সামান্য এতে ভয় পেলো।
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- আসেন আমি আছি। আপনার কিছু হবে না।
.
আরাভ পাশাপাশি দাড়ালো। দুজনে হাটতে লাগলাম। আবারও বিদ্যুৎ চমকালো। আরাভের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আরাভ এবারও ভয় পেয়েছে। কিন্তু আজব ব্যাপার এতো ভয় পেয়েও আরাভ আমাকে স্পর্শ করে নি। হয়তো ওর জায়গায় হলে আমি পাশের জনের হাত ধরে ফেলতাম।
.
আমি- হাতটা ধরেন। আমি আছি পাশে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ আমার হাতটা ধরলো।
.
আমরা হাটছি।
আমি- তা মি. আরাভ আমার প্রশ্নের জবাব দিবেন না?
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- হাহা জানতাম জবাব নেই।
আরাভ- (নিশ্চুপ) {আবারও বিদ্যুৎ চমকালো আরাভ শক্ত করে আমার হাত ধরলো। ও একটু বেশিই হয়তো ভয় পায়}
আমি- আচ্ছা কি খেতে ভালোবাসেন? (কথা ঘুরিয়ে তার মনের ভয় দূর করতে)
আরাভ- কিছু না।
আমি- ও আচ্ছা। তা জানেন আমি অনেক কিছু খাই।
আরাভ- কেমন খাও বুঝা যায়।
আমি- না মানে খাই খাওয়ার জিনিস খাই না।
আরাভ- একটু মোটা হও। বেশিই পাতলা।
আমি- পার্ফেক্ট আছি।
আরাভ- তাও ধরা যায় কারণ যখন কোলে নিছিলাম ওজন মনে হইছে।
আমি- স্টপ।
আরাভ- ওকে।
.
আবারো দুজন নিশ্চুপ হাটছি।
আমি- আচ্ছা মি. আরাভ সত্যি করে বলেন না আমার কি দোষ ছিলো?
আরাভ- জানি না। আমি সত্যি জানি না কেন এমন করলাম। আমি এটাও জানি না আমি এখানেই বা কেনো আসলাম।
আমি- আচ্ছা।
.
হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। আমরা তাড়াতাড়ি দৌড় দিয়ে এক গাছের নিচে দাড়ালাম। হঠাৎ বৃষ্টি কিছুটা ঠান্ডা পানি। হাত বাড়িয়ে ধরতে লাগলাম।
.
আরাভ- বৃষ্টি খুব ভালোবাসো তাই না?
আমি- হুমমম।
আরাভ- আচ্ছা। (কোনো কথা পেলাম না সামনে বাড়ানোর)
.
আমি বৃষ্টিতে ভিজতে এগোলাম।
আরাভ- যেও না।
আমি- কেন?
আরাভ- ঠান্ডা লাগবে।
আমি- না আমি যাবোই।
.
এটুকু বলে আমি আগাইতে লাগলাম। আরাভ আমার হাত ধরে তার দিকে টান দিলো। আমার এক হাত তার বুকে। শার্টটা কিছুটা ভিজে যাওয়ায় আমি তার বুকের ধুকবুকানি অনুভব করতে পারছিলাম। আরাভ আমার থেকে লম্বা হওয়ায় ওর চুলের মুখের বৃষ্টির কয়েক ফোটা পানি আমার মুখের উপর পড়লো। দুজনেই কিছু সময় দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ মাথায় এলো, আরাভের কিছু কাজ। তাড়াতাড়ি নড়ে উঠলাম।
.
আরাভ- ভিজো না।
আমি- হুমম।
.
দুজনেই নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকলাম আর বৃষ্টি দেখতে লাগলাম।
.
চলবে……

একরাতেরবউ পর্ব_৭ 

0

একরাতেরবউ পর্ব_৭
Written by Avantika Anha
আমি আরাভ এর কাছ থেকে চলে এলাম। কারণ আমার এখনো আরাভ এর সাথে থাকতে বা কথা ভালো লাগছে না। ও নিজেও জানে কারণ কি? আরাভের থেকে যতোই দূরে থাকতে চাই ওর চোখের দিকে তাকালে তাকিয়ে থাকতেই ভালো লাগে। কেন যেন ওর চোখের দিকে তাকালে মানতে ইচ্ছে করে না যে সে আমার সাথে এতোকিছু করেছে।
.
আশা- কি রে কই ছিলি? অদ্রির কথা শুনলি?
আমি- কি?
আশা- ওর নাকি সামনে বিয়ে।
আমি- এ্যা আমরা জানিও‌ না।
আশা- আরে হ। তার উপর এতো কিছু আমাদের কে তাও বলে নি। বলতোও না।
আমি- তাইলে কেমনে জানলি তোরা?
আশা- আরে কথা বলছিলো তার উনির সাথে ধরা খাইছে।
আমি- তাই নাকি কই রে ওয়?
আশা- রিয়া পিটাচ্ছে মে বি।
আমি- খাড়া আমিও মারমু তারে।
.
অদ্রির কাছে গিয়াই ওরে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করলাম। তারপর আরো কিছু আজব থেরাপি মারলাম। কিছু সময় পর,
অদ্রি- থাম দোস্ত। তুই না আমার জানে জিগার আমারে মারবি?
আমি- তা মনু আমারে কও নাই কেন?
অদ্রি- না মানে এই আর কি।
আমি- জিজুর নাম কি?
অদ্রি- ফয়সাল।
আমি- আহা আমাদের ফয়সালের বউ রে। পরিচয় করায় দিবি ওকে?
অদ্রি- ওকে।
আমি- চলো মামি ট্রিট মারো এবার। আমরা এখন করবো তোমার ব্যাগ ফাঁকা।
.
অদ্রির সাথে আড্ডা দিলাম। সব ফ্রেন্ডরা ট্রিট নিলাম। কিছু সময় সেভাবেই চললো। আমি যতোটা পারছিলাম আরাভের থেকে দূরুত্ব বজায় রাখছিলাম। কারণ কেন যেন যতোই ভুলার চেষ্টা করি ও যা করছে ভুলতে পারি না। আবার তার চোখের দিকে তাকিয়েই সব ভুলে যাই। রান্নার সময় কোনো এক জিনিস রেখে যাওয়ার সময় আরাভের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগলাম। যদিও সেদিন বেশি মানুষ ছিলো না। তবুও আজব লাগছিলো। সেই সাথে আরাভের স্পর্শ আমার কান্না আনছিলো। স্থির থাকতে পারলাম না। কিছুটা ধাক্কা দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।
.
আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা কেনো তার ছোয়া এতোটা মারাত্তক লাগে। ভিতরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
তার প্রতিটা ছোয়াই একেকটা আগুনের কুন্ডলি মনে হয়।
কাছে আসলেই ছেকা লেগে যায়।
কেনো যেনো পারিনা তাকে নিতে। তার স্পর্শগুলা ভালো লাগে নাকি খারাপ লাগে সেটাও জানিনা।
শুধু এটুকু জানি আমি তার থেকে দুরে থাকতে চাই।
তার কাছে থাকলে হয়তো অনেক কিছু বদলে যাবে।
আমি চাইনা সেসব হোক। আমি আমার মতো থাকতে চাই।
নিজের মতোন করে। যা হইছে বাদ দিয়ে আবার শুরু করতে চাই। যদিও ভোলা সম্ভব না তবুও আড়ালে রাখতে চাই। এতোটা আড়াল করতে চাই যতটা করলে নিজের ও খুব একটা মনে পড়বেনা।
তবে ছেলেটা কেনো বারবার আমার কাছে আসছে।
তার যা পাওয়ার ছিলো সেটা তো পেয়েই গেছে।
আমার মধ্যে আর বাকি কী আছে? যার কারনে সে আমার পিছনে ঘুরছে।
হয়তো আরো অনেক কিছু বাকি। যেটাও তার লাগবে।
অস্ফুট হাসিটার সাথে গড়িয়ে পড়লো কয়েকফোটা জল।
.
হঠাৎ কেউ আমার হাতটা ধরলো,
কিছুটা চমকে উঠলাম। আরাভ নয়তো?
বা হাত দিয়ে চোখটা মুছে নিলাম। অন্ধকারে দেখতে পাবেনা আমার কান্না।চোখটা মুছে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভ।
যা ভাবছিলাম তাই,
ও কেনো বারবার আমার কাছে আসছে। আমিতো পারছিনা আর।
– আনহা। (আরাভ)
– হুমম বলুন।(আমি)
– তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।(আরাভ)
– অনেক বড় জিনিসই তো কেড়ে নিছেন, দিয়ে কি হবে? (আমি
– এসব বিষয় বাদ। (আরাভ)
– ওকে। (আমি)
– জিনিসটা নিবা? (আরাভ)
– আমি নিবোনা।(আমি)
– সিওর নিবেনা?(আরাভ)
– হুমম damn sure..(আমি)
– তুমি নিবেই।(আরাভ)
– যদি না নেই?(আমি)
– বাজি?(আরাভ)
– হুমম বাজি।(আমি)
– আমি জিতলে কি পাবো?(আরাভ)
– যা চাইবেন তাই।(আমি)
– যা চাইবো তাই??(আরাভ)
– হ্যা। (আমি)
– আর যদি হেরেরে যাই?(আরাভ)
– তাহলে কালকেই চলে যাবেন এখান থেকে।(আমি)
– ঠিক আছে।(আরাভ)
.
আরাভ পকেট থেকে দুইটা কিটক্যাট বের করলো।
হেতে তো দেহি মাইন্ড কিলার। হেতে কেমনে জানলো কিটক্যাট আমার ফেবারিট। সে এটাও জানে বাকি সব ফেরত দিতে পারি বাট কিটক্যাট না।
তবুও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু চেষ্টা বৃথা।
এটা লাগবেই আমার। তার হাত থেকে কিছুটা কেড়ে নেওয়ার মতো করেই নিয়ে নিলাম। কারণ যতোই চুপ থাকি কিটক্যাট আমার জান। জান যায়ে পার কিটক্যাট নাহি যায়ে।
.
– কি বলছিলাম না না নিয়ে পারবেনা?(আরাভ)
– আপনি কেম্নে জানলেন এটা আমার প্রিয়?(আমি)
– সেটা নাহয় অন্য একদিন বলবো এখন আমি যা চাই তা দেন।(আরাভ)
– কি চান আপনি?(আমি)
– যা চাইবো তাই কিন্তু দিবেন বলছেন?(আরাভ)
.
এইরে কি বলে ফেলছি। এখন সে কি চাইবে আল্লাহই
ভালো জানে। আল্লাহ এবারের মতো বাচিয়ে দাও।
.
– হুম কি চান বলেন।(আমি)
– তোমাকে চাই। দু ঘন্টার জন্য।(আরাভ)
– মানে??(ভয়ে ভয়ে)
– মানে আজকে রাতে দু ঘন্টার জন্য তোমাকে চাই আমার।(আরাভ)
– আমাকে দিয়ে কি করবেন তাও আবার রাতের বেলা?(আমি)
আরাভ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
– যা ভাবছো তাই করবো। দু ঘন্টা তুমি আমার সাথে থাকবে আর আড্ডা দিবে। আর এই দু ঘন্টা আমি তোমান কোলে মাথা রেখে তোমার হাত ধরে গল্প করবো।(আরাভ)
– এ্যা?(আমি)
– হ্যা।(আরাভ)
.
যাক তবুও অন্যকিছু তো চায়নি।
বেচে গেছি। তবে দু ঘন্টা তার মাথা আমার মাথা সরি আমার কোল।
আমার হাত তার হাত। তবুও আমার কেলম থুরি কেমন লাগছে। আমি তার কাছে দূরে থাকতে চাচ্ছি সে আরো কাছে টানছে। এতোটা ঘৃণা জমিয়েছি যে ভুলে ঘৃণা না সরি ভালোবেসে না ফেলি।
.
ধুরো সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তখন ৮.৪০ মানে ১০.৪০ পর্যন্ত তার সাথে আমাকে থাকতে হবে।
বুঝলাম না আসলে তার মতলব কি?
সে কি আমার প্রেমে ট্রেমে পড়ে গেছে নাকি?
প্রেমে পড়ার কি আছে? আর‌ সে তো এমনিও প্রেমে পড়ে না। সে তো শুধু…. চায়। আমার সবতো সে পেয়েই গেছে।
বুঝিনা এই ছেলেটাকে। কখন কি করে সে। কখন কি চায়। সেটা নিজেও বুঝতে পারেনা।
আর আমিতো নিজেকেই বুঝতে পারিনা তাকে কি বুঝবো।
.
সেদিন রাতে, সবাই যে যার রুমে। আমার আর মিমির এক রুম ছিলো।ও না আসায় পুরো রুম আমার। আরাভের ঘরে গেলাম।
.
আরাভ- আসছো। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।
আমি- (নিশ্চুপ)
আরাভ- বেবি এই দুই ঘন্টা আমার।
আমি- কেন আবারো কি?
আরাভ- নাহ যাস্ট তোমার কোলে মাথা রাখবো এর বেশি না ডোন্ট ওয়ারি। বিলিভ রাখো।
আমি- হাহা আর বিলিভ নাই।
আরাভ- যাই হোক।
.
সে আমাকে বসালো এরপর,
সে আমার কোলে মাথা রাখতেই। শিউরে উঠলাম।
শরিরের সব লোম দাড়িয়ে উঠলো।
সে আমার হাত ধরতেই কেমন জানি অস্থির হয়ে পড়লাম।
কিছুতেই স্থির থাকতে পারছিলাম না।
নিজেকে কেমন জানি আওতার বাইরে মনে হচ্ছিলো।
তবুও নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিলাম।
বুঝিনা এই ছেলেটা কেনো এমন করতেছে।
কি চায় সে এখন?
এতোকিছু করার কোনো মানেই হয়না।
.
– আনহা?(আরাভ)
– হুমম বলুন।(আমি)
– আমার মাথা ব্যাথা করতেছে। মাথাটা একটু টিপে দিবেন?(আরাভ)
– কিভাবে দিবো? হাত তো ধরে রেখেছেন।(আমি)
– ওহ সরি।(আরাভ)
.
আরাভ হাত ছেড়ে দিলো। আমিও কেনো জানি তার কথা শুনতেছি। জাদু টাদু করলো নাকি আবার??
তার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলাম। তার চুলগুলা সেই সফট। হাতে সুরসুরি লাগতেছে। সাধারনত ছেলেদের চুল হার্ড হয়। কিন্তু হেতের উল্টা।
আরাভ প্রশ্ন করলো,
– কিটক্যাট প্রিয় কেনো?(আরাভ)
– ভালোবাসি তাই।(আমি)
– ওহ আচ্ছা আমার প্রিয় চানাচুর।(আরাভ)
– চানাচুর আবার মানুষ খায় নাকি?(আমি)
– কি জানি? মানুষ না খেলেও আমিতো খাই। হয়তো আমি মানুষের কাতারেই পড়িনা।(আরাভ)
একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো সে।
ইমোশনাল কথাবার্তা।
লাভ নেই আনহা পটবেনা।
এতোটাও সহজ নয়।
.
– আমিতো একাই বকবক করতেছি তুমিও কিছু বলুন।(আরাভ)
– আমাকে কি ছাড়া যাবে এখন? সময় কিন্তু শেষ (আমি ঘোর কাটানোর চেষ্টায়ই কথাটা বললাম)
– ওহ আচ্ছা।(আরাভ)
.
আরাভ উঠে দাড়ালো। আমিও দুরে গিয়ে দাড়ালাম।
উফফ বাচলাম। কেমন একটা ভিন্ন জগতে ছিলাম এতোক্ষন। অনেকটা মোহের মতো।
.
রিয়া আমার রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে।
– তোকে সেই কখন থেকে খুজছি।
– কেনো?
– ফয়সাল ভিডিও কল দিছে তোর সাথেও কথা বলবে।
– আচ্ছা চল।
.
আরাভকে রেখে চলে আসলাম। তবুও আমি ঘোরে আছি। কেমন একটা আকর্ষণ এখনো টানছে আরাভের দিকে। কিন্তু‌ আমি এটা বুঝছি না আরাভ কেন এমন করছে? অজানা অনেক কিছু।
.
পরেরদিন,
.
খাবার টেবিল থেকে শুরু করে সব জায়গায় আমি ইগনোর করছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় আরাভও ইগনোর করছে আমাকে। ভালোই হলো। আর জ্বালাবে না। এটাই ভাবছিলাম। কিন্তু কেমন লাগছিলো আমার।
.
চলবে??

একরাতেরবউ পর্ব_৬ 

0

একরাতেরবউ পর্ব_৬
Written by Avantika Anha
“আরাভ কি আমাকে ফলো করেই যাচ্ছে? নাকি অন্য কারণে?” প্রশ্ন গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই সাথে আরাভ কি করেছে আমার সাথে তা মনে পড়ছে।আশেপাশে জায়গা না থাকায় আরাভ এসে আমার পাশের সিটেই বসলো। এমন ভাব করতে লাগলো যেন আমাকে চিনে না।
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি চুপচাপ। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,
আরাভ- কিছু বলবেন আপু?
আমি- (তার মুখে আপনি আর আপু শুনে থ। কারণ পরিচয় থেকে শুরু করে আজ অব্দি সে আমাকে তুমিই বলেছে)
আরাভ- কি হলো আপু মুখে মশা ঢুকবে তো বলুন কি বলবেন।
আমি- আপনি তো…
.
হঠাৎ এক স্যার এলো,
স্যার- নাসির তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো বাবা?
আরাভ- না না আংকেল।
আমি- (এখনো থ এর নাম তো আরাভ তাহলে স্যার কি বলে?)
.
স্যার- এ হলো আনহা প্রথম বর্ষের। (আমাকে দেখিয়ে। তারপর আরাভকে দেখিয়ে আর আনহা এ হলো নাসির। আমাদের হেড স্যারের ভাই এর ছেলে)

.
এটা শুনে থ। স্যার আমাকে বললো তার খেয়াল রাখতে। স্যার আমার আরো তারিফ করে চলে গেলো। স্যার যেতেই,
আমি- কিন্তু
আরাভ- কি?
আমি- আপনি তো..
আরাভ- হাহা।
আমি- হাসছেন কেন?
আরাভ- ডোন্ট ওয়ারি আরাভই। কোনো জমজ ভাই না। আর এসেছি নাসির সেজে। হেড স্যার কে একটু পটাইতে হলো তাও মানে না। নাসিরের সাথে যোগাযোগ করলাম। ভাগ্যক্রমে নাসির আমার বন্ধু। তারপর আরো কাহিনী আর আমি এখানে।
.
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এতোটা চালাকি মানুষ কিভাবে করতে পারে আমার মাথায় ঢুকছে না।
.
আরাভ- এতো হা করো না মাছি ঢুকবে।
আমি- আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন?
আরাভ- ঘুরতে যাবো।
আমি- এখানেই কেন? আপনি এতোকিছুর পরেও আমার সাথে যাচ্ছেন কেন?
আরাভ- কি কিছু?
আমি- জানেন না?
আরাভ- বাবু এটা বাস আর বেশি জোড়ে কথা বলো না। মানুষ জেনে যাবে।
আমি- (ঠিক বলেছে তাই আর কথা বাড়ালাম না)
.
আমার রাগ উঠছে সাথে ঘৃণাও। কারণ যেই মানুষটা থেকে আমি শুধু দূরে থাকতে চাচ্ছি সে প্রতি ক্ষেত্রে আমার সামনে আসছে। ভেবেছিলাম এই পিকনিকে এসব ভাবনা থেকে দূরে থাকবো কিন্তু তাও হলো না। মন বলছে একবার তাকে জিজ্ঞেস করি, “কি চায় সে আর? কেন এতো ফলো করছে আমাকে। আর সৃষ্টিকর্তাই কেন তাকে বারবার আমার মুখোমুখি করাচ্ছে?” এসব প্রশ্ন আমার মনে কিন্তু আমি উত্তর পাচ্ছিলাম না। প্রশ্ন করার ইচ্ছেও করছে না আবার জানতেও ইচ্ছে করছে। আমার মাঝে এক অস্থিরতা কাজ করছে। আমি নিজেও জানি না কি করবো। জানালার বাহিরে তাকালাম। নিজেকে শান্ত করে নিলাম। চোখ বুঝে নিলাম। আমি ভালো করেই বুঝছি আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে। কারণ তার ধারণা হয়তো ছিলো না আমি এতোটা চুপচাপও হতে পারি। কিন্তু একদিকে তো আমারো ধারণা ছিলো না যে, সে এভাবে আমার ইজ্জত…..। চোখ বুঝে নিলাম। কিছুটা ঘুমের রাজ্জে হারিয়ে গেলাম। কিন্তু একটু ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাকিয়ে দেখি আমার মাথা কিছুটা আরাভের কাঁধে আর কিছু চুলও তার মুখে। তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে নিলাম।
.
আমি- সরি মাফ করবেন।
আরাভ- না ইটস ওকে। ঘুমিয়ে পড়েছিলে ভুলে এসেছো।
আমি- সরিয়ে দিলেই পারতেন।
আরাভ- থাক ভাবলাম ঘুম কেন নষ্ট করবো?
আমি- নাকি এতেও সুখ খুঁজে নিচ্ছিলেন?
আরাভ- কি বলতে চাও?
আমি- যা বুঝেছেন তাই।
.
আরাভ আর কিছু বললো না। আমি জানি সে কিছু বলবে না। কারণ আজকাল আর কিছু না পারি এসবের জবাব দেওয়া শিখে যাচ্ছি। যদিও সকল ক্রেডিট এক্ষেত্রে আরাভেরই। সে যাই হোক আর কিছু ভাবার সময় পেলাম না। কিছু ফ্রেন্ড ডাকতে এলো।
.
আশা- ওই আনহা তুই এখানে?
আমি- শাকচুন্নিগুলো কথা কইবি না।
আশা- আরে রাগিস কেন?
আমি- তোরা সব পিছনে বসে গেলি আর আমি জায়গা পেলাম এখানে। গালি দিবো না তো কি আদর করবো? (স্বাভাবিক ব্যবহার করতেই হবে এদের সাথে। তাই স্বাভাবিকের নাটক। আবার কিছুটা বাস্তবতাও। কারণ যতই আমি চেষ্টা করি এসব ফাজলামির অভ্যাস আমার যায় না।)
আশা- আরে আমরাও লেটই আইছি। তুই তো জানিসই আমরা সবাই লেট লতিফ রিয়া ছাড়া।
আমি- তারে ডাক জিগা আমার জায়গা রাখে নি কেন?
আশা- হেতে এক পোলার উপর ক্রাশ খাইছে। তাতে সব ভুইলা গেছে। অদ্রিও জায়গা পায় নি। সামনে বসছে।
আমি- ওকে ওকে বাদ দে।
আশা- তোকে গান গাইতে বলছে ব্যাচ এর বাকীরা।
আমি- কিতা কস আমি তো গানই বেশি পারি না।
আশা- যাই পারিস গা। সবাই গাইতেছে।
আমি- ওকে চল। (আরাভের থেকে যেতে পারলেই বাঁচি। তাই চলে গেলাম)
.
পিছনের দিকে গিয়েও বসতে পারছিলাম না। তাই একটা ছেলেকে বকা দিয়ে সামনে পাঠালাম আমার সিটে। নিজেকে জয়ী মনে হচ্ছে কারণ পিছনে আসতে পারলাম আরাভের থেকে দূরে। গান শুরু করলাম,
.
“আমার ভিতরো বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে,
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।”

.

গান আগেও কিছু জন শুনেছিলো আবার অনেকে শুনে নি। অনেকেরই ভালো লাগলো। আরাভ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো। কিছুজন বললো কিন্তু আমি তার নয়নের দিকে তাকালাম না। কারণ তার নয়নের দিকে তাকাতেও আমার ভয় হয়। সবাই পালা ক্রমে গান গাচ্ছিলো। কিছুটা জোর করেই অনেককে দ্বারা গান গাওয়াতে হলো। এক সময় আরাভের পালা।
সুমি- এবার আপনাকে গান গাইতেই হবে ভাইয়া।
আরাভ- আমি গান পারি না।
সুমি- না বললে হবে না।
আরাভ- সত্যি পারি না।
আমি- বাদ দে রে সুমি সবার দ্বারা সব হয় না। (কিছুটা বাঁশ দিতে)
আরাভ- অনেক কিছুই পারি।
আমি- তো গান গেয়ে দেখান।
আরাভ- ওকে। এক শর্ত আমার সাথে আপনাকেও গাইতে হবে।
আমি- মানে কি বলছেন আমি কারো সাথে গাইতে পারি না।
আরাভ- ওহো তাহলে তো আপনিই পারেন না দেখছি।
আমি- কি বললেন?
আরাভ- এই যে সবার দ্বারা সব হয় না।
আমি- গাবো আসেন।
.
আরাভ শুরু করলো, সাথে আমিও.
.
.
“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে,
আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ”
.
গান শেষে সবাই তালি বাজালো। আরাভও ভালো গান করে আমিও মুগ্ধ তার প্রতি। কিন্তু তবুও আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না।
বাস তার গন্তব্য সিলেটে পৌঁছে গেলো। মূলত একসময় এখানে আসার শখ আমার অনেক ছিলো। চা বাগান তেতুলিয়ায় থাকলেও এখানে তার পরিমাণ বেশি। সবচেয়ে বেশি যে কারণে আসার ইচ্ছা তা ছিলো এক প্রকার স্পেশাল চা খাওয়া। সিলেটের মাটিতে পা রেখেও আমার বারবার মিমির কথা মনে পড়তে লাগলো।
.
এক কোণে দাড়িয়ে গেলাম। যেখানে সবাই এক সাথে ছবি তুলা বা গল্পে ব্যস্ত হলো সেখানে আমি একা এক কোণে দাড়িয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম। হয়তো মিমি থাকলে কম একা লাগতো। হঠাৎ কে জানি কাঁধে হাত রাখলো। ভাবলাম কোনো বান্ধবী। কিন্তু তাকিয়ে দেখি আরাভ,
আরাভ- একা দাড়িয়ে যে?
আমি- আজকাল একা ভালো লাগে।
আরাভ- আনহা।
আমি- বলুন।
আরাভ- কিছু না। (সরি বলতে চেয়েছিলো। কারণ আরাভ অনুতপ্ত আগের গুলো খারাপ ছিলো। কিন্তু আনহা কিছু করে নি তবুও আরাভ এমন করেছে এটা ভেবেই সে অনুতপ্ত)
আমি- তাহলে সরুন ওরা ডাকছে।
.
আমি চলে এলাম।
.
চলবে…..

একরাতেরবউ পর্ব ৫ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ৫
Written by Avantika Anha
কে এই মাস্ক ম্যান এ বিষয়ে আমি বেশি মাথা ঘামালাম না। শুধু এটা নয় অন্য কোনো বিষয়েই আজকাল আমি মাথা ঘামাই না। নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। কারণ আমি যখনি একা হয়ে পড়ি আরাভের সেই কুকর্ম আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।
.
সময় পার হতে লাগলো। শারীরিক ব্যাথা অনুভব করা কমে গিয়েছে আজকাল। কিন্তু মনের ভিতরে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা যে কোনোভাবেই মিটানো যাবে না তা আমার ভালো করেই জানা আছে।
.
কিছুদিন পর হঠাৎ কথা হলো পিকনিকে যাওয়া হবে কলেজ থেকে। গতবারের পিকনিকেও আমি সবার আগে লাফাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার আমার মাঝে ওতো বেশি ভালো লাগা কাজ করছে না। ক্যান্টিনে বসে ছিলাম,
মিমি- শুনেন তো মিস।
আমি- কারে কস?
মিমি- আপনাকে।
আমি- মিস? (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
মিমি- জ্বী। ম্যাম আপনি কি জানেন আমার বেস্টু আনহা কই?
আমি- না তো জানি না তো। (বিষয়টা বুঝতে পেরে)
মিমি- একটু খুঁজতে সাহায্য করবেন ?
আমি- না বইন আমি এখন ব্যস্ত।
মিমি- কুত্তি কি কইলি?
আমি- হিহি। যা শুনলেন মিস পেঁচার বউ।
মিমি- ওই আমাকে পেঁচার বউ বলবি না।
আমি- ওহো সরি আমি তো ভুলেই গেছিলাম তুই তো পেঁচার বউ না তুই তো পেত্নী।
মিমি- আনহার বাচ্চা ভালো হবে না বলছি।
আমি- কারেকশন আমার বাচ্চা হয় নি।
মিমি- হবে তো একদিন।
আমি- তখন তারে বকিস এখন না বেইপি।
মিমি- যাই হোক। থেংকস।
আমি- কিল্লাইগা?
মিমি- আগের আনহা রূপে আসার জন্য। এভাবেই থাক তোকে ভালো লাগে।
আমি- এমনেই আছি। পিকনিকে কি বাহিরের লোকও যাবে?
মিমি- হুমম চাইলে যে কেউ তাদের সাথে একজনকে নিতে পারবে।
আমি- ওয়াও আমাগো কাপল গুলো তাহলে তাদের উনি গুলোরে নিবে।
মিমি- অবশ্যই।
আমি- হয় কেন এরাম করলো? ওরা প্রেম করবো আর আমরা এদিকে জ্বলবো আর লুচির মতো ফুলবো।
মিমি- হ রে প্রেম করা দরকার।
আমি- তুই ই কর আমি তো বিয়া করে… (এটুকু বলে থেমে গেলাম। কারণ মাথায় আসলো আমি তো আর পবিত্র নই)
মিমি- থামলি কেন? জানি বিয়ের পর বরের সাথে প্রেম করবি।
.
ঠিক হলো পিকনিকে সবাই যাবো। এতো আড়ালে থাকলে বাকীরা সন্দেহ করবে তাই আমি রেডি হতে লাগলাম। দায়িত্ব পড়লো এক্সট্রা মজার জন্য যা যা লাগবে সব আমি আর মিমি কিনে আনবো। যেই বলা সেই কাজ।
.
আমি- তাড়াতাড়ি কর,,,তোর জন্য আবার আমাগো বাস মিস হয়ে যাবে।

মিমি- আরে থাম এতো তাড়া দিস না। পরে সব উল্টা পাল্টা হয়ে যাবে।

আমি- তোর তো ওই একটাই কাজ সব কিছুই উল্টা পাল্ট করা।

মিমি- ওই হারামী চুপ কর।

আমি- আচ্ছা,চুপ করছি তুই কর তারাতাড়ি

মিমি- এইতো একদম ভালো মাইয়া।

আমি আর মিমি জিনিষ কিনতে ব্যাস্ত। হঠাৎ একটা কৃষ্ণন কালো পাথরের মূরতি দেখে চোখ টা আটকে গেলো, ওটাই হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম।
মূরতি থেকে নিজের চোখ সরাতেই দেখি,
আরাভ আমি ঠাস করে নিজের চোখ টা নামিয়ে নিলাম,
আরাভকে দেখা মাত্র আমার হার্টবিড দ্বিগুণ স্পীডে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো।
ওর মুখো আমি দেখতে চাই না। বার বার কেনো আমার অতীতের কথা গুলা মনে পড়ে যায়। আরাভের,,, না না আমি আর আরাভকে নিয়ে ভাববো না। আমি যত ওকে নিয়ে ভাববো ও তত নিজেই কষ্ট পাবো। আমি তো আরাভকে নিজের মন থেকে বের করে দিয়েছি এখন আর কি।
নিজেকে আমি স্বাভাবিক করে নিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
আমি বেশ টের পাচ্ছি আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি কোনো পাতাই দিচ্ছি না এবং ওর দিকে তাকিয়েও দেখছি না।
হঠাৎ দেখলাম আরাভ যেখানে দারিয়ে ছিলো সেখানে নেই। আশেপাশে খুঁজে দেখলাম নেই। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যাক বাবা চলে গেছে।
বলেই সামনে থাকতেই থমকে গেলাম।
আরাভ আমার সামনে দারিয়ে আছে।
আমার মুখ দিয়ে কেনো কথা বের হচ্ছে না।

মিমি- কিরে এভাবে ভূত দেখার মতো ভয় পায়ছিস কেন?. আরে আরাভ আপনি??.
আরাভ- আপনারা এখানে কি করছেন??..
মিমি- আরে শপিং করছি।
আরাভ- ওহ বুঝলাম এখানে কি শপিং করছেন??..
মিমি- আর বলবেন না এতো পিকনিকের জন্য শপিং করছিলাম।
আরাভ- পিকনিক??.
মিমি- আরে হ্যা,,কলেজ থেকে তো সবাই পিকনিকে যাচ্ছি।
আরাভ- ওহ,,আচ্ছা শুধু আপনারাই নাকি?.
মিমি- বাহিরের লোক ও যেতে পারে। যে কেউও তার সাথে একজন কে নিতে পারে।
.
আমি কোনো কথা না বলে মিমি কে ফিসফিস করে কানে কানে বললাম, ওই কুত্তি সব বলা শেষ এখন চল যাই।
মিমি- আচ্ছা আমরা এখন আসি।
বলেই ওখান থেকে আমরা চলে আসলাম।
.

আমি আর মিমি পিছন দিকে হাটছি। আমি যতোদূর আরাভকে চিনি, আমি ভালো করেই জানি সে এখনো আমার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আমি পিছন ফিরলাম না। আমার মাথায় এটা আসছে না তার এতো আমার আশেপাশে আসার কারণ কি? আমি তো দূরেই থাকতে চাচ্ছি কেনো সে এভাবে কাছে আসছে। আমি এসব ভাবছিলাম। আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে,
মিমি- কি রে চুপ কেন?
আমি- কথা বলবি না একদম।
মিমি- আরে শুন না।
আমি- চুপ।
মিমি- আমি ভাবলাম সে তোকে পছন্দ করে তাই আরকি।
আমি- মাথা করে। এতো মাথা খাটাইতে বলছে কে তোকে?

মিমি- না মানে খাটাই আরকি।
আমি- বাবু আমার কাছে একটা গিফ্ট আছে তোমার জন্য।
মিমি- কি?
আমি- কুত্তি তোরে আমি খাইছি।
.
এই বলে জুতা হাতে মিমির পিছনে দৌড় দিলাম। মিমি সামনে আমি পিছনে। মিমি এদিক আমি ওদিক। এদিকে মাঠ ছিলো। কখনো মাঠের মাঝে। কখনো বাইরে। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে। কিন্তু কে মানে কার কথা। হঠাৎ একটা গাড়ি আসতে লাগলো। আমি যদিও প্রথমে লক্ষ্য করি নি। গাড়িটা আমার দিকে এগোতে লাগলো। পা জমতে লাগলো। মিমি এদিকে ডাক দিচ্ছে। কিন্তু আমার শক্তি কএে যাচ্ছে। কেন যেন আমি নিজেও চাই নিজেকে শেষ করতে। হঠাৎ কে যেন হাত ধরে টান দিলো।
.
আমি ছিটকে গেলাম। রোমান্টিকতা নেই তবুও টান দেওয়ায় আমার মচুলগুলো তার মুখে থেকলো। এক হাত তার হাতে আরেক হাত তার কাধে। কিছু লোক ছবি তুলছে। কিছু লোক তাকিয়ে হাসছে। স্পর্শে বুঝে গেলাম এটা কে? কারণ এক রাতেই তার স্পর্শ চেনা হয়ে গেছে। সে চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে চড় দিলো।
.
আমার এক হাত আমার গালে। কিছু সময় আগেও যারা মজা নিচ্ছিলো, তারাও স্তম্ভিত।
আরাভ- চোখ কি নাই? রাস্তায় কে এভাবে দৌড়ায়? বাচ্চা তুমি? জ্ঞান নাই? কি করো হা? কে তোমাকে বের হতে দেয়? তোমাকে তো বেঁধে রাখা উচিত।
.
আরাভ বকা দিয়ে যেতে লাগলো। বাকী লোকগুলো কেটে পড়তে লাগলো। কেউ কেউ আবার দেখতে লাগলো। আমাকে এভাবে বকা খেতে দেখে মিমিও আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলো না।
আরাভ- কিছু বলছো না কেন?
আমি- বকা হইলো?
আরাভ- মানে?
আমি- ইন্তা সালসুল মুখমাফি। (অন্য ভাষায় গালি দিলাম)
আরাভ- মানে?
আমি- কিছু না থেংকু গরু। টাটা। ভাগ আনহা ভাগ মিমি ভাগ।
.
এই বলে এক দৌড় দিলাম। কেউ আশা করে নি মেয়েটা এভাবে দৌড় দিবে। আরাভ বুঝেও নি আমি ওরে গালি দিছি। নিজেকে জয়ী মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ কানে আসলো পাশে পাড়ায় এক মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করছে কারণ সে ধর্ষিতা। একটু আগেও ভুলে গেছিলাম। কিন্তু কথাটা কানে আসতেই আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। ঘরে ঢুকে দতজা লাগিয়ে অনেক সময় কাঁদলাম। কারণ যতোই যাই হোক আমিও হয়তো ধর্ষিতাই। “তবুও আমাকে বাঁচতে হবে সবার জন্য” এটা মাথায় কাজ করলো। নিজেকে সামলে নিলাম।
.
সময় যেতে লাগলো, আমি একটু একটু করে চুপচাপ হতে লাগলাম।
.
তবুও চারপাশের সবার জন্য একটু একটু চঞ্চলতা রাখলাম। কারণ আমি হাজার চেষ্টায়ও এটা ছাড়তে পারবো না আমি জানি।
.
পিকনিকের দিন চলে এলো। জানতে পারলাম মিমি ফক্স হইছে। ও চাইলেও আসতে পারবে না। মনটা খারাপ হলো। কিন্তু সবচেয়ে আজব হলাম কারণ আরাভও আমাদের বাসে। অনেক মেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আমি ভাবছি, “তার মানে কি সেও আমাদের সাথে যাবে?” আমি আরাভকে দেখে থ। ও কিভাবে মাথায় ঢুকছে না।
.
চলবে…..

একরাতেরবউ পর্ব ৪ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ৪
Written by Avantika Anha
আরাভ জানে না সে কেন আনহাকে ফোন দিলো। আরাভের প্রচুর রাগ উঠলো। দেয়ালে কয়েকবার হাত দিয়ে বাড়ি মারলো। হঠাৎ আরাভের ফোনে এক কল আসলো,
আরাভ- হ্যালো কে বলছেন?
জান্নাত- আমি বেবি।
আরাভ- মানে?
জান্নাত- এতো সহজে ভুলে গেলা? তোমার প্রথম ভালোবাসা জান্নাতঙ
আরাভ- না বেবি তোমাকে কেমনে ভুলি। তোমার সাথে তো আমার হোটেলের সম্পর্ক।
জান্নাত- হাহা যাই হোক। তা বাড়ি অব্দি আমিই আনবো।
আরাভ- তাই?
জান্নাত- অবশ্যই।
আরাভ- তা বেবি তোমার রাহুলের খবর কি? সেদিন হোটেলে গেছিলা যে?
জান্নাত- মানে? আমি কোথাও যাই নি। (হকচকিয়ে)
আরাভ- বেবি আমি যাদের যা-ই করি পরে ঠিক খোঁজ রাখি ওকে।
জান্নাত- ফাইন। ফার্স্ট তো তুমিই নিয়েছিলে এখন কেনো অস্বীকার করো। তুমিও তো কতো মেয়ের সাথেই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে নেও।
আরাভ- আমি যা ছেড়ে দেই একেবারে ছাড়ি।
জান্নাত- প্লিজ। (কিছুটা কান্নার সাথে)
আরাভ- গলি না আমি। আমি একটা অমানুষ।
.
এটুকু বলে আরাভ কল কেটে দিলো। আরাভের এসবে যায় আসে না। আরাভের চিন্তায় কোনো কিছুই নাই। সব শেষে এখনো তার চিন্তায় আনহা রয়েছে। সে ভিতরে ভিতরে এখনো অনুতপ্ত। সে ঠিক করলো সামনে একদিন আনহার সাথে দেখা করবে। ও আনহাকে কিছু দিয়ে হলেও অনুতাপের হাত থেকে বাঁচতে চায়। আরাভ শুয়ে পড়লো। কিন্তু ওর চোখে ঘুম নাই। আছে শুধু অনুতাপ।
.
পরেরদিন,
ঘুম থেকে উঠে কিছুটা ভুলে গেলেও ব্যাথা সব মনে করিয়ে দিলো। কিছু সময় কিছু জিনিস হয়তো চাইলেও ভুলা যায় না। আমিও ভুলতে পারছি না। যে আমার সাথে কি কি হয়েছে। চোখে পানি চলে আসলো। কিন্তু পরোক্ষণেই প্রেয়সি ঘরে আসলো।
.
প্রেয়সি- হ্যাপি বার্থডে আপু। বাইরে আয় আম্মু ডাকে।
আমি- হুম এগিয়ে যা আমি আসছি।
.
প্রেয়সি চলে গেলো। যদিও আমি ভুলে গেছিলাম আমার জন্মদিন। আমি নিজেকে একা রাখতে চাচ্ছিলাম। তাই ঠিক করে ছিলাম বাহানা করবো অসুস্থতার। যেই‌ ভাবা সেই কাজ। বের হয়ে আম্মুকে বললাম মাথা ব্যাথা ভালো লাগছে না। সে বললো যেন রেস্ট নেই। সবাই ভাবলো একটু অসুখ। কিন্তু কেউ বুঝছিলো না এটা শারীরিক অসুখ না, মানসিক অসুখ।
.
ঘরে আসতেই মিমির ফোন,
মিমি- হ্যাপি বার্থডে বেবি।
আমি- থেংকু। (স্বাভাবিক ভাবে)
মিমি- কি রে এক্সাইটেড না?
আমি- না।
মিমি- কিছু হয়েছে কি?
আমি- না।
মিমি- জ্বলদি আয়। সবাই তোর ট্রিটের অপেক্ষায়।
আমি- আমি অসুস্থ।
মিমি- ওরে কিপটু রে। ওকে আমি আসতেছি।
আমি- না। (কারণ ও আসলে মা জেনে যাবে আমি গতদিন মিমির সাথে ছিলাম না।)
মিমি- এখন না কেনো?
আমি- আসতেছি রে। রেডি হচ্ছিলাম। (মিথ্যা বললাম)
মিমি- জানি তো।
আমি- হুমমম তোরা স্কাই তে আয়। আমি আসছি।
মিমি- ওকে।
.
অগত্যা রেডি হতেই হলো। রেস্টুরেন্টে সবাই কথা বললাম অনেক বিষয়ে। যদিও প্রথমে গুরুত্ব দেই‌নি। কিন্তু পরে ওরা সন্দেহ করছিলো। কারণ আমি চুপ থাকার মেয়ে না। তাই তাদের সাথে বকবক করলাম। তারপর সবাই বের হয়ে শহরের বাইরে এক জায়গায় গেলাম। যেখানে মেলা লেগেছে। সেখানেও ঘুরাঘুরি শেষে‌ আমি আর মিমি বাড়ি ফিরছিলাম একসাথে। রাস্তায় কয়েকটা ছেলে বাজে মন্তব্য করছিলো। আমি আর‌ মিমি চুপচাপ হেটে যাচ্ছিলাম। পিছন থেকে কে জানি ওদের কথার জবাব দিলাম। তাকিয়ে দেখি আরাভ। ওকে দেখতেই রাগ উঠে গেলো। কিন্তু মিমি পাশে ছিলো। আরাভ ওদের কিছু কথা বললো আর‌ ওরা সরি বলে চলে‌ গেলো।
.
মিমি- দেখ ভাইয়াটা অনেক ভালো।
আমি- হাহা। ওসব নাটক।
মিমি- তুই চিনিস নাকি? এটাই কি এংরি ম্যান?
আমি- হুমম। (মিমিকে সব বলতাম। আরাভের সাথে কয়েক পরিচয়ে ওর রাগ দেখে তার নাম রেখেছিলাম এংরি ম্যান)
মিমি- ওয়াও সেই তো।
আমি- বাদ দে।
.
.
আমি আর মিমি আবার হাঁটা শুরু করলাম। পিছন থেকে,
আরাভ- আনহা।
.
আমি পিছনে ঘুরলাম না। এগিয়ে যাচ্ছিলাম।
আরাভ আরও একবার ডাক দিলো। এখনো জবাব না দিলে মিমি একটু বেশি চিন্তা করবে। হয়তো সন্দেহ করে বসবে। তাই জবাব দিলাম,
আমি- জ্বী বলুন।
আরাভ- এদিকে‌ এসেছো যে?
আমি- এমনি ঘুরতে।
আরাভ- এতো দূরে কোনো বিশেষ দিন আজ?
আমি- না।
আরাভ- মিমি আপু আপনি বলেন আজ কি বিশেষ কিছু?
মিমি- হ্যা আজ আনহার জন্মদিন। (মজা করে বলে দিলো সত্যি)
আরাভ- হ্যাপি বার্থডে।
মিমি- ভাইয়া আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?
আরাভ- আনহার সাথে কয়েকবার দেখা হলেও ও অনেকবার আপনার কথা বলেছে।
মিমি- ওয় তো ঢংগি বকবক করে খালি।
আরাভ- সত্যিই তাই পাগলি টাইপ।
মিমি- জ্বী ভাইয়া। ও নিজেও অনেকবার আপনার কথা বলেছে।
আরাভ- তাই নাকি আনহা?
.
আমি আরাভের দিকে তাকালাম। ওর চাহনিতেও আমার বাজে লাগছে।
আমি- মিমি তোর হলো? চল বাড়ি যাবো দেরি হচ্ছে।
মিমি- এতো জ্বলদি গিয়ে কি করবো?
আমি- মুড়ি খাবি চল।
মিমি- আরে রাগিস কেন?
আরাভ- আনহা আমাকে ট্রিট দিবা না?
আমি- না আমার টাকা নাই। আমি ফকির। হইছে। মিমির বাচ্চা চল।
আরাভ- এটা তো হবে না। ট্রিট তো আমিও চাই। কি বলেন মিমি আপু?
মিমি- জ্বী ভাইয়া অবশ্যই।
আমি- তুই আমার বান্ধুবী নাকি শত্রু?
মিমি- ওকে সরি। ভাইয়া আমাদের যেতে হবে বাড়িতে কাজ আছে।
আরাভ- ওকে চলেন এগিয়ে দেই। নাহয় সামনে আরো কোনো ছেলে জালাতে পারে।
মিমি- আচ্ছা চলুন ধন্যবাদ।
.
আমরা কিছুদূর হাটলাম। মিমি আর আরাভ একটু আধতু কথা বললো। যদিও আমি জবাব দিলাম না।
.
হঠাৎ আইসক্রিম দেখে,
মিমি- আনহা আইসক্রিম খাওয়া।
আমি- টাকা নাই।
মিমি- ওকে আমি খাওয়াচ্ছি চল।
আমি- ওকে।
মিমি- কি ফ্লেভার খাবি?
আমি- চকলেট।
মিমি- ভাইয়া আপনি?
আরাভ- আমি আইসক্রিম খাই না।
মিমি- আরে একটা খান।
আমি- বাদ দে শয়তানের ঘি হজম হয় না।
মিমি- এভাবে বলতে হয় না।
আমি- আরে না না আরাভ ভাইয়া ভালো মাইন্ড করে না। তাই না মি. আরাভ? (কিছুটা বাঁশ মারতেই বললাম)
আরাভ- জ্বী। (যদিও রাগ করেছি। কিন্তু কিছু বললাম না)
.
মিমি আইসক্রিম আনতে যেতেই.
আরাভ- বেশি বাড়তেছো আনহা।
আমি- আপনার কি প্রবলেম আর‌ কেনো এসেছেন? আর কি ক্ষতি করার বাকী?
আরাভ- আমি কোনো ক্ষতি করতে আসি নি। তোমার বার্থডে উপলক্ষে কিছু দিতে চাই। একটা বিএমডাব্লুউ।
আমি- নো নিড।
আরাভ- রাখো আমি পে করে দিবো যাস্ট চয়েজ।
আমি- শুনেন আমি কোনো কিছু নিবো না। পতীতা না যে দাম নিবো। আপনার কাছে বর্তমানে আমি ধর্ষিতা। তাই কিছু দেওয়ার হলে আপনার আগের গফগুলোকে দেন।
আরাভ- তারা আর তুমি এক না।
আমি- তাই?
আরাভ- জ্বী।
আমি- এক না তাই তো আমার সাথেও বিছানা‌…
.
কথাটা শেষ করার আগেই মিমি এলো।
মিমি- নে খা।
.
আমি আর মিমি আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আমার যতোই যা হোক সব ক্ষেত্রে পাগলামি চলে আসে কিছুটা। তাই তাড়াতাড়ি নিজেরটা শেষ করে মিমির টা কেড়ে নিয়ে খেতে লাগলাম।
মিমি- ওই শয়তান্নি দে।
আমি- দিবো না।
মিমি- দে বলছি।
আমি- নো বেবি এটা এখন আমার। শয়তান্নি আজ জন্মদিন বইলা ছাড়লাম।
.
আমি ভুলে গেছিলাম পিছনে আরাভ ছিলো। আরাভ এগুলো দেখে হাসতে লাগলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, “তোমার এই পাগলামি গুলো দেখেই আমি কেনো যেন তোমাকে পেতে চেয়েছি। জানি আমি দোষী কিন্তু কিভাবে এসব হলো জানি না রে।” মনে মনে ভাবলো আরাভ।
.
সেদিন এসব শেষেই আমরা চলে এলাম। আর আরাভও চলে গেলো। কারণ আমি আর মিমি দুজনেই আলাদা অটো নিয়ে নিলাম। আরাভ বাড়ি ফিরে এলো।
.
কিন্তু এখনো তার মনে আনহার স্মৃতি। রাতে ঘুমানোর আগে ঠিক ১১:৫৯ সময়ে আরাভ আনহাকে মেসেজ দিলো। সেই নম্বর দিয়ে যা দিয়ে আগেও একবার কল দিয়েছিলো।
“tmr ei jonmodiner ses wish ta hoyto ami kresi. kintu prarthona oporisim. jani praptir baire. kintu kolponar majhe. shuvo jonmodin. wish u a happy birthday.”
.
মেসেজটা পড়ে বুঝলাম না কে দিয়েছে? তাই রিপ্লাই দিলাম,
“k?”
reply- “a mask man”
me- ow great so mask poira ghuman. gd night.
reply- haha okay wish ta purno krbo

.
আমি আর‌ রিপ্লাই দিলাম না।
.
চলবে….

একরাতেরবউ পর্ব ৩ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ৩
Written by Avantika Anha
আমি- প্রব্লেম কি আপনার?
আরাভ- কি প্রবলেম আবার?
আমি- গান শুনবো না আমি।
আরাভ- তো আমার কি আমি শুনবো।
আমি- আমাকে‌ এখানে‌ নামিয়ে দেন একা চলে যাবো।
আরাভ- জায়গাটা নিরাপদ না।
আমি- হাহা আর কি হারাবো আর‌ কে কথা বলছে? যে নিজেই আমার….. (আর বললাম না)
আরাভ- যাই হোক আমি দিবো না অন্য কাউকে তোমার কিছু নিতে। এক অধিকার আমিই খাটিয়েছি। এবার সামনে নাহয় তোমার স্বামী।
আমি- চুপপপপ একদম চুপ।
আরাভ- আজকাল পাগলি মেয়েটা দেখি রাগও করে। (আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো)
আমি- প্লিজ (কেঁদে ফেললাম)
.
আরাভ গাড়ি থামিয়ে দিলো। আমাকে কাঁদতে দেখে ওর খারাপ লাগলো।
আমি- থামালেন কেনো?
আরাভ- কান্না থামাও।
আমি- আমার কি এবার কাঁদারো অধিকার নাই?
আরাভ- আছে কিন্তু আমার সামনে না।
আমি- আমি কাঁদবো।
.
এই বলে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলাম। এক মুহূর্তে আরাভ গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। এবার আমার পাশে এসে আমাকে গাড়ি থেকে বের করলো। আমি কিছু বুঝছিলাম না।
.
গাড়ির বাইরে এসেও আমি কাঁদছি। এবার আরাভ আমার মুখ চেপে ধরলো, আরেক হাত দিয়ে আমার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গেলো। আমি কিছু বলতে পারছি না।
আরাভ- শুনো আনহা। আমি জানি না কেনো এমন করলাম? আমি নিজেও বুঝছি না। কেনো যেন তোমাকে পাওয়ার চিন্তা উঠে গেলো। তোমাকে মিস করতে লেগেছিলাম। তাই একবারের জন্য তোমাকে কাছে টেনে নিলাম। আর ডোন্ট ওয়ারি আমি কোনোদিন বিয়েই করবো না। আমার সামনে কেঁদো না আমি সহ্য করতে পারছি না। মাথায় পেইন উঠে যাচ্ছে তোমার কান্না শুনে। (মুখ থেকে হাত নামিয়ে নিলো)
আমি- তো আমাকে বিয়ে করেন সবই তো নিয়ে নিলেন। (একটু জোড়ে বললাম)
আরাভ- নো বেবি। আমি কাউকেই বিয়ে করবো না কোনোদিন না। নট ইভেন ইউ।
আমি- তো মেরে ফেলুন।
আরাভ- তাও হবে না। আমি তোমার সুখ চাই।
আমি- জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়ে এসেছেন এসব বলতে।
.
আরাভ আর কিছু বললো না। আমিও কিছু না বলে নিশ্চুপ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কেউ কিছু বলছি না। শুধু তাকিয়ে আছি‌ একে অপরের দিকে। আরাভের হাত আমার কোমড়ে নেমে এলো। ও আমার কাছে আসতে লাগলো। আমার প্রচুর ঘৃণা পেলো। সেই সময় হাত-পা বাঁধা ছিলো বলে কিছু করতে পারি নি। এখন খোলা থাকায় আরাভকে ধাক্কা দিলাম। আরাভ কিছুটা দূরে গেলো কিন্তু আর কিছু বললো না। আরাভ গাড়িতে উঠে পড়লো। বাকী রাস্তা দুজনই নিশ্চুপ ছিলাম। আমি ভাবছিলাম বাড়ির বাকীদের কিভাবে বলবো বিষয়টা। ঠিক করে নিলাম কাউকে কিছু বলতে পারবো না। কারণ মানুষ সবসময়ের মতোই মেয়েদেরই বলবে। আর এমনিও আরাভ ক্ষমতাবান। কিছুই হবে না তার।
.
বাড়ির কাছে আসতেই,
আরাভ- বাকী পথ তোমার। কখনো টাকা বা হেল্প লাগলে বলো।
আমি- আপনার কেনা পতীতা নই আমি যে আপনার টাকা নিবো।
.
এটা বলে বাড়ি এলাম।
বাড়ি যেতেই,
আম্মু- হঠাৎ মিমির মা কিভাবে অসুস্থ হলো?
আমি- ইয়ে মানে আম্মু হঠাৎ করেই কি থেকে কি। (আমি জানতাম না বিষয় তবুও বুঝলাম আরাভ মেসেজে কি দিয়েছে)
আম্মু- এখন কেমন আছে?
আমি- ভালো আছে।
আম্মু- খাইছিস?
আমি- হুম। (যদিও খাই নি। কারণ ক্ষুধা জিনিসটা কি এটা এখন আমার মাথায় কাজ করছে না)
আম্মু- যা এতো ভিজে গেছিস কাপড় পাল্টা।
আমি- হুমম যাচ্ছি।
.
আমি ঘরে যাচ্ছিলাম। আম্মু পিছন দিয়ে ডাক দিলো,
আম্মু- আনহা।
আমি- হুম।
আম্মু- কিছু হইছে?
আমি- না আম্মু কেনো? (মিথ্যা বললাম)
আম্মু- চেহারা দেখে মনে হলো।
আমি- রাতে জাগছি তাই হয়তো।
আম্মু- আচ্ছে তাই মনে হয় যা ঘরে যা।

.
আমি ঘরে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। নিজেকে বড্ড অপবিত্র লাগছিলো। আমি গোসলে ঢুকলাম। অনেক সময় ধরে গোসল করেও নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিলো। কিছু বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লাম। কিছু সময় যেতেই ঘুমের মাঝে ডুবে পড়লাম।
.
ওদিকে আরাভের নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছিলো। ও ওর ঘরের অনেক জিনিস ভাঙলো। কারণ ও চায় নি এমন করতে। হঠাৎ কেনো এমন করলো ও নিজেও জানে না।
.
ও ভাবতে লাগলো আনহা আর ওর কথা। সেদিনের পরে আরো কয়েকবার আনহা আর আরাভের দেখা হয়েছিলো। একবার পহেলা বৈশাখে আনহার পড়নে ছিলো শাড়ি। সেদিন যদিও আরাভ ওর এক গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুড়তে গিয়েছিলো। কিন্তু কোনো এক কারণে তার গার্লফ্রেন্ডকে বাড়ি ফিরে‌ যেতে হয়। ওদিন মজার ছলে আনহার এক বান্ধবী তার গালে‌ লাল আবির মাখিয়ে দেয়। আনহাও রেগে গিয়ে তার বান্ধবীকে রং মাখাতে তার পিছনে দৌড় দেয়। এক পর্যায়ে সব রং গিয়ে পড়ে আরাভের মুখে গায়ে।
.
আরাভ রাগী লুকে তাকালো। আনহাকে ও দেখেই চিনে গেলো ওই ফাজিল মেয়েটা সে-ই। আমি রাগী লুক দেখেও চিনলাম না ভালো করে। কিছু সময় চোখের দিকে তাকাতেই বুঝে গেলাম যে ওটা যে রাগী মানুষটি। আরাভের চোখ সবচেয়ে আলাদা আর মায়াবী তাই আনহার চিনতে সমস্যা হয় নি।
.
আমি- ইয়ে মানে আমি না দেখি নাই।
আরাভ- what the heck
আমি- না মানে ভুলে হইছে। সরি।
আরাভ- এতো কেয়ারলেস আবারো। আমার মুখের অবস্থা কি করছেন এটা আপনি?
আমি- কি করছি এমন সুন্দরই তো লাগছে। এমনিও আপনি রাগলে লাল হন। আমিও লাল করে দিছি। (আন্দাজি এসব বলে নিজের জিহ্বায় কামড় দিলাম। কারণ আমার মাথায় এসে গেছে যে আমি উল্টা পাল্টা বলছি)
আরাভ- কি বললেন?
আমি- না মানে আমি কিছু বলি নি অন্য কেউ বলছে। খাড়ান আমি মুছে দিচ্ছি।
.
হাত দিয়ে মুছে দিতে গেলাম। কিন্তু ভুলেই গেছিলাম আমার হাতে আরো রং আছে। তাই ভুলের বসে আবারো আরো বেশি রং আরাভের গায়ে ভরে গেলো। আরাভ বুঝেছে বিষয়টা। তাই সে আমার হাত ধরে নিলো। আমার ভয় বেড়ে গেলো।
.
আরাভ- লাগবে না মুছতে। আমি দেখাচ্ছি কিভাবে মুছতে হয়।
আমি- মানে?
.
আরাভ আমার দিকে এগোতে লাগলো। এভাবে তার আগানো দেখে আমার ভয় লাগতে লাগলো। আরাভ কাছে এসে আমার হাত দিয়েই আমার মুখে আরো রং লাগিয়ে দিলো।
আরাভ- এবার মুছুন টেপা টেপির মা।
.
এটা বলে আরাভ ওখান থেকে চলে গেলো। আর বাকীরা হাসতে লাগলো এটা দেখে। সবগুলোকে পিটায় সেদিনের মতো বিষয়টা মিটিয়ে গিয়েছিলো।
.
এভাবে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছিলো। যদিও প্রতিবার এভাবেই রাগারাগি হতো। এভাবেই কেমন করে যেন আরাভ আনহার মায়ায় জড়িয়ে যায়। স্মৃতি গুলো ভেদ করে আরাভের চোখের সামনে আনহার কান্না করা মুখটা ভেসে উঠছে। কেন যেন নিজের অজান্তে আরাভেে চোখ দিয়েও কিছুটা জল পড়লো।
.
রাহেলা- আরাভ বাবা তোমার আব্বু তোমাকে খেতে ডাকছে। (বাহির থেকে আরাভদের কাজের বুয়া ডাকলো।)
.
আরাভ বের হয়ে গিয়ে টেবিলে বসলো। দুজন দুজনের মতো করে খেতে লাগলো। এটা নতুন না।‌ একই বাড়ির নিচে থেকেও দুজন কেনো যেন অনেক অজানা। কেউ কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। খাবার শেষে যে যার রুমে চলে গেলো।
.
আরাভের কেনো যেন ঘুম আসছিলো না। সে তার এক নাম্বার দিয়ে আনহাকে ফোন দিলো। যদিও আনহা জানে না আরাভের নাম্বার। আনহার সব খোঁজ আরাভ বের করেছে। কিন্তু আনহা আরাভ সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না।
.
ঘুমোচ্ছিলাম,, সে সময় কল ধরে,
আমি- হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম। (কিছুটা ঘুম ও কান্না জড়ানো কন্ঠে)
আরাভ- (নিশ্চুপ।)
আমি- হ্যালো।
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- কথা বললে বলেন নইলে রাখুন।
.
আরাভ ফোনটা কেটে দিলো। আমি বিশেষ কোনো গুরুত্ব দিলাম না।
.
চলবে…..

একরাতেরবউ পর্ব ২ 

0

একরাতেরবউ পর্ব ২

Written by Avantika Anha
আমি- হাসা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ভাইয়া।
আরাভ- হুম।
আমি- তাইলে মুখ বাকা কইরা থাকেন কিনু? হাসতে থাকুন বেশি কইরা।
.
এইটা বলে আমি উঠে আগাতে গিয়ে খাইলাম উস্টা।
আমি- উরিম্মা।
আরাভ- পাগলি নাকি আপনি? (আমাকে এভাবে পড়তে দেখে আরাভের প্রচুর হাসি পেলো)
আমি- আপনি এইটা ইঁদুর। যখন হাসতে কই হাসেন না। এখন আমি পড়ে গেছি আর আপনি হাসছেন???
আরাভ- আপনি সত্যি হাসাতে পারেন।
আমি- হাসাহাসি পরের ব্যাপার। সরি বলেন আমাকে। (আমি উঠে দাড়ালাম)
আরাভ- মানে?
আমি- মানে আপনি আমাকে পড়তে দেখে হেসেছেন তাই সরি কন।
আরাভ- নাহ আমি কাউকে সরি বলি না।
আমি- হুহ। ভালো ইউ আফ্রিকান তেলাপোকা। ভাগেন। আর আমু না কাউকে মন খারাপ হয়ে বসে থাকতে দেখেও। হুহ। মিমি কই তুই।
.
এটা বলে সেদিন রাগেই চলে এসেছিলাম। এটাই ছিলো আমার সাথে আরাভের পরিচয়। হঠাৎ ফ্লাশব্যাক থেকে ফিরে এলাম।
.
আরাভ- এখনো এভাবে বসে যে? যাওয়ার ইচ্ছে নাই বুঝি?
আমি- মেরে ফেললেই তো পারতেন। কেনো এমন জীবন দিলেন আমাকে?
আরাভ- মারতে পারবো না রে পাগলি।
আমি- আমাকে এই নামে ডাকবেন না।
আরাভ- কেনো নিজেই তো আগে কয়েকবার বলেছিলে তুমি পাগলি।
আমি- চুপ করুন। কেনো যে আমার আপনার সাথে পরিচয় হলো? সেদিন যদি না হতো আমি আজ পবিত্র হতাম।
আরাভ- হয়তো ঠিক। পরিচয় না হলে ভালো হতো। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছা ছিলো গো। চলো পৌঁছে দেই তোমাকে।
আমি- বিষ এনে দেন।
আরাভ- এতো সাহস নাই তোমার অন্তত এটা জানা আছে আমার।
আমি- কিছুই জানেন না। জানলে এতো বড় ক্ষতি করতেন না আপনি।
আরাভ- হাহা হুমমম। আর কিছু?
আমি- আপনি কি জানেন আপনি একটা অমানুষ?
আরাভ- জানি। আর কিছু?
আমি- আই হেট ইউ যাস্ট হেট ইউ।
আরাভ- বাট আই ডোন্ট হেট ইউ।
আমি- লাভ করেন?
আরাভ- না।
আমি- তো এটা কেনো করলেন?
আরাভ- জানি না।
আমি- কি জানেন?
আরাভ- কিছুই না।
আমি- আপনি কি বলতে পারবেন আমি এখন এই অবস্থায় কই যাবো?
আরাভ- ডোন্ট ওয়ারি কেউ জানবেই না। তুমি যে কাউকে বিয়ে করে নিও আর কখনো হেল্প লাগলে বলিও আমি হেল্প করবো।
আমি- আমি পতীতা নই। মাথায় রাখবেন।
আরাভ- জানি রে পাগলি।
আমি- পাগলি বলবেন না।
আরাভ- ওকে বেবি।
আমি- মুখ বন্ধ করুন।
আরাভ- আসো কাছে আসো করছি।
আমি- প্লিজ।
আরাভ- ওকে ওকে চলো।
.
অগত্যাই বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। দুজনে গাড়িতে। আরাভ ড্রাইভ করছে। আমার প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে ওর প্রতি। আমি ভাবতেও পারি নি এমন কিছু হবে। আরাভ খারাপ জানতাম। বাট এতো পরিমাণ এটা ধারণার বাহিরে ছিলো।
আমি- আমি কয় নাম্বার?
আরাভ- কিসে?
আমি- এই যে লাইফ নষ্ট করায়?
আরাভ- ৬ নাম্বার।
আমি- কি দোষ করছি আপনার দূরররর?
আরাভ- কিছুই না।
.
আমি আর কিছি বললাম না। জানালার বাহিরে তাকিয়ে কাঁদছি চুপচাপ। কারণ আমার কিছুই করার নাই। এখনো নিজেকে দোষ দিচ্ছি কেনো পরিচয় হলো তার সাথে।
আরাভ- আনহা
আমি- (নিশ্চুপ)
আরাভ- জবাব দেও।
আমি- কি জবাব চান আর?
আরাভ- কিছু না তুমি চুপ থাকলে ভালো লাগে না। কথা বলো।
আমি- কথা হারিয়ে দিলেন আপনি।
আরাভ- ওকে বলো না।
.
আমি আবার স্মৃতির পাতায় আবার ডুব দিলাম। সেদিন প্রথম যোগাযোগ হয়েছিলো আরাভের সাথে। তারপর দেখা হয়েছিলো দেরিতে। সেদিন প্রথমে না চিনলেও পরে চিনেছিলাম। যদিও আরাভ আমাকে আগেই চিনেছিলো। হয়তো আমার মতো পাগলি আর পায় নি।
.
দেখা হয়েছিলো এক পশলা বৃষ্টিতে। আমি ভিজছিলাম নির্জন রাস্তায়। আজকের মতোই। আমার মতে ছিলো বৃষ্টি সব ধুয়ে দেয় কষ্টও। সেদিন মিমি আসে নি। আমি একাই রাস্তায় হাটছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। হাটছিলাম বৃষ্টিতেই। হাতে ছাতা ছিলো কিন্তু খুলার ইচ্ছা একদম ছিলো না। সামনে দিয়ে একটা গাড়ি যাচ্ছিলো। গাড়িটা পাশে দিয়ে যেতেই আমার গায়ে কাঁদা ছিটকে এলো, রেগেই বলে উঠলাম,
.
.
আমি- ওই আফ্রিকান ইঁদুর। দেখে চলতে পারেন না। বাচ্চা মাইয়ার গায়ে কাঁদা ছিটালেন। তেলাপোকা কোনেকার।
.
এই বলার কিছু সময়ের মধ্যেই আরাভ বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে। সেদিন তার পড়নে ছিলো সাদা শার্ট আর ব্লাক জিন্স। বৃষ্টির আড়ালে তাকে দেখে পুরোই অন্য রকম লাগছিলো। আমি ভেবে বসেছিলাম হয়তো ক্রাশ খেয়ে গেছি। ভেবেছি সরি বলবে কিন্তু সে সামনে এসেই,
আরাভ- নিজের চোখ নাই? দেখে চলতে পারেন না? এতো বৃষ্টিতে কে রাস্তার মাঝে দিয়ে হাটে? বাচ্চা আপনি? নাকি অবুঝ?
(আমি ভাবলাম আমিই দোষী ইট্টু তাই মাথা নিচু করে নিলাম। প্রথমে আরাভও চিনে নি।)
আরাভ- কি হলো? উপরে তাকান।
আমি- ইয়ে মানে সরি। আমি পালাইলাম টাটা। (এইটা বলে উল্টা দিকে হাটা শুরু করলাম। ভয়ে আর তাকাচ্ছি না। নইলে আরো বকা খাবো এই ভেবে।)
.
পিছন দিয়ে, “আপনি ওই পাগলি মেয়েটা না?”
.
এই কথাটা শুনে আমি পিছনের দিকে তাকালাম। ভালো করে তাকিয়ে বুঝলাম আমি তাকে হয়তো চিনি। কিন্তু কেমনে চিনি মনে পড়ছিলো না। মানুষ তো আমাকেই পাগলি বলে তাই অগত্যাই বললাম, “হুমম”
আরাভ- হুম বুঝেছি কনসার্টে যেমন পাগলামি করলেন তাতেই বুঝে গেছিলাম আপনি পাগলি। আজ যেভাবে হাটছিলেন বুঝেছি আপনি পুরাই মাথা খারাপ মাইয়া। (এবার মনে পড়ে গেলো সব)
আমি- হোয়াট ইজ মাথা খারাপ মাইয়া? মুই ভালো মাইয়া।
আরাভ- এই ধরনের ভাষা ভালো লাগে না ভালো করে কথা বলুন।
আমি- নো আই উইল কমু এই ভাবেই।
আরাভ- চুপচাপ ভালো করে কথা বলুন। কথা বললে ভালো করে বলুন। নইলে যান।
আমি- উকে আই উইল চলে যাচ্ছি।
.
পা বাড়ালাম। মনে হলো কে যেন হাত ধরছে আমার। পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভ।
আমি- এমা গো ছাড়েন। মোর ব্যাথা লাগে।
আরাভ- ভালো করে বলুন।
আমি- ওকে ছাড়েন ভাইয়া আমার হাত।
.
আরাভ হাত ছেড়ে দিলো।
আমি- উরিমা ব্যাথা রে। কি খান? এতো শক্তি কেমনে?
আরাভ- হাহা।
আমি- ভিলেন মার্কা হাসি ছাড়েন। ইউ গন্ডার।
আরাভ- কি?
.
আরাভ রাগী লুক দিলো।
আমি- না মানে মুই কিছু কই নাই। যাই বাড়িতে আমার ৪-৫ টা বাচ্চা আছে ওরা মনে হয় মা মা করছে। ওরে আমার টেপা, টেপি, টুপু, টাপা, টুপা আমি আইতাছি।
.
এই বলে আমি এক দৌড় দিলাম। আরাভ কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিলো না আমার এ ধরণের কথা শুনার পর। কিছু সময় নির্বাক তাকিয়ে ছিলো। সেদিন বাড়ি ফিরে ঠিক করে নিয়েছিলাম আর কোনোদিন রাস্তায় কাউকে এভাবে গালি দিবো না নইলে কপালে দুঃখ।
.
.
হঠাৎ বাইরে মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ হলো। ঘোর ভেঙ্গে গেলো। আজও বৃষ্টি হচ্ছে। কেনো যেন আমার এই বৃষ্টিকেও ঘৃণা লাগছে। আরাভের দিকে তাকাতেই,
আরাভ- কি বৃষ্টি ভিজবা? নাকি প্রথম বৃষ্টিতে ভিজার কথা মনে পড়লো।
আমি- সেটাও আমার ভাগ্যেরই হয়তো দোষ ছিলো।
আরাভ- হাহা সেটাও ঠিক। আমার সাথে দেখা হওয়া তো দোষই।
আমি- অবশ্যই।
আরাভ- গান শুনবা?
আমি- না।
আরাভ- আমি শুনবো।
.
আরাভ গান ছেড়ে দিলো,
“না বলা কথা কিছু,
থাক অজানা।
কবিতার ভাষায় হোক আনাবোনা।”
.
আমি বন্ধ করে দিলাম। আরাভ আবার বন্ধ করে দিলো। আমি আর কিছু বললাম না। আরাভ আমাকে শহর থেকে কিছুটা দূরেই এনেছিলো। তাই যাইতে সময় লাগছিলো। আমার আবার কান্না পেতে লাগলো সব ভেবে।
.
চলবে…..

এক রাতের বউ পর্ব ১ 

0

এক রাতের বউ পর্ব ১
Written by Avantika Anha
রুহি- তুই আমার ক্ষতি করলি এতো বড়। তোর কোনোদিন ভালো হবে না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় জিনিস কেড়ে নিয়ে এখন আমাকে ইগনোর করছিস?
আরাভ- নো বেবি ইটস এ গেম। তুমি ফেঁসেছো নিজেই।
রুহি- আমি ফাঁসি নি। তুই এনেছিস। এখন আমার সবটা নিয়ে তুই আমাকে ছেড়ে দিলি? কেনো কি দোষ করছি আমি তোর?
আরাভ- শুনো বাবু। আমি কিছু করি নি। তুমিই বলতা ভালোবাসি। তাই চেয়েছিলাম তোমাকে এক রাতের জন্য আর তুমি এলেও। এখন আর আমার ইন্টারেস্ট নাই তোমার প্রতি বললাম ই তো।
রুহি- আগেই বুঝা উচিত ছিলো মেয়ে তোর কাছে গেম। ২ নাম্বার ছিলাম না তোর ইউজ করে ছুঁড়ে ফেলা।
আরাভ- অবশ্যই। আর দুই নাম্বার না ৩ নাম্বার। তোমার আগেও আরও ছিলো গো।
রুহি- ছি ছি ছি আমার ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি। তোর কখনো ভালো হবে না দেখে নিস।
আরাভ- ওকে বেবি। টাটা।
.
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো আরাভ আর রুহির মাঝে। রুহি আরাভের বর্তমান প্রেমিকা। এটা বললে অবশ্য ভুল হবে, রুহি আরাভের প্রাক্তন প্রেমিকা। যার সাথে আরাভ খারাপ কাজ করে ছেড়ে দিলো। বড়লোক বাবার ছেলে আরাভ। যা চায় পেয়ে যেত। কিন্তু বাবা মায়ের কাছে সময় কম পেয়েছে সে। আরাভের বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় আরাভ যখন ৩য় শ্রেণীতে পড়তো তখন। তারপর থেকে তার বাবার কাছে থাকতে হয় তাকে। বাবা ভালোবাসতো কিন্তু ওতো সময় দিতো না। মায়ের কমতি থেকে নাকি খারাপ সঙ্গ এভাবে করে আরাভ খারাপ পথে পা বাড়ায়। যার একটি উদাহরণ সামনে।
.
গল্পের নায়িকা আনহা। সবসময় ফাজলামিতে মগ্ন থাকা একটা মেয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আরাভ আর আনহা পুরাই আলাদা দুনিয়ার দুজন মানুষ।
.
.
কিছু মাস পর,,,,
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম আমি (আনহা) আর মিমি। দুজনেই বেস্ট ফ্রেন্ড।
মিমি- ওই আনহা
আমি- কইতে থাক বকবকানি পেত্নি।
মিমি- তোরে না কইছি আমাকে এই নামে ডাকবি না।
আমি- এ্যা তুই কইলেই হলো। এই নামটা সেই মানায় তোরে।
মিমি- তোরেই মানায় এসব নাম।
আমি- লা লা লা। আমি তো ভালো মাইয়া।
মিমি- তুই একটা শয়তান্নি।
আমি- নাহি বেবি আমি একটা পেত্নি আর তুই বান্দরনি।
মিমি- দূরর। বাদ দে শুন কাল তো তোর জন্মদিন। কাল ট্রিট দিবি না?
আমি- হিহি কথায় না পাইরা। যাই বলো মনু ওকে, কাল যাবো নে। বাকীদেরও বলিস।
মিমি- আমি আর আসবই না। এই গেলাম আমি।
আমি- যাই কাল আমু নে ওকে।
.
এই বলে মিমি ঠিকই অটো নিয়ে চলে গেলো। আমি হাসতে লাগলাম। কিন্তু কে জানতো সামনে বিপদ আছে আমার।
.
সেদিন বাড়ি ফেরার পথে কেউ একজন চোখ বেঁধে আমাকে তুলে এনেছে। এখনো বুঝছি না কি হচ্ছে। মনে হলো কেউ এসে আমার পাশে বসলো।
.
একজন- সো অবশেষে ইউ আর হেয়ার
আমি- কে আপনি আর আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো?
একজন- জানবে তো জানু সব জানবে।
আমি- মানে কি? এসব কি বলছেন? আর আমাকেই এখানে আনলেন কেনো?
একজন- জন্মদিনের গিফ্ট নিবা না বেবি?
আমি- কে আপনি আর এভাবে কথা বলছেন কেনো?
একজন- তুমি আমাকে ভালো করে না হলেও কিছুটা তো চিনোই।
আমি- প্লিজ আমাকে যেতে দিন আমি কি ক্ষতি করছি আপনার?
একজন- না বেবি আজ তো তুমি আমার এক রাতের আনন্দ দেওয়া বস্তু।
আমি- মানে?
একজন- এতো ডিটেইলে বলা লাগে? ওকে শুনো আজ রাতে‌ আমি তোমাকে ……. করবো।
আমি- প্লিজ আমার ক্ষতি করিয়েন না। আমার উপর আমার স্বামী ছাড়া আর কারো অধিকার নেই।
একজন- তাহলে আজকের জন্য তুমি আমার এক রাতের বউ।
আমি- না দয়া করে ছেড়ে দিন আমাকে। আমি মুখ দেখাতে পারবো না কাউকে।
একজন- তাই তো বলছি ভালোয় ভালোয় আমাকে সব দিয়ে দেও।
আমি- অসম্ভব আমি কখনো দিবো না। ছাড়ুন আমাকে।
.
আমি জোড় করা শুরু করলাম। লোকটা আমার হাত ধরে ফেললো। আমি কেঁদে ফেললাম।
লোকটি- কেঁদে লাভ নাই জান আমি গলবো না। অনেক কথা হলো। এখন কাজে আসা যাক। আজ রাতটা তুমি আর আমি আদিম খেলায় মেতে উঠবো।
আমি- প্লিজ।
লোকটি- নো প্লিজ বেবি কাছে আসো।
.
লোকটা আমাকে টান দিলো আমাকে বিছানা জাতীয় কোথাও ফেললো। আমার চোখ এখনো বাঁধা। লোকটা আমার আরো কাছে আসতে লাগলো। আমি তাকে ধাক্কা দিলাম। এতে প্রচন্ড রেগে গেলো লোকটি। আমার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো।
.
লোকটা- রাগ উঠাবি না। চুপচাপ থাক। তোকে তো আজ আমি নিজের করবোই।
আমি- দয়া করে ছেড়ে দেন। আমিও তো কারো বোন,‌একদিন কারো মা হবো।
লোকটা- হাহা। এসব কথায় যায় আসে না।
.
লোকটির লালসা আমার প্রতি আমি আটকাতে পারলাম না। লোকটা আমার হাত বেঁধে রেখেছিলো। তবুও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পেরে উঠলাম না।
.
সব শেষে,
আমি- কেনো এরকম ক্ষতি করলেন আমার? কে আপনি?
লোকটি- অনেক জানার ইচ্ছা? এই দেখ।
.
চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে নিতেই দেখলাম সামনে আরাভ। হুম আমি আরাভকে চিনি। না সে আমার প্রেমিক না। অন্যভাবে আমি চিনি তাকে। তা নাহয় সামনে জানবেন। গল্পে আসা যাক।
.
আমি- মি. আরাভ।
আরাভ- ইয়াহ বেবি আমি।
আমি- আমি আপনার বেবি না আর কেনো করলেন এমন? কি করেছি আমি আপনার? কেনো এমন?
লোকটি- কারণ তোকে আপন করার একটা ইচ্ছা ছিলো আমার। করে নিলাম।
আমি- বিয়ে করতেন আমাকে। এভাবে কেনো?
লোকটি- হা হা আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না।
আমি- এরকম করলেন কেনো?
লোকটি- শুন তোর ভালো এতেই যে যা হইলো চুপ থাক। তোর ফোন দিয়ে তোর বাড়িতে মেসেজ দিছি তোর মা কে তুই গ্রুপ স্টাডি করছিস। সো চিন্তা নাই।
আমি- এটা ঠিক করলেন না। আমি তো কোনো ক্ষতি করি নি আপনার। কেনো এমন?
লোকটি- তুই রাগলেও কিউট রে।
আমি- চুপপপপ। আপনি কেনো করলেন?
লোকটি- চুপ কর তো একটু। দেখি তোকে। (আমার মুখে হাত রেখে)
.
আমার ঘৃণা হচ্ছিলো তার প্রতি। এরপর আরাভ আমাকে ঠিক করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু আমার প্রচুর কান্না পাচ্ছিলো।
.
আরাভের সাথে আমার দেখা হঠাৎ করে হয়ে যায়। একদিন এক কনসার্টে বান্ধুবিদের জোর করায় আমি গিয়েছিলাম। সেখানে সেও ছিলো। চুপচাপ এক কোণে ছিলো। আমি ভাবলাম হয়তো মন খারাপ। আমার সবাইকে হাসাতে ভালো লাগে তাই এগিয়ে গেলাম।
.
আমি- মন খারাপ?
.
.
আরাভ তাকালো না।
আমি- আপনাকেই বলছি কালো শার্টওয়ালা গোমরা মুখো ভাইয়া।
আরাভ- আমাকে বলছেন?
আমি- না এখানে তো একটা ভুত আছে আমি তার সাথে কথা বলছি।
আরাভ- মানে?
আমি- মন খারাপ?
আরাভ- না।
আমি- তো আলুর মতো মুখ করে আছেন কেনো?
আরাভ- আপনি পাগল?
আমি- আরে না আমি তো মেয়ে পাগলি হবো।
আরাভ- সে যাই হোক এখানে আমাকে বলছেন কেনো?
আমি- একটা গল্প বলে যাচ্ছি।
আরাভ- ওকে বলুন বলে ফুটেন।
আমি- একদিন আমি যাচ্ছি।
আরাভ- ওহ।
আমি- আরে শুনেন। আমি যাচ্ছি মিমির সাথে। মিমি জিগায় “আনহা তুই প্রেম করিস না কেনো?” আমি কি বলছি জানেন?
আরাভ- না।
আমি- আরে আমি প্রেম করি না কারণ আমি নিয়মিত সাবধান ইন্ডিয়া দেখি। ওইটা দেইখা ভয় লাগে।
আরাভ- ওহ।
আমি- একটু হাসেন।
আরাভ- হাসি পায় নি।
আমি- দূরররর আমি কি এখন আপনাকে হাসাতে বান্দর ডান্স করবো। হাসুননননন।
আরাভ- আজব তো।
আমি- আপনি পঁচা। আই হেট্টু।
আরাভ- (জবাব দিলো না)
আমি- ওই হাওয়াই মিঠাই আসুন।
.
আমি একটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে খেতে লাগলাম।
আমি- খাবেন? ইয়াম্মি।
আরাভ- না।
আমি- এই দেখেন আমার দাড়ি হইছে হিহি।
আরাভ- (অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকালো। বাচ্চার মতো ব্যবহার আর এরকম পাগলামি মার্কা অবস্থা দেখে আরাভ নিজেই হাসে দিলো)
আমি- ইয়াহু আমি হাসাতে পারছি। যাই গা থাকুন।
.
এই বলে চলে গেলাম আমি।

.
চলবে…..

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  অন্তিম পর্ব

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  অন্তিম পর্ব
#আরিশা অনু

-ঘড়ির কাটাই রাত নয়টা বাজে।অপারেশন থিয়েটারের সামনে পাঁচজোড়া চোখ চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে।প্রত্যেকের মনে অজানা এক আতঙ্ক এসে ভর করেছে।কি হতে চলেছে আর এক মুহূর্তের মধ্যে কি হয়ে গেল সেটা নিয়ে এখনো সবার বিস্ময় যেন কাটেনি।ঘড়ির কাটা টিক টিক করে আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে আর পাঁচজন মানুষের মনের ভয় ও একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে।শেষ রক্ষা কি হবে?নাকি মুহূর্তের মাঝে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাবে এই অজানা কালবৈশাখি ঝড়।সবার মনে একটাই প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে বাঁচবে তো অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে যে সে কি সত্যি আগের মত আবার ফিরে আসতে পারবে?মনকে প্রশ্ন করে বার বার ব্যর্থ সবাই।

-অবশেষে নিরবতা ভেঙে নিপা কথা বলা শুরু করলো।স্যার রুহিকে আমার কাছে দিন আমি ওকে কিছু খাইয়ে দি।মেয়েটা সন্ধা থেকে না খেয়ে আছে হয়ত।না আমি কাবো(খাব)না আমি আম্মু যাব কথাটা বলে রুহি কেঁদে উঠলো।রোহানের বুকটা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে বার বার। হ্যাঁ সে আজ তার সকল ভুলের জন্য অনুতপ্ত। কিন্তু অনুতপ্ত হয়ে ও কি হবে এখন।বড্ড দেরি হয়ে গেল যে।যখন রোহান তার সব ভুল বুঝলো তখন অনন্যা অনেক দূরে চলে যেতে শুরু করেছে।

-হ্যাঁ ট্রাকটা স্বজোরে ধাক্কা দিয়ে আপন গতিতে শা শা করে চলে গেছিল তখন।আর অনন্যা ছিটকে যেয়ে রাস্তার পাশে রাখা ইটের উপরে পড়ে।মাথার পেছন দিকটা ইটের উপরে পড়ায় অনেকটা ক্ষত র সৃষ্টি হয়।তারউপর কিছুদিন আগের এক্সিডেন্ট এ ও মাথায় আঘাত পেয়েছিল অনন্যা। গল গল করে রক্ত বের হতে শুরু করে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় অনন্যা।প্রায় পনেরো বিশ মিনিট পর স্থানিয় লোকেরা অনন্যা কে রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালের নিয়ে আসে।মূলত অনন্যা যেখানে এক্সিডেন্ট করেছিল ঐ জায়গাটা একটু ফাঁকা আর অন্ধকার ছিল সেজন্য এক্সিডেন্ট এর সাথে সাথে কেউ দেখতে পাইনি।যখন দেখতে পেল সাদা শাড়িটা ততক্ষণে অনন্যার রক্তে লাল বর্ন ধারন করেছে।

-প্রায় মৃত অবস্থা অনন্যাকে হাসপাতালে আনা হয়।তারপর ওর বাসার সবাইকে জানানো হয়।রোহান বা অনন্যার বাড়ির কেউ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিল না এটা।

-খবরটা শোনার পর ছুটে চলে আসে সবাই হাসপাতালে।পার্টিতে রিসব আর নিপা উপস্থিত ছিল তখন তাই ওরা ও রোহানের সাথে চলে আসে হাসপাতালে।

-অনন্যা কে যে হাসপাতালে আনা হয় সেটা রোহানের আঙ্কেলের হাসপাতাল।উনি অনন্যাকে এ অবস্থা দেখার সাথে সাথে রোহান কে ফোন করেছিলেন।তারপর আর দেরি না করে তিনি অনন্যার অপারেশন এর ব্যবস্থা করেন।

-আড়াই ঘন্টা পার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে কিন্তু অনন্যার কোনো খবর রোহান জানেনা।অনন্যার অপারেশন হতে এত সময় কেন লাগছে অজানা ভয়ে বার বার বুকটা কেঁপে উঠছে রোহানের।এদিকে মিসেস শাহেলা জামান একনাগাড়ে কেঁদে চলেছে তার কলিজার টুকরা যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছে প্রতিটা সেকেন্ড সেটা আর বুঝতে বাকি নেই তার।মায়ের মন হয়ত তাই আগে থেকে সবটা বুঝতে পারে।শাহেলা জামান এক মুহুর্ত শান্ত হতে পারছে না বার বার আল্লাহতালার কাছে তার সন্তানের জীবন ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে।

-আর রোহান যেন পাথর হয়ে গেছে।আজ বার বার তার মনে পড়ছে কত কষ্ট, যন্ত্রনার মধ্যে রেখেছিল সে তার অনুসোনা কে।যদিও সে নিজে ও একটা দিন শান্তিতে থাকতে পারেনি তারপর ও কি করে তার অনুসোনা কে সে এত কষ্ট দিতে পারলো।বার বার একরাশ ঘৃনায় গা টা ঘিন ঘিন করে উঠছে রোহানের। তার অনু সোনা তাকে কখনো ক্ষমা করবে তো একটা প্রশ্ন বার বার রোহানের ভেতরটা নাড়া দিয়ে তুলছে।

-হাজার চিন্তার মধ্যে দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পর অনন্যার অপারেশন শেষ হল।থিয়েটারের ভেতর থেকে গম্ভীর মুখে বেরিয়ে আসলেন ডক্তর আঙ্কেল। রোহান সহ বাকিরা দৌঁড়ে উনার কাছে চলে গেলেন।

-আঙ্কেল আমার অনন্যা কেমন আছে। ও ঠিক আছে তো ওর কিছু হয়নি তো আঙ্কেল।এমন দেখাচ্ছে কেন তোমায়।কিছুতো বল ঠিক আছে তো আমার অনন্যা।

-রোহান শক্ত কর নিজেকে।অনন্যার অবস্থা খুব একটা ভালোনা।অনেক কষ্টে জ্ঞান ফিরেছে ওর।মাথার পেছনের অংশটা খুব বিচ্ছিরি ভাবে থেতলে গেছে আর ডিপ হয়ে গেছে অনেকখানি।বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে ও। অনেক কষ্টে জ্ঞান ফিরেছে তবে এবার জ্ঞান হারালে আর শেষ রক্ষা হবেনা।যাও দেখা কর ওর সাথে ওর হাতে সময় খুব কম।কথাগুলো একটানা বলে থামলেন ডক্তর আঙ্কেল। এক মুহূর্তের জন্য সবার মাথায় যেন বাঁচ পড়ল।কি বলছে এসব।রোহান আর এক সেকেন্ড ও লেট না করে দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেল।

-এখনো অক্সিজেন চলছে অনন্যার। পাশে বসে অনন্যার একটা হাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল রোহান।চোখ খুলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তারপর ও আস্তে আস্তে চোখটা খুলে কাটা কাটা গলায় বললাম এই পা-পা গো-ল কা -কাঁ-দ-ছো কেনো হু। তু তুমি এভাবে ভে ঙে পড়লে রুহি কে কে দেখবে বলোতো?

-প্লিজ আর একটা সুযোগ দাও আমায় আর কখনো তোমায় কষ্ট দেবনা অনুসোনা।এই তোমাকে ছুয়ে কথা দিচ্ছি আমি এবার প্রুভ করে দেখাবো একজন ভালো হাসবেন্ড আর বাবা হিসেবে ও।তাও যেওনা আমায় ছেড়ে।প্রয়োজনে যে কোনো শাস্তি দাও আমায় তারপর ও প্লিজ আমায় ছেড়ে যেওনা অনুসোনা।

-আ-আমি জানি তু-তুমি একজন ভালো বা-বা রোহান সে-জন্য তো শান্তি-তে মরতে পারবো আমি।

-প্লিজ এমন বলোনা অন্তত রুহির কথা ভেবে থেকে যাও প্লিজ। মেয়েটা তোমায় ছাড়া একদম থাকতে পারবে না।

-রু-র -হি কোথায় ওকে একবার শেষ বা-রের মতো দেখব।

-একটু পর রোহান রুহিকে নিয়ে আসলো রুহি তার আম্মু কে এভাবে দেখে কেঁদে ফেলল।

-আম্মু তুমি ওতো(ওঠো)এবাবে (এভাবে)শুয়ে আতো(আছো)কেন।

-রোহানের সাহায্যে একটু বেডে হেলাম দিয়ে বসলো অনন্যা তারপর রুহিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে অনেক আদর করল।রোহান তুমি রুহিকে বাইরে দিয়ে এসো।

-অনন্যার কথায় রুহিকে বাইরে ওর নানুর কাছে রেখে আসল রোহান।তারপর আবার অনন্যার পাশে এসে বসল।

-রোহান আ-আমার শেষ একটা চাওয়া পূরন করবা…?

-বল অনুসোনা আজ তোমার সব চাওয়া আমি পূরন করবো শুধু আমায় ছেড়ে কোথাও যেওনা কথাটা বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো আবার রোহান।

-আমায় শেষ বারের মত একটাবার বুকে জড়িয়ে নেবে রোহান।আমি তোমার বুকে মাথা রেখে মরতে চাই।

-কোনো কথা না বলে রোহান তার অনুসোনা কে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিল যেন ছেড়ে দিলে এখনি তার অনুসোনা পালিয়ে যাবে।অনুও শেষ বারের মত তার রোহান কে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে পরম শান্তিতে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলো রোহানের বুকে।

-কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হঠাৎ রোহানের খেয়াল হল তার অনুসোনা আর শ্বাস নিচ্ছে না বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো ও সাথে সাথে অনন্যার মাথাটা বুক থেকে নামিয়ে বার বার অনন্যাকে ডাকতে শুরু করল রোহান।

-অনুসোনা এই অনুসোনা তুমি কথা বলনা কেন?এই তাকাও তুমি কি শুনতে পাচ্ছনা আমি ডাকছি তো তোমায় কিছু বলনা কেন তুমি, না এভাবে আমায় একা করে চলে যেতে পারোনা তুমি।রোহানের চিৎকারে ততক্ষণে সবাই ভেতরে চলে এসেছে।

-আম্মু আম্মু তুমি ঘুমিয়ে আতো(আছো)কেন ও আম্মু ওতো (ওঠো)বাবাই কানতে (কাঁদছে)তো।ও আম্মু তুমি ওতোনা (ওঠোনা)কেনো আমাল(আমার) অনেক ক্ষুদা লাকছে (লাগছে)ছেই(সেই) ককন (কখন)তেকে (থেকে)না কেয়ে (খেয়ে)আচি(আছি) ও আম্মু আমায় খাইয়ে দিবানা।অনন্যার হাতে বার বার ধাক্কা দিয়ে দিয়ে কাঁদছে আর কথা গুলো বলছে রুহি।আর রুহির অবস্থা দেখে বাকিরা কেঁদে ফেলেছে ততক্ষণে।মিসেস শাহেলা তার একমাএ মেয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে মরার মত পড়ে আছে।কোনো মা ই হয়তো সন্তান এর মৃত্যু এত সহজে মেনে নিতে পারেনা।

-এদিকে রোহান ও পাগলের মত কেঁদে কেঁদে ডেকে চলেছে তার অনুসোনা কে।এই অনুসোনা দেখ রুহি কাঁদছে ওর জন্য হলেও প্লিজ ওঠে।আমার ভুলের জন্য এতবড় শাস্তি দিতে পারোনা আমায়।এই তুমি বলতে না আমরা দুজন মিলে আমাদের বাবুকে অনেক বড় করবো।তারপর বাবুটা যখন বড় হবে তখন ওর বিয়ে দেব।একসাথে বৃদ্ধ হব আমরা।তাহলে এভাবে স্বার্থপরের মত চলে কেন যাচ্ছ তুমি।

-রোহানের আত্মনাদে মধ্যরাতে সারা হাসপাতাল যেন কেঁপে উঠেছে সাথে রুহির আম্মু ওঠো আম্মু ওঠো শব্দ গুলো যেন চারপাসটা আরো ভারি হয়ে উঠেছে আজ।এক করুন সময়ের সৃষ্টি হয়েছে চারপাশে।ওদের আত্মনাদে সারা হাসপাতালের মানুষ কেঁদে বুক ভাষিয়েছে আজ।
.
.
.
.
-সময় তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে আজ চৌদ্দ বছর পর রোহান তার অনুসোনার রেখে যাওয়া কলিজার টুকরা রুহিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে।আজ রুহির আঠারো তম জন্মদিন। বাড়ির ডান সাইডে পাকুড় গাছের তলায় শায়িত অনন্যার সমাধির সাথে এতক্ষণ রোহান কথা বলছিল যে আজ তাদের মেয়ের আঠোরো তম জন্মদিন। আজকের পর তাদের রুহি এডাল্ট বলে গন্য হবে।আজকের পর রুহি তার সব সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে।একা একা কথা গুলো অনন্যাকে বলছিল তখন পেছন থেকে কার ডাকে যেন হুশ ফিরল।

-বাবাই এদিকে তাকাও তো আজ আমার জন্মদিন এটা জেনেও কাঁদছো এটা ঠিক না আমি কিন্তু আম্মুর কাছে নালিশ দেব।তারপর এক নজর মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে চোখের জলটা মুছে বাবাকে নিয়ে বাসার ভেতর এগিয়ে চলল রুহি।এইতো বাবা মেয়ের দিন গুলো এভাবেই চলে যাচ্ছে।অনুভূতি হারায়নি অনুভূতি গুলো বেঁচে আছে আজো রোহানের বুকে।দিন শেষে রোহান এসে অনন্যার কবরের সামনে বসে রুহি আজ এটা করেছে আজ এটা বলেছে বলে গল্প শোনায়।আর রোহান যখন রুহির আবদার গুলো মেটাবো না বলে আড়ালে হাসে তখন রুহি ও বাইনা ধরে বলে আম্মুর কাছে নালিশ দেব কিন্তু। বাবা মেয়ের পাগলামি দেখে হয়ত দূর থেকে হেসে ফেলে অনন্যা।এইতো বাবা মেয়ের খুনশুটির মাঝেই বেঁচে আছে অনন্যা।এভাবেই বা কতজন বাঁচতে পারে।
সমাপ্ত,,,,,,,,

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পর্ব-২৯

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পর্ব-২৯
#আরিশা অনু

-অফিস থেকে বাসায় আসার পর রোহান একটা ফোন ও দিলনা আর রুহির কোনো খোঁজ ও নিলনা।আবার আমি ফোন দিলাম দাও ধরলো না। কি হল কে জানে কিছুই বুঝতে পারছি না।একরাশ অসস্তি চেপে ধরেছে যেন।বার বার মনে হচ্ছে কোনো অঘটন ঘটতে চলেছে আবার।

-সকাল থেকেই মনটা কেমন কু ডাকছে। বার বার মনে হচ্ছে কোনো বিপদ আসতে চলেছে। এত অস্থির কেন যে লাগছে কিছুতেই বুঝতে পারছি না।অবশেষে রুহিকে স্কুল এ দিয়ে আমি অফিসে রওনা দিলাম। মেয়েটা কতবার বাবাই কোথায় বলল কিন্তু আমি কোনো উওর দিতে পারিনি।অফিসে যেয়ে আগে রোহান কে জিজ্ঞেস করব এমন এড়িয়ে কেন যাচ্ছে আমায়।সব কিছুতে কেমন যেন গা ছাড়া ভাব।হঠাৎ হল কি ওর।

-প্রায় বিশ মিনিট পর অফিসে পৌঁছালাম। সবাই কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে বাট কি বলছে সেটা বুঝতে পারছি না আমি।এসব এ কান না দিয়ে সোজা রোহানের কেবিনে চলে গেলাম।দেখি তৃধা আর রোহান বসে আছে।

-আরে অনন্যা তুমি চলে এসেছো বাহ্ ভালো করেছো। এতক্ষণ তো তোমার ই অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।তারপর অনন্যার দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিলাম।নাও আজ সন্ধায় আমার আর রোহানের এংগেজমেন্ট পার্টতে তোমায় কিন্তু অবশ্যই থাকতে হবে।কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।আর হ্যাঁ রুহিকে ও নিয়ে এসো আফটারঅল ওর বাবাইয়ের এংগেজমেন্ট বলে কথা।আচ্ছা এখন তাহলে আমি আসি অনেক জায়গায় কার্ড দিতে যেতে হবে আমার আবার।তারপর তৃধা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

-কি বলব বুঝতে পারছি না।রোহানের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুম ছেড়ে বেবিয়ে আসলাম।এই অঘটন টা ঘটতে যাচ্ছে বলেই আমার মনটা এত অস্থির হচ্ছিল কাল থেকে।বুঝতে পারছিনা চোখদুটো বার বার ঝাঁপসা কেন হয়ে উঠছে।বুকের ভেতরটা ও অদ্ভুত এক যন্ত্রনায় অবশ হয়ে যাচ্ছে।নাহ্ কাঁদবো না আমি কিছুতেই কাঁদবোনা।আমার দুর্বলতা আর বুঝতে দেবনা রোহানকে কিছুতেই না।ও যদি তৃধাকে নিয়ে সুখে থাকে তাহলে থাকনা। আমি না হয় আমার মেয়েটাকে নিয়ে বাকি জীবনটা পার করে দিব।তারপর চোখের জল মুছে নিজেকে শক্ত করে কাজে মন দিলাম।

-অনন্যাকে আজ সত্যিই অনেক অদ্ভুত লাগছে।এতবড় একটা ঘটনাকে ও এত হালকা ভাবে নেবে কখনো ভাবেনি রোহান।অবশ্য আমার বিয়েতে ওর কি বা আসে যাই। যার জন্য আমায় ছেড়ে দিতেও ওর বুকটা কাঁপলোনা সে তো ওর পাশে আছে।আমি শুধু শুধু এতদিন ভেবে এসেছি।

-সন্ধায় পার্টি উপলক্ষে সকল স্টাফ কে দুপুরে ছুটি দেয়া হয়েছিল।এখন বাজে সন্ধা সাতটা।অনন্যা এখনো ভাবছে পার্টিতে যাবে কি না।
বসে বসে ভাবনা চিন্তা করতে করতে উঠে পড়লো ও।পার্টি ড্রেস হিসেবে কি পরবে বুঝতে না পেরে আলমারি থেকে একটা ধবধবে সাদা রংয়ের নেটের শাড়ী বের করল অনন্যা।পুরো শাড়ীর ভেতর টাই সাদা আর দুইপাশের পাড় টা টকটকে লাল।একবার মনে হল পার্টিতে যাবনা।কিন্তু পার্টিতে না গেলে তো পরদিন অফিসে গেলে সবাই হাজারটা প্রশ্ন করে মাথা খারাপ করবে সাথে রোহান ও ভাববে আমি আপসেট।নাহ্ রোহানকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবেনা আমার কষ্টের কথা।কি লাভ ওকে আমার মায়ায় আটকে রেখে আর আটকাব না ওকে মুক্ত করে দিলাম ওকে চিরতরে।কথাগুলো ভাবতেই চোখদিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।সাথে সাথে চোখ মুছে ফেললাম।তারপর শাড়িটা পরে নিলাম।কানে দুইটা সাদা টপ আর গলাই চিকন চেনের সাথে একটা সাদা পাথরের লকেট।চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে গাড়ো করে লালা লিপস্টিক দিলাম।আজ চুলগুলো খোলা রেখে কানের পাশে চুলের সাথে লাল টকটকে একটা জারবারা ফুল গুজলাম।আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ধাক্কা খেলাম।তারপর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম এত সাজ কার জন্য অনন্যা?প্রতিউত্তরে বুকচিরে বেরিয়ে আসলো একরাশ দীর্ঘশ্বাস। হয়ত তার জন্যই শেষ বারের মত সাজা।আর কখন তার সামনে যেয়ে দাঁড়াতে পারবো কি না সত্যই যানিনা আমি।

-রুহিকে আম্মুর কাছে রেখে আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ওবাড়ির উদ্দেশ্যে। সারা রাস্তা নিজেকে বুঝিয়েছি যাই হয়ে যাকনা কেন আমি আজ কাঁদবোনা কিছুতেই না।যদিও কেঁদে ফেলেছি বার বার তারপর ও ওবাড়িতে কারোর সামনে কিছুতেই কাঁদবোনা আমি আজ।অবশেষে দীর্ঘ বিশ মিনিট পর রোহানের বাসায় এসে পৌঁছালাম আমি।

-সবার সাথে কথা বললে ও চোখটা বার বার দরজার দিকে চলে যাচ্ছিল আমার।অনন্যা আসবে তো বার বার এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম নিজের মনকে কিন্তু কোনো উওর খুঁজে পাচ্ছিলাম না।এক এক করে সবাই চলে আসছিল কিন্তু ও আসছিল না।প্রচন্ড খারাপ লাগছিল তখন আমার।কিন্তু একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে তৃধার সাথে একটু পরেই আমার এংগেজমেন্ট অথচ আমার মনটা এখনো অনন্যাতেই আটকে আছে।আমি কি সত্যিই পারবো সবটা ভুলে আবার সবকিছু নতুন করে তৃধাকে নিয়ে শুরু করতে। একা একা কথাগুলো মনে মনে ভাবছিল রোহান হঠাৎ কার ডাকে হুস ফিরল ওর সামনে তাকিয়ে চমকে উঠল ও।একি এ যে একটা সাদা পরি।এক মুহুর্তের জন্য যেন রোহানের চারদিক স্তব্ধ হয়ে গেল।কোনো কথায় আর ওর কানে ঢুকছেনা এখন।হা করে অনন্যা কে দেখছে বেচারা।

-স্যার শুনছেন হঠাৎ অনন্যার কথায় ঘোর ভাঙল রোহানের।

-হ-হ্যাঁ বল।

-একগুচ্ছ ফুলের তোড়া রোহান আর তৃধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম নতুন জীবনের অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাদের।তারপর ওখান থেকে সরে আসলাম।এটুকু সময় খুব কষ্ট করে চোখের জল আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু আর আটকাতে পারলাম না সাইডে এসে মুখ চেপে ধরে কেঁদে ফেললাম।কিছুক্ষণের মধ্যে রোহান আর তৃধার এংগেজমেন্ট হয়ে গেল।এবার কাপল ডান্স এর আয়োজন করা হল তৃধা আর রোহান একটা গানে নাচলো।বুকের ভেতরটা ছিড়ে যাচ্ছিল ওদের কে একসাথে নাচতে দেখে তারপর ও কিছু বললাম না শুধু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দুচোখের জল ফেলছিলাম তখন।

-একটু পর রিসব এসে জোর করে আমাকে ডান্স ফ্লোরে টেনে নিয়ে গেল। আমি যেতে চাইনি ও কিছুতেই শুনলো না।তারপর মিউজিক অন করলো সব কাপল রা এবার এক সাথে নাচতে শুরু করলো।একটা ইংলিশ রোমান্টিক গানের সাথে সাথে সবাই নাচে মেতে উঠল।
.
.
.
.
“””””””Every night in my dreams I see you I feel you….

“””””””There is how i know you go on……

-সফট্ মিউজিক এর সাথে সাথে সবাই যার যার মত নেচে যাচ্ছিল। অপূর্ব এক মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল যেন সবাই।খুব সুন্দর এক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সবাই সবার কাপলের সাথে আনন্দে নেচে যাচ্ছিল। অথচ এত সুখের মাঝেও দুটি মানুষের বুকে হারানোর ব্যাথা যেন খাঁ খাঁ করছিল।

-অনন্যা যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে রিসবের সাথে নেচে যাচ্ছিল।আসলে ও রোহান কে বোঝাতে চাইছিল যে ও একদম ঠিক আছে।কিন্তু রোহান আর সহ্য করতে পারছিল না। অনন্যা আর রিসব কে এভাবে নাচতে দেখে ওর মাথা আগুন হয়ে গেল। ও তখনি তৃধাকে ছেড়ে দিয়ে অনন্যা কে রিসবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বজোরে এক থাপ্পড় বসালো অনন্যার গালে।

-ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাওয়ায় কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারলো না সবাই এ ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল কি হল সেটা।

-তারপর রোহান মুখ খুলল এবার।অনন্যা কে উদ্দেশ্য করে বলল এই তোমার চরিএ কি কোনো দিন ও ঠিক হবেনা।সারা জীবন এমন নোংরামি করে যাবে।আর কত জনকে ঠকাবা তুমি।আমাকে ঠকিয়ে তমালের কাছে গিয়েছো তাতে ও মন ভরলো না। কখনো তো ভালো হও আর কত নষ্টামি করবা।এর থেকে তো একটা পতিতালয় খুলে নিতে পারতে তাহলে আর কষ্ট করে বাড়ি বাড়ি যেয়ে সার্ভিস দিতে হতনা।না যানি কার সাথে নষ্টামি করে পাপের ফসল স্বরূপ রুহির জন্ম দিয়েছো।

-এতক্ষণ রোহানের সব কথা মুখবুজে সহ্য করলে ও এবার মুখ বুজে থাকতে পারলো না অনন্যা। সর্ব শক্ত দিয়ে জোরে এক থাপ্পর বসালো রোনানের গালে।এনাফ ইজ এনাফ।খবরদার আমার মেয়ের নামে আর একটা নোংরা কথা বললে তোমার জ্বীব টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি।কোন সাহসে তুমি আমার সন্তান কে পাপের ফসল বলো।তুমি কি ভুলে গেছো দু দুটো বছর তোমার সাথে সংসার করেছি আমি।আর যাকে তুমি পাপের ফসল বলছো সে পাপের ফসল নয় আমাদের ভালোবাসার অংশ।আমার সন্তানের শরীরে তোমার রক্ত বইছে রোহান।একটানা কথা গুলো বলে থামলো অনন্যা।

-এতক্ষন অনন্যার মুখে এগুলো শুনে সারা বাড়ি যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।আর রোহানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্যা কে জিজ্ঞেস করলো কি বললে তুমি….?

-হ্যাঁ ঠিক ই বলছি।ঠিক পাঁচ বছর আগে এমনি এক সন্ধায় আমায় বাসা থেকে ঝড় বৃষ্টির মধ্য অসুস্থ অবস্থায় বের করে দিয়েছিলে মনে পড়ে সেদিনের কথা মিস্টার রোহান খান?সেদিন হাজার বার আমি সত্যিটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কিছু না শুনে আমায় বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন।একটা বার আমার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেন নি।

-তবে আজ আমি সব বলবো আর আপনায় সবটা শুনতে হবে।

-রোহান কিছু না বলে নির্বাক দিষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে আর মাথার ভেতর বার বার একটা কথা ঘুরছে ওর যে রুহি ওর সন্তান।

-শুনুন তবে পাঁচ বছর আগে ঠিক কি হয়েছিল। তোমার নিশ্চয় মনে আছে যে আমি অসুস্থতার জন্য ডক্তারের কাছে যাব বলে বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলাম সেদিন বিকালে।আমি গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালের ভেতরে যাব তখন ই হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠল।খুব শরীর খারাপ লাগছিল আমার তখন। হঠাৎ আমার ছোট বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড তমাল সামনে দিয়ে যাচ্ছিল আমায় এমন অসুস্থ দেখে ও আমাকে ধরে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাই।আর ঐ সময় তৃধা কোনো ভাবে আমার আর তমালের কিছু ছবি তুলে নেই আর তোমায় উল্টা পাল্টা বোঝায়।আর তুমি ও সবটা সত্যি ভেবে নাও তখন।তারপর ডক্তর সবকিছু পরিক্ষা করে বলে আমি মা হতে চলেছি।খুশিতে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।তখন ইচ্ছা করছিল ছুটে যেয়ে তোমায় খুশির খবর টা জানাতে।কিন্তু পরে ভাবলাম রাতে তুমি বাসায় ফেরার পর তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বাট বাসায় ফেরার পর আমি নিজেই বড় সড় একটা সারপ্রাইজ পেলাম।

-সেদিন যদি অন্তত একটা বার আমায় সুযোগ দিতে তাহলে এতগুলো বছর আমাদের কাউকে কষ্ট পেতে হতোনা রোহান।তুমি যানতে যে তৃধা যে কোনো মূল্যে আমাদের আলাদা করতে চাই আর এটা জানার পর ও কি তোমার উচিত ছিলনা আমার কথা একটা বার শোনা।আজ আবার সেই একই ভুল পথে হেটেছো তুমি বার বার আমায় কষ্ট দিয়েছো সেটা ও মাথা পেতে নিয়েছি আমি।বাট আমার সন্তান সম্পর্কে কোনো নোংরা কথা আমি সহ্য করবোনা মিস্টার রোহান খান।আর তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ। আজকের পর না তুমি আমার স্বামী আর না আমি তোমার স্ত্রী। আর হ্যাঁ খবরদার ভুল করেও আমার সন্তানেরর দিকে চোখ তুলে তাকালেও খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে এক দৌঁড়ে রোহানের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল অনন্যা।

-এদিকে বাড়িতে উপস্থিত সকলে যেন অনন্যার কথায় হতভম্ব হয়ে রইল কি হচ্ছে কেউ যেন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না এখনো।

-দুচোখ ভরা জল নিয়ে ছুটতে ছুটতে অনন্যা কখন যে হাইওয়েতে চলে এসছে সেদিকে তার খেয়াল ই নেই।বার বার একটা কথা মাথায় ঘুরছে ওর যে আজ ও রোহানের সব ভুল ভাঙতে পেরেছে।আজকের পর রোহানের চোখে অনন্যা আর কখনো অপরাধী থাকবে না।এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তার মাঝদিয়ে হেটে চলছিল ও হঠাৎ ওর চিন্তার ছেদ ঘটালো চোখের উপর একরাশ আলো আশায়।অন্ধকারে তিব্র আলো চোখের উপর পড়তেই চোখটা আবার বন্ধ হয়ে গেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকটা……….
.
.
.
.
Continent….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৮

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৮
#আরিশা অনু

-বিকালে রোহান অনন্যাদের ওবাড়িতে রেখে আসলো।রুহি কিছুতেই তার বাবাই কে ছাড়তে চাইছিল না।মেয়েটা কেঁদে কেটে অস্থির। রুহির কান্না দেখে অনন্যা,রোহান কেঁদে ফেলেছে।অবশেষে রোহান রুহিকে কথা দিয়েছে যে বাবাই তোমায় প্রতিদিন ঘুরতে নিয়ে যাবে তারপর মেয়েটা একটু কান্না থামিয়েছে।আর এক মুহুূর্ত দেরি না করে রোহান চলে আসে।কারন মেয়েটার কান্না ও সহ্য করতে পারছিল না।

-সন্ধায় রোহান বাসায় এসে সোজা রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।তৃধা ওর মামী এতবার করে ডাকার পর ও দরজা খোলেনি রোহান।

-রুমের ভেতরটা টা যতবার ই দেখছি মনে হচ্ছে যেনো রুহি ছোটাছোটি করে খেলছে।এই তো এই ডান সাইড টাই আমার অনন্যা ঘুমিয়ে থাকতো।এই সাতটা রাত ঠিকমত ঘুমায়নি শুধু দুচোখ ভরে আমার অনুসোনার মুখটা দেখবো বলে।বুকেন ভেতর টাই দাও দাও করে আগুন জ্বলে যাচ্ছে। আমার রুহিসোনাটা এ কয়দিন আমার বুকের মধ্যে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়েছে।আজ যেন বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে।অসহ্য এক যন্ত্রনায় বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে এখন।কাল ঠিক এই সময়টায় সারা বাড়ি ছোটাছোটি করছিল আমার রুহিটা আর আজ আমায় একা করে চলে গেল। শ্বাস নিতেও যে খুব কষ্ট হচ্ছে এখন আমার।দুদিনের মায়ায় কেন জড়ালাম আমি।এতক্ষণ রোহান রুহির ফেলে যাওয়া একটা টেডি জড়িয়ে ধরে একা একা কথা গুলো ভাবছিল আর নিরবে চোখের জল ফেলছিল।

-ওদিকে রুহি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে না খেয়ে।

-দেখতে দেখতে পাঁচমাস কেটে গেলো।দিন গুলো এত দ্রুত কিভাবে কেটে গেলো অনন্যা রোহান কেউ ই বুঝে উঠতে পারেনি।আর মাএ একমাস আছে কন্টাক্ট পেপারের মেয়াদ। এর পর অনন্যা ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় জবটা ছেড়ে দিতে পারবে।বার বার রোহানের মনে হচ্ছে কেন সময়টা আরো বাড়ালো না।এত দ্রুত সময় চলে যাবে রোহান বুঝে উঠতে পারেনি।অপরদিকে অনন্যার প্রথম দিকে চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে ও এখন একদম রোহানকে ছাড়তে মন চাইছেনা ওর।বার বার মনে হচ্ছে রোহানের পাশে সারাজীবন এভাবে থাকতে।কিন্তু এখন সেটা একেবারেই সম্ভব না কারন তৃধা আর রোহানের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।অনেক বেশি অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে অনন্যা আর রোহান।এর মাঝে রোহান অনন্যা কে অফিসে সিফট্ করেছে।কারন রোহান যানে অনন্যা বাসায় থাকলে তৃধা এক সেকেন্ড ও শান্তিতে থাকতে দেবেনা।আর মামীর উপর ও বিশ্বাস নেই ওর কখন কি বলে বসে তখন আবার কোন অঘটন ঘটে যাই তার ঠিক নেই। সেই ভয়ে রোহান আবার অনন্যাকে অফিসে আসতে বলছে।মাঝে মাঝে অফিস শেষে অনন্যাকে বাসায় দিয়ে যাই রোহান আর এই বাহানাই রুহির সাথে সময় ও কাটায়।মোটামুটি ভালোই কেটে যাচ্ছে ওদের দিনগুলো ।

-রুহির সাথে আড্ডা দিতে দিতে আড় চোখে অনন্যা কে দেখা। আবার দুজনার চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেওয়া বেশ ভালোই জমে উঠেছে আজকাল ওদের প্রেমটা।এ যেন নতুন এক অনুভূতি।এক সেকেন্ড চোখের আড়াল হলেও যেন অনেক বেশি কষ্টে থাকে দুজন এখন।আবার নতুন করে #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো যেন প্রান ফিরে পেতে শুরু করেছে।সবকিছু যেন নতুন করে শুরু হতে চলেছে ওদের মাঝে।ঘৃনা কে একপাশে রেখে আবার নতুন করে জন্ম নিতে শুরু করেছে বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা।সত্যি বড় অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মিশ্রিত সময় পার করছে অনন্যা আর রোহান। আবার ও হয়তো দুজনে এক হওয়ার স্বপ্ন ও দেখতে শুরু করেছে।কিন্তু কথায় বলেনা সুখের সময় দ্রুতই পেরিয়ে যাই কথাটা আসলেই ঠিক।দুঃখের সময় যত ধীরে ধীরে পার হয় সুখের সময় তার দ্বিগুণ দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাই।

-আজ রোহানের একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে অফিস শেষে তাই অনন্যা কে একাই বাসায় চলে যেতে বলেছে ও।অনন্যা ও কথামত অফিস টাইম শেষে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।রাস্তায় এসে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোনো রিকসা পাচ্ছি না কি মেজাজ খারাপ হয় এবার।একটু পর একটা গাড়ির হর্নের শব্দে হুস ফিরলো আমার।চিন্তার জগৎ ছেড়ে সামনে তাকিয়ে দেখি তমাল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা চলে আই এখন কোনো রিকসা পবিনা আমি তোকে নামিয়ে দেব।ওর সাথে এভাবে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? এদিকে সন্ধা ও নেমে আসছে উপায় না পেয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে।

-কেমন আছিস তুই? কোনো খোঁজ খবর নেই তোর রাগ করেছিস আমার উপর কথাগুলো একটানা বলে থামলো তমাল?

-আরে না রাগ করব কেন পাগল।একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আর কি কথা বলা হয়নি।ভালো আছি আমি।তুই কেমন আছিস আর ভাবির কি খবর।

-হুম ভালো আছি তোর ভাবি ও ভালো আছে।রুহির কি খবর আমার ছোটমা টা ভালো আছে তো?

-হুম তোর ছোট মা ও অনেক ভালো আছে।তারপর টুকটাক কথা বলতে বলতে হঠাৎ তমাল গাড়ি থামাল।কিরে গাড়ি থামালি যে হঠাৎ?

-সামনে তাকা গাধী।

-সামনে কি বলে তাকিয়ে দেকি ফুসকা ওয়ালা। ওয়াও সাথে সাথে বলে উঠলাম ফুসকা।

-হু চল আজ দেখব কে ফাস্ট হয়।

-বলছিস যখন চল তবে আমি যানি আমি ফাস্ট হব। কার ভার্সিটিতে থাকতে কখনো তুই ফুসকা খাওয়ায় আমার উপরে উঠটে পারিসনি সুতরাং আজ ও আমি ফাস্ট হব।

-ও হ্যালো ম্যাম সময় পাল্টে গেছে আজ তো আমিই ফাস্ট হব বলে দিচ্ছি।

-হইছে থাম তুই সময় ই বলে দেবে কে কি হবে তা।

-তারপর দুজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়ায় মন দিলাম।টুকটাক কথা বলছি আর হাসছি দুজন সাথে গপাগপ ফুসকা শেষ করছি হা হা।

-কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করে রাস্তার পাশে চোখ গেল।অনন্যা আর তমাল একসাথে ফুসকা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে।এই মুহুর্তে যে আমার ভিতরে কি হচ্ছে সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না।আবারো আমার একটু একটু করে গড়ে তোলা স্বপ্নগুলো ভেঙে চূর্নবিচূর্ন হয়ে গেল।নাহ্ এভাবে আর মরিচিকার পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করে লাভ নেই যা করার এবার আমাকেই করতে হবে।এতক্ষণ কথাগুলো মনে মনে ভাবছিল রোহান তারপর অনন্যা আর তমালের দিকে একবার তাকিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।আর এদিকে বেচারি অনন্যা যানতে ও পারলোনা ওর অজান্তেই আবারো কতবড় ভুল করে ফেললো ও।
.
.
.
.
Continue…

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পর্ব-২৭

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পর্ব-২৭
#আরিশা অনু
-ভয়ে ভয়ে আমি মাথা নিচু করে মামির সামনে দাঁড়িয়ে আছি তখন উনি শুর পালটে বলে উঠলেন অনন্যা আই এম স্যরি। প্লিজ মাফ করে দাও আমায়।আমি ভুত দেখার মত খানিক ক্ষন ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম।কি বলে এই মহিলা।আমায় স্যরি বলছে যে কিনা কোনো কালে আমায় দুচোখে সহ্য ই করতে পারতো না সে আজ যেচে এসে স্যরি বলছে।হিসাবটা ঠিক মিলছে না যেন। কিছু তো ঘাপলা আছে বাট সেটা কি ঠিক ধরতে পারছিনা আমি তাই চুপচাপ আগের মত হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

-আমার চুপ থাকা দেখে উনি আবার কথা বলা শুরু করলেন।দেখ অনন্যা আমি যানি আমি অনেক খারাপ একজন মানুষ।আমি এটাও জানি যে আমি তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে কখনো এসব করিনি।কথাটা বলে মামি একটু থামলেন তারপর আবার বলা শুরু করলেন।

– অনন্যা তুমি তো যানো আমার মেয়েটা রোহান বলতে পাগল।তোমার আর রোহানের যখন বিয়ে হল আমার মেয়েটা কত পাগলামি ই না করেছে তখন।এসব কিছু তোমার অজানা নয়।তারপর তুমি যখন চলে গেলে রোহান কতটা ভেঙে পড়েছিল তা বলে বোঝাতে পারবোনা আমি তোমায়।ছেলেটা রুমের সবকিছু ভাংচুর করতো।ঠিকমত খেতনা ঘুমাতো না এবনরমার এর মত আচারন করত সবসময়।ওর এই অবস্থায় তৃধা ওকে জোর করে কানাডা নিয়ে যায়।ওর খারাপ সময় গুলোতে আমার মেয়েটা ছায়ার মত পাশে থেকেছে।অনেক সময় লেগেছে রোহানের নরমাল হতে।ওদের দুজনের এই লং টাইম একসাথে থাকাটা আস্তে আস্তে রোহানের মনে জায়গা করে নিয়েছে তৃধা।আর সেজন্য রোহান তৃধাকে বিয়ে করবে বলে শিদ্ধান্ত ও নিয়েছে।তাইতো সুদূর কানাডা থেকে এখনা ছুটে এসেছি আমরা।কথাগুলো বলে মামি কিছুক্ষণ থামলেন।

-রোহান তৃধাকে বিয়ে করবে কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথার ভিতর চক্কর দিয়ে উঠলো আমার।দু পা পিছিয়ে গেলাম সাথে সাথে আমি।এটা হতে পারেনা রোহান এতবড় অন্যায় কিছুতেই করতে পারেনা।আর তৃধাকে যদি বিয়ে ই করবে তাহলে আমায় কেন নতুন করে আবার ফিরিয়ে আনলো। মাথাটা কেমন শুন্য শুন্য লাগছে এখন আমার।দুচোখ দিয়ে নিজের অজান্তে জল গড়িয়ে পড়ছে।এই সাতটা দিন যে পাগলামি গুলো ও করেছে তা কিছুতেই মিথ্যা হতে পারেনা।ও যতবার ই আমার কাছে এসেছে ততবার ই আমার প্রতি ওর ভালোবাসার গভীরতা আমি উপোলদ্ধি করেছি।আমার প্রতি ওর অনুভূতি গুলো এভাবে মিথ্যা হতে পারেনা।উফ্ শ্বাস নিতে এত কষ্ট কেন হচ্ছে আমার।মনে হচ্ছে গলাটা খুব শক্ত করে কেউ চেপে ধরেছে আমার।মনে মনে কথাগুলো ভাবছিলাম তখন মামি আবার বলতে শুরু করলো।

-দেখ অনন্যা আমি জানি তোমার এগুলো মানতে হয়ত কষ্ট হবে। কিন্তু তাই বলে তো সত্যিটা মিথ্যা হতে পারেনা।কানাডা থাকতে রোহান তৃধাকে চোখে হারাতো।আমি নিজে দেখেছি ওরা দুজন দুজনকে কতটা বোঝে তা।আর তাই আমি আর তোমার মামা ওদের চার হাত এক করে দেওয়ার জন্যই কানাডা থেকে এখানে এসেছি।এবাড়িতে এসে প্রথমে তোমায় দেখে আমার মাথার ঠিক ছিলনা। তাই তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছি।এর জন্য তোমায় স্যরি ও তো বলেছি আশা করছি তুমি খুব দ্রুত রোহানের জীবন থেকে দূরে চলে যাবা।আমার বিশ্বাস তুমি তৃধার জন্য না হোক অন্তত রোহানের সুখের কথা ভেবে ওকে এবার মুক্তি দেবে।ছেলেটা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছে এখন একটু সুখে থাকতে দাও ওদের তুমি।

-তোমার মামা আর আমি ভেবেছিলাম এবার ই আল্লার নাম নিয়ে বিয়েটা পড়িয়ে দেব। কিন্তু তুমি তো এখনো আইনত রোহানের স্ত্রী তাই ভাবছি আগে তোমাদের ডিভোর্স টা হোক তারপর বিয়ে দেব ।এখন আপাতত এংগেজমেন্ট টা করিয়ে রাখতে চাইছি।আমি কি বলতে চাইছি তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো?এখন যাও অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড় কেমন।একটানা কথাগুলো বলে মামি নিচের দিকে রওনা হলেন।

-ডিভোর্স, এংগেজমেন্ট, বিয়ে মনে মনে কয়েকবার কথাগুলো উচ্চারণ করলাম।আর দাঁড়িয়ে থাকার মত শক্তি নেই আমার মাঝে।ধপ করে ছাদের উপর বসে পড়লাম।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে এখন আমার।রোহান তৃধাকে ভালোবাসে না এটা কিছুতেই হতে পারেনা।এই মহিলা আমাকে আর রোহান কে আবার আলাদা করার জন্য এসব বলছে।এ সবকিছু মিথ্যা মানিনা আমি কিছুতেই মানিনা।কিন্তু রোহান তো এই সাতদিনে একবার ও বলিনি যে অনন্যা তুমি একেবারে থেকে যাও।আবার আগের মত সংসার বসাবো আমরা। শুধু বলেছে সুস্থ হও তারপর যেও।তারমানে রোহান ও চাইনা আমি থাকি এখানে।আমার সাথে কেন এমন হয় সবসময়। আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি মুখ চেপে ধরে অনেক সময় ছাদে বসে কাঁদলাম।

-রাত অনেকটা গভীর হলে রুমের দিকে এগোলাম।রুমে এসে দেখি রুহিকে বুকের মধ্যে নিয়ে রোহান ঘুমিয়ে পড়েছে সাথে রুহি ঘুমিয়ে আছে।রুহির অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহান আজকাল।মেয়েটা বাবা ছাড়া যেন কিছুই বুঝেনা। তার সব আবদার বাবাইয়ের কাছে।পাগলি মেয়ে একটা হয়েছে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এসে গেল আবার।

-সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি আমি।শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে এসেছিল তাও বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারিনি।রোহানের সাথে কথা বলা দরকার ও মনেহয় ওয়াশরুমে। আমাদের ফিরে যাওয়ার কথাটা আজ বলতেই হবে আমার।

-একটু পর রোহান শাওয়ার নিয়ে রুমে আসলো।আরে অনন্যা তুমি উঠে গেছো আর একটু ঘুমালে তো পারতে।আমি রুহিকে রেডি করে দেব তুমি বরং আর একটু ঘুমাও কথাগুলো বলে থামলো রোহান।

-রোহানের কেয়ারিং দেখে আবার আমার চোখে জল এসে গেল।কি করে থাকবো এই মানুষটাকে ছাড়া আমি।চোখের জল গুলো দ্রুত মুছে নিয়ে বললাম এখন আর ঘুম আসবেনা আমি বরং রুহিকে রেডি করে দি।তুমি ও রেডি হয়ে নাও।আচ্ছা তাহলে যাও রুহিকে রেডি করে দাও ওকে স্কুল এ দিয়েই আমি অফিসে যাব।তারপর রোহান রেডি হতে গেল আর আমি রুহিকে তৈরি করতে নিয়ে গেলাম।

-বুঝতে পারছিনা কিভাবে কথাটা তুলবো। একটু ভয় ভয় করছে আবার যদি রোহান আমায় ভুল বুঝে ।নাহ্ ভয় পেলে চলবেনা তৃধাকে যখন রোহান ভালোই বাসে তখন আমার কোনো অধিকার নেই ওদেরকে আলাদা করার।

-রেডি হয়ে রোহান বের হবে তখন বললাম শোনো।

-হুম বলো।কিছু আনতে হবে?

-না!!

-তাহলে…?

– বলছিলাম যে এখনতো আমি একেবারেই সুস্থ তাই ওবাড়িতে ফিরতে চাইছিলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথাগুলো বলে থামল অনন্যা।

-করুন দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কেনো যেন চোখটা ঝাঁপসা হয়ে উঠছে ও দেখে ফেলবে তাই দ্রুত চোখটা সরিয়ে নিলাম।তারপর কিছু না বলে রুহিকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।
.
.
.
.
.
Continue….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৫

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৫
#আরিশা অনু
-দুপুরের পর থেকে রুহি বাইনা ধরেছে বাবাইএর সাথে সে ঘুরতে বের হবে।এদিকে অনন্যার কঠিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যাওয়ার ক্ষমতা ও বেচারির নেই। তাই আম্মুকে লুকিয়ে বাবাইএর কানে কানে কি যেন ফিস ফিস করে বলছে।আর রোহান সেটা শুনে এক প্রকার হেসে গড়িয়ে পড়ছে।সে হাসিতে যেন সকালে প্রথম ওঠা নরম রোদের ছোয়া মিশে আছে। অনন্যা মুগ্ধ দৃষ্টিতে রোহানের হাসি দেখছে আর বাবা মেয়ের ফুসুর ফুসুর বোঝার চেষ্টা করছে।বাট সে শুনতে ব্যার্থ কারন ওরা বারান্দাই বসে কথা বলছে। আর অনন্যা বেডের উপর আধাশোয়া হয়ে আছে।
অনেকক্ষণ ধরে বাবা মেয়ের কথা শোনার চেষ্টা করেও কিছু শুনতে পেলনা অনন্যা তাই এক প্রকার বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি এত কথা হচ্ছে শুনি বাবা মেয়ের মধ্যে…?
!
-সকালে ওঠা নরম রোদের মতন হাসিটা হেসে রোহান জবাব দিল এটা বাবা মেয়ের মধ্যকার কথাবার্তা। তোমাকে বলা যাবেনা তুমি বরং ঘুমাও এখন।রোহানের কথায় তেড়ে উঠে বললাম বাবা মেয়ের মাঝে আমি কি বাইরের লোক নাকি যে আমায় বলা যাবেনা।আমি শুনতে চাই বাবা মেয়ের মধ্যে এত কিসের ফুসুর ফুসুর হচ্ছে।
!
-আম্মুর এমন তেড়ে ওঠা দেখে রুহি ভয় পেয়ে গেছে। না জানি তাদের সব প্লান আবার আম্মু জেনে যাই।আর তাদের ঘুরতে যাওয়ার প্লান ভেস্তে যাই আবার।বেচারি ভয়ে ভয়ে মায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে করুন চোখে তাকাল।আরে মামনি তুমি ভয় পেওনাতো। তোমার আম্মুকে কাঁচ কলা দেখিয়ে আমরা ঘুরতে যাব বলেই হেসে উঠল রোহান সাথে রুহিও হেসে ফেলল।ওদিকে অনন্যা বাবা মেয়ের কথা শুনে রাগে গজ গজ করে বলল যা পারো করো পরে যেন আবার আমায় বলতে আসবা না বলে দিচ্ছি।রোহান আর রুহির ঠোঁটের কোনায় এখনো সেই নরম হাসিটা লেগে রয়েছে।
!
-অনন্যা মুখে যতই বলুকনা কেন মনে মনে খুব খুশি যে রোহান রুহিকে নিয়ে আজ ঘুরতে বের হচ্ছে। মেয়েটার অনেক দিনের স্বপ্ন যে সে বাবার সাথে ঘুরতে যাবে।আজ আমার মেয়েটার স্বপ্ন পুরোন হতে চলেছে।অনেক খুশি আজ আমার বাচ্ছাটা। কি চাই আর আমার চোখ বন্ধ করে কথাগুলো এতক্ষণ ভাবছিল অনন্যা।ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেছে টের পাইনি ও।
!
-গোধূলির হালকা নরম লাল রোদ এসে মুখের উপর পড়তেই ঘুম কিছুটা ভেঙে গেল বেচারির।আড়ামোড়া ভেঙে একবার চোখমেলে তাকাতেই চোখে লেগে থাকা ঘুম কোথায় যেন তিরের বেগে ছুটে পালালো।এখন প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে। ধরমড়িয়ে উঠে পড়ল অনন্যা রুমটা অনেকটা অন্ধকার। শুধু জানালার একসাইডের পর্দা সরে গেছে তাই সূর্যের অবাধ্য আলো এসে ভির জমিয়েছে রুমের ভেতর।হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সূর্যের আলো চোখে পড়ে কিছুটা অসস্থি হলেও এখন আলোটা চোখে সয়ে গেছে তাই এখন অসস্থি বোধটা কিছুটা কমে গেছে অনন্যার।
!
-বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। খোলা চুলগুলো হাতখোপা করে হাতমুখ ধুতে গেল অনন্যা।হাতমুখ ধুয়ে রুমে এসে দেখে আম্মু বসে আছে বেডের উপর।কিরে ঘুম হলো তোর।হ্যাঁ আম্মু রুহি, রোহন ওরা কোথায়।মেয়েটা ওর বাবার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে রে মা। তুই ওকে কিছু বলিসনা আর।বাচ্চাটার একটা ইচ্ছা তো পূরণ হোক।হুম আম্মু কিছু বলব না।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে তৃধাকে নিয়ে। এই শয়তান মেয়ে মনে মনে আবার কোন ফাঁদ পাতছে কে জানে।
!
-আরে রাখতো এত চিন্তা করিসনা ঠিক হয়ে যাবে সব।রোহান যদি ঠিক থাকে তাহলে তৃধার কিছু করার ক্ষমতা নাই কথাটা বলে থামলেন শাহেলা জামান।
!
-তা ঠিক কিন্তু এই তৃধা যা মানুষ জিতে যাওয়া খেলা ও যে কোনো মুহুর্তে হারিয়ে দিতে পারে এ মেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাশা পালটে নিতে সময় লাগবে না এর।আরে ধুর রাখতো আই মা মেয়ে মিলে একটু শান্তিতে গল্প করি।শোন কাল রাতে কি কি হয়েছে। মুখে একঝুড়ি হাসি নিয়ে মেয়েকে পাশে বসিয়ে গল্পে মেতে উঠলেন শাহেলা জামান।
!
-অনেক আদিক্ষেতা সহ্য করেছি আর না আজ রোহান বাসায় ফিরুক এর একটা বিহীত আমি করে ছাড়ব।কি ভেবেছে কি এই ছেলে দিনের পর দিন আমায় মেয়েটার সাথে খেলা করবে আর আমি চুপচাপ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব। নেভার অনেক হয়েছে আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি।সুদূর কানাডা থেকে আসছি কি এসব রং ঢং দেখতে।কত আশা ছিল আমার একমাএ মেয়েটাকে বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেব তা আর হলনা।কোত্থেকে এই ফালতু মিডিলক্লাস মেয়েটা উঠে আসলো আবার।প্রথম থেকেই দুচোখে সহ্য করতে পারিনা একে আমি।শুধু রোহানের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতাম।একরাশ ক্ষোব নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে চা খেতে কথাগুলো বলল তমসা রহমান।
!
-যা কিছু হচ্ছে এর জন্য তুমি দায়ী মম।কি দরকার ছিল মাতব্বরি করে অনন্যা কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার।না তুমি বের করে দিতে আর না আজ গুষ্টিশুদ্ধু সবাই এবাড়িতে এসে হাজির হত।এই রোহানের বাচ্চার এত সম্পত্তি না থাকলে কবে ওকে ছেড়ে দিয়ে আমার বয়ফ্রেন্ড হায়াটে কে বিয়ে করতাম। এতদিনে দুই বাচ্চার মা হয়ে যাই আমি।তোমাদের ফালতু সম্পত্তির চক্কোরে পড়ে আমার সব গেল।বিয়ের কোনো ঠিক ঠিকানা নাই আমার জিবন গেল চিরোকুমারি হয়ে। আমি বুঝতে পারছি না হায়াটে কে বিয়ে করলে তোমাদের প্রবলেম কোথায় ছিল একরাশ বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বলল তৃধা।
!
-এ পর্যায়ে তমসা রহমান ফুসে উঠে বললে তুই এখনো ঐ হারিমির বাচ্চাটার কথা ভুলিসনি।কি আছে ওর সাদা চামড়া ছাড়া আর কি যোগ্যতা আছে।
!
-মম ওর যা যোগ্যতা আছে তোমার তা নেই।তুমি আর ড্যাড মিলে আমার লাইফ পুরো হেল করে ফেলেছো।নাটক করতে করতে আজ আমি ক্লান্ত।
!
-হ্যাঁ এখন তো ক্লান্ত হবাই ওই সাদা চামড়ার বাচ্চাটার সাথে যখন রাতদিন ফুর্তি করে বেড়াতে তখন তোমার ক্লান্তি কোথায় থাকত।নাইট ক্লাব,লং ড্রাইভে ই সারাদিন রাত পার করে দিতে তখন তোমার ক্লান্তি আসতোনা।
!
-এ পর্যায়ে তৃধা এবার চরম আকারে খেপে গেল খবরদার মম তুমি আমার পার্সোনাল ম্যাটারে নাক গলাতে আসবানা।ভুলে যেওনা আমি এখন এডাল্ট। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করব।যেখানে ইচ্ছা যার সাথে ইচ্ছা থাকব ঘুরব তোমার কোনো অধিকার নেই আমাকে আটকানোর।এবার কানাডা ব্যাক করেই আলাদা এপার্টমেন্ট ভাড়া করব আমি থাকব না আর তোমার ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে ওবাড়িতে।
!
-মেয়ের কথা শুনে এক প্রকার হা হয়ে গেলেন তমসা রহমান।কি বলে এসব একি আদেও তার মেয়ে। নাকি বাইরে থেকে তুলে আনা কোনো বস্তু। যার উপর সে কোনো কথা বলতে পারবে না। অথচ তার খাবে আবার তার ই গাবে।মনে মনে কথা গুলো ভেবে চুপচাপ ঝিম মেরে বসে রইলেন তমসা রহমান।আর আক বাড়িয়ে কথা বলার স্বাদ তার নেই।
!
-ঘটনা বাড়াবাড়ির দিকে যাচ্ছে দেখে এ পর্যায়ে মুখ খুললেন তুষার রহমান।এতক্ষণ চুপচাপ মা মেয়ের ঝগড়া শুনলে ও এবার আর মুখ বন্ধ করে থাকতে পারলেন না তিনি।দুজনকেই একপ্রকার ধমক দিয়ে বলে উঠলেন কি হচ্ছে টা কি এখনে অবুঝ দুধের শিশু তোমরা। যেকোনো মুহুর্তে রোহান চলে আসতে পারে এছাড়া অনন্যারা ও এবাড়িতে আছে আর তোমরা মা মেয়ে ভর সন্ধা বেলা তর্ক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছো।একবার ভেবে দেখেছো একবার রোহানের কানে এসব কথা ঢুকলে আমাদের এত বছরের সব প্লান মাটি হয়ে যাবে।এক দমে কথা গুলো বলে থামলেন তুষার রহমান।তবে মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল এতক্ষণ তিনি সময় নষ্ট করে যে বয়ান দিলেন তাতে এদের কিছু এসে যাই।বরং সুযোগ পেলে আবার কখন তর্ক যুদ্ধে নেমে পড়বে এরা এমন ভাবসাব এদের।
!
-রাত সাড়ে আটটা ছুই ছুই তখন বাসায় আসলো রুহি আর রোহান।একগাদা শপিংব্যাগ আর খেলনা নিয়ে হাজির হল তারা।তৃধা তখন ড্রয়িং এ বসা।চোখ যেন রাগে ঝলসে উঠছে তার।মনের দুঃখে নিজের চুল নিজে ছিড়তে মন চাইছে এখন।এসব রং ঢং দেখে দেখে কি সে বুড়ি হবে নাকি। নেভার এবার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে এই অনন্যার।মনে মনে এগুলো চিন্তা করলেও মুখফুটে কিছু বলল না।চুপচাপ দেখতে থাকল সব তামাশা।
!
-রুহি হাসি হাসি মুখে দৌঁড়ে এসে অনন্যার গলা জড়িয়ে ধরল।দানো(যানো) আম্মু বাবাই আমাতে(আমাকে)অনেককিতু (অনেককিছু)তিনে(কিনে)দিয়েছে।মেয়েকে এত খুশি দেখে অনন্যার চোখে পানি এসে গেল।তারপর রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল এতকিছু কেনার কি দরকার ছিল শুধু শুধু কতগুলো টাকা নষ্ট হল তোমার।
!
-অনন্যার এমন কথায় রোহান রাগে গর্জে উঠে বলল আমি আমার মামনির জন্য যা ইচ্ছা কিনবো তোমার অত চিন্তা করা লাগবে না রেস্ট নাও তুমি।তারপর ব্যাগগুলো রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল রোহান।
.
.
.
.
Continue….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৬

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৬
#আরিশা অনু
-ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি মা মেয়ে জমিয়ে গল্প শুরু করেছে।আজ অফিসে যায়নি সারাদিনের কাজ পড়ে আছে তাই ল্যাপটপ টা নিয়ে কাজে লেগে পড়লাম।অনেক কাজ জমে আছে শেষ করতে করতে রাত শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

-আম্মু যানো আজ কতো জায়গায় গিয়েতি(গিয়েছি)টাইগার দেখেছি লায়ন দেখেছি পিচ্চিটা আজ বাবাইয়ের সাথে ঘুরতে যেয়ে কি কি দেখেছে তার বর্ননা দিচ্ছে। আর আমি ওর মুখথেকে উপচে পড়া খুসির ঝলক দেখছি।এত আনন্দ এর আগে কখনো হতে দেখিনি রুহিকে।আমার সাথে তো অনেক বার অনেক জায়গায় বেড়াতে গেছে এতখুসি ওকে কখনো হতে দেখিনি। মনে মনে কথা গুলো চিন্তা করছিল অনন্যা তখন রুহির ডাকে হুস ফিরল ওর।আবার গল্প শোনায় মন দিল ও।

-দিনগুল বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে সাতটা দিন কেটে গেল। অনন্যা এখন অনেকটাই সুস্থ।যেহেতু এখন সুস্থ হয়ে গেছে তাই এখন এবাড়ি থেকে চলে যাওয়াই সমীচিন।ভাবছে আজ রোহান অফিস থেকে আসার পর ওকে কথাটা বলবে অনন্যা।

-খুব কষ্ট। হবে এবাড়ি ছেড়ে যেতে। এই সাতটা দিন রোহান হাজার উপায়ে আমার মন ভালো করেছে। পাগলটা বেড থেকে নামতেই দেইনি।নামার সাথে সাথে ধমক দিয়ে আবার বেডে শুইয়ে দিয়েছে।

-রোহান আজ বাড়ি ফিরলো নয়টার পর।আজ নাকি মিটিং ছিল অফিসে তাই আসতে এত দেরি হল।
সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে ছেলেটা। দুপুরে খেয়েছে কিনা কে জান।বাসায় এসেই আজ শাওয়ার নিতে ঢুকে পড়েছে বাথরুমে।মুখটা একদম শুখিয়ে গেছে বেচারার।একমনে কথাগুলে ভাবছিলাম তখন ও বলে উঠল। খুব ক্লান্ত আমি আজ এখনি শুয়ে পড়ব।সেকি খাবেনা তুমি একটু বসো আমি এখনি খাবার দিতে বলছি রুমকি কে।আমি অসুস্থ হওয়ার পর রুমকি আবার চলে এসেছে এবাড়িতে।সম্ভাবত রোহান ওকে ফোন করে আনিয়েছে।

-রুমকিকে খাবার দিতে বললাম একটু পরে ও এসে খাবার দিয়ে গেল।আমি যে টেবিলটাই বসে বই পড়তাম ওটার সাথে একটা মাএ চেয়ার রাখা ছিল।রোহান রুহিকে কোলে নিয়ে খেতে বসেছে।রুহিয়ে খাইয়ে দিয়ে ও খেয়ে নিল।ওর খাওয়া শেষ হলে আমি প্লেট গুলো নিয়ে নিচে চলে আসলাম।রুমকি কে বললাম টেবিলে খাবার দিতে।মেয়েটা যেন আমার ইশারার অপেক্ষায় ছিল এতক্ষণে সাথে সাথে খাবার গুলো এনে টেবিলে রাখলো।আমি ও সাহায্য করলাম ওকে।মেয়েটা বড্ড ভালো শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে।সাত চড়ে ও রা উচ্চারণ করবেনা ওকে দেখলে মনে হয়।মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে দেখি কত নিরীহ একটা মেয়ে।দুচোখ যেন মায়ায় ভরা।

-একটু পর সবাই খেতে এলো।তৃধা যে রেগে আগুন হয়ে আছে আমাকে দেখে তা ওর ফরসা মুখ দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।বেচারির মুখটা ঠিক লাল টমেটো হয়ে আছে। রাগে ফোস ফোস করছে বাট মুখে কিছু বলছেনা মুখ নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে।বেস মজা লাগছে আমার তৃধাকে এভাবে দেখতে।কিছুক্ষণের মধ্যে সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল।বাকিরা উপরে চলে গেল।আমি আর রুমকি মিলে টেবিল গুছিয়ে বাকি খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে দিলাম।রুমকি কে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ও রুমের দিকে এগোলাম।মনে মনে ভাবছি রুমে যেয়ে রোহানকে আমাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার কথাটা বলবো।আর কতদিন ওর বাসায় থাকবো।ও হয়তো চলে যাওয়ার কথা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না তাই বলে কি আমি ও চুপ থাকবো।মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুমে যাচ্ছিলাম তখন ই কে যেন ডাক দিল।পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি
মামি দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম কিছু বলবেন মামি?

-হ্যাঁ বলবো একটু এদিকে আসো।ঠিক আছে চলেন।কি বলবে কে যানে।ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। সেদিনের মত আজ আবার হয়তো অপমান করবে তাই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে।ভয়ে ভয়ে আমি ওনার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম।অবশেষে উনি ছাদে এসে থামলেন।আমি ছাদে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওনার অপমান গুলো গেলার জন্য রেডি হচ্ছি হঠাৎ উনি শুর বদলে বলে উঠলেন……
.
.
.
.
.
Continue….

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পার্ট-২৪

0

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পার্ট-২৪
#আরিশা অনু

-ঘড়ির কাটায় রাত ১১:২৫ রুহিকে নিয়ে রোহান রুমে ঢুকলো……

-মামনি এবার আমরা ঘুমাই চলো অনেক রাত হয়ে গেছে….

-বাবাই আমাল(আমার) গল্প না শুনলে ঘুম আছেনা(আসেনা)আম্মু আমায় গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয় প্রতিদিন বলল রুহি….

-আচ্ছা সোনা মামনি আমি ও আজ আমার মা কে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেব হবেতো তাহলে….?

-হ্যাঁ বাবাই হবে….

-তারপর রুহিকে আমার বুকের মধ্যে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প বলা শুরু করলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে ও ঘুমিয়ে গেল।কি নিঃষ্পাপ লাগছে বাচ্চাটা কে।মনে হচ্ছে খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে আমার বুকে।রুহির মায়া ভরা মুখটা দেখলে যেন পৃথিবীর সব কষ্ট কে ভুলে থাকা যায়। অদ্ভুত ভাবে মেয়েটার চোখ,নাক,মুখ সব আমার সাথে মেলে কেন যেন বার বার মনে হয় ও আমার ই অংশ।কিন্তু কিভাবে রুহি আমার অংশ হবে ও তো….. ভাবতে ভাবতে আবার মন খারাপ হয়ে গেল।

-রুহির কপালে একটা হামি দিলাম।পাশে তাকালাম অনন্যা ও যেন আজ অনেক শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। ইস্ কত ভালো হতো যদি সারাজীবন এভাবে থাকতে পারতাম। আজ আমার জীবনটা স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।হোকনা অতি অল্প সময়ের জন্য তারপর ও তো এত বছর ধরে বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন কিছুটা প্রশমিত হল।

-এখক্ষণ অনন্যার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। তারপর এগিয়ে যেয়ে ওর কপালে একটা হামি দিয়ে দুচোখ বন্ধ করলাম।চোখ বন্ধ করতেই রুহি আর অনন্যার মুখটা ভেষে উঠলো। অনেক বছর পর আজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো….
.
.
.
.
-একঝালক রোদ এসে মুখের উপর পড়তের আরামের ঘুমটা ভেঙে গেল অনন্যার…

-আড়ামোড়া ভেঙে উঠতে যেয়ে ও ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠে আবার শুয়ে পড়লো বেচারি।

-কি হল বুঝতে পারেনি এখনো বেচারি তাই মাথায় হাত দিতেই বুঝলো ব্যান্ডস করা।হুট করে পাশে তাকাতেই চোখ আটকে গেল অনন্যার।

-রোহানের বুকে মুখগুজে শুয়ে আছে একটা ছোট্ট পরি সে পরি টা আর কেউ নয় আমার কলিজার টুকরা রুহি।

-রুহি এখানো কি করে আসলো নাকি রোহান আসলো আমার বাসায় কিন্তু আমার এক্সিডেন্ট হল যে তাহলে আমি কোথায় এখন আর রুহি কি করে আসল? নাকি আমি স্বপ্নে আছি? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না পুরো মাথা আওলা ঝাওলা লাগছে এখন আমার।মাথা চেপে ধরে উঠে বসলাম।সারা রুমে চোখ বুলাতেই বুঝতে পারলাম এটা রোহানের রুম।আর আমি এখন রোহানের বাসায় আছি কিন্তু কিভাবে আসলাম এখানে? আমিতো রাস্তার উপর পড়ে ছিলাম আর রুহি এখানে কিভাবে আসলো না না রুহির কথা রোহান কিছুতেই যানতে পারে না আমার মনের ভুল এটা।

-হাত দিয়ে চোখ ডলে আবার তাকিয়ে দেখি আগের মতই রোহানের বুকের মধ্যে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে রুহি।অপূর্ব এক দৃশ্য বাবা মেয়েকে এভাবেই তো দেখতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু রোহান কি মেনে নিতে পারবে সবটা? আনমনে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কার ডাকে হুস ফিরলো অনন্যার।

-এই অনন্যা তুমি উঠলে কেনো শুয়ে পড় আমি নাস্তা রেডি করে এনে তোমায় ফ্রেশ করে দেব। খবরদার ততক্ষণ যেন বেড ছেড়ে এক পা ও নামবা না বলে দিচ্ছি।আমার কথা শুনে অনন্যা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি কিছু না বলে হালকা হেসে উঠে পড়লাম বেড ছেড়ে।রুহিকে বুক থেকে নামিয়ে বেডে শুইয়ে দিলাম আর কপালে একটা চুমু দিলাম।পিচ্চিটার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে এত ভালো লাগছে যে বলে বোঝাতে পারবোনা।এসব ভাবতে ভাবতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো রোহান।

-আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি এগুলো হচ্ছে আমার সাথে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।রোহানের এই হঠাৎ পরিবর্তন আমাকে বড্ড ভাবাচ্ছে আজ।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবনা বাদ দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। নয়তো রোহান এসে এভাবে বসে থাকতে দেখলে মাথা খাবে আবার।আস্তে আস্তে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।রোহান যে এত সহযে রুহিকে মেনে নিবে বুঝতেই পারিনি। তবে সবকিছু জানার পর কি হবে সত্যি যানিনা আমি।

-কাল অনন্যার রান্না করা খাবার গুলো এখনো কিছুটা ফ্রিজে রাখা আছে তাই গরম করে খাবারগুলো উপরে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ই তৃধার সাথে দেখা হয়ে গেলো ড্রয়িং এ।

-বাহ্ তুমি তো একেবারে গিরগিটি কে ও হার মানিয়ে গেছো রোহান।কখন কোন সময় রং বদলে ফেলছো বোঝা দাই।তো যে বউকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা করছো তার অতীতের কাহিনি কি এত দ্রুত সব ভুলে গেছো? আর যদি ভুলে যেয়ে থাকো তাহলে বলো আমি না হয় কষ্ট করে আবার মনে করিয়ে দি?

-সামনে থেকে সরো তৃধা তোমার ফালতু কথা শোনার মুডে নেই এখন আমি কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে উপরে চলে আসলাম।

-কি আমি ফালতু কথা বলি ঐ মেয়ের জন্য আমায় ফালতু বলা তাই না দেখো এবার আমি কি করি। শুধু অপেক্ষা করো একটু যাকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা করছো তাকে নিজেই বাড়ি থেকে বের করে দেবে তুমি রোহান। আর এটা তৃধার প্রমিজ তোমায় একা একা রাগে গজ গজ করতে করতে কথাগুলো বললো তৃধা।

-রুমে যেয়ে খাবার গুলো পাশের টেবিলে রেখে এগিয়ে গেলাম অনন্যার দিকে।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ও তাই পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ঘুমিয়ে পড়েছো কি?

-কেবলমাএ চোখটা লেগে আসছিল তখন রোহানের কথা শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল তাই বললাম না ঘুমাইনি।

-আচ্ছা উঠে বসো তাহলে চলো ফ্রেশ করে দি তোমায় খাওয়ার পর মেডিসিন আছে সেগুলো ও খেতে হবে তো।

-রোহান কে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি আমি ও কি সত্যি এখনো আগের মত ভালোবাসে আমায় নাকি সব অভিনয় করছে। মনে মনে এগুলো ভাবতে থাকলাম তখনি রোহানের কথায় হুস ফিরলো আমার।

-কি হল ওঠো..?

-হুম উঠছি।

-উঠে বসতেই রোহান আচমকা কোলে তুলে নিল আমায়। আরে আরে কি করছো পাগল হয়েছো নাকি।নামাও আমায় পড়ে যাব তো রোহান।

-হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি চুপ থাকো তো।তারপর ওকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেয়ে নামিয়ে দিলাম।শুনো ফ্রেশ হয়ে আমায় ডাক দিবা আমি এসে নিয়ে যাব খবরদার বেসি পাকনামি করতে যাবানা বলে দিচ্ছি।কথাগুলো বলে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।

-কি বলে গেল পাগলটা। আবার আগের মত পাগলামি শুরু করছে ও।সামান্য জ্বর আসলেও আগে এমন পাগলামি করতো বেড ছেড়ে নামতে দিতনা একদম এখনো তাই শুরু করেছে পাগলটা।তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

-ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসার সাথে সাথে পাগলটা কোলে তুলে নিলো।জানি ওকে বলেও কোনো কাজ হবেনা তাই চুপ করে থাকলাম।বেডের কাছে যেয়ে নামিয়ে দিল পাগলটা।

-চুপচাপ বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি এখনি।

-হুম।

-খাবার এনে ওর পাশে বসলাম। দেখি হা করো তো।

-কোনো কথা না বলে হা করলাম। ও খাইয়ে দিচ্ছে আমায় আর আমি চুপচাপ খাচ্ছি।পাঁচ বছর পর ওর হাতে খাবার খাচ্ছি চোখে পানি এসে গেছে আমার।অনেক কষ্টে চোখের পানিটা আটকে রাখলাম আমি। কিছু অনুভূতি মুখে বলে প্রকাশ করা যায়না। আমাদের অনুভূতি গুলো হারিয়ে যায়নি ঢাকা পড়েছিল কিছু অভিমানের আড়ালে।

-এই বউ কি এত ভাবো হুম? খাবার শেষ হয়ে গেছে অথচ তুমি এখনো হা করছো। আবার কি খাবার আনবো খুদা কি খুব বেশি লাগছে আজ আমার বউ পাখিটার।

-রোহানের কথায় হুস ফিরলো আমার। না না আমার পেট ভরে গেছে আর খাবনা।

-আচ্ছা বউ তাহলে তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কেমন?

-হঠাৎ খেয়াল হল রোহান আমায় বউ বলল। অনেক দিন পর বউ শুনলাম ওর মুখে। হালকা হেসে বললাম যাও ফ্রেশ হয়ে নাও অফিসে যাবেতো আবার।

-হুম বউ যাব বলে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে প্লেট গুলো সরিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

-ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রুহি উঠে গেছে। আরে মামনি তুমি উঠে গেছ।

-হ্যাঁ বাবাই আমি স্কুলে যাবতো।

-না মামনি আজ তোমার স্কুল আর আমার অফিস ছুটি আজ শুধু আমরা মজা করবো।

-ইয়ে সত্যি বাবাই রুহি আনন্দে রোহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।

-বাবা মেয়ের কাজ দেখে চোখে পানি এসে গেল আমার।তারপর বললাম স্কুল যাবেনা মানে রোহান তুমি যেন একদম আদর দিয়ে বাদর বানাবে না ওকে।

-আমার মেয়ে তো প্রিন্সেস বাদর কেন হবে। আচ্ছা মামনি তুমি বসো তোমার আম্মুকে আমি মেডিসিন দিয়ে আসি।

-আচ্ছা বাবাই।

-মেডিসিন গুলো অনন্যাকে খাইয়ে রুহিকে ও ফ্রেশ করে খাইয়ে দিলাম।তারপর বসে পড়লাম তিনজন আড্ডা দিতে।

-রোহানের কথা শুনে রুহি হেসে গড়িয়ে পড়ছে আর আমি বাবা মেয়ের কাজ দেখে হাসছি। চোখে আজ আনন্দের অস্রু আমার।অনেক বছর পর আমার বুকের খা খা টা কমলো আজ। এটাই তো চেয়েছিলাম আমি।আজ যেন আমার সব চাওয়া পূরন হওয়ার দিন মনে মনে কথা গুলো ভাবলো অনন্যা।
.
.
.
.
.
Continue….

হরিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৩

0

হরিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৩
#আরিশা অনু
-অনু কোথায় রোহান….?

-জ্বী ও উপরে আছে আমার সাথে আসুন……

-তারপর শাহেলা জামান রুহিকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন রোহানের পিছে পিছে….

-কিছুক্ষণের মধ্যে রোহানের রুমে এসে পৌঁছালো ওরা…

-মেয়েকে এ অবস্থায় দেখে কেঁদে ফেললেন মিসেস শাহেলা জামান…

-রুহি ততক্ষনে নানুর কোল ছেড়ে নেমে পড়েছে।দৌঁড়ে যেয়ে বেডের উপর উঠে ডাকতে লাগলো অনন্যাকে….

-অনন্যার মুখে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো রুহি আম্মু আম্মু দেখো আমি আসছি তাকাও ও আম্মু তুমি কথা বলনা কেন?আমি আর দুষ্টুমি করবোনা তোমার সব কথা শুনবো আম্মু তাকাও না আমার দিকে, নানু তুমি বলনা আম্মুকে আমার সাথে কথা বলতে রুহি এতক্ষণ কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলল….

-রুহির কান্না দেখে শাহেলা জামান ও রোহান দুজনেই কেঁদে ফেললো…

-রুহির ডাকে অনন্যা উঠছেনা দেখে একপর্যায়ে মেয়েটা অনন্যার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগল আর আম্মু আম্মু করতে লাগল….

-শাহেলা জামান এটা দেখে নিরবে কফোঁটা চোখের জল ফেলল…

-রুহিকে শান্ত করতে চোখের জল মুছে রোহান এগিয়ে গেল বেডের দিকে…

-বেডের এক সাইডে বসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রোহান জিজ্ঞেস করলো আমার ছোট্ট মা টার নাম কি শুনি…..?

-অনন্যার বুকে মাথা রেখেই বলল “অরিএীকা রুহি”…….!!!

-নামটা শুনেই বুকের ভেতটা কেঁপে উঠল রোহানের।অস্পষ্ট ভাবে একবার নামটা উচ্চারণ করলো রোহান অরিএীকা রুহি…..

-ভাবতে ভাবতে রোহান অতীতে ডুব দিল…….
.
.
.
-রোহান শুননা এদিকে এসে দু দন্ড আমার পাশে বসো তো সারাদিন খালি কাজ আর কাজ তোমার। কথাগুলো এতক্ষণ অনন্যা রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল….

-যথা আজ্ঞা মহারিনী বলুন এই মহাশয় আপনার কি সেবা করতে পারে…

-হইছে ঢং থামাও এবার সারাদিন খালি এগুলো তোমার….

-আচ্ছা ঠিক আছে এবার বলতো এত জরুরি তলব কেন কি হয়েছে….?

-আচ্ছা আমাদের বাবুর নাম কি রাখবো সেটা ভেবে দেখেছো কখনো…..?

-উহু নাতো ভাবা হয়নি কিন্তু বাবুতো…..

-রোহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই বললাম জানি এখনো তো বাবু হয়নি, আরে হয়নি তো কি হয়েছে হবে তো একদিন..

-শুনো আমি ঠিক করছি যদি মেয়ে বাবু হয় তোমার নামের সাথে মিলায়ে বাবুর নাম রাখব…

-তো মহারিনী কি নাম রাখবা শুনি…..

-রোহান এর র আর হ দিয়ে নাম ঠিক করছি আমি হু হু…

-র আর হ মানে সেটা আবার কেমন নাম…..?

-আরে বুদ্ধু রোহানের রয়ের নিচে উ কার দিলে হয় রু আর হয়ের আকার কেটে দিয়ে ই কার দিলে হি। তাহলে দুইটা এক করলে কি দাঁড়ালো রুহি আমাদের মেয়ের নিক নেম হবে রুহি এবার বুঝলে তো বুদ্ধু……

-ওরে বাপরে এতকিছু ভেবে ফেলেছো তুমি……

-হু তুমি তো সারাদিন অফিস আর কাজ ছাড়া কিছু বুঝ না তাই আমায় ভাবতে হয় স্যার…..

-আচ্ছা এতকিছু যখন ভেবে ফেলেছো তখন বাবু আসার ব্যবস্থা টা ও করে ফেলি বলে অনন্যা দিকে এগোতে শুরু করলাম…
.
.
.
-এই নামটা তো আমি আর অনন্যা মিলে ঠিক করেছিলাম। যখন আমাদের মেয়ে বাবু হবে তখন এই নামটা রাখবো বলে….

-হঠাৎ বাচ্চাটার কথায় অতীতের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসলাম…..

-আপনাল(আপনার) নাম কি রোহানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো রুহি….

-হালকা হেসে বললাম রোহান।আমার নামের সাথে তোমার নামের কিন্তু অনেক মিল খেয়াল করেছো সেটা…..?

-হুমমমম তাইতো….

-হ্যাঁ মামনি চলতো আমরা এখন ডিনার করে নি তারপর অনেক গল্প করবো কেমন…..?

-না আমি আম্মুকে ছেড়ে কোথাও যাবনা আমি আম্মুর হাতে ছাড়া খাবোনা খাবোনা….

-আচ্ছা মামনি তুমি চাওনা তোমার আম্মু ঘুমথেকে তাড়াড়াড়ি উঠে যাক…?

-হু তাইতো(চাইতো)……

-তাহলে তো তোমায় এখন খাবার খেতে হবে আর ঘুমাতে ও হবে।আর যদি তুমি এগুলে না করো তোমার আম্মু আর ঘুম থেকে উঠবেনা বলেছে আমায়….

-আমি খাবাল(খাবার) খেলে সত্যি আম্মু ঘুমথেকে উঠবে তো ভালো আঙ্কেল….?

-রুহির মুখে আঙ্কেল শুনে রোহানের চোখে পানি এসে গেল আবার।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আঙ্কেল না মা তুমি আমায় বাবাই বলে ডাকবা কেমন আর তোমার আম্মু অবশ্যই উঠবে

-আচ্ছা বাবাই…

-রুহি আর রোহানের কথা শুনে শাহেলা জামানের চোখে জল এসে গেল…

-আচ্ছা মামনি চল এখন আমরা খেয়ে নি কেমন…

-ঠিক আছে বাবাই চলো….

-তারপর রুহিকে কোলে নিয়ে রোহান নিচে চলে গেল আর শাহেলা জামান কে ও খাবার খেতে ডেকে গেলেন…

-জানিস অনন্যা তোর এত বছরের আশা আজ পূরন হয়ছে রে মা কিন্তু তোর ভাগ্য দেখ তুই এখন ঘুমিয়ে আছিস দেখতেই পেলিনা বাবা মেয়ের ভালোবাসা।আচ্ছা তুই ঘুমা সোনা মা আমি নিচে যেয়ে দুচোখ ভরে দেখি বাবা মেয়ে কি করছে তারপর তোর ঘুম ভাঙলে সব বলবো তোকে কেমন সোনামা।অনেক বছর শান্তিতে ঘুমাসনা আজ একটু ঘুমিয়ে নে।এতক্ষণ অনন্যার পাশে বসে একা একা কথাগুলো বলছিলেন শাহেলা জামান। তারপর অনন্যার কপালে চুমু দিয়ে উঠে নিচের দিকে এগিয়ে গেলেন মিসেস শাহেলা জামান…….!!!

-রুহিকে কোলে বসিয়ে কিছুটা ভাত মেখে রুহির মুখের সামনে ধরে বললাম দেখি মামনি হা করতো….

-এইতো লক্ষি মামনি আমার খাবার টা খেয়ে নাও তারপর অনেক গল্প শোনাবো তোমায় কেমন…

-আচ্ছা বাবাই…. তুমি কখন খাবা দেখি হা কলো তো তোমায় ও খাইয়ে দি। কিছুটা ভাত মুখের সামনে ধরে কথাটা বলল রুহি…..

-রুহির খাইয়ে দেওয়া দেখে চোখে পানি এসে গেলো রোহানের তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে খাবারটা মুখে নিয়ে বলল বাহ্ আমার মামনির হাতের খাবার তো অনেক মজার……

-আসলে আজ প্রথম বারের মত রোহান ফিল করলো বাবা হওয়ার সুখ টা, প্রথম বার কারো মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার সুখ যে কত মধুর তা আজ রোহান বুঝতে পারছে…..

– সময়টা যেন আজ রোহানের কাছে অনেক মধুর হয়ে উঠেছে। হোকনা সুখটা খনস্থায়ি তারপর ও তো কিছু সময়ের জন্য সব দুঃখ থেকে দূরে থাকতে পারছে এটাই বা কম কিসে।এত বছর হাজার কষ্টের পর যে এতটুকু সুখের মুখ দেখতে পেয়েছে এটাই বা কম কিসে….

-সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে নিরবে চোখের জল ফেলছে মিসেস শাহেলা জামান।এই মুহুর্ত গুলো যদি তার মেয়ে এখন দুচোখ ভরে দেখতে পেত তাহলে এতবছর ধরে ওর বুকের ভেতর জ্বলা হাহাকার টা কিছুটা হলেও কমতো। কিন্তু আফসোস আমার মেয়েটা সেটাও দেখতে পেলনা….

-বাবা মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে অপর দিকে মেয়ে ও বাবাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে অপূর্ব এক দৃশ্য। আজ বহু বছর পর মেয়ে তার বাবাকে খুঁজে পেয়ে যেন খুশিতে আত্মহারা। অপরদিকে বছরের পর বছর যন্ত্রনার আগুনে পুড়তে থাকা এক বাবার কলিজায় ও যেন শান্তির পরশ খুঁজে পেলো আজ।হোকনা সেটা অজানাই তারপর ও তো দুজনের মনের আশা কিছুটা হলেও পূরন হল।বাবা মেয়ে খাওয়া শেষ করে এবার রোহান রুহিকে নিয়ে শোবার ঘরে এগোলো আর শাহেলা জামানকে খেয়ে ঘুমাতে বলে গেল……
.
.
.
.
.
Continue….
।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)