হরিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৩

0
2184

হরিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৩
#আরিশা অনু
-অনু কোথায় রোহান….?

-জ্বী ও উপরে আছে আমার সাথে আসুন……

-তারপর শাহেলা জামান রুহিকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন রোহানের পিছে পিছে….

-কিছুক্ষণের মধ্যে রোহানের রুমে এসে পৌঁছালো ওরা…

-মেয়েকে এ অবস্থায় দেখে কেঁদে ফেললেন মিসেস শাহেলা জামান…

-রুহি ততক্ষনে নানুর কোল ছেড়ে নেমে পড়েছে।দৌঁড়ে যেয়ে বেডের উপর উঠে ডাকতে লাগলো অনন্যাকে….

-অনন্যার মুখে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো রুহি আম্মু আম্মু দেখো আমি আসছি তাকাও ও আম্মু তুমি কথা বলনা কেন?আমি আর দুষ্টুমি করবোনা তোমার সব কথা শুনবো আম্মু তাকাও না আমার দিকে, নানু তুমি বলনা আম্মুকে আমার সাথে কথা বলতে রুহি এতক্ষণ কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলল….

-রুহির কান্না দেখে শাহেলা জামান ও রোহান দুজনেই কেঁদে ফেললো…

-রুহির ডাকে অনন্যা উঠছেনা দেখে একপর্যায়ে মেয়েটা অনন্যার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগল আর আম্মু আম্মু করতে লাগল….

-শাহেলা জামান এটা দেখে নিরবে কফোঁটা চোখের জল ফেলল…

-রুহিকে শান্ত করতে চোখের জল মুছে রোহান এগিয়ে গেল বেডের দিকে…

-বেডের এক সাইডে বসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রোহান জিজ্ঞেস করলো আমার ছোট্ট মা টার নাম কি শুনি…..?

-অনন্যার বুকে মাথা রেখেই বলল “অরিএীকা রুহি”…….!!!

-নামটা শুনেই বুকের ভেতটা কেঁপে উঠল রোহানের।অস্পষ্ট ভাবে একবার নামটা উচ্চারণ করলো রোহান অরিএীকা রুহি…..

-ভাবতে ভাবতে রোহান অতীতে ডুব দিল…….
.
.
.
-রোহান শুননা এদিকে এসে দু দন্ড আমার পাশে বসো তো সারাদিন খালি কাজ আর কাজ তোমার। কথাগুলো এতক্ষণ অনন্যা রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল….

-যথা আজ্ঞা মহারিনী বলুন এই মহাশয় আপনার কি সেবা করতে পারে…

-হইছে ঢং থামাও এবার সারাদিন খালি এগুলো তোমার….

-আচ্ছা ঠিক আছে এবার বলতো এত জরুরি তলব কেন কি হয়েছে….?

-আচ্ছা আমাদের বাবুর নাম কি রাখবো সেটা ভেবে দেখেছো কখনো…..?

-উহু নাতো ভাবা হয়নি কিন্তু বাবুতো…..

-রোহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই বললাম জানি এখনো তো বাবু হয়নি, আরে হয়নি তো কি হয়েছে হবে তো একদিন..

-শুনো আমি ঠিক করছি যদি মেয়ে বাবু হয় তোমার নামের সাথে মিলায়ে বাবুর নাম রাখব…

-তো মহারিনী কি নাম রাখবা শুনি…..

-রোহান এর র আর হ দিয়ে নাম ঠিক করছি আমি হু হু…

-র আর হ মানে সেটা আবার কেমন নাম…..?

-আরে বুদ্ধু রোহানের রয়ের নিচে উ কার দিলে হয় রু আর হয়ের আকার কেটে দিয়ে ই কার দিলে হি। তাহলে দুইটা এক করলে কি দাঁড়ালো রুহি আমাদের মেয়ের নিক নেম হবে রুহি এবার বুঝলে তো বুদ্ধু……

-ওরে বাপরে এতকিছু ভেবে ফেলেছো তুমি……

-হু তুমি তো সারাদিন অফিস আর কাজ ছাড়া কিছু বুঝ না তাই আমায় ভাবতে হয় স্যার…..

-আচ্ছা এতকিছু যখন ভেবে ফেলেছো তখন বাবু আসার ব্যবস্থা টা ও করে ফেলি বলে অনন্যা দিকে এগোতে শুরু করলাম…
.
.
.
-এই নামটা তো আমি আর অনন্যা মিলে ঠিক করেছিলাম। যখন আমাদের মেয়ে বাবু হবে তখন এই নামটা রাখবো বলে….

-হঠাৎ বাচ্চাটার কথায় অতীতের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসলাম…..

-আপনাল(আপনার) নাম কি রোহানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো রুহি….

-হালকা হেসে বললাম রোহান।আমার নামের সাথে তোমার নামের কিন্তু অনেক মিল খেয়াল করেছো সেটা…..?

-হুমমমম তাইতো….

-হ্যাঁ মামনি চলতো আমরা এখন ডিনার করে নি তারপর অনেক গল্প করবো কেমন…..?

-না আমি আম্মুকে ছেড়ে কোথাও যাবনা আমি আম্মুর হাতে ছাড়া খাবোনা খাবোনা….

-আচ্ছা মামনি তুমি চাওনা তোমার আম্মু ঘুমথেকে তাড়াড়াড়ি উঠে যাক…?

-হু তাইতো(চাইতো)……

-তাহলে তো তোমায় এখন খাবার খেতে হবে আর ঘুমাতে ও হবে।আর যদি তুমি এগুলে না করো তোমার আম্মু আর ঘুম থেকে উঠবেনা বলেছে আমায়….

-আমি খাবাল(খাবার) খেলে সত্যি আম্মু ঘুমথেকে উঠবে তো ভালো আঙ্কেল….?

-রুহির মুখে আঙ্কেল শুনে রোহানের চোখে পানি এসে গেল আবার।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আঙ্কেল না মা তুমি আমায় বাবাই বলে ডাকবা কেমন আর তোমার আম্মু অবশ্যই উঠবে

-আচ্ছা বাবাই…

-রুহি আর রোহানের কথা শুনে শাহেলা জামানের চোখে জল এসে গেল…

-আচ্ছা মামনি চল এখন আমরা খেয়ে নি কেমন…

-ঠিক আছে বাবাই চলো….

-তারপর রুহিকে কোলে নিয়ে রোহান নিচে চলে গেল আর শাহেলা জামান কে ও খাবার খেতে ডেকে গেলেন…

-জানিস অনন্যা তোর এত বছরের আশা আজ পূরন হয়ছে রে মা কিন্তু তোর ভাগ্য দেখ তুই এখন ঘুমিয়ে আছিস দেখতেই পেলিনা বাবা মেয়ের ভালোবাসা।আচ্ছা তুই ঘুমা সোনা মা আমি নিচে যেয়ে দুচোখ ভরে দেখি বাবা মেয়ে কি করছে তারপর তোর ঘুম ভাঙলে সব বলবো তোকে কেমন সোনামা।অনেক বছর শান্তিতে ঘুমাসনা আজ একটু ঘুমিয়ে নে।এতক্ষণ অনন্যার পাশে বসে একা একা কথাগুলো বলছিলেন শাহেলা জামান। তারপর অনন্যার কপালে চুমু দিয়ে উঠে নিচের দিকে এগিয়ে গেলেন মিসেস শাহেলা জামান…….!!!

-রুহিকে কোলে বসিয়ে কিছুটা ভাত মেখে রুহির মুখের সামনে ধরে বললাম দেখি মামনি হা করতো….

-এইতো লক্ষি মামনি আমার খাবার টা খেয়ে নাও তারপর অনেক গল্প শোনাবো তোমায় কেমন…

-আচ্ছা বাবাই…. তুমি কখন খাবা দেখি হা কলো তো তোমায় ও খাইয়ে দি। কিছুটা ভাত মুখের সামনে ধরে কথাটা বলল রুহি…..

-রুহির খাইয়ে দেওয়া দেখে চোখে পানি এসে গেলো রোহানের তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে খাবারটা মুখে নিয়ে বলল বাহ্ আমার মামনির হাতের খাবার তো অনেক মজার……

-আসলে আজ প্রথম বারের মত রোহান ফিল করলো বাবা হওয়ার সুখ টা, প্রথম বার কারো মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার সুখ যে কত মধুর তা আজ রোহান বুঝতে পারছে…..

– সময়টা যেন আজ রোহানের কাছে অনেক মধুর হয়ে উঠেছে। হোকনা সুখটা খনস্থায়ি তারপর ও তো কিছু সময়ের জন্য সব দুঃখ থেকে দূরে থাকতে পারছে এটাই বা কম কিসে।এত বছর হাজার কষ্টের পর যে এতটুকু সুখের মুখ দেখতে পেয়েছে এটাই বা কম কিসে….

-সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে নিরবে চোখের জল ফেলছে মিসেস শাহেলা জামান।এই মুহুর্ত গুলো যদি তার মেয়ে এখন দুচোখ ভরে দেখতে পেত তাহলে এতবছর ধরে ওর বুকের ভেতর জ্বলা হাহাকার টা কিছুটা হলেও কমতো। কিন্তু আফসোস আমার মেয়েটা সেটাও দেখতে পেলনা….

-বাবা মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে অপর দিকে মেয়ে ও বাবাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে অপূর্ব এক দৃশ্য। আজ বহু বছর পর মেয়ে তার বাবাকে খুঁজে পেয়ে যেন খুশিতে আত্মহারা। অপরদিকে বছরের পর বছর যন্ত্রনার আগুনে পুড়তে থাকা এক বাবার কলিজায় ও যেন শান্তির পরশ খুঁজে পেলো আজ।হোকনা সেটা অজানাই তারপর ও তো দুজনের মনের আশা কিছুটা হলেও পূরন হল।বাবা মেয়ে খাওয়া শেষ করে এবার রোহান রুহিকে নিয়ে শোবার ঘরে এগোলো আর শাহেলা জামানকে খেয়ে ঘুমাতে বলে গেল……
.
.
.
.
.
Continue….
।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে