হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৪
#আরিশা অনু
“””স্যার আসবো বলতেই উনি হাত দিয়ে ভেতরে যেতে ইশারা করলেন।পেছন ফিরে ফোনে কথা বলছে তাই মুখটা দেখতে পেলাম না….!!!
“””অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে আমার। বুকের ভিতর টাই যেন কাল বৈশাখি ঝড় উঠেছে।
“””আগে যখন রোহান আমার আশে পাশে থাকতো তখন এমন অনুভব হতো।এতবছর ওর থেকে দূরে থেকে অনুভূতি গুলো ও কেমন যেন মরে গিয়েছিল।কিন্ত আজ আবার হঠাৎ এমন কেন মনে হচ্ছে যে ও আমার আশে পাশে আছে?
“””কিছু বুঝতে পারছি না তবে কি রোহান আবার ফিরে আসলো?মাথার ভেতর টা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আমার।
“””আর এই লোকটার কথাবলা কখন শেষ হবে কে যানে? এমনিতেই অসস্থি হচ্ছে আমার তারপর কতখন দাঁড় করিয়ে রাখবে কে যানে..?
“””তার উপর আজ আসতে ও লেট হয়ে গেছে না যানি কি কি শুনতে হবে এখন আমার….!!
“””তুমি এখানে… অস্পষ্ট স্বরে কেউ যেন কথাটা বলে উঠলো….?
“””এতখন দাঁড়িয়ে উপরের কথা গুলো ভাবছিল অনন্যা হঠাৎ কারো কথা শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে গেল সে…!!!
“””মুখদিয়ে কোনো কথা ই যেনো বের হচ্ছে না দুজনের।
“””কতগুলো বছর পর রোহান কে দেখছি। এভাবে হুট করে যে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।অনেক শুকিয়ে গেছে ও।একটু ও যে নিজের খেয়াল রাখেনা তা ওকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।
“””অভিমানে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নোনা জল পড়ে চলেছে।ও জলভরা চোখে এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর দৃষ্টির মাঝে আমি হাজার হাজার অভিযোগ,অনুযোগ দেখতে পাচ্ছি বাট মুখদিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পাচ্ছি না।শুধু নিরবে দৃষ্টি দিয়ে যেনো দুজন দুজনার মনের সব কথা পড়ে ফেলছি। (অনন্যা)
.
.
.
.
“””এত বছর পর দেশে এসে অনন্যা কে যে এভাবে দেখতে পাবো বুঝতেই পারিনি।
“””মেয়েটা যে একটু ও নিজের খেয়াল রাখেনা তা ওকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।অনেক শুকিয়ে গেছে খাওয়া দাওয়া যে একদম করেনা মনে হচ্ছে। চোখের নিচে ও কালি পড়েছে।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।দেখে মনে হচ্ছে কাল রাতে ও ঠিক মত ঘুমায় নি মেয়েটা।ওর দু চোখ বার বার বলছে কেনো রোহান কেনো এভাবে আমায় দূরে সরিয়ে দিলে।চোখে চোখে হাজার টা কথা বলে ফেলছি দুজন কিন্ত মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হচ্ছেনা।উফ্ ওর চোখের জল আমি কেনো সহ্য করতে পারিনা।অসহ্য লাগছে ওকে এভাবে দেখতে।কাঁদছে ও আর আমার ভিতর টা গুড়িয়ে যাচ্ছে।
“””হঠাৎ ওর করা প্রতারনার কথা মনে হতেই মাথা গরম হয়ে গেল।কিন্তু ও এখানে কেন?তারমানে কি ও আমার নতুন পি.এ?যদি তাই হয় তাহলে ওর জীবন টা হেল করে ছাড়বো আমি।রোহান খান কে ঠকানোর চরম মুল্য দিতে হবে তোমায় অনন্যা। সেদিন হয়তে ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্ত আজ কিছুতেই ছাড়বোনা আমি…..!!!
“””তারপর সব চিন্তা বাদ দিয়ে কথা বলা শুরু করলাম ওর সাথে।(রোহান)
“””হেটে যেয়ে চেয়ারে বসলাম তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললাম মিস অনন্যা আপনি এখন বসতে পারেন।
“””বাই দি ওয়ে এখন কয়টা বাজে..?(রোহান)
“””কোনো রকম দুচোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে উওর দিলাম ৯:১০…!!!(অনন্যা)
“””অফিস টাইম কয়টাই শুরু আপনি জানেন না..?নাকি বয়ফ্রেন্ড দের টাইম দিতে দিতে অফিস টাইম কয়টা থেকে সেটা ভুলে গেছেন (রোহান)
“”” প্রথমত আমার পারসোনাল ম্যাটারে নাক গলানোর কোনো অধিকার আপনার নাই।আর দ্বিতীয়ত লেট হওয়ার জন্য স্যরি…!!!(অনন্যা)
“””প্রথম দিন থেকেই স্যরি না জানি বাকি দিনগুলো কি করবেন।যাই হোক আপনি নিশ্চয় যানেন যে আমার নিউ পি.এ আপনি…?(রোহান)
“””নাহ্ যানতাম না আর আগে যানলে আপনার সামনে অন্তত কখনো আসতাম না।যাই হোক কাল এসে আমি আমার রেজিগনেশন লেটার টা দিয়ে যাব।(অনন্যা)
“””মিস অনন্যা আপনি জবে জয়েন করার আগে সব পেপার পড়ে সাইন করেছিলেন? নাকি না দেখেই সাইন করে দিয়েছিলেন? যাই হোক আপনার অবগতির জন্য আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি এই অফিসের প্রত্যেক টা স্টাফ আগামি ছয় মাসের আগে জব ছাড়তে পারবে না।যারা জবে আছে তারা প্রত্যেকে কন্টাক্ট পেপারে সাইন করে তারপর জবে জয়েন করেছে।আপনি চাইলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন সবার কাছে।আর যারা ছয় মাসের আগে জব ছেড়ে দেবে তারা আগে অফিসের একাউন্ট আগে দশ লাখ টাকা জমা দিয়ে জব ছেড়ে দিতে পারে সেক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নাই।
“””এতখন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললাম অনন্যা কে।আড় চোখে একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বেচারির মুখটা শুকিয়ে গেছে আমার কথা শুনে।আমি জানি ও এতগুলো টাকা কখনো ম্যানেজ করতে পারবে না। ভাজ্ঞিস কন্টাক্ট পেপারে সাইন করিয়েছিলাম নয়তো ওকে আটকাতে পারতাম না।(রোহান)
“””উফ্ এটা কোন গেড়াকলে পড়লাম আমি আগে ভাবছিলাম অন্তত ছয়টা মাস জব যাওয়ার কোনো ভয় থাকবে না এটা ভেবে কন্টাক্ট পেপারে সাইন করেছিলাম কিন্ত আগে যদি যানতাম এটা রোহানের অফিস তাহলে মরে গেলেও এখানে জব করতাম না।(অনন্যা)
“””কি হল মিস অনন্যা আপনি কি সারাদিন ধরে এখানে বসে ভাববেন বলে ঠিক করেছেন?
“””আমার এখনি আন্সার চাই আপনার মত বসে বসে খেলে আমার চলে না।কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিল তারপর ও বললাম।(রোহান)
“””রোহানের এমন রুড বিহেভ এ আমার চোখে পানি এসে গেছে তারপর ও খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকে বললাম….
“””প্রথমত আমি মিস নই মিসেস অনন্যা,আর দ্বিতীয়ত আমি জবটা করবো। আসা করছি আপনি আপনার আন্সার পেয়ে গেছেন…!!(অনন্যা)
“””কিছু না বলে মুচকি হাসলাম শুধু। আমি জানতাম যে ও জবটা ছাড়বে না।তারপর নিপাকে ফোন দিয়ে কেবিনে আসতে বললাম…!!
(রোহান)
“””স্যার আসবো…..?(নিপা)
“””এসো নিপা ….!!!
“””মিস অনন্যা কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে ওনার কেবিন টা দেখিয়ে দাও….(রোহান)
“””জ্বি স্যার দিচ্ছি।আসুন ম্যাম…(নিপা)
“””আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে নিপার সাথে চলে আসলাম…আসার আগে একবার রোহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমি যে ফাইলটা নিয়ে এসছিলাম সেটা দেখছে ও….
“””ম্যাম ও রিসভ(নিপা)
“””হ্যালো ম্যাম (রিসভ)
“””মাথা নাড়িয়ে হাই বললাম।তারপর বললাম দেখুন আমায় প্লিজ ম্যাম বললেন না। অনন্যা বলে ডাকবেন সবাই।আমরা সবাই এখানে বন্ধুর মত সুতরাং আমি চাইনা কেউ আমায় আলাদা চোখে দেখুক।(অনন্যা)
“””কিন্ত ম্যাম এটা কি করে হয়। আর আপনি তো আমাদের সিনিয়র…..!!!(নিপা)
“””আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা ম্যাম বলা যাবেনা ব্যাস।(অনন্যা)
“””অনন্যার পাগলামি দেখে সবাই হেসে দিল আর ওর ব্যবহারে মুগ্ধ ও হল সবাই।ও এত সহযে সবাইকে আপন করে নেবে সেটা কেউ ভাবতেও পারিনি…!!!
“””তারপর সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিজের কেবিনে চলে আসলাম।ছয়মাস এই কেবিন টাই থাকতে হবে আমায়।রোহানের হাজার কটু কথা সইতে হবে।না যানি আরো কত যন্ত্রনার সম্মুখীন হতে হবে আমায়……!!!
.
.
.
.
Continue………