হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৭
#আরিশা অনু
–বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেল।খুব ক্লান্ত লাগছে তাই রুহিকে ফ্রেশ করে দিয়ে আমি ও ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর বেডে গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো চোখে…..
–মাগরিবের আজান কানে আশাই ঘুম ভেঙে গেল আমার।তাই বেড ছেড়ে উঠে পড়লাম।ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম তারপর রুহিকে পড়তে বসালাম।অনেকদিন পর মনটা আজ ফুরফুরে লাগছে।হঠাৎ রোহানের কথা মনে পড়ে গেল আরে আমার ফোনটা তো সাইলেন্ট করা এখনো। আমার একটুও খেয়াল নেই ফোনের কথা কে জানে রোহান আবার ফোন দিল কি না।রুহিকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে আমি রুমে আসলাম..
–রুমে এসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম।ফোন চেক করে দেখি রোহান ৪০+ ফোন দিয়েছে আমার মাথায় এবার বাঁচ পড়ল। না জানি কাল কোন শনি অপেক্ষা করছে আমার জন্য আবার।ভয়ে ভয়ে রোহানকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হওয়ার পর ও রিসিভ করলো….
–আসসালামু আলাইকুম।স্যার আমি অনন্যা বলছি। স্যরি স্যার আমার ফোনটা কখন সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি।প্লিজ স্যার এবারের মত আমায় ক্ষমা করে দিন।আর কখনো এমন ভুল করবোনা কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামল অনন্যা…..
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।মিসেস অনন্যা প্রথমত আমার চোখ আছে আপনি যখন ফোন দেন আপনার নাম টা আমার ফোনের স্কিনে স্পষ্ট ভাবে ভেষে ওঠে তাই ফালতু সময় নষ্ট করে আপনার নাম বলা লাগবে না।আর দ্বিতীয়ত আপনার কাছে আমি কোনো ব্যাখ্যা শুনতে চাইনি যে এত পক পক করছেন।যাই হোক কাল সকাল আটটার মাঝে আপনাকে আমার বাসায় দেখতে চাই কথাটা বলেই ঠাঁস করে ফোনটা কেটে দিল রোহান।তারপর কিছু সময়ের জন্য ফোনটা অফ করে দিল কারন ও জানে এত দ্রুত আসতে বলাই অনন্যা আবার ফোন দেবে ওকে তাই ফোনটা অফ করে রাখলো…..
–আরে সকাল আটটাই মানে কি এত সকালে কি করে যাব আমি। আর রুহিকে স্কুল এ নামিয়ে তারপর না আমি যাব। আজব তো আরে এ ফোনটা ও অফ করে দিয়েছে শয়তান লোক একটা। বিড় বিড় করে রোহান কে গালি দিতে দিতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো অনন্যা….
–সকালে ফজরের আজানে ঘুম ভাঙল অনন্যার। উঠে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামায আদাই করে নিলাম।কিছুক্ষণ পরে কিচেনে যেয়ে ভাত চাপালাম কারন আজ দ্রুত ওবাড়িতে যেতে হবে।লেট হলে রোহান আবার লংকা কান্ড বাধিয়ে দেবে সাথে তৃধা কূটনি তো আছেই।তৃধার কথা মনে পড়তেই বুকচিরে বেরিয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস। দ্রুত রান্না শেষ করলাম ততক্ষণে আম্মু ও কিচেনে চলে এসেছে…..
–কিরে মা আজ এত দ্রুত রান্না শেষ করলি সকাল করে বের হবি নাকি আজ আম্মু আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল….
–হ্যাঁ আম্মু আজ সাত টার সময় বেরোনো লাগবে কাল যাইনি বলে আজ দ্রুত যেতে বলেছে……
–তো আমায় আগে বলবিনা এটা তাহলে আমি সকাল করে উঠে রান্না টা করে রাখতাম….
–ঠিক আছে আম্মু সমস্যা না আমার চিন্তা হচ্ছে রুহিকে নিয়ে।মেয়েটাকে আজ স্কুল এ কে দিয়ে আসবে তাই ভাবছি….
–আমি আছি কি করতে তুই একদম চিন্তা করিস না আমি ওকে স্কুল এ দিয়ে আসবো তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে….
–উফ্ আম্মু বাঁচালে আমায় আমি তো রাত থেকে টেনশনে আছি এটা নিয়ে….
–পাগলি মেয়ে আমার যা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আয় আমি খাবার দিচ্ছি….
–ঠিক আছে আম্মু বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল অনন্যা….
–ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম রোহানের বাসার উদ্দেশ্যে।কি জানি আজ আবার কোন শনি আছে আমার কপালে।প্রতিদিন তো কোনো না কোনো অঘটন লেগেই থাকে আজ আবার কি হতে চলেছে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে অনন্যার….
–একদম সকাল হওয়ায় আসতে কোনো সমস্যা হয়নি আজ কারন এত সকালে জ্যামের কোনো ভয় থাকেনা। অন্যদিন যেখানে ৩০-৪০ মিনিট লেগে যাই আজ সেখানে ২০মিনিটে চলে এসেছে অনন্যা।আর সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া ও যেন চারপাশটা আরও স্নিগ্ধা করে তুলেছে আজ।সাথে মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলেছে বেশ লাগছে পরিবেশটা অনন্যার আজ।তারপর সব ভাবনা চিন্তা কে একপাশে ফেলে রেখে এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে অনন্যা….
–দরজার সামনে যেয়ে কলিংবেল দিতে দেরি হলেও ওপাস থেকে রোহানের দরজা খুলতে এক সেকেন্ড ও দেরি হলনা।মনে হল ও যেন আগে থেকেই অনন্যার জন্য দরজার অপাশে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।অনন্যা কিছুটা অবাক হলেও বুঝতে দিলনা রোহান কে সেটা।তারপর রোহানকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
–স্যার আজ এত তাড়াতাড়ি আসতে বললেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি কথাটা বলে থামলো অনন্যা…..
–অনন্যার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে রোহান বললো এতকথা শোনার সময় নাই। সন্ধায় মামা-মামি আসবে কানাডা থেকে তাই পুরো বাড়ি সন্ধার আগে আমার পরিষ্কার চাই।কোনো কিছু যেন এদিক ওদিক না দেখি আমি। আর হ্যাঁ এখন বাসার সব কাজের লোক ছুটিতে আছে সুতরাং সব কাজ তুমি একা করবা।কোনো কিছু যেন কমতি না থাকে। আর রান্নাটা ও করে রাখবা সন্ধার আগে ওরা এসে খাবে এখানে।আর যতদিন ওরা এখানে থাকবে ওদের সব দায়িত্ব কিন্তু তোমার উপরে।সুতরাং কোনো রকম কমপ্লেইন যেন না শুনি আমি।একটানা কথাগুলো বলে সোজা উপরে চলে গেল রোহান আর এদিকে অনন্যা সব শুনে হা করে দাঁড়িয়ে রইলো বোকার মত….
–সারা বাড়িতে কম করে হলেও পাঁচটা রুম সাথে বারান্দা, কিচেন, ড্রয়িং, ছাদ এসব আমি একা হাতে কখন গোছাবো মাথার তার কি সব এক সাথে কেটে গেছে এর।আজ কেন কাল সারাদিন গোছালে ও তো শেষ হবেনা তার উপর রান্না না যানি কত রকমের করা লাগবে আজ….
–উফ্ এখন ইচ্ছা করছে হারামিটাকে ধরে গরম পানিতে চুবাই।শয়তান,এনাকন্ডা,অক্টোপাস, কান লম্বা হাতি একটা মনে মনে এক ঝুড়ি গালি দিতে দিতে সিঁড়ি বেয়ে এগোলাম ঝাড়ু হাতে উপরের দিকে…..
–টানা তিন ঘন্টা ধরে সব রুম পরিষ্কার করলাম এবার সব মোছার পালা।অলরেডি আমার মাজার বারোটা বেজে গেছে।তারপর সব রুম গুলো মুছে বের হতে হতে প্রায় তিনটা বেজে গেছে এদিকে আমার সারা গা ব্যাথায় অবস্থা খারাপ….
–আর গা হাত পায়ের যে অবস্থা তাতে গোছল না করলে ও তো উপায় নাই। কিন্তু সাথে তো কোনো ড্রেস ও নিয়ে আশিনি আমি কি করি এখন শাওয়ার নিয়ে পরবো টা কি একা একা কথা গুলো বলে চলেছে অনন্যা….
–অফিসে বসে বসে অনন্যার কান্ড দেখছে আর হেসে মরছে রোহান।বেচারি আমার সাথে গেম খেলার ঠেলা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে তুমি।রুম পরিষ্কার করা তো শেষ এবার রান্নার পালা বাট ওভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছে ও হুম একটা ফোন করে দেখি তারপর রোহান ফোন দিল অনন্যাকে…..
–অনন্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল কি করা যায় তখনি রোহানের ফোন আসলো।খচ্চর, বদমাশ ব্যাটা এতক্ষণ ধরে গরু খাটুনি খাটিয়ে এখন আবার ফোন দিয়ে আলগা পিরিত দেখানো হচ্ছে তাইনা।রাগে গজ গজ করতে করতে ফোন রিসিভ করলো অনন্যা…
–কি করছো কাজ সব শেষ হয়ে গেছে তো হাতে কিন্তু সময় নাই বেশি কথাগুলো বলে থামলো রোহান….
–না আপনার জন্য কিছু বাকি রেখেছি বাসায় এসে বাকি কাজটা করে নিন ঝাঁঝালো কন্ঠে উওর দিল অনন্যা….
–রোহানের এখন প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে তারপর ও হাসি চেপে রেখে বললো মিসেস অনন্যা আপনি কি ভুলে গেছেন কার সাথে কথা বলছেন..?যাই হোক কাজ শেষ হলে শাওয়ার নিয়ে রান্না করতে যাবেন দ্রুত। আর হ্যাঁ আপনার ড্রেস আমার আলমারির ভেতরে ডান সাইডে রাখা আছে ওখান থেকে নিয়ে তারপর শাওয়ারে যাবেন কথাগুলো একটানা বলে অনন্যাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল রোহান….
.
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)