Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1075



বসন্তের আগমনে পর্ব-১৪

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৪

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার নাকের ডগায় আঙুল ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আমি গিয়ে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে একটু গল্প করি।নাহলে আবার আমাকে বউ পাগল ভাবতে পারে।”

আরহানের কথা শুনে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহান মুচকি হেসে ঈশার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।




হিয়া পানির গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো,

“একটা কাজও তোমরা ঠিক মতো করতে পারো নাহ্।বিয়ের পরে খবর নিয়ে আসছো।বিয়েটা হওয়ার কোথায় ছিলে!”

“ম্যাডাম আমরা তো বুঝতেই পারিনি আরহান স্যারের বিয়ে কার সাথে ঠিক হয়েছে।যার কারণে ঝামেলা হয়ে গেছে।”

হিয়া চিৎকার করে বললো,

“গেট আউট।”

লোকগুলো আর কোনো কথা না বলে হিয়ার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।হিয়া রাগে কাঁপছে।রাগের কারণে ড্রেসিং টেবিলে থাকা সব জিনিসপত্র নিচে ছুড়ে মারলো।

||🌸||

আরহান আর আরিশা মাসুমা বেগমের সাথে বসে বসে গল্প করছে।ঈশা একটা লাল শাড়ি পড়ে হালকা সেজে তাদের সামনে আসলো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরহান মনে মনে বললো,

“কপাল করে বউ পেয়েছি।মাশাআল্লাহ!”

আরিশা আরহানের মুখের সামনে তুড়ি মেরে বললো,

“কি রে ভাইয়া’ ভাবিকে দেখে কোথায় হারিয়ে গেলি!”

আরিশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।আরহান মুচকি হেসে মাসুমা বেগমকে বললো,

“আন্টি ঈশা তো রেডি হয়ে গেছে।আমরা তাহলে এখন আসি।”

মাসুমা বেগম মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।আরহান ঈশা আর আরিশাকে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।বাড়িতে এসে দেখলো আয়েশা বেগম সোফায় বসে আছেন।ঈশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“শ্বাশুমা তোমার ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো।আমি তো ভেবেছিলাম নাম্বার ওয়ান অভদ্র।”

আয়েশা বেগম ঈশার কপালে চুমু দিয়ে বললো,

“মা তুই এসেছিস!আমি কত চিন্তা করতে ছিলাম।”

আরিশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আরে আম্মু এতো চিন্তা করে লাভ নাই।ভাইয়া তো ঈশা আপু থুক্কু ভাবির প্রেমে আগে দিয়েই হাবুডুবু খাচ্ছে।জাস্ট আমরা জানতাম নাহ্।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কি রে তুই এইসব কোথা থেকে শুনলি?”

“আমি আড়ি পেতে ছিলাম।”

আরহান আরিশার কান টেনে বললো,

“ছুটকি তুই কিন্তু বেশি চালাক হয়ে গেছিস।”

“আউ ভাইয়া লাগছে তো!”

ঈশা আরহানকে বললো,

“মি.অভদ্র আমার ননদকে ছেড়ে দিন।একদম ওর গায়ে হাত দিবেন নাহ্।”

আরহান আরিশার কান ছেড়ে বললো,

“বাহ্ তোমাকেও পটিয়ে ফেলছে।ছুটকি তোর এলেম আছে বলতে হবে!”

আরিশা কান ডলতে ডলতে বললো,

“দেখতে হবে না বোনটি কার!”

আরিশার কথায় সবাই হেসে দিলো।আয়েশা বেগম সবাইকে থামিয়ে বললো,

“অনেক হাসাহাসি হয়েছে।এখন অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমাতে যাও।”

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“কিন্তু আম্মু ভাইয়া আর ভাবির বাসর ঘর তো সাজানো হয়নি!”

আরিশার কথায় আরহান কেঁশে দিলো।কোনো মতে কাঁশি থামিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো।

আরহানের যাওয়া দেখে আয়েশা বেগম আর আরিশা হেসে দিলো।ঈশা মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে।আরিশা ঈশার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“থাক ভাবি এতো লজ্জা পেতে হবে নাহ্।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ওদের জন্য আমি আর রুবি মিলে বাসর ঘর সাজিয়ে রেখেছি।তুই গিয়ে ঈশাকে ওর রুমে দিয়ে আয়।”

আরিশা আর ঈশা দুজনেই আয়েশা বেগমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“ইতিহাসে প্রথমবার কোনো শ্বাশুড়ি মা তার ছেলের বাসর ঘর সাজিয়েছে।”

আয়েশা বেগম আরিশার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,

“এতো কথা না বলে ঈশাকে গিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়।মেয়েটার সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।”

আরহান তার রুমে এসে চমকে গেলো।সম্পূর্ণ রুম ফুল দিয়ে সাজানো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কে করলো এইসব?”

আরিশা ঈশাকে নিয়ে এসে বললো,

“কে আবার করবে!আমাদের মা জননী আর রুবি খালা করেছে।”

আরহান পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিশা ঈশাকে নিয়ে তার রুমে এসেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“কি বলছিস তুই?”

“আমি ঠিকই বলতেছি।মা আর রুবি খালাই সবটা করেছে।এখন বেশি কথা না বলে বাসর কর।আমি গেলাম।”

আরিশা কথাটা বলেই দৌড় দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“মেয়েটা কি যে বাদর হয়েছে!”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঈশা তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান ঈশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে বললো,

“ঈশা তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।আসলে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভুল।আমি তোমাকে মেনে নেয়নি।আর তোমাদের বাড়িতে বসে যা বলেছি সম্পূর্ণটা মিথ্যা ছিলো।তোমাকে এই বাড়িতে এনে অপমান করবো বলে ওইসব বলেছি!”

আরহানের কথায় ঈশা অবাক হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“মি.অভদ্র তুমি কি আমার সাথে মজা করছো!”

“আরে মজা কেনো করবো?আমি যা বলছি ঠিক বলছি।সো তুমি মাটিতে বিছানা করে শুয়ে পড়ো আর আমি বিছানায় শুবো।”

কথাটা বলে আরহান তার গায়ে থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে একটা গেঞ্জি পড়ে নিলো।ঈশা তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হয় সে জেনো আকাশ থেকে পড়েছে।ঈশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আরহান অনেকক্ষণ ধরে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু শেষমেশ না পেড়ে জোরে হেসে দিলো।আরহানকে হাসতে দেখে ঈশা চমকে উঠলো।আরহান হাসি থামিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপরে ঈশার চোখ মুছে গিয়ে বললো,

“পাগলি নাকি!এটুকু বিষয়ে কেউ কেঁদে দেয়।আমি তো তোমার সাথে মজা করতেছিলাম।আর আমি তো ভেবেছিলাম মিসেস.বকবকানি একদম ধানিলঙ্কা।কিন্তু না এ তো দেখি নেতিয়ে যাওয়া বরবটি!”

আরহানের কথা শুনে ঈশা চোখ রাঙিয়ে তাকালো।ঈশা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

“এইসব নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্ মি.আরহান।মানুষের ইমোশনাল নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্।”

আরহান মনে মনে বললো,

“ইশ বেশি কষ্ট পেয়েছে মনে হয়!এখন কি করবো?”

আরহান কিছু না বলে ঈশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।ঈশা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও আরহানের শক্তির সাথে পেড়ে উঠলো নাহ্।আরহান ঈশার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

“সরি ঈশু।আর এমন করবো নাহ্!”

ঈশা কিছু বলছে নাহ্।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে কানের হাত দিয়ে বললো,

“সরি।আর হবে না এমন।এখন তো কানে হাত দিয়েছে।এখন একটু হাসো।”

আরহানের বাচ্চামো দেখে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহানের মুখেও হাসি ফুটলো।ঈশা হাসি থামিয়ে বললো,

“সেই অ্যাটিটিউড ওয়ালা মি.অভদ্র আর এই মি.অভদ্র’র মধ্যে কত পার্থক্য!”

আরহান ঈশার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

“এইসব তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে।তুমিই আমাকে নতুন করে হাসতে শিখিয়েছো।#বসন্তের_আগমনে 💛🌸তুমি আমার জীবনে বসন্ত নিয়ে এসেছো।”

আরহানের কথাগুলো শুনে ঈশা মুচকি হেসে আরহানকে জড়িয়ে ধরলো।আরহানও ঈশার মাথায় একটা চুমু দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ পরে আরহান ঈশাকে ছেড়ে বললো,

“দেখে বেঁচে থাকলে বাসর পড়েও করা যাবে।আজকে আমরা গল্প করেই না’হয় রাতটা কাটিয়ে দিবো।এইদিনটা স্বরণীয় করে রাখতে চাই।”

আরহানের কথা শুনে ঈশা মুচকি হেসে বললো,

“আসলেই তুমি অনেক ভালো।আমার এমন একটা মানুষেরই প্রয়োজন ছিলো।”

“আমারও তোমার মতো একটা ঈশু বকবকানির প্রয়োজন ছিলো।”

“এই একদম আমাকে বকবকানি বলবে নাহ্।”

“তাহলে তুমিও আমাকে মি.অভদ্র বলবে নাহ্।”

“আমি তো বলবোই।”

“তাহলে আমিও বলবো।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।আরহান ঈশাকে কোলে তুলে বললো,

“আজকে আমরা চন্দ্রস্নান করবো!”

“আরে এতো রাতে?”

“তো কি হয়েছে!”

ঈশা আর কিছু বললো নাহ্।কারণ সে এতোদিনে এটা বুঝে গেছে আরহান কারো কথা শোনার পাত্র নাহ।

আরহান ঈশাকে কোলে করে তার রুমের বেলকনিতে থাকা ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি দিয়ে ছাদে গেলো।ঈশাকে দোলনায় বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ঈশা আরহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“আরহান তোমার এমন কঠোর হয়ে যাওয়ার কারণ কি ছিলো?

আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

“আমার বাবা আর ভাইয়ার মৃত্যু।আমার বড় ভাই আফিনের বউ হিয়া।হিয়া আমার সাথে পড়তো।মেয়েটা অনেক খারাপ ছিলো।চরিত্রের কথা আর না বলি।আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না এরপরে রাগে ও আমার ভাইয়ার সাথে রিলেশনে যায় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলে।ভাইয়া যখন হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসে তখন বাবা ওদের মেনে নিতে চায় না।বাবা অনেক চিৎকার চেচামেচি করে হার্ট অ্যাটাক করেন।কারণ বাবা জানতো হিয়া ভালো ছিলো না।কারণ হিয়ার বাবার সাথে বাবার পরিচয় ছিলো।উনিই বাবাকে সবটা বলতেন।এরপরে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।বাবাকে অনেক বুঝানো হয়।তারপরে বাবা স্বাভাবিক হন।আরেক দিকে হিয়া তো আমাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতে শুরু করে।যার কারণে আমি বিদেশে চলে যাই।আমি যখন বিদেশ ছিলাম সেই সময়ই আলভি হয়।কিন্তু কয়েকদিন পরে জানতে পারি হিয়া অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।আর ভাইয়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।এই খবর যেদিন পাই সেদিনই আমি দেশের উদ্দেশ্য রওনা দেই।কিন্তু দেশে পৌঁছানোর আগেই জানতে পারি ভাইয়া সুইসাইড করেছে।আর ভাইয়ার এইসব সহ্য করতে না পেড়ে বাবা দ্বিতীয় বারের মতো হার্ট অ্যাটাক করেছেন।তাকে আর বাঁচানো যায়নি।একদিনেই আমি আমার বাবা আর ভাইয়া হারাই।যার কারণেই আমি এতোটা পাথর হয়ে গেছিলাম।অনেক কেস করে আলভিকে আমাদের কাছে রাখতে পেরেছি।”

আরহানের চোখ ছলছল করছে।ঈশা আরহানের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আরহান এইসব ভেবে আর কষ্ট পেয়ে নাহ্ প্লিজ।”

আরহান মুচকি হেসে বললো,

“চেষ্টা করবো।”

#চলবে………………

বসন্তের আগমনে পর্ব-১৩

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান বাড়িতে এসে সোফায় বসে বসে কি জানি ভাবছে!আয়েশা বেগম এসে আরহানের পাশে বসে বললো,

“কি এতো ভাবছিস তুই আরহান?”

“সবকিছুতে কেমন জানি খটকা লাগছে আম্মু।আচ্ছা আম্মু তোমরা কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”

আয়েশা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“কি আবার লুকাবো তোর থেকে!”

“না কিছু নাহ্।”

আরহান আর কিছু না বলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।আয়েশা বেগম আরহানের গালের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।দেখলো আরহানের গালে হালকা হলুদ লেগে আছে।আয়েশা বেগম মৃদু হাসলেন।আয়েশা বেগম মনে মনে বললেন,

“যাক আমার আর চিন্তা নেই।”

সন্ধ্যাবেলা,

আরিশা আলভিকে নিয়ে নেচে নেমে দেখলো আয়েশা বেগম বসে আছেন।আরিশা আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু ভাইয়া কই?”

আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে আরহান বললো,

“এই তো আমি।”

আরিশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান দাঁড়িয়ে আছে।আরহানকে দেখে আরিশা অবাক হয়ে বললো,

“বাহ্ ভাইয়া তো দেখছি পাঞ্জাবি পড়েছে।”

“হুম মিস.বকবকানির বিয়ে।এতো রিকুয়েষ্ট করলো পাঞ্জাবি না পড়লে হয়!”

আয়েশা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা এখন চলো তাহলে।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“হ্যাঁ চলো।”

আয়েশা বেগম আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আরহান আজকে তুই ড্রাইভ করবি নাহ্।”

“কেনো আম্মু?”

“আমি বললাম তাই।আজকে ড্রাইভার ড্রাইভ করে আমাদের নিয়ে যাবে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণের মধ্যে আরহানরা ঈশাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলো।আরহান গাড়ি থেকে নামতেই সারা বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।এইসব দেখে আরহান বেশ অবাক হলো।আরহান আস্তে করে আরিশাকে জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা আমি আমরা আসার পরে সবাই বর এসেছে,বর এসেছে বলছে কেনো?”

“তুই বর বলেই তো সবাই বর এসেছে বলছে।”

আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“হোয়াট?কি বলছিস তুই এইসব?”

“যা শুনেছিস তাই বলেছি।এখন বেশি কথা না বলে চল।”

আরিশা আরহানকে জোর করে নিয়ে গিয়ে কাজির পাশে বসালো।আরহান কিছু বলতে গেলে আয়েশা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আরহান রাগে ফুসছে।রাগের কারণে হাত মুথো করে বসে।আরহান মনে মনে বললো,

“এরা নাহলে আমার সাথে এমন করলো।কিন্তু ঈশা?ও তো আমাকে জানাতে পারতো!”

আরহান আর ঈশার বিয়ে হয়ে গেলো।বিয়ে শেষ হতেই আরহান বসা থেকে উঠে সোজা গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসলো।আরহানের কান্ডে সবাই অবাক হয়ে গেলো।সবচেয়ে বেশি অবাক হলো ঈশা।ঈশা মনে মনে বললো,

“কি হলো?উনি এভাবে উঠে চলে গেলেন কেনো!”

ঈশার মুখের চিন্তার ছাপ দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“মা চিন্তা করো না।ওর একটু কাজ আছে তো তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেছে।”

“না আন্টি আর মিথ্যা বলবেন নাহ্ প্লিজ।আপনারা কিছু একটা লুকিয়েছেন।আমাকে সত্যিটা বলুন।”

আয়েশা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।ঈশা আয়েশা বেগমের হাত ধরে বললো,

“প্লিজ বলুন আন্টি।”

“আরহান এই বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানতো নাহ্।আমরা তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আরহান সবটা জানে।আসলে আরহান বিয়ে করতে চায় না।তাই এভাবে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিলো নাহ্।”

ঈশা অবাক হয়ে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়েশা বেগম ঈশার হাত শক্ত করে ধরে বললো,

“আমাকে মাফ করে দিয়ো মা!”

ঈশা মৃদু হেসে বললো,

“কি বলেন এইসব আন্টি!আমি আপনার বিষয়টা বুঝতে পারতেছি।একবার যখন বিয়েটা হয়ে গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই।যা কপালে আছে তাই হবে ”

ঈশা কথাটা বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো।




আরহান তার রুমে এসে চুপচাপ বসে আছে।রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।আরহান বুঝতে পারলো কারা এসেছে!

আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো রুবি খালা দরজা খুলে দিয়েছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা দাঁড়িয়ে আছে।আলভি আরিশার কোলে।তবে ঈশা না দেখে আরহান কিছুটা অবাক হলো।আরহান আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতে।”

আয়েশা বেগম আরহানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“দেখ বাবা ঈশা মেয়েটা অনেক ভালো।আলভিকে কত ভালোবাসে!ও তোর জন্য একদম পারফেক্ট।আর ওর কোনো দোষ নেই।”

আয়েশা বেগমকে থামিয়ে আরহান বললো,

“থাক আম্মু উনার নামে আর সাফাই গাওয়া লাগবে নাহ্।উনি তো জানতো বিয়ের কথাটা।উনি আমাকে জানাতে পারতো তো!”

“ঈশা ভাবির কোনো দোষ নেই ভাইয়া।”

আরিশার কথা শুনে আরহান আরিশার দিকে তাকালো।

“কি বললি তুই?বিয়ে হতে না হতেই ভাবি বানিয়ে ফেললি!”

“ভাবিকে তো ভাবিই ডাকবো।আর ভাবির সত্যিই দোষ নেই।আমরা বলেছিলাম তুই এই বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানতি।আর তুই এই বিয়েতে রাজি।তার কারণেই ঈশা ভাবি রাজি হয়েছে।আর সেদিন ভাবির যখন সন্দেহ হয়েছে তখন আমি বলেছিলাম তুই ভাবির সাথে মজা করতেছিস।তাই ভাবিও বললো তাহলে আমিও মজা করে যাই।”

“তার মানে আসল কালপিট তুই?”

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“ও আম্মু দেখো তোমার ছেলে কি বলে!এর জন্যই কারো ভালো করতে নেই।”

“থাক তোর এতো ভালো করতে হবে নাহ্।তা তোমাদের গুণবতী বউমা কই?”

“ঈশা ভাবি আসেনি?”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“তুই না আনতে গেলে ঈশা আসবে নাহ্।”

আরহান বিরক্তি নিয়ে বললো,

“বাহ্ সব যখন তোমরাই করলে তা উনাকে নিয়েও তো আসতে পারতে!”

“ভাবি না আসলে আমরা কিভাবে আনবো?”

“আচ্ছা ছুটকি তুই গিয়ে আলভিকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়।আমি গাড়ি বের করতেছি।বিয়ের পরে বউ যদি শ্বশুরবাড়ি না আসে তাহলে এটা আমাদের বাড়িই বদনাম।সো আমি আর তুই উনাকে আনতে যাবো!”

আরহানের কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশার মুখে হাসি ফুটলো।আরিশা দৌড় দিয়ে আলভিকে রুমে নিয়ে গেলো।আলভিকে রেখে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“চল ভাইয়া।”

“তুই তো মনে হচ্ছে স্পিডবোট হয়ে গেছিস!”

“তুই ভাবিকে আনতে যাবি শুনে আমি স্পিডবোটই হয়ে গেছি।”

আরহান আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো।আরিশা আরহানের পাশে বসে বললো,

“দেখেশুনে গাড়ি চালাবি।”

“তোর এতো জ্ঞান দিতে হবে না।”

আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।ঈশাদের বাড়িতে কলিংবেল বাজাইতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।ঈশা আরহানকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।আরহান যে আসবে সে কখনো ভাবেনি।আরিশা পিছন থেকে বললো,

“হাই ভাবি!”

ঈশা আরিশার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“দরজাতেই দাঁড়া করিয়ে রাখবেন নাকি ভিতরে যেতেও বলবেন!”

ঈশা জিহ্বায় কামড় দিয়ে দরজা থেকে সরে গিয়ে বললো,

“ভিতরে আসুন।”

আরহান আর আরিশা ভিতরে গিয়ে বসলো।মাসুমা বেগম বললো,

“তোমরা দুজন এতো রাতে?”

আরহান বললো,

“বিয়ের দিন নতুন বউ বাড়িতে না গেলে তো আর ভালো দেখায় না।সেই জন্যই আমরা ঈশাকে নিতে আসলাম।”

হাফিজ সাহেব বললেন,

“বাবা বিয়ের সময় তুমি অনেক রেগে গিয়েছিলে না?”

“আঙ্কেল আগের কথা বাদ দিন।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“মেক-আপ তো দেখছি সব উঠিয়ে ফেলেছেন।যান গিয়ে রেডি হয়ে আসুন।বাড়িতে যেতে হবে তো।নতুন বউ এভাবে গেলে কেমন দেখায়!”

ঈশা কিছু না বলে মুখ ভেঙচি দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আরহান মাসুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আন্টি আমার একটু ঈশার সাথে কথা আছে।আমি কি একটু উনার রুমে যেতে পারি?”

“হ্যাঁ বাবা।যাবে না কেনো?ও তো তোমার বিয়ে করা বউ।”

আরহান কিছু না বলে মুচকি হেসে ঈশার রুমে গেলো।ঈশার রুমের দরজায় নক করতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।আরহানকে দেখে ঈশা বললো,

“আপনি এখানে?”

“আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”

“ভিতরে আসুন।”

ঈশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজছে আরহান ঈশার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।

“আপনি নাকি কি যেন বলবেন!”

ঈশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।

“হ্যাঁ বলবো তো!”

আরহান এটুকু বলে ঈশাকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আরহান এহেন কাজে ঈশা চমকে গেলো।তার হাত থেকে ঝুমকো জোড়া পড়ে গেলো।ঈশা বললো,

“কি করছেন আপনি?”

আরহান চুপ করে ঈশার চুলে নাক গুঁজে আছে।আরহান কিছুক্ষণ পড়ে ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আমি আসলে অনেক আগেই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।সেটা আমি আগে বুঝিনি তবে আপনার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনার পরে থেকে আমার কেমন জানি লাগতো।আর এই দুই-তিন দিন তো শুধু আপনার কথাই মাথায় ঘুরতো।”

“যদি ভালোবেসে ফেলেন তাহলে আজকে ওভাবে বিয়ে শেষ হতে উঠে চলে গেলেন কেনো?”

“দেখুন আরে না দেখো!নিজের বিয়ে করা বউকে কি কারণে আপনি বলবো এখন থেকে তুমি করেই বলবো।আসলে আমি তো কিছু জানতাম না।সবটা হুট করে হয়েছে।তাই রিয়েক্ট করে ফেলছি।বিশেষ করে তুমি সবটা জেনেও আমাকে বলোনি এতে আরো রাগ হয়েছিলো।কিন্তু আম্মু আমাকে সবটা জানিয়েছে।তারপরেই রাগ কন্ট্রোল হয়েছে।”

ঈশা আরহানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমার সাথে রাগ দেখালে খবর আছে মি.অভদ্র।”

আরহান মুচকি হেসে ঈশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ওকে মিস উপ্স মিসেস.বকবকানি।”

দুজনে একসাথে হেসে দিলো।

#চলবে…………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১২

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান কিছু একটা ভেবে বললো,

“কিন্তু আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।”

“আরে ভাইয়া ছেলেদের পাঞ্জাবিতে বেশি সুন্দর লাগে।আর তুই পাঞ্জাবি পড়তে চাস নাহ্!”

“আমাকে ওতো সুন্দর লাগতে হবে নাহ্।”

আরিশা আয়েশা বেগমের কানে কানে বিড়বিড় করে বললো,

“আম্মু আমরা বললে কাজ হবে না।ঈশা আপুকে দিয়েই বলাতে হবে।”

আয়েশা বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

পরেরদিন সকালে,

ঈশা ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।চোখ ডলতে ডলতে মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো আরিশার কল।ঈশা কলটা রিসিভ করলো।

“হ্যাঁ আরিশা বলো।”

“আপু তুমি একটু ভাইয়াকে রাজি করাতে পারবে পাঞ্জাবি পড়তে বিয়েতে!”

“আমি রাজি করাবো কেনো?”

“ও তো পাঞ্জাবি পড়তেই চায় না।ইনফেক্ট কখনো পড়েও নাহ্।আর আমাদের কথা তো শুনবেই না।তুমি একটু রাজি করাও।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“যেখানে ওরা দুজন রাজি করাতে ব্যর্থ আমি সেখানে কিভাবে রাজি করাবো!”

ঈশা চুপ করে থাকায় আরিশা বললো,

“আপু তুমি কি শুনতে পারতেছো।”

“হ্যাঁ আরিশা আমি শুনতে পারতেছি।ওকে আমি চেষ্টা করবো।তুমি খালি মি.কাস্টার্ডের নাম্বারটা আমাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দেও।কারণ উনার নাম্বার আমার কাছে নেই।”

“ওকে।”

আরিশা কলটা কেটে দিলো।ঈশা ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।ঈশা ওয়াশরুম থেকে এসে দেখলো আরিশা আরহান নাম্বার ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে।ঈশা সাত-পাঁচ না ভেবে আরহানকে কল করলো।

আরহান ফ্রেশ হয়ে এসে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার।প্রথমে রিসিভ করতে না চেয়েও কি মনে করে রিসিভ করলো!

মোবাইল রিসিট করতেই ঈশা বলে উঠলো,

“এতো টাইম লাগে কল ধরতে।”

ভয়েস শুনতে আরহানের বুঝতে বাকি নেই যে ঈশা কল করেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আমাকে কি মনে করে কল করলেন!”

“কারণ তো আছেই কল করার।”

“কারণটাই তো জানতে চাচ্ছি।”

আপনি নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বেন না শুনলাম!”

“আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।আর বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়তে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি?”

ঈশা মনে মনে বললো,

“বর নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বে নাহ্।হায়রে দুনিয়া!”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“আপনার পাঞ্জাবি পড়তেই হবে।বিকজ আমি চয়েজ করে দিয়েছি।আমি কিন্তু কখনো কোনো কিছু নিয়ে আপনাকে জোর করিনি।সো আমার এই কথাটা রাখতেই হবে।”

আরহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঈশা কলটা কেটে ফেললো।আরহান মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো,

“আরে আমাকে তো কিছু বলতেই দিলো নাহ্।”

আরহান বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে নিচে গেলো।আরহান নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আলভিকে নিয়ে খেলছে।

“ওই তোকে কে বলেছিলো ঈশাকে জানাতে যে আমি পাঞ্জাবি পড়বো নাহ্।”

“আগে এটা বল তোকে কে বললো যে আমি ঈশা আপুকে জানিয়েছি।”

“তোকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি।”

“তা বলবো নাহ্ কেনো?ঈশা আপু এতো শখ করে তোর জন্য পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিলো আর তুই পড়বি নাহ্!এটা কি ভালো দেখায় নাকি!”

“তোকে সবকিছু কে দেখতে বলছে?”

“আমার মন চায় তাই দেখি।”

আরহান আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে বাড়ি দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।আয়েশা বেগম আরিশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ব্রেকফাস্ট না করেই চলে গেলো।এতো রাগ যে কোথা থেকে আসে!”

“আম্মু ওর কথা বাদ দেও।কালকে যে বিয়ে ওটা নিয়ে ভাবো।”

“আরে বিয়ে তো ওর’ই।”

“কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই-না আম্মু!যার বিয়ে তার হুঁশ নাই,আর পাড়াপড়শির ঘুম নাই।তবে এখানে পাড়াপড়শির জায়গায় মা-বোন হবে।”

আরিশার কথায় আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।আয়েশা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন,

“একে একমাত্র ঈশা’ই ঠিক করতে পারবে।”

“হ্যাঁ আম্মু ঠিক বলছো।”

আলভি আরিশার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

“আসলেই দিদুন থুমি টিক বলছু।”

আলভির কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশা একসাথে হেসে দিলো।




বিয়ের দিন সকালে,

“আম্মু আমি ঈশা আপুর হলুদে যাচ্ছি।”

“ঈশার হলুদে না হয়ে গেলি কিন্তু আরহানের হলুুদ কিভাবে করবো!”

“আম্মু ভাইয়াকে আমাদের সাথে নিয়ে চলো।কোনো না কোনো ভাবে ওর গালে হলুদ ঠিকই লাগিয়ে দিবো।”

“আরহানকে নিয়ে গেলে ঈশা যদি সন্দেহ করে?”

“আরে আম্মু শোনো ঈশা আপু আমাকে বলছে ভাইয়া তো বিয়ের কথা তার সামনে বলে না তাই সে নিজেও বিয়ের কথা ভাইয়ার সামনে বলে না।আমি আবার আগবাড়িয়ে বলে দিছি ‘ভাইয়া তোমার সাথে মজা করতেছে আপু।’তখন আপু বললো ‘ওকে আমিও তাহলে মজাটা চালিয়ে যাই।'”

“কি যে হবে আল্লাহ জানে।আরহান তো কিছুই জানে না আর ঈশাও সবটা জানে নাহ্।আমার সব মিলিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।”

“আম্মু তুমি রিলাক্সে থাকো আমি ভাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছি।আর হলুদ লাগিয়েই বাড়িতে আনবো।”

আরিশা আরহানের রুমে গিয়ে দেখলো আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে গিটার বাজাচ্ছে।

“ভাইয়া চলো।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কোথায় যাবো আমি?”

“ঈশা আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে।”

“আমি হলুদে যাবো না।আমি একেবারে বিয়েতে যাবো নে।তুই বরং আলভিকে নিয়ে যা।”

“তোকে তো যেতেই হবে ভাইয়া।”

আরিশা জোর করে আরহানকে নিয়ে গেলো।আরহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো,

“তোর জন্য ভালো একটা শার্ট-প্যান্টও পড়তে পারলাম নাহ্।এই টি-শার্ট আর জিন্স পড়েই চলে এসেছি।”

“আরে ওতো ভালো ড্রেস পড়তে হবে নাহ্।আমার ভাই তো এমনিই মাশাআল্লাহ।”

আরিশার কথায় আরহান জোরে হেসে দিলো।আরহান হাসি থামিয়ে বললো,

“পাম দিচ্ছিস?”

“আরে না তুই ঈশা আপুকে যেটা বলেছিলি আমিও তোকে সেটা বললাম।”

আরহান আর কিছু না বলে মৃদু হাসলো।আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ঈশার হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাদের বাড়ির বাগানে।আরহান গাড়ি থামাতেই আরিশা নেমে দৌড় দিলো।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেলো।আরহানকে দেখে সবাই মুচকি হাসছে আর একে অপরের সাথে কথা বলছে।যা দেখে আরহানের অনেক অশস্তি লাগছে।

“এই ছুটকির জন্য আমার এই অবস্থা।এমন অবস্থায় এসেছি দেখে সবাই হয়তো হাসাহাসি করছে।”

আরহান গিয়ে ঈশাকে যেখানে বসানো হয়েছে সেখানে দাঁড়ালো।ঈশাকে দেখে আরহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হলুদ রঙের শাড়ি,ফুলের গহনায় ঈশাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আরহান ঈশার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে নাহ্।আজকে প্রথম বার আরহান ঈশার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে।

আরিশা এসে আরহানের হাতে একটা চিমটি দিলো।আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“আউচ!”

আরহান আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে আরিশার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“এটা তুই কি করলি?”

“ভাইয়া অন্যের বউয়ের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে নাকি!”

“আরে উনাকে সুন্দর লাগছে তাই তাকিয়ে ছিলাম।তাকিয়ে থাকলে কি হয়েছে?”

“তোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলে অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে।”

“ওকে তাকালাম নাহ্।”

ঈশা আরহানকে বললো,

“এই যে মি.কাস্টার্ড এদিকে আসুন।”

আরহান কিছু না বলে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

“ডাকলেন কেনো?”

“এতো কথা না বলে আমার পাশে এসে বসুন।”

“কেনো?”

“আহ্ একটু কম কথা বললে হয় নাহ্!”

আরহান আর কিছু না বলে একটা নিশ্বাস ফেলে ঈশার পাশে গিয়ে বসলো।

“এখন আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিন।”

“আমি এইসব পারবো নাহ্।”

“আমার হলুদে এসে আপনি আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন নাহ্।তাহলে কিভাবে হবে?হলুদ লাগিয়ে দিন বেশি কথা না বলে।”

আরহান আর কিছু না বলে খানিকটা হলুদ নিয়ে ঈশার গালে লাগিয়ে দিলো।ঈশা মুচকি হেসে বেশখানিকটা হলুদ নিয়ে আরহানের গালে লাগিয়ে দিলো।

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“এটা কি করলেন?”

“বা রে আমার হলুদে এসে আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন কিন্তু আপনার গায়ে হলুদ থাকবে না এটা কি করে হয়?”

“ডিসকাস্টিং!”

আরহান ঈশার পাশে থেকে উঠে চলে গেলো।আরহান একটা চেয়ারে বসে আছে।মাসুমা বেগম এসে আরহানের হাতে শরবত দিয়ে বললো,

“এটা খেয়ে নেও বাবা।”

আরহান গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“থ্যাঙ্কিউ আন্টি।”

মাসুমা বেগম মৃদু হেসে চলে গেলেন।আরহান বসে বসে শরবত খাচ্ছে তবে তার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে।

“আমার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে কেনো?না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান উঠে দাঁড়িয়ে আরিশার কাছে গেলো।

“ছুটকি তুই আলভিকে নিয়ে চলে আসিস।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

“ওকে ভাইয়া তুই চলে যা।এমনিও তোকে জোর করে আনার কারণ মিটে গেছে।”

“আমাকে জোর করে আনার কারণ কি?”

“কারণ হলো ঈশা আপু চেয়েছিলো তোকে হলুদ লাগাবে।তাই তার ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্যই তোকে জোর করে নিয়ে এসেছিলাম।”

আরহান আর কিছু না বলে চোখ রাঙিয়ে ঈশাদের বাড়ি থেকে চলে আসলো।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১১

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১১

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

ঈশা আর আরহান আরিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আরিশা বসে বসে কফি খাচ্ছিলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরিশা দেখলো আরহান ঈশাকে সময়ের আগেই নিয়ে আসছে।আরিশা বললো,

“যাক আমার ভাইয়ের এলেম আছে।”

আরহান আরিশার কথায় হাসি দিলো।ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“আরিশা তুমি হঠাৎ এই কথা বললে কেনো?”

আরিশা কিছু বলতে যাবে আরহান আরিশাকে থামিয়ে বললো,

“তুই চুপ থাক।আমি বলতেছি।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আসলে আরিশা আমাকে বলেছিল আপনাকে যেন দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসি।আর আমি যদি আপনাকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে ও আমাকে বীরপুরুষ মানবে।”

“ওহ্ তার মানে আপনি এই কারণেই বলেছেন আমাকে মেকআপ ছাড়া সুন্দর লাগে!”

“একদম ঠিক ধরেছেন।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“কি ভাবলাম আর কি হলো!”

ঈশা আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।মাসুমা বেগম এসে আরহানকে কফি দিলো।আরহান কফি খেয়ে আরিশা আর ঈশাকে নিয়ে রওয়ানা দিলো।আরিশা আলভিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসেছে।আরহান ড্রাইভ করছে আর ঈশা তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।আরহান বিষয়টা অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করে বললো,

“আচ্ছা আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

“ইচ্ছে করছে আপনাকে খুন করে ফেলতে।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“আপনার জন্য আমি মেকআপ করতে পারিনি।”

“আরে আমি বললাম তো আপনাকে মেকি ছাড়া সুন্দর লাগে।”

“ওটা তো মিথ্যা বলেছেন।”

“আরে না ওটা সত্যিই বলেছি।”

ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান গাড়ি নিয়ে শপিংমলের সামনে থামালো।তারপরে তারা শপিংমলের ভিতরে গেলো।ঈশা একটা লাল শাড়ি তার গায়ে জড়িয়ে আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এই শাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে?”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।তারপরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার চেয়ে বেটার হবে আপনি আরিশাকে জিজ্ঞেস করুন।কারণ আমি এইসব বুঝিনা।”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

হ্যাঁ আপনি তো বাচ্চা।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে কোলে নিয়ে এদিক-ওদিক হাঁটা শুরু করলো।হঠাৎ তার সামনে এসে হিয়া দাঁড়ালো।আরহান হিয়াকে দেখে বিরক্ত নিয়ে চলে যেতে গেলে হিয়া আরহানের হাত টেনে ধরলো।আরহান রাগের কারণে এক ঝটকা দিয়ে হিয়ার হাত ছাড়িয়ে ফেললো।তারপরে হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“আপনার সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার?”

“আমার সাহসটা বরাবরই একটু বেশি আরহান।”

“একদম চুপ করুন।পাব্লিক প্লেসে ফাজলামো করতে আসছে।”

আরহান কথাটা বলে চলে যেতে গেলে হিয়া পিছন থেকে বললো,

“কি তোমার বিয়ের শপিং করতে আসলে নাকি?”

হিয়ায় কথায় আরহান দাঁড়িয়ে পড়লো।অবাক হয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি বললেন আপনি?”

“যা শুনলে তাই তো বললাম।তোমার বিয়ের শপিং করতে আসছো নাকি?”

আরহান চোখ বন্ধ করে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো,

“উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দেন।আর নিজের কাজে মন দেয়।ডিসকাস্টিং!”

আরহান কথাটা বলে আলভিকে নিয়ে হেঁটে চলে গেলো।ঈশা আর আরিশা কেনাকাটা শেষ করে বসে আছে।আরহান এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।আরহান দেখলো ঈশার হাতে কতগুলা ব্যাগ আর আরিশার হাতে কতগুলো ব্যাগ!আরহান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“মেয়েরা এতো শপিং কিভাবে করে আল্লাহ জানে!আচ্ছা আলভির খুদা লেগেছে।আমরা লাঞ্চ করে একবারে বাড়িতে যাবো।আরহান আলভিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।পিছন থেকে আরিশা চিৎকার করে বললো,

” ভাইয়া তুই এমন কেনো!আমাদের হাতে গুলো ব্যাগ।আর তুই আমাদের রেখে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছিস!”

“তুই দেখতে পারছিস না আলভি আমার কোলে।”

“আলভি হা্ঁটতে পারে।তুই ও-কে নামিয়ে দিয়ে ব্যাগ নে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নামিয়ে দিলো।আরিশা আর ঈশার হাত থেকে কতগুলো ব্যাগ নিলো এক হাতে আরেক হাতে আলভিকে ধরে হা্ঁটা শুরু করলো।আরহানরা গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো।লাঞ্চ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আরহান বললো,

“কিভাবে যাবো!আগে কি ঈশাদের বাড়িতে যাবো নাকি আমাদের বাড়িতে?”

“ভাইয়া…ঈশা আপু আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে।আম্মু বলছে ঈশা আপুকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।সে দেখলো ঈশা আলভির সাথে খেলা করছে।আরহান বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে গাড়িতে উঠো তোমরা।”

আরহান গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে গেলো।আরহান বাড়িতে এসে সোজা তার রুমে চলে গেলো।আয়েশা বেগম ঈশাকে দেখে অনেক খুশি হলেন।

“আমার হবু বউমা এসেছে!”

আয়েশা বেগমের কথায় ঈশা হেসে দিলো।আরিশা পাশে থেকে বললো,

“আর আমার হবু ভাবি।”

আয়েশা বেগম,ঈশা আর আরিশা গল্প করতে বসলো।আলভি ঈশার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আরিশা বললো,

“ভাবি আলভিকে আমার কাছে দেও।ও-কে আমি রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি।”

“সমস্যা নেই তো আরিশা।ও আমার কোলেই ঘুমাক।আমার তো ভালো লাগতেছে।”

আরিশা আর কিছু বললো নাহ্।

সন্ধ্যাবেলা,

আরহান নিচে নামলো।আরহানকে নিচে নামতে দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“ভালোই হলো তুই নিচে নামলি।ঈশাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আয় তো।”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।আরহান ঈশাকে নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো।ঈশা গাড়ি থেকে নেমে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.কাস্টার্ড।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.বকবকানি।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“আমি মোটেও এতো বকবক করি না।”

“আপনি বকবক না করলে বকবক করে কে!”

“আপনার বউ বকবক করে।”

ঈশার কথা শুনে আরহান তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“থাক আপনাকে আর কিছু বলবো নাহ্।আফটার অল কালকের পরেরদিন আপনার বিয়ে।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“ইশ্!আমার মনে হয় একা বিয়ে।আর উনার কিছু নাহ্।”

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহান বললো,

“আপনি চুপ করেও থাকতে পারেন?”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

“আপনি আসলেই ভালো মানুষ নাহ্।”

“হ্যাঁ আমি জানি তো সেটা।”

ঈশা আর কিছু না বলে চলে যেতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলো।হঠাৎ পিছনে ঘুরে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“একটা কথা কি জানেন,অতি চালাকের গলায় দড়ি।”

“হ্যাঁ এটা নিশ্চিয়ই আপনি আপনার কথা বলছেন।”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“এটা আমি আপনাকে বলছি।”

“আমি তো কোনো চালাকি করিনি।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“একবারও বিয়ের কথা মুখ দিয়ে বলছেন না।উনি নাকি চালাকি করেনি!”

ঈশা হালকা কেঁশে বললো,

“আচ্ছা ভিতরে চলুন।”

“না একবার তো গিয়েছি আর যাবো নাহ্।আপনি যান।আর বকবক করে আন্টির মাথা নষ্ট করুন।”

ঈশা আর কিছু না বলে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো।আরহান মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসলো।

ঈশা বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আরহানকে বকছে।

“কি লোক রে বাবা!কেউ নিজের হবু বউয়ের সাথে এমন করে।আমাকে কিভাবে অপমান করে।আল্লাহ জানে বিয়ের পরে আমার কপালে কি আছে!”

ঈশা কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।




আরহান বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আছে।বারবার ঈশার কথাগুলো মনে পড়ে তার মুখে হাসি ফুটছে।

“আচ্ছা আমি ঈশার কথা এতো ভাবছি কেনো!না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।তারপরে তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আর আয়েশা বেগম বসে আছেন।

“ছুটকি আলভি কোথায় রে?”

“আলভি আমার রুমে ঘুমাচ্ছে।”

“ওহ্ আচ্ছা।ও কি খেয়েছে?”

“হ্যাঁ আমি খাইয়ে দিয়েছি।”

“আচ্ছা চলো তাহলে আমরা খেয়ে নেই।”

আরহান,আয়েশা বেগম আর আরিশা খেতে বসলো।আরিশা বললো,

“আম্মু ঈশা আপুর বিয়ের শাড়িটা অসাধারণ হয়েছে।আপুর পছন্দ অনেক সুন্দর।আর ভাইয়ার পাঞ্জাবিটাও অনেক সুন্দর হয়েছে।ঈশা আপুই পছন্দ করে দিয়েছে।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“ঈশা আমার পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছে?”

“হ্যাঁ দিতেই পারে।সমস্যা কি!”

“না কোনো সমস্যা নাই।”

#চলবে……………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১০

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১০

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

খাওয়া শেষ করে আরহান তার রুমে চলে আসলো।রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত সাড়ে এগারোটা বাজে।

“এতো রাতে কে কল করলো!”

আর মোবাইলটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে নারী কণ্ঠ ভেসে আসলো।

“কি খবর আরহান বেবি!”

হিয়ার কণ্ঠ শুনেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।সে কিছু না বলে কলটা কেটে মোবাইল সুইচ অফ করে দিলো।আরহান মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে মেরে বিছানার উপর বসে পড়লো।

“এই মেয়েটা আমাকে ভালো থাকতে দিবে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে হাত মুথো করে ফেললো।সে রাগে ফুসছে।হঠাৎ সে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

/🌸\

মাসুমা বেগমের ডাকে ঈশার ঘুম ভাঙলো।ঈশা চোখ ডলতে ডলতে বললো,

“এতো ডাকাডাকি করছো কেনো আম্মু?”

“দু’দিন পরে তোর বিয়ে।এখন যদি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাস জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে কি করবি!”

“আম্মু ওই বাড়িতে গিয়ে আমার কপালে কি শনি নাচছে একমাত্র আল্লাহ জানে।তাই বিয়ের আগে যত পারি চিল করে নেই।”

কথাটা বলে ঈশা যেই আবার শুতে যাবে মাসুমা বেগম তার হাত টেনে ধরলো।ঈশাকে জোর করে ওয়াশরুমে পাঠালো।



আরহান বসে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।আরিশা’ আলভিকে কোলে নিয়ে এসে বললো,

“ভাইয়া তুই রেডি?”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কিসের জন্য রেডি হবো?”

“বা রে আম্মু তো তোকে কালকে বললো।ঈশা আপুর বিয়ের শপিংয়ে হেল্প করতে।”

“আমি পারবো নাহ্।তুই গিয়ে হেল্প কর।”

আয়েশা বেগম এসে আরহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আরহান তুমি ইদানীং নিজেকে অনেক বড় মনে করতেছো।নিজের মায়ের কথাও অমান্য করছো।”

আরহান কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়েশা বেগম বললো,

“তুমি আরিশা আর ঈশাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে।আলভি দাদুভাই-কেও চাইলে সাথে নিতে পারো।এটাই শেষ কথা।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই নাহ্!”

আয়েশা বেগম কথাগুলো বলে তার রুমের দিকে চলে গেলেন।আরিশা দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।আরহান আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এতো হিহিহি না করে গিয়ে রেডি হয়ে আয়।”

আরিশা মুখ গোমড়া করে আলভিকে কোলে করে নিয়ে চলে গেলো।আরহান ব্রেকফাস্ট শেষ করে সোফায় বসে আছে।আরিশা আলভিকে নিয়ে আসলো।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“চল উড়নচণ্ডী।”

“ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”

“যা করতেছি একদম ঠিক করতেছি।বেশি কথা না বলে চল।মিস.বকবকানিকে তো আবার তার বাড়ি থেকে ড্রপ করতে হবে।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেলো।আরহান গাড়িতে উঠে বসলো।আরিশা আলভিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“ওই তুই আলভিকে নিয়ে পিছনে বসলি কেনো?আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয়!”

“একটু পরে ঈশা আপু গাড়ি উঠবেই।আপু না হয় সামনে বসলো।আমি আর আলভি পিছনেই ঠিক আছি।”

“আলভিকে সামনে দে।আর তুই ওই বকবকানিকে নিয়ে পিছনে বসিস।”

“একদমই না।আমার ক্রাইম পার্টনার আমার সাথেই বসবে।”

আরহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো,

“তুই দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছিস।”

“হ্যাঁ তুই যেমন গিয়েছিস!”

“ছুটকি তুই কিন্তু এবার আমার হাতে মার খাবি।”

আরিশা মুখে হাসি ফুটলো।সে বললো,

“ভাইয়া তুই কতদিন পরে আমাকে এই নামটা ধরে ডাকলি।”

আরহান কিছু না বলে চুপ করে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো।খানিকক্ষণ বাদে বললো,

“এখন থেকে এই নাম ধরেই ডাকবো।”

||🌼||

আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।আরিশা আর আলভি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।

“আমি গাড়িতেই বসে থাকি।তুই আর আলভি গিয়ে উনাকে নিয়ে আয়।”

“আরে ভাইয়া বাড়ির সামনে এসে এভাবে গাড়িতে বসে থাকলে মানুষ খারাপ বলবে।ভিতরে চল।”

আরিশা আরহানকে কিছু বলতে না দিয়ে জোর করে ঈশাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো।মাসুমা বেগম এসে দরজা খুলে দিলো।মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

“আরে তোমরা এসেছো!আচ্ছা ভিতরে আসো।”

আরহান আর আরিশা ভিতরে গিয়ে বসলো।আরহান মাসুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আন্টি ঈশা কোথায়?”

“ঈশা রেডি হচ্ছে বাবা।”

আরহান বিড়বিড় করে বললো,

“এই মেয়ে যে এখন কয় ঘন্টা লাগায় রেডি হয় কে জানে!”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বসলো।আরিশা আরহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“ভাইয়া ঈশা আপুকে দশ মিনিটের মধ্যে যদি তুই ডেকে আনতে পারিস তাহলে আমি ভেবে নিবো তুই বীরপুরুষ।”

আরহান আরিশার কথা শুনে চমকে গেলো।মাসুমা বেগম বললেন,

“আচ্ছা আমি একটু আসছি।”

মাসুমা বেগম চলে যেতেই আরহান বললো,

“তুই কি পাগল হয়েছিস!একটা অচেনা মেয়ের ঘরে আমি কিভাবে যাবো?”

“আরে ঈশা আপু অচেনা হলো কিভাবে?তুই তো তাকে ভালো করে চিনিস।আর তুই যদি ঈশা আপুকে ডেকে আনতে পারিস তাহলে আমি তখন এখনের চেয়েও বেশি রেসপেক্ট করবো।”

“তোর রেসপেক্টের আমার দরকার নেই।”

“তাহলে ধরে নিলাম তুই একদম ভিতুর ডিম।”

আরিশার কথা শুনে আরহানের রাগ উঠে গেলো।সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“উনার রুম কোন দিকে?”

“সোজা গিয়ে ডানে।”

আরিশার কথা অনুযায়ী আরহান হেঁটে গেলো।ঈশার রুমের দরজা খোলা।আরহান ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো ঈশা চুল আঁচড়াচ্ছে।আরহান ঈশার দরজায় টোকা দিলো।ঈশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশা আরহানকে দেখে এগিয়ে এসে বললো,

“আরে আপনি বাইরে কেনো দাঁড়িয়ে আছেন!ভিতরে আসুন।”

আরহান ঈশার রুমের ভিতরে গিয়ে বললো,

“আপনার রেডি হতে আরো কতক্ষণ লাগবে?”

“মিনিমাম বিশ মিনিট।”

“আরে এতো টাইম লাগবে কেনো!ড্রেস তো পড়েছে আর চুলও আঁচড়ানো শেষ।সো এখন চলুন।”

“আরে না এখনো মেক-আপ করা বাকি আছে।”

“আরে আপনাকে মেক-আপ ছাড়াই সুন্দর লাগে।”

আরহানের কথায় ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকালো।আরহান দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।আরহান মনে মনে বললো,

“কি বলতে কি বলে ফেললাম!”

ঈশা মনে মনে বললো,

“তাহলে আর সেজে কি হবে!আমার হবু বরই তো বলে দিলো মেক-আপ ছাড়াই আমাকে সুন্দর লাগে।আউ কি সুন্দর কথা!”

আরহান কিছু বলতে যাবে ঈশা আরহানকে থামিয়ে বললো,

“আচ্ছা চলুন।আমি রেডি।”

ঈশা হাঁটা শুরু করলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“বাহ্ এক কথাই কাজে লেগে গেলো।”

আরহান কথাটা বলে হাসি দিয়ে ঈশার পিছনে হাঁটা শুরু করলো।

#চলবে…………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-০৯

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৯

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান ঈশাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলো।ঈশা ফ্রেশ হয়ে বসে বসে ভাবছে,

“আচ্ছা আরহান সাহেব একবারও বিয়ের কথা উল্লেখ করলো নাহ্ কেনো!উনি সত্যি কি জানে এই বিয়ের বিষয়ে?নাহ্ আম্মু আমাকে মিথ্যা বলবে নাহ্।”

মাসুমা বেগম এসে দেখলো ঈশা বসে বসে কি জেনো ভাবছে তাই উনি এসে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

“কি রে কি এতো ভাবছিস?”

মাসুমা বেগমের কথায় ঈশার ধ্যান ভাঙ্গলো।তারপরে সে বললো,

“আম্মু তুমি আসছো ভালোই হয়েছে।আচ্ছা আম্মু আজকে আমার আরহান সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিলো।কিন্তু অবাক বিষয় হলো উনি আমার আর ওনার বিয়ে নিয়ে একটাও কথাও বলেনি।আসলে উনি কি সবটা জানে!”

মাসুমা বেগম ঈশা কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“তুই বলেছিস কিছু?”

“একটা ছেলে কিছু বলেনি আর আমি মেয়ে হয়ে বলবো।আমার কোনো লজ্জা নাই নাকি!”

“হয়তো আরহানও লজ্জায় কিছু বলেনি।”

“উনার আবার লজ্জাও আছে?”

“বিয়ের বিষয় তো লজ্জা পেতেও পারে।”

কথাটা বলে মাসুমা বেগম তাড়াতাড়ি করে ঈশার রুম থেকে চলে গেলো।ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,

“আম্মু প্রথম আমার প্রশ্ন শুনে ওমন ঘাবড়ে গেলো কেনো!ধ্যাত আমি একটু বেশিই ভাবছি।”

ঈশা তার রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে গেলো।



আরহান বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।আরহান নিচে গিয়ে দেখলো আয়েশা বেগম আর আরিশা বসে বসে কিসের যে লিস্ট করছে!

আরহান গিয়ে আয়েশা বেগম আর আরিশার সামনে দাঁড়ালো।আরহানকে দেখে আয়েশা বেগম এবং আরিশা দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কি হয়েছে?তোমরা আমাকে দেখে এমন ঘাবড়ে গেলে কেন?”

আয়েশা বেগম তুতলিয়ে বললেন,

“ককক কই কিছু কিছু নাতো।আমরা কই ঘাবড়ে গেছি!”

“রিলাক্স আম্মু তুমি এমন তোতলাচ্ছো কেন?”

আরিশা আয়েশা বেগমের কানে কানে বললো,

“কালকে আমাকে বকাবকি করে আজকে নিজেই সব প্যাঁচ লাগাবো।”

আয়েশা বেগম ও আস্তে করে বললো,

“তাহলে তুই সামলা নাহ্ ছেলেকে!জানিস তো সব বিষয়ে একশোটা প্রশ্ন করবে।”

আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বললো,

“আরে ভাইয়া তেমন কিছু নাহ্।আমরা জাস্ট বাজারের লিস্ট করতেছিলাম।আসলে তুই হঠাৎ করে এসে দাঁড়ালি তো।তাই একটু ঘাবড়ে গেছি।”

আরহান নিশ্বাস ফেলে বললো,

“তোরা দুজনে পারিসও বটে।মাঝে মাঝে এমন করিস মনে হয় কি না কি হয়ে গেছে!”

আরিশা আরহানের কথায় হেসে দিলো।

“এতো দাঁত না ক্যালিয়ে বল আলভি কোথায়?”

“আলভিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।”

“তা তোমরা মা-মেয়ে কি খাবে নাকি?নাকি সারা দুপুর না খেয়েই থাকবে।”

আয়েশা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা চল আমরা খেয়ে নেই।”

সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলো।আরহান খাওয়া শেষ করে বসে বসে টিভি দেখছে।আরিশা এসে তার পাশে বসে বললো,

“ভাইয়া আজকে সন্ধ্যায় আমি আর আম্মু ঈশা আপুদের বাড়িতে যাবো।”

“কি কারণে?”

“আপু তো সামনে বিয়ে তাই একটু দেখে আসি।”

“বিয়ে কবে?”

“আজকেই নাকি সব ঠিক করবে।”

“আচ্ছা তাহলে আমিও যাবো নে।আমার তো আজকে তেমন কাজ নাই।”

আরহানের যাওয়ার কথা শুনে আরিশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।আরিশা মনে মনে বললো,

“আজকে যদি ভাইয়া যায়।সব বারোটা বাজবে।না ভাইয়াকে কোনোভাবেই নেওয়া যাবে নাহ্।”

আরিশা হালকা কেঁশে বললো,

“আরে ভাইয়া তুই কেনো যাবি?ওখানে সব মেয়ে মানুষরা থাকবে।তোর যাওয়ার দরকার নেই।”

“আঙ্কেল তো আছেন।”

“আরে না আঙ্কেল গুরুত্বপূর্ণ কাজে চিটাগং গিয়েছেন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ঘুরে আয় গিয়ে।আলভিকেও নিয়ে যাস।ওর ভালো লাগবে।”

“ওকে ভাইয়া।”

আরিশা চলে গেলো।আরহান বসে বসে ভাবছে,

“আমার যাওয়ার কথা শুনে আরিশা এমন করলো কেনো!ডাল মে কুচ কালা হে-”

আরহান কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে টিভি দেখায় মন দিলো।

/🌸/

আয়েশা বেগম আর আরিশা ঈশাদের বাড়িতে গেলো।ঈশা আলভির সাথে বসে বসে খেলা করছে।আয়েশা বেগম বললেন,

“আমি চাই তিনদিন পরে আরহান আর ঈশার বিয়েটা সেরে ফেলতে।”

মাসুমা বেগম আর তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আলহামদুলিল্লাহ।”

আয়েশা বেগম ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ঈশা মা তুমি রাজি তো।”

“আন্টি আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই হবে।আমার কোনো আপত্তি নেই।”

ঈশা কথাটা বলেছে ঠিকই কিন্তু তার মনের মধ্যে এক প্রকার সন্দেহ কাজ করছে।

আয়েশা বেগম আর আরিশা চলে আসার সময় ঈশা একটা বক্স আরিশার হাতে দিয়ে বললো,

“এটা মি.কাস্টার্ডের জন্য।”

আরিশা বক্সটা নিয়ে বললো,

“এতে কি আছে ঈশা আপু?”

“মি.কাস্টার্ডের জন্য কাস্টার্ড আছে।”

ঈশার কথায় সবাই হেসে দিলো।ঈশা খানিকটা লজ্জা পেলো।

—💚—

আরহান তার রুমে বসে বসে বই পড়ছে।কলিংবেল বাজার আওয়াজ আরহানের কানে আসলো।সে নিচে নেমে দেখলো রুবি খালা দরজা খুলে দিয়েছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা এসেছে।আরহান গিয়ে আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“এতো টাইম লাগে আসতে?”

আরহান কথাটা বলার সাথে সাথে আরিশা বক্সটা আরহানের হাতে দিলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“এতে কি আছে?”

“কাস্টার্ড আছে।তোর হব না মানে ঈশা আপু পাঠিয়েছে।”

কাস্টার্ডের কথা শুনে আরহানের মুখে হাসি ফুটলো।হঠাৎ কি যেন মনে হতে আরহান আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“এই হব-র মানে কি?পুরোটা বল।”

“আর ভাইয়া তেমন কিছু না।এমনি মুখে চলে আসছিলো।

আরহান আর কিছু না কাস্টার্ড খাওয়া শুরু করলো।আরহান কাস্টার্ড খাওয়া শেষ করে বললো,

” আমার পছন্দের জিনিসটা খুব ভালোই বানাতে পারে মিস.বকবকানি।”

আরহানকে মুচকি হাসতে দেখে আরিশা বললো,

“কি রে ভাইয়া প্রেমে পড়লি নাকি?”

আরিশার কথায় আরহান চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“আরে ভাইয়া আমি মজা করেছি।এতো চোখ রাঙাতে হবে নাহ্।”

“🌻”

হিয়া বসে বসে মোবাইল টিপছে।এমন সময় একটা লোক এসে বললো,

“ম্যাডাম খবর পেলাম আয়েশা বেগম আরহান সাহেবের বিয়ে দেওয়ার মতলব করছে।”

লোকটার কথায় হিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এতো বড় সাহস ওই মহিলা!আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিবো নাহ্।কবে বিয়ে তা জানো?”

“না ম্যাডাম তা এখনো জানতে পারিনি।”

“ওকে খোঁজ নেও।ভালো করে খোঁজ নেও।”

হিয়া রাগে কাঁপছে।

/🧡\

আরিশা আলভিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।আরহান আর আয়েশা বেগম বসে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে।আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশা বিয়ে তিনদিন পরে।”

হঠাৎ আজকে কেনো জানি ঈশার বিয়ের কথা শুনে আরহানের বুকটা কেঁপে উঠলো।সে নিজেকে সামলে বললো,

“ওয়াও!খুব ভালো খবর।”

“হ্যাঁ।কালকে তুই ঈশা আর আরিশাকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাস।”

“আমি?আমি কেনো যাবো?”

“দেখ ঈশাদের সাথে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক আছে।আর ঈশার ভাই-বোন নেই।আর তুই তো ঈশার বড় ভাইয়ের মতো।তাই তোর যাওয়া উচিত।”

আয়েশা বেগম কথাটা বলে মৃদু হাসলেন।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আমি কিভাবে উনার বড় ভাই হলাম।আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।শুধু শুধু এইসব তৈরি করো না তো আম্মু।এতোকিছু থাকতে আমি নাকি ওই বাচাল মেয়ের বড় ভাই!”

আরহানের কথা শুনে আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।আরহানও মুচকি হাসলো।তারপরে মনে মনে বললো,

“আম্মু আমাকে ঈশার বড় ভাই বলায় আমার এমন লাগলো কেনো!”

#চলবে…………………………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-০৮

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৮

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান চলে যেতে ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,

“কি ব্যাপার উনি তো একবারও বিয়ের কথা কিছু বললেন নাহ্!আর কি লোক রে বাবা।হবু বউকে এভাবে রেখে চলে যায়।কোথায় একটু সুন্দর করে কথা বলবে তা না চলে গেলো।উনাকে দিয়ে এর চেয়ে বেশি আর কি বা আশা করা যায়।উনি যখন বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না সো আমিও বলবো নাহ্।যাকগে এখন আগে ভালো করে পরীক্ষা দিতে হবে।”

ঈশা কথাটা বলে কলেজে চলে গেলো।

আরহান অফিসে এসে তার কেবিনে বসে কাজ করছে।হঠাৎ তার টেবিলের সামনে একজন এসে দাঁড়ালো।আরহান তাকিয়ে দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে।আর হিয়াকে দেখেই ভ্রু জোড় কুচকে ফেললো।তারপরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“নক না করে আমার কেবিনে ঢোকার সাহস হয় কিভাবে আপনার?আর আপনি এই অফিসে এসেছেন কেনো?কতবার বারণ করেছি আপনাকে।আপনার কি একটুও লজ্জা নেই!”

হিয়া কিছু না বলে মুচকি হেসে চেয়ারে বসলো।তারপরে বললো,

“দেখো আরহান অনেক ক্যাচ করে আলভির দায়িত্ব তুমি নিয়েছো।আমাকে নিতে দেওনি।এই নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই।আলভি আমার কাছে না থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না।আমার তো শুধু তোমাকে লাগবে।”

আরহান রাগের কারণে দেয়ালে তার হাত ঘুষি মারলো।যার কারণে তার হাত বেশখানিকটা কেটে গেছে।আরহানের রাগে কাঁপছে।যা দেখে হিয়া ভয় পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আরহানের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।আরহান একটা টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে হিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে অফিসের বাইরে নিয়ে আসলো।অফিসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আরহান হিয়াকে রাস্তায় দাঁড়া করিয়ে বললো,

“এরপরে আরেকদিন আমার অফিসে আসলে আপনার যে কি হবে তা আপনি নিজেও জানেন নাহ্!”

আরহান কথাটা বলে গাড়ি নিয়ে অফিস থেকে চলে গেলো।হিয়াও লজ্জায় তাড়াতাড়ি আরহান অফিসের সামনে থেকে চলে গেলো।আরহান গাড়িতে চালাতে চালাতে হঠাৎ দেখলো ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরহান গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নেমে ঈশার সামনে গিয়ে বললো,

“আপনি আলভিকে কোথায় পেলেন?”

ঈশা আরহানকে দেখে বললো,

“আরে আপনি!আরিশার ভার্সিটিতে নাকি কি াকজ আছে।তাই ও আলভিকে ছুটির পরে নিয়ে যেতে পারবে নাহ্।তাই আন্টিকে আমাকে বললো। আলভিকে একটা বাসায় পৌঁছে দিতে।”

“আপনাকে বলার কি দরকার আমি আছি তো!”

“আপনার নাকি অফিসে জরুরি মিটিং আছে।”

“হ্যাঁ আছে।তবে আজকে মিটিং অ্যাটেন্ড করার মুড নাই।”

ঈশা হঠাৎ আরহানের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।সে দেখলো আরহানের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে।ঈশা আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে আরহানের হাত ধরে বললো,

“আরে হাতটা তো অনেকখানি কেটে গেছে।কিভাবে রক্ত বের হচ্ছে।কিভাবে কাটলো?”

“তেমন কিছু হয়নি।জাস্ট একটু কেটে গেছে।”

“একটু কেটে গেলে এতো রক্ত বের হয় নাকি!আচ্ছা ওয়েট।”

ঈশা তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে আরহানের হাতে বাঁধতে গেলে আরহান বাধা দিয়ে বললো,

“আরে এটা আপনার ব্যাপার করা রুমাল।এটা নোংরা তো।”

“এটা মোটেও নোংরা নাহ্।এটা আমি একটু আগেই কিনছি।আলভি জিজ্ঞেস করেন।”

“থাক আলভিকে জিজ্ঞেস করতে হবে না।আপনার কথাই আমার বিশ্বাস হয়েছে।যা খুশি করেন।খালি বেশি বকবক করবেন নাহ্!”

ঈশা আর কিছু না বলে মুখ ভেঙচি দিয়ে রুমাল দিয়ে আরহানের হাত বেঁধে দিলো।

“বাসায় গিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে নিবেন।নাহলে প্রবলেম হতে পারে।”

আরহান ঈশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“আপনি কি ডক্টর নাকি?”

“না আপনার হব…….”

ঈশা এটুকু বলে থেমে গেলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“হব?এটার মানে কি?”

“এটার মানে আপনার মাথা।এখন বেশি কথা বাদ দিয়ে আলভিকে নিয়ে বাসায় যান।আমিও বাসায় যাই।”

ঈশা চলে যেতে গেলে আরহান পিছন থেকে ঈশার হাত ধরে ফেললো।ঈশা ভ্রু কুচকে পিছনে তাকালো।আরহান ঈশার হাত ছেড়ে বললো,

“আপনার কাস্টার্ডটা কালকে অনেক মজা হয়ে ছিলো।”

“তাই নাকি!”

“হুম।”

“আমিও শুনলাম আপনি নাকি কাস্টার্ড খুব পছন্দ করেন।তাই ভাবলাম আপনার নাম মি.অভদ্র বাদ দিয়ে মি.কাস্টার্ড রাখবো!”

“আমার নাম রাখা বাদ দিয়ে।আপনার বরের নাম রাখেন।”

ঈশা বিড়বিড় করে বললো,

“আমার বরের নামই তো রাখতেছি।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কিছু বললেন?”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“নাহ্।”

“আচ্ছা চলেন।”

“ঈশা অবাক হয়ে বললো,

” কোথায় যাবো?”

“আপনাকে ফুচকা খাওয়াবো।”

“আপনি জানলেন কিভাবে আমি ফুচকা পছন্দ করি?”

“এটা তো সিম্পল।সব মেয়েরাই ফুচকা পছন্দ করে।সেই হিসেবেই বলেছি।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঈশা এসে তার পাশে দাঁড়ালো।ঈশা ফুচকা অর্ডার দিলো।

ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনি ফুচকা খান?”

“হুম তবে বেশি ভালো লাগে নাহ্।”

“দেখেন আর যাই বলেন ফুচকা ভালো লাগে না এটা বলবেন নাহ্।”

“ওকে মিস.বকবকানি।আমি আর ফুচকা নিয়ে কোনো কথা বলবো নাহ্।”

ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,

“কি ব্যাপার আজকে যে এতো ভালো বিয়েইভ করছেন?”

“কালকেও তো ভালো ব্যবহার করেছিলাম।তবে আজকে একটু বেশিই ভালো ব্যবহার করছি।কারণ সামনে আপনার বিয়ে।এখন আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করা ঠিক নাহ্।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“ইশ্!উনার সাথে যে বিয়ে সেটা বলছেন নাহ্।তবে ভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছে।যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা খারাপও নাহ্।”

আলভি আরহানকে বললো,

“বাবাই আমি আইসক্রিম খাবো।”

“ওকে পাপাই চলো।কিনে দিচ্ছি।আচ্ছা মিস.বকবকানি আপনি ফুচকা খেতে শুরু করেন আমি আইসক্রিম নিয়ে আসতেছি।”

ঈশা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।ঈশা এক বেঞ্চে গিয়ে বসলো।ঈশা বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে।হঠাৎ একটা ছেলে এসে তার পাশে বসলো।ঈশা দেখলো ছেলেটা আর কেউ না রুশান।রুশানকে দেখেই ঈশার রাগ উঠে গেলো।

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“তুই এখানে কি করতেছিস?”

“তোকে দেখলাম একা একা বসে থাকতে।তাই আমি এসে তোর পাশে বসলাম।”

“তোকে এসে কেউ আমার পাশে বসতে বলেনি।আমার হবু বর আছে আমার পাশে বসার জন্য।সো তুই এখান থেকে চলে যা।”

“ওহ্ তার মানে জিজু এখানে আছে।আচ্ছা জিজুকে তাহলে দেখেই যাই।”

ঈশা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিবো।যা এখান থেকে।”

ঈশার চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান আলভিকে নিয়ে আইসক্রিম কিনে আনতে গিয়ে ঈশার চিৎকার শুনলো।সে মাঝপথে দাঁড়িয়ে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো ঈশা একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপছে।আরহান আলভির হাতে আইসক্রিম দিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“কি হয়েছে মিস.ঈশা?”

ঈশা কিছু বলার আগেই রুশান বললো,

“ওয়াও!জিজু তো দেখছি অনেক হ্যান্ডসাম।”

ঈশা রুশানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।রুশান দৌড় তাদের সামনে থেকে চলে গেলো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“উনি কি আমাকে জিজু বললেন?”

“হ্যাঁ আপনাকেই বলেছে।ওর বুঝতে ভুল হয়েছে।”

ঈশা কথাটা বলে ফুচকা খেতে বসলো।আর বিড়বিড় করে বললো,

“ন্যাকামি শুরু করেছে।এমন ভাব যে উনি জানেনই না উনার সাথে আমার বিয়ে।”

আরহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান হাসি দিয়ে,

“আপনারা নিজেদের খাবার খান।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই।”

ঈশা আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,

“এই পাব্লিকগুলার কোনো কাজ নাই।কিছু হলেই মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।”

“আপনি যেভাবে চিৎকার করেছে দুই মাইল দূরে থেকেও শোনা যাবে।”

“মোটেও নাহ্।”

আলভি এসে ঈশার হাতে আইসক্রিম দিয়ে বললো,

“আন্টি এটা কাও।তুমাল মাথা টাড্ডা হয়ে যাবে।”

আলভির কথায় ঈশা হেসে দিলো।তারপরে আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“মাথা টাড্ডা হয়ে যাবে!”

#চলবে………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-০৭

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৭

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপরে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো।তারপরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।

আরহান বাড়িতে গিয়ে আয়েশা বেগম আর আরিশা’ আলভিকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে!আরহান তাদের সাথে সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশাদের বাড়িতে।”

“ঈশাদের বাড়ি কেনো যাচ্ছো?”

“এমনি বেড়াতে যেতে ইচ্ছে হলো।”

“ওহ্ আচ্ছা।ঠিক আছে যাও।কিন্তু আলভিকে রেখে যাও।”

“না বাবাই আমি যাবো।ঈশা আন্টির সাথে দেখা না হলে আমার ভালো লাগে না।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“পাপাই তুুমি গেলে তো বাবাই একা হয়ে যাবে!”

আরিশা বললো,

“ভাইয়া তুইও চল।”

“না আমার ভালো লাগছে নাহ্।এখন একটু ঘুমাবো।”

আরহান গালে একটা চুমু দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আয়েশা বেগম আরিশা আর আলভিকে নিয়ে ঈশাদের বাড়িতে চলে গেলো।

আয়েশা বেগম মৃদু হেসে বললেন,

“তা ঈশা কোথায়?তাকে তো দেখতে পারছি নাহ্।”

তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আপা আর কি বলবো!মেয়ে হয়েছে একদম আপনার ভাবির মতো।”

মাসুমা বেগম মুখটা মলিন করে করলো,

“বাহ্ বোনের কাছে বউয়ের বদনাম করতেছো।”

আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

“আরে ভাবি।আমি আপনার পক্ষেই আছি।ভাইয়ের কথা কে শুনে!”

ঈশা কফি বানিয়ে এনে সবার সামনে দিয়ে বললো,

“কেমন আছেন আন্টি?”

“এইতো মা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

ঈশা গিয়ে আরিশার পাশে বসে বললো,

“তোমার সাথে আমার সেদিন তেমন কথা হয়নি।তুমি আরিশা।ঠিক বললাম তো?”

“হ্যাঁ ভাবি।একদম ঠিক বলছো।”

আরিশার মুখে ভাবি ডাক শুনে ঈশা চুপসে গেলো।একটা ঢোক গিলে বললো,

“এখনি ভাবি ডেকো নাহ্।আমারও তো লজ্জা লাগে।”

কথাটা বলে ঈশা আলভিকে কোলে নিলো।আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“এখন না ডাকি।কয়দিন পর কিন্তু সারাদিনই ডাকবো।”

“তা তোমার অভদ্র ভাইয়া আসেনি?”

“অভদ্র ভাইয়া মানে? তুমি কি আরহান ভাইয়ার কথা বলছো?”

“উনি ছাড়া আর কে অভদ্র হতে পারে!”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি আসলে ঠিকই বলেছো। ভাইয়া আসলেই আস্ত একটা অভদ্র।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশা মা তুমি যদি কিছু না মনে করো।তুমি আরিশা আর আলভিকে নিয়ে একটু অন্য রুমে যাবে!আমি তোমার বাবা-মা’র সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“ওকে আন্টি।আমি ওদের নিয়ে আমার রুমে যাচ্ছি।”

ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে আর।আরিশা কে সঙ্গে নিয়ে তার রুমে গেলো।

আয়েশা বেগম তারপরে বললেন,

“তৈয়ব ভাইয়া আর মাসুমা ভাবি শুনেন আমার কথাগুলো।আসলে আরহান বিয়ে করতে চায় না।যার একমাত্র কারণ আলভি।আলভি হলো আফিনের ছেলে।তোমরা তো সবটাই জানো।কিন্তু ঈশা জানে নাহ্।তবে আমি চাই আরহান ঈশাকে সবটা বলবে।তাই আমি বিয়ের আগে ঈশা সবটা জানুক।আরহান ভাবে সে যদি বিয়ে করে আর তার বউ যদি আলভিকে মেনে না নেয়!আর আরহানের মাঝে মেয়েদের প্রতি একটা ঘৃণা চলে আসছে হিয়াকে দেখে।”

কথাগুলো বলে আয়েশা বেগম থামলেন।উনার চোখে পানি।চোখের পানি মুছে বললেন,

“মেয়েটাকে কত ভালোবাসতাম।আর ওই মেয়েটাই কিনা আমার স্বামী আর সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী।খালি ওর বাবার ক্ষমতার জোরে ওর কোনো শাস্তিও হলো নাহ্!”

মাসুমা বেগম আয়েশা বেগমের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,

“থাক আপা কষ্ট পেয়েন নাহ্।আমরা তো সবটাই জানি।কিন্তু কিছুই বলিনি।আপনারা কষ্ট পাবেন বলে!”

আয়েশা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“থাক এইসব বাদ দেই।আমি এই কারণেই আরহানকে বিয়ের কথাটা জানাতে চাচ্ছি না। একদম বিয়ের দিনে ওকে বলবো না হলে ও বিয়েটা করতে রাজি হবে না।”

মাসুমা বেগম বললেন,

“কিন্তু বিয়ের পরে ও যদি ঈশাকে না মেনে নেয়।তাহলে কি হবে?”

“আমার মনে হয় বিয়ের পরে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি তো আরহানকে চিনি।ও কখনো নিজেী দায়িত্ব থেকে সরে আসবে নাহ্।একবার বিয়েটা হোক শুধু।”

তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আপা আপনার কথায় আমরা নিশ্চিত হলাম।”

আয়েশা বেগম মনে মনে বললেন,

“আল্লাহ সব জানি ভালোয় ভালোয় হয়।”

/🌼/

আরহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো ওরা এখনো আসেনি।আরহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আজব!এখনো আসছে না কেনো ওরা?এতোক্ষণ আলভিকে না দেখলে আমার ভালো লাগে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে সোফায় গিয়ে বসলো।তারপরে টিভিটা ছেড়ে খেলা দেখতে শুরু করলো।রুবি খালা এসে কফি দিয়ে বললো,

“আরহান বাবা আয়েশা আফায় ফোন করছিলো।কইলো তাগো আসতে নাকি দেরি হইবো!”

“দেরি হবে কেনো খালা?”

“ওই তো কি কেনাকাটা জানি করোন লাগবো।”

“মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা।বাইরে গেলে শপিং না করলে চলে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে কফিতে চুমুক দিলো।রুবি খালা হাসি দিয়ে চলে গেলো।আরহান কফি শেষ করতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।আরহান গিয়ে দরজা খুলে দেখলো আয়েশা বেগম,আরিশা আর আলভি দাঁড়িয়ে আছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা হাতে এক গাদা শপিং ব্যাগ।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ভিতরে আসতে আসতে বললো,

“পুরো শপিংমল তুলে আনলে নাকি!”

আরিশা বললো,

“তোর বিয়ে বলে কথা শপিংমল তো তুলে আনতেই হবে।”

আরিশার কথায় আরহান পিছনে ফিরে তাকালো।তারপরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার বিয়ে মানে?”

আরিশা আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনি চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।আরিশা ভয়ে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললো,

“আরে ভাইয়া তুমি তো জানো আমি সব বিষয়ে বেশি এক্সাইটেড হয়ে যাই।তাই মুখ ফোসকে তোর বিয়ের কথা বলে ফেলছি।আসলে বিয়ে তো ঈশা আপুর।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“ঈশার বিয়ে তা তোমাদের এতো শপিং করার কি আছে?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“তোমার মেয়েদের বিষয়ে এতো জানা লাগবে নাহ্।নিজের কাজ করো।”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।আয়েশা বেগম আরিশার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেলেন।

“আরেকটু হলেই তো সব বলে দিচ্ছিলি।”

“আরে আম্মু মুখ ফোসকে বের হয়ে গেছে।”

“তোমার মুখটাকে একটু সামলে রাখো মা আমার।নাহলে পরে সব শেষ হবে।”

আরহান আলভিকে নিয়ে ক্যামার খেলছে।খেলার মধ্যে আলভি বললো,

“জানো বাবাই ঈশা আন্টি আজকে কাস্টার্ড বানিয়ে ছিলো।”

আরহান কাস্টার্ডের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো।

“ইশ্!আমার কাস্টার্ড খাওয়াটা মিস হলো।আমার ফেভারিট জিনিস আমিই খেতে পারলাম নাহ্।”

আরিশা রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার সময় আরহানের কথাটা শুনতে পেলো।আরিশা ফ্রিজ থেকে কাস্টার্ডের বাটিটা এনে আরহানের সামনে দিয়ে বললো,

“মাসুমা আন্টি তোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে।”

“আন্টি জানলো কিভাবে যে আমি কাস্টার্ড পছন্দ করি?”

“তুই যখন হোস্টেলে ছিলি তখন আন্টিরা আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে আসতো।তখন আম্মুই একদিন বলছিলো।তোর বিষয়ে সবই জানতো।তবে তোকে আগে কখনো দেখেনি।”

“কেনো আমার ছবি দেখাইনি আম্মু আন্টিকে?”

“হ্যাঁ পিচ্চি বেলার।তখন তো তোর এমন দাড়ি-গোঁফ ছিলো নাহ্।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“তাও ঠিক।না চেনাটা স্বাভাবিক।আমিও তো উনাদের কখনো দেখিনি।ওইদিনই ফাস্ট দেখছি।”

“কিন্তু আমরা আগে থেকেই চিনতাম।আচ্ছা এখন কাস্টার্ড টেস্ট করে দেখ কেমন হয়েছে!”

আরহান এক চামচ কাস্টার্ড খেয়ে বললো,

“ওয়াও!কাস্টার্ডটা তো অনেক মজা হয়েছে।বাহ্ ওই বকবকানি তো ভালোই কাস্টার্ড বানাতে পারে।”

“হ্যাঁ বিয়ের পরেও বানিয়ে খাওয়াবে।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“হ্যাঁ উনার হাসব্যান্ডকে।”

আরিশা মনে মনে বললো,

“হ্যাঁ তার হাসব্যান্ড তুই-ই হবি।”

আরহান কাস্টার্ড খাওয়া শেষ করে বললো,

“আজকে রাতে আমি আর কিছু খাবো নাহ্।এখন ঘুমিয়ে পড়বো।তুই আলভিকে খাইয়ে আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে যাস।”

“এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাবি কেনো ভাইয়া?”

“কালকে অনেক সকালে অফিসে যেতে হবে।”

“আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পড়।”

—❤️—

সকালবেলা,

আরহান সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো আলভি এখনো ঘুমাচ্ছে।আরহান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গেলো।

“আরিশা তুই আলভিকে স্কুলে নিয়ে যাস।আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।”

“ওকে ভাইয়া।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“আরহান ব্রেকফাস্ট করে যা।”

“আম্মু আমি অফিসে গিয়ে করে নিবো।”

“এখানে বসে করে যেতে হবে।”

আরহান আর কিছু না বলে একটা পাউরুটির টোস্ট খেয়ে চলে গেলো।আরহান অফিসে যাওয়ার পথে দেখলো ঈশা কয়টা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতেছে।আরহান গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে গেলো।

“কি হয়েছে মিস.ঈশা?”

ঈশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান দাঁড়িয়ে আছে।

“ওহ্ মি.অভদ্র।দেখেন না এই ছেলে গুলো আমাকে ডিস্টার্ব করছে।”

ছেলেগুলো থেকে একটা ছেলে বললো,

“মাফ চাই বোন।তোকে ডিস্টার্ব করতে এসে অনেক বড় ভুল করে ফেলছি।আধাঘন্টা ধরে বকবক করে মাথা শেষ করে ফেললি।”

ছেলেটার কথা শুনে আরহান জোরে হেসে দিলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকাতেই ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে গেলো।ঈশা তাদের পিছনে দৌড়াতে গেলে আরহান ঈশার হাত টেনে ধরলো।ঈশা আরহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।আরহান ঈশার হাত ছেড়ে বললো,

“হাত ধরার জন্য সরি।আপনার পায়ে এখনো ব্যান্ডেজ আছে।এতো দৌড়াদৌড়ি করা ঠিক নাহ্।আর ওই ছেলেগুলো ওতোটাও খারাপ নাহ্।তাহলে আধাঘন্টা ধরে আপনার বকবক শুনতো নাহ্।বরং আপনার মুখে কাপড় বেঁধে ধরে নিয়ে চলে যেতো।”

“আমার পা একদম ঠিক হয়ে গেছে।আপনার জন্য ওই ছেলেগুলো মারতে পারলাম নাহ্।”

“মারলে আরো আগেই মারতেন।চলে যাওয়ার পরে মারার জন্য আপসোস করছেন কেনো?”

“দুই-তিনটা থাপ্পড় তো দিছি।”

“তাহলে তো হয়েই গেলো।বাই দ্যা ওয়ে এতো সকালে আপনি কই যাচ্ছেন?বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কারণে কি পালিয়ে যাচ্ছেন নাকি?”

“জ্বি নাহ্।আমার কোনো প্রেমিকা নাই যে যার জন্য আমি পালিয়ে যাবো!আমার আজকে একটা এক্সাম আছে।তাই কলেজে যাচ্ছিলাম।”

“আপনার কলেজ কোথায়?”

“ওই যে সামনে।”

“ওহ্ আচ্ছা।তাহলে কলেজে যান।আর আমি অফিসে যাই।”

আরহান কথাটা বলে চলে গেলো।

#চলবে…………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-০৬

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৬

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান’ আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“আচ্ছা আজকে তাহলে আসি।আর আপনার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়।তাই আর কিছু বললাম নাহ্।চর শুনেন এরপরে কাউকে থাপ্পড় দেওয়ার আগে হাত কাপড় বেঁধে নিবেন।”

আরহান কথাটা বলে চলে গেলো।ঈশা আরহানের কথা শুনে মুচকি হাসলো।ঈশা বান্ধবীদের সাথে ঘোরাঘুরি শেষ করে বাড়িতে গেলো।বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে মোবাইল টিপছে।মাসুমা বেগম এসে ঈশা পাশে বসে বললো,

“আয়েশা আপা কল করেছিলো।”

“তা তো ভালো কথা।কি বললো আন্টি?”

“উনি একটা প্রস্তাব দিয়েছেন।”

ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“প্রস্তাব?”

“হ্যাঁ।”

“কিসের প্রস্তাব?”

“আরহানের সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব।”

ঈশা চমকে গিয়ে বললো,

“কি বলছো আম্মু?আমি ওই অভদ্রকে বিয়ে করবো!তবে এখন ভদ্র হয়ে গেছে।তাও আমি উনাকে বিয়ে করবো নাহ্।”

“দেখ আয়েশা আপা তোকে অনেক পছন্দ করছেন।”

“আন্টি পছন্দ করলে তো হবে না।আরহান সাহেবেরও একটা মত আছে।আর তার চেয়ে বড় কথা আমি ওই লোককে বিয়ে করবো নাহ্।”

“আরে আরহান রাজি তো।”

“মানে?”

“হ্যাঁ ও রাজি।এখন তুই রাজি হলেই হয়।”

ঈশা রাগে ফুসছে।মনে মনে বললো,

“এর জন্যই মি.অভদ্র আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করলো!ওই লোকের সাথে আর কোনো কথাই নাই আমার।”

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে মাসুমা বেগম বললেন,

“কি রে চুপ হয়ে গেলি কেনো?কিছু তো বল।”

“আম্মু তুমি আর আব্বু কি রাজি?”

“হ্যাঁ।তোর বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।উনি আজকেই আসবেন।তোর আব্বু আর আমি দুজনেই রাজি।”

“তাহলে আমি আর কি বলবো!আমি তো অনেক আগেই বলে দিয়েছি তোমাদের পছন্দেই বিয়ে করবো।সো আমিও রাজি।”

মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে চলে গেলেন।মাসুমা বেগম ঈশার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

“মেয়েটাকে তো মিথ্যা বললাম যে আরহান এই বিয়েতে রাজি।আসলে তো আরহান বিয়ের কথা কিছু জানেই নাহ্।আল্লাহ জানে কি হবে!”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

“শেষমেশ ওই অভদ্রটাকে বিয়ে করতে হবে!যাক ব্যাপার নাহ্।আমার আলভি বাচ্চু তো আছে।”

“ঈশা কথাটা বলে হাসি দিলো।




আরহান বাড়িতে আলভির সাথে ফুটবল খেলতেছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা বসে বসে গল্প করতেছে।

” আম্মু ভাইয়াকে না জানিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে!যদি ঈশা আপুর সাথে খারাপ বিয়েইভ করে।তুমি তো জানোই ভাইয়া কেমন বদরাগী।”

“এখন এমন।বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি বুঝে শুনেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।পারলে ঈশাই পারবে এই বদরাগী ছেলেকে ঠিক করতে।”

“তুমি যা ভালো বুঝো।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে আয়েশা বেগমের পাশে এসে বসলো।

“তোমরা মা-মেয়ে কি নিয়ে আলোচনা করছো?”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“এই তো আমার বিয়ে নিয়ে।তুই তো আর বিয়ে করবি নাহ্।তাই ভাবলাম আমিই বিয়েটা করে ফেলি।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“তোর মতো পেত্নীকে কেউ বিয়ে করবে নাহ্।”

“হ্যাঁ নিজে তো মনে হয় নায়ক।”

আরহান কিছু না বলে হাসলো।আয়েশা বেগম আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সামনে একটা বিয়ের দাওয়াত পেতে পারিস।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কার বিয়ে আম্মু?”

“ঈশার।”

“মিস.বকবকানির বিয়ে?ওয়াও!যাক উনার বকবকের হাত থেকে তাহলে বাঁচতে পারবো।”

আরিশা ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“ভাইয়া তুই তো ভালোই চেঞ্জ হয়েছিস দেখছি।এতো হেসে হেসে কথা বলতেছিস আবার ঈশা আপুকে এমন অদ্ভুত নামে ডাকতেছিস।”

“মাঝে মাঝে একটু হাসতে হয়।নাহলে তো হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবো।”

আরহানের কথায় সবাই হেসে দিলো।আরহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা আমি একটু বাইরে যাবো।তোমরা আলভির খেয়াল রেখো।”

“কোথায় যাবি তুই?”

“আম্মু আমার একটা কাজ আছে।এসে জানাবো সবটা।”

আরহান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।আরহান গাড়ি নিয়ে হিয়ার ফ্লার্টে গেলো।আরহান কলিংবেল বাজাতেই হিয়া এসে দরজা খুলে দিলো।তারপরে হাসি দিয়ে বললো,

“ভিতরে আসো আরহান।”

আরহান হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হিয়া একটা টাওয়াল গায়ে প্যাঁচিয়ে রেখেছে।আরহান চোয়াল শক্ত করে বললো,

“কাপড়চোপড় নাই নাকি?এইসব কি পড়ে দরজা খুলতে আসছেন?নিজেই আমাকে ডেকে আবার এইসব করছেন।”

“কেনো তোমার ভালো লাগেনি?”

“জাস্ট সার্ট-আপ।আপনি আসলেই একটা বেহায়া মেয়ে।”

হিয়া জোরে হেসে বললো,

“ভিতরে আসবে নাহ্।”

“নাহ্।”

“একটু ওয়েট করো আমি চেঞ্জ করে আসতেছি।”

আরহান দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতেছে।একটু পরে হিয়া একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আসলো।

“এবার ঠিক আছে?”

আরহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“এইসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে কেনো ডেকেছে তা বলেন।”

“আগে বাড়ির ভিতরে তো আসো।”

আরহান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বাড়ির ভিতরে গেলো।

“দেখো আরহান’ আফিন তো মারা গেছে।এখন আমি চাচ্ছি আলভি আমার কাছে থাকুক।শুধু আমার কাছে না তোমার কাছেও থাকুক।বিকজ আই লাভ ইউ।আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

হিয়া কথাটা বলে আরহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।

“আগে যা হয়েছে প্লিজ ভুলে যাও।আর আমাকে গ্রহণ করে নেও।”

আরহান চোখ রাঙিয়ে ধাক্কা দিয়ে হিয়াকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।ধাক্কা দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে হিয়া নিচে পড়ে গেলো।”

“লজ্জা করে নাহ্ আপনার!আমার ভাইয়ার জীবনটা শেষ করে আমাকে ভালোবাসা দেখাতে আসছেন।আপনার জন্য আজকে আমার বড় ভাই এই পৃথিবীতে নাই।আর ওই নিষ্পাপ শিশুটা বাপ হারা হয়েছে।তবে আমি চাই না আপনার মতো একটা মেয়ের কাছে আলভি থাকুক।ওর জন্য আমিই ঠিক আছি।ওর আর কারোর প্রয়োজন নেই।ও আমার ছেলে।আর নেক্সট টাইম আমাকে ডেকে এমন অসভ্যতা করলে এই পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলো দিবো।গট ইট।”

আরহান কথাগুলো বলে রাগে ফুসতে ফুসতে হিয়ার বাড়ি থেকে চলে গেলো।হিয়া মেঝেতে বসে রাগে কাঁপছে।”

“আমাকে অপমান করা।তোর জীবন আমি নরক বানিয়ে ফেলবো।”

/✨/

আরহান গাড়ি চালিয়ে সোজা নদীর পাড়ে চলে গেলো।গাড়ির উপর বসে বসে নদীতে ঢিল ছুড়ছে।আর তার চোখ বেয়ে দুই-এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে।

“ভাইয়া কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলি!বাবা না হয় চলে গেছে।তাই বলে তুইও চলে যাবি।কতবার বারন করেছিলাম এই মেয়েটাকে বিয়ে করিস নাহ্।শুধুমাত্র এই হিয়ার জন্য তুই আর বাবা আমাদের মাঝে নেই।আমি তোদের অনেক মিস করি।আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে আমি তোমাদের দুজনকে ছাড়া ভালো নেই।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-০৫

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মাসুমা বেগম দরজা খুলে দেখলেন ঈশা চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

“ঈশা কিছু কি হয়েছে?”

মাসুমা বেগমকে দেখে ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“না আম্মু কিছুই হয়নি।”

“তুই কি একা একা আসছিস নাকি?”

“আম্মু আগে ভিতরে তো ঢুকতে দেও তারপরে সব বলতেছি।”

“আচ্ছা ভিতরে আয়।”

মাসুমা বেগম ঈশাকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।

আরহান গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।আরহান রাগে ফুসছে।অনেক স্পিডে গাড়ি চালিয়ে বাসায় গেলো।আরহান বাড়ির ভিতরে ঢুকে সোজা তার রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখলো আলভি ঘুমিয়ে আছে।আলভির ঘুমন্ত চেহারা দেখে আরহানের মুখে হাসি ফুটলো।নিমিষেই সব রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।আরহান বিছানার বসে আলভির মাথায় হাত রাখলো।

“একমাত্র তোকে দেখলেই আমার রাগ কমে যায়।কি জাদু আছে তোর এই মিষ্টি মুখে!আমার বাবা তাহ্।”

আরহান আলভির কপালে একটা চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো্।ফ্রেশ হয়ে এসে পকেটে হাত দিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।

“এই মেয়েটা বেশি বেড়ে গেছে!আমাকে থাপ্পড় মারলো।আমাকে কি উনার ফালতু ছেলে মনে হয়!”

আরহান কথাটা বলে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে আছে।কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।



“ঈশা তুই আরহান কে থাপ্পড় দিয়ে একদম ঠিক করিস নি!”

ঈশা বিছানায় শুতে শুতে বললো,

“আম্মু আমি তো আর ইচ্ছা করে থাপ্পড় দেইনি।এইটা একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং।”

“আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়।ওহ্ হ্যাঁ! আয়েশা আপা কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।তবে দেখলাম আন্টি অনেক সিম্পল হয়ে গেছেন।আগের তো সেজেগুজে থাকতেন।”

“হয়তো আরিফ সাহেব মারা যাওয়ার পরে এমন হয়ে গেছেন।”

“হ্যাঁ হতে পারে।আচ্ছা আম্মু তুমি এখন যাও।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।”

“বান্দরনি।”

“আম্মু কোনো মা তার মেয়েকে এভাবে বলে?”

“তোর মতো মেয়ে থাকলে বলে।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে শুয়ে পড়লো।মাসুমা বেগম মৃদু হেসে চলে গেলেন।

“🌻”

আরহান ঘুম থেকে উঠে দেখলো আলভি তার পাশে নেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বাজে।আরহান মাথায় হাত দিয়ে বললো,

“ওফ শিট! এতো বেলা হয়ে গেলো।আরিশা হয়তো আলভিকে স্কুলে নিয়ে গেছে!ফ্রেশ হয়ে এখনই অফিসে যেতে হবে।কত দেরি হয়ে গেল!ধ্যাত আমাকে কেউ ডাকও দিলো নাহ্।”

আরহান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো আলভি এবং আয়েশা বেগম বসে বসে টিভি দেখছে আর আরিশা ব্রেকফাস্ট করছে।

আয়েশা বেগম আরহানকে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখে অবাক হয়ে বললো,

“কিরে আরহান তুই ছুটির দিনেও কি অফিসে যাবি!”

আরহান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে হেসে দিলো।তারপরে আলভির পাশে গিয়ে বসে বললো,

“আমি মেইবি পাগল হয়ে গেছি আম্মু।আমার মনেই ছিলো না আজকে যে ছুটি।”

“যা গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নে।আমি আলভিকে খাইয়ে দিছি।”

“ওকে আম্মু।”

আয়েশা বেগম আরহানের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার গালের এক পাশ লাল হয়ে আছে।আরহান উঠে দাঁড়াতেই আয়েশা বেগম বললেন,

“আরহান তোর গালে কি হয়েছে?”

আরহান চমকে গিয়ে গালে হাত দিলো।তারপরে বললো,

“কেনো আম্মু আমার গালে আবার কি হবে!”

“ডান পাশের গালটা লাল হয়ে আছে।”

আরহানের কালকে রাতের ঘটনা মনে পড়তেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,

“কিছু নাহ্ আম্মু মনে হয় এলার্জি হয়েছে।ব্রেকফাস্ট করে আমি ওষুধ খেয়ে নিবো।”

আরহান আর কিছু না বলে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।তারপরে মনে মনে বললো,

“মেয়েরা হাতে জোর আছে বলতে হবে!”

/🌸/

ঈশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ড্রেস ট্রাইল করছে।তবে তার কোনোটাই ভালো লাগছে নাহ্।মাসুমা বেগম ঈশার রুমে এসে বললো,

“কিরে তুই এতোগুলো ড্রেস নামিয়ে কি করছিস?”

“আম্মু আজকে আমরা ফ্রেন্ডরা ঘুরতে যাবো।তাই কোনটা পড়বো বুঝতে পারছি নাহ্!”

মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে এক কালো রঙের সেলোয়ার-কামিজ ঈশার হাতে দিয়ে বললো,

“এটা পড় তোকে অনেক সুন্দর লাগবে।”

ড্রেসটা হাতে নিয়ে ঈশার মুখে হাসি ফুটলো।ঈশা মাসুমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তুমিই আমার সব মুশকিল আশান।”

“হয়েছে।এখন বল তোর পায়ের কি অবস্থা?”

“আজকে অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে।দৌড়াতেও পারতেছি।”

“হ্যাঁ না দৌড়ালে তো তোর আবার পেটের ভাত হজম হয় নাহ্।”

“তুমি একদম ঠিক বলেছো আম্মু।”

ঈশা দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো।কালো সেলোয়ার-কামিজ,সঙ্গে চোখে কাজল,হাতে কালো চুড়ি,খোলা চুল!

ঈশা ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে রুম থেকে হলো।ড্রয়িং রুমে গিয়ে সে কিছুটা অবাক হলো তার সঙ্গে রাগও হলো।কারণ ড্রয়িং রুমে বসে আছে তার জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষটা।ঈশা মাসুমা বেগমের সামনে গিয়ে বললো,

“আম্মু এই ছেলেকে তুমি আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছো কেনো?”

“দেখ ঈশা ও তো এখন আগে মতো নেই।আর তখন অল্প বয়স ছিলো!”

“ব্যাস মা!এমন একটা লম্পটকে নিয়ে তুমি অন্তত সালিশি করো নাহ্।ওইদিন যদি মির্জা আঙ্কেল না আসতো তাহলে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো আম্মু।”

রুশান ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ঈশা আমাকে মাফ করে দে।আমি এখন আর আগেী মতো নেই।তোর সাথে ওমন একটা কাজ আমি করতে চেয়েছিলাম ভাবতেই আমার ঘৃণা হয়!দেখ তখন আমি ছোট ছিলাম তাই এতোকিছু বুঝতাম নাহ্।”

ঈশা চিৎকার করে বললো,

“জাস্ট স্টপ।এই বাড়ি থেকে এই মূহুর্তে তুই বের হয়ে যা।তোর এই নোংরা চেহারাটা আমি আর দেখতে চাই নাহ্।”

মাসুমা বেগম বুঝতে পেরেছেন ঈশা খুব রেগে গেছে।উনি রুশানকে বললেন,

“রুশান তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।নাহলে ঈশা অসুস্থ হয়ে যাবে।”

“কিন্তু কাকি……”

রুশানকে থামিয়ে মাসুমা বেগম বললেন,

“আর কোনো কথা নাহ্।তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”

“কিন্তু রাগ হওয়ার সাথে অসুস্থ হওয়ার কি সম্পর্ক?”

“তোমার জন্যই সবটা হয়েছে।তুমি তো সেদিন মার খেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।আর আমার মেয়ে ভয় পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো।এক বছর লেগেছে ওর ঠিক হতে।এখনও অতিরিক্ত রেগে গেলে ও অসুস্থ হয়ে যায়।সেন্সলেস হয়ে যায়।তুমি চলে যাও।”

রুশান আর কিছু না বলে ঈশাদের বাড়ি থেকে চলে গেলো।ঈশা চুপ করে সোফা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মাসুমা বেগম ঈশার সামনে গিয়ে বললো,

“আমার ভুলে হয়ে গেছে মা।ও-কে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হয়নি।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“ঠিক আছে আম্মু।আমি এখন যাই নাহলে আবার দেরি হয়ে যাবে।”

“মা তোর আবার শরীর অসুস্থ লাগছে না তো?”

“না আম্মু আমি এখন রাগ কন্ট্রোল করতে শিখে গেছি।তবে এটা মি.অভদ্রের থেকেই শেখা।”

“মি.অভদ্র আবার কে?”

“আরে আরহান সাহেব।কালকে আমি যখন থাপ্পড় দিয়েছিলাম উনি কিন্তু প্রচুর রেগে গিয়েছিলেন।যা আমি উনার মুখ দেখে বুঝেছি।তবে উনি আমাকে একটা কথাও না বলে সোজা হেঁটে চলে গিয়েছেন।”

“দেখেছিস ছেলেটা কত ভালো!আর তুই খালি কি সব বলিস।”

“হয়েছে ওই লোকের এতো গুণগান গাইতে হবে নাহ্।”

ঈশা কথাটা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

—❤️—

আরহান আলভিকে নিয়ে শপিং করতে এসেছে।হঠাৎ আয়নার দিকে চোখ যেতে আরহান দেখলো ঈশা তার বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে।ঈশাকে দেখেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।আরহান বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বললো,

“আমি যেখানেই যাই এই মেয়ে এসে হাজির হয়।”

ঈশা তার সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকাতেই আরহানকে দেখতে পেলো।সে পিছন থেকে ডাক দিলো।

“এই যে মি.অভদ্র।”

ঈশার ডাকে আরহান পিছনে তাকালো।এমনি তো তাকে দেখেই মাথা গরম হয়ে গেছে।তার উপর পাব্লিক প্লেসে এই নাম ধরে ডাকছে।ঈশার দিকে আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে আছে।ঈশা বুঝতে পারলো এমন করে ডাকার কারণে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরহান রাগে ফুসছে।ঈশা আশেপাশের সবাইকে উদ্দেশ্য কে বললো,

“আমার পরিচিত মানুষকে আমি যা ইচ্ছা বলে ডাকতে পারি।আপনাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে কে বলছে!”

ঈশার কথা শুনে যে যার কাছে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ঈশা হাসি দিয়ে এসে আরহানের সামনে দাঁড়ালো।ঈশাকে হাসতে দেখে আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আপনার কি চব্বিশ ঘন্টাই এমন দাঁত ক্যালানো লাগে?”

আরহান কথায় ঈশা আরো জোরে হেসে দিলো।আরহান হা হয়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশা হাসি থামিয়ে বললো,

“আপনি একদম ঠিক বলেছেন।না হাসলে আমার মোটেই ভালো লাগে নাহ্।”

আরহান মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বললো,

“ডিশকাস্টিং।”

ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে তার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আলভি বাচ্চু কেমন আছে?”

“অনেক ভালো আছি।তোমাকে দেখে আরো ভালো লাগছে।”

“তার মানে আলভি সাহেব আমাকে পছন্দ করে্?”

“হ্যাঁ অনেক বেশি।”

আরহান ঈশা আর আলভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকাতেই আরহান চোয়াল শক্ত করে ফেললো।

“মি.অভদ্র কালকে জন্য সরি।আসলে আমি না বুঝেই ওমনটা করে ফেলেছি।”

“সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায় নাকি?”

“তাহলে আমার এখন কি করতে হবে!”

“একটা শাস্তি তো পেতে হবে।”

“কি শাস্তি?”

“আলভি মেইবি আপনাকে অনেক লাইক করে।আপনি যদি পারেন মাঝে মাঝে একটু আলভির সাথে দেখা করবেন।এতে আলভির অনেক ভালো লাগবে।আর আলভির ভালো লাগবে মানে আমারও ভালো লাগবে।তাহলে আপনার শাস্তিও পেয়ে যাবেন।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“বাহ্!এটা তো অনেক ইজি পানিশমেন্ট।”

“আপনার মতো বাচালকে এটা ছাড়া আর কি বা পানিশমেন্ট দেওয়া যায়!”

“আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করতেছেন।”

“আপনার আবার অপমান গায়ে লাগে নাকি?”

“তা লাগে নাহ্।”

ঈশার কথায় আরহান হেসে দিলো।ঈশাও তার সাথে হাসলো।

#চলবে………………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]