Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1074



ভালোবাসি পর্ব-০৪

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৪

উফফ সারাদিন কাজের চাপে খুব টায়ার্ড লাগছে এই সময় একটা কফি পেলে আর কি লাগে.কফি কাপটা হাতে নিয়ে সোফায় সাবার পাশে বসতে বসতে কথাটা বললো ইরফান ভাইয়া.

-এটা কি হলো?কফিটা মামনি আমাদের দিয়েছে .আপনি কোথ থেকে এসে আমার কফিটা নিয়ে নিলেন.

সাবার কথা শুনে ভাইয়া কফি মগটা উল্টে পাল্টে দেখে বলে .

-কই আমি তো এখানে তোমার নাম দেখছি না.তাহলে কফিটা তোমার কি করে হলো?

সাবা ব্রু কুঁচকে বলে ,

-নাম কেন লেখা থাকবে.মামনি বলে গিয়েছে তার মানে এই কফিটা আমারি .

-মোটেও না যেহেতু এটা এখন আমার হাতে সেহেতু এটা এখন আমি খাবো.

-আপনার এত খাবার ইচ্ছে হলে নিজে বানিয়ে খান আমারটায় কেন নিতে হবে.

-তুমি বানিয়ে নিয়ে এসো.আমি ওয়েট করছি.

-আমি পারবোনা.

-এখনই মুখের উপর পারবোনা বলে দিচ্ছে আল্লাহই জানে বিয়ে পর এই মেয়ে কি করে.

আমি এবার বিরক্ত হয়ে বললাম.

-এই তোমরা দুজন চুপ করবে.এত ঝগড়া কেন করো বলতো?

-তোর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর.উনার তো কাজই হলো আমার পেছনে লাগা.

-ওহ আচ্ছা আমি তোমার পেছনে লাগি.আর তুমি যে সামান্য একটা কফির জন্য আমাকে এত কথা শুনাচ্ছ সেটা কিছু না.

সাবা এবার উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে ,

-কি এখন সব আমার দোষ.আর আপনি তো ধোয়া তুলসী পাতা.

-হুম এটা ঠিক বলেছো আমি তো ধোয়া তুলসী পাতায় .এক্কেবারে কিউট ভদ্র হেন্ডসাম.

সাবা ভেংচি কেটে বলে.

-হুম আসছে কোথ থেকে কিউট ভদ্র হেন্ডসাম.শুনুন আপনার মতো রাগি আর বদমেজাজি মানুষ আমি একটাও দেখিনি.আবার নিজেকে বলে ধোয়া তুলসী পাতা.

-আমি মোটেও শুধু শুধু রাগ দেখায় না.রাগ দেখানোর মতো কাজ করলে তো রাগ দেখাতে হবেই.

ওদের দুজনের ঝগড়ায় আমি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বললাম

-সাইলেন্ট .কি শুরু করেছো বলতো!বাচ্চাদের মতো ঝগড়া কেন করছো?

-তুই দেখছিস না প্রত্তু তোর ভাইয়া তো পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করছে.আমার কি দোষ!

-কি আমি ঝগড়া করছি আর তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুড়ি ভাজছো.

-দেখলি প্রত্তু কি ত্যারা ত্যারা কথা বলে.

ভাইয়া মুখ ঘুরিয়ে বলে

-যে যেমন তার সাথে এমন ভাবেই কথা বলতে হয়.বাই দা ওয়ে আমি এখন খুব টায়ার্ড রুমে যাচ্ছি.

-হুম যান .আমিও একটু শান্তিতে থাকি.

ভাইয়া দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ঘুরে বলে ,

-আমি রুমে গেলাম.

সাবা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে ,

-যাচ্ছেন তো নিজের রুমে এটা এত বার বলার কি আছে .এমন একটা ভাব যেন মঙ্গোল গ্রহে যাচ্ছেন.

ভাইয়া আবার কিছুটা রেগে গিয়ে বলে ,

-আমি রুমে যাচ্ছি তুমি কি বুঝতে পারছো না!

আমি এবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম .ভাইয়া ব্রু কুঁচকে সাবার দিকে তাকিয়ে আছে.এবার বুঝলাম ভাইয়া বার বার রুমে যাচ্ছি রুমে যাচ্ছি বলে চিল্লাচ্ছেন কেন.আসলে ভাইয়া সাবাকেও উনার রুমে নিয়ে যেতে চাইছে .কিন্তু আমার সামনে সেটা সরাসরি বলতে পারছেন না.আহারে বেচারা.প্রচুর হাসি পাচ্ছে ভাইয়াকে দেখে কিন্তু এখন ভাইয়ার সামনে হাসলে নির্ঘাত মার্ খেতে হবে তাই কোনো রকমে হাসিটা দমিয়ে রেখে সাবাকে বললাম ,

-সাবু তুই না কিচ্ছু বুঝিস না ।

সাবা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ,

-কি বুঝিনা আমি ?

-এই যে কারোর ইশারার তো পাত্তাই দিচ্ছিস না.

ভাইয়া আমার সামনে এসে বলে ,

-এই কি বলছিস তুই?

-না কিছু না.আমার না রুমে একটা কাজ আছে আমি আমার রুমে গেলাম .কেমন!

আমি উঠে দাঁড়াতেই সাবা বললো ,

-আচ্ছা দাঁড়া আমিও আসছি .

আমি কিছু না বলে চলে আসি .কিন্তু সাবা আমার পেছনে আসতে নিলেই ভাইয়া ওর হাত ধরে ফেলে .দৃশ্যটা একবার হালকা চোখে দেখে মুখ টিপে হেসে নিজের রুমে চলে আসি.রুমে এসে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবি .থাক না এই সময়টা দুটো ভালোবাসার মানুষের জন্য.একান্তই ওদের জন্য বরাদ্দ থাক.
.
বুক সেলফ থেকে একটা বই নিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে সেটা পড়ছিলাম .তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠে.

-হ্যালো!আস্সালামুআলাইকুম .কে বলছেন .

ওপাশ থেকে কেউ বললো ,

-নাম্বারটা সেইভ করেননি বুঝি?

বেশ বুঝতে পারলাম মানুষটি কে.তাই কর্কশ গলায় বললাম

-না.প্রয়োজন বোধ করেনি .

আমান হালকা হাসলো .তারপর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

-রেগে আছেন আমার উপর?

-না রেগে থাকার মতো কি আপনি কিছু করেছেন?

-জি অবশ্যই করেছি.আর আমি সত্যিই দুঃখিত.আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি এতটা কষ্ট পাবেন.আর সাবার উপরও রাগ করে থাকবেন না ও আপনাকে খুব ভালোবাসে তাই ভেবেছিলো আর কি আপনি বোধ হয় আমার সাথে ভালো থাকবেন আর এই জন্যই এতো কিছু করা .

-হুম বুঝলাম .তা আপনি কি শুধু এই কথা গুলো বলার জন্য আমাকে কল দিয়েছেন?

-না .আসলে আমার আপনার কাছে একটা অনুরোধ ছিল.

-কিসের অনুরোধ?

-দেখুন আমাদের বিয়েটাতো এরেঞ্জ ম্যারিজ .আমরা আগে থেকে কেউই কাউকে চিনি না সম্পর্ণ দু জন অপরিচিত মানুষ .তাই আমি চাইছিলাম আরকি যদি আমরা বিয়ের আগে একদিন আমাদের মধ্যে কিছুটা সময় কাটাই আই মিন আমরা একজন আরেকজনকে জানার জন্য আলাদা ভাবে কথা বলি.যাতে করে বিয়ের পর এটা মনে না হয় যে বিয়ের আগে আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা উচিত ছিল .এমন কিছু যার জন্য পরে আফসোস না করতে হয় .তাই বলছিলাম আরকি!তা আপনি কি বলেন?

আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম .

-আচ্ছা ঠিক আছে .কিন্তু আপনি কবে দেখা করতে যাচ্ছেন?

-যদি কাল বিকেল 4.00 ফ্রি থাকেন তাহলে কালই .

-কালকেই?

-আপনার আপত্তি থাকলে আমি জোর করবো না .সমস্যা নেয় আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারেন.

-না না সমস্যা নেয় .কালই দেখা করবো .

আমান খুশি হয়ে বলে ,

-ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে.আল্লাহ হাফেজ ।

-ওকে আল্লাহ হাফেজ.।

পরদিন..

ঘড়িতে পরপর ৪টা ঘন্টা বেজে জানান দিচ্ছে যে ৪টা বেজে গিয়েছে.আর এইদিকে আমি পুরো আলমারির কাপড় খুলে বিছানার উপর ফেলে রেখে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি .আর আমার ঠিক সামনে সাবা গালে হাত দিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে .

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম ,

-সাবু দেখ না আমি কোনটা পরে যাবো .৪টা তো বেজে গিয়েছে আর আমি এখনো একটা ড্রেসই সিলেক্ট করতে পারলাম না .

সাবা এবার সোজা হয়ে বসে রাগি কন্ঠে বলে ,

-কবে থেকে তুই এই জামা গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছিস অথচ এখন অবধি একটা ড্রেস ও চুস করতে পারলি না .আর আমি যেটা বেছে দিচ্ছি সেটা তোর পছন্দ হচ্ছে না .এক কাজ কর যেটা তোর পরনে আছে সেটা পরেই চলে যা .

-কি আমি এটা পরে যাবো এই প্লাজু আর টি শার্ট .তোর কি মাথা খারাপ?

-না এখনও মাথা খারাপ হয়নি তবে আর কিছুক্ষনের মধ্যে হয়ে যাবে .

-উফফ দোস্ত বল না কোনটা পরবো?

সাবা অনেক ঘেটে ঘুটে একটা ব্লেক কালার কামিজ বের করে বললো ,

-দোস্ত তুই এই ব্লেক কালার জামাটা পর .দেখবি তোর সাদা চামড়ায় এই ব্লেক কালারটা কি সুন্দর মানায় .

ওর কথায় জামাটা গায়ে লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে দেখছি আমাকে কেমন লাগে .না ভালোই লাগছে

-আচ্ছা তো এটা পরে আসি .

-হুম যা .

কিছুক্ষন বাদে ড্রেসটা পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় .না বেশ ভালোই মানিয়েছে .ব্লেক কালারের লং কামিজ .সাথে চুড়িদার পায়জামা আর ব্লেক কালার একটা জর্জেটের ওড়না .জামাটার বুকে গোল্ডেন কালার কাজ আছে তাই সেটার সাথে ম্যাচ করে একটা গোল্ডেন কালার হিজাব বাধলাম .ব্যাস আমি রেডি .আমার সাজগোজ পছন্দ না তাই মুখে শুধু হালকা একটু ক্রিম দিয়েই সব জায়গায় যাই.আজও তাই করলাম।

রেডি হয়ে পার্সটা কাঁধে নিয়ে সাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছি .উদ্দেশ্য হলো ওকে ও আমার সাথে নিয়ে যাওয়া .কিন্তু ও কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছে না .ও নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না .অবশ্য আরেকটা কারণও আছে.সেটা হলো ও যখন ভাইয়ার সাথে প্রথম ডেটিং এ যায় তখন ও আমাকে অনেক সাধছিলো ওর সাথে যাওয়ার জন্য .কিন্তু আমি যায়নি এখন ও যে সেইদিনের রিভেঞ্জ নিচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছি .

-সাবু তুই তাহলে আমার সাথে যাবি না এটাই ফাইনাল .

-হুম .

-ঠিক আছে তাহলে একাই যাচ্ছি . আমি কি তোর মতো ভীতু নাকি হুহ .যত সব ভিতুর ডিম্
.
-হুম আমার সাহসী বান্ধবী এবার আপনি যান .

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ি .নিচে নামতে দেখি আমান এক হাত পকেটে পুরে অন্য হাত দিয়ে মোবাইল নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে .পরনে তার অ্যাশ কালারের শার্ট আর ব্লেক কালার পেন্ট .শার্টের হাত গুলো ফোল্ড করা .বাম হাতে ব্রেন্ডের একটা ঘড়ি .আমি উনার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম .ফর্সা গালে ছোট ছোট দাড়ি .হালকা গোলাপি ঠোঁট.উনি মোবাইলে কি যে নো করছেন মাঝে মাঝে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরছেন .আবার কিছুক্ষন বাদে বাম.হাত দিয়ে হালকা করে চুলটা উপরের দিকে নেড়ে দিচ্ছেন .বেশ কিছুক্ষন যাবৎ উনাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর কেন যেন নিজের মনের ভেতর এক অজানা লাজুকতা ভর করলো .আনমনেই বলে উঠলাম ‘ছি! প্রত্যাশা তুই কি লুচু .এভাবে কেউ কোনো ছেলেকে দেখে নাকি!’ পরক্ষনেই আমার মন বলে উঠলো’বা রে কয়দিন পর তো আমার বরই হবে তো আমিতো দেখতেই পারি!’

চলবে..

ভালোবাসি পর্ব-০৩

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৩

সাবার কর্মকান্ডে আমি অবাক হয়ে সাবাকে জিজ্ঞেস করি.
-তুই কি উনাকে চিনিস?

আমার প্রশ্নে সাবা আমানকে ছেড়ে দিয়ে জিভে কামড় দিয়ে বলে,

-যা দিলাম সব প্লেন পোপার্ট করে.

আমি ব্রু খুচকে জিজ্ঞেস করলাম.

-কোন প্লেনের কথা বলছিস তুই?

সাবা অসহাইয়ের মতো মুখ করে বলে ,

-কি করে বলি বল তো .সব কিছু শুনার পর তো তুই নির্ঘাত আমাকে এক উস্টা দিয়ে উগান্ডা পাঠাবি.

সাবাড় কথা শুনে মনে হচ্ছে ডাল মে জারুর কুছ কালা হে.আমি ছোট ছোট চোখ করে জিজ্ঞেস করলাম.

-কি করেছিস শুনি!যদি এমন কোনো কাজ করে থাকিস যাতে করে আমার তোকে উগান্ডা পাঠাতে মন চাইবে তাহলে সত্যিই আমি কিন্তু তোকে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো.

-তাহলে আমি বলবো না.

এতক্ষন ধরে মি. আমান চৌধুরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলো.এখন সে হালকা হেসে সাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে.

-সাবা এবার মেডামকে সব কিছু বলে দে.এমনিতে এখন সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে তারপর ও যদি উনি ঘাড় ত্যারামি করতে চাই তাহলে আমি ত্যারা ঘাড়কে সোজা করে দিবো.

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম.

-এই যে মি. আপনি কি বলছেন বলুন তো.কার ঘাড় সোজা করবেন .আর সাবা তুইই বা আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস.

সাবা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে .

-ভাইয়া তোমার ভরসায় বলছি কিন্তু .আমার কিছু হয়ে গেলে তার সম্পূর্ণ ধায় ভার কিন্তু তোমার.

সাবাড় কথায় এইটুকু বুঝলাম ওরা দুজন এক জন আরেকজনকে আগে থেকে চেনে.কিন্তু কিভাবে?আর চিনেই যখন তখন সাবা কেন আমাকে কিছু বললো না.এই সব প্রশ্নের উত্তর সাবাই দিতে পারবে.তাই আমি ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম.

-দেখ তোর এতো ঢং আমার আর ভালো লাগছে না.তুই কি এখন সবটা বলবি নাকি তুই বলার আগেই তোকে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো কোনটা?

সাবা ভাবার এক্টিং দেখিয়ে বলে

-না আগে বলেই নেয়.তারপর না হয় উগান্ডা থেকে ঘুরে আসব ।

-হুম.তাহলে এত পেচাল না মেরে আসল কথা বল.

সাবা এবার বলতে শুরু করলো.

-শুন তাহলে .এই যে আমার পাশে যে হেন্ডসাম ডেশিং বয় দাঁড়িয়ে আছেন উনি হলেন আমার একমাত্র মামার এক মাত্র ছেলে আমান চৌধুরী তার মানে হলো আমার কাজিন.তবে ভাইয়াকে আমি কখনো মামাতো ভাই হিসেবে দেখিনি সব সময় নিজের আপন ভাই হিসেবে দেখেছি আর ভাইয়াও আমাকে সব সময় নিজের বোনের মতো ভালোবেসেছে.১ মাস আগে ভাইয়া বিদেশ থেকে দেশে ফিরে.এখন থেকে ভাইয়া উনার বিজনেস দেশে থেকেই সামলাবে.মামাও তাতে খুশি হয়ে গেলো আর ছেলের বিয়ের বয়স ওতো হয়ে গিয়েছে তাই পাত্রী খোঁজার গুরু ভার মামা আমার কাঁধে দিলো.আর পাত্রীর কথা বলতেই আমার না সবার প্রথমে তোর নাম মাথায় এলো.তোর মতো গুণবতী.লক্ষীমতি.রূপবতী .রাগিবতী আর একটা মেয়েও দুনিয়াতে নাই.তাই মামাকে ইরফানের নাম্বারটা দিয়ে দিলাম আর তারপর তো কাল সব হলোই.ও আর হে তোকে দেখতে আসার আগেই ভাইয়া আমার থেকে তোর সম্পর্কে সব ডিটেলস ও জেনে নেয়.আর আমিই ভাইয়াকে তোর প্লেনের কথাটা বলে দিয়েছিলাম.তাই ভাইয়া আগে থেকেই জানতো তুই যে নাটক করছিস.

কথাগুলো বলে সাবা মাথা নিচু করে বলে

-সরি দোস্ত .জানি এখন তুই মারাত্মক পরিমানে রেগে যাবি.কিন্তু বিশ্বাস কর আমার চোখে তোর জন্য বেস্ট লাইফ পার্টনার আমান ভাইয়াই .

সাবার পুরো কথা শুনে রাগে মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে গরম ধুয়া বের হচ্ছে .ইচ্ছে করছে এই দুই ভাই বোনকে একসাথে নিয়ে সামনের ডোবাটাই চুবিয়ে আনি.নিজেকে কোনোরকমে শান্ত করার চেষ্টা করছি.আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমান সাবাকে ফিসফিস করে বলে .

-কিরে তোর বান্ধবী দেখি কোনো কথা বলছে না .আমি তো আরো ভাবলাম সব জানার পর দু জনকে একসাথে মাথায় তুলে আছাড় দিবে .কিন্তু মেডাম তো দেখছি একদম শান্ত.

সাবা আমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে .

-আহারে ভাইয়া বুঝতে পারছো না এ হলো ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ কোনো বড় সড় ঝড় আসার আগে পরিবেশটা এমন শান্তই থাকে.

কিন্তু আমি কোনো প্রকার রিএক্ট না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম.আমার এই আচরণ বোধ হয় সাবা আর আমান কেউই হজম করতে পারলো না .সাবা মন খারাপ করে বললো .

-প্রত্তু নিশ্চই কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া .ও যখন আমার কোনো কথায় কষ্ট পায় তখন ও এইভাবেই আমার সাথে রাগ না দেখিয়ে আমাকে ইগনোর করে.এখন ও তাই করছে .

আমান সাবাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
.
-আরে পাগলি মন খারাপ করিস না .তোদের সম্পর্কটা খুব স্ট্রং দেখবি প্রত্যাশা বেশিক্ষন অভিমান করে থাকতে পারবে না.একটু পরই এসে তোর সাথে কথা বলবে.

-হুম .কিন্তু তোমার এখানে আসার কারণটাই তো জানতে পারলাম না .

-ওহ হে সব কিছুর মাঝে আসল কাজের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম.আসলে মা পাঠিয়েছে প্রত্যাশার চুরির মাপ নেয়ার জন্য.কিন্তু এখন ও যা রেগে আছে ওর কাছে চাইবো কিভাবে সেটাই ভাবছি .

-না না এখন ওর কাছে কিছু বলতে গেলে এটম বোমা ফেটে যাবে .তার চেয়ে তুমি দাড়াও আমি ওর একটা চুরি তোমাকে দিচ্ছি .

-আচ্ছা তাহলে দে .

সাবা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা চুরি বের করে আমানকে দিয়ে বললো .

-নাও ভাইয়া এটাই প্রত্যাশার হাতের পারফেক্ট মাপ।

-ওহ ওকে .আমার কাজ হয়ে গেছে এবার আমি যাই.আর তোর বান্ধবীর রাগ কমলে ওকে বুঝিয়ে বলিস যেন আমাকেও ভুল না বুঝে .

-আচ্ছা ভাইয়া তুমি টেনশন করো না ও তোমায় ভুল বুঝবে না।

আমান সাবার মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে তার শাশুড়ি মাকে বিদায় জানিয়ে ড্রয়িং রুমের কাছে যায়.সেখানে গিয়ে দেখে প্রত্যাশা সোফায় বসে মোবাইলে কি যেন করছে.আমান তাকে একবার ডাকে .কিন্তু প্রত্যাশার কোনো রেস্পন্স না পেয়ে সে আল্লাহ হাফেজ বলে বেরিয়ে যায়.

সন্ধ্যা ৬.৩০টা ,

ড্রয়িং রুমের মাঝখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাবা .আধ ঘন্টা যাবৎ সে এইভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রত্যাশাকে বলে ,

-বান্ধবী আর কতক্ষন এইভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো .স্কুল কলেজ লাইফে ও তো কখনো এইভাবে কান ধরে দাঁড়ায়নি .

আমি মনোযোগ দিয়ে মোবাইল গুতাচ্ছিলাম .সাবার কথায় একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার মোবাইলে মনোযোগ দেয় তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলি .

-আমাকে মিথ্যে বলার আগে মনে ছিলোনা যে আমি জানতে পারলে তোমাকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেব .

সাবা এবার ঠোঁট উল্টিয়ে বলে.

-আমার মিথ্যা কি তোর কোনো ক্ষতি করেছে নাকি .বরং আমি মিথ্যা বলাই তুই আমান ভাইয়ের মতো এমন হেন্ডসাম ডেশিং একটা জামাই পাচ্ছিস কোথায় তুই আমার তারিফ করবি তা না উল্টা আমাকে শাস্তি দিচ্ছিস .হায় কপাল দুনিয়াতে ভালো মানুষের কোনো দামই নেয়.

আমি ব্রু কুঁচকে বললাম.

-তুই কি চাস বিয়ের আগেই হানিমুনের জন্য উগান্ডা যেতে?

সাবা মাথা নাড়িয়া না বলে.

-হুম তাহলে গুড গার্লের মতো কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক.উইথ আউট এনি টক.ওকে বেবি !

সাবা বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো .

-জানু শোননা আমাকে তো বাড়িতে ফিরতে হবে তাই না.

-কোনো বাড়ি ফেরা হবে না .

দরজার দিকে দাঁড়িয়ে দেখি আম্মু হাতে একটা ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে .রুমে এসে ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে সাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে .

-প্রত্যাশার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তুই এই বাড়িতেই থাকবি . তোর বাবা মার্ সাথেও আমার কথা হয়েছে .উনারাও সম্মতি দিয়েছেন.আর প্রত্যাশার বিয়ের পর তো পার্মানেন্টলি এই বাড়ির মেয়ে হয়ে যাবি তাই আগে থেকেই থাকার অভ্যাস করেনে.

-কিন্তু মামনি..

-কোনো কিন্তু না আম্মু কি বলেছে শুনিসনি.সো আর কোনো কথা হবে না আম্মুর কথায় শেষ কথা .

-হুম .নে এবার দুজন কফি খা.

কথাটা বলেই আম্মু আম্মুর রুমে চলে যায় আর সাবা আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে ,

-আমি কি কফিটা খাবো?

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম ,

-এবারের মতো মাফ করে দিলাম .আর যদি কোনো দিন কোনো মিথ্যা কিংবা আমার থেকে কিছু লুকিয়েছিস না তাহলে তোকে আমি ফ্যানের সাথে উল্টা লটকিয়ে ইচ্ছা মতো ধুলায় দিবো ।

সাবা খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে .

-আচ্ছা সোনা আর কোনো কিছু তোর থেকে লুকাবো না প্রমিস .

-আচ্ছা আচ্ছা এবার ছাড় আমায়.
সাবাকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে যেই কফির মগটা হাতে নিতে যাবে অমনি কেউ ছো মেরে সেটা নিয়ে নেয় .

চলবে..

ভালোবাসি পর্ব-০২

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ ০২

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে বেশ গভীর ভাবে দেখছে।খুব অস্বস্তি ও বিরক্ত লাগছে,বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে দেখি সাবা আমার উপর ঝোকে আহাম্মকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে,ওকে দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল তাই রাগে দিলাম এক ধাক্কা,বেচারি তাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।

-ওমাগো আমার কোমর গেলো গো,আল্লাহ এখন আমার কি হবে,এই কোমর ভাঙা মেয়েকেতো কেউ বিয়েও করবে না,আমাকে তো সারাজীবন আয়বুড়ো হয়ে থাকতে হবে।

কথাগুলো বলে ও ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল,আমি বড় করে একটা হায় তুলে বললাম,

-শোন সাবু তোর শুধু কোমর কেন যদি শরীরের সব গুলো হাড় ও ভেঙে যায়না তবুও আমার ভাইয়া তোকে বিয়ে করবে,সো তোকে আর বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না।

আমার কথা শুনে সাবু মুখ ভেঙচিয়ে বলে,

-এএ আমার বয়েই গেছে তোর ঐ রাগি চন্ডালি ভাইকে বিয়ে করতে,

-আচ্ছা তাই নাকি।ভাইয়াকে ডেকে বলি যে তুই ভাইয়াকে বিয়ে করবি না?

-ডাক ডাক আমি তোর ভাইকে ভয় পায় নাকি!

আচ্ছা দাড়া এক্ষণি তোর সাহস বের করছি,কথাটা বলেই আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলাম,

-ভাইয়া ও ভাইয়া,শুনে যাও তোমার বউ কি বলে,সে নাকি তোমার মতো রাগি চন্ডালিকে বিয়ে করবে না।ও ভাই কই তুমি?জলদি আসো আমার রুমে।
.
আমার চিৎকারে ভাইয়া না এসে আম্মু আসলো,এসেই বিরক্তি নিয়ে বললো,

-কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?

-আম্মু ভাইয়া কই?

-তোর ভাই তো অফিসে গেছে,কেন?

-ও তাই বলি এই সাবুর এত সাহস দেখাচ্ছে কি করে,ভাইয়া তো বাসায় নায় তাই উনার আজ অনেক সাহস হয়ে গিয়েছে।

আমার কথা শুনে আম্মু সাবার দিকে তাকিয়ে দেখে ও বাম পায়ের উপর ডান পা ভাজ করে মেঝেতে আরামসে বসে মুখ টিপে হাসছে,

-কিরে সাবু আমাদের বাসায় কি বসার জায়গার অভাব পড়েছে যে তুই এভাবে মেঝেতে বসে আছিস?

সাবু এবার ইনোসেন্ট ফেইস করে বলে,

-আমি কি ইচ্ছে করে আর মেঝেতে বসে আছি,তোমার মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।
.
আম্মু এবার চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকায়,আম্মুর চাহনি দেখে আমি বোকার মতো একটা হাসি দিয়ে বলি,

-আম্মু ও সকাল সকাল এসে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে তাই রাগে ধাক্কা দেই,আর এই ঢংগি মেয়ে এখনো মেঝেতে বসে আছিস কেন উঠতে পারছিস না।

-কি করে উঠবো আমি কোমরে অনেক ব্যাথা পেয়েছি,

-এই এত ঢং করিস কেন!আম্মু ও একটুও ব্যাথা পায়নি,হুদাই আমাকে বকা শুনানোর জন্য মিথ্যে বলছে।

-না না মামনি আমি সত্যি বলছি,

-ঐ কুত্তি আর একবার মিথ্যে বললে আমি এবার তোর কোমরে পারা দিয়ে সত্যি সত্যি তোর কোমর ভেঙে দিবো কিন্তু।

আমার কথা শুনে আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-প্রত্যাশা,,
.
সাবুর দিকে তাকিয়ে দেখি পেতনিটা মুখ চেপে হাসছে,আমি ওকে টেনে উঠিয়ে বেডে বসিয়ে ওয়াশ রুমে চলে আসি।এই পেতনিটাকে পরে দেখে নিবো,

-মামনি, প্রত্তুকে যারা দেখতে এসেছিল তাদের ফ্যামিলি কেমন?

-আমাদের কাছে তো ভালোই মনে হলো।ইরফান ওদের সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবরও নিয়েছে।সবকিছু তো ভালোই দেখলাম,এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা।আমার তো চিন্তা হয় প্রত্যাশাকে নিয়ে ,দেখিস না এখনো ওর মধ্যে থেকে বাচ্চামু স্বভাব গুলোই গেলনা,কে জানি সংসার ঠিক ভাবে সামলাতে পারবে কিনা।

সাবা উঠে মামনির হাতে ধরে বলে,

-তুমি এত টেনশন করো নাতো মামনি,বিয়ের পর দেখবে ওর মধ্যে ম্যাচুরিটি চলে আসবে।

-হুম রে মা তুই ও একটু বুঝাস ওকে,তোর কথায় তো একমাত্র ও পাত্তা দেয়,নাহলে তো আমাদের কথা কানেও তুলে না।

-তুমি কোনো চিন্তা করো না,আমি ওকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবো তাহলেই ও বুঝবে।

মামনি সাবার থুতনিতে হাত রেখে বলে,

-হুম সাথে তোমারও কিন্তু নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে কারণ আর বেশি দিন নেয়,প্রত্তুর বিয়ের পরপরই তোমাকে তুলে আনার ব্যবস্থা করবো,আমার বাড়ির বউকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার সময় হয়ে গিয়েছে।
.
মামনির কথায় সাবা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেলে,সাবার লজ্জা মাখা মুখ দেখে মামনি হালকা হেসে রান্নাঘরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ বাদে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি পেতনিটা বারান্দার স্কটেচে বসে মোবাইল গুতাচ্ছে,আমি টাওয়ালটা বারান্দার দড়িতে রাখতে রাখতে বলি,

-কিরে আবার কার সাথে প্রেম করছিস?

সাবু মুচকি হেসে বললো,

-তোকে কেন বলবো!

আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলি,

-কি আমাকে বলবি না মানে,
কথাটা বলেই ছো মেরে ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেই,মোবাইলের স্ক্রিনে ভাইয়ার আর ওর চ্যাট বক্স ওপেন করা,আমি শয়তানি হাসি দিয়ে বলি,,

-আহা আমার ভাইয়া ও তো দেখছি খুব রোমান্টিক,কি কিউট ভাবে লিখেছে I love you dear❤।ওহহো কি প্রেম!

-ছি তোর লজ্জা করে না ছোটো বোন হয়ে ভাই আর ভাবির চ্যাট পড়ছিস!

আমি মোবাইলটা সাবার হাতে ধরিয়ে এক হাত দিয়ে ঢং করে সামনের চুল গুলো পেছনে ফেলে দিয়ে বলে,

-Nope. Because i have no shame. Understand?

আমার কথায় সাবা হালকা হেসে বলে,

-ওকে দেখবোনে তোমার জামাই যখন তোমাকে আদর করতে আসবে তখন তুমি লজ্জা না পেয়ে কি করে থাকো।

আমি ভেংচি কেটে বলি,

-আমি তো বিয়েই করবো না আবার জামাইয়ের আদর তো দূরে থাক।

আমার কথা শুনে সাবা জোড়ে জোড়ে হাসতে আরাম্ভ করে,তারপর হাসতে হাসতে বলে,

-কালকে তোকে আংটি পরিয়ে চলে গেছে আর এখনো তুই বিয়ে না করার ধান্দায় আছিস?

আমি সাবার পাশে বসে খুব সিরিয়াস হয়ে বললাম,

-আচ্ছা বিয়ে করাটা কি খুব জরুরি?

আমার প্রশ্নে সাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

-হ্যাঁ রে সব মেয়েকেই বিয়ে করতে হয়,সব মেয়েকেই বাপের বাড়ি ছেলে অন্যের বাড়িতে যেতে হয়।এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

-কিন্তু তুই বল আমার দ্বারা কি সংসার করা পসিবল?আমি কিছুই করতে পারিনা,আম্মু না ডাকলে আমার ঘুম ভাঙে না,আম্মু না বলা অবধি আমি গোসল করতে যায় না,আম্মু না বললে আমি খেতে বসি না,আম্মু না বললে আমি পড়তে বসিনা,আমার সব কিছুই তো আম্মু ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে করায়,আমি তো নিজের মত করে কিছুই করতে পারি না।বিয়ের পরে আমাকে কে এসব বলে বলে করাবে বলতো?(মন খারাপ করে বলি)

আমাকে মন খারাপ করতে দেখে সাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-জানিস তো প্রত্তু আমরা মেয়েরা না ঠিক তরল পদার্থের মতো যে পাত্রে আমাদের রাখা হয় আমরা সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করতে পারি।আজকে তুই বলছিস না তুই কিভাবে সংসার করবি একদিন দেখবি তুই পুরোপুরি নিজেকে সংসারের মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছিস।তখন তোর জন্য তোর বরের বাড়ির মানুষ গুলোই সব হবে,

-সাবু তুই কবে এত বড় হয়ে গেলিরে?

সাবা মুখ ফুলিয়ে বলে,

-তোর ভাইয়ের জন্যই তো আমাকে বড় হতে হয়েছে,নাহলে আমি এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে,তোর ভাইই তো আমার সাথে কাবিন করে আমাকে বড় বানিয়ে দিল,কতবার বললাম আমার ভার্সিটিটা আগে শেষ হোক তারপর না হয় বিয়েটা হবে কিন্তু না উনার তো সব কিছুতে তাড়াহুড়ো,তাই তো আগে আগে কাবিনটা হয়ে গিয়েছে,আর মামনিতো এখন বলছে তোর বিয়ের পরই নাকি আমাকে তুলে আনবে।

-oh great. কিন্তু আমি তো তখন এত মজা করতে পারবো না।(মন খারাপ করে)

-কেন পারবি না?তোর শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে একসাথে আনন্দ করবি বুঝেছিস!

-হুম।

আমি আর সাবা অনেক গল্প করছিলাম।হঠাৎই পেছন থেকে কেউ গলা কাশি দিয়ে উঠল,আমি পেছনে ফিরে দেখি আমান মুখে একটা টেডি স্মাইল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর আমানকে দেখা মাত্রই সাবা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে,সাবার কর্মকান্ডে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।

চলবে,,,

ভালোবাসি পর্ব-০১

0

গল্পঃ- ভালোবাসি।
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০১

আমি প্রেগনেন্ট জেনেও আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?
আমার সামনে থাকা মানুষটি বেশ শান্ত গলায় বললো,
-জি.

-কিন্তু কেন?আপনি জানেন না যেসব মেয়েরা বিয়ের আগে প্রেগনেন্ট হয় সেই সব মেয়েদেরকে সমাজ কটু চোখে দেখে.দেখুন আমাকে বিয়ে করে আপনি সুখী হতে পারবেন না.আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আর আমার পেটে তারই সন্তান।

-সমস্যা নেয় আমি আপনার আর আপনার সন্তান উভয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি আছি.আর বিয়ের আগে এমন সবারি প্রেম ভালোবাসা থাকে সেটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।

কথাটা বলে উনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যায়.আমি মাথায় হাত দিয়ে বসি পড়ি.মনে মনে বলি এবার বোধ হয় বিয়েটা হয়েই যাবে.না না কিছু একটা করতে হবে.আমি টেবিল থেকে আমার মোবাইলটা নিয়ে সাবাকে কল দেই.

-হ্যালো! কিরে এই বিয়েটাও নির্ঘাত শেষ.

-নারে এইবার বোধ হয় হয়ে যাবে .

আমার কথায় সাবা লাফিয়ে উঠে বলে.

-সত্যি!যাক এবার তাহলে তোর বিয়েটা খেতে পারবো.

আমি রেগে গিয়ে বললাম.

-ওই কুত্তি তোকে কি আমি বিয়ে খাওয়ানোর জন্য কল দিয়েছি.শোন আমি বিয়ে করবো না আর এখন কিভাবে বিয়েটা বেসতে দিবো সেই প্লেন দে .

-আমি কি প্লেন দিবো.আর তুইতো বললি যে ছেলে দেখতে আসবে তাকে তুই মিথ্যে কথা বলবি .বলবি যে তোর অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক আছে আবার তার বাচ্চাও তোর পেটে.তা এসব বলেছিস তুই?

-হুম বলেছি তো কিন্তু কোনো লাভ হয়নি ওই ছেলে তবুও আমাকে বিয়ে করতে রাজি .

-কি বলিস.দোস্ত শুন তুই আর তেড়ামি করিস না, এবার প্লিজ রাজি হয়ে যা আজ কাল এমন ছেলে কোথায় পাওয়া যাবে বল যে কিনা প্রেগনেন্ট জেনেও সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে যদিও সবটা সাজানো তবুও আমার মনে হয় ছেলেটা ভালো।
সাবার কথা শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেলো. আমি ক্ষেপে গিয়ে বলি.

-তোর যদি এত ভালো লাগে তাহলে তুইই বিয়েনা করেনে যত সব ফালতু.

রাগে ফোনটা কেটে দেই.তখনি আম্মু আমার রুমে আসে.

-প্রত্যাশা মা চল.ড্রইং রুমে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে
.
আমি একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললাম
.
-আবার কোন নতুন নাটক করতে ডাকছে বলোতো?

আম্মু আমার মাথায় কাপড় টেনে দিয়ে বলে .

-কিসের নাটক.তোর বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গিয়েছে.উনারা চাচ্ছেন আজই তোকে আংটি পরিয়ে দিতে .

আমি চিল্লানি দিয়ে বললাম .

-কিহহ!

-আরে আস্তে.এত চিল্লা চিল্লি করছিস কেন .উনারা শুনবে তো.

-শুনলে শুনুক.আর কি দেখতে এসে আংটি পড়িয়ে ফেলবে.মগের মুল্লুক নাকি .আমার একটা প্রিপারেশনের প্রয়োজন আছে এভাবে বললেই কি সব কিছু হয়ে যায় নাকি.

আম্মু এবার ব্রু কুঁচকে বলে .

-প্রিপারেশন আবার কিসের এখানে তো আর বিয়ে হচ্ছে না সামান্য আংটি বদল.এটার জন্য এত প্রিপারেশনের প্রয়োজন নেয়.

-কিন্তু আম্মু সাবা নেয় যে ওকে ছাড়া কি করে আংটি বদল হবে .ওকে ছাড়া আজ পর্যন্ত কিছু করেছি বলো.ও শুনলে অনেক কষ্ট পাবে.

-এক কাজ কর ও যেহেতু এখন ওর গ্রামের বাড়িতে আছে তাই তো আর আসতে পারবে না তুই বরং ওকে ভিডিও কল দে.তাহলে ও সবটা দেখতে পাবে.

-ভিডিও কলে কি আর সব বুঝা যায় নাকি .ও ২ দিন পর চলে আসবে তো তখনি না হয় সব কিছু হোক।

-না ২ দিন পর না আজই হবে.আমার সাবার সাথে এক্ষনি কথা হয়েছে ও বলেছে ওর কোনো আপত্তি নেয় ও বরং খুশি হয়েছে.

পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজে পেছনে ফিরে দেখি বড় ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভাইয়াকে দেখা মাত্র আমার গলা শুকিয়ে উঠলো,হায় খোদা আর বোধ হয় কোনো উপায় নেয় এই বিয়েটা আটকানোর।মনে মনে ভাবছি আমার বেস্টুর মতো যদি একটা বেস্টু থাকে না তাহলে তার আর কোনো শত্রুর প্রয়োজন হবে না.একবার পাই শুধু তোকে তোর ২০৭টা হাড়কে আমি ভেঙ্গে ৩০৭টা হাড়ে পরিণত করবো.

-কিরে কি ভাবছিস?এখন তো আর কোনো সমস্যা নেয়.নাকি তোর আরও কোনো প্রব্লেম আছে ?

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম.

-না.

-হুম তাহলে ড্রইং রুমে চল উনারা সবাই অপেক্ষা করছেন।

আস্তে করে বললাম .

-চলো।

এক পর্যায়ে আমাকে আংটি পরিয়ে.বিয়ের ডেট ফিক্সট করে তবেই উনারা গেলেন.আর এই দিকে রাগে আমার গায়ে আগুন জ্বলছে.ইচ্ছে করছে এই আগুনে ওই ছেলেটাকে ভস্ম করে দেই .কি অদ্ভুত লোক!এত মিথ্যে বলেও কোনো লাভ হলো না সেই বিয়েটা ফিক্সট হয়ে গেলো.এর আগের দুটো বিয়ে আমি এইভাবে ভেঙে দেয় কিন্তু আজ আর হলো না,কি করে আমার মা আর ভাইয়াকে বুঝায় আমি এখন এই বিয়ে নামক প্যারাতে নিজেকে জড়াতে চাই না।ধুরর!

রাত ১১.৩০ টা,,

রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছিলাম.তখনি আমার ফোনে একটা আননোন নাম্বারে কল আসে.আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করি না.কিন্তু এ ও তো দেখি নাছোড় বান্দা ফোন দিয়েই যাচ্ছে.আমি ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে আমি বলতে শুরু করি.

-হ্যালো কে! এত রাতে কি ভীমরতি ধরেছে নাকি দেখছেন না বার বার কলটা কেটে দিচ্ছি তাও কল দিয়েই যাচ্ছেন এটা কেমন ধরণের অভদ্রতা.সমান্য মেনার্সটুকু নেয় না.খবরদার যদি আর একটা কলও এসেছে তো আমি এবার পুলিশ কমপ্লেইন করবো.

এবার ওপাশ থেকে হালকা আওয়াজ ভেসে আসে .

-আপনি তো দেখছি খুব ডেঞ্জেরাস.সামান্য কল করতে আপনি আমাকে পুলিশে দিবেন.আপনার থেকে তাহলে তো নিজেকে সেইফ রাখতে হবে .কখন আবার রেগে গিয়ে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন বলা তো যায় না.

আমি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি.

-কে আপনি?

উনি কিছুটা চুপ থেকে বলেন.

-আমান বলছি.

আমি শুয়া থেকে দ্রুত উঠে বসে বলি.

-আপনি? আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?

-আপনার ভাইয়া দিয়েছিল.

উফফ ভাইয়া!ইচ্ছে করছে ভাইয়ার রুমে কোটি কোটি মশা ছেড়ে দিয়ে আসি আর এই মশা গুলো ইচ্ছে মতো ভাইয়াকে কামরড়াক তবে আমার শান্তি হতো.(মনে মনে)

-আপনাকে ভাইয়া নাম্বার দিয়েছে বলে আপনিও কল দিয়ে দিবেন!আর এখন আমার বয়ফ্রেন্ডের কল দেয়ার সময় হয়েছে ও যদি এখন কল দিয়ে দেখে আমার নাম্বার ওয়েটিং এ আছে তাহলে আমাকে সন্দেহ করবে.তাই আমি আর আপনার সাথে কথা বলতে পারছি না সরি.

উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে.

-যে সম্পর্কে সন্দেহ আছে ওই সম্পর্কের কোনো মূল্য থাকে না জানেন তো!

আমি মনে মনে ভাবছি নিজের কথার পেঁচে নিজে পরে যায়নি তো!আমি আমতা আমতা করে বললাম.

-সসব সম্পর্কেই একটু আধটু সন্দেহ থাকে এতে করে সম্পর্ক মজবুত হয় ।

প্রত্যাশার এমন বোকা মার্কা কথায় আমান হেসে ফেলে.

-এই আপনি হাসছেন কেন?

-না আসলে আমি এই প্রথম শুনলাম সন্দেহও কোনো সম্পর্ককে মজমুত করে.

-মানুষ সব কিছু প্রথমই শুনে.সবাই তো আর সব কিছু জানে না .আপনার জানা নায়ই থাকতে পারে তাই বলে আরেক জনের উপর হাসবেন!

-আচ্ছা আচ্ছা আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ।আমি জাস্ট একটু মজা করছিলাম.আচ্ছা তো আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলুন আমি রাখছি .আল্লাহ হাফেজ।

আমি কিছু বলার আগেই উনি কলটা কেটে দেয়.কি অদ্ভুত লোকরে বাবা.আমাকে বিকেলে আংটি পরিয়ে দিয়ে রাতে বলে কিনা আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলুন.এর কি মাথায় কোনো সমস্যা টমস্যা আছে নাকি.আমি আজ অবধি কোনো ছেলেকে দেখিনি যে কিনা নিজের হবু বউকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলে.কি জানি উনি কেমন লোক.এত কিছু বললাম তাও উনি বিয়েতে রাজি.উনি কি বুঝে গেলেন নাকি যে এইসব কিছু মিথ্যে তাই হয়তোবা উনিও উল্টো আমার সাথে মজা নিচ্ছে.উম্ম হতে ওতো পারে.কিন্তু বুঝবো কি করে উনি সবটা বুঝে গিয়েছেন কি না?

আচ্ছা যাকগে কালকে সকালে এসব নিয়ে ভাববো এখন প্রচুর ঘুম আসছে.চোখে একরাশ ঘুম নিয়ে বিছানায় ঢলে পড়ি.
.
চলবে…

বসন্তের আগমনে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৬ (অন্তিম পর্ব)

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

ঈশা মুখ ভেঙচি দিয়ে আরহানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো।আরহান ঈশার কান্ডে ভ্রু কুচকে তাকালো।ঈশা আয়েশা বেগমের হাত ধরে বললো,

“অনেক প্রশংসা করেছো বউমার!এখন চলো সকালের নাস্তা বানাতে হবে তো।”

আয়েশা বেগম মৃদু হেসে বললেন,

“তোর কিছু করতে হবে নাহ্।তুই বরং আরহানের সাথে বসে গল্প কর।”

“না শ্বাশুমা তোমার ছেলের সাথে বসে গল্প করার ওতো দরকার নেই।তার সাথে গল্প করার চেয়ে তোমার কাজে হেল্প করার দরকার বেশি।”

ঈশা আয়েশা বেগমকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো।সকালে নাস্তা বানানো শেষ হলে সবাই একসাথে নাস্তা করে নিলো।

এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেলো।আরহান আর ঈশা দুজনে এক সুন্দর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।

আয়েশা বেগম আর ঈশা বসে বসে গল্প করছে।হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।কলিংবেল বাজতেই ঈশা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলতেই হিয়া এসে ঈশার গলায় ছুঁড়ি চেপে ধরলো।হিয়া এমন কান্ডে তো আয়েশা বেগম ভয়ে কাঁপছে।আয়েশা বেগম আরহান নাম ধরে ডাকা শুরু করলো।

হিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“আরহান শুধু আমার।আরহান আমার না হলে আর কারো হতে পারবে নাহ্।”

আয়েশা বেগমের ডাকে আরহান দৌড়ে তার রুম থেকে এসে দেখলো হিয়া ঈশার গলায় ছুঁড়ি চেপে ধরে রেখেছে।আরহান দ্রুত এসে হিয়ার হাত থেকে ছুঁড়িটা ছাড়িয়ে ঠাস করে ওর গালে একটা থা*প্প*ড় মারলো।হিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো,

“তোর এতো সাহস তুই আমাকে আবার চ*ড় মারলি!”

“তোর মতো মেয়ের জন্য এটাই ঠিক আছে।আর আমি এখন পুলিশকে কল করে বলবো তোকে জেনো ধরে নিয়ে চলে যায়।তোর মতো মেয়ের জেলেই থাকা উচিত।”

আরহান যেই মোবাইল বের করে কল করলো।হিয়া পালাতে গেলে ঈশা এসে হিয়ার হাত চেপে ধরলো।হিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“ছাড় আমাকে!”

ঈশা মৃদু হেসে বললো,

“না আপু আপনাকে আর ছাড়া যাবে না।আপনাকে জেলের ভাত না খাওয়ালে আপনি ঠিক হবেন নাহ্।”

হিয়া বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

“তোরা আমাকে কিসের ভিত্তিতে অ্যারেস্ট করাবি!আমি একটু আগে যা করেছি তার কি কোনো প্রমাণ আছে?”

আয়েশা বেগম হিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“হিয়া তুমি ভুলে যেও নাহ্।আমাদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে কিন্তু সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।”

আয়েশা বেগমের কথায় হিয়ার মুখ ভয়ে চুপসে গেলো।কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে হাজির হলো।আরহান সব প্রমাণ পুলিশকে দেখিয়ে বললো,

“ও আমার স্ত্রী কে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে ছিলো।আর হ্যাঁ আগের বার তো ওর বাবার কারণে ওর কোনো শাস্তি হয়নি।দয়া করে একটা অনুরোধ এই মেয়েটাকে প্লিজ আর ছেড়ে দিবেন নাহ্।ওর মতো মেয়ে এই সমাজের জন্য অনেক ক্ষতিকর।প্লিজ ও-কে নিয়ে যান।”

হিয়াকে দুজন মহিলা পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো।আরিশা গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে এই ঘটনা দেখতে পেলো।দৌড়ে বাড়ির ভিতরে আসলো।তারপরে বললো,

“হিয়া আপুকে পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেলো কেনো?”

ঈশা আরিশাকে সবটা বললো।সবটা শুনে আরিশা বললো,

“যাক ভালো হয়েছে।আমাদের আর কোনো ঝামেলা রইলো নাহ্।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন।”

রাতের বেলা,

ঈশা চুল আছড়াচ্ছিলো আরহান গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।ঈশা মুচকি হেসে বললো,

“কি হয়েছে মি.অভদ্র?”

“আমার বউ তাহ্ এতো সুন্দরী যে তাকে ছেড়ে আমার এক মুহূর্ত থাকতে ভালো লাগে নাহ্!”

“থাক হয়েছে।রাতের বেলা ঢং শুরু করেছে।আমি না থাকতে পারিনা।সেই মি.অভদ্র আর এই মি.অভদ্রের মধ্যে কত পার্থক্য!”

“আসলেই অনেক পার্থক্য তাই নাহ্ ঈশু!”

“আসলেই।তবে ভালো হয়েছে।তুমি যে এখন লক্ষী বর হয়ে গেছো।নাহলে যে আমার কি হতো কে জানে!”

আরহান হাসি দিয়ে বললো

“আচ্ছা তুমি কি আমাকে আগে ভয় পেতে?”

“মোটেও নাহ্।তোমার মতো কিউট বয়কে কিভাবে কেউ ভয় পায়!”

আরহান কোমড় চেপে ধরে বললো,

“সত্যিই কিউট নাকি?”

“প্রচুর।পুরাই কিউটের ডিব্বা।”

আরহান ঈশার গালে চুমু দিয়ে বললো,

“আই লাভ ইউ মিসেস.বকবকানি।”

“আই লাভ ইউ টু মি.অভদ্র উপ্স মি.কাস্টার্ড।”

ঈশার কথায় আরহান হেসে দিলো।ঈশাও হাসি দিয়ে আরহানকে জড়িয়ে ধরলো।

এক বছর পর,

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ঈশার কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।একটু পরে ঈশা এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।আরহান ঈশাকে দেখে বললো,

“যাক তাহলে তোমার এক্সাম শেষ।এখন চলো আমরা আজকে রেস্টুরেন্টে খাবো।আরিশা ওয়েট করতেছে আমাদের জন্য।”

“শ্বাশুমা আসেনি?”

“মাকে অনেকবার বললাম।তবে মা আসবে নাহ্।তাই ভাবলাম খাবার পার্সেল করে নিয়ে যাবো।”

“ধূর শ্বাশুমা না আসলে ভালো লাগে নাকি!”

“হয়েছে শ্বাশুমার চামচা।এখন চলো।”

“তুমি বেশি কথা না বলে আলভিকে আমার কোলে দেও।আর গাড়ি নিয়ে এদিকে আসো।”

“যথাআজ্ঞা বিবিজান।”

আরহানের কথায় ঈশা মুচকি হেসে আলভিকে কোলে নিলো।আরহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঈশাদের সামনে আসবে এমন সময় একটা ট্রাক এসে আরহানের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলো।যার কারণে আরহানের গাড়ি ছিটকে গিয়ে খানিকটা দূরে পড়লো।ঈশা সবটা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশা আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,

“আরহান………….”

কিছুক্ষণের মধ্যে আরহানের গাড়ির চারিপাশে মানুষের ভিড় জমে গেলো।কয়েকজন মিলে আরহানকে গাড়ি থেকে বের করলো।আরহানকে সারাশরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে গেছে।মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে সাদা শার্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে।ঈশা আলভিকে তার এক বান্ধবীর কোলে দিয়ে ছুটে গেলো আরহানের কাছে।আরহানের অবস্থা দেখে ঈশা জোরে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলো।

লোকজন মিলে অ্যাম্বুলেন্স এনে ঈশা আর আরহানকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।ঈশার বান্ধবী আলভিকে নিয়ে তাদের পিছনে গেলো।আরহানকে হসপিটালের নেওয়ার সাথে সাথেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো!আর ঈশাকে ডক্টর চেক করতেছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা হসপিটালে এসে দেখলো একটা মেয়ে আলভিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা তার দিকে এগিয়ে গেলো।আয়েশা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“আমার ছেলে আর বউমা কেমন আছে?তুমি কিছু জানো মা?”

নিহা আয়েশা বেগমের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“আন্টি প্লিজ কান্না করবেন নাহ্।নিজেকে সামলান।আরহানকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কারণ ওর মাথা দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছিলো।আর ঈশা সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার কারণে ও-কে ডক্টর চেক-আপ করতেছে।”

আয়েশা বেগম ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।আরিশা গিয়ে আয়েশা বেগমের পাশে বসে বললো,

“আম্মু প্লিজ নিজেকে একটু সামলাও।ওদের কিচ্ছু হবে নাহ্।”

“আমার বাবাই আর ঈশা আম্মুকে এনে দেও।”

আলভির কথায় আয়েশা বেগমের কান্না বেগ আরো বেড়ে গেলো।নিহা আলভিকে কোলে নিয়ে ও-কে বোঝাচ্ছে।হঠাৎ ডক্টর এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।ডক্টরকে দেখে আরিশা এগিয়ে গিয়ে বললো,

“ডক্টর আমার ভাইয়া আর ভাবি কেমন আছে?মানে মি.মির্জা আর মিসেস.মির্জা।”

ডক্টর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“মিসেস.মির্জা মা হতে চলেছেন কংগ্রাচুলেশনস।”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“আলহামদুলিল্লাহ।আর ভাইয়া কেমন আছে?”

“সরি তাও এটা আমাদের বলতে হবে।He is no more.আরহান সাহেব আর বেঁচে নেই।আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছু করা সম্ভব হয়নি।”

আয়েশা বেগম চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো।আর আরিশা তার জায়গায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ডক্টর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“মিসেস.মির্জার জ্ঞান এসেছে।উনি অনেক উত্তেজিত হয়ে আছেন।আপনারা গিয়ে একটু দেখা করেন।আমরা উনাকে কিছু জানায়নি।”

ডক্টর কথাটা বলে চলে গেলেন।নিহা একদিকে আয়েশাকে সামলাচ্ছে।আরেক দিকে আলভিকে।তবে আরিশা নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে।সে চোখের পানি মুছে বললো,

“নিহা আপু তুমি আম্মু আর আলভিকে একটু দেখো।আমি ভাবিকে দেখে আসতেছি।”

আরিশা ঈশার ক্যাবিনে গিয়ে দেখলো ঈশা থ হয়ে বসে আছে।আরিশা গিয়ে ঈশার সামনে দাঁড়াতেই ঈশা আরিশার হাত ধরে বললো,

“ননদিনী মি.অভদ্র কেমন আছে?ও কি করতেছে?”

আরিশা কষ্ট চেপে রেখে হাসি দিয়ে বললো,

“আরে ভাবি তুমি মা হতে চলেছো।এটা নিয়ে ভাবো নাহ্!ওইসব পরে ভেবো!”

“আরিশা আমাকে বলো আগে আরহান কেমন আছে?”

আরিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“ভাবি ভাইয়া আর নেই।”

কথাটা শুনে ঈশা চমকে উঠলো।ঈশা হা হয়ে আরিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নিজের পেটে হাত দিয়ে বললো,

“তোর বাবা আমাদের একা করে চলে গেলো।সমস্যা নেই।আমি আমার বড় ছেলে আর তোকে নিয়েই থাকবো!”

ঈশা কথাটা বলে অনেক কষ্টে কান্না চেপে বললো,

“আরিশা চলো শেষবারের মতো তোমার ভাইয়াকে দেখে আসি।

আরিশা কিছু না ঈশাকে নিয়ে আরহানের কাছে গেলো।সেখানে আয়েশা বেগম আর নিহা দাঁড়িয়ে আছে।তৈয়ব সাহেব আর মাসুমা বেগম আলভিকে নিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।

ঈশা চারিপাশে এক পলক তাকিয়ে আরহানের বেডের দিকে এগিয়ে গেলো।আরহানের গালে কাঁপাকাঁপা হাত রেখে বললো,

” খুব ভালো লাগতেছে আমাদের কষ্ট পেতে দেখে।এতো সহজে কিভাবে চলে গেলে তুমি!আমাকে এভাবে একা করে তুমি চলে যেতে পারলে মি.অভদ্র?যাক চলে যখন গেছো তখন তো আর কিছু করার নেই।তবে হ্যাঁ তুমি দেখে নিয়ো আমি আমার আলভি আর নতুন অতিথিকে নিয়ে অনেক সুখে থাকবো।তুমিও ভালো থেকো।আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কারো জায়গা হবে নাহ্!আই লাভ ইউ মাই মি.অভদ্র।”

আরহানের নিথর দেহটা পড়ে রইলো।ঈশা তার চোখের পানি মুছে আলভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

—🌻—

বিশ বছর পরে,

গায়ে সাদা-কালো রঙের শাড়ি,চুলে খোঁপা করা,চোখে কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঈশা।হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

“ইয়াহু!ঈশা আম্মু আমি এখন একজন সিভিল ইন্জিনিয়ার।সবটা তোমার জন্য হয়েছে ঈশা আম্মু।”

“আরহান সাহেবের ছেলে বলে কথা।যেটা জেদ করবে সেটা তো উসুল করেই ছাড়বে!”

“খালি আরহান সাহেবের না আমি ঈশা সাহেবারও ছেলে।তবে পুচকি কই?”

ঈশার পিছন থেকে একটা মেয়ে সামনে এসে বললো,

“এই যে ভাইয়া আমি এখানে!”

আলভি আর্শাকে দেখে মুচকি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“পুচকি বনু তাহ্ আমার!”

ঈশা তার দুই ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তোরা আছিস বলেই আমি এখনো বেঁচে আছি।তবে আমার শ্বাশুড়ি মা আর আরহান বেঁচে থাকলে আজকে সবচেয়ে খুশি হতো।”

আলভি ঈশাকে বললো,

“ঈশা আম্মু পিমনি আসবে না?”

“হ্যাঁ তোর পিমনি আর ফুপ্পা একটু পরেই আমাদের বাড়িতে আসবে।তুই আর আর্শা বাড়িতে চলে যা আমি একটু পরে আসতেছি।”

“ওকে আম্মু।”

আলভি আর্শাকে নিয়ে চলে গেলো।ঈশা সোজা আরহানের কবরের কাছে গেলো।আরহান কবরের সামনে যেতেই ঈশার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।চোখ থেকে চশমা খুলে আরহানের কবরের সামনে বসে বললো,

“কি গো মি.অভদ্র!কেমন আছো তুমি?দেখলে আমি তোমার আলভিকে ঠিকই মানুষের মতো মানুষ করতে পেড়েছি।তবে জানো তোমার শূন্যতা কখনোই পূরণ হবে নাহ্।আজ যদি তুমি আমার পাশে থাকতে তাহলে কতই নাহ্ ভালো হতো!আমি ভাবিনি তোমাকে ছেড়ে আমার কখনো থাকতে হবে।কিন্তু দেখো তোমাকে ছেড়ে আমি বছরের পর বছর পাড় করে ফেলতেছি।তবে তোমাকে এক মূহুর্তের জন্যও ভুলিনি।”

ঈশা কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপরে চোখের পানি মুছে উঠে চলে আসলো।

——————-#সমাপ্ত——————-

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১৫

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মাঝরাতের হালকা শীতল বাতাস।আরহান আর ঈশা বসে সেই শীতল বাতাস উপভোগ করছে।দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।নিরবতা ভেঙে ঈশা বললো,

“আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে মি.অভদ্র।”

“হুম বলো নাহ্!”

“সেদিন একটা ছেলের সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করেছিলাম নাহ্!ওই যে রুশান!”

“হ্যাঁ ফুচকা খেতে গিয়ে মেইবি।”

“হুম।ও আমার চাচাতো ভাই।আমি যখন ক্লাস টেন এ পড়ি তখন আমার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিল!আল্লাহর অনেক রহমত যে বাবা ওই দিন চলে এসেছিলো।নাহলে আমি আজকে এই জায়গায় থাকতে পারতাম নাহ্।ওই ঘটনার পরে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।অনেক টাইম লেগেছে আমার ঠিক হতে।অতিরিক্ত রাগ হলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। তবে হ্যাঁ এখন আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি।সেটা তোমার থেকেই শেখা।”

আরাহান ঈশার হাত ধরে বললো,

“এইসব ভেবে কখনো কষ্ট পাবে নাহ্।অতীত তো অতীত’ই।”

ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।আরহান মৃদু হেসে বললো,

“সকাল তো প্রায়ই হয়েই গেলো।এখনই ফজরের আযান দিবে।চলো আমরা দুজন আজকে একসাথে নামাজ পড়বো।”

আরহানের কথায় ঈশা হাসি দিয়ে সম্মতি জানালো।তারপরে তারা ছাদ থেকে রুমে চলে আসলো।দুজনে ওযু করে নামাজ পড়তে বসলো।

নামাজ পড়ে শেষ করে আরহান বললো,

“ঈশা সারারাত ঘুমাও নাই।এখন একটু ঘুমিয়ে নেও।”

“তুমি কি করবে?”

“আমার একটু অফিসের কাজ আছে।”

“ওকে তুমি তাহলে কাজ করো।আমি বরং নিচে যাই।এমনিতেও এখন আমার আর ঘুম আসবে নাহ্।”

“আরে শরীর খারাপ লাগতে পারে।”

“আমার এমন অভ্যাস আছে।পরীক্ষার সময় তো রাত জেগে পড়ি।আর এমনিতেও একদিন না ঘুমালে কিছু হয় না।”

“তবে আমি তো জানি তুমি নাকি ঘুমপাগলি!”

“আরে নাহ্।কে বলছে এইসব?”

“ওই যে ওইদিন কতো লেট করছিলে শপিংয়ে যেতে!”

“আরে আমি তো ভেবেছিলাম আমার বরতাহ্ কেমন না কেমন হয়!বিয়ের পরে দেখা গেলো আমাকে বাড়ি দিয়েই বের করে দিলো।তখন তো রাস্তায় যেয়ে ঘুমাতে হতো।তাই বিয়ের আগে তিনদিন ভালো ভাবে ঘুমিয়ে নিয়েছি।”

ঈশার কথা শুনে আরহান জোরে হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“তা তোমার বরতাহ্ কেমন হয়েছে?”

“অভদ্রের মধ্যে ভদ্র।”

“মানে অভদ্র উপাধিটা বাদ দিবে নাহ্?”

“কখনোই নাহ্।”

কথাটা বলে ঈশা রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আরহান মুচকি হেসে বললো,

“পাগলি একটা!”



ঈশা নিচে গিয়ে দেখলো আয়েশা বেগম আর আরিশা গল্প করছে।ঈশা গিয়ে তাদের পাশে বসলো।

“গুড মর্নিং ভাবি।”

“গুড মর্নিং ননদিনী।”

আয়েশা বেগম ঈশার কাঁধে হাত রেখে বললো,

“হ্যাঁ রে মা!আরহান আবার তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তো?”

ঈশা আয়েশা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে বললো,

“নাহ্ মা।উনি অনেক ভালো।আমি যেমনটা ভাবতাম আমার ধারণা একদম ভুল ছিলো।”

আরিশা মুচকি হেসে বললো,

“তা ভাবি বাসর রাত কেমন কাটলো!”

আরিশার কথা শুনে ঈশা কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলো।কারণ আয়েশা বেগম তার পাশেই বসে আছেন।আয়েশা বেগম আরিশার কান টেনে বললো,

“তুই একদম বেশি চালাক হয়ে গেছিস।দিলি তো মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলে।”

“আরে আম্মু আমি কি এমন বললাম!খারাপ কিছু তো বলিনি।”

“চুপ কর।ঈশা তুই ওর বাদ দে।বল আজকে ব্রেকফাস্টে কি খাবি।আমি তোর পছন্দ মতো ব্রেকফাস্ট বানাবো বলে এখনো বসে আছি।”

ঈশা আয়েশা বেগমের কথায় অবাক হয়ে গেলো।ঈশা তার ঠোঁটের স্মিত হাসি টেনে বললো,

“আমি কখনো ভাবিনি আমার শ্বাশুড়ি মা এতো ভালো হবে!”

ঈশার কথায় আয়েশা বেগম চুপ থাকলেন।আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“খালি শ্বাশুড়ি মা-ই ভালো!ননদ বুঝি ভালো নাহ্?”

আরিশার কথায় আয়েশা বেগম আর ঈশা দুজনেই হাসলেন।ঈশা আরিশার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“ননদ তো আরো বেশি ভালো।মোট কথা আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই ভালো।তবে হ্যাঁ সবচেয়ে বেশি ভালো হলো আমার আলভি বাচ্চু।কিন্তু ও কোথায়?”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“ঘুমাচ্ছে ভাবি।সমস্যা নেই একটু পরেই চলে আসবে।”

“ঈশা আন্টি…..”

আলভির গলা শুনে ঈশা সিঁড়ির দিকে তাকালো।দেখলো আলভি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশার মুখেও হাসি ফুটলো।আলভি দৌড়ে এসে ঈশার কোলে বসলো।

“দেখলে ভাবি বলতে বলতেই চলে এসেছে।”

আলভি ঈশার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আন্টি থুমি কখন এচেছো?”

“কালকে রাতে বাচ্চু।”

“জানো আমি তো ভেবে চিলাম থুমি আতবে নাহ্।তাই মন খালাপ কলে গুমিয়ে গেচিনাম।”

ঈশা আলভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আহারে আমার বাচ্চুটা কত কষ্ট পেয়েছে!সরি বাবা।”

“ইট ওখে!”

আলভির কথা শুনে আরিশা বললো,

“ওটা ইট ওখে নাহ্।ইট’স ওকে।”

“ওই পিমনি থুমি চপ থাকু।”

“নিজে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে নাহ্ তা কিছু না।আমি বললেই দোষ।”

আলভি চোখ রাঙিয়ে বললো,

“চপ।”

আয়েশা বেগম আর ঈশা দুজনেই হাসছে আরিশা চর আলভির কান্ড দেখে।আয়েশা বেগম বললেন,

“অনেক ঝগড়া হয়েছে এখন তোরা দুজনে থাম।ঈশা মা বল ব্রেকফাস্টে কি খাবি।”

“শ্বাশুমা তোমার ইচ্ছা মতো বানাও।আমি বরং তোমাকে হেল্প করতেছি।”

“তাহলে তোকে আমি লুচি আর আলুর দম বানিয়ে খাওয়াবো।মাসুমা ভাবি বলছে এটা তো পছন্দের খাবার।”

আরহান নিচে এসে দেখলো আয়েশা বেগম আর ঈশা রান্নাঘরে কাজ করছে।আরিশা আর আলভি টিভি দেখছি।আরহান ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়াতেই দরজার কলিংবেল বেজে উঠলো।আরিশা উঠতে গেলে আরহান বললো,

“তুই টিভি দেখ।আমি দেখতেছি কে আসছে!”

আরহান দরজা খুলে দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে।হিয়াকে দেখেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।আরহান চোয়াল শক্ত করে বললো,

“আপনি এখানে এসেছেন কেনো?”

“তোমাকে বউকে দেখতে আসতেই হতো।আফটার অল আমার জা বলে কথা।”

“শাট-আপ!আপনি এই মূহুর্তে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।”

“আরহান সবসময় এমন বিয়েইভ করা ঠিক নাহ্।”

আরহান চিৎকার করে বললো,

“আপনার সাথে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার আমার দ্বারা সম্ভব নাহ্।সো চলে যান এখান থেকে।”

আরহানের চিৎকার শুনে আয়েশা বেগম,ঈশা আর আরিশা দরজার কাছে চলে আসলো।আয়েশা বেগম হিয়াকে দেখে বললো,

“তুমি এখানে এসেছো কেনো?তুমি কি আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে নাহ্।”

হিয়া বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

“আহারে!বুড়িটার কি কষ্ট।”

আরহান রাগ কন্ট্রোল করতে না পেড়ে ঠাস করে হিয়ার গালে একটা চড় মারলো।হিয়া গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে আরহানের দিকে তাকালো।আরহান হিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হিয়ার হাত টানতে টানতে বাড়ির গেটের বাইরে নিয়ে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে বললো,

“এই বাড়ির ত্রিসীমায় আপনাকে দেখলে আপনার যে কি অবস্থা হবে তা আপনি বুঝতে পারছেন নাহ্!”

আরহান আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে বাড়ির ভিতরে চলে আসলো।হিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,

“নিজের বিপদ তুমি নিজেই ডেকে আনতেছো আরহান!”

হিয়া কথাটা বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।

||🌸||

আরহান বাড়ির ভিতরে এসে দেখলো সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“আরে সবাই এমন চুপচাপ হয়ে আছো কেনো!আরিশা আজকে তোর ভাইয়ের বিয়ের পরেরদিন এতো চুপচাপ থাকলে চলবে নাকি!একটু হৈ-হুল্লোড় কর।”

আরহান কথাটা বলে আলভির কাছে যেতে গিয়ে ঈশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“ঈশা এই সেই হিয়া।কালকে যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।”

আরহান কথাটা বলে আলভির পাশে গিয়ে বসলো।এদিকে আরহানের কথা শুনে আয়েশা বেগম আর আরিশা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যেই ছেলে হৈচৈ পছন্দ করে নাহ্।সেই ছেলে হৈচৈ করার কথা বলছে!

আয়েশা বেগম ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে ঈশার গালে হাত দিয়ে বললো,

“মা-রে তোর জন্য আমার ছেলের মাঝে এতো পরিবর্তন এসেছে।তুমি আমার রাগী ছেলেটাকে একদম হাসি-খুশি বানিয়ে দিয়েছিস।”

আয়শা বেগমের কথায় ঈশার মুখে হাসি ফুটলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরহান তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১৪

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৪

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার নাকের ডগায় আঙুল ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আমি গিয়ে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে একটু গল্প করি।নাহলে আবার আমাকে বউ পাগল ভাবতে পারে।”

আরহানের কথা শুনে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহান মুচকি হেসে ঈশার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।




হিয়া পানির গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো,

“একটা কাজও তোমরা ঠিক মতো করতে পারো নাহ্।বিয়ের পরে খবর নিয়ে আসছো।বিয়েটা হওয়ার কোথায় ছিলে!”

“ম্যাডাম আমরা তো বুঝতেই পারিনি আরহান স্যারের বিয়ে কার সাথে ঠিক হয়েছে।যার কারণে ঝামেলা হয়ে গেছে।”

হিয়া চিৎকার করে বললো,

“গেট আউট।”

লোকগুলো আর কোনো কথা না বলে হিয়ার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।হিয়া রাগে কাঁপছে।রাগের কারণে ড্রেসিং টেবিলে থাকা সব জিনিসপত্র নিচে ছুড়ে মারলো।

||🌸||

আরহান আর আরিশা মাসুমা বেগমের সাথে বসে বসে গল্প করছে।ঈশা একটা লাল শাড়ি পড়ে হালকা সেজে তাদের সামনে আসলো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরহান মনে মনে বললো,

“কপাল করে বউ পেয়েছি।মাশাআল্লাহ!”

আরিশা আরহানের মুখের সামনে তুড়ি মেরে বললো,

“কি রে ভাইয়া’ ভাবিকে দেখে কোথায় হারিয়ে গেলি!”

আরিশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।আরহান মুচকি হেসে মাসুমা বেগমকে বললো,

“আন্টি ঈশা তো রেডি হয়ে গেছে।আমরা তাহলে এখন আসি।”

মাসুমা বেগম মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।আরহান ঈশা আর আরিশাকে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।বাড়িতে এসে দেখলো আয়েশা বেগম সোফায় বসে আছেন।ঈশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“শ্বাশুমা তোমার ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো।আমি তো ভেবেছিলাম নাম্বার ওয়ান অভদ্র।”

আয়েশা বেগম ঈশার কপালে চুমু দিয়ে বললো,

“মা তুই এসেছিস!আমি কত চিন্তা করতে ছিলাম।”

আরিশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আরে আম্মু এতো চিন্তা করে লাভ নাই।ভাইয়া তো ঈশা আপু থুক্কু ভাবির প্রেমে আগে দিয়েই হাবুডুবু খাচ্ছে।জাস্ট আমরা জানতাম নাহ্।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কি রে তুই এইসব কোথা থেকে শুনলি?”

“আমি আড়ি পেতে ছিলাম।”

আরহান আরিশার কান টেনে বললো,

“ছুটকি তুই কিন্তু বেশি চালাক হয়ে গেছিস।”

“আউ ভাইয়া লাগছে তো!”

ঈশা আরহানকে বললো,

“মি.অভদ্র আমার ননদকে ছেড়ে দিন।একদম ওর গায়ে হাত দিবেন নাহ্।”

আরহান আরিশার কান ছেড়ে বললো,

“বাহ্ তোমাকেও পটিয়ে ফেলছে।ছুটকি তোর এলেম আছে বলতে হবে!”

আরিশা কান ডলতে ডলতে বললো,

“দেখতে হবে না বোনটি কার!”

আরিশার কথায় সবাই হেসে দিলো।আয়েশা বেগম সবাইকে থামিয়ে বললো,

“অনেক হাসাহাসি হয়েছে।এখন অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমাতে যাও।”

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“কিন্তু আম্মু ভাইয়া আর ভাবির বাসর ঘর তো সাজানো হয়নি!”

আরিশার কথায় আরহান কেঁশে দিলো।কোনো মতে কাঁশি থামিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো।

আরহানের যাওয়া দেখে আয়েশা বেগম আর আরিশা হেসে দিলো।ঈশা মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে।আরিশা ঈশার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“থাক ভাবি এতো লজ্জা পেতে হবে নাহ্।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ওদের জন্য আমি আর রুবি মিলে বাসর ঘর সাজিয়ে রেখেছি।তুই গিয়ে ঈশাকে ওর রুমে দিয়ে আয়।”

আরিশা আর ঈশা দুজনেই আয়েশা বেগমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“ইতিহাসে প্রথমবার কোনো শ্বাশুড়ি মা তার ছেলের বাসর ঘর সাজিয়েছে।”

আয়েশা বেগম আরিশার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,

“এতো কথা না বলে ঈশাকে গিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়।মেয়েটার সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।”

আরহান তার রুমে এসে চমকে গেলো।সম্পূর্ণ রুম ফুল দিয়ে সাজানো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কে করলো এইসব?”

আরিশা ঈশাকে নিয়ে এসে বললো,

“কে আবার করবে!আমাদের মা জননী আর রুবি খালা করেছে।”

আরহান পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিশা ঈশাকে নিয়ে তার রুমে এসেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“কি বলছিস তুই?”

“আমি ঠিকই বলতেছি।মা আর রুবি খালাই সবটা করেছে।এখন বেশি কথা না বলে বাসর কর।আমি গেলাম।”

আরিশা কথাটা বলেই দৌড় দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“মেয়েটা কি যে বাদর হয়েছে!”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঈশা তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান ঈশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে বললো,

“ঈশা তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।আসলে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভুল।আমি তোমাকে মেনে নেয়নি।আর তোমাদের বাড়িতে বসে যা বলেছি সম্পূর্ণটা মিথ্যা ছিলো।তোমাকে এই বাড়িতে এনে অপমান করবো বলে ওইসব বলেছি!”

আরহানের কথায় ঈশা অবাক হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“মি.অভদ্র তুমি কি আমার সাথে মজা করছো!”

“আরে মজা কেনো করবো?আমি যা বলছি ঠিক বলছি।সো তুমি মাটিতে বিছানা করে শুয়ে পড়ো আর আমি বিছানায় শুবো।”

কথাটা বলে আরহান তার গায়ে থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে একটা গেঞ্জি পড়ে নিলো।ঈশা তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হয় সে জেনো আকাশ থেকে পড়েছে।ঈশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আরহান অনেকক্ষণ ধরে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু শেষমেশ না পেড়ে জোরে হেসে দিলো।আরহানকে হাসতে দেখে ঈশা চমকে উঠলো।আরহান হাসি থামিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপরে ঈশার চোখ মুছে গিয়ে বললো,

“পাগলি নাকি!এটুকু বিষয়ে কেউ কেঁদে দেয়।আমি তো তোমার সাথে মজা করতেছিলাম।আর আমি তো ভেবেছিলাম মিসেস.বকবকানি একদম ধানিলঙ্কা।কিন্তু না এ তো দেখি নেতিয়ে যাওয়া বরবটি!”

আরহানের কথা শুনে ঈশা চোখ রাঙিয়ে তাকালো।ঈশা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

“এইসব নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্ মি.আরহান।মানুষের ইমোশনাল নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্।”

আরহান মনে মনে বললো,

“ইশ বেশি কষ্ট পেয়েছে মনে হয়!এখন কি করবো?”

আরহান কিছু না বলে ঈশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।ঈশা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও আরহানের শক্তির সাথে পেড়ে উঠলো নাহ্।আরহান ঈশার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

“সরি ঈশু।আর এমন করবো নাহ্!”

ঈশা কিছু বলছে নাহ্।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে কানের হাত দিয়ে বললো,

“সরি।আর হবে না এমন।এখন তো কানে হাত দিয়েছে।এখন একটু হাসো।”

আরহানের বাচ্চামো দেখে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহানের মুখেও হাসি ফুটলো।ঈশা হাসি থামিয়ে বললো,

“সেই অ্যাটিটিউড ওয়ালা মি.অভদ্র আর এই মি.অভদ্র’র মধ্যে কত পার্থক্য!”

আরহান ঈশার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

“এইসব তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে।তুমিই আমাকে নতুন করে হাসতে শিখিয়েছো।#বসন্তের_আগমনে 💛🌸তুমি আমার জীবনে বসন্ত নিয়ে এসেছো।”

আরহানের কথাগুলো শুনে ঈশা মুচকি হেসে আরহানকে জড়িয়ে ধরলো।আরহানও ঈশার মাথায় একটা চুমু দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ পরে আরহান ঈশাকে ছেড়ে বললো,

“দেখে বেঁচে থাকলে বাসর পড়েও করা যাবে।আজকে আমরা গল্প করেই না’হয় রাতটা কাটিয়ে দিবো।এইদিনটা স্বরণীয় করে রাখতে চাই।”

আরহানের কথা শুনে ঈশা মুচকি হেসে বললো,

“আসলেই তুমি অনেক ভালো।আমার এমন একটা মানুষেরই প্রয়োজন ছিলো।”

“আমারও তোমার মতো একটা ঈশু বকবকানির প্রয়োজন ছিলো।”

“এই একদম আমাকে বকবকানি বলবে নাহ্।”

“তাহলে তুমিও আমাকে মি.অভদ্র বলবে নাহ্।”

“আমি তো বলবোই।”

“তাহলে আমিও বলবো।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।আরহান ঈশাকে কোলে তুলে বললো,

“আজকে আমরা চন্দ্রস্নান করবো!”

“আরে এতো রাতে?”

“তো কি হয়েছে!”

ঈশা আর কিছু বললো নাহ্।কারণ সে এতোদিনে এটা বুঝে গেছে আরহান কারো কথা শোনার পাত্র নাহ।

আরহান ঈশাকে কোলে করে তার রুমের বেলকনিতে থাকা ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি দিয়ে ছাদে গেলো।ঈশাকে দোলনায় বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ঈশা আরহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“আরহান তোমার এমন কঠোর হয়ে যাওয়ার কারণ কি ছিলো?

আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

“আমার বাবা আর ভাইয়ার মৃত্যু।আমার বড় ভাই আফিনের বউ হিয়া।হিয়া আমার সাথে পড়তো।মেয়েটা অনেক খারাপ ছিলো।চরিত্রের কথা আর না বলি।আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না এরপরে রাগে ও আমার ভাইয়ার সাথে রিলেশনে যায় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলে।ভাইয়া যখন হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসে তখন বাবা ওদের মেনে নিতে চায় না।বাবা অনেক চিৎকার চেচামেচি করে হার্ট অ্যাটাক করেন।কারণ বাবা জানতো হিয়া ভালো ছিলো না।কারণ হিয়ার বাবার সাথে বাবার পরিচয় ছিলো।উনিই বাবাকে সবটা বলতেন।এরপরে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।বাবাকে অনেক বুঝানো হয়।তারপরে বাবা স্বাভাবিক হন।আরেক দিকে হিয়া তো আমাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতে শুরু করে।যার কারণে আমি বিদেশে চলে যাই।আমি যখন বিদেশ ছিলাম সেই সময়ই আলভি হয়।কিন্তু কয়েকদিন পরে জানতে পারি হিয়া অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।আর ভাইয়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।এই খবর যেদিন পাই সেদিনই আমি দেশের উদ্দেশ্য রওনা দেই।কিন্তু দেশে পৌঁছানোর আগেই জানতে পারি ভাইয়া সুইসাইড করেছে।আর ভাইয়ার এইসব সহ্য করতে না পেড়ে বাবা দ্বিতীয় বারের মতো হার্ট অ্যাটাক করেছেন।তাকে আর বাঁচানো যায়নি।একদিনেই আমি আমার বাবা আর ভাইয়া হারাই।যার কারণেই আমি এতোটা পাথর হয়ে গেছিলাম।অনেক কেস করে আলভিকে আমাদের কাছে রাখতে পেরেছি।”

আরহানের চোখ ছলছল করছে।ঈশা আরহানের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“আরহান এইসব ভেবে আর কষ্ট পেয়ে নাহ্ প্লিজ।”

আরহান মুচকি হেসে বললো,

“চেষ্টা করবো।”

#চলবে………………

বসন্তের আগমনে পর্ব-১৩

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান বাড়িতে এসে সোফায় বসে বসে কি জানি ভাবছে!আয়েশা বেগম এসে আরহানের পাশে বসে বললো,

“কি এতো ভাবছিস তুই আরহান?”

“সবকিছুতে কেমন জানি খটকা লাগছে আম্মু।আচ্ছা আম্মু তোমরা কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”

আয়েশা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“কি আবার লুকাবো তোর থেকে!”

“না কিছু নাহ্।”

আরহান আর কিছু না বলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো।আয়েশা বেগম আরহানের গালের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।দেখলো আরহানের গালে হালকা হলুদ লেগে আছে।আয়েশা বেগম মৃদু হাসলেন।আয়েশা বেগম মনে মনে বললেন,

“যাক আমার আর চিন্তা নেই।”

সন্ধ্যাবেলা,

আরিশা আলভিকে নিয়ে নেচে নেমে দেখলো আয়েশা বেগম বসে আছেন।আরিশা আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু ভাইয়া কই?”

আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে আরহান বললো,

“এই তো আমি।”

আরিশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান দাঁড়িয়ে আছে।আরহানকে দেখে আরিশা অবাক হয়ে বললো,

“বাহ্ ভাইয়া তো দেখছি পাঞ্জাবি পড়েছে।”

“হুম মিস.বকবকানির বিয়ে।এতো রিকুয়েষ্ট করলো পাঞ্জাবি না পড়লে হয়!”

আয়েশা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা এখন চলো তাহলে।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“হ্যাঁ চলো।”

আয়েশা বেগম আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আরহান আজকে তুই ড্রাইভ করবি নাহ্।”

“কেনো আম্মু?”

“আমি বললাম তাই।আজকে ড্রাইভার ড্রাইভ করে আমাদের নিয়ে যাবে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণের মধ্যে আরহানরা ঈশাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলো।আরহান গাড়ি থেকে নামতেই সারা বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।এইসব দেখে আরহান বেশ অবাক হলো।আরহান আস্তে করে আরিশাকে জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা আমি আমরা আসার পরে সবাই বর এসেছে,বর এসেছে বলছে কেনো?”

“তুই বর বলেই তো সবাই বর এসেছে বলছে।”

আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“হোয়াট?কি বলছিস তুই এইসব?”

“যা শুনেছিস তাই বলেছি।এখন বেশি কথা না বলে চল।”

আরিশা আরহানকে জোর করে নিয়ে গিয়ে কাজির পাশে বসালো।আরহান কিছু বলতে গেলে আয়েশা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আরহান রাগে ফুসছে।রাগের কারণে হাত মুথো করে বসে।আরহান মনে মনে বললো,

“এরা নাহলে আমার সাথে এমন করলো।কিন্তু ঈশা?ও তো আমাকে জানাতে পারতো!”

আরহান আর ঈশার বিয়ে হয়ে গেলো।বিয়ে শেষ হতেই আরহান বসা থেকে উঠে সোজা গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসলো।আরহানের কান্ডে সবাই অবাক হয়ে গেলো।সবচেয়ে বেশি অবাক হলো ঈশা।ঈশা মনে মনে বললো,

“কি হলো?উনি এভাবে উঠে চলে গেলেন কেনো!”

ঈশার মুখের চিন্তার ছাপ দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“মা চিন্তা করো না।ওর একটু কাজ আছে তো তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেছে।”

“না আন্টি আর মিথ্যা বলবেন নাহ্ প্লিজ।আপনারা কিছু একটা লুকিয়েছেন।আমাকে সত্যিটা বলুন।”

আয়েশা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।ঈশা আয়েশা বেগমের হাত ধরে বললো,

“প্লিজ বলুন আন্টি।”

“আরহান এই বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানতো নাহ্।আমরা তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আরহান সবটা জানে।আসলে আরহান বিয়ে করতে চায় না।তাই এভাবে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিলো নাহ্।”

ঈশা অবাক হয়ে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়েশা বেগম ঈশার হাত শক্ত করে ধরে বললো,

“আমাকে মাফ করে দিয়ো মা!”

ঈশা মৃদু হেসে বললো,

“কি বলেন এইসব আন্টি!আমি আপনার বিষয়টা বুঝতে পারতেছি।একবার যখন বিয়েটা হয়ে গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই।যা কপালে আছে তাই হবে ”

ঈশা কথাটা বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো।




আরহান তার রুমে এসে চুপচাপ বসে আছে।রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো।আরহান বুঝতে পারলো কারা এসেছে!

আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো রুবি খালা দরজা খুলে দিয়েছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা দাঁড়িয়ে আছে।আলভি আরিশার কোলে।তবে ঈশা না দেখে আরহান কিছুটা অবাক হলো।আরহান আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আম্মু আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতে।”

আয়েশা বেগম আরহানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“দেখ বাবা ঈশা মেয়েটা অনেক ভালো।আলভিকে কত ভালোবাসে!ও তোর জন্য একদম পারফেক্ট।আর ওর কোনো দোষ নেই।”

আয়েশা বেগমকে থামিয়ে আরহান বললো,

“থাক আম্মু উনার নামে আর সাফাই গাওয়া লাগবে নাহ্।উনি তো জানতো বিয়ের কথাটা।উনি আমাকে জানাতে পারতো তো!”

“ঈশা ভাবির কোনো দোষ নেই ভাইয়া।”

আরিশার কথা শুনে আরহান আরিশার দিকে তাকালো।

“কি বললি তুই?বিয়ে হতে না হতেই ভাবি বানিয়ে ফেললি!”

“ভাবিকে তো ভাবিই ডাকবো।আর ভাবির সত্যিই দোষ নেই।আমরা বলেছিলাম তুই এই বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানতি।আর তুই এই বিয়েতে রাজি।তার কারণেই ঈশা ভাবি রাজি হয়েছে।আর সেদিন ভাবির যখন সন্দেহ হয়েছে তখন আমি বলেছিলাম তুই ভাবির সাথে মজা করতেছিস।তাই ভাবিও বললো তাহলে আমিও মজা করে যাই।”

“তার মানে আসল কালপিট তুই?”

আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“ও আম্মু দেখো তোমার ছেলে কি বলে!এর জন্যই কারো ভালো করতে নেই।”

“থাক তোর এতো ভালো করতে হবে নাহ্।তা তোমাদের গুণবতী বউমা কই?”

“ঈশা ভাবি আসেনি?”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“মানে?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“তুই না আনতে গেলে ঈশা আসবে নাহ্।”

আরহান বিরক্তি নিয়ে বললো,

“বাহ্ সব যখন তোমরাই করলে তা উনাকে নিয়েও তো আসতে পারতে!”

“ভাবি না আসলে আমরা কিভাবে আনবো?”

“আচ্ছা ছুটকি তুই গিয়ে আলভিকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়।আমি গাড়ি বের করতেছি।বিয়ের পরে বউ যদি শ্বশুরবাড়ি না আসে তাহলে এটা আমাদের বাড়িই বদনাম।সো আমি আর তুই উনাকে আনতে যাবো!”

আরহানের কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশার মুখে হাসি ফুটলো।আরিশা দৌড় দিয়ে আলভিকে রুমে নিয়ে গেলো।আলভিকে রেখে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“চল ভাইয়া।”

“তুই তো মনে হচ্ছে স্পিডবোট হয়ে গেছিস!”

“তুই ভাবিকে আনতে যাবি শুনে আমি স্পিডবোটই হয়ে গেছি।”

আরহান আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো।আরিশা আরহানের পাশে বসে বললো,

“দেখেশুনে গাড়ি চালাবি।”

“তোর এতো জ্ঞান দিতে হবে না।”

আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।ঈশাদের বাড়িতে কলিংবেল বাজাইতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।ঈশা আরহানকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।আরহান যে আসবে সে কখনো ভাবেনি।আরিশা পিছন থেকে বললো,

“হাই ভাবি!”

ঈশা আরিশার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“দরজাতেই দাঁড়া করিয়ে রাখবেন নাকি ভিতরে যেতেও বলবেন!”

ঈশা জিহ্বায় কামড় দিয়ে দরজা থেকে সরে গিয়ে বললো,

“ভিতরে আসুন।”

আরহান আর আরিশা ভিতরে গিয়ে বসলো।মাসুমা বেগম বললো,

“তোমরা দুজন এতো রাতে?”

আরহান বললো,

“বিয়ের দিন নতুন বউ বাড়িতে না গেলে তো আর ভালো দেখায় না।সেই জন্যই আমরা ঈশাকে নিতে আসলাম।”

হাফিজ সাহেব বললেন,

“বাবা বিয়ের সময় তুমি অনেক রেগে গিয়েছিলে না?”

“আঙ্কেল আগের কথা বাদ দিন।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“মেক-আপ তো দেখছি সব উঠিয়ে ফেলেছেন।যান গিয়ে রেডি হয়ে আসুন।বাড়িতে যেতে হবে তো।নতুন বউ এভাবে গেলে কেমন দেখায়!”

ঈশা কিছু না বলে মুখ ভেঙচি দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আরহান মাসুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আন্টি আমার একটু ঈশার সাথে কথা আছে।আমি কি একটু উনার রুমে যেতে পারি?”

“হ্যাঁ বাবা।যাবে না কেনো?ও তো তোমার বিয়ে করা বউ।”

আরহান কিছু না বলে মুচকি হেসে ঈশার রুমে গেলো।ঈশার রুমের দরজায় নক করতেই ঈশা এসে দরজা খুলে দিলো।আরহানকে দেখে ঈশা বললো,

“আপনি এখানে?”

“আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”

“ভিতরে আসুন।”

ঈশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজছে আরহান ঈশার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।

“আপনি নাকি কি যেন বলবেন!”

ঈশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।

“হ্যাঁ বলবো তো!”

আরহান এটুকু বলে ঈশাকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আরহান এহেন কাজে ঈশা চমকে গেলো।তার হাত থেকে ঝুমকো জোড়া পড়ে গেলো।ঈশা বললো,

“কি করছেন আপনি?”

আরহান চুপ করে ঈশার চুলে নাক গুঁজে আছে।আরহান কিছুক্ষণ পড়ে ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আমি আসলে অনেক আগেই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।সেটা আমি আগে বুঝিনি তবে আপনার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনার পরে থেকে আমার কেমন জানি লাগতো।আর এই দুই-তিন দিন তো শুধু আপনার কথাই মাথায় ঘুরতো।”

“যদি ভালোবেসে ফেলেন তাহলে আজকে ওভাবে বিয়ে শেষ হতে উঠে চলে গেলেন কেনো?”

“দেখুন আরে না দেখো!নিজের বিয়ে করা বউকে কি কারণে আপনি বলবো এখন থেকে তুমি করেই বলবো।আসলে আমি তো কিছু জানতাম না।সবটা হুট করে হয়েছে।তাই রিয়েক্ট করে ফেলছি।বিশেষ করে তুমি সবটা জেনেও আমাকে বলোনি এতে আরো রাগ হয়েছিলো।কিন্তু আম্মু আমাকে সবটা জানিয়েছে।তারপরেই রাগ কন্ট্রোল হয়েছে।”

ঈশা আরহানকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমার সাথে রাগ দেখালে খবর আছে মি.অভদ্র।”

আরহান মুচকি হেসে ঈশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ওকে মিস উপ্স মিসেস.বকবকানি।”

দুজনে একসাথে হেসে দিলো।

#চলবে…………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১২

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান কিছু একটা ভেবে বললো,

“কিন্তু আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।”

“আরে ভাইয়া ছেলেদের পাঞ্জাবিতে বেশি সুন্দর লাগে।আর তুই পাঞ্জাবি পড়তে চাস নাহ্!”

“আমাকে ওতো সুন্দর লাগতে হবে নাহ্।”

আরিশা আয়েশা বেগমের কানে কানে বিড়বিড় করে বললো,

“আম্মু আমরা বললে কাজ হবে না।ঈশা আপুকে দিয়েই বলাতে হবে।”

আয়েশা বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

পরেরদিন সকালে,

ঈশা ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।চোখ ডলতে ডলতে মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো আরিশার কল।ঈশা কলটা রিসিভ করলো।

“হ্যাঁ আরিশা বলো।”

“আপু তুমি একটু ভাইয়াকে রাজি করাতে পারবে পাঞ্জাবি পড়তে বিয়েতে!”

“আমি রাজি করাবো কেনো?”

“ও তো পাঞ্জাবি পড়তেই চায় না।ইনফেক্ট কখনো পড়েও নাহ্।আর আমাদের কথা তো শুনবেই না।তুমি একটু রাজি করাও।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“যেখানে ওরা দুজন রাজি করাতে ব্যর্থ আমি সেখানে কিভাবে রাজি করাবো!”

ঈশা চুপ করে থাকায় আরিশা বললো,

“আপু তুমি কি শুনতে পারতেছো।”

“হ্যাঁ আরিশা আমি শুনতে পারতেছি।ওকে আমি চেষ্টা করবো।তুমি খালি মি.কাস্টার্ডের নাম্বারটা আমাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দেও।কারণ উনার নাম্বার আমার কাছে নেই।”

“ওকে।”

আরিশা কলটা কেটে দিলো।ঈশা ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।ঈশা ওয়াশরুম থেকে এসে দেখলো আরিশা আরহান নাম্বার ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে।ঈশা সাত-পাঁচ না ভেবে আরহানকে কল করলো।

আরহান ফ্রেশ হয়ে এসে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার।প্রথমে রিসিভ করতে না চেয়েও কি মনে করে রিসিভ করলো!

মোবাইল রিসিট করতেই ঈশা বলে উঠলো,

“এতো টাইম লাগে কল ধরতে।”

ভয়েস শুনতে আরহানের বুঝতে বাকি নেই যে ঈশা কল করেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আমাকে কি মনে করে কল করলেন!”

“কারণ তো আছেই কল করার।”

“কারণটাই তো জানতে চাচ্ছি।”

আপনি নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বেন না শুনলাম!”

“আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।আর বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়তে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি?”

ঈশা মনে মনে বললো,

“বর নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বে নাহ্।হায়রে দুনিয়া!”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“আপনার পাঞ্জাবি পড়তেই হবে।বিকজ আমি চয়েজ করে দিয়েছি।আমি কিন্তু কখনো কোনো কিছু নিয়ে আপনাকে জোর করিনি।সো আমার এই কথাটা রাখতেই হবে।”

আরহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঈশা কলটা কেটে ফেললো।আরহান মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো,

“আরে আমাকে তো কিছু বলতেই দিলো নাহ্।”

আরহান বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে নিচে গেলো।আরহান নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আলভিকে নিয়ে খেলছে।

“ওই তোকে কে বলেছিলো ঈশাকে জানাতে যে আমি পাঞ্জাবি পড়বো নাহ্।”

“আগে এটা বল তোকে কে বললো যে আমি ঈশা আপুকে জানিয়েছি।”

“তোকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি।”

“তা বলবো নাহ্ কেনো?ঈশা আপু এতো শখ করে তোর জন্য পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিলো আর তুই পড়বি নাহ্!এটা কি ভালো দেখায় নাকি!”

“তোকে সবকিছু কে দেখতে বলছে?”

“আমার মন চায় তাই দেখি।”

আরহান আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে বাড়ি দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।আয়েশা বেগম আরিশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ব্রেকফাস্ট না করেই চলে গেলো।এতো রাগ যে কোথা থেকে আসে!”

“আম্মু ওর কথা বাদ দেও।কালকে যে বিয়ে ওটা নিয়ে ভাবো।”

“আরে বিয়ে তো ওর’ই।”

“কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই-না আম্মু!যার বিয়ে তার হুঁশ নাই,আর পাড়াপড়শির ঘুম নাই।তবে এখানে পাড়াপড়শির জায়গায় মা-বোন হবে।”

আরিশার কথায় আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।আয়েশা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন,

“একে একমাত্র ঈশা’ই ঠিক করতে পারবে।”

“হ্যাঁ আম্মু ঠিক বলছো।”

আলভি আরিশার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

“আসলেই দিদুন থুমি টিক বলছু।”

আলভির কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশা একসাথে হেসে দিলো।




বিয়ের দিন সকালে,

“আম্মু আমি ঈশা আপুর হলুদে যাচ্ছি।”

“ঈশার হলুদে না হয়ে গেলি কিন্তু আরহানের হলুুদ কিভাবে করবো!”

“আম্মু ভাইয়াকে আমাদের সাথে নিয়ে চলো।কোনো না কোনো ভাবে ওর গালে হলুদ ঠিকই লাগিয়ে দিবো।”

“আরহানকে নিয়ে গেলে ঈশা যদি সন্দেহ করে?”

“আরে আম্মু শোনো ঈশা আপু আমাকে বলছে ভাইয়া তো বিয়ের কথা তার সামনে বলে না তাই সে নিজেও বিয়ের কথা ভাইয়ার সামনে বলে না।আমি আবার আগবাড়িয়ে বলে দিছি ‘ভাইয়া তোমার সাথে মজা করতেছে আপু।’তখন আপু বললো ‘ওকে আমিও তাহলে মজাটা চালিয়ে যাই।'”

“কি যে হবে আল্লাহ জানে।আরহান তো কিছুই জানে না আর ঈশাও সবটা জানে নাহ্।আমার সব মিলিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।”

“আম্মু তুমি রিলাক্সে থাকো আমি ভাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছি।আর হলুদ লাগিয়েই বাড়িতে আনবো।”

আরিশা আরহানের রুমে গিয়ে দেখলো আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে গিটার বাজাচ্ছে।

“ভাইয়া চলো।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কোথায় যাবো আমি?”

“ঈশা আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে।”

“আমি হলুদে যাবো না।আমি একেবারে বিয়েতে যাবো নে।তুই বরং আলভিকে নিয়ে যা।”

“তোকে তো যেতেই হবে ভাইয়া।”

আরিশা জোর করে আরহানকে নিয়ে গেলো।আরহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো,

“তোর জন্য ভালো একটা শার্ট-প্যান্টও পড়তে পারলাম নাহ্।এই টি-শার্ট আর জিন্স পড়েই চলে এসেছি।”

“আরে ওতো ভালো ড্রেস পড়তে হবে নাহ্।আমার ভাই তো এমনিই মাশাআল্লাহ।”

আরিশার কথায় আরহান জোরে হেসে দিলো।আরহান হাসি থামিয়ে বললো,

“পাম দিচ্ছিস?”

“আরে না তুই ঈশা আপুকে যেটা বলেছিলি আমিও তোকে সেটা বললাম।”

আরহান আর কিছু না বলে মৃদু হাসলো।আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ঈশার হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাদের বাড়ির বাগানে।আরহান গাড়ি থামাতেই আরিশা নেমে দৌড় দিলো।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেলো।আরহানকে দেখে সবাই মুচকি হাসছে আর একে অপরের সাথে কথা বলছে।যা দেখে আরহানের অনেক অশস্তি লাগছে।

“এই ছুটকির জন্য আমার এই অবস্থা।এমন অবস্থায় এসেছি দেখে সবাই হয়তো হাসাহাসি করছে।”

আরহান গিয়ে ঈশাকে যেখানে বসানো হয়েছে সেখানে দাঁড়ালো।ঈশাকে দেখে আরহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হলুদ রঙের শাড়ি,ফুলের গহনায় ঈশাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আরহান ঈশার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে নাহ্।আজকে প্রথম বার আরহান ঈশার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে।

আরিশা এসে আরহানের হাতে একটা চিমটি দিলো।আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“আউচ!”

আরহান আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে আরিশার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“এটা তুই কি করলি?”

“ভাইয়া অন্যের বউয়ের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে নাকি!”

“আরে উনাকে সুন্দর লাগছে তাই তাকিয়ে ছিলাম।তাকিয়ে থাকলে কি হয়েছে?”

“তোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলে অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে।”

“ওকে তাকালাম নাহ্।”

ঈশা আরহানকে বললো,

“এই যে মি.কাস্টার্ড এদিকে আসুন।”

আরহান কিছু না বলে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

“ডাকলেন কেনো?”

“এতো কথা না বলে আমার পাশে এসে বসুন।”

“কেনো?”

“আহ্ একটু কম কথা বললে হয় নাহ্!”

আরহান আর কিছু না বলে একটা নিশ্বাস ফেলে ঈশার পাশে গিয়ে বসলো।

“এখন আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিন।”

“আমি এইসব পারবো নাহ্।”

“আমার হলুদে এসে আপনি আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন নাহ্।তাহলে কিভাবে হবে?হলুদ লাগিয়ে দিন বেশি কথা না বলে।”

আরহান আর কিছু না বলে খানিকটা হলুদ নিয়ে ঈশার গালে লাগিয়ে দিলো।ঈশা মুচকি হেসে বেশখানিকটা হলুদ নিয়ে আরহানের গালে লাগিয়ে দিলো।

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“এটা কি করলেন?”

“বা রে আমার হলুদে এসে আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন কিন্তু আপনার গায়ে হলুদ থাকবে না এটা কি করে হয়?”

“ডিসকাস্টিং!”

আরহান ঈশার পাশে থেকে উঠে চলে গেলো।আরহান একটা চেয়ারে বসে আছে।মাসুমা বেগম এসে আরহানের হাতে শরবত দিয়ে বললো,

“এটা খেয়ে নেও বাবা।”

আরহান গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“থ্যাঙ্কিউ আন্টি।”

মাসুমা বেগম মৃদু হেসে চলে গেলেন।আরহান বসে বসে শরবত খাচ্ছে তবে তার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে।

“আমার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে কেনো?না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান উঠে দাঁড়িয়ে আরিশার কাছে গেলো।

“ছুটকি তুই আলভিকে নিয়ে চলে আসিস।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

“ওকে ভাইয়া তুই চলে যা।এমনিও তোকে জোর করে আনার কারণ মিটে গেছে।”

“আমাকে জোর করে আনার কারণ কি?”

“কারণ হলো ঈশা আপু চেয়েছিলো তোকে হলুদ লাগাবে।তাই তার ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্যই তোকে জোর করে নিয়ে এসেছিলাম।”

আরহান আর কিছু না বলে চোখ রাঙিয়ে ঈশাদের বাড়ি থেকে চলে আসলো।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

বসন্তের আগমনে পর্ব-১১

0

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১১

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

ঈশা আর আরহান আরিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আরিশা বসে বসে কফি খাচ্ছিলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরিশা দেখলো আরহান ঈশাকে সময়ের আগেই নিয়ে আসছে।আরিশা বললো,

“যাক আমার ভাইয়ের এলেম আছে।”

আরহান আরিশার কথায় হাসি দিলো।ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“আরিশা তুমি হঠাৎ এই কথা বললে কেনো?”

আরিশা কিছু বলতে যাবে আরহান আরিশাকে থামিয়ে বললো,

“তুই চুপ থাক।আমি বলতেছি।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আসলে আরিশা আমাকে বলেছিল আপনাকে যেন দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসি।আর আমি যদি আপনাকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে ও আমাকে বীরপুরুষ মানবে।”

“ওহ্ তার মানে আপনি এই কারণেই বলেছেন আমাকে মেকআপ ছাড়া সুন্দর লাগে!”

“একদম ঠিক ধরেছেন।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“কি ভাবলাম আর কি হলো!”

ঈশা আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।মাসুমা বেগম এসে আরহানকে কফি দিলো।আরহান কফি খেয়ে আরিশা আর ঈশাকে নিয়ে রওয়ানা দিলো।আরিশা আলভিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসেছে।আরহান ড্রাইভ করছে আর ঈশা তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।আরহান বিষয়টা অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করে বললো,

“আচ্ছা আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

“ইচ্ছে করছে আপনাকে খুন করে ফেলতে।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“আপনার জন্য আমি মেকআপ করতে পারিনি।”

“আরে আমি বললাম তো আপনাকে মেকি ছাড়া সুন্দর লাগে।”

“ওটা তো মিথ্যা বলেছেন।”

“আরে না ওটা সত্যিই বলেছি।”

ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান গাড়ি নিয়ে শপিংমলের সামনে থামালো।তারপরে তারা শপিংমলের ভিতরে গেলো।ঈশা একটা লাল শাড়ি তার গায়ে জড়িয়ে আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এই শাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে?”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।তারপরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার চেয়ে বেটার হবে আপনি আরিশাকে জিজ্ঞেস করুন।কারণ আমি এইসব বুঝিনা।”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

হ্যাঁ আপনি তো বাচ্চা।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে কোলে নিয়ে এদিক-ওদিক হাঁটা শুরু করলো।হঠাৎ তার সামনে এসে হিয়া দাঁড়ালো।আরহান হিয়াকে দেখে বিরক্ত নিয়ে চলে যেতে গেলে হিয়া আরহানের হাত টেনে ধরলো।আরহান রাগের কারণে এক ঝটকা দিয়ে হিয়ার হাত ছাড়িয়ে ফেললো।তারপরে হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“আপনার সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার?”

“আমার সাহসটা বরাবরই একটু বেশি আরহান।”

“একদম চুপ করুন।পাব্লিক প্লেসে ফাজলামো করতে আসছে।”

আরহান কথাটা বলে চলে যেতে গেলে হিয়া পিছন থেকে বললো,

“কি তোমার বিয়ের শপিং করতে আসলে নাকি?”

হিয়ায় কথায় আরহান দাঁড়িয়ে পড়লো।অবাক হয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি বললেন আপনি?”

“যা শুনলে তাই তো বললাম।তোমার বিয়ের শপিং করতে আসছো নাকি?”

আরহান চোখ বন্ধ করে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো,

“উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দেন।আর নিজের কাজে মন দেয়।ডিসকাস্টিং!”

আরহান কথাটা বলে আলভিকে নিয়ে হেঁটে চলে গেলো।ঈশা আর আরিশা কেনাকাটা শেষ করে বসে আছে।আরহান এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।আরহান দেখলো ঈশার হাতে কতগুলা ব্যাগ আর আরিশার হাতে কতগুলো ব্যাগ!আরহান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“মেয়েরা এতো শপিং কিভাবে করে আল্লাহ জানে!আচ্ছা আলভির খুদা লেগেছে।আমরা লাঞ্চ করে একবারে বাড়িতে যাবো।আরহান আলভিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।পিছন থেকে আরিশা চিৎকার করে বললো,

” ভাইয়া তুই এমন কেনো!আমাদের হাতে গুলো ব্যাগ।আর তুই আমাদের রেখে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছিস!”

“তুই দেখতে পারছিস না আলভি আমার কোলে।”

“আলভি হা্ঁটতে পারে।তুই ও-কে নামিয়ে দিয়ে ব্যাগ নে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নামিয়ে দিলো।আরিশা আর ঈশার হাত থেকে কতগুলো ব্যাগ নিলো এক হাতে আরেক হাতে আলভিকে ধরে হা্ঁটা শুরু করলো।আরহানরা গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো।লাঞ্চ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আরহান বললো,

“কিভাবে যাবো!আগে কি ঈশাদের বাড়িতে যাবো নাকি আমাদের বাড়িতে?”

“ভাইয়া…ঈশা আপু আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে।আম্মু বলছে ঈশা আপুকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।সে দেখলো ঈশা আলভির সাথে খেলা করছে।আরহান বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে গাড়িতে উঠো তোমরা।”

আরহান গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে গেলো।আরহান বাড়িতে এসে সোজা তার রুমে চলে গেলো।আয়েশা বেগম ঈশাকে দেখে অনেক খুশি হলেন।

“আমার হবু বউমা এসেছে!”

আয়েশা বেগমের কথায় ঈশা হেসে দিলো।আরিশা পাশে থেকে বললো,

“আর আমার হবু ভাবি।”

আয়েশা বেগম,ঈশা আর আরিশা গল্প করতে বসলো।আলভি ঈশার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আরিশা বললো,

“ভাবি আলভিকে আমার কাছে দেও।ও-কে আমি রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি।”

“সমস্যা নেই তো আরিশা।ও আমার কোলেই ঘুমাক।আমার তো ভালো লাগতেছে।”

আরিশা আর কিছু বললো নাহ্।

সন্ধ্যাবেলা,

আরহান নিচে নামলো।আরহানকে নিচে নামতে দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“ভালোই হলো তুই নিচে নামলি।ঈশাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আয় তো।”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।আরহান ঈশাকে নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো।ঈশা গাড়ি থেকে নেমে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.কাস্টার্ড।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.বকবকানি।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“আমি মোটেও এতো বকবক করি না।”

“আপনি বকবক না করলে বকবক করে কে!”

“আপনার বউ বকবক করে।”

ঈশার কথা শুনে আরহান তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“থাক আপনাকে আর কিছু বলবো নাহ্।আফটার অল কালকের পরেরদিন আপনার বিয়ে।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“ইশ্!আমার মনে হয় একা বিয়ে।আর উনার কিছু নাহ্।”

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহান বললো,

“আপনি চুপ করেও থাকতে পারেন?”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

“আপনি আসলেই ভালো মানুষ নাহ্।”

“হ্যাঁ আমি জানি তো সেটা।”

ঈশা আর কিছু না বলে চলে যেতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলো।হঠাৎ পিছনে ঘুরে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“একটা কথা কি জানেন,অতি চালাকের গলায় দড়ি।”

“হ্যাঁ এটা নিশ্চিয়ই আপনি আপনার কথা বলছেন।”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“এটা আমি আপনাকে বলছি।”

“আমি তো কোনো চালাকি করিনি।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“একবারও বিয়ের কথা মুখ দিয়ে বলছেন না।উনি নাকি চালাকি করেনি!”

ঈশা হালকা কেঁশে বললো,

“আচ্ছা ভিতরে চলুন।”

“না একবার তো গিয়েছি আর যাবো নাহ্।আপনি যান।আর বকবক করে আন্টির মাথা নষ্ট করুন।”

ঈশা আর কিছু না বলে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো।আরহান মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসলো।

ঈশা বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আরহানকে বকছে।

“কি লোক রে বাবা!কেউ নিজের হবু বউয়ের সাথে এমন করে।আমাকে কিভাবে অপমান করে।আল্লাহ জানে বিয়ের পরে আমার কপালে কি আছে!”

ঈশা কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।




আরহান বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আছে।বারবার ঈশার কথাগুলো মনে পড়ে তার মুখে হাসি ফুটছে।

“আচ্ছা আমি ঈশার কথা এতো ভাবছি কেনো!না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।তারপরে তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আর আয়েশা বেগম বসে আছেন।

“ছুটকি আলভি কোথায় রে?”

“আলভি আমার রুমে ঘুমাচ্ছে।”

“ওহ্ আচ্ছা।ও কি খেয়েছে?”

“হ্যাঁ আমি খাইয়ে দিয়েছি।”

“আচ্ছা চলো তাহলে আমরা খেয়ে নেই।”

আরহান,আয়েশা বেগম আর আরিশা খেতে বসলো।আরিশা বললো,

“আম্মু ঈশা আপুর বিয়ের শাড়িটা অসাধারণ হয়েছে।আপুর পছন্দ অনেক সুন্দর।আর ভাইয়ার পাঞ্জাবিটাও অনেক সুন্দর হয়েছে।ঈশা আপুই পছন্দ করে দিয়েছে।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“ঈশা আমার পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছে?”

“হ্যাঁ দিতেই পারে।সমস্যা কি!”

“না কোনো সমস্যা নাই।”

#চলবে……………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]