Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1073



তুমি আমার পর্ব-০৬

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৬)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
কিছুদিন পর…..
মেঘা কলেজে এসে তানিশাকে নিয়ে লাইব্রেরিতে যায় একটা দরকারি বই নিতে। তানিশা মেঘাকে বললো
– মেঘা আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি তুই বইটা নিয়ে আয়।
মেঘা ভেতরে ঢুকে ওর প্রয়োজনীয় বইটা নিয়ে বেড়িয়ে আসতে নিলে কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো
– হ্যালো নীলপরী।
মেঘা তাকালো না ভেবেছে হয়তো অন্য কাউকে ডাকছে,মেঘা পা বাড়ালো বেড়িয়ে আসার জন্য হঠাৎ ওর সামনে একটা ছেলে এসে দাড়াঁলো। ছেলেটিকে মেঘা আগে কখনো দেখেনি। মেঘা ভালো ভাবেই বললো
– কি ব্যাপার ভাইয়া সামনে দাঁড়ালেন যে! কিছু বলবেন?
ছেলেটি হেসে মেঘাকে দেখতে লাগলো তারপর বললো
– সত্যিই নীলপরীর মতোই লাগছে তোমাকে।
মেঘা এখন বুঝতে পারলো নীলপরী বলে ওকেই ডেকেছিলো কারন মেঘা আজ নীল একটা ড্রেস পড়ে এসেছে।
মেঘা একটু অস্বস্থি বোধ করছে ছেলেটিকে বললো
– ভাইয়া আমার ক্লাস আছে যেতে হবে আমাকে।
– হুম অবশ্যই যাবে। যাবার আগে তোমার নামটা বলে যাও।
– কেনো নাম জেনে কি করবেন আপনি?
– উমম না কিছুই করবো না আচ্ছা তুমি যাও,তোমাকে আমি নীলপরী বলেই নাহয় ডাকবো। ওহ আমার নামটা তো বলাই হলো না,,,আমি রাফিন আহমেদ।
মেঘা আর কথা বাড়ালো না অযথা ছেলেটির সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না এ কথা ভেবেই বেড়িয়ে আসলো লাইব্রেরি থেকে।

মেঘা বেড়িয়ে যেতেই রাফিন হেসে বললো…নীলপরী তোমাতে তো আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম গো। তোমার ওই চোখে যে আমি প্রথম দেখাতেই হারিয়ে গিয়েছি।

রাফিন মেঘার সামনে এসে দাড়িয়েছে ওর সাথে কি কথা বলেছে সবটাই রেহান দেখেছে এবং শুনেছে রেহান তখন লাইব্রেরির দিকেই এসেছিলো মেঘাকে দেখেই দরজায় দাড়িয়ে পড়েছিলো। রেহান রাফিন এর কথা গুলোতে তেমন কিছু না ভাবলেও ওর শেষের বলা কথাগুলো কিছুতেই মানতে পারছিলো না।
.
🌿
.
রেহান তানভিরকে সবটা বলেছে তানভির রেহানকে বললো
– রেহান তুই মেঘাকে প্রপোজ কর।
– কিভাবে সম্ভব মেঘা তো আমার দিকে ঠিক করে তাকাই না।
– তাকাবে ওর মনে তোকে জায়গা করে নিতে হবে এখন না হলে দেখবি মেঘাকে হারাবি তুই।
– আচ্ছা তানভির মেঘাকে কি আমি ভালোবাসি?
তানভির রেহানের দিকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠলো।
– আরে তুই হাসছিস কেনো আমি কি এমন হাসির কথা বলেছি!
– হাসবো না! অন্য একটা ছেলে মেঘার সাথে একটু কথা বলেছে তাতেই তুই জেলাস আর তুই বলছিস ওকে তুই ভালোবাসিস কিনা।
– রাফিন শুধু ওর সাথে কথা বলেনি,ও মেঘাকে অন্য নজরে দেখেছে নিজের মুখে বলেছে ও মেঘাকে দেখে মুগ্ধ।
– হুম বুঝতে পারছি আমি। শোন রেহান তুই মেঘাকে ভালোবেসে ফেলেছিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। আজ রাফিন মেঘার সাথে কথা বলেছে দেখে তোর লুকানো অনুভূতিটা নাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই বলছি আর এত না ভেবে মেঘাকে মনের কথা বলে দে।

মেঘা কলেজ ছুটির পর গেটের বাইরে এসে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন মেঘার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো
– হেই নীলপরী কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি?
মেঘা রাফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো কথা বলার ইচ্ছে না থাকা শর্তেও বললো
– রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
– ওও আচ্ছা। এই দুপুরে রিক্সা পাওয়া তো মুশকিল! তুমি যদি কিছু মনে না করো আমি তোমাকে পৌছে দিতে পারি।
মেঘা বিরক্তি নিয়ে বললো
– নো থ্যাংকস ভাইয়া আমি চলে যেতে পারবো।
– ওকেই,আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি রিক্সা নিয়ে আসছি।

মেঘা কিছু বলবে তার আগেই রাফিন চলে গেলো।
মেঘা নিজে নিজেই বলতে লাগলো…এই ছেলেটা পিছু নিলো কেনো হঠাৎ কি মতলব এর?

রেহান রাফিনকে আবারো মেঘার সাথে কথা বলতে দেখে রাগে ফুসছিলো। রেহান জানে মেঘাকে বাইকে যেতে বললে ও যাবে না তাই তাড়াতাড়ি একটা রিক্সা ডেকে মেঘার সামনে আসলো। এসেই মেঘাকে তাড়া দিয়ে বললো
– মেঘা এই রিক্সাতে যাও।
মেঘা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
– ভাইয়া আপনি কেনো রিক্সা নিয়ে আসলেন?
– কেনো সেটা পরে জেনে নিও এখন কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ো,ফাস্ট।
মেঘা ভাবলো এখন আর কথা না বলে চলে যাওয়াই ভালো অন্তত ওই রাফিনের হাত থেকে তো বাঁচা যাবে। মেঘা রিক্সায় উঠে একটু হেসে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– ধন্যবাদ ভাইয়া।
মেঘার মুখে ভাইয়া ডাকটা পছন্দ হলো না রেহানের চরম বিরক্ত হয়ে বললো
– এত ভাইয়া ভাইয়া না করলেও চলবে। এই মামা যাও তো ওকে সাবধানে পৌছে দিয়ো। রিক্সা ওয়ালাকে বললো।
মেঘা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলে রিক্সা ওয়ালা নিলো না বলেছে ভাড়া নাকি আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
.
🌿
.
মেঘা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছে। ওর ভাবনাতে এখন রেহান আছে। মেঘা দুপুর থেকেই একটা বিষয়ে ক্লিয়ার হতে পারছে না তা হলো রেহান ওকে কেনো ফলো করছে। মেঘা মনে মনে ভাবছে…রেহান ভাইয়া সেই প্রথম থেকেই আমার সাথে অন্যরকম ভাবে কথা বলে কই তানিশা বা অনুর সাথে তো এমন করে না। আজ আমি রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম উনি কি করে বুঝলো আর কেনোই বা ভাইয়া ডাকাতে উনি বিরক্ত হলেন? নাহ বাবা আমার এত ভেবে কাজ নেই আমি নিজে সেভ থাকলেই হলো।

মেঘার ফোনের রিংটন বেজে উঠলো,মেঘা বারান্দা থেকে উঠে এসে ফোনটা হাতে নিলো নাম্বারটা অচেনা। মেঘা ফোনটা নিয়ে আবারো বারান্দায় এসে দাড়ালো রিসিভ করে সালাম দিলো। ওপাশ থেকে একটা ছেলের কন্ঠ ভেসে আসলো সে সালামের উত্তর নিয়ে বললো
– কেমন আছো মেঘা?
– জ্বি ভালো আছি। কে বলছেন আপনি?
– পরিচয়টা না হয় অজানাই থাক,শুধু জেনে রাখো আমি সব সময় তোমার আশে পাশেই থাকি।
– শুনুন আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না রাখছি আমি।
– আরে আরে মেঘা ফোন রেখো না শোনো…
মেঘা ফোন কেটে দিতেই আবারো কল আসছে বার বার মেঘা বিরক্ত হয়ে ধরে বললো
– নিজের পরিচয়টা যদি দিতে পারেন তাহলে কল দিবেন না হলে দিবেন না।
– মেঘা তুমি বিরক্ত হতেও জানো! বাহ তোমার মাঝে বিরক্ত রাগ এগুলো খুবই আনকমন ব্যাপার। তবে যাই বলো না কেনো বিরক্ত হলে তোমাকে দেখতে ভালোই লাগে।
– মানে! কি সব বলছেন আপনি?
– মেঘা প্লিজ এভাবে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখো না।
মেঘা একটু নড়েচড়ে উঠলো নিজেকে স্বাভাবিক করে এদিক ওদিকে তাকালো। ফোনের ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
– একি হাসছেন কেনো আপনি?
– কি ভেবেছো এদিক ওদিকে তাকালে খুজে পাবে আমাকে! উহুম পাবে না। শুধু শুধু খুজে লাভ নেই পাবে না আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার সামনে আসবো। অবশ্য তুমি আমাকে চেনো আমাকে অনেকবার দেখেছো তুমি।
– দেখেছি আপনাকে কোথায় কি ভাবে!
– তোমার ছোট মাথায় এখনি এত কিছু ঢুকাতে হবে না অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমিয়ে পড়ো। আর একটা কথা,,,রাফিনের থেকে দুরে থেকো ও যদি কথা বলতে আসে তুমি এড়িয়ে যাবে রাফিনকে। গুডনাইট,বাই।

মেঘাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে গেলো। মেঘা হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে…..কে এই ছেলে! রাফিন তো ওই ছেলেটা যার সাথে লাইব্রেরিতে আবার কলেজের বাইরে দেখা হলো। কিন্তু এই ছেলেটি কে? কি করে জানলো? তারমানে আমাকে সব সময় কেউ ফলো করে এমনকি এখনো তার নজর আছে আমার ওপর! আচ্ছা এটা রেহান ভাইয়া নয়তো? ধুর কি ভাবছি আমি উনি কেনো আমার আশেপাশে থাকবেন।

রেহান মেঘাদের বাড়ির সামনে একতলা বাড়িটার ছাদ থেকে মেঘাকে এতক্ষণ দেখছিলো,আর ফোনটা ও রেহানি করেছিলো মেঘাকে। রেহান হেসে বললো
– মেঘা আমি কখনো ভাবিনি তোমার মত একটি মেয়ের প্রেমে পড়বো আমি। সত্যি আজ আমি উপলব্ধি করতে পারছি রুহি ছিলো শুধুই আমার আবেগ আর ভালোলাগা। মন থেকে ওকে ভালোবাসি নি আমি। তোমার জন্য যে অনুভূতি টা হয় আমার রুহির জন্য তা কখনো হয়নি। তোমাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি মেঘা, খুব শীঘ্রই আমার মনের কথা বলবো তোমাকে।
·
·
·
চলবে……………..

তুমি আমার পর্ব-০৫

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৫)
#মেঘা আফরোজ

·
·
·
সন্ধার পর রেহান নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখনি ওর ফোনের রিংটন বেজে উঠলো,তানভির কল করেছে ফোনটা রিসিভ করে
– হ্যা তানভির বল।
– রেহান কোথায় আছিস তুই?
– বাসায় আছি। কেনো?
– এক্ষুনি ……….. রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আয়।
– কেনো বলবি তো?
– আসলেই দেখতো পাবি তাড়াতাড়ি চলে আয়।
তানভির ফোনটা কেটে দিলো রেহান দেরি না করে জলদি বেড়িয়ে পড়লো। ১০ মিনিটের মধ্য তানভিরের বলা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলো। তানভির বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো,রেহানকে দেখে এগিয়ে আসলো
– কিরে হঠাৎ এভাবে আসতে বললি যে কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
– ভেতরে চল নিজের চোখেই দেখতে পাবি।
তানভির রেহানকে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলো একপাশে দাড়িয়ে রেহানকে ইশারা করলো সামনে তাকাতে। রেহান সামনে তাকালো সামনের দৃশ্যটি দেখে রেহান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না,দুপা পিছিয়ে গেলো রেহান,চোখ ছলছল করে উঠলো।

রেস্টুরেন্টে রুহি ছিলো,একটি ছেলের সাথে খুব কাছাকাছি বসে ছিলো রুহি ছেলেটি ওর হাত ধরে রেখেছিলো। রেহান যখন দেখেছে ছেলেটি তখন রুহির হাতে একটি রিং পড়িয়ে দিয়ে ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরেছিলো।

রেহান এইমুহূর্তে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,তানভির রেহানকে নিয়ে একটু দুরে এসে দাড়ালো ওর কাধে হাত রেখে বললো
– এখন তো বুঝতে পারছিস কেনো রুহির থেকে দুরে থাকতে বলতাম তোকে,আসলে ওই মেয়ে এমনি টাকার লোভে তোর সাথে প্রেমের অভিনয় করছে রুহি ওসব ভালোবাসা নামক কথাগুলো বলে শুধু তোকে হাতে রাখার জন্য।ও আমার এক কাজিনের বোন হয় ওর থেকেই আমি জানতে পেরে তোকে বলতাম কিন্তু তুই তো আমার কথায় কোনো পাত্তাই দিস নি।
রেহান আস্তে করে বললো
– তানভির আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে শুধু মাত্র টাকার জন্য কেউ ভালোবাসার মতো পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে খেলা করতে পারে!!
তানভির অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
– তুই নিজের চোখে দেখেও বলছিস ভুল হচ্ছে! আচ্ছা তুই একটা কাজ কর রুহিকে কল দে জিগ্যেস কর ও কোথায় আছে কি করছে।
রেহান তানভিরের কথামত কল দিলো রুহিকে প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো আবারো কল দিলো রেহান তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। রেহান শান্ত ভাবেই বললো
– রুহি কি করছো?ফোন ধরতে দেরি হলো যে।
রুহি অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো
– ফোনটা রুমে ছিলো আমি মায়ের রুমে ছিলাম।
রেহান রুহির বলা কথা শুনে তানভিরের দিকে তাকালো তানভির ওকে ইশারায় বললো ফোন কাটতে।
– আচ্ছা রুহি পরে কল দিচ্ছি আমি। বলেই কেটে দিলো।
রেহান ফোনটা কেটে কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। তানভির বললো
– এবার বুঝলি তো রুহি তোকে কিভাবে নিজের বসে রাখছিলো। রুহি এখানে অথচ তোকে বললো ও মায়ের রুমে ছিলো।
রেহান তানভিরের হাত ধরে বললো
– তানভির রুহি এটা করতে পারলো! কেনো ঠকালো ও আমাকে সেটা বলতে হবে ওকে।
– কি করতে চাইছিস তুই?
– ওর সামনে যাবো চল। রেহান তানভিরকে নিয়ে রুহির সামনে গিয়ে দাড়ালো।
.
🌿
.
রুহি রেহানকে দেখে চমকে উঠলো বসা থেকে দাড়িয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বললো
– র রেহান ত ততুমি!!
রেহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে হাতের মুঠো শক্ত করে বললো
– হ্যা আমি। কি আমাকে এখানে দেখে খুব অবাক হচ্ছো ,এটাই বুঝি তোমার বাড়ি আর মায়ের রুমে ছিলে একটু আগে তাইনা?
– আ আসলে হয়েছে কি রেহান আমি…….
রেহান রুহিকে আর কিছু না বলতে না জোরে চড় বসিয়ে দিলো ওর গালে,রুহি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো।
রেস্টুরেন্টের সবার চোখ তখন ওদের দিকে রুহির সাথে থাকা ছেলেটিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,রেহান নিজেকে শান্ত করতে না পেরে রুহিকে তুলে আবারো চড় মারলো ওর গালে। রুহি ছলছল চোখে রেহানকে বললো
– রেহান ততুমি আমাকে মারলে!!
– হ্যা মারলাম। অনেক বিশ্বাস করেছিলাম আমি তোকে তানভির সব সময় আমাকে বলে গিয়েছে তোর থেকে দুরে থাকতে আমি শুনিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তোর মিথ্যা ভালোবাসার মায়াজালে। কেনো ঠকালি তুই আমাকে বল? তোর ফোন ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং পেতাম লাস্ট কয়েকমাস ঠিক করে সময় দিস নি আমাকে তারপরেও কিছু বলতাম না তোকে।
রেহান একটু থেমে আবার বললো
এখন বুঝতে পারছি তুই এ ভালোবাসার নাটক কেনো করছিলি,দিনের পর দিন এটা সেটা বলে টাকা নিতে পারছিলি আমার থেকে এ সুযোগ তো তুই হাতছাড়া করতে চাইছিলি না তারজন্যই আমাকে ঠকাচ্ছিলি তুই!

রুহি কাঁদতে কাঁদতে রেহানের হাত চেপে ধরলো
– রেহান আমাকে তুমি ভুল বুঝছো একবার আমার সব কথা শোনো প্লিজ। রেহান আমি তোমাকে ভালো……
– ব্যাস রুহি অনেক হয়েছে আর কিছু শুনতে চাইনা আমি। নেক্সট টাইম আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। রেহান নিজের হাত ছাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। তানভির রেহানের এমন রাগ আগে কখনো দেখেনি অবাক হয়ে দেখছিলো ওকে,তানভির ও রেহানের পেছনে বেড়িয়ে গেলো।
.
🌿
.
তানভির দ্রুত বেড়িয়ে এসে রেহানের সামনে এসে দাড়ালো,রেহানকে শান্তনা দিতে বললো
– রেহান তুই মন খারাপ করিস না। এমনটা হওয়ার ছিলো তাই হয়েছে। তুই….
তানভিরকে থামিয়ে রেহান বললো
– তানভির আমার রুহির জন্য খারাপ লাগছে না,খারাপ লাগছে এই ভেবে যে কেউ শুধুমাত্র টাকার জন্য এমন অভিনয় করতে পারে!!
তানভির অবাক চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– রুহির জন্য তোর একটুও খারাপ লাগছে না!!তুই তো ওকে বললি আর কোনো যোগাযোগ যেনো না করে এতে কষ্ট হচ্ছে না তোর?

রেহান তানভিরের কথায় থমকে গেলো মনে মনে ভাবলো…সত্যিই তো আমি তো রুহিকে বললাম আর যোগাযোগ না করতে কই তার জন্য তো আমার একটুও খারাপ লাগছে না! এমনকি ওর প্রতি যে ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতি কাজ করতো সেটার জন্যও খারাপ লাগছে না আমার!

– কিরে রেহান কিছু বলছিস না যে?
– তানভির দেড় বছরের সম্পর্ক রুহির সাথে আমার কিন্তু কেনো জানি না ওর প্রতি কেনো টান অনুভব করতে পারছি না আমি। কেনো বলতে পারিস?
– হুম কারন তুই রুহিকে মন থেকে ভালোবাসতে পারিস নি কখনো। তুই ভাবতিস রুহিকে ভালোবাসিস আসলে সত্যিটা হলো তোর মন রুহিকে ভালোবাসেনি কখনো। যা ছিলো সবটাই ভালো লাগা।
– তাহলে আজ রুহিকে অন্য ছেলের সাথে দেখে কেনো রেগে গেলাম আমি?
– তোর রেগে যাওয়ার বিশেষ কারন হলো রুহির প্রতি তুই কিছুটা হলেও দুর্বল ছিলি আর সেই দুর্বলতা থেকে তোর রাগ হচ্ছে।

রেহান কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তানভিরের দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো
– তুই আজ আমার চোখ খুলে দিয়েছিস তানভির,তুই শুধু আমার বন্ধু নয় আমার ভাইয়ের মত কাজ করেছিস তুই। রেহানের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তানভির ওকে ছাড়িয়ে হেসে বললো
– রেহান সেই ছোট থেকে এ পর্যন্ত তোর সাথে আছি কখনো চাইনি তোর খারাপ হোক আজও চাই না। তুই নিশ্চই আমার ফোন পেয়ে চলে এসেছিস বাড়িতে বলে আসিস নি তাইনা?
– না বলিনি।
– আচ্ছা তুই এখন বাড়িতে যা আন্টি চিন্তা করছে হয়তো। আর শোন নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তোল রুহি নামে কেউ যে ছিলো তোর জীবনে পারলে ভুলে যাস।
রেহান ছোট করে হুম বলে তানভিরকে বললো
– চল তোকে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে যাবো।
তানভির না করলো না রেহানের সাথে গেলো। রেহান ওকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে তানভির ডাকলো
– রেহান শোন।
– হুম বল।
– মেঘা কিন্তু খুব ভালো মেয়ে বয়সে ছোট হলেও আমার মনে হয় ও তোর জন্য পারফেক্ট।
রেহান তানভিরের কথায় কিছু বললো না। একটু চুপ থেকে মৃদু হেসে বাই বলে চলে আসলো।
·
·
·
চলবে………………..

তুমি আমার পর্ব-০৪

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৪)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
কেটে গেলো কয়েকটি দিন,এর মধ্য মেঘার সম্পর্কে রেহান সব কিছুই জেনে নিয়েছে এবং আড়াল থেকে মেঘাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে রেহান। তবে এসব যে ও কেনো করছে তা আজও অজানা রেহানের কাছে।
একদিন বিকেলে রেহান বাইক নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার পাশে একটা ছেলে দুহাতে পা চেপে ধরে বসে আছে রেহান বাইক সাইড করে রেখে এগিয়ে গেলো ছেলেটির কাছে। হাটু গেরে বসে ছেলেটিকে বললো
– কি হয়েছে তোমার এভাবে বসে আছো কেনো?
ছেলেটি রেহানের দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে বললো
– ভাঙা কাঁচের সাথে লেগে আমার পায়ের আঙ্গুল অনেক খানি কেটে গিয়েছে,আমি হাটতে পারছি না ব্যাথা করছে।
রেহান ছেলেটির হাত সরিয়ে দেখলো প্রচুর রক্ত পড়ছে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে ওর পা বেধে দিয়ে বললো
– চলো তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাই এভাবে থাকলে প্রবলেম হবে।
– ভাইয়া আপনাকে কষ্ট করতে হবে না সামনেই আমাদের বাড়ি আপনার ফোনটা একটু দিন আমি আপুকে কল দিয়ে বলি আসতে।
– আমার কোনো কষ্ট হবে না দেখি আমার হাত ধরে আস্তে করে ওঠো।
ছেলেটি আর কথা বাড়ালো না রেহানের সাথে হসপিটালে গেলো। ডাক্তার কাটা জায়গাতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো,সাথে কিছু ওষুধ ও লিখে দিলো।
রেহান বাইরে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো কিনে ছেলেটিকে দিয়ে বললো
– নাও এগুলো তোমার ওষুধ ঠিক মতো খাবে।
– না ভাইয়া আমি নিবো না আপু বলেছে অন্যের টাকায় কেনা কিছু না নিতে।
রেহান হেসে বললো
– আচ্ছা টাকাটা না হয় পরে দিয়ে দিয়ো। তোমার নামটা কি সেটাই তো জানা হলো না এখনো?
– আমার নাম তন্ময়।
রেহানের ওর নাম শুনে মেঘার কথা মনে পড়ে গেলো,মেঘার ভাইয়ের নাম ও তো তন্ময়। রেহান তন্ময়কে বললো
– চলো তোমাকে বাড়িতে পৌছে দেই।
– ভাইয়া আমি রিক্সায় চলে যেতে পারবো এমনিতে আপনি অনেক সময় নষ্ট করেছেন আমার পেছনে।
– কোনো সময় নষ্ট হয়নি চলো পৌছে দিয়ে আসবো তোমাকে।
আসলে রেহান এমনিতেই তন্ময়কে পৌছে দিতে চেয়েছিলো তবে যখন ওর নাম শুনলো আর ওর মুখে বারবার আপু ডাকটি শুনে রেহানের কৌতুহল জাগলো যে এটাই মেঘার ভাই নাকি।
.
🌿
.
তন্ময়কে নিয়ে রেহান একটি বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো
– ভাইয়া এটাই আমাদের বাড়ি।
রেহান তাকালো বাড়িটির দিকে,বাড়িতে খুব একটা বড় নয় আবার ছোট ও নয় চারপাশে দেয়াল আর ওপরে টিনশিটের বাড়িটি।
রেহান তন্ময়কে নিয়ে বাড়িটিতে ঢুকলো,দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে নক করলো দরজায়।
মেঘা রান্নাঘরে ছিলো তখন,শব্দ পেয়ে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে এসে দরজাটা খুলে দিলো।

মেঘা দরজা খুলতেই চোখ পড়লো রেহানের দিকে রেহান ও একধ্যানে চেয়ে আছে মেঘার দিকে। মেঘা চোখ সরিয়ে নিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো খেয়াল করলো রেহান ওকে ধরে আছে,মেঘা তন্ময়কে বললো
– কি হয়েছে ভাই তোর চেহারাটা এমন দেখাচ্ছে কেনো?
– আপু আমার পা কেটো গিয়েছে,এই ভাইয়াটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।
মেঘা চিন্তিত হয়ে তন্ময়ের পায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
– কিভাবে কাটলো! তোকে কতবার বলেছি সাবধানে চলাফেরা করবি। দেখি আয় ভেতরে আয়।
মেঘা তন্ময়কে ধরে ভেতরে নিয়ে আসছিলো,তন্ময় বললো
– আপু ভাইয়াটাকে ভেতরে আসতে বলো।
মেঘা একটু লজ্জিত বোধ করলো ঘুরে তাকিয়ে রেহানকে বললো
– ভাইয়া ভেতরে আসুন।
রেহান মেঘার দিকেই তাকিয়ে ছিলো মেঘার কথায় কিছুটা নরে উঠে হাসি মুখে বললো
– নাহ আজ আসি আমি অন্য কখনো আসবো।
তন্ময় বলে উঠলো
– ভাইয়া প্লিজ আসুন না ভেতরে আপু খুব ভালো চা করে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন।
রেহান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বললো
– ঠিকআছে চা খাবো তবে আজ না,আসি আমি নিজের খেয়াল রেখো কেমন।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
তন্ময় সোফায় বসে বললো
– জানো আপু ভাইয়াটা না খুব ভালো আমাকে কতটা হেল্প করলো।
.
🌿
.
পরের দিন মেঘা কলেজে এসে রেহানকে খুজতে লাগলো। তানিশা মেঘাকে বললো
– এই মেঘা কাকে খুজছিস তুই?
– ফাইনাল ইয়ারের ওই ভাইয়াটাকে খুজছি,কি যেনো নাম? ও হ্যা মনে পড়েছে রেহান ভাইয়াকে খুজছি।

মেঘা কোনো ছেলেকে খুজছে এ কথা শুনে তানিশা অনু দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। অনু অবাক হয়ে বললো
– রেহান ভাইয়াকে কেনো খুজছিস তুই?
মেঘা মজা করে বললো
– কেনো আবার,তুই তো উনাকে লাইক করিস তাই দেখা করে বলবো তোকে যেনো নিজের গলায় ঝুলিয়ে নেয়।
অনু কোমড়ে হাত রেখে মুখ ফুলিয়ে বললো
– মেঘা একদম মজা করবি না বলে দিচ্ছি।
অনুর ফেস দেখে মেঘা তানিশা হেসে উঠলো। তানিশা হাসি থামিয়ে মেঘাকে বললো
– আসল ব্যাপারটা কি সেটা তো বল?
– কাল তন্ময়ের পা কেটে গিয়েছিলো রাস্তা থেকে তারপর রেহান ভাইয়া ওকে হসপিটালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে দিয়েছিলো ওই টাকা টা ভেরত দেবো।
অনু লাফিয়ে উঠে বললো
– দেখেছিস রেহান ভাইয়া কত্তো ভালো।
তানিশা অনুকে থামিয়ে বললো
– যা তোর রেহান ভাইয়ার সামনে গিয়ে এমন ভাবে লাফা আমাদের সামনে একদম লাফাবিনা।
.
🌿
.
রেহানকে না পেয়ে ওরা ক্লাসে চলে গেলো। কলেজ ছুটির পর মেঘা তানিশা অনু গেটের দিকেই আসছিলো। রেহান তখন গেটের পাশে বাইকের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। মেঘারা সেদিকেই এগিয়ে গেলো। রেহান মেঘাকে আসতে দেখে বাইক থেকে নেমে দাড়ালো,ওরা কাছে আসতেই হেসে বললো
– আরে মেঘা কেমন আছো,তন্ময়ের পায়ের ব্যাথাটা কি কমেছে?
– ভালো আছি ভাইয়া। আর হুম তন্ময়ের পায়ের ব্যাথা একটু কমেছে।
মেঘা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে রেহানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
– ভাইয়া টাকাটা নিন।
রেহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘার দিকে
– কিসের টাকা?
– কাল তন্ময়ের ওষুধ কিনে দিয়েছিলেন সেই টাকা।
– আমি চেয়েছি তোমার কাছে?
– চাইতে হবে কেনো,আপনি টাকাটা দিয়েছেন এখন আমি ফেরত দিচ্ছি।
রেহান একটু হাসলো তারপর বললো
– টাকাটা তোমার কাছেই রাখো।
– না ভাইয়া নিন টাকাটা। না হলে আমার খারাপ লাগবে।
– ঠিকআছে একটা কাজ করো টাকাটা দিয়ে আজও কোনো অসহায় শুিশুকে খাবার কিনে দিয়ো।
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান হেসে চলে গেলো সেখান থেকে।
তানভির রেহানের পেছনে দৌড়ে এসে বললো
– রেহান ব্যাপার কি বলতো,তুই ওই মেয়েটিকে কিছুদিন যাবৎ ফলো করছিস ওকে দেখলে তুই কেমন যেনো অন্য মনষ্ক হয়ে যাস কারনটা কি বলবি?
– এর কারন আমি নিজেও জানি নারে।
– আমি তোর চোখে একটা কারন দেখেছি। বলবো?
– হুম বল।
– মেয়েটি তোর মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে যা তুই অনুভব করতে পারছিস না। আমার মন বলছে এটাই কারন।
– তানভির কি বলছিস তুই! তুই তো জানিস আমি রুহিকে……
রেহানকে থামিয়ে তন্ময় বললো
– যদি আমার ধারণা ভুল না হয় তাহলে বলতে পারি মেঘা নামের মেয়েটি তোর মনে যতটা দাগ কেটেছে এ কদিনে,রুহি দের বছরেও তা পরেনি। তুই ঠান্ডা মাথায় কথাটা একবার ভেবে দেখিস।

তানভির চলে গেলো সেখান থেকে,রেহান তানভিরের বলা কথাটা ভাবছে….আসলেই কি তাই মেঘা একটু একটু করে আমার মনে জায়গা করে নিচ্ছে!!! তাহলে রুহি,ওকে কি আমি ভালোবাসি? নাকি রুহি শুধুই ছিলো আমার ভালোলাগা মোহ?
·
·
·
চলবে………………..

তুমি আমার পর্ব-০৩

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৩)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
আজ শুক্রবার কলেজ অফ এই একটিদিন বাবা ভাইয়ের সাথে থেকে সময় কাটায় মেঘা। সকালের নাস্তা সেরে মেঘা নিজের রুমটা গুছাচ্ছিলো তন্ময় রুমে আসলো তখন এসেই খাটের ওপর বসে মেঘার কাজ করা দেখছিলো। মেঘা তন্ময়ের সামনে এসে বললো
– ভাই কিছু বলবি?
– হুম,মাথা নিচু করে।
– বলনা কি বলবি?
– আপু স্কুল প্রাইভেটের জন্য তো কোথাও যেতে পারি না আজ বিকেলে বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরতে যাবো। প্লিজ আপু না করো না।
মেঘা হেসে তন্ময়ের পাশে বসে বললো
– ভাই আমি না করবো কেনো হুম। বাবাকে বলেছিস?
– সাহস পাইনি বলার তুমি বলে দাওনা আপু।
– ঠিকআছে আমি বাবাকে বলে দিবো। তবে শোন সন্ধার আগে বাড়িতে ফিরবি বলে দিলাম।
তন্ময় খুশিতে লাফিয়ে উঠে মেঘা হাত ধরে বললো
– আপু তুৃমি চিন্তা করো না আমি ঠিক সময়ে চলে আসবো।

তন্ময় বেরিয়ে যেতেই মেঘা আবার কাজে মন দিলো। একটু পর দরজায় দাড়িয়ে কেউ বলে উঠলো
– আসবো আপুনি।
মেঘা ঘুরে তাকালো
– আরে আশা তুই! আয় ভেতরে আয়।(আশা মেঘার মামাতো বোন,মেঘার থেকে এক বছরের ছোট।)
আশা এসে খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো,মেঘা হাতের কাজ করতে করতে বললো
– আপুনিকে এতদিন পর মনে পড়লো তাইনা।
– আর বলো না ভাইয়াকে তো যানোই কোথাও যেতে দিতে চায় না আজ অনেক বুঝিয়ে চলে এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে।
– মামা মামি ভাইয়া কেমন আছে?
– সবাই ভালো আছে।
– এসেছিস কার সাথে?
– ভাইয়া নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে আবার সন্ধার পর এসে নিয়ে যাবে।
– এটুকু সময়ের জন্য কে আসতে বলেছে তোকে?আশার পাশে বসে বললো।
– আসতে পেরেছি তাই তো আমার ভাগ্য। বড় ভাই থাকাটা সত্যিই প্যারাময় একটা ব্যাপার। সারাক্ষণ শুধু পড়তে বলে।
– তা তো বলবেই সামনে এস এস সি পরীক্ষা দিবি তার জন্যই তো বলে।
– উফ আপুনি পড়ার কথা বাদ দাও তো।
.
🌿
.
আশাকে সাথে নিয়ে মেঘা বিকেলে হাটতে বেড়িয়েছে। মেঘাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে একটা লেক আছে সেখানেই এসেছে ওরা। মেঘা আর আশা লেকের পার ধরে হাটছিলো আর টুকটাক গল্প করছিলো।

রেহান অবসর সময় পেলেই এই লেকের পারে এসে একাই সময় কাটায় আজও এসেছে। বড় একটা গাছের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বসে আছে রেহান তার দৃষ্টি লেকের সচ্ছ পানির দিকে। হঠাৎ হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে রেহান পেছনে তাকালো। নিজেকে আবারো হারিয়ে ফেললো সেই মনোমুগ্ধকর হাসিতে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
মেঘারা রেহানের থেকে একটু সামনে বসেছিলো আর গল্পের ছলে হাসছিলো মেঘা। কেউ যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে ওর কোনো খেয়াল নেই।

ফোনের শব্দে রেহানের ধ্যান ভাঙলো মেঘার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রুহি কল করেছে। রেহান রিসিভ না করে ফোনটা রেখে দিলো। রেহান রুহির ফোন পেলে এক সেকেন্ড ও দেরি করতো না ধরতে আর আজ সে ফোনটা কেটে দিলো এ কথা ভেবেই অবাক হচ্ছে রেহান!
রেহান নিজে নিজেই বলতে লাগলো…এ কি হচ্ছে আমার? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। এই মেয়েটিকে দেখার পর থেকে সব কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। বারবার শুধু কৌতুহল জাগছে মেয়েটির সম্পর্কে জানতে। মেয়েটির নামও তো জানি না,একবার কি জিগ্যেস করে দেখবো ওর নাম কি?
রেহান আর কিছু না ভেবে উঠে পা বাড়ালো মেঘাদের দিকে।
মেঘারা সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো। রেহান মেঘার পেছনে গিয়ে দাড়ালো,কিন্তু কি বলে কথা শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। রেহান হঠাৎ করে বলে উঠলো
– এক্সকিউজমি। আমি কি তোমাদের পাশে একটু বসতে পারি?
মেঘা আশা দুজনেই তাকালো রেহানকে দেখে মেঘা কিছুটা অবাক হলো,অবাকভঙ্গিতেই বললো
– ভাইয়া আপনি!!
রেহান মুচকি হেসে বললো
– আমাকে চেনো তুমি?
– না মানে হ্যা গতকাল কলেজে আপনার গান গাইতে শুনেছিলাম,আর সেদিন আমার কারনে আপনার পেপারস গুলো পড়ে গেলো।
– বাহ ভালোই তো মনে রেখেছো। তো কাল লুকিয়ে আমার গান শুনেছিলে নাকি সামনে এসেই?
– লুকিয়ে কেনো শুনবো সামনে দাড়িয়েই শুনেছি!
– ওও আচ্ছা, তো বসতে পারি এখানে?
মেঘা একটু ইতোস্থবোধ করছিলো,মনে মনে ভাবছে এ ছেলেটি হঠাৎ যেচে কথা বলছে কেনো খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নেই তো?
আশা মেঘার উত্তরের অপেক্ষা না করে হেসে বললো
– হ্যা ভাইয়া বসুন না।
রেহান আশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
– থ্যাংকস। বলেই ওদের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলো।
.
🌿
.
মেঘার খুব বিরক্ত লাগছিলো অপরিচিত একটা ছেলে এভাবে পাশে বসে আছে ব্যাপারটা ওর কাছে ভালো লাগছে না। রেহানও কিছু বলছে না। আসলে রেহানও বুঝতে পারছে না কি বলে শুরু করবে তাই চুপচাপ বসে আছে।
মেঘা নিজেই বললো
– ভাইয়া আপনি কি কিছু বলবেন?
রেহান তাকালো মেঘার দিকে দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো মেঘা মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে নিলো কিন্তু রেহান তাকিয়ে রইলো সেই মায়াবি মুখটির দিকে।
পরক্ষণেই রেহানের খেয়াল হলো ও কি করছে,নিজেকে সামলে বললো
– তুমি আমাদের কলেজেই পড়ো তাইনা?
– জ্বি ভাইয়া। সামনে তাকিয়ে।
– কিসে পড়ো? আই মিন ইন্টার নাকি অনার্সে?
– আমি ইন্টারে ভর্তি হয়েছি।
রেহান একটু অবাক হলো…..মেয়েটি ইন্টারে পড়ে! অথচ ওর চলাফেরা দেখে বোঝাই যায় না এতটা ছোট! মনে মনে।
– তোমার নাম কি জানতে পারি?
মেঘা মনে মনে খুবই অবাক হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না কি বলা উচিৎ ওর।
মেঘা কিছু বলছে না দেখে আশা বললো
– ভাইয়া আপুনির নাম মেঘা।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে ভাবলো….বাহ নামটাও তো এই মেয়ের সাথে মিলে গেছে। এ নামটি একমাত্র ওকেই মানিয়েছে। রেহান আশাকে বললো
– তোমার নাম কি কিসে পড়ো তুমি?
– আমার নাম আশা,আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি।
– ও আচ্ছা খুব ভালো মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
রেহান চাইছে মেঘা কিছু বলুক কিন্তু না মেঘা কিছুই বলছে না। রেহানের ফোনটা আবার বেজে উঠলো,পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ওর মা কল দিয়েছে।
– হ্যা মা বলো।
…………
– ঠিকআছে আসছি আমি।
রেহান উঠে দাড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা আসছি তাহলে,কলেজে কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানিয়ো।
আশা হুট করেই বললো
– ভাইয়া আপনার গান শুনবো একদিন শুনাবেন?
– আবার যদি দেখা হয় অবশ্যই শুনাবো। ভালোথেকো তোমরা।

রেহান চলে গেলো মেঘা আশার দিকে তাকিয়ে বললো
– আশা তোকে এত কথা বলতে কে বলেছে হ্যা?
– কই এত কথা বললাম! ভাইয়াটা খুব ভালো আপুনি দেখেছো কত ভদ্রভাবে কথা বললো এসে।
– এটাই তো ভাবাচ্ছে আমাকে।
– ভাবনার কি আছে খারাপ কিছু তো বলে নি,তুমি ওনাদের কলেজে পড়ো তাই নাম কিসে পড়ো জানতে চাইলো।
– হয়েছে বাদ দে চল বাড়িতে ফিরি এখন।
– হুম চলো।
.
🌿
.
রেহান ছাদে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিলো আর মেঘার কথা ভাবছিলো। মেঘাকে দেখার পর থেকে ওর কথাই বেশি ভাবে না চাইতেও ভাবনাতে চলে আসে। তবে এর কি কারন রেহান জানে না। রেহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে।
আচ্ছা আমি তো রুহিকে ভালোবাসি কিন্তু প্রথম থেকে কখনো তো রুহিকে নিয়ে এতটা ভাবি নি যতটা মেঘাকে নিয়ে ভাবছি!

পরের দিন রেহান কলেজে এসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর একটু পর পর গেটের দিকে তাকাচ্ছে,তানভির রেহানকে বললো
– কিরে গেটের দিকে তাকাচ্ছিস কেনো বার বার কেউ আসবে নাকি?
– নাহ কে আসবে এমনি।
– ওহ, এই রুহির কি খবর রে কথা হয় তোর সাথে?
– হুম হয়।
– যাক এখনো তাহলে ঝুলে আছে তোর গলায়। তাচ্ছল্যের স্বরে বললো।
– ঝুলে আছে মানে! তানভির কি বলতে চাইছিস তুই?
– আমি বলতে চাইছি কি সেটা তুই ভালো করেই জানিস। তোকে আগেও বলেছি এখনো বলছি রুহির থেকে দুরে সরে আয়। ওই মেয়ে সুবিধার না।
– স্টপ তানভির কি বলছিস তুই! রুহিকে আমি ভালোবাসি আর ও খুব ভালো মেয়ে। কিছুটা রেগে বললো।
– রেগে যাচ্ছিস কেনো,এখন আমার কথা কানে তুলছিস না ঠিকি তবে একদিন তুই নিজের ভুলটা ঠিক বুঝবি মিলিয়ে নিস আমার কথা।
রেহান তানভিরের কথায় আর কোনো উত্তর দিলো না।
আসলে রেহান ও কিছুটা বুঝতে পারে রুহির পরিবর্তন মাঝে মাঝে ওর কথা বলা চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হয় ওর কাছে।

রেহান একটা গোলোক ধাঁধায় পড়ে গিয়েছে একদিকে রুহি অন্যদিকে মেঘা। রুহিকে তো সে ভালোবাসে কিন্তু মেঘা! ওকে কেনো মনে পড়ে বারবার এটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না রেহান। রেহান গেটের দিকে আবার তাকালো কিন্তু এবারো হতাস হলো মেঘাকে না দেখে।
·
·
·
চলবে………………..

তুমি আমার পর্ব- ০২

0

#তুমি আমার (পর্ব ০২)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা ওর ফ্রেন্ড তানিশা আর অনুর সাথে ক্যান্টিনে বসে ছিলো। হঠাৎ কানে ভেসে আসলো গিটারের টুংটাং আওয়াজ। মেঘা এদিক ওদিকে তাকালো ওদের থেকে কিছুটা দুরত্বে বড় বট গাছটার নিচে কয়েকটা ছেলেমেয়ের ভীর জমে আছে,আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে। মেঘা তানিশাকে বললো
– এই তানিশা গিটারের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস তুই?
– হ্যা পাচ্ছি তো। কি সুন্দর সুর তুলছে! শব্দটা মনে হচ্ছে ওইদিক থেকে আসছে।
মেঘা উৎসাহ নিয়ে বললো
– চল না দেখে আসি কে বাজাচ্ছে।
অনু বলে উঠলো
– হয়তো রেহান ভাইয়া হবে উনি দারুন গিটার বাজায় আর গানের গলাটা তো আরো সুন্দর।
মেঘা তানিশা দুজনেই তাকালো অনুর দিকে মেঘা বললো
– রেহানটা আবার কে?
অনু কঁপালে ভাজ ফেলে হেসে বললো
– ওমা এটাও জানিস না! রেহান ভাইয়াকে তো সবাই চিনে। উনি এ কলেজেরি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।
তানিশা বললো
– এত চিনে কাজ নেই মেঘা চল তো দেখে আসি।

রেহান চোখ বন্ধ করে গিটারের তালে সুর মিলিয়ে গান গাচ্ছে। রেহানের ফ্রেন্ডরা সহ আরো কিছু ছেলেমেয়ে ওকে ঘিরে কেউ দাড়িয়ে আছে আবার কেউ বসেও আছে।
মেঘা তানিশা অনু ওরা এসে কিছুটা দুরত্ব রেখে দাড়ালো। মেঘা মুগ্ধ হয়ে রেহানের গান শুনছিলো,যখন রেহানকে দেখলো তখন একটু চমকালো মনে মনে ভাবলো
– এ তো কালকের সেই ছেলেটি।
রেহান পুরো গানটি চোখ বন্ধ করেই শেষ করলো। গান শেষে উপস্থিত সবাই জোরে হাতে তালি দিলো কেউ কেউ সিটিও বাজাচ্ছে।
মেঘা এখনো তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে ও যেনো একটা ঘোরে চলে গিয়েছে। তানিশা মেঘার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললো
– কিরে মেঘা কোথায় হারালি তুই!
মেঘা চমকে উঠে তাকালো তানিশার দিকে,তারপর বললো
– শুধু গিটারের তালে কেউ এত সুন্দর করে সুর তুলে গান গাইতে পারে আমার জানা ছিলো না।
অনু হেসে উঠে বললো
– ঠিকি বলেছিস মেঘা আমি তো পুরো ফিদা রেহান ভাইয়ার গান শুনে। আর উনি কি কিউট দেখেছিস যখন গান গাইছিলো মাঝে মাঝে গালে টোল পড়ছিলো কি সুন্দর যে লাগছিলো দেখতে।উনি যদি আমার থেকে এতটা সিনিওর না হতো আমি এখনি গিয়ে প্রোপোজ করতাম।
তানিশা জোরে হেসে উঠে বললো
– তো যা না গিয়ে প্রোপোজ করে দে,সিনিওর তাতে কি।
– তানিশা তুই ঠিক বলছিস!! করবো প্রোপোজ??
– চুপ কর হারামি তোর কি মনে হয় ওই ছেলে এখনো সিঙ্গেল আছে। আর তোর মতো একটা পিচ্চির প্রোপোজাল সে এক্সেপ্ট করবে!
অনু গাল ফুলিয়ে রইলো আর কিছু বললো না। মেঘা চুপচাপ শুনছিলো ওদের কথা কিন্তু কিছুই বলার প্রয়োজন মনে করেনি। মেঘা ওদেরকে বললো
– চল এখন ক্লাসে যাই।
ওরা ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
.
🌿
.
কলেজ ছুটির পর মেঘা তানিশা অনু গেটের বাইরে এসে দাড়ালো,সামনে ফুসকা দেখে অনু লাফিয়ে উঠে বললো
– মেঘা তানিশা ওই দেখ ফুসকা চলনা খাই।
মেঘা বাইরের খাবার তেমন পছন্দ করে না তবে ফুসকাটা ওর খুব প্রিয়। তাই আর না করলো না তিনজনে মিলে এগিয়ে গেলো ফুসকার ভ্যানের সামনে।
তিন প্লেট ফুসকা অর্ডার করে ওরা দাড়িয়ে কথা বলছিলো। ওদের তিনজনের মধ্য অনু বরাবরি বেশি কথা বলে আর হাসাতেও পারে ওর আজগুবি সব কথা বলে। অনু এমন এমন কথা বলছে যা শুনে মেঘা জোরে হেসে উঠলো।
রেহান আর তানভির যাচ্ছিলো সেখান নিয়ে হাসির শব্দ পেয়ে রেহান ঘুরে তাকালো।
মেঘার হাসি দেখে মুহূর্তেই তার চোখ আটকে গেলো।
এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিকে। রেহান নিজেও বুঝতে পারছে না কেনো সে মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে। কেনোই বা ওর হাসিতে এত মুগ্ধ হচ্ছে! তানভির রেহানকে ঝাকিয়ে বললো
– কিরে দাড়িয়ে পড়লি যে চল।
রেহান তানভিরের দিকে না তাকিয়েই বললো
– তানভির তুই বাড়িতে যা এখন সন্ধায় দেখা হবে। আমার এখন একটু কাজ আছে।
তানভির মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। রেহান চমকালো! মনে মনে ভাবছে
– কি হলো হঠাৎ আমার! আমার তো এখন কোনো কাজ নেই তাহলে তানভিরকে কেনো পাঠিয়ে দিলাম?
রেহান আবারো তাকালো মেঘার দিকে তারপর চোখ সরিয়ে মনে মনে বলছে
– কাল এই মেয়েটার মুখ বারবার আমার চোখে ভেসে উঠছিলো আর আজ ওর হাসি আমাকে মুগ্ধ করছে কিন্তু কেনো হচ্ছে এমন কিছুই তো বুঝতে পারছি না আমি!!
.
🌿
.
মেঘারা ফুসকা খেতে শুরু করলে ছোট একটি মেয়ে এসে মেঘার ওড়না ধরে টানছিলো। মেঘা তাকালো সেদিকে,মেয়েটির বয়স ৭ থেকে ৮বছর হবে গায়ে নোংরা জামা চুলগুলো এলোমেলো মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সকাল থেকে কিছুই খায়নি,মেঘার খুব মায়া হলো। মেঘা নরম স্বরে মেয়েটিকে বললো
– ক্ষুদা পেয়েছে তোমার?
মেয়েটি এদিক ওদিকে মাথা নাড়ালো মানে হ্যা ওর ক্ষুদা পেয়েছে।
মেঘা নিজের হাতে থাকা ফুসকার প্লেটটা এগিয়ে দিলো
– নাও এটা খাও তুমি,আমি তোমার জন্য আরো খাবার নিয়ে আসছি।
মেয়েটি হেসে মেঘার হাত থেকে প্লেটটি নিয়ে নিলো।
তানিশা অনু মেঘার এমন কাজ দেখে খুব খুশি হলো। আরো একজনও দেখছিলো মেঘা কি করে সে আর কেও নয় রেহান। রেহান অনেকটা উৎসাহ নিয়ে পাশে থাকা গাছটিতে হেলান দিয়ে দাড়ালো মেঘা কি করে দেখার জন্য।

মেঘা একটা ব্যাগ এনে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
– আম্মায় আছে আর ছোডো বইন আছে।
– বাবা নেই তোমার?
মেয়েটির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,মেঘা আর কিছু জানতে না চেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
– এই ব্যাগে পাউরুটি কলা আর কিছু ফল আছে বাড়িতে গিয়ে তোমার মা বোনের সাথে করে খাবে কেমন।
মেয়েটি হেসে দিয়ে মেঘার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললো
– আফা আল্লাহ আপনারে খুব ভালা রাখবো দেইখেন।
মেঘা মৃদু হাসলো। মেয়েটি খুশি হয়ে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
তানিশা মেঘাকে বললো
– মেঘা তোর থেকে সত্যিই আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি রে আজও নতুন কিছু শিখলাম,তোর মত বন্ধু পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।
মেঘা হেসে বললো
– তানিশা তুই একটু বেশি বলছিস।
অনু মেঘার কাছে এসে বললো
– তানিশা ভুল কিছু বলেনি মেঘা ও ঠিক বলেছে।
– হয়েছে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে চল এখন।
ফুসকার বিল মিটিয়ে ওরা চলে আসলো সেখান থেকে।
.
🌿
.
রেহান খুব মনোযোগ সহকারে মেঘাকে দেখছিলো এতক্ষণ,রেহান একমাত্র রুহিকে ছাড়া কোনো মেয়েকে এভাবে কখনো দেখেনি কিন্তু আজ দেখছে।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো
– এটুকু একটা মেয়ে কিন্তু কতটা ভালো তার চিন্তাধারা! ওকে দেখে তো মনে হলো মধ্যবিত্ত ঘরের নম্র ভদ্র সাধারণ একটি মেয়ে। জানিনা বার বার কেনো জানতে ইচ্ছে করছে মেয়েটি সম্পর্কে।মেয়েটার মুখে একটা মায়া আছে হাসলে যেনো সে মায়া আরো বহুগুণে বেড়ে যায়।
তারপরেও ওকে দেখে মনে হয় চাপা কষ্ট জমে আছে ওর ভেতরে। খুব আগ্রহ জাগছে জানার। কালই জানতে হবে মেয়েটির সম্পর্কে।
পরক্ষণেই রেহান ভাবলো
– আচ্ছা আমি কেনো মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাইছি! কেনোই বা এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ওকে দেখলাম! আমি তো রুহিকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবতে চাইনি কখনো। রুহির হাসি কথা বলা আমাকে মুগ্ধ করে তবে এতটা নয় কিন্তু আজ এই মেয়েটির হাসিতে কেনো মুগ্ধ হলাম আমি? নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।এখন রুহির সাথে দেখা করা দরকার আমার হয়তো ওকে দেখলে সব ভুলে যাবো আমি।

রেহান রুহিকে কল দিলো দেখা করার জন্য। রুহিও রাজি হয়েছে দেখা করবে বলেছ। একটা রেস্টুরেন্টে রুহির সাথে দেখা করলো রেহান তারপর সেখান থেকে বেড়িয়ে সারা বিকেল রুহির সাথে কাটিয়ে সন্ধায় বাড়ি ফিরেছে রেহান। রেহান রুহির সাথে সময় কাটিয়েছে ঠিকি তবে মেঘার মুখটা ভুলতে পারছে না, না চাইতেও বারবার ওর হাসি মাখা চেহারাটা ভেসে উঠেছে।

আজ সে রুহিকে আগের মতোই পেয়েছে যেমনটা রিলেশনের শুরুতে ছিলো। কিন্তু রুহি যে সবটাই অভিনয় করে চলেছে সেটা রেহান বুঝতে পারছে না। রুহিকে আজ আগের মত পেয়ে এ কদিনে রুহি যে ওকে ইগনোর করেছে সেটা হয়তো রেহান ভুলেই গিয়েছে।
·
·
·
চলবে………………..

তুমি আমার পর্ব-০১

0

#তুমি আমার (পর্ব ০১)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
কলেজ ছুটির পর রিক্সার জন্য রাস্তায় প্রায় ১৫ মিনিট দাড়িয়ে আছে মেঘা। কড়া রোদে কপাল বেয়ে ফোটা ফোটা ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিজে নিজেই বিড়বিড় করছে মেঘা……উফ এই রিক্সা গুলোর কি হলো আজ,সবগুলো কি ধর্মগট করে বসে আছে আমাকে নিতে হবে বলে! এই রোদে তো দাড়িয়ে থাকাও সম্ভব নয়।
.
মেঘা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে পুরো নাম মেঘা আফরোজ এবার ইন্টারে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবা ছোটখাটো একটা চাকরি করে মেঘার ছোট একটা ভাই আছে নাম তন্ময় সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।
.
মেঘা আর কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটতে লাগলো। কিছুদুর এগোতেই চোখ পড়লো একটি বাচ্চার দিকে,বাচ্চাটি রাস্তার মাঝের দিকে যাচ্ছে। দুপুর টাইম তাই রাস্তায় তেমন গাড়ি ছিলো না তবে ছোট ছোট গাড়ি গুলো দ্রুত গতিতে ছুটছে। মেঘা আর দেরি না করে দৌড়ে গেলো বাচ্চাটির দিকে,বাচ্চাটিকে কোলে তুলে ঘুরে দাড়াতেই বড় একটা গাড়ি ওর এক থেকে দেড় হাত দুরত্বে ব্রেক করলো। মেঘা ভয় পেয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলো গাড়িটা দাড়িয়ে পড়েছে,মেঘা আর দেরি না করে সরে গেলো।

হঠাৎ এভাবে গাড়ি ব্রেক করায় গাড়ির পেছনে বসে থাকা রেহান কপাল কুঁচকে ড্রাইভারকে বললো
– কি ব্যাপার এভাবে ব্রেক করলে কেনো?
– ছোট স্যার সামনে একটা মেয়ে একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে পড়েছিলো।
– কোথায় মেয়ে কেউ তো নেই! সামনে তাকিয়ে।
– মেয়েটা ওই যে রাস্তার পাশে চলে গিয়েছে।
ড্রাইভারের চোখ অনুসরণ করে রেহান সেদিকে তাকালো। দেখলো একটি মেয়ে একজন মহিলার কোলে বাচ্চাটিকে দিলো। আর সে মহিলাটি হাসি মুখে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিছু বলছেও কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না। রেহান নিজের চোখ সরিয়ে নিলো সেদিক থেকে। শান্ত গলায় ড্রাইভারকে বললো
– দাড়িয়ে আছো কেনো চলো।
.
রেহান ধনী ঘরের ছেলে পুরো নাম আহনাফ আহমেদ রেহান,অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। বাবা বড় বিজনেসম্যান।ওরা দুভাই বড় ভাই রাফসান বাবার সাথে বিজনেস সামলায়।
.
🌿
.
মেঘা রোজকার মত আজও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো সকালের নাস্তা বানাবে বলে। ৭ টার মধ্য নাস্তা রেডি করে তন্ময়কে ডেকে তুললো,বাবাকেও ডাকলো।
খাবার টেবিলে রাশেদ সাহেব(মেঘার বাবা)মেঘাকে বললো
– মেঘা মা তোমার খুব কষ্ট হয় তাইনা একা সব সামলাতে?
– না বাবা কষ্ট কেনো হবে!
– এই যে এই বয়সে তুমি সংসার সামলাচ্ছো তন্ময়ের দেখাশুনো করছো আর নিজের পড়াশুনায় তো আছেই। আজ যদি তোমার মা থাকতো তাহলে তোমাকে এত দিক দেখতে হতো না। চোখের পানি মুছে।
(মেঘার মা নেই ৩ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ছেলে মেয়ের কথা ভেবে রাশেদ সাহেব আর দ্বতীয় বিয়ে করে নি।)
– আমার কোনো কষ্ট হয় না বাবা তুমি ভেবো না এত।
রাশেদ সাহেব মেয়ের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে হাসি মুখে বললো
– আমার ছোট্ট মেয়েটা সত্যি বড় হয়ে গেছে। মেঘার মাথায় হাত রেখে।
তন্ময় খেতে খেতে বললো
– বাবা আমিও কিন্তু বড় হয়ে গিয়েছি,আপু যেমন আমার খেয়াল রাখে আমিও তেমন আপুর খেয়াল রাখি।
তন্ময়ের কথা শুলে মেঘা আর ওর বাবা দুজনেই হেসে উঠলো।
.
🌿
.
দুদিন পর মেঘা আজ কলেজে এসেছে। দেরি হয়ে গিয়েছে তাই তাড়াহুড়া করে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। কাধে থাকা ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গিয়েছে।মেঘা নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাড়ালো। সরি বলার জন্য সামনে তাকাতেই দেখলো একটি ছেলে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ছেলেটি রেগে বললো
– এই মেয়ে চোখে দেখো না নাকি! দিলে তো আমার পেপারস গুলো ফেলে।
মেঘা খেয়াল করলো নিচে অনেকগুলো কাগজ পড়ে আছে,মেঘা কাগজ গুলো মাটি থেকে তুলে ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– সরি ভাইয়া আসলে ক্লাসে লেট হয়ে গেছে তাই তাড়াহুড়োতে খেয়াল করি নি। অপরাধী স্বরে বললো।

মেঘার এভাবে কথা বলাতে সামনে থাকা ছেলেটি ওর মুখের দিকে তাকালো তারপর মেঘার হাত থেকে পেপারস গুলো নিলো। মেঘা আর কিছু না বলে নিজের ব্যাগটা তুলে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
ছেলেটি আর কেউ নয় রেহান ছিলো,মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো
– এই মেয়েটিকে কোথায় যেনো দেখেছি আমি!!
এর মাঝেই তানভির এসে রেহানকে খুচিয়ে বলল
– কিরে রেহান মেয়েটি তোর পেপারস গুলো ফেলে দিলো তুই কিছু না বলেই ওকে যেতে দিলি।
– আরে মেয়েটি ইচ্ছে করে ফেলেনি তাড়াহুড়ো করে আসছিলো খেয়াল করেনি হয়তো।
তানভির হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে রইলো
– ওই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো তুই?
– দেখছি তোকে আচ্ছা তুই রেহান তো??
– তানভির কি যা তা বলছিস তুই!!
-ভুল তো বলিনি এর আগেও তো দুইটা মেয়ের সাথে তোর ধাক্কা লেগেছিলো তুই ওদেরকে ইচ্ছে মত ঝেড়েছিলি আর আজ!!
– আগের মেয়েগুলো ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো তাই ওভাবে বলেছিলাম। কথা না বাড়িয়ে চল তো এখন।
.
🌿
.
রাতে রেহান নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎই মেঘার মুখটা ভেসে উঠলো ওর চোখে। রেহান চোখ বন্ধ করে আবার খুলে নিজে নিজেই বলতে লাগলো
– কি হলো ব্যাপারটা! ওই মেয়েটির মুখ আমার চোখে ভেসে উঠলো কেনো! এমনটা কেনো হচ্ছে আমার। রেহান আবার চোখ বন্ধ করলো ভেসে উঠলো
মেঘার সে মায়াবি মুখটা।
রেহান ধপ করে চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো
– আজব তো! মেয়েটিকে চিনি না জানি না আজই প্রথম দেখলাম,মুখের দিকেও তো তেমন নিখুত ভাবে তাকাইনি!তবে মেয়েটির মুখে যে একটা মায়া জড়িয়ে ছিলো এটা বুঝতে পারছি।দেখে তো মনে হলো বয়স খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু এটাই তো বুঝতে পারছি না ওই মেয়েটি কেনো আমার চোখে ভেসে উঠছে?

রেহান ল্যাপটপটা অফ করে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। তারপর ডায়েল করলো রুহির নাম্বারে দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো,ওপাশ থেকে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
– হ্যালো রেহান বলো।
রুহির কথা শুনে মনে হচ্ছে ব্যাস্ততার মাঝে এসে ফোনটা ধরেছে সে।
– রুহি তুমি কি বিজি ছিলে?
রেহানের প্রশ্নে রুহি কিছুটা চমকালো নিজেকে সামলে বললো
– না না কি নিয়ে বিজি থাকবো আমি। আসলে রেহান আমার না খুব ঘুম পেয়েছে কাল কথা বলবো।
রেহান কিছু না বলেই ফোনটা কেটে ব্যালকনিতে থাকা সোফায় ছুড়ে মারলো।
.
🌿
.
রুহি রেহানের গার্লফ্রেন্ড দের বছরের রিলেশন ওদের। শুরুর দিকে ওদের রিলেশন ভালোই চলছিলো। কিন্তু ইদানীং রুহির মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখছে রেহান। রুহির ফোনে কল দিলে বেশি সময়েই ওয়েটিং পাওয়া যায় আর যদিও রিসিভ করে বেশিক্ষণ কথা বলে না। তবে রেহান এ নিয়ে কিছু বলেনি ভাবে হয়তো কোনো রিলেটিভ এর সাথে কথা বলছে বা ব্যাস্ত আছে।

কিন্তু রুহির এমন ইগনোর করাটা রেহান আজ মানতে পারছে না ফোনটা হাতে তুলে আবারো কল দিলো রুহির নাম্বারে। একবার রিং হলো ধরে নি দ্বিতীয় বার রিং হওয়ার পর কেটে দিলো। এতে রেহানের রাগ উঠে গেলো আবারো কল দিলো তখন রিসিভ হলো ফোনটা।
ওপাশ থেকে কড়া গলায় রুহি বলে উঠলো
– রেহান তোমাকে না বললাম আমার ঘুম পেয়েছে।
– সত্যিই কি তুমি ঘুমাবে নাকি অন্য কোনো কাজে বিজি তুমি?
রেহান নিজেও জানে না ও কি বললো মুখ ফসকেই কথাটা বলে ফেলেছে।
রুহি এবার কেঁপে উঠলো আমতা আমতা করে বললো
– রে রেহান বেবি অ অন্য ককি কাজে বিজি থাকবো আমি!!
– রুহি এভাবে কথা বলছো কেনো মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছো!কোনো প্রবলেম?
– না আমি ভভয় কেনো পাবো।
রেহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই ফোনটা কেটে দিয়ে সোফাতে বসে গা এলিয়ে দিলো।

রেহান ফোনটা কাটার পর রুহি কপালের ঘাম মুছে শান্ত হয়ে বসলো। পেছন থেকে রুহিকে কেউ জড়িয়ে ধরে বললো
– রুহি বেবি কি বলেছে রেহান ঘামছো কেনো তুমি?
– আমার মনে হচ্ছে রেহান আমাকে সন্দেহ করছে।ধরে ফেলবে না তো আবার!
– আরে রুহি ঘাবড়াচ্ছো কেনো। কিছুই হবে না তুমি শুধু কৌশলে ওকে হাতে রাখো,ওকে সময় দাও বেশি বেশি তাহলে আর ওর মাথায় কিছু আসবে না।
– হুম ঠিক বলেছো।
তারপর দুজনেই রুম কাপিয়ে হেসে উঠলো।
·
·
·
চলবে…………………

ভালোবাসি পর্ব-০৮(শেষ পর্ব)

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- শেষ

প্রায় ১ ঘন্টা পর আমার সাজ কমপ্লিট হলো.আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠি.হলুদ কালারের একটা ভারী লেহেঙ্গা পড়েছি সাথে হলুদ কালারের সব ফুলের অর্গামেন্টস .নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না.সাবু আমার দু কাঁধে হাত রেখে বলে ,

-কিরে কেমন সাজালাম!দেখ তোকে কি কিউট লাগছে.

আমি মুচকি হেসে বললাম ,

-আমি তো বরাবরই কিউট !

সাবু ব্রু কুঁচকে বলে ,

-জিনা আমি এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছি বলেই তোকে কিউট লাগছে নয়তো পার্লারে সাজলে নির্ঘাত পেত্নীর মতো লাগতো .

সাবুর কথা শুনে আমি ওর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকাই.আমার তাকানোর স্টাইল দেখে সাবা বলে,

-কি এভাবে কি দেখছিস?

আমি তাচ্ছিল্লের স্বরে বলি,

-না আমার বান্ধবী যে এত বড় মেকাপ আর্টিস্ট তা আগে আমার জানা ছিল না.ভাগ্যিস তুই এতো ভালো মেকাপ করতে জানিস নয়তো আমাকে তো পার্লার থেকে পেত্নীর মতো সেজে আসতে হতো .কি দুঃখের ব্যাপার বলতো.আমান তো আমার পেত্নীর মতো চেহারাটা দেখে নির্ঘাত অজ্ঞান হয়ে যেত.আল্লাহ বাঁচিয়েছে বল ,নয়তো আজ আমার বিয়েটাই হতো না.

আমার কথা শুনে সাবা আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলে
-আমি বেশ বুঝতে পারছি যে তুই আমার মজা নিচ্ছিস!

আমি সাবার দিকে তাকিয়ে মুখে একটা সিরিয়াস ভাব এনে বললাম ,
-এসব কি বলছিস বলতো!আমি তো তোকে নিয় গর্ব করছি এই যে তুই এত ভালো মেকাপ করতে পারিস।দেখবি একদিন তুই তোর এই মেকাপের জন্য নোবেল পুরস্কার পাবি
.
আমার কথা শুনে সাবা মুখ শক্ত করে বলে
-মেকাপের জন্য কেউ আজ অবধি নোবেল পায়নি ।

আমি ভাবার এক্টিং করে বললাম
-কেউ পাই নি .তো কি হয়েছে তুই পাবি.সর্বপ্রথম মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে নোবেল বিজয়ী হবে আমার এক মাত্র বেস্টি সাবা চৌধুরী.ইয়ে হাত তালি.

কথাটা বলে দুটো হাত তালি দিতে আম্মু হুড়মুড়িয়ে রুমে আসে.আমাকে দেখে বলে ,

-তাড়াতাড়ি স্টেজে চল .মেহমানরা সবাই অপেক্ষা করছে.তারপর সাবার দিকে তাকিয়ে বলে ,

-সাবু ওকে একটু তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় তো মা।

সাবা মাথা হেলিয়ে বললো
– ঠিক আছে মামনি নিয়ে আসছি.

সাবার কথা শেষ হতেই আম্মু আবার তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় ।

আম্মুর ব্যবহারে আমি খুব অবাক হই।আমি সামান্য একটা জামা পড়লেও আম্মু আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আর আজ এত সাজলাম তাও একবার ভালো করে তাকালো না.আম্মুর চোখ মুখটাও যেন কেমন লাগছিলো.আম্মুকি কান্না করেছে তাই হয়তোবা আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলেনি যদি আমি ধরে ফেলি.হাজার চিন্তা মনে এসে ভিড়ছে.আমাকে গভীর ভাবে কিছু ভাবতে দেখে সাবা আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-কিরে প্রত্তু কি ভাবছিস.চল স্টেজে যাই।

-হুম চল.।

রাত২.৩০টা ,

ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম.উফফ এই বিয়ে মানেই হলো একটা ঝামেলা.খুব বিরক্ত লাগছে.হলুদ দিয়ে পুরো গোসল করিয়ে দিয়েছে.অসহ্য.ভীষণ রাগ লাগছে আমার.বিশেষ করে ওই পেত্নী সাবাটার উপর কি অবস্থা করেছে আমার হলুদ দিয়ে.১ ঘন্টা ধরে ঘষে মেজে বোধ হয় এই দাগ উঠেছে .সারারাত এতো হৈচৈ করে এখন খুব টায়ার্ড .রাজ্যের ঘুম এসে চোখে ভীড় করেছে.চোখের পাতাটা বুজে আসতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো.উফফ এখন আবার কে কল দিয়েছে !মানুষের কি সামান্য কমন সেন্স নাই.এত রাতে কল দিয়ে কেন আমার ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে .কিসের এত শত্রুতা সবার আমার সাথে কে জানে.একরাশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি কিউট বর কল দিচ্ছে.আমানের নাম্বারটা ওই পেত্নী সাবুটাই এই নাম দিয়ে সেইভ করেছে.কিন্তু উনি কেন এখন কল দিচ্ছে .উফফ!আমার ঘুম.

-হ্যালো!আস্সালামুআলাইকুম !

-ওয়ালাইকুমসসালাম.কেমন আছেন ?

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো .আপনি ?

-আমিও আপনার মতোই আছি .কি করছেন?

-এই তো ফ্রেশ হয়ে এসে শুলাম ।

-ওহ আপনাদের এখানে অনুষ্ঠান শেষ ?

-হুম.এখন সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে.আপনাদের কি এখনো হলুদ চলছে .

-এখানে এখন পিচ্চিরা সবাই মিলে নাচানাচি করছে.আমি আমার রুমে চলে এসেছি.ভাবছি এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবো.

-ওহ.

-হুম .আআ.আপনাকে হলুদ লেহেঙ্গায় কিন্তু খুব ভালো মানিয়েছে ।

আমি অবাক হয়ে বলি
-আপনি আমায় দেখলেন কিভাবে ?

-সাবা পিক পাঠিয়েছিল ।

-উফফ এই মেয়েটা না .আমাকে বলেওনি কখন পিক পাঠিয়ে দিয়েছে আল্লাহই জানে.

আমান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো ,
-আপনার গালের হলুদ দেখে আমারও খুব ইচ্ছে করছিলো আপনাকে একটু হলুদ ছুঁইয়ে দিতে.

আমি চুপ হয়ে রইলাম .উনি একটু গলা ঝেড়ে বললেন ,

-আচ্ছা তো ঘুমিয়ে পড়ুন.কাল ও তো ঘুমের ডিস্টার্ব হবে তাই আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ায় ভালো .।

কাল ঘুমের ডিস্টার্ব হবে.কিন্তু কেন.মনে মনে নিজেকেই প্রশ্নটা করলাম।তারপর উনাকে বললাম ,

-আচ্ছা.আল্লাহ হাফেজ.

-ওকে.আল্লাহ হাফেজ.

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বালিশের পাশে রেখেই আমি ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাই.
.
ছাদের এক কোণে মুখ ফলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাবা.তার পাশেই পকেটে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান .বেশ কিছুক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ইরফান বলে উঠে ,

-এই মেয়ে আর কতক্ষন এভাবে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে.অবশ্য তুমি এভাবে মুখ ফুলালে না তোমাকে একদম রসগোল্লার মতো লাগে.ইচ্ছে করে এক্কেবারে কামড়ে খেয়ে ফেলি .
কথাটা বলে ইরফান সাবাকে চোখ মারে.সাবা ইরফানের কথা হজম করতে না পেরে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে .সাবার তাকানোতে ইরফান বলে ,

-কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন.মানছি আমি একটু বেশিই হেন্ডসাম তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকবে আমারও তো লজ্জা শরম আছে নাকি!

ইরফানের এমন আগা গোড়া হীন কথায় সাবা গোল গোল চোখ করে ওর দিকে তাকায় .পরক্ষনেই নিজেকে শক্ত করে বলে ,

-আমি আপনার সাথে কোনো কথায় বলবো না .আমি তো আপনার কেউ না .সারাদিন তো আমার সাথে একবারও কথা বলার সময় পান না .আমি যেচে কথা বলতে গেলেও আপনি আমাকে ইগনোর করেছেন.তাই আমি আর আপনার সাথে কথা বললো না ।হুহ (মুখ ফুলিয়ে বলে সাবা)

সাবার এই বাচ্চা বাচ্চা কথা গুলো শুনে ইরফান সাবার সামনে দাঁড়িয়ে ওর দুপাশে রেলিং-এর উপর হাত রেখে সাবার খুব কাছে এসে বলে ,

-জানো আজ কেন তোমাকে এত ইগনোর করছিলাম.কারণ তোমাকে যখন এই হলুদ শাড়িতে দেখি তখনি আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়.ইচ্ছে করছিলো সব কিছু ফেলে রেখে তোমার কাছে যেতে .কিন্তু তা করলে তো হবে না বোনের বিয়ে বলে কথা আমাকেই তো সব কিছু দেখতে হবে তাই ইচ্ছে করেই তোমাকে ইগনোর করছিলাম যাতে করে তুমি আমার উপর রাগ করে আমার সামনে না আসো আর আমিও আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ এই কাজে দিতে পারি.কিন্তু এখন যে আর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না ডিয়ার।

কথাটা বলে সাবা কিছু বুঝে উঠার আগেই সাবার ঠোঁটে ইরফান ঠোঁট ডুবালো.
.
সকাল ৭.৩০টা

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে আমি কোনো মাছের বাজারে চলে আসছি .উফফ এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছে কেন সবাই .সবাই কি দেখছে না আমি ঘুমাচ্ছি.পাশ থেকে কুশনটা কানে চেপে ধরতে কে যেন সেটা ছো মেরে নিয়ে নেয়.রাগে বোম হয়ে সেই মানুষটার দিকে তাকাতেই দেখি সাবু এক হাতে কোমর অন্য হাতে কুশনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে.আমাকে তাকাতে দেখেই ও বলে উঠে ,

-আর কত ঘুমাবি এবার তো উঠ.ফ্রেশ হয়ে পার্লারে যেতে হবে নাকি!

আমি ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললাম ,

-তুই থাকতে পার্লারে যাবো কেন ?

সাবা কুশনটা আমার পাশে রাখতে রাখতে বলে ,

-বিয়ের সাজ খুব গর্জিয়াস হয়.আমি তো আর এত ভালো সাজাতে পারবো না ।

সাবার কথা শুনে আমি উঠে বসি .তারপর ঠোঁট উল্টিয়ে বলি ,

-নোপ বেবি .তুমিই আমাকে সাজিয়ে দিবে আমি কোনো পার্লারে যাচ্ছি না ,ব্যাস!

-কিন্তু প্রত্তু ,

-কোনো কিন্তু না আমি যা বলছি তাই হবে.

-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন তো আগে ফ্রেশ হতে যা.

-হুম যাচ্ছি.
.
বিকেল ৪.৩০

মা ভাইয়াকে ছেড়ে শশুর বাড়িতে চলে এলাম.বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে.জানি না মা আর ভাইকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো.এই মানুষ দুটোই যে আমার পুরো পৃথিবী.ওদেরকে ছেড়ে আসতে যে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো.মাকে এত করে ডাকলাম আসার সময় কিন্তু উনি একবারও আমার সামনে এলেন না জানি আড়াল থেকে চোখের পানি ফেলেছেন .আমি না উনার চোখের পানি দেখে ফেলি সেই ভয়ে আমার সামনে আসেনি .আর ভাইয়া সে তো আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছে’তোর মতো একটা বোন পেয়েছি বলেই ভাই হিসেবে আমি সার্থক.ওই বাড়িতে গিয়ে তুই আরেকটা মা পাবি.আর বাবাও পাবি দেখবি তোর আর কোনো কষ্ট হবে না.’বেশ বুঝতে পারছিলাম কথা গুলো বলার সময় ভাইয়ার গলা আটকে যাচ্ছিলো.কিন্তু আমাকে বুঝতে দেয়নি.আর আমার ওই পাগলিটা আছে না সাবা সে তো আমার কবুল বলা থেকে কান্না.মনে হচ্ছিলো আমার বিয়ে হচ্ছেনা আমাকে ফাশিতে চড়ানো হচ্ছে।আসার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বলে এসেছিলাম.’আমার ভাই আর মায়ের খেয়াল রাখিস.’
.
নতুন বউকে পেয়ে এই বাড়ির মানুষ গুলো যেন তাদের খুশি ধরে রাখতে পারছে না .বাড়ির পিচ্চি গুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে আমায় দেখছে .যেন আমি কোনো এলিয়েন.বেশ কিছুক্ষন উনাদের সাথে সময় কাটানোর পর মা(আমানের আম্মু)আমাদের রাতের খাবারের জন্য ডাকলেন.সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষে আমাকে আমানের রুমে রেখে আসা হলো.

পুরো রুম ফুলেতে ভরপুর.যেদিকে তাকাই সেদিকেই ফুল.অন্যরকম একটা পরিবেশ.বাইরে হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হয়েছে .সাথে ঝড়ো বাতাসও বইছে.বাইরের ঝড়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার মনেও ঝড় বয়ে যাচ্ছে.এক অজানা অনুভূতি আমাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে.কিছুক্ষন বাদে দরজা ঠেলে আমান ভেতরে আসে .উনাকে দেখে আমি সালাম করতে গেলেই উনি আমাক বাহুতে ধরে বলে,

-পা ধরতে হবে না.মুখে সালাম দিলেই হবে ।

আমিও উনার কথা মতো মুখে সালাম দিলাম .তারপর উনি আমাকে উযু করে আসতে বলেন.আমিও তাই করি .দুই রাকাত নফল নামাজ শেষে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়.ঝড়ো বাতাসটা বন্ধ হয়েছে তবে বৃষ্টি এখনো পড়ছে.হঠাৎ পেটের উপর ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে কেঁপে আমি উঠি.আমান আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে .

-এখনো তো কিছুই করেনি তার মধ্যেই এত কাপাকাপি.

উনার শীতল কণ্ঠে আমি লজ্জা পেয়ে যাই উনি আমার কানের পিঠে চুমু দিয়ে বলে .

-আজ থেকে আমি প্রতিটা বৃষ্টি ভেজা রাতে এইভাবেই তোমাকে কাছে চাই.

তারপর উনি আমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে ,

-কি হবে তো আমার প্রতিটা বৃষ্টি ভেজা রাতের সঙ্গী?
আমি লজ্জা মাখা কণ্ঠে বলি ,

-হুম।

—————-সমাপ্ত—————

ভালোবাসি পর্ব-০৭

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৭

কলিং বেল চাপতেই সাবা এসে দরজা খুলে.ওকে দেখে মৃদু হেসে আমি আমার রুমে চলে আসি.আমার পেছন পেছন সাবাও আমার রুমে আসে.খুশিতে গদ গদ হয়ে সাবা আমাকে প্রশ্ন করে ,

-জানু কেমন কাটলো আজকের দিনটা?কোথায় কোথায় ঘুরলি আর কি কি কথা হলো?

আমি আলমারি খুলে কাপড় নিচ্ছিলাম সাবার প্রশ্নে ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলি ,

-ভালোই কেটেছে.আর তুই তো আমানকে আমার সম্পর্কে সবই বলে দিয়েছিস আর নতুন করে কি জানার থাকতে পারে বল!

আমার কথায় সাবা ব্রু কুচকায়.হয়তোবা আমার কথাটা ওর বেশ একটা পছন্দ হয়নি, আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে ,

-কি হয়েছে বলতো ?

একটা প্লাজু আর টি শার্ট হাতে নিয়ে সাবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি ,

-কি হবে?কিছুই হয়নি

সাবা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়.ও আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ি.জানি ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ও ঠিক গুতিয়ে গুতিয়ে আমার পেট থেকে কথা বের করে নেবে.কিন্তু আমি ওকে কিছু বলতে চাই না নয়তো ওর ও মন খারাপ হয়ে যাবে.

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি সাবা বেডের এক কোনায় আসন পেতে বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে.ওকে এইভাবে দেখে আমি ওর মাথায় চাটি মেরে জিজ্ঞেস করি ,

-কিরে কি ভাবছিস ?

পেত্নীটা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আগের মতোই বসে আছে.আমি এবার ওকে খুশি করার জন্য বললাম,

-জানিস সাবু আমান আজকে আমাকে এত সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে গেছে না কি বলবো.উফফ!মারাত্মক রকমের সুন্দর রে .একবার সেখানে গেলে আর আসতে মন চাইবে না .আমারও না খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আসার সময়.

সাবা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো তারপর মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ,

-আর রোমান্স সেটা কেমন করলি?

আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম ,

-আমি এত লুচু টাইপ মেয়ে না যে বিয়ের আগেই তোর মতো রোমান্স এর চিন্তা করবো.ছি! তোর চিন্তা ভাবনা কি খারাপ .ভাবা যায় আমার মতো এমন কিউট ভদ্র একটা মেয়ের কিনা তোর মতো লুচু একটা ফ্রেন্ড জুগিয়েছে.আর কি দুনিয়ায় কেউ ছিল না.বল তো !এটা ঠিক.আমি আর কোনো মেয়েকে আমার বেস্টি বানাতে পারলাম না তোকেই কেন বানালাম .উফফ!এখন আফসোস হচ্ছে!

কথা গুলো বলে আমি মুখ টিপে হাসছি.আর সাবা বালিশের পাশের কুশনটা নিয়ে আমাকে উরা ধুরা মার শুরু করলো আমিও বসে থাকবো নাকি অন্য একটা কুশন নিয়ে আমিও শুরু করলাম .শুরু হয়ে গেলো আমাদের পিলো ফাইট.ধুমসে মারামারি চলছে .আমাদের যুদ্ধের মাঝেই আম্মু রুমে এসে ঢুকলো .আম্মুকে দেখা মাত্র আমরা দুজন ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়ি .এক্কেবারে ভেজা বেড়াল .মনে হয় আমাদের থেকে ইনোসেন্ট এই পৃথিবীতে আর কেউ নেয়.আমাদের এইভাবে চুপসে যেতে দেখে আম্মু মুখ টিপে হাসলেন.আমি আড় চোখে আম্মুর সেই নূরানী হাসিটা একবার দেখে নিলাম .আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

-কিরে প্রত্যাশা আমানের সাথে যে বাইরে গিয়েছিলি কথা বলতে তা আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলিসনি তো.তোর তো আবার মুখ পাতলা কি বলতে কি বলে ফেলিস!

আমি অভিমানী সুরে আম্মুকে বললাম ,

-মোটেও না আম্মু.হে আমি একটু বেশিই বলি তার মানে এই না যে আমি মানুষ বুঝে কথা বলতে জানি না.আমি উনার সাথে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করেছি.

-হুম শুনে খুশি হলাম.আর শোন তোর বিয়ের তো আর বেশি দিন নেয়.ভাবছি কাল থেকে বিয়ে শপিং শুরু করবো .তুই কি বলিস ?

আমি লজ্জা মাখা কণ্ঠে বললাম ,

-ঠিক আছে ।

আমাকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে আম্মু আমার থুতনিটা হাত দিয়ে একটু নাড়িয়ে দিয়ে বলে ,

-আমার মেয়ে তা দেখি লজ্জাও পাচ্ছে.

আম্মু কথায় আমি হেসে ফেলি .আম্মুও হেসে বলে ,

-দোআ করি সারাজীবন যেন তোর মুখে এই হাসিটা বজায় থাকে

পাশ থেকে সাবা বলে উঠে,

-আমিন।

দেখতে দেখতে অনেক দিনগুলো কেটে যায়.কাল আমার বিয়ে আর আজ গায়ে হলুদ.চারপাশে বিয়ের বেশ তোর জোর চলছে.বাসার প্রতিটা কোনায় কোনায় মানুষ গিজগিজ করছে.আম্মু পুরো বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে .মাঝে মাঝে এসে আমাকে তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য আবার দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না দেখছে তার মাঝেই ডেকোরেশনের লোকদের ডেকে বলছে এটা এখানে রোখো ওই তা ঐখানে রাখো.এক মিনিটের জন্যেও বসে রেস্ট নিচ্ছে না.এত দৌড় ছাপেও বিন্দু মাত্র কষ্টের ছাপ নেয় মুখে বিন্দাস হাসি মুখে আবার মেহমানদের আপ্পায়ন করছে .হুম এটাই মায়ের গুণাবলী.সকাল থেকে ভাইয়াওকে একবারের জন্য চোখে পড়েনি.তার এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা একটুও খুত থাকলে চলবে না .নিশ্চয় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কাজ করাচ্ছে.আর আমার বেস্টু সাবু তার যে আজ কি হয়েছে কে জানে.রুমের বাইরে একটু উঁকিঝুঁকি মারছে তো আবার এসে রুমে পায়চারি করছে.পায়চারি থামিয়ে আবার আমাকে বলছে দোস্ত তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে কিন্তু আমি সাজিয়ে দিবো .কথাটা বলে মুখটা বোকার মতো করে বলে আচ্ছা দোস্ত আমি কি দেখতে খুব বাজে .আবার নিজে নিজেই বলছে বাজে হলেই বা কি আমাকে কারো দেখার প্রয়োজন নেয় সবাই তো আজ খুব বিজি আমাকে দেখার মতো টাইম কারো নেয়.কথাগুলো বলে আবার পায়চারি করছে। এই পেত্নীর কথার আগা মাথা কিছুই আমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকছে না তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছি নিশ্চয় ভাইয়ার সাথেই আবার লেগেছে.আমি গালে হাত দিয়ে বসে বাড়ির মানুষগুলোর কাজকর্ম দেখছিলাম.তখনি সাবা চোখ লাল করে বললো ,

-এই মেয়ে তোকে আর কত বার বলবো ফ্রেশ হয়ে আয় কথা কি কানে যায় না?নাকি তোর তো তোর ভাইয়ার মতো সমস্যা আছে .তোর ভাইয়া চোখে দেখে না আর তুই কানে শুনিস না.

আমি এবার রাগি গলায় বললাম ,

-এই তুই আমাকে ঠিক ভাবে বলতো কি হয়েছে ?তখন থেকে দেখছি তুই এরকম উল্টা পাল্টা বকে যাচ্ছিস.আসল কাহিনীটা কি?

আমার প্রশ্নে সাবা আমার আমার পাশে এসে বসে তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ,

-আচ্ছা প্রত্তু আমায় কি এই হলুদ শাড়িতে খুব বাজে লাগছে?

আমি ওর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম ,

-কই না তো তোকে তো পুরো হলুদ পরীর মতো লাগছে!

সাবা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ,

-তাহলে তোর ভাইয়া আমার দিকে ভালভাবে তাকাচ্ছে না কেন.বিকেল থেকে কারণে অকারণে এটা সেটা বাহানা দিয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি বরাবর আমাকে ইগনোর করেই যাচ্ছে.

ওহ আচ্ছা এইটাই আসল কাহিনী .সাবার কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে.কোনোরকমে হাসি আটকিয়ে ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম ,

-আরে পাগলী এইটুকু ব্যাপারে তুই এত হাইপার কেন হচ্ছিস বলতো .আসলে ভাইয়া তো খুব বিজি তাই হয়তোবা তোর দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না ।

-তাই বলে আমার সাথে সারাদিন একটাও কথা বলবে না ।

-আহারে আমার জানুটার কি কষ্ট .থাক জানু কান্না করে না ।

কথাটা বলে ওর মাথাটা আমার কাঁধে চেপে ধরলাম.সাবা ঠাস করে মাথাটা উঠিয়ে বলে ,

-ওই একদম মজা নিবি না বুঝলি .আর একটাও কথা না বলে জলদি ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে সাজাতে হবে .

আমি মুখ ভেঙচিয়ে বললাম ,

-হুম যাচ্ছি ।

ফ্রেশ হয়ে এসে আমি সাজতে বসে পড়লাম.

চলবে,,

ভালোবাসি পর্ব-০৬

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ-সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৬

আমি অবাক হয়ে বললাম,

-২ বছর আগে আমার কোন পিক দেখেছিলেন?

-সেদিন সাবার বার্থডে ছিল.ও বেশ কিছু পিক পাঠিয়েছিল আমাকে তার মধ্যেই একটা পিক আপনার আর ওর.আপনি কালো রঙের শাড়ি পরে ছিলেন.প্রথম আপনাকে সেদিনই দেখেছিলাম তাও কালোতে.জানেন তো কালো রংটাকে আমি বেশি একটা পছন্দ করতাম না.আমার কাছে কালো মানেই আধার.কালো মানেই নিজেকে অন্ধকারের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া.তবে আপনাকে যেদিন কালোতে দেখি সেদিন মনে হয়েছিল যে কালোতে কাউকে এতটা প্রানোচ্ছল কি করে লাগতে পারে.সেই দিন থেকে আমারও সেই রংটার প্রতি অদ্ভুত একটা মায়া তৈরী হয়ে যায়.আর আজকে আবারোও আপনাকে কাল রঙে দেখে সেই মায়াটা আরো বেড়ে গেলো.

আমান আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু সেই কথাগুলো আমার মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছাচ্ছে না.কারণ আমার মন আর মস্তিষ্ক এখন সম্পূর্ণ রূপে মনোযোগ দিয়ে আছে আমাদের ঠিক সামনে বসে থাকা এক মধ্যবয়স্ক কাপলের উপর.যাদেরকে দেখা মাত্র আমার সারা শরীরে রাগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে.আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি .আমাকে দাঁড়াতে দেখে আমান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে প্রত্যাশা?কোনো সমস্যা?

উনার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে আমি সোজা ওই কাপলদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়.আমানও আমার পিছু পিছু আসে।আমাকে এইভাবে উনাদের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে.সেখানে ভদ্র মহিলাটি বলে উঠলো ,

-কি ব্যাপার!কে তুমি?

আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে উনার পাশে থাকা ভদ্র লোকটির দিকে তাকাই.তারপর তাচ্ছিল্লের হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করি ,

-কেমন আছেন মি. এনামুল হক?

আমার প্রশ্নে তিনি অনেক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-তুমি কি আমাকে চেনো মা?

আমি তাচ্ছিল্লের হাসি দিয়ে বললাম ,

-মা.কে মা ?

-তুমি তো আমার মেয়েরই মতো.মেয়েকে তো মা বলা যায়ই

উনার প্রতিটা কথায় রাগে আমার শরীর কাঁপছে.নিজেকে শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ,

-হুম মেয়েরই মতো.কিন্তু মেয়ে না
.
তারপর আমানের দিকে তাকিয়ে বললাম ,

-দেখেছেন আমান,উনি কি বলছেন আমি নাকি উনার মেয়ের মতো কিন্তু মেয়ে না.

আমার কথায় আমান কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে

-কি হয়েছে প্রত্যাশা.আপনি কি উনাকে চেনেন?

আমি সামনের লোকটির দিকে তাকিয়ে শক্ত মুখে বললাম

-কেন চিনবো না .খুব ভালো করে চিনি এনাকে.কখনো ভুলবো না.সারাজীবন উনার কথা আমার মনে থাকবে আমার।

ততক্ষনে লোকটি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তারপর অস্ফুটন শব্দে বলে উঠে,

-প্রত্যাশা!

উনার মুখে আমার নাম শুনে আমার চোখের কোনায় পানি জমে.কিন্তু সেই পানিকে গড়িয়ে পড়তে না দিয়ে নিজেকে শক্ত করে উনাকে প্রশ্ন করি.

-কি করে চিনলেন আমায় মি . এনামুল হক ?

উনি উনার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলো আমার মাথায় হাত রাখার জন্য কিন্তু আমি কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলি ,

-বাহ্!এখনো তো দেখছি ভালোই এক্টিং করছেন.আপনি কি ভেবেছেন আপনার এই ভালো মানুষের মুখোশটা আমি ধরতে পারবো না?

উনি কিছুটা ভেজা স্বরে বলে ,

-কেমন আছিস মা ?

আমি এবার রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলি ,

-খবরদার আমাকে মা ডাকবেন না.আমি আপনার মতো একটা লোকের মুখে মা ডাকটা শুনতে চাই না.

আমাকে এভাবে রেগে যেতে দেখে আমান আমার হাত ধরে বলে ,

-কি হয়েছে আপনার প্রত্যাশা .আর উনিই বা কে?এত রেগে যাচ্ছেন কেন?

আমি আমানের দিকে তাকিয়ে বলি ,

-উনিই সেই মানুষ আমান যার জন্য আমি বিয়ে করতে ভয় পাই.উনি সেই মানুষ যিনি ৭ বছর বয়সে আমাকে আমার ভাই আর মাকে ফেলে রেখে অন্য একটা মহিলার কাছে চলে আসে.উনিই সেই মানুষ আমান যার হাতে একটা সময় আমার মা দিনের পর দিন মার খেয়েছে.জানেন আমান আমি তখন খুব ছোট.তবে বুঝতি পারতাম আমার মার কষ্টটা.যখন দেখতাম আমার মা রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পরে আছে.তখন ধীরে ধীরে মায়ের সামনে বসে মায়ের মাথার রক্ত.ঠোঁটের কিনারার রক্ত গুলো হাত দিয়ে মুছে দিতাম.একদিন কি হয়েছে জানেন আমার মাকে যখন এই লোকটা জানোয়ারের মতো মারছিলো তখন আমার ভাই দৌড়ে গিয়েছিলো মাকে বাঁচাতে কিন্তু এই লোকটা তখন আমার ভাইকেও নির্মমভাবে আঘাত করে.আর সেই দিনই আমার মা প্রতিবাদ করেছিল.উনাকে আটকিয়েছিলো যার ফলে উনি মাকে গরম খুঁটির ছেকা দেয়.এবং বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারপর আর উনি বাসায় ফেরেননি.আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি তা একটা বারের জন্যও কখনো জানতে আসেননি.সেইদিন থেকেই না আমার মনে খুব ভয় ঢুকে গিয়েছিলো যদি আমার সাথেও এমন হয়.যদি আমাকে আমার মার মতো কষ্ট সহ্য করতে হয়.তাই আমি বিয়ে করতে চাইনি।

আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে.আজ যেন চোখের পানি গুলো কোনো বাধা মানবে না.তারা যেন কোনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কত বেশি বয়ে চলতে পারে.নিজেকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছিলাম না .ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলছি.আমার কান্না দেখে আমান আমাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বলে ,

-শান্ত হন প্রত্যাশা .আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করেন.আপনাদের ভালোর কথা ভেবেই আল্লাহ উনাকে আপনাদের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছিলো .আমি জানি আমি আপনার কষ্টটা বুঝবো না.কিন্তু আপনার কষ্টের অংশীদার তো হতে পারবো .কান্না বন্ধ করুন প্লিজ.আর একবার আপনার মার কথা ভাবুনতো যিনি কিনা এত কিছু সহ্য করে নিয়েও কখনো হতাশ হননি .উনি আপনাকে আর আপনার ভাইকে হাড় ভাঙা পরিশ্রম দিয়ে মানুষের মানুষ তৈরী করেছে কেন জানেন যাতে করে এই মানুষটার সামনে দাঁড়ালে আপনারা কখনো দুর্বল হয়ে না পড়ুন বরং রুখে দাঁড়াতে পারেন .আপনার কাছে কি নেয় সেটা নিয়ে আফসোস করবেন না বরং আপনার কাছে যা আছে তা নিয়ে গর্ব করুন.নিজেকে শক্ত করুন।

আমানের কথাই বুঝতে পারলাম কাঁদলে কিছুই হবে না .বরং নিজের কষ্টটাই বাড়বে.তারচেয়ে সব কিছুকে পেছনে ফেলে আমাকে এগিয়ে যেতে হবে .ভুলে যেতে হবে এই মানুষটাকে যেমনটা করেছিল আমার মা.কিন্তু আদৌ কি মা উনাকে ভুলে গিয়েছে .এখনতো দেখি উনার ছবিটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে আর কাঁদে.ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়.হায় কেউ ভালোবাসা পায় না তো কেউ ভালোবাসার মূল্য বুঝে না .কথা গুলো ভেবে নিজেকে শক্ত করলাম .হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে সামনে থাকা আমার জন্ম দাতাকে বললাম ,

-ভালো থাকবেন মি এনামুল হক ।

কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে.

চুপচাপ আমানের গাড়িতে বসে আছি .দৃষ্টি জানলার বাইরে.আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমান বললো,

-প্রত্যাশা আমার মনে হয় এখন আপনার নিজেকে স্বাভাবিক করা উচিত .আর আজকের এই কথা গুলো ও আপনার আম্মুকে বলবেন না নাহলে উনিও কষ্ট পাবেন.

আমি জানলার বাইরেই দৃষ্টি রেখেই বললাম ,

-জানেন আমান আমার আম্মু এখনো ওই লোকটাকে ভালোবাসে .আমি এখনো আম্মুকে ওই লোকটার ছবি হাতে কাঁদতে দেখি ,

আমান ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,

-ভালোবাসা কখনো কমে না প্রত্যাশা .ভালোবাসার মানুষটা যতই কষ্ট দিক না কেন তবু তাকে ভালোবাসতেই মন চায়.যেটা আপনার আম্মুর ক্ষেত্রেও.উনি আপনার বাবাকে সত্যিকারের ভালোবাসতেন তাই এতো অত্যাচারের পরও এখনো উনাকেই ভালোবাসেন.

আমানের কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম ,

-ওই লোকটা আমার বাবা না.আমার বাবা যদি কাউকে বলতেই হয় সেটা হলো আমার ভাই .আমার জীবনে আমার মা আর আমার ভাইই আমার সব আর কারো কোনো জায়গা নেয় বিশেষ করে ওই লোকটার তো না ই

-ঠিক আছে .তবে আপনিও আর রেগে থাকবেন না নিজেকে শান্ত করুন .

আমি শান্ত গলায় উত্তর দিলাম ,

-না আমি রেগে নেয়.ঠিক আছি আমি .

৮.০০তার দিকে বাড়ি পৌঁছায় .আমান আমাকে নামিয়ে দিয়েই উনার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে যান.আজকের বিকেলটা যতটা ভালো কাটে সন্ধ্যাটা তার থেকেও বেশি খারাপ কাটে.কি দরকার ছিল আল্লাহ আবার এই লোকটার মুখোমুখি করানোর .পুরোনো আঘতে আজ আবার রক্তক্ষরণ হয়েছে .কিন্তু এইসব কিছু আম্মুকে বুঝতে দিলে চলবে না .কিন্তু আম্মু তো আমার মুখ দেখলেই সব কিছু বুঝে ফেলে .আল্লাহ দেখো আজ যেন কিছু টের না পায় .ভয়ে ভয়ে বাসার দরজার কলিং বেল চাপি ..

চলবে ..

ভালোবাসি পর্ব-০৫

0

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৫

আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আমানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম .উনি প্রথমে খেয়াল করেননি.পরক্ষনেই মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে আমার আপাতমস্তক একবার দেখে বলে.

-কালো রংটা বোধ হয় আপনার জন্যই তৈরী হয়েছে.

আমি হালকা হেসে মাথা নিচু করে ফেললাম.উনি গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বলে,

-ভেতরে গিয়ে বসুন.

আমি সিটে বসার পর উনিও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেন.গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে.আমি আমানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,

-আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি ?

আমার কথায় আমান আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে দিকে তাকিয়ে বলে ,

-সারপ্রাইজ!

সারপ্রাইজ?এই সারপ্রাইজ জিনিসটা আমার কাছে বড্ডো বেশি বিরিক্তকর.কারণ আমার কাছে মনে হয় সারপ্রাইজ মানে হলো অযথা এই জিনিসটা নিয়ে ব্রেনকে প্রেসার দেয়া.যেমন এই মুহূর্তে মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন গুরুপাক খাচ্ছে .যেমন কি সারপ্রাইজ?কেমন হবে দেখতে?আমার কাছে কেমন লাগবে etc etc .তার চেয়ে সবটা বলে দেয়ায় ভালো .

মাথাটা সিটের সাথে ঠেস দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি.হঠাৎ খেয়াল করলাম গাড়িটা একটা শুনশান জায়গা দিয়ে যাচ্ছে .আমি এবার নড়েচড়ে বসে জানালা দিয়ে বাহিরটা ভালো ভাবে দেখছি .কিন্তু এইদিকে কোনো মানুষ বা বাড়ি ঘর নেয়.রাস্তার দুপাশে শুধু গাছপালা.মনে মনে অনেক চিন্তা ভাবনা আসতে শুরু করলো .কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন উনি.আর এই নীরব রাস্তা দিয়ে কেন?বেশ অস্বস্থি লাগছে .আমার অস্বস্থিটা বোধ হয় আমান টের পেলো .উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে ,

-ভয় পাবেন না প্রত্যাশা .আপনি আমার সাথে সেইফ.আর আমরা যেখানে যাচ্ছি সেই জায়গাটায় মেইন্ রোড দিয়েও যাওয়া যায় .কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই এই রাস্তা দিয়ে এসেছি .সাবা বললো আপনার নাকি নীরব পরিবেশ পছন্দ তাই ভাবলাম আরকি এই রাস্তা দিয়ে গেলে আপনার ভালো লাগবে .কিন্তু আপনার যদি অস্বস্থি লাগে তাহলে আমি গাড়ি ব্যাক করবো .

আমি ছোট্ট একটা নিশ্বাস নিয়ে বললাম ,

-না না সমস্যা নেয়.আপনি এই রাস্তা দিয়েই যান
কথাটা বলে আমি আবার সিটে হেলান দিয়ে বসি।

প্রায় ১ ঘন্টা বাদে গাড়িটা একটা বিশাল মাঠের সামনে থেমে গেলো.আমান গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশের দরজাটা খুলে দিয়ে আমাকে নামতে বললো.আমি গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছি.বোঝার চেষ্টা করছি কোথায় আসলাম কিন্তু আশে পাশে খোলা প্রান্তর ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না.

আমান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-চলুন .

আমান সামনে সামনে হাটছে আর আমি উনার পেছন পেছন গুটি গুটি পায়ে হেটে চলছি.বেশ কিছুটা পথ হাঁটার পর আমি থমকে গেলাম সামনের দৃশ্যটা দেখে.আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি রূপকথার কোনো রাজ্যে চলে আসছি .আমার চোখের সামনে বিশাল এক ফুলের বাগান .এতটাই বিশাল যে আমার চোখের সীমা এই বাগানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না.আমার সব থেকে বড় উইকনেস হলো ফুল .নির্দিষ্ট কোনো ফুল না সব ফুলই আমার পছন্দ .বলতে গেলে এক প্রকার পাগল আমি ফুলের জন্য.আর আমার চোখের সামনে এখন এত্ত এত্ত ফুল .বিভিন্ন রকম ফুল .কি সুবাস চারপাশে.আমি অবাক চোখে দেখে যাচ্ছি সব কিছু.আমান আমার কাছে এসে বলে ,

-কেমন লাগলো জায়গাটা?

আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে ফুলগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়.হাত দিয়ে আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছি সেগুলোকে.এতটাই হালকা ভাবে হাত বুলাচ্ছি যেন একটা পাপড়িও না পরে যায়. উফফ আমার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর জায়গায় চলে এসেছি.আমি প্রাণ ভরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম .তারপর মনে মনে বললাম’থ্যাংক ইউ আল্লাহ .আমাকে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য’আমি দাঁড়িয়ে ফুলগুলো দেখে যাচ্ছি আমানও আমার পাশে এসে দাঁড়ায়.আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি.

-থ্যাংক ইউ.

উত্তরে আমান মৃদু হাসলো.তারপর আমাকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে সামনের দিকে কিছু একটা দেখালেন.আমি উনার ইশারা অনুসরন করে সামনে তাকিয়ে দেখলাম .সামনে বিশাল একটা গাছের ডালে একটা দোলনা বাধা .সব থেকে বড় কথা হলো দোলনাটা পুরো ফুলে সেজে আছে.আমি খুশি মুখে একবার আমানের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে গিয়ে সেই দোলনাটাই বসলাম.আমান আমার ডান পাশে এসে দাঁড়ালো.আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম ,

-আচ্ছা এই এত বড় বাগানের পরিচর্চা কারা করে?

-ওই যে দেখুন সামনে কয়েকটা টিনের ঘর ঐখানে কিছু মানুষ থাকেন আর উনারাই এই বাগান পরিচর্চা করেন
.
উনার কথায় আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের থেকে কিছুটা দূরে কয়েকটা টিনের চালার ঘর.আমান হঠাৎ বললো .

-প্রত্যাশা আপনি এখানে বসুন.আমি একটু আসছি.

আমি দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম ,

-আমাকে একা রেখে কোথায় যাবেন?এই জায়গাটা খুব নীরব আমি একা থাকতে পারবো না.

আমার কথায় আমান হেসে বললো

-আরে আমি বেশি দূরে কোথাও যাচ্ছি না .ওই যে সামনের টিনের ঘরটাই যাবো.আপনি বসুন আমি যাবো আর আসব.

কথাটা বলে উনি সেইদিকে হাঁটা শুরু করলো.আমি দোলনায় বসে উনার যাওয়া দেখছি.উনি একটা টিনের ঘরে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন বাদে হাতে কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে আসে.দূর থেকে বুঝতে পারলাম না কি এটা.কাছে আসার পর বুঝতে পারলাম উনার হাতে একটা ফ্লাওয়ার ক্রাউন.ফ্লাওয়ার ক্রাউনটা দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো.উনি সেটা নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মাথায় ক্রাউনটা পরিয়ে দেয় আমি হাসি মুখে একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবার সেই ফুলগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

-কি এবার মনে হচ্ছেনা এই ফুলের রাজ্যের রানী আমি!

আমান মুচকি হেসে বললো.

-হুম ফুলের রাজ্যের রানীও একটা আস্ত ফুল.

উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে উল্টোদিকে দিকে ঘুরে দাঁড়ায়.

বিকেলের সূর্যটা পশ্চিমা আকাশে ঢলে পড়েছে. চারদিকে তার লাল আভা বিস্তৃত।সূর্যের লাল আভায় বাগানের ফুলগুলোকে যেন ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।উফফ!সময়টা যদি এখানেই থেমে
থাকত;যদি বছরের পর বছরের এইভাবেই প্রকৃতির এই ভয়ংকর সুন্দরটা দেখে যেতে পারতাম তাহলে কিন্তু খুব একটা মন্দ হতো না।অবাক চোখে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখছিলাম আমি আর আমান।দুজনের মাঝেই পূর্ণ নীরবতা বিরাজ করছে. কেউ কোনো কথা বলছি না.দোলনাটা বড় হওয়ায় এর দুই মাথায় দুজন বসে আছি দুজনের দৃষ্টিই সামনের বিশাল সৌন্দর্যের দিকে.আরো কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আমান বললো.

-এবার আমাদের যাওয়া উচিত .সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে .কিছুক্ষন পর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে সব কিছু .সেই সময় এই শুনশান রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোটা একটু রিস্কি হয়ে যাবে .তাই আমাদের এখনই বেরিয়ে যাওয়া উচিত .

চলে যাওয়ার কথা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো.এইসব কিছু ছেড়ে চলে যাবো!একদমই যেতে ইচ্ছে করছে না.মন চাইছে এই সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে.আমাকে মন খারাপ করতে দেখে আমান বলে ,

-মন খারাপ করছেন কেন?আমরা না হয় আবার আসব।

আমি আনমনেই বলে দিলাম,

-বিয়ের পর কিন্তু আমি যখন চাইবো তখনি নিয়ে আসবেন.

কথাটা বলার পর বুঝতে পারলাম আমি কি বলে ফেলেছি.হায় খোদা কি বলতে কি বলে ফেলেছি উনি কি ভাববেন.একবার বিয়ে আটকানোর জন্য এত কিছু করলাম এখন আবার বিয়ে পর ঘোরাঘুরিরও প্লেন করে ফেলছি.উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি মুখ টিপে হাসছেন.উনার হাসিতে আমি আরো লজ্জা পেয়ে গেলাম.
উনি হেসে বললেন,

-আচ্ছা বিয়ের পর যখন বলবেন তখনি নিয়ে আসব।আর মন খারাপ করতে হবে না.

আমি মাথা নিচু করে আস্তে করে বললাম,

-হুম ।

-আচ্ছা তো চলুন .নয়তো এবার সত্যি সত্যি লেইট হবে যাবে.

আমি দোলনা থেকে উঠে বললাম ,

-আচ্ছা চলুন.

যাওয়ার আগে ফুলগুলোকে আরো একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে এলাম.

সন্ধ্যা ৬.৩০টা ,

একটা কফি শপে আমি আর আমান মুখোমুখি বসে আছি.ওয়েটারকে কিছু খাবারের অর্ডার দিয়ে চুপচাপ বসে আছি দুজন.এখনো নীরবতা ছেয়ে আছে দুজনের মাঝে.হঠাৎ আমান একটু নড়েচড়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ,

-আমরা তো কথা বলতে এসেছিলাম.অথচ পুরো বিকেল কাটিয়ে দিলাম কোনো কথায় বললাম না.

আমি হালকা হেসে বললাম.

-আপনি আমাকে এত সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেখানে গিয়ে এত মুগ্ধ হয়েছি যে মাথায় আর অন্য কোনো কথা আসেনি.আচ্ছা আপনি কি আগে থেকেই জানতেন আমার ফুল পছন্দ?

-হুম.সাবা বলেছিলো.

-না জানি এই মেয়ে আরো কত কি বলেছে.

উনি হেসে বললেন ,

-যতটুকু আমাকে বলা যায় ততটুকুই বলেছে.আর আপনার বিয়ে না করার কারণটাও আমি জানি .

আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকালে উনি বলে ,

-সব পুরুষরা এক হয় না প্রত্যাশা .কেউ কেউ তার প্রিয়তমাকে অনেক ভালোবাসাও দিতে পারে.

আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলি ,

-আমরা কি অন্য কোনো ব্যাপারে কথা বলতে পারি !

আমান ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে.

-জি অবশ্যই. আপনি যদি এই ব্যাপারে কথা বলতে আনকমফোর্টাবল ফিল করেন তাহলে আর এই ব্যাপারে কথা বলবো না.

আমি হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম ,

-আচ্ছা সাবা আর কি কি বললো আপনাকে?

-এইতো আপনার কি পছন্দ অপছন্দ.আপনার ভালো লাগা খারাপ লাগা.মোটকথা সাবা আপনার সম্পর্কে যা যা জানে তা সবই আমাকে বলেছে.

-তাহলে আপনি তো আমার সম্পর্কে সবকিছুই জেনে গিয়েছেন .কারণ আমি সাবার কাছে সব কিছু শেয়ার করি.ও আমার সম্বন্ধে সব কিছুই জানে.

আমান হেসে বললো ,

-হুম আপনার পিকও আমি সাবার কাছেই প্রথম দেখি আজ থেকে ২ বছর আগে.

আমি অবাক হয়ে বলি ২ বছর আগে.!

চলবে..