Saturday, June 28, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1072



তুমি আমার পর্ব-১৬

0

#তুমি আমার (পর্ব ১৬)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রাফিন আর রেহান দুজনে একি বাড়িতে থাকলেও তেমন দেখা হয় না ওদের। রাফিন নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। দরজাটা খোলাই ছিলো রেহান দরজায় দাড়িয়ে বললো
– রাফিন আসবো?
রাফিন ঘাড় ঘুড়িয়ে রেহানকে দেখে একটু হেসে বললো
– হুম আয় নিজের বাড়িতে কোনো রুমে আসতে অনুমতি নিতে হয় নাকি।
– এটা তোর ও বাড়ি রাফিন। রিফাত ভাইয়ার যতটা অধিকার আছে আমি মনে করি তোর ও ততটাই অধিকার আছে।
রাফিন হাসলো কিছুই বললো না,রেহান রাফিনের পাশে বসে বললো
– রাফিন আমি জানি তুই মেঘাকে ভালোবাসিস কিন্তু…….
রেহানকে থামিয়ে রাফিন বললো
– থাকনা রেহান বাদ দে ওসব কথা। তোরা সুখে থাক এটাই চাই আমি।
– রাফিন তুই এত ভালো কেনো বলতো! জানিস তুই যখন মেঘার সাথে কথা বলতি তখন খুব রাগ হতো তোর ওপর ভালো চোখে দেখতাম না তোকে। রাফিন তুই কি পারিস না আগের মত স্বাভাবিক হতে?
– রেহান আমিও খুব করে চাই মনের ভেতরকার জড়তা টা কাঁটিয়ে উঠতে কিন্তু পারছি নারে। আমি জানি তুই মেঘাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসিস,আমার কষ্ট হলেও দেখ ওকে ছেড়ে থাকতে পারছি হয়তো ভুলেও যাবো এক সময়। তুই ওকে এখন যেমন ভালোবাসিস সারাজীবন এভাবেই ওকে ভালোবাসবি কেমন।
কথা গুলো বলার সময় রাফিনের চোখে পানি চিকচিক করছিলো,রেহান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
– আমার ওপর তুই রেগে নেই তো?
– কিযে বলিস না ভাই এর ওপর ভাই কখনো রেগে থাকে নাকি।
রেহান রাফিনকে জড়িয়ে ধরে বললো
– মেঘা আমার আত্মার সাথে মিশে গিয়েছে ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্ত চলতে পারবো না। তুই আমাকে ভাই বলছিস তোর কষ্টটাও যে আমি সহ্য করতে পারছি না।
– রেহান এভাবে বলিস না,আমি একদম ঠিক আছি আর থাকবো। তুই মেঘাকে ভালো রাখিস ব্যাস এতেই আমি খুশি থাকবো।
বড়মা রাফিনের রুমে এসে দুভাইয়ের সব কথা শুনে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– রাফিন যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে রেহানকে ভাই বলে আপন করে নিলো এতেই আমি খুশি,এখন বাকীটা মিতুর কাজ আমার ছেলেকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনতে ওই পারবে।
.
🌿
.
রেহানের বাড়ির সবাই মেঘাদের বাড়িতে এসেছে। সবাই বসার রুমে বসে আছে মেঘাদের বাড়িটা ছোট হলেও খুব পরিপাটি করে গুছানো সব কিছু। মেঘা নিজের রুমেই বসে ছিলো, তানিশা ওকে জোর করে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে সাজাতে চাইলে মেঘা না করলো ওর সাজ গোজ পছন্দ নয়। তানিশা মেঘাকে নিজের সামনে দাড় করিয়ে বললো
– মেঘা তোকে শাড়িতে যা লাগছে না,রেহান ভাইয়া তোকে দেখেই ফিট হয়ে পড়বে।
রাইসা রুমে এসে বললো
– হুম একদম ঠিক কথা আমার ভাইয়া এমনি পাগল হয়েছে আজ আরো হবে।
মেঘা কিছুটা লজ্জার ভঙ্গিতে বললো
– কি যে বলো না রাইসা।
– ভাবি তোমাকে কোনো সাজ ছাড়াই খুব সুন্দর লাগছে।

মেঘাকে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। রেহানের বড়মা আর ওর মায়ের মাঝে ওকে বসানো হলো। মেঘা নিচে তাকিয়ে বসে আছে আর রেহান মেঘার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিয়েছে।
সবাই কথা বলে ঠিক করে নিয়েছে আজই মেঘাকে আংটি পড়িয়ে দেবে। মেঘাকে রেহানের পাশে বসানো হলো। রেহান মেঘার দিকে না তাকিয়ে ওকে আংটি পড়িয়ে দিলো। মেঘার বাবা মেঘার হাতে একটা আংটি দিলো রেহানকে পড়ানোর জন্য,মেঘাও রেহানকে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।
মেঘা খেয়াল করলো রেহান ওর দিকে তাকাচ্ছে না কেনো তাকাচ্ছে না এটাই বুঝতে পারছে না।
তানিশা মেঘাকে রুমে নিয়ে গেলো।
রেহান মিথিলার কানে কানে বললো
– ভাবি আমি মেঘার সাথে দেখা করবো একটা ব্যবস্থা করো।
মিথিলা মুখ টিপে হেসে বললো
– হবু বউকে কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি?
– ভাবি মজা করো না তো কিছু একটা করো।
– ওকে বসো আমি দেখছি।
.
🌿
.
মিথিলা সবাইকে কিছু একটা বলে রেহানকে মেঘার রুমে নিয়ে আসলো। রেহানকে রেখে মিথিলা তানিশাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,যাওয়ার রেহানকে আস্তে করে বললো
– ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো,আমরা রুমের বাইরে আছি।
মেঘা জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে রেহান দরজাটা চাপিয়ে মেঘার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রেহান মেঘার দিকে এগিয়ে গেলো। মেঘা সামনে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে রেহান মেঘাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মেঘার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো,রেহান মেঘার ঘাড়ে মুখ গুজে ঘোর লাগা কন্ঠে বলতে লাগলো
– মেঘা তুমি শাড়ি কেনো পড়েছো হুম? তুমি যানো একদম পুতুলের মত লাগছে তোমাকে আমার মাথাটাই খারাপ করে দিয়েছো তুমি। ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ আমার পুতুল বউটাকে সামনে বসিয়ে রাখি।
মেঘা কিছুই বলতে পারছে না এমনিতে রেহান ওকে জাপটে ধরে আছে তার ওপর রেহানের ঠোঁট জোড়া বার বার মেঘার ঘাড়ে স্পর্শ করছে।
মেঘা কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো
– আ আমাকে ছাড়ুন প্লিজজ দম আটকে আসছে আমার।
– উহু ছাড়বো না। রেহান আরো গভীর ভাবে মেঘাকে জড়িয়ে নিলো।
মেঘা আর না পেরে জোর করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু নিজেকে কোনো ভাবেই ছাড়াতে পারলো না,রেহান কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
– ঠিকআছে ছেড়ে দিবো তুমি যদি আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলো তাহলেই ছাড়বো। তুমি করে না বললে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই কেউ আসলেও এভাবে জড়িয়ে রাখবো তোমাকে।
– পারবো না তুমি করে বলতে ছাড়ুন আমায়।
– পারবে না তো ঠিকআছে আমার কি আমার তো ভালোই লাগছে। তাহলে এখন তোমাকে একটু আদর করে দেই কি বলো করবো?
– খুব খারাপ তো আপনি!!
– আবারো আপনি? দেখো কি করি।
রেহান মেঘাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুষ্টু হেসে আস্তে আস্তে নিজের মুখটা মেঘার মুখের দিকে আগাতে লাগলো। মেঘা চোখ খিচে বন্ধ করে বলে উঠলো
– ঠিকআছে ঠিকআছে আআমি তুমি করেই বলবো।
– এইতো লাইনে এসেছো,তো এখন থেকেই শুরু করো।
– এখনি কিভাবে একটু সময় তো দিবেন।
– ওকে দিলাম পরে যেনো মনে করিয়ে দিতে না হয়।
– হুম এখন ছাড়ুন তো।
রেহান মেঘার কপালে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো ওকে।
মেঘা ছাড়া পেয়ে টেবিলে বোতলে পানি রাখা ছিলো সে পানি ঢকঢক করে খেতে লাগলো।
রেহান হেসে বললো
– শুধু জড়িয়ে ধরতেই তোমার গলা শুকিয়ে গেছে বিয়ের পর বাকী কাজ……..
– খুব খারাপ তো আপনি আর একটা কথাও বলবেন না।
রেহান জোরে হেসে বললো
– বাহ আমার মেঘপরীকে রাগলে খুব সুন্দর লাগে তো।
রেহানকে ওর মা ডাকছে তাই বেড়িয়ে গেলো এদিকে মেঘা হেসে বললো
– আমি ভাবি নি কখনো রেহানের মত কাউকে পাবো উনার ভালোবাসা উনার প্রতিটি কথা যে আমাকে উনার প্রেমে পড়তে আরো বেশি বাধ্য করে।
·
·
·
চলবে……………………….

তুমি আমার পর্ব-১৫

0

#তুমি আমার (পর্ব ১৫)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা কলেজ থেকে ফিরে দেখলো ওর বাবা খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে।
– একি বাবা তুমি এসব করছো কেনো!! তুমি বসো আমি করবো।
– তুই তো রোজ করিস আজ না হয় আমি করলাম,এই গরমে কলেজ থেকে ফিরে তুই নিশ্চই ক্লান্ত। যা গিয়ে গোসলটা সেরে আয় একসাথে খাবো।
মেঘা আর কথা বাড়ালো না রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর মেঘা এসে দেখলো ওর বাবা বসে আছে পাশে তন্ময়। মেঘা চেয়ারে বসতে বসতে বললো
– কিরে ভাই স্কুল থেকে আজ তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?
– প্রচুর গরম পড়ছে তাই এখন থেকে ১:৪০ এর মধ্যেই ছুটি হবে।
– ও আচ্ছা,বাবা তোমার অফিসের ও কি ভাই এর স্কুল এর মত সেম ব্যপার? তুমি আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছো।
– নারে মা আজ মনটা খুব ভালো তাই ছুটি নিয়ে চলে এলাম।
– মন ভালো! কেনো কি কারনে?
– বলবো খাওয়াটা শেষ কর।
খাওয়া শেষ হলে মেঘা সব কিছু গুছিয়ে রেখে সোফায় বাবার পাশে বসলো।
– বাবা এখন বলোতো আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
মেঘার বাবা হেসে দিয়ে বললো
– তোর জন্য খুব ভালো একটা সম্মন্ধ এসেছে,ছেলের বাবা আজ নিজে আমার অফিসে এসেছিলো। শুনেছি ধনীরা নাকি খুব অহংকারী হয় কিন্তু ছেলের বাবাকে দেখে তার ব্যবহারে তেমন কিছু মনে হলো না।
মেঘা চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে ওর বাবার দিকে। উনি আবার বলতে লাগলো
– ছেলের নাম আহনাফ আহমেদ এখনো পড়াশুনা করছে শেষ হলেই ওর বাবার বিজনেসের কাজে যুক্ত হবে। ফ্যামিলি সম্পর্কে যতটা শুনলাম ভালোই মনে হলো তাই আমি চাইছি…..
– কি চাইছো বাবা,আমাকে এত তাড়াতাড়ি পর করে দিতে?
– মেঘা এ কি বলছিস তুই! তুই আর তন্ময় ছাড়া আমার কে আছে বল।
– তাহলে এখনি বিয়ের কথা কেনো বলছো আমি তো মাত্র ইন্টার পড়ছি।
– ওরা তো এখনি বিয়েটা দিতে চাইছে না ওরা চায় কথা বলে ঠিকঠাক করে রাখতে।
– বাবা আমি এ বিয়ে করবো না।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে একটু হেসে বললো
– তোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেবো না,তুই সময় নিয়ে ভেবে দেখ।
মেঘার আর বসে থাকতে পারছে না চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে ও কিছু না বলেই নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। রেহানের কথা খুব মনে পড়ছে ওর,কি করে বাবাকে বলবে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি,ও যে বাবার মুখের ওপর কিছু বলতে পারবে না। মেঘা বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে।
.
🌿
.
রেহান বের হচ্ছিলো বাড়ি থেকে,রেহানের মা ওকে ডাকলো
– হ্যা মা বলো
– কোথায় যাচ্ছিস তুই এই রোদের মধ্যে?
– তানভির ফোন দিয়েছিলো একটু কাজ আছে।
– বিকেলে গেলেই তো পারতি। যাই হোক শোন তোর বাবা আজ মেঘার বাবার সাথে দেখা করে কথা বলেছে।
– কি বলো! কখন কি বলেছে বাবা? আর মেঘার বাবা কি বলেছে?
– উফ থাম ধৈর্য টাও দিন দিন হারিয়ে ফেলছিস দেখছি।
মিথিলা পাশে থেকে মুখ টিপে হেসে বলে উঠলো
– মা আপনার ছোট ছেলের মনে রঙ লেগেছে সে কি আর ধৈর্য রাখতে পারবে বলুন।
– ভাবি এভাবে কেনো বলছো হুম,তোমাদের যখন সময় হয়েছিলো তখন বুঝি তোমরা চুপ করে ছিলে। আমি কিন্তু ভাইয়ার মত তেমন হাত পা তুলে ডান্স করছি না।
মিথিলা চোখ রাঙালো আর রেহান দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
রেহানের মা বললো
– তোর বাবা চেয়েছিলো আমাদেরকে সাথে নিতে পরে আবার ভেবে বললো আগে একা গিয়ে মেঘার বাবার সাথে কথা বলবে দেখবে ওনার মতামত কেমন।
– মেঘার বাবা কি বলেছে মা?
– উনি বলেছে কাল জানাবে।
রেহান তো ভেবেই নিয়েছে মেঘার বাবা যখন ওকে সবটা বলবে তখন মেঘা খুব খুশি হবে। রেহান মেঘাকে ফোন দিতে গিয়েও দিলো না। মনে মনে বললো
– নাহ ফোন দিবো না আমি মেঘা যখন জানবে ও নিজেই ফোন দিবে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার মেঘপরীকে আমি নিজের করে পাবো!
.
🌿
.
রাত ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট মেঘা একবারো ফোন দেয়নি রেহান চিন্তায় পড়ে গেলো, নিজেই ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে বারবার। রেহান বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে,এমন একটা খুশির খবর শুনেও মেঘা কিছু বললো না কেনো কেনোই বা ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। নাকি মেঘার বাবা রাজি নয়। রেহান এসব ভাবছে বসে বসে। আর থাকতে না পেরে বেড়িয়ে পড়লো।

মেঘা খাটে সাথে মাথা রেখে নিচে বসে আছে,কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গিয়েছে। মেঘা বার বার রেহানকে ফোন দিতে গিয়েও দেয় নি রেগে ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মেরেছে। ওর বাবা এসে ডেকে গিয়েছে খাওয়ার জন্য,দরজা না খুলেই বলেছে এখন খাবে না।
হাটুতে মাথা গুজে বসে আছে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে চোখ তুলে তাকালো।
সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো,রেহান মেঘার সামনে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে ওর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
রেহান মেঘার হাত ধরে টেনে তুলে খুব জোরে থাপ্পড় মারলো মেঘার গালে। মেঘা কিছুই বললো না একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে রেহানের দিকে। রেহান মেঘার বাহু ঝাকিয়ে রেগে বললো
– কি প্রবলেম তোমার হ্যা, ফোন বন্ধ কেনো তোমার? তোমার কোনো ধারনা আছে কতটা টেনশনে ছিলাম আমি? বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার। চুপ করে আছো কেনো,উত্তর দাও আমার কথার।
রেহান খুব রেগে কথাগুলো বলছে মেঘাকে মেঘা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠছিলো। ও আগে কখনো রেহানকে এভাবে রাগতে দেখেনি।
.
🌿
.
রেহান খেয়াল করলো মেঘার ফোনটা পাশেই ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে,রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো নিমিষেই ওর রাগটা কমে গেলো আলতো করে মেঘার গালে হাত দিয়ে বললো
– মেঘা তোমার চোখ ফোলা কেনো!! কেঁদেছো তুমি??আর ফোনটা ভাঙলো কি করে?
মেঘা আবারো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো,রেহান আতকে উঠে বললো
– এই মেঘা কি হয়েছে বলো আমায়। আমি মেরেছি বলে রাগ করেছো তুমি? আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না প্লিজ মেঘা কেঁদো না। মেঘাকে রেহান খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুকে জড়িয়েই বললো
– আমাকে বলো কি হয়েছে?
মেঘা বুকে মাথা রেখেই বলতে লাগলো
– আজ নাকি কেউ বাবার কাছে আমার বিয়ের কথা বলেছে,বাবা রাজি আছে কিন্তু আমি কি করবো আমি তো আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইনা। বাবার মুখের ওপর কখনো কিছু বলি নি আমি,কি করবো আমি এখন।
রেহান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না মেঘাকে বুকে থেকে তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
– ছেলের নাম কি তোমার বাবা বলেনি?
– হ্যা বলেছে, আহনাফ আহমেদ।
রেহান যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে মেঘার কাধে হাত রেখে বললো
– আমার পুরো নাম জানো তুমি?
মেঘা মাথা নাড়ালো মানে ও জানে না।
– আল্লাহ এ কোন পাগলির প্রেমে পড়েছি আমি! যে এখনো আমার পুরো নামটাই জানে না।
– আপনার পুরো নাম জেনে কি হবে! আপনি কি নিজের নাম নিয়ে গবেষণা করতে এসেছেন?
রেহান মেঘার নাক টেনে বললো
– ম্যাডাম নাম নিয়ে গবেষণা না করলে আপনি তো কেঁদে কেঁদেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন তখন আমি বউ পাবো কোথায়!
– মানে! কি বলছেন আপনি কে বউ?
– তুমি আমার হবু বউ, আর আমার পুরো নামটা হলো আহনাফ আহমেদ রেহান। বুঝেছো আমার পাগলিটা?
মেঘা পুরোই বোকা বনে গেলো অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
– আপনার বাবা এসেছিলো আমার বাবার কাছে?
– জ্বি ম্যাম।
– আপনি তো খুব খারাপ নিজের পুরো নাম আগে বলেন নি কেনো,জানেন কতটা কষ্ট হচ্ছিলো আমার।
রেহান মেঘাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে বললো
– তুমি এত বোকা কেনো বলোতে একবার আমাকে ফোন দিয়ে বললে তখনি সব ক্লিয়ার হয়ে যেতো।
– আমার মাথায় কিছু আসেনি তখন।
– হুম তা আসবে কেনো। আসলেই তুমি এখনো পিচ্চিটাই আছো,নিজে তো কষ্ট পেয়েছো আমাকেও ভয় পাইয়ে দিয়েছো।
মেঘা রেহানকে জড়িয়ে ধরে বললো
– আমি বুঝতে পারি নি,ক্ষমা করে দিন আমাকে।
– এই পাগলি ক্ষমা চাইছো কেনো,আমি তোমাকে মেরেছি তুমি আমাকে…..
– মারতেই পারেন আপনার অধিকার আছে।
– হুমম ঠিক বলেছো আমার অধিকার আছে। বলে মেঘাকে আরো কাছে টেনে নিলো।
মেঘা কেঁপে উঠে বললো
– এভাবে ধরেছেন কেনো?
– কিভাবে ধরেছি! ইসস আমার মেঘপরীটা কেঁদে চোখ মুখ কেমন ফুলিয়ে ফেলেছে।
রেহান আলতো করে মেঘা দুচোখে ঠোঁট ছোয়ালো।
·
·
·
চলবে……………………

তুমি আমার পর্ব-১৪

0

#তুমি আমার (পর্ব ১৪)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান রুমের ব্যালকনিতে বসে গিটার বাজাচ্ছিলো, দরজায় কেউ নক করলো রেহান গিটারটা রেখে দরজা খুলে দিলো ওর বাবা দাড়িয়ে আছে।
– বাবা তুমি,ভেতরে এসো।
– বিজি ছিলি তুই? রুমে ঢুকে বললো।
– না বাবা। কেনো বাবা কোনো দারকার?
রেহানের বাবা খাটে বসে রেহানকেও ইশারায় বসতে বললো,রেহান পাশেই বসলো। রেহানের বাবা হাসি মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো
– হবু বউমাকে তো আর সামনে থেকে দেখতে পারলাম তাই এখন ছবি দেখতে এলাম,তোর মায়ের থেকে শুনলাম মেয়েটি নাকি খুবই ভালো।
রেহান তো চরম অবাক হলো হা করে চেয়ে আছে নিজের বাবার দিকে। রেহানের বাবা ওর কাধে হাত দিয়ে বললো
– এত অবাক হওয়ার কি আছে মুখ টা বন্ধ কর।
রেহান একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো
– আমি ভাবিনি বাবা তুমি এত সহজে আমার পছন্দটা মেনে নিবে!!
– আগে ছবিটা তো দেখা তারপর বাকীটা ভাববো।
রেহান ফোনের থেকে মেঘার একটা ছবি দেখালো। ওর বাবাও খুব পছন্দ হয়েছে। হাসি মুখে বললো
– হুম আমার ছেলের চয়েজ খারাপ না তবে বয়সটা একটু কম যাক ব্যাপার না ওটা।
– বাবা ওকে ভালো লেগেছে তোমার??
– তোর মায়ের থেকে সব শুনেই তো ভালো লেগেছে ছবিটা তো এমনি দেখলাম। শুনলাম ওদের আর্থিক অবস্থা নাকি তেমন সচ্ছল না?
– হ্যা বাবা ঠিকি শুনেছো,এতে কি তোমার আপত্তি আছে?
– তোর মা কি বলছে জানিস,বলেছে সে মেঘাকে ছেলের বউ নয় নিজের মেয়ে করে আনবে বাড়িতে। আমারো সে একি কথা। আর শোন ধনী হোক গরীব হোক আমরা সকলেই মানুষ তাই আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।
রেহান হেসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো
– থ্যাংক ইউ বাবা,থ্যাংক ইউ সো মাচ। তুমি খুব ভালো বাবা।
রেহান ওর বাবাকে ছেড়ে দিতেই ওর বাবা বললো
– আমি তোর মা তোর বড়মা চাইছি মেঘার বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে রাখতে ভাবছি কালই যাবো। তুই পড়াশুনাটা চালিয়ে যা মেঘার ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলেই তোদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো।
রেহান তো আরো অবাক হয়ে যাচ্ছে, ওর বাবা মা যে এত তাড়াতাড়ি ওদের সম্পর্কটা বাধতে চাইবে এটা ও কল্পনাও করে নি।
– কিরে কিছু বলছিস না যে?
– বাবা আমি কি বলবো তোমাদের যেটা ভালো মনে হবে করো।
রেহানের বাবা রেহানের পিঠ চাঁপরে বললো
– হুম তা তো করতেই হবে। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
রেহানের বাবা চলে গেলো। রেহান খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘাকে কল দিলো।
.
🌿
.
রেহানের রুমের পরেই রাফিনের রুম রাফিন যখন নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি মেঘা নামটা কানে আসতেই ও দাড়িয়ে পড়লো রেহানের রুমের দরজার সামনে। রেহানের আর ওর বাবার সব কথা শুনেছে। রেহানের বাবা বের হওয়ায় আগেই রাফিন নিজের রুমে চলে যায়। রাফিন দরজা বন্ধ করেই দুহাতে চুল খাঁমচে ধরে বসে রইলো। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে কাউকে ফোন দিয়ে বললো
– আমি আর বাংলাদেশে থাকতে চাচ্ছি না যত দ্রুত সম্ভব আমার বাহিরে যাওয়ায় ব্যবস্থা কর।
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে রাফিন ফোন রেখে দিলো।
খাটে হেলান দিয়ে কপালে হাত রেখে বলতে লাগলো
– আমি থাকবো না এ দেশে। এ যন্ত্রনা আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি চাইলে পারতাম মেঘাকে নিজের করে নিতে কিন্তু আমি তা করবো না কারন মেঘা রেহানকে ভালোবাসে ওকে কোনো ভাবেই কষ্ট দিতে পারবো না আমি।
রাফিনের ফোনটা বেজে উঠলো
– হ্যা বল।
ওপাশ থেকে বললো
– ভাই আপনি একমাসের আগে যেতে পারবেন না,আপনার পাসপোর্ট এ কিছু প্রবলেম আছে।
রাফিন কিছু না বলেই ফোন কেঁটে দিলো। কি করবে এখন ও এটাই ভাবছে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো এ বাড়িতে আর থাকবে না,উঠে দাড়ালো রেহানের বড়মা মানে রাফিনের মায়ের কাছে বলার জন্য যে ও এ বাড়িতে থাকবে না।
.
🌿
.
রাফিন দরজা খুলতেই কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেলো,রাফিন পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। রাফিন রেগে তাকাতেই দেখলো মিতু নিচে পড়ে আছে। মিতু কোমড়ে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো
– ওও মাগো আমার কোমড়টা বুঝি ভেঙেই গেলো গো,এখন আমি হাটবো কি করে!!
রাফিনের প্রচণ্ড রাগ উঠে গেলো মিতুর ন্যাকা কাঁন্না দেখে। রেগে বললো
– এই মেয়ে দরজার বাইরে কি করছিলে তুমি?
– আমার নাম মিতু এই মেয়ে কি হ্যা। আর আমি দরজার বাইরে থাকবো কেনো আমি তো যাচ্ছিলাম এখান দিয়ে আর আপনি….। এটুকু বলে আবারো কাঁন্না জুরে দিলো।
রাফিন জোরে ধমক দিয়ে বললো
– চুপ একদম ন্যাকা কাঁন্না করবে না। উঠো বলছি সামান্ন ধাক্কা লেগে পড়ে কারো কোমড় ভাঙে? বোকা পেয়েছো আমাকে?
নিতু আসলে ব্যাথা পায়নি ও ভেবেছিলো ব্যাথা পাওয়ার কথা শুনলে হয়তো রাফিন একটু হলেও নরম হয়ে কথা বলবে। কিন্তু না ওর ভাবনাতে এক বালতি পানি ঢেলে রাফিন আরো বেশি রেগে গেলো।
নিতু হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
– হাতটা ধরুন।
– কিহ!!
– কানে শুনতে পান না নাকি! বলেছি হাত ধরে তুলুন আমাকে।
রাফিন কিছু না বলে মিতুর হাত ধরে তুললো। মিতু দাড়িয়ে বললো
– আপনি এমন কেনো বলুন তো,আমাকে যেদিন আনতে গেলেন আপনাকে স্বাভাবিক লেগেছিলো। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকে কেমন যেনো ব্যাবহার করছেন আমার সাথে। কেনো এমন করছেন হুম??
– আমি করো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।
– আমি তো শুধু জানতে চাইলাম জবাবদিহি করতে বলেছি নাকি!! তবে আজ আমার একটা ধারনা ভুল বলে মনে হলো আর সেটা হলো,আমি ভেবেছিলাম আপনি কথা কম বলেন কিন্তু এখন এটুকু বুঝলাম আপনি আসলে অনেক কথা বলেন বাট কোনো কারনে কথা বলতে চান না আপনি। তাইতো?
রাফিনের মুখটা আবারো গম্ভীর হয়ে গেলো অন্য দিকে তাকিয়ে মিতুকে বললো
– প্লিজ মিতু তুমি আমার সামনে এসো না,অস্বস্তি লাগে আমার।
রাফিন চলে গেলো সেখান থেকে মিতু অবাক হয়ে চেয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে।
.
🌿
.
রেহান মেঘাকে কয়েকবার কল দিলো মেঘা ফোন ধরছে না। রেহান ভাবলো হয়তো বিজি আছে তাই আর ফোন দিলো না। হঠাৎ রেহানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো
– আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? বাবা যে ওর বাবার সাথে আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবে এটা ওকে জানাবো না। পরে যখন জানতে পারবে তখন দারুন সারপ্রাইজড হবে মেঘা। এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই রেহান ঘুমিয়ে পড়লো।

ওদিকে মেঘা ওর বাবা ভাইয়ের সাথে সময় কাটিয়ে রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রেহানের ৩ টা মিসড কল। মেঘা কল দিলো রিং হয়ে চলেছে কিন্তু ধরছে না। মেঘা ভাবলো হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর কল দিলো না।
.
রাফিন ওর মায়ের কাছে এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতেই উনি খুব রেগে গেলেন। সে চায় না ওকে দূরে রাখতে। নিজের মা বাবাকে হারিয়ে ওনাকেই নিজের মা বলে জানে তাহলে উনি কি করে পারবে ছেলেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। রাফিনকে অনেক বুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেন উনি।
রাফিন চলে যেতেই মিতু দরজায় দাড়িয়ে বললো
– বড়মা আসবো?
– আরে মিতু,এসো মা। চোখ মুছে বললো।
মিতু এসে বড়মার পাশে বসে বললো
– বড়মা কাঁদছেন কেনো আপনি?রাফিন ও দেখলাম চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো!!
– আমার ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে রে মা,আমি যে ওকে কি বলে শান্তনা দেবো বুঝে উঠতে পারছি না।
– কেনো বড়মা কি হয়েছে। আসার পর থেকেই দেখছি রাফিনের চলাফেরা স্বাভাবিক না সিগারেট ও খেতে দেখেছি।
– কদিন আগেও ছেলেটা ভালোই ছিলো সব সময় হাসি ঠাট্টাতে মেতে থাকতো,আর সিগারেট ওটা তো পছন্দই করতো না।
– তাহলে হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলো কি করে??
বড়মা মিতুকে সব কিছু বললো রাফিন ওনার নিজের ছেলে নয় এটাও বলেছে। মিতু সবটা শুনে ওর চোখেও পানি চলে এসেছে।
– বড়মা রাফিন সত্যি খুব ভালো মনের মানুষ কয় জন ছেলে পারে নিজের ভালোবাসাকে ছেড়ে দিতে। অবশ্য এতে তো ওদের কারোই দোষ নেই রেহান ভাইয়া মেঘা একে ওপরকে ভালোবাসে। রাফিন ভালো করেছে ওদের মাঝে থেকে বেড়িয়ে এসে।
– ছেলেটা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে,ওকে আবার আগের মত হাসিখুশিতে দেখতে খুব ইচ্ছে করে।
– বড়মা একটা কথা বলার ছিলো।
– কি কথা বলো।
– বড়মা আপনাকে আমি সেই আগের রাফিনকে ফিরিয়ে দিতে চাই সে দায়িত্বটা দিবেন আমাকে??
বড়মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
– ভালোবাসো রাফিনকে?
– ভালোবাসি কিনা এখনো বুঝতে পারছি না তবে অনেক ভালোলাগে ওকে।মাথা নিচু করে বললো।
বড়মা একটু হেসে বললো
– আমি চেয়েছিলাম রাফিনের জীবনে কোনো মেয়ে আসুক তবে সে যে এত তাড়াতাড়ি আসবে ভাবিনি। আমার মন বলছে তুমি পারবে ওকে ঠিক করে তুলতে।
·
·
·
চলবে…………………..

তুমি আমার পর্ব-১৩

0

#তুমি আমার (পর্ব ১৩)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান মেঘাকে বাড়িতে ছেড়ে ফিরছিলো বাইক নিয়ে। একটা পার্কের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ চোখ পড়লো পার্কের গেটের দিকে। রুহি দাড়িয়ে আছে আর বার বার হাতের ঘড়ি দেখছে,হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। রেহান কিছুটা দূরে বাইক নিয়ে দাড়ালো রুহি কার জন্য অপেক্ষা করছে এটা দেখার কৌতুহল চাপলো ওর মাথায়।
৫ মিনিটের মাথায় একটা কালো গাড়ি এসে দাড়ালো রুহির সামনে তারপর একটা ছেলে নামলো গাড়ি থেকে,ছেলেটি দেখতে খুবই সুন্দর আর হ্যান্ডসাম তবে রেহানের থেকে বেশি নয়।
ছেলেটি রুহির সামনে গিয়ে হেসে হেসে কিছু বলছে যা রেহান শুনতে পেলো না। রুহির ও হেসে ছেলেটির বাহুতে ধরে গায়ের সাথে মিশে গেলো তারপর দুজনে ভেততে চলে গেলো।

রেহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো…..রুহি যে এতটা বাজে একটি মেয়ে ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে,আমি এই মেয়েটাকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নিচ্ছিলাম!! যে কিনা লোভে পড়ে আমার মত ছেলেদেরকে বেছে নেয়!! তবে যাই হোক আল্লাহ যা করেন হয়তো ভালোর জন্যই করেন। মেঘার মত মেয়েকে পেয়েছি আমি। ওকে নিয়ে আমার কল্পনার জগৎ টাও অতুলনীয়,এখন শুধু অপেক্ষা কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেওয়া।

হঠাৎ রেহানের ফোনটা বেজে উঠলো ফোন পকেট থেকে বের করে দেখলো তানভির কল দিয়েছে,রেহান রিসিভ করলো
– হ্যালো তানভির বল।
– আমি কল দিয়েছি তারপরে হয়তো মনে পড়েছে তানভির নামেও কেউ আছে। শালা প্রেমে পড়ে কাছের বন্ধুকেও ভুলে গেলি!!
– ভুলি নি দোস্ত একটু বিজি ছিলাম আরকি। আচ্ছা তুই আমাকে শালা বললি কেনো হুম?আমার তো কোনো বোন নেই। ওপস সরি ভুল বলে ফেললাম একটা বোন আছে আমার বড় চাচ্চুর মেয়ে রাইসা।
– তাহলে তো আর কথাই নেই তোর বোনকে দিয়ে দে তাহলে শালা বলাটা সার্থক হবে।
– আমার চাঁদের মত বোনকে তোর মত বাদরকে দিবো কি করে ভাবলি হুম?
– এখন আমি বাদর তাইনা? আমার এত্ত কিউট বোনকে তোর করে দিলাম আর তুই আমাকে বাদর বললি,হারামি একটা।
– ওই তোর বোন কে!!
– কে আমার মেঘা আমার বোন।
দুই বন্ধু মিলে নানা রকম হাসি ঠাট্টা করে কথা বলতে লাগলো। বন্ধুত্ব তো এমনি হওয়া উচিৎ না থাকবে রাগ আর না থাকবে অহংকার। একে ওপরের পাশে সব সময় থাকবে তাহলেই না বন্ধুত্বর গভীরতা বাড়বে।
.
🌿
.
রাফিন শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছিলো মিথিলা নিচেই ছিলো তখন। মিথিলা রাফিনের সামনে এসে বললো
– রাফিন কোথাও যাচ্ছো?
– হুম ভাবি একটু বাইরে যাচ্ছি।
– জরুরী কোনো কাজে?
– না তেমন কোনো কাজ নেই,কেনো বলোতো?
– আমার ছোট বোন আসবে আজ অনেক দিন পর আসছে স্টেশন থেকে একা এতদূর আসবে তুমি যদি যেতে ওকে আনতে। তোমার ভাইয়া বা রেহান থাকলে তোমাকে বলতাম না। যাও না ভাই নিয়ে এসো ওকে।
রাফিন একটু ইতোস্তবোধ করছে ও চাইছে না আর কোনো মেয়ের ঝামেলায় পড়তে,তবে ভাবি যেভাবে বলছে না ও করতে পারছে না তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
– ঠিকআছে ভাবি আমি যাবো,কখন যেতে হবে?
– এখনি গেলে ভালো হয় ও হয়তো আধ ঘন্টার মধ্য পৌছে যাবে।
– আচ্ছা।
– আরে ওর নাম্বারটা তো নিয়ে যাও না হলে তো চিনবে না।

রাফিন স্টেশনে আসা মাত্রই ট্রেন এসে থামলো,সব যাত্রীরা একে একে নামছে। হঠাৎ রাফিনের চোখ পড়লো একটি মেয়ের দিকে মেয়েটি আকাশি আর সাদা মিশ্রণে চুড়িদার পড়া চুল গুলো হালকা কোকড়ানো ছাড়া থাকায় বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মুখেক গড়নটা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের। রাফিন একটু তাকিয়ে থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো।
রাফিন মিথিলার বোনের নাম্বারে কল দিলো কোথায় আছে জানতে।
রাফিন দাড়িয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছিলো তখন দেখলো একটু আগে দেখা মেয়েটি ওর দিকেই আসছে,মেয়েটি ওর সামনে এসে মিষ্টি হেসে বললো
– রাফিন রাইট?
– হুম, আপনি আমাকে চেনেন??
– আমি মিতু। আপনি আমাকেই নিতে এসেছেন।
– ওহ আপনি মিথিলা ভাবির বোন!!
– হ্যা।
– আমাকে কি করে চিনলেন?
– আপু ফোনে আপনার ডিটেলস বলে দিয়েছিলো।
– ও আচ্ছা ঠিকআছে চলুন যাওয়া যাক।

রাফিন মিতুকে নিয়ে সিএনজিতে উঠলো। দুজনেই চুপ,মিতু আর চুপ থাকতে পারলো না রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো
– ছেলেরা এত চুপচাপ থাকে বুঝি!!
রাফিন সামনে তাকিয়ে আছে কিছুই বললো না,মিতু আবারো বলে উঠলো
– আজব লোক তো আপনি একটি মেয়ে পাশে বসে আছে আর আপনি চুপচাপ রাস্তা দেখছেন!
রাফিন মিতুর দিকে তাকালে এবারো কিছুই বললো না আবার নিজের মত বসে রইলো। মিতু ওর এমন কাজ দেখে বিরক্ত হচ্ছে বিড়বিড় করে বললো
– ছেলের ভাব দেখো যেনো মেয়েদের দিকে কখনো তাকিয়েও দেখে না,হুহ চেনা আছে সব ছেলেদের ওপরে ওপরে সাধু আর ভেতরে ভন্ডামিতে ভরা।
.
🌿
.
রাফিন রোজ রাতে ছাঁদে এসে সিগারেট খায় আজও ছাঁদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে। হঠাৎ ভেসে উঠলো মিতুর ট্রেন থেকে নামার দৃশ্যটা,ওর এক হাতে ছিলো ব্যাগ অন্য হাতে চুল ঠিক করছিলো। রাফিন চোখ খুলে ফেললো ও নিজেই অবাক হচ্ছে মেঘাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে তো ভাবেনি কখনো তাহলে মিতুর মুখটাই কেনো ভেসে উঠলো!! আরো একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো রাফিন।

মিতুর ঘুম আসছিলো না তাই ছাঁদে আসলো,দরজায় দাড়িয়েই চোখ পড়লো ছাঁদের একপাশে কেউ দাড়িয়ে আছে। মিতু এগিয়ে গেলো অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট না দেখতে পেলেও সিগারেটের আলোটা চোখে পড়লো।
মিতু আরো একটু এগিয়ে রাফিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো কাছে থেকে বুঝতে পারলো এটা রাফিন। মিতু বলে উঠলো
– সিগারেট খাওয়া কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
রাফিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো মিতুর কন্ঠ শুনে সামনে তাকালো কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো
– আপনি! আপনি এত রাতে ছাঁদে কি করছেন??
– আপনি যেটা করছেন আমি তাই করছি তবে একটু ব্যতিক্রম আছে।
– মানে??
– আপনি এসেছে ছাঁদে হাওয়া খেতে+সিগারেট। আর আমি এসেছি হাওয়া খেতে।
– হাওয়া খেতে এসেছেন ভালো কথা ছাঁদে আরো অনেক জায়গা আছে সেখানে যান আমাকে একা থাকতে দিন।
মিতু সরে না গিয়ে রাফিনের পাশে এসে দাড়ালো,রাফিন ভারী গলায় বললো
– কি হলো শুনতে পাননি আপনি আপনাকে যেতে বলেছি তো।
– না যাবো না।
– ওকে ফাইন,আমি যাচ্ছি।
রাফিন সোজা নিচে চলে গেলো। মিতু হা করে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো
– প্রবলেমটা কি এই ছেলের! দেখতে তো ভালোই কিন্তু কথা বলতে চায় না কেনো নাকি কম কথা বলে?? তবে আপুর থেকে শুনলাম ছেলেটি খুব ভালো আর কথা বলার স্টাইল ও নরমাল। তাহলে আমার সাথে কথা বলতে বিরক্তি দেখায় কেনো!
কি যেনো নাম ওর?? ও হ্যা রাফিন। আচ্ছা আমি কি দেখতে খারাপ যে রাফিন এমন করে? আমার তো প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে ওকে। রাফিনের বিরক্তির কারন কি এমন বিষন্ন ভাবে সিগারেট খাচ্ছিলো কেনো এটাই জানতে হবে আগে।
·
·
·
চলবে………………………..

তুমি আমার পর্ব-১২

0

#তুমি আমার (পর্ব ১২)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান সকালে ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে আসতেই খেয়াল করলো ওর মা কেমন যেনো রাগি চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। রেহান ওর মাকে বললো
– মা কি হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছো কেনো! আমি কি কোনো অপরাধ করেছি??
মিথিলা পাশে থেকে বলে উঠলো
– হুম ভাইয়া অনেক বড় অপরাধ করেছো তুমি। মুখ চেপে হেসে।
– মানে! কি করেছি আমি, ও মা বলো না কি অপরাধ আমার??
ওর মা রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
– খবরদার মা বলবি না আমাকে,হ্যা রে মায়ের কাছে তো সব বলতি তাহলে এটা কেনো বললি না? তোর বড়মা রাফসান বউমা ওদেরকে তো ঠিকি বলেছিস।
– কি বলিনি তোমাকে? বড়মা তুমি বলোতো কি হয়েছে?
রাফসান খাবার খেতে খেতে বললো
– কি আর হবে তুই যে আমার বউয়ের পাল্লা ভাড়ি করতে চাইছিস এ কথা মাকে বলে দিয়েছি।
রেহান এবার বুঝতে পারলো আসল কথাটা কি রাফসানের দিকে তাকিয়ে বললো
– সত্যিই তোর পেটে কথা মজে না ঠিক এই কারনে তোকে আমি জানাতে চাইনি।
– যাহ বাবা সব দোষ এখন আমার হলো! আরে বড়মা আর তোর ভাবি তো আগে বলেছে মাকে।
রেহান সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিট মিট করে হাসছে সবাই আর ওর মা মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে। রেহান ওর মায়ের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো
– মা রাগ করো না প্লিজ আমি তো তোমাকে বলতাম একটু সময় নিচ্ছিলাম।
– হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না।
রেহান ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– ও মা রাগটা কি কমলো তোমার?
– না আমার রাগ কমেনি। আগে মেয়েটাকে দেখাবি যদি আমার পছন্দ হয় তাহলেই আমার রাগ কমবে।
– ঠিকআছে দেখাবো আমি কালই ওকে নিয়ে আসবো। আর আমি সিওর তোমার পছন্দ হবেই আমার মেঘপরীকে।
.
🌿
.
পরেন দিন মেঘাকে রেহান ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো মেঘা আসতে চায়নি একরকম জোর করেই নিয়ে এসেছে। রেহান মেঘাকে নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে কলিংবেল চাপলো। মেঘার খুব নার্ভাস লাগছে ঘামতে শুরু করেছে ওড়নাটা মাথায় টেনে ঘামটা মুছে নিলো,রেহান ওর দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা এত নার্ভাস হচ্ছো কেনো তুমি! আমার বাড়ির সবাই খুব ভালো আমার মা তো আরো ভালো দেখবে মা তোমাকে খুব পছন্দ করবে।
তখনি একটি মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো,রেহান ওর মাথায় চাটি মেরে বললো
– এত সময় লাগে দরজা খুলতে? নিশ্চই ফোনের মাঝে ডুবে ছিলি।
– উফ ভাইয়া ভাবির সামনে এভাবে কেনো বলছো!
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো মেয়েটি ওকে ভাবি বললো!!
রেহান হেসে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা ও আমার বোন রাইসা বড়মাকে তো চেনোই ওনার মেয়ে।
মেঘা রাইসার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। রাইসা মেঘাকে নিয়ে বাড়ির মধ্য ঢুকলো,তারপর জোরে জোরে ডাকতে লাগলো
– মা ছোটমা ভাবি কই তোমরা দেখো কে এসেছে।
রেহানের বড়মা আর মিথিলা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো। মেঘা বড়মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। বড়মা ওকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো
– কেমন আছো মা?
– ভালোআছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি। শোনো আমাকে এখন থেকে বড়মা বলবে আন্টি নয় কেমন।
– হুম।
মিথিলা এসে মেঘাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো
– ছবিতে যতটা সুন্দর লেগেছিলো তোমাকে তার চাইতে বেশি সুন্দর তুমি। ভাইয়া তোমার চয়েজ আছে আমার মনের মতো জ্বাকে খুজে এনেছো।
মেঘা বুঝতে পারলো এটা রেহানের ভাবি,রেহান সোফায় বসে ফোন টিপছিলো মিথিলার কথায় চোখ তুলে তাকিয়ে বললো
– মনের মতো জ্বা পেয়েছো বলেকি ওকে এখনো দাড় করিয়ে রেখেছো!
রাইসা হেসে বললো
– কেনো ভাইয়া তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝি??
– তোর এতো জানতে হবে না দাঁত কেলিয়ে না হেসে যা মাকে ডেকে নিয়ে আয়।
– যাচ্ছি হুহ। মুখ বাকা করে বললো।
রেহানের বড়মা মেঘাকে বসালো মিথিলা তো গল্প জুরে দিয়েছে মেঘার সাথে। মেঘা মনে মনে ভাবছে…….সবাইকে তো ভালোই মনে হচ্ছে কিন্তু ভয় হচ্ছে রেহানের মা কি বলবে।
.
🌿
.
রেহানের মা সিড়ি দিয়ে নামার সময় চোখ পড়লো মেঘার দিকে,মাথায় ওড়না দেওয়া গুটিশুটি মেরে সোফায় বসে আছে। উনি এসে দাড়াতেই মিথিলা আস্তে করে বললো
– মেঘা মা এসেছে।
মেঘা মুখ তুলে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে হালকা হেসে রেহানের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। রেহানের মা মেঘার বাহু ধরে দাড় করিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
এদিকে রেহান নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ওর খুব চিন্তা হচ্ছে না জানি মা কি বলবে এখন।
মেঘা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে রেহানের মা কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুখে হাসি ফুটিয়ে মেঘার থুতনি ধরে মুখ তুলে বললো
– মাশাআল্লাহ, আমার খুব পছন্দ হয়েছে তোমাকে।
রেহান খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো
– মা সত্যিই মেঘাকে ভালো লেগেছে তোমার!!
– হুম খুব ভালো লেগেছে। এমন পুতুলের মতো মেয়েকে কোথায় পেলি তুই! কি মায়া ভরা চোখ দুটো। তোমার বাড়িতে কে কে আছে??
– জ্বি বাবা আর ছোট ভাই আছে।
– আর তোমার মা??
মেঘা রেহানের মায়ের দিকে তাকালো চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে। রেহান মেঘার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো
– ওর মা নেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
রেহানের মা মেঘাকে একহাতে জড়িয়ে বললো
– আমি দুক্ষিত মা তুমি কষ্ট পেয়েছো তাইনা?
– আন্টি এভাবে কেনো বলছেন সত্যিটা তো মেনে নিতেই হবে।
– উহুম আমাকে মা বলে ডাকবি তুই আজ থেকে আমি তোর মা। বলে ওর কপালে চুমু খেলো। হ্যা রে তুই করে বললাম কিছু মনে করিস নি তো??
মেঘার চোখ থেকে পানি পড়ছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– মা বলতে বলেছেন আর তুই করে বলতে পারবেন না আমি কিছু মনে করি নি।
– আমাকে মা বলে ডাকবি আর তুমি করে বলবি ঠিকআছে।
– আচ্ছা মা।
রেহানের মা মেঘাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
.
🌿
.
একটা লেকের পাড়ে রেহান মেঘা পাশাপাশি হাটছে। মেঘার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে রেহান।
– মেঘা আমার বাড়ির সবাইকে কেমন লেগেছে তোমার??
– অনেক বেশি ভালো লেগেছে সবাইকে,তবে অবাক হয়েছি আপনার মাকে দেখে কতো সহজে আমাকে আপন করে নিলো!
– মা এমনি যাকে পছন্দ হয় পারলে তাকে কলিজাতে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে আর যাকে পছন্দ করেনা তার মুখও আর দ্বিতীয়বার দেখতে চায় না।
– যদি আমাকে পছন্দ না করতো আপনি কি করতেন??
রেহান দাড়িয়ে পড়লো মেঘার দিকে তাকিয়ে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
– আমি যেমন আমার মাকে শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি তেমনি তোমার দিক থেকেও তোমাকে আমি ভালোবাসি তোমাদের কাউকে ছাড়া আমার চলবে না,তাই যেভাবেই হোক মাকে আমি রাজি করতাম। তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তোমাকে দেখে মায়ের পছন্দ হবেই।
– হুম,আচ্ছা আপনার বাবা ভাইয়াকে তো দেখলাম না?
– আজ সকালে অফিসের কাজে বাবা আর ভাইয়া শহরের বাইরে গিয়েছে।
– রাফিন কোথায় থাকে এখন?
– আমাদের বাড়িতেই থাকে অলটাইম রুমে সময় কাটায় কোনো কাজ থাকলে বের হয়। ওকে দেখলে খুব কষ্ট হয় আমার।
– তাহলে এক কাজ করুন আমাকে ওনার কাছে দিয়ে দিন ওনার আর কষ্ট থাকবে না। হেসে বললো মেঘা।
রেহান চোখ গরম করে তাকালো মেঘার দিকে
– আরে এভাবে তাকান কেনো আমি তো মজা করে বললাম।
রেহান মেঘার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,মেঘা কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই। মেঘা রেহানের বুকের সাথে মিশে আছে রেহানের গরম নিশ্বাস পড়ছে মেঘার চোখে মুখে। মেঘা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
– এ এটা পাববলিক পপ্রেস ছাড়ুন আমায়।
রেহান মেঘার মুখে হাত দিয়ে বললো
– এদিকে কেউ তাকিয়ে নেই। শোনো মেঘা খুব ভালোবাসি তোমাকে,আমাকে কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবে না”””তুমি আমার””” শুধুই আমার বুঝেছো তুমি??
মেঘা মাথা নাড়িয়ে বললো
– হুম বুঝেছি। এখন তো ছাড়ুন।
রেহান মেঘার কপালে পরম আবেশে চুমু দিয়ে ছেড়ে দিলো। মেঘা জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো
– আপনার সাথে বাইরে পাবলিক প্রেসে কোথাও আর ঘুরতে যাবো না।
রেহান দুষ্টু হেসে বললো
– তাহলে কি আমার সাথে নিরিবিলি জায়গাতে ঘুরতে চাও যেখানে কেউ থাকবে না।
মেঘা রাগি চোখে তাকালো আর রেহান জোরে হেসে উঠলো তার মেঘপরীর রাগি চেহারা দেখে।

ওদের এই খুনশুটি ভালোবাসা ময় দৃশ্য দূর থেকে রাফিন দেখছিলো চোখের পানি মুছে মৃদু হেসে বললো
…….আল্লাহর কাছে দোয়া করি তোমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাক।
·
·
·
চলবে…………………..

তুমি আমার পর্ব-১১

0

#তুমি আমার (পর্ব ১১)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহানের চোখটা জলে ভরে উঠলো মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– বড়মা তুমি আমাকে চিনলে কি করে!!
– সেটা পরে বলছি তার আগে বল বড়মাকে ভুলে যাস নি তো??
– তোমাকে কি করে ভুলবো বলোতো আমার মা আর তুমি আমার কাছে আলাদা কেউ নয়। এখন বলোতো কি ভাবে চিনলে?
– সেই ছোট থেকে তোকে আগলে রেখেছিলাম আর তোকে চিনবো না! তোর নীল বর্ণের চোখ আর টোল পড়া গালটা দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমার রেহান।

মেঘার মুখে হাসি ফুটে উঠলো বড়মা রেহানকে চিনতে পেরেছে দেখে। আর রাফিন এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

রেহান অভিমানি স্বরে বলে উঠলো
– বড়মা কোথায় ছিলে তুমি এতদিন জানো কত খুজেছি তোমায়। মাও তোমার কথা মনে করে খুব কষ্ট পায়। তুমি এখন আমার সাথে যাবে চলো।
বড়মা একটু হেসে বললো
– কোথায় যাবো?
– কোথায় আবার তোমার বাড়িতে যাবে।
– ওটা আমার বাড়ি নয় রেহান ওটা তোর বাবার বাড়ি যেখানে আমার বা আমার ছেলেমেয়েদের থাকার কোনো অধিকার নেই। চোখের পানি মুছে।
– তুমি এখনো বাবার ওপর রেগে আছো বড়মা! বাবা নিজের ভুল অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে পরে অনেক খুজেছে তোমাদের পায় নি। প্লিজ বড়মা চলো আমার সাথে।
– না রেহান তা হয় না।
রাফিন বলে উঠলো
– মা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমাদের কথা রেহান তোমাকে বড়মা ডাকছে কেনো?
– রিফাতের বাবা আর রেহানের বাবা দুইভাই আমরা সবাই আগে একসাথেই থাকতাম,একটা ভুল বুঝাবুঝির কারনে ৮ বছর আগে আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম।
রেহান বড়মাকে বললো
– আচ্ছা বড়মা রাফিন কে? আমি তো ছোট থেকেই দেখে এসেছি রিফাত ভাইয়া আর রাইসাকে।
– রাফিন আমার বোনের ছেলে তুই ওকে আগে দেখিসনি কখনো ও ছোট থেকেই আমাকে মা বলে ডাকে ৫ বছর আগে ওর বাবা মা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় তারপর থেকে রাফিন আমার কাছেই থাকে আমাকেই মা বলে জানে।

রাফিন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে মেঘা রেহান দুজনেই তাকালো রাফিনের দিকে। বড়মা হঠাৎ বলে উঠলো
– দেখেছিস আমরা কথা বলেই যাচ্ছি মেঘার দিকে কোনো খেয়াল নেই আমার। মেঘা তুমি নিশ্চই বিরক্ত হচ্ছো তাইনা?
– না আন্টি আমি একটুও বিরক্ত হচ্ছি না বরং আরো ভালো লাগছে আপনি ওনাকে চিনতে পেরেছেন দেখে।রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
– তুমি রেহানকে চেনো??
মেঘা কিছু বলছে না রেহান নিজেই বললো
– হ্যা বড়মা আমরা একে ওপরকে চিনি।
রেহান ভাবলো……. এটাই সুযোগ রাফিনের সামনে বড়মাকে বলবো মেঘাকে আমি ভালোবাসি। রেহান বড়মার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– বড়মা মেঘাকে তোমার কেমন লাগে?
– খুব ভালো লাগে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।
– যাক তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে মায়ের ও ঠিক পছন্দ হবে।
রাফিন চোখ বড় বড় করে তাকালো বড়মা বলে উঠলো
– মানে!!
– মানেটা হলো আমি মেঘাকে ভালোবাসি শুধু ভালোবাসি বললে ভুল হবে অনেক বেশি ভালোবাসি ওকে আমি,আর মেঘাও আমাকে ভালোবাসে।
মেঘা একটু হেসে মাথা নিচু করে নিলো। বড়মা রাফিনের দিকে তাকালো। রাফিন একটু হাসার চেষ্টা করে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– নীলপরী তুমি রেহানকে ভালোবাসো??
মেঘা মাথা নাড়ালো মানে হ্যা ও রেহানকে ভালোবাসে।
রাফিন বড়মার হাত ধরে বললো
– মা বাড়ি চলো।
বড়মা রাফিনের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।
.
🌿
.
রাফিন চোখ বন্ধ করে বড়মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,বড়মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
– রাফিন সেই দুপুর থেকে মন খারাপ করে আছিস দুপুরে খাসনি রাতেও খেলি না,চল তো কিছু খেয়ে নিবি।
– না মা খেতে ইচ্ছে করছে না।
– মেঘাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলি তাইনা?
রাফিন উঠে ওর মায়ের দু হাত ধরে বললো
– আমার সাথে কেনো এমন হয় মা। বাবা মা চলে গেলো আমাকে একা করে মেঘাকে ভালোবাসলাম এখন ওকেও হারাতে হবে।মা মেঘাকে এনে দেবে আমার কাছে?
– কারো ভালোবাসা কখনো কেড়ে নিতে নেই মেঘা রেহানকে ভালোবাসে রেহানও চায় ওকে তুই তো নিজেই শুনলি।
– মেঘাকে যে আমিও ভালোবাসি।
বড়মা রফিনের গালে হাত রেখে বললো
– এক তর্ফা কখনো কিছু হয় না রাফিন মেঘা তো রেহানকে চায় তুই ওকে চেয়েও তো পাবি না। তুই স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু কর হয়তো তোর জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
রাফিন আর কিছু বললো না বড়মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
.
🌿
.
রেহানরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে রেহানের মা ওর বাবাকে বললো
– তুমি যদি যাও আপাকে আনতে আপা ঠিক ফিরে আসবে।
– কোন মুখে যাবো বলোতো,ভাবিকি কি ক্ষমা করবে আমায়?
রাফসান বলে উঠলো
– আচ্ছা বাবা সেদিন কি হয়েছিলো বড়মা কেনো চলে গিয়েছিলো?সবটা তো এখনো পরিষ্কার করে বলোনি আমাদের কাছে।
রেহানের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো
– তোদের বড় চাচ্চু মারা যাওয়ার পর তোদের বড়মা খুবই ভেঙে পড়েছিলো। তোর মা আর আমি ভাবিকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক করে তুলেছিলাম সব ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো হাসি খুশির মাঝে চলছিলো আমাদের সংসার। একদিন ভোরে আমি বাগানে হাটছিলাম তখন দেখলাম তোর বড়মা মাথায় বড় করে ঘুমটা টেনে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। ভাবি ওভাবে বের হওয়াতে আমার সন্দেহ হয়েছিলো তাই আমিও পেছনে পেছনে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে ১০ মিনিট লাগে যেতে একটা ছোট পার্ক ছিলো আমি গিয়ে দেখি ভাবি একটা ব্রেন্ঞ্চে বসে আছে আর তার পাশেই একটা লোক বসা ছিলো যে কিনা সব সময় আমাদের ক্ষতি চাইতো। খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো তখন আমি চলে আসি ওখান থেকে। বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর ভাবি বাড়িতে ফিরেছিলো সেদিন আমি ভাবিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খুব খারাপ ভাবে অপমান করেছিলাম আর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেছিলাম।
এটুকু বলে উনি থামলো রেহান এগিয়ে এসে বললো
– তারপর কি হলো?
তারপর আর কি আমি অফিসে চলে গিয়েছিলাম এসে তোর মায়ের থেকে শুনলাম ভাবি রিফাত রাইসাকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। ঠিক তার ১২ দিন পর আমার ফোনে ম্যাসেজ আসে তাতে লেখা ছিলো……যাক অবশেষে আপনার সুখি পরিবারকে অসুখি করতে সক্ষম হলাম। সেদিন আপনার ভাবির কোনো দোস ছিলো না আমি ওনাকে হুমকি দিয়ে পার্কে ডেকেছিলাম,আর উনি ভয় পেয়ে চলে এসেছিলো।আর আমি সেই সুযোগটাই নিয়েছি আমি জানতাম আপনি ভোরে বাইরে হাটেন তাই আপনার ভাবিকে তখনি আসতে বলি যেনো আপনি উনাকে ভুল বুঝেন।
ম্যাসেজটা দেখে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো তখন নিজেকে।
পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম সেই লোকটা তোদের বড় চাচ্চুর মারা যাওয়ার পেছনে হাত ছিলো আর আমাদের ব্যবসার ও অনেক ক্ষতি করেছিলো। সব রকম ইনফর্মেশন জোগার করে ওই বদ লোকটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।
.
🌿
.
পরেন দিন সকালে রেহান রাফিনের থেকে ওদের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সকলে মিলে এসেছে বড়মাকে ফিরিয়ে আনতে। রেহানের বাবা নিজে ক্ষমা চেয়েছে। তারপর সবাই মিলে বুঝিয়ে বড়মাকে ফিরিয়ে এনেছে। রাফিন আসতে চায়নি ওদের সাথে বড়মা ওকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে। আজ অনেকদিন পর পুরো পরিবার এক হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে।

রাতে মেঘার সাথে কথা বলতে বলতে রেহান ছাদে এলো, আবছা আলোতে দেখতে পেলো ছাদের এক কোনে কেউ দাড়িয়ে আছে রেহান মেঘাকে বললো
– মেঘা আমি তোমাকে একটু পরে কল ব্যাক করছি।
ফোন কেঁটে রেহান এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলো রাফিন দাড়িয়ে আছে। রেহান ওর কাধে হাত রাখলো,রাফিন চমকে ঘুরে তাকালো রেহানকে দেখে মুখটা ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো
– রাফিন কাঁদছিস কেনো তুই!!
– ককই কাঁদছি নাতো চোখে হয়তো কিছু পড়েছিলো।
রেহান রাফিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
– মিথ্যা কেনো বলছিস। তুই কি মেঘাকে….
রেহানকে থামিয়ে রাফিন একটু হেসে বললো
– তুই খুব লাকি রেহান মেঘার মত একজনকে পেয়েছিস ভালো রাখিস ওকে।
রাফিন আর ওখানে দাড়ালো না চলে গেলো। রেহান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
– আমি জানি রাফিন তোর কষ্ট হচ্ছে কি করবো বল আমিও যে খুব ভালোবাসি মেঘাকে।
·
·
·
চলবে……………………

তুমি আমার পর্ব-১০

0

#তুমি আমার (পর্ব ১০)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান রাতে মেঘাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মেঘা ধরছে না। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা খাটের ওপর ছুড়ে মারলো রেহান। রুমের মধ্য কিছুক্ষণ পাইচারি করে আবারো ফোন হাতে তুলে মেঘাকে কল দিলো। ওপাশ থেকে এবার রিসিভ হলো ফোনটা কিন্তু কোনো কথা বলছে না। রেহান নিজেই বলতে লাগলো
– মেঘা কি হয়েছে তোমার ফোন ধরছিলে না কেনো,দুপুরে আমাকে না বলেই চলে গেলে কেনো??
…………
– এই মেঘা চুপ করে থেকো না প্লিজ কিছু তো বলো।
– কি জন্য ফোন দিয়েছেন আপনি?? রেগে বললো।
– কি জন্য মানে! তুমি কি ভুলে গিয়েছো আজ সকালের কথা গুলো??
– নাহ কিছুই ভুলিনি আমি।
– তাহলে কি হয়েছে বলো আমায় আর রাগ কেনো করেছো বলো??
– দুপুরে রাফিন আমার সাথে যখন কথা বলছিলো তখন আপনি রাফিনকে কিছু বললেন না কেনো??
– বলিনি তার বিশেষ কারন আছে।
– ওও তাই! তাহলে একটা কাজ করবো রাফিনের সাথেই এখন থেকে কথা বলবো আমি আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন কেমন।
– এই একদম না,যদি কখনো দেখি তুমি নিজে থেকে ওর সাথে কথা বলছো তাহলে আমি যে কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে না। মেঘা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি কেনো বুঝো না তুমি।
– আচ্ছা তাহলে কাল যদি রাফিন আবারো কথা বলতে আসে তাহলে ওর সামনে আপনি আমাকে প্রোপোজ করবেন,কি পারবেন তো??
– হুম পারবো তবে কাল নয়। আমার কিছু কাজ আছে সেটা শেষ করেই রাফিনের সামনে আমি তোমাকে প্রোপোজ করবো।
– কি কাজ??
– কাল কলেজে এসো সব বুঝিয়ে বলবো তোমায়।
– আচ্ছা এখন রাখছি আমি।
– এখনি রেখে দেবে কথাই তো শেষ হলো না!!
– এতো কথা বলতে হবে না। মুচকি হেসে।
– কই এতো কথা বলেছি। এই মেঘা একটা কথা বলোতো তুমি হঠাৎ এমন পাল্টে গেলে কি করে?? আগে তোমাকে দেখে মনে হতো কথাই বলতে জানো না,আর রাগ অভিমাম বিরক্ত এসব তো দূরের কথা!!
– কেনো এখন কার মেঘাকে পছন্দ হচ্ছে না বুঝি??
– আরে এ কথা কখন বলেছি আমি।
– হুমম,আমি এমনি যখন যেভাবে চলতে হবে বা কথা বলতে হবে তখন সেভাবে চলি আর সেভাবেই কথা বলি। আচ্ছা আমি রাখছি এখন বাই।
– আরে এই মেঘ….যাহ কেটে দিলো ফোনটা!!

রেহান ফোনটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হেসে দিয়ে বললো….তোমাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছি মেঘা তুমি যেমনি হও না কেনো তোমার সব রুপেই আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো।
.
🌿
.
কলেজে এসে রেহান মেঘাকে সবটা বুঝিয়ে বলেছে রাফিন আর ওর বড়মায়ের ব্যাপারে। মেঘা সব শুনে রেহানকে বললো
– আপনি আপনার বড়মার সাথে দেখা করতে চান??
– হুম চাই তো আর তার জন্যই রাফিনকে কিছু বলতে পারছি না। তবে একটা বিষয় আমি কিছুতেই মিলাতে পারছি না।
– কি বিষয়?
– বড়মা তো আগে আমাদের সাথেই থাকতো আর আমার জানা মতে ওনার একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিলো।
– বড়মার ছেলের নাম কি ছিলো?
– রিফাত নাম ছিলো আর রিফাত ভাইয়া আমার থেকে ৩ বছরের বড় ছিলো। তাহলে রাফিন কে হয় বড়মার?
– সেদিন তো রাফিন আমার সামনে ওনাকে মানে আপনার বড়মাকে মা বলে ডাকছিলো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়,রাফিনের সাথে আমি কথা বলে বলবো আমি ওনার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই। রাফিন যদি আপনার বড়মাকে নিয়ে আসে তাহলেই সিওর হওয়া যাবে।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
– তুমি রাফিনের সাথে কথা বলবে??
– এছাড়া আর উপায় কি বলুন আমি তো আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি।
– ঠিকআছে রাফিনকে বলবে ওর মায়ের সাথে তাড়াতাড়ি দেখা করাতে বাট প্লিজ মেঘা এর থেকে একটা কথাও বেশি বলবে না।
মেঘা মুচকি হেসে রেহানকে বললো
– চিন্তা করবেন না আপনি।
– আচ্ছা যাও এখন ক্লাসে যাও ছুটির পরে দেখা হবে।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

ক্লাসের সামনে আসতেই তানিশা অনু মেঘাকে ঘিরে দাড়ালো অনু কোমোড়ে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
– রেহান ভাইয়ার সাথে কি চলে হুম?
– ককি চলবে কিছুনা। বলেই চলে যেতে নিলে তানিশা মেঘার হাত চেপে ধরে বললো
– একদম পালানোর চেষ্টা করবি না,আমি কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করেছি রেহান ভাইয়া তোর দিকে কিভাবে যেনো তাকায় আর তুইও মাঝে মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে হাসতি,আর আজ তো পাশাপাশি দাড়িয়ে কথাও বললি!এসবের রহস্য কি বলবি আমায়?
মেঘা কি বলবে ওদের ভেবে পাচ্ছে না চুপ করে আছে,অনু বলতে লাগলো
– ওই চুপ করে আছিস কেনো বল। আচ্ছা এমন নয়তো তোদের মাঝে হয়তো প্রেমের সূচনা ঘটেছে??
মেঘা চমকে তাকালো ও বেশ বুঝতে পারছে ওদের থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না তাই বাধ্য হয়েই খুলে বললো সবটা।
দুজনের মেঘার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে উঠলো। মেঘা অবাক চোখে চেয়ে আছে ওদের দিকে হাসির কারনটা কি সেটা বুঝতে পারছে না। অনু মেঘাকে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বললো
– আমার জায়গাটা তাহলে তুই দখল করে নিলি!!মুচকি হেসে বললো।
তানিশা হেসে বললো
– রেহান ভাইয়া তোকে কবে জায়গা দিয়েছিলো শুনি যে মেঘা তোর জায়গা নিয়ে নিবে!!
এভাবে হাসি তামাশা করেই সেদিন ওদের ক্লাসগুলো শেষ হলো।
.
🌿
.
রেহান গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছে আর তানভিরের সাথে কথা বলছে। কেউ পেছন থেকে রেহানের কাধে হাত রেখে বললো
– হেই রেহান কেমন আছিস?
রেহান ঘুরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
– আরে রাফিন যে, আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
– হুমম আমি বেশ আছি।
কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে মেঘা তানিশা অনু একসাথেই বের হলো। তানিশা রেহানকে দেখে মেঘাকে ইশারায় দেখিয়ে ওরা চলে গেলো।
মেঘা রেহানের পাশে রাফিনকেও দেখতে পেলো যদিও রাফিনের সাথে কথা বলতে ও বিরক্ত বোধ করে কিন্তু কিছু যে করার নেই রেহানের জন্য কথা বলতো হবে।
রাফিন মেঘাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– রেহান আমি একটু আসছি।
রেহান বুঝতে পেরে মাথা নাড়ালো।
রাফিন এসে মেঘার সামনে দাড়িয়ে এটা সেটা বলে যাচ্ছে। ওর কথার মাঝেই মেঘা রাফিনকে বললো
– সেদিন আপনার সাথে যে মহিলাটি ছিলেন উনি কে হন আপনার??
– আমার মা উনি কেনো সেদিন তো তোমার সামনেই মা বলে ডাকলাম।
– ওহ হুম,আমি আপনার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।
রাফিন মেঘার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললো
– ওকে কবে দেখা করতে চাও বলো?
মেঘা অবাক হলো রাফিন যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে মেঘা ভাবেনি। মেঘা আড়চোখে রেহানের দিকে একবার তাকালো তারপর রাফিনকে বললো
– কাল তো বৃহস্পতিবার কলেজ ১২ টার দিকেই ছুটি হবে আপনি কালই নিয়ে আসবেন আপনার মাকে।
– ঠিকআছে নিয়ে আসবো বাট কেনো দেখা করতে চাও জানতে পারি কি??
– এমনি দেখা করবো আন্টিকে বেশ ভালো লেগেছে আমার।
– হুম বুঝলাম।

পরের দিন মেঘার কলেজ ছুটির পর মেঘা গেটের বাইরে আসতেই বড়মাকে দেখতে পেলো। মেঘা ওনার কাছে গিয়ে টুকটাক কথা বললো এর মাঝেই রাফিন রেহানকে সাথে নিয়ে ওদের সামনে এসে দাড়ালো।
রাফিন রেহানকে বললো এটা ওর মা।
রেহান ওর বড়মার দিকে তাকালো বড়মাও তাকালো ওর দিকে রেহানের চোখে জল চিকচিক করছে। বড়মার হাসিমাখা মুখটাতে মুহুর্তেই কষ্টের ছাপ ফুটে উঠলো রেহানের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রেহানের মুখোমুখি এসে দাড়ালো। মেঘা রাফিন এমনকি রেহান সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে বড়মার দিকে। বড়মা ছলছল চোখে রেহানের দুগালে হাত রেখে বললো
– আমার ছোট্ট রেহান এতো বড় হয়ে গেছে!!
রেহান যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ও সপ্নেও ভাবেনি ওর বড়মা ওকে চিনতে পারবে!!
·
·
·
চলবে…………………

তুমি আমার পর্ব-০৯

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৯)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা রাতে পড়ছিলো হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলো মেঘা ফোনটা হাতে নিয়ে রেহানের নাম্বার দেখে মুচকি হেসে রিসিভ করলো।
– আসসালামুয়ালাইকুম…ভাইয়া কেমন আছেন?
রেহান কিছুটা অবাক হলো মনে মনে ভাবছে….. কি ব্যাপার! এটা যে আমার নাম্বার মেঘা কি সেটাও জেনে গিয়েছে?
রেহানকে চুপ থাকতে দেখে মেঘা বললো
– কি হলো কিছু বলছেন না যে?
– ওয়ালাইকুমআসসালাম…আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
– হুম আমিও ভালো আছি। তো ভাইয়া কিছু কি বলবেন?
– আমি তো তোমার অপরিচিত তাহলে আজ কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তোমার?
– কে বলেছে আপনি আমার অপরিচিত,কাল রাতেই তো চুরি করতে এসেছিলেন আপনি আমার রুমে তাইনা।
রেহান মাথা চুলকে একটু হেসে বললো
– যাহ এখানেও ধরা খেয়ে গেলাম।
মেঘা একটু হাসলো কিছু বললো না। রেহান বললো
– আচ্ছা চিনে যেহেতু ফেলেছো তাহলে এখন বলো কি ভাবলে আমার ব্যাপারে?
– কই আমি তো কিছু ভাবি নি।
– কিছু যদি না ভাবো তাহলে,আমি কাল রাতে তোমার রুমে গেলাম কিছু বললে না কেনো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এবং ফোনটাও আমি করেছি তারপরও কেনো কিছু বলছো না বলো?
…………
– এই মেঘা চুপ করে আছো কেনো বলো কিছু? তাহলে কি আমি ভেবে নিবো তোমার উত্তরটা পজিটিভ হবে।
– হুম ভাবতে পারেন।
কথাটি বলে মেঘা ফোন কেটে দিয়ে বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো,,একটু হেসে বলতে লাগলো
– ভালোবাসি রেহান আমিও যে ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। সেদিন আপনার গান শুনেই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,তারপর থেকেই আপনাকে আমি লুকিয়ে দেখতাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এটা শুধু আমার সপ্ন হয়ে থাকবে সত্যি হবে না কখনো। কারন আপনার মতো এমন একটা ছেলের সাথে আমাকে মানায় না।
তবে যখন আমি জানলাম আপনিও আমাকে ভালোবাসেন তখনি মনের সকল দুশ্চিন্তা গুলো দূর হয়ে তা আনন্দে পরিনত হয়েছে।
.
🌿
.
পরের দিন মেঘা কলেজে এসে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো। ক্লাস রুম তিন তলায় মেঘা একতলা সিড়ি দিয়ে উঠতেই কেউ পেছন থেকে হাত ধরে টেনে পাশের ফাকা একটা ক্লাসরুমে নিয়ে এলো। সব কিছু তাড়াতাড়ি হওয়ায় মেঘার কিছুটা সময় লাগলো কি ঘটেছে ভাবতে। মেঘা বিষ্ময় চোখে তাকালো সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখার জন্য। তাকাতেই মেঘা শকড চোখ বড় বড় করে বললো
– ভাইয়া আপনি!
রেহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো
– হুম আমি।
– আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন ভাইয়া?
রেহান মেঘার হাতটা একটু জোরে চেপে ধরে বললো
– এই মেয়ে কি ভাইয়া ভাইয়া করছো? আর কখনো যেনো ভাইয়া ডাক না শুনি।
মেঘা হাতে ব্যাথা পেয়ে রেহানকে বললো
– হাতে ব্যাথা পাচ্ছি তো ছাড়ুন।
রেহান মেঘার হাতটা ছেড়ে দিলো,,মেঘা মাথা নিচু করে বললো
– বললেন না কেনো এনেছেন এখানে?
– কেনো আবার তোমাকে দেখার জন্য।
মেঘা রেহানের দিকে তাকালো রেহানের মুখে লেগে আছে হাসি যে হাসিটা মেঘাকে আরো আকৃষ্ট করে তুলছে। মেঘা একটু তাকিয়ে থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো। রেহান মেঘার গালে হাত রেখে মেঘার মুখটা ওপরে তুললো
– মেঘা তাকাও আমার চোখের দিকে।

মেঘা তাকালো রেহানের চোখে রেহান অপলক দৃষ্টিতে মেঘার দিকে চেয়ে আছে। রেহান নিচু স্বরে বললো
– মেঘা আমি জানি না কিভাবে তোমাকে এত ভালোবেসে ফেললাম,আর জানতে চাইও না।শুধু এটাই জানি তোমাকে ছাড়া আমার একমুহুর্ত ও চলবে না। প্লিজ মেঘা আমাকে ছেড়ে দূরে যেও না কখনো।

মেঘার চোখে পানি ছলছল করে উঠলো মেঘা মুচকি হেসে রেহানের চোখে চোখ রেখে বললো
– আমি কি এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
– কেনো নয় হুম,আর শুরুতে কেউ কারো যোগ্য হয় না,নিজের চেষ্টায় যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। তবে আমি মনে করি তুমিই আমার জন্য পারর্ফেক্ট। এই মেঘা আমার পাশে থাকবে তো সব সময়?
– হুম থাকবো আপনি যতোদিন আমাকে আগলে রাখবেন ততোদিন আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আর যদি আপনি আমায় আগলে…..
মেঘার মুখ চেপে ধরে রেহান বললো
– আমি সারাজীবন আগলে রাখবো তোমায়। আর শোনো আমাকে তুমি করে বলবে আর ভাইয়া ডাকটা ভুলেও ডাকবে না।
– দেখবো।
– দেখবো না যা বলেছি সেটা করবে। আচ্ছা মেঘা তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি,আমার আগেও একটা রিলেশন ছিলো তবে সেটা….
– অতীত আমি জানতে চাইনা আগে যা ছিলো সেটা আমাকে না বললেও চলবে।
– কিন্তু আমি তো বলবো তোমায় তোমার জানাটা প্রয়োজন।
– আচ্ছা অন্য একদিন শুনবো আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে হবে।
– ওকে যাও আর শোনো ছুটির পর গেটের বাইরে অপেক্ষা করবো আমি।
মেঘা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে রেহান ওর হাত ধরলো মেঘা ফিরে তাকাতেই রেহান এগিয়ে এসে আলতো করে মেঘার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। তারপর মুচকি হেসে বললো
– এখন যেতে পারো।
মেঘা লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
.
🌿
.
ছুটির পর রেহান গেটের বাইরে বাইকের ওপর বসে আছে পাশে তানভির ও আছে। মেঘা তানিশা অনু একসাথেই বের হলো,তানিশা অনুর বাড়িটা একদিকে হওয়ায় ওরা চলে গেলো। মেঘা রেহানের দিকে তাকিয়ে রাস্তার একপাশে দাড়ালো।
তানভির রেহানকে বললো
– কিরে এখনো বসে আছিস কেনো যা মেঘার কাছে।
– যাবো আমি?
– নাহ তুই কেনো যাবি যাবো তো আমি তাইনা। মাথায় কি নিয়ে ঘুরিস কে জানে! যা জলদি।
রেহান মেঘার দিকে আসছে দেখে মেঘা একটু হাসলো হঠাৎই রাফিন এসে দাড়ালো মেঘার সামনে। রেহান রাফিনকে দেখে আর এগোলো না দাড়িয়ে পড়লো।
মেঘা রাফিনকে দেখে আড়চোখে রেহানের দিকে তাকালো। রেহানের মুখে গম্ভীর ভাবটা স্পষ্ট।
মেঘা বিরক্তি মাখা কন্ঠে রাফিনকে বললো
– কি চাই এভাবে হুটহাট সামনে আসেন কেনো আপনি?
– তোমার বাসার এড্রেসটা চাই দেবে আমায়?
মেঘা চরম অবাক হলো সাথে
– আপনাকে আমার বাসার এড্রেস দিতে যাবো কেনো?
– আমি চেয়েছি তাই।

মেঘার খুব রাগ হচ্ছে এখন আড়চোখে রেহানের দকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে….আশ্চর্য তো! একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলছে আর উনি দাড়িয়ে দেখছে!
ওদিকে রেহানকে দাড়াতে দেখে তানভির এগিয়ে এলো
– কিরে দাড়িয়ে পড়লি কেনো?
– রাফিন আজও মেঘার সাথে কথা বলতে এসেছে।
– তাতে কি হয়েছে তুই মেঘাকে ভালোবাসিস আর ও তোকে তাহলে বাধা কিসের? তুই যা মেঘাকে ওর সামনে থেকে হাত ধরে নিয়ে আসবি।

রেহান ভাবলো…তানভির তো ঠিকি বলেছে আমাদের মাঝে তো আর কোনো বাধা নেই। তবে এই রাফিনকে আমার ফলো করতে হবে বড়মার কাছে পৌছানোর জন্য আর তাই রাফিনের সাথে একটু মিশতে হবে আমায়।
রেহান মেঘাদের সামনে এসে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বললো
– মেঘা এখানে দাড়িয়ে আছো যে বাড়িতে যাবে না?
মেঘা রেগে বললো
– না যাবো না, যান আপনি আপনার কাজে যান।
রেহান মেঘার রাগের কারনটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে রাফিনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
– হাই আমি রেহান।
রাফিন রেহানের সাথে হাত মিলিয়ে বললো
– আমি রাফিন। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না নীলপরীর কে হন আপনি?
– নীলপরী??
– ওহ সরি আসলে মেঘার কথা বলেছি ওকে নীলপরী বলে ডাকি আমি।
রেহানের খুব রাগ হচ্ছে তবে এখন রাগলে তো চলবে না তাই হাসি মুখেই বললো
– ওও আচ্ছা! আমি মেঘার খুব কাছেন একজন।

মেঘা খুবই বিরক্ত হচ্ছিলো এতক্ষণ আর এখন রেহানের বলা কথাটি শুনে চরম রাগ হলো ওর কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।
রেহান রাফিন কেউ খেয়াল করে নি মেঘা চলে গিয়েছে দুজন তো কথা বলতে ব্যস্ত। দুজনে আপনি থেকে তুইতে চলে এসেছে। রেহান রাফিনকে বললো
– রাফিন তোর বাড়িতে কে কে আছে?
– আমার মা বড় ভাই আর ছোট বোন আছে।
রাফিনকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো রেহান রাফিন ততোটাও খারাপ নয়।
রেহান মনে মনে ভাবলো….রাফিনকে বোঝাতে হবে মেঘাকে আমি ভালোবাসি আর মেঘাও আমাকে ভালোবাসে,তবে তার আগে বড়মার খোজ বের করতে হবে। আমি যদি ভুল না করি তাহলে বড়মাই রাফিনের মা আর রাফিন ওর মায়ের সব কথা শোনে।
·
·
·
চলবে………………

তুমি আমার পর্ব-০৮

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৮)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান বাড়িতে এসেই জোরে জোরে ওর মাকে ডাকতে থাকে রেহানের ডাকে মিথিলা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে
– কি হয়েছে ভাইয়া মাকে ডাকছো কেনো এভাবে?
– ভাবি মা কোথায়?
– মা তো ছাঁদে আছে।
রেহান দেরি না করে দ্রুত সিড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে আসলো। রেহান ওর মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো
– মা আজ আমি বড়মাকে দেখেছি।
রেহানের কথা শুনে ওর মা চমকে উঠলো চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
– রেহান কি বলছিস তুই! আপাকে কোথায় দেখেছিস চিনলি কি করে?
– আমাদের কলেজের সামনে দেখেছি।আর এটা কি বলছো মা বড়মাকে আমি চিনবো না!
রেহানের মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
– আপা হয়তো এখনো রেগে আছে,তা না হলে বাংলাদেশে যেহেতু আছে রাগ কমলে অবশ্যই আসতো আমাদের সাথে দেখা করতে। শুধু রাগ না খুব কষ্টও পেয়েছিলো সেদিন। জানিস তো রেহান তোর বড়মা তোকে খুব ভালোবাসতো নিজের ছেলেদেরকেও হয়তো এত ভালোবাসতো না আপা,,,কি থেকে যে কি হয়ে গেলো।
– মা বড়মা আমাকে দেখলে চিনতে পারবে এখন?
– প্রায় ৮ বছর হতে চললো তোকে দেখেনি চিনতেও পারে।
রেহান ওর মায়ের হাত চেপে ধরে বললো
– মা আমি বড়মাকে ফিরিয়ে আনবো আমাদের পরিবারটা সেই আগের মত হয়ে উঠবে দেখো।
– আপা কি সব ভুলে আসবে ফিরে? যদি আসতো সত্যি খুব ভালো হতো রে।
– আমি ফিরিয়ে আনবো বড়মাকে তুমি বাবাকে সবটা বলো।
রেহানের মা ওর কপালে চুমু একে দিয়ে ছলছল চোখে বললো
– আমি জানি তুই পারবি আপার রাগ ভাঙিয়ে ফেরাতে।
.
🌿
.
রেহান সারাদিনে মেঘার সাথে একটুও কথা বলে নি এমনকি এটাও জানা হয় নি ওর বড়মা আর ওকে কি বলছিলো, তাই রাতে ফোন দিলো মেঘাকে। পরাপর ৩ বার রিং হয়ে কেটে গেলো এমনিতেই রেহানের মন খারাপ তারওপর মেঘা ফোন না ধরাতে রেগে গেলো।
রেহানের খুব ইচ্ছে করছিলো মেঘার কন্ঠটা একটু শুনতে কিন্তু ও তো ফোনই তুলছে না। রেহান রুমের মধ্য এদিক ওদিকে পাইচারি করে বাইকের চাবিটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
রাত তখন প্রায় ১১:৩০ বাজে মেঘাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো রেহান। আবারো ফোন দিলো মেঘাকে ধরলো না তারপর অনেক কষ্টে মেঘারা রুমের বারান্দায় পৌছালো রেহান রুমের দরজাটা খোলাই ছিলো। রেহান খুব সাবধানে রুমে ঢুকলো ওর চোখ পড়লো বিছানাতে মেঘা গুটিশুটি মেড়ে ঘুমাচ্ছে। রেহানের রাগটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো মেঘার ঘুমন্ত মুখটা দেখে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে রেহান মেঘার পাশে গিয়ে বসলো। অপলক দৃষ্টিতে রেহান মেঘার মুখের দিকে চেয়ে আছে,রেহান নিজের হাতটা মেঘার মুখে স্পর্শ করলো হাতটা কিছুটা ঠান্ডা হওয়ায় মেঘা হালকা নড়ে উঠলো।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
– জানি না কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে সব সময় টানে পরম শান্তি অনুভব করি তোমার এই শান্ত মুখটির দিকে তাকালে। আমি যে তোমাকে কি ভাবে নিজের মনের কথা বলবো বুঝতে পারছি না।
রেহান আরো কিছুক্ষণ থেকে উঠে যেতে নিলেই পাশে থাকা টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে ওটার ওপরে থাকা ফুলদানিটা পড়ে গেলো। শব্দতে মেঘার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।রেহান ফুলদানিটা তুলে রাখতে নিলেই মেঘা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
কে ওখানে?
রেহান চমকে উঠলো
– এইরে মেঘা জেগে গিয়েছে এখন কি করবো আমি!
মেঘা বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো
– কি হলো কথা বলছেন না কেনো?
রেহান কিছু না বলে সামনের দিকে পা বড়াতেই মেঘা বললো
– চুরি করতে এসে এখন পালানোর ধান্দা তাইনা,ব্যবস্থা করছি আমি।
মেঘা যেইনা বাবা বলে জোড়ে ডাকতে যাবে ওমনি রেহান ঘুরে দাঁড়িয়ে মেঘার মুখটা চেপে ধরলো। মেঘা রেহানকে দেখে চরম পর্যায় অবাক হলো চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। মুখ চেপে ধরে রাখায় মেঘা কথা বলতে না পেরে উম উম করছে রেহান বুঝতে পেরে মেঘাকে ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে দাড়িয়ে আস্তে করে বললো
– মেঘা চেঁচিয়ো না প্লিজ।
– আপনি এত রাতে আমার রুমে কি করছেন ভাইয়া?
তখনি দরজায় টোকা পড়লো মেঘার বাবা দরজার ওপার থেকে বললো
– মেঘা কি পড়ার শব্দ হলো তোর রুমে? মেঘা দরজাটা খোল।
মেঘা রেহান দুজনেই চমকে তাকালো মেঘা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না মেঘার চিন্তিত মুখ দেখে রেহান বললো
– মেঘা তুমি গিয়ে দরজাটা খোলো আমি বেড়িয়ে যাচ্ছি।
– কিন্তু আপনি কেনো এসেছিলেন?
– সেটা পরে জেনে নিও তুমি যাও দরজাটা খোলো।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো আর রেহান খুব সাবধানে বেড়িয়ে আসলো।
রেহান রাস্তায় এসে জোড়ে নিশ্বাস নিলো আর নিজে নিজেই হাসতে লাগলো এই ভেবে যে মেঘার কাছে এভাবে ধরা খেয়ে গেলো আর মেঘা ওকে চোর ভেবেছিলো! কিন্তু মেঘার সাথে দেখা হলে কি উত্তর দিবে ও মেঘাকে সেটাই ভাবছে?
.
🌿
.
পরের দিন কলেজে এসে রেহান তানভিরকে সব বলার পরে তানভির তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
– তানভির হাসিস না ভাই আমার তো গলা শুকিয়ে আসছে মেঘাকে কি বলবো সেটা ভেবে।
– কি বলবি মানে যেটা সত্যি সেটাই বলবি ওকে আজই বলবি তুই ওকে ভালোবাসিস।
– কিন্তু ও যদি না মানে?
– আরে সেটা পরের বিষয় আগের কথাটা তো বল আগে।
রেহানরা গেটের পাশেই ছিলে তখনি মেঘা আর তানিশা কলেজে ঢুকলো,ঢুকতেই চোখ পড়লো রেহানের দিকে,মেঘা হালকা হেসে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।
রেহান তানভিরকে বললো
– কি হলো রে মেঘা হাসলো কেনো এভাবে!আর কিছু তো বললো ও না এসে!
– আমিও তো বুঝলাম না। তবে যাই হোক তুই আজকেই ওকে প্রপোজ করবি।

কলেজ ছুটির পর রেহান আর তানভির দাঁড়িয়ে আছে মেঘার অপেক্ষায় মেঘাকে লাইব্রেরির দিকে যেতে দেখে তানভির রেহানকে সেখানে যেতে বললো। রেহান মেঘার পেছনে এসে লাইব্রেরির মধ্য ঢুকলো তখন ওখানে তেমন কেউ ছিলো না। রেহান মনে সাহস জুটিয়ে মেঘার সামনে গিয়ে দাড়ালো। মেঘা রেহানকে দেখেও কিছু মনে করলো না বই দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
রেহান হা করে তাকালো বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
– এটা কি হলো! মেঘা আমাকে সামনে দেখেও কেনো কিছু বলছে না?
রেহান আবারো মেঘার সামনে গিয়ে ওর হাত থেকে বইটা নিয়ে নিলো,মেঘা সরে যেতে নিলে রেহান ওর হাত ধরে ফেললো
– কি হয়েছে মেঘা,আমাকে দেখে কিছুই তো জানতে চাইলে না কাল রাতের ব্যাপারে?
– হুম বলুন কি জন্য গিয়েছিলেন?
– মেঘা আসলে কি ভাবে যে বলবো তুমি কিভাবে নিবে,মেঘা আ আমি তোমাকে ভা…..
রেহানকে থামিয়ে মেঘা বললো
– আমাকে ভালোবাসেন তাইতো?
রেহান জাস্ট অবাক হয়ে গেছে ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না মেঘা কি করে জানলো!
রেহান কিছু বলছে না দেখে মেঘা মুচকি হেসে বললো
– ভাবছেন তো আমি কি করে জানলাম?
– হুম কিভাবে জানলে?
মেঘা নিজের ব্যাগ থেকে রেহানের ফোন বের করে ওর সামনে ধরে বললো
– চুরি করতে গিয়ে তো ফোনটা ফেলে এসেছিলেন এটা থেকেই জেনেছি। সরি আপনাকে না বলে আপনার ফোনটা দেখার জন্য।
– মেঘা আমি মটেও চুরি করতে যাই নি আমি তো তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
– ওই একি তো হলো তাইনা।
রেহান মুচকি হেসে বললো
– মেঘা আমি তোমাকে যতটা চুপচাপ ভেবেছিলাম ওতটাও চুপচাপ তুমি নও। যাই হোক তুমি যেহেতু জেনেই গিয়েছো সবটা তাহলে এখন তোমার উত্তরটা কি সেটা বলো। নাহ থাক বলতে হবে না তুমি হ্যা বললেও তুমি আমার আর না বললেও তুমি আমার।
– যদি না হয় আমার উত্তরটা তাহলে কি জোর করে নিজের করবেন নাকি!
– দরকার পড়লে তাই করবো।
মেঘা আর কিছু বললো না মিষ্টি হেসে বেড়িয়ে গেলো,দরজার বাইরে তানভিরকে দেখে কিছুটা লজ্জা পেলো মেঘা। রেহান যেনো অবাকের পর অবাক হচ্ছে মেঘা যে এতটা স্বাভাবিক কি করে আছে সেটাই ভাবছে!!
তানভির ভেতরে ঢুকে রেহানের কাধে হাত রেখে বললো
– রেহান ফোনে কি এমন দেখে মেঘা বুঝে গেলো সবটা?
-তুই শুনেছিস সবটা?
– হুম শুনলাম তো। এখন বল কি ছিলো ফোনে?
– মেঘাকে নিয়ে তোর সাথে ম্যাসেজ এ যে কথা গুলো বলছিলাম ওসবই দেখে বুঝেছে হয়তো।
– হুমমম বুঝলাম আর এটাও বুঝলাম মেঘাও তোর প্রতি দুর্বল।
– শুধু দুর্বল হলে চলবে না আমাকে ভালোবাসতেও হবে।
– এত অধৈর্য হোস না ভাই লেগে থাক সব হবে।
·
·
·
চলবে………………….

তুমি আমার পর্ব-০৭

0

#তুমি আমার (পর্ব ০৭)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা আর তন্ময় বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে বাজার থেকে ফিরছিলো,হঠাৎ ওদের সামনে এসে একটা গাড়ি দাড়ালো। তন্ময় মেঘার দিকে তাকালো আর মেঘা গাড়িটির দিকে তখনি হাসি মুখে রাফিন নেমে দাড়াঁলো। মেঘার খুব বিরক্ত লাগছিলো ওকে দেখে,পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই রাফিন বলে উঠলো
– নীলপরী কোথায় যাচ্ছো?
মেঘা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো
– কোথায় আবার বাড়িতে যাচ্ছি।
– ওও আচ্ছা। ও কে? তন্ময়কে দেখিয়ে।
– আমার ছোট ভাই। বলেই মেঘা তন্ময়ের হাত ধরে বললো তন্ময় চল।
– আরে নীলপরী এত তাড়া কিসের তোমার যখনি দেখা হয় তাড়াহুড়া করো।
– মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনার সাথে গল্প করার ইচ্ছে আমার নেই,আর আপনি যখন তখন এভাবে কথা বলতে আসবেন না প্লিজ।
মেঘা আর একটুও না দাঁড়িয়ে চলে আসলো সেখান থেকে। তন্ময় জিগ্যেস করলো
– আপু কে ওই ছেলেটি?
– আর বলিস না কলেজ থেকে দেখা হয়েছে দেখলেই কথা বলতে চলে আসে আবার নীলপরী বলে ডাকে আমাকে,বিরক্তিকর একটা লোক।

মেঘারা চলে আসার পরে রাফিন মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলছে….নীলপরী তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছো তাইনা,দুরে থাকতে চাচ্ছো কিন্তু আমি যে তোমাকে এ মন থেকে দূরে সরাতে পারবো না।

রেহানের নজর এখন সব সময় মেঘার ওপর থাকে দুর থেকে রাফিনের দিকে রাগি চোখে তাঁকিয়ে রেহান বললো…. এই রাফিন বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে , আমাকে খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে মেঘাকে আমি হারাতে চাইনা। এ কদিনেই মনে হচ্ছে মেঘাকে ছাড়া আমার চলবে না গভীর ভাবে ফিল করি ওকে আমি। তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দেবো না মেঘা,,,,তুমি আমার শুধুই আমার।
.
🌿
.
রেহান রাতে শুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেঘার ছবি দেখে হাসছে ছবিটি লুকিয়ে তুলেছিলো।রাফসান তখন রুমে ঢুকে দেখে রেহান ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাফসান এসে ওর পিঠ চাপড়ে বললো
– কিরে রেহান কি আছে ফোনের মাঝে যা দেখে তোর এত হাসি আসছে?
রেহান একটু চমকে উঠে ফোনটা লক করে হেসে বললো
– ককই ভাইয়া কিছু দেখছি না তো।
– বললেই হলো কিছু দেখছি না। তোর চোখে মুখে যে উজ্জ্বলতা দেখছি সেটা কিসের? নিশ্চই ফোনে কিছু আছে! দেখি দে ফোনটা আমি দেখবো।
রেহান ফোনটা নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো
– আরে ভাইয়া কিছু নেই তো কি দেখবি তুই।
রাফসান ও ছাড়ার পাত্র নয় দুভাই রুমের মাঝেই ছুটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। এর মাঝেই মিথিলা রুমে ঢুকলো। (মিথিলা রাফসানের বউ)
দুভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে বললো
– এ কি করছো তোমরা!!বাচ্চাদের মতো ছুটাছুটি করছো কেনো?
রেহান এসে মিথিলার পেছনে দাঁড়িয়ে বললো
– ভাবি ভাইয়াকে কিছু বলো তো তখন থেকে ছুটছে আমার পেছনে।
– ওই আমি যা দেখতে চাইছি দেখালেই তো হয়।
মিথিলা কিছু বুঝতে না পেরে রাফসানকে বললো
– কি হয়েছে হুম ভাইয়ার পেছনে ছুটছো কেনো তুমি?
– ভাবি আমি বলছি,আমি ফোনে একটা ছবি দেখে হাসছিলাম আর ভা……এটুকু বলেই রেহান জ্বিভ কাটলো। মনে মনে বললো…এইরে এ কি বলে ফেললাম আমি!
রাফসান আর মিথিলা দুজন দুজনের দিকে তাকালো মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বললো
– ফোনে কি দেখছিলে ভাইয়া?
রাফসান এবার আরো জোর পেলো মিথিলাকে বললো
– বুঝলে মিথি ভাইটা আমার হয়তো প্রেমে পড়েছে মনে হচ্ছে,আমি যখন তোমার প্রেমে পড়েছিলাম ঠিক এই ভাবেই নিজের ফোনে তোমার ছবি দেখে হাসতাম আমি।
মিথিলা চোখ গরম করে তাকালো রাফসানের দিকে রাফসান আমতা আমতা করে বললো
– না মানে বলছিলাম আর কি। এই রেহান বল এমন কিছু নয় তো?
রেহান চুপ করে আছে দেখে মিথিলা এগিয়ে এসে বললো
– ভাইয়া আসল ব্যাপারটা কি বলো তো আমিও তোমার মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখছি কিছুদিন ধরে।
রেহান যে এদের দুজনকে না বলে রেহায় পাবে না তাই বাধ্য হয়ে ফোনের থেকে মেঘার ছবিটা দেখিয়ে বললো
– ভাবি মেয়েটা কেমন?
মেঘার ছবিটা দেখে রাফসান আর মিথিলার দুজনেরি খুব পছন্দ হয়েছে। মিথিলা হেসে বললো
– বাহ!! মেয়েটি তো খুব মিষ্টি দেখতে তবে বয়সটা কম মনে হচ্ছে,আমার জা হিসেবে খারাপ হবে না। আমি তো খুব করে চাই আমার জা হয়ে যে আসবে তার বয়সটা একটু কম হতে হবে।
– বা বাহ ছবি দেখেই তুমি জা বানিয়ে নিলে?
– বা রে ভবিষ্যৎ এ তো হবেই আগে থেকে মানলে সমস্যা কোথায়! কি ভাইয়া ঠিক বলেছি না?
রেহান মাথা চুলকে হেসে মাথা নাড়ালো। রাফসান রেহানকে বললো
– তো রেহান মেয়েটির সম্পর্কে বল এখন।
রেহান মেঘার সম্পর্কে রাফসান আর মিথিলাকে সবটা বলার পর ওরা কোনো ওমত করেনি বরং রেহানকে সাপোর্ট করেছে।
.
🌿
.
পরের দিন সকালে রেহান কলেজের গেট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘাকে দেখার জন্য। একটু পরেই মেঘা এসে নামলো রিক্সা থেকে। রেহানের ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটে উঠলো মেঘাকে আসতে দেখে। মেঘা গেটের দিকে আসছিলো তখনি একজন মধ্য বয়সী মহিলা মেঘার সামনে এসে হাসি মুখে দাড়াঁলো। মেঘা দাঁড়িয়ে পড়লো কিছুটা অবাক হয়ে বললো
– আন্টি কিছু বলবেন আপনি?
মহিলাটি মেঘার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো
– কি নাম তোমার?
– আমার নাম মেঘা।
– বাহ তোমার মত তোমার নামটাও সুন্দর।
রেহানের একটা ফোন আসাতে কথা বলছিলো তাই খেয়াল করেনি কথা শেষ করে মেঘার দিকে তাকাতেই ওর মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো মেঘার সামনে থাকা মহিলাটিকে দেখে।
– বড়মা! বড়মা এখানে কি করছে আর মেঘাকে কি বলছেন?
রেহান একপা এগোতেই থেমে গেলো।
রাফিন এসে মহিলাটির কাধে হাত রেখে হসে বললো
– মা দেখেছো তো নীলপরীকে?
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো রাফিনের দিকে…রাফিনের মা এটা কিন্তু উনার মা আমাকে কেনো দেখতে এসেছে?
মেঘার হঠাৎ চোখ পড়লো রেহানের দিকে রেহান কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেঘা চোখ নামিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবছে…কি ব্যাপার! রেহান ভাইয়া এভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন?
মেঘা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
– আন্টি একটু পরেই আমার ক্লাস আসছি আমি।
মেঘা কথাটা বলেই চলে এলো।
রাফিনের মা হেসে রাফিনকে বললো
– রাফিন তোর পছন্দ আছে মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।

ওদিকে রেহান এখনো থম মেরে দাড়িয়ে আছে ওর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে,…বড়মা এতদিন পর কোথা থেকে আসলো!রাফিন এসে ওমন ভাবে ধরলো কেনো বড়মাকে? কে হয় রাফিন ওনার? আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না।নাহ এর উত্তর বড়মাই দিতে পারবে কিন্তু এতদিন পর বড়মা কি আমাকে চিনতে পারবে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতে রেহান খেয়াল ও করেনি রাফিনরা সেখান থেকে চলে গিয়েছে। রেহান সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর বড়মা আর রাফিন নেই ওখানে। রেহান আর একমুহুর্ত দেরি না করে বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।
·
·
·
চলবে………………….