Sunday, August 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 479



ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১৮+১৯

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_18
_________________

” বাসায় আসা মাত্র ই তুই আমাকে এই জঙ্গলে নিয়ে আসলি কেন তাহরিম ? দেখ আমি এক কাপড়ে চলে আসছি , বড় মা র সাথে ও দেখা করতে পারলাম না , এবার বল কেন আনলি এখানে ? এই ভুতের বাড়ি তে তোর কি কাজ?

কিছু একটা ভেবে ,

ওয়েট অ্যা মিনিট ব্রো , তুই তো এখন মন্ত্রী তাহলে কি মন্ত্রী গীরি ছেড়ে এখন ভুত নিয়ে তন্ত্র সাধনা করার ইচ্ছে আছে না কি ? হুম?

বেশ সিরিয়াস ভঙিতে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে ভ্রু জোড়া উঁচু করে কথা টা বলে উঠলো রুদ্র ,

রুদ্রের হেয়ালি বুঝতে পেরে তাহরিম বলল,

” ইয়াপ ব্রো ইউ আর রাইট , বাট সামথিং মিস্টেক আছে , এটা ভুত দিয়ে তন্ত্র সাধনা না , বিয়ের সাধনা হবে বয়স তো আর কম হলো না এবার তো বিয়ে সাদি করতে হবে , তবে ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত কোন কাজ কি আমি তাহরিম তালুকদার একা করেছি না কি সব সময় আমার নামের সাথে আরেকটা নাম জুড়ে থাকতো , রুদ্র তালুকদার, তাই না ব্রাদার ? ”

” বিয়ের সাধনা মানে কি ? তোর কি গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি ? ”

” ছে ছে গার্লফ্রেন্ড থাকবে কেন ? ‘

” তাহলে ? আর ওই মেয়ে দুটোই বা কে ?

আর জানিস ! মেয়েটা এত ভীতু ! আমাকে দেখেই ভুতত বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো , এতটা ভীতু আমি আগে দেখি নাই ! ”

রুদ্রের কথা শুনে তাহরিম ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , ছাদের দেয়াল এ হেলান দিয়ে পান্জাবীর পকেটে হাত দিয়ে বলল ,

” আমার এখানে আসার দুটো কারণ ,
এক আমি ওই মেয়ে দুটো দেখলি না ? যেই মেয়েটা সাদা রঙের জামা পড়া ওই পূর্না , এই তোর ভবিষ্যত ভাবি আর সাথে যে মেয়েটা , যাকে তুই ভীতু ডাকলি সে হলো ইলমি, বুঝলি ? পেশায় দুজন ই সাংবাদিক , বিভিন্ন আর্টিক্যাল এর জন্য ও অনেক ক্ষমতা বান লোকের নজরে এসেছে পূর্ণা,
, যে কোন সময় যে কোন ভাবে ক্ষতি করে দিতে পারে , এখন আবার কাজ করছে মন্ত্রীদের নিয়ে তার উপর ওর কাছে এমন অনেক তথ্য ও আছে, যা দিয়ে অন্যান্য মন্ত্রী দের বিপদে ফেলতে পারে এমন কি ক্ষমতা চ্যুতি ও হতে পারে , তাই অনেকে ই ওকে মে’রে ফেলতে চায় , তাই ওকে সারাক্ষণ নজর বন্দী করে রাখতে হয় না হলে কখন যে কি হয় বলা তো যায় না , মেয়েটা বড্ড বেশি সাহসী আর কনফিডেন্সের কথা আর কি বলব ”

তাহরিমের কথা শুনে রুদ্র ওষ্ঠ দুটি ফাক করে ফোস করে শ্বাস ছাড়লো , সামনে র দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল ,

” হুম বুঝলাম , আর দ্বিতীয় টা কি ? ”

রুদ্র র প্রশ্ন শুনে বেশ চিন্তিত স্বরে বলল ,

” এই পরিত্যক্ত জমিদাার বাড়িটা ভুতুড়ে বাড়ি নামে পরিচিত , এখানে নাকি কি সব ভুত প্রেতের আড্ডা , কিন্তু বেশ কিছু আর্টিক্যাল আমি দেখেছি যেখানে কোথাও স্পষ্ট কোন তথ্য দেওয়া নেই এই ব্যাপারে , আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে অন্য কিছু হয় , তাই তদন্তে আমি নিজে ই এলাম , একে তো পূর্ণ র নিরাপত্তা আর তদন্ত , দুটোই ”

” হুমম বুঝলাম ! ”

_______________

” আলো নেভালি কেন পূর্ণ ? ”

আমি ভ্রু কুচকে মোমের দিকে তাকালাম , মোমটা শেষ হয়ে গেছে তাই নিভে গেছে হয়তো ,

” নেভাই নি , নিভে গেছে , মোমটা হয়তো শেষ তাই , আরেকটা জ্বালাবো ? ”

ইলমি আমার থেকে খানিক টা দুরেই বসে ছিলো , ব্যগে মাথা দিয়ে শুতে শুতে বলল ,

” থাক লাগবে না , পরে যদি কাজে লাগে তখন ! তারচেয়ে বরং আরেকটা থাক , তুই ও আমার পাশে সুয়ে পড় ”

আমি কিছু একটা ভেবে শুয়ে পড়লাম ওর পাশে তবে কারো চোখেই ঘুম নেই ,

বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলাম আমরা,

________________

হঠাৎ দুর থেকে বেশ অনেক গুলো আলোর রেস দেখতে পেয়ে রুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়ালো , মনে হচ্ছে আলো গুলো ধীরে ধীরে এই জমিদার বাড়ির দিকে ই এগিয়ে আসছে ,

রুদ্র, তাহরিম কে ইশারা করতেই তাহরিম ঘুরে পিছনে তাকালো ,
ধীরে ধীরে ওর ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো ,

” কিছু বুঝতে পারছিস তাহরিম? ”

তাহরিম সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল ,

” হুমম , বুঝব না কেন ? ”

” অপেক্ষা কর এরা এখানেই আসবে ”

তহরিম কোন কথা বলল না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ,

বেশ কিছু ক্ষন পর আলোগুলো বেশ কাছাকাছি চলে এলো , কিছু মশাল আর টর্চ লাইট হাতে প্রায় ১৫-১৬ জন দাড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির ঠিক সদর দরজার সামনে , ছাদ থেকে অনেক টায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে জায়গা টা ,

অন্ধকারে কারো মুখ ই স্পষ্ট নয় তবে এদের মাঝে কয়েকজন কে বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে তাহরিম এর , তবে যাদের অনুমান করছে তারা যদি হয়ে থাকে তবে যব্বেশ একটা ক্লু পাবে সে ,

লোকগুলো সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো , এদের মাঝে একজন বেশ মাতব্বরি করছে , তাহরিম বুঝতে পারলো এই লোকটা ই মনে হয় ওদের বস হয়তো ,
তবে এই লোকটাকেই যেন সব চেয়ে বেশি চেনা চেনা মনে হচ্ছে ,

তাহরিম দাঁড়িয়ে দেখছে আসলে এরা আসলে করছে টা কি ,
_________________

গেইট খোলার আওয়াজ পেয়ে ধরফর করে উঠলাম আমি আর ইলু , দুজন দু’জনে র দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালাম ,

আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজাটার দিকে উদ্দেশ্য দরজার ফাক দিয়ে দেখার চেষ্টা করা, কি হচ্ছে বাহিরে ,

বেশ অনেক লোকজন দেখে আমি বেশ অবাক হলাম , এত রাতে এরা এখানে কেন , আমি দেখতে দেখতে ই লোকগুলো দোতলায় উঠে গেলো , আমি ব্যগ থেকে ক্যামেরা টা কাধে তুলে নিয়ে ইলুর হাত ধরে বাইরে আসলাম আমার কাধে আমার ব্যগ আর ইলুর কাঁধে ইলুর ব্যগ , উদ্দেশ্য কোন প্রমান জোগাড় করা , আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালিয়ে যাওয়া ,

এতক্ষণে এত টুকু বুঝতে পারছি যে এরাই আসলে এখান কার নাম করা ভুতের ছদ্মবেশ ধারী মানুষ ,

আমি নিঃ শব্দে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম আমার পিছনে পিছনে ইলু ও উঠলো ,

আলো টা দোতলার সেই শেষ ঘর থেকে ই আসছে , সাথে লোকগুলোর কথা ও ভেসে আসছে , আমি ক্যামারা তে ভিডিও অন করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সেদিকে পিছনে ইলু আসছে ওর হাতেও ওর ক্যামেরা , বাই এনি চান্স একটা নষ্ট হয়ে গেলো সব সব তো জলে যাবে তাই সেফটির জন্য ও ভিডিও করছে ,

” বসস , বেছে বেছে যব্বেশ একটা জায়গা বের করেছেন তো , পুলিশ কেন , এই জন্মে কেউ কখনো খুজে ই পাইবো না আর কেউ তো আসবই না এখানে ভুতের ভয়ে ”

বিপরীত দিকে ফিরে থাকা লোকটা হেসে উঠলো , পিছনে দিকে ফিরতে ফিরতে বলল ,

” তোদের মতো গরুর ছাগলের বুদ্ধি দিয়ে তো আর রাজনীতি করা যায় না ! বুদ্ধি লাগে বুদ্ধি , রাজনীতি করতে হলে বুদ্ধির সাথে কুবুদ্ধি র ও প্রয়োজন আছে ”

বলেই চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলল ,

লোকটাকে দেখে আমি আর ইলু ভরকে গেলাম , সাদা রঙের পান্জাবী , পাজামা পড়া , মাথায় টুপি আর গাল ভর্তি আধা পাকা দাড়ি শাফিন মিয়াজি , তাহরিম তালুকদার এর আগে উনিই ছিলেন এলাকার মন্ত্রী আর প্রভাব শালী ব্যক্তি , তবে এ বছর তাহরিম তালুকদার এর জন্য ই উনার ক্ষমতা চ্যুতি হয় যার ফলে বেশ রাগ উনার তাহরিম তালুকদার এর উপর ,

বেশ ভালো মানুষ বলেই জানতো সবাই উনাকে ,

এই তাহলে উনার আসল রুপ!
নাহ্ আর ভাবতে পারছি না , সুন্নতি লেবাসের ভিতর এই কোন রুপ উনার!

” বস যেই মাল গুলো বন্দরে আসবে ওগুলো রিসিভ করতে কি আপনি যাবেন? নাকি আমাদের কেউ গেলেই হবে ? ”

” না রুস্তম , আমি যাবো , প্রায় ১ কোটি টাকার মাদক আছে কোন ভাবে যদি পুলিশ জানতে পারে তাহলে আর রক্ষা নাই , তোদের উপর এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারছি না , তাই আমি যাবো ”

” মাদক কি সব এই খানে আনবেন বস ? ”

” নাহ , মাটির নিচে চালান করবি , ই*য়াবা , ফেন*সিডিল , আর প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিদেশি ম*দ এই চালানে । কম ই আনছি , এগুলো বিক্রি করতে পারলে পরবর্তী চালানে ৪ কোটির মতো আনমু , বুঝছচ ? ”

বলেই শাফিন মিয়াজি আধা পাকা দাড়ির মাঝে হাত বুলাতে লাগলো ,

হঠাৎ কারো নজর আমাদের দিকে আসতেই আমি ছিটকে সরে গেলাম ,

” কে? কে ওখানে ? ”

কারো চিৎকারে আমি আর ইলু ভরকে যায় , দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম , সদর দরজা খুলা , আমি আর ইলু জঙ্গলের মাঝে ই দৌড় লাগালাম , আমার এক হাতে ক্যামেরা আর অন্য হাতের মুঠোয় ইলুর হাত ,

পিছনে থেকে ওরা দৌড়ে আসছে , আজ যদি ধরা পরি আর রক্ষে নেই , এখানেই জীবনের গল্পের সমাপ্তি ঘোষিত হবে ,

চলবে ,

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_19

_____________________

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আমি আর ইলু দৌড়াচ্ছিলাম , হঠাৎ পিছনে থেকে কোন শব্দ না পেয়ে পা থামালাম , বেশ অনেক টা ঘেমে গেছি , ইলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও বেশ হাঁপাচ্ছে ,

” ম্যারাথন দৌড় দিসি রে পূর্ণ , এমন দৌড় আমি আমার বাপের জন্মে দেই নাই ”

আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করতে করতে বললাম ,

” এখানো কিন্তু আমরা সেইফ না ইলু , কখন জানি আবার এখানেও চলে আসে ! আমরা কিন্তু জঙ্গলের প্রায় অনেক টায় ভেতরে, বের হবার রাস্তা খুজতে হবে ”

ইলু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল , আমার হাত থেকে পানির বোতল নিতে নিতে বলল,

” হুম , দাড়া পানি খেয়ে একটু জিরিয়ে নেই তারপর বাকি সব ”

ইলু পানি খেয়ে বোতল টা আমার হাতে দিলো , আমি ও একটু গলা ভিজিয়ে নিয়ে ব্যগে রেখে দিলাম ,

হঠাৎ কিছু পাতার মর্মর শব্দে আমি আর ইলু চুপ করে যায় , উঠে দাড়ালাম আমি , হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠলো ,

” মজনুরে পাইছি ! মাইয়া দুইডা বেশি দুর যাইবার পারে নাই , এই খানেই আছে , ওই যে সামনে ! ”

বলতে বলতেই কিছু লোক আমাদের কাছে আসতে নিলে আমি আর ইলু দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ইলু আর আমি দৌড় লাগালাম কিন্তু হাতের বাধন টা কখন জানি খুলে গেলো বুঝতে ই পারি নি , আমি আর ইলু দুজন দু দিকে চলে গেলাম , আমিও দৌড়াচ্ছি ইলুও দৌড়াচ্ছে ,

দুজন দুদিকে যাওয়ার ফলে লোক গুলো ও দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে , কিছু লোক আমার পিছনে আর কিছু লোক ইলুর পিছনে ,

হঠাৎ পায়ে কাটার মতো কিছু ফুটলো , জুতোর উপর দিয়ে কিভাবে কাটা ফুটলো বুঝতে পারলাম না , বরই গাছের চিকন ডালা মনে হচ্ছে , আমি কিছু চিন্তা না করে পা থেকে কাটা যুক্ত ডালা টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম , কিন্তু কোন ভাবে ই যেন আর দৌড়াতে পারছি না , কষ্ট হচ্ছে ভিষণ , লোক গুলো ও মনে হচ্ছে কাছাকাছি চলে এসেছে , আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াচ্ছি , একটা বড় গাছের নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা হাত দিয়ে আমার হাত হেচকা টানে গাছের আড়ালে নিয়ে গেলো কেউ , হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেলাম আমি , আমার মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে সে , যেন কথা বলতে না পারি ..
______________

এদিকে ইলু দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে , পিছনে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো এখানো ওর পিছনে , ভিষণ ক্লান্ত লাগছে তার আর সম্ভব না এবার মনে হয় ধরাই পরে যাবে ,

হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকালো সে , অন্ধকারে তেমন কিছু বোঝার না গেলেও সাদা রঙ টা খুব ভালো ই বোঝা যায় ,

ইলু খেয়াল করলো তার হাত চেপে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের শার্ট পরা লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে তার হাত হেচকা টানে দৌড় শুরু করলো, বেচারি ইলু কিছু বোঝে উঠার আগেই যেন সব ঘটে গেছে ,

বেচারি পড়তে পড়তে বেঁচেছে , লোকটা দৌড়াচ্ছে আর ইলু অবাক দৃষ্টিতে তা দিকে তাকিয়ে আছে ,

” মুখ বন্ধ করো আর তাড়াতাড়ি পা চালাও গর্ধব মেয়ে এক্ষুনি ধরা পরে যেতে ! ”

কথাটা কানে আসতেই ইলু মুখ বন্ধ করে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল ,

” আপনি কে ? আর আপনি এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন ? আপনাকে ও কি তাড়া করেছে ওরা ? ”

” এটা বোঝার ক্ষমতা যদি তোমার থাকতো তাহলে তো ভালো ই হতো , এখন কথা বলো না , আমার সাথে পা বাড়াও ”

দুরে কোথাও আলো দেখতে পেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল রুদ্র , নেহাত মেয়ে টা বিপদে পড়েছে নয়তো কোন মেয়ের হাত ধরা! সে তো ছায়া ও মারাতো না

দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা দুর চলে এসেছে রুদ্র আর ইলমি , আবাদত তারা হাটছে ইটের রাস্তার উপর দিয়ে , আশেপাশে কোথাও কোন বাড়ি নেই , আর না দোকান , সেই একটা বাতি দেখা গিয়েছিল তাও ওটা পরিত্যক্ত ল্যাম্প পোস্ট ,

” আপনি কে বললেন না তো ? ”

রুদ্র ইলুর কথার কেন উত্তর না দিয়ে সোজা হাটছে যেন মনে হচ্ছে তার আশেপাশে মানুষ বলে কোন শব্দ ই নেই ,

ইলু ভ্রু কুচকে এক পলক রুদ্র র দিকে তাকিয়ে বলল ,

“আপনি কি রোবট ? ”

এবার রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,

” হে হে না মানে আপনি রোবটের মতো সোজা হাটছেন তো আর কেন কথা ও বলছেন না যেন রোবট ! আচ্ছা রোবট দের কি নির্দিষ্ট পরিমান শব্দ সেট করে দেয় নাকি ? যেন তারা সেই পরিমান থেকে এক অক্ষর ও বেশি বলতে না পারে? আপনি জানেন ? ”

রুদ্র তা ও কোন কথা বলছে না যেন কথা বললেই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে এমন ভাব ,

রুদ্র কে পাত্তা না দিয়ে ইলু বলতে লাগলো ,

” এখানে আমাকে এনেছেন কেন ? হায় পূর্ণ টা ও যে কোথায় ? না জানি ওরা ধরেই ফেলেছে না কি ? ছাতার মোবাইলে ও নেট নাই ঠিক এ জন্য ই না বাংলাদেশ আমার পছন্দ না যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলো ৭ জি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সেখানে বাংলাদেশ ৪জি আর তাও যদি সব জায়গায় পাওয়া যেত , রাস্তায় যদি ৪ জি থাকে , বাড়িতে থাকে ৩ জি , বেডরুমে ২জি আর খাটের ওপর ইনসার্ট সিম ! কেমন ডা না লাগে ”

এবার রুদ্র বেশশ বিরক্ত হলো , হুট করে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

” এই যে মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার , আপনি যদি দয়া করে আপনার মহা মূল্য বান রেকর্ডার টা অফ রখতেন তাহলে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকতাম ”

” মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার ? এটা আবার কেমন নাম ? আর কে এটা ? ”

ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে খুজতে কথা টা জিজ্ঞেস করলো ইলু ,

এখন রুদ্রের নিজের কপাল দেয়ালে ঠুকতে ইচ্ছে করছে , কোন পাপে যে এই সেন্টি মেন্টাল কে সাহায্য করতে এসেছিলো !
________________

এদিকে লোক গুলো এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে খুজতে চলে গেলো , আমি চোখ মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে আছি , লোক গুলো চলে যেতেই সে আমার মুখ ছেড়ে দিলো ,

আমার মুখ ছাড়তেই আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম ,

” আপনি কি মানুষ ? এত জোরে কেউ ধরে ? আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতাম ”

আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে কিছু ক্ষন চুপ থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল ,

” তোমাকে এখন আমার থাপড়াতে ইচ্ছে করছে ! কষিয়ে দুটো দেই ? বেশি না মাত্র দুটো ই ! ”

” কেন ? ”

” এমনি , আমার ইচ্ছে ! ”

” কেন মন্ত্রী সাহেব ? আমি কি করলাম ? ”

আমার কথা শুনে উনি বেশ হকচকিয়ে গেলেন , সাথে সাথে ই মুখে হাত দিয়ে দেখলেন মাস্ক ঠিক আছে কি না ! নাহ্ সব তো ঠিক ই আছে তাহলে ?

” এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , আপনার মাস্ক ঠিক ই আছে , ইনফেক্ট পারফিউম টার গন্ধ টাও চেঞ্জ তবে কি বলুন তো , সাংবাদিক হতে হলে বুদ্ধি থাকতে হয় , আমি এত বেশি বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ না হলেও ঘটে কিছু টা বুদ্ধি আমার আছে , বেস্ট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে ও নাম আছে আমার তাই মানুষ চিনতে আমার খুব একটা ভুল হয় না ! ”

আমার কথা শুনে উনি হালকা শব্দ করে হেসে উঠলো , মাস্ক খুলতে খুলতে বলল ,

” বাহ্ বেশ বুদ্ধি তোমার মিস মিফতাহুল পূর্ণা , আই এম ইমপ্রেস্ড ”

উনার কথা শুনে আমি মুখ বেকিয়ে বিরবির করে বললাম ,

” ঘোড়ার ডিমের ইমপ্রেস্ড ”

উনি আমার কথা শুনে হাসলেন তবে কিছু না বলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে ফ্লাস লাইট টা অন করলেন ,

হঠাৎ আমার হাত ধরে গাছের শিকড়ে বসিয়ে উনি নিচে বসে আমার ডান পা টা উনার পায়ের উপর রেখে পায়ের নিচ টা দেখতে লাগলেন , ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে কাজ করে চলেছেন উনি ,

আমি পা টা সরাতে সরাতে কিছু বলতে যাবো , আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার পা টা চাপ দিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,

” ডোন্ট , যা করতে চাচ্ছো তা করলে খবর আছে , আর কোন কথা আমার কানে আসলে কোলে তুলে ঠাস করে নিচে ফেলে দিবো পরে ভাঙা কোমড় দিয়ে বসে বসে রেললাইনের ধারে মুড়ি বিক্রি করতে হবে ”

উনি বেশ খানিকক্ষণ আমার পা টা ভালো ভাবে দেখে বলল ,

” হুম কাটা নেই তবে রক্ত পড়েছে আর বেশ খানিকটা কেটে গেছে রক্ত পরা যদিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে , পানির বোতল টা দাও ”

” হুম ? ”

” কানে শুনতে পাও না , পানির বোতল দিতে বললাম ”

আমি কিছু না বলে পানির বোতল টা বের করে দিলাম ,
উনি পানি দিয়ে আমার পা ট পরিষ্কার করে , পকেটে থেকে একটা রুমাল বের করে আমার পায়ে বেধে দিলেন , বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন ,

” আবাদত ফাস্ট এইড নেই , হসপিটালে গিয়ে ড্রেসিং করে ব্যন্ডেজ করলেই হবে ! ”

উনার কথা ই আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,

” এই টুকু কাটায় ব্যান্ডেজ ? এটা তো এমনি ই ঠিক হয়ে যাবে ”

আমার কথা শুনে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,

” গর্ধবের মতো আরেকটা কথা বলবে ! তখন কার অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করে দিবো তোমার দু গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় দিয়ে , সোও নিজের ভালো চাইলে চুপ থাকো ”

চলবে…..

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১৬+১৭

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_16 (জমিদার বাড়ির রহস্য ৩)

______________

ইলমি হাটু গেড়ে বসে কঙ্কাল গুলো তে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করছে , এসবে ওর বেশ অভিজ্ঞতা আছে , বেশ কিছু হসপিটালের ইনভেস্টিগেসনে ও লিডার হিসেবে ছিলো ,

আমাকে যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক রাজবাড়ী , জমিদার বাড়ির ইনভেস্টিগেশনে পাঠানো হয় তেমনি ওকে হসপিটাল , মর্গ , বিভিন্ন মেডিকেল বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয় ইনভেস্টিগেশন এর জন্য , তাই এসবে ওর বেশ দক্ষ্যতা আর কোন ভয় ভীতি ও নেই ,

” কিছু বুঝলি ? ”

আমার কন্ঠ শুনতে পেয়ে ইলু আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো , এক পলক একটা কঙ্কাল এর দিকে তাকিয়ে উঠে এলো ,

” বুঝলি পূর্ণ , আমার না এখন মনে হচ্ছে এখানে ভুত টুত কিচ্ছু থাকে না ”

আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” কেন ? হঠাৎ তোর এমন মনে হচ্ছে ? ”

ও হাতে একটা মানব কঙ্কাল এর খুলি আর একটা ফিমার ( হাতের হাড্ডি) নিয়ে আমার সামনে ধরলো ,

” নে ধর ”

আমি এক হাতে ফিমার টা ধরে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলাম , কিন্তু এসবে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই তাই ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলাম ,

” কি করব এটা দিয়ে ? ”

ইলু আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে একটা হিপ বোর্ন নিয়ে আসলো ,

ফিমার টা আমার হাত থেকে নিয়ে আঙুল দিয়ে নখের সাহায্যে আলতো হাতে টোকা দিলো , আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” কিছু বুঝতে পারছিস ? ”

আমি ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম ,

” নাহ ”

” তুই কি ঘোড়ার ডিমের ইনভেস্টিগেটর রে একটা সামান্য প্লাস্টিক আর সত্যি কার হাড্ডি চিনিস না ”

আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,

” এটা প্লাস্টিক ? ”

” হুম ”

আমি মাথার খুলি টা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে বললাম ,

” তার মানে এগুলো সব প্লাস্টিক নয়তো অন্য কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি , সত্যি কারের না ”

একে একে সব গুলো কঙ্কাল ই চেক করলাম , সব গুলো প্রায় সেইম ই , হঠাৎ আমার নজর গেলো সেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে থাকা সেই কঙ্কাল টরা দিকে ,

ওর একটা হাড্ডি ধরে উপরে তুলতেই মনে হলো এটা অন্য সকল কঙ্কাল এর মতো না , মনে হচ্ছে এটা আসল! কোন মানব কঙ্কাল , সিউর হবার জন্য ইলু কে ডাকলাম

” এই ইলু এখানে দেখতো , এটা চেক কর ”

আমার কথা শুনে ইলু আমার কাছে এসে হাটু গেড়ে বসে কঙ্কাল টার হাতের হাড্ডি , মাথার খুলি চেক করতে লাগলো ,

ওর মুখের এক্সপ্রেসন টা হঠাৎ বদলে গেলো ,

” কি হয়েছে ? এটা সত্যি ই মানব কঙ্কাল তাই তো ? ”

” হ্যা এটা ই একমাত্র সত্যি কারের মানব কঙ্কাল ”

আমি উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললাম

” হুমম , এত গুলো প্লাস্টিকের কঙ্কাল এর মধ্যে একটা সত্যিকারের কঙ্কাল রাখার মানে না কি ? কি বোঝাতে চাচ্ছে ? ”

” সেটাই তো বুঝতে পারছি না ”

” দেখ ইলু , আমার যেমন ঘরে ঢুকেই এই কঙ্কাল টার দিকে নজর গেলো তার অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে থাকা দেখে তেমন ই সবার কিন্তু এটার উপর ই নজর যাবে আর যারা ইনভেস্টিগেটর আসবে তারা কৌতুহল বশত এটাই প্রথমে ধরবে আর এটা তো সত্যি কারের কঙ্কাল , সুতরাং তারা ধরে ই নিবে সব গুলো ই মানব কঙ্কাল

কিছু টা থেমে

হতেই পারে ”

আমার কথা শুনে ইলু আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” তারপর আমার মতো ভীতু হলে তো কথায় ই নেই ভয় পাবে আর চলে যাবে ”

” হুম বেশ তুখোড় বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই কাজ টা করেছে ”

আমার কথা ই সায় জানিয়ে ইলু বলল ,

” ঠিক ই বলেছিস , বাট কার কাজ এগুলো ”

” আবাদত জানি না তবে বের করতে বেশি একটা সময় লাগবে না আশা করি ”

বলেই পুরো ঘরটা কয়েকবার রাউন্ড দিয়ে পর্যবেক্ষন করলাম ,

সন্দেহ জনক কিছু ই না পেয়ে হতাশ হলাম ,

” চল ইলু , কাল সকালে আবার আসবো নে , দেখি কিছু পাই কি না ”

” হুম চল বাট.. ”

ইলুর কথা শুনে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম ,

ভ্রু কুঁচকে বললাম ,

” বাট৷? বাট কি ? ”

” পূর্ণ আমরা তো এসেছিলাম শব্দের উৎস খুজতে কিন্তু কিছু ই তো পেলাম না তাহলে ”

ইলুর কথা শুনে আমি বেশ ভাবনায় পরে গেলাম ,

” আসলে ই তো আওয়াজ টা এই ঘর থেকে ই আসছিলো কিন্তু এখান তো কিছু ই নেই
তাহলে?

হঠাৎ আমার চোখ যায় ঘরের ডান পাশ টায় বিশালাকার জানালার উপর ,

কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেলাম তার দিকে , বাইরে ভালোই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে , হয়তো ঝড় হবে , অন্ধকার থাকায় বেশ উপভোগ করা যাচ্ছে ,

“নিচে বেশ কয়েকটুকু খোলা জায়গায় রয়েছে হঠাৎ মনে হলো , আচ্ছা! এই জানলার মধ্যে দিয়ে শব্দ টা আসছে না তো? ”

বেশ খানিকক্ষণ উঁকি ঝুকি দিয়ে ও কোন উৎস পেলাম না ,

” থাক চল তো , আর কিছু দেখতে হবে না ”

আমি এক পলক ঘরটার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসলাম ,

বাইরে থেকে দরজা টা লক করে বিশাল বারান্দা দিয়ে হাটছি , মোমের আলো নিয়ে ইলু সামনে সামনে আর আমি পিছন দিয়ে হাটছি , আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি ,

হঠাৎ খুব জোরে ই বাতাস বইতে শুরু করলো হয়তো এক্ষুনি ঝড় শুরু হবে ,

ইলু মোমের আলো কে হাতের দ্বারা আড়াল করে রেখেছে যেন নিভে না যায় তবে শেষ রক্ষা আর হলো কই , মোমটা টিমটিম করে জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেলো ,

আমি আর ইলু অন্ধকারের মাঝে ই ধীর পায়ে হাটছি , এখন আবার মোম জ্বালিয়ে ও কেন লাভ হবে বলে মনে হয় না , তাই আর জ্বালালাম না ,

ইলু সামনে আর পিছনে হাটছি , হঠাৎ পিছন থেকে এক জোড়া হাত এসে আমার মুখ চেপে ধরে পাশে ই একটা বদ্ধ ঘরের দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো , আমি খানিকটা ভয় আর উত্তেজনায় ছাড়াবার চেষ্টা করছি , মনে মনে ভাবছি , কে এটা ? ভুত ? নাকি প্রেতাত্মা ?

________________

ইলু হাঁটছে তো হাটছেই তার পিছনে যে কেউ নাই সেদিকে কি তার কোন খবর ই নেই , সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ইলু বলে উঠলো ,

” পূর্ণ এখন কিন্তু তুই ঘুমাবি আর আমি জাগবো , তখন আমি ঘুমিয়েছি ”

কিন্তু পিছনে থেকে কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পিছনে তাকালো ,

” পূর্ণ ? ”

ইলু অন্ধকারের মাঝে ই খুজতে লাগলো ,

বেচারী তো এমনি ভয় পাচ্ছে তার উপর পূর্ন কেও পাচ্ছে না , অবস্থা করুন তার ,

পিছনে ঘুরে বারান্দা দিয়ে হাটছে আর পূর্ণ কে ডাকছে ,

যেতে যেতে হুট করে ই বারান্দার মাঝখানে এক খাম্বার সাথে ঠাস করে ধাক্কা খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো ,

” ওফফ , কোন ঘোড়ার ডিমের ইন্জিনিয়ার বাড়ি টা বানায়ছেরে , বারান্দার মাঝখানে এক খাম্বা দাড় করিয়ে রাখছে , ঘোড়ার ডিম ”

হঠাৎ মনে হলো , কই এখন ই তো এখন দিয়ে গেলাম , তখন তো খাম্বা ছিলো না তাহলে৷, এসব চিন্তা করতে করতে ই ইলু সামনে এক হাত বাড়িয়ে দিলো,

সোজা কারো কারো শরীরের স্পর্শ ইলু তার নিজের হাতে পেলো , এখানে তো ও আর পূর্ণা ছাড়া আর কেউ নেই ,

” ওই পূর্ণ এভাবে সঙের মতো দড়াইয়া আছোচ কেন ? দেখ ভাই তোর যদি নিয়ত থাকে আমাকে ভয় দেখাবি ! আমি আগে ই বলে রাখছি আমি বর্তমানে ভিষণ ভয় পাচ্ছি , চল রুমে চল ”

কিন্তু পূর্ণর কোন নড়চড় না দেখে ভ্রু কুচকে সামনে থাকা কারো হাত ধরলো , তারপর ও ওই মানুষ টা কিছু ই বলছে না , তবে ইলুর কাছে হাত টা কেমন অচেনা অচেনা ঠেকছে তাই হুট করে ই হাত টা ছেড়ে দিলো ,

ওর মনে হচ্ছে এটা পূর্ণ না অন্য কেউ ! তবে কে ?

চলবে…

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_17

______________

” কককে ? কে আপনি ? ”

ভয়ে ভেতর টা শুকিয়ে আসছে ইলুর , সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেও নির্লীপ্ত ভঙ্গিতে ই আছে কোন কথা ও বলছে না ,

হঠাৎ বিজলি চমকানো র ফলে আলোতে সামনে থাকা লোকটার অবয়ব কিছু টা ঠাওর করতে পারল বোধ হয় ইলু , যতটুকু বুঝেছে এটা কোন পুরুষালী অবয়ব ,
তাহলে কি ভুত পুরুষের ছদ্মবেশ ধরেছে ?

এমনি তেও তো ভুত জাতিতে পুরুষ , কখন জানি খপ করে ঘাড় টা ধরে কট করে মটকে দেয় তার উপর সে ভুতের এতোটা কাছে ,
ইলু কাদো কাদো দৃষ্টিতে একবার সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকালো আবার পিছনে পালাবার পথ খুজতে লাগলো ,
ইলুর মনে হচ্ছে ভয়ে তার রক্ত শুন্য হয়ে গেছে মাথা টা কেমন জানি ঝিম ঝিম করছে , মাথা ঘুরাচ্ছে তার ভীষণ ভাবে , নাহ্ আর কিছু ই সে বলতে পারবে না ,

” ভুতততত ” বলে চিৎকার দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে পড়ে য়েতে নিলেই এক জোড়া শক্ত হাত আকড়ে ধরলো তার কোমড় , ইলুর মাথাটা গিয়ে ঠেকলো সেই পুরুষের বুকে, লোকটা আরেক হাত দু হাটুর ভাজে নিয়ে সহসাই কোলে তুলে নিলো তাকে , হয়তে সে এই সময় টার ই অপেক্ষা করছিলো ,

কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সে ,

______________

ভুত না না প্রেতাত্মা আমাকে দেয়ালে চেপে দাঁড়িয়ে আছে, তার এক হাত দেয়ালে আরেক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , বিজলী চমকানোর আলোতে বুঝতে পারলাম সে মাস্ক পড়া , এহহ নিজেতো কালো মাস্ক পড়ে আছে দেখার ও উপায় নেই

, প্রেতাত্মা বলার প্রধান কারন হলো . লোকটা কে? তা আমার অজানা , ধরে আছে তো আছেই না নিজে কোন কথা বলছে না আমাকে বলতে দিচ্ছে . তাকিয়ে আছে তো আছেই , বুঝলাম না ভাই এই অন্ধকারে এই হতচ্ছাড়া টা দেখে কি ?

প্রায় মিনিট পাচেক পর আমার বেশ অতিষ্ঠ লাগছে তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য কথা বলতে চাইলাম কিন্তু ভাগ্য আমার ! মুখ থেকে , ” উমম , , উমম ” শব্দ ছাড়া আর কিছু ই বের হলো না ৷,

হঠাৎ ই লোকটা আমার দিকে ঝুঁকে এলো যার ফলে আমি পিছনে যেতে গিয়ে আমার মাথাটা গিয়ে বারি খেলো দেয়ালের সাথে , চোখ কুচকে ব্যথা নিবারনের চেষ্টা করলাম,

আমার কানের কাছে এসে ধীর গতিতে ফিসফিস করে বলল ,

” ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্ল্ড ”

এই অন্ধকারে ফিসফিসিয়ে কথা শুনে আমি খানিকটা কেঁপে উঠলাম ,

উষ্ঠ দুটো ফাক করে নিশ্বাস ছাড়বো তার ও উপায় নেয় ,

ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম ,

আমার ছটফট করতে দেখে সামনে থাকা লোকটা কিছু টা বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলল ,

” ওফফ রানী , এত ছটফট করো কেন বলো তো ? একটু শান্তিতে দেখতে দাও না তোমাকে ! তুমি জানো কতটা সময় ধরে তোমাকে দেখি না ? পুরোপুরি একটা দিন তোমায় না দেখে থাকতে হলো , তুমি ভাবতে পারছো? কত টা সময় তুমি আমার চোখের আড়ালে ছিলে ? ”

লোকটার কথা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি যদিও স্পষ্ট ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না , আমি ভাবতে লাগলাম , লোকটা কি পাগল না কি? নাকি মাথার তার কয়েকটা আলগা করা !

, হঠাৎ হঠাৎ বিজলী চমকানো র আলোতে কিছু টা দেখা যাচ্ছে লোকটাকে , যতবার আলোর ঝলকানি তে তার চোখের দিকে তাকাচ্ছি ঠিক ততবারই মনে হচ্ছে এর গভীরতা অনেক , খুব বেশি গভীর , এত গভীরে যাবার সাধ্য আমার নেই!

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তিনি , হঠাৎ করে ই শব্দ করে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো ,

” আমাকে বুঝতে যেও না রানী , নিজেকে অবুঝ মনে হবে ,
আমাকে খুজতে যেও না রানী নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে যে ,
আমার চোখের গভীরতা অনেক খুজে কুল কিনারা পাবা না রানী তাই বৃথা চেষ্টা করো না ”

লোকটার সাথে আমার দুরত্ব টা দু এক ইঞ্চি থেকে বেশি তো হবেই না , এই প্রথম কোন ছেলে আমার এতো টা কাছে ,

সে এতো জোরে শ্বাস প্রস্বাস নিচ্ছে যেন আমি তা নির্ভুল ভাবে গুনতে পারব , তবে খটকা জনক লাগছে ভীষণ ,

লোকটার গায়ে গন্ধে টা আমার কেন জানি ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে এর আগেও এমন গন্ধ আমি পেয়েছি খুউউবব কাছ থেকে , ভীষণ চেনা আমার , কিন্তু কিছু তেই যেন মনে পড়ছে না ,

এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে ই হঠাৎ লোকটা আমার মুখ হাত ছেড়ে দিলো ,

লোকটাকে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখন ই মনে হলো আমার আশপাশে কেউ নেই , কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি না , চলে গেছেন?

” আছেন কেউ ? ”

নাহ্ কোন সারা শব্দ নেই তারমানে কেউ নেই ,

, সব কিছু কেমন জানি গোলমেলে লাগছে , লোকটায় বা কে ছিল? এই ভরা জঙ্গলে কি করে সে ? কেন এসেছে এখানে ? বেশ কয়েক টা প্রশ্ন যেন মগজে ঠোকড়াচ্ছে , উত্তর মিলছে না কিছুতেই !

হঠাৎ ইলুর কথা মনে হলো ..

আমি এখানে ? তাহলে ইলু কোথায় ? নিশ্চয়ই আমাকে খুজছে ? দৌড়ে বের হলাম রুম থেকে , কোথাও কোন আলো নেই , ইলুর আওয়াজ ও নেই, বেশ অনেক টা ই ঘাবড়ে গেলাম আমি , মেয়েটা তো ভীষণ ভীতু , আমাকে না পেয়ে না জানি কি করছে মেয়েটা ,

বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি কোন একটা রুমে আলো জ্বলছে , দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম ,

ঘর টা তে এসে দেখি ইলু মেঝেতে ব্যগ কে বালিশ বানিয়ে শুয়ে আছে , আমি ওকে এভাবে দেখে একটু নয় অনেকটাই অবাক হলাম , আমাকে না খুঁজে ও এভাবে শুয়ে থাকবে ব্যপার টা কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে ,

জানালার দিকে নজর যেতেই আমার কেন জানি মনে হলো , আমাকে দেখা মাত্র ই কেউ জানালা থেকে সরে গেলো , ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম জানালার দিকে , কিন্তু কাউকে ই দেখলাম না , মনের ভুল ভেবে সরে আসলাম ওখান থেকে ,

ইলুর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসলাম , ভ্রু কুচকে বার কয়েক ডাকার পর ও কোন সারা শব্দ নেই ওর,
অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি? আমি আর কিছু চিন্তা না করেই ব্যগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি হাতে নিয়ে ওর মুখে ছিটা দিলাম , কয়েকবার দেওয়ার পর ই হুড়মুড় করে লাফ দিয়ে ওঠে দুরে সরে গেলো ও আমার থেকে ,

দু হাটু মুড়ে চোখ বন্ধ করে ই কেঁপে কেঁপে বলতে লাগলো ,

” ভুউউউতত প্লিজ মারবে না আমাকে , প্লিজ মারবে না , আমি বাঁচতে চাই , দয়া করো ”

” ইলু, ইলু চোখ খুল , এখানে ভুত নেই , দেখ আমি পূর্ণা , তুই চোখ খুল ”

তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না ও আনমনে বিরবির করে ই যাচ্ছে , বুঝলাম কোন কিছু নিয়ে বেশ ভয় পেয়েছে , কিন্তু কি নিয়ে? জানার জন্য তো আগে ওকে স্বাভাবিক করতে হবে ,

আমি গিয়ে ওর সামনে বসে আমার দুই হাত ওর বাহুতে রেখে দু বার শরীর ধাক্কা দিয়ে ডাকতেই ও পিটপিট করে চোখ খুলল তবুও ওর চোখে মুখে ভয়ে র ছাপ স্পষ্ট ,

আমাকে দেখা মাত্র ই দু হাতে আমাকে জরিয়ে ধরলো খুব জোরে ই ধরেছে , এত জোরে যে আমি ব্যথা পাচ্ছি তবুও কিছু বললাম না , ইলু ভয়ের তাড়নায় হুস হারিয়ে ফেলেছে ,

আমি কিছু না বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম যতক্ষন না ও নরমাল হয়

____________________

জমিদার বাড়ির ছাদের দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে এক ২৫-২৬ বছরের যুবক , ঠিক তার সামনেই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে তাহরিম তালুকদার,

” রুদ্র কাজটা কি তুই ঠিক করলি ? মেয়েটা কত ভয় পেয়েছে তুই জানিস ? তোকে নিয়ে আর পারলাম না ! এতদিন এব্রোডে থেকে এলি তবুও তোর ঘাড় ত্যারামি গেলো না! ”

শেষের কথাটা বেশ আফসোস এর স্বরে ই বলল তাহরিম ,

তাহরিমের কথা শুনে রুদ্র তার হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে দাড়ালো , ওষ্ঠ দুটো ফাক করে ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো ,

” এব্রোডে কি এমন কোন বিধি নিষেধ আছে না কি যে ওখানে থাকলে ই ঘাড় ত্যাড়ামি করা যাবে না , নিজের অভ্যাস বদলাতে হবে , মেয়েদের সাথে লেপ্টে থাকতে হবে , তাদের সাথে কথা বলতে হবে , কই আমার জানা মতে তো ছিল না! তুই যখন থাকতিস তখন ছিলো বুঝি? যদিও তুই দু বছর থেকে চলে এলি কিন্তু আমাকে ছয় বছর থাকতে হলো ”

চলবে…..

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১৪+১৫

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_14 ( জমিদার বাড়ির রহস্য )

” এই পূর্ণ আর কত দুর রে ? হাটতে হাটতে পা ব্যথা হয়ে গেলো যে ”

ইলুর কথায় আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম , টপ আর জিন্স পড়া মেয়েটার গাল কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব বিদ্যমান ,

গাড়ি থেকে নেমে, এই যে বন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাটছি তো হাটছি পথ তো আর শেষ হচ্ছে না ,

আসলে এটা বন জঙ্গল ছিলো না এটা একটা মানুষ চলাচলের রাস্তা , বহুদিন এই পথ দিয়ে কেউ আসে না তাই গাছ পালা গজিয়ে রাস্তা টা প্রায় অদৃশ্য করে দিয়েছে , বিভিন্ন গাছগাছালি আর বাঁশ ঝাড় দিয়ে পথ টা অনেক টাই অন্ধকার ,

আমি সামনে দিকে তাকিয়ে বললাম ,

” হাটতে থাক , আমি নিজে ও জানি না আর কত টুকুন হাটতে হবে ”

হঠাৎ সামনে বাড়ি টাইপ কিছু দেখতে পেয়ে দ্রুত পা চালালাম ,

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১ টা বাজতে চলল , এখন মনে হচ্ছে আরো ও আগে রওনা দিতে পারলে ভালো হতো ,
_______________

এই মূহুর্তে আমি আর ইলু দাঁড়িয়ে আছি নন্দনপুর এর সেই জমিদার বাড়ির সামনে , বিশাল জমিদার বাড়ি এটা , বাড়ির সামনে র লোহার গেইট জং ধরে গেছে ,

গাছের শুকনো পাতায় বেশ আচ্ছাদন করা বাড়ির সামনের জায়গা টা ,

ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই নজরে এলো এক বিশাল বট বৃক্ষ , বেশ কয়েকশ বছরের পুরনো বৃক্ষ দেখেই বোঝা যাচ্ছে , এবার নজরে এলো জমিদার বাড়ি টা , বহু বছর ধরে মেরামতের অভাবে অনেক জায়গায় ই ভেঙে পড়েছে , রঙ গুলো চটে গেছে ,
মনে কৌতুহল হলো না জানি বাড়িতে মানুষ থাকা কালিন বাড়ির দৃশ্য টা কেমন ছিলো ! নিশ্চয়ই ভিষণ সুন্দর আর সতেজ ,

আমি লোহার গেইট টা ধাক্কা দিতেই তুমুল শব্দে গেইট টা খুলে গেলো , আমি আর ইলু প্রবেশ করলাম বাড়ির ভেতরে ,

শুকনো পাতায় পা ফেলতেই পাতার মর মর শব্দে মুখরিত হলো চারপাশ , ইলু আমার হাত আঁকড়ে ধরে আছে , কেন যে এলো ও , এখন আবার ভয় পাচ্ছে ,

আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম সদর দরজার দিকে , বেশ পুরানো কাঠের দরজা , আমি দরজা টায় চাপ দিলাম , বেশ শক্ত মনে হচ্ছে , দরজার হাতল ধরে বেশ জোরে ধাক্কা দিতেই দরজাটি বেশ শব্দ করে খুলে গেলো ,

” পূর্ণ ভেতরে যাস না , আমার না কেমন জেনো লাগছে ”

আমি ইলুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম ,

” এত দুর এসেছি কি না দেখে চলে যাবার জন্য না কি ? চুপচাপ ভেতরে চল ! তোর কি আদৌও মনে হয় এখানে ওই সব ভূত টুত থাকবে? আমার তো মনে হয় না ”

কথাটা বলেই ওর হাত টা শক্ত করে ধরে ভেতরে আসলাম , ভেতরে বেশ বড় একটা বৃত্তাকার স্পেস খালি তার চারপাশ জুড়ে বেশ কয়েকটি ঘর , এক পাশ দিয়ে দোতলা ওঠার কাঠের তৈরি সিড়ি ,

নিচের সব গুলো ঘর এক এক করে দেখলাম ,

আমি সিড়ি র দিকে এগুতেই ইলু পিছনে থেকে আটকে দিলো ,

” আয় পূর্ণ ফিরে যায় , চুলোয় যাক তোর ইনভেস্টিগেশন , পরে কিছু হলে ! ”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে এখন নিজের কপালে নিজে বারি দিতে ইচ্ছে করছে কেন যে এই ভীতুর ডিম কে নিয়ে আসতে গেলাম!

” তুই যাবি ? না গেলে এখানে দাড়া আমি দোতলা টা ঘুরে আসি , দেখি কিছু পাই কি না ! ”

” না না আমি যাবো , চল ”

আমি আর ইলু ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম ,

এক এক করে প্রতিটি ঘর দেখলাম , প্রতিটি ঘরেই ময়লার স্তুপ , মাকড়সার জালে ভরপুর , হয়তো এখানে বহু দিন কারো পদ ধুলি পরে নি , ভয়ে তো কেউ এ মুখো হয় ই না , শহর থেকে বেশ অনেক টায় দুর এই জমিদার বাড়ি টা , তার উপর কিসব ভুতের উৎপাত ,

প্রায় বেশ কিছু টা ঘর ঘুরলাম , বাড়ি টা যেমন বড় ঘর সংখ্যা তো প্রায় শতাধিক , অনেকাংশে ভাঙা ঘর গুলো , মেরামতের অভাব !

ভাই এতো বড় বাড়ি তে থাকত কজন ? আজব

” দোস্ত খিদে পেয়েছে , কিছু আনসোস ? ”

ইলুর কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ,
ও পেট চেপে সটাং দাঁড়িয়ে আছে ,

” তোকে নিয়ে আর পারি না বাপু ”

ব্যগ থেকে একটা বিস্কুট এর প্যাকেট ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম ,
” নে বিস্কুট খা, তাও আমার মাথা খাস না ”

সব গুলো ঘর দেখা শেষে বারান্দার সবচেয়ে শেষের ঘর টা দেখতে যাবো , দরজায় ধরতে গেলাম ওমনি ঠাস করে একটা শব্দে আমি আর ইলু চমকে উঠলাম , মনে হচ্ছে দরজা লাগানোর আওয়াজ ,

ইলু দৌড়ে এসে আমার হাত আকড়ে ধরলো , আমি চারপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম , দোতলার উপর থেকে নিচ তলায় দৃষ্টি যেতেই আসল কারণ টা বুঝতে পারলাম , বাড়ির সদর দরজা টা বন্ধ হয়ে গেছে , হয়তো বাতাসে , ইলু কাদো কাদো কন্ঠে বলল ,

” তোকে আগেই বলেছিলাম , পূর্ণ চল এসব ছাতার ইনভেস্টিগেশনের দরকার নেই শুনলি না তো , এখন বুঝ ঠেলা , গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে , এখন ওই ভুত আইসা তোর ঘাড় ও মটকাইবো সাথে আমি ফ্রি ”

” ভুতে ঘাড় মটকিয়ে কি করবে শুনি ? ”

” কি আর করবে , রক্ত খাবে চুষে চুষে ”

” তাহলে তো বেচারা ভুতের কপাল টা ই খারাপ ”

” কেন কেন ? ”

” কারণ আমাদের রক্ত খেয়ে ভুত মোটে ও মজা পাবে না , কারণ দু জন ই রক্ত শুন্যতায় ভুগছি৷, শরীরে তো রক্ত নাই৷, তার চেয়ে বরং ভুতেরা আমাদের মেরে হার্ট, কিডনি , চোখ এগুলো কেটে ব্যবসা করতে পারবে , বেশ লাভ হবে কি বলিস ”

আমি এক ভ্রু উঁচু করে বেশ সিরিয়াস ভাবে কথা টা বলে উঠলাম ,
আমা কথা শুনে ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে কাদো কাদো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” পূর্ণ তুই কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস ? আমি কিন্তু সত্যি ই ভয় পাচ্ছি ”

ওর কথা শুনে আমি মুখে হাত দিয়ে গা দুলিয়ে হেসে উঠলাম ,

” বোকা মেয়ে , তুই না আধুনিক যুগের আধুনিক মেয়ে তুই ও এসব আজগুবি ভুত প্রেত বিশ্বাস করিস , আরে ও সব বলতে কিছু হয় না বোকা

” তাহলে দরজা টা বন্ধ করলো কে ? ”

” আরে ওটা মনে হয় বাতাসে বন্ধ হয়ে গেছে , চল তোকে দেখাচ্ছি ”

” হুম ”

আমি ওকে নিয়ে দোতলার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম ,

আমি গিয়ে দরজার হাতলে ধরে টান দিলাম কিন্তু আশ্চর্য , দরজা খুলছে না , বেশ অনেক বার চেষ্টা করে ও খুলতে পারলাম না , মনে হচ্ছে কেউ বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখছে , এখন উপায়?

আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলাম , ইলু আমাকে দেখে বলল ,

” আমি বলে ছিলাম না এখানে ওসব ভুত প্রেত আছে বিশ্বাস করলি না তো , এখন হলো তো , থাক এখানে , পরে পরে ভুতের রাতের ডিনার হহ , সাথে আমি তো আছি ই ”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসলাম সিড়ি তে ,

আমাকে এমন ঠান্ডা দেখে ইলু বেশ চটে গেলো,

” এই মেয়ে তোর ভয় লাগছে না ? ”

” সারাক্ষণ সাথে একটা আস্ত পেত্নি নিয়ে ঘুরলে তোর কি মনে হয় আর কোন পেত্নি আমার ধারে কাছে আসবে ? ”

আমার কথা শুনার প্রায় সেকেন্ড ১০ পর ইলু চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” তুই কি কোন এঙ্গেল এ আমাকে পেত্নি বললি পূর্ণ ? ”

আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পায়ের নখ দিয়ে মাটি ঠুকতে ঠুকতে বললাম ,

” আমি এঙ্গেল এ কেন বলতে যাবো ? আমি তো সরাসরি ই তোকে পেত্নী বললাম ”

” পূর্ণ র বাচ্চা ”

” আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমার বাচ্চা হবে দুর আমার এখনো বিয়েই হই নি ”

আমার কথা শুনে ইলু ধপ করে আমার পাশে বসে নাক ফুলিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো ,

আমি নিচ দিকে তাকিয়ে হাসলাম , যাক কিছু টা হলেও ভয় কমেছে ,

হাতের ঘড়ির দিকে আমি বেআক্কেল বনে গেলাম , এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে গেছে , এখন প্রায় ৬ টার কাছাকাছি , এখনই মাগরিবের আজান হয়ে যাবে , তারমানে আজ রাত এখানেই থাকতে হবে ,

আলো থাকতে থাকতে একটা ভালো দেখে রুম বের করতে হবে নয়তো পরে আর পারব না ,

কথা টা ভাবতে ভাবতে ই উঠে দাড়ালাম ,

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ? ”

” ভালো দেখে রুম খুজতে , আজ রাত টা এখানে ই থাকতে হবে ”

আমার কথা শুনে ইলু বলে উঠলো ,

” মানে কি ? এখানে থাকব মানে ? ”

” তুই দেখছিস না দরজা খুলছে না এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে , তাহলে ? ”

আমি আর কথা বাড়ালাম না , ওর সাথে কথা বললে সত্যি ই অন্ধকার হয়ে যাবে ,

বেশ খুঁজে খুঁজে একটা রুম বের করলাম ,
নিচ তলায় এ রুম টাই অন্য গুলোর থেকে ধুলো কম , একেবারে ই যে নেই সেটা বললে ভুল হবে , তবে কম আর কি!

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এলো ,

ধীরে ধীরে সব কিছু আধার হয়ে এলো ,

আমি আর ইলু ওই বাছায় করা রুম টায় বসে আছি ,

থেকে থেকে ভেসে আসছে শিয়ালের ডাক , কুকুরের কান্না , ভয়ে ইলু গুটিয়ে যাচ্ছে বারংবার ,

আমি ভেবে ই রেখেছিলাম এমন হয়তো কিছু হতে পারে তবে সিউর ছিলাম না তবুও সাথে দুটো মোম আর একটা দিয়াশলাই রেখেছিলাম ,

মেঝেতে মোম জ্বালিয়ে বসে আছি আমি আর ইলু , ও ঘুমে ঢুলছে ,

” তুই না হয় ঘুমা আমি বসে থাকি . তারপর আমি ঘুমাবো তুই জাগবি ”

আমার কথায় ইলু সায় জানিয়ে , কাঁধে র ব্যগ টা কে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লো মেঝেতে , বেচারীর সত্যি ই ঘুম পেয়েছে ,

রাত তখন প্রায় একটা , হঠাৎ শোনা যাচ্ছে কারো ফিসফিস কথার শব্দ আর পায়ের শব্দ , মাঝে মাঝে নুপুরের আওয়াজ ও আসছে , ঘুঙুর এর আওয়াজ টা আবছা ,ধীরে ধীরে পায়ের শব্দ টা বাড়ছে মনে হচ্ছে কেউ এদিকে ই আসছে !

তবে কে হতে পারে ? …

চলবে ….

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_15 ( জমিদার বাড়ির রহস্য ২)

ওই পদ ধ্বনি টা হঠাৎ ই থেমে গেলো , কান পেতে রইলাম কিছু শোনার জন্য কিন্তু ? কিন্তু নাহ্ আর শোনা যাচ্ছে না ,

এই জঙ্গলের ভেতরে একটা পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে কে ই বা আসতে পারে , কি তার উদ্দেশ্য ? ভুত বলতে যে কিছু ই নেই সেটা তো জানি তবে এ কেমন ভুত বেশধারী মানব!

ইলু হাত পা নাড়াচাড়া করছে হয়তো মশা কামড়াচ্ছে ! বেশ ভালো ই মশা আছে এখানে , এখন মনে হচ্ছে কয়েক টা মশার কয়েল নিয়ে আসলে ভালো হলো ,

ধুর ছাতা আগে জানলে তো বিছানা পত্র সব ই নিয়ে আসতাম , কে জানত বাপু এখানে এভাবে আটকে যাবো?

মশা গুলো ও যাচ্ছে তাই , হয়তো মনে মনে বলছে ,

” আইজকা পাইছি চান্দু , জম্মের খাওন খাইয়া লমু , তোদের রক্ত দিয়াই আইজকা গোসল করমু, হু হা হা ”

এসব আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে ই আড় চোখে ইলুর দিকে তাকালাম ইলু এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাত ঘষতে ঘষতে উঠে বসলো ,

” কি হলো উঠলি কেন ? ”

আমার কথা শুনে ইলু মুখ টা কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বলল ,

” তো উঠবো না তো কি ? ভুতের ডিনার না হলেও মশার জীবনের খাবার এক সাথে ই সাবার করতাছে , জন্মের খাবার খাইতাছে ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,

” ভুত ? ”

ও আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল ,

” হু সাথে পেত্নী ও ”

” আচ্ছা ইলু এমন ও তো হতে পারে ভুতেরা এই মশাদের ছদ্মবেশে এসে রক্ত খাচ্ছে! আসলে কি বলতো তোর শরীরে এমনি তেই তো রক্ত কম , ভুতের ওই ইয়া বড় বড় দাঁত দিয়ে রক্ত চুষতে কষ্ট হবে তাই হয়তো মশার ছদ্মবেশ ধরেছে

কিছু টা থেমে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম ,

হতেই পারে ”

বলেই আড়চোখে ইলুর দিকে তাকালাম , বেচারি একের পর এক ঢোক গিলছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে বারবার আমার দিকে চাপছে ,

ওর সাথে মজা করতে করতে ই হঠাৎ আবার সেই আওয়াজ কানে আসলো , এবার বোধ হয় ঘুঙুরের আওয়াজ টা বেশি আসছে বলে মনে হচ্ছে ,

আমি চুপ করে আওয়াজ শুনছি , ইলু ও এতক্ষণে শুনতে পেয়েছে , বেচারীর চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে গেছে ভয়ে আমি ওর হাতের উপর আমার হাত রেখে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বললাম ,

” ইলু তুই ভয় পাস না , এটা কোন মানুষের কাজ , আমি যখন সব বিষয়ে, সব দিক দেখছিলাম এমন একটা আর্টিক্যাল ও পড়েছি যাতে লেখা এই জমিদার বাড়ি টা অনেকে ভোগ করার জন্য মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে যে এখানে ভুত আছে , আসলে এখানে কিছু ই নেই , যাস্ট এটা একটা বাড়ি নাথিং ইল’স ”

আমার কথা শুনে ইলুর মনে হয় ভয় টা কিছু টা কমছে , আসলে এসব আমি কখনোই শুনিনি , এছাড়া ওকে ভয় থেকে বের করার আর কোন উপায় ও ছিলো না তবে এটা যে একেবারে বানোয়াট তা কিন্তু না , হতেও পারে তদন্ত শেষে এটাই ঠিক হলো ”

” এই পূর্ণ এটা কিসের আওয়াজ রে ? ”

” মনে তো হচ্ছে ঘুঙুর এর ”

” আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা বাজাচ্ছে না কি রে ? ”

ইলুর কথা টা যে একেবারে ফেলনা তা কিন্তু না , আমারো কেন জানি মনে হচ্ছে গভীর এক রহস্য জরিয়ে আছে এই জমিদার বাড়ি ঘিরে ,

” হুম হয়তো , চল তো! ”

আমার কথা শুনে ইলু আঁতকে উঠে বলল ,

” কোথায় ? ”

” আওয়াজের উৎস বের করতে ”

” কি দরকার বল ! ”

” তুই যাবি কি না বল , না হলে আমি একাই যাবো ”

বলেই মোম হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালাম , আমার সাথে সাথে ইলু ও উঠে দাড়ালো ,

আমি প্যান্টের পকেটে দিয়াশলাই গুজে নিলাম , আমি হাঁটছি পিছনে পিছনে ইলু ও বের হলো , ঘর থেকে বের হয়ে মনে হচ্ছে আওয়াজ টা দোতলায় থেকে আসছে , আমি কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম , পিছনে পিছনে ইলু ও , ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বারান্দা দিয়ে এগুতে লাগলাম ,

এক এক করে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ায় , যেন আওয়াজ টা আসছে কি না দেখার জন্য , ধীরে ধীরে আমি আর ইলু দোতলায় একেবারে শেষ মাথায় যে বদ্ধ রুম টা সেখানে থমকে দাঁড়ালাম ,

হ্যা , আওয়াজ টা এই ঘর থেকে ই আসছে ,

আমি আলতো হাতে রুমটার দরজার হাতলে ধরলাম,

রুম টার দরজায় ধাক্কা দিলাম খোলার জন্য কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে এটা খুলল না , বেশ কয়েকবার ট্রায় করলাম, নাহ্ খুলছে না , হঠাৎ মনে হলো তাল মারা না তো , হাতলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম , বাইরে দিয়ে তালা মারা ও না তাহলে ?

তাহলে ভেতরে কি কেউ আছে ? অবাক করা হলেও সত্যি , এই দরজা টা অন্য সকল দরজা থেকে ভিন্ন , ডিজাইন টা ও অন্য রকম তাই কৌতুহল টা ও বেশি ,

বেশ কয়েক বার দরজার হাতল ধরে এদিক সেদিক করলাম কিছু তেই খুলছেনা ,

ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে গিয়ে ও থমকে দাড়ালাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালাম , আমার থমকে যাওয়া দেখে ইলু ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে মোম টা ওর হাতে দিলাম ,

সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন করলাম দরজা টায় দু হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলাম , খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পুনরায় দরজার হাতল ধরে খানিকটা উপর নিচ করে ভেতরের দিকে চাপ দিলাম ,

দরজা খুলে গেলো,

আমি বেশ খুশি হয়ে দরজা ধাক্কা দিলাম , দরজা খুলে গেলো ,

আমি হাতে মোম নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম ,

বাট ভেতরে যা দেখলাম, সেটা কখনো কল্পনায় ও আশা করি নি ,

মোমের আবছা আলোই ভেতরে অনেক গুলো মানব কঙ্কাল ঝুলোনো দেখতে পেলাম , ঝুলোনো বললে ভুল হবে , একেকটা একেক এঙ্গেল এ রাখা , কিছু কঙ্কাল মনে হচ্ছে বসে আছে কিছু আবার মেঝেতে ছড়িয়ে আছে , পায়ের হাড্ডি এক জায়গায় তো খুলি আরেক জায়গায় , একটা কঙ্কাল দেখে বেশ অবাক হলাম , কঙ্কাল টা এমন ভাবে রেখেছে যেন তার দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঘরের এক কেনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে এমন মনে হচ্ছে , ঘরে আবার একটা বিছানা আর একটা টেবিল ও রাখা , কিন্তু বেশ আশ্চর্য জনক হলো টেবিলে বই তাক তাক করে সাজানো , আমি ধীর পায়ে টেবিলের দিকে এগুলাম , এক টা বই হাতে নিতে ই দেখি ইংরেজি সাহিত্যের বই ,

বাব বাহ্ আজকাল ভুতে রাও সাহিত্য চর্চা করে নাকি?

বাকি ঘর গুলোর মতো এটা তে বিন্দু পরিমাণ ধুলো নেই , মনে হচ্ছে প্রতিদিন ই এই রুম টা কেউ পরিষ্কার করে , কারো আসা যাওয়া প্রতিনিয়ত ই হচ্ছে

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে থাকে কে ? প্রায় কয়েক যুগ ধরে তো কেউ এখানে আসেই না , তাহলে ? বেশ অনেক টা রহস্য আছে তাহলে!

কিছু ক্ষন আগে যে পায়ের শব্দ টা শুনলাম এগুলো ও বা কিসের ,

তবে খটকার বিষয় হলো , বারান্দা দিয়ে আসার সময় মনে হচ্ছিলো আমার আশে পাশে ই কেউ আছে , কারো চলা ফেরা আছে , আর আমার মন কখনো মিথ্যা যুক্তি দেখায় না , তাহলে কি আমরা ছাড়াও কেউ আছে এখানে ? , ঠান্ডা বাতাস আর দমকা হাওয়ায় নাকে কেমন চেনা গন্ধ লাগছিলো , হ্যা পারফিউম এর গন্ধ , কিন্তু কথা তো এটা না কথা হলো আজকাল ভুতেরা ও কি পারফিউম ইউজ করে নাকি ? হতেও পারে আধুনিক যুগের আধুনিক ভুততত ,

কিছু একটা মনে হতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,

ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কঙ্কাল গুলোর দিকে ,

এগুলো কি আদৌ তেও কোন মানুষের তো ?

চলবে …

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১২+১৩

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_12

চোখের উপর সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়াতে ঘুমটা ভেঙে গেলো , বেলকনি দিয়ে সকালের মৃদু বাতাস হালকা আসছে , চোখ বন্ধ রাখতে ই ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো , পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসলাম , জ্বর টা এখন নেই বললেই চলে।

এক হাতে পেচিয়ে চুল গুলো খোপা করতে করতে আশপাশে তাকালাম , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর একটা বাটিতে তোয়ালে এখনো ভিজানো আছে , তার সাথে ই ঔষধের পাতা গুলো ছড়ানো , আর থার্মোমিটার রাখা।

আশেপাশে তাকিয়ে ইলুকে খোঁজা র চেষ্টা করলাম , ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে উঁকি দিলাম নাহ্ বেলকনিতে তো নাই ইলু , কিচেন রুম, ড্রয়িং , ডাইনিং রুমে কোথাও নেই ইলু তবে গেলো টা কোথায় , এত সকাল সকাল বাসায় চলে গেলো না কি , কখনো তো এমন করে না , এটলিস্ট বিদায় টা নিতে পারতো ,

এত বেখেয়ালি মেয়েটা , সারারাত জেগে জেগে সেবা করলো আর ভোর হবার আগেই উধাও , ব্যপার টা ভয়ানক না! যেই মেয়ে রাত এগারো টার জায়গায় বারো টা হলেই সেদিন সকালে আর ঘুম থেকে টেনেও তোলা যায় না আজ সে সারা রাত সেবা করার পরও সক্কাল সক্কাল উধাও , আসলেই খটকা জনক ,

আর কিছু না ভেবে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসতে বসতে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম ,

সবে মাত্র সাতটা আরো বহুত সময় বাকি আছে ,

আমি আর কিছু চিন্তা না করেই মোবাইল খুজতে লাগলাম , কিছু তো বলতেই হবে এই ছন্ন ছাড়া মেয়েটাকে , বড্ড বেখেয়ালি নিজের প্রতি।

ফোন খুঁজে বের করে অন করতেই ফোন আসতে লাগলো, প্রায় ৬০ -৭০ টা মিসড কল এসে জমা হলো কল লিস্টে , আমার ফোন আবার অফ থাকলে ও অন করার সাথে সাথে ই সকল নোটিফিকেশন আসা শুরু করে , সে যায় হোক ,

কল লিস্টে ঢুকেই দেখি ইলুর প্রায় ৪০+ মিসড কল আর আননোন নাম্বার থেকে প্রায় ৩০+ মিসড কল , ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ইলুর নাম্বারে কল করলাম ,

কয়েকবার রিং বাজার পর ই ইলু কল পিক করলো , আমি কিছু বলার আগেই শুরু হলো তার উনিশসো কটকটি সালের ভাষন ,

” ওই মহারানী ভিক্টোরিয়া , তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট রে না কি প্রেসিন্টের বউ তুই ? ডোনাল্ড ট্রাম্প এর এক্স বউ না কি তুই আর না কোন সেলিব্রিটি ? তোরে কেডা রাইতের বেলা ফোন দিয়ে জালাইবো ? কোন দুঃখে তুই ফোন ডা অফ করে ঘুমাস? তোরে কত বার ফোন দিসি ফোন টা ও ধরার ইচ্ছে করে নাই তাই না , শা*লি বলদি , ওই দিকে ওনি মরার মতো পইরা পইরা ঘুমা আর এদিকে টেনশনে আমি ফুসফুস অ্যাটাক করি ”

ইলুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম ,

” তুই না সকালে গেলি শুধু আমার বাসা থেকে! আবার এসব কথার মানে কি ? আর বাপের জন্মে ফুসফুস অ্যাটাক এর নাম শুনি নাই ”

আমার কথা শুনে ইলু অবাক হয়ে বলল ,

” ওই পূর্ণ কি কস তুই ? আমি কবে তোর বাসাত গেলাম , আমি তো আমার বাসায় ই ! মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খাইছোস না কি রে ? কি আবল তাবল কথা বলতাছোস ? আর ফুসফুস অ্যাটাক শুনোস নাই বলে কি থাকতে পারে না! ”

” আমি আবল তাবল কথা বলতাছি নাকি তুই ভাউ খাইতাছোস ? সারারাত আমার সেবা করলি এখন আবার নাটক করছিস ? ”

” হুয়াট ? আর ইউ ক্রেজি পূর্ণ ? আমি কখন গেলাম তোর বাসায় ? আর তোর কি ই বা হয়েছে ? যে সারারাত সজাগ থাকতে হবে কেন আমার ? ”

” ওমা কাল রাতে তো তুই ই আসলি বেলকনি দিয়ে, কড়া পারফিউম এর গন্ধ , এখনো আমার ঘরের মাঝে আছে ”

” রাতে তাও আমি আবার মানুষের বাসায় যাবো বেলকনি দিয়ে , আমাকে কি তোর কোন এঙ্গেল এ চুর টুর মনে হয় ? আর তুই তো জানিস পূর্ণ আমি পারফিউম দেই না , কড়া হবে দুর ”

” তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই কাল মাঝ রাতে আমার বাসায় আসিস নি ? ”

” আরে বাবা না রে , কেন কিছু কি হয়েছে ? “..

” না মানে তুই যদি কাল না ই এসে থাকিস তাহলে আসলো কে ? আমার মাথার কাছে বসে কপালে জলপট্টি দিয়ে দিলো আবার সুপ খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে দিলো, মাথায় হাত রেখে ঘুম ও পারিয়ে দিলো , তুই না হলে আসলো কে ?

” আচ্ছা তুই টেনশন করিস না৷, আমি তোর বাসায় আসবো নে বিকেলে অফিস শেষ করে ”

বলেই বিদায় জানিয়ে ফোন টা কেটে দিলো ,

আমি বিছানার উপর বসে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ যায় , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর ,
পানির গ্লাসে র নিচে একটা চিরকুট টাইপ কিছু রাখা আছে ,

আমি ভ্রু কুচকে সেই চিরকুট টা হাতে নিলাম ,

সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছিলো ,

________________

….ভালোবাসি তোমায় যতটা ভালোবাসলে লোকে পাগল বলে

আমি তোমার সেই পাগল প্রেমিক…

নিজের যত্ন নিবে , ভালো ভাবে খাওয়া দাওয়া করবে, এখন সিজন চেঞ্জ হচ্ছে বাইরে বেশি ঘুরাঘুরি করবে না আর একটা কথা , কখনো যদি মেয়ে তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি তাহলে সেদিন দেখবে পাগলের পাগলামি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ? বি কেয়ার ফুল মাই গার্ল ,

আর হ্যা ,
শুভ সকাল রানী …

__________________

তালুকদার ভিলায় ,

দোতলার একদম শেষ মাথার একটা রুম , আবছা অন্ধকার হয়ে আছে রুম টা , পর্দা দিয়ে জানলা গুলো ঢেকে দেওয়া , পর্দার ফাক গলে কিছু টা অবাধ্য রশ্মি প্রবেশ করেছে রুমের মেঝেতে ,

বিছানায় উপুড় হয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন এক যুবক , গায়ের চাদর টা কোমড় পর্যন্ত মেলে দেওয়া , পড়নে শুধু মাত্র একটা টাউজার ,

পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো কেউ , রুমে এসেই জানলা থেকে পর্দা সরাতেই কয়েকগুচ্ছ আলোর প্রতি ফলন ঘটলো রুমে র মধ্যে ,

সূর্যের আলো টা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলল তাহরিম , চোখ বন্ধ করে ই বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো ,

” তোর কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তানজিম ? সকাল সকাল আমার ঘুমের বারো টা বাজাতে চলে আসলি? এমনি তেই সারা রাত ঘুমোতে পারি নাই , এখন যা তো যা, ঘুমোতে দে !

বলেই আবার কাথা দিয়ে নাক মুখ ঢেকে সুয়ে পড়লো ,

ভাইয়ের কান্ড দেখে তানজিম গা দুলিয়ে হেসে উঠলো ,

তাহরিমের মাথার কাছে এসে বসলো , চাদর টা একটু ফাক করে মুখ বাড়িয়ে তাহরিম এর কানের কাছে গিয়ে বলল ,

” কেন রে ভাইয়া ? সারা রাত কি চুরি করছিলি ? ছে ছে ছেহ , শেষ মেষ কি না মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার চুরি করছে তাও কোথায় , নিজের হনে ওয়ালা গার্লফ্রেন্ড এর বাসায় , হায় খোদা এটা শোনার আগে আমার কিডনি অ্যাটাক কেন হলো না , ”

তানজিম এর কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই হাতের কাছে থাকা বালিশ দিয়ে তানজিম কে ঢিল ছুড়ে বলল ,

” তানজুর বাচ্চা , তুই কি যাবি না কি আমি উঠবো? কাল কেই তো মাত্র গলাটা ঠিক হয়েছে , অকালে যদি পার্মানেন্ট বোবা না হতে চাস এখনি বের হ রুম থেকে আর আমাকে ঘুমাতে দে ”

তাহরিমের থ্রেট শুনে তানজিম খানিকটা দমে গেলো ,

রুম ছেড়ে যেতে যেতে বলল ,

” হুম হুম এখন দিন তোমার ই, করে নাও অত্যাচার এই অবলা প্রানী টার উপর , তবে মনে রাইখো এই দিন , দিন না, আরো দিন আছে
মনে রাইখো , এক মাঘে শীত যায় না ,
রাতের বেলা চুরি করে বউরে দেখতে যায়তে পারে আর আমি বললেই দোষ , হুহ ভালো মানুষের এই দুনিয়ায় দাম নাই , লোকে ঠিক ই বলে ”

বলতে বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো , তানজিমের আজগুবি কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , পুনরায় ডুবে গেলো ঘুমের অতল গহীনে ,

চলবে …

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_13

” কিরে মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রাখছোস ক্যা ? কি হইছে? ”

ইলুর কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালাম , এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে র দিকে তাকালাম ,

এখন বিকেল পাঁচ টা , অফিস থেকে সরাসরি ই ধানমন্ডি লেকের পাড় আসলাম , জায়গা টা আমার বরাবরই ভালো লাগে , পড়ন্ত বিকেলে সূর্য টা যখন ডুবে ডুবে ভাব তখনকার রক্তিম আকাশ আমার বরাবরই প্রিয় , এই বেলায় এখানে অনেক মানুষ ই দেখা যায় ,

” কি হলো কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর ? স্যার ডেকে নিয়া কিছু বলছে? ”

আমি সামনে র দিকে তাকিয়ে ই বললাম ,

” না , স্যার কি বলবে , ডেকেছিলো একটা কাজের জন্য , আর আমি ভাবছি সকালে র সেই বিষয় টা নিয়ে , বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে বিষয় টা ! ”

আমার কথা শুনে ইলু কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে ব’লে উঠলো ,

” ওও হ্যা , আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম , তোর সেই সকালের গাঁজা খুরি কথা বার্তা , কি হয়েছিলো রে ? ”

ওর কথা শুনে আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম ,

” আমি গাঁজা খুরি কথা বার্তা বলি ? ”

” হে হে হে , কে বলল তুই এসব কথা বলিস , এসব তো আমি বলি , তুই তো সদা সর্বদা সত্যি কথা ই বলিস , এখন বল তো কি হয়েছিলো ”

” আরে কাল সন্ধ্যা থেকে ই শরীর টা কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছিলো , সিজন চেঞ্জ এ জ্বর আসবে আসবে ভাব , খারাপ লাগছিলো বিধায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম , হঠাৎ রাতে খুব খিদে পেয়েছিলো কিন্তু উঠে খাবো সেই সুযোগ বা শক্তি ছিল না , রাত তখন ১২ টা কি একটা , বেলকনি থেকে কিছু পড়ার শব্দে আমি চমকে যায় , কিন্তু কারো শরীরের পারফিউম এর গন্ধে অনেক টাই নিশ্চিত হই যে কেউ এসেছে আর এই বেলকনি দিয়ে আসার স্বভাব তো তোর ই আছে তাই আমি ভাবলাম তুই এসেছিস ”

আমার কথা শুনে ইলু কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করে চিন্তিত স্বরে বলল ,

” তারপর ? ”

” তারপর আমার মাথার কাছে এসে কপালে হাত দিলো , আমি ভাবলাম তুই তাই বললাম কিছু রান্না করতে খিদে পেয়েছে , সেও আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে , না না শুধু মাথায় না , চোখ সহ ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে নিঃশব্দে রান্না করতে চলে গেলো , কিছুক্ষণ পর এক বাটি সুপ নিয়ে খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালো আর সারা রাত সেবা করলো , আমি ভোরের দিকে ও কপালে কারো স্পর্শ টের পেয়েছিলাম , সে হয়তো কানে কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলেছিলো আমি বুঝতে পারি নি , আমি তো ভাবছিলাম তুই , আর সকালে উঠে দেখি নাই কেউ ”

আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুচকে খানিক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ,

” তোর কথা আমি সবসময় ই বিশ্বাস করি কারণ তুই বানোয়াট কিছু বলিস না , তবে এই বিষয় টা আসলে ই রহস্য জনক ”

আমি ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ব্যগ থেকে চিঠি টা বের করে ওর হাতে দিলাম , ইলু আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

” এটা কি ? ”

” সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্লাসের নিচে থেকে পেয়েছি ”

ইলু পুরো টা পরে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আমার দিকে ,

” কি রে পূর্ণ , এই দেখি তোর সিক্রেট লাভার , সেই পসেসিভ আর কেয়ারিং তো , হায়য়য় আমার যে কেন একটা সিক্রেট লাভার নাই ! ”

ইলুর কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে বললাম ,

” ঢং বাদ দে , যে মনে চাই সে হবে , তার কথা কেন আমার শুনতে হবে আজিব , এখন চল তো কাল আবার একটা জায়গায় যেতে হবে কিছু ইনভেস্টিগেশন আছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো কোথাও পাঠাবে কতৃপক্ষ থেকে ”

আমার কথা শুনে ইলু বলে উঠলো ,

” মানে কি কোথায় যাবি কাল ? ”

” নন্দন পুর এলাকা আই মিন নন্দনপুর জমিদার বাড়ি ”

” নন্দনপুর জমিদার বাড়ি মানে কি ? তুই জানিস ওই জায়গা টা কত রিস্কি ? কম লোক তো আর পাঠানো হয় নি ওখানে , এক জন ও কি বেঁচে ফিরেছে ? কারো টিকি টি পর্যন্ত পায় নি কেউ , ভুতুড়ে এলাকা ওটা , তুই যাবি না , আমি বলছি তুই যাবি না ”

বেশ আতঙ্কিত কন্ঠে ইলু কথা গুলো বলে উঠলো ,

” আরে বোকা ভয় পাচ্ছিস কেন ? আমি তো কাল শুধু দিনের বেলাই যাবো ঘুরে সব কিছু দেখে রাতের মধ্যে ই ফিরে আসবো , চিন্তা করিস না তো ”

” আমি স্যারের সাথে কথা বলব , তুই একা একটা মেয়ে , তোকে কোন আক্কেলে ওখানে পাঠাচ্ছে হে ? তুই একদম রাজি হবি না ”

” আরে পাগল , আমি কি আগে কখনো এরকম পোড়া বাড়ি কিংবা পুরোনো রাজবাড়ী এসবে ইনভেস্টিগেশন করি নি নাকি ? আগেও তো কত আর্টিকেল করলাম এসব নিয়ে , কত রাত কাটালাম এসব বাড়িতে ”

” পূর্ণ তুই বুঝতে পারছিস না , ওসব পুরা বাড়ি আর নন্দনপুর জমিদার বাড়ি এক না , তুই জানিস না ওই এলাকায় কোন মানুষ থাকে না , রাত হলে কিসব শব্দ শুনা যায় আবার ইনভেস্টিগেশনের জন্য যারাই গিয়েছে এক রাতের বেশি তাদের তো দেখায় যেত না , একদম গায়েব , এখন তো ওখানে কোন ইনভেস্টিগেটর কিংবা পর্যটক ও যায় না , তুই প্লিজ না করে দে ”

আমি চারপাশে তাকিয়ে ব্যগ নিয়ে বসা থেকে উঠতে উঠতে বললাম ,

” মিফতাহুল পূর্ণা যখন একটা কাজ কাঁধে নিয়েছে সেটা সে করেই ছাড়বে আর সফল সে হবেই , এটাই পূর্ণার নিয়ম , আমি কোন কিছু তে পিছপা হওয়া শিখিনি তাই আজ ও হবো না , আমি এটা পারব বলেই সরকার এই কাজ টা আমাকে দিয়েছে আর আমি পারব ই , ইন শা আল্লাহ ”

আমার এমন দৃঢ প্রতিজ্ঞা দেখে কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে বলে উঠলো ,

” ঠিক আছে তুই যখন যাবি ই যাহ , সাথে আমি ও যাবো , বিপদে পড়লে দুজন একসাথে ই পড়ব , আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না , চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যাবো ”

আমি কিছু বললাম না , পা চালিয়ে রাস্তায় আসলাম , সাথে ইলু ও , কারো মুখে কোন কথা নেই ,

রিকসা দিয়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় মাগরিবের আজান হয়ে গেছে ,

নামাজ পড়ে কিছু খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম , উদ্দেশ্য নন্দনপুর জমিদার বাড়ির সব তথ্য জানা,

তবে আর যাই হোক , জমিদার বাড়ি টা বেশ সুন্দর , ছবি তে যা দেখলাম ,

ল্যাপটপ থেকে বিভিন্ন তথ্য কালেক্ট করে ডায়েরি তে নোট করতে লাগলাম,

___________________________

” স্যার পূর্ণা মেম কে নন্দনপুর ইনভেস্টিগেশনের জন্য নোটিশ দিয়েছে ”

” নন্দনপুর ? ”

” স্যার ওই যে নন্দন পর জমিদার বাড়ি যে , আরে যেটা কে সবাই ভুতুড়ে বাড়ি বলে চেনে ওটা

কুশনের কথা শুনে তাহরিম খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বলল ,

“What nonsense ! কি সব কথা বলছো ? ওটা র ইনভেস্টিগেশন না অফ করে দিয়েছিলো , গত কয়েক বছরে যাদের কেই পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ই ফিরে আসে নি , এটা আবার চালু করেছে কে ?

” স্যার এটা কতৃপক্ষের আদেশ ”

” পূর্ণা রাজি হয়েছে ? ‘

” জি স্যার , মেম কাল একবার দেখে আসতে যাবে ”

” হুয়াট ? এই মেয়েটা এমন কেন ? লাইফে এত রিস্ক নিতে হবে কেন ? কি দরকার এসব ? এত রিস্কি একটা জায়গায় কেন যেতে হবে , সাহস কি ওর ওভার লোড হয়ে গেছে নাকি ”

কিছু ক্ষন ভেবে তাহরিম বলে উঠলো ,

” কুশন , আমাদের কিছু লোককে কে নন্দন পুর জমিদার বাড়ি তে পাঠাবে , তার সব কিছু ইনভেস্টিগেশন করে আমাকে জানা তে বলো “..

তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা নাড়িয়ে বলল ,

” ঠিক আছে ভাই ”

কুশন চলে যেতে নিয়েও হঠাৎ থেমে গেলো ,

পিছনে ফিরে তাহরিমের দিকে তাকিয়ে বলল ,

” ভাই একটা কথা ! ”

” হ্যা বলো ”

” ভাই কাল ইন্টারভিউ তে যখন মেম আপনাকে প্রশ্ন করেছিলো যে , তানজিম ভাই এর এক্সিডেন্টের পিছনে কারো হাত আছে না কি ? আপনি তো জানতেন এটা বিরোধী দলের ইসতিয়াক সরকার এর কাজ , আর আপনি তো প্রমান ও পেয়েছেন ! তাহলে আপনি ওরকম কথা বললেন কেন যে আপনি জানেন না ? ”

কুশনের কথায় তাহরিম রহস্য জনক ভাবে হাসলো ,

” তোমার মাথায় এটা ঢুকবেনা বলেই আমি মন্ত্রী আর তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট ”

তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা চুলকাতে চুলকাতে হাসলো ,

তাহরিম সোফায় বসতে বসতে বলল ,

” বুঝলে কুশন , রাজনীতি বড় জটিল একটা জিনিস , বড্ড মাথা খাটাতে হয় নয়তো বাঁশ খাবে , এখন যদি আমি বলেই দিতাম যে আমি জানি কে ষড়যন্ত্র করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই সাবধান হ’য়ে যেত , আর তাদের জব্দ করা টা বেশ টাফ হয়ে যেতো , তারা এখানো পর্যন্ত জানে যে আমি কিছু ই জানি না তাই বেখেয়ালি ভাবে অনেক ভুল ই করতে পারে , আর আমাদের সেই সুযোগের অপেক্ষা ই করতে হবে , বুঝলে ? ”

” জি ভাই ”

” হুম এখন যাও যা করতে বললাম , কর ”

” জি ভাই ”

কথা টা বলেই কুশন রুম থেকে চলে গেলো ,

তাহরিম কুশনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ,

মন্ত্রী সাহেব এর মনে চলছে আরেক অংক , অংকের সমাধান হয়তো খুঁজে পাবে খুব শীঘ্রই …

চলবে…

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১১

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_11

” তা আপনার বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন নাকি মন্ত্রী সাহেব ? ”

আমার কথা শুনে উনি বেশ খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন , এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,

” আবাদত বিয়ে নিয়ে কিছু ই ভাবছি না , তবে সময় সুযোগ বিয়ে তো অবশ্যই করবো আর অতি শীঘ্রই আর তা হলে মিডিয়া তে অবশ্য ই জানানো হবে ”

আমি মুচকি হেসে বললাম ,

” শুনলাম আপনার ভাইয়ের উপর না কি কারা আক্রমণ করেছে ইনফ্যাক্ট এক্সিডেন্ট করিয়েছে তারাই , আপনি কি কাউকে সন্দেহ করছেন ? আপনার বিরুধী দলীয় কাউকে ? ”

” না আবাদত পুলিশ তদন্তে আছে , আমি কাউকেই অযথা সন্দেহ করছি না আসলে প্রমান ছাড়া কিছু ই বলা যাচ্ছে না ”

” আচ্ছা মন্ত্রী সাহেব ধরেন , আপনাকে কেউ সাহায্য করলো তাহলে তার প্রতিদান আপনি কি ভাবে দিবেন ? ”

আমার কথা শুনে উনি খানিকটা থমকে গেলেন , ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বললেন,

” অবশ্য ই তার যে কোন বিপদে আমাকে সবার আগেই পাবে ”

” আর সেই মানুষটার সাথে আপনার বিহেভ কেমন হবে? ”

আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে রহস্যময় ভাবে হেসে বললেন ,

” অবশ্য ই সে আমার থেকে শালিন, নম্র আর অমায়িক ব্যবহার প্রাপ্য ”

” এই ধরুন একজন লোকের আমি খুব বড় উপকার করলাম , কিন্তু বিনিময়ে সে আমার সাথে ভালো আচরণ তো করেই নি উল্টো সন্দেহ করেছে , সে লোকের ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি হবে মন্ত্রী সাহেব ? আপনার যুক্তিতে সে কি ম্যানারলেস ? হ্যা বা না? ”

আমরা কথা শুনে তাহরিম তালুকদারের নাক খানিক টা ফুলিয়ে উঠলো হয়তো রেগে যাচ্ছে , তাতে আমার কি ? আমি তো আমার অপমানের ফায়দা উঠাবো, মনে মনে কথাটা চিন্তা করে ই ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলাম ,

” কি হলো বলুন মন্ত্রী সাহেব ? আপনার যুক্তিতে সে কি ম্যানারলেস ? হ্যা নাকি না? ”

উনি নাক ফুলিয়ে ই উত্তর দিলো ,

” হ্যা ”

” হুম , আসলেই সেই লোকটা ম্যানারলেস, অভদ্র , ফালতু তাই না ? ”

” হুম ”

উনি বেশ রেগে যাচ্ছে মনে হচ্ছে তাই আর কিছু বললাম না , টপিক চেঞ্জ করে বললাম ,

” তা মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , বিয়ে করার সময় তো মিডিয়া কে জানাবেন, আর অতি শীঘ্রই আপনি বিয়ের পিরিতে বসবেন , তাহলে কি আমরা ধরে নেবো যে আপনার প্রিয় আই মিন মনের মানুষ টাকে আপনি পেয়ে গেছেন ”

আমার কথা শুনে উনি হাসলেন ,

” হুম হয়তো পেয়ে গেছি তবে আমি সিউর নই , আগে সিউর হই তারপর তাকে বলব আর সে যদি এক্সেপ্ট করে তাহলে সবাইকে ই বলব ”

আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম ,

” আপনাকে এক্সেপ্ট করবে না ? দেশের অধিকাংশ মেয়ের হৃৎস্পন্দন থমকে দাড়ানো পুরুষ কে কেউ রিজেক্ট করবে ? এটা ভাবা যায়? আপনার কি মনে হয় ? ”

আমার কথ শুনে উনি বেশ শব্দ করে ই হেসে উঠলেন ,

” আপনি হলে এক্সেপ্ট করতেন ? ”

উনার কথায় আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই , আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠলো ,

” ডোন্ট মাইন্ড , আমি মজা করলাম আসলে সে সবার মতে নয় বলেই তো সে তাহরিম তালুকদার এর নজর কেরেছে , সে তো অধিকাংশের বাহিরে , আপনি কি ভেবে বা কি জেনে বলেছেন জানি না যে আমি অধিকাংশ মেয়ের হৃৎস্পন্দন থমকে দাড়ানোর কারণ কিন্তু আমার তো মনে হয় আমার উপস্থিতি সেই মেয়েটার ভ্রু কুচকে দেওয়ার কারণ ”

উনার কথায় আমি আবারো বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম.

” বাহ বেশ ভালো ই মন জয় করে নিয়েছে , আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ই আমাদের তরুণ মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর বিবাহের দাওয়াত পাবো , কি মন্ত্রী সাহেব দাওয়াত দিবেন না ? ”

আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট নাড়িয়ে আস্তে আস্তে বলল যেন কেউ শুনতে না পায় ,

” নিজের বিয়ে তে কি বউ কে দাওয়াত দেওয়া যায় না কি ? এরকম কোন নিয়ম আছে না কি! জানতম না! ”

উনার মুখ নড়তে থাকায় আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” কিছু বললেন ? ”

আমার কথা শুনে উনি মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো ,

” না বলছি , অবশ্যই সবাইকে দাওয়াত দেবো , জীবনে একবার ই তো বিয়ে করব , দাওয়াত অবশ্যই পাবেন ”

এমন বেশ টুকটাক কথা বলে প্রায় এক ঘন্টা র ইন্টার ভিউ শেষ করে উঠে দাড়ালাম ,

ক্যামেরা অফ করা হয়েছে , সোফায় গা হেলিয়ে দিলাম , বড্ড ক্লান্ত লাগছে , গা টা ও কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছে , হঠাৎ জ্বর জ্বর লাগার কারণ টা বুঝলাম না , হয়তো সিজন চেঞ্জ তাই , কাজ তো শেষ এখন বাসায় গিয়ে বিছানায় শুতে পারলেই বাঁচি ,

অফিস থেকে বের হতেই গেইটে র কাছে এসে হঠাৎ মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো, গেইট ধরে খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে রইলাম , হঠাৎ কানের কাছে করো কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম ,

” বেশ তুখোড় বুদ্ধি আপনার মিস পূর্ণা ”

মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর কথা শুনে আমি কিছু বললাম না , আলতো হাসলাম ,

” আমি অভদ্র , ফালতু তাই না ? বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন গুলো করেছেন, মানতে হবে মাথায় বেশিদিন গোবর থেকে থেকে কিছু টা সার উৎপাদন হয়েছে ”

এবার আমি বেশ চটে গেলাম ,

” হেই কি বললেন ? আমার মাথায় গোবর ? আমার মাথায় মোটেও গোবর না, গোবর থাকলে আপনাদের মতো ধুরন্ধর নেতাদের বাগে আনতে পারতাম না বুঝলেন ? ”

” হে সেটাই , মাথায় তো খালি শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করে, অন্য ক্ষেত্রে ও মাথাটা খাটাও মেয়ে ”

বলেই উনি আমার সামনে দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন , পিছনে পিছনে তার এসিস্ট্যান্ট কুশন ,

আমি ভ্রু কুচকে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম ,

উনি অন্য ক্ষেত্রে বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন ?

” কিরে আজ সারাদিন কি এভাবে ই দাঁড়িয়ে থাকবি না কি ? বল তাহলে , স্যার কে বলে তোকে সাংবাদিকতা থেকে গার্ড এ ট্রান্সফার করতে বলি ”

ইলুর কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম , মুখ বেকিয়ে বললাম

” দরকার নেই , তোর এত ইচ্ছে করলে তুই যা , আমি এভাবে ই ভালো আছি ”

বলেই রাস্তায় হাটতে লাগলাম , আমার পিছনে পিছনে ইলু ,

কিছুদূর গিয়ে রিকসায় উঠলাম ,

আমার ভিষণ খারাপ লাগছে কিন্তু ইলুকে বলা যাবে না , মেয়েটা এমনি তেই বহুত টেনশন করে আমার জন্য আর নতুন করে টেনশন দেওয়ার মানেই হয় না.

ওকে বাসায় দিয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম , ফ্রেস হয়ে কড়া করে এক কাপ কফি বানালাম ৷ রান্না করার ইচ্ছে , মুড আর শক্তি কোন টাই নেই , কফি টা খেয়ে ঘুমাবো পরে যদি ভালো লাগে তাহলে রান্না করবো , এখন ঘুম টা বেশি জরুরি , জ্বর টা মনে হয় চলেই আসলো বলে,

মোবাইল অফ করে ঘুম দিলাম ,

বিকেল গড়িয়ে রাত নামলো কিন্তু ঘুম থেকে উঠার নাম গন্ধ নেই আমার , ওদিক থেকে কেউ একজন যে ফোন করতে করতে পাগল প্রায় সেদিকে কি কারো নজর আছে !

রাত প্রায় ১ টা , প্রচন্ড খিদে পেয়েছে সারাদিন কিছু খাওয়া নেই , কিন্তু উঠার সামর্থ্য নেই , মোবাইল টা কোথায় রেখেছি এই মূহুর্তে মনে ও পরছে না , চোখ খুলে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ছে , হঠাৎ বেলকনি থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলাম কিন্তু গিয়ে দেখব কিভাবে ? উঠতেই তো পারছি না , ভাবলাম হয়তো ইলু , এই মেয়ে প্রায় ই এমন করে , আমার বাসাটা দোতলা ই তো , তাই প্রায় ই ও মই দিয়ে বেলকনি দিয়ে আসে তাই আর কিছু ভাবলাম না চোখ বন্ধ করলাম কিন্তু আমার মাথায় এটা তখনো আসে ই নি এতো রাতে একা একটা মেয়ে কিভাবে আসবে তাও বেলকনি দিয়ে ,

চোখ খুলে রাখতে ই পারছি না , চোখ বন্ধ করে ই মনে হলো কেউ এসেছে রুমে কড়া পারফিউমের ঘ্রান পাচ্ছি , তিন তিনটে কাথা মুড়ি দিয়ে আছি আমি তাও যেন শীত কমছে না ,

হঠাৎ মাথায় কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে যেন সারা শরীর কেঁপে উঠলো ,

চোখ বন্ধ করে ই কাপা কাপা গলায় বললাম ,

” ইলু তোর হাত অনেক ঠান্ডা , হাত সরা , আর পারলে কিছু রান্না কর , সারাদিন কিছু খাই নি , খিদে পেয়েছে প্রচুর ”

আমার কথা শুনে মনে হলো কেউ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো ,

প্রায় পনেরো মিনিটের মাথায় আবার সেই পারফিউম এর গন্ধ পেলাম আমার খুব কাছে ,

কপালে ঠান্ডা কাপড়ের স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে উঠলাম ,

কাপড় টা দিয়ে আমার কপাল সহ চোখ দুটো ও ঢেকে দিলো ,

মাথা টা উপরে তুলে বালিশ টা খাটের সাথে হেলান দিয়ে রেখে আমাকে ও উঠিয়ে এক হাতে জরিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসালো , আমি যে তখনো পুরোপুরি হুসে আছি তাও কিন্তু না , জ্বর যখন প্রচন্ড হয় তখন আমার কোন হুস ই থাকে না ,

” মুখের সামনে গরম কিছু র আভাস পেয়ে হা করলাম , খুব যন্ত সহকারে কেউ আমাকে সুপ খাইয়ে মুখ মুছিয়ে ঔষধ ও খাইয়ে আবার শুইয়ে দিলো , সব কিছু রেখে এসে পুনরায় আমার মাথার কাছে বসলো, মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো আমি ও ইলু ভেবে তার এক হা জরিয়ে ধরলাম , তখনো খেয়াল হলো না ইলুর হাত তো এত শক্ত থাকবে না ,

আর কিছু ই মনে নেই , আমি ঘুমিয়ে গেলাম

পরের দিন সকালে …

চলবে …

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১০

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_10

” তুমি এইটা কি পড়ে আসছো পূর্ণা , তুমি একটা ইন্টারভিউ নিবে তাও আবার মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর , সাড়ি টা এটলিস্ট পড়তে পারতে , তোমাকে নিয়ে আর পারি না বাপু ”

মিস অন্নেষা হলো আমাদের অফিসের বসের পিএস ,

মিস অন্নেষার কথা শুনে আমি এক পলক নিজের দিকে তাকালাম ,
কই খারাপ কিছু তো পরি নাই , একটা হুয়াইট টপ আর ব্ল্যাক প্যান্ট , গলায় ওরনা ঝুলানো , চুল গুলো পিছনে বিনুনি করা,

” কোথায় মেম , আমি সবসময় যেমন থাকি সেভাবে ই তো আসলাম , আমি তো এর আগেও অনেক ইন্টারভিউ নিয়েছি কই তখন তো আমার সাড়ি টারি পড়তে হয় নি , আজ হঠাৎ কেন আমাকে সাড়ি পড়তে হবে ? আমি এভাবে ই যাবো আমাকে ভালো না লাগলে অন্য কাউকে পাঠান ”

আমার কথা শুনে মিস অন্নেষা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,

” তোমাকে কেন পাঠাচ্ছি সেটা তুমিও জানো আমরাও জানি , তুমি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে অনেক আর্টিকেল লিখেছো , এসব নিয়ে তুমি ঘাটাঘাটি করেছো , তাই অন্য যেকোনো কারো থেকে তোমার ধারণা টাই বেশি থাকবে , তার উপর তুমি ইন্টারভিউ বিষয়ে অভিজ্ঞ মেয়ে , বেশ অনেক বার অভিনেতাদের , রাজনৈতিক নেতা দের ইন্টারভিউ নিয়েছো , তাই তোমাকে দেওয়া হচ্ছে ”

মিস অন্নেষা র কথা শুনে আমি মনে মনে হাসলাম , যাক এই প্রথম এই হিংসুক মহিলা আমার প্রসংশা করলো , তাই এই হিংসুককে আর ঘাটালাম না ,

” মেম আমি মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার কে প্রশ্ন করে বিভিন্ন কিছু জানতে যাবো নিজেকে প্রেজেন্ট করতে না , আশা করি আমার ড্রেস আপ এর ব্যপারে আপনার না ভাবলে ও চলবে ”

আমার কথা শুনে মিস অন্নেষা ঠোঁট বেঁকিয়ে চলে গেলো , আমিও মুচকি হেসে আমার কেবিনে যেতে যেতে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালাম ,

ঘড়ির কাটায় নয় টা বেজে পঁচিশ মিনিট , অনুষ্ঠান শুরু হবে দশ টায় আরো বেশ অনেকটা সময় বাকি আছে , ততক্ষণে গিয়ে প্রশ্ন গুলো সাজিয়ে নেই ,

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কেবিনে গিয়ে ফাইল নিয়ে বসলাম ,

______________________________

পিছনে থেকে কোন একটা কিছু পিঠে এসে লাগতেই তাহরিম পিছনে ঘুরে নিচে তাকালো , একটা কাগজের টুকরো পরে আছে ,

তাহরিম ভ্রু কুচকে এক পলক বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় থাকা তানজিমের দিকে তাকিয়ে, ঝুঁকে কাগজ টা তুলে নিলো ,

” ভাই তুই এখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাটক করছিস এদিকে নয় টা পয়ত্রিশ বাজতে চলল , কবে যাবি তুই ? ”

তানজিম এর কথায় তাহরিম ঘাড় বেকিয়ে তানজিমের দিকে তাকাল,

বেচারা কথা তো বলতে পারে না কি আর করার , তাছাড়া আরো কিছু দিন হসপিটালে থাকার কথা ছিলো কিন্তু তানজিমের ছেলে মানুষির কারনেই কাল রাতেই ওকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে ,

পায়ে কিছু টা চোট লাগাই , হাটতে প্রবলেম হলেও খুড়িয়ে খুড়িয়ে সেই সকাল বেলাই ভাইয়ের রুমে এসে উপস্থিত ,

তাহরিম সাদা রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়তে পড়তে বলল ,

” সেটা নিয়ে তোর এত চিন্তা কিসের , তুই নিজের টা চিন্তা কর , তোর এই অবস্থার কথা শুনলে গার্লফ্রেন্ড থাকবে তো ? বেচারি তোর গার্লফ্রেন্ড এর জন্য খারাপ লাগছে , বিয়ের আগেই জামাই বোবা হয়ে গেলো , শুধু বোবা না সাথে ল্যাংড়া ও ”

তাহরিমের কথা শুনে তানজিম কিছু বলতে নিবে , গলায় ব্যথা পাওয়াই পাশে থাকা খাতার মাঝে বড় বড় করে কিছু একটা লিখলো ,

তাহরিমের দিকে ধরতেই , তাহরিম পড়া শুরু করলো ,

” ডিয়ার ভাই সাহেব , আপনি জেনে উপকৃত হবেন যে আমি তানজিমের কোন গার্ল ফ্রেন্ড নাই ”

পুরো টা পরে তাহরিম হো হো করে হেসে উঠলো ,
হাসি কিছু টা থামিয়ে , টেবিলের উপর থেকে হাত ঘড়ি টা নিয়ে পড়তে পড়তে বলল ,

” ডিয়ার ছোট ভাই , আপনি জেনে খুশি হবেন যে , আপনার বিষয়ে সকল তথ্য আমার কাছে আছে , আপনি কখন কার সাথে যান, কার সাথে ডেট করেন এভরিথিং , আজ টিনা তো কাল নাতাশা , এর পরে র দিন আরশী, প্লে বয় কোথাকার ,

তাহরিম এর কথা শুনে তানজিমের কাশিই উঠে গেলো , কাশতে কাশতে এক পলক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেতে লাগলো,

তানজিমের এই অবস্থা দেখে তাহরিম হাসতে হাসতে কুশনকে কল করে গাড়ি বের করতে বলে এক পলক নিজেকে আয়নায় দেখে বের হয়ে যায় আর তানজিম ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ই রইলো ,

” আর কতক্ষন লাগবে কুশন ? ”

পিছনের সিটে বসে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কথা টা বলে উঠলো তাহরিম ,

” এই তো স্যার আর পাঁচ ছ মিনিট ”

অফিসের সামনে তাহরিমের গাড়ি পৌঁছাতে ই সাংবাদিক আর জনগন জেঁকে ধরলো তাহরিম কে আর হাজার টা প্রশ্নের ভীড়ে তাহরিম মনে হচ্ছে তলিয়ে যাচ্ছে , সেলিব্রিটি হলে এই এক সমস্যা ,

কোন ভাবে সব উপেক্ষা করে ইন্টারভিউ নেওয়ার কক্ষে প্রবেশ করলো ,

তাহরিম কক্ষে প্রবেশ করতেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম আর হাতে ফাইল , চোখের চশমা টা একটু ঠিক করে বললাম ,

” বসুন মিস্টার তাহরিম তালুকদার ”

আমি সবসময় চশমা পড়ি না , আমার চশমা নেওয়া মূলত মাথা ব্যথার জন্য আবার বেশিক্ষণ ক্যামেরার সামনে থাকলে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাবে তাই সেফটি মেইনটেইন করতে মূলত আজ চশমা পড়া ,

আমি ও সামনে থাকা চেয়ারে বসলাম ,

ক্যামেরাও অন করা হলো ,

” কেমন আছেন তাহরিম তালুকদার ? ”

“আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহ ভালো রেখেছে , আপনি কেমন আছেন ? ”

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ , আপনাকে এখানে আসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ , আপনার এই অঢেল ব্যস্ততার মাঝে আমাদের একটু সময় বের করে দেওয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ ”

আমার কথার ভিত্তি তে তাহরিম হাসলো ,

” তো নতুন মন্ত্রী হয়ে আপনার অভিব্যক্তি কেমন ? কেমন লাগছে , নাকি একটু প্রেশারাইজ লাগছে ? ”

আমার কথা শুনে তাহরিম তার তর্জনী আঙুল ঠোঁটের কোনে রেখে কিছু টা ভেবে বলল,

” রাজনীতি আমার জন্য একদম নতুন যে তা কিন্তু না , আমি ভার্সিটি তে ও ছাত্রলীগ করতাম এছাড়া রাজনীতি খারাপ লাগার মতো এখন ও কিছু পাই নি তাই এখন পর্যন্ত ভালো ই লাগে ”

” আপনার কি ছোট থেকে ই রাজনীতি তে আসার ইচ্ছে ছিলো না কি বড় হতে হতে ধীরে ধীরে হয়েছে ? ”

” এক্চুয়ালি , আমার ছোট বেলা থেকে ই মানুষ কে সাহায্য করার ইচ্ছে ছিলো সাথে চেষ্টা ও, কিন্তু যত বড় হচ্ছিলাম ততই বুঝতে শুরু করেছি ক্ষমতা না থাকলে কিছু ই করা সম্ভব না আর ক্ষমতা চাইলে আমাকে রাজনীতি করতে ই হবে এর কোন সেকেন্ড অপশন নেই , তাই আমার রাজনীতি তে ঢুকা ‘

উনার উত্তর গুলো বেশ ভালো ই লাগছিলো ,

” আচ্ছা , আমরা তো প্রায় ই শুনি রাজনীতি তে এই মন্ত্রী র বাড়ি থেকে কোটি টাকা উদ্ধার , এই এমপির বাড়িতে কয়েক শ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার , এই নেতার খাটের নিচে তেলের খনি আই মিন , চুরির তেল আর কি আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে ই তো পারছেন , এই সম্পর্কে আপনার ধারণা কি ?

আমার কথা শুনে তাহরিম মনে হলো খানিকটা চিন্তায় পরে গেলো , কিছু টা ভেবে বলল,

” আসলে রাজনীতি জিনিস টাই এমন কেউ ব্যবহার করে মানুষের ভালো করার জন্য আবার কেউ নিজের পকেট ভারী করার জন্য , আসলে তাদের ব্যপারে আমার ব্যক্তিগত মত বলতে, তারা দেশের জন্য অভিশাপ , হয়তো তারা নিজেদের বদলে ফেলুক নয়তো দেশ ত্যাগ করুক ”

” আপনার মতে তাদের কিভাবে ধরা উচিত আর কেমন শাস্তি তাদের প্রাপ্য ? ”

” প্রতিটি কাজের সেক্টরে ভালো খারাপ সব কিছু ই থাকবে , এই ধরুন মসজিদে তো নামাজ পড়তে সবাই ই যায় তাহলে বাইরে বের হয়ে জুতা চুরি করে কে ? অবশ্যই সে মসজিদে নামাজ পড়া কোন ব্যক্তি , কিন্তু মানুষ কাকে ছেড়ে কাকে সন্দেহ করবে , এই বিষয় টা ঠিক তেমন ই , আমরা সবাই ই দেশের জন্য কাজ করি তাদের মধ্যে কেউ যদি এমন হয় তাহলে বের করা টা খুব একটা সহজ কাজ না , তবে আাশা করা যায় অতি শীঘ্রই আমরা আমাদের কাজে সফল হবো ”

এভাবে প্রায় অনেক প্রশ্ন ই করা হলো , আর উনি ও খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে প্রশ্ন গুলোর উত্তর করলো ,

আমি কিছু একটা চিন্তা করে বললাম ,

” তো এবার আসি আপনার ব্যক্তিগত লাইফ স্টাইল নিয়ে , আপনি কি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত তাহরিম তালুকদার ? ”

চলবে …

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৯

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_09

আকাশ টা মেঘলা , বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব, হয়তো যেকোনো সময় আকাশের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি কণা ,প্রকৃতির সকল ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা সব কিছু ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবে , ইসস বৃষ্টির মতো কেউ যদি আমার ডিপ্রেশন গুলোকে নিয়ে যেত , কিন্তু এটা কখনো ই সম্ভব নয় , এতিমদের জন্য কেউ কখনো আসে না , আসতে পারে না , একজন নাম পরিচয়হীন মেয়ের জন্য কেই বা আসবে ,

বিকেল টা আজ বড্ড বেশি শান্ত মনে হচ্ছে , ছাদের রেলিঙের কোন ঘেষে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি , আজ আকাশের মতো আমার মনে ও ভারি মেঘ জমেছে কিন্তু কি তার কারণ সেটা অজানা , হুটহাট মন খারাপের কারণ থাকে না , কিছু মন খারাপ এর কারণ থাকতে নেই যে ,

আমার জীবন টা কখনো ই সহজ ছিলো না , ছোট বেলায় আশ্রমে মাদারের কাছে মানুষ হলাম , বয়স আঠারো পেরুতে না পেরুতে ই আশ্রম থেকে বিদায় দিয়ে দিলো , শুরু হলো জীবন নিয়ে আরেক যুদ্ধ , তখন তো সবে পাবলিকে চান্স পেয়েছিলাম , টিউশনি ও ছিলো না , প্রথম দু এক মাস খুব কষ্টে কেটেছে , ম্যাচে উঠেছিলাম , ম্যাচ ভাড়া ও দিতে পারি নি , মাদার যা কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছিলো তাতে দু বেলা ও খাওয়া যেত না , ম্যাচের মালিক এসে দু তিন বার ওয়ার্নিং ও দিয়েছিলো , ম্যাচ থেকে বের করে দেবে , ঠিক তার পরের মাসেই নতুন টিউশনি পেলাম , সেই টিউশনি করে ভাড়া , নিজের খাবার খরচ , চলা ফেরা খুব ভালো ভাবে না গেলেও চলে যেতো কোন ভাবে ,

তারপর হঠাৎ ই আমার জীবনে আসে ইলু নামক একটা এঞ্জেলের, হ্যা তো এঞ্জেল ই তো ও আমার জীবনে , আমার সকল দুঃখ কষ্ট সব কিছু তে ভাগ বসাতে শুরু করলো , আমার ভালো লাগা , খারাপ লাগা সব কিছু তে তার নজর , কখনো আমাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে , কখনো বাবার মতো শাসন করেছে , কখনো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে আবার কখনো বা বোনের মতো ছায়া হয়েছে , বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে আবার শত্রু হয়ে ঝগড়া ও করেছে ,

কি হয়নি সে আমার জন্য ! সব কিছু হয়েছে ..

আমি অন্ধকার ভয় পাই বলে , রাতে যখন ই বিদ্যুৎ চমকায় সাথে সাথে তার কল থাকবে সবার আগে , রাতের পর রাত পেরিয়ে যায়, কখনো ফোন কানে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি দুজনেই , এ কেমন বন্ধন! আমার জানা নেই , এই বন্ধনের কোন নাম দিয়ে ছোট করতে চাই না আমি কখনো , নাম না জানা সম্পর্ক , ও আমার জীবনে ডানা কাটা সেই পরী হয়েই থাক আজীবন,

হঠাৎ শরীরে পানির স্পর্শে আমার ধ্যান ভঙ্গ হলো , চারপাশে তাকিয়ে দেখি আকাশ টা মেঘে ঢেকে অনেকটাই অন্ধকার হয়ে এসেছে , বৃষ্টি নামার আগের মূহুর্তের ঠান্ডা বাতাস টা হীম শীতল থাকে , খুব ভালো ও লাগে ,

” কিরে ভুতনী , এই অবেলায় এখানে কি করিস ? আমি আরোও তোকে রুমে খুঁজে আসলাম ”

ইলুর কথা শুনে আমি সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে ই বললাম ,

” প্রশ্ন তো আমার করার কথা ইলু , তুই এই অসময়ে আমার বাসায় কি করিস ? আর আমাকে দেখে কোন এঙ্গেলে ভুতনী মনে হয় তোর কাছে ? ”

কথাটা বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,

ইলু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল ,

” ভুতনী বলব না তো কি বলব হে ? তুই যে ড্রেস আপ করছিস , ভুত ছাড়া তো আর কিছু মনে আসছে না , সাদা সালোয়ার , সাদা কামিজ , সাদা ওরনা সব সাদা , আর সাদা তো ভুতে রাই পড়ে ”

আমি দুম করে ইলুর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ,

” কেন রে সাদা কি ভুতের জন্য বরাদ্দ করা নাকি যে সাদা শুধু ভুতে রাই পড়তে পারবে ? যতসব আউল ফাউল কথা বার্তা ”

আমার কথায় ইলু হাসলো , হঠাৎ করে বলে উঠলো ,

” পূর্ণ , তোর জন্য একটা গিফট আছে ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম .

” গিফট ? ”

” হ্যা হ্যা তুই চোখ বন্ধ করে দুই মিনিট দাড়া আমি যাব আর আসব

বলেই ইলু দৌড়ে চলে গেলো আর আমি চোখ বন্ধ করে ইলুর অপেক্ষা করতে লাগলাম ,

প্রায় মিনিট দুই এর মাঝে ই ইলু এসে হাজির , আমার হাতে ভারি কোন বস্তু রেখে বলল ,

” নে এবার চোখ খুল ”

আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে হা হয়ে আছি , আমার হাতে একটা গিটার , গিটার টা বেশ নামি-দামি ব্রেন্ডের সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ,

আমি কিছু ক্ষন গিটারের দিকে তাকিয়ে পরবর্তী তে ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,

ইলু ইশারা ই জিজ্ঞেস করলো পছন্দ হয়েছে কি না !

আমার মুখ দিয়ে যেন কথায় ই বের হচ্ছে না , আশ্চর্য হয়ে গেলাম , তবু ও কষ্ট করে বললাম ,

” গিটার ? ”

আমার কথা শুনে ইলু বলল ,

” পছন্দ হয়েছে ? ”

ওর চোখে মুখে উৎকন্ঠা , উৎসুক দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,,

আমি গিটার টা সাইডে দাড় করিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম ,

” পছন্দ অপছন্দ পরের কথা , আগে তুই বল অযথা টাকা গুলো নষ্ট করলি কেন ? গিটার এর ব্যপারে তুই কিভাবে জানলি ? ”

আমার কথা শুনে ইলু হেসে আমার দিকে চেপে এসে ছাদের রেলিঙে পিঠ ঠেকিয়ে বলে উঠলো ,

” আসলে ওইদিন তোকে জিজ্ঞেস না করে তোর পার্সোনাল ডায়রি পরেছিলাম তাতে তোর গিটারিস্ট হবার সখ টা হাইলাইট করা তা ই ভাবলাম তোর সব সখ তো আর পুরন করতে পারব না আমি তো আর যাদুকর না , যাদুকর হলে তোর কোন ইচ্ছে ই অপূর্ণ রাখতাম না , বিলিভ মি তাই আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করছি ”

আমার মুখে কোন ভাষা নেই ওকে বলার মতো , আমি এখন রাগ করব নাকি কান্না করব বুঝে উঠতে পারছি না , গিটার টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলাম ,

” কি হলো বললি না যে পছন্দ হয়েছে কি না ? আর এটা কিন্তু আমার ইনকামের টাকা আমার বাবার না কিন্তু , কয়েক টা টিউশনি করিয়েছিলাম যে ওই টাকা ”

আমি গিটার এক হাতে নিয়ে হুট করে ওকে জরিয়ে ধরলাম , কেন জানি না খুব কষ্ট হচ্ছে , কান্না ও পাচ্ছে খুব , কিন্তু আমি তো কান্না করতে পারি না , শেষ কবে মন খুলে কান্না করেছিলাম মনে নেই ,

ইলু আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে বলল ,

” হয়েছে বাবা , আমি কিন্তু গিটার টা তোকে এমনি এমনি দেই নি , শর্ত আছে ! ”

ইলুর কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম ,

” শর্ত ? কিসের শর্ত? ”

” এই যে তোকে গিটার গিফট করলাম , সেটা কি এমনি এমনি নাকি , আমার শর্ত হলো , তুই প্রতিদিন আমাকে একটা গান শুনাবি ”

” এই এর মানে কি ? আমার কি খেয়ে দেয়ে আর কোন কাজ নেই নাকি , আর আমি কি গান পারি না কি ? ”

” আহহ মরন , ভার্সিটিতে তুমি গিটার ও বাজাতে আর গান ও করতে, সেটা তুমি ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলি নাই , আমার সাথে নাটক করতে আইসো না বেবি ”

কথা বলতে বলতেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো আমি আর ইলু নিজ জায়গা থেকে এক চুল ও নড়লাম না , দুজন ই আজ ভিজব ,

গিটার টা হাতে নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললাম , বৃষ্টি র ঝাপটায় সামনের কিছু ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না ,

ইলু ধপ করে নিচে বসে আমাকে ও টেনে বসিয়ে দিলো ,

” পূর্ণ একটা গান ধর তো , বহু দিন তোর গান শুনি না , ভার্সিটি ফাংশন তো পুরা কাঁপাইয়া দিতি , আজ আবার ধর ”

“এখন ? ”

” হ্যা এখন ই তো ”

আমি আর কিছু বললাম না ,

গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে গাইলাম ,

Dua bhi lage na mujhe

Dawa bhi lage na mujhe

Jabse dil ko mere tu laga hai

Neend raaton ki meri

Chaahat baaton ki mari

Chain ko mere toone yun thaga hai

Jab saansein baroon main band

Aankhein karun main

Nazar tu yaar aaya kar

Dil ko karaar aaya

Tujhpe hai pyar aaya

Pehli pehli baar aaya

Oh yaara

Dil ko karaar aaya

Tujhpe hai pyar aaya

Pehli pehli baar aaya

Oh yaara

Har roz puchhein yeh hawayein

Hum to bata ke haare

Kyun zikar tera karte hain

Humse taare

Har roz poochhein yeh hawayein

Hum to bata ke haare

Kyun zikra tera karte hain

Humse taare

Ab is se hain tere in

Hothon pe mere izhaar aaya yaara

Dil ko karar aaya

Tujhpe hai pyar aaya

Pehli pehli baar aaya

Oh yaara

Dil ko karaar aaya

Tujhpe hai pyar aaya

Pehli pehli baar aaya

Oh yaara

চোখ বন্ধ করে গান গেয়ে , গনা শেষ হতেই চোখ খুলে তাকালাম , এত ক্ষনে কাক ভেজা আমি আর ইলু ,

ইলু গদগদ কন্ঠে বলে উঠলো,

” ব্যপার কি বলতো পূর্ণ ? এতদিন পরে গান গেয়েও মনে হচ্ছে তোর গানের গলা আগের থেকে আরো দারণ হয়েছে ! ”

আমি হাসলাম ,

ও আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ,

” বিশ্বাস করলি না তো , সত্যি বলছি তো ইয়ার ”

” হুম হয়েছে , এবার চল নিচে , না হলে আবার জ্বর বাধাবি ”

” জ্বর আমার না বরং তোর হবে ”

” হুম ”

বলেই আমি গিটার নিয়ে উঠে দাড়ালাম , ইলু নিজের হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো ওকে টেনে উঠাতে ,

আমি এক হাত দিয়ে টান দিতেই ও উঠে পড়লো ,

রুমে এসে একে একে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসতেই আমার ফোন টা বেজে উঠলো ,

আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি , স্যারের কল ,

আমি ভ্রু কুচকে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ফোন টা হাতে নিতে নিতে পুনরায় ইলুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

” ইলু তুই কি আজ স্যার কে কল করে ছুটি নিস নি ? আমি না তোকে বলেছিলাম আজকের দিন টা ছুটি নিতে ”

ইলু দুম করে বিছানায় সুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল ,

” আমি তো ছুটি নিয়েছি আর ওই টাকলা ও তো ছুটি দিসে আবার ফোন দিলো ক্যা ? ”

আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফোন পিক করলাম ,

” হ্যালো , আসসালামু আলাইকুম স্যার ”

“…………

” জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ , আপনি ? ”

“……………

” স্যার কোন দরকার ছিলো ? ”

“…………..

” স্যার আমি ই কেন ? আমার থেকে অনেক সিনিয়র রাও তো আছে ! ”

“…………….

” জি স্যার , আমি পৌঁছে যাবো সময় মতো , ”

“………….

” আচ্ছা স্যার , আল্লাহ হাফেজ ”

আমি ফোন টা রেখে বিছানায় বসলাম ,
ইলু আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” কি রে স্যার কি এমন বলল যে তোর মুখ টা বাংলা ভাদ্র মাসের মতো হট হট হয়ে গেলো ”

আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম ,

” ইন্টারভিউ নিতে হবে ”

” তো নিবি , এটা তো আর তোর কাছে নতুন না , মুখ এমন করে রাখছিস কেন ? ”

” ইন্টার ভিউ নিবো সেটা বড় কথা না , কথা টা হলো কার ইন্টার ভিউ নিবো ! ”

” কার ? ”

“মন্ত্রী তাহরিম তালুকদারের ইন্টার ভিউ ”

” তো নিবি , এতে এত ঘাবড়ানোর কি আছে , তুই তোর প্রশ্ন করবি আর সে উত্তর দিবে , চাইলে অনেক কিছু ই জিজ্ঞেস করতে পারিস ”

ইলুর কথা শুনে হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই আমি মনে মনে হাসলাম , কালকের জন্য প্রস্তুত তো মন্ত্রী সাহেব? ”

চলবে…

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৮

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_08

” মা আমি থানায় যোগাযোগ করেছি , ওরা তদন্ত করছে আর কারা তানজিম এর এরকম একটা এক্সিডেন্ট করিয়েছে সেটা অতি শীঘ্রই ধরা পড়বে , টেনশন করো না ”

মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে হসপিটালের কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো কেউ বলল ,

ইলমি দরজার দিকে তাকিয়ে ই আস্তে আস্তে বলল,

” মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার ”

আমি কথা টা স্পষ্ট শুনতে না পেলেও দেখে উনাকে ঠিক ই চিনতে পেরেছি , আর মন্ত্রী দের সাংবাদিক গন চিনবে না সে টা কস্মিনকালে কালেও সম্ভব না কি , কারণ উনাদের নিয়েই তো আমাদের ঘাটাঘাটি , আমাদের যত খবর থাকে বেশির ভাগ অংশ জুড়েই মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা ”

কিন্তু উনি এখানে কি করছে সেটাই ভাববার বিষয় , আর মা ! মা কাকে ডাকছে , আমি ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছি , পুরো ব্যপার টা বুঝতে আমার মিনিট দুই সময় লাগলো , তার মানে তানজিম , মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর ভাই!.

” তাহরিম তুমি একটু ডক্টর নূর এর সাথে কথা বলো , তানজিম কে কি আজ বাসায় নিতে পারব ? না কি আরো দু একদিন থাকতে হবে ”

মেহেরিন শিকদার এর কথা শুনে তাহরিম চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো , মোবাইল পকেটে ভরতে ভরতে বলল ,

” আমি এক্ষুনি ডক্টর এর সাথে কথা বলেই এসেছি , কয়েক টা দিন থাকলে ই ভালো হবে ”

কথা টা বলে তাহরিম ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকালো ,

” আপনি ? ”

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই তাপস তালুকদার বলে উঠলেন ,

” আরে ও ই তো তানজিম কে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে আর নিজের ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে, সেবা করেছে , এই যুগে অচেনা অজানা একটা ছেলের জন্য এমন কেউ করে আমার জানা ছিলো না অন্য কেউ হয়তো করতো না ”

তাহরিম ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে মেয়ে দুটোর অভিব্যক্তি কি ! আর কি উদ্দেশ্য তাদের ?

আমার দিকে এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে বেশ অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল ,

তাহরিম তালুকদার আমার কাছে এসে বলল ,

” উদ্দেশ্য কি আপনাদের ? ”

উনার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম , চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাহরিমের দিকে তাকালাম ,

” মানে ? কি বলতে চাইছেন তা স্পষ্ট করে বলুন তো মন্ত্রী সাহেব ”

আমার কথা যেন উনার কাছে খুব মজার বিষয় মনে হলো , বা এটা ভেবেই রেখেছেন যেন আমি ঠিক এমন একটা প্রশ্নই তার দিকে ছুড়ে দিবো , উনি হাত দুটো ভাজ করে বুকের উপর রেখে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল ,

” না , আমার কাছে ব্যপার টা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে , রাতের বেলা দু দুটো মেয়ে একজন মন্ত্রীর ভাইকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাচিয়েছে , আবার তার ভাই বলেও সম্বোধন করছে , তাকে সেবা করছে , কোন না কোন কারণ তো আছেই ! কারণ টাই জানতে চাচ্ছি , না কি টাকার জন্য ? ”

তাহরিম তালুকদারের কথা শুনে আমি অবাকের চেয়ে বেশি অপমানিত বোধ করলাম , তবে আমাকে কেউ অপমান করবে আমি তাকে ছেড়ে দেবো সেটা কি করে হয় , হোক সে এমপি , মন্ত্রী যা মনে চাই তা , তাতে আমার কি!

আমি ঢের বুঝতে পারছি উনি কিছু একটার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনটা সেটা বুঝতে পারছি না ,

” ফাস্ট অফ অল আমি মোটেও জানতাম না তানজিম আপনার ভাই ”

আমার কথার মাঝখানে দিয়ে উনি বলে উঠলো ,

” হেই গার্ল , লিসেন , এখন আবার বলো না যেন , যদি জানতাম তানজিম আপনার ভাই তাহলে কখনোই ওকে আমি হসপিটালে নিয়ে আসতাম না , প্লিজ এটা বলবে না , এটা তো কমন ডায়লগ সবাই বলে . ইউনিক কিছু বলেন ”

আমি হাসলাম ,

” আমাকে দেখে কি আপনার গর্ধব মনে হয় ? আর তাও আবার ঠিক , যে যেমন সে তো সবাই কে তেমন ই ভাববে , নিজে গর্ধব হয়ে তো অন্য কে ক্লেভার মনে করবে না , তাই না ? বাই দা ওয়ে , আমি যদি জনতাম ও যে তানজিম আপনার ভাই তবুও আমি আমার কর্তব্যে পিছ পা হতাম না , পূর্ণা কখনো বিপদ কে ভয় পাই না , আর জার্নালিসম পেশায় রাত দিন বলতে কোন ওয়ার্ড নেই , নিরলস শ্রম দিতে হয় , তা আপনারা কি বুঝবেন ? আপনারা সেলিব্রিটি রা তো জার্নালিস দের মানুষ ই মনে করেন না , কুকুর বেড়াল মনে করেন আপনারা মিডিয়ার লোকদের ”

কিছু টা থেমে ,,

” পৃথিবীতে যার কেউ নেই , পুরো পৃথিবী ই তার পরিবার , পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ তার আপন জন , স্পেসিফিক কোন আপনজন নেই তাদের , সে ক্ষেত্রে তানজিম আমার ছোট ভাই ই , আর ছোট ভাইয়ের অসুখ হলে নিশ্চয়ই কোন বোন ই বসে থাকবে না , আর আরেকটা কথা , আমাকে দেখে কি কোন এঙেল এ আপনার ভিক্ষুক মনে হয় ? অতি শীঘ্রই আপনি চোখের ডক্টর দেখান , চোখে মনে হয় কম দেখেন , যা হোক, আমার পেশা যথেষ্ট ভালো, প্রতি মাসে খেয়ে দেয়ে অনেক টা ই বেশি হয় টাকা , অন্য কোন মানুষের কাছে হাত পাতার মতো খারাপ পরিস্থিতি এখনো আমার আসে নি , সো আপনার টাকা আপনার কাছে ই রেখে দেন টাকার গরম আর যাই হোক মিফতাহুল পূর্ণাকে দেখাতে আসবেন না , আমি যা কিছু করেছি আমার ভাইয়ের জন্য করেছি , আমি আশা করি আপনি আর আমার ব্যপারে নাক না গলালেই বোধ হয় ভালো হবে ”

বলেই আমি তাহরিম কে পাশ কাটিয়ে কাঁধে র ব্যগটা নিয়ে বেডের কাছে গেলাম , তানজিমের কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করে বললাম ,

” জ্বর টা এখন আর নেই ! আমি বরং আজ আসি তানজিম , তুমি তোমার মা বাবার কাছে থাকো আমি আবার পরে আসবো নে , আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবে আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে আর সময় মতো ঔষধ নিবে সমস্যা হলে জানাবে ”

আমার কথা শুনে তানজিম হাসলো, আমিও মুচকি হেসে আঙ্কেল এর কাছে গেলাম ,

ব্যগ থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে তাপস তালুকদার এর হাতে দিয়ে বললাম ,

” আঙ্কেল এই হলো আমার ভিজিটিং কার্ড , কখনো কোন প্রয়োজনে অবশ্য ই কল করবেন , আজ আসি আল্লাহ হাফেজ ”

বলেই আন্টি থেকে বিদায় নিয়ে ইলুকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলাম,

” তুমি মেয়েটার সাথে এমন বিহেভ করলে কেন তাহরিম ? মেয়েটা তোমার ভাইকেই তো বাচিয়েছে, সে না থাকলে হয়তো তুমি তোমার ভাইকে এখানে দেখতে ই পেতে না ”

তাপস তালুকদার এর কথা শুনে তাহরিম মুচকি হেসে তানজিম এর পাশে বসলো ,

তানজিমের কপালে আর গালে হাত দিয়ে ভালো ভাবে চেক করে উঠতে উঠতে বলল ,

” তুমি সেটা বুঝবে না ডিয়ার ফাদার , তুমি বরং তোমার বউকে নিয়ে চিন্তা করো , দিনে দিনে মা ইয়ং হচ্ছে আর তুমি বুড়ো হচ্ছো আর বসে থাকতে থাকতে ভুড়ি বাড়ছে , কয়েকদিন পর তোমাকে আর মা কে একসাথে দেখলে বাপ বেটি ও বলতে পারে , সোওও আগে থেকে ই সাবধান মিস্টার তাপস তালুকদার ”

বলেই গাড়ির চাবি আঙুলের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে বেরিয়ে গেলো ,

তানজিম ভাইয়ের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে , সে ঢের বুঝতে পারছে তাহরিম এর মনে কিছু তো একটা চলছেই যার কারণে সে পূর্ণা কে এভাবে খোঁচা দিলো , অযথাই , আর বাবার কথা ও কাটিয়ে গেলো , তবে কি চলছে তার মনে ?

” শুনেছো মেহু শুনেছো তোমার অসভ্য ছেলের কথা শুনেছো ? বাবা কে তো মান্য করেই না উল্টো কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলে শুনেছো তুমি ? বাবা কে পিঞ্চ মেরে কথা বলে ,

মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল ,

নাহ্ এই ছেলে আর শুধরাবে না , অসভ্য নির্লজ্জ কোথাকার ”

তাপস তালুকদার এর কথা শুনে মেহেরিন শিকদার বিরবির করে বলে উঠলেন ,

” বাপ গুনে ছেলে হলে যা হয় আর কি ? যেমন নির্লজ্জ বাপ তার তেমন ছেলে তো হবেই ”

কথাটা তাপস তালুকদার এর কানে না গেলেও তানজিম স্পষ্ট ই শুনতে পেলো , আর মনে মনে হাসলো ।

এমন সার্কাস তার পরিবারে প্রতি নিয়ত ই হয় , এ আর নতুন কি!

চলবে..

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৭

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_07

সাঁঝের সকাল , বসন্তের দক্ষিণা বাতাস শা শা করে ঢুকছে হসপিটালের জানলা দিয়ে , সেই বাতাস কে যেন আহবান করতে জানলার ধারে রেলিং এ মাথা ঠেকিয়ে কোন এক নির্দিষ্ট জায়গায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নির্লিপ্ত ভঙিতে দাড়িয়ে আছে বাসন্তী রঙের সাড়ি পরিহিতা এক রমনী, সাড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ যেন শুকিয়ে আছে , চুলের খোঁপা টা অনেকাংশে খুলে যাওয়ার ফলে কিছু অবাধ্য চুল পিঠ ময় আছড়ে পরে আছে , চোখে তার ঘুমু ঘুমু ভাব, ক্লান্তি তবুও যেন ঘুমুতে নাড়াজ সে , ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ঘড়ির দিকে দৃষ্টি তাক করলো , ঘড়ির কাটা সাত টা পেরিয়ে গেছে সেই আধ ঘন্টা আগে , পুনরায় তাকালো বেডে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকা হাত পায়ে ব্যন্ডেজ করা ছেলেটার দিকে , ছেলেটার পরিচয় এখনো অজানা , জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত পরিচয় জানা অসম্ভব ,
কেবিন নাম্বার ২০৪ , বেডে শুয়ে থাকা ছেলেটার গোঙানির আওয়াজে পিছনে তাকালাম, জ্ঞান ফিরেছে তার ,

আমি ধীর পায়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলাম কপালে আর গালে হাত দিয়ে দেখলাম এখন জ্বরের অবস্থা , এখন কিছুটা কম হলেও একেবারে যে নেই তা কিন্তু না , বেডের পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে পানির বোল টা নিয়ে তাতে ভিজানো রোমাল টা ভাজ করে কপালে রাখলাম ,

ছেলেটা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো ,
চোখের সামনে অপরিচিত একটা মেয়েকে দেখে হয়তো বেশ চমকেও গেছে হয়তো , তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে আমি বাধা দিলাম ,

” উঠো না শুয়ে পড়ো , , সারা শরীরে তোমার আঘাত , ব্যথা আছে আর কথা বলো না কষ্ট হবে তোমার , যা লাগবে ইশারায় বলে দিবে আমি এনে দিবো ”

বলেই মাথা থেকে জলপট্টি টা সরিয়ে আবার ভিজিয়ে রাখলাম ,

ছেলে টা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না , অবাক তো হবার ই কথা ,

এমন সময় দরজা ঠেলে প্রবেশ করল ডাক্তার নুর ,

” কেমন আছো মাই বয় ”

আমি আর ছেলেটা ডক্টর এর দিকে তাকালাম,

” আসলে ডক্টর , ওর কথা বলতে প্রবলেম হচ্ছে ”

আমার কথা শুনে ডাক্তার হাসলেন ,

” ওই যে বললাম না গলায় বেশ আঘাত পেয়েছে তবে চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে কিছু দিন রেস্ট নেক ”

ছেলেটার কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে বলল ,

“জ্বর তো এখন আর তেমন নেই , ডোন্ট ওয়ারি মাই বয় , তোমার বোন থাকলে তোমার আর কিছু হবে না এটা আমার বিশ্বাস ”

ডাক্তারের কথা শুনে ছেলেটা আবারো অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকালো ,

ডাক্তার কিছু টা থেমে বলল ,

” ভেইরি ব্রেভ গার্ল তোমার বোন , কালকে ও সময় মতো না নিয়ে আসলে তো তোমাকে বাঁচানো ই যেত না , আর সারা রাত জেগে মেয়েটা তোমার সেবা করেছে , মাঝ রাতে তো হঠাৎ ই তোমার প্রচন্ড জ্বর আসে আর ও তোমার মাথার পাশে সারা রাত থেকে জেগে জেগে তোমার মাথায় পানি দিয়েছে আর শরীর মুছিয়ে দিয়েছে , ভাগ্য করে একটা বোন পেয়েছো তুমি চিন্তা র কোন কারণ নেই , ঔষধ নাও আর রেস্ট করো ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে ”

বলেই ডাক্তার চলে গেলেন ,

ডক্টর এর কথা শুনে ছেলেটা আমার দিকে অশ্রুশিক্ত দৃষ্টিতে তাকালো , আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম ,

ছেলেটা আশফাস করছে হয়তো কিছু বলবে ,

” তুমি কি কিছু বলবে ? ”

সে মাথা নাড়ায় ,

” কিভাবে বলবে ? তোমার গলায় তো ব্যথা! ”

ছেলেটা আমাকে টেবিলের দিকে ইশারা করে , আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি , একটা খাতা রাখা আছে , আমি কিছুটা ভেবে বলি ,

” তোমার তো হাতে তো ব্যথা লিখবে কিভাবে ? ”

ছেলেটা আবারো ইশারা করতেই আমি আর কিছু না বলে টেবিল থেকে একটা খাতা আর কলম এগিয়ে দিলাম ,

খুব কষ্ট করে ছেলেটা কাগজে কিছু একটা লিখলো ,
আর আমার দিকে এগিয়ে দিলো ,

” আমার বাসায় একটু যোগাযোগ করবা ? নাম্বার 017******09 ”

লেখা টা পরে আমি হাসলাম , খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বললাম ,

” তোমার নাম কি লেখ ”

সে নাম লিখে আমার দিকে এগিয়ে দিলো ,

” তানজিম ”

লেখাটা পড়ে আমি হাসলাম ,

” বাহ্ বেশ সুন্দর নাম ”

আমাদের কথার মাঝে পিছনে থেকে হঠাৎ কেউ বলে উঠলো ,

” কি ব্যপার বাছাধনের জ্ঞান ফিরলো তাহলে ? ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলাম ”

আমি ইলুর দিকে তাকিয়ে হাসলাম , হাতে একটা শপিং ব্যগ নিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ,

ইলু খানিকটা এগিয়ে এসে আমার হাতে শপিং ব্যগ টা দিয়ে বেডে বসে পড়লো ,

আমি শপিং ব্যগ থেকে ড্রেস খুলে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে , মাইয়ার কাজ দেখছো , আবার আমার জন্য এই সাড়ি ই আনছে , কেমন ডা লাগে !

” ওই ফহিন্নি , দুনিয়ায় কি আর কোন ড্রেস নাই ! তুই সাড়ি আনলি কোন বুঝে ? ”

” তো কি ওয়েস্টার্ন আনতাম ? ”

বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো , তানজিম ও আমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হাসলো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম , এই মেয়েকে কিছু বলে লাভ নাই , ঘাড় ত্যাড়া কোথাকার !

আমি ইলুর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর হাতে খাতা টা ধরিয়ে বললাম ,

” তানজিমের বাড়ি তে ফোন কর আমি ততক্ষণে চেঞ্জ করে আসছি ”

সাড়ি যে আমি একদম ই পড়তে পারি না তা কিন্তু না , আমি সাড়ি পড়তেও পারি সামলাতেও পারি , কিন্তু এই মূহুর্তে সারি টা কম্ফোর্ট বলে আমার মনে হচ্ছে না , সে যায় হোক এখন আর কি করার , অগত্যা এসব নিয়েই আমাকে ওয়াসরুমে ঢুকতে হলো ,

নীল রঙের সাড়ি আর সাদা রঙের ব্লাউজ পড়ে চুল থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে ওয়াস রুম থেকে বেরিয়ে দেখি কেবিনে বেশ অনেক লোকের ভীড় ,

একজন মহিলা তানজিমের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরেকজন মাঝ বয়সী লোক বেডের সাথে ই চেয়ার নিয়ে বসে কথা বলছে ,

আমি পলক ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম, ইলু চোখের ইশারায় বোঝালো এনারাই তানজিমের বাবা মা,

আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম , যাক ছেলে তার মা বাবার কোলে ফিরে গিয়েছে , আমার দায়িত্ব শেষ,

তানজিমের বাবা তানজিম কে বিভিন্ন কিছু জিজ্ঞেস করছে কিন্তু বেচারার তো কথা বলতে পারে না আর সেটা বোঝাতে ও পারছেনা ,

” আঙ্কেল , তানজিম তো গলায় ব্যথা পেয়েছে তাই কথা বলতে ওর প্রবলেম হবে , আবাদত ওকে কিছু জিজ্ঞেস না করলেই ভালো হবে ”

অচেনা কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আঙ্কেল আর আন্টি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো ,

উনাদের অব্যক্ত কথা টা হয়তো আমি বুঝতে পেরেছি তাই হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বললাম ,

” আমাকে আপনারা চিনবেন না , আমার নাম মিফতাহুল পূর্ণা , পেশায় একজন সাংবাদিক , তানজিম কে কাল আমরাই পেয়েছিলাম রাস্তায় , আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় ”

আমার কথা শুনে আঙ্কেল বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আমাকে কাছে ডাকলেন , আমিও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে ,

উনি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন ,

” কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো ভাষা নেই আমার , তুমি নিজেও জানো না তুমি আমাদের কত বড় একটা উপকার করেছো ”

” এভাবে বলবেন না আঙ্কেল , এটা আমার কর্তব্য আজ তানজিমের জায়গায় আমার ছোট ভাই কিংবা বোন হতে পারতো , আমার ভাই হলে কি আমি এভাবে রাস্তায় ফেলে রেখে আসতে পারতাম? কখনোই না ”

” তোমার মতো এভাবে কেউ চিন্তা করে না মা ”

প্রতুত্যরে আমি হাসলাম,

কথার মাঝে হঠাৎ মেহরিন শিকদার বলে উঠলো ,

” মেয়ে তুমি সারা রাত তানজিমের পাশে ছিলে তোমার বাবা মা টেনশন করেননি ? ”

উনার কথায় আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম ,

” নাহ আন্টি , টেনশন করার মতো কেউ নেই আমার , আমি এতিমখানায় বড় হয়েছি , ভাড়া বাসায় থাকি , আমার পরিবার বলতে এখন শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইলমি আছে , আর কেউ নেই ”

বেশ হাসি মুখেই কথা গুলো বললাম , মিসেস শিকদার আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,

হয়তো ভাবছে , এত কঠিন কথা গুলো মেয়েটা কত সুন্দর সাবলীল ভাষায় অবলীলায় বলে দিলো ,

ঠিক তখন ই কথা বলতে বলতে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো কেউ…

চলবে…

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৬

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_06

” কিরে পূর্ণ ! এভাবে মাটিতে বসে আছিস কেন ? ”

ইলমির কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ইলমির দিকে তাকালাম ,
চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে ফট করে উঠে দাড়িয়ে সাড়ি থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে সাড়ি টা ঠিক করে দাড়ালাম,

” রাস্তা ঘাটে যখন কিছু অসভ্য মানুষজন গরু ছাগলের মতো দৌড়াদৌড়ি করে তখন আমার মতো মাসুম কিউট বাচ্চাদের তো চলতে ফিরতে সমস্যা হবে ই , ধাক্কা খেয়ে পড়তেই হবে , ইট ইজ স্বাভাবিক ”

বলেই আড় চোখে মাস্ক পড়া লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখি , উনি কি সুন্দর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ফোন ঘাটছে যেন কিছু ই হয় নি ,

” আপু আসলে দোষ টা আমার ই , আমি ই খেয়াল করি নি , আমি আসলেই দুঃখীত , প্লিজ রাগ করবেন না আপু ”

আমি সাড়ির কুচি ঠিক করে সেই ছেলেটার দিকে তাকালাম ,
মুচকি হেসে বললাম ,

” ইট’স ওকে ভাইয়া , আমি কিছু মনে করি নি , তুমি তো আমার ছোট ভাইয়ের মতোই , আর ভাইয়ের সাথে কি বোন রাগ করতে পারে ? আমি একটুও রাগ করি নি ”

মাঝখান থেকে সেই মাস্ক পড়া লোকটা মোবাইলে র দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলে উঠলো ,

” তানজিম তুই কি আজ বাসায় যাবি? গেলে বল তা না হলে আমি গেলাম , বাই ”

বলেই লোকটা মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো ,

” তোমার ভাই উনি ? ”

আমার কথা শুনে তামজিদ শব্দ করে হেসে বলল,

” খুব অদ্ভুত তাই না ? আসলে ভাইয়া এমন ই , কথা কম বলে আর সারাক্ষণ আলাদা মুড নিয়ে থাকে , খাটাস ”

” হ্যা সেটাই ”

” ধন্যবাদ আপু , আজ তাহলে আসি ”

আমি প্রতুত্তরে হাসলাম ,

ছেলেটা চলে গেলো , খারাপ লাগে নি ছেলেটাকে , বয়স আর কত হবে ! হয়তো বাইশ কি তেইশ , অনার্স থার্ড কিংবা ফোর্থ ইয়ারে পড়ে হবে হয়তো ”

” কিরে আজকে কি সারাদিন এখানে ই দাঁড়িয়ে থাকবি ? চল ভেতরে চল ”

” হুম ”

বলেই চুলে হাত দিয়ে দেখি বকুল ফুলের মালা টা নেই , চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে তাকালাম , নাহ কোথাও নেই , নিচে পড়লে তো এখানেই থাকতো ,

” কিছু খুজছিস ? ”

আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললাম ,

” হ্যা বকুলের মালা টা ”

” থাক মালা লাগবে না , চুল গুলো এমনি ই ছেড়ে দে , একটা দিন ই তো ”

ওর অনুরোধের ভঙ্গিতে বলা কথার পরিপ্রক্ষিতে আমি ও কথা বাড়ালাম না ,

বসন্তের আমেজ শুরু হয়ে গিয়েছে , হালকা শীতল বাতাস আর চারিদিকে রঙ বেরঙের পাখি গাছে গাছে নতুন পাতা গজানোর মৌসুমে অনুষ্ঠানটা বেশ আনন্দময় হয়ে উঠলো , দিনের ক্লান্তি ভাব টা অনেকাংশে ই কমে গেছে , বাসন্তী রঙের সাড়ি তে আর খোলা চুলে বসন্ত বাতাস আজ বেশ উপভোগ করছি ,

আমি যে ততটা ফর্সা তা কিন্তু না , আমি শ্যামবর্না , গায়ের রং টা তামাটে , আর ইলু হলুদ ফর্সা , কোথাও একটা শুনেছিলাম , একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে আরেকটা সুন্দরী মেয়ের বন্ধুত্ব টা খুব বেশি দিন টেকে না , তাই হয়তো আমার আর ইলুর বন্ধুত্ব টা এতো টা গাঢ় ,

দু’জনে মিলে বেশ অনেক ঘুরাঘুরি করলাম , বিভিন্ন খাবার দাবার শেষ করে ফিরতে প্রায় রাত আটটার মতো বেজে গেছে ,

এই মূহুর্তে আমি আর ইলু দাঁড়িয়ে আছি রিক্সার জন্য কিন্তু আমাদের ভাগ্য তো এত সুপ্রসন্ন নয় যে দাঁড়ানোর সাথে সাথে রিকশা পেয়ে যাবো ,

দুর থেকে একটা রিকসা দেখা যাচ্ছে এদিকটায় আসছে ,

” চাচা যাবেন ? ”

চাচা গলায় থাকা গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল ,

” হহহ আম্মা যামু , কই যাবা ”

” দুই নাম্বার রোড ”

” আইচ্ছা উঠো ”

মাঝ রাস্তায় হঠাৎ সামনে ভিষন ভীড় দেখে রিকসা থেমে যায় ,

আমি ভ্রু কুচকে সামনে তাকায় , ইলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওই ঘুমে ঢুলছে ,

আমি রিকসা থেকে নেমে কিছু টা সামনে এগিয়ে গেলাম , লোকজন বলাবলি করছে সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে ,

আমি ভীড় ঠেলে সামনে গেলাম , চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে কিন্তু চারপাশে এত লোক থাকতে ও কেউ গিয়ে ধরছে ও না আর না হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে ,

আমি ছেলে টার কাছে যেতেই একজন লোক পিছনে থেকে ডেকে বলে উঠলো ,

” আপা ওনার কাছে যাইয়েন না , যেই এক্সিডেন্ট করছে মনে হয় না যে বাঁচব আজাইরা নিজে ঝামেলা ই জরাইয়েন না , পুলিশের প্যাচে পড়বেন,

লোকটা আরো ও কিছু বলতে নিবে আমি রেগে তার দিকে তাকতেই লোকটা চুপ হয়ে যায় ,

মানুষ কতটা নিম্ন মস্তিষ্কের অধিকারী হলে এই মূহুর্তে এমন একটা কথা বলতে পারে , আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম ,

আমি ধীর পায়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলাম ,
ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে তর্জনী আঙুল ওর নাকের কাছে নিতেই শ্বাস প্রস্বাস টের পেলাম তার মানে এখনো বেঁচে আছে , তবে অবস্থা আশঙ্কা জনক সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে এখনো

এতক্ষণে ভীড় ঢেলে ইলু ও এসেছে , আমি ওকে কিছু একটা ইশারা করতেই ও দৌড়ে সেখানে থেকে চলে যায় ,

আমি ছেলেটার মাথা নিজের কোলের উপরে রেখে সাড়ির আচলের কিছু অংশ ছিড়ে মাথাটা ভালো ভাবে বেধে দেই যেন রক্ত পড়া টা কিছু টা হলেও কমে যায় , ততক্ষণে ইলু রিক্সা ওয়ালা চাচাকে নিয়ে হাজির , ছেলেটাকে রিকসা য় উঠিয়ে আমি আর রিকসা ওয়ালা চাচা হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম , ইলু সেই রিকসার পিছনে পিছনে ই আরেকটা রিকসা নিয়ে, কাছে ই একটা হসপিটালে ছেলেটাকে নিয়ে এলাম , আমার সারা শরীর ছেলেটার রক্তে রঞ্জিত , হসপিটালে ভর্তি করে সেখানেই বসে রইলাম,

” চাচা আপনার ভাড়া টা কত দিবো ? ”

আমার কথা শুনে চাচা চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন,

” ভাড়া লাগবো না রে মা , দোয়া করি তোর মতো মেয়ে যেন সবার ঘরে ঘরে জন্মে ”

এমন সময় ডাক্তার বের হয়ে আসে , ডাক্তার কে দেখা মাত্র ই আমি দৌড়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে ,

” ডাক্তার কি অবস্থা রোগীর ? ”

আমার কথা শুনে ডাক্তার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল ,

” অবস্থা এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না তবে খুব একটা ভালো না , মাথার পিছনে দিকে আঘাত টা বেশি লাগছে , গলায় ও বেশ খানিকটা জখম হয়েছে ,মাথায় বিভিন্ন জায়গায় কাচ ঢুকে আছে , ইমিডিয়েটলি অপারেশন করাতে হবে , রোগীর বাসার লোক কেউ আছে ? bond paper এ সাইন করতে হবে , অপারেশন করালেও যে রোগী বাচবে এমন কোন সিউরিটি দিতে পারছি না , আঘাত টা খুব বেশি ই পেয়েছে

আমি কিছু চিন্তা না করে ই বলে উঠলাম ,

” আমি রোগীর বোন হই কোথায় সাইন করতে হবে বলেন আমি এক্ষুনি সাইন করে দিচ্ছি , আপনি এক্ষুনি অপারেশন এর ব্যবস্থা করেন ”

” জি অবশ্য ই ”

ডাক্তার তার পাশে থাকা নার্স কে বলল ,

” উনার সব পেপার রেডি করে সাইন করাও আর অ’টি রেডি করো ,, তাড়াতাড়ি কর ”

নার্স আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” আপনি চলুন আমার সাথে ”

আমি নার্সের সাথে যেতে যেতে পিছনে তাকিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে বললাম ,

” তুই এখানে একটু বস আমি আসছি ”

আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইলু মাথা নাড়িয়ে সিটে বসে পড়লো ,

নার্স আমা সাথে যেতে যেতে বলল ,

” রোগী কি আপনার কিছু হয় ? ”

” হুম , আমার ভাই ”

” ওহ , ওনার আঘাত গুলো খুব গুরুতর , কিভাবে হয়েছে একটু বলতে পারবেন ? ”

” লড়ির সাথে প্রাইভেট কারের এক্সিডেন্ট ”

” ওহ ”

ফর্মালিটি শেষে ডাক্তার অ’টি তে ঢুকেছে প্রায় এক ঘন্টা , আমি আর ইলু অ’টির সামনে , টেনশনে হাত পা বরফ হয়ে আসছে , চোখ ফেটে কান্না আসছে , টুপ করে চোখ থেকে জল মাটিতে গড়িয়ে পড়লো , একটা অচেনা অজানা ছেলের জন্য এতো চিন্তা ! আমি খুব করে চাইছি আল্লাহ র কাছে যেন ছেলেটা সুস্থ হয়ে যায়, কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয় ,

প্রচন্ড অস্থিরতায় ভুগছি , অবশেষে অ’টির লাল লাইট নিভে গেলো

ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে এলেন৷

” কি অবস্থা ডাক্তার আমার ভাইয়ের ? ”

” আল্লাহ র অশেষ রহমতে এবারে র মতো বেচে গেছে , সময় মতো না পৌছালে হয়তো বাচানো সম্ভব হতো না , তুমি মেয়ে অনেক সাহসী , খুব ভালোবাসো ভাইকে তাই না , ব্রেভ গার্ল, ডোন্ট ওয়ারি ভাই ঠিক হয়ে যাবে , কিছু দিন রেস্ট করুক , আর গলায় যেহেতু আঘাত পেয়েছে কথা বলতে কয়েক দিন সমস্যা হবে তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ”

ডাক্তারের কথায় আনমনেই আমার ঠোঁটে হাসির রেখা ভেসে উঠলো ,

” ভেতরে যেতে পারি ডাক্তার ? ”

” আবাদত ঘুমাচ্ছে , কাল সকালে র আগে ঘুম ভাঙবে না , তবে দেখে আসতে পারো ”

” ধন্যবাদ ডাক্তার ”

” মাই প্লেজার ”

বলেই ডাক্তার চলে গেলো , আমি ইলমির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম , ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালাো সব ঠিক হয়ে যাবে ,

_______________

সকাল প্রায় ৭ টা বাজতে চলল ,

তালুকদার ভিলায় কারো চোখে ঘুম নেই , ড্রয়িং রুম জুড়ে সবার আনাগোনা , তাপস তালুকদার সোফায় নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে , মেহেরিন শিকদারের চেহারায় ও ছেলের জন্য অস্থিরতা , তাহরিম তালুকদার মোবাইল হাতে নিয়ে পায়চারি করছে পুরো রুম জুড়ে কাল রাত থেকে তানজিমের ফোন বন্ধ , রাতেও বাসায় আসে নি , যে ছেলে এক ঘন্টা বাসায় না থাকলে মায়ের কাছে সত্তর বার ফোন করে সে ছেলের ফোন কাল রাত থেকে অফ!

পুরো শহর জুড়ে পুলিশ ফোর্স লাগানো হয়েছে , কিছু ক্ষন আগেই একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে জানিয়েছে , তাদের গাড়ি টা মহাসরকের পাশে খুব ই বাজে ভাবে ভেঙে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে কিন্তু সেখানে তানজিম ছিলো না ,

এলাকার লোক জন থেকে শোনা গেছে গত কাল রাতে প্রায় আটটার দিকেই এদিকে গাড়ি ট এক্সিডেন্ট করে আর পরে থাকা ছেলে টাকে একটা মেয়ে রিকসায় করে হসপিটালে নিয়ে যায় , কিন্তু কোন হসপিটালে নিয়ে গেছে কেউ জানে ,,

চলবে ….