ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১৮+১৯

0
492

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_18
_________________

” বাসায় আসা মাত্র ই তুই আমাকে এই জঙ্গলে নিয়ে আসলি কেন তাহরিম ? দেখ আমি এক কাপড়ে চলে আসছি , বড় মা র সাথে ও দেখা করতে পারলাম না , এবার বল কেন আনলি এখানে ? এই ভুতের বাড়ি তে তোর কি কাজ?

কিছু একটা ভেবে ,

ওয়েট অ্যা মিনিট ব্রো , তুই তো এখন মন্ত্রী তাহলে কি মন্ত্রী গীরি ছেড়ে এখন ভুত নিয়ে তন্ত্র সাধনা করার ইচ্ছে আছে না কি ? হুম?

বেশ সিরিয়াস ভঙিতে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে ভ্রু জোড়া উঁচু করে কথা টা বলে উঠলো রুদ্র ,

রুদ্রের হেয়ালি বুঝতে পেরে তাহরিম বলল,

” ইয়াপ ব্রো ইউ আর রাইট , বাট সামথিং মিস্টেক আছে , এটা ভুত দিয়ে তন্ত্র সাধনা না , বিয়ের সাধনা হবে বয়স তো আর কম হলো না এবার তো বিয়ে সাদি করতে হবে , তবে ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত কোন কাজ কি আমি তাহরিম তালুকদার একা করেছি না কি সব সময় আমার নামের সাথে আরেকটা নাম জুড়ে থাকতো , রুদ্র তালুকদার, তাই না ব্রাদার ? ”

” বিয়ের সাধনা মানে কি ? তোর কি গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি ? ”

” ছে ছে গার্লফ্রেন্ড থাকবে কেন ? ‘

” তাহলে ? আর ওই মেয়ে দুটোই বা কে ?

আর জানিস ! মেয়েটা এত ভীতু ! আমাকে দেখেই ভুতত বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো , এতটা ভীতু আমি আগে দেখি নাই ! ”

রুদ্রের কথা শুনে তাহরিম ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , ছাদের দেয়াল এ হেলান দিয়ে পান্জাবীর পকেটে হাত দিয়ে বলল ,

” আমার এখানে আসার দুটো কারণ ,
এক আমি ওই মেয়ে দুটো দেখলি না ? যেই মেয়েটা সাদা রঙের জামা পড়া ওই পূর্না , এই তোর ভবিষ্যত ভাবি আর সাথে যে মেয়েটা , যাকে তুই ভীতু ডাকলি সে হলো ইলমি, বুঝলি ? পেশায় দুজন ই সাংবাদিক , বিভিন্ন আর্টিক্যাল এর জন্য ও অনেক ক্ষমতা বান লোকের নজরে এসেছে পূর্ণা,
, যে কোন সময় যে কোন ভাবে ক্ষতি করে দিতে পারে , এখন আবার কাজ করছে মন্ত্রীদের নিয়ে তার উপর ওর কাছে এমন অনেক তথ্য ও আছে, যা দিয়ে অন্যান্য মন্ত্রী দের বিপদে ফেলতে পারে এমন কি ক্ষমতা চ্যুতি ও হতে পারে , তাই অনেকে ই ওকে মে’রে ফেলতে চায় , তাই ওকে সারাক্ষণ নজর বন্দী করে রাখতে হয় না হলে কখন যে কি হয় বলা তো যায় না , মেয়েটা বড্ড বেশি সাহসী আর কনফিডেন্সের কথা আর কি বলব ”

তাহরিমের কথা শুনে রুদ্র ওষ্ঠ দুটি ফাক করে ফোস করে শ্বাস ছাড়লো , সামনে র দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল ,

” হুম বুঝলাম , আর দ্বিতীয় টা কি ? ”

রুদ্র র প্রশ্ন শুনে বেশ চিন্তিত স্বরে বলল ,

” এই পরিত্যক্ত জমিদাার বাড়িটা ভুতুড়ে বাড়ি নামে পরিচিত , এখানে নাকি কি সব ভুত প্রেতের আড্ডা , কিন্তু বেশ কিছু আর্টিক্যাল আমি দেখেছি যেখানে কোথাও স্পষ্ট কোন তথ্য দেওয়া নেই এই ব্যাপারে , আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে অন্য কিছু হয় , তাই তদন্তে আমি নিজে ই এলাম , একে তো পূর্ণ র নিরাপত্তা আর তদন্ত , দুটোই ”

” হুমম বুঝলাম ! ”

_______________

” আলো নেভালি কেন পূর্ণ ? ”

আমি ভ্রু কুচকে মোমের দিকে তাকালাম , মোমটা শেষ হয়ে গেছে তাই নিভে গেছে হয়তো ,

” নেভাই নি , নিভে গেছে , মোমটা হয়তো শেষ তাই , আরেকটা জ্বালাবো ? ”

ইলমি আমার থেকে খানিক টা দুরেই বসে ছিলো , ব্যগে মাথা দিয়ে শুতে শুতে বলল ,

” থাক লাগবে না , পরে যদি কাজে লাগে তখন ! তারচেয়ে বরং আরেকটা থাক , তুই ও আমার পাশে সুয়ে পড় ”

আমি কিছু একটা ভেবে শুয়ে পড়লাম ওর পাশে তবে কারো চোখেই ঘুম নেই ,

বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলাম আমরা,

________________

হঠাৎ দুর থেকে বেশ অনেক গুলো আলোর রেস দেখতে পেয়ে রুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়ালো , মনে হচ্ছে আলো গুলো ধীরে ধীরে এই জমিদার বাড়ির দিকে ই এগিয়ে আসছে ,

রুদ্র, তাহরিম কে ইশারা করতেই তাহরিম ঘুরে পিছনে তাকালো ,
ধীরে ধীরে ওর ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো ,

” কিছু বুঝতে পারছিস তাহরিম? ”

তাহরিম সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল ,

” হুমম , বুঝব না কেন ? ”

” অপেক্ষা কর এরা এখানেই আসবে ”

তহরিম কোন কথা বলল না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ,

বেশ কিছু ক্ষন পর আলোগুলো বেশ কাছাকাছি চলে এলো , কিছু মশাল আর টর্চ লাইট হাতে প্রায় ১৫-১৬ জন দাড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির ঠিক সদর দরজার সামনে , ছাদ থেকে অনেক টায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে জায়গা টা ,

অন্ধকারে কারো মুখ ই স্পষ্ট নয় তবে এদের মাঝে কয়েকজন কে বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে তাহরিম এর , তবে যাদের অনুমান করছে তারা যদি হয়ে থাকে তবে যব্বেশ একটা ক্লু পাবে সে ,

লোকগুলো সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো , এদের মাঝে একজন বেশ মাতব্বরি করছে , তাহরিম বুঝতে পারলো এই লোকটা ই মনে হয় ওদের বস হয়তো ,
তবে এই লোকটাকেই যেন সব চেয়ে বেশি চেনা চেনা মনে হচ্ছে ,

তাহরিম দাঁড়িয়ে দেখছে আসলে এরা আসলে করছে টা কি ,
_________________

গেইট খোলার আওয়াজ পেয়ে ধরফর করে উঠলাম আমি আর ইলু , দুজন দু’জনে র দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালাম ,

আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজাটার দিকে উদ্দেশ্য দরজার ফাক দিয়ে দেখার চেষ্টা করা, কি হচ্ছে বাহিরে ,

বেশ অনেক লোকজন দেখে আমি বেশ অবাক হলাম , এত রাতে এরা এখানে কেন , আমি দেখতে দেখতে ই লোকগুলো দোতলায় উঠে গেলো , আমি ব্যগ থেকে ক্যামেরা টা কাধে তুলে নিয়ে ইলুর হাত ধরে বাইরে আসলাম আমার কাধে আমার ব্যগ আর ইলুর কাঁধে ইলুর ব্যগ , উদ্দেশ্য কোন প্রমান জোগাড় করা , আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালিয়ে যাওয়া ,

এতক্ষণে এত টুকু বুঝতে পারছি যে এরাই আসলে এখান কার নাম করা ভুতের ছদ্মবেশ ধারী মানুষ ,

আমি নিঃ শব্দে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম আমার পিছনে পিছনে ইলু ও উঠলো ,

আলো টা দোতলার সেই শেষ ঘর থেকে ই আসছে , সাথে লোকগুলোর কথা ও ভেসে আসছে , আমি ক্যামারা তে ভিডিও অন করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সেদিকে পিছনে ইলু আসছে ওর হাতেও ওর ক্যামেরা , বাই এনি চান্স একটা নষ্ট হয়ে গেলো সব সব তো জলে যাবে তাই সেফটির জন্য ও ভিডিও করছে ,

” বসস , বেছে বেছে যব্বেশ একটা জায়গা বের করেছেন তো , পুলিশ কেন , এই জন্মে কেউ কখনো খুজে ই পাইবো না আর কেউ তো আসবই না এখানে ভুতের ভয়ে ”

বিপরীত দিকে ফিরে থাকা লোকটা হেসে উঠলো , পিছনে দিকে ফিরতে ফিরতে বলল ,

” তোদের মতো গরুর ছাগলের বুদ্ধি দিয়ে তো আর রাজনীতি করা যায় না ! বুদ্ধি লাগে বুদ্ধি , রাজনীতি করতে হলে বুদ্ধির সাথে কুবুদ্ধি র ও প্রয়োজন আছে ”

বলেই চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলল ,

লোকটাকে দেখে আমি আর ইলু ভরকে গেলাম , সাদা রঙের পান্জাবী , পাজামা পড়া , মাথায় টুপি আর গাল ভর্তি আধা পাকা দাড়ি শাফিন মিয়াজি , তাহরিম তালুকদার এর আগে উনিই ছিলেন এলাকার মন্ত্রী আর প্রভাব শালী ব্যক্তি , তবে এ বছর তাহরিম তালুকদার এর জন্য ই উনার ক্ষমতা চ্যুতি হয় যার ফলে বেশ রাগ উনার তাহরিম তালুকদার এর উপর ,

বেশ ভালো মানুষ বলেই জানতো সবাই উনাকে ,

এই তাহলে উনার আসল রুপ!
নাহ্ আর ভাবতে পারছি না , সুন্নতি লেবাসের ভিতর এই কোন রুপ উনার!

” বস যেই মাল গুলো বন্দরে আসবে ওগুলো রিসিভ করতে কি আপনি যাবেন? নাকি আমাদের কেউ গেলেই হবে ? ”

” না রুস্তম , আমি যাবো , প্রায় ১ কোটি টাকার মাদক আছে কোন ভাবে যদি পুলিশ জানতে পারে তাহলে আর রক্ষা নাই , তোদের উপর এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারছি না , তাই আমি যাবো ”

” মাদক কি সব এই খানে আনবেন বস ? ”

” নাহ , মাটির নিচে চালান করবি , ই*য়াবা , ফেন*সিডিল , আর প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিদেশি ম*দ এই চালানে । কম ই আনছি , এগুলো বিক্রি করতে পারলে পরবর্তী চালানে ৪ কোটির মতো আনমু , বুঝছচ ? ”

বলেই শাফিন মিয়াজি আধা পাকা দাড়ির মাঝে হাত বুলাতে লাগলো ,

হঠাৎ কারো নজর আমাদের দিকে আসতেই আমি ছিটকে সরে গেলাম ,

” কে? কে ওখানে ? ”

কারো চিৎকারে আমি আর ইলু ভরকে যায় , দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম , সদর দরজা খুলা , আমি আর ইলু জঙ্গলের মাঝে ই দৌড় লাগালাম , আমার এক হাতে ক্যামেরা আর অন্য হাতের মুঠোয় ইলুর হাত ,

পিছনে থেকে ওরা দৌড়ে আসছে , আজ যদি ধরা পরি আর রক্ষে নেই , এখানেই জীবনের গল্পের সমাপ্তি ঘোষিত হবে ,

চলবে ,

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_19

_____________________

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আমি আর ইলু দৌড়াচ্ছিলাম , হঠাৎ পিছনে থেকে কোন শব্দ না পেয়ে পা থামালাম , বেশ অনেক টা ঘেমে গেছি , ইলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও বেশ হাঁপাচ্ছে ,

” ম্যারাথন দৌড় দিসি রে পূর্ণ , এমন দৌড় আমি আমার বাপের জন্মে দেই নাই ”

আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করতে করতে বললাম ,

” এখানো কিন্তু আমরা সেইফ না ইলু , কখন জানি আবার এখানেও চলে আসে ! আমরা কিন্তু জঙ্গলের প্রায় অনেক টায় ভেতরে, বের হবার রাস্তা খুজতে হবে ”

ইলু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল , আমার হাত থেকে পানির বোতল নিতে নিতে বলল,

” হুম , দাড়া পানি খেয়ে একটু জিরিয়ে নেই তারপর বাকি সব ”

ইলু পানি খেয়ে বোতল টা আমার হাতে দিলো , আমি ও একটু গলা ভিজিয়ে নিয়ে ব্যগে রেখে দিলাম ,

হঠাৎ কিছু পাতার মর্মর শব্দে আমি আর ইলু চুপ করে যায় , উঠে দাড়ালাম আমি , হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠলো ,

” মজনুরে পাইছি ! মাইয়া দুইডা বেশি দুর যাইবার পারে নাই , এই খানেই আছে , ওই যে সামনে ! ”

বলতে বলতেই কিছু লোক আমাদের কাছে আসতে নিলে আমি আর ইলু দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ইলু আর আমি দৌড় লাগালাম কিন্তু হাতের বাধন টা কখন জানি খুলে গেলো বুঝতে ই পারি নি , আমি আর ইলু দুজন দু দিকে চলে গেলাম , আমিও দৌড়াচ্ছি ইলুও দৌড়াচ্ছে ,

দুজন দুদিকে যাওয়ার ফলে লোক গুলো ও দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে , কিছু লোক আমার পিছনে আর কিছু লোক ইলুর পিছনে ,

হঠাৎ পায়ে কাটার মতো কিছু ফুটলো , জুতোর উপর দিয়ে কিভাবে কাটা ফুটলো বুঝতে পারলাম না , বরই গাছের চিকন ডালা মনে হচ্ছে , আমি কিছু চিন্তা না করে পা থেকে কাটা যুক্ত ডালা টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম , কিন্তু কোন ভাবে ই যেন আর দৌড়াতে পারছি না , কষ্ট হচ্ছে ভিষণ , লোক গুলো ও মনে হচ্ছে কাছাকাছি চলে এসেছে , আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াচ্ছি , একটা বড় গাছের নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা হাত দিয়ে আমার হাত হেচকা টানে গাছের আড়ালে নিয়ে গেলো কেউ , হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেলাম আমি , আমার মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে সে , যেন কথা বলতে না পারি ..
______________

এদিকে ইলু দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে , পিছনে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো এখানো ওর পিছনে , ভিষণ ক্লান্ত লাগছে তার আর সম্ভব না এবার মনে হয় ধরাই পরে যাবে ,

হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকালো সে , অন্ধকারে তেমন কিছু বোঝার না গেলেও সাদা রঙ টা খুব ভালো ই বোঝা যায় ,

ইলু খেয়াল করলো তার হাত চেপে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের শার্ট পরা লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে তার হাত হেচকা টানে দৌড় শুরু করলো, বেচারি ইলু কিছু বোঝে উঠার আগেই যেন সব ঘটে গেছে ,

বেচারি পড়তে পড়তে বেঁচেছে , লোকটা দৌড়াচ্ছে আর ইলু অবাক দৃষ্টিতে তা দিকে তাকিয়ে আছে ,

” মুখ বন্ধ করো আর তাড়াতাড়ি পা চালাও গর্ধব মেয়ে এক্ষুনি ধরা পরে যেতে ! ”

কথাটা কানে আসতেই ইলু মুখ বন্ধ করে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল ,

” আপনি কে ? আর আপনি এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন ? আপনাকে ও কি তাড়া করেছে ওরা ? ”

” এটা বোঝার ক্ষমতা যদি তোমার থাকতো তাহলে তো ভালো ই হতো , এখন কথা বলো না , আমার সাথে পা বাড়াও ”

দুরে কোথাও আলো দেখতে পেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল রুদ্র , নেহাত মেয়ে টা বিপদে পড়েছে নয়তো কোন মেয়ের হাত ধরা! সে তো ছায়া ও মারাতো না

দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা দুর চলে এসেছে রুদ্র আর ইলমি , আবাদত তারা হাটছে ইটের রাস্তার উপর দিয়ে , আশেপাশে কোথাও কোন বাড়ি নেই , আর না দোকান , সেই একটা বাতি দেখা গিয়েছিল তাও ওটা পরিত্যক্ত ল্যাম্প পোস্ট ,

” আপনি কে বললেন না তো ? ”

রুদ্র ইলুর কথার কেন উত্তর না দিয়ে সোজা হাটছে যেন মনে হচ্ছে তার আশেপাশে মানুষ বলে কোন শব্দ ই নেই ,

ইলু ভ্রু কুচকে এক পলক রুদ্র র দিকে তাকিয়ে বলল ,

“আপনি কি রোবট ? ”

এবার রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,

” হে হে না মানে আপনি রোবটের মতো সোজা হাটছেন তো আর কেন কথা ও বলছেন না যেন রোবট ! আচ্ছা রোবট দের কি নির্দিষ্ট পরিমান শব্দ সেট করে দেয় নাকি ? যেন তারা সেই পরিমান থেকে এক অক্ষর ও বেশি বলতে না পারে? আপনি জানেন ? ”

রুদ্র তা ও কোন কথা বলছে না যেন কথা বললেই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে এমন ভাব ,

রুদ্র কে পাত্তা না দিয়ে ইলু বলতে লাগলো ,

” এখানে আমাকে এনেছেন কেন ? হায় পূর্ণ টা ও যে কোথায় ? না জানি ওরা ধরেই ফেলেছে না কি ? ছাতার মোবাইলে ও নেট নাই ঠিক এ জন্য ই না বাংলাদেশ আমার পছন্দ না যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলো ৭ জি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সেখানে বাংলাদেশ ৪জি আর তাও যদি সব জায়গায় পাওয়া যেত , রাস্তায় যদি ৪ জি থাকে , বাড়িতে থাকে ৩ জি , বেডরুমে ২জি আর খাটের ওপর ইনসার্ট সিম ! কেমন ডা না লাগে ”

এবার রুদ্র বেশশ বিরক্ত হলো , হুট করে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

” এই যে মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার , আপনি যদি দয়া করে আপনার মহা মূল্য বান রেকর্ডার টা অফ রখতেন তাহলে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকতাম ”

” মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার ? এটা আবার কেমন নাম ? আর কে এটা ? ”

ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে খুজতে কথা টা জিজ্ঞেস করলো ইলু ,

এখন রুদ্রের নিজের কপাল দেয়ালে ঠুকতে ইচ্ছে করছে , কোন পাপে যে এই সেন্টি মেন্টাল কে সাহায্য করতে এসেছিলো !
________________

এদিকে লোক গুলো এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে খুজতে চলে গেলো , আমি চোখ মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে আছি , লোক গুলো চলে যেতেই সে আমার মুখ ছেড়ে দিলো ,

আমার মুখ ছাড়তেই আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম ,

” আপনি কি মানুষ ? এত জোরে কেউ ধরে ? আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতাম ”

আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে কিছু ক্ষন চুপ থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল ,

” তোমাকে এখন আমার থাপড়াতে ইচ্ছে করছে ! কষিয়ে দুটো দেই ? বেশি না মাত্র দুটো ই ! ”

” কেন ? ”

” এমনি , আমার ইচ্ছে ! ”

” কেন মন্ত্রী সাহেব ? আমি কি করলাম ? ”

আমার কথা শুনে উনি বেশ হকচকিয়ে গেলেন , সাথে সাথে ই মুখে হাত দিয়ে দেখলেন মাস্ক ঠিক আছে কি না ! নাহ্ সব তো ঠিক ই আছে তাহলে ?

” এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , আপনার মাস্ক ঠিক ই আছে , ইনফেক্ট পারফিউম টার গন্ধ টাও চেঞ্জ তবে কি বলুন তো , সাংবাদিক হতে হলে বুদ্ধি থাকতে হয় , আমি এত বেশি বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ না হলেও ঘটে কিছু টা বুদ্ধি আমার আছে , বেস্ট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে ও নাম আছে আমার তাই মানুষ চিনতে আমার খুব একটা ভুল হয় না ! ”

আমার কথা শুনে উনি হালকা শব্দ করে হেসে উঠলো , মাস্ক খুলতে খুলতে বলল ,

” বাহ্ বেশ বুদ্ধি তোমার মিস মিফতাহুল পূর্ণা , আই এম ইমপ্রেস্ড ”

উনার কথা শুনে আমি মুখ বেকিয়ে বিরবির করে বললাম ,

” ঘোড়ার ডিমের ইমপ্রেস্ড ”

উনি আমার কথা শুনে হাসলেন তবে কিছু না বলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে ফ্লাস লাইট টা অন করলেন ,

হঠাৎ আমার হাত ধরে গাছের শিকড়ে বসিয়ে উনি নিচে বসে আমার ডান পা টা উনার পায়ের উপর রেখে পায়ের নিচ টা দেখতে লাগলেন , ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে কাজ করে চলেছেন উনি ,

আমি পা টা সরাতে সরাতে কিছু বলতে যাবো , আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার পা টা চাপ দিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,

” ডোন্ট , যা করতে চাচ্ছো তা করলে খবর আছে , আর কোন কথা আমার কানে আসলে কোলে তুলে ঠাস করে নিচে ফেলে দিবো পরে ভাঙা কোমড় দিয়ে বসে বসে রেললাইনের ধারে মুড়ি বিক্রি করতে হবে ”

উনি বেশ খানিকক্ষণ আমার পা টা ভালো ভাবে দেখে বলল ,

” হুম কাটা নেই তবে রক্ত পড়েছে আর বেশ খানিকটা কেটে গেছে রক্ত পরা যদিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে , পানির বোতল টা দাও ”

” হুম ? ”

” কানে শুনতে পাও না , পানির বোতল দিতে বললাম ”

আমি কিছু না বলে পানির বোতল টা বের করে দিলাম ,
উনি পানি দিয়ে আমার পা ট পরিষ্কার করে , পকেটে থেকে একটা রুমাল বের করে আমার পায়ে বেধে দিলেন , বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন ,

” আবাদত ফাস্ট এইড নেই , হসপিটালে গিয়ে ড্রেসিং করে ব্যন্ডেজ করলেই হবে ! ”

উনার কথা ই আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,

” এই টুকু কাটায় ব্যান্ডেজ ? এটা তো এমনি ই ঠিক হয়ে যাবে ”

আমার কথা শুনে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,

” গর্ধবের মতো আরেকটা কথা বলবে ! তখন কার অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করে দিবো তোমার দু গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় দিয়ে , সোও নিজের ভালো চাইলে চুপ থাকো ”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে