কথাটা বলতে বলতেই আমার চোখ ছলছল করে উঠলো, বৃষ্টির ঝাপটায় হয়তো চোখের পানি গুলো দৃশ্যমান হয় নি তবুও যেন মন্ত্রী সাহেব বুঝতে পারলেন আমার মন খারাপের আভাস।
আমার মাথা টা আলতো হাতে চেপে ধরলেমন ঠিক তার বুকের মাঝে পারলে হয়তো ভেতরেই ঢুকিয়ে রাখতেন, আমি নড়চড় করলাম না আর না কোন কথা বললাম। ঘাপটি মেরে রইলাম তার বুকের মাঝে।
ক্ষনিক বাদে মন্ত্রী সাহেব চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমি চোখ বন্ধ করে আছি।
” শোনো মেয়ে আমি তাহরিম তালুকদার বেঁচে থাকতে তোমার শরীর আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন সত্তা স্পর্শ করার সাহস করবে না, তুমি আমার মানে একান্তই আমার, যার বিন্দু পরিমাণ ও আমি কারো সাথে শেয়ার করবো না ”
” মন্ত্রী সাহেব বেশি বেশি সব কিছু ই বিষ, বেশি অবহেলা করলে যেমন মানুষ টা কে ধরে রাখা যায় না তেমনি বেশি ভালোবাসলে মানুষ টা আর নিজের থাকে না, জানেন মন্ত্রী সাহেব, আমার ভালোবাসা তে ভীষণ ভয় হয়, আমি যে অ*পয়া মেয়ে যাকে ভালেবাসি তারই ক্ষতি হয়, চলে যায় আমার থেকে বহুদূর, ছোট বেলা থেকে একাই বড় হয়েছি, একা থাকতে শিখেছি, জানেন কখনো হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে কেউ আসে নি ধরে উঠাবে বলে, বসে বসে সেভাবে ই কেঁদে কেটে উঠে দাঁড়াতাম। এতিম দের কেউ ভালোবাসতে চায় না মন্ত্রী সাহেব! ”
বলতে বলতেই হুরহুর করে কাদতে লাগলাম। মন্ত্রী সাহেব ও কিছু বললেন না আমাকে আরোও শক্ত করে চেপে ধরে আমাকে আমার মতো করে কাঁদতে দিলেন।
আমার কান্না কিছু টা কমে আসতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমার অতীত হয়তো আমি মুছে দিতে পারব না, সেই ক্ষমতা খোদা আমায় দেয় নি, তেমন কোন ক্ষমতা থাকলে আমি সবার আগে তোমার অতীত টায় মুছে দিতাম! কিন্তু এটা সম্ভব না তবে আই প্রমিস ইউ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ এ তুমি আমাকে তোমার সঙ্গী হিসেবে পাবে, বর্তমান দিয়ে তোমার অতীত ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করব”
আমি কিছু বললাম না,
উনি আমার দিকে ঝুঁকে উনার ঠোঁট আমার কপাল স্পর্শ করে বলল,
” বউজান”
” হুম”
” এবার একটু হাসো না! ”
আমি চোখ উঁচিয়ে তার দিকে তাকালাম,
উনার করুন চাহুনি আমার দৃষ্টি গোচর হলো,
আমি ঠোঁট এলিয়ে হাসলাম, যা দেখে উনার ঠোঁট ও প্রসারিত হলো।
উনি আলতো হাতে আমার নাক টেনে বলল,
” এভাবেই সবসময় হাসবে বুঝলে টুনটুনি! ”
” টুনটুনি? আমি কি ছোট বাচ্চা যে টুনটুনি ডাকছেন? ”
” উহুম তুমি তো বাচ্চা নও, তুমি তো আমার বাচ্চার মা হবা বউজান!”
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে হাসে,
আমি বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম।
আমরা দুজন ই ভিজে জুবুথুবু অবস্থা। প্রায় এক ঘন্টা যাবত ভিজছি এখন বেশ শীত শীত করছে উনি আমাকে রিকসায় নিয়ে ঠিক কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। রিকসা টা একটা আধা পাকা রাস্তা দিয়ে চলছে চারপাশে তাকিয়ে দেখি
বেশ গাছপালা আছে, হঠাৎ একটা ফার্ম হাউস এর সামনে এসে রিকসা টা থেমে যায় , আমি অবাক হয়ে তাকালাম ফার্ম হাউস টার দিকে।
উনি রিকসা থেকে নেমে আমাকে হাত ধরে নামালেন। আমি ফার্ম হাউস টা দেখছি, বিশাল বড় ফার্ম হাউস। উনি আমার হাত টেনে ধরে গেইটের সামনে দাড় করালেন,
আমার নজর গেলো গেইটের পাশে বড়ো বড়ো অক্ষরে ফার্ম হাউস টার নাম লেখা ” তালুকদার কটেজ ”
আমি অবাক হয়ে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম, আমার দৃষ্টি লক্ষ্য করে উনি বললেন,
” এটা আমার দাদাজানের ফার্ম হাউস, উনি এখানেই বেশি সময় ব্যয় করতেন, উনি মারা যাবার পর আমাদের সচরাচর এখানে আসা হয় না ”
বলেই উনি আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন, তখন অবশ্য ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছিলো তবে আকাশ টা বেশ কালো, হয়তো আবারো বৃষ্টি নামবে।
উনি আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একজন লোক ছাতা হাতে দৌড়ে এলেন,
” একি গোও বাবা ভিজ্জা গেছো গা দি, আমারে ডাক দিতা আমি ছাতা লইয়া আইতাম ”
উনি চাচার দিকে তাকিয়ে বলল,
” না না চাচা সমস্যা নেই আমি আর পূর্না ইচ্ছে করে ই ভিজেছি, তুমি এতো ব্যস্ত হইও না ”
উনি একটা রুমে গিয়ে কিছু শপিং ব্যাগ এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
” নাও তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও নয়তো ঠান্ডা লাগবে ”
আমি নাক টানতে টানতে বললাম,
” ঠান্ডা লাগবে না অলরেডি লেগে গেছে আর সব দোষ আপনার, আপনার জন্য ই ঠান্ডা লাগছে ”
উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
” ওকে সমস্যা নেই ঠান্ডা লাগলে, রাতে সব হঅঅটট করে দিবো জানন”
বলেই প্যাকেট গুলো আমার হাতে গুজে দিয়ে নিজে চলে গেলেন চেঞ্জ করতে,
আমি প্যাকেট গুলে হাতে নিয়ে ভ্যাবলার মতো কিছু ক্ষন দাঁড়িয়ে কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করলাম, কথা গুলো বুঝতে পেরে একটা বড়ো সড়ো একটা ঢুক গিলে বিরবির করে বললাম,
” কি বলে গেলো এটা! অসভ্য ছিইই”
আমি দ্রুত অন্য রুমে ঢুকে গেলাম, প্যাকেট খুলে দেখি একটা সাদা রঙের ফিনফিনে পাতলা শাড়ি, সাথে সাদা ব্লাউজ আর সব জুয়েলারি ”
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম শাড়ির দিকে এটা ঠিক কোনটা আচল বুঝতে পারছি না সব দিক দিয়ে একই,
সারা রুম খুজেও অন্য কিছু পেলাম না পরার জন্য অগত্যা ই গোসল শেষ করে এই বদ মার্কা শাড়ি পরতে হলো, বদমার্কা এই জন্য যে যতকিছু ই করি না কেন এতো পাতলা শাড়ি ঠিক সব দিক দিয়ে সামাল দেওয়া যাবে না। তবে একটা সাদা রঙের ব্লেজার আছে, সেটাই গায়ে জরালাম।
আমি শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম, উহুম খারাপ লাগছে না আবার সেইই ভালো ও লাগছে না!
ঠিক তখন ই বাইরে থেকে চাচা ডেকে বললেন,
” বউমনি তোমাদের খাবার টা টেবিলে দিলাম , আমি বাড়ি তে চলে যায়, বাড়িতে বউ একলা আছে ”
বলেই চাচা চলে গেলেন,
আমি দরজা খুলে বের হয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আট টা বাজতে চলল,
খুব বেশি তাড়াতাড়ি যে এটাও না তবে এতো সময় চলে গেলো টের ই পেলাম না,
আশেপাশে তাকিয়ে ও মন্ত্রী মশাই এর কোন পাত্তা পেলাম না, একদম লা পাত্তা। কি আর করার আবার রুমে গিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারলাম না ।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো, আমি ধীরে ধীরে উঠে বসলাম, আশেপাশে তাকিয়ে এখনো মন্ত্রী সাহেব এর কোন পাত্তা নেই, এবার বেশ অবাক লাগলো, হলো টা কি এই মন্ত্রীর?
আমি ধীরে ধীরে বাইরে এলাম, বেশ খিদে ও পেয়েছে , বাইরে এসে প্রথমেই নজরে এলো দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ টা বেজে ২৫ মিনিট।
আমি অবাক হয়ে আশেপাশে তাকালাম,
হঠাৎ ই সব লাইট অফ হয়ে গেলো, চারপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না, সব যেন আধারে ডুবে গেছে, সব নিকষ কালো, অন্ধকার! আমার অন্তরাত্মা হুট করেই কেঁপে উঠলো! মনে হতে লাগলো খারাপ কিছু হবে না তো?
সকালের সূর্যের তীর্যক আলো চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুললাম। আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে গভীর ঘুমে মগ্ন মন্ত্রী সাহেব। মনে হচ্ছে আমি তার কোলবালিশ! এত জোরে চেপে ধরে আছে। না আমি হাত ধরাতে পারছি আর না শরীর, কেমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাটা ছয়টার ঘরে গিয়ে টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন সকাল ছয়টা।
আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, এখন সত্যি সত্যি ই নিজেকে বালিশ বালিশ ফিল আসছে।
আমি উনার হাত টা সরাতে যাবো কিন্তু উনি ঘুমের মধ্যে ই চেপে শক্ত হয়ে আছেন যার কারণে হাত সরাবো কি, নড়াতেও পারলাম না, অগত্যা ই চুপ করে শুয়ে রইলাম। কখন যে আবার ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারব না।
ফের আবার যখন ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট, সাইডে তাকিয়ে মন্ত্রী সাহেব কে খুঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু আশে পাশে তাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে উঠে বসলাম।
আশেপাশে নজর যেতে ই ওয়াসরুম থেকে পানির শব্দ আসছে মানে উনি গোসল করছেন কিন্তু ভাবনা তো এটা না, উনি গোসল করছেন ঠিক আছে কিন্তু পরবেন টা কি? কাপড় তো নাই!
আমি এটা ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমের দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। উনার দিকে চোখ যেতেই আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নাকে মুখে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কারণ উনার পরনে একটা সাদা টাওয়াল ছাড়া কিচ্ছু নেই। উনি কিছু ক্ষন ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা এগিয়ে এসে কাঁথা ধরে টান দিয়ে বলল,
” কি হয়েছে ঘুম শেষ হয়নি? আবার শুয়ে পড়লে কেন? তাড়াতাড়ি উঠো বাসায় যেতে হবে ”
” কি হলো যাচ্ছো না কেন পূর্ণ? আর কি বিরবির করছো আজব! ”
” আমি উঠবো না যান তো এখান থেকে, আর উ*লঙ্গ ঘুরছেন কেন নির্লজ্জ, আপনার লজ্জা নাই বা থাকতে পারে আমার আছে, যান তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করেন ”
আমার কথা শুনে তাহরিম নিজের দিকে তাকালো,
সে এতক্ষণে বুঝতে পারলো পূর্ণার এ অদ্ভুত বিহেভিয়ার এর কারণ,
সে বাঁকা হেসে কাঁথা ধরে আরেকটু জোরে টান দিলো, যার ফলে কাঁথা টা তাহরিমের হাতে চলে আসে,
” উফফ কি শুরু করছেন, যান তো আর চেঞ্জ করে আসেন ”
” তুমি এমন করছো কেন পূর্ণ? আমি তো তোমার হাসবেন্ড তাই না? দেখার অধিকার আছে তোমার, তুমি বললে টাওয়াল টাও খুলে দিতে পারি ”
বলেই টাওয়াল টা আমার মুখে ছুড়ে মারে,
আমি দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে আছি,
” ছিইই, নির্লজ্জ মন্ত্রী সাহেব যান না এখান থেকে ”
তাহরিম বিছানার উপর বসে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,
” চোখ থেকে হাত সরাও”
আমি আরোও জোরে চেপে ধরে বললাম,
” না কিছুতেই না ”
তাহরিম এবার ধমকে উঠে বলল,
” সরাও বলছি! ”
আমি চোখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,
সামনে তাকিয়ে আমি হতবাক! এই লোক তো দেখি পুরো রেডি, ব্লু পাঞ্জাবি আর সাদা রঙের পাজামা আর চুল গুলো এলোমেলো, ফর্সা শরীরে নীল রঙ টা যাস্ট অসাধারণ লাগছে যদিও তাকে যেই রঙ পরে সেই রঙেই অসাধারণ লাগে!
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,
” আপনি? ”
উনি এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
” কি আমি? ”
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
” আপনি পাঞ্জাবি কোথায় পেলেন? ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাকে কি তোমার মতো মাথা মোটা মনে হয়? আর এমন মাথা মোটা থাকলে আমার আর রাজনীতি করতে হতো না, কাল রাতে আপনি যখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন আমি তখন বাইরে থেকে আপনার আর আমার ড্রেস আনিয়ে ছিলাম ”
বলেই আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ গুজে দিলেন,
আমাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন ,
” কি? ”
আমি আমতাআমতা করে,
” আবব নাহ্ কিছু না ” বলেই শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লাম। এই লোক এমন অদ্ভুত কেন? আর সব অদ্ভুত গীরি আমার সাথে ই কেন দেখাতে হবে? হুয়াই মি?
বেশ অনেক ক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু পূর্ণা এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে তাহরিম গিয়ে ওয়াসরুমের দরজাই টোকা দিলো,
” পূর্ণা তোমার হয় নি? এতক্ষণ লাগে নাকি? আমরা বের হবো না? লেট হয়ে যাচ্ছে তো!”
তৎক্ষনাৎ ওয়াসরুম থেকে উত্তর এলো,
” আপনার এতো তাড়া থাকলে আমি চলে যান। আমি রাস্তা চিনি, বাসায় যেতে পারব ”
তাহরিম ভ্রু কুচকে এক পলক ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকালো,
বিরবির করে বলতে লাগলো,
” মেয়েটা এমন ঘাড় ত্যাড়া! এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েকে কিভাবে সামলাবো আল্লাহ ই জানে! কোন সুখে যে এই মেয়েকে ভালোবাসতে গেলাম! ”
দরজা খুলার আওয়াজে তাহরিম সেদিকে তাকালো,
নীল রঙের কুর্তি সাথে সাদা রঙের প্যান্ট আর ম্যাচিং ওরনা বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে।
তাহরিম এগিয়ে আসলো আমার দিকে,
আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাতেই সে হাসি মুখে বলল,
” সুন্দর লাগছে তোমাকে ”
উনার এটুকু কথায় কি ছিলো জানি না তবে আমার মন ভালো করতে যথেষ্ট ছিলো…
_________________________
ঘুৃমের মাঝে ই ইলুর মনে হচ্ছে সে কারো পেট জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে , ইলু ঘুমের মধ্যে ই ভাবতে লাগলো তার ঘরে তো সে একাই থাকে তাহলে কে আসলো তার রুমে? তার ভাই?
তবে নিশ্চিত হবার জন্য পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো ইলু, মুখ উঁচু করে উপরের দিকে তাকাতেই রুদ্রের চোখে চোখ পড়ে তার। রুদ্র তার দিকেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
ইলু হুট করে উঠে বসলো, সে দেখলো এতো ক্ষন রুদ্রের কোলে মাথা রেখে তারই কোমড় জরিয়ে শান্তি তে ঘুমিয়ে ছিলো, বেচারা রুদ্র না পেরেছে হেলান দিতে আর না পেরেছে শুইতে। সারারাত বসে বসে মশা মেরেছে।
তালুকদার বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে কথা টা বলল তাহরিম তালুকদার। আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম, সারাটা রাস্তা ঝগড়া করতে করতে এসেছে এখন আবার বাসায় এসেও খুচাচ্ছে!
আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,
” আমাকে কোন এঙ্গেলে ফল মনে হয় আপনার? যে পেঁকে যাবো? ”
” হুম, কথা বলার আগে সাবধানে বলবেন, বুঝে শুনে বলবেন! ”
কথাটা বলে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আমার পা দুটো থমকে যায়, ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পিছনে পিছনে মন্ত্রী সাহেব মোবাইল দেখতে দেখতে এসে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি হয়েছে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? ”
আমার থেকে কোন রুপ উত্তর না পেয়ে আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো,
উনি কাউকে সোফায় বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলো,
” কেমন আছো সুইটহার্ট? ”
মহিলাটি পান চিবুতে চিবুতে বলল,
” ভালো আর থাকতে দিলে কই মন্ত্রী মশাই! বউ কে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে তুমি? ”
মহিলার কথা কানে যেতেই তাহরিম মুচকি হেসে উনার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো,
” কি যে বলো না জান! তোমাকে আমি ভুলতে পারি নাকি? তুমি তো আমার প্রথম ভালোবাসা, তোমাকে ভুলা তো অসম্ভব ! ”
” হে হে সেইই আর কি, পাম মারার জন্য তো তুমি উস্তাদ! তো আমার সতিন কোথায় তাকে দেখছি না যে! ”
বুড়ী মহিলার কথায় উনি আমাকে ইশারা করে ডাকতেই আমি বাদ্ধ মেয়ের মতো উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম,
বুড়ি মহিলা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর গলাটা ঝেড়ে বলল,
” তাহু তোমার বউ তো দেখি একেবারেই বাচ্চা! শেষ মেষ কি না বাচ্চা বউ বিয়ে করলে? ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে একবার মহিলার দিকে একবার আমার দিকে তাকালাম,
আমাকে কোন এঙ্গেল এ উনার বাচ্চা মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না, আর উনার সম্পর্ক তাহরিমের সাথে কেমন সেটাও বুঝতে পারছি না। সম্পর্কে উনি আমার কি হয়?
” দাদিমা, তোমার কাছে আমার বউ কে বাচ্চা মনে হচ্ছে? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম, বুড়ী মহিলা উনার দাদিমা? আগে বললে কি হতো? খচ্চর পোলা, না জানি দাদিমা আমাকে কি মনে করছে! প্রথম দেখায় না দাদি মা কে সালাম দিলাম না কুশলাদি বিনিময় করলাম, বোবার মতো দাঁড়িয়ে ই রইলাম।
আমি মুচকি হেসে দাদিমা কে বললাম,
” আসসালামু আলাইকুম দাদিমা, কেমন আছেন? ”
উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” হুম ভালো ”
” দাদিমা আমার নাম হচ্ছে মিফতাহুল পূর্ণা, আমি একজন সাংবাদিক, বাচ্চা নই ”
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” বাড়ির বউ কি এই বাচ্চাদের কাপড় পরে রাখে নাকি? তোমার শাশুড়ী তোমাকে শাড়ি দেয় নি? ”
আমি এক পলক নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
” না দাদিমা, মা তো আমাকে শাড়ি দিয়েছে আমি পরতে পাড়ি না তো তাই”
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর অজুহাত দিতে হবে না, বাইরে থেকে এসেছো বিশ্রাম নাও পরে কথা হবে ”
আমি আর কিছু না বলে দোতলায় চলে এলাম, আমার পিছু পিছু মন্ত্রী সাহেব,
রুমে এসে আমি চোখ ছোট ছোট করে তাহরিম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে বুকের উপর হাত গুজে দাড়িয়ে বললাম,
” আপনার দাদিমা আসবে আপনি আমাকে বলেননি কেন? আমি কি আপনার দাদিমা কে চিনি? ”
উনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বিছানার উপর বসে বলল,
” সেটা তোমার দায়িত্ব, বাসা তোমার, সংসার তোমার, এখানে কে আসবে না আসবে সেটা দেখার দায়িত্ব ও তোমার, আমি কেন বলব? ”
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেল,
এটা কোন কথা! ফালতু যুক্তি আর ফালতু যুক্তি হবেই বা না কেন? ফালতু মানুষের ফালতু যুক্তি, কোন পাগলে যে উনাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানাইছে আল্লাহ ই জানে!
উনি বেশ খানিক্ষন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” কিছু বলবে? ”
” আপনি কি? ”
” আমি কি? ”
আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না, ফোসফাস করতে করতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম, রাগের মাথায় একবার ফিরে ও দেখলাম না! উনি ভ্রু কুচকে আমার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করছিলেন। করুক তাতে আমার কি! হুহ।
বিকেলের দিকে,
আজ মন টা বেশ একটা ভালো না, কেন ভালো না ঠিক বুঝতে পারছি না, মানে মন খারাপ এর কোন কারণ ই খুঁজে পাচ্ছি না।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি, বেশ কালো করেছে আকাশ, মেঘের ঘর্ষনের আওয়াজ দুর আকাশের থেকে শোনা যাচ্ছে হয়তো কিছু ক্ষনের মাঝে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে মাটি, সেটার ই অপেক্ষা করছি,
শাড়ির আঁচল টা ছেড়ে দেওয়া , দুপুরে মূলত দাদিমার কথায় শাড়ি পরেছি, গাঢ় নীল রঙের শাড়ি, নীল টা আমাকে কেমন লাগে আমি ঠিক জানি না, আসলে শ্যাম রঙের মেয়ে তো আমি, কোন রং ই যেন খাপ খাওয়াতে চায় না।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কেউ পিছনে থেকে এসে জরিয়ে ধরলো, আমি বেশ চমকে উঠলাম,
” কি ব্যপার মন খারাপ? ”
” নাহ্ ”
” তাহলে একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? ”
” কিছু না ”
উনি আমাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে, আমার হাত টেনে ধরে বলল,
” চলো”
” কোথায়? ”
উনি আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
” আরে চলোই না, আজকে রিকসা দিয়ে ঘুরবো”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” এখন বৃষ্টি হবে, বাইরে যাওয়াটা ঠিক হবে না মন্ত্রী সাহেব! ”
উনি আমাকে টেনে রাস্তায় এনে দাড় করিয়ে বললেন,
” বৃষ্টি হবে বলেই তো বাইরে আনলাম তোমাকে,
বৃষ্টির মাঝে ই রিকসা দিয়ে ঘুরবো ”
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একটা রিকসা দাড় করানো, বুঝলাম উনি সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে, অগত্যা ই আমাকে রিকসায় উঠে বসতে হলো, উনিও বসলেন আমার পাশে,
আমি রিকসার হুড তুললাম, সামনে থেকে বৃষ্টির ঝাপটা এসে চোখে মুখে পড়ছে, অনুভতি ভিন্ন রকম!
আমি মুচকি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে।
আমি মুখে হাসি বিদ্যমান রেখে উনার দিকে আরেকটু চেপে বললাম,
“মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম? ”
” আপনি নাকি খুব ভালো গান করেন? ”
উনি ভ্রু কুচকে বলল,
” কে বলল তোমাকে? ”
” জানি আমি ”
উনি হেসে মাথা চুলকে বললেন,
” ওই আর কি একটু আকটু, তেমন ভালো পারি না ”
” বেশি ভালো লাগবে না, একটু আকটু হলেই হবে”
উনি বাঁকা হাসলো, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম, কিন্তু উনার বাঁকা হাসার মানে না বুঝলাম না।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলেন,
_______________
“”হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো হুড তোলা এক রিকশায়
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না
রোদে পোড়া এ রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
কোনো কাক ডাকা এক সকালে
তুমি বারান্দা এসে দাঁড়ালে
আমি ছিদ্র খুঁজছি দেয়ালে
তোমায় দেখব বলে
তুমি অদ্ভুত এক খেয়ালে
গাঢ় লাল টিপ দেখি কপালে
হঠাৎ আমার দিকে তাকালে
আজ আমি ভয় পেলাম না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
নামি চলো আজ পথে
হাত রাখো এই হাতে
দু’জনে চলো যাই বহুদূর
আমার গিটারের সুরে
দোলা লাগে তোমার নূপুরে
উত্তাল ঢেউ তোলে, দোলে হৃদয়-সমুদ্দুর
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
ডাকো একবার ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকাব, পলক পড়বে না
আজ আমার প্রেমিক শরীরে
তোমার হাওয়ায় উড়ছি ফুরফুরে
প্রেম আর পাগলামি, তাকে লুকাব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না””
____________
” বেশ ভালো গান তো আপনি বাট বর্তমানের সাথে পুরোপুরি মেলেনি গান টা”
” কেন কেন? ”
” ওই যে আপনি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম না! ”
” আরে ওইটা তো প্রেমিকার জন্য গাওয়া কিন্তু আমার তো বউ আছে তাই একটু ডিফারেন্ট তো থাকবেই ”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
” আমাকে ভালোবাসেন মন্ত্রী মশাই? ”
আমার কথাটা কর্ন গোচর হতেই উনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন, হয়তো এই মূহুর্তে আমার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেন নি,
আমি সামনে তাকিয়ে আছি,
উনি আমার দিকে আরোও চেপে বসে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলেন, আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“”শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে, আমি তোমাকে প্রতিটা মূহুর্তে ভালোবাসি বউজান !'””
বেশ অনেক্ক্ষণ হয়ে গেলো সামনে কোন আওয়াজ পাচ্ছি না, চোখ বন্ধ করে বসে বসে মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছি আর চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে মন্ত্রী সাহেব এর হাস্যোজ্জল মুখখানি,
এবার ভীষণ সন্দেহ হলো প্রায় মিনিট ৪-৫ হয়ে গেলো এখনো কোন শব্দ পাচ্ছি না , পিটপিট করে চোখ খুললাম, কিন্তু সামনে যা দেখলাম আমার চোখ অটোমেটিক বড়ো হয়ে গেলো, টাসকি খেয়ে গেলাম সামনের মানুষ টার দিকে তাকিয়ে,ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম, খানিকটা ভয় ও লাগলো,
মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এই লোক এখানে কেন? কি করে ঢুকলো এখানে? আমার মুখ থেকে যেন কথায় বের হচ্ছে না, কথাগুলো যেন গলায় দলা পাকিয়ে আসছে আর গলাতে ই থেমে যাচ্ছে, মুখ পর্যন্ত আর আসছে না!
বহুকষ্টে আমতাআমতা করে বললাম,
” আআপনি? ”
আমার সামনে রাখা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছেন মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার। আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি এখন। উনার এমন দৃষ্টির সাথে আমি পরিচিত নই। তার পাশেই দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে ইলু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মন্ত্রী সাহেব এর দিকে। দুরে চেয়ারে বসে রুদ্র ভাইয়া মোবাইল ঘাটছে।
” আআপনি কখন এলেন? ”
উনি কোন কথায় বলছেন না কেবল আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে,
হঠাৎ উনি চেয়ার থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালেন, ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
” ইলমী তুমি একটু বাহিরে যাও, তোমার বান্ধবীর সাথে আমার কথা আছে”
ইলু যেতে না চাইলে ও রুদ্র ভাইয়া ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো,
ইলমী অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, আমি মাথা নাড়িয়ে ইশারা করলাম ওকে না যেতে, ও কি সুন্দর আমাকে অল দা বেস্ট জানিয়ে চলে গেলো বাহিরে,
আমি বিরবির করে বললাম,
” মীর জাফরের ফিমেল ভার্সন! ”
উনি এবার আমার দিকে তাকালো, আমার হাত পা তখন ও বাধা, উনি কিছু করলেও আমি কিছু করতে পারব না,
উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে আসলো, উনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝলাম, মারাত্মক লেভেলে রেগে আছেন উনি!
উনি এগিয়ে এসে ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় মারলেন, থাপ্পড় টা এতো জোড়েই ছিলো আমার গাল টা চিনচিন করে উঠলো,
ব্যথা পেয়েছি অনেক! উনি আরেক হাত উঠাতেই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম, কিন্তু গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শ পেয়ে ফট করে চোখ খুলে তাকালাম,
কি করছেন উনি? কিসস!
উনি যেই গালে থাপ্পড় দিয়েছেন ঠিক একই গালে কিস করলেন,
আমি গালের ব্যথার কথা ভুলে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি উনার দিকে,
উনি ঝুঁকে আমার হাতের বাধন খুলে দিলো,
তারপর সোজা টান দিয়ে দাড় করিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসলেন, কিন্তু হেটে তো রাস্তা পর্যন্ত যেতে হবে তাই ফট করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা লাগালেন, রাস্তার কাছে এসে গাড়ির সামনে আমাকে নামিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি তে বসিয়ে নিজে চালাতে শুরু করলো, আমি এতটা সময় ঘোরের মধ্যে ই কাটিয়ে দিলাম, গাড়ি চালানোর শব্দে আমার রেস টা পুরোপুরি কাটলো, এতক্ষণ কি হলো কিছু ই বুঝলাম না,
আমি লাফ দিয়ে সোজা হয়ে বসলাম,
” এইই আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? ”
উনি সামনের দিকে তাকিয়ে ই থমথমে গলায় বলল,
” জমের বাড়ি”
” এইই না না এখন কারো বাড়ি টাড়ি যাবো না আমার প্রমান গুলো অফিসে জমা দেওয়া লাগবে”
উনি খুব জোরে ব্রেক করে আমার দিকে তাকালো,
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” থাপ্পড় কি আরেকটা খেতে চান মিসেস মিফতাহুল পূর্ণা? ”
আমি হাত দুটো অটোমেটিক দুই গালে চলে গেলো, আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম,
” খেতে না চাইলে চুপচাপ বাসায় চলো, বড্ড বেশি সাহস বেড়ে গেছে তোমার! তোমার সাহস আমি ছোটাচ্ছি! ”
আমি আর কোন কথা বললাম না, চুপ চাপ সিটে হেলান দিলাম , খুব বেশি রাত হয়ে গেছে এদিকে সারাদিনের ব্যস্ততায় বড্ড বেশি ই ঘুম পাচ্ছে, তাই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের ই পাই নি।
তাহরিম ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকালো পূর্ণার দিকে, পূর্ণা ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে ওর মাথা টা নিজের কাঁধের উপর নিলো, কপালে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে একটা কিস দিয়ে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভে মন দিলো,
তখন কার দৃশ্য মনে হতেই তাহরিম এর শরীর কাটা দিয়ে উঠছে, আর একটু দেরি করলে হয়তো তার পূর্ণা কে সে জীবিত পেতো না, কি করে থাকতো সে তার পূর্ণ ছাড়া, এই পূর্ণ ছাড়া তো সে অপূর্ণ!
তাহরিম প্রায় শতাধিক পুলিশ নিয়ে একেবারে ভেতরে ঢুকেছিলো সে আর লোকেশন তাকে ইলু দিয়েছে, বাইক দিয়ে পূর্ণার সাথে আসতে আসতে ই সে তাহরিম কে মেসেজ করেছিলো,
পুলিশ সবাইকে নিয়ে সন্তোর্পনে বেরিয়ে গিয়েছিলো আর তাহরিম পূর্ণার সামনে বসে ছিলো, থাপ্পড় টা পূর্ণার প্রাপ্য ছিলো , সব কাজে এমন মাতব্বরি ভালো না মেয়েটা তা বুঝতে ই চায় না!
রুদ্র গাড়ি তে বসে সিটবেইল লাগাচ্ছিলো, ইলুর কথা শুনে সে তার দিকে তাকালো,
” তো কি ওরা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চেয়েছিলে নাকি? ”
ইলু নাক কুচকে বলল,
” কাবাব মে হাড্ডি হতে যাবো কেন? তাহরিম ভাই যদি এখন ওকে কিছু করে বসে তাহলে? ”
রুদ্র ইলমীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালোবাসার মানুষ কে আর যায় হোক কষ্ট দেওয়া যায় না, কেউ তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে সে তোমাকে সবসময় খুশি দেখতে পছন্দ করবে আর তাহরিম তো পূর্ণা কে প্রচন্ড ভালোবাসে তাই ওকে কষ্ট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না, বুঝলে? ”
ইলমী ছোট করে উত্তর দিলো,
” হুম ”
রুদ্র কিছু একটা ভেবে বলল,
” ওয়েট অ্যা সেকেন্ড! তুমি আমাকে ভাইয়া বললে কেন? আমি কি তোমার ভাইয়া হই? ”
ইলু ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালো,
” তো? ”
” তো মানে? আমি কি তোমার ভাইয়া? ”
” আপনি তো পূর্ণর ভাসুর আই মিন ভাইয়া! আর পূর্ণা আমার ফ্রেন্ড মানে বোন, তার মানে বোনের ভাই মানে তো আমার ও ভাই, ঠিক না? ”
ইলুর কথা শুনে রুদ্র বিরবির করে বলল,
” হুয়াট অ্যা লজিক! ”
ইলু খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
” কি কিছু ভুল বললাম ভাইয়া? ”
রুদ্রের ইচ্ছে করছিলো ইলুকে ঘুড়িয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে,
আমি তোর ভাইয়া না জামাই হই জামাই, জামাই ডাক!
কিন্তু মুখ দিয়ে বের করলো না, মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,
” ভুল বলবে কেন? তোমার লজিক কি ভুল হতে পারে নাকি? ”
ইলু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” এক্সেক্টলি তাই! ”
বলেই ইলু বাইরের দিকে তাকিয়ে রুদ্রের আড়ালে মুখ টিপে হাসল,
মনে মনে বলল,
” দেখি কত দিন আপনি নিজের মনের কথা মনে ই চেপে রাখতে পারেন! আমি ও ইলমী কি করে মনের কথা বের করতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে”
রুদ্র কে আরোও জালানোর জন্য ইলু হঠাৎ রুদ্র কে ডেকে উঠলো,
” ভাইয়া? ”
রুদ্র ইলুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো,
যা দেখে ইলু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
” এভাবে তাকাচ্ছেন কেন ভাইয়াআআ? ভাইয়া, আমি কি কিছু ভুল করেছি ভাইয়া? ভাইয়া আপনি কি কিছু বলবেন ভাইয়া? ”
রুদ্র ইলুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এই দুই লাইনে পাঁচ বার ভাইয়া ডেকেছো তুমি? তোমার সমস্যা কি হে? চুপচাপ বসো! ”
” ভাইয়া আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন ভাইয়া? ”
রুদ্র রাগে ফুসছে, কোন কথা বলল না,
” কি হলো ভাইয়া? কথা বলছেন না কেন ভাইয়া? ”
রুদ্র এবার স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ব্রেক করে ইলুর দিকে এগিয়ে গেলো,
এবার ইলু আর রুদ্রের মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব, ইলুর হার্ট বিট যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো,
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তুমি যদি আরেকবার ভাইয়া ডাকো তাহলে এই জানালা দিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দিবো, চুপচাপ বসে থাকো”
কথা টা বলেই রুদ্র সোজা হয়ে বসে মন দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো,
পূর্ণাদের গাড়ি টা আপাতত দাঁড়িয়ে আছে তালুকদার বাড়ির সামনে, তাহরিম এক পলক পূর্ণার দিকে তাকালো, পূর্ণার পরনে জ্যাকেট আর প্যান্ট, এই অবস্থায় কি করে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে সেটাই ভাবছে সে,
তাহরিম কিছু একটা ভেবে আমাকে গালে চাপড় দিয়ে ডাকলো,
” পূর্ণ? শুনতে পাচ্ছো? ”
আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেলাম,
তাহরিম আবার ডাকলো,
” এই পূর্ণ? ”
আমি খানিকটা সময় নড়েচড়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,
উঠে বসতে বসতে বললাম,
” কি হয়েছে ডাকছেন কেন? ”
তাহরিম খানিকটা ভাবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
” তুমি ড্রেস কোথায় চেঞ্জ করেছো? ”
আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম,
” মানে? ”
তাহরিম গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত রেখে আমার দিকে ঘুরে তাকালো,
“তুমি যে গোয়েন্দা গীরি করতে গেছো এই ড্রেস পরে, কোথায় চেঞ্জ করেছো? তোমার শাড়ি কোথায় ? হোটেলে? এই ড্রেস পরে তো আর শ্বশুর বাড়ি তে যেতে পারবে না! তাই আগে ড্রেস টা চেঞ্জ করে কাল সকালে বাসায় আসবো ”
আমি এবার নিজের দিকে তাকিয়ে পুরোপুরি কথার মানে টা বুঝতে পারলাম,
” এই ব্রেইন নিয়ে তুমি গেছো রাজনৈতিক নেতাদের সাথে পাঙ্গা নিতে, হাউউ ফানি!”
উনার কথা শুনে আমি বেশ রেগে আঙুল উচিয়ে বললাম,
” দেখুন অপমান করবেন না বলে দিলাম, আমি কিন্তু সব প্রমান জোগাড় করে ফেলেছিলাম কিন্তু হঠাৎ হাত লেগে ফুল দানি টা পড়ে যেতেই সবাই বুঝে গিয়েছিল, এতে আমার কি দোষ ”
উনি স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,
” নাআআ নাহ্ তোমার কি দোষ! তোমার কি কোন দোষ থাকতে পারে! এত এত মিথ্যা বলে তুমি বের হয়েছো, আবার এত রিস্কের একটা কাজ নিজের ইচ্ছে তে করেছো, এটা তো দোষ না! এটা একটা অন্যায়, এত মাতব্বরি করতে কে বলেছে তোমাকে? আমি বলেছি তোমাকে? এটলিস্ট আমাকে তো জানাতে পারতে! ”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
” আপনাকে বললে আপনি যেতে দিতেন আমায়? কক্ষনও যেতে দিতেন না, আপনাকে আমি ভালো করেই চিনি! ”
আমি লোকেশন বলে দিচ্ছি উনি গাড়ি চালাচ্ছে আর ঝগড়া করছে।
গাড়ি এসে থামলো একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে, উনি গাড়ি থেকে নামার পূর্বে মাস্ক টা ভালো ভাবে পরে নিলেন যাতে কোন সমস্যা না হয়,
রিসিপশন থেকে চাবি নিয়ে রুমে এসে আমি পূর্বের পরা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলাম,
প্রায় মিনিট বিশের পর শাড়ি ঠিক করে বের হলাম,
উনিও ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় বসলেন, আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছিলো সারাদিনের ঝামেলায় ভীষণ ক্লান্ত আমি,
” কারণ টা তো জানি না, তবে তোমাকে বলেছে কাল তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে”
আমি উঠে বসলাম,
” কেন কাল কি কোন অনুষ্ঠান? ”
উনি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন,
” আমি কি জানি? ”
আমি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়তেই উনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
” পূর্ণ শোননা! ”
” হুম? ”
” কাল তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে মিট করাবো!”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” গার্লফ্রেন্ড? ”
” হুমম, তোমাকে বলেছিলাম না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে! কাল একবার সময় করে তোমার সাথে দেখা করাবো, তুমি রেডি হয়ে থেকো”
আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,
” আপনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করলে আমার আবার রেডি হতে হবে কেন আজব! যান সরেন তো, দেখানোর সময় দেখাইয়েন, এখন ডিস্টার্ব করবেন না ”
বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে উঠিয়ে আমি কাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম,
আমার বুকের মধ্যে কোথাও না কোথাও জ্বলন অনুভব করছি, আর জেলাস হবো না কেন, প্রথমত তাহরিম তালুকদার আমার হাসবেন্ড, দ্বিতীয়ত আমি তাকে ভালেবাসি আর ভালেবাসার মানুষের মুখে অন্য কোন মেয়ে মানুষের কথা শুনতে কার ভালো লাগে তার উপর তাকে যদি নিজের গার্লফ্রেন্ড দাবি করে!
মনে তো বলছিলো ঠাস ঠুস করে কয়েকটা কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলি, বউ থাকতে তোর কিসের গার্লফ্রেন্ড রে? বেদ্দপ পোলা,!
কিন্তু আফসোস কিছু ই বলতে পারলাম না!
_____________________
” ভাইয়া শুনছেন? ”
রুদ্র বিরক্ত, ভীষণ বিরক্ত এই মেয়েটার উপর, প্রতিটি লাইনে পাঁচ বার ভাইয়া না ডাকলে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন ভাব,
রুদ্র রাগী দৃষ্টি তে ইলুর দিকে তাকালো,
” তোমাকে না বললাম চুপচাপ সিটে বসে থাকতে, এত কথা বলো কেন? আরেকটা কথা বলবে তো মাইর ও খেতে পারো!”
ইলু তো ইলুই, ইলু হঠাৎ খেয়াল করলো রুদ্র ইলুদের বাড়ির রোডে না গিয়ে তার বিপরীত দিকে যাচ্ছে, ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
” এইই রুদ্র ভাইয়া কি করছেন? আপনি বামে যাচ্ছেন কেন? আমার বাসা তো ডানে! ”
রুদ্র নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
” আমি তো তোমার বাসায় যাচ্ছি না যে তোমার ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী যাবো! আমি যাচ্ছি আমার ইচ্ছে মতো, চুপচাপ বসো আর দেখো কোথায় যাই! ”
” দেখুন রুদ্র ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমি নামবো, নামান আমাকে! ”
রুদ্র না কোন কথা বলছে আর না ইলুর কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে,
ইলু নিজের করা একটা প্রশ্নের উত্তর ও না পেয়ে বেশ হতাশ। হতাশ হয়ে চুপচাপ বসে রইলো, রুদ্র আড়চোখে এক পলক ইলুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,
রুদ্র দের গাড়ি এসে থামলো একটা বিলের পাশে,
রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ইলুর দিকের দরজা খুলে দিলো,
” নামো”
ইলু হাত গুটিয়ে বসে আছে মানে সে কিছু তেই গাড়ি থেকে নামবে না..
” আপনার ইচ্ছে হলে আপনি যান আমি যাবো না, আমি বাসায় যাবো”
রুদ্র ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন নিরব দৃষ্টিতে ইলুর দিকে তাকিয়ে, খানিকটা ঝুঁকে ইলুকে হুট করে ই কোলে তুলে নেয়,
হঠাৎ এমন হওয়াতে ইলু বেশ চমকে উঠলো,
” এইই কি করছেন নামান আমাকে! নামান আমি যাবো আপনার সাথে তাও নামান আমাকে”
রুদ্র সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বলল,
” সুন্দর ভাবে বলেছিলাম নামতে, নামো নি তাই আমি আমার টেকনিক টা এপ্লাই করলাম, এখন তুমি মুখ টা বন্ধ রাখো নয়তো আমি আমার টেকনিক এপ্লাই করে তোমার মুখ টা বন্ধ করবো! নাউ ইউর উইস!”
রুদ্রের কথা শুনে ইলু চুপ করে গেলো আর মনে মনে নিয়ত করলো কেয়ামত হয়ে গেলেও সে কথা বলবে না আর না মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের করবে, একদম চুপপ!
রুদ্র ইলুকে নিয়ে বিলের তীরে এসে ইলুকে বসিয়ে প্যান্ট টা একটু উপরে তুলে পানিতে পা দিয়ে নিজেও বসে পড়ল,
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আকাশে অর্ধচন্দ্রিমা, আর আকাশ ভরা তারার মেলা,
ইলুর বেশ ভালো লাগলো এখন, তার কাছে কেন জানি অর্ধ চন্দ্র টাই বেশি ভালো লাগে, সবার তো পূর্ণিমা ভালো লাগে কিছু ইলুর আলাদা, সবার পছন্দ যে এক রকম হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই!
আকাশ টা পরিষ্কার হওয়ায় চারপাশে মৃদু আলোটা ভালোই লাগছে, তার সাথে হালকা ঝিরঝিরে বাতাস.
” ভালো লাগছে? ”
” হুমম ”
ইলু চারপাশে নজর বুলিয়ে পাশে রুদ্রের দিকে তাকালো,
রুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে, ইলু ভ্রু কুচকে বলল,
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কিছু বলবেন? ”
” হুমম আজকের চাঁদ টা ভীষণ সুন্দর তাই না? ”
ইলু মুচকি হেসে বলল,
” হুমম অর্ধ চন্দ্র আমার ভালো লাগে ”
” তোমাকেও আমার ভালো লাগে ”
ইলুর কথার প্রেক্ষিতে হঠাৎ রুদ্রের এমন কথায় ভ্রু কুচকে বলল,
সেই কখন থেকে সং সেজে স্টেজে বসে আছি! না দেখা মিলছে ইলুর আর না দেখা যাচ্ছে ওই মন্ত্রী সাহেব এর। বিরক্ত হচ্ছি ক্ষনে ক্ষনে তার উপর মাথায় চলছে আরেক চিন্তা আদৌও কাজ টা ঠিক ভাবে করতে পারব তো? আজ কাজ টা যদি না পারি তাহলে হয়তো মরব নয়তো বাঁচবো। তবে ভাববার বিষয় আরেকটা, এই অনিশ্চিত কাজে ইলুকে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে?
” হেইই বান্ধবী দেখ তো কেমন লাগছে আমাকে? ”
চেনা কোন কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমার ধ্যান ভাঙ্গে সামনে তাকিয়ে দেখি কালো কাতান শাড়িতে নিজেকে জড়িয়েছে ইলু। মেয়েটা এমনি ই উজ্জ্বল ফর্সা তার উপর কালো টা যেন অন্ধকারের আলো। চুল গুলো স্ট্রেইট করে পিছনে ছেড়ে দেওয়া। অনুষ্ঠানে তেমন মানুষ দাওয়াত দেওয়া হয় নি এই টুকটাক ঘরোয়া আয়োজন।
” মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার জানু পরীকে ”
আমার কথা শুনে মেয়েটা লাজুক হাসলো, কাঁধে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলল,
” লজ্জা দিচ্ছিস কেন? আমি ফর্সা হলেও তোর মতো মায়াবতী নই, ফর্সা মেয়েদের অবজ্ঞা করা যায় তবে মায়াবতী কে না! ”
” হে হে বুঝছি তোর কবি গিরি, পাম মারার তো উস্তাদ আপনি, তবে রাতের কথা টা ভুলিস না যেন! যে করেই হোক আমাদের আজকেই যেতে হবে ”
” হুম ”
বলেই ইলু উঠে বাহিরে চলে গেলো, ইলু বাগানের মধ্যে বুকের উপর হাত গুজে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো ,
” কি ব্যাপার আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে? মন খারাপ? ”
ইলু হাসলো সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” মানুষ তো একাই ভালো থাকে, একাকিত্বের মাঝে তারা নিজেকে খুঁজে পায় ”
” বাহ্ আজ বেশ আধ্যাত্মিক কথা বলছেন ব্যপার কি? ”
ইলু ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালো, যে ছেলের পেট থেকে বোমা মারলেও কথা বের হয় না সে ছেলে নিজে থেকে এসে কথা বলছে, ব্যপার টা অদ্ভুত!
” কি ব্যপার বেহাই মশাই, আজ মনে হচ্ছে মন টা বেশ ভালো, অন্য দিন তো বোমা মারলেও কথা বের হয় না আজ নিজে থেকে এসে কথা বলছেন! ”
রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলো,
” হুমম আসলে দেখলাম, আমার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বেহাইন সাহেবা একা দাঁড়িয়ে গাছের পাতা গুনছে তাই ভাবলাম একটু সঙ্গ দেওয়াই যায় ”
” ভালো বলেছেন ”
বলেই ইলু আবার সামনে তাকালো,
” চলেন হাটি ”
ইলু মাথা দুলিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো , রুদ্র ও পাশাপাশি হাঁটছে..
__________________
” বউজান.. এই বউ জান ”
স্টেজে বসে তাহরিম পূর্ণার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ঝুঁকে তাকে ডাকলো,
আমি বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে বললাম,
” কি সমস্যা আপনার? এমন ফিসফিস করে কথা বলছেন কেন? ”
” আরে শোনো না ”
তখন তাদের ফটোসেশান চলছে,
আমি তাহরিমের দিকে খানিকটা ঝুঁকতে ই তাহরিম ফটোগ্রাফার কে কিছু একটা ইশারা করে পূর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে গালে একটা কিস করে বসে,
আর ফটোগ্রাফার ও সেই সুযোগে বেশ কয়েক টা ছবি ক্লিক করে নেয়,
এর থেকে খানিকটা দুরেই ইলু পূর্ণা আর তাহরিমের ফটোসেশান দেখছিলো হঠাৎ তাহরিমের এমন কাজে ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,
আমি হতবুদ্ধির ন্যায় বোকা হয়ে গেলাম৷ , পুরো ব্যপার টা আমার মগজে ঢুকতে বেশ কিছু সেকেন্ড সময় লাগলো,
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাহরিম এর দিকে তাকালাম , তাহরিম তখন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বসে মোবাইল ঘাটছে ,
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” আপনি কবে থেকে এমন নির্লজ্জ হয়েছেন মন্ত্রী সাহেব ? ”
তাহরিম মোবাইলের থেকে চোখ তুলে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,
” মিস পূর্ণা তুমি কি আমাকে কিছু বলছো? ”
আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,
” আপনি না এক কাজ করতে পারেন এসব রাজনীতি ফাজনীতি বাদ দিয়ে হলিউড, বলিউড, টলিউডে অভিনয় করতে পারেন, ট্রাস্ট মি হেব্বি হিট হবে ”
বলেই অন্য দিকে তাকালাম , আমার কথা শুনে তাহরিমের মনে হলো সে খুব ভালো একটা জোক্স শুনেছে , শব্দ করে হেসে বলল,
” তুমি চাইলে আমি বলিউড অভিনেতা হতেই পারি তবে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”
আমি ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলাম,
” আমার আবার জ্বলবে কেন? ”
” না মানে এত এত ফিমেল এক্ট্রেস এর সাথে কাজ করবো কত সুন্দরী সুন্দরী অভিনেত্রী তারা , কোথাও গিয়ে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”
আমি মুখ বেকিয়ে বললাম,
” ইসস কক্ষনো না , হুদাই ”
” আর ইউ সিউর ? ”
” ইয়াহ ”
” না থাক পরে তুমি মনে মনে কষ্ট পাবা মুখে না বললে ও আমি জানি আর আমি আবার মহান ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন পুরুষ, নিজের বউ কে কষ্ট দেবার কথা চিন্তা ও করতে পারি না, যা হোক তোমাকে এ যাত্রাই বাচিয়ে দিলাম ”
” আমাকে বাচিয়ে দিলেন! হাউউ ফানি ”
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আয়োজন শেষ হলো৷, সব শেষ করে বাসায় ফিরতে বেশ অনেক টায় দেরি হয়ে গেছে , আমার ইচ্ছেতেই অনুষ্ঠান টা দিনের বেলায় হয়েছিল , যার ফলে শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ,
সবাই বের হতেই ইলু এসে আমার পাশে দাড়ালো, আমি ওকে ইশারা করতেই ও আমাকে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করলো ,
আমার পাশে ছিলো মা , ইলুর এমন কান্না দেখে মা বলল ,
” ইলমী কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন,? ”
ইলু আমার হাত ধরে নাক মুছতে মুছতে বলল ,
” দেখুন না আন্টি, আজ আমার জন্মদিন অথচ পূর্ণ বলছে ও নাকি যাবে না , ও যাবে না এটা কি কখনো হয়? ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না? ওকে ছাড়া আমি কি করে কেক কাটি ? ”
ইলুর কথা শুনে মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ও কি কথা পূর্ণ, তুমি ইলমীকে মানা করছে কেন? ওর সাথে যাও, বেচারী যখন এত আশা নিয়ে বলছে তুমি আর রিজেক্ট করো না যাও ”
” আপনি যখন বলছেন, ঠিক আছে মা ”
আমার কথা শুনে ইলু লাফ দিয়ে উঠে বলল,
” আন্টি আজ পূর্ণ একটু আমাদের বাসায় থাকুক! কাল সকালে আমি ওকে আবার দিয়ে যাবো, আন্টি প্লিজ না করবেন না প্লিজ আন্টি ”
মা অমত থাকা সত্তেও ইলুর এতো রিকোয়েস্ট ফেলতে পারলো না অগত্যাই সে মত দিয়ে দিলো , আমি আর ইলু দ্রুত পায়ে ক্যাব ভাড়া করে চলে এলাম একটা হোটেলে,
তখন ভাগ্যিস মন্ত্রী সাহেব ছিলো না, না হলে কিছু তেই আসতে দিতেন না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি,
হোটেলের রুমে গিয়ে সকল ফাইল, পেন ড্রাইভ এক জায়গায় রেখে ,
কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের চলে গেলাম, ফ্রেস হয়ে ফরমাল ড্রেসআপ করে বের হলাম ,
একটা কালো লং স্যুট আর কালো প্যান্ট মাথায় ক্যাপ আর মুখে মাস্ক , পায়ে ক্যাডস , কেউ চেনার উপায় নেই, আমার মতোই সেইম সাজে ইলমী ,
” ইলু তুই সব জিনিস পত্র রেডি কর আমি বাইক নিয়ে আসছি , তারপর একসাথে বেরিয়ে যাবো , দশটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে ”
“কোথায় যাবি সেটা তো বললি না”
” যেতে যেতে সব বলব ”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ,
কাউকে ফোন করে বললাম বাইক টা যেন রেডি রাখে আমি আসছি সেটা নিতে,
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলাম হোটেল থেকে ,
প্রায় আধাঘন্টার মাঝে পুনরায় ফিরে এলাম হোটেলে ,
বাইক টা পার্ক করে হোটেলের রুমে ঢুকলাম , ইলু সব কিছু রেডি করে বসে আছে ,
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা ত্রিশ বাজছে ,
দুজন মিলে বেরিয়ে গেলাম , সেই জায়গাটার উদ্দেশ্যে,
আদৌও জানি না কাজে কতটুকু সফল হতে পারব , আদৌ তেও কি বেঁচে ফিরতে পারবো কি না , এক অনিশ্চিত জীবন…
ইলু বেশ অবাক হলো , এতো রাতে কাশিমপুর যাবার মানে টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে , ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
” এই এতো রাতে কাশিমপুর তোর কি কাজ রে পূর্ন? ”
আমি বাইকের আয়না দিয়ে ওর দিকে তাকালাম যদিও অন্ধকারে ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না।
” কাশিমপুরে পুরনো বাংলো টা আছে যেটা একদম সমুদ্রের তীর ঘেষে আর জঙ্গলের শেষ প্রান্তে? ”
” হুমম ”
” ওখানে ই যাচ্ছি ”
ইলু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
” কেন? কেন যাচ্ছি সেটাই তো জিজ্ঞেস করলাম? ”
” আমি খবর পেয়েছি আজ রাতেই ওদের সবচেয়ে বড় ডিল টা কমপ্লিট করবে, আর তার প্রমান জোগাড় করার জন্য ই ওখানে যাওয়া ”
ইলু পুরো ব্যাপার টা শুনে বলল,
” কিন্তু পূর্ণ আমার না কেমন জানি খটকা খটকা লাগছে, তুই সিউর তো? যে তোকে এসব খবর দিয়েছে সে কোন ভুল ইনফরমেশন দেয় নি তো? এটা ফাঁদ পাতে নি তো আমাদের ধরার জন্য? ”
আমি হাসলাম,
মেয়েটা অল্পতেই খুব বেশি ঘাবড়ে যায়,
” যদিও আমি সব খবর নিয়েই এসেছি তবুও আমরা যেই পেশায় আছি সেটা মোটেও শান্তি জনক পেশা না, জীবন মরনের লড়াই হয় এখানে, আমি নিজের জীবন টাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েই এসেছি ”
ইলু কিছু টা ভেবে বলল,
” আমরা তাহরিম তালুকদার কে না বলে এসে কোন ভুল করিনি তো? উনাকে কি জানানো উচিত ছিলো না পূর্ণ? ”
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম,
” উনাকে জানালে কি হতো শুনি? সেই আসতে দিতেন না, হয়তো আসতে দিলেও টেনশনে হার্ট অ্যাটাক ই করে বসতেন, আর আমার পেশাটাই এমন ভয় পেলে চলবে না, সমাজের চোখে সত্যি টা প্রকাশ করতে হবে, এটাই তো আমাদের লক্ষ্য ”
” পূর্ণ? ”
” হুম বল, সাম হাউ তুই কি ভয় পাচ্ছিস? দেখ ইলু ভয় পেলে বল আমি এমনিতেও তোকে নিয়ে যেতে চাইছিলাম না, তবে দুজন যেতে ই হতো, শোন তোকে একটা কথা বলি! ”
” হুম বল ”
” ওখানে যাচ্ছি তবে কি হবে সেটা কিন্তু জানি না , শুনেছি শাফিন মিয়াজি লোকটা ভীষণ ধুরন্ধর, একবার যদি টের পায় কিংবা ধরতে পারে তবে কিন্তু আর রক্ষে নেয়, তোকে একটা কথা দিতে হবে! ”
ইলু ভ্রু কুচকে বলল,
” কি কথা? ”
” ধর কোন ভাবে আমি ধরা পরে গেছি তখন তুই আমাকে রেখেই পালিয়ে আসবি সব প্রমান সহ, আমার যা হয় হোক তুই নিরাপদে চলে আসবি! ”
ইলু থমকালো, চমকিত নজরে আমার দিকে তাকালো, থমথমে গলায় বলল,
” আমাকে দেখে কি কোন এঙ্গেল এ তোর কাছে সার্থপর মনে হয় পূর্ণ? মরলে দুজন একসাথে মরব আর বাচলে একসাথে, কিন্তু তোকে বিপদে রেখে আমি যেতে পারব না, সরি”
আমি খানিকটা রেগে বললাম,
” ইলু বোঝার চেষ্টা কর ইলু, এটা পাগলামির সময় নয়, আমি না পারলে তোকে যে পারতেই হবে ”
” না বললাম না, পরের টা পরে দেখা যাবে এখন সাবধানে বাইক চালা তুই ”
বুঝলাম মেয়েটাকে বুঝিয়ে কাজ নেই, সে যা বলবে তাই করবে তাই আর বেশি কথা বললাম না!
কাশিমপুর আমাদের শহর থেকে বেশি একটা দুর নয় এই মাইল ৪-৫। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সময় লেগেছে, আমি ইলু বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি ওই জঙ্গলের মাঝে কোন দিকে যাবো ঠিক বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ মনে হলো বা দিকে দুরে কোথাও একটু আলোর রেস দেখা যাচ্ছে তাই আমি আর ইলু সেদিকেই এগুলাম,
কিছু দুর এগুতেই দেখলাম বেশ কিছু লোক একটা কাঠের তৈরি বাড়ির চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আর ইলু লোক গুলোর ছবি তুলে নিলাম,
ইলু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
” কিরে পূর্ণ ভেতরে ঢুকবি কি করে? ”
” পিছন দিক দিয়ে ”
আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুঁচকে বলল,
” মানেহ ”
” মানে হলো এখন আমরা ঠিক বাড়ি টার পিছনে দিকে যাবো,”
” তারপর? ”
আমি ব্যাগ থেকে একটা ছোট বোমা টাইপ কিছু বের করে বললাম ,
” তারপর এটা ঢিল দিয়ে সামনের দিকে ফেলব, তখন আওয়াজে সবাই যখন সামনের দিকে যাবে আমি ভেতরে ঢুকবো, বুঝলি? ”
” হুম বাট ইলু আমার টা কেমন জানি লাগছে! আমরা কি পারবো? ”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
” তোকে কে ভেতর যেতে বলল? যাবো তো আমি আর তুই এভাবে এখানে লুকিয়ে থাকবি আমি যা প্রমান জোগার করব সাথে সাথে ই তোর ফোনে আর আমার লেপটপে চলে আসবে ”
” মানে কি? তুই একা যাবি মানে? আমি ও যাবো ”
” না ইলু তুই এখানে থাকবি! আমার কসম এক পা ও নড়বি না”
বলেই আমি আর ইলু বাড়ি টার পিছনে দিকে এসে সামনের দিকে বোমার পিন খুলে তা ছুড়ে মারি,
আর প্রচন্ড শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়, আর পিছন দিকের যত লোক ছিল সবাই দৌড়ে সামনে চলে যায় কিসের আওয়াজ তা দেখার জন্য, এই সুযোগে আমি বাড়ির পিছনে দিকের একটা ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই, যদিও পিছনে থেকে ইলু হাত ধরে রাখছিলো তাই পর হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে এলাম, এছাড়া আর যে কোন উপায় ছিলো না ,
আমি হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, বেশ অনেক গুলো মশাল জ্বলানো, একটা ঘর থেকে বেশ অনেক মানুষের আওয়াজ আসছে, আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সে দিকে,
ক্যামেরা সেট করে এক ফাঁক দিয়ে বেশ অনেক গুলো ভিডিও করলাম আর ছবি ও তুললাম তাদের। শাফিন মিয়াজি লোকটা থেকে টাকা নিচ্ছে, তাদের কথা বার্তা, দাম দর সব কিছুই প্রমান জোগার করলাম, যা পেয়েছি তাতেই হয়ে যাবে , এর থেকে বড় প্রমান দরকার নেই।
ক্যামেরা ঠিক করে পিছনে ঘুরে আসতে যাবো অমনি আমার ধাক্কা লেগে একটা ফুল দানি পরে যায় সাথে তাল সামলাতে না পেরে আমি ও,
শব্দ শুনে ভেতর থেকে শাফিন মিয়াজি সহ সবাই চলে এলো, আমি পালাতে গিয়েও পারলাম না সবাই এসে ঘিরে ধরলো আমায়! আমার যেন নিঃশ্বাস টা আটকে আসছে!
আমাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে সামনে শাফিন মিয়াজি বসা,
” তুই কে হে মাইয়া? এত সাহস তোর? এই ডেরার ভিতরে ঢুকলি কিবা কইরা? মানতে হইবো তোর বুদ্ধি আছে ”
শাফিন মিয়াজি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে এক টানে আমার মুখের মাস্ক খুলে ফেলল,
কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
” আয় হায় তুই মাইয়া আমাগো নতুন মন্ত্রী সাহেবের সাংবাদিক বউ টা না? এতো দেহি মেঘ না চাইতেই জল! ”
পিছনে তাকিয়ে ই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে কারণ তার পিছনে শাড়ি পরিহিত সয়ং পূর্ণা দাঁড়িয়ে , যেহেতু তাহরিমের মোবাইলে আগে পূর্ণার ছবি দেখেছে তার উপর ওই ভুতুড়ে বাড়ি তে ও পূর্ণাকে দেখেছে তাই তার চিনতে মোটেও ভুল হচ্ছে না, তবে পিছনে যদি পূর্না হয় তাহলে এতক্ষণ সে কার সাথে কথা বলছিলো ,
মনে মনে এটা চিন্তা করে ই পুনরায় সামনের দিকে তাকালো ,
সামনের দিকে তাকাতেই আবার আরেকটা ঝটকা খেলো রুদ্র বাবাজি ,
কারণ তার সামনে ই দাঁত কেলিয়ে ইলমী দাঁড়িয়ে আছে , রুদ্র তার দিকে তাকাতেই ইলমী তার হাসি টা আরেকটু প্রসস্থ করে হাত নাড়িয়ে বলল ,
” হ্যালোওও বেহাই সাব থুক্কু সাহেব ”
” হুয়াট ননসেন্স , তুমি এই রুমে কি করো ইডিয়ট! আর কে বেহাই? কার বেহাই? কিসের বেহাই ”
” ভাব লইয়েন না বেহাই মশাই , আমি আপনার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বেহাইন সাহেবা , আপ্যায়ন করা আপনার কর্তব্য ”
রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে ইলমীর দিকে তাকালো ,
উজ্জ্বল ফর্সা গড়নের মাথায় ঢেউ খেলানো চুলের মেয়েটা কি জানে সে বয়সের তুলনায় জ্ঞান বুদ্ধি অনেকাংশেই কম!
উহুম সে তো অনেক কথায় জানে না!
, সে আরো জানে না তার ওই বোকা বোকা কথা , বোকা হাসি , তার ওই কাজল টানা চোখ, জোড়া ভ্রু আর কুচকানো কপালের ভাঁজ কোন ছাব্বিশে পদার্পন করা এক তাগড়া যুবকের ঘুম কেড়েছে ,
” পূর্ণা তোমার কিছু ভুল হচ্ছে , আমার মা বাবা বেঁচে নেই , উনারা আমি ছোট থাকতে ই তারার দে-শে চলে গেছেন , আর তোমার যেমন বড় চাচী আমার ও তেমন ই বড় চাচী , আমার বাবা ছিলেন সবার ছোট ”
আমি জিভে আলতো কামড় দিয়ে হাসলাম ,
” আসলে আমি সরি ভাইয়া , আমি জানতাম না বাবারা ৩ ভাই তাই বড় চাচী কে আপনার মা ভেবে নিয়েছি ”
” ইট’স ওকে পূর্ণা , মানুষের ভুল হতে ই পারে আর তুমি তো জানতে না , ইট’স ওকে ”
ইলু গালে হাত দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে , কেন জানি তার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে , ওয়াহ্ ছেলেটার হাসি কত্ত কিউট, হাসি দিলে গালে কি সুন্দর টোল পড়ে আর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায়!
” আচ্ছা ভাইয়া আপনি বসেন আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি , এত ক্ষনে মনে হয় চা হয়ে গেছে ”
রুদ্র কিছু বলল না যাস্ট হেসে সম্মতি দিলো ,
পূর্ণা চলে যেতেই রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো , কিন্তু ওর দিকে তাকাতেই রুদ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় কারণ মেয়েটা গালে হাত দিয়ে ডেব ডেব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে , চোখের পলক ও ফেলছে না , তার মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই কিছু একটা মিস হয়ে যাবে !
” এই যে মিস ভাঙা টেপ রেকর্ডার , কি দেখছেন ওমন ডেবডেব করে তাকিয়ে ”
রুদ্রের প্রশ্ন শুনে ইলু আনমনে ই বলে উঠলো ,
” আপনি এমন ধবল রুগীর মতো ফর্সা কেন? পুরা ধবল রুগীদের মতো লাগছে ”
” হুয়াট! আমি ধবল রুগী? ”
ইলমী গাল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসলো , গলা টা পরিষ্কার করে বলল ,
” তা নয় তো কি! নিজেকে কখনো আয়নার দেখেছেন , এত ফর্সা কি ছেলে মানুষ থাকে? একেবারে ইংরেজদের বংশধর , মনে হচ্ছে ওরা এদেশ ত্যাগ করার সময় ভুলে আপনাকে ফেলে রেখে চলে গেছে বাট কথা সেইটা না , আমি তো ভাবছি আরেকটা কথা! ”
রুদ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ,
” কি ভাবছো শুনি! ”
” ভাবছি , ধরেন আপনি ও ফর্সা আর আপনার বউ ও ফর্সা হলো , তাহলে আপনার বাচ্চাকাচ্চা তো সবগুলো ধবল রুগী প্রো মেক্স ”
রুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলল , এই পাগলের মুখ থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা ই বেকার ,
” এত ফালতু কথা তোমার মুখ থেকে কিভাবে বের হয় আমাকে একটু বোঝাবা? ”
” আমি ও সেটাই ভাবছি , আমার এত গুরুত্বপূর্ন কথা গুলো কে সবাই এমন আজাইরা কথা মনে করে কেন? ”
” ভাইয়া ওর কথা ধরবেন না , ও কিছু দিন হলো পাবনা মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে এসেছে , বুঝলাম না , এত কড়া গার্ড থাকা সত্তেও ও পালিয়ে এসেছে কিভাবে! ”
আমি কথা গুলো বলতে বলতেই ট্রে টা টেবিলের উপর রাখলাম , সেখান থেকে একটা কাপ রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলাম , রুদ্র সেই কাপ টা নিতে নিতে এক পলক ইলমীর দিকে তাকালো ,
” হুমম কথা টা সত্যি ই বলেছো বিশ্বাস যোগ্য! ”
” ওই পূর্ণর বাচ্চা পূর্ণ , তুই কি আমার বান্ধবী না কি ওই বেহাইয়ের? হে? ”
” ফাস্ট অফ অল আমার কেন বাচ্চা নাই, সেকেন্ড আমি তোর বান্ধবী প্লাস রুদ্র ভাইয়ের বোন , সো আমি দুই দিকে ই আছি ”
বলেই হাসলাম ,
এভাবে অনেক ক্ষন গল্প করার পর কোন একটা জরুরি কাজে রুদ্র ভাই চলে গেলো এদিকে আবার অফিস টাইম হয়ে গেছে , যদিও বেশ কিছু দিনের ছুটি নিয়েছি তবুও একটা কাজ করতে ইমারজেন্সি যেতে হবে ,
” তুই কি এখন অফিস যাবি ইলু? ”
” হুম যাবো ”
” কাল রাতে তোর বাসায় থাকবো ”
আমার কথা শুনে ইলু বিছানা থেকে উঠতে নিয়েও থেমে গেলো , ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো ,
” আমার সাথে ? ”
” হুম ”
” কিন্তু কেন? ”
” কারণ তো অবশ্যই আছে , যা হোক তুই তোর ফ্যামিলি তে বলবি তুই আমার সাথে আমার বাসায় থাকবি ”
” মানেহ? ”
” মানে আমরা কাল কেউই কারো বাসায় থাকব না , কাল রাতে একটা জায়গায় যাবো আর তুই রেডি হয়ে থাকিস আমি বাইক নিয়ে আসব ”
” কোথায় যাবো সেটা তো বল! ”
” উহুম সেটা পরে যখন যাবো তখন দেখিস এখন চল ”
আমি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলাম মা কোথায় , রান্না ঘরে উঁকি দিতেই নজরে এলো কালো শাড়ি পড়া এক মাঝ বয়সী মহিলা কোমড়ে আঁচল গোঁজে রান্না করছে মাঝে মাঝে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে ,
আমি পিছনে থেকে গিয়ে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বললাম ,
” মা ”
উনি পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা অমায়িক হাসি দিলেন,
হাতে ব্যাগ দেখে বললেন,
” কোথাও যাচ্ছো বাচ্চা? ”
” জি মা , একটু অফিস যাবো ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যে ই চলে আসবো ”
” ঠিক আছে কোন ব্যাপার না , যাও তুমি , আর সাবধানে যাবে , রাস্তা পারাপারের সময় ডানে বায়ে ভালো ভাবে দেখে নিবে আর রাস্তায় থাকা কোন খোলা খাবার খেও না , ফুড পয়জন এর সমস্যা হবে , বুঝলে? ”
আমি পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে বললাম ,
” জি মা মনে থাকবে ”
উনি পিছনে এক হাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করে বললেন ,
” হুম সাবধানে কিন্তু ! ”
আমি বেরিয়ে আসতে আসতে বললাম,
” জি মা , আল্লাহ হাফেজ ”
ইলু এতক্ষণ রান্না ঘর এর দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছু দেখলো ,
বাইরে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” কি যাদু করেছো বলো না ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” এটা তো একটা গানের লাইন ”
” হুম বাট আমার মনে হয় তুই মেইবি যাদু ই জানিস , না হলে এমন রুক্ষ মহিলা ও তোর সামনে গলে যায় না কি ”
” তুই যতটা গম্ভীর মনে করছিস উনি ততটা গম্ভীর নয় বেশ ফ্রেন্ডলী ”
আরো বিভিন্ন কথা বলতে বলতে অফিসে ঢুকলাম ,
কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই মেজাজ খারাপ করে ফেলল কারন ভেতরে ঢুকা মাত্র ই ওই ছেঁচড়া মৃদুলের মুখোমুখি ,
” হেইই পূর্ণা কেমন আছো? গত কয়েক দিন যাবত আসো না কেন? বাট আজ হঠাৎ শাড়ি পড়লে যে , ইউ লুক সোওও কিউট ”
আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই পিছনে থেকে ইলু দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো ,
” কিউট তো হবেই , মন্ত্রীর বউ বলে কথা ”
ইলুর কথা শুনে মৃদুল চকিত নজরে ইলুর দিকে তাকালো ,
” মন্ত্রীর বউ মানে? পূর্ণা বিবাহিত ? ”
ইলু মুখ টিপে হেসে বলল,
” এমা মৃদুল তুমি জানো না ? পুরো বাংলাদেশ জানে মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর বউ পূর্ণা আর তুমি ই জানে না! তাও একজন সাংবাদিক হয়ে? ”
মৃদুল মুখ টা ছোট করে বলল ,
” আসলে আমি কিছু দিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম আর ওখানে নেট পাওয়া যায় না তাই সোস্যাল মিডিয়ার সাথে কিছু দিন বিচ্ছিন্ন ছিলাম ”
বলেই মৃদুল গিয়ে নিজের ডেস্কে বসলো , ইলু মুখ টিপে হেসে আমার বাহু জরিয়ে ধরে আমার ডেস্কে নিয়ে এলো, যেহেতু আমার ডেস্ক আলাদা আর একটা রুমে সেহেতু ইলু সেটার ভিতর ঢুকে দরজা অফ করে পেট চেপে হাসতে লাগলো , আমি ভ্রু বাকিয়ে এক পলক ওকে দেখে ডেস্কে গিয়ে বসে ব্যাগ টা রাখলাম , যে কাজ গুলো আছে সেগুলো ঘন্টা খানেক এর মধ্যে শেষ করতে হবে আজ আবার বাড়ি তে অনুষ্ঠান ,
” ইলু নিজের কাজে যা আর আমাকে আমার কাজ করতে দে , ডিস্টার্ব করবি না ”
” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি , ভাগিয়ে দিচ্ছিস কেন? ”
আমি কোন কথা না বলে লেপটপ অন করে কাজ করতে লাগলাম , কাজ শেষ করতে করতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগলো ,
বাসায় গিয়ে রেডি হতে হবে , তাই সব অফ করে ইলুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ,
” তুই না বলছিলি আজ ট্রিট দিবি তাহলে আমার ট্রিট কই? ”
” দোস্ত রাগ করিস না কাল সিউর তোকে ট্রিট দিবো, পাক্কা প্রমিস, আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে ”
” ঠিক আছে ঠিক আছে এত ভাউ খেতে হবে না যা কাল ই দিস ”
আমি বাসায় এসে ইলু কে নিচে বসিয়ে আমি উপরে গেলাম রেডি হতে ,
আমি কিছু চিন্তা করছি আর এগুচ্ছি , দরজা থাক্কা দিবো হঠাৎ দরজা খুলে গেলো, ভেতরে ঢুকতেই কেউ পিছনে থেকে দরজা টা লাগিয়ে দিলো ,
দরজা লাগানোর আওয়াজ শুনে আমি ঘুরে পিছনে তাকালাম ,
” কি সমস্যা দরজা লাগালেন কেন? ”
তাহরিম বাঁকা হেসে আমার দিকে এগুতে এগুতে নেশাক্ত কন্ঠে বলল ,
” সকালের পাওনা আদায় করতে ”
আমি চমকে উঠলাম ধীরে ধীরে পিছুতে পিছুতে আমতাআমতা করে বললাম ,
” কি আজগুবি কথা বার্তা বলছেন? কিসের পাওনা , যান তো , মাথায় ভুতে ভর করেছে ”
আমি পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম , পিছনে যাওয়ার তো জায়গা নেই ,
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে এক হাত আমার কাঁধ ঘেঁষে দেয়ালে ঠেকালেন ,
কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন ,
” পালাচ্ছো কোথায় ? আর পালিয়ে যাবে কোথায় ? পুরো পৃথিবীতো গোল ঘুরে ফিরে এই আমার এই জায়গায় ই ফিরে আসবে , বউজান ”
নিজের বুকের বা পাশে এক আঙুল ঠেকিয়ে ইশারা করে কথা গুলো বলে উঠলেন ,
আমি চকিত নজরে উনার দিকে তাকালাম , কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে উনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু মুখে কখনো বলেন নি , আর মাঝে মাঝে মনে হয় উকি আমাকে কেন ই বা ভালোবাসবেন, এটা আমার মনের খেয়াল বয় আর কিছু ই না !
আমি উনার চোখে চোখ রেখে বললাম ,
” আমাদের বিয়েটাতো একটা এক্সিডেন্ট মাত্র , তাতে আপনার তো মত ছিলো না , তাহলে কেন বারবার আমার কাছে আসেন , এভাবে আমার অনুভূতি গুলো নাড়িয়ে দেন , কেন আসেন আপনি আমার কাছে ? ”
উনি হাসলেন , এগিয়ে আসলেন আমার আরো কাছে , দুজনের মাঝে তখন মাত্র এক ইঞ্চি দুরত্ব কি না সন্দেহ , উনি আমার হাত ধরে নিজের বুকের বা পাশে রাখলেন, আমি কেঁপে উঠলাম , অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি তার চোখে ,
আমার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন ,
” প্রশ্ন টা আবার করো বউজান ”
আমি কাপা কাপা কন্ঠে বললাম ,
“কেন আপনি বারবার আমার কাছে আসেন?? ”
উনি আমার কানের পাশে ঠোঁট নাড়িয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন ,
” অসীম মুগ্ধতাই ! ”
আমি থমকালাম , শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এলো শীতল স্রোত , এই ছোট্ট কথায় কি এমন ছিলো যেন মনে হচ্ছে শরীরের সকল শক্তি হ্রাস পাচ্ছে , এ কেমন অনুভুতি ? …
রাত তখন এক টা কি দুটো , চোখে ঘুম নেই , মাথা ভর্তি টেনশন , মেয়েটাকে যে এত বড় একটা দায়িত্ব দিলাম , ওকি করতে পারবে? ভীষণ রিস্কের কাজ তো , ওকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করলাম না তো ? এতক্ষণে তো কাজটা করে ফেলার কথা , এখনো ফোন করছে না কেন? আমিও তো ফোন দিতে পারছি না , যদি বিপদ হয়? ইসস কেন যে ওকে দিতে গেলাম তার চেয়ে বরং আমি ই করতাম …
বিছানায় সুয়ে এপাশ ওপাশ করছি আর চিন্তা হচ্ছে , হঠাৎ বালিশের তলায় থেকে ফোন টা বায়োব্রেট মুডে বেজে উঠলো ,
আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ফোন টা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে গেলাম ,
” হ্যালো ইলু কই তুই? ”
ও মেইবি কিছু চিবুতে চিবুতে বলল ,
” কেন বাসায়! ”
” তুই বাসায় মানে কি ? যা কাজ দিয়েছিলাম পুরোটা করতে পেরেছিস তো ? ”
” হ্যারে বাবা করেছি , ইনফেক্ট ফাইট টাও রেডি বাট তোকে দেবো কি না ভাবছি ! ”
আমার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেলো , বলে কি এই মেয়ে! তিলে তিলে যেই প্রমান গুলো জোগার করলাম , তা তো ফাইলের মধ্যে ই আছে , এটা হাত থেকে চলে যাওয়া মানে বিশাল লস…
” মাথা ঠিক আছে তোর? কি আবল তাবল বকছিস,? ”
ও কিছু একটা চিবুতে চিবুতে বলল ,
” ট্রিট দে , নাহলে পাবি না ফাইল ”
” এই তুই এমন ছেঁচড়া কেন সব কিছু তেই ট্রিট ট্রিট করিস , তোরে আংকেল আন্টি কিছু খাওয়ায় না? ”
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো , প্রান খোলা সেই হাসি , অগাধ সরল মেয়েটা , আমি মুচকি হাসলাম ,
” ঠিক আছে আসিস কালকে, ট্রিট দিয়ে দিবো নে ”
” ওক্কে বান্তুপী , lavuuu so much ”
” lovuu? What is lavuu?
” আরে লাভ ইউ কে সংক্ষিপ্ত করে লাবুও বলে এটাও জানে অক্ষিশিত! ”
” অক্ষিশিত? মানে আমি অশিক্ষিত? ”
” এটা আমি কখন বললাম! বেশি কথা বলিস তুই বেদ্দপ মহিলা , ফোন রাখ ”
” এই কি বললি তুই ? আমি বেদ্দপ ? হ্যালো হ্যালো….. ”
ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখি ও ফোন টা কেটে দিয়েছে ,
ফোন টা দোলনার উপর রেখে ঝুঁকে রেলিঙের উপর বসে দেয়ালে হেলান দিলাম , একটু উনিশ বিশ হলেই দোতলা থেকে ঠাস করে পড়বো এটা নিশ্চিত না মরলেও হাত পা আর আস্ত থাকবে না আর ভাগ্য খারাপ থাকলে সোজা উপরের টিকিট পেয়ে যাবো , আমি একটু নিচ দিয়ে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলাম আসলে নিচে আছে টা কি ?
হঠাৎ দরজার দিক থেকে কেউ আমার নাম নিয়ে চিৎকার করতেই আমার অন্তরাত্তা যেন কেঁপে উঠলো ,
এই মাঝ রাতে হঠাৎ এমন চিৎকারে কে না ভয় পাবে , তাল সামলাতে না পেরে পা টা পিছলে বাইরে পরে যেতেই আমি বাইরের দিকে ঝুকে গেলাম , ইনফেক্ট পরে যাবো আমি হঠাৎ এক জোড়া হাত এসে আটকে দিলো আমার বাহু , আমি চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়তেছি , হঠাৎ হেঁচকা টানে আমাকে বেলকনির ভেতরে নীচে ফেলে দিলো , পড়তে পড়তে বেঁচেছি আমি তখনও চোখ মুখ কুঁচকে দোয়া পড়ছি,
হঠাৎ মনে হলো গাল টা আমার জ্বলে উঠলো , কোন শক্ত হাতের দাবাং মার্কা থাপ্পড়ে , আমি খানিকটা পাশে ঝুকে গেলাম ,
থাপ্পড়ের রেস কাটিয়ে উঠে গালে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম , এখন আমার কি কষ্ট পাওয়া উচিত নাকি অবাক হওয়া উচিত সেটা বুঝতে পারছি না তাই চেষ্টা করছি দুই এক্সপ্রেশন ই প্রদর্শন করার ,
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে অবাক দৃষ্টিতে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার দিকে ,
ভীষণ অস্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রস্বাস আনা নেওয়া করছেন , উনার বুকের ধুকপুকানি আমি কয়েক ইঞ্চি দুর থেকে ও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি,
আচ্ছা উনি কি কোন কারণে ভয় পেয়েছেন?
” মিফতাহুল পূর্ণা! সুইসাইড এটেম্প করার এত শখ? আমাকেই বলতে পারতে আমি নিজেই তোমাকে বাজারের সেরা বি*ষ কিংবা মোটা দড়ি এনে দিতাম ! এই মাঝ রাতে এসব নাটকের মানে কি? ”
দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা বললেন , আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে , এই রাত দুপুরে কি হাবিজাবি কথা বলছেন আমি কেন অযথা সুইসাইড করতে যাবো!
কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম ,
” আপনি আমাকে মারলেন কেন? আর কি হাবিজাবি কথা বলছেন আমি কেন সুইসাইড খাইতে যাবো? ”
” তাহলে এই এতো রাতে তুমি বেলকনিতে রেলিঙের উপর ঝুলে করছিলে কি? ভুতের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলে? ”
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
” আড্ডা দিবো কেন? ঘুম পাচ্ছিলো না তাই তারা গুনতে এসেছি ! ”
” তোমাকে এখন ওই গালে আরেকটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে আমার, ইডিয়ট ”
আমি রেগে গাল থেকে হাত সরিয়ে বললাম ,
” আমার গাল টা কি রিলিফের মাল পেয়েছেন? নাকি সরকার কতৃক প্রতত্ত সরকারি সম্পদ ? যে যখন ইচ্ছে ঠুস ঠাস থাপ্পড় মারবেন! , এই সরেন তো সরেন , আমি ঘুমাবো ”
বলেই গটগট পায়ে রুমে এসে বিছানায় সুয়ে পড়লাম ,
কিছু ক্ষন পর উনি এসে আমার পাশে বসে বললেন,
” বেশি ব্যথা করছে গাল? ”
আমি ঘুরে অপর পাশ ফিরে শুলাম , এহহ নিজে মেরে এখন আদিক্ষেতা দেখাচ্ছে , বলব না কথা !
আমাকে পাশ ফিরে শুতে দেখে উনি আমার দিকে গিয়ে বললেন ,
” আচ্ছা বাবা সরি, আমি আসলে হঠাৎ ওভাবে তোমাকে দেখে মাথা ঠিক ছিলো না তাই রেগে গিয়েছিলাম ”
আমি আবার অপর পাশ ফিরে শুলাম , বাছাধন যত কিছু ই করো আমি তোমার সাথে কথা বলব না ”
” এই পূর্ণ শোননা! ”
আহা কি সুন্দর ডাক , তবুও গলছি না, হুহ!
” আচ্ছা ঠিক আছে, কি করতে হবে বলো আমি করব তাও এমন বিহেভ করো না প্লিজ ”
আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম , মৃদু সবুজ রঙের লাইটের আলোতে উনার চেহারা টা দেখে কেন জানি ভীষণ মায়া হলো তাই উঠে বসলাম ,
” আমি যা বলব তাই করবেন তো? ”
” হুম ঠিক আছে ”
আমি কোলের উপরে বালিশ নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বললাম ,
” কানে ধরেন ”
আমার কথা শুনে উনি দু পা পিছিয়ে গেলেন ,
” হুয়াট! আমি কানে ধরবো? ”
” হুম বেশি না মাত্র পঞ্চাশ বার কানে ধরে ওঠবস করতে হবে ”
” ওকে , গুড নাইট ” বলে যেই না শুতে যাবো উনি কিছু একটা ভেবে বললেন ঠিক আছে করছি কিন্তু এত গুলো না ,
” আচ্ছা যান ৩০ বার করেন ”
” ত্রিশ বার! ”
” এটলিস্ট বিশ বার তো করেন, নূন্যতম ডিসকাউন্ট এর চেয়ে কম পারবো না সরি ”
উনি আমতাআমতা করে বললেন ,
” ওকে , করছি ”
বলেই কানে হাত দিয়ে উঠ বস করতে লাগলো আর আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে সেই বিখ্যাত দৃশ্য উপভোগ করছি , বেটা বোঝ এবার এই পূর্ণা কে থাপ্পড় মারার ফল! তুই জামাই৷ জামাইয়ের মতো থাক , মারতে কেন যাবি ! জামাই বলে কি সাত খু*ন মাফ নাকি , ইটের বদলে ইট নাই বা দিতে পারি পাটকেল তো দেওয়ায় যায়!
হুয়াট অ্যা দৃশ্য ভাই রে ভাই , মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার নাকি বউয়ের কথায় কানে ধরে ওঠবস করছে ভাবা যায়! উনার ভক্ত গন দেখলে তো চোখ খুলে বেরিয়ে আসবে, মনে মনে কথা টা ভেবেই মুখ টিপে হাসলাম ,
উনি আমার দিলে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওঠবস করছে , বেচারা কে দেখে ভীষণ মায়া হলো তাই ১০ বারের মতো হতেই বললাম ,
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর করতে হবে না , মাফ করে দিলাম , পরবর্তী তে যেন এমন না করেন , অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন ”
বলেই শুয়ে পড়লাম ,
উনি ও আমার পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়লেন , কোন কথায় বললেন না ,
আমি উনার দিকে ফিরে মাথার নিচে হাত দিয়ে শুলাম ,
” এই শুনছেন? ”
“…………….”
” আপনি কি রেগে আছেন? ”
“…………… ”
” কথা বলছেন না কেন? ”
উনি সোজা হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে কোন নড়চড় নেই ,
আমি আধশোয়া হয়ে উনার ওপর ঝুকে নাকের কাছে আঙুল দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি আসলে কানে ধরার কষ্টে হার্ট অ্যাটাক করে মরে টরে যাননি তো ?
হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে নিজের দিকে টান দেওয়ায় আমার মাথা সোজা গিয়ে ঠেকলো উনার বুকে , আমি চমকে উঠলাম
উঠতে নিবো উনি এক হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছেন ,
” কি হলো এটা, ছাড়ুন আমাকে ”
” যেভাবে আছো চুপচাপ সেভাবে ই থাকো উঠার চেষ্টা করবে আর নড়চড় করবে , সোজা বেলকনিতে নিয়ে গিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দিবো একদম উপরের টিকিট পেয়ে যাবে , সোও চুপ করে থাকো আর আমাকে ঘুমুতে দাও ”
বলেই দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটনা ঘটে গেলো , আমি বেক্কেল এর মতো শুধু তাকিয়েই রইলাম..
সকালের সূর্যের আলো টা চোখে পড়তেই ঘুম টা হালকা হয়ে গেলো , চোখ বন্ধ থাকতে ই মনে হচ্ছে কানের কাছে ধক ধক আওয়াজ টা বেশ তীব্র গতিতে চলছে , কিসের আওয়াজ সেটা ঠাওর করতে পারছি না , খানিকটা নড়েচড়ে উঠলাম , পিটপিট করে চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করছি আমার অবস্থান ,
হঠাৎ কারো ঘুমো ঘুমো কন্ঠে সকালের শুভেচ্ছা কার্নোগোচর হওয়ায় মাথা উঁচু করে তাকালাম তার দিকে , সকালের প্রথম মিষ্টি আলো উনার চোখে মুখে পড়ছে, মুখে লেগে আছে অসম্ভব মিষ্টি হাসি, সদ্য ঘুম থেকে উঠার জন্য ফর্সা মুখ আর চোখ খানিকটা ফুলে আছে , খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে ভীষণ মায়াবী লাগছে তার মুখ , এক কথায় সুপুরুষ যাকে বলে , উনাকে একটা উপাধি দিতে ভীষণ ইচ্ছে করছে , তা হলো ভয়ংকর সুন্দর , আমার গায়ের রং যেমন শ্যাম বর্ণ উনার ঠিক দুধে আলতা, এত দিন শুনে এসেছি দুধে আলতা গায়ের রং কমপ্লিমেন্ট টা শুধু মাত্র মেয়েদের জন্য কিন্তু আজ কেন জানি এই কমপ্লিমেন্ট টা উনার জন্যই যুতসই মনে হচ্ছে ,
” এভাবে তাকিয়ে থাকে না বউ , এতে আমার শ্বাসকষ্ট টা যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায় , শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হয় তো , এই যে এখানে ভীষণ কষ্ট হয় ! ”
নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে কথা টা বলে উঠলেন উনি , আমি চমকে উঠে চোখ ফিরিয়ে নিলাম , ছি ছি কি ভাবছিলাম এসব আমি !
চোরা চোখে আমার উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে , আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম , যা দেখে উনি স্ব শব্দে হেসে উঠলো ,
আমি উঠতে নিলে খেয়াল হলো উনি আমাকে ঝাপটে ধরে আছে যা ফলে কিছু টা উঠে আবার উনার বুকের উপরেই পড়লাম
উনার বুকের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম ,
” কি হচ্ছে! ছাড়ছেন না কেন ? আমি উঠবো! ”
উনি আরো শক্ত ভাবে আমাকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বললেন,
” উঠো! মানা করেছি আমি? ”
আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,
” এভাবে জোকের মতো ধরে রাখলে উঠবো কিভাবে ? আপনি হাত সরান ”
” আমি তো আমার হাত সরাবো না পারলে উঠে দেখাও ”
” এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না , দেখুনন মন্ত্রী সাহেব … ”
উনি পিটপিট করে চোখ খুলে বললেন,
” দেখাও , আমি কি না করেছি নাকি? আমার হক আছে ! কি বলো তুমি? ”
বলেই ঠোঁট কামড়ে হেসে দু চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেললেন ,
আমি ব্যপার টা ঠাওর করতে পেরে উনার নাক কুচকে বললাম,
” ছিইই… অসভ্য ! ”
উনি আমাকে ঝাপটে ধরে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে শুলেন ,
” চুপচাপ শুয়ে থাকো যতক্ষণ না আমি উঠবো তুমিও শুয়ে থাকো আমার সাথে ”
” দেখুন এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না , আমার ঘুম শেষ আমি এখনই উঠবো ”
উনি ফট করে চোখ মেলে তাকালেন,
” তুমি উঠবে,? , ”
” হুম, ছাড়ুন ”
” ওকে তোমাকে যেতে দেবো বাট একটা শর্তে ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,
” শর্ত? কি শর্ত ? ”
” নাউ ইউ মিস মি ! ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,
” কি বললেন? কিসস? নো, নেভার , কাভি নেহি ! ”
আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে মাথা উচিয়ে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এলো , আমি তৎক্ষনাৎ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ,
গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ির ছোয়া পেয়ে খানিকটা কেপে উঠলাম , বেশ লম্বা একটা কিস করে উনি আবার আগের মতো চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন , আমি চোখ বড়ো বড়ো করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম , এখন যা হলো ঠিক আমার মাথার ৩ হাত উপর দিয়ে গেলো , হঠাৎ মনে হলো , উনি কি আমাকে কিস করলেন! ভেতর থেকে উত্তর এলো , হেএএ ওই কারেক্টার লেস মন্ত্রী তোকে কিস করলো! আমি হা করে তাকিয়ে আছি , গালে হাত দিয়ে , রেস টা যেন এখানো কাটছে না ..
” কি হলো এটা ? ”
উনি চোখ বন্ধ করে ই উত্তর দিলো ,
” কিসস হলো ”
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম ,
” কেন হলো? ”
উনি চোখ খুলে আমার দিকে ভ্রু বাকিয়ে তাকিয়ে বললেন ,
” শুকরিয়া আদায় করো , তোমার ওই কোমল গোলাপি ঠোঁট গুলো যে এখনো জীবিত আছে , আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে স্ট্রবেরি মনে করে খেয়ে ফেলতো ”
এতো টা সিরিয়াস ভাবে কথা টা বললেন উনি আমি প্রথমে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও পরবর্তী তে ব্যপার টা বুঝতে পেরে রেগে বললাম ,
” আপনি কি জানেন! আপনি যে লিমিট লেস অসভ্য লোক ”
উনি খানিকটা ভাব নিয়ে বললেন ,
” ইয়েস আই নোওও ”
আমি রেগে বললাম ,
” আপনি কি ছাড়বেন? ”
” না ”
” শেষ বারের মতো বলছি ছাড়বেন ? ”
উনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন,
” কাভি নেহি ”
” এখন যা হবে তার জন্য আমি দায়ি নই ” বলেই উনার উন্মুক্ত বুকের বা পাশে ঝুকে কামড়ে ধরলাম , যত ঝাঁজ আছে সব একসাথে ঢালতে লাগলাম ,
উনি প্রথমে আমার কাজে খানিকটা হকচকিয়ে গেলে ও পরবর্তী তে মুচকি হেসে আলতো হাতে জরিয়ে ধরলো ,
প্রায় মিনিট ৫ পর আমি মুখ তুলে উনার দিকে তাকালাম ,
কোন নড়চড় না দেখে অনেক টাই বিরক্ত আমি , পুনরায় কামড়ের স্থানে চোখ যেতেই আমার চোখ আপনাআপনি ই বড় হয়ে গেলো ,
রেগে দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু এতো টা আহত হবে ভাবতে পারি নি , ফর্সা লোম হীন বক্ষে কামড়ের দাগ টা জ্বলজ্বল করছে , আমি আলতো হাতে ছুয়ে দিলাম , উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকিয়ে বললেন ,
” এতো অল্প তেই ঝাঁজ শেষ ? রাগ না কমলে আরেক পাশ খালি আছে ওটাতে ও দিতে পারো , আই ডোন্ট মাইন্ড ”
আমি মুখ উচিয়ে বললাম ,
” ব্যথা লাগে নি? ”
” উহুম একটু ও না , ভেতরের ব্যথা থেকে বাইরের ব্যথা নিতান্তই ঠুকনো ব্যপার , তবে জানো তো , তোমার দেওয়া বাইরের ব্যথা কিছু টা হলেও ভেতরের ব্যথা কমিয়ে দিতে পেরেছে , তাই তুমি একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য বাট একটা কথা কি জানো! আমি বেশ অবাক হয়েছি ”
” কি ? ”
” আমি তো যাস্ট কিস চেয়েছিলাম তুমি তো লাভ বাইট দিয়ে দিলে , ইউ আর সোওও এডভান্স বউজান ”
আমি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম ,
” দুনিয়াতে কত পাগল দেখেছি , আপনার মতো এমন পাগল বিশ্বাস করেন আমি আমার বাপের জন্মে দেখি নি , গত আধা ঘণ্টা যাবত এমন পাগলামির মানে কি? ”
” ঠিক আছে ঠিক আছে , ছাড়বো , আগে একটা প্রমিস করতে হবে ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
” কি প্রমিস? ”
” আগে বলো রাখবা! ”
” আগে আপনি বলেন কি প্রমিস ”
” না হলে ছাড়ব না , আজকে সারাদিন এভাবে ই থাকতে হবে , বুইঝো কিন্তু আমার কোন সমস্যা নেই ”
” ঠিক আছে ঠিক আছে রাখব বলেন ”
উনি হাতের বাধন আলগা করতে করতে বললেন ,
” এখন থেকে আমি যা বলব তাই করতে হবে না হলে শাস্তি হিসেবে ইউনিক কিছু ই থাকবে ”
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে বসতেই উনি লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেলল ,
আমি চোখ বড়ো করে চিৎকার দিয়ে বললাম ,
” এটা কিন্তু ঠিক না , বের হোন আপনি , আমাকে দেরি করিয়ে এখন নিজে আগে ঢুকছেন , এটা দুর্নীতি ”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালাম উনার দিকে,
এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে আশেপাশে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে বললাম ,
” হ্যান্ডসাম কাকে বলছেন? এক মিনিট..
আপনি নিজেকে হ্যান্ডসাম বলছেন না তো? হুয়াট অ্যা জোক ব্রো ”
বলেই উঠে কাবার্ড থেকে উনার তোয়ালেটা হাতে নিলাম ,,
” সব কিছু ই বুঝলাম বাট ব্রো আই মিন ভাই কাকে বললে তুমি? আমি কি তোমার ভাই হই ? ”
আমি তোয়ালে দিতে দিতে বললাম ,
” এই ভাই সেই ভাই না ভাই.. এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি বের হোন , বলেই আমি চলে এলাম ,
উনি পিছনে থেকে বলে উঠলো ,
” কাবার্ডে দেখো আমার এ্যাস কালার পাঞ্জাবি টা বের করে রাখো ”
বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো ,
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাঞ্জাবি বের করে বিছানায় রাখলাম ,
প্রায় ৩ মিনিটের মাথায় উনি শুধু একটা পাজামা পড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হলেন , আমি এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম ,
গোসল শেষে শাড়ি কোন রকম পেচিয়ে রুমের মাঝে উকি দিলাম , যাক কেউ নেই ,
দরজা টা ভালো ভাবে লাগিয়ে যেই পিছনে ফিরতে যাবো দেখি উনি কথা বলতে বলতে বেলকনি থেকে রুমের মধ্যে ঢুকলো , ভাগ্য ভালো ছিলো যে শাড়ি টা পেচিয়ে নিয়ে ছিলাম , ভেবেছিলাম রুমে এসে শাড়ি টা পড়ব নয়তো ওয়াসরুমে ভিজে যাবে,
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” লুঙ্গির মতো পেচিয়ে কি শাড়ি পড়া যায় নাকি ? এত কিছু পারো আর এটা পারো না , ইডিয়ট ! ”
বলেই ফোন টা বিছানায় রেখে আমার সামনে এসে দাড়ালো , আঁচলে ধরতেই আমি এক কদম পিছনে গিয়ে বললাম,
” না না আপনার হেল্প লাগবে না আমি পারব , আপনি বরং বেরিয়ে যান ”
” আর ইউ সিউর তুমি পারবে? ”
” হুম ”
উনি গিয়ে বিছানার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল,
” ঠিক আছে পড়ো ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,
” আপনি বের হোন, বসতে বলি নি , আমি এখন শাড়ি পড়ব ”
” তো পড়ো, আমি কি ধরে রাখছি নাকি?
” বের না হলে পড়ব কিভাবে ? ”
আমার কথা শুনে উনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন,
” তোমার কাছে দুটো অপশন , এক আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেবো , দুই তুমি এখন আমার সামনে শাড়ি পড়বে , ইচ্ছে তোমার , যেকোনো একটা বাছাই করতে পারো ”
আমি কাদো কাদো দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম , এই কোন মুসিবত , কি করব এখন !
কিছু ক্ষন ভাবার পর ও কোন উপায় না পেয়ে মিনমিনে কন্ঠে বললাম,
” ঠিক আছে আপনি ই পড়াই দেন , শাড়ি পড়ার সময় এমন ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকলে শান্তি লাগবে না তার চেয়ে বরং আপনি ই কাজ করুন ”
উনি মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি নিয়ে এগিয়ে এলেন ,
যদিও আমার ব্লাউজ ফতুয়া টাইপ, একদম পেট পর্যন্ত ঢাকা তবুও জীবনের প্রথম কোন পুরুষ মানুষের ছোঁয়া , অস্বস্তি তো লাগবেই, লাগাটাই স্বাভাবিক ,
উনি হয়তো আমার অস্বস্তির কারণ টা বুঝতে পেরেছেন তাই কোন রকম ফাইজলামি ছাড়াই সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন এবং খুব তাড়াতাড়ি , আমি ততটা সময় চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছিলাম , তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো , আমার মনে হয় নি পুরো টা সময়ে উনার হাত আমার শরীর স্পর্শ করেছে ,
কুচি ধরে বললেন ,
” নাও এটা ধরো ”
আমি কুঁচি ধরতেই উনি ঝুকে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দিতে লাগলেন ,
কুচি ঠিক করে বললেন ,
” নাও এবার গুঁজো ”
সব শেষ করে আমাকে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়া করালো ,
” দেখো তো তোমার জামাই কেমন শাড়ি পড়ালো? ”
আমি এক পলক আয়নায় চোখ বুলিয়ে উনার দিকে তাকালাম ,
” বাহ্ বেশ সুন্দর করে শাড়ি পড়ান তো! কবে শিখলেন ? আই থিংক গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো মনে হয় ! ”
উনি ড্রসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে ভ্র নাচিয়া হেসে বললেন ,
” হুমম ছিলো তো, এখনো আছে , সময় হলে ঠিক দেখা করাবো তোমার সাথে , আমার গার্ল ফ্রেন্ড সেই সুন্দরী , তোমার থেকে ও ”
বলেই আমার চুল গুলো সুন্দর করে আচরিয়ে মাঝ বরাবর সিঁথি করে দিলো
” নাও পারফেক্ট ভেজা চুল তাই আর বাধলাম না , ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো৷,
” কিরে ছোটো , তাহরিম বাবা এইডা কাকে বিয়ে করে আনছে ! না আছে রুপ আর না আছে গুণ , দেখতে তো পুরা হিন্দু দেবী মা কালীর মতো , আদব কায়দা ও তো মনে হয় না আছে আর দেখ আমার মেয়ে নাতাশা কে , দেখতে যেমন মাশা আল্লাহ , গুণেও তেমন , এক কথায় রুপে লক্ষি আর গুণে স্বর সতী ”
তাহরিম বেশ অনেকক্ষণ আগেই উঠে নিজের রুমে চলে গেছে ,
রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে আসতে আসতে ই কথা টা কানে ঠেকলো আমার , আমি সেকেন্ড এর জন্য থমকে গেলাম , পরবর্তী তে মুচকি হেসে ওনাদের সামনে গিয়ে টি টেবিলে ট্রে টা রেখে উঠে দাড়িয়ে বড় চাচি মানে ওই আন্টি কে উদ্দেশ্য করে বললাম ,
” আপনি ঠিক ই বলেছেন চাচি আম্মা সরি আন্টি , কি বলুন তো ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি মায়ের গুণে মেয়ে হয় , আর আপনি তো আমার চাচি মানে মায়ের মতো তাই আমি ও আপনার মতোই হয়েছি , এই যে দেখুন আপনার গায়ের রং আর আমার গায়ের রং এ পার্থক্য থাকলেও কিছু টা তো মিলে যায় ,
কিছু টা খেয়াল করে ,
এমা আন্টি আপনি তো দেখা যায় আমার থেকে ও বেশি কালো , আমি তো তাও ব্রাউন ব্রাউন শেড আসে আপনার তো ব্ল্যাক এন্ড ব্ল্যাক ”
বলেই মুখ টিপে হাসলাম , আমার কথা শুনে উনি চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন এই মুহূর্তে আমার মুখ থেকে এমন কিছু শুনবে বলে কল্পনা ও করে নি ,
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তানজিমের দিকে তাকালাম ,
ও আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে ,
” আর কি যেন বললেন , আপনার মেয়ে বাতাসা..
চাচি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালে আমি বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললাম ,
আমি নাতাশা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললাম ,
” কিন্তু আমরা তো মনে হচ্ছে আপনার মেয়ে মুখে কয়েক কেজি আটা ময়দা মেখে আসছে , কারা মেক আপ করে জানেন? যারা নিজের চেহারা নিয়ে সন্তুষ্ট না , তাদের মতে তাদের চেহারা আলাদা প্রলেপ দিলে হয়তো তাদের সুন্দর লাগবে , যার ফলে আসল সৌন্দর্য টাই মেক আপ এর আস্তরণের নিচে চাপা পড়ে যায় , আসলে তারা নিজেকেই ভালোবাসতে পারে নি , ন্যাচারাল সৌন্দর্য কি আটা ময়দা মেখে হয় চাচি আম্মা ? যা হোক পরে আসি গুণের কথায় , গুণের কথা আর কি বলব বলেন! আপনার মেয়ে বাতাসা আই মিন নাতাশার তো মিনিমাম ভদ্রতা টুকু ও নেই , যেখানে আপনি , আমার শাশুড়ী মা বসে আছে সেখানে একটা বয়সে ছোট মেয়ে কিভাবে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে পারে ? ”
কথা গুলো বলে আমি মুচকি হাসলাম ,
আমি ট্রে থেকে এক কাপ চা নিয়ে চাচি আম্মার সামনে গিয়ে দাড়ালাম ,
” আপনি যদি মনে করে থাকেন, আমাকে অপমান করে পার পেয়ে যাবেন তাহলে আপনার ধারণা টা সম্পুর্ন ভুল, আমার প্রতিটি জিনিস খুঁটিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আছে ”
চাচি আম্মা আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাতাশার উদ্দেশ্যে বললেন ,
” এতো অপমান সহ্য করে এখানে আর থাকা যাবে না , তুই এখনো বসে আছিস কেন উঠ , আজ তোর বাপের কাছে যদি না বলেছি তার ভাতিজার বউয়ের অপমান তাহলে আমার নাম ও নিলাশা না , চল ”
নাতাশা বসা থেকে উঠতে উঠতে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল ,
” মাম্মি , তাহরিম কোথায় ? ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবো তো ”
চাচি আম্মা ওর হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো ,
ওরা যাবার পর আমি নাতাশা কে কেপি করে বললাম ,
” মাম্মি , মাম্মি , তাহরিম কোথায় ? ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবো তো , এহহহ নেকা ষষ্ঠী ”
বলেই আমরা দুজন হেসে হাইফাইভ করে পিছনে তাকাতেই দেখি ,
তাহরিম বুকের উপর দু হাত গুজে ভ্রু বাঁকা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ,
আমি আর তানজিম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচু করে ইশারাই জিজ্ঞেস করলাম , ” কি? ”
আবার দুজন ই ঠোঁট উল্টে সামনে তাকালাম ,
তাহরিম এগিয়ে এসে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে চারদিকে গোল করে এক বার রাউন্ড দিয়ে বলল ,
” আর কি কি করার বাকি আছে আপনাদের? এক পাগলের জ্বালায় এত দিন হাফ পাগল ছিলাম এখন মনে হচ্ছে আমার নিজের ই পাবনা মানসিক হসপিটালে কেবিন বুক করা লাগবে কারণ আমার পুরো পাগল হতে বেশি সময় বাকি নেই ”
বলেই হাটতে হাটতে বাড়ির বাইরে চলে গেলো ,
” এতো রাতে তোমার ভাই কোন বউয়ের সাথে দেখা করতে বাইরে গেলো ? ”
আমার কথায় তানজিম হু হা করে হেসে বলল ,
” কুশন ভাইয়ের সাথে গেছে , কুশন ভাই বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো ”
” ওহ , কিন্তু এখন তো ডিনার টাইম ”
” আরে এসে যাবে , দেখলে না একটা থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট আর টি শার্ট পড়ে গেলো , মেইবি ফাইল আনতে গেছে , ভাবি জান অনেক খুদা লাগছে , টেবিলে খাবার দাও না ”
আমি অবাক হয়ে বললাম ,
” আমি ? ”
” তা নয়তো কি , তুমি না বাড়ির বড় বউ আর আমার কিউট সুইট ভাবিজান , আচ্ছা তুমি একা করতে হবে না আমি আর ফুল কলিও হেল্প করছি , let’t gooo ”
বলেই তানজিম রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে ফুলকলি কে ডাকতে লাগলো,
কিন্তু মেয়েটা বোধ হয় শাশুড়ী মায়ের কাছে তাই আসতে পারছে না তাই আমি ই তানজিম এর পিছনে গিয়ে বললাম,
” ফুল মনে হয় শাশুড়ী মায়ের কাছে , চলো আমরা দুজন ই টেবিলে খাবার সাজাই ”
” ওক্কে ডিয়ার ভাবিজান ”
একে একে সব খাবার রেখে বললাম , তুমি ওয়েট করো আমি বাবা আর শাশুড়ী মা কে ডেকে নিয়ে আসি, খাবার সাজাতে সাজাতেই দেখেছিলাম বাবা অফিস থেকে এসে গেছে , হয়তো ফ্রেস হয়েছে ,
আমি ওনাদের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম, ভেতর থেকে আওয়াজ এলো ,
” কে ? ”
” বাবা আমি ”
” আয় ভেতরে আয় ”
আমি ভেতরে ঢুকে দেখি শাশুড়ী মা বই পড়ছেন আর বাবা ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছেন,
” বাবা মা টেবিলে খাবার সাজিয়েছি চলো খেতে চলো ”
” ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি ”
আমি চলে আসতে নিলেই শাশুড়ী মা বইয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল ,
” তাহরিমের বাবা তুমি নিচে যাও পূর্ণার সাথে আমার কিছু কথা আছে ”
মায়ের গম্ভীর কন্ঠে বলা কথা আমার হৃৎপিণ্ড নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো , আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে পিছনে তাকালাম , কেন জানি শাশুড়ী মা কে দেখলে ভীষণ নার্ভাস লাগে ,
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন, আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম , না জানি এখন কি বলে, টেনশনে আমার হাত পা অসার হয়ে আসছে, মনে মনে বিপদের দোয়া পড়তে লাগলাম ,
” ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো , এ দিকে এসো , বসো আমার পাশে ”
শাশুড়ী মায়ের কথা কর্নোগোচর হওয়ায় আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম উনার দিকে ,
” কি হলো বসো , ভয় পাচ্ছো আমাকে ? ”
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম, উনার থেকে কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব রেখে বসলাম ,
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি , উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে যা আমি মাথা নিচু করে ও বুঝতে পারছি , নার্ভাস ভীষণ নার্ভাস লাগছে ,
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে উঠে আলমিরার কাছে গেলেন , ওটা খুলে কিছু একটা বের করে আবার লাগিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন ,
উনি আমার হাত ধরে এক জোড়া বালা পড়াতে পড়াতে বললেন ,
“এটা তালুকদার পরিবারের বড় বউদের জন্য , আমার শাশুড়ী এটা আমাকে দিয়েছে , আমি তোমাকে দিলাম , তুমি এটা স্বযত্নে আগলে রেখে তোমার বড় সন্তান কে দিবে ”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে , বেশ গম্ভীর চরিত্রের উনি, মেয়েরা এতো গম্ভীর হয় আগে কখনো দেখি নি ,
উনি আমাকে একটা মেরুন রঙের শাড়ি দিয়ে বললেন ,
” কাল তোমাদের জন্য একটা ছোট খাটো ঘরোয়া আয়োজন হবে এটা পড়বে আর মার্কেট থেকে যে শাড়ি গুলো এনেছি সে গুলো পরে ইচ্ছে হলে পড়বে কেমন? আর সাথে থ্রি পিছ আর টপস ও আছে যা ইচ্ছে হয় পড়বে , এসবে আমার কোন আপত্তি নেই তবে সব যেন শালীনতার ভেতরে হয় ”
আমি ঘাড় নাড়িয়ে বললাম ,
” ঠিক আছে ”
উনি কিছু একটা চিন্তা করে বললেন ,
” আমি তোমার কি হই ? ”
আমি চকিত নজরে তাকালাম উনার দিকে উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,
আমি কি বলব তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না তাই আমতাআমতা করে বললাম ,
” শাশুড়ী মা ”
” হুম , আমি তোমার শাশুড়ী মা , পৃথিবীতে নিজের মায়ের জায়গা অন্য কাউকে দেয়া যায় না আর দিতে পারে না কেউ , আমি কখনো তোমার মায়ের জায়গা নিতে পারব না , তবে মায়ের মতো, তবে শাশুড়ী মা না ডেকে শুধু মা ডাকলে খুশি হবো তাহরিম আর তানজিম যেমন আমার ছেলে তেমন তুমিও আমার মেয়ে তাই যে কোন প্রয়োজনে যেকোন বিপদে , কোন কনফিউশন মোমেন্টে তুমি আমার সাথে শেয়ার করতে পারো , জানো তো মায়েদের কাছে সকল সমস্যার সমাধান থাকে ”
উনার কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো , মায়েরা বুঝি এমন ই হয়! কত সুন্দর করে প্রতিটি জিনিস বোঝায় তারা, আমাকে তো কখনো কেউ এভাবে কোন জিনিস বোঝায় নি , কারণ আমার তো মা ই নেই ।
” আর শোনো মেয়ে আমাকে যতটা গম্ভীর মনে হচ্ছে তোমার আমি ততটা ও গম্ভীর নই, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন ই ভীষণ ভাবে ভালো লেগেছিলো , দুরন্ত সাহসী তুমি আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানো , আই লাইক ইট!
শোনো , কখনো একা একা থেকে বোরিং লাগলে আমার কাছে চলে আসবে , দুজন মিলে অনেক গল্প করবো কেমন ? ”
আমি মুচকি হেসে ছল ছল চোখে উনার দিকে তাকালাম, উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে উনাকে একটু জরিয়ে ধরতে , উনার গায়ের গন্ধ টা কেমন তা জানতে! কখনো মায়ের গায়ের গন্ধ কেমন তা জানা হয় নি৷, আজ অবাদ্ধ মন তা জানার জন্য প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠেছে , আচ্ছা জরিয়ে ধরলে কি খুব বেশি খারাপ হয়ে যাবে? হোক কিছু খারাপ তবুও একটা বার জরিয়ে ধরি!
তাই হুট করে দু হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে , প্রথমে একটু অবাক হলেও পরবর্তী তে মুচকি হেসে আমার মাথায় একটা চুমু খেয়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো , আমি উনার বুকে মাথা রেখে চুপটি করে রইলাম , চোখ থেকে নেমে আসছে অবাধ শ্রাবন,
প্রায় ৫-৬ মিনিট এভাবে থাকার পর উনি আমাকে সোজা করে বসালেন, আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি , ইচ্ছে করছে না চোখ খুলতে , যদি চোখ খুললেই যদি এটা স্বপ্ন হয়ে ভেঙে যায় , তখন!
উনি আমার দু গালে ধরে পানি গুলো মুছে দিয়ে বলল ,
” এই বোকা মেয়ে ! এভাবে কেউ কাঁদে ! তুমি না স্ট্রং গার্ল , মন খারাপ হলে অবশ্যই মায়ের সাথে শেয়ার করবে কেমন ? এখন চলো তো দেখি খাবার মনে হয় সব ঠান্ডা হয়ে গেছে ”
বলেই আবার কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাড়ালো , আমিও চোখ খুলে চোখের পানি গুলো মুছতে মুছতে উঠে দাড়ালাম ,
উনি যেতে যেতে পিছনে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললেন ,
” আসো না কেন ”
আমি মুচকি হেসে উনার পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম ,
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে খেয়াল করলাম সবাই খাবার রেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,
আমি টেবিলে গিয়ে বাবার পাশে দাড়ালাম , মা ও দাড়ালো ,
” দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো ”
” না মা আপনি বসেন আমি বরং সার্ভ করি ”
” দরকার নেই যার যার টা সে সে নিয়ে নেবে তুমি বসো আমিও বসবো, এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে সবার খাওয়া দেখার দরকার নেই ”
মায়ের কড়া ধমকে আমি চট জলদি বাবার পাশে বসে পড়লাম ,
আমার এক পাশে বাবা আরেক পাশে তানজিম , তানজিমের পাশে তাহরিম আর তার পাশে র চেয়ার খালি বাবার আরেক পাশে মা ,
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি তানজিম বাবা বসে গল্প করছিলাম , মা আর তাহরিম রুমে চলে গেছে ,
গল্প করা শেষ করতে করতে রাত প্রায় ১১ টা , যে যার যার রুমে চলে গেলো, আমি দোতলায় উঠে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম , দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ , উনি চার হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে তাও বিছানায় হাফ দখল করে , যদিও হতো সাইডের হাফ তাও না,, উনি দখল করে আছে মাঝখানের হাফ
” দেখছো কাজ ! ঘরে যে একটা জলজ্যান্ত বউ আছে সে খেয়াল কি উনার আছে ? কিভাবে চার হাত পা চার দেশে দিয়ে দিব্বি ঘুমিয়ে আছে ! ”
আমি উনার কাছে গিয়ে দাড়ালাম ,
” এই শুনেছেন ? ”
“………………
” এইইই শুনছেন ? ডাকছিতো ! উঠেন ”
উনি খানিকটা নড়েচড়ে উঠলেন ,
আমি উপায় না পেয়ে এক আঙুল দিয়ে উনার বাহুতে ধাক্কা দিলাম৷
” এইইই ”
” হুমমম ”
” আমি কোথায় ঘুমাবো ? ”
উনি ঘুমের ঘোরে ই বললেন ,
” কেনন এখানে , আমার পাশে ”
” তাহলে সরেন আপনি , অর্ধেক জায়গা তো আপনি ই দখল করে বসে আছেন! ”
” হাফ আমার হাফ তোমার , তোমার হাফে তুমি ঘুমাও আর আমাকে ডিস্টার্ব করবে না তো ”
“আমার এখন মেজাজ টা খুব খারাপ হচ্ছে ভালোই ভালোই বলছি সরেন না হলে ধাক্কা মারবো ”
উনি কোন কথায় বলে না , এবার আমি ঝুকে উনার বাহু তে ধাক্কা দিতেই খানিকটা সরে গেলো , বাট উনি ঘুমের ঘোরে সরতে সরতে ঠাস করে বিছানা থেকে পড়লো , আর আমি বেচারী কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটনা টা ঘটে গেলো , আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছি , উনি ব্যথা পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলেন ,,
” এইই তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? ”
আমি মুখ চেপে হেসে বললাম ,
” আমি কোথায় ধাক্কা দিলাম , আপনি ই না পড়ে গেলেন! ”
উনি রেগে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললেন,
” ইউউউ ! ইডিয়ট! ধাক্কা দিয়ে বলছে ধাক্কা দেয় নি , ধাক্কা না দিলে আমি পড়লাম কিভাবে , ভুতে এসে ফেলে দিয়েছে আমাকে? ”
আমি সিরিয়াস হয়ে বললাম ,
” হতেও পারে , অসম্ভব কিছু না , ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের রেষারেষি থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? ”
প্রায় কয়েক সেকেন্ড পরে উনি পুরো কথাটার মানে বুঝতে পেরে বিছানায় উঠে কাথা ধরে টান দিয়ে বলল,
” এইই কি বললে তুমি? ভুত আমার ভাই হয় ? ”
আমি কাথা শক্ত হাতে ধরে আছি ,
কিছু ক্ষন পর যখন উনার কোন সাড়া শব্দ পা-ওয়া যাচ্ছে না তাই কাথা টা একটু ফাঁক করে আশেপাশে তাকাতেই দেখি উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে ই আমি কাঁথা নিচে নামিয়ে ফেলি , হঠাৎ উনি বলে উঠলেন ,
” তুমি যদি বুনো ওল হও আমিও বাঘা তেঁতুল , একদম সব বাদরামি ছুটিয়ে ফেলব , ফাজিল মেয়ে ”
” তাহরিম কাজ টা কি তুই ঠিক করলি ? কখনো যদি পূর্ণা জানতে পারে এই সকল কিছুর মাস্টার মাইন্ড তুই, সব কিছু র পিছনে তোর হাত তাহলে ক্ষমা করতে পারবে তো তোকে ! ”
রুদ্রের কথায় খানিকটা নড়েচড়ে দাঁড়ালো তাহরিম , শুভ্র রঙের টি শার্ট গায়ে ধুসর রঙের টাউজার পরে ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বুকের উপর দু হাত গুজে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো সে , হঠাৎ পিছন থেকে রুদ্রের কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো,
শুভ্র রঙের টি শার্ট আর ব্ল্যাক টাউজার পরে পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে তাহরিমের দিকেই তাকিয়ে আছে,
তাহরিম হাসলো তবে কোন উত্তর করলো না , তাহরিমের কাছ থেকে আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে খানিকটা এগিয়ে গেলো রুদ্র , ছাদের রেলিঙের ভর দিয়ে উঠে বসলো রেলিঙের উপর
” কি হয়েছে তোর ? ”
তাহরিম সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই ছোট করে বলল ,
” বিকেলের আকাশ টা খুব সুন্দর তাই না রুদ্র ? ”
” তুই কি কথা ঘুরাচ্ছিস তাহরিম ? জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তুই আমাকে কি উত্তর দিস হে ? ”
” কিছু না ”
” পূর্ণ কোথায় ? ”
” ঘুমাচ্ছে ”
কিছু ক্ষন নিরব থেকে মনে মনে প্রশ্নের প্যাটার্ন সাজালো রুদ্র , প্রশ্ন সাজানো শেষে গলা ঝেড়ে বলল ,
” তোদের বিয়ের খবর টা তুই ই ছড়িয়েছিস তাই না ? ”
” হুম ”
তাহরিমের সাবলীল উত্তর , রুদ্র হয়তো এত সহজে স্বীকারুক্তি আশা করে নি তাই কিছু টা থম মেরে বসে থেকে বলল ,
” আমার তো এখন মনে হচ্ছে তোদের বিয়ের কাজ টা ও প্রি প্ল্যানিং ”
তাহরিম আড় চোখে রুদ্রের দিকে তাকালো , রুদ্রের উৎসুক দৃষ্টি তাহরিমের চোখ এড়ালো না , সে ভ্রু বাকিয়ে হাসলো ,
” তোর কি মনে হয় , কাজ টা কি আমার? ”
” হুম , হান্ড্রেড পার্সেন্ট ”
” তাহলে ধরতেই পারিস কাজ টা আমার ”
” কিন্তু কেন? ”
” তুই ভালো করে ই জানিস রুদ্র, তাহরিম তালুকদার কারণ ছাড়া কোন কাজ করে না আমি যা করেছি তার পিছনে অবশ্যই একটা কারণ আছে ”
” হে সেটাই তো জানতো চাচ্ছি , কি কারণে তুই এ কাজ করেছিস ”
” প্রথমত পূর্ণার সেফটি , দ্বিতীয়ত ভালোবাসা ”
রুদ্রর ভ্রু কুচকালো ,
” তুই কি সিউর তুই পূর্ণ কে ভালোবাসিস ? নাকি কয়েকদিন পর তোর এই ভালোবাসা হাওয়া হয়ে যাবে ! ”
” যদি কাউকে দেখার পর হৃদ স্পন্দন খনিকের জন্য থমকে যায় , তাকে দেখতে না পেয়ে যদি ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট রোগ টা দিন কে দিন বাড়তে থাকে , মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যদি তাকে দেখার তীব্র বাসনা জাগে , চোখের ঘুম গুলো অকাতরে বিলিন হয়ে যায় , তার কথা চিন্তা করে যদি একটা নির্ঘুম রাত অবলীলায় পার করা যায়, এই লক্ষন গুলো কে যদি ভালোবাসা মনে হয় তোর তাহলে আমিও বলব ” আই এম ইন লাভ ”
” বাহ্ বেশ বলেছিস তো, এখন তো আমার মনে হচ্ছে তোর মন্ত্রীগীরি ছেড়ে কবি হওয়া দরকার ”
তাহরিম হাসে , রুদ্র লাফ দিয়ে রেলিঙ থেকে নেমে তাহরিমের দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল ,
” আমার বাসর নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যথা কেন , নিজে তো এখন বুড়ো হয়ে যাচ্ছিস বিয়ে টিয়ে কিছু করছিস না , আবার কথা বলিস , নির্লজ্জ ছেলে ”
রুদ্র অবাক হলো , ভীষণ রকম অবাক হলো ,
” তুই কাকে নির্লজ্জ বলছিস তাহরিম ? , নির্লজ্জের জন্য যদি কেউ অস্কার পেতো তাহলে নিঃসন্দেহে প্রাইজ টা তুই ই পেতি ”
” হুম সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে নিচে চল ”
বলেই গটগট পায়ে নিচে নেমে এলো তাহরিম , রুদ্র তাহরিম এর চলে আসার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে আছে , তাহরিমের কোন কারণে কি মন খারাপ ? নাকি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত ? আর নাকি আমাকে এভয়েড করলো !
” এই সন্ধ্যায় ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে থাকা ভালো না, পেত্নি ধরে , তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয় রুদ্র ”
নিচ থেকে তাহরিমের কন্ঠ শুনতে পেয়ে দ্রুত পা চালালো রুদ্র , এর ব্যবহার দেখে মনে হয় এর সাথে সবসময় ই আমি আঠার মতো লেগে থাকি মধ্যে দিয়ে যে ছ ছটা বছর আমরা আলাদা ছিলাম , মনে হয় ভুলে গেছে ! এই ছেলের থেকে যে আমি বয়সে কত বড় সেটা বেমালুম ভুলে যায় , দু আনার সম্মান ও দেয় না বেদ্দপ ছেলে
সেই দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে বিছানায় গা হেলিয়ে দেওয়া মাত্র ই এক রাশ ঘুম এসে চোখে ভর করেছিলো , চোখ দুটো বন্ধ হতেই আর কিছু টের পায় নি ,
ঘুম ভাঙতে ই কানে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি , ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করলাম এটা কোন ওয়াক্তের আজান , বাইরে অনেক টা অন্ধকার হয়ে গেছে , মাগরিবের আজান !
শুয়া থেকে উঠে বসলাম , এমন সময় দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতে করতে তাহরিম বলল ,
” গুড মর্নিং ”
” গুড ম.. ” বলতে গিয়েও আটকে গেলাম , ভ্রু কুচকে তাকালাম উনার দিকে ,
” এই ভর সন্ধ্যা বেলা আপনার কোন এঙ্গেল এ মর্নিং মনে হচ্ছে ? ”
” তুমি যা ঘুম দিয়েছিলে , কেউ রাতের বেলা ও এত ঘুম ঘুমায় না ”
” তোওও আপনার এতে সমস্যা কি? , আমি কুম্ভকর্ণের মতো ছ মাস ঘুমালেও আমার আফসোস মিটবে না সেখানে এটা তো কম সময় , সে যায় হোক আপনি এই রুমে কি করেন ? ”
” হ্যা হ্যা সেটাই তুমি তো আবার কুম্ভকর্ণের জমজ বোন , মিল তো থাকবেই , আর আমার রুমে আমি আসব না তো কে আসবে শুনি ? ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,
” এটা আপনার রুম? ”
” তা নয়তো কি ! আমার বাড়িতে আমার রুম থাকবে এটাই তে স্বাভাবিক ”
আমি কিছু একটা চিন্তা করে বললাম ,
” কিন্তু তানজিম যে আমাকে এই রুমে নিয়ে এসে বলল এটা আমার রুম ! ”
আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট টিপে হেসে বললেন ,
” খারাপ কি বলেছে ? ভালোই তো বলল ! যেহেতু আমি তোমাকে বিয়ে করেছি সেহেতু তুমি আমার বিয়ে করা বউ , আর বউ তার স্বামীর ঘরে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক ”
আমি কথাটা শুনে কিছুক্ষন চিন্তা করে বললাম ,
” আপনি কোথায় থাকবেন এখন ? ”
” কেন আমার রুমে ”
” তাহলে আমি কোথায় থাকব? ”
” কেন এই রুমে ! ”
আমি কিছু বললাম না , আমার মাথায় চলছে অন্য চিন্তা , তাই কিছু না বলে ফ্রেস হতে চলে গেলাম ,
ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখি রুমে কেউ নেই , তাই কাজ না থাকায় এই রুম টাই ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করেছিলাম ,
রুমটা বেশ অনেক টা বড়, রুমের একপাশে সোফা তার পাশেই একটা ডিভান, একটা রিডিং টেবিল সেখানে বেশ অনেক গুলো মোটা মোটা ইংরেজি বই হয়তো মন্ত্রী সাহেব পড়েন , একটা ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি , বুকশেল্ফ । আমি ধীরে ধীরে বুকশেল্ফ এর সামনে গেলাম।
বুকশেল্ফ এর বই গুলো নজরে আসতেই নাক মুখ কুচকে ফেললাম,
এহহে কি আজাইরা মোটা মোটা বইয়ে ভরা এই বুক শেলফ , ময়না তদন্ত করেও মনে হয় বাংলা ভাষা কিংবা উপন্যাস টাইপ কিছু পাওয়া যাবে না , অদ্ভুত , মানুষ এমন রসকসহীন বই কেমনে পড়ে, হাউউ!
” উপর থেকে বিবেচনা করলে সবসময় যে ঠিক হবে এমন তো কোন কথা নেই মিস পূর্ণ ! ”
চলবে …
#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_25
_____________________
” তাই তো বলি আপনি এমন নিরামিষ কেন ? এসব ছাইপাঁশ মোটা মোটা ইংরেজি বই পড়লে আমিষ টা আসবে কোথা থেকে , তাও যদি হতো ইংরেজি সাহিত্যের ! তাও তো না ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো , ভীষণ অবাক ও হলো অতঃপর বাঁকা হেসে এগিয়ে এলো বুক শেলফ এর দিকে , আমি তখন ও আপন মনে বই গুলো দেখছি , যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে একটা বই পেতাম পড়ার মতো , ছোট বেলা থেকে ই আমার বইয়ের প্রতি বেশ ভালো লাগা কাজ করে তবে পাঠ্যপুস্তক নয় , উপন্যাস টাইপ বই পড়তে বরাবর ই আমার ভালো লাগে ,
উনাকে কোন বাংলা উপন্যাসের বই আছে নাকি তা জিজ্ঞেস করার জন্য পিছনে ঘুরে কিছু বলব তার আগেই খেয়াল করলাম উনি আমার ভীষণ কাছে , আমাকে বুক শেলফ এর সাথে চেপে ধরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ,
আমার ভীষণ রাগ হলো , নাক ফুলিয়ে ফোসফাস করতে করতে বললাম ,
” এটা কি হলো ? ”
উনি কিছু না জানার ভান করে আমাকেই উল্টো প্রশ্ন করলো,
” কি হলো এটা ? ”
” আপনি কি আমাকে অকালে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মেরে ফেলতে চান ? এভাবে যখন তখন গা ঘেঁষাঘেষির মানে কি ? এভাবে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন হে? ”
উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তুমি না বললে আমি নিরামিষ, তাহলে নিরামিষ মানুষ কে এতো ভয় পাচ্ছো কেন ? আমি কোথায় তোমার গা ঘেঁষা ঘেঁষি করলাম ? তুমি ই না উল্টো আমার জায়গা দখল করে বসে আছো ”
” হ্যা তো নিরামিষ ই তো , নিরামিষ না হলে কি কেউ এমন উদ্ভট বই পড়ে! আর আমি আপনার জায়গা দখল করেছি মানে কি হে ? আমাকে কি মনে হয় আপনার ? ”
” এটা কার রুম ? ”
” কেন আপনার ”
” তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছো? ”
” রুমেই তো ”
” তাহলে কি বুঝলে , আমার রুমে তুমি দাঁড়িয়ে আছো, তার মানে তুমি আমার রুমের জায়গা দখল করো নি বলছো ? ”
আমি ভ্রু কুচকে কিছু বলতে নিবো তার আগেই কেউ ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতরে ঢুকলো ,
” ভাবিজান ওও ভাবিজান ঘরে আছো নি ” বলেই সামনের দিকে তাকিয়ে আমাদের এভাবে দেখে দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করতে করতে বলল ,
” সরি সরি সরিইইই , আমি বোধ হয় ভুল টাইমে এন্ট্রি নিয়েছি , যা হোক ভাইয়া কুটনা বুড়ি থুক্কু বড়ো চাচি এসেছে আর সাথে উনার চামচা না মানে তার মেয়ে নাতাশা আপু আসছে , আম্মু তোমাকে নিচে ডাকছে ”
বলেই চলে যেতে নিলে আমি পিছনে থেকে ডাক দিলাম , এতক্ষণে উনি আমাকে ছেড়ে দুরে সরে দাঁড়ালো ,
” তানজু দাড়াও তো কথা আছে ”
তানজিম পিছনে ঘুরে দাড়ালো ,
বলেই উনার দিকে তাকালাম , ভ্রু বেকিয়ে বললাম ,
” কি হলো আপনি এখানো দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? আপনাকে না নিচে ডাকছে যান না কেন? ”
” কোন ভাবে কি তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছো না কি পূর্ণ ? ”
উনার কথা শুনে তানজিম লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছে এসে বলল ,
‘ হে হে ভাই , তোমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে তাও যাচ্ছো না কেন ? ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা ! ‘
বলেই দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো , আমি মুখ টিপে হাসলাম , উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে গটগট পায়ে রুম থেকে চলে গেলেন ,
উনি চলে যেতেই তানজিম মুখে হাত রেখেই চোখ থেকে দু আঙুল ফাঁক করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো তাহরিম আছে না কি ,
অতঃপর মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকালো, দুজন ই খিল খিল করে হেসে উঠলাম ,
” বাহ্ বেশ দিয়েছো তো ভাবিজান , আর শুনো তোমাকে যা বলতে আসলাম ”
আমি ওর গাল টেনে বললাম ,
” হুম বলো শুনছি ”
” ওই যে বললাম না নিচে কুটনা বুড়ি আসছে ওনি আমার বড় চাচি আর তোমার সতিন না মানে নাতাশা বাতাসা থেকে দুরে থাকবা , সব সময় মানুষের খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকে ”
আমি মুচকি হেসে বিছানায় বসতে বসতে বললাম ,
” ও নিয়ে তুমি ভেবো না ভাইজান , আমি ঠিক সামলে নেবো ”
তানজিম আমার পাশে ধপ করে বসে বলল,
” আরে ভাবি তুমি এতো হালকা ভাবে নিও না , তোমার উপর তো ওই কুটনা বুড়ির আলাদা নজর আছে , তোমাকে অপমান করতে এক বিন্দু ও ডিসকাউন্ট দিবে না ”
” কেন কেন ? ”
” আরে বুঝলে না! চাচি চেয়েছিলো ওই নাতাশা বাতাসা রে এই তালুকদার বাড়ির বড় বউ করতে কিন্তু ভাইয়ার তো এক কথা সে ওই ঢঙ্গি কে বিয়ে করবে না , আর চাচি ও ছাড়বার পাত্রী না , এখন যখন শুনছে ভাইয়া বিয়ে করে ফেলছে অমনি চলে এলো কুটনামি করতে , এক্ষুনি তোমার ডাক পড়বে দেইখো ”
” ওকে দেখা যাক , আজ পর্যন্ত পূর্ণা কে অপমান করে কেউ পার পায় নি আজও পাবে না , দেখো কি হয় ”
ওমনি ফুল এসে আমায় বলল
” ভাবিজান খালাম্মা আপনারে নিচে যাইতে কইছে ”
” আচ্ছা ফুল তুমি যাও আমি আসছি ”
ফুল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো ,
” আচ্ছা ভাবি তুমি ফুলকলি রে শুধু ফুল ডাকো কেন? ”
” ফুল নাম টা আমার ভালো লাগে তাই ডাকি ”
আমি উঠে দাড়ালাম , ওরনা টা ভালো ভাবে মাথায় দিয়ে নিচে নেমে এলাম , আমি পিছনে পিছনে তানজিম ,
নিচে নামতেই চোখে পড়লো ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে থাকা একজন মহিলার উপর , গড়ন তার হালকা পাতলা, গায়ের রং কালো না হলেও বেশ একটু চাপা , চুল গুলো স্ট্রেইট করা , বুঝলাম বয়স হলেও মহিলার মনের রঙ এখনো যায় নি, না হলে এই বুড়ো বয়সে কেউ ভ্রু প্লাক , চুল স্ট্রেইট করে নাকি ! যা হোক আমি তার সামনে গিয়ে লম্বা একটা সালাম দিলাম ,
কথা টা বলেই বেক্কেল মার্কা একটা হাসি দিলাম, আমার পাশে তানজিম দাঁড়িয়ে থাকায় আমার বিরবির করা কথা গুলো ও স্পষ্ট শুনতে পেলো , উল্টো দিকে ঘুরে হাসি আটকানোর চেষ্টায় আছে সে ,
আমি এবার ওই ঢঙ্গি আন্টির পাশে বসে থাকা তার মেয়ের দিকে তাকালাম ওই নাতাশা না বাতাসা ,
মিনিমাম কয়েক বস্তা আটা ময়দা মেখে আসছে , আটা ময়দার নিচে চাপা পরে আছে চেহারা , যেমন মা তার তেমন মেয়ে , যা হোক এসব চিন্তা করে আমার লাভ নাই ,
মনে মনে কথা গুলো চিন্তা করে ই এক সাইডে সরে গেলাম , আমার পাশে এসে দাড়ালো তানজিম ,
তানজিমের মা আই মিন আমার বর্তমান শাশুড়ী মা বসে ওদের সাথে কথা বলছে তাহরিম তালুকদার তো এই পৃথিবীতে ই নাই , এক পাশে সোফায় বসে মোবাইলে গেইম খেলায় ব্যস্ত ,
” আপনি চিন্তা করবেন না মিস্টার তাহরিম তালুকদার , ডিভোর্স লেটার খুব তাড়াতাড়ি ই পৌঁছে যাবে আপনার কাছে ”
খুব ধীরে ধীরে কথাটা বলে পুনরায় বাসের জানালায় মাথা ঠেকালাম , এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি ,
কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর তাহরিম তালুকদার একটু নড়েচড়ে বসলেন , আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম , আমার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তিনি হয়তো হাসলেন , যা তার চোখ ই জানান দিচ্ছে , হাসি দিলে ওনার চোখ কুচকে যায় , ফর্সা মুখে কেন জানি না এই জিনিস ভীষণ ভালো লাগে , উনি হাসলে ভীষণ সুন্দর লাগে উনাকে , হাসি তে উনার মুখের বাঁকা দাতঁ টা দেখতে ও বেশ লাগে ,
” উহুম উহুম , আমাকে পর্যবেক্ষন করা শেষ হলে বলবে কেমন ? ”
আমি হকচকিয়ে উঠলাম , দ্রুত চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে তাকালাম ,
” বুঝলে পূর্ণ , আমি আরো ভেবেছিলাম তুমি সো কলড কমন ডায়লগ বলবে যে , নাআআ আমি এই বিয়ে মানি না , আপনি আমার জীবন টা কেন নষ্ট করলেন মন্ত্রী সাহেব ? কি দোষ করে ছিলাম আমি ? আপনি কেন বিয়ে টা করলেন ? ইত্যাদি ইত্যাদি ! ,
উনার কথা গুলো বাংলা সিনামার নাইকার অভিনয় থেকে কম কিছু ছিলো না , বেশ নাকি স্বরে কথা গুলো বললেন , আমি আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম ,
” বাহ্ আপনার তো দারুণ প্রতিভা মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , অভিনয়ে বেশ দক্ষ আপনি , আগে কি কোন থিয়েটারে অভিনয় করেছেন না কি? ”
” অভিনয় করতে হলে থিয়েটারে কাজ করতে হবে এমন কি কোন কথা আছে মিস পূর্ণ ? ”
” না সেটা নেই , তবে যাই হোক , আমি এত টাও অবুঝ নই মিস্টার তাহরিম তালুকদার , আমি পরিস্থিতি বুঝি , এখানে না আপনার দোষ আছে আর না আমার , এটা সবটাই পরিস্থিতি , আর আমাদের বিয়ে হয়েছে এটা তো আমরা দুজন ছাড়া বাকি কেউ ই জানে না , তাহলে তো কোন সমস্যা ই নেই , আপনি আপনার মতো থাকেন আমি আমার মতো আর সময় হলে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে সব মিটিয়ে নিলেই হয়ে যাবে ,
আমার কথা শুনে তাহরিম তালুকদার কিছু একটা ভেবে বলল ,
উনি কিছু না বলে আমাকে নিজের ফোন এগিয়ে দিলো ,
আমি ফোন টা নিয়ে ইলুর নাম্বারে কল করলাম , ওর নাম্বার টা আমার মুখস্থ তাই বেশি বেগ পেতে হয় নি ,
দু বার কল করলাম কিন্তু দুই বার ই বন্ধ বলছে , তাই মন খারাপ করে উনার ফোন উনার কাছে ফিরিয়ে দিলাম,
” কি হয়েছে হঠাৎ মুখ টা এমন করে ফেললে কেন? ”
” কাল রাত থেকে ইলুটার কোন খোঁজ নেই , কোথায় আছে , কেমন আছে কিছু ই জানি না
” ওহ এই ব্যপার , চিন্তা করো না , ও ভালো আছে আর ওর সাথে আমার চাচাতো ভাই আছে , ও ইলমি কে দেখে রাখবে ”
” ওহহ ”
আমি আর কিছু না ভেবে মাথা টা আবার জানালায় ঠেকালাম , সারা রাত দৌড়াদৌড়ি র ফলে শরীর বেশ ক্লান্ত , বাসায় ফিরে একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে ঘুমাতে হবে , কখন যে চোখ টা লেগে এলো বুঝতে ই পারলাম না,
তাহরিম এক পলক পূর্ণর দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কারো নাম্বার ডায়াল করল ,
” হ্যালো ”
“………………….”
” ওয়ালাইকুম সালাম , তোমাকে যেই কাজ টা দিয়েছিলাম , সেটা ঠিক মতো করো আর কাক পক্ষী ও যেন টের না পায় কথা টা মাথায় রেখো ”
তাহরিম প্রথম কথা টা জোরে বললেও শেষ কথা গুলো ভীষণ আস্তে বলল ,
“………………..”
” ঠিক আছে , রাখছি , এ বিষয়ে পরে কথা হবে ”
বলেই ফোন টা কেটে দিলো , ফোনের দিকে তাকিয়ে ই রহস্য ময় ভাবে হেসে বলল ,
” দেখা যাক কি হয় , কি আছে সামনে ! ”
প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নি করে বাস এসে পৌঁছালো ঢাকা বাস স্ট্যান্ড , তাহরিম আগে নেমে পড়লো তার পিছনে ই আমি নামলাম ,
দুজন ই রিকসার জন্য দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ তাহরিমের ফোনে কল আসায় সে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে কল টা কানে ধরলো ,
আমি আড় চোখে একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম ,
উনি একটু দুরে গিয়ে কথা বলে ২ মিনিটের মাথায় আবার আসলেন ,
” একটু ওয়েট করো কুশন গাড়ি নিয়ে চলে আসবে ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,
” কুশন কে ? ”
” আমার সাথে যে সবসময় থাকে , আমার এসিস্ট্যান্ট ”
” ওহহ সেই ক্যাবলাকান্ত টা! ”
আমার কথা শুনে উনি বেশ শব্দ করে হেসে বললেন ,
” ভালো নাম দিয়েছো তো ”
” শুনোন ! আমি রিকসা নিয়ে চলে যাই , আপনি আপনার গাড়ি আসলে যাবেন নে ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকিয়ে বললেন ,
” এত দুর যেহেতু এসেছি , সেহেতু বাড়ি পর্যন্ত আমি ই এগিয়ে দিয়ে আসবো , সো চুপ করে দাঁড়িয়ে ওয়েট করো ”
আমি কিছু ই বললাম না কারণ কিছু বলে আদৌও লাভ নেই সেটা খুব ভালো করে জানা আছে আমার ,
আমি ব্যগ থেকে ফোন টা বের করে অন করতে চেষ্টা করলাম কিন্তু অন হচ্ছে না তাই আবার ব্যগে রেখে দিলাম ,
প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাড়ালো আমাদের সামনে ,
সামনের সিট থেকে একটা ছেলে আই মিন ওই ক্যাবলা কান্ত বেরিয়ে এলো ,
কুশন গাড়ির সামনের সিটে বসে ডোর লক করে বলতে লাগলো ,
” আসলে ভাই , কে বা কারা কাজ টা করেছে সেটা বলতে পারছি না তবে আপনার বিয়ের খবর টা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়েছে ”
বলেই কুশন চুপ করে গেলো ,
এতোক্ষণ এদের কথায় আমি তেমন একটা পাত্তা না দিলেও এবার আমি বেশ চমকে উঠি , কি বলে কি? কিভাবে সম্ভব ?
” কি বলছো কি ক্যাবলাকান্ত আই মিন কুশন ? এটা কিভাবে সম্ভব ? আমাদের তো ওখানে কেউ ই চিনতো না তাহলে ? ”
আমার কথা শুনে কুশন লুকিং মিরর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” আসলে মেম , কে বা কারা করেছে সেটা তো এখনো জানি না , বের করতে পারি নি তবে সকাল থেকে সকল নিউজ চ্যানেল , সকল খবরের হেড লাইন হয়ে গেছে আপনার আর ভাইয়ের বিয়ের খবর , ইনফ্যাক্ট এরা এটাও বলছে যে আপনার সাথে নাকি ভাইয়ের গোপনে প্রেম ছিলো এবং আপনারা কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে সংসার করছেন ”
” হ্যা হ্যা আসেন , আপনার জন্য ই অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি আসেন , আমি, আপনার মা আর তানজিম অপেক্ষা করছি আর বাড়ির সামনে এক দল জার্নালিস্ট আছে তারাও অপেক্ষা করছে , আসেন আপনি মন্ত্রী সাহেব ”
” জার্নালিস্ট! ”
” জি , সেই সক্কাল থেকে উনারা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে , আপনি তাড়াতাড়ি আসেন আর সাথে তালুকদার বাড়ির বড় বউকে নিয়ে আসবেন, তালুকদার বাড়ি তে কোন কাপুরুষের জায়গা হতে পারে না তাই বীরের বেশে বউ কে সাথে নিয়ে আসবেন ”
উনার বাবার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন ,
” ইউ নোও না বাবা , আমি কাপুরুষ নই তাই বীরের বেশে আমার বউ কে আমি নিয়ে ই আসবো , রাখি এখন আর ১০ মিনিট লাগবে ”
” হুম আসেন ”
উনি ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” দেখলে তো বাবা কি বলল? আমি তোমাকে তোমার শশুর বাড়ি তে নিয়ে যাবো , আই মিন তালুকদার বাড়িতে , আমি আর যায় হোক কাপুরুষ পদবী টা পেতে চাই না ”
” এই যে শুনছেন ? আর কতক্ষণ হাটতে হবে ? আমি তো বুঝতে ই পারছি না এ-ই রাস্তার শেষ কোথায়! ”
ইলমি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কথা টা বলে উঠলো ,
কিন্তু রুদ্র তো নির্বিকার হেটে যাচ্ছে . যেন মনে হচ্ছে ইলমির কথা টা শুনতেই পায় নি , ইলমির কথায় পাত্তা না দেওয়ায় বেচারী তো ভীষন বিরক্ত ,
ইলমি খেয়াল করলো রুদ্র তাকে ছেড়ে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছে তাই সে রুদ্রের পিছনে পিছনে দৌড় দিলো , দৌড়ে এসে রুদ্রের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতে বলল ,
” এই যে শুনছেন ? ”
“……… ”
” আমি কিন্তু আপনাকে ডাকছি ! এই যে শুনছেন ? নাম টা ও তো জানি না দুররর ..
ইলমির কথা যেন রুদ্রের কানে যাচ্ছে ই না এমন একটা ভাব নিয়ে হাটছে , এবার ইলমির ভীষণ রাগ হলো , সাহায্য করেছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি ? এত ভাব দেখানোর কি আছে ? আজব ,
এবার ইলমি বেশ রেগে গেলো ,
” ওই বেডা তোরে ডাকতাছি তুই শুনোস না ? কানে কালা তুই ? ভাব দেখাস তুই আমারে ? এহহ ভাব দেইখা তো মনে হইতাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ! খচ্চর পোলা ”
বলেই সে দাড়িয়ে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো , এই যাহ্ , মুখ ফসকে মনের কথা গুলো রাগের বসে বেরিয়ে গেলো , এখন ?
ইলমি চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়তে পড়তে আস্তে আস্তে এক চোখ খুলল , পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝার জন্য ,
রুদ্র ভ্রু কুচকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,
রুদ্র র ভাব ইলমির কাছে মোটেও সুবিধা জনক লাগছে না তাই সে ধীরে ধীরে মুখ থেকে হাত টা সরিয়ে, মেকি হাসি দিয়ে বলল ,
” হে হে হে , আপনি ওমন করে কি দেখছেন সাদা বিল… না থুক্কু ভাইয়া ? আমি না ইচ্ছে করে বলি নি , মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে , এতে আমার কি কোন দোষ আছে ! ”
হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে অনেক গুলো শেয়ালের হাঁক শুনে ইলমি দৌড়ে গিয়ে রুদ্রের হাত খামচে ধরলো , বেচারী এমনি তেই ভয় পাচ্ছে তার উপর এই ভরা জঙ্গলে অন্ধকারে হাটছে , আর এই লোকটাকেও বিশ্বাস নেই , যা রাগ বাবা , ওরা আসবে আর উনি সুন্দর ভাবে আমাকে শেয়ালের ডিনারে রেখে ফুসস করে হাওয়া হয়ে যাবে ,
শেয়ালের ডাক কমতেই ইলমি খেয়াল করলো সে রুদ্রের হাত খামচে দাড়িয়ে আছে তাই চট জলদি হাত ছেড়ে দিয়ে দুরে সরে দাড়ালো ,
ইলমি খেয়াল করে রুদ্র খুব জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে , মানে কি ! রেগে গেলো মনে হয় , কেন যে মুখ টা বন্ধ করলাম না , এখন যদি এই ভরা জঙ্গলে মেরে কেটে রেখে যায় , কাক পক্ষি ও তো টের পাবে না ,
কথা টা মনে মনে ভেবে কাদো কাদো কন্ঠে বলে উঠলো ,
” বিশ্বাস করেন ভাইয়া , আমি ইচ্ছে করে বলি নি , ট্রাস্ট মি ! মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ”
বলেই নাক টানতে লাগলো ,
রুদ্র এতক্ষণ পকেটে হাত দিয়ে ইলমির কথা ই শুনছিলো , এতক্ষণে সে মুখ খুলল ,
” তুমি মেয়ে শুধু ভীতু আর ভাঙা টেপ রেকর্ডার না সাথে চরম লেভেল এর বেয়াদব! সারা রাত জঙ্গলে কাটাতে না চাইলে হাটো , আর যদি বনের শেয়াল কুকুরের সাথে থাকতে চাও থাকতে পারো , এজ ইউর উইসস ”
বলেই আবার হাটতে লাগলো , হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ৪ টা , কিছু ক্ষনের মাঝে ই আজান দিবে ফজরের , চার পাশ টা হালকা আলো,
ইলমি রুদ্রের পিছনে পিছনে যেতে বলল,
” এইই কি বললেন ? কি বললেন টা কি আপনি ? আমাকে কি আপনার জন্তু জানোয়ার মনে হয় যে আমি ওদের সাথে থাকবো ? ”
” তার থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না ”
” মানে কি হে ? আমাকে কোন এঙ্গেল এ জন্তু জানোয়ার মনে হয় ? ”
রুদ্র কিছু না বলে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল টা বের করে ফ্লাস লাইটটা অন করে হাতের দিকে তাক করে বলল ,
” দেখো কেন বললাম তোমাকে জন্তু জানোয়ার? ”
ইলমি খেয়াল করলো , লোকটার হাত মাত্রা অতিরিক্ত ফর্সা , ফোল্ড করা শার্টের হাতার কিছু অংশ নিচে গুনে গুনে পাচ টা খামচির দাগ , দুইটাই আবার রক্ত ও বের হ’য়ে গেছে আর তিন টায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে ,
ইলমি চট জলদি নিজের হাতের আঙুলের দিকে খেয়াল করলো , নখ গুলো যে কবে এতো বড় হয়ে গেছে খেয়াল ই করল না , ইসসসস কত খানি ছিলে গেলো লোকটার !
ইলমি অপরাধী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকালো , মাথা নিচু করে বলল ,
” আসলে আমি ভয়ের চোটে খেয়াল ই করি নি , আমি আসলে ই সরি ”
রুদ্র ফ্লাস লাইট অফ করে বির বির করে বলল ,
” জঙ্গলি বিড়াল কোথাকার ”
______________
” বেশি কষ্ট হচ্ছে হাটতে ? ”
খুড়িয়ে খুড়িয়ে এক মনে জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে হাটছি৷, পাশে মহামান্য নেতা মহাশয় , হাঁটার মাঝে ই হঠাৎ উনার প্রশ্ন শুনে মোটে ও চমকে উঠলাম না , কারণ এই ২০ মিনিটে ও নি ৪০ বার এই কথা জিজ্ঞেস করেছে , বিরক্তি টা ভেতরে চেপে রেখে বললাম ,
” আরেকটা কথা বলবে মেয়ে তুমি , একদম মুখ টা সেলাই করে দিবো ”
বলতে বলতে হুট করে আমাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলেন , আমি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছি তার মুখের দিকে ,
” মুখে মশা যাবে ! আর এভাবে হা করে থাকবে না , পথ চলতে সমস্যা হয় ”
উনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম ,
” নামান আমাকে , আমি হেটেই যেতে পারব , এই সব ব্যথা আমার কিছু করার ক্ষমতা রাখে না , আরো বহুত গুন বেশি ব্যথা আমি পেয়েছি ”
” আমি তোমাকে নামাবো না , কি করতে পারো করো , আর বেশি ত্যাড়ামি করলে ঠাস করে ফেলে দিবো , মাইন্ড ইট ”
উনার ধমক শুনে আমি চুপ করে গেলাম , নাকে ভীষণ সুন্দর একটা স্মেল পাচ্ছি , এটা যে নেতা মশাই এর গা থেকে আসছে সেটা বোঝার আর বাকি রইলো না ,
আমি আনমনে উনার আর একটু বুক ঘেষে রইলাম , কেন জানি এভাবে থাকতেই বেশি ভালো লাগছে ,
” এই একদম আমার বুকে মাথা রাখবে না মিস পূর্ণা , আমি কিন্তু একেবারে পিউর ভার্জিন , আমার ভার্জিনিটি অপমান করবে না ”
উনার এমন কথায় চমকে উঠা থেকে বেশি অবাক হলাম , বলে কি উনি ? বুকে মাথা রাখলে ভার্জিনিটি কে অপমান করা হবে ? বাপের জন্মে তো এমন কথা শুনি নি .
” বুকে মাথা রাখলে রাখলে ভার্জিনিটির অপমান হবে ? আর এতো রাতে একা একটা মেয়েকে কোলে চাপিয়ে সারা জঙ্গল হাঁটছেন তখন কিছু হচ্ছে না ”
উনি আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ইউ নোও না মিস পূর্ণা , আমি মানব দরদি , মানুষ কে সাহায্য করছি ”
বিরবির করে বলে উঠলাম ,
” এহহহ আইছে আমার মানবতার ফেরিওয়ালা ”
” ইয়েস মিস , আর আমার বুক একমাত্র আমার বউয়ের জন্য , আপনার মতো আজাইরা পাবলিকের জন্য না , ”
” কিই আমি আজাইরা পাবলিক ? ”
” তা নয়তো কি ? ”
বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো ,
এবার আমার বেশ ইগোতে লাগলো , উনার দিকে আরো চেপে বুকে মাথা রেখে বললাম ,
” নেন রাখলাম মাথা , দেখি কি করতে পারেন আপনি ! আপনি যেমন আমার অনুমতি ছাড়া কোলে নিলেন ঠিক তেমন ভাবে আমি ও আপনার ভার্জিনিটি তে আঘাত দিলাম , দেখি কি করতে পারেন আপনি ”
পূর্ণার এমন বাচ্চা মানুষের মতো জেদ দেখে ঠোঁটের হাসি আরো বিস্তর হলো তাহরিমের ,
সে তো ঠিক এটার জন্য ই তো এতো ক্ষন অপেক্ষা করছিলো ,,
” আমাদের কি পূর্ণা কে এভাবে জঙ্গলে ফেলে আসা উচিত হয়েছে ? ”
ইলমির কথায় রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,
আবাদত তারা এখন বাসের মধ্যে আছে , মিনিট ১৫ হয়েছে তারা বাসে উঠেছে কিন্তু ইলমি এই প্রশ্ন মনে হয় ৩০ বার অলরেডি করে ফেলেছে ,
রুদ্র ভ্রু কুচকে বলল ,
” পূর্ণা নিরাপদেই আছে আমার ভাইয়ের সাথে আছে , তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না , ইডিয়ট ! ”
ইলমির শরীর টা খুব একটা ভালো লাগছে না তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে বাসের জানালায় মাথা এলিয়ে দেয় ,
বাসের ঝাঁকি তে বারবার ওর মাথা গিয়ে জানালায় লাগছে , তাই রুদ্র ইলমির মাথা টা নিজের কাঁধের উপর রেখে শান্ত দৃষ্টিতে বাহিরে তাকালো ,
মেয়েটা বড্ড বাচ্চা স্বভাবের , ভেতরে কোন জটিলতা নেই , সাংবাদিক হয়েও এতো সহজ সরল কিভাবে হতে পারে সেটা রুদ্র ভেবে পায় না ,
জঙ্গলের শেষ মাথায় একটা গ্রাম শুরু , এটা আমাদের শহর থেকে বেশ অনেক টা দুর , জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে আমায় কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে জঙ্গলের শেষ কিনারে চলে এসেছেন মন্ত্রী সাহেব , সামনেই একটা লোকালয় দেখতে পেয়ে হাসি ফুটলো আমার মুখে , প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত কোলে নিয়ে হাঁটছেন , উনার কি ক্লান্ত লাগছে না? আমি যে এত টা ও শুকনো তা কিন্তু না ওজন তো মাশা আল্লাহ অনেক , কিন্ত উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে এত টা পথ কাউকে কোলে নিয়ে এসেছে , এসব ভাবতে ভাবতে ই হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে আমি চমকে উঠি ,
একটা বছর ২২ কি ২৩ এর ছেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে কাউকে ডাকছে , ফজরের আজান সেই কখন ই হয়ে গেছে , নামাজ শেষ করে সবাই বাড়ি ফিরছে ঠিক সেই সময়েই ছেলেটা এমন হাক ডাক শুরু করলো ,
উনি হাটতে হাটতে ছেলে টার সামনে গিয়ে দাড়ালো , আমাকে নামিয়ে দিয়ে আড় মোড়া ভেঙে পকেটে থেকে মাস্ক টা বের করে মুখে পড়ে নিলো , এক পলক আশে পাশে তাকিয়ে দেখে জায়গা টা একটা মসজিদের পাশেই ,
এতো ক্ষনে ছেলে টার ডাক শুনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে , আমি মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
আমি খেয়াল করলাম , একজন মাঝ বয়সী লোক মুখে আধা পাকা দাড়ি , দাড়ি তে হাত বুলাতে বুলাতে কথাটা বলল ,
” আসলে চাচা , আমরা জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম ”
” হয় হয় বুঝি বুঝি , দেইখা তো মনে অইতাছে শহুরে পোলা মাইয়া , কেন আ*কামের লাইগা জঙ্গলার ভিত্তে গেছো বুঝি না মনে করছো ! শহুরে পোলাপান রে আমাগো ভালা কইরাই চিনা আছে ”
লোকটার কথা শুনে আমার আর বোঝা বাকি রইলো না উনি কি মিন করে কথা বলছে , আমি কিছু বলার জন্য মুখ খুলব তার আগেই তাহরিম তালুকদার আমার হাত চেপে ধরলেন , ইশারায় ই বোঝালেন কোন কথা না বলতে কারণ এখন আমি কথা বললে জিনিস টা উল্টে যেতে পারে ,
” দেখুন চাচা আপনি কিন্তু না জেনে অপবাদ দিচ্ছেন , আমরা একটা কাজে এসেছিলাম আর পথ হারিয়ে ফেলি জঙ্গলে ”
” তা না হয় বুঝলাম , তাইলে লগে এই মাইয়া কেডা? ”
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ও আমার স্ত্রী ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তার দিকে তাকিয়ে আছি , বলে কি এই লোকে! আমি আবার কখন তাও বউ হলাম!
” কেমতে বিশ্বাস করুম , তোমরা যে জামাই বউ ? ”
” বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনাদের ব্যপার সেখানে আমি কি বলতে পারি , যা হোক আমাদের সময় খুব ই স্বল্প , এখন যেতে দেন !”
বলেই উনি আমার হাত ধরে চলে আসতে নিলে ,
ভীরের মধ্যে থেকে একজন বয়স্ক লোক বলে উঠলো,
” খারাও পোলা , তোমাগো কথা আমরা বিশ্বাস করছি, হেতি তোমার বউ তাইলে বউ রে তো আবার বিয়া করুন ওই যা , তোমাগো আমরা হগ্গলে মিল্লা
ফের বিয়া দিমু ”
চারপাশে কাউকে খুঁজতে খুঁজতে হাফ ছাড়লো ,
” মতি ,, মতি রে কই গেলি ! যা তো ইমাম সাব আর কাজি রে ডাইক্কা লইয়া ”
লোকটার কথা শুনে আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম , উনার হাত খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম ,
প্রায় মিনিট পাচেক পরে মতি নামের ছেলেটা একজন হুজুর আর মাঝ বয়সী এক কাজি নিয়ে আসলো ,
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাহরিমের দিকে তাকালাম , উনি নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে ,
মসজিদ থেকে কিছু চেয়ার নিয়ে আসা হলো৷, একটায় উনাকে বসতে দেওয়া হলো , আরেকটায় আমাকে সামনে কাজি আর হুজুর ,
আমি মাথা নিচে করে বসে আছি , বলার ই বা কি আছে! এক পলক তাহরিমের দিকে তাকালাম , লোকটার মুখে কোন প্রকার এক্সপ্রেসন দেখা যাচ্ছে না , ওরা যে কাজ টা করছে ওটাতে আদৌও কি তার মত আছে ? উনি কেন ই বা মেনে নেবেন ? একটা এতিম মেয়ে কে নিজের বউ হিসেবে মানার কোন প্রশ্ন ই আসে না ! নেহাত চাপে পড়ে বিপাকে পড়ে বিয়ে টা করছে ,
কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতায় নাম তুলছে ,
আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” মা তোমার নাম কি ? ”
” পূর্ণা , মিফতাহুল পূর্ণা ”
” তোমার বাবার নাম ? ”
কাজি সাহেব এর কথা শুনে আমি খানিকটা চিন্তা করে বললাম ,
” আমি এতিম , মা বাবা নেই , এতিম খানায় মানুষ ”
” ওহহ, আচ্ছা ঠিক আছে ”
এবার কাজি উনার নাম পরিচয় নিলেন ,
সব কিছু লেখা শেষে উনি খাতাটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,
” না ও বাবা এই খান টায় সইন করো “..
উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে , সাইন করে দিলেন , এবার কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতা টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন সাইন করে দেওয়ার জন্য ,
আমি খাতা আর কলম নিয়ে সাইন করতে গিয়েও থেমে গেলাম , এটা তো আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত , আজকের দিন টা তো অন্য রকম হলেও পারতো , আমার এক পাশে মা আরেক পাশে বাবার থাকার কথা ছিলো , কিন্তু আজ ,? আজ তো কেউ নেই হাতে হাত রেখে ভরসা দেওয়ার মতো ,
এসব চিন্তা করার মাঝে দিয়েই হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ টের পেলাম , চোখ তুলে হাতের মালিক এর দিকে তাকালাম , উনি আমার হাতে হাত রেখে ভরসা দিচ্ছেন , আমার চোখ জলে টইটম্বুর তবুও গড়িয়ে পড়তে দিলাম না , এক হাত দিয়ে চোখ টা আলতো হাতে মুছে সাইন টা করে দিলাম ,
এবার মৌলভী সাহেব বিয়ে পড়নো শুরু করলো , প্রথমে উনাকে কবুল বলতে বলল , উনি ও সুন্দর ভাবে কবুল বলে দিল ,
তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল সব কথা শেষ করে বলল ,
” বল মা কবুল ”
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে ই বললাম ,
” কবুল ”
বিয়ের কার্যক্রম শেষ , সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করলো , আমি ঠিক একই ভাবে পাথরের মতো বসে আছি , চারপাশে র কিছু ই যেন কানে আসছে না ,
ভেতর থেকে শুধু একটা কথা ই শোনা যাচ্ছে ,
” পূর্ণ তোর বিয়ে হয়ে গেছে , তুই এখন কারো অর্ধাঙ্গিনী , কারো বিয়ে করা বউ তুই , তোর ও এখন আপন মানুষ হয়েছে , তুই বিবাহিত পূর্ণ ,