ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-২২+২৩

0
498

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_22

” আপনি চিন্তা করবেন না মিস্টার তাহরিম তালুকদার , ডিভোর্স লেটার খুব তাড়াতাড়ি ই পৌঁছে যাবে আপনার কাছে ”

খুব ধীরে ধীরে কথাটা বলে পুনরায় বাসের জানালায় মাথা ঠেকালাম , এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি ,

কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর তাহরিম তালুকদার একটু নড়েচড়ে বসলেন , আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালাম , আমার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তিনি হয়তো হাসলেন , যা তার চোখ ই জানান দিচ্ছে , হাসি দিলে ওনার চোখ কুচকে যায় , ফর্সা মুখে কেন জানি না এই জিনিস ভীষণ ভালো লাগে , উনি হাসলে ভীষণ সুন্দর লাগে উনাকে , হাসি তে উনার মুখের বাঁকা দাতঁ টা দেখতে ও বেশ লাগে ,

” উহুম উহুম , আমাকে পর্যবেক্ষন করা শেষ হলে বলবে কেমন ? ”

আমি হকচকিয়ে উঠলাম , দ্রুত চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে তাকালাম ,

” বুঝলে পূর্ণ , আমি আরো ভেবেছিলাম তুমি সো কলড কমন ডায়লগ বলবে যে , নাআআ আমি এই বিয়ে মানি না , আপনি আমার জীবন টা কেন নষ্ট করলেন মন্ত্রী সাহেব ? কি দোষ করে ছিলাম আমি ? আপনি কেন বিয়ে টা করলেন ? ইত্যাদি ইত্যাদি ! ,

উনার কথা গুলো বাংলা সিনামার নাইকার অভিনয় থেকে কম কিছু ছিলো না , বেশ নাকি স্বরে কথা গুলো বললেন , আমি আড় চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম ,

” বাহ্ আপনার তো দারুণ প্রতিভা মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , অভিনয়ে বেশ দক্ষ আপনি , আগে কি কোন থিয়েটারে অভিনয় করেছেন না কি? ”

” অভিনয় করতে হলে থিয়েটারে কাজ করতে হবে এমন কি কোন কথা আছে মিস পূর্ণ ? ”

” না সেটা নেই , তবে যাই হোক , আমি এত টাও অবুঝ নই মিস্টার তাহরিম তালুকদার , আমি পরিস্থিতি বুঝি , এখানে না আপনার দোষ আছে আর না আমার , এটা সবটাই পরিস্থিতি , আর আমাদের বিয়ে হয়েছে এটা তো আমরা দুজন ছাড়া বাকি কেউ ই জানে না , তাহলে তো কোন সমস্যা ই নেই , আপনি আপনার মতো থাকেন আমি আমার মতো আর সময় হলে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে সব মিটিয়ে নিলেই হয়ে যাবে ,

আমার কথা শুনে তাহরিম তালুকদার কিছু একটা ভেবে বলল ,

” হুমমম সেটাই , যেটা হবে সেটা সময়ই দেখিয়ে দেবে ”

বেশ রহস্য ময় ভাবে কথা টা বলে উঠলেন উনি ,

” আপনার ফোন টা দেওয়া যাবে? আমার ফোনে চার্জ নেই । ”

উনি কিছু না বলে আমাকে নিজের ফোন এগিয়ে দিলো ,
আমি ফোন টা নিয়ে ইলুর নাম্বারে কল করলাম , ওর নাম্বার টা আমার মুখস্থ তাই বেশি বেগ পেতে হয় নি ,

দু বার কল করলাম কিন্তু দুই বার ই বন্ধ বলছে , তাই মন খারাপ করে উনার ফোন উনার কাছে ফিরিয়ে দিলাম,

” কি হয়েছে হঠাৎ মুখ টা এমন করে ফেললে কেন? ”

” কাল রাত থেকে ইলুটার কোন খোঁজ নেই , কোথায় আছে , কেমন আছে কিছু ই জানি না

” ওহ এই ব্যপার , চিন্তা করো না , ও ভালো আছে আর ওর সাথে আমার চাচাতো ভাই আছে , ও ইলমি কে দেখে রাখবে ”

” ওহহ ”

আমি আর কিছু না ভেবে মাথা টা আবার জানালায় ঠেকালাম , সারা রাত দৌড়াদৌড়ি র ফলে শরীর বেশ ক্লান্ত , বাসায় ফিরে একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে ঘুমাতে হবে , কখন যে চোখ টা লেগে এলো বুঝতে ই পারলাম না,

তাহরিম এক পলক পূর্ণর দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কারো নাম্বার ডায়াল করল ,

” হ্যালো ”

“………………….”

” ওয়ালাইকুম সালাম , তোমাকে যেই কাজ টা দিয়েছিলাম , সেটা ঠিক মতো করো আর কাক পক্ষী ও যেন টের না পায় কথা টা মাথায় রেখো ”

তাহরিম প্রথম কথা টা জোরে বললেও শেষ কথা গুলো ভীষণ আস্তে বলল ,

“………………..”

” ঠিক আছে , রাখছি , এ বিষয়ে পরে কথা হবে ”

বলেই ফোন টা কেটে দিলো , ফোনের দিকে তাকিয়ে ই রহস্য ময় ভাবে হেসে বলল ,

” দেখা যাক কি হয় , কি আছে সামনে ! ”

প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নি করে বাস এসে পৌঁছালো ঢাকা বাস স্ট্যান্ড , তাহরিম আগে নেমে পড়লো তার পিছনে ই আমি নামলাম ,

দুজন ই রিকসার জন্য দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ তাহরিমের ফোনে কল আসায় সে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে কল টা কানে ধরলো ,

আমি আড় চোখে একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম ,

উনি একটু দুরে গিয়ে কথা বলে ২ মিনিটের মাথায় আবার আসলেন ,

” একটু ওয়েট করো কুশন গাড়ি নিয়ে চলে আসবে ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,

” কুশন কে ? ”

” আমার সাথে যে সবসময় থাকে , আমার এসিস্ট্যান্ট ”
” ওহহ সেই ক্যাবলাকান্ত টা! ”

আমার কথা শুনে উনি বেশ শব্দ করে হেসে বললেন ,

” ভালো নাম দিয়েছো তো ”

” শুনোন ! আমি রিকসা নিয়ে চলে যাই , আপনি আপনার গাড়ি আসলে যাবেন নে ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকিয়ে বললেন ,

” এত দুর যেহেতু এসেছি , সেহেতু বাড়ি পর্যন্ত আমি ই এগিয়ে দিয়ে আসবো , সো চুপ করে দাঁড়িয়ে ওয়েট করো ”

আমি কিছু ই বললাম না কারণ কিছু বলে আদৌও লাভ নেই সেটা খুব ভালো করে জানা আছে আমার ,

আমি ব্যগ থেকে ফোন টা বের করে অন করতে চেষ্টা করলাম কিন্তু অন হচ্ছে না তাই আবার ব্যগে রেখে দিলাম ,

প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাড়ালো আমাদের সামনে ,

সামনের সিট থেকে একটা ছেলে আই মিন ওই ক্যাবলা কান্ত বেরিয়ে এলো ,

” গুড মর্নিং ভাই ”

” গুড মর্নিং কুশন ”

” ভাই একটা আর্জেন্ট নিউজ আছে ”

উনি গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ইশারা করলেন গিয়ে বসতে , আমি গিয়ে বসতেই উনিও সিটে বসতে বসতে বলল ,

” গাড়ি তে বসে কথা বলো কুশন ”

কুশন গাড়ির সামনের সিটে বসে ডোর লক করে বলতে লাগলো ,

” আসলে ভাই , কে বা কারা কাজ টা করেছে সেটা বলতে পারছি না তবে আপনার বিয়ের খবর টা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়েছে ”

বলেই কুশন চুপ করে গেলো ,

এতোক্ষণ এদের কথায় আমি তেমন একটা পাত্তা না দিলেও এবার আমি বেশ চমকে উঠি , কি বলে কি? কিভাবে সম্ভব ?

” কি বলছো কি ক্যাবলাকান্ত আই মিন কুশন ? এটা কিভাবে সম্ভব ? আমাদের তো ওখানে কেউ ই চিনতো না তাহলে ? ”

আমার কথা শুনে কুশন লুকিং মিরর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” আসলে মেম , কে বা কারা করেছে সেটা তো এখনো জানি না , বের করতে পারি নি তবে সকাল থেকে সকল নিউজ চ্যানেল , সকল খবরের হেড লাইন হয়ে গেছে আপনার আর ভাইয়ের বিয়ের খবর , ইনফ্যাক্ট এরা এটাও বলছে যে আপনার সাথে নাকি ভাইয়ের গোপনে প্রেম ছিলো এবং আপনারা কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে সংসার করছেন ”

” হুয়াটট ? বানিয়ে বানিয়ে নিউজ বানালেই হলো নাকি ! ”

এই প্রথম মিডিয়ার লোকদের উপর আমার চরম ভাবে রাগ উঠছে , কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছে!

হঠাৎ তাহরিম তালুকদার বলে উঠলো ,

” ভাগ্যিস সংসার পর্যন্ত টিকে আছে , যদি বলতো গোপনে বাচ্চা ও আছে তিন চার টা তাহলে তো আমার ভার্জিনিটির অপমান হতো ”

এই টেনশনের সময় উনার এমন আজাইরা কথা শুনে আমার যেন গা টা জ্বলে উঠলো ,

আমি রাগান্বিত চোখে তার দিকে তাকাতেই উনি ইনোসেন্ট মুখ করে মোবাইল গুতানো শুরু করলো যেন এই মূহুর্তে উনি কিছু ই বলেন নি ,

হঠাৎ উনার ফোনে ফোন আসায় উনি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন , ফোন টা লাউড স্পিকার এ দিয়ে বললেন ,

” হ্যাললো মাই ডিয়ার ফাদার ! হুয়াট’স আপ বয়? ”

” তোর হুয়াট’স অ্যাপ আর ইমু অ্যাপ এর গুষ্টির ষষ্ঠী পুজা করমু আয় তুই বাড়িতে , বেয়াদব ছেলে , তুই বিয়ে করবি একবার জানালিনা পর্যন্ত ”

” আরে আরে মিস্টার তাপস তালুকদার রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আসছিই ”

” হ্যা হ্যা আসেন , আপনার জন্য ই অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি আসেন , আমি, আপনার মা আর তানজিম অপেক্ষা করছি আর বাড়ির সামনে এক দল জার্নালিস্ট আছে তারাও অপেক্ষা করছে , আসেন আপনি মন্ত্রী সাহেব ”

” জার্নালিস্ট! ”

” জি , সেই সক্কাল থেকে উনারা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে , আপনি তাড়াতাড়ি আসেন আর সাথে তালুকদার বাড়ির বড় বউকে নিয়ে আসবেন, তালুকদার বাড়ি তে কোন কাপুরুষের জায়গা হতে পারে না তাই বীরের বেশে বউ কে সাথে নিয়ে আসবেন ”

উনার বাবার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন ,

” ইউ নোও না বাবা , আমি কাপুরুষ নই তাই বীরের বেশে আমার বউ কে আমি নিয়ে ই আসবো , রাখি এখন আর ১০ মিনিট লাগবে ”

” হুম আসেন ”

উনি ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” দেখলে তো বাবা কি বলল? আমি তোমাকে তোমার শশুর বাড়ি তে নিয়ে যাবো , আই মিন তালুকদার বাড়িতে , আমি আর যায় হোক কাপুরুষ পদবী টা পেতে চাই না ”

” কিন্তু … ”

” কোন কিন্তু না , তুমি এখন আমার সাথে যাবে বেসস ”

প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় গাড়ি গিয়ে থামলো তালুকদার বাড়ির সামনে ,

গাড়ি থাকতেই উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে বের করে আনলেন , আমরা বের হতেই আমাদের জেঁকে ধরলো এক দল জার্নালিস্ট ….

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে