Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 480



ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৫

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_05

কান থেকে ফোন টা নামিয়ে ফিক করে হেঁসে দিলো পূর্ণা , এমন নয় যে পূর্ণা বুঝতে পারে নি যে লোকটা মিথ্যে বলছে কিংবা কথা ঘুড়ানোর চেষ্টা করছে , তবে যায় হোক লোকটার কথা খারাপ লাগে নি তার ,

” কি হয়েছে হাসছিস কেন ? ”

ইলমির কথায় পূর্ণা ইলমির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল ,

” আবব কিছু না , তো তুই তো বললি না এত সকাল সকাল সঙ সেজে আমার বাসায় কি করছিস? ”

ইলমি হাত দিয়ে সপিং ব্যগ টাকে কাছে টেনে খুলতে খুলতে বলল ,

” কাল কি বলেছিলাম মনে নাই তোর ? যায় হোক মনে না থাকলেও আমার কিছু করার নাই , তোকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি আজ পহেলা ফাল্গুন , পহেলা বসন্ত , বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান হবে জা’বির ক্যাম্পাসে আর অফিস শেষে তুই আর আমি যাবো , বিশাল অনুষ্ঠান হয় ওখানে ”

পূর্ণা চোখ ছোট ছোট করে ইলমির দিকে তাকিয়ে আছে , ইলমি শপিং ব্যাগ থেকে বাসন্তি রঙের সাড়ি , সাদা রঙের ব্লাউজ , মাথার খোঁপায় লাগানোর মতো বেলি ফুলের মালা আর হাতে বাধার জন্য রজনীগন্ধার গাজরা , গলায় আর কানের জন্য ছোট্ট পাথরের ইয়ারিং আর চেইন হাতে ম্যাচিং রেশমি চুড়ি ,

” এগুলো আনলি কেন ? ”

জিনিস গুলো বিছানায় সাজিয়ে রাখতে রাখতে ইলমি বলল ,

” জিনিস গুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য আনি নি , আর তুই ই তো কালকে বললি তোর বাসন্তী রঙের সাড়ি নাই তাই নিয়ে আসলাম এখন তো আর বলতে পারবি না যে তোর সাড়ি নাই ”

ইলমির কথায় পূর্ণা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল ,

” দেখ ইলমি কাজটা কিন্তু তুই একদম ঠিক করিস নি , এত গুলো টাকা নষ্ট করার কোন মানে ই হয় না ”

” এই এই পূর্ণ তোকে কে বলেছে রে টাকার হিসেব করতে , আমার টাকা আমি ঢেরর বুঝবো তোকে আমার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না , যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় তো , অফিস টাইম হয়ে গেছে প্রায় ”

পূর্ণা আর কিছু বলল না কারণ সে জানে এই মেয়ে কে কিচ্ছু বলে লাভ নাই উল্টো একটা কথার বদলে দশ টা কথা শুনাবে

পূর্ণা ফ্রেস হয়ে আসলে ইলমি পূর্ণা কে সাড়ি পড়িয়ে রেডি করে দিয়ে গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো ,

____________________

” আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মিহু , একদম আমার স্বপ্নের রাজকন্যা , গড প্রমিস একদম হুর পরী লাগছে , চোখ ফেরানো দায় হ’য়ে যাচ্ছে ”

নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছিলো পূর্ণা , সামনে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালো ,

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৃদুল কে দেখতে পেয়ে বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে গেলো তার , অনিচ্ছা সত্যেও বলল ,

” ধন্যবাদ ”

পূর্ণা বুঝতে পারে না মানুষ এতোটা ছে’চড়া কি করে হতে পারে , এতো বেহায়া যে কেউ হতে পারে মৃদুল কে না দেখলে পূর্ণা কখনোই বুঝতে পারতো না ,

” আজ কোথাও যাবে না কি মিহু ? ”

পূর্ণা ভ্রু কুচকে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বলল ,

” ফাস্ট অফ অল আমি মিহু নই , আমার নাম মিফতাহুল পূর্ণা , ডাক নাম পূর্ণা , মিফতাহুল ডাকলে পুরো টাই ডাকবেন নয়তো পূর্ণা , এসব হাফ নেইম আমার পছন্দ না বিশেষ করে আপনার কাছ থেকে তো না ই , আর আমাকে কেমন লাগছে সেটা আমি বাসা থেকে বের হবার আগে আয়নায় দেখে এসেছি আপনার কাছে কোন কমপ্লিমেন্ট চাই নি যেহেতু দিয়েছেন আপনার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিল তাই ধন্যবাদ দিলাম, আমরা কোথায় যাই আর না যাই সেটা আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে হবে আমার ? হু আর ইউ ? নিজের কাজ নেই ? যান নিজের চরকায় তেল দেন ”

বলেই আবার ফাইল দেখায় মনোযোগ দিলো পূর্ণা ,

” মিহু তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো ! ”

পূর্ণা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,

” ইট’স মিফতাহুল নট মিহু আর মান আছে আপনার ? মান থাকলে না অপমান করবো , আপনার তো মান ই নেই , আত্ম সম্মান যদি বিন্দু পরিমাণ থাকতো তাহলে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন না ! আর কাকে কি বলি আমি ! ”

” পূর্ণা! ”

” সে যায় ই হোক না কেন , আপনি কি আর কিছু বলবেন ? না বললে যান নিজের কাজে যান অযথা কাউকে ডিস্টার্ব করবেন না মিস্টার মৃদুল , আর আমি এখন বেরুবো , আমার কাজ শেষ আপনার কোন কাজ থাকলে করতে পারেন আর না থাকলে আমার ডেস্ক টা বেশ ময়লা হয়েছে , চাইলে পরিষ্কার ও করে দিতে পারেন , আমি ডোন্ট মাইন্ট ”

বলেই পূর্ণা বাকা হাসি দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো , বাইরে এসে দেখে খুব অল্প স্বল্প মেম্বার ই আছে অফিসে , বেশির ভাগ ই চলে গেছে , এই পহেলা ফাল্গুন এ হয়তো কেউ নিজের প্রিয় মানুষ টার সাথে সময় কাটাতে ব্যস্ত আবার কেউ ভালোবাসার মানুষ এর সাথে দিনটি উদযাপন করতে ব্যস্ত কেউ কেউ আবার নিজের পরিবার কে নিয়ে এই রঙিন শহরে ঘুরতে ব্যস্ত ,

পিছনে থেকে হাতে টান পরাই পূর্ণা পিছনে তাকালো , ইলমি ভ্রু কুচকে তরা দিকে ই তাকিয়ে আছে ,

” কি হয়েছে তোর এমন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? ”

পূর্ণা ক্ষীণ কন্ঠে বলল ,

” না তেমন কিছু না ”

” মন খারাপ ? ”

” আমার আবার মন খারাপ ! মন আছে এটাই অনেক সেটা খারাপ করার সামর্থ নেই ”

ইলমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

” তোর এই ফালতু প্যাচাল শেষ হলে বল বেরুবো আমরা ”

” হুম চল ”

পূর্ণা আর ইলমি অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিকশায় উঠলো , প্রায় মিনিট পনেরোর মাঝে ই রিকসা এসে থামলো জা’বির গেইটের সামনে ,

রিকসা ভাড়া মিটিয়ে ইলমি বলল ,

” দোস্ত তুই এই দিকটাই একটু দাড়া আমি এই যাব আর এই আসবো ”

পূর্ণা হাতের রজনী গন্ধার গাজরা ঠিক করতে করতে বলল ,

” ঠিক আছে যা তবে তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু ”

কথাটা বলেই পূর্ণা সামনে তাকিয়ে দেখে ততক্ষণে ইলমি উধাও ,

প্রায় পনেরো মিনিট হতে চলল এই ইলমির আসার নাম গন্ধ নেই , পূর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে জা’বির গেইটে র দিকে তাকালো ,

ভেতরে বেশ জাক জমক পূর্ণ সেটা কোলাহল দেখে ই বোঝা যাচ্ছে , পূর্ণা গেটের দিকে হাটতে লাগলো ,

পূর্ণার মনে হচ্ছে চুলের খোঁপা টা ঢিলে হয়ে গেছে কিছু ক্ষনের মাঝে ই খুলে পড়বে , চুল তো আর কম না কোমড় ছাড়িয়ে সামলানো খুব কষ্ট নেহাত লম্বা চুল প্রিয় নয়তো কবেই বয়কাট দিয়ে ফেলতো ,

পূর্ণা চুল থেকে বেলি ফুলের মালা টা খুলে আলগোছা চুল গুলো এক হাতে খোপা করতে করতে সামনে এগুলো ,

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ দৌড়ে এসে পূর্ণার কাঁধে র সাথে ধাক্কা লাগতেই পূর্ণা পরতে পরতে বেচেছে কিন্তু হাতে থাকা বেলি ফুলের মালা টা নিচে পরে গেছে , পূর্ণা চোখ তুলে তাকালো সামনের দিকে , ছেলেটা বেশ কিছু টা দৌড়ে গিয়ে হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে জোরে বলল,

” সরি আপু , আ’ম রিয়েলি সরি , আসলে পিছনে থেকে দৌড়ানি দিয়েছে তো তাই খেয়াল করি নি ”

, মাস্ক পড় ছিলো বলে কথাটা বুঝতে খানিক সেকেন্ড সময় লাগলো ,ছেলেটি আবার সামনের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিতে যাবে হঠাৎ কোন একটা কারনে সেখানে ই থেমে গেলো

পিছনে থেকে ছেলেটার নাম ধরে কেউ দৌড়ে আসছে, পূর্না পিছনে তাকাতে যাবে অমনি কেউ দৌড়ে এসে পূর্ণার উপর পড়লো পূর্না টাল সামলাতে না পেরে লোকটাকে নিয়ে ই নিচে পরে গেলো

তারপর আর কি ! সবাই ফ্রি তে বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন উপভোগ করলো ,

লোকটা উপরে পূর্ণা নিচে , পূর্ণা ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকালো , মাস্ক পড়া থাকলেও লোকটার চোখ অসম্ভব সুন্দর ,

কথাটা মনে আসতেই পূর্ণা নিজের মন কে হাজার টা গালি দিলো ,

” ওয়াও ওয়াও হুয়াট অ্যা রোমান্টিক সিন ইয়ার ”

কথাটা কানে আসতেই পূর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো , সেই মাস্ক পড়া ছেলেটা হাতে মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেল এ ছবি তুলছে , চারপাশে বেশ ভীড় জমে গেছে কিন্তু পূর্ণার সাথে লেপ্টে থাকা লোকটার উঠার কোন নাম গন্ধ নেই ,

” এই যে মিস্টার কানা , আই নোও আমি কিউট একটা মেয়ে তাই বলে পাবলিক প্লেসে এভাবে লেপ্টে থাকার কোন মানে ই হয় না , আর মানুষ না তো যেন একটা আস্ত হাতি , ও মা গো আমার কোমড় শেষ ! আরে উঠুন উঠুন সবাই কে কি বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন দেখানোর সখ হয়েছে না কি ”

পূর্ণার কথাটা কানে যেতেই লোকটা পূর্ণার কানে র কাছে কিছু টা ঝুকে ফিসফিস কন্ঠে বলল,

” আপনার ভাগ্য ভালো মিসস , বাংলা সিনামা র রোমান্টিক সিন দেখাচ্ছি , যদি কোরিয়ান সিনামার রোমান্টিক সিন দেখাতাম তাহলে …

বলেই লোকটা ভ্রু বাকিয়ে উঠে বসলো ,

আর পূর্ণা চোখ বড় বড় করে লোক টার দিকে তাকালো , কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ পাবলিক প্লেসে একটা অচেনা মেয়েকে এ কথা বলতে পারে , পূর্ণা ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো ,

” অসভ্য ”

লোকটা খানিকটা শব্দ করে হেসে বলল ,

” আই নোওও ”

চলবে …..

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৪

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_04

দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে ঘুম হালকা হয়ে হেলো পূর্ণার মিটমিট করে তাকিয়ে শুয়া ছেড়ে উঠে বসলো, ভ্রু কুচকে বার কয়েক ঠক ঠক আওয়াজ শুনে বালিশের নিচে থেকে ফোন টা বের করে একবার সময় ট দেখে নিলো , মোটে ৭ টা বাজে এই সাত সকালে কে আসবে ? মাস ও তো শেষ হয় নি যে বাড়িওয়ালার বউ আসবে ভাড়া চাইতে তাহলে কি ইলমি?

কথাটা ভাবতে ভাবতে ই বিছানা থেকে নেমে এক হাতে চুলের খোপা করতে করতে দরজার দিকে এগুলো পূর্ণা , বাড়িওয়ালার বউ আর ইলমি ছাড়া এই বাসায় তেমন কেউ ই আসে না ,

পূর্না দরজার কাছে কি গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

” কে? ”

অপর পাশ থেকে ইলমির কন্ঠ শুনা মাত্র ই দরজা খুলে দিয়ে দু হাত বুকে গুজে দাড়ালো পূর্ণা ,

ইলমির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই থতমত খেয়ে গেলো সে , ইলমি বাসন্তী রঙের সাড়ি পড়েছে, সাদা ব্লাউজ সাথে ম্যাচিং কানের দুল আর গলায় ছোট পাথরের রকেটের সাথে চিকন চেইন , ফর্সা গায়ে রং টা বেশ মানিয়ে ছে আবার হাতে একটা সপিং ব্যাগ কিন্তু এই সকালে এত সঙ সাজার কারণ বুঝলো না পূর্ণা ,

ইলমি পূর্না কে দেখে সব কটি দাঁত বের করে হাসি দিলো

” কি চাই ? এই সাত সকালে আমার ঘুম ভাঙানোর কারণ টা জানতে পারি? ”

পূর্ণার কথার কোন রুপ পাত্তা না দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

” সর তো, আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি এসেছি তাতে তোর কি ? ”

বলেই ইলমি সোজা ঘরের দিকে হাটতে লাগলো , পূর্ণা ও দরজা লাগিয়ে ইলমির পিছনে পিছনে গেলো ,

” কি সমস্যা তোর ? রাতে ও ঘুমাতে দিলি না এখন আবার সাত সকালে এসে হাজির! ”

ইলমি বিছানায় বসতে বসতে ভ্রু কুচকে বলল ,

” রাতে ঘুমাতে দেই নাই মানে কি ? আমি তো একবার ই ফোন দিলাম ”

” তাহলে রাত ১২ টা বাজে কি আমি দিয়েছি তোকে ফোন? ”

পূর্ণার কথায় ইলমি বেশ অবাক হলো,

” রাত ১২ টা মানে ? তুই তো জানিস পূর্ণ আমাকে ১১ টার পর এই বাংলাদেশে চিরুনি তদন্ত করলে ও আমাকে পাওয়া যাবে না ”

কথাটা যে ইলমি একেবারে ভুল বলেছে তা কিন্তু না , ওকে আসলেই রাত ১১ টার পর ঘুম থেকে তোলা ইহকালে সম্ভব না কিন্তু ফোন করলো কে?

” তাহলে? ”

পূর্ণার কথার ভিত্তি তে ইলমি ভ্রু কুচকে বলল,

” এত চিন্তা করার কি আছে আজব, তোর ফোন চেক করলেই হয় ”

” আরে হ্যা তো , মনেই ছিল না ”

বলেই পূর্ণা নিজের ফোন হাতে নিয়ে কল লিস্টে ঢুকলো , প্রথমেই অপরিচিত নাম্বার দেখে খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো সে , এটা তো ইলুর নাম্বার না, তাহলে? ইসস কে না কে ফোন দিয়েছিল আর কি করলাম এটা? এখন তো নিজের কপাল নিজে থাপরাইতে মন চাচ্ছে ,

পূর্ণা মোবাইল থেকে চোখ তুলে সামনে বসে থাকা ইলমির দিকে তাকালো ,
ইলমি প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে, ইলমির দৃষ্টি লক্ষ্য করে পূর্ণা বোকা ভাবে হাসলো ,

” কি হয়েছে ? ”

পূর্ণা কিছু টা ঢোক গিলে বলল,

” আননোন নাম্বার চিনি না ”

ইলমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ,

” আননোন নাম্বার তো কি হয়েছে ? বাই দা রাস্তা তুই কি উল্টো পাল্টা কিছু কথা বলছিস না কি ? ঝাড়ি টাড়ি দিসিস ? ”

পূর্ণা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো,

” আমি না আসলে, তুই ফোন দিয়েছিস ভেবে ইচ্ছে মতো ঝেড়ে ফোন রেখে দিয়েছিলাম , আমি কি জানতাম না কি ? আর ওই লোকের কমনসেন্স নাই নাকি! মাঝ রাতে একটা মেয়েকে কল করে ! ”

ইলমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

” আচ্ছা যা করার তো করেই ফেললি এখন বলে লাভ নাই , তুই বরং বেচারা অর বেচারি যেই হোক না কেন তাকে ফোন করে সরি বলে দে ”

পূর্না মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে বলল,

” ঠিক আছে ”

বলেই ফোন হাতে নিয়ে কল করলো সেই নাম্বারে ,

_______________

মুখে সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়াতে চোখ মুখ কুচকে গেলো তাহরিমের , রাতে সকল হিসেব নিকেশ শেষ করে ঘুমোতে ঘুমোতে বেশ দেরি হয়ে ছিলো তার,
সূর্যের আলোতে কাঁচা ঘুম টার ব্যঘাত তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না, উপুর হয়ে শুয়ে কাথা দিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে আবার ঘুম দিলো এর ই মাঝে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে নিজের কর্কষ শব্দে বেজে উঠলো ফোন, চোখ বন্ধ করে বালিশের তলায় থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো , কানে দেওয়ার সাথে সাথে ই কারো কোমল কন্ঠে হৃদপিন্ড কম্পিত হলো তাহরিম তালুকদারের ,

ওপাশ থেকে কেউ একজন কোমল কন্ঠে সালাম দিলো , সালামের উত্তরে তাহরিম শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল ,

” ওয়ালাইকুম সালাম ”

অপর পাশ থেকে মেয়েটা বলল,

” আপনি কি কাল রাতে আমার ফোনে কল দিয়েছিলেন ? আসলে এই নাম্বার থেকে কাল রাত ১২ টায় আমার ফোনে কল গিয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আর ঘুমের ব্যঘাত ঘটানোর কারণে বেশ রেগেও গিয়েছিলাম , আসলে আমি ভেবেছিলাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মনে হয় ফোন দিয়েছিলো আর আমি ঘুমের তাড়নায় নাম্বার টাও খেয়াল করি নি তাই আসলে আপনাকে ওভাবে বলা হয়েছিলো আসলে আমি ঘুমের মাঝে কাকে কি বলি মাথায় থাকে না , আপনি মনে হয় কোন দরকারে ফোন দিয়েছিলেন! আসলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত , আমি ইচ্ছে করে করি নি , আপনার কোন দরকার হলে বলতে পারেন , কি উপকার করতে পারি? ”

তাহরিম চোখ বন্ধ করে মেয়েটার কথা শুনছিলো , মেয়েটার কন্ঠ কি আসলেই এত মধুর নাকি শুধু মাত্র তার কাছে ই এমন মনে হচ্ছে! আচ্ছা! এক সাথে এত কথা কেউ কি বলতে পারবে? হ্যা তো মেয়েটা পেরেছে, এমন কেন মনে হচ্ছে যেন সে চাইছে মেয়েটা আরো কিছু ক্ষন কথা বলুক আর সে শুধু শুনবে ! এতো আবেগ দিয়ে কেউ কি কখনো সরি বলেছে তাকে? কই মনে হচ্ছে না তো, এত সুন্দর করে সরি মেয়েটাকে কে বলেছে বলতে? আনমনেই তার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ভেসে উঠলো ,

ওপাশ থেকে মেয়েটা সমানে হেলো হেলো করেই যাচ্ছে ,

” হ্যালো , এই যে শুনছেন আপনি ? ”

“……………..

” কথা বলুন , আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? ”

” জজজজ্বি ”

” আসলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ”

” ইট’স ওকে, আমার ই ভুল হয়েছে, এত রাতে একটা মেয়েকে ফোন দেওয়া ঠিক হয় নি , আমিও আসলে…. ”

সরি বলতে গিয়েও তাহরিম ঠেকে গেলো কারণ সে এর আগে কখনো ই কাউকে তার কাজের জন্য সরি কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেনি

” জি? ”

” আববব কিছু না ”

” আচ্ছা যায় হোক, আপনি কি কোন দরকারে ফোন দিয়েছিলেন? ”

অপরপাশে কথা বলা মেয়েটরা প্রশ্নে তাহরিম জ্বিব দিয়ে খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে গিয়েও থেমে গেলো , কেনো জানি আজ অদ্ভুত ভাবে মেয়েটিকে তার পরিচয় দিতে ইচ্ছে করছে না , কেন জানি তার নিজের পরিচয় গোপন রেখে মেয়েটার সাথে কথা বলতেই ভালো লাগছে , সে চাই না মেয়েটা তাকে চিনুক, সাধারণ ছেলে হিসেবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করতে ইচ্ছে করছে তা খুব করে ,

” আসলে আপনাদের ওখানে কি সংবাদ পত্র ছাপা হয় ? আমার একটা সংবাদ ছাপানো ছিলো তাই আপনাকে কল করেছিলাম ”

” কি রকম সংবাদ ? ”

” পাত্রীর ”

পূর্ণা বেশ থতমত খেয়ে বলল ,,

” পাত্রী? ‘

নিজের বোকা বোকা কথায় নিজেই বেআক্কেল হয়ে গেলো তাহরিম , মিথ্যে সে কোন কালেই বলতে পারে না তার উপর দুনিয়ায় কি আর কোন নিউজ ছিলো না শেষে কি না পাত্রী চাই! যে কি না হাতে তুড়ি দিলে পাত্রীর লাইন লাগবে সেখানে সে কি না পাত্রী চাই বলে সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন! ব্যপার টা হাস্যকর না!

চলবে….

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০৩

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_03

পূর্ণা বাসায় ঢুকে লাইট অন করতেই দেখে লাইট টা জ্বলছে না চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে হঠাৎ কিছু একটা পরার শব্দে চমকে পিছনে তাকালো পূর্ণা ,

” কে ? কে ওখানে ? ”

হঠাৎ নিজের পায়ের কাছে কোন কিছুর আভাস পেয়ে ছিটকে দুরে সরে গেলো ঠিক তখনই কানে ভেসে আসলো ” মিউউ মিউউ ” শব্দ যা শুনে পূর্না খানিকটা হাফ ছেড়ে বাচলো ,

” ওফফ মিনি তুই তো আমাকে ভয় পাইয়েই দিয়েছিলি রে ”

বলেই পায়ের কাছ থেকে নিজের পোষা বিড়াল টাকে কোলে তুলে নিলো , পূর্ণা মিনি নামক বিড়াল পোষে সেই চার বছর আগে থেকে , অবসর সময় টা সে মিনির জন্য ই বরাদ্দ থাকে ,

” কি রে মিনি আজকে আবার বিদ্যুৎ ভাইজানের কি হলো রে? ”

পূর্ণার কথা শুনে মিনি কেবলই মাথা নাড়ায়, পূর্ণা মুচকি হেসে মিনি কে নিচে নামিয়ে মোবাইল বের করে মোমবাতি খোঁজার চেষ্টা করে , এই বিদ্যুৎ টাও যে কি , আকাশের অবস্থা খারাপ করলেই ঠাস করে বিদ্যুৎ চলে যায় ,

মোমবাতি জ্বালিয়ে পূর্ণা ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে লেপটপ নিয়ে বসলো , বহুত কাজ জমা হয়ে আছে তার উপর আবার নতুন আর্টিক্যাল সব মিলিয়ে প্যারাময় জীবন ,

লেপটপ অন করে নেট কানেকশন দেওয়া মাত্র ই কিছু ই-মেইল এসে জমা হলো পূর্ণার আইডি তে, পূর্ণা ধীরে ধীরে সব গুলো ই-মেইল চেক করছে, হঠাৎ করে একটা ই-মেইল এ এসে তার চোখ আটকে গেলো চোখ দুটো ছোট ছোট করে পুরো ই-মেইল টা পড়লো কিন্তু ই-মেইল টা কে পাঠালো তার বোঝার উপায় নেই ,

ই-মেইল এ লেখা ছিল ,

” পূর্ব থেকে ই সাবধান হয়ে যান মিফতাহুল পূর্ণা, রাজনীতি নিয়ে বেশি কিছু খুজতে যাবেন না , খুব খারাপ জিনিস এই রাজনীতি সেটা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবেন না, কোন কিছু র ই বেশি গভীর ভালো না, যা জানেন তাই নিয়ে শুক্রিয়া আদায় করেন আর এই সম্পর্কে আর্টিক্যাল লেখা অফ করে দেন না হলে পরবর্তী তে বিপদে পড়বেন , বিপদ আপনার খুব সন্নিকেটে মিস মিফতাহুল পূর্ণা ”

ই-মেইল টা চেক করে পূর্ণা মুচকি হাসলো ,কারণ এমন থ্রেট আজ পূর্ণার জন্য নতুন না , এমন থ্রেট কত এসেছে এসবের ধার পূর্ণা ধারে না তবে অবাক করা বিষয় হলো যেই একাউন্ট থেকে ই-মেইল টা এসেছে সেটা ডিজেবল করা হয়তো লোকটা চায় নি পূর্ণা তাকে চিনোক,

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার টাইপিং এ মনোযোগ দিলো , এই ছোট্ট জীবনে কত কিছু ই না দেখলো কত মানুষের কত রুপ, কত কথা, কত ধরনের দৃষ্টি ,

কাজ শেষে লেপটপ অফ করে বারান্দায় যায় পূর্ণা কোলের উপরে মিনি গুটিশুটি মেরে বসে আছে মিনির গায়ের উপর বার কয়েক হাত বুলিয়ে বারান্দায় রাখা টুলের উপর বসে পরে ,

আজ মা বাবার কথা বেশ মনে পড়ছে পূর্ণার হয়তো কখনো দেখা হয় নাই , হয়তো কারো পাপের ফসল কিংবা অন্য কিছু ও হতে পারে তবে একটা কথা কি , যত যায় ই হোক না কেন এই জন্মদাত্রী আর জন্মদাতা কে কখনো ঘৃণা করা যায় না , গল্প টা এমন না হলেও পারতো , একটা সুন্দর সংসার হতে পারতো একটা সুন্দর ভবিষ্যত হতে পারতো, কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে জল টুকু মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু ক্ষন ,

বিদ্যুৎ এখনো আসে নি , পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে আছে ,

আর বেশিক্ষণ বারান্দায় না থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরে চলে আসলো ,

পুরো ঘরে একটু হাটাহাটি করে বিছানা করে মিনি কে নিয়ে শুয়ে পড়লো পূর্ণা , চোখ টা শুধু লেগে আসবে অমনি ঘুমের তেরো টা বাজিয়ে স্ব শব্দে মোবাইল টা বেজে উঠলো , চোখ বন্ধ করেই হাতরাতে হাতরাতে মোবাইল টা হাতে নেয় পূর্ণার বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে গেলো কোন মতে একটা চোখ খুলে স্ক্রিনে ইলু নামটা দেখে রিসিভ করে নেয় ,

” এতো রাইতে কি তোর? ”

পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো ,

” ডিস্টার্ব করলাম দোস্ত ? ”

” তুই কি এইডা জিগাইবার লাইগা ফোন দিসোস ফহিন্নি? ”

” না না দোস্ত , শোননা? ”

” শুনতাছি বল জলদি আমার ঘুম পাইছে ”

” দোস্ত কালকে তো পহেলা ফাল্গুন! ”

” তো আমি কি করমু ? ”

পূর্ণার কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল ইলমি,

” আমি কি করমু মানে? তুই এমন পাংসা কেন রে? আমি কিছু জানি না তুই কালকে সাড়ি পড়বি আমিও পড়মু তাও বাসন্তী রঙের ”

” আমার কেন বাসন্তী সাড়ি নাই সো তুই পড় আমি না ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে , রাখি ”

বলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো ইলমি যার দরুন বেশ অনেক টায় অবাক হলো পূর্না , এত সহজে মেনে নেওয়া র মেয়ে তো ইলমি না কে জানি কি তালগোল পাকাচ্ছে মনে মনে ,

পূর্ণা আর কিছু চিন্তা না করেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো,

কিছু ক্ষনের মাঝেই আবার ফোন আসাতে মেজাজ বেশ খারাপ হলো পূর্ণা , চোখ বন্ধ করে ই ভাবলো এখন ইচ্ছে মতো ঝাড়বে সে ইলুকে মনে মনে কথাটা ভেবেই রিসিভ করে কানে ধরলো , অপর পাশ থেকে কেউ কিছু বলার আগেই পূর্ণা বলতে লাগলো ,

” ওই কালা শামসুর বউ , শাঁকচুন্নি কোথাকার , এই তোর জামাই কি আরেক বেডির লগে ভাইগা গেছেগা? নাকি তোর সতিন রে বাইত লইয়া আইছে, কোনডা ? ফহিন্নি তুই আমরা সাধের ঘুমটার চব্বিশ টা বাজাইতাছোস অহন তোরে আমার মনে কইতাছে ওই বুড়ী গঙ্গার পঁচা পানিতে চুবানি দিতাম , বেদ্দপ বেডি এক থাপড়ানি দিমু সাত দিন কানে হুনবি না, আবার যদি ফোন দেস তোর নাক বরাবর এক ঘুষি দিমু মুখের মানচিত্র বদলাইয়া লামু নিজেরেই নিজে চিনবার পারবি না , তুই যদি বেডি আমার সামনে থাকতি! তোর সাত জনমের ভাগ্য তুই আমার সামনে নাই , নাইলে তোরে আমি বুঝাইয়া দিতাম এই পূর্ণার ঘুমের জন্য পূর্ণার কি করতে পারে , ঘুমের লগে নো সেক্রিফাইজ, আবার যদি ফোন দেস তুই তাইলে ফোনের মধ্যে দিয়া গিয়া কানের দুই আঙুল নিচে একটা চড় দিমু বিটিভির মতো ঝিরঝির করবি , বেদ্দপ, ”

বলেই ঠাস করে ফোন টা কেটে দিয়ে পূর্না আবার ঘুমিয়ে পড়লো , মেজাজ এতো খারাপ হতো না যদি না এতো সুন্দর স্বপ্নের মধ্যে ফোন কল ব্যঘাত ঘটাতো , মাত্রই একটা স্বপ্ন দেখা শুরু করছিলো তারমধ্যে আবার ফোন…

ফোন হাতে নিয়ে কুশন বেক্কেল এর মতো দাঁড়িয়ে আছে, এতক্ষণ কি থেকে কি হয়েছে তার ঠিক মাথার উপর দিয়ে গেছে , কুশন তার সামনে বসে থাকা তাহরিমের দিকে তাকালো ,

তাহরিম ভ্রু কুচকে কুশনের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো,

কোথা থেকে শুরু আর কোথায় শেষ তার ঠিক বুঝে আসছে না,

তাহরিম খবর পেয়েছিলো মিডিয়ায় কাজ করা একজন মেয়ে সব রাজনীতি বিদ দের নিয়ে আর্টিক্যাল লিখছে তাই মেয়েটার নাম্বার বের করে কল দিয়েছিলো যেন কোন কিছু না জেনে উল্টো পাল্টা কথা না লিখে কারণ সে নতুন এমপি হয়েছে এর মাঝে গুজব ছড়ালে ক্যারিয়ারে বেড ইফেক্ট পড়তে পারে ,

কিন্তু তাকে তো কোন কথায় বলতে দিলো না মেয়েটা, মুখের উপর হাবিজাবি কতকিছু বলে ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো, এটাকে কি ম্যানার বলে,

কথা টা মনে মনে চিন্তা করে ই তাহরিম বিরবির করে বলে উঠলো ,

” ম্যানারলেস মেয়ে কোথাকার! ”

চলবে,,

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০২

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_02

” স্যার কাউকে খুঁজছেন? ”

কুশনের কথায় খানিকটা চমকে পাশেই কুশনের দিকে তাকালো তাহরিম,

পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ই পিছনে তাকিয়েছিলো সে কিন্তু তেমন কাউকে ই নজরে এলো না তার, এছাড়া চারপাশে প্রেস মিডিয়া সাথে পুলিশ রয়েছে এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা ভালো হবে না

কখন যে আবার পুলিশের বাধা অতিক্রম করে আবার মিডিয়ার লোকজন জেঁকে ধরে বলা তো যায় না , এটা চিন্তা করে ই সামনের দিকে অগ্রসর হলো সে, কম ধকল তো আর গেলো না নিজের উপর দিয়ে তাই বাড়ি তে গিয়ে রেস্ট নেওয়া টাই বেটার অপশন বলে মনে হলো তাহরিমের দরকার পড়লে কাল প্রেস কনফারেন্স করবে সে তবুও আজ আর না,

তাহরিম গিয়ে বসলো কুশনের আনা আরেকটা গাড়িতে , গাড়ি তে বসেই মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে দিলো সে,

কপালে হাত দিয়ে কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন তাহরিম, লুকিং গ্লাস দিয়ে একবার নিজের স্যার কে পর্যবেক্ষন করলো কুশন,

” স্যার কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত? ”

” তোমাকে কতবার বলেছি কুশন আমাকে স্যার না ভাই বলে ডাকবে ”

কপলাে হাত রেখেই কথাটা বলে উঠলো তাহরিম,

” আবব ঠিক আছে স্যার ,, ইয়ে না মানে ভাই ”

” ঠিক আছে চলো আর আমার কিছু হয় নি ”

প্রায় বিশ মিনিটের মধ্যে ই তালুকদার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো তাহরিম তালুকদার এর গাড়ি , গাড়ি থামতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো তাহরিম তালুকদার ,

বাড়ির সদর দরজা খোলা দেখে খানিকটা ভ্রু কুচকালো ,

সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করা মাত্র ই তার নজরে এলো সোফায় বসে থাকা একজন মহিলার উপর , চুল গুলো হালকা লাল দেখা যাচ্ছে , ছেলেকে দেখা মাত্র ই ধীর পায়ে ছেলের কাছে এলেন মেহেরিন শিকদার, মুখে কিছু বললে ও চোখ মুখ ঠিক ই জানান দিচ্ছে তার চিন্তার বিষয় টা,
মেহেরিন শিকদারের জায়গায় অন্য কোন মা থাকলে হয়তো এতক্ষণে কেঁদে কেটে এক সার করে ফেলতো কিন্ত মেহেরিন শিকদার তার কিছু করেননি আর কখনো করে ও না , মনের দিক দিয়ে তিনি খুব বেশি ই শক্ত প্রকৃতির ঠিক এই জিনিস টাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তাহরিমের ,

কথা গুলো ভেবেই মুচকি হেসে খানিকটা এগিয়ে গেলো মায়ের দিকে ,

মেহেরিন শিকদার ছেলেকে আপাদমস্তক ভালো করে পর্যবেক্ষন করার পর বললেন

” ব্যথা পেয়েছো কোথাও ? ”

তাহরিম হাসলো ,

” না আম্মাজান ব্যথা পাই নি , ভাগ্যের জোরে বেচে গেলাম ”

ছেলের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহেরিন শিকদার গম্ভীর কন্ঠে বললেন ,

” ঠিক আছে সব কথা পরে শুনব এখন যাও রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ নিচে নামার দরকার নেই রেস্ট করো যা লাগবে আমি পাঠিয়ে দিবো ”

” ঠিক আছে ”

বলেই তাহরিম ফ্রেস হতে রুমে চলে গেলো ,

মেহেরিন তাহরিমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার দুই ছেলের মাঝে বড় ছেলেটা একটু বেশিই একরোখা স্বভাবেরই যা বলবে তাই করবে এবার সেই কাজে যত রিস্ক ই থাক না কেন!
রাজনীতি তে ছেলেকে জড়ানোর কোন ইচ্ছে ছিলো না মেহেরিন শিকদারের তবুও ছেলের জেদের কারনেই যেতে দিতে হয়েছে তার ,

কথা গুলো চিন্তা করে ই রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন মেহেরিন শিকদার , উদ্দেশ্য ছেলের জন্য খাবার তৈরি করা ,

তাহরিম মাত্র ই গোসল শেষ করে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হলো হঠাৎ ই তার নজর গেলো নিজের মোবাইলের উপর কিছুক্ষন আগের সেই মেসেজের কথা মনে হতেই তাহরিম দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে সেই নাম্বারে কল করলো কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে নাম্বার টা বন্ধ বলছে,

তাই সে আর ফোন দেওয়ার চেষ্টা করল না, একজন মন্ত্রী হিসেবে তার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তাহরিম তালুকদার চাইলেই সেই সিমের মালিক কে আধা ঘণ্টা র মাঝে ই বের করতে পারবে কিন্তু তাহরিম তা করবে না, কিছু জিনিস অজ্ঞাত ই সুন্দর , তহরিম জানে না নাম্বার টা কার? সে ছেলে না মেয়ে? কি উদ্দেশ্য তার ?

জানার আগ্রহ থাকলে ও এই মূহুর্তে জানতে ইচ্ছে করছে না তার , তাই মোবাইল টা যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে দিলো, মাথাটা ব্যথা করছে আবাদত রেস্ট করা টা মাস্ট বি ইম্পর্টেন্ট ।

____________________

” কিরে পূর্ণ আর্টিকেল লেখা শেষ হলো তোর? ”

ইলমির কথায় কম্পিউটার থেকে মুখ তুলে তাকালো পূর্ণা, মুখ কুচকে বলল,

” ইলু ডোন্ট কলড মি পূর্ণ, ইট’স পূর্ণা, মিফতহুল পূর্ণা, আর আমার লেখা প্রায় শেষ আর ২ মিনিট অপেক্ষা কর আমি সেভ করে বন্ধ করছি ”

পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মুখ বেকিয়ে পূর্ণার পাশের চেয়ারে বসে বলল,

” আহহ মরনন, আসছে আমার ব্রিটিসদের উত্তরসরী, পূর্ণা হোক আর যায় হোক আমি পূর্ণ ই ডাকবো আর তুই যে আমার এত সুন্দর একটা নাম ইলমি, শাহরিন ইলমি কে ইলু ডাকিস আমি কি কিছু বলছি তোকে ? ”

পূর্ণা কম্পিউটার অফ করতে করতে বলল,

” আররে ইয়ার , ইলু তো মেয়েদের নাম কিন্তু পূর্ণ তো ছেলেদের, তুই পূর্ণ ডাকলে কেমন যেন একটা ছেলে ফিল আসে ”

” তুই কি মেয়ে নাকি পূর্ণ ? আমার যুক্তিতে তো তুই ছেলেই , আচ্ছা তুই তোর মাঝে একটা মেয়েসুলভ আচরণ দেখা তো আমাকে? তুই যদি দেখাতে না পারিস আমি তোকে তোর মাঝে হাজার টা ছেলে সুলভ আচরন দেখাবো ”

” দেখ ইলু আজাইরা কথা বলবি না , অফিস তো ছুটি সেই কখন তুই গেলি না কেন ?

জনালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে পুনরায় বলল
” সন্ধ্যা তো হয়ে এলো এতক্ষণ বসে রইলি কেন? তোর বাসার সবাই চিন্তা করবে না? আমার তো দুনিয়ায় কেউ নেই তাই কেউ চিন্তা করবে না কিন্তু তোর তো আছে ”

পূর্ণার কথা শুনে ইলমি মুচকি হেসে উঠে দাড়িয়ে পূর্ণার ব্যাগ টা পূর্ণার কাঁধে ঝুলাতে ঝুলাতে বলল,

” হুসস মেয়ে বাজে কথা বলছিস কেন ? আমি কি তোর কেউ না? বোকা মেয়ে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নস তুই আমার বোন আর বোন বোনের জন্য অপেক্ষা করবে তাতে কার কি আসে যায় , চল তো এখন খালি বেসতি কথা ”

বলেই ইলমি পূর্ণার হাত ধরে অফিসের বাইরে নিয়ে আসে ,

পেশায় দুজন ই জার্নালিস্ট মাত্র কয়েকদিন ই হলো জয়েন করেছে সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে পূর্ণা আর ইলমির জুটি অনন্য , ইলমি সফল ব্যবসায়িক বাবা ইসতিমুল হকের আর মা সুফিয়া বেগমের ২য় সন্তান, ইলমির বড় এক ভাই আছে ইসতিহাদ হক সে বর্তমানে কানাডা আছে পড়াশোনার জন্য , আর পূর্ণা ছোট বেলা থেকে ই এতিম খানায় মানুষ পৃথিবীতে আপন বলতে শুধু এতিমখানার কেয়ারটেকার অর্থাৎ মাদার আর এখন ইলমি , ছোট থেকে ই ইলমির শখ জার্নালিসম নিয়ে পড়ার , এবং ভার্সিটিতে সে জার্নালিসম নিয়েই পড়েছে ,

” আচ্ছা পূর্ণ ! তুই সকালে মন্ত্রী তাহরিম তালুকদারের সাথে এমন অদ্ভুত বিহেভ করেছিস কেন? তুই তো এমন না! ”

ইলমির কথার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণা হাসলো ভ্রু উচিয়ে বলে উঠলো ,

” আমার পেশা কি? ”
ইলমি ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
” জার্নালিসম ”
” আর তাহরিম তালুকদার কে? ”
” মন্ত্রী ”
” উনার সাথে আমার সম্পর্ক নিশ্চয়ই মধুর না! এক কথায় বলা যায় রাজনীতি রিলেটেড সবার সাথে ই আমাদের জার্নালিস দের শাপে নেউলে সম্পর্ক, আর তুই তো জানিস আমি যে আর্টিকেল নিয়ে কাজ করছি সেটা রাজনীতি রিলেটেড বেশ কিছু ক্রিমিনাল আর নারী পাচার সম্পর্কে, আমি তো নতুন এই পেশায় তাই রাজনীতিবীদ সম্পর্কে আমার জ্ঞান শুন্য তাই তাহরিম তালুকদারকে একটু বাজিয়ে দেখলাম আর কি ”

আমার কথা শুনে ইলমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো,

” সিরিয়াসলি পূর্ণ? এতকিছু ভেবে ফেললি? হাউ ইন্টেলিজেন্ট ইউ আর! পেটে পেটে এত কিছু ? ”

ইলমির কথায় পূর্ন পুনরায় হাসলো,

” আচ্ছা চল তাড়াতাড়ি পা চালা , বাসায় গিয়ে কাজ আছে , ভাড়া বাসায় থাকি দোস্ত তাও একা , বাড়ি ওয়ালা মুখে যত আদর ই দেখাক না কেন কার মনে কি আছে কে জানে ! ”

ইলমিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে পূর্ণা ও বাসায় চলে আসলো , পূর্ণা একাই একটা ভাড়া বাসায় থাকে , ইলমির বাসা থেকে পূর্নার বাসা প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা ,

পূর্ণা বাসায় ঢুকে লাইট অন করতেই দেখে লাইট টা জ্বলছে না চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে হঠাৎ কিছু একটা পরার শব্দে চমকে পিছনে তাকালো পূর্ণা…

চলবে..

ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-০১

0

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_01

” এই যে শুনুন মিস্টার নব নির্বাচিত মিনিস্টার সাহেব, নিজেকে এমন আহামরি কিছু মনে করার কিছু হয় নি যে মানুষ কে বিড়াল শাবক বলে মনে করবেন,
চলার সময় একটু দেখে শুনে হাঁটবেন, এই আমাদের মতো জনগনের ভোটেই কিন্তু আপনি নির্বাচিত হয়ে এমপি হয়েছেন, আকাশ থেকে ঠুস করে পরে ঠাস করে এমপি হন নি কিন্তু, আপনি যদি মনে করে থাকেন এমপি হয়েছেন তো রাস্তা ঘাট কিনে নিয়েছেন তাহলে আগেই বলে রাখছি এটা সরকারি সম্পদ আপনার ব্যক্তিগত নয়, যদিও আপনি সরকারি মানুষ তবে এটা জেনে রাখা ভালো সরকারের শক্তি ই জনগন, আর আমি দেশের একজন নিষ্ঠাবান নাগরিক ”

পিছনে থেকে এক নাগারে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে কানে থাকা মোবাইল ফোন টা কান থেকে নামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো তাহরিম তালুকদার,

কয়েকদিন হলো নির্বাচন শেষ হলো আর সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে তাপস তালুকদারের বড় ছেলে তাহরিম তালুকদার,

আজ তার ই একটা জন সম্মেলনে এসেছিলো সে, বক্তৃতার মাঝে ই হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ কল আসায় স্টেজের থেকে খানিকটা দুরে আসতে হলো তাকে, সেখানে মাইকের আওয়াজে ফোনের ওপাশে র কারো কথা ই ভালো ভাবে শোনা যাচ্ছিল না, ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে এগুতেই হঠাৎ পিছন থেকে এক নাগারে কারো কথা শুনতে পেলো,

পিছনে তাকাতেই তার চোখের সামনে দৃশ্য মান হলো একটা মেয়ে যে কিনা কোমরে হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছে,

তাহরিম তালুকদার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে,

” এই যে নব নির্বাচিত এমপি, এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে একটু উঠতে সাহায্য করুন তো মশায়, এমনি তেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার কোমরের বারো টা বাজালেন তার উপর আমার খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কোন প্রকার সাহায্য না করেই, কেমন মানুষ আপনি হে? দয়া মায়া কিছু নাই নাকি? আমার মতো মাসুম কিউট একটা বাচ্চাকে আপনার মতো খাম্বা ধাক্কা মারলেন বেঁচে আছি যে এটাই শুকরিয়া
আপ…….”

” হেই ইউ স্টপ ইট, কখন থেকে দেখছি পাগলের মতো বকবক করেই যাচ্ছেন তো করেই যাচ্ছেন, পাগল আপনি? কখন আপনাকে আমি ধাক্কা দিলাম? কি সমস্যা আপনার আর আপনি এভাবে মাটিতে বসে আছেন কেন? এটা কি ভিক্ষা করার জায়গা? ভিক্ষা করতে হলে গেইটে র বাহিরে যান ”

বেশ জোরেই কথা গুলো বলে উঠলো তহরিম,

তাহরিমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিচে থেকে কাপড়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়িয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাহরিমের দিকে তাকালো পূর্ণা,

” ওমাআআ এতো দেখি ভুতের মুখে রাম রাম, নিজে ধাক্কা দিয়ে আবার নিজেই বলছে নিচে বসে আছি কেন? আপ….”

পূর্ণা আরও কিছু বলতে নিবে হঠাৎ ই তার পাশ দিয়ে কেউ একজন দৌড়ে তাহরিমের দিকে এগিয়ে গেলো,

” কি হয়েছে স্যার? কোন সমস্যা স্যার? ”

নিজের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি কুশনের আগমনে খানিকটা ভরসা পেলো বলে মনে হলো তাহরিম কে, নারী সঙ্গ বরাবর ই এভয়েড করে সে,

” মেয়েটা বোধ হয় পাবনা মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে এসেছে , তুমি বরং কতৃপক্ষ কে খবর টা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করো কুশন ”

বেশ গম্ভীর কন্ঠে কথা টা বলেই বিপরীত দিকে ঘুরে সেখান থেকে হন হন করে চলে গেলো, বেচারা কুশন একবার স্যারের চলে যাওয়া দেখে আরেকবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটকে দেখে,

স্যার যে কি আদেশ দিলো সে আগামাথা কিছু ই বুঝতে পারলো না, মেয়েটাকে দেখে তার মোটেও পাগল বলে মনে হচ্ছে না , অগত্যা ই সে জড় বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো,

” কিরে পূর্ণা তুই এখানে? আমি কখন থেকে খুঁজে চলেছি তোকে? ”

নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ইলমির কন্ঠ শুনতে পেয়ে গাল ফুলালো পূর্ণা,

পূর্ণার গাল ফুলানো দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো ইলমি,

” কি হয়েছে তোর ? এতক্ষণ তো ভালোই ছিলি হঠাৎ বিধবা ওয়ালা লুক দিচ্ছিস কেন? ”

” ইলু ও তুই জানিস, ওই মিনিস্টার সাহেব আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে বললাম সরি বলতে তা ও বলল না, বদ লোক একটা, অকৃতজ্ঞ কোথাকার, আরেকটু হলে আমার কোমর টা ই ভেঙে ফেলতো, তখন কি হতো বল তো, আমার ভবিষ্যত জামাই একটা কোমর ভাঙা বউ পেতো, আমার বাচ্চা গুলা একটা কোমর ভাঙা মা পেতো, আর আমা … ”

” আর তোর নাতি নাতনী রা কোমড় ভাঙা দাদি পেতো সেটা ই তো বলবি, তোর টা আমি ই বলে দিলাম তবু ও তোর ভাঙা ক্যাসেড চালু করিস না ”

বিরক্ত সহকারে কথাটা বলেই পাশে তাকালো ইলমি, একটা অপরিচিত ছেলেকে নিজেদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্যপার টা স্বাভাবিক ই নিলো সে কারণ এসব অবাক মার্কা লুকে অভ্যস্ত সে যেহেতু পাশে একটা সেন্টি মেন্টাল ফ্রেন্ড আছে এই লুক গুলো স্বাভাবিক,

ইলমি খানিকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল,

” এভাবে তাকানো র কিছু নেই, ও এমন ই, ভাঙা রেকর্ডার অন করলে অফ করতে ইচ্ছে করে না ”

বলেই পিছনে ঘুরে পূর্ণার হাত ধরে গেইটে র দিকে এগিয়ে গেলো ইলমি ,

ইলমির কথায় খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কুশন,

__________________

” আপনার গাড়িতে উঠবেন না ”

” গাড়ি তে বোমা রাখা আছে ” ,

” ক্ষতি হবে আপনার ”

সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ি তে উঠতে নিবে হঠাৎ এক নাগাড়ে তিনটে মেসেজের শব্দে বেশ কৌতুহল বশত হাতে থাকা মোবাইল অন করে মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ গুলো দেখেই ভ্রু কুচকে গেলো তাহরিমের,

উঠতে গিয়ে ও থেমে গেলো সে,

” স্যার কোন সমস্যা ? ”

কুশনের প্রশ্নের উত্তরে মুখে কিছু না বলে হাতে থাকা মোবাইল টা ই কুশনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আশেপাশে তাকালো তাহরিম তালুকদার,

চারপাশে বেশ লোক সমাগম, যদি ও গাড়ি তে বোমা থাকে এখানে ব্লাস্ট হলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে এটা নিশ্চিত,

তাহরিম একটু ঝুঁকে বোমা টা খোঁজার চেষ্টা করলো হয়তো তাহরিমের ভাগ্য সহায় ছিলো বলে সে বোমা টা দেখতে পেলো, সেটা সেট করা ছিলো গাড়ির ঠিক নিচে, কিন্তু সময় কেবল ই ঘনিয়ে আসছে, বোমা ব্লাস্ট হবার আর মাত্র ৪ মিনিট বাকি,

তাহরিম আর কিছু চিন্তা না করেই হুট করে গাড়িতে ঢুকে দরজা অফ করে চাবি ঘুরিয়ে চালানো শুরু করলো,

পিছনে থেকে কুশানের আতংকিত গলার স্বর স্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে লাগলো, কিন্তু নিজের কথা এখন ভাবলে চলবে না, সে এখন দেশের একজন দায়িত্ব বান লোকদের মধ্যে সে একজন, দেশের মানুষ কে রক্ষা করা তার কর্তব্য,

তাহরিম ভিষন স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে, সম্মেলনের জায়গা থেকে বেশ খানিকটা দুরে নদীর পাড়ে একটা খোলা জায়গা দেখে গাড়ি টা পার্ক করে দ্রুত সে গাড়ি র বাইরে চলে আসে দৌড়ে খানিকটা পথ আসার পর হঠাৎ পিছন থেকে বিকট শব্দে বোমা ব্লাস্ট হয়,

তাহরিম পাঞ্জাবি র হাতায় নিজের ঘাম মুছে মুখে হাত দিয়ে নিচে বসে পরে আর মনে মনে আল্লাহ আর সেই অচেনা লোকটাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়, আজ সেই লোকটা র জন্য ই এত গুলো প্রান সে বাচাতে পেরেছে,

তার কিছু ক্ষনের মাঝে ই প্রায় বিশ পঁচিশ টা গাড়ি এসে জড়ো হলো সেই ঘটনা স্থলে,

গাড়ি থেকে নেমেই কুশন দৌড়ে এলো তাহরিমের দিকে,

বেশ আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলো,

” ভাই! ভাই আপনি ঠিক আছেন তো? কিছু হয় নি তো আপনার? ”

কুশনের কন্ঠ শুনতে পেয়ে মুখ থেকে হাত সরালো তাহরিম, উঠে দাড়িলো,

মুচকি হেসে বলল

” খোদার দয়ায় এ যাত্রা ই বেচে আছি ”

ততক্ষণে প্রেস মিডিয়া ঘিরে ধরলো তাকে,
হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো তাহরিম তালুকদার এর দিকে,

কিন্তু আবাদত কারোর প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই সে,

প্রশ্ন গুলো এড়িয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলো সে

” আপনি কি জন্মগতভাবে ই কি এতো সাহসী মিস্টার নব নির্বাচিত এমপি সাহেব?

চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে পা গুলো থমকে গেলো তার ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো তাহরিম,

চলবে…

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#সমাপ্তি_পর্ব
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ধূসরের ভালোবাসার পরশে মেঘের কষ্ট কমতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে দুজনের ভালোবাসা গভীর হতে লাগলো। ধূসর নিজের ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই জানিয়ে দিল। তার মেঘবালিকার কষ্ট তার সহ্য হয় না।তার ভালোবাসা দিয়ে সে তার মেঘবালিকার সব কষ্ট মুছে ফেলবে।

নিচে সবাই কেমন বিমর্ষ হয়ে আছে। কারো মধ্যে কোন অনুভূতি আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। চৌধুরী বাড়ির আত্মীয় স্বজন বাদে আর সবাই যে যার মতো চলে গেছে। রহমান পরিবার ও লজ্জায় আগেই প্রস্থান নিয়েছে। আয়মান চৌধুরী ধূসরকে ভেতরে ঢুকতে দেখে চলে এসেছেন। মেঘের বান্ধবীরা আর ধূসরের পরিবার মেঘের কাছে যেতে চাইলে তিনি বাঁধা দেন। ধূসর আছে ও সব সামলে নেবে। সমশের চৌধুরী থম মেরে বসে আছেন। আজান তার হাত ধরে বসে আছে। আয়মান চৌধুরী সমশের চৌধুরী পাশে গিয়ে বসলেন। সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বললেন,,

“এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী তাই না আয়মান। যদি সেদিন আমি হামিদের কথামতো সব করতাম তাহলে কিছুই হতো না। ঐ আব্দুল রহমান কাদের কিছুই করতো না। ওটা বাদ দিলাম আয়মান আমার দুই মেয়ের জামাই আমার ছোট ছেলে এগুলো কি করতে পারলো। নিশ্চয়ই আমারই কোন ভুল ছিল নাহলে ওরা আমার আপন হয়ে কিভাবে এরকম করতে পারলো।

আয়মান চৌধুরী তার আব্বার হাত শক্ত করে ধরে বলল,,

“না আব্বা কোনকিছুতেই আপনার কোন ভুল ছিল না। আপনি ঠিক ছিলেন ভুল তো তারা ছিল। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য দায়ী আপনি নন।

“আমার দুই মেয়ের জামাইরাই এখন জেলে তাদের কি হবে এই বয়সে এসে। তারমানে আমি আমার মেয়েদের জন্য সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে পারি নি। সেই সাথে আমি আমার ছোট ছেলেকে মানুষ করতে পারি নি। তার জন্য তোমাদের সন্তান কে এই পৃথিবীর আলো দেখার আগেই শেষ করে ফেলেছে। আমি একজন ব্যর্থ পিতা আয়মান। ”

তখন আয়না চৌধুরী আর আশা চৌধুরী সমশের চৌধুরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন। আশা চৌধুরী বললেন,,

“আপনি ব্যর্থ পিতা নন আব্বা। আমাদের সাথে যা হলো এবং হয়েছে সব আমাদের তকদিরে ছিল। রেজাউল আগে থেকেই লোভী ছিল এটা নতুন নয়। ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এর জন্য ভাববেন না আপনার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আপনার মেয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব সুখে থাকবে।”

আয়না চৌধুরী বললেন,,

“আপা ঠিক বলেছে । আমরা খুব সুখে থাকবো যে আমাদের মাকে মেরেছে তাদের আমরা মনেই রাখবো না বাবা। তোমার মেয়েরা খুব সুখে থাকবে তুমি দেখে নিও। এতদিন যা যা মেঘের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি সব মায়ের মৃত্যুর জন্য।আমি ভেবেছিলাম ওর জন্যই মা আমাদের মাঝে নেই। ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জানিনা ও ক্ষমা করবে কিনা আমি ওর কাছে মাফ চাইবো বাবা। আমার সব ভুল সুধরে নতুন ভাবে জীবন শুরু করবো‌। তুমি চিন্তা করো না বাবা।”

সমশের চৌধুরী মেয়েদের আগলে নিলেন। কিছুক্ষণ চৌধুরী পরিবারের সবার মেলোড্রামা হলো। সবশেষে সমশের চৌধুরী বললেন,,

“যা হয়েছে হয়েছে আমরা আর পুরোনো কিছু ভাববো না। নতুন ভাবে সব শুরু করবো।”

সবাই সমশের চৌধুরীর কথায় সায় জানালো। সকলে একবার মেঘের সাথে দেখা করতে চাইলো। কিন্তু আয়মান চৌধুরী সবাইকেই বলল আজ ওদের মতো ওদের কে ছেড়ে দিতে। কাল সকালে সবাইকে দেখা করতে।

________________

অতঃপর নতুন সকালের আগমন। মিষ্টি রোদ মুখে পরতেই মেঘ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। তখন ও কারো আওয়াজ শুনতে পায়,,

“মেঘবালিকা উঠো সকাল হয়ে গেছে তো!”

মেঘ চোখ পিটপিট করে তাকায়। সামনেই ধূসর গোসল সেরে সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কোন শুভ্র মানব ওর সামনে দাঁড়িয়ে। ধূসরকে এভাবে দেখে মেঘের মুখেও হাসি ফুটে উঠে। ধূসর বলল,,

“শুভ সকাল মেঘবালিকা! এখন উঠে গোসল সেড়ে নাও। ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে তো ওটা কাযা হয়ে গেছে। তুমি আর আমি একসাথে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করবো।

এবার মেঘের নিজের দিকে খেয়াল হলো। মেঘ লজ্জায় ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে মুখ ঢাকলো। তারপর সব ঠিক করে গুটি গুটি পায়ে ব্ল্যাঙ্কেট থেকে বের হয়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। তা দেখে ধূসর হাসলো। মেঘ গোসল শেষে একটা সাদা রঙের থ্রিপিস পরে বের হলো। একেবারে ওযু করে বের হয়েছে। ধূসর জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যে কাজটা সবসময় মেঘের থাকে আজ ধূসর করছে। আসলে কাল মেঘের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিল কিন্তু ও প্রকাশ করে নি। তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো এখনো মাথা ব্যাথা আছে তবে এখনো ও প্রকাশ করছে না। ধূসরকে জায়নামাজ বিছিয়ে রাখতে দেখে মেঘ হেঁসে ড্রয়ার থেকে টুপি বের করে ধূসরের হাতে দিল। ধূসর টুপি পরে মেঘকে নিয়ে নামাজে দাঁড়ালো। অতঃপর দু’জনে একসাথে নামাজ আদায় করে নিল। মেঘ নামাজ শেষ করে বিছানায় বসলো ওর মাথাব্যথা এখন একটু বেড়েছে। ও চুপ করে হেলান দিয়ে বসে আছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি হয়েছে?”

“ঐ একটু মাথা ব্যথা করছে?”

“কখন থেকে?”

“তেমন কোন ব্যাপারনা ছাড়ুন তো। আমি ঠিক আছি?”

“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি এটা কাল ওষুধ না খাওয়ার ফল। কাল রাতে ওষুধ খাওনি এতো ঝামেলায় মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল। তোমার জন্য সময়মতো ওষুধ খাওয়া অনেক জরুরী। একটা ওষুধ মিস হলে তোমার শরীরে দ্রুত ইফেক্ট করবে। অবশ্য তোমার তাতে কি তুমি তো বুঝবে না। যদি নিজের খেয়াল রাখতে একটু। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।

“এটা কিন্তু বেশি বলছেন আপনি। আপনি যখন ছিলেন না তখন আমিই নিজের খেয়াল নিজে রাখতাম।”

“কেমন রাখতে সেটা বুঝতেই পারছি। এখন নিচে চলো খেয়ে তাড়াতাড়ি ওষুধ খেতে হবে নাহলে ব্যাথা আরো বাড়বে পরে সমস্যাও দেখা দিতে পারে।”

“আমি এখন কোথাও যাবো না। আমি এখন আবার ঘুমাবো।”

বলেই মেঘ শুয়ে পড়লো ওর খুব খারাপ লাগছে। ধূসর বুঝতে পারলো মেঘের অনেক খারাপ লাগছে। তাই কিছু বললো না মেঘের ভেজা চুল দেখে ও হেয়ার ড্রায়ার খুঁজতে লাগলো ভেজা চুলে ওর মাথা ব্যাথা আরো বাড়বে। কিছুক্ষণ খুঁজে পেয়েও গেল মেঘ কে বসতে বলল চুল শুকানোর জন্য। কিন্তু মেঘ উঠলো না ধূসর মেঘকে জোর করে উঠিয়ে দিল তারপর যত্ন সহকারে মেঘের চুল শুকিয়ে আবার শুয়িয়ে দিয়ে নিচে গেল। সবে সাতটা বাজে নিচে আসলেও কাউকে পেল না। হয়তো সবাই কালকের ঘটনায় ডিসটার্ভ হয়ে আছে। ধূসর কিচেনে গিয়ে খাবার খুঁজতে লাগলো। পেয়েও গেল কিন্তু সব হেভি খাবার। এগুলো এখন খাওয়া ঠিক হবে না। হুট করে ওর নজর গেল ওপরের তাকে রাখা নুডুলসের ওপর। ধূসর ফটাফট ওটাই রেঁধে ফেললো আর কফি বানালো। ততক্ষনে চৌধুরী বাড়ি ও খান বাড়ির সবাই নিচে নেমে এলো । ধূসর কে সকাল সকাল কিচেনে দেখে সবাই অবাক হলো। মায়মুনা চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে বললেন,

“কি ব্যাপার ধূসর তুমি এতো সকালে কিচেনে? কিছু লাগলে আমাদের বলতে তুমি জামাই মানুষ হয়ে কিচেনে এসেছো?”

ধূসর হেঁসে বলল,

“তেমন কোন ব্যাপার না মা। বাড়ির জামাই তো কি হয়েছে মেঘের পরিবার মানেই আমার পরিবার। আর মেঘের বাড়ি মানেই আমার বাড়ি। নিজের বাড়িতে নিজের কিচেনে ঢুকেছি তাতে কি হয়েছে মা। আসলে মেঘ কাল রাতের ওষুধ খায় নি তাই মাথা ব্যাথা করছে সাথে একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে। খাবার খায়িয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। আপনারা কেউ নিচে ছিলেন না তাই তাই কিচেনে এসেছিলাম খাবার খুঁজতে। খাবার পেলাম কিন্তু হেভি খাবার যেটা এতো সকালে খাওয়া উচিত নয়। নুডুলসের দিকে নজর পরতেই ওটায় বানালাম। এখন আমি ওপরে যাই বেশি দেরি করা যাবে না।”

ধূসর নুডুলস নিয়ে ওপরে গেল। সবাই ধূসরের ব্যাবহারে মুগ্ধ এরকম কেউ শ্বশুরবাড়ি কে নিজের ভেবে বউয়ের জন্য রান্না করতে পারে। মেয়ে অসুস্থ শুনে আয়মান চৌধুরী মেয়ের কাছে গেল। মেঘ আধশোয়া হয়ে বসে আছে ধূসর জোর করে মেঘকে খাওয়াচ্ছে। মাথাটা বোধহয় সোজা করতে পারছে না। আবার মেঘ খেতে চাইছে না। দরজায় আয়মান চৌধুরী কে দেখে মেঘ বলল,,

“আব্বা ভেতরে আসুন!”

আয়মান চৌধুরী ভেতরে ঢুকে মেয়ের পাশে বসলেন আর বললেন,,

“আপনি নাকি অসুস্থ? তাই দেখতে এলাম!

“আমি অসুস্থ না শুধু একটু মাথাব্যথা করছিল। তাতেই উনি যা করছে মনে হয় আমি আইসিইউ এর পেশেন্ট। জামাই ডাক্তার হলে অনেক সমস্যা আব্বা। কিছু হলেই বাড়াবাড়ি। এই অতিরিক্ত ভালোবাসা নামের টর্চার আমার আবার সহ্য হয় না।”

তখন ধূসর ধমকে বললে,,

“এই তুমি আব্বা কে কি বললে? আমি তোমাকে টর্চার করি। নিজে তো আমার বউয়ের কেয়ার করবে না। আমি করছি তাতেও ওনার সমস্যা আবার আব্বার কাছে নালিশ দেওয়া হচ্ছে। আমি নাকি উনাকে টর্চার করছি।”

“তো কি করছেন? আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না জোর করে খাওয়াচ্ছেন। আমার ঘুম পরিপূর্ণ হয় নি আমি আরো ঘুমাবো।”

“হুম ঘুমাও এই সবটুকু শেষ করে ওষুধ খেয়ে তারপর।”

ধূসর আর মেঘের খুনসুটি দেখে আয়মান চৌধুরী হাসলেন। আর বললেন,,

“আম্মা ধূসর ঠিকই বলেছে খেয়ে দেয়ে ওষুধ খেয়ে তারপর ঘুমান। সবথেকে বড় কথা আপনার এখনকার অবস্থা কাল ওষুধ না খাওয়ার ফলে হয়েছে।”

মেঘের আর কি জামাই আর আব্বার ভালোবাসার কাছে নিজেকে পরাজিত করতেই হলো। সে খাবার খেয়ে ওষুধ খেল। কিন্তু ঘুমাতে গিয়েও কি ভেবে ঘুমালো না। একটু ভালো লাগতেই সোজা নিচে গেল। সবাই নিচেই আছে এখন মেঘকে নিচে নামতে দেখে ধূসর এগিয়ে আসতে চাইলো মেঘ মানা করলো সে গিয়ে তার চার বান্ধবীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

‘মাই ডিয়ার বান্ধবীগন একটু বাগানে আসেন। কিছু কথা বলার ছিল।”

মেঘ বাইরে বাগানে চলে গেল। সাথে তার চার বান্ধবী ও গেল। মেঘ গিয়ে বেতের সোফারাখা আছে সেটায় বসলো শরীর খুব একটা ভালো না তাই। হির গিয়ে মেঘের পাশে বসে বলল,,

“নে আমার ঘাড়ে মাথা রাখেন আপামনি। আপনার না মাথা ব্যাথা।”

মেঘ হেঁসে মাথা রাখলো । তখন জাবিন বলল,,

‘কি বলবি বলে ফেল তারপর রুমে গিয়ে রেস্ট নে। এই শরীরে উনি এসেছেন কথা বলতে।”

তখন লিয়া বলল,,

“একটু নিজের খেয়াল যদি রাখে। সারাদিন শুধু বলবে কিছুই করতে হবে না জীবন তো জীবনের মতো চলবে। বলি জীবন তো জীবনের মতো চলবেই কিন্তু একটু ভালো থাকার জন্য সুস্থ থাকার জন্য একটু নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো।”

তখন নীলি বলল,,

‘ভাইয়া একদম ঠিক বলে নিষ্ঠুর মেয়ে। নিজের প্রতিই তার যতো নিষ্ঠুরতা।’

বান্ধবীদের কথা শুনে মেঘ হাসে। মেঘ বলল,,

“তোরা একটু এগিয়ে আয়। যাতে তোদের চারজন কে আমি একসাথে জড়িয়ে ধরতে পারি।

মেঘ উঠে দাঁড়ালো মেঘের চার বান্ধবী গিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। তখন মেঘ বলতে শুরু করল,,,

“আমার জীবনে আসার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া। এই নিষ্ঠুর মেয়েটার পাশে সবসময় থাকার জন্য শুকরিয়া। সবসময় হাসিখুশি রাখার জন্য শুকরিয়া।এতো এতো খেয়াল রাখার জন্য শুকরিয়া। কাঁদতে চাইলে নিজেদের কাঁধ দেওয়ার জন্য শুকরিয়া। জীবনে যতো খারাপ সময় এসেছে শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখার জন্য শুকরিয়া। সবাই বলে এমনি অনেকগুলো বন্ধু থাকলেও বেস্টফ্রেন্ড একটাই থাকে। কিন্তু আমার বেলায় নয় আমার চারজন বন্ধুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর এই চারজন বন্ধুই আমায় একভাবে ভালোবাসে কেয়ার করে। আমি খুব লাকি যে তোদের মতো চারজন বন্ধু পেয়েছি। আমি সব জায়গায় হেরে গেলেও বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার কাছে জিতে গেছি। তোরা তোদের কথা রেখেছিস তোরা আমায় ছেড়ে যাসনি। আমি তোদের খুব ভালোবাসি । শুকরিয়া সবকিছুর জন্য।”

মেঘ ওদের ছেড়ে দিল সবার অপত্যাশিত ভাবে এভাবে শোনার জন্য খুশিতে তাদের চোখ ভরে উঠলো। সবাই খুব খুশি। সবাই একসাথে বলে উঠলো,,

“আমরাও তোকে খুব ভালোবাসি।”

হুট করে হির বুকে হাত চেপে দাঁড়িয়ে তা দেখে মেঘ বলল কি হয়েছে,,

“কি হয়েছে?’

“আর বলিস না দোস্ত। আজ আমগো নিষ্ঠুর বান্ধবী জীবনে প্রথমবার ভালোবাসি বলছে । খুশির ঠেলায় হার্ট অ্যাটাক না করি এই জন্য আগে থাকতেই হাত দিয়ে ধরে রাখছি।”

হিরের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠল। মেঘ আবার সবাই কে জড়িয়ে। এভাবে বান্ধবীদের ভালোবাসি আর শুকরিয়া কতোজনেই বা বলতে পারে। বন্ধুত্ব শুরু থেকে শেষ হয়ে যায় তবুও হয়তো বলা হয়ে উঠেনা শুকরিয়া আমার জীবনে আসার জন্য। অতঃপর চার বান্ধবী মিলে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ভেতরে গেল। এখন মেঘের ভালো লাগছে ওষুধ যে পেটে পরেছে। মেঘকে দেখে মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

‘মেঘ তোমার বান্ধবীদের নিয়ে খেতে বসো।”

“আমি এখন খাবো না একটু আগেই খেয়েছি ওদের খেতে দিন।”

মেঘ হিরদের খেতে পাঠিয়ে দিল। সকলে ড্রাইনিং টেবিলে বসেছে। মেঘ সোফায় বসলো দিলরুবা খানমের কাছে কারন তারা মহিলারা পরে খাবে। তখন লিলি এলো মেঘের কাছে। মেঘ লিলিকে কোলে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। দিলরুবা খানম বললেন,,

“তো মেঘ এখন কেমন লাগছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা। তবে এখন আপনার কাঁধে মাথা রাখতে ইচ্ছে করছে রাখি?”

“তা আর বলতে অবশ্যই!”

মেঘ দিলরুবা খানমের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতে লাগলো। মায়মুনা চৌধুরী দেখলেন তার খারাপ লাগছে। কিন্তু তিনি এটা ভেবে খুশি হলেন তার মেয়ে জীবনে অনেক কষ্ট পেলেও আর পাবে না ও ভালো একটা পরিবার পেয়েছে। সবার খাওয়া শেষ হলে সবাই সোফায় এসে বসলো যারা খায় নি তারা এখন খাবে। মেঘ সমশের চৌধুরীর কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলো। তখন হুট করে আয়না চৌধুরী মেঘের কাছে এসে ক্ষমা চাইলেন। মেঘ প্রথমে অবাক হলেও পরে বুঝলো মেন কাহিনী মেঘ কিছুই বললো না মুচকি হেসে চলে গেল। সেদিন খান বাড়ির সবার সাথে মেঘ ও চলে গেল। পরের দিন মেঘ গেল আতাউর রহমানের কাছে মেঘকে দেখেই তিনি গর্জে উঠলো। আর বলল,,

“এখানে কি দেখতে এসেছো তুমি? আমি একবার শুধু বের হই মেঘ। তোমাকে কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে না।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আগে বের হয়ে তো দেখান তারপর দেখা যাবে‌। আপাতত নিজের কথা চিন্তা করুন।সব থেকে বড় কথা আপনি A.R.K অন্ধকার জগতের বস সেটাও আমি প্রমান করে দেব। এতগুলো অভিযোগ আপনার নামে আপনি কোনটা কোনটার জন্য ছাড়া পাবেন A R.K……

“আমি A .R.K নই আমি শুধু বিজনেস ম্যান আতাউর রহমান।”

“ঐ আকাশ আপনার সব তথ্য দিয়ে দিয়েছে। মিস্টার A.R.K যাস্ট ওকে বলা হয়েছিল ওকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

“বিশ্বাসঘাতক আমি ওকে ছাড়বো না। ওর জন্য আমার সব প্ল্যান ভেস্তে গেল।”

“তার মানে আপনি মেনে নিলেন আপনি A.R.K ……

“মানে?”

“মানে হলো আকাশ কিছুই বলে নি আপনিই স্বীকার করলেন আপনি কে? আপনি নয়নার বাবা এটা সবাই জানে তাই না। আপনাকে ধরা দুই মিনিট এর ব্যাপার। অফিসার সব রেকর্ড করেছেন তো।”

তখন আড়াল থেকে একজন বের হয়ে বলল,,

“ইয়েস ম্যাডাম!”

আতাউর রহমান মেঘের দিকে আসতে নিলেই অন্যান্য পুলিশরা এসে ওনাকে ধরে। মেঘ হেঁসে বলল,,

‘আচ্ছা বাই হ্যাপি জার্নি।”

মেঘ চলে গেল সেদিনের মতো। অতঃপর দুই দিন পর কেস কোর্টে উঠলো। চৌধুরী পারিবারের সকলেই এসেছে কোর্টে। মেঘ আর ধূসর উপস্থিত হলো। এবং মেঘ যে লয়ার হিসেবে কেস লড়বে এটা শুনে সবাই অবাক হলো আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরী ছাড়া কেউ জানতোই না মেঘ একজন নামকরা লয়ার। কোর্টের সময় হয়ে এলে মেঘ এক এক করে সবকিছুর প্রমান দিলো। রেজাউল করিম আশরাফ হক শাফিয়ান চৌধুরীর মোবাইল রেকডিং শোনানো হলো আতাউর রহমানের কিছু ভিডিও দেখানো হলো। আর আতাউর রহমানই যে A.R.K সেটা প্রমান করে দিল। মেঘ প্রথম A.R.K দেখেছিল যখন প্রথম বার ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল নয়না আর আকাশ গাড়ি থামিয়ে ওনার সাথে কথা বলছিল। উনি মেঘকে না দেখলেও মেঘ ঠিকই দেখতে পায় ওনাকে তাই তো মুনের বিয়েতে দেখে চমকে গিয়েছিল। বিভিন্ন প্রমানের ভিত্তিতে ওনারা দোষী সাব্যস্ত হলো। সবাইকে আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হলো। চৌধুরী বাড়ির সকলেই মেঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো তার আব্বার এখন তাকে দরকার। তাই ধূসরকে বাড়ি যেতে বলে মেঘ আয়মান চৌধুরীকে নিয়ে একটা পার্কে গেল। কতোগুলো বাদাম কিনলো আর আয়মান চৌধুরীর হাতে দিয়ে বলল,,

“নিন আব্বা খোসা ছাড়িয়ে দিন আমি বাদাম খাবো।”

আয়মান চৌধুরী খোসা ছাড়িয়ে মেয়ের হাতে বাদাম দিয়ে বলল,,

“আম্মা দুনিয়াটা বড় আজব। মানুষের শুধু চাই আর চাই। এই চাওয়া পাওয়ার জন্য কতোকিছু না মানুষ করে ফেলে। তারপর সবথেকে বড় কথা প্রতিহিংসা এটা মানুষ কে কতটা নিচে নামিয়ে দেয়। আজ এই লোভ আর প্রতিহিংসার কারনে এসব হয়েছে।”

মেঘ বাদাম মুখে দিয়ে বলল,,

“মানুষ শুধু দুনিয়াবির চিন্তা করে। তারা আখিরাত কে ভুলে যায়। দুনিয়ার একটু সুখে থাকার জন্য কতোকিছু করে। লোভ হিংসা বিদ্বেষ মানুষের ঈমান নষ্ট করে ফেলে এবং আমাদের কলব কে মেরে ফেলে। তখন তারা কি করে হীতাহিত জ্ঞান থাকে না।তারা এটা ভাবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা হতে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা। কারো কোন দোষের কথা জানতে চেষ্টা কর না। গোয়েন্দাগিরি কর না, ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি কর না, পরস্পর হিংসা রেখ না, পরস্পর শত্রুতা কর না এবং একে অন্যের পিছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘পরস্পর লোভ-লালসা কর না’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/৪৮০৮)।

একদম কষ্ট পাবেন না আব্বা তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাচ্ছে।”

“আম্মা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি!”

মেঘ হেঁসে সায় জানালো। আয়মান চৌধুরী কাঁধে মাথা রেখে বললেন,,

“আপনি আমার সুখ আম্মা। আপনার কাঁধে মাথা রেখে আমি পৃথিবীর সবথেকে সুখ অনুভব করি। আপনার সাথে কথা বললে মনটা খারাপ থাকলেও ভালো হয় যায়। আপনি আমার অভিভাবক এর ন্যায় সর্বদা আমার খেয়াল রাখেন। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি আম্মা।”

“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আব্বা।”

বাবা মেয়ে আরো কিছুক্ষণ নিজেদের মতো প্রকৃতি বিলাস করে নিজেদের গন্তব্যে চলে গেল।

_______________

দুই মাস পর,,

সবার জীবন তার অতীত কে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছে। কেউ তাদের অতীত ভাবতে চায় না। সবাই নিজেদের খুশি রাখতে জীবনকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস করছে। ধূসর আর মেঘ আজ সারা দিন নিজেদের মতো সময় কাটাবে। দু’জনেই দু’জনের দেওয়া শুভ্র পাঞ্জাবি আর শুভ্র শাড়ি হিজাব নিকাব পড়ে পরে রেডি। আজ তারা তাদের সেই লেকে যাবে। ওরা দুজনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ধূসর একটা বেলী ফুলের মালা, কয়েকটা লাল গোলাপ আর কতোগুলো রঙ বেরঙের বেলুন কিনলো। তারপর চলে গেল তাদের কাঙ্খিত জায়গায়। আশেপাশে কেউ নেই। ধূসর বেলুন গুলো হাতলে বাঁধলো। ধূসর আর মেঘ বেঞ্চে বসে পড়লো। ধূসর হেঁসে বলল,,

“মেঘবালিকা তোমার হাত দাও!”

মেঘ মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। ধূসর মেঘের হাতে বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দিল। আর গোলাপগুলো মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“এই লাল গোলাপ নিষ্ঠুর মেয়েটার জন্য। যদি এই লাল গোলাপ দিয়ে তার মুখে ভালোবাসার ফুল ফোটে।”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“বলুন তো আজ এই ভাবে এখানে এসেছি কেন?”

“কেন আবার কয়েকমাস আগে যখন আমরা অপরিচিতভাবে এসেছিলাম সেদিন আমাদের আকদ হয়েছিল সেই তারিখ টা ছিল। আর আমরা সবসময় সেই দিনটাকে গোলাপ বেলুন আর শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি,শাড়ি পরে সেলিব্রেট করতাম। সারাদিন নিজেদের মতো কাটাতাম। সেদিন পারি নি তাই আজ এসেছি।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আজ সেই কারনটা থাকলেও আরেকটা কারনে এসেছি?”

“কি কারন?”

মেঘ ধূসরের মুখোমুখি বসলো ওর দুই কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“আজ নিষ্ঠুর মেয়েটা তার নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধিকে মুছে ফেলবে তার ভালোবাসার প্রকাশের মাধ্যমে আর একটা সুসংবাদ দেবে।”

ধূসরের ভেতরে খুশির জোয়ার বইতে লাগলো। এই দিনটার জন্য সে কতোদিন অপেক্ষা করছে। ধূসর মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“আপনাকে প্রথম দেখেছি শীতের মাঝে বৃষ্টির ভাঁজে,
তারপর দেখেছি নিজের কাজে মত্ত হতে কোন রাস্তার মাঝে। তারপর দেখেছি কখনো বাড়িতে, কখনো ছাদে কখনো সামনের রাস্তায়। কিন্তু,

ভালোবাসা এসেছিল চুপিসারে
চোখে চোখে দেখে দেখি তে
আমি বুঝিনি
ভালোবাসা এসেছিল অভিসারে
আমি তার গভীরতা খুঁজিনি।
আপনি মুখ ফিরেয়ে নিতেন
অভিমানে কখনো নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি
দিয়ে কখনো চোখ সরিয়ে নিয়ে
কিন্তু কখনো অভিমান ভাঙাতে
আমি ভালোবাসি বলিনি।
কারন আমি মনে করি মুখে বলার
চেয়ে কাজে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ প্রকাশ শ্রেয়!
শুনেছি কবিতায় নাকি
বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়
তাই তো আপনাকে রেখেছি আমার কবিতায়।
সবশেষে আমার ভালোবাসা আপনাতে শুরু
আপনাতেই সমাপ্তি
আপনি আমার জীবনের
সবথেকে সেরা বড়প্রাপ্তি
জীবনের শেষে আমি
আপনাকেই ভালোবেসে
করতে চাই এক সুন্দর সমাপ্তি
আপনি আমার মুগ্ধতা আর স্নিগ্ধ হাসি
শুনুন আমার একান্ত
মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলি
আমি আপনাকে ভালোবাসি !

ধূসর মুগ্ধ হয়ে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই কথাগুলো যেন ওকে চারপাশ থেকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখেছে। ধূসর মুগ্ধ চোখে বলল,,

“আমার প্রকাশিত ভালোবাসার চেয়ে তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসার গভীরতা বেশি।
শুনো মেঘবালিকা আমিও
তোমায় অনেক ভালবাসি।

তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“আপনার আগমন আমার জীবনে বসন্তের মতো। যা আমাকে সারাজীবন আঁকড়ে রাখে। যার রেশ আমায় মন খারাপে ডুবতে দেয় না। যার ভালোবাসায় আমার শহর বড্ড রঙিন। এই ধূসর রাঙা মেঘ ছিল বড্ড বেরঙিন কিন্তু আপনার আগমনে আপনার ভালোবাসার রাঙানো মেঘ আজ বড্ড রঙিন।
হয়তো আমি ধূসর রাঙা মেঘ
আপনি মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলি!

মেঘ ধূসরকে ছেড়ে উঠে সামনে নদীর তীরে দাঁড়ালো। ধূসর পেছন থেকে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“আজ আমার নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি তুলে ফেললাম মেঘবালিকা। এখন আমার সুংসবাদ দাও আমি কিন্তু ভুলিনি।

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“আমাদের মাঝে এক ছোট্ট ধূসরের আগমন ঘটতে চলেছে জনাব।”

হুট করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাঙ্ক্ষিত কিছু পেয়ে ধূসর থমকে গেল। মেঘকে ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল যা বলছে সত্যি কি না। মেঘ হেঁসে মাথা নাড়ালো তারমানে সত্যি। ধূসর খুশিতে মেঘকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে লাগলো। ধূসরের এতো খুশি দেখে মেঘ ও হাসলো। কিছুক্ষণ পর ধূসর সাবধানে মেঘকে বেঞ্চে বসিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

‘আজ আমি কতটা খুশি তুমি ভাবতেও পারবে না। কতোদিন হয়েছে?”

“এক মাস! কালকেই জানতে পারলাম।”

“সব ঠিক আছে কিন্তু তুমি ছোট্ট ধূসর কেন বললে? আমি ছোট্ট মেঘবালিকা চাই। দেখো ছোট্ট মেঘবালিকা আসবে।”

“না ছোট্ট ধূসর আসবে!”

“না মেঘবালিকা আসবে!”

কিছুক্ষণ খুনশুটি করার পর দুজনে একসাথে বলল,,

“আচ্ছা যেই আসুক সে আমাদের চোখের মনিই থাকবে। আমরা দুজন তাকে খুব ভালোবাসবো। আমাদের তিনজনের অনেক সুন্দর একটা ছোট্ট পৃথিবী থাকবে।”

দু’জনেই একসাথে বলে একসাথে হেসে উঠলো। ধূসর বসে মেঘকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে বলল,,

“ভালোবাসি মেঘবালিকা!”

“ভালোবাসি আমার জীবনসঙ্গী আমার ধূসর !”

~ ভালোবাসা সুন্দর যদি মানুষ টা সঠিক এবং সম্পর্কটা পবিত্র হয়। সাময়িক সুখের জন্য হারামে লিপ্ত না হয়ে সার্বজনীন সুখের জন্য সবার অপেক্ষা টা হোক হালালের প্রতি।

~~~সমাপ্ত ~~~

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। পরিস্থিতির চাপে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সময়ের অভাবে গল্পের সমাপ্তি হলো। গল্পটা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের মতামত জানার জন্য অপেক্ষা করবো। খুব খারাপ লাগছে এভাবে শেষ করতে কারন এই গল্পটা শুরুর আগে অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলাম। জানিনা কতোটুকু কি করতে পেরেছি। কিছু জিনিস মিস হয়ে যেতে পারে এই জন্য আমি দুঃখিত। জানিনা আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গল্পটা শেষ করতে পেরেছি কি না। কোন কিছু ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। মেঘ আর ধূসর বড্ড ভালোবাসার আর শখের। এবং গল্পটাও আমার খুব শখের। প্রথম থেকে যারা গল্পটার সাথে ছিলেন সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা। নিজেদের খেয়াল রাখবেন এবং ভালোবাসা নিবেন এই লেখিকার থেকে। সবাই একটু লেখিকার জন্য দোয়া করবেন। সবশেষে পাঠকমহলের প্রতি ভালোবাসা অবিরাম!❤️🥀

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-২২

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ধূসরের সাথে নিচে আসলো। ড্রাইনিং টেবিলে খাবারের ব্যবস্থা দেখে মেঘ অবাক হলো। এতো এলাহি কারবার। মায়মুনা চৌধুরী নিজ দায়িত্বে ধূসরকে দেখে দেখে খাওয়াচ্ছেন। আজ মেঘকেও দেখে দেখে খাওয়াচ্ছে। মেঘ খাবে কি ওর মায়ের এতো ভালোবাসা দেখে ওর পেট এমনিতেও ভরে উঠছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে মেঘ নিজের রুমে এলো। ধূসর দাদুভাই আর আজানের সাথে কথা বলতে লাগলো। মেঘ সবে বিছানায় বসবে এমন সময় মায়মুনা চৌধুরী মেঘের রুমে এলেন। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কিছু বলবেন?”

মায়মুনা চৌধুরী আসামির মতো এগিয়ে এসে বললেন,,

‘না তেমন কিছু না এমনিই এলাম। একা বসে আছো তাই?”

“ওহ আচ্ছা বসুন!”

মায়মুনা চৌধুরী বসলেন। তখন মেঘ বলল,,

‘আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলুন তো! হুট করে এতো খেয়াল রাখছেন কেন? আবার আমার হাজবেন্ড কে আর আমাকে দেখে দেখে খাওয়ালেন। আমি একা আছি দেখে আপনি এলেন সঙ্গ দেওয়ার জন্য। এসবের মানে কি? আপনি ঠিক কি চাইছেন বলুন তো?”

মায়মুনা চৌধুরী অসহায় হেঁসে বললেন,,

“জীবনের এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি যে, মেয়ের একটু খেয়াল রাখবো তাতেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

মেঘ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

“এসবের জন্য আপনি দায়ী নন কি? যখন আমার একটু আদরের দরকার ছিল, একটু খেয়াল রাখার দরকার ছিল তখন তো আসেন নি। হুট করে এত বছর পর একটু খেয়াল রাখছেন কেয়ার করছেন। এটা আমি সহজ ভাবে নিতে পারছি না। হুট করে কেউ অপত্যাশিতভাবে অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখালে আমার কাছে মনে হয় তার স্বার্থের জন্য করছে। আমি সহজ ভাবে এগুলো নিতে পারি না।”

‘আমাকে মাফ করে, একবার মা হিসেবে কাছে টেনে নেওয়া যায় না। আমি ভুল করেছি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। আমায় মাফ করে দাও।”

মেঘ মুচকি হাসলো। মায়মুনা চৌধুরীর মনে হচ্ছে এই হাঁসি কতোটা চমৎকার সেই সাথে অন্যরকম কিছু একটা আছে। মেঘ বলল,,

“হুট করে আপনার কেন মনে হলো? আমার কাছে আপনার মাফ চাওয়া উচিৎ। সত্যি বলতে আপনি কি করেছেন আমার সাথে? আমি আর আমার ভাই যে একসাথে আপনার পেটের ভেতর ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার ভাই হওয়ার পর মারা যায়। সেই জন্য আপনি কি করেছিলেন ঐ ছোট্ট নবজাতক শিশু কে খুনী তকমা লাগিয়েছিলেন। কারন ডক্টর বলেছিল ঐ বাচ্চাটার জন্য আরেকটা বাচ্চার পজিশন সরে গিয়েছিল তাই বাচ্চাটার মৃত্যু ঘটেছে। সেই নবজাতকের কি দোষ বলুন তো সবই তো আল্লাহর ইচ্ছে । সেই নবজাতক কি কিছু করেছিল ঐ বাচ্চাটা কি করতে পারে আপনিই বলুন। অথচ আপনি কি করলেন? মেয়েটাকে জীবিত তো রাখলেন দুধ ও খাওয়ালেন। কিন্তু আদর ভালোবাসা স্নেহ থেকে বঞ্চিত করলেন। তার ওপর মেয়েটা হলো সবার থেকে কালো যা আপনার পছন্দ হলো না। লোকের কথা শুনতে আপনার এতো গায়ে লাগলো যে। প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কথাও বলতেন না। মেয়েটা আপনার আদর পাওয়ার জন্য বারবার আপনার পেছনে ঘুরতো। আপনি কি করতেন ধমকে নয়তো মেরে সরিয়ে দিতেন।”

কি করেছেন আপনি আমার সাথে? বাড়ি যা কিছু খারাপ হতো সবকিছুর জন্য আমাকে শুধু দায়ী করতেন। এমন কি পাঁচ বছর বয়সে যখন বাগান বাড়িতে দাদুভাই এর রুমে আগুন লাগলো । তখন আমি নাকি আগুন নিয়ে খেলছিলাম । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি নিজেও জানতাম না আমি আগুন নিয়ে খেলছিলাম। আমি আর দাদীজান শুধু একসাথে ঐ রুমে কথা বলছিলাম দাদীজান আমার সাথে খেলছিল বিছানায়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে দাদীজান মারা যায়। আপনার একবার ও মনে হয়েছে আমাকে খুনী বলার আগে যে এই আমিও ঐ আগুনে মারা যেতে পারতাম। কতো সহজেই না আপনি অবলীলায় আমাকে দুই দুই বার খুনী বলে দিলেন। কি করেছেন আপনি আমার সাথে কিছুই করেন নি। শুধু মেরে ফেলেছেন আমার দুষ্টুমিকে আর আমার ছোটবেলাকে। এই এতো অবহেলা এতো অনাদরেই আমার জীবন আগাতে লাগলো।এই সবের জন্য কেউ মাফ চায়। এগুলো তো ছোটখাটো ব্যাপার মাফ চেয়েই এসবের জন্য মাফ পাওয়া যায়। সবকিছু সহজ করে নেওয়া যায় এক নিমিষেই।

মায়মুনা চৌধুরীর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে অথচ মেঘের দৃষ্টি স্থির। মেঘ বলল,,

“সব ঠিক আছে আমিও ঠিক আছি এখন বলুন হুট করে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখানোর কারন কি?”

মায়মুনা চৌধুরী মেঘের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,

“আমি জানতে পেরে গেছি সব মেঘ। আমার আরেকটা বাচ্চা তোমার জন্য মারা যায় নি। ডাক্তারের অপারেশন এর গাফিলতির কারণে মারা গেছে। উনি ঠিক ভাবে বাচ্চার ডেলিভারি করাতে পারেন নি। তাই রিজন হিসেবে ওনারা অন্য বাচ্চার কথা বলেছে মানে তোমার কথা। এটা আমাকে তোমরা যে হাসপাতালে হয়েছিলে সেখানে থাকা নার্স বলেছে। উনি অসুস্থ ছিলেন আমাকে দেখেই চিনতে পারেন তারপর আমাকে জানান। আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকে আদর ভালোবাসা দিই নি কারন তোমাকে দেখলেই মনে পরতো আমার আরেকটা সন্তান থাকার কথা ছিল তোমার জন্য নেই। তোমার জন্য আমার আরেক সন্তান পৃথিবীতে নেই। আমি চেয়েও তোমাকে আপন করতে পারতাম না। নিজের দুঃখে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে এই ছোট জিনিসটা বুঝতে পারিনি একটা বাচ্চা কি করে এরকম করতে পারে যে সবে মাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমায় মাফ করে দাও মেঘ।

“যদি সত্যিটা আপনার সামনে কোনদিন না আসতো তাহলে কি করতেন মায়মুনা চৌধুরী। আপনি কি করে পারলেন এরকমটা করতে আমি তো আপনার নিজের মেয়ে ছিলাম। কি করে ঐ ছোট্ট বাচ্চাটার সাথে এরকম অন্যায় করতে পারলেন। সত্যি বলতে আপনি আমার মন থেকে উঠে গেছেন। তবে হ্যা আপনি আমার মা।
না চাইলেও কিছু সম্পর্ক থেকে পালানো যায় না। আমাদের সম্পর্ক ঠিক হওয়ার থাকলে হবে তবে আমার পক্ষ থেকে কিছু আশা করবেন না।”

মায়মুনা চৌধুরী মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,

“আমি তোমায় ভালোবাসি মেঘ। তুমি অসুস্থ হলে আমার ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। আয়মান যখন বলল তোমার অবস্থা এর আগে মৃত প্রায় ছিল। তখন আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। হাসপাতালে আমি তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখতে পারছিলাম না। তোমার এই ইগনোর গুলো আমায় বড্ড পোড়ায়।আমি খুব করে বুঝতে পারি আমি আমার মেয়ের সাথে কি কি আর কতো বড় অন্যায় করে করেছি পারলে মাফ করে দিও মেঘ।’

বলেই তিনি দৌড়ে রুমে থেকে চলে গেলেন। মেঘের চোখ ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে আর বলতে ,,

“তোমাদের ঐ অবহেলা আমাকে কতটা যন্ত্রনা দিতো তোমরা ভাবতেও পারবে না কোনদিন। এই আমি কতো রাত কেঁদেছি।কেউ আমার পাশে থাকে নি। একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছি কেউ আসে নি। শুধু আমার আব্বা আমায় ভালোবেসে গেছে নাহলে এই মেঘ কবেই ধরনীর বুক থেকে হাড়িয়ে যেত।”

কিন্তু বলা হয়ে উঠলো না।চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। কিন্তু মেঘ মুছে ফেললো। ও চায়না ধূসর এসে ওকে এই অবস্থায় দেখুক। তার ও আধা ঘন্টা পর ধূসর এলো মেঘ পাশ ফিরে শুয়ে আছে। ধূসর গিয়ে বলল,,

“ওষুধ খেয়েছো?”

মেঘ জবাব দিলো না। ধূসর এগিয়ে গিয়ে মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে চেক করলো ঘুমিয়েছে কিনা। মেঘ ঘুমায় নি জেগেই আছে তা দেখে বলল,,

“কি হলো ওষুধ খেয়েছো?”

মেঘ ছোট করে উত্তর দিল,,

‘না!”

“আমি জানতাম এমনটাই হবে। তাড়াতাড়ি উঠো আমি ওষুধ দিচ্ছি। আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে ওষুধ দিয়ে তারপর দাদুভাইদের সাথে গল্প করা উচিৎ ছিল। অবশ্য দাদুভাই ও এমনভাবে ধরলো আর উঠা হলো না।”

“আমি কিছু বলি নি আপনাকে। নিজে নিজেই এতগুলো কথা বলছেন কেন? একদিন ওষুধ না খেলে মরে যাব না। ”

ধূসর মেঘের এরকম কথা শুনে একটু ধমকের সুরে বলল,,

“একদম আজেবাজে কথা বলবে না। মরে না গেলে এই যে কষ্ট গুলো পাবে। সুস্থ হতে দেরি হবে ওগুলো ভুগবে কে? তোমার না হয় নিজের প্রতি কোন যত্ন নেই। কিন্তু আমার কেমন লাগে তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার কতোটা যন্ত্রনা হয় তুমি বুঝো। অবশ্য তুমি বুঝবে কিভাবে তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়ে। সবকিছুতে নিষ্ঠুরতা দেখাতেই হবে।”

এটুকু বলে ধূসর থামলো মেঘ আজ কিছুই বললো না। ধূসর মেঘকে খেয়াল করলো কেমন চুপচাপ এখন। কিন্তু মেঘ তো এরকম থাকে না। মেঘের কি মন খারাপ
ধূসর মেঘকে টেনে তুলল তারপর মেঘের সামনে বসে দুই কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“কি হয়েছে আমার মেঘবালিকার মন খারাপ নাকি?”

মেঘ ধূসরের চোখের দিকে তাকালো। ধূসর ও ওর চোখের দিকে তাকালো। ধূসর দেখলো মেঘের চোখ ছলছল করছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ?”

“আমায় একটু ভালোবাসবেন ধূসর। যতটা ভালোবাসলে সব মন খারাপ দূর হয়ে যাবে।”

“মেঘ তুমি!”

” ধূসর চলুন একটু চন্দ্রবিলাস করে আসি।”

ধূসর কিছুই বুঝতে পারলো না এই মেয়েটাও না কখন কি করে বা বলে নিজেও জানে না।মেঘ উঠে ধূসরকে নিয়ে সিঁড়ির সামনে এলো তারপর বলল,

“আপনার অসুস্থ বউকে একটু সিড়িগুলো পার করে দেবেন?”

ধূসর মেঘের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু মেঘ সে জানে নিজের খুশি কিভাবে নিজেকেই খুঁজতে হয়। ধূসর হেঁসে বলল,,

“কেন নয় অবশ্যই পার করে দেব! তবে শুধু পার করবো না আরো অনেক কিছু করবো।”

বলেই ধূসর মেঘকে কোলে নিল। মেঘ হেঁসে ধূসরের গলা জড়িয়ে ধরলো।ছাদে গিয়েও ধূসর মেঘকে নামালো না। দোলনায় গিয়েও ধূসর মেঘকে কোলে নিয়েই বসলো। মেঘ উঠার চেষ্টা করছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“এই যে মেয়ে এত ছুটাছুটি করছো কেন? আমার অসুস্থ বউ আমি তো একে কাছ ছাড়া করবো না। আজ আমার বউ আমার কোলে থেকেই চন্দ্রবিলাস করবে।”

“এটা কিন্তু ঠিক না।আমি শুধু সিড়ি পার করে দিতে বলেছিলাম।”

‘তাতে কি হয়েছে আমার বউ আমি যা খুশি করবো তাতে তোমার কি চুপ করে থাকো। আর দেখো আজ চাঁদ টা কি সুন্দর।”

“আপনার কাঁধে মাথা রেখে আপনার হাত জড়িয়ে ধরে আমি চাঁদ দেখতে চাই। সাথে পাশে তাকালেই যেন আপনার এই চাঁদের আলোয় ঝলমল করা মুখটা দেখতে পাই।এই জন্য কোলে নয় আপনার পাশে বসতে চাই।”

ধূসর হেঁসে মেঘকে পাশে বসিয়ে দিল। আর ফিসফিস করে বলল,,

“আর আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই।”

মেঘ হেঁসে ধূসরের এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলো। ধূসর ও নিজের মাথাটা মেঘের মাথায় সাথে লাগিয়ে দিল। মেঘ বলল,,

“আপনি আমার ব্যক্তিগত সুখ। যে পাশে থাকলে আমি নিজেকে সর্বদা সুখী মানুষের কাতারে রাখি।”

ধূসর একহাত দিয়ে মেঘের হাত আঁকড়ে ধরে বলল,,

তুমি ধূসর রাঙা মেঘ
আমি মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলি
আমিবিহীন স্মৃতির শহরে থেকেছো বহুদিন
মনে রেখে আমার কথাকলি!

যদিও তুমি মুখে বলো না ভালোবাসি
তাই তো তোমায় আমি নিষ্ঠুর মেয়ে বলি
তাতে কি তোমার অন্য কথার ভাঁজে,
বোধহয় কেউ আমায় ফিসফিস করে বলে
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।

মেঘ কিছু বললো না চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। ধূসর বুঝতে পারলো মেঘ মতো নিজেকে আড়াল করে রাখুক ওর মন ভিশন খারাপ। নাহলে এতোটাও নিঃস্তব্ধতা ওকে কখনো ঘ্রাস করে না। ধূসর বলল,,

“মেঘ ঠিক আছো?”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“নিজের খুশি রাখার পথ নিজেকেই খুঁজতে হয়। নিজেকে ভালো রাখা খুশি রাখা সমস্ত দায় নিজেরেই। অন্যরা হয়তো কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি দেবে কিন্তু নিজে খুশি থাকবে কি থাকবে না সেটা নিজের ওপর নির্ভরশীল।”

“কি হয়েছে মেঘ এভাবে বলছো কেন? তুমি ঠিক আছো?”

মেঘের চোখটা ছলছল করে উঠলো। মেঘ ধূসরের হাত ছেড়ে ধূসরের চোখের দিকে তাকিয়ে আর মাথা নাড়িয়ে বলল,,

“আমি ঠিক নেই ধূসর! আমি ঠিক নেই। অতীতের সব তিক্ত স্মৃতি আমাকে ঘ্রাস করছে। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। আমি চেয়েও আজ নিজেকে সামলাতে পারছি না ধূসর। নিজেকে খুশি রাখার সব রকম চেষ্টা করছি ধূসর তবুও পারছি না।”

এই মেঘকে ধূসর এর আগে কোনদিন দেখেনি। ওকে চুপচাপ থাকতে দেখেছে একা থাকতে দেখেছে কিন্তু এরকম কোনদিন দেখেনি। এই ভাঙা মেঘকে ও দেখেনি। তার মেঘবালিকার কষ্ট যেন তাকেও ঘ্রাস করলো। ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো। ধূসর মেঘের মুখে হাত দিয়ে ধরে বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ কিসের এতো কষ্ট তোমার। তোমার ধূসর আছে তো বলো আমাকে। সব কষ্ট বিলীন করে দেবে তোমার ধূসর।”

মেঘ ধূসরকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আজ যেন শখের পুরুষের প্রশ্নে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। নিষ্ঠুর মেয়েটা যেন নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। এদিকে ধূসরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এরকমটা আজ প্রথম ঘটলো। ধূসর শক্ত করে মেঘকে ধরে রাখলো। কিছুক্ষণ পর মেঘ শান্ত হলো। আর বলল,,

‘রুমে চলুন ধূসর!”

ধূসর মেঘকে কোলে নিল কারন মেঘ ঠিক নেই। ধূসর মেঘকে কোলে নিয়ে নিচে আসলো। মেঘ কিছুই বললো না। ধূসরের গলা জড়িয়ে চুপটি করে তার প্রেমিক পুরুষের বুকে লেপ্টে রইলো। ধূসর মেঘকে বিছানায় শুয়িয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু মেঘ ওকে আর উঠতে দিল না। ধূসর ও মেঘের পাশে শুয়ে পরলো। মেঘ চুপটি করে ধূসরের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। ধূসর বুঝতে পারলো মেঘ এখন তার প্রেমিক পুরুষের সান্নিধ্য চাইছে। ধূসর ও কিছু না বলে মেঘকে জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল। তবে এটাও ভাবলো মেঘ কেন এরকম করলো। তবে ওকে জিজ্ঞেস করবে না। সময় হোক মেঘ নিজেই এসে বলবে।

_________________

দেখতে দেখতে কাঙ্খিত দিনটা এসেই পরলো। আজ চৌধুরী বাড়িতে অনুষ্ঠান। মেঘ ধূসর দুদিন আগেই এসে পরেছে। সকাল হতেই খান বাড়ির সকলে এসে পরলো। মেঘের বান্ধবীরাও এসে পরেছে। চৌধুরী বাড়ির সব আত্মীয় স্বজন হাজির। আজ মেঘ খুব খুশি সে ধূসরের পরিবারের ওর বান্ধবীদের সাথে মন খুলে হাসছে। মেঘকে এভাবে কেউ চৌধুরী বাড়ির হাঁসি খুশি দেখে নি। তাই সকলেই অবাক হলো। সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীও আজ ভিশন খুশি। সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমে সোফায় আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরীর মাঝখানে বসে মেঘ গল্প করছে হাসছে। সমশের চৌধুরী মেঘকে কিছু বলছে মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাসতে হাসতে মেঘের চোখে পানি চলে এসেছে তবুও মেঘের হাঁসি থামছেই না। সবাই অবাক চোখে মেঘকে দেখছে। এটা মেঘ নাকি এটা নিয়েও সবার সন্দেহ হচ্ছে। একটা সময় মেঘ বলল,,

‘দাদুভাই থামুন আমি আর পারছি না। আপনি আর আব্বা ছোটবেলায় কতো বোকামো করেছেন। ভেবেই আমার হাঁসি পাচ্ছে।”

তখন সমশের চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“আরে এগুলো তো কিছুই না। একবার আয়মান ছোটবেলায় কি করেছে জানো,,

“দাদুভাই প্লিজ আজ থাক আর না আমার পেট ফেটে যাওয়ার জোগাড়।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“থাক আব্বা আর লজ্জা দিয়েন না। আমার আম্মাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই পরে ওগুলো নিয়েই কথা শোনাবে।”

তখন মেঘ হাঁসি থামিয়ে বলল,,

‘ভাগ্যিস আমার ছোটবেলা আপনাদের মতো নরমাল ছিল না। নাহলে নিশ্চয়ই আমি ছোটবেলায় সবার মতো বোকামো করতাম।”

হুট করে এমন কথা শুনে আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরীর হাঁসি থেমে গেল। এই তো সব ঠিক চলছিল। কেউ কিছু বলবে তখন প্রবেশ ঘটলো আতাউর রহমানের পরিবারের। তা দেখে মেঘের মুখে আবার হাঁসি ফুটে উঠল। মেঘ উঠে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“শুভ সন্ধ্যা আঙ্কেল ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।”

মেঘ ওনাদের নিয়ে গিয়ে বসালো। তখন শাফিয়ান চৌধুরী বললেন,,

‘মেঘ এখন তো সবাই এসে পরেছে। এখন বলো কিসের অনুষ্ঠান তুমি তো বলেছিলে সবাই এসে পরলে তারপর বলবে।”

‘আরে কাকাই এতো তাড়া কিসের? সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হোক তারপর বলবো। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা একে অপরের সাথে কথা বলেন না।”

অতঃপর সবাই মেঘের কথা মতো নিজেদের মতো গল্প করতে লাগলো। ডিনার শেষ করে সবাই ড্রয়িংরুমে বসলো। তখন মেঘ সবার সামনে একটা প্রজেক্টর সেট করলো। আর বলতে লাগলো,,

“আমার আর দাদুভাই এর কথায় এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য সকলেকে ধন্যবাদ। তো সবার একটাই প্রশ্ন কিসের অনুষ্ঠান? তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ দিনের জন্য অনুষ্ঠান নয়। আজ থেকে ছয় বছর আগে ঠিক আজকেই দিনেই আয়মান চৌধুরী মানে আমার আব্বার ওনারে একটা অনুষ্ঠান রাখা হয়েছিল। সেখানে থাকা সকলেই আজ উপস্থিত। মূলত সেই অনুষ্ঠানে আমার আব্বা কে অপমানিত হতে হয়েছিল তাও এমন একটা ভুলের যা আমার আব্বা করেই নি। তো আপনাদের এখানে ডাকার মেন কারন হলো আমার আব্বা যে নির্দোষ এটার প্রমান দেওয়ার জন্য এবং কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য। তো প্রথমে আপনারা একটা ভিডিও দেখুন যেটা ছয় বছর আগে দেখেছিলেন।

মেঘ একটা ভিডিও দেখালো যেখানে আয়মান চৌধুরী একজন কে টাকা দিচ্ছে তারপর আরেকটা কাট ভিডিও দেখানো হলো যেখানে ঐ লোকটা একটা পরিবারকে আটক করেছে। যেখানে আয়মান চৌধুরী কে পেছন থেকে ভিডিও করা হয়েছে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।আয়মান চৌধুরী কাউকে ফোন করে বলছেন যে নতুন ডিল প্রেজেন্ট করা হয়েছে সেই ডিলটা না পেলে তোমার পরিবার কে মেরে ফেলা হবে। এই আয়মান চৌধুরী ওপরে ওঠার জন্য যা কিছু করতে পারে। আর এই ডিলটা আমার জন্য খুব ইম্পোর্টেন্ট। তখন ওখানে থাকা একটা মহিলা চিৎকার করে উঠলে তিনি গিয়ে মহিলার গায়ে হাত তুলেন।

ভিডিও টা শেষ হওয়ার পর মেঘ আবারো সবার সামনে গিয়ে বলল,,

“তো এটাই ছিল সেই ভিডিও যা ছয় বছর আগে দেখানো হয়েছিল এবং আয়মান চৌধুরী কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল । তিনি নাকি নিজের মেহনত না করে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তার ডিল পেয়েছিলেন।

বলতে বলতেই মেঘের কথা বন্ধ হয়ে গেল। সে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। আয়মান চৌধুরী মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ধূসর মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘের পাশে গিয়ে দাড়ালো। তখন মেঘ বলতে শুরু করল,,

“তো এই ভিডিও টা অনুষ্ঠানে একটা বোমা ফেলার ন্যয় কাজ করেছিল। কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার হলো আয়মান চৌধুরী এতকিছু করলো কিন্তু তাকে পুলিশে দেওয়া হলো না। যার পরিবার কে কিডন্যাপ করা হয়েছিল সে ভিশন দয়ালদার মানুষ তিনি আয়মান চৌধুরী কে পুলিশে না দিয়ে, সমশের চৌধুরীর কাছে বিচার দিলেন। যে সে তার ছেলের যে বিচার করবেন সেটাই সে মেনে নেবে। কারন সে আমার সমশের চৌধুরী কে অনেক সম্মান করে। তো সমশের চৌধুরী তো আর ছেলেকে পুলিশে দিতে পারেন না। তাই তাকে বাড়ি থেকে এবং সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে বাড়ি থেকে বের করে দেন সবার সামনে। সত্যি কি দয়ালু মানুষ তিনি। এবার আসি মেন টপিকে যার জন্য আপনাদের ডাকা তো এখন আপনারা আরেকটা ভিডিও দেখুন যেই ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবেন কে যেন কালপ্রিট।

মেঘ আরেকটা ভিডিও দেখালো সেখানে আগের ভিডিওটার ফুল ভিডিও দেখা যাচ্ছে। পেছন দিকে মুখ করে একটা লোক বসে আছে আয়মান চৌধুরীর গলা নকল করে কারো সাথে কথা বললেন এবং মহিলাটিকে থাপ্পড় মেরে পেছনে ঘুরলেন যেখানে স্পষ্ট লোকটার চেহারা দেখা গেল।

এই ভিডিওটা দেখে সবাই অবাক হয়ে আতাউর রহমানের দিকে তাকালো। কারন ভিডিওটার লোকটা আর কেউ না আতাউর রহমান। তখন আরেকটা ভিডিও চললো ঐ ডিল করা লোকটার সে বলছে,,

“আমি আয়মানের সাথে কিছু করতে চাই নি। ঐ আতাউর রহমান আমার পরিবার কে কিডন্যাপ করেছিল। আর বলেছিল এগুলো বলতে আর ভিডিওটা দেখাতে। তিনি তো জেলেও দিতে বলেছিল কিন্তু একটা নিরপরাধ মানুষকে কিভাবে জেলে দিই তাই সমশের চৌধুরীর কাছে বিচার দিই। আর ঐ লোকটার ভয়ে তারপরের দিনই আমি পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে আসি যাতে ঐ লোকটা আমাদের কিছু না করতে পারে।”

মেঘ এবার আতাউর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘তো সবাই দেখলেন সবকিছু কে করেছে। আর হ্যা প্রথমে আমার আব্বা মে টাকা দিয়েছিল ওটা লোকটার মা অসুস্থ ছিল তাই টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এই সবকিছুর প্ল্যান ছিল জনাব আতাউর রহমানের।তো আঙ্কেল এখন আপনার কেমন লাগছে বলুন। আসলে এটার জন্যই আপনাকে আসতে বলেছিলাম। পুলিশ অফিসার ভেতরে আসুন।”

পুলিশ এসে আতাউর রহমান কে ঘিরে ধরলো। একজন পুলিশ ওনার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল।তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“মেঘ আমাকে ধরিয়ে দিলেও তুমি বাঁচবে না। কি কেস দেবে এই সামান্য কেসের জন্য তো আমি দুদিনেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবো।

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,,

“সামান্য কেস বলছেন? আপনার ওপর কি কি কেস আছে সেটা আপনিও জানেন না? আমার পাঁচ বছর বয়সে আমার শ্রদ্ধেয় দুই ফুপা আপনার কথামতো বাগান বাড়িতে দাদুভাই কে মারার জন্য আগুন দিয়েছিল তার কেস আপনার ওপর রয়েছে। আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে আবার আব্বার ওপর অ্যাটাক হয়েছিল সেটার কেস ও আপনার ঘাড়ে। আমার দাদুভাই এর গাড়ির ব্রেকফেইল হয়েছিল তিন বছর আগে সেটার কেস ও আপনার ঘাড়ে। মুন আপুর বিয়ের সময় বাড়িতে অ্যাটাক হয়েছিল সেটাও আপনার ঘাড়ে। আরো কতো অসংখ্য কেস আপনার ওপর আপনি নিজেই জানেন না‌।

মেঘের কথা শুনে সকলে চমকে উঠলো। রেজাউল করিম আর আশরাফ হক ভয় পেল এবার তারা কি করবে? আর বাকি সবাই থমকে গেলেন আয়না চৌধুরী আর আশা চৌধুরী কাঁদতে লাগলেন। হুট করেই চৌধুরী বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।ওনারা পালাতে গেলেই পুলিশ ওনাদের ধরে ফেললেন।তখন মেঘ বলল,,

“আরে আমার শ্রদ্ধেয় দুই ফুপা পালাচ্ছেন কোথায়? আপনাদের এতো লোভ যে নিজের শ্বশুরকেই মেরে ফেলতে চাইলেন। রেজাউল করিম আর আশরাফ হক সর্বদা আতাউর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করতেন। এবাড়ির সকল তথ্য আপনারা ওনার কাছে পৌঁছে দিতেন। কিসের এতো লোভ আপনাদের সামন্য সম্পত্তির জন্য এরকম টা করলেন। আর দোষ চাপিয়ে দিলেন ঐ পাঁচ বছরের বাচ্চাটার ওপর যে নাকি কিছুই বুঝতো না। কি বলেছিলেন ঐ বাচ্চাটা আগুন নিয়ে খেলছিল আর খেলতে খেলতে সমশের চৌধুরীর রুমে ঢুকেছিল। তার থেকেই এই এক্সিডেন্ট ঘটেছে তাই না। কিন্তু সত্যি তো এই সেই ছোট্ট বাচ্চা টা তার দাদীর সাথে গল্প করছিল আর সেই সুযোগে আপনারা দুজন আগুন ধরিয়ে দেন। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যে ছিল সমশের চৌধুরী কে মারা কিন্তু সে তো ছিল না ঘরে এটা বোধহয় আপনারা দুজন খেয়াল করেন নি। সমশের চৌধুরীর স্ত্রী তার নাতনি কে কোলে নিয়ে বেরুতে পারছিলেন না। আর নাতনি কে বাঁচাতে গিয়েই তিনি ওখানে মারা যান। এটাই ছিল মূল কাহিনী তাই না‌ এসব জেনেও আপনারা এতদিন চুপ ছিলেন আর দোষ চাপিয়েছিলেন ঐ বাচ্চাটার ওপর। যার জন্য বাচ্চাটার জীবনে কতোটা অন্ধকার নেমে এসেছিল। আসলে তো আপনারা ওখানের দুজনেরই খুন করেছিলেন।

মেঘের চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘ তাড়াতাড়ি করে মুছে ফেললো ধূসর গিয়ে মেঘকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে রইল। আশা চৌধুরী গিয়ে রেজাউল করিম আর আশারাফ হক কে থাপ্পড় মারলো। আজ আয়না চৌধুরীর কি হলো কে জানে তিনিও গিয়ে আশরাফ হক কে থাপ্পড় মারলো আর কাঁদতে লাগলো। কারন এই মানুষ দুটোর জন্যই সে তার মাকে হাড়িয়েছিল। আশা চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী বললেন উনাদের সামনে থেকে নিয়ে যেতে।
সবাইকে নিয়ে যাওয়া শুরু করলে মেঘ বলল,,

“দাঁড়ান অফিসার আরো একজন বাকি আছে তো?”

“কে ?’

“মিস্টার শাফিয়ান চৌধুরী আমার ভাইয়ের হত্যাকারী।”

এ কথা যেন সবার মাঝে আরো একটা বিস্ফোরণ ঘটালো। আয়মান চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী মেঘের কাছে এগিয়ে এলো। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কি বলছেন আম্মা?”

‘আমি ঠিক বলছি আব্বা! এই শাফিয়ান চৌধুরী আমার যমজ ভাইকে মারার জন্য ডক্টরকে টাকা দিয়েছিলেন। সে চেয়েছিল আপনার যাতে ছেলে বংশধর না আসে। আর বেশি সম্পত্তি তার নামে করে দেয় দাদুভাই কারন তার ছেলে ছিল জিয়ান ভাইয়া।”

“এসব কি বলছেন?”

“সব সত্য বলছি আব্বা আজান হওয়ার সময় কাকাই একজনের সাথে কথা বলছিল । যেভাবে সে আপনার আগের পুত্র সন্তান কে মেরে ফেলেছিল এবারও মেরে ফেলতে চান। কিন্তু এবার তিনি করতে পারবেন না কারন ডক্টর ছিলেন মায়ের বান্ধবী। পরে আমি খোঁজ লাগিয়েছিলাম সত্যি সত্যি শাফিয়ান চৌধুরী আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমি পেছন থেকে সব শুনে নিয়েছিলাম আব্বা। এমন কি আমাদের সাথে যা খারাপ ঘটনা ঘটেছে সব বিষয়ে সে হাত না দিলেও তিনি জানতেন। এমন কি মুন আপুর বিয়ের সময় আপনার ওপর অ্যাটাক হলো সেটাও তিনি জানতেন। তিনিও আতাউর রহমান এর সাথে মিলিত।”

সব শুনে মায়মুনা চৌধুরী কেঁদে উঠলেন।আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলেন।সমশের চৌধুরী শাফিয়ান চৌধুরী কে থাপ্পড় মারলেন আর বললেন,,,

“তুমি আমার ছেলে এটা ভাবতেই আমার ঘৃনা লাগছে। অফিসার নিয়ে যাও একে।”

অতঃপর পুলিশ সবাইকে নিয়ে গেল। বাড়িতে নিস্তেজ হয়ে গেল। কিন্তু মেঘ স্থির তার কোন দুঃখ নেই যেন। এই যে এতো গুলো মানুষের নজর ওর ওপর। কিন্তু তাতে ওর কোন হেলদোল নেই। মেঘ নিঃশব্দে ওপরে উঠতে লাগলো। তখন ধূসর ওর সাথে আসতে চাইলে মেঘ বলল,,

‘ধূসর আমাকে একটু একলা ছেড়ে দিন। আমি একটু নিজেকে সামলিয়ে নিই।”

ধূসর ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো। মেঘ রুমে গিয়ে দরজা আটকে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ও নিজের মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো কারন ও জানে ধূসর দরজার বাইরেই আছে সাথে ওর আব্বাও। মেঘ নিজের চুল আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। এতদিন কার সব কষ্ট কেন একেবারে মাথায় চেপে বসেছে। কিছুক্ষণ পর মেঘ নিচে বসে দেয়ালে নিজের মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ধূসর একটা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। অনেক হয়েছে সে তার মেঘবালিকা কে কষ্ট পেতে দেবেনা। মেঘকে ওভাবে দেখে ধূসরের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ধূসর গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও ধূসরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ধূসর মেঘকে শক্ত করে আঁকড়ে রাখলো। কিন্তু ওর মেঘের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। তাই মেঘকে নিজের ভালোবাসার শুভ্রতা দিয়ে তার কষ্টগুলো কে বিলীন করতে উদ্যত হলো। মেঘ তার প্রেমিক পুরুষের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেও তাকে আঁকড়ে ধরলো।

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-২০+২১

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ধূসর যেভাবে মেঘকে নিয়ে গোডাউনে ঢুকেছিল। সেভাবেই কোলে নিয়ে মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ধূসর গাড়িতে উঠে বসলো।তখন মেঘ বলল,,

“এভাবে কোনদিন তো আপনাকে দেখি নি?”

“দেখবে কিভাবে? কোনদিন তোমার সামনে এই রাগী আমিকে দেখাই নি। তুমি জানো কলেজে থাকতে কিছু অন্যায় দেখলেই তার সাথে আমার লেগে যেত। কতো মারপিট করেছি মেয়েদের কে ডিস্টার্ব করতো এই জন্য। তবে হ্যা এর আগে এতো হিংস্র কোনদিন ও হইনি। তুমি আমার খুব শখের মেঘবালিকা। তোমার সাথে ওরা যা যা করেছে তার কাছে এটা কিছুই না।”

“হুম অনেক হয়েছে এখন গাড়ি স্টার্ট দিন। মা বাবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

ধূসর গাড়ি স্টার্ট করলো একটা ফুলের দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে দিল।তারপর গাড়ি থেকে নেমে একটা বেলী ফুলের মালা আর কয়েকটা লাল গোলাপ নিয়ে এলো। তারপর মেঘ কে বলল,,

“হাত দাও মেঘবালিকা।”

মেঘ হাত বাড়িয়ে দিল। ধূসর মেঘের হাতে বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দিতে দিতে বলল,,

“কতোদিন হয়ে গেল, আমায় হাতে কেউ বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দেয় না। সেই জন্য বোধহয় হাতটাও আর বেলী ফুলের মালা দিয়ে জড়িয়ে থাকে না।
এই লাইনটা লিখতে ভুলে গেছিলে বোধহয় তাই আমিই পড়ে শোনালাম।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

“ধূসর হাওয়ার মিঠাই কিনে দেবেন? সেই আপনার সাথেই লাস্ট হাওয়ার মিঠাই খাওয়া হয়েছিল।”

ধূসর হেঁসে গাড়ি স্টার্ট দিল তারপর হাওয়ার মিঠাই দেখে গাড়ি থামিয়ে কয়েকটা হাওয়ার মিঠাই কিনলো। মেঘ আর ধূসর একসাথে হাওয়ার মিঠাই খেল। বাকিগুলো নীল রিমঝিম এর জন্য নিয়ে গেল। খান বাড়ির সকলে মেঘদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। ওরা যেতেই দিলরুবা খানম বলল,,

“কিরে এত দেরি হলো কেন?”

তখন ধূসর বলল,,

“আর বলো না মা কিছু বাকি কাজ ছিল সেগুলো শেষ করলাম। তারপর তোমার বউমা বায়না করলো হাওয়ার মিঠাই খাবে তাই একটু দেরি হলো।”

তখন নীল বলল,

‘হাওয়ার মিঠাই তো আমার এত্তগুলা প্রিয় আম্মু। তুমি আমার জন্য হাওয়ার মিঠাই আনো নি?”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“হুম নীলবাবু এনেছি তো দেখো তোমার মামা তার পেছনে হাত রেখে আছে। সেই হাতেই তো তোমাদের জন্য হাওয়ার মিঠাই নিয়ে এসেছে।”

নীল রিমঝিম এগিয়ে গেল তা দেখে ধূসর সরে গেল। আর ওরা তিনজন ধূসরের চারদিকে ঘুরতে লাগলো। সবাই ধূসরের কান্ড দেখে হাসলো অনেকদিন পর মনে হয় বাড়িটা প্রান ফিরে পেল। তখন রোহিনী বলল,,

“হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক জুড়ে গিয়েছিল মেঘ। তবে বুঝতেই পারি নি সেই গম্ভীর মুখু মেয়ে আমাদের পরিবার কে এতটা জড়িয়ে ফেলবে। এই যে কতোদিন তুমি ছিলে না। বাড়িতে মনে হয় প্রান ছিল না। তুমি আসতে
না আসতেই বাড়িটা মনে হয় প্রান ফিরে পেল।”

“ভাবী এরকমটা বলো না। তবে একটা পরিবারের সবাই যখন একসাথে থাকে তখনি পরিবারটা পরিপূর্ণ। কিন্তু ঐ পরিবারের সদস্য যেমনই হোক না কেন একজন যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে পুরো পরিবারটাই যেন কেমন যেন হয়ে যায়। ঐ একজনের অনুপস্থিতিই যেন সবাই কে শূন্যতা অনুভব করানোর জন্য যথেষ্ট।”

“তুমি ঠিক বলেছো।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

‘এই যে দুই জা এখানেই সব গল্প করবে নাকি। মেঘ অসুস্থ ওকে রুমে নিয়ে রেস্ট করতে হবে তো। আর ধূসর এতদিন বউয়ের কতো কেয়ার করলো। অথচ বাড়ি আসতে না আসতেই উনি বউয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে মজা করছে।”

এ কথা শুনে ধূসর বলল,,

“কি এত বড় কথা আমি একটু মজা করছি। এটা তোমার চোখে লাগছে। তোমরা এতগুলো মানুষ আছো তবুও আমাকে কেন দরকার। এভাবে বলছো তো দাঁড়াও দেখাচ্ছি।”

এই বলে ধূসর মেঘকে কোলে নিল আর বলল,,

“আমি সোজা আমার বউকে রুমেই নিয়ে যেতাম তাও আবার কোলে করে। আমার বউকে আমি কোলে করে নিয়ে আসিনি আমার বউ লজ্জা পাবে বলে। তোমাদের জন্য আমাকে লজ্জা দিতেই হলো।”

এই বলে ধূসর ওপরে গেল ওর কান্ড দেখে সকলে হাসলো। তখন নীলি সোহেল কে আর রোহিনী দিশান কে বলল,,

“কিছু শেখো ধূসর ভাইয়ার থেকে।”

বেচারা দু’জন ধূসরের ভালোবাসার চক্করে ফেঁসে গেল। নোলক ,দিলরুবা খানম আর এহসান খান হাসলো। ধূসর মেঘকে নিয়ে রুমে গিয়ে নামালো। এদিকে সবার সামনে কোলে নিয়েছে দেখে মেঘের লজ্জা লাগলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। কিন্তু ধূসর ঠিকই বুঝতে পেরে বলল,,

“হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন ফ্রেশ হও। আর হ্যা ক্ষত গুলো যে পর্যন্ত না কমছে তুমি এই কয়েকদিন শাড়ি পরবে। তাহলে ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগাতে বা ড্রেসিং করতে সুবিধা হবে।”

“শাড়ি টা ঝামেলা হবে এর থেকে থ্রিপিস কিংবা গোল জামা বেটার। তাছাড়া সবকিছু তো আপনিই করবেন শাড়ির দরকার নেই।”

ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,

“তারমানে বোঝাতে চাইছো সব তো আমিই করবো তাহলে জামা না,,”

মেঘ ধমকে উঠলো,,

‘আপনি বড্ড অসভ্য ধূসর! একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না।”

‘তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো।”

‘না আমার রাগ লাগছে! এখন সামনে থেকে সরুন আমি ফ্রেশ হবো।”

বলেই মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেল। তা দেখে ধূসর হেঁসে বলল,,

“আজকাল লজ্জা বাবাজি আমার বউয়ের খুব কাছে থাকছে। যাই হোক মেঘবালিকা তোমার লজ্জামাখা মুখ আমার খুব প্রিয়। অনেক দিন হলো তোমার এই লজ্জা মাখা মুখ দেখি না। সুস্থ হও তারপর না হয় নতুন করে তোমার লজ্জা ভাঙাবো।

মেঘ ফ্রেশ হয়ে বের হলে তারপর ধূসর গেল ফ্রেশ হতে।

________________

“বস নয়না আর আকাশকে পুলিশ গ্ৰেফতার করেছে। তবে জানেন কি? আকাশ কে খুব মারা হয়েছে ছেলেটা কতোদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না কে জানে? কিন্তু নয়না,,

“কি করেছে আমার মেয়ের সাথে?”

“ওর ডান হাতটা কব্জি থেকে কেটে ফেলেছে একেবারে।”

লোকটার কথা শুনে A.R.K “কি!!!! বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলো। আর বলল,,

“আয়মান আর মেঘ তোমরা কাজ টা ঠিক করো নি। আমার মেয়ের হাত কেটে ফেলেছো। এবার দেখবে আমি তোমাদের সাথে কি কি করি। আমি পুরো মাথাটাই তোমাদের শরীর থেকে আলাদা করে দেব। আমার মেয়ে হলো আমার জান। তাড়াতাড়ি শহরের বেস্ট উকিল এপোয়েন্ট করো। ওদের তাড়াতাড়ি করে ছাড়াতে হবে‌।যেভাবেই হোক ওদের কে জেল থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। আর মেঘ আমি তোমাদের ছাড়বো না রেডি থেকো।

বলেই রেগে চেয়ারটাই সামনের দেয়ালে ছুড়ে মারলো ওখানে থাকা লোকটা ভয় পেয়ে গেল। লোকটা চলে গেল ভয়ে A.R.K কে ঘরে ভেতর রাগে ফুঁসতে লাগলো। এই জন্যই বলে যার আপনজনের আঘাত লাগে তখনি সে বুঝতে পারে তার কেমন লাগে। কিন্তু তার বোঝার ক্ষমতা নেই অন্যের মেয়েকে আঘাত করলে তার কেমন লেগেছিল।

_________________

‘বাবা আমি গ্ৰামের বাড়িটা নিতে চাই। এখন আপনার মতামত জানান।”

রাতে চৌধুরী বাড়িতে খাবার টেবিলে সবাই বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য । হুট করে রেজাউল আহমেদ এর কথায় সবাই অবাক হলো। সমশের চৌধুরী মাথা উঠিয়ে বলল,,

“তোমার বাড়িটা কিসের জন্য প্রয়োজন? এমন তো নয় তুমি ঐ বাড়িতে থাকবে।”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

‘আসলে বাবা একটা অফার এসেছে ঐ বাড়িটাকে নিয়ে অনেক মোটা অঙ্কের টাকা দেবে। ঐ বাড়ির যত দাম পরবে তার থেকে দিগুন দেবে। কম্পানিটাও ভালো যাচ্ছে না। ওটা বিক্রি করে যদি বিজনেস এ লাগাতে পারি তাহলে বিজনেস ভালো চলবে। আমি আমার জন্য নয় বরং আপনার কম্পানির জন্য চাইছি।”

সমশের চৌধুরী হাসলেন আয়মান চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে। রেজাউল আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আমাদের ভালো ভেবেছো শুনে ভালো লাগলো। তবে তুমি আমার বড় মেয়ের জামাই। তোমার কেউ নেই দেখে তোমাকে আমার কম্পানিতে যোগ দিতে বলেছিলাম। এই মানে এই না আমার পারিবারিক বাড়ি নিয়ে নিজের কথা রাখবে। তোমার মনে আছে এর আগে শাফিয়ান আমার কাছে বাড়িটা চেয়েছিল নতুন ফ্যাক্টরি বানাবে দেখে আমি দিই নি। এর কারন জানো ঐ বাড়িটা আমি কাউকে দিতে চাই না।”

“আশা আপনার বড় মেয়ে সেই হিসেবে আমাদের ও কিন্তু ঐ বাড়ির ওপর অধিকার আছে।”

‘এই তো নিজের পথে এসেছো। তো আশরাফ তুমিও ও তো ঐ বাড়িটা চাও। তা তোমরা দুজন একসাথে বুদ্ধি করেছো নাকি আলাদাভাবে।”

হুট করেই এমন কথায় আশরাফ হক কাঁশতে লাগলো। সকলে বিষ্ফোরিত নয়নে আশরাফ হকের দিকে তাকালো। এমনকি রেজাউল আহমেদ নিজেও।আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরী মুচকি মুচকি হাসছেন। তাদের এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে। আশরাফ হক বললেন,,

“আসলে বাবা আমারও একটা লোকের সাথে কথা হয়েছিল। বড় দুলাভাই বলছে দেখে চুপ করে আছি আপনি তাকেই দেবেন না সেখানে আমি তো কোন ছাড়।তাই কিছু বলছি না।”

“শাফিয়ান তুমি কিছু বলবে?”

এ কথা শুনে শাফিয়ান চৌধুরী তার বাবার দিকে চট করে তাকালো। আল বলল,,

“আমার কাছে অফার এসেছিল তবে আমি বলেছি আপনি বাড়িটা কাউকে দিতে চান না। তবে যদি দেন তাহলে উনাকে বলবো।”

সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আয়মান বুঝলে তো এভাবে টোপ ফেলতে হয় চারদিকে একদিকে না একদিকে মাছ উঠবেই। কিন্তু মাছ যদি তার থেকেও বেশি বুদ্ধিমান হয়। তাহলে সে একটু লোভের জন্য খাবার খুঁজবে না। বরং নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য আরো গভীরে চলে যাবে। এমন যায়গায় লুকিয়ে পরবে যাতে সে টোপ ও দেখতে না পায় আর তার লোভ ও না হয়।”

সমশের চৌধুরীর কথা আর কেউ বুঝতে পারলো না কিন্তু আয়মান চৌধুরী হেঁসে ফেললেন। আর
বললেন,,

“জি আব্বা বুঝতে পেরেছি।”

“তো এখন বলো তোমাদের তিনজন কে কারা কারা এই অফার দিয়েছে?”

“A.R ইন্ড্রাস্টিজ এর মালিক ।”

তিনজনে একসাথে একটা কথাই বলে উঠলো। সবাই অবাক হলেও সমশের চৌধুরী অবাক হলো না। আয়মান চৌধুরী ও একটু অবাক হয়েছেন। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আমার নাতনি মানুষ চিনতে ভুল করে না। সে ঠিকই বলেছিল এবার বুঝতে পারলে আয়মান।”

“জি আব্বা বুঝতে পেরেছি।”

“তো তোমাদের মতামত ঐ বাড়ির ওপর তোমাদের সকলের অধিকার আছে।”

আয়মান চৌধুরী ব্যতিত সবাই একসাথে বলত উঠল,,

“জি অবশ্যই আছে!”

“ওহ আচ্ছা তাহলে শুনো আমার গ্ৰামের জমিজমা সব ভাগ করে দিয়েছি। আশা আর আয়নাকে তাদের প্রাপ্য অধিকার মোতাবেক চাষাবাদের কিছু জমি ওদের নামে করেছি। রেজাউল আশরাফ তোমরা চাইলে সেটুকু বিক্রি করতে পারো আমি কিছুই বলবো না। আর শাফিয়ান তোমাকে আমাদের গ্ৰামের বাজারে কতোখানি জমি আছে সেই খানি আর বাড়ির পাশের চাষাবাদের জমি তোমার নামে করেছি। তুমি চাইলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারো।”

এটা শুনে রেজাউল আহমেদ বললেন,

“আর বাড়ি ওটা কাকে দিয়েছেন?”

“ওটা আপাতত মেঘের নামে আছে। ওটা মেঘের বাড়ি।”

সকলে একসাথে ‘কি’ বলে উঠলো যে পুরো বাড়িতেই প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। সমশের চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“ওটা আমার বড়ছেলে আয়মানের নামে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আয়মান বলল মেঘের নামে করতে সে পুরোটা মেঘকে দিয়ে দিয়েছে।”

হুট এরকম কথা শুনে সবাই আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো। আর আয়মান চৌধুরী সমশের চৌধুরীর দিকে। কারন তিনি বলেননি মেঘের নামে করে দিতে। তখন জিয়ান বলল,,

“দ্যাখ আজান দ্যাখ তোর বাবা মুনকে আর তোকে একদম ভালোবাসে না।”

তখন আজান হেঁসে বলল,,

“সম্পত্তির লোভ আমার কোনকালেই ছিল না। বাবা যদি মেঘ আপুকে বাড়িটা দিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই ভালো ভেবেই দিয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা দেনাপাওনায় কখনো ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা মন থেকে আসে মানুষের কাজের মাধ্যমে। বাবা মেঘ আপুকে আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসে কারন সে সেটা ডিজার্ভ করে। তার মানে এই না আমাদের ভালোবাসে না। আমাকে আর মুন আপুকে বাবা যথেষ্ট ভালোবাসে। তবে মেঘ আপুকে একটু বেশি। এই যে বাবা একটা বিজনেস করে সেখানে A.M.C ইন্ডাস্ট্রিজ নাম বাবা সেখানে বাবা মেঘ আপুর নামের অক্ষরের জন্য M দিয়েছে। ঐ পুরো কম্পানি যদি মেঘ আপুর নামে করে দেয় তাহলে সেটাও তার প্রাপ্য। কারন যখন ওটা হয়েছে তখন মেঘ আপু বাবার পাশে ছিল আমরা ছিলাম না। এমন কি তখন আমাদের কেউ বাবার পাশে ছিল না। ঐ একটা মানুষ ছিল যে বাবার পাশে ছিল বাবাকে হারতে দেয় নি বরং আগলে রেখেছিল। মেঘ আপুর সেই অবস্থার পর বাবা এমনি এমনি হার্ট অ্যাটাক করে নি। এটাই তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।”

ছেলের কথা শুনে আয়মান চৌধুরীর মন ভরে উঠলো। আর সকলে চুপ মেরে গেল।তখন আয়না চৌধুরী বললেন,,

“আমি বুঝতে পারলাম না আজান? যেই মেঘকে তুই ছয় বছর দেখিস নি। তার সাথে তোর এত ভালো সম্পর্ক হলো কখন। তার ওপর তোর এত ভালোবাসা এলো কোথা থেকে?

“কে বলেছে এই ছয় বছরে আমাদের দেখা হয় নি। মেঘ আপু সপ্তাহে দুদিন স্কুলে আমার সাথে এসে দেখা করতো। এমনকি বাবাও আমার সাথে দেখা করতো। আমরা কতো একসাথে আইসক্রিম ফুচকা খেয়েছি। এমন কি ধূসর ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ের পর ধূসর ভাইয়াও আমাদের সাথে এসে ফুচকা আইসক্রিম খেতো আমরা কতো মজা করতাম। কিন্তু ধূসর ভাইয়ার স্মৃতি চলে যাওয়ার পর, আপু তেমন বেশি দেখা করতো না। বিয়ে বাড়িতে ধূসর ভাইয়াকে দেখে খুশি হয়েছিলাম অনেক। কিন্তু ধূসর ভাইয়ার সামনে এমন ভাবে কথা বলেছি মাঝে আজই নতুন দেখছি।”

আজানের কথা শুনে সবাই অবাক হলো সবথেকে বেশি মায়মুনা চৌধুরী। মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“ধূসরের স্মৃতি কিভাবে গেল? আর মেঘ কি ধূসরের স্মৃতি যাওয়ার পর ধূসরদের সাথে থাকতো না।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসরের আর মেঘের অনেক বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিল। সেখান থেকেই ধূসরের স্মৃতি চলে যায়। ধূসর পুরোনো পাঁচ বছরের স্মৃতি ভুলে যায়। পুরোনো কিছু মনে করতে গেলে ধূসরের লাইফ রিস্ক ছিল, তাই মেঘ আলাদা থাকতো। তবে ধূসর বাদে আর সবার সাথে যোগাযোগ হতো।”

মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল শুনে মায়মুনা চৌধুরীর বুকটা ধক করে উঠলো। আর সেদিনের কথা মনে পরলো মেঘ বেঁচে আছে। তাই তিনি তাড়াতাড়ি করে বললেন,,

“সেদিন একটা লোক বলেছিল মেঘ বেঁচে আছে ওটা কি ছিল ওটাই এক্সিডেন্ট ছিল।’

“হুম মেঘের বাঁচার কথা ছিল না। ওদের আমি আর এহসান উদ্ধার করি তখন ওরা মৃত প্রায়। তবুও আল্লাহর রহমতে দুজন বেঁচে উঠেছে আলহামদুলিল্লাহ।”

মায়মুনা চৌধুরীর হুট করেই খুব কাঁদতে ইচ্ছে করলো। তিনি কান্না গুলো কে গিলে ফেললেন। সকলে এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে মেঘের কথা শুনছিল মেঘের ব্যাপারে তারা পুরোই অজ্ঞাত। হুট করে মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“ওদের আসতে বলো আমাদের বাড়িতে। তখন তো জানতাম না ধূসর আমার মেয়ের জামাই।”

“যাকে মেয়ে হিসেবে কোনদিন মানলে না। তার জামাইকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিলে। যাক খুশি হলাম। মেঘ আরেকটু সুস্থ হোক তারপর বলবো আসতে।এমনিতেও এ বাড়ি আসতে হবে।”

মায়মুনা চৌধুরী আর কিছু বললেন না। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“তো আশা এবং আয়না তোমাদের স্বামীরা সম্পত্তি নিয়ে কথা বলল এটায় তোমাদের মতামত কি?”

আশা চৌধুরী বললেন,,

“এটা নিয়ে আমার এবং ওনার মাঝে কোন কথা হয় নি। যদিও আমার আপনার থেকে কিছু নেওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু উনি যখন বলে ফেললেন তাহলে উনার প্রয়োজন হলে উনি নিতে পারেন। কিন্তু আমি ওখানে হাত লাগাচ্ছি না।”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“এমন করে বলছো কেন আশি? আমি তো বাড়িটার কথা বলছিলাম তাও তোমাদের কম্পানির জন্য।আমার নিজের জন্য নয়।”

“আপনাকে কিছু বলতে হবে না রেজাউল আমি আপনাকে চিনি এবং জানি।”

তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“আপা বাদ দাও না যা হয়েছে হয়েছে। তবে বাবা ভাইয়া ওটা মেঘের নামে করে দিয়ে একদম ঠিক করে নি। সব থেকে দামি জায়গাটা কেন ও পাবে? আজান না নিক মুনের তো অধিকার আছে। তাছাড়াও এ বাড়ির আরো নাতি নাতনি আছে ভাইয়া না নিলে জিয়ান শিফা ওদের দিতে।”

সমশের চৌধুরী ধমকে উঠলেন মেয়েকে বাবার ধমকে আয়না চৌধুরী ভয় পেল। সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আমি আয়মান কে দিয়েছি ওটা তাই ওটা আয়মান ঠিক করবে কাকে দেবে কাকে দেবে না? আমি একবার ও বলেছি আয়মান ওটা নেয় নি। আমি বলেছি ওটা আয়মান মেঘের নামে করে দিয়েছে। একটা সহজ কথা তোমার মাথায় ঢোকেনা। ওটা আয়মানের অধিকার আর আমিই নিজ হাতে ওটা মেঘকে লিখে দিয়েছি আয়মানের হয়ে। এটা নিয়ে যেন আর কোন কথা না শুনি। অনেক দিন তো হলো বাপের বাড়ি এসেছো এখন বাড়ি যাও কয়েকদিন ওখানে থেকে তারপর আবার এসো। মানলাম তোমার শ্বশুরশাশুড়ি জীবিত নেই। কিন্তু তোমার সংসার তো ওটা তাই না।”

আর কোন কথা হলো না। সবাই খাওয়া শেষে নিজেদের রুমে চলে গেলেন। এদিকে চৌধুরী বাড়ির কিছু লোক রাগে ফুঁসছে। কিন্তু কিছু করতে পারছে না। ঐ বাড়ির বিনিময়ে শুধু টাকা না আরো অনেক কিছু পেত।

______________

“লিলি কোথায়?”

মেঘের প্রশ্নে ধূসর হেঁসে বলল,,

“কেন মিস করছো বুঝি?”

“আপনি সব ভুলে যাওয়ার পর। আপনার দেওয়া একমাত্র সেই -ই তো আমার সাথে ছিল।”

ধূসরের হাঁসি মুখটা হুট করেই মূর্ছা গেল। ধূসর বলল,,

“সেদিন ঐ অবস্থার পর কি হয়েছিল মেঘ!”

“আব্বা আর বাবা আমাদের উদ্ধার করে তখন নাকি আমাদের পালস্ অনেক স্লো ভাবে চলছিল। হাসপাতালে নেওয়া হলে তাড়াতাড়ি করে চিকিৎসা শুরু করে ডক্টর। আমার জ্ঞান একদিন পর ফেরে কিন্তু আপনার অবস্থা আমার থেকে বেশি খারাপ ছিল।আপনার জ্ঞান ফেরে একমাস পর যদি সহজ ভাবে বলি তাহলে ঐ একমাস আপনি কোমায় ছিলেন। আমি ঐ একমাসে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠি। আপনার জ্ঞান ফিরলে সবাই আপনার সাথে দেখা করে আপনি সবাইকে চিনতে পারেন । সবার শেষে আমি ঢুকি হেঁসে আপনার দিকে এগুতেই আপনি বলেন,, আপনি কে? ব্যস এইটুকুতেই বুঝে যায় সবাই আপনি স্মৃতি হাড়িয়েছেন ।হুট করেই আপনি বলেন আমি বোধহয় আপনাকে চিনি। এই বলেই আপনার মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা শুরু হয় আপনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে ডক্টর জানায় আপনার শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়েছে তিনি আশংকা করছেন আপনি পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময়ের মেমোরি ভুলে গেছেন। আমার জন্য আপনার ঐ অবস্থা হয়েছে আমাকে যেন আমার থেকে দূরে রাখা হয়। ব্যস এইটুকুই।

মেঘের চোখে পানি ছলছল করছে তখন ওর কেমন লাগছিল সেটা শুধু ঐ জানে। ধূসরের চোখেও পানি ছলছল করছে ধূসর বলল,,

‘আমি জানি না মেঘবালিকা। তোমার তখন কেমন লাগছিল? আমি হলে তো সহ্যই করতে পারতাম না। তুমি যদি আমাকে ভুলে যাও এটা আমি ভাবতেও পারি না।”

বলেই ধূসর মেঘকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল‌। মেঘ আধ শোয়া হয়ে বসেছিল আর ধূসর ওর হাত ধরে বিছানায় বসেছিল। ধূসর বলল,,

“তারপর কি হয়েছিল মেঘবালিকা? তোমার সাথে তো আমার আটমাস আগে দেখা হলো। তার আগের একবছর তুমি কোথায় ছিলে?

“সবার প্রথমে আমি নয়না আর আকাশকে খুঁজি। কিন্তু কোথাও নেই ওরা। ওদের নাগাল পাই না। তারপর আপনার ঐ অবস্থায় পর আমি আমার ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করার জন্য বিদেশে চলে যাই। যদিও তখন যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু আপনার সামনেও আসতে পারতাম না। দূর থেকে আপনাকে দেখে যে আমার চোখের তৃপ্তি হতো না। দিন কে দিন অসহ্যকর হয়ে উঠছিল সবকিছু। হাসতে ভুলে গেছিলাম কথা বলতেও ইচ্ছে করতো না। তাই আব্বা আর বাবা জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। আমার ব্যারিস্টার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসার পর ভাবি অনেক হয়েছে আপনার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। আপনি ভুলে গেছেন তো কি হয়েছে আমি তো আপনাকে ভুলিনি। সবথেকে বড় কথা আপনাকে আমার মনে আছে। ব্যস এইটুকুই শেষ পর্যন্ত আপনাকে আমার মনে আছে।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আপনার আমাকে মনে না থাকতেই পারে,
কিন্তু আমার তো আপনাকে মনে আছে!
আপনি আমাদের ছোট ছোট সুন্দর কাটানো মুহূর্তগুলো ভুলতেই পারেন। কিন্তু আমার তো মনে আছে!
আমি আমার প্রিয়জনদের ক্ষেত্রে খুবই স্বার্থপর ধূসর!
আপনি আমার কাছে না আসতেই পারেন,
কিন্তু আমি তো যেতে পারি তাই না।
ভালোবাসায় এমন টা জরুরি নয় আমি আপনাকে যেভাবে মনে রেখেছি, আপনি আমায় সেভাবেই মনে রাখবেন। জরুরী নয় আমি যেভাবে আপনাকে চাই আপনিও সেভাবেই আমাকে চান। আপনি মানুষটা যেমনই হোন না কেন ? আমাকে আপনার মনে থাক বা না থাক। আমি আবারও আপনাকেই চাই। সবশেষে আমার মাথায় একটাই কথা সেট হয়ে গেছিল, আমার আবারও আপনাকেই চাই।

সব শুনে ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই মেয়েটা তাকে এমনভাবে ভালোবাসে কেন? মেঘের মুখ স্থির কিন্তু অন্যরকম একটা জেদ চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে আমার আবারও আপনাকেই চাই। ধূসর মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“আমারও তোমাকেই চাই মেঘবালিকা ! জীবনে যাই হোক না কেন?কিন্তু তুমি তো হাসপাতালে প্রথমে গিয়ে মেয়ে ডক্টর খুঁজছিলে। তোমার হাতের কনুই তে অনেক খানি কেটে গিয়েছিল। তারপর হুট করে আমাকে দেখে না তুমি আমার কাছে সেবা নিতে রাজি হলে। আর তুমি ওভাবে ব্যাথা পেয়ে হাসছিলে কেন? যার জন্য তোমাকে নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দিয়েছিলাম প্রথম দিনই।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

” আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঠিক তখন একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়। আমার হাত অনেকটা কেটে যায়। আপনি তো জানেনই আমি পুরুষ মানুষের থেকে দূরে থাকি। আপনি আর আব্বা ছাড়া কারো স্পর্শ আমি নিতে পারি না।এখন ভালোমতো ট্রিটমেন্ট করাতে মেয়ে ডক্টর লাগবে তো। তাই মেয়ে ডক্টর খুঁজছিলাম। হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে দেখলাম। আপনি এসেই ব্যস্ত হয়ে আমার হাত ধরলেন আমাকে দেখেও আপনার কিছু হলো না। এটা ভেবে আমি অনেক খুশি ছিলাম। আর এতটাই খুশি ছিলাম যে হাতের কথা আপনাকে দেখেই বেমালুম ভুলে গেলাম। তারপর থেকেই শুরু করলাম আপনার কাছে আসা যাওয়া।”

“তাই বুঝি ইচ্ছে করে নিজেকে আঘাত করতে?”

“একটু আঘাতে যদি শখের মানুষের সঙ্গ পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি?”

“তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন মেয়ে?”

“আমি কখন বললাম আমি আপনাকে ভালোবাসি?”

“তোমার ভালোবাসা অদ্ভুত বুঝলে মেঘবালিকা। যা প্রকাশিত নয় তবে অপ্রকাশিতও নয় । তুমি তো মুখে প্রকাশ করো না ভালোবাসি। তোমার কাজের মাধ্যমে তুমি তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করো। এটাতেই তো আমি ভিশন রকম ফাঁসি।শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে আমি তোমায় ভালোবাসি।

“অনেক হয়েছে এখন লিলি কোথায় বলুন?”

“এই যে দিয়ে দিলে তো আমার ভালোবাসায় বাগড়া নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”

মেঘ হাসলো তা দেখে ধূসর বলল,,

“এই যে একদম হাসবে না।”

“আচ্ছা বেশ এখন লিলিকে নিয়ে আসুন। কবে থেকে বাচ্চাটাকে দেখি না।”

“নোলককে ওর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। বোধহয় ওর রুমেই আছে।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।”

ধূসর গেল লিলিকে আনতে। তখন মেঘ বলল,,

“এই পুরোনো ধূসরকেই তো আমি মিস করছিলাম। যে রোজ নিয়ম করে আমাকে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতো। ভালোবাসি ধূসর খুব ভালোবাসি আপনাকে।”

কিছুক্ষণ পর ধূসর লিলিকে নিয়ে। লিলি মেঘকে দেখেই ডাকতে লাগলো। কিন্তু ধূসর ছাড়লো না যদি এক লাফ দিয়ে মেঘের পেটের ওপর উঠে। তাই একেবারে মেঘের হাতে দিল। মেঘ লিলিকে পেয়ে একদম আদরে ভরিয়ে দিল। কয়েকটা চুমু ও দিল। তা দেখে ধূসর বলল,,

“হুম হুম খালি লিলিকেই এভাবে আদর করো। তোমার জামাই কতোদিন পর তোমার হলো কই তাকে তো একবার ও ,,

ধূসরের কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘের শুকনো গলায় কাঁশি উঠে গেল। কি বলছে এসব অসভ্য মানুষ। মেঘ কোন রকমে কাঁশি থামিয়ে লিলিকে পাশে নামিয়ে বলল,,

“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র আপনি কি জানেন? দিনদিন আপনি বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।”

“এতদিন পর বউকে কাছে পেলাম এখানে অসভ্য এর কি হলো। তুমি শুধু একবার সুস্থ হও তারপর দেখাবো অসভ্য কাকে বলে।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘ লজ্জা পেল কিন্তু প্রকাশ করলো না। ও বলল,,

“অনেক কিছু হলো এখন আমাকে আমার ইনজেকশন দিন। আমি ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে।’

“তুমি এত নিষ্ঠুর মেয়ে যে কি বলবো। ইনজেকশন নেওয়ার কতো তাড়া তোমার আর সবাই নাম শুনেই ভয় পায় ।

“আমি নিষ্ঠুর মেয়ে সেটাই ঠিক আছি। বেশি ভালো হতে হবে না। কিন্তু আপনাকে বলছি ভালো হয়ে যান ধূসর।”

মেঘের কথা শুনে ধূসর শব্দ করে হাসলো। আর বলল,,

“এই প্রথম বোধহয় কোন বউ তার জামাই একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলছে দেখে। জামাইকে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলছে। ”

“আমি ঘুমিয়ে পরলাম আপনি থাকুন জেগে। লিলি তুই এখানে আয় আজ তুই আমাদের মাঝখানে শুবি।”

মেঘ শুয়ে পড়লো মাঝখানে লিলিকে শুয়ালো। ধূসর একটা ইনজেকশন মেঘের শরীরে পুশ করে দিল। ধূসর লিলিকে উঠিয়ে রুমের বাইরে দিয়ে বলল,,

“যা লিলি আজ তোর ফুপির রুমে গিয়ে ঘুমা। তোর বাপ মায়ের মাঝে তোর এলাচি হয়ে লাভ নেই। সত্যি বলতে তোকে আমার বিশ্বাস নেই তোর মায়ের পেটের ওপর উঠলে তোর মা ব্যাথা পাবে। তাই সেই রিস্ক আমি নেব না। ”

লিলি কি বুঝতে পারল কে জানে? ও দুই বার মিয়াও মিয়াও ডেকে চলে গেল নোলকের রুমে। ধূসর পেছনে ঘুরতেই দেখতে পেল মেঘ ধূসরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ধূসর লাইট অফ করে দিয়ে বলল,,

“হয়েছে এখন ঘুমাও। তোমার এতকিছু মাথায় ঢুকাতে হবে না।”

কিন্তু মেঘ ঘুমাচ্ছে না ও ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর কিছু বলবে মেঘ কিছু বলার সুযোগই দিলো না। মেঘ চোখ বন্ধ করে নিল। ধূসর হাসলো মেয়েটা এমন কেন?

__________________

‘মেঘের নামে জমিটা করা। এখন আর ওটা নেওয়ার চেষ্টা করাও বৃথা।”

“সেটা তোমাদের ভাবতে হবে না। তোমার আপাতত কাজ শেষ এখন ফোন রাখতে পারো।”

ওপাশের লোকটা ফোন রেখে দিল। এপাশের লোকটা ফোন নামিয়ে বলল,,

“সমশের চৌধুরী তুমি বুদ্ধি করে মেঘের নামে করেছো সেটা আমি ভালো করেই জানি। কারন সবাই লোভী হলেও আয়মান আর মেঘ লোভী নয়। সমস্যা নেই সামনে দেখতে থাকো কি হয়। তোমার জন্য যেমন আমি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলাম সেভাবে তোমার পুরোনো বাড়িটাও আমি তোমাকে হাতছাড়া করতে চেয়েছিলাম। ক’টা দিন নিশ্চিন্তে থাকো আপাতত আমার মেয়েকে ছাড়াই। আমার মনে হচ্ছে মেঘের সাথে মেঘের হাজবেন্ড ও মিলিত। ওর হাজবেন্ড ও বেঁচে আছে শুনলাম। তারমানে ঐটাই সেই ধূসর যে ধূসরকে নয়না ভালোবাসতো। এবং মেঘের সাথে মেরে ফেলেছিল আমি বুঝতে পারলাম না ওরা দুজনেই কিভাবে বাঁচলো? আমার সন্দেহ হচ্ছে ওদের কাছে ভিডিওটা এখনো আছে। কিন্তু ওটা নেব কিভাবে মেঘ যে বুদ্ধিমতী মেয়ে। তাছাড়া এখন তো ওর হাজবেন্ড ও আছে। আয়মান সব জায়গায় গার্ড ঠিক করে রেখেছে। ধূসর ও একজন নামকরা ডক্টর। এহসান ও বিজনেস ম্যান কিছু করলে ধরা পরার চান্স বেশী। একদিকে নয়না একদিকে আমি । এখন কি করবো এই মেঘ কেমন যেন চারদিক থেকে গোলক ধাঁধার মতো আমার চারদিকে ঘুরছে।

______________

দেখতে দেখতে এভাবেই আরো সাত দিন পেরিয়ে গেল। মেঘ মোটামুটি সুস্থ। আজকে নয়না আর আকাশের কেস কোর্টে উঠবে। মেঘের কষ্ট হলেও মেঘ কোর্টে আসলো। মেঘ আর ধূসর কোর্টে পৌঁছাতেই দেখলো আয়মান চৌধুরী মেঘের অফিসের কেবিনে বসে আছে‌। মেয়েকে দেখে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলো। আর বেস্ট অফ লাক জানালো। মেঘ সবার প্রথমে নয়নার বাবাকে খুঁজলো না কোথাও নেই। নয়না আর আকাশ কে আনা হলো। মেঘ আর ধূসর তাদের দিকে এগিয়ে গেল। মেঘ নয়নার সামনে গিয়ে হেঁসে বলল,,

‘কিরে কি অবস্থা? একটা হাত নেই আর এক হাত দিয়ে সব করতে পারছিস তো ঠিক ভাবে?”

নয়না রেগে বলল,,

“আমার জন্য তোর চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবা ঠিক আমাকে বাঁচিয়ে নেবে তারপর দেখবো তুই কিভাবে বাঁচিস।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“তা তোর বাবা কোথায় দেখছি না তো! ওহ হো তোর বাবা তো আবার জনসম্মুখে মুখ দেখাতে লজ্জা পায়। তাই তো সবসময় মুখ ঢেকে থাকে।”

“মুখ সামলে কথা বল মেঘ নাহলে তোকে ,,

তখন ধূসর বলল,,

‘ভুলে চেষ্টাও করবে না আমার মেঘবালিকার কিছু করতে। একবার হাত গেছে পরেরবার প্রানটাই না নিয়ে নিই। ডক্টর মানুষ বলবো অপারেশন করতে গিয়ে মারা গেছে ব্যস ওখানেই খেল খতম। তাছাড়া আমার বউ একজন লয়ার ঠিক কিছু বলে কেস শেষ করে ফেলবে।”

এ কথা শুনে আকাশ আর নয়না অবাক হয়ে বলল,,

‘কি মেঘ লয়ার?”

“ইয়েস আফামনি এখনকার বেস্ট লয়ারদের মধ্যে অন্যতম লয়ার K.A.Megh…

ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,

‘কোর্টের ভেতর যা হবে তার জন্য তৈরি থেকো নয়না। তোমার বাবাও আজ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। উল্টে তোমার বাবা না আজ ফেঁসে যায়। চলুন ধূসর!”

মেঘ ধূসরের হাত ধরে চলে এলো। এদিকে নয়না পরে গেল চিন্তায়। এই লয়ারের নামে অনেক শুনেছে কিন্তু এটাই যে মেঘ এটা বুঝতে পারে নি। কিন্তু ও আশে পাশে কোথাও ওর বাবাকে পেল না। অতঃপর কেস কোর্টে উঠলে মেঘ সব প্রমান করে দিল। ধূসর ও তার স্টেটমেন্ট দিল। সবার শেষে মেঘ এটাও বলল দেশের বড় শত্রু অবৈধ সব কারবারের সাথে জড়িত A.R.K তাকে ধরতে। কোর্ট যেভাবে হোক A.R.K কে ধরার নির্দেশ দিল। নয়নার আর আকাশের আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হলো। কিন্তু কোথাও নয়নার বাবাকে দেখা গেল না। তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘ গাড়ির কাছে এসে বলল,,

“ধূসর আপনি বাড়ি যান। আমি আব্বার সাথে কিছু কথা বলে আব্বার সাথে বাড়ি যাবো।”

“তারমানে বলতে চাইছো তুমি আমার শ্বশুরবাড়ি যাবে?’

“হুম একটু দাদুভাই এর সাথে কথা বলবো।”

“তাহলে চলো আমিও তোমার সাথে শ্বশুরবাড়ি যাবো।”

“না আজ আমি একা যাবো। কাল সকালেই চলে আসবো।”

“তোমার ওষুধগুলো তো বাড়িতে তাই না।”

“আমি নিয়ে এসেছি আমার ব্যাগে।”

“এ কথাগুলো আমাকে আগে বললেই হতো।”

‘সরি মনে ছিল না কাল রাতে আপনার ইমার্জেন্সি এসে পরেছিল তাই।”

ধূসর মন খারাপ করে বলল,,

“ওহ আচ্ছা তাহলে আমি যাই। নিজের খেয়াল রেখো!

ধূসর চলে যেতে নিল। মেঘ হেঁসে বলল,,

‘আচ্ছা ঠিক আছে তবে আপনি চাইলে রাতে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেন। এখন তো আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে একটা অপারেশন আছে তাই।”

হুট করেই ধূসর এর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ধূসর হেঁসে বলল,,

“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা! এটা আগে বললে কি হতো।আচ্ছা ঠিক আছে আমার বউ যখন বললো তাহলে আমি রাতেই শ্বশুরবাড়ি যাবো।”

“আমি কখন বললাম।”

‘সব মুখে বলতে হবে নাকি। আচ্ছা আমি আসছি নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।”

‘আল্লাহ হাফেজ।”

ধূসর চলে গেল । মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে এসে বলল,,

“আব্বা চলুন একটু A.R.K এর সাথে দেখা করে আসি।”

আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা আপনি তো অসুস্থ চলুন আজ থাক সুস্থ হোন আগে। তারপর না হয় তার সাথে দেখা করা যাবে।”

“কিছু কিছু জিনিস দেরি করা উচিৎ নয়।”

আয়মান চৌধুরীর আর কি? মেয়ে যখন বলেছে তাহলে যেতেই হবে। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী চললেন তাদের গন্তব্যে। গাড়িটা গিয়ে একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে দেখতে পেলেন সবাই লাঞ্চ করছে। তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী কে এই সময় দেখে সকলে অবাক হলো। হুট করে একজন উঠতে উঠতে বলল,,

“আরে আয়মান হঠাৎ এই সময় আমার বাড়িতে?”

তখন মেঘ বলল,,

“আরে আতাউর আঙ্কেল উঠছেন কেন? খাবার ছেড়ে উঠতে নেই। আসলে কিছু কথা বলার ছিল। আপনি খাওয়া শেষ করুন আমি আর আব্বা অপেক্ষা করছি।”

“আর মেঘ তুমি না অসুস্থ এই অবস্থায় আসতে গেলে কেন? খুব প্রয়োজনীয় হলে আমাকে বলতে আমি নাহয় তোমাদের সাথে দেখা করতে চলে যেতাম।”

‘”আমি অসুস্থ আপনি কি করে জানলেন?”

এ কথা শুনে আতাউর রহমান একটু হকচকিয়ে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“ঐ একটা কাজে রেজাউল কে ফোন করেছিলাম ও বলেছে তাই। ঐ তো অসুস্থ শরীর নিয়ে এলে কেন? আমাকেই বলতে না হয়।”

“না আঙ্কেল যার প্রয়োজন তারই সবসময় যাওয়া আসা করা উচিৎ। আপনি খাবার খান আমরা বসছি।”

‘তোমরাও আমাদের সাথে বসে পড়োনা। এই সময় এসেছো নিশ্চয়ই খেয়ে আসো নি।”

“না আঙ্কেল আমরা একদম বাড়ি গিয়ে খাবো। খাওয়ার আগে আমার একটা ওষুধ আছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

আতাউর রহমান তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করলেন। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী ওখানেই ড্রয়িংরুমে বসে ছিল। মেঘ আতাউর রহমানের ফ্যামিলিকে দেখলো। আতাউর রহমান ওনার মিসেস এবং ওনার ছেলে আর বউমা খাবার খাচ্ছে এটাই বোধহয় তাদের পরিবার। আতাউর রহমান ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসলেন। আর বললেন,,

“তো মেঘ বলো কি বলবে?”

“তেমন ইম্পোর্টেন্ট কিছু না শুধু আপনাকে দেখতে এসেছিলাম। আর একটা কথা বলতে।

‘মানে?”

“আজ নয়না রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমি শুনেছিলাম আপনার মেয়ের নাম ও নয়না রহমান তাই না।”

হুট করে নয়নার কথা শুনে রহমান পরিবার আতকে উঠলেন। মিসেস রহমান বললেন,,

“হ্যা আমার মেয়ের নাম ও নয়না রহমান। তো কি হয়েছে ও তো কয়েকদিন হলো দেশে ফিরেছে। কিন্তু পনেরো বিশ দিন ধরে ওর কোন খোঁজ পাচ্ছি না। কিন্তু কারাদণ্ড কেন? ওটা কি বলছিলে তুমি।”

“আরে রিল্যাক্স আন্টি আমি তো বলি নি সেই নয়না রহমান আপনার মেয়ে নয়না রহমান। কিছু দিন আগে আমার ওপর একটা মেয়ে অ্যাটাক করে‌। সেই অভিযোগ এ নয়না রহমান নামে কাউকে গ্ৰেফতার করা হয়।আসলে সে আর তার এক বন্ধু মিলে আমাকে মারতে চেয়েছিল তাই পুলিশ ধরেছে। আজ কোর্টে কেস উঠেছিল। অপর পক্ষের লয়ার তার সকল কর্মকাণ্ড কোর্টে পেশ করেছে তাই তার শাস্তি হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় জানেন মেয়েটার পরিবারের কেউ তার জন্য কোর্টে যায় নি। মেয়েটা অনাথের মতো চারদিকে দেখছিল বোধহয় কাউকে খুঁজছিল। মনে হয় তার বাবাকে খুঁজছিল। তবে আমার মনে হচ্ছিল ওটা আতাউর আঙ্কেল এর মেয়ে অথচ আঙ্কেল কে কোথাও দেখলাম না। অবশ্য ভুল হতেই পারে নয়না রহমানের বাবা তো A.R.K কিন্তু আপনি তো আতাউর রহমান তাই না আঙ্কেল।

হুট করে এমন কথায় আতাউর রহমান চমকে উঠলেন। তার মানে মেঘ সব জানতে পেরেছে। আতাউর রহমান বললেন,,

“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো মেঘ?”

“কিছু না ওটা এমনিই বললাম। আসলে আজ থেকে ঠিক পনেরো দিন পর আমাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাই আপনাকে দাওয়াত দিতে এসেছি।”

“কি উপলক্ষে?”

“সেটা গেলেই জানতে পারবেন! যাই হোক আপনাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে যাবেন ঠিক আছে। আন্টি ভাইয়া আপনারাও কিন্তু যাবেন। আজকের মতো আসি আল্লাহ হাফেজ। পনেরো দিন পর দেখা হবে।”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী চলে গেল। আতাউর রহমান নিজেদের রুমে গিয়ে কাউকে ফোন করলেন আর জানতে পারলেন মেঘ যা বলেছে তাই সত্যি। কিন্তু ঐ লয়ার তো বলেছিল যে করেই হোক নয়না কে ছাড়িয়ে আনবে। উনি মূর্তির মত বসে রইলেন। তখন মিসেস রহমান রুমে গিয়ে ওনাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললেন,,

‘নয়না কোথায়? মেয়েটা আমার ঠিক আছে তো?
তুমি তো বলেছিলে ও ঘুরতে বেরিয়েছে। কিন্তু এ কয়েকদিন ওকে ফোনে কেন পাওয়া যাচ্ছিল না।”

এসব শুনে আতাউর রহমান চিৎকার করে বলল,,

“নয়না নেই ও কোথাও নেই। মেঘ যে নয়নার কথা বলছিল সেটাই আমার মেয়ে নয়না। নয়না মেঘের পেটে ছুরি বসিয়েছিল তাই ওকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। আর আজ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বুঝতে পেরেছো তুমি।”

এ কথা শুনে মিসেস রহমান অসহায় হয়ে পরলেন। তিনি চিৎকার করে বললেন,,

“তার মানে তুমি সব জানতে? তাহলে আমাকে জানাও নি কেন? তোমার জন্য এসব হয়েছে তুমি তো অন্ধকার রাস্তায় গেছোই সাথে আমার মেয়েটাকেও নিয়েছো। তোমার জন্য আজ এই অবস্থা আমার মেয়ের। আর তুমি নিজে ধরা পরবে বলে আমাকে মেয়ের কাছে যাও নি। ছিঃ তুমি বাবা তুমি বাবা নামের কলঙ্ক। ওহ হো মেয়েটা যখন বলল নয়নার বাবা তো A.R.K তখনি আমার বোঝা উচিৎ ছিল যে, ওটা আমার মেয়েই মিস্টার আব্দুল রহমান কাদের ওরফে A.R.K ….
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার পুরোনো নাম মিস্টার আতাউর রহমান। আমার মেয়েকে এনে দাও আমার একটাই মেয়ে আমার খুব আদরের। তোমার না এত ক্ষমতা তুমি প্লিজ আমার মেয়েকে এনে দাও।”

আতাউর রহমান বললেন,,

“একদম কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবে না। আমি বলেছিলাম তোমার মেয়েকে মেঘকে মারতে। এখন তো রায় বেরিয়েই গেছে এখন কি করার আছে?”

“শুধু মাত্র তোমায় ভালোবেসে তোমার সব জানার পরও আমি তোমার সাথে আছি। ভেবেছিলাম তুমি একদিন শুধরে যাবে। কিন্তু তুমি দিনকে দিন ভালো হবার বদলে আরো নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে যাচ্ছো। নয়না না তোমার কত আদরের ছিল। আজ ধরা পরেছে বলে নিজের মেয়েকেই ভুলে গেলে যদি নিজের পরিচয় সামনে আসে। এরকম স্বার্থপর তুমি।”

আতাউর রহমান অসহায় কন্ঠে বলল,,

“একজন মানুষ খারাপ হলেও কখনো কোন বাবা খারাপ হয় না। আমি নয়নাকে এসবে জড়াতে চাই নি। তোমার মেয়ে নিজেই জড়িয়েছিল। আমি শুধু চৌধুরী পরিবার কে শেষ করার জন্য অবৈধ ভাবে ওপরে উঠেছি। তাই বলে আমি কোন দিন ও চাই নি নয়না এসবে জড়াক।তবে হ্যা আজ আমি স্বার্থপর হয়েছি কারন ওখানে গেলেই আমাকে ধরে ফেলতো। কিন্তু আমি যে এত সহজে ধরা দেব না। মেঘকে আর চৌধুরী পরিবার কে শেষ না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। তুমি জানো ওরা নয়নার ডান হাত কেটে দিয়েছে আমি ওদের মাথা কাটবো।”

একথা শুনে মিসেস রহমান কেঁদে উঠলেন আর কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,

“যা হয়েছে হয়েছে তুমি আর এসবে যেও না। এগুলো খুব খারাপ জিনিস ধ্বংস করে ফেলবে সব।”

“ধ্বংসই তো করবো। পনেরো দিন পর দাওয়াত দিয়ে গেল তো। যাই দাওয়াত খেয়ে আসি তার পনেরো দিন পর না হয় আবার যাবো ধ্বংস করতে।”

বলেই আতাউর রহমান হাসতে লাগলো। তা দেখে মিসেস রহমান ভয় পেলেন না জানি কি হয়।

_________________

মেঘের খারাপ লাগছে দেখে আয়মান চৌধুরী মেঘকে ধরে ধরে আনছে। মেঘ এখানে আসতো না, কিন্তু দাদুভাই কে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলতে হবে। কেন না সব ওকেই বুঝিয়ে বলতে হবে।কারন পনেরো দিন পরেই তো ওদের শত্রুর দি ইন্ড করবে। আয়মান চৌধুরী মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে আনছে এই সময় তেমন কেউ বাড়িতে নেই শুধু সমশের চৌধুরী,
জাহানারা আর মায়মুনা চৌধুরী বাড়িতে। মেয়েকে এভাবে ধরে আনতে দেখে মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

‘কি হয়েছে মেঘের?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘তেমন কিছু না একটু খারাপ লাগছে। তুমি একটু খাবারের ব্যবস্থা করো। খেয়ে ওষুধ খেতে হবে মেঘের।”

“আচ্ছা এখনি যাচ্ছি তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তাহলে তোমাদের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিই। তোমাদের নিচে আসতে হবে না। তাছাড়া মেঘ ও অসুস্থ।”

মায়মুনা চৌধুরী চলে গেলেন এদিকে মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেঘ বলল,,

“আব্বা এটা কি হলো?”

“তেমন কিছু না আম্মা। একটু আপনার মা হওয়ার চেষ্টা। তবে কারনটা আমি জানি না। আপনি ওপরে চলুন।”

আয়মান চৌধুরী মেঘ কে নিয়ে ওপরে গেলেন। মেঘরা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিল। বিকেল এ মেঘ সমশের চৌধুরী কে বললেন অনুষ্ঠানের কথা। অতঃপর সমশের চৌধুরী বিকেলেই ওনার সব আত্মীয় স্বজন কে অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে দিলেন। হুট করে অনুষ্ঠান শুনে সবাই অবাক হলো। একটা ফোন এহসান খান এর কাছেও গেল। আয়মান চৌধুরী আগেই বলে রেখেছিলেন রাতে ধূসর আসবে। তাই মায়মুনা চৌধুরী সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। রাত আটটায় ধূসরের আগমন ঘটলো এই প্রথম সে সজ্ঞানে শ্বশুরবাড়ি এলো। ধূসর সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো তারপর মেঘের রুমে গেল। মেঘ আধশোয়া হয়ে বই পরছিল । মেঘকে এভাবে দেখে ধূসর গিয়ে বলল,,

“তুমি তো দেখি খুব মজায় আছো জামাই কে ছাড়া?”

মেঘ মুখ তুলে বলল,,

“আপনি এসে পরেছেন? আমি ভাবলাম আরও দেরি হবে।”

“বউ আমার শ্বশুরবাড়ি আসতে বলেছে। বেশি দেরী করলে হয় নাকি।”

“আচ্ছা যান আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি।”

“তোমার করতে হবে না। শাশুড়িমা আমাকে ফ্রেশ হয়েই নিচে যেতে বলেছে। সে আমার খাবারের ব্যবস্থা করছে।”

বলেই ধূসর ওয়াশরুমে ঢুকলো। এদিকে মেঘ ওর মায়ের বিষয়টা বুঝতে পারছে না উনি চাইছে টা কি?

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৯

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘের এই মুহূর্তে কি রিয়াক্ট দেওয়া উচিৎ মেঘ বুঝতে পারছে না। হুট করেই মেঘের অনুভূতিশূন্য লাগছে। মেঘ এক দৃষ্টিতে অদ্ভুত ভাবে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর এক হাতে ভর দিয়ে মাথা উঠিয়ে মেঘের দিকে ঘুরে আছে। মেঘ তার পাশেই কারন পেটের জন্য সে উঠতে পারছে না মাথাটাও ভার হয়ে আছে। মেঘ কিছু বলছে না দেখে ধূসর বলল,,,

“কি হলো নিষ্ঠুর মেয়ে তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তোমার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর পুরুষ ফিরে এসেছে পুরোনো মিস প্রতিবেশী নিষ্ঠুর মেয়েটার প্রেমে পাগল হওয়া প্রেমিক হয়ে।”

মেঘ এবার ও কিছু বললো না অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে যেন কতোদিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। ধূসর মেঘের চোখের দিকে তাকালো কি মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে এই চোখে ডুবে যেতে। মেঘের চোখ ছলছল করছে। মেঘ আস্তে আস্তে হাত উঠিয়ে ধূসরের মুখে হাত বুলাতে লাগলো ধূসর মেঘের ছোয়ায় চোখ বন্ধ করে নিল। ধূসর চোখ খুলতেই মেঘ বলল,,

“ধূসর আপনার সব মনে পরে গেছে।”

ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

“সব মনে না পরলে কি? একটা মেয়ের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। নাকি একটা মেয়ের এতো খেয়াল রাখতাম। নাকি একটা মেয়েকে অবিবাহিত ভাবে জরিয়ে ধরতাম। আমি তাকে পছন্দ করি তো কি হয়েছে এসব করার জন্যও তো একটা অধিকার দরকার মানে একটা বৈধতা দরকার তাই না।”

মেঘের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। তা দেখে ধূসর তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,,,

“উঁহু একদম কান্না না আজ তো তোমার খুশির দিন। তোমার তো আজ ঈদ লাগার কথা। তোমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে তোমার ধূসর তোমার কাছে ফিরে এসেছে।”

মেঘ চোখে পানি নিয়েও মুচকি হাসলো আর বলল,,

“আমায় একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন ধূসর।”

“না বাবা একদম না আমার বউ ব্যাথা পেলে। এখন না আমার বউ আগে সুস্থ হয়ে নিক। তারপর কথা দিচ্ছি সারাদিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো ছাড়বো না।”

“ধরুন না একটু প্লিজ।”

“আরিব্বাস নিষ্ঠুর মেয়েটা আমাকে রিকুয়েস্ট করছে। যা সে কখনো করে না । তাহলে তো রাখতেই হয়। এখন বলো শুয়ে শুয়ে জড়িয়ে ধরবো নাকি দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরবো।”

ধূসরের পাগলামি দেখে মেঘ হাসে। আর বলে,,

“আগে আপনি দাঁড়ান তারপর আমাকে দাঁড় করান তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন। কারন শুয়ে শুয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরতে পারবো না হাতে ক্যানেলার তো।”

ধূসর আগে উঠলো তারপর মেঘকে নিজের দুই পায়ের ওপর মেঘের দুই পা রাখতে বললো। ধূসর ও সাহায্য করলো অতঃপর মেঘ ধুসর এর দুই পায়ের ওপর দাঁড়ালো ধূসর সাবধানে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু মেঘ তার তো কোন সাবধানতার দরকার নেই সে নিজের একটুও যত্ন নেবে না। ধূসর হালকা করে ধরলেও মেঘ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। পেটে হালকা ব্যাথা লাগছে কিন্তু ও প্রকাশ করছে না।ও নিজের পাগল ডক্টরকে অনুভব করছে। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল। মেঘ কিছু করছে না দেখে ধূসর বলল,,

“মেঘবালিকা!”

“হুম!”

“এখন ছাড়ো ফ্রেশ হতে হবে তো। এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে তোমার সমস্যা হবে।”

“আমার এভাবেই ভালো লাগছে।”

ধূসর মেঘকে ছাড়িয়ে কোলে নিল আর বলল,,

“এখন চলো ফ্রেশ হও। সীমিত সময়ের খুশির জন্য আমি তো তোমাকে বেশি কষ্ট দিতে পারি না। এভাবে থাকলে পরে সত্যি সমস্যা হবে। ”

মেঘ ধূসরের গলা জড়িয়ে ধরলো আর বলল,

“হুম!”

ধূসর মেঘকে ফ্রেশ করিয়ে দিল।তারপর মেঘকে বেডে শুইয়ে দিল। মেঘের খিদে পেয়েছে তাই ধূসর গেল খাবার আনতে। ততক্ষন মেঘ কি যেন ভাবলো। ধূসর খাবার এনে মেঘকে খায়িয়ে দিল। সবে সকাল সাড়ে ছয়টা বাজে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“ধূসর আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন আসুন বেডে এসে শুয়ে পরুন।’

“পেশেন্ট আমি না তুমি। তাছাড়া আমার ঘুমের প্রয়োজন নেই।আমি ঠিক আছি।”

“না আপনি ঠিক নেই। কাল রাতে আপনি ঘুমান নি আমি জানি এখন এসে শুয়ে পড়ুন। আপনার তো বউয়ের সেবা করতে হবে তাই না। আপনি ঠিক না থাকলে সেবা কিভাবে করবেন?”

“বললাম তো আমি ঠিক আছে। আর আমার শরীরে অনেক শক্তি আছে। এটা দিয়েই বউয়ের সেবা করতে পারবো।”

“ধূসর আপনি কিন্তু আমার কথা শুনছেন না। যা বলছি আসুন এখানে।”

মেঘ একটু চেপে শুলো তা দেখে ধূসর হেঁসে মেঘের বেডে শুয়ে পড়লো। ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে তা দেখে মেঘ বলল,

“আপনাকে ঘুমানোর জন্য এখানে শুতে বলেছি আমাকে দেখতে না। চোখ বন্ধ করুন।”

ধূসর ভদ্র বাচ্চার মতো চোখ বন্ধ করে নিল। মেঘ ধূসরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একটা সময় ধূসর ঘুমিয়ে পড়লো। আর মেঘ সে ধূসরের কপালে চুমু দিয়ে মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখতে লাগলো। কি অদ্ভুত ভালোবাসা তাই না । নার্সটা সব কিছুই দেখছিল এদের ভালোবাসা দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। মেঘ আর ঘুমায় নি। আটটা বাজতেই ধূসরের পরিবার কে দেখা গেল। সেই সাথে মেঘের বান্ধবীরাও এসেছে। সবার আগে দিলরুবা খানম ঢুকলো। তারপর বাকি সবাই। মেঘের বেডে মেঘের পাশে ধূসরকে দেখে একটু অবাকই হলো। দিলরুবা খানম জিজ্ঞেস করলেন,,

“মেঘ এখন কেমন আছো?”

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা আপনারা কেমন আছেন?”

তখন নীলি বলল,,

“তোর এই অবস্থায় কি করে ভালো থাকি বল! এই তিন চারদিন যা গেল।”

“আস্তে বল উনি ঘুমাচ্ছেন তো। কাল রাতে ঘুম হয় নি ওনার আমার জ্বর এসেছিল তাই।”

মেঘের ধূসরের প্রতি ভালোবাসা দেখে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। তখন হির মেঘের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,,

“তার মানে সব ঠিক আছে। তোর জামাই ঘুমাচ্ছে আমরা বরং বাইরে যাই। তোর জামাইয়ের ঘুম ভাঙলে বলিস তখন এসে তোর সাথে কথা বলবো ঠিক আছে।”

হিরের ফিসফিস করে কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“না বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। একটু আস্তে কথা বললেই হবে। মা আপনারা বসুন না।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“না মেঘ ধূসর ঘুমাক আমরা তো এখনি যাচ্ছি না। ধূসর উঠলে না হয় এসে তোমার সাথে কথা বলবো।”

এই বলে দিলরুবা খানম সবাইকে নিয়ে বাইরে গেলেন। আয়মান চৌধুরীর পরিবার ও এসেছে আজ। সমশের চৌধুরী, জাহানারা চৌধুরী, আশা চৌধুরী, আজান ,মুন ও এসেছে সাথে মায়মুনা চৌধুরী ও এসেছেন। হাসপাতালে এসে দেখলো সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে তাই এগিয়ে গিয়ে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কিরে এহসান সবাই বাইরে কেন?”

এহসান খান হেঁসে বললেন,,

“তোর মেয়ের জামাই তোর মেয়ের কেবিনে ঘুমাচ্ছে ঘুমে ডিসটার্ভ হবে দেখে সবাই বাইরে।”

“তা আমার মেয়েও কি ঘুমে নাকি?”

‘না তোর মেয়ে জেগে আছে তার জামাইকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাতে তার জামাই এর ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।”

এই কথা শুনে আয়মান চৌধুরী জোরে হেঁসে ফেললেন।তা দেখে সবাই হাসলো। তখন হির বলল,,

“আসলে ভালোবাবা কাল রাতে মেঘের জ্বর এসেছিল। ধূসর ভাইয়া সেবা করেছে রাতে ঘুমাতে পারে নি। তাই এখন ঘুমাচ্ছে নীলি একটু জোরে কথা বলেছিল বলে তোমার মেয়ে বলল আস্তে কথা বলতে তাই আমরা চলে
এলাম। কথাই বলবো না যেখানে সেখানে আস্তে জোরে কি। এত গুলো লোক গিয়েছি একটা করে কথা বললেই অনেক কথা।”

‘হয়েছে হয়েছে আর আমার শ্বশুর এর কাছে নালিশ দিতে হবে না। ঘুম থেকে উঠে পরেছি আমি। একটু ঘুমিয়েছি বলে এতকিছু । ঘুমাতাম না বুঝলে শালিকা তোমার বান্ধবী ধমকে শুয়িয়ে দিল তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল আমিও ভদ্র ছেলের মতো ঘুমিয়ে পরলাম আর কিছুই না।”

ধূসর কেবিনের বাইরে এসে বললো। ও আরেকটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে বাইরে এসে সবাইকে ভেতরে যেতে বলবে তখন বাইরে এসে কথাগুলো শুনতে পেল। ধূসরের কথা শুনে সকলে হাসলো তখনও চৌধুরী বাড়ির সকলের চোখে বিষ্ময়। মেঘ তার জামাইকে নিয়ে এতো পসেসিব। অতঃপর সবাই ভেতরে ঢুকলো। মেঘ সবার সাথে কথা বললো। মেঘের বান্ধবীরা একটু থেকে চলে গেল। আয়মান চৌধুরী বাদে চৌধুরী বাড়ির আর সবাই ও চলে গেল। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেছে। দিলরুবা খানম মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,

“ভালো মানুষের সাথে খারাপ কিছু হয় না। আল্লাহর রহমত তোমার সাথে ছিল। সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ।”

” হুম মা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু মা আমার একটা অভিযোগ আছে। আপনার ছেলের সব মনে পরেছে। সেটা আপনার ছেলে কাল আমাকে বলে নি আজ সকালে বলল যদি ধরা না পরতো তাহলে বোধহয় তাও বলতো না।”

“আর কি বলবো বলো মেঘ আমার ছেলে তো পাগল মাথায় কখন কি চলে বোঝা যায় না। তুমি ঠিক উপাধি দিয়েছো পাগল ডক্টর।”

“বাহ একটু সুস্থ হতে না হতেই আমার নামে নালিশ করছো। আর আরেকজন কে দেখো নিজের ছেলের বিরুদ্ধে ছেলের বউয়ের সাথে তাল মেলাচ্ছে।”

কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল ধূসর। দিলরুবা খানম হাসলেন আর বললেন,,

“সত্যের সাথে সবসময় থাকতে হয় বুঝলি।”

“হুম হুম আমাকে বলতে হবে না। মেয়েকে পেলে ছেলেকে ভুলে যাও।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর সব ঠিক আছে এখন বলো তোমার স্মৃতি কিভাবে ফিরলো।”

তখন ধূসর মুচকি হেসে বলল,,

“আপনার মেয়ের জন্য।”

তখন মেঘ অবাক হয়ে বলল,,

“আমি কি করলাম শুনি?”

“আগের দিন রাতে তুমি ফোনে আমাকে আগের ঘটনা বললে। তখন হুট করেই আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয় মনে হচ্ছিল সব আমার সামনেই ঘটছে। কিন্তু যখন তোমাকে নয়না আঘাত করে তখন একই জিনিস বারবার দেখে ওটা আমার মস্তিষ্ক ক্যাচ করে আর তখন আগেকার ঘটনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এমনিতেও তোমার সাথে সময় কাটালে আমার সবকিছু মনে পরতো শুধু আবছা ছিল কিছু স্পষ্ট ছিল না। তোমার ঐ অবস্থা দেখার পর আমার কাছে সব স্পষ্ট হয় আর আমার মনে পরে।”

“ওহ আচ্ছা!”

দুপুরের দিকে ধূসরের পরিবার ও চলে গেল। ধূসর নিচে তাদের এগিয়ে দিতে গেল। আপাতত মেঘ আর আয়মান চৌধুরী আছে। মেঘ শুয়ে আছে। সে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন আম্মা?”

“সেই ছোটবেলার বাদাম খাওয়ার ঘটনা মনে পরছে হুট করে। আব্বা আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। আর বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে।

“হুট করে এমন ইচ্ছে হলো কেন আম্মা?

“জানিনা তবে আমার কি মনে হয় জানেন, ভাগ্যিস আপনার সামনে ওভাবে বাদাম খাচ্ছিলাম নাহলে আমার আব্বার সাথে আমার এত সুন্দর সম্পর্কের সন্ধি কিভাবে হতো।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন। আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মেঘ চোখ বন্ধ করে সেই ঘটনা ভাবতে লাগলো। তখন মেঘের সবে পাঁচ বছর পরেছে মুন বাদাম খাবে বলে বায়না করে তাই মায়মুনা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী সব বাচ্চাকে বাদাম দেন। ওদের ড্রয়িংরুমে রেখে নিজেদের কাজে চলে যায়। সবাই বেশ বড় ছিল মুন ,জায়মা,জিয়ান এদের ৭/৯ বছর হবে তখন। ওদের খাওয়া দেখে মেঘ ও বলে সে খাবে। তখন জায়মা ওকে বাদাম দেয় কিন্তু বাদাম কিভাবে খেতে হয় ও জানে না। এমন কি মেঘ খেয়ালও করে না ওরা কিভাবে খাচ্ছে। তাই ওদের জিজ্ঞেস করে কিভাবে বাদাম খায়। এটা শুনে জিয়ান মজা করে বলে ‘এমনি একটা বাদাম গালে দিয়ে ভাতের মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে হয়।’ মেঘ ঠিক আছে বলে খায় কিন্তু মেঘের ভালো লাগে না। উল্টো গলায় বোধহয় কাঁটা কাঁটা বিঁধে এরকম মনে হয়। মেঘের অবস্থা দেখে সবাই হাসে। ওরা কিছু বলবে তার আগে ওখানে আয়মান চৌধুরী আসেন ওরা ওনাকে দেখেই চলে যায়। যদি বকা দেয় তো। আয়মান চৌধুরী সোফায় মেঘের পাশে বসেন। মেঘ আরেক টা বাদাম খেয়ে বলে ,,

“আব্বা এই বাদাম একটুও মজা না। কতো কষ্ট দেয় গলায় তাও আজ মুন আপু এটা খেতে বায়না করলো।”

মেয়ের কথা শুনে আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেন আম্মা বাদাম তো মজাদার একটা খাবার। এতে তো কোনো তেমন কিছু নেই যে গলায় কষ্ট দেবে।”

“আপনি খেয়ে দেখুন আপনিও কষ্ট পাবেন। এই যে এই ভাবে!”

বলেই মেঘ আরেকটা বাদাম গালে দিল তা দেখে আয়মান চৌধুরী মেয়েকে থামালেন আর বললেন,,

“এভাবে বাদাম খেতে কে বলেছে আপনাকে? এভাবে বাদাম খায় না। এভাবে খেলে তো কষ্ট পাবেনই। বাদাম এভাবে খেতে হয় খোসা ছাড়িয়ে।

বলেই মেঘকে দেখিয়ে খোসা ছাড়িয়ে মেঘের হাতে বাদাম দিলেন । তারপর খেতে বললেন। মেঘ খেয়ে বলল,,

“এটা মজা আছে। আপনি আরো খোসা ছাড়িয়ে দেন আব্বা আমি আরো খাবো।”

মেয়ের কথায় আয়মান চৌধুরী খোসা ছাড়িয়ে দিলেন
হুট করে মেঘ বলল,,

“সবাই আমাকে কষ্ট কেন দেয় আব্বা। আপনি জানেন এভাবে জিয়ান ভাইয়া আমাকে বলেছে বাদাম খেতে। আপনি জানেন মা আমাকে একটুও আদর করে না। কিন্তু মুন আপুকে কতো আদর করে। আজ তো আপু আবদার করলো দেখে মা বাদাম দিল। অথচ আমি দু’দিন ধরে আইসক্রিম খেতে চাইছি কেউ আমাকে কিনেই দিল না। উল্টো বকাঝকা করলো। আমি কি খারাপ আব্বা যে আমাকে সবাই আমাকে কষ্ট দেয়।”

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে আয়মান চৌধুরী কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন। মায়মুনা চৌধুরী যে ওকে ভালোবাসে না সেটা সে জানে কিন্তু এতটা অবহেলা মেঘের প্রাপ্ত নয়। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে কোলে নিয়ে বললেন,,

“আম্মা এরপর থেকে সব আমাকে বলবেন। আর কাউকে বলতে হবে না। যেটা না জানেন সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। আমি আপনার সব কথা শুনবো। আর আপনার আবদার ও পূরন করবো। এখন চলেন আইসক্রিম খেয়ে আসি।”

“আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্বা।”

“আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”

এভাবেই শুরু হয়েছিল পরিবারের মধ্যে থেকেও বাবা মেয়ের অদ্ভুত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এরপর থেকে মেঘের সবকিছু তাঁর আব্বা। দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে যে এই দু’জনের বিপরীতে যদি পুরো পৃথিবী থাকে তবুও এই দুজন এই দু’জনকেই বেছে নেবে। হুট করে ছোটবেলার কথা ভাবতেই মেঘের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। হুট করে মেঘ চোখ খুলে বলল,,

“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি আব্বা!”

হুট করে মেয়ের মুখে ভালোবাসি শুনে আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,

“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আম্মা।”

তখন ধূসর এলো দরজা ঠেলে। আর বলল,,

“বাবা মেয়ে কি করা হচ্ছিল শুনি। খাওয়ার সময় হয়েছে এখন আপনারা খেয়ে নিন।

ধূসর মেঘকে খায়িয়ে ওষুধ খাওয়ালো। আয়মান চৌধুরীর একটা ফোন এলো তিনি বাইরে চলে গেলেন। তখন ধূসর মেঘের হাত ধরে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি দেখছেন?”

“দেখছি নিষ্ঠুর মেয়েটা কে কি অদ্ভুত আব্বাকে কতো সহজে ভালোবাসি বলে দিলে। অথচ আমার ভালোবাসা বলায় নিষ্ঠুরতা দেখায়। সেই ঘটনার সময় দুবার ভালোবাসি বলেছিলে। তাছাড়া এই পাঁচ বছরে কখনো ভালোবাসি বলো নি।”

“ভালোবাসি বলি নি দেখে কি? আপনার কখনো মনে হয়েছে ভালোবাসার কমতি আছে।”

‘তা মনে হয় নি কিন্তু!!’

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ধূসর।”

ধূসরের মনে পরলো মেঘকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তাই ধূসর আর কিছু বললো না শুধু বলল,

“হুম ওষুধের প্রভাবে তুমি ঘুমাও।”

মেঘ ঘুমিয়ে পরলো ধূসর মেঘের হাত ধরে মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও মেঘবালিকা এখনো অনেক কিছু করার বাকি। তোমার অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয় নি তো এখনো।”

দেখতে দেখতে সাতটা দিন পার হয়ে গেল। মেঘকে আজ রিলিজ করে দেয়া হবে। মেঘ বহুদিন পর নিজের শ্বশুরবাড়ি যাবে। সবাই বলেছিল মেঘকে চৌধুরী বাড়িতে রাখতে কিন্তু ধূসর আর আয়মান চৌধুরী মানা করেছে বলেছে মেঘ এখন খান বাড়িতেই যাবে। আয়মান চৌধুরী কেন বলেছেন সেটা মেঘ ছাড়া কেউ জানেনা। এখন ও বাড়িতে গেলে রিস্ক হতে পারে তাই আয়মান চৌধুরী নেন নি। সবাই বাড়ির দিকে রওনা হলো কিন্তু ধূসর মেঘকে নিয়ে পরে আসবে বলে জানিয়ে ওকে নিয়ে অন্য একটা জায়গায় গেল। একটা গোডাউনে সামনে নিয়ে গাড়ি থামালো । তা দেখে মেঘ বলল,,

“আমরা এখানে এলাম কেন? আর এটা তো আব্বার গোডাউন।”

ধূসর গাড়ি থেকে নেমে মেঘকে কোলে নিয়ে বলল,,

“চলোই না তারপর দেখতে পাবে।”

“আমি হাঁটতে পারি তো তাহলে কোলে কেন?”

“আমার বউ আমি কোলে নেব তোমার তাতে কি চুপ করে থাকো।”

মেঘকে নিয়ে ধূসর গোডাউনের ভেতরে ঢুকলো। একটা অন্ধকার রুমে নয়না আর আকাশ কে আটকে রাখা হয়েছে । ধূসর মেঘকে নিয়ে ওখানেই ঢুকলো ওখানে কতগুলো গার্ড ছিল ধূসর একজন কে চেয়ার আনতে বলল। লোকটা চেয়ার এনে দিল ধূসর মেঘকে সেখানে বসিয়ে দিল। মেঘ সামনে তাকাতেই দেখলো আকাশ আর নয়নাকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে । মেঘ কিছুই বললো না ও বুঝতে পারল ধূসর ওকে কেন এনেছে। আয়মান চৌধুরী আগেই মেঘকে বলে রেখেছে তাই ও সব বুঝতে পারছে। দুইজন গার্ড গিয়ে ওদের ওপরে এক বালটি করে পানি ফেলল দু’জনে ধরফরিয়ে উঠলো। ওরা চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো মেঘ চেয়ারে বসে আছে তার পাশে ধূসর দাঁড়িয়ে আছে। ওদের অবাক হওয়া চোখ দেখে ধূসর বলল,,

“কি রে ঘুম থেকে উঠে ভাবছিস চোখে ভুল দেখছিস নাকি? আরে নারে ভুল নারে আমি আর মেঘ দু’জনেই সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে আছি।”

এই বলে ধূসর ওদের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর একটা লাঠি নিয়ে আকাশের থুতনির নিচে রেখে বলল,,

“শফিকের থেকে শুনলাম তুই নাকি সেবার আমার মেঘবালিকার মাথায় আঘাত করেছিলি। সেটা তো পুরোনো হিসাব আছেই আবার এই বারো মেরেছিস। তো তোকে কি করা উচিত বলতো।”

নয়না আর আকাশ ভয় পাচ্ছে মেঘ শান্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ বলল,,

“আমাদের মাফ করে দাও প্লিজ।”

তখন ধূসর হেসে বলল,,

“একবার হলে মাফ করে দেওয়ার চিন্তা করতাম। কিন্তু একই ভুল দুই বার করেছিস কি করে মাফ করি বলতো।”

বলেই ধূসর আকাশের মাথায় বারি মারলো পর পর দুটো। তারপর ইচ্ছে মতো লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগলো। আকাশ চিৎকার করছে তা দেখে নয়না আরো ভয় পাচ্ছে। না জানি ওর সাথে কি করে। কিছুক্ষণ পর ধূসর থামলো আর বলল,,

“তোকে মেরে ফেললে শান্তি হতো আমার কিন্তু আমি তো খুনী নই তাই এইটুকুই থাক।’

আকাশ খুব ক্লান্ত এতগুলো মার খেয়ে। ওর মাথা হেলে পরছে। এবার ধূসর গেল নয়নার কাছে। ধূসর বলল,,

‘আকাশ শুধু মাথায় মেরেছিল তাই এই অবস্থা। কিন্তু তুই তো আমার মেঘবালিকার জীবনটাই বের করে নিতে চেয়েছিলি তোর সাথে কি করা যায় বলোতো। অবশ্য তুই একটা মেয়ে তোকে তো কিছু করতেও পারবো না।”

তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা বলো তো কি করা যায়।”

মেঘ হেঁসে এগিয়ে আসলো তারপর নয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঠাটিয়ে পরপর কতোগুলো থাপ্পড় মারলো। কিন্তু ও এইটুকুতেই হাঁপিয়ে উঠলো অসুস্থতার জন্য। তখন ধূসর মেঘকে নিয়ে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিল। আর বলল,,

‘এইটুকু থাপ্পড় এ ওর কিছুই হবে না মেঘ। কি করবো তুমি শুধু বলো বাকিটা আমি দেখে নেব। তাছাড়া আমি নিজেকে প্রতিজ্ঞা করেছি আইন শাস্তি দেওয়ার আগে আমি একটু ওদের শাস্তি দেব। এটা বাড়াবাড়ি হবে না প্রতিশোধ নেওয়া হবে। ইসলামে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা আছে কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়া জায়েজ আছে। তাছাড়া আমরা ওদের মতো করবো না। কারন আমরা ওদের মতো নই।

তখন মেঘ বলল,,

“আজ আপনার দিন আমি কিছু জানি না। তবে আমি সুস্থ থাকলে ওর হাত টাই কেটে নিতাম কারন ও ঐ হাত দিয়েই আপনার পেটে ছুরি বসিয়েছিল।”

“বাহ দারুন আইডিয়া গার্ডস একটা বড় দেখে চাকু নিয়ে এসো। আজ একজনের হাতের অপারেশন করবো।”

মেঘ হাসলো অতঃপর গার্ড একটা বড় চাকু নিয়ে এলো। তখন দুজন মহিলা গার্ডস নয়নার ডান হাত খুলে একটা টেবিলের ওপর রাখলো কারন ঐ ডান হাত দিয়ে ওদের মেরেছিল। ধূসরের মধ্যে আজ অন্যরকম হিংস্রতা কাজ করছে। মেঘ শান্ত চোখে দেখছে এর কারন আছে ওর ওপর মেঘের অদ্ভুত রাগ আছে। নয়না বারবার না না করছে ওকে মাফ করে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু ধূসরের কানে পৌছাচ্ছে না। ধূসর সত্যি সত্যি নয়নার ডান হাত কেটে ফেলল। নয়না গগন ফাটিয়ে চিৎকার দিল। তারপর মেঘ বলল ওদের কে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাকিটা ও কোর্টে দেখে নেবে। ধূসর মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৭+১৮

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যেতেই চোখ খুলে কারো বাহুডরে নিজেকে আবিষ্কার করে মেঘ। প্রথমে এমনটা হওয়ায় থমকে যায় একটু। পরবর্তীতে নিজের মস্তিষ্কে একটু চাপ দিতেই কালকে রাতের কথা মনে পড়ে। কালকের রাত টা তাদের বেশ গেছে। প্রথমে ধূসরের কথা মতোই মেঘকে ধূসরের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে হয়েছে। কাল ধূসর মেঘকে অনেক গল্প বলেছে। সব নিজে থেকে মেঘ শুধু শুনে গেছে। মাঝখানে এটা বলেছে ‘যদি ঘুমিয়ে যাও তাহলে আমি কিন্তু তোমায় আমার বুকে নিয়ে শুবো তুমি সকালে উঠে আবার থমকে যেও না। আর হ্যা হিজাব টাও আমি খুলে রেখে দিব তুমি আবার হিজাব খোলা দেখে চিন্তা করো না।” কিন্তু মেঘ যে সত্যি ঘুমিয়ে যাবে ও ভাবতে পারে নি। অনেক দিন পর নিশ্চিন্তে ঘুমালো মেঘ। মেঘ ধূসরকে ডেকে তুলল ফজরের নামাজের জন্য। ধূসর ঘুমঘুম চোখে মেঘকে দেখলো আর তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ও নিজেও বোধহয় ভুলে গেছিল ওর বউ আছে। ধূসর জানালো আজ বাড়িতেই মেঘের সাথে নামাজ আদায় করবে। অতঃপর দু’জনে নামাজ আদায় করে নিল।

এভাবেই শুরু হয়েছিল মেঘ আর ধূসরের পথচলা। দেখতে দেখতে ছয় মাস হয়েছে মেঘদের আকদের। এ ছয়মাসে, প্রতিদিন নিয়ম করে ধূসর মেঘকে ভার্সিটি নামিয়ে দিতো।মাঝেমাঝে ঘুরতে নিয়ে যেত ফুচকা খাওয়াতো। এই ছয়মাসে একে অপরের বোঝাপড়াটা জোরদার হয়েছে। ভালোবাসাটাও গভীরে যেতে শুরু করেছে। একটা সহজ সম্পর্ক আছে দু’জনের মধ্যে। আর শ্বশুরবাড়ি সে তো তার পাশের বাড়িই যখন ইচ্ছে তখন চলে যেতো। কতোবার এমন হয়েছে মেঘ সারাদিন ধূসরদের বাড়িতে থাকতো শুধু রাতে এসে বাড়িতে থাকতো। এসবের মধ্যেও সে তার আব্বার জন্য আলাদা সময় রেখে দিতো। বাবা মেয়েও কম কিসে তারাও নিজেদের মতো বিন্দাস জীবন যাপন করছে। আয়মান চৌধুরী নতুন গাড়ি কিনেছেন।সেটা নিয়ে আজ বাবা মেয়ে একটা পার্কে গেল। দু’জনে পাশাপাশি বেঞ্চে বসে আছে আয়মান চৌধুরী বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছেন মেয়েকে। মেঘ একটা নিজে খাচ্ছে একটা আয়মান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। হুট করে মেঘ বলল,

“আব্বা আপনার খোসা ছাড়ানোর কি দরকার? এখন তো আমি বড় হয়েছি। ”

“আম্মা এটা আমার আনন্দ আপনাকে খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়াতে পারলে আমার সুখ লাগে। এই বাদামের খোসা ছাড়ানোর জন্যই কিন্তু আজ আমার আর আপনার সম্পর্ক এতো সুন্দর। তাই আমি চাই প্রত্যেকবার আপনার বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিতে।”

“হুম আব্বা সেটা আবার পরে ভাববো আজ থাক।”

“হুম! আম্মা আপনি আপনার জীবনে নতুন মানুষের আগমনে খুশি তো!”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি খুব করে চাইতাম ভবিষ্যতের মানুষ টার সাথে যেন আমার প্রয়োজনের সম্পর্ক না হয়। সে যেন তার প্রিয়জনের রুপেই আমাকে গ্ৰহন করে। প্রয়োজনের তাগিদে বাঁচতে বাঁচতে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি। এখন মনে হয় আমি সেরকম কাউকে পেয়েছি আব্বা। যার প্রয়োজন নই আমি তার প্রিয়জন আমি।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন। আর বললেন,,

“আম্মা তার প্রিয়জন কে তার হাতে পরিপূর্ণ ভাবে ন্যস্ত করার সময় হয়ে গেছে। আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদের ঘন্টা বেজে গেছে আম্মা।”

হুট করে অপত্যাশিত ভাবে এরকম কথা শুনে মেঘ থমকালো। মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। মেঘ আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ ও ছলছল করছে। মেঘ কিছু বলবে তার আগেই আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘এহসান আর ধূসর আপনাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে চায়। আপনি সময় চেয়েছিলেন তারা দিয়েছে এখন আপনার ও উচিত আপনার নীড়ে যাওয়া। আজ তারিখ জানিয়েছে এহসান, আর মাত্র পনেরো দিন পর আপনাদের বিয়ে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।”

“আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা?”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথার মানে বুঝতে পারলেন। তিনি মাথা নাড়লেন মেঘ চুপটি করে তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে সামনে তাকিয়ে রইল। তারা নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে গেল। রাতে ধূসর ছাদে মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল ওকে কিছু কথা বলবে। মেঘ ছাদে যেতেই ধূসর বলল,,

“কি হলো আজ এতো লেট কেন? তোমাকে একটা সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছি?”

“কি সুসংবাদ শুনি?”

“তোমার জামাই ডক্টর হয়ে গেছে‌।”

“আলহামদুলিল্লাহ এটা তো ভালো খবর!”

“কাল এর জন্য আমাদের ব্যাচের সবাই আর সিনিয়র রা মিলে একটা গেট টুগেদার আয়োজন করেছে। এরপর কে কোথায় থাকবে জানা নেই তাই। তুমিও যাচ্ছো আমার সাথে।”

“আপনাদের মধ্যে আমি গিয়ে কি করবো।”

“বারে আমার বউকে পরিচয় করিয়ে দেব না সবার সাথে। কেউ তো জানে না আমাদের বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া তোমার অনুষ্ঠান পছন্দ না তাই অনুষ্ঠান ও করবো না। প্লিজ চলো না আমার বিয়ের ব্যাপারে কয়েকজন জানে তারা তোমাকে দেখতে চাইছে।আমিও বলেছি তুমি যাবে। এখন তুমি না গেলে আমার সম্মান বলতে কিছু থাকবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যাবো তবে আমার সেরকম,,”

“সেরকম কোন ড্রেস নেই তাই তো! আমি তোমার জামাই আমার একটা দায়িত্ব আছে না। তাই তোমার জন্য একটা শুভ্র রঙের গ্ৰাউন আর হিজাব নিকাব এনেছি। শুভ্র রঙে তোমায় খুব মানায় মেঘবালিকা!”

মেঘ হাসে ধূসরের কথা শুনে। আর হেঁসে বলে,,

“আমি ড্রেসের কথা না আমি বলতে চাইছিলাম আমার সেরকম সময় হবে না বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। কারন আব্বা একটু অসুস্থ থাকছে কয়েকদিন ধরে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।”

“আব্বা অসুস্থ তুমি আমাকে বলো নি কেন? এরকম ডাক্তার জামাই থাকতে শ্বশুর কেমনে অসুস্থ থাকে। তুমি দরজা খুলো আমি এখনি আসছি।”

“আপনার আসতে হবে না। সামান্য জ্বর আর শরীর ব্যাথা হয়। আব্বা ওষুধ খাচ্ছে তো।’

“নিষ্ঠুর মেয়ে আব্বার জ্বর আর শরীর ব্যাথাকে হালকা বলছে। সাধে তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি। তোমার কিছু হলে নিজে তো কাউকে জানাবেই না নিজে যত্ন ও নিবে না। আমার শ্বশুর এর যত্ন আমি করবো তাতে তোমার কি! আমি আমার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি একটাও কথা বলবে না।

বলেই ধূসর নিচে চলে এলো । মেঘের আর কি ধূসরের কোন কথাকে আজ পর্যন্ত সে অগাহ্য করতে পারে নি। ধূসর এসে শ্বশুরকে দেখলো কয়েকরকমের টিপস্ দিল। তারপর মেঘের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল আজ সে শ্বশুরবাড়িই থাকবে। এই ছয়মাসে হুটহাট করেই কথা বলতে বলতেই ধূসর শ্বশুরবাড়ি চলে আসে। প্রথম প্রথম সবাই অন্যরকম ভাবে নিলেও এখন সহজ হয়ে গেছে। আজকাল আয়মান চৌধুরী ও কিছু মনে করেন না। পরের দিন মেঘ আর ধূসর গেল ধূসরদের অনুষ্ঠানে ধূসর সাদা স্যুট সেট পরেছে আর মেঘ সাদা রঙের গ্ৰাউন হিজাব নিকাব। ধূসর মেঘের হাত ধরে অনুষ্ঠানে গেল। ও যেতেই সবাই হৈ হৈ করে উঠলো কারন ধূসর ওদের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সাথে গুড লুকিং মানুষ। ওরা যেতেই নয়না ওদের কাছে এলো। কারন ধূসর আর নয়না একই সঙ্গে ডক্টর হয়েছে। নয়না এসে ধূসরের হাত ধরতে চাইলো কিন্তু সে এসেই দেখলো ধূসরের হাতের মুঠোয় অন্য একজনের হাত। তা দেখে নয়না বলল,,

“ও কে? তুমি কার হাত ধরে আছো ধূসর?”

তখনি ইশানকে দেখা গেল মাইক হাতে সে বলল,

“এটেনশন গাইজ! আজ আমাদের অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছেছে আমাদের সবার প্রিয় ধূসর এহসান শুভ্র যে আমাদের মধ্যে থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে ডক্টর হয়েছে। আমাদের ডক্টর কিন্তু আজ একা আসেন নি সাথে তার বিউটিফুল ওয়াইফকে নিয়ে এসেছেন। তো প্লিজ ওয়েলকাম ডক্টর শুভ্র এবং তার ওয়াইফ কাশফিয়া আয়মান মেঘ ‌। ”

ধূসর বন্ধুর কান্ড দেখে হাসে। ধূসর হেসে নয়নাকে বলল,,

“এখন বুঝতে পারছো কার হাত ধরে আছি। যাই হোক আসছি।”

এই বলে ধূসর মেঘকে নিয়ে ইশানদের কাছে যায়। এদিকে ওরা যেতেই নয়না রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“কাজটা তুমি ঠিক করো নি ধূসর। তুমি জানতে আমি তোমাকে পছন্দ করি তবুও তুমি কিভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারলে এর মূল্য একদিন চুকাতে হবে তোমাকে।”

ধূসর মেঘকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এতগুলো মানুষ দেখে মেঘের অস্বস্তি হতে লাগলো তবুও ধূসর আছে দেখে কিছু বলছে না। ধূসর মেঘের অবস্থা বুঝতে পারল। তাই মেঘকে একপাশে এনে বসিয়ে বলল,,

“অস্বস্তি বোধ করছো?”

“আরে না আপনি আছেন তো সমস্যা হচ্ছে না তেমন।”

“তবুও আমাকে বলবে অবশ্য তুমি তো আবার মুখের ওপর সত্য কথা বলে দাও।”

“হুম।”

“তোমার ওয়াইফের কি খারাপ লাগছে নাকি।”

হুট করে কারো কথা তে ধূসর পেছনে চাইলো । লোকটার মুখ দেখে ধূসর বলল,

“না আকাশ ভাইয়া তেমন কোন ব্যপার না। মেঘ উনি আকাশ মাহমুদ আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র।”

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

সালামের উত্তর দিয়ে আকাশ মেঘের দিকে কিরকম যেন চেয়ে আছে। সেটা মেঘ ধূসর দু’জনেই খেয়াল করলো। তাই ধূসর বলল,

“চলো মেঘ আমি আমাদের ক্যাম্পাস টা তোমাকে দেখাই।”

ধূসর মেঘের হাত ধরে বের হলো। মেঘ বুঝতে পারলো ধূসর কেন এখন এলো তবুও কিছু বললো না। ধূসর মেঘের হাত ধরে ওর ক্যাম্পাস দেখাচ্ছে। ওদের কিছু ঘটনা বলছে ধূসর হাসছে আর হাত নাড়িয়ে দেখাচ্ছে মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখছে। একটা সময় ধূসর সেটা খেয়াল করলো। ধূসর মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“কি ম্যাডাম প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি?”

“না তো আমি তো দেখছিলাম আপনার টাই কিরকম যেন হয়ে গেছে! সোজা হয়ে দাঁড়ান ঠিক করে দিচ্ছি।”

“সত্যি টাই দেখছিলে তো নাকি আমাকে।”

“বড্ড অহেতুক চিন্তা করেন আপনি। চুপচাপ দাঁড়ান।”

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে একটু নিজের অনুভূতি বলে দাও না।”

“তেমন অনুভূতি নেই বলবো কি?”

মেঘ ধূসরের টাই ঠিক করে দিলো। তখনি ধূসর টুপ করে মেঘের কপালে চুমু খেল। তা দেখে মেঘ হাসলো। এইসব দূর থেকে আকাশ আর নয়না দেখলো। অতঃপর অনুষ্ঠান শেষ করে মেঘ আর ধূসর বাড়ি চলে গেল। ধূসর নিজের বাড়ি যাওয়ার আগে বলে গেল।
“আর মাত্র চৌদ্দ দিন মেয়ে তারপর দেখবো আমার থেকে কোথায় পালাও। আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা কিভাবে দেখাও আমিও দেখবো।”

অতঃপর অপেক্ষা ঘুচিয়ে সঠিক সময় ধূসর নিজের একান্ত মেঘবালিকা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার সবাইকে নিয়ে হাজির হলো আয়মান চৌধুরীর বাড়িতে। এবারও সেরকম কেউ নেই মেঘের তাতে কি মেঘের পুরো ভালোবাসাই তো আছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ এবার বিদায়ের পালা। আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করছে এই তো পাশের বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে তবুও যেন খারাপ লাগাটা কতো গভীর। মেঘ ওর আব্বাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

‘আব্বা একদম কাঁদবেন না। আমি অনেক দূরে যাচ্ছি না এই তো আপনার পাশেই বাড়িতেই। যখন আপনার আমাকে মনে পরবে তখন আমাকে ফোন করবেন অথবা জানালা দিয়ে ডাক দিবেন। ‘আম্মা একটু আসবেন আপনার আব্বার আপনার সঙ্গ প্রয়োজন।’ আমি চলে আসবো। যখন যা মনে হবে তাই করবেন আব্বা। একদম ভেঙ্গে পরবেন না। আমি আছি আপনার পাশে সর্বদা। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্বা। এখন আমাকে হাঁসি মুখে শ্বশুরবাড়ি পাঠান আব্বা।”

আয়মান চৌধুরী নিজেকে সামলিয়ে ধূসর এর হাতে মেঘকে তুলে দিল। মেঘ চলে গেল শ্বশুরবাড়ি। দিলরুবা খানম ছোট পুত্রবধূ কে সাদরে গ্ৰহন করলেন। অতঃপর সব ঝামেলা শেষ করে ওরা রুমে ঢুকলো। মেঘকে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরিধান করা হয়েছে। তাও ধূসরের ইচ্ছের জন্য।বাসর ঘরের সব ইসলামিক ফর্মালিটি শেষ করে ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,

“তো মেঘবালিকা এবার বলো আমার তোমাকে বিয়ে করা উচিৎ হয়েছে কি হয় নি। এই ছয়টা মাস আমার কেমন কেটেছে জানো একদম সুখের রাজ্যের এক রাজার মতো। কতো তাড়াতাড়ি এই সুন্দর ছয় মাস জীবন থেকে চলে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। তোমায় ভালোবেসে আমি ঠকেনি বরং জিতেছি। তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা আমাকে বারংবার মুগ্ধ করে চলেছে। তোমার ব্যক্তিত্ব যা আমাকে বারবার প্রথম দিনের মতো মনে করিয়েছে। তোমার প্রতিটা সাক্ষাৎ যেন মনে হয়েছে নতুন ভাবে তোমায় দেখছি। সব শেষে আমি তোমায় ভালোবাসি মেঘবালিকা আমার একান্ত নিষ্ঠুর মেয়ে অতঃপর আমার মিস প্রতিবেশী থেকে আমার ঘরণী কে।”

মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনদিন কি মেঘ ভেবেছিল এরকম একজন রাজকুমার ওর জীবনে আসবে। ধীরে ধীরে ওর একাকিত্বতা দূর করেবে। ধূসর আবার বলল,,

“তোমার জীবনে আমি আসার পর কি হয়েছে? কেমন কেটেছে? আমাকে নিয়ে তোমার অনুভূতি কি?

মেঘ হেঁসে বলল,,

“কিছুই না জীবন জীবনের মতো চলেছে। আর আমি আমার মতো বেঁচেছি।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা আমার এত সুন্দর মুহূর্ত তুমি বাগড়া দিচ্ছো কেন?”

“আপনার ভালোবাসায় বাগড়া দেওয়া আমার ইম্পোর্টেন্ট কাজ।”

“সাধে তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

‘আমার জীবনে ছয় মাস আগে এক রাজকুমার এর প্রবেশ ঘটেছে যার রেশ এখনো কাটেনি। যা আমাকে বসন্তের মতো ভালোলাগা আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে।”

হুট করে এমন কিছু শুনবে ধূসর ভাবতেই পারে নি। ধূসর মনে মনে হাসলো। না এই মেয়েটা কখনো সরাসরি তাকে ভালোবাসি বলে নি। তবে তার কাজে বুঝিয়ে দিয়েছে। ধূসর বলল,,

“মেঘবালিকা আজ যদি তোমায় ধূসর রঙের রঙিন রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিতে চাই তাহলে কি বাঁধ সাধবে।”

মেঘ মাথা নিচু করে লজ্জামাখা হাঁসি দিল আর বলল,,

“অতঃপর সে আসুক এই ধূসর রাঙা মেঘকে নিজের রঙ দিয়ে রাঙিয়ে তুলুক।”

সম্মতি পেতেই ধূসর নিজের মেঘবালিকা একান্ত ভাবে নিজের করে নিল। এভাবেই ভালোবাসাময় জীবন শুরু হয়েছিল তাদের।

_______________

দেখতে দেখতে এভাবেই ভালোবাসায় কেটে গেছে দুই বছর আট মাস। এই দুই বছর আট মাস এ আগমন ঘটেছে কিছু নতুন অতিথিদের। নীলির ছেলে হয়েছে দুই বছর আগে। তার নাম নীল রাখা হয়েছে নীলির সাথে মিলিয়ে। নীলির বেবি হওয়ার সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয় আর রক্তের প্রয়োজন হলে মেঘ ওকে রক্ত দেয়। তখন রক্ত না দিলে যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারতো। তাই নীলি ওর ছেলেকে আম্মু বলতে শেখায় মেঘকে ও মেঘ ওর আরেক মা। একবছর হয়েছে দিশানের দুটো জমজ মেয়ে হয়েছে রিম ঝিম। এইভাবেই সবাইকে নিয়ে মেঘের জীবন কাটছে মেঘ নতুন করে হাসতে শিখেছে। এর মাঝে আয়মান চৌধুরীর সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে সে এখন চৌধুরী বাড়িতে যাওয়া আসা করে কিন্তু মেঘ যায় নি। আয়মান চৌধুরী সকলের অগোচরে অনেক বড় বিজনেস ম্যান হয়েছে। আর ধূসর আর মেঘের ভালোবাসা যেন বিস্তৃত লাভ করছে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। মেঘের ল নিয়ে পড়া শেষ এখন কোর্টে গিয়ে প্যাক্টিস করছে। মাঝে ওর খুব ইচ্ছে হয়েছে নিজে কিছু করবে তাই একদিন ধূসর আর ওর আব্বাকে জানিয়েছে ধূসর আর আয়মান চৌধুরী মত দিয়েছেন। অতঃপর দু’জনের সাহায্যে মেঘ বেশ বড় এমাউন্টের টাকা নিয়ে শোরুম খুলেছে। আজ মেঘের খুব ইচ্ছে হয়েছে সে আজ ধূসরের জন্য খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাবে। মেঘ খুশি মনে নিজে ধূসরের জন্য রান্না করে টিফিন বক্সে ভরে নিল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হাসপাতালে পৌঁছাতেই মেঘ ধূসরের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো কিন্তু ও কেবিনের সামনে গিয়ে শুনতে পেল। কয়েকজনের কথাবার্তা সেখানে কথা কাটাকাটি চলছে। একসময় কেউ একজন উঠে ধূসরের কলার চেপে ধরলো। ঠিক ঐ মুহুর্তে মেঘ কেবিনে ঢুকলো। আর এই অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল। হুট করে কারো উপস্থিতিতে আকাশ মাহমুদ আর নয়না চমকে উঠলো। ধূসর একটু ভরকালো ঠিকই কিন্তু তার মেঘবালিকাকে দেখে শান্ত হলো। মেঘ গিয়ে আকাশ মাহমুদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আর বলল,,

“আপনার সাহস কি করে হলো উনার কলার ধরার?”

তখন আকাশ মাহমুদ হেঁসে বলল,,

“বাহ তোমার সাহস আছে তো বলতে হবে। সেদিন দেখে মনে হয়েছিল তুমি একজন সরল মেয়ে কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে একটা আগুনের ফুলকি। আমাকে ধাক্কা মারলে। যাই হোক তোমার হাজবেন্ড বলো যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে নাহলে তোমার হাজবেন্ড এর সাথে কি করবো আমি নিজেও জানি না। আমাদের বিষয়ে সে যেন নাক না গলায়।”

বলেই আকাশ নয়না কে নিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন মেঘ ধূসরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আপনি ঠিক আছেন?”

“হুম!”

“এখানে কি হচ্ছিল?”

“আর বলো না ঐ আকাশ আর নয়না মিলে হাসপাতালের ওষুধের সাথে অবৈধ ওষুধের কারবার চালাচ্ছে। আজ একজনকে ওষুধ দিতে যেয়ে দেখলাম এটা সেই ওষুধ না যেটা আমি সাজেস্ট করেছি। এটা নাকি বলা হয়েছে একই কাজ করে শুধু কম্পানি আলাদা। ওটা নাকি আকাশ বলেছে। কিন্তু সত্যি বলতে ঐ কোম্পানির কোন নামই নেই। আমি আকাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে কেবিনে যাব তখন কেবিনের সামনে গিয়ে জানতে পারি এরাই মূল অবৈধ ওষুধ কারবার চালাচ্ছে এদের মাথা আছে একটা নাম কি যেন A.R.K . আমি যে শুনেছি সেটা নয়না দেখতে পায়। আমি তাড়াতাড়ি কেবিনে চলে আসি তখন ওরাও দুজন আমার পেছনে এসে আমাকে ধমকাতে থাকে যা শুনেছি তা যেন ভুলে তাই নাহলে আমাকে শেষ করে ফেলবে ওরা। তারপরেই কথা কাটাকাটি তে এই পর্যন্ত।”

“দুজন ডাক্তার হয়েও এটা কিভাবে করতে পারে?”

“সেটাই রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন কি করার থাকতে পারে। যাই হোক বাদ দাও এখন বলো এখানে কেন?”

“আপনার খাবার নিয়ে এসেছিলাম।”

“ওহ মাই আল্লাহ আমার বউ আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। তো নিজে খায়িয়ে দাও!”

“পারবো না।”

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে মুখে অন্তত ভালোবাসি না বললে একটু খায়িয়ে দাও না। এখন আমার নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা দেখিও না।”

ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

‘তবুও নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই বিয়ে করলেন?”

‘বিয়ে কি বলছো আমরা তো বাচ্চাও নেব। এই যে তুমি ব্যারিস্টার হবে তখন আমাদের বাবু আসবে। এখন বাবুর আব্বাকে একটু খায়িয়ে দিন মহারানী।”

ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ লজ্জা পায় কিন্তু প্রকাশ করে না । মেঘ হাত ধুয়ে এসে ধূসরকে খায়িয়ে দিতে লাগে আর ধূসর সে ছোট বাচ্চাদের মতো সারা রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়।

এভাবেই ধূসর আর মেঘের পনেরো দিন কেটে যায়। এ কয়েকদিন এ ধূসর চেষ্টা করেছে আকাশদের বিরুদ্ধে প্রমান পেতে তাহলে ও পুলিশ কে জানিয়ে ওদের ধরিয়ে দিতে পারবে। ধূসর অনেক চেষ্টার পর একটা প্রমান পায় যেখানে আকাশ নয়না আর A.R.K কে একসাথে কথা বলছে আনফরচুনেটলি ধূসর জানতে পারে নয়না A.R.K এর মেয়ে। সেদিনের পর থেকে ধূসর ওদের ফলো করে‌। আর এভাবেই একটা সুযোগ আসে একটা রেস্টুরেন্টে তিনজনে কথা বলে ধূসর সুযোগ বুঝে ভিডিও করে নেয় কিন্তু সেখানে A.R.K এর মুখ ঢাকা। ধূসর প্রমান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে যায় যাতে এদের ধরে নেয়। পুলিশটা ছিল A.R.K এর লোক লোকটা তাকে ফোন করে সব জানায়। ধূসর বাইরে থেকে এটা শুনতে পেয়ে ওখান থেকে সেদিনের মতো বাড়ি ফিরে আসে। পরের দিন মেঘ প্যাক্টিস এর জন্য বের হলে ওকে কিডন্যাপ করে নেয় আকাশ আর নয়না মিলে। এদিকে মেঘের বাড়ির ফেরার সময় পার হওয়ার পরও যখন মেঘ বাড়ি ফেরে না সবাই চিন্তায় পরে যায়। আয়মান চৌধুরী ও মেয়ের নিখোঁজ হওয়ায় তাড়াতাড়ি ধূসরদের বাড়ি আসে। রাত আটটায় ধূসরের ফোনে ফোন আসে। ফোনটা আকাশ করে সে জানায় ওর কাছে যে প্রমান আছে সেটা দিলে মেঘকে ছেড়ে দেবে। অন্য কাউকে বা পুলিশকে যেন না আনে নাহলে মেঘকে ওরা মেরে ফেলবে।ধূসর যেন একাই যায়। ধূসর এরকম কথা শুনে পাগলের মতো করতে থাকে। তখন ধূসর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে আয়মান চৌধুরী আর এহসান খান কে বলে সে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর যেন তারা অন্য পুলিশ নিয়ে ওর ফোন ট্র্যাক করে ওখানে পৌঁছে যায় । যে মানুষের ক্ষতি করে তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। ধূসর আকাশের কথা মতো সেই জায়গায় যায়। একটা নির্জন জায়গা জঙ্গলের মতো। তাতে একটা পুরাতন বাড়ির ভেতরে মেঘকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে মেঘ দূর্বল চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর যেতেই মেঘের একরম অবস্থা দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসতে লাগে তখন কতোগুলো লোক ওকে বাঁধা দেয়। তখন আকাশ মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আরে রিল্যাক্স ধূসর এত তাড়া কিসের? তোমার বউ তো পালিয়ে যাচ্ছে না।”

“তোরা আমার মেঘবালিকার গায়ে হাত দিয়েছিস কেন? আমি তো বলে দিয়েছি সব প্রমান দিয়ে দেব। আমার মেঘকে ছেড়ে দে।”

তখন নয়না হেঁসে বলল,,

“আরে দেব দেব তোমার বউয়ের একটু খাতির দাড়ি করা উচিৎ তাই না। যাই হোক এখন ভিডিও টা আমাদের হাতে ট্রান্সফার করো দেখি।”

“তোমাদের একটুও লজ্জা নেই। একেকজন ডাক্তার হয়েও মানুষের ক্ষতি কিভাবে করছো তোমরা। অবশ্য নয়না তোমাকে কি বলবো তোমার বাবাই তো একজন ঠক প্রতারক দেশের মানুষ কে ঠকাচ্ছে সেখানে তোমার থেকে কি আশা করা যায়।”

“এই ধূসর মুখ সামলে কথা বল। নাহলে তোর বউকে একদম ওপরে পাঠিয়ে দেব।

ধূসরের থেকে আকাশ গিয়ে ভিডিও নিয়ে এলো। তখন ধূসর বলল,,

“এবার তো আমার মেঘকে ছেড়ে দাও।”

নয়না মেঘের হাতের দড়ি খুলে দিয়েছে। মেঘ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। মেঘ একটু আগাবে তখন নয়না মেঘের হাত ধরে ফেলল। আর বলল,,

“”তোর ভাগ্য ভিশন ভালো জানিস তুই আমার ভালোবাসাকে পেয়েছিস?

তখন মেঘ বলল,,

“মানে?”

“এই ধূসরকে পাওয়ার জন্য আমি কতো পাগলামি করেছি আর তুই তাকে সহজেই পেয়ে গেছিস। কিন্তু আমার যে তোকে ধূসরের পাশে সহ্য হয় না তাই,,,

নয়না বলতে বলতে মেঘের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিল। তা দেখে ধূসর চিৎকার দিল ‘মেঘ!!!!’ ধূসর দৌড়ে মেঘের কাছে আসতে চাইলো তখন আকাশ পেছন থেকে রড দিয়ে ধূসরের মাথায় বারি মাড়লো। ধূসর নিচে পরে গেল। ততক্ষনে নয়না আরেকটা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে মেঘের পেটে। তারপর মেঘকে ছুড়ে মারলো টেবিলের ওপর মেঘ সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেল। তখন নয়না হাসতে হাসতে বলল,,

“আমাদের ধরা এত সোজা নয় মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র। আমার বাবা বলে, নিজের পথে যে আসবে তাকে উপরে ফেলতে তাহলেই না আমাদের পথ পরিস্কার। তোমাকে তো পেলাম না তাই তোমার বউকেও তোমার হতে দিলাম না। তোমাদের খুব ভালোবাসা তাই না। এখন দেখবো তোমাদের ভালোবাসা কোথায় যায়। তুমি আমার নও মানে কারো নও।

এই বলে ধূসরকে উঠিয়ে ওর পেটে ছুরি বসিয়ে দিল। এতক্ষন ক্লান্ত চোখে মেঘ দেখছিল এটা দেখেই মেঘ “ধূসর’ বলে চিৎকার দিল। তা দেখে নয়না আর আকাশ হেসে উঠলো নয়না বলল ,,

“ইশশ কি তাদের ভালোবাসা। এখন দেখবো এই নির্জন জায়গায় তোদের কে বাঁচাতে আসে। ততক্ষনে তোরা একটু সুখ দুঃখের গল্প কর।”

বলেই সবাই চলে গেল। মেঘের দেহে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। ধূসর অনেক কষ্ট করে মেঘের কাছে গেল। মেঘের মাথা কোলে নিল তারপর নিজের শার্ট খুলে মেঘের পেটে বেঁধে দিল। তারপর ওকে কোলে তুলে নিল ধূসরের অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও তার মেঘবালিকা কে নিয়ে বাঁচার আকাংখা ওকে ভেতর থেকে সাহস দিচ্ছে। মেঘ তার প্রেমিক পুরুষ কে দেখছে এতটা কেউ কি করে ভালোবাসতে পারে। নিজের কষ্ট হচ্ছে তবুও তাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে ভুলে যাচ্ছে।তখন মেঘের কষ্ট হলেও বলল,,,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি ধূসর আপনার সাথে অনেক টা পথ চলতে চাই আমি। জীবনের অল্প সুখটুকু আমার হাতে ধরা দিয়েছে ধূসর আমি এত তাড়াতাড়ি এই সুখের রাজ্য থেকে হারাতে চাইনা ধূসর আমি আপনাকে নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে চাই। আমি আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।”

“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি মেঘবালিকা। আমিও তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।”

ধূসর আর যেতে পারলো না। ওর শরীর আর কুলাচ্ছে না । ও বসে পরলো কিন্তু ও বসে থাকতেও পারছে না। ধূসরকের ভিশন কষ্ট হচ্ছে ও একটু পেছনে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিল। মাথার পেছনটায় রক্তের মাখামাখি পেট থেকেও রক্ত পরছে। এতকিছুর মাঝেও ধূসর মেঘকে ছাড়ে নি। ধূসর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,,

“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি মেঘ‌।তুমি একবার বলেছিলে মেঘবালিকা আমাদের জীবন অনেক ছোট কিন্তু মানুষের জীবনের কষ্টগুলো তার থেকেও বড়। তাই আমাদের জীবনে ছোট ছোট খুশি গুলোকে মনে রেখে কষ্ট গুলোকে ভুলে থাকা উচিৎ। এখন যদি আমাদের দুজনের ইতি ঘটে তাহলে ক্ষতি কি একসাথে মরতে তো পারবো। একে অপরকে ছেড়ে বাঁচার থেকে একে অপরের সাথে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

মেঘের চোখ নিভু নিভু হয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ও অস্ফুট স্বরে বলল,,

“আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি ধূসর! আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

মেঘের অবস্থা দেখে ধূসর ভয় পেয়ে গেল ওর নিজের চোখ ও বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও ধূসর আস্তে আস্তে বলল,,

“মেঘবালিকা চিন্তা করো না। আর একটু কষ্ট করো আব্বা আর বাবা আমাদের বাঁচাতে অবশ্যই আসবে। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো কিচ্ছু হবে না। আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি।

তখনি গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। ধূসর খুশি হয়ে মেঘকে বলতে নিল,,মেঘ দেখো বাবারা এসে পরেছে। কিন্তু মেঘের দিকে তাকিয়ে ধূসর থমকে গেল। মেঘের সারাশব্দ নেই। ধূসর তাড়াতাড়ি করে মেঘ কে ডাকতে লাগলো । ধূসর মেঘকে নিয়ে উঠতে লাগলো যেভাবেই হোক তার মেঘবালিকা কে বাঁচাতে হবে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ধূসরকে হাত লেগে একটা বাঁশ সরে গেল তখন ওখানে থাকা কিছু মোটা কাঠ ওদের ওপর পরতে নিল। ধূসর সেটা দেখে তাড়াতাড়ি করে মেঘকে আগলে নিল আর সব কাঠ গিয়ে ওর ওপর পরলো। ও আঘাত পেয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল। এত কিছুর পরেও সে তার মেঘবালিকা কে ছাড়ে নি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল।এটাই তো একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

বর্তমান,,

ধূসরের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। ও হাত দিয়ে বারবার পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ যেন চোখের পানি মানছেই না। সবগুলো চিঠিই খুব মনোযোগ দিয়ে যত্ন সহকারে পরেছে শুধু লাস্ট চিঠিটা ছাড়া। কখনো হেসেছে কখনো শব্দ করে কেঁদে উঠেছে।কখনো নিজের ওপর অনেক রাগ হয়েছে কখনো মেঘের ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব করেছে। কখনো তার নিষ্ঠুর মেয়েটার ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সবকিছুর মিশ্রন ঘটেছে সব চিঠি পড়ে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা নেমে আসার সময় হয়েছে। চোখের পানি টুকু মুছে , শেষ চিঠিটা হাতে নিল তারপর পরতে লাগলো,,

প্রিয় একান্ত নিষ্ঠুর পুরুষ,,

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করা হয় না, সেইজন্য বোধহয় চাঁদটাও আর মুগ্ধতা নিয়ে আমায় ধরা দেয়না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার দিকে মুগ্ধতা নিয়ে একাধারে তাকিয়ে থাকা হয় না। এই জন্যই বোধহয় আমার মুগ্ধ হওয়া চোখ আপনার চোখে আটকায় না।

কতোদিন হয়ে গেল ,আপনার মুখে সেই নিষ্ঠুর মেয়েটা শোনা হয় না। সেই জন্য বোধহয় এই আমি নিষ্ঠুর মেয়েটা তার ভালোনাম শুনেও তৃপ্তি পায়না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার হাতে হাত রেখে একসাথে নির্জনে হাঁটা হয় না, সেই জন্য বোধহয় নির্জন পথটাও আমায় ডাকতে চায় না।

কতোদিন হয়ে গেল, রাত জেগে গল্প করতে করতে আপনার বুকে ঘুমিয়ে পড়া হয় না ,সেই জন্যই বোধহয় স্বাভাবিক ঘুমেরাও সহজে আমাকে ধরা দিতে চায় না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার মুখে ভালোবাসি মেঘবালিকা শোনা হয় না, সেই জন্যই বোধহয় এতো ভালোবাসা দেখেও মুখে হাঁসি ফুটতে চায় না।

বহুদিন হয়ে গেল। একটা বসন্ত পাড় হয়ে গেল আপনাকে ছাড়া কিন্তু বসন্তের মিষ্টি পরিবেশ আমায় ছুঁতে পারলো না। নতুন শীতের বৃষ্টি হলো কিন্তু বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করা হলো না। আপনি ছাড়া এই আমি কতোটা সুখে আছি জানেন যতটা সুখে থাকলে কারো জীবনে বাঁচার আকাংখা থাকে না। তবুও জানেন আমি বাঁচি আপনার অপেক্ষায়। আমি জানি একদিন ঠিকই ফিরে আসবেন এই নিষ্ঠুর মেয়েটার জীবনসঙ্গী হয়ে। আপনি কি জানেন আপনাকে ছাড়া এই ধূসর রাঙা মেঘ আবার বেরঙিন হয়ে গেছে। তার জীবনে রঙের একটু অস্তিত্বও নেই। আপনি যে হাড়িয়েছেন তার সাথে আমিও হাড়িয়ে গেছি আপনি যদি আবার আমাকে পেয়ে যান তাহলে আমিও নিজেকে আবার ফিরে পাবো।

ইতি আপনার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর মেয়েটা

ধূসরের চিঠিটা পড়ে মিশ্র অনুভূতি হলো। সুখ দুঃখ দুটোই মিশে আছে। সেই সাথে অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সুন্দর অনুভূতি। ধূসর সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা সেদিন যদি আমার আর তোমার ইতি ঘটতো তাহলে আজকের তোমার এই বিমর্ষ রূপ দেখতে হতো না। একটা সুন্দর ইতি ঘটতো। তোমার এত কষ্ট করতে হতো না। আমাকে একটু দেখার জন্য আমার একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য তোমার নিজেকে আঘাত করতে হতো না। যে মানুষটার গম্ভীর অস্তিত্ব হাড়িয়ে গিয়েছিল আমার সাথে জুড়ে যাওয়ার পর। তাকে আরো খারাপভাবে তোমার জীবনে ফেরত আসতে হতো না। সবশেষে আমায় ভালোবেসে তোমাকে বিলীন হতে হতো না। মেঘবালিকা তুমিই সত্যিই নিষ্ঠুর তেমন তোমার ভালোবাসাও নিষ্ঠুর । হ্যা তুমি নিষ্ঠুর মেয়ে যাকে ভয় কাবু করতে পারে না। কোন আঘাত বাঁধা দিতে পারে না। যে সবকিছু বিলীন করে শুধু ভালোবাসা বিলাতে পারে। যার চাওয়ার কিছু নেই পাওয়ার কিছু নেই শুধু নিজেকে বিলীন করতে জানে। তাকে নিষ্ঠুর বলবো না তো কাকে বলবো। আমি তোমায় ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এতকিছুর পরেও তুমি আমার হাত ছাড়ো নি নিষ্ঠুর মেয়ে। আমার জন্য সব করে গেছো। তোমার নামের মতোই তোমার ভালোবাসাও খুব নিষ্ঠুর মেঘবালিকা। ফিরে এসো মেঘ তোমার অপেক্ষায় আছে তোমার ধূসর।

এইটুকু বলেই ধূসর থামলো। সন্ধ্যার আজান শুনতে পাচ্ছে ধূসর তাই উঠে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠলো। একটা মসজিদ দেখে গাড়ি থামিয়ে ওযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল।

এদিকে ধূসরের পরিবার সবাই চিন্তা করছে সেই কখন ধূসর গেল এখনো এলো না। এদিকে আয়মান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে আরো আগেই। তিনি চুপচাপ হয়ে আছেন। অতঃপর মাগরিবের নামাজের পর ধূসর হাসপাতালে গেল। ধূসর সোজা আয়মান চৌধুরীর কাছে গেল তারপর আয়মান চৌধুরীর হাতে হাত রেখে বলল,,,

“আব্বা ঠিক লাগছে এখন?”

“হুম!”

“চলুন আপনার আম্মার সাথে দেখা করবেন। আজ শ্বশুর আর জামাই মিলে আপনার মেয়ের সাথে গল্প করবো। আর বলবো আমাদের দুজনের কাছে কতটা প্রয়োজনীয় আপনার নিষ্ঠুর মেয়ে।”

“ধূসর তুমি ঠিক আছো?”

“আপনার কি আমাকে দেখে বেঠিক মনে হচ্ছে? আসলে আব্বা এখন তো মেঘের জ্ঞান ফেরাটা দরকার। তাই আমরা অনেক গল্প করবো যাতে মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে তাড়াতাড়ি। আমাদের দুজনকে মজা করতে দেখে আপনার মেয়েটার রাগ হবে। তাকে ছাড়া আমরা দুজন গল্প করছি তাতে সে তাড়াতাড়ি উঠে পরবে।”

আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে ধূসরের দিকে তাকালো তারপর ধূসরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,

“চলো কিন্তু এখন কিছু বাদাম থাকলে ভালো হতো। খেতে খেতে গল্প করা যেত।”

হুট করেই ধূসরের মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। ধূসরের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল ও বলল,,

“আব্বা পরে একদিন বাদাম পপকর্ন পেপসি সব নিয়ে বসবো। আজকে থাক।”

এবার আয়মান চৌধুরীও একটু হাসলেন। ধূসর আয়মান চৌধুরীর হাত খুব শক্ত করে ধরলো। তারপর কেবিনের বাইরে তাকে ধরে ধরে নিয়ে এলো। কেবিনে এতক্ষন আয়মান চৌধুরী একাই ছিলেন তিনি একা থাকতে চাইছিলেন দেখে কেউ ডিস্টার্ব করে নি। আজ মুনের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আজ মুনরাও এ বাড়িতে আসবে তাই আয়মান চৌধুরী সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আজান,আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী থাকতে চেয়েছিলেন তাদের কেও পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুধু আজান রয়ে গেছে তার বাবার কাছে। মায়মুনা চৌধুরী একটু জোর করে থাকতে চাইলে আয়মান চৌধুরী বলেছেন,,

“এই ছয় বছরে অনেক কঠিন সময় গেছে আমি আর আমার আম্মা পার করেছি এখন কাউকে লাগবে না। যদি মেঘের জন্য থাকতে না পারো তাহলে আমার জন্যও থাকতে হবে না। আমি জানি আমার আম্মার জন্য তুমি এখানে আসো নি তুমি এসেছো আমি এসেছি বলে আর লোকে যদি কিছু বলে তাই। তাছাড়া যে আমার আম্মার মা হয়ে উঠতে পারে নি তাকে এই মুহূর্তে আমার দরকার নেই।”

ব্যস এটুকুতেই মায়মুনা চৌধুরী মাথা নিচু করে চলে গেছেন। ধূসরের পরিবারের সদস্যরা সবাই আছে সেই সাথে মেঘের চার বান্ধবী। ওদের আসতে দেখে সকলে একটু অবাক হলো। ধূসর ডক্টরের সাথে কথা বলে আয়মান চৌধুরীকে নিয়ে ভেতরে গেল। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী অনেক চেষ্টা করেও মেঘের জ্ঞান ফেরাতে পারলো না। তারা হতাশ হয়ে ফিরে এলো। ধূসর বাইরে এসে সবাইকে বলল বাড়ি চলে যেতে হাসপাতালে দুজনের বেশি কেউ থাকতে পারবে না। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী থাকবেন এমনিতেও আয়মান চৌধুরী পেশেন্ট হিসেবেই থাকবেন। ধূসরের কথা শুনে সবাই চলে গেল। আজান থাকতে চাইলে ধূসর তাকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিল। যাওয়ার আগে এহসান খান দিশানকে দিয়ে ধূসর আর আয়মান চৌধুরীর জন্য খাবার কিনে আনলেন। আয়মান চৌধুরীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে‌। তাই ধূসর আয়মান চৌধুরীর সামনে খাবার রাখলো তা দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

“আমি খাবো না ধূসর আমাকে জোর করো না।”

“সেই সকালে খেয়েছেন এখন খেতে হবে রাতে ওষুধ ও তো খেতে হবে। ”

“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”

ধূসর হাত ধুয়ে খাবার মাখিয়ে আয়মান চৌধুরীর সামনে ধরে বলল,

“খেয়ে নিন আব্বা আপনার মেয়ে যদি জানে আমি আপনার যত্ন নিই নি তাহলে কি বলবে জানেন? বলবে ধূসর আপনি আমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলেন কিন্তু নিষ্ঠুর তো আপনি। আপনি জানেন আমার আব্বার আমি ছাড়া কেউ যত্ন নেয় না। আমি যখন নেই তাহলে আপনি কেন আব্বার খেয়াল রাখলেন না। আপনি ডাক্তার হয়েও শ্বশুরের খেয়াল রাখতে পারলেন না।কেমন ডাক্তার আপনি।

আয়মান চৌধুরী অসহায় হেঁসে বলল,,

“হুম আমার আম্মা ছাড়া আমার কেউ যত্ন নিতে পারে না। কারন আমার আম্মার মতো কেউ তো আমাকে শ্বাসন করে না। জোর করে খাবার ও খাওয়ায় না। একটু অধিকার দেখিয়ে আমার সাথে থাকবে সেটাও কেউ করেনা। শুধু একটা কথায় আমি চাই নি তাই তারা থাকেনি।”

“আব্বা আপনি কি মায়ের কথা বলছেন?”

“না আমি সবার কথা বলছি। আমি খাবো তবে আমার সাথে তোমাকেও খেতে হবে। নাহলে আমার মেয়ে আমাকে বলবে আব্বা জানেনই তো আমার জামাই আমাকে নিয়ে কতো পসেসিব কতো পাগলামি করে। আমি যখন নেই আমার জামাই এর একটু খেয়াল রাখবেন না।”

একথা শুনে ধূসর হাসলো আর বলল,,

“আপনার মেয়ে আমাদের জীবনের এমন একজন মানুষ যার ভালোবাসার গভীরতা আমাদের একে অপরের সাথে বেঁধে রাখে। আমিও খাবো তো নিন এখন খাবারটা মুখে নিন।”

দুই জামাই শ্বশুর মিলে খাবার খেল। পাশে থাকা নার্স অবাক চোখে জামাই শ্বশুর কে দেখলো। এরকম ও কারো সম্পর্ক হয়। হুট ধূসর বলল,,

“আকাশ আর নয়নার কি হয়েছে ওদের কি ধরা হয়েছে আব্বা।”

‘হুম আমাদের ওখানে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের এখনো পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয় নি।”

“ভালো করেছেন আব্বা আজ যাদের জন্য আমাদের জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল। আমার জীবন থেকে এক বছর আট মাস হাড়িয়ে গেছে। আমার মেঘবালিকা এত কষ্ট পেয়েছে আজ ও পাচ্ছে। তাদের আমি নিজ হাতে শাস্তি দেব আগে তারপর আইন দেবে‌। ওদের কিচ্ছু করতে মানা করবেন আমার মেঘ বালিকা সুস্থ হোক তারপর আমার মেঘবালিকার সামনে তাদের শাস্তি দেব আমি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

_________________

“মেঘকে মারতে গিয়ে আকাশ আর নয়না ধরা পরেছে আয়মান চৌধুরীর গার্ডদের কাছে।”

এ কথা শুনে A.R.K চমকে উঠলো। আর চিৎকার করে বলল,,

“কি বলছো নয়নার সাথে মেঘের কি শত্রুতা। তারমানে এই মেঘই কি সেই মেঘ যাকে দেড় বছর আগে মেরে ফেলেছিল। তার মানে এটাই ঐ মেঘ যার হাজবেন্ড আমাদের সম্পর্কে জানতে পেরে গেছিল। কিন্তু মেঘের তো হাজবেন্ড এর নাম গন্ধও শুনলাম না। না মেলাতে পারছি না কিছুই কি হচ্ছে? কিন্তু নয়না আর আকাশ ওকে মারতে গেল কেন এখন। তাও আমাকে না জানিয়ে। কয়েকদিন হলো ওরা দেশে ফিরলো এর মধ্যে এটাও করে ফেলল। আমি তো ঐ ঘটনার পর ওদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। যাতে ওদের কেউ ধরতে না পারে। জানিনা এই আয়মান এখন কি করবে আর মেঘ যদি বেঁচে যায় তাহলে নয়নারা তো শেষ হবেই সাথে আমাকেও শেষ করে ফেলবে।আমার মনে হচ্ছে মেঘের কাছে এখনো ঐ ভিডিও ছিল । আমার মনে হয় মেঘ ওদের অপেক্ষায় ছিল ওরা কবে দেশে আসবে। কি করবো মাথা কাজ করছে না। আমার মেয়েটাকে বাঁচবো কিভাবে। ওদের সম্পর্কে তেমন ধারনাও নেই কারন ওদের ওপর নজরদারি করা হয় নি।

__________________

আরেকটা নতুন দিনের সূচনা কিন্তু সবার সকাল কি একভাবে শুরু হয় না হয় না। আমাদের অবস্থান অনুযায়ী আমাদের সকাল শুরু হয়। খান বাড়ির সকলে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে কালকেই সেই সাথে মেঘের বান্ধবীরাও। আজ সকাল হতেই সবাই এসেছে আর চৌধুরী বাড়ি থেকে সমশের চৌধুরী আর আজান এসেছে। নাতনির খবর শুনে ভেতরে ভেতরে তিনি একেবারে ভেঙ্গে পরেছে। সমশের চৌধুরী ছেলের অবস্থা জানেন না তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আরো ভেঙে পরতেন। চৌধুরী বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে সকলে তাকে নিয়েই ব্যস্ত কিন্তু বাড়ির মেয়ে আইসিইউতে ভর্তি সেটা কিছু মানুষের মনেই নেই বোধহয়। মায়মুনা চৌধুরী ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে মুনকে এখনো জানানো হয় নি। তাই সবাই স্বাভাবিক থাকছে। মায়মুনা চৌধুরী নিজের রুম থেকে বেরুচ্ছে না। না জানি রুমে কি আছে। সবকিছু আশা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী দেখছেন। বাকি সবাই যেন চিল করছে। সেই দিনটাও কেটে গেল মেঘের জ্ঞান ফিরলো না। আর একটা দিন যতো সময় যাচ্ছে ধূসরের ছটফটানি বাড়ছে সেই সাথে সবার টেনশন।

অতঃপর আজকেই শেষ দিন মেঘের জ্ঞান ফিরতেই হবে। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে আর এই অবস্থায় সহ্য করতে পারছে না তাই আজ আর তিনি গেলেন না। ধূসর গেল মেঘ নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। অক্সিজেন চলছে হাতে ক্যানেলার ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে শুনছো তোমাকে ঐ চাঁদ ডাকছে তুমি কতোদিন মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকাও না এই নিয়ে সে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে তোমাকে মুগ্ধ চোখে চন্দ্রবিলাস করতে বলেছে। তুমি জানো ঐ পথ তোমায় ডাকে কতোদিন নাকি তুমি ঐ নির্জন পথে হাটো না। আমায় হাতে হাত রেখে তোমাকে হাঁটতে বলেছে। আর আমি সে তো তোমার মুগ্ধ চোখটা দেখতে চাই আমার দিকে একআকাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। আমি চুপটি করে তোমাকে দেখবো। শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে আমি তোমায় ভালোবাসি । আমার মেঘবালিকা ফিরে এসো আমার নীড়ে তোমার অপেক্ষায় আছে তোমার ধূসর। এখন কিন্তু আমিও রাগ করবো তোমার ওপর আমি তো এসেছি তাহলে তুমি কেন দূরে যেতে চাইছো। আমি তোমাকে পেয়ে গেছি মেঘবালিকা এখন তুমি নিজেকেও পেয়ে যাবে এই জন্য তোমাকে ফিরতে হবে।”

ধূসরের চোখ দিয়ে পানি পরছে ধূসর মেঘের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা আমাদের এখনো অনেক শখ পূরণ করা বাকি সব পূরন করতে হবে তো। আমার সাথে অনেক চন্দ্রবিলাস করা বাকি, একসাথে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি, অনেক ভালোবাসা বাকি এখনো, সব পূরন করতে হবে তো। প্লিজ মেঘ ফিরে এসো তোমার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর পুরুষ এর কাছে। এবার প্রমিস করছি আর তোমার থেকে দূরে যাবো না তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। প্লিজ মেঘ আমার ওপর একটু দয়া করো এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না। আমার কাছে ফিরে এসো তোমার ধূসরের কাছে। নিজের নিষ্ঠুরতা দেখিও না আমি সইতে পারবো না মেঘ। প্লিজ মেঘ ফিরে এসো।

ধূসরের কান্না মেঘের মুখের ওপর পরছে। ধূসর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে মেঘের হাতে চুমু দিল আর শক্ত করে ধরে রাখলো। তখন ধূসরের কানে আওয়াজ এলো,,

‘ধূসর!”

ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো মেঘ চোখ খুলেছে। ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা তুমি!

মেঘের শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চলতে লাগলো। তা দেখে ধূর ভয় পেল। ধূসর ডক্টরকে ডাক দিল । ও নিজেও একজন ডক্টর সেটা বোধহয় ভুলে গেছে ধূসর।
ধূসরের ডাক শুনে ডক্টর চলে এলো মেঘকে ইনজেকশন দেওয়া হলো মেঘ শান্ত হলো ততক্ষন মেঘ এক দৃষ্টিতে ধূসরের দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষন পর্যন্ত না ওর চোখ বন্ধ হলো। ডক্টর জানালো মেঘ এখন আউট অফ ডেন্জার। কয়েক ঘন্টা পরেই আবার জ্ঞান ফিরবে। ধূসর বাইরে গিয়ে সকলকে জানালো সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।

অতঃপর সবার কাঙ্ক্ষিত সময়টা এসেই গেল মেঘ চোখ খুললো। সবার প্রথমে ও ধূসরকে দেখতে পেল তার পাশেই ওর আব্বা বসা। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,,

“এখন কেমন লাগছে আম্মা!”

মেঘ মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন আব্বা?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

এরপর ধূসরকে বলল,,

“ডক্টর বাড়ি যাবো কবে?”

তখন ধূসর বলল,,

“আরে এতো তাড়া কিসের? এই তো তিনদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরলো। এখন কয়েকদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে।”

“কি তিন দিন পর?”

“হুম তিন দিন পর!”

“ওহ আচ্ছা, আব্বা খেয়েছেন কিছু? এখন কয়টা বাজে?

আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথা শুনে হাসলেন এত কিছুর মাঝেও সে তার আব্বার খেয়াল রাখছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“রাত আট টা বাজে। একটু পরেই খাবো।”
তখন ধূসর বলল,,

“শুধু কি তোমার আব্বারই খবর নেবে মেঘবালিকা। আমিও তো আছি আমার খোঁজ খবর নাও একটু। হাজার হোক আমি তোমাকে বিয়ে করবো কয়েকদিন পর। সেই হিসেবে তোমার হবু জামাই। তোমার আব্বা কে বলেছি সে রাজি আমাদের বিয়ের জন্য।

মেঘবালিকা শুনে মেঘের বুকটা চমকে উঠলো সাথে খুশিও। এই বুঝি পুরোনো ধূসর ওকে বলছে। কিন্তু পরের কথা শুনে বেশিক্ষণ আর খুশি রইলো না। মেঘ কিছু বললো না শুন্য দৃষ্টিতে পাশের দেয়ালে তাকিয়ে রইল। ধূসর বুঝতে পারলো কিন্তু এই মুহূর্তে সে কিছু করবে না। কিছুক্ষণ পর মেঘের খাবার আনা হলে ধূসর মেঘকে খায়িয়ে দিতে নিল তখন মেঘ বলল,,

“আপনার এখনো আমাকে খায়িয়ে দেওয়ার অধিকার হয় নি । তাই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে খুশি হবো। আমার আব্বা আমাকে খায়িয়ে দেবে। কি আব্বা দেবেন না।”

তখন আয়মান চৌধুরী কিছু বলতে নিলেন কিন্তু ধূসর মানা করলো। আর খাবার টা আয়মান চৌধুরীর কাছে দিয়ে বলল,,

“মেঘ ঠিক বলেছে।”

আয়মান চৌধুরী যত্ন সহকারে মেয়েকে খায়িয়ে দিলেন। সবাই আজ আসতে চেয়েছিল মেঘকে দেখতে কিন্তু ধূসর মানা করেছে কারন সবাই জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি গেছে। সবাইকে কাল আসতে বলেছে আজ আসলে মেঘ বেশি কথা বলবে। আয়মান চৌধুরীর অবস্থা মেঘকে জানানো হয় নি। মেঘকে খাওয়ানো শেষ হলে মেঘ বলল ,,

“আব্বা আপনি আর ডক্টর খেয়ে নিন এখন।”

অতঃপর ধূসর আর আয়মান চৌধুরীও খেয়ে নিল। মেঘ আয়মান চৌধুরীকে বাড়ি যেতে বলল সে একা থাকতে পারবে নার্স ডক্টর সবাই আছে। কিন্তু আয়মান চৌধুরী মানতে নারাজ তাছাড়া এই তিনদিন সে হাসপাতালে পেশেন্ট হিসেবেই ছিলেন। ধূসর আয়মান চৌধুরীর পুরো খেয়াল রেখেছে। তাই তিনি অনেকটাই সুস্থ। তখন ধূসর বলল,,

“সমস্যা নেই আব্বা মেঘ যা বলে শুনুন আপনি বাড়ি যান আমি আছি ওর পাশে। কিছু হলে না নার্স আর ডক্টর মিলে দেখে নেবে।”

তা শুনে মেঘ বলল,,

“আপনি আমার আব্বা কে আব্বা বলছেন কেন? আর আপনি হাসপাতালে থাকবেন কেন আমার জন্য।”

“বারে কদিন পর আমাদের বিয়ে হবে তাই এখন থেকেই ট্রায়াল দিচ্ছি আব্বা ডাকা । আর তাছাড়া তুমি আমার হবু বউ আমার দায়িত্ব আছে না আমার ভবিষ্যৎ বউয়ের খেয়াল রাখা, তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা। তাহলেই না আমার বউ আমার দেখাশোনা করবে ভালোমতো। সবথেকে বড় কথা আমি একজন ডক্টর আর তোমার ডক্টর ও তাই বেশি কথা বলো না। তাই আমাকে হাসপাতালে থাকতেই হবে।

“আপনি অহেতুক কথা বেশি বলেন ডক্টর।”

মেঘের জোরাজুরিতে আয়মান চৌধুরী বাড়ি চলে গেল। তখন মেঘের মনে পরলো মেঘ ধূসরকে বলেছিল ওর হাজবেন্ড ধূসর আর বলেছিল চিঠি পরতে ধূসর কি চিঠি পরেছে। মেঘ বলল,,

“ডক্টর সেদিন গাড়িতে আপনাকে কিছু বলেছিলাম আমি!”

ধূসর মনে হাসে কিন্তু প্রকাশ করে না। ধূসর বলল,,

“তোমায় ঐ অবস্থায় দেখে আশেপাশে কিছু খেয়াল করি নি । তাই তোমার কোন কথাই আমি বুঝতে পারি নি।”

কথাটা শুনেই মেঘের মন খারাপ হয়ে গেল। তা দেখে ধূসর মনে মনে বলল,,

“মন খারাপ করো না মিস প্রতিবেশী। কালকেই তোমার অপেক্ষার শেষ হবে। হ্যা হয়তো তুমি খুব খুশি হতে কিন্তু তোমার এক্সাইটেডমেন্ট এ মাথায় চাপ পরতো। এই মুহূর্তে তোমার রিল্যাক্স থাকা প্রয়োজন। তারপর তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইতে কিন্তু তোমার কষ্ট হলেও তুমি করতে। তোমার পেটে চাপ পরতো। নিজের ক্ষতি করেও তুমি আমার সঙ্গ চাইতে তাই আজ না। কাল আরেকটু সুস্থ হও তারপর। কিন্তু তোমার উপাধি নিষ্ঠুর পুরুষ এর যে একটু নিষ্ঠুর হতে ইচ্ছে করলো। মা বাবা আসুক কাল অধিকার নিয়েই তোমায় কোলে নিয়ে ঘুরাবো।”

মেঘ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলো ওষুধের প্রভাবে। ধূসর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একসময় ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু মাঝরাতে মেঘের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। হুট করে গরম কিছু তে হাত লেগে ধূসরের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলেই ধূসর দেখলো মেঘ কাঁপছে। ধূসর নার্সকে ডেকে কম্বল নিয়ে মেঘের ওপর দিলো তবুও মেঘের কাঁপুনি থামছে না এদিকে ধূসর মেঘের অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছে। ধূসর আর সহ্য করতে না পেরে মেঘের পাশে গিয়ে সাবধানে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। কারো উষ্ণতায় মেঘ গুটিশটি মেরে তার বুকে লেপ্টে রইলো। মেঘের গায়ের গরমের তীব্রতায় ধূসর ঘেমে উঠলো তবুও মেঘকে ছাড়লো না। ভোরের দিকে মেঘের জ্বর কমলো শরীর এখন ঘাম দিচ্ছে। তা দেখে ধূসর কম্বল সরিয়ে দিল। ধূসর নিজে উঠতে চাইলো কিন্তু মেঘ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে তাই উঠতে পারলো না যদি উঠতে গিয়ে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে যায় কিংবা মেঘ পেটে ব্যাথা পায় সেই জন্য। রাতে তেমন ঘুম হয় নি তাই ও ঘুমিয়ে পরলো মেঘকে ধরে। সকালে আগে মেঘের ঘুম ভাঙলো চোখ খুলে মুখের সামনে ধূসরকে দেখতে পেয়ে ও চমকে উঠলো। তারপর ওর খেয়াল হতেই দেখলো মেঘ নিজেই ধূসরকে জড়িয়ে ধরেছিল। মেঘ সাবধানে নিজেকে সরিয়ে আনলো। তখন নার্স আসলো আর এসে দেখলো মেঘ উঠে পরেছে তাই দেখে নার্সটি হেঁসে বলল,,,

“ম্যাম আপনি উঠে পরেছেন? স্যার এখনো ঘুমাচ্ছে নাকি! ঘুমানোরই কথা কাল রাতে উনি ঘুমাতে পারে নি তেমন। আপনি অনেক লাকি এমন একজন মানুষ কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। কাল রাতে আপনার খুব জ্বর এসেছিল আপনি কাঁপছিলেন। স্যার কম্বল এনে দিল তবুও আপনার কাঁপুনি থামছিল না বলে স্যার নিজেই আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। স্যারের খুব গরম লাগছিল ঘামে শরীর ভিজে গেছিল তবুও আপনাকে ছাড়েন নি।এরকম স্বামী ক’জন পায় বলুন তো। আপনাকে যেদিন হাসপাতালে আনা হলো স্যার আপনার বাবাকে ধরে কতো কাঁদছিলেন। কেউ স্ত্রীর জন্য শ্বশুরকে জড়িয়ে কাঁদতে পারে সেটা ওনাকে প্রথম দেখলাম।”

সব শুনে মেঘ অবাক হলো কিন্তু ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তারমানে কি ধূসরের সব মনে পরেছে আর যদি মনেই পরে তাহলে কাল বলে নি কেন? তখন ধূসরের ঘুম ভাঙলো মেঘের চোখ খোলা দেখে বলল,,

“মেঘবালিকা উঠে পরেছো?”

“হুম! আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন? আপনার এটা করা মোটেই উচিৎ হয় নি। বিয়ে ঠিক হয়েছে তো কি হয়েছে? তাই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুবেন এটা ঠিক না এটা অবৈধ।

“মিস প্রতিবেশী আমাকে তোমার বৈধ না অবৈধ কিছু শেখাতে হবে না। আমি জানি আমার ঘরণীর সাথে কি করা উচিৎ আর উচিৎ নয়।”

~চলবে,,