Monday, August 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 481



ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৫+১৬

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“কিরে ধূসর আজ আসতে এত লেট হলো?”

“আর বলিস না ইশান। মিস প্রতিবেশী কে ভার্সিটি দিয়ে আসলাম। তাই একটু লেট হলো।”

“মিস প্রতিবেশী কে?”

“আমার এক প্রতিবেশী। যাই হোক কথা না বলে ক্লাসে মন দে।”

ধূসরের কথায় ধূসরের বন্ধু ইশান আর কিছু বললো না। আজকে ধূসরের একটু দেরি হয়েছে আসতে তাই ও আসতেই ওর বন্ধু ইশান জিজ্ঞেস করলো। সবগুলো ক্লাস শেষ হলে ইশান বলল,,

“ধূসর তোর কি কোন কাজ আছে? নাকি একেবারে বাড়ি যাবি।”

“কেন?”

“একটু শপিং মলে যেতে হবে আমাকে কিছু জিনিস কিনবো। তোর কাজ না থাকলে তুই ও চল না। একা একা শপিং করা যায় নাকি। চল তোকে একটা দামি আতর কিনে দিবো!”

“ঘুষ দিতে চাচ্ছিস?”আসতাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারীর উপর অভিশাপ করেছেন (ইবনু মাজাহ, সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/৩৭৫৩ ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়)।

“আরে ভাই কুল আমি ঘুষ দিচ্ছি না। আমি উপহার দিচ্ছি তাও মন থেকে তুই আমার সাথে শপিংমলে যাবি এই জন্য নয়। আমি এমনিতেই ভেবে রেখেছিলাম তোর আতর পছন্দ তোকে একটা দামি আতর কিনে দেব। আজ যেহেতু শপিং মলে যাচ্ছি তাহলে আজকেই দিয়ে দেব। তাই বলছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা! এমনি উপহার তাহলে ঠিক আছে চল! শুকরিয়া দোস্ত।”

ওরা শপিং মলে গেল। ধূসর আর ইশান শপিং মলে ইশানের জন্য পাঞ্জাবি দেখছিল। হুট করেই সামনে মেঘদের পাঁচ বান্ধবী কে দেখতে পায়। কিন্তু ও এগোয় না। মেঘরা ইশানদের পাশের দোকানে ঢোকে। ধূসর ওর দিকে এগিয়ে যায় তখন জাবিন মেঘকে একটা হিজাব কিনে দেয়। মেঘ নিতে নারাজ তাই জাবিন বলল,,

“কি সমস্যা তোর নিচ্ছিস না কেন?”

তখন মেঘ বলল,,

“ধূর আমার এখন লাগবে না। যখন লাগবে তখন নেব না হয়। তাছাড়া তোর এখন টাকার দরকার আছে তো।”

“ধূর আমার এখন টাকা আছে আজকেই টিউশনির বেতন পেয়েছি । রাসুল (সা) হারাম না হলে কোন উপহার ফেরত দিতেন না।”

“হইছে আর বলতে হবে না।”

মেঘ জাবিনের জন্য একটা হিজাব দেখলো। তারপর জাবিনের হাতে দিয়ে বলল,,

“নে এটা আমার তরফ থেকে!”

“তুই আবার কেন?”

আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন।
(সহীহ, ইরওয়া (১৬০৩) , বুখারী।)
তাই কথা না বলে চুপ চাপ নে। শুধু তুই সব জানিস না আমিও জানি।আর বাকিরা আপনারা চাইলে হিজাব নিতে পারেন আজকে। আমার কাছে বেশি টাকা নেই। নাহলে অন্যকিছু কিনে দিতাম।”

বাকি তিনজন মানা করলো। যেহেতু মেঘের ব্যাপারে সবাই অবগত। তাই চার বান্ধবী ঠিক করলো, সবাই আলাদা আলাদা জিনিস মেঘ কে উপহার দেবে। যাতে মেঘের কম টাকা খরচ হয়। জাবিনই প্রথম শুরু করলো। মেঘ উপহার নিল এবং ওকে উপহার দিলো। তা দেখে তিনজনের উপহার দেওয়া মাটি হয়ে গেল। এখন মেঘের টাকা খরচ কয়িয়ে লাভ নেই। তাই তারা মানা করলো দরকার নেই।

এদিকে ইশান ধূসর কে তার আতর কিনে দিল । তখন মেঘের কথা মনে পড়লো। ইশানের আবার আতরের থেকে পারফিউম বেশি পছন্দের তাই ধূসর ইশানকে একটা হালাল পারফিউম কিনে দিল। ইশান কিছু বললে ধূসর ওকে মেঘের বলা হাদিস শুনিয়ে দিল।

অতঃপর সবাই নিজেদের বাড়িতে ফিরলো। মেঘ বাড়িতে ঢুকেই দেখলো ওর আব্বা বসে আছে।তা দেখে মেঘ বলল,

“আব্বা এই সময় বাড়িতে। আপনি না রাতে আসবেন বললেন।’

“কিছুই ভালো লাগছে না।

“শরীর খারাপ লাগছে আব্বা?”

“না একটু আগে মায়মুনা কে ফোন দিয়েছিলাম। ও খুব রাগারাগী করলো। কেন ফোন দিয়েছি তাই। ওদের খবর নিতেই ফোন দিয়েছিলাম। ওদের থেকে দূরে থাকলেও আমি আমার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি না। ওরা আমার দায়িত্ব আমার পরিবার।আমি ওদের সাথে থাকতে চাই ওদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না। ওরা আমার পরিবার ‌।

“আব্বা আপনার সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিৎ ও নয়।কারন তারা আপনার আপনজন আপনার পরিবার। তাছাড়া দাদুভাই আপনাকে বেরিয়ে আসতে বলেছে বলে। আপনি এসেছেন নাহলে আসতেন না।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমানুরুপ ব্যবহারের মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী।

{সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৪) , সহীহ আবূ দাঊদ (১৪৮৯) , বুখারী, মুসলিম।}

“হুম আম্মা! তাছাড়াও আল্লাহ তায়ালা সম্পর্ক ছিন্ন কারীকে পছন্দ করেন না। যাই হোক ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন খাবার খেতে হবে তো। বেশ বেলা হয়ে গেছে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছি তো।”

“হুম আব্বা যাস্ট পাঁচ মিনিট।”

মেঘ ওপরে চলে গেল হাতের ব্যাগপত্র নিয়ে। কিছুক্ষণ পর ফ্রেস হয়ে নিচে আসলো। বাবা মেয়ে একসাথে দুপুরের খাবার খেল।

______________

বিকেলে নোলক আর নীলি আসলো রোহিনীকে নিয়ে। দরজা খুলে ওদের দেখেই মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“ভেতরে আসুন!”

তখন নীলি বলল,,

‘তুই না বললেও আসতাম এখন সাইড দে।”

মেঘ সাইড দিল নীলি ভেতরে ঢুকে গেল। মেঘ ওদের ড্রয়িংরুমে বসতে বলে কিচেনে গেল কফি বানাতে। কিছুক্ষণ পর কফি নিয়ে আসলো মেঘ। তখন নীলি কফির মগ উঠিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল,,

“ভালোবাবা বাড়িতে নেই?”

“না!”

‘নোলক আর ভাবি আপনারা কিন্তু কিছু নিচ্ছেন না। আমার পেটুক বান্ধবী কে দেখুন কফি নিয়ে আসার পরেই কফি শুরু করে দিয়েছে।”

তখন রোহিনী বলল,,

“আহ হা মেঘ আমি কি বুড়ি নাকি । আমাকে তুমি করে বলো প্লিজ। আর আমি তো তোমারও ভাবি হই।”

‘আমার একটু সময় লাগবে।”

তখন নোলক বলল,,

“আমি কিন্তু তোমার থেকে অনেক ছোট আপু। তাই আমার ক্ষেত্রে সময় দেব না। আমি সবে সেভেনে পড়ি আমাকে আপনি বলা যাবে না।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে পিচ্চি আপু। তো পিচ্চি বলো চকলেট খাবে আমার কাছে আছে কিন্তু।”

‘চকলেট তো আমার এত্তগুলা পছন্দ।”

‘তুমি কফি খাও আমি নিয়ে আসছি।”

“ওকে!”

তখন নীলি বলল,,

“আমার জন্য নিয়ে আসিস আমার ভালোবাসা!”

“তোর ভালোবাসার সাথে না বিচ্ছেদ করলি বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছিস দেখে।”

‘এখন তোর সাথে ঝগড়া করার মুড নেই। তাই কিছু বললাম না। যা নিয়ে আয়।”

“আমার ও মুড নাই।”

বলেই মেঘ চলে গেল। তখন রোহিনী বলল,,

“ওকে কালকে দেখে গম্ভীর মনে হলেও আজ মনে হচ্ছে ওর মাঝে একটা ছোট্ট দুরন্ত বাচ্চা মেয়ে আছে।”

“মেঘ সবসময় গম্ভীরতার আড়ালে থাকে। কিন্তু মেয়েটা সম্পর্ক রাখতে জানে ভালোবাসতে জানে। ওর সাথে কারো সম্পর্ক জুড়ে গেলে ও ওর সর্বচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই জন্য এত বছরেও আমাদের সম্পর্কের কিছু হয় নি। ওর সাথে প্রথম আলাপ হয় যখন আমরা ক্লাস এইটে পড়ি। ও সবসময় একা থাকতো কারো সাথে কথা বলতো না। কিন্তু আমার ওকেই কেন যেন ভালো লাগতো একদিন গিয়ে বললাম,” আমার বন্ধু হবে!” ও কি বললো জানো আমার বন্ধুর দরকার নেই। আমি কেন বললাম ও বলল ওর বিচ্ছেদ এ ভয় বেশি। প্রথমে ওর সাথে সম্পর্ক তৈরি করবে তারপর যখন ওকে ভালো লাগবে না তখন ওকে ছেড়ে দেবে‌। তারওপর ও একজন বোরিং পার্সন ওর সাথে থাকতেও পারবে না সবাই। ও আগ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলবে না। ওর কোন গল্পও নেই যেটা ও অন্যের সাথে শেয়ার করবে। এরকম বন্ধু কেউ চাইবে না। সেই ওকে রেখে চলেই যাবে। তাই ও বন্ধুত্ব করবে না কারো সাথে। ওর কথাগুলো আমার মাথার ওপর দিয়ে গেছিল। সেদিনের মতো আমি চলে আসি। কিন্তু মনে মনে একটা জেদ চেপেছিল ওর সাথেই বন্ধুত্ব করবো। তারপর পরপর তিন দিন ট্রাই করলাম ওর সাথে মিশতে পারলাম না। আমি কথা বলতাম ও কিছু বলতো না। চারদিনের মাথায় ওকে আবার বললাম “প্লিজ আমার বন্ধু হয়ে যাও! কথা দিচ্ছি ছেড়ে যাবো না। তুমি যেমনই হও ছেড়ে দেব না। তোমার গল্প করতে হবে না আমি করবো। তুমি শুনবে আমার সাথে মাঝে মাঝে ফুচকা খাবে আইসক্রিম খাবে চকলেট খাবে। তুমি চাইলে মাঝে মাঝে আমাকে কিছু বলতে পারো। অতঃপর ও রাজি হলো। ওর সাথে মিশতে শুরু করলাম মাঝে মাঝে মনে হতো ও আমার থেকেও বেশী কথা বলতে পারে। ও আমার সাথে সহজ হয়ে গেল বন্ধুত্ব টাও গাঢ় হলো। তারপর আমার সামনে ওকে গম্ভীর হতে দেখি নি। নাইনে গিয়ে হির জাবিন আর লিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হলো। মেঘ ওদের সাথে প্রথমে ফ্রি হচ্ছিল না আমার বান্ধবী হয়েই ছিল । টেনে উঠে ওদের সাথেও ফ্রি হয়ে গেল। এরপর থেকে আমরা পাঁচ বান্ধবী হয়ে উঠলাম। মাঝে মাঝে ঝগড়া হয়েছে সব মেঘ সলভ করেছে। ওর সাথে কারো ঝগড়া লাগলে ও আগে সরি বলেছে ওর ভুল না হলেও কারন ও বিচ্ছেদ চায় না। সম্পর্ক জুড়ে রাখতে চায়। ও বিচ্ছেদ কে ভয় পায়। কিন্তু ও গম্ভীর বেশি তেমন মন খুলে হাসে না বলে। আমরা চারজন সবসময় চেষ্টা করি ওকে খুশি রাখতে। এটা অবশ্য অনেকের ন্যাকামি লাগে। একটা মেয়েকে সবাই এতো প্যামপার করে কেন? কিন্তু একটু প্যামপার করলে যদি আমার বান্ধবী ভালো থাকে খুশি থাকে তাহলে সেই টুকুই আমাদের কাছে অনেক।”

নীলি কথা শেষ করেই দেখলো ওর সামনে পানি নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। নীলি মানুষ টার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘ তুই পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে কেন?”

“যে বড় স্পিস দিলি। গলা শুকিয়ে গেছে নে পানি খা। এই কফিতে হবে না।”

“মজা করছিস!”

“না!”

মেঘ পানি টেবিলে রেখে সবাইকে চকলেট দিল। তারপর নীলির সামনে এগিয়ে বলল,,

“নে খা তোর ভালোবাসা।”

ওরা কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেল। রাতে মেঘ একটা উপন্যাস এর বই নিয়ে ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে পড়লো। তখন পাশের ছাদ থেকে কারো কথার আওয়াজ পেল। ফোনে কথা বলছে। মেঘ মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো ধূসর । ও ভালো করে ওরনা দিয়ে মাথা ঢেকে নিল। তারপর নিজের কাজে মন দিল। তখন হুট করে কারো আওয়াজ আসলো,,

‘মিস প্রতিবেশী রাতে ছাদে কি করছেন? উপন্যাস পরছিলেন বুঝি।”

মেঘ মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে ফিরে বলল,,

“দেখতেই যখন পাচ্ছেন তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন? মিস্টার প্রতিবেশী।”

“এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। যাই হোক আজকের চাঁদ দেখেছেন মাশাআল্লাহ কতো সুন্দর।”

“আপনার যদি কথা শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমি নিজের কাজে মন দিতে পারি।”

“আপনি এরকম কেন মিস প্রতিবেশী?”

“আমার কাছে তো মনে হয় আমি ঠিকই আছি। আপনার অন্যরকম লাগলে আমি কি করতে পারি। সবথেকে বড় কথা কাউকে অহেতুক প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করা উচিৎ নয়।”

কথাটা শুনে ধূসর একটু থমকে গেল। ও কি মেঘকে বিভ্রান্ত করছে । ও অবাক হয়েই বললো,,

“আমি কি আপনাকে বিভ্রান্ত করছি?”

“আপনার উপস্থিতিই আমাকে বিভ্রান্ত করে মিস্টার প্রতিবেশী।”

কথাটা শুনে ধূসরের খারাপ লাগলো।ওর উপস্থিতিই কাউকে বিভ্রান্ত করে এটা ওর কাছে লজ্জাজনক ছাড়া আর কিছু লাগছে না। কই কোন মেয়ে তো ওকে কোনদিন বলেনি এভাবে বরং ওর কাছাকাছি থাকতে চেয়েছে। ধূসর বলল,,

“সরি মিস প্রতিবেশী! সবকিছুর জন্য দুঃখিত। আমি বুঝতে পারি নি। আপনি আমার উপস্থিতিতে বিভ্রান্ত হবেন।”

মেঘ বুঝতে পারলো ধূসরের খারাপ লাগছে। কিন্তু ও কিছু বললো না বরং নিচে চলে গেল। সত্যিই ধূসরের উপস্থিতি ওকে সবসময় বিভ্রান্তই করেছে। তাই আজ মুখের ওপর বলে দিল। হয়তো এটা অসামাজিক কার্যকলাপ হয়েছে। তাতে ওর কি, ও এসবের ধার ধারে না। সবথেকে বড় কথা আব্বা ছাড়া কোন ছেলের সংস্পর্শে সে বিভ্রান্ত হয়। এটা আজ নতুন নয়।

মেঘ চলে যেতেই ধূসর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মতো ভাবতে লাগলো । ওর উপস্থিতি কাউকে বিভ্রান্ত করছে এটা ওর কাছে নতুন। ভার্সিটি তে কোন মেয়ে এটা নিয়ে ওকে বলে নি। বরং কিছু মেয়েরা ওর সংস্পর্শে থাকতে চায়। ও নিজেই কোন মেয়ের কাছাকাছি থাকে নি। কিন্তু এই মেয়েটা অবলীলায় বলে দিল। সব ভেবে ওর মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হলো,,
“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা ” এভাবে কেউ মুখের ওপর সত্যি কথা বলে। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধির সুত্রপাত।

_______________

পরের দিন সকালে মেঘ আজও রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজ বেশ সময় বের করে মেঘ দাঁড়িয়েছে। ধূসর দেখলো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে তবুও আজ কিছু বললো না। ও গাড়ি নিয়ে চলে গেল। এতে মেঘের কিছু যায় আসে না। কিছুক্ষণ পর রিক্সা পেতেই মেঘ চলে গেল নিজের গন্তব্যে। এভাবেই কেটে গেল এক মাস। ধূসর মাঝে মাঝে মেঘ কে দেখতো কখনো ছাদে, কখনো বারান্দায়,কখনো রাস্তায় আবার কখনো নীলির সাথে ওদের বাড়িতে কিন্তু সেদিনের পর ধূসর আগ বাড়িয়ে ওর সাথে কথা বলতে যায় নি। কিন্তু ওর সাথে কথা না বলতে পারা এটা ওকে অনেক ভুগিয়েছে। কিন্তু কেন সেটা ধূসরের জানা নেই। আর মেঘের ওর কোন হেলদোল নেই জীবন চলছে নিজের মতো। আজ মেঘ আর আয়মান চৌধুরী ধূসরদের পরিবার কে দাওয়াত করেছে। কারন এতদিন একটু ভালো রান্না করলেই দিলরুবা খানম ওদের দিয়ে যেত। কিন্তু ওরা বাবা আর মেয়ে তেমন রান্না করতে পারে না। খাওয়ার মতো কিছু রেঁধে খেয়ে নেয়। পনেরো দিন আগে একজন কাজের মেয়ে জোগার করেছে। দু’জনে ভাবলো ওদের দাওয়াত দেওয়া উচিৎ তাই আজকে দিল। যদিও আরেকটা কারনে আজকে দাওয়াত। দুপুর হতেই ধূসরের পরিবার চলে এলো। ধূসর একবার মেঘের দিকে চাইলো ধূসর রঙের থ্রিপিস টায় অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। কিন্তু আবার কি মনে করে দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ তাদের সাদরে গ্রহন করলো। নীলি আজ শ্বশুরবাড়ি তাই ও আসতে পারে নি। মেঘ খাবার রেডি করে সবাইকে ডাকলো। তখন নোলক বলল,,

“আচ্ছা আপু আজ কি উপলক্ষে দাওয়াত?”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

‘আজ আমার আব্বা একটা ডিল সাইন করেছে। এটাই আমাদের কম্পানি খোলার পর প্রথম কাজ। ”

‘কি বললে আমি বুঝলাম না।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“তোমার মাথায় চাপ দিতে হবে না নোলক। ওগুলো বিজনেসের ব্যাপার স্যাপার। তুমি চুপ করে খাও।তা এতকিছু কে রান্না করেছে মেঘ নাকি?”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“না আন্টি আমি তেমন পাকা রাঁধুনি নই। খালা রান্না করেছে আমি শুধু সাহায্য করেছি।”

“ওহ আচ্ছা সমস্যা নেই। রান্না করতে করতে শিখতে পারবে ।এটা বিশাল ব্যাপার না। আমার সাহায্য লাগলে বলো আমি রান্না শিখিয়ে দেব।”

“ঠিক আছে আন্টি।”

তখন মেঘ ধুসরকে দেখলো খাবার নিয়ে নাড়ছে কিন্তু খাচ্ছে না। তা দেখে মেঘ বলল,,

“মিস্টার প্রতিবেশী খাচ্ছেন না কেন? কিছু লাগবে?”

হুট করে মিস্টার প্রতিবেশী শুনে ধূসর ঝটপট মাথা তুললো। এটা ওর কাছে আশ্চর্যজনক ছাড়া কিছু নয়। এদিকে সবাই মেঘের মিস্টার প্রতিবেশী শুনে অবাক হলো। তখন ধূসর বলল,,

‘আসলে মিস প্রতিবেশী অনেক আইটেম তো! তাই কি দিয়ে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। বোঝেনই তো চয়েজ বেশি থাকলে বাছাই করতে কষ্ট হয়।”

তখন নোলক বলল,,

“মিস্টার এন্ড মিস প্রতিবেশী নামগুলো দারুন তো। কে রাখলো?

তখন মেঘ বলল,,

“আসলে নোলক তোমার ভাইয়া প্রথমদিন থেকে আমাকে মিস প্রতিবেশী বলে সম্বধোন করেছে। তাই আমি আর ওনাকে কি বলবো আমিও মিস্টার প্রতিবেশী বলি ।”

তখন ধূসর বলল,,

“তো কি বলবো। প্রথম দিন ওনার সাথে ছাদে দেখা কি বলে ডাকবো? পরে ভাবলাম উনি আমার প্রতিবেশী এটা ধরেই ডাকি। শুধু প্রতিবেশী কেমন যেন তাই সামনে মিস লাগালাম।”

“ওহ আচ্ছা তবে নামগুলো দারুন।”

ওরা সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ি ফিরে গেল। বিকেলে ছাদে ধূসর মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল ওর মনে হচ্ছিল মেঘ আসবে। কারন মেঘ নিয়মিত আসে এই সময়ে ছাদে। কিছুক্ষণ পর এলোও তাই। মেঘ ছাদে আসতেই ধূসর বলল,,

“যার উপস্থিতি আপনাকে বিভ্রান্ত করে। তাকে কি নিজের সম্বোধন দেওয়া নামে ডাকা যায়!”

হুট করে ধূসর কে আর ধূসরের প্রশ্নে মেঘ অবাক হলেও বলল,,

“যাকে তার নাম ধরে কোনদিন ডাকা হয় নি। তাকে কি হুট করে নাম ধরে ডাকা যায়!”

‘আপনার কাছে সবসময় উত্তর রেডি থাকে তাই না।”

” এটা রেডি থাকা উত্তর নয় এটা ফ্যাক্ট। আপনি আজ আমাদের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। আপনার সুবিধা অসুবিধা দেখা আমার দায়িত্ব। আপনি খাচ্ছিলেন না,,তাই কি সম্বোধন করে আপনাকে ডাকবো বুঝতে পারছিলাম তাই এর আগে মিস্টার প্রতিবেশী বলে সম্বধোন করেছি তাই ওটাই করলাম।”

“লজিক টা ঠিক আছে।”

“তা আপনি এখন এখানে কেন? এতদিন তো বিকালে ছাদে দেখতে পাই নি।”

” নিজের কাজে গভীরভাবে ডুবে থাকলে আশেপাশে কিছু খেয়াল থাকে না। আমি তো মাঝে মাঝে ছাদে আসতাম কিন্তু পেছনদিকে থাকতাম এই জন্য বোধহয় দেখতে পান নি। আপনি বিভ্রান্ত হবেন বলে আমার উপস্থিতি জানতে দিই নি।”

‘হয়তো বা!”

“আপনি উপন্যাস পছন্দ করেন?”

“উপন্যাস কে না পছন্দ করে। কিন্তু আপনি শুনে কি করবেন?”

“আপনাকে মাঝে মাঝেই দেখতাম উপন্যাস পরতে তাই জিজ্ঞেস করলাম। তাছাড়া আমার কতোগুলো উপন্যাস এর বই আছে। আপনি পরলে আপনাকে দিতাম আর কি? আমার তো মনে হয় আপনি বইপ্রেমী।”

“সময় কাটানোর বেস্ট ওয়ে হচ্ছে উপন্যাস বা গল্প।”

“মিস প্রতিবেশী আপনি কি পরবেন আমার বইগুলো?”

‘আসলে আমি বই পরলেও সব ক্যাটাগড়ির বই পড়িনা।”

“আমার কাছে প্রিয়তমা বই আছে। ওটা পরবেন বেস্ট একটা বই।

“প্রিয়তমা বইটা পরেছি লাগবে না। আমারও প্রিয় একটা বই।”

‘ওকে আপনি নাম বলুন। দেখি আমার কাছে আছে কি না। যদি না থাকে আমি কালেক্ট করে দেব। নাহয় কিনে আনবো।”

“আমার জন্য এত কষ্ট কেন করবেন?”

“জানি না তবে আমার মনে হয় আপনার ভালো লাগবে। প্রতিবেশী হয়ে যদি প্রতিবেশীকে একটু ভালো লাগা না দিতে পারি তাহলে কিসের প্রতিবেশী।”

বলেই ধূসর হাসলো মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“আপনার কথাগুলো ভালো লাগলেও আমার বই লাগবে না মিস্টার প্রতিবেশী। বলার জন্য শুকরিয়া আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মেঘ চলে গেল। ধূসর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“অদ্ভুত মেয়ে মিস প্রতিবেশী যে জিনিসটা কতজনে চেয়েও পায় না। সেই জিনিস টা সহজে পেয়েও নিল না। ওহো আমি তো ভুলে গেছি আপনি সবাই নন। আপনি আলাদা , আলাদা ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“ধূর উনি যেদিনই ছাদে আসেন। আমার ছাদে থাকা হয় না। উনি তো ওনার নিজেদের ছাদেই থাকে তাই কিছু বলাও যায় না। ভেবেছিলাম আজ একটা উপন্যাস পড়বো কিছুই হলো না।”

“আম্মা কি হয়েছে কি বিরবির করছেন?”

আয়মান চৌধুরীর কথায় মেঘের হুশ ফেরে। ও সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিল আর একা একাই বিরবির করছিল। মেঘ হেঁসে বলল,,

“তেমন কিছু না আব্বা চলুন না একটু ফুচকা খেয়ে আসি।”

“হুম চলুন অনেক দিন হলো আব্বা আর মেয়ে মিলে ফুচকা খাওয়া হয় না। আজ শুধু ফুচকা না আইসক্রিম ও খাবো।”

“ঠিক আছে আপনি দুই মিনিট দাঁড়ান। আমি রেডি হয়ে আসি।”

“ঠিক আছে।”

মিনিট কয়েক পরে মেঘ বোরকা হিজাব নিকাব পড়ে বের হলো। আয়মান চৌধুরী সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়েছিল। মেঘ আসতেই আয়মান চৌধুরীরা বের হলেন। দুজনে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর রিক্সা পেতেই দুজনে উঠে পড়লো। এরপর একটা ফুচকার দোকানে গেল দু’জনে মিলে ফুচকা খেল । কতো জনে ওদের ঘুরে ঘুরে দেখলো ঠিকই কিন্তু তেমন কেউ কাছে এসে কিছু বললো না। তবে একজন যুবক বলল,,

“এই যে কাকু এরকম বয়সে ফুচকা খেতে এসেছেন ভালো কথা। কিন্তু পাশেরটা কে? দেখে তো আপনার থেকে অনেক বছরের ছোট মনে হচ্ছে।”

আয়মান চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে মেঘই বলল,

“কেন ভাইয়া? এ বয়সে ফুচকা খেতে আসা বারন নাকি। সবথেকে বড় কথা আমাকে কি মিন করে কথা বললেন? পাশের টা কে?অনেক বছরের ছোট মনে হচ্ছে। শুনুন কোন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একসাথে ফুচকা খেতে বা রেস্টুরেন্টে গেলে যে সেটা স্বামী স্ত্রী কিংবা আপনাদের সো কল্ড প্রেমিক প্রেমিকা হবে এমন কোন নেই। তারা ভাই বোন ও হতে পারে কিংবা বাবা মেয়ে হতে পারে। অহেতুক প্রশ্ন করে তাদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া আপনাদের মতো লোকদের কাজ নেই তাই না। নিজের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলান ভাইয়া আপনাদের মতো লোকদের জন্য আজকাল ভাই বোনেরা আর বাবা মেয়েরা একসাথে কোথাও যেতে ভয় পায়। ইশশ লোকে যদি আমাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে বসে এই জন্য।”

“মেঘ আম্মা শুনুন!”

“আপনি একদম এর মাঝে কথা বলবেন না আব্বা। এদের কাজ নেই অন্যদের সমালোচনা কিংবা বিশ্লেষণ করা ছাড়া। তো ভাইয়া আমার আব্বাকে কি মিন করে কথা বলছিলেন তার জন্য সরি বলুন। আর হ্যা কাকু মজা করে বলেছেন তাই না তার জন্যও সরি বলুন।”

“আম্মা আপনি থামেন?”

এবার মেঘ একটু চিৎকার করেই বলল,

“আমার আব্বাকে সরি বলুন!”

এবার ছেলেটা তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“সরি আঙ্কেল আসলে আমি বুঝতে পারি নি। সরি আপু।”

মেঘ ওখান থেকে চলে গেল। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ মাথা থেকে নোংরা চিন্তা ঝেড়ে ফেলে একটু পজিটিভ চিন্তা ভাবনা রাখো। তাহলেই জীবনে সুষ্ঠু ভাবে এগুতে পারবে। আসলে এখানে তোমার দোষ কি দেব জেনারেশন টাই এমন। যদি পারো তাহলে নিজের খারাপ চিন্তা গুলো কে মেরে ফেলো। চিন্তা ধারা বদলাও।”

“সরি আঙ্কেল !”

“ইটস্ ওকে আমার মেয়েটা রেগে গেছে বুঝলে কিছু মনে করো না।”

বলে আয়মান চৌধুরী ও চলে গেলেন। সকলে এতক্ষন এদেরকেই দেখছিল। সকলে অবাক সাথে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ। কেউ বোধহয় ভাবতেই পারে নি বাবা মেয়ের সম্পর্ক এমন হয়। এদিকে ধূসর এদিকে এসেছিল ইশানের সাথে দেখা করতে হুট করে এমন কিছু দেখবে ও বুঝতে পারে নি। ধূসর ছিল মেঘদের পাশের চায়ের দোকানে। ইশান বলল,,

“এই রকম মেয়ে এই প্রথম দেখলাম ভাই। প্রথমে তো বাবার সাথে ফুচকা খেতে এসেছে। আবার কেউ ওনার বাবাকে একটু অন্যরকম ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলাতে এই রকম করলো সবার সামনে সরি বলালো।”

“এটাই তো মিস প্রতিবেশীর ক্যারেক্টর। যা সত্যি একদম তাই মুখের ওপর বলে দেবে। এতে মানুষ কি ভাবলো তাতে উনার যায় আসে না।”

“মিস প্রতিবেশী? তার মানে এর কথায় বলেছিলি যে বলেছিল তার বিভ্রান্তির কারন তুই।’

“হুম উনিই মিস কাশফিয়া আয়মান মেঘ ওরফে মিস প্রতিবেশী।”

“ওহ আচ্ছা অবশ্য মেয়েটা ঠিকই বলেছে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ দেখলেই স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকা হতে হবে নাকি। তবে সো কল্ড প্রেমিক প্রেমিকা বললো কেন? মনে হয় ওনার রিলেশনশিপ পছন্দ নয়।”

“উনি বেশ ইসলামিক মাইন্ডের মানুষ। হারাম রিলেশনশিপ ওনার অপছন্দ থাকতেই পারে আমি জানি না। যাই হোক তোর জন্য আজ এটা দেখতে পারলাম শুকরিয়া। তুই ফোন না দিলে আমি তখন বেরুতাম না আর এই দৃশ্যটাও দেখা হতো না।”

“ইটস্ ওকে একা একা ভালো লাগছিল না। তাই ভাবলাম তোকে নিয়ে এখানের চা খাই।”

“হুম!”

দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে গেল ছয় মাস। দুই মাস হলো মেঘ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে । এই ছয় মাসে ধূসরের অবস্থা পাগল পাগল। এই ছয় মাসে ধূসর মেঘের নানকাজের মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়েছে। এই ছয় মাসে কখনো ছাদে দেখা হয়েছে কিন্তু কখনো সেরকম কথা হয়ে উঠেনি। কারন মেঘ তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এসেছে। কখনো কখনো মেঘের অনেক লেট হয়েছে ধূসরের গাড়িতে গিয়েছে কিন্তু সেখানেও কথা হয় নি। একদিন তো ধূসরের গাড়ি থামিয়ে একজন অন্ধকে রাস্তা পার করে দিল যা ধূসরকে আরো মুগ্ধ করেছে। দিলরুবা খানম প্রায়ই মেঘকে ডেকে এনে রান্না শেখান। মেঘ ও মনোযোগ দিয়ে রান্না শিখতো। এখন তো মেঘ পাক্কা রাঁধুনি হয়ে গেছে। সাথে ধূসরদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে। খান বাড়ির সকলেই মেঘকে স্নেহ করে। মেঘ এখন দিলরুবা খানম কে মামনি বলে নোলক রোহিনী কে নিজের বোন মনে করে। এটাই যেন ওর ফ্যামিলি। এর মাঝে একটা সুখবর নীলি প্রেগন্যান্ট তিন মাসের যেদিন প্রথম জানলো ও মা হতে চলেছে। সেদিন মেঘকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। কারন মেঘকে নিয়েই ও ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। এতদিনে ধূসর মেঘের প্রতি কিছু ফিল করতে শুরু করেছে মেঘকে না দেখতে পেলেই কেমন ছটফট করে সবকিছু অসহ্য লাগে। তার জন্য ধূসরের আজকাল আয়মান চৌধুরীর সাথে বেশি থাকছে সুযোগ পেলেই আয়মান চৌধুরীর সাথে এমনভাবে মিশে যায় যেন দুই হারানো বন্ধু। আয়মান চৌধুরী ও এখন খুব ব্যস্ত সময় পার করছে ওনার বিজনেস টা কিছুটা দাঁড়িয়েছে তবে আরো কষ্ট করতে হবে।

ধূসরের মেঘের প্রতি ফিলিংস যেন কমছেই না। বরং বাড়ছে মেঘকে দেখলে মনে হয় কতোটা মুগ্ধতা এসে ভর করে মেঘের মুখে শুধু দেখতেই মন চায়। তাছাড়া মেঘের ব্যক্তিত্ব ধূসরকে সব থেকে টানে। কখনো মেঘ ধূসরের দিকে তাকায় না মুখের ওপর সত্যি কথা বলে দেয়। যেদিন মেঘ একা ছাদে থাকতে চায় সেদিন যদি ধূসর থাকে তবে বলে দেবে,,

“মিস্টার প্রতিবেশী আপনার জন্য আমি এই সুন্দর প্রকৃতির স্বাদ স্বাধীন ভাবে গ্ৰহন করতে পারছি না। আপনি আমায় আজ ও বিভ্রান্তিতে ফেলেন।”

ধূসরের আর কি চোখটা নিচে নামিয়ে সোজা নিজের রুমে। কিন্তু মেঘকে কে বোঝাবে ওর জন্য ছাদে যাওয়া ধূসরের অন্যকিছু তো বাহানা মাত্র। ধূসর ওর মনকে বুঝিয়েছে এগুলো ঠিক না অনেক বার নিজেকে কন্ট্রোল করতে চেয়েছে কিন্তু ও বরাবরই নিজের কাছে ব্যর্থ ।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেভাবেই হোক মেঘকে তার চাই। এই যে ওকে দেখার তৃষ্ণা ওকে তৃষ্ণার্ত করে তুলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। চোখ বুঝলেই মেঘের কর্মকান্ড চোখের পাতায় ভেসে উঠে। না এভাবে আর সম্ভব না ও নফসকে সামলাতে পারছে না। অনুভূতি অন্য দিকে যাওয়ার আগেই ওকে বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ। এতদিন কয়েকবার পরিবার কে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে ও বিয়ে করতে চায় তাড়াতাড়ি বিয়ে করার হাদিস ও শুনিয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।তাই আজ রাতে খাওয়ার পর ধূসর সবাইকে ড্রয়িংরুমে থাকতে বলেছে। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে নীলিও আজ আছে কিছুদিন থাকবে এখানে। ধূসর অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ করে আছে । তা দেখে এহসান খান বললেন,,

“তা কিসের জন্য থাকতে বলেছো?”

ধূসর চোখ তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আসলে বাবা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।”

“কি এমন বলবে যে বুঝতে পারছো না?”

“বাবা আমি জানি না এটা আমার মুখে শুনতে তোমাদের কাছে শোভনীয় মনে হবে কিনা। ওকে ফাইনাল বলেই ফেলি আমি বিয়ে করতে চাই । আমি জানি তোমরা কি বলবে আমি সবে ইন্টার্নি করছি, এখনি কেন বিয়ে করবো। আমি তো ঠিক ভাবে মেয়েটার সব দায়িত্ব নিতে পারবো না। আসলে আমি একজন কে খুব পছন্দ করি তাকে নিয়ে অনুভূতি খারাপ দিকে যাওয়ার আগেই আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।”

হুট করে বিয়ের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে ধূসরকে দেখলো তবে ধূসর আজ নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে। এহসান খান বললেন,,

“না তোমার পড়াশোনা নিয়ে কিছু বলবো না। কারন রিযিকদাতা আল্লাহ তায়ালা। তুমি কিছু করছো না মানে এই না তুমি যাকে বিয়ে করবে তার ভরনপোষন তোমাকেই করতে হবে। সবকিছুর মালিক আল্লাহ এবং রিযিকদাতা ও তিনি। তার বান্দার রিযিক তিনি আগেই নির্ধারন করে রেখেছেন। তাছাড়া তোমার বাবা এখনো মরে যায় নি সে আছে তার ভরনপোষন এর চিন্তা তোমার করতে হবে না। সবথেকে বড় বিয়েশাদী তাড়াতাড়িই হয়ে যাওয়া ভালো এমনকি ইসলামে বিবাহ যোগ্য ছেলে মেয়েদের অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ দিতে বলা আছে। তাই বিয়ের ব্যাপার নিয়েও কিছু বলবো না তোমার ক্ষেত্রে ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্যই কি কয়েকদিন ধরে এতো হাদিস শুনালে বিয়ের আমি সবই খেয়াল করেছি। আমি তোমার সরিসরি মতামত জানতে চাইছিলাম যাতে সরাসরি তুমি আমায় বলো তাই রিয়াক্ট করি নি। এখন বলো মেয়েটা কে?

ধূসর ওর বাবার কথা শুনে লজ্জা পেল। এতদিন বিয়ে করার জন্য সে কম কিছু করে নি। বারবার আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে সে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু এখন যখন ওর বাবা মত দিয়েছে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে তখন অস্বস্তি হচ্ছে কেন যেন এখন। কিভাবে বলবে তোমার বন্ধুর মেয়ে সাথে বোনের বান্ধবী। তবুও ধূসর সাহস যুগিয়ে বলল,

“মেয়েটা কাশফিয়া আয়মান মেঘ। ওরফে তোমার বন্ধুর মেয়ে বাবা।”

এ কথা শুনে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো । কারন সবার কাছের মেঘ স্নেহের পাত্রী। সবথেকে খুশি লেডিসগন কিন্তু এহসান খান মুখটাকে গম্ভীর করে ফেললেন। তা দেখে সকলের হাঁসি গায়েব হয়ে গেল। ধূসর বলল,,

“কি হয়েছে বাবা?”

তখন এহসান খান হেঁসে বললেন,,

“আমিও চেয়েছিলাম মেঘের সাথে তোমার বিয়ের কথা বলতে। কারন মেঘকে আমার খুবই পছন্দ। কিন্তু আয়মান কে কিভাবে বলবো তাই একটু চিন্তিত হয়ে উঠছিলাম। তবে আমার মনে হয় ধূসর আগে তোমার আয়ামানের সাথে কথা বলা উচিৎ। তুমি তার মেয়ের যোগ্য কিনা সেটা তো আয়মানকে পরখ করে নিতে হবে। তাছাড়া তোমার মেঘের মতামত ও তো নিতে হবে।”

“সমস্যা নেই বাবা আমি কালকেই মেঘের আব্বার সাথে কথা বলছি। তারপর মেঘের সাথেও বলবো।

‘এত তাড়া কিসের? একটু সময় নিয়ে করো।”

“তিন মাস ধরে আমি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নাহলে নিশ্চয়ই এভাবে বলতাম না তাও বিয়ের বিষয়ে। আসলে বাবা যদি সত্যি কথা বলি আমি খুব করে মেঘকে চাই। আর খুব খারাপভাবে চাই। এই অনুভূতির ওপর আমার কন্ট্রোল নেই। বরং তাকে নিয়ে আমার যতো পাগলামি।”

ধূসরের কথা শুনে সকলেই হাসলো। তখন নীলি বলল,,

‘ধূর ভাইয়া তুমি যখন মেঘকে নিয়ে এতো ডেস্পারেট তাহলে মেঘকে আমার ভাবি হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

‘আগে মেঘের সিদ্ধান্ত জেনে নিতে হবে ধূসর। কারন তুই ডেস্পারেট হলেও মেঘ যদি রাজি না হয়। তাহলে কিছুই করার থাকবে না।

হুট করেই এমন কথা শুনে ধূসরের ভয় হতে লাগলো। ধূসর তো এটার কথা ভাবেই নি। ও ভেবেছে খুব সহজেই ও মেঘকে পেয়ে যাবে। কারন এ বাড়ির সকলেই মেঘ কে অনেক পছন্দ করে। ধূসর নিজেকে সামলিয়ে ছোট করে বলল,,

“হুম! ঠিক বলেছো। তবে আমি চেষ্টা করবো যাতে মেঘ রাজি হয়।”
_____________

পরের দিন সন্ধ্যায় আয়মান চৌধুরী বাড়ি ফিরলেন। তা দেখে ধূসর কিছুক্ষণ পর আয়মান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে গেল। ধূসর এসেছে দেখে মেঘ ওনাদের নাস্তা দিয়ে রুমে চলে গেল। হুট করে ধূসর বলল,,

“আঙ্কেল একটা কথা বলতে চাইছিলাম?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“বলো কি বলতে চাও?”

‘আসলে আংকেল আমি জানি না কিভাবে শুরু করবো। আমি এটাও জানি না আপনি বিষয়টা কিভাবে নেবেন।”

‘এতো ফর্মালিটি করছো কেন? বলো না কি বলবে?

“আসলে আংকেল আমি বোধহয় মেঘ কে পছন্দ করি। এবং ভালোবাসি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি মেঘকে বিয়ে করতে চাই।”

আয়মান চৌধুরী হেসে বললেন,,

“পছন্দ করো নাকি ভালোবাসো আর বোধহয় টা কি?”

“আমি ওকে পছন্দও করি আবার ভালোবাসি। আপনার সামনে কিভাবে বলবো তাই বোধহয় ব্যবহার করেছি।”

“ওহ আচ্ছা। তোমার কেন মনে হলো তুমি মেঘকে ভালোবাসো। কারন তোমরা তো একেঅপরের সাথে তেমন ভাবে খোলাখুলি কথাও বলো নি।”

“তার সাথে কথা বললেই যে তার ওপর অনুভূতি আসবে এমন টা নয়। এক চোখের দেখায়ও কারো ওপর অনুভূতি অনুভব করা যায়। সত্যি বলতে আপনি ঠিক বলেছেন আমাদের খোলাখুলি কথা হয় নি। তবে তাকে দেখা হয়েছে ,তার কাজ কথা বলার ভঙ্গি, তার আচরন সবথেকে তার ব্যক্তিত্ব যা আমাকে প্রভাবিত করেছে। আমি জানি না এটাকে ভালোবাসা বলে কি না? তবে তাকে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে. তাকে দেখলে চোখটা শীতল হয়ে যায়। মনে হয় সারাদিন তাকেই দেখি। তার সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে। যখন তার মন খারাপ হুট করে আমারও মন খারাপ হয়। সে যখন হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করে তখন তার মাথার ওপর ছাতা ধরতে ইচ্ছে করে। সে যখন বেখেয়ালি ভাবে নিজের অযত্ন করে জীবন যাপন করে। তখন খুব ইচ্ছে হয় তার একটু যত্ন করি তার জীবন টাকে রঙিনভাবে সাজিয়ে তুলি। কারন ধূসর রাঙা মেঘ এর জীবন বড্ড বেরঙিন। আমার খুব ইচ্ছে হয় এই ধূসর রাঙা মেঘকে রঙিন করতে।

এইটুকু বলে ধূসর থামলো। আয়মান চৌধুরী মুগ্ধ হয়ে ধূসরের কথা শুনছিল। এরকম ভাবে তার মেয়ের কথা তাকেই বলছে এটা বেমানান হলেও ধূসর তার জীবন সঙ্গী কে পাওয়ার অবলীলায় বলে দিল। আবার এটাও বলল তার মেয়ের জীবন কে রঙিন করে তুলতে চায়। সে একবার ও বলে নি তার জীবনে সে আসলে এটা করবে ওটা করবে খুব সুখে রাখবে। সে শুধু বলল তার ইচ্ছে করে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘যদি আমি রাজি না হই তো?”

হুট করেই ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো ।সে অসহায় চোখে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো। আর বলল,,

“আঙ্কেল আমি মেঘকে খুব করে চাই । ওর প্রতি আমার অনুভূতি খুব গভীর। প্লিজ এরকম করবেন না। আমি কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে সবসময় অনেক খুশি রাখবো। পৃথিবীর সব সুখ ওকে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর সারাজীবন ওকে আগলে রাখবো।

বলতে বলতে ধূসরের চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। এ যে হারানোর ভয়। বুকটা হাহাকার করছে। আয়মান চৌধুরী ধূসরের চোখে পানি দেখে অবাক হলো। সে তো এখনো কিছু বলেই নি। কিন্তু ছেলেটার চোখ থেকে পানি পরছে। এরকম ছেলে কি সে তার আম্মার জন্য কোনদিন পাবে। আয়মান চৌধুরী ধূসরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,,

“ধূসর আমি তোমাকে শক্ত পোক্ত মানুষ ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি তো দেখি ইমোশনাল ফুল। যে ছেলেটা আমার আম্মাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে তার থেকে আমার আম্মাকে আর কে বেশি ভালোবাসবে? আর তার সাথে আমার আম্মাকে তুলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে কি?”

হুট করেই ধূসরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। চোখে পানি নিয়ে মুখে হাসি এই অনুভূতি আর মুহুর্ত ও না অসম্ভব সুন্দর। ধূসর হেসে বলল,,

“আপনি রাজি আঙ্কেল?”

“হুম আমি আর এহসান তোমাদের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আরো কয়েকবছর আগে কথা বলেছিলাম। তোমরা যদি রাজি থাকো তাহলেই তোমাদের বিয়ে দেব। তাছাড়া তোমার কালকের কথা এহসান আমাকে জানিয়েছিল। ও দেখতে চেয়েছিল তুমি সত্যি মেঘের কথা বলতে আমার কাছে আসো কি না। কিন্তু তুমি দেখি এহসান এর কথা মতো মেঘকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। তুমি তো রাজি এখন দেখতে হবে মেঘ রাজি কি না।”

“আমি এ ব্যাপারে ওনার সাথে কথা বলতে চাই আঙ্কেল?”

“ঠিক আছে তুমি যা মনে করো তাই। যদি আমার আম্মা রাজি হয় তাহলে আমার পক্ষ থেকেও কোন বাঁধা নেই।”

“শুকরিয়া আঙ্কেল আমি আজি ওনার সাথে কথা বলবো। উনি যখন ছাদে যাবে।”

“ঠিক আছে।”

“আল্লাহ হাফেজ আঙ্কেল আমি যাই এখন।”

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”

ধূসর খুশি মনে নিজের বাড়িতে চলে গেল। রাতে মেঘকে কিভাবে বলবে সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেল। এটা একটা কঠিন বিষয়। অতঃপর ধূসর নিজেকে সাহস যুগিয়ে ছাদে গেল। কারন এই সময়টায় মেঘ ছাদে যায়। ধূসর যেতেই দেখলো মেঘ দোলনায় বসে চাঁদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। ধূসর এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আজকের চাঁদ টা সুন্দর তাই না মিস প্রতিবেশী!”

মেঘ প্রথমে ধূসরের কথা শুনে একটু চমকালেও পেছনে তাকিয়ে বলল,,

“চাঁদ বরাবরই সুন্দর!”

“তো চাঁদের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছিলেন বুঝি?”

মেঘ একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার ধূসরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“হুম ভাবছিলাম এই চাঁদ কে নিয়ে কতো ঘটনা আছে। এই যে এতো দূর থেকে পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখছে। অদ্ভুত সৌন্দর্য নিয়ে এই চাঁদ বিরাজ করছে। কতোশত কবিদের লেখকদের কতো শত বর্ননা এই চাঁদ কে নিয়ে। কতো শত প্রেমিক প্রেমিকা কে তুলনা করে এই চাঁদের সাথে। অথচ দিনশেষে একটাই কথা চাঁদের কলঙ্ক আছে। চাঁদের কলঙ্ক আছে তাতেও মনে হয় চাঁদের সৌন্দর্যের কোন ঘটতি নেই। অদ্ভুত সুন্দর এই চাঁদ।

সব শুনে ধূসর বলল,,

“তবে আজকে চাঁদের মাঝে কিছু তো আছে। নাকি আমিই অন্য চাঁদের সাথে গুলিয়ে ফেলছি।”

‘মানে?”

“একটু এগিয়ে আসবেন মিস প্রতিবেশী!”

‘কেন?”

“আসুন না একটু আপনার সাথে একটু কথা আছে।”

মেঘ এগিয়ে গেল তবে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। তখন ধূসর এর হার্টবিট বেড়ে গেল হুট করেই বড্ড ভয় হচ্ছে। ধূসর আর হেয়ালি না করে বলল,,

“মিস প্রতিবেশী আপনি আমার ঘরণী হবেন?”

হুট করে ধূসরের এমন কথায় মেঘ চমকে উঠলো। কি বলছে ধূসর, মেঘ বলল,,

“আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন?”

“আমি বোধহয় আপনাকে ভালোবাসি মিস প্রতিবেশী। আমি আপনাকে আমার ঘরণী করতে চাই। আপনার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়েছে। আমার অজান্তেই আজকাল যা আমাকে বড্ড পীড়া দিচ্ছে। আপনি আমার স্বপ্নে এসে রোজ জ্বালাতন করেন।আমার অনুভূতি কে আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না। এই অনুভূতি কে স্বীকৃতি দিয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”

মেঘ ধূসরের কথা মন দিয়ে শুনলো তারপর বলল,,

“আমার মতো বোরিং পার্সন কে বিয়ে করতে চাওয়ায় কারন?”

“কারন একটাই আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

“বুঝলেন কি করে ভালোবাসেন?”

“জানিনা শুধু জানি আমি আপনার প্রতি আমার অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। আর আপনাকে আমার করে পেতে চাই।”

“দেখুন ধূসর আমার জীবনের প্রতি এক্সটেনশন কম থাকলেও। আমার মনে হয় না আপনার জীবনে আমার মতো এক্সপেক্টেশন নেই। সব মানুষের তাদের লাইফ পার্টনার এর থেকে এক্সটেনশন থাকে। আপনি নিশ্চয়ই আপনার অর্ধাঙ্গিনী কাছে থেকে কিছু আশা রাখেন । আপনি আমার সাথে সুখী হবেন না। কারন আমি সাধারন হলেও আরো একটু বেশিই সাধারন।”

“উহু তুমি সাধারণ নও তুমি একটু বেশিই অসাধারণ।
তুমি শুধু রাজি হয়ে যাও মেয়ে বাকিটা আমি দেখে নেব। আমার সুখ আমি খুঁজে নেব।”

হুট করে আপনি থেকে ধূসরের তুমি শুনে মেঘ অবাক হলেও এখন কিছু বললো না । শুধু বলল,,

“তবুও আমার মনে হয় আমাকে বিয়ে করা আপনার উচিৎ নয়।”

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে তোমাকে বলতে হবে না আমার কি উচিৎ,আর কি উচিৎ নয়। আমার ভালো আমি বুঝি।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে বলছেন আবার বিয়েও করতে চাইছেন।”

“তোমার কর্মকান্ডে নিষ্ঠুর মেয়ে একদম পারফেক্ট উপাধি হয়েছে। কারন তুমি আমার সাথে বারবার নিজের নিষ্ঠুরতা দেখাও। যাই হোক এসব তোমার বুঝতে হবে না। এখন বলো বিয়ে করবে কি না?”

“যদি না করি তো?”

“তোমার আব্বা রাজি আছে তোমায় তুলে নিয়ে বিয়ে করবো।”

‘কি আব্বা রাজি? তার মানে আপনি আব্বার সাথে আগে কথা বলেছেন।”

‘তা নয়তো কি তোমায় নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল তুমি কোন ভাবে যদি না করে দাও।তাই আগে ওনার সাথে কথা বলেছি।”

“আব্বা আমাকে না জানিয়েই রাজি হয়ে গেল এটা আমি বিশ্বাস করি না।”

“তোমার আব্বা বলেছে তুমি রাজি থাকলে তার পক্ষ থেকে বাঁধা নেই এখন বলো রাজি কি না।”

মেঘ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ও নিজের মতো ভাবতে লাগলো। এদিকে ধূসরের ভয়ে বুক কাঁপছে। তবুও আশা রেখেছে ধূসরের বিশ্বাস মেঘ ওর আব্বার কথা শুনে না বলবে না। মেঘ কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল,,

“আব্বা যেহেতু রাজি সেহেতু আমার কোন আপত্তি নেই। ”

বলেই মেঘ নিচে চলে গেল। এদিকে ধূসরের খুশি দেখে কে। ধূসর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠলো। তারপর খুশি মনে গেল সবাইকে জানাতে।

এদিকে মেঘ সরাসরি মেঘের আব্বার রুমে গেল। আয়মান চৌধুরী বোধহয় মেঘেরই অপেক্ষা করছিল। মেঘ গিয়েই বলল,,

“আব্বা আপনার কি মনে হয় আমার এখন বিয়ে করা উচিৎ?”

আয়মান চৌধুরী মেঘের এমন কথায় হাসলেন। সে যে তার বাবা তাতে কোন দেয়াল নেই। সব সরাসরি বলবে কোন ইতস্তত নেই। আয়মান চৌধুরী হেসে বললেন,,

“আপনার এই সময় বিয়ে করাটা পারফেক্ট বয়স বলেই মনে হচ্ছে।”

“আপুর বিয়ে হয় নি তো এখনো, সে আপনার বড় মেয়ে।”

“তার হয় নি কারন সে চায় নি। তাছাড়া আমরা এখন তাদের থেকে আলাদা রয়েছি। আপনি কি রাজি আম্মা। ধূসর ভালো ছেলে আপনাকে খুশি রাখবে ভালো রাখবে।”

“ড্রয়িংরুমের সব কথাই আমি শুনেছি আব্বা। আমি আপনাকে একটা কথা বলতে যাচ্ছিলাম তখন শুনেছি। আপনার যেহেতু কোন আপত্তি নেই আমারও আপত্তি নেই। তবে আমি এখনি সংসার জীবনে পদার্পণ করতে চাই না। আমার কিছুটা সময় লাগবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আপাতত আকদ করে রাখি। পরে না হয় একেবারে আনুষ্ঠানিকতা করা যাবে।”

“ঠিক আছে আব্বা! আপনি যেমনটা ভালো মনে করেন তবে আমি কিন্তু অনুষ্ঠান চাই না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আসলে মেঘ ড্রয়িংরুমে ধূসরের সব কথাই শুনেছে। তার ও ভালো লেগেছে এরকম লাইফ পার্টনার কে না চায়। তবুও ধূসরের সাথে একটু বাক্যল্যাপ করলো। মেঘ দেখতে চাইছিল ধূসর ওকে কিভাবে জানায় আর ওর ব্যাপারে কি মতামত। এদিকে ধূসর গিয়ে সবাইকে জানালো এহসান খান খুশি মনে আয়মান চৌধুরী কে ফোন করলেন এবং ডেট ঠিক করার জন্য কালকে বাড়িতে আসতে বললেন। তিনি মেঘের কথা জানালেন এতে কারো আপত্তি নেই। সামনে শুক্রবার আকদের অনুষ্ঠান রাখা হলো। আয়মান চৌধুরী সমশের চৌধুরী ও মায়মুনা চৌধুরী কে জানালেন কিন্তু তারা কেউ আসবে না বলে জানালেন। মেঘের সম্পর্কে তাদের কোন ইন্টারেস্ট নেই। ধূসর ভিশন খুশি। যেহেতু এখন আকদ হবে সেহেতু তেমন আনুষ্ঠানিকতা নেই। এহসান খান তার কাছের আত্মীয়দের জানালেন তারা আসবে বলে জানালো। মেঘের পক্ষে কেউ নেই তাই আয়মান চৌধুরী মেঘের বান্ধবীদের মেঘের পক্ষে থাকার জন্য বললেন। অতঃপর দেখতে দেখতে সেই কাঙ্খিত দিনের আগমন। সন্ধ্যায় ধূসর আর ধূসরদের আত্মীয় স্বজন এসে পরলো মেঘদের বাড়িতে। ধূসর নরমাল একটা সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরেছে। ধূসর মেঘের জন্য সাদা রঙের শাড়ি হিজাব নিকাব পাঠিয়েছে তাই ওগুলোই পরানো হয়েছে। প্রথমে সাদা রঙের শাড়ি শুনে অনেকে একটু কথা বললেও তখন ধূসর বলে দিয়েছে আমার বউকে আমি যে সাজে দেখতে চাইবো সেটাই সাজবে তাতে অন্য মানুষের কি। তারপর এটা নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি। ধূসরের পাগলামি দেখে ধূসরের পরিবার হেসেছে। অতঃপর মেঘকে আয়মান চৌধুরী নিয়ে এসে ধূসরের পাশে বসালেন। আজ মেঘের অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে। অদ্ভুত আনন্দ দিচ্ছে মেঘকে। তখন ধূসর ফিসফিস করে বলল,,,

“শুনছো নিষ্ঠুর মেয়ে আজ আমাদের বিয়ে!”

মেঘের কি হলো কে জানে? সে মাথানত করে মুচকি হাসলো। আর কেউ না দেখলেও ধূসর দেখলো। মেঘের পাশে আজ ওর আব্বা ছাড়া কেউ নেই। মেঘ এর খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ও প্রকাশ করছে না। আয়মান চৌধুরী মেয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘের হাত ধরলো মেঘ অসহায় চোখে ওর বাবার দিকে তাকালো। তারপর উঠে আয়মান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরলো। দুই ফোঁটা বাবা মেয়ের চোখ থেকে পানি ও গড়িয়ে পরলো। কিন্তু দুজনে নিজেদের সামলিয়ে নিল। অতঃপর তিন কবুলের মাধ্যমে ধূসর আর মেঘ একে অপরের সাথে জড়িয়ে গেল। সবাই আজ ভিশন খুশি সবথেকে বেশি ধূসর। তবে মেঘ খুশি কি না বোঝা যাচ্ছে না। অতঃপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সবাই ধূসর আর মেঘ কে রেখে চলে গেল। আজ ধূসর ওর শ্বশুরবাড়ি থাকবে। মেঘের বান্ধবীরাও থাকবে কারন এ বাড়িতে মেয়ে নেই। আজ নীলি ও মেঘের বান্ধবী হিসেবে মেঘদের বাড়িতে থাকবে। সবাই প্রথমে মানা করলেও নীলির বাচ্চামোর কাছে হার মেনেছে। মেঘ বসে আছে নিজের রুমে ধূসরের জন্য অপেক্ষা করছে। মেঘ আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিল। সাদা শাড়ি আর সাদা হিজাব পরে আছে। নিকাবটা এখন নেই আর মুখে তেমন প্রসাধনী নেই। মেঘ এই দিনটাকে ভাবেও নি কোনদিন। অতঃপর ধূসর মেঘের বান্ধবীদের আবদার মিটিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। রুমে প্রবেশ করতেই বিছানায় সাদা শাড়ি আর হিজাব পরিহিতা মেয়েকে দেখতে পেল । ধূসর সালাম দিল মেঘ সালামের উত্তর নিল। ধূসর এগিয়ে গিয়ে মেঘের দিকে একটা খাম দিল মোহরানার টাকা। মেঘ ওটাকে নিয়ে একটা ড্রয়ারে রেখে দিল। ধূসর বলল,,

“ওযু করে আসো আমরা আল্লাহর শুকরিয়া জানিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো।”

‘আমি ওযু করেই এসেছি জনাব আপনি ওযু করে আসুন।”

ধূসর ওযু করে আসলে দেখতে পেল মেঘ দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে । ধূসর গিয়ে সামনের টায় দাঁড়ালো তারপর দুজনে মিলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লো। রবের নিকট নিজের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয় এই দোয়া করলো অতঃপর সবার জন্য দোয়া করে নামাজ শেষ করলো। মেঘ জায়নামাজ যথা স্থানে রেখে দিলো। ধূসর মেঘের মাথায় হাত রেখে রসুল (সা) এর দোয়া পড়ে ফুঁ দিল। মেঘ মনে মনে হাসলো। সকল কার্যক্রম শেষ। মেঘ এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। অনুভূতিরাও অদ্ভুত ভাবে দলা পাকাচ্ছে। ধূসর মেঘের হাত ধরলো তা দেখে মেঘ একটু চমকে উঠলো। তারপর ধূসরের দিকে তাকালো তখন ধূসর মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,,

“আমার অনেক দিনের শখ বউকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করবো। আমার কাঁধে মাথা রেখে আমার বউ চাঁদ দেখবে আর আমি আমার বউকে।”

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৩+১৪

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

খাওয়া শেষে মেঘ সমশের চৌধুরী কে ওষুধ দিলো। সমশের চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,

“জীবনের এখনো অনেকটা পথ বাকি তোমার। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তোমার সকল মনের আশা পূরণ করুক এবং তোমার ভাগ্যকে খুলে দিক।”

“আমিন দাদুভাই আমিন।”

সমশের চৌধুরী চলে গেলেন। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ ওপরে চলে যেতে নিল তখন ধূসর বলল,,

“মেঘ!”

মেঘ বলল,,

“জি কিছু বলবেন?”

“তুমি তো খাওয়া শেষ করে ওষুধ খাওনি। এটা খাও ব্যাথা কমে যাবে।”

মেঘ ধূসরের হাত থেকে ওষুধ নিয়ে বলল,,

“শুকরিয়া!”

মেঘ ওষুধ খেয়ে হিরদের নিয়ে ওপরে চলে গেল। হুট করে হির বলল,,

“মেঘ তুই কিছু বলবি নাকি ঘুমাবো?”

‘না কিছু বলবো না। সব তোদের জানা। তোদের দুলাভাই ফোন দেবে তোরা ঘুমিয়ে পর।”

তখন লিয়া বলল,

“ধূসর ভাইয়া ফোন দেবে তোকে বলেছে?”

“না বলেনি তবে মনে হয় দেবে।’

তখনি মেঘের ফোন বেজে উঠলো মেঘ বলল,,

“দ্যাখেন মহাশয়ারা!

সবাই হাসলো মেঘ বেলকনিতে চলে গেল। তারপর ফোন দিয়ে বলল,,

“কিছু বলবেন?”

“ফোন ধরেই এটা কোন কথা হলো নাকি। প্রথমে সালাম দিতে হয় তারপর জিজ্ঞেস করতে হয় কেমন আছেন বা কি খবর তা না ধরেই কিছু বলবেন!”

“ওকে আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন ডক্টর? রাতে খাবার খেয়েছেন? আপনি কি হাসপাতালে নাকি বাড়িতে? ঘুমাবেন কখন?

সব শুনে ধূসর থ বনে গেল আর বলল,,

“মাফ করেন ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে আপনাকে ওগুলো বলেছি বলে । যাই হোক ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“হুম আমি জানি আপনি কিছু বলার জন্যই ফোন দিয়েছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম?”

“কিছু প্রশ্ন ছিল?”

“হুম করুন!”

“লোকটা তখন বলছিল কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। এর মানে কি?”

“অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার উনি আর আমি দুজন ব্যক্তির অপকর্ম জানতে পারি। তখন পুরোপুরি লয়ার হইনি আমি। আমরা যে তাদের বিরুদ্ধে জেনে গেছি এমনকি পুলিশের কাছে তাদের তথ্য দেব এটা তারা জানতে পারে। তাই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আগে। তারপর আমার উনিকে ফোন দেয়। তিনি যেন সকল প্রমান দিয়ে তাদের হাতে দিয়ে আমাকে ফেরত নিয়ে আসে। আমার উনি যায় কিন্তু তারা আমাদের সাথে ছলনা করে । মূলত আমাদের দুজনকে একসাথে মারতে চেয়েছিল। তার সামনে আমাকে আঘাত করে এবং তাকেও আঘাত করে। তারপর একটা ঘরে আটকে রাখে ওরা ভাবে আমরা মরে গেছি। কিন্তু আব্বা আমাদের রক্ষা করে আমি ঠিক থাকলেও আমার উনি!!

এইটুকু বলেই মেঘের চোখ ছলছল করে। কি দৃশ্য ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। যতটা সহজভাবে মেঘ বলল তখনকার বিষয়টা মোটেও সহজ ছিল না। দুজনের শেষ কথা একজন আরেকজনকে নিয়ে বাঁচার আকাংখা। এদিকে সব শুনে ধূসরের মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে মেঘের বলা কথাগুলো ধূসর যেন দেখতে পাচ্ছে কিন্তু আবছা। ধূসর কোন রকমে নিজেকে শান্ত করে বলল,,

“তারমানে তোমার উনির সেখানেই ইতি হয় তাইতো।”

মেঘ ছোট করে বলল,,

“হুম!আপনি ঠিক আছেন ডক্টর?”

“হুম একটু মাথা ব্যথা করছে।”

“তাহলে শুয়ে পড়ুন আজ বেশ ধকল গেছে আপনার।”

“দাড়াও না নিষ্ঠুর মেয়ে আমার কথা শেষ হয় নি!”

“আপনিই তো বললেন আপনার মাথা ব্যাথা করছে।”

“আরে তেমন কিছু না ঐ একটু! তোমার সাথে কথা বললেই ভ্যানিস হয়ে যাবে। তুমি গান চালাতে শিখলে কবে।আর ফাইটিং সেটাও তো দেখলাম প্রফেশনালদের মতো।

“সে শিখেছিলাম কয়েক বছর আগে শখ করে কিন্তু এখন কাজে লেগে গেল আর কি। আসলে আমার ফাইটিং শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই ওটা শখ করে শিখেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে আব্বার ওপর অ্যাটাক হয় তারপর থেকে গান চালানো শিখেছি।”

“তোমাদের মনে হয় আগে থেকেই শত্রু আছে তাই না।”

“বিজনেস ম্যানদের আর রাজনীতিবিদ দের শত্রু সবসময় থাকে। এরা না চাইতেও এদের শত্রু হয়ে যায় আর কি। আচ্ছা সেসব কথা বাদ দিন। আর ভালো লাগছে না।

“আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের চাঁদকে দেখেছো তুমি?”

“না এপাশ থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবে রাতের আকাশ দেখতে পাচ্ছি। হালকা অন্ধকার থাকলেও চাঁদের আলোয় এক বিশেষ সুন্দরতা দেখা যাচ্ছে।”

“রাত মানেই অদ্ভুত সুন্দর। তুমি কি বেলকনিতে?”

“হুম!”

“সেইজন্যই দেখতে পাচ্ছো না।”

“আর কিছু বলবেন?”

“শুনো মেয়ে খুব বেশি দিন বাকি নেই!
আমি অধিকার নিয়ে তোমার পাশে থাকবো,
তোমার সাথে চন্দ্রবিলাস করবো,
আমার শহরে তখন থাকবে
আমার একান্ত নিষ্ঠুর মেয়েটার বাস।

লাল গোলাপের সমারোহে,
লাল টুকটুকে শাড়ি পরে নবুবধুর বেশে,
সে আসবে আমার দেশে!
একান্ত আমার মেঘবালিকা হয়ে!

এমনি এক চাঁদ উঠার রাতে!
তোমার হাতে হাত রেখে,
এই আমি প্রেমবিলাশ করবো!
শুনো মেয়ে খুব বেশি দিন বাকি নেই!

ধূসরের কবিতায় মেঘের লজ্জা লাগলো। এ কেমন অদ্ভুত ভয়ঙ্কর অনুভূতি। ইচ্ছে করছে এখনই ধূসরের কাছে যেতে। মেঘ বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,,

“অনেক হয়েছে আল্লাহ হাফেজ!”

“আরে শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে রাখছো কেন? কবিতাটা কেমন হলো বললে না তো।”

“ভয়ঙ্কর সুন্দর! রাখছি এখন!”

“আরে শুনো তো!”

মেঘ খট করে ফোনটা কেটে দিলো। আরেকটু কথা বললে হয়তো ধূসর ভালোবাসি বলেই দিতো। তাই তো মেঘ থামিয়ে দিল। অনুভূতি কন্ট্রোল করা ওর জন্য কঠিন হয়ে যেতো।মেঘ রুমে এসে দেখলো তার তিন বান্ধবী গালে হাত দিয়ে কিছু ভাবছে তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে?”

তখন জাবিন বলল,,

“তুই এসে পরেছিস। আমরা ভাবলাম অর্ধেক রাত কাটিয়ে দিবি।”

“ধূর আমরা কি প্রেমের আলাপ করছিলাম নাকি।’

“প্রেমের আলাপ করো নাই বুঝলাম । কিন্তু ব্লাশিং মুডে কেন তুমি? তোমার মুখ আয়নায় দেখছো।”

মেঘ বুঝতে পারলো এরা ফাজলামো করছে। তবে ও যে সত্যি লজ্জা পেয়েছিল সেটা বুঝতে দেবে না। তাই বলল,

“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পর এখন! আমিও ঘুমাবো।”

বলেই মেঘ একপাশে শুয়ে পড়লো। লিয়া লাইট বন্ধ করে সব বান্ধবী শুয়ে পড়লো হুট করে হির বলল,,

“আকাশ মাহমুদ আর নয়না নিশ্চয়ই জেনে গেছে মেঘ। তুই বেঁচে আছিস ওরা যদি কিছু করে আবার?”

“এখন কি করবে আমি কি আর একা আছি নাকি তোরা সবাই আছিস তো।’

“তবুও আমার ভয় হচ্ছে।”

“ভয় পাস না কিছু হবে না ঘুমিয়ে পর।”

সবাই ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু মেঘের চোখে ঘুম নেই। আজকের সবকিছু ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যদি ওর আব্বার আঘাত লাগতো। আকাশ মাহমুদ আর নয়নাও জেনে গেছে ও বেঁচে আছে। এখন সবাই ওর পেছনে আর ওর পরিবারের পেছনে লাগবে। তাছাড়া ধূসরের স্মৃতি নেই। এই মুহূর্তে একা সব সামলাবে কিভাবে? ভেবে ভেবেই ও ওর মাথা ধরছে।আজ কেন যেন ভয় ও হচ্ছে যা এতদিন হয় নি। এখন ও পুরোনো ধূসরকে খুব মিস করছে যে কিছু হলেই বলতো, মেঘবালিকা আমি আছি তো কিছুই হবে না আমরা সব সামলে নেব। মেঘ মনে মনে বলল,,

“আপনি ফিরে আসুন ধূসর , আপনার মেঘবালিকার আপনাকে ভিশন দরকার।”
___________________

অতঃপর আরেকটা নতুন দিনের সূচনা মেঘ আজ ফজরের আজান কানে যেতেই ঘুম ভেঙ্গেছে । মেঘ সবাইকে ডেকে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল।ভোরে আলো ফুটতেই নিচে এলো। বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো একটু কথাবার্তা বললো। তারপর ভেতরে যেতেই দেখলো সবাই নিচে চলে এসেছে। মেঘকে দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ আম্মা মুনের শ্বশুরবাড়ি যাবেন তো?”

‘না আব্বা যাবো না। আমার একটা কাজ আছে?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এহসানরাও যাবে না। মনে তো হচ্ছে নীলি কিংবা আপনার তিন বান্ধবীও যাবে না।”

“হ্যা ভালোবাবা আমরাও যাবো না।”

“আচ্ছা!”

মেঘরা ওপরে চলে গেল ব্রেকফাস্ট এর সময় ওরা নিচে নামলো। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ যারা মুনের শ্বশুরবাড়ি যাবে না তারা বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাবে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“এহসান ও বাড়িতে না গেলি। এখানে থেকে যা!”

“নারে সময় হবে না। তুই ধূসরকে বলতে পারিস।

ধূসর লিলিকে নিয়ে বসে আছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর তোমার ও কি?”

“আঙ্কেল আমারও কাজ আছে।”

তখনি চৌধুরী বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে একটা ফোন আসলো। আজান ফোনটা ধরলো তারপর বলল,,

“মেঘ আপু তোমার ফোন ?”

মেঘ অবাক হয়ে বলল,,

“আমার ফোন তো আমার ফোনেই দিতে পারতো তাই না ।”

“তোমার নাম্বার নাকি তার কাছে নেই। কোনরকমে ল্যান্ডলাইন নাম্বার জোগাড় করেছে। তোমার সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে নাকি তাই বলবে?”

মেঘ ফোন কানে নিয়ে সালাম দিতেই বলল,,

“ইশশশ কতোদিন পর তোর আওয়াজ শুনলাম!”

“নয়না!”

“যাক চিনেছিস তাহলে শোন তোর সাথে কিছু কথা আছে আকাশের ব্যাপারে। বিশ্বাস কর আমি সেদিন কিছু করতে চাই নি সব আকাশ জোর করে কড়িয়েছে। শুনলাম তুই বেঁচে আছিস। আমি জানি তুই আকাশ কে শাস্তি দিতে পারবি। তাই তোকে ওর সববকথা বলে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো। আমি তোর বাড়ির বাইরে গেটের সামনে আথি।”

“তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে?”তাছাড়া আমি যদি না যাই তাহলে।”

“আমার কাছে সেদিনের প্রমান আছে সেগুলো দিতেই তোর কাছে এসেছি। বিশ্বাস কর আমার অন্য কোন মতলব নেই।

মেঘ যাবে কি যাবে না ভাবতে লাগলো। এই সকাল বেলা কিছু করবে বলে তো মনে হয় না আবার বিশ্বাস ও করতে পারছে না। কি করবে মেঘ বলে দিল ও বাইরে যাচ্ছে। মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে এলো ওনাকে একটু দূরে নিয়ে সব জানালো। তিনি বলল ঠিক আছে তবে এলার্ট থাকতে। কিছু হলে গার্ড আছে বাইরে এখনো। আয়মান চৌধুরী ফোন করে দিলেন তাদের। মেঘ বাইরে চলে গেল মেঘকে যেতে দেখে কিছুক্ষণ পর ধূসর ও দরজার সামনে দাঁড়ালো ওখান থেকে মেঘকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেঘের কথা বলা শেষ হলে ও যাবে ওর সাথে কথা বলতে। ধূসরকে খুব খুশি লাগছে আজ। মেঘ দেখতে পেল গেটের সামনেই নয়না দাঁড়িয়ে আছে। নয়না বলল,,

“থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ তুই এসেছিস। আমি তো ভেবেছিলাম আসবিই না।’

“কি বলবি বল আর কি দিবি দিয়ে তাড়াতাড়ি যা নাহলে ??

মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই কেউ পেছন থেকে মেঘের মাথায় বারি মারলো। মেঘ পেছনে ঘুরতেই দেখলো আকাশ মাহমুদ হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মেঘ একটু সামনে ঘুরতেই নয়না মেঘের পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে বলল,,

“তুই কিছুই করতে পারবি না। যে কাজটা সেদিন করতে পারি নি সেই কাজ টা আজ করলাম।”

সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝতেই পারলো না। এই সবকিছুই ধূসর দেখলো প্রথমে বাড়ি মারাটা না দেখলেও ছুড়ি ঢুকানো টা ধূসর দেখেছে এই সিনটা ও আগেও দেখেছিল আজ যেন স্পষ্ট ও নিজের সর্বোচ্চ চিৎকার দিয়ে উঠলো “মেঘ!” তারপরেই দৌড় দিল। ধূসরের চিৎকারে ভেতরে বাহিরে থাকা সকলেই চমকে উঠলো। ততক্ষনে নয়না আরেকটা ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে। ওরা পালাতে যাবে এমন সময় আয়মান চৌধুরীর গার্ড রা ওদের ধরে ফেলল ওরা ভাবতেও পারে নি এভাবে ধরা পরে যাবে। ভেবেছিল বাড়ির বাইরে থেকে মেরেই চলে যাবে‌। কাল রাতে এটাই প্ল্যান করেছিল নিজেরাই মারবে তাই তো দু’জনে বাইক নিয়ে এসেছিল। মেঘ মাটিতে পড়ে গেল মেঘের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ও নিভু নিভু চোখে দেখলো ধূসর দৌড়ে ওর দিকে আসছে। ধূসর এসেই মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর চিৎকার করে বলল,,

“মেঘ বালিকা কিছু হবে না তোমার। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো। কিছু হবে না তোমার আমি এখনি হাসপাতালে যাবো। ভাইয়া গাড়ি বের করো। কে কোথায় আছো কেউ গাড়ি নিয়ে আসো।

ধূসর মেঘকে কোলে তুলে নিলো। আর গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। ধূসরের চিৎকারে সবাই বেরিয়ে এসেছে আয়মান চৌধুরী মেয়েকে এভাবে দেখে থমকে গেলেন। মেঘ হাত দিয়ে ধূসরের মুখে হাত রাখতেই ধূসর থেমে গেল। তখনি দিশান গাড়ি নিয়ে এলো। হির গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল। ধূসর ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো হির আর লিয়াও উঠলো। দিশান যত দ্রুত পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। মেঘের চোখ নিভু নিভু ও অদ্ভুত দৃষ্টিতে ধূসরকে দেখছে। ধূসর ওকে জড়িয়ে ধরে আছে ধূসর কান্না মাখা কন্ঠে বলল,,

“মেঘবালিকা খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।আরেকটু আমরা হাসপাতালে এসে পরেছি তুমি চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো।”

মেঘ অনেক চেষ্টার পর ধূসরের মুখে হাত রাখলো। ধূসর ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো স্থির ভাবে। মেঘ কষ্ট করে বলল,,

“আপ,পনি সে ্সেদিন জানতে চেয়েছিলেন না আমার উনির এর নাম কি? আমার উনির নাম ধূসর এহসান শুভ্র। আপনি সেই ব্যক্তি ধূসর। আপনার নামে কতগুলো চিঠি আছে ধূসর আমার আলমারিতে ওগুলো পরে নিয়েন ধূসর।”

মেঘ আর কোন কথা বলতে পারলো না ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ধূসর বলল,,
মেঘবালিকা তোমার ধূসর তোমার কিছুই হতে দেবে না।

ততক্ষনে ওরা হাসপাতালে পৌঁছে গেল ধূসর মেঘকে কোলে নিয়ে ছুটলো ভেতরের দিকে‌। মেঘকে ভেতরে নিতেই ধূসর মেঘের প্রাথমিক কাজ ধূসর করলো। ততক্ষনে লেডি ডক্টরকে খুঁজতে বলল হিরদের। কিছুক্ষণ এর মধ্যে লেডি ডক্টর পেলে ধূসর বাইরে চলে আসে এতক্ষন ওর মেঘবালিকা কে দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু ওর মেঘবালিকাকেও তো সাপোর্ট দিতে হবে। ধূসর ধপ ওখানে থাকা বেঞ্চে বসে পড়লো দিশান তাড়াতাড়ি করে ভাইয়ের কাছে গেল। ধূসর কোন কথা বলছে না। এক দৃষ্টিতে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি চৌধুরী বাড়ির সকলে আর ধূসরদের পরিবার এলো। আয়মান চৌধুরী ধূসরের কাছে গিয়ে বলল,,

“ধূসর আমার মেয়ে?”

ধূসর এবার মাথা তুলে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“চিন্তা করবেন না আব্বা। আপনার মেয়ে অনেক স্ট্রং ওর কিছুই হবে না। আমার মেঘবালিকা আমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না।”

বলতে বলতে ধূসরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর আয়মান চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আব্বা আপনার মেয়ে এত নিষ্ঠুর কেন? দেখেন না আজই আমার সব মনে পড়লো অথচ আপনার মেয়ে আজই আমার থেকে দূরে যেতে চাইছে। জানেন সেদিন ও বিবাহিত জানার পর ওর হাজবেন্ড এর কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিন ও বলে নি আব্বা। কিন্তু আজ যখন ওকে রক্তাত্ব অবস্থায় নিয়ে আসছিলাম। তখন আমার গালে হাত রেখে বলেছে আব্বা। আমার উনির নাম ধূসর এহসান শুভ্র। সেই ব্যক্তিটা আপনি ও নাকি আমাকে চিঠি লিখেছে কতোগুলো সেগুলো পরতে বলেছে আব্বা। আপনার মেয়েটা এমন কেন আব্বা?”

ধূসর বাচ্চাদের মতো শ্বশুরকে ধরে কেঁদে উঠলো। ধূসরের পরিবার বুঝতে পারল ধূসরের স্মৃতি ফিরে এসেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ খুশি হতে পারছে না। মেঘের পরিবার অবাক তার মানে এই ধূসরই মেঘের হাজবেন্ড। কিন্তু ওদের জানালো না কেন? ধূসর কে কাঁদতে দেখে সকলেই অবাক। আয়মান চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি পরছে।এমনকি কেউ কোনদিন দেখেছে স্ত্রীর জন্য শ্বশুর কে জড়িয়ে ধরে কেউ কাঁদছে। কিন্তু ধূসর কাঁদছে তার অর্ধাঙ্গিনী তার মেঘবালিকার জন্য। আয়মান চৌধুরী ধূসরকে ছাড়িয়ে নিজের চোখ মুছে বলল,,

“তুমি না একটু আগে বললে আমার মেয়ে স্ট্রং ও তোমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না। এমনকি আমি বলছি মেঘ ওর আব্বাকে ছেড়ে যেতেই পারে না কিছু হবে না মেঘের দেখো তুমি। আল্লাহ ভরসা। একদম কাঁদবে না। মেঘ সুস্থ হয়ে যখন জানতে পারবে তুমি আর আমি কেঁদেছি তাহলে কিন্তু রেগে যাবে। তুমি তো জানো আমাদের দুঃখ কষ্ট তার সহ্য হয় না।”

আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে ধূসর চোখ মুছে ফেললো। এহসান খান ছেলের পাশে বসলেন। ধূসরের কাঁধে হাত রেখে সাহস দিলেন। ধূসর খুব শক্ত করে আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে রাখলো কারন সে জানে তার প্রিয়তমার আব্বার ভেতরে কি চলছে। আয়মান চৌধুরী ধূসরের দিকে তাকালো। দিশান আয়মান চৌধুরীর পাশে বসলো। আয়মান চৌধুরীর এরাই তো ভরসা সবাই যখন হাত ছেড়ে দিয়েছিল এই ওরাই তাকে কাঁধ দিয়েছিল আজ ও তাই। তখন একজন নার্স বলল ,,
মেঘের অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে তাই রক্ত লাগবে। নীলিমার আর মেঘের ব্লাডগ্ৰুপ সেইম তাই নীলি তাড়াতাড়ি করে বলল তার আর মেঘের ব্লাডগ্ৰুপ সেইম সে নার্সের সাথে চলে গেল। অপারেশন শেষ হলে সবার আগে ধূসর গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়ালো। এতক্ষন সে আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আর মনে মনে দোয়া করছিল আল্লাহ তায়ালা যেন ওর মেঘবালিকা সুস্থ করে দেয়। আয়মান চৌধুরী ও তাই। বাকিরা এতক্ষন শুধু ওদের দুজনকেই দেখে গেছে। কি অদ্ভুত বন্ধুত্বের মিষ্টি সম্পর্ক এদের। ডক্টর বেরুলেই ধূসর বলল,,

“ডক্টর আমার মেঘ ঠিক আছে তো। ওর জ্ঞান ফিরবে কখন?”

তখন ডক্টর বলল,,

“ডক্টর শুভ্র আপনি নিজেও একজন ডক্টর। অপারেশন সাকসেসফুল কিন্তু আপনি ভালো করেই জানেন এখন পেশেন্টের অবস্থা কিরকম।আমরা কোন মিথ্যা আশা দিতে চাই না। প্রথমত ওনার মাথায় খুব জোড়ে লাঠি টাইপ কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তারপর পেটে পরপর দু’বার ছুড়ি দিয়ে গভীর ভাবে আঘাত করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। পেশেন্ট এর অবস্থা ক্রিটিকাল। অপারেশন সাকসেসফুল হলেও যদি ৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফেরে তাহলে আমাদের হাতে কিছুই থাকবে না। এখন আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ভরসা দোয়া করুন এই ৭২ ঘন্টার মধ্যে যেন পেশেন্টের জ্ঞান ফেরে। এক্সকিউজ মি!

বলেই ডক্টর চলে গেল। ধূসর মাটিতেই ঠপ করে বসে পরলো। আর বিরবির করতে লাগলো,,

‘নিষ্ঠুর মেয়ে তুমি আমকে এভাবে একা রেখে যেতে পারো না। এখনো অনেক পথ বাকি তোমার সাথে চলার। তুমি এভাবে নিষ্ঠুরতার প্রমান দিতে পারো না। তোমাকে ফিরতে হবে মেঘ তোমার ধূসরের কাছে। তোমার ধূসর তোমার অপেক্ষায় নিষ্ঠুর মেয়ে।”

ধূসর এতক্ষন আয়মান চৌধুরীর কাছে ছিল বলে দিলরুবা খানম আর যায় নি। ছেলেকে মেঝেতে বসতে দেখে তিনি গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। ধূসর আবার কেঁদে উঠলো মাকে জড়িয়ে। ভেতরটা হাহাকার করছে। আয়মান চৌধুরী মনে হয় থমকে গেলেন। এহসান খানের কেমন যেন সন্দেহ হলো তিনি আয়মান চৌধুরী কে ধাক্কা দিতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। সবাই এরকম অবস্থায় হকচকিয়ে উঠলো। ধূসর এ অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে আয়মান চৌধুরী কে চেক করলো। আয়মান চৌধুরীর মাইনর অ্যাটাক হয়েছে । ধূসর তাড়াতাড়ি করে তাকে একটা কেবিনে গিয়ে ডাক্তারি কার্যক্রম শুরু করলো। মাইনর অ্যাটাক ছিল বলে তেমন কিছু হয় নি। ধূসর সেলাইন দিয়ে বের হলো। মুহুর্তেই পরিবেশ টা কেমন গুমোট হয়ে গেল। মেঘের জন্য চৌধুরী পরিবারের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখা গেলেও আয়মান চৌধুরীর জন্য পরিবেশ টা ভারী হয়ে উঠলো। সমশের চৌধুরী আর বাচ্চাদের কে বাড়িতে রেখে আসা হয়েছে জাহানারা চৌধুরীর কাছে। তাছাড়া বাড়ির আর কোন ছেলে আসেনি সবাই বাড়িতেই। তারা এখানে কি হচ্ছে তা সম্পর্কে অবগত নয়। নাহলে নিশ্চয়ই সমশের চৌধুরীর আজ কিছু একটা হয়ে যেত। মায়মুনা চৌধুরী কেঁদে উঠলেন দিলরুবা খানম কাকে রেখে কাকে সামলাবে বুঝতে পারলে না। তবুও তিনি মায়মুনা চৌধুরীর কাছে গেলেন তাকে শান্তনা দিতে। এদিকে মেঘের বান্ধবীদের অবস্থা আরো খারাপ সব কয়টা কেঁদে কেটে অস্থির। একে অপরকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। সবার এতো হাহাকারে হাসপাতাল ভারী হয়ে উঠলো সবাই করুন চোখে মেঘের পরিবারদের দেখেছে হয়তো এর আগে কোন স্বামী এমন ভাবে কাঁদে নি। বা কারো হার্ট অ্যাটাক ও হয় নি। ধূসর আয়মান চৌধুরী কে রেখে বের হওয়ার পর চুপচাপ হয়ে গেছে। ও ডক্টরের সাথে কথা বলল মেঘের সাথে দেখা করতে পারবে কি না। আজকে কাউকে দেখা করতে দেবে না। কিন্তু ধূসরের জোরাজুরিতে রাজি হলো। তবে সেফটি দিয়ে ধূসর জামাকাপড় চেন্জ করে মেঘের কাছে গেল। মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ক্যানেলা স্যালাইন রক্ত দুটোই চলছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক ভারী নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেঘ। ধূসর প্রথমে মেঘের কপালে একটা চুমু খেল আজ আর কোন বাঁধা নেই। মেঘের হাত ধরে ধূসর বলল,,

“জানো মেঘবালিকা তুমি দুজন মানুষের খুব কাছের। যারা তোমাকে ছাড়া তাদের জীবন ভাবতে পারে না। তাদের জীবনে এখন খুব খারাপভাবে তোমাকে চায়। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া তোমার আব্বা কতটা অসহায়। আমিও তো অসহায় তুমি জানো তোমার ধূসরের সব মনে পরেছে। এখন আর তোমাকে অভিনয় করতে হবে না অপরিচিত এর মতো। তুমি ফিরে আসো তোমার ধূসরের কাছে। তারপর আমরা আমাদের জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ করবো। এবার তো আমাদের বাবুও নিতে হবে। একটা ছোট্ট ধূসর নাহলে ছোট্ট মেঘ আসবে আমাদের জীবনে। কিন্তু আমার তো একটা ছোট্ট মেঘ চাই। তুমি কথা দিয়েছিলে তোমার পড়াশোনা শেষ হলে আমরা বেবি নেব। তোমার কিন্তু পড়াশোনা শেষ এবার আমার ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। তুমি কি ভাবছো তোমার ধূসর বোকা তাই না। এই সময় দাঁড়িয়ে কিভাবে এগুলো বলছি। আমি বলছি কারন তুমি ফিরবে আমি জানি তোমার ধূসরের কাছে। তাইতো আগে থাকতেই বলছি।

কথা বলতে বলতেই ধূসরের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো তবুও যেন কন্ট্রোল করতে পারছে না। ও কান্না মাখা কন্ঠে বলল,,

“মেঘবালিকা এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না। তোমার ধূসর যে তোমার অপেক্ষায়। ফিরে এসো তোমার ধূসরের নীড়ে।”

ধূসর আর সহ্য করতে পারলো না,বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে ড্রেসচেন্জ করলো। ওর মনে পড়লো মেঘ চিঠির কথা বলছিল। ও সবাইকে বলে চৌধুরী বাড়িতে গেল কেউ কিছু বলে নি। ধূসর মেঘের রুমে ঢুকলো আলমারিটা লক করা নেই তা দেখে একটু অবাক হলো। আলমারি খুলতেই একটা ব্যাগ দেখতে পেল। ব্যাগের ওপরে লেখা মেঘের ডাকবাক্স । ধূসর ব্যাগটা হাতে নিল তারপর সেটা নিয়ে বেরিয়ে সেই নির্জন লেকের পারে গেল। ব্যাগটা নিয়ে বেঞ্চে বসলো ব্যাগটা খুলতেই প্রায় তিনশ’খানেক চিঠি পেল। চিঠির ওপর নাম্বার লেখা আর তারিখ দেওয়া। ধূসর খুঁজে এক নম্বর চিঠিটা বের করলো। ধূসরের হাত কাঁপছিল ও খুলে পরতে লাগলো,,

প্রিয় একান্ত নিষ্ঠুর পুরুষ,,

প্রিয় বলছি আবার নিষ্ঠুর ও বলছি বলে অবাক হলেন বুঝি। প্রিয় বলছি কারন আপনি সর্বদা আমার প্রিয়ই ছিলেন। আর নিষ্ঠুর পুরুষ বলছি কারন আপনি আপনার নিষ্ঠুরতার প্রমান দিয়েছেন। আচ্ছা বাদ দিন আপনার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা। না মনে নেই আপনার। এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে মনে নেই ধূসর। এতটা পথচলা আমাদের। আপনি যখন বললেন কে আপনি তখন ইচ্ছে করছিল,গলা কাটা মুরগির ছটফটানি দেখেছেন কখনো ধূসর। এই যে আপনি যে কথাটা আমাকে বললেন সেটা শুনে আমার বুকেও যেন সেইরকম ছটফটানি শুরু হয়েছে। ভেবেছিলাম আপনি সবসময় আমার আব্বার মতো আমার সাথে থাকবেন আপনি কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি আপনার কথা রাখেন নি। আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। আচ্ছা এবার যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে কি আপনি বলবেন, মেঘ তুমি ভিশন নিষ্ঠুর। না সেটাও বলবেন না কারণ আপনার তো আমাকে মনেই নেই।

~ইতি আপনার মেঘবালিকা

চিঠিটা পরে ধূসর চোখ বন্ধ করে বলল,,

আমার আজ সব মনে আছে মেঘবালিকা। কিন্তু আজ আমি তোমার হাত আকরে ধরে আছি। তুমি আমায় ছেড়ে যেও না, নিজের নিষ্ঠুরতার প্রমান দিও। সবসময় আমার সাথে থেকো আমার মেঘবালিকা হয়ে। কি বললে আমাদের প্রথম দেখা মনে আছে কি না আমার সব মনে আছে মেঘ। সেই শ্যামবতী মেয়ে শীতের প্রথম বৃষ্টি।

অতীত,,

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ছয় বছর আগে,,

বৃষ্টির ভেতরে শুনশান লেকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি অনুভব করছিল একটা মেয়ে। হুট করে বৃষ্টির ফোঁটা তার ওপর না পরতেই মেয়েটা বুঝতে পারে তার পাশে আলাদা মানুষের অস্তিত্ব। চোখ খুলে ওপর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় একটা কালো ছাতা। পাশে তাকাতেই দেখতে পায় একজন সুদর্শন সাদা শার্ট পরিহিত পুরুষ ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা তাকাতেই ছেলেটা হাসলো। হেসে ছেলেটা বলল,,

“শুনশান লেকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বৃষ্টিবিলাস করছিলেন বুঝি। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না। কারন বৃষ্টিবিলাস করলে কেউ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে না। হাত মেলে লাফালাফি করে বৃষ্টিকে অনুভব করে।মনে হলো বৃষ্টিবিলাস করছেন না তাই ছাতাটা নিয়ে এলাম। শীতের সিজনের প্রথম বৃষ্টি এখন ভিজলে ঠান্ডা জ্বর আসতে পারে মিস।”

এই প্রথম কোন ছেলের এতটা কাছে দাঁড়িয়ে মেয়েটার অদ্ভুত অনুভূতি হলেও প্রকাশ করলো না। সে ছাতা থেকে বেরিয়ে এসে একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো তারপর বলল,,

“সবার সব অনুভূতি যে একরকম ভাবে প্রকাশ পাবে তেমন টা নয়। সবার একরকম অনুভব হলেও প্রকাশটা আলাদা হতে পারে। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে হাত মেলে লাফালাফি করলে বুঝি শুধু বৃষ্টি বিলাস হয়। প্রকৃত পক্ষে সেটাকে বৃষ্টি বিলাস বলে না। ওটাকে বৃষ্টির মজা নেওয়া বলে। বৃষ্টি বিলাস মানে হলো বৃষ্টি কে অনুভব করা। বৃষ্টির সতেজতাকে অনুভব করা। সেটা যে বৃষ্টির মধ্যে থেকেই করতে হবে তেমনটা নয়। অনেকে শুধু হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁয়েও বৃষ্টিবিলাস করে। সব শেষে বলবো যেখানে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে সেখানে আপনার আসা মোটেও উচিত হয়নি এবং শুভনীয় দেখাচ্ছে না। এখন আপনি এখান থেকে চলে গেলে আমি খুশি হবো।”

ছেলেটার মেয়েটার প্রথমের কথাগুলো মুগ্ধ করলো। কিন্তু পরের কথা গুলো অন্যরকম অনুভূতি দিল। সত্যিই হয়তো উচিৎ হয় নি। ছেলেটা বলল,,

“আপনার পার্সোনাল স্পেস নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি ডাক্তারি পরি। এই সময় বৃষ্টিতে ভিজলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এটা ভেবে এই জন্যই এসেছি। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো গাড়ি পাচ্ছিলেন না। তাই এভাবে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছেন। সত্যি আমি দুঃখিত।”

মেয়েটা একবার ছেলেটার দিকে চাইলো। না দেখে অন্যকিছু মনে হচ্ছে না। এবং এখন ছেলেটার দৃষ্টিও নত করে রেখেছে যা দেখে মেয়েটার ভালো লাগলো। নিজের দিকে একবার তাকালো বৃষ্টিতে ভিজে বোরকার অবস্থা বেহাল তবুও বাতাসের জন্য একটু পায়ের সাথে বাড়ি খাচ্ছে। মাথায় হিজাব আছে তবে নিকাবটা খুলে রেখেছে। মেয়েটা বলল,,

‘এই টুকু ভেবেছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনি যেতে পারেন আমার গাড়ি এখানেই আছে। আমি একটু বৃষ্টিতে ভিজছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা আপনার নাম কি?”

নাম জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে বলল,,

” আমার নাম জানা কি? আপনার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।”

‘আপনার মতো এমন ব্যাক্তিত্বের মানুষ প্রথম দেখলাম তাই আর কি। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে নামটা বলতে পারেন। আর আপনি না চাইলে না ও বলতে পারেন আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছে।”

ছেলেটার কথা শুনে মেয়েটার অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা হেসে বলল,,

“আমার নাম কাশফিয়া আয়মান মেঘ!”

‘বাহ মাশাআল্লাহ সুন্দর নাম তো। আপনার নাম মেঘ দেখেই বৃষ্টির সাথে আপনার এতো গভীর সম্পর্ক। আমার নাম ধূসর এহসান শুভ্র। তাহলে আমি আসি। ভেবেছিলাম আপনার ছাতাটা প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম প্রয়োজন নেই। আল্লাহ হাফেজ।”

‘আল্লাহ হাফেজ!”

ধূসর চলে গেল। মেঘ একবার তাকিয়ে দেখলো এখন মেঘের ঠান্ডা লাগছে। ও গাড়িতে উঠে বসলো গাড়িটা ও নিজেই ড্রাইভ করে এসেছিল। ধূসর দুপুরবেলা ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি হচ্ছে বলে রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। গাড়ি চালানোর সময় হুট করেই নজর যায় একটা লেকের ভেতর খোলা আকাশের নিচে কালো বোরকা পরিহিত এক মেয়ের দিকে। সে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। ধূসরের মনে হলো এই বৃষ্টির জন্য বোধহয় গাড়ি পাচ্ছে না তাই একটু ভেতর দিকে গিয়ে ওভাবে রাস্তার উল্টোমুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ও একটা ছাতা নিয়ে গেল ভাবলো সাহায্য করবে । ধূসর একটু কাছে যেতেই দেখলো মেয়েটা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে তাই কোন কথা না বলেই তার ওপর ছাতা ধরলো। গাড়ির ভেতর বসে এটাই ভাবছিল। সব ভাবনা শেষ করে ধূসর বলল,,

“অদ্ভুত রহস্যময় একটা চরিত্র মেয়েটা।তবে আলাদা সতেজতা আছে ওনার ভেতর। কি স্নিগ্ধতা ফুটে উঠেছে বৃষ্টির ফোঁটায়। ছাতা ধরলাম অথচ সে ছাতা না নিয়েই ছাতা থেকে বেরিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। এরকম মানুষ আমি একটাও দেখিনি বৃষ্টির মধ্যে ছাতার ভেতরে না থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে। তাছাড়া ওভাবে বৃষ্টির মধ্যে কে দাঁড়িয়ে থাকে হাত ভাঁজ করে।

আমিও না কি বলছি? উনি তো বললোই সবার সব অনুভূতি যে একরকম ভাবে প্রকাশ পাবে তেমন টা নয়। তবে মেয়েটার কথার গভীরতা বেশ। ব্যক্তিত্বটাও অনেক সুন্দর। আচ্ছা আমি ওনার খুব কাছাকাছি আছি বলেই কি উনি সরে গেলেন। এটাই হবে দেখে মনে হলো বেশ ইসলামিক মাইন্ড এর। আমি একটা ছেলে ওনার কাছাকাছি আছি এটা ওনার পছন্দ হয় নি। আর এটা ঠিক ও নয়। না উনার কাছে উনি ঠিক আছেন আমার উচিত হয় নি ওনার এত কাছাকাছি যাওয়া। এটা ভুলে গেলে চলবে না,,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৫)।

_____________

মাঝে কেটে গেল বেশ কয়েকটি মাস। মাঝে মাঝে ধূসরের হুট করেই মেঘের মুখটা সামনে আসে। এর কারণ ধূসর জানে না তবে ধূসর খুব করে চায় মেঘের মুখটা যেন না আসে। একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ি যেতেই দেখলো ওর পুরো পরিবার ড্রয়িংরুমে সাথে ওর বাবার পুরোনো বন্ধু ও একটা মেয়ে। ধূসর গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“এই সময় তোমরা সবাই বাড়িতে?”

তখন এহসান খান বললেন,,

“আয়মান আমাদের পাশের বাড়িতে উঠেছে আজই। দুপুরে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছি। তাই চলে এলাম অফিস থেকে।”

“ওহ আচ্ছা!”

” হুম আর ধূসর ও হচ্ছে মেঘ আয়মানের মেয়ে।”

তখন নীলিমা বলল,,

“আরেকটা পরিচয় আছে ভাইয়া মেঘ হলো বেস্ট ফ্রেন্ড।”

মেঘ শুনেই ধূসর একটু এগিয়ে গেল আর গিয়ে কাঙ্খিত মানুষটাকেই দেখতে পেল। তবে ও বুঝতে দিল না ও মেঘকে চিনতে পেরেছে। ও শুধু বলল,,

“ওহ আচ্ছা! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি মা খাবার বাড়ো খুব খিদে পেয়েছে।”

ধূসর ওপরে চলে গেল। মেঘ একবার আড় চোখে ধূসরের দিকে তাকিয়েছিল। এখন চুপ করে বসে আছে। নীলিমা মেঘকে কতোকিছু বলছে মেঘ শুধু হু হা করছে। নীলিমা উঠে নোলকের সাথে আর রোহিনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তখন রোহিনীর নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আর নীলির একবছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে। দিলরুবা খানম কতক্ষন ধরে মেঘকে পর্যবেক্ষন করছিলেন ।মেঘের অস্বস্তি হচ্ছে তাই তিনি বললেন,,

“মেঘ তুমি কি অস্বস্তিবোধ করছো?”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“তেমন কোন ব্যাপার না আন্টি।”

তখন নীলি বলল,,

“আহ হা মা তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটা গম্ভীর বান্ধবী আছে। যার সাথে আমি জোর করে সম্পর্ক করেছি সেই খারুস বান্ধবীই হলো মেঘ। কারো সাথে আগ বাড়িয়ে কথা তো বলেই না উল্টো ওর কানের কাছে সারাদিন বকবক করলেও হু হা ছাড়া আর কিছু বলে না।”

দিলরুবা খানম মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের গালে হাত রেখে বলল,,

“তোমার ধৈর্য্যের প্রসংসা না করে পারছি না। আমার মেয়ের এতো বকবক সহ্য করো কিভাবে? আমি তো শুনেছি আমার মেয়ের আরো তিনটা বাঁচাল বান্ধবী আছে। আর তুমি এদের চারজনের বকবকই মন দিয়ে শুনো।”

তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“যখন কারো বলার মতো কোন গল্প থাকে না। তখন সামনের মানুষটার গল্প মনোযোগ দিয়ে শোনা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না। তাছাড়া ওদের গল্প শুনতে মন্দ লাগে না। তবে হ্যা আমি বেশ মনোযোগী শ্রোতা এটা বলতে পারি।”

মেঘের এমনকথা শুনে দিলরুবা খানম কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। এইটুকু একটা মেয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে তার বলার মতো কোন গল্পই কি নেই। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা এদিকে আসুন চলুন বাড়ি যাই।”

“হুম আব্বা চলুন। আন্টি আমাদের বাড়িতে যাবেন। ভাবি নোলক আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো আপনারাও যাবেন। আর নীলি তোকে তো আর বলতে হবে না ইচ্ছে হলেই চলে যাস।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

‘আরে আয়মান ভাই দাঁড়ান আমি পায়েস রেঁধেছি। ওটা তো আপনারা তখন খেলেন না এখন খেয়ে যান।”

তখন এহসান খান বললেন,,

‘দিলরুবা যাও পায়েস নিয়ে এসো ওরা বসছে। আর আয়মান তোর ভাবির পায়েস খাসনি মানে তার বেস্ট রান্নাই খাস নি।”

দিলরুবা খানম হেঁসে চলে গেলেন। আয়মান চৌধুরী ও হেসে বসে পড়লেন বন্ধুর পাশে। তখন ধূসর এলো নিচে দিলরুবা খানম মেঘদের ড্রয়িংরুমে পায়েস দিয়ে ছেলের জন্য খাবার বেড়ে দিলেন। ধূসর খাচ্ছে আর আড়চোখে মেঘকে দেখছে। মেঘ খেয়াল করলো। অতঃপর পায়েস খাওয়া শেষ হলে ওরা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। খাওয়া শেষে ধূসর নীলির পাশে বসে বলল,,

“তোর বান্ধবীকে তো কোনদিন এ বাড়িতে দেখলাম না। কেমন বান্ধবী তুই? যে এখনো বান্ধবীদের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াতে পারলি না।”

‘আরে ভাইয়া ওদের সবার আচরণ আলাদা হলেও। কিছুক্ষেত্রে একইরকম আমি কতোবার বলেছি একবার ও আমাদের বাড়িতে আসে নি। এমনকি আমিও কারো বাড়িতে তাই নি। তবে আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু অনেক বছরের।”

“দিশান ভাইয়ার বিয়েতে বলেছিলি?”

‘হ্যা ভাইয়া এসেছিল তো তুমি দেখো নি বিয়ে বাড়িতে বিজি ছিলে। তাছাড়া এলেও তুমি দেখবে কিভাবে? মেঘ তো সবসময় হিজাব নিকাব পড়ে চলাচল করে।”

“কই সেদিন তো নিকাব ছিল না?”

“কি বললে ভাইয়া?”

“কিছু না। আচ্ছা বাবা তোমার বন্ধু তো একজন নাম করা বিজনেস ম্যান। তাহলে আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়ায় কেন উঠলো। উনি তো একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন।

তখন এহসান খান বললেন,,

“একটু ঝামেলা হয়েছে বাড়িতে তাই আয়মান চলে এসেছে সাথে মেঘও। কাল রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলল আমার চেনাজানা কোন রেডিমেট বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে কি না? যাতে তাড়াতাড়ি করে ভাড়ায় উঠতে পারবে। আমি আমার বাড়িতেই আসতে বলেছিলাম ওদের কিন্তু আয়মান নাকচ করে দিল। ওকে যেরকম চিনি ও অন্যরকম তাই বলেও লাভ হবে না। পরে মনে পড়লো পাশের বাড়িটা তো অনেকদিন ধরেই ফাঁকা মালেক ভাই বলেছিল ভাড়ায় দিতে পারলে যেন দিয়ে দিই। সবকিছুই আছে বাড়িতে। ওনারা তো বিদেশ থাকে তাই এই বাড়িতেই বললাম। রাতে মালেক ভাইকে আয়মানের কথা জানিয়েছি। উনি আয়মান কে আগে থেকেই চেনে তাই সকালেই কেয়ার টেকার এসে চাবি দিয়ে গেছে। আর সব পরিষ্কার করে রেখেছে সকাল নয়টার মধ্যেই দেখি ওরা হাজির। তাই দুপুরে বলেছি আমাদের বাড়িতে আসতে।

“ওহ আচ্ছা তারমানে রাগ করে চলে এসেছে বাড়ি থেকে।”

“আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় আয়মানের সাথে কিছু খারাপ কিছু ঘটেছে। কাল ওদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল আয়মানের অনারে। একটা বড় ডিল পেয়েছিল আয়মান তাই। আমাকেও বলেছিল কিন্তু আমি যাই নি একটা কাজের জন্য। কিন্তু হুট করেই আয়মান ফোন দিল ও সব ছেড়ে চলে আসছে। এসব শুনে তো আমি অবাক।”

“তারমানে সত্যিই খারাপ কিছু ঘটেছে। কিন্তু ওনাদের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে ওনাদের মাঝে কি চলছে। আঙ্কেল ও হাঁসি মুখেই কথা বললো। তাছাড়া ওনার মেয়েকেও দেখলাম মুচকি হেসে মায়ের সাথে কথা বলতে।”

এহসান খান হেসে বললেন,,

“মানুষ সেটায় দেখতে পায় যেমনটা সামনের মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে। তবে আয়মান আর মেঘের এটা একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে। এরা বাবা মেয়ে একেঅপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। আয়মানের কাছে মেঘের নামে কতো গল্প শুনেছি । মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে আয়মান। তবে আয়মান এটা সবসময় বলে ওর মেয়ে ওর শক্তি, ওর ভরসা, ওর সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। ওদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। সবথেকে বেশি ওদের কথোপকথন কি সুন্দর আপনি বলে সম্বোধন করে। ওদের দেখলে মনে হয় আপনি ডাকটাই সবথেকে কাছের।”

ধূসর মনোযোগ দিয়ে শুনলো তারপর উঠে নিজের রুমে চলে গেল।

বিকেল এ মেঘ ছাদে গেল। বাড়িওয়ালার মালিক বেশ সৌখিন মানুষ সেটা মেঘ এ বাড়িতে ঢুকেই বুঝতে পেরেছে। দুতলা বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো বাড়ির সামনে বাগান। বিভিন্ন ফুলের গাছ সেখানে সেগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেঘ ছাদে উঠেই দেখতে পেল একপাশে ছোট্ট বাগান। তারমধ্যে একটা দোলনা ফুলের সুবাসের সাথে দোল খাওয়া অনুভুতি অদ্ভুত সুন্দর। মেঘ হাত দিয়ে ফুল গুলো ছুয়ে দিল। মুহুর্তেই মেঘের মনটা ভালো হয়ে গেল। মেঘ দোলনায় বসে চোখ বুঝে অনুভব করতে লাগলো। তখন মেঘের পাশের ছাদ থেকে আওয়াজ আসলো,,,

“এই যে মিস প্রতিবেশী! আপনি কি একা থাকলে সবসময় চোখ বুজেই থাকেন নাকি?

মেঘ চোখ তুলে পাশে তাকাতেই দেখলো ধূসর ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ বলল,,

‘মিস প্রতিবেশী মানে?”

“আরে আপনি তো আমার প্রতিবেশী তাই না। আমাদের আশেপাশে থাকা সবাই আমাদের প্রতিবেশী। তাই আপনাকে মিস প্রতিবেশী বলে ডাকলাম।”

“আমার নাম আছে সেটা দিয়ে ডাকতে পারতেন। এমন তো নয় আপনি আমার নাম জানেন না?”

“আমাদের আগেও দেখা হয়েছিল বুঝি! আপনার মনে আছে নাকি?”

“আমি কিছু ভুলি না ধূসর এহসান শুভ্র!”

“আমিও কিছু ভুলিনা মিস কাশফিয়া আয়মান মেঘ। যাক আমায় মনে রেখেছেন তাহলে। আমি তো ভাবলাম আপনার মনেই নেই আমার কথা। আজকে বাসায় এমন একটা ভাব করলেন যেন আজকেই প্রথম দেখলেন আমাকে। যাই হোক আমার মনে আছে আপনার কথা সেই জন্যই তো বললাম আপনি একা থাকলে চোখ বন্ধ করেই থাকেন নাকি। সেদিন ও বৃষ্টির মধ্যে দেখলাম চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি অনুভব করছিলেন। আজ ও চোখ বন্ধ করে ছিলেন। ছাদের প্রকৃতি অনুভব করছিলেন বুঝি। আচ্ছা চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি অনুভব করা যায় নাকি?

“হুম যায় তো! আমি চোখ বন্ধ করেই প্রকৃতি অনুভব করছিলাম।”

“তা কিরকম?”

“চোখ খোলা রেখে প্রকৃতি অনুভব করা একটা অনুভূতি। আর চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি অনুভব করা অন্যরকম একটা অনুভুতি। আপনি চোখ খুলে সব দেখছেন তা আপনাকে মুগ্ধ করছে সেটা শুধু চোখের তৃপ্তি দিচ্ছে। কিন্তু আপনি চোখ বন্ধ করুন দেখবেন আপনার বাকি ইন্দ্রিয় গুলো বেশি সজাগ থাকছে। আপনার নাকে প্রকৃতির তীব্র সুবাস পাবেন। এমনকি চোখ বন্ধ করলে আপনার শ্রবনশক্তি ও বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি দূরের ঐ পাখির আওয়াজ ও ভালোভাবে শুনতে পাবেন যা আপনাকে আলাদা রকম মনের তৃপ্তি দেবে।”

“আপনি তো দেখি সব বিষয়ে পি এইচ ডি করে এসেছেন। যাই হোক নতুন পরিবেশ আর নতুন প্রতিবেশীদের কেমন লাগলো।”

“পরিবেশ তো ভালোই লাগছে কিন্তু প্রতিবেশী দের সাথে এখনো তেমন ভাবে মেশা হয় নি । তাই বলতে পারছি না। যাই হোক আমি নিচে যাচ্ছি।”

ধূসরকে কোন কথা বলতে না দিয়ে মেঘ চলে গেল। ও যেতেই ধূসর বলল,,

“অদ্ভুত মেয়ে একটা। যাই হোক সাদা থ্রিপিস এ মেয়েটাকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছিল। মাথায় ওরনাটাও ভালো মতো দেওয়া। মনে হয় আমার মতো আসরের নামাজ পড়েই ওপরে এসেছে। কিন্তু ধূসর তুই কি করছিস একটা মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিস এটা ঠিক না কিন্তু।

বলেই ধূসরও নিচে চলে গেল। মেঘ নিচে গিয়ে দেখলো ওর আব্বা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“আব্বা কিছু ভাবছেন?”

“ভাবলাম এহসান বাড়ির ব্যবস্থা না করে দিলে। আমি আর আপনি এত তাড়াতাড়ি বাড়ি কোথায় পেতাম।”

“হুম তবে সবই আল্লাহর দেওয়া রহমত আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য। এখন বলুন কাজ নিয়ে কিছু ভাবলেন?”

“আমার একাউন্টে বড় এমাউন্টের টাকা আছে ভাবছি বিজনেস শুরু করবো। তাছাড়া নতুন একটা ব্রাঞ্চ বানানো হয়েছে। সবকিছু রেডি সব ধরনের মেশিন থেকে শুরু করে ইমপ্লোয়ি পর্যন্ত। সেটা এই মাসেই খোলার কথা ছিল ওটা আব্বা আমার নামে করে দিয়েছিলেন ওটার কথা আমি আর আব্বা ছাড়া কেউ জানেনা। ওখান থেকেই শুরু করবো। না নতুন ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।”

“দাদুভাই যদি আপনার নামে করে দিয়ে থাকে। তাহলে ওখান থেকেই শুরু করুন তবে দাদুভাই এর সাথে আগে কথা বলে নিন।”

“আপনার কি মনে হয় আব্বা আমার সাথে কথা বলবে। উনি কাল সবার সামনে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাছাড়া ওটা যুক্তিসংগত হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।

“তাহলে কি করবেন? তবে যাই করুন না কেন আমি আপনার পাশে আছি।”

“আপনি থাকতে আমার ভয় কিসের আম্মা। আমি নতুন ভাবেই শুরু করবো। বিজনেস সম্পর্কে বেশ ধারনা আছে ইনশাআল্লাহ সমস্যা হবে না শুধু একটু সময় লাগবে। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। ইনশাআল্লাহ একদিন আমরাও সফল হবো।”

“ইনশাআল্লাহ আব্বা!”

“আমি সবার সাথে কথা বলছি আমার পরিচিতদের সাথে।”

তখনি আয়মান চৌধুরীর কাছে একটা ফোন আসে তিনি ফোনটা রেখেই খুশি হয়ে মেঘকে জানান সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীকে নতুন ব্রাঞ্চ দিয়ে দিয়েছে। মেঘ হেঁসে বলল,,

“আল্লাহ তায়ালা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী।”

আয়মান চৌধুরী শমশের চৌধুরী কে ফোন করলেন। আয়মান চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে উনি নিজেই বললেন,,

“ওটা তোমাকে দিয়েছি বলে এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। তুমি যেমনই হও না কেন তুমি আমার সন্তান। তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি ঠিকই তবে আমার এটাও দেখা উচিৎ তুমি কি ভাবে চলবে কারন তোমার সাথে মেঘ আছে। তাই ওটা দিয়েছি এরপর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবে না রাখছি। আর হ্যা এটা সম্পর্কে কাউকে কিছু বলবেও না। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই সমশের চৌধুরী ফোন কেটে দিলেন। আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

“যা হওয়ার তাই হবে আব্বা যেদিন সব সামনে আসবে সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। একটু ধৈর্য্য ধরে কঠিন সময়টা কাটিয়ে নিন ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।”

“ইনশাআল্লাহ আম্মা!”

“রাতে কি খাবেন আব্বা? আমি রান্না করবো!”

“আপনি তো তেমন পাকা রাঁধুনি না আমিও হেল্প করবো আপনাকে। তাহলে আজ আব্বা আর মেয়ে মিলে ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভাজি রান্না করবো। খিচুড়ি আপনি বেস্ট রান্না করেন।”

“আর আপনি ডিম ভাজি!”

বলেই বাবা মেয়ে হাসলো। এই তো তাদের দুজনের সুখের সংসার। নেই কোন জটিলতা আছে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আর অগাধ বিশ্বাস।

‘ তাহলে যাই আপাতত আজকের জন্য বাজার করে নিয়ে আসি। বাকি যা যা লাগে কাল গিয়ে করে আনবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

______________

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নীলি বলল,,

“মা আমার আসতে দেরি হবে। তোমরা চিন্তা করো না।

দিলরুবা খানম বললেন,,

“কেন?”

“আসলে মেঘের কিছু জিনিস কেনার ছিল। ভার্সিটি শেষ করে ওর ভার্সিটিতে যাবো তারপর ওখান থেকে ওকে নিয়ে শপিংমলে যাবো।”

তখন ধূসর বলল,,

“কেন? উনি কি তোর সাথে তোদের ভার্সিটিতে পড়ে না।”

“আমার বান্ধবী উনি করে বলছো কেন তুমি করে বললেই হয়?”

“সময় হোক তারপর বলবো। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দে? তোরা পাঁচ বান্ধবী একই ভার্সিটিতে পড়িস না।

“না মেঘ আমার ভার্সিটি তে পরে না। ও ‘ল’ নিয়ে পরছে আলাদা ভার্সিটিতে। আমরা পাঁচ বান্ধবী আলাদা আলাদা গ্ৰুপের মতো। আমি আর জাবিন একসাথে একই ডিপার্টমেন্টে পরি। হির আর লিয়া অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে কিন্তু ভার্সিটি একই শুধু মেঘ আলাদা ভার্সিটিতে পড়ে।”

“বাহ ‘ল’ নিয়ে পরছে। তুই ও তো ‘ল’ নিয়ে পরতে পারতিস। সবাই কে ন্যয় বিচার পায়িয়ে দিতিস।”

“ধূর আমার কি মেঘের মতো ওতো বুদ্ধি আছে নাকি। তাছাড়া আমি তো পড়াশোনা করছি পড়াশোনা করতে হবে তাই। ভাবলাম বিয়ের পর পড়াশোনা আমার থেকে দূরে থাকবে‌। কিন্তু বিয়ের পর দেখলাম তোমাদের থেকে আমার জামাই আরেক লেবেল ওপরে। যাই হয়ে যাক না কেন পড়াশোনা কম্পিলিট করতে হবে।”

“আমরা দেখেই বিয়ে দিয়েছি ছোট আপু।”

দিশানের কথায় নীলি গাল ফুলিয়ে বলল,,

“একদম মজা করবে না বড় ভাইয়া। এখন উঠলাম আমার দেরি হচ্ছে।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিস সন্ধ্যায় কিন্তু সোহেল আসবে।”

“আমি আগেই বলে রাখছি আমি এক সপ্তাহ আগে কোথাও যাচ্ছি না।”

“আরে তোকে নিতে আসছে না শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসছে। বুঝলি নীলি শ্বশুরবাড়ি রসের হাঁড়ি। কবজি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া।”

“হ্যা বড় ভাইয়া সেই জন্যই তো তুমি শ্বশুরবাড়ি গেলে আর আসতে চাও না। এমনভাবে বললে যেন মা তোমাকে না খায়িয়ে রাখে।”

“বাড়ি খাওয়া আর শ্বশুরবাড়ি খাওয়া এক হলো নাকি। বাড়ির জামাই খেতে বসেছে ব্যাপারটাই আলাদা।”

“দেখেছো ভাবি এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ি গেলে শুধু ডালভাত খেতে দিতে বলবে তোমার মাকে।”

নীলির কথায় রোহিনী লজ্জা পেল। তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“আহ নীলি কি হচ্ছে। এখন তোর দেরি হচ্ছে না।”

“হ্যা হ্যা যাচ্ছি উচিৎ কথার ভাত নাই।”

নীলি গাল ফুলিয়ে চলে গেল। বাকি সবাই হাসলো।
_____________

মেঘ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু রিক্সা আসছে না। এখন তো আর গাড়ি নেই যে গাড়িতে চলাচল করবে। এখন থেকে অন্য যানবাহনে যাতায়াত করতে হবে। যে পর্যন্ত না আয়মান চৌধুরী বিজনেস ভালোভাবে দাড় করায়। আর একটা গাড়ি না কেনে। আয়মান চৌধুরী সকালেই খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পরেছে মেঘের একটু পর ক্লাস তাই পরে বেরিয়েছে। ধূসর গাড়ি নিয়ে গেট পেরুতেই দেখতে পেল একজন কালো বোরকা, হিজাব নিকাব পড়িহিতা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু বাড়ির সামনেই তাই ও বুঝতে পারল ওটা মেঘ। মেঘকে দেখে ধূসর গাড়ি থামিয়ে বলল,,

” মিস প্রতিবেশী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন বুঝি?”

মেঘ একবার ধূসরের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,

“হুম রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি!”

“আপনার ক্লাস কয়টায়?”

“দশটায়!”

“আরে এখন তো নয়টা চল্লিশ বাজে। কোন ভার্সিটিতে পড়েন আপনি?”

“কেন?”

‘আপনার সব প্রশ্নে উল্টো প্রশ্ন করেন কেন? ”

“**** এই ভার্সিটিতে পড়ি।”

“রিক্সা দিয়ে ভার্সিটিতে যেতে আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। তাছাড়া রিক্সা পাবেন কিনা সন্দেহ। আপনার ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে। আপনি বরং আমার গাড়িতে আসুন।”

“আমাকে সাহায্য করার কারন?”

“তেমন কোন কারন নেই। তবে আপনার যদি কারন দরকার হয়। তাহলে প্রথমত আপনি আমার বাবার সব থেকে কাছের বন্ধুর মেয়ে আপনাকে হেল্প করলে বাবা খুশি হবে। দ্বিতীয়ত আপনি আমার বোনের বান্ধবী আপনাকে সাহায্য করলে আমার বোন আমাকে মাথায় করে রাখবে। আর তিন নাম্বার আমরা প্রতিবেশী। প্রতিবেশী হয়ে যদি প্রতিবেশীকে না সাহায্য করলাম তাহলে কিসের প্রতিবেশী।”

“আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন মিস্টার প্রতিবেশী।”

“মিস্টার প্রতিবেশী?”

“তো কি বলবো বলুন? আপনি আমার নাম জানা সত্বেও আমাকে মিস প্রতিবেশী বলেন। তাহলে আমি কেন বলবো না।”

“নামটা খারাপ না আপনার ইচ্ছে হলে বলিয়েন। এখন বলুন যাবেন? সমস্যা নেই আমার পাশে বসতে হবে না। আমি জানি আপনি আমার পাশে বসে অস্বস্তি বোধ করবেন। আপনি পেছনেই বসুন। আমি কিছুই মনে করবো না।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘের ভালো লাগলো। তাই বলল,,

“ঠিক আছে। আর আমার দিকটা বোঝার জন্য শুকরিয়া।”

মেঘ পেছনের দরজা খুলে বসে পড়লো। ধূসর গাড়ি স্টার্ট দিলো ওদের ভার্সিটি পৌঁছানোর মাঝে আর একটা কথাও হয় নি। ভার্সিটি আসলে ধূসর গাড়ি থামিয়ে দিল। মেঘ ‘শুকরিয়া’ বলে চলে গেল। ধূসর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেয়েটাকে ওপর থেকে কঠিন মনে হলেও মেয়েটায় আচরনে আলাদা নম্রতা আছে।”

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১২

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। আর চৌধুরী বাড়িতেই আছে।”

কথাটা এতটাই জোরে ছিল যে , সব ভেদ করে সবার কানে পৌঁছে গেছে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। সবাই এমন কথা শুনে চমকে উঠলো। মেঘ মারা গেল কবে। লোকটা সামনে তাকাতেই দেখলো ওর আর মেঘের মাঝখানে দুই হাত সমান জায়গা বাকি। মেঘ লোকটার নাক বরাবর ঘুষি মারলো লোকটা পরে গেল তখন মেঘ ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,,

“দিলি তো আমার ফান্ডা ভেঙে। আরে শফিক তোর বসকে খবর দিচ্ছিলি বুঝি আমি মরি নি বেঁচে আছি।”

এটুকু বলেই মেঘ ফোন কেটে দিল। এরপর মেঘ একটু নিচু হয়ে লোকটার কাছে ফিসফিস করে বলল,,

“শুধু আমি না! ধূসর এহসান শুভ্রও বেঁচে আছে।”

এই কথাটা শুনে লোকটা এক পা পিছিয়ে গেল। তখন পেছন থেকে বাকি সবাই মেঘকে আঘাত করতে নিলে ধূসর আর হিররা গিয়ে সবগুলো মারতে লাগলো। মেঘ পেছনে ঘুরে একবার ধূসরকে দেখলো কতোটা ডেস্পারেট হয়ে মারছে নিজের তিন বান্ধবী কেও দেখলো। মেঘ হাসলো ততক্ষনে মেঘের গার্ডরা এসে বাকি সবাইকে ঘিরে ফেলেছে। ধূসর আর হিররা গার্ডদের হাতে লোকগুলো কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইল। ধূসরকে দেখে নিচে পরে থাকা লোকটা অবাক হয়ে গেল। মেঘ নিচের লোকটাকে গান পয়েন্টে রেখেছে তা দেখে লোকটা বলল,

“তোমরা দুজনেই বেঁচে আছো? মাফ করে দাও এবারের মতো ছেড়ে দাও আমায় মেরো না প্লিজ। আমি আর কোন খারাপ কাজ করবো না।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আচ্ছা মারবো না যদি সত্যি কথা বলিস তো! আজ এখানে তান্ডব চালাতে কে বলেছিল। আমার আব্বাকে কে মারতে বলেছিল?”

“আমি জানিনা!”

লোকটার বলতে দেরি আয়মান চৌধুরীর গুলি করতে দেরি হয় নি। মেঘ সবেই ট্রিগারে চাপ দিচ্ছিল তার আগে আয়মান চৌধুরী লোকটার হাতে গুলি করে দিল। মেঘ হেঁসে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

” আব্বা পারফেক্ট শট!”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

“কতোদিন হলো গান চালাই না। আজ ইচ্ছে করলো তাই করে দিলাম।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আপনিও না আব্বা মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে যান। তো মিস্টার শফিক বলুন কে এগুলো করতে বলেছে? ভালোই ভালোই বলুন নাহলে আমার আব্বা আগের গুলিটা হাতে করেছে এখন সোজা বুকে করবে।”

লোকটা ভয় পেয়ে বলল,

“বলছি বলছি A.R.K আমি তার ফুল নেম জানি না। কখনো দেখিওনি শুধুমাত্র ফোনে ঠিকানা জানিয়েছিল।”

মেঘ নামটা জেনে খুশি হয়ে বলল,,

“এটুকুতেই হয়েছে আর বলতে হবে না। গার্ড এদের নিয়ে যাও পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।”

গার্ডগুলো সবাইকে নিয়ে চলে গেল। এদিকে তিনজন খুব ভায় পাচ্ছে। কিন্তু তারা প্রকাশ করতে চাইছে না। তারা ঘাম মুচ্ছে এই বুঝি সব শেষ। মেঘ পেছনে ঘুরতেই দেখলো সবাই উৎসুক জনতার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“তো আজ এখানে যা হলো! সেটা নিতান্তই একটা দুর্ঘটনা কেউ এটা মনে না রাখলেই খুশি হবো।”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“মেঘ কে? ও গান চালাতে পারে। এতগুলো মানুষকে গুলি করলো এর দায় কে নেবে।”

তখন মেঘ বলল,,

“কেউ নেবে না এটা আমার লাইসেন্স করা গান আমার সেফটির জন্য। এমনকি আব্বারটাও তাই।”

“কি লাইসেন্স করা গান?”

“তো আমার আব্বা এতবড় বিজনেস ম্যান আর বিজনেস ম্যানের মেয়ে আমি। সেফটি রাখবো না। বলা তো যায়না কখন কে শেষ করে দিতে চাইলো।যেমনটা আজই আব্বার ওপর অ্যাটাক হলো।

“মানে?”

“মানে হলো এই আমার আব্বা এখনকার টপ বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন! A.M.C ইন্ড্রাস্টিজ এর ওনার A.C ওরফে আয়মান চৌধুরী। তাদের সেফটি তো দরকার তাই না।”

কথাটা যেন সকলের নিকট বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। সকলে অবাক হয়ে ওদের দুজনকে দেখলো। সমশের চৌধুরী বললেন,,

“অনেক হয়েছে এখন সবাই ফ্রেশ হয়ে নাও!”

তখন আশরাফ হক বললেন,,

“বাবা আপনি জানতেন আয়মান এতবড় বিজনেস ম্যান।”

“আমার ছেলে আমি জানবো না, তা কি করে হয়? তবে জানো তো সব কথা সবাইকে জানাতে হয় না। কারন সবাই আপন হয় না। এখন সবাই যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

সমশের চৌধুরীর কথার মানে কিছু লোক বুঝতে পারল। তবে ওনার কথা শুনে সবাই চলে গেল। আর মেঘের বেঁচে থাকার ব্যাপারটা সবার মাথা থেকে বেরিয়ে গেল তবে কিছু মানুষ ঠিকই মনে রেখেছে সময় বুঝে প্রশ্ন করবে পরে। ধূসর গিয়ে মেঘের হাত ধরলো নিজের রুমাল বের করে ওর হাতে চেপে রাখলো। তা দেখে মেঘ হাসলো । আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী আর ধূসরের পরিবার ওখানে ছিল। নীলি রোহিনী রক্তারক্তি অবস্থা খারাপ দেখে নীল আর রিমঝিম কে নিয়ে ওপরে গেছে। ওরা এখনো ছোট এটা ওদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ধূসর মায়মুনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আন্টি ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসুন।”

মায়মুনা চৌধুরী এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওনার চোখটা ছলছল করছে হাজার হোক মেয়ে তো। ধূসরের কথায় মায়মুনা চৌধুরীর ধ্যান ভাঙে। তিনি তাড়াতাড়ি করে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। ধূসর মেঘকে সোফায় বসিয়ে দেয়। ধূসর মেঘের হাত পরিস্কার করছে ডান হাতটা বাজে ভাবে কেটে গেছে।ধূসরের কষ্ট হচ্ছে কালকেই কতো যত্ন করে মেহেদী পরিয়ে দিল আর আজ এরকম অবস্থা। মেঘ কিছু বলছে না চুপচাপ ও ওর আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর আব্বাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো খারাপ লাগছে আজ তার জন্যই মেঘের এই অবস্থা। মেঘ বলল,,

“আব্বা এখানে আসেন?”

আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে গেলে মেঘ হাত ধরে তাকে বসিয়ে দিল। মেঘ হেঁসে আয়মান চৌধুরীর কাঁধে মাথা রেখে বলল,

“নিজেকে একদম দোষারোপ করবেন না আব্বা। যা হয়েছে সব এক্সিডেন্ট বুঝেছেন।”

ধূসর মেঘের হাত ব্যান্ডেজ করে দিল। কিন্তু মেঘ একটা টু শব্দ ও করে নি। তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে দেখেছে ধূসর কিভাবে ওর যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

____________

“মেঘ কি করে বাঁচতে পারে। ওর ঐ অবস্থার পরও কিভাবে বাঁচতে পারে ও। শফিক ঠিক দেখেছে নাকি ভুল। না না এটা কি করে হতে পারে। মেঘের কন্ঠ শুনলাম তো আমি। আমি তো ধূসর আর মেঘকে একসাথে মেরেছিলাম। তাহলে মেঘ কি করে বাঁচতে পারে। নয়নাকে জানাতে হবে মেঘ বেঁচে আছে। মেঘ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা কেউ জানে না। ওকে মারতে হবে নাহলে ও আমাদের মেরে ফেলবে। আমাদের শেষ করে ফেলবে। শফিক আজ কোথায় গিয়েছিল কোন চৌধুরী বাড়ি হ্যা মনে পরেছে আমাকে জানিয়েছিল। সমশের চৌধুরীর বাড়িতে এটাই তো বলেছিল। মেঘকে শেষ করতে হবে মেঘ যদি একবার জানে আমি আর নয়না দেশে আছি তাহলে শেষ করে দেবে আমাদের।

তখনি নয়না নামের মেয়েটি রুমে প্রবেশ করলো। আর বলল,,

“কি হয়েছে আকাশ? তোমাকে অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”

“নয়না মেঘ বেঁচে আছে। শফিক বলেছে।”

“কি বলছো কি?”

“হুম ঠিক বলেছি। মেঘ যদি জানে আমরা দেশে আছি তাহলে আমাদের শেষ করে ফেলবে।”

“ও শেষ করে ফেলার আগে আমরা ওকে আবার শেষ করে ফেলবো।”

“মানে?”

“মানে হলো কাল মেঘ সূর্যদয় তো দেখবে কিন্তু সূর্যাস্ত দেখবে না। ওর ঠিকানা দাও কালকেই ওকে শেষ করে ফেলবো।”

“চৌধুরী বাড়ি সমশের চৌধুরীর বাড়িতে গিয়েছিল শফিক! আজ ওখানে গিয়ে কাদের মারার কথা ছিল ওদের।”

“ওকে রিল্যাক্স থাকো আমি সব ব্যবস্থা করছি। কালকেই মেঘের শেষ দিন হবে। কাল শুধু ও বাড়ি থেকে বের হোক ওর খেল খতম। বের না হলে আমি নিজ দায়িত্বে বের করবো। মেঘের নাম্বার জোগাড় করতে পারলে ভালো হতো। সমস্যা নেই চৌধুরী বাড়ির ল্যান্ড লাইন নাম্বার হলেই চলবে।”

“তুমি ঠিক কি করতে চাইছো!”

“দেখোই না জান কি হয়। ওর জন্য আমার সব শেষ হয়েছে। এখন ওকেও শেষ করবো যেটা আমরা এক বছর আট মাস আগে করতে পারি নি।”

বলেই মেয়েটা হাসতে লাগলো। সাথে আকাশ নামক লোকটাও হাসতে লাগলো।

_____________

অন্যদিকে

“না না না এটা কি হলো? ঐ আয়মান বেঁচে গেল? কিভাবে? কোন আঘাত লাগলো না ওর। আজ তো ওর সমশের চৌধুরী ভয়ের দুয়ারে নিয়ে যেতাম নিজ চোখে ছেলের রক্ত দেখতো। কিন্তু ঐ মেঘ এর জন্য কিছু হলো না। তোমায় আমি সহজ সরল ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি তো অন্য লেভেলের খেলোয়াড়। যাক খেলাটা ভালোই জমবে মনে হচ্ছে। তবে আমার সময় নেই তোমায় মরতে হবে মেঘ খুব তাড়াতাড়ি মরতে হবে নাহলে আমার উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।

তখনি কেউ একজন ফোন দিল ফোনটা এপাশ থেকে ধরতেই বলল,,

“শুনেছো A.M.C ইন্ড্রাট্রিজ এর ওনার আর কেউ না আয়মান চৌধুরী ওরফে A.C !

“তুমি জানলে কিভাবে?”

“মেঘ নিজে বলেছে। আর তোমার ওই বোকা লোক তোমার নাম বলে দিয়েছে A.R.K….

“তো নামে কি আসে যায় আমাকে না পেলে নাম দিয়ে কি করবে? আজ পর্যন্ত A .R.K কে কেউ দেখেনি তাহলে আমাকে পাবে কোথায়?”

“তবুও সাবধানে থেকো তোমার সাথে কিন্তু আমিও যুক্ত আছি।”

তখন লোকটা মনে মনে হেসে বলল,,

‘তুমি একা নও আরো দুজন আছে কিন্তু তোমরা নিজেদের খুব চালাক মনে করো। তিনজনেই এমনভাবে কাজ করো কেউ কারোটা জানে না। কিন্তু আমি তিনজনকেই পরিচালনা করি এবং জানিও। বোকার দল!”

কিন্তু মুখে বলল,,

“সব ঠিক আছে। তবে বুঝতে পারলাম না এতদিন সব আড়ালে রেখে আজ কেন সবাইকে জানালো। নিশ্চয়ই এতে ওদের কোন মোটিভ আছে। যতটুকু মেঘকে জানলাম ও বেশ ধুরন্ধর।”

“হুম তা তো একটু আছে গান চালাতে পারে। মারপিট পারে। তবে একটা কথা তোমার একটা লোক আরো কাউকে ফোন দিয়ে বলেছিল মেঘ বেঁচে আছে। ও মরলো কবে যে এরকম একটা সিন হলো।”

“বলেছে যখন নিশ্চয়ই কারণ আছে। মেঘের অতীতে এমন কিছু হয়েছে যে মেঘ বাঁচার কথা না। তবুও বেঁচে ফিরেছে কিন্তু ওরা ভেবেছে মেঘ মরে গেছে।”

‘হুম আমারও তাই মনে হয়। তুমি সাবধানে থেকো ওকে যতটা সিধেসাধা দেখা যায় ও তার থেকেও ভয়ঙ্কর আজ বুঝেছি। তবে কিছু একটা আছে যা আমরা ধরতে পারছি না। আমার মনে হয় আজ কিছু একটা হবে এ ব্যাপারে মেঘ বা আয়মান অবগত ছিল। নাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ নিজের কাছে গান রাখে। তাও দুটোই লাইসেন্স করা।”

‘হুম হয়তো। রাখছি!”

এপাশের লোকটা ফোনটা রেখে দিল। তখন ওপাশের লোকটার কাছে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো,,

“আজকের চৌধুরী পরিবারের ওপর অ্যাটাক হতে তোমার হাত ও আছে। আজ ছেড়ে দিয়েছি মানে এই না সবসময় ছেড়ে দেব। আমি তো তোমার সাথে থাকা মেন মাথা কে একসাথে ধরবো তাই আজ ছেড়ে দিয়েছি। তোমাকে ধরতে আমার দু মিনিট সময় ও লাগবে না। এখনো বলছি সরে আসো নাহলে তোমার সাথে কি হবে নিজেও জানো না। চৌধুরী পরিবার থেকে দূরে থাকো। আর হ্যা A.R.K কেউ বলে দিও তাকে কেউ আমার থেকে বাঁচাতে পারবে না। অনেক করেছে সে এবার তার শাস্তি পাওয়ার পালা।”

ইতি অজানা কেউ!”

লোকটা মেসেজ পরে ঘামতে লাগলো। কিন্তু A R.K কে ফোন করে কিছু বললো না।

______________

মেঘ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। বাড়িটা কেমন চুপচাপ সবাই বোধহয় নিজেদের রুমে নিচে কেউ নেই। প্রথমত মুনের বিদায় হয়েছে সবারই বড় মেয়ের জন্য মন খারাপ। তারওপর এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল সবার মনে একটা ভয় সৃষ্টি করেছে। আয়মান চৌধুরীও নিচে আসলো মেঘ ওর বাবার কাছে গিয়ে বলল,,

“আব্বা খুদা লাগছে? দুপুরে ধূসরের ঘটনার পর তেমনভাবে খেতে পারি নি।”

আয়মান চৌধুরী বিনা বাক্যে মেয়ের জন্য খাবার বেড়ে মেয়েকে খায়িয়ে দিতে লাগলেন চেয়ারে বসে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আজ অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি!”

“আজ তেমন কিছু করতে আসেনি । একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিল সমশের চৌধুরী কে। শুধু দেখাতে এসেছিল আপনাকে একটু আঘাত করতো কিন্তু মেরে ফেলা তাদের মোটিভ ছিল না। এই সবকিছুর প্রশ্ন দাদুভাই দিতে পারবে। এখন খেয়ে দেয়ে ওনার রুমে যেতে হবে।”

“তারমানে আমরা যে তিনজন কে চিনি তার মধ্যে কেউ অ্যাটাক করায় নি তাই তো!”

“পত্যক্ষভাবে করায় নি কিন্তু পরোক্ষভাবে তিনজনেই এ বিষয়ে অবগত। কারন তিনজনে আলাদাভাবে মেন কালপ্রিট এর সাথে কথা বলে। আজ তিনজনকেই আলাদা আলাদা ভাবে মেসেজ দিয়েছি।”

“এরা তো সবাই আমার আপন তাঁরপরেও এরকমটা করতে পারে কিভাবে?”

“দুনিয়ায়াটাই স্বার্থের খেল আব্বা স্বার্থে একটু আঘাত পরলে কেউ দেখে না কে আপন কে পর!তবে চিন্তা নেই মেন মাথাকে আমি পেয়ে গেছি আব্বা।খুব তাড়াতাড়ি এর শেষ করবো। আজ কিছু করলাম না কারন চারজনকেই একসাথে ধরবো তাই। ঐ তিনজনের ফোন হ্যাক করেছি যা হবে সব আমার কাছে আগে আসবে।”

“এটা খুব ভালো খবর!এখন খেয়ে নিন।

“সবাইকে রেখেই খেতে বসলাম।”

‘আমার মনে হয়না কারো গলা দিয়ে খাবার নামবে সবাই আতংকিত হয়ে আছে। সবাই তো আর আপনি না।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

‘আয়মান চৌধুরী ও তো খাচ্ছেন না। ভয় পেলেন বুঝি!”

“উহু আমার আম্মা থাকতে ভয় কিসের?”

বলেই আয়মান চৌধুরী হাসলেন মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হাসছে। তখন আওয়াজ আসলো,,

“তোমরা এই সময়েও হাসতে পারছো আবার খাবারও খাওয়া হচ্ছে দেখি। তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে পার্টি হচ্ছে এখানে।”

কথাটা শুনে মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হাঁসি থামিয়ে পেছনে চাইলো। পুরো পরিবার ওখানে ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি ধূসরের পরিবার মেঘের বান্ধবীরাও। উক্ত কথাটি শাফিয়ান চৌধুরী করেছেন।সবাইকে দেখে মেঘ বলল,

“যা হওয়ার তো আমার সাথে আর আব্বার সাথে হয়েছে কাকাই আপনার এত টেনশন কিসের? তাছাড়া এর থেকেও কঠিন অবস্থা আমরা দুজনে পার করে এসেছি। এটা তেমন বড় বিষয় নয় আমাদের কাছে। তাছাড়া যেখানে তেমন কারো কিছু হয়নি সেখানে শোক সভা করে কি লাভ। আমরা বাবা মেয়ে একটু নরমাল কথাবার্তা বলছিলাম এমনিই। আসলে কি বলুন তো আমি দুপুরে তেমন কিছু খেতে পারি নি। তাই খিদে পেয়েছিল আব্বাকে বলতেই খায়িয়ে দিলেন এই যা।”

মেঘ যতটা সহজভাবে বলল মনে হলো কিছুই হয় নি। আয়মান চৌধুরী কিছু বললেন না। মেঘকে খায়িয়ে দিতে লাগলেন নিজেও খাচ্ছেন সাথে। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই নিচে থাকলেও সমশের চৌধুরী নেই। মেঘ খেয়ে দেয়ে ধূসরদের কাছে গিয়ে বলল,,

“সরি আপনাদের রেখেই খেয়ে ফেললাম। আপনারা খেয়ে নিয়েন। হির তোরাও খেয়ে আজ ভিশন ধকল গেছে তোদের ওপর দিয়ে। আর বড় ফুপি কাকিমনি সবার খাবারের ব্যবস্থা করুন। আমি আর আব্বা একটু ওপরে গেলাম দাদুভাইকে নিয়ে আসছি।

মেঘ আয়মান চৌধুরীকে নিয়ে চলে গেল। সোজা সমশের চৌধুরীর ঘরে গিয়ে দরজা আটকে সমশের চৌধুরী কে দেখে মেঘ বলল,,

‘এরপরেও কি দাদুভাই আপনি কিছু বলবেন না।আজ কি হচ্ছিল আপনি তো নিজের চোখেই দেখলেন তবুও চুপ থাকবেন। আমি জানি আপনি সবটা জানেন। প্লিজ দাদুভাই এখন আর চুপ করে থাকবেন না।”

সমশের চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,

“হুম আমারও মনে হয় তোমাদের জানানো উচিৎ। এভাবে আর কতো একজন কে তো হারিয়েছি । আজকে আরেকজন কেও বোধহয় হাড়িয়ে ফেলতাম।

মেঘ গিয়ে সমশের চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

“দাদুভাই আমিও সব শুনতে চাই।”

আয়মান চৌধুরী তার বাবার আরেক হাত ধরলেন। সমশের চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,,

“আমি আর হামিদ ছিলাম স্কুল জীবন থেকে বন্ধু। যাকে বলে জানে জিগার দোস্ত। একসাথে কলেজের গন্ডি পেরুলাম ভার্সিটিও পেরুলাম। পড়াশোনা শেষ হতেই আমাদের আব্বারা আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলেন কারন পরে নাকি চাকরি খুঁজতে খুঁজতে বুড়ো হয়ে যাবো। আমরাও বিয়ে করে নিলাম দু’জনে। পড়াশোনা শেষ করেছি চাকরি বাকরি কিছু একটা করবোই তাই তাড়াতাড়ি বিয়েও হয়ে গেল। নতুন সংসার ভালোই চলছিল। গ্ৰামেই আমাদের দুজনের বাড়ি দু’জনে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় চাকরির ইন্টারভিউ দিলাম কয়েক জায়গায় কিন্তু হলো না। চাকরি করতে হলে টাকা লাগবে যাকে বলে ঘুষ। তাই আমি বুদ্ধি দিলাম হামিদকে কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা করবো । ও বলল ও ব্যবসা করবে না ও চাকরি করবে। আমি ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করলাম। হামিদ বেশ কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিল কিন্তু হলো না। এদিকে বিয়েও করে ফেলেছে তখন ওর বাচ্চাও হবে তাই আমি বললাম চাকরির চিন্তা ঝেড়ে ফেল চল আমার বিজনেস এ আমার পার্টনার হবি। কিছুদিন পর আমার আব্বা আর হামিদ এর আব্বা বেশ কিছু জমি বিক্রি করে টাকা দিল। দুজনে ঢাকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করলাম ভালোভাবে। আব্বা অসুস্থ তাই গ্ৰামেই আমি বেশি থাকতাম হামিদ বউ নিয়ে ঢাকায় থাকতো। আব্বা মারা যাবার পর আমরা সবাই ঢাকায় এলাম। ব্যবসা ভালোই চলছিল আমি আর হামিদ মিলে জোর কদমে ব্যবসা শুরু করলাম পাঁচ বছরের মধ্যে আমরাও পৌঁছে গেলাম উন্নতির শিখরে । ততদিনে আয়মানের বয়স আঠারো পেরিয়েছে। আর হামিদের ছেলের বয়স বিশ পেরিয়েছে। হুট করেই আমার আর হামিদের মাঝে বিজনেস নিয়ে ঝগড়া লাগলো। দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ প্রায়। একদিন আমরা দু’জনে দেখা করে সব মিটমাট করতে চাইলাম। সেদিন হামিদের ছেলে অফিসে এসেছিল কি যেন নিতে। মিটমাট করার থেকে ঝগড়া আরো বেড়ে গেল আমি শেষ মেষ বলেছিলাম আমি তোর সাথে বিজনেস করবো না। আমার জন্যই তুই এখানে আসতে পেরেছিস নাহলে করতি তো দুই টাকার চাকরি। সেটা হামিদের ছেলে দেখে ফেলে। আমি দু’দিন পর সব আলাদা করে নেওয়ার জন্য ওর বাড়িতে যাই। কারন ওর সাইন লাগবে আমরা ড্রয়িংরুমে কথা বলে আমি সাইন নিয়ে চলে আসি। আমি আসার পরেই হামিদ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। হামিদের ছেলে মনে করে আমার জন্য সব হয়েছে আমার জন্য ওর বাবা মরে গেছে। হামিদ একটা ডিল করেছিল অন্য কম্পানির সাথে আমাকে না জানিয়েই যার জন্য আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। কারন ডিলটার জন্য অনেক টাকা দরকার হতো তখন লোন ছাড়া কোন উপায় নেই।আমাদের ওপর একটা লোন এমনিতেই ছিল আরেকটা নেওয়া সম্ভব না। ও বলে কম্পানির পেপার রেখে লোন নিতে। আমি রাজি হই নি তাই সব আলাদা করে নিই। হামিদ মারা যাওয়ার পর ওরা জানতে পারে ডিলটার জন্য সময় ছিল না বলে হামিদ ওদের বাড়ির পেপার রেখে লোন নিয়েছিল কিন্তু ওর মৃত্যুর পর ডিলটা কম্পিলিট হয় নি দেখে লোন শোধ করতে পারে নি। তার জন্য ওদের বাড়ি ব্যাংক নিয়ে নেয়। সব শুনে আমি গিয়েছিলাম কিন্তু ভাবী আর হামিদের ছেলে আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এই সব কিছুর জন্য হামিদের ছেলে ভাবে আমি দায়ী। ও বলেছিল এই সবকিছুর মূল্য চুকাতে হবে আমাকে তখন আমি এগুলো আমলে নিই নি ভেবেছিলাম কষ্টে এগুলো বলছে কিন্তু,,,

সব বলে সমশের চৌধুরী থামে। তখন মেঘ বলে,,

‘ কিন্তু সেই সবকিছুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এতদিন আমাদের সাথে যা হয়েছে সেগুলো করেছে।”

‘হ্যা! আমিও জানতাম না কিন্তু তোমরা বাড়ি থেকে যাওয়ার এক বছর পর ও আমার সাথে দেখা করে আর জানায় আমাকে শেষ করে ফেলবে। এমনকি যার জন্য আমি প্রথমে তোমাকে দায়ী করতাম সেটা সেই ঘটিয়েছিল আরো দুজনের সাথে মিলে। আমাকে মারার জন্য কিন্তু আমি না মরলেও দুঃখজনকভাবে তোমার দাদী মারা যায়। এমনকি আয়মানকে মিথ্যার মধ্যে সেই ফাসিয়েছিল যার জন্য আয়মানকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম কিন্তু তার সাথে তুমিও চলে গেছিলে। তার জন্যই তো আমি বুঝতে পারলাম ভুল হয়েছে আমার দ্বারা। আমাকে মাফ করে দিও আয়মান।

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“একদম মাফ চাইবেন না আব্বা। আপনার কোন দোষ নেই। যা হয়েছে হয়েছে তার মানে মেন কালপ্রিট সেই আব্বা ওর নাম ছিল কি যেন? আমার সাথে বেশি মিশতো না এই জন্য ভুলে গেছি নামটা।”

“আবদুল রহমান কাদের?”

তখন মেঘ বলল,,

“হুম দাদুভাই তার নাম আব্দুল রহমান কাদের। কিন্তু সে এখন নতুন পরিচয়ে আছে সবার সামনে। আব্দুল রহমান কাদের ওরফে A.R.K. যিনি আজ আমার বোনের বিয়েতে এসেছিলেন কিন্তু সে কে কেউ ধরতে পারে নি। এমনকি আপনার সাথে দেখাও করে নি যদি চিনে ফেলেন। তিনি একজন বিজনেস ম্যান সাথে অন্ধকার জগতের বস। সে ভালো বিজনেস ম্যান এর জায়গায় তার ছদ্মনাম ইউজ করে কিন্তু অন্ধকার জগতে তার আসল পুরো নামের শর্ট ফ্রম ইউজ করে A.R.K। এর ব্যাপারে আমার কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে। কিন্তু প্রমান নেই তাই কিছু করতে পারছি না। ওনার বিরুদ্ধে প্রমান পেলেই ওনার দি ইন্ড।”

“মানে আম্মা আপনি কি তাকে চিনে ফেলেছেন। তার ছদ্মনাম কি আম্মা!”

‘সময় হোক আব্বা বলবো এখন না। তবে খুব তাড়াতাড়ি তাকে সবার সামনে আনবো। আর তাদের যোগ্য শাস্তি দেব।”

সমশের চৌধুরী বললেন,,,

‘আমি চাই তুমি তাকে তাড়াতাড়ি বের করে শাস্তি দাও। নাহলে আমার পরিবারকে শেষ করে ফেলবে। সেই ভুলের শাস্তি আমি পাচ্ছি যে ভুল আমি করিই নি ।”

“হুম দাদুভাই আর কিছুটা সময় তারপরেই তার ইতি টানা হবে। এখন নিচে চলুন খাবেন তারপর ওষুধ খেতে হবে।”

“আমি কিছু খাবো না!”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘আজ আপনার ছেলে আপনাকে খায়িয়ে দেবে আব্বা।”

কথাটা শুনে সমশের চৌধুরীর চোখটা ছলছল করে উঠলো। তিনি বললেন,,

“অনেকদিন হলো কারো হাতে খাওয়া হয় না। আজ তোমার মায়ের কথা মনে পরছে আয়মান। শেষ তিনিই আমাকে যত্ন করে খায়িয়ে দিয়েছেন।”

তখন মেঘ বলল,,

“আমি খায়িয়ে দিতাম দাদুভাই। কিন্তু আমার হাত তো কেটে গেছে। সমস্যা নেই আমি আপনার পাশে বসে থাকবো আপনার হাত ধরে। আব্বা আপনাকে খায়িয়ে দেবে। আমরা তিন জেনারেশন একসাথে বসে গল্প করবো আজ।”

মেঘের কথায় সমশের চৌধুরী আর আয়মান চৌধুরী হাসলেন। মেঘ সোজা হয় সমশের চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

“এখন নিচে চলুন!”

মেঘ সমশের চৌধুরী কে নিয়ে সিড়ির কাছে আসলো। পেছনে আয়মান চৌধুরী । মেঘ ফিসফিস করে সমশের চৌধুরী কে বলল,,

“আব্বা বলে আমি আব্বার মায়ের মতো। মানে আপনার অর্ধাঙ্গিনীর মতো। তাহলে দাদুভাই ফিল নিন এখন আপনি আপনার তিনির হাত ধরে হাঁটছেন।”

মেঘের কথা শুনে সমশের চৌধুরী হেঁসে বলল,,

“ঠিক বলেছে আয়মান আপনি আমার তিনির মতো। তো আমার উনি এবার যাওয়া যাক নিচে।”

সমশের চৌধুরীর আজ নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে। এতদিন পর মনে হচ্ছে সে একা নয়। নিচে সবাই রয়েছে কেউ খাচ্ছে কেউ বিরস মুখে সোফায় বসে আছে। মেঘ কারো তোয়াক্কা না করে সোজা সমশের চৌধুরী কে তার চেয়ারে বসিয়ে দিল। আয়মান চৌধুরী ওনার চেয়ারের পাশে একটা চেয়ার উঠিয়ে রাখলেন মেঘ আর সমশের চৌধুরী বসে পরলো। আয়মান চৌধুরী এক প্লেটে খাবার বেড়ে আয়মান চৌধুরীর সামনে ধরলো। সমশের চৌধুরী হেঁসে মুখে নিলেন। মেঘ ওনার হাত ধরে বসে আছে আয়মান চৌধুরী খায়িয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্যটা সবাইকেই মুগ্ধ করলো। সকলে মুগ্ধ চোখে তাদের তিনজন কে দেখতে লাগলো। কে জানে এই দৃশ্য আবার কখনো আসবে কিনা।

~চলবে,,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১১

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১১ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ আস্তে ধীরে দুই হাত উঁচু করে নিচে নামলো। তারপর সাবধানে নিজের রুমে ঢুকলো। এতক্ষন ধূসর মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল তবে লুকিয়েছিল। ঠিকভাবে মেঘ রুমে ঢুকতেই ধূসর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। মেঘ রুমে ঢুকতেই দেখলো ওর তিন বান্ধবী আরামসে ঘুমাচ্ছে একে অপরকে জরিয়ে। মেঘ হাসলো তারপর টেবিলে বসে ধূসরের কথা ভাবতে লাগলো। লোকটার হাঁসি, তার এলোমেলো চুল কতো সাবধানে যত্ন করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছিল। মেঘের ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেশ দেখা যাচ্ছে। অতঃপর কিছুক্ষণ পরে মেঘ হাত ধুয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে হাত দু’টো ভালো করে দেখলো অনেক সুন্দর রঙ হয়েছে। সে খুশিমনে বিছানায় বান্ধবীদের পাশে শুয়ে পড়লো। খুব তাড়াতাড়ি মেঘের চোখে শান্তির ঘুম নেমে এলো।

অতঃপর মিষ্টি সকালের আগমন। কাল অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে , তাছাড়া কালকে রাতের ঘুমটাও শান্তির ছিল। তাই মেঘের আজ ফজরের সময় ঘুম ভাঙেনি। মেঘের বান্ধবীরা ফজরের সময় উঠে পরেছে তাই মেঘকেও ডেকে তুলল। অতঃপর চার বান্ধবী উযু করে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। চার বান্ধবী একসাথে বেলকনিতে গিয়ে ভোরের স্নিগ্ধতা দেখতো লাগলো। হুট করে হিরের নজর গেল মেঘের হাতের দিকে ও মুখে হাত দিয়ে বলল,,

“ও মাই আল্লাহ!”

তখন জাবিন বলল,,

“কি হয়েছে?”

“আমাদের নিরামিষ বান্ধবীর হাত দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন?”

সবাই মেঘের হাতের দিকে তাকালো। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি!

তখন হির বলল,,

“রাতে দুলাভাই আইছিলো ঘরে আমরা কেউ ঠাহরই করতে পারলাম না। আল্লাহ কাল রাতে ঘুমটা একটু কম দিতে পারলে না, তাইলে ঐ প্রেমিকযুগলরে মন ভইরা দেখতে পারতাম। আহ দুলাভাই আপনি কেন আমাগো জাগাইলেন না।”

“ঐ ড্রামাবাজ অফ যা!”

‘আচ্ছা বল এইটা কেমনে হলো? তুই তো নিবি না সেটা জানি তবে এটাও জানি ধূসর ভাইয়ার হাতে ছাড়া আরো কারো হাত থেকে মেহেদী নিবি না।ধূসর ভাইয়ার তো কিছু মনে নাই তাইলে তোরে মেহেদী কেমনে দিল।”

ওকে শোন কাল রাতে,,, মেঘ ওদের কে সব ঘটনা বললো এদের থেকে মেঘ কিছুই লুকায় না। সব শুনে লিয়া বলল,,

“ধূসর ভাইয়ার কথা কি বলবো। তোকে ফিল করে আবার এটাও মনে এটা ঠিক না। তোর হাতে মেহেদী দিল কিন্তু হাত ধরলো না। ভাইয়ার মেহেদী দিতে কষ্ট হয়েছে কিন্তু!”

‘হুম তা তো হয়েছেই। এখন নিচে চল সকাল হয়ে গেছে। আপনাদের কাজ আপনারা দেখে নেন।”

______________

আজ মুনের বিয়ে সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত। আজ আয়মান চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরীর মনটা বেশ খারাপ। তাদের বড় সন্তান আজ অন্যের বাড়ি চলে যাবে। সকাল থেকেই মেঘ আয়মান চৌধুরী কে লক্ষ্য করছিল। মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে মুনের রুমে নিয়ে গেল। মুন প্রথমে অবাক হলেও পরে বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর মাফ চাইলো। আয়মান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে শান্ত করে বেরিয়ে এলেন। সকালে সবাই নাস্তা করে বসে আছে দিলরুবা খানম আর মেঘ একসাথে বসেছে। এমন কি অপর পাশে ওর বান্ধবীরা আর ধূসর ও ওখানে ছিল। তখন মেঘের বড় মামি ওনার মেয়েকে এনে দিলরুবা খানম এর কাছে এসে বললেন,,

“আচ্ছা আপনার ছোট ছেলে তো ডক্টর তাই না।”

দিলরুবা খানম হেঁসে বললেন,,

“হুম আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলে একজন ডক্টর!”

“মাশাআল্লাহ আপা! ও হচ্ছে আমার মেয়ে মিতু।”

ধূসর আর মেঘ মন দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। হুট করে মেয়ের কথা আসতেই মেঘ বুঝতে পারলো কি বলবে এখন। তাই ও নিজেই বলল,,

“হ্যা বড় মামি ও আপনার মেয়ে মিতু। তাতে কি হয়েছে?”

তখন মেঘের বড় মামি দিলরুবা খানম এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আসলে আপা আমি ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। তাই সরাসরিই বলছি। আমার আপনার ছেলেকে জামাই হিসেবে পছন্দ হয়েছে। যদি আপনাদের আমার মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে ওরা একে অপরের সাথে আলাপ করে বিয়ে অব্দি যেতে পারে।”

মেঘ বিস্ফোরিত চোখে ওর বড় মামির দিকে তাকালো। দিলরুবা খানম পরে গেলেন মহা বিপদে এদিকে সবাই ধূসরের বিয়ের কথা শুনে উৎসুক হয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না তখন ধূসর বলল,,

“সরি আন্টি আমি বিবাহিত!”

এ কথা শুনে সবার দৃষ্টি ধূসরের দিকে পড়লো। মেঘ ও চমকে উঠলো। দিলরুবা খানম ও ছেলেকে পর্যবেক্ষন করছে। তখন মেঘের বড় মামি বলল,,

‘ওহ আচ্ছা সরি! আসলে তোমার বউকে তো আনোনি তাই ভাবলাম তুমি অবিবাহিত কিছু মনে করো না।”

উনি লজ্জায় মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন। এদিকে দিলরুবা খানম ছেলের কাছে গিয়ে বললেন,,

“এখন এটা কি হলো?”

ধূসর ফিসফিস করে বলল,,

“কি আবার হলো আমি তো একজন কে পছন্দ করি তাকেই বিয়ে করবো। আর কেউ যেন বিয়ের প্রস্তাব না দেয়। সেই জন্য বলে দিলাম আমি বিবাহিত।”

ধূসরের কথায় দিলরুবা খানম হাসলেন আর বললেন,,

“পাগল একটা! তাই এভাবে কেউ বলে!

“আমি বলি এই ধূসর এহসান শুভ্র বলে!”

দিলরুবা খানম হেঁসে ওখান থেকে মেঘের কাছে গেলেন। মেঘ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে উনি ধূসরের বিষয়টা জানালেন। মেঘ হাসলো ধূসরের কান্ড দেখে। হুট করেই বিয়ে বাড়িতে একটা খবর উঠলো ধূসর নামক হ্যান্ডসাম ডক্টর বিবাহিত।

দুপুর হয়ে গেলে মেঘরা সবাই তৈরি হয়ে নিল। মেঘ,নীলি, জাবিন, হির আর লিয়া একইরকম গ্ৰাউন পরেছে শুধু রঙটা ভিন্ন। মেঘ হোয়াইট কালার ,হিরের টা পিংক, নীলির টা ব্লু ,জাবিনেরটা ব্ল্যাক, আর লিয়ার টা নেভিব্লু কালার। সবাই নিজের গ্ৰাউনের সাথে মিলিয়ে হিজাব নিকাব পরেছে। পাঁচজন কেই সুন্দর লাগছে। এদিকে ধূসর সাদা রঙের স্যুট সেট পরছে। যে কেউ দেখে বলবে ওরা ম্যাচিং করে পরেছে। মেঘরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে নিচে নামলো সবাই ওদের প্রশংসা করলো। মেঘ ওর আব্বার কাছে গেল। আয়মান চৌধুরী মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,

“মাশাআল্লাহ আমার আম্মাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কারো নজর না লাগে।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

‘আব্বা আপনাকেও এই শুভ্র রঙের পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”

‘আমার থেকে আপনাকে বেশি সুন্দর লাগছে। দাঁড়ান আমি সূরা পরে নজর কাটিয়ে দিই।”

মেঘ হাসলো আয়মান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে তিনবার করে সূরা ফালাক আর সূরা নাস পরে মাথায় ফুঁ দিয়ে দিল। ওখানে থাকা সকলেই দেখলো এদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে তারা মুগ্ধ। মেঘ ওর আব্বার কাছেই দায়িয়ে রইলো। তখন মেঘ ধূসরকে দেখলো সিড়ি দিয়ে নামতে সাদা রঙের স্যুট সেট পরেছে। একবার নিজের দিকে তাকালো আবার ধূসরের দিকে তাকালো। দুজনে ম্যাচিং হয়ে গেছে। ধূসরও মেঘকে দেখলো আর মেঘকে দেখে ওর হার্টবিট বেড়ে গেল। আর মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,,

“মাশাআল্লাহ মেঘবালিকা! যেন একটু মেঘ আমার সামনে দাঁড়িয়ে!

ধূসর মেঘের কাছে যাওয়ার জন্য ওর দিকেই আসলো। ওখানে এহসান খান আর দিশান ও ছিল। ধূসর মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ মেঘবালিকা!”

বলেই ওর পাশ কাটিয়ে দিশানের কাছে গেল। তখন একজন এসে আয়মান চৌধুরী কে বলল,,

“তো আয়মান সাহেব বড় মেয়ের বিয়ে তো হলো এখন ছোট মেয়ের পালা শুনলাম মেয়ের পড়াশোনা শেষ তো মেয়েকে বিয়ে দেবেন না!”

হুট করে এমন প্রশ্নে আয়মান চৌধুরী আর মেঘ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তাছাড়া ধূসরের পরিবার ও ওখানে ছিল। তখন সমশের চৌধুরী মেঘের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“আমার নাতনি বিবাহিত!”

এ কথাটা যেন ধূসরের কাছে বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ ভাবেনি হুট করে সমশের চৌধুরী এখানে এসে সব বলে দেবে। মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো ওর চোখ ছলছল করছে। ও ধূসরের অবস্থা বুঝতে পারলো। ধূসর কোন কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেল। পেছনে দিশান ও ছুটলো ও বুঝতে পারছে এখন ওর ভাইকে একা ছাড়া উচিৎ নয়। মেঘ এই ভয়টাই পাচ্ছিল। মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। এখন ধূসর কি করবে? আয়মান চৌধুরী মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘের হাত ধরে ওনার রুমে গেল। মেঘকে এই মুহূর্তে কেমন বিধস্থ লাগছে। ও রোবটের মতো ওর আব্বার সাথে রুমে এলো। সকলে অবাক চোখে বাবা মেয়েকে দেখলো কিন্তু এগিয়ে এলো না। ধূসরের পরিবার ওখানেই ছিল তাই ঐ অবস্থা দেখে ওনারাও এগিয়ে এলো। এহসান খান সব জানালেন। ওনারা নিজেরাও কি করবে বুঝতে পারছে না। মেঘকে রুমে এনে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘আম্মা আপনি!”

মেঘ ওর আব্বাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যের যখন ভুল সময়ে আগমন ঘটে তখন কি রকম অনুভুতি হয় আমার জানা নেই। তখন ধূসরের দিকে তাকিয়ে কিছুই হয় নি শুধু হুট করে থমকে গেছিলাম। তার চোখে আমাকে হাড়িয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রনা দেখতে পেয়েছিলাম। ওনার চোখদুটো ছলছল করছিল আব্বা। বোধহয় ঐ চোখ দুটো চিৎকার করে বলছিল এটা হতে পারে না।”

“আর আপনি?”

মেঘ নিঃশব্দে তার আব্বার বুকে তার অনুভূতি ঢেলে দিচ্ছে। এ যে নিদারুণ বিষাদ। কিছুক্ষণ পর মেঘ নিজের চোখ মুছে ফেলল আর বলল,,

‘আমি ঠিক আছি আব্বা আপনি নিচে যান। আপনার বড় মেয়ের বিয়ে অনেকেই আসছে। তাদের স্বাগতম জানাতে হবে তো! ”

“আম্মা আপনি ,,

‘আব্বা আমার কথা শুনুন আপনি যান। আমি ফ্রেশ হয়ে আবার ঠিকঠাক হয়ে নিচে আসছি। তাছাড়া বরযাত্রী এসে পরবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।”

আয়মান চৌধুরী মানা করলে মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বেরিয়ে এলো। সিড়ির সামনে দাঁড়ালো মেঘ ইশারা করলো নিচে যেতে । আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ আপনার সময় টা সুখের হোক!”

“আমিন আব্বা!”

আয়মান চৌধুরী নিচে চলে গেলেন। মেঘ তাড়াতাড়ি করে রুমে আসলো ওখানে নীলি আর জাবিন ছিল। ওদের দেখেও না দেখার ভান করে বলল,,

‘তোরা নিচে যা আমি দশ মিনিটে নিচে আসছি। আর নীলি খোঁজ কর তোর ভাই কোথায়? তোর ভাই আবার শোকে দেবদাস হয়ে বনবাসে গেছে নাকি‌। দিশান ভাইয়াকে বল বাড়ি নিয়ে আসতে।”

বলেই মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। নীলি আর জাবিন অসহায় মুখ করে নিচে চলে এলো। মেঘ নিকাব খুলে নিজের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখলো। ও হিজাব খুলে নিজের মুখ ভালো করে ধুয়ে বের হলো। আবার হিজাব নিকাব পরে নিচে আসলো। নিচে এসে প্রথমে নীলকে কোলে নিল তারপর ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল এখন ও পুরো বাড়িটা দেখবে ঘুরে ঘুরে। নীল ও একটা ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পরেছে খুব সুন্দর লাগছে। বাইরে এসে মেঘ নীলকে নামিয়ে হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে ও হাড়িয়ে গেছে এদিক ওদিক কিছু খুঁজছে। হুট করে তখন আয়মান চৌধুরী মেঘকে ডাক দিল স্টেজের ওখানে। মেঘ ওখানে গেল। আর ওখানে গিয়ে ওর আব্বার সাথে কাউকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখে চমকে উঠলো। ও গিয়ে বলল,,

“হুম আব্বা ডেকেছেন?”

“ইনি হলো সুনামধন্য বিজনেস ম্যান আতাউর রহমান। বিজনেসে সবার ওপরে যদি কারো নাম থাকে সেটা হচ্ছে তার।”

“তুমি ভুল বললে আজকাল A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজের A .C ও কিছু কম যায় না।”

আয়মান চৌধুরী একটু নড়েচড়ে উঠলে। মেঘ কথাটা শুনে হেঁসে কথা ঘুরানোর জন্য বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল!”

তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এতদিন তোমার নাম অনেক শুনেছি আজ দেখলাম। তুমিই তো সেই যে আয়মানের সবসময় সাথে ছিলে। এমনকি যখন সবাই আয়মান কে ভুল বুঝে ছিল তুমি তার সাথে ছিলে।”

আয়মান চৌধুরী একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“আহ হা পুরোনো কথা টেনে এনে কি লাভ। মেঘ ওর কথায় কিছু মনে করো না।”

“ফুপা আপনারা দুজন কি বন্ধু!”

এটা শুনে দুজনেই একটু হকচকিয়ে গেল। তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“হ্যা আমরা একসাথে পড়াশোনা করতাম।”

‘ওহ আচ্ছা! আপনি তো AR ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর মালিক তাই না।”

“হুম বাহ আমায় দেখি চিনো তুমি?”

‘হ্যা ঐ একটু! আচ্ছা আপনারা কথা বলুন আমি আসছি!”

তখনি শোনা গেল বর এসেছে সবাই এগিয়ে গেল কিন্তু মেঘ গেল না। ও নীল কে বলল ওর মায়ের কাছে যেতে। নীল চলে গেল। মেঘের ভালো লাগছে না হুট করে নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। ও বাড়ির পেছন দিকে গেল। সেখানে গিয়ে ধূসরকে দেখলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ ওখানে গেল ও ভাবতে পারে নি ধূসরকে এখানে পাবে। এই জায়গায় কেউ আসনা সচরাচর। মেঘ ধূসরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ধূসর কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকালো এই মুহূর্তে তার মেঘবালিকা কে দেখে মোটেও খুশি হয় নি সে। ওর চোখটা ছলছল করছে মেঘের চোখের দিকে তাকাতেই চোখের পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে মুছে ফেলল। তা দেখে মেঘের চোখটাও ছলছল করে উঠলো কিন্তু মেঘ কিছু বললো না।চোখটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করে ধূসর বলল,,

আকাশের মেঘ তুমি!
যাকে দেখা যায়,
অনুভব করা যায়,
কিন্তু ধরে রাখা যায় না।

ভেতরে বিষাদভরা শোক!
তুমুল আর্তনাদ,
নাম না জানা নীল ব্যাথা
তুমি আমার থেকে
ঝড়ে যাওয়া
এক সবুজ পাতা।

এক একটা মুহুর্ত যাচ্ছে
সাথে হাহাকার গুলো গাঢ় হয়ে উঠছে।
আহ এ কেমন বিষাদ
আমাকে ঘিরে ধরেছে!

“এই সময় দাঁড়িয়ে আমার ভেতর থেকে এই কথাগুলোই কবিতার রুপ নিয়ে আসলো কবিতাটা সুন্দর তাইনা মেঘ।”

মেঘ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“হুম!”

“তুমি বিবাহিত আমায় বলো নি তো?”

“সেরকম সময়ই আসে নি। তাছাড়া যে নেই তার কথা বলে কি লাভ।”

কথাটা শুনে ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো মেঘ এখনো সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। ধূসর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“কি বললে? কিছু বুঝলাম না!”যে নেই মানে?”

‘যে নেই মানে নেই। আমার সে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে।”

‘আমার সে’ শুনে ধূসরের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। মেঘ কি তাকে অনেক ভালোবাসে? ধূসর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“ছেড়ে দিয়েছে মানে? তোমার মতো মানুষকে কে ছেড়ে দিতে পারে? এতটা বোকা কেউ কি করে হতে পারে?”

মেঘ হেসে বলল,,

“আমাদের জীবনে অনেকসময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কিছু বিপর্যয় আসে। যা আমাদের হাতে থাকে না। ঠিক তেমনটাই আমাদের সাথে ঘটেছিল। আমার থেকে চিরতরে সে হাড়িয়ে গেছে। আমায় ভুলে গেছে সে।

এ কথা শুনে মেঘের জন্য খারাপ লাগলেও ধূসরের অনেক খুশি নিজের জন্য। ধূসর খুশি মনে বলল,

“চিরতরে মানে?

ধূসরের কন্ঠস্বর শুনে মেঘ বুঝতে পারল তার অবস্থা তাই ওর দিকে ঘুরে বলল,,

“চিরতরে মানে চিরতরে তার তখনকার অস্তিত্ব মুছে গেছে। আজ থেকে একবছর আটমাস আগে। সে আর আমার হয় নি আমায় ছেড়ে গেছে। আমায় ভুলে গেছে সে।”

আমায় ভুলে গেছে এই শব্দটার মানে ধূসর বুঝতে পারলো না। তবে ধূসরের চোখেমুখে হাঁসি দেখা যাচ্ছে কিন্তু সে প্রকাশ করছে না। কিন্তু মেঘ বুঝতে পারলো। মেঘ মনে মনে হাসলো। ধূসর বলল,,

“আপনার সে যেমনভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার কাছে থেকে হাড়িয়ে গেছে। তেমনভাবে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার জীবনের সাথে কেউ জুড়ে যায়। আপনি কি তাকে গ্ৰহন করবেন মিসেস কাশফিয়া আয়মান মেঘ?”

মেঘ মুখ ঘুরিয়ে হাসলো চমৎকার সেই হাঁসি। তবে ধূসর দেখতে পেল না। মেঘ বলল,,

“জানিনা আপনার মতো!”

ধূসর বুঝতে পারলো এ কথার মানে। ও হাসলো। ওর জানিনা শব্দে যেমন সব হয়ে যায়। তেমনটাই মেঘ বলল। মেঘ ওখান থেকে চলে আসতে নিল। তখন ধূসর চিৎকার করে বলল,,

“আপনার উনার নাম কি মিসেস কাশফিয়া আয়মান মেঘ?”

মেঘ কিছু বললো না হেঁসে ওখান থেকে চলে গেল। মেঘের মনে অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে। ধূসরের ভালোবাসা ঠুনকো নয়। মেঘের প্রতি তার ভালোবাসা এক আকাশ। মেঘের বিবাহিত শোনার পরও সে মেঘকে নিজের করতে রাজি। মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার উনি অদ্ভুত সে শুনছো আকাশ,
তোমার বিশলাতার থেকেও তার ভালোবাসার পরিমান বিশাল! তাই তো এতো তাকে নিয়ে অহং আমার।”

মেঘ ভেতরে চলে গেল ততক্ষণে মুজাহিদের সাথে আসা মানুষজন খাওয়া দাওয়া শুরু করেছে। মেঘ পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধূসরের পরিবারের সবাই বিরস মুখে বসে আছে। সাথে তার বান্ধবীরাও সেখানে তেমন কেউ নেই। তাই মেঘ তাদের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,,

“আমার জীবন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ধূসর এহসান শুভ্র এর সাথে জুড়তে চলেছে। তাই সবাই মুড ঠিক করুন!

মেঘের কথা শুনে মনে হলো ঈদ লাগছে মেঘের চার বান্ধবী মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। দিলরুবা খানম মেঘের কপালে চুমু খেলেন। ওপর থেকে মায়মুনা চৌধুরী সব দেখলেন। হুটহাট করে ঘটনাগুলো তার মাথায় ঢুকছে না। মাত্রই মুনের রুমে থেকে বের হয়ে ওদের দেখলেন। অতঃপর মুনের বিয়ের বাকি থাকা সকল কার্যক্রম শেষ করা হলো। ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নেমে গেছে আরও আগেই চারদিকে অন্ধকার। এখন মুনের বিদায়ের পালা। মুন সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। মেঘকে জড়িয়েও কাঁদলো কিছুক্ষণ। সমশের চৌধুরী মুনকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে মুজাহিদ এর হাত ধরে বললেন, মুনকে ভালো রাখতে। মুনের গাড়ি চলতে লাগলো কিছুক্ষণ পর সবাই ভেতরে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো ওর আব্বার মন খারাপ অনেক তাই মেঘ সোফায় তার হাত ধরে বসে রইলো। আয়মান চৌধুরীর একটা একটা কল এলো উনি দরজার কাছে গিয়ে ফোনটা ধরে কথা বলতে লাগলেন।তখন এর পর থেকে ধূসরের মেঘের সাথে কথা হয় নি। মেঘ বসে আছে তা দেখে ধূসর ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিল। তখনি মেঘ “আব্বা!’ বলে আয়মান চৌধুরীর দিকে দৌড় দিল। আসলে আয়মান চৌধুরীকে কেউ পেছন থেকে চাকু দিয়ে আঘাত করতে যাচ্ছিল। মেঘ গিয়ে ধরে ফেলল চাকুটা মেঘের হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। সকলে মেঘের চিৎকারে দরজার দিকে তাকালো। মেঘ পা দিয়ে লোকটাকে লাথি মারলো লোকটা নিচে পরে গেল। ধূসর মেঘের দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় মেঘ বলল,,

‘সবাই ওপরে যাও তাড়াতাড়ি!”

তখনি কতোগুলো বাড়িতে ঢুকলো। কারো হাতে বন্দুক কারো হাতে লাঠি। মেঘ হাতে থাকা ছুড়িটা একজনের দিকে ছুড়ে মারলো। আরেকজন লোক আয়মান চৌধুরীর দিকে আঘাত করতে এলো মেঘ ওকেও মারতে লাগলো। আয়মান চৌধুরী ততক্ষনে নিজের গান বের করেছে। একটা মেঘের দিকে ছুড়ে মারলো । মেঘ বন্ধুক নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

“এখন যে আগাবে তাকেই শ্যুট করে দেব!”

তখন একটা লোক হেঁসে বলল,,

“তোমার হাতে ওটা মানাচ্ছে না মামনি এসব খেলনা বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাচ্ছো?”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“খেলনা বন্দুক বুঝি!”

মেঘ একসাথে চারজনকে শ্যুট করলো। সবার কাঁধের দিকে গুলি করেছে যাতে না মরে। এত তাড়াতাড়ি সব ঘটলো যে কেউ কিছু ঠাহরই করতে পারলো না। সকলে অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে মেঘের পরিবার আর ধূসর! তখন মেঘ হেঁসে বলল,,,

‘কাশফিয়া আয়মান মেঘ কখনো খেলনা জিনিস ইউজ করে না। এখনো তোদের মনে হচ্ছে এটা খেলনা বন্দুক।

কাশফিয়া আয়মান মেঘ শুনে সবথেকে পেছনে থাকা একটা লোক পিছিয়ে গেল। আর তাড়াতাড়ি করে কাউকে ফোন দিল । তখন গুলি চলার আওয়াজ আসলো বাইরে মেঘের গার্ডদের সাথে হয়তো গুলাগুলি হচ্ছে। প্রথমে হয়তো ওদের পাঠিয়েছে। ,,
ততক্ষনে ওপাশের লোকটা হ্যালো হ্যালো করছে লোকটা ফোন নিয়ে বলল,,

“বস মেঘ বেঁচে আছে।”

ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো ,,

“কে বেঁচে আছে?”

লোকটা তখন চিৎকার দিয়ে বলল,,

“K.A. Megh ওরফে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে।”

এই কথাটা এতটাই জোরে ছিল যে , সব ভেদ করে সবার কানে পৌঁছে গেছে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে।”

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১০

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ কিছুক্ষণ ধূসরের কথা ভেবে বাইরে বের হলো। ও নিচে গিয়ে দেখলো সোফায় ধূসর আর দিশান বসে আছে। তার পাশের সোফায় দিলরুবা খানম, আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী বসে গল্প করছে। দিলরুবা খানম মেঘকে দেখে ডাক দিলেন। মেঘ হেসে ওনার কাছে গিয়ে ওনার পাশে বসে পরলো। দিলরুবা খানম বললেন,,

“তোমার মুখ এমন লাগছে কেন?’

মেঘ বলল,,

“তেমন কিছু না!”

তখন ধূসর মেঘকে ডাকল ,,

“মেঘ একটু এদিকে এসো?”

মেঘ উঠে সেখানে গেল। তখন আশা চৌধুরী বললেন,,

“আপনাদের সবার সাথে মেঘ বোধহয় খুব ফ্রি তাইনা।”

দিলরুবা খানম হেঁসে বললেন,,

“হুম। ওকে দেখতে কঠিন মনে হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেঘ ভিশন অদ্ভুত। তবে একটা জিনিস মেঘকে যদি আপনি একটু ভালোবাসেন তাহলে মেঘ আপনাকে দশগুণ ফিরিয়ে দেবে। তবে মুখে প্রকাশ করে নয়, তার কাজের মাধ্যমে। অবশ্য আপনারা ওর পরিবার আপনাদের থেকে কে ভালো জানবে?”

মায়মুনা চৌধুরী অন্য কিছু ভাবলেন। মায়মুনা চৌধুরী মনে মনে জিজ্ঞেস করতে চাইলেন,,

“আপনারা মেঘকে এত ভালোবাসেন কেন?”

কিন্তু মুখে বলা হলো না উনারা অন্য কথায় মজে গেলেন। এদিকে ধূসরের কাছে মেঘ যেতেই ধূসর বলল,,

“লিলি কোথায়?”

“লিলি তো ছাদে রিমঝিম আর নীলের সাথে খেলছে।”

‘তুমি একটু ওকে এনে দেবে? আসলে সবাই অপরিচিত কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। ওর সাথে একটু সময় কাটালে ভালো লাগবে।”

“আচ্ছা একটু বসুন। আমি ওকে নিয়ে আসছি?”

মেঘ চলে গেল ওপরে গিয়ে দেখলো তার চার বান্ধবী শোকসভা করছে। তা দেখে মেঘ বলল,

“এখানে কেউ মরছে নাকি?”

হুট করে মেঘের আগমনে ওরা চমকে উঠলো। তা দেখে মেঘ হেসে বলল,,

“সবার মেহেদী নেওয়া ডান। তোদের কি হয়েছে? জায়মা আপু শায়লা আপু আমার বান্ধবীদের হাত খালি কেন? ওদের মেহেদী দিয়ে দাও তোমরা।”

জায়মা এগিয়ে এসে বলল,,

“তখন কি হয়েছিল ওভাবে রাগ করলি কেন?”

‘তেমন কিছু না! তোমরা ওদের চারজন কে মেহেদী দিয়ে দাও।”

তখন চার জন একসাথে বলল,,

“আমরা মেহেদী পরবো না।”

‘তোরা পরবি না মানে তোদের হাত পরবে। দারা আমি লিলিকে দিয়ে এসে তোদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি।”

মেঘ লিলিকে নিয়ে নিচে আসলো। ধূসরের হাতে লিলিকে দিল। তখন ধূসর বলল,,

‘তোমার সাথে সময় কাটাতে পারলে মন্দ লাগতো না।”

“আপনি কি আমার সঙ্গ চাইছেন ডক্টর?”

“সঙ্গ চাইলেই কি তুমি দেবে নাকি। তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়ে আমার সব জিনিসে বাগড়া দেওয়া তোমার কাজ।”

“আপনার কি মনে হয়? এতগুলো মানুষের মধ্যে বসে আপনাকে সঙ্গ দিই। এটা উচিৎ বলে আপনার মনে হয়।”

“আমার তো অনেক কিছুই উচিত মনে হয়। কিন্তু তোমার কাছে সেগুলো অনুচিত মনে হয়।”

‘আপনার সাথে কথা বললে কথা বাড়বে বই কমবে না। আমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে আমার বান্ধবীরা।”

“তো যাও না আমি আটকে রেখেছি?”

“আটকে রাখেন নি কিন্তু কথার জালে আটকে রাখছেন।”

“ওকে আর একটা কথাও বলবো না যাও। লিলি যাদের ভাব বেশি তাদের সাথে কথা বলতে হয় না তাই না।”

“লিলি শোন অন্যের কথায় কান দিবি না। তুই ভালো বাচ্চা ভালো বাচ্চার মতো থাকবি। অহেতুক আবদার একদম করবি না। সবসময় আবদার করলেই হয় না সুযোগ আর সময় দেখেও করতে হয়। সবথেকে বড় কথা মানুষ দেখেও করতে হয় কয়েকদিনের পরিচয়ে এত আবদার করতে হয় না।

বলেই মেঘ চলে গেল। তখন ধূসর বলল,

“এই লিলি কথাগুলো কি নিষ্ঠুর মেয়ে আমাকে বলল। দেখলি তোর মালকিন কত নিষ্ঠুর। আমি নাহয় একটু আবদার করলাম আর সে কি করলো জ্ঞান দিয়ে চলে গেল।

ধূসর লিলিকে নিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। আর বিছানায় বসে লিলিকে কোলে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,

“আচ্ছা আমি ওর সাথে এত ফ্রিভাবে কথা বলি কিভাবে? যেখানে কোন মেয়ের দিকে তাকাই না। সেখানে ওর সাথে গল্প করতে চাই, যেটা কিনা সত্যিই একেবারে অনুচিত। একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে একসাথে এত ফ্রি হওয়া উচিৎ নয়। আচ্ছা আমি কি শয়তানের ধোকায় পড়ছি নিজের নফসকে কন্ট্রোল করতে পারছি না এটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কেন যেন মেঘের দিকে তাকালে মনে হয় সবকিছু বৈধ এক অদ্ভুত প্রশান্তি আসে। না বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাকে নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে হবে।”

_________________

মেঘ ওপরে গিয়ে সবার সাথে মিলে ওর চার বান্ধবীকে মেহেদী পড়িয়ে দিল। নোলক আর রোহিনীও নিচ্ছে জায়মাদের থেকে। রিমঝিম বায়না করলো তারাও নেবে মেঘ সুন্দর করে তাদের হাতে দিয়ে দিল। তখন নীল মেঘের কাছে গিয়ে বলল,,

“আম্মু?”

“হুম নীলবাবু বলো তুমি মেহেদী নিবে?”

‘না আমার মেহেদী ভালো লাগে না। খুদা লাগছে মা তো মেহেদী নিয়েছে তুমি খায়িয়ে দাও।”

‘হুম চলো! রিমঝিম মামনি তোমরাও চলো একসাথে তিনজনকে খায়িয়ে দেব। ভাবির হাতে তো মেহেদী খাওয়াতে পারবে না।”

তখন রোহিনী বলল,,

‘শুকরিয়া মেঘ সত্যি বোধহয় ওদের খিদে পেয়েছে।”

“ধূর ভাবি তুমি যে কি বলো না। ওরা তো আমার নীলের মতোই আমার কাছে।”

মেঘ তিনজনকে নিয়ে নিচে এলো তিনজন কে সোফায় বসিয়ে খায়িয়ে দিতে লাগলো ওরাও ভদ্র বাচ্চার মতো খাচ্ছে। তখন দিলরুবা খানম ওদের কাছে এসে বলল,,

‘বাহ তোমার হাতে তিনজন কতো ভদ্র বাচ্চার মতো খাচ্ছে। কিন্তু রোহিনীর তো রিমঝিম কে খাওয়াতে জান বের হওয়ার মতো অবস্থা হয়। নীল ও কম যায় না।

তখন রিম বলল,,

‘আমরা ভালো বাচ্চা তাইনা ছোট আন্টি। আর ভালো বাচ্চারা দুষ্টুমি করে না।”

মেঘ রিমের কথা শুনে হাসলো। ছোট মা বলতে যাচ্ছিল তা ও ভালো মতোই বুঝতে পারলো। তখন নীল বলল,,

‘একদম ঠিক বলেছে রিম। আসলে কি বলো নানুমনি তোমার মেয়ে ঠিক মতো খাওয়াতে পারে না। তাই ওতো অসুবিধা হয়। কিন্তু দেখো আম্মু কতো সুন্দর করে খায়িয়ে দিচ্ছে।”

মেঘ আর দিলরুবা খানম হাসলো। দিলরুবা খানম বললেন,,

“ওরে পাকা ছেলে। তো বাচ্চারা এখানে, কিন্তু বাচ্চাদের মায়েরা কোথায় মেঘ?”

‘এই যে আম্মাজান আমরা এখানে? হাতে মেহেদী তাই মেঘ খাওয়াচ্ছে।”

নীলির কথায় দিলরুবা খানম হাসলেন। সব লেডিসরা দুই হাত ভরে মেহেদী লাগিয়েছে। সবাই এসে সোফায় বসলো আপাতত ছেলেরা ড্রয়িংরুমে নেই। বড়রা সবাই নিজেদের রুমে। আর ইয়াংস্টার সবাই বাইরে হাঁটতে গেছে আর ধূসর নিজের রুমে। ওদের খাওয়া শেষ হলে। তখন জাবিন বলল,,

“মেঘ বান্ধবী?”

“তোর আবার কি হলো?”

‘আমার ও খুদা লাগছে কিন্তু শরমে কইতে পারতেছিলাম না। নীলকে দেখে খুদাটা যেন বেড়ে গেল। তাই তুই যদি একটু খায়িয়ে দিতি আমার তো হাতে মেহেদী!”

তখন বাকি তিনজন বলল,,

“আমরাও কিন্তু আছি!”

মেঘ হেসে বলল,,

‘ঠিক আছে চারজন কেই দিচ্ছি কিন্তু ভাবি আর নোলক তোমাদের কেও খায়িয়ে দেব নাকি?”

তখন নোলক বলল,,

“না আপু আমরা পরে খাবো। তুমি আপুদের খাওয়াও।”

‘তোরা চারজন আমার রুমে যা। এখানে চারজনকে একসাথে খাওয়ানো সম্ভব নয়। আর সেটা ঠিক ও হবে না। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

ওরা চারজন ওপরে চলে গেল মেঘ কিচেনে গেল খাবার বাড়তে সেখানে মায়মুনা চৌধুরী,আশা চৌধুরী , জাহানারা চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী ছিল । আয়না চৌধুরী বলল,,

“এদের নিয়ে এত আদিখ্যেতা কিসের বুঝলাম না।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“তো এদের ছেড়ে আপনাদের নিয়ে আদিখ্যেতা করার দরকার ছিল নাকি। আমার প্রিয়জন এরা তাদের নিয়ে আদিখ্যেতা করি আর যাই করি আপনাদের তাতে কি? আমি ওদের জন্য আদিখ্যেতা করছি সেটা দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ওরা যখন আপনাদের এই অবহেলার পাত্রী কে নিয়ে আদিখ্যেতা করে তখন চোখ কোথায় থাকে। এই যে নীলির মাকে দেখছেন সে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো চুমু খেল কই মায়মুনা চৌধুরী তো আমার নিজের মা কখনো ভালো করে কথা অব্দি বলে নি। এমন কি আপনি যে আজ পর্যন্ত অপমান ছাড়া কথা অব্দি বলেন নি আবার এসেছেন আমাদের বলতে। একটা কথা মাথায় রাখবেন ফুপি কিছু বলছি না মানে এই না কখনো কিছু বলবো না। আমি যদি বলতে শুরু করি না মুখ দেখানোর অবস্থায় থাকবেন না।”

অপমানে আয়না চৌধুরীর মুখ থমথমে হয়ে উঠে। আর মায়মুনা চৌধুরীর অদ্ভুত বুকে জ্বালা শুরু হয়। নিজের তিক্ত সত্য শুনে নাকি অন্য কিছু কিন্তু আজ আর মেঘকে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না।তাই তিনি কিছু বললেন না। তখন আশা চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ তোর কিছু লাগবে?”

‘তেমন কিছু না আমি সব নিয়েই যাচ্ছি শুধু পানি লাগবে।”

“আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি তোর সাথে।”

মেঘ দুই প্লেটে পাঁচজনের খাবার নিল। আশা চৌধুরী পানি নিয়ে মেঘের সাথে ওপরে এলেন। উনি পানি দিয়ে চলে গেলেন । অতঃপর মেঘ বিছানায় বসে ওদের খাওয়াতে লাগলো। হুট করে দরজায় নক পড়লো মেঘ বলল,

” কে?”

“আমি ডক্টর শুভ্র? ”

“কোন দরকার ছিল?”

“লিলির খিদে পেয়েছে?”

“ওহ আচ্ছা আসলে আমি ভুলে গেছিলাম। ক্যাট ফুড আমার টেবিলের ওপর । আমি এখন ব্যস্ত আমার আমার হাত ও আটকানো।”

“যদি কিছু না মনে করো তাহলে আমি ভেতরে এসে ওগুলো নিতে পারি। আসলে লিলির অনেক খুদা লাগছে। অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছিল।”

মেঘ ওদের সকলের দিকে তাকালো সব ঠিক আছে। ওরাও সবাই সম্মতি দিল। তা মেঘ বলল,,

“আচ্ছা ভেতরে এসে নিয়ে যান।”

ধূসর কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই ভেতরে ঢুকলো ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। ওর বোনসহ আরো তিনজন মেয়ে মেহেদী হাতে বসে আছে। আর মেঘ সবাইকে খায়িয়ে দিচ্ছিল বোধহয়। ধূসর একবার ওদের দিকে তাকিয়ে আর কোন দিকে না তাকিয়ে ক্যাটফুড নিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন হির বলল,,

“দেখছিস মেঘ তোর জামাইটা কতো ভালো । দ্যাখ তোর বিলাই এর জন্য একটা মেয়ের রুমে ঢুকছে।”

হিরের কথায় সবাই হাসলো। মেঘ কিছু বললো না। অতঃপর সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ মেহেদী রেখে হাত ধুয়ে ফেলল। ওদের সাথে মেঘ ও খেয়ে নিয়েছে। তাই ও নিচে ওর আব্বার আর ধূসরের পরিবারের খাওয়া হলো কি না দেখতে এলো। কেউ এখনো বসেনি মেঘই সবাইকে বলে খাবার খাওয়ালো। অতঃপর সবাই নিজেদের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল।

___________________

“কাল আয়মানের মেয়ের বিয়ে অথচ কোন ধামাকা হবে না এটা কি ঠিক হবে বন্ধু।”

“কাল এত বড় একটা অনুষ্ঠান থাক না কালকের প্ল্যানটার সময় নির্ধারণ আরেকটু পর করো না হয়। তাছাড়া যার বিয়ে তার ও কিছু এক্সপেক্টেশন আছে তাই না।

“তুমি কি ওদের খুশির কথা ভাবছো?”

“না ওদের খুশির জন্য করছি না। ধামাকা টা মুনের বিদায়ের পর বাইরে থেকেই করলে ভালো হয়। বিয়ের গাড়ি ছাড়ার দুই মিনিট পর করবে কারন তখন সবার মন খারাপ থাকবে আয়মান ও দূর্বল থাকবে। তখন হুট করে অ্যাটাক হলে ওরা কেউ কিছু বুঝতে পারবে না।”

“বাহ ভালো বুদ্ধি দিলে তো? তখন ওরা গেটের সামনে থাকবে। সবাইকে কষ্ট করে খুজতে হবে না।”

“তুমি ঠিক করতে চাইছো?”

” তোমার এতো জানতে হবে না। শুধু জেনো রেখো কাল আমি চৌধুরী বাড়িতে এ তান্ডব চালাবো।”

“সমশের চৌধুরীর সাথে তোমার কিসের শত্রুতা আমি আজও জানতে পারলাম না।”

“তোমার জানতেও হবে না তুমি শুধু আমার কাজ ঠিকভাবে করে যাও। শুধু মনে রেখো আমি চৌধুরীদের শেষ দেখতে চাই। এখন রাখছি!

বলেই লোকটা ফোন কেটে দিল। এপাশের জন কিছুই বুঝতে পারলো না।

________________

“এত রাতে ছাদে কি করছেন ম্যাডাম?”

মেঘ ছাদে দাঁড়িয়ে কিছু দেখছিল। রাত বারোটা সবাই ঘুমিয়ে পরেছে বোধহয়। ওর তিন বান্ধবীও ঘুমিয়ে পরেছে। কেন যেন ওর ঘুম আসছিল না। তাই মনটাকে ফ্রেশ করার জন্য ছাদে এসেছে। এত রাতে হুট করে কারো আওয়াজ পেয়েই ও সাথে সাথে ঘুরলো না। আগে আয়তুল কুরসি পাঠ করলো তারপর চোখ বুজে পুরোটা ঘুরল তারপর চোখ খুলে ছাদের লাইট লাগানো আলোতে ধূসরকে দেখতে পেল। ও ধূসরকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তা দেখে ধূসর বলল,,

“ভয় পেয়েছিলে নাকি?”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“এত রাতে হুট করে কারো শব্দ পেলাম। তাও পেছন থেকে ভয় তো একটু পাবোই।”

“আমি না হয় মানুষ যদি জ্বিন থাকতো। এত রাতে ছাদে এসেছো কেন? এত রাতে মেয়েদের রুমের বাইরে থাকা উচিত নয়।”

“সেটা আমি জানি তাই কুল আর আয়তুল কুরসি পরেই এসেছি আমি। আর আপনার দিকেও আমি আয়তুল কুরসি পাঠ করেই ঘুরেছি। তা আপনি এখানে কেন?”

“ঘুম আসছিল না। কতো এপাশ ওপাশ করলাম এলোই না। তখন মনে হলো ছাদে থেকে ঘুরে আসি তাই মনটাও ফ্রেশ হবে ঘুম ও আসবে।”

“আমার ও একই অবস্থা ডক্টর?”

“সবাই মেহেদী নিয়েছে তুমি কেন নাও নি?”

হুট করে এমন কথায় মেঘ একটুখানি অবাক হলো মেঘ বলল,

“আপনি জানলেন কি করে?”

“তুমি তোমার বান্ধবীদের খাওয়াচ্ছিলে তখন আমি তোমার হাত দেখেছি। তাছাড়া ততক্ষনে সবাই মেহেদী নিয়ে নিচেও নেমে এসেছিল।”

“ওহ আচ্ছা!’

“হুম তুমি মেহেদী পরবে?”

“না!”

“আরে আমি পরিয়ে দেব। তবে হাত ধরবো না প্রমিস। এমনিই পরিয়ে দেব।

“আপনি পারেন?”

“জানিনা তবে মনে হয় আমি কারো হাতে মেহেদী পরিয়ে দিতাম।”

“জানিনা বলেও দিতে পারেন বলছেন? তাছাড়া আমি আপনার হাত থেকে মেহেদী নেবে কেন?”

“আমি জানি না তবে আমার মনে হয় তোমার নেওয়া উচিৎ মেহেদী। প্রথমত মেহেদী পড়া সুন্নত। আর দ্বিতীয়ত একটা হাদিস আছে।’ নারীদের ন’খ সর্বদাই মেহেদী দ্বারা রাঙিয়ে রাখাই উত্তম ”
– মিশকাত : ৪৪৬৭

এখন দেখো মেহেদী পরলে তোমার সুন্নত পালন করা হচ্ছে। আবার নিজের হাত ও রঙিন করা হচ্ছে। মেহেদী পরলে হাতটা কতো সুন্দর লাগবে।”

“যদি আমি না লাগাই তো!”

ধূসর কিছু বললো না। মেঘ ও কিছু বললো না। দু’জনে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হুট করেই ধূসর বলল,,

“আচ্ছা মেঘ আমায় একটা সত্যি কথা বলবে?আমাদের পরিচয় কি এই আটমাসের নাকি আরো আগে থেকে। আমার কেন জানি মনে হয় তোমার সাথে আমার অনেকদিনের পরিচয়। তোমার সাথে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি। আরো অনেকগুলো বিষয় আছে যা আমি তোমার সাথে উপলব্ধি করি। তোমার সাথে এত ফ্রিভাবে কথা বলি যেটা আমি মেয়েদের সাথে পারি না। তোমার সাথে এতটা ফ্রিভাবে মেশা উচিৎ নয় কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এখানে অনুচিত কিছু নয়। এটা বৈধ।”

মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো আর মনে মনে বলল,

“আমাদের পরিচয় অনেকদিনের এই আটমাসের নয়। আপনি ঠিক বলেছেন আমরা অনেক সময় একে অপরের সাথে কাটিয়েছি। আর সবথেকে বড় কথা আপনার আর আমার এই ফ্রিভাবে মেলামেশা এটা অনুচিত নয় এটা বৈধ। কারন আমরা স্বামী-স্ত্রী। ”

কিন্তু মুখে বলল,

“যদি বলি আমি আর আপনি স্বামী স্ত্রী তাহলে বিশ্বাস করবেন যার জন্য আপনার এগুলো বৈধ মনে হয়?”

ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো। আর অবাক হয়ে বলল,,

“কি বলছো সত্যি এমন কিছু?”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

” আমি মজা করছিলাম!”

ধূসরের বুকটা হুট করেই ভারী হয়ে গেল। ও বিশ্বাস করে নিয়েছিল প্রায় ওরা স্বামী স্ত্রী। ধূসর বলল,,

“যদি বলতে এটা সত্যি তাহলে আমি বিনা বাক্যে বিশ্বাস করে নিতাম।”

এ কথা শুনে মেঘ চোখ বুজে ফেললো। হুট করেই তার কান্না পাচ্ছে। সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আমার ওপর আপনার এতো বিশ্বাস?”

“জানি না!”

“এই যে শুরু হয়ে গেল জানি না।

“না জানলে বলবো কিভাবে আজব!”

“আমাকে মেহেদী পরিয়ে দেবেন ডক্টর?

ধূসর হেঁসে বলল,,

“যাক ম্যাডামের সুবুদ্ধি হয়েছে?”

“মেহেদী কোথায় পাবেন এখন?”

“আমি কি অন্ধ ? ঐ যে ওখানে মেহেদী রাখা আছে। তোমার বোনেরা বোধহয় নিয়ে যেতে ভুলে গেছে। দেখেছো আমার ভাগ্য কতো ভালো। আমার জন্য তোমার বোনেরা মেহেদী রেখে গেছে।”

‘আপনি কিন্তু বলেছেন হাত না ধরে মেহেদী দেবেন!”

“দেখোই না কি হয়? শুধু হাতটা এই টেবিলের ওপরে সোজা করে নামিয়ে রাখবে। আর নড়াচড়া করবে না। তাহলে কিন্তু মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।”

মেঘ হেসে চেয়ারে বসে পরলো তারপর টেবিলের ওপর হাত রাখলো। ধূসর ও পাশের চেয়ারে বসে মেঘের ডান হাতে যত্ন করে মেহেদী দিতে লাগলো। সুন্দর ডিজাইন করে নিজে চেয়ার থেকে উঠে উঠে মেহেদী লাগাচ্ছে যাতে মেঘের হাত ধরতে নাহয়। মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখছে। গায়ে জিন্স আর কালো রঙের টিশার্ট মুখে চাপ দাড়ি, চুল গুলো এলোমেলো ওর ইচ্ছে করছে ধূসরের চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিতে। এদিকে ধূসরের কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ওর চোখে ঝাপসা কিছু দেখছে মনে হচ্ছে ও এভাবেই কাউকে যত্ন করে মেহেদী পড়িয়ে দিত। ও হুট করেই মেঘের দিকে তাকালো মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আজ আর মেঘ দৃষ্টি সরালো না। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি দেখছো?”

“আপনি কি সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আপনি একজন ভালো হাজবেন্ড হবেন।”

ধূসর হেঁসে বলল,,

“তা আর বলতে আমার মনের রানীকে আমি মাথায় করে রাখবো। আমার মেহেদী খুব পছন্দ তাকে প্রতি মাসে মেহেদী দিয়ে দেব নিজ হাতে। আর কথা নিয়ে রাখবো আমি ছাড়া সে যেন অন্য কারো হাত থেকে মেহেদী না নেয়।”

মেঘ হাসলো আর মনে মনে বলল,

“রাখবো কি আপনি তো রেখেই দিয়েছেন।”

তখন ধূসর বলল,,

“তোমার ডান হাত শেষ এখন বাম হাত দাও!”

বাম হাতের কথা মনে পরতেই মেঘের মনে পরলো বাম হাত তো লাল হয়ে আছে। তখন বাম হাতেই মেহেদী পরিয়ে দিয়েছিল। সব ভেবে মেঘ বলল,

“আর লাগবে না। আমি একহাতে তো দিলেনই। অনেক রাত হয়েছে।’

“তা বললে কি করে হয় আমি দুই হাতেই দেব। হাত নামাও বলছি।

মেঘের ইতস্তত করে বাম হাত সামনে আনলো। টেবিলের ওপর নামালো ওর হাত লাল দেখে ধূসর ব্যস্ত হয়ে বলল,,

“তোমার হাত এত লাল কেন? কি হয়েছে?”

মেঘ কি বলবে ভেবে পেল না। শুধু বলল,,

“তেমন কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।”

“কি হয়েছিল?”

“বললাম না তেমন কিছুই না!”

“আচ্ছা ঠিক আছে হাত কি ব্যথা করছে?”

“না!”

“হাত লাল হয়ে গেছে তাও বলছে ব্যথা হচ্ছে না। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা নিজের খেয়াল একটুও রাখবে না। আচ্ছা নিচে গিয়ে শুয়ে পড় মেহেদী আর না দিলাম।”

“এই হাতে দেবেন না?”

“তোমার ব্যথা লাগবে তাই দেব না।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘ মনে মনে হাসে। লোকটা ওর হাত ধরবে না শুধু মেহেদী লাগিয়ে দেবে তবুও বলছে তোমার ব্যাথা লাগবে। এর ভালোবাসার ওপর আর কতোদিকে মুগ্ধ হবে ও। মেঘ বলল,,

“একটুও ব্যথা নেই বিশ্বাস করুন। তাছাড়া আপনি তো আমার হাত স্পর্শ করবেন না আর ব্যাথাও লাগবে। মেহেদী যেহেতু নিলাম তাহলে দুই হাতেই নিই।”

“তুমি সিওর?”

“শতভাগ!”

ধূসর মেঘের বাম হাতেও মেহেদী দিয়ে দিল । দেওয়া শেষ করে ধূসর ভাবতে লাগল,,

“কয়েক ঘন্টা আগেও নিজেকে কন্ট্রোল করবো বলে বুঝালাম। না পারলেও করতে হবে। কিন্তু এই সময়টায় মেঘকে দেখেই সব হাওয়া শেষ। উল্টো আমিই বললাম মেহেদী লাগিয়ে দেব। এটা ঠিক হচ্ছে না। আমি বিয়ের আগে একটা মেয়েকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছি। যদিও হাত ধরি নি তবুও এটা ঠিক হচ্ছে না। আমার এখন নিচে যাওয়া উচিৎ। ইয়া আল্লাহ মাফ করে দিয়েন।কি করছি নিজেও বুঝতে পারছি না। কন্ট্রোল ও করতে পারছি না।

ধূসর মনে মনে কয়েকটা দোয়া পরলো। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে মেঘকে বলল,,

“তাহলে এখন নিচে যাই ঘুম পাচ্ছে। তুমিও চলো নিচে এতরাতে এখানে থাকতে হবে না!”

“আপনি যান আমি আরেকটুপর নামছি। হুট করে দুজনকে একসাথে রাতে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে।”

“তা ঠিক বলেছো।” আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ। তুসবিহুন আলা খইর!

“শুকরিয়া তুসবিহুন আলা খইর।”

মেঘ নিচে চলে গেল। মেঘ তার মেহেদী রাঙা হাত দেখে বলল ,,

“ধূসর আপনি না জেনেও অনেক কিছু করে ফেলেন। আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটার খেয়াল রাখেন। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটার সব শখ পূরণ করেন। আজ আমার খুব ইচ্ছে ছিল আপনার হাতে মেহেদী নেওয়া। এই মাঝরাতে এসে পুরন হবে ভাবতে পারি নি। এই যে আপনি নিজের কাজে নিজেই মনে করেন অনুচিত হচ্ছে। আবার মনে করেন এটা বৈধ। আসলেও তো আমার আর আপনার এই সবকিছু বৈধ। আলহামদুলিল্লাহ এটাই তো হালাল সম্পর্কের জোর। আপনি সবকিছু ভুলে গেলেও তো আমাদের এই হালাল সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে নি। আপনি আমার সাথে যাই করুন না কেন সব বৈধ। এই যে আমরা দুজন এখানে সময় কাটালাম এগুলোও বৈধ। কারন যদি বৈধ না হতো তবে এই মেঘ এখানে কখনোই থাকতো না। তবে জানেন কি ধূসর এই মেয়েটা মাঝে মাঝে আপনাকে ভিশন মিস করে।

আমি খুবই সঙ্গোপনে,
আপনার অপেক্ষায় রত!
ভাবি এইতো বোধহয়,
অপেক্ষার শেষ কিন্তু
অপেক্ষাটা দীর্ঘ কত?

আমি হেঁটে যাই আপনার শহরের কাছে,
যদি অপেক্ষার স্বল্পতা ঘনিয়ে আসে!
হয়তো ভাবছেন আমি ভালো আছি,
কিন্তু আমি তো শুধু আপনার অপেক্ষায় আছি।
যত সময় যায় নিঃসঙ্গতা হাহাকার করে বুকে,
আপনি কি ভাবছেন আমি আপনাকে ছাড়া আছি সুখে!

নিষ্ঠুর মেয়ে বলেন,
অথচ নিষ্ঠুরতার প্রমান
আপনিই দিলেন!
এখন যদি আমি বলি
নিষ্ঠুর পুরুষ তো আপনি!
তবে কি আমার মতো,
মুচকি হাসতে পারবেন আপনি!
কি জানি হয়তো হ্যা,
নয়তো না তবুও
আমার সবকিছুতেই আপনি।
সন্ধিতেও আপনি,
আবার বিচ্ছেদেও আপনি,
আমার ভালোবাসাও আপনি!
এই আমি ধূসর রাঙা মেঘ
আপনাতেই সমাপ্তি!

~ চলবে?

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৯

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“আরে আপনি এখানে? অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারি নি।”

মেঘ ধূসরকে দেখে মনে মনে হাসে। মেঘ ধূসরের জন্যই গেটের সামনে অপেক্ষা করছিল প্রায় একঘন্টা যাবৎ। যাতে ধূসরের এই অবাক হওয়া মুখটা দেখতে পায়।আর সকলের অগোচরে কথা বলতে পারে। ধূসরের কথার উত্তরে মেঘ বলল,,

“এটা আমারই বাড়ি ডক্টর?”

ধূসর অবাক হয়ে বলল,,

“তোমার বাড়ি?”

“বাহ প্রথমে আপনি করে বলে, আবার তুমিতে চলে এলেন। তাহলে আপনি সম্বোধন এ গিয়েছিলেন কেন?”

ধূসর বিরবির করে বলল,,

“মাঝে মাঝে তুমি বলা মানুষটাকে আপনি করে সম্বধোন করতে হয়। যাতে সে বোঝে সামনের মানুষটার তার প্রতি অভিমান হয়েছে।”

ধূসর বিরবির করে বললেও মেঘ ঠিকই শুনতে পেল। মেঘ হাসলো।মেঘের প্রতি অভিমান হলেই ,সে বুঝিয়ে দেবে যে সে অভিমান করেছে। মেঘ বলল,

“কি হলো? কি বিরবির করছেন?”

“তেমন কিছু না এটা তোমার বাড়ি তাই ভাবছিলাম। আচ্ছা যার বিয়ে হচ্ছে সে তোমার কে হয়? আমার জানামতে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।”

“আপনার বাবার বন্ধুর নাম কি জানেন?”

“হ্যা জানি তো আজকে বলেছে। তখন আমার তাড়া ছিল দৌড়ে বেরুচ্ছিলাম তখন বলেছে, বাবার বন্ধুর নাম আয়মান চৌধুরী!”

আয়মান চৌধুরী বলে ধূসর কিছুক্ষণ থামলো। তখন তাড়াহুড়োই আয়মান চৌধুরী নামটা মাথায়ই ছিল না। ধূসর আবার বলল,,

“আয়মান চৌধুরী তো তোমার বাবা তাই না। তুমি ওনার মেয়ে!”

কথাটা বলতে বলতেই ধূসর থমকে গেল। ওর বুকটা ভার হয়ে উঠলো সমস্তটা যেন তিক্ত রুপ ধারন করলো। মেঘ ধূসরকে পর্যবেক্ষণ করলো ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারলো। ধূসর কি ভাবছে? সেই সাথে কষ্টের ছাপ ও দেখা গেল। তা দেখে মেঘের ভেতরটা চমকে উঠলো কারন সে ধূসরের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তাই মেঘ তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“আমার বড় আপুর বিয়ে!”

হুট করে এমন কথা শুনে মুহুর্তেই ধূসর বিষন্নতা উবে, এক আকাশ খুশি ভর করলো। ও বোকার মতো কিছুটা হাসতে লাগলো। মেঘ ওর কাজে মনে মনে হাসলো। ধূসর বলল,,

“শুকরিয়া আরেকটুর জন্য তুমি আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার থেকে বাঁচালে। তা কেমন আছো তুমি? অনেকদিন হলো তোমার সাথে কথা হয় না। আজকাল খুব নিজের যত্ন নাও বুঝি। হাত ও কেটে যায় না, কোথাও আঘাত ও পাও না , তাই হাসপাতালেও যাও না।”

ধূসরের কথায় মেঘ একটু জোরেই হাসলো। মাত্র ছয় দিন হয়েছে ওরা কথা বলে না। তাতে অনেক দিন হয়েছে ধূসরের কাছে ওর সাথে দেখা হয়না বলে নিজের আঘাতের কথাও বলছে। মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি আঘাত পেলে আপনি খুশি হন বুঝি?”

“তুমি আঘাত পেলে খুশি হইতো, খুব খুশি হই। আর এতো খুশি হই যে ভেতরটা ফেটে যায়। কিন্তু তুমি তা দেখতে পাওনা নিষ্ঠুর মেয়ে।”

ধূসর বিরবির করে বললেও এবারও মেঘ শুনতে পেল। আর বলল,,

“কি হলো?”

“না তেমন কিছু না! আচ্ছা বাড়িতে ঢুকতে দেবে না বুঝি।”

“আপনিই তো আসার পর থেকে কথা বলছেন? যাই হোক ভেতরে চলুন।”

মেঘ হাঁটা ধরলো তার পেছনে ধূসর ও হাঁটতে লাগলো। ধূসর বলল,,

“তুমি কেমন আছো বললে না তো?”

“আপনি কেমন আছেন ডক্টর?’

“প্রশ্ন আমি করেছি আগে?”

“মনে করেন আপনার উত্তরই আমার উত্তর।’

ধূসর একটু অবাক হলো। মেঘ আর ধূসর বাড়িতে ঢুকে পরলো। ধূসরের পরিবার দুজনকে একসাথে দেখে খুশি হলো। কিন্তু মেঘের পরিবার একটু অবাক হয়েছে ।কারন মেঘ ছেলেদের থেকে দূরে থাকে সেটা সবাই জানে। ধূসরকে দেখে এহসান এগিয়ে আসলো তারপর আয়মান চৌধুরীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আয়মান চৌধুরীর কে জানে কি হলো চোখটা ছলছল করে উঠলো।তিনি ধূসরকে জরিয়ে ধরলেন। ধূসরের কেমন যেন লাগলো বোধহয় এই জিনিসটা তার সাথে আগেও ঘটেছে। ধূসর ওনাকে ছাড়িয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন আঙ্কেল?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো! তুমি কেমন আছো ধূসর?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি আমায় আগে থেকেই চিনেন?

” হুম চিনি তো আসলে তোমার তো পুরোনো তেমন কিছু মনে নেই তাই এরকম মনে হচ্ছে।অনেক দিন পর তোমাকে দেখে খুব খুশি হলাম ধূসর।”

“জি আঙ্কেল চিনতে না পারার জন্য দুঃখিত। আমার ও আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগছে।

‘ঠিক আছে মেঘ আম্মা এদিকে আসেন!’

“জি আব্বা!”

মেঘ শুনেই ধূসর অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো। অস্ফুট স্বরে বলল,,

“মেঘ!মেঘবালিকা!!’

ততক্ষনে মেঘ ধূসরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“যান আজানকে বলুন ধূসরকে ওর রুম দেখিয়ে দিতে। হাসপাতাল থেকে ফিরেছে একটু রেস্ট নিক।”

“হুম আব্বা আজান বোধহয় ঘরে আছে। আমি ওর ঘর পর্যন্ত ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি তারপর আজান নিয়ে যাবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

মেঘের ব্যাপারে যারা অবগত সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘকে দেখছে। একটা মানুষ এতটা নিখুঁতভাবে ভালো থাকার অভিনয় কিভাবে করতে পারে। ধূসর নীলিমা সোহেল আর নীলের সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর মেঘের সাথে চলতে লাগলো। হুট করে ধূসর বলল,,

“তোমার নাম মেঘ কোনদিন বললে না তো?”

“আপনার নাম ধূসর আপনিও তো বলেন নি?”

“আসলে ডক্টর এর ওখানে আগে থেকেই নাম ছিল D.A. শুভ্র তাই। আর তোমার সাথে তো সবসময় ডক্টর হিসেবেই দেখা হয়েছে তাই নাম বলা হয় নি। আমার ফুল নাম ধূসর এহসান শুভ্র।

“আমার ফুল নাম কাশফিয়া আয়মান মেঘ। মেঘ টা ডাকনাম বলতে পারেন।”

“এখানে না এলে জানতেই পারতাম না তোমার নাম মেঘ। মেঘবালিকা!”

“কি বললেন?”

“তেমন কিছু না!” আচ্ছা আমি তোমায় এখন থেকে কি নামে ডাকবো?

“আপনার যেটা ইচ্ছা!”

“আচ্ছা! আমি তোমায় মেঘবালি না মানে মেঘ বলেই ডাকবো। এখানে না আসলে জানতামই না তুমি আমাদের পরিবারের পূর্ব পরিচিত। আমার বাবা আর তোমার বাবা বন্ধু। অথচ তোমার বাবার নাম জানতে কত কথা খরচ করতে হলো। সেদিন বাবাও কিছু বললো না। এখানে আরো আগে আসলে মিস্ট্রি সল্ভ হয়ে যেতো!”

“কি মিস্ট্রি সল্ভ হতো।”

“কিছু না!”

ওরা আজানের রুম এসে পরেছে। মেঘ আজানকে ডাক দিল আজান লিলিকে নিয়ে বের হলো। এই দুদিনে আজানের সাথে মিশে গেছে লিলি। লিলি ধূসরকে দেখেই নিজের মতো ডাকতে লাগলো আর লাফ দিয়ে ধূসরের কোলে উঠলো। তা দেখে ধূসর প্রথমে হকচকিয়ে উঠলেও পরে নিজেকে সামলিয়ে নিল। আল বলল,,

“বাহ এটাই বোধহয় লিলি?”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“হ্যা ঐ লিলি!”

ধূসর লিলিকে আদর করতে লাগলো। লিলি ও চুপচাপ বাবার আদর খেতে লাগলো। তখন আজান বলল,,

“ইনি কে আপু?”

“উনি আব্বার বন্ধুর ছেলে ধূসর । তুই ওনাকে ওনার রুম দেখিয়ে দিয়ে আয়।”

“সকালে বাবা যার কথা বলছিল সে?”

“হুম!”

“আসুন ভাইয়া।”

ধূসর লিলিকে মেঘের কাছে দিয়ে বলল,,

“তোমার লিলি অনেক সুইট। এখন যাই লিলি আবার পরে দেখা হবে। এখন আমি ফ্রেশ হবো।”

ধূসর আজানের সাথে চলে গেল। এদিকে মেঘ লিলিকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“কি বলেছিলাম না তোর বাবার সাথে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।”

মেঘ হেঁসে নিচে গেল। নীলিমার পাশে গিয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলো। ওখানে জাবিন নোলক রোহিনীও ছিল। কিছুক্ষণ পর হির আর লিয়াও যোগ দিল। সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। জায়মা আর শায়লা অদ্ভুত ভাবে মেঘকে দেখছে। মেঘের নজর ওদের দিকে যেতে মেঘ ওদের দুজনের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ওদের সাথে ওরা মিশে যায়। সব লেডিসরা একসাথে গল্প করতে থাকে। মুন আর মেঘের মামাতো বোনেরা মুনের সাথে রয়েছে। হলুদের অনুষ্ঠান হবে না তাই কোন চাপ নেই। তবে মেয়েরা আবদার করেছে রাতে ছাদে গিয়ে একটু মেয়েরা মিলে একটু আনন্দ করবে আর মেহেদী পরবে সবাই একসাথে। সমশের চৌধুরী ওদের কথায় সম্মতি দিয়েছেন। ছেলেরা সবাই একসাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর ধূসর এলো দিশান আগেই এসে পরেছে আর শায়লা জায়মার হাজবেন্ডদের সাথে আলাপ করে নিয়েছে। ধূসর আসতে ওকেও পরিচয় করিয়ে দিল। একটু পর মেঘ ধূসরের জন্য আর বাকি সবার জন্য চা কফি পাঠিয়ে দিল। অতঃপর রাত হলে সব মেয়েরা ছাদে চলে গেল। মেঘকে বললো যেতে কিন্তু ও বলল ওর আব্বার সাথে কথা আছে পরে আসবে। ও গিয়ে আয়মান চৌধুরী কে বলল,,

“আব্বা এদিকে আসুন একটু কথা আছে?”

আয়মান চৌধুরী সবাইকে কথা বলতে বলে মেঘের সাথে বাড়ির বাইরে চলে এলেন। মেঘ চারদিকে দেখে বলল,,

“আব্বা আপনার সব গার্ডদের সাথে কথা হয়েছে?”

“জি আম্মা হয়েছে তারা কাল সকালেই সিভিল ড্রেসে এ বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে। আমি যদি ভুল না হই কাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

“হুম! তাদের এ্যালার্ট থাকতে বলবেন।কখন কি হয় বলা যায় না। সবথেকে বড় কথা কাল আপনার কাছে দু’টো গান রাখবেন?”

“কেন?”

“রাখতে বললাম রাখবেন বাকিটা দেখা যাবে। আপনার নামে লাইসেন্স করা গানটা আর আমার নামের টা ঐ দুটোই রাখবেন। যাতে কোন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতে না হয়। আমার সাথে রাখতে পারবো না ঐ ড্রেস পরে। তাই আপনার কাছে রাখা।”

“আপনি কি কাউকে সন্দেহ করছেন আম্মা!”

“আমি ছাড়াও আরেকজন করছে দাদুভাই। তিনি ভাবছেন আমাদের সাথে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিল চারটি সংখ্যা দিয়ে ৭৭৭ কিভাবে হবে। সংখ্যা চার টা মানে মানুষ চারজন। কিন্তু তিনটা সংখ্যা ২৫৯ ঐ সংখ্যার মানুষ আলাদা তিন জন। কিন্তু চারজন মানুষের মাঝে একজন বেশ শক্তিশালী। আর সে হলো অংকের ভাষায় ৩….. ২৫৯ কে ৩ দ্বারা গুন করে হয় ৭৭৭। মানে ঐ শক্তিশালী একজনের ঐ তিনজননের সাথে যোগাযোগ রয়েছে । আর সবচেয়ে বড় কথা ৭৭৭ এটা দ্বারা বুঝিয়েছে এই ছোট তিনজনের উদ্দেশ্য একটাই। কিন্ত ঐ একজনের উদ্দেশ্য আলাদা। দাদুভাই কিছু জানে কিন্তু পরিস্কার করে বলছে না। জানি না কেন বলছে না। আমরা তিন জনকে জানি কিন্তু আরেকজন কে? এটা জানি না আব্বা ‌। ঐটাই মেন কালপ্রিট। তার ব্যাপারে জানি না। যার জন্য আমরা সিওর হয়ে কিছু করতে পারছি না। আর এই বিষয়ে কিছু কি আছে যা আমি ধরতে পারছি না।‌‌ কাল একটা অনুষ্ঠান তাই রিস্ক নিতে চাইছি না। আমাদের পরিবারের সেফটির বিষয়।”

“তাহলে আমাদের মেন কালপ্রিট কে বের করতে হবে।”

“আমার মনে হয় সে নিজে এসেই ধরা দেবে।”

“আপনার এমন কেন মনে হয়?”

“অতিরিক্ত চালাক মানুষ ও মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলে। আমরা তার ভুল করার অপেক্ষায় থাকবো।”

“চালাক আর বুদ্ধিমান এর মাঝে বিস্তর ফারাক। দু’টো এক নয় সেটা আমি আপনাকে দেখে বুঝলাম আম্মা। চালাক মানুষ নিজের চতুরতায় মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলে। অথচ বুদ্ধিমান সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে তার জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে। যেমনটা আপনি আম্মা।”

“তো এবার ভেতরে যাওয়া যাক।”

“এই কথাগুলো পরেও করতে পারতাম ছাদে অনুষ্ঠান হচ্ছে সবাই মজা করছে আর আপনি?”

“আমি কেমন ধরনের মানুষ সেটা আপনি জানেন তবুও!”

“আজ তো আপনার চার বান্ধবী আছে। সাথে আপনার জা আর আপনার ননদ আছে তাহলে।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“কিছু কিছু জায়গায় আমার একাকিত্বতা ঐ একজন ছাড়া কেউ পূরন করতে পারবে না। ওখানে গেলে আপুরা মেহেদী দেওয়ার জন্য জোর করবে। কিন্তু আমি তো তার হাতে ছাড়া আর কারো হাতে মেহেদী লাগাবো না। তার নিষেধ আছে। যদি তার নিষেধ অমান্য করা তাহলে একদিন আমাকে বলবে,,

“আমি না হয় সব ভুলে গিয়েছিলাম নিষ্ঠুর মেয়ে।
তুমি তো ভুলো নি। তাহলে তুমি কেন অন্যের হাত থেকে মেহেদী লাগিয়েছিলে। তুমি তো কথা দিয়েছিলে আমার হাতে ছাড়া আর কারো হাত থেকে মেহেদী নেবে না। এখন তোমায় কি শাস্তি দেব।” তখন আমি তাকে কি জবাব দেব? আমি যে কথা দিয়েছি তাকে।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন আমার সাথে আপনি না হয় আমার পাশে বসে থাকবেন।”

“হুম।”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী ভেতরে চলে গেল। মেঘ চুপটি করে তার আব্বার পাশে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর তখন মেঘের চার বান্ধবী মেঘের সামনে দুই হাত কোমরে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। মেঘ মাথা উঠিয়ে বলল,,

“কি হয়েছে?”

তখন নীলি বলল,,

“সেটাই তো কি হয়েছে?”

“আমি জানবো কিভাবে?”

তখন হির বলল,,

“তোর জন্য ছাদে কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু তুই যাচ্ছিস না কেন?”

“আমার ছাদে যাওয়ার মুড নেই তাই!”

তখন লিয়া বলল,,

“তাহলে কি করলে মুড হবে?”

“কোনকিছু করলেই না। আমি এখন ছাদে যাবো না।”

তখন জাবিন বলল,,

“ভালোবাবা কিছু বলো না?”

আয়মান চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“আমি তোদের মাঝে নেই।”

তখন নীলি বলল,

“তা থাকবে কেন? তোমার আম্মা যা বলবে তাই। তুমি তো নাদান বাচ্চা ভালোবাবা। মেঘ উঠ নাহলে এরপর যা হবে আমরা দায়ী থাকবো না।”

“কি হবে এরপর!”

“হির, লিয়া, জাবিন দেখা কি হবে?”

তিনজনে মেঘের দিকে এগিয়ে গেল। তা দেখে ওরা কি করবে এটা বুঝতে পেরে মেঘ বলল,,

“একদম আমাকে ছুবি না।”

“আমরা তো ছুবো না ধরবো।”

বলেই হির ওকে টান দিয়ে উঠালো লিয়া আর জাবিন দুপাশে ধরে ওকে কোলে নিল। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি করলো মেঘ কিছু বুজতে পারলো না। তারপর হির আর নীলি ধরলো চার বান্ধবী দুইপাশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘ ছটফট করছে তা দেখে হির বলল,

“এবার কোথায় পালাবি এবার যাই করিস না কেন?ছাদে না যাওয়া পর্যন্ত নামবো না।এই জন্যই চারজনে ধরেছি। নাহলে আমি একাই নিতাম।”

“ভালো হচ্ছে না কিন্তু! নামিয়ে দে আমি যদি নামতে পারি না। একটার ও হাড্ডি আস্ত রাখবো না।”

“ছাদে যাওয়ার আগে নামা নেই তাই চুপ থাক।”

এদিকে মেঘের অবস্থা দেখে সবাই হাসছে‌। আয়মান চৌধুরী বেশ খুশি হলেন। কিন্তু এগুলো দেখে ধূসরের মনে প্রশ্ন উঁকি মারছে নীলি মেঘের বান্ধবী নাকি? ও মেঘের বাবাকে ভালোবাবা বললো কেন? পাশেই দিশান ছিল ও দিশান কে বলল,

“ভাইয়া কাশফিয়া মানে মেঘ ও আর নীলি কি পূর্বপরিচিত?”

“নীলি আর মেঘ তো বেস্ট ফ্রেন্ড তাও স্কুল থেকে।”

“কই আমি কোনদিন দেখলাম না। তাছাড়া কাশফিয়া কি নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এর ভাইকে চেনে না। আমি নাহয় পুরোনো কয়েকবছর ভুলে গেছি। কিন্তু ওর তো মনে আছে।

দিশান বুঝতে পারলো গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছে তাই সামলাতে বলল,,

“আসলে মেঘ তো আমাদের বাড়িতে যাই নি কখনো। তোকে দেখেও নি তাই তোকে চেনে না। আজই বোধহয় দেখলো। তুই জানিস রোহিনীর কেমন যেন বোন হয় মেঘ। আর তুই যখন অসুস্থ ছিলি তখন ওরা কয়েকমাস আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। তাই আমাদের পরিবারের সবাই ওকে ভালোমতো চেনে। তুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার দুদিন আগে ওরা চলে আসে। তাই তোর সাথে আর দেখা হয় নি। বাই দা ওয়ে এই মেঘই কি তোর কাশফিয়া।”

ধূসর মুচকি হেসে মাথা চুলকালো। তা দেখে দিশান মনে মনে শ্বাস নিল যাক বাঁচা গেছে। সবটা সামলাতে পেরেছে এখন ওর পরিবারের সাথে মেঘকে দেখলেও সমস্যা নেই। তাছাড়া ধূসরের মনটাকে ও অন্যদিকে নিয়েছে। কিন্তু এদিকে সব শুনে ধূসর বলল,,

“ইশশ তুমি চলে এলে কেন? যদি না চলে আসতে তাহলে আমাদের আরো আগে দেখা হতো মেঘবালিকা।”

_________________

ছাদে এসে ওরা চারজন মেঘকে নামিয়ে দিল। চারজনে মেঘকে এভাবে আনতে দেখে সবাই ওদের দিকে এগিয়ে আসলো। নোলক বলল,,

“বড় আপু তুমি মেঘ আপুকে এভাবে আনলে কেন?

“তোর মেঘ আপুর ঘাড়ের রগ ত্যারা ওপরে আসতে বললাম কিন্তু না তিনি আসবে না। তাই এভাবে আনতে হলো।”

এ কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। মেঘ কোন কথা না বলে দেখলো রিমঝিম আর নীল লিলিকে নিয়ে খেলছে। মেঘ সেদিকে গিয়ে ওদের কাছে গিয়ে বসলো তিনজনকে ডাক দিল ।তারপর ওদের সাথে কথা বলতে লাগলো। তখন হির বলল,

“এই মেঘ তোকে এই করার জন্য ওপরে আনলাম।”

মেঘ তাকিয়ে বলল,,

“আমি বলেছি আনতে? এবার আমার সাথে কথা বলতে এলে ছাঁদ থেকে ফেলে দেব।”

তখন শায়লা বলল,,

“এদিকে আয় না মেঘ তোর হাতে মেহেদী দিয়ে দেব। তোর না মেহেদী নিতে অনেক ভালোলাগে।”

“আমি মেহেদী পারবো না। তোমরা তোমাদের কাজ করো না। আমাকে ডিসটার্ভ করবে না। নাহলে নিচে চলে যাবো।”

মেঘের কথা শুনে কেউ ওকে ঘাটালো না। তবে বেশ কয়েকজন বুঝতে পারল মেঘ মেহেদী কেন নেবে না। ওরাও জোর করলো না। মেঘের চার বান্ধবী মেঘের সাথে গিয়ে ভাব জমাতে নিল। কিন্তু মেঘ ওদের পাত্তা দিল না প্রথমে কিছুক্ষণ পর মেঘ হেঁসে সবার সাথে কথা বলতে লাগলো। তখন মুন বলল,,

“দেখো শায়লা আপু জায়মা আপু মেঘ কি সুন্দর চারটা বান্ধবী পেয়েছে। যেই মেয়েটা অনুষ্ঠানে আসতে চাইলে বড়রা বারন করতো এমনকি আমরাও বলতাম না আসতে। অথচ দেখো আজ মেঘই আসতে চায় নি তাও চার বান্ধবী মেঘকে খুশি রাখার জন্য কোলে করে নিয়ে এলো। মেঘের ভালোবাসার মানুষ খুব স্বল্পসংখ্যক। কিন্তু যারা ওকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসায় কোন খাদ নেই। এরকম ভালোবাসার মানুষ জীবনে থাকলে খুব বেশী মানুষের দরকার নেই। স্বল্প মানুষ জীবনে থাকলেও চলবে।”

“তুই ঠিক বলেছিস মুন। মানুষ জীবনে বেশি থাকার প্রয়োজন নেই।এমন ভালোবাসার স্বল্পসংখ্যক মানুষ থাকলেই চলবে। কিন্তু কি বলতো আজকাল মানুষ সম্পর্ক তৈরি করে প্রয়োজনে তাই তো জীবনে অনেক মানুষের আনাগোনা চলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমন কেউ জীবনের সাথে যুক্ত থাকে না। যার যখন যাকে প্রয়োজন তখন তার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখে কিন্তু প্রয়োজন শেষ সম্পর্ক গুলোও কেমন ফিকে পরে যায়। তারা ভাগ্যবান যাদের সত্যিকারের নিঃস্বার্থ বন্ধু আছে। কিন্তু আজকাল অনেক নামধারী বন্ধু পাওয়া যায়। নিঃস্বার্থ বন্ধু খুব কম সংখ্যক মানুষ পায়।”

“হুম মেঘ মেহেদী পরতে খুব পছন্দ করতো আজ ওকে মেহেদী পড়াবো।”

“কিন্তু ও তো না করলো তাহলে?”

“তো কি হয়েছে আমরা পড়াবো। কিন্তু ওকে জানতেও দেব না। পরে দেখতে পাবে ?”

“এটা সম্ভব নাকি মেহেদী পড়াবি কিন্তু জানতে পারবে না।”

“আমরা তখন খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করি অথবা ভাবতে থাকি। তখন আমাদের আশেপাশে খেয়াল থাকে না।”

“তুই কি করতে চাইছিস বলতো?”

“আমি একটা জিনিস জানি তা তোমরা জানো না। আমি মেঘকে আনছি আমি ইশারা করলে তোমরা ওর হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেবে। ওর বোনের বিয়ে ওর মেহেদী রাঙা হাত না চলে নাকি।”

তখন শায়লা বলল,,

“ওকে ঠিক আছে। তুই যদি ওর হাতে মেহেদী লাগাতে পারিস। ওকে না জানিয়ে,তাহলে তোকে এক হাজার টাকা দেব।”

“ওকে ডান কাজটা আমি এমনিই করতাম কিন্তু তুমি যখন বললে দেবে তাহলে এখন জোরদার করে করবো।”

মুন মেঘের কাছে গেল সকলকে বলে মেঘকে নিয়ে এক কর্নারে আনলো। মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে আপু এখানে আনলে?”

” দেখ না আজকের চাঁদটা কি সুন্দর?

“তুমি এটা বলতে আমাকে এখানে এনেছো?”

মুনের বোকা কথায় মুন নিজেই মাথা চাপড়ায়। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“কিছু টা এরকমই। তুই জানিস এই চাঁদ কি অদ্ভুত ভালোবাসা। এই চাঁদ রকমের মুহুর্ত তৈরি করে। কতোজনের প্রেমময় রাতের সাক্ষী সে। আমার তো চাঁদনি রাতে মুজাহিদ এর সাথে চন্দ্রবিলাস করা মুহুর্ত মনে পরে যায়। তুই ও বিবাহিত তোর কি তোর হাজবেন্ড এর সাথে কোন সুন্দর মুহুর্ত নেই।”

বিবাহিত শুনে মেঘ একটু চমকালো তারমানে মুনের মনে আছে। কারন মেঘের বিয়েতে এ বাড়ির সবাইকে জানানো হয়েছিল কিন্তু কেউ যায় নি। মুন আবারও বলল,

“কি হলো কোন সুন্দর মুহুর্ত নেই?”

মেঘ ধূসরের কথা ভাবলো এই চাঁদরাতে তাদের কতো সুন্দর মুহুর্ত। মেঘ হেঁসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেন থাকবে না? আমরা কতো চন্দ্রবিলাস করেছি। তার হাতে হাত ধরে কতোটা রাস্তা হাঁটা। কখনো ছাদে কখনো নৌকায় কখনো বা গাড়ির ছাদে। একসাথে বসে কতোশত গল্প করা হয়েছে। একে অপরের পাশে বসে কতো সুন্দর মুহুর্ত অনুভব করা হয়েছে।

মেঘ চোখ বুজে ধূসরের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবতে লাগলো আর মূনকে বলতে লাগলো। ওর মুখে অদ্ভুত প্রশান্তির হাঁসি। মুন জানতো মেঘের হাজবেন্ড এর সাথে ওর খুব ভালো সম্পর্ক।এটা দুই বছর আগে ওর বাবার মুখে শুনেছিল। ওর হাজবেন্ড নাকি মেঘকে অনেক ভালোবাসে। তাই মুন প্রথমে এই ট্রিকটা কাজে লাগালো। কিন্তু ও ভাবতে পারে নি এত তাড়াতাড়ি ও ওর কাজ করতে পারবে। মুন বুঝতে পারল মেঘ এখন কল্পনা করছে মুন জায়মাকে ইশারা করলো। মেঘের ছাদের হাতলে হাত রেখে আছে মেঘ এখনো চোখ বন্ধ করে মুহুর্তগুলো ভাবছে। অর্ধেক হাতে মেহেদী দেওয়া শেষ তখন মেঘ চোখ খুলে। ওকে চোখ খুলতে দেখে মুন জায়মা সোজা হয়ে দাড়ায়। আসলে মেঘ কল্পনাবিলাসী হলেও ওর ব্রেন খুব ভালো কাজ করে। ওর মনে হচ্ছিল হাতে কিছু একটা হচ্ছে তাই তো চোখ খুললো। মেঘ হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো মেহেদী। মেঘ চমকে মুনকে বলল,

“আমার হাতে মেহেদী দিল কে?”

তখন জায়মা মেকি হাঁসি দিয়ে বলল,,

“আসলে?”

মেঘের খুব রাগ হলো কিন্তু ও রাগটা দেখাতে চাইছে না। মেঘ কঠোর স্বরে বলল,,

“কেউ যদি কোন কিছু না করে তারমানে সেটা না হবে তাই না। আমি একবার ও বলেছি আমি মেহেদী পারবো। যখন মেহেদী পরতে চাইতাম তখন তো কেউ দিতো না। আর এখন যখন না করছি তাহলে নিশ্চয়ই আমি নেব না।”

বলেই মেঘ ওখান থেকে চলে গেল ওখানে টিস্যু বক্স ছিল মেঘ টিস্যু দিয়ে হাতটা মুছতে লাগলো। তারপর নিচে আসতে লাগলো তখন হির বলল,,

“এই কোথায় যাস?”

“সবকিছুর কৈফিয়ত তোদের দিতে হবে। তোদের জন্য এটা হয়েছে তোদের বলেছিলাম না আমি এখানে আসবো না। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হলো।”

বলেই মেঘ হাঁটা ধরলো। তখন হির বলল,

“কি হয়েছে?”

তখন জায়মা এসে বলল,,

“ওর হাতে একটু মেহেদী দিয়ে দিয়েছি কিন্তু ও রাগ করলো। রেগে টিস্যু নিয়ে মুছেও ফেলল। এর আগে এত রাগতে দেখেনি।”

ওরা চারজন একসাথে বলল,,

“মেহেদী?’

“হ্যা মেহেদী!”

চার বান্ধবী দৌড়ে নিচে চলে গেল। তা দেখে মুন বলল,,

“বুঝলাম না কি হলো?”

এদিকে মেঘ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকলো সাবান দিয়ে হাত ধুতে লাগলো। এইটুকু সময়ের মধ্যে কিছুটা রঙ হয়েছে । মেঘ ওর হাত ওর শক্তি আছে তা দিয়ে ডলতে লাগলো সাবান ছুবা দিয়ে। এদিকে নীলিরা ঘরে ঢুকলো। মেঘ ওয়াশরুমে ওরা বলল মেঘকে বাইরে আসতে কিন্তু মেঘ কথা শোনার মানুষ না। হাত ডলতে ডলতে লাল হয়ে গেছে। একটু মেহেদীর রঙ আছে। তা দেখে মেঘ আরো ডলতে লাগলো। অতঃপর টানা দশমিনিট পর মেঘ বের হলো। হাতে আর অবশিষ্ট মেহেদীর রঙ নেই। তবে হাত এমনভাবে লাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে হাতের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। (এখনকার বাজারের মেহেদী সম্পর্কে ধারনা আছে সবার। এখনকার মেহেদী কিরকম সেটা সবার জানা রংমিশ্রিত মেহেদী যা তাড়াতাড়ি রঙ হতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি সময় থাকে না। এখানে সেই মেহেদী ব্যবহার করা হয়েছে।যেহেতু পাঁচ মিনিট ও রাখেনি তাই দশমিনিটে ডলে মেহেদী তুলে ফেলা বড় ব্যাপারনা। তাই এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর আমাকেও করবেন না।)

মেঘ বের হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে ফেলল খুবই ক্লান্ত সে। চার বান্ধবী মেঘের রুমেই ছিল ওরা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ বলল,

“মেহেদীর টপিক যেন কারো কানে না যায়। তারপর তখনকার জন্য সরি। খুব রাগ হচ্ছিল নিজের ওপর তাই ঝেড়ে দিয়েছি। তোদের ওপর কোন রাগ নেই আমার।তোরা তো জানতিস না এরকম কিছু হবে। তাই গিল্টি ফিল করার কোন মানে নেই। এখন সর ভালো লাগছে না তোরা ছাদে যা আর হ্যা আমার জন্য মন খারাপ করতে হবে না। আমি আধ ঘন্টা পর আসছি।এখন একটু একা থাকতে চাই।”

“আমরা,,,”

“একটাও কথা না যা আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ।”

চার বান্ধবী দরজা ভিরিয়ে দিয়ে গেল। মেঘ তখন চোখ খুলে হাতটা উঁচু করে ধরে বলল,,

“সরি ধূসর আমি আমার কথা রাখতে পারি নি। তবে হ্যা আমার হাতে আমি মেহেদীর রঙ অবশিষ্ট থাকতে দেই নি। তাই রাগ করবেন না। আপনার মেঘবালিকার হাত তো শুধু ধূসর নামক মানুষটা মেহেদী দ্বারা রঙিন করবে আর কেউ নয়।”

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৮

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

হির আর লিয়া বিয়ের ডেকোরেশনের জন্য লোকদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিল। হুট করে হিরের নজর যায় মেঘের দিকে ও মেঘকে দেখে এগিয়ে আসে। তখন মেঘের একটু ওপরে একটা লোক হাতুরি আর লোহা দিয়ে কিছু কাজ করছিল। হুট করেই লোকটার হাত থেকে হাতুরিটা পরে যায়। তাই দেখে হির ‘মেঘ’ বলে দৌড়ে গিয়ে ওকে সরিয়ে আনে তাল সামলাতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে। হুট করে এমন হওয়ায় মেঘ চমকে উঠে। সেই সাথে সকলে । মেঘকে না সরালে হাতুড়িটা ওর মাথার ওপর পরতো।সবাই তাড়াতাড়ি করে ওদের দিকে যায়। হিরের চিৎকার এতটাই জোরে ছিল যে বাড়ির ভেতরে থাকাও মেঘের পরিবার সবাই বাইরে চলে আসে। এদিকে লিয়া সব ঘটনাই দেখেছে তাই ও ওদের কাছে গিয়ে বলল,,

“মেঘ হির ঠিক আছিস?”

হির মেঘকে ছেড়ে দেয় আর দু’জনেই মাথা নেড়ে জানায় ঠিক আছে। এরপর লিয়া রেগে লোকটাকে বলে ,,

“দেখে কাজ করতে পারেন না। এতটা ইরেসপন্সিবল কিভাবে হতে পারেন? দেখছেন এখান দিয়ে লোকজন চলাচল করছে দেখে কাজ করবেন না। হাতুড়ি কিভাবে হাত থেকে পরে যায়। আপনার আইডিয়া আছে এটা যদি মেঘের মাথায় পড়তো তাহলে কি হতো?”

তখন হির বলল,,

“লিয়া একদম ঠিক বলেছে । প্রফেশনাল হয়েও এভাবে ইরেসপন্সিবলভাবে কাজ কিভাবে করতে পারেন?”

ততক্ষনে লোকটা নিচে এসে পরেছে।সে মুখ ছোট করে বলল,,

“সরি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে । আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারি নি হাতুড়িটা হাত থেকে পরে যাবে। এমনিতে তো সেফটি নিয়েই কাজ করি ম্যাডাম ভুল হয়ে গেছে।”

তখন মেঘ বলল,,

“হির লিয়া ছাড় না কিছু হয়নিতো?”

‘হয়নি কিন্তু হলে কি হতো? অবশ্য তোকে বলে লাভ আছে, নিজের তো একটুও যত্ন নিস না। যত অবহেলা তোর নিজের প্রতি।”

“আহ হা এমন করছিস কেন? উনি তো উনার ভুল স্বীকার করেছে তাহলে। তাছাড়া কেউ ইচ্ছা করে কাউকে আঘাত করে না। এটা একটা এক্সিডেন্ট ছাড় তো ভাইয়া আপনি আপনার কাজ করুন। আর হ্যা এরপর থেকে সাবধানে কাজ করবেন।

লোকটা মাথা নেড়ে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে চলে গেল। তখন হির রেগে বলল,,

“তুই ওনাকে যেতে বললি কেন? তুই না হয় ভালো মানুষ আমি তো না। একদম ধুয়ে ছেড়ে দিতাম।”

তখন মেঘ বলল,

“মাথা ঠান্ডা কর হির! লোকটা কিন্তু তোদের লোকই। একটা ভুল হতেই পারে তাই নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। সবথেকে বড় কথা লোকটার কাছে থেকে ভুলে পরে গিয়েছে আর ক্ষমাও চেয়েছে। অহেতুক রাগ করা বন্ধ কর।”

“তুই!”

“একটাও কথা না চল। ভেতরে চল!”

তখন লিয়া বলল,,

“তুই ওকে থামিয়ে দিলি দেখে নাহলে লোকটাকে জেলে পাঠিয়ে দিতো হির। তার বান্ধবীর মাথায় ভুল করে হাতুড়ি ফেলার অপরাধে। হবু বর পুলিশ থাকলে যা হয় আর কি?”

কথাটা শুনে মেঘ মুচকি হাসলো আর লিয়া একটু জোরেই হাসলো। হির রাগী চোখে ওদের দিকে তাকালো। আয়মান চৌধুরী এইমাত্র বাড়ি ফিরলেন ওদের এক জায়গায় দেখে আর ওনার পরিবার কে ওদের পেছনে দেখে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,,

“কি ব্যাপার বাড়ির সবাই এখানে?”

তখন মেঘ বলল,,

“সবাই মানে আমরা তো তিনজনই?”

“পেছনে দেখেন আম্মা আপনার পুরো পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।”

মেঘ পেছনে ঘুরে দেখলো সত্যি তাই। সকলে যে ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারলো মেঘ। মেঘ এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“কি ব্যাপার সবাই অবাক হয়ে কি দেখছেন?”

তখন মুন বলল,,

“তুই এনাদের চিনিস?”

“হুম ওরা আমার বান্ধবী হির আর লিয়া।”

“সেদিন বললি না তো?”

‘এমনিই! তাছাড়া ওদের নিয়ে কি বলবো। আজ তো জানতেই পারলে।”

তখন জায়মা বলল,,

“ওরা বোধহয় তোকে খুব ভালোবাসে তাইনা। তোর জন্য নিজেদের কাজ করার লোকের সাথে ওভাবে কথা বলছিল।”

“ওরা ঐরকমই আমায় নিয়ে একটু পসেসিব হাজার হোক বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা। তোমরা সবাই ভেতরে যাও আমি ওদের নিয়ে আসছি।”

সবাই ভেতরে চলে গেল। কিন্তু মায়মুনা চৌধুরী ওদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। হুট করে তার মেয়েকে কেউ এত দাম দিচ্ছে এটা তার মনে অন্যরকম একটা অস্বস্তি দিচ্ছে। তিনি ভেতরে চলে গেলেন বাড়িই ছিল শুধু মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী। ছেলেরা সবাই অফিসে আয়না চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী কোথায় যেন গিয়েছে। শমশের চৌধুরী সামনের দোকানে গিয়েছেন আজান কে নিয়ে একটু আড্ডা দিতে বোধহয়। সবাই যেতেই আয়মান চৌধুরী জানতে চাইলো কি হয়েছে লিয়া সব জানালো সবাই বাড়িতে ঢুকলো। মেঘ নিজের জিনিস পত্র নিয়ে আর হিরদের নিয়ে ওপরে চলে গেল। মেঘ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো হির ওর শপিং সব বের করেছে। তা দেখে মেঘ হেঁসে বলল,

“কেমন হয়েছে?”

তা শুনে হির বলল,,

“আমারটা পিংক কালার সেটা বেশি সুন্দর।”

“বাহ জাবিন বলে দিয়েছে?”

“তো বলবে না।”

“হুম তোদের একজনের কাছে যে কথা বলা আর বাকি তিনজনের কাছে বলাও তাই।”

“হুম!”

“বাই দা ওয়ে তোর বিলাই কই?”

“আজানের কাছে রেখে গিয়েছিলাম ওর কাছেই বোধহয়। তোরা কফি খাবি?”

তখন লিয়া বলল,

“এই দোস্ত ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। চল না ফুচকা খেতে তাই।”

“সবে সাতটা বাজে এখন বাড়িতে এলাম আবার যাবো। এনার্জি নাই! তোরা বরং বাড়ি যাওয়ার পথে খেয়ে নিস।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“চল নিচে চল কফি খাই।”

“না এখন বাড়ি যাবো রাত ও হয়ে গেছে ভেবেছিলাম সন্ধ্যার আগেই কাজ বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো‌। কিন্তু দেরি হয়ে গেল ,তোর সাথে দেখা করার জন্য আবার আরেকটু থেকে গেলাম। আবার দুদিন পর আসবো দেখতে কাজ কতোদূর এগুলো।তারপর একেবারে বিয়ের আগের দিন।”

” ওহ আচ্ছা ।”

ওরা আরো কিছুক্ষন কথা বলে ওদের নিয়ে মেঘ নিচে এসে দেখলো সবাই বাড়ি চলে এসেছে। মেঘ হিরদের বিদায় দিয়ে কিচেনে গিয়ে দুই মগ কফি বানালো তারপর একটা নিয়ে সোফায় বসে খেতে লাগলো। আরেকটা আয়মান চৌধুরীর হাতে দিল। তখন হুট করে রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“তা মেঘ শুনলাম তোমার শোরুম আছে?”

“জি বড় ফুপা আছে। আজ ওখান থেকেই শপিং করেছি।”

“সেটা তো আগে বললেই পারতে তাহলে।”

“আমি বলতে চাইনি তাই। তাছাড়া ওরা যদি আমার শোরুমে না যেত? তবুও আমি ওদের বলতাম না আমার শোরুম আছে ওখানে চলো।”

তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“ওখানে বলে নিয়ে গেলে তো ফ্রিতে দিতে হবে তাই বলে নি?”

এ কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি প্রফেশনাল লাইফ আর পার্সোনাল লাইফ মিক্সড করি না। তারপরেও ওদের জিজ্ঞেস করুন ছাড় দিয়েছি কিনা? ওদের কে বিশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হয়েছে।”

“মাত্র বিশ পার্সেন্ট ছাড় সব ফ্রিতে দিলেই কি?”

“কেন আমি কি ওগুলো ফ্রিতে কিনেছি নাকি! তারওপর আমার দাদুভাই এর টাকা কম আছে নাকি যে তার নাতনির বিয়ের শপিং ফ্রিতে করাবে!”

তখন শমসের চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ যা বলেছে ঠিক বলেছে। সবারই। বি প্রফেশনাল থাকা উচিৎ।”

তখন আশরাফ হক বলল,,

“বাহ বিজনেস ম্যান এর মেয়ে একটা শোরুমের মালিক বিষয়টা খারাপ না। তুমি ও একজন বিজনেস ওমেন। আচ্ছা আয়মান তোর কম্পানির নাম কি?

এ কথা শুনে আয়মান চৌধুরী একটু ভরকালো তবুও নিজেকে শক্ত করে বলল,,

“আমার কম্পানির নাম জেনে তুই কি করবি? আমার কোন জিনিস এ নাক গলাবি না তুই। বোন জামাই বোন জামাই এর মতো থাক।”

“বোন জামাই এর আগে আমরা বন্ধু?”

“একটা বিশ্বাসঘাতক কখনো আমার বন্ধু হতে পারে না।”

বলেই আয়মান চৌধুরী উঠে গেল। তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“তুমি কি এমন করেছো যে? ভাইয়া তোমাকে সবসময় বিশ্বাসঘাতক বলে।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“নিশ্চয়ই কোন জঘন্য কাজ করেছে। তা না হলে এক সময়কার কাছের বন্ধু এত সহজে সবার সামনে বিশ্বাসঘাতক বলতে পারে না।”

বলেই মেঘ ও উঠে কফির মগ নিয়ে কিচেনে রেখে ওপরে চলে গেল। ওরা যেতেই সমশের চৌধুরী বললেন,,

“কি এমন হয়েছিল আশরাফ যে আয়মান তোমাকে এভাবে বলে?”

আশরাফ হক আমতা আমতা করে বলল,,

“তেমন কিছু না বাবা একটা মিসআন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়েছে। তবে আমি ওকে বোঝাতে চেয়েছি আমার ভুল ছিল না। কিন্তু ও আমার কোন কথা শুনতেই নারাজ। তাই ওটা এখনো রয়ে গেছে।”

“ভুল ধারনা বেশিদিন রাখতে নেই তাহলে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে।”

বলেই সমশের চৌধুরী অন্যরকম হেঁসে উঠে গেল। বাকিরাও যে যার মতো চলে গেল।

ছাদে গিয়ে আয়মান চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। মেঘ তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল,,

“আব্বা?”

“এমন কি জিনিস আছে যার সত্যতা জেনেও সহ্য করতে অনেক কষ্ট হয়?”

মেঘ হেসে বলল,,

“কাছের বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা।”

“আমি তো ওকে বন্ধু ভেবেছিলাম। তাহলে ও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কেন করেছিল আম্মা! আর বারবার কেন আমাকেই?

মেঘ আয়মান চৌধুরী কে নিয়ে ওখানে থাকা দোলনায় বসালো আর ওনার হাত ধরে বলল,,

“একদম কষ্ট পাবেন না আব্বা!”

“ওকে দেখলে আমার সহ্য হয় না আম্মা। শুধুমাত্র ওর জন্য আমি ছাত্রজীবনে ইন্টার প্রথম বর্ষে থাকতে অপমানিত হয়েছি। ও নকল নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু স্যার আসতেই সেটা আমার বেঞ্চে রেখে দিয়েছিল নিজেকে বাঁচাতে।স্যার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই সবার সামনে আমাকে অপমান করেছিল।এমনকি আব্বাকে জানায় সামান্য ক্লাস টেস্টে যদি নকল করে তাহলে বার্ষিক পরীক্ষায় কি করবো। লজ্জায় সেদিন বাবাকে বলতে পারি নি আমি এই কাজ করি নি আমার বন্ধু আশরাফ করেছে। কারন সে যে আমার বন্ধু আর আব্বা তাকে খুব স্নেহ করতেন। যদি বলে নিজে বাঁচতে ওর কথা বলছি। তাই বলি নি কিন্তু ও একজন ড্রাগ এডিক্টেড এবং সেগুলোর ব্যবসা করতো। আমি জানতে পারলাম পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর। আমি পুলিশ কে জানাতে চাইলে ও কিভাবে জেনে ফেলে কিন্তু এতটাই ধূর্ত যে তাড়াতাড়ি করে আব্বাকে আর আয়নাকে পটিয়ে আমার বোনকেই বিয়ে করে নিল। আর আমাকে বলল পুলিশ কে জানালে আমার বোনের ওপর টর্চার করবে এমন কি মেরে ফেলতেও হাত কাঁপবে না। ও এগুলো ছেড়ে দেবে নতুন বিজনেস শুরু করবে বলে কথাও দিল ও নাকি আয়নাকে ভালোবাসে। আমি শেষবার সুযোগ দিলাম। ও করলোও তাই আমি ভেবেছিলাম হয়তো ও ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু না আমাকে নিচে নামাতে যা কিছু করতে পারে ও। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে এতকিছু। আমি সবসময় ফাস্ট বয় ছিলাম ও সেকেন্ড নাহলে এহসান সেকেন্ড থাকতো। সেটা ওর সহ্য হতো না। এমনকি আমি মায়মুনা কে পছন্দ করতাম বলে ও মায়মুনা কে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওকে পায় নি বলে ও আমার বোনকেই ভালোবাসার কথা বলে বিয়ে করে যাতে আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারে। ও একটা কারনে আয়নাকে বিয়ে করেনি এটা কারনেও বিয়ে করেছে। তাছাড়া এতদিন যা,,

আয়মান চৌধুরী কে আর বলতে না দিয়ে মেঘ হাত শক্ত করে ধরে বলল,,

“আব্বা শান্ত হন! আমি সব জানি হায়পার হয়ে যাচ্ছেন তো।

আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করছে পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা সব মনে পরছে। আয়মান চৌধুরী নিজেকে শান্ত করে বলল,,

“আম্মা আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি?”

মেঘ সোজা হয়ে বসে মাথা নাড়ালো আয়মান চৌধুরী মেয়ের সম্মতি পেয়ে মেঘের কাঁধে মাথা রেখে বলল,,

“আমার সাথেই কেন হলো আম্মা?”

“আব্বা একদম মন খারাপ করবেন না। আপনি কি জানেন না,,রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ
আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন, তাকে তিনি দুঃখকষ্টে রেখে পরীক্ষা করেন !
সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫

এই দুঃখ কষ্ট তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। যারা ধৈর্য্য ধরে সেই সময়টা কাটাতে পারে সেই তো সফল আব্বা। আর কিছুটা সময় ধৈর্য্য ধরে নিন।
‘ধৈর্য্য মানুষকে ঠকায় না,
বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়।
সূরা যুমার – ১০
আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটে।
_সুরা বাকারা: ২১৪
সময় সঠিক হলে সবকিছুই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর তো কিছুটা সময়।”

আয়মান চৌধুরী সবটুকু মন দিয়ে শুনলো তার মনটা ভালো হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন,,

‘আপনার সাথেও তো আম্মা কম খারাপ কিছু ঘটেনি তারপরেও আপনি।”

“আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে। আমি মন থেকে এই কথাটা মানি আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ছেড়ে দেন না।একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই নিখুঁত, সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী, দানশীল ও পরম দয়ালু। তাঁর প্রতিই সর্বাবস্থায় ভরসা রাখুন।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
“আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?”
[সূরা যুমার: ৩০]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” [সূরা ত্বলাক্ব: ৩]

আমার জন্য আমার রব যথেষ্ট। তারওপর একটা জিনিস কি জানেন আব্বা আমার জীবন নিয়ে আমার তেমন কোন প্রত্যাশা নেই, আশা নেই, চাহিদা নেই। যেখানে কোন এক্সপেক্টেশন নেই সেখানে যা পাবো সেটাই আমার কাছে অনেক মনে হবে।যেখানে আমার কোন এক্সপেক্টেশন নেই সেখানে আমার খারাপ লাগাটা ও নেই। তাছাড়া আপনি আছেন তো আমার সুখ। আমার জীবনে শুধু দুঃখ আছে সুখ নেই নাকি। এই যে আপনি, ধূসরের পরিবার আমার বন্ধুমহল। বাকি সব বাদ দিয়ে যদি এই কয়েকজন মানুষ কে নিয়ে আমার জীবন সাজিয়ে বলি তাহলে আমার থেকে সুখী তো আমি কাউকে দেখছি না। সবথেকে বড় কথা কি জানেন আব্বা? ধূসর আমাকে ভুলে গেছে তবুও আমায় নিয়ে তার পাগলামি বেড়েছে। এখন বলুন তো আমি কেন বলবো না।”

আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আপনি ঠিক বলেছেন আম্মা যার এক্সপেক্টেশন কম সেই তার জীবনে সুখী।”

“দেখেছেন আব্বা আমরা কথা বলতে বলতে কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছি।”

“শুকরিয়া আম্মা আমার মনকে শান্ত করার জন্য।’

” হুম এখন রাতের শান্ত প্রকৃতি অনুভব করুন।”

“হুম!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী নিজেদের মতো সময় কাটাতে লাগলো। এদিকে মায়মুনা চৌধুরী এসেছিলেন আয়মান চৌধুরী কে ডাক দিতে আর জায়মারা এসেছিল মেঘকে ডাকতে। এভাবে বাবা মেয়েকে দেখে কেউ তাদের ডিস্টার্ভ করলো না।
__________

দেখতে দেখতে মুনের হলুদের দিন এসেই পরলো। এ কয়েকদিন এ ধূসর মেঘকে ফোন দেয় নি জেদ করে। কিন্তু মেঘ ঠিকই তার ব খোঁজ নিয়েছে। মেঘের মামার বাড়ি থেকেও দুদিন আগেই সবাই এসে পরেছে।সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত। মেঘ ড্রয়িংরুমে ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল তখনি আগমন ঘটে ধূসরদের পরিবারের ধূসর আর দিশান ছাড়া ওরা বিকেলে আসবে। মেঘ এক কোনে দাড়িয়ে নিজের মতো কথা বলছিল হুট করেই মেঘের নজর যায় তাদের দিকে দিলরুবা খানম এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে ছলছল করে তাকিয়ে আছে। মেঘ ফোনে কথা বলতে বলতেই তাদের দিকে আসে। তারপর ফোনটা কাটতেই দিলরুবা খানম মেঘকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেঘ ও তাকে দুই হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে। সবাই অবাক চোখে মেঘ আর দিলরুবা খানম কে দেখে। ওদের এভাবে দেখে সকলেই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছে। মায়মুনা চৌধুরী অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘদের দেখছে। এদিকে দিলরুবা খানম কিছু বলছে না তা দেখে মেঘ ফিসফিস করে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম মা কেমন আছেন?”

দিলরুবা খানম মেঘকে ছেড়ে কপালে চুমু খেয়ে গালে হাত রেখে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?

মেঘ হেসে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!

তখন মায়মুনা চৌধুরী ওদের কাছে এসে বলল,,

“এনারা কারা?”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ওরা হলো এহসানের পরিবার। এহসান আমার বন্ধু তুমি চেনো তো?”

তখন আয়না চৌধুরী হুট করেই বলল,,

“হ্যা এহসান ভাইকে চিনি কিন্তু ওনাদের পরিবারের সাথে মেঘের কি সম্পর্ক? না মানে জরিয়ে ধরলো আবার চুমুও খেল।”

মেঘের কেন জানি খুব হাঁসি পেল। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম একসময়। তাই ওদের সাথে আমাদের বন্ডিংটা সুন্দর । আর ভাবি তো মেঘকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন।”

মেঘ দেখলো রোহিনী আর নোলক ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মেঘ ওদের কে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,

“তোমাদের কথা হাড়িয়ে গেছে বুঝি? নাকি আমায় ভুলে গেছো আমার কাছে গেলে না।”

রোহিনী হেসে মেঘকে ছেড়ে বলল,,

“কি বলি বলো তো মেঘ। তুমি আমার বান্ধবী+ বোন কোনটা বলবো বুঝতে পারছি না। আর নোলক তোমাকে আপু বলার জন্য টানা তিন দিন প্যাক্টিস করেছে।”

নোলক হেঁসে বলল,,

“কি করবো বলো ভা আপু । সরি আপু, আপু যে হতেই চায়না পাঁচবছর এর অভ্যেস কয়েকদিনে কি পরিবর্তন হয়।”

“তা দিশান ভাইয়া কোথায়?”

“শুধু দিশান নাকি ধূসর ও আছে এই প্রশ্নে?”

রোহিনীর কথায় মেঘ হাসলো আর বলল,,

“আমি তো একজনের কথা জিজ্ঞেস করলাম?”

“আমি দু’জনের কথাই বলছি দিশানের অফিসে একটা মিটিং আছে বিকেলে আসবে। আর ধূসরবাবুর ও একটা অপারেশন আছে সেটা শেষ করে বিকেলে আসবে।”

“ওহ আচ্ছা!”

মেঘ ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে রিমঝিম কে কোলে নিলো । ওদের কপালে চুমু দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো। ওরা আন্টি বলা শিখে এসেছে তাই সমস্যা নেই। তারপর এহসান খান এর সাথে গিয়ে কুশল বিনিময় করলো। মায়মুনা চৌধুরী আর আশা চৌধুরী কিচেনে ওনাদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছিল তখন হুট করে আশা চৌধুরী বলল,,

“দ্যাখ মায়মুনা মেঘকে আজ কতো খুশি আর স্বাভাবিক লাগছে। এহসানের পরিবারের সাথে কতটা ফ্রি ভাবে কথা বলছে। মনে হচ্ছে ওদের পরিবারের সদস্য মেঘ। বাচ্চা থেকে শুরু করে এহসান পর্যন্ত মেঘের সাথে ফ্রি। আবার দ্যাখ মেঘের মুখে হাঁসি দেখা যায়না আর ওনারা আসার পর দ্যাখ মেঘের মুখ থেকে হাঁসি সরছেই না।”

আশা চৌধুরীর কথা শুনে মায়মুনা চৌধুরীর বুকটা জ্বলতে লাগলো কিন্তু কেন সেটা তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। তিনি শুধু ছোট করে বললেন,,

“হুম!”

মেঘই এসে সকলের জন্য নাস্তা নিয়ে গেল। সবাই কে নিজেই সার্ভ করলো। তখনি বাড়িতে ঢুকলো নীলিমা আর ওর হাজবেন্ড আর নীল। ও ‘আম্মু” বলে চিৎকার দিল। হুট করে এমন হওয়ায় সবাই চমকে উঠলো। নীল দৌড়ে আসছে তা দেখে মেঘ হেসে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো নীল দৌড়ে গিয়ে মেঘকে জরিয়ে ধরলো। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না মেঘকে কেন আম্মু বলছে। মেঘ বলল,,

‘নীলবাবু আস্তে আস্তে পরে যাবে তো?”

“অনেক দিন পর দেখা হলো আম্মু তাই আর কি?”

“হুম কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও ভালো আছি।”

তখন নীলি ওদের কাছে এসে হেঁসে বলল,,

“না ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না। ও আমার ছেলে। কিন্তু মেঘকে নিয়ে এমনভাবে চিল্লাচিল্লি করে যে কেউ মনে করবে নীল ওর ছেলে।”

তখন নীল বলল,,

“মা তুমি তো আমায় বকো আম্মু কি আমাকে বকে? বরং আমাকে তোমার বকুনির হাত থেকে বাঁচায়।”

“এত দেরি হলো কেন তোদের? আর জাবিন কই?”

মেঘের কথায় তখন দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে জাবিন বলল,,

“এই যে আমি ওদের সাথেই এসেছি কিন্তু বাহির থেকে হির আটকে দিয়েছিল তাই।”

“তা ঐ দুই মহাশয়া কোথায়?”

“এই মেঘ আমরা এখানে?”

বলেই হির আর লিয়া হাজির। মেঘ তার বান্ধবীদের দেখে হাসলো। অতঃপর সবাই সবার পরিচয় পেয়ে গেল। এবং সবাই জানতে পারলো মেঘের জীবনে চার চারটা ভালো বন্ধু রয়েছে এবং তাকে ভালোবাসার জন্য আয়মান চৌধুরী বাদ দিয়ে আরো অনেকে রয়েছে। মেঘের তিন বান্ধবী মেঘের রুমে থাকবে। বাকি সবাই গেস্ট রুমে থাকবে বলে জানানো হলো। মেঘের কাছের মানুষদের দেখে চৌধুরী বাড়ির সকলে অবাক।

বিকেল বেলা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখে চোখে প্রশান্তি নেমে আসে। এতদিন যে বিরহে ছিল তা নিমিষেই উধাও হয়ে মুগ্ধতা ঘিরে ধরে। সামনে থাকা মানুষটার দিকে নজর পরতেই চোখ স্থির হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,,

“আরে আপনি এখানে? অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার সাথে দেখা হবে ভাবতেই পারি নি।”

~চলবে,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৭

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

এহসান খানের কথা ধূসর মন দিয়ে শুনলো আর বলল,,

“বাবা আমার সে আহামরি সুন্দর না। শ্যামলা তার গায়ের রঙ। কিন্তু চোখ তার মায়াভরা, যে কেউ তার মায়ার পড়বে। সব থেকে বড় কথা তার ব্যক্তিত্ব যা অসম্ভব সুন্দর। তবুও তোমরা তাকে দেখে নিও। তবে হ্যা একটা কথা, তাকে পছন্দ না হলে? তোমরা একটু মানিয়ে নিও আমার দিকে তাকিয়ে। বাকিটা সে তোমাদের মন জয় করে নেবে।

এ কথা শুনে সকলে মনে মনে হাসলো । ধূসর আবার ও বলল,,

“তার কথা যদি এক বাক্যে ব্যাখ্যা করি তাহলে হবে,
‘আমার সে আহামরি সুন্দর না হলেও, তার ব্যক্তিত্ব অসম্ভব সুন্দর।”

তখন এহসান খান বললেন,,

“আচ্ছা ধূসর মানলাম তোমার মেয়েটাকে অনেক পছন্দ। কিন্তু যদি তুমি সেই মেয়ের ব্যাপারে এমন কিছু শুনো যা তোমার জন্য অপ্রিতিকর। তাহলে কি করবে?”

“জানিনা কি করবো? তবে আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে ভাবতে চাই না এখন। যখন হবে তখন দেখা যাবে তবে আমি যাই হোক না কেন? সেই নিষ্ঠুর মেয়েটার সাথেই থাকতে চাই। আর আমি জানি মেয়েটা আমার দিকে নিষ্ঠুর হলেও,সে অন্যরকম সত্যতা নিয়ে চলাচল করে।”

নিষ্ঠুর মেয়ে শুনে সবাই অবাক হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। নোলক শুধু বিরবির করে বলল,

“ভাইয়ার কিছু মনে নেই তবুও ভাবিকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলা ভুলে নি।”

তারপর জোরে বলল,,

“ভাইয়া তোমার সাথে সে কি করেছে? যে তাকে নিষ্ঠুর বলছো?”

“কি করে নি বল? আমি যাই করি তাতেই সে বাগড়া দেয়। আবার দশদিনের অবরোধ করেছে।

“আমি জানবো কিভাবে? আর কি বললে?

“তোর জানতে হবে না। চুপচাপ খা নাহলে গলায় চা আটকে যাবে। আমি ওপরে গেলাম।”

ধূসর ওপরে যেতেই সবাই হেঁসে উঠল। দিলরুবা খানম বললেন,,

“আমার ছেলের মাথা গেছে বুঝলে এহসান। যাই হয়ে যাক না কেন? তার সেই মেয়েকেই চাই।”

তখন দিশান বলল,,

“নিজের বউকে আবার বিয়ে করার জন্য কেউ এতো ডেস্পারেট হয়। ধূসরকে না দেখলে জানতাম না।যদিও ওর কিছু মনে নেই।

তখন এহসান বলল,,

“ধূসর সবদিক দিয়ে ম্যাচুয়ার হলেও যতো পাগলামি তার মেঘকে নিয়ে। আগের বারের কথা ভুলে গেছো। তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য শুধু হাদিস শুনাতো। আর মেঘকে মানানোর জন্য কতো পাগলামি করেছে। কিন্তু দেখো সময়ের সাথে কি হয়েছে এখন।”

তখন রোহিনী বলল,,

“বাবা চিন্তা করবেন না। সব খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। আর যারা ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের কে মেঘ পেয়ে গেলে তাদের শাস্তি দেবে তো।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,

“মেয়েটা কখনো মুখ ফুটে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না।অথচ কাজের মাধ্যমে কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় তার ভালোবাসার গভীরতা। এই যে ধূসর ওকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলে কিন্তু ধূসরকে তার থেকে কেউ কোনদিন বেশি ভালোবাসতে পারবে না। ধূসর ওকে চিনতে না পারা ঐ অবস্থার পর মেয়েটাকে কাঁদতে দেখিনি মুখে মুচকি হাঁসি দেখেছি ঐ হাসিতে কতটা যন্ত্রনা ছিল সেটা ঠিকই উপলব্ধি করেছি। ধূসর যখন মেঘকে বলেছিল ‘আপনি কে?’ তখন মেয়েটার পৃথিবী থমকে যেতে দেখেছি তার চোখদুটো স্থির হতে দেখেছি। মনে হচ্ছিল কোন যন্ত্রমানবী। তবুও মেয়েটা হাঁসি মুখে ধূসর কে বলেছিল,
“আমি আপনার অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষী!” তখনি ধূসরের প্রচন্ড মাথাব্যাথা শুরু হয় আর বলে “আপনাকে আমি চিনি বোধহয় আপনি আপনি!’ বলতে বলতেই ধূসর অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ডাক্তার বলে মেঘকে দেখেই ধূসরের এই অবস্থা।পুরোনো জিনিস মনে করাতে গেলে ধূসরের মাথায় অনেক চাপ সৃষ্টি হবে যার মাধ্যমে ও ব্রেন স্ট্রোক করতে পারে। এবং মারাও যেতে পারে। তাই যেন মেঘকে ধূসরের থেকে দূরে রাখা হয়। সেদিন মেঘ শুধুমাত্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল ‘একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে মা’। হাড়িয়ে গেছিল এই ধূসরের জীবন থেকে। আমি ভেবেছিলাম মেঘ ধূসর কে ছেড়ে দিল বোধহয় নিয়তির কাছে মাথানত করে নিল। সেদিনের কথা ভাবতেই আমার বুক চিরে কান্না আসে। অথচ মেঘ ধূসরের থেকে হারায় নি। নতুন ভাবে তার হাত শক্ত করে ধরেছে যাতে এবার ওর থেকে হারাতে না পারে। আমি সবসময় দোয়া করতাম ধূসর যেন অন্য মেয়ের দিকে আকৃষ্ট না হয়। আমার ভয় ছিল মেঘ যদি ধূসরের ভালোর জন্য ধূসরের সামনে না আসে ওকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু কে জানতো ধূসরের নিষ্ঠুর মেয়েটা ধূসরকে নিয়ে স্বার্থপর। তাই তো ফিরে এসেছে মেঘ থেকে কাশফিয়া হয়ে।

সব শুনে রোহিনী বলল,,

“মেঘ সবসময় একটা কথা বলতো, তার জীবনে কিছু ইম্পোর্টেন্ট মানুষ আছে । তাদের কে সে কোনমতেই হারাতে চায় না । সে তার প্রিয়জনদের ক্ষেত্রে খুবই স্বার্থপর।”

তখন এহসান খান বললেন,,

“ধূসর ঠিকই বলেছে তার সে আহামরি সুন্দর না হলেও, তার ব্যক্তিত্ব অসম্ভব সুন্দর। যদিও আমরা সবাই ভেবেছিলাম মেঘের সাথেই ধূসরের ঘরুয়াভাবে আবার বিয়ে করাবো মুনের বিয়ের পর। কিন্তু এখানে কেসটা উল্টো ধূসরই চাইছে মেঘকে বিয়ে করতে। তাহলে আর কোন বাঁধা নেই।”

“ঠিক বলেছো এহসান আর কোন বাধা নেই। ইনশাআল্লাহ আমাদের সুখের দিন ফিরতে চলেছে। ”

________________

“তোমরা কখন যাবে শপিং করতে?”

“কেন মেঘ? তোর কি হুট করে কাজ এসে পরেছে?”

মুনের কথায় মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“না! এমনি জিজ্ঞেস করলাম সকাল দশটা তো বাজে । এখন যাবে না বিকেলে যাবে? তাই জিজ্ঞেস করছি।”

“বিকেলে যাবো তোর দুলাভাইয়ের অফিসে কাজ আছে, বিকেলে শেষ হবে তাই।”

তখন শায়লা বলল,,

“আমি কিন্তু লেহেঙ্গা নিব। যতগুলো বিয়ের দাওয়াত খাইছি লেহেঙ্গা পরতে পারি নাই। তোদের দুলাভাইয়ের জন্য, কিন্তু এইবার তার সাথে এক প্রকার ঝগড়া করছি। অতঃপর সে মানছে। আমার কতোদিনের শখ কারো বিয়েতে লেহেঙ্গা পড়বো।”

তখন জায়মা বলল,,

“এক বাচ্চার মা হয়ে সে নাকি লেহেঙ্গা পরবে?”

“কেন ভাই? সংবিধানের কোথাও লেখা আছে বাচ্চা নেওয়ার পর লেহেঙ্গা পরা যাবে না।”

তখন মেঘ ওদের থামিয়ে বলল,,

“আহ হা আপু তোমরা ঝগড়া করছো কেন? যার যেটা ইচ্ছে সে সেটা পড়বে তবে হ্যা শালীন ভাবে। এখন বলো কোন শপিংমলে যাবে?”

তখন জায়মা বলল,,

“আর বলিস না **** জায়গায় শুভ্রমেঘ লেডিস শোরুমে লেহেঙ্গা কি সুন্দর! তার সাথে মেয়েদের যাবতীয় সব পাওয়া যায়। আমরা যেহেতু শুধুমাত্র মেয়েদের শপিং করবো তাহলে ওটাই বেটার। সব থেকে বড় কথা কাস্টমারদের সাথে তারা কি অমায়িক ব্যবহার করে। বেশ নাম ডাক ও আছে।

মেঘ অস্ফুট স্বরে বলল,,

“শুভ্রমেঘ লেডিস শোরুম!”

“হুম ওটায়!”

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন রুমে গেলাম।”

“তুই সবসময় রুমে গেলাম রুমে গেলাম বলোস। রুমে কি তোর জামাই রাইখা আইসোস। বইনগো লগে বইছোস বইনগো লগে গপ্পো শপ্প কর তা না।”

একথা শুনে সবাই হাসলো কিন্তু মেঘের হাঁসি পেল না। তখন শায়লা বলল,,

“নানু এভাবে গ্ৰামের ভাষায় কথা বলতো। গ্ৰামের ভাষাও না অনেক জোস। মেঘ বোস গল্প করি।”

“কি গল্প করবে? তোমরা যা বলবে আমি তা জানি। আর আমার তেমন গল্প নেই যে বলবো । উল্টো এখানে থাকলে অন্যের সমালোচনা শুনতে হবে মেয়েমানুষ মানেই কথার কারখানা। এ সেটা করেছে ওর সেটা হয়েছে ওমুকের সেটা ভালো না, এর খপ্পরে যে পরে।
সে না চাইতেও জড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন মেয়েমানুষ যেখানে সেখানেই গীবত এর কারখানা। এটা সবাই না চাইতেও করে ফেলে। যেটা আমি অপছন্দ করি। তবে আমি সেটা বলছি না যে মেয়েরা শুধু গীবত করে। তারা অনেক কিছু আলোচনাও করে যা একে অপরের জন্য উপকারী। তবে এই সবকিছু আমাদের নিজেদের ওপর ডিপেন্ড করে। তাই আগে থাকতেই নিজের প্রতি নিজের কন্ট্রোল রাখা উচিৎ। গীবত দেখলে এটাকে ইগনোর করা উচিৎ।”

সব শুনে জায়মা বলল,,

“তুই একদম ঠিক বলেছিস। গীবত এমন একটা জিনিস যা মানুষ না চাইতেও করে ফেলে।‌ তবে সত্যি বলতে আমাদের গল্প নিজেদের মধ্যে শুরু করলেও গল্পে গল্পে সেটা কোথা থেকে কোথায় ঘুরে আসতো কে জানে সেখানে অনেকের গিবত করে ফেলতাম। আল্লাহুম্মাগফিরলী। আসতাগফিরুল্লাহ।”

“তবে জানো কি? একত্রিত হওয়ার পর অর্থ্যাৎ মনে করো কোথাও গিয়ে বসলে কয়েকজন মানুষ বসে কথা বললে।কোথাও কোন বাড়তি কথা হয়ে গেছে অপ্রয়োজনীয় কথা হয়ে গেছে। সেই ভুলত্রুটি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাসুল (সা) একটা দোয়া শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেখান থেকে উঠার করার আগে তুমি যদি সেই দোয়া টা পড়ে উঠো তাহলে ইনশাআল্লাহ আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তোমার ঐ বৈঠকে বসা সকল গুনাহ মাফ করবে। দোয়াটা হলো ,,

‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতু’বু ইলাইক্।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! সমস্ত অসম্পূর্নতা থেকে আপনি বহু দূরে (আপনি পবিত্র) এবং আমি আপনার প্রশংসা করছি। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি ছাড়া আর কোন ইবাদতযোগ্য ইলাহ নেই। আমি আপনার ক্ষমা প্রার্থণা করছি এবং আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করি।’

এটা আমাদের মেয়েদের বেশি প্রয়োজন। তাই সবার শিখে রাখা উচিত এবং সবাইকে শিখিয়ে দেওয়া উচিৎ। যাতে আমরা গীবতের গুনাহ থেকে পানাহ পেতে পারি।

“শুকরিয়া মেঘ সবকিছুর জন্য!

মেঘ হেঁসে ওখান থেকে চলে গেল। বাকিরাও আর একসাথে না থেকে ড্রয়িংরুম থেকে, নিজেদের রুমে চলে গেল।

বিকেল বেলা সবাই মিলে শোরুমে গেল। জায়মা, শায়লা, মুন, মেঘ আর শিফা এসেছে মেঘের গাড়ি করে। মেঘ কালো বোরকা হিজাব নিকাব সাথে ক্যাপ পড়েছে এটার মানে ওরা কেউ জানে না। আজকাল মেঘের ব্যাপারে ওরা প্রশ্নও করে না। মেঘকে ওর মতো ছেড়ে দেয়।সবাইকে ভেতরে ঢুকতে বলে মেঘ গাড়ি পার্ক করে এলো। সবার শেষে মেঘ ঢুকলো। মেঘের জন্য ওরা গেটে দাঁড়িয়ে ছিল ও আসতেই সকলে একসাথে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকেই দেখে দুজন মেয়ে ঝগড়া করছে তা দেখে মেঘ হাসে। আর সবাইকে কিনতে বলে ওদের রেখে একফাকে সেদিকে গিয়ে দেখে একজন বলল,

“তুই কি শোরুমের মালিক নাকি যে তোর কথা শুনবো।”

তা শুনে আরেকজন বলল,,

“আমি শোরুমের মালিক না হলাম। আমার বান্ধবী তো মালিক। তাই আমি যা বলবো তাই হবে।”

“তোর বান্ধবী কিন্তু আমার মনে হয় কেউ না। একদম বাড়াবাড়ি করবি না জাবিন।”

তখন মেঘ পেছনে গিয়ে বলল,,

“বাহ মালিকের অগোচরে তাহলে এইসব করেন আপনারা। আপনারা শোরুমের মালিক না হলেও আমি এই শোরুমের মালিক। আর আমার শোরুমে এসে আপনারা এভাবে ঝগড়া করছেন ।এভাবে শোরুমের দেখাশোনা করেন। এভাবে যদি আপনারাই ঝগড়া করেন তাহলে কাষ্টমারদের সাথে কেমন ব্যবহার করেন আল্লাহ মালুম।”

হুট করে কারো কথায় দু’জনেই মেঘের দিকে তাকায়। তারপর জাবিন নামক মেয়েটা বলে,,

‘যে মেঘকে আগে জড়িয়ে ধরতে পারবে। তার কথা শোনা হবে।

মেয়েটা বলতে দেরি দু’জনের দৌড় দিতে দেরি হয় নি। দু’জনে একসাথে মেঘকে জরিয়ে ধরে তা দেখে মেঘ বলল,,

“আহ হা আস্তে আস্তে কি করছিস? জাবিন নীলি আমাকে তো পুরো কিমা বানিয়ে দিলি।”

তখন জাবিন বলল,,

“কেমন আছিস তুই?”

“আগে ছাড় তারপর বলছি আমি ভর্তা হয়ে যাবো।”

দু’জনে ছেড়ে দিল তখন মেঘ বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তোদের কি খবর?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

“আর নীলিমা ম্যাডাম আপনি এক বাচ্চার মা হয়ে কিভাবে জাবিনের সাথে ঝগড়া করছেন?”

“আমি কিছু করিনি জাবিন আগে শুরু করছে?”

” নীল কোথায়?”

“ও তো বাড়িতে ওর দাদার সাথে রয়েছে।”

“আচ্ছা বেশ তো কি চলছিল তোদের মাঝে?”

“আরে একটা লেহেঙ্গা ঝুলানো হবে এখানে, আমি বলছি ডার্ক রেড কালারের কিন্তু জাবিন বলছে হোয়াইট কালারের তাই নিয়ে ঝগড়া।”

“তুই জানিস মেঘ হোয়াইট মানে সাদা তোর ভাষায় শুভ্র রঙের লেহেঙ্গা টা কি সুন্দর।”

তখন নীলি হেঁসে বলল,,

“মায়ের কাছে খালার গল্প করা হচ্ছে বিষয়টা তেমন হলো না। আরে ভাই মেঘই তো সব পছন্দ করে আনছে।”

“হ ওটা আমি জানি আমি শুধু আমার পছন্দের টা জানাইলাম।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“তোর যদি খুব পছন্দ হয় তাহলে নিয়ে নে ওটা।”

“আমার যেদিন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হইবো সেদিন কইতে হবে না দোস্ত নিয়ে যাবো।”

“ইশান ভাইয়া কে বল তাড়াতাড়ি ঘরে উঠাতে তাহলেই তো হলো।”

“আর ইশান ওতো এখন ব্যস্ত তবে বলেছে তাড়াতাড়িই ঘরে নেবে।”

তখন নীলিমা বলল,,

‘তাহলে আমরাও তোর বিয়ে খাইতে পারি আর কি! কিন্তু মেঘ তুই তো ফ্যামিলির সাথে এসেছিস তারা কই?”

“ওদের শপিং করতে বলেছি। এখন তোরা দুজনে মিলে আমার জন্য একটা সিম্পল শুভ্র রঙের গ্ৰাউন বের কর।”

তখন জাবিন বলল,,

“ঐ লেহেঙ্গা টা নে না। অনেক সুন্দর গ্ৰাউন তো কতোই পড়িস।”

“লেহেঙ্গা টা নিতে পারি যদি তুই টাকা দিস!”

“আমি গরিব মানুষ আমি এত দামি লেহেঙ্গা কেমনে কিনা দিমু দোস্ত।”

“তাহলে তোর মাইনে থেকে কেটে রাখবো?”

নীলির কথা শুনে জাবিন বলল,,

“নাইলে আমি মইরা যামু। আমার খাওন জুটবো না বাড়িতে।”

“ঐ ড্রামাবাজ অফ যা আগে ভাবতাম খালি হির ড্রামা করে এখন দেখি জাবিন ও কম যায় না।”

তখন জাবিন দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“মেঘ দোস্ত তোর তো টাকার অভাব নাই। তুই কিনে নে যাহ তোর জন্য দশ পার্সেন্ট ছাড় দিমু।”

এ কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“কপালগুনে বান্ধবীগুলা পাইছি নিজের শোরুমে নিজেরেই দশ পার্সেন্ট ছাড় দিয়ে লেহেঙ্গা নেওয়ার অফার দিচ্ছে।”

তখন নীলিমা বলল,,

“তো কি হইছে পার্সোনাল ইজ পার্সোনাল, প্রফেশনাল ইজ প্রফেশনাল। তুই আমাদের বান্ধবী হতে পারিস। কিন্তু আজ আইছোস কাস্টমার হিসেবে। আমরা এই শোরুমের ম্যানেজার তাই শোরুমের লাভ ক্ষতি আমাদের দেখতে হবে। তাই ব্যাপারটা প্রফেশনাল হিসেবে নিলাম।”

“ধন্য নারী আপনারা তাহলে ঠিক আছে। আমার ওতো টাকা নাই, তাই আমাকে সিম্পল গ্ৰাউন দেখান আমার ওতো দামি লেহেঙ্গা লাগবে না।”

‘বোনের বিয়েতে একটু সাজবি না তাই বলে।”

“বেশি কথা না বলে যা বলেছি তাই কর! বেশি কথা বললে চাকরি নট করে দেব তোদের দুজনের।”

“করে তো দেখা! তোর শোরুমে আমি আগুন ধরিয়ে দেব । নীল আমার থেকে বেশি তোকে আদর করে ওকে গিয়ে বলবো তো তোর কথা। আর হ্যা মাকেও বলব তোমাদের আদরের বউমা আমাদের সাথে এগুলো করে।”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“আমার বান্ধবী সবগুলোই ড্রামাবাজ। সত্যি বলতে আমার লেহেঙ্গা এখন দরকার নেই। কিন্তু কথা দিচ্ছি আমার বিয়েতে অবশ্যই লেহেঙ্গা পড়বো। আর জাবিন আমার বিয়েতে তোদের চারজনকেও লেহেঙ্গা পড়াবো এখন থেকেই দেখে রাখ।”

জাবিন হেঁসে বলল,,

“ততদিনে কতো সুন্দর সুন্দর লেহেঙ্গা আসবে এখন দেখে আমি লস খেতে চাই না।”

মেঘ আর নীলিমা হাসলো। তখন মুন ওদের কাছে এসে বলল,,

“এই মেঘ কাদের সাথে কথা বলছিস? জায়মা আপুরা তোকে ডাকছে। বিয়ের জন্য কোনটা নেবে বুঝতে পারছে না। তোর চয়েজ তো বেস্ট তাই খুঁজছে।”

“ভাইয়ারা এসে পরেছে?”

“না আর পাঁচ মিনিট লাগবে।”

“ওহ আচ্ছা ওরা হলো আমার বান্ধবী!”

“ওহ আচ্ছা।”

মুন ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর মেঘকে নিয়ে যেতে ধরলো। তখন মেঘ নীলিমাদের ওখানে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“৩২৪ নাম্বার গ্ৰাউন কোড ওটা বের করে রাখ আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। আর হ্যা শুভ্র রঙের হিজাব নিকাব ও বের করিস। আর হ্যা ওটার মতো অন্য রঙের আরো চার টা গ্ৰাউন রেখে দিস। আপুর বিয়েতে তোরা চারজন পরবি। আমার কথার যেন নড়চড় না হয় তাহলে চাকরি নট করে দেব।

দু’জনেই হেসে বলল,,

“ঠিক আছে।”

তারপর মুনের সাথে চলে গেল। তখন জাবিন বলল,,

“এই মেয়েটাও না সবকিছু সামলায় কি করে?”

“ওর একটা আলাদা ক্ষমতা আছে চল দেখি আমার বান্ধবী কি চয়েজ করলো।”

নীলিমা আর জাবিন মেঘের বলা গ্ৰাউনটা বের করলো হালকা কাজ করা সিম্পল শুভ্র রঙের গ্ৰাউন। দেখতে অবশ্য অনেক সুন্দর। নীলি বলল,,

“মেঘের চয়েজ অলওয়েজ বেস্ট। আমার তো চোখেই পরেনি এটাতে। আমি টেনশন করছিলাম অনুষ্ঠানে কি পরবো। মেঘ সহজ করে দিল।”

________________

“মুজাহিদ ও হলো মেঘ আমার ছোট বোন!’

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!”

মুনের হাজবেন্ড মুজাহিদ একটু হেঁসে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আপু! কেমন আছো?’

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”

‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এটাই আমাদের প্রথম দেখা বোধহয়।”

“হুম আচ্ছা তো অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে এবার শপিং শুরু করুন।”

বলেই মেঘ জায়মার কাছে চলে গেল। মুজাহিদ আসতেই মুহাজিদ বলল মেঘের সাথে পরিচিত হবে। কারন এতদিন শুধু নামই শুনে গেছে দেখেনি। মেঘ যেতেই মুজাহিদ বলল,,

“তোমার বোনের কি আমাকে পছন্দ হয় নি। কথাই বললো না।”

মুন হেঁসে বলল,,

“তেমন ব্যাপারনা ও একরমই। কারো সাথে বেশি কথা বলে না। অহেতুক মজাও করবে না।”

“তার মানে একটা নিরামিষ শালি কপালে জুটল।”

মুন হাসলো কিছু বললো না অতঃপর সবাই শপিং এ মনোযোগী হলো। মেঘ যেতেই সেল্সম্যান সালাম দিয়ে বলল,,

“আপু কোনটা দেখাবো?”

মেঘ হেঁসে মুন আর জায়মাদের দিকে ইশারা করে বলল,,

“বিয়ের জন্য একটা ব্রাইডাল লেহেঙ্গা ওনার জন্য!আর বাকি সিম্পল এর ভেতরে গর্জিয়াস লেহেঙ্গা দেখাও এদের তিনজনের জন্য।”

“আচ্ছা তা কোন কালারের সেটা বলো?”

“মুন আপু কোন কালার নেবে?”

তখন জায়মা বলল,,

“মেঘ তুই এদের চিনিস?”

“হুম চিনি তো! পাখি ওখানে কি কর এখানে এসে লেহেঙ্গা বের করতে সাহায্য করো।”

একটু দূরে থাকা বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় সাদা রঙের ক্যাপ পড়িহিতা একটা মেয়েকে দেখে মেঘ উক্ত কথা বলল । মেয়েটা হেসে এগিয়ে এসে বলল,,

“বাড়ি থেকে কল দিয়েছিল আপু তাই কথা বলছিলাম।!”

“ওহ আচ্ছা পড়াশোনা কেমন চলছে।”

“অল আলহামদুলিল্লাহ!”

“হুম যাও এখন ওকে সাহায্য করো।”

পাখি নামক মেয়েটা চলে গেল। তারপর সবাই মিলে সবার লেহেঙ্গা সিলেক্ট করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলো। দুই ঘন্টা ঘুরে ফিরে অতঃপর শপিং শেষ হলো। মেঘরা বিল দিতে গেলে তাদের বিশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হলো আর মেঘের গ্ৰাউনটার টাকা নেওয়া হলো না। তা দেখে একটা কাস্টমার ওদের পাশ থেকে বলল,,

“এখানে তো কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে ওনাদের বিশ পার্সেন্ট ছাড় দিলেন কেন? আমাদের ও তাহলে দিতে হবে।”

তখন জাবিন হেঁসে বলল,,

“ওনাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে এই জন্যই যে ওনারা মালিক পক্ষের পরিবার। এটা যার শোরুম তার পরিবার এরা।”

এ কথা শুনে সবাই অবাক হলো তখন মুন বলল,,

“মালিক পক্ষের মানে? কে এই শোরুমের মালিক?”

তখন নীলি হেসে বলল,,

“মুন আপু এটা আপনার বোন কাশফিয়া আয়মান মেঘ এর শোরুম।”

মেঘ দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই অবাক চোখে মেঘকে দেখলো। সবাই কিছু বলবেতার আগে মেঘ বলল,,

“হুম এটা আমার শোরুম। এখন এটা নিয়ে কোন কথা নয় বাড়িতে চলো। আর জাবিন নীলি তোরা সময় মতো পৌঁছে যাস। আর হ্যা দেরি যেন না হয় নাহলে একটারও হাড্ডি আস্ত রাখবো না।”

মেঘ চলে গেল ওর পেছনে সবাই চলে গেল। মেঘ বাড়ি এসে দেখলো বিয়ের ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সকলে আশেপাশে দেখতে লাগলো মেঘ গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে কয়েক পা এগুতেই কেউ একজন মেঘকে টেনে নিয়ে জরিয়ে ধরলো।হুট করে এমন হওয়ায় মেঘ চমকে উঠলো।

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৬

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“কি ব্যাপার আয়মান খুব খুশি মনে হচ্ছে? মেয়েকে আদর করে কথা বলাও হচ্ছে দেখি।

পেছন থেকে হুট করে কারো এরকম কথা শুনে আয়মান চৌধুরী পেছনে ফিরলেন। মেঘ ও তার দিকে তাকালো এবং সবার দৃষ্টি তার দিকেই। আয়মান চৌধুরীর চোখ তাকে দেখে স্থির হয়ে গেল। তিনি শুধু বললেন,,

“তেমন কিছু না মনে হলো আমার আম্মাকে একটু আদর করি তাই‌।”

তখন আয়না চৌধুরী বলল,,

“তোমার না আরো দুদিন পর আসার কথা ছিল?”

“কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ হলো তাই, তাছাড়া শুনলাম আয়মান আর মেঘ বাড়ি ফিরেছে তাই আরো তাড়াতাড়ি চলে এলাম।”

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,

“আপনিই বাকি ছিলেন নাহলে আমার বাবার আত্মীয় সব এসে পরেছে আপুর বিয়েতে। যাক আপনি আসায় সবাই কম্পিলিট। তা কেমন আছেন কাকু সরি ফুপা।

“আরে মেঘ আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?তবে তোমার মুখে কাকু শুনতে বেশ লাগে।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে আপনি আমার আব্বার কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন তাই সেই হিসেবে কাকু আবার আপনি আমার ছোট ফুপির স্বামী সেই হিসেবে ফুপা। আচ্ছা যাই হোক আব্বা চলুন ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই।”

বলেই মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেল। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আশরাফ যাও গিয়ে ফ্রেশ হও। আয়না আশরাফকে নিয়ে রুমে যাও।”

আশরাফ হক আয়না চৌধুরীর সঙ্গে চলে গেল। মেঘ আয়মান চৌধুরী কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,,

“আব্বা কি বুঝলেন?”

“বুঝলাম তো অনেক কিছুই! কিন্তু,,”

“কিন্তু কি আব্বা?”

“এই মুহূর্তে এহসান আর মাইনুল কে দরকার!”

“মেজো মামা আর বাবা।”

“হুম, কারন আমার মনে হচ্ছে মুনের বিয়েতে অন্যরকম কোন ধামাকা আসতে চলেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

“ওকে আব্বা সমস্যা নেই হির, লিয়া, জাবিন, নীলিমা ওরাও তো থাকছে। কিছু হলে সবাই মিলে সামলে নেব।”

“বিয়েতে ধূসর ও থাকবে আম্মা! কিভাবে সব সামলাবেন একটু ভেবে নিয়েন। এবাড়ির কেউ জানেনা আপনার হাজবেন্ড কে? কিন্তু আপনি বিবাহিতা সেটা সবাই জানে। যদিও সবার মনে আছে নাকি সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আমার।

মেঘ চমকে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনি ওনাদের বলেছেন?”

“না আব্বা বলেছে। এহসান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেই হিসেবে। আমার মেয়ের বিয়ে অথচ আমার বন্ধুদের ফ্যামিলি থাকবে না। তাই আব্বা ওদের বলেছে। এটা আমাকে কাল বিকেলে জানিয়েছে আপনাকে জানাতে মনে ছিল না। তাই এখন জানালাম।”

“এবার কি করবো আব্বা?” যদিও আমার মনে হচ্ছে আমার বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা হবে না। তবুও যদি কিছু হয়।”

“আপনি সব সামলাতে পারবেন আম্মা আল্লাহ ভরসা। যদি কিছু হয়েও থাকে তাহলে আমিও দেখবো ধূসরের কি হয়? আপনি বিবাহিত শুনে ও কি করে। আপনি তো বলেছিলেন ও এখনো আপনাকে অনুভব করে। আমি যতটুকু ধূসর কে চিনি ও ওর ইচ্ছে যেভাবেই হোক পূরন করেই ছাড়ে। আজ এহসান ফোন দিয়েছিল তাকে কাশফিয়া আয়মান এর বাবার সাথে বিয়ের কথা বলতে বলেছে ধূসর।

“সকালের ঘটনা নোলক ফোন দিয়ে আমাকে বলেছে।”

“আপনি খুব লাকি আম্মা যে ধূসরের মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছেন এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে নতুন ভাবে আবার পাবেন।”

“ইনশাআল্লাহ আব্বা! এখন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আব্বা মেয়ে গল্প শুরু করলে সারা রাতেও শেষ হবে না।”

“ঠিক বলেছেন আম্মা।”

আয়মান চৌধুরী চলে গেলেন। মেঘের রুমের উল্টোদিকে ওনার রুম। উনি রুমে যেতেই দেখলো মায়মুনা চৌধুরীকে ওনার জন্য অপেক্ষা করছেন। উনাকে দেখে, মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,

“এতক্ষনে আসার সময় হলো। তুমি না কখন এলে নিচে থেকে।”

“মেঘের সাথে কথা বলছিলাম তাই।”

“আচ্ছা তুমি মেঘের সাথে এত কথা বলে কি পাও?” যতটা তুমি ওর সাথে কাটাও বাকি সবার সাথে সেটুকু সময় ও কাটাও না।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“কেন তোমার ঈর্ষা হয় নাকি?”

“না ওর কোন কাজে আমার কেন ঈর্ষা হবে ? ও তেমন কোন ইম্পোর্টেন্ট মানুষ না।”

“সেটা তোমার কাছে আমার কাছে না। আমার জীবনে যদি সবথেকে ইম্পোর্টেন্ট কেউ থেকে থাকে। সেটা হলো আমার আম্মা আমার মেয়ে মেঘ। আর তার সাথে কথা বলে কি পাই বললে না? তার সাথে কথা বলে আমি সুখ পাই। আমার জীবনে মেঘ হলো আমার জীবনের সুখ, আমার প্রশান্তি , আমার সাহস, আমার মনোবল, আমার শক্তি, আমার ভরসার হাত, সবশেষে আমার বিশ্বস্ত বন্ধু। আমার জীবনের সবকিছু যেন তাকে ঘিরেই। এই ছয় বছর আমি আর আমার আম্মা এমন একটা নিজেদের ছোট্ট পৃথিবীতে বাস করতাম। সেখানে ছিল না কোন জটিলতা। ছিল এক সহজ জীবনের চিত্র আর ভালোবাসা। তাকে নিয়ে বলতে শুরু করলে সারারাত ও কম পরবে তাই এখন আর কিছু বলছি না। তবে যাই বলো না কেন আমার আর আমার আম্মার ভালোবাসা দেখে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হবে। তুমি মানো আর না মানো!”

বলেই আয়মান চৌধুরী নিজের কোর্ট খুলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,,

“মেঘ কেমন তা জানি না? আর জানতে চাই ও না। তবে সে তার জন্মের পর থেকে আমার জন্য কিছু সুখ বয়ে আনে নি। যা এনেছে তা শুধু দূর্যোগ। তবে এটা সত্যি তোমাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হবে।”

_______________

“না না এটা কি করে হতে পারে আমার হাত থেকে ডিলটা কিভাবে ফসকে যেতে পারে।”

“শান্ত হও বন্ধু আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হয় নি!”

“সেটাই তো কেন হয় নি? এই ডিলটার ওপর পরবর্তী বিজনেস অফ দ্য ইয়ার নির্ধারন করা হবে। সেই জন্য বাংলাদেশের টপ টেন এ থাকা সব বিজনেস ম্যান এই ডিলটায় অংশগ্রহণ করেছিল। আমি তো সব কম্পানিতেই নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। এমন কি তোমার কথা মতো চৌধুরী কম্পানির শাফিয়ান কেও কিনে নিয়েছিলাম যার জন্য ওরা নরমাল একটা প্রজেক্ট সাবমিট করেছে। এসবের মাঝেও যেই কম্পানিতে লোক ঢোকাতে পারি নি। সেটাই ডিল পেয়ে গেল। এত কষ্ট করে কি হলো সব ওয়েস্ট। কি করে ঐ A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজ ডিলটা পেয়ে গেল।”

“A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজের ওনার A.C অনেক ধূর্ত। এখন পর্যন্ত কখনো নিজের নামের ফুল ফ্রম ইউজ করে নি। এমন কি কেউ জানেও না। হুট করেই চার বছর আগে তার নাম বিজনেস এর টপ টেনে চলে এসেছে। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে দেখে নি। সবসময় মাস্ক পরে থাকে।’

“খোঁজ লাগাও কে এই A.C . তাকে শেষ করতে হবে নাহলে আমি ওপরে উঠতে পারবো না।”যাই হোক তুমি A.C. এর খোঁজ নাও।

‘হুম লাগাচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবো।”

“ওকে শেষ করতে পারলে বিজনেস ওয়াল্ড এ আমার নামটাই প্রথমে থাকবে। তারপর আমি হবো বিজনেসের রাজা।

“হুম আজকেই লাগাচ্ছি।”

“সে যখন বিজনেসের টপ টেনে নিজের নাম লিখিয়েছিল তখন ভেবেছিলাম সে তেমন কিছুই না। কিন্তু সে তো সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হচ্ছে। আমি দশ বছরেও যা করতে পারি নি লোকটা এই পাঁচ বছরেই করে ফেলেছে।”

“বিজনেস এমন একটা জিনিস হুট করে যেমন ওপরে উঠাতে পারে তেমন নামাতেও সময় নেয় না। এই চৌধুরীদেরকেই দেখো না । আয়মান থাকতে কতো বড় কম্পানি ছিল তারপর তুমি বুদ্ধি করে ওকে সরালে তারপর থেকে দেখো শুধু নিচের দিকে যাচ্ছে।”

‘সেটাই তো আমি চাই ঐ চৌধুরীদের শেষ দেখতে। সমশের চৌধুরীর খুব অহংকার ছিল তাই না। নিজেদের বিজনেস নিয়ে আর নিজের বাড়ি নিয়ে। সেটা একদিন মাটির সাথে মিশিয়ে দেব আমি। ওনার জন্য কি কি পোহাতে হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি। ওনাকেও শেষ হতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। বড় ছেলের বড় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন না উনি। দাওয়াত দিয়েছে দাওয়াত খেতে তো যেতেই হবে। তাছাড়া আয়মান ও শুনলাম ফিরে এসেছে একেবারের জন্য, তার সাথে তো দেখা করতেই হয় কি বলো।

বলেই লোকটা হাসতে লাগলো । তার হাসির সাথে আরেক জন ও হাসতে লাগলো। তারপর হাঁসি থামিয়ে বলল,,

“এবার তাহলে ফোনটা রাখি কেউ শুনে ফেলবে।”

“তুমিও না চৌধুরীদের সাথে থাকো, অথচ কেউ জানেই না? তুমি ওদের আপন হয়েও পেছন থেকে আমার সাথে মিলে…….

“জীবনে আগাতে হলে অনেক কিছুই করতে হয় রাখছি।”

বলেই লোকটা তাড়াতাড়ি করে ফোন রেখে দিল। ফোনটা রাখতেই ওপাশ থেকে লোকটা হেঁসে বলল,,

“তুমি কি ভাবছো তুমি খুব বুদ্ধিমান আমার বন্ধু। নাহ তুমি তো আমার তুরুপের তাস। আমার স্বার্থে আঘাত লাগলে আমি কি করতে পারি তোমার ধারনাতেও নেই। তোমার প্রয়োজন শেষ হলে তুমিও শেষ হয়ে যাবে।

বলেই লোকটা নোংরা ভাবে হাসতে লাগলো।
________________

মেঘ ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষণ লিলির সাথে সময় কাটিয়ে দেখলো, ডিনার টাইমে হয়ে গেছে। তাই মেঘ লিলিকে খাবার দিয়ে নিচে নেমে গেল। সকলে টেবিল এ বসে পরেছে। মেঘ তার আব্বার পাশের চেয়ারে বসে বলল,,

“আব্বা আমার মামার বাড়ির লোকেদের খবর দিন। বিয়ের এখনো এক সপ্তাহ বাকি আপনার আত্মীয়রা চলে এসেছে। অথচ আমার মায়ের আত্মীয়দের এখনো কারো দেখা নেই। তারা কিন্তু পিছিয়ে পরবে?”

মেঘের কথা শুনে সবাই অবাক। এ কথা শুনে আয়না চৌধুরী রেগে বলল,,

“তুই কি আমাদের ইনডেরিক্টলি অপমান করছিস?”

“ছোট ফুপি আমি কখন অপমান করলাম । আপনার বাবার বাড়ি আপনি সারাবছর থাকেন আমার কি? আমি তো আমার মামার বাড়ির কথা বলছিলাম। দেখুন আপনারা চলে এসেছেন। শায়লা আপু, জায়মা আপু পর্যন্ত জামাই বাড়ি থেকে এসেছে অথচ আমার মামারা এখনো এলো না। সব কাজ আপনারাই করবেন নাকি তাদের ভাগ্নির বিয়ে তাদের কোন দায়িত্ব নেই নাকি‌ । সব কষ্ট কেন আপনারাই করবেন। কাল থেকেই কাজ শুরু হবে তাই বলছিলাম।”

কিভাবে কথার মাধ্যমে কথা সামাল দিতে হয় সেটা মেঘ ভালো করেই জানে। আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথার মানে বুঝতে পেরে বললেন,,

“মেঘ ঠিক বলেছে কাল থেকেই সব কাজ শুরু হবে। সব আমার ভাই বোন আর বোনের জামাইরা করবে নাকি। তোমার ভাই ভাবিদের খবর দাও আসতে বলো মায়মুনা।”

তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,

‘হঠাৎ তাদের কথা কেন? তারা তাদের সময় বুজে আসবে।”

‘আহ হা তাদের প্রথম ভাগ্নির বিয়ে বলে কথা। তাছাড়া মাইনুল কে বলো তাড়াতাড়ি যেন ছুটি নিয়ে আসে।”

তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আহ হা অনেক হয়েছে। ময়মুনা বলে দেবে। এখন সবাই খাওয়া শুরু করো।”

সবাই খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে সমশের চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ কাল কি তোমার কাজ আছে?”

“কেন দাদুভাই!”

“আসার পর থেকে দিনের বেলা বাড়িতেই থাকছো না তাই।”

“সরি দাদুভাই কাজ থাকে তাই বাড়ি থাকা হয় না।”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“মেঘ তুমি কি কাজ করো? যার জন্য সবসময় বাইরে থাকতে হয়। মানে তোমার প্রফেশন কি? পড়াশোনা তো শেষ করেছো আগেই ,শুনলাম গাড়িটাও তোমার নিজের কেনা।”

“একটা সময় যারা আমার খোঁজ করেনি তাদের হুট করে খোঁজ নেওয়াটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু লাগছে না।” তাছাড়া আমার কাজ দিয়ে আপনারা কি করবেন?

তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“তোমার কিছুই বলতে হবে না মেঘ। তুমি তোমার মতো নিজের কাজ করো। কাল থাকতে বলতে চাইছিলাম এই জন্যই কাল মুনরা সবাই শপিং করতে যাবে বিয়ের জন্য তাই।”

তখন মুন বলল,,

“সমস্যা নেই দাদুভাই। মেঘের সময় হলে আমরা বরং চলে যাবো ওকে নিয়ে।

বোনের কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

“কাল কোন সমস্যা নেই, কালকেই যাবো। আচ্ছা আমি উঠি তাহলে?”

বলেই মেঘ উপরে চলে গেল। বাকিরা কেউ মেঘের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে সমশের চৌধুরী তাদের থামিয়ে দিলেন। আয়মান চৌধুরী শুধু হাসলেন।
_______________

বেশ রাত হয়েছে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ লিলিকে নিয়ে বসে আছে আর কিছু ভাবছে। তখন ধূসরের ফোন আসলো তা দেখে মেঘ হেঁসে ফোনটা রিসিভ করে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম ডক্টর!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! কি করছেন?”

“এই তো লিলিকে নিয়ে বসে আছি।”

লিলি নাম শুনে ধূসরের অন্যরকম লাগলো। কিন্তু সব সাইডে রেখে বলল,,

“লিলি কে?”

“আপনার বিড়াল সরি আমার বিড়াল।”

“ওহ আচ্ছা মাশাআল্লাহ নামটা অনেক সুন্দর। কিন্তু আপনি বললেন আমার বিড়াল।”

“আরে ওটা ভুলে হয়ে গেছে। তা কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন?

“শুনতে আমার কলিগের কেসটা কতদূর এগুলো?

“ওহ আচ্ছা। ভালোই এগিয়েছে আমি গ্ৰামে গিয়েছিলাম ওখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সত্যিই আপনার কলিগের চাচা টাকা দিয়েছিল ওখানে গিয়ে জানতে পেরেছি। তাই আমি তাদের বলেছি এখন ওনাকে সাহায্য না করলে আর ভবিষ্যতে ঘুষ খেলে তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নেবো।ব্যাস এতেই সব ঠিক আপনার কলিগের চাচাকে ধরে নিয়েছে পুলিশ।কেসটা কোর্টে উঠলেই হলো এখন। বুঝি না মানুষ অন্যের জমি দখল করে কি পায় তারা কি জানে না,ইয়া’লা ইবনু মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যেকোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিগত জমি দখল করে তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে, যাবৎ না মানুষের বিচার শেষ করা হয়’ (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০)।

সব শুনে ধূসর বলল,,

“এটাই তো মানুষ বুঝতে চায় না মিস। এখন যুগ পাল্টিয়েছে সাথে সবার জীবনযাপন ও এখন শুধু তাদের সম্পদ আর টাকার দরকার। সেটা হালাল না হারাম সেটা দেখার সময় নেই।আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ হালাল-হারাম উপার্জনে বিবেচনা করবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬১)।
সেই সময়টা বোধহয় এসে গেছে মিস।

“হুম কিন্তু আপনার কলিগ তো তার হাতে কাগজ ও পেয়ে গেছে। আপনাকে বলে নি?

“বলেছে কিন্তু আমি তো আপনার থেকে শুনতে চাইছিলাম।”

“মানে?”

“আচ্ছা আপনার বাবার নাম কি?”

“হুট করে আমার বাবা এলো কোথা থেকে?”

“বলেন না একটু আমার দরকার?”

“কেন? আপনার দরকার কেন?”

“তুমি বড্ড কথা বলো মেয়ে?”

হুট করে তুমি শুনে মেঘ চোখ বুজে ফেললো। নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“বাহ আপনি থেকে তুমি?”

“ধুর আপনি আপনি আর ভালো লাগছে না। আমি কিন্তু এখন থেকে তুমি করেই বলবো মাইন্ড করলেও কিছু করার নাই। তাছাড়া আমি তোমার থেকে বয়সে বড় হবো।”

মেঘ হেঁসে বলল,

“ঠিক আছে তুমি করেই বইলেন।”

“তুমি না করলেও, আমি তুমি করেই বলতাম। বুঝলে মেয়ে?”

“বুঝলাম!”

“কি বুঝলে?”

“আপনি পাগল হয়ে গেছেন ডক্টর!”

“পাগল হই আর যাই হই তোমারই বুঝলে।”

বলেই ধূসর একটা লজ্জামাখা হাঁসি দিল। এ কি বলে ফেলল। এদিকে মেঘ শুনেও না শোনার ভান করে বলল,,

“কি বললেন বুঝলাম না নেটওয়ার্ক সমস্যা মনে হয়।”

এটা শুনে ধূসর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে করে বলল,,

“আল্লাহ বাচাইছে শুনে নাই মনে হয়।

মেঘ সব শুনে হাসছে তখন ধূসর বলল,,

“তেমন কিছুই বলি নাই। এখন তোমার বাবার নাম বলো ? আর তোমার বাবার প্রফেশন কি?

“ঐ তো বাবার নাম আর আর প্রফেশন দিয়ে কি করবেন?”

“তোমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো….

ধূসর কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল,,

‘যাই হোক মজা করলাম।”

এবার মেঘ একটু জোরেই হাসলো। তা শুনে ধূসর বলল,,

“হাসছো কেন তুমি? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”

“তেমন কিছু না ডক্টর এমনিই।”

“আচ্ছা আমিও তোমার বাবার নাম আর প্রফেশন জানতে চাইছি এমনিই!”

“আমার আব্বার নাম আয়মান চৌধুরী! পেশায় একজন বিজনেস ম্যান।

ধূসর কয়েকবার আয়মান চৌধুরী নামটা আওড়ালো তারপর বলল,,

“নামটা কোথায় যেন শুনেছি? মনে পড়ছে না। আর আব্বা? তুমি তোমার বাবাকে আব্বা বলো?

“হুম বলি তো আব্বা বলার মাঝেও আলাদা শান্তি আছে। জানেন আমি আমার আব্বাকে আপনি বলে সম্বোধন করি। আর আমার আব্বা আমাকে আম্মা আর আপনি বলে সম্বোধন করে। এতে সবার বিস্তর অভিযোগ আছে। আমাদের বাবা মেয়ে কেন আপনিময় সম্পর্ক থাকবে? আপনি কতো দূরে দূরে লাগে। কিন্তু তাদের কে বোঝাবে এই আপনার মাঝে কতটা আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা মিশ্রিত থাকে। সবথেকে বড় কথা আলাদা প্রশান্তি থাকে।”

মেঘের কথা শুনে ধূসর মুগ্ধ হয়ে গেল। আর বলল,,

“তাহলে আমি তো আপনিতেই ঠিক ছিলাম। হুট করে তুমি তে নিয়ে এলাম। ভুল হয়ে গেল।”

মেঘ হেসে বলল,,

“আমার আব্বার মুখে আপনি টা অনেক সুন্দর লাগলেও। আপনার মুখে আপনির থেকে তুমিটা অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ডক্টর।”

“তাহলে ঠিক আছে। রাতে খাবার খেয়েছো?

“হুম ! আপনি?”

“হাসপাতালে আছি কিছুক্ষন পর বাড়ি যেয়ে খাবো।”

“ওহ আচ্ছা ! তাহলে সময়মতো খাবার খেয়ে নিয়েন।আর নিজের যত্ন নিয়েন। রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”

“আরে নিষ্ঠুর মেয়ে শুনো এখনই রাখছো কেন?”

“নিষ্ঠুর মেয়ে?”

“তো নিষ্ঠুর মেয়ে বলবো না আমার কথা শেষ হয় নি তুমি ফোন রাখতে চাইছো।”

“কি বলবেন বলেন?”

“তোমাদের বাড়িতে ছাদ আছে?”

‘হ্যা আছে।”

“একটু ছাদে যাও তো!”

“যদি না যাই!”

“তোমার কাছে বেশি কিছু চেয়েছি নাকি?”

“যাবো না!”

“আমার কাজে বাধা না দিলে তো তোমার শান্তি হয় না নিষ্ঠুর মেয়ে।”

” কয়েকদিনের পরিচয়ে একটা মেয়েকে অবলীলায় নিষ্ঠুর বলতে আপনার একটুও বাঁধছে না?”

“কই না তো! বরং তোমাকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলে আলাদা প্রশান্তি পাচ্ছি। কিন্তু কেন পাচ্ছি জানি না?”

“ঐ যে শুরু হয়ে গেল জানি না।”

“না জানলে বলবো কিভাবে?”

“আর কিছু বলবেন?”

“ছাদে যাও!”

‘যাবো না তো বললাম!”

‘আজ অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে তোমাকে দেখাতে চাইলাম কিন্তু তুমি দেখলে না।”

“আপনি এখন কোথায়?”

‘আমি তো ছাদেই দাঁড়িয়ে আছি। হুট করে চাঁদের দিকে নজর গেল তাই তোমাকে বললাম। কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনলেই না।”

‘আপনার মনে হয়না একটা মেয়েকে রাত করে ফোন দিয়ে গল্প করছেন। আবার ছাদে যেতে বলছেন। শুধুমাত্র চাঁদ দেখানোর জন্য। এটা অনুচিত হচ্ছে। এটা আপনার মনে হচ্ছে না। আপনি একটু বেশিই ফ্রিভাবে কথা বলছেন না আমার সাথে? যা একটা প্রাপ্ত বয়সের ছেলে ও মেয়ের করা উচিৎ নয়।

ধূসর হুট করেই অবাক হয়ে গেল সাথে একটু খারাপ ও লাগলো। সত্যিই তাই এটা তার উচিত হচ্ছে না। কিন্তু হুট করেই ধূসর মনে মনে ভাবলো আর জেদ চেপে বসলো ওর সাথে আর কথা বলবে না। যা বলার কাল সামনাসামনি বলবে। তবে কিছুদিন পর একদম পুরো অধিকার নিয়ে এর জবাব দেবে ও কি উচিত আর উচিত নয়। ওকে সব তাড়াতাড়ি করতে হবে এবং নিষ্ঠুর মেয়েটাকে নিজের সাথে বেঁধে ফেলবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো। এদিকে মেঘ বোধহয় ধূসরের অবস্থা বুঝতে পারলো যাতে সব তাড়াতাড়ি করে তাই তো মেঘ ওকে এগুলো বলল। মেঘ হাসলো আর বলল,,

“কি হলো! কিছু বলছেন না যে?”

“সরি হয়তো আজ একটু বেশিই অধিকার দেখিয়ে দিলাম। যাই হোক কাল একবার দেখা করতে পারবেন সেই জায়গায়। কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

‘সরি হবে না আমি দশদিনের মতো বিজি থাকবো।সময় হবে না কোনভাবেই।

“আচ্ছা তাহলে দশদিন পরই বলবো আপনাকে।”

“আচ্ছা! আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ!”

বলে ধূসর ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে বলল,,

“তুমি যে নিষ্ঠুর সেটা এখনো প্রমান করলে। যেখানে আমি একটা দিন তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না। সেখানে দশদিন তবে আমিও কম যাই না মেয়ে। তুমি ইনডিরেক্টলি আমার অধিকার নিয়ে কথা বললে তো। দেখিও আমার অধিকার কতোটা সেটা তোমায় সঠিক সময় দেখিয়ে দেব। এই ধূসর এহসান শুভ্র কি জিনিস তুমি জানো না মেয়ে। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা আমার এত সুন্দর একটা মুহূর্ত কিভাবে নষ্ট করে দিল। কি সুন্দর তাকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে চাইলাম অথচ তাকে দেখো। এই সব কিছুর হিসাব রাখলাম। বিয়ের পর পই পই করে হিসাব নেব তোমার নিষ্ঠুর মেয়ে। তখন দেখবো আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা কিভাবে দেখাও তুমি।

এদিকে মেঘ ধূসরের কথা শুনে হাসছে। সে জানতো ধূসর ফোন না দেখেই নিজের সাথে নিজে কথা বলবে। তাই তো ফোনটা না কেটে শুনছিল মেঘ হেঁসে ফোনটা কেটে দিল আর বলল,,

“কাল কি বলবেন আমি জানি ধূসর। তবে কি বলুন তো এতদিন আমাকে যে বিরহের আগুনে পুড়িয়েছেন আপনিও একটু পরুন আমাকে একা রেখে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলেন । যদিও আপনার অগোচরে তাতে কি হয়েছে পুড়িয়েছেন তো। এটুকু যদি নিষ্ঠুর না হই তাহলে আপনার নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দেওয়া টা কি করে স্বার্থক হবে।

তারপর মেঘ লিলিকে তুলে একটা চুমু দিল আর বলল,,

“তোর বাবা এমন কেন বলতো? পাগল ডক্টর একটা। আমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলে, অথচ মূলত নিষ্ঠুর তো সেই ধূসর এহসান শুভ্র। এই নিষ্ঠুর মেয়েটার নিষ্ঠুর পুরুষ।”

_______________

ফজরের আজান শুনেই ধূসর জেগে গেল। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে টুপি নিয়ে বেরিয়ে পরলো মসজিদের উদ্দেশ্যে। জামাতের মাধ্যমে নামাজ শেষে সবার জন্য এবং নিজের জন্য দোয়া করলো যাতে, সব ভালোই ভালোই হয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে তাই ধূসর টুপি পকেটে ভরে এদিক ওদিক কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর বাড়ি ফিরে দেখতে পেল সবাই ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছে। ধূসর গিয়ে সোফায় বসলো তখন দিলরুবা খানম ধূসরকে কফি দিয়ে গেল। ধূসর কফি শেষ করে বলল,,

“বাবা মেয়ের বাবার নাম আয়মান চৌধুরী । পেশায় একজন বিজনেস ম্যান। তুমিও তো বিজনেস ম্যান তাহলে তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমার।”

তখন নোলক বলল,,

“ভাইয়া তুমি তো দেখছি 5G স্পিডে চলছো। তা মেয়ে রাজি নাকি ।”

” জানি না? দশদিন পর জানবো।”

তখন দিশান বলল,,

“ভাই একটু লজ্জা রাখ বিয়ে বিয়ে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিস। আচ্ছা মেয়েটাকে তো আমাদের ও পছন্দ হতে হবে। তাহলেই না বিয়েটা হবে।”

“কেন তোমাদের পছন্দ করতে হবে কেন? বিয়ে করবো আমি তাহলে আমার পছন্দই শেষ কথা হওয়ার কথা।”

তখন এহসান খান বললেন,,

“সেটা ঠিক আছে তবে কি বলো তো ধূসর, যখন একটা মেয়ের বিয়ে হয় তখন কি মেয়েটা তার স্বামীর সাথেই থাকে, থাকে না তো। মেয়েটাকে তার স্বামীর পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের ও তো মেয়েটাকে সাদরে গ্রহন করতে হবে। এখন মনে করো একটা মেয়ে দেখা হলো পরিবারের সবার পছন্দ হলো। কিন্তু সেই পরিবারের দুজন ব্যক্তির মেয়েটাকে পছন্দ হলো না। মেয়েটার যদি বিয়ে হয়েও যায়। তবুও ঐ মেয়েটা সেই দুজন ব্যক্তির কাছে খারাপ থাকবে কিছু না করেই। কারন মেয়েটাকে তাদের পছন্দ হয় নি আগেই। সবথেকে বড় কথা আমাদের যাদের অপছন্দ তার কোন কাজই আমাদের ভালো লাগে না। এভাবে একটা সময় সেই দুজন ব্যক্তি মেয়েটাকে অপমান করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। না চাইতেও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মেয়েটা কষ্ট পাবে। এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয়।একটা বিয়ে শুধু দুজনকার মধ্যে সম্পর্ক নয় । বরং দুই পরিবারের এবং অনেক গুলো মানুষের সম্পর্কের স্থাপনা হলো বিয়ে। এই জন্যই বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের সকলের পছন্দটাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোন মেয়ে বা ছেলের সাথে কিছু খারাপ না হয়ে যায়।”

~চলবে,,

ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৫

0

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ‘আমার বউ’ শুনেই স্থির হয়ে গেছে। এদিকে ওর কফি যে ঠান্ডা হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই। মেঘ অস্ফুট স্বরে বিরবির করে বলতে লাগলো,,

“সব ভুলে গেলেও নিষ্ঠুর মেয়ের প্রতি কি অভিযোগ করা যায় অবলীলায়। কিছু দিনের পরিচয়ে তার সাথে জড়তা ছাড়াই আজব স্বপ্নের কথা বলা যায়। নাকি কথার মাঝেই আমার বউ বলা যায় অবলীলায়। অদ্ভুত আপনার ভালোবাসা ধূসর।

ধূসর আপনি এক অদ্ভুত মানব যার আগমন ঘটেছিল এই ধূসর রাঙা মেঘের জীবনে এক অদ্ভুত লগ্নে। ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছিল মেঘের রঙহীন জীবন। কিন্তু ধূসর এমনটা আমাদের সাথে কেন হলো? নাকি আমার অতিরিক্ত ভালোবাসা সহ্য হয় না এটাই কারন। ধূসর আপনি তো বলেছিলেন আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা যতোই আপনার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা দেখাক,আপনি সবসময় নিষ্ঠুর মেয়েটার পাশে থাকবেন আমৃত্যু পর্যন্ত। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ছেড়ে দিলেন কেন?

মেঘ আরো কিছু বলবে তার আগেই কারো ডাকে মেঘের হুশ ফিরল।আয়মান চৌধুরী ডাক দিয়েছেন। মেঘ ওনার দিকে চমকে তাকালো। তখন তিনি বললেন,,

“কি ব্যাপার আম্মা? আপনি তো দেখি একদম স্থির হয়ে বসে কিছু বিরবির করছেন। আর কফি এটা তো বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি ওপর থেকে দেখলাম এক ভাবেই বসে আছেন।”

মেঘ কফি এক চুমুকে শেষ করে মগটা রেখে বলল,,

“আব্বা একটু বসবেন আমার পাশে?”

আয়মান চৌধুরী বসলেন তখন মেঘ বলল,,

“আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা?”

আয়মান চৌধুরী বুঝতে পারলেন মেঘের কোন কারনে হয়তো মন খারাপ। তিনি মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। মেঘ তার আব্বার কাঁধে মাথা রাখলো। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কি হয়েছে আম্মা মন খারাপ?”

” তুমি খুব নিষ্ঠুর বলা লোকটা যেদিন নিষ্ঠুরতার প্রমান দিয়ে গেল। সেদিনই বুঝেছি দুনিয়া টাই বড় নিষ্ঠুর।”

মেয়ের কথা শুনে আয়মান চৌধুরী একটু অবাক হলেন আর বললেন,,

“ধূসরের কথা মনে পড়ছে আম্মা?”

“জীবনের মোড়ে আমাদের সাথে কত কিছুই না ঘটে। অথচ হাঁসি মুখে নিয়তি মেনে জীবন এগিয়ে যায় সময়ের সাথে।”

আয়মান চৌধুরী কিছু বললেন না চুপ করে রইলেন। মেঘ ও কিছু না বলে তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ রইলো। কে জানে মাথায় কি চলছে। আস্তে আস্তে বাড়ির সকলে নিচে নেমে আসলো। সবার প্রথমে এলেন মায়মুনা চৌধুরী তিনি বাবা মেয়েকে দেখে একটু অবাক তো হয়েছে তবে কিছুই না বলে কিচেনে চলে গেল। বাকিরা অবাক চোখে দেখছে।সবার অস্তিত্ব টের পেয়ে মেঘ আয়মান চৌধুরী কে আস্তে করে বলল,,

“আব্বা অনেকদিন হলো দু’জনে সকালে বের হওয়া হয় না। চলুন আজ দুজনে একটু বাইরে থেকে টং এর চা খেয়ে আসি।”

আয়মান চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“সাথে পাউরুটি!”

“তা আর বলতে!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী কাউকে কিছু না বলে বাইরে চলে এলেন। মেঘ নামাজ পড়ে ওরনা আর মাথা থেকে নামায় নি। তবুও ভালোভাবে ওরনা দিয়ে মাথা আবৃত করে বের হলো। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে হুট করে আয়না চৌধুরী বলল,,

“বাবা একটা প্রশ্ন? তুমি তো মেঘকে একটা সময় দেখতেই পারতে না হুট করে কি এমন হলো যে, তাকে পারলে মাথায় করে রাখো?”

মেয়ের কথা শুনে সমশের চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“চোখ যখন খুলে যায়, তখন কি মানুষ অন্ধ থাকে!”

সমশের চৌধুরীর এক কথায় সবাই অবাক হলো কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। আবার আয়না চৌধুরী বললেন,,

“কি বললে বুঝলাম না?”

“এটাই আমার উত্তর। পারলে বুঝে নাও। তোমার হাজবেন্ড আসবে কবে দেশে? মুনের বিয়ের তো আর এক সপ্তাহ বাকি। তাছাড়া তোমার ছেলে মেয়ে তারা।”

“দুই তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে বাবা?”

“আচ্ছা!”

“শাফিয়ান আর রেজাউল নতুন ডিলের কি হলো?”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“সবজায়গাতেই কম্পিটিশন প্রচুর। আমাদের সাথে অনেকেই তাদের প্রজেক্ট সাবমিট করেছে ডিলটা পাওয়ার জন্য। দেখি কি হয়? এখনো জানায় নি আজকে বিকেলে মিটিং তখন জানা যাবে।তবে ডিলটা আমাদের জন্য ইম্পোর্টেন্ট।

“ওহ আচ্ছা!”

ওনারা নানা বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। এদিকে
বাবা মেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে টং দোকানের চা পাউরুটি খেল। তারপর বাড়িতে ফিরলো ওরা যে যার মতো নিজের রুমে চলে গেল। সবাই দেখলো কিন্তু কেউ কিছু বললো না। মেঘ লিলিকে নিয়ে নিচে আসলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। আজান গিয়ে লিলির সাথে ভাব জমাতে লাগলো। আজ লিলি ঠিকই আজানের কাছে গেল তা দেখে আজান বলল,

“দেখো মেঘ আপু কাল তুমি ঠিকই বলেছিলে। আজকেই আমার কোলে উঠে পড়েছে।”

তখন লিলি আজানের কোল থেকে নেমে শায়লার মেয়ের কাছে গেল। তা দেখে আজান বলল,,

“মেঘ আপু কেসটা কি হলো?”

মেঘ হেসে বলল,,

“লিলির বাচ্চা খুব পছন্দ তাই পিচ্চির কাছে গেল।”

তখন শায়লা বলল,,

“তোর মতো তোর বিলাই ও ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার।”

“একদম আমার লিলিকে বিলাই বলবে না ওর নাম আছে ওর নাম লিলি!”

“আরে বাবা রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি এমনি বলেছি!”

“এরপর থেকে বলবা না। ওকে বিলাই বলা একজনের খুব অপছন্দ তাই বলবা না ঠিক আছে।”

“আচ্ছা আমার আফা আর বলবো না তোর লিলিকে বিলাই!বাই দা ওয়ে কার অপছন্দ?

“আমার মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলির! যাই হোক লিলি আয় আমার কাছে ।”

লিলি দৌড়ে মেঘের কাছে গেল। কিন্তু মেঘের কথার মানে আয়মান চৌধুরী ছাড়া কেউ বুঝতে পারলো না।মেঘ লিলিকে কোলে নিয়ে হাত বুলাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর খেয়ে দেয়ে নিজেদের রুমে চলে গেল। ও রুমে গিয়ে দেখলো মুন বসে আছে তা দেখে মেঘ বলল,

“আরে আপু তুমি এখানে?”

“মনে হলো আমার ছোট্ট পুতুলটার সাথে একটু সময় দিই। তাই এলাম ।”

“ওহ আচ্ছা!”

“তুই অনেক বদলে গেছিস মেঘ? আগে তো তাও একটু কথা বলতিস। এখন তো তাও বলিস না। বাবার ঐ ঘটনার পর কি আমাকে আর মাকে ঘৃনা করিস।”

“তোমার কথা শুনে আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো, সেটা হলো তুমি ছোটবেলায় আমাকে খুব আদর করতে। ছোট বেলার ঐ ঘটনার পর কি তুমি আমায় ঘৃনা করতে?” মনে করো তোমার উত্তরের মতোই আমার উত্তর কিছু টা হবে।

কথাটা শুনে মুনের চোখ ছলছল করে উঠলো সাথে মাথাও নিচু করে ফেললো। তখন মেঘ বলল,,

“কি হলো বলো না? অবশ্য বলবে কিভাবে ঘৃনাই তো করতে। একটা ছোট্ট বাচ্চাকে যখন হুট অবহেলা করতে তখন মেয়েটা কিছুই বুঝতো না। খালি বলতো মুন আপু আমায় আর ভালোবাসে না। কিন্তু বুঝতে পারতো না তখন মেয়েটাকে সবাই ঘৃনা করতো। আর তার মা কেমন মা যার শুধু প্রয়োজনের জন্য তার কাজ করা হতো। খাবার দেওয়া, জামা পড়িয়ে দেওয়া এগুলোই। আর কি কখনো ভালোবাসা দিয়েছে সে? তবুও আমি কথা বলতাম কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সব বুঝতে পারলাম। তবুও সব নিয়ে ভালো ছিলাম। কিন্তু ছয় বছর আগে তোমরা আব্বার সাথে কি করেছিলে ওটা। আমার কিছুতেই সহ্য হয় নি সেটা। না তোমাদের ওপর ঘৃনা আসে নি। তবে তোমাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে মরে গিয়েছে।”

এটুকু বলেই মেঘ থামলো মুন কাঁদছে তা দেখে কিছুক্ষণ থেমে বলল,,

“একটা কথা আমি কোনদিন কাউকে বলি নি। সেটা হলো তার ঐ অবস্থার জন্য আমি কখনোই দায়ী ছিলাম না। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে সেদিন ঐ ঘটনায় আমি মারাও যেতে পারতাম।সেটা তোমরা কেউ ভাবো নি। দোষারোপ করে গেছো আমাকে। তোমরা কিভাবে পারলে ঐ ছোট্ট মেয়েটার ওপর এত বড় একটা অভিযোগ করতে। ছোট্ট মেয়েটা কি বুঝতো বলো তো। যার জন্য তোমরা তার জীবনটাকে ভালোবাসাহীন অবহেলাময় একটা জীবনে প্রবেশ করালে। তার জীবনের কিছু ঘটনা যা সে কখনোই করেনি কিন্তু তাও তোমরা অভিযোগ দিয়েছো অবলীলায়। সেই মেয়ের কাছ থেকে তোমরা কি আশা করো যে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় সব। এটাই তো তোমার মায়ের কথা তাই না। আজ থেকে আট বছর আগের ঘটনায় ও আমি দায়ী ছিলাম না। তবুও সবাই আমাকেই দোষী করেছো। তোমরা কি পারতে না আমার আব্বার মতো আমার হাত ধরতে। আর ছয় বছর আগে কি আব্বাকে বিশ্বাস করে আব্বার হাত ধরতে পারতে না। তিনি তো তোমার বাবা ছিল।

মুন উঠে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদতে কাঁদতে বলল,,

“আমায় মাফ করে দে মেঘ আমি তো কিছু বুঝিনি ছোট বেলায় ঐ ঘটনা একটা ট্রমার মতো ছিল। আমারই বয়স কত ছিল বল। ইভেন বাড়ির সবাই সেই ঘটনার পর থেকে চুপচাপ হয়ে গেছিল। সবাই তোকে দোষী বলছিল তাই আমিও ভেবেছিলাম সত্যি তুই দোষী।”

মেঘের চোখ স্থির ও মুনকে ধরলো না শুধু বলল,,

“তুমিও বিশ্বাস করে নিলে ঐ ছোট্ট বাচ্চা ওমন করতে পারে । শুধু পুতুল খেলার ছলে বলেছিল আমি সব শেষ করে দেবো। চলে যাও মুন আপু আমার রুম থেকে আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।

মেঘ মুনকে ছাড়িয়ে নিল আর রুমের বাইরে রেখে দরজা আটকিয়ে দিল। কিন্তু মেঘ এখন নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মেঘ মুখটাকে কঠোর করে বলল,,

“যাদের জন্য আমার পরিবার এর থেকে অবহেলা পেয়েছি তাদের কাউকে ছাড়বো না আমি। কড়ায় গন্ডায় সব বুঝে নিব। আমার জীবন তো অবহেলাময় করেছোই আবার আমার আব্বার দিকে হাত বাড়িয়েছিলে এর জন্য তোমাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।”

বলেই কাউকে ফোন দিল। মেঘ রেডি হয়ে বের হলো বাড়িতে ভালো লাগছে না। আয়মান চৌধুরী অফিসের জন্য বের হচ্ছিল মেঘকে রেডি দেখে মেঘকে নিয়ে নিচে আসলো। তখন আজান বলল,,

“মেঘ আপু আমায় একটু কলেজে ড্রপ করে দেবে?”

“হুম চল । জায়মা আপু আর শায়লা আপু লিলিকে একটু দেখো আমার আসতে দেরি হবে কিছু কাজ আছে।”

মেঘ আজান আর আয়মান চৌধুরী বের হলো ওনারা আলাদা আলাদা গাড়িতে যাবে। মেঘ ওর আব্বাকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“বেস্ট অফ লাক আব্বা। টেনশন করবেন না তকদিরে যা আছে তাই হবে।”

“হুম আম্মা!”

তিনি মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আজান আর মেঘ গাড়িতে উঠলো। মেঘ গাড়ি স্টার্ট করলো আজান কে নামিয়ে দিয়ে অন্য রাস্তায় গেল। হুট করে একটা মেয়েকে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও মেঘ গাড়ি থামালো না। তা দেখে মেয়েটা বোধহয় ভয় পেল তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মেঘ মেয়েটার ঠিক আধ হাত সামনে গাড়ি থামালো তা দেখে মেয়েটা চিৎকার দিয়ে বলল,,

‘হ্যা হ্যা একদম উঠিয়ে দে না আমার ওপর দিয়ে, এটা তো তোর বাপের রাস্তা। একজন দাঁড়িয়ে আছে চোখে দেখতে পাস না। আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট হতো। যারা গাড়ি চালায় তারা নিজেদের কি মনে করে কে জানে?

মেঘ গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল,,

‘আমার বাপের রাস্তা না হলো আপনার বাপের রাস্তা নাকি‌। এভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে কে? এই আপনাদের মতো লোকদের জন্য, যারা গাড়ি চালায় তাদের দোষ হয়। এখন রাস্তা থেকে সরুন আমার তাড়া আছে।”

মেয়েটা মেঘের মাথায় টুকা মেরে বলল,,,

“তুই দশ মিনিট লেট এর জন্য এটা?”

“ঐ মা একদম আমার আম্মুকে মারবে না!”

মেঘ পাশে ঘুরে দেখলো একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা স্কুল ড্রেস পরে আর ব্যাগ নিয়ে ওদের দিকে আসছে। তা দেখে মেয়েটা বলল,,

“ঐ যে এসে গেছে তোর চামচা! মায়ের থেকে মায়ের বান্ধবীর দরদ বেশি।”

“ঐ নীলি একদম আমার নীলবাবু কে কিছু বলবি না নাহলে মুখ ভেঙে দেব।”

“হ ভাই সব তো তোরাই করবি। আমি খালি দেখমু।”

এই বলেই মেঘ ছেলেটাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম নীলবাবু! কেমন আছো?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

তখন নীলি নামক মেয়েটা বলল,,

“আমি কেমন আছি সেটাও জিজ্ঞেস করা হোক!

এ কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি তো দেখতেই পাচ্ছি তুই কেমন আছিস আবার জিজ্ঞেস করতে হবে নাকি।”

‘তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না মেঘ নিষ্ঠুর একটা!”

“আরে ভাই রাগ করছিস কেন? এখন তোর দেরি হচ্ছে না।”

“তোর জন্য দেরি হলো। তুই ফোন করে বললি আমাদের ড্রপ করবি। নাহলে সোহেলের সাথে যেতে পারতাম।”

“মনে হলো নীলবাবুর সাথে একটু দেখা করি তাই!”

“আর আমি তোর কেউ না?”

ওরা গাড়িতে বসে পড়লো নীল একা পেছনে আর মেঘ আর নীলি সামনে। নীলি মুখ ভার করে আছে কারন মেঘ প্রশ্নের উত্তর দেয় নি। তা দেখে মেঘ হেঁসে বলল,,

‘মিসেস নীলিমা খান আপনি হলেন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাথে আমার ননদ। আরেকটা পরিচয় যদি বলি তাহলে নীলবাবু হলো রাজকুমার আর আপনি হলেন রানী।”

এটা শুনে নীলিমা হাসলো। আর বলল,,,

“তো মাই ডিয়ার ভাবি এখন গাড়ি স্টার্ট দিন নাহলে আমাদের আর স্কুলে যেতে হবে না।”

মেঘ নীলকে দুটো চকলেট দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল, গাড়ি চলছে। হুট করে মেঘ বলল,,

“ও বাড়িতে যাবি কবে? মা তোর জন্য অপেক্ষা করে তো?”

“ভাইয়ার ঐ ঘটনার পর ও বাড়িতে গিয়ে ভালো লাগে না তোকে ছাড়া। তাছাড়া ভাইয়াও কেমন যেন হয়ে গেছে আগের মতো আর কিছুই নেই।”

“ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“মেঘ তুই কেমন আছিস? ঠিক আছিস তো?”

মেঘ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“আমার আবার কি হবে ঠিক আছি। জীবন তো চলছে থেমে নেই।”

“ভাইয়াকে খুব মিস করিস?”

তখন মেঘ গাড়ি থামিয়ে বলল,,

“তোর গন্তব্য এসে গেছে নেমে পড়। পরে আবার কথা হবে।আর নীলবাবু একদম দুষ্টুমি করবে না। গুড বয় হয়ে থাকবে, আর হ্যা মায়ের সাথে একদম ঝগড়া করবে না।”

“একদম করবো না আম্মু।”

নীলি আর কিছু বললো না নীলকে নিয়ে নেমে পড়লো। নীল ও মেঘের কথায় সায় জানিয়ে বিদায় দিয়ে চলে গেল। মেঘ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘তোর ভাইয়াকে খুব মিস করি আমি নীলি।”

_______________

এদিকে,,

ধূসরদের পরিবারের সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। হুট করে ধূসর বলল,,

‘বাবা আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তোমাদের কি চোখে পরছে না।”

এ কথা শুনে সকলে একপ্রকার শকড। নোলকের তো খাবারটায় গলায় আটকে গেল। নোলক তাড়াতাড়ি করে পানি খেল। তখন ধূসরের বড় ভাই দিশান বলল,,

“ভাই একটু রয়ে সয়ে কথা বল । একটু লজ্জা রাখ!”

“এখানে লজ্জার কি হলো ভাইয়া। আমি তো বিয়ের কথা বললাম।”

দিলরুবা খানম রোহিনী আর নোলক জানে তাই ওরা কিছু বলছে না। দিলরুবা খানম জানতো তার ছেলে বিয়ে নিয়ে বাবার সাথে কথা বলবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে নি। ধূসরের বাবা এহসান খান বললেন,,

“ধূসর তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলো?”

‘ওকে তাহলে সরাসরিই বলি। আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। তাকে বিয়ে করতে চাইছি তুমি তার বাবার সাথে কথা বলো।”

এ কথা শুনে এহসান খান স্থির রইলেন। কারন কালকের ঘটনা দিলরুবা খানম ওনাকে বলেছে তাই উনি বেশ নিশ্চিন্ত। দিশানকেও রোহিনী বলেছে তাই কেউ কোন রিয়াক্ট করলো না। সব স্বাভাবিক রেখেই এহসান খান বললেন,,

“তা মেয়ের নাম আর মেয়ের বাবার নাম কি? আর মেয়ের বাবা কি করে?

“মেয়ের নাম আর কি করে, বলতে পারবো। কিন্তু মেয়ের বাবার কথা বলতে পারছি না। মেয়ের নাম কাশফিয়া আয়মান পেশায় একজন লয়ার। আমি যদি ভুল না হই তাহলে আমার মনে হয় মিস কাশফিয়ার বাবার নাম আয়মান।”

‘বাহ শুধুমাত্র মেয়ের পরিচয় জেনেই, মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে চাইছো। আরে মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে গেলে মেয়ের বাবাকেও তো চিনতে হবে তাই না। সবথেকে বড় কথা মেয়েটা তোমাকে বিয়ে করতে চায় কি না? সেটাও তো তোমাকে জানতে হবে।

এবার ধূসরের মাথায় এলো তাও ঠিক। তখন ধূসর বলল,,

“তুমি ঠিক বলেছো আগে মেয়েটা আমাকে বিয়ে করতে চায় কি না জানতে হবে। আর বাবার পরিচয় ও জানতে হবে। ওকে বাবা আমি সব জেনে তারপর আবার তোমাকে জানাচ্ছি ঠিক আছে।”

তখন দিশান বলল,,

“আমার ভাই বিয়ে পাগল কবে থেকে হলো। রোহিনী দেখছো তোমার ছোট ভাইয়াকে। আমার মেয়ে গুলো ওর পাগল আমার মেয়েগুলোকে একটু ওর থেকে দূরে রেখো। নাহলে এরাও কবে বলে বসে। বাবা আমাদের ছেলে পছন্দ হয়ে গেছে তুমি তার বাবার সাথে কথা বলো।”

দিশানের কথা শুনে সকলে হাসলো তখন রিম বলল,,

‘বাবা তুমি কি বললে আমি তো কিছুই বুঝলাম না।”

“থাক মা তোমার বুঝতে হবে না।”

তখন দিলরুবা খানম বলল,,

‘অনেক হয়েছে এখন চুপ চাপ খাও।”

তখন ধূসর বলল,,

‘ মা নীলি অনেকদিন হলো আমাদের বাড়িতে আসে না। ওকে আসতে বলো না এখন হাসপাতালের চাপ কম ভাইবোনেরা একটু আড্ডা দেওয়া যাবে।”

“আচ্ছা বলে দেব।”

তখন রিমঝিম বলে উঠলো,,

“দাদি তাহলে ছোট আম্মুকেও বলো না আসতে!”

এ কথা শুনে সকলে একেঅপরের দিকে তাকালো তখন ধূসর বলল,,

“ছোট আম্মু কে?”

রিমঝিম কিছু বলবে তার আগে রোহিনী বলল,,

“তেমন কিছু না ছোট ভাইয়া আমার এক বান্ধবী+বোনকে ওরা ছোট আম্মু বলে।”

‘ওহ আচ্ছা তাহলে তাকেও বলো আসতে রিমঝিম এর ভালো লাগবে। আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।”

ধূসর ওপরে চলে গেল তখন রোহিনী বলল,,

“রিমঝিম তোমাদের কতোবার বলেছি ছোট ভাইয়ার সামনে ছোট আম্মু বলবে না।”

‘আহ বকছো কেন ওরা কি এতকিছু বুঝে নাকি।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“আচ্ছা সেসব বাদ দাও রিমঝিম তোমার ছোট আম্মুর সাথে আমাদের আবার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে। আর আমাদের বাড়িতে আসবে।

‘সত্যি!”

“তিন সত্যি!”

‘ইয়েইইইইইইই”

______________________

সন্ধ্যার পর মেঘ বাড়িতে ফিরে দেখলো সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে । আয়মান চৌধুরী এখনো ফেরেন নি। কিন্তু শাফিয়ান চৌধুরী আর রেজাউল আহমেদ আর সমশের চৌধুরী মুখ কালো করে বসে আছে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে দাদুভাই?”

তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আজকে একটা মিটিং ছিল একটা ডিলের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমরা ডিলটা পাইনি। জানিনা কিভাবে প্রজেক্ট তৈরি করেছে?

তখন শাফিয়ান চৌধুরী বললেন,,

‘বাবা তুমি এমন করে কেন বলছো? আমরা চেষ্টা করেছিলাম তো।”

“তোমরা চেষ্টা করেছিলে কিন্তু বেস্ট টা দাও নি সেটা আমি হরফ করে বলতে পারি। একটা প্রজেক্ট নিজের বেস্ট দিয়ে তৈরি করতে কতটা শ্রম লাগে সেটা আমি জানি। খাওয়া ঘুম সময়মতো হয় না অথচ এ কয়েকদিনে আমি তোমাদের মধ্যে সেরকম কিছুই দেখলাম না। উল্টো বাড়িতেই বেশি দেখলাম। একটা কথা মনে রেখো,,
‘আল্লাহ কাউকে নেয়ামত দিলে যতদিন ইচ্ছে ভোগ করতে দেন। কিন্তু যখন সে অকৃতজ্ঞ হয়, তিনি সেই নেয়ামতকে আযাবে পাল্টে দেন!

— হাসান বাসরি (রহ.)
সূত্র: কিতাবুশ শুক্‌র, ইবনু আবিদ দুনইয়া, ১৭

এখনো সময় আছে বিজনেসের হাল শক্ত করে ধরো। নাহলে কখন ডুবে যাবে বলা যায় না। তখন উঠানোর মতো কেউ থাকবে কি না সন্দেহ।

মেঘ সহ সবাই মন দিয়ে শুনলো তখনি আয়ামান চৌধুরী কে দেখা গেল হাঁসি মুখে বাড়িতে ঢুকতে। মেঘ তার আব্বার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো তার মনে কি চলছে। তাই সে চলে যেতে নিল তখন আয়মান চৌধুরী মেঘকে ডাকলেন,,

“মেঘ আম্মা!”

মেঘ ঘুরে তাকালো তখন আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

‘আপনার আব্বা জিতে গেছে আপনার ঐ আইডিয়ার জন্য।”

“আমি কিছুই করি নি আব্বা আপনিই সব করেছেন রাত জেগে না খেয়ে। আপনার কাজের ফলাফল আপনি পেয়েছেন। হ্যা যদিও ঐ একটুখানি আইডিয়া আমি দিয়েছিলাম। তবে কাজটা তো আপনি করেছেন আমি নই। আচ্ছা আমি ওপরে যাই ফ্রেশ হবো।”

‘ঠিক আছে আম্মা!

‘আমি যদি ভুল না হই তাহলে আপনি আর কাকাই রা একই জায়গায় আপনাদের প্রজেক্ট সাবমিট করেছিলেন?”

“হুম কিন্তু ওরা আমাকে খেয়াল করে নি। তারওপর মাস্ক পড়েছিলাম।

‘এই একটা কারনেই ওনারা পেছনে সবসময়। চোখ কান খোলা রেখে সামনে আগাতে হয় কিন্তু ওনারা। যাই হোক! তবে এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। রাসুল (সা) বলেছেন,

কিছু খুশির সংবাদ গোপন রাখতে হয়।কেননা প্রত্যেক সংবাদ শ্রবনকারী বন্ধু হয় না।”
( তারবানি হাদিস)

~চলবে,,।