ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৭+১৮

0
402

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যেতেই চোখ খুলে কারো বাহুডরে নিজেকে আবিষ্কার করে মেঘ। প্রথমে এমনটা হওয়ায় থমকে যায় একটু। পরবর্তীতে নিজের মস্তিষ্কে একটু চাপ দিতেই কালকে রাতের কথা মনে পড়ে। কালকের রাত টা তাদের বেশ গেছে। প্রথমে ধূসরের কথা মতোই মেঘকে ধূসরের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে হয়েছে। কাল ধূসর মেঘকে অনেক গল্প বলেছে। সব নিজে থেকে মেঘ শুধু শুনে গেছে। মাঝখানে এটা বলেছে ‘যদি ঘুমিয়ে যাও তাহলে আমি কিন্তু তোমায় আমার বুকে নিয়ে শুবো তুমি সকালে উঠে আবার থমকে যেও না। আর হ্যা হিজাব টাও আমি খুলে রেখে দিব তুমি আবার হিজাব খোলা দেখে চিন্তা করো না।” কিন্তু মেঘ যে সত্যি ঘুমিয়ে যাবে ও ভাবতে পারে নি। অনেক দিন পর নিশ্চিন্তে ঘুমালো মেঘ। মেঘ ধূসরকে ডেকে তুলল ফজরের নামাজের জন্য। ধূসর ঘুমঘুম চোখে মেঘকে দেখলো আর তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ও নিজেও বোধহয় ভুলে গেছিল ওর বউ আছে। ধূসর জানালো আজ বাড়িতেই মেঘের সাথে নামাজ আদায় করবে। অতঃপর দু’জনে নামাজ আদায় করে নিল।

এভাবেই শুরু হয়েছিল মেঘ আর ধূসরের পথচলা। দেখতে দেখতে ছয় মাস হয়েছে মেঘদের আকদের। এ ছয়মাসে, প্রতিদিন নিয়ম করে ধূসর মেঘকে ভার্সিটি নামিয়ে দিতো।মাঝেমাঝে ঘুরতে নিয়ে যেত ফুচকা খাওয়াতো। এই ছয়মাসে একে অপরের বোঝাপড়াটা জোরদার হয়েছে। ভালোবাসাটাও গভীরে যেতে শুরু করেছে। একটা সহজ সম্পর্ক আছে দু’জনের মধ্যে। আর শ্বশুরবাড়ি সে তো তার পাশের বাড়িই যখন ইচ্ছে তখন চলে যেতো। কতোবার এমন হয়েছে মেঘ সারাদিন ধূসরদের বাড়িতে থাকতো শুধু রাতে এসে বাড়িতে থাকতো। এসবের মধ্যেও সে তার আব্বার জন্য আলাদা সময় রেখে দিতো। বাবা মেয়েও কম কিসে তারাও নিজেদের মতো বিন্দাস জীবন যাপন করছে। আয়মান চৌধুরী নতুন গাড়ি কিনেছেন।সেটা নিয়ে আজ বাবা মেয়ে একটা পার্কে গেল। দু’জনে পাশাপাশি বেঞ্চে বসে আছে আয়মান চৌধুরী বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছেন মেয়েকে। মেঘ একটা নিজে খাচ্ছে একটা আয়মান চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। হুট করে মেঘ বলল,

“আব্বা আপনার খোসা ছাড়ানোর কি দরকার? এখন তো আমি বড় হয়েছি। ”

“আম্মা এটা আমার আনন্দ আপনাকে খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়াতে পারলে আমার সুখ লাগে। এই বাদামের খোসা ছাড়ানোর জন্যই কিন্তু আজ আমার আর আপনার সম্পর্ক এতো সুন্দর। তাই আমি চাই প্রত্যেকবার আপনার বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিতে।”

“হুম আব্বা সেটা আবার পরে ভাববো আজ থাক।”

“হুম! আম্মা আপনি আপনার জীবনে নতুন মানুষের আগমনে খুশি তো!”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি খুব করে চাইতাম ভবিষ্যতের মানুষ টার সাথে যেন আমার প্রয়োজনের সম্পর্ক না হয়। সে যেন তার প্রিয়জনের রুপেই আমাকে গ্ৰহন করে। প্রয়োজনের তাগিদে বাঁচতে বাঁচতে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি। এখন মনে হয় আমি সেরকম কাউকে পেয়েছি আব্বা। যার প্রয়োজন নই আমি তার প্রিয়জন আমি।”

আয়মান চৌধুরী হাসলেন। আর বললেন,,

“আম্মা তার প্রিয়জন কে তার হাতে পরিপূর্ণ ভাবে ন্যস্ত করার সময় হয়ে গেছে। আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদের ঘন্টা বেজে গেছে আম্মা।”

হুট করে অপত্যাশিত ভাবে এরকম কথা শুনে মেঘ থমকালো। মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। মেঘ আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ ও ছলছল করছে। মেঘ কিছু বলবে তার আগেই আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘এহসান আর ধূসর আপনাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে চায়। আপনি সময় চেয়েছিলেন তারা দিয়েছে এখন আপনার ও উচিত আপনার নীড়ে যাওয়া। আজ তারিখ জানিয়েছে এহসান, আর মাত্র পনেরো দিন পর আপনাদের বিয়ে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।”

“আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা?”

আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথার মানে বুঝতে পারলেন। তিনি মাথা নাড়লেন মেঘ চুপটি করে তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে সামনে তাকিয়ে রইল। তারা নিজেদের মতো সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে গেল। রাতে ধূসর ছাদে মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল ওকে কিছু কথা বলবে। মেঘ ছাদে যেতেই ধূসর বলল,,

“কি হলো আজ এতো লেট কেন? তোমাকে একটা সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছি?”

“কি সুসংবাদ শুনি?”

“তোমার জামাই ডক্টর হয়ে গেছে‌।”

“আলহামদুলিল্লাহ এটা তো ভালো খবর!”

“কাল এর জন্য আমাদের ব্যাচের সবাই আর সিনিয়র রা মিলে একটা গেট টুগেদার আয়োজন করেছে। এরপর কে কোথায় থাকবে জানা নেই তাই। তুমিও যাচ্ছো আমার সাথে।”

“আপনাদের মধ্যে আমি গিয়ে কি করবো।”

“বারে আমার বউকে পরিচয় করিয়ে দেব না সবার সাথে। কেউ তো জানে না আমাদের বিয়ে হয়েছে। তাছাড়া তোমার অনুষ্ঠান পছন্দ না তাই অনুষ্ঠান ও করবো না। প্লিজ চলো না আমার বিয়ের ব্যাপারে কয়েকজন জানে তারা তোমাকে দেখতে চাইছে।আমিও বলেছি তুমি যাবে। এখন তুমি না গেলে আমার সম্মান বলতে কিছু থাকবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যাবো তবে আমার সেরকম,,”

“সেরকম কোন ড্রেস নেই তাই তো! আমি তোমার জামাই আমার একটা দায়িত্ব আছে না। তাই তোমার জন্য একটা শুভ্র রঙের গ্ৰাউন আর হিজাব নিকাব এনেছি। শুভ্র রঙে তোমায় খুব মানায় মেঘবালিকা!”

মেঘ হাসে ধূসরের কথা শুনে। আর হেঁসে বলে,,

“আমি ড্রেসের কথা না আমি বলতে চাইছিলাম আমার সেরকম সময় হবে না বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। কারন আব্বা একটু অসুস্থ থাকছে কয়েকদিন ধরে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।”

“আব্বা অসুস্থ তুমি আমাকে বলো নি কেন? এরকম ডাক্তার জামাই থাকতে শ্বশুর কেমনে অসুস্থ থাকে। তুমি দরজা খুলো আমি এখনি আসছি।”

“আপনার আসতে হবে না। সামান্য জ্বর আর শরীর ব্যাথা হয়। আব্বা ওষুধ খাচ্ছে তো।’

“নিষ্ঠুর মেয়ে আব্বার জ্বর আর শরীর ব্যাথাকে হালকা বলছে। সাধে তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি। তোমার কিছু হলে নিজে তো কাউকে জানাবেই না নিজে যত্ন ও নিবে না। আমার শ্বশুর এর যত্ন আমি করবো তাতে তোমার কি! আমি আমার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি একটাও কথা বলবে না।

বলেই ধূসর নিচে চলে এলো । মেঘের আর কি ধূসরের কোন কথাকে আজ পর্যন্ত সে অগাহ্য করতে পারে নি। ধূসর এসে শ্বশুরকে দেখলো কয়েকরকমের টিপস্ দিল। তারপর মেঘের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল আজ সে শ্বশুরবাড়িই থাকবে। এই ছয়মাসে হুটহাট করেই কথা বলতে বলতেই ধূসর শ্বশুরবাড়ি চলে আসে। প্রথম প্রথম সবাই অন্যরকম ভাবে নিলেও এখন সহজ হয়ে গেছে। আজকাল আয়মান চৌধুরী ও কিছু মনে করেন না। পরের দিন মেঘ আর ধূসর গেল ধূসরদের অনুষ্ঠানে ধূসর সাদা স্যুট সেট পরেছে আর মেঘ সাদা রঙের গ্ৰাউন হিজাব নিকাব। ধূসর মেঘের হাত ধরে অনুষ্ঠানে গেল। ও যেতেই সবাই হৈ হৈ করে উঠলো কারন ধূসর ওদের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সাথে গুড লুকিং মানুষ। ওরা যেতেই নয়না ওদের কাছে এলো। কারন ধূসর আর নয়না একই সঙ্গে ডক্টর হয়েছে। নয়না এসে ধূসরের হাত ধরতে চাইলো কিন্তু সে এসেই দেখলো ধূসরের হাতের মুঠোয় অন্য একজনের হাত। তা দেখে নয়না বলল,,

“ও কে? তুমি কার হাত ধরে আছো ধূসর?”

তখনি ইশানকে দেখা গেল মাইক হাতে সে বলল,

“এটেনশন গাইজ! আজ আমাদের অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছেছে আমাদের সবার প্রিয় ধূসর এহসান শুভ্র যে আমাদের মধ্যে থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে ডক্টর হয়েছে। আমাদের ডক্টর কিন্তু আজ একা আসেন নি সাথে তার বিউটিফুল ওয়াইফকে নিয়ে এসেছেন। তো প্লিজ ওয়েলকাম ডক্টর শুভ্র এবং তার ওয়াইফ কাশফিয়া আয়মান মেঘ ‌। ”

ধূসর বন্ধুর কান্ড দেখে হাসে। ধূসর হেসে নয়নাকে বলল,,

“এখন বুঝতে পারছো কার হাত ধরে আছি। যাই হোক আসছি।”

এই বলে ধূসর মেঘকে নিয়ে ইশানদের কাছে যায়। এদিকে ওরা যেতেই নয়না রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“কাজটা তুমি ঠিক করো নি ধূসর। তুমি জানতে আমি তোমাকে পছন্দ করি তবুও তুমি কিভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারলে এর মূল্য একদিন চুকাতে হবে তোমাকে।”

ধূসর মেঘকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এতগুলো মানুষ দেখে মেঘের অস্বস্তি হতে লাগলো তবুও ধূসর আছে দেখে কিছু বলছে না। ধূসর মেঘের অবস্থা বুঝতে পারল। তাই মেঘকে একপাশে এনে বসিয়ে বলল,,

“অস্বস্তি বোধ করছো?”

“আরে না আপনি আছেন তো সমস্যা হচ্ছে না তেমন।”

“তবুও আমাকে বলবে অবশ্য তুমি তো আবার মুখের ওপর সত্য কথা বলে দাও।”

“হুম।”

“তোমার ওয়াইফের কি খারাপ লাগছে নাকি।”

হুট করে কারো কথা তে ধূসর পেছনে চাইলো । লোকটার মুখ দেখে ধূসর বলল,

“না আকাশ ভাইয়া তেমন কোন ব্যপার না। মেঘ উনি আকাশ মাহমুদ আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র।”

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

সালামের উত্তর দিয়ে আকাশ মেঘের দিকে কিরকম যেন চেয়ে আছে। সেটা মেঘ ধূসর দু’জনেই খেয়াল করলো। তাই ধূসর বলল,

“চলো মেঘ আমি আমাদের ক্যাম্পাস টা তোমাকে দেখাই।”

ধূসর মেঘের হাত ধরে বের হলো। মেঘ বুঝতে পারলো ধূসর কেন এখন এলো তবুও কিছু বললো না। ধূসর মেঘের হাত ধরে ওর ক্যাম্পাস দেখাচ্ছে। ওদের কিছু ঘটনা বলছে ধূসর হাসছে আর হাত নাড়িয়ে দেখাচ্ছে মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরকে দেখছে। একটা সময় ধূসর সেটা খেয়াল করলো। ধূসর মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“কি ম্যাডাম প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি?”

“না তো আমি তো দেখছিলাম আপনার টাই কিরকম যেন হয়ে গেছে! সোজা হয়ে দাঁড়ান ঠিক করে দিচ্ছি।”

“সত্যি টাই দেখছিলে তো নাকি আমাকে।”

“বড্ড অহেতুক চিন্তা করেন আপনি। চুপচাপ দাঁড়ান।”

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে একটু নিজের অনুভূতি বলে দাও না।”

“তেমন অনুভূতি নেই বলবো কি?”

মেঘ ধূসরের টাই ঠিক করে দিলো। তখনি ধূসর টুপ করে মেঘের কপালে চুমু খেল। তা দেখে মেঘ হাসলো। এইসব দূর থেকে আকাশ আর নয়না দেখলো। অতঃপর অনুষ্ঠান শেষ করে মেঘ আর ধূসর বাড়ি চলে গেল। ধূসর নিজের বাড়ি যাওয়ার আগে বলে গেল।
“আর মাত্র চৌদ্দ দিন মেয়ে তারপর দেখবো আমার থেকে কোথায় পালাও। আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা কিভাবে দেখাও আমিও দেখবো।”

অতঃপর অপেক্ষা ঘুচিয়ে সঠিক সময় ধূসর নিজের একান্ত মেঘবালিকা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার সবাইকে নিয়ে হাজির হলো আয়মান চৌধুরীর বাড়িতে। এবারও সেরকম কেউ নেই মেঘের তাতে কি মেঘের পুরো ভালোবাসাই তো আছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ এবার বিদায়ের পালা। আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করছে এই তো পাশের বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে তবুও যেন খারাপ লাগাটা কতো গভীর। মেঘ ওর আব্বাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

‘আব্বা একদম কাঁদবেন না। আমি অনেক দূরে যাচ্ছি না এই তো আপনার পাশেই বাড়িতেই। যখন আপনার আমাকে মনে পরবে তখন আমাকে ফোন করবেন অথবা জানালা দিয়ে ডাক দিবেন। ‘আম্মা একটু আসবেন আপনার আব্বার আপনার সঙ্গ প্রয়োজন।’ আমি চলে আসবো। যখন যা মনে হবে তাই করবেন আব্বা। একদম ভেঙ্গে পরবেন না। আমি আছি আপনার পাশে সর্বদা। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্বা। এখন আমাকে হাঁসি মুখে শ্বশুরবাড়ি পাঠান আব্বা।”

আয়মান চৌধুরী নিজেকে সামলিয়ে ধূসর এর হাতে মেঘকে তুলে দিল। মেঘ চলে গেল শ্বশুরবাড়ি। দিলরুবা খানম ছোট পুত্রবধূ কে সাদরে গ্ৰহন করলেন। অতঃপর সব ঝামেলা শেষ করে ওরা রুমে ঢুকলো। মেঘকে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরিধান করা হয়েছে। তাও ধূসরের ইচ্ছের জন্য।বাসর ঘরের সব ইসলামিক ফর্মালিটি শেষ করে ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,

“তো মেঘবালিকা এবার বলো আমার তোমাকে বিয়ে করা উচিৎ হয়েছে কি হয় নি। এই ছয়টা মাস আমার কেমন কেটেছে জানো একদম সুখের রাজ্যের এক রাজার মতো। কতো তাড়াতাড়ি এই সুন্দর ছয় মাস জীবন থেকে চলে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। তোমায় ভালোবেসে আমি ঠকেনি বরং জিতেছি। তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা আমাকে বারংবার মুগ্ধ করে চলেছে। তোমার ব্যক্তিত্ব যা আমাকে বারবার প্রথম দিনের মতো মনে করিয়েছে। তোমার প্রতিটা সাক্ষাৎ যেন মনে হয়েছে নতুন ভাবে তোমায় দেখছি। সব শেষে আমি তোমায় ভালোবাসি মেঘবালিকা আমার একান্ত নিষ্ঠুর মেয়ে অতঃপর আমার মিস প্রতিবেশী থেকে আমার ঘরণী কে।”

মেঘ মুগ্ধ চোখে ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনদিন কি মেঘ ভেবেছিল এরকম একজন রাজকুমার ওর জীবনে আসবে। ধীরে ধীরে ওর একাকিত্বতা দূর করেবে। ধূসর আবার বলল,,

“তোমার জীবনে আমি আসার পর কি হয়েছে? কেমন কেটেছে? আমাকে নিয়ে তোমার অনুভূতি কি?

মেঘ হেঁসে বলল,,

“কিছুই না জীবন জীবনের মতো চলেছে। আর আমি আমার মতো বেঁচেছি।”

“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা আমার এত সুন্দর মুহূর্ত তুমি বাগড়া দিচ্ছো কেন?”

“আপনার ভালোবাসায় বাগড়া দেওয়া আমার ইম্পোর্টেন্ট কাজ।”

“সাধে তোমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলি।”

মেঘ হেঁসে বলল,,

‘আমার জীবনে ছয় মাস আগে এক রাজকুমার এর প্রবেশ ঘটেছে যার রেশ এখনো কাটেনি। যা আমাকে বসন্তের মতো ভালোলাগা আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে।”

হুট করে এমন কিছু শুনবে ধূসর ভাবতেই পারে নি। ধূসর মনে মনে হাসলো। না এই মেয়েটা কখনো সরাসরি তাকে ভালোবাসি বলে নি। তবে তার কাজে বুঝিয়ে দিয়েছে। ধূসর বলল,,

“মেঘবালিকা আজ যদি তোমায় ধূসর রঙের রঙিন রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিতে চাই তাহলে কি বাঁধ সাধবে।”

মেঘ মাথা নিচু করে লজ্জামাখা হাঁসি দিল আর বলল,,

“অতঃপর সে আসুক এই ধূসর রাঙা মেঘকে নিজের রঙ দিয়ে রাঙিয়ে তুলুক।”

সম্মতি পেতেই ধূসর নিজের মেঘবালিকা একান্ত ভাবে নিজের করে নিল। এভাবেই ভালোবাসাময় জীবন শুরু হয়েছিল তাদের।

_______________

দেখতে দেখতে এভাবেই ভালোবাসায় কেটে গেছে দুই বছর আট মাস। এই দুই বছর আট মাস এ আগমন ঘটেছে কিছু নতুন অতিথিদের। নীলির ছেলে হয়েছে দুই বছর আগে। তার নাম নীল রাখা হয়েছে নীলির সাথে মিলিয়ে। নীলির বেবি হওয়ার সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয় আর রক্তের প্রয়োজন হলে মেঘ ওকে রক্ত দেয়। তখন রক্ত না দিলে যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারতো। তাই নীলি ওর ছেলেকে আম্মু বলতে শেখায় মেঘকে ও মেঘ ওর আরেক মা। একবছর হয়েছে দিশানের দুটো জমজ মেয়ে হয়েছে রিম ঝিম। এইভাবেই সবাইকে নিয়ে মেঘের জীবন কাটছে মেঘ নতুন করে হাসতে শিখেছে। এর মাঝে আয়মান চৌধুরীর সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে সে এখন চৌধুরী বাড়িতে যাওয়া আসা করে কিন্তু মেঘ যায় নি। আয়মান চৌধুরী সকলের অগোচরে অনেক বড় বিজনেস ম্যান হয়েছে। আর ধূসর আর মেঘের ভালোবাসা যেন বিস্তৃত লাভ করছে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। মেঘের ল নিয়ে পড়া শেষ এখন কোর্টে গিয়ে প্যাক্টিস করছে। মাঝে ওর খুব ইচ্ছে হয়েছে নিজে কিছু করবে তাই একদিন ধূসর আর ওর আব্বাকে জানিয়েছে ধূসর আর আয়মান চৌধুরী মত দিয়েছেন। অতঃপর দু’জনের সাহায্যে মেঘ বেশ বড় এমাউন্টের টাকা নিয়ে শোরুম খুলেছে। আজ মেঘের খুব ইচ্ছে হয়েছে সে আজ ধূসরের জন্য খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাবে। মেঘ খুশি মনে নিজে ধূসরের জন্য রান্না করে টিফিন বক্সে ভরে নিল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হাসপাতালে পৌঁছাতেই মেঘ ধূসরের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো কিন্তু ও কেবিনের সামনে গিয়ে শুনতে পেল। কয়েকজনের কথাবার্তা সেখানে কথা কাটাকাটি চলছে। একসময় কেউ একজন উঠে ধূসরের কলার চেপে ধরলো। ঠিক ঐ মুহুর্তে মেঘ কেবিনে ঢুকলো। আর এই অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল। হুট করে কারো উপস্থিতিতে আকাশ মাহমুদ আর নয়না চমকে উঠলো। ধূসর একটু ভরকালো ঠিকই কিন্তু তার মেঘবালিকাকে দেখে শান্ত হলো। মেঘ গিয়ে আকাশ মাহমুদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আর বলল,,

“আপনার সাহস কি করে হলো উনার কলার ধরার?”

তখন আকাশ মাহমুদ হেঁসে বলল,,

“বাহ তোমার সাহস আছে তো বলতে হবে। সেদিন দেখে মনে হয়েছিল তুমি একজন সরল মেয়ে কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে একটা আগুনের ফুলকি। আমাকে ধাক্কা মারলে। যাই হোক তোমার হাজবেন্ড বলো যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে নাহলে তোমার হাজবেন্ড এর সাথে কি করবো আমি নিজেও জানি না। আমাদের বিষয়ে সে যেন নাক না গলায়।”

বলেই আকাশ নয়না কে নিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন মেঘ ধূসরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“আপনি ঠিক আছেন?”

“হুম!”

“এখানে কি হচ্ছিল?”

“আর বলো না ঐ আকাশ আর নয়না মিলে হাসপাতালের ওষুধের সাথে অবৈধ ওষুধের কারবার চালাচ্ছে। আজ একজনকে ওষুধ দিতে যেয়ে দেখলাম এটা সেই ওষুধ না যেটা আমি সাজেস্ট করেছি। এটা নাকি বলা হয়েছে একই কাজ করে শুধু কম্পানি আলাদা। ওটা নাকি আকাশ বলেছে। কিন্তু সত্যি বলতে ঐ কোম্পানির কোন নামই নেই। আমি আকাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে কেবিনে যাব তখন কেবিনের সামনে গিয়ে জানতে পারি এরাই মূল অবৈধ ওষুধ কারবার চালাচ্ছে এদের মাথা আছে একটা নাম কি যেন A.R.K . আমি যে শুনেছি সেটা নয়না দেখতে পায়। আমি তাড়াতাড়ি কেবিনে চলে আসি তখন ওরাও দুজন আমার পেছনে এসে আমাকে ধমকাতে থাকে যা শুনেছি তা যেন ভুলে তাই নাহলে আমাকে শেষ করে ফেলবে ওরা। তারপরেই কথা কাটাকাটি তে এই পর্যন্ত।”

“দুজন ডাক্তার হয়েও এটা কিভাবে করতে পারে?”

“সেটাই রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন কি করার থাকতে পারে। যাই হোক বাদ দাও এখন বলো এখানে কেন?”

“আপনার খাবার নিয়ে এসেছিলাম।”

“ওহ মাই আল্লাহ আমার বউ আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। তো নিজে খায়িয়ে দাও!”

“পারবো না।”

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে মুখে অন্তত ভালোবাসি না বললে একটু খায়িয়ে দাও না। এখন আমার নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা দেখিও না।”

ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,

‘তবুও নিষ্ঠুর মেয়েটাকেই বিয়ে করলেন?”

‘বিয়ে কি বলছো আমরা তো বাচ্চাও নেব। এই যে তুমি ব্যারিস্টার হবে তখন আমাদের বাবু আসবে। এখন বাবুর আব্বাকে একটু খায়িয়ে দিন মহারানী।”

ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ লজ্জা পায় কিন্তু প্রকাশ করে না । মেঘ হাত ধুয়ে এসে ধূসরকে খায়িয়ে দিতে লাগে আর ধূসর সে ছোট বাচ্চাদের মতো সারা রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়।

এভাবেই ধূসর আর মেঘের পনেরো দিন কেটে যায়। এ কয়েকদিন এ ধূসর চেষ্টা করেছে আকাশদের বিরুদ্ধে প্রমান পেতে তাহলে ও পুলিশ কে জানিয়ে ওদের ধরিয়ে দিতে পারবে। ধূসর অনেক চেষ্টার পর একটা প্রমান পায় যেখানে আকাশ নয়না আর A.R.K কে একসাথে কথা বলছে আনফরচুনেটলি ধূসর জানতে পারে নয়না A.R.K এর মেয়ে। সেদিনের পর থেকে ধূসর ওদের ফলো করে‌। আর এভাবেই একটা সুযোগ আসে একটা রেস্টুরেন্টে তিনজনে কথা বলে ধূসর সুযোগ বুঝে ভিডিও করে নেয় কিন্তু সেখানে A.R.K এর মুখ ঢাকা। ধূসর প্রমান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে যায় যাতে এদের ধরে নেয়। পুলিশটা ছিল A.R.K এর লোক লোকটা তাকে ফোন করে সব জানায়। ধূসর বাইরে থেকে এটা শুনতে পেয়ে ওখান থেকে সেদিনের মতো বাড়ি ফিরে আসে। পরের দিন মেঘ প্যাক্টিস এর জন্য বের হলে ওকে কিডন্যাপ করে নেয় আকাশ আর নয়না মিলে। এদিকে মেঘের বাড়ির ফেরার সময় পার হওয়ার পরও যখন মেঘ বাড়ি ফেরে না সবাই চিন্তায় পরে যায়। আয়মান চৌধুরী ও মেয়ের নিখোঁজ হওয়ায় তাড়াতাড়ি ধূসরদের বাড়ি আসে। রাত আটটায় ধূসরের ফোনে ফোন আসে। ফোনটা আকাশ করে সে জানায় ওর কাছে যে প্রমান আছে সেটা দিলে মেঘকে ছেড়ে দেবে। অন্য কাউকে বা পুলিশকে যেন না আনে নাহলে মেঘকে ওরা মেরে ফেলবে।ধূসর যেন একাই যায়। ধূসর এরকম কথা শুনে পাগলের মতো করতে থাকে। তখন ধূসর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে আয়মান চৌধুরী আর এহসান খান কে বলে সে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর যেন তারা অন্য পুলিশ নিয়ে ওর ফোন ট্র্যাক করে ওখানে পৌঁছে যায় । যে মানুষের ক্ষতি করে তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। ধূসর আকাশের কথা মতো সেই জায়গায় যায়। একটা নির্জন জায়গা জঙ্গলের মতো। তাতে একটা পুরাতন বাড়ির ভেতরে মেঘকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে মেঘ দূর্বল চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর যেতেই মেঘের একরম অবস্থা দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসতে লাগে তখন কতোগুলো লোক ওকে বাঁধা দেয়। তখন আকাশ মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আরে রিল্যাক্স ধূসর এত তাড়া কিসের? তোমার বউ তো পালিয়ে যাচ্ছে না।”

“তোরা আমার মেঘবালিকার গায়ে হাত দিয়েছিস কেন? আমি তো বলে দিয়েছি সব প্রমান দিয়ে দেব। আমার মেঘকে ছেড়ে দে।”

তখন নয়না হেঁসে বলল,,

“আরে দেব দেব তোমার বউয়ের একটু খাতির দাড়ি করা উচিৎ তাই না। যাই হোক এখন ভিডিও টা আমাদের হাতে ট্রান্সফার করো দেখি।”

“তোমাদের একটুও লজ্জা নেই। একেকজন ডাক্তার হয়েও মানুষের ক্ষতি কিভাবে করছো তোমরা। অবশ্য নয়না তোমাকে কি বলবো তোমার বাবাই তো একজন ঠক প্রতারক দেশের মানুষ কে ঠকাচ্ছে সেখানে তোমার থেকে কি আশা করা যায়।”

“এই ধূসর মুখ সামলে কথা বল। নাহলে তোর বউকে একদম ওপরে পাঠিয়ে দেব।

ধূসরের থেকে আকাশ গিয়ে ভিডিও নিয়ে এলো। তখন ধূসর বলল,,

“এবার তো আমার মেঘকে ছেড়ে দাও।”

নয়না মেঘের হাতের দড়ি খুলে দিয়েছে। মেঘ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। মেঘ একটু আগাবে তখন নয়না মেঘের হাত ধরে ফেলল। আর বলল,,

“”তোর ভাগ্য ভিশন ভালো জানিস তুই আমার ভালোবাসাকে পেয়েছিস?

তখন মেঘ বলল,,

“মানে?”

“এই ধূসরকে পাওয়ার জন্য আমি কতো পাগলামি করেছি আর তুই তাকে সহজেই পেয়ে গেছিস। কিন্তু আমার যে তোকে ধূসরের পাশে সহ্য হয় না তাই,,,

নয়না বলতে বলতে মেঘের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিল। তা দেখে ধূসর চিৎকার দিল ‘মেঘ!!!!’ ধূসর দৌড়ে মেঘের কাছে আসতে চাইলো তখন আকাশ পেছন থেকে রড দিয়ে ধূসরের মাথায় বারি মাড়লো। ধূসর নিচে পরে গেল। ততক্ষনে নয়না আরেকটা ছুরি বসিয়ে দিয়েছে মেঘের পেটে। তারপর মেঘকে ছুড়ে মারলো টেবিলের ওপর মেঘ সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেল। তখন নয়না হাসতে হাসতে বলল,,

“আমাদের ধরা এত সোজা নয় মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র। আমার বাবা বলে, নিজের পথে যে আসবে তাকে উপরে ফেলতে তাহলেই না আমাদের পথ পরিস্কার। তোমাকে তো পেলাম না তাই তোমার বউকেও তোমার হতে দিলাম না। তোমাদের খুব ভালোবাসা তাই না। এখন দেখবো তোমাদের ভালোবাসা কোথায় যায়। তুমি আমার নও মানে কারো নও।

এই বলে ধূসরকে উঠিয়ে ওর পেটে ছুরি বসিয়ে দিল। এতক্ষন ক্লান্ত চোখে মেঘ দেখছিল এটা দেখেই মেঘ “ধূসর’ বলে চিৎকার দিল। তা দেখে নয়না আর আকাশ হেসে উঠলো নয়না বলল ,,

“ইশশ কি তাদের ভালোবাসা। এখন দেখবো এই নির্জন জায়গায় তোদের কে বাঁচাতে আসে। ততক্ষনে তোরা একটু সুখ দুঃখের গল্প কর।”

বলেই সবাই চলে গেল। মেঘের দেহে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। ধূসর অনেক কষ্ট করে মেঘের কাছে গেল। মেঘের মাথা কোলে নিল তারপর নিজের শার্ট খুলে মেঘের পেটে বেঁধে দিল। তারপর ওকে কোলে তুলে নিল ধূসরের অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও তার মেঘবালিকা কে নিয়ে বাঁচার আকাংখা ওকে ভেতর থেকে সাহস দিচ্ছে। মেঘ তার প্রেমিক পুরুষ কে দেখছে এতটা কেউ কি করে ভালোবাসতে পারে। নিজের কষ্ট হচ্ছে তবুও তাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে ভুলে যাচ্ছে।তখন মেঘের কষ্ট হলেও বলল,,,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি ধূসর আপনার সাথে অনেক টা পথ চলতে চাই আমি। জীবনের অল্প সুখটুকু আমার হাতে ধরা দিয়েছে ধূসর আমি এত তাড়াতাড়ি এই সুখের রাজ্য থেকে হারাতে চাইনা ধূসর আমি আপনাকে নিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে চাই। আমি আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।”

“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি মেঘবালিকা। আমিও তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।”

ধূসর আর যেতে পারলো না। ওর শরীর আর কুলাচ্ছে না । ও বসে পরলো কিন্তু ও বসে থাকতেও পারছে না। ধূসরকের ভিশন কষ্ট হচ্ছে ও একটু পেছনে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিল। মাথার পেছনটায় রক্তের মাখামাখি পেট থেকেও রক্ত পরছে। এতকিছুর মাঝেও ধূসর মেঘকে ছাড়ে নি। ধূসর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,,

“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি মেঘ‌।তুমি একবার বলেছিলে মেঘবালিকা আমাদের জীবন অনেক ছোট কিন্তু মানুষের জীবনের কষ্টগুলো তার থেকেও বড়। তাই আমাদের জীবনে ছোট ছোট খুশি গুলোকে মনে রেখে কষ্ট গুলোকে ভুলে থাকা উচিৎ। এখন যদি আমাদের দুজনের ইতি ঘটে তাহলে ক্ষতি কি একসাথে মরতে তো পারবো। একে অপরকে ছেড়ে বাঁচার থেকে একে অপরের সাথে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

মেঘের চোখ নিভু নিভু হয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ও অস্ফুট স্বরে বলল,,

“আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি ধূসর! আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

মেঘের অবস্থা দেখে ধূসর ভয় পেয়ে গেল ওর নিজের চোখ ও বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও ধূসর আস্তে আস্তে বলল,,

“মেঘবালিকা চিন্তা করো না। আর একটু কষ্ট করো আব্বা আর বাবা আমাদের বাঁচাতে অবশ্যই আসবে। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো কিচ্ছু হবে না। আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি।

তখনি গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। ধূসর খুশি হয়ে মেঘকে বলতে নিল,,মেঘ দেখো বাবারা এসে পরেছে। কিন্তু মেঘের দিকে তাকিয়ে ধূসর থমকে গেল। মেঘের সারাশব্দ নেই। ধূসর তাড়াতাড়ি করে মেঘ কে ডাকতে লাগলো । ধূসর মেঘকে নিয়ে উঠতে লাগলো যেভাবেই হোক তার মেঘবালিকা কে বাঁচাতে হবে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ধূসরকে হাত লেগে একটা বাঁশ সরে গেল তখন ওখানে থাকা কিছু মোটা কাঠ ওদের ওপর পরতে নিল। ধূসর সেটা দেখে তাড়াতাড়ি করে মেঘকে আগলে নিল আর সব কাঠ গিয়ে ওর ওপর পরলো। ও আঘাত পেয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল। এত কিছুর পরেও সে তার মেঘবালিকা কে ছাড়ে নি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল।এটাই তো একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

বর্তমান,,

ধূসরের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। ও হাত দিয়ে বারবার পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ যেন চোখের পানি মানছেই না। সবগুলো চিঠিই খুব মনোযোগ দিয়ে যত্ন সহকারে পরেছে শুধু লাস্ট চিঠিটা ছাড়া। কখনো হেসেছে কখনো শব্দ করে কেঁদে উঠেছে।কখনো নিজের ওপর অনেক রাগ হয়েছে কখনো মেঘের ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব করেছে। কখনো তার নিষ্ঠুর মেয়েটার ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সবকিছুর মিশ্রন ঘটেছে সব চিঠি পড়ে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা নেমে আসার সময় হয়েছে। চোখের পানি টুকু মুছে , শেষ চিঠিটা হাতে নিল তারপর পরতে লাগলো,,

প্রিয় একান্ত নিষ্ঠুর পুরুষ,,

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করা হয় না, সেইজন্য বোধহয় চাঁদটাও আর মুগ্ধতা নিয়ে আমায় ধরা দেয়না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার দিকে মুগ্ধতা নিয়ে একাধারে তাকিয়ে থাকা হয় না। এই জন্যই বোধহয় আমার মুগ্ধ হওয়া চোখ আপনার চোখে আটকায় না।

কতোদিন হয়ে গেল ,আপনার মুখে সেই নিষ্ঠুর মেয়েটা শোনা হয় না। সেই জন্য বোধহয় এই আমি নিষ্ঠুর মেয়েটা তার ভালোনাম শুনেও তৃপ্তি পায়না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার হাতে হাত রেখে একসাথে নির্জনে হাঁটা হয় না, সেই জন্য বোধহয় নির্জন পথটাও আমায় ডাকতে চায় না।

কতোদিন হয়ে গেল, রাত জেগে গল্প করতে করতে আপনার বুকে ঘুমিয়ে পড়া হয় না ,সেই জন্যই বোধহয় স্বাভাবিক ঘুমেরাও সহজে আমাকে ধরা দিতে চায় না।

কতোদিন হয়ে গেল, আপনার মুখে ভালোবাসি মেঘবালিকা শোনা হয় না, সেই জন্যই বোধহয় এতো ভালোবাসা দেখেও মুখে হাঁসি ফুটতে চায় না।

বহুদিন হয়ে গেল। একটা বসন্ত পাড় হয়ে গেল আপনাকে ছাড়া কিন্তু বসন্তের মিষ্টি পরিবেশ আমায় ছুঁতে পারলো না। নতুন শীতের বৃষ্টি হলো কিন্তু বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করা হলো না। আপনি ছাড়া এই আমি কতোটা সুখে আছি জানেন যতটা সুখে থাকলে কারো জীবনে বাঁচার আকাংখা থাকে না। তবুও জানেন আমি বাঁচি আপনার অপেক্ষায়। আমি জানি একদিন ঠিকই ফিরে আসবেন এই নিষ্ঠুর মেয়েটার জীবনসঙ্গী হয়ে। আপনি কি জানেন আপনাকে ছাড়া এই ধূসর রাঙা মেঘ আবার বেরঙিন হয়ে গেছে। তার জীবনে রঙের একটু অস্তিত্বও নেই। আপনি যে হাড়িয়েছেন তার সাথে আমিও হাড়িয়ে গেছি আপনি যদি আবার আমাকে পেয়ে যান তাহলে আমিও নিজেকে আবার ফিরে পাবো।

ইতি আপনার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর মেয়েটা

ধূসরের চিঠিটা পড়ে মিশ্র অনুভূতি হলো। সুখ দুঃখ দুটোই মিশে আছে। সেই সাথে অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সুন্দর অনুভূতি। ধূসর সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা সেদিন যদি আমার আর তোমার ইতি ঘটতো তাহলে আজকের তোমার এই বিমর্ষ রূপ দেখতে হতো না। একটা সুন্দর ইতি ঘটতো। তোমার এত কষ্ট করতে হতো না। আমাকে একটু দেখার জন্য আমার একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য তোমার নিজেকে আঘাত করতে হতো না। যে মানুষটার গম্ভীর অস্তিত্ব হাড়িয়ে গিয়েছিল আমার সাথে জুড়ে যাওয়ার পর। তাকে আরো খারাপভাবে তোমার জীবনে ফেরত আসতে হতো না। সবশেষে আমায় ভালোবেসে তোমাকে বিলীন হতে হতো না। মেঘবালিকা তুমিই সত্যিই নিষ্ঠুর তেমন তোমার ভালোবাসাও নিষ্ঠুর । হ্যা তুমি নিষ্ঠুর মেয়ে যাকে ভয় কাবু করতে পারে না। কোন আঘাত বাঁধা দিতে পারে না। যে সবকিছু বিলীন করে শুধু ভালোবাসা বিলাতে পারে। যার চাওয়ার কিছু নেই পাওয়ার কিছু নেই শুধু নিজেকে বিলীন করতে জানে। তাকে নিষ্ঠুর বলবো না তো কাকে বলবো। আমি তোমায় ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এতকিছুর পরেও তুমি আমার হাত ছাড়ো নি নিষ্ঠুর মেয়ে। আমার জন্য সব করে গেছো। তোমার নামের মতোই তোমার ভালোবাসাও খুব নিষ্ঠুর মেঘবালিকা। ফিরে এসো মেঘ তোমার অপেক্ষায় আছে তোমার ধূসর।

এইটুকু বলেই ধূসর থামলো। সন্ধ্যার আজান শুনতে পাচ্ছে ধূসর তাই উঠে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠলো। একটা মসজিদ দেখে গাড়ি থামিয়ে ওযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল।

এদিকে ধূসরের পরিবার সবাই চিন্তা করছে সেই কখন ধূসর গেল এখনো এলো না। এদিকে আয়মান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে আরো আগেই। তিনি চুপচাপ হয়ে আছেন। অতঃপর মাগরিবের নামাজের পর ধূসর হাসপাতালে গেল। ধূসর সোজা আয়মান চৌধুরীর কাছে গেল তারপর আয়মান চৌধুরীর হাতে হাত রেখে বলল,,,

“আব্বা ঠিক লাগছে এখন?”

“হুম!”

“চলুন আপনার আম্মার সাথে দেখা করবেন। আজ শ্বশুর আর জামাই মিলে আপনার মেয়ের সাথে গল্প করবো। আর বলবো আমাদের দুজনের কাছে কতটা প্রয়োজনীয় আপনার নিষ্ঠুর মেয়ে।”

“ধূসর তুমি ঠিক আছো?”

“আপনার কি আমাকে দেখে বেঠিক মনে হচ্ছে? আসলে আব্বা এখন তো মেঘের জ্ঞান ফেরাটা দরকার। তাই আমরা অনেক গল্প করবো যাতে মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে তাড়াতাড়ি। আমাদের দুজনকে মজা করতে দেখে আপনার মেয়েটার রাগ হবে। তাকে ছাড়া আমরা দুজন গল্প করছি তাতে সে তাড়াতাড়ি উঠে পরবে।”

আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে ধূসরের দিকে তাকালো তারপর ধূসরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,

“চলো কিন্তু এখন কিছু বাদাম থাকলে ভালো হতো। খেতে খেতে গল্প করা যেত।”

হুট করেই ধূসরের মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। ধূসরের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল ও বলল,,

“আব্বা পরে একদিন বাদাম পপকর্ন পেপসি সব নিয়ে বসবো। আজকে থাক।”

এবার আয়মান চৌধুরীও একটু হাসলেন। ধূসর আয়মান চৌধুরীর হাত খুব শক্ত করে ধরলো। তারপর কেবিনের বাইরে তাকে ধরে ধরে নিয়ে এলো। কেবিনে এতক্ষন আয়মান চৌধুরী একাই ছিলেন তিনি একা থাকতে চাইছিলেন দেখে কেউ ডিস্টার্ব করে নি। আজ মুনের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আজ মুনরাও এ বাড়িতে আসবে তাই আয়মান চৌধুরী সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আজান,আশা চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী থাকতে চেয়েছিলেন তাদের কেও পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুধু আজান রয়ে গেছে তার বাবার কাছে। মায়মুনা চৌধুরী একটু জোর করে থাকতে চাইলে আয়মান চৌধুরী বলেছেন,,

“এই ছয় বছরে অনেক কঠিন সময় গেছে আমি আর আমার আম্মা পার করেছি এখন কাউকে লাগবে না। যদি মেঘের জন্য থাকতে না পারো তাহলে আমার জন্যও থাকতে হবে না। আমি জানি আমার আম্মার জন্য তুমি এখানে আসো নি তুমি এসেছো আমি এসেছি বলে আর লোকে যদি কিছু বলে তাই। তাছাড়া যে আমার আম্মার মা হয়ে উঠতে পারে নি তাকে এই মুহূর্তে আমার দরকার নেই।”

ব্যস এটুকুতেই মায়মুনা চৌধুরী মাথা নিচু করে চলে গেছেন। ধূসরের পরিবারের সদস্যরা সবাই আছে সেই সাথে মেঘের চার বান্ধবী। ওদের আসতে দেখে সকলে একটু অবাক হলো। ধূসর ডক্টরের সাথে কথা বলে আয়মান চৌধুরীকে নিয়ে ভেতরে গেল। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী অনেক চেষ্টা করেও মেঘের জ্ঞান ফেরাতে পারলো না। তারা হতাশ হয়ে ফিরে এলো। ধূসর বাইরে এসে সবাইকে বলল বাড়ি চলে যেতে হাসপাতালে দুজনের বেশি কেউ থাকতে পারবে না। ধূসর আর আয়মান চৌধুরী থাকবেন এমনিতেও আয়মান চৌধুরী পেশেন্ট হিসেবেই থাকবেন। ধূসরের কথা শুনে সবাই চলে গেল। আজান থাকতে চাইলে ধূসর তাকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিল। যাওয়ার আগে এহসান খান দিশানকে দিয়ে ধূসর আর আয়মান চৌধুরীর জন্য খাবার কিনে আনলেন। আয়মান চৌধুরীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে‌। তাই ধূসর আয়মান চৌধুরীর সামনে খাবার রাখলো তা দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,,

“আমি খাবো না ধূসর আমাকে জোর করো না।”

“সেই সকালে খেয়েছেন এখন খেতে হবে রাতে ওষুধ ও তো খেতে হবে। ”

“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”

ধূসর হাত ধুয়ে খাবার মাখিয়ে আয়মান চৌধুরীর সামনে ধরে বলল,

“খেয়ে নিন আব্বা আপনার মেয়ে যদি জানে আমি আপনার যত্ন নিই নি তাহলে কি বলবে জানেন? বলবে ধূসর আপনি আমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলেন কিন্তু নিষ্ঠুর তো আপনি। আপনি জানেন আমার আব্বার আমি ছাড়া কেউ যত্ন নেয় না। আমি যখন নেই তাহলে আপনি কেন আব্বার খেয়াল রাখলেন না। আপনি ডাক্তার হয়েও শ্বশুরের খেয়াল রাখতে পারলেন না।কেমন ডাক্তার আপনি।

আয়মান চৌধুরী অসহায় হেঁসে বলল,,

“হুম আমার আম্মা ছাড়া আমার কেউ যত্ন নিতে পারে না। কারন আমার আম্মার মতো কেউ তো আমাকে শ্বাসন করে না। জোর করে খাবার ও খাওয়ায় না। একটু অধিকার দেখিয়ে আমার সাথে থাকবে সেটাও কেউ করেনা। শুধু একটা কথায় আমি চাই নি তাই তারা থাকেনি।”

“আব্বা আপনি কি মায়ের কথা বলছেন?”

“না আমি সবার কথা বলছি। আমি খাবো তবে আমার সাথে তোমাকেও খেতে হবে। নাহলে আমার মেয়ে আমাকে বলবে আব্বা জানেনই তো আমার জামাই আমাকে নিয়ে কতো পসেসিব কতো পাগলামি করে। আমি যখন নেই আমার জামাই এর একটু খেয়াল রাখবেন না।”

একথা শুনে ধূসর হাসলো আর বলল,,

“আপনার মেয়ে আমাদের জীবনের এমন একজন মানুষ যার ভালোবাসার গভীরতা আমাদের একে অপরের সাথে বেঁধে রাখে। আমিও খাবো তো নিন এখন খাবারটা মুখে নিন।”

দুই জামাই শ্বশুর মিলে খাবার খেল। পাশে থাকা নার্স অবাক চোখে জামাই শ্বশুর কে দেখলো। এরকম ও কারো সম্পর্ক হয়। হুট ধূসর বলল,,

“আকাশ আর নয়নার কি হয়েছে ওদের কি ধরা হয়েছে আব্বা।”

‘হুম আমাদের ওখানে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের এখনো পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয় নি।”

“ভালো করেছেন আব্বা আজ যাদের জন্য আমাদের জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল। আমার জীবন থেকে এক বছর আট মাস হাড়িয়ে গেছে। আমার মেঘবালিকা এত কষ্ট পেয়েছে আজ ও পাচ্ছে। তাদের আমি নিজ হাতে শাস্তি দেব আগে তারপর আইন দেবে‌। ওদের কিচ্ছু করতে মানা করবেন আমার মেঘ বালিকা সুস্থ হোক তারপর আমার মেঘবালিকার সামনে তাদের শাস্তি দেব আমি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

_________________

“মেঘকে মারতে গিয়ে আকাশ আর নয়না ধরা পরেছে আয়মান চৌধুরীর গার্ডদের কাছে।”

এ কথা শুনে A.R.K চমকে উঠলো। আর চিৎকার করে বলল,,

“কি বলছো নয়নার সাথে মেঘের কি শত্রুতা। তারমানে এই মেঘই কি সেই মেঘ যাকে দেড় বছর আগে মেরে ফেলেছিল। তার মানে এটাই ঐ মেঘ যার হাজবেন্ড আমাদের সম্পর্কে জানতে পেরে গেছিল। কিন্তু মেঘের তো হাজবেন্ড এর নাম গন্ধও শুনলাম না। না মেলাতে পারছি না কিছুই কি হচ্ছে? কিন্তু নয়না আর আকাশ ওকে মারতে গেল কেন এখন। তাও আমাকে না জানিয়ে। কয়েকদিন হলো ওরা দেশে ফিরলো এর মধ্যে এটাও করে ফেলল। আমি তো ঐ ঘটনার পর ওদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। যাতে ওদের কেউ ধরতে না পারে। জানিনা এই আয়মান এখন কি করবে আর মেঘ যদি বেঁচে যায় তাহলে নয়নারা তো শেষ হবেই সাথে আমাকেও শেষ করে ফেলবে।আমার মনে হচ্ছে মেঘের কাছে এখনো ঐ ভিডিও ছিল । আমার মনে হয় মেঘ ওদের অপেক্ষায় ছিল ওরা কবে দেশে আসবে। কি করবো মাথা কাজ করছে না। আমার মেয়েটাকে বাঁচবো কিভাবে। ওদের সম্পর্কে তেমন ধারনাও নেই কারন ওদের ওপর নজরদারি করা হয় নি।

__________________

আরেকটা নতুন দিনের সূচনা কিন্তু সবার সকাল কি একভাবে শুরু হয় না হয় না। আমাদের অবস্থান অনুযায়ী আমাদের সকাল শুরু হয়। খান বাড়ির সকলে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে কালকেই সেই সাথে মেঘের বান্ধবীরাও। আজ সকাল হতেই সবাই এসেছে আর চৌধুরী বাড়ি থেকে সমশের চৌধুরী আর আজান এসেছে। নাতনির খবর শুনে ভেতরে ভেতরে তিনি একেবারে ভেঙ্গে পরেছে। সমশের চৌধুরী ছেলের অবস্থা জানেন না তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আরো ভেঙে পরতেন। চৌধুরী বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে সকলে তাকে নিয়েই ব্যস্ত কিন্তু বাড়ির মেয়ে আইসিইউতে ভর্তি সেটা কিছু মানুষের মনেই নেই বোধহয়। মায়মুনা চৌধুরী ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে মুনকে এখনো জানানো হয় নি। তাই সবাই স্বাভাবিক থাকছে। মায়মুনা চৌধুরী নিজের রুম থেকে বেরুচ্ছে না। না জানি রুমে কি আছে। সবকিছু আশা চৌধুরী আর জাহানারা চৌধুরী দেখছেন। বাকি সবাই যেন চিল করছে। সেই দিনটাও কেটে গেল মেঘের জ্ঞান ফিরলো না। আর একটা দিন যতো সময় যাচ্ছে ধূসরের ছটফটানি বাড়ছে সেই সাথে সবার টেনশন।

অতঃপর আজকেই শেষ দিন মেঘের জ্ঞান ফিরতেই হবে। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে আর এই অবস্থায় সহ্য করতে পারছে না তাই আজ আর তিনি গেলেন না। ধূসর গেল মেঘ নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। অক্সিজেন চলছে হাতে ক্যানেলার ধূসর মেঘের হাত ধরে বলল,,

“এই যে নিষ্ঠুর মেয়ে শুনছো তোমাকে ঐ চাঁদ ডাকছে তুমি কতোদিন মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকাও না এই নিয়ে সে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে তোমাকে মুগ্ধ চোখে চন্দ্রবিলাস করতে বলেছে। তুমি জানো ঐ পথ তোমায় ডাকে কতোদিন নাকি তুমি ঐ নির্জন পথে হাটো না। আমায় হাতে হাত রেখে তোমাকে হাঁটতে বলেছে। আর আমি সে তো তোমার মুগ্ধ চোখটা দেখতে চাই আমার দিকে একআকাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। আমি চুপটি করে তোমাকে দেখবো। শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে আমি তোমায় ভালোবাসি । আমার মেঘবালিকা ফিরে এসো আমার নীড়ে তোমার অপেক্ষায় আছে তোমার ধূসর। এখন কিন্তু আমিও রাগ করবো তোমার ওপর আমি তো এসেছি তাহলে তুমি কেন দূরে যেতে চাইছো। আমি তোমাকে পেয়ে গেছি মেঘবালিকা এখন তুমি নিজেকেও পেয়ে যাবে এই জন্য তোমাকে ফিরতে হবে।”

ধূসরের চোখ দিয়ে পানি পরছে ধূসর মেঘের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা আমাদের এখনো অনেক শখ পূরণ করা বাকি সব পূরন করতে হবে তো। আমার সাথে অনেক চন্দ্রবিলাস করা বাকি, একসাথে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি, অনেক ভালোবাসা বাকি এখনো, সব পূরন করতে হবে তো। প্লিজ মেঘ ফিরে এসো তোমার একান্ত ব্যক্তিগত নিষ্ঠুর পুরুষ এর কাছে। এবার প্রমিস করছি আর তোমার থেকে দূরে যাবো না তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। প্লিজ মেঘ আমার ওপর একটু দয়া করো এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না। আমার কাছে ফিরে এসো তোমার ধূসরের কাছে। নিজের নিষ্ঠুরতা দেখিও না আমি সইতে পারবো না মেঘ। প্লিজ মেঘ ফিরে এসো।

ধূসরের কান্না মেঘের মুখের ওপর পরছে। ধূসর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে মেঘের হাতে চুমু দিল আর শক্ত করে ধরে রাখলো। তখন ধূসরের কানে আওয়াজ এলো,,

‘ধূসর!”

ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো মেঘ চোখ খুলেছে। ধূসর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেঘবালিকা তুমি!

মেঘের শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চলতে লাগলো। তা দেখে ধূর ভয় পেল। ধূসর ডক্টরকে ডাক দিল । ও নিজেও একজন ডক্টর সেটা বোধহয় ভুলে গেছে ধূসর।
ধূসরের ডাক শুনে ডক্টর চলে এলো মেঘকে ইনজেকশন দেওয়া হলো মেঘ শান্ত হলো ততক্ষন মেঘ এক দৃষ্টিতে ধূসরের দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষন পর্যন্ত না ওর চোখ বন্ধ হলো। ডক্টর জানালো মেঘ এখন আউট অফ ডেন্জার। কয়েক ঘন্টা পরেই আবার জ্ঞান ফিরবে। ধূসর বাইরে গিয়ে সকলকে জানালো সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।

অতঃপর সবার কাঙ্ক্ষিত সময়টা এসেই গেল মেঘ চোখ খুললো। সবার প্রথমে ও ধূসরকে দেখতে পেল তার পাশেই ওর আব্বা বসা। আয়মান চৌধুরী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,,

“এখন কেমন লাগছে আম্মা!”

মেঘ মুচকি হেসে আস্তে আস্তে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন আব্বা?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

এরপর ধূসরকে বলল,,

“ডক্টর বাড়ি যাবো কবে?”

তখন ধূসর বলল,,

“আরে এতো তাড়া কিসের? এই তো তিনদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরলো। এখন কয়েকদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে।”

“কি তিন দিন পর?”

“হুম তিন দিন পর!”

“ওহ আচ্ছা, আব্বা খেয়েছেন কিছু? এখন কয়টা বাজে?

আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথা শুনে হাসলেন এত কিছুর মাঝেও সে তার আব্বার খেয়াল রাখছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“রাত আট টা বাজে। একটু পরেই খাবো।”
তখন ধূসর বলল,,

“শুধু কি তোমার আব্বারই খবর নেবে মেঘবালিকা। আমিও তো আছি আমার খোঁজ খবর নাও একটু। হাজার হোক আমি তোমাকে বিয়ে করবো কয়েকদিন পর। সেই হিসেবে তোমার হবু জামাই। তোমার আব্বা কে বলেছি সে রাজি আমাদের বিয়ের জন্য।

মেঘবালিকা শুনে মেঘের বুকটা চমকে উঠলো সাথে খুশিও। এই বুঝি পুরোনো ধূসর ওকে বলছে। কিন্তু পরের কথা শুনে বেশিক্ষণ আর খুশি রইলো না। মেঘ কিছু বললো না শুন্য দৃষ্টিতে পাশের দেয়ালে তাকিয়ে রইল। ধূসর বুঝতে পারলো কিন্তু এই মুহূর্তে সে কিছু করবে না। কিছুক্ষণ পর মেঘের খাবার আনা হলে ধূসর মেঘকে খায়িয়ে দিতে নিল তখন মেঘ বলল,,

“আপনার এখনো আমাকে খায়িয়ে দেওয়ার অধিকার হয় নি । তাই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে খুশি হবো। আমার আব্বা আমাকে খায়িয়ে দেবে। কি আব্বা দেবেন না।”

তখন আয়মান চৌধুরী কিছু বলতে নিলেন কিন্তু ধূসর মানা করলো। আর খাবার টা আয়মান চৌধুরীর কাছে দিয়ে বলল,,

“মেঘ ঠিক বলেছে।”

আয়মান চৌধুরী যত্ন সহকারে মেয়েকে খায়িয়ে দিলেন। সবাই আজ আসতে চেয়েছিল মেঘকে দেখতে কিন্তু ধূসর মানা করেছে কারন সবাই জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি গেছে। সবাইকে কাল আসতে বলেছে আজ আসলে মেঘ বেশি কথা বলবে। আয়মান চৌধুরীর অবস্থা মেঘকে জানানো হয় নি। মেঘকে খাওয়ানো শেষ হলে মেঘ বলল ,,

“আব্বা আপনি আর ডক্টর খেয়ে নিন এখন।”

অতঃপর ধূসর আর আয়মান চৌধুরীও খেয়ে নিল। মেঘ আয়মান চৌধুরীকে বাড়ি যেতে বলল সে একা থাকতে পারবে নার্স ডক্টর সবাই আছে। কিন্তু আয়মান চৌধুরী মানতে নারাজ তাছাড়া এই তিনদিন সে হাসপাতালে পেশেন্ট হিসেবেই ছিলেন। ধূসর আয়মান চৌধুরীর পুরো খেয়াল রেখেছে। তাই তিনি অনেকটাই সুস্থ। তখন ধূসর বলল,,

“সমস্যা নেই আব্বা মেঘ যা বলে শুনুন আপনি বাড়ি যান আমি আছি ওর পাশে। কিছু হলে না নার্স আর ডক্টর মিলে দেখে নেবে।”

তা শুনে মেঘ বলল,,

“আপনি আমার আব্বা কে আব্বা বলছেন কেন? আর আপনি হাসপাতালে থাকবেন কেন আমার জন্য।”

“বারে কদিন পর আমাদের বিয়ে হবে তাই এখন থেকেই ট্রায়াল দিচ্ছি আব্বা ডাকা । আর তাছাড়া তুমি আমার হবু বউ আমার দায়িত্ব আছে না আমার ভবিষ্যৎ বউয়ের খেয়াল রাখা, তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা। তাহলেই না আমার বউ আমার দেখাশোনা করবে ভালোমতো। সবথেকে বড় কথা আমি একজন ডক্টর আর তোমার ডক্টর ও তাই বেশি কথা বলো না। তাই আমাকে হাসপাতালে থাকতেই হবে।

“আপনি অহেতুক কথা বেশি বলেন ডক্টর।”

মেঘের জোরাজুরিতে আয়মান চৌধুরী বাড়ি চলে গেল। তখন মেঘের মনে পরলো মেঘ ধূসরকে বলেছিল ওর হাজবেন্ড ধূসর আর বলেছিল চিঠি পরতে ধূসর কি চিঠি পরেছে। মেঘ বলল,,

“ডক্টর সেদিন গাড়িতে আপনাকে কিছু বলেছিলাম আমি!”

ধূসর মনে হাসে কিন্তু প্রকাশ করে না। ধূসর বলল,,

“তোমায় ঐ অবস্থায় দেখে আশেপাশে কিছু খেয়াল করি নি । তাই তোমার কোন কথাই আমি বুঝতে পারি নি।”

কথাটা শুনেই মেঘের মন খারাপ হয়ে গেল। তা দেখে ধূসর মনে মনে বলল,,

“মন খারাপ করো না মিস প্রতিবেশী। কালকেই তোমার অপেক্ষার শেষ হবে। হ্যা হয়তো তুমি খুব খুশি হতে কিন্তু তোমার এক্সাইটেডমেন্ট এ মাথায় চাপ পরতো। এই মুহূর্তে তোমার রিল্যাক্স থাকা প্রয়োজন। তারপর তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইতে কিন্তু তোমার কষ্ট হলেও তুমি করতে। তোমার পেটে চাপ পরতো। নিজের ক্ষতি করেও তুমি আমার সঙ্গ চাইতে তাই আজ না। কাল আরেকটু সুস্থ হও তারপর। কিন্তু তোমার উপাধি নিষ্ঠুর পুরুষ এর যে একটু নিষ্ঠুর হতে ইচ্ছে করলো। মা বাবা আসুক কাল অধিকার নিয়েই তোমায় কোলে নিয়ে ঘুরাবো।”

মেঘ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলো ওষুধের প্রভাবে। ধূসর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একসময় ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু মাঝরাতে মেঘের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। হুট করে গরম কিছু তে হাত লেগে ধূসরের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলেই ধূসর দেখলো মেঘ কাঁপছে। ধূসর নার্সকে ডেকে কম্বল নিয়ে মেঘের ওপর দিলো তবুও মেঘের কাঁপুনি থামছে না এদিকে ধূসর মেঘের অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছে। ধূসর আর সহ্য করতে না পেরে মেঘের পাশে গিয়ে সাবধানে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। কারো উষ্ণতায় মেঘ গুটিশটি মেরে তার বুকে লেপ্টে রইলো। মেঘের গায়ের গরমের তীব্রতায় ধূসর ঘেমে উঠলো তবুও মেঘকে ছাড়লো না। ভোরের দিকে মেঘের জ্বর কমলো শরীর এখন ঘাম দিচ্ছে। তা দেখে ধূসর কম্বল সরিয়ে দিল। ধূসর নিজে উঠতে চাইলো কিন্তু মেঘ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে তাই উঠতে পারলো না যদি উঠতে গিয়ে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে যায় কিংবা মেঘ পেটে ব্যাথা পায় সেই জন্য। রাতে তেমন ঘুম হয় নি তাই ও ঘুমিয়ে পরলো মেঘকে ধরে। সকালে আগে মেঘের ঘুম ভাঙলো চোখ খুলে মুখের সামনে ধূসরকে দেখতে পেয়ে ও চমকে উঠলো। তারপর ওর খেয়াল হতেই দেখলো মেঘ নিজেই ধূসরকে জড়িয়ে ধরেছিল। মেঘ সাবধানে নিজেকে সরিয়ে আনলো। তখন নার্স আসলো আর এসে দেখলো মেঘ উঠে পরেছে তাই দেখে নার্সটি হেঁসে বলল,,,

“ম্যাম আপনি উঠে পরেছেন? স্যার এখনো ঘুমাচ্ছে নাকি! ঘুমানোরই কথা কাল রাতে উনি ঘুমাতে পারে নি তেমন। আপনি অনেক লাকি এমন একজন মানুষ কে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। কাল রাতে আপনার খুব জ্বর এসেছিল আপনি কাঁপছিলেন। স্যার কম্বল এনে দিল তবুও আপনার কাঁপুনি থামছিল না বলে স্যার নিজেই আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। স্যারের খুব গরম লাগছিল ঘামে শরীর ভিজে গেছিল তবুও আপনাকে ছাড়েন নি।এরকম স্বামী ক’জন পায় বলুন তো। আপনাকে যেদিন হাসপাতালে আনা হলো স্যার আপনার বাবাকে ধরে কতো কাঁদছিলেন। কেউ স্ত্রীর জন্য শ্বশুরকে জড়িয়ে কাঁদতে পারে সেটা ওনাকে প্রথম দেখলাম।”

সব শুনে মেঘ অবাক হলো কিন্তু ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তারমানে কি ধূসরের সব মনে পরেছে আর যদি মনেই পরে তাহলে কাল বলে নি কেন? তখন ধূসরের ঘুম ভাঙলো মেঘের চোখ খোলা দেখে বলল,,

“মেঘবালিকা উঠে পরেছো?”

“হুম! আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন? আপনার এটা করা মোটেই উচিৎ হয় নি। বিয়ে ঠিক হয়েছে তো কি হয়েছে? তাই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুবেন এটা ঠিক না এটা অবৈধ।

“মিস প্রতিবেশী আমাকে তোমার বৈধ না অবৈধ কিছু শেখাতে হবে না। আমি জানি আমার ঘরণীর সাথে কি করা উচিৎ আর উচিৎ নয়।”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে