Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 444



নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-১০

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ১০

🍁

চেঞ্জ করতে গিয়ে আরোহীর মনে হয় তার গোসল করলেই ভালো হবে, তাই একেবারে গোসল করেই বের হয় সে।

বের হয়ে আসে পাশে আঁধারকে না দেখেই বুঝতে পারে হয়তো বেলকনিতে আছে, তাই চুপচাপ সেও বেলকনিতে চলে যায়।

আঁধার একটা চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে! আরোহী আঁধারকে কি বলবে, কি বলে ডাকবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এরইমধ্যে ধপ করে চোখ খুলে আঁধার! আরোহী হকচকিয়ে যায়,

কিন্তু আঁধার আরোহী দেখে ও না দেখার ভান করে উঠে ঘরে চলে যায়,আঁধারের পেছন পেছন আরোহী নিজেও চলে আসে। আঁধারকে টাওয়াল হাতে নিতে দেখে আরোহী ভ্রুকুঁচকে তাকায় আর ভাবে,,

–‘উনি না একটু আগেই ভার্সিটি থেকে আসে গোসল করলো, আবার গোসল করবেন নাকি?’

আরোহীর ভাবনার মধ্যেই আঁধার আরোহীকে টেনে বিছানায় তার উল্টো দিক করে বসায়।আরোহী এবার অবাক হয়ে যায়! আঁধার আসলে কি করতে চাচ্ছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করে,এরইমধ্যে নিজের চুলে কারো হাতের অস্তিত্ব পেতেই চমকে যায় আরোহী।

কিন্তু আঁধার তাকে অবাক করে দিয়ে চুপচাপ টাওয়াল দিয়ে তার দীর্ঘ লম্বা চুলগুলো মুছতে শুরু করে।আরোহীর কাছে এবার সবটা পরিস্কার হয়! মুচকি হেসে চুপ করে বসে থাকে সে।

অনেক সময় পর আঁধার নিজের কাজ শেষ করেই আরোহীকে বলে,,

–‘নিচে চলো আম্মু ডেকে গেছেন আসে।’

বলেই আঁধার চলে যেতে নেয় কিন্তু আরোহী আঁধারের হাত টেনে ধরে বলে,,

–‘আপনি আগে আগে যাচ্ছেন কেনো,একসাথে যেতে বলেছে তো আমাদের!’

আরোহীর কথা শুনে আঁধারের মধ্যে কোনো ভাবাবেগে লক্ষ করা গেলো না সে যেনো শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে আরোহীর হাত ধরে নিচে নামতে শুরু করে।

নিচে নামতেই ডাইনিং টেবিলে সবাইকে বসে থাকা দেখেই আঁধারের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তারা তাদের অপেক্ষায় করছিলো।আদর ও আলিশাকে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরোহীর অসস্তি হওয়া শুরু হয়, কিন্তু আঁধার তখনও তার হাত ধরেই আছে।

–‘এ কি ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোরা? ‘

আঁকলিমা চৌধুরীর কথা শুনে আরোহীর হাত ছেড়ে দেয় আঁধার। আরোহী গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় ডাইনিং এর দিকে।একটা চেয়ার টেনে আরোহীকে বসিয়ে দেয় তারেক চৌধুরী! আলিশা এসব দেখে ভ্রুকুঁচকে নেয়।

আরোহীর ডান পাশের চেয়ারেই আঁধার বসে পড়ে কারণ বাম পাশের চেয়ারে আলিশা বসে আছে।কখন কি করবে বা বলবে তার ঠিক নেই।

আঁধার নিজের প্লেটে ভাত বেরে আরোহীর প্লেটেও বেরে দেয়। আলিশা এসব দেখে রাগে ফুঁসে ওঠে। কিন্তু আদর সে মাথা নিচু করে খাওয়া শুরু করে দেয়,কি দরকার চোখ তুলে তাকিয়ে নিজের প্রিয় মানুষটাকে অন্যের সাথে দেখার। কিন্তু মন তো আর মানে না তাই না চাইতেও চোখ তুলে তাকায়।

তাকাতেই দেখে আরোহী আঁধারের দিকে চেয়ে আছে, আদরের কষ্টে বুকটা ফেঁটে যায়।তাই অল্প একটু খেয়েই তার খাওয়া হয়েছে বলে চলে যায়।তারেক চৌধুরী ও আঁকলিমা চৌধুরী ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছে কেনো আদর উঠে চলে গেলো,হাজার হোক তারা তো মা বাবা সন্তানের মুখ দেখেই কষ্টের কথা বলে দিতে পারে তারা।আঁধার নিজেও একপলক আদরের যাওয়ার দিকে তাকায়।

আঁধারের কখনো কখনো মনে হয় তার এই ছোট ভাইটি আরোহী নামক রমনীটিকে অনেক ভালোবাসে, কিন্তু নিজেরই কিছু ভুলের কারণে হারিয়ে ফেলেছে সে। আবার কখনো কখনো মনে হয় সে তো প্রতারক, আরোহীর সাথে ও তার সাথে প্রতারণা করেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই!

আঁধার মনে মনে বলে,,উহু অবশ্যই তাই নয়, তবে আরোহী তার বউ শুধু মাত্র তারই।

খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর যে যার রুমে বিশ্রামের জন্য চলে যায়। আরোহী ও আঁধার তাদের রুমে আসে বিশ্রামের জন্য। আরোহী বিছানায় বসে পড়ে আর আঁধার সোফায়। আরোহী আঁধারের রুমে বসে খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে তার রুমটি পর্যবেক্ষণ করছে। রুমটি প্রায় অনেকটাই বড় কিন্তু পুরে রুম জুড়ে সাদা আর সাদা দিয়ে ভর্তি।রুমের রং থেকে শুরু করে জালানার পর্দা পর্যন্ত সবকিছু সাদা দিয়ে ভরা ভরা।

আরোহীর মনে ঝট করে একটা প্রশ্ন উদয় হয়,,আচ্ছা এই লোক কি নিজে সাদা বলে তার সবকিছু সাদা সাদা নাকি!
হতেই পারে, জিজ্ঞেস করে দেখবো নাকি?না না থাক পড়ে যদি আবার কিছু বলে!

আঁধার আরোহীকে বেশ অনেকক্ষণ যাবত লক্ষ করছে, আরোহীকে নিজে নিজেই বিরবির করে কিছু বলতে দেখে ভ্রুকুঁচকে তাকায় তার দিকে।

প্রায় অনেকক্ষণ যাবত আরোহীর দিকে তাকিয়ে থাকে আঁধার। মূলত আঁধার আরোহীর ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে আরোহী আসলে কি বিরবির করছে।

–‘ ডোন্ট ওয়ারি সুইটহার্ট আমাদের বেবি ও সাদা সাদাই হবে!’

মুখ চেপে হেসে বলে আঁধার।

আরোহী হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠে,,

–‘এই আপনি আমার কথা শুনলেন কিভাবে?’ আমার কথাতো আমি নিজেই শুনতে পারছি না।

–‘ইট’স সিক্রেট মিসেস চৌধুরী!’

বাঁকা হেসে বলে আঁধার।

আরোহী চোখ ছোট ছোট করে আঁধারের দিকে তাকায়।

–‘আজকে কি আমাকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে নাকি?’ সকাল থেকেই দেখছি কেউ একজন হাঁ করে তাকিয়ে আছে।

আরোহীর তাকানোর স্টাইল দেখে আঁধার বলে।

আরোহী উত্তর দেয় না কিন্তু আগের মতো আর তাকায় না মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে তাকায়।

আরোহীর মুখ ভেংচি দেওয়া দেখে আঁধার চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় আরোহীর দিকে,যার অর্থ তার সেটা পছন্দ হয়নি!

ফোন বেঁজে উঠায় আরোহীকে আর কিছু বলে না, কিন্তু ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় থমকে যায়।

–‘আপনার ফোনটা তো অনেকক্ষণ থেকে বাঁজছে রিসিভ করছেন না কেনো?’

আঁধারকে ফোনের এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে আরোহী। আরোহীর কথায় আঁধার কিছু না বলেই ফোন নিয়ে বাহিরে চলে যায়।

আরোহী হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে আঁধারের যাওয়ার দিকে।

আঁধার যাওয়ার পর পরই আলিশা আঁধারের ঘরে আরোহীর কাছে আসে, সে এতোক্ষণ আরোহীকে কখন একা পায় সেটারই অপেক্ষা করছিলো।

–‘বাহ আরো,আসতে না আসেই বরের সাথে রোমান্স করা শুরু করে দিয়েছিস?’ মানতে হবে তোকে, নাহলে আসেই কেউ বরের সাথে এসব করে। বলি তোর লজ্জা করে না?

কারো খোঁচা মারা কথা শুনে চোখ মেলে তাকিয়ে আলিশাকে দেখতে পায় আরোহী। ভাবনার মধ্যে যদিও সব কথা স্পষ্ট শুনতে পায়নি তবে লজ্জা করার কথাটা ঠিকই তার কানে এসেছে।

ভ্রুকুঁচকে আলিশার কথার মানে বুঝার চেষ্টা করে আরোহী। কিন্তু আলিশা ততোক্ষণে আরোহীর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।

–‘কিসের লজ্জা করার কথা বলছিস তুই আমায়?’

শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করে আরোহী।

এতে যেনো আলিশা আরও তেঁতে উঠে।

–‘ছি ছি তুই এখন ও বুঝতে পারছিস না বুঝি,বুঝবি কেমনে তুই তো বরের সাথে কখন রোমান্স করা যায় সেটাই বুঝবি!’

আলিশার কথায় আরোহীর গাঁ জ্বলে গেলেও নিজেকে সামলিয়ে নেয়।

–‘৫০ বছর আগের গ্রামের শাশুড়ীদের মতো না করে যা বলার সরাসরি বল!’

–‘এসব কি, ভেঁজা চুল এসবের মানে বুঝিনা আমি মনে করেছিস?’

আরোহীর চুলে সামান্য টান দিয়ে বলে আলিশা।

–‘না বুঝার কি আছে, গোসল করলে মানুষের চুল ভেজায় তো থাকবে এমন ভাবে বলছিস মনে হয় তুই কেবল পৃথিবীতে ল্যান্ড করলি!’

আরোহীর কাঠকাঠ জবাবে আলিশা আরোহীর হাত পেছন দিক দিয়ে মুচড়ে ধরে বলে,,

–‘আমায় শেখাতে আসবি না একদম,এতো শরীরের জ্বালা তোর আসেই শুরু করে দিয়েছিস।’ এতো তাড়াতাড়ি আদরকে ভুলে আঁধারকে আপন করে নিলি বাহ..

আলিশা আর কিছু বলার আগেই ঝট করে আলিশার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়! আলিশাকে আরোহী।

কিন্তু আরোহীর রাগ মনে হয় কমে না তাই কোন কিছু না ভেবেই আলিশাকে ঠাঁটিয়ে একটা চড় লাগিয়ে দেয়। এতেও যেনো আরোহীর রাগ কমে না, আলিশার চুলের পেছনে হাত ঢুকিয়ে চেপে ধরে বলে,,

–‘তোর মতো নোংরা মনে করবি না আমাকে যে একবার এর সাথে তো একবার ওর সাথে।’ আর কি যেনো বললি লজ্জা, লজ্জা তো তোর করা উচিত! এতো বড় বড় কথা তোর মুখ দিয়ে বের হয় কিভাবে বল তো, যেখানে বিয়ের আগেই পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘুরছিস! আর কি যেনো বললি রোমান্সের কথা, আমার বর আমি রোমান্স করি বা যা ইচ্ছে করও তুই বলার কে রে,তোর পারমিশন নিয়ে আমায় রোমান্স করতে হবে।

আরোহীর কথাগুলো শুনে আলিশা চিৎকার করে বলে উঠে,,

–‘আরো তুই ভুল করছিস, তোর এতো বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস আবার আমার চুল টেনে ধরেছিস! বড় বোন হই আমি তোর, এর জন্য অনেক সাফার করতে হবে তোকে অনেক..

আলিশার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরোহী তার থেকে দ্বিগুন চেঁচিয়ে বলে,,

–‘বোন কিসের বোন তুই আমার,তোর মতো নোংরা মন মানুষিকতা মানুষ কখন ও আমার বোন হতে পারে না, আর কি বললি সাফার করতে হবে,,হাহ্ সাফার কাকে করতে হয় সেটা তো তোকে বুঝাবো আমি।’ ভেবেছিলাম তোকে আর কিছু বলবো না খারাপ ব্যাবহার ও করবো না বাট তুই সেটার যোগ্য না।আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবি তুই, নাহলে তোকে খুন করতে ও আমার হাত কাঁপবে না।আর রইলো বড় এর কথা, মনে রাখিস আমি তোর বড় জ্বা হই।

কথাগুলো বলেই ধাক্কা দিয়ে আলিশাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আলিশা রাগে ক্রোধে ফেঁটে পড়ছে। আরোহীকে শিক্ষা দেওয়া যায় কিভাবে সেসব ভাবতে ভাবতেই চলে যায় আলিশা।

ততোক্ষণে আড়াল থেকে দুজন মানুষও বের হয়ে আসে, তারা আলিশা আশা থেকেই সবটা দেখছিলো কিন্তু আরোহী কি করে দেখার জন্য এগিয়ে যায় নি।

–‘তবে যাই বলো আরোহী মামনীকে আমরা যততা শান্ত ও সহজ সরল ভাবি আসলে সে ততোটাও শান্ত নয় কিন্তু। ‘

তারেক চৌধুরীর কথায় আঁকলিমা চৌধুরী বলেন,,

–‘এইরকম একটা মেয়েরই দরকার আমার, এখন আমরা মা মেয়ে মিলে ওই আলিশাকে শিক্ষা দিব বুঝলে?’ তুমি আজই আমজাদ ভাইজানকে ফোন করে বলো যে আরোহী মামনি কয়েকদিন থাকবে এই বাড়িতে?

–‘আমজাদ কি রাজি হবে বলো তো, সে তো ১ বছর আগে আরোহীকে এ বাড়ি আনতেই বারন করেছিলো।’

আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় বলেন তারেক চৌধুরী।
আঁকলিমা চৌধুরী কিছু একটা ভাবেন তারপর তারেক চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলেন,,

–‘রাজি হবেন চলো তো তুমি ফোন করো আমি কথা বলবো ওনার সাথে।’

–‘আচ্ছা চলো!’

বলেই আঁকলিমা চৌধুরীকে নিয়ে যান তারেক চৌধুরী।

আর এদিকে আরোহী দরজা বন্ধ করে অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করে।

যতোই হোক আলিশা তার বড় বোন, নিজের বড় বোনের থেকে এসব কিছু কে আশা করে, কিন্তু আরোহীর ভাগ্যে হয়তো এসব ছাড়া আর কিছুই নেই। ভেবেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে আরোহী।

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৯

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৯

🍁

ভার্সিটি থেকে একটু সামনে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে আরোহী, কিন্তু আজ মনে হয় সব রিকশার মালিকেরা পন করেছে কিছুতেই আরোহীর সামনে আসবে না। এরইমধ্যে একটা গাড়ি আরোহীর থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে যায়।আরোহী এক পলক দেখে আবার এদিক ওদিক রিকশা খোঁজায় মন দেয়।গাড়ি থেকে একটি ভদ্রলোক আরোহীর সামনে এসে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বলে,,,

–‘মামনী, রিকশা পাচ্ছো না বুঝি?’

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় আরোহী৷ তার সামনে স্বয়ং তারেক চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।

–‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল, আপনি এখানে এভাবে?’

অবাক হলেও ভদ্রতা বজায় রেখে কথাগুলো বলে উঠে আরোহী।

–‘এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তোমায় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলাম গাড়ি আসেনি হয়তো, তাই নিতে আসলাম মা!’

ভদ্রলোকের কথাশুনে সামান্য হাসলো আরোহী, কে বলবে এই লোকটা তার শশুর হয়। হেঁসেই বলে উঠে আরোহী,,

–‘আসলে আজকে একটু তাড়াতাড়ি ভার্সিটি থেকে বের হয়েছি তো তাই, আপনাকে এই রোদের মধ্যে কে আসতে বললো আঙ্কেল?’ শরীর খারাপ করবে তো!

–‘আমি একটু দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে আর তুমি থাকলে করবে না! ‘

বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠেন ভদ্রলোক। আরোহী শুধু তাকিয়ে দেখে, লোকটাকে দেখে কে বলবে যে এইলোকটার এমন ধামড়া দুটো ছেলে আছে।

–‘তা মামনী, এই বাবাটার গাড়িতে যেতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো আবার?’ দেখো রোদের মধ্যে তোমার চোখ মুখ অনেকটা শুকিয়ে গেছে।

ভদ্রলোকের কথা শুনে আরোহীর ফিক করে হেসে মাথা নাড়ায়, যার অর্থ না আমার কোনো সমস্যা নেই।

–‘তাহলে যাওয়া যাক,,’

বলেই ভদ্রলোক আরোহীর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে গল্প জুড়ে দেন। আরোহী ও হেসে হেসে কথা বলে, গাড়ির সামনে এসে তারেক চৌধুরী নিজেই দরজাটি খুলে দেন।আরোহী ও মুচকি হেসে উঠে বসে, তার পাশেই তারেক চৌধুরী ও উঠে বসে। মূহুর্তেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

দূর থেকে সবটা লক্ষ করছিলো আঁধার, আরোহী ও তার বাবার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি সে কিছুতেই মিস করতে চায় নি।

তাই তো যখনই তার বাবার গাড়িটি থেমে যায় তখন থেকেই সে সবটা লক্ষ করা শুরু করে, সে ও আরোহীর পেছন পেছন এসেছিলো ঠিকই কিন্তু আরোহী যেনো দেখতে না পায় তাই দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

আঁধারের ঠোঁটের কোণে ও আজকে তৃপ্তির হাসি, সে ভেবেছিলো হয়তো আরোহী এতো সহজে সবটা মেনে নিতে পারবে না সবার সাথে আলিশার মতোই খারাপ ব্যাবহার করবে কিন্তু তার বাবার সাথে এতো আন্তরিকতার সাথে কথা বলতে দেখে অনেকটা হালকা মনে হয় আজকে আঁধারের।

সেদিন আরোহীকে বিয়ে করার কথাটা তার বাবা নিজেই তাকে বলেছিলেন। আঁধারের রাজি হওয়ার পেছনে অবশ্য অন্য কারণ ও আছে যেটা আঁধার নিজের মধ্যেই রেখেছে। কিন্তু এর পরিনতি যে কি হতে চলেছে সেটা আঁধারের ও অজানা।

আসলেই কি আঁধার আরোহীর সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চায়, স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো হতে চায়। কথাটা ভেবেই আঁধার রহস্যময় একটা হাসি দেয়।

আর কিছু না ভেবে আঁধার ও তার বাসার দিকে রওনা হয়।

গাড়িতে তারেক চৌধুরী ও আরোহী গল্প জুড়ে দিয়েছে। তারেক চৌধুরী আরোহীকে তার ব্যাবসা, অফিস এসব নিয়ে বলছে আরোহী নিজেও আগ্রহের সাথে সবটা কথাই চুপচাপ শুনছে। মাঝে মাঝে আবার প্রশ্ন করছে,আবার মাঝে মাঝে হেসে উঠছে দুজনে একত্রে। ড্রাইভার সবুজ আর চোখে তাদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে৷ তার মনে হচ্ছে তারা হয়তো বাবা মেয়ে।সে নতুন তাই কাউকেই তেমন চেনে না।

–‘মামনী, আমি কি তোমার খুব পর বলো তো?’

তারেক চৌধুরীর কথা শুনে আরোহী ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

–‘আরে না- না আঙ্কেল তা কেনো হবে!’

আমতা আমতা করে বলে আরোহী।

–‘তাহলে আমায় এখন ও আঙ্কেল বলে ডাকছো কেনো বলো তো?’

–‘তাহলে কি বলে ডাকবো আঙ্কেল?’

আরোহীর অবুঝ প্রশ্নে তারেক চৌধুরী মুচকি হাসে, তার মতে মেয়েটা এখন ও বাচ্চা। তার বাচ্চামি এখন ও কাঁটেনি।
আরোহীর এই বাচ্চামি গুলোর জন্যই আরোহীকে তার ভিষণ ভালো লাগে, তাই তো আঁধারের জন্য আরোহীকে পছন্দ করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু আদরের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের মত বদলে ফেলেছিলেন, তবে কে জানতো তাদের বিয়েটা ভাগ্যের লিখন হয়ে যাবে।

তিনি হাজার বার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন, যে শেষ অব্দি আল্লাহ না চাইলে কখন ও আঁধার আর আরোহীর বিয়েটা হতো না।এই একটি মাত্র মেয়ে যাকে তার খুব আপন আপন লাগে, কেনো লাগে তিনি সেটা আজও বুঝতে পারেননি৷

এরইমধ্যে আরোহীর বাড়ির বিপরীত দিকে গাড়ি যেতেই আরোহী চেঁচিয়ে উঠে,,,

–‘আঙ্কেল, এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয়, এটা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন উনি?’

–‘আবার আঙ্কেল?’

তারেক চৌধুরীর মলিন কন্ঠ শুনে আরোহী বুঝতে পারে আবার সে ভূল করে ফেলেছে।

–‘ছরি বাবা!’

আরোহীর কথা শুনেই হেসে জবাব দেন তারেক চৌধুরী,,,

–‘আজকে তোর এই বাবার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি মা, তুই কি খুব রাগ করবি যদি নিয়ে যাই তো?’

–‘আরে না না বাবা কি বলছেন তবে আমার বাবাকে বলা হয়নি তো?’

–‘তোর বাবাকে আমি বলে দিবো মা, তুই আমায় আব্বু বলে ডাকিস আঁধারের মতোই৷’

–‘আচ্ছা আব্বু।’

আরোহীর কথা শুনে সুন্দর করে হাসেন ভদ্রলোক। আরোহী আর কি বলবে ভেবে না পেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।

কিছুক্ষণ পরেই তারা চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে৷ কলিং বেল বাজিয়ে তারেক চৌধুরী দাঁড়িয়ে থাকে আর পাশেই আরোহী মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।

এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরী মুচকি হেসে দরজা খুলে দেন। তিনি পিছু ফিরে আবার চলে যেতে ধরলেই কিছু একটা মনে হতেই আবার পিছনে ফিরে আরোহীকে দেখেই অবাক হয়ে যান।

–‘কি হলো আঁকলি এমটা হয়তো কল্পনাতেও আশা করোনি বুঝি?’

স্বামীর ঠাট্টার স্বর শুনে হেসে বলে উঠেন তিনি,,

–‘আশা তো করিনি তবে আপনি কাজটা ঠিক করেন নি,আগে বললে আমি আমার মায়ের জন্য কতো কি রান্না করতাম।’

বলেই আরোহীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন তিনি।আরোহী তার শাশুড়ীর ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়ে যায়।

–‘চলো মা, তোমার এই ছোট রাজ্যে তোমায় স্বাগতম।’

বলেই আরোহীকে ভেতরে নিয়ে যান।আরোহী লাজুক হেসে চুপচাপ থাকে।

–‘তা মামনী ভালো আছো তুমি?’ এতোদিন পরে বুঝি এই মায়ের কথা মনে পড়লো?

–‘আরে ও তো ভূলেই গেছে আমাদের, দেখো না একে বারে তুলে নিয়ে এসেছি।’ এবার ওর বাবা কয়েকঘন্টা খুঁজে হয়রান হোক।

আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় হেসে বলেন তারেক চৌধুরী।

–‘হ্যা তুমি ঠিক কাজ করেছ একদম, ভাইজানের বুঝা উচিত মেয়েটা একা তার নয় আমাদের ও, উনি এটা মোটেও ঠিক করেননি আমাদের সাথে!’

–‘হয়েছে বাকি কথা পড়ে হবে, তুমি আগে মেয়েটাকে ফ্রেস হতে দাও!’ তারপর বাকি কথা হবে।

–‘হ্যা তাই তো আমি তো ভূলেই গেছিলাম, নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে তোমার তাই না মা?’

–‘আরে না না মা ব্যস্ত হবেন না আমার খিদে পায় নি।’

–‘বাহ্, আমি আব্বু ডাক শুনার জন্য কতোবার বললাম তার পর বললে আর এসেই ওকে মা বলে ডাকলে? ‘

আরোহীর কথায় মন খারাপ করে বলে উঠলো তারেক চৌধুরী।

আঁকলিমা চৌধুরী ও আরোহী একত্রে হেসে ফেললো, তারেক চৌধুরী ও হেসে হেসে বললেন,,

–‘দেখলে আঁকলি, বউমা কিন্তু আমি খাঁটি পছন্দ করেছি।’

আরোহী অবাক হয়ে তারেক চৌধুরীর দিকে তাকায় আর ভাবে,কি বলছেন উনি? উনি তো আমায় পছন্দ করেনি, আমায় তো আদরের পছন্দে বউ করতে চেয়েছিলেন। এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরীর গলার আওয়াজ পায় আরোহী।

–‘হুম ঠিক বলেছেন তবে আরোহী মা আমার বউ মা না মেয়ে।’ চল মা তোকে ফ্রেস হতে নিয়ে যাই। আমি যদি তোকে তুই করে বলি তুই কি মন খারাপ করবি মা?

–‘আরে না না মা, মায়েরা সন্তানদের যেভাবে ইচ্ছে ডাকতে পারে,তবে আমি আপনাকে আম্মু বলে ডাকি?’

আরোহীর কথায় মুগ্ধ হন আঁকলিমা চৌধুরী। হেসে বলেন,,

–‘ঠিক আছে, তবে তুমি করে ডাকতে হবে বুঝলি।’

আরোহী আঁকলিমা চৌধুরীর কথা শুনে সামান্য হাসে। একটা বড় ঘরের কাছে নিয়ে এসে উঁচু গলায় বলেন,,,

–‘আঁধার, এই আঁধার?’

এরইমধ্যে আঁধার বের হয়ে বলে,,

–‘আম্মু কি হয়েছে?’

বলেই তার মায়ের পাশে আরোহীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। পরক্ষনেই মনে পড়ে হয়তো তার বাবা নিয়ে এসেছে।

–‘আরোহী মাকে রুমে নিয়ে যা, ফ্রেস হবে ও।’

আঁধার দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে আরোহীকে যাওয়ার জায়গা করে দেয়।

–‘যা মা, ফ্রেস হয়ে আঁধারকে নিয়ে নিচে আয় আমি খাবার বাড়ছি কেমন!’

আরোহীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁকলিমা চৌধুরী বলেন।
আরোহী মাথা নাড়ায়, যার অর্থ ঠিক আছে। মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী হেসে নিচে চলে যান।

আঁধার আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে আর আরোহী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে হেসে ফেলে আঁধার, কিন্তু আরোহী তার দিকে তাকায় না।

–‘চলুন মিসেস চৌধুরী আপনার ঘরের প্রতিটি ইট, পাথর ও এতো দিন আপনাকে মিস করেছিলো,আজকে তাদের আপনার দর্ষণ দিয়ে ধন্য করুন!’

আঁধারের কথার মানে বুঝতে পেরে আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যায়,কিন্তু মাথা উঁচু করে আঁধারের দিকে তাকায় না।

–‘বাহ রে এতো লজ্জা আপনার ইসস ভাবছি যেই মেয়ে ভার্সিটির ভরা মাঠে আমায় চুমু খেতে পারে সে কি না সামান্য ঘরে ঢুকতেই এতো লজ্জা পাচ্ছে! ‘

আঁধারের কথায় আরোহী লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।আঁধার শুরু থেকেই সবটা লক্ষ করছিলো, এবার আর হাসি থামাতে পারে না উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আরোহী বেচারি পারে না তো মাটি ফাঁক করে নিচে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে।

আঁধারের হাসির আওয়াজ এতোটাই জোড়ে ছিলো যে নিচ থেকে তার বাবা মা ও শুনতে পায়।

আঁকলিমা চৌধুরীর কলিজাটা মনে হয় ঠান্ডা হয়ে যায়, ঠিক কতোদিন পড়ে তার ছেলেটার প্রাণ খোলা হাসির আওয়াজ শুনছে ভাবতেই ভালো লাগায় তার মনটা ভরে যায়।

তারেক চৌধুরী এতোক্ষণ স্ত্রীর মুখের দিকে এই হাসিটাই দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি এবার বললেন,,

–‘দেখলে তো আঁকলি, মেয়েটা এসেই আমাদের ছেলেটাকে আবার আগের মতো করে দিলো। ‘

আঁকলিমা চৌধুরী মুখে কিছু না বললেও চোখ দিয়ে স্বামীকে ধন্যবাদ জানান।

আদর ও আলিশা আঁধারের হাসি শুনে এগিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আরোহীকে তারা আশা করেনি।

ততোক্ষণে আঁধার হাসি থামিয়ে আরোহীর অনেকটা কাছে চলে গেছে। আরোহী লজ্জায় আরও খানিকটা মাথা নিচু করে নিয়েছে। আঁধার আর কোন কিছু না ভেবেই ঝট করে আরোহীকে কোলে তুলে নেয়।

ঘটনাটা এতোই দ্রুত ঘটে যে আরোহী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। আর আলিশা ও আদর হা করে তাকায়,মূহুর্তেই আলিশার চোখ মুখ রাগে লাল হয় যায়।আর আদরের চোখ দিয়ে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি বের হয়,বার বার মনে হয় আজকে আঁধারের জায়গায় সে হতে পারতো কিন্তু কিছু ভুলের কারণে আরোহীকে হারাতে হলো তার। আলিশা রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ঘরে চলে যায়। আর আদর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে চলে যায়।

–‘আপনি আমায় কোলে নিলেন কেনো?’ আমি একা যেতে পারবো তো!’

আরোহীর কথা শুনে আঁধার গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,

–‘অনেকদিন থেকেই ভাবছি বুঝলে অনেক তো হলো এবার অন্তত্য বাসরটা সেরে ফেলা উচিত কিন্তু বউ ছিলো না তাই কথাটা ভুলেই গেছিলাম, আজকে বউ যেহেতু চলে এসেছে নো ছাড়াছাড়ি।’

বলেই চোখ টিপ দেয় আরোহীকে।

–‘অসভ্য! ‘

আরোহী চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,

–‘কিছুই করলাম না এখনো তাতেই অসভ্য বলছো?’ দিস ইজ নট ডান বউ,তাহলে অসভ্যতা করতেই হয় কি বলো?’

আরোহীর কথা শুনে হাসি হাসি ভাব করে বলে আঁধার।

এতে যেনো আরোহী চোখ মুখ আরও খানিকটা কুঁচকে নেয়।

আঁধার অনেক কষ্ট হাসি কন্ট্রোল করে বলে,,

–‘আদর চাই বললেই তো হয় বউ এভাবে মুখ বাকিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছো বলো তো?’

বলেই আরোহীকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় আঁধার।

আরোহীকে আঁধারকে পাত্তা না দিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে ভেংচি কেঁটে ধারাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আঁধার বেচারা হাবলার মতো তাকিয়ে থাকলেও ফিঁক করে হেসে দেয়।

–‘যতটা বোকা ভাবতাম ততোটা বোকা নয় তাহলে মেয়েটি, আমার ফাজলামোটা খুব সহজে ধরে নিয়েছে।’

নিজেই নিজেকে কথাটা বলে আঁধার। কি আর করার বেচারার বউ তো ওয়াশরুমে তাই বেলকনিতে চলে যায় সে।

–‘তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো আমার?’

আদর নিচে যেতেই তারেক চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে উক্ত কথাটি বলে উঠেন।

আদর একপলক তার বাবার দিকে তাকায়, সে ভালো করেই বুঝতে পারছে কি বলতে চায় তার বাবা।

–‘আরোহী যেহেতু এখন তোমার বড় ভাইয়ের বউ আর তুমি যেহেতু নিজেও বিবাহিত, তাই আগের সবকিছু ভুলে যাও।’ আরোহীকে নিজের বড় ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে সন্মান করবে।
নিজের বউকে মেনে নেও সবকিছু স্বাভাবিক করো।বাবা হিসেবে এইটা আমার অনুরোধ তোমার কাছে।

তারেক চৌধুরীর কথাগুলো আদরের কাছে বিষাক্ত লাগছিল,কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার কিন্তু কিছু করার নেই তার নিজের কারণেই আজকে তাকে এতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। আরোহীকে অন্য কারো সাথে দেখতো হচ্ছে। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করেই বলে উঠে,,

–‘আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো আব্বু, কিন্তু আমায় সময় দিতে হবে। ‘

তারেক চৌধুরী আর কিছু বললেন না।

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরোহীর অবস্থা দেখে আঁধার ভ্রুকুঁচকে বলে,,

–‘ফ্রেস হতে গেছিলে নাকি গোসল করতে?’ এভাবে জামা কাপড় ভিজিয়ে রেখেছো কেনো?

–‘আসলে ভুলে সাওয়ার অন হয়ে গেছিলো।’

আমতা আমতা করো বলে আরোহী।

আঁধার আর কিছু না বলে আলমারির কাছে চলে যায়,আলমারি খুলেই একটা জামা বের করে আরোহীর হাতে দেয়। দিয়ে বলে,,

–‘চেঞ্জ করে আস যাও?’

জামাটা হাতে নিয়ে আরোহী ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে থাকে আঁধারের দিকে। আঁধার নিজেও ভ্রুকুঁচকে তাকায় আরোহীর দিকে,ইশারায় জানতে চায় কি?

–‘আপনার আলমারি তে মেয়ে মানুষের এতোগুলো জামাকাপড় কেনো?’

আরোহীর প্রশ্ন শুনে আঁধার বিরক্ত হয়ে বলে,,

–‘আগে আর একটা বউ ছিল যে আমার তাই!’

–‘জামাগুলো কি আলিশা আপুর জন্য কিনেছিলেন? ‘

আরোহীর প্রশ্নে আঁধারের চোঁয়াল শক্ত হয়ে যায়।এক টানে আরোহীর হাত থেকে জামাটা কেড়ে নিয়ে বলে,,

–‘তোকে জামা দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে, তোর জামা পরতে হবে না তুই এভাবেই দাঁড়িয়ে থাক।’

বলেই জামাটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে হনহন করে বেলকনিতে চলে যায়। আরোহী বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।

–‘আরে ভাই তোর কথায় কথায় এতো রাগ আসে কোথা থেকে বুঝি না, আমি তো জাস্ট মনের মধ্যে থাকা প্রশ্নটাই কারলাম। ‘

নিজেই নিজেকে বলে বিছানা থেকে জামাটা নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায় আরোহী।

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।)

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৮

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৮

🍁

আরোহী ও রাহি বসে আছে ভার্সিটির গাছ তলায়, দু’জনের মুখেই বিরাজ করছে থমথমে গম্ভীরতা। একে একে সব ঘটনা রাহিকে বিস্তারিত খুলে বলার পর থেকেই রাহির রিয়াকশন এমন হয়ে আছে৷

আর আরোহীর সাথে আদর ও আলিশার করা প্রতারণার কথা মনে পড়ার কারণে তার মুখের রিয়াকশন এমন হয়ে আছে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে আজকে আরোহীর, যদি তার বাবাকে শুরু থেকেই বারণ করে দিতো বিয়ের ব্যাপারে তাহলে এতো কিছু হয়তো দেখতে হতো না তাকে!

আবার ভাবছে সেদিন যদি বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসতো তাহলে না ওই ছাউনির নিচে যেতে হতো আর না আদরের সাথে দেখা হতো!তবে আল্লাহর কাছে হাজারবার শুকরিয়া করে আরোহী যে বিয়ের আগেই সবকিছু তার সামনে এসেছে নাহলে যদি বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে কি হতো আরোহীর!

–‘দোস্ত মন খারাপ করিস না যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে নাহলে তুই আঁধার ভাইয়ার মতো কাউকে পেতিস না!’ ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ রে, সবাই ওনাকে কত সন্মান করে দেখিস না?

আরোহীর ভাবনার মধ্যেই রাহির কথা গুলো শুনতে পায় আরোহী। চোখ তুলে রাহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আরোহী।

–‘আমার মনে হয় ভাইয়ার সাথে তোর সম্পর্কটা এবার স্বাভাবিক করা উচিত,ওই আদর আর আলিশা তো ঠিকই সুখে সংসার করছে আর তোরা এখন অব্দি প্রেমেই করতে পারলি না!’

রাহির কথাটা শুনে আরোহী বলে,,

–‘হুম, বাট যার মনে অন্যের বসবাস তার সাথে কিভাবে সবকিছু স্বাভাবিক করি বল?’

–‘মানে, কি বলছিস তুই আঁধার ভাইয়ার ও গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?’

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রাহি।

তারপর আরোহী বিয়ের পরের দিন থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বলে রাহিকে। সাথে আলিশার করা খারাপ ব্যাবহার থেকে আঁধার ব্লক করে দেওয়া পর্যন্ত সবকিছু বলে।

আরোহী সব কথা শুনে রাহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে,,,

–‘দেখলি তুই ও আমার মতোই ভাবছিস আমি জানি,এখন বল আমি কি ভূল করেছি? ‘

রাহির পাশে আর একটু চেপে বসে বলে আরোহী,, এরই মধ্যে দুম করে আরোহীর পিঠে কিল বসিয়ে দেয় রাহি।আরোহী চোখ মুখ শক্ত করে রাহির দিকে কটমট চাহনিতে তাকায়।

কিন্তু তার কটমট চাহনিকে পাত্তা দেয় না রাহি,

–‘হায় হায় আরো,হায় হায় কি করলি এইসব তুই,কি করলি তুই এইটা হায় হায়?’

রাহির হায় হুতাশ করা দেখেই আরোহী অবাক হয়,,

–‘কি হলো তোর বল তো, এমন হায় হুতাশ করছিস কেনো?’

আরোহীর কথা শুনে রাহি হায় হুতাশ করা ছেড়ে দিয়ে আরোহীর দিকে মুখ করে বসে।

–‘তুই আঁধার ভাইয়ার সাথে এসব ঠিক করিস নি আরো, এমদম ঠিক করিস নি! ‘ আঁধার ভাইয়া কি করে এসব সহ্য করে উফফ।

প্রথমের কথাটা শান্ত ভাবে বললেও শেষের কথাটা রাগ নিয়েই বলে রাহি।

আরোহী ভ্রুকুচকে তাকায়, এতে যেনো রাহি বেশি করে ফুসে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে আরোহীর সাথে রাগারাগি না করে শান্ত ভাবে বুঝাতে হবে।

–‘আরো, আমি যদি তোকে শান্ত ভাবে কিছু কথা বলি তুই কি আমার কথা শুনবি?’ দেখ কোনো প্রশ্ন করতে পারবি না, তুই না চাইলেও তোকে শুইতেই হবে।

রাহির জেঁদি স্বরের কথাগুলো শুনে আরোহী মাথা নাড়ায়, যার অর্থ বল আমি শুনবো।

–‘তোর সাথে বিয়ের পর আঁধার ভাইয়া বিনা কারণে কখনো রাগারাগি করেছে, তোর খোঁচা মারা কথাগুলো বাদে?’

–‘কি বললি আম. আমি খোঁচা মারা কথা বলি! ‘

রাহির কথা শুনে আরোহী যেনো ফুসে উঠে,,

–‘আরে থাম মেরি মা,বললাম না প্রশ্ন করতে পারবি না? ‘

মন খারাপ করে আরোহী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,,

–‘না করেনি,,, ‘

–‘তুই কথাগুলো বলার পরই কিন্তু রাগ করে, রাইট?’

–‘হুম রাইট,,’

–‘আঁধার ভাইয়া যে শুরু থেকেই তোর সাথে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে সেটা কি তোর এই গোবর মাথায় ঢুকছে?’

দু’দিকে মাথা নাড়ে আরোহী যার অর্থ না। রাহি মনে হয় আগে থেকেই জানতো এমটা হবে তাই ভাবলেশহীন ভাবে নেক্সট প্রশ্ন করে।

–‘আঁধার ভাইয়া কিন্তু বলে নি কখন ও সে আলিশা আপুকে ভালোবাসে তোকে মেনে নিতে পারবে না, বা তোকে কখন ও আদর ভাইয়ার নিয়ে কিছু বলেনি।’ ইভেন, বিয়ের দিন থেকেই আলিশা আপু ও আদর ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তোকে একা হাতে সামলিয়েছে,এমন কি তোর জন্য আলিশা আপুর গায়ে হাত অব্দি তুলেছে।বুঝতে পারছিস এসবের মানে কি দাড়ায়?

রাহির কথাগুলো মন দিয়ে শুনে আরোহী ভাবে আসলেই তো,সে তো এতো কিছু কখন ও ভাবেইনি।আঁধার শুরু থেকেই সবটা একা সামলিয়েছে, আমি কি ঠিক করলাম এসব!

–‘কি রে?’

রাহির ডাকে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে আরোহী। রাহির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,,,

–‘বাট সেদিন আপুর ঘর থেকে বের হতে দেখলাম যে?’

–‘গাধি হয়তো বুঝাতে গেছিলো কিছু, বা’লডা তুই কি এখন ও ছোট কিছুই বুঝোস না!’ আঁধার ভাইয়া সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চায় তোকে তো বলেছে কিন্তু তুই কি করলি দাজ্জাল বউয়ের মতো বললি,,, হবু বউয়ের প্রতি দরদ না দেখায়?’ ছেহ্ আরো তোর থেকে আমি এটা আশা করি নি! যেটা তোর সেটা তোরই, দরকার পড়লে লড়াই কর তবুও কাউকে দান করিস না? ভাই কি ভাবে পারিস তোরা এতো মহান হতে এয়ার, তোদের কথাবার্তা শুনলেই আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। বাংলা সিনেমার সাবানার মতো বলিস,, ওগো আপনার মনের মাঝে যে আছে তাকে নিয়ে সুখে থাকিয়েন সেটা হোক না কেনো আমার চরিত্রহীন বোন!!আমিও তো একসময় আপনার চরিত্রহীন ভাইয়ের হবু বউ ছিলাম।

শুরুর কথাগুলো সুন্দর ভাবে বললেও শেষের কথাগুলো ব্যাঙ্গ করে বলেই উচ্চস্বরে হেসে দেয়।

রাহির শেষের কথা শুনে আরোহী মুখ গোমড়া করেই হেসে দেয়৷

রাহির মূলত হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আর সেই হাসির দিকেই তাকিয়ে আছে শিহাব হা করে।

–‘দোস্ত মশা ঢুকে যাবে তো,এতো বড় হা করে কি মশার বংশ সহ মুখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকতে চাস নাকি? ‘

হাত দিয়ে শিহাবের মুখের হা বন্ধ করে বলে উঠে রাতুল।

কিন্তু শিহাবকে মনে হয় না অন্য কারো কথা তার কানে গেছে, সে আবার বড় একটা হা করে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাতুল এবার সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।রাতুলের দৃষ্টির মানে সবাই বুঝতে পারে,,, বেচারা রাতুল চোখের সামনে তারই বন্ধু একটা মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, সেটা সে কোনো মতেই মানতে পারছে না! তার মতে ছেলেরা কেনো মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে, মেয়েদের উচিত ছেলেদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা।

–‘ভাই তুই আমার মান ইজ্জত খাস নে রে, তোর জন্য সবাই যদি আমায় বলে আমার বন্ধুই তো মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে!’

কিন্তু এতে যেনো শিহাবের কোনো হেলদোল নেই,,

–‘শালা নিমকহারাম, ওই ব্যাটা তুই মাইয়া গো লগে ওমনে তাকাইয়া থাকবি কিল্লাই?’ মাইয়া মানুষ তোর দিকে তাকাইয়া থাকবো তুই থাকবি কেন বুঝা আমারে?

রাতুল ধাক্কা দিয়ে বলে শিহাবকে।

শিহাব হকচকিয়ে যায়,,,

বিরক্ত হয়ে বলে,,

–‘উফফ এতো সুন্দরী একটা মেয়ের হাসি তোর জন্য ভালো করে দেখতে পারলাম না সর, সর তোরে এই মূহুর্তে থা’পড়াইতে মন চাচ্ছে শালা।’

সোহেল দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় শিহাবের পিঠে।

–‘কি মামা, তলে তলে এতো কিছু! ‘ আজকেই প্রথম দেখলা আর আজকেই ফ্লাট?

সোহেলের কথায় শিহাব ঢং করে লাজুক হেসে বলে,,

–‘লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইড, ব্যাটারা ভাগ, আমার হাসিটা কিউট লেগেছে তাই বলে প্রেমে ট্রেমে পরিনি শালারা সর সামনে থেকে।’

শেষের কথাটা ধমক দিয়েই বলে শিহাব।রাতুল আর সোহেল হা করে এবার শিহাবের দিকে তাকায়।

–‘শালা! একটা মেয়ের দিকে তুই হা করে তাকিয়ে থাকবি আর আমরা বললেই বলবি কিছুই না, তলে তলে জ্বল খাও মামা আর আমরা বললেই বলো মিষ্টি না লবণ টেস্ট করে দেখছিলাম!’

আবার শিহাবের পিঠে দুম করে আর একটা কিল বসিয়ে দিয়ে উক্ত কথাগুলো বলে আঁধার।

–‘একদম ঠিক বলছিস আঁধার তুই, এ ব্যাটা দেখছি একদম সুবিধার নয়! ‘

সোহেল কথাগুলো বলেই আঁধারকে চোখ মারে।

–‘শালা তুই চোখ দিয়েই একটা মেয়েকে এতোক্ষণ ইভটিজিং করলি আর আমরা বললেই দোষ! ‘ কবে না জানি অসুবিধাজনক কিছু ঘটিয়ে আসে বলিস দোস্ত ওইটা কিছুই না।’

সোহেলর কথায় সামান্য হেসে কথাগুলো বলে আঁধার।

–‘উফফ তোরা মাইয়া মানুষকে নিয়ে এতো গবেষণা করছিস কেনো বল তো, মাইয়া মানুষ আমাদের নিয়ে গবেষণা করবে। তোদের কেনো এতো গবেষণা করতে হবে বল তো।’

রাতুলের কথায় সবাই নিজের কপাল চাপড়ায়,

–‘তুই ব্যাটা চুপ থাক, তোরে তো মাঝে মাঝে আমার ৩য় লিঙ্গের মানুষ মনে হয়। ‘

শিহাবের কথায় রাতুল আগুন চোখে তাকায় তাদের দিকে।

–‘সোহেল চেক করে দেখ তো রাতুল কি আসলেই ৩য় লিঙ্গের নাকি?’

আঁধারের কথায় সবাই আর এক দফা হাসাহাসি করে। এতে যেনো রাতুলের আগুণে ঘি ঢালার কাজ হয়ে যায়। রাতুল তেড়ে যায় আঁধারের কাছে,,

–‘আয় আজকে তোরেই দেখামু আমি কোন লিঙ্গের মানুষ।’

আঁধার ভয় পাওয়ার ভান করে বলে,,

–‘না আমি দেখবো না আমার শরম করে,,’

মূহুর্তের মধ্যেই রাতুল তাদের সাথে ছুটাছুটি শুরু করে দেয়।

আঁধার, সোহেল আর শিহাব ছুটাছুটি করতে থাকে আর তাদের পেছনে রাতুল। পুরো ভার্সিটিতে তাদের ছুটাছুটি,হাসাহাসি আর লাফালাফি চলতেই থাকে।

সকলে মুগ্ধ হয়েই দেখতে থাকে তাদের,এটা নতুন না তারা এসব দেখেই আসছে প্রতিদিন। তাই তাদের কাছে এইসব কিছুই না। মেয়েরা তো তাদের ক্রাশ তাশরিফ আঁধার চৌধুরীকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। আবার অনেকে সোহেল,শিহাব ও রাতুলের দিকেও তাকিয়ে আছে। কিন্তু রাহি ও আরোহী একপ্রকার হা করেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

–‘দোস্ত দেখ, ওরা ছোট বাচ্চার মতো ছুটাছুটি করছে?’ কতো সুন্দর ফ্রেন্ডশীপ তাদের ইসস।’

–‘হুম ঠিক বলছিস, আঁধারকে ছোট বাচ্চার চেয়ে কম লাগছে না! ‘ একদম ছোট পিচ্চি বাচ্চা মনে হচ্ছে।

আরোহীর কথায় রাহি একপলক আরোহীর দিকে তাকায়, আরোহীকে আঁধারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহি অনেক খুশি হয়ে যায়। আর মনে মনে বলে,,আরো তোদের লাভস স্টোরিটার ক্রিয়েটর আমিই হবো দেখে নিস। আঁধার ভাইয়ার প্রেমে যে তুই বাজে ভাবে ফেঁসে গেছিস সেটা তুই নিজেই জানিস না। মুচকি হেসে রাহি আবার আঁধারদের দিকে নজর দেয়।

একসময় রাতুলকে তারা তিন বন্ধু মিলে চেপে ধরে হাফাতে থাকে।

–‘একি আপনারা একসাথে সবাই জড়াজড়ি করছেন কেনো এভাবে?’

রাহির কথায় তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে রাহির দিকে তাকায়।

তারা যে ছুটাছুটি করতে গিয়ে কখন আরোহীদের পাশে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি, আরোহী এখন ও আঁধারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে! আর রাহি উৎসুক ভাবে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে হয়তো প্রশ্নের উত্তের জন্য।

আঁধার একপলক আবার আরোহীর দিকে তাকায় কিন্তু আরোহীকে একইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হেসে আরোহীর সামনে যায়। আর বাকিরা সুর টেনে বলে,,

–‘আঁধাররররররররররররর,,’

পেছনে ঘুরে আঁধার তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গায়। তিন জনেই হেসে উঠে আবার, তারা ও বুঝতে পারে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত তাই চলে আসতে নেয় কিন্তু কি মনে করে শিহাব পেছনে ঘুরে দেখে রাহি হা করে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। শিহাব এবার বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রাহির হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে যায়।

–‘আপনি এতো সুন্দর কেনো? ‘

আরোহীর হঠাৎ প্রশ্নে আঁধার ভ্রুকুচকায়।

–‘তোমার বর তো তাই, তা আমি কি শুধুই সুন্দর? ‘

এক ভ্রু উঁচু করে বলে আঁধার।

–‘না অনেক কিউট ও। ‘

–‘ শুধুই কিউট আর কি?’

ফাজলামো করে বলে আঁধার।

আরোহীর হুস আসে, একপ্রকার হকচকিয়ে যায় সে,,আমতা আমতা করে বলে,,

— ‘আমায় বাসায় যেতে হবে আমি যাই।’

আঁধার কিছু বলে না কিন্তু বাঁকা হেসে আরোহীর পালিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

শিহাব রাহির হাত ধরে টেনে আনার পরও দেখে রাহি তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সোহেল ও রাতুল ভ্রুকুচকে তাকায় রাহির দিকে।কিন্তু তাতে রাহির কোনো হেলদোল নেই, সে হা করেই তাকিয়ে আছে।

এবার বিরক্ত চোখে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে শিহাব,,,

–‘এই মেয়ে শুনতে পারছো?’

রাহি চমকে উঠে।

–‘এমন নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছো কেনো তুমি আমাদের দিকে?’

শিহাবের কথায় রাহির রাগ হয় তাকে নির্লজ্জ বললো ছেলেটি এতো সাহস তার।

–‘এই আপনার সাহস তো কম না একে তো আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন আবার উল্টো আমায়ই নির্লজ্জ বলছেন?’ নির্লজ্জ তো আপনি হু।

রাহির কথা শুনে সোহেল ও রাতুল ফিঁক করে হেসে ফেঁলে।

শিহাব কড়া চোখে তাকায় তার বন্ধুদের দিকে, তারা ততক্ষণাত মুখে হাত দেয়৷

–‘কি বললে আমি নির্লজ্জ আমি, বেয়াদব মেয়ে সিনিয়রদের সন্মান দিতে জানো না?’ এইসব করার জন্য ভার্সিটিতে আসো?

শিহাবের কাঠকাঠ গলার হুঙ্কার শুনে কেঁপে উঠে রাহি কিন্তু দমে যায় না। ভয় লুকিয়ে উপরে শক্ত করে নেয় চোখ মুখ।

–‘জানি তো ভাইয়া তবে নির্লজ্জ সিনিয়রদের সন্মান দেই না।’

বলেই চলে যায় রাহি। আর শিহাব রাগে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে।

–‘এই নেও তোমার খাবার আর খেয়ে আমায় উদ্ধার করো!’

বিছানার উপর খাবারের প্লেটটা শব্দ করে রেখেই আদরের উদ্দেশ্যে কথাটা বললো আলিশা।

–‘খাবো না নিয়ে যাও।’

আদরের কথায় আলিশার মাথায় রক্ত উঠে যায়।

–‘খেতে হবে, অনেক কষ্ট করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি আমি!’

আলিশার কথায় ভ্রুকুচকে তাকায় আদর, সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি যদিও তার বউ কিন্তু মেয়েটিকে তার একদম পছন্দ নয়। মূলত মেয়েটির অহংকারের জন্যই, মেয়েটি নিজেকে রানী ভিক্টোরিয়া মনে করে কিন্তু আরোহীর মতো অতোটা ও সুন্দরী নয়। ভেবেই হাসে আদর, কোথায় তার আরোহী আর কোথায় এই মেয়েটি।

–‘কি হলো খাও?’

আলিশার কথায় আদরের ভাবনা কেঁটে যায়।

–‘কথা বুঝো না তুমি খাবো না বলছি তো নিয়ে যাও এসব!’

আদরের চিৎকারে আলিশা আরও ফুসে উঠে,,,

–‘তোমার মাকে বলে দেও ভালো করে উনি যেনো বার বার আমায় তোমার সেবা করতে না বলেন, ডাইনি মহিলা একটা! ‘

–‘মুখ সামলে কথা বলো আলিশা, জানে মেরে দিবো আমার মায়ের নামে আর একটা বাজে কথা বললে।’ দূর হও আমার চোখের সামন থেকে এখনি।

আলিশার কথাগুলো শুনে আদরের মাথা খারাপ হয়ে যায় তাই চিৎকার করে আলিশার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে আদর।

আলিশা রেগে বেরিয়ে যায়। আদর চিৎকার করে তার মাকে ডেকে উঠে,,,

–‘মা, মা এখনি আসো আমার রুমে।’

মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী দৌড়ে ছেলের ঘরে চলে আসেন৷

–‘কি হয়েছে রে?’

–‘তুমি আলিশাকে আমার সেবা করতে বলবে না আর ওর মতো মেয়ের সেবার দরকার নেই আমার। ‘

–‘কি বলছিস তুই এসব বাবা,ও তোর বউ আর বউয়ের কর্তব্য স্বামীর সেবা করা। ‘

–‘না বলেছি তো না,,,’

–‘ঠিক আছে তোর ব্যাপার সেটা আমি আর বলবো না, তবে ওই মেয়েকে দিয়ে আমি আমার বাড়ির কাজ অবশ্যই করাবো।’

–‘তোমার যা ইচ্ছে করাও তবে আমার কোনো কাজ করাবে না। ‘

–‘ঠিক আছে। ‘

বলেই আঁকলিমা চৌধুরী আলিশার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। আর আদর ও দরজা বন্ধ করে দেয়।

–‘এই যে নবাবজাদী, শুয়ে না থেকে গিয়ে বিকেলের নাস্তা বানাতে শুরু করে দেন।’ আর হ্যা আমি মেনু বলে দিচ্ছি কি কি রান্না করতে হবে!

আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় আলিশা যেনো আরও ফুঁসে ওঠে,,

–‘আমি কি আপনাদের কাজের লোক যে আমি নাস্তা বানাতে যাবো?’ এতোগুলো সার্ভেন্ট থাকতে আমি কেনো রান্না ঘরে যাব।

–‘না না আপনি রান্না ঘরে গেলে আবার আমার একটা ছেলের জীবন নষ্ট করে আর একটার জন্য প্লান করছেন সেসব আবার কে করবে তাই না।’

ব্যাঙ্গ করে কথাগুলো বলেই আবার বলেন আঁকলিমা চৌধুরী,,,

–‘চুপচাপ রান্না ঘরে গিয়ে যা যা বলবো সব রান্না করবে, নাহলে তোমায় দিয়ে কি করে রান্না করাতে হয় সেটা এই আঁকলিমা চৌধুরী ভালো করেই জানেন। ‘

আলিশা সব কথা শুনেও না শোনার ভান করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এতে আঁকলিমা চৌধুরী ফুঁসে উঠলেও তেমন কিছু না বলেই চলে যায়। হাজার হোক তার পেটে তো তাদেরই বংশধর রয়েছে।

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৭

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৭

🍁

দুইটা ক্লাস শেষ করে আরোহীরা বসে আছে।
কিন্তু
ক্লাসে সবাই বার বার আরোহীর দিকে তাকাচ্ছে,

আবার অনেকে বলা বলি করছে মেয়েটা কি তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড নাকি! নাহলে তাশরিফ আঁধারকে যেখানে কেউ প্রোপোজ করতে পারে না, চোখ তুলে তাকাতেই পারেনা।

আর এই মেয়েটি আজকে ভরা মাঠের সবার সামনে তাকে কিস করলো!

আবার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু তাশরিফ আঁধার তাকে কিছুই বললো না, উল্টো ক্লাসে আসতে বললো এটা কিভাবে হতে পারে!

আবার অনেকে হিংসার চোখে তাকাচ্ছে বার বার আর বলা বলি করছে, নিশ্চয়ই রুপ দিয়ে ফাঁসিয়েছে তাশরিফ আঁধারকে।

আরোহীর কানেও কিছু কিছু কথা এসেছে কিন্তু সে কি বলবে নিজেই বুঝতে পারছে না।তার এখন মনে হচ্ছে সে তখন ওইটা না করলেও পারতো, তার উচিত ছিলো আঁধারকে সবটা বলে পার পেয়ে যাওয়া কিন্তু সে উল্টো ঘটনা উল্টে দিলো।

আরোহীর ভিষণ অসস্তি হচ্ছে, তাই,

দাঁত দিয়ে বার বার নখ খুঁটছে আরোহী। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে বর্তমানে সে ভার্সিটির টপ নিউজের মধ্যে আছে! এরই মধ্যে অনেকে আসে তাকে দেখেও গেছে, তার এখন মনে হচ্ছে সে যেনো আঁধারের বিয়ে করা নতুন বউ।

–‘আজব আমি কি আঁধারের বিয়ে করা নতুন বউ নাকি সবাই এভাবে দেখতে আসছে কেনো আমায়?’

–‘তুই আজকে যেটা করেছিস মনে হচ্ছে না কখন ও আজ অব্দি কেউ এমটা করতে পেরেছে, তাই সবাই এভাবে দেখে যাচ্ছে। ‘

আরোহী কথাটা ধিরে বললে ও রাহি শুনতে পায়, আর তার পর পরই উত্তর হিসেবে এই কথাটা বলে।

–‘তবে আর যাই বলিস না কেনো,আঁধার ভাইয়ার বউ হওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার!’ আমি তো ওনাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছি, আর সবার কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে উনি ভার্সিটির সবার ক্রাশ। তুই ওনাকে যে সত্যিই চুমু খেয়েছিস অনেকেই সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

আরোহীকে দাঁত দিয়ে আবার নখ খুঁটতে দেখেই কথাটি বলে উঠে রাহি। আরোহী এবার একটু সিরিয়াস হয়,,

–‘দোস্ত এদিকে কানটা নিয়ে আয় একটা কথা বলবো!’

আরোহীর সিরিয়াস মুখের কথা শুনে রাহি আরোহীর দিকে নিজের কানটা এগিয়ে দেয়।

–‘এই যে ভার্সিটির ক্রাশ আছে না মানে তাশরিফ আঁধার চৌধুরী, উনি আমার বর!’ তাই তাকে চুমু টুমু খাওয়া আমার জন্য ক,খ পড়ার সমান।

বলেই লাজুক হাসি দেয়।

–‘নাইস জোকস।’

বলপই রাহি সরে যায় কিন্তু পরক্ষণেই কথাটা ভালো করে বুঝতেই চেঁচিয়ে উঠে,,,

–‘কিহহহহহহহহহ’

আরোহী কানে হাত দেয়। আসে পাশের সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, রাহি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। পরমুহূর্তে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে এয়ার?’

–‘উফফ বা’ল ডায় আমি তোর সাথে ফাজলামো করতে যাবো কেন বল তো?’

–‘যাহ্ বিশ্বাস হয় না, নাহলে উনি তোকে প্রথমে অচেনার মতো কথা বললো কেনো?’

রাহির কথায় আরোহীর মুখটা ছোট হয়ে যায়, সেদিনের ব্যাবহারের কথা মনে পড়ে যায়৷ কিছু না বলেই চুপ করে থাকে।

–‘ধুর সর এধরণের মজা আমার সাথে আর করবি না,এখন চল খিদা পেয়েছে আগে কিছু খেয়ে আসি। ‘

রাহির কথায় মলিন মুখে আরোহী মাথা নাড়ায়।

–‘হুর মন খারাপ করিস না দোস্ত আমি তোর আর আঁধার ভাইয়ার সেটিংসটা করিয়ে দিব কেমন!’

দাঁত বের করে হেসে বলে উঠে রাহি।আরোহী বলে,,

–‘আমি অলরেডি তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর বউ বুঝলি তাই তোর আর সেটিংস করতেই হবে না।’

–‘তাই নাকি প্রমাণ কর তাহলে তুই আঁধার ভাইয়ার বউ নাহলে বিশ্বাস করবো না!’

–‘যদি পারি তখন?’

রাহির কথায় আরোহী কথাটি বলে।

–‘আমি তোকে ঢাকার বড় রেস্তোরাঁতে খাওয়াব যাহ্।’ আর তুই যদি না পারিস তখন?

একটা ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করে রাহি।

আরোহী রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,

–‘তুই যেটা বলবি সেটাই করবো যাহ্!’

রাহি লাফিয়ে উঠে বলে,,

–‘ওকে ডান তাহলে।’

আরোহী ও মাথা নাড়ায়।

এরইমধ্যে তারা দেখে আঁধার এখন ও গাছ তলায় দাড়িয়ে আছে, কিন্তু এবার তাকে ঘিরে অনেকেই দাড়িয়ে আছে।আরোহী ভাবে হয়তো বন্ধুরা নয়তো জুনিয়ররা।

তারা কেন্টিনের দিকে চলে যায় কিন্তু আরোহী বুঝতেই পারে না এক জোড়া চোখ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে তারই দিকে।

–‘কি রে আঁধার তুই ওই মেয়েটাকে এভাবে তাকিয়ে দেখছিস কেনো বল তো?’ সেই তখন থেকেই জিজ্ঞেস করছি সবাই, মেয়েটি তোর কি হয়! তুই তাকে তখন কিছু বললি না কেনো বল তো? তের যে কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই সেটা আমরা সবাই ভালো করেই জানি, সো এখন বল কাহিনি কি? নাকি ওইটায় আমাদের ফিউচার ভাবি?

এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলে থামলো সোহেল কিন্তু এতে যেনো আঁধারের হেলদোল নেই বললেই চলে।

–‘আধার তুই কি আদও আমাদের কথা বুঝতে পারছিস? ‘ সোহেলের কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেনো? কে হয় মেয়েটি তোর?

বিরক্ত হয়েই প্রশ্ন করলো নীলিমা।

–‘আমার মনে হয় আঁধার মেয়েটির প্রমে পড়েছে!’ শুধুই পড়ে নি একপ্রকার বাজে ভাবেই ফেসে গেছে।

রাতুলের কথায় ভ্রুকুচকে রাতুলের দিকে তাকায় আঁধার কিন্তু কিছু বলে না।

নীলিমা এক পলক আঁধারের দিকে তাকায় তার এসব সহ্য হচ্ছে না,প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারছে না।

–‘আঁধার, তই কি শুনতে পারছিস সবাই কি কি বলছে?’ চুপ করে থাকবি এখন ও তুই।

একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে এবার নীলিমা।

কিন্তু এবারও আঁধার চুপ করেই থাকে কাউকে কিছু বলে না।

–‘ওই ব্যাটা, কথা বলিশ না কেনো বল না দোস্ত? ‘

শিহাবের কথায় আঁধার চোখ তুলে শিহাবের দিকে শান্ত চোখে তাকায় আর বলে,,,

–‘আমি জানি না বাট, ” She is very special person for me and my life.”

–‘ওহহহহহহহহ ” Special person.”

একসাথেই সকলে বলে উঠে হেসে দেয়, শুধু মাত্র নীলিমা বাদে। নীলিমার বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, সকলের আড়ালেই চোখের পানি মুছে নেয়। মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে আঁধারকে বলে,,,

–‘সত্যি তাহলে মেয়েটি অনেক স্পেশাল, আমাদের আঁধার যাকে স্পেশাল বলেছে সে কি আর সামান্য মেয়ে হতে পারে নাকি?’

–‘আরে নীলি, শুধুই স্পেশাল বলছিস কেনো, বল অনেকককককক স্পেশাল। ‘

সোহেলের কথায় সকলে আর এক দফা হেসে ফেলে।

–‘ তবে যাই বলিস না কেনো আমাদের ভাবি কিন্তু মারাত্মক জোস দেখতে। ‘

তরি কথায় নীলি বলে,,,

–‘ হুম ঠিক বলেছিস, আমাদের আঁধারের সাথে একদম সুন্দর ভাবে মানাবে। ‘

–‘অবশেষে শালা প্রেমে পড়লি তাহলে?’

বলেই রাতুল, সোহেল, শিহাব মিলে আঁধারে ঝাপটে ধরে।

(নীলিমা,সোহেল,আঁধার, তরি,রাতুল ও শিহাব এরা ছোট বেলার বন্ধু সবাই৷ সবাই একে অপরকে অনেক ভালোবাসে, একজনের কিছু হলে দ্বিতীয় জন প্রাণ ও দিতে পারে।সবই ঠিক শুধু মাত্র ব্যাতিক্রম হয়েছে নীলিমার ক্ষেত্রে, নীলিমা কলেজ লাইফ থেকেই আঁধারকে ভালোবাসে কিন্তু কখন ও সাহস করে বলতে পারেনি বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে। ঠিক যেমটা আজকে ও বলতে পারলে না। কিন্তু আঁধার তরি ও নীলিমাকে বোনের চোখেই দেখে ।)

ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় একটা ছেলে আরোহীকে দেখেই সালাম দেয়,,,

–‘আসসালামু আলাইকুম ভাবি!’

–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

–‘ কে ভাবি ভাইয়া?’

সালাম আরোহী নিলেও প্রশ্নটা করে রাহি। ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়।

–‘আরে কে- কেউ না আসি ভাবি।’

বলেই ছেলেটা চলে যায় আর রেখে যায় অবাক হয়ে যাওয়া আরোহী ও রাহিকে।

–‘রাহি ছেলেটা কি তোকে ভাবি বলে গেলো?’ তোর বয়ফ্রন্ড কি এই ভার্সিটিতে পড়ে নাকি?

আরোহী প্রশ্নটা করেই চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে রাহির দিকে। রাহি ভেবাচেকা খেয়ে যায়,,

–‘কি সব বলছিস, আমার বয়ফ্রেন্ড কোথা থেকে আসবে? ‘ পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই? তোকে ভাবি বলেছে হয়তো!

রাহির উত্তর ও প্রশ্নের মাঝেই আরোহী কিছুই বুঝতে পারে না। রাহিও আর কথা বাড়ায় না,

–‘ওই যে আঁধার ভাইয়া চল চল প্রমাণ কর?’

আঁধারকে দেখে আরোহীর হাত ধরে টানতে টানতে বলে রাহি৷

আরোহী চোখ তুলে তাকাতেই আঁধারের শান্ত মূখশ্রী দেখতে পায়। আঁধারের এই শান্ত চাহনিই যে কারো কলিজা কেঁপে উঠতে বাধ্য।ঠিক এখন যেমন আরোহীর কলিজা কেঁপে উঠছে।

–‘কি রে আরো চল?’

রাহির কথাতেই আঁধারের দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আরোহী।

আঁধারদের কাছাকাছি আসতেই আঁধারের বন্ধুরা সকলে মুখ টিপে হাসে,,

–‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।’

এক গাল হেসে বলে রাহি৷

–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম!’

মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে আরও কিছু বলবে সোহেল তার আগেই আঁধারের গম্ভীর গলায় বলা কথাটি শুনে সোহেল সহ সকলে কপাল চাপড়ায়।

–‘তোমরা এখানে কেনো?’ এনিথিং ইস রং?

–‘আসলে ভাইয়া আরোহী আপনাকে কিছু একটা বলবে বলছিলো,সেই তো নিয়ে আসলো আমায় এখানে। ‘ কি রে আরো বল?

চটপট করে কথাটা বলেই আরোহীর পেটে ঘুতো দেয় রাহি৷ আরোহী বেচারি কাচুমাচু করে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

রাহির কথা শুনে আঁধার এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আরোহীর দিকে।আরোহীকে কাচুমাচু করতে দেখেই আঁধারের ভ্রু খানিকটা কুচকে যায়।

–‘সাপের মতো মোচড়া মুচড়ি না করে যেটা বলতে এসেছিলে সেট বলো ইডিয়েট?’

আঁধারের ধমকে কেঁপে উঠে আরোহী।

–‘আমার মনে হয় আমাদের যাওয়া উচিত, কি বলিস তোরা?’

সকলের উদ্দেশ্যে কথাটি বলে সোহেল। সবাই মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। থেকে যায় শুধু আঁধার, আরোহী ও রাহি।

–‘ কি হয়েছে এবার বলো?’

আঁধারের প্রশ্নে আরোহী রাহির দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,,

–‘রাহির নাকি খুব ইচ্ছে তার দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করবে তাই নিয়ে এলাম আর কি!’

আঁধার এবার আরোহীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাহির দিকে তাকায়।

রাহি হা করে তাকিয়ে আছে, তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এখন ও আঁধারই আরোহীর স্বামী। কিন্তু রাহির মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

–‘কি ব্যাপার শালি সাহেবা, দুলাভাইকে দেখার এতো তাড়া?’

মুচকি হেসে বলে উঠে আঁধার। রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, সে শুনেছিলো আঁধার সবসময় গোমড় মুখ করে থাকে কিন্তু এই প্রথম হাসতে দেখছে ব্যাপারটা তার ঠিক হজম হচ্ছে না।

–‘আসলে ভাইয়া, আমার কেনো জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমার জিজু?’

আমতা আমতা করে বলে রাহি।

এবার শব্দ করে হেসে দেয় আঁধার, রাহি যেনো আরও অবাক হয়ে যায় আর এবার রাহির সাথে সাথে আরোহী নিজেও অবাক হয়ে যায়। আঁধারকে এভাবে হাসতে কখন দেখেনি আরোহী৷

–‘কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না শুনি?’ তোমার বান্ধবী ভরা মাঠে সকলের সামনে এমনি এমনি তো আর চুমু খায় নি, আসলে কি বলো তো ১মাস দূরে ছিলাম তাই আমায় দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি বুঝলে তো!

বলেই চোখ টিপ দেয় রাহিকে। রাহি নিজেও এবার হেসে ফেলে৷ আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আঁধার আর চোখে তাকাতেই চোখ পাকিয়ে তাকায় আরোহী। আঁধার মুচকি হেসে রাহিকে বলে,,,

–‘এই যে দেখো দেখো, আবার আমায় ইশারা করছে?’ তা বউ বাড়ি গিয়ে বাকি চুমু টুকু দিয়ো এখন থাক কেমন সবাই আছে তো।

প্রথমের কথাটা রাহির দিকে তাকিয়ে বললেও শেষের কথাটা আরোহীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে।

–‘অসভ্য।’

বলেই হনহন করে চলে যায়৷ আঁধার আর রাহি দু’জনেই ফিক করে হেসে দেয়।

–‘আচ্ছা রাহি এখন যাও পড়ে ভালোকরে পরিচিত হবো কেমন, দেখো মহারানি কোথায় গেলো। ‘ আমার ও আবার একটু কাজ আছে।

–‘সমস্যা নেই ভাইয়া, আমি যাই।’

আঁধারের কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায় রাহি।আঁধারও নিজের গন্তব্যে চলে যায়।

আর এদিকে চৌধুরী বাড়িতে,,,

–‘এই মেয়ে আজকে থেকে তুমি আদরের সাথে আদরের ঘরেই থাকবে বুঝলে?’ স্বামী অসুস্থ অন্তত সেবাটা তো করতে পারো নাকি?

কাঠকাঠ গলায় কথাগুলো আলিশার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী।

আলিশা চোখ মুখ কুচকে তাকায় আঁকলিমা চৌধুরীর দিকে,তাকে দেখেই মনে হচ্ছে মিসেস চৌধুরীর কথাটা তার ঠিক পছন্দ হয়নি।

–‘বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব হয়ে গেছে আন্টি? ‘

আলিশার কথায় ক্রোধ নিয়ে তার দিকে তাকায় আঁকলিমা চৌধুরী।

–‘না মানে আমায় সেবা করার কথা বলছেন তো তাই বললাম আর কি?’

মিসেস চৌধুরীর কঠিন দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বলে উঠে আলিশা।

–‘সার্ভেন্টের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেইনি বুঝলে, তাই যেট বললাম মাথায় রেখো?’ আমার ছেলের খারাপ সময়ে তুমি না ছিলে পাশে আর না করছো সেবা, কেমন বউ তুমি? লজ্জা হওয়া উচিত তোমার, অবশ্য তোমার আাবার লজ্জা আছে নাকি! লজ্জা থাকলে তো আর এসব করতে পারতে না।আমার ছেলে ভালো মানুষ তাই তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করেছে।

কিছুটা তাচ্ছিল্য করেই বলেন আঁকলিমা চৌধুরী।

আলিশার কিছুটা খারাপ লাগে কিন্তু তার থেকে বেশি রাগ হয়৷

এতোসব বলাতে মিসেস আঁকলিমা চৌধুরীর ও খারাপ লাগে কিন্তু তার কিছু করার নেই আলিশার ব্যাবহারেই আজকে এতোকিছু তাকে বলতে বাধ্য হলেন মিসেস চৌধুরী। কিন্তু আলিশার কথা শুনে মাথাট গরম হয়ে যায়।

–‘বিয়ে করার জন্য কি আমি আপনার ছেলের পায়ে পড়েছিলাম নাকি?আমার মতো মেয়ে আপনার ল্যাংড়া ছেলের বউ হয়েছে তাতে আপনার উচিত আমায় মাথায় তুলে রাখা আর আপনি.. ‘

আর কিছু বলতে পারে না আলিশা তার আগেই শক্ত হাতের থা’পড় খেয়ে পড়ে যায়।

আঁকলিমা চৌধুরী যেনো আঁতকে উঠেন।

–‘কি করলি আদর এটা তুই, বউয়ের গায়ে হাত তুললি? ‘ এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে?

–‘ওর সাহস হয় কি করে মা তোমার সাথে এভাবে কথা বলার? ‘ আর বেয়াদবি করার সাহস পায় কোথায় ও?

চিৎকার করে বলে উঠে আদর। আলিশা কেঁপে উঠে আদরের চিৎকারে। কিন্তু আদর থামে না,,,

–‘আমি ১মাস বেডে পড়ে ছিলাম বলে তুই আমায় ল্যাংড়া বললি তোর এতো বড় সাহস!’ তোকে তো আমি,,

আলিশার দিকে তেড়ে যেতে ধরলেই আঁকলিমা চৌধুরী টেনে সরিয়ে আনে আদরের গালে একটা চড় মেরে দেয়।

–‘ বেয়াদব তো তুই হয়েছিস?’ তোর জন্য আজকে আমাদের এই দিন দেখতে হচ্ছে, আমার তো আপসোস হয়, তোকে মানুষ করতে পারিনি! আমি মানুষ করতে পারিনি তোকে!

বলেই আচঁলে মুখ চেপে কেঁদে উঠছেন বার বার আঁকলিমা চৌধুরী।

আলিশাকে ধরে উঠিয়ে বিছানায় বসিয়ে পানি খাওয়ায় আঁকলিমা চৌধুরী। তারপর আদরের উদ্দেশ্যে বলে,,,

–‘আজকে থেকে তোরা একসাথে থাকবি, আর নিজেদের মানিয়ে নিতে চেষ্টা কর! ‘ যা করেছিস নিজের ইচ্ছায়, আর হ্যা আরোহী এখন তোর বড় ভাইয়ের বউ আশা করবো তুই তাকে ভাবির সন্মানটা দিবি। আগে যা হয়েছে ভূলে যা।

–‘আর হ্যা এই যে তুমি, মাথায় রেখো কথাটা ভালো করে।আর আমার আরোহী ও আঁধারের থেকে দূরে থেকো , তোমার সবকিছু এই একমাস খেয়াল করেছি আমি। কথাটা ভালো করে মাথায় রাখবে নাহলে ফল ভালো হবে না।

আলিশার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে গটগট করে চলে যান আঁকলিমা চৌধুরী।

আদর ও আলিশার দিকে একপলক তাকিয়ে চলে যায়।

–এই নীলি কি হয়েছে তোর বল তো?’ মন খারাপ করে আছিস কেনো রে?

রাতুলের কথা শুনে মলিন হেসে বলে নীলিমা,,,

–‘বাবা মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে রে, ভাবছি গিয়ে ঘুরে আসি কিছুদিন?’

–‘তুই একা যাবি?’

ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করে আঁধার।

–‘হুম, তোরা তো সবাই ব্যাস্ত এখন তাই!’

–‘সোহেল গিয়ে দিয়ে আসবে, কিরে সোহেল তুই কি বলিস?’

আঁধারের কথায় মলিন হাসে নীলিমা, যে হাসির কথা কেউ বুঝতে না পারলেও আঁধার ঠিকই বুঝতে পারে কিন্তু তার কিছুই করার নেই। নীলি ও তরিকে ছোট থেকেই বোনের মতো ভেবে এসেছে৷ তার বোন না থাকার কারণে তার বাবা মা ও তাদের নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। কিন্তু আঁধার সবসময় ছোট বোনের আসনেই বসিয়েছিলো আর এখন ও আছেই।

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৬

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৬

🍁

এরইমধ্যে কেটে গেছে ১ মাস কিন্তু সেদিনের পর আঁধারের আর দেখা পাওয়া যায়নি। আরোহীর খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করেনি। সেদিনের পর থেকেই আঁধার একপ্রকার তার থেকে দূরে চলে গেছে।

একদিন দরকারে আরোহী ফোন দিতে গিয়ে বুঝতে পারে আঁধার তাকে ব্লক করে দিয়েছে। তাই আরোহীর নিজের ও আঁধারের উপর অভিমান জমে গেছে। অবশ্য আদর আরোহীকে অনেক কয়েকবার ফোন করেছিলো,আরোহী বিরক্ত হয়ে ব্লক করে দিয়েছে।

আরোহী এখন অন্যকারো স্ত্রী সেটাই মেনে নিয়েছে, আর আদর এখন আরোহীর বড় বোনের স্বামী। সব থেকে বড় কথা আদর একটা প্রতারক, বেইমান।

আর আলিশাকে পরের দিনেই চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কারণ আলিশা যেহেতু প্রেগনেন্ট তাই সবাই নানান ধরনের কথা বলতে পারে সে জন্যই মূলত ।

কিন্তু আরোহীকে ১ বছর সময় দেওয়া হয়েছে নিজেদের মানিয়ে নিতে। এরই মধ্যে আরোহীর এডমিশনের রেজাল্ট ও বের হয়েছে, ভর্তি ও হয়ে গিয়েছে সে। তবে তার জন্য ভালো হয়েছে যে আঁধারদের ভার্সিটিতেই তার চান্স হয়ে গিয়েছে। ক্যামিস্ট্রি নিয়েই সে চান্স পেয়েছে।

আরোহী ভার্সিটি নিয়ে অনেক এক্সাইটেড, কারণ তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাহি সে ও সেম ভার্সিটি ও সেম সাবজেক্ট নিয়ে চান্স পেয়েছে।আরোহী সে সব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় সকালে তাকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, ভার্সিটি যেতে হবে, নতুন ভার্সিটি নতুন ক্লাস,নতুন সব তাই একটু বেশিই এক্সাইটেড আরোহী।

ঘুমের মধ্যেই বরোহীর মনে হয় কারো গরম নিশ্বাস তার চোখ মুখে পড়ছে।ধিরে ধিরে নিশ্বাসের প্রবণতা বেড়েই চলছে,কিন্তু ঘুমে বুদ হয়ে থাকার কারণে আরোহী চোখ খুলতেই পারছে না।

কিন্তু হঠাৎ করেই কারো গভীর ভাবে ওষ্ঠদ্বয় কপালে চেপে ধরতেই কেঁপে উঠে আরোহী। সামান্য নড়েচরে আবার ও ঘুমিয়ে যায়, এতে যেনো সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে সামনে থাকা যুবকটি। কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে তার অতি প্রিয় মানুষটির মুখের দিকে!

এই একটা মানুষই তার লাইফে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ, এই বালিকাটিকে একনজর দেখার জন্য প্রতিটা দিন, প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা সেকেন্ড ছটফট করে, আর বালিকাটি তারই সামনে কিভাবে এতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে যায়।

সকালে,,,

এলার্মের শব্দে ধড়পড় করে উঠে বসে আরোহী, বিরক্ত হয় খানিকটা এলার্মের জন্য।

–‘ধেত, কতো সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম আমি! সব চলে গেলো ধুর। ‘

বলেই সময়ের দিকে চোখ যেতেই চোখ গুলো আপনা আপনি বড় বড় হয়ে যায়।

–‘ইয়া আল্লাহ!৯ টা বাজে, আর তো মাত্র ৪০ মিনিট সময় হাতে।’

বলেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে যায়। ২০ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। দৌড়ে গিয়ে বলে,,,

–‘আম্মু আমি গেলাম আর হাতে একটা পরটা নিয়ে গেলাম।’

–‘ভালো মতো খেয়ে যা আরো,আরে শুন আরো।’

চেঁচাতে চেঁচাতে বের হয়ে আসলেন শাহানাজ শেখ। কিন্তু বের হয়ে কোথাও আর তার আদরের মেয়েকে দেখতে পেলেন না। হতাশার নিশ্বাস ছাড়লেন তিনি,বিরক্ত হয়ে আবার নিজের কাজে চলে গেলেন।

এদিকে আরোহী ভার্সিটির সামনে আসতেই পুরো ভার্সিটির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তেই কেউ পেছন থেকে দু হাত দিয়ে তার চোখ ধরে নেয়। আরোহী প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পড়ে বুঝতে পারে কে সেটা, তাই পেছনে ঘুরেই একপ্রকার ঝাপটে ধরে তাকে।

রাহি মুচকি নিজেও জড়িয়ে ধরে হেসে বলে,,,

–‘আরো, তুই কি আদর ভাইয়া মনে করে আমায় এভাবে ঝাপটে ধরলি নাকি এয়ার?’ নট ফেয়ার, আদর ভাইয়া দেখলে কিন্তু রাগ করবে বুঝলি।

রাহি ঠাট্টার স্বরে এসব বললেও আরোহীর কাছে কথাগুলো একদম বিষাক্ত লাগে৷ সে তো আদরের নাম পর্যন্ত শুনতে নারাজ তাহলে সবাই কেনো বার বার আদরের কথাই তাকে মনে করিয়ে দেয়।

আরোহী রাহিকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে যায়। এতে যেনো রাহি কিছুটা অবাক হয়ে যায়।

–‘কি হয়েছে আরো?’ তোদের কি ঝগড়া হয়েছে নাকি?

আরোহীর থেকে কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে রাহি আবার বলে উঠে,,

–‘কি রে বল? ‘

–‘আসলে তোকে বলাই হয়নি সেদিন আদরের সাথে আপুর বিয়ে হয়েছে, ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো।’

কথাগুলো বলেই খানিকটা জোড়ে দম নেয় আরোহী। রাহি অবাক হওয়ার সাথে রাগ হয়ে ও যায়।

–‘কি বললি তুই, ওরা যদি দুজন দুজনকে ভালোবাসতো তাহলে তোর সাথে কেনো আদর ভাইয়া এই নাটকটা করলো!’ তুই কিভাবে হতে দিলি বিয়েটা, তের কি হবে বল তে? আর আলিশা আপুর সাথে না আদর ভাইয়ার বড় ভাইয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল?

–‘উফ ভাই একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেই বল তো, চল ক্লাসে গিয়ে তোকে ধিরে ধিরে সব বলবো। ‘

রাহি কিছু না বলেই মাথা নাড়ায়, তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতো বড় একটা শকের মধ্যে আছে সে।

রাহির মন খারাপ দেখে আরোহীর ও মন খারাপ হয়ে যায়। আরোহী জানে এইটুকুতেই রাহি মন খারাপ করছে পুরোটা শুনলে না জানি কতোটা রেগে যায়।

রাহি একপলক আরোহীর মলিন মুখশ্রীর দিকে তাকায়, তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করেই আরোহীর সাথে গল্প জুড়ে দেয়। আরোহীর ও মুখে হাসি ফুটে উঠে!

ভার্সিটির ভেতর আসতেই দুজনে প্রাপ্তির হাসি দেয়, এই ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন তাদের অনেক আগে থেকেই। অবশেষে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।

আর কোন কিছু না ভেবেই তারা ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়, ঠিক তখনই কয়েকজন ছেলেমেয়ে তাদের সামনে চলে আসে।হঠাৎ এরকমটা হওয়াতে আরোহী ও রাহি দু’জনেই চমকে যায়, সাথে ভয় ও পেয়ে যায়।

–‘ এই মেয়ে, সিনিয়রদের দেখে সালাম দিতে হয় জানো না?’ অভদ্রের মতো দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছো!

একটা মেয়ে ধমকে কথাটি বলে উঠে।

–‘সরি আপু আমরা আসলে খেয়াল করিনি, করলে নিশ্চয়ই সালাম দিয়ে যেতাম।’

রাহি ভয় পেয়ে আরোহীর হাত চেপে ধরে।
আরোহীর কথায় সামনের মেয়েটি আরও ক্ষেপে যায় মনে হয়,,,

–‘ওহহহহ আচ্ছা, তা কি খেয়াল করছিলে শুনি?’ আর ফার্ট ইয়ার নিশ্চয়ই?

–‘হ্যা আপু। ‘

মেয়েটির কথায় ছোট করে জবাব দেয় রাহি।

–‘ তা নাম কি বেবিরা তোমাদের?’
একটা ছেলে প্রশ্ন করে,,

আরোহী ভ্রুকুচকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটির দিকে, ছেলেটিকে দেখে তার ছেঁচড়া ছাড়া কিছুই মনে হয় না। আর মেয়েগুলোর পোশাক দেখে তো আরোহীর মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই এদের জামা কেনার টাকা নেই তাই তো এতো ছোট আর ছেঁড়া ফাটা কাপড় পড়েছে।

–‘এই মেয়ে কি বলছে সাদ তোমাদের শুনতে পাও নি? ‘

পাশে দাড়িয়ে থাকা আর একটি মেয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে।

–‘ আমাদের নাম তো আর বেবি না তাই চুপ করে আছি আপু।’

আরোহীর কাঠ কাঠ উত্তরে রাহির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সে জানে এই সিনিয়ররা রেগে গেলে কি করতে পারে, একবার তার বড় বোনকে মাঠে কান ধরে দাড়িয়ে রেখেছিলো।

–‘আমার নাম রাহিয়াত রাহি আর ওর নাম আলিনা সিদ্ধরাতুল আরোহী।’

ভয়ে ভয়ে বলে উঠে রাহি।

–‘তা আরোহী বেবি, তুমি তো প্রচুর হ….ট। ‘

আরোহীর উপর থেকে নিচ অব্দি তাকিয়ে বললো কথাটা সাদ।

আরোহী ঘৃণায় চোখ মুখ কুচকে নেয়।

–‘ ভাই পাশের টা ও কিন্তু মারাত্মক। ‘

পাশ থেকে রাফি বলে উঠলো কথাটি।

রাহি ভয়ে কাঁপছে, আর আল্লাহ আল্লাহ করছে কেউ যেনো এসে তাদের বাঁচিয়ে দেয়।কিন্তু তাদের ভাগ্যে মনে হয় আজকে এমটাই ছিলো তাই তো কেউ আর আসলো না।

–‘তা এই হ..ট মেয়েটির জন্য হ..ট একটা র্যাগ তো দেওয়াই যায় কি বলিস সবাই? ‘

প্রথমের মেয়েটি কথাটা বলে উঠলো।

–‘ দে অবশ্যই দে, তার আগে আমায় একটা কিস করতে বল!’

শয়তানি হাসি দিয়ে বলে সাদ। আর বাকিরা ও মনে হয় এতে মজা পায় তাই তারাও উচ্চস্বরে হেসে দেয়।

এবার আরোহীর নিজেরই ভয় হচ্ছে, সিনিয়রা কেমন সে ও অনেকবার শুনেছে কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখেও নিচ্ছে। আরোহীর ভয় হচ্ছে যদি অসভ্যতা করে তার সাথে, তখনই আরোহীর মনে হয় আদর,আঁধার ও আলিশা একই ভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু আদর হয়তো এখন ও ভার্সিটিতে আসার মতো সুস্থ হয়নি আর আলিশা সে তো কখনই সাহায্য করবে না। আগে হলে ব্যাপারটা আলাদা ছিলো আর এখন তো সে আরোহীকে তার একমাত্র শত্রুই মনে করে। আর বাকি রইলো আঁধার সে কি আদও সাহায্য করবে? কিন্তু আঁধারকে কিভাবে জানাবে, সে তো ব্লক করে রেখেছে আরোহীকে!

–‘ কি হলো বেবি একটা কিস তো আমার পাওনা তাই না?’

সাদের কথা শুনে আরোহী ভয়ে ভয়ে আসে পাশে তাকায় কিন্তু আঁধারকে দেখতে পায় না৷ ততোক্ষণে সাদ আরোহীর হাত টেনে ধরেছে,,

–‘উফফ বেবি তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো একটা কিসই তো, কাম অন?’

আরোহী হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করছে, রাহি ভয়ে কেঁদেই দিয়েছে।

–‘উফফ বেবি তুমি কাঁদছ কেনো, তোমার বান্ধবীর পর তোমার পালা তো!’

বলেই রাহির দিকে অনিল আগিয়ে আসে।

আরোহী আর কিছু সহ্য করতে না পেরে একটা চড় মেরে দেয় সাদের গালে। এতে যেনো সাদ আরও রেগে যায়, কিন্তু এবার হেমা মানে প্রথম মেয়েটি বলে,,

–‘সাদ ওকে এভাবে শাস্তি দিলে হবে না, অন্য রকম ভাবে শাস্তি দিতে হবে।’

বলেই এগিয়ে এসে আরোহীর হাত চেপে ধরে বলে,,,

–‘ ওই যে উল্টো ঘুরে ছেলেটি দাড়িয়ে আছে তাকে গিয়ে কিস করতে হবে তোমায়, আর ডিরেক্ট ঠোঁটে।’ আর যদি না বলো তাহলে,, অনিল তুই ওর বান্ধবীটাকে নিয়ে যাবি কেউ তোকে কিছুই বলবে না।

আরোহী এবার রাগের বসে হেমার দিকে তেড়ে যেতেই তার বন্ধুরা তাকে টেনে ধরে থাকে।

–‘উম বেবি, এতো সাহস দেখিয় না, সাদের গায়ে হাত তোলার সাহস আজকে তোমার বের করবো। ‘ হেমা যেটা বললো করো নাহলে আজকে তোমার সাথে কি হবে সেটা নিজেও জানো না আর তোমার বন্ধুর কথা তো বাদই দিলাম।

সাদের কথার সাথে তার গা জ্বালানো হাসি দেখে আরোহী ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে। কিন্তু কি করবে বুঝতে না পেরে রাহির দিকে একবার তাকায়। মেয়েটার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, আর চোখের জ্বল তো মনে হচ্ছে বাধ মানছে না।

নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর এরকম বেহাল দশা দেখেই আরোহীর কলিজা কেঁপে উঠছে বার বার। সবাই তাদের দেেখছে ঠিকই কিন্তু সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। কেউ দেখে হাসছে আর কেউ বা ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে গাছ তলায় সেই ছেলেটার দিকে একবার তাকায়। ছেলেটা উল্টো দিকে হয়ে তখন থেকে ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে। আরোহীর মনে হয় ছেলেটাকে কোথায় জানি দেখেছে।কিন্তু মনে করতে পারছে না।

এরইমধ্যে হেমারা আরোহীকে তাড়া দিতে থাকে,,
আরোহী এবার কিছু একটা ভাবে আর ভেবেই রাজি হয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই হেমাদের সকলের চোখ মুখে শয়তানি হাসি দেখা যায়।

–‘ঠিক আছে আমি আপনাদের শর্তে রাজি তবে, আপনারা আর কখনও আমাদের বিরক্ত করবেন না?’

–‘ওকে তুমি যেমটা চাও তবে আগে আমাদের শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে!’

লিমা অর্থাৎ দ্বিতীয় মেয়েটির কথায় সবাই সম্মতি দেয়।

আরোহী একপলক রাহির দিকে তাকায়। রাহি তাকে চোখ দিয়ে বার বার বারণ করছে কিন্তু আরোহী আর কিছু না ভেবে গাছ তলার কাছে যেতে থাকে।

আরোহী যতোই এগিয়ে যাচ্ছে তার ভয় ততোই বাড়ছে, আরোহী রাজি হয়েছিলো কারণ সে ছেলেটাকে গিয়ে সব বলে দিয়ে সাহায্য চাইতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার এতো সাহস নেই। ছেলেটার কাছাকাছি এসে আরোহী ভয়ে কাঁপছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

আর এদিক থেকে হেমারা চুপ চাপ দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে। অনিলের ফোন আসাতে অনিল রাহির হাত ছেড়ে দিয়ে ফোনে কথা বলতে শুরু করে আর এদিকে রাহি ততোক্ষণে দৌড়ে আরোহীর দিকে এগিয়ে যায়।

–‘আরে আরে মেয়েটা তো চলে যাচ্ছে লিমা আটকা?’

হেমার কথা শুনে লিমা রাহির হাত টেনে ধরে। রাহি আরোহীর থেকে অল্প দূরত্বেই ছিলো এতোক্ষণ কিন্তু লিমার জন্য আর আরোহী অব্দি পৌঁছাতে পারলো না।

আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে দাড়িয়ে থাকে, সেই মুহূর্তে ছেলেটি আরোহীর দিকে ফিরতেই অবাক হয়ে যায়। আরোহী নিজেও থম মেরে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে খুশি হয়ে যায়, কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষণ স্থির থাকে না আঁধারের প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয়ে যায় আরোহী।

–‘কিছু বলবেন? ‘

শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে আঁধার।

–‘আসলে, আমি আসলে…আঁধার! ‘

–‘ইয়েস,হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ মিস?’

আরোহী কি বলবে ভেবে না পেয়ে পিছনে ফিরে হেমাদের দিকে একবার তাকায়। হেমারা চোখ দিয়ে ইশারা করে, আঁধার ও আরোহীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে হেমাদের দিকে তাকায়৷ হেমারা ভয় পেয়ে যায়,তারা আঁধারের রাগ সম্পর্কে জানে তাই তারা ইচ্ছে করেই আরোহীকে এই প্রস্তাব দিয়েছে।আঁধার রেগে গেলে যে আরোহীকে ভার্সিটি থেকে টিসি নিয়ে ও দিতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর আগে অনেক মেয়েই আঁধারকে প্রপোজ করছে কিন্তু আঁধার হয়তো অপমান করেছে, নয়তো শান্ত মাথায় বুঝিয়েছে,আর বেশি বাবা বাড়ি করলে থা’পড় মেরে অপমান করেছে। সেখানে তো আরোহী ডিরেক্ট কিস করতে গেছে তার অবস্থার কথা ভেবেই তারা ভিতরে ভিতরে হাসে ফেটে পরছে।

আরোহী আঁধারের দিকে তাকিয়ে একবার আসে পাশে তাকায়। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, আরোহী আর কোন কিছু না ভেবেই আঁধারের খুব কাছে চলে যায়।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কারণ আঁধারের ধারের কাছেও যেখানে কেউ যেতে পারেনি, সেখানে আরোহী আঁধারের অনেকটা কাছে চলে গেছে।আঁধার শান্ত চোখে তাকিয়ে সবটা লক্ষ করছে, আরোহী কি করতে চাচ্ছে মূলত সে সেটাই দেখতে চাচ্ছে।

আরোহী সকলে অবাক করে দিয়ে আঁধারের মাথাটা চেপে ধরে আঁধারের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। কয়েক সেকেন্ড পর সরে আসে।

সবার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে যায় হেমারা শয়তানি হাসি দেয় তাদের মনে হয় আঁধার এইবার আরোহীকে থা’পড় মারবে।

কিন্তু আঁধার তখন ও শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।

কিছুটা পাশেই দাড়িয়ে ছিলো আঁধারের বন্ধুরা তারা এক একজন রীতিমতো হা করে তাকিয়েই আছে।

আরোহীকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার বলে,,

–‘মাথা নিচু করলে কেনো?’ শেষ সব সাহস!

আরোহী এবার চোখ তুলে তাকায় আঁধারের দিকে, আর বাকি সবাই হা করেই তাকিয়ে থাকে। আঁধারের স্বাভাবিক আচরণ সকলের হজম হচ্ছে না।আর হেমার তো আর ও বেশি অবাক হয় তাদের প্লান ফ্লপ হয়ে যায়। কিন্তু তাড়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না কিছু।

আঁধার আসে পাশে একবার তাকায়, সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদেরই দিকে। আঁধার সকলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরোহীকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

–‘ক্লাসে যাও! ‘

আরোহী নিজেই অবাক হয়, যে আঁধার একটু আগেই তাকে না চেনার ভান করছিলো সে তাকে ক্লাসে যেতে বলছে। আরোহী গিয়ে লিমার হাত থেকে রাহির হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর ক্লাসের দিকে রওনা হয় তারা। রাহি নিজেও হা করে তাকিয়ে আছে, সে ভাবতেও পারেনি আরোহী সত্যি সত্যি এমটা করবে?

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৫

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৫

🍁

মেজাজটা এতোটাই খারপ হয়ে গেলো যে আপুর সাথে কথা বলাও পাপ মনে হলো। তাই পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলাম৷ কিন্তু আপুর আমার পেছন পেছন রুমে ঢুকতে দেখে মেজাজটা আবার চটে গেলো।কি রে ভাই একটা মানুষ কি বুঝে না যে তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসলাম, হয়তো তার সাথে কথা বলতে চাই না তাই। কিন্তু আপুর ছেঁচড়ামি কিছুতেই সহ্য করার মতো না৷

তবুও কিছু না বলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আপুর কথা শুনে চটে গেলাম৷

–‘বরের সাথে তো ভালোই ঘুরাঘুরি করছিস দেখছি?’তা ঘুরাঘুরিটা কি আসলেই নাকি আমাদের দেখানোর জন্য!

–‘তোমাদের বলছো কেনো বলো তো, তোমার তো নিজের কথাই বলা উচিত! কারণ দেখানোর মতো তো আর কেউ নেই। বাই দা ওয়ে আমি আমার বরের সাথে ঘুরতে যাই বা কোথাও থাকতে যাই তোমার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।নিজের লিমিটের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করো। আমরা স্বামী-স্ত্রী কি করছি না করছি সেটা না দেখে নিজের স্বামী হাসপাতালে ভর্তি আছে কাল থেকে সেটাও তো দেখতে পারো নাকি৷ আমরা আমাদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করছি সো সেটাই করতে দাও আর নিজের স্বামীর প্রতি আর বাচ্চাটার প্রতি নজর দাও, নাহলে ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে।

এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলেই দম নেয় আরোহী।
আলিশা রাগে কাঁপছে। আরোহীর হাত চেপে ধরে জোড়ে আরোহী ব্যাথায় আহ্ বলে একটা শব্দ উচ্চারণ করার সাথেই চোখ মুখ শক্ত করে আলিশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

–‘হাউ ডেয়ার ইউ, তোমার সাহস হয় কি করে আমার হাতে ব্যাথা দেওয়ার?’

আরোহীর চিৎকারে আলিশা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,

–‘উফফ ব্যাথা পেলি বুঝি আরো,ইসসস আসলে কি বলতো বাহিরে যখন আঁধারকে তোর এতোটা কাছে দেখলাম তখন আমারও এতোটাই ব্যাথা লেগেছিলো।’ তোর জন্য ভালোই হবে যদি আঁধারের থেকে দূরে থাকিস নাহলে তোর অবস্থা কি হবে সেটা তুই নিজেও জানিস না।

–‘হাহ্ কি বললে আমি আঁধারের থেকে দূরে থাকবো, আমি!’

বলেই পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে আরোহী৷ কিন্তু পরক্ষণেই শক্তভাবে বলে উঠে,,,

–‘আমার বরের থেকে আমি কেনো দূরে থাকতে যাবো, আমি তো পারলে তার কোলে উঠে ও ঘুরে বের হবে!’তবে যাই বলো উনি তো আমায় কতো ভালোবাসে দেখতেই তো পারো,কোলে উঠতে চাইলে অবশ্য না করবেন না কখন ও। আর আঁধার বলো কেনো আপু সে তো তোমার বড় ভাসুর আর বড় ভাসুর তো নিজের ভাইয়ের মতো তাই না বলো।

আলিশা রাগে কটমট করে উঠে।

–‘তোর এই মুখ আজকাল দেখি খুব কথা ফুটেছে তাই না রে, তোর এই মুখের কথা মুখেই মানায় বুঝলি।আঁধার যে তোকে এখনও মেনে নিতে পারেনি সেটা আমি ভালো করেই জানি তাই কোলে নেওয়া তো দূর জড়িয়েই আগে ধরুক৷ ‘ তবে আমি অনেক জলদিই আঁধারের কোলেই শুধু না বুকেও থাকবো দেখে নিস।

আপুর কথা শেষ হতেই আমার পুরো শরীর রাগে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। কতোটা বেয়াদব আর বেশরম হলে কেউ এতো সবকিছু করার পড়েও এসব বলতে পারে৷ রাগে আর কিছু না ভেবেই কাপড় সব মেঝেতে ছুড়ে মেরে টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিলাম।

রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আঁধারের নাম্বারে ডয়েল করলাম৷ স্পিকারে দেওয়ার খানিকক্ষণ পরেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,

–‘হ্যালো …’

–‘এই আপনি কোথায় আছেন এখন?’

ওনার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বলে উলাম, নাহলে আপুর সামনে যদি কে বলছেন বলে ফেলে তখন কি হবে আমার মানসম্মান কিছুই থাকবে না।

ভাগ্যিস বিয়ের আগে আদর নিজেই আঁধার ও তার পুরো ফ্যামিলির ফোন নাম্বার আমার ফোনে সেভ করে দিয়েছিলো নাহলে আপু ডাইনির সামনে আমার মান ইজ্জত সব শেষ হয়ে যেতো। সে হয়তো শয়তানি হাসি দিয়ে বলতো কেমন বউ তুই বরের ফোন নাম্বার নিজের ফোনে সেভ করা নেই।

আঁধার খানিকটা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে যায়। আরোহীর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে, কিন্তু এখনই তো এলো এখন আবার ফোন করলো কেনো।আঁধারের ভাবনাও শেষ হতে দেয় না আরোহী তার আগেই আবার চিৎকার করে বলে উঠে,,

–‘হ্যালো, কি বলছি আমি?’

আঁধারের মনে হলো হয়তো কোনো সিরিয়াস কিছু হয়েছে। আবার আরোহীর চিৎকার শুনে রাগ ও উঠে যায় তার।নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে,,

–‘বাসার সামনে কেনো কি হয়েছে?’ এভাবে কথা বলছো কেনো, কিছু কি হয়েছে?

আরোহী মনে হয় আঁধারের এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো এতোক্ষণ। তাই তো সাথে সাথেই বলে উঠে,,,

–‘১৫মিনিট সময় দিলাম, তার মধ্যেই আপনাকে আমাদের বাসায় আমার রুমের মধ্যে চাই।’

চিৎকার করে বলার পর পরই ফোন কেটে দেয় আরোহী। আঁধার বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু পরক্ষণেই সিরিয়াস কিছু মনে করেই আবার গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।

ফোন কেটেও রাগ কমে না আরোহী, পায়চারি করতে থাকে পুরো ঘরময়৷ আর আলিশা আরাম করে সোফায় বসে থাকে৷ কুটিল হাসি দিয়ে বলে উঠে,,,

–‘উফফ আরো, বেকার ফোন করলি। আঁধার কারো কথার ধার ধারে না বুঝলি তো,আর চেঁচিয়ে কথা বলা, রাগ ঝাড়া এসব পছন্দ করে না৷ দেখবি আসবে না আর কথাও বলবে না। বেকার!

আমি কিছু বললাম না মনে মনে ভাবছি আঁধার যদি সত্যি না আসে৷ কিন্তু আবার ভাবছি আসবে আর যদি না আসে আমি বাবাকে বলবো যে ছেলে আমার কথা শুনলো না তার সাথে সংসার করবো না আমি।

এরইমধ্যে গাড়ির হর্ণের সাউন্ড শুনে বুঝতে পারলাম আঁধার এসেছে, মুখে আপনা আপনি হাসি চলে আসলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ১০ মিনিট ও হয়নি এখন। মনে মনে ভাবলাম লোকটা কি পাগল ৩০ মিনিটের রাস্তা যদিও গাড়ি জোড়ে চালিয়ে ২০ মিনিট বা ১৭/১৮ মিনিট তো লাগেই তাহলে এতো জলদি কিভাবে আসলো।

আর কিছু ভাবার আগেই হুরমুর করে আঁধার আমার রুমে ঢুকে পড়লো।

হাপাতে হাপাতে আমার সামনে এসে দম ছেড়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো,,,

–‘কি হলো এখন চুপ করে আছো কেনো?’কি হয়েছে বলো?

আমি আর চোখে একপলক আপুর দিকে তাকালাম৷ আপুর দিকে তাকাতেই তার অবাক হওয়া বিস্ময় মুখটি দেখতে পেলাম। সে হয়তো কল্পনাতেও ভাবেনি আঁধার আসবে । অবশ্য আমি নিজেও সেটা ভাবিনি।

আরোহীকে অন্যমনস্ক দেখে আঁধার আরোহীর মুখোমুখি দাড়ালো।

–‘কি হয়েছে আরু, কোনো সমস্যা? ‘

আঁধারের কথাটা শুনে আমি অনেকটাই চমকে গেলাম।মনে হলো শরীরের মধ্যে একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।মনে মনে ভাবলাম, উনি আমায় আরু বলে ডাকলেন।সবাই তো আরো বলে ডাকে আর আঁধার তো এতোদিন আমায় আরোহী বলেই ডাকতো আজ হঠাৎ আরু বলে ডাকলেন যে! কিন্তু কিছু বলার সাহস হলো না।

–‘উফফ, এই মেয়ে!কথা বলছো না কেনো এখন?’ কি হয়েছে হঠাৎ এভাবে ডাকলে কেনো বলবে তো নাকি?

আঁধারের ধমকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ আগের কথা মাথায় আসতেই রাগটা তরতর করে বেড়ে উঠলো।

–‘জড়িয়ে ধরুন আমায়!’

আরোহীর কথা শুনে আঁধার ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।কিন্তু ততোক্ষণে আরোহী নিজেই এসে জড়িয়ে ধরেছে।

আঁধারের মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ একজন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।হার্টবিট অনেক ফাস্ট চলাচল শুরু করেছে। পুরো শরীরের লোমসহ দাড়িয়ে গেছে।আরোহী খানিকটা বিরক্ত হয় আঁধারের কান্ডে।

নিজেই আঁধারের হাতগুলো তার কোমরে এনে দেয়। এতে যেনো আঁধার আরও খানিকটা বিচলিত হয়ে যায়। খুব শক্ত করেই আঁধার আরোহীর কোমড় চেপে ধরে নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আরোহীর পুরো শরীর মনে হয় শীতল হয়ে যায়। এবার নিজেই বিপাকে পড়ে যায় আরোহী৷ তার হার্ট বেচারা মনে হয় লাফিয়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। আর আঁধারের হার্টবিটের শব্দও সে ভালো করেই শুনতে পারছে।

আলিশার রাগে শরীর কেঁপে উঠে। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত আলিশা। তার এখন মনে হচ্ছে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারছে সে। তার জন্যই আরোহী আর আঁধার কাছাকাছি আসছে৷ কি দরকার ছিলো তার আরোহীকে এসব বলার৷ অবশ্য তারও দোষ নেই,তার মতে আঁধার আরোহীকে এতোক্ষণ ৪/৫টা চড়,থা’পড় দিতো কিন্তু উল্টো তার চাল তাকেই যে ভাড়ী পড়ে যাবে কে জানতো!

আলিশার আর সহ্য হলো না তাই পাশের টেবিলেই পানির গ্লাস ছিলো, সেটা হাত দিয়ে ফেলে দিলো।আঁধার চমকে উঠে আরোহীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে গেলো! কিন্তু কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিলো না৷ না সরিয়েই ঘুরে তাকিয়ে আলিশাকে দেখে ভ্রুকুচকে ফেললো।

আলিশার থেকে চোখ সরিয়ে আরোহীর দিকে তাকাতেই আরোহীকে ভাবলেসহীন দেখে কুঁচকানো ভ্রু যেনো আরও একটু কুঁচকে গেলো।এবার আঁধারের কাছে ধিরে ধিরে সবটা পরিস্কার হতে শুরু করলো।

–‘কোলে নেন এইবার আমায়!’

আরোহীর কন্ঠে শুনা এই ছোট কথাটা শুনেও আঁধার যেনো চমকে উঠলো। আরোহী আরও খানিকটা এগিয়ে গেলো আঁধারের কাছে। আঁধারের বুকের কাছের শার্টটা খানিকটা তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করেই বলে উঠলো,,,

–‘কি হলো নিবেন না আমায় কোলে?’

এবার শুকনো ঢোক গিললো আঁধার। আর মনে মনে ভাবলো, এই মেয়ের আজকে কি হয়েছে! তবে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমার কি হবে সেটাই আমি বলতে পারবো না। তার থেকে বরং তার কথাটাই মেনে নেই কিন্তু এভাবে বড় বোনের সামনে মেয়েটার কি লজ্জা টজ্জা নেই নাকি? আবার মনে হচ্ছে না আরোহী তো আমার সামনে আসলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু করে তাহলে হঠাৎ এতো কাছে আসছে কেনো! নাকি অন্য কোনো কারণে?

–‘কি হলো আঁধার সাহেব?’

–‘এভাবে বড় বোনের সামনে, কি করে…’

আপু নিজেই এই ইচ্ছে পোষণ করেছে জামাই আমার, তাই তো আমি ও তার ইচ্ছে পূরণ করছি।

আঁধারের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আরোহী খানিকটা ঢং করে বলে।

আঁধারের কাছে এবার সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যায়। মনটা তার খারাপ হয়ে যায়। ভাবে, এই মেয়েটা আসলেই একটা যাচ্ছে তাই৷ আর সে কতোটা খুশি হয়েছিলো মনে আর এই মেয়ে তো মানুষকে দেখানোর জন্য তাকে ডেকে এনে এভাবে রোমান্স করছে। ছেহ্ আঁধার ছেহ্ অবশেষে তোর ভাগ্যে এমন একটা বউ জুটলো।

–‘আঁধার। ‘

এরইমধ্যে আরোহীর চিৎকারে আঁধার চমকে উঠে বলে,

–‘হ্যা হ্যা বলো। ‘

–‘আপনি কি এতো ভাবেন বলেন তো।’

আঁধার মনে মনে ভাবে যার ভাগ্যে তোমার মতো বউ আছে তার শুধু ভাবা ছাড়া আর কোনো কাজ আছে নাকি! আঁধার আর কোন কিছু না ভেবেই আরোহীকে কোলে তুলে নেয়। আরোহী লাজুক হাসি না দিয়ে এমন ভাবে হাসে যেনো পুরো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।আঁধার বিরক্ত হলেও আরোহীর হাসি মুখটা দেখে থমকে যায়।

আর মনে মনে ভাবে মেয়েটা হাসলে কতোটা কিউট লাগে। একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগছে আরোহীকে। ছোট বাচ্চা যখন কোনো খেলনার জন্য বায়না ধরার পর খেলনাটি পেয়ে যাওয়ার পর যে হাসিটা থাকে ঠিক সেই হাসিটিই আরেহীর চোখ মুখে খেলা করছে।

আলিশা আর সহ্য করতে না পেরে কাঁচের জগটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে গটগট করে চলে যায়।

আরোহী মিষ্টি হেসে আঁধারকে নামিয়ে দিতে বলে। আঁধার নামিয়ে দিলেই আরোহী লাফিয়ে এসে আঁধারের গালে একটা চুমু দিয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়। আর আঁধার অবাক হয়ে এবার মনে হয় আকাশ থেকে ধপ করে নিচে পরলো। সাথে সাথেই একটা হাত তার ডান গালে চলে গেলো!

আঁধারের মুখটা ও এবার হাসিতে ভরে গেলো। কি আর করবে ভেবেই বের হয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে আসতেই আরোহীর সামনা সামনি হয়ে গেলো৷ কিন্তু আরোহী এবার আঁধারের ডান হাতটা ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে সে পাশে বসে আঁধারের বাম হাতটা কোলে নিয়ে নিলো।

আঁধার এবার নিজের হাতটা পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো রক্ত শুকিয়ে গেছে। কাচঁগুলো সে নিজেই তুলে নিয়েছিলো কিন্তু হাতটা ব্যান্ডেজ করেনি।

আরোহী ধিরে ধিরে সবটা রক্ত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আর পুরোটা সময় আঁধার অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো আরোহীর মুখের দিকে।আরোহী আলতো হাতে যেভাবে ফু দিয়ে দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো ব্যাথাটা আঁধার না আরোহী নিজেই পাচ্ছিলো।

আমার এই পিচ্চি বউটা ও রাগ অভিমান ছাড়াও কেয়ার করতে পারে বাহ্। আরও না জানি কি কি লুকায়িত আছে আপনার মধ্যে মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী! যেটা এখনও আমি জানতেই পারিনি।নিজেই নিজেকে এসব বলে উঠে আঁধার আবার নিজে নিজেই হেসে ফেলে।আরোহী দেখার আগেই আবার চুপ করে নিজেকে গম্ভীর করে থাকে।

–‘নিজেই ব্যাথা দিয়ে নিজেই ওষুধ লাগাচ্ছেন মিসেস চৌধুরী? ‘

আঁধারের কথা শুনে আরোহী চোখ তুলে একপলক আঁধারের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে,,

–‘আমি কাউকে ব্যাথা দেইনি সে নিজেই নিজেকে ব্যাথা দিয়েছে, কিন্তু আমি ওষুধ লাগাচ্ছি মিস্টার চৌধুরী।’

আরোহীর কথা শুনে আঁধারের মুখে হাসি ফুটে উঠে। তারই বউ তার কথাটিই উল্টে তাকে বলছে ভাবা যায়।

–‘ভাবছিলাম সম্পর্কটাকে এবার স্বাভাবিক করা উচিত কি বলেন মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘

–‘আগে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শিখে নেন মিস্টার তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘

–‘আপনি না হয় মিস্টার তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শিখিয়ে দিবেন মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘ কি বলেন দিবেন তো!

এবার আরোহীর মুখে সামান্য হাসি ফুটে উঠে। আঁধারের চোখে চোখ রেখেই বলে উঠে,,

–‘মিস্টার চৌধুরী যদি মনে রাখে তার শুধু মাত্র একটাই বউ আর কেউ নেই, কোনো হবু বউ ছিলো না তার।’ হবু বউয়ের প্রতি দরদ না দেখায় তবে আমি ও সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে পারি।

বলেই আঁধারের হাতটা ভালো ভাবে দেখতে থাকে। কিন্তু আঁধারের রাগ হয় প্রচুর রাগ হয়, যার কারণে আরোহীর হাত থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,

–‘তোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভবই না, তুই ভালো ব্যাবহারের যোগ্যই না।’ ভুলেও আমার সামনে আসবি না তুই।

বলেই ফাস্টএইড বক্সটা আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।

আরোহী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মতে সে কি এমন বললো যে আঁধার এতোটা রেগে গেলো! আর শুধু রাগলোই না তুই তুকারি করে গেলো।আজকের আঁধারের সাথে কালকের আধারের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না আরোহী। সে তো শুধু কথাটা বললো যেনো আঁধার আলিশার প্রতি দরদ না দেখায়। সকালে আঁধারকে আলিশার রুম থেকে বের হতে দেখেই বুঝে গিয়েছিল হয়তো সান্ত্বনা দিতে গেছে তাই কথাটা বললো।

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৪

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৪

🍁

–‘আ.রো.’

হঠাৎ করেই কারো দূর্বল গলার কন্ঠে থেমে থেমে আরোহীর নাম উচ্চারণ করা শুনে আরোহীর পা জোড়া থেমে যায়। কিন্তু ঘুরে তাকিয়েও দেখে না। আঁধারের দিকে তাকাতেই আঁধার চোখের ইশারায় ঘুরে কথা বলতে বলে। কিন্তু আরোহী নির্বাক হয়েই দাড়িয়ে আছে। আঁধারের মা বাবা ও একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।

–‘তুমি আমার সাথে কথা বলবে না আরো!’

আদরের দূর্বল কন্ঠে বলা কথাটি শুনে আরোহী এক পলক আঁধারের দিকে তাকায় কিন্তু আঁধারকে দেখে মনে হচ্ছে তার চোখ মুখ খানিকটা শক্ত। তবুও সে আরোহীকে চোখ দিয়ে ইশারা করে কথা বলার জন্য, আর সম্পূর্ণ বিষয়টিই খেয়াল করে আদর ও তার বাবা মা ও। আদরের বাবা যদিও খুশি হয় তবে আদরের বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠে।

–‘জ্বি ভাইয়া বলেন?’ আসলে আমাদের বাড়ি যেতে হবে তো।

শক্ত কন্ঠে বলে উঠে আরোহী।

আদর হাসে কিন্তু সে হাসিতে কোনো আনন্দ নেই সুখ নেই।
আদর জানে আরোহী অনেক অভিমানী কিন্তু এভাবেও যে আরোহী কারো সাথে কথা বলতে পারে জানতো না আদর।
আরোহীকে বরাবরই সে শান্ত, নরম ও ভিতু দেখেছিলো৷ মূলত তার ফেইসের সাথে ওইসব রিয়াকশনই মানানসই ছিলো। কিন্তু এভাবে শক্ত কন্ঠেও যে আরোহী কথা বলতে পারে সেটা আদর আজকেই প্রথম দেখলো।

এইসব ভাবনার মধ্যেই তার মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

–‘এখন কেমন লাগছে তোর বাবা?’জানিস আমরা কতোটা চিন্তিত ছিলাম তোর জন্য!

আদর হাসে,,

–‘জানি মা, তোমরা আমায় মাফ করে দিয়ো মা আমি ভুল করেছি।’

–‘কি হলো যাবেন না, লেট হয়ে যাচ্ছে তো?’

আরোহী আঁধারকে খানিকটা বিরক্তির সাথে বলে উঠে।

আঁধার এক পলক আদরের দিকে তাকায় কিন্তু কথা বলে না। বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে আরোহীর হাত ধরে বেরিয়ে আসে।

আদর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে আজকে আরোহীর পাশে তার থাকার কথা ছিলো কিন্তু তার কিছু ভূলের জন্য আঁধারকে আজকে আরোহীর পাশে দেখতে হচ্ছে। আদরের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি বের হয়, কিন্তু কেউ দেখার আগেই সেটা মুছে নেয়।

কেবিনের বাহিরে এসেই আঁধার আরোহীর হাত ছেড়ে দিয়েই হনহন করে চলে যায়। আরোহী বোকার মতো কিছুক্ষণ আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আঁধারের থামারই নাম নেই সে নিজের মতোই যেতে থাকে, আরোহী আর কিছু না ভেবে সে ও আঁধারের পিছু পিছু যায়।

কিন্তু বাহিরে এসে আঁধারকে আর দেখতে পায় না কোথাও৷ এবার কিছুটা বিরক্ত হয় আরোহী। ভাবে লোকটা অনেক অদ্ভুত, সাথে বেয়াদপ ও। তা না হলে একা একটা মেয়েকে কিভাবে রেখে যেতে পারে।

এরইমধ্যে আঁধারের গাড়ি পার্কিং এড়িয়া থেকে তার দিকেই আসতে দেখে মনে মনে একটা ভেঙ্গচি কাটে। আঁধার গাড়ি থামিয়ে ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দেয়। আরোহী এক পলক আঁধারের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে ।

আঁধারকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় আরোহী। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ও আরোহী বুঝতে পারে আঁধার তার অনকেটা কাছে৷ আঁধারের নিশ্বাস আরোহীর গলায় পড়ছে এতে যেনো আরোহীর পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠে৷ আরো চেপে বসে আরোহী গাড়ির সিটের সাথে৷ আঁধার এক পলক আরোহী দিকে তাকিয়ে সরে যায়।

–‘গাড়ির দরজা ভেঙে বাহিরে চলে যেতে চাচ্ছো নাকি?’

খানিকটা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে আঁধার। ধপ করে চোখ খুলে আরোহী৷ একবার আঁধার ও আর একবার তার দূরত্ব দেখে নেয়,তারপর সস্তির নিঃস্বাস ছাড়ে৷

সেটা দেখে আঁধার বলে উঠে,,

–‘ইডিয়ট। ‘

তারপর ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।
আরোহী যেনো প্রাণ ফিরে পায়।তখনই নজর যায় তার সিট বেল্টের দিকে। মনে মনে ভাবে তার মানে আঁধার সিট বেল্ট লাগানোর জন্য এতো কাছাকাছি এসেছিলো, আর আমি কি না কি সব ভাবছিলাম। ছি আরো ছি তোর মাইন্ড এতো নোংরা। নিজেই নিজেকে কয়েকটা গালি দিয়ে হেসে ফেলে আরোহী।

হঠাৎ করেই আঁধার গাড়ি ব্রেক করে আরোহীর দিকে ঘুরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করাতে খানিকটা বিরক্ত হলেও আঁধারকে তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভেবাচেকা খায় আরোহী।

কিন্তু আঁধার তাকে অবাক করে দিয়ে প্রশ্ন করে,,,

–‘এই তোমার কি জ্বীন -ভুতের সমস্যা আছে নাকি?’ না মানে যেভাবে একা একা হাসছো আমার তো সেটাই মনে হলো৷

আঁধারের প্রশ্ন শুনে আরোহী চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে থাকে।

–‘আরে আরে কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?’ না মানে থাকলে বলতে পারো, আমি আবার জ্বীন-ভুতকে অনেক সহজেই তাড়াতে পারি।

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে আঁধার। আরোহী কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে আঁধারের দিকে। এতে আঁধার যেনো অনেকটাই মজা পায়।

–‘তোমার ভেতরের জ্বীন-ভুতকে তাড়িয়ে দেখাবো নাকি?’

আরোহী চোখ মুখ শক্ত করে কটমট করে আঁধারের দিকে তাকায়। আঁধার ফিক করে হেসে ফেলে। আরোহী এক দৃষ্টিতে আঁধারের হাসির দিকে তাকায়, কি সুন্দর তার হাসিটা৷ আঁধার হাসতে হাসতে মনে হচ্ছে গড়াগড়ি খাচ্ছে তবুও তার হাসি থামছে না৷

ফোনের রিংটোনে আঁধারের হাসি থেমে যায়। কিন্তু বেচারা মনে হয় অনেক কষ্টে হাসিটাকে কন্ট্রোল করে রেখেছে তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

আঁধার ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথেই তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।

গাড়িতে আর তাদের মধ্যে কোনো কথাই হয় না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে আরোহীকে নামতে বলে সেও নেমে যায়।

আঁধারের পেছন পেছন যেতেই আঁধার একটা টেবিলে বসে আরোহীকে বসতে বলে। আরোহী ও বাধ্য বাচ্চার মতো বসে পড়ে।

আঁধার একটা ওয়েটারকে ডেকে আরোহীকে খাবার অর্ডার করতে বলে সে ফোন দেখায় মনোযোগ দেয়।এরইমধ্যে ওয়েটারের কথা কর্ণগোচর হতেই আঁধার চোখ তুলে আরোহীর দিকে তাকায়।

–‘কি হলো, খাবার অর্ডার করছো না কেনো?’

আঁধারের কথাশুনে আরোহী আমতা আমতা করতে থাকে।আঁধার ভ্রুকুচকে তাকায় আরোহীর দিকে৷ কিন্তু আরোহী কিছু না বলেই চুপচাপ বসে থাকে।আঁধার খানিকটা বিরক্তি নিয়ে নিজেই খাবার অর্ডার করে। ওয়েটার ও হাসিমুখে বিদায় নেয়।

আঁধার কিছু না বলেই আবার ফোন দেখায় মনযোগ দেয়।

কিছুক্ষণ পড়েই ওয়েরটার ও খাবার নিয়ে চলে আসে৷ আঁধার এক পলক আরোহীর দিকে তাকায়। দেখে মেয়েটা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আরোহীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলা খেঁকারি দেয়৷ এতে অবশ্য কাজ ও হয়ে যায়!আরোহী চোখ তুলে আঁধারের দিকে তাকায়।

–‘খাবারটা খেয়ে নাও।’

আঁধারের কথা শুনে আরোহী কিছু না বলেই খেতে শুরু করে।আঁধার চুপচাপ বসে থাকে। আরোহী একটু খেয়ে যখন বলে আর খাবে না তখন আঁধার অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,,,

–‘খাবে না মানে কি?’ এইটুকুতেই পেট ভরে গেলো? সম্পূর্ণ খাবার শেষ করো কুইক!

–‘আমি এর বেশি খেতে পারবো না প্লিজ ভাইয়া।’

–‘ভাইয়া…’

আঁধারের চেঁচানিতে আরোহীর হাত থেকে চামুচটা ধপ করে প্লেটে পড়ে যায়৷ এতে যেনো আঁধার আরও ফুসে উঠে।

–‘ভাইয়া, কোথায় তোমার ভাইয়া, কে তোমার ভাইয়া?’ভুলেও আমার দিকে তাকাবে না। এই আমি কোন দিক থেকে তোমার ভাইয়া লাগি হ্যা!বিয়ে করা বরকে কেউ এভাবে ভাইয়া বলে ইডিয়েট।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নেয় আঁধার। আরোহী বোকার মতো তাকিয়ে থাকে কিন্তু বুঝতেই পারে না আঁধারের হঠাৎ করেই হলোটা কি!

–‘আপনি…’

–‘এই মেয়ে চুপ, তুমি যখনই মুখ খুলো তখনই ঘুর্ণিঝড়ের মতো কথা বলে আমার ভেতরটাকে লন্ডভন্ড করে দেও।’ এর থেকে ভালো হবে তুমি কথাই বলো না আমার সাথে।

–‘আরে,,,’

–‘এই বললাম না চুপ, আমি তোমার কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই।’ হাহ্ এমন করে ভাইয়া ডাকছে মনে হচ্ছে আমি তার কোন জনমের ভাই আহাাাা কি ডাক ভাইয়া! এই তোমার জন্য শুধু মাত্র তেমার জন্য যদি আমার ফিউচার বেবিরা আমায় মামা ডাকছে তো তোমায় আমি ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো ইডিয়েট।

রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে আঁধার। আরোহী অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।

–‘এই মেয়ে খাচ্ছো না কেনো এখন ও খাও!’

বলেই, আরোহীর প্লেটে অনেকগুলো খাবার দিয়ে আবার বলে,,

–‘সব খাবার তুমি খাবা, যদি একটু ও রাখছো তো তোমায় আমি গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।’

ফুসতে ফুসতে বলে আঁধার। আরোহী করুন চোখে একবার খাবারের দিকে তাকায় তো একবার আঁধারের দিকে তাকায়।কিন্তু আঁধারকে রাগে ফুসতে দেখে চুপচাপ খাবার গিলতে থাকে।

আঁধার শক্ত চোখে আরোহীকে দেখতে থাকে।

–‘আপনি খাবেন না?’

থেমে থেমে বলে উঠে আরোহী। কিন্তু আঁধারের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়। তাই চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করে।

আরোহীর খাওয়া শেষ হতেই আঁধার হনহন করে বিল দিতে চলে যায়। আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে সেও আঁধারের পেছন পেছন যেতে থাকে৷ কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই আঁধার পেছনে ঘুরে দাড়িয়ে যায়,যার ফলে আরোহী আঁধারের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে সরে যায়।

আঁধার শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,,,

–‘গাড়িতে গিয়ে বসো।’
বলেই আবার নিজের মতো চলে যায়৷ আর আরোহী বুকে ফু দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে।

কিছুক্ষণ পরে আঁধারও চলে আসে৷ চুপচাপ গাড়িতে বসে শান্ত চোখে আরোহীর দিকে তাকায়।আরোহী ভিষণ অসস্তিতে পরে যায়। পরমুহূর্তেই কিছু একটা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি সিট বেল্ট বেধে নেয়। আঁধারও আর কিছু না বলেই গাড়ি চালাতে শুরু করে

আরোহীদের বাসার সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে আরোহীর হাতে কিছু চকলেট দেয়। দিয়ে যেতে বলে।

–‘চকলেটগুলো কি আপুকে দেওয়ার জন্য দিলেন?’

আরোহীর কথা শেষ হতেই আঁধারের চোখ মুখ ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে যায়। গাড়ির জানালায় জোড়ে একটা পাঞ্চ মারে। ফলে কাচঁ গুলো ভেঙে যায় আর অনেকগুলো কাচঁ আঁধারের হাতে গেঁথে যায়।আরোহী ভয় পেয়ে যায়

–‘একি আপনার হাতে তো কাচঁ গেঁথে গেছে, রক্ত বের হচ্ছে। ‘আপনি কি পাগল নাকি?

আঁধারের হাত ধরে দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে বলে আরোহী।

–‘ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ মি?’ স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি ড্যামেট।

এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে এসে চেঁচিয়ে বলে আঁধার ,,,

আরোহী কেঁপে উঠে। কিন্তু আবার আঁধারের হাত টেনে ধরে বলে,,

–‘আপনি এতো রাগ করছেন কেনো, আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে তো।’

আঁধার আবার ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।

–‘যেতে বলিনি তোমায় আমি?’ গো?

চেঁচিয়ে বলে উঠে আঁধার। আরোহীর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি বের হয়। আঁধারকে কিছু না বলেই চকলেটগুলো গাড়িতে ছুড়ে মেরে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়।

চকলেটগুলো ফেলে দেওয়াতে আঁধারের রাগ যেনো আরও বেশি মনে হয়। গাড়ির দরজা এক ধাক্কায় খুলে। ভালো হাতটা দিয়ে আরোহীর হাত চেপে ধরে। আরোহী খানিকটা ভয় পেলেও চোখ মুখ একদম স্বাভাবিক রেখে চুপচাপ দাড়িয়ে দেখতে থাকে আঁধার কি করে,,,

কিন্তু কিছু বলতে পারে না তার আগেই একটা ছেলের কন্ঠস্বর শুনে দুজনেই পেছনে ঘুরে তাকায়।

–‘হেই আরো, তুমি এতোক্ষণ লেট করলে কেনো?’ আমি কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছিলাম ইউ নো!

আঁধার ছেলেটাকে ভালো করে পর্যাবেক্ষণ করে কিন্তু তার রাগ কমানোর দরকার নাহলে কখন কি করে দিবে তার ঠিক নেই তাই আর কিছু না বলেই আরোহীকে টানতে টানতে বাড়ির দরজার সামনে এনে রেখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

ব্যাপারটা এতোই দ্রুত হয় যে, আরোহীর সাথে সাথে ছেলেটাও অবাক চোখে তাকায়।

–‘ছেলেটা কে আরো?’

–‘সেটা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।’

শক্ত কন্ঠে বলেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় আরোহী। ছেলেটা ও দৌড়াতে দৌড়াতে আরোহীর পেছন পেছন চলে যায়৷ আর প্রশ্ন করতে থাকে।

এসময় আরোহী বিরক্ত হয়ে বলে,,,

–‘আমার বয়ফ্রেন্ড হয় উনি, আর কিছু?’

–‘বয়ফ্রেন্ড, তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকতেই পারে না সেটা আমি ভালো করেই জানি আরো সো ঢপ মেরো না।’

সবকটা দাঁত বের করে হেসে বলে উঠে ছেলেটা। আরোহী যেনো আরও ফুসে উঠে, একে তো আঁধারের উপর রাগটা ওর তরতর করে বেরে উঠছে। তার উপর এই ছেলেটা।

–‘উনি আমার যেই হোক না কেনো তাতে আপনার কি সাফিন ভাই?’ আপনার আসলে সমস্যাটা কি একটু বলবেন?

–‘আরে রিলাক্স এয়ার আই আম জাস্ট জোকিং।’ তুমি রেগে…

আর কিছু বলবে সাফিন ভাই তার আগেই আমি উপরে চলে যাই। না দেখেও বুঝতে পারছিলাম সে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে আমার যাওয়ার দিকে।

( সাফিন ভাই হলো আমার ফুপির ছেলে, আপুর সাথেই পড়াশোনা করে । আমার ফুফিরা দু বোন।আর সাফিন ভাই হলো ছোট ফুপির ছেলে। ওরা সবাই লন্ডনে থাকে যদিও তবে সাফিন ভাই মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে আমাদের বাড়িতে। সবাই ওনাকে অনেক ভালোবাসে শুধু মাত্র আমি বাদে৷ কোনো এক কারণে ওনাকে দেখলেই আমার হাবলার মতো লাগে যদিও সে অনেক স্মার্ট কিন্তু আমার পেছনে পড়ে থাকে সবসময় তাই হয়তো হাবলার মতো লাগে আমার কাছে। তবে উনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ও দয়ালু। উনি হয়তো আমার বিয়ের খবর জানেন না এখন। কারণ বাবা চা না এখনই কেউ জানুক। তাই হয়তো আধারকে চিন্তে পারেন নি।)

রুমের সামনে আপুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই মেজাজটা আরও অনেক বেশিই চটে গেলো।

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৩

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৩

🍁

টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম ওনার গালে।

উনি মনে হয় খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আমায় চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন।

–‘কি করলে তুমি এটা? হাউ ডেয়ার ইউ?’ সাহস হয় কি করে তোমার?

ওনার চিৎকারে নিজেই নিজের কাছে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। উনি সত্যি সত্যিই আছেন! তার মানে আমি সত্যিই ওনাকে চুমু দিয়ে দিলাম, ও মাই আল্লাহ! কি লজ্জাজনক ব্যাপার। আমি..আমি কি করি এখন, কি বলবো ওনাকে আমি? আর কিছু ভাবতে পারছি না ।

কিন্তু হঠাৎ উনি মিষ্টি হেসে আমায় দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমাদের মাঝের দুরত্বটা একদম কমিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসি,,,,

–‘আপনি আমায় জড়িয়ে ধরেছেন কেনো আঁধার?’ আমি…

কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই আঁধার আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দেয়৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে তখনই তার ফিসফিস কথার শব্দে অবাক হয়ে যাই।

–‘ উহু, নড়াচড়া করো না, দরজায় কে যেনো আছে! সো একদম চুপ করে থাকো।’

–‘কোথায় কে…. ‘

–‘হুসসসস, নো মোর ওয়াড।’ চোখ তুলে ভালো করে দেখো!

আমি ভালো করে তাকাতেই কারো একটা ছায়া দেখতে পাই, কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছি না।

আঁধারের দিকে তাকাতেই তাকে কিছুটা ভাবুক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পাই।
কিন্তু আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না, আঁধারের জড়িয়ে ধরাতে অনেকটা অসস্তিতে পড়ে যাই। আর এতোক্ষণ সেটা না বুঝলেও এখন শুধু বুঝতেই পারছি না উপলব্ধি করতেও পারছি। বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে ঢোল বাজছে।

আমার অসস্তি আরও কয়েকগুন বাড়ানোর জন্যই হয়তো আঁধার আমায় আরও শক্ত করে চেপে ধরলো।

–‘উফফ বউ এমন পালাই পালাই করছো কেনো বলো তো?’ আমার এখন রোমান্স করার ইচ্ছে করছে সো ডন্ট ডিসটার্ব!

আঁধারের হঠাৎ উচ্চস্বরে বলা কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। পরমুহূর্তেই মনে হলো আরে উনি তো নাটক করছেন।

উনাকে হঠাৎ করেই আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমার আত্মা মনে হয় হাতে চলে এসেছে৷ কিন্তু উনি ধিরে ধিরে আমার ঠোঁটের দিকে আসছেন তো আসছেনই।

ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু লোকটার তাতে কেনো হেলদোল নেই। হঠাৎ করেই উনি থেমে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকান। কিন্তু একি উনি তাকানো মাত্রই আমার হিচকি শুরু যায়।

হঠাৎ করেই উনি দম ফাটানো হাসিতে মেতে উঠেন। আমি হা করে ওনার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি, কি সুন্দর ওনার হাসি! হাসলে ওনার দুগালে টোল ও পড়ে আবার বাহ। তবে আমি এতোদিন জানতাম টোল সাধারণত মেয়েদের গালেই পড়ে কিন্তু ছেলেদের ও যে টোল পড়ে সেটা আজই প্রথম দেখলাম। মনে হলো প্রথম বাড়ের মতো আমি কারো হাসির উপর ক্রাশ খেলাম।

হঠাৎ করেই উনি হাসি থামিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন মনে হয়। গলা খেঁকারি দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

–‘রেডি হয়ে নেও, উই নিড টু গো!’

আমি ছোট ছোট চোখ করে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠেন।

–‘কি বললাম শুনতে পারো নি?’ নো মোর কোয়েশ্চেন! ওনলি ২০ মিনিটস সময় দিলাম, ১ মিনিট ও যদি লেট হয় তাহলে আমি নিজেই এসে রেডি করাতে বাধ্য হব।

আমি ওনার কথা শুনে নাক মুখ কুচকে তাকাই আর ভাবি,,
ওনাকে যতোটা ভালো মনে করতাম উনি আসলে ততোটা ভালো না। অসভ্য লোক একটা, কথার কি সিরি।

–‘কি হলো যাও।’

আর কিছু ভাবার আগেই ওনার ধমকে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।

আরোহী ওয়াশরুমে যাওয়ার পর পরই আঁধার হেসে ফেলে। এতোক্ষণ সে অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করে ছিলো।

হঠাৎ করেই আঁধারের দরজার কথা মনে হতে, তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হয়তো চলে গেছে! দেখেই আঁধার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।

আলিশা আবার নিজের রুমে এসে নিজের চুল টানতে থাকে। রাগে তার শরীর কাঁপছে, আঁধার আর আরোহী যে এক রাতের মধ্যেই এতো কাছাকাছি এসে যাবে ভাবতেই তার রাগ হচ্ছে অনেক। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে রাগ হয়েই বা কি হবে যা করার আরোহী তো এখন আঁধারের বউ।

এরইমধ্যে আঁধার আলিশার দরজায় নক করে। আলিশা প্রথমে থম মেরে থাকলেও পড়ে খুশি হয়ে যায়৷

–‘আঁধার তুমি বাহিরে দাড়িয়ে আছ কেনো, ভেতরে আস!
খুশিতেই বলে উঠে আলিশা।

–‘ আমি তোমায় কিছু বলতে এসেছিলাম আলিশা।’

–‘হুম বলো,তোমার আমার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে না তো! আমি তো তোমারই….

–‘ভাবি হও। ‘

আলিশা কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আঁধার মুচকি হেসে কথাটি বলে।আলিশার হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। এতে যেনো আঁধার খানিকটা মজাই পায়।

–‘আসলে আলিশা ভাবি হয়েছিলো কি বলেন তো, কারো রুমে পারমিশন ছাড়াই লুকিয়ে কথা শুনা ব্যাড মেনার্সের মধ্যে পড়ে জানেন তো। ‘ আর আমি আমার বউয়ের সাথে আপনার উঁকি ঝুঁকি মারার কারণে শান্তি মতো রোমান্স করতেই পারলাম না। বোঝোই তো নতুন নতুন বিয়ে করেছি।

আলিশার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।
আঁধার আলিশার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,,,

–‘দেখো আলিশা তোমায় আমি কখনও অন্য কেনো নজরে দেখিনি বোনের নজরেই দেখে ছিলাম তাই দূরত্ব মেইনটেইন করে চলতাম সবসময়।’ তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারটা ও জানতাম না আমি। কাল হঠাৎ যখন আমায় বাবা ডেকে নিয়ে এসে বিয়ে করতে বলে তখনই আমি বারণ করতাম কিন্তু বাবা নিজের অসুস্থতার কথা বলে আমায় বাধ্য করেছিলেন বিয়ে করতে৷ কাল যদি তেমনটা না হতো তাহলে হয়তো তোমায় বিয়ে করতাম ঠিকই কিন্তু কখন স্ত্রীর অধিকার দিতে পারতাম না। আর আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম বিয়ে করে সাথেই বিদেশে চলে যাবো। কিন্তু যখন আমার বিয়েটা তোমার সাথে না হয়ে আরোহীর সাথে হয় তখনই আমার মতামত পাল্টে যায়৷ আরোহীর উপর একদিনেই আমার অনেকটা মায়া চলে এসেছে। আর সবথেকে বড় কথা তুমি এখন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আর আমার বড় শালী। মানে আমার বড় বোনের মতো। আর আমি চাইলেই এখন তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারি প্রতারণার জন্য কিন্তু আমি সেটা করছি না কেনো জানো? কারণ কাল এতো কিছু না হলে হয়তো ৪ টা জীবন নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু আমি মনে করি ভাগ্যে ছিলো হয়তো এইটা হওয়ার তাই তো কবুল বলার কয়েক মিনিট আগেই কেনো এরকম ঘটনাটা ঘটলো। যাই হোক, তোমার গর্ভে এখন আদরের সন্তান সো ভালো হবে নিজের সন্তান নিয়ে ভাবো আর মন দিয়ে সংসার করো। আর হ্যা এই সবকিছুর জন্য শুধুমাত্র তুমি এবং তোমরাই দায়ী আমি বা আরোহী না৷ আমার মনে হয় তোমার একটু ভাবনার প্রয়োজন। তুমি শান্ত মতো ভাবার চেষ্টা করো সব বুঝতে পারবে। এন্ড হ্যা মোস্ট ইম্পরটেন্ট টপিক, তুমি আরোহী সাথে ভালো ব্যাবহার করার চেষ্টা করবে কজ সি ইজ মাই ওয়াইফ। এতোদিন সে কি ছিলো তোমরা ওর সাথে কি বিহেইব করেছো সেটা তোমাদের ব্যাপার বাট ফ্রম নাও সি ইজ মাই ওয়াইফ। মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী, সো আই হোপ তোমরা তোমাদের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে। এন্ড দা লাস্ট টপিক, স্টে এ্যাওয়ে ফ্রম মি এন্ড মাই ওয়াইফ।

আলিশা ভাবছে,, আচ্ছা আমি কি কিছু ভূল করছি। সব দোষ তো আমার আর আদরের, আমরা নিজের দোষেই আজকে এইরকম পরিস্থিতিতে আছি তাহলে কি আমি ভুল।

আঁধার কি তাহলে আমায় সব ঠিক কথাই বললো।
আলিশা ভাবতে ভাবতেই মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো।

আরোহী আঁধারকে খুজতে খুজতেই আলিশার ঘর থেকে আঁধারকে বের হতে দেখে থমকে যায়। আঁধারও খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কিন্তু আরোহীকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে উঠে,,,

–‘চলো লেট হয়ে যাচ্ছে।’

আরোহী কিছু না বলেই সম্মতি দেয় ঠিকই কিন্তু আঁধার আলিশার ঘরে কি করছিলো সেটাই ভাবতে থাকে। পরে ভাবে হয়তো তখন রাগের বসে মেরে ছিলো তাই হয়তো এখন কষ্ট হচ্ছে সে জন্যই হয়তো এসেছিলো।

হাসপাতালে একটা কেবিনের ভেতরে বসে আছে আঁধারে বাবা ও মা। পাশেই বেডে শুয়ে আছে আদর। হাত, পায়ে প্লাস্টার। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। মুখের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ক্ষত। আদরের সেন্স এখন ও ফেরেনি। এরইমধ্যে আঁধার ও আরোহী প্রবেশ করে৷ আঁকলিমা চৌধুরী ও তারেক চৌধুরী আরোহীকে দেখে খুশি হয়ে যায়। তাদের ধারণা ছিলো আরোহী হয়তো সবটা এতো তাড়াতাড়ি মানতে পারবে না। কিন্তু আরোহী তাদের ধারণাকে সম্পূর্ণ ভূল প্রমাণ করে দিয়ে আঁধারের সাথে হয়তো সব মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

আরোহী তাদের দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দেয় কিন্তু আদরের দিকে একবার তাকিয়েও দেখে না।

–‘মামনি তুমি এসেছো?’
খানিকটা উৎফুল্লের সাথে বলে উঠেন আকলিমা চৌধুরী।

–‘ভালো আছি আন্টি তুমি কেমন আছ?’

–‘আমার আর ভালো থাকা মা.. ‘ তা আলিশা আসেনি?

মন খারাপ করে বলে উঠলেন আকলিমা চৌধুরী।

–‘না আন্টি, আসলে আপু…।

–‘থাক মা আমি বুঝতে পেরেছি।’

–‘না আসলে আন্টি আমরা আপুকে এখন ও জানাইনি এই ব্যাপারে। ‘

খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলে আরোহী। আর মনে মনে ভাবে এই মানুষগুলো কতো ভালো এতো কিছু হওয়ার পরও আলিশা আসার কথা জিজ্ঞেস করছে।

তখনই ডাক্তার প্রবেশ করে কেবিনে তাই আর তেমন কথা হয় না তাদের।

আঁধার গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বললো৷ তারপর আদরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে। তার মা বাবার সাথে ভালো মন্দ কথা বলে আরোহীকে বাসায় যাওয়ার কথা বললেই আরোহী ও রাজি হয়ে যায়।

#চলবে।

(ভূলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।)

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০২

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০২

🍁

আমার বুকে,,,

কথাটি শুনে কয়েক সেকেন্ড হাবলার মতো তাকিয়ে থাকলাম আঁধারের দিকে। কিন্তু পরক্ষণেই রাগটা তরতর করে বেড়ে উঠলো, সাথে মেজাজটা ও চরম ভাবে খারাপ হয়ে গেলো৷ অসভ্য বলে কয়েকটা গালি দিলাম মনে মনে।

–‘মনে মনে গালি দেওয়া শেষ হলে চুপচাপ বিছানার অন্যপাশে শুয়ে পড়ো।’ আর যদি আমার পাশে শুতে ইচ্ছে না হয় তো, সোফায় অথবা মেঝেতে শুতে পারো।

ওনার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে ওনার দিকে তাকাতেই বলে উঠলেন,,

–‘আর যদি সেটাও ইচ্ছে না হয় তো যেখানে ইচ্ছে গিয়ে ঘুমাও।’ “আই ডন্ট কেয়ার ” আমার ও তোমার পাশে শোয়ার এক বিন্দু পরিমানও ইচ্ছে নেই। আম্মুর কথা মতো বিয়েটা করছি সো বিয়েটা নাম মাত্রই বিয়ে থাকবে, আমার কাছে কখনও কিছু আশা করো না৷

ওনার কথাশুনে অবাক হয়ে ধপ করে মাটিতে পরলাম। কি বললেন উনি আন্টির কথা শুনে বিয়ে করেছেন? কখন আন্টির কথা শুনলেন। আর উনি নিজেই তো এসে আমায় বিয়ের জন্য জোড় করলেন! আর ভাবতে পারছি না আমি। আমার সবকিছু মনে হচ্ছে গুলে যাচ্ছে।

–‘কি হলো এখনও দাড়িয়ে আছো কেনো?’ আলোতে আমার ঘুমাতে অসুবিধা হয় লাইট অফ করে যা ভাবার ভাবতে পারো!

হঠাৎ ওনার বাজখাঁই গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম। মনে মনে ভাবছি,, এই লোকটার মুখে হয়তো কেউ জন্মের সময় মধু দিতেই ভুলে গিয়েছে, ব্যাটা করলামুখো। আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই ওনার ধমকে কেঁপে উঠলাম। তাই লাইট অফ করে চুপচাপ গিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকলাম আর ভাবতে থাকলাম আদরের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো।

ছোট বেলা থেকেই আদরকে দেখলে আমার ভালো লাগতো না। সবসময় মেয়েদের আশে পাশে থাকায় ছিলো তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন অন্যরকম ভাবে তার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়।। বৃষ্টির দিনে কোচিং থেকে ফেরার পথে ছাতা উল্টে যাওয়াতে খানিকটা ভিজে যাই। ঠান্ডায় আমার এলার্জি তাইতো যেনো ঠান্ডা না লাগে দৌড়ে একটা ছাউনির নিচে চলে যাই। যদিও ছাউনিতে আশ্রয় নেওয়ার সময় কে আছে নাই দেখার সময় পাইনি। কিন্তু একটু পরই মনে হলো কেউ হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাজে ছেলে ভেবে পাশে ঘুরতেই কাউকে মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা দেখতেই কেমন যেন অসস্তি লাগতে শুরু করে। আমি ছাউনির অন্যদিকে চলে যাই কিন্তু ছেলেটার দৃষ্টি বরাবরের মতোই আমার মুখের দিকেই। পাশ থেকে কেউ একজন কোমড়ে স্পর্শ করতেই অসস্তি এবার রাগে পরিনত হয়। ঘুরে কোনো কিছু না ভেবেই একটা চড় মেরে দেই। কিন্তু একদল বখাটে ছেলেকে দেখেই ভয়ে ছিটিয়ে যাই। ততক্ষণে ওই ছেলেটা ও আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। আমি তখন আরও খানিকটা ভয় পেয়ে যাই। বারবার মনে হচ্ছিল আমি হয়তো আজকে শেষ আর এই ছেলেটাও হয়তো ওদের দলেরই। কিন্তু ছেলেটা আমায় অবাক করে দিয়ে পালটা একটা থা’পড় লাগায় বখাটে ছেলেটার একটাকে। আমি তখন আরও একটু ভয়ে ছিটিয়ে যাই আর ভাবি যদি ছেলেটাকে মেরে আমার কোনো ক্ষতি করে দেয়। তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াতে থাকি। অনেকটা দৌড়ানোর ফলে যখন হাঁপিয়ে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ি তখনই পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করি৷ চোখ তুলে পাশে তাকাতেই ওই ছেলেটাকে দেখে আবার ভয় পেয়ে যাই।

–‘রিলাক্স, আমি তোমার ক্ষতি করবো না।’
হাত ধরে বলে উঠে ছেলেটি।

আমি তখনও ভয়ে কাঁপছি।

–‘ এই বার্বিডল! তোমার নামটা কি বলো তো?’ তোমায় আমার ভালো লেগেছে! একদম বার্বিডলের মতো দেখতে তুমি।

আমি খানিকটা সাহস করে ওনার হাতে কামড়ে দিয়ে দৌড়ে পালাই৷ তারপর থেকেই ওনাকে দেখলে আমি ভয় পেতাম।কিন্তু ওনাকে কোথায় যেনো দেখেছি ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যায়,, উনি তো তারেক আঙ্কেলের ছেলে। কিন্তু তারপর ও দূরে দূরই থাকতাম তারও অবশ্য একটা কারণ আছে,,

ওনাকে বেশিরভাগ সময়ই আপুর সাথে দেখা যেতো। আর ওনার সাথে কথা বললে যদি আপু রাগ করে তাই দূরে দূর থাকতাম। একদিন তো জড়িয়ে ধরেছিলো আপু ওনাকে আমি দেখেছিলাম কিন্তু আমি আপুর ফ্রেন্ড মনে করে কিছু বলিনি। আর আমি জানতাম আপুকে প্রশ্ন করলেও সেম কথাই বলতো৷ কিন্তু এখন বুঝছি আমি কতোটা বোকা। তার কয়েকদিন পরেই বাবা আদরের সাথে আমার বিয়ের কথা বলে। তখন বারণ করলেও আদরের ভালোবাসা আর পাগলামি দেখেই মনে হয়েছিলো লোকটা আমায় সত্যি অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আজকে বুঝতে পারলাম। আদর আর আপুর সম্পর্কে সবকিছু হঠাৎ করেই জানতে ইচ্ছে করছে। ওদের কতোদিনের সম্পর্ক কেনো আমার সাথে এমনটা করলো যদি জানতে পারতাম তাহলে হয়তো নিজেকে একটু শান্ত করতে পারতাম৷ কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের মুখোমুখি হতেও কষ্ট লাগছে।

আর কিছু ভাবতে পারছি না মনে হচ্ছে মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বারবার সবকিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে,, আচ্ছা আঁধারের সাথে কি আমার সংসার জীবন সুখের হবে? আঁধার কি আমায় মেনে নিবে? নাকি সে ও আদরের মতো বিশ্বাসঘাতকতা করবে? করতেও পারে ভাই ভাইয়ের মতো হবে এটাই তো স্বাভাবিক! আঁধারকে দেখে মনে হচ্ছে সেও হয়তো বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি৷ কিন্তু সে তো নিজেই আমায় জোড় করে বিয়েটা করলো। আপুর প্রতি প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেনি তো আঁধার? এইসব ভাবতে ভাবতেই মাথাটা চেপে ধরে বসে পড়লাম কিছুক্ষণ। আর কোন কিছু না ভেবেই বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম৷

আলিশা মেঝেতে বসে আছে,,

–‘আজও আমার পছন্দের মানুষটাকে কেড়ে নিলো আরো?’ কেনো আরো? কেনো? তুই ছোট থেকেই আমার সবকিছু কেনো কেড়ে নিস? আমি তো তোর বোন হই তবুও বার বার কেনো সবকিছু তুই আমার থেকে কেড়ে নিস?

চিৎকার করে বলে উঠলো আলিশা।

–‘আর এই বাচ্চাটা, এই আজাইরা বাচ্চাটার জন্য আজকে আমি আঁধারকে পেলাম না!’ একে সেদিনই কেনো মেরে ফেললাম না? কেনো?

পাগলের মতো সবকিছু ভাঙ্গচুর করছে আলিশা।

আবার বিরবির করে বলছে,,

–‘আমি তো তোকে মারতে চাইনি, বিয়ের পর আঁধারের বাচ্চা বলে তোকে পৃথিবীতে আনতে চেয়েছিলাম! কিন্তু তুই কি করলি আমার সবকিছু শেষ করে দিলি?

নিজের পেটে নিজেই খাঁমচি দিচ্ছে আলিশা।

–‘আঁধার শুধু আমার কেনো আধার আরো কে বিয়ে করলো কেনো করলো?’ আমি হেরে গেলাম আবার আরোর কাছে, না না আমি হেরে যেতে পারি না৷ আঁধার আমার!

বলতে বলতেই চুপ হয়ে গেলো।

–‘কি করবো এখন আমি?’ উফফ কিছুই ভাবতে পারছি না। কে করলো এমনটা আমার সাথে? ছাড়বো না আমি তাকে।

আবার বলে উঠলো,,

–‘উফ আলিশা ডোন্ট ফরগেট হু আর ইউ, আমি তো আঁধারকে আমার করবোই যেভাবেই হোক। আগে এই বাচ্চাটার ব্যবস্থা করতে হবে।

–‘আদর ফোন ধরছে না কেনো?’ কালই বাচ্চাটার কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।থাক এখন একটু ঘুমিয়ে নেই।

আর অন্যদিকে,,,,

–‘তুমি এইখানে এখনও কি করছো আকলিমা?’ যার জন্য অপেক্ষা করছো সে যেনো আমার বাড়িতে আর পা ও না দেয়। ওর জন্য আমার মানসম্মান সব শেষ হয়ে গেছে৷

তারেক চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠে আকলিমা চৌধুরী খানিকটা কেঁপে উঠেন। কারণ তিনি ও জানেন তার ছেলে কতো বড় ভুল করেছে৷ কিন্তু তিনি তো মা তাই সন্তানরা হাজারটা ভুল করলেও মায়ের চিন্তা হয়।

–‘আপনি…’

আকলিমা চৌধুরীকে আর কিছু বলতে না দিয়েই তারেক চৌধুরী বলেন,,,

–‘ছেলের হয়ে সাফাই গাইবে না,আমি ওর নামও শুনতে চাই না আর…’

বাকি কথা শেষ করার আগেই বাজখাঁই আওয়াজে তার ফোন বেজে উঠে।

–‘আকলিমা তোমার ছেলে,, তোমার ছেলে… ‘ বলেই ধপ করে বসে পড়েন আর আকলিমা চৌধুরী অস্থির হয়ে প্রশ্ন করতেই থাকেন।

সকালে,,,

আরোহী ঘুম থেকে উঠে ঝিমমেরে বসে থাকে কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই কালরাতের কথা মনে পড়তেই আঁধারের কথা ও মনে পড়ে যায়। পাশে তাকিয়ে আঁধারকে দেখতে না পেয়ে আশে পাশে চোখ বুলায়। কিন্তু পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে ও আঁধারকে কোথাও দেখতে পায় না। আর কিছু না ভেবেই ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যায়, কিন্তু বের হয় গোসল করেই। আঁধার হয়তো নিচে আছে ভেবেই নিচে যায় আরোহী। কিন্তু নিচেও দেখতে পায় না। ধপ করে তার বাবার পাশে বসে পড়ে আরোহী৷

আমজাদ শেখের গম্ভীর মুখে হাসি ফুটে উঠে আরোহীকে দেখে।

–‘ঘুম কেমন হলো মামনি?’

–‘ভালোই হয়েছে বাবা।’
মিষ্টি হেসে বলে আরোহী।

–‘ও হ্যা!আঁধার হাসপাতালে গিয়েছে, তুমি ঘুমে ছিলে তাই আমায় বলে গেছে।’
কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলেন আমজাদ শেখ।

–‘ ওহ, কিন্তু হাসপাতালে কেনো গেলো হঠাৎ বাবা?’

–‘আদরের এক্সিডেন্ট হয়েছে রাতেই তাই। ‘ আমিও ছিলাম হাসপাতালেই কিন্তু ভোরের দিকে আঁধার বাসায় রেখে গেছে আমায়।

আমি চমকে গেলাম আদরের কথা শুনে কিন্তু নিজেকে স্বভাবিক করেই বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।
এরই মধ্যে আম্মু ৩ কাপ কফি নিয়ে এসে আমাদের পাশে বসলো ঠিকই তবে হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু বলতে পারছে না।

আম্মু বাবাকে উসখুস করতে দেখে আরোহী নিজেই প্রশ্ন করলো,,,

–‘তোমরা কি আমায় কিছু বলতে চাও,কিন্তু বলতে পারছো না!’

–‘আসলে আরো আমরা তোকে আঁধারের ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।’

আম্মুর কথায় খানিকটা অবাক হলাম। আঁধারের ব্যাপারে আবার কি বলতে চায়,আঁধার কি আপুকে ভালোবাসে নাকি? নিজের করা প্রশ্নে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলাম৷
তখনই বাবার গলার আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম।

–‘মামনি বাবা যদি তোমায় কিছু কথা বলে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে বলে তুমি কি বাবার কথাটা রাখবে?’

–‘কেনো নয় বাবা, আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। ‘ তুমি তোমার মেয়েকে এতোটাও দূর্বল ভেবো না। আর বেইমানদের কথা আমি কাল রাতেই ভুলে গেছি৷ আমি নতুন জীবন শুরু করতে চাই আধারকে নিয়ে কিন্তু আঁধার সে কি?

আর কিছু না বলেই বাবার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আরোহী।
আরোহীর বাবা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তাই তিনি বললেন,,,

–‘আঁধারকে নিয়ে তুমি ভেবো না সবটা সামলে নিবো আমি।’ তবে তোমাকেই আগে আঁধারের সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে হবে। ছেলেটা অনেক ভালো আর আমি জানি সে তোমায় অনেক ভালো রাখবে৷ দ্বিতীয়বারের মতো বাবাকে বিশ্বাস করতে পারো মামনি এইবার তোমার বাবা তোমার জন্য বেস্টটাই সিলেক্ট করেছেন।

–‘আমি জানি বাবা, তুমি আমার জন্য যেটাই সিলেক্ট করবে ভালোর জন্যই করবে।’ আমি চেষ্টা করবো। তবে আমি যদি আদরকে দেখতে যাই তোমার কি কোনো আপত্তি আছে বাবা?

বাবার হাসিমুখটা খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেলো,,,

–‘ কি দরকার আরো, তুই ওকে দেখতে না যাওয়াই ভালো মা। ‘ ভুলে যাস না তোর সাথে কি করেছে ওরা।

–‘ উফফ আম্মু, চিন্তা করো না তোমার মেয়ে ওইখানে গিয়ে ইমোশনাল হবে না। ‘ আর আমি কিছু ভুলিনি কিন্তু তুমিই তো বলো শত্রুদের ও বিপদের সময় পাশে থাকতে হয়।

–‘আঁধারের সাথে কথা বলে নে, ও যদি বলে তাহলে যা।’

আম্মুর কথায় বাবা ও সায় জানালো। আমিও ঠিক আছে বলে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু আবার ফিরে এসে বললাম,,,

–‘আপু কোথায়, ওর বর হাসপাতালে ও যাবে না?’

আম্মু ও বাবার মুখ কালো হ’য়ে গেলো৷ আমি ও আর কিছু না বলেই উপরে যাচ্ছিলাম কিন্তু বাবার কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলাম।

–‘ওকে বলে দে ওর এই বাড়িতে জায়গা হবে না, তারেক ওকে ও বাড়িতে নিয়ে যাবে আজ এসে! মহারানী যেনো রেডি হয়ে থাকেন।’

আমি সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে যাই, আমিও তো সুযোগই খুজচ্ছিলাম আপুর সাথে কথা বলার৷ কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না, এখন যেহেতু পেলাম তাই কাজে লাগানো উচিত।

–‘তুই আমার ঘরে কি করছিস?’

আপুর চিৎকারের ঘাড় ঘুড়িয়ে বেলকনির দরজার সামনে তাকে দেখতে পাই।

–‘কথা বলতে এসেছিলাম।’
শক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম।

–‘তোর সাথে আমার কোনে কথা নেই, বের হ আমার ঘর থেকে? বের হ!

চিৎকার করে বলে উঠলো আলিশা।

–‘চিৎকার করবে না এটা ভদ্রলোকের বাসা, আর তোমার কাছে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার আছে।’

–‘বললাম না তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।’

এইবার আরোহী খানিকটা নরম হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,

–‘আমার সাথে কেনো করলে আপু তোমরা এমনটা বলো তো? ‘ নিজের ছোট বোনের সাথে এইরকম করতে তোমার বিবেকে বাঁধল না?

আপু হয়তো কিছুটা নরম হলো,,

–‘আরো আরো আমি তোর সাথে এমনটা করতে চাইনি কিন্তু পরিস্থিতি আমায় বাধ্য করেছে৷ তুই আমায় ক্ষমা করে দে রে… ‘
আর কিছু বলার আগেই আলিশার চোখ যায় আরোহীর ভেজা চুলের উপর মুহুর্তেই আলিশার চোখ মুখ রক্তিম হয়ে উঠে,,,,

–‘ওহ তার মানে তোর আসল উদ্দেশ্য হলো তোর বাসর রাতের গল্প বলতে এসেছিস?’ বরের সাথে রোমান্স করে ভেজা চুল দেখাতে এসেছিস? তুই, তুই একটা বেইমান! ফালতু মেয়ে তুই!এক রাতেই সবকিছু শেষ করে এসেছিস, লজ্জা করে না বেহায়া মেয়ে অন্যের হবু বরের সাথে রাত কাটা…

আর কিছু বলার আগেই আলিশার গালে কষে একটা থা’পড় পড়ে। আরোহী নিজেও হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে একবার আলিশা তো একবার অপর পাশে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে।

–‘তোর ওই মুখ দিয়ে যদি আর একটা বাজে ওয়াড বের করেছিস আমার বউয়ের সম্পর্কে তাহলে তোর জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।’ মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না কখনই আমি কিন্তু তোর ওই নোংরা মুখের কথা শুনে নিজেকে সামলাতেও কষ্ট হয়।

আঁধারের চিৎকারে কেঁপে উঠি আমি সাথে আপু ও৷ কিন্তু আঁধারের রাগ কমে না। ততোক্ষণে বাড়ির বাকি সবাইও চলে আসে,,,

–‘ও অন্যকারো হবু বর না নিজের বিয়ে করা বরের সাথে রাত কাটিয়েছে কথাটা ভালো ভাবে মাথায় রাখবি?’

আপুকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে আরোহীর হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে রুমে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সাথে রাগে খুব জোড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

আমি ভয়ে কাঁপতে ধরি,, একটা মানুষের এতো রাগ কিভাবে হতে পারে ভাই। আর আমার বোন যা বলার আমায় বলেছে আপনার কি? ভাবতে ভাবতেই কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। কি বলেছি মনে পড়তেই নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁপা-কাঁপি শুরু করি।

আড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখি রক্তচোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হয় যখন তখন টুপ করে গিলে ফেলবে। আঁধারকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করি কিন্তু হাসিটা ও আমার সাথে বেইমানী করছে। কিন্তু আমায় পাশ কেটে ওয়াশরুমে চলে যায় মিষ্টার তাশরিফ আধার চৌধুরী, মনে হয় নিশ্বাসটা হয়তো আটকে গেছিলো এতোক্ষণ। ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি।

আর মনে মনে ভাবি আজরাইলের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছি।

এই লোকটাকে দেখে যতোটা ভালো মনে হয় লোকটা আসলে আস্ত একটা রাগের ড্রাম। সুন্দর ছেলেদের বুঝি রাগটা একটু বেশিই থাকে। দেখে তো ভালোই মনে হয়। উচ্চতায় ৬ ফিট হবে হয়তো। সাদা ফর্সা দেখতে, চুলগুলো জেল দিয়ে মনে হয় সবসময় সেট করে রাখে৷ ডার্ক রেড ঠোঁট, আমার তো মনে হয় লিপস্টিক দেয় হয়তো। আবার ছোট ছোট চোখ। ভাবনার মাঝেই সামনে ওনার মতো কাউকে কল্পনায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে দূরত্ব কমিয়ে দাড়িয়ে গেলাম……..

#চলবে?

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০১

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০১

কবুল বলার আগ মুহুর্তে নিজের বড় বোন ও হবু বরের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও দেখে আমার সম্পুর্ন পৃথিবী যেনো থমকে যায়।
আমি আলিনা সিধরাতুল আরোহী। বাবা মায়ের ছোট মেয়ে আর আমার বড় বোন হচ্ছে আদ্ধিয়া সুলতানা আলিশা ভার্সিটির ২য় বর্ষের ছাত্রী। বাবা আমজাদ শেখ একজন সফল ব্যাবসায়ী আর মা গৃহিণী শাহনাজ শেখ।

আর যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা তার নাম তহিদুল আদর চৌধুরী একই ভার্সিটির ৩য় বর্ষের ছাত্র। বাবা তারেক চৌধুরী একজন সফল ব্যাবসায়ী ও মা আকলিমা চৌধুরী গৃহিণী। আর বড় ভাই তাশরিফ আঁধার চৌধুরী। তিনিও একই ভার্সিটিতে ৪র্থ বর্ষে পড়ে।

গল্পে ফেরা যাক,,

ঝাপসা চোখে একপলক আমার বড় বোন ও হবু বরের দিকে তাকিয়ে আমার বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেই। বাবাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আমার ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারছে না আর পারবেই বা কিভাবে তারা তো তাদের বড় মেয়ের আসল রুপ জানে না। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না তবে সবাই যে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেটা আমি এমনিতেও বুঝতে পারছি। অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা। বিয়ের আগ মুহুর্তে যে বিয়ের কনে ফোন দেখায় মনযোগ দিতে পারে সেটা হয়তো আমাকে না দেখলে তারা বুঝতেই পারতো না। আমি কিছু না বলেই এইবার বিয়ের আসর থেকে উঠে সামনে এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দিলাম আমার দিকে উৎসুকভাবে তাকিয়ে থাকা লোকটার দিকে। লোকটাও আমার মতো হয়তো চমকে গেলো কিন্তু তাকে দেখে বুঝতে পারলাম না সে রেগে গেলো নাকি ক্ষেপে গেলো। লোকটা একপলক আমার চোখের দিকে তাকাতেই আমার চোখ থেকে টুপটাপ করে বৃষ্টির পানির মতো জ্বলের ধারা বহিতে শুরু করল। উনি হয়তো এমনটা আশা করেননি। আমি কোনো কিছু আর চিন্তা করলাম না ছুটে গিয়ে আদরের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে দিলাম। আদর যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো আর সাথে পরিবারের বাকি সদস্যরাও।কিন্তু তাতে যেনো আমার কিছু যায় আসলো না এবার আমি আদরের কলার ধরে আর একটা চড় মারলাম, আর তাকে ঝাকাতে ঝাকাতে বললাম,,,

–‘কি ক্ষতি করেছিলাম তোর যার কারণে আমায় এতো বড় একটা শাস্তি দিলি তুই জানোয়ার?’ বল?

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও তাকিয়ে থাকলো না আমার বাবা৷ তিনি এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে আদরকে ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,,

–‘কি হয়েছে মা তোর?’ বাবা কে বল! তুই ওকে মারলি কেনো মা বল তো? ও কি করেছে বল বাবাকে?

কিন্তু আমি কিছু বলতে পারলাম না, মনে হচ্ছে আমার গলায় কথাগুলো আটকে যাচ্ছে কিনা আমায় যে আজ বলতেই হবে নাহলে যে এদের আসল রুপ সবার সামনে আনতে পারবো না।
এরই মধ্যে আমার হবু বর বাবার কাছ থেকে আমায় ছাড়িয়ে বলে,,,

—‘ কি হয়েছে আরো?’ আমি কি কিছু ভুল করেছি বলো? এই যে কানে ধরছি প্লিজ আমায় মাফ করে দাও? আর বিয়ের পর বাকি রাগগুলো করো কেমন এখন না প্লিজ! আজকে তো আমাদের বিয়ে বলো!

আমি কিছু বলছি না দেখে আপু এসে বলা শুরু করলো,,,

–‘এই আরো কি হয়েছে তোর বল তো?’ এমন করছিস কেন? কবুলটা বললেই তো বিয়ে হয়ে যায় তারপর তোর সো কল্ট বরের সাথে যা ইচ্ছে কর কিন্তু এখন কবুলটা বল প্লিজ।

আপুর কথায় বুঝা যাচ্ছে যে সে আমায় তাচ্ছিল্য করেই কথাগুলো বলছে। কিন্তু আমি তখনও চুপ করে আছি দেখে আপু আমার হাত ধরে টান দেয়। আমি কিছু বলার আগেই একটা শক্ত পুরুষালী হাত আমার হাত শক্ত করে ধরে এক ঝটকায় আপুর হাত সরিয়ে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে আপুকে আমার থেকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে,,

–‘খবরদার আলিশা,ডন্ট টাচ হার?’ তোমার ওই নোংরা হাত দিয়ে ওকে টাচ করার দুঃসাহস দেখাবে না।

–‘তুমি কি বলছো এসব আঁধার?’ ও আমার বোন আর ওকে টাচ করার অধিকার আমার আছে! কিন্তু তুমি কোন অধিকারে ওকে টাচ করছো? আর ওর কবুল বলার অপেক্ষায় আমাদের বিয়েও আটকে আছে আঁধার তোমার তো বুঝা উচিত।

–‘হাহ্ বিয়ে! কার বিয়ে?আমাদের? হা হা হা হা কোনো বিয়ে হবে না এখানে।’

–‘কি বলছো বাবা তুমি এসব?’ বিয়ে হবে না মানে?
আরোহীর বাবা আঁধারের পাশে দাড়িয়ে বলে।

আঁধার ফোনটা বাবার দিকে এগিয়ে দেয়। বাবা প্রশ্নবোধক ভাবে আঁধারের দিকে তাকালে আঁধার চোখ দিয়ে ইশারা করে ফোনটা হাতে নিতে। বাবা বিনাবাক্যে ফোনটা হাতে নিতেই চমকে উঠেন। আসতে আসতে সবাই ফোনটা নিয়ে দেখতে থাকে কিন্তু আঁধার আমার হাত ছাড়ে না শক্ত করেই ধরে থাকেন। আমি আঁধারের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আপুর দিকে এগিয়ে যাই!আপু কৌতুহল নিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু আপুর সেই কৌতুহল মুহুর্তের মধ্যেই রাগে পরিনত হয়ে যায় আর আপু একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠে,,,

–‘ তোর এতো বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস? বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস? তুই আমার ছোট বোন?
বলেই তেড়ে আসে আমার দিকে আর আমাকে ধাক্কা দেয়, কিন্তু এবারও আঁধার আমায় সরিয়ে এনে আপুকে শক্ত হাতে একটা চড় মেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,

–‘তোর সাহস হয় কি ওর গায়ে হাত দেওয়ার ফালতু মেয়ে?’ তোকে বারন করিনি ওকে তুই তোর নোংরা হাত দিয়ে ছুঁবি না! তারপর ও তোর এতো সাহস হয় কি করে?

আঁধারের চিৎকার সবাই কেঁপে উঠে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। কিন্তু আদর এগিয়ে এসে বলে,,

–‘ কি হয়েছে ভাই, আর তুমি ওকে মারলে কেনো আরো?’ আলো তো সত্যি বলেছে তুমি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো আগে আমায় মারলে এখন নিজের বড় বোনকে মারছো….

আর কিছু বলার আগেই আঁধারে শক্ত হাতের থাবায় নিচে পড়ে যায় আদর। কিন্তু আঁধার আর কিছু বলার আগেই আঁধারের বাবা মিস্টার তারেক চৌধুরী এসে আদরকে উঠিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আদর হয়তো এখনও বুঝতে পারছে না ঠিক কি কারণে এতোগুলো মার খেতে হচ্ছে ওদের। কিন্তু কিছু বলারই সুযোগ দিচ্ছে না কেউ ওদের। আর আমার বাবা সে তো পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে আর আম্মু সে তো অপলক চেয়ে আছে আমাদের দু’বোনের দিকে। আঁধার ওর বাবাকে থামিয়ে ফোনটা আদরের দিকে করতেই আদর অনেকটা চমকে গিয়ে নিজের দৃষ্টি লুকাতে চেষ্টা করে সেটা দেখে আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে আধারের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আপুর হাতে দিয়ে খানিকটা হাসি দেই। আপু চুপচাপ মোবাইলের দিকে দৃষ্টি দিতেই কেঁপে উঠে। হয়তো সে ও দৃষ্টি লুকাতে চেষ্টা করে।

আপু মোবাইল আমার হাতে দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে আঁধারের কাছে যায়,,,

–‘আঁধার বিশ্বাস করো এইসব মিথ্যে, আমি তোমায় ভালোবাসি আঁধার। তুমি আমায় বিশ্বাস করো একবার।’

আঁধার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–‘আরো প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো এইসব মিথ্যে আরো,কেউ হয়তো ইডিট করে আমাদের বিয়ে ভাঙতে এইসব করছে৷’ তুমি…

আর কিছু বলার আগেই এক ধাক্কা দিয়ে আদরকে আমার থেকে সরিয়ে আরও একটা চড় মেরে দেই।

–‘তোর আর আপুর সম্পর্কে আমি একটু সন্দেহ করতাম কিন্তু মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেছি সবসময়।’ কিন্তু তোরা কি করলি? ধোকা দিলি আমাদের?

এইবার আপু এসে আমার হাত ধরে মিনতি করে বলতে ধরলো,,,

–‘বোন আমার প্লিজ বিশ্বাস কর একবার…’

আর কিছু বলার আগেই আমি এক ঝটকায় আপুর হাত সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকি,,,,

–‘বোন বলবি না তোর ওই নোংরা মুখে বিশ্বাসঘাতক।’

এইবার আরোহী চিৎকার করে কেঁদে উঠে। সবার চোখে পানি কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

আরোহী বরাবরই পরিবার এবং চৌধুরী পরিবারের অনেক আদরের। তাই তো তারেক চৌধুরীর ইচ্ছে ছিলো আঁধারের বৌ করে নিয়ে যাবেন আরোহীকে কিন্তু আদরের পাগলামী দেখে মনে করেছিলেন আদর আরোহীকে সুখে রাখবে তাই তো বাধ্য হয়েই আঁধারের সাথে আলিশার ও বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু আঁধার সে জানতোই না আজকে তার বিয়ে।

ছোট থেকেই আঁধার বিদেশেই বড় হয়েছে কিন্তু তার মায়ের জন্য গত ৬ মাস হচ্ছে বিদেশ থেকে এসে আদরদের ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে। তাই আঁধার এতোদিন আরোহীদের চিনতো না। আরোহী ও চিনতো না তবে, আঁধারকে দেখেই আলিশা বিয়েতে রাজি হয়েছিলো। ভার্সিটির বর্তমান ক্রাশ বয় কে নিজের বর হিসেবে পাওয়াটা ছিলো আলিশার কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার সমান।আঁধার বেচারাকে মিথ্যে বলে নিয়ে এসে তারেক চৌধুরী বিয়ের পিরিতে বসিয়ে দিয়েছে। কে জানতো যে এতো কিছু হবে। আর আঁধার মাত্রই জানতে পারলো আরোহী কেবল এডমিশন পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু এতো তারাতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা এখনও আঁধারের কাছে রহস্যজনক। যদিও আঁধার এখনও তেমন কিছু জানে না। তবে আরোহী ব্যাপারে অনেক কিছুই তার জানা, কারণ তার বাসায় ২৪ ঘন্টা আরোহীকে নিয়েই আলোচনা করা হয়৷ আর আলিশাকে কয়েকবার ভার্সিটিতে দেখেছিলো৷ তাকে দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো। গায়ে পড়ে কথা বলতো যেটা আঁধারের অপছন্দের কারণ। আঁধার প্রথমে আরোহীর সাথে তার বিয়ে এমনটাই জানতো কিন্তু বিয়েতে বসার পরপরই আরোহী নয় আলিশাকে তার বিয়ে করতে হবে জানতেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বাবার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই এইসব হলো।

আর আদর ও আলিশার সম্পর্ক আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু কোনো একটা কারণে তাদের ব্রেকাপ হয়ে যায়। আদর মেয়েদের সাথে ফ্লাট করতে ভালোবাসে তাই আলিশাকে কখনও মন থেকে ভালোবাসতেই পারেনি। আর আলিশাও কিছুটা তেমনই তাই তো আদর ওকে ভালোবাসতে পারেনি ও নিজেও ভালোবাসেনি টাইমপাসের জন্য রিলেশনে জরিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এক বন্ধুর জন্মদিনে তারা কাছাকাছি এসে যায়। যার ফলস্বরূপ এই নিস্পাপ প্রাণটা এখন আলিশার গর্ভে।

আর আদর সে তো প্রথমে আরোহীকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। প্রথমে টাইম পাস করতে চাইলেও পড়ে ধিরে ধিরে আরোহীর প্রেমে পড়ে যায়৷ তাই আলিশা যখন বাচ্চাটার কথা আদরকে বলার পর পরই আদর যখন বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলে। তখন আলিশা বাচ্চাটা প্রথমে নষ্ট করতে না চাইলেও যখন আঁধারর সাথে বিয়ের কথা শুনে তখনই নষ্ট করাতে চায়৷ কিন্তু আদরের সাথে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় আলিশার হেল্থ কন্ডিশন ভালো না কিছুদিন পর আসতে। আদর ও ভাবে ততোদিনে তাদের বিয়ে হয়ে যাবে তখন নষ্ট করা যাবে। কিন্তু কে জানতো তাদের আজকে এই দিন দেখতে হবে।

আপু এগিয়ে আসতেই কে যেনো ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়৷ আমি চোখ তুলে তাকাতেই অগ্নিরুপে আম্মুকে দেখতে পাই।

এরইমধ্যে আদর চিৎকার করে বলে,,

–‘ওর গায়ে আর আঘাত করবেন না আন্টি প্লিজ ও মা হতে চলছে।’
আরও একবার সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আঁধারের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। আদরকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে মারতে থাকে।

–‘কাপুরুষ, নিজের বাচ্চাকে ও অস্বীকার করবি এখন তুই?’ আর কতো কিছু লুকিয়েছিস বল?

সবাই মিলে অনেক কষ্টে আঁধারকে সরিয়ে নিয়ে আসে। তারপর আলিশাকে বলা হয় আদরকে বিয়ে করার জন্য আর বাকি সব কথা পরে হবে।

কিন্তু আমি আর কিছু না বলেই চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যাই। চুপচাপ মেঝেতে বসে ভাবতে থাকি আমার আমার বড় বোন ও হবু বরের করা প্রতারণার কথা। কিন্তু আমায় হয়তো কেউ এইসব বিষয়ে ভাবতে দিতে চায় না তাই তো হুর মুর করে আধার ভিতরে ঢুকে যায়৷ কিন্তু আমি তাকাই না! কথা বলতে চাই না হয়তো তাই। কিন্তু আঁধারের কোনো ভাবাবেগ নেই। সে নিজের মতো এসে আমার পাশে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে।

–‘আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই আরোহি!’ উইল ইউ ম্যারি মি রাইট নাও? আর ভেবো না আমি তোমার মতামত জানতে চেয়েছি! আমি আমার ডিসিশন জানিয়ে দিলাম।

প্রথমের কথাগুলো আমার কানে বর্জ্যপাতের মতো আঘাত করলেও শেষের কথাগুলো শুনে মেজাজ বিগড়ে যায়।

–‘আমি কখনওই বিয়ে করবো না সেটা আপনাকে হোক বা আপনার ভাইকে। ‘

আরোহীর রাগ মিশ্রিত কন্ঠেও আঁধারে কোনো ভাবাবেগ হয় না। সে তার মতো উঠে দাড়িয়ে বলে,,,

–‘বিয়ে তো তোমায় করতেই হবে আর সেটা আমাকেই। ‘

আরোহী কিছু বলবে তার আগেই আঁধার ওর হাত শক্ত করে ধরে বলে,,,

–‘চলো! নো মোর ওয়াড।’ তোমার বাবা তোমার চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা সো চুপচাপ বিয়েটা করে নাও।

আঁধারের কথা শুনে বুঝতে পারলাম হয়তো বাবার জন্যই উনি বিয়েটা করতে চাচ্ছেন। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেক ভেবে চিন্তে আঁধারের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানাই। আঁধার হয়তো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। উনি চাইলেই জোড় করে নিয়ে যেতে পারতো কিন্তু উনি সেটা না করে হাত ধরে দাড়িয়ে হয়তো আমায় ভাবার জন্য সময় দিয়েছিলেন। যাই হোক এই মুহুর্তে আমি বাবার কথা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না৷

আঁধার আমার হাত ধরে বাবার সামনে গিয়ে বলেন,,,

–‘আমি আরোহীকে বিয়ে করছি এখন এই মুহুর্তে। ‘আর ওদেরও বিয়েটা দিয়ে দিন আঙ্কেল।

আরোহী তার বাবার দিকে তাকাতেই তার বাবা মাথা নিচু করে নেন। আরোহীর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি বের হয়। কিন্তু আরোহী নিজেকে শক্ত রেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

আরোহী ও আঁধারের বিয়ে সুস্ঠভাবেই সম্পন্ন। সাথে আলো ও আদরের ও। যেহেতু আগে থেকেই কথা ছিলো তাদের বিয়ে হবে পরিবারের লোকজন নিয়ে ঠিকই কিন্তু বিদায় ১বছর পর সেহেতু আঁধারা সবাই চলে যাবে কিন্তু আঁধার যাওয়ার আগেই বলে উঠে আজকে সে এখানে থাকবে। আরোহী যেনো পাথর হয়ে আছে তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। আদর বিয়ে করেই উঠে চলে গেছে তারপর আর তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় নি। আর আলিশা অপলক চেয়ে আছে আঁধারের দিকে। আর মনে মনে ভাবছে আঁধারের সাথে আজকে তার থাকার কথা ছিলে কিন্তু তার কিছু ভুলের জন্য আজকে তাকে এতে কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।

বাসর ঘরে বসে আছি আমি। বসে আছি বললে ভুল হবে একবার বসছি তো একবার উঠছি আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। আদর অনেক ভালোবাসতো আমায় কিন্তু আমি কখনই তাকে ভালোবাসিনি। আমি ছোট থেকেই পছন্দ করতাম না তাকে কিন্তু বাবার কথায় বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিলাম ঠিকই। তবে সময় চেয়েছিলাম তাই ৩ মাস সময় দিয়েছিলেন আমায় আদরের সাথে সম্পর্ক ঠিক করার যদিও সেটাকে সম্পর্ক ঠিক বলে না কিন্তু আদরের জন্য মনের মধ্যে একটা কিছু অনুভব করতে শুরু করেছিলাম হয়তো তাই একটু কষ্ট হচ্ছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আপুর এই বিশ্বাসঘাতকতা কি করে ভুলবো আমি?

আপু নামের এই মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসি আমি। কিন্তু আপু মন থেকে আমায় সবসময় হিংসে করতো। আমিও বুঝতাম তবে কিছু বলতাম না। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে এইটায় ভাবতাম। কিন্তু এতো বড় একটা ধোকা কি করে মানবো আমি। বুকের ভেতরের চিন চিন ব্যাথাটা ধিরে ধিরে বাড়ছে মনে হচ্ছে।

দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই চোখ তুলে তাকিয়ে আঁধারের আঁধার মুখ দেখেই চোখ নামিয়ে নেই।

আঁধার চুপচাপ দরজা লাগিয়ে এসে ওয়াশরুম ফ্রেস হতে চলে যায়। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরে উনি টাওয়াল পড়ে খালি গায়ে বের হতেই আমি জোড়ে একটা চিৎকার দেই।

–‘এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার?’এভাবে চিৎকার করছো কেনো?

ধমক দিয়ে উনি বলে উঠেন।

–‘আপনি এভাবে বেশরমের মতো শুধু টাওয়াল পড়ে ঘুড়ছেন কেনো?’

অন্য দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করি আমি।

কিন্তু তাতে মনে হয় না তার কোনো হেলদোল দেখা গেলো।সে নিজের মতো সার্ট প্যান্ট নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে যায়।আমি বোকার মতো আবার তাকিয়ে আছি। মনে মনে বেয়াদব বলে কয়েকটা গালি দেই।

উনি বের হয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়েন।

–‘একি আপনি বিছানায় শুয়ে পরলেন কেনো?’ আমি কোথায় ঘুমাবো?

ওনাকে প্রশ্ন করাতে মনে হলো উনি অনেকটাই বিরক্ত হলেন।

#চলবে?