নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০১

0
601

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০১

কবুল বলার আগ মুহুর্তে নিজের বড় বোন ও হবু বরের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও দেখে আমার সম্পুর্ন পৃথিবী যেনো থমকে যায়।
আমি আলিনা সিধরাতুল আরোহী। বাবা মায়ের ছোট মেয়ে আর আমার বড় বোন হচ্ছে আদ্ধিয়া সুলতানা আলিশা ভার্সিটির ২য় বর্ষের ছাত্রী। বাবা আমজাদ শেখ একজন সফল ব্যাবসায়ী আর মা গৃহিণী শাহনাজ শেখ।

আর যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা তার নাম তহিদুল আদর চৌধুরী একই ভার্সিটির ৩য় বর্ষের ছাত্র। বাবা তারেক চৌধুরী একজন সফল ব্যাবসায়ী ও মা আকলিমা চৌধুরী গৃহিণী। আর বড় ভাই তাশরিফ আঁধার চৌধুরী। তিনিও একই ভার্সিটিতে ৪র্থ বর্ষে পড়ে।

গল্পে ফেরা যাক,,

ঝাপসা চোখে একপলক আমার বড় বোন ও হবু বরের দিকে তাকিয়ে আমার বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেই। বাবাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আমার ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারছে না আর পারবেই বা কিভাবে তারা তো তাদের বড় মেয়ের আসল রুপ জানে না। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না তবে সবাই যে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেটা আমি এমনিতেও বুঝতে পারছি। অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা। বিয়ের আগ মুহুর্তে যে বিয়ের কনে ফোন দেখায় মনযোগ দিতে পারে সেটা হয়তো আমাকে না দেখলে তারা বুঝতেই পারতো না। আমি কিছু না বলেই এইবার বিয়ের আসর থেকে উঠে সামনে এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দিলাম আমার দিকে উৎসুকভাবে তাকিয়ে থাকা লোকটার দিকে। লোকটাও আমার মতো হয়তো চমকে গেলো কিন্তু তাকে দেখে বুঝতে পারলাম না সে রেগে গেলো নাকি ক্ষেপে গেলো। লোকটা একপলক আমার চোখের দিকে তাকাতেই আমার চোখ থেকে টুপটাপ করে বৃষ্টির পানির মতো জ্বলের ধারা বহিতে শুরু করল। উনি হয়তো এমনটা আশা করেননি। আমি কোনো কিছু আর চিন্তা করলাম না ছুটে গিয়ে আদরের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে দিলাম। আদর যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো আর সাথে পরিবারের বাকি সদস্যরাও।কিন্তু তাতে যেনো আমার কিছু যায় আসলো না এবার আমি আদরের কলার ধরে আর একটা চড় মারলাম, আর তাকে ঝাকাতে ঝাকাতে বললাম,,,

–‘কি ক্ষতি করেছিলাম তোর যার কারণে আমায় এতো বড় একটা শাস্তি দিলি তুই জানোয়ার?’ বল?

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও তাকিয়ে থাকলো না আমার বাবা৷ তিনি এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে আদরকে ছাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,,

–‘কি হয়েছে মা তোর?’ বাবা কে বল! তুই ওকে মারলি কেনো মা বল তো? ও কি করেছে বল বাবাকে?

কিন্তু আমি কিছু বলতে পারলাম না, মনে হচ্ছে আমার গলায় কথাগুলো আটকে যাচ্ছে কিনা আমায় যে আজ বলতেই হবে নাহলে যে এদের আসল রুপ সবার সামনে আনতে পারবো না।
এরই মধ্যে আমার হবু বর বাবার কাছ থেকে আমায় ছাড়িয়ে বলে,,,

—‘ কি হয়েছে আরো?’ আমি কি কিছু ভুল করেছি বলো? এই যে কানে ধরছি প্লিজ আমায় মাফ করে দাও? আর বিয়ের পর বাকি রাগগুলো করো কেমন এখন না প্লিজ! আজকে তো আমাদের বিয়ে বলো!

আমি কিছু বলছি না দেখে আপু এসে বলা শুরু করলো,,,

–‘এই আরো কি হয়েছে তোর বল তো?’ এমন করছিস কেন? কবুলটা বললেই তো বিয়ে হয়ে যায় তারপর তোর সো কল্ট বরের সাথে যা ইচ্ছে কর কিন্তু এখন কবুলটা বল প্লিজ।

আপুর কথায় বুঝা যাচ্ছে যে সে আমায় তাচ্ছিল্য করেই কথাগুলো বলছে। কিন্তু আমি তখনও চুপ করে আছি দেখে আপু আমার হাত ধরে টান দেয়। আমি কিছু বলার আগেই একটা শক্ত পুরুষালী হাত আমার হাত শক্ত করে ধরে এক ঝটকায় আপুর হাত সরিয়ে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে আপুকে আমার থেকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে,,

–‘খবরদার আলিশা,ডন্ট টাচ হার?’ তোমার ওই নোংরা হাত দিয়ে ওকে টাচ করার দুঃসাহস দেখাবে না।

–‘তুমি কি বলছো এসব আঁধার?’ ও আমার বোন আর ওকে টাচ করার অধিকার আমার আছে! কিন্তু তুমি কোন অধিকারে ওকে টাচ করছো? আর ওর কবুল বলার অপেক্ষায় আমাদের বিয়েও আটকে আছে আঁধার তোমার তো বুঝা উচিত।

–‘হাহ্ বিয়ে! কার বিয়ে?আমাদের? হা হা হা হা কোনো বিয়ে হবে না এখানে।’

–‘কি বলছো বাবা তুমি এসব?’ বিয়ে হবে না মানে?
আরোহীর বাবা আঁধারের পাশে দাড়িয়ে বলে।

আঁধার ফোনটা বাবার দিকে এগিয়ে দেয়। বাবা প্রশ্নবোধক ভাবে আঁধারের দিকে তাকালে আঁধার চোখ দিয়ে ইশারা করে ফোনটা হাতে নিতে। বাবা বিনাবাক্যে ফোনটা হাতে নিতেই চমকে উঠেন। আসতে আসতে সবাই ফোনটা নিয়ে দেখতে থাকে কিন্তু আঁধার আমার হাত ছাড়ে না শক্ত করেই ধরে থাকেন। আমি আঁধারের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আপুর দিকে এগিয়ে যাই!আপু কৌতুহল নিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু আপুর সেই কৌতুহল মুহুর্তের মধ্যেই রাগে পরিনত হয়ে যায় আর আপু একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠে,,,

–‘ তোর এতো বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস? বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস? তুই আমার ছোট বোন?
বলেই তেড়ে আসে আমার দিকে আর আমাকে ধাক্কা দেয়, কিন্তু এবারও আঁধার আমায় সরিয়ে এনে আপুকে শক্ত হাতে একটা চড় মেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,

–‘তোর সাহস হয় কি ওর গায়ে হাত দেওয়ার ফালতু মেয়ে?’ তোকে বারন করিনি ওকে তুই তোর নোংরা হাত দিয়ে ছুঁবি না! তারপর ও তোর এতো সাহস হয় কি করে?

আঁধারের চিৎকার সবাই কেঁপে উঠে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। কিন্তু আদর এগিয়ে এসে বলে,,

–‘ কি হয়েছে ভাই, আর তুমি ওকে মারলে কেনো আরো?’ আলো তো সত্যি বলেছে তুমি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো আগে আমায় মারলে এখন নিজের বড় বোনকে মারছো….

আর কিছু বলার আগেই আঁধারে শক্ত হাতের থাবায় নিচে পড়ে যায় আদর। কিন্তু আঁধার আর কিছু বলার আগেই আঁধারের বাবা মিস্টার তারেক চৌধুরী এসে আদরকে উঠিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আদর হয়তো এখনও বুঝতে পারছে না ঠিক কি কারণে এতোগুলো মার খেতে হচ্ছে ওদের। কিন্তু কিছু বলারই সুযোগ দিচ্ছে না কেউ ওদের। আর আমার বাবা সে তো পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে আর আম্মু সে তো অপলক চেয়ে আছে আমাদের দু’বোনের দিকে। আঁধার ওর বাবাকে থামিয়ে ফোনটা আদরের দিকে করতেই আদর অনেকটা চমকে গিয়ে নিজের দৃষ্টি লুকাতে চেষ্টা করে সেটা দেখে আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে আধারের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আপুর হাতে দিয়ে খানিকটা হাসি দেই। আপু চুপচাপ মোবাইলের দিকে দৃষ্টি দিতেই কেঁপে উঠে। হয়তো সে ও দৃষ্টি লুকাতে চেষ্টা করে।

আপু মোবাইল আমার হাতে দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে আঁধারের কাছে যায়,,,

–‘আঁধার বিশ্বাস করো এইসব মিথ্যে, আমি তোমায় ভালোবাসি আঁধার। তুমি আমায় বিশ্বাস করো একবার।’

আঁধার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–‘আরো প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো এইসব মিথ্যে আরো,কেউ হয়তো ইডিট করে আমাদের বিয়ে ভাঙতে এইসব করছে৷’ তুমি…

আর কিছু বলার আগেই এক ধাক্কা দিয়ে আদরকে আমার থেকে সরিয়ে আরও একটা চড় মেরে দেই।

–‘তোর আর আপুর সম্পর্কে আমি একটু সন্দেহ করতাম কিন্তু মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেছি সবসময়।’ কিন্তু তোরা কি করলি? ধোকা দিলি আমাদের?

এইবার আপু এসে আমার হাত ধরে মিনতি করে বলতে ধরলো,,,

–‘বোন আমার প্লিজ বিশ্বাস কর একবার…’

আর কিছু বলার আগেই আমি এক ঝটকায় আপুর হাত সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকি,,,,

–‘বোন বলবি না তোর ওই নোংরা মুখে বিশ্বাসঘাতক।’

এইবার আরোহী চিৎকার করে কেঁদে উঠে। সবার চোখে পানি কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

আরোহী বরাবরই পরিবার এবং চৌধুরী পরিবারের অনেক আদরের। তাই তো তারেক চৌধুরীর ইচ্ছে ছিলো আঁধারের বৌ করে নিয়ে যাবেন আরোহীকে কিন্তু আদরের পাগলামী দেখে মনে করেছিলেন আদর আরোহীকে সুখে রাখবে তাই তো বাধ্য হয়েই আঁধারের সাথে আলিশার ও বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু আঁধার সে জানতোই না আজকে তার বিয়ে।

ছোট থেকেই আঁধার বিদেশেই বড় হয়েছে কিন্তু তার মায়ের জন্য গত ৬ মাস হচ্ছে বিদেশ থেকে এসে আদরদের ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে। তাই আঁধার এতোদিন আরোহীদের চিনতো না। আরোহী ও চিনতো না তবে, আঁধারকে দেখেই আলিশা বিয়েতে রাজি হয়েছিলো। ভার্সিটির বর্তমান ক্রাশ বয় কে নিজের বর হিসেবে পাওয়াটা ছিলো আলিশার কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার সমান।আঁধার বেচারাকে মিথ্যে বলে নিয়ে এসে তারেক চৌধুরী বিয়ের পিরিতে বসিয়ে দিয়েছে। কে জানতো যে এতো কিছু হবে। আর আঁধার মাত্রই জানতে পারলো আরোহী কেবল এডমিশন পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু এতো তারাতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা এখনও আঁধারের কাছে রহস্যজনক। যদিও আঁধার এখনও তেমন কিছু জানে না। তবে আরোহী ব্যাপারে অনেক কিছুই তার জানা, কারণ তার বাসায় ২৪ ঘন্টা আরোহীকে নিয়েই আলোচনা করা হয়৷ আর আলিশাকে কয়েকবার ভার্সিটিতে দেখেছিলো৷ তাকে দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো। গায়ে পড়ে কথা বলতো যেটা আঁধারের অপছন্দের কারণ। আঁধার প্রথমে আরোহীর সাথে তার বিয়ে এমনটাই জানতো কিন্তু বিয়েতে বসার পরপরই আরোহী নয় আলিশাকে তার বিয়ে করতে হবে জানতেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বাবার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই এইসব হলো।

আর আদর ও আলিশার সম্পর্ক আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু কোনো একটা কারণে তাদের ব্রেকাপ হয়ে যায়। আদর মেয়েদের সাথে ফ্লাট করতে ভালোবাসে তাই আলিশাকে কখনও মন থেকে ভালোবাসতেই পারেনি। আর আলিশাও কিছুটা তেমনই তাই তো আদর ওকে ভালোবাসতে পারেনি ও নিজেও ভালোবাসেনি টাইমপাসের জন্য রিলেশনে জরিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এক বন্ধুর জন্মদিনে তারা কাছাকাছি এসে যায়। যার ফলস্বরূপ এই নিস্পাপ প্রাণটা এখন আলিশার গর্ভে।

আর আদর সে তো প্রথমে আরোহীকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। প্রথমে টাইম পাস করতে চাইলেও পড়ে ধিরে ধিরে আরোহীর প্রেমে পড়ে যায়৷ তাই আলিশা যখন বাচ্চাটার কথা আদরকে বলার পর পরই আদর যখন বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলে। তখন আলিশা বাচ্চাটা প্রথমে নষ্ট করতে না চাইলেও যখন আঁধারর সাথে বিয়ের কথা শুনে তখনই নষ্ট করাতে চায়৷ কিন্তু আদরের সাথে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় আলিশার হেল্থ কন্ডিশন ভালো না কিছুদিন পর আসতে। আদর ও ভাবে ততোদিনে তাদের বিয়ে হয়ে যাবে তখন নষ্ট করা যাবে। কিন্তু কে জানতো তাদের আজকে এই দিন দেখতে হবে।

আপু এগিয়ে আসতেই কে যেনো ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়৷ আমি চোখ তুলে তাকাতেই অগ্নিরুপে আম্মুকে দেখতে পাই।

এরইমধ্যে আদর চিৎকার করে বলে,,

–‘ওর গায়ে আর আঘাত করবেন না আন্টি প্লিজ ও মা হতে চলছে।’
আরও একবার সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আঁধারের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। আদরকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে মারতে থাকে।

–‘কাপুরুষ, নিজের বাচ্চাকে ও অস্বীকার করবি এখন তুই?’ আর কতো কিছু লুকিয়েছিস বল?

সবাই মিলে অনেক কষ্টে আঁধারকে সরিয়ে নিয়ে আসে। তারপর আলিশাকে বলা হয় আদরকে বিয়ে করার জন্য আর বাকি সব কথা পরে হবে।

কিন্তু আমি আর কিছু না বলেই চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যাই। চুপচাপ মেঝেতে বসে ভাবতে থাকি আমার আমার বড় বোন ও হবু বরের করা প্রতারণার কথা। কিন্তু আমায় হয়তো কেউ এইসব বিষয়ে ভাবতে দিতে চায় না তাই তো হুর মুর করে আধার ভিতরে ঢুকে যায়৷ কিন্তু আমি তাকাই না! কথা বলতে চাই না হয়তো তাই। কিন্তু আঁধারের কোনো ভাবাবেগ নেই। সে নিজের মতো এসে আমার পাশে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে।

–‘আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই আরোহি!’ উইল ইউ ম্যারি মি রাইট নাও? আর ভেবো না আমি তোমার মতামত জানতে চেয়েছি! আমি আমার ডিসিশন জানিয়ে দিলাম।

প্রথমের কথাগুলো আমার কানে বর্জ্যপাতের মতো আঘাত করলেও শেষের কথাগুলো শুনে মেজাজ বিগড়ে যায়।

–‘আমি কখনওই বিয়ে করবো না সেটা আপনাকে হোক বা আপনার ভাইকে। ‘

আরোহীর রাগ মিশ্রিত কন্ঠেও আঁধারে কোনো ভাবাবেগ হয় না। সে তার মতো উঠে দাড়িয়ে বলে,,,

–‘বিয়ে তো তোমায় করতেই হবে আর সেটা আমাকেই। ‘

আরোহী কিছু বলবে তার আগেই আঁধার ওর হাত শক্ত করে ধরে বলে,,,

–‘চলো! নো মোর ওয়াড।’ তোমার বাবা তোমার চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা সো চুপচাপ বিয়েটা করে নাও।

আঁধারের কথা শুনে বুঝতে পারলাম হয়তো বাবার জন্যই উনি বিয়েটা করতে চাচ্ছেন। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেক ভেবে চিন্তে আঁধারের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানাই। আঁধার হয়তো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। উনি চাইলেই জোড় করে নিয়ে যেতে পারতো কিন্তু উনি সেটা না করে হাত ধরে দাড়িয়ে হয়তো আমায় ভাবার জন্য সময় দিয়েছিলেন। যাই হোক এই মুহুর্তে আমি বাবার কথা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না৷

আঁধার আমার হাত ধরে বাবার সামনে গিয়ে বলেন,,,

–‘আমি আরোহীকে বিয়ে করছি এখন এই মুহুর্তে। ‘আর ওদেরও বিয়েটা দিয়ে দিন আঙ্কেল।

আরোহী তার বাবার দিকে তাকাতেই তার বাবা মাথা নিচু করে নেন। আরোহীর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি বের হয়। কিন্তু আরোহী নিজেকে শক্ত রেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

আরোহী ও আঁধারের বিয়ে সুস্ঠভাবেই সম্পন্ন। সাথে আলো ও আদরের ও। যেহেতু আগে থেকেই কথা ছিলো তাদের বিয়ে হবে পরিবারের লোকজন নিয়ে ঠিকই কিন্তু বিদায় ১বছর পর সেহেতু আঁধারা সবাই চলে যাবে কিন্তু আঁধার যাওয়ার আগেই বলে উঠে আজকে সে এখানে থাকবে। আরোহী যেনো পাথর হয়ে আছে তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। আদর বিয়ে করেই উঠে চলে গেছে তারপর আর তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় নি। আর আলিশা অপলক চেয়ে আছে আঁধারের দিকে। আর মনে মনে ভাবছে আঁধারের সাথে আজকে তার থাকার কথা ছিলে কিন্তু তার কিছু ভুলের জন্য আজকে তাকে এতে কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।

বাসর ঘরে বসে আছি আমি। বসে আছি বললে ভুল হবে একবার বসছি তো একবার উঠছি আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। আদর অনেক ভালোবাসতো আমায় কিন্তু আমি কখনই তাকে ভালোবাসিনি। আমি ছোট থেকেই পছন্দ করতাম না তাকে কিন্তু বাবার কথায় বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিলাম ঠিকই। তবে সময় চেয়েছিলাম তাই ৩ মাস সময় দিয়েছিলেন আমায় আদরের সাথে সম্পর্ক ঠিক করার যদিও সেটাকে সম্পর্ক ঠিক বলে না কিন্তু আদরের জন্য মনের মধ্যে একটা কিছু অনুভব করতে শুরু করেছিলাম হয়তো তাই একটু কষ্ট হচ্ছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আপুর এই বিশ্বাসঘাতকতা কি করে ভুলবো আমি?

আপু নামের এই মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসি আমি। কিন্তু আপু মন থেকে আমায় সবসময় হিংসে করতো। আমিও বুঝতাম তবে কিছু বলতাম না। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে এইটায় ভাবতাম। কিন্তু এতো বড় একটা ধোকা কি করে মানবো আমি। বুকের ভেতরের চিন চিন ব্যাথাটা ধিরে ধিরে বাড়ছে মনে হচ্ছে।

দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই চোখ তুলে তাকিয়ে আঁধারের আঁধার মুখ দেখেই চোখ নামিয়ে নেই।

আঁধার চুপচাপ দরজা লাগিয়ে এসে ওয়াশরুম ফ্রেস হতে চলে যায়। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরে উনি টাওয়াল পড়ে খালি গায়ে বের হতেই আমি জোড়ে একটা চিৎকার দেই।

–‘এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার?’এভাবে চিৎকার করছো কেনো?

ধমক দিয়ে উনি বলে উঠেন।

–‘আপনি এভাবে বেশরমের মতো শুধু টাওয়াল পড়ে ঘুড়ছেন কেনো?’

অন্য দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করি আমি।

কিন্তু তাতে মনে হয় না তার কোনো হেলদোল দেখা গেলো।সে নিজের মতো সার্ট প্যান্ট নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে যায়।আমি বোকার মতো আবার তাকিয়ে আছি। মনে মনে বেয়াদব বলে কয়েকটা গালি দেই।

উনি বের হয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়েন।

–‘একি আপনি বিছানায় শুয়ে পরলেন কেনো?’ আমি কোথায় ঘুমাবো?

ওনাকে প্রশ্ন করাতে মনে হলো উনি অনেকটাই বিরক্ত হলেন।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে