নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৬

0
434

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৬

🍁

এরইমধ্যে কেটে গেছে ১ মাস কিন্তু সেদিনের পর আঁধারের আর দেখা পাওয়া যায়নি। আরোহীর খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করেনি। সেদিনের পর থেকেই আঁধার একপ্রকার তার থেকে দূরে চলে গেছে।

একদিন দরকারে আরোহী ফোন দিতে গিয়ে বুঝতে পারে আঁধার তাকে ব্লক করে দিয়েছে। তাই আরোহীর নিজের ও আঁধারের উপর অভিমান জমে গেছে। অবশ্য আদর আরোহীকে অনেক কয়েকবার ফোন করেছিলো,আরোহী বিরক্ত হয়ে ব্লক করে দিয়েছে।

আরোহী এখন অন্যকারো স্ত্রী সেটাই মেনে নিয়েছে, আর আদর এখন আরোহীর বড় বোনের স্বামী। সব থেকে বড় কথা আদর একটা প্রতারক, বেইমান।

আর আলিশাকে পরের দিনেই চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কারণ আলিশা যেহেতু প্রেগনেন্ট তাই সবাই নানান ধরনের কথা বলতে পারে সে জন্যই মূলত ।

কিন্তু আরোহীকে ১ বছর সময় দেওয়া হয়েছে নিজেদের মানিয়ে নিতে। এরই মধ্যে আরোহীর এডমিশনের রেজাল্ট ও বের হয়েছে, ভর্তি ও হয়ে গিয়েছে সে। তবে তার জন্য ভালো হয়েছে যে আঁধারদের ভার্সিটিতেই তার চান্স হয়ে গিয়েছে। ক্যামিস্ট্রি নিয়েই সে চান্স পেয়েছে।

আরোহী ভার্সিটি নিয়ে অনেক এক্সাইটেড, কারণ তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাহি সে ও সেম ভার্সিটি ও সেম সাবজেক্ট নিয়ে চান্স পেয়েছে।আরোহী সে সব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় সকালে তাকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, ভার্সিটি যেতে হবে, নতুন ভার্সিটি নতুন ক্লাস,নতুন সব তাই একটু বেশিই এক্সাইটেড আরোহী।

ঘুমের মধ্যেই বরোহীর মনে হয় কারো গরম নিশ্বাস তার চোখ মুখে পড়ছে।ধিরে ধিরে নিশ্বাসের প্রবণতা বেড়েই চলছে,কিন্তু ঘুমে বুদ হয়ে থাকার কারণে আরোহী চোখ খুলতেই পারছে না।

কিন্তু হঠাৎ করেই কারো গভীর ভাবে ওষ্ঠদ্বয় কপালে চেপে ধরতেই কেঁপে উঠে আরোহী। সামান্য নড়েচরে আবার ও ঘুমিয়ে যায়, এতে যেনো সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে সামনে থাকা যুবকটি। কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে তার অতি প্রিয় মানুষটির মুখের দিকে!

এই একটা মানুষই তার লাইফে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ, এই বালিকাটিকে একনজর দেখার জন্য প্রতিটা দিন, প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা সেকেন্ড ছটফট করে, আর বালিকাটি তারই সামনে কিভাবে এতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে যায়।

সকালে,,,

এলার্মের শব্দে ধড়পড় করে উঠে বসে আরোহী, বিরক্ত হয় খানিকটা এলার্মের জন্য।

–‘ধেত, কতো সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম আমি! সব চলে গেলো ধুর। ‘

বলেই সময়ের দিকে চোখ যেতেই চোখ গুলো আপনা আপনি বড় বড় হয়ে যায়।

–‘ইয়া আল্লাহ!৯ টা বাজে, আর তো মাত্র ৪০ মিনিট সময় হাতে।’

বলেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে যায়। ২০ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। দৌড়ে গিয়ে বলে,,,

–‘আম্মু আমি গেলাম আর হাতে একটা পরটা নিয়ে গেলাম।’

–‘ভালো মতো খেয়ে যা আরো,আরে শুন আরো।’

চেঁচাতে চেঁচাতে বের হয়ে আসলেন শাহানাজ শেখ। কিন্তু বের হয়ে কোথাও আর তার আদরের মেয়েকে দেখতে পেলেন না। হতাশার নিশ্বাস ছাড়লেন তিনি,বিরক্ত হয়ে আবার নিজের কাজে চলে গেলেন।

এদিকে আরোহী ভার্সিটির সামনে আসতেই পুরো ভার্সিটির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তেই কেউ পেছন থেকে দু হাত দিয়ে তার চোখ ধরে নেয়। আরোহী প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পড়ে বুঝতে পারে কে সেটা, তাই পেছনে ঘুরেই একপ্রকার ঝাপটে ধরে তাকে।

রাহি মুচকি নিজেও জড়িয়ে ধরে হেসে বলে,,,

–‘আরো, তুই কি আদর ভাইয়া মনে করে আমায় এভাবে ঝাপটে ধরলি নাকি এয়ার?’ নট ফেয়ার, আদর ভাইয়া দেখলে কিন্তু রাগ করবে বুঝলি।

রাহি ঠাট্টার স্বরে এসব বললেও আরোহীর কাছে কথাগুলো একদম বিষাক্ত লাগে৷ সে তো আদরের নাম পর্যন্ত শুনতে নারাজ তাহলে সবাই কেনো বার বার আদরের কথাই তাকে মনে করিয়ে দেয়।

আরোহী রাহিকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে যায়। এতে যেনো রাহি কিছুটা অবাক হয়ে যায়।

–‘কি হয়েছে আরো?’ তোদের কি ঝগড়া হয়েছে নাকি?

আরোহীর থেকে কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পেয়ে রাহি আবার বলে উঠে,,

–‘কি রে বল? ‘

–‘আসলে তোকে বলাই হয়নি সেদিন আদরের সাথে আপুর বিয়ে হয়েছে, ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতো।’

কথাগুলো বলেই খানিকটা জোড়ে দম নেয় আরোহী। রাহি অবাক হওয়ার সাথে রাগ হয়ে ও যায়।

–‘কি বললি তুই, ওরা যদি দুজন দুজনকে ভালোবাসতো তাহলে তোর সাথে কেনো আদর ভাইয়া এই নাটকটা করলো!’ তুই কিভাবে হতে দিলি বিয়েটা, তের কি হবে বল তে? আর আলিশা আপুর সাথে না আদর ভাইয়ার বড় ভাইয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল?

–‘উফ ভাই একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেই বল তো, চল ক্লাসে গিয়ে তোকে ধিরে ধিরে সব বলবো। ‘

রাহি কিছু না বলেই মাথা নাড়ায়, তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতো বড় একটা শকের মধ্যে আছে সে।

রাহির মন খারাপ দেখে আরোহীর ও মন খারাপ হয়ে যায়। আরোহী জানে এইটুকুতেই রাহি মন খারাপ করছে পুরোটা শুনলে না জানি কতোটা রেগে যায়।

রাহি একপলক আরোহীর মলিন মুখশ্রীর দিকে তাকায়, তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করেই আরোহীর সাথে গল্প জুড়ে দেয়। আরোহীর ও মুখে হাসি ফুটে উঠে!

ভার্সিটির ভেতর আসতেই দুজনে প্রাপ্তির হাসি দেয়, এই ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন তাদের অনেক আগে থেকেই। অবশেষে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।

আর কোন কিছু না ভেবেই তারা ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়, ঠিক তখনই কয়েকজন ছেলেমেয়ে তাদের সামনে চলে আসে।হঠাৎ এরকমটা হওয়াতে আরোহী ও রাহি দু’জনেই চমকে যায়, সাথে ভয় ও পেয়ে যায়।

–‘ এই মেয়ে, সিনিয়রদের দেখে সালাম দিতে হয় জানো না?’ অভদ্রের মতো দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছো!

একটা মেয়ে ধমকে কথাটি বলে উঠে।

–‘সরি আপু আমরা আসলে খেয়াল করিনি, করলে নিশ্চয়ই সালাম দিয়ে যেতাম।’

রাহি ভয় পেয়ে আরোহীর হাত চেপে ধরে।
আরোহীর কথায় সামনের মেয়েটি আরও ক্ষেপে যায় মনে হয়,,,

–‘ওহহহহ আচ্ছা, তা কি খেয়াল করছিলে শুনি?’ আর ফার্ট ইয়ার নিশ্চয়ই?

–‘হ্যা আপু। ‘

মেয়েটির কথায় ছোট করে জবাব দেয় রাহি।

–‘ তা নাম কি বেবিরা তোমাদের?’
একটা ছেলে প্রশ্ন করে,,

আরোহী ভ্রুকুচকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটির দিকে, ছেলেটিকে দেখে তার ছেঁচড়া ছাড়া কিছুই মনে হয় না। আর মেয়েগুলোর পোশাক দেখে তো আরোহীর মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই এদের জামা কেনার টাকা নেই তাই তো এতো ছোট আর ছেঁড়া ফাটা কাপড় পড়েছে।

–‘এই মেয়ে কি বলছে সাদ তোমাদের শুনতে পাও নি? ‘

পাশে দাড়িয়ে থাকা আর একটি মেয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে।

–‘ আমাদের নাম তো আর বেবি না তাই চুপ করে আছি আপু।’

আরোহীর কাঠ কাঠ উত্তরে রাহির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সে জানে এই সিনিয়ররা রেগে গেলে কি করতে পারে, একবার তার বড় বোনকে মাঠে কান ধরে দাড়িয়ে রেখেছিলো।

–‘আমার নাম রাহিয়াত রাহি আর ওর নাম আলিনা সিদ্ধরাতুল আরোহী।’

ভয়ে ভয়ে বলে উঠে রাহি।

–‘তা আরোহী বেবি, তুমি তো প্রচুর হ….ট। ‘

আরোহীর উপর থেকে নিচ অব্দি তাকিয়ে বললো কথাটা সাদ।

আরোহী ঘৃণায় চোখ মুখ কুচকে নেয়।

–‘ ভাই পাশের টা ও কিন্তু মারাত্মক। ‘

পাশ থেকে রাফি বলে উঠলো কথাটি।

রাহি ভয়ে কাঁপছে, আর আল্লাহ আল্লাহ করছে কেউ যেনো এসে তাদের বাঁচিয়ে দেয়।কিন্তু তাদের ভাগ্যে মনে হয় আজকে এমটাই ছিলো তাই তো কেউ আর আসলো না।

–‘তা এই হ..ট মেয়েটির জন্য হ..ট একটা র্যাগ তো দেওয়াই যায় কি বলিস সবাই? ‘

প্রথমের মেয়েটি কথাটা বলে উঠলো।

–‘ দে অবশ্যই দে, তার আগে আমায় একটা কিস করতে বল!’

শয়তানি হাসি দিয়ে বলে সাদ। আর বাকিরা ও মনে হয় এতে মজা পায় তাই তারাও উচ্চস্বরে হেসে দেয়।

এবার আরোহীর নিজেরই ভয় হচ্ছে, সিনিয়রা কেমন সে ও অনেকবার শুনেছে কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখেও নিচ্ছে। আরোহীর ভয় হচ্ছে যদি অসভ্যতা করে তার সাথে, তখনই আরোহীর মনে হয় আদর,আঁধার ও আলিশা একই ভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু আদর হয়তো এখন ও ভার্সিটিতে আসার মতো সুস্থ হয়নি আর আলিশা সে তো কখনই সাহায্য করবে না। আগে হলে ব্যাপারটা আলাদা ছিলো আর এখন তো সে আরোহীকে তার একমাত্র শত্রুই মনে করে। আর বাকি রইলো আঁধার সে কি আদও সাহায্য করবে? কিন্তু আঁধারকে কিভাবে জানাবে, সে তো ব্লক করে রেখেছে আরোহীকে!

–‘ কি হলো বেবি একটা কিস তো আমার পাওনা তাই না?’

সাদের কথা শুনে আরোহী ভয়ে ভয়ে আসে পাশে তাকায় কিন্তু আঁধারকে দেখতে পায় না৷ ততোক্ষণে সাদ আরোহীর হাত টেনে ধরেছে,,

–‘উফফ বেবি তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো একটা কিসই তো, কাম অন?’

আরোহী হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করছে, রাহি ভয়ে কেঁদেই দিয়েছে।

–‘উফফ বেবি তুমি কাঁদছ কেনো, তোমার বান্ধবীর পর তোমার পালা তো!’

বলেই রাহির দিকে অনিল আগিয়ে আসে।

আরোহী আর কিছু সহ্য করতে না পেরে একটা চড় মেরে দেয় সাদের গালে। এতে যেনো সাদ আরও রেগে যায়, কিন্তু এবার হেমা মানে প্রথম মেয়েটি বলে,,

–‘সাদ ওকে এভাবে শাস্তি দিলে হবে না, অন্য রকম ভাবে শাস্তি দিতে হবে।’

বলেই এগিয়ে এসে আরোহীর হাত চেপে ধরে বলে,,,

–‘ ওই যে উল্টো ঘুরে ছেলেটি দাড়িয়ে আছে তাকে গিয়ে কিস করতে হবে তোমায়, আর ডিরেক্ট ঠোঁটে।’ আর যদি না বলো তাহলে,, অনিল তুই ওর বান্ধবীটাকে নিয়ে যাবি কেউ তোকে কিছুই বলবে না।

আরোহী এবার রাগের বসে হেমার দিকে তেড়ে যেতেই তার বন্ধুরা তাকে টেনে ধরে থাকে।

–‘উম বেবি, এতো সাহস দেখিয় না, সাদের গায়ে হাত তোলার সাহস আজকে তোমার বের করবো। ‘ হেমা যেটা বললো করো নাহলে আজকে তোমার সাথে কি হবে সেটা নিজেও জানো না আর তোমার বন্ধুর কথা তো বাদই দিলাম।

সাদের কথার সাথে তার গা জ্বালানো হাসি দেখে আরোহী ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে। কিন্তু কি করবে বুঝতে না পেরে রাহির দিকে একবার তাকায়। মেয়েটার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, আর চোখের জ্বল তো মনে হচ্ছে বাধ মানছে না।

নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর এরকম বেহাল দশা দেখেই আরোহীর কলিজা কেঁপে উঠছে বার বার। সবাই তাদের দেেখছে ঠিকই কিন্তু সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। কেউ দেখে হাসছে আর কেউ বা ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে গাছ তলায় সেই ছেলেটার দিকে একবার তাকায়। ছেলেটা উল্টো দিকে হয়ে তখন থেকে ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে। আরোহীর মনে হয় ছেলেটাকে কোথায় জানি দেখেছে।কিন্তু মনে করতে পারছে না।

এরইমধ্যে হেমারা আরোহীকে তাড়া দিতে থাকে,,
আরোহী এবার কিছু একটা ভাবে আর ভেবেই রাজি হয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই হেমাদের সকলের চোখ মুখে শয়তানি হাসি দেখা যায়।

–‘ঠিক আছে আমি আপনাদের শর্তে রাজি তবে, আপনারা আর কখনও আমাদের বিরক্ত করবেন না?’

–‘ওকে তুমি যেমটা চাও তবে আগে আমাদের শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে!’

লিমা অর্থাৎ দ্বিতীয় মেয়েটির কথায় সবাই সম্মতি দেয়।

আরোহী একপলক রাহির দিকে তাকায়। রাহি তাকে চোখ দিয়ে বার বার বারণ করছে কিন্তু আরোহী আর কিছু না ভেবে গাছ তলার কাছে যেতে থাকে।

আরোহী যতোই এগিয়ে যাচ্ছে তার ভয় ততোই বাড়ছে, আরোহী রাজি হয়েছিলো কারণ সে ছেলেটাকে গিয়ে সব বলে দিয়ে সাহায্য চাইতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার এতো সাহস নেই। ছেলেটার কাছাকাছি এসে আরোহী ভয়ে কাঁপছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

আর এদিক থেকে হেমারা চুপ চাপ দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে। অনিলের ফোন আসাতে অনিল রাহির হাত ছেড়ে দিয়ে ফোনে কথা বলতে শুরু করে আর এদিকে রাহি ততোক্ষণে দৌড়ে আরোহীর দিকে এগিয়ে যায়।

–‘আরে আরে মেয়েটা তো চলে যাচ্ছে লিমা আটকা?’

হেমার কথা শুনে লিমা রাহির হাত টেনে ধরে। রাহি আরোহীর থেকে অল্প দূরত্বেই ছিলো এতোক্ষণ কিন্তু লিমার জন্য আর আরোহী অব্দি পৌঁছাতে পারলো না।

আরোহী কি করবে ভেবে না পেয়ে দাড়িয়ে থাকে, সেই মুহূর্তে ছেলেটি আরোহীর দিকে ফিরতেই অবাক হয়ে যায়। আরোহী নিজেও থম মেরে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে খুশি হয়ে যায়, কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষণ স্থির থাকে না আঁধারের প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয়ে যায় আরোহী।

–‘কিছু বলবেন? ‘

শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে আঁধার।

–‘আসলে, আমি আসলে…আঁধার! ‘

–‘ইয়েস,হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ মিস?’

আরোহী কি বলবে ভেবে না পেয়ে পিছনে ফিরে হেমাদের দিকে একবার তাকায়। হেমারা চোখ দিয়ে ইশারা করে, আঁধার ও আরোহীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে হেমাদের দিকে তাকায়৷ হেমারা ভয় পেয়ে যায়,তারা আঁধারের রাগ সম্পর্কে জানে তাই তারা ইচ্ছে করেই আরোহীকে এই প্রস্তাব দিয়েছে।আঁধার রেগে গেলে যে আরোহীকে ভার্সিটি থেকে টিসি নিয়ে ও দিতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর আগে অনেক মেয়েই আঁধারকে প্রপোজ করছে কিন্তু আঁধার হয়তো অপমান করেছে, নয়তো শান্ত মাথায় বুঝিয়েছে,আর বেশি বাবা বাড়ি করলে থা’পড় মেরে অপমান করেছে। সেখানে তো আরোহী ডিরেক্ট কিস করতে গেছে তার অবস্থার কথা ভেবেই তারা ভিতরে ভিতরে হাসে ফেটে পরছে।

আরোহী আঁধারের দিকে তাকিয়ে একবার আসে পাশে তাকায়। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, আরোহী আর কোন কিছু না ভেবেই আঁধারের খুব কাছে চলে যায়।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, কারণ আঁধারের ধারের কাছেও যেখানে কেউ যেতে পারেনি, সেখানে আরোহী আঁধারের অনেকটা কাছে চলে গেছে।আঁধার শান্ত চোখে তাকিয়ে সবটা লক্ষ করছে, আরোহী কি করতে চাচ্ছে মূলত সে সেটাই দেখতে চাচ্ছে।

আরোহী সকলে অবাক করে দিয়ে আঁধারের মাথাটা চেপে ধরে আঁধারের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। কয়েক সেকেন্ড পর সরে আসে।

সবার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে যায় হেমারা শয়তানি হাসি দেয় তাদের মনে হয় আঁধার এইবার আরোহীকে থা’পড় মারবে।

কিন্তু আঁধার তখন ও শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।

কিছুটা পাশেই দাড়িয়ে ছিলো আঁধারের বন্ধুরা তারা এক একজন রীতিমতো হা করে তাকিয়েই আছে।

আরোহীকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার বলে,,

–‘মাথা নিচু করলে কেনো?’ শেষ সব সাহস!

আরোহী এবার চোখ তুলে তাকায় আঁধারের দিকে, আর বাকি সবাই হা করেই তাকিয়ে থাকে। আঁধারের স্বাভাবিক আচরণ সকলের হজম হচ্ছে না।আর হেমার তো আর ও বেশি অবাক হয় তাদের প্লান ফ্লপ হয়ে যায়। কিন্তু তাড়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না কিছু।

আঁধার আসে পাশে একবার তাকায়, সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদেরই দিকে। আঁধার সকলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরোহীকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

–‘ক্লাসে যাও! ‘

আরোহী নিজেই অবাক হয়, যে আঁধার একটু আগেই তাকে না চেনার ভান করছিলো সে তাকে ক্লাসে যেতে বলছে। আরোহী গিয়ে লিমার হাত থেকে রাহির হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর ক্লাসের দিকে রওনা হয় তারা। রাহি নিজেও হা করে তাকিয়ে আছে, সে ভাবতেও পারেনি আরোহী সত্যি সত্যি এমটা করবে?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে