নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৫

0
429

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৫

🍁

মেজাজটা এতোটাই খারপ হয়ে গেলো যে আপুর সাথে কথা বলাও পাপ মনে হলো। তাই পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলাম৷ কিন্তু আপুর আমার পেছন পেছন রুমে ঢুকতে দেখে মেজাজটা আবার চটে গেলো।কি রে ভাই একটা মানুষ কি বুঝে না যে তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসলাম, হয়তো তার সাথে কথা বলতে চাই না তাই। কিন্তু আপুর ছেঁচড়ামি কিছুতেই সহ্য করার মতো না৷

তবুও কিছু না বলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আপুর কথা শুনে চটে গেলাম৷

–‘বরের সাথে তো ভালোই ঘুরাঘুরি করছিস দেখছি?’তা ঘুরাঘুরিটা কি আসলেই নাকি আমাদের দেখানোর জন্য!

–‘তোমাদের বলছো কেনো বলো তো, তোমার তো নিজের কথাই বলা উচিত! কারণ দেখানোর মতো তো আর কেউ নেই। বাই দা ওয়ে আমি আমার বরের সাথে ঘুরতে যাই বা কোথাও থাকতে যাই তোমার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।নিজের লিমিটের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করো। আমরা স্বামী-স্ত্রী কি করছি না করছি সেটা না দেখে নিজের স্বামী হাসপাতালে ভর্তি আছে কাল থেকে সেটাও তো দেখতে পারো নাকি৷ আমরা আমাদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করছি সো সেটাই করতে দাও আর নিজের স্বামীর প্রতি আর বাচ্চাটার প্রতি নজর দাও, নাহলে ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে।

এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলেই দম নেয় আরোহী।
আলিশা রাগে কাঁপছে। আরোহীর হাত চেপে ধরে জোড়ে আরোহী ব্যাথায় আহ্ বলে একটা শব্দ উচ্চারণ করার সাথেই চোখ মুখ শক্ত করে আলিশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

–‘হাউ ডেয়ার ইউ, তোমার সাহস হয় কি করে আমার হাতে ব্যাথা দেওয়ার?’

আরোহীর চিৎকারে আলিশা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,

–‘উফফ ব্যাথা পেলি বুঝি আরো,ইসসস আসলে কি বলতো বাহিরে যখন আঁধারকে তোর এতোটা কাছে দেখলাম তখন আমারও এতোটাই ব্যাথা লেগেছিলো।’ তোর জন্য ভালোই হবে যদি আঁধারের থেকে দূরে থাকিস নাহলে তোর অবস্থা কি হবে সেটা তুই নিজেও জানিস না।

–‘হাহ্ কি বললে আমি আঁধারের থেকে দূরে থাকবো, আমি!’

বলেই পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে আরোহী৷ কিন্তু পরক্ষণেই শক্তভাবে বলে উঠে,,,

–‘আমার বরের থেকে আমি কেনো দূরে থাকতে যাবো, আমি তো পারলে তার কোলে উঠে ও ঘুরে বের হবে!’তবে যাই বলো উনি তো আমায় কতো ভালোবাসে দেখতেই তো পারো,কোলে উঠতে চাইলে অবশ্য না করবেন না কখন ও। আর আঁধার বলো কেনো আপু সে তো তোমার বড় ভাসুর আর বড় ভাসুর তো নিজের ভাইয়ের মতো তাই না বলো।

আলিশা রাগে কটমট করে উঠে।

–‘তোর এই মুখ আজকাল দেখি খুব কথা ফুটেছে তাই না রে, তোর এই মুখের কথা মুখেই মানায় বুঝলি।আঁধার যে তোকে এখনও মেনে নিতে পারেনি সেটা আমি ভালো করেই জানি তাই কোলে নেওয়া তো দূর জড়িয়েই আগে ধরুক৷ ‘ তবে আমি অনেক জলদিই আঁধারের কোলেই শুধু না বুকেও থাকবো দেখে নিস।

আপুর কথা শেষ হতেই আমার পুরো শরীর রাগে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। কতোটা বেয়াদব আর বেশরম হলে কেউ এতো সবকিছু করার পড়েও এসব বলতে পারে৷ রাগে আর কিছু না ভেবেই কাপড় সব মেঝেতে ছুড়ে মেরে টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিলাম।

রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আঁধারের নাম্বারে ডয়েল করলাম৷ স্পিকারে দেওয়ার খানিকক্ষণ পরেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,

–‘হ্যালো …’

–‘এই আপনি কোথায় আছেন এখন?’

ওনার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বলে উলাম, নাহলে আপুর সামনে যদি কে বলছেন বলে ফেলে তখন কি হবে আমার মানসম্মান কিছুই থাকবে না।

ভাগ্যিস বিয়ের আগে আদর নিজেই আঁধার ও তার পুরো ফ্যামিলির ফোন নাম্বার আমার ফোনে সেভ করে দিয়েছিলো নাহলে আপু ডাইনির সামনে আমার মান ইজ্জত সব শেষ হয়ে যেতো। সে হয়তো শয়তানি হাসি দিয়ে বলতো কেমন বউ তুই বরের ফোন নাম্বার নিজের ফোনে সেভ করা নেই।

আঁধার খানিকটা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে যায়। আরোহীর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে, কিন্তু এখনই তো এলো এখন আবার ফোন করলো কেনো।আঁধারের ভাবনাও শেষ হতে দেয় না আরোহী তার আগেই আবার চিৎকার করে বলে উঠে,,

–‘হ্যালো, কি বলছি আমি?’

আঁধারের মনে হলো হয়তো কোনো সিরিয়াস কিছু হয়েছে। আবার আরোহীর চিৎকার শুনে রাগ ও উঠে যায় তার।নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে,,

–‘বাসার সামনে কেনো কি হয়েছে?’ এভাবে কথা বলছো কেনো, কিছু কি হয়েছে?

আরোহী মনে হয় আঁধারের এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো এতোক্ষণ। তাই তো সাথে সাথেই বলে উঠে,,,

–‘১৫মিনিট সময় দিলাম, তার মধ্যেই আপনাকে আমাদের বাসায় আমার রুমের মধ্যে চাই।’

চিৎকার করে বলার পর পরই ফোন কেটে দেয় আরোহী। আঁধার বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু পরক্ষণেই সিরিয়াস কিছু মনে করেই আবার গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।

ফোন কেটেও রাগ কমে না আরোহী, পায়চারি করতে থাকে পুরো ঘরময়৷ আর আলিশা আরাম করে সোফায় বসে থাকে৷ কুটিল হাসি দিয়ে বলে উঠে,,,

–‘উফফ আরো, বেকার ফোন করলি। আঁধার কারো কথার ধার ধারে না বুঝলি তো,আর চেঁচিয়ে কথা বলা, রাগ ঝাড়া এসব পছন্দ করে না৷ দেখবি আসবে না আর কথাও বলবে না। বেকার!

আমি কিছু বললাম না মনে মনে ভাবছি আঁধার যদি সত্যি না আসে৷ কিন্তু আবার ভাবছি আসবে আর যদি না আসে আমি বাবাকে বলবো যে ছেলে আমার কথা শুনলো না তার সাথে সংসার করবো না আমি।

এরইমধ্যে গাড়ির হর্ণের সাউন্ড শুনে বুঝতে পারলাম আঁধার এসেছে, মুখে আপনা আপনি হাসি চলে আসলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ১০ মিনিট ও হয়নি এখন। মনে মনে ভাবলাম লোকটা কি পাগল ৩০ মিনিটের রাস্তা যদিও গাড়ি জোড়ে চালিয়ে ২০ মিনিট বা ১৭/১৮ মিনিট তো লাগেই তাহলে এতো জলদি কিভাবে আসলো।

আর কিছু ভাবার আগেই হুরমুর করে আঁধার আমার রুমে ঢুকে পড়লো।

হাপাতে হাপাতে আমার সামনে এসে দম ছেড়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো,,,

–‘কি হলো এখন চুপ করে আছো কেনো?’কি হয়েছে বলো?

আমি আর চোখে একপলক আপুর দিকে তাকালাম৷ আপুর দিকে তাকাতেই তার অবাক হওয়া বিস্ময় মুখটি দেখতে পেলাম। সে হয়তো কল্পনাতেও ভাবেনি আঁধার আসবে । অবশ্য আমি নিজেও সেটা ভাবিনি।

আরোহীকে অন্যমনস্ক দেখে আঁধার আরোহীর মুখোমুখি দাড়ালো।

–‘কি হয়েছে আরু, কোনো সমস্যা? ‘

আঁধারের কথাটা শুনে আমি অনেকটাই চমকে গেলাম।মনে হলো শরীরের মধ্যে একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।মনে মনে ভাবলাম, উনি আমায় আরু বলে ডাকলেন।সবাই তো আরো বলে ডাকে আর আঁধার তো এতোদিন আমায় আরোহী বলেই ডাকতো আজ হঠাৎ আরু বলে ডাকলেন যে! কিন্তু কিছু বলার সাহস হলো না।

–‘উফফ, এই মেয়ে!কথা বলছো না কেনো এখন?’ কি হয়েছে হঠাৎ এভাবে ডাকলে কেনো বলবে তো নাকি?

আঁধারের ধমকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ আগের কথা মাথায় আসতেই রাগটা তরতর করে বেড়ে উঠলো।

–‘জড়িয়ে ধরুন আমায়!’

আরোহীর কথা শুনে আঁধার ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।কিন্তু ততোক্ষণে আরোহী নিজেই এসে জড়িয়ে ধরেছে।

আঁধারের মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ একজন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।হার্টবিট অনেক ফাস্ট চলাচল শুরু করেছে। পুরো শরীরের লোমসহ দাড়িয়ে গেছে।আরোহী খানিকটা বিরক্ত হয় আঁধারের কান্ডে।

নিজেই আঁধারের হাতগুলো তার কোমরে এনে দেয়। এতে যেনো আঁধার আরও খানিকটা বিচলিত হয়ে যায়। খুব শক্ত করেই আঁধার আরোহীর কোমড় চেপে ধরে নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আরোহীর পুরো শরীর মনে হয় শীতল হয়ে যায়। এবার নিজেই বিপাকে পড়ে যায় আরোহী৷ তার হার্ট বেচারা মনে হয় লাফিয়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। আর আঁধারের হার্টবিটের শব্দও সে ভালো করেই শুনতে পারছে।

আলিশার রাগে শরীর কেঁপে উঠে। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত আলিশা। তার এখন মনে হচ্ছে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারছে সে। তার জন্যই আরোহী আর আঁধার কাছাকাছি আসছে৷ কি দরকার ছিলো তার আরোহীকে এসব বলার৷ অবশ্য তারও দোষ নেই,তার মতে আঁধার আরোহীকে এতোক্ষণ ৪/৫টা চড়,থা’পড় দিতো কিন্তু উল্টো তার চাল তাকেই যে ভাড়ী পড়ে যাবে কে জানতো!

আলিশার আর সহ্য হলো না তাই পাশের টেবিলেই পানির গ্লাস ছিলো, সেটা হাত দিয়ে ফেলে দিলো।আঁধার চমকে উঠে আরোহীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে গেলো! কিন্তু কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিলো না৷ না সরিয়েই ঘুরে তাকিয়ে আলিশাকে দেখে ভ্রুকুচকে ফেললো।

আলিশার থেকে চোখ সরিয়ে আরোহীর দিকে তাকাতেই আরোহীকে ভাবলেসহীন দেখে কুঁচকানো ভ্রু যেনো আরও একটু কুঁচকে গেলো।এবার আঁধারের কাছে ধিরে ধিরে সবটা পরিস্কার হতে শুরু করলো।

–‘কোলে নেন এইবার আমায়!’

আরোহীর কন্ঠে শুনা এই ছোট কথাটা শুনেও আঁধার যেনো চমকে উঠলো। আরোহী আরও খানিকটা এগিয়ে গেলো আঁধারের কাছে। আঁধারের বুকের কাছের শার্টটা খানিকটা তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করেই বলে উঠলো,,,

–‘কি হলো নিবেন না আমায় কোলে?’

এবার শুকনো ঢোক গিললো আঁধার। আর মনে মনে ভাবলো, এই মেয়ের আজকে কি হয়েছে! তবে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমার কি হবে সেটাই আমি বলতে পারবো না। তার থেকে বরং তার কথাটাই মেনে নেই কিন্তু এভাবে বড় বোনের সামনে মেয়েটার কি লজ্জা টজ্জা নেই নাকি? আবার মনে হচ্ছে না আরোহী তো আমার সামনে আসলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু করে তাহলে হঠাৎ এতো কাছে আসছে কেনো! নাকি অন্য কোনো কারণে?

–‘কি হলো আঁধার সাহেব?’

–‘এভাবে বড় বোনের সামনে, কি করে…’

আপু নিজেই এই ইচ্ছে পোষণ করেছে জামাই আমার, তাই তো আমি ও তার ইচ্ছে পূরণ করছি।

আঁধারের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আরোহী খানিকটা ঢং করে বলে।

আঁধারের কাছে এবার সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যায়। মনটা তার খারাপ হয়ে যায়। ভাবে, এই মেয়েটা আসলেই একটা যাচ্ছে তাই৷ আর সে কতোটা খুশি হয়েছিলো মনে আর এই মেয়ে তো মানুষকে দেখানোর জন্য তাকে ডেকে এনে এভাবে রোমান্স করছে। ছেহ্ আঁধার ছেহ্ অবশেষে তোর ভাগ্যে এমন একটা বউ জুটলো।

–‘আঁধার। ‘

এরইমধ্যে আরোহীর চিৎকারে আঁধার চমকে উঠে বলে,

–‘হ্যা হ্যা বলো। ‘

–‘আপনি কি এতো ভাবেন বলেন তো।’

আঁধার মনে মনে ভাবে যার ভাগ্যে তোমার মতো বউ আছে তার শুধু ভাবা ছাড়া আর কোনো কাজ আছে নাকি! আঁধার আর কোন কিছু না ভেবেই আরোহীকে কোলে তুলে নেয়। আরোহী লাজুক হাসি না দিয়ে এমন ভাবে হাসে যেনো পুরো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।আঁধার বিরক্ত হলেও আরোহীর হাসি মুখটা দেখে থমকে যায়।

আর মনে মনে ভাবে মেয়েটা হাসলে কতোটা কিউট লাগে। একদম ছোট বাচ্চার মতো লাগছে আরোহীকে। ছোট বাচ্চা যখন কোনো খেলনার জন্য বায়না ধরার পর খেলনাটি পেয়ে যাওয়ার পর যে হাসিটা থাকে ঠিক সেই হাসিটিই আরেহীর চোখ মুখে খেলা করছে।

আলিশা আর সহ্য করতে না পেরে কাঁচের জগটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে গটগট করে চলে যায়।

আরোহী মিষ্টি হেসে আঁধারকে নামিয়ে দিতে বলে। আঁধার নামিয়ে দিলেই আরোহী লাফিয়ে এসে আঁধারের গালে একটা চুমু দিয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়। আর আঁধার অবাক হয়ে এবার মনে হয় আকাশ থেকে ধপ করে নিচে পরলো। সাথে সাথেই একটা হাত তার ডান গালে চলে গেলো!

আঁধারের মুখটা ও এবার হাসিতে ভরে গেলো। কি আর করবে ভেবেই বের হয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে আসতেই আরোহীর সামনা সামনি হয়ে গেলো৷ কিন্তু আরোহী এবার আঁধারের ডান হাতটা ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে সে পাশে বসে আঁধারের বাম হাতটা কোলে নিয়ে নিলো।

আঁধার এবার নিজের হাতটা পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো রক্ত শুকিয়ে গেছে। কাচঁগুলো সে নিজেই তুলে নিয়েছিলো কিন্তু হাতটা ব্যান্ডেজ করেনি।

আরোহী ধিরে ধিরে সবটা রক্ত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আর পুরোটা সময় আঁধার অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো আরোহীর মুখের দিকে।আরোহী আলতো হাতে যেভাবে ফু দিয়ে দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো ব্যাথাটা আঁধার না আরোহী নিজেই পাচ্ছিলো।

আমার এই পিচ্চি বউটা ও রাগ অভিমান ছাড়াও কেয়ার করতে পারে বাহ্। আরও না জানি কি কি লুকায়িত আছে আপনার মধ্যে মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী! যেটা এখনও আমি জানতেই পারিনি।নিজেই নিজেকে এসব বলে উঠে আঁধার আবার নিজে নিজেই হেসে ফেলে।আরোহী দেখার আগেই আবার চুপ করে নিজেকে গম্ভীর করে থাকে।

–‘নিজেই ব্যাথা দিয়ে নিজেই ওষুধ লাগাচ্ছেন মিসেস চৌধুরী? ‘

আঁধারের কথা শুনে আরোহী চোখ তুলে একপলক আঁধারের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে,,

–‘আমি কাউকে ব্যাথা দেইনি সে নিজেই নিজেকে ব্যাথা দিয়েছে, কিন্তু আমি ওষুধ লাগাচ্ছি মিস্টার চৌধুরী।’

আরোহীর কথা শুনে আঁধারের মুখে হাসি ফুটে উঠে। তারই বউ তার কথাটিই উল্টে তাকে বলছে ভাবা যায়।

–‘ভাবছিলাম সম্পর্কটাকে এবার স্বাভাবিক করা উচিত কি বলেন মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘

–‘আগে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শিখে নেন মিস্টার তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘

–‘আপনি না হয় মিস্টার তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শিখিয়ে দিবেন মিসেস তাশরিফ আঁধার চৌধুরী? ‘ কি বলেন দিবেন তো!

এবার আরোহীর মুখে সামান্য হাসি ফুটে উঠে। আঁধারের চোখে চোখ রেখেই বলে উঠে,,

–‘মিস্টার চৌধুরী যদি মনে রাখে তার শুধু মাত্র একটাই বউ আর কেউ নেই, কোনো হবু বউ ছিলো না তার।’ হবু বউয়ের প্রতি দরদ না দেখায় তবে আমি ও সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে পারি।

বলেই আঁধারের হাতটা ভালো ভাবে দেখতে থাকে। কিন্তু আঁধারের রাগ হয় প্রচুর রাগ হয়, যার কারণে আরোহীর হাত থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,

–‘তোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভবই না, তুই ভালো ব্যাবহারের যোগ্যই না।’ ভুলেও আমার সামনে আসবি না তুই।

বলেই ফাস্টএইড বক্সটা আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।

আরোহী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মতে সে কি এমন বললো যে আঁধার এতোটা রেগে গেলো! আর শুধু রাগলোই না তুই তুকারি করে গেলো।আজকের আঁধারের সাথে কালকের আধারের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না আরোহী। সে তো শুধু কথাটা বললো যেনো আঁধার আলিশার প্রতি দরদ না দেখায়। সকালে আঁধারকে আলিশার রুম থেকে বের হতে দেখেই বুঝে গিয়েছিল হয়তো সান্ত্বনা দিতে গেছে তাই কথাটা বললো।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে