নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-০৮

0
389

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৮

🍁

আরোহী ও রাহি বসে আছে ভার্সিটির গাছ তলায়, দু’জনের মুখেই বিরাজ করছে থমথমে গম্ভীরতা। একে একে সব ঘটনা রাহিকে বিস্তারিত খুলে বলার পর থেকেই রাহির রিয়াকশন এমন হয়ে আছে৷

আর আরোহীর সাথে আদর ও আলিশার করা প্রতারণার কথা মনে পড়ার কারণে তার মুখের রিয়াকশন এমন হয়ে আছে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে আজকে আরোহীর, যদি তার বাবাকে শুরু থেকেই বারণ করে দিতো বিয়ের ব্যাপারে তাহলে এতো কিছু হয়তো দেখতে হতো না তাকে!

আবার ভাবছে সেদিন যদি বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসতো তাহলে না ওই ছাউনির নিচে যেতে হতো আর না আদরের সাথে দেখা হতো!তবে আল্লাহর কাছে হাজারবার শুকরিয়া করে আরোহী যে বিয়ের আগেই সবকিছু তার সামনে এসেছে নাহলে যদি বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে কি হতো আরোহীর!

–‘দোস্ত মন খারাপ করিস না যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে নাহলে তুই আঁধার ভাইয়ার মতো কাউকে পেতিস না!’ ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ রে, সবাই ওনাকে কত সন্মান করে দেখিস না?

আরোহীর ভাবনার মধ্যেই রাহির কথা গুলো শুনতে পায় আরোহী। চোখ তুলে রাহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে আরোহী।

–‘আমার মনে হয় ভাইয়ার সাথে তোর সম্পর্কটা এবার স্বাভাবিক করা উচিত,ওই আদর আর আলিশা তো ঠিকই সুখে সংসার করছে আর তোরা এখন অব্দি প্রেমেই করতে পারলি না!’

রাহির কথাটা শুনে আরোহী বলে,,

–‘হুম, বাট যার মনে অন্যের বসবাস তার সাথে কিভাবে সবকিছু স্বাভাবিক করি বল?’

–‘মানে, কি বলছিস তুই আঁধার ভাইয়ার ও গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?’

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রাহি।

তারপর আরোহী বিয়ের পরের দিন থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বলে রাহিকে। সাথে আলিশার করা খারাপ ব্যাবহার থেকে আঁধার ব্লক করে দেওয়া পর্যন্ত সবকিছু বলে।

আরোহী সব কথা শুনে রাহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে,,,

–‘দেখলি তুই ও আমার মতোই ভাবছিস আমি জানি,এখন বল আমি কি ভূল করেছি? ‘

রাহির পাশে আর একটু চেপে বসে বলে আরোহী,, এরই মধ্যে দুম করে আরোহীর পিঠে কিল বসিয়ে দেয় রাহি।আরোহী চোখ মুখ শক্ত করে রাহির দিকে কটমট চাহনিতে তাকায়।

কিন্তু তার কটমট চাহনিকে পাত্তা দেয় না রাহি,

–‘হায় হায় আরো,হায় হায় কি করলি এইসব তুই,কি করলি তুই এইটা হায় হায়?’

রাহির হায় হুতাশ করা দেখেই আরোহী অবাক হয়,,

–‘কি হলো তোর বল তো, এমন হায় হুতাশ করছিস কেনো?’

আরোহীর কথা শুনে রাহি হায় হুতাশ করা ছেড়ে দিয়ে আরোহীর দিকে মুখ করে বসে।

–‘তুই আঁধার ভাইয়ার সাথে এসব ঠিক করিস নি আরো, এমদম ঠিক করিস নি! ‘ আঁধার ভাইয়া কি করে এসব সহ্য করে উফফ।

প্রথমের কথাটা শান্ত ভাবে বললেও শেষের কথাটা রাগ নিয়েই বলে রাহি।

আরোহী ভ্রুকুচকে তাকায়, এতে যেনো রাহি বেশি করে ফুসে উঠে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে আরোহীর সাথে রাগারাগি না করে শান্ত ভাবে বুঝাতে হবে।

–‘আরো, আমি যদি তোকে শান্ত ভাবে কিছু কথা বলি তুই কি আমার কথা শুনবি?’ দেখ কোনো প্রশ্ন করতে পারবি না, তুই না চাইলেও তোকে শুইতেই হবে।

রাহির জেঁদি স্বরের কথাগুলো শুনে আরোহী মাথা নাড়ায়, যার অর্থ বল আমি শুনবো।

–‘তোর সাথে বিয়ের পর আঁধার ভাইয়া বিনা কারণে কখনো রাগারাগি করেছে, তোর খোঁচা মারা কথাগুলো বাদে?’

–‘কি বললি আম. আমি খোঁচা মারা কথা বলি! ‘

রাহির কথা শুনে আরোহী যেনো ফুসে উঠে,,

–‘আরে থাম মেরি মা,বললাম না প্রশ্ন করতে পারবি না? ‘

মন খারাপ করে আরোহী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,,

–‘না করেনি,,, ‘

–‘তুই কথাগুলো বলার পরই কিন্তু রাগ করে, রাইট?’

–‘হুম রাইট,,’

–‘আঁধার ভাইয়া যে শুরু থেকেই তোর সাথে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে সেটা কি তোর এই গোবর মাথায় ঢুকছে?’

দু’দিকে মাথা নাড়ে আরোহী যার অর্থ না। রাহি মনে হয় আগে থেকেই জানতো এমটা হবে তাই ভাবলেশহীন ভাবে নেক্সট প্রশ্ন করে।

–‘আঁধার ভাইয়া কিন্তু বলে নি কখন ও সে আলিশা আপুকে ভালোবাসে তোকে মেনে নিতে পারবে না, বা তোকে কখন ও আদর ভাইয়ার নিয়ে কিছু বলেনি।’ ইভেন, বিয়ের দিন থেকেই আলিশা আপু ও আদর ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তোকে একা হাতে সামলিয়েছে,এমন কি তোর জন্য আলিশা আপুর গায়ে হাত অব্দি তুলেছে।বুঝতে পারছিস এসবের মানে কি দাড়ায়?

রাহির কথাগুলো মন দিয়ে শুনে আরোহী ভাবে আসলেই তো,সে তো এতো কিছু কখন ও ভাবেইনি।আঁধার শুরু থেকেই সবটা একা সামলিয়েছে, আমি কি ঠিক করলাম এসব!

–‘কি রে?’

রাহির ডাকে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে আরোহী। রাহির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,,,

–‘বাট সেদিন আপুর ঘর থেকে বের হতে দেখলাম যে?’

–‘গাধি হয়তো বুঝাতে গেছিলো কিছু, বা’লডা তুই কি এখন ও ছোট কিছুই বুঝোস না!’ আঁধার ভাইয়া সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চায় তোকে তো বলেছে কিন্তু তুই কি করলি দাজ্জাল বউয়ের মতো বললি,,, হবু বউয়ের প্রতি দরদ না দেখায়?’ ছেহ্ আরো তোর থেকে আমি এটা আশা করি নি! যেটা তোর সেটা তোরই, দরকার পড়লে লড়াই কর তবুও কাউকে দান করিস না? ভাই কি ভাবে পারিস তোরা এতো মহান হতে এয়ার, তোদের কথাবার্তা শুনলেই আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। বাংলা সিনেমার সাবানার মতো বলিস,, ওগো আপনার মনের মাঝে যে আছে তাকে নিয়ে সুখে থাকিয়েন সেটা হোক না কেনো আমার চরিত্রহীন বোন!!আমিও তো একসময় আপনার চরিত্রহীন ভাইয়ের হবু বউ ছিলাম।

শুরুর কথাগুলো সুন্দর ভাবে বললেও শেষের কথাগুলো ব্যাঙ্গ করে বলেই উচ্চস্বরে হেসে দেয়।

রাহির শেষের কথা শুনে আরোহী মুখ গোমড়া করেই হেসে দেয়৷

রাহির মূলত হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আর সেই হাসির দিকেই তাকিয়ে আছে শিহাব হা করে।

–‘দোস্ত মশা ঢুকে যাবে তো,এতো বড় হা করে কি মশার বংশ সহ মুখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকতে চাস নাকি? ‘

হাত দিয়ে শিহাবের মুখের হা বন্ধ করে বলে উঠে রাতুল।

কিন্তু শিহাবকে মনে হয় না অন্য কারো কথা তার কানে গেছে, সে আবার বড় একটা হা করে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাতুল এবার সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।রাতুলের দৃষ্টির মানে সবাই বুঝতে পারে,,, বেচারা রাতুল চোখের সামনে তারই বন্ধু একটা মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, সেটা সে কোনো মতেই মানতে পারছে না! তার মতে ছেলেরা কেনো মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে, মেয়েদের উচিত ছেলেদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা।

–‘ভাই তুই আমার মান ইজ্জত খাস নে রে, তোর জন্য সবাই যদি আমায় বলে আমার বন্ধুই তো মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে!’

কিন্তু এতে যেনো শিহাবের কোনো হেলদোল নেই,,

–‘শালা নিমকহারাম, ওই ব্যাটা তুই মাইয়া গো লগে ওমনে তাকাইয়া থাকবি কিল্লাই?’ মাইয়া মানুষ তোর দিকে তাকাইয়া থাকবো তুই থাকবি কেন বুঝা আমারে?

রাতুল ধাক্কা দিয়ে বলে শিহাবকে।

শিহাব হকচকিয়ে যায়,,,

বিরক্ত হয়ে বলে,,

–‘উফফ এতো সুন্দরী একটা মেয়ের হাসি তোর জন্য ভালো করে দেখতে পারলাম না সর, সর তোরে এই মূহুর্তে থা’পড়াইতে মন চাচ্ছে শালা।’

সোহেল দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় শিহাবের পিঠে।

–‘কি মামা, তলে তলে এতো কিছু! ‘ আজকেই প্রথম দেখলা আর আজকেই ফ্লাট?

সোহেলের কথায় শিহাব ঢং করে লাজুক হেসে বলে,,

–‘লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইড, ব্যাটারা ভাগ, আমার হাসিটা কিউট লেগেছে তাই বলে প্রেমে ট্রেমে পরিনি শালারা সর সামনে থেকে।’

শেষের কথাটা ধমক দিয়েই বলে শিহাব।রাতুল আর সোহেল হা করে এবার শিহাবের দিকে তাকায়।

–‘শালা! একটা মেয়ের দিকে তুই হা করে তাকিয়ে থাকবি আর আমরা বললেই বলবি কিছুই না, তলে তলে জ্বল খাও মামা আর আমরা বললেই বলো মিষ্টি না লবণ টেস্ট করে দেখছিলাম!’

আবার শিহাবের পিঠে দুম করে আর একটা কিল বসিয়ে দিয়ে উক্ত কথাগুলো বলে আঁধার।

–‘একদম ঠিক বলছিস আঁধার তুই, এ ব্যাটা দেখছি একদম সুবিধার নয়! ‘

সোহেল কথাগুলো বলেই আঁধারকে চোখ মারে।

–‘শালা তুই চোখ দিয়েই একটা মেয়েকে এতোক্ষণ ইভটিজিং করলি আর আমরা বললেই দোষ! ‘ কবে না জানি অসুবিধাজনক কিছু ঘটিয়ে আসে বলিস দোস্ত ওইটা কিছুই না।’

সোহেলর কথায় সামান্য হেসে কথাগুলো বলে আঁধার।

–‘উফফ তোরা মাইয়া মানুষকে নিয়ে এতো গবেষণা করছিস কেনো বল তো, মাইয়া মানুষ আমাদের নিয়ে গবেষণা করবে। তোদের কেনো এতো গবেষণা করতে হবে বল তো।’

রাতুলের কথায় সবাই নিজের কপাল চাপড়ায়,

–‘তুই ব্যাটা চুপ থাক, তোরে তো মাঝে মাঝে আমার ৩য় লিঙ্গের মানুষ মনে হয়। ‘

শিহাবের কথায় রাতুল আগুন চোখে তাকায় তাদের দিকে।

–‘সোহেল চেক করে দেখ তো রাতুল কি আসলেই ৩য় লিঙ্গের নাকি?’

আঁধারের কথায় সবাই আর এক দফা হাসাহাসি করে। এতে যেনো রাতুলের আগুণে ঘি ঢালার কাজ হয়ে যায়। রাতুল তেড়ে যায় আঁধারের কাছে,,

–‘আয় আজকে তোরেই দেখামু আমি কোন লিঙ্গের মানুষ।’

আঁধার ভয় পাওয়ার ভান করে বলে,,

–‘না আমি দেখবো না আমার শরম করে,,’

মূহুর্তের মধ্যেই রাতুল তাদের সাথে ছুটাছুটি শুরু করে দেয়।

আঁধার, সোহেল আর শিহাব ছুটাছুটি করতে থাকে আর তাদের পেছনে রাতুল। পুরো ভার্সিটিতে তাদের ছুটাছুটি,হাসাহাসি আর লাফালাফি চলতেই থাকে।

সকলে মুগ্ধ হয়েই দেখতে থাকে তাদের,এটা নতুন না তারা এসব দেখেই আসছে প্রতিদিন। তাই তাদের কাছে এইসব কিছুই না। মেয়েরা তো তাদের ক্রাশ তাশরিফ আঁধার চৌধুরীকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। আবার অনেকে সোহেল,শিহাব ও রাতুলের দিকেও তাকিয়ে আছে। কিন্তু রাহি ও আরোহী একপ্রকার হা করেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

–‘দোস্ত দেখ, ওরা ছোট বাচ্চার মতো ছুটাছুটি করছে?’ কতো সুন্দর ফ্রেন্ডশীপ তাদের ইসস।’

–‘হুম ঠিক বলছিস, আঁধারকে ছোট বাচ্চার চেয়ে কম লাগছে না! ‘ একদম ছোট পিচ্চি বাচ্চা মনে হচ্ছে।

আরোহীর কথায় রাহি একপলক আরোহীর দিকে তাকায়, আরোহীকে আঁধারের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহি অনেক খুশি হয়ে যায়। আর মনে মনে বলে,,আরো তোদের লাভস স্টোরিটার ক্রিয়েটর আমিই হবো দেখে নিস। আঁধার ভাইয়ার প্রেমে যে তুই বাজে ভাবে ফেঁসে গেছিস সেটা তুই নিজেই জানিস না। মুচকি হেসে রাহি আবার আঁধারদের দিকে নজর দেয়।

একসময় রাতুলকে তারা তিন বন্ধু মিলে চেপে ধরে হাফাতে থাকে।

–‘একি আপনারা একসাথে সবাই জড়াজড়ি করছেন কেনো এভাবে?’

রাহির কথায় তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে রাহির দিকে তাকায়।

তারা যে ছুটাছুটি করতে গিয়ে কখন আরোহীদের পাশে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি, আরোহী এখন ও আঁধারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে! আর রাহি উৎসুক ভাবে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে হয়তো প্রশ্নের উত্তের জন্য।

আঁধার একপলক আবার আরোহীর দিকে তাকায় কিন্তু আরোহীকে একইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হেসে আরোহীর সামনে যায়। আর বাকিরা সুর টেনে বলে,,

–‘আঁধাররররররররররররর,,’

পেছনে ঘুরে আঁধার তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গায়। তিন জনেই হেসে উঠে আবার, তারা ও বুঝতে পারে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত তাই চলে আসতে নেয় কিন্তু কি মনে করে শিহাব পেছনে ঘুরে দেখে রাহি হা করে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। শিহাব এবার বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রাহির হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে যায়।

–‘আপনি এতো সুন্দর কেনো? ‘

আরোহীর হঠাৎ প্রশ্নে আঁধার ভ্রুকুচকায়।

–‘তোমার বর তো তাই, তা আমি কি শুধুই সুন্দর? ‘

এক ভ্রু উঁচু করে বলে আঁধার।

–‘না অনেক কিউট ও। ‘

–‘ শুধুই কিউট আর কি?’

ফাজলামো করে বলে আঁধার।

আরোহীর হুস আসে, একপ্রকার হকচকিয়ে যায় সে,,আমতা আমতা করে বলে,,

— ‘আমায় বাসায় যেতে হবে আমি যাই।’

আঁধার কিছু বলে না কিন্তু বাঁকা হেসে আরোহীর পালিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

শিহাব রাহির হাত ধরে টেনে আনার পরও দেখে রাহি তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সোহেল ও রাতুল ভ্রুকুচকে তাকায় রাহির দিকে।কিন্তু তাতে রাহির কোনো হেলদোল নেই, সে হা করেই তাকিয়ে আছে।

এবার বিরক্ত চোখে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে শিহাব,,,

–‘এই মেয়ে শুনতে পারছো?’

রাহি চমকে উঠে।

–‘এমন নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছো কেনো তুমি আমাদের দিকে?’

শিহাবের কথায় রাহির রাগ হয় তাকে নির্লজ্জ বললো ছেলেটি এতো সাহস তার।

–‘এই আপনার সাহস তো কম না একে তো আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন আবার উল্টো আমায়ই নির্লজ্জ বলছেন?’ নির্লজ্জ তো আপনি হু।

রাহির কথা শুনে সোহেল ও রাতুল ফিঁক করে হেসে ফেঁলে।

শিহাব কড়া চোখে তাকায় তার বন্ধুদের দিকে, তারা ততক্ষণাত মুখে হাত দেয়৷

–‘কি বললে আমি নির্লজ্জ আমি, বেয়াদব মেয়ে সিনিয়রদের সন্মান দিতে জানো না?’ এইসব করার জন্য ভার্সিটিতে আসো?

শিহাবের কাঠকাঠ গলার হুঙ্কার শুনে কেঁপে উঠে রাহি কিন্তু দমে যায় না। ভয় লুকিয়ে উপরে শক্ত করে নেয় চোখ মুখ।

–‘জানি তো ভাইয়া তবে নির্লজ্জ সিনিয়রদের সন্মান দেই না।’

বলেই চলে যায় রাহি। আর শিহাব রাগে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে।

–‘এই নেও তোমার খাবার আর খেয়ে আমায় উদ্ধার করো!’

বিছানার উপর খাবারের প্লেটটা শব্দ করে রেখেই আদরের উদ্দেশ্যে কথাটা বললো আলিশা।

–‘খাবো না নিয়ে যাও।’

আদরের কথায় আলিশার মাথায় রক্ত উঠে যায়।

–‘খেতে হবে, অনেক কষ্ট করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি আমি!’

আলিশার কথায় ভ্রুকুচকে তাকায় আদর, সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি যদিও তার বউ কিন্তু মেয়েটিকে তার একদম পছন্দ নয়। মূলত মেয়েটির অহংকারের জন্যই, মেয়েটি নিজেকে রানী ভিক্টোরিয়া মনে করে কিন্তু আরোহীর মতো অতোটা ও সুন্দরী নয়। ভেবেই হাসে আদর, কোথায় তার আরোহী আর কোথায় এই মেয়েটি।

–‘কি হলো খাও?’

আলিশার কথায় আদরের ভাবনা কেঁটে যায়।

–‘কথা বুঝো না তুমি খাবো না বলছি তো নিয়ে যাও এসব!’

আদরের চিৎকারে আলিশা আরও ফুসে উঠে,,,

–‘তোমার মাকে বলে দেও ভালো করে উনি যেনো বার বার আমায় তোমার সেবা করতে না বলেন, ডাইনি মহিলা একটা! ‘

–‘মুখ সামলে কথা বলো আলিশা, জানে মেরে দিবো আমার মায়ের নামে আর একটা বাজে কথা বললে।’ দূর হও আমার চোখের সামন থেকে এখনি।

আলিশার কথাগুলো শুনে আদরের মাথা খারাপ হয়ে যায় তাই চিৎকার করে আলিশার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে আদর।

আলিশা রেগে বেরিয়ে যায়। আদর চিৎকার করে তার মাকে ডেকে উঠে,,,

–‘মা, মা এখনি আসো আমার রুমে।’

মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী দৌড়ে ছেলের ঘরে চলে আসেন৷

–‘কি হয়েছে রে?’

–‘তুমি আলিশাকে আমার সেবা করতে বলবে না আর ওর মতো মেয়ের সেবার দরকার নেই আমার। ‘

–‘কি বলছিস তুই এসব বাবা,ও তোর বউ আর বউয়ের কর্তব্য স্বামীর সেবা করা। ‘

–‘না বলেছি তো না,,,’

–‘ঠিক আছে তোর ব্যাপার সেটা আমি আর বলবো না, তবে ওই মেয়েকে দিয়ে আমি আমার বাড়ির কাজ অবশ্যই করাবো।’

–‘তোমার যা ইচ্ছে করাও তবে আমার কোনো কাজ করাবে না। ‘

–‘ঠিক আছে। ‘

বলেই আঁকলিমা চৌধুরী আলিশার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। আর আদর ও দরজা বন্ধ করে দেয়।

–‘এই যে নবাবজাদী, শুয়ে না থেকে গিয়ে বিকেলের নাস্তা বানাতে শুরু করে দেন।’ আর হ্যা আমি মেনু বলে দিচ্ছি কি কি রান্না করতে হবে!

আঁকলিমা চৌধুরীর কথায় আলিশা যেনো আরও ফুঁসে ওঠে,,

–‘আমি কি আপনাদের কাজের লোক যে আমি নাস্তা বানাতে যাবো?’ এতোগুলো সার্ভেন্ট থাকতে আমি কেনো রান্না ঘরে যাব।

–‘না না আপনি রান্না ঘরে গেলে আবার আমার একটা ছেলের জীবন নষ্ট করে আর একটার জন্য প্লান করছেন সেসব আবার কে করবে তাই না।’

ব্যাঙ্গ করে কথাগুলো বলেই আবার বলেন আঁকলিমা চৌধুরী,,,

–‘চুপচাপ রান্না ঘরে গিয়ে যা যা বলবো সব রান্না করবে, নাহলে তোমায় দিয়ে কি করে রান্না করাতে হয় সেটা এই আঁকলিমা চৌধুরী ভালো করেই জানেন। ‘

আলিশা সব কথা শুনেও না শোনার ভান করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এতে আঁকলিমা চৌধুরী ফুঁসে উঠলেও তেমন কিছু না বলেই চলে যায়। হাজার হোক তার পেটে তো তাদেরই বংশধর রয়েছে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে