Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 440



প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১৩

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১৩
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

আজ নুহাশকে কোর্টে নেয়া হবে।সকাল থেকেই ছোয়া খুব ব্যাস্ত। বার বার সবকিছু দেখে নিচ্ছে ঠিকঠাক আছে কি না।আজ নাহার বেগম একটু বেশিই অসুস্থ তাই নুর থেকে গেলো মায়ের কাছে।রোহিত ছোয়ার সাথে গেলো এবং বিপুলকে রেখে গেলো নুরদের দেখে রাখতে।

এর মধ্যে লুবনা বেগম টিভির নিউজ দেখে বায়না ধরেছে সে ঢাকায় আসবে।ছোয়ার মামা কিছুতেই বোনকে আটকে রাখতে পারছিলো না।উপায় না পেয়ে ছোয়ার সাথে কথা বলে তবেই ক্ষান্ত হয় লুবনা বেগম।

মেয়ের এতো বড় বিপদ অথচ মা হয়ে একমাত্র মেয়ের পাশে থাকতে পারছেন না তিনি।তাই রেগে মেগে ছোয়ার সাথে আর একটা কথা না বলে ফোন রেখে দিলেন খট করে।
ছোয়াও বিষয় টা বুঝে কিন্তু মাকে তো এখানে এখন আনাই যাবে না এটা মাকে বলতেও পারবে না তাই ছোয়া আর ফোন করেনি।

মিলিও তারাতাড়ি চলে এসেছে।ছোয়া মিলিকে বললো সবকিছু চেক করেছে কি না।

“ম্যাম কাল থেকে চেক করছি।আপনি না বললেও।আজ অব্দি এতো কেস জিতেছেন।কতো জটিল কেস সলভ করেছেন আপনাকে এতোটা নার্ভাস আমি দেখিনি যতটা আজ দেখছি।

” আমিও জানি না মিলি এমন কেন হচ্ছে।সত্যি বলতে যতই কোর্ট এর দিকে এগোচ্ছি ততই আমার হাত পা কেমন পাথর হয়ে আসছে।হয়তো নুহাশ আমার আপনজন বলেই এমন হচ্ছে।

“এতো চিন্তা কেন করছেন ম্যাম সব ঠিক হবে দেখবেন।

” ঠিক তো হতেই হবে মিলি তা না হলে আমি আমার শাশুড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না।আর না নুরের সামনে।সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার সন্তানকে কি জবাব দিবো?

“আরে মিস ছোয়া যে।সরি মিস বলে ফেললাম আপনি তো এখন মিসেস।আপনিই তো নুহাশ চৌধুরীর কেস নিয়ে লরছেন তাই না?

” হাই মিঃ শামিম। আপনি ঠিকই শুনেছেন।

“আপনার জন্য বড্ড খারাপ আলছে আমার।

” কেন বলুন তো?

“এই যে জীবনের প্রথম হার তাও আমার কাছে।আপনি জানেন তো আপনার বিপক্ষে আমি থাকছি?

” তা জানি। তবে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।দেখুন এখনই তো বলা যাচ্ছে না যে আমি হারবো কি না তবে আপনাকে একটা কথা দিতে পারি।আর তা হলো আজ কোর্টে বিশাল এক ধামাকা হবে।

“ধামাকা মানে!হারার আগেই পাগল হয়ে গেছেন নাকি?

” সেটা না হয় তোলা থাক ঠিক সময়ে খেলা শুরু হয়ে যাবে আপনি বরং তখনই দেখতে পাবেন।
চলো মিলি আমাদের যেতে হবে কিছুক্ষণ পরই তো কোর্টের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

“এতো তেজ তোমার ছোয়া আমিও দেখবো এই তেজ আজকের পর কোথায় থাকে।

ছোয়া মিলিকে নিয়ে চলে গেলো।শামিম তখনও ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।শামিমকে ছোয়ার পছন্দ নয় শুরু থেকেই। বউ থাকা সত্ত্বেও ছোয়ার পিছনে পরে ছিলো দুটো বছর। এছাড়াও শামিম ছোয়ার থেকে গুনে গুনে ১৪ বছরের বড়। একদিন তো ছোয়াকে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছিলো।সেদিন ছোয়া তার উপযুক্ত যবাবও দিয়েছিলো। চাইলেই অনেক কিছু করতে পারতো ছোয়া তবে শামিমের ৫ বছরের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুই বলেনি।তা না হলে ওই বাচ্চাটার মনে এর বাজে একটা প্রভাব পরতো।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো।তবে এটা সত্যি সেদিনের পর শামিম আর ছোয়কে কোনো ভাবেই বিরক্ত করেনি।

” দেখেছেন ম্যাম এই লোকটা ধরেই নিয়েছে আমরা আজ হেরে যাবো।একবার কেসটা জিতি ওই শাইম্মাকে আমি দেখে নিবো।

“বাদ দাও মিলি।এসব নিয়ে আমাদের না ভাবলেও হবে।তবে আমি ভাবতেও পারিনি আমার প্রতিপক্ষ এই লোকটা হবে।

” আমার মনে হয় অনেক মোটা অংকের টাকা খেয়েছে। কিন্তু ম্যাম একটা জিনিস খেয়াল করেছেন এই শামিম লোকটা এখনো আপনাকে বাজে নজরে দেখে।

“হুম বুঝেছি।আমি এখন এটা নিয়ে ভাবছি না।

” ম্যাম নুহাশ স্যার!

“কোথায়?

” ওইতো গাড়ি থেকে নামছে।

নুহাশ গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে কাউকে খুজছে, হয়তো ছোয়াকেই।পেয়েও গেছে।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হলো।নুহাশ চমৎকার ভাবে একটা মুচকি হাসি দিলো।ছোয়ার বুকটা ধক করে উঠলো। নুহাশের চোখের নিচে কালি পরে গেছে।চুলগুলো উসকোখুসকো হয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে ঠিক মতো খায়নি।হয়তো কালও রিমান্ডে নেয়া হয়েছিলো।তার প্রমান নুহাশের কালশিটে চেহারায়। কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারলো না। তার আগেই নুহাশকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো।তবে এই না বলাতেও যেন অনেক কথা হলো।

“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?

” কি করে ঠিক থাকবো বলতে পারো মিলি।ওরা ওনাকে কিভাবে টানতে টানতে নিয়ে গেলো দেখেছো।আর শরীরে ওই দাগ সেতো এমনি এমনি হয়নি।নিশ্চয়ই অনেক টর্চার করা হয়েছে।

“আচ্ছা মিস ছোয়া আমি যতদূর সুনলাম আপনি এবং আপনার ক্লায়েন্ট সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী। তাই আপনি তো চাইবেনই যে আপনার স্বামী ছাড়া পাক এবং নির্দোষ প্রমাণিত হোক। আর তার জন্য আপনি যে কোনো পথ অবলম্বন করতে পারেন তাই না?

কথাটা শামিম বলেছে ছোয়াকে।যখন ছোয়া একের পর এক প্রমান আদালতে পেশ করছিলো আর তা সবকিছুই এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে তখন মোড় পাল্টাতে এই কথা বলে শামিম।তবে তার আশায় এক বালতি পানি ঢালে ছোয়া।

” আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন মিঃ শামিম?

“না মানে আমি বলতে চাইছি না, জানতে চাইছি আর কি।আপনি আবার কোনো অসত উপায় এই প্রমাণ গুলো জোগার বা এমনও হতে পারে এগুলো সব মিথ্যা।আজকাল তো সবই সম্ভব।

” মি’লর্ড আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু হয়তো ভুলে যাচ্ছে যে এটা কোর্ট।আর এখানে জালিয়াতি চলে না।আমি যেই প্রমাণ গুলো পেশ করেছি এটা তো সামান্য কিছু ডকুমেন্টস মাত্র।এগুলো মিথ্যে নয় এটাও আমি প্রমাণ করে দিবো।
মি’লর্ড এখন একটা ভিডিও পেশ করতে চাই যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে।

“অনুমতি দেয়া হলো।

তারপর ছোয়া সেই পার্সেল এ পাওয়া ফোনের ভিডিও পেশ গুলো জর্জ সাহেবকে দিলো।সবটা দেখে তিনি বললেন-
“এখানে স্পষ্ট ভাবে মিঃ শিকদারের নাম বলে গেলো।

“মিথ্যে এসব মিথ্যে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে মি’লর্ড।

এরশাদ শিকদারের আওয়াজে সবাই এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।শামিম চেষ্টা করছে তাকে থামানোর।

” আপনি দয়া করে চুপ করুন।এভাবে চিৎকার করলে উল্টো আপনি ফেঁসে যাবেন মিঃ শিকদার।

“আপনার যা বলার সামনে এসে বলুন।

” মি’লর্ড আমি শিকদার সাহেবকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

“অনুমতি দিলাম।

” ধন্যবাদ মি’লর্ড। আচ্ছা মিঃ শিকদার দেখুন তো এই স্বাক্ষর টা আপনার কিনা?

“হ্যাঁ আমার।

” আনি শিওর তো?

“কি আশ্চর্য আমার স্বাক্ষর আমি চিনবো না?

” ঠিকি তো।মি’লর্ড এটা একটা ডকুমেন্টস যেখানে গত সপ্তাহে প্রায় ১লাখ টাকার ই*য়া*বা এবং ১০ জন মেয়েকে জোর করে এদেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হয়েছিলো। যেখানে শিকদার সাহেবের স্বাক্ষর রয়েছে।এটা তারই ডকুমেন্টস। আর সেই ই*য়া*বা এবং মেয়ে গুলো এখন পুলিশের হেফাজতে আছে।আর
এই হচ্ছে আজ থেকে ১৮ বছর আগে সরকারি পক্ষের উকিল সোলাইমান এবং ৬ মাস আগে আলহাজ্ব চৌধুরীর খুন এই দুটোই মিঃ শিকদার করিয়েছেন।সোলাইমানের খুনের বিষয় ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি বিদেশে পারি জমান।শুধু তাই নয় আলহাজ্ব চৌধুরীর খুনের আগের দিন তিনি গোপনে দেশে আসেন এবং তাকে খুন করে খুব গোপনেই আবারও বিদেশে ফিরে যান।এই হচ্ছে এয়ারপোর্টের সমস্ত তথ্য।এবং শহরে যে খুন গুলো হয়েছে তার সবকিছুর পিছনে রয়েছে এরশাদ শিকদার। এখানে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে।আপনি দেখে নিতে পারেন।

“না এসব মিথ্যে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

” তাই নাকি! তাহলে একটু অপেক্ষা করুন।মি’লর্ড আমি আমার তরফ থেকে এই কেসের শেষ প্রমাণ টা পেশ করতে চাই।যেখানে কাল ওনাদের বাংলোতে নিজ মুখে শিকার করেছে এই খুনের কথা।আর শুধু তাই না এরশাদ শিকদার এবং শামসুল রহমান অরুফে শামসুল শিকদার দুজনে মিলে মিঃ নুহাশ কে নিজেদের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য এই নোংরা চক্রান্ত করেছে।যাতে শামসুল এমপির পদে বসতে পারে আর ভাইয়ের দাপট নিয়ে শিকদার সাহেব তার সমস্ত কালো বিজনেস করে যেতে পারে।কি তাই তো শিকদার সাহেব?

“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই।আমার আরো বড় ভুল হচ্ছে নিজের ভাইকে বাচিয়ে রাখা।ওর জন্য শুধু মাত্র ওর জন্য আজ আমাকে ধরা পরতে হলো।

” মিঃশামিম আপনি বলছিলেন না নুহাশ আমার সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর?

“হ্যাঁ।

” আপনার তো ছেলে আছে তাই না?

“হ্যাঁ আছে।

” আপনি তাকে ভালোবাসেন নিশ্চয়ই?

“অবশ্যই বাসি।

” এক্সাক্টলি। আমি আমার স্বামীকে বাঁচাতে চাই এটা সত্য তবে এর থেকেও বড় সত্যি আমি শুধু আমার স্বামীকেই বাঁচাতে আসিনি। আমার অনাগত সন্তানের বাবাকে বাঁচাতে এসেছি।আর যেখানে সে কোনো অপরাধই করেনি সেখানে সে কেনই বা শাস্তি ভোগ করবে? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, আইন সম্পর্কে না প্রমাণে বিশ্বাসী। আর আমি প্রমাণ দিয়েছি।আমার আর কিছু বলার নেই মি’লর্ড।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১২

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১২
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“আরে লোকটা তো মারা গেলো!কি ভাবছেন ম্যাম?

” হু কিছু না।মিলি তুমি এক কাজ করো এই ফোনটা তোমার কাছে রাখো আর ভিডিও টার একটা কপি করে রাখো।আমাদের কাছে যত প্রমাণ আছে সবগুলো একটা করে এক্সট্রা কপি রাখতে হবে।আর অবশ্যই কপিগুলোই আমাদের সবার সামনে শো করতে হবে অন্তত কোর্ট অব্দি পৌঁছানো পর্যন্ত। আমাদের শত্রু পক্ষ যথেষ্ট স্ট্রং তাই রিস্ক নেয়া যাবে না।

“ইয়েস ম্যাম বুঝতে পেরেছি কি বলতে চাইছেন।যাতে করে শত্রুর কেউ ওই প্রমাণ গুলো কোনো ভাবে নষ্ট করতে চাইলে বা করলেও আসল গুলো দিয়েই আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারি।

” একদম।

শামসুল শিকদার টিভিতে নিউজ দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।তার অনেক দিনের স্বপ্ন অবশেষে পুরন করতে পেরে।একবার যদি নুহাশকে দোষি প্রমাণিত করা যায় তাহলে এইবারের এমপি সেই হবে এব্যাপারে নিশ্চিত শামসুল।

“অনেক জ্বালিয়েছিস নুহাশ।তোর বাপ থাকতে কেউ তোর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।এমনকি বাপ মরার পরও।শালা এমন একটা ড্রাইভার জুটিয়েছিস যে নিজে মরবে তবুও তোর কিছু হতে দিবে না? এখন দেখ কেমন লাগে? খুব তো সবার মনে যায়গা করে নিয়েছিলি।এবার দেখবি তারাই তোকে জুতোপেটা করবে।আহ আমার ভেবেই কেমন আনন্দ হচ্ছে।

” স্যার একজন ছেলে এবং মেয়ে দেখে মনে হলো স্বামী স্ত্রী আপনার সাথে দেখা করতে চায়।

“কে। নাম বলেছে?

” নাম বললো রোহিত।আপনার ছোট বেলার বন্ধু।

“রোহিত!ওহ হ্যাঁ পাঠিয়ে দাও।কিন্তু হঠাৎ এতোদিন পর কি মনে করে?

” আসতে পারি?

“আয়। সাথে ইনি কে?

” তোর ভাবি।আসলে আমাদের বিয়ের ১ সপ্তাহ হলো।কাউকে জানাইনি।হুট করেই বিয়ে তো।এদিকেই এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।

“তা এতোদিন কোথায় ছিলি? হুট করেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলি।কোনো খোজ খবর নেই।দেখা নেই।

” ছিলাম কোথাও একটা। তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে যে কোনো ভালো খবর আছে নাকি?

“তা বলতে পারিস।আজ আমার অনেক আনন্দের দিন।

” কেন কেন?

“আজ আমার সবচেয়ে বড় শত্রুকে আমার রাস্তা থেকে সরাতে পেরেছি তাই।

” শত্রু!তোর আবার শত্রু কে কিসব বলছিস?

“শোন তাহলে নুহাশ আছে না।আরে এভাবে তো চিনতে পারবি না।রাজনীতিবিদ নুহাশ চৌধুরী এইবার ভোটে এমপি হয়েছে?

” হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।শুনলাম এখন জেলে আছে কাল রাতে পুলিশ এরেস্ট করেছে বাড়ি থেকে।কিন্তু ওর সাথে তোর কি সমস্যা?

“ওর জন্য শুধু মাত্র ওর জন্য আমি এবার ভোটে জিততে পারিনি।সবার মাথার ওপরে ছুড়ি ঘুরাচ্ছে আর সবাই নেচে যাচ্ছে। এবার আমার শান্তি।

” এখানেও ওই নু্হাশ!

“এভাবে কেন বললি?

” বউ তুমি একটু বাড়িটা ঘুরে দেখো আমাদের কিছু কথা আছে।

“দেখেছিস আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
দাঁড়া তোর ভাবিকে ডাকছি।ও নিয়ে যাবে রাহা একটু এদিকে এসো তো।

স্বামীর ডাক শুনে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রাহা।শামসুল এর স্ত্রী। হাইটে ছোট হলেও দেখতে একদম পুতুলের মতো।

” কিছু বলবে?

“ও আমার ছোট বেলার বন্ধু রোহিত।আর ইনি হচ্ছে ওর ওয়াইফ নামটা যেন কি?

” নুর।

“হ্যাঁ নুর।তুমি ওনাকে ভিতরে নিয়ে যাও আর খাবার বানাতে বলো কাউকে।

“হাই আমি রাহা ।আসুন ভেতরে যাই।

নুর চলে গেলো রাহার সাথে।রোহিত চাইছিলো না নুর এখানে থাকুক।প্রথমত রোহিত নুহাশের বিষয়ে অনেক খারাপ কথা বলবে আর দ্বিতীয়ত ভাইয়ের এমন কথা নুর কিছুতেই মানতে পারবে না সেটা যতই বানিয়ে বানিয়ে হোক না কেন।তখন দেখা যাবে নুর রিয়াক্ট করবে এতে হিতে বিপরীত বই কিছুই হবে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

“ভাবি তো নেই এবার বল।

” আসলে ওই নুহাশের বাচ্চা আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে।অনেক ভালোবাসতাম ওরে কিন্তু ক্ষমতা আর টাকার কাছে আমার ভালোবাসা কোনো মূল্যই পায়নি।কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না ওকে কিভাবে ফাঁসালি?

“সবই বুদ্ধির খেলা বুঝলি।সে অনেক কথা।আচ্ছা তুই যখন আজ এসেই গেছিস তাহলে রাতের পার্টিতে থাকবি কিন্তু।

” কিসের পার্টি?

“আরে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু তার ব্যাপারে কাল কোর্টে রাই বেরুবে।আর আমি তো জানি ও কিছুতেই বাঁচতে পারবে না।সেই আনন্দে।

” তুই শিওর বাঁচতে পারবে না তো?

“আরে হ্যাঁ পাক্কা।

” তাও বলছি ওর বউ কিন্তু সুবিধার নয়।নামকরা উকিল একটু সাবধানে পা ফেলিস।

“তা হোক না। আমাদের কাছে প্রমান আছে তো।ওই উকিল কিচ্ছু করতে পারবে না।তবে ওই কথাই রইলো।তুই এবং ভাবি আজ আসছিস।আমাদের পুরনো বাংলোতে। চিনিস তো তুই।

” হ্যাঁ তা চিনি।

“এবার কি করবে ভাবছো ছোয়া? আমরা কি সত্যিই যাবো।

” হ্যাঁ অবশ্যই যাবে এবং আমাকে আর মিলিকে যাওয়ার ব্যাবস্থাও তোমরাই করে দেবে।

“কিন্তু সেটা কিভাবে ভাবি?

” দেখো এমনিতে তো ওই বাংলোতে সবসময় সবার যাওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু আজ যেহেতু সেখানে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে তার মানে অনেকেই আজ সেখানে যাবে।আর আমরা এই সুযোগ টাই কাজে লাগাবো।

“বুঝেছি।তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমাদের বেতরে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবো।

পার্টির আয়োজন বেশ বড় করেই করা হয়েছে।কিন্তু বাইরে থেকে তা বুঝার উপায় নেই।নুর এসেছে একটা কালো শাড়ি পরে।নুরকে দেখে রাহা এগিয়ে এসে অন্যদিকে নিয়ে গেলো।নুর এটুকু বেশ বুঝেছে রাহা মেয়েটা খুবই সরল প্রকৃতির এবং মিশুক।যা শামসুল এর দিক থেকে সম্পুর্ন আলাদা।ওর মনে নেই কোনো হিংসা। এবার রাহার জন্য খারাপ লাগলো নুরের। রাত পোহালেই মেয়েটার বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবে এই ভেবে।

রোহিত কানে হেডফোন দিয়ে রেখেছে।মুলত ছোয়ার সাথে যোগাযোগ রেখেছে সে।ভেতরে মিউজিক বাজছে।সেই সাথে উচ্চ পরিবারের লোকজন মিউজিকের তালে তালে কোমড় দুলাচ্ছে কেউ বা ড্রিংকস নিয়ে ব্যাস্ত।

এতোকিছুর মাঝে এরশাদ শিকদারকে একবারও দেখা যায়নি।কিন্তু এবার তার দেখা পাওয়া গেলো।দেখে মনে হচ্ছে সে মোটেও খুশি নয় এই আয়োজনে। শামসুল এর সাথে কিছু একটা নিয়ে তর্কাতর্কি চলছিলো তার।কথার একপর্যায়ে এরশাদ শিকদার একটা রুমে ঢুকে গেলো।ভাইয়ের পিছু পিছি শামসুল ও গেলো।বিষয় টা মোটেও সুবিধার লাগলো না।ছোয়াকে একটা টেক্সট দিয়ে সেও পিছু নিলো।

নুর ছোয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো।অবশ্য রাহাকে বলেই ছোয়ার ভেতরে ঢুকার পারমিশন নিয়েছে নুর কৌশলে।রাহাকে বলেছিলো ওর এক ফ্রেন্ড আসবে।রাহা শুনেই সিকিউরিটি গার্ডকে বলেছে নুর যাকে আনতে চায় তাকে যেন ঢুকতে দেয়া হয়।ব্যস নুরের কাজ শেষ।

এদিকে রোহিতের টেক্সট পেয়ে ছোয়া চলে এসেছে। নুরকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো ওর কাছে।

“একি তুমি এভাবে কেন এসেছো ভাবি।এসব সুট বুট পরে কেন?

” আস্তে কথা বলো নুর।রোহিত কোথায়?

“উনি ভেতরেই আছেন।শোনো যা করবে খুব সাবধানে ঠিক আছে।আর ঘরটা চিনবে তো।

” হ্যাঁ হ্যাঁ চিনে নিবো। তুমি বাইরের টা দেখে রেখো আর কোনো বেগতিক ঠেকলে আমাকে ফোন করবে কেমন।

“হ্যাঁ ঠিক আছে এবার যাও কেউ একসাথে এভাবে দেখলে সমস্যা হতে পারে।তোমাদের কাজ হয়ে গেলে দেরি করবে না কেমন।আমাকে টেক্সট করে চলে যাবে তোমরা।

” ঠিক আছে।চলো মিলি আমাদের যেতে হবে।

ছোয়া খুব সাবধানে এরশাদ শিকদারের রুমে প্রবেশ করলো।ঘরটা বেশ বড়।বাইরে গানের শব্দ শোনা যাচ্ছে।বলা বাহুল্য এখানে তেমন কোনো জিনিসপত্র না থাকলেও যা আছে খুব দামি এবং নজরকাড়া। ড্রিম লাইটের আলোতেও দেখতে মোহনীয় লাগছে।

“ম্যাম অন্ধকারে তো চাবি খুজে পাবো না এর এই লাইটের আলোতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিক করে।

” ফোনের আলো জালাও মিলি।তবে আলো যেন বেশি না ছড়িয়ে পরে।

“হ্যাঁ ম্যাম।

অনেক খোজাখুজি করে অবশেষে একটা চাবির ছড়া পেলো তারা।কিন্তু এখানে চাবির পরিমাণ এতোই যে কোনটা কোন আলমারির চাবি তাই বুঝতে পারছে না।কারন এই ঘরে টিনটে আলমারি। একটা মানুষ ঘরে যে তিনটা আলমারি রাখে তা এই ঘর না দেখলে বিশ্বাস হতো না।আলমারি ছাড়া তেমন কোনো ফার্নিচার নেই বললেই চলে।

” এখানে এতোগুলো আলমারির মধ্যে কোন টাতে খুজবো আমরা ম্যাম?এক কাজ করি আমরা একটা একটা করে চেক করি।

“এতে অনেক সময় লাগবে মিলি আমাদের হাতে এতো সময় নেই।
আমাকে একটু ভাবতে দাও।এখানে আলমারি তিনটা হলেও চাবি কিন্তু একটু বেশিই আর কেমন অদ্ভুত রকমের চাবি আছে দুটো
সুতরাং এখানে আলমারি ছাড়াও অন্য কিছু আছে যার চাবি এটা।

” ম্যাম একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন?

“কি বলতো?

” বাকি দুটো আলমারি তুলনায় এই আলমারিটা কেমন পাতলা।মানে আমি বলতে চাইছি এটা দেখে যেমন ভারি মনে হচ্ছে আদোও কিন্তু তা নয়।এই দেখুন আমি মাত্রাই এটার সাথে লেগে পরেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন এটা কোনো আলমারিই নয় বরং আলমারির মতো দেখতে একটা ছবির ফ্রেম যেটার ছবি দেখতে হুবহু আলমারির মতোই।

“কই দেখি।তাই তো।কিন্তু এটা এভাবে কেন রাখা হছেয়ে।নিশ্চয়ই এখানে কিছু একটা আছে।আমাদের এটা সরাতে হবে।

দুজনে খুব সাবধানে ফ্রেমটা সরিয়ে এমন কিছু দেখলো যা দেখে ছোয়া শিওর হয়ে গেলো যে ওরা যার জন্য এসেছে তা এখানেই আছে।

” ম্যাম এটা একটা দরজা!

“আমি নিশ্চিত মিলি আমরা যেটা খুজতে এখানে এসেছি তা এখানেই পেয়ে যাবো।তুমি এখানেই থাকো আমি দেখছি।

রোহিত অনেক্ষন ধরেই এরশাদ শিকদার এবং শামসুল যেই রুমে আছে সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরে কি কথা হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না।

” উফ এতো কি কথা বলছে কে জানে।কিন্তু যাই কথা হোক আমাকে তো শুনতে হবে ওরা কি বলছে।আরে এই বুদ্ধিটা কেন আগে মাথায় আসেনি।

কিছু একটা ভেবে রোহির জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।যা ভেবেছিলো তাই।এই জানালাটা উপর এবং নিচের দিকটা ফাঁকা।আগে যেহেতু রোহিত এই বাংলোতে এসেছে তাই অনেক কিছুই তার জানা।এই রুমটাতে শামসুল এর বাবা থাকতেন।তিনি বন্ধ পরিবেশ পছন্দ করতেন না।তাই এই ঘরটা সেইভাবেই বানানো যাতে বাইরের হাওয়া বাতাস সবসময় চলাচল করতে পারে।

“এই সামান্য বিষয় নিয়ে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে ভাইজান?

” তুমি এখনো রাজনীতিতে কাচা শামসুল। তাই বুঝতে পারছো না।আরে পার্টি করছো বেশ ভালো তাই বলে এতো লোকজন! সময় অসময়ের একটা ব্যাপার আছে তো নকি।তাছাড়া তুমি যে নুহাশকে ফাঁসানোর জন্য এসব করেছো তা যে কেউই বুঝবে তোমার এই আয়োজন দেখলে।

“ভাইজান কেউ বুঝবে না।তাছাড়া এর কোনো প্রমাণ নেই যে আমিই নুহাশকে ফাঁসিয়েছি।তাই কারো ভাবা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই।

” ঠিক এই জন্য এই জন্যই তোমাকে আমার অপদার্থ মনে হয়।সামান্য ইলেকশন জিততে পারো না এখন তাকে সরাতে তোমার এতো কিছু কর‍তে হচ্ছে।

“আপনিও তো সামান্য এক উকিলকে সামলাতে পারেন্নি ভাইজান।শেষে তাকে আপনি দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিয়েছেন।

” কি বলতে চাইছো!

“কেন সোলাইমান এর কথা ভুলে গেছেন আপনি। মনে আছে ১৮ বছর আগের কথা?সে না হয় অনেক দিন আগের কথা গত ৬ মাস আগের কথা মনে আছে আপনার।আলহাজ্ব চৌধুরীর কথা ভুলে গেছেন?

” তুমি!

“আমি সব জানি।ওদেরকে আপনি খুন করেছেন সেটাও জানি।এমনকি আপনার ড্রাগস এর ব্যাবসা ছাড়াও মেয়ে ভক্রের কথাও জানি আমি।ছয় মাস আগে হুট করে দেশে আশা তারপর কাউকে না জানিয়েই হুট করে চলে যাওয়া এই সবই আমি জানি। তাই আমাকে বেশি ঘাটবেন না।এতে আপনারই বিপদ ভাইজান।

কথাটা বলে আর থামলো না শামসুল। সে এখন পার্টি মুডে আছে।তাই আপাতত ভাইয়ের কথা সে মেনে নিতে পারছে না।

” এই ব্যাপার। আজ আরো একজন জেনে গেলো আর তা আমার এই ফোনে ভিডিও হয়ে গেলো মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড।

“ম্যাম কেউ আসছে মনে হয় আপনি কি কিছু পেলেন?

” পেয়েছি মিলি।আমাদের যা দরকার ছিলো
পেয়ে গেছি এবার এই ফ্রেমটা আগের মতো করে রাখতে হবে।জলদি করো।

সবকিছু ঠিকঠাক করে ছোয়া মিলি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই এরশাদ শিকদার ঘরে প্রবেশ করেন।অন্ধকার থাকায় সবটা না দেখলেও তার মনে হলো এখানে কেউ ছিলো।কিন্তু ঘরের লাইট জালিয়ে কিছুই তিনি দেখতে পেলেন না।সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হলো।

“বিপুল ভাই তারাতাড়ি গাড়ি ঘুরান ।যে কোনো সময় কেউ চলে আসবে।আমি নুরকে টেক্সট করছি।

‘আমাদের কাজ হয়ে গেছে তোমরা সুযোগ বুঝে চলে এসো অপেক্ষা করছি’
নুর নিজের ফোনে এই টেক্সট টা দেখে রোহিতকে খুজতে লাগলো।

” এই লোকটা আবার কোথায় গেলো।এখন একে কোথায় খুজবো।

“নুর ছোয়া কিছু জানিয়েছে?

” আপনাকেই খুজছিলাম।কোথায় ছিলেন।আমাদের বেরুতে হবে ওরা অপেক্ষা করছে।

“হ্যাঁ আমারও কাজ শেষ। চলো এবার যাওয়া যাক।

প্রায় আধঘন্টা পর নুর আর রোহিতকে দেখতে পেলো ছোয়া।

” এসে গেছো তোমরা।তারাতাড়ি উঠে পরো।

“তোমাদের কাজ শেষ ছোয়া?

” হ্যাঁ। এবার আর নুহাশকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না।কেউ না।এবার শত্রুদের পালা।অনেক খেল দেখিয়েছে।এবার ওরা দেখবে সবকিছুর হিসাব নেবো আমি।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১১

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১১
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“চলুন অফিসার।এভাবে গেলে হবে তো নাকি হাতকড়া পরিয়ে নিতে চান?

” এভাবে লজ্জা দিবেন না স্যার।আশা করি সব খুব তারাতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।

যাওয়ার সময় নুহাশ বিপুলকে ইশারায় কিছু একটা বললো।সেটা অন্য কেউ না বুঝলেও বিপুল ঠিক বুঝেছে।

“এবার কি হবে ভাবি।ভাইয়াকে তো ওরা ধরে নিয়ে গেলো?

” চিন্তা করো না নুর। আমি আছি তো।বিপুল ভাই আছে। তোমার ভাইয়ের কিছু হতে দেবো না আমি।

নাহার বেগম ছেলের জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে।তিনি খাননি বলে বাকিদেরও আর রাতে খাওয়া হলো না।বিপুল আজ থেকে গিয়েছে।বলা তো যায় না শত্রু পক্ষরা কোন দিক দিয়ে আবার আক্রমণ করে।

“আমাদের একটা ভালো উকিল লাগবে ভাবি।ভাইকে তো আর জেলে থাকতে দেয়া যাবে না।আপাতত জামিন টা করিয়ে নিতে হবে।

” হুম আমিও তাই ভাবছি।কিন্তু।

“আবার কিন্তু কি।আপনার তো চেনা জানা অনেক উকিল আছে তো আপনিই এই বিষয় টা দেখুন না।

” কেন ভাবির মতো একজন অভিজ্ঞ উকিল থাকতে অন্য কেউ কেন?ভাবিই যাবে।

“বিষয় টা এতো সহজ নয় নুর।সম্পর্কে আমরা স্বামী স্ত্রী তাই আমাকে এলাও নাও করতে পারে।তবে আমি ইতমধ্যে স্যারকে একটা মেইল পাঠিয়েছি।এখন দেখা যাক কি হয়।

” এই স্যার টা কে?

“উনি একজন জর্জ এবং সেই সাথে আমার শিক্ষক। এই কেসে উনিই বিচারক হবেন যতটুকু জানতে পেরেছি আমি।
কিন্তু তার আগে আমায় নুহাশের সাথে দেখা করতে হবে।আর তার জন্য সকাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।

সকাল সকাল রোহিত নুরদের বাড়িতে এসে হাজির।খবর শুনেছে কাল রাতে নুরের থেকে।কেন আরো আগে থেকে জানানো হলো না এই বিষয়ে কথা বলছে ছোয়ার সাথে।

” এতো কিছু মাথায় ছিলো না রোহিত।কিন্তু এবার আমায় একটু বের হতে হবে।মিলির সাথে আমার কিছু কাজ আছে।তাছাড়া আমি এই কেসের জন্য অনুমতি পেয়ে গেছি।নুহাশকে জামিনের জন্য এখন না বেরুলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

“আমরা কি যাবো তোমার সাথে?

” না নুর তুমি আম্মার কাছেই থাকো।আমি বিপুল ভাইকে নিয়ে যাচ্ছি।আর হ্যাঁ প্রয়োজনে তোমাদের হেল্প লাগতে পারে তাই প্রস্তুত থেকো।
চলুন বিপুল ভাই।

“চিন্তা করো না নুর সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি ছোয়াকে যতদূর জানি হেরে যাওয়ার মেয়ে ছোয়া নয়।আর এখানে তো বিষয় টা স্বয়ং নিজের স্বামীর।তবে আমার কি মনে হচ্ছে বলতো জামিন টা হয়তো আজ হবে না।

” কি বলছেন!মাকে তাহলে সামলাবো কি করে।এভাবে বলবেন না।

“আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এতো ভেবো না।কাল থেকে নিশ্চয়ই কিছু খাওনি চলো আগে খেয়ে নিবে।

যা ভেবেছিলো তাই নুহাশের জামিন হয়নি।তবে নুহাশের কেসটা ছোয়াকে দেয়া হয়েছে।নুহাশকে কোর্টে নেয়ার আগে ছোয়ার সাথে কিছুতেই দেখা করতে দেয়নি।এতে ছোয়া একটু আশাহত হয়।

ছোয়াকে নুহাশের সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।আপাতত ছোয়া নুহাশের সাথে কথা বলছে।

” আমি সরি নুহাশ আপনার জামিনটা আমি করাতে পারলাম না।আপনাকে ওরা মেরেছে? কিভাবে করলো এটা।

“ভেঙ্গে পরছো কেন।আর এটা তো স্বাভাবিক কোনো কেস নয়। আমাকে এমন কেসে ফাঁসিয়েছে যে।যাই হোক রিমান্ডে এমন মারপিট হয় ছোয়া সেটা তুমিও জানো।তোমাকে একটা কথা বলি যেটা তোমার কাজে আসবে।

” কি কথা?

“তোমার বাবাকে শিকদার খুন করেছে এটা তুমি আমি জানি কিন্তু আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই।

” কিন্তু ডকুমেন্টস তো আছে।সেটা দিয়ে তেমন কিছুই প্রমান হবে না।

“হ্যাঁ। কিন্তু তুমি চেষ্টা করলে সেই প্রমাণ জোগাড় করতে পারো।

” কিন্তু কিভাবে!

“বাবা তোমার সাথে কেন দেখা করতে চেয়েছিলো সেটা জানতে চাইছিলে না? তবে শোনো।তোমার বাবার খুনের কথা শিকদার নিজ মুখে শিকার করেছে আর সেই অডিও ক্লিপটাই তোমাকে দিতে চেয়েছিলো বাবা।সেটা বাবার কাছে কিভাবে এলো আমি জানি না।কিন্তু আমি যদি খুব ভুল না হয়ে থাকি তাহলে সেটা এখনো শিকদারের বাংলোতেই আছে।আর যেভাবেই হোক সেটা তোমাকেই আনতে হবে।

” এসব আপনি কি বলছেন!কিন্তু সেটা তো বাবা খুনের প্রামান। আপনাকেও তো বাঁচাতে হবে।

“সেটাও.

পুরো কথাটা আর বলা হলো না নুহাশের।তার আগেই তাদের সময় শেষ জানানো হলো বাইরে থেকে।

” আপনি চিন্তা করবেন না নুহাশ আমি সব খুজে বের করবো।আর আপনাকে নির্দোষ প্রমাণিত করবো।

“আমি জানি তুমি পারবে।নিজের খেয়াল রেখো আর নুর আম্মার ও কেমন।

নুহাশের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরছে ছোয়া সাথে আছে মিলি এবং বিপুল ও।ড্রয়িং রুমে আগে থেকেই নুররা বসে ছিলো।রোহিতও আছে।এখানে এই অবস্থা সবাইকে রেখে যেতে চায় না রোহিত।নাহার বেগম ছেলের শোকে পাগল প্রায়।ছোয়ার থেকে সবটা শুনে তিনি আরো কষ্ট পাচ্ছেন।

” আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার ছেলেকে আমি ফিরিয়ে আনবো।শুধু একটু অপেক্ষা করুন।

” ম্যাম কিছু ভাবলেন কি করবেন?

“ভেবেছি অনেক কিছু। আমাদের এবার সবাইকে কাজে লেগে পরতে হবে।

” কি রকম কাজ ছোয়?
রোহিত প্রশ্ন করলো।

“রোহিত তোমার মনে আছে বেশ কিছুদিন আগে তুমি একবার শামসুল নামের এক ব্যাক্তিকে দেখিয়ে বলেছিলে তোমার ছোট বেলার স্কুল ফ্রেন্ড?

” হ্যাঁ। তবে সেটা তো অনেক আগের কথা।এখন অবশ্য ওর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।কিন্তু তুমি কেন তার কথা বলছো?

“কারন সেই শামসুলই এই শামসুল শিকদার যে নুহাশকে এমন যায়গায় দাঁড় করিয়েছে। আর ওর চেহারা আমি যেমন দেখেছিলাম তেমন নেই এই জন্যই প্রথমে আমি চিনতে পারিনি।

” কি বলছো!

“হ্যাঁ। তোমার যে এই পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে সেটা নিশ্চয়ই ও জানে না তাই না?

” জানার কথা নয়।বললাম তো যোগাযোগ নেই অনেক বছর হলো।

“হ্যাঁ এটাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

” তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না।

“দেখো এই মুহুর্তে ওদের সবচেয়ে বড় শত্রু নুহাশ।আর নুহাশ এখন জেলে।এই খুশিতে ওরা যে কোনো পার্টির আয়োজন করতেই পারে।আর আমি শিওর আজ ওরা এটা করবেই।তোমাকে এই সুযোগ টা নিতে হবে।যেহেতু ওরা আমাকে আজ দেখে নিয়েছে তাই আমি যেতে পারবো না।কিন্তু তুমি ওর পুরনো বন্ধু তাই তোমাকে ও সন্দেহ করবে না।

” তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলতো।আমাকে কি করতে হবে?

“তুমি আজ যাবে ওদের বাড়িতে আর সাথে নিয়ে যাবে নুরকে কারন আমাদের যে করেই হোক এরশাদ শিকদারের বাংলোতে ঢুকতে হবে আর এই রাস্তা তুমি নুর করে দেবে।
তুমি যাবে শামসুল এর বাড়িতে ছোয়াকে নিয়ে।বলবে তোমার বউ নুর।যেহেতু নুহাশের পরিবারের বিষয় বিশেষ করে নুরের বিষয় তেমন কেউ কিছু জানে না।তাই নুরকে ওরা চিনতে পারবে না।তারপর তুমি নুহাশের সম্পর্কে যা পারো বানিয়ে বলবে।আমি শিওর
আমি যেটা ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে আজই আমরা ওই বাংলোতে ঢুকতে পারবো।

” তার মানে তুমি বলতে চাইছো শামসুল আমাদের ওই বাংলোতে ঢুকার রাস্তা করে দিবে?

“এক্সাক্টলি।

” বাহঃ এতো বুদ্ধি কোথায় রাখো বলতো?

“ওকালতি করতে এটুকু বুদ্ধি তো থাকতেই হয়।তবে সাবধান বিষয় টা কিন্তু এতো সহজও নয়।একবার যদি বুঝতে পারে তাহলে কিন্তু বিপদ।

” আই হোপ সব ঠিকই হবে।এটুকু রিস্ক তো নিতেই হবে।আমি প্রস্তুত।কি বলো নুর?

“একদম আমিও প্রস্তুত।

” আর আমি কি করুম ভাবি?

“আপনার ও কাজ আছে কিন্তু সেটা পরে বিপুল ভাই।

ছোয়ার কথা অনুযায়ী রোহিত নুরকে নিয়ে চলে গেছে।মিলি এখনো ছোয়ার কাছেই আছে।ওরা রাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।এমন সময় একটা মেসেজ এলো ছোয়ার ফোনে।সেখানে লেখা ছিলো ” দরজার সামনে একটা পার্সেল আছে।দ্রুত সেটা রিসিভ করুন।”

মেসেজটা দেখে ছোয়া ভ্রু কুচকে নেয় তবুও এগিয়ে যায় মেইন দরজাএ কাছে।সত্যি সত্যিই সেখানে একটা পার্সেল আছে।দেরি না করে ছোয়া দ্রুত সেটা তুলে নেয়।

“এটা কি ম্যাম?

” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না।খুলে দেখতে হবে।

খুব আগ্রহ নিয়ে ছোয়া পার্সেলটা খুললো।সেখানে একটা মোবাইল ফোন।

“ফোন!কিন্তু এটা কার ফোন?

” সেটাই তো।দাঁড়াও ওপেন করে দেখি।

“” আমি রহিম। আজ থেকে অনেক বছর আগে সোলাইমান নামের এক উকিলকে খুন করা হয়েছিলো।তার এই খুনের পিছনে যারা ছিলো তার মধ্যে আমিও একজন। অবশ্য আমি একা নই এখানে আরো ১৫ জনের মতো জড়িত ছিলাম আমরা।তাদের মধ্যে দুজন কে কেউ খুন করেছে।এর পিছনে যিনি সবার মাথার ওপরে তিনি আর কেউ নন সাবেক মন্ত্রী এরশাদ শিকদার। এরশাদ শিকদারের অনেক অবৈধ ব্যাবসা ছিলো যা সোলাইমান সাহেব জেনে গিয়েছিলেন।মুলত সে কারনেই তাকে খুন করা হয়।প্রথমে টাকার অফার করা হয়েছিলো।কিন্তু উনি রাজি না হওয়ায় তাকে খুন হতে হয়।আমি এগুলো বলছি এজন্যই আমি আসলে প্রান সংসয় নিয়ে বেঁচে আছি।আমার করা অপরাধ আমাকে আর বাঁচতে দিচ্ছে না।তাই ঠিক করেছি আমি আ*ত্ন*হ*ত্যা করবো।তাই ভাবলাম চলে যাওয়ার আগে সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে যাই।”””

তারপর রহিম গলায় ফাঁ*শ লাগিয়ে সেখানেই আ*ত্ন*হ*ত্যা করেন।

“তার মানে সত্যিই সেদিন রহিম মারা যায়নি।যাক এখন আরো একটা প্রমাণ আমার হাতে এসে গেছে।এবার নুহাশকে ওরা আর আটকে রাখতে পারবে না।কিন্তু এই ভিডিও টা কি করে এলো?

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-১০

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_১০
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“ভাবছো কি করে জানলাম তাই তো?আমিই বলছি তুমি যে ডক্টর দেখিয়েছো তোমার রিপোর্টে স্বামীর যায়গায় আমার নাম দেখেই উনি আমাকে ফোন করেছিলেন ওটা আমিই কিনা।আর উনি আমার বন্ধুর ওয়াইফ।তার থেকেই সবটা শুনেছি।
কি করে এই খবর টা আমার থেকে লুকোলে ছোয়া।আমার কি নিজের অনাগত সন্তানের কথা জানার অধিকার নেই?

” আপনি যেমন ভাবছেন বিষয় টা তেমন নয়।আমি আসলে এটা নিয়ে দিধায় ছিলাম। আর সত্যি বলতে বাচ্চার কথা জানলে আপনি আমাকে আরো কড়া নজরে রাখতেন যেটা এই মুহুর্তে আমি চাইনি।তাহলে যে আমি আমার কাজ করতে পারতাম না।

“সেটা তুমি এমনিতেও পারবে না।কারন আমি তোমাকে আর কারো জীবন নিতে দিবো না।আইন আছে ওদের তারাই শান্তি দিবে।আমি চাই না আমার সন্তানের মা কারো জীবন নাশের কারন হোক।

” কি বলছেন!আমি তো বাবাকে কথা দিয়েছি নিজ হাতে ওদের শান্তি দেবো।আর ওই নরপিশাচ গুলো কে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।

“কে বললো শাস্তি দেবো না?ওরা শাস্তি পাবে কিন্তু অন্যভাবে।

” মানে?

“সেটা না হয় সময় বলবে।তবে ওরা যেহেতু একবার ভেবেই নিয়েছে আমার ক্ষতি করবে তার মানে করবেই।কিন্তু ঠিক কি করবে সেটা বুঝতে পারছি না।আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ছোয়া।তুমি এখন থেকে সাবধানে থাকবে।আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে ওরা ওদের দোষ শিকার করে নেয়।

” কিন্তু সেটা কি ভাবে?

“সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না জান।এক কাজ করো মা-কে কাল তোমার মামার কাছে পাঠিয়ে দাও।আমার কেন যেন মনে হচ্ছে শিকদার এবার তোমাকে খুজে বের করার চেষ্টা করবে।আর তোমাকে খুজতে গিয়ে যদি তোমার মায়ের খোজ পেয়ে যায় ভাবতে পারছো কি হবে?

” কিন্তু আমাকে কেন খুজবে স?

“বা রে।তুমি তার সঙ্গীকে মেরেছো সে কি তোমাকে ছেড়ে দিবে?হ্যাঁ যদিও খুনির কোনো খোজ কেউ পায়নি কিন্তু সাবধানের তো মার নেই তাই না।

“না মায়ের কিছু হতে দেয়া যাবে না।আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই।

” ভয় নেই এবার তুমি একা নও আমি আছি তোমার পাশে।

“সত্যি বলতে এতোদিন আমার কোনো ভয় কাজ করেনি কিন্তু আজ কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে।আমি এমন জীবন চাইনি নুহাশ।

” আমি তোমায় সাহায্য করবো এখান থেকে বেরিয়ে আসার।কিন্তু তীরে এসে তরি ডুবলে হবে না।আমারও এখনো অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে।

“কিসের হিসাব নিকাশ!
আচ্ছা পুলিশ কেন এখনো রহিমের বডি পেলো না?
এই প্রশ্নটা আমায় খুব ভাবাচ্ছে।কোনো ভাবে বেঁচে যায়নি তো?

” এসব নিয়ে আর ভেবো না।ঘুমিয়ে পরো।অনেক রাত হয়েছে।

“আপনি আমায় ভুল বুঝেন নি তো নুহাশ?আপনার ঘৃনা হচ্ছে না আমার ওপর?

নুহাশ আলতো করে ছোয়াকে বুকে জরিয়ে নিলো।ছোয়া যতই নিজেকে কঠোর দেখাক না কেন কোথাও না কোথাও সেও একজন নারী। আর নারীর মন কোমল।

” কেন বলতো?

“এই যে আমি মানুষ মেরেছি তার জন্য?

” না।এবার চুপ করো ঘুমোও।
তোমাকে দিয়েই আমি প্রতিশোধ শেষ করবো ছোয়া তবে তোমার প্রতিশোধ এবং আমার প্রতিশোধ হবে একদম আলাদা।যাকে বলে শাপ ও মরবে না আর লাঠিও ভাঙবে না।প্রতিশোধ আমি তোমাকে দিয়েই নিবো কিন্তু তোমার মতো করে নয় আমার মতো করে।তুমি ঠিকই বলেছো রহিম মারা যায়নি কিন্তু যাবে।আমিই ওকে বাঁচিয়েছিলাম সেদিন।তোমার হাত কাটার জন্য তুমি ঠিকভাবে কাজ করতে পারোনি।তবে চিন্তা করো না।ওর শাস্তি ও নিজেই দিবে।সেই ব্যাবস্থা আমি করে এসেছি।


পরদিন ছোয়ার মামা এসে লুবনা বেগমকে সাথে করে নিয়ে গেছে।মেয়ের সুখবর শুনে যেতে চাননি তিনি।কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েই যেতে হলো তাকে।

“আমি বুঝতে পারছি না ছোয়া আমাকে তুই কেন পাঠাতে চাইছিস।আমার মেয়ের এই অবস্থা আর তাকে নাকি এভাবে রেখে আমি ভাইয়ের কাছে গিয়ে থাকবো।এটা হয়?

” মা কারন আছে বলেই তো যাচ্ছো। আর আমি কেবল দু মাসের গর্ভবতী এতে এমন কোনো অসুবিধা নেই।

অগত্যা তাকে যেতেই হলো।লুবনা বেগমকে পাঠানোর আরো একটা কারণ তিনি যদি শিকদার সম্পর্কে কিছু দেখেন বা জানেন এটা তার জন্য মোটেও ভালো হবে না।যদিও শিকদারের মুখ তিনিও দেখেন নি কিন্তু বাবার খুন নিয়ে যখন কোট কাচালি হবে তখন তো তিনি সবটাই দেখবেন,শুনবেন।তখন হিতে বিপরীত হতে পারে।যা ছোয়া একেবারেই চাইছে না।এছাড়াও শিকদার যদি কোনো ভাবে মায়ের খোজ পায় তাহলে হয়তো এবার মাকে মেরেই ফেলবে।মাকে যত সেফলি রাখা যায় তাই ছোয়া নুহাশের কথায় রাজি হয়ে গেলো।

সময় তখন রাত ৮টা।নুহাশ বাড়িতেই ছিলো। এমন সময় বিপুল ছুটে এলো।

“কি হয়েছে এভাবে ছূটছিস কেন বিপুল?

” ভাই টিভি দেখেন। নিউজ করছে আপনারে নিয়া।

“কি বলছিস বুঝতে পারছি না।

” আপনি আগে টিভি চালু করেন ভাই।আমিই চালাই।

-“এই মুহুর্তের বড় খবর।দেশের এক তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণায় যার নাম সবার মুখে।যে প্রতিটি তরুনের অনুকরণীয়। সেই এমপি নুহাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা পেয়েছি চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।যা শুনলে থমকে যাবেন আপনিও।”

আর কিছু শুনার আগেই নুহাশ টিভি টা বন্ধ করে দেয়।

“এসব কি!আমার বিরুদ্ধে এই তথ্য কে দিয়েছে।আর মামলা কিসের কে করেছে সব জানতে চাই আমি।

” ভাই এটা নিশ্চয়ই ওই শামসুল এর কাজ।
ভাই পুলিশ।

বলতে বলতে বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ইন্সপেক্টর সাব্বির এর দিকে চোখ যায় নুহাশের।বুঝায় যাচ্ছে অনুমতির জন্যই অপেক্ষা করছে।

“আসুন ইন্সপেক্টর।

” আসলে স্যার আমি কোনোদিন ভাবিনি এভাবে আপনার বাড়িতে আমায় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসতে হবে।নিউজ টা নিশ্চয়ই দেখেছেন।আসলে আমি অপারগ। উপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আপনাকে এরেস্ট করার।তাছাড়া আপনার বিরুদ্ধে স্মাগলার, ইয়াবা ব্যাবসা এবং আরো কিছু অভিযোগ এসেছে।বুঝতেই পারছেন আপনাকে কেউ বাজে ভাবে ফাঁসিয়েছে।আচ্ছা আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?কে করেছে?

অফিসারের কথায় নুহাশ হেসে ফেললো।
“সেটা তো আপনার খুজে বের করার কথা অফিসার।

” হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।

“কি ব্যাপার বাড়িতে পুলিশ কেন আব্বা?

” আম্মা আপনি শান্ত হোন।

“শান্ত হবে মানে? কি হচ্ছে এখানে নুহাশ।ওনারা কেন এসেছে?

” আরে আপনি এডভোকেট ছোয়া তো!

“হ্যাঁ। তো?

” কিন্তু আপনি এখানে কেন?

“কারন উনি আমার স্ত্রী। আমরা বিয়ে করেছি।আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে যাওয়ার আগে আমি আর স্ত্রীর সাথে একটি আলাদা কথা বলতে চাই।

” জি অবশ্যই।

“এসব কি হচ্ছে নুহাশ। নিউজ এ আপনাকে নিয়ে খবর বেরিয়েছে। এখন পুলিশ। আপনি বলছেন যাওয়ার আগে।মানে এসব কি হচ্ছে?

” শুনো ছোয়া যা হচ্ছে হতে দাও।আমি খুব ভালো করে জানি এটা কারা করেছে।তবে চিন্তা করো না আমার কিছুই হবে না।কিন্তু তোমাকে একটু কষ্ট করতেই হবে।

“কিন্তু আপনি না থাকলে আমি একা এই লড়াই টা করতে পারবো না নুহাশ।

” পারতে হবে।ওরা আমাকে যেভাবে ফাঁসিয়েছে তাতে খুব সহজে জামিন আমি পাবো না।আমার অনুপস্থিতিতে আম্মা নুরের দায়িত্ব তোমার। আর হ্যাঁ ভয় পাবে না।নিজের যত্ন নিও আর আমাদের প্রিন্সেস এর ও।

“কিন্তু এবার আমি কি করবো?

” কাল সকাল অব্দি অপেক্ষা করো। সব বলবো।আসছি।

“নুহাশ!

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৯

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৯
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

দেখতে দেখতে নুহাশ ছোয়ার বিয়ের ছয়মাস কেটে গেছে।পরিবর্তন ঘটেছে নুহাশ ছোয়ার সম্পর্কেও।কোনো বৃষ্টির রাতেই তাদের প্রনয় হয়েছে।মেনে নিয়েছে দুজন দুজনাকে।নুরকে এখন প্রায়ই রোহিত কলেজ থেকে নিয়ে আসে।মাঝে মাঝে দুজন ঘুরতে চলে যায়।সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পালটে গেছে।

গত কাল ছোয়ার শরীর টা খুব খারাপ লাগছিলো। তাই আসার সময় মেডিকেলে কিছু টেস্ট করিয়ে এসেছে।সে যেটা সন্দেহ করছে যদি সেটাই হয় তবে এই মুহূর্তে তা কাউকে জানানো যাবে না।এমনকি নুহাশকেও না।তা না হলে তার অসম্পূর্ণ কাজ আর শেষ করতে পারবে না।তার যে এখনো বাবাকে দেয়া কথা রাখা বাকি।

আজ ছোয়া কোর্টে যায়নি।নুহাশও এখনো বাড়িতেই।সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে নিউজ দেখছিলো।হঠাৎ কিছু একটা শুনে ছোয়া টিভির দিকে খুব উৎসাহ নিয়ে তাকালো।ছোয়ার দেখা দেখি নুহাশও লক্ষ্য রাখলো টিভিতে।

* দীর্ঘ দশ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলো সাবেক মন্ত্রী এরশাদ শিকদার। এক সময় রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ দশ বছর আগেই তার ইতি ঘটিয়েছেন এই নেতা।তাকে বরন করে নিতে সাধারণ মানুষের ভির এয়ারপোর্টে।*

মুহুর্তেই ছোয়ার চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো। নুহাশ ঠান্ডা মাথায় সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।ছোয়া আর বসে থাকলো না।নিজের ঘরে চলে গেলো।নুহাশও কিছু একটা ভেবে ছোয়ার পিছু পিছু গেলো।

“অনেকদিন পর আমার সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের খোজ আমি পেয়ে গেছি।ছাড়বো না কাউকে ছাড়বো না আমি।রক্তের নেশা পেয়ে বসেছে আবার।এই নরপিশাচ এর রক্ত না পেলে কিছুতেই মাথা কাজ করবে না। কিছুতেই না।

” ছোয়া!

“কে! ও আপনি।

” হ্যাঁ। ওভাবে চলে এলে যে কিছু হয়েছে?আর এভাবে ভয় পেয়ে গেলে যে আমি আসায়?

“না। আসলে অনেক সময় এক যায়গা বসে ছিলাম তো তাই ভালো লাগছিলো না।আপনি এলেন যে কিছু লাগবে?

” আমিও বউকে দেখতেই এসেছি।

সকাকের নিউজ দেখার পর থেকেই ছোয়া একটু কেমন করছিলো। অন্য সময় হলে নুহাশ প্রশ্ন করতো একের পর এক।কিন্তু আজ করছে না।ও শুধু ছোয়াকে লক্ষ্য করছে।ও যেটা সন্দেহ করছে সেটা যদি সত্যি হয় তবে আজ অনেক বড় কিছু হতে চলেছে।

“আলমারিতে একটা ব্যাগ ছিলো পাচ্ছি না।আপনি কি দেখেছেন নুহাশ?

” কিসের ব্যাগ বলতো? আমি তো কোনো ব্যাগ দেখিনি।

“আরে তাহলে যাবে কোথায়?

“এতো রাতে তুমি ব্যাগ দিয়ে কি করবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এসো শুয়ে পরো কাল সকালে না হয় খুজো আবার।

ছোয়া অপেক্ষা করছে নুহাশ কখন গভীর ভাবে ঘুমিয়ে যাবে।আজ এতো দেরি কেন করছে ঘুমোতে?

” কি ভাবছ?

“কিছু না।

” ঘুমোওনি কেন এখনো?

” সেটাতো আরও প্রশ্ন আপনি কেন এখনো জেগে আছেন।

“বউ না ঘুমোলে আমি কি করে ঘুমাই।

অনেক অপেক্ষার পর ছোয়া লক্ষ্য করলো নুহাশ ঘুমিয়ে গেছে।তাই চুপি চুপি খুব সাবধানে খাট থেকে নামলো ছোয়া।আবারও সেই ব্যাগটা খুজছে।এবার আর বেশি কষ্ট কর‍তে হলো না।

” কি আশ্চর্য তখনো তো এখানে খুজলাম পেলাম না কেন?যাই হোক এবার আমায় বেরুতে হবে খুব সাবধানে। নুহাশ বুঝতে পারলে আমি আর বেরুতে পারবো না।

ছোয়া বের হওয়ার পর নুহাশও তার কাজে লেগে পরলো।ছোয়াকে কেউ ফলো করছে এটা ছোয়ার অজানা।সবটাই নুহাশের কথা অনুযায়ী হচ্ছে।যাতে ছোয়ার কোনো রকম বিপদ না হয়।

রাতের আঁধারে একা একা হাটছে ছোয়া।সে মুলত গিয়েছিলো এরশাদ শিকদারের ডুপ্লেক্স বাংলোতে।রাতের সিকিউরিটির জন্য যার জন্য গিয়েছিলো তাতে সফল হতে পারেনি।তবে একটা খবর সে শুনেছে যেটা শুনে তার এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে মাথায়।যদি ওই কথাগুলো সত্যি হয় তবে নুহাশের অনেক বিপদ।
না এটা হতে দেয়া যাবে না।নুহাশকে এদের থেকে বাঁচাতেই হবে।

রুমে গিয়ে ছোয়া চমকে গেলো।নুহাশ বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে তার অপেক্ষায় ছিলো।ছোয়ার গলাটা শুকিয়ে এলো। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।

“আপনি জেগে আছেন!

” কেন ঘুমিয়ে থাকলে সুবিধা হতো বুঝি?

“ম…মানে?

“কোথায় গিয়েছিলে?

“………

” এতো কিছুর পরেও চুপ করে থাকবে?

“আমি আসলে।

” অনেক হয়েছে।ওই খুন গুলো তুমিই করেছিলে তাই না?আমি ভাবতে পারছি না আমার স্ত্রী একজন খুনি।

“আপনি এসব কি বলছেন নুহাশ?

” কেন মিথ্যা বলেছি কিছু? তুমি অস্বীকার করতে পারবে ওই খুন সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না।সেদিন তোমার হাত ফল কাটতে গিয়ে কেটে যায়নি বরং কেউ কেটে দিয়েছে তাই না?তোমার ওই বিশেষ পোশাক আমি দেখে নিয়েছি ছোয়া।একমিনিট।
দেখতো এটা চিনতে পারছো কিনা?

“এটা তো।

” হ্যাঁ এটা তোমার হাতের ব্রেসলেট। যেটা আমি বাবা মারা যাওয়ার পরদিন গেটের একটা কোনায় পেয়েছিলাম।এবার বলো না যে এটা তোমার নয়।আমি সবকিছু জেনে তবেই তোমাকে বলছি।তোমার ফোনের ওয়ালপেপারের ছবিটাতে এই ব্রেসলেট টাই তো পরে আছো তুমি তাই না?
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটা আমাদের বাড়ির সামনে কি করে এলো।তার মানে খুনের রাতে তুমি এসেছিলে?
চুপ করে থাকবে না ছোয়া বল প্লিজ।

নুহাশের চিৎকারে মনে হলো পুরো বাড়িটা কেপে উঠেছে। ভাগ্যিস রুমটা সাউন্ড প্রুভ তাই কেউ কিছু শুনতেই পেলো না।

“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন নুহাশ।

“তবে ঠিকটা বুঝাও আমাকে!
হয় তুমি আমাকে সবটা খুলে বলবে নয়তো আমি ধরে নিবো আমার বাবাকে তুমিই খুন করেছো।আর আমি তোমাকে নিজের হাতে শাস্তি দেবো।নুহাশ চৌধুরী কি এটা এখন বুঝবে তুমি।বলো।

” আমি আমি আপনার বাবাকে মারিনি নুহাশ আমি তো সেদিন।

“কি থেমে গেলে কেন? তুমি সেদিন কি?

” বেশ সব যখন জেনেই গিয়েছেন আমিও আর কিছুই লুকোতে চাই না।আমিও হাপিয়ে গেছি লুকোতে লুকোতে।

“সেদিন মা বাবার ১৬ তম বিবাহ বার্ষিক ছিলো।আমি মামার বাড়িতে সিলেট ছিলাম।মা বাবাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।তাই তাদেরকে না জানিয়েই মামার সাথে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য এসেছিলাম।বৃষ্টির থাকায় আমাদের যেতে একটু দেরি হয়ে যায়।গিয়ে কি দেখেছিলাম জানেন নুহাশ?আমি ভাবিনি যে বাবা মাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবো।

“আমি দেখেছিলাম আমার বাবার নিথর শরীরটা। জানোয়ার গুলো মুখটাও থেতলে দিয়েছিলো।বাবাকে শেষবার বাবা বলেও ডাকতে পারিনি।
আপনি তো আম্মাকে খুব ভালোবাসেন তাই না? আপনি নিজের মায়ের নগ্ন শরীর দেখলে কি করতেন? বা এমন কিছু দেখে সহ্য করতে পারতেন? আমি দেখেছি।ওরা আমার ফুলের মতো মাকেও ছাড়েনি।খুবলে খেয়েছিলো।আমার মায়ের সতিত্ব নষ্ট করেছিলো।এটুকু করেই শান্ত হয়নি মাথায় গুলি করেছিলো।ভাগ্য ভালো হওয়ায় গুলিটা মাথার সাইডে লেগেছিলো।তবুও তিন বছর কোমায় ছিলেন তিনি।সেই যাত্রায় মাকে বাঁচাতে পারলেও বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলি।তখন মামাই আমাদের দায়িত্ব নেন।আমার মা মামার খুব আদরের ছিলেন। ভাবুন তো যদি তখন মামা আমাদের পাশে না থাকতো কোথায় যেতাম আমি।মা কে বাঁচাতে পারতাম।১২ বছরের একটা মেয়ে কোথায় যেত?

“সেদিনই ঠিক করেছিলাম কাউকে ছাড়বো না।এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।বাবার একটা ডায়েরি পেয়েছিলাম আমি সেখানে অনেক কিছুই লেখা ছিলো।সেখান থেকেই রহিম, বিপ্লব আর তাহের এর বিষয় জানতে পারি।রহিম, বিপ্লবকে আমি আগে থেকে চিনতাম না।কিন্তু তাহের ছিলো আমার বাবার এসিস্ট্যান্ট। বাবাকে শেষ করতে ও শেষপর্যন্ত ওই পশুদের সাথে হাত মিলায়।তার একটাই কারন টাকা।টাকার কাছে গুরু নামক মানুষটাকে খুন করতেও ওর হাত কপেনি তাই ওকেও শেষ করে দিয়েছি।বেইমানের শাস্তি তো পেতেই হতো তাই না।

“তার জন্যই হয়তো ওর ডে*ড বডির পাশে ওই লেখাটা ছিলো?

” হ্যাঁ।

“যখন মা কোমায় চলে যায় আর বাবাকে হারানোর কষ্ট আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।প্রতিশোধ নিবো সেটা তো ভেবেছিলাম কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তখন মামাকে বলে আমি ক্যারাটে শিখি।অনেক ভেবে দেখলাম আইনের কাছাকাছি থেকে যদি আমি আমার কাজগুলো করি তাহলে কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না।তাই বাবার পেশাকেই বেছে নিলাম।

তারপর একে একে পেন ড্রাইভ লকারের কথা সবকিছু নুহাশকে খুলে বললো ছোয়া।

” এরশাদ শিকদারকে আমি আগে কখনো দেখিনি।কিন্তু শুনেছি তার কথা।আর আজ সকালে ওই নিউজ টা দেখে আমার মধ্যে প্রতিশোধের নেশা টা আবার জেগে ওঠে। যাদের মেরেছি তারা কেউ ভালো মানুষ নয়।আমায় একটু পানি দিবেন?

নুহাশ ছোয়াকে পানি এগিয়ে দিলো।ছোয়া পানি পান করলো।

“এবার বলো বাবাকে তুমি কিভাবে চিনো?

” আসলে আংকেল আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু ছিলেন।একদিন আংকেল আমাকে ফোন করে বললেন আমার সাথে দেখা করতে চান।কিছু একটা দিবেন কিন্তু তার আগেই কেউ তাকে।
আমি যখন এসেছিলাম তখন আংকেলকে যেমন আমার বাবাকে দেখেছিলাম ঠিক তেমনভাবেই দেখে আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।তখন তারাহুরোই সেখান থেকে পালাতে গিয়েই ব্রেসলেট টা পরে যায়।
এরশাদ শিকদার এর বাংলোতে গিয়েছিলাম।ওকে শেষ করবো বলে।কিন্তু যেখানে ওরা আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে সেখানে আমি কি করে চুপ থাকতে পারি।

নুহাশ ওরা ক্ষতি করতে চাইছে।আপনি জানেন আপনার এক্সিডেন্টের পিছনে ওদেরই হাত আছে?আর শামসুল রহমান এর আসল নাম শামসুল শিকদার। ওরা আপন ভাই।

“আমি সবটাই জানি ছোয়া।আর আমি এটাও জানি তুমি বাবাকে মারোনি।এটা তো আমার একটা ছিপ ছিলো যাতে তুমি সবটা শিকার করো।তুমি আমার বাচ্চার বিষয় টা আমার থেকে গোপন করে ভুল করেছো।

” আপনি জানেন?

“তুমি কি ভেবেছো নুহাশ চৌধুরী ঘাসে মুখ দিয়ে চলে?তোমার ব্যাপারে আমি এমন কিছু জানি যা তুমি নিজেই জানো না।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৮

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৮
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“নুর সত্যি করে বলতো তুমি কাউকে ভালোবাসো না?

” তুমিও শুরু করলে মায়ের মতো। আমার জীবনে কেউ নেই।

“তাহলে তো আর কিছুই বলার নেই।তাহলে সাহিল ভাইকে অবশ্যই পছন্দ হবে তোমার।আগে দেখেছো কখনো?

” ছোট বেলায় হয়তো দেখেছি।আমার ঠিক মনে নেই।
এর মধ্যেই নাহার বেগমের ডাক পরলো।নুরকে নিয়ে যেতে বলছে নুহাশ।

“চলো তোমার ডাক পরে গেছে।

নুর লক্ষ্য করলো তার পা দুটো এগোতে চাইছে না।না চাইতেই চোখে অবাধ্য পানি এসে ভর করছে।নিজেকে আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেই যাচ্ছে নুর।ছোয়া সবটাই খেয়াল করেছে কিন্তু মুখে কিছুই বললো না।সে অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের জন্য।

নুর সবাইকে সালাম দিলো।সাহিলের মা নুরকে নিজের পাশে বসালেন।

” নুরকে তো আমাদের পছন্দ হয়েছে। বাবা নুহাশ আমরা চাইছিলাম আজই আংটি পরিয়ে যেতে যদি তোমাদের মত থাকে।

“হ্যাঁ অবশ্যই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

” কিন্তু আমার আপত্তি আছে।এই বিয়ে হবে না।

“একি আপনি এখানে?

” হ্যাঁ আমি।

“এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো রোহিত।তুমি একাই এসেছো?

” না মাও এসেছেন বাইরেই আছেন।

“এসবের মানে কি ছোয়া।তুমি ওনাকে ডেকেছো?

” ঠিক ডাকিনি জানিয়েছি শুধু।

“একমিনিট। কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

” আমি বলছি।আসলে নুর আমাকে ভালোবাসে।সেটা আজ থেকে নয় কলেজ পড়ার সময় থেকে।নুরের জীবনে যা ঘটে গেছে তার জন্য প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আমি দায়ী।

“এসব কি নুর?তুই আমাকে আগে কেন সব বলিসনি?

” আ..আমি আসলে।

“নুর তুমি এই বিয়েতে রাজি?

” হ্যাঁ। ভাইয়া যাকে বলবে আমি তাকেই বিয়ে করবো।আপনি কেন এসেছেন এখানে?

“কেন এসেছি তুমি বুঝতে পারছো না।এই যে তোমার পিছনে দিনের পর দিন পাগলের মতো ঘুরছি তবুও তুমি বুঝতে পারছো না নাকি বুঝতে চাইছো না?নুর তুমি কি তোমার ভাইকে ভয় পাচ্ছো? দেখো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।প্লিজ আমায় শাস্তি হিসেবে অন্য যে কোনো শাস্তি দাও আমি মেনে নিবো কিন্তু অন্যকারো হবার চেষ্টাও করো না।

” হাত ছাড়ুন লাগছে আমার।

” অনেক হয়েছে মিঃ রোহিত আপনি এক্ষুণি এখান থেকে বেরিয়ে যাবেন।নুর আমার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে।

“সরি মিঃ নুহাশ।আপনি একজনকে আমার থেকে কেরে নিয়েছেন তখন আমি কিছু করতে পারিনি ঠিকি কিন্তু নুরকে আমি হারাতে চাই না।

দুজনেই খুব রেগে।এদের না থামালে যা কিছু হয়ে যাবে তা বুঝতে বাকি নেই কারোর।ছোয়া এবার মুখ খুললো।

” নুহাশ আপনার সাথে আমার কথা আছে প্লিজ একটু ঘরে চলুন।

“যা বলার এখানেই বলো।

” বিষয়টা সিরিয়াস প্লিজ।

ছোয়া নুহাশের সাথে কথা বলছে অনেকটা সময় হলো।কিন্তু কেউ বের হচ্ছে না ঘর থেকে।সাহিলকেও ডেকে নিয়েছে এক ফাকে।রোহিত এখনো নুরের হাত ধরে আছে।ছাড়ানোর চেষ্টা করেও নুর ব্যার্থ। রোহিতের কোনো হেলদোল নেই।আজ যা কিছু হয়ে যাক নুরের হাত সে ছাড়বে না ঠিক করে নিয়েছে।

“এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমি কিছুই জানি না।আমার বোনটা এভাবে শেষ হয়েছে আর আমি ভাই হয়ে কিছুই জানি না।তুমি আগে আমাকে কেন বলনি ছোয়া।

” আসলে আমি নিজেও আজই জেনেছি সবকিছু।

“আমি সাহিলের পরিবারকে কি বলবো?

” এক কাজ করলে কেমন হয় সাহিল ভাইকে ডেকে সবকিছু বুঝিয়ে বলি।আমি শিওর উনি ঠিক বুঝতে পারবেন এবং আংকেল আংটিকে বুঝিয়ে বলিতে পারবে।

“হ্যাঁ তাই করি।

সেই থেকেই তিনজন আলাপ করেই যাচ্ছে।এমন নয় যে সাহিল নুরকে ভালোবাসে।অনেক দিন ধরেই বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছিলো বাবা মা তাই নুরকে দেখতে আশা।তাই খুব সহজেই সবটা মেনে নিয়েছে সাহিল।

এতোকিছুর পরেও রোহিত একবারের জন্যও নুরের হাত ছাড়েনি। বরং আরো শক্ত করে আগলে নিয়েছে। এবার নুরের খুব খারাপ লাগছে।বাড়িতে এতোগুলো মানুষের সামনে।

” হাতটা কি ছিড়ে ফেলবেন ছাড়ুন।

“একবার যখন ধরেইছি আর ছাড়ছি না।অনেক কষ্ট পেয়েছো আর না।

” এবার একটু বেশি বেশিই হচ্ছে না।

“একদম না।এবারই ঠিক হচ্ছে।

সবার অবসান ঘটিয়ে ছোয়া নুহাশ এলো সাথে সাহিল। সাহিল নিজের বাবা মাকে সবটা বুঝিয়ে বলেছে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলেও গেছে।

” মিঃ রোহিত আপনি আপনার মা কে নিয়ে আসুন। আংটিবদল টা আজই সেরে ফেলি।

“কিন্তু আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না।অন্য কারো ভালোবাসায় ভাগ বসাতে চাই না আমি।কারো দয়া নিয়েও বাঁচতে চাই না।

” নুর শোন।

নুহাশ যেতে নিলে ছোয়া আটকে দেয়।
“যাবেন না।এটা ওদের দুজনের ব্যাপার। ওরাই মিটিয়ে নিবে।আমরা বরং এদিকটায় সব মেনেজ করি রোহিত ঠিক নুরকে বুঝিয়ে নিয়ে আসবে।

এতোক্ষণ সব নিরব চোখে দেখছিলেন নাহার বেগম।এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।

” তোমরা আমায় একটু বলবে এখানে কি হচ্ছে?এসবের মানে কি। আর ওই ছেলেটার সাথেই বা নুরের কি সম্পর্ক?

ছোয়া শাশুড়ি মাকে সব খুলে বললো।সব শুনে নাহার বেগম ভেঙ্গে পরেন।আদরের মেয়ের সাথে এতো কিছু হয়ে গেলো আর মা হয়ে তিনি মেয়ের মনের খবর রাখতে পারেন নি।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েও কিছুই বুঝতে পারে নি।তবে কি মা হিসেবে তিনি ব্যার্থ?

“এভাবে কেন ভাবছেন আম্মা।এখানে কারো কোনো হাত নেই।এই দেখুন না যদি রোহিত আগে আমার সাথে এই বিষয় টা নিয়ে কথা বলতো আমি কি এসব কিছু হতে দিতাম।বা আপনারা জানলে কি আজ নুরের এতো কিছু হতো? না তো।কিন্তু হয়ে গেছে আর যা হয়ে গেছে তা নিয়ে তো ভেবে লাভ নেই।আমরা বরং যাতে আর খারাপ কিছু না হয় সেটা করি।নুর রোহিতকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না আম্মা।আর রোহিত ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।ও নুরকে সত্যিই খুব ভালোবাসে।

রোহিত নুরের পিছন পিছন ওর রুম পর্যন্ত চলে এসেছে।নুর দরজা বন্ধ করার আগেই রোহিত আটকে দিলো।

” এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যা? এতো করে বুঝাচ্ছি বুঝতে পারছো না?

রোহিত বুঝতে পারলো সে একটু বেশি রিয়েক্ট করছে তাই নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখলো।এবার নরম সুরেই বললো-

” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন রেগে আছো।চলো আমরা ঠান্ডা মাথায় একটু বসে কথা বলি? প্লিজ।

নুর কোনো কথা বললো না।চুপচাপ বিছানার একপাশে গিয়ে বসে পরলো।রোহিত একটা চেয়ার টেনে নুরের সামনে বসে আছে।মেয়েটা কাঁদছে।মুখটা অসম্ভব লাল হয়ে আছে।নাহার বেগমের গায়ের রঙ পেয়েছে মেয়েটা।একটু রেগে গেলে বা কান্না করলেই চোখমুখ লাল হয়ে যায় তার।রোহিত নুরের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়।নুর ছাড়াতে গেলে রোহিত তা সফল হতে দেয় না।

“আমি জানি নুর তুমি কি ভাবছ।তুমি হয়তো ভাবছ ছোয়াকে না পেয়ে আমি তোমাকে চাইছি।ছোয়াকে আমি এখনো ভালোবাসি। কিন্তু এটা সত্যি নয়।হ্যাঁ আমি মানছি ছোয়াকে আমি পছন্দ করতাম।কিন্তু তখন আমি বুঝিনি যে মনের অজান্তে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি জানো না তোমাকে আমি অনেক খুজেছি।মিস করেছি খুব কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ করিনি।সেদিন তোমাকে দেখে আমি নতুন করে তোমাকে নিয়ে ভেবেছি।ছোয়াকে নিয়েও ভেবেছি।কিন্তু তোমাকে নিয়ে ভাবতে যা ফিল করেছি ছোয়াকে নিয়ে তা ফিল করিনি।অনেক দেরি হলেও আমি বুঝতে পেরেছি যে ছোয়া নয় তুমিই আমার ভালোবাসার মানুষ। আমাকে শেষ বারের মতো একটা সুযোগ দাও। কথা দিচ্ছি আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো না তোমায়। তোমার সাথে যা যা হয়েছে সবকিছুর জন্য আমি দায়ী। আমাকে একটু প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও।

একাধারে কথা গুলো বলে থামল রোহিত।নুর তখনও চুপ।তা দেখে রোহিত হতাশ কিন্তু হাল ছাড়ল না।

” এখনো চুপ থাকবে কিছুই বলবে না?

“আপনি সত্যিই ছোয়া ভাবিকে ভালোবাসেন না!

” একেবারে বাসি না সেটা বললে ভুল হবে।কিন্তু তোমার মতো হয়তো না।আমাদের অনেকদিনের সম্পর্ক নুর একটু তো সময় লাগবে তাই না?

“ঠিক আছে আমি রাজি।কিন্তু ভাইয়া রাজি হলে তবেই।

” সত্যি বলছো! তোমার ভাইয়াকে ছোয়া রাজি করিয়ে নিবে।দরকার পরলে আমি তার এসিস্ট্যান্ট এর কাজ করবো তবুও তোমাকে আমার লাগবেই।

“আমার ভাইয়া অতটাও খারাপ নয়।যে ওকে চিনতে পারে না তার মতো বোকা আর কেউ নেই।

” আচ্ছা ঠিক আছে এবার নিচে চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

পারিবারিক ভাবে নুর রোহিতের আংটিবদল হয়ে গেলো।সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেছে অনেক সময় হলো।নুর নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছে। অনেক দিন একটু শান্তিতে ঘুমায় না সে।আজ যেন শান্তির ঘুম দিচ্ছে।নাহার বেগম মেয়ের পাশে বসে ছিলেন।সবেই নিজের ঘরে গেছেন।

তার মেয়েটার ওপর দিয়ে অনেক কিছু গেছে। আজ যদি রোহিত না আসতো, যদি নুরকে মেনে না নিতো।কি জানি নুরের কি হতো। ও তো মন থেকে বিয়েটা মেনে নিতে পারতো না।একটু একটু করে রোজ মারা যেত।

রাত গভীর। নুহাশ ছাদে বসে আছে।ছোয়া অপেক্ষা করছে নুহাশের।বিকেলের ঘটনার পর থেকে নুহাশ কেমন চুপচাপ হয়ে আছে।ভালো করে কথা বলছে না।

সারাক্ষণ যার ভয়ে সবাই গুটিয়ে থাকে।হুট করে তার গুটিয়ে যাওয়া ছোয়া মেনে নিতে পারছে না।তার চেয়ে তাকে সারাক্ষণ বকাবকি করলেই বেশি ভালো লাগে।লোকটা কি বেশিই কষ্ট পেয়েছে? এতো রাত হলো এখনো আসছে না কেন? ছাদে গিয়ে দেখবো একবার?
যেই ভাবা সেই কাজ।ছোয়া ছাদে গিয়ে দেখলো নুহাশ ছাদের এক কিনারায় চুপটি করে বসে আছে।

“এভাবে বসে আছেন যে ঘরে যাবেন না?

” তুমিও বসো না একটু আমার পাশে।

ছোয়া কিছুই বললো না।গুটি গুটি পায়ে নুহাশের পাশে গিয়ে বসলো।

“এখানে আর কতক্ষণ বসে থাকবেন।রাতের খাবারও তো খাননি।ঘরে চলুন খেয়ে একটু রেস্ট করবেন।
আপনি কি নুরের বিষয় নিয়ে নিজেকে দোষ দিচ্ছেন? কিন্তু এতে তো আপনার কোনো হাত নেই।

” দোষ দিচ্ছি না ভাবিছি।আমি হয়তো ওর ভাই হয়ে উঠতে পারিনি ছোয়া।যদি পারতাম অবশ্যই ওকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।এতো গুলো বছর ও নিজের মধ্যে সব চেপে রেখেছে অথচ আমি বুঝতেই পারিনি।আমি আমার বোনের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না।ওর দিকে তাকালে নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয়।আমি হয়তো ওর নিজের ভাই হতে পারিনি।

“কি সব বলছেন আপনি।এখানে আপনার কোনো দোষ নেই নুহাশ।আর নিজের ভাই মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?

” তুমি একটা সত্যি জানো না ছোয়া।তোমার থেকে লুকিয়েছি আমি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি

“কি কথা?

” আমি এবাড়ির কেউ নই ছোয়া।বাবা আমাকে এক বৃষ্টির রাতে ডাস্টবিন থেকে কুরিয়ে পেয়েছিলেন।তখন আমি সবে তিন কি দুদিনের বাচ্চা।আমি জানি না আমার মা কে।আমার বাবা কে।তখন থেকেই আমি এই পরিবারের বড় ছেলের পরিচয়ে বেরে উঠি।বাবা আমাকে কখনোই পর ভাবেন নি।এমনকি আম্মাও আমাকে কখনও সেই নজরে দেখেনি।নুর আর আমাকে কখনো আলাদা ভাবেন নি।আম্মাকে আমি অনেক ভালোবাসি।আর নুর আমার অনেক আদরের।এই পরিবার আমাকে এতোটা দিয়েছে বিনিময়ে আমি কি দিলাম? না বাবাকে বাঁচাতে পেরেছি। না তার খুনিকে ধরতে পেরেছি।আর না নিজের বোনকে বুঝেছি।আর সবচেয়ে বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে।
একটু থামলো নুহাশ।আবার বলতে শুরু করলো-

আসলে একদিন শপিংমলে তোমাকে দেখেছিলাম। তখন থেকেই তোমার জন্য আলাদা একটা যায়গা আমার মনে তৈরি করেছিলাম।তারপর কাজের চাপে প্রায় ভুলেই যাই তোমার কথা।তারপর তুমি সেদিন বিপুলকে যখন মারলে তখন তোমাকে দেখে আমি আবার সেই পুরনো অনুভূতি খুজে পাই।তাই কোনো কিছু না ভেবেই তোমাকে বিয়ে করে ফেলি।
তোমাকে এভাবে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না আমার কিন্তু তোমার ব্যবহার আমাকে এমনটা করতে বাধ্য করেছে। যখন রোহিতের সাথে দেখা করতে তোমার হাস্যজ্বল মুখ দেখে আমার খুব কষ্ট হতো।তাই এমন ভাবে তোমায় বিয়ে করেছি ।তোমাকে আমার আসল পরিচয় অনেকবার বলতে যেয়েও বলতে পারিনি।যদি সত্যিটা জানার পর তুমি চলে যেতে যাও এই ভয়ে।আমায় ক্ষমা করে দাও ছোয়া।

বাবাকে খুব ভালোবাসতাম।বাবা যেদিন খুন হলো সেদিন কারোর জন্য অপেক্ষা করছিলো। বাবা খুব অস্থির ছিলো সেদিন।আমার একটা জরুরি কাজ চলে আসায় রাতেই যেতে হয়েছিলো।তারপর ফিরে আর বাবাকে পাইনি।বাবা বলেছিলো সব সময় আমার পাশে থাকবে।কিন্তু বাবা কথা রাখেনি।বাবার মৃত্যুর পর অনেক ভেঙ্গে পরি কিন্তু সেটা নুর বা আম্মাকে বুঝতে দিতাম না।

“আপনাকে কি করে বলি সেদিন আমার সাথেই বাবার দেখা করার কথা ছিলো কিন্তু আমি আসার আগেই কেউ তাকে মেরে ফেলে।

” আচ্ছা সব তো বলেই দিলাম।তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?

“এসব কথা এখন থাক।অনেক রাত হয়েছে ঘরে চলুন।

” তার মানে তুমি থাকবে না তাই না?যাবেই তো আমার তো কোনো পরিচয় নেই।হয়তো কারো পাপের ফল আমি।চলে যাও তুমি।আমি তোমায় আর বাধা দিবো না।

“সব নিজের মতো করে কেন ভাবছেন।শুনুন মিঃ নুহাশ আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।এবার চলুন।খবরদার আর নিজেকে এমন ভাববেন না।আপনি যাই হোন না কেন।না থাকুক আপনার আসল পরিচয়। আপনার একটাই পরিচয় আপনি এবাড়ির ছেলে, আমার স্বামী।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৭

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৭
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

রাত তখন গভীর। নুহাশ পাশ হাতরে দেখলো ছোয়া নেই।এতো রাতে কোথায় যাবে।সন্দেহ বসত বাথরুম চেক করলো না নেই।তারপর বেলকনিতে সেখানেও নেই।
একে একে ড্রইংরুমে, ছাদ কোথাও বাদ রাখেনি নুহাশ।

“এতো রাতে কোথায় গেলো? মায়ের কাছে কিন্তু সেখানে এতো রাতে কেন যাবে?

নুহাশ রুমে এসে ভাবছিলো কি করবে এখন।ছোয়ার ফোন নিয়ে যায়নি।তাই চিন্তাও হচ্ছে।কোনো বিপদ হলো না তো। এমন সময় কিচেনে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ হলো।নুহাশ দেরি না করে সেখানে গেলো।ছোয়া দাঁড়িয়ে আছে।

” তুমি এখানে কিন্তু আমি যে একটু আগে দেখে গেলাম।তখন তো তুমি ছিলে না?

“কিন্তু আমি তো এখানেই ছিলাম আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।

” ভুল দেখবো আমি!

“আসলে আমার খিদে পেয়েছিলো তাই এসেছিলাম কিছু আছে কি না দেখার জন্য।

” তো খাওয়া শেষ?

“হ্যাঁ।

” কিন্তু রান্না করা কোনো খাবার তো নেই আমি যতদূর জানি।তাহলে কি এমন খেলে?

“এবার কি বলবো।সত্যিই তো কোনো খাবার নেই।

এসব ভাবতেই টেবিলের দিকে চোখ পরলো ছোয়ার।দেখে একটু খুশিই হলো।যাক এ যাত্রায় বেঁচে যাবে।

” কেন ফল খাচ্ছিলাম ওইতো এখনো কাটা আছে।আপনি খাবেন?

“না ঘরে যাও আমি আসছি।

” হুম।আপনিও আসুন না।

“একমিনিট তোমার হাতে রক্ত কোথা থেকে এলো দেখি।

নুহাশের কথায় পিলে চমকে উঠে ছোয়ার।তারাহুরোয় এটার কথা ভুলেই গেছে সে।আজ যার জন্য ছোয়া গেছিলো কোনো কারনে সে হাত ফস্কে বেরিয়ে যায়।তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।হাতাহাতির এক পর্যায়ে তার হাতের একটা ধারালো ছুরি দিয়ে ছোয়ার হাতে আঘাত করে।তখনই এই ঘটনা ঘটে।কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি ছোয়া কাজ সম্পন্ন করে তবেই এসেছে।
কিন্তু এটা তো নুহাশকে বলা যাবে না।

” কি হলো কি এতো ভাবছো কিছু জানতে চেয়েছি তো?

“আব..আসলে ওই ফল কাটতে গিয়েই।

” আর ইউ ক্রেজি! ফল কাটতে গিয়ে এভাবে কেউ হাত কাটে।ক্ষত দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক ধারালো ছুরি।এই ছুরি এতো ধারালো?

“সেটা আমি কি করে বলবো আশ্চর্য। এমন ভাবে কথা বলছেন যেন আমি মিথ্যে বলছি।কোথায় ওষুধ লাগিয়ে দিবে তা না শুধু প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন তখন থেকে।এই হাত ছাড়ুন তো।আমিই লাগিয়ে নিচ্ছি ওষুধ।

” তার কোন প্রয়োজন নেই।ঘরে চলো আমিই দিচ্ছি।

“এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম উফ।এতো প্রশ্ন কেউ করে।ভাগ্যিস তখন ফল কাটার কথাটা মাথায় এসছিলো নয়তো আজ ধরা পরে যেতাম।

” কি বির বির করছো তখন থেকে।

“কই কিছু না তো।

আজও নুর দেখলো রোহিত দাঁড়িয়ে আছে।নুর একবার এড়িয়ে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পরলো।

” নুর প্লিজ একবার কথা বলো।

“আমি বুঝতে পারছি না স্যার। আপনি এমন কেন করছেন? এসবের মানে কি?

” নুর আমি একটা সুযোগ চাই প্লিজ একটা সুযোগ দাও আমায়।

“আপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশিই করে ফেলছেন? আর বার বার কিসের সুযোগের কথা বলছেন আপনি?

” আমরা কি কোথাও বসে কথা বলতে পারি?

“না।আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না।

” এতো বার রিকুয়েষ্ট করছি তবুও শুনছ না।তুমি তো এমন ছিলে না।

“হয়ে গেছি।পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছে।

“একটা সুযোগ দাও প্লিজ। প্রমিজ তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।আমায় বিয়ে করবে নুর?

” দয়া করতে চাইছেন নাকি করুণা?

“নুর!

” প্লিজ স্যার। আমি কারো দয়ার পাত্রী হয়ে থাকতে চাই না।আর এটাতো মিথ্যে না ভাবিকে আপনি ভালোবাসেন।তার জন্যই তোমাকে। যাই হোক আমার মনে হয় আপনার আর কিছু বলার নেই।

রোহিত নুরকে আর কিছুই বলতে পারলো না।নুর সেই সুযোগটাই দিলো না।নিজেকে অনেক কষ্টে এমন তৈরি করেছে। নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলো নুর।তবে কেন আবার সেই দহনের মুখোমুখি হতে হলো।সব কিছু ছেড়ে দিয়েই তো এসেছিলো।

আজ নুহাশ পার্টি অফিসে যায় নি।ঘরে বসেই একটা মিটিং সেরেছে।ছোয়া নাহার বেগমের সাথে রান্না করছে।ছেলে মেয়ের পছন্দের খাবার বানাচ্ছে নাহার বেগম। বাদ যায়নি ছোয়াও।আজ ছোয়া নিজের হাতে নুহাশের জন্য পাস্তা রান্না করছে।চিকেন পাস্তা নুহাশের পছন্দ সেটাই বানাচ্ছে।বিয়ের এতোদিন পর ছোয়া আজ নিজে থেকেই নুহাশের জন্য কিছু বানাচ্ছে।

“আম্মা একটু দেখবেন কেমন হয়েছে?

” ওমা তুমি রান্না করেছো আবার দেখতে হবে কেন।অবশ্যই ভালো হবে।

“তবুও আপনি দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না।আপনার যে ছেলে দেখা গেলো পরে মন মতো না হলে আমাকে কথা শুনিয়ে দিবে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।ছোয়া অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে নুহাশের দিকে।কিন্তু লোকটা এখনো পাস্তা ছুয়েই দেখেনি।সেটা নুর লক্ষ্য করে নুহাশকে বললো।

” ভাইয়া পাস্তাটা আগে খাও না।খেয়ে বল কেমন হয়েছে।

“ভালো লাগছে না।খেতে ইচ্ছে করছে না।

” সেকি এটা তো তোমার প্রিয় খাবার।ভাবি এতো কষ্ট করে রান্না করলো আর তুমি বলছো খাবে না!

“কে রান্না করেছে?

” তোমার বউ।

“যাহ ও কেন রান্না করতে যাবে এটা তো আম্মা রান্না করেছে।

নুহাশ কথাগুলো ইচ্ছে করেই বলছিলো ছোয়াকে রাগানোর জন্য।রান্নার সময় নুহাশ দেখেছে তাই সে জানে এটা ছোয়াই করেছে। ছোয়া যে নুহাশের পছন্দের খাবার রান্না করবে এটা নুহাশের ভাবনার বাইরে ছিলো।

” নুহাশ কি হচ্ছে। এটা সত্যিই ছোয়া মা বানিয়েছে।

“তাহলে আমি এটা খাচ্ছি না।

” খেতে হবে না আপনাকে।আমি এটাতে বিষ মিশিয়েছি।দিন এটা আমিই খাবো।খেয়ে মরে যাবো।

বলতে বলতেই দুই চামচ মুখে নিয়েছে ছোয়া।তা দেখে নুহাশ সেটা কেরে নিলো।

“আমার খাবারে হাত দিলে কোন সাহসে তুমি।হাউ ডেয়ার ইউ?

” ১০০ দিবো হাজার বার দিবো তাতে আপনার কি।
ছোয়া হন হন করে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।

“আরে ভাবি কোথায় যাচ্ছো?
দেখলে তোমার জন্য এখন না খেয়ে থাকবে।তুমি এমন কেন কর ভাইয়া?

নুহাশ খাবার শেষ করে ছোয়ার খাবার নিয়ে ঘরে গেলো। ছোয়া উল্টো মুখ করে শুয়ে আছে।তা দেখে নুহাশ খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে ছোয়ার কাছে গেলো। কেন জানি ছোয়াকে রাগাতে তার ভালোই লাগে।কোনো রকম হাসি চাপিয়ে ছোয়াকে ডাকলো নুহাশ।কিন্তু ছোয়া কোনো সারা দিলো না।

” উঠো বউ খাবার এনেছি।

“আমি কি আপনাকে বলেছি খাবার আনতে।যান তো এখান থেকে ঢং করতে হবে না।

” আমার কি দোষ বলতো।বিয়ের পর থেকে আজ অব্দি আমার সাথে ভালো করে কথা বলেছো? যত বার আমি কথা বলেছি বা তোমার কাছাকাছি গেছি জোর করে।তাহলে আজ যে তুমি আমার জন্য এটা বানিয়েছো তাতে কি আমার অবিশ্বাস হওয়ার কথা নয়?

সত্যিই তো।ছোয়া নুহাশের সাথে ভালো করে কথা বলা তো দূর কখনো ভালো করে তাকিয়েও দেখেনি।

“আচ্ছা চলো একটা ডিল করি।রান্নাটা যখন তুমিই করেছো তাহলে খাইয়ে দাও।তবেই খাবো।

” আ.আমি পারবো না।

“ঠিক আছে তাহলে আমিও খাচ্ছি না।

” বাচ্চাদের মতো জেদ করছেন কেন?

“তুমি শুনছো না কেন?

” ধুর আচ্ছা আসুন।

“আমি একা খেলে তো হবে না।তোমার খাবারও এনেছি।এসো খেয়ে নিবে।

সকালে নুহাশ বাইরে যাওয়ার সনয় মালিহা বেগমকে বলে গেলো আজ নুরকে ওর এক ফ্রেন্ড তার পরিবার নিয়ে দেখতে আসবে নুর যেন রেডি থাকে।এদিকে এই কথা শুনে নুর হতভম্ব। ভাই কেন এখন বিয়ের কথা বলছে।কিন্তু ও তো রোহিতকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।

” কিন্তু ভাইয়া আমি।

“দেখলেই বিয়ে হয়ে যায় না নুর।ওরা শুধু দেখতে আসবে। তেমন হলে এখন শুধু আংটি পরিয়ে রাখবে।

” কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাইছি না।

“এই বিষয় নিয়ে আমি আর কিছুই বলতে চাই না নুর।রেডি থাকবি আমি ওদের সাথে নিয়েই ফিরবো।

” মা তুমি কি কিছুই বলবে না?

“নুহাশ তো ঠিকই বলেছে নুর।তাছাড়া ও তো তোর খারাপ চায় না।আচ্ছা তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?

” ক কি সব বলছো!

“তাহলে বিয়ে কেন করতে চাস না তুই?আগে দেখ না হয়তো তোর তাকে ভালো লাগবে।তুই এক কাজ কর আজ ভার্সিটি যেতে হবে না।আমি রান্নার ব্যাবস্থা করি।

” আম্মা আমি একটু বের হবো তারাতাড়িই ফিরে আসবো।নুর আমি এসেই তোমাকে সাজিয়ে দিবো কেমন।

নুরের পুরো পৃথিবীটাই এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো। ভাইয়ের মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই তার।কিন্তু এভাভে সবটা শেষ হয়ে যাবে সেটাও মানতে পারছে না।

” এতো জরুরী তলব কি ব্যাপার রোহিত?

“আসলে কিভাবে যে বলবো।

” এতো ভনিতা না করে কি বলবে বলো না।আমার আজ একটু তারা আছে।আমার ননদকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।

“ননদ মানে নুর?

” হ্যাঁ। তুমি কি করে জানো?

“আসলে আমি নুরকে নিয়েই কথা বলতে চাইছি।

” ঠিক বুঝলাম না বুঝিয়ে বলো প্লিজ।

তারপর শুরু থেকে সবটা বললো রোহিত।সবকিছু শুনে ছোয়ার এটাই মনে হলো তিন বছর আগে নুরের এক্সিডেন্ট, পর পর দুবার ফেল করা এর কোনোটাই কাকতালীয় নয়।রোহিতই তার মূল কারন।এবার রোহিতের ওপর রাগ হলো ছোয়ার।মেয়েটাকে একটা সুযোগ দিলে কি হতো?

“তুমি কি জানো তোমার এই রিজেক্ট মেয়েটা মানতে পারেনি।ওর জীবন থেকে তিনটা বছর হারিয়েছে ও।আচ্ছা পর পর দুবার ফেল করায় তোমার মনে হয়নি এতো ভালো একটা স্টুডেন্ট ফেল কিভাবে করতে পারে? তারপর টিনটা বছর দেখোনি।একটা খোজ নিয়ে দেখেছিলে?

” আমি বুঝতে পারছি না কি বলছো তুমি।তিন বছর নষ্ট মানে?

“আচ্ছা তুমি বলো নুরের কি এখন ভার্সিটিতে পড়ার কথা?

” এই প্রশ্নটা আমার কাছেও অদ্ভুত লেগেছে কিন্তু জানতে পারিনি।কেন বলতো?

ছোয়া নুরের এক্সিডেন্ট এর সব কিছুই রোহিতকে জানিয়ে দিলো।এই কথাটাই হয়তো সেদিন নুর বলতে গিয়েও বলেনি।

“আমি এটা কি কিরলাম ছোয়া।একটা মেয়ে জীবনটা এভাবে শেষ করে দিলাম? কিন্তু আমি তো এমন কিছু হোক তা চাইনি।এবার কি হবে? নুর তো আমাকে মেনে নিবে না।

” মেনে না নেয়ারই কথা।আমার মনে হয় নুর তোমাকে এখনো ভালোবাসে।তাই পাত্রের কথা শুনে তখন অমন রিয়েক্ট করছিলো।

“তাহলে ও কথা কেন বলতে চায় না?

” এটাই স্বাভাবিক রোহিত।মেয়েটা অনেক কিছু সহ্য করেছে।
ওর কথা ছাড়ো ওর যায়গায় আমি থাকলে এর থেকেও বেশি কিছুই করতাম হয়তো। এসব এখন ভেবে লাভ নেই।কি করলে এই বিয়েটা আটকানো যায় সেটাই আমাদের ভাবতে হবে।মিঃ রোহিতকে দেখে আমার যা মনে হলো এই বিয়েটা উনি দিবেনই।

“না এটা হতে দেয়া যাবে না।তুমি আমায় হেল্প করো প্লিজ।তোমাকে হারিয়েছি নুরকে হারাতে চাই না।তার জন্য যা করতে হবে আমি তাই করবো।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৬

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৬
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

ছোয়ার আগেই নুহাশ ঘুম থেকে উঠে গেছে।নুহাশ অপেক্ষা করছে ছোয়া কখন উঠবে।বেশি অপেক্ষা করতে হলো না।ছোয়া উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ২ মিনিটের মাথায় আবার ফিরে এলো।
নুহাশ বলে একটা চিৎকার করলো।

“কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে চিল্লানোর মানে কি?

” আপনি বুঝতে পারছেন না কেন এমন করছি?

“না। আশ্চর্য আমি কি করে বুঝবো তোমার কি হয়েছে!

” এটা কি।কি এটা এখানে এমন হলো কি করে?

“কই দেখি দেখি।এসব কি ছোয়া?

” মানে ইয়ারকি হচ্ছে নাকি।আপনি জানেন না আমি জানবো।

“ছিঃ ছিঃ তুমি এটা কি করলে বলতো।এবার আমি লোকের সামনে মুখ দেখাবো কি করে।

” দেখুন আমি খুব ভালো করেই জানি এটা আপনার কাজ।এই আর কি কি করেছেন আপনি সত্যি করে বলুন।

“কেন তুমি বুঝতে পারছো না। নিজের মধ্যে কি কোন পরিবর্তন বুঝতে পারছো?
বাই দ্যা ওয়ে কি করেছি বলতো?

” কামড়ের…

“থেমে গেলে কেন বলো?

” বুঝেও কেন বুঝতে চাইছেন না আপনি।দেখি সরুন সামনে থেকে।

ছোয়া আর কথা বাড়ালো না।এই লোকের সাথে কথায় পেরে ওঠা অসম্ভব। তাই চুপ করে যাওয়াটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো ছোয়ার।

সেদিনের পর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ছোয়া নুহাশের সম্পর্কে একটু পরিবর্তন এসেছে।ছোয়াও নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।মিলি প্রথমে নুহাশের বিয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছে এমন ভাব করলেও ছোয়ার সাথে বিয়ে হওয়ায় খুশিও হয়েছে।ছোয়ার বাবার সেই বাক্স এ এমন কিছু ছোয়া পেয়েছে যেটা ছোয়া এতোদিন খুজছিলো।এই বাক্স এ এমন কিছু আছে যেটা থেকে জানা যায় একসময় কার খুব নামি দামি একজন নেতা যার নাম এরশাদ শিকদার ইনিই ছোয়ার বাবার আসল খুনি।যার নির্দেশনা অনুযায়ী সোলাইমান সাহেবকে খু*ন করা হয়েছিলো।
খোজ নিয়ে জানা গেছে আজ থেকে ১০ বছর আগে সবকিছু ছেড়ে তিনি পরিবার সহ আমেরিকায় পারি জমিয়েছে কিন্তু বাকিরা এখনো রয়ে গেছে এদেশেই।এই খুনে ছোয়া এতদিন জানতো ৬ জন যুক্ত আছে কিন্তু বক্সের ভিতর কিছু চিঠি এবং একটা ভিডিও ক্লিপ দেখে জানা গেছে ১২ জনের হদিস। এখন ছোয়া তাদের খুজছে।

ছোয়া কোর্ট থেকে ফিরে শাশুড়ী ননদের সাথে কথা বলে ঘরে গেলো।সময় তখন সন্ধ্যা ৭ঃ৩৪ মিনিট। হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢোকে নুহাশ।পরনের সাদা পাঞ্জাবীটা হাতা অনেকটা র*ক্তে লাল হয়ে আছে। খুড়িয়ে হাটছে নুহাশ। এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে আল্লাহ বলে এগিয়ে যায় ছোয়া।

“একি এসব কিভাবে হলো আপনার?

” এক্সিডেন্ট করেছি।ভাগ্য ভালো এবারের যাত্রায় বেঁচে গেছি।

“কিন্তু এক্সিডেন্ট হলো কি করে।গাড়ি কে ড্রাইভ করছিলো?

ছোয়ার চিৎকার শুনে নাহার বেগম ছুটে এলেন ওদের ঘরে। ছেলের এই অবস্থা দেখে তিনি বিচলিত হয়ে ছেলেকে আগলে নিলেন।

” একি এসজব কি করে হলো আব্বা।তোমার এই অবস্থা কেন।নুর ডক্টর খানকে আসতে বল এক্ষুনি।

“আম্মা আমি ঠিক আছি বিচলিত হবেন না।

” হ্যাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন ঠিক আছো।আমার আর ভালো লাগে না এসব।একবার মেয়ে এক্সিডেন্ট করে আসছে। একবার স্বামী তো এখন তুমি।আমাকে কি তোমরা শান্তি দেবে না?

এরি মধ্যে ডক্টর খান চলে এলেন।গাড়ি থেকে পরে যাওয়ায় হাতে এবং হাটুতে লেগেছে খুব।পার্টি অফিস থেকে গাড়িতে করে ফেরার সময় এই দুর্ঘটনা।গাড়িতে বিপুল ও ছিলো।দুজন কথা বলছিলো এমন সময় দেখলো সামনের দিক থেকে একটা বড় ট্রাক ওদের গাড়ির দিকেই আসছে।রাস্তা ফাকা থাকায় ড্রাইভার গাড়ির ডোর খুলে পাশেই জোরে ব্রেক করে। তখন রাস্তার পাশে নুহাশ এবং বিপুল ছিটকে পরে এবং ড্রাইভার গাড়িসহ একটা গাছের সাথে বারি খায়।ড্রাইভার সেখানেই সেন্স হারিয়ে ফেলে।বিপুলকে দিয়ে তাকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেয় নুহাশ।নিজে একটা সি এন জি ধরে বাড়িতে আসে।ঘটনা যে এক্সিডেন্টলি নয় বরঞ্চ ইচ্ছাকৃত তা নুহাশের বুঝতে বাকি নেই।এটা বিরধী পক্ষের কাজ।বেশ কিছুদিন ধরেই নুহাশকে পদত্যাগ করার জন্য বলছিলো আরো একজন নেতা শামসুল রহমান। তবে এমন কিছু ঘটাবে সেটা নুহাশ টেরই পায়নি।

নাহার বেগম ছেলের পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছেন।ডক্টর চলে গেছে একটু আগেই।বিপুল এলো প্রায় ১ ঘন্টা পরে।বিপুলের তেমন কিছু হয়নি কিন্তু ড্রাইভারের অবস্থা তেমন সুবিধার নয়।

“আপনার সন্দেহ ঠিক ভাই এইডা ওই শামসুল এর কাম।
ভাই আপনি শুধু একবার অনুমতি দেন ওই শামসুলরে আপনার সামনে হাজির করুম।

” বিষয় টা এতোটাও সহজ নয় বিপুল। আমরা সন্দেহ করেছি কিন্তু প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আর একজন নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগ আনা বোকামি।তবে ছেড়ে আমি দিবো না।এর হিসাব আমি করায় কন্ডায় বুঝে নেবো।

রাত ১ টা বাজে।নহারা বেগম নুর নুহাশের রুম ছেড়ে মাত্রই ঘরে গেলো।ছোয়া নুহাশের কি লাগে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখছে।এটা মেঘ না চাইতেই জলের মতো। এতদিন টুকটাক কথা হলেও এভাবে কখনো কাছাকাছি আসেনি কেউ কারো। আজ নুহাশের মনে হচ্ছে এই এক্সিডেন্ট টা আগে হলে ভালোই হতো।কে না চায় তার ভালোবাসার মানুষটা তার কাছাকাছি থাকুক।নুহাশও চায় খুব করে চায়।

“ঘুমিয়ে পরো আমার আর কিছু লাগবে না।

” কিন্তু।

“তোমার তো খুশি হবার কথা তাই না।তাহলে ছেড়ে দাও আমাকে আমার মতো।

” কি সব উল্টো পালটা কথা বলছেন খুশি কেন হতে যাবো আজব।

“না হবারও তো কোনো কারণ নেই।তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো ন্স।

“আমার ভুল হয়েছে।ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনি নুহাশ চৌধুরী। কথায় আপনার সাথে আমি পারবো না।


ইদানীং নুর লক্ষ্য করছে তাকে কেউ ফলো করে কিন্তু কে করে সেটা তার চোখে পরেনি।আজ বাইরে প্রচুর রোদ।ছাতাটাও আনতে ভুলে গেছে নুর।রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে থেকে এখন প্রায় বিরক্ত সে।এখন মনে হচ্ছে গাড়ি নিয়ে এলেই ভালো হতো।এখান থেকে তাদের বাড়ি অনেকটা দুরেই তা না হলে হেটেই যেত নুর।হঠাৎ করেই সামনে একটা বাইক এসে দাঁড়ালো।নুর প্রথমে তাকায়নি কিন্তু লোকটা বাইকের হর্ন দিলো যাতে ছোয়া তাকে লক্ষ্য করে।লোকটা আর কেউ নয় রোহিত।

“আপনি এখানে!

” কেন এদিকে কি আমার আসা বারন?

“আমি সেটা বলতে চাইনি।তাছাড়া আমি এখানে রোজ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করি আপনাকে তো কখনো দেখি না।

” গাড়ি থাকতে কেন রিক্সায় যাতায়াত করো সেটাই তো বুঝতে পারি না।যাই হোক চলো তোমাকে ড্রপ করে দিই।

নুর কিছুটা অবাক হলো।সে ঠিক শুনছে তো নাকি ভুল? রোহিত যেখানে নুরকে পাত্তাই দিতো না সেখানে নাকি তাকে আবার ড্রপ করে দেবে ভাবা যায়?

“সরি!

” এই মেয়ে বাংলা বুঝতে পারো না? বলেছি ড্রপ করে দিবো উঠে এসো।

“তার কোনো দরকার হবে না স্যার। আমি রোজ যেভাবে যাই আজও সেভাবেই যাবো। তাছাড়া আপনার সাথে আমার সম্পর্ক টিচার স্টুডেন্ট সেখানে আমাকে ড্রপ করে দেয়া আপনাকে মানায় না।

বলতে বলতেই একটা রিক্সা এসে পরলো।চেনা জানা।নুর প্রায়ই এই রিক্সায় যাতায়াত করে।

” নুর প্লিজ তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।

নুর কোনো জবাব দিলো না।রিক্সা মামাকে যাওয়ার তারা দেখিয়ে যেতে বললো।

রোহিতের একটু খারাপ লাগলো।তবে নুরের তুলনায় খুবই কম।সেদিন নুরদের বাড়ি থেকে এসে অনেক ভেবেছে রোহিত।ছোয়াকে সে ভালোবাসলেও ছোয়া কখনো তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবেই নি।এমনকি ছোয়ার চোখে রোহিতের জন্য কোনো ভালো লাগা দেখেনি।যখনই কথা হতো নর্মাল বন্ধুদের মতই এর বাইরে কিছুই নয়।কিন্তু নুরের চোখে অনেকবার সে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছে।এমনকি আজ অনেকগুলো দিন পর দেখেও এটাই মনে হয়েছে।তারপর প্রায় দুটো মাস চলে গেছে। এই কয়েকটি দিন শুধু নুরকে নিয়েই ভেবেছে রোহিত।আশ্চর্যের বিষয় ছোয়ার কথা তার একবারও মনে পরেনি।সমীকরণ মিলাতে সময় লাগলো না রোহিতের।সে বুঝে গেছে তার আসল ভালোবাসার মানুষ কে।কিন্তু কথা হচ্ছে নুর এতো সহজে সবটা মেনে নেবে না।ওকে মানাতে অনেক সময় লাগবে রোহিতের।তাতে কোনো সমস্যা নেই।নুরের কষ্টের কাছে রোহিতের এটুকু সামান্যই মনে হলো।রোহিত আদোও পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। নুরের মতো মেয়েরা খুব আত্নসম্মানী হয়ে থাকে।একবার সেখানে আঘাত লাগলে সেই ক্ষত সারাতেও অনেক সময় লাগে।

নুর বাড়িতে ফিরে অনেকটা মন খারাপ করে।ছোয়া বসে বসে মিলির সাথে কথা বলছিলো।নুরের সাথে মিলির আগে থেকেই পরিচয় ছিলো।নুরের কলেজের জুনিয়র ছিলো মিলি।এখন অবশ্য মিলি অনেকটা এগিয়ে গেছে।এখন তারা দুজনেই সেম ইয়ারে।

“আরে নুর আপু এসো না বসো।

” না তোমরা কথা বলো আমার ভালো লাগছে না।

“কি হয়েছে নুর কোনো সমস্যা। টায়ার্ড লাগছে।শরবত করে দিই?

” না ভাবি আমি ঠিক আছি।বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবো।

নুর আর কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না।ও ভালোই বুঝতে পারছে ছোয়ার এভাবে বিয়ে করায় রোহিত এখন একা হয়ে গেছে।যেহেতু নুর রোহিতকে ভালোবাসে তাই এখন নুরকে রোহিত দয়া করতে চাইছে।কিন্তু নুর তো কারো দয়া চায় না।

“যা বাবা এর আবার কি হলো!

” আমিও বুঝতে পারছি না মিলি।কিন্তু কিছু তো একটা হয়েছে।যাই হোক তুমি এবার এসো।আর তিন দিন পর যেহেতু কেসটা কোর্টে তোলা হবে তাই তোমাকে সব কিছু চেক করতে হবে।আর হ্যাঁ যাওয়ার পথে একবার ক্লায়েন্ট এর বাড়ি থেকে ঘুরে যাবে কেমন।

“ঠিক আছে ম্যাম।

বিকাল থেকেই আকাশ টা মেঘলা হয়ে ছিলো।সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির আগমন। আজ নুরের মনটা ভালো নেই।স্বল্পভাষী, শান্ত মানুষের একটাই সমস্যা। ওরা মনের অনুভূতি কষ্টগুলো কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না।

বৃষ্টি নুরের তেমন একটা পছন্দ নয়।কিন্তু আজ কেন জানি মনে হলো ভিজতে।যেই ভাবা সেই কাজ। নুরের বারান্দায় ছোট ছাদ আছে।সেখানেই আকাশে পানে মুখ করে ভিজছে নুর।মনে হচ্ছে বৃষ্টির সাথে সাথে তার মনের দুঃখও কিছুটা কমেছে।

ছোয়া বিকাল থেকেই নুরকে নজরে রাখছিলো।কিছু যে একটা হয়েছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।ছোয়ার প্রথম থেকেই নুরের প্রতি কিউরিওসিটি একটু বেশিই।নুরের অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে নিজের বিষয় গুলো অন্যদের থেকে লুকানোর।

” একা একাই ভিজছো আমাকে কেন ডাকলে না ননদিনী?

“তুমি কখন এলে?

” অনেক্ষন হলো।তুমি এতোটাই মগ্ন ছিলে যে আমাকে খেয়ালই করনি।তা কি এতো ভাবছিলে শুনি।আম্মার কাছে শুনেছিলাম তুমি বৃষ্টি পছন্দ কর না।

“হ্যাঁ তেমন একটা পছন্দ নয় তবে আজ কেন যেন ইচ্ছে হলো।

” তোমার কি কিছু হয়েছে আমাকে বলতে পারো নুর।

“না তো।আমার আবার কি হবে।তুমি বেশিই ভাবছ ভাবি।

” সত্যি বলছো তো?

“একদম।

রাতে নুরের কাপনি দিয়ে জ্বর হলো। ছোয়ার অভ্যস্ত থাকায় তেমন সমস্যা হলো না।নাহার বেগম ইচ্ছে মতো নুরকে বকাবকি করছেন।যখন অভ্যাস নেই তখন কেন অবেলায় ভিজলো ।এই নিয়ে মায়ের সাথে রাগ করে আছে নুর।সে জানে তার রাগ করাটা বেমানান। কিন্তু মনের অবস্থা তার মোটেই ভালো নেই।সেটা তো কাউকে বুঝাতে পারছে না।

তিনদিন ভার্সিটি যায়নি নুর।রোহিত এই তিন দিনে এসে ঘুরে গেছে।তাহলে কি মেয়েটা আবারও হারিয়ে গেলো।আর রোহিতের সামনে আসবে না? কিন্তু রোহিতকে অবাক করে দিয়ে আজ নুর এলো।দেখে বুঝাই যাচ্ছে কিছুটা পরিবর্তন। চোখমুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।নুর রোহিতকে লক্ষ্য করেছে কিন্তু তবুও পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে।রোহিত পিছনে থেকে ডাকলেও ফিরে তাকায়নি।

” এমন কেন করছো নুর।শেষ বারের মতো কি একটা সুযোগ পাবো না?

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৫

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৫
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

সকালে কারো চিৎকারে ঘুম ভাঙে ছোয়ার।মথাটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে।প্রথমে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আবারও শুয়ে পরলো।পরক্ষণেই আবার সেই চিৎকার।গলাটা কেমন চেনা চেনা লাগছিলো।
“রোহিত!

“আরে কে তুমি বাবা।এভাবে আমার ছেলের বউকে ডাকছো কেন? কি হও তুমি ছোয়ার?

” আপনার ছেলের বউ?

“হ্যাঁ নুহাশ চৌধুরী। কালই ওদের বিয়ে হয়েছে।কিন্তু তুমি কে?

” আন্টি প্লিজ একবার ছোয়াকে ডেকে দিন।আমার ওর সাথে কথা আছে।

“রোহিত!

” ছোয়া আমি যা শুনলাম তা কি সত্যি?
তুমি বিয়ে করে নিয়েছো।হ্যাঁ কি না?

“হ্যাঁ তুমি যা শুনেছ সব সত্যি। কিন্তু

” তুমি এটা করতে পারলে?তুমি জানতে না আমি তোমায় কতটা পছন্দ করি। তুমি জানতে না তুমি আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কেন এমন করলে ছোয়া।একবার বলতে পারতে আমায়।আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো না।ভেবেছিলাম এখন ভালোবাসো না কিন্তু একদিন ঠিক বাসবে।এভাবে ঠকালে আমায়?

“তুমি ভুল বুঝছো রোহিত।আমার কোনো উপায় ছিলো না এই বিয়েটা ছাড়া। প্লিজ।

” তাহলে কেন বিয়েটা করেছো বল?

“কারন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি তাই।
হাই আমি নুহাশ চৌধুরী। মিট মাই ওয়াইফ ছোয়া চৌধুরী।

” ছোয়া তুমি শুধু একবার বলো মিথ্যে।এসব মিথ্যে তাই না?আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।

“শান্ত হও রোহিত।এসব সত্যি।আমি তোমার সাথে যেতে পারবো না।আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও।

ছোয়া আর দাঁড়াল না।রোহিত যেন পাথর হয়ে গেছে।কতো স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলো ছোয়াকে নিয়ে।এভাবে সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে তা কি সে ভেবেছিলো?
স্বপ্ন ছিলো তাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে।ভালোবাসা ভরপুর থাকবে সে সংসারে। কিন্তু হলো কি?
আসলেই বুঝি মেয়েরা ছলনাময়ী হয়?

” আমার মনে হয় আপনার আর কিছু বলার নেই মিঃ রোহিত।এবার আপনি যেতে পারেন।
নুহাশ আবারও ছাদের দিকে গেলো।

এতক্ষন সবকিছু আড়াল থেকে দেখছিলো নুর।সামনে আসার সাহস হচ্ছিলো না।ঠিক কতগুলো দিন পর মনের পুরুষটিকে দেখলো সে।আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।এই বুঝি তার সেই ভালোবাসার মানুষ যার জন্য নুরের মতো মেয়েকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো রোহিত।
তার জীবনে অন্য কেউ আছে যাকে সে খুব ভালোবাসে তাই অযথা যেন রোহিতকে বিরক্ত না করে নুর।এটাই তো বলেছিলো রোহিত।

রোহিতের প্রত্যাখ্যান মন থেকে মেনে নিতে পারেনি নুর।কারো সাথে বিষয় টা শেয়ার ও করতে পারছিলো না।প্রথম ভালোবাসা, ভালো লাগা খুব ভয়াবহ হয়।কেউ কেউ পরিনতি মেনে নিতে পারলেও অনেকেই সেটা পারে না।নুরও সেই দলের একজন।মানুষিক ভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পরেছিলো। পর পর দুবার ফেল করে নুর।সেই হতাশায় একদিন রাস্তা পারাপারের সময় অসাবধানে রোড এক্সিডেন্ট করে নুর।ক্ষত খুব গভীর হওয়ায় সেগুলো ঠিক হতে অনেক সময় লাগে।ছোট বেলায় সমবয়সী বন্ধুদের সাথে খেলা করতে গিয়ে এক তলার ছাদ থেকে পরে গিয়েছিলো নুর।এক পা ভেঙ্গে গেছিলো এবং হাতে অনেক জখম হয়েছিলো।সেবারই তার প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মেয়ের ওই অবস্থায় আর স্কুল যেতে দেয়নি বাবা আলহাজ্ব চৌধুরী। দু বছর বাদে ফের স্কুলে ভর্তি হয়।সবকিছু মিলিয়ে পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে যায়।তারপর নতুন করে আবার শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যায়।এসব নিয়ে আর ভাবতে চায় না নুর।ভাবলেই কেমন গা শিউরে ওঠে।

ভেবেছিলো এই লোকটার সামনে আর কোনো দিন আসবে না। কিন্তু আজ এই অবস্থায় এভাবে দেখে থাকতে পারছে না।

রোহিত এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।ফিরে যাওয়ার জন্য মাত্রই ঘুরছিলো সে।এমন সময় খুব পরিচিত এক কন্ঠস্বর থামিয়ে দিলো তাকে।আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে এই কন্ঠস্বর শুনেছিলো।হুট করেই মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেলো।তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।সময়ের সাথে সাথে ভুলেই গিয়েছিলো সব।আজ হঠাৎ আবার কেন যেন সব কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

“তুমি এখানে!

” হ্যাঁ। আমি এই বাড়ির মেয়ে।আর নুহাশ চৌধুরী আমার ভাই।

কথাটা শোনা মাত্র যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো রোহিত।নুর এই বাড়ির মেয়ে?কই কখনো তার চালচলন দেখে এটা মনে হয়নি যে নুর এমন বাড়ির মেয়ে হতে পারে।কথা বার্তায় কেউ বুঝবে না।যেখানে আজকাল কার দিনে এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা দাম্ভিক একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করে সেখানে নুরকে দেখে এটা বোঝার উপায় নেই।বরাবরই দেখে এসেছে সাধারণ পোশাক, সাধারণ ভাবেই থাকতে।তার থেকেও বড় কথা নুর চাইলেই তাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য ভাইয়ের পাওয়ার কাজে লাগিয়ে তাকে অনেক কিছুই করতে পারতো। তাহলে নুর কেন এসব করলো না।সবকিছুই কি তার নাটক নাকি সত্যি সত্যিই নুর এমন? প্রশ্নটা আর প্রকাশ করলো না রোহিত।

“বসুন না স্যার আপনাকে ঠিক লাগছে না।

“আমি এখানে বসতে আসিনি। এতো বছর পর পুরনো প্রতিশোধ নিলে তাই না নুর?

“এসব আপনি কি বলছেন স্যার। আমি কেন আপনার থেকে প্রতিশোধ নিতে যাবো?

” হ্যাঁ প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি,তোমার ভাই মিলে।তোমার ভালো মানুষের যে মুখোশ পরে ঘুরে বেরাও না এটা আসলে তুমি নও।

“যদি প্রতিশোধ নেয়ারই হতো তাহলে তার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতাম না স্যার। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন আমি সত্যি জানতাম না যে ভাবিই আপনার সেই ভালোবাসার মানুষ।

” বিশ্বাস! আমি কাউকে বিশ্বাস করি না।তোমাকেও না।

ভালোবাসায় মানুষ এতো বেহায়া কেন হয়? কষ্ট আছে জেনেও কেন মানুষ বার বার সেই দিকেই অগ্রসর হয়? এই যে নুর,সে তো ভেবেছিলো আর কোনো দিন রোহিতের সামনে যাবে না।ভুলে যাবে তাকে।সামনে যায়নি ঠিকই কিন্তু ভুলতে কি পেরেছে? মানুষটাকে ওভাবে দেখেই তো নিজেকে আর আড়ালে রাখতে পারেনি নুর।কিন্তু এবার ও বরাবরের মতোই লোকটা তাকে ভুল বুঝলো। সে কি জানে নুরের ওপর দিয়ে তিনটা বছর কি কি গেছে? এক্সিডেন্ট, মানসিক যন্ত্রণা এই সব কিছুই নুর নিজের মধ্যে রেখেছে।যদি প্রতিশোধ নিতেই চাইতো তাহলে কি এতদিন চুপ করে থাকতে পারতো।একজনকে পাগলের মতো ভালোবাসে অথচ যে তাকে ভালোবাসে তার কোনো মুল্যই নেই।

“না আর ভাববো না আমি এই লোকের কথা।কেন ভাববো সে কি আমাকে বুঝতে চেয়েছে? আমি তো শুধু তাকে একটু সঙ্গ দিতে গিয়েছিলাম।উল্টো আমাকেই কথা শুনিয়ে দিলো।

সকালে সবাই খেতে বসলেও ছোয়া আসেনি।রোহিত যাওয়ার পর থেকে ছোয়া আর নিচে নামেনি।নুহাশ ও তখন কিছু বলেনি তবে এখন মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশিই করে ফেলছে ছোয়া।এদিকে নুর চুপচাপ বসে আছে খাচ্ছে না কিছুই।

” তোর আবার কি হলো খাচ্ছিস না কেন?

ভাইয়ের কথায় ভাবনা থেকে বের হলো নুর।একটু আমতা আমতা করে খাওয়ায় মনযোগী হলো।

বারান্দার কাট ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে আছে ছোয়া।জীবনটা কেমন এক দিনেই পালটে গেলো।এমন জীবন সে চায়নি।নিজের ফোনটাও নেই।নুহাশ এখনো তা ফেরত দেয় নি।মায়ের সঙ্গে কাল দেখা করিয়ে এনেছিলো বিয়ের পর।
এভাবে চলতে থাকলে তো বাবাকে দেয়া কথা রাখতে পারবে না সে।

“খেতে যাওনি কেন ছোয়া?

নুহাশকে দেখেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেললো ছোয়া।তার জীবনের যত সমস্যা যত বিপত্তি সব এই লোকটার জন্য।

” কেন আমি কি আমার মতো একটু থাকতে পারি না।এতেও কি আপনার পারমিশন নিতে হবে?

“তুমি ঠিক কি চাইছো বল তো?কাল যা যা না করেছি সেগুলো করি? আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।

” অসভ্যতার সব পিএইচডি করে ফেলেছেন তাই না।

ছোয়াকে কোমড় ধরে কাছে টেনে নিলো নুহাশ।এতে রাগের মাত্রা আরো বেড়্ব গেলো ছোয়ার।
তাই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতেই নুহাশের গায়ে আবারও হাত তুলে ফেললো।নুহাশ ক্ষিপ্ত হয়ে চোখ দিয়েই মনে হলো ছোয়াকে গিলেই ফেলবে।

“সমস্যা কি আপনার। হুটহাট গায়ে কেন হাত দিয়ে বসেন।শুনুন আমি এখনো এই বিয়েটা মানি না।তাই আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টাও করবেন না।

” খুব বার বেড়েছে তাই না।দেখাচ্ছি ঘরে চলো।

একপ্রকার টেনে হিচরে নিয়ে এলো ছোয়াকে।হাতে খুব ব্যাথাও করছে।কিন্তু রাগের চেয়ে ব্যাথার পরিমাণ কম।

“এখানে যত খাবার আছে ১০ মিনিটে শেষ করতে হবে।যদি শেষ না হয় আমি নিজ হাতে খুব ভালো করে আপ্যায়ন করে খাইয়ে দিবো।নাও ফাস্ট।

খাবারের দিকে তাকিয়ে ছোয়ার গলা শুকিয়ে এলো। ১০ মিনিট কি সারাদিনেও এই খাবার শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।এতো খাবার সে খাবে কি করে।তাও আবার ১০ মিনিটে।ভাবতে ভাবতেই যে সময় শেষ হয়ে গেছে ছোয়া তা টেরই পেলো না।টের তখনই পেলো যখন মুখে নুহাশ খাবার পুড়ে দিলো।ছোয়াকে মুখের খাবার শেষ করার সময়টুকু দিচ্ছে না নুহাশ।একের পর এক লুকমা দিয়েই যাচ্ছে।এক সময় সইতে না পেয়ে ছোয়া মুখের খাবার গুলো ফেলে দিলো।যা দেখে নুহাশ হাত উচু করে মারার জন্য থেমে গেলো।সেই মুহূর্তে নাহার বেগম উপস্থিত হলেন।

” এসব কি আব্বা মেরে ফেলবে নাকি মেয়ে টাকে?

ছোয়া খাবার ফেলে অনবরতই কেশে যাচ্ছে।দম কেমন আটকে আসছে তার।নাহার বেগম দ্রুত ছোয়ার কাছে এগিয়ে এলো।

“আম্মা ওকে বলে দিবেন ২য় বার যেন এমন জেদ আমাকে না দেখায়।আমার একটা কাজ আছে আসছি।

নাহার বেগম ছোয়ার বুক ডলে দিচ্ছেন।মেয়েটাকে দেখে খুব মায়া হলো তার।নুহাশ হঠাৎ করে এমন কেন করছে।সেটাই বুঝতে পারছেন না তিনি।তার ছেলে তো এমন নয়।

” ঠিক আছো বউ মা?

“যার ঘরে এমন একজন স্বামী আছে সে ঠিক না থেকে পারে? খুব ভালো আছি আমি।

” আমার ছেলেটা এমন নয় কিন্তু। তুমি চলো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।

“আমার খিদে নেই আন্টি প্লিজ।

” আন্টি!কেন আমি তোমার মা নই?

“আমার সময় লাগবে।আমি একটু একা থাকতে চাই।

” ঠিক আছে তবে কিছু লাগলে আমায় বলবে কেমন? মা না ভাবো বন্ধু ভাবতেই পারো।

বিকেলে ছোয়া বসে বসে বই পড়ছিলো।ছোয়ার মতো নুহাশেই ঘরেও প্রচুর বই আছে সেখান থেকেই বই নিয়ে পড়ছিলো ছোয়া।
বাইরে নুর দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে আসবে কি আসবে না সেটাই ভাবছে।ছোয়ার সাথে এখনো দেখা বা কথা হয়নি নুরের তাই এসেছে আলাপ করতে।

“ভেতরে আসবো?

” কে?এসো।

“আমি নুর। নুহাশ ভাইয়ার ছোট বোন।

” আমি ছোয়া।আমার যে একটা ননদ আছে জানতাম না তো?

“কারন তুমি এখনো আমায় দেখই নি।বাই দ্যা ওয়ে তুমি করে বলছি তাই কিছু মনে করছো না তো?আসলে আমার মনে হয় আমরা সমবয়সী তাই।

” মনে কেন করবো।আমার আরো ভালো লাগবে।এমনিতেই আমার সমবয়সী কোনো ফ্রেন্ডস নেই।

“তাহলে সকালে যিনি এসেছিলেন?

” রোহিত ও আমার থেকে দু বছরের বড়।কিন্তু ক্লাস সেম ছিলো।যাই হোক বাদ দাও।তুমি কি করো এখন?

“আমি ইংলিশ এ অনার্স করছি এবছরই ফাইনাল এক্সাম। আসলে ছোট বেলায় একটা ছোট্ট এক্সিডেন্টে পিছিয়ে গিয়েছি।
মাঝের ঘটনা গুলো আড়াল করলো নুর।

” কোনো ব্যাপার না।

এক কথায় দুই কথায় অনেকটা সময় কেটে গেলো।নুহাশের কথা ছোয়া প্রায় ভুলেই গেলো।যাক দুটো মানুষ এবাড়িতে আছে যারা অন্তত ওই লোকটার মতো নয়।ছোয়া এটুকু বুঝেছে নুহাশের হাত থেকে ওর রেহায় নেই।তাই আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে সেই সাথে তার লক্ষ্য পুরনের জন্য হলেও আপাতত কোনো ঝামেলা করা যাবে না।
এরি মধ্যে লুবনা বেগম মেয়ের সাথে দেখা করে গেছেন।মেয়ে যে তার একমাত্র বেঁচে থাকার কারন।

বিকেলে নাহার বেগম কিচেনে রান্না করছিলেন।এবাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই।তবে ছেলে মেয়ে মায়ের হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারেন না।

“আম্মা আসবো?

” আরে ছোয়া মা এসো।কিন্তু তুমি এখানে কেন এলে?আমাকে ডাকলেই পারতে।কিছু লাগবে?

“আসলে ঘরে থেকে বোর হচ্ছিলাম তাই।আমি আপনাকে হেল্প করবো?

” এমা তুমি তো সবে কাল এলে।এখনই এতো কাজ করতে হবে না।চলো তোমাকে আমি আমাদের ফ্যামিলি ফটো দেখাই।

তারপর একে একে সবার ছবি দেখালেন নাহার বেগম।নুহাশের ছোট বেলার কিছু ছবি দেখে শাশুড়ী বউমা একটু হাসাহাসি করলো।হঠাৎ একটা ছবি দেখে ছোয়া প্রশ্ন করলো এটা কার ছবি।কারন ছবিটায় ফেসটা ভালো করে বুঝা যাচ্ছিলো না।তাছাড়াও মুখের অনেকটা অংশ নিয়েই ব্যান্ডেজ করা।

“এটা কে আম্মা।চেহারা তো বুঝা যাচ্ছে না।

” এটা আমার নুরের।আসলে মেয়েটার ছোট বেলা থেকে কোনো না কোনো বিপদ হয়েই থাকতো।ছোট বেলায় ছাদ থেকে পরে গিয়েছিলো।তারপর প্রায় তিন বছর আগে জানি না আমার মেয়েটার কি হয়েছিলো।পর পর দুবার এইচএসসি তে ফেল করে। হতাশায় রাস্তা পার হতে গিয়ে। আমার মেয়েটার জীবন থেকে তিন টি বছর চলে যায়।তবে আমার মনে হয় মেয়েটা অন্য কোনো কিছু নিয়ে চিন্তায় ছিলো।ও নিজে থেকে কিছু না বললে জোর করেও লাভ হয় না।আগে আমার মেয়েটা অনেক চঞ্চল ছিলো এখন অনেকটাই চুপচাপ হয়ে গেছে।

“নুর দু- দুবার এক্সিডেন্ট করেছে কই তখন তো কিছুই বললো না? তাহলে কি সত্যিই অন্য কোনো কারন আছে?
এরা ভাই বোন এতো রহস্যময় কেন?

নুহাশ বাড়িতে ফিরেছে অনেক রাতে।প্রতিদিনের ন্যায় আজও নাহার বেগম ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন।ছেলেকে না দেখে ঘুমোতে পারেন না তিনি।দুশ্চিন্তায় কাটে সারা রাত।

” আম্মা এখনো জেগে আছেন কেন?

“এটা তোমার কেমন কাজ আব্বা।আচ্ছা এখন তো তোমার ইলেকশন নেই তবুও কেন এত রাত করে ফেরো?

” একটু কাজ ছিলো আম্মা।আপনি খেয়েছেন।

“তুমি তো জানো রাতে তোমাকে খাইয়ে না দিলে আমিও খেতে পারি না।

” বলেছি তো আম্মা যেদিন আমার ফিরতে দেরি হবে আপনি খেয়ে নিবেন।

মা ছেলে খাওয়ার পর্ব চুকিয়েছে অনেক আগেই।তবুও বসে আছে।

“নুরটা কেমন যেন হয়ে গেছে আব্বা।সেই আগের মতো চুপচাপ। আজ সারাদিন ঘর থেকেই বের হয়নি মেয়েটা।

” হয়তো পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত আম্মা।আপনি তো জানেন এমনিতেই কতগুলো বছর ও পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলো।

ছোয়া ঘুমে।নুহাশ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর পানে চেয়ে।ঘুমোলে সবাইকে বুঝি এমন নিষ্পাপ লাগে? এই মেয়ে জানেও না যে তার ঘুমন্ত চেহারায় ও নেশা কাজ করে ।নুহাশের মাথায় একটা সয়তানি বুদ্ধি এলো।সকালে নিশ্চিত ছোয়া এটা দেখলে তুলকালাম বাধিয়ে ছাড়বে।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৪

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৪
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

শহরে আজ আরো একটা অজ্ঞাত লা*শের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। প্রথমে স্থানীয়রাই দেখেছে লা*শটা পরে পুলিশে খবর দেয়ার পর তারাই উদ্ধার করেছে।এটাও মার্ডার কেস।পর পর তিন তিনটা খুন।পুলিশ প্রশাসন এবার বেশ চাপের মুখে।এবার পুরো শহর যেন আতঙ্কে থমকে গেছে।
লা*শের পাশে একটা কাগজে লেখা ছিলো বেইমানের ক্ষমা নেই।এটা অবশ্যই ছাপানো লেখা।কাজেই হাতের লেখা দিয়ে খুনি অব্দি পৌঁছানো একেবারেই অসম্ভব।সকালে এমন খবর দেখে ছোয়ার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে।

“আমি বুঝতে পারছি না সাব্বির তোমরা এখনো কেন খুনিকে ধরতে পারলে না? তোমার মতো একজন অভিজ্ঞ অফিসারের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করা যায় না।কি যবাব দিবে সবাইকে? এতোগুলো খুন আমি প্রেসের সামনে কি বলবো?

” স্যার আমরা তো চেষ্টা করছি। কিন্তু।

“আমি আর কিছু শুনতে চাই না।খুনের সংখ্যা যেন তিন থেকে চারে যেন না যায় এটা দেখার দায়িত্ব তোমার।পুরো শহর এখন আতঙ্কিত। এবার তো পদত্যাগ করে বাড়িতে গিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।যত দ্রুত সম্ভব এই কেসটা শেষ করো।এট এনি কস্ট।

” ইয়েস স্যার।

ছোয়া সকালের খাবার খাচ্ছিলো এমন সময় লুবনা বেগম পাশে এসে বসলো।
মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও খাওয়া মনযোগী হলো ছোয়া।

“কিছু বলবে?

” আমার কোন কথাটা শুনিস তুই?

“বলই না কি বলবে মা।

” বলছি এই কাজটা ছেড়ে দে না মা।আমরা তো ভালো আছি বল।

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছো?

” চারপাশে যা হচ্ছে আমার তোকে নিয়ে খুব ভয় হয় ছোয়া তোর বাবার মতো না হয় শেষে। তুই তো আমার একটা কথাও শুনিস না।শহরে একের পর এক খুন হয়েই যাচ্ছে।আমার আর ভালো লাগছে না এসব।

“মা আবার শুরু করলে? আমার কিচ্ছু হবে না।তাছাড়া বাবাকে আমি যে কথা দিয়েছি সেটা এখনো পুরন হয়নি।তুমি অযথা এসব নিয়ে ভেবোনা তো।

ছোয়া বলে গেলো ঠিকই কিন্তু লুবনা বেগমের দুশ্চিন্তা একটুও কমলো না।আজকাল নিজের মেয়েকে তিনি বুঝে উঠতে পারে না।কেমন একটা গা ছাড়া ভাব।

“বলছিলাম সব তো হলো আব্বা এবার বিয়েটাও করে ফেলো।আমার তো বয়স হয়েছে।তোমরা দুই ভাই-বোন সারাদিন বাসায় থাকো না আমি একা একা কেমন বোরিং লাগে।অথচ এই বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে আমার খেলা করার কথা।সেটা কি তুমি চাও না?

” ঠিক বলেছো মা আমার ও তো ফুপি হতে ইচ্ছে করে নাকি।

“সকাল সকাল কি শুরু করলেন আম্মা।যাই হোক খুব তারাতাড়ি আপনার ইচ্ছে পুরন করবো।

” সত্যি বলছো ভাইয়া!

“এতো অবাক হবার কি আছে? তোকেও বিদায় করার ব্যবস্থা করছি একবার তোর পরিক্ষা শেষ হোক।

” হুহ তোমার সেই ইচ্ছা কোনোদিন পুরন হবে না।আমি তোমার ঘারে বসে বসেই জীবন পার করবো।

“নুর থাম এবার।নুহাশকে কিছু বলবি বললি তখন আমাকেও তো বললি না।

” ও হ্যাঁ। আগামী বুধবার আমাদের ভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাই রাঙামাটি যাবে আমিও যেতে চাই ভাইয়া।

“অনেক দূরে।তোকে আমি একা একা যেতে দিবো না।
তাই তোর যাওয়া হচ্ছে না।

” তুমি কিন্তু আমাকে বলেছিলে আমি যেখানে যেতে চাই যেতে দিবে ভাইয়া প্লিজ। আর আমি তো একা যাচ্ছি না।সাথে আমার বন্ধুরাও যাবে। মা ভাইয়াকে বলো না।

“আমি কি বলবো তাছাড়া এটা তো সত্যি এতো দূরে একা একা কি কতে যেতে দেই।

” তুমি অন্তত ভাইয়ার মতো বলো না মা।

“আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমার একটা শর্ত আছে।দুজন গার্ড যাবে।ওরা আলাদা যাবে কিন্তু একা যাওয়া যাবে না।এখন আমার চারপাশে বিরোধী দলের লোকজন সুযোগ খুজছে।আমি চাই না তোর বা আম্মার কোনো বিপদ হোক।

” ঠিক আছে তাই হবে তবে ওরা কিন্তু দূরে দূরে থাকবে।

“বেশ।

_

“ম্যাম আপনি যেটা বলেছিলেন সেটাই সত্যি। আমি এমন কিছু পেয়েছি যেটা হয়তো আপনি যা খুজছেন তাই হবে।

” কি বলছো। কিন্তু কি করে পেলে?

“কেন ছবির ভেতরে ছবি।

” মানে?

“মানে হচ্ছে আপনাদের ফ্যামিলি ফটোর পিছনে আরো একটা ছবি আছে।কোনো একটা পেইন্টিং এর ছবি।সেখানেই উত্তর টা আছে।

” মানে তুমি বলতে চাইছো ছবিটাই ক্লু।কিন্তু ছবি কি করে ক্লু হতে পারে?

“এক্সাক্টলি ম্যাম ছবি তো ক্লু নয় কিন্তু ছবির নিচের দিকে কিছু কোড আছে।সম্ভবত যিনি পেইন্টার এটা তার বিশেষ কোনো কোড যা তিনি তার পেইন্টিং এর সব ছবিতে ব্যাবহার করে থাকেন।আর আংকেল খুব চালাকির সাথে সেটাকেই কাজে লাগিয়েছেন।

” বাহঃ তুমি তো কামাল করে দিয়েছো মিলি।আমি আসছি।তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে।

“তাহলে?

” আমার অনেক হেল্প হবে।

“ছোয়া তোর খাবার খেয়ে যা কখন থেকে নিয়ে বসে আছি।

” আমি এখন খেতে পারবো না মা। আমার জরুরী একটা কাজ আছে এখনই যেতে হবে আমায়।

“আরে শোন আমাদের সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেছে। যা চলে গেলো? কখন আসবে কে জানে।

ছোয়া এতটাই এক্সাইটেড যে মায়ের শেষের কথাটা শুনতে পেলো না।সে এখন একটা কথাই ভাবছে অবশেষে শিকদার নামের হদিস পাওয়া যাবে।

“স্যার মেডাম কোথাও যাচ্ছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে খুব তারাহুরোর মধ্যে আছে।

” যেভাবেই হোক খুব সাবধানে আমার দেয়া ঠিকানায় নিয়ে এসো।আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না।

“কাজ হয়ে যাবে স্যার।

” বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,
এইবার ছোয়া পাখি নুহাশ তোমার বধিবে পরান।

ছোয়া একটা ট্যাক্সি খুজছে।এখান থেকে বনানী অনেকটাই দূরে তাই ট্যাক্সিই উপযুক্ত হবে বলে মনে হলো।বেশি খুজতে হলো না পেয়েও গেলো।
অল্পটা পথ যেতেই ট্যাক্সি অন্য রাস্তায় মোড় নিলো।এটা দেখে ছোয়া জিগ্যেস করলো-
” একি আপনি এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন এটা তো বনানীর রাস্তা নয়?

হুট করেই ছোয়ার মুখে কিছু স্প্রে করলো ড্রাইভার সিটে বসে থাকা লোকটা। তারপর নুহাশের দেয়া ঠিকানায় নিয়ে গেলো ছোয়াকে।

জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটা অন্য ঘরে আবিষ্কার করলো ছোয়া। মিলাতে চাইলো তার সাথে কি হয়েছে।তার যতটা মনে পরলো সে একটা ট্যাক্সিতে উঠেছিল বনানী যাবে বলে কিন্ত তার ড্রাইভার কিছু একটা স্প্রে করার পর আর কিছু মনে নেই।কিন্তু তাকে এখানে কেন আনা হয়েছে আর কেই বা আনলো।আচ্ছা বাবার রেখে যাওয়া সেই বক্স এর কথা কেউ জেনে যায়নি তো?
না না সেটা কি হরে সম্ভব। যেখানে আমিই এতো দিন এটার কথা জানতাম না সেখানে অন্য কেউ কি করে।তাহলে এসবের মানে কি? এখন এসব ভাবলে হবে না আমাকে এখান থেকে আগে বেরুতে হবে।

“কেউ আছেন। শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?

নাহ কেউ কোনো সারা দিচ্ছে না।এবার ছোয়া দরজা ধাক্কাতে লাগলো তাতেও বিশেষ কোনো লাভ হলো না।
না কেউ নেই।

” এবার আমি কি করবো।মিলি হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।একটা কল করি।কিন্তু আমার ফোন কোথায়?

খট করেই দরজা খোলার আওয়াজ হলো।নুহাশ দাঁড়িয়ে আছে।মুহুর্তেই ছোয়ার মুখ লাল হয়ে গেলো রাগে।আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো এই লোকটার কথা।
এই লোককে সহজ ভাবে নেয়া ঠিক হয়নি ছোয়ার।কিন্তু এখন কি করে এখান থেকে বের হবে সেটা আগে নিশ্চিত হতে হবে।

“আপনি।এসব আপনিই করেছেন তাই না?

” হুম। আমিই করেছি।

“এসবের মানে কি? দেখুন এসব যদি আপনার ফাজলামো হয়ে থাকে তাহলে খুব খারাপ হবে।আমার ফোন দিন।ফোন কোথায় আমার?

” ফোন তো এখন দেয়া যাবে না।ততক্ষণ যতক্ষণ তুমি আমার কথায় রাজি না হচ্ছো।

“আপনার কি মনে হচ্ছে আপনি বললেন আর আমি নাচতে নাচতে আপনাকে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলাম তাই তো?
তাহলে আপনি ভুল ভাবছে আপনার এই ইচ্ছা আমি পুরন হতে দেবো না।

” কনফিডেন্স থাকা ভালো।তুমি জানো তোমার বাড়ির সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেছে? আমার লোক অলরেডি সেখানে পৌঁছে গেছে।আমার একটা কথায় বোমম।আর সেটা যদি নাও হয় তোমাদের টিভি সেখানেও। বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দেখো।

তারপর নুহাশ কাউকে ভিডিও কল করলো এবং সে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখালো ছোয়াকে।পাশেই লুবনা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।তার ধারণা ওদেরকে ছোয়াই পাঠিয়েছে।

“এসব দেখিয়ে ভয় দেখাতে চাইছেন আমায়? আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছেন।আপনি জানেন আপনাকে আমি এর জন্য কি করতে পারি?

” জানি। কিন্তু আপনি জানেন না আমি কি করতে পারি।
আরো একটা জিনিস দেখাই আপনাকে।আপনার কি যেন একটা বন্ধু আছে না রোহিত।আমি যতদূর জানি সে এখন বাইকে করে কোথাও যাচ্ছে আমার লোক সেখানেও আছে আমার একটা কথায় উড়িয়ে দিতে সময় লাগবে না।
তারপর একটা ভিডিও যেটা দেখে ছোয়ার মাথায় রক্ত উঠে গেলো।

“এটা মিথ্যে এটা আমি নই।এটা আমি হতে পারি না।আপনি এগুলো!

” হুম যেটা ভেবেছেন তাই।এডিট করেছি।আর এটা যে সত্যি না সেটা আমি আর আপনি জানি কিন্তু বাকিরা।

এবার রাগে দুঃখে ছোয়া নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।এলোপাতাড়ি চর মারলো নুহাশের গালে।যার ফলে নুহাশ ও এবার রেগে গেলো।হ্যাচকা টানে ছোয়াকে নিজের কাছে নিয়ে এলো।কোনো কথা না বলেই ছোয়ার ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা আটকে নিলো।এতে ছোয়া যেমন হতভম্ব তেমন নিস্তেজ। কস্মিনকালেও ভাবেনি ছোয়া যে নুহাশ এমন কিছু করবে।

কিছু সময় যাওয়ার পর নুহাশ ছেড়ে দিলো ছোয়াকে।রাগ কিছুটা কমেছে।

“এটা প্রথম আর এটাই শেষ দ্বিতীয় বার এমন কিছু করার সাহস যেন না হয় তা না হলে দেখবে নুহাশ কি জিনিস।১০ মিনিট সময় দিচ্ছি হয় আমার কথায় রাজি হয়ে বাড়িতে ফিরবে এবং আজই আমাদের বিয়ে হবে আর নয়তো বাকিটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিবে। সেই সাথে তোমার বাড়িও উড়ে যাবে আর তোমার মা-ও।বলেই রুম ত্যাগ করলো নুহাশ।

ছোয়া ধপ করে মেঝেতে বসে গেলো।সে ভয় পাচ্ছে না নুহাশকে।কিন্তু মা ছাড়া তার আর কেউ নেই।অনেক কষ্টে মা কে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়েছে এখন যদি আবার এমন কিছু হয় ছোয়া নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না।রোহিতের ও তো কোনো দোষ নেই।কি করবে ছোয়া সব মেনে নিবে?

ছোয়াকে বউ করে নুহাশ মায়ের সামনে বসে আছে।নাহার বেগম একবার ছোয়াকে দেখছে একবার নুহাশকে।

“আম্মা আপনার কি ছেলের বউ পছন্দ হয়নি?

” হয়েছে কিন্তু তুমি আমাকে এটা বলো যে রাত ১ টা বাজে কোন ছেলে কাউকে না জানিয়ে এভাবে বউ নিয়ে ঘরে আসে?

“কেন আপনার ছেলে।আপনি তো ছেলের বউ চাইছিলেন।

” হ্যাঁ কিন্তু এভাবে?
অনেক রাত হয়েছে মেয়েটাকে নিয়ে ঘরে যাও। আমি খাবার পাঠাচ্ছি।

নাহার বেগম কথা শেষ করে চলে গেলেন।নুর এখনো জানেই না তার ভাই বিয়ে করেছে।অনেক রাত হওয়ায় ঘুমিয়েছে বলে আর জাগায়নি নাহার বেগম।

“চলো।
ছোয়ার কথার অপেক্ষা না করেই হাত ধরে নিয়ে গেলো নুহাশ।ছোয়া পারছে না কিছু বলতে আর না পারছে এসব সহ্য করতে।

কিছু সময় বাদে নাহার বেগম দুই প্লেট খাবার দিয়ে গেলো।বেশি রাত হওয়ায় তিনি খাওয়ার তারা দিয়ে চলে গেলেন।

” খেয়ে নাও অনেক রাত হয়েছে।

“আমার খিদে নেই।তাছাড়া আপনার বাড়ির খাবার আমি স্পর্শ করতে চাই না।

” আমার স্পর্শ নিতে পারো আর খাবার খেতে পারবে না?
ঠিক আছে খেতে হবে না।চলো শুয়ে পরবে।

“শুয়ে পরবো মানে আপনার সাথে এক বিছানায় এক ঘরে অসম্ভব।

” আমাকে রাগিও না ছোয়া।খেতে চাও না জোর করছি না। আমাকে জোর করতে বাধ্য করো না।

“কি করবেন আপনি মারবেন? আপনাকে দিয়ে সব সম্ভব।

” ইশ কি বলো বউ মারবো কেন।আদর করবো।আর বিশ্বাস করো এমন আদর করবো সারাজীবন মনে থাকবে তোমার।

” ন্যাকামি বন্ধ করুন।আপনার সাথে এক ঘরে আমি কিছুতেই থাকবো না।

“ঠিক আছে থাকবে না যখন তখন আমি আর কি বলবো।তবে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।তুমি এক কাজ করো ব্যালকনিতে ঘুমোতে পারো।তোমার যায়গা হয়ে যাবে।সারা রাত মশার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিতে পারবে।আর এটাই তোমার শাস্তি।

নুহাশের কথায় ছোয়ার রাগ হলেও প্রকাশ করলো না। এই অসভ্য বরবর লোকের সাথে থাকার চেয়ে এই ব্যালকনিতে থাকাই ভালো।তাই দেরি না করে ছোয়া সেখানে গিয়েই শুয়ে পরলো।

ছোয়ার কান্ডে নুহাশ মুচকি হাসলো।এই মেয়ে যে খুব জেদি সেটাও বুঝে গেলো।তবে নুহাশের কথায় সত্যি সত্যিই যে সেখানে গিয়েই শোবে এটা নুহাশের ধারনা ছিলো না।ভেবেছিলো এটা নিয়ে ছোয়া নুহাশের সাথে তুমুল ঝামেলা করবে।

প্রায় ১ ঘন্টা হতে চললো ছোয়া বাইরে।মশার সাথে রীতিমত যুদ্ধ করছে।থাই গ্লাসে নুহাশ সবটাই লক্ষ্য করছিলো।

” এতো জেদ মশার কামর খাবে তবুও ঘরে আসবে না।

“এই মশাগুলো ওই লোকটার মতই কার বারান্দা দেখতে হবেনা? নিজে যেমন অসভ্য মশাগুলো ও তাই।

” মশার সাথে কথা শেষ হলে ঘরে চলো।

“………..।

” আমি কিছু বলেছি ছোয়া।

“বলেছি তো আপনার সাথে আমি থাকবো না।

” কেন আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো।আমাকে বাঘ মনে হয়?

“আপনি তার থেকেও জঘন্য। এভাবে জ্বালাচ্ছেন কেন আপনি।যা চেয়েছেন তা তো পেয়েছেন তাহলে এখন একটু আমাকে আমার মতো থাকতে দিন না প্লিজ।

” বিবাহিত হয়েও বউ ছাড়া থাকা সম্ভব নয়। তুমি মশার সাথে বাসর করতে পারো কিন্তু আমি তোমার মতো পাগল হইনি।বাই দ্যা ওয়ে, আমি কিন্তু এখনো সবকিছু পাইনি।না মানে হিসেব মতে এখন আমাদের বাসর করার কথা কিন্তু দেখো তুমি আমাকে ফেলে রেখে এখানে এসে শুয়ে আছো এটা কি ঠিক বলো।
তুমি কি যাবে নাকি আমি জোর করবো এবার? আমি জোর করলে কিন্তু বিষয় টা তোমার ভালো লাগবে না।

“……।

” বুঝেছি এভাবে হবে না।
বলেই নুহাশ ছোয়াকে কোলে তুলে নিলো।

“আরে এবার কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে মিঃ নুহাশ।আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

“করো আমার রুম সাউন্ড প্রুভ কোনো লাভ নেই।

ইতমধ্যে ছোয়াকে খাটে এনে ছুরে মারে নুহাশ।একটু বেশি জোরেই ফেলেছে যার ফলে ছোয়া কোমড়ে বেশ ব্যাথা পেলো।চোখ দিয়ে পানি পরছে টপ টপ করে।

” এবার ঠিক হয়েছে।বলেছিলাম কথা শুনতে। কিন্তু না এডভোকেট বলে কথা ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।
ঘুরে শুয়ে পর মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।

“জুতো মেরে গুরু দান করতে এসেছেন লাগবে না আপনার মালিশ।

” এই মেয়ে এক কথা তোমাকে বার বার কেন বলতে হবে।

তারপর নুহাশ ছোয়াকে ঘুরিয়ে শুইয়ে মলম লাগিয়ে দিলো।ছোয়া চুপচাপ আছে।যেন তার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই।

“দেখো কেউ আমার কথার অবাধ্য হলে আমি সেটা নিতে পারি না।তাই এর পর থেকে আমার কথার অবাধ্য হবে না।তোমাকে বিয়ে করার যথেষ্ট কারন আছে।আর আমি তো সাধু পুরুষ নই যে বউকে আদর যত্ন করবো না।শুধু একটু সময় দিচ্ছে নিজেকে মানিয়ে নাও।

ছোয়া ভাবছে অন্য কথা।কি এমন কারন থাকতে পারে যে নুহাশ এতো মেয়ে ছেড়ে তাকেই বিয়ে করার জন্য এতো কিছু করলো? যেখানে প্রায় প্রতিটি মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ নুহাশ চৌধুরী সেখানে কিনা তার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করলো।নাহ আর ভাবতে পারছে না ছোয়া।সারাদিনের ক্লান্তি আর কান্নার ফলে দুচোখে ঘুম নেমে এলো।

নুহাশ খেয়াল করে দেখলো ছোয়া ঘুমিয়ে গেছে।
” আজ ছাড় পেয়েছো ছোয়া রানী কাল থেকে আর পাবে না।

চলবে