প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৭

0
297

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৭
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

রাত তখন গভীর। নুহাশ পাশ হাতরে দেখলো ছোয়া নেই।এতো রাতে কোথায় যাবে।সন্দেহ বসত বাথরুম চেক করলো না নেই।তারপর বেলকনিতে সেখানেও নেই।
একে একে ড্রইংরুমে, ছাদ কোথাও বাদ রাখেনি নুহাশ।

“এতো রাতে কোথায় গেলো? মায়ের কাছে কিন্তু সেখানে এতো রাতে কেন যাবে?

নুহাশ রুমে এসে ভাবছিলো কি করবে এখন।ছোয়ার ফোন নিয়ে যায়নি।তাই চিন্তাও হচ্ছে।কোনো বিপদ হলো না তো। এমন সময় কিচেনে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ হলো।নুহাশ দেরি না করে সেখানে গেলো।ছোয়া দাঁড়িয়ে আছে।

” তুমি এখানে কিন্তু আমি যে একটু আগে দেখে গেলাম।তখন তো তুমি ছিলে না?

“কিন্তু আমি তো এখানেই ছিলাম আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।

” ভুল দেখবো আমি!

“আসলে আমার খিদে পেয়েছিলো তাই এসেছিলাম কিছু আছে কি না দেখার জন্য।

” তো খাওয়া শেষ?

“হ্যাঁ।

” কিন্তু রান্না করা কোনো খাবার তো নেই আমি যতদূর জানি।তাহলে কি এমন খেলে?

“এবার কি বলবো।সত্যিই তো কোনো খাবার নেই।

এসব ভাবতেই টেবিলের দিকে চোখ পরলো ছোয়ার।দেখে একটু খুশিই হলো।যাক এ যাত্রায় বেঁচে যাবে।

” কেন ফল খাচ্ছিলাম ওইতো এখনো কাটা আছে।আপনি খাবেন?

“না ঘরে যাও আমি আসছি।

” হুম।আপনিও আসুন না।

“একমিনিট তোমার হাতে রক্ত কোথা থেকে এলো দেখি।

নুহাশের কথায় পিলে চমকে উঠে ছোয়ার।তারাহুরোয় এটার কথা ভুলেই গেছে সে।আজ যার জন্য ছোয়া গেছিলো কোনো কারনে সে হাত ফস্কে বেরিয়ে যায়।তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।হাতাহাতির এক পর্যায়ে তার হাতের একটা ধারালো ছুরি দিয়ে ছোয়ার হাতে আঘাত করে।তখনই এই ঘটনা ঘটে।কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি ছোয়া কাজ সম্পন্ন করে তবেই এসেছে।
কিন্তু এটা তো নুহাশকে বলা যাবে না।

” কি হলো কি এতো ভাবছো কিছু জানতে চেয়েছি তো?

“আব..আসলে ওই ফল কাটতে গিয়েই।

” আর ইউ ক্রেজি! ফল কাটতে গিয়ে এভাবে কেউ হাত কাটে।ক্ষত দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক ধারালো ছুরি।এই ছুরি এতো ধারালো?

“সেটা আমি কি করে বলবো আশ্চর্য। এমন ভাবে কথা বলছেন যেন আমি মিথ্যে বলছি।কোথায় ওষুধ লাগিয়ে দিবে তা না শুধু প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন তখন থেকে।এই হাত ছাড়ুন তো।আমিই লাগিয়ে নিচ্ছি ওষুধ।

” তার কোন প্রয়োজন নেই।ঘরে চলো আমিই দিচ্ছি।

“এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম উফ।এতো প্রশ্ন কেউ করে।ভাগ্যিস তখন ফল কাটার কথাটা মাথায় এসছিলো নয়তো আজ ধরা পরে যেতাম।

” কি বির বির করছো তখন থেকে।

“কই কিছু না তো।

আজও নুর দেখলো রোহিত দাঁড়িয়ে আছে।নুর একবার এড়িয়ে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পরলো।

” নুর প্লিজ একবার কথা বলো।

“আমি বুঝতে পারছি না স্যার। আপনি এমন কেন করছেন? এসবের মানে কি?

” নুর আমি একটা সুযোগ চাই প্লিজ একটা সুযোগ দাও আমায়।

“আপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশিই করে ফেলছেন? আর বার বার কিসের সুযোগের কথা বলছেন আপনি?

” আমরা কি কোথাও বসে কথা বলতে পারি?

“না।আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না।

” এতো বার রিকুয়েষ্ট করছি তবুও শুনছ না।তুমি তো এমন ছিলে না।

“হয়ে গেছি।পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছে।

“একটা সুযোগ দাও প্লিজ। প্রমিজ তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।আমায় বিয়ে করবে নুর?

” দয়া করতে চাইছেন নাকি করুণা?

“নুর!

” প্লিজ স্যার। আমি কারো দয়ার পাত্রী হয়ে থাকতে চাই না।আর এটাতো মিথ্যে না ভাবিকে আপনি ভালোবাসেন।তার জন্যই তোমাকে। যাই হোক আমার মনে হয় আপনার আর কিছু বলার নেই।

রোহিত নুরকে আর কিছুই বলতে পারলো না।নুর সেই সুযোগটাই দিলো না।নিজেকে অনেক কষ্টে এমন তৈরি করেছে। নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলো নুর।তবে কেন আবার সেই দহনের মুখোমুখি হতে হলো।সব কিছু ছেড়ে দিয়েই তো এসেছিলো।

আজ নুহাশ পার্টি অফিসে যায় নি।ঘরে বসেই একটা মিটিং সেরেছে।ছোয়া নাহার বেগমের সাথে রান্না করছে।ছেলে মেয়ের পছন্দের খাবার বানাচ্ছে নাহার বেগম। বাদ যায়নি ছোয়াও।আজ ছোয়া নিজের হাতে নুহাশের জন্য পাস্তা রান্না করছে।চিকেন পাস্তা নুহাশের পছন্দ সেটাই বানাচ্ছে।বিয়ের এতোদিন পর ছোয়া আজ নিজে থেকেই নুহাশের জন্য কিছু বানাচ্ছে।

“আম্মা একটু দেখবেন কেমন হয়েছে?

” ওমা তুমি রান্না করেছো আবার দেখতে হবে কেন।অবশ্যই ভালো হবে।

“তবুও আপনি দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না।আপনার যে ছেলে দেখা গেলো পরে মন মতো না হলে আমাকে কথা শুনিয়ে দিবে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।ছোয়া অধির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে নুহাশের দিকে।কিন্তু লোকটা এখনো পাস্তা ছুয়েই দেখেনি।সেটা নুর লক্ষ্য করে নুহাশকে বললো।

” ভাইয়া পাস্তাটা আগে খাও না।খেয়ে বল কেমন হয়েছে।

“ভালো লাগছে না।খেতে ইচ্ছে করছে না।

” সেকি এটা তো তোমার প্রিয় খাবার।ভাবি এতো কষ্ট করে রান্না করলো আর তুমি বলছো খাবে না!

“কে রান্না করেছে?

” তোমার বউ।

“যাহ ও কেন রান্না করতে যাবে এটা তো আম্মা রান্না করেছে।

নুহাশ কথাগুলো ইচ্ছে করেই বলছিলো ছোয়াকে রাগানোর জন্য।রান্নার সময় নুহাশ দেখেছে তাই সে জানে এটা ছোয়াই করেছে। ছোয়া যে নুহাশের পছন্দের খাবার রান্না করবে এটা নুহাশের ভাবনার বাইরে ছিলো।

” নুহাশ কি হচ্ছে। এটা সত্যিই ছোয়া মা বানিয়েছে।

“তাহলে আমি এটা খাচ্ছি না।

” খেতে হবে না আপনাকে।আমি এটাতে বিষ মিশিয়েছি।দিন এটা আমিই খাবো।খেয়ে মরে যাবো।

বলতে বলতেই দুই চামচ মুখে নিয়েছে ছোয়া।তা দেখে নুহাশ সেটা কেরে নিলো।

“আমার খাবারে হাত দিলে কোন সাহসে তুমি।হাউ ডেয়ার ইউ?

” ১০০ দিবো হাজার বার দিবো তাতে আপনার কি।
ছোয়া হন হন করে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।

“আরে ভাবি কোথায় যাচ্ছো?
দেখলে তোমার জন্য এখন না খেয়ে থাকবে।তুমি এমন কেন কর ভাইয়া?

নুহাশ খাবার শেষ করে ছোয়ার খাবার নিয়ে ঘরে গেলো। ছোয়া উল্টো মুখ করে শুয়ে আছে।তা দেখে নুহাশ খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে ছোয়ার কাছে গেলো। কেন জানি ছোয়াকে রাগাতে তার ভালোই লাগে।কোনো রকম হাসি চাপিয়ে ছোয়াকে ডাকলো নুহাশ।কিন্তু ছোয়া কোনো সারা দিলো না।

” উঠো বউ খাবার এনেছি।

“আমি কি আপনাকে বলেছি খাবার আনতে।যান তো এখান থেকে ঢং করতে হবে না।

” আমার কি দোষ বলতো।বিয়ের পর থেকে আজ অব্দি আমার সাথে ভালো করে কথা বলেছো? যত বার আমি কথা বলেছি বা তোমার কাছাকাছি গেছি জোর করে।তাহলে আজ যে তুমি আমার জন্য এটা বানিয়েছো তাতে কি আমার অবিশ্বাস হওয়ার কথা নয়?

সত্যিই তো।ছোয়া নুহাশের সাথে ভালো করে কথা বলা তো দূর কখনো ভালো করে তাকিয়েও দেখেনি।

“আচ্ছা চলো একটা ডিল করি।রান্নাটা যখন তুমিই করেছো তাহলে খাইয়ে দাও।তবেই খাবো।

” আ.আমি পারবো না।

“ঠিক আছে তাহলে আমিও খাচ্ছি না।

” বাচ্চাদের মতো জেদ করছেন কেন?

“তুমি শুনছো না কেন?

” ধুর আচ্ছা আসুন।

“আমি একা খেলে তো হবে না।তোমার খাবারও এনেছি।এসো খেয়ে নিবে।

সকালে নুহাশ বাইরে যাওয়ার সনয় মালিহা বেগমকে বলে গেলো আজ নুরকে ওর এক ফ্রেন্ড তার পরিবার নিয়ে দেখতে আসবে নুর যেন রেডি থাকে।এদিকে এই কথা শুনে নুর হতভম্ব। ভাই কেন এখন বিয়ের কথা বলছে।কিন্তু ও তো রোহিতকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।

” কিন্তু ভাইয়া আমি।

“দেখলেই বিয়ে হয়ে যায় না নুর।ওরা শুধু দেখতে আসবে। তেমন হলে এখন শুধু আংটি পরিয়ে রাখবে।

” কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাইছি না।

“এই বিষয় নিয়ে আমি আর কিছুই বলতে চাই না নুর।রেডি থাকবি আমি ওদের সাথে নিয়েই ফিরবো।

” মা তুমি কি কিছুই বলবে না?

“নুহাশ তো ঠিকই বলেছে নুর।তাছাড়া ও তো তোর খারাপ চায় না।আচ্ছা তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?

” ক কি সব বলছো!

“তাহলে বিয়ে কেন করতে চাস না তুই?আগে দেখ না হয়তো তোর তাকে ভালো লাগবে।তুই এক কাজ কর আজ ভার্সিটি যেতে হবে না।আমি রান্নার ব্যাবস্থা করি।

” আম্মা আমি একটু বের হবো তারাতাড়িই ফিরে আসবো।নুর আমি এসেই তোমাকে সাজিয়ে দিবো কেমন।

নুরের পুরো পৃথিবীটাই এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো। ভাইয়ের মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই তার।কিন্তু এভাভে সবটা শেষ হয়ে যাবে সেটাও মানতে পারছে না।

” এতো জরুরী তলব কি ব্যাপার রোহিত?

“আসলে কিভাবে যে বলবো।

” এতো ভনিতা না করে কি বলবে বলো না।আমার আজ একটু তারা আছে।আমার ননদকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।

“ননদ মানে নুর?

” হ্যাঁ। তুমি কি করে জানো?

“আসলে আমি নুরকে নিয়েই কথা বলতে চাইছি।

” ঠিক বুঝলাম না বুঝিয়ে বলো প্লিজ।

তারপর শুরু থেকে সবটা বললো রোহিত।সবকিছু শুনে ছোয়ার এটাই মনে হলো তিন বছর আগে নুরের এক্সিডেন্ট, পর পর দুবার ফেল করা এর কোনোটাই কাকতালীয় নয়।রোহিতই তার মূল কারন।এবার রোহিতের ওপর রাগ হলো ছোয়ার।মেয়েটাকে একটা সুযোগ দিলে কি হতো?

“তুমি কি জানো তোমার এই রিজেক্ট মেয়েটা মানতে পারেনি।ওর জীবন থেকে তিনটা বছর হারিয়েছে ও।আচ্ছা পর পর দুবার ফেল করায় তোমার মনে হয়নি এতো ভালো একটা স্টুডেন্ট ফেল কিভাবে করতে পারে? তারপর টিনটা বছর দেখোনি।একটা খোজ নিয়ে দেখেছিলে?

” আমি বুঝতে পারছি না কি বলছো তুমি।তিন বছর নষ্ট মানে?

“আচ্ছা তুমি বলো নুরের কি এখন ভার্সিটিতে পড়ার কথা?

” এই প্রশ্নটা আমার কাছেও অদ্ভুত লেগেছে কিন্তু জানতে পারিনি।কেন বলতো?

ছোয়া নুরের এক্সিডেন্ট এর সব কিছুই রোহিতকে জানিয়ে দিলো।এই কথাটাই হয়তো সেদিন নুর বলতে গিয়েও বলেনি।

“আমি এটা কি কিরলাম ছোয়া।একটা মেয়ে জীবনটা এভাবে শেষ করে দিলাম? কিন্তু আমি তো এমন কিছু হোক তা চাইনি।এবার কি হবে? নুর তো আমাকে মেনে নিবে না।

” মেনে না নেয়ারই কথা।আমার মনে হয় নুর তোমাকে এখনো ভালোবাসে।তাই পাত্রের কথা শুনে তখন অমন রিয়েক্ট করছিলো।

“তাহলে ও কথা কেন বলতে চায় না?

” এটাই স্বাভাবিক রোহিত।মেয়েটা অনেক কিছু সহ্য করেছে।
ওর কথা ছাড়ো ওর যায়গায় আমি থাকলে এর থেকেও বেশি কিছুই করতাম হয়তো। এসব এখন ভেবে লাভ নেই।কি করলে এই বিয়েটা আটকানো যায় সেটাই আমাদের ভাবতে হবে।মিঃ রোহিতকে দেখে আমার যা মনে হলো এই বিয়েটা উনি দিবেনই।

“না এটা হতে দেয়া যাবে না।তুমি আমায় হেল্প করো প্লিজ।তোমাকে হারিয়েছি নুরকে হারাতে চাই না।তার জন্য যা করতে হবে আমি তাই করবো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে