Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 441



প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০৩

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_৩.
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

“মিঃ শিকদার আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আপনি কাকে ঘুষের অফার করছেন।একজন মন্ত্রী হয়ে দেশের জনগণের সেবা না করে তাদের ক্ষতি করছেন।সেটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য একজন সরকারি পক্ষের আইনজীবীকে আপনি ঘুষ দিতে চাইছেন আপনার এলেম আছে বলতে হয়।

” আহা আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন সোলাইমান সাহেব।বুঝেছি টাকার এমাউন্ট কম হয়ে গেছে।ঠিক আছে আমি বাড়িয়ে দিচ্ছি।এই কে আছিস গাড়ি থেকে আরো একটা সুটকেস নিয়ে আয়।আপনি আগে বলবেন না?

“আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার বাড়ি থেকে।
আপনার সাথে আমার কোর্টে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনি সাধারণ মানুষের যে ক্ষতি করতে চাইছেন তা কোনোদিন পুরন হবে না। আমি বেঁচে থাকতে আপনার আশা আশাই থেকে যাবে মিঃ শিকদার।

” আপনি কিন্তু কাজটা ঠিক করছেন না সোলাইমান সাহেব।এর জন্য পস্তাতে হবে।

“বললাম তো আপনার সাথে আমার কোর্টে দেখা হবে। আপনি এবার আসতে পারেন।

” কিন্তু তার জন্য তো আপনাকে সেই অব্দি বেঁচে থাকতে হবে।

“মানে!

” মানে আপনার কাছে আমার বিরুদ্ধে যে ডকুমেন্টস গুলো আছে তা যদি আমাকে না দেন তাহলে আজকের পর আপনি আর এই দুনিয়ার আলো দেখতে পারবেন না।

” হুমকি দিচ্ছেন?

“একদম না।

সোলাইমান সাহেবকে ইচ্ছা মতো গনপিটুনি দেয়া হলো।মুখের অবস্থা করুন।থেতলে দিয়েছে।

” শেষ বারের মতো বলছি বলুন ডকুমেন্টস গুলো কোথায় আছে?

“মরে গেলেও বলবো না।আমাকে হয়তো আজ তোরা মেরে ফেলবি কিন্তু পাপ কোনোদিন চাপা থাকে না।একদিন আসবে যেদিন সবকিছু সবার সামনে আসবে।

কথা গুলো বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো সোলাইমান সাহেবের।একজন সৎ উকিল।এভাবে জীবন দিতে হবে সে নিজেও ভাবেনি কোনোদিন।বাইরে প্রচুর বৃষ্টি।যার কারনে চিৎকারের আওয়াজ কেউ শুনতে পেলো না।

” বাবা!
ছোয়ার গলা শুকিয়ে এলো।এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো।এই স্বপ্নটা ১৮ বছর ধরে দেখে যাচ্ছে ছোয়া কিন্তু বাবার খুনির মুখ আজ অব্দি দেখতে পায়নি।

“কেন বাবা। বার বার এসেও কেন চলে যাও।কেন হারিয়ে যাও বাবা।আমি কেন ওই শয়তানটার ফেস দেখতে পাই না।কেন?

পাশের রুম থেকে লুবনা বেগম ছুটে এলেন মেয়ের রুমে।

” কি হয়েছে ছোয়া চিৎকারের আওয়াজ শুনলাম?

“কিছু না মা।স্বপ্ন দেখেছি।ঠিক আছি এখন।

” আমি থেকে যাবো?

“না মা।আ’ম ফাইন।

” ঠিক আছে কোনো প্রয়োজন হলে ডাকিস।

“হুম।

সেদিন বাবার বিধস্ত লা*শ নিজের চোখে দেখেছিলো ছোয়া।খুনিকে গাড়িতে করে যাওয়া দেখলেও তার চেহারা দেখতে পায়নি কারন মুখমণ্ডল পুরোটা ঢাকা ছিলো তার।দেখেছিলো মায়ের অর্ধ উ*ল*ঙ্গ শরীর। মামা বাড়ি থেকে বাবা মায়ের ১৬ তম বিবাহ বার্ষিকের সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলো মামাকে নিয়ে।কিন্তু এসে নিজেই যে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে তা ভাবেনি।সেই রাতেই মামা শামসুল হকের সাহায্যে মাকে বাঁচাতে পারলেও বাবাকে বাঁচাতে পারেনি ছোয়া ।লুবনা বেগমকে জানোয়ারের মতো খুবলে খেয়েছিলো হায়নার দলেরা।শেষে মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিলো।কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় গুলিটা মাথার সাইডে লাগার কারনে সে যাত্রায় মাকে বাঁচাতে পেরেছিলো।১২ বছরের ছোয়া অনেকটাই ভেঙ্গে পরে।মামার কাছেই তারা দীর্ঘ ১৪ বছর কাটিয়ে দেয়।লুবনা বেগম প্রায় ৩ বছর কোমায় ছিলেন।
সেসব মনে পরলে এখনো গায়ে কাটা দেয় ছোয়ার।

” আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি বাবা কাউকে ছাড়বো না আমি।এক এক করে সবাইকে খুজে বের করবো।তারপর নিজ হাতে শাস্তি দেবো।

রাত প্রায় দুটো নুহাশ ছাদে বৃটিতে ভিজছে।এই বৃষ্টি নিয়ে নুহাশের অনেক অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে। নুহাশ এই পরিবারের কেউ নয়।বাবা আলহাজ্ব চৌধুরীর কাছে শুনেছে নুহাশকে সে কোনো এক বৃষ্টির রাতেই ডাস্টবিনে কুরিয়ে পেয়েছিলো।সবে তিন বা চার দিনের সদ্যোজাত নুহাশ।কে বলতে পারে হয়তো কারো গোপন পাপের ফল ছিলো সে।নুর তখন নাহার বেগমের গর্ভে। মাত্র ৩ মাসের গর্ভবতী ছিলো নাহার বেগম।তখন আলহাজ্ব চৌধুরী সবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।আগে তিনি একজন নামকরা লিডার ছিলো।সমস্ত খারাপ কাজের সাথে যুক্ত ছিলো।তার জন্য জেলেও গিয়েছে বহুবার। কিন্তু সেখান থেকে ভালো কাজে ফিরে এসেছে শুধু নাহার বেগমের ভালোবাসায়।সেসব এখন অতীত।

বাবা হিসেবে দারুন একজন ছিলেন আলহাজ্ব চৌধুরী। নুহাশকে নিজের সন্তান ছাড়া অন্য চোখে দেখেননি তিনি।নাহার বেগম মাতৃস্নেহে বুকে আগলে নিয়ে বড় করেছে নুহাশকে।একটা নতুন পরিচয়, নতুন নাম দিয়েছে তারা।এই মানুষ গুলোর কাছে নুহাশ কৃতজ্ঞ।তারা না থাকলে আজ হয়তো নুহাশের কোনো অস্তিত্ব থাকতো না।হয়তো সেদিন ওখানেই বৃষ্টিতে ভিজে মরে থাকতো নয়তো কোনো কুকুর বিড়াল ছিড়ে খেতো।

হ্যাঁ এরাই তো প্রকৃত আপনজন।নুহাশের সবকিছু। নুর নুহাশের প্রান।মাঝে মাঝে ঝগড়া করে বোনের সাথে কিন্তু সেটা মন থেকে নয়।এমনিতে বোনকে চোখে হারায় নুহাশ।নুরও ভাই বলতে অজ্ঞান।

আজও ছোয়া রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে।আজ অবশ্য তেমন জ্যাম নেই।কিন্তু ইলেকশনের মিছিলের কারনে রাস্তা প্রায় বুকড।এতে বেশ বিরক্ত হয় ছোয়া।কি দরকার এসবের।আরে মিছিল করবি কর কিন্তু এভাবে রাস্তা বন্ধ করে কোনো মানে আছে? প্রায় ১৫ মিনিট এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে ছোয়া।ছোয়ার মনে হলো ওর পাশে কেউ আছে।সেটা দেখার জন্য পাশে তাকালো সে।নুহাশ দাঁড়িয়ে আছে।

“এই ছেলে আবার এখানে কি করছে।তার তো মিছিলে থাকার কথা।

” কেমন আছেন মিস ছোয়া?

“আপনি এখানে কি করছেন আপনার তো এখানে থাকার কথা না।

এই মেয়েটা কি সহজ ভাবে কথা বলতে পারে না?
” হ্যাঁ মিছিলেই ছিলাম দেখলাম আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন তাই।

“কি করবো বলুন রাস্তা তো আটকে রেখেছেন।তাই রিক্সা পাচ্ছি না।আপনাদের তো কোনো সমস্যা নেই যত সমস্যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের।

” ঠিক আছে রাস্তা এখনি ফাঁকা করে দিচ্ছি।

“মানে?

” দেখুন না।

ঠিক ৫ মিনিটে পুরো রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেলো।নুহাশের কোনো লোক আর রাস্তায় নেই।

“নিন মেডাম এবার আপনি যেতে পারেন।

” সত্যি সত্যিই ফাঁকা হয়ে গেলো বাহঃ।বাই দ্যা ওয়ে সেদিনের জন্য ধন্যবাদ।

“ইটস ওকে।আপনি চাইলে আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি।

” ধন্যবাদ। আমি যেতে পারবো।

এরি মধ্যে একটা রিক্সা পেয়ে গেলো ছোয়া।সেটাতে চরে বসতেই রিক্সা চলে গেলো নুহাশের চোখের সামনে দিয়ে।ছোয়া একবার ও নুহাশের দিতে ফিরে দেখলো না।যেটা দেখে নুহাশ একটা হাসি দিলো।নুহাশ জানে এই মেয়ে এতো সহজে ধরা দিবে না।

ইলেকশনের চাপে নুহাশ পাগল প্রায়।এদিকে আজও ছোয়াকে সেই ছেলে সাথে দেখা গেলো।নুহাশ ছবিগুলো শুধু দেখে গেলো।

বিকেলে ছোয়া বাড়িতে এসে অবাক।নুহাশ তার মায়ের সাথে কথা বলছে।ছোয়াকে দেখে নুহাশ কথা বলার আগেই ছোয়া বলে উঠলো।

“একি আপনি এখানে কোনো কারন?

” ছোয়া তোর সাথে আমার একটু কথা আছে এদিকে আয়।

“কি হয়েছে মা?

” আসলে ও এসেছে তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তোকে বিয়ে করতে চায়।

“কি! তুমি রাজি হয়ে গেলে?

” না হবার তো কিছু নেই।ছেলেটা ভালো।

“তুমি জানো ছেলেটা পলিটিক্স করে?

” হ্যাঁ। আর এটা তো খারাপ নয়।

“কিন্তু আমার এটা পছন্দ নয় তুমি ভালো করেই জানো।

” কিন্তু।

“আপনি আমার মা-কে কি বলেছেন মিঃ নুহাশ?

” হয়তো আপনি শুনেছেন।তবুও বলছি আমি আপনাকে পছন্দ করি বিয়ে করতে চাই।

“বাহঃ।আপনি বললেন আর আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যাবো তাই তো।এটাই ভেবেছেন আপনি?

” দেখুন আপনি রাজি হোন বা না হোন আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আমি শুধু আমার ডিসিশন জানাতে এসেছি।জানিয়ে গেলাম এখন আপনি রাজি হলে ভালো আর না হলে সেটা আমিও খুব ভালো করেই জানি আপনাকে কি করে রাজি করাতে হবে।

“থ্রেট দিচ্ছেন।আমি জীবনেও আপনাকে বিয়ে করবো না।বুঝেছেন আপনি।এবার আপনি যেতে পারেন।

” ঠিক আছে তবে আমিও দেখি আপনি কি করে আমাকে বিয়ে না করেন।বিয়ে আপনাকে করতেই হবে।এটা নুহাশ চৌধুরীর চ্যালেঞ্জ।

নুহাশ চলে গেছে।গাড়িতে বসে প্ল্যান করছিলো সে কিছু একটা।

“দেখছেন ভাই এই মাইয়ার দেমাগ।আপনারে কয় বাসা থেকে বাইর হইয়া যাইতে।

” চিন্তা করিশ না বিপুল একবার এলেকশন টা যেতে দে তারপর আমিও দেখছি কি করে এই মেয়ে আমার থেকে নিজেকে বাঁচায়।

লুবনা বেগম ছোয়ার সাথে কোনো কথাই বলছেন না।বলা বাহুল্য নুহাশকে জামাই হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছে তার।কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে তিনিও অপারগ।আপাতত মেয়ের ওপর অভিমান করেই তিনি কথা বলছেন না।

সেদিনের পর নুহাশ আর ছোয়ার সাথে কোনো রকম কথা বলেনি।কেটে গেছে দুটো সপ্তাহ। আজ ভোটের দিন। নুহাশ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই ব্যস্ত।

ভোটের রেজাল্ট সন্ধ্যার মধ্যেই প্রকাশ করা হলো।যথারীতি নুহাশই অসংখ্য ভোটে জয়লাভ করেছে।সেই আনন্দে দলের সবাই স্লোগান দিচ্ছিলো।রাস্তা দিয়ে আসার সময় ছোয়া সবকিছুই দেখছিলো।এতে অবশ্য তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।


তিন মাস পর।নুহাশের পার্টি অফিসে আজ বড়সড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।কেন না আজ নুহাশের এমপি পদের নতুন করে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো।তারই আয়োজন।

ছোয়া বসে বসে বাবার রেখে যাওয়া ডায়েরি পড়ছিলো।এখানে তার লেখা অনেক গোপন কথা আছে যা লুবনা বেগমও জানেন না।ছোয়ার বাবার শত্রুদের সম্পর্কে অনেক কিছুই এখানে লেখা আছে তাদের অনেকের পরিচয় কিন্তু শিকদার নামে কারো কোনো কিছু লেখা নেই।ঠিক এই নামটাই খোজার জন্য ছোয়া বার বার এই ডায়েরিটা পড়ে দেখে কিন্তু ফলাফল বরাবরের মতোই শূন্য।

“কতবার যে এই ডায়েরি পড়েছি তার ঠিক নেই।না এই শিকদারের কোনো হদিস পেয়েছি না বাবাকে খুন করার কোনো কারন।কিন্তু স্বপ্নে যেটা দেখি তাতে এটা স্পষ্ট যে এমন কোনো প্রমাণ বা ডকুমেন্টস আছে যার জন্য আমার বাবাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।কিন্তু সেটা কি।কি হতে পারে?

আচ্ছা বেশ কিছু বছর আগে আমার নামে একটা ব্যংকের চিঠি এসেছিলো বাবার রেখে যাওয়া।যদিও সেখান থেকে কোনো টাকা তোলা হয়নি এখনো।মা বলেছিলো সেখানে একটা লকারের ডিটেইলস দেয়া আছে।কোনোভাবে।হ্যাঁ হতেই পারে।ইশ আমার মাথায় আগে কেনো এটা আসেনি। তার মানে যে পেন ড্রাইভ টা আমার কাছে আছে এখানে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ক্লু তো আছেই।আমাকে এটাই খুজে বের করতে হবে।কিন্তু সেখানে তো আমাদের একটা ফ্যামিলি ফটো ছাড়া কিছুই নেই।আমাকে আগে ওই পেপারস গুলো দেখতে হবে।

সেই কখন থেকে লুবনা বেগমের আলমারি ঘেটে যাচ্ছে ছোয়া কিন্তু পাচ্ছে না।লুবনা বেগম রান্না করছিলো বলে তাকে আর বিরক্ত করেনি।

” তুই আমার আলমারির এই অবস্থা কেন করছিস ছোয়া।কি লাগবে বলবি তো।

“মা সেই ব্যাংকের চিঠির খামটা কোথায় যেটার ব্যাপারে আমরা জানতাম না কিছু?

” ড্রয়ারেই আছে।সেটা দিয়ে কি হবে?

“দরকার আছে মা। দাও প্লিজ।

ছোয়া খামটা নিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে গেলো।লুবনা বেগম মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন।

” কি জানি এই মেয়ের দুদিন পর পর কি হয়।

“এইতো সেই লকারের ডিটেইলস।আমাকে এক্ষুনি একবার ব্যাংকে যেতে হবে জানতে হবে কি আছে এই লকারে।

ছোয়া দেরি না করে রেডি হয়ে গেলো।যে করেই হোক এই শিকদার কে।বাবার সাথে কি শত্রুতা ছিলো এই সবকিছু তাকে জানতে হবে।

” মা আমি বের হচ্ছি ফিরতে দেরি হতে পারে।

“এই সময় আবার কোথায় যাচ্ছিস?

” একটু ব্যাংকে যাচ্ছি মা। এখন না গেলে বন্ধ হয়ে যাবে।আসছি।

“স্যার মেডাম একটা ব্যাংকের সামনে নামলো।মনে হচ্ছে ব্যাংকেই কোনো কাজে এসেছে।

” হুম।অপেক্ষা করো আর নজর রাখো।

“ঠিক আছে স্যার।

” এমন কি কাজ যে এই সময় ব্যাংকে যেতে হবে?

ছোয়া লকার থেকে একটা বাক্স পেলো যেটা পাসওয়ার্ড ছাড়া খুলবে না।আর এটার পাসওয়ার্ড ছোয়ার জানা নেই।আপাতত এটাকে এখানেই রেখে দিলো ছোয়া।তারপর ব্যাংক থেকে বেরিয়ে মিলিকে ফোন করলো।এমনিতে মিলি যেমনই হোক মেয়েটা খুব ইন্টেলিজেন্ট।

মিলি তখন তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলো।হঠাৎ ছোয়ার কল দেখে ভাবুক হয়ে পরলো।

“কি ব্যাপার ইনি আবার কল করছে কেন।আচ্ছা শোনো না জান আমার মেডাম ফোন করেছেন কথা বলে তোমাকে কলব্যাক করছি বাই।

” লিসেন মিলি এক্ষুনি দেখা করো।খুব জরুরী কথা আছে তোমার সাথে।

“কোনো কি সমস্যা ম্যাম।মানে আপনার কথা এমন শোনাচ্ছে কেন?

” বিষয় টা সিরিয়াস কিন্তু পারসোনাল। তুমি এক কাজ করো আমি একটা এড্রেস দিচ্ছি এক্ষুনি সেখানে চলে এসো।

“ঠিক আছে ম্যাম আপনি একটু ওয়েট করুন।

কফিশপে বসেছে ছোয়া মিলি।খুব জরুরী কথা চলছে তাদের মধ্যে।

” তার মানে আপনার মনে হয় এই পেন ড্রাইভ টায় এমন কিছু আছে যা আপনি খুজে পাচ্ছেন না।কিন্তু ম্যাম আংকেল কি এতো বোকামি কাজ করবে? না মানে এতো সেনসেটিভ কিছু এর মধ্যে রাখবে?

“আমরা অনেক সময় সামান্য জিনিসকে সামান্য ভেবে এরিয়ে চলি কিন্তু সেই সামান্য কিছুও মাঝে মাঝে অসামান্য কাজ করে মিলি।কেসের ক্ষেত্রে দেখো না।

” হুম তা ঠিক।আপনি চিন্তা করবেন না ম্যাম।আমাকে দুদিন সময় দিন আই হোপ কিছুতো একটা পাবো।

“বিষয় টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিলি।এই মুহূর্তে তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না।তাই তোমাকেই জানালাম।আই হোপ খুব তারাতাড়ি এর সমাধান পাবো।

” আমাকে আপনি ভরসা করেছেন এটা আমার কাছে কতোটা আনন্দের আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না ম্যাম।

“হয়েছে ইমোশনাল হয়ে যেও না।অনেক বেলা হলো এবার আমাদের যেতে হবে।

” ঠিক আছে। চলি তবে।

“মন বলছে কিছু একটা হবেই।আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো বাবা।তোমার মেয়ে তোমায় কথা দিচ্ছে।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০২

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#পর্ব_২
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

সামনে ইলেকশন। নুহাশ খুবই ব্যাস্ত ইদানীং সবকিছু নিয়ে।এদিকে শহরে একের পর এক খুন হয়েই চলেছে।

ছোয়া অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।পিছন থেকে ছোয়ার মা লুবনা বেগম মেয়ের খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়।

“কিছু বলবে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

” বললেই কি তুই শুনবি? সেই কপাল কি আমার আছে?

“কি বলবে বলো না মা। বের হবো আমি।

” বলছি এভাবে আর কতদিন থাকবি তুই। দেখ আমার তো ইচ্ছে করে তোর সুখের সংসার দেখতে।

“মা কতবার বলেছি এসব না বলতে।আমার তুমি ছাড়া কে আছে বলো।এসব বিয়ে টিয়ে আমাকে দিয়ে হবে না।

” তাই বলে সারাজীবন আইবুড়ো হয়েই কাটিয়ে দিবি। আমার ইচ্ছার কি কোনো দাম নেই তোর কাছে ছোয়া?

“অবশ্যই আছে মা তবে এই কথাটা আমি রাখতে পারছি না।আমি যাচ্ছি ফিরতে লেট হবে।

খাবার টেবিলে বসে আছে নুহাশ।মা বোনের সাথে সকালের ব্রেকফাস্ট করছে।নুর আগের থেকে এখন স্বাভাবিক। নুহাশ বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো।অল্পদিনেই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বসে গেছে।পড়াশোনার চাপ তো আছেই বাবা মারা যাওয়ার শোকটা নুরের ওপর একটু বেশিই প্রভাব ফেলেছে।বাবার আদরের রাজকন্যা বলে কথা।

” নুর তোর এক্সাম কবে?

“অনেক দেরি ভাইয়া।কেন?

“এমনি।চাইলে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারিস আম্মাকে নিয়ে।মন ভালো হবে।

” আমি ঠিক আছি ভাইয়া চিন্তা করো না।এখন আমি কোথাও যেতে চাইছি না।

“ঠিক আছে তবে যখন ইচ্ছে হবে আমায় বলবি আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।
আম্মা নানু বাড়ি থেকে ঘুরে আসুন।

” না আব্বা আমিও ঠিক আছি।তাছাড়া সামনে তোমার ইলেকশন তোমাকে একা রেখে কোথাও যাবো না আমি।তুমি এমনিতেই কাজের চাপে খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছো প্রায়।আমি না থাকলে সেটা আরো বেরে যাবে।

“আম্মা আমি ভাবছি নুরের বিয়ে দিয়ে আমি আর আপনি একটা ট্যুর দিয়ে আসবো ভালো হবে তাই না?

” ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
তুমি যে দিন দিন বুড়ো হচ্ছো সেটা একবার আয়নায় দেখেছো আসছে আমাকে বিয়ে দিতে।

নুর আর থাকলো না সেখানে।মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মালিহা বেগম হেসে ফেললেন।

“সত্যিই মেয়েটা কত তারাতাড়ি বড় হয়ে গেলো।এখন না হয় মজা করে বলছো যখন সত্যিই বিয়ে দিবে তখন থাকতে পারবে তো তাকে ছাড়া।

” দরকার পরলে জামাইকে ঘরজামাই করে রাখবো আম্মা আমার পুতুলকে আমি হারাতে চাই না।আসলে ও মন মরা হয়ে থাকলে কেমন শূন্য শূন্য লাগে তাই এসব বলে রাগিয়ে দিলাম।

“ভাই বোনে পারোও তোমরা।তবুও আমার শান্তি লাগে।

পার্টি অফিসের কাজ শেষ করে ফিরতে নুহাশের দেরি হয়ে গেলো।এখন রাস্তার এই জ্যাম। বৃষ্টির জন্য রাস্তার আনাচে কানাচে পানি কাদায় মাখামাখি।ছোয়াও জ্যাম এ আটকে গেছে।উপায় না পেয়ে সে রিক্সা থেকে নেমে হাটা ধরলো।হঠাৎ গাড়ির লুকিং গ্লাসে নুহাশ ছোয়াকে দেখতে পেলো একটা সাদা শাড়ি পরা ছোয়া।চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকানো এতেই যেন নুহাশ খুন হলো।মুখে তার চাপা হাসি।

” বাহঃ এমন সাধারণ রুপেই এতো মারাত্মক লাগে বউ রুপে কেমন লাগবে কে জানে।খুব তারাতাড়ি এটাও হয়ে যাবে মিস ছোয়া।

“ভাই এটা সেই মাইয়াডা না আমায় যে থাপ্পড় দিছিলো আজ ওরে আমি।

” বিপুল এখানেই থেমে যা।উনি তোর ভবিষ্যৎ ভাবি।

“মানে!

” মানে ‘তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’ বুঝলি।অনেক অপেক্ষার পর খুজে পেয়েছি আর হারাতে দিবো না।

“ভাই আপনি কি কইতাছেন আমি তো কিছুই বুঝতাছি না।

” তোর এতো কিছু বুঝতে হবে না।এখন থেকে দেখে শুনে রাখবি আমার প্রান ভোমড়াকে।

কিছুদূর হাটার পর জ্যাম ছেড়ে দিলো। ছোয়া দেরি না করে আবার একটা রিক্সায় চড়ে বসলো।যাক শেষমেশ এই জ্যাম তো গেলো।

এর মধ্যে ঘটলো আরেক বিপত্তি। নুহাশের গাড়ির সামনে ছোয়ার রিক্সাটা হুট করে এসে পরায় ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো যার ফলে ছোয়া রিক্সা থেকে ছিটকে পরে গেলো।এতক্ষণে নুহাশের হুস ফিরলো।ড্রাইভারের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও কিছুটা রেগে গেলো নুহাশ কিন্তু প্রকাশ করলো না।গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে গেলো নুহাশ।এগিয়ে গেলো ছোয়াকে তোলার জন্য কিন্তু ছোয়া তাকে সরিয়ে নিজেই উঠে গেলো।প্রচন্ড ব্যাথা পাওয়ায় হাটার শক্তি হলো না। পরে যেতে নিলেই নুহাশ হাত ধরে ফেললো।

“আপনি ঠিক আছেন।মনে হচ্ছে অনেক লেগেছে।

” বুঝতেই যখন পারছেন লেগেছে আবার জানতে কেন চাইছেন অদ্ভুত। মামা আমাকে একটু সামনের ফার্মেসীতে নিয়ে চলুন তো।

“আমি হেল্প করছি। গাড়িতে উঠে বসুন।

ছোয়া গোল গোল চোখে নুহাশের দিকে ফিরে তাকালো।তাকালো বললে ভুল হবে মনে হচ্ছে গিলে খাবে।

” দেখুন এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। যেহেতু আমার গাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে তাই এর দায়ভার ও আমার। আপনি প্লিজ চলুন।

“আপনাকে আমি বলেছি দায়ভার নিতে! বলিনি তো। তাহলে যেচে কেন এসেছেন?

” এই মাইয়া।না মানে আপা আপনি কেন ভাইয়ের লগে এমন করতাছেন।গাড়িতে উঠেন আপনার হাত পা থেকে রক্ত বাইর হইতাছে।

“আপনি সেদিনের ওই অসভ্যটা না? যে রিক্সা চালক মামাকে মারতে যাচ্ছিলেন? তার মানে আজ ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাই না?

” আস্তাগফিরুল্লাহ।ভাই এ কয় কি।আপনি থাকতে আমি নাকি প্রতিশোধ নিমু।কই এই মাইয়ার উপকার করতে আইলাম আর উল্টো অপবাদ দিয়া দিলো!

“বিপুল তোর মুখটা বন্ধ কর। আমি কথা বলছি।
দেখুন ও কিছুই করেনি।আর আপনি হয়তো এটা ভালো করেই দেখেছেন যে আমার ড্রাইভার কিছুই করেনি উল্টো আপনাদের রিক্সাটা হুট করে গাড়ির সামনে এসে পরেছে।শুধু শুধু ঝগড়া করে তো কোনো লাভ হচ্ছে না।আপনার এখন ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন।

ছোয়া ভেবে দেখলো আসলেই কোনো লাভ নেই।এতে বরং তারই ক্ষতি হচ্ছে।একা একা যেতেও পারবে না।তাই ঠিক করলো নুহাশের হেল্প নিতে হবে তার।তাছাড়া তিন দিন পর তার একটা জটিল কেস আছে।তার আগেই তাকে সুস্থ হতে হবে।

” আপনাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই তো?

“এক কাজ করুন আপনি আপনার ফোন থেকে লাইভ হোন।কিছু যদি করিও তাহলে সবাই সেটা দেখতে পাবে।

” ঠিক আছে চলুন।কিন্তু আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন আপনি।আপনার মতো নেতাদের আমার একদম পছন্দ নয়।

“ঠিক আছে মেডাম আপনি যা বলছেন তাই হবে এবার চলুন।

ছোয়াকে তার এপার্টমেন্ট এ নামিয়ে দিয়ে গেছে নুহাশ।মেয়ের এই অবস্থা দেখে বিচলিত লুবনা বেগম। নুহাশ সবটা বুঝিয়ে বলে গেছে যাওয়ার সময়।বলা বাহুল্য প্রথম বারেই নুহাশ ছোয়ার মায়ের মন জয় করে নিয়েছে।এটা নুহাশের প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো।

” মা এতো চিন্তার কিছু নেই।ঠিক হয়ে যাবো আমি।

“এই জন্যই বলি একটা বিয়ে কর। আমার কথা তো তোর ভালো লাগবেই না।

” উফফ আবার সেই বিয়ে টেনে আনছো কেন।খেতে দাও তো খুব খিদে পেয়েছে।

বাড়ি ফেরার পর থেকে নুহাশ ছোয়ার কথাই ভেবে যাচ্ছে।চাইলেও কাজে মন দিতে পারছে না।অথচ তার কাজের শেষ নেই।ইলেকশন নিয়ে মন্ত্রী, অন্যান্য নেতাদের সাথে অনলাইনে একটা মিটিং ছিলো তার।সেটাও ঠিক মতো করতে পারেনি।অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুতই সেই মিটিং কোনো মতে শেষ করেছে নুহাশ।এখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে আর ছোয়ার কথাই ভাবছে।

“উফ নুহাশ একটু সামলা নিজেকে।সামনে ইলেকশন এখন উল্টো পালটা চিন্তা না করে সেদিকে ফোকাস কর।ছোয়াকে নিয়ে আপাতত আর ভাবিস না।

নিজের মনকে নিজেই বুঝাচ্ছিলো নুহাশ।

সকালে ছোয়ার বাসায় মিলির আগমন। ফোনে শুনেছে ছোয়া এক্সিডেন্ট করেছে তাই সে দেখতে এসেছে ছোয়াকে।ছোয়ার মায়ের সাথে মিলির ভালোই ভাব রয়েছে।রুগী দেখতে এসে রুগীর মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।এটা দেখে ছোয়া খুবই বিরক্ত বোধ করে।

” তুমি কি আমায় দেখতে এসেছো মিলি নাকি আমার মাকে?

“আরে ম্যাম কি বলছেন আপনার জন্যই আমি এসেছি।আপনি তো জানেন আন্টিকে আমি মায়ের চোখে দেখি।তাই আর কি।

” হয়েছে।এদিকে এসো কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।মা মিলির জন্য নাস্তা কিছু বানাও।

“সেটা কি তুই বললেই আমায় করতে হবে? তুই বলার আগেই আমি শুরু করে দিয়েছি।শোনো মিলি আজ তোমার যাওয়া হবে না।এখানেই থাকবে।

” আমার কোনো সমস্যা নেই আন্টি।

ইদানীং নুহাশ একটু বেশিই ব্যস্ত। দিন রাত সব ভুলে গেছে সে।খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম বেড়েই চলেছে।এই যেমন সকালের খাবার দুপুরে মাঝে মাঝে সারাদিন না খেয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে।গত দুদিন নুহাশের ঠিকঠাক দেখা পায়নি নাহার বেগম।আজ পেয়ে ইচ্ছেমতো বকে যাচ্ছে ছেলেকে আর নিজ হাতেই খাইয়ে দিচ্ছে।

“বাহঃ নিজের ছেলেকেই শুধু খাইয়ে দিবে মা। আমি বুঝি তোমাদের কেউ না।

” এটা কেমন কথা নুর।ছেলেটা দুদিন ঠিক মতো খায়নি।আর তুই আছিস তোর কথা নিয়ে।

“এই জন্যই বলেছি আম্মা আমি বিয়ে করার আগে এই পেত্নিকে বিদায় করবো।

” তুমি সবসময় এমন করো ভাইয়া।

“তোদের ঝামেলা এখানেই থামা নুর।আমার আর ভালো লাগে না।এমনিতেই ছেলেটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই আমার।

বলতে বলতেই চোখ ভিজে এলো নাহার বেগমের।যা দেখে নুর এবং নুহাশ দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।

” কি হয়েছে আম্মা?

“মা এমন কেন করছো?

” তোমার বাবারো এই পথেই জীবন দিতে হয়েছে আব্বা।আমি আমার বুকের মানিককেও হারাতে চাই না।আমার কথায় তো রাজনীতি তুমি ছাড়বে না।কিন্তু তোমাদের দুই ভাই- বোনকে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হয়।

নুহাশ মা বোনকে জরিয়ে নিলো নিজের সাথে।
“চিন্তা করবেন না আম্মা।আমার কিচ্ছু হবে না।আপনার দোয়া আছে তো আমার সাথে।বাবার খুনিকেও আমি খুব তারাতাড়ি খুজে বের করবো দেখবেন।শুধু আপনার ছেলের জন্য দোয়া করুন যেন এই ইলেকশনে জিতে ফিরতে পারি।

” আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথেই আছে আব্বা।

গত এক সপ্তাহে ছোয়ার সাথে দেখা হয়নি নুহাশের।কফিশপে এক ছেলের সাথে হাসতে হাসতে কফি খাচ্ছিলো ছোয়া।এটা দূর থেকে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মনযোগ দিয়ে দেখছিলো নুহাশ।ব্যস এতেই যেন শরীরে জ্বালা ধরে গেলো তার।

“কে এই ছেলে কিছু জানতে পেরেছো?

” এর নাম রোহিত।পেশায় একজন প্রফেসর। মেডামের কলেজের বন্ধু।

“কলেজের বন্ধু!এর বেপারে সব কিছু জানতে চাই আমি। খোজ নাও।
নাও ইউ গো।ছোয়া কাজটা একদম ঠিক হয়নি।নুহাশ ছাড়া তোমার জীবনে অন্য কোনো পুরুষ থাকবে না।একবার ইলেকশনটা যেতে দাও।তারপর তোমাকে আমার আসল রুপ দেখাবো।আই প্রমিজ।

চলবে

প্রেম প্রেম পায়রা পর্ব-০১

0

#প্রেম_প্রেম_পায়রা
#সূচনা_পর্ব
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী

বাবার লা*শ দা*ফ*ন করে শেষ করতে না করতেই ঝুম বৃষ্টি।অবশ্য এই মুহুর্তে বৃষ্টিকে খুব আপন বলে মনে হলো নুহাশের।ছোট বেলায় বাবার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো বার বার মনে পরছে তার।এই তো সেদিনও ইলেকশনের দিন যখন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হলো তখন ও বৃষ্টি ছিলো।জেতার আনন্দে বাবা ছেলে মিলে সেকি আনন্দ করলো বৃষ্টিতে ভিজে।আজ শুধু সেই স্মৃতিই মনে পরছে বার বার।

“ভাই অনেক সময় তো হইলো বাসায় ফিরবেন না?

বিপুলের ডাকে পিছু ফিরে আরো একবার বাবার কবর দেখে নিলো নুহাশ।সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো।ড্রাইভার বিনা বাক্যেই গাড়ি স্টার্ট করলো।

নুহাশ চৌধুরি।নাম করা একজন এমপি।নতুন প্রজন্মের এক দুরন্ত, এবং পছন্দের নাম নুহাশ চৌধুরী। যার এক কথায় যুব সমাজের সবাই জীবন দিতে প্রস্তুত।

ঢাকা শহরের একটা কমন বিষয় জ্যাম। বিশেষ করে বৃষ্টির পর রাস্তার আশেপাশে কাদায় মাখামাখি অবস্থায় জ্যাম থাকলে ভালো মানুষেরও মেজাজ বিগরে যায়।নুহাশ চুপচাপ বসে আছে গাড়িতে। হুট করেই পেছন থেকে একটা রিক্সা এসে গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগায় মেজাজ খারাপ হয় বিপুলের।গাড়ির পেছন থেকে দরজা খুলে বাইরে বেরয় সে।কোনো কথা না বলেই রিক্সায় থাকা বৃদ্ধার জামার কলার ধরে টেনে নিচে নামিয়ে যেইনা মারতে যাবে ঠিক সেই সময় বিপুলের গালে জোরে সোরে একটা থাপ্পর মারে রিক্সায় বসে থাকা একটা মেয়ে।বয়স আনুমানিক ৩০ এর কাছাকাছি। গাড়ির লুকিং গ্লাসে সবটাই দেখছিলো নুহাশ।

” ওই মাইয়া সাহস তো কম না আমার গায়ে হাত তুলেন।

“আর একবার ওনার গায়ে হাত তুলতে গেলে এর থেকে বেশি কিছুই হবে।লজ্জা করে না বাবার বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলতে?
আবার এখানে দাঁড়িয়ে মাস্তানি হচ্ছে? কি হয়েছে গাড়ির।ভেঙ্গে তো যায়নি সামান্য লেগেছে মাত্র।

বিপুল কিছু বলতে যাবে সেই সময় লুকিং গ্লাসের দিকে চোখ পরলো।নুহাশ তাকে গাড়িতে উঠে আসতে বলছে।বিপুল রাগে গজ গজ করে উঠে বসলো।

” ভাই মাইয়াডা আমারে থাপ্পড় দিছে আর আপনি।

“আমি সবটাই দেখেছি বিপুল।

তারপর নুহাশ কোথাও একটা ফোন করলো।
” আমার গাড়ির পিছনে রিক্সায় একটা মেয়ে বসে আছে।ওর নাম,কোথায় থাকে,কি করে,পরিবারে কে কে আছে সব খবর আমার চাই।

“কাজ হয়ে যাবে স্যার।

” হুম গুড।সময় কাল অব্দি।

“মনে হয় না কাল পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে স্যার। আজকেই পেয়ে যাবেন।

জ্যাম ছাড়ার পর নুহাশের গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো।

“ওই লোকটার সাথে এমন করলেন কেন আম্মা।ওরা অনেক ভয়ানক।

” তো কি করতাম চাচা বসে বসে আপনাকে মার খেতে দেখতাম?

“দুই একটা দিয়াই চইলা যাইতো।তাছাড়া দোষ তো আমারই।

” এটা একটা এক্সিডেন্ট চাচা।আর রাস্তায় এমন ঘটনা ঘটেই থাকে তাই বলে কি গায়ে হাত তুলবে।মাফ করবেন আমার এটা পছন্দ নয়।আর এভাবে ওদের প্রশ্রয় দিলে আরো মাথায় চরে বসবে।

বৃদ্ধা আর কথা বাড়ালো না।এটা বুঝে গেছে যে এই মেয়ে অন্যায় দেখলে চুপ থাকতে পারে না।তাই তিনি কোনো কথা না বলেই রিক্সা চালাতে মনোযোগী হলেন।

মেয়েটির নাম জান্নাতুল ছোয়া।সবাই ছোয়া বলেই ডাকে।পেশায় নাম করা উকিল।তার পেশা জীবনে আজ অব্দি কোনো কেসে সে হারেনি। তার বাবাও একজন উকিল ছিলেন।মুলত বাবার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতেই সেও এই পেশাকেই বেছে নিয়েছে।

রিক্সা এসে থামলো একটা বড় বিল্ডিং এর নিচে।এখানে একটা এপার্টমেন্ট নিয়ে মা লুবনা বেগমকে নিয়ে থাকে ছোয়া।এটা তার বাবার রেখে যাওয়া। তার বাবা চাইতেন যখন ছুটিতে থাকবে তখন পরিবার নিয়ে এখানে এসে থাকবেন।কিন্তু এটাই যে তাদের মা মেয়ের শেষ আশ্রয়ের যায়গা হবে তা কেউ ভাবেনি।হঠাৎ একটা ঝরে সব উলোটপালোট হয়ে যায়।

রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে ছোয়া দেখলো বেলকনিতে তার মা দাঁড়িয়ে আছে।এটা তার রোজকার কাজ।মেয়ে না ফেরা অব্দি তিনি এখানেই অপেক্ষা করেন আর বই পড়েন।

বাড়িতে ফিরে নুহাশ তার মাকে দেখলো ঘুমিয়ে আছে।মুলত তাকে ঘুমের ঔষুধ দেয়া হয়েছে।মায়ের পাশে বোন নুর।ভাইকে দেখে এগিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো।বোনকে পরম আদরে জরিয়ে নিলো নুহাশও।

“আম্মার এখন কি অবস্থা?

” ভালো নেই ভাইয়া।জ্ঞ্যান ফিরলেই পাগলামি করছে আর বাবাকে খুজছে।এমন কারা করলো ভাইয়া।কেন বাবাকে এভাবে খুন করলো?
আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না ভাইয়া।

“চিন্তা করিস না।আমি সব খুজে বের করবো।তারপর নিজ হাতে একে একে সবাইকে শাস্তি দিবো প্রমিজ। কিন্তু তার আগে তোদের ঠিক থাকতে হবে।আমি তো নানান কাজ এর জন্য ব্যস্ত থাকবো তাই আম্মাকে তোকেই দেখে রাখতে হবে। পারবি না?

” পারবো।

“গুড।আম্মা হয়তো আজ আর উঠবে না চল তোকে খাইয়ে দিই।

আজ সারাদিন কেউ খাবার খায়নি।নুহাশ নুরকে খাইয়ে দিলে নুরও ভাইয়ে খাইয়ে দিলো।তারপর নুর নিজের ঘরে গেলো।একটু শাওয়ার নেয়া দরকার।

রাত তখন ১২টা।নুহাশ তার বিশাল বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিলো।এমন সময় সেই কাঙ্ক্ষিত নম্বর থেকে ফোন আসে।

” স্যার যার খবর নিতে বলেছিলেন তার নাম জান্নাতুল ছোয়া।সবাই ছোয়া নামেই চেনে।বাবা নেই মা আছে।আপনার বাড়ি থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা তার এপার্টমেন্টের।পরিবার বলতে এটাই।শুনা যায় আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে কেউ বা কারা তার বাবাকে হত্যা করেছিলো।ওদের আত্নীয় স্বজন তেমন নেই।এক মামা আছে সিলেটে সে তার পরিবার নিয়ে থাকে।মেয়েটার বয়স ৩০ বছর।

” কি করে?

” উনি একজন নাম করা উকিল স্যার। তার বাবাও একজন উকিল ছিলেন।

“বলছো কি।ইন্টারেস্টিং বিষয়। আপাতত এতেই চলবে।আজ থেকে ওনার সব খবরাখবর আমার টাইম টু টাইম চাই।আর এটা তোমাকেই করতে হবে।

ছোয়া আজ থেকে তোমার ওপর আমার নজর সব সময়ই থাকবে।

সকালে ছোয়া অফিসে বসে ফাইল দেখছিলো।আজ তার একটা ক্লায়েন্টকে কোর্টে তোলার কথা মুলত সেই বিষয় সবকিছু খুটিয়ে দেখছিলো।এমন সময় ছোয়ার এসিস্ট্যান্ট মিলি এলো।

” ম্যাডাম খবর শুনেছেন?

“কিসের খবর?

” সেকি ম্যাডাম এতো বড় একজন নেতার বাবা মারা গেলো তাও আবার মার্ডার আর আপনি বলছেন কিসের খবর!

“এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলো কেন মিলি?
সোজাসুজি বলো।তাছাড়া এই দেশে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।কেউ স্বাভাবিক ভাবে বা কেউ অন্যের হাতে।এটা নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে?
তা কোন নেতা শুনি?

” নুহাশ চৌধুরীর বাবা।তিনিও একসময় পলিটিক্স এর সাথে জড়িত ছিলেন।

“এটা তোমার সেই ক্রাশ না?

” আপনার মনে আছে? হ্যাঁ তারই বাবা।

“আমি যতটা জানি তার বাবাও একসময় কালো জগতের সাথে জড়িত ছিলেন।পরবর্তীতে পলিটিক্স এ যোগ দিয়েছেন।একজন গেছে তো অন্য একজন রেখে গেলো।

” এভাবে বলবেন না ম্যাডাম। তাছাড়া উনি ওনার বাবার মতো নন।যুবসমাজের প্রান বলতে পারেন আর হাজার মেয়ের ক্রাশ।

“তো এতই যখন মায়া তাহলে এক কাজ করো কাল থেকে আমার এসিস্ট্যান্ট না হয়ে তার হয়ে কাজ করো কেমন।তোমরা মেয়েরা এই ছেলের মধ্যে এমন কি দেখেছো বলতো।যেখানেই যাই এর নাম আছেই উফ।

ছোয়া আর দাঁড়ালো না।চলে গেলো উল্টো পথে। মিলি একটু মন খারাপ করলো।ছোয়া সবসময়ই এমন করে। নুহাশ নামটা যেন তার চিরকাকের শত্রুর নাম।এতো রেগে যাওয়ার কি আছে হুহ।

সকালে মায়ের ঘরে গেলো নুহাশ।মিসেস শায়লা এখনো ঘুমিয়ে।নুর সবে ঘুম থেকে উঠেছে।ভাইকে মায়ের ঘরের দিকে যেতে দেখে সেও গেলো পিছন পিছন।

” ভাইয়া।

“উঠে গেছিস।আম্মা এখনো ঘুমোচ্ছে।

” তুমি একবার ডক্টর আংকেলকে আসতে বলবে?
আমার বিষয় টা ভালো লাগছে না।কাল দুপুরে ঘুমের মেডিসিন দেয়া হয়েছিলো আর আজ সকাল এখনো কেন এতো ঘুমোচ্ছে মা?

“আচ্ছা আমি দেখছি।

” ভাইয়া তুমি কি আজ বের হবে?

“হ্যাঁ একটু কাজ ছিলো।কেন কিছু বলবি?

” আজ কোথাও যেওনা ভাইয়া প্লিজ।

বোনের করুন চোখে তাকিয়ে আর না করলো না নুহাশ।
“ঠিক আছে যাবো না।


দুদিন ধরে টানা বৃষ্টির পর আজ একটু রোদের দেখা মিলেছে।রাস্তার আনাচে কানাচে পানিতে টইটম্বুর অবস্থা।

আজ সকালেও শহরে একটি অজ্ঞাত লাশ পেয়েছে স্থানীয়রা।সেটা নিয়েই এখন সবার চর্চা চলছে।গত তিনদিন আগেও পছন্দের অবসরপ্রাপ্ত নেতার নির্মম খুনে এমনিতেই সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে।এতোকিছুর মধ্যেই পুলিশ এখনো খুনিকে খুজে পেতে সক্ষম হয়নি।

পর পর দুটো খুন তাও একই পদ্ধতিতে। সকালের খবরের কাগজ দেখে রীতিমত চমকে গেলো ছোয়া।
“আজকেও একটা লাশ পাওয়া গেছে মা।

” তুই পড়ার আগেই দেখেছি আমি।কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করছে।এভাবে তাদের নাকের ডগা থেকে একের পর এক খুন হচ্ছে আর তারা নাকি খুনিকেই ধরতে পারছে না।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আর দোষ কি মা।খুনি এমন কোনো ক্লু রেখে যায়নি যা দিয়ে খুনি অব্দি যেতে পারবে।

” তাহলে তো বলতে হয় তোদের আইন কোনো কাজেরই না।এসব দেখলে তোর বাবার কথা মনে পরে যায়।তাছাড়া।

“হয়েছে বাদ দাও।এখন পুরনো কাসন্দি ঘাটতে হবে না।তুমি বরং আজ জমিয়ে খিচুড়ি রান্না করো সাথে গরুর গোস্ত।আজ ভালো খাওয়া দাওয়া হবে।আজ আমার খুব শান্তি লাগছে।

” তোকে আমি মাঝে মাঝে বুঝি না কেন বলতো।
মানুষ ভয়ে আতঙ্কে মরে যাচ্ছে আর তুই চিল মুডে আছিস।

“ওটা তুমি বুঝবে না মা।

আজ চৌধুরী বাড়িতে এলাকা সহ আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত সমস্ত সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য ভোজনের আয়োজন করা হয়েছে।এটা চলবে আগামী তিনদিন পর্যন্ত। তারা আসবে নিজেদের ইচ্ছা মতো যার যেটা পছন্দ সে সেটাই খাবে।এটা নুহাশের বাবা আলহাজ্ব চৌধুরীর ইচ্ছা ছিলো।খুন হবার এক সপ্তাহ আগে তিনি নিজেই এই কথা জানিয়েছিল নুহাশকে।

নাহার বেগন(নুহাশের মা) আগের থেকে এখন একটু সুস্থ। এখন একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন।ছেলে মেয়ের সামনে এভাবে থাকলে ওদেরও খারাপ লাগে সেটা তিনি বুঝেন।

নুহাশ ভোজনের সমস্ত আয়োজন দেখে কেবলই ঘরে ফিরলো।নাহার বেগমকে সোফায় দেখে সেদিকেই এগিয়ে গেলো।

” আম্মা?

“বলো আব্বা।কিছু বলবে?

“আপনার শরীর এখন কেমন আছে?

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আব্বা।তুমি কেমন আছো।

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আম্মা।নুর কোথায় দেখছি না তো।

” মাত্রই ঘরে গেলো।মেয়েটা কিছু খেলোও না।

“আপনিও তো কিছু খাননি আম্মা।আমি নুরকে ডেকে আনছি আজ একসাথে খাবো সবাই।

নুহাশ বসে বসে কাজ করছিলো।এমন সময় বিপুল এলো।
” ভাই আজও একটা বডি পাওয়া গেছে।স্যারকে যেভাবে মারা হয়েছিলো ঠিক একই ভাবে।

“সেকি আমাকে আগে কেন বলিসনি?

” আপনি ব্যস্ত ছিলেন বলে বলিনি।

“বডিটা এখন কোথায়?

” মর্গেই আছে।আসলে অফিসার আপনার সাথে দেখা করতে চায়।এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে।উনি বাইরেই আছেন।

“আসতে বল।

অফিসারের বের করে দেয়া কিছু ছবি নুহাশ অনেক সময় নিয়েই দেখলো।কিন্তু তেমন কিছুই বুঝলো না।

” ছবিগুলো দেখে তো তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছে না অফিসার। বাবার ফেসটা তবুও বুঝা গেছে কিন্তু এর তো ফেসটাই বুঝা যাচ্ছে না।

“সেটাই তো প্রব্লেম স্যার।খুনিও কি চালাক ভাবুন মানে একটা ক্লুও রেখে যায়নি যেটা দ্বারা খুনি অব্দি পৌছেতে পারবো।সত্যি বলছি আমি আমার ১০ বছরের ক্যারিয়ারে এমন কেস দেখিনি।বডি কিছুটা পচেও গেছে।বুঝেনই তো টানা দুদিন বৃষ্টিতে ভিজেছে।

“আচ্ছা আশেপাশে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ পাননি?

” এটাও চেষ্টা কিরেছি।কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো খুনের ঠিক দু’দিন আগেই ক্যামেরা গুলো কেউ বা কারা ভেঙ্গে দিয়েছে।

“আর এটা কেউ দেখেনি?

” না।খুনি যে সব বুঝেশুনে এবং সাবধানতা অবলম্বন করেছে তা বুঝাই যাচ্ছে।সে যাই হোক আপনার বাবার তদন্তের জন্য আমাদের আরো কিছু তথ্য প্রয়োজন স্যার। তবে এখন আমায় উঠতে হবে।প্রয়োজনে কল করলে অবশ্যই আমাদের সাথে কোওপারেট করবেন আশা করি।

“অবশ্যই করবো।আপনি নির্দিধায় ডাকতে পারেন।বাবার খুনিকে ধরার জন্য আমি সব কিছুই করবো।

” এবার বুঝতে পারছি এখানকার সবাই আপনাকে এতো ভালোবাসে কেন।আপনার এই নম্র ব্যাবহারের জন্য।

অফিসারের কথা শুনে মুচকি হাসলো নুহাশ যার অর্থ নুহাশ ছাড়া কেউ জানে না।

চলবে

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-৪৯ এবং শেষ পর্ব

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃঅন্তিম

🍁

০২ ডিসেম্বর ২০২৩,, সময় ও সালটার দিক থেকে নজর সরিয়ে নিলো আরোহী!

হ্যা আজকে ডিসেম্বর মাসের দুই তারিখ ২০২৩ সাল।আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর তেইশের কাজ শেষ তখন চব্বিশ সাল চলে আসবে!হয়তো কেউ খুশি মনে গ্রহন করবে কিংবা কেউ দুঃখী মনে!

তবে আজকের তারিখটা দেখে আরোহীর হয়তো মনে পড়ে গেলো তিন বছর আগের সেই দিনটির কথা।সেদিন ও ছিলো ০২ ডিসেম্বর তবে সালটা ছিলো ২০২০!

সেই দিনটির কথা মনে পড়লে যেমন আরোহীর দুঃখের সময়ের কথা মনে পড়ে ঠিক তেমনি আনন্দ ও হয়!কারণ এই দিনেই তো সেদিন তার দুই প্রাণ তার কোল জুড়ে এসেছিলো,তার ঘর আলো করে এসেছিলো।

হ্যা আজকে আদ্র ও আয়রার জন্মদিন সাথে রাহির ছেলে রাদিফের ও! আদ্র ও আয়রার সাথে রাদিফের জন্মদিনটি কাকতালীয় ভাবে মেলেনি অবশ্য!

দুই বছর আগে রাহীর জোড়াজুড়িতে মিলাতে বাধ্য হয়েছিলো সকলে।রাহীর জেদের কাছে হার মেনে সকলকে ওইদিনেই রাহির সিজারের ব্যাবস্থা করতে হয়েছিলো।

রাহির মতে তাদের বাচ্চাদের জন্মদিন যেনো স্বরণীয় হয়ে থাকে তাই তার এই দিনে সিজার করার জেদ বেশি ছিলো।সবকিছু মনে করে খানিকটা হাসলো আরোহী!

তারপর শাড়ি পড়ে সাজতে বসে পড়বে সে।তাই শাড়ি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো,আর আজকে যেহেতু তার ছেলেমেয়ের জন্মদিন তাই মা হিসেবে নিজেকে একটু অন্যরকম দেখাটা তো দরকার নাকি?

তাই সে আর রাহি ঠিক করেছে আজকে তারা সেম সেম শাড়ি পড়বে, হয়তো রাহি ও এতোক্ষণ তৈরি হতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে।

আরোহীর শাড়ি পড়া প্রায় শেষের দিকে ঠিক তখনই কোথা থেকে আঁধার এসে নিচে বসে তার শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে শুরু করলো!

আরোহী চমকে দু ‘কদম পেছনে চলে গেলো,তার চোখ মুখে ভয়ের রেস স্পষ্ট!আঁধার বসেই ভ্রুকুঁচকে আরোহীর দিকে তাকালো!আরোহী নিজের বুকে থু থু দিয়ে আঁধারের দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকায় এবার!

আঁধার একটা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

–‘কি?’

–‘এই আপনি হঠাৎ কোথায় থেকে আসলেন বলেন তো?’

অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে বলে আরোহী।

–‘কেনো,তোমার মনের ভেতর থেকে?’

বাঁকা হেসে বলে আঁধার। আরোহী বিরক্ত হয়ে এবার দরজার দিকে তাকায়,দরজা তো বন্ধ তাহলে আসলো কোথায় থেকে এই লোক!

আরোহীর ভাবনার মাঝেই আঁধার তাকে কোমড় চেপে এগিয়ে নিয়ে আসে,কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,,

–‘আমি রুমেই ছিলাম মিসেস চৌধুরী কিন্তু আপনি আমায় লক্ষ করেননি, আর আমার সামনেই চেঞ্জ করে ফেললেন!’ এবার কি হবে আমি যে আপনার সব দেখে ফেললাম!’

আরোহীর মাঝে হঠাৎ করেই লজ্জা লজ্জা ভাব আসা শুরু করলো! লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো আরোহী।আঁধার মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে আবার ফিসফিস করে বলে উঠে,,,

–‘সব বলতে বুঝো আরুপাখি?’ সবববববববববব কিন্তু!

শেষের কথাটা খানিকটা টেনে টেনেই বললো আঁধার।আরোহীর লজ্জারা যেনো এবার দ্বিগুণ হয়ে গেলো,আরোহীর গালগুলো মুহুর্তের মাঝেই লাল নীল হতে শুরু করলো!

আঁধার আরোহীর লজ্জা মাখা মুখ দেখে এবার নিজেই হাসফাস করতে শুরু করলো।হঠাৎ করেই আরোহীকে নিজের আরও খানিকটা কাছে টেনে নিলো সে!

আরোহী এবার আড় চোখে আঁধারের দিকে তাকায়, কিন্তু আঁধারের নেশা ভড়া চোখজোড়া দেখে আরও খানিকটা নুইয়ে যায় সে!

আঁধার ধিরে ধিরে আরোহীর ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দু’জনের ওষ্ঠের মাঝে যখন কিঞ্চিৎ ফাঁক ঠিক তখনই কেউ একজন দরজায় বারি মারলো!

আঁধার চমকে উঠলো,মুহুর্তের মাঝেই বিরক্তিরা এসে হানা দিলো তার ভেতর!কিন্তু ছোট ছোট একটা কন্ঠের স্বর শুনে বিরক্ত মুখটা এবার স্বাভাবিক হয়ে যায় তার।

আরোহী ফিঁক করে হেঁসে ফেলে! আঁধার চোখ পাকিয়ে তাকায় তার দিকে, ভেংচি কেটে দরজা খুলে দেয় আরোহী!

আদ্র তার বড় বড় চোখদ্বয় দিয়ে অবাক হয়ে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘পাপা!’

আরোহী ভেংচি কেটে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আর বলে,,,

–‘বুঝি না মানুষের ছেলে সারাদিন মা মা করে আর তুই পাপা পাপা করিস কেনো রে?’ বলি তুই কি তোর পাপার পেট থেকে বের হয়েছিস!

আদ্র এবার ছোট ছোট চোখ করে তার মাম্মামের দিকে তাকায়, এতো কথা একসাথে তার ছোট মস্তিষ্কে ঢুকেনি!

তাকে ফ্যাল ফ্যাল করে আরোহীর দিকে তাকানো দেখে হেঁসে এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেয় আঁধার! আদ্র গলা জড়িয়ে ধরে তার পাপার!

আরোহী দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে এগিয়ে এসে জোর করে নিজের কোলে ছিনিয়ে নেয় আঁধারের থেকে আদ্রকে।আদ্র তখনো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে তার পাপার গলা!

আরোহী জোর করে সেটাও ছাড়িয়ে নেয়!আদ্রের চোখ এবার ঝাপসা হয়ে যায়, মুহুর্তের মাঝেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠে সে।

আরোহী হতবম্ভ হয়ে যায়,আঁধার এবার তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে নেয় আদ্রকে! আদ্রের কান্না ও থেমে যায়, আরেক দফা হতভম্ব হয়ে যায় আরোহী!

–‘এ কি ধরিবাজ ছেলে রে বাবা,এই ছেলে এই তুই কি আদৌও আমার ছেলে হ্যা?’ বাপের কপি তো পুরাই হইছিস,বাপ কা বেটা!আমার কোলে তো আসতেই চাস না, আর আসবি কেনো আমি তোর মা হই নাকি? ভালোবাসে না কেউ আমায়, থাকবো না আমি আর এইখানে! তোর জন্মদিনের জন্য আমি কতো সুন্দর করে সাজগোছ করছি আর তুই কি না আমার কোলে আসছিস না। খাওয়ার সময় তো ঠিকই মাম্মা মাম্মা করিস, তখন তোর পাপার কাছে যেতে পারিস না।

চেঁতে গিয়ে কথাগুলো বলে আরোহী, কিন্তু শান্ত হয়নি সে আবার বলে উঠে,,,

–‘আজকে থেকে তোর পাপাকে বলবি খাওয়াতে আমার কাছে যেনো খাইতে চাস না তুই!’

বলেই উল্টো দিকে ঘুরে যায় আরোহী, আদ্র তার পাপার দিকে তাকায়! তার পাপার চোখের দিকে তাকাতেই তার পাপা আসতে করে তার কানের কাছে বলে,,,

–‘চ্যাম্প মাম্মাম ক্ষেপে গেছে, এবার যাও তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরো নাহলে কিন্তু মাম্মাম আরও রাগ করবে!’

আদ্র কি বুঝলো কে জানে,আঁধারের কোল থেকে নেমে গিয়ে আরোহীর দু’পাঁ জড়িয়ে ধরে বললো,,,

–‘মাম্মা কোলে!’

আরোহী একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো!আদ্র এবার মায়া মায়া কন্ঠে বললো,,,

–‘মাম্মা!’

আরোহীর এবার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো,কোনো কিছু না ভেবেই আদ্রকে কোলে তুলে নিয়ে সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।আদ্র চুপ করে মায়ের আদর অনুভব করলো!

আরোহী থেমে যেতেই আদ্র আরোহীর মতো করেই আরোহীর গালে কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,,,

–‘আদ্র লাভ ইউ!’

আরোহী অবাক হয়ে আঁধারের দিকে তাকায়, নিশ্চয়ই আঁধার শিখিয়েছে এটা ও!আঁধার আরোহীর দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরেই মুচকি হাসি দেয়! আরোহীর থেকে রেসপন্স না পেয়ে আদ্র এবার আরোহীর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘মাম্মাম!’

আরোহী আঁধারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘হুম বাবা!’

–আদ্র লাভ ইউ!’

মায়া মায়া কন্ঠ আদ্রের।

–‘ওইটা লাভস ইউ হবে চ্যাম্প!’

আঁধার এগিয়ে এসে আরোহী সহ আদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলে।আদ্র হেঁসে দু’হাতে আরোহী ও আঁধারকে জড়িয়ে ধরে, আরোহী নিজেও হেঁসে ফেলে।

–‘মাম্মাম অলসো লাভস বোথ অফ ইউ বাবা!’

আরোহীর কথার মাঝে আরো দুটি ছোট ছোট হাত তাদের পাঁ পেঁচিয়ে ধরে বলে,,,

–‘তোমলা আমাল ছালে এতানে তি করছো?’

আঁধার আয়রাকে কোলে তুলে গাল টেনে দিয়ে বলে,,,

–‘আমরা তোমায় ছেড়ে কখনো কিছু করতে পারি নাকি প্রিন্সেস!’

আয়রা এবার আঁধারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘আমি তোমাল তুজতি মাম্মা!’

আরোহী এক হাত দিয়ে আয়রাকে ও জড়িয়ে নিয়ে বলে,,,

–‘আমি ও তো তোমায় খুঁজছিলাম মাম্মামের প্রিন্সেস!’

আরোহীর কথা শুনে আয়রা উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে বলে,,,

–‘মাম্মাম তখন তেত তাটবো!’

–‘ওইটা তখন না কখন হবে আয়রু,আর তেত না কেক হবে তো!’

গম্ভীর কন্ঠে বলে আদ্র!আয়রা জিহ্বায় কামড় দেয়, আরোহী ও আঁধার একসাথে হেঁসে ফেলে!

!
!

–‘আশা, আশা,আমার পান্জাবি কোথায়?’

চেঁচিয়ে বলতে বলতেই রুমে ঢুকলো আদর।আলিশা নিজের শাড়ি ঠিক করে বিরক্ত হয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলে,,,

–‘ওই যে ডিভানে দেখো!’

আদর পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে আলিশার সামনে এসে বলে,,

–‘পড়িয়ে দিবে বউ!’

আলিশা বিরক্ত হয় না,হালকা হেঁসে বলে,,,

–‘আজকে কি খুব বেশি কাজ করে ফেলেছো নাকি?’

–‘না তবে বউয়ের হাতে পড়ার ইচ্ছে হলো কেনো জানি!’

আলিশার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো আদর।আদরকে পাঞ্জাবি পড়িয়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে আলিশা,,,

–‘অভ্যেসগুলো চেঞ্জ করো,সারাজীবন কি আর আমি থাকবো নাকি তো….’

আর কিছু বলতে পারো না আলিশা তার আগেই তার ওষ্ঠাগত দখল করে নেয় আদর!কিছুক্ষণ পড়ে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,

–‘এমন কথা বললে কিন্তু আরেকটা বউ নিয়ে বসবো বলে দিলাম!’

চোখ পাকিয়ে তাকায় আলিশা,আদর বাঁকা হেসে আর একটু এগিয়ে যায় কিন্তু তার আগেই তাহশিফ ও তাহমিদ চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,

–‘পাপা দেখো না পাশের বাড়ির ইমরান আঙ্কেলের মেয়েটা আমাদের ভাইয়া বলে ডেকেছে!’

আদর তাদের কাছে ডাকে, আর আলিশা ভ্রুকুঁচকে বলে,,,

–‘ভাইকে ভাই ডাকবে না তো কি ডাকবে?’

তাহশিফ ও তাহমিদ একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,

–‘কিন্তু পাপা যে বললো তার সাথে আমাদের একজনের বিয়ে দিবে!’

আলিশা এবার চোখ কটমট করে তাকায় আদরের দিকে।আদর আমতা আমতা করতে করতে তাহশিফ ও তাহমিদকে টেনে বাহিরে নিয়ে চলে যায়। আলিশা রাগে ফুঁসে উঠে যেনো আরও!

!

!

–‘বাহ বউ আজকে তো তোমায় অনেক হ…..ট লাগছে!’সাথে…

আর কিছু বলতে দেয় না রাহি শিহাবকে সাথে তার কথায় বিরক্ত হয়ে কটমট করেতে করতে বলে,,,

–‘হা আজকে একটা ছেলে পটিয়ে ভেগে যাবো!’

শিহাব বিছানা থেকে উঠে এসে রাহির বাহু শক্ত করে ধরে বলে,,,,

–‘কি বললে?’

–‘শুনতে পাননি আপনি নাকি কান নেই আপনার?’

রাহি দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলে।শিহাব রাহির কোমড় শক্ত করে ধরে বলে,,,

–‘কি বললে আবার বলো?’

রাহি এবার শুকনো ঢোক গিলে নেয়, আমতা আমতা করে বলে,,,

–‘আমি.. আমি না মানে…’

এরইমধ্যে ছোট রাদিফ কেঁদে উঠে। রাহিকে ছেড়ে দেয় শিহাব,,,

–‘রাতে দেখে নেবো তোমায়, আর ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে নাহলে কিন্তু!’

শিহাবের রাগ দেখে রাহি হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,,,

–‘আচ্ছা!’

শিহাব আর কোনো কথা না বলেই রাদিফকে কোলে তুলে নেয়!রাহি ভেংচি কাটে,শিহাব শক্ত চোখে তাকায়!

!

!

সকলে অপেক্ষা করে আছে বাচ্চাদের জন্য, চৌধুরী পরিবারে আজকে উৎসবের আয়োজন চলছে!একসাথে তিনটে নাতি নাতনীর জন্মদিন বলে কথা!

সকলে এসেছে সোহেল,নীলিমা,তরী,সাহফিফ, রাতুল ও ক্যারিরা ও আছে এখনো!রাতুল ও ক্যারির বিয়ে ঠিক করেছেন পরিবারের সবাই মিলে আগামী সপ্তাহেই তাদের বিয়ে!

ক্যাথি ও বাংলাদেশে থাকার প্লানিং করছে কিন্তু রিহান ফারুকি ও ফ্লোরা এখনে সিফট হতে পারবেন না বাংলাদেশে তবে ক্যাথিকে রেখে যাবেন।

এরইমধ্যে আদ্র ও আয়রাকে নিয়ে আঁধার ও আরোহী নিচে নেমে আসে!আয়রাকে লাল গাউনে লাল পরীর মতো লাগছে আর আদ্রকে লাল পাঞ্জাবিতে চকলেট বয়ের মতো লাগছে!

আরোহী ব্লাক শাড়ি পড়েছে আর আঁধার তার সাথে ম্যাচিং করে ব্লাক পাঞ্জাবি পড়েছে!এরইমধ্যে রাহিরা ও নিচে নেমে আসে,তারা ও আরোহীদের মতো ম্যাচিং পড়েছে! আর রাদিফ লাল পাঞ্জাবি পড়েছে!

তারেক চৌধুরী এবার কেক কাটার কথা বলেন,বাচ্চারা হইহই করে ওঠে একসাথে।

একসময় কেক কাটার পর সকলের মাঝে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়,আনন্দের মাঝে সকলের জীবন কেটে যায়! চৌধুরী পরিবারের সকলে অনেক খুশি, তাদের সকলের জীবনের সকল অন্ধকার কেটে গিয়ে সুখের ছায়া নেমে আসে!

~সমাপ্ত~

নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি পর্ব-৪৮

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৮

🍁

রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ঘরে ঘড়ির কাটা গুনে গুনে এসে থামলো!বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরোহী, মুখে লেপ্টে রয়েছে তার তৃপ্তির হাসি।

জীবনের হিসেবের দারগড়ায় আজকে সে পরিপূর্ণ, এই যে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে তার পরিবার, বাচ্চা নিয়ে সে এখন সুখেই আছে!

এই যে তার কলিজার টুকরা দুইটা আদ্র ও আয়রা তারা যেমন মা বাবা পাগল তেমনি আরোহী আঁধারো ছেলে মেয়ে পাগল। বাচ্চারা তাদের প্রাণ, আর এই প্রাণ দু’টোর ও প্রাণ তারা!

চৌধুরী পরিবারের সকলে তাদের অনেক বেশি ভালোবাসে! আর তারা ও যেনো পরিবার ছাড়া কাউকে গুরুত্ব দেয় না!

এই তো সেদিনই আলিশার সাথে রাস্তায় একটা মহিলার সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেছিল, পাশেই আরোহী,আদ্র,আয়রা,তাহমিদ, তাহশিফ ও রাহি তার দুই বছরের ছোট ছেলে রাদিফকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এক পর্যায়ে মহিলাটা রাগের মাথায় আলিশাকে সামান্য ধাক্কা মেরে ছিল।

আর বাচ্চাদের কি রাগ, আদ্র,আয়রা,তাহমিদ ও তাহশিফ মিলে মহিলাটার বাচ্চাটাকে ইচ্ছে মতো ধোলাই দিয়েছে সাথে মহিলাটার শাড়িতে তাদের হাতের আইসক্রিম ছুঁড়ে মেরেছিলো।

ঘটনাটা মনে হতেই আরোহী শব্দ করে হেঁসে উঠলো! হঠাৎ পেটে দুটি হাতের অস্তিত্ব অনুভব করতেই শিউড়ে উঠলো সে! এই স্পর্শ তার কাছে নতুন না হলেও এখনো কেঁপে উঠে সে!

আরোহী তার চুলের ভাঝে গরম নিশ্বাসের অস্তিত্ব পেতেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়! আঁধার বাঁকা হেসে বলে উঠে,,,

–‘এতো রাতে পেত্নীদের মতো হাসছো কেনো বউ?’ যদি কোনো পেত্নীর বংশধর তোমায় তাদের সাথে নিয়ে চলে যায় তখন আমার কি হবে একবার ভেবে দেখেছো? রাত বিরাতে এভাবে হাসতে নেই ভূতেরা ও ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে তো।

মুহুর্তের মাঝেই আরোহীর চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়,কোমড় থেকে আঁধারের হাত সরানোর চেষ্টা করে!তবে আঁধার সেটা করতে দেয় না,শক্ত করে চেপে ধরে থাকে আরোহীর কোমড়।

আরোহী হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আঁধার আরোহীকে আরও একটু কাছে টেনে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,,,

–‘ এভাবে মুখ ফুলালে তোমায় কিন্তু অনেককক হ……ট লাগে বউ।’

আঁধারের কথা শুনে আরোহীর লজ্জায় কান গরম হয়ে যায়, লোকটা দিন দিন লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে!কে বলবে এই লোকটা দুই বাচ্চার বাপ।

–‘আপনি একটা বাজে লোক, সরুন তো!’ রাত বিরাতে এসে ঢং করছেন।

নিজেকে সামলিয়ে বলে আরোহী। আঁধার বাঁকা হেসে আরোহীর ঘাড়ের এক পাশে ছোট ছোট করে দু’টো চুমু দেয়।আরোহী এবার খানিকটা কেঁপে উঠে, কাঁপা কাঁপা হাতে শক্ত করে চেপে ধরে রেলিংটা।

আঁধার আবার একই কাজ করে বসে!আরোহী ছোট আত্মাটা যেনো আবার কেঁপে উঠে।

আঁধার এবার কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলিয়ে নেয় আর স্বাভাবিক ভাবে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরোহীকে।

আরোহী তখনো চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।আরোহীকে স্বাভাবিক করতে আঁধার এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে উঠে,,,

–‘দু’টো বাচ্চার মা হয়ে গেছো এখনো বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে থাকো,এমনি এমনি তোমায় কি আর সাধে বাচ্চা বলি বলো?’

আরোহী চোখ মুখ কুঁচকিয়ে নেয় এবার।

–‘আমি বাচ্চা নই মিষ্টার চৌধুরী,আমি বাচ্চা হলে আপনার বাচ্চাদের মা হতে পারতাম না কিন্তু!’ বাচ্চারা কখনো বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না হু।

মুখ গোমড়া করে বলে আরোহী। আঁধার এবার শব্দ করে হেঁসে উঠে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,,

–‘তাই তো,ব্যাপারটা তো আমি আগে ভাবিনি!’ কিন্তু তোমার এই টুকুনি শরীরে দু’টো বাচ্চা কিভাবে হলো বলো তো? আরে না না তুমি তো আবার বাচ্চা না বাচ্চা বউ আমার!

ঠাট্টার স্বর আঁধারের। আরোহী এবার মুখ বাকিয়ে তাকায় আঁধারের দিকে।আরোহীর রিয়াকশন দেখে আঁধার শব্দ করে আরেক দফা হেঁসে নেয়।

কিন্তু তার সাথে আরও দু’টো মানুষের হাসির স্বর শুনে চমকে উঠে দু’জনে।

আঁধার আরোহীকে ছেড়ে ঝট করে পেছনে তাকায়, তবে হঠাৎ করেই আঁধারের তাকানো চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়।আরোহী নিজেও আঁধারের মতো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে।

আদ্র ও আয়রা তাদের ছোট ছোট দাঁতদ্বয় বের করে খিলখিলিয়ে হেঁসে চলছে তখনো।আঁধারের দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তার বাচ্চাদের এভাবে হাঁসতে দেখলে তার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।

আরোহী নিজেও মুচকি হেঁসে তাকায় তার ছোট ছোট দু’টো প্রাণের দিকে।এই তো তার দুই প্রশান্তির দু’টো রাস্তা, যেখানে দেখতে গেলে তার মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

আঁধার এবার এগিয়ে গিয়ে তাদের সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়,আর ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে,,,

–‘এই তোরা এখন এই সময় এই খানে কি করছিস রে?’

আদ্র হাসি থামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

–‘এই তোমরা এখন এই সময় এই খানে কি করছো?’

আরোহী নিজেও খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে, আর আয়রা তার হাসির শব্দ এবার আরও বেড়ে যায়।

আঁধারের ও হাসি পায় তবে সে না হেঁসে মুখ খানিকটা গম্ভীর করে আদ্রের মতো করেই বলে উঠে,,,,

–‘রোমান্স করছিলাম রে বাপ কিন্তু তোরা আর করতে দিলি কই,তোদের জন্য তো আমার বউ থেকেও না থাকার মতো থাকতে হয়।’

আদ্র অদ্ভুত নজরে তাকায় তার পাপার দিকে।আঁধার মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে আছে তখনো আদ্রের দিকে,তবে আদ্র যে তার কথার মানে বুঝতে পারেনি সেটা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে।

শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে আদ্রের দিকে সে,আদ্র যে এবার আর তার কথায় তাকে ফাঁসাতে পারবে না সে ভেবেই মনে মনে শান্তি পাচ্ছে সে।

আয়রা একবার আদ্রের দিকে তো একবার তার পাপার দিকে তাকাচ্ছে।

আর আরোহী সে তো লজ্জায় হাসফাস করছে,আর মনে মনে আঁধারের গুষ্টি উদ্ধার করছে। লোকটা ছেলের সামনে কি সব বলছে ভাবতেই তার মেজাজ চারশো চল্লিশ ভোল্টে গরম হয়ে যাচ্ছে।

–‘রোমানস কি পাপা?’

ভ্রুকুঁচকে উল্টো তাকেই প্রশ্ন করে আদ্র।আঁধার চোখ মুখ কুঁচকিয়ে তাকায় আরোহীর দিকে।আরোহী এবার দাঁত কেলিয়ে তাকায় তার দিকে যার অর্থ,যেমন কর্ম তেমন ফল!

আদ্র এবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার তার বাবার দিকে তাকায়।

–‘ওতা লোমাচ হবে বাইয়া!’

আয়রা খানিকটা চেঁচিয়ে বলে উঠে। আরোহী এবার ফিঁক করে হেঁসে ফেলে,আদ্র তার বোনের দিকে তাকিয়ে আবার আঁধারের উদ্দেশ্যে বলে,,,

–‘পাপা কি ওটা?’

আঁধার অসহায় চোখে তাকায় তার ছেলের দিকে,কি বলবে এখন সে! আর তার যে ছেলে উত্তর না দেওয়া অব্দি মানবে ও না।

মাথা চুলকিয়ে আঁধার এবার কিছু একটা ভেবে নেয় তারপর আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

–‘তার আগে তুমি বলো এতো রাতে উঠলে কেনো?’ আর বোন কিভাবে জেগে গেলো এখন?

আদ্র আয়রার দিকে একবার তাকিয়ে বলে,,,

–‘আগে তুমি বলো!’

আঁধার হতাশ হয়, এই ছেলেটা তারই মানা যায়? বাপের কথার কোনো মূল্য দেয় না এখনেই,মায়ের মতো হয়েছে!

মাকে তো চুপ করানো যায় তবে তার ছেলেকে চুপ করাতে পারেনি এখন অব্দি আঁধার!

কপাল চাপড়িয়ে আদ্রকে কোলে তুলে নেয় এবার আঁধার!

–‘চল বাপ চল আমার গলা শুকিয়ে গেছে আগে পানি খাবো!’

আঁধারের কথা শুনে আদ্র মাথা নাড়ায়, আঁধার এবার সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে! বড় বাঁচা বেঁচে গেছে আজকে নাহলে এ যে ছেলে তাকে প্রশ্ন করতে করতে হয়রান করিয়ে দিতো।

এইসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রকে বিছানায় বসিয়ে দেয় সে,কিন্তু আদ্র তার মায়া মায়া কন্ঠ নিয়ে বলে উঠে,,,,

–‘পাপা!’

–‘ইয়েস মাই বয়!’

আদ্রের গালে চুমু দিয়ে বলে আঁধার।

–‘কোলে উঠবো!’

আদ্রের আবদারে আঁধারের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আদ্রকে কোলে তুলতেই সে ও আঁধারের গালে একটা চুমু দেয়!

হেঁসে ফেলে আঁধার, তার ছেলের এই অদ্ভুত কাজগুলো তার হৃদয়ে অনেক সময় প্রশান্তি এনে দেয়।

আদ্র তার পাপাকে হাঁসতে দেখে তার পাপার মাথার কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করে।কিন্তু কোলে উঠলেও তার নাগালের বাহিরে সেটা! আঁধার মাথাটা কিছুটা নিচু করে নেয় আদ্রের কাছে,আদ্র মনে হয় খুশি হয়ে যায়!

সে খুশি মনে তার পাপার মাথার চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে,,,

–‘সুন্দর!’

আঁধার মাথা নাড়িয়ে বলে,,,,

–‘আমার বাবা চ্যাম্প ঠিক করে দিয়েছে সুন্দর তো হবেই!’ তো চ্যাম্প এখন কি পাপার সাথে গল্প করবে নাকি ঘুমাবে?

আদ্র তার পাপার গালে হাত দিয়ে আবার বলে,,,

–‘পাপা!’

আঁধার আদ্রকে কোলে নিয়ে পানির গ্লাস থেকে পানি খেতে খেতে বলে,,,

–‘ইয়েস পাপা!’

–‘পানি খাবো?’

শান্ত কন্ঠ আদ্রের।আঁধার হেঁসে ফেলে, আদ্রের এই জিনিসগুলো তার অনেক পছন্দের।সব কাজে তার পাপাকে তার লাগবেই। আদ্রকে পানি খাইয়ে দেয় আঁধার।

আরোহী আয়রাকে কোলে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ বাবা ছেলের কাহিনি দেখছিলো।

আয়রার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সে ঘুমিয়ে গেছে এতোক্ষণে!

কিন্তু তার এই পাকা ছেলে এখনো তার পাপার সাথে কথা বলছে! এই জন্যই হয়তো বলে বাপ কা বেটা।

আরোহী আয়রাকে বিছানায় শুয়ে দেয়,আদ্র এক পলক তাকায় বোনের দিকে।

–‘এতো জলদি ঘুমিয়ে গেলো ও?’

আঁধারের প্রশ্নে আরোহী হালকা হেসে বলে,,,

–‘হ্যা, আর আপনার ছেলে সে কি এখনে ঘুমাবে নাকি তাকে বাহিরে রেখে আসবো!’

আদ্র তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার তার পাপার গালে হাত বুলিয়ে বলে,,,

–‘পাপা!’

আরোহী হেঁসে ফেলে, আদ্রের এই কাজটা তার অনেক ভালোলাগে কথায় কথায় মায়া ভড়া কন্ঠে বলে”পাপা” ইসস কি মধুর ডাক!

আর যখন তাকে মাম্মাম বলে ডাকে তখন তো আরোহীর হৃদয় ছুঁয়ে যায়! মাঝে মাঝে তো তার বিশ্বাসই হয়না এই পুচকো পুচকি দু’টো তার।

–‘হুম পাপা!’

আঁধার আদ্রকে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বলে। আদ্র তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

–‘মাম্মাম বাহিরে রেখে আসবে?’

আঁধার আরোহী দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করার চেষ্টা করে বলে,,,

–‘তোমার মাম্মাম পঁচা চ্যাম্প,আমরা তোমার মাম্মামকে বাহিরে রেখে আসবো কেমন!’

আরোহী চোখ পাকিয়ে তাকায় আঁধারের দিকে।আদ্র হেঁসে উঠে। আঁধার আরোহীর দিকে একবার তাকিয়ে আদ্রকে বুকের উপর নিয়ে শুয়ে পড়ে।আদ্র তার পাপার বুকে চুপটি করে শুয়ে আঁকিবুঁকি করতে চেষ্টা করে।

#চলবে?

নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৪৬+৪৭

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৬

🍁

সেদিন এক্সিডেন্টের পর কিছু মানুষ ধরাধরি করে আরোহী ও আঁধারকে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ততোক্ষণে শিহাবদের কাছেও খবর পৌঁছে যায়,ওরা পৌঁছানোর আগেই আঁধার ও আরোহীর ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেন ডাক্তাররা!

সাধারণ অন্যান্য ডাক্তাররা যেখানে এক্সিডেন্ট কেইস পেলেই পুলিশ আশা অব্দি অপেক্ষা করেন,সেখানে এই হাসপাতালের ডাক্তাররা আগে রোগীর ট্রিটমেন্টের ব্যাবস্থা করেছেন!

আরোহী যেহেতু প্রেগন্যান্ট ছিলো ও তার লেবার পেইন আগেই উঠেছিল তাই ডাক্তারদের কাছে কেইসটা অনেক ক্রিটিকাল হয়ে যায়।

অনেক ভাবার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় আরোহীর ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি বাচ্চা বের করার জন্য অপারেশন করতে হবে!

কারণ এই মুহুর্তে সিজার ছাড়া উপায় নেই, তবে আরোহীর ট্রিটমেন্ট আগে।তারা বাচ্চার পজিশন আগে দেখে নেয়,তারপর আরোহীর ট্রিটমেন্ট করা অবস্থায় সিজার শুরু করে।

আর অপর দিকে আঁধারের খবর আসে, আঁধার ভালো আছে কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার সেন্স ফিরে আসবে। ডাক্তাররা আলহামদুলিল্লাহ বলেন সকলে একসাথে, তাদের দু’জনের অবস্থা অনেকটা খারাপ ছিলো!

এখন একজন ভালো আছে এটাই অনেক বড় একটা ব্যাপার।তারপর আরোহীর বাচ্চা বের করা হয়,বাচ্চাগুলো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।হয়তো তাদের চেষ্টা সফল হয়েছিলো।

আঁধার যেমন নিজের জীবনের পরোয়া না করে তার আরুকে আগলে রেখেছিলো এটা হয়তো তারই ফল।তবে আরুহীর একটা না দু’টো বাচ্চা হয় একসাথে!

ডাক্তাররা যখন এই খবর দেয় তখন চৌধুরী পরিবারের সকলে খুশিতে কেঁদে উঠে। আরোহী একটা ছেলে ও আর একটা মেয়ে হয়।

ছেলেটা দশ মিনিট আগে বের করা হয়,আর মেয়েটিকে দশ মিনিট পরে তবে আরোহীর কোনো উন্নতি দেখা যায় না!ডাক্তাররা বাচ্চা দু’টোকে ভালো করে চেকআপ করে দেখে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

তবে আরোহীকে নিয়ে তারা অনেক টেনশনে পড়ে যায়! ৪৮ ঘন্টার আগে কেউ কিছু বলতে পারবে না!যেহেতু এক্সিডেন্ট ও সিজার একসাথে তাই আরোহীর কন্ডিশন একটু ক্রিটিকাল।

বাচ্চাগুলোকে অবজারভেশনে রাখতে হবে সেই ৪৮ ঘন্টা অব্দি, কারণ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে ও একটু আশংকা তো থেকেই যায় যেহেতু এক্সিডেন্ট কেইস!

চৌধুরী পরিবার ও শেখ পরিবারে এবার যেনো শোকের ছায়া নেমে আসে।সকলের মুখে বিষাদের ছায়া স্পষ্ট!এরইমধ্যে নীলি ও সোহেল তাদের তিন মাসের ছেলেকে নিয়ে হাজির হয় সেখানে।

রাতুল ও চলে আসে!এরপর তরী ও সাহফিফ ও চলে আসে।তরী ও সাহফিফের বিয়ের তিন মাস হচ্ছে! সাহফিফ তার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে তারপর তরীকে বিয়ের জন্য রাজি করায়,এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়ে যায়।

সকলে এসে চুপচাপ বসে পড়ে।আঁকলিমা চৌধুরী ও শাহানাজ শেখ কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছেন সাথে শিরিন চৌধুরী ও যোগ দিয়েছেন।রাহি চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে।

আর আলিশা গুনগুনিয়ে কাঁদছে বার বার।শিহাব বিরক্ত হয়ে যায় তাদের কান্না দেখে তবে কিছু বলতে পারে না কারণ পরিস্থিতিই এমন!

এভাবেই কেটে যায় চার ঘন্টা তবে না আঁধারের সেন্স ফিরলো আর না আরোহীর।

পরিবারের সকলে এবার ভয় পেয়ে যায়, তারা বার বার আরোহী ও আঁধারের কেবিনে চেক করছে তো আবার দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।

কিন্তু আশা অনুরুপ ফল পাচ্ছে না।আলিশা এবার আর নিজেকে আটকাতে পারে না,কোলের বাচ্চাটাকে আঁকড়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দেয়।

তার বোন ও ভাইয়ের মতো বড়ো ভাশুরের আজকে এই অবস্থা আর সে কিছু করতে পারছে না! আলিশার কান্না দেখে আদরো নিজেকে আর সামলাতে পারে না করিডরেই ধপ করে বসে পড়ে।

শিহাব ও সোহেল দৌড়ে গিয়ে ধরে।

–‘আমার ভাই, আমার আরো!’

বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সে।সোহেল ও শিহাবের চোখের কোণে পানিরা টুপ করে পড়ে যায়। নীলি আঁধারের কেবিনের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।

রাতুল দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।তরী রীতিমতো পাগলের মতো কাঁদছে সাহফিফকে আঁকড়ে ধরে।

আর সাহফিফ সে ও কাঁদছে তার বোন নামক ছোট পরীটার জন্য! সেই পরীটা আজকে কতো বড় হয়েছে, দুটো বচ্চার মা হয়ে গেলো কিন্তু এখনো চোখ খুলে তার কলিজার টুকরো বাচ্চাদের দেখতে পেলো না।

আঁকলিমা চৌধুরী ও শাহানাজ শেখ সেন্সলেস হয়ে গেছে তাদের কেবিনে রাখা হয়েছে। শিরিন চৌধুরী নামাজ পড়তে গেছেন।আমজাদ শেখ, তারেক চৌধুরী ও তৌফিক চৌধুরী ও নামাজ পড়তে গেছেন।

এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না।নীলিমার তিন মাসের ছোট ছেলেটা শাহরিয়ার নীলয়,সে মায়ের কান্না দেখে নিজেও কেঁদে উঠলো এবার

নীলিমা চোখের পানি মুছে বাচ্চাটাকে বুকের সাথে চেপে রাখলো কিছুক্ষণ এতেই যেনো বাচ্চাটা চুপ হয়ে গেলো।

নীলিমার ছেলের নাম আরোহী ও আঁধার মিলে ঠিক করে রেখেছে।তাদের নাকি এই নামটা অনেক পছন্দের।তাই নীলিমা ও সোহেল কেউই আর আপত্তি করেনি এতে।

লিমা নিজের চোখের পানি মুছে আলিশার ছেলেটার মুখে ফিডার তুলে দেয়!সে ও আজকে কাঁদছে! সকলের এতো ভালো বাসার দু’জন মানুষ আজকে এই পরিস্থিতিতে আছে আর তার না কেঁদে কিভাবে থাকবে!

কি হবে কেউ কিছু বুঝতে পারছিলো না যখন,ঠিক তখনই ম্যাজিকের মতো আঁধারের আগে আরোহীর সেন্স ফিরে আসে।

সকলে অবাকের জায়গায় হতভম্ব হয়ে যায়, যেখানে ৪৮ ঘন্টার আগে ডাক্তার নিজেও কিছু বলতে পারবে না বলছিলো সেখানে ৪ ঘন্টার মাঝেই এটা কি করে সম্ভব।

তবে সকলে একসঙ্গে আল্লাহকে শুকরিয়া জানায়!আল্লাহর হুকুম ছাড়া যেখানে একটা পাতা ও নড়ে না সেখানে এতো বড় একটা ঘটনা অসম্ভব ছিলো।

আরোহীর সেন্স ফেরার সাথে সাথে সে আঁধারকে সবার আগে দেখতে চায়!সকলে ভয় পেয়ে যায় কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না যখন তখন শিহাব বলেই ফেললো,,,

–‘আরে আরো তোমার যে এইটুকু শরীর থেকে দু’টো টুইনস বাচ্চা হয়েছে তার কি খেয়াল আছে?’

–‘টু-ই-স বাবু!’

অবাক হয়ে থেমে থেমে বলে আরোহী।

–‘হুম আরো মা একটা রাজপুত্র আর একটা রাজকন্যা!’

শিরিন চৌধুরীর কথা শুনে আরোহীর খুশিতে চোখে জ্বল চলে আসে।

–‘তুই দেখবি না আরো?’

রাহির কথা শুনে আরোহী মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে কিন্তু আবার পরমুহূর্তে আবার বলে,,,

–‘আঁধার কোথায়,ওনাকে একটু ডেকে দে না!’

আরোহীর কথা শুনে সকলের মুখ কালো হয়ে যায়। আরোহী কিছু একটা আন্দাজ করেই আবার বলে উঠে,,,

–‘কিরে ডেকে দে,আঁধার কোথায় ঠিক আছে ও?’

–‘আসলে ভাইয়া একটু বাহিরে গেছে আরো,এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই!’

রাহির কথা শুনে ভ্রুকুৃচকায় আরোহী, কিছু একটা মনে হতেই এবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে সে,,,

–‘ওর মাথায় রক্ত ছিলো, আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তো ও!’ আমার আঁধার, আমার আঁধার কোথায়! চুপ করে আছো কেনো সবাই।

–‘তুই উত্তেজিত হস না মা,আঁধার আছে তো!’

শাহানাজ শেখের কথা শুনে আরোহী শান্ত হতে পারে না।আরও চেঁচিয়ে উঠে,,,,

–‘কোথায় আমার আঁধার, আমার আঁধারের কাছে নিয়ে চলো আমায়!নিয়ে চলো।

–‘তুমি শান্ত হও আরো,তোমার এখন চেঁচামেচি করা যাবে না,ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাবো আমি তোমায়!’ শান্ত হও আগে।

আদরের কথায় এবার মায়া মায়া চোখে তাকায় আরোহী তার দিকে।আদর চোখ নামিয়ে নেয়, আরোহী এবার শান্ত হয়ে ধির কন্ঠে বলে,,,

–‘তুমি নিয়ে যাবে আমায় ভাইয়া,আমার আঁধারের কাছে নিয়ে যাবে!’

–‘হুম যাবো,তবে তুমি যদি আমার সব কথা শুনো তাহলে!’ শুনবে তো?

আরোহীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আদর।আরোহী মাথা নাড়িয়ে বলে,,,

–‘হুম!’

–‘এখন রেস্ট নাও তুমি একটু পর ভাইয়ের সাথে দেখা করানোর জন্য নিয়ে যাবো তোমায়,তার জন্য ফিট থাকতে হবে তো তাই না!’

মুখে সামান্য হাসি ঝুলিয়ে বলে আদর।আরোহী আবার মাথা নাড়ায়। ধির কন্ঠে বলে উঠে,,,

–‘আমি ঠিক আছি ভাইয়া তুমি আমায় নিয়ে চলো!’

–‘আমার কথা না শুনলে কিন্তু নিয়ে যাবো না বললাম তো!’

আদরের কথায় আরোহীর মুখ কালো হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।এরইমধ্যে হতদন্তর করে ছুটে এসে কেউ একজন তাকে ঝাপটে ধরে। চোখ খুলে হতভম্ব হয়ে যায় আরোহী।

সকলে অবাক চোখে তাকায় আঁধারের দিকে,আজকে কি সবকিছু মিরাক্কেলের মতো হচ্ছে তাদের সাথে।এই তো যেই আঁধারের এতোক্ষণ সেন্স ফেরার কোনো হুদিস নেই।

সেই আঁধার দৌড়ে এসে আরোহীকে বুকের মাঝে চেপে ধরে আছে।তবে আরোহী খেয়াল করে আঁধারের হাত থেকে রক্ত পড়ছে,হয়তো ক্যানেলা এক টানে খুলে ছুটে এসেছে তার আরুপাখিকে দেখতে তাই।

আরোহী আঁধারকে ছাড়িয়ে বলে উঠে,,,

–‘রক্ত আঁধার!’

আঁধার নিজেও তাকায় তার হাতের দিকে।শিহাব একটা নার্সকে ডেকে তার হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে নেয়।

এবার সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরোহী ও আঁধারকে একটা কেবিনে সিফট করা হয়,আর সাথে বাচ্চাদের ও।এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়, আরোহী, আঁধার ও বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়।

এরইমধ্যে সকলে অনেকটা সুস্থ যেহেতু তাই সকলে মিলে একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠান করে বাচ্চাদের নামকরণ করা হয়।

ছেলেটার নাম রাখা হয়,, তাশফিদ আদ্র চৌধুরী আর মেয়েটার নাম রাখা হয়,,,তাশফিহা আয়রা চৌধুরী।
দেদে
তবে দু’টো বাচ্চা তাদের জমজ হলেও দু জনের চেহারা সম্পূর্ণ আলাদা।আদ্র পেয়েছে অনেকটা মায়ের মতো চেয়াহা তবে স্বভাব বাবার মতো!

আর আয়রা পেয়েছে বাবার মতো চেহারা তবে স্বভাবটা মায়ের।আদর তাদের শিখিয়েছে সে তাদের বাবাই আর আলিশা তাদের আশা মা।

আর শিহাব ও রাহি শিখিয়েছে শিহাব ছোট বাবা আর রাহি ছোট মা তবে বাচ্চারা ছোট মা বলতে পারে না তাই অনেক সময় মাম্মা বলে।আর আঁধারকে পাপা আর আরোহীকে মাম্মাম বলেই ডাকে।

আরোহীদের যেদিন হাসপাতাল থেকে নিয়ে আশা হয় সেদিন আরোহীর হাতে ডায়েরিটি ছিলো।সে এক্সিডেন্ট অব্দি লিখলেও বাকিটুকু লিখতে পারেনি বাচ্চাদের কান্নার জন্য!

ছোট বেলা থেকেই তার সখ ছিলো বিয়ের পর বর সম্পর্কে ডায়েরিতে লিখে রাখবে সবকিছু যেনো বুড়ো বয়সে নাতী নাতনীদের শুনাতে পারে।

কিন্তু ভুল বসত সেদিন ডায়েরিটি সেখানেই ফেলে আসে।তবে পড়ে আর পায়নি ডায়েরিটি!পুরো হাসপাতালে খুঁজেছিলো তারা কিন্তু ততোক্ষণে হয়তো কেউ নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়েছিলো তাই পায়নি।

অনেক মন খারাপ ছিলো আরোহীর যার কারণে এযকন অব্দি আর কোনো ডায়েরিতেই কিছু লিখতে পারেনি।

এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় তিনটি বছর।সকলে হাসি খুশির সাথে জীবনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে! সাথে পরিবর্তন এসেছে সকলের জীবনেও।

ড্রয়িংরুমে থমথমে পরিবেশ! সবটা শুনে হতভম্ব ক্যারি ও ক্যাথি!তবে কষ্টের মাঝে ও তাদের চোখ মুখে সুখের ছায়া দেখা যায়।সবাই সুখে আছে শুনেই তাদের মনে শান্তি আসলে যেনো।

এরইমধ্যে ক্যাথির নজর যায় সেই অফিসের বাচ্চাটার দিকে যে বাচ্চাটা আরোহীর সাথে গিয়েছিল। দেখতে আরোহীর মতোই অনেকটা,তাহলে কি এটাই আরোহী ও আঁধারের ছেলে আদ্র।

তবে ছেলেটা অনেকটা গম্ভীর এবং এতো ছোট একটা বাচ্চা কি না স্পষ্ট কথা বলতে পারে।আঁধারের কপি,ভেবেই হেঁসে দেয় ক্যাথি।ক্যারি ও এতোক্ষণ হয়তো এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলো।

সে ও ক্যাথির মতো নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে খুশি হয়ে যায়। হাতের ইশারায় বাচ্চাটাকে তার কাছে ডাকে।

আদ্র গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়ায় ক্যারির।ক্যারি একটু জড়িয়ে ধরতেই আদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,,,

–‘তুমি কে?’

ক্যারি হেঁসে ফেলে, বাপের কার্বণ কপি সেটা আবার প্রমাণ করে দিলো আদ্র।

–‘ও হলো আমার ঘরওয়ালির বোন ওরফে তোমার খালামনি!’ সালাম দাও।

আঁধার ফাজলামো সুরে বলে। আদ্র একপলক পাপার দিকে তাকায় তার তবে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে,,,

–‘আসসালামু আলাইকুম!’

স্পষ্ট আদ্রের কন্ঠস্বর, ক্যারির সাথে ক্যাথি ও তার বাবা মা ও অবাক হয় এতোটা পরিস্কারভাবে এতো ছোট বাচ্চা সালাম দিতে পারে? নিসন্দেহে বাচ্চাটা বাবাকে কপি করে তাই তো সালাম দেওয়ার স্টাইলটা ও বাবার মতো।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৭

🍁

ভরদুপুরে বাগানে রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ক্যারি,আর তার পাশেই একটু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাতুল।

ক্যারিকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে,আর রাতুলকে দেখে মনে হচ্ছে সে ক্যারিফিয়া নামক বিদেশি রমনীকে খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখতেই ব্যাস্ত!

ক্যারিদের এই বাড়িতে আসার আজকে দশদিন পূর্ণ হয়ে গেলো।অথচ এই বাড়ির মানুষদের ব্যাবহার দেখে মনেই হয় না এনারা তাদের অথিতি, বাড়ির সদস্যদের মতোই তারা ক্যারিদের ট্রিট করে।

এই কয়েকদিনে ক্যারি ও ক্যাথি সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে! আরোহী ও আলিশা তাদের নিজের বোনের মতো ভালোবাসে! আঁধার ও ছোট বোনের মতো তাদের যত্ন করে আর বাড়ির বড়োরা মেয়ের মতো!

তবে এই কয়েকদিনে আদ্র, আয়রা,তাহমিদ ও তাহশিফের সাথে তাদের অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে! আর সাথে

–‘আরোহী কতো লাকী তাই না মিস্টার রাতুল?’

–‘হুম!’

হঠাৎ করেই ভাবনার মাঝে ক্যারির কন্ঠ শুনে ঘোরের মাঝেই উত্তর দেয় রাতুল।

–‘আঁধার তাকে কতো ভালোবাসে, আর আদর সে ও তো ভালোবাসতো তার আরোকে!’

সামান্য হেঁসেই বলে ক্যারি,,,

–‘হুম!’

রাতুল এখনো ঘোরের মাঝেই আছে তাই ক্যারির সব কথাতেই সায় দিচ্ছে।

–‘আঁধারের মতো কেউ যদি আমার লাইফে আসতো তাহলে হয়তো আমিও তাকে আরোহীর মতোই ভালোবাসতাম!’

উৎসাহ দেখিয়ে বলে ক্যারি।

–‘হুম!’

রাতুলের আবার একই উত্তরে ক্যারির কোনো ভবাবেগ হলো না সে নিজের মতো করেই আবার বলতে শুরু করলো।

–‘আই উইস আমি যদি আরোর জায়গায় থাকতে পারতাম আর আঁধার যদি আমায় ভালোবাসতো।’

–‘হুম!’

রাতুল ঘোরের মাঝেই উত্তর দেয় ঠিকই তবে মুহুর্তের মাঝে তার ধ্যান ভেঙ্গে যায় আর চেঁচিয়ে বলে উঠে সে,,,,

–‘কিহ!’

রাতুলের চিৎকারে ক্যারি তার দিকে তাকায়, রাতুলের শক্ত চোখ মুখ দেখে অবাক হয় সে।রাতুল দু কদম এগিয়ে এসে ক্যারির হাতের বাহুদ্বয় শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,

–‘তুমি কি আঁধারকে ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?’ আর যদি এমনটা হয় তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না!’

রাতুলের শক্ত কন্ঠ শুনে ক্যারির মাঝে কোনো ভবাবেগ হলো না সে মুখে হাসির রেস টেনে এনে বললো,,,

–‘কেনো?’ হু আর ইউ? আমার লাইফ আমি কাকে ভালোবাসবো কাকে আমার লাইফে জড়াবো সেটা আমার ব্যাপার! আপনি কে আমায় এসব বলার বলুন তো?

চোখ মুখ শক্ত করে বলে ক্যারি।রাতুল ভেবাচেকা খেয়ে যায়, তবে সে ও পাল্টা জবাবে বলে,,,,

–‘আরো আমার ছোট বোন হয় আর আমার ছোট বোনের লাইফে অনেক প্রবলেম এসেছে, তোমার জন্য নতুন করে আর কোনো প্রবলেম আসতে দিবো না আমি!’

ক্যারির শক্ত চোখ মুখ আরও খানিকটা শক্ত হয়ে যায়।

–‘আই লাভ আঁধার, আই লাভ হিম ভেরি মাচ!’ আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই,আপনি আমার ব্যাপারে নাক না গলালেই ভালো করবেন!

কথাটা বলার সাথে সাথেই ক্যারির গালে একটা শক্ত হাতের থাবা পড়ে।হতভম্ব হয়ে যায় ক্যারি!চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে, চোখ তুলে তাকাতেই রাতুলের লাল টকটকে চোখ মুখ সামনে ভেসে ওঠে!

ক্যারি এবার অসহায় চোখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আঁধার, আরোহী ও বাকি সবার দিকে তাকায়!ওরা নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এমনটা হবে সেটা তাদের ধারণার বাহিরে ছিলো।

রাতুল তখনো চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে ক্যারির দিকে।ক্যাথির চোখে পানি এসে যায়,তার বোনকে কেউ এভাবে মারবে সেটা সে কখনোই কল্পনা করে নি!

আরোহী এগিয়ে আসতে ধরলে আঁধার তার হাত টেনে ধরে।

আরোহী দ্বিগুণ অসহায় চোখে তাকায় আঁধারের দিকে,তবে আঁধার তাকে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে!

ছোট আদ্র ভ্রুকুঁচকে একটু দূরেই ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে সকলের কাজ কর্ম দেখছে!

–‘আপনার সাহস হলো কি করে আমায় মারার?’

চোখের পানি মুছে চেঁচিয়ে বলে ক্যারি।রাতুলের এবার হুস ফিরে আসে,সে রাগের মাথায় কি করেছে বুঝতে পেরেই হাসফাস শুরু করে।ক্যারির চোখ জোড়া তখনো ছলছল করছিলো।

–‘আ’ম সরি ক্যারিফিয়া,আসলে….’

আমতা আমতা করে রাতুল।

–‘আই লাভ ইউ রাতুল, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনি কি না…!’

বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে ক্যারি।রাতুল হতবাক হয়ে যায়, কি বলছে ক্যারি তাহলে আঁধারের কথা কেনো বললো এতোক্ষণ?

শুকনো ঢোক গিলে রাতুল।

–‘আমি তো আপনার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য এমনটা বলেছিলাম আর আপনি কি না…!’

চোখের জ্বল মুছে নিয়ে বলে ক্যারি।রাতুল আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই ক্যারি একটা আচর্য জনক কাজ করে বসে।

সবাই হা করে তাকায়,পরমুহূর্তে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রের দিকে নজর যায় শিহাবের।সে তখনো ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে ক্যারিদের দিকে।

সকলে উল্টো দিকে ঘুরে যায়, আর শিহাব দৌড়ে গিয়ে আদ্রেকে কোলে তুলে বাড়ির দিকে ছুট লাগায়! রাতুল কয়েক সেকেন্ডের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলেও পরমুহূর্তে প্রেয়শীর ডাকে সারা দেয়!

সকলে লজ্জায় পড়ে যায়, ক্যারি যদিও বিদেশে বড় হয়েছে কিন্তু তারা তো আর বিদেশি না তাই তারা লজ্জা যে যার মতো চলে যায়।

কয়েক মিনিট বাদে সরে আসে ক্যারি রাতুলের কাছ থেকে! দু’জনে হাফাতে শুরু করে,রাতুল ঠোঁট মুছে আসে পাশে তাকায়,না কেউ দেখেনি ভেবে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে সে।

–‘আই লাভ ইউ!’

রাতুলের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ক্যারি!রাতুল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,,

–‘তুমি কি আদৌও বুঝতে পারছো কি বলছো?’

–‘না তবে আপনি হয়তে ভাবছেন আমি বিদেশে বড় হয়েছি কয়েকদিন পড়ে যদি অন্য কাউকে ভালো লাগলে ছেড়ে যাই রাইট?’

রাতুল অবাক হয়ে তাকায় ক্যারির দিকে।ক্যারি আবার বলতে শুরু করে,,,

–‘আমাদের দেশে ভালোবাসা বলতে মনের থেকে বেশি সবাই শরীরকে চেনে, হয়তো আমারো এটাই হতো বাট আমি আরোহীর ডায়েরি পড়ার পর তার লেখা ও তাদের ভালেবাসার প্রেমে পড়েছি রাতুল!’ আমি চাই আরোহীর মতো করে আমায় ও কেউ ভালোবাসুক, আমি ও আরোহীর মতো এক পুরুষে আসক্ত হতে চাই!আপনি যদি আমায় ভালো না বাসেন তাহলে ইটস ওকে আমরা কালকেই ফিরে যাচ্ছি!

ক্যারির কথা শুনে রাতুল মুচকি হেসে বলে,,,

–‘বিয়েটা কি আজকেই করবে নাকি কাল?’

ক্যারি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়!রাতুল এবার দু কদম ক্যারির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,

–‘নাকি তুমি বিয়ে করতে চাও না আমায়?’

ক্যারি উৎফুল্ল হয়ে লাফিয়ে রাতুলের গলা জড়িয়ে ধরে।রাতুল হেঁসে ক্যারিকে কোলে তুলে ঘুরাতে ঘুরাতেই বলে,,,

–‘আমি কিন্তু তোমায় কাল কোথায় ও যেতে দিচ্ছি না, আর আজকেই বিয়েটা করতে হবে বুঝলে?’ আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি ক্যারিফিয়া, আমার মতো একটা ছেলে কি না এই বিদেশিনী রমনীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!

ক্যারি মুচকি হেসে রাতুলের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

–‘ভালোবাসা সুন্দর রাতুল,আমিও সেই ভালোবাসা পেতে চাই উপভোগ করতে চাই!’ আপনার হাতে হাত রেখে আরো ও আঁধারের মতো চলতে চাই।আমি এসেছিলাম আরো ও আঁধারের সাথে দেখা করতে কিন্তু আমার ডেসটিনি আমায় যে এখানে আপনার জন্য টেনে আনবে সেটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি রাতুল।আমি চাই না আপনাকে হারাতে,আমি চাই না আপনার ভালোবাসা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে।

কথাগুলো বলতে বলতে ক্যারির গলা ধরে এসেছিলো বার বার,রাতুল এবার একটু সময় নিয়ে ক্যারির কপালে একটা চুমু খায়।

–‘ত্যালি আন্তি তুমি লাতুল আঙ্তেলের তোলে তি তলছো?’

হঠাৎ ছোট বাচ্চার কন্ঠ পেয়ে রাতুল ক্যারিকে ধপ করে নিচে ফেলে দেয়।ক্যারি ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠে, রাতুল চোখ ঘুরাতেই আয়রা,তাহমিদ,তাহশিফ ও নীলয়কে দেখতে পায়!

বাচ্চাগুলো ক্যারিকে দেখে খিলখিল করে হেঁসে উঠে!ক্যারি নিজের ব্যাথার কথা ভুলে গিয়ে রাতুলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়!

রাতুল অসহায় চোখে একবার ক্যারির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার বাচ্চাগুলোর দিকে।

এরইমধ্যে একটা ছোট হাত এগিয়ে দেয় ক্যারির দিকে কেউ। ক্যারি চোখ ঘুরাতেই আদ্রের দিকে নজর যায় তার!আদ্র গম্ভীর মুখ করে তারই দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

–‘তুমি হাসবে না?’

ক্যারি ব্যাথাযুক্ত কন্ঠে আদ্রের দিকে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেয়!আদ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায় তার দিকে।ক্যারির মুখে এবার হাসি ফুটে উঠে!

বাচ্চাটার সবকিছু তার কাছে অনেক ভালো লাগে,এই যে এখন ভ্রুকুঁচকে তাকালো সেটাও তার কাছে চমৎকার লাগলো।

ছেলেটা কিছুটা গম্ভীর আবার একটু বেশিই হাসিখুশি! তবে তাকে অনেক সময় বড়দের মতো গম্ভীর চেহারা করতে দেখা যায় সেটা না!

হয়তো সে বড়দের মতো করে সবকিছু করার চেষ্টা করে তাই।এইটুকু একটা ছেলে যে নিজের হাতে ভাত খেতে পারে না তবে তার বোনকে মাঝে মাঝে নিজের হাতে তুলে দু’টো দু’টো করে ভাত খাইয়ে দেয়!

বোনকে সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করে,চর কাপড় তো বাবার সাথে মিলিয়ে পড়ে সবসময়। বাবার স্টাইল কপি করে সে সবসময়।

আর আয়রা সে এখনই যেনো ছন্নছাড়া, আর অগোছালো! ফাজিলের হাড্ডি, সবসময় ফাজলামো করাই তার কাজ!বাড়ির সকলের নয়নের মনি সে! তাহমিদ, তাহশিফ ও আদ্র তারা তিন ভাইয়েই হয়েছে বোন ভক্ত!তাদের বোন হলে আর কিছু লাগে না!

–‘কি হলো উঠো!’

আদ্রের কথায় ক্যারির ধ্যান ভাঙ্গে!সে আদ্রের দিকে তাকায় একবার তার হাতের দিকে তাকায়!পরমুহূর্তে আদ্রকে কাছে টেনে নেয়,মিষ্টি হেসে তার গাল টেনে দেয়।

#চলবে?

নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৪৪+৪৫

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৪

🍁

ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকতো এক সুখী দম্পতী ফ্লোরা ফারুকি ও তার হাসবেন্ড রিহান ফারুকি। তারা একসময় বাংলাদেশেের চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করলেও কোনো এক কারণে ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসতে হয়।

তখন থেকেই তাদের নিজস্ব শহর বলতে চট্টগ্রামকে না তারা বরং ক্যালিফোর্নিয়াকেই বোঝায়!তাদেরই জমজ দুই রাজ কন্যা ক্যারিফিয়া ও ক্যাথিলিয়া!

তাদের জন্ম হয় ক্যালিফোর্নিয়াতেই।মায়ের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে গল্প শুনতে শুনতেই তারা বড় হয়!আর বাংলা ভাষা অনেকটা আয়ত্বে নিয়ে আসলেও ঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না।।

একসময় তাদের মা তাদের প্রতিদিনই বাংলা শিখাতে শুরু করেন। আর এখন তারা বাংলাদেশীদের মতোই বাংলা বলতে ও বুঝতে পারে।

তাদের দেখতে অনেকটা বিদেশীদের মতো মনে হলেও তাদের বাংলা শুনে যে কেউ বলবে তারা বাংলাদেশের মানুষ!

একসময় তাদের প্রথমে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কৌতুহল থাকলেও এখন আর সেই কৌতুহল নামক জিনিসটা আর নেই! বরং আছে বিরক্তি!

কারণ তাদের জেদের কারণে যখন ফ্লোরা ও রিহান তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন, তারপর বাংলাদেশের লোক জনদের লাইফ স্টাইল আরো অনেক কিছু এমন আছে যেটা তাদের পছন্দ হয়নি!

তাই তারা দুদিনের মধ্যেই চলে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করছিলো তখনই তার গ্রানী তাদের ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেন!শুরুতে তারা রাজি না হলেও পরে গ্রানীর মন রক্ষা করার জন্য রাজি হয়ে যায়!

তবে নির্দিষ্ট জাগয়ায় পৌঁছানোর পর পরই পায়ের নিচে একটা নীল কভারের সুন্দর ডায়েরি দেখতে পায়!ক্যারি কৌতুহল বসত হাতে তুলে নিতেই ক্যাথি বলে উঠে,,,,

–‘উফ ইটস সো ডার্টি ক্যারি!’

কিন্তু ক্যাথির কথা না শুনেই ক্যারি ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে পরিষ্কার করে নেয়!ডায়েরিটির কভারে অনেকটা খোদাই করে লেখার মতো সাদা পাথর দিয়ে লেখা নীল ডায়েরির সেই মেয়েটি!

ক্যাথি এতোক্ষণ নাক ছিটকালেও সে ও ডায়েরির কভারটি দেখে বলে উঠে,,,

–‘ইটস সো প্রিটি ইয়ার!’

–‘হুম পড়ে খুলে দেখবো এটা এখন রেখে দে!’

বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর আর তাদের সে কথাটি মনেই ছিলো না, কিছুদিন আগে ল্যাগেজের এক কোনে তারা ডায়েরিটি পায়!

তাই খুলে দেখার কৌতুহল জাগে তাদের মনে! আর খুলে দেখতেই তারা পড়তে গিয়ে প্রেমে পড়ে যায় সেই নীল ডায়েরির সেই মেয়েটির আর তার বর তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর!

তাই তো তাদের খুঁজতে আজকে তারা বাংলাদেশ অব্দি চলে এসেছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই লম্বা একটা শ্বাস নেয় দু’জনে।

ফ্লোরা ও রিহান মেয়েদের দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে!একসময় বাংলাদেশে না থাকার জন্য যে মেয়েরা তার ড্যাডের কাছে রিকুয়েষ্ট করেছিলো।

আর আজকে বাংলাদেশে আশার জন্য তার মেয়েরা আবার রিকুয়েষ্ট করেছে তার কাছে, তাই তো বাধ্য হয়ে নিয়ে আসতেই হয়েছে রিহানকে।

–‘গার্লস চলো এবার হোটেল বুক করা হয়ে গেছে!’ আর ওই যে গাড়ি পাঠিয়েছে।

রিহানের কথায় তারা মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে!

–‘ড্যাড হোটেলে যাওয়ার আগেই যদি একবার ভার্সিটিতে যেতে পারতাম,প্লিজ ড্যাড!’

ক্যারির কথায় ফ্লোরা বিরক্ত হয়ে বলে,,,

–‘নো ওয়ে, আগে ফ্রেশ হবে রেস্ট করবে দেন!’

–‘আহ ফ্লোরা ওরা যেটা বলছে সেটায় হবে তুমি আর কিছু বলো না!’

ফ্লোরাকে থামিয়ে দিয়ে বলে রিহান।ক্যাথি ও ক্যারি জড়িয়ে ধরে তার ড্যাডকে বলে,,,,

–‘ইউ আর দা বেস্ট ড্যাড ইন দা ওয়াল্ড, লাভ ইউ ড্যাড!’

–‘রিহান এভাবেই ওদের মাথায় তুলো তুমি!’

কথাটা বলার সাথে সাথেই দু’বোনে এবার এগিয়ে গিয়ে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘লাভ ইউ টু মম!’

ফ্লোরা আর রাগ করে থাকতে পারে না সে ও হেঁসে ফেলে।

!

!

ভার্সিটিতে,,,

একটা সুদর্শন ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা! ছেলেটি নিজেও ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বিদেশি রমনীর দিকে!

তাদের চেহারা কিছুটা এক হলেও তাদের দেখতে অনেকটাই পরীর মতো!কি কিউট দেখতে তারা,কিন্তু সেসব মুখে প্রকাশ করে না সেই ছেলেটি কারণ মেয়ে মানুষকে বেশি লায় দিতে নেই! একসময় রিহান গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,,

–‘বেটা,তুমি কি এখানের স্টুডেন্ট?’

বিরক্ত হয় ছেলেটি,তার চোখ মুখে অনেকটা বিরক্তি ফুটে উঠে।

–‘জ্বি না, আমি ইংরেজি প্রফেসার!’

–‘ওহ সরি সরি, আসলে বোঝার ভুল আমার!’ আমি রিহান ফারুকি আর ইনি আমার ওয়াইফ ফ্লোরা ফারুকি আর ওরা আমার টুইনস ডটার ক্যারি ও ক্যাথি! আমরা আসলে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এসেছি! একজনের খোঁজে।

–‘ও নাইস টু মিট ইউ আঙ্কেল, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ আঙ্কেল? ‘ বাই দা ওয়ে আমি রাতুল আহম্মেদ।

মুখে হাসি টেনে বলে উঠে রাতুল।

–‘রাতুল!’

একসাথে চেঁচিয়ে উঠে ক্যারি ও ক্যাথি! হকচকিয়ে যায় রাতুল।

–‘আঁধার আঁধার!’

উত্তেজিত হয়ে আঁধারের নাম বলতে দেখে ক্যারির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় এবার রাতুল।

–‘আঁধারকে কিভাবে চিনেন আপনারা ?’

–‘আঁধার কোথায় মিস্টার রাতুল, আর আরোহী সে কোথায়?’ বলুন না আঁধার কোথায়?

ক্যারিকে এবার এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন রিহান।মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,,

–‘রিলাক্স ডিয়ার,রিলাক্স! ‘

শান্ত হয় ক্যারি।রাতুল অবাক হয়ে তাকায় সকলের দিকে, আঁধারের সাথে কি সম্পর্ক এদের যে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ছুটে এসেছে তার খোঁজে।

আর আরোহীকে ও তো চেনে এরা? তাহলে তাদের বাসায় না গিয়ে এখানে কেনো খোঁজে এসেছে? মনে মনে এইসব ভাবে রাতুল।

–‘হোয়াট হ্যাপেন্ড আঙ্কেল?’ উনি আঁধারের জন্য এতো বিচলিত হয়ে আছেন কেনো? কি সম্পর্ক ওর সাথে এনার?

–‘প্লিজ আগে বলুন না আঁধার কোথায়?’বেঁচে আছে সে বলুন না প্লিজ!’

ক্যাথির কথায় এবার রাতুল বিরক্তের সহিত বলে উঠে,,,,

–‘আরে আপনারা আগে বলবেন তো কাহিনি কি!’

–‘আঁধার কোথায় মিস্টার রাতুল?’

–‘অফিসে আছে ভাই এটা জানার জন্য নিশ্চয়ই এতো দূর দেশ থেকে এখানে আসেননি?’

বিরক্তির সহিত বলে এবার রাতুল। ক্যারি তার উত্তর পেয়েই লাফিয়ে গিয়ে রাতুলকে জড়িয়ে ধরে।

রাতুল হতভম্ব হয়ে যায়, এই প্রথম কোনো নারী তার এতোটা কাছে এসেছে!তার বুকের ভেতর ধক ধক করে একটা শব্দের উৎপত্তি শুরু হয়!

অন্য রকম ফিল হয় রাতুলের,তার মনে হচ্ছে পুরো শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো! কিন্তু তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা রমনীর সে দিকে হুস নেই।

ফ্লোরা বিরক্ত হয়ে যায় তার মেয়ের কান্ডে,এটা যে বাংলাদেশ তার মেয়ের সে দিকে ধ্যান নেই! ভার্সিটির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

হয়তো তারা এমনটা আশা করেনি একটা প্রফেসরের কাছে।রাতুল নিজেও বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে।

–‘ক্যারি!’

ক্যাথি তার মায়ের ইশারা পেয়ে একটু চেঁচিয়ে ক্যারিকে ডেকে ওঠে! ক্যারি রাতুলকে ছেড়ে দিয়ে এবার ক্যাথিকে জড়িয়ে ধরে। রাতুলের বুকের ভেতর এখনো অস্থির লাগছে।

–‘ক্যাথি,আঁধার বেঁচে আছে ক্যাথি!’

ক্যারির কথা শুনে রাতুল এবার স্বাভাবিক হয়।

–‘চলুন না আমাদের আঁধারের কাছে নিয়ে রাতুল প্লিজ!’

রাতুলের হাত ধরে আবদারের সহিত কথাটা বলে ক্যারি।রাতুলের মন বলে আবদারটা তোর রাখা উচিত রাতুল নিয়ে চল।তাই রাতুল ও রাজি হয়ে যায়!রাতুলকে উদ্দেশ্য করে এবার রিহান বলে,,,,

–‘কিছু মনে করো না বাবা,আসলে ওরা বাংলাদেশের কালচার তেমন জানে না তো!’

–‘ইটস ওকে আঙ্কেল আমি কিছু মনে করিনি, আর ও ছোট মানুষ!’

রাতুলের কথা শুনে ক্ষেপে যায় ক্যারি,,,,,

–‘হোয়াট ডু ইউ মিন, আপনার কি আমায় চাইল্ড মনে হয়!’ আমি ভার্সিটিতে পড়ি বুঝলেন।

ক্যারির কথায় এবার রিহান ও ফ্লোরা হেঁসে ফেলেন। রাতুল মাথা নাড়ায় মানে হ্যা সে বুঝেছে।তবে মেয়েটাকে তার বেশ লেগেছে।

!

!

তাদের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে রাতুল গেছে আঁধারকে ডাকতে,সে নাকি এখন কোন জানি মিটিং এ আছে! এরই মধ্যে একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পায় ক্যাথি, ক্যারির দিকে দূর থেকে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটি।

–‘ক্যারি!’

–‘হুম?’

কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই উত্তর দেয় ক্যারি।

–‘বাচ্চাটা কি কিউট দেখ!’

–‘কোন বাচ্চা?’

ভ্রুকুঁচকে বলে ক্যারি।

–‘তুই আঁধারের মতো ভ্রুকুঁচকে তাকাবি না তো!’

ক্যাথির কথা শুনে ক্যারি আবার ভ্রুকুঁচকে তাকায়!ফ্লোরা ও রিহান হেঁসে উঠেন।এরইমধ্যে বাচ্চাটি গুটি গুটি পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,,

–‘তোমলা তালা?’

–‘হোয়াট?’

একসাথে চেঁচিয়ে উঠে সকলে।বাচ্চাটি বড় বড় চোখে সকলকে একবার দেখে নেয়, তার পর আবার ঠোঁট উল্টে বলে উঠে,,,

–‘তোমলা তালা?’

–‘হোয়াট আর ইউ সেয়িং ডিয়ার?’

হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চাটির গালে হাত দিয়ে বলে ক্যারি।বাচ্চাটা দূরে সরে গিয়ে বলে,,,

–‘দোন্ট তাচ!’

ক্যারি আবার ভ্রুকুঁচকে তাকায়,সে বাচ্চাটির কথার মানে বুঝতে পারছে না!

এরইমধ্যে একটা ছেলে এসে বলে,,,,

–‘আয়রু তুই এখানে আর আমি তোকে কোথায় কোথায় খুঁজছি!’

মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে কোলে উঠে যায় ছেলেটির।তার আধো আধো গলায় বলে উঠে,,,

–‘বাবা ওলা তে?’

বাচ্চাটির কথায় ছেলেটি এবার ক্যারিদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,,,

–‘আসলেই তো কে আপনারা?’

রিহান ফারুকি এগিয়ে এসে বলে,,,

–‘আমি রিহান আর উনি আমার স্ত্রী আর ওরা আমার মেয়ে!’ তুমি কি বাচ্চাটার বাবা?’

–‘জ্বি আঙ্কেল, আর আমি তৈহিদুল আদর চৌধুরী এখানের সেকেন্ড বস মানে তারেক চৌধুরীর ছোট ছেলে।’ আর এই যে আমার পিচ্চি মা, তাশফিহা আয়রা চৌধুরী। মাম্মা সালাম দাও দাদুভাইকে।

–‘আততালামু আলাইতুম!’

আয়রার কথা শুনে হেঁসে ফেলে আদর!

–‘আসলে আঙ্কেল ছোট বাচ্চা তো তাই হয়তো কথাগুলো বুঝতে পারেনি তবে সালাম দিয়েছে আপনাকে।’

রিহান ফারুকি এবার হেঁসেই সালাম নেন,,,

–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম পিচ্চি!’

–‘বা বা দাদু পঁতা আমাতে পিত্তি বলছে!’

আদর হেঁসে উঠে তার মেয়ের কথা শুনে আবার।ক্যারি এগিয়ে এসে বলে,,,,

–‘আমি ক্যারি ডিয়ার,তুমি অনেক কিউট আর সুন্দর দেখতে!’

আয়রা কি বুঝলো কে জানে,তবে সে লাফিয়ে ক্যারির কোলে গিয়ে তার গালে হাত বুলিয়ে বললো,,,

–‘তুমি ও অনেত তুন্দল একতম আলুর মতো!’

–‘তাই তবে এই আলুটা কে?’

–‘আমাল মাম- ম্মাম!’

খুশি হয়ে বলে আয়রা।ক্যারি ভাবনায় পড়ে যায় আসলে আলু বলতে সে বুঝতে পারছে না আসলে কে?ক্যাথি এবার এগিয়ে এসে বলে,,,,

–‘আর আমি?’ আমি কি সুন্দর না?’

আয়রা ভ্রুকুঁচকে তাকায়,এতোটুকু মেয়েকে ভ্রুকুঁচকে তাকাতে দেখে অবাক হয় ক্যাথি ও ক্যারি।

–‘তোমলা তি তুইনস?’ আমাল বাইয়াদেল মতো?

ভাবুক হয়ে বলে আয়রা।ক্যাথি ও ক্যারি বুঝতে না পেরে আদরের দিকে তাকায়!আদর ওদের দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে হেঁসেই বলে,,,

–‘ও বললো তোমরা কি টুইনস?’ ওর ভাইয়াদের মতো। আসলে আমার দুই ছেলে ও টুইনস তো, আর তোমাদের মতো ওদের ও চেহারা অনেকটা সেম সেম তাই।

ক্যাথি ও ক্যারি হেঁসে ফেলে। এতোটুকু বাচ্চা কি না ওদের জিজ্ঞেস করছে ওরা টুইনস কি না।

–‘হুম আমরা তুইনস ডিয়ার!’

ক্যাথি আয়রার মতো করই বলে উঠে কথাটি।আয়রা আবার ভ্রুকুঁচকে তাকায়।এরইমধ্যে ক্যারি আদরকে বলে,,,

–‘আফনান ও আদনান কেমন আছে আদর ভাইয়া?’ আর আলিশা আপু?

আদর অবাক হয়।

–‘তোমরা ওদের কিভাবে চেঁনো?

–‘আমরা আপনাদের সবাইকে চিনি শুধু এই পিচ্চিকে বাদে।’

আয়রাকে দেখিয়ে বলে ক্যাথি।আদর অবাক হয়ে তাকায়।

–‘আগে বলুন তারপর বলবো!’

–‘ভালো আছে সবাই।’

ক্যাথি যেনো শান্তি পায়,কিন্তু আবার কৌতুহল না থামিয়ে বলেই ফেলে,,,,

–‘আর আপনার আরো?’

চমকে উঠে আদর।এই মেয়ে তার আর আরোর কথা কিভাবে জানলো?

–‘কে আপনারা?’ আর এতো কিছু কি করে জানেন?’

একটা গম্ভীর কন্ঠ শুনতে পেয়ে সকলে চমকে যায়। দরজার দিকে তাকাতেই আঁধারকে দেখতে পায় ক্যারি, আর কোনো কিছুর পরোয়া না করেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৫

🍁

আঁধার এক হাত দিয়ে সামনের মেয়েটিকে ছাড়িয়ে ভ্রুকুঁচকে তাকায় তার দিকে।ক্যারি এতোটাই এক্সাইটেড যে,সামনের এই অচেনা ছেলেটাকে নিজের পরিচয় ও দিতে ভুলে গেছে!

–‘হু আর ইউ?’

গম্ভীর ও শক্ত কন্ঠ আঁধারের।ক্যারি হাঁ করে তাকিয়ে আছে! ক্যাথি ব্যাপারটা বুঝতে পারে যে আঁধার আসলে আরোহীর লেখা গল্পের মতোই!

তাই তো ক্যারির মতো একটা সুন্দর রমনীকে সযত্নে সরিয়ে দিলো!

–‘আমি ক্যাথি আর ও আমার টুইনস সিস্টার ক্যারি!’ সরি ফর দ্যাট মিস্টার আঁধার, আমার বোন একটু বেশিই এক্সাইটেড হয়ে গেছে!’

এগিয়ে এসে কথাটা বলে ক্যাথি,আঁধার এক পলক ভ্রুকুঁচকে তাকায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটির দিকে তার পর অপর পাশে দাঁড়ানো রমনীটিকে একবার দেখে নেয়।

ছোট খাটো দুটো ডলের মতো তাদের চেহারা,দেখতে বিদেশির মতো হলেও এতোটা স্পষ্ট ভাবে বাংলা বলা দেখে একটু বেশিই অবাক হয় আঁধার!

রিহান ফারুকি এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বলেন এবার,,,,

–‘হেই ইয়াং ম্যান,ইউ আর তাশরিফ আঁধার চৌধুরী রাইট!’

আঁধার ভদ্রতা সূচক হাত মিলিয়ে বলে,,,

–‘জ্বি আঙ্কেল আমিই তাশরিফ আঁধার!’ বাট আপনারা কারা!

এরপর রিহান ফারুকি নিজের পরিচয় দিয়ে, একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন!

এরপর আঁধার তাদের তার কেবিনে নিয়ে যায় কথা বলার জন্য! আয়রা আদরের কোল থেকে নেমে গিয়ে আঁধারের পায়ের কাছে বসে পড়ে!সকলে অবাক হয়, তবে আঁধার আর আদর বাদে।

–‘কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের?’

আয়রার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলে আঁধার! আয়রা তার ছোট ছোট হাত দিয়ে আঁধারের গালে হাত ছুঁয়ে দিয়ে আধো আধো গলায় বলে,,,

–‘পাপা তোমাল তোলে উঠবো!’

আঁধার তার মেয়ের কথা শুনে মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় তাকে। আয়রা এবার তার পাপার বুকের সাথে লেপ্টে জড়িয়ে ধরে!

–‘কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের?’ মন খারাপ কেনো?

মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে আঁধার। মায়া মায়া চোখে তাকায় আয়রা তার পাপার দিকে,আর ছোট কন্ঠে বলে,,,

–‘আয়লা মিস মাম্মাম!’

আঁধার হতাশ হয়,এখন কি বলবে সে?

–‘ওর মা কোথায়?’

ক্যারি কৌতুহল বসত বলে,,,

সকলে এক পলক তার দিকে তাকায়!এরইমধ্যে দু’টো বাচ্চা দৌড়ে ভেতরো ঢুকে যায়।বাচ্চাগুলোর বয়স চার কি পাঁচ হবে হয়তো!

সকলে কৌতূহল নিয়ে তাদের দিকে যে তাকিয়ে আছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই তারা চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,,

–‘পাপা!’

আদর ভ্রুকুঁচকে বলে,,,,

–‘তোমরা?’

–‘মাম্মামের সাথে এসেছি!’

লাফিয়ে বলে উঠে তাহশিফ ও তাহমিদ।এরইমধ্যে হতদন্তর করে আলিশা ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠে,,,,

–‘এই তোরা এতো বিচ্ছু কেনো বল তো?’ এভাবে কেউ দৌড়ে আসে,আমার জান না নিয়ে তোরা শান্তি পাবি না জানি তো!’

তাহশিফ ও তাহমিদ দাঁত বের করে হেঁসে দেয়।আদর নিজেও দাঁত কেলিয়ে তাকায়!

আঁধার ঠোঁট চেপে হাঁসে,আর আয়রা মাথা তুলে উঁকি দিয়ে দেখে আবার আঁধারের সাথে লেপ্টে যায়। রাতুল হাঁ করে তাকিয়ে আছে, আর ক্যারি ও ক্যাথি কি যেনো ভাবছে।

–‘আলিশা আপু!’

ক্যারি ও ক্যাথির কিছু একটা মনে পড়তেই চেঁচিয়ে বলে উঠে তারা।আলিশা চমকে যায়, অবাক হয়ে তাকায় তার সম্মুখে চমৎকার হেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বিদেশি রমনীদের দিকে।

তাকে দেখে বুঝায় যাচ্ছে তাদের সে চিনতে পারছে না।আদর এবার এগিয়ে গিয়ে আলিশার কাঁধে হাত রেখে বলে,,,,

–‘ওদের তুমি চিনো?’

দু’দিকে মাথা নাড়ায় আলিশা,যার অর্থ না।আদর ভ্রুকুঁচকে তাকায় আঁধারের দিকে,আঁধার তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারই দিকে।

হতাশ নিশ্বাস ছাড়ে আদর, এরপর দুই ভাই একসাথে তীক্ষ্ণতার সাথে তাকায় রাতুলের দিকে।রাতুল তাদের দৃষ্টি দেখে ভড়কে গিয়ে বলে,,,,

–‘আরে আমি নিজেও ওদের চিনি না ভাই, ওরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আঁধার ও আরোর সাথে দেখা করতে এসেছে।’

আঁধারের এক ভ্রু এবার আপনা আপনি কুঁচকে যায়! রিহান ফারুকি ও ফ্লোরা ফারুকি একে অপরকে কি যেনো ইশারা করেন।তারপর ফ্লোরা আমতা আমতা করে বলেন,,,,

–‘আমাদের মেয়েরা তোমাদের সাথে দেখা করার জন্য জেদ করছিলো বেটা,তবে তারা হয়তো আরোহীকে ছাড়া কিছু বলবে না!’

–‘হুম,আরোহী মা কোথায় ওকে ডাকো একটু!’

রিহান ফারুকির কথা শুনে আদর,আলিশা ও রাতুল তাকায় এবার আঁধারের দিকে।আঁধার হতাশ হয়ে বলে,,,

–‘সে এখন নেই আঙ্কেল, তবে আপনারা আমাদের বলতে পারেন!’

–‘নেই মানে?’

ক্যাথি একটু জোড়েই বলে উঠে যার কারণে সকলে তার দিকে তাকায়।ক্যাথি আমতা আমতা করে বলে,,,

–‘না আসলে আমাদের ওনার সাথে একটু দরকার আছে আর কি!’

–‘আচ্ছা আয়রা কি আপনার আর আরুর মেয়ে?’

ক্যারি ভাবুক হয়ে বলে।আঁধার গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

–‘হুম!’

–‘তাহলে মিস্টার আদর বললেন যে ওনার মেয়ে?’ আর আয়রা তো ওনাকেই বাবা বলে ডাকলো?তবে তার ফেইস আপনার সাথে অনেকটা মিলে যায়,তাকে যে কেউ দেখলে বলবে সে আপনার মেয়ে।

ক্যারির কথায় আলিশা এগিয়ে এসে বলে,,,

–‘ওর জন্মদাতা বাবা মা আরো ও ভাইয়া হলেও আমরা ওর আর এক বাবা মা তাই আমাদের বাবাই মা বলে ডাকে।’ আর বাপ কা বেটি বুঝোই তো তাই আমাদের আয়রু সোনা পাপার কপি,তাই না আয়রু?

আয়রাকে আঁধারের থেকে নিতে নিতেই বলে আলিশা। আয়রা এবার খুশি হয়ে আলিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘আতা মা!’

–‘বলো সোনা মা!’

আয়রার মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলে আলিশা।

–‘মাম্মাম!’

আলিশা হেঁসেই আয়রার কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,

–‘আয়রু সোনা কি মাম্মামকে মিস করছে?’

–‘আয়লা মিস মাম্মা!’

ঠোঁট উল্টে বলে আয়রা।

–‘এই তো মাম্মা চলে এসেছে সোনা!’

একটা সুন্দর ও পাতলা গড়নের মেয়ে একটা ছোট ছেলের হাত ধরে ভেতরে ঢুকেতে ঢুকতে বলে।ছেলেটির বয়স হয়তো তিন কি চার হবে, আয়রার থেকে একটু বড়।

আয়রা আলিশার কোল থেকে লাফিয়ে মেয়েটির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দেয়।

মেয়েটি আয়রাকে কোলে তুলে বলে,,,

–‘ওলে আমার বাচ্চাটা মাম্মাকে খুব বেশি মিস করছিলো নাকি?’

আয়রা হাসোজ্জল চেহারা নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।ক্যারি ও ক্যাথি ভ্রুকুঁচকে একসাথে বলে,,,

–‘উনি কে?’

–‘আয়রা ওনাকে মাম্মাম বলে ডাকছে কেনো?’ আপনি কি আর একটা বিয়ে করেছেন আঁধার?

অবাক হয়ে বলে ক্যারি।

আঁধার হতভম্ব হয়ে যায়,পরমুহূর্তেই চোখ মুখ শক্ত করে তাকায় ক্যারির দিকে। আদর,আলিশা ও রাতুলে বাঁকা চোখে তাদের দিকে তাকায়।

–‘আসসালামু আলাইকুম,আমি আলিনা সিরাতুল আরোহী চৌধুরী আয়রার ওয়ান এন্ড অনলি মাম্মাম!’ আর তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর একমাত্র বউ।

খানিকটা তীক্ষ্ণতার সাথে তাকিয়ে হেঁসে বলে আরোহী।আঁধার আরোহীকে এভাবে বলতে দেখে হেঁসে ফেলে,মেয়েটা এখনো তাকে নিয়ে জেলাস ফিল করে।

–‘আরোহী!’

চেঁচিয়ে বলে উঠে ক্যাথি ও ক্যারি।তারপর কিছু একটা ভেবেই হেঁসে ফেলে তারা।

–‘সরি সরি এক্সাইটমেন্টে ভুলেই গেছিলাম তোমায়,তবে ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই হাগ ইউ?’

ক্যারির কথাটা আরোহীর কাছে ছোট বাচ্চার আবদারের মতো লাগলো,সে মাথা নাড়িয়ে সায় জানানোর সাথেই ক্যারি তাকে ও আয়রাকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো।আর ছোট ছেলেটিকে আঁধার তার কোলে তুলে নিয়ে বলে,,,

–‘চ্যাম্প কি খবর তোমার?’ আজকে আমার ঘরওয়ালীর সাথে যে?

–‘মাম্মা পাঠিয়েছে! ‘

স্পষ্ট কন্ঠ ছেলেটির।এইটুকুনি একটা ছেলের স্পষ্ট কন্ঠ শুনে ক্যাথি অবাক হয়।

–‘কেনো?’

ভ্রুকুঁচকে বলে আঁধার।

–‘বলতে বারণ আছে!’

ছেলেটির কথা শুনে আঁধার চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

–‘ওখেই।’

আর কোনো কথা হয় না তাদের মাঝে।

আদর, আলিশা ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আছে অচেনা বিদেশি মানুষদের দিকে কিন্তু ক্যারির দিকে তাকিয়ে রাতুল কি যেনো বির বির করছিলো।

পাশেই আদর দাঁড়িয়ে ছিলো,রাতুলকে বিরবির করতে দেখে আর একটু গাঁ ঘেসে দাঁড়িয়ে সে শুনার চেষ্টা করছে আসলে রাতুল কি বলছে?

তবে সে কিছুই শুনতে না পেরে হতাশ হয়,রাতুল আদরকে তার গাঁ ঘেসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু সরে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,

–‘আলিশা ভেবে ভুল করে নিশ্চয়ই আমার সাথে ঘেঁসা ঘেসি করছিলি!’বলবো নাকি তাকে?

আদর হতভম্ব হয়ে যায়, চোখ মুখ কুঁচকে সেও রাতুলের মতো ফিসফিস করে বলে,,,

–‘আর তুমি যে ক্যারি নামের মেয়েটাকে দেখে বিরবির করছিলে সেটা বলবো নাকি তাকে!’ বুড়ো হয়ে ছোট বাচ্চার দিকে নজর দিচ্ছো,নট ফেয়ার ভাইয়া!

রাতুল শুকনো ঢোক গিলে সরে দাঁড়ায় যেনো আদর তাকে খোঁচাতে না পারে। আদর রাতুলের দিকে বাঁকা হেসে নিজেও অন্যদিকে মন দেয়।

ক্যারি আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,

–‘তুমি বাস্তবে আরও কয়েকগুন বেশিই সুন্দরী আঁধারের আরু!’

–‘বাস্তবে মানে?’

আরোহীর প্রশ্ন শুনে ক্যারি এবার শুরু থেকে সবটা তাকে বলতে শুরু করে।সব শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়, তবে আরোহী ও আঁধারের মুখে বিষাদে ছায়া দেখা যায়।

আয়রাকে নিজের সাথে আর একটু চেপে ধরে আরোহী।আয়রা তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ক্যারি ও ক্যাথিকে দেখিয়ে বলে,,,

–‘আলু, ওলা তালা?’

–‘ওটা আলু না আরু হবে মা,আর ওরা তোমার আন্টি হয়।’

আরোহী মেয়ের গাল টেনে দিয়ে বলে।আয়রা মায়ের দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।তার গাল টেনে দেওয়া জিনিসটা অনেক অপছন্দের আরোহী হেঁসে ফেলে!

আঁধার এগিয়ে এসে বলে,,,

–‘সেদিন কি হয়েছিলো জানতে চাও ক্যারি?’

–‘জানার জন্যই তো এতো দূর এসেছি আঁধার, তবে তোমাদের এভাবে দেখে মনের ভিতর অনেকটা শান্তি পেয়েছি যেটা বলে প্রকাশ করা যাবে না!’

হাসোজ্জল চেহারা নিয়ে বলে ক্যারি।আরোহী ও আঁধার উভয়ে তাকায় ক্যারি ও ক্যাথি নামক রমনী দুটির দিকে,মেয়ে দু’টির চোখের কোণে স্পষ্ট পানির আভাস দেখা যাচ্ছে।

আরোহী এবার নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে ক্যারি ও ক্যাথিকে একসাথে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

–‘তোমরা অনেক ভালো ক্যারি ও ক্যাথি!’ অন্যদের কষ্টে যারা কেঁদে উঠে তারা নিঃসন্দেহ অনেক ভালো মনের মানুষ। আমার লাইফে দেখা তোমরা প্রথম অচেনা মানুষ,যারা না দেখেই আমাদের এতোটা আপন ভেবে নিয়েছে।

–‘আর আমাদের লাইফে দেখা সেরা ভালো মনের মানুষ তুমি ও সেরা প্রেমিক পুরুষ আঁধার ও আদর ভাইয়া!’ আমরা তোমাদের ভালোবেসে ফেলেছি আরো,না দেখে ভালোবাসে ফেলেছি।

ক্যারির কথায় এবার ক্যাথি সায় দিয়ে বলে,,,

–‘আমরা অনেক ভালোবাসি তোমাদের আরো,তবে আমরা তোমাদের এক্সিডেন্টের দিন থেকে বাকি ঘটনাগুলো শুনতে চাই প্লিজ!’

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরোহী বলে,,,

–‘আচ্ছা বলবো তবে এখানে নয় বাসায় গিয়ে,যাবে তো আমাদের বাসায় তোমরা আমাদের সাথে?’

ক্যারি ও ক্যাথি হেঁসে আবার একসাথে বলে,,,,

–‘ইয়েস ডিয়ার হোয়াই নট!’

ফ্লোরা ও রিহান মনে মবে অনেক শান্তি পায়,তাদের মেয়েদের এতো দূর আসা সার্থক হয়েছে। তার মেয়েরা হাসি মুখে থাকতে পারবে এবার।

#চলবে?

নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৪২+৪৩

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪২

🍁

পরেরদিন বিকেলে রাহিরা সকলে চৌধুরী ম্যানশনে হাজির।তৌফিক চৌধুরী ও শিরিন চৌধুরী এসেই নিজেদের রুমে চলে গিয়েছেন ফ্রেস হতে।

শিহাব ও রাহি ড্রয়িং রুমের সোফায় শরীর এলিয়ে বসে আছে।তারা মূলত সকলে শিরিন চৌধুরীর বোনের বাড়ি চট্টগ্রামে বেড়াতে গেছিলো।

–‘রাহু তোর গাঁ থেকে গন্ধ আসছে, সরে বস!’

আরোহীর কথায় বড় বড় চোখে তাকায় তার দিকে রাহি।কিন্তু আরোহী নাক মুখ চেপে ধরেই বসে আছে।

–‘সত্যি বলছিস আরো?’

অবিশ্বাসো কন্ঠস্বর রাহির।শিহাব পাশেই বসে মুখ চেপে হাসছে।

–‘সরে বস তো!’

বিরক্ত হয়ে বলে আরোহী, রাহি কাঁদো কাঁদো ফেঁস করে বলে,,,,

–‘আমার গাঁ থেকে গন্ধ আসছে এটাও সম্ভব?’

বলতে বলতেই উপরে ছুটে চলে যায় রাহি,আরোহী এবার স্বাভাবিক হয়ে বসে। শিহাব নিজেও মুখ টিপে হেসে পেছনে পেছনে চলে যায়।

আরোহী দীর্ঘস্বাস ছাড়ে!এখন একটু গন্ধ যদি তার থেকে দশ হাত দূরে ও থাকে তবুও যেভাবেই হোক না কেনো তার নাক গন্ধ পাবেই।

এরইমধ্যে আঁকলিমা চৌধুরী হাতে কিছু ফল নিয়ে হাজির হন,সেটা দেখেই নাক মুখ কুঁচকায় আরোহী।আঁকলিমা চৌধুরী হেঁসে বলেন,,,

–‘পুষ্টিকর খাবার দেখেই চোখ মুখ কুঁচকাচ্ছেন আম্মা, এইগুলোই খেতে হবে এখন আপনার চুপচাপ সব কয়টা শেষ করেন!’

আরোহী অসহায় চোখে তাকায় মিসেস আঁকলিমা চৌধুরীর দিকে।আঁকলিমা চৌধুরী হেঁসেই আবার যেভাবে এসেছিলেন ওই ভাবেই রান্নাঘরে চলে যান।

!

!

রাহি গোসল করে বের হতেই দু’হাতে তাকে ঝাপটে ধরে শিহাব!চমকে উঠে রাহি,

–‘রিল্যাক্স আমি এটা, এতো ভয় পাও কেনো এখনো?’

শিহাবের কন্ঠ শুনে শান্ত হয় রাহি।

–‘এভাবে কেউ ধরে ভয় পেয়ে গেছিলাম তো!’

হাফ ছেড়ে বলে রাহি।শিহাব আর একটু শক্ত করে ধরে বলে,,,,

–‘বরের ছোঁয়া এখনো চিনতে পারো না,কেমন বউ তুমি!’

–‘ছাড়ো তো, ভালো লাগছে না!’

শান্ত কন্ঠ রাহির।

–‘কি হলো আবার তোমার?’

–‘মাথাটা ঘুরছিলো কেনো জানি না, একটু আগে বমি ও হলো অনেক!’

ক্লান্ত কন্ঠে বলে রাহি।

–‘কি হলো এমন হা করে কি দেখছো?’

শিহাবকে হা করে তাকাতে দেখে বলে রাহি।

–‘তুমি প্রেগন্যান্ট?’

হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে বলে শিহাব।হকচকিয়ে যায় রাহি,একটা হাত আপনা আপনি তার পেটে চলে যায়।

–‘কি বলছো এসব তুমি?’

নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে রাহি।

–‘আরে হ্যাঁ, তোমার লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছিলো?’

–‘দু মাস আগে!’

শিহাব খুশিতে জড়িয়ে ধরে রাহির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,,

–‘ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব কাল রেডি থেকো!’

রাহি হতভম্ব হয়ে যায়, আসলেই কি শিহাব যেটা ভাবছে সেটাই হবে নাকি হবে না!যদি না হয় তাহলে তো শিহাব অনেক কষ্ট পাবে আর যদি হয় তাহলে?

!

!

রাত তখন দুইটা,,,,

আরোহীর প্রতিদিনের মতোই আজকে ও ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম ঘুম কন্ঠে সে আজকে আর আঁধারকে ডাকে না,আঁধারের বুকে আকিঁ বুকিঁ করতে শুরু করে।

আঁধার নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু আরোহী এবার আঁধারের চুলে হাত বুলিয়ে,দারিগুলোতে হাত বুলাতে শুরু করে।

আঁধার ঘুম ঘুম চোখে আরোহীর দিকে তাকায়। আরোহী মিষ্টি হেঁসে বলে,,,,

–‘আপনি চোখ খুলছেন কেনো?’

–‘আমি চোখ খুললে কি হবে?’

ঘুমঘুম কন্ঠ আঁধারের।আরোহী ক্রাশ খায় আঁধারের ঘুম ঘুম কন্ঠের উপর।

–‘আমার কাজের ডিস্টার্ব হচ্ছে তো?’

আঁধারের চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে আরোহী। আঁধার এবার আরোহীর হাতটা টেনে নিয়ে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,

–‘আপনি কি আমায় সিডিউস করতে চাচ্ছেন ম্যাডাম?’ কিন্তু সেটা তো এখন আর সম্ভব নয়।

আরোহী হতভম্ব হয়ে যায়,,,,

–‘অসভ্য লোক, আমি কখন সেটা বললাম!’

–‘নাম মুখ কুঁচকিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছো আমি মিথ্যে বলছি?’

অন্যরকম কন্ঠ আঁধারের,আরোহী থতমত খেয়ে যায়। নিজেকে সামলিয়ে বলে,,,,

–‘আমি আইসক্রিম খাবো!’

ভ্রুকুঁচকিয়ে বলে আঁধার,,,,

–‘অন্য কি খাবা সেটা বলো!’ বাবুর ঠান্ডা লাগবে এখন এইসব খাওয়া যাবে না।

–‘না আমি খাবোই!’

জেদি কন্ঠস্বর আরোহীর।

আঁধার কিছু না বলেই উঠে চলে যায়।আরোহী অবাক হয় হঠাৎ আঁধারকে এভাবে উঠে বাহিরে যেতে দেখে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আঁধার একটা বাটিতে আইসক্রিম নিয়ে এসে কোনো কথা ছাড়াই আরোহীর সামনে রেখে শুয়ে পড়ে।

আরোহী আঁধারের দিকে একটু তাকায় তবে আঁধারকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাতে দেখে হালকা হাসে আরোহী।

তবে মুখে কিছু বলে না আর চুপচাপ সবগুলো আইসক্রিম খেয়ে বাটিটা একপাশে রেখে শুয়ে পড়ে সে ও।

আঁধার তখনো উল্টো দিকে ঘুরে আছে,আরোহী এবার একটু এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,

–‘আমি ঘুমাচ্ছি!’

আঁধার কোনো রেসপন্স করে না আর না ঘুরে জড়িয়ে ধরে। তার অভিমান হয়েছে আরোহী তার কোনো কথায় শুনতে চায় না! সে ও ওভাবেই ঘুমিয়ে যায়।

পরের দিন সকালে ছেলেরা সকলে অফিসে চলে গেছে আর মেয়েরা নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।শিরিন চৌধুরী ও আঁকলিমা চৌধুরী রান্নার কাজে, আলিশা তার বাচ্চাদের সামলাচ্ছে,লিমা তাকে সাহায্য করছে আর রাহি ও আরোহী বসে বসে টিভি দেখছে।

রাহি পানি খাচ্ছিলো,তখনই হঠাৎ করেই আরোহী চিৎকার দিয়ে উঠে।রাহির হাত থেকে পানির গ্লাস পরে যায়।

রান্না ঘর থেকে শিরিন চৌধুরী ও আঁকলিমা চৌধুরী দৌড়ে চলে আসেন।আরোহী তখন পেটে হাত দিয়ে ব্যাথায় ছটফট করছিলো।

তারা সকলে আরোহীকে দেখে বুঝতে পারে তার লেবার পেইন উঠছে, শিরিন চৌধুরী তাড়াতাড়ি আঁধারকে ফোন করেন।

কিন্তু সে ফোন রিসিভ করে না,এরইমধ্যে আঁধার ও শিহাব হাতে কতোগুলো ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে।কিন্তু আরোহীর অবস্থা দেখে আঁধার সবকিছু ফেলে ছুটে চলে যায় তার কাছে।

আঁধার কি করবে বুঝতে পারছিলো না, তখনই শিহাব তাকে তাড়া দেয় আরোহীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য!

আঁধারের টনক নড়ে, সে আরোহীকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেয় পাশেই বসে সে চট জলদি ড্রাইভিং শুরু করে।

শিহাবরা হতভম্ব হয়ে যায়, তাদের রেখে ততোক্ষণ আঁধার আরোহীকে নিয়ে চলে গেছে।শিহাব আর কিছু না ভেবে সকলকে নিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে বসে।

আরোহী ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে।আঁধার টলমল চোখে এক বার আরোহীর দিকে তাকায় আর একবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তার নিজেকে পাগল পাগল লাগতে শুরু করে।

–‘কিছু হবে না আরু,আর একটু সহ্য করো এই তো চলে এসেছি!’

আরোহীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে আঁধার, আরোহী ব্যাথায় ছটফট করতে করতে কোনো মতো টেনে টেনে বলে,,,,

–‘আ-আ-মার খু-ব ক-ষ্ট হ.চ্ছে!’ মনে হচ্ছে আমি বাঁচবো না আঁধার!

–‘আরু এভাবে বলো না আমার কষ্ট হচ্ছে তো আরু,আমি আছি তো আমি তোমায় কিছু হতে দেবো না!’

আরোহীর কপালে চুমু দিয়ে কথাটা বলে আঁধার যখন সামনের দিকে তাকালো,তার অন্তর আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো!

সামনের দিক থেকে একটা বড় মালবাহী ট্রাক ধেয়ে আসছে তাদের গাড়ির দিকে,আঁধার আরোহীর দিকে তাকিয়ে কথা বলার কারণে বুঝতেই পারেনি।

গাড়ি সাইডে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ও তার কাছে নেই এখন তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই আরোহীকে ঝাপটে ধরে গাড়ি পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করলো তবে শেষ রক্ষা আর হলো না!

মুহুর্তেই যেনো দু’টো গাড়ির সংঘর্ষে বিকট একটা শব্দ তৈরি হলো।আঁধার পিট পিট করে চোখ খুলে ধির কন্ঠে শুধু একবারই বললো,,,,,

–‘ভালোবা-সি আরু-পাখি,তোমা-য় শেষবারের মতো র-ক্ষা করতে পারলাম না!’

আরোহী আঁধারের বুকে লেপ্টে থাকলেও তার অবস্থা খারাপ পুরো শরীরে রক্তে মাখামাখি, আর আঁধার সে তো তার আরু পাখিকে বাঁচাতে গিয়েই নিশ্চুপ হয়ে আছে।তার মাথা দিয়ে রক্তের স্রোত পড়ছে একসময় দু’জনে একসাথে নিস্তেজ হয়ে যায়।

নিস্তেজ হওয়ার আগে আরোহী একবার আঁধারের মুখটা ছুঁয়ে দেখে নেয়।তারপর ধিরে ধিরে চোখ বুঁজে আসে তার।

হয়তো সেও শেষ বারের মতো তার রাগী গম্ভীর বরটাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার ইচ্ছে হয়তো পূরণ হওয়ার ছিলো না।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪৩

🍁

এইটুকু পড়তেই ক্যারির হাত থেকে ডায়েরিটি ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো! তার চোখ দিয়ে ও অঝোর ধারায় বৃষ্টির পানির মতো চোখের পানি পড়ছে!

সে যেনো একটা ঘোড়ের মধ্যে আছে,কিন্তু তার চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছেই। তার পাশের ক্যাথির ও একই অবস্থা!

এই মুহুর্তে যে কেউ এই দু বোনকে দেখলে বলবে তারা নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের কাছে ধোকা খেয়েছে, তাই এভাবে কাঁদছে আর মূর্তির মতো বসে আছে!মিসেস ফ্লোরা ফারুকি রুমে ঢুকেই মেয়েদের অবস্থা দেখে অবাক হন!

–‘হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই চাইল্ডস?’ হোয়ায় বোথ আর ইউ ক্রায়িং?’

অস্থির কন্ঠে যখন কথাটা বলেই এগিয়ে আসেন মিসেস ফ্লোরা ফারুকি তখন তাদের উভয়ের ধ্যান ভাঙ্গে।কিন্তু কান্না থামে না!

ক্যাথি দৌড়ে গিয়ে তার মমকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে। কিন্তু ক্যারি কিছু একটা ভেবে ফ্লোর থেকে নীল কভারের ডায়েরিটি সযত্নে হাতে তুলে নেয়!

মিসেস ফ্লোরা ক্যারির দিকে অদ্ভুত নজরে তাকান, তবে ক্যাথির কান্নার বেগ বারতে দেখে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তবে ক্যারির থেকে নজর সরিয়ে নেননি তিনি।

ক্যারি সময় নষ্ট না করেই ডায়েরিটি উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে,তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি না পেয়ে এবার সে ডায়েরিটি ছুঁড়ে মারে!

ডায়েরিটি ছুঁড়ে মারতেই সেটা একটা কাঁচের শোপিজে লেগে নিচে পড়ে যায়,আর শোপিজটি পড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু ভাঙ্গার শব্দ ক্যাথির কান্না থেমে যায়, মিসেস ফ্লোরা ফারুকি আঁতকে উঠেন।

কারণ শোপিজটি ক্যারির প্রিয় শোপিজেগুলোর মধ্যে এজটা! ক্যাথি চোখের পানি মুছে ক্যারির দিকে তাকায়, ক্যারি নিজের চুল খাঁমচে ধরে মাথা নিচু করে আছে।

মিসেস ফ্লোরা ফারুকি অবাক হন,কারণ নিজের প্রিয় জিনিস গুলোর ব্যাপারে ক্যারি অনেক কঠোর, আর সেই ক্যারিই কি না এখন অব্দি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে!

ব্যাপারটা যে অনেক সিরিয়াস সেটা তিনিই ভালোই বুঝতে পারছেন।তিনি ক্যারির এগিয়ে যেতে গেলেই সে উঠে সোজা ডায়েরিটির কাছে চলে যায়, এতে করে তার পায়ে বেশ কয়েকটা কাঁচ ঢুকে যায়।

চেঁচিয়ে উঠে ক্যারি,ক্যাথি ও মিসেস ফ্লোরা ফারুকি দৌড়ে এগিয়ে যান!তবে ততোক্ষণে ক্যারি ডায়েরিটি কুড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে!

অবাকের থেকেও বেশি অবাক হয়ে যান এবার ফ্লোরা! থেমে যায় তার পদচারণ, তবে থেমে থাকেনা ক্যাথি!কিন্তু তাকেও থেমে যেতে হয় ফ্লোরার কারণে!তার হাত টেনে থামিয়ে দেন ফ্লোরা!

–‘ক্যাথি ডিয়ার কেয়ার ফুল,গ্লাস গুলো পায়ে গেঁথে যেতে পারে!’

–‘বাট মম!’

–‘আমি দেখছি,তুমি দাড়াও!’

বলেই তিনি একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে পরিষ্কার করতে করতে এগিয়ে যান!ক্যারিকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দেন তবে কোনো প্রশ্ন করেনি এখনো তিনি!

ক্যারি একপলক নিজের মমের দিকে তাকায়, তারপর চোখ ঘুড়িয়ে তার জমজ বোন ক্যাথির দিকে তাকায়। ক্যাথি তার বোনের দৃষ্টি দেখে এগিয়ে এসে পাশে বসেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়!

ক্যারি তার বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে হাউমাউ করে!ফ্লোরা ততোক্ষণে ক্যারির পায়ের কাঁচগুলো বের করে ড্রেসিং করে দেন।

ক্যারি তখনো কান্না থামায়নি আর তার সাথে এবার ক্যাথিও যোগ দিয়েছে।

ফ্লোরা এবার দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়,মায়ের ভালোবাসা পেয়ে দু’বোনে মাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না কাটি করে!তবে একসময় চুপ হয়ে যায়।

–‘হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই ডিয়ার এঞ্জেল’স?’

দু’বোনের মাঝখানে বসে কথাটি বলেন ফ্লোরা ফারুকি!

–‘মম উই ওয়ান্ট টু গো দেয়ার!’

কাতর কন্ঠস্বর ক্যারির! ফ্লোরা ভিষণ অবাক হন,অবাক কন্ঠেই তিনি এবার বলে উঠেন,,,

–‘হোয়ার ডিয়ার?’

–‘বাংলাদেশে , আওয়ার কান্ট্রি মম।’

ক্যাথি তার মায়ের কাথে মাথা রেখে বলে।ফ্লোরা চরমে ওঠেন।

–‘বাট তোমরা তো…’

–‘উই নো মম,বাট বাংলাদেশের সব মানুষ এক হয় না মম!’ নাও উই লাভ’স দ্যাট কান্ট্রি!

মাঝ পথে থেমে যেতে হয় ফ্লোরা ফারুকিকে, ক্যারির এহেন কথায় চরমে যান তিনি!’

–‘আমরা যেতে চাই মম,প্লিজ!’

ক্যারির কথা শেষ হতেই ক্যাথি অনুরোধের কন্ঠে বলে উঠে কথাটি।

–‘বাট হোয়াই ডিয়ার?’ আই কান্ট আন্ডারসট্যান্ড হোয়াই আর বোথ অফ ইউ গো দেয়ার?’

ফ্লোরার কথা শুনে ক্যারি এবার উৎসাহের সাথে বলে উঠলো,,,

–‘ তাশরিফ আঁধার চৌধুরী!’

–‘হোয়াট,হু ইজ হি?’

ফ্লোরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

–‘আরোহী’স হাসবেন্ড!’

–‘আরোহী, হু ইজ দ্যাট গার্ল?’

আরেক বার অবাক কন্ঠ ফ্লোরা ফারুকির।

এবার ক্যারি ও ক্যাথি উভয়েই একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,

–‘উফ মম,দে আর হাসবেন্ড ওয়াইফ!’

–‘ওখেই আই আন্ডারসট্যান্ড ডিয়ার, বাট আই ডন্ট নো হু ইজ হি এন্ড সি?’

–‘লুক এট দিস মম?’

–‘বুক?’

ক্যারির হাতের ডায়রিটিকে দেখে যখন ফ্লোরা ফারুকি কথাটি বললেন সাথে সাথেই দু’বোননে একত্রে হেঁসে উঠলো।

–‘নো,ইট’স কল ডায়েরি!’

উৎসাহের সাথে কথাটি বলে উঠে ক্যাথি।ফ্লোরা ফারুকি এবার ভালো করে লক্ষ করলেন!হ্যা আসলেই এটা ডায়েরি যেটা তার ছোট রাজকন্যাটা বুকে জড়িয়ে ধরে ছিলো এতোক্ষণ। কিন্তু কি আছে এতে?

–‘ওহ,আই সি!’ বাট এটা তো পুরাতন মনে হচ্ছে আর কারো ইউস করা ও মনে হচ্ছে ? কিন্তু তোমাদের কাছে কেনো? কার ডায়েরি এটা?

চিন্তিত কন্ঠ ফ্লোরা ফারুকির! এবার তার দুই মেয়ে তাকে দু’দিকে থেকে জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ ঘটনা শুরু থেকে বলতে শুরু করে সবে শর্ট ভাবে।

সবটা শুনে তিনি একবার তার মেয়েদের দিকে তাকান!তারা বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য কতোটা এক্সাইটেড দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি এবার বললেন,,,

–‘বাট আঁধার ও আরোহীকে তোমারা খুঁজে পাবে কিভাবে ডিয়ার?’ বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও সেখানে কোটি কোটি মানুষ থাকে?

মায়ের কথা শুনে ক্যারি ও ক্যাথি চিন্তায় পড়ে যায় আসলেই তো? মন খারাপ করে বসে পড়ে দু’জনে।

–‘ওরা তো অন্য দেশের ও হতে পারে তোমরা সিয়র হচ্ছো কিভাবে ওরা বাংলাদেরই?’

ফ্লোরা ফারুকি ভাবুক হয়ে বলেন।

–‘কজ আমরা লাস্ট টাইম,আই মিন তিন /চার বছর আগে যখন বাংলাদেশে গেছিলাম এই ডায়েরিটা আমরা সেখানেই একটা গাছ তলায় পেয়েছিলাম!’ নিয়ে এসেছিলাম ঠিকই তবে পড়ার সুযোগ হয়নি কখনো!

ক্যারির কথায় তার মা তার দিকে তাকায় এবার!

–‘কিন্তু কোথায় সেটা?’

–‘গ্রান্ডমমের বাসা থেকে অনেক দূরে ঘুরতে এসে পেয়েছিলাম!’

ক্যাথি তার মায়ের উৎসহের কন্ঠ শুনে বলে।

–‘ইউ মিন চট্টগ্রাম?’

–‘ইয়াহ আওয়ার লাভলি মাদার!’

আবার একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠে তারা।

–‘ডায়েরিটাতে তাদের ঠিকানা,বা এনিথিং ইল’স আছে কি?’

কৌতূহল অনুযায়ী জিজ্ঞেস করে ফ্লোরা ফারুকি।

–‘নো মম!’

ক্যাথি মন খারাপ করে বলে।

–‘এমনকি শেষ এ আর কিছুই লেখা নেই মম সব পেইজ সাদা!’

উদাস কন্ঠ ক্যারির।

–‘তাহলে খুঁজবে কিভাবে?’

–‘উই ডন্ট নো!’

চিন্তিত কন্ঠ তাদের। ফ্লোরার নিজের ও বাচ্চাদের কাছে এসব শুনে কৌতূহল জেগেছে কিন্তু কিভাবে খুঁজবে তাদের সেটায় বুঝতে পারছে না।অনেকক্ষণ ভাবার পর এবার তিনিই চেঁচিয়ে উঠেন,,,,

–‘সোশাল মিডিয়া!’

ক্যাথি ও ক্যারি নিজেরাও চমকে উঠে, আসলেই তো তারা এতোক্ষণ ভাবেই নি এটা।আর কিছু না ভেবে একসাথে জড়িয়ে ধরে তার মাকে।

–‘লাভ ইউ মম!’

তার মায়ের দু’গালে চুমু দিয়ে বলে দু’জনেই।ফ্লোরা ফারুকি হেঁসেই বলে উঠেন,,,,

–‘সার্চ করো তাহলে কুইক!’

ক্যারি দৌড়ে ডিভান থেকে নিজের আই প্যাড নিয়ে আসে।প্রথমেই তারা তাশরিফ আঁধার চৌধুরী দিয়ে সার্চ করে,সামনে একটা সুদর্শন পুরুষের ছবি ভেসে ওঠে।

ডায়েরিতে আরোহীর বর্ণনা অনুযায়ী তাদের বুঝতে সমস্যা হয়না এটা আঁধার!

আরোহীর আঁধার যাকে তারা খুঁজছিলো।আঁধারকে দেখে তার উভয়েই ক্রাশ খেয়ে যায়,তাদের মতে আঁধারের মতো সুদর্শন পুরুষকে তারা কখনোই দেখেনি।

কিন্তু তার আইডিতে ঘুরতে গিয়ে হতাশ হয় তারা কারণ তিন বছর আগের পোস্ট সব।তার মানে হয়তো তার পর থেকে আঁধার আর সোশাল মিডিয়াতে আসে নি।মন খারাপ হয়ে যায় তাদের, তাহলে কি আঁধার আর বেঁচে নেই।

–‘নো নো ইটস নট পসিবল, মম আঁধার বেঁচে আছে তাই না? ‘ আমি জানি আঁধার বেঁচে আছে, আমার হার্ট বলছে।

ক্যারির চিৎকারে ফ্লোরা ফারুকি দীর্ঘস্বাস ছাড়েন,তার মেয়ের কথা যেনো সত্যি হয় সেটা উনি নিজেও চান। তবে আঁধারের সোশাল মিডিয়া একাউন্ট দেখে মনে হচ্ছে তার মেয়ের চিন্তা ভাবনা ভুল।

–‘ক্যারি,আরোর নামের একাউন্ট খুঁজে পেলাম না তো!’

ক্যাথির কথায় ক্যারি এবার চোখ মুছে বলে,,,,

–‘ দেখি! ‘

এরপরও সে আঁধারের একাউন্টে আবার ঢুকে তার ঠিকানা, ভার্সিটি সব দেখে নেয়।

–‘আঁধারের বাসা ঢাকাতেই, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তো তার মানে আরোহী ও সেখানেই পড়তো।’ আমাদের ঢাকায় যেতে হবে ক্যাথি আর আজকেই।

–‘হোয়াট আর ইউ সেয়িং ডিয়ার?’ বাংলাদেশ আর আজকেই, আর ইউ ক্রেজি?

ফ্লোরা ফারুকির কথা শুনে ক্যাথি ও ক্যারি অসহায় চোখে তাকায় তার মায়ের দিকে।কিন্তু তাদের পাত্তা না দিয়ে ফ্লোরা ফারুকি রুম থেকে বের হয়ে যায়।

–‘মম তো চলে গেলো!’

ক্যাথির কথা শুনে ক্যারি এবার উৎসাহের সাথে বলে,,,

–‘ডোন্ট প্যানিক,আমরা যাচ্ছি এটাই ফাইনাল!’ আমি এই নীল ডায়েরির মেয়েটি কে সেটা দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি! আই ওয়ান্ট টু সি হার এন্ড আই ওয়ান্ট টু নো , পরে কি হলো? কোথায় তারা?

–‘বাট মম?’

–‘ডোন্ড ওয়ারি আমরা রাজি করাবো চল!’

ক্যারির কথা শুনে ক্যাথি মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়।কারণ সে নিজেও এক্সাইটেড নীল ডায়েরির সেই মেয়েটিকে দেখার জন্য।

আচ্ছা আঁধারের মতো কি আরোহী ও দেখতে সুন্দর হবে?আঁধার কি আদোও বেঁচে আছে আর আরোহী ও তাদের বেবি? দু”বোনেই অনেক এক্সাইটেড!

#চলবে?

নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৪০+৪১

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪০

🍁

আজকের সকালটা অন্য রকম ভাবে শুরু হলো সকলের,,,

চৌধুরী পরিবারের আজকে উৎসবের দিন , আর হবে নাই বা কেনো? একসাথে কালকে দ্বিগুণ খুশির খবর পেলো আর আজকে আরও একটা যোগ হয়ে গেলো তারা কি আর খুশি না হয়ে থাকতে পারে?

তাহশিফ ও তাহমিদকে দেখতে এসেছে আঁধারের নানার পরিবারের সকলেই, তবে তারা এসে যে এতো বড় আর একটা খুশির সংবাদ পাবে সেটা বুঝতে পারেনি।

সকলে আজকে ভিষণ খুশি, আরোহীর যত্নের জন্য সকলেই আজকে যেনো উঠে পড়ে লেগেছে।

আরোহী অনেকটায় অবাক হয়ে গেছে, কারণ একদিন হলো তারা শুনেছে কিন্তু তাদের যত্ন দেখে মনে হচ্ছে তারা কতোদিন থেকে এই দিনটারই অপেক্ষা করছিলো।

আরোহীর আজকে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে! সকলের এতো ভালোবাসা এতো কেয়ার সব তো শুধু মাত্র তারই জন্যই তাহলে সে তো ভাগ্যবতীই হলো নাকি!

আঁধারের মামী সুরাইয়া বেগম তিনি ও আজকে আরোহীকে কাছে টেনে আদর করে দিয়ে বলেছেন,,,,”স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাক মা,আর পারলে তোমার এই খারাপ মাটাকে ক্ষমা করে দিয়ো”।

আরোহী তাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর স্বাভাবিক হয়ে গেছে তার সাথে।মহিলাটা আসলে যতোটা কঠোর দেখিয়ে ছিলো তাকে তিনি তার থেকে আরও কয়েকগুন ভালো।

আরোহী ভিষণ খুশি, কিন্তু সকলের মাঝে সে আঁধারের সাথে তার খুশিটা ভাগ করতে পারছে না ভেবেই অস্থির হচ্ছে বার বার সে।

আমজাদ শেখ তো হাঁড়ি হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে এসেছেন সাথে তারেক চৌধুরী ও সেম কাজটায় করেছেন!এখন সেগুলো মহল্লায় ও আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

আঁকলিমা চৌধুরী আরোহীকে রীতিমতো দুই প্লেট ফল খাইয়ে ফেলেছেন। আরোহী অবশ্য বিরক্ত হচ্ছে না তার বরং ভালোই লাগছে এসব।

আঁধার বার বার আরোহীর আশে পাশে ঘুরঘুর করছে, তবে একা পাচ্ছে না এখন আর তার বউকে।অসহায় চোখে বার বার আরোহীর দিকে তাকাচ্ছে সে।

আরোহী কেনো জানি না আজকে এইসব কাহিনি মজাই লাগছে।বিশেষ করে আঁধারের অসহায় চাহনি, ভেবেই হেঁসে কুটিকুটি খাচ্ছে সে।

আরোহীর হাঁসি দেখে দু’বার অবশ্য আঁধার চোখ রাঙ্গানি ও দিয়েছে তবে কাজ হয়নি!আজকে হয়তো আরোহীর হাসার দিন তাই তো আঁধারের চোখ রাঙ্গানি হোক কিংবা রাগী চাহনি হোক কোনটাই আজকে আরোহীকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে নি।

রাহি আর শিহাব তো এখনই আরোহী ও আঁধারের বাচ্চার নামের প্লানিং এ লেগে পড়েছে।নাম ঠিক করছে কম তারা কিন্তু ঝগড়া করছে বেশি।

এরইমধ্যে তৌহিদ চৌধুরী ও তারেক চৌধুরীর সব ঝামেলা ভুল বোঝা বুঝি মিটেও গেছে।বাচ্চারা আবদার করেছে তারা একই সঙ্গে থাকবে, তাই তো চৌধুরী ম্যানশনে সকলে একসঙ্গে থাকবে বলে ঠিক করেছে।

যেহেতু শিহাবরা থাকবে তাহলে রাহিও থাকবে তাই আরোহীর খুশি আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে যেনো আজকে।তৌহিদ চৌধুরী কালকেই এখানে চলে আসবেন বলেছেন।

রাতে,,,,

আরোহী একা একা বসে আছে বিছানায় হেলান দিয়ে,আঁধার অফিসের ফাইল ঘাটাঘাটি করছে!আরোহী মনে হয় এবার ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়,তাই তো একটা বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে আবার চুপচাপ বসে থাকে।

তবে এতে আঁধারের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না,সে নির্বাক হয়ে নিজের কাজই করছে!মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে কাজ ছাড়া তার আশে পাশে কিছুই নেই,তাই এক মুহূর্তের জন্য কাজ না করলে সে মরে মরে শহীদ হয়ে যাবে।

–‘এই যে?’

আরোহীর শান্ত কন্ঠস্বর।আঁধার তাকায় না,তবে মাথা নাড়ায়! যার অর্থ নাটক না করে বলে ফেলো।আরোহীর বিরক্ত যেনো এবার খানিকটা বেড়ে যায়, তবে সে প্রকাশ করে না সেটা।

আবার আঁধারের উদ্দেশ্যে বলে সে,,,

–‘ঘুমাবো তো!’

–‘ঘুমাও!’

নির্লিপ্ত কণ্ঠস্বর আঁধারের।

–‘আপনি কখন ঘুমাবেন?’

খানিকটা চেঁচিয়ে বলে উঠে এবার আরোহী। আঁধার একটা ভ্রু উঁচু করে সামান্য তাকায়, তবে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিতে দিতেই বলে উঠে,,,,

–‘কাজ শেষ করেই, তুমি ঘুমাও না!’

–‘না আপনি এখনই ঘুমাবেন আর সেটা ও আমার সাথেই!’

জেদি কন্ঠে বলে উঠে এবার আরোহী। আঁধার নিজের কাজ করতে করতে বলে,,,,

–‘কাজ আছে অনেক আরু, ঘুমাও তুমি আমি আসছি একটু পর!’

–‘আপনি এখন এ এসে শুয়ে পড়বেন, এখন মানে এখন!’ নাহলে আমিও ঘুমাবো না।

–‘জেদ করো না আরু শুয়ে পড়ো তুমি রাত জাগা তোমার আর বেবির দু’জনের জন্যই ভালো না!’

কিছুটা শক্ত কন্ঠে বলে উঠে আঁধার। আরোহীর এবার কান্না পায়, তবুও নিজেকে শান্ত করে আবার বলে,,,,

–‘বললাম তো আপনি না আসলে আমি ঘুমাবো না!’

ব্যাস আঁধারকে রাগানোর জন্য এই একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো। রাগে ফুঁসে উঠে হাতে থাকা ফাইলটা আঁছাড় মেরে বলে উঠে আঁধার,,,,,

–‘কথা বুঝিস না তুই, এক কথা কয়বার বলার লাগে তোকে?’ ঘুমাবি না তো কি করবি রাত জেগে,নাচবি? থা’পড়ায় সোজা করে দিবো একদম বেয়াদব মেয়ে! চুপচাপ শুয়ে পড় বেশি কাহিনি করবি তো বাগানে অন্ধকারে রেখে আসবো!’

আঁধারের ধমক খেয়ে আরোহী আর নিজেও আটকাতে পারে না,চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হয় তার!কিন্তু আঁধার সেদিকে খেয়াল না দিয়ে আবার ধমকে উঠে,,,,

–‘কথা কানে যায়নি তোমার,এখনো বসে আছো কেনো?’

ভয়ে কেঁপে উঠে আরোহী চুপচাপ শুয়ে পড়ে, আর একটা বাক্য ও ব্যায় করে না। তবে আঁধার ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে,হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করে।

এরইমধ্যে আরোহী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়, শক্ত চোখে তাকায় আঁধার। তবে আরোহী সেদিকে পাত্তা না দিয়েই চোখের পানি মুছে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে রাগে জেঁদে দরজা খুলে বের হয়ে যায়।

আঁধার সবটাই দাঁড়িয়ে দেখে তবে সে কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে পারে না।চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করে সে ও আরোহীর পেছন পেছন এগিয়ে যায়।

আরোহী গেস্ট রুমে ঢুকে কেবল দরজা আঁটকে দিবে তার আগেই আঁধার হাত দিয়ে আঁটকে দেয়। আরোহী আঁধারকে দেখে ভয় পেয়ে যায়,কারণ আঁধারের রাগ সম্পর্কে তার ধারণা আছে।

তবে মুখে সেটা প্রকাশ করে না বরং আবার দরজা লাগানোর চেষ্টা করে। আঁধার এবার তাকে এক হাতে আগলিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়!

আরোহী তাকায় তার দিকে,আঁধারকে রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকাতে দেখে মিইয়ে যায় এবার সে।তবে পরক্ষণেই নিজেও শক্ত চোখে তার দিকে তাকায়।

নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে তবে পারে না,আঁধারের কাছে সে যে চুনোপুঁটি সেটা সে কেনো সকলেই ভালো করে জানে। তাই আর বেকার চেষ্টা না করে মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নেয়।

আঁধার আর সময় ব্যায় না করেই ঝট করে কোলে তুলে নেয় তার অভিমানী প্রেয়শীকে।তবে এবার আরোহী নিজেই মুখ ফুটে বলে,,,,

–‘যাবো না কোথাও আমি নামান আমায়!’

–‘অনুমতি চেয়েছি নাকি?’

শক্ত কন্ঠ আঁধারের।আরোহী কেঁদে ফেলে, আঁধার সামনে এগুতে শুরু করে। এরইমধ্যে আরোহী চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,,

–‘আমি আপনাকে আমায় ছোঁয়ার অনুমতি দেই নি মিস্টার চৌধুরী, নামান আমায় নাহলে ভালো হবে না কিন্তু!’

–‘তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর কারো অনুমতির দরকার বা প্রয়োজন হয় না!’ আর তোমার ক্ষেত্রে তো নাহহই।

খানিকটা উপহাসের সুরে বলে আঁধার। আরোহী আবার চেঁচিয়ে উঠে,,,,

–‘নামাবেন আপনি?’ নাকি কামড়িয়ে দেবো!’

–‘চেঁচিয়ো না আরুপাখি সকলে কি ভাববে বলো তো তুমি যে ছোট বাচ্চা সেটা কি সকলে দেখানোটা জরুরি?’ আর কামড়া কামড়ি রুমে গিয়ে করো যতো ইচ্ছে।

নরম সুরে বলে এবার আঁধার, আরোহী আর তর্কে জড়ায় না তবে কান্না থামায় না!

আরোহীকে বিছানায় শুয়ে দেয় আঁধার, দিয়েই আবার বাহিরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর হাতে এক গ্লাস জুস নিয়ে আসে।

–‘নাও খেয়ে নাও এতোক্ষণ চেঁচামেচি করে গলা শুঁকিয়ে গেছে নিশ্চয়ই!’

জুসের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে আঁধার, আরোহী কোনো বাহানা ছাড়াই নিয়ে নেয় কারণ তার আসলেই গলা শুঁকিয়ে গেছে।

এবার দরজা বন্ধ করে এসে আরোহীর পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ে, আঁধারকে গাঁ ঘেসে শুতে দেখেই আর একটু বিছানার কিনারে সরে যায় আরোহী।

আঁধার সময় ব্যায় না করে টেনে জড়িয়ে ধরে। আরোহী ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করে তবে আঁধার আরও শক্ত করে ধরে।

–‘বেকার এনার্জিগুলো নষ্ট করছো কেনো জান, তুমি ভালো করেই জানো দূরে যাওয়ার ক্ষমতা তোমার নেই!’ আর যেতে চাইলেও আমি যেতে দিবো না।

বলেই শব্দ করে আরোহী কপালে চুমু খায় আঁধার। আরোহীর ছটফট এবার থেমে যায়,তবে কথা বলে না।তাই আঁধার নিজেই বলা শুরু করে,,,,

–‘সরি আরুপাখি, অফিসের একটা প্রজেক্ট নষ্ট হয়ে গেছে তাই মাথাটা গরম ছিলো!’ তাই একটু রাগ দেখিয়ে ফেলেছি, এই যে এতো গুলো সরি।

হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে আঁধার। আরোহী তবুও শক্ত হয়ে থাকে।আঁধার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,,

–‘আচ্ছা তুমি যেটা শাস্তি দিবে সেটাই মেনে নিবো তবুও এমন করে না,আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি সেটা কি তুমি জানো না বলো?’ তোমার ভালোর জন্যই তো রাগ দেখালাম, তোমারো তো বোঝা উচিত আমার অফিসের চাপ যাচ্ছে একটু।

মন খারাপ করে নেয় এবার আঁধার, আরোহীর মায়া হয়। ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিতে তার কি আর ভালো লাগে নাকি উহু একদম লাগে না তাই তো গলে যায় সে ও।আঁধারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

–‘ভালোবাসি!’

আঁধার নিজেও পরম আবেশে প্রেয়শীকে আর একটু জড়িয়ে নিয়ে বলে,,,,

–‘আমিও তোমায় ভালোবাসি বাবুর আম্মু, অনেক ভালোবাসি!’

আরোহীর মনে প্রশান্তি বয়ে যায়।আঁধারের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয় সে,এখন একটা প্রশান্তিময় ঘুম দিবে সে।

#চলবে?

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৪১

🍁

দেখতে দেখতেই কেটে গেছে অনেক কয়টা মাস, এই তো আজকে আরোহীর প্রেগন্যান্সির আট মাস পূর্ণ হয়ে নয় মাসে পড়লো।

এই নয় মাসে চৌধুরী ম্যানশনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে!সাথে পরিবর্তন হয়েছে সকলের ও, এই তো এখন সবাই আরোহীকে বেশি আদর ভালোবাসা দেয়!

যেমন আঁকলিমা চৌধুরী, তিনি আরোহী কি খাবে, কখন কি করবে কখন গোসল করবে এবং আরোহী কোথায় যাবে সেটার ও খেয়াল তিনি নিজ দায়িত্বে রাখেন।

তারেক চৌধুরী, তিনি তো অফিস থেকে আসার সময় আরোহী ও আলিশার জন্য চটপটি, ফুঁসকা,চকলেট এক এক দিন এক এক ধরনের খাবার নিয়ে আসেন।

আঁধার আজকাল বেশিভাগ সময়ই ব্যাস্তটার সাথে কাঁটায়, এইতো কিছুদিন আগেই ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলো তার।তারপর অফিস নিয়েই ব্যাস্ত হয়েগেছে পুরোদমে!

তবে অফিসে থাকাকালীন সময়ে হাজার বার আরোহীকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে সে।মাঝে মাঝে আরোহীর মনে হয় তাদের নতুন নতুন প্রেম চলছে।

আলিশার বাচ্চাদের বয়স এখন ছয়মাস কারণ আরোহী যেহেতু সেদিন তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো তাই তাদের ছয় মাস হয়ে গেছে। পিচ্চিরা এখন আধো আধো গলায় কথা বলতে পারে, তবে এখনো হাঁটা শিখেনি।

আলিশা বাচ্চা কাচ্চা সামলিয়ে সেও আরোহীর খেয়াল রাখতে কোনো ত্রুটি রাখে না,সাথে আদর ও।

তাই আরোহীর আর নিজেকে একা একা লাগে না,তবে তার মুড সুয়িং হয় প্রচুর।হুট হাট আঁধারকে বিরক্ত করা,সাথে সকলে বিরক্ত করা তার অভ্যেসে পরিনত হয়েছে যেনো।

তবে কেউ বিরক্ত হয় না তার এই সব আবদারে কিংবা পরিবর্তনে।শাহনাজ শেখ ও আমজাদ শেখ দুদিন পর পর এসে মেয়ে ও নাতীদের দেখে যান।

আলিশার বাচ্চারা যেনো এখন সকলের প্রাণ হয়ে উঠেছে, সকলে তাদের সবসময় মাথায় তুলে রাখে। আর সব থেকে বেশি তো আঁধার!

আরোহী যদিও কোলে নিতে পারেনা তবে বসে বুকের মাঝে চেপে ধরে বসে থাকে।বাচ্চাগুলোর গাঁ থেকে সে কেমন একটা নিজের বাচ্চা বাচ্চা গন্ধ পায়,তাদের যখন বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে মনে হয় সে কতো সুখী একজন মানুষ।

দীর্ঘ নয় মাসের কথা ভেবে আনমনে হেসে উঠে আরোহী।লিমা ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে থাকে আরোহীর দিকে,আরোহীর হঠাৎ করে মনে হয় কেউ তাকে গভীর চাহনিতে দেখছে!

চোখ ঘুরাতেই লিমাকে এমন ভুত দেখার মতো চমকে তার দিকে তাকাতে দেখে সামান্য হাসার চেষ্টা করে আরোহী!

–‘আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো লিমা, আর হ্যা আমায় ভুতে টুতে ধরেনি কিছু মধুর সময়ের কথা ভেবে হাসছিলাম।’

আরোহীর কথা শুনে লিমা এবার স্বাভাবিক হয়, মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আরোহী আবার হেঁসে ফেলে, লিমার রিয়াকশন দেখে অন্য সময় হলে আরোহী গড়াগড়ি দিয়ে হাসতো কিন্তু এখন হাসলো না।

এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো, আরোহীর বিরক্ত লাগছে একা একা বসে থাকতে। বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছে তার,কিন্তু সে চাইলেও এখন একা একা উঠে বাহিরে যেতে পারবে না।

কারণ এই নয় মাসে আরোহীর শরীীের অনেকটা পরিবর্তন এসেছে, এই তো হাত পা ফুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো হয়েছে!

সাথে আগের থেকেও শরীরটা অনেকটা ভারী হয়েছে,পেটটা অনেকটা ফুলে গেছে।আরোহীর ভাষায়, মোটা হয়ে গেছে আগের থেকে দ্বিগুন আরোহী!

তাই এখন আর আরোহী কারো সাহায্য ছাড়া নড়া চড়া ও করতে পারে না আর হাঁটা তো দূরের কথা! দীর্ঘস্বাস ছেড়ে মন খারাপ করেই বসে থাকে আরোহী লিমার অপেক্ষায়।

!
!

রাত যখন নয়টা আঁধার বাসায় আসে।ক্লান্ত পায়ে যখন আঁধার রুমে ঢুকতে ঢুকতে গলার টাই ঢিলে করছিলো তখন নজর যায় বেডের দিকে!

আরোহীকে এলোমেলো ভাবে ঘুমাতে দেখে অবাক হয় না,কারণ এই নয় মাসে সে আরোহীকে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছে!

হাতের কোর্টটা ও অফিস ব্যাগটা সোফায় রেখে, হাত ঘড়ি খুলতে খুলতেই বিছানার দিকে এগিয়ে যায় সে! ঘড়িটা টেবিলে রেখেই আরোহীর দিকে ঝুঁকে তার কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে একটা চুমু দেয়!

তারপর একে একে তার দু’গালে চুমু দেয়, তারপর ধিরে ধিরে পুরো মুখেই চুমু দিয়ে এসে ঠোঁটের কাছে এসেই থেমে যায়!

পরক্ষণেই ঠোঁটেও ছোট একটা চুমু দিয়ে সরে যায় সে।অফিস থেকে এসেই তার প্রতিদিনের রুটিন এটা,তবে আরোহী আজ অব্দি বুঝতে পারেনি যে আঁধার তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কি কি করে!

এবার গলার টাই ও শার্টের বোতাম খুলে শার্ট ও টাই সোফায় রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় আঁধার! তার ফ্রেশ হওয়া দরকার আগে।

ফ্রেশ হয়ে আঁধার নিচে চলে যায়,মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী ও বাকি সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন খাবার টেবিলে। আঁধার এক পলক ঘড়ির দিকে তাকায়,দশটা বাজে।

সে এসেছিলো নয়টায় আর এ বাড়ির সকলে ঠিক সাড়ে নয়টায় ডিনার করে! তবে আজকে তার ও আদরের আসতে দেরি হওয়াতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো, ভেবেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায় তার!

একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে সেও।

–‘আরো মা কি খেয়েছে আঁকলি?’ ও কোথায় দেখছি না যে?

আঁকলিমা চৌধুরীর উদ্দ্যেশে কথাটা বলপন তারেক চৌধুরী। আঁকলিমা চৌধুরী হেঁসে বলে উঠেন,,,,

–‘হ্যা খেতে চাচ্ছিলো না জোড় করে খাইয়ে দিয়েছি,মেয়েটা তো তোমাদের অপেক্ষায় ছিলো অনেকক্ষণ, কিন্তু তোমরা আসতে লেট করছিলে তাই খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি!’

–‘ঠিক করছো একদম!’ আর আমরা দাদুভাইরা কোথা আলিশা মা আজকে এতো চুপচাপ কেনো তারা?’ কোথায় দেখছি না যে তাদের?

শেষের কথাটা আলিশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন তারেক চৌধুরী।

–‘ওরা ও ঘুমিয়েছে আব্বু খেয়ে!’ নাহলে শান্তি মতো খেতে দিতো নাকি তোমাদের, আশার মতোই বিচ্ছু হয়েছে ছেলে দু’টো।

আলিশা কিছু বলবে তার আগেই আদর ফট করে কথাটা বলে ফেললো।আলিশা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে আছে আদরের দিকে। আঁধার ফিঁক করে হেঁসে ফেলেছে।

–‘তোমার মতোই তোমার ছেলেরা বিচ্ছু হয়েছে আলিশা মার কথা কেনো বলছো তুমি কি কম জ্বালিয়েছিলে আমাদের নাকি!’

তারেক চৌধুরীর কথায় এবার আলিশা ও আঁধার একসাথে হেঁসে ফেলে। আদর মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। আঁকলিমা চৌধুরী সকলকে ধমকে বলেন,,,,

–‘খাওয়ার সময় কোনো কথা না চুপচাপ খেয়ে নাও সকলে।’

তারপর আর তাদের কারো কোনো কথা হয় না, সকলে খেয়ে দেয়ে চুপচাপ উঠে চলে যায়।

!

!

রাতে হঠাৎ করেই আরোহীর ঘুম ভেঙে যায়, নিজেকে আঁধারের বুকে আবিষ্কার করতেই টনক নড়ে তার!ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই তিনটা চার বাজে দেখতেই চোখ কপালে উঠে যায় তার।

তার মানে আজকে ও আঁধার কখন আসছে সে বুঝতে পারেনি,আঁধার তো তাকে ডাকতে পারতো কিন্তু ডাকে নি তো আবার মন খারাপ হয়ে যায় আরোহী! কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে আঁধারকে ডাক দেয়।

–‘এই উঠেন না, এই যে!’

ধরপড়িয়ে উঠে বসে আঁধার।

–‘ কি-কি হয়েছে আরুপাখি, কোথায় পেইন হচ্ছে?’ বেশি ব্যাথা করছে, ডাক্তারের কাছে নিতে হবে তো!’

আঁধারকে ছটফট করতে দেখে দীর্ঘস্বাস ছাড়ে আরোহী। এটা নতুন না প্রথম মাস থেকেই দেখে আসছে সে, হাসি পায় তার!

যখন প্রথম আরোহী জানতে পেরেছিলো সে প্রেগন্যান্ট তারপর একদিন হঠাৎ করেই আঁধারকে রাতে ডাকতেই এই কথাগুলো শুনে সেদিন খুব হেঁসেছিলো আরোহী।

তিন মাসেই নাকি লেবার পইন উঠে,পড়ে আঁধার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথা চুলকিয়ে বলেছিলো,,,,”আমি কি জানি নাকি,ফাস্ট টাইম তাই এমন হচ্ছে এর আগে আর একটা বিয়ে করলে ভালো হতো!”

–‘কি হলো আরু,এই আরু!’

আঁধারের ডাকে হকচকিয়ে যায় আরোহী,,,,,

–‘খিদে পেয়েছে আমার!’

ঠোঁট উল্টে বলে আরোহী, আঁধার শান্ত হয়।বুকে হাত দিয়ে বলে,,,,

–‘কি খাবে বলো?’

–‘চটপটি!’

চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বলে আরোহী। আঁধার এক পলক ঘড়ির দিকে তাকায় তারপর মুখটা ছোট করে বলে,,,,,

–‘এতো রাতে কোথায় পাবো, দোকান খোলা নেই তো।’

–‘আমি জানি না আমি চটপটি খাবো মানে খাবোই আর এখনই!’

আরোহীর জেদি কন্ঠস্বর শুনে আঁধার কিছু একটা ভেবে বলে,,,,,

–‘আচ্ছা তুমি নামবে না কিন্তু আমি নিয়ে আসতেছি কেমন!’

কথাটা বলেই আরোহীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে যায় সে।

কিছুক্ষণ পর এক ঘন্টা হবে হয়তো,,,আঁধার একটা বাটিতে গরম গরম চটপটি নিয়ে চলে আসে।আরোহী ফোনে গেইম খেলছিলো আঁধারকে হাতের বাটিটা পাশেই রাখতে দেখে চোখ তুলে তাকায় সে।

গরম গরম চটপটি দেখে তার জিহ্বায় জ্বল চলে আসে,তবে অবাক হয়ে যায় সে।

–‘এতো রাতে কোথায় পেলেন?’

–‘রান্না করে নিয়ে আসলাম ম্যাডাম,এখন আমার কপালের ঘাম গুলো মুছে দেন তো!’

ক্লান্ত কন্ঠে বলে আঁধার। আরোহী অবাকের থেকে ও অবাক হয়।

–‘আপনি রান্না করলেন?’

এগিয়ে এসে আঁধারের গলা ও মুখের ঘাম ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বলে আরোহী। বাটিটা হাতে নিয়ে চামুচে চটপটি উঠিয়ে ফুঁ দিয়ে আরোহীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে আঁধার,,,,,

–‘ ইউটিউব দেখে রান্না করছি, কেমন হয়েছে খেয়ে বলো তো!’

মুখে নিতেই আরোহী এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।আঁধার অবাক হয়ে বলে,,,,

–‘কি হলো ভালো হয়নি?’

আরোহী এক পলক আঁধারকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,,,,

–‘একটু লবণ কম হ’য়েছে তবে ঠিক আছে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে! ‘

আরোহীর কথায় আঁধার এক চামুচ মুখে নিতেই ফেলে দেয়,,,,,,

–‘একটু লবণ কম হয়েছে বলছো আরু আমি তো লবণই দেইনি!’ এই খাবার খেতে হবে না তোমার,আমি আলাদা বানিয়ে আনছি।

–‘আরে এটা কেমন কথা আপনি এতো কষ্ট করে মাঝ রাতে আমার জন্য রান্না করলেন আর সেটা আমি খাবো না এটা হয় নাকি!’ আলাদা বানাতে হবে না আমি এটাই খাবো আপনি লবণ নিয়ে আসুন একটু যান।

আঁধার জানে তার আরু কথা শুনবে না তাই বিনা বাক্যে লবণ আনতে চলে যায়।

#চলবে?

নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি পর্ব-৩৯

0

#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ৩৯

🍁

চেক-আপ শেষ করে ক্লান্ত পায়ে এসে হাসপাতালের করিডরের একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে আরোহী! আঁধার ফোনে কথা বলছিলো,আরোহীকে এভাবে এসেই বসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে!

–‘এই তুমি ঠিক আছো,এভাবে বসে পড়লে কেনো?’

ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে আঁধার, আরোহী বিরক্ত হয়ে বলে,,,

–‘আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো বলেন তো কয়েকদিন থেকে?’

–‘মানে?’

অবাক কন্ঠ আঁধারের।

তপ্ত শ্বাস ফেলে এবার আঁধারকে টেনে তার পাশে বসিয়ে বলে আরোহী,,,,

–‘আমি ঠিক আছি ক্লান্ত লাগছিল তাই এভাবে বসে পড়লাম!’

–‘ও তাই বলো…’

–‘হ্যা জানি তো আপনি ভয় পেয়ে গেছিলেন?’

আঁধারকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়েই বলে উঠে আরোহী।

–‘বড্ড বেশি কথা বলা শিখে গেছেন আপনি মিসেস চৌধুরী!’

আরোহীর নাক টিপে দিয়ে আবার বলে,,,

–‘চেক-আপ শেষ সব?’

–‘হুম!’

–‘ডাক্তার আপনাদের ভিতরে ডাকে? ‘

একজন নার্স কথাটা বলেই চলে গেলেন।

আঁধার আরোহীকে এক হাতে আগলে নিয়েই ডাক্তারের চেম্বারের চলে যায়।

!
!

–‘আশা বাচ্চারা কাঁদছে তো কখন বের হবে ওয়াশরুম থেকে তুমি!’

আদরের চিৎকারে আলিশা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে গেলে আদর ছুটে গিয়ে ধরে।

–‘আসতে কালকেই বাচ্চা হলো আর আজকেই দৌড়াদৌড়ি করতে চাচ্ছো নাকি?’

আদরের কথা শুনে আলিশা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,,,,

–‘তাহলে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিলে কেনো?’

আদর অবাক হয় তবে সেটা প্রকাশ না করেই বলে,,,

–‘ওরা কাঁদছে যে তাই!’

আলিশা আর কিছু না বলেই তার একটা ছেলেকে কোলে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করে, তবে আর একটা যে কাঁদছে তার কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না।

–‘আরে এর কি হবে এ যে কাঁদছে?’ একে কে খাওয়াবে?

কথাটা বলার সাথে সাথেই আলিশা কটমট চাহনিতে তাকায় আদরের দিকে।আদর ভেবাচেকা খেয়ে যায়, আলিশা হঠাৎ রেগে গেলো কেনো বুঝতে পারলো না সে।

–‘সব দোষ তোমার, এখন এই দু’টোকে কে সামলাবে একসাথে? ‘

কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে আলিশা।

–‘কেনো তুমি?’

–‘আর তুমি কি করবে, তুমি খাওয়াতে পারছো না?’

আদরের কথা শেষ হওয়ার সাথেই হুঙ্কার ছেড়ে বলে আলিশা।

আদর থতমত খেয়ে যায়, আলিশার কোল থেকে তাহশিফকে নিয়ে তাহমিদকে ধরিয়ে দেয় আগে। তারপর মুচকি হেসে বলে,,,,

–‘আমি কিভাবে খাওয়াবো বউ আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি!’

লাজুক হেসে বলে আদর।আলিশা কপাল চাপড়ায়, একে বলে আর কি হবে।

–‘এই তুমি যাও তো আমার চোখের সামন থেকে দেখতে পারছি না তোমায়!’ তুমি আর তোমার বাচ্চারা আমায় জ্বালিয়ে মারছো।

বলেই ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে উঠে আলিশা।আদর আলিশার কাছে বসে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,

–‘আহা বউ কাঁদে না, পরের বছর আরও দু’টো চলে আসবে তোমায় জ্বালানোর জন্য!’

কটমট চোখে তাকায় আলিশা আর আদর দাঁত কেলিয়ে সরে যায় নাহলে তার কপালে আজকে শনি রবি সব আছে।

!
!

বাসায় এসেই শুয়ে পড়ে আরোহী, আঁধার দৃঢ চাহনিতে তাকিয়ে বলে,,,,

–‘নোংরা শরীরে শুয়ে পড়েছো কেনো আরু, বাহিরে কতো ধুলো বালি!’ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো!

আরোহী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে।

–‘কি হলো যাও?’

আঁধারের ধমকে আরোহী এবার দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।

আঁধার ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে আর মনে মনে ভাবে,,,,
“এখন থেকে তাহলে ধমক দিয়েই সবকিছু করতে হবে।”

!

!

এক পায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাহি, তারই পাশে বিছানায় আরাম করে শুয়ে তারই দিকে নজর রেখেছে শিহাব।

–‘আর কতক্ষণ?’

রাহির করুন কন্ঠ।শিহাব রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,,,,

–‘তোমার ওই সাহফিফের সাথে কিসের এতো কথা শুনি?’ আমাকে ইনগোর করো তুমি ওই জন্য তাই না এখন দাঁড়িয়ে থাকো তুমি।

রাহি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় শিহাবের দিকে।

–‘এদিকে আসুন তো একবার?’

আদেশের স্বরে বলে রাহি।শিহাব বাধ্য ছেলের মতো উঠে চলে যায়।রাহি এবার কান ছেড়ে পাঁ ঝেরে শিহাবের চুল ধরে টেনে বলে,,,,

–‘হনুমান উনি তরী আপুকে ভালোবাসে, তাই আমি ওদের সেটিং করিয়ে দিচ্ছি!’ আর তুই ঘটনা না জেনেই আমায় এতোক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখলি।

শিহাব অবাক হয়,,,

–‘আরে ছাড়ো ছাড়ো,লাগছে!’ তোমার ভুল আমায় আগে বলা উচিত ছিলো তো!

চুল ছেড়ে রাগী চোখে তাকায় এবার রাহি,শিহাব ক্যাবলা হাসি দিয়ে কেটে পড়ে।

!

!

বিকেলে,,,

আঁধার গিয়েছে রিপোর্ট আনতে দু’ঘন্টা আগে, এখনো ফেরার নাম নেই। আরোহী ভাবছে যে এখনো আসলো না কেনো? নাকি আবার অফিসে চলে গেছে?

লোকটা আজকাল কাজ পাগল হয়ে গেছে, যখনই সময় পায় তখনই অফিসের কাজ করতে বসে পড়ে।

আলিশাকে বা বাড়ির অন্য কাউকে এখনো ব্যাপারটা বলেনি আরোহী।কারণ তারা চিন্তা করবে শুধু শুধু তাই।

এরইমধ্যে আঁধার চলে আসে তবে প্রতিদিনের মতো আরোহীকে জড়িয়ে ধরে না, বরং পাশ কাটিয়ে টেবিলের উপর রিপোর্টটা রেখে দেয়।আরোহী অবাক হয় অনেকটা,আঁধারকে হাত ঘড়ি খুলতে দেখে এগিয়ে যায় সে।

–‘এতো দেরি করলেন যে?’ আর রিপোর্টে কি এসেছে?

আরোহীর কথায় আঁধার পাত্তা দেয় না।হাত ঘড়িটা ড্রসিং টেবিলের উপর রেখে টাই খুলে রেখে দেয়। আরোহী আবার প্রশ্ন করে,,,,

–‘কি হয়েছে আপনার? ‘

আঁধার এবার পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আরোহীর এবার মন খারাপ হয়ে যায়। আঁধার কি তার উপর বিরক্ত, যে একটা প্রশ্নের ও উত্তর দিলো না।

টেবিলের উপর রিপোর্টটা দেখেই এবার কৌতুহল নিয়ে হাতে তুলে নেয় সে।উল্টে পাল্টে দেখতেই হাত পা কাঁপতে শুরু করে আরোহী।

চোখ ফেটে কান্না আসছে তার, এই তো বড় বড় অক্ষরে এই কাগজটায় লেখা,,,,” প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজিটিভ”.

একটা হাত আরোহীর আপনা আপনি পেটে চলে যায়, খুশিতে লাফিয়ে ওঠে সে।কিন্তু পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায় এটা ভেবে,,,আঁধার কি তবে এই কারণেই তার সাথে এমন ব্যাবহার করলো?

আঁধার কি তবে বেবি আসাতে খুশি নয়? এরপর কি হবে আঁধার আর তার সম্পর্কটা কি তাহলে এই বেবির জন্যই ভেঙ্গে যাবে? এবার শব্দ করেই কেঁদে উঠে আরোহী।

কি হবে তার জীবনে, আঁধারকে ছাড়া সে থাকবে কিভাবে? তার আঁধার কি তবে এই বাচ্চাটার জন্য তাকে ছেড়ে দিবে? আরোহী এইসব ভাবনার মাঝেই পেটে শীতল স্পর্শ পায় সে।

চমকে যায় আরোহী, তবে এই ছোঁয়ার মালিকে সে খুব করে চেনে! এটা তো তারই প্রিয় মানুষ তারই ভালোবাসার মানুষ।

মুখ দিকে কথা বের হয় না তার,তবে আঁধার আরোহীর অ
উুমুক্ত পেটে হাত বুলিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরোহীকে।

–‘আরুপাখি আমি বাবা হতে যাচ্ছি, তুমি মা হবে?’ কেউ একজন ছোট ছোট হাত দিয়ে আমায় ধরবে,ছোট ছোট পাঁ দিয়ে আমার সাথে পাঁ মিলিয়ে হাঁটবে, আমায় আধো আধো গলায় পাপা বলে ডাকবে, আমার সাথে খেলবে? তুমি বুঝতে পারছো আরু।

আরোহী ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আঁটকে ধরার চেষ্টা করে, ততোক্ষণে তার ঘাঁড়ের অনেকটা অংশ ভিজে গিয়েছে। তাহলে কি আঁধার কাঁদছে?

আরোহী আর কিছু না ভেবেই উল্টো ঘুরে জড়িয়ে ধরে আঁধারকে আর শব্দ করেই কেঁদে উঠে। আঁধার আজকে আর আঁটকায় না তার আরুপাখিকে।

–‘আমি অনেক খুশি আরু অনেক, তুমি তুমি…. ‘

আর কিছু বলতে দেয় না আরোহী আঁধারকে নিজের ওষ্ঠের ভাজে আঁধারের ওষ্ঠের স্থাপন করে।থাক না কিছু অনুভূতি অজানা,অদেখা ক্ষতি কি তাতে? সব অনুভূতি সবসময় প্রকাশ করে যে সুখটা পাওয়া যায় না সেটা না প্রকাশ করার মাধ্যমেই অনেক সময় সেই সুখটা পাওয়া যায়।

থাক না কিছু ভালোবাসা অজানাই।

#চলবে?