Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 389



আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১০

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ সেদিন যখন তোমায় দেখলাম রায়ান ভাইয়াকে পাওয়ার জন্য বড় মামির হাত ধরে আকুতি মিনতি করে কান্না করতে ট্রাস্ট মি ইচ্ছে করছিলো তোমাকে জাপ্টে ধরে বুকের মধ্যে নিয়ে বলি- এই চিত্রা ভুল মানুষের জন্য একদম চোখের জল ফেলবা না। এই শাস্তি টুকু তোমার প্রাপ্য, তুমি কেনো আমায় ভালো না বেসে রায়ান ভাইয়া কে আমার ভালোবাসা দিয়ে দিয়েছো। কিন্তু বলতে পারি নি নিরবে সয়ে গেছি। রায়ান ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে আমার চাইতে বেশি মনে হয় খুশি আর কেউ হয় নি সেদিন,রায়ান ভাই নিজেও না। ভেবেছি রায়ান ভাইয়ের বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে এবার সত্যি সত্যি আম্মুকে পাঠাবো তোমার আর আমার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা বলার জন্য। কিন্তু হুট করে বিয়ে দিন ছোট মামুর সাথে আমেরিকা চলে গেলে। কথাটা যখন আমার কানে এসেছিল বিশ্বাস করো খুব ইচ্ছে করছিল তোমাকে সামনে এনে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় দিতে। যখনই তোমাকে নিজের করে নেওয়ার প্ল্যান করি তখনই তুমি সেই প্ল্যানে এক বালতি জল ঢেলে দাও।

চিত্রা মনোযোগ দিয়ে তুষারের কথা শুনলো।
-“ এর মধ্যে আর কাউকে ভালোবাসেন নি?
-“ আর কাউকে ভালোবাসার মত সময় পাই নি তাই বাসি নি। তুমি আমেরিকা চলে যাওয়ার পর আমি পড়াশোনার পাশাপাশি আব্বুর বিজনেসের হাল ধরি,শ্রম+সময় পড়াশোনা আর বিজনেসেই দিতে গিয়ে আর সময় হয়ে উঠে নি অন্য কাউকে ভালোবাসার।

-“ আপনি তো জানেন আমি রায়ান ভাই কে ভালোবাসি।
চিত্রার উদাস ভঙ্গিতে বলা কথাটা তুষারের বুকে তীরের মতো বিঁধে। জিহ্বা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট টাকে ভিজিয়ে বলে-
-“ এখনও ভালোবাসো রায়ান ভাইয়া কে?
চিত্রা হুঁশে ফিরে। কেনো যে মুখ থেকে এটা বের হলো। দৃষ্টি তুষারের দিকে রেখে বলে-

-“ সত্যি বলবো?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমি এখনও তাকে ভুলতে পারি নি তুষার ভাই। প্রথম অনুভূতি ছিলো তাকে ঘিরে। তাকে পাই নি বলে যে বলবো তাকে ভালোবাসি না এটা ভুল। আমার এখনও রায়ান ভাইকে দেখলে কষ্ট হয়।
-“ বুঝতে পারছি,তাকে তো পাওয়া সম্ভব না সে ম্যারিড, বাচ্চা আছে।

চিত্রা মুচকি হাসলো তুষারের কথা শুনে।
-“ আপনি কি ভাবছেন তাকে দ্বিতীয় বার পাওয়ার সুযোগ আসলে আমি তাকে গ্রহণ করবো? কখনই না। সে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখী থাকুক এটাই চাই।
-“ আর তোমার সুখ?
-“ সুখ কি নিজের হাতে ধরে আনা যায় জীবনে তুষার ভাই?
-“ চাইলেই আনা যায়। আমি চাই তোমার লাইফে সব সুখ এনে দিতে,কিন্তু সেক্ষেত্রে তোমার অনুমতি তুষার চায় না।

-“ আজ আসি,ভালো থাকবেন।

কথাটা বলে চিত্রা উঠতে নিলে তুষার বলে উঠে-
-“ জবাব টা দিয়ে গেলে না?

চিত্রা তুষারের পানে চেয়ে বলে-
-“ কিসের জবাব?
-“ বিয়ে করার ব্যাপার টা নিয়ে।
-“ আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে রাতুল ভাইয়া কে ফিরিয়ে দিতাম না।

রাতুলের নাম চিত্রার মুখে শুনে তুষারের কপালে দু ভাজ পড়লো। মুখটা গম্ভীর হলো।
-“ তুমি ফিরিয়ে না দিলেও বিয়েটা কিন্তু হতো না।
-“ কেনো?
-“ কারন এই তুষার হতে দিতো না।
-“ কি করতেন?
-” বেশি কিছু না, রাতুল কে বুঝাতাম চিত্রা শুধুই তুষারের, তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন যেনো মাথা থেকে বের করে দেয়।
-“ আপনি আগের তুষার ভাইই ঠিক ছিলেন। এখন আপনার সাথে কথা বলতে গেলেও আনইজি লাগবে।
-“ আচ্ছা তাহলে মেসেজে বলে দিয়ো।
-“ মেসেজে কি বলবো?
-“ বলবা আমি রাজি বিয়ে করতে।
-“ আমি বললাম না আমি রাজি না। আপনাকে আমি ভাইয়ের ন….
তুষার চিত্রা কে পুরো কথা শেষ করতে দিলো না,তার আগেই বলে উঠল-
-“ জাস্ট শাট-আপ, তোমার এটা জাতীয় ভাষা হয়ে গেছে আমি আপনাকে ভাইয়ের নজরে দেখি এটা বলা। দেখে তুমি ভাইয়ের নজরে আমায় দেখো নাকি কি নজরে দেখো সেসব নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই,আমি তোমাকে কখনও বোনের নজরে দেখি নি বিকজ আমার নিজের একটা বোন আছে। যাকে তাকে বোন বানানোর রুচি আমার নেই। তবে আমি বাদে আর সবাইকে ভাইয়ের নজরে দেখো কোনো সমস্যা নেই। আর একটা কথা।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি?
-“ তুমি তো সবাইকে ভাইয়ের নজরে দেখো তাহলে রায়ান ভাইকে ভাইয়ের নজরে না দেখে এক্সট্রা নজরে কেনো দেখলে?
-“ আমি কি জানতাম নাকি সে আমার ভাগ্যে নাই তাহলে তো জীবনেও তার কেয়ার দেখে এসব একতরফা ভেবে বসতাম না।
-“ রায়ান ভাইয়ার কেয়ার গুলো তোমার চোখে পড়লো কিন্তু আমার ভালোবাসা গুলো চোখে পড়লো না তোমার। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য বারবার ছুটে যেতাম।
-“ পুরোনো কাসন্দ কেনো ঘাটছেন? আমি বাসায় যাচ্ছি আপনিও বাসায় যান।
-“ বিয়ে…
-“ আশ্চর্য বিয়ে বিয়ে করছেন কেনো? বিয়ের বয়স হয়েছে আমার আপনার?

তুষার একবার নিজের দিকে তাকিয়ে ফের চিত্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে-
-“ তোমার একুশ আর আমার আটাশ। এটাকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স বলে না?
-“ আমি অত কিছু জানি না,আমার সামনে পড়াশোনা আছে সেটায় ফোকাস দিতে চাই।

তুষার বসা থেকে উঠে চিত্রার হাত ধরে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলে-
-“ সমস্যা নেই বিয়ের জন্য তোমার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না।
-“ আবার সেই বিয়ে!

তুষার গাড়ির দরজা খুলে চিত্রা কে ইশারায় বসতে বলে। চিত্রা গাড়িতে বসলে তুষার চিত্রার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে-
-“ দেখো আমার ওসব নিব্বা নিব্বির মতো লুতুরপুতুর প্রেম করার বয়স নেই,ডিরেক্ট বিয়ে করে হ্যাপিলি একটা সংসার গড়তে চাই হালাল ভাবে।

-“ আমি কখন বললাম আপনি আমার সাথে লুতুরপুতুর প্রেম করেন।
-“ বলো নি আমিই বললাম।

চিত্রা আর কিছু বললো না। তুষার গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে নিজের ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। দু’জনের কারো মুখে আর কোনো কথা নেই,তুষার চুপচাপ গাড়ি চালাতে থাকল। সে জানতে চিত্রা রাজি হবে না। কিন্তু তুষারের মনে হলো তার সব বলে দেওয়া উচিত। এতোগুলো বছর তে নিজের মাঝে চেপে রেখেছিল আজ না হয় সেসব বলে দিলো। কাউকে ভালেবাসলে তাকে বলে দেওয়া উচিত,তবে সবার ক্ষেত্রে না। এই জিনিস টা সবার লাইফে সুট করে না।

ওপর পাশের মানুষ টা সঠিক হলে কেবলই নিজের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। ভুল মানুষকে বলে নয়। ভুল মানুষ কে বললে সবসময় আফসোস করতে হবে কেনো তাকে নিজের অনুভূতি জানাতে গেলে এটা ভেবেই।

তুষার চিত্রা দের বাসার সামনে এনে গাড়ি থামায়।চিত্রা গাড়ি থেকে নামলো,তুষার কে নামতে না দেখে বলে-
-“ যাবেন না ভেতরে?
-“ না।
-“ তাহলে সাবধানে যাবেন।
-“ হু।
-“ আসি।

কথাটা বলে চিত্রা ভেতরে ঢুকে যায়। তুষার চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অফিসে চলে যায়।

বাড়ির পাশে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছে তৃষ্ণা আর লিমন। গন্তব্য তাদের টিএসসি। লিমন তৃষ্ণার খুব ভালো ফ্রেন্ড। বাসা তৃষ্ণা দের তিন বাড়ি পেছনে। হালকা রোদ শরীরে ব্লাক কালারের কুর্তি তার উপর জ্যাকেট। বেশ মিষ্টি লাগছে দেখতে তৃষ্ণা কে। লিমন এটা ওটা বলছে আর তৃষ্ণা হেসে হেসে সেই কথার পৃষ্ঠে কথা বলছে। রাফি এসেছিল টিএসসি ঘুরতে কিছু ফ্রেন্ডের সাথে। কিন্তু ঘুরতে এসে যে তৃষ্ণা কে একটা ছেলের সাথে এভাবে হেসে কথা বলতে দেখবে ভাবে নি। মেয়েটা না সেদিন বললো তার নাউজুবিল্লাহ জিনিস নেই। আজ তো দেখছি আসতাগফিরুল্লাহ নিয়ে ঘুরছে।

রাফি ফ্রেন্ড’দের থেকে সরে গিয়ে তৃষা আর লিমনের সামনে দাঁড়ালো। তৃষ্ণা লিমনের সাথে কথা বলছিলো রাফি কে দেখে নি। হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রাফি। তৃষ্ণা অবাক হয় রাফিকে এখানে দেখে। লিমন রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কিছু বলবেন ভাইয়া?

রাফির দৃষ্টি তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা লিমনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি যাও লিমন আমি আসছি।
লিমন মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। তৃষ্ণা রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাইয়া আপনি এখানে? ঘুরতে এসেছেন?

রাফি ভ্রুকুটি করে বলে-
-“ ভাগ্যিস ঘুরতে এসেছিলাম বলে এসব দেখলাম।

তৃষ্ণা আশেপাশে তাকিয়ে বলে-
-“ কি দেখলেন?
-“ আজকাল কার মেয়েরা রাস্তায় আসতাগফিরুল্লা জিনিস নিয়ে ঘুরাফেরা করে।
-“ সেটা আবার কি?
-“ ছেলেটা কে ছিলো?
-“ কোন ছেলে?

রাফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
-“ যার সাথে রংঢং করে হাসতে হাসতে আসছিলে।
-“ ওটা লিমন আমার ফ্রেন্ড।
-“ কেমন ফ্রেন্ড।
-“ জাস্ট ফ্রেন্ড।
রাফি মাথার চুল গুলো কে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ আজকাল জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কত কিছু ভাইরাল হয়।
-“ কি ভাইরাল হয়?
-“ কি আবার আমার মাথা। মেয়ে মানুষ ছেলে ফ্রেন্ড কেনো থাকবে?
-“ আশ্চর্য এভাবে কথা বলছেন কেনো? ফ্রেন্ড থাকা দোষের নাকি। আপনার ও তো ফ্রেন্ড আছে।

রাফি তার ফ্রেন্ড সার্কেলের দিকে হাত তাক করে বলে-
-“ দেখো তো আমার ফ্রেন্ড সার্কেলে কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে নাকি?
তৃষ্ণা তাকালো। তিনজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
-“ না নেই।
-“ তাহলে তোমার কেনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকবে?
-“ আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি।
-“ সো হোয়াট?
-“ বাসাও পাশাপাশি।
-“ সেজন্য তার সাথে মিশতে হবে তোমার?

-“ আশ্চর্য মিশলে কি হবে?
-“ মিশবা কেনো?
-“ তো আমি কি মিশবো না? ও কথা বলতে আসলে কি করবো?
-“ কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যাঁ হু বলবে। বেশি মিশার দরকার নেই কেমন?
-“ আচ্ছা। আপনি এখানে এসেছেন কেনো বললেন না তো?
-“ এমনি ঘুরতে।
-” বাসায় যাবেন এখন?
-“ না অফিসে যাবো, আজ জমির ওখানে যেতে হবে।
-“ এখন?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা তাহলে সাবধানে যান।
-“ হু। ছেলেদের সাথে মিশবে না। মনে যেনো থাকে?
-“ আচ্ছা।

রাফি আর কিছু না বলে ফ্রেন্ড দের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। তৃষ্ণা ক্লাসে চলে আসে।

চিত্রা বাসায় ঢুকে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখে তার মা তার বিছানা গোছাচ্ছে। চিত্রা মাকে জড়িয়ে ধরে। চয়নিকা বেগম মেয়েকে সামনে এনে বলে-
-“ তোমার এডমিশন পরীক্ষা কবে?
-“ এই তো সপ্তাহ খানেক পর। কেনো বলো তো?
-“ তোর পরীক্ষা শেষ হলে আমরা সবাই গ্রামে বেড়াতে যাবো।

চিত্রা উৎফুল্ল নিয়ে বলে-
-“ দাদু বাড়ি?
-“ হ্যাঁ। তোর দাদা ভাই আজ ফোন করে বলেছে যেতে। কতগুলো দিন তোকে দেখে না আর শীতের কাল তো চলেই এসেছে।
-“ হ্যাঁ দাদির বানানো পিঠা জাস্ট ওয়াও আর ওয়াও।
-“ আজ কোচিং থেকে ফিরতে দেরি হলো যে?

চিত্রা চুপ হয়ে গেলো। মাথা থেকে হিজাব খুলতে খুলতে বলে-
-” ঐ এমনি নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে গল্পগুজব করছিলাম একটু।
-“ ওহ্ আচ্ছা তোর ফুপি কে একটু ফোন দে তো।

চিত্রা ভ্রুকুটি করে বলে-
-“ কেনো?
-“ তোর ফুপি কে বলতে হবে তোর ফুপা যেনো আসার সময় সিলেট থেকে চা আনে। তোর দাদু নিয়ে যেতে বলেছে।
-“ ফুপিরা সবাই যাবে নাকি?
-“ সেটা তো জানি না। হয়তো যাবে।
-“ ওহ আচ্ছা, তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে ফোন দিচ্ছি।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৯

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৯
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কিরে তুই নাকি রাজি না ভাইয়াকে বিয়ে করতে?

চিত্রা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছিলো হঠাৎ রিয়ার কথা কর্ণকুহর হতেই দরজার পানে তাকায়। রিয়া রিমি কে কোলে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসে। রিয়ার থেকে রিমি কে কোলে নিয়ে বলে-
-” হ্যাঁ রাজি নই।
-“ কিন্তু কেনো?
-“ আমি এখনই বিয়ে টিয়ে করবো না।
-“ তোকে তো ফোর্স করা হয় নি, যখন বিয়ে করতে চাস তখনই করবি এখন না হয় কাবিন করে রাখবে।
-“ আমি তো বলছি আমি বিয়ে করবো না।এতো জোর কেনো করছিস?
-“ বিয়ে না করার একটা রিজন দে?
-“ কি রিজন দিবো? রাতুল ভাইয়া কে দেখলে আমার কোনো ফিলিংস আসে না। যার প্রতি ফিলিংস আসে না তাকে কেনো বিয়ে করতে যাবো?

রিয়া সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ কাউকে পছন্দ করিস বা ভালোবাসিস?

চিত্রা বিছানা থেকে রিমি কে নিয়ে উঠলো। রিমির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল-“ যাকে ভালোবেসেছিলাম, যাকে পছন্দ করতাম তার সাথেই তো সংসার করছিস।

-“ কি হলো বল,কাউকে কি পছন্দ বা ভালোবাসিস?
-“ না কাউকে ভালোবাসি না পছন্দ ও করি না। রাতুল ভাইয়া কে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। দ্যাট’স ফাইনাল।

রিয়া তপ্ত শ্বাস ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। রাতুলের জন্য এসেছিল রিয়া। রাতুল ফোন করে রিয়াকে বলেছে যেনো সে চিত্রা কে বুঝায়। কিন্তু চিত্রা তো না করছে বারংবার। যেখানের সম্পর্কের শুরুতেই না না করছে সেখানে সম্পর্ক শুরু না করাই শ্রেয় রিয়ার মতে।

রিয়া নিজের রুমে এসে বিছানায় বসতেই রায়ান রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। রিয়া স্মিত হাসে। রায়ান রিয়ার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে-
-“ কি বললো তোমার ননদী?
-“ কি আর বলবে আগে যেটা বলেছে সেটাই বললো। রাজি না।
-“ যেহেতু ও রাজি না তাহলে আর এই সম্পর্কের জন্য জোর না দেওয়াই ভালো।
-“ আমার ও সেটাই মনে হয়।
-“ হুমম,শুনো না।
-“ বলো শুনছি তো।
-“ বলছি বয়স হচ্ছে তো।

রিয়া বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে বলে-
-“ বয়স হচ্ছে তো কি হয়েছে?
-“ না মানে রিমি ও তো বড় হচ্ছে।
-“ হ্যাঁ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে।
-“ ধূরু আমি স্কুলের কথা বলি নি।
-“ তাহলে?
-“ রিমির ও তো একটা ভাই বোনের দরকার।

রিয়া রায়ান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে উঠতে যায়। আর ওমনি রায়ান রিয়ার হাত ধরে টান মেরে রিয়াকে নিজের কাছে টেনে নেয়। চিত্রা রিমি কে দেওয়ার জন্য এদিক টায় আসছিলো দরজার কাছে আসতেই এমন দৃশ্য দেখে পা থেমে যায় চিত্রার। কষ্ট লাগলো না তবে খারাপ লাগলো। এক সময় ভালোবাসতো,এখনও হালকা হালকা অনুভূতি আছে।যতোই হোক প্রথম অনুভূতি ছিলো তাকে ঘিরেই। ভুলতে চাইলেও ভুলা যায় না।

রিমি কে আর না দিয়ে নিজের রুমের দিকে ফিরে গেলো। রাফি এসেছে,সোফায় বসে চিত্রা কে হাক ছেড়ে ডাক দেয়। চিত্রা রাফির ডাক শুনে রিমি কে নিয়ে নিচে আসে। রাফির ওপর পাশে বসে বলে-
-“ এভাবে ডাকছো কেনো?
-“ তোমার সামনে বিয়ে চলে যাবা ভাই কে একটু আদর যত্ন করে কফি+রান্না বান্না করে কিছু খাওয়াও।

মুহূর্তে চিত্রার মাথা গরম হয়ে গেলো।
-“ কিসের বিয়ে বিয়ে করতেছো তোমরা বুঝতেছি না। একবার বলেছি না আমি বিয়ে করবো না। তবুও শুধু বারবার একই প্যাঁচাল করে যাচ্ছো।

রাফি অবাক হয়ে তাকালো চিত্রার দিকে। রাগার মতো তো তেমন কথা বলে নি।
-“ এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি তো মজা করেছি।
-“ সব সময় মজা ভালো লাগে না। কফি খেতে ইচ্ছে করেছে বললেই পারো কফি বানিয়ে দাও তা না করে বিয়ে নিয়ে কথা বলছো।
-“ আচ্ছা যাও কফি বানিয়ে নিয়ে আসো,রিমি কে দিয়ে যাও।

চিত্রা রিমি কে রাফির কাছে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায় কফি বানাতে। এরমধ্যে রাফির ফোনে ফোন আসে তুষারের। রাফি কেবলই তুষারের কাছ থেকে ফিরলো এর মাঝে আবার ফোন। রাফি ভাবলো হয়তো বাসায় ঠিক মতো পৌঁছিয়েছে নাকি সেজন্য ফোন দিয়েছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে রাফি বলে-
-“ হ্যালো ব্রো আমি ঠিকমতো বাসায় এসেছি কোনো সমস্যা হয় নি।

তুষার রাফির এমন কথ শুনে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে-
-“ জাস্ট শাট-আপ, আমি তোর সমস্যার হয়েছে কি না বাসায় পৌঁছাতে সেটা শোনার জন্য ফোন করি নি। চিত্রা কি বিয়েতে হ্যাঁ বলেছে?
-“ আর বলো না ব্রো চিতাবাঘ তো রেগে ফায়ার। ন করে দিয়েছে।

তুষার ভ্রুকুটি করে বলল-
-“ না কেনো করেছে?
-“ সেটা জানি না।
-“ চিত্রা কোথায়?
-“ রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছে।
-“ ফোন টা গিয়ে চিত্রা কে দে তো।
-“ কেনো ব্রো কিছু হয়েছে নাকি?
-“ এখনও হয় নি কিছু সামনে হবে।
-“ কি হবে?
-“ ফোন টা আগে দে চিত্রা কে।
-“ আচ্ছা দিচ্ছি হোল্ড করো।

রাফি ফোন টা নিয়ে রান্না ঘরে যায়। চিত্রা কফি বানাচ্ছিল রাফি কে দেখে বলে-
-“ তুমি আসলে কেনো আমি তো নিয়েই যাচ্ছিলম কফি।

রাফি ফোনটা চিত্রার সামনে ধরে বলে-
-“ না কফির জন্য আসি নি,তুষার ব্রো কথা বলবে তোমার সাথে নাও।

কথাটা বলে রিমি কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাফি। চিত্রা হঠাৎ অবাক হলো তুষার কি কথা বলবে তার সাথে? ইতস্ত হয়ে ফোন টা কানে নিলো। মুহুর্তে ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসলো-
-“ চিত্রা।
-“ হু বলেন।
-“ শুনলাম রিয়ার বাবা মা আর রাতুল এসেছিল?
-“ হ্যাঁ।
-” রাজি হলে না কেনো বিয়েতে?
-“ এমনি, মনে হলো রাজি না হওয়াটাই বেটার।
-“ কেনো?
-“ এমনি।
-“ গুড,শোনো একটা কথা।
-“ কি কথা?
-“ রাতুল কেনো পৃথিবীর অন্য কোনো ছেলে বা ছেলের মা বা আসলেও তুমি বিয়েতে রাজি হবা না।

চিত্রা তুষারের কথার মানে বুঝলো না। রাজি কেনো হবে না।
-“ রাজি কেনো হবো না?
-“ কারন তুমি অন্য কারোর জন্য তৈরি। সে ব্যাতিত অন্য কেউ আসলে রাজি হবা না।
-“ ধূরু কি বলেন আমি আবার কার জন্য তৈরি। আর সেই কেউ টা কে?

রাফি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিত্রার কথা গুলো শুনছে। তার মাথায় আসছে না হঠাৎ তুষার ব্রো চিত্রার বিয়ে হওয়ার কথা শুনে এমন করছে কেনো?

তুষার তপ্ত শ্বাস ফেললো। তার ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলার অভ্যাস নেই।

-“ কাল কোচিং ছুটির শেষে বাহিরে দাঁড়াবে আমি আসবো কথা আছে।
-“ কি কথা?
-“ ফোনে বলা সম্ভব নয়। যা বলার কালই বলবো।

কথাটা বলে তুষার ফোন কেটে দেয়। চিত্রা একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা রাফির হাতে দেয়। রাফি ফোন টা নিয়ে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চিতাবাঘ তোমার আর ব্রো এর মাঝে কি কিছু আছে?

চিত্রা কফির মগ টা রাফির হাতে দিয়ে বলে-
-“ আমার আর তুষার ভাইয়ার মাঝে কি থাকবে?
-“ না মানে ব্রো যেনো কেমন করছে না? তোমার বিয়ের খবর শুনে কেমন যেনো একটা হাবভাব করলো।

চিত্রা রাফির থেকে রিমি কে কোলে নিয়ে বলে-
-“ কেমন হাবভাব?
-“ ঐ তো গল্পে বা নাটকে বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের খবর হঠাৎ করে শুনলে যেমন রিয়াক্ট করে তেমন।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ মানে?
-“ মানে, আমার মনে হয় তুষার ব্রো তোমাকে অন্য নজরে দেখে,বোনের থেকেও বেশি কিছু ভাবে।

চিত্রা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলে-
-“ ধূর ভাইয়া কি বলো, তুষার ভাইয়ার মনের মানুষ আছে।

তুষার কফি মুখে নিতে যাচ্ছিল চিত্রার কথা শুনে কফি আর খাওয়া হলো না। রাফি কফির মগ হাতে নিয়ে চিত্রার পেছন পেছন গিয়ে বলে-
-“ কি বলো এটা ব্রো এর মনের মানুষ আছে!
-“ হ্যাঁ।

রাফি সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ তুমি কিভাবে জানো?
-“ এই তো গতকাল রাতে বললো ভাইয়া।
-“ কি বললো?
-“ বললো তার মনের মানুষ আছে।
-“ তাকে চিনো?
-“ না তাকে চিনি না,তবে ভাইয়া বলছে পরিচয় করিয়ে দিবে।
-“ তুষার ব্রে তার মানে রিলেশন করে বাহ!
-“ আরে না রিলেশন করে না। মেয়েটা জানে না যে ভাইয়া তাকে পছন্দ করে।

রাফি অবাক হয়ে বলে-
-“ মানে!
-” মানে আর কি,ভাইয়া এখনও তার মনের মানুষ টিকে জানায় নি।
-“ ওয়ান সাইড লাভ?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই।
-“ জাস্ট ইমাজিন, তুষার ব্রো ছ্যাকা খেলো কেমন লাগবে বিষয় টা?

কথাটা বলে রাফি হেসে উঠলো।
-“ আরে না ছ্যাকা কেনো খাবে সে? তার মতো হ্যান্ডসাম ড্যাশিং ছেলে যেই মেয়েকে প্রপোজ করবে সেই রাজি হয়ে যাবে।
-“ আমার মনে হয় ব্রো ছ্যাকা খাবে।
-“ এটা কেনো মনে হচ্ছে?
-“ আমার ষষ্ঠ ইন্দ্র জানান দিচ্ছে ব্রো ছ্যাকা খাবে। যাইহোক ঘুমাতে যাও গুড নাইট।

কথাটা বলে রাফি নিজের রুমে চলে যায়। চিত্রা রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রিমি কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

————————–

কোচিং শেষে কোচিং এর বাহিরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা। মিনিট পাঁচেক হলো কিন্তু তুষারের আসার নাম নেই। বিরক্ত লাগলো,এভাবে দাঁড়িয়ে রাখার কোনো মানে হয়। মিনিট পাঁচেক ও মনে হচ্ছে ঘন্টা খানেকের মতো। এরমধ্যে একটা ব্লাক কালারের গাড়ি এসে থামলো চিত্রার সামনে। গাড়িটা দেখে চিন্তে অসুবিধে নেই গাড়ি টা কার। গাড়ির ভেতর থেকে তুষার বের হলো। পড়নে তার সাদা রঙের শার্ট, নিত্যকার দিনের মতো হাতেও সেই ব্র্যান্ডের ঘড়ি। দারুন লাগে এই গেটআপ টা চিত্রার। তুষার চিত্রার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছো?
-“ ঘন্টা খানেকের মতো।

তুষার হাত ঘড়ি টার দিকে তাকায়। এখন বাজে নয় টা চল্লিশ মিনিট। চিত্রার কোচিং শেষ হয় নয়টা ত্রিশ মিনিটে। সেখানে মেয়েটা ঘন্টা খানেক কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
-“ তুমি আজ কোচিং করো নি?
-“ করেছি।
-“ তাহলে ঘন্টা খানেক কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকো? কোচিং তো শেষ হয় নয়টা ত্রিশ মিনিটে, আর এখন বাজে চল্লিশ।
-“ কিহ! আমার কাছে তো মনে হলো আমি ঘন্টা খানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
-“ আচ্ছা চলো ওদিক টায় যাই।

চিত্রা হ্যাঁ জানায়। কোচিং এর মেয়ে গুলো কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মনে হয় কখনও ছেলে মেয়ে দেখে নি। তুষার চিত্রা কে নিয়ে কোচিং এর পাশে একটা ছোট পার্কে ঢুকে। পার্ক টাকে একটা খোলা উদ্যান ও বললে চলে।

চিত্রার ভালে লাগলো জায়গা টা। সামনে বসার জন্য একটা বেঞ্চ দেখতে দেয়ে সেখানে গিয়ে বসলো। তুষার চিত্রার পেছন পেছন আসলে কিন্তু বসলো না। চিত্রা তুষার কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসার জন্য বলে। তুষার চিত্রার পাশে বসে। কোনো রকম হেয়ালি ছাড়া চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ দেখো চিত্রা আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারি না তাই সরাসরি বলছি,উইল ইউ ম্যারি মি?

তুষারের কথাটা চিত্রার কর্ণকুহর হতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুষারের দিকে অবাক হয়ে বলে-
-“ এসব কি বলছেন আপনি!
-“ যা বলেছি সত্যি বলছি।বিয়ে করতে চাই আমি তোমাকে।
-“ আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান মানে! আমাদের সম্পর্ক কি সেটা কি ভুলে গেছেন?
-“ না কিচ্ছু ভুলি নি।
-“ তাহলে এসব কিভাবে পোষণ করেন?
-“ তুমি আমার মায়ের পেটের বোন নও যে এটা পোষণ করা পাপ।
-“ আপনার না মনের মানুষ আছে?
-“ হ্যাঁ।
-“ তাকে না বলে আমাকে বলছেন কেনো?
-“ সেই মানুষ টা তুমি তাই তোমাকে বলছি।
-“ সেই মানুষ টা আমি!
-“ হ্যাঁ।
-“ কিভাবে?
-“ মনে আছে ক্লাস এইটে থাকা কালীন তুমি টেস্ট এক্সামে ফেল করেছিলে বলে মামি আমাকে বলেছিলো তোমায় এক মাস প্রাইভেট পড়াতে। আমার নিজের ও পড়াশোনা ছিলো বলে মামি তোমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে গিয়েছিল। তোমাকে আর তৃষ্ণা কে রোজ বিকেলে পড়াতাম। তুমি অংকে ভীষণ কাঁচা ছিলে,সামান্য মুনাফার অংক পারছিলে না বলে তোমাকে দুটো ধমক দিয়েছিলাম সেজন্য পুরোা দেড় টা ঘন্টা কেঁদেছিলে। সেদিন তোমার জন্য মা আমাকে বকেছিলো। মায়ের বকা টা অতো গায়ে মেখেছিলাম না। কিন্তু তোমার কান্না দেখে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছিল। এতো বড় একটা মেয়ে সামান্য একটা ধমকে এভাবে কেঁদে দেয় ভাবা যায়? আর কাউকে কাঁদলে যে এতো কিউট লাগে আগে জানা ছিলো না। এরপর থেকে তুমি সবসময় আমাকে এড়িয়ে চলতে। তোমার ইগনোর টা আমার ইগো তে লাগছিলো।তুষার কে কোনো মেয়ে ইগনোর করছে! তোমার সাথে সেধে কথা বলতে গেলেও তুমি এড়িয়ে চলতে। কিন্তু তোমার সাথে কথা না বললে আমার হাসফাস লাগতো,দম বন্ধ লাগতো। এরপর তুমি পনেরো দিনের মাথায় বাসায় চলে গেলে,এরপর প্রতিদিন বিকেল হলে মনে পড়তো এই টাইমে তোমাকে পড়ানোর কথা আমার,মাঝে মাঝে তৃষ্ণার রুমে গিয়ে বলেও ফেলতাম পড়তে আয়। তৃষ্ণা আসতো কিন্তু যখন দেখলাম তুমি আসো নি তখন তৃষ্ণা কে বলে বসতাম চিত্রা কোথায়? তৃষ্ণা তখন খিলখিল করে হেসে বলে উঠতো-“ ভাইয়া চিত্রা তো বাসায় চলে গেছে ভুলে গেছো? আমি তখন চুপ হয়ে যেতাম। পনেরো টা দিন অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিলে তুমি।তোমাকে দেখার জন্য কয়েক দিন পর ছুটে যেতাম তোমাদের বাসায়। বুঝে গেলাম আমার সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য হলেও তোমাকে চাই। ভেবেছিলাম তুমি যখন এসএসসি পাশ করবে তখন মা কে জানাবো। কিন্তু যখন দেখলাম নিজের প্রিয়তামর চোখে অন্য এক পুরুষের জন্য এক আকাশ সম ভালোবাসা ট্রাস্ট মি সেদিন নিজেকে এতো অসহায় মনে হচ্ছিলো যা বলার বাহিরে। বুকের এই বা পাশ টায় এতো ব্যাথা করছিল যে…..
চিত্রা চুপচাপ এতোরক্ষণ কথা গুলো শুনছিলো। লাস্টের কথাটা শুনে চিত্রার বুক ধক করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে-
-“ আপনি জানতেন সব?
তুষার স্মিত হেসে বলে-
-“ যেখানে তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি পুরো রচনা,উপন্যাস পড়ে ফেলতে পারি আর সেখানে তুমি অন্য একজন কে দিনের পর দিন ভালোবেসেছো,তার জন্য তোমার চোখে যে মুগ্ধতা ছিলো সেটা বুঝতে পারবো না!

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৮

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ কি হলো নিশ্চুপ কেনো? কথা বলবেন না?
ফোনের ওপর পাশের রমণীর কথা শুনে মুচকি হাসলো রাফি। মুহূর্তে মুখটাকে আবার গম্ভীর করে শুধায়-
-” কি কথা বলবো?
ফোনের ওপাশে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রমনী যা রাফি বুঝতে পারলো।
-“ কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেছিলাম,উত্তর পাই নি।
-” কেমন থাকার কথা আমার?
-“ সেটা জানলে জিজ্ঞেস করতাম না।
রাফি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বেলকনিতে থাকা দরজাটা লাগিয়ে দিলো বাতাস আসছে খুব।
-“ এতো রাতে একটা ছেলেকে ফোন দিতে তোমার ভয় করলো না?
গড়গড় করে ভেসে আসলো -“ না।
রাফি তার চাপ দাড়িতে হাত বুলায়।
-“ সত্যি ভয় করছে না? এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসি তখন?
-“ কেমন আছেন?
তপ্ত শ্বাস ফেললো রাফি।
-“ ভালো আর থাকতে দিলে কখন যে জিজ্ঞেস করছো কেমন আছেন। শোনো মেয়ে নেক্সট টাইম মধ্য রাতে ফোন দিবে না আর। মনে থাকবে?
-“ হু।
-“ আবার হু বলে ফাজিল মেয়ে। এতো রাত হয়েছে ঘুমাও নি কেনো?
-“ এমনি।

রাফি সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ এমনি নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত জেগে চ্যাট করছিলে?
-“ এসব নাউজুবিল্লাহ জিনিস আমার নেই।
-“ ভদ্র সাজা হচ্ছে?
-“ না সত্যি নেই।
-“ তাহলে ঘুমাও নি কেনো?
-“ আপনাকে ফোন দিবো, একটু কথা বলবো সেজন্য।
-“ আমি যদি ফোন না ধরতাম?
-“ না ধরলে না ধরতেন।
-“ তোমার করা অপমান টা এখনও ভুলি নি।
-“ কোন অপমান ভাইয়া?
-“ সক্কাল সক্কাল তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম বলে কথা শুনিয়েছিলে।

-“ আমি সেভাবে বলতে চাই নি,আসলে অতো সকালে এসেছিলেন বাহিরে ঠান্ডা বাতাস সেজন্য বলেছিলাম। আসতে তো অনেক কষ্ট হয়েছে।
-“ আমার জন্য এতো ভাবো তুমি?
-“ একটু একটু ভাবি যতোই হোক মামুর ছেলে ভাইয়া বলে কথা।
-“ জাস্ট শাট-আপ ওকে?
-“ ভুল কিছু বলেছি কি?
-“ না।
-“ তাহলে শাট-আপ কেনো বললেন?
-“ এমনি বলেছি ভালো লেগেছে তাই। তা তোমার খবর কি?

তৃষ্ণা গায়ের চাদর টা আরো ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে-
-“ এতোক্ষণ পর মনে হলো আমার খবর নেওয়ার কথা? সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বললেন আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।
-“ ওহ মনে ছিলো না তোমার সাথে কথা বলতে।
-“ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি।
-“ ভালোই বুঝতে শিখেছো আজকাল।
-“ হ্যাঁ বড় হচ্ছি যে।
-“ হ্যাঁ খুব বড় হয়েছো,ফুপি কে বলে ছেলে খুঁজতে হবে দেখছি।
-“ ছেলে কেনো খুঁজবেন?
-“ বাহ রে আমার ফুপির মেয়ে বোনটার বিয়ে দিতে হবে না?
-“ আমার বিয়ে দেবার জন্য আমার নিজের ভাই আছে।
-“ আমিও তো তোমার ভাই,আপন না হলাম মামাতো ভাই তো।
-“ আপনি বিয়ে করেন।
-“ কাকে?
-“ আমি জানি নাকি কাকে? বয়সে তো আপনি বড় সে হিসেবে তো আপনার বিয়ে হবে আমার আগে।
-“ ভুলে গেলে তুষার ব্রোর বিয়ে হলো না সেখানে আমার বিয়ে বিলাসিতা মাত্র।
-“ আপনার পছন্দের কেউ আছে?
-“ তোমাকে কেনো বলবো?
তৃষ্ণা মন খারাপ করে শুধায়-
-“ না এমনি, থাকলে বলেন ভাইয়ার আগেই আপনার বিয়ের ব্যাবস্থা করে দিবো।
রাফি হেঁসে বলে-
-“ পিচ্চি মেয়ে আগে পড়াশোনা করো ঠিকমতো। এতো বড় দায়িত্ব নিতে পারবা না।
-“ এতো বড় দায়িত্ব হলো কিভাবে। আপনি বলেই দেখুন তুড়ি মেরে আপনার বিয়ে দিয়ে দিব।
-“ আচ্ছা তাই বুঝি।
-“ হু।
-“ ঘুমাও বাই।

কথাটা বলে রাফি ফোন কেটে দেয়। তৃষ্ণা ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়। লোকটা কি বিদেশে গিয়ে কাউকে পছন্দ করে ফেলছে? নাকি কারো সাথে রিলেশনে আছে।
———————-
গতকালের মতই আজকের দিনেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সোফায় বসে আছে রাতুল আর তার বাবা মা। রিয়া অনেক দিন পর বাবা মা কে পেয়ে খুশিতে জড়িয়ে ধরে। সোফার ওপর প্রান্তে বসে আছে রাসেল আহমেদ, সাহেল আহমেদ, রায়ান, রাফি,রিক্তা বেগম আর চয়নিকা বেগম। রাতুলের চোখ এদিক ওদিক শুধু চিত্রা কে খুঁজছে। রিয়া জানতো না আজ তার ভাই আর মা বাবা আসবে। রাতুলের বাবা রফিক সাহেল আর রাসেল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বেয়াই সাহেব আজ একটা আর্জি নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে।

রাসল আহমেদ ভ্রু কুঁচকে বলে
-“ কিসের আর্জি?
-“ আসলে আপনাদের মেয়ে চিত্রা ওকে আমার ছেলে রাতুলের বউ করে নিতে চাইছি,আপনাদের কি কোনো অমত আছে এতে?
রাসেল আহমেদ একবার সাহেলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ মেয়েটা তো সাহেলের,সাহেল তোর কি অমত এতে?

সাহেল আহমেদ স্ত্রীর পানে তাকালো। চয়নিকা ইশারায় জানালো যেটা ভালো হয় সেটা করতে। সাহেল আহমেদের জানা মতে রাতুল শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলে। এখনও তার কানে কোনে খারাপ কথা আসে নি। ছেলে যেহেতু ভালোই তাহলে না করার কি আছে। পরমুহূর্তে আবার মনে হলো মেয়ের মতামত জরুরি। কিন্তু মেয়ে তার বাসায় নেই, কোচিং-এ গেছে তুষারের সাথে সক্কাল সক্কাল সামনে এডমিশন পরীক্ষা সেজন্য। গলা ঝেড়ে নিয়ে বললেন-

-“ অমত নেই তবে মেয়ের মতামত ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। মেয়ে আমার বড্ড আদরের,তাকে আগে জানিয়ে দেখি সে কি বলে তারপর কিছু বলতে পারবো আপনাদের।
রফিক স্মিত হেসে বলে-
-“ তা অবশ্যই, মেয়ের মতামত জরুরি। কিন্তু চিত্রা কোথায়?
-“ বাবা ও তো কোচিং এ গেছে সামনে ওর এডমিশন পরীক্ষা তো তাই।
রিয়ার কথা শুনে রাতুল রিয়ার কানে কানে বলে-
-“ চিত্রা যে কাল বললো ও ফ্রী আছে কোথাও যাবে না তাহলে?
-“ তুষার ভাইয়া নিয়ে গেছে।
-“ তোর ফুপি শ্বাশুড়ির গম্ভীর ছেলেটা?
-” হ্যাঁ।
-“ উনি কেনো নিয়ে গেলো?
-“ ভাইয়াই তো কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিবে সেজন্য।
-“ ওহ্।
রাতুল ভেবেছিল চিত্রা কে প্রপোজাল দিবে কিন্তু পরে মনে হলো চিত্রা কে দেওয়ার থেকে ফ্যামিলি নিয়ে গিয়ে বলাটা বেটার। এখানে না করার স্কুপ কম।

দুপুরের দিকে চিত্রা বাসায় আসে। ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসতেই রিয়া জাপ্টে ধরে। হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় ভরকে যায় চিত্রা।
-“ কি হয়েছে এভাবে জড়িয়ে ধরছিস কেনো?
-“ গুড নিউজ আছে তাই।
চিত্রা ভালো করে তাকালো রিয়ার দিকে। ভ্রু কুঁচকে বললো-
-“ আবার মা হতে যাচ্ছিস?
-“ আরে ধূর না।
-“ তাহলে?
-“ একটু পরই জানতে পারবি।

চিত্রা রিয়ার এমন হেয়ালি কথা শুনে বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই দেখে চিত্রার মা চয়নিকা বেগম দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে। চিত্রা মাকে দেখে স্মিত হাসে। চয়নিকা বেগম চিত্রার পাশে বসে। এরপর সাহেল আহমেদ ও মেয়ের রুমে ঢুকে। বাবা কে নিজের রুমে দেখে অবাক হয় চিত্রা, সচারাচর তার দুজন এক সাথে তার রুমে আসে না। সাহেল আহমেদ মেয়ের ওপর পাশে বসে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-

-“ কিছু বলবে তোমরা?
চয়নিকা বেগম হ্যাঁ জানায়।
-“ তাহলে বলো।
-“ রাতুল কে তোর কেমন লাগে?
মায়ের কথা শুনে চিত্রা মায়ের পানে তাকায়।
-“ রাতুল ভাইয়া কে কেমন লাগে মানে?
-“ রাতুলের বাবা মা এসেছিল আজ।
-“ তো?
-“ রাতুলের সাথে তোর বিয়ের কথা বললো।

চিত্রা পা দিয়ে ফ্লোরে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে-
-“ তোমরা কি বললে?
-“ তোর বাবা কিছু বলে নি। তোর মতামত নিয়ে জানাবে তাদের।
-“ আমি এই বিয়ে করতে চাই না।
-“ কেনো বিয়ে করবে না?
-“ রাতুল ভাইয়া কে আমি সে নজরে কখনও দেখি নি। আর তাছাড়া আমি তাকে ভাইয়ার নজরে দেখি। সেখানে স্বামী হিসেবে মানা ইম্পসিবল।
-“ আচ্ছা তাহলে না করে দিবো?
-“ হ্যাঁ।

সাহেল ইশারায় চয়নিকা বেগম কে আর কিছু বলতে না করলেন। স্বামীর ইশারা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো তিনি।সাহেল আহমেদের চুপচাপ মেয়ের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। যেখানে মেয়ে না করছে সেখানে তার কিছু বলার থাকে না। সাহেল আর চয়নিকা চলে যাওয়ার পর চিত্রার ফোনে কল আসে। চিত্রা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রাতুলের ফোন। তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন টা রিসিভ করে চিত্রা।
-“ কেমন আছো?
থমথমে গলায় জবাব দেয় চিত্রা।
– “ভালো আছি।
– “বাসায় তুমি?
– “ হ্যাঁ।
– “ কেউ কিছু বলেছে?
– ” হ্যাঁ বলেছে।
– “ তুমি কি বললে?
চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-“ আমি না করে দিয়েছি।
মুহূর্তে রাতুলের হাস্যজ্বল মুখ চুপসে গেলো।
-“ কেনো?
-“ কারন আমি আপনাকে কখনও ওসব নজরে দেখি নি। আপনাকে আমি একজন বড় ভাইয়ের নজরে দেখে এসেছি। আমার পক্ষে আপনাকে স্বামী হিসেবে মানা ইম্পসিবল।
-“ আমি তো কখনও তোমাকে বোনের নজরে দেখি নি।
-“ সেটা আপনার ব্যাপার কিন্তু আমার পক্ষে রাজি হওয়া সম্ভব নয়। ভালো থাকবেন।

কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় চিত্রা। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয় যত্তসব।
তুষার অফিসে বসে আছে সামনের চেয়ারে বসে আছে রাফি। এসে থেকেই রাফি বকবক করেই চলছে।

-“ ব্রো জানো আজকাল সাধাসিধে দেখতে মেয়েগুলো অনেক পাঁজি হয়। কাল একটা কাজে গিয়েছিলাম জমি কিনতে। মেয়েটা জানে কি বললো?
-“ আমি কিভাবে জানবো কি বললো।
-“ দশ শতাংশ জমি কিনবো আমরা। মহিলা টা প্রতি শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ করে মোট ১ কোটি চেয়ে বসলো। যখন রাজি হয়ে তাকে ফোন করে বললাম ১ কোটি টাকায় জমি কিনতে রাজি তখন মেয়েটা বলে উঠলো ৩ কোটি। মানে ভাবো সুযোগ পেয়ে লাফ মেরে ৩ কোটি তে চলে গেলো।
তুষার ক্যালকুলেটর টা রাফির দিকে এগিয়ে দিলো। রাফি ক্যালকুলেটর টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বলে-

-“ এটা কেনো দিলে?
-“ ৩০ লাখ গুন ১০ দে, দেখ তো কত আসে?
রাফি হিসেব করে বলে-
-“ এই যে দেখো ৩ কোটি আসে।
-“ তাহলে তো ঠিক ই আছে বেশি কোথায় চাইলো। দাম তো তিন কোটিই আসে।
-“ হ্যাঁ সেটাই তো তাহলে ১ কোটি চাইলো কেনো?
-“ হয়তো কানে কম শুনেছিস বা বোঝায় ভুল হয়েছে।
-“ নে ব্রো আমি স্পষ্ট শুনেছি সে ১ কোটি বলেছিল।
-“ হয়েছে থাম।
-“ ব্রো একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি।
-“ এসে থেকে তো অনেক কথা বলে ফেললি এর মধ্যে আবার কি বলতে ভুল করলি।
-“ আরে ব্রো আমাদের চিতাবাঘের তো বিয়ে সামনে।

তুষার সবেই চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলো কিন্তু রাফির কথা শুনে অর্ধেক উঠে গিয়ে ফের বসে পড়লো। অবাক হয়ে বললো-
-“ চিত্রার সামনে বিয়ে মানে!
-“ হ্যাঁ আজ রাতুল আর ওর বাবা মা আসছিলো চিত্রার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে।
-“ পরে কি হলো?
-“ কি আর হবে সবাই রাজি।
মুহুর্তে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো তুষার। টেবিলে থাকা গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে বলল-
-“ চিত্রা ও রাজি?
-“ সেটা তো জানি না। চাচা বললো চিত্রার মত থাকলে বিয়ে হয়ে যাবে।

তুষার পকেট থেকে ফোন বের করে চিত্রার নম্বরে ফোন লাগায়। কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলে। তুষার দিকশূন্য হয়ে পড়ে। চিত্রা কি রাজি হয়ে গেছে? না চিত্রা কেবল তুষারেরই। তুষার দ্বিতীয় বার আর চিত্রা কে হারাতে দিবে না। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হলে এবার তাই করবে তুষার। তবুও চিত্রাকে নিজের করে নিবে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৭

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৭
#Raiha_Zubair_Ripti

বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে,ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। সোফায় গোল হয়ে বসে আছে বাড়ির সকল মেয়ে সদস্য। বৃষ্টি পড়ার দরুন তুষার কে আজ বাড়ি যেতে দেয় নি সকল সদস্য রা। তুষার ও মানা করে নি। চিত্রা শরীরের চাদর টা দিয়ে হাত পা সহ পুরো শরীর ঢেকে কোলে রিমি কে নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। রিমি গুটিশুটি হয়ে চিত্রার বুকে শুয়ে আছে। চয়নিকা বেগম গরুর মাংস আর ভুনা খিচুড়ি রান্না করেছে সাথে রয়েছে আমের চাটনি। চাটনি টা অবশ্য আগের। এই সময়ে তো আম পাওয়া সম্ভব না। খিচুড়ির গন্ধে ড্রয়িং রুম মৌ মৌ করছে। চিত্রা ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ঘ্রাণ তো অনেক সুন্দর হয়েছে মা। আমার তো এখনই জিহ্বা দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসছে।

চয়নিকা বেগম মেয়ের কথা শুনে স্মিত হাসে। রিয়া চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। রাতুল মেসেজ দিয়েছে চিত্রার নম্বর চাচ্ছে। রিয়া আড়চোখে চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রার অনুমতি ছাড়া কিভাবে তার নম্বর দিবে রিয়া। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। চিত্রার পাশে গিয়ে বসে বলে-
-“ এই চিত্রা একটা কথা বলতে চাই।

চিত্রা নড়েচড়ে বসে।
-“ হু বল।
-“ তোর নম্বর টা আসলে রাতুল ভাইয়া চাচ্ছে, আমি কি দিবো?
-“ কেনো?
-“ জানি না,বললো তোকে কি একটা কথা নাকি বলবে।
-“ ওহ আচ্ছা।
-“ দিবো?
-“ দে।

রিয়া চিত্রার নম্বর টা সেন্ড করে রাতুল কে পাঠায়। রাতুল চিত্রার নম্বর টা পেয়ে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দেয়।

তুষার একের পর এক হাঁচি দিচ্ছে। ঝালের রেশ এখন বের হচ্ছে। রাফিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে তার রুমে জ্বরের মেডিসিন আছে কি না? রাফি না করে দেয়। রিয়া বা মা চাচির কাছে চেয়ে দেখতে বললো। তুষার তপ্ত শ্বাস ফেলে বসার রুমে আসে। সোফায় বসে থাকা রিক্তা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ মামি জ্বরের মেডিসিন হবে?
রিক্তা বেগম তুষারের কথা শুনে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ জ্বরের মেডিসিন চাইছো কেনো তুষার, জ্বর এসেছে?
-“ এখনও আসে নি,বোধহয় আসবে। আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে তো। ঠান্ডা অলরেডি লেগে গেছে।
-“ চিত্রা আমার রুমে যা তো মা দেখ খাটের পাশে বক্সে মেডিসিন আছে তুষার কে এনে দে।

চিত্রা বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে রিক্তা বেগমের রুমে গিয়ে মেডিসিন টা নিয়ে আসে। তুষারের সামনে মেডিসিন টা রেখে বলে-
-“ ভাইয়া খালি পেটে খাবেন না। আম্মু রান্না করেছে। খাবার মুখে দিয়ে মেডিসিন টা খান।

তুষার মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। সোফা ছেড়ে উঠে টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। চয়নিকা বেগম রুমে গিয়েছে সেজন্য খাবার টা রিয়া বেড়ে দিলো। তুষারের আনইজি লাগলো একা একা খেতে। চিত্রা রিমি কে রিক্তা বেগমের কাছে দিয়ে তুষারের ওপর পাশের চেয়ারে বসে বলে-
-“ রিয়া আমাকেও দে, আমি আর না খেয়ে থাকতে পারলাম না।

রিয়া স্মিত হেসে চিত্রা কে প্লেটে খিচুড়ি আর মাংস বেড়ে দিলো। এরমধ্যে রিমি কান্না কর উঠলো। রিক্তা বেগম রিয়া কে ডেকে বললেন রিমি হয়তো ঘুমাবে তাকে নিয়ে যেনো ঘুম পাড়ায়। রিয়া শ্বাশুড়ির ডাক শুনে মেয়ের কাছে গিয়ে দেখে সত্যি তার মেয়ে ঘুমাবে। মেয়েকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রিক্তা বেগম ও উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। ড্রয়িং রুমে রইলো চিত্রা আর তুষার। তুষার খাওয়ার মাঝে বারবার আড়চোখে চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রা মনের সুখে খেয়ে চলছে। তুষার পানি টা খেয়ে প্লেটে হাত ধুয়ে মেডিসিন টা খেয়ে নেয়। এরমধ্যে চিত্রার ফোন বেজে উঠে। টেবিলের উপর ছিলো ফোন টা। চিত্রা তাকিয়ে দেখলো অচেনা নম্বর তাই আর রিসিভ করলো না। প্রথম বার বেজে কল কেটে গেলো। ফের আবার কল আসতেই তুষার বলে উঠে-

-” ফোন ধরছো না কেনো?
চিত্রা প্লেটে আচার নিতে নিতে বলে-
-“ চিনি না এই নম্বর,অচেনা।
-“ তাই বলে ধরবে না? মামু তো বাসায় নেই মামুও তো হতে পারে। রিসিভ করে দেখো।

চিত্রা বাম হাত দিয়ে ফোন টা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেয়। ওপাশ থেকে এক পুরুষালি কন্ঠে ভেসে আসলো-“ হ্যালো।

চিত্রা আচার খেতে খেতে বলে-“ হ্যালো কে বলছেন?
-“ আমি রাতুল বলছি।

চিত্রার খাওয়া থেমে যায়। তুষার ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাতুল তো রিয়ার ভাই। সে কেনো চিত্রা কে ফোন দিলো। চিত্রা ফোনটা হাতে নিয়ে স্পিকার কমিয়ে কানে নিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ রাতুল ভাইয়া বলুন।

রাতুল নিজের রুমের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
-“ তোমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। তোমার আশেপাশে কি কেউ আছে?

চিত্রা একবার তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ আছে। আপনি কি বলবেন বলেন আমি শুনছি।
-“ না তাহলে আর বলা যাবে না। তুমি কি কাল আছো?
-“ হ্যাঁ।
-“ দেখা করতে পারবা?
-“ কেনো?
-“ একটা কথা বলবো।
-“ হ্যাঁ সেটা তো আমিও জানি। আপনি বলুন সেই কথাটা।
-“ সামনা সামনি বলতে চাই। তুমি বরং কাল তোমার বাসার পাশে যে ক্যাফে টা আছে ওখানে এসো আমি অপেক্ষা করবো ঠিক বিকেল তিনটে বাজে।
-“ আরে কাল বৃষ্টি থাকবে, আর আমি বৃষ্টির ভেতর কোথাও যাওয়া পছন্দ করি না।
-“ তাহলে আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়াবো তুমি এসো।
-“ আশ্চর্য বাসার সামনে আসতে পারলে তো বাসায়ই আসতে পারেন। আপনি বরং বাসাতেই আসেন। এখন রাখি আমি খেতে বসছি।

রাতুল কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চিত্রা ফোন কেটে দেয়। তুষার গম্ভীর কন্ঠে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ রিয়ার ভাই রাতুল কেনো ফোন দিলো?
-“ কি যেনো বলবে বললো।
-“ কি বলবে?
-“ সেটা তো বলে নি।
-“ তা কোথায় যাওয়ার প্ল্যান করলে?

চিত্রা প্লেটে হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে বলে-
-“ কিসের কোথায় যাওয়ার প্ল্যান করলাম?
-“ একটু আগেই না বললে বৃষ্টির মধ্যে তোমার কোথাও যাওয়া পছন্দ না।
-“ ওহ্ রাতুল ভাইয়া কাল পাশের ক্যাফেতে দেখা করতে বললো। পরে না করলাম। দ্যান সে বললো বাসার সামনে আসবে তাই বললাম বাসার সামনে যখন আসবেন তাহলে বাসাতেই আসেন।
-“ ওহ রাতুল তো বিয়ে করে নি তাই না?
-“ হ্যাঁ মনে হয়। শিওর জানি না।
-“ তোমার নম্বর কোথায় পেলো?
-“ রিয়া দিয়েছিলো।
-“ সবাইকে কি নম্বর দিয়ে বেড়াও?
-“ আশ্চর্য সবাইকে নম্বর দিতে যাবো কেনো?
-“ না এমনি মনে হলো তাই। বৃষ্টি তো এখন ও থামলো না, আমি রুমে যাচ্ছি তুমি প্লিজ এক কাপ কফি দিয়ে যেয়ো। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
-“ আচ্ছা আপনি যান আমি প্লেট ধুয়ে নিয়ে আসছি।

তুষার হনহন করে রুমে চলে গেলো। চিত্রা প্লেট ধুয়ে রান্না ঘরে গেলো কফি বানাতে।

এদিকে রাফি আর রায়ান,রাসেল আহমেদ ফ্যাক্টরির ভেতর দাঁড়িয়ে আছে। রাফি তার বাবা সামনে বসে ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে-
-“ বাবা দশ শতাংশ জমির দাম শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ মোট ১ কোটি টাকা।

রাসেল আহমেদ চা মুখে দিচ্ছিলেন।ছেলের কথা কানে আসতেই মুখ ফসকে চা পড়ে যায়। রায়ান বাবার দিকে চেয়ে বলে-
-“ আস্তে খাও চা।
রাসেল আহমেদ চায়ের কাপ টা টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ আর দশ শতাংশ ১ কোটি?
-“ হ্যাঁ।
-“ দাম টা কে ঠিক করেছে?
রাফি বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ কে আবার ঐ মেয়েই বলেছে।
-“ আমি রাজি ১ কোটি টাকায় জমি কিনতে। তুই এখনই কথা বল।

রাফি রায়ানের থেকে নম্বর টা নিয়ে ভদ্রলোকের ফোনে কল লাগায়। অধরা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল। আশরাফুল রহমান ফোন টা নিয়ে মেয়ের রুমে ঢুকে। বেলকনিতে গিয়েছিল বলে-
-“ অধরা ওরা আবার ফোন করেছে।
অধরার বৃষ্টি দেখায় ব্যাঘাত ঘটে। বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে ফোন কানে নিয়ে বলে-
-“ হ্যালো।

রাফি অধরার কন্ঠ শুনে বলে-
-“ আমি রাফি বলছিলাম।
-“ হ্যাঁ বলুন।
-“ আমরা আপনার শর্তে রাজি ১ কোটি টাকা দিয়ে জমিটা নিতে চাই।
-“ কিসের ১ কোটি?
-“ আপনিই না বললেন শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ মোট ১ কোটি।
-“ ৩০ লাখে দশ শতাংশ ১ কোটি আসে?
-“ সেটা তো আপনিই জানেন ভালো।
-“ ৩ কোটি আসে। ৩ কোটির নিচে এক পয়সা ও কমে জমি বিক্রি করবো না।

মুহূর্তে রাফির মাথায় রাগ চেপে বসলো। সহসা চেয়ার ছেড়ে উঠে বসলো। কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো-
-“ এই আপনি আমাদের কি পাইছেন,এক এক সময় এক এক কথা বলেন। টাকা কি গাছে ফলে? দশ শতাংশের দাম ৩ কোটি কোন আক্কেলে চান। মেন ঢাকাতেও তো এতো দাম না জমির।

রাসেল আহমেদ ছেলের হাত চেপে ধরে। ইশারায় মাথা ঠান্ডা রাখতে বলে। তিনি ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে হলেও জায়গা টা নিবে। রাফি তার বাবার ইশারা দেখে ফোন টা তার বাবার দিকে এগিয়ে দেয়।
-“ নাও তোমার জমি তুমি কথা বলো।

রাসেল আহমেদ ফোন টা নেয়।
-“ হ্যালো,আমরা আপনার শর্তে রাজি তিন কোটি টাকাই দিবো তবুও জায়গা টা চাই।
-“ ঠিক আছে কাগজপত্র সহ টাকা রেডি করুন। আর হ্যাঁ ছেলেকে ভদ্রতা শিখাবেন।

কথাটা বলে অধরা ফোন কেটে দেয়। সুযোগ একবার আসলে সেই সুযোগ কে কাজে লাগাতে এই অধরা ভালো করেই জানে। রাফি তার বাবার থেকে ফোন টা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। রাগ মাথায় নিয়েই বাড়িতে প্রবেশ করে রাফি। চিত্রা কফি নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হতেই দেখে রাফি হন্তদন্ত হয়ে আসছে। চিত্রা রাফির সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ এই তোমার আসার সময়?
রাফি হাঁটা থামিয়ে দেয়। চিত্রার হাতে কফি দেখে কফি টা হাতে নিয়ে বলে-
-“ থ্যাংকস এটারই প্রয়োজন ছিলো।

চিত্রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই রাফি কফি টায় চুমুক বসায়। চিত্রার রাগ হলো,এখন তাকে আবার কফি বানাতে হবে। ফের রান্না ঘরে ছুটলো কফি বানিয়ে তুষারের রুমের দিকে গেলো। তুষার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির সাথে আসা মৃদু ঠান্ডা বাতাস তুষারের শরীর টা কাঁপিয়ে তুলছে তবুও ভালো লাগছে তুষারের। চিত্রা রুমে ঢুকে তুষারের পাশে দাড়িয়ে বলে-
-“ আপনার কফি।

তুষার চিত্রার পানে চেয়ে কফির মগ টা হাতে নিয়ে দৃষ্টি বৃষ্টির দিকে রেখে বলে-
-“ এতোক্ষণ লাগলে একটা কফি বানাতে?
-“ না এতো টাইম লাগতো না আসলে আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছিলাম সেটা রাফি ভাইয়া খেয়ে ফেলছে।
-“ রাফি ফিরেছে?
-“ হ্যাঁ। আপনি শরীরে শীতের পোষাক পড়েন নি কেনো।দেখেন কত শীত।
-“ আমার শীত লাগছে না বরং ভালোই লাগছে।
-“ আমি শুনেছি যাদের শরীরে চর্বি বেশি তাদের শীত কম গরম লাগে বেশি।

তুষার কফিতে চুমুক বসিয়ে বলে-
-“ আমার শরীরে কি চর্বি বেশি নাকি?
-“ মনে হয় বেশি সেজন্যই তো আপনার শীত লাগছে না।

তুষার হেসে উঠলো।চিত্রা সেই হাসির দিকে চাইলো। লোকটার হাসি কি সুন্দর। মেয়েদের মতো গালে টোল পড়ে।
-“ তুষার ভাই আপনি কি জানেন আপনার হাসি কত সুন্দর?
-“ না আগে তো কেউ বলে নি। তবে তুমি বলায় আজ জানলাম।
-“ সত্যি আপনার হাসি সুন্দর। আমি হাসলে যেমন গালে টোল পড়ে তেমন আপনার হাসলে গালে মেয়েদের মতো টোল পড়ে।

তুষার ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কেনো টোল কি শুধু মেয়েদের ই হয় নাকি। ছেলেদের হতে বারন নাকি?
-“ না তেমন না আসলে ছেলেদের তো তেমন টোল দেখা যায় না গালে। কিন্তু আপনার আছে।
-” কারন তুষার তো ওয়ান পিসই তাই।
-“ এহ আমি আপনাকে পাম দিছি ফুলে যাইয়েন না।
-“ আমি তো ফুলেই গেছি তোমার পাম দেওয়া দেখে।

চিত্রা কিছু বললো না। তুষার ভাই আজকাল ভালোই কথা বলছে। বিদেশ যাওয়ার আগে তো কথাই বলতো না। গুমরো মুখ করে থাকতো। এখন ভালোই হাসিখুশি কথা বলছে সবার সাথে। তপ্ত শ্বাস ফেললো চিত্রা মানুষের বদল ঘটতে সময় লাগে না।
-“ আচ্ছা তুষার ভাই একটা কথা বলি?
তুষার কফির মগ টা চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
-” হু বলো।
-“ আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
-“ কেনো বলতো?
-“ না এমনি কৌতূহল হলো জানার।
-“ যদি বলি আছে?
-“ কে সে?
-“ আছে আছে সে এক মায়াবতী।
-“ বলেন কে সে?
-“ এখনও সঠিক সময় হয় নি।
-“ সে অনেক সুন্দর বুঝি?
-“ হ্যাঁ আমার চোখে সে সবার চেয়ে সেরা সুন্দরী।
-“ ইশ মেয়েটার কি ভাগ্য।
-“ কেনে ভাগ্য কেনো?
-“ এই যে আপনাকে সে পাবে। মেয়েটার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরতে যান নিশ্চয়ই তাই না?
-“ না মেয়েটা এখনও জানে না আমি তাকে পছন্দ করি।
-“ আল্লাহ কি বলেন,এখনও বলেন নাই মেয়েকে! মেয়ে যদি অন্য ছেলের সাথে ভেগে যায় তখন?
-“ না সেই সুযোগ তুষার আসতেই দিবে না। অন্য ছেলের সাথে ভেগে যাওয়া তো দূর কোনো ছেলের দৃষ্টি ও ওর দিকে পড়তে দিবো না।
-“ তে বলে দিলেই তো পারেন।
-“ না তাকে বলার সঠিক সময় এখন ও হয় নি। তবে খুব শীগ্রই বলবো।

-“ হ্যালো, কেমন আছেন?

রাফি ঘুমিয়েছিল হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় বিরক্তি নিয়ে ফোন টা রিসিভ করে কানে নেয়। ওপাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠ শুনে ঘুম সব উবে যায়। শোয়া থেকে উঠে বসে। মুহূর্তে মুখে ফুটে উঠে হাসি। রাফি জানতো মেয়েটা তাকে ফোন দিবে। ফোন মুখের সামনে এনে দেখে রাত দেড় টা বাজে। সেই সাথে ফোনের স্কিনে জ্বল জ্বল করছে ❝চাতক পাখি❞ দিয়ে নাম সেভ করা। যা ফোন রিসিভ করার সময় ঘুমের কারনে খেয়াল করে নি।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৬

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripti

পড়ন্ত বিকেল, বাহিরে এখনও বাতাস বইছে তবে সকালের তুলনায় খানিক টা তীব্র গতিতে। আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে আজ থেকে টানা দুইদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। টিভিতে এই নিউজ টা দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিত্রা। তার এমন বৃষ্টি পছন্দ না,চারিদিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। সোফার ওপর প্রান্তে বসে আছে তুষার। সে ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল চেক করছে। আড় চোখে চিত্রার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-“ মুখ টাকে এমন পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছো কেনো? কোনো সমস্যা?
চিত্রা নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি বাহিরের দিকে রেখে বলল-
-“ ভাইয়া কখন যাবেন ও বাড়ি? দেখেন আকাশ কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি আসবে তো।
-“ আসলে আসুক তোমার প্রবলেম কি।
তুষারের এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে চিত্রা তার দিকে তাকায়।
-“ আমারই তো সমস্যা বাসায় যাবো কিভাবে,তখন রাফি ভাইয়ার সাথে গেলে ভালো হতো।
তুষার ল্যাপটপ টা বন্ধ করলো। সেকেন্ড খানিক সময় নিয়ে বলল-
-“ যাও রেডি হয়ে আসো।

কথাটা বলেই তুষার বসা থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। চিত্রা তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। ব্যাগ টা গুছিয়ে একদম বসার ঘরে চলে আসে। তৃষ্ণা বাসায় নেই,তৃষ্ণা গেছে তার ফ্রেন্ডের বাসায় কিছু নোট আনতে। তানিয়া বেগম রুমে শুয়ে আছে। আকাশের আবহাওয়া খারাপ দেখে তার স্বামী তামিম খান একটু আগে ফোন দিয়ে জানিয়েছে ফিরতে দু দিন লেট হবে। চিত্রা বসার ঘরে ব্যাগ টা রেখে ফুপির রুমে চলে গেলো। দরজায় টোকা দিয়ে বললো-
-“ ফুপি আসবো?
তানিয়া বেগম চিত্রার গলার আওয়াজ শুনে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“ হ্যাঁ আয়।
চিত্রা দরজা ঠেলে ভেতরে আসে। তানিয়া বেগম চিত্রাকে রেডি হওয়া দেখে বলে-
-“ কোথাও যাচ্ছিস?
-“ হ্যাঁ বাসায় যাচ্ছি।
-“ সে কি এখনই চলে যাবি নাকি।
-“ হ্যাঁ মা আজই যেতে বলছে তাছাড়া কয়েক দিন পর আমার এডমিশন পরীক্ষা সেটার জন্য ও তো প্রিপারেশন নিতে হবে।
-“ আচ্ছা, তুষার নিয়ে যাচ্ছে তো?
-“ হ্যাঁ তুষার ভাইয়াই নিয়ে যাচ্ছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা সাবধানে পৌঁছে ফোন দিস একটা।
-“ আচ্ছা ফুপি ভালো থেকো।

কথাটা বলে তানিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে চলে আসে। সোফার কাছে আসতেই দেখে সিঁড়ি দিয়ে তুষার নামছে। পড়নে জিন্স প্যান্ট হাতে হাত ঘড়ি,গায়ে ব্লাক শার্ট,শার্টের সামনে দিয়ে দুটো বোতাম খোলা। পারফেক্ট লাগছে চিত্রার কাছে। ভাইয়ের বউ অনেক লাকি হবে এমন সুদর্শন ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
তুষার চিত্রার সামনে এসে বলে-
-“ রেডি? তো চলো যাওয়া যাক।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে ব্যাগটা নিয়ে তুষারের পেছন পেছন হাঁটা ধরে। গাড়ির কাছে এসে পেছনের সিটে বসতে নিলে তুষার বলে-
-“ ব্যাগ টা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসো। আমি তোমার ড্রাইভার নই যে পেছনে বসবা।

চিত্রা তুষারের কথা মতো ব্যাগটা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসে। তুষারের বলার আগেই সিট বেল্টটা লাগিয়ে নেয়। তুষার স্মিত হেসে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করে। গাড়িটা ঢাবির সামনে আসতেই চিত্রা এক ধ্যানে ঢাবির দিকে তাকিয়ে থাকে। চিত্রার খুব ইচ্ছে করছে ঢাবির ভেতর টায় ঢুকতে। তুষার কে গাড়ি টা থামাতে। তুষার চিত্রার চোখ অনুসরণ করে দেখলো মেয়েটা ঢাবির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িটাকে এক সাইডে রেখে বলে-
-“ চলো একটু ঢাবির ভেতরে যাই।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-“ কেনো?
তুষার গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে-“ এমনি।আসলে ঢাবির সামনে আসলে একবারের জন্য হলেও যেতে ইচ্ছে করে। এক সময় ঢাবির স্টুডেন্ট ছিলাম বলে কথা।

চিত্রা গাড়ি থেকে নামলো। তুষারের পাশে দাঁড়িয়ে বাহির থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ঢাবির দিকে। পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে ছিলো অনেক চেয়ে চিত্রার কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করে না। কিন্তু আজ ঢাবির দিকে তাকিয়ে সেই পুরোনো ইচ্ছে টাকে আবার পূরণ করতে ইচ্ছে করছে। তুষার চিত্রার সামনে নিজের বা হাত টা বাড়িয়ে দিলো। চিত্রা হাত টার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো-“কি?
তুষার ডান হাত দিয়ে তার চুল গুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বলল-
-“ চলো আজ তোমাকে একটা সুন্দর বিকেল উপহার দেই।

কথাটা বলে তুষার চিত্রার ডান হাত চেপে হাঁটা ধরলো। যতই ঢাবির ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই চিত্রার মন আত্মিক শান্তি পাচ্ছে। এভাবে কেউ তাকে নিয়ে কখনও হাঁটে নি। ক্যাম্পাসের সবাই কি সুন্দর একে ওপরের হাত ধরে ঘুরছে আবার কেউ একজোট হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ গিটারে সুর তুলে গান গাইছে। চিত্রা হাঁটা থামিয়ে দিলো। ছেলে মেয়ে গুলোর দিকে তাকালে। তুষার হাঁটার মাঝে বাঁধা পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে বলল-
-“ ওখানে যাবে? ওরা গান গাইবে এখন।

চিত্রা হ্যাঁ জানালো। তুষার চিত্রা কে নিয়ে ঐ ছেলেমেয়েদের কাছে গেলো। ছেলেমেয়ে গুলো সুর তুলছে গান গাইবে। চিত্রা সবটা খেয়াল করছে। তাদের মধ্যে থাকা এক টা ছেলে হঠাৎ করে বলে উঠলো-
-“ আরে তুষার ভাই আপনি যে।
তুষার খেয়াল করে নি ছেলেটা কে। ছেলেটার ডাক শুনে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হেই শামিম হোয়াটসঅ্যাপ?
-“ এই তো চলছে,অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলেন। (চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে) ওটা কি ভাবি আমাদের?

কথাটা কর্ণকুহর হতেই খানিক টা লজ্জা পেলো চিত্রা। এরা কি একজন ছেলের পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই গফ/বফ ভেবে ফেলে। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ও আমার মামার মেয়ে।
ছেলেটা ওহ্ বলে পাশে থেকে ফুচকার স্টলে থেকে দুটো চেয়ার এনে তুষার আর চিত্রা কে দেয় বসার জন্য। চিত্রা আর তুষার বসে। ছেলে মেয়েগুলো গাইতে থাকে,,
যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তুমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় ? আর প্রেমই বা কোথায় ?
যদি দিশেহারা ঈশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ঈশারা কোথায় ? আর আশারা কোথায় ?
যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা |
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরুপায় |
যদি প্রতিদিন সেই রঙ্গিন হাসি ব্যথা দেয়
যদি সত্য গুলো স্বপ্ন হয়ে শুধু কথা দেয়
তবে শুনে দেখো প্রেমিকের গানও অসহায় |
যদি অভিযোগ কেড়ে নেয় সব অধিকার
তবে অভিনয় হয় সবগুলো অভিসার
যদি ঝিলমিল নীল আলোকে ঢেকে দেয় আঁধার
তবে কি থাকে তুমার বলো কি থাকে আমার
যদি ভালোবাসা সরে গেলে মরে যেতে হয়
কেন সেই প্রেম ফিরে এলে হেরে যেতে ভয়
শেষে কবিতারা দ্বায়সারা গান হয়ে যায় |

গানটা কয়েকবার ফেসবুকে শুনেছিলো চিত্রা। এবার সামনা সামনি গাইতে দেখলো। গান ভালোই লাগলো ছেলেমেয়ে গুলোর কন্ঠে। তুষার চিত্রার হাত ধরে বসা থেকে উঠে কার্জন হলের সামনে গেলো। ফাস্ট টাইম আজ কার্জন হল দেখলো সামনা সামনি চিত্রা। পিক তুলবে না সেটা হয় নাকি। তুষারের দিকে তার ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ আমার কয়েক টা পিক তুলে দিন।

তুষার নিজের ফোন টা বের করে বলে-
-“ আমার কাছে ফোন আছে তুমি গিয়ে দাঁড়াও আমি পিক তুলে দিচ্ছি।

চিত্রা হলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পোস নিলো আর তুষার পিক তুলে দিলো। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে ভেলপুরি দেখে সেখান টায় তুষারের হাত ধরে ছোট লাগালো চিত্রা। ভেলপুরির কাছে গিয়ে চিত্রা বলল-

-“ মামা দু প্লেট ভেলপুরি দিন ঝাল বেশি করে।

ভেলপুরি মামা দু প্লেট ভেলপুরি চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা এক প্লেট নিজে নিয়ে আরেক প্লেট তুষারের সামনে ধরে বলে-
-“ ভাইয়া নিন।

তুষার ভেলপুরির দিকে তাকিয়ে, ভেলপুরির ঝাল মেপে নিলো। ঝাল খুব একটা খেতে পারে না তুষার।
-“ না না আমি ভেলপুরি খাই না তুমি খাও।

চিত্রা নিজের প্লেট থেকে একটা ভেলপুরি নিয়ে তুষারের মুখের সামনে ধরে বলে-
-“ একটা খান ভাইয়া তা না হলে আমার পেট খারাপ হবে প্লিজ।

তুষার চিত্রার হাতে দেওয়া ভেলপুরির অফার টা লুটে নিলো। এমন সুযোগ কবে আসবে কে জানে। তুষার একটা ভেলপুরি খেলে চিত্রা ওপর প্লেট টা তুষারের হাতে ধরিয়ে দেয়। ইশারায় খেতে বলে। তুষার খেয়ে নেয়। প্রেয়সীর সাথে একই পাশে দাঁড়িয়ে এই ঝাল ও যেনো অমৃত লাগলো। কিন্তু সব ভেলপুরি খাওয়ার শেষে বুঝলো এ অমৃত কেবল তার ভাবনাতেই ছিলো। মুহূর্তে চোখ ঠোঁট লাল হয়ে গেলো। চিত্রা খেতে খেতে তুষারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এই ছেলের চোখ ঠোঁট হঠাৎ লাল কেনো হলো বুঝতে পারলো না।
-“ ভাইয়া আপনার চোখ ঠোঁট এমন লাল কেনো?

তুষার ইশারায় পানি চাইলো। চিত্রা দোকানদারের কাছে থাকা পানির বোতল টা তুষারের দিকে এগিয়ে দেয়। তুষার ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে ফেলে। চিত্রা বুঝলো বেচারা ঝালের জন্য এমন করছে। দোকানদারের থেকে প্লেটে মিষ্টি টক নিয়ে তুষারের সামনে ধরে বলে –
-“ মিষ্টি টক টা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

তুষার খেয়ে নিলো। একটু একটু করে ঝাল কমতে লাগলো। তুষার ভেলপুরির বিল মিটিয়ে চিত্রাকে নিয়ে হাঁটা ধরে। চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সামান্য ঝাল খেতে পারেন না আই এম তো অবাক! আমার তো ঝাল লাগলো না। পুরুষ মানুষ থাকবে ঝালের উপর দিয়ে। এমন হলে চলে নাকি।
তুষার কিছু বললো না। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। চিত্রা গাড়িতে বসে বলে-
-“ আর একটু সময় থাকলে কি হতো?
-“ কেনো তোমার না পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে নাই তাহলে পাবলিকের আঙিনায় থাকবা কেনো।
-“ আশ্চর্য কে বললো ইচ্ছে নাই,আছে তো কিন্তু পাবলিকে চান্স পেতে হলে ভাগ্য লাগে।
-“ তোমার কি ভাগ্য নেই? লিসেন চিত্রা নিজের ভাগ্য নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।মন দিয়ে প্রিপারেশন নাও।
-“ হ্যাঁ আপনার আর তৃষ্ণার কপালের সাথে কপাল ঘষা দিতে হবে যদি ভাগ্য বদলায়।

তুষার কথা বললো না। ঝালে তার অবস্থা খারাপ,রাতে হয়তো জ্বর আসবে। চিত্রা কে বাসায় দিয়ে ফেরার পথে মেডিসিন নিতে হবে। এই এক শরীর সামান্য ঝালই সহ্য করতে পারে না বিরক্তিকর শরীর। একটু কিছু হলেই নেতিয়ে যায়।

তুষার চিত্রা কে নিয়ে তার বাসায় আসে। সোফায় রিক্তা বেগম আর রিয়ার মেয়ে রিমি বসে আছে। দাদি নাতনি মিলে খুনসুটি করছে। চিত্রা আর তুষার বাড়ির ভেতর ঢুকে। রিমি চিত্রা কে দেখা মাত্রই হাতে তালি দিয়ে হেঁসে উঠে। চিত্রা ব্যাগ টা রেখে পিচ্চি টাকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। রিক্তা বেগম তুষার আর চিত্রা কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুষারের দিকে এগিয়ে বলে-
-“ কেমন আছো তুষার?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামি। আপনারা কেমন আছেন?
-“ এই তো আল্লাহ রাখছে ভালো। আজ কত গুলো মাস পড় আসলা।

তুষার স্মিত হেসে বলে-
-“ কাজের অনেক প্রেসার সেজন্য আসার সময় হয়ে উঠে না। রায়ান ভাই আর মামা রা কোথায়?
-“ ওরা তো বাসায় নাই। তুমি বসো।

তুষার সোফায় বসলো। চিত্রা আর রিমি মিলে কথা বলছে আর হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। তুষার পর্যবেক্ষণ করলো সবটা। মেয়েটা রায়ানের মেয়ের সাথে কিভাবে মিশে গেলো। অন্য কেউ হলে কি এতো ইজিলি ভালেবাসার মানুষটার বাচ্চাকে এভাবে আদর করতে পারতো? তপ্ত শ্বাস ফেললো তুষার।রিয়া স্ন্যাকস আর কফি এনে তুষারের সামনে রাখে।
-“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?
তুষার চিত্রার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রিয়া। তুমি কেমন আছো?
-“ আমিও ভালো আছি।
-“ রাফি ও কি বাসায় নেই?
-“ না ভাইয়া, বাবা আর রায়ানের সাথে গেছে কোথাও একটা।

তুষার কফিতে চুমুক বসালো। চয়নিকা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আগে। কপালে চুমু একে দেয়। সোফার ওপর পাশে তুষার কে দেখে। তুষার ছেলেটা আজ অনেক দিন পর আসলো তাদের বাসায়। লাস্ট এসেছিলো বছর খানে আগে। যখন গ্রাম থেকে শ্বাশুড়ি আর শ্বশুর এসেছিল।
-“ তুষারের তাহলে পা পড়লো মামার বাসায়? দাওয়াত দিয়েও তো তুষার কে পাওয়া যায় না।
-“ কি করবে বলুন মামি, সব দিক সামলিয়ে আসা টা হয়ে উঠে না।
-“ বয়স হচ্ছে তো বিয়ের। পাত্রী দেখি কি বলো?

তুষার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। চিত্রার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো-
-“ মেয়ে দেখে কি করবেন মেয়ে দেখাই আছে। এখন শুধু সবার অনুমতি নিয়ে উঠিয়ে নেওয়া বাকি।

চিত্রা সহ রিয়া, চয়নিকা, রিক্তা সবাই অবাক হয়। মেয়ে দেখাই আছে মানে? তানিয়া কি তাহলে না জানিয়েই মেয়ে ঠিক করে রেখেছে। তুষার সবাই কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে –
-“ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো সবাই?
রিক্তা বেগম তুষারের পাশে বসে বলে-
-“ মেয়ে কি কর? কোথায় থাকে? কোন পরিবারের মেয়ে সে?দেখতে কেমন?

তুষার শব্দ করে হাসলো।
-“ সিরিয়াস হচ্ছেন কেনো আমি মজা করেছি। বিয়ে নিয়ে এখনও প্ল্যান করি নি। মনের মানুষ পেয়ে গেলে করবো।

রায়ান, রাফি আর রাসেল আহমেদ এনাম মেডিকেলের পাশে তাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের অফিসের কাজ চলছে। অফিসের ভেতর ঢুকতে হলে এই দশ শতাংশ জমির উপর দিয়ে যেতে হবে যার জন্য রাসেল আহমেদের এই দশ শতাংশ জমি চাই। রাফি বুঝলো কেনো তার বাবা জমিটার জন্য এমন করছে। রায়ান জমির মালিকের বাবা কে ফোন দেয়। আশরাফুল রহমান মেয়ে অধরার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ফোনে কল আসায় দেখে সেই পরিচিত নম্বর। মেয়ের দিকে নাম্বার টা তাক করে বলে-
-“ এই যে দেখো জমির জন্য আবার ফোন করা হয়েছে।

অধরা ফোন টা কেড়ে নিলো বিরক্তিতে। ফোন টা রিসিভ করতেই অধরা গড়গড় করে বলল-
-“ একবার আপনাদের বলা হয়েছে না জমি বিক্রি করা হবে না তাহলে বারবার কেনো ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন।

রাফির রাগ হলো-
-“ জাস্ট শাট-আপ, আপনাকে জমি বিক্রি নিয়ে ফোন করা জয় নি। আপনি একবার জমির কাছে আসুন।
-“ কেনো?
-“ আসুন তারপর দেখে যান।
-” ওয়েট আসছি।

কথাটা বলে অধরা ফোন কেটে দেয়। হ্যান্ড ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে যায়। রায়ান আর রাসেল আহমেদ অফিসের ভেতরে গেছে,রাফি বাহিরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশ ফিরে দেখে সেদিনের সেই বিধবা মেয়েটা। আজও পড়নে সাদা শাড়ি। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সেই অধরা না?
অধরা রাফি কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনি কে?
-“ আমি রাফি সেদিন প্লেনে যার পাশে বসেছিলেন।
-“ ওহ্ আপনি এখানে কি করছেন?
-“ আসলে এক বজ্জাত মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
-“ মানে?
– “ মানে হলে এই যে,এই যে সামনে যে জায়গা টা দেখতে পাচ্ছেন না এই জায়গা টা একটা মহিলার, সেই মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
অধরা হাতের ইশারায় জমির জায়গা টার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই দশ শতাংশ?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমিই সেই মালিক। বলুন কি বলবেন?
রাফি একবার জমি তো আরেক বার অধরার দিকে তাকায়।

-“ এই জমি আপনার?
-“ হ্যাঁ।
-“ আপনি এই দশ শতাংশ জমি ছাড়ছেন না কেনো? আপনার জন্য আমাদের অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
-“ আপনাদের এখানে কে বলেছে অফিস তৈরি করতে? আমার জায়গার জন্য প্রবলেম হলে অন্য জায়গায় তৈরি করুন অফিস।
-“ আপনার জায়গা দশ শতাংশ আর আমাদের আপনার জায়গার তিন ডবল করলেও জায়গার পরিমাপ আসবে না। সেক্ষেত্রে কি আপনার উচিত না জায়গা টা ছেড়ে দেওয়া? আপনার কাছে তো জায়গা টা মাগনা চাওয়া হচ্ছে না। দাম তো দেওয়া হবে।

-“ কত দিবেন আপনারা?
-“ আপনি কত চান?
-“ আমি যা চাইবো তাই দিবেন?
-“ চেয়ে দেখুন।
-“ বেশ,আমি শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ করে সেল করবো।
-“ জায়গার আসল দাম কত?
-“ আসল দাম যাই থাকুক, দশ শতাংশ জমির দাম আসে ১ কোটি টাকা। এখন আপনাদের পোষালে আপনারা নিবেন। যদি পারেন তাহলে জানাবেন আর না পারলে জমির সংক্রান্ত আর একটা ফোন যেনে না আসে।

কথাটা বলে অধরা চলে যায়। রাফি অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবে দশ শতাংশ জমির দাম ১ কোটি টাকা! মেয়েটা সুযোগ বুঝে সুযোগের দুর্ব্যবহার করছে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৫

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৫
#Raiha_Zubair_Ripti

শীতের সকাল চারিদিক কুয়াশায় জড়ানো। সেই সাথে মৃদু মৃদু ঠান্ডা বাতাস শরীর টাকে বরফের ন্যায় জমে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সূর্যের দেখা নেই,শরীরে একটা জ্যাকেট জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে তৃষ্ণা দের বাড়িতে ঢুকে রাফি। তানিয়া বেগম শরীরে চাদর জড়িয়ে সোফায় বসে ছিলেন। হঠাৎ কাউকে তার পাশে বসতে দেখে চমকে উঠে। পাশ ফিরে তাকিয়ে পরিচিত মুখ দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তানিয়া বেগম। রাফির বাহু ধরে উৎফুল্ল নিয়ে বলে-

-“ রাফি তুই এসেছিস সত্যি।

রাফি নিজের বাহু থেকে তানিয়া বেগমের হাত সরাতে সরাতে বলে-
-“ উফ ফুপি এভাবে কেউ ধরে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে এসেছি। শরীর জমে গেছে বাতাসে।
-“ একা এসেছিস নাকি?

রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ হ্যাঁ একা আসবো না তে সঙ্গী পাবো কই। তা তুমি একা এখানে বসে আছো যে ফুফা,চিতাবাঘ,তুষার ব্রো কই?
-“ ওরা সবাই ঘুমাচ্ছে। তোর ফুফা সিলেটে আছে।

রাফি হাতে থাকা ঘড়িটায় সময় দেখে বলে-
-“ সকাল সাড়ে আটটা বাজে এখনো ঘুমাচ্ছে সবাই!
-“ হ্যাঁ, তোর না আজ আসার কথা ছিলো বিদেশ থেকে?
-“ হ্যাঁ গতকাল রাতে এসেছি।
-“ ওহ্ আচ্ছা তুই বস আমি কফি বানিয়ে আনছি।
-“ তুমি বানাতে থাকো আমি ততক্ষণে তুষার ব্রো কে জাগিয়ে আসি।

তানিয়া বেগম রান্না ঘরে চলে যায়। রাফি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে তুষারের রুমে যায়। দরজা চাপানো সেটা দেখে দরজাটা হালকা ফাঁক করে চুপিচুপি রুমে ঢুকে পড়ে। হালকা অন্ধকার রুম,বিছানার কাছে গিয়ে কম্বল দেখে সেটার মধ্যে পুরো শরীর ঢুকিয়ে দিলো রাফি। তুষার হঠাৎ নিজের শরীরে ঠান্ডা অনুভব করতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। কম্বলের ভেতর থেকে মাথা বের করে বেড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। পাশে তাকাতেই দেখে রাফি তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে আছে। তুষার শরীরের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে বলে-

-“ সমস্যা কি তোর এভাবে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লি কেনো?
-“ খুব শীত করছিলো ব্রো।

তুষার আর কথা বাড়ালো না। বিছানা থেকে উঠে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রাফি সেটা দেখে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

তৃষ্ণা হেলতে দুলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে সোফায় বসে। মাথা ব্যাথা করছে খুব। রান্না ঘরে মাকে দেখে বলে-
-“ মা এক কাপ কফি বানিয়ে দাও না।

তানিয়া বেগম মেয়ের ডাক শুনে বলে-
-“ ওরে আমার রাজকন্যা টা উঠেছে নাকি। মা একটু অপেক্ষা করো তোমার মা তোমার জন্য কফির সাথে স্ন্যাকস ও নিয়ে আসছে।

হঠাৎ মায়ের এমন আহ্লাদী কথা শুনে তপ্ত শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা।
-“ তোমার কষ্ট করে স্ন্যাকস দেওয়া লাগবে না মা এক কাপ কফি দাও তাতেই চলবে।

তানিয়া বেগম এক কাপ কফি এনে তৃষ্ণার সামনে রাখে। তৃষ্ণা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কফি টায় চুমুক বাসতে যাবে আর ওমন সময় তানিয়া বেগম বলে উঠে –
-“ আরে কফি টা তুই খাচ্ছিস কেনো?

তৃষ্ণা অবাক হয়ে বলে-
-“ কফি তো আমিই চেয়েছি সেজন্য তো কফি টা আমিই খাবো।
-“ না এটা তোর কফি না।
-“ তাহলে কার কফি।
-“ তোর ভাইয়ের যা তুষারের রুমে দিয়ে আয়।
-“ আমার কফি?
-“ আগে দিয়ে আয় তারপর দিতেছি তরে তোর কফি।

তৃষ্ণা কফির মগ টা নিয়ে তুষারের রুমের দিকে যায়। তুষারের রুমে ঢুকে দেখে তার ভাই কম্বল মুড়ি দিয়ে এখনও শুয়ে আছে,এই টাইমে কিভাবে তার ভাই কফি খাবে বুঝে আসে না তৃষ্ণার। কফিটা বেডের পাশে থাকা টেবিল টার উপর রেখে দেয়। যাওয়ার আগে বলে যায়-
-“ ভাইয়া তোর কফি দিয়ে গেলাম।

হঠাৎ তৃষ্ণার কন্ঠ শুনে কম্বল থেকে মাথা বের করে রাফি। দরজার পানে চেয়ে দেখে তৃষ্ণা ততক্ষণে চলে গেছে। বেডের পাশে টেবিল টায় কফির মগ দেখে সেটা হাতে নেয়। কিছু একটা ভেবে স্মিত হাসে। এরমধ্যে তুষার ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই সাতসকালে শাওয়ার নিয়েছে তুষার। তুষারের ভেজা শরীর দেখে রাফির শীত যেনো আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো। কফিটা তে চুমুক বসিয়ে বলে-
-“ ব্রো এই সাতসকালে গোসল না করলেই কি চলছিলো না? তুমি তো বিবাহিত নও।

তুষার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিলো রাফির কথা শুনে কপালে দু ভাজ পড়ে তুষারের।
-“ বিবাহিত রাই কি শুধু সকালে গোসল করার অধিকার রাখে নাকি?
-“ না তেমন টা না আসলে ওরাই তো জীবন বাজি রেখে সকালে এই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে যায়।
-“ জাস্ট শাট-আপ রাফি। তোর মতো পিচাশ নই আমি যে সামান্য ঠান্ডার জন্য গোসল করা বন্ধ দিবো।
-“ না তুমি এলিয়েন ব্রো।
-“ কফি খাচ্ছিস চুপচাপ কফি খা। আমি নিচে গেলাম।

কথাটা বলে তুষার নিচে নেমে আসে। সোফায় গিয়ে বসে বলে-
-“ মা এক কাপ কফি দাও তো।

তৃষ্ণা সোফায় বসে কফি খাচ্ছিল। তুষারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে-
-“ ভাই আমি না কেবল তোমাকে কফি দিয়ে আসলাম,এরমধ্যে আবার কফি চাচ্ছো!

তানিয়া বেগম কফির কাপ টা ছেলের দিকে এগিয়ে দেয় বিনা বাক্যে সেটা দেখে তৃষ্ণা বলে-
-“ এই কফি টা আমি চাওয়াতে কত কথা খরচ করলা মা আর ভাইয়ার বেলায় বিনা বাক্যে কফি দিয়ে দিলা। তোমার ছেলে তো সেই নিচে এসেই কফি খাইলো তাহলে শুধু শুধু আমাকে উপরে কেনো পাঠালে।

তুষার কফিতে চুমুক বসাতে বসাতে বলে-
-“ কি তখন থেকে বকে যাচ্ছিস,আমার জন্য কখন কফি নিয়ে গেলি তুই।

-“ তোমার বেডের পাশে যে আমি কফি রেখে এসেছি আর বলে এসেছি ভাইয়া তোর কফি। ওটা কি তোর চোখে পড়ে নি।

তানিয়া বেগম মেয়ের মাথায় চাটি মেরে বলে-
-“ গাধা ঐ টা তো রাফির জন্য নিয়ে যাইতে বলছি।

কথাটা তৃষ্ণার কর্ণপাত হতেই তৃষ্ণা অবাক হয়ে যায়।
-“ রাফি ভাইয়া আসছে?
-“ হ্যাঁ।
-“ কখন?
-“ আট টার দিকে।
-“ তার না বিদেশ থেকে আজ ফেরার কথা ছিলো?
-“ গত কাল রাতে এসেছে।

তৃষ্ণা কফির মগ টা টেবিলের উপর রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এতো সকাল সকাল কেউ মাইনষের বাসায় আসে?

তানিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে বলে-
-“ মাইনষের বাসা মানে?

তৃষ্ণা ভরকে যায়। আমতা আমতা করে বলে-
-“ না মানে এতো সকাল কেউ আসে নাকি, বেলা করে আসতো।
-“ তোর সমস্যা কি আমার ভাইপো আমার বসায় এসেছে। যখন তোর চাচার ছেলেরা আমার বাসায় আসে তখন তো এসব বলিস না।

-“ দেখছো ফুপি তোমাদের বাসায় আসাতে তোমার মেয়ে আমায় এভাবে বলে বসলো।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাটা বলে রাফি। তৃষ্ণা সিঁড়ির পানে চেয়ে থমকে যায়। তৃষ্ণা হাসবে নাকি মুগ্ধ হবে বুঝতে পারলো না। জ্যাকেটেই তো সুন্দর লাগতো মাথায় আবার কে পিচ্চিদের মতো টুপি পড়ে। রাফি এসে তুষারের পাশে বসে। তানিয়া বেগম রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ রাফি তুই চিত্রাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাস তো। আমার মূল্য দেয় না এই ছেলে মেয়ে দুটো।

তুষার এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলো মায়ের কথা কর্নপাত হতেই কফির কাপ নিচে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে –
-“ তুই চিত্রা কে নিতে এসেছিস নাকি রাফি?

রাফি মাথা থেকে টুপিটা খুলতে খুলতে বলে-
-“ না এমনি এসেছি,যাওয়ার সময় চিত্রা গেলে যাবে। আচ্ছা চিতাবাঘ এখনও উঠে নি নাকি?
-“ তৃষ্ণা যা তো চিত্রা কে ডেকে নিয়ে আয়।
তৃষ্ণা একবার রাফির দিকে তাকিয়ে চিত্রা কে ডাকতে চলে যায়। চিত্রা কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। তৃষ্ণা চিত্রার শরীর থেকে কম্বল রা সরিয়ে বলে-
-“ চিত্রা উঠ দেখ কে এসেছে।
চিত্রা ঘুমঘুম কন্ঠে বলে –
-“ কে এসেছে?
-“ রাফি ভাইয়া এসেছে।
-“ ভাইয়ার তো আজ আসার কথা বিদেশ থেকে।
-“ না গতকাল রাতে এসেছে। আজ এ বাসায় এসেছে উঠ।

চিত্রা সহসা শোয়া থেকে উঠে বসে।
-“ সত্যি এসেছে?
-“ হুম।
-“ আচ্ছা আমি চটপট ফ্রেশ হয়ে আসি আগে।

তৃষ্ণা হুম জানালে চিত্রা উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে বলে-
-“ চল নিচে যাই।
-“ না যাবো না,তুই যা।

চিত্রা আচ্ছা বলে নিচে চলে আসে। সিঁড়িতে এসে দেখে সোফায় তুষার,ফুপি আর রাফি বসে আছে। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রাফির পাশে বসে বলে-
-“ কেমন আছো রাফি ভাই?

চিত্রার কন্ঠ শুনে ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরে চিত্রার দিকে তাকায় তুষার। চিত্রার মুখে হাসি বিরাজ করছে। রাফি হাসি মুখে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। চিতাবাঘ কেমন আছে?
-“ ইট’স চিত্রা নট চিতাবাঘ।
-“ হ্যাঁ ইট’স চিতাবাঘ।
-“ ফুপি কিছু বলো এই আহাম্মক কে আমায় চিতাবাঘ বলছে।
-“ ফুপি কিছু বলো এই চিতাবাঘ কে আমার নামে বিচার দিচ্ছে তোমার কাছে।

রাফির এমন কথা শুনে তানিয়া বেগম আর চিত্রা হেসে উঠে। হাসি নেই শুধু তুষারের মুখে। সে আড় চোখে বারবার চিত্রা কে দেখে চলছে। মেয়েটার মুখে অন্যকে নিয়ে হাসি ঠিক হজম হলো না তুষারের। কফির মগটা শব্দ করে টেবিলে রেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।

রুমে এসে ল্যাপটপ টা অন করে অফিসের কিছু ফাইল চেক করতে বসে তুষার। কিন্তু কাজে মন দিতে পারছে না। অস্বস্তি লাগছে। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ছাঁদে চলে গেলো।

এদিকে রাফি সোফায় বসে চিত্রার সাথে গল্পগুজব করছে। এরমধ্যে রাফির ফোন টা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে তার বাবার ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তার বাবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ব্যাক করতে বলে। রাফি হঠাৎ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বললো দেখে অবাক হলো। তানিয়া বেগম ভাইপোর যাওয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে টেবিলে খাবার বাড়ে। তুষার আর তৃষ্ণা কেও ডেকে আনে। তুষার চুপচাপ খেয়ে চলছে। তৃষ্ণার সামনা সামনি বসেছে রাফি। থেকে থেকে কিভাবে যেনো তাকাচ্ছে রাফি, তৃষ্ণার অস্বস্তি হলো,গলা দিয়ে খাবার নামতে চাইলো না। রাফি চিত্রার দিকে চেয়ে বলল-
-“ আমি তো বাসায় যাচ্ছি আমার সাথে যাবে?
চিত্রা হ্যাঁ বলতে নিবে তখনই তুষার খাবার মুখে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে –
-“ চিত্রা কে আমি বিকেলে দিয়ে আসবো,তুই নিশ্চিন্তে বাড়ি যা।

চিত্রা পানির গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে-
-“ না ভাইয়া আপনার কষ্ট করতে হবে না আমি রাফি ভাইয়ার সাথে চলে যাবো।

তুষার তাকালে চিত্রার পানে। মন চাইলো ঠাটিয়ে একটা চড় লাগাতে। ইচ্ছে টাকে মনের ভেতরই রেখে বললো-
-“ আমার কষ্টের হবে তোমায় কে বললো? আমি বিকেলে ও বাড়ি যাবো তাই নিয়ে যাচ্ছি।
-“ আচ্ছা ব্রে তুমি চিত্রাকে নিয়ে যেয়ো,আমি এখন আসি।

কথাটা বলে রাফি চলে যায়। রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো তৃষ্ণা। সবার সাথে কথা হলো রাফির শুধু এই তৃষ্ণার সাথে কথা বলে গেলো না।

বাবা রাসেল আর ভাই রায়ানের সামনে বসে আছে রাফি। এসে থেকেই ব্যাবসা নিয়ে হাবিজাবি বুঝিয়ে চলছে রাফি কে। রাফি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। রাসেল আহমেদ এবার সাভারে থাকা তাদের প্রজেক্টের ফাইল বের করে বলে-
-“ এখানে আমাদের অফিসের সাথে দশ শতাংশের একটা জায়গা আছে। এই জায়গা টা যে করে হোক তোমার আমাকে পাইয়ে দিতে হবে।

রাফি ফাইল টা তার বাবার সামনে রেখে বলে-
-“ আমার কাছে কি কোনো আলাদীনের চেরাগ আছে নাকি যেটা ঘষলাম আর জমিটা তোমার হয়ে গেলো। টাকা দিয়ে কিনে নাও জায়গা।

রায়ান রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ টাকার বিনিময়েও তারা ঐ জায়গা আমাদের কাছে বিক্রি করতে নারাজ। আমাদের অফিসের জন্য ঐ জায়গা টা জরুরি।
-“ জায়গা বিক্রি করতে না চাইলে সেখানে আমি কি করতে পারি?
-“ জায়গাটা ভদ্রলোকের মেয়ের নামে।

রাসেল আহমেদের কথা শুনে সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে রাফি বলে-
-“ তো?
-“ মেয়টাকে ইমপ্রেস করো,যে করেই হোক জায়গাটা আমার চাই।

রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“ মাথা ঠিক আছে নাকি তোমার? মেয়েকে আমি ইমপ্রেস করতে যাবো কেনো?
-“ কারন জায়গা টা আমার লাগবে?
-“ তোমার লাগবে তুমি ইমপ্রেস করো মেয়েটাকে,আর তা না হলে রায়ান ভাইকে বলো।

রায়ান ফট করে বলে উঠে-
-“ পাগল নাকি আমার বউ আছে না। রিয়া জানলে আমার মাথার চুল টেনে ছিঁড়বে। আমার একটা মেয়েও আছে।
-“ তো আমার বউ বাচ্চা নেই দেখে কি আমাকে এসব করতে বলছো নাকি। দেখো আমি এসব কিছুই করতে পারবো না। এসব বিজনেসে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
-“ রাফি মেয়েটাকে চাইলে বিয়েও করতে পারিস আমার কোনো আপত্তি থাকবে না তবুও জমি টা আমায় এনে দে।
-“ সরি বাবা আমার পক্ষে পসিবল না তবে মেয়েটার সাথে কথা বলে একটু চেষ্টা করতে পারি বাট শিউর দিতে পারবো না জমি পাবে কি পাবে না।
-“ আচ্ছা চেষ্টা কর।

রাফি হাফ ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তার বাপ ভাই তাকে এসবের জন্য দেশে আসতে বলেছে। আগপ জানলে আসতো না। কি কথা সামান্য জমির জন্য নাকি মেয়েটাকে ইমপ্রেস করতে হবে। সব মেয়ে রাফি কে দেখে ইমপ্রেস হয় আর সেখানে রাফি করবে ইম্পসিবল।

#চলবে

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৪
#Raiha_Zubair_Ripte

-“ মা ছবিটা এখনো আমার রুমের মধ্যে কি করছে?

তানিয়া বেগম সোফায় বসে টিভি দেখছিলো। হঠাৎ ছেলের কথা কর্ণকুহর হতে পাশে ফিরে দেখে তুষার রেডি হয়ে তার পাশে দাড়িয়ে আছে। তানিয়া বেগম ফের টিভির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কিসের ছবির কথা বলছিস?

তুষার সোফায় বসে একটু ঝুঁকে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
– কিসের ছবির কথা বলছি বুঝতে পারছে না? সিলেট যাবার আগে কিসের ছবি দেখিয়েছিলে।

তানিয়া বেগম এবার টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্পূর্ণ মনোযোগ ছেলের দিকে দিয়ে উৎফুল্ল নিয়ে বলে-
-“ পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে? আজই তাহলে মেয়েটার বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো।

তুষার তপ্ত শ্বাস ফেললো। পকেট থেকে ছবিটা বের করে তার মায়ের সামনের টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ নেক্সট টাইম যেনো এই ছবি কেনো অন্য কোনো ছবি আমার রুমের মধ্যে না দেখি।

তানিয়া বেগম ছবিটা হাতে নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বিরস গলায় বলে-
-“ কেনো রে তুই কি বিয়ে করবি না নাকি। নাতী নাতনির মুখ দেখবো না নাকি আমি?

তুষার সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে বলে-

-“ বিয়ে করবো না কখন বললাম। বিয়ে অবশ্যই করবো কিন্তু তার জন্য তোমার মেয়ে খুঁজতে হবে না।
তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলে-
-“ তারমানে তোর পছন্দের কেউ আছে?
তুষার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি সেটা কখন বললাম।
-“ তাহলে মেয়ে দেখতে মানা করছিস কেনো। আমি অবশ্যই মেয়ে দেখবো।

তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাঁটা ধরলো। বিরবির করে শুধালো-
-“ তোমার এই মেয়ের ছবির চক্করে আমার সংসার গড়ার আগেই ভেঙে যেতে বসেছিল।

তৃষ্ণা আর চিত্রা ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চিত্রা বিদেশে চলে যাওয়ায় পড়াশোনায় পিছিয়ে গেছে। তৃষ্ণা এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আর চিত্রা বিদেশ থেকে কেবল ইন্টারমিডিয়েট শেষ করলো। এবার ভার্সিটি তে ভর্তি হতে হবে। তৃষ্ণা চিত্রার কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-“ চিত্রা তুই জাহাঙ্গীর নগরে ট্রাই কর। তোর বাসা থেকেও কাছে হবে। আর তা না হলে ঢাবি তে ট্রাই কর আমার সাথে যেতে পারবি।

চিত্রা আড় চোখে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে কাঁধ থেকে তৃষ্ণার হাত সরিয়ে বলে-
-“ মজা নিচ্ছিস আমার সাথে? এমন ভাবে বলছিস ট্রাই করলাম আর হয়ে গেলো।
-“ তুই তো ভালো স্টুডেন্ট ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। পাবলিকে চান্স না পেলে বোইন খোঁটা শুনতে শুনতে জীবন চলে যাবে।
-“ পাবলিকেই যে পড়তে হবে তার কি ধরা বান্ধা কোনো নিয়ম আছে নাকি। প্রাইভেট ভার্সিটি কি এমনি এমনি বানানো হইছে নাকি?
-“ আরে কথাটা ওমন না। কথাটা এমন যে যারা পাবলিকে চান্স পায় না তারাই তো প্রাইভেট ন্যাশনালে ভর্তি হয়।
-“ হয়েছে আমার পাবলিকে আসলে আসবে না আসলে নাই। পাবলিকেই যে পড়তে হবে এমন চিন্তা নাই।
-“ জানিস ভাইয়ার সামনে যদি এই কথাটা বলতি তাহলে ভাইয়া কি বলতো?
-“ কি বলতো?
-“ বলতো পাবলিকে চান্স পেতে হলে মেধা লাগে যা তোর নেই।
-“ চুপ করবি তুই। তোর আর তোর ভাইয়ের মাথা ভর্তি তো অনেক মেধা,আমাকে ধার দিস।
-“ ঐ দেখ ভাইয়া যাইতেছে।

চিত্রা মাথা এগিয়ে ঝুঁকে দেখে তুষার গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
-“ ভাইয়া।

তৃষ্ণার ডাক শুনে তুষার পেছন ফিরে ছাঁদের দিকে তাকায়। চোখাচোখি হয় চিত্রা তুষারের। চিত্রা চোখ সরিয়ে নেয়।
– “ ভাই আজ একটু বিকেলে তাড়াতাড়ি ফিরো তো।
– “ কেনো?
– “ আমি আর চিত্রা একটু শপিং এ যাবো। একটু নিয়ে যাবা।
– “ চেষ্টা করবো।
কথাটা বলে চিত্রার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়।

তুষার দৃষ্টির সীমানার বাহিরে চলে যেতেই চিত্রার মুঠোফোন টা বেজে উঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা ফোন দিয়েছে। মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটে উঠে চিত্রার। ফোন টা রিসিভ করে কানে নেয়।

-“ কেমন আছে আমার মেয়ে টা?
-“ আলহামদুলিল্লাহ তোমার মেয়েটা ভালো আছে। তা এই মেয়েটার মা আর বাবাই টা কেমন আছে?
-“ সবাই ভালো আছে। যার কারনে তোমাকে ফোন দেওয়া। কাল বিকেলে চলে এসো বাসায়।
-“ কালই?
-“ হ্যাঁ রাফি আসছে।
-“ কিহ! রাফি ভাইয়া আসছে?

কিছুটা অবাক হয়ে কথাটা বলে চিত্রা। পাশে থাকা তৃষ্ণার বুকটা ধক করে উঠে। সে সত্যি শুনছে তো রাফি ফিরছে?
-“ হ্যাঁ কাল আসতেছে বাড়ি রাফি। তোর ফুফুরা সবাই কেমন আছে রে?
-“ তারা সবাই ভালো আছে। কথা বলবা?
-“ না থাক বিকেলে ফোন দিবো নি কাল চলে আসিস।
-“ আচ্ছা রাখি তাহলে।

চিত্রা ফোন টা কেটে দেয়। তৃষ্ণার হাত ঝাঁকিয়ে বলে-
-“ রাফি ভাইয়া আসছে দেশে,উফ ভাবতে খুশিখুশি লাগছে।

তৃষ্ণা নির্বাক রইলো। চিত্রার থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে-
-“ চল নিচে যাই।

চিত্রা হ্যাঁ জানিয়ে তৃষ্ণার পিছে পিছে নিচে নেমে যায়।

__________________

বিকেলে রেডি হয়ে বসে আছে চিত্রা আর তৃষ্ণা তুষারের অপেক্ষায়। সেই আধঘন্টা আগে বলেছে রেডি হয়ে থাকতে সে আসবে, কিন্তু তার আসার নাম নেই এখনও। বিরক্ত লাগলো চিত্রার। তৃষ্ণা ফের তার ভাইকে ফোন দিতে নিবে এমন সময় বাহির থেকে গাড়ির হর্ণ বাজার শব্দ আসলো। তৃষ্ণা ফোনটা ব্যাগে ভরে চিত্রার হাত ধরে বাহিরে আসে। ড্রাইভিং সিটে তুষার বসে আছে। তার দিকে একবার চিত্রা তাকায়। তৃষ্ণার সাথে পেছনে চিত্রা বসতে গেলে তৃষ্ণা বলে-
-“ এখানে বসিস না সামনে বস। সামনে কেউ না বসলে ভাইয়ার নিজেকে ড্রাইভার মনে হয়।
-“ তো তুই সামনে গিয়ে বস।
-“ আমার সামনে বসতে ভালো লাগে না।
-“ আমারও সামনে বসতে ভালো লাগে না।
কথাটা বলে চিত্রা তৃষ্ণার পাশে বসতে নিলে সামনে থেকে তুষার গম্ভীর কন্ঠে বলে –
-“ চিত্রা জাস্ট দুই মিনিটের মধ্যে সামনে বসবা, জরুরি কথা আছে।

তৃষ্ণা ইশারায় বসতে বলে। চিত্রা গিয়ে তুষারের পাশে বসে পড়ে। তুষার ইশারায় সিট বেল্ট লাগাতে বলে। চিত্রা সিট বেল্ট টা লাগিয়ে নেয়। তৃষ্ণা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। সকাল থেকে তার মনের আকাশে কালো মেঘ জমেছে কারো আগমনের বার্তা শুনে। মানুষ টাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আচ্ছা মানুষ টা কি সেই আগের মতোই আছে নাকি বদলে গেছে। এখন তো আর ছোট্ট নেই সে কি এবার ও বুঝবে না এই তৃষ্ণার তৃষ্ণাদগ্ধ ভালোবাসা।

-“ শুনলাম তুমি নাকি ভার্সিটিতে ভর্তির প্রিপারেশন নিচ্ছো?

চিত্রা সামনের দিকে তাকিয়ে সামনে থাকা গাড়ি গুলোকে দেখছিলো। তুষারের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ নিচ্ছি।
-” পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে নেই?
-“ না নেই।
-“ গাধা। কিছুটা আস্তে বললো তুষার। চিত্রা ভালোমত শুনতে না পেয়ে বলল-
-“ কিছু বললেন?
-” না, পাবলিকে চান্স পেতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। মনোবল ও থাকতে হয়। যেখানে তোমার এগুলোর মধ্যে একটাও নেই।
-“ একটা সিটের জন্য লড়াই করবে কয়েক হাজার স্টুডেন্ট সেখানে আমি গিয়ে আরেকটা প্রতিযোগিতার সংখ্যা বাড়ানোর কোনো মানে দেখছি না।
-“ সেই কয়েক হাজারের মধ্যে তো তুমিও হতো পারো যে কিনা সবাইকে ছাপিয়ে ঐ একটা সিট দখল করবে নিজ যোগ্যতায়।
-“ অতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আমি নই।
-“ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।
-“ আমি কখন বললাম চেষ্টা করবো না,চেষ্টা অবশ্যই আমি করবো। এখন টিকলে টিকবো না টিকলে নাই।
-“ আশা ছেড়ে দাও টিকবা না।
-“ আমারও ইচ্ছে নাই টিকার।
-“ পড়াশোনা ছেড়ে দিলেই তো পারো। একে তো দুই বছর পিছিয়ে গেছো তার উপর এমন পড়াশোনার অবস্থা না পড়াই বেটার।
চিত্রা কিছু বললো না চুপ রইলো। তুষার তপ্ত শ্বাস ফেলে গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো। শপিং এর সামনে এসে গাড়ি থামালো। তৃষ্ণা নামতেই চিত্রা ও নেমে গেলো। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাই তুমি ও আসো।

তুষার একপলক চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ নাহ তোরা যা আমি এখানে অপেক্ষা করছি তোদের কেনাকাটা শেষ হলে এখানে চলে আসিস।
-“ আচ্ছা।
তৃষ্ণা আর চিত্রা চলে গেলো। তুষার পকেট থেকে ফোনটা বের করে একটা পিকের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমার শহরে তুমি নামক মানুষটার আমন্ত্রণ স্থায়ী করার যুদ্ধে নেমেছি। আই হোপ খুব শীগ্রই স্থায়ী হবে।

——————–

-“ এক্সকিউজ মি, বলছি ঘাড় টা একটু সোজা করুন। আমার সমস্যা হচ্ছে।

হঠাৎ এক মেয়েলি কন্ঠে চোখ মেলে তাকায় রাফি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারে নি। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সরি বলতে গিয়ে থমকে যায় রাফি। মেয়েটার গায়ে সাদা সিল্কের শাড়ি। চুল গুলো হাত খোঁপা করা। গায়ে কোনে অলংকার নেই। কি স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। আচ্ছা মেয়েটার কি স্বামী মা’রা গেছে? স্বামী মা’রা গেলে তো মেয়েরা এমন বিধবা সাজে। মুহূর্তে রাফির মন খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটার জন্য কষ্ট লাগলো। বয়স তো বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না। এই টুকু বয়সে বিধবা হলো। অতি সুন্দর রমণী দের কপাল কেনো যে এতো খারাপ হয় কে জানে। মেয়েটা এক ধ্যানে প্লেনের জানালা দিয়ে বাহিরের মেঘ গুলো কে দেখে চলছে। রাফির ইচ্ছে হলো মেয়েটার সাথে কথা বলার। ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে-
-“ হাই আমি রাফি আপনি?

মেয়েটা বাহিরের দিকে চোখ রেখেই বললো-
-“ অধরা।
রাফি বার দুয়েক ঠোঁটে বিরবির করে অধরা নামটাকে।
-“ আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
অধরা এবার রাফির দিকে তাকালো।
-“ আপনি যেনো কোথায় যাচ্ছেন?

রাফি শার্টে কলার পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ প্রশ্ন আমি করেছি উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন কেনো করছেন?
-“ এটা কোথায় যাওয়ার প্লেন?
-“ বাংলাদেশ।
-“ আমি নিশ্চয়ই লন্ডন যাচ্ছি না এই প্লেনে চড়ে।
নিজের বোকামি বুঝতে পেরে বেক্কল একটা হাসি দিলো রাফি। বেশি স্মার্ট সাজতে গিয়ে ওভার স্মার্ট দেখিয়ে ফেলছে। মেয়েটাও কেমন ভাবে কথা বলে। এই মেয়ের কথার ধাঁচেই মনে হয় মেয়েটার স্বামী অকালে প্রাণ ত্যাগ করেছে। রাফি আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো।

অধরা একপলক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ফের বাহিরে তাকালো।

প্লেন টা বাংলাদেশে আসতে রাত আট টা বেজে চল্লিশ বেজে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে রাফি সোজা একটা গাড়ি বুক করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়। রাফি কাল বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছিল সবাইকে কিন্তু সে আজই চলে এসেছে সারপ্রাইজ দিতে।

অধরা এয়ারপোর্ট থেকে বাহিরে এসে দেখে তার বাবা আর মা দাঁড়িয়ে আছে। অধরা গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে। আশরাফুল রহমান মেয়ের হাত থেকে ল্যাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠায়। আয়েশা রহমান মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।

রিয়া আর রায়ান মিলে মেয়েকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। রিক্তা বেগম আর চয়নিকা বেগম সোফায় বসে টিভি দেখছেন। সাহেল আহমেদ আর রাসেল আহমেদ নিজেদের রুমে শুয়ে আছে। হটাৎ কলিং বেল বাজায় রিক্তা বেগম টিভির সামনে থেকে বিরক্ত নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এতো রাতে আবার কে বেল বাজাচ্ছে। দরজা খুলে সামনে তাকাতেই দেখে সামনে কেউ নেই। অবাক হয় রিক্তা বেগম। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে ফের দরজা বন্ধ করে ফিরে যেতে নিলে আবার দরজার কলিং বেল বেজে উঠে। রিক্তা বেগম দরজা খুলে কিছু বলতে নিবে আর ওমনেই কেউ তাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় ভয় পেয়ে যায় রিক্তা বেগম। চিৎকার দিয়ে বলে উঠে-
-“ আরে কে আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেনো? ছাড়েন বলছি।ঐ রায়ান কই গেলি।

রাফি রিক্তা বেগম কে ছেড়ে দেয়। মুখ থেকে মাক্স খুলে বলে-
-“ নিজের মাকেও কি আমি জড়িয়ে ধরতে পারবো না আশ্চর্য!

রিক্তা বেগম নিজের ছেলেকে দেখে হা হয়ে যায়। ছেলে না ফোন করে জানালো কাল আসবে। ছেলের শরীরে হাত দিয়ে বলে-
-“ তুই সত্যি রাফি?
-“ না আমার ভুত। চিমটি দেই হাতে?
-“ আয় বাপ ভেতরে আয়। রায়ান রে দেখ কে আসছে।
রায়ান আর রিয়া সদর দরজার কাছে আসে। সামনে রাফিকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে রাফিকে। রিয়া জিজ্ঞেস করে –
-“ কেমন আছেন ভাইয়া।

রাফি এগিয়ে এসে পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাবি। আমার সোনামণি টা কেমন আছে?

রায়ান ভ্রু কুঁচকে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই যে বললি কাল আসবি তাহলে হঠাৎ আজ আসলি যে।
-“ কেনো আমার আসাতে তোমরা খুশি হও নি?
-“ সেটা নয়,বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরেছিস খুশি হয়েছি।

রাফি কিছু বললো না। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চয়নিকা বেগমের সামনে গিয়ে বললো-
-“ কেমন আছো চাচি?
চয়নিকা বেগম রাফিকে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা,তুমি কেমন আছো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। চিতা বাঘ কোথায়?
হেঁসে উঠলো চয়নিকা বেগম।
-“ চিতা বাঘ সে তো তৃষ্ণা দের বাসায়। কাল আসবে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৩

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte

-“ কি ব্যাপার চাচি চিত্রা কে দেখছি না কেনো? কাল রাতেও দেখলাম না আজ সকালেও দেখছি না যে?

ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে কথাটা বলে রায়ান। রায়ানের মা রিক্তা বেগম গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে-

-“ চিত্রা তো বাসায় নেই। ও তৃষ্ণা দের বাসায় গেছে।

রায়ান পরোটা মুখে নিতে নিতে বলে-

-“ একাই গেছে নাকি?

রিয়া তার মেয়েটাকে নিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বলে-
-“ না ফুপি আসছিলো তৃষ্ণা কে নিয়ে। সন্ধ্যার দিকে চিত্রা কে নিয়ে গেছে।

চিত্রার মা চয়নিকা বেগম রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপ টা নিয়ে এসে সোফায় বসে থাকা ভাসুর রাসেল আহমেদ ও স্বামী সাহেল আহমেদ কে দেয়। সাহেল আহমেদ স্মিত হেসে স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ টা নেয়। দিনটা তার স্ত্রীর হাতের চা দিয়ে শুরু না করলে চলে না। রাসেল আহমেদ চা টা নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে-

-“ রায়ান সাভারের এনাম মেডিকেলের পাশে যে জায়গাটা আছে সেটা নিয়ে কতদূর আগালে?

রায়ান তার বাবার দিকে চেয়ে বলে-
-“ উনাদের বুঝাচ্ছি বাবা কিন্তু উনারা ঐ জমি বিক্রি করতে নারাজ।

রাসেল আহমেদ চায়ের কাপ টা সশব্দে টি-টেবিলের উপরে রাখলো। চোখমুখ শক্ত করে বলল-
-“ নারাজ মানে কি! উনাদের কোনো ধারনা আছে তার ঐ দশ শতাংশ জমির জন্য আমার ফ্যাক্টরির উপর কি প্রভাব পড়ছে।

রায়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে সোফায় গিয়ে বাবার সামনে বসে বলে-

-“ ঐ জায়গাটা তাদের নয় বাবা। জায়গা টা তার মেয়ের নামে। মেয়েকে গিফট হিসেবে দিয়েছে ভদ্রলোক। আর তার মেয়ে ইতালি থাকে। তার মেয়ে না করে দিছে সে বিক্রি করবে না ঐ জায়গা টা।

-“ আশ্চর্য বুঝি না ঐ দশ শতাংশ জায়গায় কি এমন তৈরি করবে তারা? তাদের ঐ জায়গার জন্য আমার ফ্যাক্টরির কাজ বন্ধ হয়ে আছে। আমার ঐ জায়গা টা চাই এট এনি কস্ট।
-“ চেষ্টা তো করছি সব আমার উপর ছেড়ে দাও কেনো? তোমার আদরের ছেলেটাকে বলো এবার আমাদের সাথে ব্যাবসার হাল ধরতে। তাকে বলো এই জমি কিনে দিতে তাহলে সে কোম্পানির ৪০%শেয়ার পাবে।
রাসেল আহমেদ ছেলের পানে চেয়ে অবাক হয়ে বলে-
-“ পাগল হয়েছিস নাকি,রাফি এই ব্যাবসার কিচ্ছু বুঝে না সে কিভাবে কি করবে!

-“ তাকে দেশে আসতে বলো। কয়েক দিন অফিসে যাওয়া আসা করলে শিখে যাবে। তুষার ও তো ওর বয়সী ছেলেটা কে দেখছো ফুফার সাথে থেকে থেকে
একজন বিজনেস ম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছে অলরেডি। আর তোমার ছোট ছেলেকে দেখো আমরা গায়ে গতরে খেটে রোজগার করি আর সে সেই টাকা দিয়ে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। এই জমির ব্যাপারে আর আমার সাথে কথা বলবা না।

কথাটা বলে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে রায়ান বেরিয়ে যায় অফিসে। বাপ ছেলের কথা এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো সাহেল আহমেদ। তার এই বিজনেস নিয়ে অতো ইন্টারেস্ট নেই। সে মাস শেষে তার লভ্যাংশ পায় শুধু। আর তাছাড়া তার বনানী তে ছয় তলার দুটো ফ্লাট আছে সেখান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে তার ও তার স্ত্রী মেয়ের ভবিষ্যতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে। ছেলে নেই দেখে তার এসব বিজনেসের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। তার যা আছে তাতে মেয়ের জন্য এনাফ।

-“ ভাই রায়ান তো ভুল কিছু বলে নি। তোমার বয়স হচ্ছে রায়ানের পক্ষে তো একার সম্ভব না এতো বড় বিজনেস টার সবদিক সামলানো। আর আমি তো এসব বিজনেসের ধারে কাছেও যাবো না খুব প্রয়োজন ছাড়া। রাফিকে ফোন দিয়ে বুঝাও সে বড় হয়েছে কয়েক দিন পর বিয়ে করবে। সে যদি এখন এভাবে উড়নচণ্ডীর মতো ঘুরে বেড়ায় তাহলে কি চলে বলো? মাথা ঠান্ডা রেখে বুঝাবা রাফি কে।

কথাটা বলে উঠে চলে যায় সাহেল আহমেদ। রাসেল আহমেদ চিন্তায় পড়ে যায়। তার ছোট ছেলে অনেক ত্যাড়া, ছোট ছেলেটা হয়েছে ভাই সাহেলের মতো। বিজনেসের ধারে কাছেও আসতে চায় না। এক ভাই আমেরিকায় বউ বাচ্চা নিয়ে সেটেল্ড হলো আরেক ভাই থেকেও না থাকার মতো। উপায়ন্তর না পেয়ে ছোট ছেলে রাফিকে ফোন লাগায় রাসেল আহমেদ।

_____________________

ইতালির এক হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে। হাতে তার কফির মগ,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠায় ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে বাংলাদেশ থেকে ফোন এসেছে। মুহূর্তে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। ফোন রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো-

-“ হ্যালো অধরা।
-“ হ্যাঁ মা বলো।

মিসেস আয়েশা রহমান একবার সামনে বসা থাকা স্বামীর দিকে চেয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে-
-“ কেমন আছো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। শোন না একটা কথা বলার ছিলো।
-“ হুম বলো।
-“ আমাদের ইতালি যাওয়ার সব প্রসেস তো শেষ বলছিলাম কি মেডিকেলের পাশের জায়গা টা বিক্রি করে দিয়ে দেই। আমার তো আর বিডি তে থাকছি না জমি তো এখানেই পড়ে থাকবে তো বিক্রি করে দেই?

মুহূর্তে অধরার হাসি মুখ চুপসে গেলো।

-“ না মা কখনই না। আমি বিডি আসছি মাস খানেকের মধ্যে। তোমাদের ইতালি আসতে হবে না। ঐ জায়গায় আমি ডুপ্লেক্স বানাবো। আমার স্বপ্নের বাড়ি গড়বো ওখানে।

আয়েশা রহমান বিরক্ত হলো মেয়ের কথা শুনে।
-“ পাগল হয়েছো নাকি ইতালি থেকে বিডি আসবে মানে!
-“ আমি পাগল হই নি। আমি বিডি আসছি ঐ জমি সংক্রান্ত কোনো কথা যেনো আর না বলা হয়। ওটা আমাকে দেওয়া হয়েছে আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। সেটার মালিকানা আমি,ঐ জমি আমি সেল করবো না।

কথাটা বলে অধরা ফোন কেটে দেয়।আয়েশা রহমান তার স্বামীর পানে চেয়ে বলে-
-“ দেখলে তোমার মেয়ে বিডি চলে আসছে।

আশরাফুল রহমান তপ্ত শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আমি আগেই বলছিলাম অধরা ঐ জমি বিক্রি করবে না। তাহলে কেনো শুধু শুধু মেয়েটাকে ঐ জমি সংক্রান্ত খোঁচাও? দেশে আসছে ভালোই হয়েছে আমার ও বিডি ছেড়ে ইতালি যেতে মন সায় দিচ্ছিলো না। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরছে চিন্তা মুক্ত হলাম।

কথাটা বলে আশরাফুল রহমান চলে যায় নিজের রুমে। আয়েশা রহমান ঠাই বসে রইলো সোফায়। মেয়ে তার ভীষণ জেদি এবার দেশে এসে কি করবে কে জানে।

সকাল সকাল রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় চিত্রার। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসে। ফোন হাতরে সময় দেখে নেয় নয়টা চল্লিশ বাজে। পাশে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা নেই। মেয়েটা কখন উঠলো? উঠেছেই যখন তখন ডাকলো না কেনো। কথাগুলো ভেবে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ওড়না টা জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে বসার রুমে যায়। তৃষ্ণা সোফায় বসে টিভি দেখছে। চিত্রা তৃষ্ণার পাশে বসে ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলে-

-” কি রে কখন উঠছিস,ডাক দিলি না যে?

তৃষ্ণা টিভি থেকে মুখ ঘুরিয়ে চিত্রার পানে চেয়ে বলে-
-“ আমি নিজে থেকে উঠতে চাই নি মা ডেকে উঠিয়েছে। আমি না থাকলে মা রান্না করবে কি করে তার হেল্পার হিসেবে বসে আছি এখানে। একটু পর ডাকবে আর বলবে এটা নিয়ে যা ওটা নিয়ে আয়।
-“আহারে আমার তৃষ্ণা পাখির কি কষ্ট। একটা কাজের লোক রাখলেও তো পারিস।
-“ তোর কি মনে হয় কাজের লোক নাই,খালা কয়েক দিনের ছুটিতে গ্রামে গেছে, আর সেই সুযোগে আমার মা আমাকে খাটাচ্ছে।
-“ তোর ভাইকে বিয়ে করা বিয়ে খাই,তোর ও আর খাটাখাটুনি করতে হবে না।

কথাটা বলে রান্না ঘরের দিকে যায় চিত্রা। তানিয়া বেগম কে হাতে হাতে সাহায্য করে দেয়। রান্না শেষে খাওয়া দাওয়া করতে বসলে চিত্রা বলে উঠে-
-“ ফুপি তুষার ভাইয়া খাবে না?
তানিয়া বেগম খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলে-
-“ তুষার আসবে কই থেকে ও তো বাসায় নাই। ও তো সিলেটে তোর ফুফার সাথে।

চিত্রা প্লেটে থেকে খাবার মুখে দিতে দিতে বলে-
-“ না তুষার ভাইয়া তো কাল রাতে বাসায় ফিরছে।

তানিয়া বেগম চিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কিহ তুষার বাসায় ফিরছে রাত্রে?
-“ হ্যাঁ তৃষ্ণা ও তো জানে। কিরে তৃষ্ণা ফুপি কে বলিস নি?
তৃষ্ণা অবাক হয়ে বলে-
-“ আরে আমি কিভাবে জানবো? ভাইয়া তো আব্বুর সাথে সিলেট। দু তিন দিন দেরি হবে আসতে।
-“ ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখে আসো ভাইয়া আছে কি নাই। আমি রাতে নিজে ভাইয়াকে নুডলস রান্না করে দিছি।
তানিয়া বেগম তৃষ্ণা কে তুষারের রুমে গিয়ে দেখতে বললো তুষার আছে কি না। তৃষ্ণা মায়ের কথা মতো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে তুষারের রুমে গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা। তড়িৎ গতিতে নিচে নেমে এসে বলে-
-“ কই ভাইয়ার রুম তো পুরো ফাঁকা।

চিত্রার স্পষ্ট মনে আছে রাতে তুষার এসেছিল। তাহলে এখন কই তিনি।
-“ ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখ সে সত্যি আসছিলো।
তানিয়া বেগম চিত্রার কথা মতো তুষার কে ফোন দিতে নিলে তৃষ্ণা বাঁধা দিয়ে বলে-
-“ আরে মা শুধু শুধু ভাইয়াকে ফোন দিয়ে কাজে ডিস্টার্ব করার কি কোনো দরকার আছে? আর ভাইয়া যদি আসতো তাহলে কি আমাদের সাথে দেখা করতো না তুমিই বলো? আর চিত্রা তুই মনে হয় ভুল স্বপ্ন দেখছিস। ভাইয়া আসার আগে আমাদের জানিয়ে আসে। আর ভাইয়ার ফেরার কথা আব্বুর সাথেই।
-“ আশ্চর্য তৃষ্ণা আমি মোটেও স্বপ্ন দেখি নি। আমি নিজের হাতে ভাইয়াকে কষ্ট করে নুডলস রান্না করে দিছি তোকে ডেকেছি তুই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলি।
-“ আচ্ছা আচ্ছা চুপ কর দু’জনে আগে খেয়ে নে। তুষার আসলে আমাকে জানাতো।
চিত্রা কিছু বলতে গিয়েও বললো না। চুপচাপ খেতে নিবে এমন সময় সদর দরজায় চোখ যেতেই দেখে তুষার হেঁটে আসছে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-

-“ ফুপি ঐ টা তুষার ভাই না? নাকি আমি ভুল দেখতেছি।

তনয়া বেগম দরজার পানে চেয়ে দেখে সত্যি তুষার আসতেছে। তৃষ্ণা তুষারের দিকে চেয়ে বলে-
-“ ওটারে তো ভাইয়ার মতোই লাগে।
তুষার বাড়িতে ঢুকে সবাইকে নিজের দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুকুটি করে বলে-

-“ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো তোমরা সবাই আমার দিকে? কিছু হয়েছে নাকি?

তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে দু হাত গুঁজে বলে-
-“ ভাইয়া তুমি কখন আসছো?

তুষার সোফায় বসে শার্টের কলার পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ কাল রাতে আসছি কেনো?
-“ কাল রাতে আসছো অথচ আমি আর মা জানলাম ও না।
-“ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলি জানবি কি করে।
-“ ও না হয় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল কিন্তু আমি? আমাকে কেনো ডাকলি না?

তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে ফের মায়ের দিকে তাকায়।
-“ তুমি ঘুমিয়েছিলে তাই ডাকি নি। বাট এটা নিয়ে এতো কথা কেনো হচ্ছে?
-“ না এমনি চিত্রা বারবার বলছিলো তুই এসেছিস আমি আর তৃষ্ণা উল্টো বলেছি তুই সিলেটে আছি।
-“ হ্যাঁ ছিলাম সিলেটে কাল কাজ শেষ হওয়ায় চলে আসছি। আর আব্বু কাল আসবে।
-“ ওহ্ আয় তাহলে খেতে বস।

তুষার সোফা থেকে উঠে বলে-
-“ না খাবো না তেমাদের খাওয়া শেষ হলে এক কাপ কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দিয়ো।
কথাটা বলে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় তুষার। চিত্রা তৃষ্ণার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে-
-“ কি রে আমি স্বপ্ন দেখতেছিলাম? দেখলি তো নিজের চোখে।
-“ হ্যাঁ দেখলাম।

তানিয়া বেগম রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে কফির মগ টা চিত্রার সামনে দিয়ে বলে-
-“ চিত্রা কফি টা একটু তুষার কে দিয়ে আয়।
চিত্রা কফির মগ টা নিয়ে মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। তুষারের রুমে সামনে এসে দেখে দরজা চাপানো। দরজাটা হালকা ফাঁক করে বলে-
-“ ভাইয়া আসবো?
মিনিট দুয়েকেও যখন কোনো উত্তর আসলো না ভেতর থেকে তখন চিত্রা আর উত্তরের অপেক্ষা না করে ভেতরে ঢুকে পড়লো। খাটের পাশে থাকা টেবিল টায় কফির মগটা রাখে। হঠাৎ একটা পিকের উপর চোখ যায় চিত্রার। মেয়েলি পিক যার শুধু হাত দেখা যাচ্ছে। চিত্রার কৌতূহল হলো পিক টা দেখার। পিকটার দিকে হাত বাড়াতেই পেছন থেকে ভেসে আসলো-
-“ কি করছো ওখানে?
চিত্রা পেছনে ঘরতেই দেখে তুষার সাদা একটা টাওয়াল পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভরকে যায় চিত্রা।
-“ আপনার কফি নিয়ে আসছি।
তুষায় একবার কফির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে –
-“নক করে আসতে হয় কারো রুমে ঢোকার আগে।
-“ আমি নক করেছিলাম কিন্তু কোনো জবাব পাই নি তাই..
-“ তাই ঢুকে পড়বে রুমে! আমার রুমের ভেতর নেক্সট টাইম যেনো আর না দেখি।
-“ ফুপি বলেছিল বলে এসেছি।
-“ মা বললেও আর আসবে না আমার রুমে। যতক্ষণ না আমি অনুমতি দিবো।
চিত্রা আর কিছু বললো না। তুষার কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তুষার তপ্ত শ্বাস ফেলে কফির পেছনে থাকা ছবিটা ড্রয়ারের ভেতর রেখে দেয়।

(নোট টা পরবেন সবাই। ফাস্ট পর্বে আমি রায়ান আর রিয়ার ছেলে বেবি দিয়েছিলাম সেটা এডিট করে মেয়ে বানিয়ে দিয়েছি। আর সেকেন্ড পর্বে যেখানে নামের কনফিউশান ছিলো রায়ান রায়হান নিয়ে সেটা রায়ানের নামই রায়হান আহমেদ রায়ান যেটা আমার ফল্ট হয়েছে ভেঙে না দেওয়ায়। রায়ান বা রায়হান দিয়ে সংলাপ দিলে বুঝে নিবেন তারা দুজন এক ব্যাক্তিই)

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০২

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripte

সকাল সকাল কারো ছোট্ট নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙে চিত্রার। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে রিয়ার বাচ্চাটা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কি কিউট বাচ্চাটা। এক ধ্যানে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রইলো চিত্রা। রায়হান আর রিয়ার বাচ্চা। রিয়ার জায়গায় তো বাচ্চা টা চিত্রা আর রায়হানের হতে পারতো। তপ্ত শ্বাস ফেললো চিত্রা। এর মধ্যে বাচ্চাটা চিত্রার বুকে আঁচড়ে পড়লো সাথে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। চিত্রার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। বাচ্চাটাকে টেনে কাঁথার নিচে নিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চা টা চুপচাপ গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো। চিত্রা ফের চোখ বুঝতেই বাচ্চা টা চিত্রার গালে হাত রাখলো। চিত্রা তাকালো,বাচ্চাটার গালে রাখা হাত টায় হাত দিয়ে বলে-

-“ কি হয়েছে মাম্মাম?

বাচ্চা টা উঠে বসলো। দরজার দিকে চেয়ে বলে-

-“ আমাকে বাহিলে নিয়ে তলো।

চিত্রা নিজেও এবার উঠে পড়লো। চুল গুলোকে হাত খোঁপা করে নেয়।

-“ বাহিরে যাবা মাম্মাম?
বাচ্চা টা উপর নিচ মাথা নাড়ালো।
-“ আচ্ছা তুমি এখানে চুপ করে বসো আমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসে নেই।

বাচ্চা টা চুপ করে বসে রইলো। চিত্রা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে নিচে নামে।

ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে তার মা,বড়মা,রিয়া বসে আছে। পাশে একটা পরিচিত মুখ ও দেখতে পেলো চিত্রা। রিয়ার বড় ভাই রাতুল এসেছে। রিয়া চিত্রা কে দেখে বসা থেকে উঠে চিত্রার কাছে এলো। বাচ্চাটাকে কোলে নিতে চাইলো কিন্তু গেলো না।

-“ তোর উঠার সময় হলো চিত্রা? দশটা বাজে ঘুম ভাঙলো তোর।

চিত্রা হাতে থাকা ফোনটায় সময় দেখে নিলো। আমেরিকায় থাকা কালীন চিত্রা অনেক বেলা করেই ঘুম থেকে উঠতো। ছোট চাচা আর চাচি থাকায় সে সবসময় রিলাক্স মুডে থাকতো।

-“ আসলে এলার্ম দিতে ভুলে গেছি। তোর মেয়েটা না ডাকলে তো এখনও ঘুমিয়ে থাকতাম।

কথাটা বলে সোফার দিকে এগিয়ে যায় চিত্রা। সামনে থাকা পরিচিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ আসসালামু আলাইকুম রাতুল ভাইয়া। কেমন আছেন?

রাতুল স্মিত হাসলো। বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে-

-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

রাতুল বাচ্চা টাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে বলে-

-“ ভালো থাকারই তো কথা। আমেরিকার মতো শহরে থাকলে কেউ ভালো না থেকে পারে।

চিত্রা কিছু বললো না। চিত্রার মা চিত্রার পাশে বসে বলে-

-“ বেলা হলো তো ক্ষিদে লাগে নি তোর? চল খেয়ে নিবি,বিকেলে তোর ফুপি আসবে তোকে নিতে।

চিত্রা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমাকে নিতে মানে?

-“ কাল রাতেই ফোন করে বলেছে আজ আসবে আর কয়েক দিন তোকে তার কাছে রাখবে। জানিস তো তোর ফুপি কে, বলেছে মানে তোকে নিয়েই ছাড়বে।

-“ আচ্ছা চলো খেতে দাও। তোমাদের খাওয়া শেষ সবার?
-“ সবার খাওয়া শেষ,শুধু তোর মা খায় নি।

পাশ থেকে চিত্রার বড় মা রিক্তা বেগম কথাটা বলে উঠলেন। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে মায়ের হাত ধরে খাবার টেবিলের সামনে যায়।

-“ বাড়ির সবাই কি অফিসে চলে গেছে?
-“ হ্যাঁ তোর আব্বু,বড় চাচা, আর রায়হান অফিসে গেছে।

মা’কে বসিয়ে সে নিজেও বসে পড়লো। দু প্লেটে খাবার বেড়ে মা মেয়ে খেয়ে নিলো। এরমধ্যে হঠাৎ করে চিত্রার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো তার ছোট চাচা ভিডিও কল দিয়েছে। চিত্রা ভুলেই গিয়েছিল তার চাচা কে ফোন দিতে। ফোন টা রিসিভ করে সামনে পানির জগের সাথে হেলান দিয়ে রাখে। ফোনের ওপাশে চিত্রার চাচা চাচি আর তাদের একমাত্র মেয়ে সানা বসে আছে।

-“ আসসালামু আলাইকুম চাচা।
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ঠিকঠাক পৌঁছিয়েছো তো?
-“ হ্যাঁ চাচা, আর খুব সরি এখানে আসার পর একদম ভুলে গেছি তোমায় ফোন দিতে।
-“ হ্যাঁ ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। এতোদিন পর ফ্যামিলির সাথে দেখা হলো।
-“ চাচি আর পিচ্চি তো রেগে আছে দেখো আমার সাথে কথাই বলছে না।

সানা এবার ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে বলে-
-“ রেগে থাকারই তো কথা। তুমি কিভাবে আমাকে ভুলে যেতে পারো। আমি তোমার সানা পিচ্চি টাকে ভুলে যাও একটা ফোন দিতে ওয়াও!
-“ সরি খুব সরি আর এমন ভুল হবে না। আসলে অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম।
-“ ওকে ওকে আর সরি বলতে হবে না। আবার আসবে কবে?

-“ যেদিন আমার সানা পিচ্চির বিয়ে হবে সেদিন যাবো।

সানার হাত থেকে সানার মা সোনিয়া আহমেদ ফোন টা নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে গিয়ে ভিডিও কল কেটে অডিও কল দিয়ে বলে-

-“ চিত্রা সব ঠিকঠাক আছে তো?
-“ হ্যাঁ চাচি সব ঠিকঠাক আছে।
-“ রায়হান কে দেখে দূর্বল হয়ে যাও নি তো?
চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির বাহিরে বাগানে গেলো।

-“ কিছুটা খারাপ লাগছিলো চাচি। তবে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি।
-“ এখন থেকে তো রোজ চোখের সামনে থাকবে,ভেঙে পড়বা না।
-“ আমি ভেঙে পড়লে শক্ত করার জন্য তো তুমি আছো।
-“ তুমি আমার মেয়ে হলে তোমাকে কখনই ও বাড়িতে যেতে দিতাম না চিত্রা।
-“ কেনো চাচি আমি কি তোমার মেয়ে নই?
-“ হ্যাঁ মেয়ে কিন্তু অধিকারবোধ নেই আমার। আচ্ছা ভালো থাকবা রোজ ফোন দিবা।
-“ আচ্ছা চাচি তোমরাও ভালো থাকবা।

ফোনটা কেটে দিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখে রাতুল বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে তার পেছন দাঁড়িয়ে আছে।

-“ কখন এসে দাঁড়ালেন টের পেলাম না?
-“ এই তো কেবলই এসে দাঁড়ালাম। কার সাথে কথা বলছিলেন ফোনে?

চিত্রা বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে বলে-
-“ আমার চাচির সাথে। আমেরিকায় যার কাছে ছিলাম।
-“ ওহ্।

চিত্রা আর কোনো জবাব না দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লো। রাতুল চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে দেখার জন্য এসেছিল রাতুল। মেয়েটা আগের থেকেও সুন্দর হয়ে গেছে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

——————-

বিকেলের দিকে ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো চিত্রা। হঠাৎ চোখে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বুঝতে বাকি নেই এটা কে।

-“ তৃষ্ণার তাহলে মনে পড়লো তার চিত্রার কথা?

তৃষ্ণা চোখ ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ালো অবাক হয়ে বলল-
-“ বুঝলি কি করে এটা আমি?

চিত্রা বুকে দু হাত দিয়ে বলে-
-“ কারন এসব বাচ্চামো তুই ছাড়া আর কেউ করতে পারে না তাই।
-“ কোথায় ভাবলাম তুই আমায় চিনতে পারবি না। অথচ চিনে ফেললি।
-“ কে কে আসছিস?
-“ আমি আর মা এসেছি তোরে আমন্ত্রণ করে আমাদের বাড়ি নিতে।
-“ আমাকে নিতে কেনো?
-“ সেটা মা জানে। চল নিচে চল।

চিত্রা আর তৃষ্ণা নিচে আসলো। সোফায় বসে থাকা তানিয়া বেগম কে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

-“ কেমন আছো ফুপি?
-“ ভালো আছি। বিদেশে গিয়ে তো ফুপিরে ভুলেই গেছোস।
-“ কি যে বলো না তোমাদের ভুলে গেলে চিনলাম কি করে?

রিয়া মিষ্টি আর কিছু ফ্রুটস এনে টি-টেবিলের রাখলো। রিক্তা বেগম ননদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তা তানিয়া ছেলের তো বয়স হলো বিয়ে টিয়ে দিবে না নাকি?

তানিয়া বেগম মুখে মিষ্টি নিতে নিতে বলে-
-“ হ্যাঁ ভাবি এবার তুষার কে বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।
-“ তা তুষার আসলো না কেনো?
-“ সে কি আর বাসায় বসে থাকার মানুষ নাকি? বাবার সাথে গেছে সিলেট।
-“ দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলছে তোমার ছেলেকে।
-“ হ্যাঁ তা আর বলতে বাকি নেই। অফিস টু কাজ, কাজ টু অফিস। এর বাহিরে আর কোনো সময় নেই পরিবার কে দেওয়ার জন্য । দিনকে দিন রোবট বানিয়ে ফেলছে ছেলেটাকে। এই চিত্রা যা রেডি হয়ে আয়।

-“ রেডি হবো কেনো?
-“ আমার সাথে যাবি।
-“ আজই? আজ থাকো আমাদের বাসায় কাল যাবো নি।
-“ না না আজই চল রেডি হয়ে আয়।

চিত্রা জানে তার ফুপির সাথে পেরে উঠবে না তাই রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ফুপির বাড়ির উদ্দেশ্যে।

দোতলা বাড়ি, মোট ছয় টা রুম। বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান। মেয়ে আর ভাইয়ের মেয়ে কে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো তানিয়া বেগম। পুরো রুম অন্ধকার, সন্ধ্যা বাতি দেওয়া হয় নি এখনও। চিত্রা ফোনের লাইট অনে করে। তানিয়া বেগম সুইচ হাতরে বাড়ির লাইট গুলো এক এক করে জ্বালিয়ে দেয়। মুহূর্তে পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে পড়ে। তানিয়া বেগম বোরকা খুলে কিচেনে চলে যায় রান্না করার জন্য। ফুপি কে রেস্ট না নিয়ে সোজা রান্না ঘরে যেতে দেখে চিত্রা বলে উঠলো-

-“ ফুপি কত দূর থেকে আসলা। রেস্ট না নিয়ে সোজা রান্না ঘরে গেছো কেনো?
-“ রাতে খাওয়া দাওয়া করতে হবে তো আমাদের।
-“ আমরা তিনজনই তো বাসায় তাই না?
-“ হুম।
-“ রান্নার প্যারা নিয়ো না আমি খাবার বাহিরে অর্ডার দিচ্ছি। আজ তিনজন মিলে বাহিরের খাবার খাবো।
-“ একদম না বাহিরের খাবার খাওয়া ঠিক না। আমি তাড়াতাড়ি করে রান্না করে ফেলবো।

চিত্রা শুনলো না তার ফুপির কথা। হাত টেনে রান্না ঘর থেকে বের করে বলে-
-“ তোমার রান্না করা লাগবে না। আজ আমরা বাহিরের খাবার খাবো তাই নারে তৃষ্ণা।

তৃষ্ণা বাসায় এসেই টিভি ছেড়ে টিভি দেখছিল। চিত্রার কথা শুনে ঘাড় ফিরিয়ে বলে-

-“ হ্যাঁ হ্যাঁ মা তোমার রান্না করার দরকার নেই। তুমি রান্না করতে গেলে শুধু একটু পর পর আমায় ডাকো। তার থেকে চিত্রার প্রস্তাব টা বেটার। আমরা বাহিরের খাবার খাবো।

তানিয়া বেগম মেয়ের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মেয়ের কান টা টেনে ধরে বলে-
-“ মা যে এতো কষ্ট করে রান্না করে খাওয়ায় কই সে তো বিরক্ত হয় না। আর তোমাকে দু একবার ডাক দিলে ঘন্টা খানেক পর এসে ডাক শুনে যাও। এতেই তোমার বিরক্ত লেগে যায়।

তৃষ্ণা মায়ের থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দেয়। এর মধ্যে চিত্রা বাহিরে খাবার অর্ডার দেয়। মিনিট ত্রিশ পরে ডেলিভার ম্যান খাবার নিয়ে চলেও আসে। চিত্রা বিল পে করে খাবার টা নিয়ে টেবিলে রাখে। তৃষ্ণা এক এক করে খাবারের প্যাকেট গুলো খুলে। কাচ্চি আর রসমালাই অর্ডার দিয়েছিল চিত্রা। তানিয়া বেগম খাবার গুলো এক এক করে প্লেটে বেড়ে খেয়ে নেয় সবাই। আর সামান্য বেচে যাওয়া খাবার টা ফ্রিজে তুলে রাখে।

খাওয়া দাওয়া শেষে তিনজনে টুকিটাকি গল্পগুজব করে তানিয়া বেগম নিজের রুমে চলে যায়। আর চিত্রা তৃষ্ণা, তৃষ্ণার রুমে যায়। চিত্রা তৃষ্ণার রুমে এসে সোজা বেলকনি তে চলে যায়। এ বাড়ির বেলকনি গুলো অনেক সুন্দর। খোলামেলা বড় কি সুন্দর আকাশ দেখা যায়। দমকা হাওয়া গুলো এসে গা ছুঁয়ে দেয়। সবচেয়ে বেলকনি সুন্দর তুষার ভাইয়ার রুমের। লোকটার বেলকনিতে হরেক রকমের গাছ দিয়ে ভরা বেলকনির অর্ধেক টা। সুন্দর একটা দোলনা ও আছে। দোলনা টাতে বসলে কি সুন্দর চাঁদের আলো একদম শরীরের উপর পড়ে। কথাটা ভাবতেই চিত্রা বেলকনি থেকে রুমে এসে তৃষ্ণা কে ডাকে।

তৃষ্ণা কেবলই ঘুমাতে যাচ্ছিল চিত্রার ডাক শুনে চোখ মেলে বলে-

-“ কি?
-“ তুষার ভাইয়া তো বাসায় নেই তাই না। আর আসবেও তো না তাই তো।
-“ হ্যাঁ বাসায় নেই।
-“ তাহলে চল আজকে তুষার ভাইয়ার রুমে ঘুমাই।

তৃষ্ণা উল্টো ফিরে শুয়ে বলে-
-“ পাগল নাকি আমি। ভাইয়ের বকা খাওয়ার ইচ্ছে নাই।
-“ আশ্চর্য বকা কেনো খাবি?
-“ ভাইয়া তার রুম কাউকে শেয়ার করতে দেয় না। আর ভাইয়ার কানে যদি যায় আমরা গিয়ে রাতে তার বিছানায় ঘুমাইছি তাহলে বকবক করবে।
-“ তুষার ভাইয়ের বেলকনি টা কিন্তু অনেক সুন্দর রে।
-“ হ রে তুষার ভাই ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে তারে বিয়ে দিয়ে তার রুম টা আমি নিয়ে নিতাম। কিন্তু আফসোস তার রুম নেওয়ার আগে আমাকেই আমার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে হবে।
_“ আহারে তোমার কষ্টে আমি জাস্ট কেন্দে দিলাম।

-“ হইছে আর কান্না লাগবে না ঘুমিয়ে পড়। আমার ঘুম ধরছে অনেক।

চিত্রা আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ তৃষ্ণার পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ ফেসবুক স্ক্রোল করে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত তিনটের দিকে হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দে ঘুম ভেঙে যায় চিত্রার। পাশে শুয়ে থাকা তৃষ্ণা কে ডেকে বলে-
-“ ঐ তৃষ্ণা কে যেনো দরজা ঠকঠক করছে গিয়ে দেখ।

তৃষ্ণা কাঁথা টা দিয়ে উল্টো মুখ ঢেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে-
-“ তুই গিয়ে দেখ মা ডাকছে মনে হয়।

তার ফুপি ছাড়া তো আর কেউ নেই এ বাসায়। ওড়না না নিয়েই বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে সামনে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠে চিত্রা।দরজার সামনে তুষার দাঁড়িয়ে আছে। তুষার চিত্রা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে-

-“ তৃষ্ণা কে ডেকে দাও তো। আর বলো খাবার টা গরম করে যেনো টেবিলে রাখে।

কথাটা বলে আর কোনো বাক্য ব্যায় না করে তুষার চলে যায়। চিত্রা তৃষ্ণার কাছে এসে বলে-

-“ এই তৃষ্ণা তুষার ভাই আসছে তোকে খাবার গরম করে দিতে বলছে। কি রে উঠ যা গরম করে দিয়ে আয়।

তৃষ্ণা উঠলো না। চিত্রা আবার ডাকলো কিন্তু মেয়েটা ম’রার মতো ঘুমাচ্ছে। চিত্রা এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। বিছানার এক প্রান্তে বসে রইলো। মিনিট দশেক পর তুষারের আবার ডাক আসলো। উপায়ন্তর না পেয়ে চিত্রা নিজেই নিচে নামলো। জড়োসড়ো হয়ে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-

-“ ভাইয়া তৃষ্ণা তো উঠে নি খাবার টা কি আমি গরম করে দিবো?
-“ দাও।

চিত্রা ফ্রিজের কাছে গিয়ে খাবার বের করতে গিয়ে দেখে খাবার বলতে তো সেই রাতে বেঁচে যাওয়া একটু খানি কাচ্চি যা খেলে তো রিয়ার বাচ্চারই পেট ভরবে না। এর আর কি পেট ভরবে? তুষার চিত্রা কে ঠাই ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে গলায় বললো-

-“ কি হলো ফ্রীজের সামনে ঠাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাইয়া খাবার তো নাই ফ্রিজে।
-“ খাবার নাই মানে? মা রান্না করে নি আজ?
অবাক হওয়ার কন্ঠে বললো তুষার।
-“ রান্না করতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই দেই নি। বাহির থেকে খাবার এনে খেয়েছিলাম আমরা।
-“ তাহলে এখন আমি কি খাবো?
-“ আপনি যে আসবেন কেউ কি জানতো?
তুষার গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ না।

-“ তাহলে এখন কি করবেন। না খেয়ে থাকবেন নাকি?
-“ আশ্চর্য না খেয়ে থাকবো কেনো। কিছু একটা তাড়াতাড়ি বানিয়ে দাও। ক্ষিদে পেয়েছে অনেক।
-“ আমি কি বানাবো?

-“ রান্না করতে পারো না?
-“ হ্যাঁ পারি।
-“ তাহলে দয়া করে খানিকটা নুডলস রান্না করে দাও।

আচ্ছা ওয়েট করেন দিচ্ছি। মিনিট দশেকের মধ্যে চিত্রা কোনো রকমে নুডলস রান্না করে তুষারের সামনে দিলো। এই ফাস্ট এ বাসায় এসে রান্না করলো চিত্রা। তুষার চুপচাপ নুডলস টা খেয়ে পানি খেয়ে চলে গেলো। একটা মানুষ যে এতো রাতে উঠে তাকে নুডলস রান্না করে খাওয়ালো তাকে যে ধন্যবাদ দিতে হয় সেই ধন্যবাদ টুকু দিলো না।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০১

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#সূচনা_পর্ব
#Raiha_Zubair_Ripte

তিন বছর আগে ঠিক এই দিনটায় ভালাবাসার মানুষটার বিয়ের দিন পাড়ি দিয়েছিলাম সদূর আমেরিকায়। আজ আবার
দীর্ঘ তিন বছর পর পা রাখলাম সেই চিরচেনা শহরে। এই শহরে পা রাখতেই পুরোনো সেই অতীতটা আবার মনে পড়ে গেলে। ভালোবাসার মানুষ টাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা টা আরো প্রকোপ হলো।

একতরফা ভালোবাসা যে এতোটা পু*ড়ায় ক্ষনে ক্ষনে। একদম দম বন্ধকর পরিস্থিতি।

খুব ছোট থেকেই ভালো লাগতো রায়ান ভাইকে। সে সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই। আস্তে আস্তে এই ভালোলাগা টা যে কখন ভালোবাসায় পরিনত হলো বুঝতেই পারলাম না। তার আশে পাশে কোনো মেয়েকে সহ্য হতো না। কোনো মেয়ের সাথে তাকে কথা বলতে দেখলে খুব রাগ হয়। তার সাথে কথা বার্তা খুবই কম হতো আমার।

রায়ান ভাইয়ার আম্মু জানতো যে আমি রায়ান ভাইকে ভালোবাসি। আমার হাবভাব দেখেই কিছুটা বুঝে ফেলছিলো।

এভাবেই কাটতে থাকতো দিনগুলো।

আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন একটা ফ্রেন্ড হয়। তার নাম রিয়া বেস্ট ফ্রেন্ড ও বটে। প্রান উচ্ছাসি একটা মেয়ে।

যখন ইন্টারে উঠি তখন রিয়ার আমাদের বাসায় আসার মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছিলো। তখন বুঝতে পারি নি তার আসার কারন ভেবেছি আমার সাথেই দেখা করতে আসতো।যেই রায়ান ভাই কি না আমার সাথে নিজে এসে কথা বলতো না সেই রায়ান ভাই কি না আমার কাছে রিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিতো, প্রথমে এসব নরমালি নিলেও পরে ব্যাপারটা খুব ভাবায় আমায়। এর মধ্যেই হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনি রায়ান ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্রী আর কেও না আমারই ফ্রেন্ড রিয়া। সেদিন শুধু রায়ানের মা বড় আম্মুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি তো আমায় কথা দিয়েছেলেন আমায় রায়ান ভাইয়ের বউ বানাবে। তাহলে আজ কেন এমন করলো বড় আম্মু?

রাতে বড় আম্মুর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বললে তিনি জানান,,

” দেখ চিত্রা আগে যেটা বলেছিলাম সেটা ভুলে যা। আমি রিয়াকেই আমার ছেলের বউ বানাতে চাই। তখন আবেগের ছলে বলে ফেলেছিলাম তোকে রায়ানের বউ বানাবো কিন্তু রায়ান রিয়াকে ভালোবাসে আর রিয়াকেই বিয়ে করতে চায়। আশা করি তুই বুজছিস।”

” কিন্তু বড় আম্মু আমার ভালোবাসার কি হবে তাহলে আমিও তো রায়ান ভাইকে ভালোবাসি। ”

“এক পাক্ষিক ভালোবাসা দিয়ে কিচ্ছু হয় না, রায়ান তোকে কখনো সে নজরে দেখে নি। তুই দেরি করে ফেলছিস তোর ভালোবাসা প্রকাশ করতে, এখন আর কিছু করার নেই।”

কথাটা শুনা মাত্র ই ছুটে চলে এসেছিলাম নিজের ঘরে।
সেদিন খুব কেঁদেছিলাম পা*গলের মতো। রুমের দরজা বন্ধ করে ছটফট করছিলাম গ*লা কা*টা মুরগীর মতো।
বলতে পারি নি কাউকে নিজের কথা। আর না ছিলো বলার মতো পরিস্থিতি।

একবার বলতেও চেয়েছিলাম রায়ান ভাইকে আমার এক পাক্ষিক ভালো বাসার কথা। কিন্তু অপমান লাজলজ্জার ভয়ে বলতে পারি নি।

দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দিনও চলে আসলো।
আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না বিয়েটা নিজের চোখে দেখার। যেখানে এতোদিন নিজেকে তার পাশে বসিয়ে এসেছি আর আজ তার পাশেই আমার বেস্টু রিয়া। মানতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই সেদিন রাতেই আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হই ছোট চাচ্চুর সাথে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তার আমেরিকা যাওয়ার ডেট ছিলল। আমার ও যেহেতু ভিসা পাসপোর্ট ছিলো আগে থেকেই সে জন্য আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় নি। সবাই অবাকই হয়েছিলো আমার হঠাৎ চলে যাওয়াতে, তাদের বলেছিলাম ভালো পড়াশোনার জন্য আমায় ওখানে যেতেই হবে আর তার উর্ধে ভালো থাকার জন্য।

আমি চলে আসার এক বছর পরই রিয়া রায়ানের একটা মেয়ে হয়। সেদিন খবর টা শুনে কোনো অনুভূতিই পাই নি। এখানে আসার পর রায়ান ভাই আর রিয়া অনেক বার ফোন দিয়েছিলো বিভিন্ন ব্যাস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছি। এই তিনটা বছর ধরে নিজেকে তৈরি করেছি।

আজ আবার নিজ গৃহ নিজ মাতৃভূমি তে ফিরছি,চিরকাল তো আর ভীনদেশে থাকা যায় না। এবার নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলেছি যাতে আর নিজেকে ভেঙে যেতে না দেখি।

বাড়িতে পা রাখতেই এক পিচ্চি এসে সামনে দাঁড়ালো সাথে ছিলো পুরো পরিবার। মা বাবা আমায় দেখার সাথে সাথে দৌড়ে কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো পরম আবেশে। মা অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো মুখ,তখন ও দেখি পিচ্চিটা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,আমার চিনতে খুব একটা কষ্ট হয় না এ বাচ্চাটা কাদের। আমি পিচ্চিটার কাছে গিয়ে খানিকটা ঝুঁকে হাত বাড়ালাম কোলে নেবার জন্য, পিচ্চি টা ও কোলে আসার জন্য হাত বাড়ায়,কোলে নিতেই পিচ্চি টা আদো আদো কন্ঠে ফুপি,আন্টি বলতে লাগলো।

এই টুকু পিচ্চির মুখে এমন ডাক শুনে অবাক হয়ে যাই। ব্যাগ থেকে চকোলেট বের করে পিচ্চি ছেলেটার হাতে দেয়, এর মধ্যেই রিয়া এসে আমায় জড়িয়ে ধরে।

-“ খুব মিস করছি ইয়ার তোকে,আর যাস না চলে ঐ সুদূর দেশে।

রিয়াকে কিছু বলতে নিবে এর মাঝেই চোখ যায় সোফায় বসে থাকা রায়ান ভাইয়ের দিকে,আগে থেকে আরো সুদর্শন হয়ে গেছে, নিজের দৃষ্টিকে সংবরণ করে শুধাই-

-“ না আর যাবো না তা কেমন চলছে তোদের দিনকাল। পিচ্চিটা দেখি একদম তোর মতো হয়েছে।

-“ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছো সব,আগে যা ফ্রেশ হয়ে আয় অনেক দূর থেকে এসেছিস,রেস্ট নে গিয়ে।

চিত্রার মা পাশ থেকে চিত্রা কে নিয়ে যায়, চিত্রা ঘরে এসে অবাক হয়, সেই আগের মতোই আছে তার এই রুম টা একটু ও পরিবর্তন হয় নি। মেয়েকে এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুধায়,,

” তোর রুমে কাউকে ঢুকতে দেই নি প্রতিদিন এসে সযত্নে পরিষ্কার করে গেছি,এদিক থেকে ওদিক হতে দেই নি। ”

চিত্রা মায়ের কথা শুনে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খানিকটা সময় নিজের ঘরে বিশ্রাম নেয়, এর মধ্যে চিত্রার মায়ের ডাক আসে খাবার খাওয়ার জন্য, চিত্রা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতেই দেখতে পায় রায়ান আর রিয়া মিলে পিচ্চি টাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে,পিচ্চি টা খেতে চাচ্ছে না তা দেখে রায়ান নানান অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে ছেলেকে হাসাচ্ছে আর রিয়া সেই সুযোগে পিচ্চির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।

চিত্রা মাথা নিচু করে এসে টেবিলে বসে নিশ্চুপে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে চলে যায়। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চায় তার অনুভূতির কাছে,কেনো সে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে আবার, কেনো তাদের সুখী পরিবারকে দেখে বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়,

মুখ দিয়ে তো খুব সহজে বলাই যায় নিজেকে গড়ে তুলেছি শক্ত করে, কিন্তু মন গহীনে তো এখনো থেমে থেমে কড়া নাড়ে পুরোনো অতীত, তাকে তো চেয়েছি ভুলতে কিন্তু আদৌও কি সেটা সম্ভব হয়,আগে তো সুদূরে ছিলাম তাই একটু হলেও ভুলে থাকতে পেরেছি,কিন্তু এখন কি হবে, এখন থেকে তো একই ছাঁদের নিচে বসবাস,মনের অন্তঃস্থলে আর কতো দিন তাকে নিয়ে অসংখ্য ব্যাথা অনুভূত হবে, ভালোবাসলেই তো তার সাথে ঘর বাঁধা যায় না।

আকাশে জ্বল জ্বল করে থাকা চাঁদটার দিকে তাকায় চিত্রা। ছলছল নয়নে চেয়ে থেকে বলে উঠে,,
” ও চাঁদ তুমি ভুলিয়ে দিয়ো সব মোর গ্লানি, সঙ্গী হইয়ো মোর এমনি প্রতিটি রাতের, আমার সব ব্যাথাযুক্ত গল্প গুলো শুনাবো তোমায় অতি সন্তপর্ণে, তুমি না হয় নিরব পাঠক হয়ে শুনে যাবে আমার গল্পের প্রতিটি পর্ব”

—————–

-“ হ্যালো ভাইয়া তোমার প্রেয়সী দেশে এসেছে। এবার আর হারাতে দিয়ো না। নিজের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দাও তাকে।

ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি চোখ মেলে তাকালো। বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে বলল-

-“ রেডি থাকতে বলিস তাকে। খুব পুড়িয়েছে আমায়। তার শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে। শাস্তি স্বরূপ তাকে আমার শহরে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলে জানে মে’রে ফেলবো

#চলবে?