আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০২

0
524

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripte

সকাল সকাল কারো ছোট্ট নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙে চিত্রার। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে রিয়ার বাচ্চাটা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কি কিউট বাচ্চাটা। এক ধ্যানে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রইলো চিত্রা। রায়হান আর রিয়ার বাচ্চা। রিয়ার জায়গায় তো বাচ্চা টা চিত্রা আর রায়হানের হতে পারতো। তপ্ত শ্বাস ফেললো চিত্রা। এর মধ্যে বাচ্চাটা চিত্রার বুকে আঁচড়ে পড়লো সাথে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। চিত্রার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। বাচ্চাটাকে টেনে কাঁথার নিচে নিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চা টা চুপচাপ গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো। চিত্রা ফের চোখ বুঝতেই বাচ্চা টা চিত্রার গালে হাত রাখলো। চিত্রা তাকালো,বাচ্চাটার গালে রাখা হাত টায় হাত দিয়ে বলে-

-“ কি হয়েছে মাম্মাম?

বাচ্চা টা উঠে বসলো। দরজার দিকে চেয়ে বলে-

-“ আমাকে বাহিলে নিয়ে তলো।

চিত্রা নিজেও এবার উঠে পড়লো। চুল গুলোকে হাত খোঁপা করে নেয়।

-“ বাহিরে যাবা মাম্মাম?
বাচ্চা টা উপর নিচ মাথা নাড়ালো।
-“ আচ্ছা তুমি এখানে চুপ করে বসো আমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসে নেই।

বাচ্চা টা চুপ করে বসে রইলো। চিত্রা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে নিচে নামে।

ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে তার মা,বড়মা,রিয়া বসে আছে। পাশে একটা পরিচিত মুখ ও দেখতে পেলো চিত্রা। রিয়ার বড় ভাই রাতুল এসেছে। রিয়া চিত্রা কে দেখে বসা থেকে উঠে চিত্রার কাছে এলো। বাচ্চাটাকে কোলে নিতে চাইলো কিন্তু গেলো না।

-“ তোর উঠার সময় হলো চিত্রা? দশটা বাজে ঘুম ভাঙলো তোর।

চিত্রা হাতে থাকা ফোনটায় সময় দেখে নিলো। আমেরিকায় থাকা কালীন চিত্রা অনেক বেলা করেই ঘুম থেকে উঠতো। ছোট চাচা আর চাচি থাকায় সে সবসময় রিলাক্স মুডে থাকতো।

-“ আসলে এলার্ম দিতে ভুলে গেছি। তোর মেয়েটা না ডাকলে তো এখনও ঘুমিয়ে থাকতাম।

কথাটা বলে সোফার দিকে এগিয়ে যায় চিত্রা। সামনে থাকা পরিচিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ আসসালামু আলাইকুম রাতুল ভাইয়া। কেমন আছেন?

রাতুল স্মিত হাসলো। বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে-

-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

রাতুল বাচ্চা টাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে বলে-

-“ ভালো থাকারই তো কথা। আমেরিকার মতো শহরে থাকলে কেউ ভালো না থেকে পারে।

চিত্রা কিছু বললো না। চিত্রার মা চিত্রার পাশে বসে বলে-

-“ বেলা হলো তো ক্ষিদে লাগে নি তোর? চল খেয়ে নিবি,বিকেলে তোর ফুপি আসবে তোকে নিতে।

চিত্রা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমাকে নিতে মানে?

-“ কাল রাতেই ফোন করে বলেছে আজ আসবে আর কয়েক দিন তোকে তার কাছে রাখবে। জানিস তো তোর ফুপি কে, বলেছে মানে তোকে নিয়েই ছাড়বে।

-“ আচ্ছা চলো খেতে দাও। তোমাদের খাওয়া শেষ সবার?
-“ সবার খাওয়া শেষ,শুধু তোর মা খায় নি।

পাশ থেকে চিত্রার বড় মা রিক্তা বেগম কথাটা বলে উঠলেন। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে মায়ের হাত ধরে খাবার টেবিলের সামনে যায়।

-“ বাড়ির সবাই কি অফিসে চলে গেছে?
-“ হ্যাঁ তোর আব্বু,বড় চাচা, আর রায়হান অফিসে গেছে।

মা’কে বসিয়ে সে নিজেও বসে পড়লো। দু প্লেটে খাবার বেড়ে মা মেয়ে খেয়ে নিলো। এরমধ্যে হঠাৎ করে চিত্রার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো তার ছোট চাচা ভিডিও কল দিয়েছে। চিত্রা ভুলেই গিয়েছিল তার চাচা কে ফোন দিতে। ফোন টা রিসিভ করে সামনে পানির জগের সাথে হেলান দিয়ে রাখে। ফোনের ওপাশে চিত্রার চাচা চাচি আর তাদের একমাত্র মেয়ে সানা বসে আছে।

-“ আসসালামু আলাইকুম চাচা।
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ঠিকঠাক পৌঁছিয়েছো তো?
-“ হ্যাঁ চাচা, আর খুব সরি এখানে আসার পর একদম ভুলে গেছি তোমায় ফোন দিতে।
-“ হ্যাঁ ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। এতোদিন পর ফ্যামিলির সাথে দেখা হলো।
-“ চাচি আর পিচ্চি তো রেগে আছে দেখো আমার সাথে কথাই বলছে না।

সানা এবার ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে বলে-
-“ রেগে থাকারই তো কথা। তুমি কিভাবে আমাকে ভুলে যেতে পারো। আমি তোমার সানা পিচ্চি টাকে ভুলে যাও একটা ফোন দিতে ওয়াও!
-“ সরি খুব সরি আর এমন ভুল হবে না। আসলে অনেক টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম।
-“ ওকে ওকে আর সরি বলতে হবে না। আবার আসবে কবে?

-“ যেদিন আমার সানা পিচ্চির বিয়ে হবে সেদিন যাবো।

সানার হাত থেকে সানার মা সোনিয়া আহমেদ ফোন টা নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে গিয়ে ভিডিও কল কেটে অডিও কল দিয়ে বলে-

-“ চিত্রা সব ঠিকঠাক আছে তো?
-“ হ্যাঁ চাচি সব ঠিকঠাক আছে।
-“ রায়হান কে দেখে দূর্বল হয়ে যাও নি তো?
চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির বাহিরে বাগানে গেলো।

-“ কিছুটা খারাপ লাগছিলো চাচি। তবে নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি।
-“ এখন থেকে তো রোজ চোখের সামনে থাকবে,ভেঙে পড়বা না।
-“ আমি ভেঙে পড়লে শক্ত করার জন্য তো তুমি আছো।
-“ তুমি আমার মেয়ে হলে তোমাকে কখনই ও বাড়িতে যেতে দিতাম না চিত্রা।
-“ কেনো চাচি আমি কি তোমার মেয়ে নই?
-“ হ্যাঁ মেয়ে কিন্তু অধিকারবোধ নেই আমার। আচ্ছা ভালো থাকবা রোজ ফোন দিবা।
-“ আচ্ছা চাচি তোমরাও ভালো থাকবা।

ফোনটা কেটে দিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখে রাতুল বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে তার পেছন দাঁড়িয়ে আছে।

-“ কখন এসে দাঁড়ালেন টের পেলাম না?
-“ এই তো কেবলই এসে দাঁড়ালাম। কার সাথে কথা বলছিলেন ফোনে?

চিত্রা বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে বলে-
-“ আমার চাচির সাথে। আমেরিকায় যার কাছে ছিলাম।
-“ ওহ্।

চিত্রা আর কোনো জবাব না দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লো। রাতুল চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে দেখার জন্য এসেছিল রাতুল। মেয়েটা আগের থেকেও সুন্দর হয়ে গেছে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

——————-

বিকেলের দিকে ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো চিত্রা। হঠাৎ চোখে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বুঝতে বাকি নেই এটা কে।

-“ তৃষ্ণার তাহলে মনে পড়লো তার চিত্রার কথা?

তৃষ্ণা চোখ ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ালো অবাক হয়ে বলল-
-“ বুঝলি কি করে এটা আমি?

চিত্রা বুকে দু হাত দিয়ে বলে-
-“ কারন এসব বাচ্চামো তুই ছাড়া আর কেউ করতে পারে না তাই।
-“ কোথায় ভাবলাম তুই আমায় চিনতে পারবি না। অথচ চিনে ফেললি।
-“ কে কে আসছিস?
-“ আমি আর মা এসেছি তোরে আমন্ত্রণ করে আমাদের বাড়ি নিতে।
-“ আমাকে নিতে কেনো?
-“ সেটা মা জানে। চল নিচে চল।

চিত্রা আর তৃষ্ণা নিচে আসলো। সোফায় বসে থাকা তানিয়া বেগম কে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

-“ কেমন আছো ফুপি?
-“ ভালো আছি। বিদেশে গিয়ে তো ফুপিরে ভুলেই গেছোস।
-“ কি যে বলো না তোমাদের ভুলে গেলে চিনলাম কি করে?

রিয়া মিষ্টি আর কিছু ফ্রুটস এনে টি-টেবিলের রাখলো। রিক্তা বেগম ননদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তা তানিয়া ছেলের তো বয়স হলো বিয়ে টিয়ে দিবে না নাকি?

তানিয়া বেগম মুখে মিষ্টি নিতে নিতে বলে-
-“ হ্যাঁ ভাবি এবার তুষার কে বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।
-“ তা তুষার আসলো না কেনো?
-“ সে কি আর বাসায় বসে থাকার মানুষ নাকি? বাবার সাথে গেছে সিলেট।
-“ দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলছে তোমার ছেলেকে।
-“ হ্যাঁ তা আর বলতে বাকি নেই। অফিস টু কাজ, কাজ টু অফিস। এর বাহিরে আর কোনো সময় নেই পরিবার কে দেওয়ার জন্য । দিনকে দিন রোবট বানিয়ে ফেলছে ছেলেটাকে। এই চিত্রা যা রেডি হয়ে আয়।

-“ রেডি হবো কেনো?
-“ আমার সাথে যাবি।
-“ আজই? আজ থাকো আমাদের বাসায় কাল যাবো নি।
-“ না না আজই চল রেডি হয়ে আয়।

চিত্রা জানে তার ফুপির সাথে পেরে উঠবে না তাই রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ফুপির বাড়ির উদ্দেশ্যে।

দোতলা বাড়ি, মোট ছয় টা রুম। বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান। মেয়ে আর ভাইয়ের মেয়ে কে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো তানিয়া বেগম। পুরো রুম অন্ধকার, সন্ধ্যা বাতি দেওয়া হয় নি এখনও। চিত্রা ফোনের লাইট অনে করে। তানিয়া বেগম সুইচ হাতরে বাড়ির লাইট গুলো এক এক করে জ্বালিয়ে দেয়। মুহূর্তে পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে পড়ে। তানিয়া বেগম বোরকা খুলে কিচেনে চলে যায় রান্না করার জন্য। ফুপি কে রেস্ট না নিয়ে সোজা রান্না ঘরে যেতে দেখে চিত্রা বলে উঠলো-

-“ ফুপি কত দূর থেকে আসলা। রেস্ট না নিয়ে সোজা রান্না ঘরে গেছো কেনো?
-“ রাতে খাওয়া দাওয়া করতে হবে তো আমাদের।
-“ আমরা তিনজনই তো বাসায় তাই না?
-“ হুম।
-“ রান্নার প্যারা নিয়ো না আমি খাবার বাহিরে অর্ডার দিচ্ছি। আজ তিনজন মিলে বাহিরের খাবার খাবো।
-“ একদম না বাহিরের খাবার খাওয়া ঠিক না। আমি তাড়াতাড়ি করে রান্না করে ফেলবো।

চিত্রা শুনলো না তার ফুপির কথা। হাত টেনে রান্না ঘর থেকে বের করে বলে-
-“ তোমার রান্না করা লাগবে না। আজ আমরা বাহিরের খাবার খাবো তাই নারে তৃষ্ণা।

তৃষ্ণা বাসায় এসেই টিভি ছেড়ে টিভি দেখছিল। চিত্রার কথা শুনে ঘাড় ফিরিয়ে বলে-

-“ হ্যাঁ হ্যাঁ মা তোমার রান্না করার দরকার নেই। তুমি রান্না করতে গেলে শুধু একটু পর পর আমায় ডাকো। তার থেকে চিত্রার প্রস্তাব টা বেটার। আমরা বাহিরের খাবার খাবো।

তানিয়া বেগম মেয়ের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মেয়ের কান টা টেনে ধরে বলে-
-“ মা যে এতো কষ্ট করে রান্না করে খাওয়ায় কই সে তো বিরক্ত হয় না। আর তোমাকে দু একবার ডাক দিলে ঘন্টা খানেক পর এসে ডাক শুনে যাও। এতেই তোমার বিরক্ত লেগে যায়।

তৃষ্ণা মায়ের থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দেয়। এর মধ্যে চিত্রা বাহিরে খাবার অর্ডার দেয়। মিনিট ত্রিশ পরে ডেলিভার ম্যান খাবার নিয়ে চলেও আসে। চিত্রা বিল পে করে খাবার টা নিয়ে টেবিলে রাখে। তৃষ্ণা এক এক করে খাবারের প্যাকেট গুলো খুলে। কাচ্চি আর রসমালাই অর্ডার দিয়েছিল চিত্রা। তানিয়া বেগম খাবার গুলো এক এক করে প্লেটে বেড়ে খেয়ে নেয় সবাই। আর সামান্য বেচে যাওয়া খাবার টা ফ্রিজে তুলে রাখে।

খাওয়া দাওয়া শেষে তিনজনে টুকিটাকি গল্পগুজব করে তানিয়া বেগম নিজের রুমে চলে যায়। আর চিত্রা তৃষ্ণা, তৃষ্ণার রুমে যায়। চিত্রা তৃষ্ণার রুমে এসে সোজা বেলকনি তে চলে যায়। এ বাড়ির বেলকনি গুলো অনেক সুন্দর। খোলামেলা বড় কি সুন্দর আকাশ দেখা যায়। দমকা হাওয়া গুলো এসে গা ছুঁয়ে দেয়। সবচেয়ে বেলকনি সুন্দর তুষার ভাইয়ার রুমের। লোকটার বেলকনিতে হরেক রকমের গাছ দিয়ে ভরা বেলকনির অর্ধেক টা। সুন্দর একটা দোলনা ও আছে। দোলনা টাতে বসলে কি সুন্দর চাঁদের আলো একদম শরীরের উপর পড়ে। কথাটা ভাবতেই চিত্রা বেলকনি থেকে রুমে এসে তৃষ্ণা কে ডাকে।

তৃষ্ণা কেবলই ঘুমাতে যাচ্ছিল চিত্রার ডাক শুনে চোখ মেলে বলে-

-“ কি?
-“ তুষার ভাইয়া তো বাসায় নেই তাই না। আর আসবেও তো না তাই তো।
-“ হ্যাঁ বাসায় নেই।
-“ তাহলে চল আজকে তুষার ভাইয়ার রুমে ঘুমাই।

তৃষ্ণা উল্টো ফিরে শুয়ে বলে-
-“ পাগল নাকি আমি। ভাইয়ের বকা খাওয়ার ইচ্ছে নাই।
-“ আশ্চর্য বকা কেনো খাবি?
-“ ভাইয়া তার রুম কাউকে শেয়ার করতে দেয় না। আর ভাইয়ার কানে যদি যায় আমরা গিয়ে রাতে তার বিছানায় ঘুমাইছি তাহলে বকবক করবে।
-“ তুষার ভাইয়ের বেলকনি টা কিন্তু অনেক সুন্দর রে।
-“ হ রে তুষার ভাই ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে তারে বিয়ে দিয়ে তার রুম টা আমি নিয়ে নিতাম। কিন্তু আফসোস তার রুম নেওয়ার আগে আমাকেই আমার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যেতে হবে।
_“ আহারে তোমার কষ্টে আমি জাস্ট কেন্দে দিলাম।

-“ হইছে আর কান্না লাগবে না ঘুমিয়ে পড়। আমার ঘুম ধরছে অনেক।

চিত্রা আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ তৃষ্ণার পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ ফেসবুক স্ক্রোল করে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত তিনটের দিকে হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দে ঘুম ভেঙে যায় চিত্রার। পাশে শুয়ে থাকা তৃষ্ণা কে ডেকে বলে-
-“ ঐ তৃষ্ণা কে যেনো দরজা ঠকঠক করছে গিয়ে দেখ।

তৃষ্ণা কাঁথা টা দিয়ে উল্টো মুখ ঢেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে-
-“ তুই গিয়ে দেখ মা ডাকছে মনে হয়।

তার ফুপি ছাড়া তো আর কেউ নেই এ বাসায়। ওড়না না নিয়েই বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে সামনে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠে চিত্রা।দরজার সামনে তুষার দাঁড়িয়ে আছে। তুষার চিত্রা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে-

-“ তৃষ্ণা কে ডেকে দাও তো। আর বলো খাবার টা গরম করে যেনো টেবিলে রাখে।

কথাটা বলে আর কোনো বাক্য ব্যায় না করে তুষার চলে যায়। চিত্রা তৃষ্ণার কাছে এসে বলে-

-“ এই তৃষ্ণা তুষার ভাই আসছে তোকে খাবার গরম করে দিতে বলছে। কি রে উঠ যা গরম করে দিয়ে আয়।

তৃষ্ণা উঠলো না। চিত্রা আবার ডাকলো কিন্তু মেয়েটা ম’রার মতো ঘুমাচ্ছে। চিত্রা এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। বিছানার এক প্রান্তে বসে রইলো। মিনিট দশেক পর তুষারের আবার ডাক আসলো। উপায়ন্তর না পেয়ে চিত্রা নিজেই নিচে নামলো। জড়োসড়ো হয়ে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-

-“ ভাইয়া তৃষ্ণা তো উঠে নি খাবার টা কি আমি গরম করে দিবো?
-“ দাও।

চিত্রা ফ্রিজের কাছে গিয়ে খাবার বের করতে গিয়ে দেখে খাবার বলতে তো সেই রাতে বেঁচে যাওয়া একটু খানি কাচ্চি যা খেলে তো রিয়ার বাচ্চারই পেট ভরবে না। এর আর কি পেট ভরবে? তুষার চিত্রা কে ঠাই ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে গলায় বললো-

-“ কি হলো ফ্রীজের সামনে ঠাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাইয়া খাবার তো নাই ফ্রিজে।
-“ খাবার নাই মানে? মা রান্না করে নি আজ?
অবাক হওয়ার কন্ঠে বললো তুষার।
-“ রান্না করতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই দেই নি। বাহির থেকে খাবার এনে খেয়েছিলাম আমরা।
-“ তাহলে এখন আমি কি খাবো?
-“ আপনি যে আসবেন কেউ কি জানতো?
তুষার গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ না।

-“ তাহলে এখন কি করবেন। না খেয়ে থাকবেন নাকি?
-“ আশ্চর্য না খেয়ে থাকবো কেনো। কিছু একটা তাড়াতাড়ি বানিয়ে দাও। ক্ষিদে পেয়েছে অনেক।
-“ আমি কি বানাবো?

-“ রান্না করতে পারো না?
-“ হ্যাঁ পারি।
-“ তাহলে দয়া করে খানিকটা নুডলস রান্না করে দাও।

আচ্ছা ওয়েট করেন দিচ্ছি। মিনিট দশেকের মধ্যে চিত্রা কোনো রকমে নুডলস রান্না করে তুষারের সামনে দিলো। এই ফাস্ট এ বাসায় এসে রান্না করলো চিত্রা। তুষার চুপচাপ নুডলস টা খেয়ে পানি খেয়ে চলে গেলো। একটা মানুষ যে এতো রাতে উঠে তাকে নুডলস রান্না করে খাওয়ালো তাকে যে ধন্যবাদ দিতে হয় সেই ধন্যবাদ টুকু দিলো না।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে