আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-০৬

0
486

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripti

পড়ন্ত বিকেল, বাহিরে এখনও বাতাস বইছে তবে সকালের তুলনায় খানিক টা তীব্র গতিতে। আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে আজ থেকে টানা দুইদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। টিভিতে এই নিউজ টা দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিত্রা। তার এমন বৃষ্টি পছন্দ না,চারিদিক স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। সোফার ওপর প্রান্তে বসে আছে তুষার। সে ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল চেক করছে। আড় চোখে চিত্রার মুখের ভাবভঙ্গি দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-“ মুখ টাকে এমন পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছো কেনো? কোনো সমস্যা?
চিত্রা নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি বাহিরের দিকে রেখে বলল-
-“ ভাইয়া কখন যাবেন ও বাড়ি? দেখেন আকাশ কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি আসবে তো।
-“ আসলে আসুক তোমার প্রবলেম কি।
তুষারের এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে চিত্রা তার দিকে তাকায়।
-“ আমারই তো সমস্যা বাসায় যাবো কিভাবে,তখন রাফি ভাইয়ার সাথে গেলে ভালো হতো।
তুষার ল্যাপটপ টা বন্ধ করলো। সেকেন্ড খানিক সময় নিয়ে বলল-
-“ যাও রেডি হয়ে আসো।

কথাটা বলেই তুষার বসা থেকে উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। চিত্রা তড়িঘড়ি করে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। ব্যাগ টা গুছিয়ে একদম বসার ঘরে চলে আসে। তৃষ্ণা বাসায় নেই,তৃষ্ণা গেছে তার ফ্রেন্ডের বাসায় কিছু নোট আনতে। তানিয়া বেগম রুমে শুয়ে আছে। আকাশের আবহাওয়া খারাপ দেখে তার স্বামী তামিম খান একটু আগে ফোন দিয়ে জানিয়েছে ফিরতে দু দিন লেট হবে। চিত্রা বসার ঘরে ব্যাগ টা রেখে ফুপির রুমে চলে গেলো। দরজায় টোকা দিয়ে বললো-
-“ ফুপি আসবো?
তানিয়া বেগম চিত্রার গলার আওয়াজ শুনে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“ হ্যাঁ আয়।
চিত্রা দরজা ঠেলে ভেতরে আসে। তানিয়া বেগম চিত্রাকে রেডি হওয়া দেখে বলে-
-“ কোথাও যাচ্ছিস?
-“ হ্যাঁ বাসায় যাচ্ছি।
-“ সে কি এখনই চলে যাবি নাকি।
-“ হ্যাঁ মা আজই যেতে বলছে তাছাড়া কয়েক দিন পর আমার এডমিশন পরীক্ষা সেটার জন্য ও তো প্রিপারেশন নিতে হবে।
-“ আচ্ছা, তুষার নিয়ে যাচ্ছে তো?
-“ হ্যাঁ তুষার ভাইয়াই নিয়ে যাচ্ছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা সাবধানে পৌঁছে ফোন দিস একটা।
-“ আচ্ছা ফুপি ভালো থেকো।

কথাটা বলে তানিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে চলে আসে। সোফার কাছে আসতেই দেখে সিঁড়ি দিয়ে তুষার নামছে। পড়নে জিন্স প্যান্ট হাতে হাত ঘড়ি,গায়ে ব্লাক শার্ট,শার্টের সামনে দিয়ে দুটো বোতাম খোলা। পারফেক্ট লাগছে চিত্রার কাছে। ভাইয়ের বউ অনেক লাকি হবে এমন সুদর্শন ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
তুষার চিত্রার সামনে এসে বলে-
-“ রেডি? তো চলো যাওয়া যাক।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে ব্যাগটা নিয়ে তুষারের পেছন পেছন হাঁটা ধরে। গাড়ির কাছে এসে পেছনের সিটে বসতে নিলে তুষার বলে-
-“ ব্যাগ টা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসো। আমি তোমার ড্রাইভার নই যে পেছনে বসবা।

চিত্রা তুষারের কথা মতো ব্যাগটা পেছনের সিটে রেখে সামনে এসে বসে। তুষারের বলার আগেই সিট বেল্টটা লাগিয়ে নেয়। তুষার স্মিত হেসে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করে। গাড়িটা ঢাবির সামনে আসতেই চিত্রা এক ধ্যানে ঢাবির দিকে তাকিয়ে থাকে। চিত্রার খুব ইচ্ছে করছে ঢাবির ভেতর টায় ঢুকতে। তুষার কে গাড়ি টা থামাতে। তুষার চিত্রার চোখ অনুসরণ করে দেখলো মেয়েটা ঢাবির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়িটাকে এক সাইডে রেখে বলে-
-“ চলো একটু ঢাবির ভেতরে যাই।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-“ কেনো?
তুষার গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে-“ এমনি।আসলে ঢাবির সামনে আসলে একবারের জন্য হলেও যেতে ইচ্ছে করে। এক সময় ঢাবির স্টুডেন্ট ছিলাম বলে কথা।

চিত্রা গাড়ি থেকে নামলো। তুষারের পাশে দাঁড়িয়ে বাহির থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ঢাবির দিকে। পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে ছিলো অনেক চেয়ে চিত্রার কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করে না। কিন্তু আজ ঢাবির দিকে তাকিয়ে সেই পুরোনো ইচ্ছে টাকে আবার পূরণ করতে ইচ্ছে করছে। তুষার চিত্রার সামনে নিজের বা হাত টা বাড়িয়ে দিলো। চিত্রা হাত টার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো-“কি?
তুষার ডান হাত দিয়ে তার চুল গুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বলল-
-“ চলো আজ তোমাকে একটা সুন্দর বিকেল উপহার দেই।

কথাটা বলে তুষার চিত্রার ডান হাত চেপে হাঁটা ধরলো। যতই ঢাবির ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততই চিত্রার মন আত্মিক শান্তি পাচ্ছে। এভাবে কেউ তাকে নিয়ে কখনও হাঁটে নি। ক্যাম্পাসের সবাই কি সুন্দর একে ওপরের হাত ধরে ঘুরছে আবার কেউ একজোট হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ গিটারে সুর তুলে গান গাইছে। চিত্রা হাঁটা থামিয়ে দিলো। ছেলে মেয়ে গুলোর দিকে তাকালে। তুষার হাঁটার মাঝে বাঁধা পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে বলল-
-“ ওখানে যাবে? ওরা গান গাইবে এখন।

চিত্রা হ্যাঁ জানালো। তুষার চিত্রা কে নিয়ে ঐ ছেলেমেয়েদের কাছে গেলো। ছেলেমেয়ে গুলো সুর তুলছে গান গাইবে। চিত্রা সবটা খেয়াল করছে। তাদের মধ্যে থাকা এক টা ছেলে হঠাৎ করে বলে উঠলো-
-“ আরে তুষার ভাই আপনি যে।
তুষার খেয়াল করে নি ছেলেটা কে। ছেলেটার ডাক শুনে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হেই শামিম হোয়াটসঅ্যাপ?
-“ এই তো চলছে,অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলেন। (চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে) ওটা কি ভাবি আমাদের?

কথাটা কর্ণকুহর হতেই খানিক টা লজ্জা পেলো চিত্রা। এরা কি একজন ছেলের পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই গফ/বফ ভেবে ফেলে। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ও আমার মামার মেয়ে।
ছেলেটা ওহ্ বলে পাশে থেকে ফুচকার স্টলে থেকে দুটো চেয়ার এনে তুষার আর চিত্রা কে দেয় বসার জন্য। চিত্রা আর তুষার বসে। ছেলে মেয়েগুলো গাইতে থাকে,,
যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তুমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় ? আর প্রেমই বা কোথায় ?
যদি দিশেহারা ঈশারাতে প্রেমই ডেকে যায়
তবে ঈশারা কোথায় ? আর আশারা কোথায় ?
যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা |
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরুপায় |
যদি প্রতিদিন সেই রঙ্গিন হাসি ব্যথা দেয়
যদি সত্য গুলো স্বপ্ন হয়ে শুধু কথা দেয়
তবে শুনে দেখো প্রেমিকের গানও অসহায় |
যদি অভিযোগ কেড়ে নেয় সব অধিকার
তবে অভিনয় হয় সবগুলো অভিসার
যদি ঝিলমিল নীল আলোকে ঢেকে দেয় আঁধার
তবে কি থাকে তুমার বলো কি থাকে আমার
যদি ভালোবাসা সরে গেলে মরে যেতে হয়
কেন সেই প্রেম ফিরে এলে হেরে যেতে ভয়
শেষে কবিতারা দ্বায়সারা গান হয়ে যায় |

গানটা কয়েকবার ফেসবুকে শুনেছিলো চিত্রা। এবার সামনা সামনি গাইতে দেখলো। গান ভালোই লাগলো ছেলেমেয়ে গুলোর কন্ঠে। তুষার চিত্রার হাত ধরে বসা থেকে উঠে কার্জন হলের সামনে গেলো। ফাস্ট টাইম আজ কার্জন হল দেখলো সামনা সামনি চিত্রা। পিক তুলবে না সেটা হয় নাকি। তুষারের দিকে তার ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ আমার কয়েক টা পিক তুলে দিন।

তুষার নিজের ফোন টা বের করে বলে-
-“ আমার কাছে ফোন আছে তুমি গিয়ে দাঁড়াও আমি পিক তুলে দিচ্ছি।

চিত্রা হলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পোস নিলো আর তুষার পিক তুলে দিলো। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে ভেলপুরি দেখে সেখান টায় তুষারের হাত ধরে ছোট লাগালো চিত্রা। ভেলপুরির কাছে গিয়ে চিত্রা বলল-

-“ মামা দু প্লেট ভেলপুরি দিন ঝাল বেশি করে।

ভেলপুরি মামা দু প্লেট ভেলপুরি চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা এক প্লেট নিজে নিয়ে আরেক প্লেট তুষারের সামনে ধরে বলে-
-“ ভাইয়া নিন।

তুষার ভেলপুরির দিকে তাকিয়ে, ভেলপুরির ঝাল মেপে নিলো। ঝাল খুব একটা খেতে পারে না তুষার।
-“ না না আমি ভেলপুরি খাই না তুমি খাও।

চিত্রা নিজের প্লেট থেকে একটা ভেলপুরি নিয়ে তুষারের মুখের সামনে ধরে বলে-
-“ একটা খান ভাইয়া তা না হলে আমার পেট খারাপ হবে প্লিজ।

তুষার চিত্রার হাতে দেওয়া ভেলপুরির অফার টা লুটে নিলো। এমন সুযোগ কবে আসবে কে জানে। তুষার একটা ভেলপুরি খেলে চিত্রা ওপর প্লেট টা তুষারের হাতে ধরিয়ে দেয়। ইশারায় খেতে বলে। তুষার খেয়ে নেয়। প্রেয়সীর সাথে একই পাশে দাঁড়িয়ে এই ঝাল ও যেনো অমৃত লাগলো। কিন্তু সব ভেলপুরি খাওয়ার শেষে বুঝলো এ অমৃত কেবল তার ভাবনাতেই ছিলো। মুহূর্তে চোখ ঠোঁট লাল হয়ে গেলো। চিত্রা খেতে খেতে তুষারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এই ছেলের চোখ ঠোঁট হঠাৎ লাল কেনো হলো বুঝতে পারলো না।
-“ ভাইয়া আপনার চোখ ঠোঁট এমন লাল কেনো?

তুষার ইশারায় পানি চাইলো। চিত্রা দোকানদারের কাছে থাকা পানির বোতল টা তুষারের দিকে এগিয়ে দেয়। তুষার ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে ফেলে। চিত্রা বুঝলো বেচারা ঝালের জন্য এমন করছে। দোকানদারের থেকে প্লেটে মিষ্টি টক নিয়ে তুষারের সামনে ধরে বলে –
-“ মিষ্টি টক টা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

তুষার খেয়ে নিলো। একটু একটু করে ঝাল কমতে লাগলো। তুষার ভেলপুরির বিল মিটিয়ে চিত্রাকে নিয়ে হাঁটা ধরে। চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সামান্য ঝাল খেতে পারেন না আই এম তো অবাক! আমার তো ঝাল লাগলো না। পুরুষ মানুষ থাকবে ঝালের উপর দিয়ে। এমন হলে চলে নাকি।
তুষার কিছু বললো না। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। চিত্রা গাড়িতে বসে বলে-
-“ আর একটু সময় থাকলে কি হতো?
-“ কেনো তোমার না পাবলিকে পড়ার ইচ্ছে নাই তাহলে পাবলিকের আঙিনায় থাকবা কেনো।
-“ আশ্চর্য কে বললো ইচ্ছে নাই,আছে তো কিন্তু পাবলিকে চান্স পেতে হলে ভাগ্য লাগে।
-“ তোমার কি ভাগ্য নেই? লিসেন চিত্রা নিজের ভাগ্য নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।মন দিয়ে প্রিপারেশন নাও।
-“ হ্যাঁ আপনার আর তৃষ্ণার কপালের সাথে কপাল ঘষা দিতে হবে যদি ভাগ্য বদলায়।

তুষার কথা বললো না। ঝালে তার অবস্থা খারাপ,রাতে হয়তো জ্বর আসবে। চিত্রা কে বাসায় দিয়ে ফেরার পথে মেডিসিন নিতে হবে। এই এক শরীর সামান্য ঝালই সহ্য করতে পারে না বিরক্তিকর শরীর। একটু কিছু হলেই নেতিয়ে যায়।

তুষার চিত্রা কে নিয়ে তার বাসায় আসে। সোফায় রিক্তা বেগম আর রিয়ার মেয়ে রিমি বসে আছে। দাদি নাতনি মিলে খুনসুটি করছে। চিত্রা আর তুষার বাড়ির ভেতর ঢুকে। রিমি চিত্রা কে দেখা মাত্রই হাতে তালি দিয়ে হেঁসে উঠে। চিত্রা ব্যাগ টা রেখে পিচ্চি টাকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। রিক্তা বেগম তুষার আর চিত্রা কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুষারের দিকে এগিয়ে বলে-
-“ কেমন আছো তুষার?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামি। আপনারা কেমন আছেন?
-“ এই তো আল্লাহ রাখছে ভালো। আজ কত গুলো মাস পড় আসলা।

তুষার স্মিত হেসে বলে-
-“ কাজের অনেক প্রেসার সেজন্য আসার সময় হয়ে উঠে না। রায়ান ভাই আর মামা রা কোথায়?
-“ ওরা তো বাসায় নাই। তুমি বসো।

তুষার সোফায় বসলো। চিত্রা আর রিমি মিলে কথা বলছে আর হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। তুষার পর্যবেক্ষণ করলো সবটা। মেয়েটা রায়ানের মেয়ের সাথে কিভাবে মিশে গেলো। অন্য কেউ হলে কি এতো ইজিলি ভালেবাসার মানুষটার বাচ্চাকে এভাবে আদর করতে পারতো? তপ্ত শ্বাস ফেললো তুষার।রিয়া স্ন্যাকস আর কফি এনে তুষারের সামনে রাখে।
-“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?
তুষার চিত্রার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রিয়া। তুমি কেমন আছো?
-“ আমিও ভালো আছি।
-“ রাফি ও কি বাসায় নেই?
-“ না ভাইয়া, বাবা আর রায়ানের সাথে গেছে কোথাও একটা।

তুষার কফিতে চুমুক বসালো। চয়নিকা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আগে। কপালে চুমু একে দেয়। সোফার ওপর পাশে তুষার কে দেখে। তুষার ছেলেটা আজ অনেক দিন পর আসলো তাদের বাসায়। লাস্ট এসেছিলো বছর খানে আগে। যখন গ্রাম থেকে শ্বাশুড়ি আর শ্বশুর এসেছিল।
-“ তুষারের তাহলে পা পড়লো মামার বাসায়? দাওয়াত দিয়েও তো তুষার কে পাওয়া যায় না।
-“ কি করবে বলুন মামি, সব দিক সামলিয়ে আসা টা হয়ে উঠে না।
-“ বয়স হচ্ছে তো বিয়ের। পাত্রী দেখি কি বলো?

তুষার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। চিত্রার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো-
-“ মেয়ে দেখে কি করবেন মেয়ে দেখাই আছে। এখন শুধু সবার অনুমতি নিয়ে উঠিয়ে নেওয়া বাকি।

চিত্রা সহ রিয়া, চয়নিকা, রিক্তা সবাই অবাক হয়। মেয়ে দেখাই আছে মানে? তানিয়া কি তাহলে না জানিয়েই মেয়ে ঠিক করে রেখেছে। তুষার সবাই কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে –
-“ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো সবাই?
রিক্তা বেগম তুষারের পাশে বসে বলে-
-“ মেয়ে কি কর? কোথায় থাকে? কোন পরিবারের মেয়ে সে?দেখতে কেমন?

তুষার শব্দ করে হাসলো।
-“ সিরিয়াস হচ্ছেন কেনো আমি মজা করেছি। বিয়ে নিয়ে এখনও প্ল্যান করি নি। মনের মানুষ পেয়ে গেলে করবো।

রায়ান, রাফি আর রাসেল আহমেদ এনাম মেডিকেলের পাশে তাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের অফিসের কাজ চলছে। অফিসের ভেতর ঢুকতে হলে এই দশ শতাংশ জমির উপর দিয়ে যেতে হবে যার জন্য রাসেল আহমেদের এই দশ শতাংশ জমি চাই। রাফি বুঝলো কেনো তার বাবা জমিটার জন্য এমন করছে। রায়ান জমির মালিকের বাবা কে ফোন দেয়। আশরাফুল রহমান মেয়ে অধরার সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ফোনে কল আসায় দেখে সেই পরিচিত নম্বর। মেয়ের দিকে নাম্বার টা তাক করে বলে-
-“ এই যে দেখো জমির জন্য আবার ফোন করা হয়েছে।

অধরা ফোন টা কেড়ে নিলো বিরক্তিতে। ফোন টা রিসিভ করতেই অধরা গড়গড় করে বলল-
-“ একবার আপনাদের বলা হয়েছে না জমি বিক্রি করা হবে না তাহলে বারবার কেনো ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন।

রাফির রাগ হলো-
-“ জাস্ট শাট-আপ, আপনাকে জমি বিক্রি নিয়ে ফোন করা জয় নি। আপনি একবার জমির কাছে আসুন।
-“ কেনো?
-“ আসুন তারপর দেখে যান।
-” ওয়েট আসছি।

কথাটা বলে অধরা ফোন কেটে দেয়। হ্যান্ড ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে যায়। রায়ান আর রাসেল আহমেদ অফিসের ভেতরে গেছে,রাফি বাহিরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশ ফিরে দেখে সেদিনের সেই বিধবা মেয়েটা। আজও পড়নে সাদা শাড়ি। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি সেই অধরা না?
অধরা রাফি কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনি কে?
-“ আমি রাফি সেদিন প্লেনে যার পাশে বসেছিলেন।
-“ ওহ্ আপনি এখানে কি করছেন?
-“ আসলে এক বজ্জাত মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
-“ মানে?
– “ মানে হলে এই যে,এই যে সামনে যে জায়গা টা দেখতে পাচ্ছেন না এই জায়গা টা একটা মহিলার, সেই মহিলার জন্য অপেক্ষা করছি।
অধরা হাতের ইশারায় জমির জায়গা টার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই দশ শতাংশ?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমিই সেই মালিক। বলুন কি বলবেন?
রাফি একবার জমি তো আরেক বার অধরার দিকে তাকায়।

-“ এই জমি আপনার?
-“ হ্যাঁ।
-“ আপনি এই দশ শতাংশ জমি ছাড়ছেন না কেনো? আপনার জন্য আমাদের অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
-“ আপনাদের এখানে কে বলেছে অফিস তৈরি করতে? আমার জায়গার জন্য প্রবলেম হলে অন্য জায়গায় তৈরি করুন অফিস।
-“ আপনার জায়গা দশ শতাংশ আর আমাদের আপনার জায়গার তিন ডবল করলেও জায়গার পরিমাপ আসবে না। সেক্ষেত্রে কি আপনার উচিত না জায়গা টা ছেড়ে দেওয়া? আপনার কাছে তো জায়গা টা মাগনা চাওয়া হচ্ছে না। দাম তো দেওয়া হবে।

-“ কত দিবেন আপনারা?
-“ আপনি কত চান?
-“ আমি যা চাইবো তাই দিবেন?
-“ চেয়ে দেখুন।
-“ বেশ,আমি শতাংশ প্রতি ৩০ লাখ করে সেল করবো।
-“ জায়গার আসল দাম কত?
-“ আসল দাম যাই থাকুক, দশ শতাংশ জমির দাম আসে ১ কোটি টাকা। এখন আপনাদের পোষালে আপনারা নিবেন। যদি পারেন তাহলে জানাবেন আর না পারলে জমির সংক্রান্ত আর একটা ফোন যেনে না আসে।

কথাটা বলে অধরা চলে যায়। রাফি অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবে দশ শতাংশ জমির দাম ১ কোটি টাকা! মেয়েটা সুযোগ বুঝে সুযোগের দুর্ব্যবহার করছে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে