Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 388



প্রিয় অনুভব পর্ব-০১

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#সূচনা_পর্ব

নিজের ভাঙ্গা গিটারের দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাহিয়ান। নিজের থেকেও প্রিয় গিটারের এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়েছে ও। বিস্ময়ের মাত্রাকে আরো কয়েক দফা বাড়িয়ে দিয়ে সাজ্জাদ বলে উঠলো‚ “মেয়েটা যে কেনো গিটারটাকেই চোখে দেখলো!”

বিস্ময় কাটাতে বেশ খানিকটা সময় নিলো নাহিয়ান। কিছুক্ষণ পর নাহিয়ান ফুঁসে উঠলো । তেজী কণ্ঠে বললো‚ “এটা কে করেছে?”

সাজ্জাদ কিছুটা সময় নিয়ে বললো, “একটা মেয়ে।”

“কে?”

সাজ্জাদ চুপ করে রইলো।

“কে সে?”

“বাদ দে না, ভুলবশত করেছে মেয়েটা!”

“আমি জানতে চাইছি কে করেছে?”

সাজ্জাদকে কিছু বলতে না দিয়ে তাহসিন বলে উঠলো, “রীতির কাজিন!”

“কোথায় সে?”

সাজ্জাদ আর তাহসিন একে অপরের দিকে তাকালো। ইশারায় বোঝালো তারা জানে না। নাহিয়ান চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো।

“ভাইয়া, গিটারের মালিক কি এসেছেন?”

মেয়েলি কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালো নাহিয়ান। পরনে তার হালকা নীল রঙের গাউন। মুখে হালকা সাজ।

“কি হলো, এসেছেন?”

সাজ্জাদ আর তাহসিন নাহিয়ানের দিকে তাকালো। ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মেয়েটি তার দিকে তাকালো।

“ওহ আপনার তাহলে। সরি ভাইয়া, আসলে একটু মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই ভুলবশত আপনার গিটারের উপর রাগ ঝেড়ে ফেলেছি।”

নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই সেই মেয়েটির পাশে থাকা আরেক মেয়ে বলে উঠলো, “নীতির বাচ্চা, সুন্দর করে বল। তোর কথায় কোনো অনুতপ্তবোধ নাই। ঠিক করে বল।”

প্রীতির কথায় বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো নীতি। আড়চোখে আবার সামনে থাকা যুবকটিকে। সে অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো।

কাজিন বোনের বিয়ে‚ চারপাশের ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সে। সেই মুহূর্তে ওর ফোনে কিছু মেসেজ আসে। মেসেজগুলো ওর ভার্সিটির এক ছেলে পাঠিয়েছে। যেগুলো দেখে ওর মেজাজ জাস্ট বিগড়ে গিয়েছিল। রেগে গেলে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলার অভ্যাস আছে তার। অভ্যাসের ধারা ধরেই সেই মুহূর্তে গিটার সামনে দেখে ছুঁড়ে ফেলেছিল। এদিকে নাহিয়ান, সাজ্জাদ আর তাহসিন গিটার রেখে নিজেদের ব্যাক্তিগত কাজে একটু সরে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর তাহসিন আর সাজ্জাদ ফিরে এসে দেখে গিটার মাটিতে। আর তার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। পাশেই ভয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়িয়ে আছে নীতি। কার না কার জিনিস ভাঙলো। সে তো ভাবেই নি গিটারটা ভেঙে যাবে। এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে তার। যার গিটার তাকে কী জবাব দিবে এখন?

“গিটারটা কে ভাঙলো?”(সাজ্জাদ)

“নাহিয়ান দেখলে শেষ আজকে!”(তাহসিন)

নীতি বুঝতে পারলো এরাই গিটারের মালিক। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বলে উঠলো‚ “সরি, আমার আসলে মাথা গরম ছিলো। তাই কোনোদিক না ভেবেই‚ ইয়ে মানে ভুল হয়ে গেছে।”

সাজ্জাদ চমকে উঠে বললো ,“ভুল হয়ে গেছে মানে? তুমি জানো এটা কার? সে জানলে কি হবে বুঝতে পারছো?”

নীতি কাঁদো স্বরে বলল, “আমি সত্যি বুঝিনি। রাগের মাথায় করে ফেলেছি। সরি!”

তাহসিন তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, “আমাদের সরি বলে লাভ নেই। যার গিটার তাকে বলো!”

অতঃপর নীতি অসহায়। আর এখন নাহিয়ানের সামনে।

“আমি সত্যি ইচ্ছে করে করিনি। রাগের বশে মানে মাথা এত গরম হয়ে গিয়েছিল, তাই সামনে যা পেয়েছি ছুঁড়ে ফেলেছি। আচ্ছা এটার দাম কত? আমি দিয়ে দিবো। সত্যি!”

বলেই হাসার চেষ্টা করলো ও। যদিও জানে না টাকা কোথা থেকে পাবে। নাহিয়ান যেনো আরও রেগে গেলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো‚ “গরম ছিলো তাই না?”

নীতি উপর নিচ মাথা নাড়লো।

“ওয়েট!”‚ বলেই সে কোথায় যেনো গেলো।

সেই জন্য প্রীতি ভাবুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো‚ “কোথায় গেলো?”

“কে জানে… আরে!”‚ কথা বলার মাঝেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো নীতি। মাথা বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ওর শরীরে। চুল ও জামার অর্ধাংশ ভিজে গেলো সেই পানিতে। সম্পূর্ণ বোতলের পানি নীতির মাথায় ঢেলে ক্যাপ আটকাতে‚ আটকাতে নাহিয়ান বললো‚

“এবার ঠান্ডা হয়েছে‚ মাথা?”

বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগলো নীতির। চমকে ওঠা কণ্ঠে বললো‚ “এটা কি করলেন?”

“মাথা ঠান্ডা।”

“আপনাকে আমার মাথা ঠান্ডা করতে বলেছি?”

“তো তোমার মাথা গরম দেখে আমার গিটার ভাঙতে বলেছি?”

“ওটা ভুল ছিলো!”

“এটা ভুলের মাশুল ছিলো!”

নীতি রাগে ফুঁসে উঠলো। সকাল সকাল গোসল সেরে কাজে লেগেছে ও। নয়তো কাজ করতে গিয়ে সেটা আর হতো না। তাই আগেই সেরেছে। কিন্তু এখন? এখন আবার ওকে ড্রেস পাল্টাতে হবে। আবার চুল শুকিয়ে সেট করতে হবে। আবার যা হালকা সাজ করেছিলো সেগুলোও করতে হবে। যতই হোক‚ বিয়ে বাড়ি তো। একটু না সেজে থাকলে চলে? এখন ওর যে এত এত সময় নষ্ট হবে এগুলো পুনরায় করতে গেলে, তার দায় কে নেবে?

“আপনাকে আমি…” ‚ বলেই নাহিয়ানের চুল টেনে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় বেকুব বনে গেলো নাহিয়ান। সাজ্জাদ আর তাহসিন হতভম্ব।

“আরে আরে কি করছো?”

নাহিয়ানের কথা শুনেও নীতি কিছু না বলে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর চুল টানতে থাকে। নাহিয়ান আর না পেরে নিজেও নীতির চুল টেনে ধরে। দুজনের চুলোচুলি দেখে ভরকে গেলো প্রীতি, সাজ্জাদ আর তাহসিন। প্রীতি কি করবে ভেবে না পেয়ে দুজনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ।

বেশ খানিকটা ধমকে বললো‚ “নীতি‚ ছাড়। কি করছিসটা কি?”

নীতি সেই অবস্থাতে থেকেই বললো‚ “আমাকে না বলে এই বেডারে বল।”

প্রীতি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এদের থামাবে কি করে? কেউ দেখলে সমস্যা! এই নীতি পরে ওকেই ফাঁসাবে সব কিছুর জন্য। ভাবতে ভাবতে হুট করেই বলে উঠলো‚ “বাবা দেখো ওরা কি করছে!”

সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে সরে গেলো দুজন। কিন্তু সেখানে কাউকে না দেখতে পেয়ে দুজনই প্রীতির দিকে তাকালো। প্রীতি মলিন মুখ করে বললো‚ “আমি দুঃখিত। কিন্তু তোমরা প্লিজ থামো। কেউ এসব দেখলে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

নীতি রেগে বললো‚ “এই লোকটাকে বল।”

“আমাকে কি বলবে?”

“বলবে আপনার মাঝে আসলেই সমস্যা আছে। নইলে একটা মেয়ের চুল এমন করে টানতে পারতেন?”

“ওরে বাবা! নিজে টানলে দোষ নেই। আমি টানলেই যত দোষ নন্দ ঘোষ ?”

“আপনি আমার মাথায় পানি ঢাললেন কেন? ঢাললেন তো ঢাললেন‚ আবার চুলও টানলে !”

“আমার গিটার ভাঙ্গার জন্য চ’ড় দিয়ে তোমার দাঁত যে আমি ফেলে দেইনি তার শুকরিয়া আদায় করো! আবার টাকার গরম দেখাও আমায়? যত্তসব‚ আজাইরা পাবলিক।”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো নীতি।

“আপনাকে আমি . . . . .”‚ বলে আবার তেড়ে যেতে নিলেই প্রীতি ওকে টেনে ধরলো।

“প্রীতি ছাড় আমায়। আজকে ইনাকে টাক যদি না করেছি তাহলে আমার নামও নীতি না!”

নাহিয়ান টিটকারী দিয়ে বললো, “এই যে পাঁচ ফুটের মেয়ে! তোমাকে আর কষ্ট করে নাম রাখতে হবে না। তোমার নতুন নাম আমি রেখে দিচ্ছি। ‘দুর্নীতি’ ‚ ওকে? সুন্দর না নামটা? এখন থেকে এটা বলেই ডাকবো ! বাই!”

বলেই ভাঙ্গা গিটারটা তুলে নিলো । একেই তো ওর প্রিয় গিটার ভেঙ্গেছে, তার উপর টাকা দিবে বলছে। টাকা আর প্রিয় জিনিস কি এক হয়? সব কেনা গেলেও, প্রিয় জিনিসগুলোর মায়া কি কেন যায়! সরি বলে চুপ থাকলেও হতো। এইটুকু মেয়ে, আবার টাকা দিবে বলছে। চুপ করে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ওখান থেকে চলে গেলো ও। ওর পিছু পিছু সাজ্জাদ আর তাহসিনও ছুটলো। নীতি প্রীতির দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। অতঃপর নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। প্রীতি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে রইলো। কি করবে এখন? নীতি নিশ্চয়ই ওকে আটকানোর জন্য রাগ করেছে। কাঁদো কাঁদো স্বরে নিজেকে নিজেই বললো‚ “ধুর ভাই‚ ভাল্লাগে না!”

বলেই ধপাধপ পা ফেলে রীতির কাছে গেলো।

নীতি‚ রীতি আর প্রীতি তিনজনই চাচাতো বোন। তাদের মায়েরা শখ করে তিনজনের নাম মিলিয়ে রেখেছে। এদের মাঝে রীতি তাদের বড়, আর প্রীতি নীতির এক বছরের ছোট। তবুও দুইজন সমবয়সীর মতোই থাকে। রীতির বিয়ে উপলক্ষে চলছে এত আয়োজন। তাই দুই বোন অনেক ব্যাস্ত। এই ব্যাস্ততার মাঝে আবার এমন পরিস্থিতি ঘটার কারণে নীতি চরম বিরক্ত। রুমে এসে স্বশব্দে আলমারি খুলে নিজের এক সেট কাপড় নিয়ে আবার স্বশব্দে লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো সে। বিছানায় বসে রীতি অবাক নয়নে কেবল সবটা পর্যবেক্ষণ করেই গেলো। কিছুক্ষণ পর গম্ভীর মুখ নিয়ে প্রবেশ করলো প্রীতি। রীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো‚ “তোদের আবার কি হলো? ফের ঝ‘গড়া করেছিস দুইজন?”

প্রীতি গাল ফুলিয়ে বললো‚ “ঝগড়া নয়, চুলো‘চুলি হয়েছে! তাও আমার সাথে না, তোমার বন্ধুর সাথে !”

রীতি ভরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো‚ “মানে?”

“মানে তোমার বন্ধু উরফে তোমার দেবর নীতির চুল টেনেছে!”

“কী বলিস?”

অতঃপর প্রীতি সবটা খুলে বললো।

“ওই বে‘ক্কলটা তাহলে আপুর বন্ধু?”

চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো নীতি। প্রীতি প্রত্যুত্তরে বললো‚ “দেবরও হয়। শাফিন জিজুর এক মাত্র ভাই লাগে।”

নীতি টাওয়াল চুলে পেঁচিয়ে প্রীতির উদ্দেশ্যে বললো, “আপু‚ তোমার দেবরকে ভালো হতে বলবে। নয়তো এই নীতি কি চিজ‚ সেটা হারে হারে বুঝিয়ে দিবে!”

রীতি বিরক্ত হয়ে বললো‚ “তোরই বা কি দরকার ছিল ছেলেদের মতো গু‘ন্ডাগীরি করার?”

প্রীতি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো‚ “গু‘ন্ডা না গু’ন্ডি হবে!”

সঙ্গে সঙ্গে নীতি ওর কান টেনে ধরলো। প্রীতি মৃদু আর্তনাদ করে বলে উঠলো, “আহ নীতি ছাড়!”

“চুপ বে‘দ্যোপ! ওই টাকলা মুরাদের জন্য তোর এত জ্বলে কেন? তোর জন্য আজকে ওই লোক হাত ছাড়া হলো। নাইলে আজকেই বুঝিয়ে দিতাম এই নীতি কী জিনিস!”

অতঃপর প্রীতিকে ছেড়ে রীতির দিকে তাকিয়ে বললো‚ “কেউ সরি বললে মেনে নিতে হয়। আমি কি ইচ্ছে করে ওমন করেছি? তাহলে উনি আমার সাথে লাগলো কেনো? আমি তো টাকা দিবোও বললাম।”

রীতি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো‚ “দেখ নীতি, গিটার নাহিয়ানের অনেক শখের একটা জিনিস। তাই ওর রাগ করাটা স্বাভাবিক। আর তাছাড়া তুই কেবল সরি বললে ও হয়তো তেমন রিয়েক্ট করতো না। টাকার কথাটা বলায় এমন করেছে। এখন আর কথা বাড়াস না। এমনেই অনেক ঝামেলা চলছে। তুই আবার কোনো গ্যাঞ্জাম করিস না। যেটা গেছে, গেছেই। বাদ দে‚ আমি গিয়ে দেখি নাহিয়ান কোথায়! ও যদি না বুঝে তোর বাবাকে বিচার দেয় তখন আরেক বিপদ! থাক তোরা।”

বলেই বেরিয়ে গেলো। দু সেকেন্ডের মাথায় আবার ফিরে এসে বললো‚ “নীতি, প্রীতি! সাবধান! ভুলেও খিচুড়ি পাকাবি না দুইটা মিলে!”

দুইজনই বাধ্য মেয়ের মতো বললো‚ “ওকে!”

রীতি যেতেই নীতি বাঁকা হেসে বললো‚ “খিচুড়ি পাকাবো না‚ তবে বিরিয়ানি পাকাবো! উইথ অনেকগুলো এলাচ!”

প্রীতি সতর্কতার বাণী হিসেবে বললো‚ “নীতি, প্লিজ! উল্টা পাল্টা চিন্তা বাদ দে। উনি কিন্তু আপুর শ্বশুরবাড়ির লোক। তোর উল্টা পাল্টা কাজে যদি বিয়েতে সমস্যা হয়?”

নীতি হেসে কোমরে হাত রেখে বললো‚ “কিচ্ছু করতে পারবে না ওই টাকলা মুরাদ! বিয়ের এই কয়দিনে যদি ওই টাকলা মুরাদকে জব্দ না করেছি‚ তবে আমার নামও নীতি নয়!”

প্রীতি ঠাস করে কপালে হাত দিয়ে বললো‚ “এই নিয়ে হাজারবার বলেছিস‚ এটা না পারলে‚ ওটা না পারলে তোর নাম নীতি না। অথচ এখন অব্দিও তোর নাম নীতি-ই আছে।”

নীতি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। অতঃপর মাথা থেকে টাওয়াল খুলে প্রীতির মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বললো‚ “বের হ ‚ ফাজিল! আমার সাথে থেকে আমারই বিরোধিতা করিস? তুই দেখি ফুল টু মির জাফর! বের হ বলছি! যা…”

নীতির ধমকে মুখ বাঁকিয়ে বের হয়ে গেলো প্রীতি। নীতি রাগে গজগজ করতে করতে রেডি হতে থাকলো!

__________________________________

“নাহি!”

রীতির ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নাহিয়ান। বন্ধুমহলের আড্ডায় ব্যস্ত ছিল সে। এখানে এসেছিলো কনের কিছু জিনিস দিতে‚ যা ওর মা পাঠিয়েছে। রীতির এমন সম্বোধনে বিরক্ত হলো নাহিয়ান! ধপাধপ পা ফেলে রীতির কাছে এসে বললো‚ “তোকে বলেছি না? পাবলিক প্লেসে এমন শর্ট করে ডাকবি না? আরে ভাই লোকে মেয়ে ভাবে আমায়!”

“ভাবলে ভাবুক। যেটা বলতে আসলাম! তুই নাকি নীতির চুল টেনেছিস?”

প্রথমে নীতির নাম ধরতে পারেনি ওর মস্তিষ্ক। পরমুহুর্তে বুঝতে পারলো ‚ ‘সেই মেয়েটি ছিলো নীতি!’

“শুধু এতটুকু বলেছে? বাকিটা বলেনি?”

“বলেছে। দেখ ওর কথা ধরিস না তুই। বাচ্চা মানুষ.. কী বলতে কী বলে বুঝে না।”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে‚ “ও বাচ্চা?”

রীতি বিরক্তিতে ‘উফফ’ বলে উঠলো।

“ধুর ছাই, শোন না। তুই ওর কথা মনে নিস না। আর..”

“আর ভাইয়াকে বলবো না‚ তাই তো?”

রীতি উপর নিচ মাথা নাড়লো। নাহিয়ান ওর মাথায় গাট্টা মে’রে বললো‚ “তুই না বললেও বলতাম না।”

তৎক্ষণাৎ রীতির মুখে হাসি ফুটলো।

“ঠিক এই কারণেই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

বলেই নাহিয়ানের গাল টেনে দিলো। নাহিয়ান গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো‚ “হইছে‚ দাড়া তো ঠিকভাবে!”

“কেনো?”

“তোর জামাই তোর কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যেতে বলেছে।”

সঙ্গে সঙ্গে গালে লাল আভা ফুঁটে উঠলো ওর।

“যাহ!”

“এত লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। দাড়া!”

রীতি লজ্জায় নত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। কি দরকার ছিলো নাহিয়ানকে এসব করতে বলার? রীতির এমন লজ্জারাঙা মুখ দেখে মুচকি হাসলো নাহিয়ান।

__________________________________

সাজগোজ শেষে ওড়না ঠিক করে বের হতে নিবে সেই মুহূর্তে বিছানায় পড়ে থাকা নিজের মোবাইলের ফেসবুক নোটিফিকেশন টিউন শুনতে পেলো নীতি। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো ওর। সঙ্গে সঙ্গে ফোন হাতে নিলো ও। নোটিফিকেশন চেক করতেই শান্ত হয়ে গেলো ওর। চোখে মুখে নেমে এলো মলিনতার ছাপ। না‚ তার কাঙ্ক্ষিত নোটিফিকেশন এখনও আসেনি। আর না খুঁজে পেয়েছে সেই কাঙ্ক্ষিত আইডি। কি করে খুঁজবে ও তাকে? আদো কি পাবে? ভাবতে ভাবতেই একটা রেকর্ডিং অন করলো ও। গানের রেকর্ড সেটা। গানটা তার ভীষণ প্রিয়! গান গেয়ে তাকে পাঠানো মানুষটা তার থেকেও অধিক প্রিয়। যে এখন ওর থেকে অনেক দূরে। অনেক অনেক দূরে! ইয়ারফোন কানে গুঁজে অনুভব করতে লাগলো সেই গান‚ আর গান গাওয়া মানুষটাকে।

“একটা মানুষ কাছে ছিলো‚
একটা মানুষ দূরে….
আমার যত কথা ছিল‚
বলতে যে চাই তারে!”

চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো ওর। আচ্ছা এটাকে কী মানুষ হারানো বলবে নাকি বিচ্ছেদ? ভেবে পেলো না ও। মনে মনে আওড়ালো‚ “আচ্ছা‚ দূরে আছি বলে কী ভালোবাসা ছেড়ে দিবেন অনুভব? আপনার প্রিয় যে দুঃখের সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আপনাকে ছাড়া‚ তা কি জানেন?”
কথাটা বলেই হাসলো নীতি। এটা যদি তার অনুভবকে বলতো‚ তাহলে সে অভিমান করে বলতো‚ “আমাকে ছেড়ে তুমি ওই দুঃখের সাগরের কাছে গেলে কী করে প্রিয়?”
পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে গেলো তার। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর উঠে বাইরে গেলো। কত কাজ তার? এভাবে বিরহে ডুবে থাকলে চলবে তার? আবারো মনে মনে বলে উঠলো‚

“আপনারও বিরহে আমি বিরহীনি‚ অনুভব! এই বিরহে ডুবে আছি আমি! জানেন কি?”

#চলবে

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৯

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৯
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ আয়েশা তোমার মেয়ের পরিবর্তন গুলো কি লক্ষ করছো?

আয়েশা রহমান স্বামীর কথা শুনে কাপড় গুছানো বাদ দিয়ে বলে-
-“ কেমন পরিবর্তন?
-“ এই যে আজ ওর মধ্যে পরিবর্তন দেখলাম। হুটহাট রেগে যাচ্ছে।
-“ নিশ্চয়ই রাগার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে তাই রেগে গেছে।
-“ হতে পারে।
-“ আচ্ছা তুমি অধরার জন্য ছেলে দেখছো না কেনো? আমাদের তো বয়স কম হচ্ছে না।

আশরাফুল তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ তোমার মেয়েকে তো চিনো। বিয়ের কথা বললে কিভাবে রেগে যায়।
-“ এভাবে জীবন চলে না। মেয়েটার কি সাধ-আহ্লাদ নেই মনে? ওর কি ইচ্ছে হয় না দ্বিতীয় বার আবার সব টা নতুন ভাবে শুরু করতে?
-“ থাক বাদ দাও। জোর করে কিছু করতে হবে না। ওর ইচ্ছে হলে ও নিজে থেকেই বলবে।
-“ শাফিন মা-রা গেছে এক বছর হয়ে গেলো। রঙিন শাড়ি তো দূরে থাক রঙিন কোনো পোষাকই তোমার মেয়ে পড়ে নি। সেই একই পোষাক সাদা শাড়ি। মানে সে বিধবা এটা তাকে প্রমান সহকারে মানুষ কে দেখাতে হবে?
-“ আস্তে বলো শুনতে পাবে তো।
-“ শুনতে পাক। তুমি ছেলে দেখবা ওর এবার বিয়েতে রাজি হতেই হবে।

কথাটা বলে আয়েশা রহমান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আশরাফুল রহমান চোখের চশমা টা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

অধরা মাথা চেপে বসে আছে। অযথা রাগ কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। ফ্লোরে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে এখন নিজেকে কয়েকটা চড় দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের রাগ কন্ট্রোল কেনো হচ্ছে না। অধরা ফ্লোর থেকে ফোনটা উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। চুল গুলো কে ঠিক করে বলে-
-“ অধরা কন্ট্রোল ইউর সেলফ। তুমি এমন নও। নিজেকে অন্য রূপে প্রকাশ করা মানায় না। দ্বিতীয় বার আর এমন ভুল করবে না,মাইন্ড ইট।

কথাটা বলে অধরা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

চিত্রা নিজের রুমে শুয়ে রিমি কে নিয়ে। এটা ওটা বলে রিমিকে হাসাচ্ছে। হঠাৎ মুঠোফোন টা বেজে উঠায় ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষারের নম্বর। মুহুর্তে অজান্তে মুখের হাসি চওড়া হলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ অনেক দিন ধরে দেখি না তোমায় প্রেয়সী ভিডিও কল দিচ্ছি রিসিভ করো।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। কল তো দিয়েছে তাহলে ভিডিও কল দিলেই তো হতো।আর অনেক দিন ধরে দেখে না মানে আজ সকালেই তো এক সাথে ফিরলো তারা ঢাকা।
-“ আশ্চর্য কল তো দিয়েছেনই তাহলে একেবারে ভিডিও কলই দিতেন। অডিও কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন কেনো?
-“ অনুমতি নেওয়া ভালো।
-“ ওরে আমার শ্রদ্ধেয় পুরুষ।
-“ শ্রদ্ধেয় সাথে শুদ্ধ পুরুষ ও বটে। কথা কম বলে ফোন দিচ্ছি রিসিভ করো।

কথাটা বলে তুষার ফোন কেটে দিয়ে ভিডিও কল দেয়। চিত্রা কল টা রিসিভ করে ফোনটা মুখের সামনে ধরে। তুষার চিত্রার ফেইস টা দেখে বুকে হাত দিয়ে বলে-
-“ হায় রে দেখো বুকের ধুকপুকানি টা তোমায় দেখা মাত্রই থেমে গেলো।

চিত্রা বিছানায় বসা রিমিকে কোলে নিয়ে বলে-
-“ একদম ফালতু কথা বলবেন না।
-“ আমি মোটেও ফালতু কথা বলি নি। সত্যি বুকটা লাফাচ্ছিল, হৃদপিণ্ডটা হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মে’রে মে’রে বলছিল চিত্রা কে দেখবো। আর আমিও ভালো মানুষ তাই তার কথাটা রাখলাম।

তুষারের কথা শুনে চিত্রা হেসে উঠে। রিমি হাত বাড়িয়ে চিত্রার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়। তুষারের কপালে দু ভাজ পড়ে।
-” এই যে পাকা বুড়ি ফোন নিলে কেনো,তোমার ফুপি কে দেখতে দাও মন প্রাণ ভরে।

চিত্রা রিমির থেকে ফোন টা নিয়ে ফের মুখের সামনে ধরে বলে-
-” দেখা শেষ?হৃদপিণ্ডটা এখন শান্ত হয়েছে?
-“ হ্যাঁ কিছুটা তবে এখনও হালকা লাফাচ্ছে।
-“এখনও লাফাচ্ছে কেনো?
-“ কারন চিত্রা কে তুষার ছুঁতে পারছে না তাই।
-“শুধু ছোঁয়াছুঁয়ির কথা বলেন।
-“বিয়ের পর প্রেম কাব্য ও শোনাবো।
-“ রাখেন ফোন।
-“ না রাখবো না।
-“ কেনো?
-“ ইচ্ছে করছে না তাই।
-“ কখন ইচ্ছে করবে?
-“ জানি না।
-“ তে আপনি কি জানেন।
-“ আপাতত চিত্রা ছাড়া কিছুই বুঝতেছি না।

চিত্রা চুপ রইলো। তুষারকে ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলো লোকটা এই রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে শরীরে একটা ব্লাক টি-শার্ট পড়ে।
-“ আপনি এই রাতে ছাঁদে কেনো?
-“ এমনি হাঁটতে আসছি।
-“ তো শীতের পোষাক কোথায় শরীরে?
-“ শীত নেই।
-“ চর্বি বেশি শরীরে।
-“ নো।
-“ তাহলে শীত কেনো করবে না। আমি রুমের মধ্যে তবুও দেখেন চাদর জড়িয়ে আছি।
-“ কারন তুমি চিত্রা আর আমি তুষার। আমার নামের মাঝেই আছে প্রুফ। আর শোনো একটা কথা।
-“ হু বলুন।
-“ কাল মা যাবে তোমাদের বাসায়।
-“ ফুপি আসবে দারুন হবে।
-“ হ্যাঁ তোমার আর আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
-“ আপনিও আসবেন?
-“ না তবে তুমি চাইলে আসবো।
-“ থাক আসা লাগবে না। বাই।
-“ আচ্ছা শুভ রাত্রি।

চিত্রা ফোন কেটে দেয়। বিয়ে কথাটা ভাবতেই শরীরে কেমন একটা অনুভূতি হলো। রিমিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

———————–

-“ সাহেল আমি চাইছি চিত্রা কে অতি শীগ্রই তুষারের বউ করে নিতে।

তানিয়া বেগমের কথা শুনে রাসেল আহমেদ সাহেল আহমেদ তানিয়ার দিকে তাকায়। রাফি অধৈর্য্য হয়ে বসে আছে কখন তার আর তৃষ্ণার বিয়ের কথা বলবে সেটা শোনার জন্য।
-“ আমাদের কোনো সমস্যা নেই আপা।

সাহেল আহমেদের কথা শুনে স্বস্তি পায় তানিয়া বেগম।
-“ তাহলে সামনের মাসে একটা ডেট ফিক্সড করি?
-“ যেটা ভালো হয় করো।
-“ সামনের মাসের পনেরো তারিখ তাহলে ফিক্সড করি। এর আগে তো ভোটাভুটি হবে। দশ তারিখের আগে ডেট ঠিক না করাই ভালো।পনেরো তারিখ ই ঠিক হবে।
-“ বেশ তবে তাই হোক।

চয়নিকা বেগম মিষ্টির প্লেট এনে তাদের সামনে রাখে। সবাই এক এক করে মিষ্টি নেয়। রাফি একটা মিষ্টি তুলে মুখে নিতে নিতে বলে-
-” ফুপি ব্রোর টা তো বললে এবার আমার টা তো বলো।

তানিয়া বেগম কেবলই মিষ্টি মুখে নিতে যাচ্ছিল। রাফির কথা শুনে মিষ্টি টা আর খাওয়া হলো না। হাতে রেখেই বলে-
-“ আপাতত বিয়ে হচ্ছে না তোর আর তৃষ্ণার।
মুহুর্তে রাফির মুখ চুপসে যায় বেলুনের মতো।
-“ বিয়ে হচ্ছে না মানে?
-“ মানে কয়েক মাস পর হবে। এরমধ্যে তুই প্রতিষ্ঠিত হ ভালো করে। তোর ফুপা এখনই তৃষ্ণা কে দিবে না।
-“ চিতা কে নিতে পারলে তৃষ্ণা কে দিতে পারবে না কেনো? দেখো ফুপি আমার বোন কে তোমার ছেলের জন্য নিতে হলে তোমার ছেলের বোন কেও আমায় দিতে হবে।

রাসেল আহমেদ ছেলের এমন কথা শুনে হা হয়ে যায়। ছেলেকে ঝাড়ি দিয়ে শুধায়-
-“ এই রাফি তোর ফুপি তো ঠিকই বলেছে। কয়েক মাস যাক তারপর না হয়…..
-“ তারপর এরপর কোনোপর ই আমি মানবো না বাবা। ব্রোর বিয়ে হলে আমি ও করবো বিয়ে।

রাফি তার বাবা কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে কথাটা বলে উঠে। রিয়া রাফির কথা শুনে বলে-
-“ ভাইয়া এমন করছেন কেনো? সবাই তো বললো কয়েক মাস পর আপনার আর তৃষ্ণার বিয়ে হবে।
এক সাথে দু বিয়ে হলে তো আমরা মজাই করতে পারবো না। এর থেকে সময় নিয়ে হলে এনজয় করা যাবে অনেক বিয়েতে।
-“ না ভাবি বিয়েতে মজা করা লাগবে না। জাস্ট উকিল আনিয়ে বিয়ে পড়ায় দেন আমার আর তৃষ্ণার।

রাসেল আহমেদ এবার রেগে উঠলেন।
-“ এই তুই এতো বিয়ে পাগল হইছিস ক্যান?
-“ বিয়ের বয়স পাড় করছি বাবা বিয়ে পাগল হবো না? এটা কেমন কথা।
-“ মুখে লাগাম টান অসভ্য ছেলো।
-“ আমি সভ্যই বা ছিলাম কবে। ফুপি দেখো আমি একটা কথা বলছি তুমি ফুপা কে কনভিন্স করবে কিভাবে করবে তা জানি না বাট করবে। আমার তৃষ্ণার বিয়ে টা যেনো তাড়াতাড়ি মানে ব্রো এর বিয়ের কয়েক দিন পরই দিয়ে দেয়।

তানিয়া বেগম আহাম্মক হয়ে গেলো ভাইপোর কথা শুনে। এ ছেলে গুরুজন ও মানছে না।

#চলবে?

গল্পের বাকি অংশ নিয়মিত আপলোড করা হবে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৮

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৮(বোনাস পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ চিত্রা তুমি আমাকে ভাইয়ের নজরে দেখো বলে বিয়ে করতে চাইলে না অথচ তোমার ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করতে ঠিকই রাজি হলে।

চিত্রা গ্রাম থেকে নিজের বাসায় এসে ঘুমিয়েছিল। সন্ধ্যার আগে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য বসার রুমে আসে। চয়নিকা বেগম কে এক কাপ কফি দিতে বলে সোফয় মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। হঠাৎ পাশ থেকে রাতুলের কথ শুনে চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। রাতুল তার দিকে নির্নিমেষ চোখে চেয়ে আছে। চিত্রা ঠিক হয়ে বসলো। খোলা চুল গুলো হাত খোঁপা করে শুধালো –

-“ আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হই নি তার একটা কারন আছে রাতুল ভাই। যেই কারন টা কখনই প্রকাশ্যে আনা সম্ভব না আমার পক্ষে। তবে অস্বীকার করাও সম্ভব নয়, আপনি যথেষ্ট ভালো ছেলে। আমার থেকে বেস্ট কাউকে পাবেন।
-“ আমি তো বেস্ট কাউকে চাই নি চিত্রা। ট্রাস্ট মি আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি।
-“ বাট আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। আমার বিয়ে অলরেডি ঠিক হতে যাচ্ছে। একজন মানুষ আছে যে আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তার সামনে যাইহোক এসব বইলেন না সে কিন্তু ছেড়ে দিবে না।
-“ তার ভালোবাসা টা দেখলে আমার ভালোবাসা টা দেখলে না?
-“ ভুল মানুষের প্রতি ভালোবাসা এনে ফেলছেন। মন থেকে ভুলতে না চাইলে পস্তাবেন খুব।
-“ তোমাকে নিজের করে পাওয়ার কি কোনো পথ আর খোলা নেই?
-“ কখনও পথ ছিলোই না আপনার আমাকে পাওয়ার সেখানে আমায় পাওয়ার পথ খোঁজা মানে বৃথা চেষ্টা করা।
-“ তুমি এতো কঠিন হৃদয়ের কেনো?

চিত্রা মুচকি হাসলো।
-“ আমি ব্যাক্তি ভেদে নিজেকে প্রকাশ করতে পছন্দ করি। আমার হৃদয় কে সবাই স্পর্শ করতে পারে না।
-“ তুষার পেরেছে?
-“ যার হৃদয়ে তুষারপাত ঘটছে সর্বদা, আর সেই হৃদয় তুষার স্পর্শ করতে পারবে না এটা হাস্যকর হয়ে গেলো না?
-“ বিয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।
-“ আপনাকেও।

চয়নিকা বেগম রান্নাঘর থেকে কফির মগ এনে চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা কফির মগ টা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দেখে রিয়া নামছে। কোলে রিমি এমনি অসুস্থ রিয়া তার উপর মেয়েকে কোলে নিয়েছে বিষয় টা ভালো লাগলো না চিত্রার। রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ তোর তো শরীর ভালো না ওকে কোলে নিছিস কেনো? আমার কাছে দে আমি রাখছি।

রিয়া রিমিকে চিত্রার কোলে দিলো। চিত্রা রিমি কে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রিয়া ভাইকে দেখে ভাইয়ের পাশে বসে। রাতুল রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ শরীর টা এখন কেমন আছে?
-“ মোটামুটি ভালোই আছে।
-“ হঠাৎ এমন অসুস্থ হলি যে?
-“ আসলে প্রথম বার গ্রামে গিয়েছি সেখান কার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারি নি তার উপর পানি গুলো যেনো কেমন।
-“ হু বুঝতে পেরেছি। তা ননদের বিয়ে ভাসুরের সাথে ঠিক করলি তাহলে।
-“ তুষার ভাইয়া ভালোবাসে চিত্রা কে সেখানে আমরা রাজি না হয়ে থাকি কিভাবে?
-“ আমার দিকটা ভাবলি না!
-“ জীবন বড় অদ্ভুত ভাইয়া। সবাই কে ভালবাসা উচিত না। সবার কপালে ভালোবাসা জোটে না। তুমি চিত্রার থেকেও পারফেক্ট কাউকে পাবে।

রাতুল কিছু বললো না।চুপচাপ বসা থেকে উঠে চলে গেলো। চয়নিকা বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব টা শুলো। জীবন টা কেমন যে যাকে ভালোবাসে সে তাকে পায় না। তাহলে কেনো যার তার প্রতি মায়া ভালোবাসা চলে আসে?

রাফি ঢাকা এসেই বাবা ভাইয়ের সাথে বিজনেসে হাত দিয়েছে। তামিম খান স্পষ্ট বলেছে বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে না। বিয়ে করলে বউয়ের তেল সাবান শাড়ি গয়না দিতে দিতে নাকি ফকির হয়ে যেতে হয়। আর সেখানে বেকার থাকলে নাকি বউ কপালে ঝাঁটার বারি দিয়ে চলে যায়। রায়ানের সুবিধা হচ্ছে রাফির বিজনেসে হাত দেওয়ায়। কাজের প্রেসার টা একটু কমেছে। কাজের ফাঁকে রায়ান ফোন দিয়ে একবার রিয়ার শরীরের খোঁজ নেয়। রাফি ল্যাপটপ নিয়ে কিছু ডকুমেন্টস চেক করছে। হঠাৎ ফোনে রিংটোন বেজে উঠায় রাফি ফোন টা সাইড থেকে তুলে দেখে অধরার নম্বর। হঠাৎ অধরার ফোন আসায় কপালে দু ভাজ পড়ে রাফির। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফোন টা কেটে যায়। রাফি ফোনটা কেটে যাওয়ায় ফোনটা সাইডে রাখতেই ফের ফোন টা বেজে উঠে।

রাফি ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে আছে-
-“ কেমন আছেন মিস্টার রাফি?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হঠাৎ ফোন দিলেন যে আমায়, কোনো দরকার?
-“ হ্যাঁ দরকার না হলে ফোন দিতাম না।
-“ জ্বি বলুন কি দরকার?
-“ শুনলাম আপনাদের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হতে যাচ্ছে।

রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আপনি কিভাবে জানেন আমাদের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হতে যাচ্ছে?

অধরা হাসলো।
-“ সুখবর বাতাসের বেগের চাইতেও দ্রুত বেগে ছড়িয়ে যায়।
-“ তা আপনি কি যেচে দাওয়াত নেওয়ার জন্য ফোন দিছেন?
-“ না বিষয় টা সেটা নয়। দাওয়াত চাইছি না।
-“ তবে?
-“ বিয়েটা আসলে কার সাথে আপনার?

রাফি বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ আমার বাচ্চার মায়ের সাথে।
-“ বাচ্চার মা টা কে?
-“ আমার নাতির দাদি। এখন রাখি কাজ আছে। বেকার নই আমি। সময়ের মূল্য আছে। আপনার সাথে যতক্ষণ কথা বলছি ততক্ষণে আমার কাজ অনেক দূর এগিয়ে যেত।

রাফি ফোন কেটে দেয়। অধরা হাতে থাকা ফোনটা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। আশরাফুল কিছু ছিটকে পড়ার শব্দ শুনে মেয়ের রুমে এসে দেখে মেয়ের ফোন ফ্লোরে পড়ে আছে কয়েক টুকরো হয়ে।
-“ এভাবে ফোন টা ভাঙলো কি করে?

অধরা আশরাফুল কে দেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
-“ হাত ফস্কে পড়ে গেছে।
-“হাত থেকে পড়ে গেলে এভাবে কয়েক টুকরো হয় না ফোন।
-“ আশ্চর্য বললাম তো হাত ফস্কে পড়ে গেছে। তোমার কি মনে হয় আমি আমার ফোন ইচ্ছে করে ফেলে ভেঙেছি।

অধরার আচমকা রাগ দেখে আশরাফুল বলে-
-“ রেগে যাচ্ছিস কেনো। কোনো সমস্যা হয়েছে?
-“ না আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আশরাফুল চলে গেলেন মেয়ের রুম থেকে। অধরা বিছানার এক প্রান্তে বসে মাথার চুল গুলো চেপে ধরে। রাগ হিংসা দিন কে দিন বেড়ে চলছে। এটাকে কন্ট্রোল করতে হবে।

তুষার নিজের রুমে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। তানিয়া বেগম তুষারের রুমে ঢুকে তুষারের পাশে বসে বলেন-
-“ কাল তোর আর চিত্রার বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে যাবো।

তুষার ফোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়-
-“ আচ্ছা।
-“ তৃষ্ণার বিয়ের কথা এখন ভাবছি না।

তুষার ফোনের থেকে দৃষ্টি সরায়।
-“ কেনো?
-“ কয়েক মাস যাক রাফি কেবল বিজনেসের হাল ধরলো। আরেকটু পাকা পোক্ত হোক। তুই তো জানিস তোর বাবা কেমন। সে বলেছে রাফি এখনও উপযুক্ত নয়।

তুষার বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে-
-“ তোমার ভাইপো মানলে হয়।
-“ না মানার কি আছে?

তুষার রুম থেকে বের হতে হতে বলে-
-“ সেটা তোমার ভাইপো কে জিজ্ঞেস করো সে সুন্দর করে বলে দিবে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৭

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৭
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ এই আপনি সবাই কে বলে দিয়েছেন কেনো আমি রায়ান ভাইকে ভালোবাসতাম?

তুষার ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। চিত্রার কথা শুনে চিত্রার পানে ঘুরে। দু হাত বুকে গুঁজে বলে-
-“ ভুল কিছু তো বলি নি,সত্যি টাই বলেছি।
-“ আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
-“ অস্বস্তি হচ্ছে কেনো?
-“ রায়ান ভাই আর রিয়ার সামনে যেতে।
-“ তোমাকে কে বলেছে তাদের সামনে যেতে।
-“ আশ্চর্য কেউ বলবে কেনো? একই বাড়িতে থাকছি সামনে তো চলে আসবেই।
-“ আচ্ছা বাড়ি পাল্টানোর ব্যাবস্থা করেছি।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো তুষারের কথায়।
-“ বাড়ি পাল্টানোর ব্যবস্থা করেছেন মানে?

তুষার চিত্রার কোমড়ে বা হাত দিয়ে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ হ্যাঁ। এই যে তোমার আমার বিয়ে হবে। আমি তো আর আমার বউকে বিয়ের পর তার বাবার বাসায় রেখে নিজের বাসায় ঠিক থাকতে পারবো না।
-“ ঠিক থাকতে পারবেন না কেনো,বউ তার বাবার বাসায় থাকলে?

তুষার চিত্রা কে ঘুরিয়ে চিত্রার কাঁধে থুতনি রেখে বলে-
-“ কারন আমি বউ পাগল। বউ পাগল ছেলেরা বউ ছেড়ে এক সেকেন্ড ও থাকতে পারে না।

চিত্রা তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। নিরাশ হয়ে বলে-
-“ আপনি কথায় কথায় এতো চেপে ধরেন কেনো?

তুষার চিত্রার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে নেশালো কন্ঠে বলে-
-“আমি তো এখনও কিছু চেপে ধরি নি। সব বিয়ের পরের জন্য তুলে রাখছি।
মুহুর্তে চিত্রার চোখ মুখ শক্ত হলো।
-“ সব সময় নেগেটিভ জিনিস ঘুরে কেনো মাথায়? আমি কি ওসব ঈঙ্গিত দিয়েছি।
-“ কি করবো বলো তুমি এমন ভাবে বলো, না চাইতেও ওসব এসে পড়ে মাথায়।

চিত্রা তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে-
-“ মাথা একদম ফা’টিয়ে ফেলবো,লাগাম নেই কথায়?
তুষার চুল গুলো কে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে
দিতে বলে-
-“ না নেই।
-“আপনি চরম লেভেলের অভদ্র।
-“তোমার সামনে এতো ভদ্র সেজে কি হবে আমার?
-“ আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না। আপনি থাকুন আমি চলে যাচ্ছি।

কথাটা বলে চিত্রা চলে যাবার জন্য ঘুরলে তুষার চিত্রার হাত চেপে ধরে। চিত্রা তুষারের দিকে ঘুরে বলে-
-“ আবার হাত ধরলেন কেনো?
-“ এই হাত ধরার অধিকার কেবল আমারই তাই ধরেছি।
-“ এখনও হয় নি।

তুষার চিত্রার হাত ছেড়ে দিলো। চিত্রা নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তুষার মুখ টাকে গম্ভীর করে বলে-
-“ আমরা কালই ঢাকায় ব্যাক করবো। ঢাকায় গিয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট ফিক্সড করে বিয়ে করবো।
-“ কেনো তর সইছে না বুঝি?
-“ না, বউকে চোখের সামনে দেখছি চাইলেও নিজের মতো করো ছুঁতে পারছি এর চাইতে কষ্ট আর কি হতে পারে পুরুষের জন্য।
-“ ইশ পুরুষ মানুষের আবার কষ্ট ও হয়?
-“ না পুরুষ রা তো মানুষ নয় তাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই,তারা তাদের বউয়ের হৃদয় নিয়ে চলে।
-“ রেগে রেগে কথা বলছেন কেনো?
-“ রেগে রেগে বলি নি কথা।
-“ আমি তো স্পষ্ট আপনার কথায় রাগের আভাস পেলাম।
-“ কারন চিত্রা নামক রমণী দু লাইন এক্সট্রা করে নিজের মতো ভেবে নেয়।

চিত্রা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই আমার চোখের দিকে তাকান তো।
তুষার না তাকিয়ে বলে-
-“ পাগল করার ধান্দা?
-“ চোখের দিকে তাকালে বুঝি মানুষ পাগল হয়?
-“ মানুষ হয় কি না জানি না তবে তোমার চোখের দিকে তাকালে আমার ভুলভাল জিনিস করে ফেলতে ইচ্ছে করে। ভুলভাল মানে কি আই মিন বুঝতে পেরেছো।

চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ছাঁদ থেকে নেমে যেতে যেতে বলে-
-“ এমন লাগামহীন বেলেল্লাপনা পুরুষ কেনো আমার কপালে জুটলো?

তুষার চিত্রার কথা শুনে শব্দ করে হেসে ফেললো।

তৃষ্ণা বসে আছে নিজের রুমে। সামনে সোফায় বসে তৃষ্ণা কে পর্যবেক্ষণ করছে রাফি। বা হাতের তালু দিয়ে মাথার চুল গুলো কে সেট করে বলে-
-“ ঐ তৃষ্ণা এভাবে বসে আছো কেনো?

তৃষ্ণা রাফির দিকে তাকালো। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ এই ভাবে কেউ কখনও মেয়ে চায় তার বাপ মায়ের কাছে?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিভাবে চাইলাম? ব্রো যেভাবে চিতা কে চাইলো আমিও তো সেভাবেই চাইলাম।
-“ আশ্চর্য ভাই যেভাবে চাইবে সেভাবে কি আপনার ও চাইতে হবে? আপনি একটু সুন্দর করে চাইতে পারলেন না? বলতেন যে ফুপি আমি তৃষ্ণা কে অনেক ভালোবাসি। তোমার মেয়েকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তোমার মেয়ে আমার অক্সিজেন সাপ্লাই হিসেবে কাজ করে। অক্সিজেন ছাড়া কি মানুষ বাঁচতে পারে বলো? এভাবে চাইতে হয়।

রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে এসে কোমড়ে দু হাত দিয়ে বলে-
-” এই মেয়ে তুমি আমার অক্সিজেন?
-“ অবশ্যই।
-“ আসো তো তোমায় বেলকনি থেকে ফেলে দেই দেখি আমার অক্সিজেন সাপ্লাই করা বন্ধ হয় নাকি।
-“ উফ আপনি প্র্যাক্টিক্যালি দেখতে চাচ্ছেন কেনো? এটা কথার কথা। সব প্রেমিক প্রেমিকা এমন ডায়লগ দেয়।
-“ আমি তোমার প্রেমিক নই।
-“ প্রেম করলে তো প্রেমিক হতেন। আমরা বরং বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবো।

রাফি হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই বিয়ের পর প্রেম করে টাইম ওয়েস্ট করবো। কোনো প্রেম ট্রেম নেই সোজা হেক্সা মিশন কমপ্লিট করবো।

তৃষ্ণা বুঝলো না রাফি কিসের মিশন কমপ্লিট করার কথা বললো।
-“ কিসের মিশন কমপ্লিট করবেন?
-“ কিসের আবার বাবা হবো দাদা হবো নানা হবো। কত মিশন কমপ্লিট করা বাকি এখনও। তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করতে হবে নাতি নাতনির বিয়ে দেখবো তাদের বাচ্চাদের ও বিয়ে দেখবো।

তৃষ্ণা হা হয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো। মিনিট কয়েক চুপ থেকে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে-
-“ এহ বিয়ের কোনো নামগন্ধ নেই সে আসছে নাতি নাতনির বিয়ে দেখতে।
-“ আরে প্যারা কিসের? তুষার ব্রোর বিয়ে হলে আমার ও হবে।
-“ আপনি সবসময় আমার ভাইকে কপি করেন কেনো?
-“ তোমার ভাইরে কপি না করলে আমার নিজের ফিউচার ক্যামনে গড়বো? সে আমার আইডল।
-“ আমার ভাই আপনার আইডল? রসকষহীন কাঠখোট্টা আমার ভাই আপনার আইডল হাস্যকর!

রাফি তৃষ্ণার মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
-“ তুষার ব্রো রসকষহীন কাঠখোট্টা কে বলছে?এতো কিছু হওয়ার পরও বলছো সে রসকষহীন কাঠখোট্টা? তুমি ব্রো এর রোমান্স দেখলে কি বলতা সে জায়গাবেধ বুঝে না যেখানে সেখানে…..

তৃষ্ণা রাফির মুখ চেপে ধরে বলে-
-“ চুপ থাকেন তো। কিসব বলছেন আমার ভাইয়ের নামে,বোন হই আমি তার।
-“ ব্যাপার টা জোশ তাই না? ব্রো তোমার ভাই হয় আবার ভাসুর ও হয়।

কথাটা বলে রাফি হাসতে থাকে। তৃষ্ণা রাফির হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকায়। এই হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে সে সহস্র বছর কাটিয়ে দিতে পারবে মানুষটার পাশে থেকে। কখনও টু শব্দ ও করবে না।

-“ রায়ান আমার কেমন যেনো লাগছে?

রিয়ার কথা শুনে রায়ান তড়িঘড়ি করে রিয়ার কাছে আসে। মাথায় হাত দিয়ে বলে-
-“ খুব খারাপ লাগছে? ডক্টর ডেকে আনবো?

রিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো আস্তেধীরে।
-“ না ডক্টর ডাকতে হবে না। আমার চিত্রার ব্যাপার টা নিয়ে খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে তোমাকে আমি চিত্রার থেকে কেড়ে নিয়েছি। আমি একটু বুঝতে পারলাম না ও তোমায় এতোদিন ভালোবেসে এসেছে।

রায়ান রিয়ার মাথা বুকে চেপে ধরে বলে-
-“ হুঁশ মন খারাপ করো না।আমি তো নিজেও বুঝতে পারি নি।
-“ আমি কি একটু চিত্রার সাথে কথা বলবো?
-“ না থাক বলার দরকার নেই, হিতে বিপরীত হতে পারে। বিষয় টা হয়তো কাটা গায়ে নুনের ছিটার মতো হয়ে যাবে।

রিয়া আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ রায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

রাসেল আহমেদ স্ত্রীর উপর ভীষণ রেগে আছে। রিক্তা বেগম স্বামীর সামনে দিয়ে বারবার ঘুরঘুর করছে।রাসেল আহমেদ বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“এভাবে আমার সামনে পায়চারি করছো কেনো? সমস্যা কি?

রিক্তা বেগম দাড়িয়ে পড়ে।
-“রেগে আছো আমার উপর?
-“ বিষয় টা কি রাগার মতন নয়?
-“ একটু আমার দিকটা ও ভাবো। আমি তো যেচে চিত্রা কে কষ্ট দেই নি। রায়ান নিজেই তো রিয়াকে পছন্দ করেছে। এমন তো না যে আমি রিয়াকে পছন্দ করে রায়ান কে বিয়ে করতে বলেছি।আমি শুধু স্বার্থপর হয়ে ছেলের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছি।

রাসেল আহমেদ এবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সেই তখন থেকে একই পেঁচাল শুনছে।রুম থেকে বেরিয়ে বসার রুমে যেতেই তুষারের সাথে দেখা হয় রাসেল আহমেদের। তুষার মামার রাগান্বিত চেহারা দেখে মামার পাশে বসেন।
-“ মামা আপনি কি বিষয় টা নিয়ে এখনও মামির উপর রেগে আছেন?
রাসেল আহমেদ চোখ বন্ধ করে রেখে বলেন-
-“ রেগে থাকার মতোই কান্ড করেছে তোমার মামি।
-“ মামির জায়গায় একটু নিজেকে বসিয়ে ভাবুন বিষয় টা মামা। যার যার জায়গায় সে সে ঠিকই আছে। শুধু শুধু বিষয় টা নিয়ে মামির উপর রেগে থাকবেন না।

উপর থেকে চিত্রা দাঁড়িয়ে দেখলো সব টা। লোকটা কি করে যেনো ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে জানে।

তামিম খান আর তানিয়া বেগম দু’জনে রুমে বসে আলোচনা করছেন ছেলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে। কতজন মানুষ ইনভাইট করবে, কিভাবে কি করবে না করবে। তানিয়া বেগম খুশিই হয়েছে তার ছেলে মেয়ে গুলো ঘরের মেয়ে ছেলে কে বিয়ে করবে দেখে। এবার ঢাকা ফিরেই আগে বিয়ের বন্দবস্ত করবে। বয়স হচ্ছে তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখবে।

সজল আহমেদ আর সানজিদা বেগমের রুমে বসে আছে সাহেল আর চয়নিকা বেগম। সজল আহমেদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন-
-“ সাহেল বেশি ভেবো না বাবা। মেয়ে তোমার কাছেই তো থাকছে। তুষার যথেষ্ট দায়িত্বশীল একজন মানুষ। তোমার মেয়েকে সে অনেক সুখে রাখবে।

সাহেল আহমেদ সজল আহমেদের দিকে তাকায়।
-“ না বাবা আমার ভরসা আছে তুষারের উপর। আমরা কাল সকালে বাড়ি ব্যাক করতে চাই। তুমি আর মা ও যাচ্ছো আমাদের সাথে।
-“ সে না হয় যাবো আমরা কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ফিরতে চাইছিস কেনো?
-“ নতুন কনস্ট্রাকশন এর কাজ ধরেছি সেখানে না গেলে চলবে না। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৬

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৬
#Raiha_Zubair_Ripti

সকাল বেলা বাড়ির উঠান থেকে কিছু মানুষের কথপোকথনের আওয়াজ ভেসে আসছে। চিত্রা গায়ে চাদর জড়িয়ে বাড়ির উঠানে আসে। উঠানে আসতেই দেখতে পায় তার রহমত চাচা পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসেছে। রহমত হচ্ছে চিত্রার বাবার চাচাতো ভাই। চিত্রা মাছ গুলোর দিকে এগিয়ে আসলো। বড় বড় সিলভার কার্প আর কৈ মাছ। রাসেল আহমেদ, তামিম খান আর সাহেল আহমেদ গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছে। কিচেনে রান্না করছে রিক্তা বেগম,চয়নিকা বেগম। আর তাদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে তানিয়া বেগম।

সোফায় বসে আছে সানজিদা বেগম আর তৃষ্ণা। তৃষ্ণা ফোন স্ক্রোল করছে। সানজিদা বেগম পানের বাটা থেকে পান বের করে মুখে নেয়। রায়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সানজিদা বেগম এর পাশে বসেন।

-“ দিদা বাবা আর চাচা কোথায় গেছে জানো?

সানজিদা বেগম পান চিবাতে চিবাতে বলে-
-“ হ তর বাপ চাচায় নরেশ গো বাড়ি গেছে। হের মাইয়া আর মাইয়ার জামাই আইছে। সক্কালে বাড়ি আইছিলো নরেশ হেয় নিয়া গেছে।

-“ ওহ দাদা কই?
-“ ঐ যে বাইরে রহমতে মাছ লইয়া আইছে।
-“ বাড়ির পাশের পুকুরের মাছ?
-“ হ তগোর লাইগা নিয়া আইছে।

রায়ান বসা থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। এরমধ্যে হুড়মুড়িয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সিয়াম। সিয়াম সোজা এসে সানজিদা বেগম এর পাশে বসেন।
-“ কেমন আছো বুড়ি?

সানজিদা বেগম সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভালোই আছি তুই কেমন আছোস? মেলা দিন পর আইলি আমাগো বাড়ি।
-” হ আব্বার দোকানে বসতে হয় রোজ আসার সময় পাই না। রাফি কই?
-“ তারা কি এহন উঠবো নি। হেরা বেলা দশ টা না বাজলে উঠে না।

সিয়াম তৃষ্ণার দিকে তাকালো। মেয়েটা এক ধ্যানে ফোন টিপছে।
-“ কেমন আছো তৃষ্ণা?

তৃষ্ণা ফোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরায়। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
তৃষ্ণা ফের মোবাইলে ডুবে যায়। সিয়াম সানজিদা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ দাদি তৃষ্ণা কে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই? মা নিয়ে যাইতে বলছে।
-“ যা লইয়া না করছে কেরা।

সিয়াম তৃষ্ণার দিকে তাকালো।
-“ তৃষ্ণা চলো আমাদের বাড়ি যাই।

তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-“ না না আপনাদের বাসা অনেক দূর হেঁটে যেতে যেতে পা ব্যাথা হয়ে যায়।

সিয়াম মুচকি হেসে বলে-
-“ সমস্যা নেই আজ হাঁটিয়ে নিবো না সাইকেল এনেছি সাথে। সাইকেলে চড়িয়ে নিয়ে যাবো।
-“ তাহলে যাওয়াই যায়।
-“ ওকে তাহলে চলো।

তৃষ্ণা আর সিয়াম বাড়ি থেকে বের হয়ে উঠানে আসতেই চিত্রা তাদের দেখে বলে-

-“ কোথায় যাচ্ছিস তৃষ্ণা?

তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে যায়।
-” সিয়াম ভাইদের বাসায়। চল যাই।
-“ না যাবো না,যাচ্ছিস তাড়াতাড়ি ফিরবি।
-“ আচ্ছা।

সিয়াম তৃষ্ণা কে নিয়ে সাইকেলের কাছে যায়। সিয়াম সাইকেলে উঠে তৃষ্ণা কে উঠতে বলে। তৃষ্ণা সিয়ামের কাঁধের শার্ট ধরে সাইকেলে বসে। রাফি কেবলই হাই তুলতে তুলতে জানালার ধারে এসে পর্দা টা সরাচ্ছিল। বাহিরের দিকে তাকাতেই এমন কিছু দেখে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যায়। সিয়াম এসেছে এ বাড়ি,আবার সাইকেলে চড়িয়েছে তৃষ্ণা কে। আর তৃষ্ণা সিয়াম কে স্পর্শ করেছে। ধপাধপ পা ফেলে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে। বাহিরে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে দেখে ততক্ষণে সিয়াম তৃষ্ণা কে নিয়ে চলে গেছে। রায়ানের একটা ফোন কল আসায় রায়ান রিমি কে চিত্রার কোলে দিয়ে সাইডে চলে যায়। চিত্রা রিমি কে কোলে নিয়ে ভেতরে যেতে নিলে পেছন থেকে রাফি ডেকে উঠে। চিত্রা চোখমুখ বুজে ফেলে। মনে মনে ধরে নিলো হয়তো খেপাবে।

আস্তে ধীরে পেছন দিকে ঘুরে তাকাতেই রাফি চিত্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ তৃষ্ণা কোথায় গেছে?

চিত্রা স্বস্তি পেলো।
-“ ঐ যে সিয়াম ভাইয়া আসছিলো তার সাথে তাদের বাসায় গেছে।
রাফি গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ যাওয়ার পারমিশন কে দিছে?
-“ সেটা তো জানি না।

রাফি চোখমুখে কাঠিন্যে এনে বাড়ির ভেতর চলে যায়। রিক্তা বেগম দূর থেকে রাফি আর চিত্রা কে দেখছিলো। চিত্রা রাফির হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে কপালে দু ভাজ পড়ে। রিমিকে কোলে নিয়ে চলে যায় ভেতরে।

খাবার টেবিলে এক এক করে খাবার সাজাচ্ছে বাড়ির বউ মেয়ে। রিয়ার শরীর টা ভালো না। হঠাৎ করে রাত থেকে জ্বর এসেছে। রিমিকে চিত্রাই সামলাচ্ছে। তুষার সোফার এক প্রান্তে বসে দাদির সাথে কথা বলছে আর আড়চোখে চিত্রা কে দেখে চলছে। চিত্রা ভুলেও তুষারের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। রাফি গম্ভীর মুখ করে বসে আছে সোফায়। আর বারবার দরজার পানে তাকাচ্ছে কখন আসবে তৃষ্ণা আর সে তাকে ইচ্ছে মতো কথা শোনাবে। চয়নিকা বেগম রিমির খাবার টা এনে চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা খাবার টা নিয়ে উঠানে চলে আসে। রিক্তা বেগম রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলে-

-” রাফি চিত্রা তো একা খাওয়াতে পারবে না রিমিকে তার সামনে কেউ টিকটকারের মতো না নাচলে। তুই একটু যা বাপ,রায়ান তো নেই।

রাফি পানির মামপট টা নিয়ে চলে যায়। রিক্তা বেগম দরজার কাছে আসে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে ছেলে আর চিত্রা কিভাবে নাতনি কে খাওয়াচ্ছে। চয়নিকা বেগম শ্বশুর আর শ্বাশুড়ির খাবার টা ঘরে দিয়ে আসে।

রাসেল আহমেদ সাহেল আহমেদ তামিম খান একসঙ্গে বাসায় ঢুকেন। রাসেল সাহেল আর তামিম খান কে দেখে তানিয়া বেগম বলে উঠে খাবার টেবিলে বসতে খাবার খাওয়ার জন্য। তামিম খান বলে উঠে যে তারা খেয়ে এসেছে আপাতত খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তানিয়া বেগম নিচ থেকে রায়ান কে হাক ছেড়ে ডাকে। তুষার রিয়া সবাইকে নিয়ে খেতে বসে। চিত্রা রাফি রিমি কে খাইয়ে রিমি কে সাহেল আহমেদের কাছে দিয়ে তারাও খেতে বসে। চিত্রা মাথা নিচু করে খাচ্ছে কেউ যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। তুষারের ইচ্ছে করলো চিত্রা কে সামনে বসিয়ে চোখ গুলো কে সুপার গ্লু দিয়ে চোখের পাপড়ি গুলো কে আটকে দিতে যেনো চিত্রা আর চোখ বন্ধ ই না করতে পারে। রাফির গলা দিয়ে ভাত নামছে না। সিয়াম কে দিয়ে ভরসা নেই। ছেলেটা যদি সত্যি সত্যি তৃষ্ণা কে প্রপোজ করে বসে তখন। বিষন্ন মন নিয়ে খাবার টা খেয়ে নিলো রাফি।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসলো। রিক্তা বেগম শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি কে রুম থেকে ডেকে আনলো। তিনি কিছু জানাতে চান সবাই কে। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। রিক্তা বেগম চিত্রার পানে একবার তাকিয়ে সাহেল আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ সাহেল ভাই আমি তোমার কাছে আজ কিছু চাইবো আশা করি না করবে না।

সাহেল আহমেদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল।
-“ কি চাইবেন ভাবি? দেওয়ার সাধ্যি থাকলে অবশ্যই না করবো না।

রিক্তা বেগম নৈঃশব্দ্য হাসলো।
– আসলে সাহেল আমি চিত্রা কে আমার রাফির বউ করে নিতে চাই,আজ সবাই আছে তাই ভাবলাম এখনই বলা উচিত। তুমি কি দিবে তোমার মেয়েকে আমার ঘরে?

তৃষ্ণা কেবলই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে আসছিলো। রিক্তা বেগমের কথা শুনে পা আগানোর সাহস আর হয়ে উঠলো না। দাঁড়িয়ে গেলো পাথরের মূর্তির মতো। তুষার আগেই কিছুটা আঁচ পেয়েছিল যখন তিনি বললেন কিছু চাইবেন সাহেল আহমেদের কাছে। রাফি বিরক্তি চাহনি নিয়ে মায়ের পানে তাকায়। আর চিত্রা অবাক দৃষ্টি নিয়ে। চিত্রা এবার তুষারের পানে তাকায়। তুষারের দৃষ্টি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রিক্তা বেগম ফের বলে উঠলেন-

-“ আপত্তি আছে কোনো?
তানিয়া বেগম ভাইয়ের পানে তাকায়। সে নিজেও চিত্রা কে তুষারের জন্য নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন যে বড় ভাবি চেয়ে বসলো। রাফি মায়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার পানে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগান্বিত হয়ে তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে তৃষ্ণার বাহু ধরে বলে-
-“ এই কোথায় গেছিলে?

তৃষ্ণার কেনো যেনো কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখে আসা পানি টুকু মুছে নেয়। গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ গলা টা চেপে ধরেছে। সময় নিয়ে আস্তে করে বলে-
-“ সিয়াম ভাইয়ার বাসায়।
-“ সিয়ামের বাসায় কি তোমার?
-“ কিছু না।
-“ তাহলে গেছো কেনো?
-“ ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়েছি।

কথাটা বলার সময় তৃষ্ণার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ এই কাঁদছো কেনো?
-“ কই কাঁদছি? কাঁদি নি।
-“ তাহলে চোখ থেকে পানি বের হলো কেনো?
-“ আনন্দে।
-“ কিসর আনন্দ মনে?
-“ বাড়িতে বিয়ের সুখবর শোনা যাচ্ছে তাই।
-“ মে’রে একদম তক্তা বানিয়ে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।

বাড়ির সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে। রাফি তৃষ্ণার হাত ধরে সবার সামনে এনে বলে-
-“ দেখো মা তোমার এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে বের করো। চিত্রা কে কেনো চয়েস করছো আমার জন্য? এই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। (তৃষ্ণার দিকে ইশারা করে বলে রাফি)

সজল আহমেদ আর সানজিদা বেগম চুপচাপ নাতি নাতনি আর ছেলে ছেলের বউদের কার্যক্রম দেখছে। রিক্তা বেগম চিত্রার পানে তাকায়। সে তো চেয়েছিল চিত্রা কে যেহেতু রায়ানের বউ করে নিতে পারে নি তাহলে রাফির জন্য নিবে কিন্তু ছেলে দেখি তৃষ্ণা কে নিয়ে এসেছে।

তানিয়া বেগম অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই রাফিকে ভালোবাসিস তৃষ্ণা?

তৃষ্ণা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এভাবে যে রাফি বলে দিবে সে কল্পনাও করতে পারে নি। রাফি তৃষ্ণা কে বলতে না দেখে বলে উঠে-
-“ কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো? ফুপি কি জিজ্ঞেস করছে উত্তর দাও। ভালোবাসো না না আমায়?

তৃষ্ণা জিহবা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ বাসি।

তৃষ্ণার এই একটা কথা,রাফির মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে। রিক্তা বেগম ভাবতে পারছে না এভাবে তার ফেইস লস করবে তার ছেলে। চিত্রা তুষার কে কিছু বলতে না দেখে এবার নিজেই উঠে দাঁড়ালো। রায়ান রিয়া বুঝতে পারছে না কি থেকে কি হচ্ছে। চিত্রা রিক্তা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ চাচি তোমার কি আমাকে সুখে দেখতে ইচ্ছে করে না?
রিক্তা বেগম চিত্রার কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-“ আমি কেনো তোর সুখ দেখতে চাইবো না। আমি সত্যি বুঝতে পারি নি চিত্রা রাফি এভাবে তৃষ্ণা কে এনে দাঁড় করাবে। আমি মন থেকে চেয়েছি আর কথাও দিয়েছিলাম আমার ছেলের বউ করবো তাই…

চিত্রা নিজের কাঁধ থেকে রিক্তা বেগমের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে-
-“ তোমার ছেলের বউ কে হতে চেয়েছে? যখন কথা দিয়েছিলে তখন তো কথা রাখতে পারো নি। এখন কেনো এসব বলছো? দেখো চাচি তুমি ফারদার আমার ব্যাপারে আমার অনুমতি ছাড়া আর একটা কথাও বলবে না। আমার সুখ আমি পেয়ে গেছি। আমার সুখ টাকে অসুখে পরিনত করার জন্য উঠে পড়ে লেগো না। প্রথম বার নিরবে চুপচাপ থেকে সহ্য করছি কিন্তু এবার করবো না।

কথাটা বলে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় চিত্রা। চয়নিকা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কিসের কথা দিয়েছিলেন ভাবি আমার মেয়েকে আপনি?

তুষার এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বলে-
-“ বড় মামি আপনার আমাকে কিছু বলার নেই। জাস্ট একটা কথা বলতে চাই অযথা চিত্রা কে নিয়ে ভাববেন না। চিত্রা কে এই তুষার ভালোবাসে। চিত্রার সুখের জন্য তুষার নিজে একাই এনাফ সেখানে রাফি কে টেনে আনতে হবে না। আপনি একবার চিত্রা কে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন নি, সেই কথাটা না রাখার জন্য চিরকাল আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু দ্বিতীয় বার এমন কিছু করবেন না যাতে চিত্রা সহ কয়েকজন মানুষ হার্ট হয়। আমার বোন স্বীকার করলো সে রাফি কে ভালোবাসে। এই তুই আমার বোন কে ভালোবাসিস?

তুষারের কথা শুনে রাফি সহসা বলে উঠে-
-“ ইয়েস ব্রো আই লাভ হার।
-“ বিয়ে করতে চাস তাকে?
-“ হ্যাঁ।
-“ তোর তো ইনকাম সোর্স নেই খাওয়াবি কি আমার বোন কে? আমি তো কোনো বেকার ছেলের কাছে বোন দিবো না।
-“ আমি বাবার ব্যাবসায় হাত দিবো আর তাছাড়া তুমি যেমন চিত্রা কে লাভ করো আমিও তৃষ্ণা কে লাভ করি। তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে পারলে আমিও তোমার বোন কে বিয়ে করতে পারবো।

দুই ভাইয়ের কথোপকথনের বাড়ির বড়রা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। রাসেল আহমেদ ছেলের পানে তাকিয়ে বলে-
-“ এসব হচ্ছে কি? শুরু হলো রাফি আর চিত্রার বিয়ে নিয়ে সেখানে এখন রাফি তৃষ্ণার সহ চিত্রা তুষারের হচ্ছে। আর রিক্তা তুমি চিত্রা কে কিসের কথা দিয়েছিলে?

তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
-“ বড় মামা আপনার বড় ছেলে রায়ান ভাইকে চিত্রা ভালোবাসতো। ইভেন বড় মামি সেটা আঁচ করতে পেরেছিল আর বলেছিল রায়ান ভাইয়ার সাথে চিত্রার বিয়ে দিবে।

রিয়া আর রায়ান তুষারের কথা শুনে একে ওপরের দিকে তাকায়। রায়ান অবাক হয়ে বলে-
-“ চিত্রা আমাকে ভালোবাসতো! কই আমি তো কখনও চিত্রা কে অন্য চোখে দেখি নি সবসময় বোনের নজরে দেখেছি।

তুষার স্মিত হেঁসে বলে-
-“ তুমি দেখেছো কিন্তু চিত্রা দেখে নি তোমায় ভাইয়ের নজরে। শুনতে খারাপ লাগলেও চিত্রা আজও তোমায় ভুলতে পারে নি। তোমার পাশে রিয়াকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল বলে ছোট মামার সাথে আমেরিকা চলে গেছিলো।

রিয়া তুষারের দিকে তাকায় তুষার রিয়ার তাকানো দেখে বলে-
-“ নিজেকে দোষ দিয়ো না রিয়া। তোমারও দোষ নেই। চিত্রা কেবল একতরফা ভালোবেসেছিল রায়ান ভাইয়াকে।

চয়নিকা বেগম আর সাহেল আহমেদ একে ওপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে। তাদের মেয়ে কাউকে ভালোবেসে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছে আর বাবা মা হিসেবে তারা জানতেই পারলো না। চয়নিকা বেগম সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে উঠে মেয়ের কাছে চলে গেলো। রাসেল আহমেদ স্ত্রীর পানে তাকিয়ে বলে-
-“ রিক্তা তুমি মেয়েটাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলে! তোমার জন্য মেয়েটা কষ্ট পেয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় চলে গেলো।

রিক্তা বেগম স্বামীর পানে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি কোথায় মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছি। রায়ান চিত্রা কে ভালোবাসলে আমি অবশ্যই চিত্রা কে আমার রায়ানের বউ করে নিতাম। কিন্তু রায়ান তো রিয়াকে ভালোবেসেছে, সেখানে আমি কি করতে পারি।

রাসেল আহমেদ বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন উপরে। চিত্রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে ঘুরে দেখে তার মা। চয়নিকা বেগম উচিত মাথায় হাত দিলেন।
-“ একজন কে একতরফা ভালোবেসে এতো কষ্ট পেলি অথচ মা হয়ে আমি জানতে পারলাম না! আমি কি আমার মেয়ের মা হয়ে উঠতে পারি নি তাহলে?

চিত্রা মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল-
-“ জেনে গেছো?
-“ হ্যাঁ। আমি আমার মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারলাম না!

চিত্রা চয়নিকা বেগমের হাত মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলে-
-“ নিজের দোষ দিয়ো না। আমি জানতে দেই নি দেখেই জানতে পারো নি।
-“ তুষার না বললে আজও জানতে পারতাম না।
-“ তা তিনি কি বললেন?
-“ আজও কি রায়ানের জন্য কষ্ট পাস চিত্রা?
-“ সত্যি বলবো মা?
-“ হ্যাঁ।
-“ দেশে আসার পরও কষ্ট পেতাম না বাট খারাপ লাগতো রায়ান ভাই আর রিয়াকে একসঙ্গে দেখলে তবে এখন আর লাগে না। ওরা সুখী সেখানে আমার খারাপ লাগাটা বেমানান।
-“ ভালোবাসিস কাকে এখন?
-“ ভালোবাসি কাকে? আমি এখন আমার বর্তমান কে ভালোবাসি মা। অতীত কেউ যে ভালোবাসি না এটা অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার নেই। প্রথম অনুভূতি যতই ভুলতে চাই না কেনো ভুলা যায় না।
-“ তুষার নাকি তোকে ভালোবাসে।

চিত্রার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
-“ স্বীকার করেছে সবার সামনে?
-“ হ্যাঁ। তোর চাচি তোর সাথে এমন করবে আমি ভাবতে পারি নি।
-“ জাস্ট চাচির দোষ দিলে হবে না সে একজন মা।সে কখনও চাইবে না তার নিজের ছেলের সুখ বিসর্জন দিয়ে আমার সুখ কে প্রাধান্য দিতে।
-“ তবুও সে আশ্বাস দিয়েছিল তোকে।

-“ বাদ দাও মা সে তো আর ভবিষ্যত যেনে রেখেছিল না যে রায়ান ভাই অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলবে। হয়তো চাচির সাথে নিচে একটু বেশিই বাজে ব্যাবহার করে ফেলছি।

-“ সাহেল এখন কি হবে?

তানিয়া বেগমের কথা শুনে সাহেল আহমেদ বোনের পানে তাকায়।
-“ কি হবে?
-“ সবই তো শুনলাম আমরা। তুষার চিত্রা কে আর রাফি তৃষ্ণা কে ভালোবাসে। এখন আমাদের করণীয় কি?

তুষার এগিয়ে এসে সাহেল আহমেদের পাশে বসে। সাহেল আহমেদের দিকে চেয়ে বলে-
-“ মামা আমি চিত্রা কে ভালোবাসি আর চিত্রা কে আমি আমার ওয়াইফ হিসেবে পেতে চাই। আপনাকে বলছি না আপনার কাছে প্রস্তাব রাখছি অনেক আশা নিয়ে আই হোপ আপনি আপনার ভাগ্নে কে ফেরাবেন না।

রাফি এবার তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ ব্রো শুধু নিজের টা ভাবছো কেনো? আমার জন্য ও ভাবো। ফুপি আমিও তোমার মেয়েকে তোমার কাছে চাইছি প্লিজ তুমি তোমার ভাইপো কে ফিরিয়ে দিয়ো না।

সজল আহমেদ ছেলে মেয়ের পানে তাকিয়ে বলে-
-“ বুঝতেছি না তোমরা বিষয় টাকে এতো জটিল কেনো করছো?ওরা তো স্বীকার করলো ওরা ভালোবাসে ওদের তাহলে তোমাদের তো উচিত ছেলেমেয়েদের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেওয়া।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৫

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৫
#Raiha_Zubair_Ripti

দুতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি। তার আশেপাশে রয়েছে একতলা বিশিষ্ট চারটি বাড়ি। বাড়ির সামনে ইয়া বড় একটি উঠান। উঠানে একপাশ ঘেঁষে সারি সারি সুপারি গাছ। উঠানের দক্ষিণ দিক থেকে ভেসে আসছে গরুর ডাক। বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা,রিয়া,তৃষ্ণা। দৃষ্টি সবার দুতলা বিশিষ্ট বাড়ি টির দিকে। বাড়ির গায়ে জ্বলজ্বল করে লেখা আছে আহমেদ ভিলা। আহমেদ ভিলায় এসেছে ঘন্টা দুয়েক হলো। বাড়ির বড় সদস্যরা তাদের রুমে রয়েছে। রাফি রায়ান টায়ার্ড হয়ে শুয়ে আছে রুমে। লাঠি ঠকঠক করতে করতে এগিয়ে আসলেন সজল আহমেদ। এই আহমেদ ভিলার কর্তা। চিত্রা এগিয়ে গেলো সজল আহমেদের দিকে। সজল আহমেদ এর এক হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে-

-“ দাদা ভাই বাড়িটা এমন চুপচাপ কেনো?

সজল আহমেদ নিজের বাড়ির পানে চাইলেন। কয়েক মাস আগেও বাড়িটা মানুষজন দিয়ে ভরপুর ছিলো। আর এখন মানব বিহীন জনশূন্য প্রায়। ভরাকান্ত মন নিয়ে সজল আহমেদ বলে উঠে-
-“ ইকবাল,ইয়াসমিন রা চলে গেছে মাস কয়েক আগে।

ইকবাল ইয়াসমিন সম্পর্কে সজল আহমেদের ছোট ভাই সাজিদ আহমেদের ছেলে আর ছেলের মেয়ে। চিত্রা নির্নিমেষ চোখ চেয়ে রয় দাদার দিকে।
-“ চলে গেছে কেনো?
-“ ইকবালের মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। মেয়েট পড়ালেখার জন্য পাড়ি জমিয়েছে রাজশাহী শহরে।
-“ ওখানে চাচা একা কি আপু কে সামলাতে পারবে? সে তো কাজে চলে যাবে আপু তো একা থাকবে।
-” সেটা ইকবালই ভালো জানে। মা মরা মেয়েটা, না জানি কিভাবে আছে সেখানে।
-“ কথা হয় না তোমার সাথে তাদের?
-“ হয়েছিল দু মাস আগে।
তৃষ্ণা সজল আহমেদের সামনে এসে দাঁড়ায় । কোমড়ে হাত গুঁজে বলে-
-“ এই বুড়ো আমাকে কি চিনো তুমি?

সজল আহমেদ চশমা টা ভালো করে চোখে নিয়ে বলে-
-“ আমার ছোট গিন্নি না এটা।
-“ চিনেছো তাহলে? আসার পর থেকে এই গিন্নিটাকে একটু সময় ও দাও নি। ছেলে মেয়ে নিয়ে পড়েছিলে।
-“ চলো তাহলে আজ তিন গিন্নি নিয়ে ঘুরবো।
রিয়া সজল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ দাদু আপনারা যান। রিমি ঘুমিয়েছে উঠে আমায় না পেলে কাঁদবে। আমি নাহয় পরে যাবো একদিন।

সজল আহমেদ সায় জানালো। তৃষ্ণা আর চিত্রা কে নিয়ে বেড় হলো গ্রামের রাস্তায়। সজল আহমেদের দু পাশে দুজন। তৃষ্ণা ফোন নিয়ে আশেপাশে প্রকৃতির ছবি তুলছে। আর চিত্রা মুগ্ধ হয়ে আশপাশ টা দেখছে। পুরো মাঠ টাকে এক হলুদের রাজ্য মনে হচ্ছে। সরিষা ফুলের সৌন্দর্য অতুলনীয়। সজল আহমেদ তাদের সবজির ক্ষেতে এসে সবজি দেখাচ্ছে নাতনি দের। হরেক রকমের সবজি,ফুলকপি বাঁধাকপি, সিম,টমেটো, মরিচ,লাউ।

-“ দাদা ভাই একটা লাউ নেই?

চিত্রার কথা শুনে সজল আহমেদ বললেন-
-“ শুধু লাউ কেনো যেটা নিতে ইচ্ছে করে নাও।

তৃষ্ণা বাঁধাকপির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তাহলে আমি বাঁধাকপি নেই?

সজল আহমেদ মুচকি হেসে বলে-
-“ নাও।

তৃষ্ণা বাঁধাকপির সাথে সাথে ফুলকপি আর কয়েকটা টমেটো ছিঁড়ে নিলো। আর চিত্রা দুটো লাউ নিয়ে বাড়ি ফিরলো। বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে রিয়া,রিমি আর সানজিদা বেগম । চিত্রা তৃষ্ণা বাহির থেকে হাত পা ধুয়ে রিয়ার পাশে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। সজল আহমেদ এর স্ত্রী সানজিদা বেগম পেয়াজুর প্লেট টি-টেবিলে রেখে চিত্রা আর তৃষ্ণার উদ্দেশ্যে বলে-
-“ দিদিভাই রা নাও খাও এগুলো।

চিত্রা পেঁয়াজু নিয়ে মুখে নিতে নিতে বলে-
-“ দাদি তোমাদের এখন ভয় করে না দুজন মানুষ একা এতো বড় বাড়িতে থাকতে?
-“ ভয় ক্যান করবে?
-“ না এই-যে এতো বড় বাড়ি কেউ নেই দাদাভাই ছাড়া। ভয় হওয়ার কথা তো।
-“ না ভয় করে না। তোমার দাদার লগে আমার বিয়া হওয়ার পর থিকাই তো এই বাড়ি আমি থাকি। কত বছর হইয়া গেছে ভয় করে না।
-“ আমি তো একা জীবনেও থাকতে পারতাম না ভয়ে।
-“ হ্যাঁ রে তৃষ্ণা আমাগো তুষারে আইলো না যে?
-“ ভাই আসবে কাল পরশু। আচ্ছা মা কোথায় দাদি?
-” তর মা হেগোর ঘরে।

তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে চলে গেলো উপরে। চিত্রা রিমি কে কোলে নিলো। বাহিরে তাকিয়ে দেখলো মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। রিয়া উঠে বসার ঘরের সব জানালা গুলো বন্ধ করে দিলো। আহমেদের ভিলার কাজের মেয়ে নিলুফা রান্না ঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে সাজাচ্ছে। চিত্রা রিমিকে নিয়ে বসা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে। রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে তার মা আর চাচি রাঁধছে। চয়নিকা বেগম মেয়েকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে-
-“ কিছু লাগবে?

চিত্রা মাথা নেড়ে না জানালো। রিক্তা বেগম চিত্রা কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ চিত্রা যা তো এই কফি টা রাফি কে গিয়ে দিয়ে আয়।

চিত্রা কফির মগটা নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখে তৃষ্ণা আসছে। চিত্রা কফির মগটা তৃষ্ণার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
-” তৃষ্ণা কফি টা রাফি ভাইয়া কে দিয়ে আয়। আমার কোলে দেখছিস তো রিমি আছে।

তৃষ্ণা কফির মগ টা নিয়ে রাফির ঘরের দিকে আসে। রাফি বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোনে কিছু একটা দেখছে। তৃষ্ণা দরজায় টোকা দেয়। রাফি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তৃষ্ণা কফির মগ হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে।
-“ ভেতরে আসো।

রাফির অনুমতি পেয়ে তৃষ্ণা ভেতরে আসে। কফির মগটা রাফির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে৷ বলে-
-“ এই নিন আপনার কফি।

রাফি কফির মগটা হাতে নিয়ে বলে-
-“ কফিটা কি তুমি বানিয়েছো?
-“ না।
-“ এখন থেকে যখন আমার কফির প্রয়োজন হবে তুমি বানিয়ে দিবে। আচ্ছা তুমি কফি বানাতে পারো?

তৃষ্ণা বিছানার এক প্রান্তে বসতে বসতে বলে-
-“ হ্যাঁ কফি বানাতে পারি।
-“ আর কি পারো?
-“ নুডলস, চপ,ভাত,ডিম ভাজা এসবই।

রাফি কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে-
-“ সমস্যা নেই আস্তে আস্তে শিখে নিবে বাকিসব।

তৃষ্ণা মাথার উপর থাকা ছাঁদ টার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ শ্বাশুড়ি মায়ের থেকে শিখবো বাকিসব।

রাফি আড়চোখ তাকালো তৃষ্ণার পানে।
-“ সব কি প্ল্যান করে রেখেছো?
-“ কিসের প্ল্যান?
-“ এই যে বিয়ের পর আমার মায়ের থেকে রান্না শিখবে।

তৃষ্ণা ঠোঁট চেপে হাসলো। রাফির দিকে ঘুরে বলল-
-“ আপনার মা কি আমার শ্বাশুড়ি?
-“ কেনো শ্বাশুড়ি হলে কি সমস্যা হবে নাকি?
-“ না সমস্যা হবে না কিন্তু তার ছেলে কি সে সুযোগ দিবে আমায়?
-“ চেয়ে দেখো, তোমাকে ফেরানোর সাধ্যি তার নেই।
-“ তাহলে চাইবো বলছেন?
-“ হুম চাও।

তৃষ্ণা চুপ রইলো, কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে উঠলো-
-“ না তৃষ্ণা চাইবে না।

রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কেনো?
-“ জানি না বাট তৃষ্ণা নিজে থেকে কিছু চাইবে না।
-“ তাহলে কি স্বয়ং রাফি তাকে নিজ থেকে চাইবে?
-“ বিষয় টা মন্দ নয়।
-“ ওক্কে,এবার আসতে পারো। কফির মগ টা নিয়ে যাও। আর যাওয়ার আগে দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে যেয়ো।

মুহূর্তে তৃষ্ণার মুখ টা চুপসে গেলো। কোথায় ভাবলো রাফি হয়তো সত্যি চাইবে তা না করে কফির মগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে দিলো। তৃষ্ণা একপ্রকার রাফির হাত থেকে কফির মগটা ঝাড়া দিয়ে নিয়ে রুম থেকে হনু করে বেরিয়ে যায়। যাওয়া আগে দরজা টা শব্দ করে লাগিয়ে দেয়। তৃষ্ণার কর্মকাণ্ড দেখে শব্দ করে হেঁসে ফেলে রাফি।
-“ বোকা মেয়ে ধৈর্য্য জানে না।

রাতের আকাশে থাকা গোল চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে চিত্রা। কিছুক্ষন আগেই রাতের ডিনার সেরে রুমে এসেছে। বড্ড অস্থির লাগছে হৃদয়ে। শান্তিমত ঘুমাতে পারছে না। বাড়িটায় এসে আগের মতো শান্তি পাচ্ছে না। তৃষ্ণা রুমে এসে চিত্রা কে বেলকনিতে দেখে বলে-
-“ কিরে ঘুমাবি না?
চিত্রা আকাশের পানে তাকিয়ে বলে-
-“ ঘুম আসছে না।
-” কেনো?
-“ কেনোর উত্তর জানলে তো ঘুমকেও ধরে নিয়ে আসতাম।
-“ মন খারাপ?
-“ না রে।
-“ আয় বিছানায়, আমি ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়াই।

চিত্রা বেলকনি থেকে রুমে আসলো। তৃষ্ণার পাশে শুয়ে বলল-
-” ঘুম পাড়ানি গান গাইতে হবে না আপাতত আমার মাথাটা টিপে দে খুব ব্যাথা করছে।

তৃষ্ণা চিত্রার মাথা টিপে দেয়। মাথা টিপার মিনিট কয়েকের মাঝে তৃষ্ণা ঘুমে তলিয়ে যায়। চিত্রা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে। ঘুম কিছুতেই আসছে না। মনটা কেনো এত অশান্ত। চিত্রা উঠে বসে,মাথার চুল গুলো খামচে ধরে। হঠাৎ পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠায় চিত্রা ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষার ফোন দিয়েছে। সময় নিলো না চিত্রা ফোন রিসিভ করতে। ওপাশ থেকে তুষারের কন্ঠ ভেসে আসলো। চিত্রার নাম ধরে ডেকেছে। চিত্রা কোনো শব্দ করলো না চুপ রইলো। চিত্রার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তুষার ফের বলে উঠলো-
-“ চিত্রা শুনতে পাচ্ছো?
চিত্রা তবুও কথা বললো না।
-“ কি হলো কথা বলবে না?
চিত্রা এবার জবাব দিলো-“ আমি শুনতে পারছি তো আপনার কথা।
-” কিন্তু আমি তো পারছিলাম না তোমার কথা শুনতে। তা চুপ ছিলে কেনো?
-“ এমনি কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না।
-“ আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না?
-“ না শুধু আপনার ভয়েস শুনতে ইচ্ছে করছিলো।
-“ একটু ছাঁদে আসবে?
-“ এতো রাতে ছাদে এসে কি করবো? আর তাছাড়া এখন রাত,রাতে ভূতপ্রেত ঘুরাঘুরি করে ছাঁদে।
-” সেসব কিচ্ছু নেই ছাঁদে আসো।
-“ না যাবো না।
-“ ভয় পাচ্ছো?
-“ হ্যাঁ কিছুটা।
-” ভয় পেয়ো না আমি ছাঁদে আছি।

চিত্রা কান থেকে ফোনটা নামায়। উনি ছাঁদে মানে? উনি তো ঢাকায়। চিত্রা নম্বর টা ভালো করে দেখে, এটা তুষারের নম্বর। মাথায় আবার হঠাৎ করে উদয় হলো, আচ্ছা ভুতপ্রেত কি নম্বর + ভয়েস নকল করে কাউকে ফোন দেয়? হ্যাঁ দিতেই পারে। চিত্রার নিরবতা দেখে তুষার আবার বলে উঠে –
-“ কি হলো আসবে না?
-“ আপনি কি সত্যি ছাদে?
-“ হ্যাঁ।
-“ আপনি না ঢাকায় ছিলেন অফিসের কাজে।
-“ আরে বাবা ছাঁদে তো আসো।
-“ আসবো?
-“ হুমম আসো।
চিত্রা ফোন কেটে দেয়। ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। পুরো বাড়ি অন্ধকার, তৃষ্ণা ফোনের টর্চ জ্বালায়। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে গলা উঁচু করে বলে-
-“ কোথায় আপনি?
-“ এই তো এখানে।

চিত্রা তুষারের গলার আওয়াজ পেয়ে দিক অনুসরণ করে দেখে ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। চিত্রা এগিয়ে গিয়ে তুষারের পাশে দাঁড়ালো। তুষার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে চিত্রার পানে। চোখাচোখি হলো দুজনের। চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।
-“ ভয় করছে এখনও?

চিত্রা মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
-“ আপনি এসেছেন কখন?
-“ কিছুক্ষণ আগে।
-” আপনি যে আসবেন বললেন না তো?
-“ কেউ একজন বলেছিল অপেক্ষায় থাকবে আমার। অপেক্ষার প্রহর যেনো দীর্ঘ না হয় সেজন্য কাজ শেষ হওয়া মাত্রই চলে আসলাম।
-“ তা হঠাৎ ছাঁদে আসতে বললেন যে?
-“ তোমাকে না দেখে ঠিক ঘুম আসছিলো না। তাই ভাবলাম ডেকে দেখে তারপর নিশ্চিন্তে ঘুম দিবো।
-“ দেখা শেষ?
-“ দেখলাম ই কোথায় যে শেষ হবার কথা বলছো।
চিত্রা ফোনের লাইট টা নিজের চেহারার সামনে ধরে বলে-
-“ এই যে দেখুন, ভালে করে দেখুন,দেখে তারপর ঘুমাতে যান।
তুষার মুচকি হাসলো। -“ একটা অন্যায় করে ফেললে কি রাগ করবে?
-“ কি অন্যায়?
-“ অনুমতি নিবো না তবে বলে নিলাম তোমার ঐ কপালে আমি আমার ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে ছুয়ে দিতে চাই।

চিত্রার কপালে দু ভাজ পড়লে। তুষার এক হাত দিয়ে চিত্রার কোমড় চেপে চিত্রা কে নিজের কাছে এনে শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয়। চিত্রা কেঁপে উঠে,হৃদপিণ্ড টা কেমন জোরে জোরে লাফাচ্ছে। তুষারের নিঃশ্বাস চিত্রার মুখে আছড়ে পড়ছে। চিত্রা চোখ বন্ধ করে ফেললো। তুষার বা হাত দিয়ে চিত্রার মুখের উপর আসা চুল গুলো সযত্নে কানের পেছনে গুঁজে দেয়। হালকা করে নিজের ওষ্ঠদ্বয় চিত্রার কপালে ছুঁইয়ে দেয়।

রাফি কেবলই ছাঁদে এসেছিল হাওয়া খেতে। কিন্তু ছাঁদে এসে এমন দৃশ্য দেখবে কল্পনা ও করতে পারে নি। তুষার ব্রো আর চিতা বাঘ ছাঁদে এসে এমন রোমান্স করবে তা যেনো রাফির চিন্তা ধারার বাহিরে ছিলো। আগেই আচঁ করতে পেরেছিলো রাফি এদের মধ্যে কিছু একটা আছে আজ প্রমান হলো। রাফি দূর কেশে উঠে। রাফির গলার আওয়াজ পেয়ে চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। তড়িৎ গতিতে তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। একবার তুষার তো আরেকবার রাফির দিকে তাকিয়ে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে যায় চিত্রা।

রাফি চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তুষারের দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-“ ব্রো এটা ছাঁদ এখানে এসব কি কেউ করে?

তুষার ভ্রু কুঁচকে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কি করছি?
-” কি করো নি সেটা বলো? আমার বোনের সাথে ছাঁদে এসে রোমান্স করছো!
তুষার বিরক্ত হলো রাফির কথায়। ছাঁদ থেকে নামতে নামতে বলে-
-“ জাস্ট শাট-আপ, রোমান্সের র ও করতে দিস নি। তার আগেই কাবাব মে হাড্ডি হতে চলে এসেছিস রাস্কেল।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৪
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ তুষার ভাইয়া যাবে না গ্রামে?তাকে তো দেখছি না।

চিত্রার করা প্রশ্নে তৃষ্ণা তপ্ত শ্বাস ফেলে। সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে বলে-
-“ সে আসলে তো তাকে দেখবি। ভাইয়া যাবে না আজ। কাল বা পরশু যাবে। অফিসে কিসের যেনো প্রবলেম হয়েছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা চল গাড়িতে গিয়ে বসি।

চিত্রা তৃষ্ণা সোফা থেকে উঠতেই রিয়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। তৃষ্ণা চিত্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ ননদীরা রিমি কে একটু ধরো তো।
চিত্রা রিমি কে কোলে নেয়। রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এখন ও রেডি হোস নি যে?
-“ বাচ্চা রেডি করালাম,বাচ্চার বাবাকে রেডি করালাম,নিজের রেডি হবার জন্য সময় হলো না।রিমি কে একটু রাখ আমি চটপট রেডি হয়ে আসছি।

চিত্রা তৃষ্ণা রিমিকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে। আকাশে আজ সূর্য্যি মামার দেখা নেই। চারিপাশে বইছে ঠান্ডা শীতল বাতাস। তৃষ্ণার শরীরে শীতের বস্ত্র নেই। এই শীতল ঠান্ডা বাতাস তৃষ্ণার শীরের বিঁধছে। সেই সাথে বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। চিত্রা তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ শীতের পোষাক কেনো পড়িস নি? যা ফুপির থেকে জ্যাকেট বা চাদর নিয়ে আয়।
তৃষ্ণা বাড়ির সামনে থাকা গাড়ি গুলোর দিকে তাকায়।যেই গাড়ি গুলো দিয়ে তারা গ্রামে যাবে। গাড়ির সামনেই তৃষ্ণার বাবা,মামারা আর রায়ান, রাফি দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণা রাফির দিকে নজর দিলো। ছেলেটার শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। পুরো শরীর শীতের পোষাক নামের জ্যাকেট, মাফলার, হাত মোজা দিয়ে নিজেকে পুরো প্যাকেট করে নিয়েছে।

তৃষ্ণা বুঝে উঠতে পারে না,এই ছেলের এতো শীত লাগে কিভাবে? যেখানে তৃষ্ণা নিজেই শুধু একটা কুর্তি পড়ে আছে।

-“ তামিম তুষার আসলো না কেনো?
রাসেলল আহমেদের কথায় তামিম খান বলে উঠল-
-“ আসলে ভাইজান অফিসে একটু সমস্যা হয়েছে তুষার সেখানেই আছে। সমস্যা টা সল্ভ করে তারপর আসবে।

রাসেল আহমেদ রাফির দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে-
-“ আমাদের রাফি টাও যদি একটু তুষারের মতো হতো তাহলে আমার আর এই ব্যাবসা নিয়ে চিন্তা পোহাতে হতো না।

তামিম খান মুচকি হাসলেন। রায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ সমস্যা কি ভাইজান রায়ান তো আছে। ফ্যামিলির সবাই যদি পারিবারিক ব্যাবসার হাল ধরে তাহলে বাহিরে সরকার যে এতো কর্মসংস্থান করেছে সেগুলো কাদের জন্য।
রাফি তার ফুপার আস্কারা পেয়ে বলে উঠে-
-“ সেটা কে বোঝাবে এদের ফুপা আপনিই বলেন৷ এসব বিজনেস টিজনেস এ আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,এসব বুঝিও না আমার দ্বারা হবেও না। এর থেকে আমি যেমন আছি তেমন ভাবেই থাকতে চাই।

তামিম খান রাফির কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-“ শোনো ছেলের কথা ছেলে কি বলে। বিয়ের তো বয়স হয়েছে কয়েকদিন পর বিয়ে করবে। তখন বউকে খাওয়াবে কি? বেকার ছেলের কাছে মেয়ে তো কেউ দিতে চাইবে না।

রাফি উদাস হয়ে বলে-
-“ কেনো ফুপা আমাদের তো আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল তাহলে অসুবিধা কোথায় মেয়ে দিতে?
-“ এসব টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি এসব তো তোমার বাবা,চাচা ভাইয়ের করা, তারা শ্রম ব্যায় করে এসব গড়েছে,তোমার চেষ্টায় হয় নি। তোমার ইনকাম সোর্স নেই।
-“ তারমানে এখন কোনো বাবাই তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে না?
-“৮০% দিবে না,যদি আমার মতো তাদের মেন্টালিটি থাকে তবে।
-“ তার মানে আপনার মেয়েকে পেতে হলে জব করা লাগবে তার?
-“ অবশ্যই।
-“ হ্যাঁ রে চিত্রা তোর মা চাচি আর ফুপি কোথায়?
সাহেল আহমেদ মেয়েকে দেখতে পেয়ে দূর থেকে কথাটা জিজ্ঞেস করে।
চিত্রা সদর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মা চাচি ফুপি আর রিয়ারে চলে এসেছে।
-“ ঐ যে আব্বু তারা চলে আসছে।

চয়নিকা বেগম বাড়ির সদর দরজায় তালা মেরে চাবিটা বাড়ির দারোয়ান কে দেয়। রিক্তা বেগমের হাতে থাকা ব্যাগ টা মাটিতে রেখে রাফি কে হাক ছেড়ে ডাক দিয়ে বলে-
-“ রাফি রে ব্যাগ টা নিয়ে যা তো বাপ।

রাফি মায়ের ডাক শুনে মায়ের কাছে এসে ব্যাগ টা গাড়িতে তুলে। মোট তিনটে দুটো গাড়ি। প্রথম গাড়িটায়, চয়নিকা বেগম, তানিয়া বেগম,রিক্তা বেগম,রাসেল আহমেদ, সাহেল আহমেদ তামিম খান উঠে বসে। আর ড্রাইভিং সিটে বসে রায়ান। সেকেন্ড গাড়িতে তৃষ্ণা, চিত্রা, রিয়া, রিমি আর রাফি বসে। ড্রাইভিং সিটে বসেছে রাফি।প্রথম গাড়ির থেকে এই গাড়িটা আকারে ছোট। রাফির পাশে বসেছে তৃষ্ণা। পেছনে চিত্রা আর রিয়া বসেছে।

তৃষ্ণা রাফির পানে তাকায়। আসার পর থেকে লোকটার মুখ এখনও দেখা হয়ে উঠে নি। বিরক্তি নিয়ে তৃষ্ণা ফিসফিস করে বলে-
-“ ভাইয়া মাফলার টা তো খুলুন।

রাফি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আশ্চর্য আমি মাফলার কেনো খুলতে যাবো? দেখছো না কি শীত আর ঠান্ডা বাতাস। আমার নাক মুখ ঠান্ডা বরফের মতো জমে যাবে।

তৃষ্ণা নিজের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন তো একটু….
-“ না তোমার দিকে এখন তাকানো যাবে না গাড়ি চালাচ্ছি পরে না হয় তাকিয়ে থাকবো।

তৃষ্ণা বিরক্ত হলো। কথা শেষ করতে না দিয়ে কথা বলে।
-“ উফ আমি কি ওটা বলছি,বলছি যে এই যে দেখুন আমার শরীরে শীতের পোষাক নেই, বাতাসে তো আমার নাক মুখ ঠান্ডা বরফের মতো জমে যাচ্ছে না।
-“ তুমি আর ব্রো হচ্ছো এলিয়ান। ভুল করে আমাদের বাংলাদেশে এসে আছড়ে পড়েছো।

-“ এই তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো দুজনে?

পেছন থেকে রিয়া ওদের মধ্যে কথোপকথন দেখে কথাটা জিজ্ঞেস করে।কি বলছে পেছন অব্দি আসছে না কথা গুলো। রাফি লুকিং গ্লাসে রিয়াকে একবার দেখে বলে-
-“ তেমন কিছু না ভাবি,আসলে অনেক দিনপর রামে যাচ্ছি তো আমরা দুই ভাইবোন একটু সুখ দুঃখের আলাপ করছিলাম।

তৃষ্ণা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রাফির পানে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ আমরা ভাই বোন?
-“ অবশ্যই আমরা ভাই বোন। তুমি নিজেই আমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডেকে বেড়াও।
-“ আশ্চর্য ভাইয়া ডাকি বলেই কি ভাইয়া লাগেন নাকি।
-“ তাহলে কি লাগি?
-“ জানেন না কি লাগেন?
-“ না জানি না,জানিয়ে দাও তাহলে জেনে যাবো।
-“ আপনি আমার…
রাফি মুচকি হেসে বলে-
-“ হু আমি তোমার।
-“ উফ বলতে দেন।
-“ হ্যাঁ বলো।
-“ আপনি আমার…
-“ এই তৃষ্ণা তোর ফোনটা দে তো।

মুহুর্তে তৃষ্ণার মুখটা চুপসে গেলো। মনে হলো নিজের ফোনটাকে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। রাগ টাকে সংবরণ করে ফোন টা চিত্রার হাতে দেয়। রাফির খুব হাসি পেলো, মুখ টাকে জানালার দিকে ঘুরিয়ে হাসলো। তবে এ হাসিতে তৃপ্তি পেলো না। কারন হো হো করে হাসতে পারলো না সে। চিত্রা তৃষ্ণার ফোন টা নিয়ে হটস্পট অন করে। তার ফোনে ডাটা নেই। এই রকম নিদারুন জার্নিতে ফোনে ডাটা না থাকলে কি চলে? চিত্রা নিজের ফোন টিপতেই রিমি রিয়ার কোল থেকে তার কোলে চলে আসলো। চিত্রার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি দেকবো।

চিত্রা মুচকি হেসে রিমির গালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ আমার মাম্মাম টা কি কার্টুন দেখবে?
রিমি উপর নিচ মাথা নাড়ালো। চিত্রা ইউটিউবে ঢুকে মটু পাতলু বের করে দেয়। রিমি ফোন টা নিয়ে নিজের মতো করে কার্টুন দেখতে থাকে। রিয়া জানালা দিয়ে চারপাশের দৃশ্য দেখছে। এই প্রথম বার সে গ্রামে যাচ্ছে। বিয়ের পরপরই চিত্রা, রাফি বিদেশ চলে যাওয়ায় আর স্বামীর ব্যাস্ততার জন্য আসা হয় নি। এমনি দাদা শ্বশুর আর দাদি শ্বাশুড়ি এসেছিল। রিয়া শুনেছে রায়ানদের গ্রামে নাকি অনেক রিলেটিভ। যাকে বলে যৌথ পরিবার। ব্যাবসার সূত্রে শুধু তারা এই কয়েকজনই ঢাকায় থাকে। তাছাড়া আর সবাই গ্রামে থাকে, গ্রামে বিঘা বিঘা জমি চাষাবাদ করে,কারো গরু মুরগির ফার্ম আছে। এই করে চলে তারা।

চিত্রা রিয়াকে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ এখনই এভাবে তাকিয়ে আছিস গ্রামের ভেতরে যখন যাবি তখন কি কিভাবে তাকাবি জাস্ট সেটাই ভাবছি।
রিয়া স্মিত হেসে বলে-
-“ আমি কখনও গ্রামে যাই নি। আমার নানা দাদা বাড়ি সব আমাদের বাড়ির আশেপাশেই।
-“ এই যে আজ যাচ্ছিস, দেখবি আর শহরে যেতেই ইচ্ছে করবে না। দাদুর বাড়ি মানেই অজানা এক ভালো লাগা৷

———————-

-“ এই ব্যাটা প্লে বয় ভিডিও কল দিচ্ছি ধরছিস না কেনো?

রাফি পানি খাচ্ছিল হঠাৎ মেসেজের টং বেজে উঠতেই ফোন বের করে দেখে সিয়ামের মেসেজ। সিয়াম সম্পর্কে রাফির বাবার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। মেসেজ টা দেখে রাফি কল দেয় সিয়াম কে। রাগী কন্ঠে বলে উঠে-
-“ এই তুই আমাকে কোন সাহসে প্লে বয় বলিস হ্যাঁ? তুই নিজেই একটা প্লেবয় হয়ে আমাকে বলিস প্লেবয়।

ওপাশ থেকে সিয়াম হো হো করে হেঁসে উঠে।
-“ ভিডিও কল টা ধর আশপাশ টা দেখা। আচ্ছা তোর সেই ফুপির মেয়ে তোর বোন টা কি আসছে?

রাফির কপালে দু ভাজ পড়লো।
-“ আমার ফুপি আছে বাট তার কোনো মেয়ে আমার বোন নেই।
-“ এই মিথ্যা বলবি না একদম।
-“ আশ্চর্য মিথ্যা কেনো বলবো। সত্যি আমার ফুপির মেয়ে আমার বোন নাই।
-“ তৃষ্ণা টা কে তাহলে?
-“ ওটা ভাবি লাগে আহাম্মক।
-“ বুঝলি কি করে ওটা তোর ভাবি লাগে।

রাফি একপলক তৃষ্ণার দিকে তাকালো দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ গাধা তোর ভাবি লাগে আমার না।
-“ সরি ব্রো আমার কোনো ভাই নেই,আমি একা। আমার ভাবি হওয়ার কোনো চান্সই নেই।
-“ ব্যাটা আমি তোর কি লাগি? নজর ভালো কর,ভাবি হিসেবে ট্রিট করবি।

সিয়াম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ সর আমি ভাবি হিসেবে ট্রিট করতে পারবো না।
-“ তাহলে আমি বাড়ি থাকা কালীন আমার বাড়ির আশেপাশে ও যেনো তরে না দেখি।
-“ এহ বললেই হলো নাকি। আমি আসবো তৃষ্ণা কে ইমপ্রেস করার চেষ্টা ও করবো। যদি একটু পটে যায়।
রাফির মুখটা মুহুর্তে গম্ভীর হয়ে গেলো।
-“ মা’টির তলে পুঁ’তে রেখে দিবো তরে রাগাস না আমায়।

-“ আচ্ছা রাগালাম না আর কতক্ষণ লাগবে তোদের আসতে?
-“ ঘন্টা খানেক। একটু রেস্তোরাঁয় নামছি সকলে খেতে।
-“ ওহ্ আচ্ছা খা তাহলে পেট ভরে আর তৃষ্ণা কে বলিস তার অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত হয়ে বসে আছে এই সিয়াম।

কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় সিয়াম। রাফির মুড নষ্ট হয়ে গেলো। এখনই ফোন দিয়ে তৃষ্ণা তৃষ্ণা করছে বাড়িতে গেলে না জানি কি করে।

চিত্রা পরোটা আর ডিম খাচ্ছে মুহূর্তে ফোন টা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষারের নম্বর জ্বলজ্বল করছে। আশেপাশে তাকালো মা, চাচি বাবা রা খাচ্ছে। অন্য সময় হলে সবার সামনেই ফোন ধরে বসতো কিন্তু এখন কেমন যেনো আনইজি লাগে। পরোটার মধ্যে ডিম টা ভরে সেটা রোলের মতো করে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে থমথমে গলায় ভেসে আসে-
-“ ফোন রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে?
তৃষ্ণা পরোটা টা মুখে দিতে দিতে বলে-
-“ আমি তো খাচ্ছিলাম।
-“ হ্যাঁ দূরে থেকেও আমার মাথা টাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছো।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আশ্চর্য আমি কখন আপনার মাথা চিবিয়ে চিবিয়ে খেলাম? আমি তো পরোটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছি।
-“ কতদূর তোমরা?
-“ এই তো ঘন্টাখানেক লাগবে যেতে। আপনি আসলেন না যে?

তুষার হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ কেনো মিস করছো নাকি?
-“ না মিস করছি না তবে সবাই আসলো আপনি আসলেন না তাই আর কি।
-“ অফিসে সমস্যা হয়েছে তাই আসা হয় নি তবে চলে আসবো।
-“ অপেক্ষায় থাকবো।
তুষার নৈঃশব্দ্যে হাসলো। প্রাপ্য টা আস্তেধীরে প্রাপ্তি তে পরিনত হচ্ছে।
-“ জলদি আসার চেষ্টা করবো।
-“ অপেক্ষার প্রহর যেনো দীর্ঘ না হয় সেদিক টা খেয়াল রাখবেন।
-“ তুষার রা অপেক্ষা করে অপেক্ষা করায় না ম্যাডাম। সাবধানে যাবে,রাখি।

তুষার ফোন কেটে দেয়। চিত্রা ফোন টা বুকে জড়িয়ে ধরে। জীবনে যেটা পাওনি সেটা নিয়ে আফসোস না করে জীবনে যা পেতে চলছো সেটা সাদরে গ্রহণ করো,দেখবে জীবন তাতেই সুন্দর। চিত্রা ফাস্ট যাকে ভালোবেসেছিল সেটা ছিলো একতরফা। একতরফা ভালোবাসা গুলো নিখুঁত হয়। সেখানে ওপর পক্ষে থাকা মানুষটার প্রতি রাগ অভিমান ক্ষোভ থাকে না। কারন ওপর পক্ষের মানুষ তো জানতেই পারে না কেউ তাকে ভালোবেসেছে আড়ালে। আর দুপক্ষের ভালোবাসায় থাকে অগাধ মায়া,অভিমান, এক্সপেকটেশন, এটেনশন। চিত্রা নামক রমণী দু রকম ভালোবাসার স্বাদ গ্রহণ করলো। প্রথম টা ছিলো অপ্রাপ্তি আর দ্বিতীয় টায় আছে শেষ প্রাপ্তি।

( সেদিন কমেন্টে দেখলাম অনেকে বলছে রাফি কে আমি লুচু ক্যারেক্টার দিয়েছি। আমার প্রশ্ন টা সেখানে, সব গল্পেই যে নায়ক নায়েকা সৎ নিষ্ঠাবান হবে এটা কোথায় লেখা আছে? মানুষ একজনকে দেখলে মুগ্ধ হতেই পারে। রাফি হয়েছিল অধরা কে দেখে। কোনো স্নিগ্ধ চেহারা হঠাৎ করে মুখের সামনে চলে আসলে যে কেউ থমকে যায়। রাফি কোথাও স্বীকার করে নি সে অধরা কে ভালোবাসে বা তার প্রতি তার কোনো উইকনেস আছে,বা আমি কোথাও সেটা শো করি না। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, রায়ান রিয়া আর রায়ানের মাকে যেনো শাস্তি দেই। তো কিসের ভিত্তিতে আমি তাদের শাস্তি দিবো? তারা কি অন্যায় করেছে? রায়ান তো জানেও না চিত্রা তাকে ভালোবাসে আর রিয়াও না। চিত্রা তো কাউকে বলেই নি। রায়ান রিয়ার এতো সময় ও নেই যে তুষারের মতো চিত্রার চোখের ভাষা বুঝে নিবে। কারন রায়ান রিয়া তো তখন প্রেম করতে ব্যাস্ত তাদের কি সময় আছে অন্যের চোখের ভাষা পড়ার? আর রায়ানের মা বলেছিল তাকে তার ছেলের বউ করবে কিন্তু যেখানে রায়ান রিয়াকে পছন্দ করে বসে আছে, এবল দুজন দুজন মানুষ কে ভালোবাসে সেখানে চিত্রার সুখের জন্য কেনো তিন তিনটে জীবন নষ্ট করবে? এর চাইতে কি তিনজনের জীবন নষ্ট না করে একজনের জীবনই নষ্ট হোক,চিত্রাই সাফার করুক। কারন তার ভালোবাসার ভ্যালু ছিলো না। আই থিংক বিষয় টা ক্লিয়ার)

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৩

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৩
#Raiha_Zubair_Ripti

শীতের সকাল,কুয়াশা ভেদ করে সূর্য্যি মামা উঁকি দিচ্ছে আকাশে। চিত্রা রেডি হয়ে বসে আছে সোফায়। আজ তার এডমিশন পরীক্ষা, পাশেই রাফি চিত্রার নার্ভাসনেস দেখে বলে-
-“ এতো টেনশন করো না,সব তো পড়েই নিয়েছো কমন পড়বে,চান্স ও পেয়ে যাবে।

চিত্রা শরীরে জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে-
-” যদি একবার কমন না পরে, খুব ভয় করছে ভাইয়া।
-“ প্যারা নিয়ো না উঠো সময় হচ্ছে তো পরীক্ষার।

চিত্রা হাত ঘড়িটায় সময় দেখে নিলো,সত্যি সময় হয়ে এসেছে। চয়নিকা বেগম মেয়ের কপালে চুমু খেলো।
-“ অল দ্যা বেস্ট, ভালো মতো এক্সাম দিবে,তাড়াহুড়ো করবে না।

চিত্রা চয়নিকা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো। রিয়া রিমি কে কোলে নিয়ে চিত্রার দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-“ সাবধানে যাবি,বুঝেশুনে সব লিখবি।

চিত্রা চয়নিকা বেগম কে ছেড়ে রিয়ার কোল থেকে রিমি কে কোলে নেয়। রিমির গালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ এই যে মাম্মাম দোয়া করো তো তোমার এই ফুপির জন্য। সে যেনো কারো মুখে ঝামা ঘষে চান্স পেয়ে যায়।

রিমি চিত্রাকে নরম দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়। চিত্রা নৈঃশব্দ্যে হেঁসে রিমি কে রিয়ার কোলে দিয়ে রাফির সাথে বেরিয়ে পড়ে। রাফি গাড়িতে উঠতেই রাফির পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। রাফি পকেট থেকে ফোনটা বের করো দেখে তুষার ফোন দিয়েছে। রাফি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তুষার বলে উঠে-
-“ বের হয়ে গিয়েছিস তোরা?

রাফি সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ গাড়িতে উঠলাম কেবল।
-“ তোর পাশে চিত্রা আছে?

রাফি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-
-“ হ্যাঁ আছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা আমি ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি দেখেশুনে আয়।

রাফি তুষারের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কিহ তুমি জাবির সামনে দাঁড়িয়ে আছো ব্রো?
তুষার বিরক্ত হলো রাফির কথায়। সে তো বললোই সে দাঁড়িয়ে আছে তারপর ও কেনো জিজ্ঞেস করছে। তুষার আর কিছু বললো না,ফোন টা কেটে দিলো। তৃষ্ণা ভাইয়ের বিরক্ত মাখা মুখ দেখে বলল-
-“ কিছু হয়েছে নাকি ভাইয়া?

তুষার তৃষ্ণার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ না কিছু হয় নি। কিছু খাবি?
-“ না খাবো না কিছু। চিত্রার আসতে কতক্ষণ লাগবে?
-“ মিনিট বিশেক লাগতে পারে।

চিত্রা রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কে ফোন দিছিলো?
-“ তুষার ব্রো।

চিত্রা জানে ওটা তুষারের ফোন তবুও না জানার ভান করে জমি করেছে।
-“ তা কি বললো?
-“ জাবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-“ অফিস নেই উনার?
-“ সেটা তো জানি না।

চিত্রা চুপ রইলো। গতকাল রাতে ফোন দিয়েছিল তুষার। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে দুজনের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে। তুষার মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছে। বারবার বলে দিয়েছে রাত জেগে না পড়তে। বেশি পড়তেও মানা করেছে। চিত্রার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই সেই গম্ভীর মুখো তুষার। যে কিনা আগে বেশি মানুষের সাথে কথা বলতো না। কথা বললেও মেপে মেপে হা হু বলে সরে যেত। সেই ছেলে টানা তিনদিন এরওর কাছে ফোন দিয়ে তার খোঁজ খবর নিয়েছে।

চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো,পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো জাবির সামনে চলে এসেছে। রাফি ইশারায় চিত্রা কে গাড়ি থেকে নামতে বললো। চিত্রা গাড়ি থেকে নামতেই রাফি গাড়ি টা সাইডে পার্ক করে। জাবির সামনে থাকা ওভার ব্রিজের দিকে চোখ যেতেই চিত্রা দেখে তুষার আর তৃষ্ণা তার দিকে এগিয়ে আসছে।

-“ কিরে প্রিপারেশন কেমন?

তৃষ্ণার কথা শুনে চিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে-
-“ মোটামুটি।

এরমধ্যে রাফি এসে চিত্রার পাশে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা দেখেও না দেখার ভান করে। তুষার চিত্রার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে –
-“ চলো ভেতরে যাওয়া যাক।

রাফি আর তৃষ্ণা আগে আগে হাঁটছে,আর পেছনে তুষার চিত্রা। চিত্রা হাঁটতে হাঁটতে বলে-
-“ শুধু শুধু অতো দূর থেকে কেনো আসলেন।
তুষার সামনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কেনো এসেছি জানো না?নাকি না জানার ভান ধরে আছো।
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো।

রাফি তৃষ্ণার দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে। সেদিনের পর থেকে মেয়েটা তার সাথে একটু ও কথা বলে নি। একটু না হয় হেসে কথাই বলেছিল অধরার সাথে তার জন্য এমন কথা বলা বন্ধ করবে। রাফি মুখটাকে গম্ভীর করে বলে-
-“ এই মেয়ে এতো এটিটিউড কেনো তোমার?

তৃষ্ণা শুনেও না শোনার ভান ধরলো। রাফি আশেপাশে তাকিয়ে তৃষ্ণার হাত নিজের হাতে মুঠোয় নেয়। তৃষ্ণা ছাড়াতে নিলে রাফি রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে-
-“ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ঠাটিয়ে গাল লাল করে দিবো।

তৃষ্ণা চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। রাফি তৃষ্ণার নিরবতা দেখে ফের বলে উঠলো-
-“ সরি তৃষ্ণা।

তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে রাফির দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ সরি ফর হোয়াই?
রাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ সরি কিসের জন্য বলেছি জানো না?
তৃষ্ণার সরাসরি জবাব-“ না জানি না।
-“ অধরা সত্যি আব্বুর বান্ধবী, আমি তাকে আন্টি বলে ডাকবো ট্রাস্ট মি।

তৃষ্ণার হাসি পেলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো-
-“ আশ্চর্য এতো সুন্দর রমণী কে আন্টি কেনো ডাকবেন? সে তো আপনার….
রাফি তৃষ্ণা কে আর বলার সুযোগ না দিয়েই বলে-
-“ সে তো আমার আন্টি।
-“ তাকে এখন থেকে আন্টি ডাকবেন তো?

রাফি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো সে আন্টি ডাকবে। সেদিন চিত্রা দের বাড়িতে রাফি তৃষ্ণা কে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন নাটক করলো যে বেচারা নিজেই ফেঁসে গিয়েছিল। সেদিন খাওয়া শেষে যখন চিত্রা আর তৃষ্ণা সোফায় বসে ছিল রাফি গিয়ে ঠিক অধরার থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে বসেছিল। তৃষ্ণা আড়চোখে দেখেছিল। অধরা ফোনে সময় দেখে রাফির দিকে তাকিয়ে বলেছিল-
-“ মিস্টার রাফি,এখন আমায় যেতে হবে।

রাফি আড়চোখে একবার তৃষ্ণার পানে তাকিয়ে অধরা কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ চলুন তাহলে এগিয়ে দিয়ে আসি।
-” না তার দরকার হবে না,আমি যেতে পারবো।
রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে-
-“ আরে সেটা বললে হয় নাকি? আপনি আমাদের গেস্ট আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসতেই পারি চলুন।

অধরা গম্ভীর মুখে নিজের হ্যান্ড ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে যায়। রাফিও অধরার পেছন যেতে নিলে তৃষ্ণা পেছন থেকে রাফিকে শুনিয়ে বলে-
-“ আজকাল মানুষ যেচে মানবতা দেখাতে যায়।
রাফি শুনলো তবুও না শোনার ভান করে চলে গেলো। তৃষ্ণা রেগে উঠলো। চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ দেখলি মেয়েটা না করলো তবুও রাফি ভাই চলে গেলো।

চিত্রা সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে-
-“ মনে হয় ভাইয়ার পছন্দ হয়েছে ঐ আপু কে।

ব্যাস এই একটা কথাই ছিলো তৃষ্ণার মনে বিষ ঢুকানোর জন্য যথেষ্ট। তৃষ্ণা পাড়ছিলো না সেখানেই চোখের জল গুলো ছেড়ে দিতে। রাফি অধরাকে তাদের মেন গেট অব্দি ছেড়েই বাসায় ব্যাক করে। ততক্ষণে তৃষ্ণা নিজের মায়ের কাছে চলে যায়। রাফি ভেবেছিল তৃষ্ণা হয়তো জেলাস হবে আর তাকে এসে বলবে কেনো সে গেলো। কিন্তু তার কিচ্ছু টি হলো না উল্টো তৃষ্ণা সেদিন সন্ধ্যায় তার বাবা মায়ের সাথে বাসায় চলে যায়। তুষার দুপুরে খেয়েই চলে গিয়েছিল।

এরপর তৃষ্ণা একবারের জন্য ও ফোন দেয় নি রাফি কে। রাফি দিয়েছিল, কিন্তু তৃষ্ণা প্রথমে রিসিভ না করলেও পরে করেছিল। রাফিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তৃষ্ণা বলেছিল-
-“ মামুর বান্ধবী কে গিয়ে ফোন দেন আমাকে দিবেন না ফোন।
এই ছিলো শেষ কথা। সময়ের অভাবে যেতেও পারে নি তৃষ্ণা দের বাসায় রাফি।

-“ হ্যালো মিস্টার রাফি।
রাফি আর তৃষ্ণা হাঁটছিলো হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে অধরা নামের সেই মেয়ে। রাফি এক ঢোক গিলে। পাশে তৃষ্ণার দিকে তাকায়। তৃষ্ণা একবার রাফি তো আরেক বার অধরার দিকে তাকায়। রাফি ভদ্রতার খাতিরে বলে-
-“ হ্যালো। আপনি এখানে যে?

অধরা চোখের সামনে আসা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে-
-“ আমার কাজিন এসেছে এক্সাম দিতে তাই এসেছি। তা আপনার এক বোন কে দেখছি সাথে আরেক বোন যার এক্সাম সে কই?
রাফি পেছনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে-
-“ ঐ যে পেছনে দুই ভাইবোন আসছে। আর আমার সাথে যেটা আছে এটা আমার বোন না। এটা আপনার ফ্রেন্ডের ছেলের বউ।

অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো রাফির দিকে। রাফির পাশে থাকা মেয়েটা তার কোন ফ্রেন্ডের ছেলের বউ?
-“ আমার ফ্রেন্ডের ছেলের বউ মানে?
রাফি মুচকি হেসে, মাথার চুল গুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-” ও আপনি বুঝবেন না আসি ভালো থাকবেন।
কথাটা বলে রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে চলে আসে। তৃষ্ণা সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ আপনি তাকে বুঝিয়ে বললেন না কেনো?
-“ কি বুঝিয়ে বলবো?
-“ এই-যে ফ্রেন্ডের ছেলের বউ কিভাবে সেটা।
-“ তার মাথায় গবর না থেকে বুদ্ধি থাকলে বুঝে নিবে। আমার তাকে বুঝাতে হবে না।

তৃষ্ণা আর কথা বাড়ালো না। অতিরিক্ত রাগ অভিমান দেখানো মানে সম্পর্কে ফাটল ধরানো। যা তৃষ্ণা চায় না। হালকা করে দেখাবে সব।

—————–

-“ এক্সাম কেমন হলো?
হল থেকে বাহিরে আসতেই প্রশ্ন টি ছুঁড়ে দেয় তুষার। চিত্রা ঘাসের উপর বসে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে।
-“ পানি খাবে?
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তুষার স্টল থেকে পানির বোতল এনে চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা ঢকঢক করে পানি টুকু খায়। আশেপাশে তাকিয়ে বলে-
-“ তৃষ্ণা আর ভাইয়া কোথায়?
-“ রাফি তৃষ্ণা কে বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়েছে।
-“ কেনো?
-“ মা ফোন করে বলল তৃষ্ণা কে যেনো পাঠিয়ে দেওয়া হয়,তাি রাফিকে বললাম পৌঁছে দিতে।
-“ ওহ চলুন তাহলে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিন।
-“ খুব কি টায়ার্ড লাগছে?
-“ হ্যাঁ প্রচুর। এখানে একটা বিছানা থাকলে ট্রাস্ট মি এখানেই আমি শুয়ে পড়তাম।
-“ আচ্ছা চলো তাহলে বাসায় পৌঁছে দেই।
চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুষার চিত্রার হাত ধরে গাড়ির দিকে যায়। গাড়িতে চিত্রা কে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ে। তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-
-“ চিত্রা একটা কথা বলতে চাই।
চিত্রা সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে-
-“ বলুন।
-“ আর কত ওয়েট করাবে? শীতের মধ্যে বিয়ে টা করতে চাচ্ছি।

চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। সোজা হয়ে বসে বলে-
-“ মানে?
-“ মানে হচ্ছে এই যে আমি চাইছি এই শীতেই তোমাকে আমার বউ করে নিতে।
-“ এই শীতেই কেনো?
-“ সিঙ্গেল ছেলেদের শীতে বউ ছাড়া থাকতে কতটা কষ্ট হয় তুমি কি জানো?
চিত্রা আড়চোখে তাকালো তুষারের পানে। তুষার মুখ টাকে বাচ্চাদের মত করে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে রেখেছে।

-“ আপনি দিন কে দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন। কোথায় কি বলতে হয় জানেন না?
-“ আমি কি লাগামহীন কোনো কথা বলেছি?
-“ শীতের মধ্যে বউ ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় মানে কি?
-“ মানে টা তো তুমিও বুঝো তবুও আমার মুখে শুনতে চাইছো?
-“ চুপচাপ গাড়ি চালান।
-“ গাড়িতো চালাচ্ছি,এবার গ্রাম থেকে ফিরে ট্রাস্ট মি মামুর কাছে আমি তোমাকে চেয়ে বসবো। আমি জানি মামু আমাকে ফেরাবে না।
-” সবজান্তা আপনি?
-” না তবে কনফিডেন্স আছে নিজেকে নিয়ে।
-“ ওভার কনফিডেন্স কিন্তু ভালো নয়।

তুষার কিছু বললো না। মুচকি হেসে গাড়ি চালাতে লাগলো। মিনিট কয়েকের মধ্যে বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় তুষার। চিত্রা গাড়ি থেকে নামার আগে বলে-
-“ যাবেন না ভেতরে?
তুষার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ না।
-“ মেয়েরা দ্বিতীয় বার যখন কাউকে ভালোবাসার চেষ্টা করে তখন ওপর পাশে থাকা মানুষটা কে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে তারপর ভালোবাসে। যেনো প্রথমবারের মতো ভুল আবার না করে বসে৷
-“ তা আমাকে যাচাই-বাছাই করে কি দেখলে?

চিত্রা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে-
-“ জীবনসঙ্গী হিসেবে মন্দ নন।
-“ ভেবে বলছো তো?
-“ চিত্রা না ভেবে কিছু বলে না।
-“ তারমানে আপত্তি নেই আর।
-“ হয়তো।
-“ হয়তো কেনো? ডাউট আছে এখনো?
-“ না।
-“ তাহলে?
-“ কিছু না, সাবধানে বাসায় যাবেন আল্লাহ হাফেজ। কাল দেখা হচ্ছে। চিত্রা বাড়ির ভেতর যায়। তুষার চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১২

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১২
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ শোনো আজ দুপুরে বাসায় গেস্ট আসবে,ভালোমন্দ রান্না করো।

রিয়া রিমিকে জামা পড়িয়ে দিচ্ছিল। রায়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কে আসবে বাসায়?

রায়ান বিছানায় বসতে বসতে বলে-
-“ ঐ তো সাভারে যে জমির জন্য ফ্যাক্টরির কাজ বন্ধ ছিলো ঐ জমির মালিক।
-“ ওহ্ আজ তো ফুপিদের ও আসার কথা। ফুপা এসেছে সে জন্য চাচা ওদের ও ইনভাইট করেছে।

রায়ান অবাক হয়ে বলে-
-“ ফুপা এসেছে সিলেট থেকে?
-“ হ্যাঁ কাল এসেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা রিমি কে দিয়ে যাও দুপুর হতো হলো বলে তাড়াতাড়ি চাচি কে নিয়ে রান্না বান্না সেরে ফেলো।

রিয়া হু জানিয়ে রিমি কে রায়ানের কোলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বসার রুমে এসে চয়নিকা বেগম কে দেখে বলে-
-“ চাচি কি কি রান্না করতে হবে বলে দিন, রান্না বসিয়ে দেই বেলা হচ্ছে তো।

চয়নিকা বেগম চিত্রার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিল। রিয়ার কথা শুনে বলে-
-“ তুমি রান্না ঘরে যাও আমি সব কেটে ধুয়ে রেখেছি,তুমি গরুর মাংস টা বসিয়ে দাও আমি আসছি।

রিয়া চয়নিকা বেগমের কথা শুনে রান্না ঘরে চলে যায়। চুলার সাইডে এক এক করে সব কেটে ধুয়ে রাখা আছে। রিয়া চুলাতে কড়াই বসিয়ে গরুর মাংস টা বসিয়ে দেয়।

চয়নিকা বেগম চিত্রার চুল গুলো হাত খোঁপা করে বলে-
-“ যাও এখন গোসল টা করে ফেলো। একটু পর তোমার ফুপা,ফুপি চলে আসবে।

চিত্রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ফোন টা সোফা থেকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমে এসে আলমারি খুলে ব্লাক কালারের একটা থ্রিপিস নিয়ে গোসল খানায় চলে যায়। গোসল করে টাওয়াল দিয়ে চুল ভালো করে মুছে হাত পায়ে ময়েশ্চারাইজার দেয়।

বিছানায় শুয়ে ফোন টা নিয়ে স্ক্রোল করতে থাকে। এর মধ্যে হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই সেদিকে তাকায় চিত্রা। রায়ান এসেছে রিমি কে কোলে নিয়ে। চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসে। রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কিছু বলবে?

রায়ান দরজার বাহিরে থেকেই বলে-
-“ হ্যাঁ আসলে একটু রিমি কে নিতে পারবা? আমার একটু বাহিরে যেতে হবে।

চিত্রা বিছানা থেকে নেমে রায়ানের কোল থেকে রিমি কে নেয়। রায়ান এক সেকেন্ড ও দেড়ি না করে চলে যায়। চিত্রা রিমি কে খাটে বসায়। নিজে ফ্লোরে বসে দু হাত গালে দিয়ে বলে-
-“ রিমি বুড়ি এতো কিউট কেনো তুমি?

রিমি চিত্রার কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। চিত্রা রিমির গালে চুমু দিয়ে বলে-
-“ পাক্কা বুড়ি একটা,একটু নিজেক নিয়ে প্রশংসা করলে হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।

রিমিকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো চিত্রা। বেলকনি থেকে বাড়ির সামনে টার সব দেখা যায়। রিমি কে কোলে রেখেই কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো দুজন। ছবি গুলোর মধ্যে থাকা দুটো সুন্দর ছবি ফেসবুকের ডে তে দিলো।

তুষার রুমে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিল। হঠাৎ ফেসবুক রিফ্রেশ করে উপরে আসতেই চিত্রার ফেসবুক স্টোরির দিকে চোখ গেলো। স্টোরির ভেতর ঢুকলো,চিত্রা আর রিমির ছবি। তুষারের হাসি পেলো পিক দেখে। চিত্রা রিমির দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে,আর একটায় গাল চেপে চুমু দিয়েছে। তুষার নিজের এক্সপ্রেশন প্রকাশ করলো চিত্রার স্টোরিতে তিনটে হাহা রিয়াক্ট দিয়ে।

সচারাচর প্রত্যেক মেয়েই ফেসবুক স্টোরিতে কোনো কিছু পোস্ট করলে মিনিটে মিনিটে চেক করে, কয়জন দেখেছে আর কে কি রিয়াক্ট দিয়েছে। চিত্রাও একটু পর স্টোরি করতে গিয়ে দেখে লাভ,কেয়ার,হাহা এই তিনটে রিয়াক্ট ছবির উপর ভাসছে। ভিউসের মধ্যে ক্লিক করে দেখে সর্ব প্রথম তুষারের আইডির নাম জ্বল জ্বল করছে আর পাশে নামের পাশে তিনটে হাহা রিয়াক্ট। হাহা দেওয়ার মানে বুঝলো না চিত্রা। বাজে লেগেছে নাকি চিত্রাকে? চিত্রা ভেবে নিলো হয়তো বাজেই লাগছে তাই স্টোরি ট ডিলেট করে দিলো।
ফোনটা চার্জে লাগিয়ে নিচে চলে আসলো রিমি কে নিয়ে।

তৃষ্ণা আজ পার্পল কালারের কুর্তি পড়েছে। মুখে হালকা মেক-আপ, চুল গুলো খোলা। কিউটনেস টা খানিক বেড়ে গেছে। আয়নায় তাকিয়ে একবার দেখে নিলো সাজে কোনো ত্রুটি আছে নাকি। না নেই। ওড়না টা গলায় ঝুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ষোড়শীর মেয়েরা যখন কাউকে ভালোবাসে তখন প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে খুব এক্সপেন্সিভ, আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। যাতে ওপর পাশে থাকা মানুষটার এটেনশন কেবল তার দিকেই থাকে। তৃষ্ণার ও নিজেকে পদে পদে তেমন আকর্ষণীয় করে তুলছে।
তানিয়া বেগম আর তার স্বামী তামিম খান বসে আছে। তৃষ্ণা গিয়ে তাদের মাঝখানে বসে পড়ে। তামিম খানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ দেখো তো আব্বু কেমন লাগছে তোমার আনা ড্রস টায়?
তামিম খান মেয়ের দিকে তাকালো। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল-
-“ মাশা-আল্লাহ আমার প্রিন্সেস টাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

তৃষ্ণা হাসলো ফের মায়ের দিকে ঘুরে বলল-
-” মা বলো তো আমাকে কেমন লাগছে।

তানিয়া বেগম সিঁড়ির দিকে তাকালো দেখলো তুষার নামছে। পড়নে ব্লাক শার্ট। এই ছেলে এতো ব্লাক পড়তে পারে, মানে সাদা, ব্লাক ছাড়া আর কোনো কালার মনে হয় আছে সেটা তার ডিকশিনারিরতে নাই। মেয়েকে রাগানোর জন্য তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ মাশা-আল্লাহ আমার বাপ জানকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

তৃষ্ণার মুখ চুপসে গেলো। বিরস মুখে বলল-
-“ জানি ভাই অসম্ভব সুন্দর, আমি তো ভাইয়ের প্রশংসা করতে বলি নাই। আমার টা করতে বলছি।

তানিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকালো।
-“ ওহ্ তুই আমায় বলছিলি তোর প্রশংসা করতে? আমি ভাবছি তোর আব্বুকে বলছি। না খারাপ লাগছে না দেখতে তোকে। মোটামুটি ভালোই লাগছে।

তৃষ্ণা বাবার পানে চাইলো। তামিম খান মেয়েকে চোখের ইশারায় বলল- মোটামুটি না অনেক সুন্দর লাগছে।

তুষার এসে মা বাবা বোনের সামনে দাঁড়াতেই তানিয়া বেগম বলে উঠল-
-“ তোর কি ব্লাক কালারের শার্ট ছাড়া আর কোনো শার্ট নেই?
তুষার শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে-
-“ থাকবে না কেনো আছে তো হোয়াইট কালারের।
-“ সেটা আমিও জানি। সাদা, কালো ছাড়া কি আর নেই?
-“ উফ তুমি আবার আমার শার্ট নিয়ে পড়লে কেনো।দেরি হচ্ছে চলো।

তুষার চলে গেলো। তানিয়া বেগম স্বামীর পানে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে সে ও বেরিয়ে গেলো। তামিম খান মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চেলে গেলো।

রায়ান বাড়ি থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা আর তার ফ্যামিলি আসছে। বাসা চিনে না তাই এখান টা এসে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ একটা ব্লাক কালারের গাড়ি সামনে এসে দাঁড়াতেই রায়ান বুঝলো এটাই অধরার গাড়ি। গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলো। অধরা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো। রায়ান গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে দেখে গাড়িতে অধরা ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। অধরা ইশারায় রায়ান কে গাড়িতে উঠে বসতে বললো।

রায়ান অধরার পাশে থাকা সিটে বসে পড়লো।
-“ আপনার বাবা মা আলেন না যে?
-“ তারা এসব দাওয়াতে আসা খুব একটা পছন্দ করে না।
রায়ান ওহ বলে বাসা টা কোন দিকে সেটা বলে দিলো। অধরা রায়ানের ডিরেকশন অনুযায়ী গাড়ি চালিয়ে বাসার সামনে আসলো। অধরা গাড়ি থেকে নামলো। দু তলার একটা ডুপ্লেক্স। আকাশী রং এর। রায়ান অধরাকে বাসার ভেতর ঢুকতে বললো। অধরা আর রায়ান বাসার ভেতর ঢুকলো। মেন গেট পেড়িয়ে ভেতরে আসতেই দেখলো চারপাশে হরেক রকমের ফুলের গাছ।

– এতো ফুল প্রিয় কে আপনাদের বাসার?
অধরার ফুল গাছ গুলোর দিকে তাকালো।রায়ান অধরার তাকানো দেখে বললো-
-” এই ফুল গাছ গুলোর অংশীদার অনেক,শুধু একজনের নাম নেওয়া যাবে না।

অধরা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ অংশীদার অনেক মানে?
-“ এই ফুল গাছের বাগনের মালিক হচ্ছে আমার ভাই বোন গুলো।
-“ আপনার ভাই তো রাফি,আপনার বোন ও আছে নাকি?
-“ হ্যাঁ, রাফি আর আমার চাচাতো বোন চিত্রা আর ফুপির মেয়ে তৃষ্ণা। ওদের শখের বাগান এটা।
-“ ওহ্ আচ্ছা।

রায়ান অধরা কে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে বসার ঘরে ঢুকে। সোফায় বসে ছিলো চিত্রা। হঠাৎ অচেনা একটা মেয়েকে রায়ানের সাথে দেখে কিছুটা বিস্ময় হয়। রায়া অধরাকে নিয়ে চিত্রার সামনে এনে বলে-

-“ এটা হচ্ছে আমার বোন চিত্রা।

চিত্রা রিমিকে কোলে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা মুচকি হেসে বলল-
-“ হাই।
চিত্রা ও ভদ্রতার খাতিরে হাই বললো। রায়ান অধরাকে সোফায় বসতে বলে উপরে চলে যায়। অধরা আশেপাশে তাকিয়ে সোফায় বসলো।
-“ তুমি কিসে পড়াশোনা করো?
চিত্রা দাঁড়িয়ে থেকেই বললো-
-“ জ্বি এবার এডমিশন দিবো।
অধরা চিত্রার কোলে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে বললো-
-“ বাচ্চা টা কার?
-“ যার সাথে আসলেন তার মানে রায়ান ভাইয়ার মেয়ে রিমি।

রাফি শুয়ে ছিলো। হঠাৎ দরজায় টোকা পাওয়ার শব্দ শুনে শুয়া থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে রায়ান।
-“ কিছু বলবা?

রায়ান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ এখনও রুমে কি করছিস বাহিরে যা অধরা এসেছে।

রাফি বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ তাতে আমার কি?
-“ তোর কি মানে? মেয়েটাকে একটু সময় দে। চিত্রাও আছে ওখানে। বাবা আসছে।
-“ চিত্রা তো আছেই তাহলে আমার ক…
-“ চিত্রা তো তেমন চিনে না অধরা কে তুই যা।

রাফি তপ্ত শ্বাস ফেলে নিচে নেমে আসলো। অধরা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফি আসছে। রাফি অধরার পানে চাইলো। অধরার সেই একই ড্রেসআপ, সাদা শাড়ি চুল গুলো হাত খোপা। রাফি এসে চিত্রার পাশে বসলো। রান্ন ঘর থেকে রিয়া আর চয়নিকা বেগম ও বেড়িয়ে আসলো। খাবার টেবিলে এক এক করে সব খাবার সার্ভ করলো। রাফি অধরার সাথে কোনো কথা বললো না। রিয়া আর চয়নিকা বেগমের সাথে হালকা পাতলা পরিচয় হয়ে গেলো।

এরমধ্যে সদর দরজা দিয়ে রাসেল আহমেদ আর সাহেল আহমেদ বসার রুমে ঢুকে। রাসেল আহমেদ অধরা কে দেখে কিছুটা খুশি হয়। অধরার দিকে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। সাহেল আহমেদ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আপারা এখনও আসে নি?

চয়নিকা বেগম মাথা নাড়িয়ে না জানায়। সাহেল আহমেদ আর রাসেল আহমেদ উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। চিত্রা রিমিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে রইলো রাফি আর অধরা। রাফি এক ধ্যানে ফোন স্ক্রোল করতে থাকে। এরমধ্যে কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে তার ফুপি ফুপা আসছে। তার পেছনেই আছে তুষার আর তৃষ্ণা। চোখ থমকে যায় রাফির। অধরা রাফির দৃষ্টি অনুসরণ করে। রাফির চোখ মুখে রয়েছে মুগ্ধতা। দুজন মধ্যবয়সী আর দুজন ইয়াং। তৃষ্ণা বাড়ির ভেতর ঢুকেছিল যতোটা হাসি খুশি নিয়ে এখন আর ততটা হাসি নেই মুখে। তানিয়া বেগম আর তামিম খান সোফায় বসতে বসতে বলে-
-“ বাড়ির লোকজন কই?
রাফি তৃষ্ণার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে-
-“ সবাই উপরে দাঁড়াও এখনই ডাকছি।
কথাটা বলে রাফি সবাই কে ডাক দেয়। তৃষ্ণা গিয়ে মায়ের পাশে বসে। তুষার আলাদা একটা সোফায় বসে। তানিয়া বেগম অধরার দিকে তাকিয়ে রাফিকে বলে-
-“ মাইয়া টা কে রে রাফি? চিনতেছি না। তর বান্ধবী নাকি?

রাফি অধরার দিকে একবার তাকি বলে-
-“না ফুপি,আব্বুর বান্ধবী আমার না।

অধরা আড়চোখে তাকালো রাফির দিকে। তুষারের দৃষ্টি এদিক ওদিক। চিত্রা কে কেনো দেখছে না। মেয়েটা কই। রাসেল আহমেদ, সাহেল আহমেদ, চয়নিকা বেগম, রিয়া, রায়ান নিচে নেমে আসলো। রাসেল আহমেদ আর সাহেল আহমেদ বোন আর বোনের স্বামীর সাথে কুশলাদি করে। রায়ান তুষারের পাশে বলে-
-“ হেই তুষার কেমন আছিস?

তুষার নড়েচড়ে বসে বলে-
-“ এইতো আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালো। তুমি?
-“ আমিও আছি ভালো। তা বিয়ে করছিস কবে?
-“ এই শীতেই।
-“ সত্যি?
-“ তুষার মিথ্যা বলে না জানো তো।
-“ তা অবশ্য ঠিকই। ফুপি মেয়ে দেখেছে?
-“ না মেয়ে তোমার ফুপি কেনো দেখবে? আমি দেখেছি।

রায়ান সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ তুই দেখছিস মানে! পছন্দ আছে?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই।
চয়নিকা বেগম সবাই কে খাবার টেবিলে বসতে বললো। তুষার, রাফি,তৃষ্ণা এখন খাবে না বলে দিয়েছে। তাদের রেখেই বাকি সবাই খেতে বসেছে। অধরার আনইজি লাগছে। এতো মানুষ। তুষার রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাড়িতে আরেক জন কে দেখছি না কেনো?
তুষার ভ্রুকুটি করে বলে-
-“ কে?
-“ চিত্রা।
-“ হয়তো ওর রুমে আছে।

তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাফি তৃষ্ণার দিকে চেয়ে বলল-
-“ কোথায় যাচ্ছো?
-“ চিত্রার কাছে।

তৃষ্ণা চলে গেলো। রাফি তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চলো ব্রো আমার রুমে যাই। তুষার আর রাফি উপরে চলে গেলো।চিত্রা রুমে বসে আছে রিমিকে নিয়ে।হঠাৎ রুমে তৃষ্ণা কে আসতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-“ কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি,এতোক্ষণ লাগে আসতে?
-“ তুই নিচে যাস নি কেনো?
-“ এমনি।
-“ তোদের বাসায় নতুন ঐ মেয়েটা কে রে?
-“ আমি ঠিক চিনি না। বিজনেস রিলেটেড হয়তো।
-“ ওহ্।

-“ চিত্রা রিমি কে দে খাইয়ে দেই।
কথাটা বলতে বলতে রুমে ঢুকে রিয়া। চিত্রা বিছানায় বসে খেলতে থাকা রিমি কে রিয়ার কোলে দেয়।
-“ তোমরা নিচে যাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

কথাটা বলে রিমি কে নিয়ে চলে যায়। চিত্রার ক্ষিদে পেয়েছে খুব। তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চল খেয়ে আসি ক্ষিদে লেগেছে খুব।

তৃষ্ণা চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই যা আমি আসছি।

চিত্রা কোনো কথা ব্যায় না করে রুম থেকে চলে আসে। সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখে তুষার আর রাফি বের হচ্ছে। রাফি চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি একা যে চিত্রা কোথায়?
-“ আমার রুমে ডেকে নিয়ে এসো তো।

রাফি চিত্রার ঘরের দিকে যায়। তুষার চিত্রার দিকে মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” এভাবে তাকাবেন না একদম।

তুষার ঠোঁট কামড়ে হাসে। চিত্রার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে-
-“ কেনো তাকানো বারন নাকি?
-“ হ্যাঁ আপনার জন্য বারন।
-“ কেনো?
-“ আমি কি আপনার দিকে এমন দৃষ্টি দিয়ে তাকাই? তাকাই না তো তাহলে আপনি কেনো তাকাবেন?

তুষার বিরস গলায় বলে-
-” এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই বলে কি আমাকে এটা বলবা,আমি যেনো তোমাকে ভালো না বাসি?
-“ ভালোবাসেন তাই বলে এভাবে তাকাবেন নাকি?
-” তুষার তাকাতেই পারে যেকোনো ভাবে তোমার দিকে। তুমিও চাইলে মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে পারো। তুষার একটু ও বিরক্ত হবে না।

আড়চোখে তাকায় চিত্রা তুষারের পানে। কিছুটা নরম কন্ঠে বলে-
-” আপনি কি জানেন? পুরুষের অল্প ভালোবাসায় নারী আসক্ত হয়। আর নারীর অতিরিক্ত ভালোবাসায় পুরুষ বিরক্ত হয়।

তুষার হাটা থামিয়ে দিলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-” যে পুরুষ নারীর অতিরিক্ত ভালোবাসায় বিরক্ত হয়, আর যাই হোক সেই পুরুষ ভালোবাসা মানেই বুঝে না।
-“ আপনি বুঝি ভালোবাসায় পিএচডি করে বসে আছেন।

তুষার হেঁসে ফেলে। চিত্রা হাসির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” এতো হাসেন কেনো? আগে তো হুতুম পেঁচার মতো মুখ করে রাখতেন।আর এখন কিছু বলতে না বলতেই হাসেন।
-“ খেতে চলো ক্ষুধা লাগছে।

তুষার চলে যায়। চিত্রা তুষারের পেছন পেছন চলে যায়।

চিত্রার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তৃষা।

-“ ওদিকে তাকিয়ে ওভাবে কি দেখছো?

তৃষ্ণা পাশ ফিরে তাকালো না। রাফি তৃষ্ণার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো সেদিকটায়। তৃষ্ণার চোখ মুখ জুড়ে রয়েছে মুগ্ধতার আবেশ। দৃষ্টি রায়ান,রিয়া আর রিমির দিকে রেখেই তৃষ্ণা বলল-
-“ একদিন আমি আপনি মিলে হবো আমরা।
-“ মানে!

তৃষ্ণার হুঁশ ফিরলো। রায়ান আর রিয়া বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিমি কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। দৃশ্য টা দেখছিল তৃষ্ণা। ভালে লেগেছে,কখন যে ওখানে নিজেকে আর রাফি কে কল্পনা করলো বুঝতেই পারে নি। পাশ ফিরে রাফি কে দেখে বলে-
-“ মানে টানে কিছু না। আপনি এখানে কেনো? মামুর বান্ধবী কই?
-“ আমি কিভাবে বলবো সে কই।
-“ কেনো আপনিই না দেখলাম তার সাথে গল্পগুজব করছিলেন।
-“ আশ্চর্য আমি কখন গল্পগুজব করলাম। আমি তো জাস্ট বসে ছিলাম।

তৃষ্ণা বিরক্তি নিয়ে তাকালো রাফির পানে।
-“ বসে কেনো থাকবেন? আমাকে বলেছিলেন কোনো ছেলের সাথে মিশতে না আপনার ও উচিত কোনো মেয়ের সাথে মেশা তো দূরস্থ, তার আশেপাশে ও না বসা।

রাফি হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ আর ইউ জেলাস মিস তৃষ্ণা?
– “ নো। আমি জাস্ট আপনার কথাটাই আপনাকে ব্যাক করলাম। যে কথা নিজে মানতে পারেন না সে কথা অন্য কে কেনো মেনে চলতে বলেন?
– “ ওক্কে মেনে চলবো খেতে চলো এখন।

তৃষ্ণা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। রাফি হাসলো, তার এখন একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে আর সেটা হলো-
-“ মেয়ে তোর জেলাস জেলাস চোখে, যেন হিংসেরা ঢেউ খেলে, সেই ঢেউয়ের খেলা দেখিতে আমার ভাললাগে! মেয়ে তোর গোলাপী গোলাপী গালে যখন রাগের আভা ফুটে । সেই আভা দেখিতে আমার ভাল্লাগে! বড়ই ভাল্লাগে!

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১১

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১১
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ হ্যালো আপা ভাই কে আসার সময় সিলেটের চা নিয়ে আসতে বইলেন তো। বাবা নিয়ে যেতে বলছে।

তানিয়া বেগম স্মিত হেসে বলে-
-“ তোমার ভাইকে বলে দিয়েছি আগেই, আজ ফেরার পথে নিয়ে আসবে। তোমরা যাবে কবে গ্রামে?
-“ এই তো চিত্রার এক্সামের ঝামেলা শেষ হলে। আপনারা যাবেন না?
-“ হ্যাঁ যাবো।
-“ এক সাথেই তো তাহলে যাওয়া যায়।
-“ আমি আর তৃষ্ণা না হয় যেতে পারবো কিন্তু তুষার আর তার বাপের তো আগে সময় বের করতে হবে।
-“ সেটাও ঠিক,আচ্ছা আজ রাখি রান্না বান্না করতে হবে ভাবি তার ভাইয়ের বাসায় গেছে।
-“ আচ্ছা রাখো।

চয়নিকা বেগম ফোন টা কেটে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। চিত্রা ফোনটা নিয়ে সোফায় বসে টিভিতে রোডিস দেখতে থাকে। এরমধ্যে উপর থেকে রায়ান কয়েকটা ফাইল নিয়ে এসে চিত্রার ওপর পাশে বসে। চিত্রা নড়েচড়ে বসে। একবার টিভির দিকে তো আরেকবার রায়ানের দিকে তাকাচ্ছে। রায়ান চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ তোমার এক্সাম কবে?

চিত্রা টিভির দিকে চেয়ে বলে-
-“ আটাশ তারিখে।
-“ তো পড়াশোনা না করে টিভির সামনে বসে আছো কেনো?
-“ সবসময় ই কি পড়াশোনা করতে হবে নাকি? আর এই সন্ধ্যায় কে পড়তে বসে।
-“ সব স্টুডেন্ট সন্ধ্যাতেই পড়তে বসে। টিভি বন্ধ করে পড়তে যাও।

চিত্রা টিভি টা বন্ধ করে ফোন টা হাতে নিয়ে উপরে চলে যায়। নিজের রুমে না ঢুকে সোজা বাবার কাছে চলে যায়। দরজার সামনে এসে দরজা ফাঁক করে দেখে তার বাবা ঘরে নেই। সন্ধ্যার সময় তার বাবা তো স্টাডি রুমে থাকে। চিত্রা ছুট লাগালো স্টাডি রুমে। সাহেল আহমেদ স্টাডি রুমে বসে বই পড়ছেন। চিত্রা চুপিচুপি রুমে ঢুকে বাবার পাশে বসলো। রুম টার চার দিকে চার টা বড় বড় বুক শেল্ফ। তাতে রয়েছে হরেক রকমের বই। সাহেল আহমেদ নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তার মেয়ে বসে আছে। মুচকি হাসেন।

-“ আজ হঠাৎ এ ঘরে যে?
-“ এমনি।
-“ বই পড়বে?
-“ হ্যাঁ।
-“ যাও পছন্দ মতো একটা বই নিয়ে পড়ো।

চিত্রা বসা থেকে উঠে গিয়ে শেল্ফ থেকে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা নামক বই টা নিয়ে আসে। বইটা খুলে পড়তে নিবে আর ওমন সময় চিত্রার ফোন বেজে উঠে। সাহেল আহমেদের কপালে দু ভাজ পড়লো। বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বলল-
-“ পড়ার সময় ফোন সাথে রেখো না। এরা প্রচুর বিরক্ত করে।

চিত্রা বই টা টেবিলে রেখেই স্টাডি রুম থেকে বের হয়। রাতুল ফোন দিয়েছে। একবার ভাবলো ফোন টা রিসিভ করবে না কিন্তু কি একটা মনে করে ফোন টা রিসিভ করলো চিত্রা। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো-

-“ কেমন আছো চিত্রা?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি,আপনি?
-“ আমি ভালো নেই।

চিত্রা ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো-
-“ ভালো নেই কেনো?
-“ বিয়ে টা কি করা যায় না?
-“ করা গেলে অবশ্যই আমি না করতাম না।
-“ অন্য কাউকে পছন্দ করো?
-“ না।
-“ কাল একবার দেখা করতে পারবা?
-“ কেনো?
-“ একটু দেখা করতাম।
-“ বাসায় আসেন।
-“ না তোমার কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে থেকো।
-“ আচ্ছা রাখি।

কথাটা বলে চিত্রা ফোন কেটে দেয়। একদিকে তুষার ভাই আরেক দিকে রাতুল ভাই। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসে।

রাফি আর রাসেল আহমেদ বসে আছে অধরার সামনে। রাসেল আহমেদ কাগজপত্র বের করে অধরার সামনে রাখে। অধরা কাগজ গুলোতে সাইন করার আগে রাসেল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ আমি টাকা ক্যাশ নিতে চাই না, আমি চাই টকাগুলো আমার একাউন্টে ট্রান্সফার হোক।

রাফি বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। সামান্য জমি নিয়ে কি তাল-বাহানা করছে এই মেয়ে। ফাস্ট দেখে যতোটা ভালো লেগেছিল এখন ততটাই বিরক্ত লাগে।

-“ আপনার টাকা গুলো আপনার একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। আর প্যারা দিয়েন না তো সাইন করেন এখন।
-“ আগে টাকা টা পাঠান।

রাফি পকেট থেকে ফোন টা বের করে রায়ান কে ফোন করে বলে দেয় টাকা ট্রান্সফার করে দিতে। টাকা অধরার একাউন্টে আসলে অধরা কাগজ গুলোতে সাইন করে দেয়। রাফি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। রাসেল আহমেদ কাগজ গুলো ফাইলে ঢুকিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ধন্যবাদ, আপনার এবং আপনার ফ্যামিলির ইনভাইট রইলো আমাদের বাসায় কালে দুপুরে। আই থিংক না করবেন না।
রাফি তার বাবার কথা শুনে তার হাত চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলে-

-“ ইনভাইট কেনো দিচ্ছো তাও বাসায়। রেস্টুরেন্টে খাইয়ে দিলেই তো হয়।

অধরা বাপ বেটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে-
-“ চেষ্টা করবো আসার। এখন আসি বাই।

কথাটা বলে অধরা চলে যায়। রাসেল আহমেদ আর রাফিও চলে আসে।

————–

-“ হ্যাঁ রে তুষার তোর কি মাধবীর মেয়ে ময়নার কথা মনে আছে?

তুষার খাবার খাচ্ছিল হঠাৎ তানিয়া বেগমের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” কয়েক বছর আগে যে এসেছিল বাচ্চা মেয়েটা?
-“ হ্যাঁ। ও কিন্তু এখন আর বাচ্চা নেই।
-“ কিসে যেনো পড়ে?
-“ এবার এসএসসি দিবে।
-“ এসএসসি দিবে। যে কিনা এখনো স্কুলের গণ্ডী পাড় করে নি সে তো এখনও বাচ্চাই।
-“ মেয়েটা কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর।

তুষার কিছু বললো না। তানিয়া বেগম গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে-
-“ এবার গ্রামে গিয়ে ভাবছি মাধবীর সাথে কথা বলবো।
তুষার ভাত খেতে খেতে জবাব দেয়-
-” ভালো তো।
-“ কি নিয়ে কথা বলবো জিজ্ঞেস করলি না?
-“ কি নিয়ে কথা বলবা?
-“ তোর আর ময়নার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই তুষার বিষম খায়। তানিয়া বেগম তুষারের মাথায় পিটে হাত বুলিয়ে বলে-
-“ ধিরে সুস্থে খা,এখনই তো গলায় আটকে যাচ্ছিল ভাত।

তুষার গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে-
-“ আমার গলায় ভাত আটকে যাচ্ছিল না মা, আমার শ্বাস টাই আটকে যাচ্ছিল তোমার কথা শুনে। তুমি কার সাথে কার বিয়ের কথা বলছো!
-“ কেনো তর আর ময়নার।
-“ মাথা কি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে? ওর বয়স কত? আঠারোও হয় নি ওর থেকে গুনে গুনে দশ-এগারো বছরের বড় আমি।
-“ তাতে কি? বয়স কোনো ম্যাটারই করে না।
-“ তোমার চোখ এতো বাজে আগে তো জানতাম না মা।
-“ কেনো কি হইছে?
-“ তুমি আশেপাশে মেয়ে রেখে গেছো ঐ মাধবী খালার মেয়ে ময়নার কাছে!

তানিয়া বেগম আফসোস নিয়ে বলেন-
-“ আশেপাশে তো কত মেয়ে দেখালাম তোকে, তুই তো পছন্দ করলি না। আমি কি ছেলের বিয়ে দেখতে পারবো না ইহকালে?
-“ তুমি কি ভাবছো ঐ পিচ্চি মেয়ের কথা বললে আমি রাজি হয়ে যাবো?
-” সুন্দরী রাজি না হওয়ার কি আছে?
-“ সুন্দর ধুয়ে ধুয়ে তুমি পানি খাও মা।

সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে কথা টা বলে তৃষ্ণা। তানিয়া বেগম রাগী দৃষ্টি নিয়ে মেয়ের পানে চায়। তুষার প্লেটে হাত ধুয়ে উপরে উঠে চলে যায়। তানিয়া বেগম মেয়ের কান ধরে বলে-
-“ সম সময় কথার মাঝে কথা বলাই লাগবে তাই না?

তৃষ্ণা তানিয়া বেগমের হাত থেকে কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-
-“ কান টা তো ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি।

তানিয়া বেগম কান ছেড়ে দেয়।
-“ তুমি এতো মেয়ে দেখছো কই তোমার ভাইয়ের মেয়েকে তো দেখলে না?

তানিয়া বেগম বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ কার কথা বলছিস?
-“ কে আবার মামুর মেয়ে চিত্রা। ওরেও তো পারো এই বাড়ির বউ বানিয়ে আনতে।

তানিয়া বেগম কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। তৃষ্ণা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে-
-“ তুষার কে কি একবার চিত্রার কথা বলে দেখবো?
-“ দেখো গিয়ে বলে।
-“ রাজি হবে তো?
-“ সেটা আমি জানি নাকি?
-“ আগে গ্রামে গিয়ে নেই ঘুরে আসি তারপর কোমড় বেঁধে নামবো, ছেলের বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।

-“ কবে যাচ্ছি আমরা?
-“ চিত্রার এক্সাম শেষ হোক তারপর।
-“ সবাই এক সাথে যাবে নাকি?
-“ হ্যাঁ তোর বাবা তো বললো এবার সবাই একসাথে যাবে।

-“ ভাইয়া কি আমাদের সাথে যাবে?
-“ জানি না,ওরে তো এখনও বলাই হয় নি। এখনও তো দেরি আছে বলবো নি।

-“ খাইতে দাও,পড়া আছে আমার। শুধু ছেলেরেই ডেকে ডেকে খাবার দাও। আমাকেও তো ডাকতে পারো সাথে।
-“ হিংসুটে, শুধু আমার ছেলে টাকে হিংসে করে।

——————-

-“ রাফি ভাইয়া কি করা যায় বলোতো?

রাফি আর চিত্রা কোচিং এর বাহিরে হাঁটছে। চিত্রার কথা শুনে রাফি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে বলে-
-“ কি করবা?
-“ আর বইলো না রাতুল ভাই আসতেছে।
-“ রাতুল কেনো আসছে?
-“ জানি না।
-“ ঐ যে দেখো রাতুল আসছে।
চিত্রা তাকিয়ে দেখে সত্যি রাতুল তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। চিত্রা আশেপাশে তাকালো। রাতুল চিত্রার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ বাহ রাফি কেও সাথে নিয়ে এসেছো দেখছি।
-“ কি আর করবো বলুন,বোন তো একা তো বাহিরে ছাড়া যায় না। ভাই হিসেবে এইটুকু তো করতেই হয়।

রাতুল স্মিত হাসলো। রাফির কথাটা তার মোটেও পছন্দ হয় নি।
-“ একটু সাইডে আসবে কথা বলতাম?

চিত্রা রাফির পানে তাকালো। রাফি ইশারায় যেতে বললো। চিত্রা রাতুলের পেছন পেছন গেলো কিছুটা সামনে।

-“ চিত্রা বলছিলাম কি আর একটা বার কি ভেবে দেখা যায় না?
-“ কি?
-“ বিয়ে টা নিয়ে,না মানে মা আজ মেয়ে দেখতে যাবে।
-“ দেখেন রাতুল ভাই,আপনার মা যাকে দেখতে যাচ্ছে তাকে বিয়ে করুন। আপনি সুখীই হবেন। আমার জবাব আগেও যা ছিলো এখনও তাই থাকবে।
-“ এটাই শেষ কথা?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা তাহলে ভালো থেকো।

রাতুল চলে যায়। রাফি এগিয়ে এসে বলে-
-“ কি বললো?
চিত্রা রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কি আর বলবে,ঐ বিয়ে নিয়ে কথা বললো।
-“ তুমি কি বললে?
-“ আগেও যা বলেছি তাই বললাম।
-“ রাজি হলেও তো পারতে।
-“ কখনোই না,চলে বাসায়।

রাফি মাথা নাড়িয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে। রাতুল একমাত্র রিয়ার ভাই দেখেই চিত্রা রাতুল কে বিয়ে করবে না। রাতুল কে রিজেক্ট করতে কিছুটা খারাপ লাগলেও ভালো লাগা ছিলো অসীম। কিছুটা রিভেঞ্জ নেওয়াই যায় সবার অগোচরে।

#চলবে?