Tuesday, July 22, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 387



প্রিয় অনুভব পর্ব-১২+১৩

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১২

“আরে প্রীতি না?”

প্রীতির নাম শুনে ঘুরে তাকালো নীতি।

”তূর্ণা!”

“তুমি এখানে কি করছো?”

“ভাইয়ার সাথে এসেছিলাম। একটু কাজ ছিল, তাই আগে চলে গিয়েছে। আর আমার নাম নীতি, প্রীতি না!”

“ওহ, আসলে তোমাদের নাম এতটা সেম। আমি ভিতরেই ছিলাম। তোমাকে দেখে এলাম। বান্ধবীদের সাথে এসেছিলাম ঘুরতে। আপাতত এখানে এসেছি। এরপর বাড়ি যাবো।”

“এখানে এসেছো বাড়ি যাবে না?”

“না, আজ না। তুমি এসো। আমার বান্ধবীদের সাথে দেখা করিয়ে দেই।”

নীতি না করার আগেই সে ওকে টেনে নিয়ে গেলো। না করার সুযোগও পেলো না। সোজা নিয়ে ওদের টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।

“দেখ কাকে এনেছি!”

টেবিলে বসে থাকা দুই রমণী মুখ তুলে তাকালো।

“কে এ?”

নীতির অস্বস্তি হলো।

“আরে ছবি দেখিয়েছিলাম না? নীতি!”

“তুই তো প্রীতি বলেছিলি!”

তুর্ণা মেকি হেসে নীতির দিকে তাকালো। নীতিও হালকা হাসার চেষ্টা করলো।

“তূর্ণা আজ আসি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারও হয়ে এসেছে।”

“আরে আমাদের সাথে কিছু মুখে দেও।”

“না না, মাত্রই খেয়েছি।”

তুর্ণা কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে থাকা মানুষটার নাম দেখেই জলদি পিক করলো।

“হ্যালো!”

ওপাশে কি বললো নীতির জানা নেই। তবে তুর্ণা উত্তর দিলো, “তোমার হাতের বাম পাশে একটা ক্যাফে আছে। ওখানেই আছি আমরা! ওকে আসো।”

“আসছি তুর্ণা।”

“আরে দাড়াও। ভাইয়া আসছে। দেখা করে যাও।”

“ভাইয়া?”

“ওই তো!”

নীতি তূর্ণার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই নাহিয়ানকে দেখতে পেলো। নাহিয়ান ওকে দেখে একটু অবাক হলো। ওদের দিকে এগিয়ে আসতেই তূর্ণা বলে উঠলো, “দেখো ভাইয়া, এখানে নীতির সাথে দেখা হলো। আচ্ছা তুমি এখানে কি করছো?”

“তোর মা ফোন দিল। বললো এদিক দিয়েই যাচ্ছি তোদের একটু নিয়ে আসি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, এখনও বাইরে কি তোদের?”

“ঘুরতে এসেছিলাম।”

“বিকেলের মধ্যে বাসায় যেতে পারিস নাই?”

“রাগছো কেনো?”

“রাগছি না। চল এখন।”

“আরে কিছু তো খেলামই না।”

“এখন তোদের খাওয়ার জন্য বসে থাকবো আমি?”

“বেশি না, একটু অপেক্ষা করো।”

“তোর একটু মানে এক ঘন্টা!”

নীতি ওদের দুইজনের কথার মাঝে বলে উঠলো, “আমি এবার যাই। অন্ধকার হয়ে গেছে। মা চিন্তা করবে।”

“আচ্ছা।”

নীতি নাহিয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।

“ভাইয়া কি খাবে?”

“আমি কিছু খাবো না। তোরা শেষ কর, আমি আসছি!”

বলে সেও বেরিয়ে গেলো। নীতি তখনও দাঁড়িয়ে। আশেপাশে রিকশা খোঁজার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

“রিকশা খুঁজছো?”

নাহিয়ানের গলা শুনে নীতি ওর দিকে তাকালো। মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বোধক জবাব দিল।

“এখানে রিকশা পাবে না। একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পেয়ে যাবে।”

নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো।। অন্ধকার রাস্তা । মৃদু আলো জ্বলছে। রুমের আর ছাদের অন্ধকার এক জিনিস। আর বাইরের এই রাস্তার অন্ধকার আরেক! না জানি, কোন বিপদে পড়ে। কিন্তু নাহিয়ানকে এই নিয়ে বলতে পারবে না সে। লোকটা মজা নিতে পারে। সাহস করেই এগিয়ে গেলো। পাশে কেউ আছে বুঝতে পেরেই তাকালো ও। নাহিয়ান ওর পাশে ফোন দেখতে দেখতে হাঁটছে। নীতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

“মা যদি জানতে পারে যে তার বড় বউয়ের বোনের সাথে দেখা হয়েছে আর সে চলে যাওয়ার সময় আমি এগিয়ে দিয়ে আসেনি একশোটা কথা বলবে। কথা শোনার মুড নাই!”

নীতি সামনে তাকালো। অদ্ভুতভাবে আজ কেনো যেনো নাহিয়ানের সামনে কিছু বলতে পারছে না। মনে মনে স্বস্তি পেলো। সামনে এগিয়ে একটা রিকশা পেলো। নাহিয়ান ডাক দিল,

“মামা সেনপাড়া যাবেন?”

“হো যামু!”

“কত?”

“পঞ্চাশ টাকা!”

“এখান থেকে এখানে পঞ্চাশ টাকা? ত্রিশ টাকা দিবো!”

“মামা, এই সন্ধ্যার সময়। রিকশা কম এহন !”

“চল্লিশ দিবো!”

“আচ্ছা আসেন!”

“উঠো!”

নীতি উঠলো না।। রিকশাওয়ালাকে দেখে তার কেমন যেনো লাগছে। নজরও তেমন ভালো না।

“কি হলো?”

“আপনি যাবেন না?”

“মানে?”

নীতি অন্যদিকে ফিরে জিভে কামড় দিলো। ভুল কথা বলে ফেলেছে।

“না মানে এখানে এসেছেন, বাড়ি তো যেতে পারেন আমাদের!”

“নাহ, গেলে আর আসতে দেয় না। আর এমনিও কাজ আছে। এখন উঠো!”

নীতি বেশ অস্বস্তি নিয়ে উঠলো। রিকশা টান দিতেই নাহিয়ান আবার ডাক দিল, “মামা দাড়াও।”

রিকশা থামতেই নাহিয়ান উঠে বসলো। এদিকে নাহিয়ানকে উঠতে দেখে নীতি সঙ্গে সঙ্গে সরে বসেছিলো। অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে নীতি।

“এবার যাও।”

রিকশা চলতে লাগলো। নাহিয়ান আবার ফোন দেখতে লাগলো। নীতি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আরেকটু সরে বসলো।

“রিকশা থেকে পড়ার শখ হয়েছে নাকি?”

তখনই রিকশায় উচু নিচু জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলো। ফলস্বরূপ নীতি পড়তে গিয়েও পড়েনি। নাহিয়ান ওর এক হাত ধরে ফেলেছিলো।

“সমস্যা হচ্ছে? নেমে যাব?”

তৎক্ষণাৎ নীতি ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করলো। অতঃপর স্বাভাবিক হয়ে বসলো।

“মুখে কিছু হয়েছে? আজ এত চুপ চাপ যে!”

“আপনি না বললে যাবেন না বাড়ি!”

“হুমম যাবো না।”

“তাহলে?”

নাহিয়ান চুপ রইলো কিছুক্ষণ। অতঃপর বললো,“কেউ একজন ভয় পাচ্ছে।”

“কে ভয় পাচ্ছে শুনি?”

“পাচ্ছে না?”

“উহু।”

“তাহলে আমি নেমে যাই!”

নীতি তৎক্ষণাৎ বাঁধা দিয়ে বললো, “এই না!”

নাহিয়ান বাঁকা হাসলো।

”এখানে কি করছিলে? বয়ফ্রেন্ড এর সাথে এসেছিলে নাকি?”

“আর বয়ফ্রেন্ড! ভাইয়ার সাথে এসেছিলাম। বাঁশ দিয়ে চলে গিয়েছে।”

“মানে?”

নীতি সব কথা বললো। সব শুনে নাহিয়ান জোরে হেসে দিলো। নীতি গাল ফুলালো।

”বাহ চমৎকার! একেই বলে অতি লোভে তাতি নষ্ট!”

“হয়!”

বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই দুইজন নেমে গেলো। নীতি ভাড়া দেয়ার আগেই নাহিয়ান ভাড়া দিয়ে দিলো।

“ভিতরে আসুন অন্তত!”

“আজ না, দেরি হয়ে যাবে। ওরাও বসে আছে।”

“আচ্ছা সাবধানে যাবেন।”

নাহিয়ান হেসে বিদায় নিলো। নীতি কয়েক পলক সেদিকে তাকিয়ে ভিতরে গেলো।

__________________________________

পড়াশোনা শেষে পিছনে গা এলিয়ে দিলো নীতি। লাইফ ওর আগের মতোই চলছে। কেবল মাঝে ‘অনুভব’ নামক ঝড় এসেছিল। এই আরকি। বিছানার পাশে টি টেবিল থেকে ফোন নিলো। মেসেঞ্জারে ঢুকলো। বর্ষা নিজেদের বাসায় চলে গিয়েছে। ভার্সিটিতে রোজ দেখা হয় ওদের। ওকে মেসেজ দিলো।

“কালকে আসবি?”

“আসলে টাকা দিবি?”

“না, জুতা দিবো!”

“তাইলে আসবো না!”

“ভাগ তুই!”

বলেই ওর চ্যাট থেকে বের হলো। অতঃপর এক্টিভ লিস্টে নাহিয়ানকে দেখে একটু অবাক হলো। রাত একটার কাছাকাছি। এই সময়ও ইনি জেগে? অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। আজকালের দিনে রাত একটা মানে সবে রাত শুরু। নীতি নক দিলো,

“হ্যালো টাকলা!”

মেসেজটা কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সিন হলো।

“টাকলা কাকে বলো?”

“আপনাকে!”

বেশ কিছুক্ষণ পর নাহিয়ান একটা ছবি দিলো। তার মাথার। সঙ্গে মেসেজ দিলো, “মাথায় দেখেছো কত চুল?”

নীতি ঠোঁট চেপে হাসলো।

“আমি নজর দিলাম, আপনার সব চুল ঝড়ে পরে যাবে।”

সঙ্গে সঙ্গে নাহিয়ান ছবিটা আনসেন্ড করে দিলো। নীতির এবার আরো হাসি পেলো।

“শা’কচুন্নির নজর!”

“কি বললেন?”

“অন্ধ, দেখো না?”

”ফা’জিল লোক!”

“তোমার উপকার করলাম, আর তুমি এসব বলছো? ছি, কৃতজ্ঞতা নেই দেখছি!”

“ওটা বলতেই নক দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর বলবো না।”

“আহা, এটা বলতে নক দিয়েছো। আর কি সুন্দর সম্বোধন তোমার!”

“আপনাকে নক দেয়াই ভুল আমার। ভাগেন তো!”

“সেম টু ইউ!”

নীতি সিন করে রেখে দিল। এর মাঝেই আনাফ মেসেজ করলো।

“বইনা!”

“পাশের রুম থেকে মেসেজ করতেছো কেন?”

“তো কি? রাত একটা বাজে তোর রুমে যাবো?”

“তাও ঠিক! তুমি এখনও ঘুমাও নাই?”

“হ্যাঁ আমি ঘুমাচ্ছি, আমার ভুত জেগে আছে।”

“ভাইয়া!”

“দেখছিস ই তো অনলাইন। আচ্ছা মাকে বলেছিস?”

“এমন বিয়ে পাগল হচ্ছো কেনো? এখনই বললে চাচী বুঝে যাবে।”

“ওহ, তাও ঠিক!”

“আমার মনে হয় না দিবে বলে।”

“কেনো?”

“প্রীতি এখনও বাচ্চা তাই!”

“আরে বাড়িতেই তো থাকবে। ছোট চাচীও থাকবে। সমস্যা কি?”

“বুঝবা না তুমি! ঘুমাও তো।”

“বলিস কিন্তু!”

নীতি আর রিপ্লাই করলো না। ফোন পাশে রেখে উপরে থাকা বন্ধ ফ্যানের দিকে তাকালো। এখন সে কি করবে? কিভাবে বলবে বড় চাচীকে এসব? শুরুটা কেমন করে করবে? এসব ভাবতে ভাবতেই হুট করেই হারিয়ে গেলো নিজের ভাবনায়!

__________________________________

“আচ্ছা শোনো!”

“বলো।”

“একটা জিনিস অনুভব করতে বলবো। মন থেকে অনুভব করবে। এরপর কি অনুভব করলে সেটা আমায় জানাবে।”

“আচ্ছা।”

“চোখ বন্ধ করবে আগে। তারপর অনুভব করবে অনুভবের লাইফে প্রিয় নেই। হারিয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়েছে। কোনো অস্তিত্ব নেই আর প্রিয়র। প্রিয়র মেসেজ নেই, কথা নেই! এমনটা অনুভব করুন!”

“এসব কি প্রিয়?”

“করুন না, প্লিজ!”

অনুভব বিরক্ত হলেও বিষয়টা ফিল করতে লাগলো। ওদিকে প্রিয় অপেক্ষা করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর অনুভব বলে উঠলো,

“নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না প্রিয়!”

প্রিয় হাসলো। আবার জিজ্ঞেস করলো, “কেমন লাগলো আমি বিহীন এই অনুভূতি?”

“যেখানে নিজের অস্তিত্বকেই পাচ্ছি না সেখানে আবার অনুভূতি কিসের? অনুভূতি থাকে সেখানে?”

“তাই?”

“হুমম, এবার তুমি বলো!”

“কি?”

“আমি বিহীন তোমার কেমন লাগবে?”

“ভাবতে চেয়েছিলাম এটা। কিন্তু ভাবতে গিয়ে বুঝতে পারলাম আপনাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। দমবন্ধ লাগে অনুভব। সাথে থাকবেন কি সবসময়? ছেড়ে যাবেন না তো?”

__________________________________

চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো নীতির। তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারেনি সে, আর আজ? নীতি উঠলো। ধীর পায়ে ফোন হাতে ব্যালকনিতে গেলো। বাইরের পরিবেশ দেখে লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। নিজেকে নিজেই বলে উঠলো,

“তুমি আমার মন কেমনের রাতের এমন এক অনুভূতি, যাকে যতই ভাবি সুখ অনুভূতি হয়। হঠাৎ মনে পড়ে তুমি নেই, কোথাও নেই। আবছা আলোয় মিলিয়ে গেছো। অতঃপর সুখ বিষাদে ছেয়ে যায়। অনুভব হয়, তুমি ছাড়া আমি ঠিকই আছি। তবে সাথে আছে এক বিষাদিনির বিষাদপূর্ণ মন। যেই মন তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষায়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় সে মন। সেই মনকে বিষাদ থেকে মুক্ত করতে তুমি আসবে না?”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আবার রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বললো, “কত রাত তোমাকে ভেবে চলে গেলো অনুভব। মাত্র এক বছরের অনুভূতিগুলো এতটা আবেগময়ী কি করে হয়? কই? আমি তো দেখেছি, পাঁচ বছরের অনুভূতি ভুলেও মানুষ দিব্বি থাকে। তবে আমি কেনো এক বছরের অনুভূতিগুলো অবহেলা করতে পারছি না? আপনিও কি এইসব অনুভব করেন অনুভব?”

প্রশ্নটা করা হলেও উত্তর মিললো না নীতির। অতঃপর ঘুমাতে চলে গেলো। আর কত? নিজেকেও একটু ভালোবাসা উচিত!
__________________________________

“ও বাতাস তুমি বলে দিও তারে,
সে যেনো আমারই থাকে! ভোলে না আমারে!”

গানের এই অংশটুকু গেয়েই থামলো অনুভব। মুখে তার মুচকি হাসির রেখা!

”জানো প্রিয়? তোমাকে ভুলতে চেষ্টা করছি আমি। এলে তো আমার জীবনে এক স্নিগ্ধ বাতাস হয়ে, কিন্তু চলে গেলে তুমুল ঝড় তুলে। তবে জানো, ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে! কি পেলে চলে গিয়ে? কি পেলে আমায় ডুবিয়ে! দেখা তো হলো না, তবে সুযোগ হলে জেনে নিবো। আমিও ভালো থাকবো প্রিয়! তুমিও থেকো। যতই হোক, ভালো তো বাসিই!”

বোকা অনুভব! জানলোই না তার প্রিয় তাকে ছাড়া ভালো নেই। এক বিন্দুও ভালো নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলো। ভুলবে বললেও কি মানুষ ভোলা যায়? আর প্রিয় মানুষ হলে তো তা অসম্ভব! আবার সেই চেনা পরিচিত গ্রুপে গেলো। ‘প্রিয়’ নামে সার্চ দিতেই অসংখ্য আইডি স্ক্রিনে ভাসলো। অনুভব দেখতে লাগলো সব। কিছু নিচেই সেসব আইডি এর পোস্ট সামনে এলো। হুট করেই একটা লিখায় আটকে গেলো সে। থমকে গেলো তার সময়। হাতের উল্টোপিঠে নাকে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো। আবারও লিখাটা পড়লো। নাহ! এটা তারই লিখা.. তার প্রিয়র জন্য লিখা! তবে কি তার প্রিয় এটা? পোস্টের সময় দেখলো সে। দু সপ্তাহ আগে করা। সিউর হতে আইডিতে গেলো সে। তখনই ভেসে উঠলো নামের নিচে থাকা বায়োর দিকে। যেখানে লিখা,

“অনুভবের প্রিয়!”

সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ করলো সে। আনন্দ হচ্ছে তার। পুরো পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করছে সে পেয়েছে তার প্রিয়কে। হুট করেই মনে প্রশ্ন জাগলো। প্রিয় এতদিন কোথায় ছিল?

#চলবে

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১৩

“বড় চাচী আসবো?”

“আরে নীতি, আয় আয়।”

নীতি এক বুক সাহস নিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকলো। ভয়ঙ্কর কাজ করতে যাচ্ছে সে।

“কি করছো?”

আনাফের মা হেসে বললেন,

“দেখ না তোর চাচা অফিস গিয়েছে, আর রুমের কি হাল বানিয়ে গিয়েছে। এদিক সেদিক জামাকাপড় ছড়িয়ে রুমের হাল বেহাল করে ফেলেছে। বয়স হয়েছে, তাও ছোটদের মতো কাজ করে। ওদিকে আবার আনাফ। নিজের কাজ নিজে তো করেই না; আবার সেও অগোছালো মানুষ। এখন আবার চাকরি হয়েছে। রুম তো আরো গুছাবে না। সকাল সকাল বেরিয়ে গিয়েছে। গিয়ে দেখবো তার রুমের হালও একই। এই দু’জন আমার এত কাজ বাড়ায়।”

নীতি হাসলো কেবল। অতঃপর এখানে আসার কারণ মনে পড়তেই বললো, “এই জন্যই উচিত আনাফ ভাইকে বিয়ে দেয়া। তাহলে তার বউই সবগুছিয়ে রাখবে। তোমার বাড়তি কোনো কাজ করতে হবে না!”

আনাফের মা বিছানার এক কোণে বসে কাপড় গুছাচ্ছিলেন। নীতির কথা শুনে তার হাত থেমে গেলো। নীতি বুঝতে পারলো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। প্রথমে এই কাজ করবে না ভাবলেও সকালে ছোট চাচীর আর নিজের মায়ের কথা শুনে বুঝেছে তারা প্রীতি কোন মামার ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে রাখতে চায়। তাই আনাফের এত তাড়াহুড়ো। নীতিও জেনেশুনে সব নষ্ট হতে দিতে পারে না। আর যাই হোক, দু’জন ভালোবাসার মানুষ আলাদা হতে দেখতে পারবে। আর নিজের বোনের জন্য এইটুকু করে না হয় একটু চ’ড়-থা’প্পড়ই খেলো। লম্বা শ্বাস নিলো । অতঃপর বলতে লাগলো,

“একা আর কত করবে? ছেলের জন্য বউ, আর নিজের জন্য একটা মেয়ে এনে নেও।”

কাপড়গুলো সরিয়ে রেখে তিনি নীতির দিকে তাকালেন। শান্ত কণ্ঠে বললেন, “এখানে আয়!”

নীতি ঢোক গিললো। এতক্ষণ বিছানার থেকে দূরে দাড়িয়ে ছিলো সে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার বড় চাচীর দিকে।

“বস!”

নীতি বিনাবাক্যে বসলো।

“এবার বল, আনাফ কি বলতে তোকে পাঠিয়েছে।”

নীতি চমকে তাকালো। মুখ ফসকে জিজ্ঞেস করে ফেললো, “তুমি জানলে কি করে যে ভাইয়া পাঠিয়েছে?”

আনাফের মা স্মৃতি হেসে বললেন, “কারণ আমার নীতিরানী আমাকে কখনো এসব নিয়ে বলে না। সে আমাকে ভয় পায় অকারণে। আর আজকে এত্ত বড় বড় কথা বলছে, বোঝাটা কি কঠিন ব্যাপার?”

নীতি মেকি হাসলো।

“কি বলেছে? বিয়ে করতে চাইছে সে?”

নীতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

“যেহেতু বিয়ের কথা বলেছে, তার মানে মেয়েও পছন্দ আছে। তাই না?”

“হুমম!”

“কে সে?”

“প্রীতি!”

স্মৃতি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন নীতির দিকে। পরক্ষণেই হেসে বললেন, “তাহলে এই ব্যাপার!”

“হুমম, ছোট চাচী তার ভাইয়ের ছেলে কথা তোমাকেও হয়তো বলেছে। আনাফ ভাইয়া তাই একটু ভয় পেয়ে আছে। তোমাকে কথাটা কেমন করে বলবে বুঝতে পারছিলো না। আর রীতি আপুও এখন সংসারে ব্যাস্ত। তাই আমাকেই বলতে বললো।”

“বুঝেছি। তবে ওকে বলো মা মানেনি।”

“সত্যি মানে নি?”

নীতির বোকা প্রশ্নে স্মৃতি হাসলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “আমার কাছে রীতি, প্রীতি, নীতি, সিনথী, আনাফ, রাদিফ সব এক। আমার ছেলে মেয়েরা যেটাতে খুশি আমি সেটাই দিবো।”

নীতির মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো। স্মৃতিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বললো, “তুমি বেস্ট চাচী।”

বলেই গালে চুমু এঁকে ছুটে বেরিয়ে গেলো। স্মৃতি হেসে নিজের কাজে মন দিলেন। নিজের রুমে যাওয়ার ফাঁকেই ফোন বের করে আনাফকে মেসেজ করলো নীতি।

“চাচী মানে নি ভাইয়া। তোমাকেই কিছু করতে হবে।”

মেসেজটা সেন্ড করেই হেসে দিলো নীতি। খুশি লাগছে তার। ইশ, কেনো লাগছে? পরক্ষণেই হাসি থেমে গেলো। আচ্ছা অন্যদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে ওর এত্ত খুশি লাগে। নিজেরটা পেলে কতোটা খুশি হবে ও? এসব ভাবতে ভাবতেই সিঁড়ির কাছে এসেছে সে। ড্রয়িংরুমে প্রীতি সিরিয়াল দেখছে। ওকেও জ্বালাবে ভেবে নিচে আসছিলো সে। কিন্তু ভাবনায় এতটা বুদ ছিল সিঁড়ির দিকে খেয়াল করেনি। হুট করেই নিচু জায়গা আসায় আর বেখায়ালি হওয়ায় পড়ে যেতে নিচ্ছিলো সে। তৎক্ষণাৎ সিঁড়ির রেলিং ধরে সামলে নিলো। নিজেকে সামলে নিলেও ফোন সামলাতে পারেনি সে। হাত থেকে ছুটে সেটা দুটো সিঁড়িতে আছার খেয়ে, রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে গিয়ে সোজা সোফায় পড়লো। নীতি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে প্রীতি সিরিয়াল রেখে একবার নীতিকে দেখছে তো একবার তার পাশের সোফায় পড়ে থাকা ফোন দেখছে। নীতি ধীর পায়ে নিচে নেমে আসলো। সোফার কাছে গিয়ে ফোন উঠালো। স্ক্রিন অন করতেই দেখলো ডিসপ্লে গায়েব। হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো সে। শুধু সোফায় পড়লেই পারতো। কি দরকার ছিল সিঁড়িতে আছার খেয়ে এখানে পড়ার। নিজের মনে নিজেই বললো, “এইজন্যই বলে, বেশি খুশি হতে নেই। পরে কাঁদতে হয়!”

প্রীতি ততক্ষণে উঠে নীতির ফোন দেখছিল। চানাচুর খেতে খেতে বললো, “কান্দিস না। রাদিফ ভাইয়া কে দিস, ঠিক করে দিবে।”

নীতির খারাপ লাগলেও আপাতত পাত্তা দিলো না। কেননা এটা ঠিক করা যাবে। আর সেদিন সিনথীর না বলে ফোন নেয়ার জন্য যেই জিনিস হারানোর ভয় ছিল সেগুলোও নিজের ড্রাইভে সেভ করেছে। তাই সে শান্ত। নয়তো অনুভবের স্মৃতি নষ্ট হবে, আর সে চুপ করে থাকবে; এমনটা হবার নয়!

“কাঁদার পালা তোর। তোর বিয়ে তোর মা তোর মামার ছেলের সাথে দিবে। ওদিকে বড় চাচীও তোরে মানবে না। সো দুঃখ পালন করো বইন!”

বলেই ফোন হাতে নিয়ে উপরে গেলো। প্রীতি মুখে চানাচুর নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তৎক্ষণাৎ রুমে গিয়ে ফোন দিল আনাফকে। কান্নাকাটি করে সব বলতে লাগলো। ওদিকে আনাফও নীতির মেসেজ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। করবেটা কি?

__________________________________

সন্ধ্যায় রাদিফ আসতেই নীতি তার ফোন এগিয়ে দিলো। রাদিফ ফোন দেখে নীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি করবো এটা?”

“ডিসপ্লে চলে গিয়েছে আছার খেয়ে। ঠিক করে দেও।”

রাদিফ এসবের কাজ মোটামুটি পারে। কিন্তু বেশ সময় সাপেক্ষ।

“পরীক্ষা চলে রে বইন। সময় হবে না এখন!”

“আচ্ছা দোকানে দিয়ে দিও!”

“দেখি আগে!”

বলেই ফোন হাতে নিলো। উল্টে পাল্টে দেখে বললো, “ডিসপ্লে পাল্টাতে হবে। টাকাও লাগবে। এর চেয়ে ভালো নতুন নিয়ে নে।”

নীতি উদাস মনে ভাইয়ের পাশে বসে বললো, “মা দিবে না ভাইয়া!”

“আহারে।”

“ধুর, ফাজলামি করো না তো ভাইয়া!”

রাদিফ হাসলো। রীতি আর আনাফ জমজ ভাই বোন। চেহারায় অত টুইন ভাব না থাকলেও মিল আছে। আনাফ রীতির কয়েক মিনিটের ছোট। তবুও ওকে আপু বলেই ডাকে। রাদিফ ওদের দুই বছরের ছোট। নীতির এক বছর আর প্রীতির দুই বছরের বড় সে।

”বললে দিবে দেখিস।”

“দিবে না!”

নীতি গালে হাত দিয়ে বসে রইলো। আজকে ভেবেছিল আরেকবার ‘প্রিয়’ নামক আইডিতে যাবে। কিন্তু হলো কোথায়? হয়তো ফোনও চাইছে না সে আবার হতাশ হোক।

__________________________________

বসার ঘরে সবাই উপস্থিত। তাদের সবার মধ্যে টপিক একটাই। ‘প্রীতি আর আনাফের বিয়ে’। সবাই রাজি, কিন্তু মাঝে আনাফ আর প্রীতি নীতির দিকে খেয়ে ফেলা লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে। সেই দুপুরের আগ মুহূর্তে বলেছে ওদের মেনে নিবে না, প্রীতির বিয়ে। দুইজন কত প্রকার ইমোশনাল কথা বললো। প্রীতি তো কেঁদে কেঁটে অস্থির। এর জন্য কে দায়ী? অবশ্যই নীতি! আপাতত দুইজন নীতিকে একা ঘরে চেপে ধরেছে।

“কি যেনো বলেছিলি নীতি?”

আনাফের কথা শুনে নীতি হাসার চেষ্টা করে বললো, “বড় চাচীই বলেছে বলতে।”

“তাই বলে তুইও বলবি? জানিস কতটা টেনশনে ছিলাম?”

প্রীতির কথা শুনে নীতি হেসে বললো,“বড় চাচী বলেছে। পালন না করে কি করে থাকি? যতই হোক, বড়দের কথার সম্মান করা উচিত!”

“ওরে আমার বড় ভক্ত। দাড়া তুই!”

প্রীতি তেড়ে আসলেই নীতি ছুটে বেরিয়ে যায়। ওর পিছু পিছু প্রীতিও যায়। আনাফ ধপ করে বিছানায় বসে পরে। আপাতত সব স্বাভাবিক। কয়েক মাস পরে ওদের বিয়ে হবে। ভাবতেই অবাক লাগছে ওর। সবাই এত সহজে মেনে নিলো?

__________________________________

নীতি এক ছুটে নিচে চলে আসে। বড়রা সবাই সন্ধ্যার আড্ডায় বসেছে। সিনথী ওদের মাঝে বসে চা, বিস্কুট খাচ্ছে। নীতি নিচে আসতেই প্রীতি চিৎকার করে বললো, “সিনথী, নীতিকে ধরতে পারলে তোকে মেলা ঘুরতে নিয়ে যাবো!”

প্রীতির কথা শুনে সিনথী চা রেখে উঠে দাঁড়ালো। ততক্ষণে প্রীতিও নিচে এসে গেছে।

নীতি নিজেকে বাঁচাতে বললো, “ছোট চাচী, তোমার মেয়ে আমায় মা’রছে। দেখো, বড়দের সম্মান করে না।”

“তোর বড়গীরি আমি দেখাচ্ছি।”

প্রীতির মা প্রীতিকে ডাক দিলেও প্রীতি শুনলো না। সে আজ নীতিকে এক দুই ঘা হলেও দিবে। নীতির পিছু ধাওয়া করায় নীতি সোজা বাড়ির সদর দরজার দিকে দৌড়ে যায়। পিছনে প্রীতির পরিস্থিতি আর অবস্থান দেখতে পিছে ঘুরে তাকিয়েই ছুট দেয়। সঙ্গে সঙ্গে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে থেমে যায় ও। কপালে হাত দিয়ে মৃদু আর্তনাদ করে সামনে তাকায়। সামনেই নাহিয়ান থুতনী চেপে ধরে চোখ মুখ কুঁচকে আছে।

“আপনি?”

ওদিকে প্রীতি এসেই ঠাস করে ওর পিঠে থা’প্পড় দিয়ে উপরে ছুটলো।

“আহ্, প্রীতির বাচ্চা।”

বলে সেও ছুটলো। এদিকে নাহিয়ান হতভম্ব হয়ে আছে। সাথে শাফিনও। সে নাহিয়ানের পিছেই ছিল। এমন মুহূর্তের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। নীতির মা এগিয়ে এলেন।

“খুব লেগেছে বাবা?”

“না আন্টি!”

“আর বলো না। এরা এত্ত বাচ্চামী করে। বরফ দিবো?”

নাহিয়ান হাসার চেষ্টা করে বললো, “দিলে ভালো হয়!”

__________________________________

দৌড়াদৌড়ির পর্ব শেষে নীতির রুমে বসে হাপাচ্ছে প্রীতি আর নীতি।

“তোর জন্য কপালে ব্যাথা পেলাম!”

“ঠিক হয়েছে একেবারে।”

“সর! আচ্ছা নাহিয়ান আর শাফিন ভাইয়া এখানে কেনো?”

“দাওয়াত দিতে এসেছে।”

“কিসের?”

“তূর্ণার জন্মদিন! কেনো জানিস না? তুর্ণাই তো আমাদের গ্রুপেই বললো।”

“ফোন নষ্ট, সকাল থেকে লাইনে যাই নি।”

“আলহামদুলিল্লাহ!”

“একটা দিমু ধইরা! বের হ রুম থেকে!”

প্রীতি মুখ বাঁকিয়ে রুম থেকে বের হলো।

__________________________________

বেশ কিছুক্ষণ বাদে নীতি রুম থেকে বের হলো। নিচে উকি দিতেই দেখলো বড়রা কেউ নেই। আনাফ আর রাদিফ বসে আছে নাহিয়ান আর শাফিনের সাথে। নিচে নামলো সে। রাদিফকে উদ্দেশ্য করে ডাক বললো, “ভাইয়া!”

“কি?”

“ঠিক করে এনে দেও না।”

“বইন আমার পড়া আছে। এখন পারবো না। সকালে দিয়ে আসবো!”

“আমার লাগবে তো! কত নোটস আছে গ্রুপে!”

“আরে আজকে দিলেও তারা তো আজ দিতে পারবে না ফোন ব্যাক। টাইম লাগবে। এর চেয়ে ভালো চাচীর কাছে গিয়ে পক পক কর। নতুন ফোন দিতে।”

নীতি চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।

“আচ্ছা আজ আসি আমরা।”

বলেই দাঁড়ালো নাহিয়ান আর শাফিন।

“খাওয়া দাওয়া করে যেতেন দুলাভাই!”

আনাফের কথায় শাফিন অমত প্রকাশ করলো।

”না আজ না। অন্য একদিন!”

এমন নানান কথায় আনাফ আর শাফিন বাইরে যেতে লাগলো। রাদিফ উঠে তার রুমে গেলো। নীতি তখনও রাদিফের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে।

“তোমার মাথা কি লোহার তৈরি? আগে তো ভাবতাম খালি মাথাটা মোটাই। এখন দেখছি লোহারও। মনে হচ্ছে নিচের পাটির দাঁত সব ভেঙ্গে গিয়েছে। এই জন্যই তো ঘটে বুদ্ধি কম!”

নাহিয়ানের এক নাগাড়ে বলা কথা শুনে নীতি অবুঝ হয়ে তাকিয়ে রইলো। যতক্ষণে বুঝলো ততক্ষণে নাহিয়ান তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফুঁসে উঠলো সে। লোকটা তাকে এভাবে অপমান করে চলে গেলো?

__________________________________

সারাদিনের কাজ শেষে আবারও অনলাইন হলো অনুভব। সারাদিন কতবার যে দেখেছে প্রিয় উত্তর দিয়েছে কিনা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। হতাশ হলো। আচ্ছা, তবে কি প্রিয়কে সে পায় নি? দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

“আমি অপেক্ষা করবো প্রিয়। অন্তত এটা বুঝেছি তুমি হারাও নি আমার থেকে। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় আমি প্রিয়! অনেক কিছু যে জানার আছে। অনেক কিছু!”

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-১০+১১

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১০

“নাহি!”

শাফিনের চিৎকারে লাফিয়ে উঠলো নাহিয়ান। ঘুম তার পুরো হয়নি এখনো।

“কি হয়েছে?”

“উঠিস না কেনো? যাবি না?”

“কোথায়?”

“রীতিদের বাড়ি!”

“আজব, তোমার শ্বশুরবাড়ি তুমি যাও!”

বলে আবার শুয়ে পড়তে বলেই শাফিন ওর হাত টেনে ধরে আটকে দিলো।

“ভাইয়া! ঘুমোতে দেও।”

“আমার সোনা ভাই না তুই? দেখ রীতির এত বোন যে ওদের মাঝে নিজেকে হাড্ডি লাগে। তার উপর ওর যেই দুই ভাই আছে, তাদের বাড়িতে পাওয়া যায় না। আমি একা কি করবো? প্লিজ চল ভাই!”

“আমি গিয়ে কি করবো?”

“দেখবি, ঘুরবি! তাছাড়া রীতির মা তো তোদেরকেও দুপুরের খাবারের দাওয়াত দিয়েছে। খেয়ে দেয়ে রাতে চলে আসিস। রাতে বউ কাছে থাকবে। তখন আর সমস্যা হবে না!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো, “আচ্ছা সুবিধাবাদী লোক তো তুমি!”

“চল না ভাই। তাহলে দেখা গেলো আমার কোনো শালীকা পটে গেছে তোর উপর। তোর লাইনও ক্লিয়ার হবে। আমি সাহায্য করবো!”

“তোমার ঐ মেন্টাল শালীকাদের দিয়ে আমার কাজ নেই।”

“তাহলে ওদেরকেই তোর গলায় ঝুলিয়ে দিবো দেখিস!”

নাহিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বললো, “মানে?”

“মানে হলো মা কে বুঝিয়ে সুজিয়ে ওদের কাউকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দিবো। ওটা নীতিও হতে পারে।”

“ব্ল্যাকমেইল করছিস?”

“সোনা ভাই না আমার তুই? প্লিজ!”

নাহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ”আসছি! রেডি হতে তো দে?”

শাফিন চট করে নাহিয়ানের গালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা বুঝতে সময় লাগলো নাহিয়ানের। বুঝতে পেরেই গাল ঘষতে ঘষতে বললো, “ছি!”

__________________________________

বাড়ি থেকে রওনা হয়েছে আরো একঘন্টা আগে। দেড় ঘন্টার রাস্তার মাঝে আধা ঘণ্টাই জ্যামে বসে আছে সবাই। সবাই বলতে নীতি, প্রীতি, বর্ষা, রীতি, শাফিন, নাহিয়ান আর সাজ্জাদ। মাইক্রো নিয়েছে যাওয়ার জন্য। নীতি এবার অনেক বিরক্ত। মাইক্রো থেকে নামার জন্য পদক্ষেপ নিতেই বর্ষা বলে উঠলো, “কই যাস?”

“হাঁটতে!”

“মানে?”

“মানে আমি আর বসে থাকতে পারবো না। হেঁটে যাবো!”

নাহিয়ান তাচ্ছিল্য করে বললো, “হ্যাঁ, যাও যাও। দশ মিনিটের রাস্তা তো। হেঁটেই যাওয়া যায়!”

নীতি কড়া চোখে ওর দিকে তাকালো।

“আপনার মত পঙ্গু না, পা আছে। বুড়ো হয়ে যাই নি যে হেঁটে যেতে পারবো না। থাকেন আপনারা।”

বলেই হাত ব্যাগ নিয়ে নেমে গেলো। ওর পিছু পিছু বর্ষাও নামলো। বান্ধবীকে একা ছাড়বে কি করে? প্রীতি নামলো না। এসি ছেড়ে রোদের মধ্যে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। রীতি বেশ কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু নীতি কোনো কথা না শুনে ওদের বিদায় দিয়ে ফুটফাট দিয়ে হাঁটতে লাগলো। রীতি চিন্তিত হয়ে বললো, “ওরা একা কি করে যাবে। এত রাস্তা হাঁটবে কি করে?”

“সেটাই তো!”

শাফিনের জবাবে রীতি ধমক দিয়ে বললো, “কেমন দুলাভাই তুমি? যাও ওদের পিছু পিছু। ওদের খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব না?”

শাফিন অসহায় হয়ে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে। নাহিয়ান ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে বলল, “আর কোনো হেল্প করতে পারবোনা আমি। তাকিয়ে লাভ নেই।”

“প্লিজ!”

“ভাইয়া, সব সময় এমন অসহায়ভাবে রিকোয়েস্ট করবে না তো। ওই রীতি তোর জামাই সামলে রাখ।”

সঙ্গে সঙ্গে শাফিন ওর মাথায় গাট্টা দিয়ে বললো, “ভাবী হয় তোর। সম্মান দে!”

“তোর বউ হওয়ার আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয় ও। আমার জন্যই ও তোর বউ ভুলিস না!”

“শাফিন, যাবা তুমি?”

শাফিন দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললো, ”এখন আমার জন্য নীতি তোর বউ হবে।”

“আবার?”

“যা!”

নাহিয়ান উপায় না পেয়ে নেমে গেলো। বর্ষা আর নীতিকে খুঁজতে লাগলো।

“এই টুকু সময়ে গেলো কোথায়?”

__________________________________

ফুটপাতের উপর একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বসে আছে বর্ষা। গালে হাত দিয়ে বাচ্চাটার চকলেট খাওয়া দেখছে। দূর থেকে নাহিয়ান ওকে দেখে এগিয়ে গেলো। যেতে যেতেই ভাবলো, “নামতে না নামতেই দুইজন হয়রান হয়ে গিয়েছে?”

ও পৌঁছানোর আগেই নীতি। হাতে খাবারের পার্সেল। সেও মেয়েটির আরেক পাশে বসলো। খাবারের প্যাকেট মেয়েটির দিকে এগিয়ে বললো,“এখানে তোমার মা, বাবা, ভাই সবার জন্য খাবার আছে। এবার খুশি তুমি?”

মেয়েটি মিষ্টি করে হেসে মাথা নাড়লো। হাত বাড়িয়ে সেগুলো নিতে গেলেই নীতি তা সরিয়ে নিলো।

“ফ্রি তে তো দিচ্ছি না আমি! একটা পাপ্পা দেও দেখি!”

বলেই গাল বাড়িয়ে দিলো। মেয়েটাও হামি দিলো। অতঃপর মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে দুইজন হাঁটতে লাগলো।

“তুই এটার জন্যই নেমেছিস, তাই না?”

নীতি হাসলো কেবল!

“তাই তো বলি, নীতি এসি ছেড়ে এই রোদে হাঁটতে চাচ্ছে? যার গরম দু দন্ডও সহ্য হয় না, সেই নীতি!”

“হুমম হুমম!”

“কষ্ট করার কি দরকার ছিল? টাকা দিলেই তো ও কিনে নিতে পারতো।”

“সে পারতো। তবে ও বাচ্চা মানুষ। বয়স হবে সাত কি আট! আর এই দুনিয়াটা বড্ড লোভী। তারা আমাদের মত প্রাপ্ত বয়স্কদেরকেই বোকা বানাতে চায়, সেখানে ওই বাচ্চা কি বুঝবে? দেখা যাবে প্রয়োজনের থেকেও বেশি দাম রেখেছে। আবার বাচ্চাটার মনে যদি টাকার বাজে প্রভাবে পড়ে, তাহলে? হতে পারে খাবার না কিনে অন্য কিছু কিনে ফেললো। বা হারিয়ে ফেললো, বা…”

বর্ষা ওর সামনে গিয়ে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে বললো, “থাম বইন, বুঝছি আমি! এর অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।”

পরক্ষণেই পিছনে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আরে ভাইয়া?”

নীতি বর্ষার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে পিছে তাকালো। নাহিয়ান ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো। বর্ষা হেসে বললো, “আপনিও নেমে পড়েছেন?”

“তোমাদের জন্য নেমে পড়তে হয়েছে।”

নীতি ভ্রু কুঁচকে রেখেই জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? আমরা কি আপনাকে নামতে অনুরোধ করেছি?”

“তোমার দুলাভাই করেছে!”

“বাহ, অনুরোধ করলো আর নেমে গেলেন? আপনি তো বেশ ভাই ভক্ত দেখছি।”

নাহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “বক বক কম করো হাঁটতে শুরু করো!”

“ভালো কথা বললেও রেগে যায়। অদ্ভুত মানুষ!”

নাহিয়ান প্রতি উত্তর করলো না। তিনজন হাঁটতে লাগলো। বর্ষা নাহিয়ানকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে।

“আপনি আর রীতি আপু তো সেম এজ তাই না ভাইয়া?”

“হুমম!”

“চাকরি বাকরি করেন না?”

“পাওয়া তো লাগবে!”

“পেয়ে গেলে কি করবেন?”

“কাজ করবো, আবার কি করবো?”

“বিয়ে করবেন না?”

“করবো!”

“কাকে করবেন?”

নাহিয়ান হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো। এবার বুঝতে পারছে তার ভাই কেনো এই শালীকা টিমদের ভয় পায়। বর্ষা ওর চাহনি দেখে বললো, “মানে গার্লফ্রেন্ড আছে কি?”

“হুমম আছে!”

“কে সে?”

নাহিয়ান কিছু বলার আগে নীতি বলে উঠলো, “তূর্ণা!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা তোমায় কে বললো?”

“সাজ্জাদ ভাইয়া!”

নাহিয়ান বির বির করে সাজ্জাদকে ভয়ঙ্কর একটা গালি দিলো। নীতি সেটা বুঝতে পেরে গলা ঝাড়লো। বর্ষা আবারও প্রশ্ন করলো,

“আপনার ফেসবুক আছে?”

“না থাকার কি কথা?”

“না তাও ঠিক! দেয়া যাবে?”

“কি করবে?”

“এমনি, মানে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। যতই হোক, বেয়াইন হই আপনার।”

নাহিয়ান একটু ভাবলো। অতঃপর বললো, “দিতে পারি। এক শর্তে!”

“কি?”

“দশ মিনিটের জন্য একটু মুখটা বন্ধ রাখতে হবে।”

সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা দাঁড়িয়ে গেলো। নীতি শব্দ করে হাসতে লাগলো। নাহিয়ান হেসে বললো, “আরে মজা করছি!”

“আপনিও না !”

নাহিয়ান নিজের ফোন বের করলো।

“নাম বলো!”

“সিদ্রাতুল বর্ষা!”

নাহিয়ান সার্চ দিলো। পেয়েও গেলো। অতঃপর রিকোয়েস্ট পাঠালো।

“ডান!”

বর্ষা আবার কথা বলতে শুরু করলো। নাহিয়ান এবার মনোযোগ দিলো না। এফবি স্ক্রোল করতে লাগলো। মূলত নীতির আইডি ঘুরে দেখেছিলো। হুট করেই ওর এক পোস্টে ট্যাগকৃত এক আইডি পেলো। নাম “প্রিয়োনা অনান নীতি”। সেখানে নীতি আর বর্ষার ছবি! মনে মনে আওড়ালো, “প্রিয়োনা!”

অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, “প্রিয়!”

নীতি থেমে গেলো। ওরা দুইজন এগিয়ে যাচ্ছে। ওর মনে হলো কেউ ওকে ’প্রিয়’ সম্বোধনে ডেকেছে। আশেপাশে তাকালো ও। নাহ কেউ নেই! তাহলে কি সে ভুল শুনলো? দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশপানে তাকালো।

“আমাদের এই বিচ্ছেদ মৌসুমের সমাপ্তি কবে হবে অনুভব?”

কথাটা মনেই রইলো তার। আবার পথ চলতে শুরু করলো সে। ইশ, পথ যদি জানতো তার অনুভবের ঠিকানা।

“মিস দুর্নীতি, এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”

নীতি ঠোঁট উল্টালো। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর এসেছে। এখনও ত্রিশ মিনিটের পথ বাকি।

“পা ব্যাথা করছে।”

বর্ষা টিটকারী দিয়ে বললো , “খুব তো হাঁটবি বলে নামলি। এখন ব্যাথা করছে কেনো জান?”

নাহিয়ান গলা খাঁকারি দিলো। ছি ছি, কিসব জান টান বলছে।

“তো এখন কি করবেন শুনি?”

“অটো নিবো। ওই তো যাচ্ছে। এই অটো!”

বলেই ছুটলো অটোর দিকে। নাহিয়ান হতাশ হয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো, “এসি মাইক্রো ফেলে উনি অটোতে চললেন। একদম আজব তোমার বান্ধবী!”

বর্ষা হেসে বললো, “ছোট থেকেই মাথায় একটু সমস্যা, কিন্তু মনটা ভালো।”

“অপমান করলি নাকি প্রশংসা?”

নীতির গম্ভীর কণ্ঠে বর্ষা চমকে তাকালো।

“তুই না ওদিকে গেলি?”

“তোদের না নিয়ে গেলে, অটো ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে তো। তাই এখানে আবার আসলাম আর আপনার মূল্যবান বক্তব্য শুনলাম।”

”ভাইয়া, আমাদের যাওয়া উচিত। আপুরা মনে হয় পৌঁছে গেছে।”

বলেই হাঁটা শুরু করলো। নীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো। নাহিয়ান বড় করে শ্বাস নিলো। এদের সাথে আর একটু থাকলে সেও পা’গল হয়ে যাবে। কিছুদূর গিয়েই ওরা অটো নিলো।

__________________________________
“রীতিরা কোথায়?”

বাড়িতে পা ফেলতে না ফেলতেই মায়ের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে ফেলে নীতি।

“আসেনি তারা?”

“আসেনি বলতে? তোরা এক সাথে আসিস নি?”

“না। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল তাই আমরা হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি।”

বর্ষা নীতির দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলে, “ওরে বাবা! হেঁটে হেঁটে এসেছো তুমি?”

“ওই মানে জ্যাম ছাড়িয়ে খালি রাস্তায় অটো নিয়েছি আরকি!”

নীতির মা আবার বললেন, “আচ্ছা সে না হয় বুঝলাম। কাল ও বাড়ি থেকে আসার সময় তোকে যে কিছু টাকা দিয়েছিলাম সেগুলো কোথায়?”

নীতি থমকালো। এবার কি বলবে?

“কিসের টাকা?”

নীতির মা দাঁত কটমট করে বললেন, ”তোকে যে বললাম যদি আগে আসিস তাহলে পারলে টাকা দিয়ে রীতির জামাই এর জন্য শার্ট প্যান্ট কিনে আনতে। আর না পারলে টাকা রেখে দিতে। মনে নাই?”

নীতি আমতা আমতা করে বলল, “ওহ আচ্ছা। দাঁড়াও দিচ্ছি।”

নীতি ব্যাগ হাতড়ে তেরো’শো টাকা বের করলো।

“বাকি টাকা কোথায়? পঁচিশশো দিয়েছিলাম তো!”

”খরচ হয়ে গেছে!”

নীতির মা বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করলেন, “আজ আবার কার কি ভাঙলেন?”

নীতি হাসলো।

“জানো যখন জিজ্ঞেস কেনো করছো? বাবার তো আরো টাকা আছে। যাও সেখান থেকে নিয়ে নেও!”

“এমন ভাবে বলছিস যেনো ওগুলো তোর টাকা!”

“বাবার মানেই আমার!”

নীতির মা বির বির করতে করতে চলে গেলেন। পাশেই বর্ষা দাঁড়িয়ে ছিল।

“আন্টিকে সব সময় ভাঙচুরের কথা কেনো বলিস? সত্যিটা বললে কি হয়?”

”মায়ের এই রাগী চেহারায় মাকে ভীষণ মিষ্টি লাগে। আগে তো ভীষণ রাগ করতো। এখন আর তেমন করে না।”

“কারণ তার ধারণায় এটাই গেঁথে গেছে মেয়ে তার বদমেজাজী!”

বলেই বর্ষা নীতির রুমের দিকে যেতে লাগলো। নীতি হাসলো কেবল।

“সত্যি বললে বললে তার চোখে আনন্দ দেখতে পেতে।”

নাহিয়ানের কণ্ঠ শুনে চমকে ওর দিকে তাকালো । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি…”

আর কিছু বলার আগেই নাহিয়ান বলে উঠলো, “দেখেছি। কারণ আপনাদের যাওয়ার কয়েকমিনিট পরেই আমি নেমেছি ম্যাম।”

নীতি নাহিয়ানের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল, “কাউকে বলবেন না প্লিজ!”

“কেনো?”

নীতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো, “আপনার যেমন টাকার গরম দেখানো পছন্দ না, আমারও তেমন মানুষের কাছে এসব বলে শো অফ করা পছন্দ না। যা আছে মনে মনে! শুধু বর্ষাই জানে! আর কেউ জানে না এসবের ব্যাপারে! তাই! বুঝলেন?”

“বুঝলাম!”

“গুড বয়! আপনার রুম ওইদিকে! ঐযে তিন নাম্বার রুমটা। ওটা গেস্ট রুম! যান। ফ্রেশ হয়ে নিন।”

বলে চলেই যাচ্ছিলো, কিন্তু কিছু একটা মনে পড়তেই আবার ওর কাছে আসলো।

“আব.. সেদিনের জন্য আমি দুঃখিত! আমার রাগ খুব একটা হয় না। কিন্তু হলে কি করি বলতে পারি না। তাই অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার গিটার ভেঙ্গে ফেলেছি। আপনার মুখের প্রতিক্রিয়া দেখে ভেবেছিলাম হয়তো অনেক দামী গিটার, তাই এমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। তাই টাকার অফার করে বসেছিলাম। যদি আপনি হ্যাঁও বলতেন তবুও আমার কাছে দেয়ার মত কোনো টাকাই পেতেন না। আর যখন জানলাম সেটা কারো স্মৃতি তখন খারাপ লেগেছে। আর বুঝেছিও। কিন্তু আপনার ঝগড়ার জন্য আপনাকে সরি বলতে আর ইচ্ছে করেনি। তাও আজ বললাম।”

“ঝগড়া আমি করি? নাকি তুমি করো?”

“এইযে এখন যে শুরু করছে সে করে। টাটা!”

বলেই নীতি এক দৌড়ে উপরে নিজের ঘরে যেতে লাগলো। নাহিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তার ভাবনা আপাতত এক জায়গাতে ই। শুরুটা কে করেছে?

#চলবে

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১১

খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে যায় সবার। খাওয়া শেষ করেই যে যার রুমে চলে গিয়েছে। নীতি গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে বর্ষাও আসলো।

”ইয়ার, প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

“তো ঘুমা, না করেছে কে?”

বলেই উঠে ফোন নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। নীতি ফেসবুকে ঢুকলো। ‘প্রিয়’ আইডিতে দুইদিন ধরে যাচ্ছে না ও। ইচ্ছেও নেই আর। বার বার হতাশ হতে ভালো লাগে না ওর। নিজের নামের আইডিতে ঢুকতেই দেখতে পেলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে কয়েকটা। নীতি সেগুলো চেক করতে লাগলো। হুট করেই ও থেমে গেলো একটা নামে। ‘ইহরাম আবসার নাহিয়ান’। নামটা দেখে মুখ দিয়ে একটাই কথা বেরিয়ে এলো তার।

“এত্ত বড় নাম!”

পরক্ষণেই নিজের নামের কথা মনে করে হেসে দিলো। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ফোন পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। ঘুম পাচ্ছে তার ভীষণ। অতঃপর ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।

__________________________________

মধ্যরাত। ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা ছুঁই ছুঁই। ঘুম নেই নীতির চোখে। এ আর নতুন নয়। তার উপর দুপুরে বেশ করে ঘুমিয়েছে অনেকটা সময়। ওদিকে বর্ষা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমের দেশে চলে গেছে। নীতি হেসে ওর গায়ে চাঁদর টেনে দিল। কিছুক্ষণ রুমের মাঝে পায়চারি করে বেরিয়ে গেলো। উদ্দেশ্য ছাদে যাওয়া। এটাও নতুন নয়। এমন কত রাত বিলাস করেছে সে। ভয়? তা তার মাঝে নেই। ধীর পায়ে ছাদের দরজায় যেতেই বুঝলো ভিতরে কেউ আছে। উকি দিয়ে দেখতেই দেখলো নাহিয়ান রেলিংয়ে দু হাতে ভর দিয়ে নিচের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে। পিছন থেকে দেখেও চিনতে অসুবিধা হয়নি নীতির। চলে যাবে ভেবে ঘুরে দাঁড়াতেই তৎক্ষণাৎ আবার নাহিয়ানের দিকে তাকালো। না দেখেও সিগারেটের ধোঁয়া দেখে বুঝতে পারলো নাহিয়ান সিগারেট খাচ্ছে। রাগ হলো তার। ভিতরে ঢুকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ”রাত বিরেতে এই ভদ্র বাড়িতে সিগারেট খেতে লজ্জা করছে না?”

নীতির কথায় নাহিয়ান চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সিগারেট ফেলে ওর দিকে তাকালো। নীতির হাসি পেলো নাহিয়ানের মুখ দেখে। যেনো ভয়ংকর কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।

“তুমি এখানে?”

“আপনি এখানে কেনো সেটা বলেন। বাড়িটা আমার, আমি যেখানে খুশি যেতে পারি।”

নাহিয়ান আবার আগের মতোই রেলিংয়ে দু হাতে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। কেবল উত্তর দিলো, “আমার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি। যেখানে খুশি থাকতে পারি।”

“আপনার ভাইয়ের, আপনার না।”

বলেই নাহিয়ানের পায়ের কাছে পড়ে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট পা দিয়ে নিভিয়ে দিলো। পা উচু করে দেখে নিলো তার পরিহিত স্লিপার ঠিক আছে কিনা।

“আমারও হতে পারে!”

“এই বাড়ির কাকে পটানোর চেষ্টা করছেন? প্রীতি নাকি সিনথী?”

সিনথীর কথা শুনে হাসলো। ওটুকু মেয়েকে কি পটাবে? নাহিয়ানের হাসি দেখে নীতিও ওর মতো দাড়িয়ে বললো, “আজকালকার ছেলেরা কচি মেয়ে বেশি চায়। তাই বললাম!”

নাহিয়ান এবার শব্দ করে হাসলো।

“তো তুমিও কি কচি ছেলে চাও নাকি?”

নীতি ভরকে গেলো।

“আরে আমি ছেলেদের কথা বলছি!”

“সব ছেলেরা এক হয় না!”

“তা ঠিক। কিছু কিছু ছেলেরা অসাধারণ হয়!”

নীতির কথা শুনে ওর দিকে তাকালো নাহিয়ান। মেয়েটা কোনো ভাবনায় চলে গেছে। হয়তো তার কেউ সেই অসাধারন ছেলে। নাহিয়ান ঘাটলো না। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে সে, এসব থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

“তো আপনি যে তুর্ণাকে ফেলে এখানে মেয়ে পটাচ্ছেন, তূর্ণা জানে?”

“তূর্ণাকে আমি বোনের চেয়ে বেশি কিছুই ভাবি না!”

“ওমা, তাহলে যে সাজ্জাদ ভাইয়া বললো?”

“ওরা এমনিতেই মজা করে।”

“ওহ, কিন্তু মেয়ে হিসেবে ভীষণ ভালো। মানাবে কিন্তু আপনার সাথে।”

নাহিয়ান প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, “এত রাতে ছাদে যে? ঘুমাও নি কেনো?”

“সেম প্রশ্ন আমারও!”

“উত্তরটা আমি আগে চেয়েছি!”

“দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম, সাথে বর্ষার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস আমাকে ঘুমাতে দেয় না।”

“আর আমার জায়গা পরিবর্তন সেই সাথে সাজ্জাদের নাক ডাকা! তার উপর এত ঘুম কাতুরে, ডাকলেও শোনে না। জাস্ট বিরক্ত আমি।”

সাজ্জাদের নাক ডাকা শুনে নীতি কল্পনা করলো
সাজ্জাদ আর বর্ষার বিয়ে হয়েছে। ঘুমের সময় বর্ষা সাজ্জাদের গায়ে হাত পা তুলে দিচ্ছে। আর এদিকে সাজ্জাদ নাক ডাকছে। দুইজনই ঘুম! আহা, কি সুন্দর সুখের সংসার!

“সাজ্জাদ ভাইয়ের পার্টনার বর্ষা হলে দু’জনই সুখে থাকবে!”

“মানে?”

“এইযে দুইজন ঘুম কাতুরে। তাই বর্ষা ভাইয়ার শরীরে হাত পা তুলে দিলেও ভাইয়া টের পাবে না। আবার বর্ষাও ঘুম কাতুরে, তাই সাজ্জাদ ভাইয়া নাক ডাকলেও সমস্যা হবে।”

“বাহ! কি সুন্দর প্রেডিকশন তোমার!”

“প্রেডিকশন না, বললাম আরকি।”

“তো তোমার কোনো বাজে অভ্যাস নেই, মানে ঘুমের মাঝে?”

“নেই বলবো না। পাশ বালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসে না। এটাই বাজে অভ্যেস।”

“আমার তো ঘুম আসে।”

নীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। নাহিয়ান ঠোঁট চেপে হাসছে।

“তো?”

“আমাদেরও তো তাহলে সংসার হতে পারে, সুন্দর সংসার! আহা। তুমি পাশ বালিশ নিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারবে। টানাটানি করবে না কেউ!”

”হুঁহ, আপনার কাছে থাকার চেয়ে পাশ বালিশ ছাড়া থাকা ভালো!”

“মিস প্রিয়োনা!”

নীতি চমকে তাকালো। নাহিয়ান ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো, “এই মুহুর্তে আপনি আমার কাছেই আছেন। আপনি, আমি একা, এই ছাদে! বুঝছেন কিছু?”

নীতি ঢোক গিললো। এই নাহিয়ান এভাবে কথা বলছে কেনো? নাহিয়ান বেশ অনেকটা ওর কাছে মাথা এগিয়ে নিয়ে আসছে। আর নীতি মাথা পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হুট করে নাহিয়ান আবার নিজের মাথা সরিয়ে নিয়ে বললো, “তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট নাই আমার। তাই ভেবো না বেশি!”

আজব। লোকটা এভাবে বলছে কেনো? নীতির কি আছে নাকি ওর প্রতি ইন্টারেস্ট? কিছু বলবে তার আগেই নাহিয়ান বললো, “যেকোনো একজনের যাওয়া উচিত এখান থেকে। এত রাতে ছাদে আমাদের একা দাঁড়িয়ে থাকাকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না।”

নীতি রেলিং ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “হুমম, জলদি যান!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“মানে?”

“মানে আমি থাকবো, আপনি যান!”

“আমি যাচ্ছি না কোথাও।”

“আমিও না!”

দুইজন দুইদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। নীতি আকাশের দিকে তাকালো।

“আজকের আকাশে চাঁদ নেই।”

“অন্ধকার ভয় লাগে?”

“ভুলে যাচ্ছেন, আমি একাই ছাদে এসেছিলাম, রাত্রি বিলাস করিতে মহাশয়!”

“বাহ, খুব সাহস দেখি তোমার!”

নীতি হাসলো।

“আমার প্রিয় রঙ সাদা আর কালো। সাদা হলো শুভ্রতার রঙ। আর কালো অন্ধকারের। কালোকে ভালোবাসতে পারলে অন্ধকারকে কেনো পারবো না?”

নাহিয়ান কিছু বললো না। নীতি আবার বললো, “আমার বাড়ির লোক অবুঝ নয়। তারা আমায় চিনে। বিশ্বাস করে। তাই উল্টো পাল্টা ভাবার কারণ নেই।”

নাহিয়ান এবারও চুপ। নীতিও আর কিছু বললো না। হুট করেই নাহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। নীতির কিছুটা কাছে গিয়ে বলল, “কিন্তু আমায় তো করে না! আর তুমি, আমি এখানে সম্পূর্ণ একা! চিৎকার করলেও এখন সেটা কেউ শুনতে পারবে না। বুঝতে পারছো? কি বলছি?”

নীতি অদ্ভুতভাবে নাহিয়ানের চোখে চোখ রাখলো। কিছুটা থমকানো দৃষ্টি বিনিময় হলো একে অপরের সাথে। অতঃপর হেসে বললো, “কিন্তু আপনি এমন কিছুই করবেন না। কারণ আপনি খুব ভালো করেই জানেন কি করে নারীদের সম্মান করতে হয়। রীতি আপুর সময় দেখেছি।”

“রীতি আমার ফ্রেন্ড হয়! তাই…”

নীতি ওকে বলতে না দিয়েই বললো,

”মানুষের চোখ কখনো মিথ্যে বলে না। চোখ দেখলেই বলা যায় তার দৃষ্টি কেমন। আপাতত আপনার দৃষ্টি কেবল আমার চোখের মাঝেই বরাদ্দ। সেখানে কোনো প্রকার খারাপ কিছু আমি দেখতে পাচ্ছি না।”

নাহিয়ান দূরে সরে দাঁড়ালো। এই মেয়ের বড্ড সাহস। কোথায় ভাবলো ভয় দেখিয়ে পাঠিয়ে দিবে। তা না! বেশ কিছুক্ষণ পর নীতি নেমে গেলো। নাহিয়ান সেদিকে কয়েক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

__________________________________

সময় চলছে তার নিজ স্রোতে। কেঁটে গেছে কয়েকটা দিন। এই কয়েকদিনে সবাই সবার কাজ, পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছে।

ফুচকার দোকানে বসে আছে নীতি। সামনে থাকা মানুষটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সে। হুট করে ওকে ফুচকা ট্রিট দেয়া লোকটির মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে সে।

দিন শুক্রবার। শীতের সময় এই বিকেলে ঠান্ডা যেনো বেশীই পড়ে। নীতি সোয়েটারের পকেটে হাত ঢুকালো। টিউশন শেষে বাড়ি ফিরছিলো সে। তখনই আনাফ ফোন করলো, তার সাথে দেখা করার জন্য। আপাতত সেখানেই আছে সে। ফুচকা এসে গেছে। নীতি একবার ফুচকা তো একবার আনাফের দিকে তাকাচ্ছে।

“কি দেখছিস? খা, আজকে যাই খেতে চাস সব খাওয়াবো। যত খুশি খা! ”

নীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“হঠাৎ এত ভালো হলে কি করে? জীবনেও তো দশ টাকার চিপস এনে দিতে না। আর আজ ফুচকা? আবার বলছো যা খেতে চাই সব খাওয়াবো! যত খুশি?”

আনাফ মাথা চুলকে বললো, “আরে তুই আমার ছোট বোন। এইটুকু তো করতেই পারি!”

“তোমার মতিগতি আমার ভালো টিকছে না ভাইয়া।”

“আরে আমার চাকরি হয়েছে। সেই খুশিতে খাওয়াচ্ছি!”

“তো সবাইকে না খাইয়ে একা আমাকে কেনো?”

“তুই আমার আদরের বোন তাই!”

নীতি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এত ভালোবাসা? হঠাৎ?

“সত্যি বলছি, আর কিছু নেই এর মাঝে!”

নীতি বিশ্বাস করলো। আর আনাফের তো প্রীতি আছেই। সো চিল! সে আয়েশ করে ফুচকা মুখে নিলো। আহা! অমৃত যেনো এগুলো। পরপর দুই প্লেট খেয়ে বেরিয়ে এলো ওরা।

“বিরিয়ানি খাবি?”

“না!”

“কেনো? তোর তো পছন্দ!”

নীতি ভাবলো। এত্ত সুন্দর সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। কিন্তু ওর মনে হচ্ছে কিছু না কিছু ঘটবে। তবুও পাত্তা না দিয়ে হ্যাঁ বলে দিলো।

আপাতত সামনে থাকা বিরিয়ানি চামচ দিয়ে তুলে আয়েস করে মুখে দিচ্ছে নীতি। মনে মনে ভাবছে যাওয়ার সময় আরো কিছু কিনিয়ে নিবে। টিউশন করতো নিজের এসব খাওয়া দাওয়ার শখ মেটাতে। নয়তো ওর প্রয়োজন পড়ে না। সেই সাথে টুকটাক জিনিস নিজের টাকাতে কিনতেই ভালো লাগে।

“মজা না?”

“হুমম!”

বলেই আরেক চামচ মুখে দিলো।

“এবার আসি আসল কথায়।”

মুখ থেকে আর চামচ বের করলো না নীতি। একটু নড়ে চড়ে বসলো। আনাফের দিকে তাকাতেই সে বললো, “দেখ আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে। এবার আমার বিয়ের পালা। বয়সও হচ্ছে, বুঝিস তো!”

মুখ থেকে চামচ সরিয়ে প্লেটে রাখলো। আস্তে আস্তে মুখে থাকা খাবারটুকু চিবুতে লাগলো।

“তাই যদি মাকে একটু বলতি।”

ভালো মতো না চিবিয়েই খাবারটুকু গিলে নিলো নীতি। পাশে থাকা বোতল থেকে কিছুটা পানি খেলো। থমথমে মুখ করে বসে আছে সে।

“কিরে নীতি?”

“তাই তো ভাবি কিপটা ভাই হুট করে এত্ত উদার হলো কি করে? আবার আমি ই বা বিশ্বাস করলাম কি করে? যে ভাই এক টাকার চকলেট আনলেও সেটা আমায় না দিয়ে নিজে খেয়ে বলতো, ‘আমার টাকায় কেনা’, সে আমায় এত্ত কিছু নিজের ইচ্ছেতে খাওয়াচ্ছে; আগেই বোঝা উচিত ছিল।”

আনাফ হাসলো। নীতি প্লেট ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “রইলো তোমার বিরিয়ানি। আমি চললাম!”

“বিল দিয়ে যা।”

“কিসের বিল?”

“বিরিয়ানি। এই ওয়েটার, ম্যাম এর থেকে বিল রেখে দিবেন।”

বলে ও উঠে যেতে নিলেই নীতি তড়িঘড়ি করে আটকে দিয়ে বললো, “আরে আমার কাছে বাসায় ফেরার জন্য পঞ্চাশ টাকা আছে। সোয়েটারের পকেটে করে ফোন এনেছি। আর ফোনের কভারে পঞ্চাশ টাকা। আমি টাকা কই পাবো?”

“তাহলে থালা বাসন ধুয়ে দিস ওদের।”

নীতি অসহায়ভাবে তাকালো। আনাফ নিজের জায়গায় বসলো। নীতিও বসলো। প্লেট টেনে উদাস মনে খেতে শুরু করলো। বিরিয়ানির উপর রাগ দেখিয়ে লাভ আছে? ফেঁসে এমনেই গিয়েছে। দুঃখ বিলাস করুক এই বিরিয়ানি খেয়ে।

“দেখ নীতি, মাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। মনে আছে ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে রীতি আপু আমাকে ফেলে দিয়েছিল মজা করে? পড়ে যাওয়ায় পা ছিলে গিয়েছিল। তখন মাকে দেখাতেই মা ঠাস করে রীতি আপুর গালে…”

বলেই চুপ করে গেলো। নীতিও ঢোক গিললো। রীতির মা বরাবরই ছেলে মেয়েদের খুব রকমের শাসন করেন। তাই তো রীতি আপু সেদিনের পর আর মজার ছলেও আনাফ ভাইয়ার গায়ে টোকা দেয়নি। শুধু রীতি না, ইফেক্টটা নীতি, প্রীতি আর আনাফের উপরেও পড়েছে । ওরা ভাবেও নি রীতি এভাবে থা’প্পড় খাবে। সেই থেকে মনে ভয় ঢুকেছে একেক জনের। যদিও নীতি জানে বড় চাচী নিতান্তই এখন একজন শান্ত মানুষ। তবুও ভয় তো ভয়ই! বির বির করে বললো, “এখন সেই থা’প্পড় তুমি আমাকে খাওয়াতে চাও।

“আরে মা তোকে কিছু বলবে না।”

নীতি খাওয়ায় মন দিল।

“বলবি তো?”

“উপায় রেখেছো কি আর?”

“প্রমিস?”

নীতি ঠোঁট উল্টে তাকালো। ভেবেছিল একবার বিল দিয়ে দিলেই ও ছুটে চলে যাবে। কিন্তু এই প্রমিস! কেন? হতাশ হয়ে বললো, “প্রমিস!”

আনাফ বিশ্বজয়ের হাসি দিল। বিল পরিশোধ করে নীতিকে তাড়া দিয়ে বললো, “তাড়াতাড়ি শেষ কর। আমি উল্টো দিকে যাবো আবার। মিষ্টি আনতে। তোকে বাড়ি দিয়ে তারপর যাবো!”

“তুমি যাও, আমি যেতে পারবো!”

“সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তোকে একা ছাড়া সেফ না!”

“এখান থেকে বের হয়েই রিকশা নিবো!”

“সিউর?”

“হুমম!”

“ওকে পৌঁছে ফোন দিস। টাটা!”

বলেই বেরিয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গেই নীতি বলে উঠলো, “শা’লার বা’ন্দর। বড় না হলে ঠাস ঠুস দিতাম। প্রীতিকে বলবো তো আমি, তোকে উঠতে বসতে থা’পড়ায়! ফা’জিল পোলা, আমাকে এমনে ফাসায় দিলি!”

বলেই চোখ মোছার ভান ধরে বিরিয়ানি মুখে দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষে বের হতেই দেখলো মাগরিবের আজান পড়েছে। আশেপাশে রিকশাও নেই। নীতির কিছুটা ভয় হলো। সন্ধ্যার পর একা বাড়ির বাহিরে থাকে না সে। আনাফের ডাবল জার্নি হবে দেখেই চলে যেতে বলেছিলো ও। এবার ও নিজে যাবে কি করে?

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৯

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৯

“ভালোবাসতে কি চাই?”

“বিশ্বাস!”

“বিশ্বাস করো আমাকে?”

প্রিয় মুচকি হেসে বললো,“না করলে কখনো এই মনে তোমাকে জায়গা দিতাম না!এই সঙ্গ কখনো চাইতাম না!কখনো বলতাম না,‘জনাব!ভালোবাসি..’!”

অনুভব এক গাল হেসে বললো,“আমিও!”

“কি?”

“বাসি!”

“কি বাসেন?”

“ভালোবাসি!”

“আমার থেকে কম!”

“জি, না বেশি।”

“কই দেখি না তো!”

প্রিয় হেসে বললো, “জাস্ট একবার আমার হয়ে যান, সত্যি বলছি ভালোবাসায় আপনাকে হারিয়ে দিবো আমার কাছে! দেখিয়ে দিবো ভালোবাসায় আমি ই বেশি স্কোর করেছি। মিলিয়ে নিয়েন!”

__________________________________

অনুভব আর প্রিয়র সম্পর্কটা ছিল স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক। যেখানে বর্তমান সম্পর্কের মতো না ছিল কোনো চাওয়া পাওয়া, না ছিলো কোনো অশ্লীলতা। মিষ্টি ছিল তাদের সম্পর্ক। তাই হয়তো হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছেদ মানতে পারছে না নীতি।

“এখানে কি করছো নীতি?”

সালেহার ডাকে স্মৃতিচারণ থেকে বেরিয়ে এলো নীতি। সব জায়গায় কেবল অনুভবের স্মৃতিতে মেতে থাকা যেনো তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“কিছুনা আন্টি!”

সালেহা নীতিকে একবার পরখ করলো। অতঃপর চোখের কোণে থেকে কাজল নিয়ে ওর কানের নিচে লাগিয়ে বললো, “কারোর নজর না লাগুক! ভীষণ মিষ্টি লাগছে তোমায়।”

নীতি হাসলো কেবল।

“এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো যে? প্রীতি, বর্ষা কোথায়?”

“রেডী হচ্ছে!”

“এখনও শেষ হয়নি?”

“আমি দেখে আসছি!”

“আচ্ছা যাও, আমি ওদিকটা দেখি। তোমরা সেই সকালে খেয়েছো। তিনটা বেজে যাচ্ছে। একসাথে বসে পড়।”

বলেই সালেহা চলে গেলেন। নীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে লাগলো। আর একটা সিঁড়ি বাকি তখনই হুট করে নাহিয়ান সামনে আসলো। সেও নামার জন্যই এসেছে। নীতি ওকে দেখে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই নাহিয়ান জলদি করে ওর ডান হাত ধরে ফেললো। নীতি ওভাবেই রইলো। নাহিয়ান হাত ছাড়লেই নীতি পড়ে যাবে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে নীতি। বুক ধড়ফড় করছে তার। ওদিকে নাহিয়ান পলকহীন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। স্বল্প সাজে এক অদ্ভুত রমণী তার সামনে। চোখ ফেরানো দায় আপাতত। এদিকে নীতি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “আমাকে কি এমনেই ঝুলিয়ে রাখবেন? টান দিচ্ছেন না কেনো? ”

নাহিয়ান বিরক্ত হলো। নীতির কণ্ঠে ছিল ধমকের আভাস। নাহিয়ান অস্পষ্টভাবে বললো, “রমণীর মুখশ্রী নিষ্পাপ হলে কি হবে? ইনি একজন আদবহীন মহিলা। না না নাহিয়ান, কোনো রমণীর রূপের জালে ফেঁসে যাস নে! এরা পরে ডা’ইনি বের হয়!”

“উঠাবেন!”

নীতির ধমকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো নাহিয়ান। আপাতত এদিকে কারো নজর নেই। সবাই খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়ার আয়োজন বাগানের দিকটায় করা হয়েছে। তাই জনগণ সব ওখানেই। নাহিয়ান বাঁকা হাসলো। হাত আরেকটু হালকা করে ধরে বললো, “যদি ছেড়ে দেই?”

নীতি তৎক্ষণাৎ আরেক হাত দিয়ে নাহিয়ানের হাত শক্ত করে ধরে বললো, “ম’রে যাবো!”

নাহিয়ান চমকালো। নীতির চোখপানে তাকালো। ভয়ে চোখ ছল ছল করছে তার। এদিকে পরিস্থিতি এমন যে, নাহিয়ান যদি নিজের দিকে না টানে আর নীতি যদি নিজেই সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তবে সে সফলও হতে পারে, বিফলও। নীতি হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে ধরে বললো,

“ছাড়বেন না প্লিজ!”

নাহিয়ান চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর খানিকটা জোরেই ওকে নিজের দিকে টেনে আনলো। টানের প্রভাবে নীতি সোজা গিয়ে পড়লো নাহিয়ানের বুকে। চোখ বন্ধ করে আছে নীতি। বুক ঢিপ ঢিপ করছে তার। কিছুক্ষণ বাদেই খেয়াল হলো তার হৃদস্পন্দন বাদে আরো একটি হৃদস্পন্দন টের পাচ্ছে সে। খেয়াল হলো তার নিজের অবস্থান। নাহিয়ানের বুক থেকে মাথা সরাতে নিলেই চুলে টান লাগলো তার। পাঞ্জাবির বোতামে চুল আটকে আছে তার। রেগে বললো, “কচুর লোক! একটু আস্তে উঠালে কি হতো?”

“তুমি যেই ভারী, আস্তে টানলে উঠতেই পারতে না।”

নীতি তেজী কণ্ঠে বলল, “তাইলে আমাকে অভাবে ঝুলিয়ে কিভাবে রেখেছিলেন?”

“যেই পে’ত্নী মার্কা সাজ দিয়েছো। ভয়ে ছিলাম। না জানি ঘাড়ে চেপে বসো আবার।”

“আপনার বোতাম সরান!”

নাহিয়ান অবাক হয়ে বললো, “আজব বোতাম সরাবো কি করে? তোমার চুল সরাও!”

“উফফ, সরাবো কি করে? দেখছেন না পেঁচিয়ে আছে। টান দিলে ছিঁড়ে যাবে।”

নাহিয়ান আশেপাশে তাকিয়ে বললো, “আমার রুমে চলো। এখানে এভাবে কেউ দেখলে খারাপ দেখাবে।”

বলে হাঁটতে নিলেই নীতির চুলে টান লাগলো।

“আহ! আস্তে! আপনার মতো টাকলা মুরাদ বানাতে চান নাকি?”

নাহিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আমার চুল আছে মিস! আর একটা এমন বাজে কথা বললে আপনার চুল একটানে ছিঁড়ে ফেলবো!”

নীতি সঙ্গে সঙ্গে মুখে আঙ্গুল দিলো। আপাতত চুপ থাকাই বেটার। অতঃপর দুইজন নাহিয়ানের রুমে গেলো। রুমে যেতেই নীতি চুল নিয়ে টানাটানি করতে লাগলো । তাই নাহিয়ান এক ধমক দিয়ে তাকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। আর নিজে সাবধানতার সহিত চুলের প্যাচ খুলতে লাগলো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই নীতির নজর যায় আয়নায়। নাহিয়ান বেশ মনোযোগ দিয়ে প্যাচ ছোটানোর চেষ্টা করছে। এক ধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো নীতি। বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর তার মন একটা কথাই বলে উঠলো, “মানুষটা দেখতে দারুন!”

পরক্ষণেই নিজের ধারণাকে পিষে দিয়ে বললো, “কিন্তু ব্যাবহার এক্কেরে অদারুন!”

‘অদারুন’ কোনো শব্দ আদো আছে কিনা নীতির জানা নেই। কেবল ছন্দ মিলালো সে। ছন্দের কথা মাথায় আসতেই অনুভবের কথা মনে এলো তার। অন্যমনস্ক হয়ে গেলো সাথে সাথেই।

“নেও হয়ে গেছে।”

নাহিয়ানের কথায় আবার আয়নার দিকে তাকালো নীতি। চুল এক পাশে এলোমেলো হয়ে আছে। দ্রুত পায়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা চিরুনি দিয়ে চুল ঠিক করে নিলো। অতঃপর নাহিয়ানকে ভেংচি কেঁটে বেরিয়ে গেলো।

“যাহ বাবা, ধন্যবাদও দিলো না।”

পরক্ষণেই চিরুনির দিকে তাকাতেই দেখলো কিছু চুল আটকে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “চুলগুলো যখন ছিঁড়বেই, তখন আমাকে দিয়ে এত খাটুনি কেন করালো?”

__________________________________

“মুখ এমন ভার করে রেখেছিস কেনো?”

রীতির প্রশ্ন শুনে ঠোঁট উল্টে তাকালো নীতি। রীতি, নীতি, বর্ষা, শাফিন, প্রীতি, তাহসিন, সাজ্জাদ একত্রে এক টেবিলেই বসেছে। নাহিয়ান এখনও আসেনি। নীতির পাশে রীতি বসেছে। আর ওর পাশের চেয়ার আপাতত ফাঁকা। যেখানে নাহিয়ান বসবে। তাই ওর যত সমস্যা।

“এই লোকটার সাথে বসবো না আমি!”

“কেনো?”

“একদম বিরক্তকর লোক!”

“নীতি! নাহিয়ান মোটেই বিরক্তকর নয়!”

“তোমার সাথে তো কিছু করেনি। তাহলে তুমি কি করে বুঝবে!”

“শুরুটা তুই ই করেছিলি। সেদিন অকারণে ওর উপর রাগ না দেখালে ও ভালো বিহেভই করতো যেমনটা বর্ষা আর প্রীতির সাথে করে।”

“তাইলে বলছো আমার দোষ?”

“আমি বলছি না তোর দোষ! জাস্ট এখন থেকে ওর সাথে ঝগড়া না করে একটু মিশে দেখ, দেখবি আর বিরক্ত লাগছে না।”

নীতি উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ বাদেই নাহিয়ান এসে বসলো। নীতি কয়েক পলক নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর রীতির কানে ফিস ফিস করে বললো, “একে দেখলেই তো আমার ঝগড়া ঝগড়া পায়! মিশবো কি করে? ঝগড়া দিয়ে মিশলে হবে না? স্পাইসি খাবার টাইপ ভালো ব্যাবহার করলে হবে না?”

রীতি তখন সবে এক লোকমা পোলাও মুখে দিয়েছে। নীতির কথা শুনে তার খাবার নাকে উঠে গেলো। কাশতে লাগলো সে। শাফিন তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিলো। রীতি শান্ত হতেই বললো, “আস্তে খাও। তাড়াহুড়োর কি আছে?”

সঙ্গে সঙ্গে রীতি অগ্নি দৃষ্টিতে শাফিনের দিকে তাকালো। শাফিন ভরকে গিয়ে হেসে বললো, “না না, তুমি তাড়াতাড়িই খাও!”

শাফিনের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিল। রীতি কড়া চোখে নীতির দিকে তাকাতেই নীতি মেকি হেসে খাওয়া শুরু করলো। এখন চুপ থাকাই ভালো। পাশে থাকা নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নাহিয়ান তা খেয়াল করে বললো, “লজ্জা করে না অন্যের খাবারে নজর দিচ্ছো?”

নীতি চমকে উঠে বললো, “নজর কখন দিলাম?”

“তো এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? খাবে?”

নীতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো, “আপনাকে খাবো লবণ মরিচ দিয়ে। আসেন!”

নাহিয়ান তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আস্তাগফিরুল্লাহ! রা’ক্ষসী নাকি?”

সবার নজর ওর দিকে গেলো।

“রা’ক্ষসী কাকে বলেন?”

“তোমাকে!”

“আপু কিছু বলবি না?”

রীতি মৃদু কন্ঠে বলল, “আশেপাশে সব তোদের দেখছে। বস প্লিজ নাহি। থাম নীতি!”

দুইজনই চুপচাপ বসলো। নীতি বির বির করে বললো, “এর সাথে নাকি আবার ভালো ব্যাবহার করবো! ঝগড়াটে ছেলে।”

__________________________________
খাওয়া দাওয়া শেষে অনেকে চলে গেছেন। রীতি আর শাফিনের আজ রীতির ফ্যামিলির সাথে তাদের বাড়ি যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা দুইজনেই কালকে যাবে বললো। নীতি, প্রীতি, বর্ষাকেও রেখে দিলেন সালেহা। বড্ড ভালো লাগে তার, যখন বাড়িটা ভরা থাকে। নীতির থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। প্রীতি আর বর্ষার জন্য ঘুম হয় না। এমনেই ঘুমেরা পালিয়েছে, তাও যতটুকু আছে তারাও হারিয়ে যায় এদের জন্য। কিন্তু সালেহার জন্য তাকে থাকতেই হলো। সারা বিকেল তাদের বড়দের কাজে সাহায্য করতে করতেই গেলো। যদিও তেমন কাজ করেনি কেউ ই।

রাতের খাবারের পর আবার ছাদে আড্ডা বসলো। এবার শাফিন আর রীতি নেই। নবদম্পতি, এখন একটু ফ্রি সময় পেয়েছে। তাই কেউ জ্বালাচ্ছে না। নীতি বসে বসে ফোন ঘাটছে। এই অনুভব নামক মানুষটা কি হাওয়া হয়ে গিয়েছে? নয়তো কোথাও কেনো থাকবে না? ভেবে পায় না নীতি।

“নীতি!”

সাজ্জাদের ডাকে চমকে তাকালো নীতি।

“হু?”

“তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”

সবার সামনে এমন প্রশ্নে বিব্রত হলো নীতি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নীতি হেসে বললো, “না ভাইয়া!”

“কেনো? সুন্দরী মেয়েদের তো বয়ফ্রেন্ড তো থাকেই।!”

“সবাই এটা ভাবে দেখেই আজ বয়ফ্রেন্ড নেই।”

সঙ্গে সঙ্গে হাসির মেলা বসলো যেনো। নাহিয়ান মাঝে ফোঁড়ন কেঁটে বলে উঠলো, “নিজেকে সুন্দরী ভাবার কারণ নেই। দেখতে একদম ডা’ইনির মতো!”

নীতি চরম ক্ষেপে গেলো। কিছু বলবে তার আগেই রীতির কথাগুলো মনে পড়লো। নাহিয়ানের হাতে গিটার দেখে বললো,

“আপনার গিটার ঠিক হয়েছে?”

সবাই যেনো একটু চমকালো।

“আমার গিটার দিয়ে তোমার কাজ কি?”

“গান গাইবেন, আমরা শুনবো!”

সাজ্জাদ হেসে বলল, “ওর গান শোনা ভাগ্যের ব্যাপার। ওর যখন মনে হয় তখন গান গায়! কিন্তু যখনটা আসতে বছর পেরিয়ে যায়।

“এমন অদ্ভুত কেন?”

“আমি মানুষটা অদ্ভুত, তাই!”

নীতি ফিক করে হেসে দিল। সেও তো অনুভবকে বলতো, “আমি অদ্ভুত, তাই আমাদের সম্পর্কও হবে অদ্ভুত।”

সবাই নীতিকে দেখছে। মেয়েটার হলো কি? নীতি তা বুঝতে পেরে গলা ঝাড়লো। ধুর এত ভালো মেয়ে হওয়া লাগবে না তার।

“আচ্ছা আমি গান গাইবো, গিটার বাজাতে পারেন তো?”

তাহসিন বলে উঠলো, “গান গাইতে পারো?”

নীতি হেসে বললো, “গাইতে তো পারি ই। তবে আশেপাশের মানুষের কান পরে নষ্ট হয়ে যায়।”

সাজ্জাদ আর তাহসিন কিছুটা ভয় পেলো। কাকের গলা শুনতে হবে এখন? নীতি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো। গুনগুনিয়ে সুর তুললো,

“কিছু অক্ষর ছিল এলোমেলো,
একে একে সাজিয়ে রাখলাম।
মুঠো হতে ছড়িয়ে গেলো
মিষ্টি মধুর সে ডাকনাম ।”

গান শেষ হতেই চোখ খুললো নীতি। সবাই ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো?”

প্রীতি জিজ্ঞেস করে বসলো, “এই নীতি, তোর গানের ভয়েস এত ভালো হলো কবে থেকে?”

বর্ষাও তাল মিলিয়ে বললো, “হ্যাঁ, তাইতো। তোকে তো আগে এত সু্র দিয়ে গাইতে দেখিনি। ইভেন আমাদের সার্কেলে গানের কলি খেলাতেও তোর ভয়েস শুনে সব হেসেছিলো।”

“প্রশংসা করছিস, নাকি অপমান?”

সাজ্জাদ হেসে বললো, “আরে অপমান না, ঘোর অপমান করছে। দারুন ছিল কিন্তু।”

“অতটাও না ভাইয়া!”

তাহসিন জিজ্ঞেস করলো, “গান কি শিখো?”

“না!”

“তাহলে?”

নীতি চুপ থেকে মুচকি হাসলো। অনুভব তাকে গান শোনাতো। সেই সবের সাথে সুর মেলাতে মেলাতে অদ্ভুতভাবে হয়ে গেছে তার শিখাটা। ওদের দিকে তাকিয়ে বললো, “গান ভালোবাসি। অনুভব করি! তাই আপনা আপনিই এসে যায় সুর!”

নাহিয়ান কয়েক পলক নীতির দিকে তাকালো। পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। অদ্ভুতভাবে তার হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে । যেনো কোনো দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন। অদ্ভুত লাগছে আজকের দিনটা তার। বড়ই অদ্ভুত! হচ্ছেটা কি তার সাথে?

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৮

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৮

ভোর সাড়ে পাঁচটা। হাঁটতে বেরিয়েছে অনুভব। আপাতত তার একটু শান্তি দরকার। রাস্তায় তেমন কেউ নেই। বেশ খানিকটা হেঁটে শুনশান জায়গায় গিয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো। শুনেছিল বিরহ কাঁটাতে নাকি অনেকে সিগারেট খায়। সেও ট্রাই করেছে এই কয়েক মাসে। সিগারেট ধরিয়ে এক টান দিতেই কাশতে লাগলো সে। সিগারেট তার নিয়মে নেই। হুট করেই মনে পড়লো তার। আইডিতে একবার সিগারেটের পিক দিয়েছিল। তখন প্রিয় জিজ্ঞেস করেছিল,

“তুমি সিগারেট খাও?”

অনুভব মজা করে বলেছিলো, “হুমম, খাইতো!”

“কেনো?”

“মজা লাগে।”

“খাবে না আর।”

“কেনো?”

“আমি আপনার সাথে লাখ লাখ বছর বাঁচতে চাই অনুভব।”

“লাখ লাখ বছর কেউ বাঁচে না প্রিয়!”

“না বাঁচুক, যত টুকুই বাঁচে মানুষ, ওইটুকুর মাঝে এই ম’রণকে খেয়ে সময় কমাবেন কেনো?”

“সিগারেট ম’র’ণ?”

“অবশ্যই!”

অনুভব সেদিন খুব হেসেছিল। প্রিয়কে আর তার বলা হয়নি সে সিগারেট খায় না। যেই প্রিয় সেই প্রিয় তাকে ছেড়ে কি সত্যি ভালো আছে? সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিলো ও। নাহ, এভাবে আর চলে না তার।

“তুমি ফিরবে প্রিয়। ঠিক ফিরবে!”

__________________________________

শরীরের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে নীতির। হালকা করে চোখ খুলতেই দেখলো তার গলার উপর প্রীতির দুই পা, আর পেটের উপর বর্ষার মাথা। মুহূর্তেই হতবাক হলো সে। এই দামড়া দামড়া মেয়েগুলোর ঘুমানোর স্টাইল এমন কেনো? এই জন্যই প্রীতি কোনোদিন নীতির রুমে নীতির সাথে ঘুমানোর পারমিশন পায় না। আর বর্ষা? সে আসলেই নীতি পাহাড় সমান বালিশ মাঝে দিয়ে দেয়। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ওদের দুইজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো। ধাক্কার ফলে প্রীতি ধড়ফড়িয়ে উঠলেও, বর্ষা ঘুমাচ্ছে। প্রীতি একবার নীতির দিকে তাকিয়ে বর্ষার পায়ের উপর শুয়ে পড়লো। নীতি বিড়বিড় করে বললো, “আমার লাইফ এত অদ্ভুত মানুষ কেন রে ভাই?”

উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ঘড়ির কাঁটায় দেখলো আটটা বাজে সবে। দরজা খুলে বাইরে যেতেই তাহসিনের সাথে ধাক্কা খেলো। তাহসিন তখন ওদের রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো। তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,“সরি, সরি!”

“ইটস ওকে ভাইয়া!”

“এত জলদি উঠলে যে?”

“এমনি, ঘুম ভেঙে গেলো।”

“ওহ, ছাদে যাবে?”

নীতি ভাবলো একটু। অতঃপর বললো, “যাওয়া যায়!”

“চলো তাহলে।”

ছাদে যেতেই নীতি তাহসিনকে বললো,

“আচ্ছা, ছাদের এই অবস্থা কেনো?”

তাহসিন আশেপাশে তাকিয়ে বললো, “কি অবস্থা? পরিষ্কারই তো আছে।”

“পরিষ্কার রেখে কি হবে? এমন নিরামিষ ছাদ কেনো? কোনো ফুলগাছ নেই, দোলনা নেই।”

তাহসিন হাসলো।

“নাহিয়ান লাগাতে দেয় না এসব।”

“কেনো?”

“কালকে আড্ডা দিলে না? মূলত গাছ রাখলে মাঝ রাতে এমন আড্ডার জায়গা নাকি কম পড়ে যাবে। তাই ও এসব দেয় না।”

“সুন্দর মতো সাজালে সব কিছুরই জায়গা হবে।”

“তাহলে তুমিই সাজিয়ে দেও।”

“বয়েই গেছে আমার। আমি আমার জামাইয়ের বাড়ি সাজাবো। যদি থাকে আরকি। আর আপনার বন্ধুর বাড়ি সাজালে, তারপর সে বলবে আমি এই বাড়িতে থাকবো না। আমার লিস্টের অপছন্দের মানুষ বাড়ি সাজিয়েছে তাই।”

নীতির কথা শুনে তাহসিন শব্দ করে হাসলো। নীতিও মৃদু হাসলো।

“নাহির তোমাকে অপছন্দ করার কারণ জানো?”

নীতি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাহসিনের দিকে তাকালো।

“তুমি তো কাল চলে গেলে রীতি তোমাকে কেনো আগে বলেনি। সত্যি বলতে আমরাও জেনেছি বিয়ে যখন ঠিক হবে তার প্রায় এক কি দুই মাস আগে। আমরাও রেগে গিয়েছিলাম। তোমার রাগ করাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু রীতির কথা, সম্পর্ক যদি গোপন থাকে সেই সম্পর্ক টেকার সম্ভাবনা বেশি হয়। তাই!”

নীতি হেসে বললো, “আপুর উপর আমি রাগ করিনি। শুধু একটু আফসোস হয়েছে, যদি আগে জানতাম তাহলে একটা জিনিস স্বাভাবিক থাকতো।”

“কি জিনিস?”

“বাদ দিন, ওসব পুরোনো কথা। আপনি বলুন যেটা বলছেন।”

“আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডায় তোমার আর প্রীতির কথাই ও বেশি বলতো। তোমরা এমন সেমন! আরো কত্ত কি! নাহির তোমাকে অপছন্দ কারণ তোমার খাম খেয়ালিপনা।”

নীতি অবাক হয়ে বললো, “মানে?”

“এইযে তুমি নাহিয়ানের গিটারের মতো, রাস্তাঘাটেও এর ওর জিনিস ভেঙ্গে নাকি টাকা দিয়ে আসো। এটাই! নাহির মতে তুমি টাকার উপর অনেক নির্ভরশীল। এটা ছাড়া তোমার জীবন অচল!”

“কার জিনিস ভাঙলাম আমি?”

“রীতি বলেছিলো কয়েকদিন আগেও নাকি তুমি কার স্কুটি ভেঙ্গে টাকা দিয়ে এসেছো!”

নীতি মনে করার চেষ্টা করলো। মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দিল।

“এটাই অপছন্দের কারণ আপনার বন্ধুর?”

“হুমম!”

নীতি হেসে বললো, “কিছু মানুষ বাইরে এক ভিতরে আরেক। এটা অনেকেই বুঝে না।”

তাহসিন বুঝতে না পেরে বললো, “মানে?”

“ঐযে বললাম। অনেকে বুঝে না। নিচে যাই কেমন?”

বলেই নিচে গেলো সে। তাহসিন অবুঝ হয়ে তাকিয়ে রইলো নীতির দিলে। অতঃপর বললো, “রীতির মতো কি ওর বোনও পা’গল! ধুর, কই ভাবলাম লাইন টাইন মা’রবো। এখন দেখি এও পা’গল। এর সাথে দুইটাও কি এক?”

__________________________________

নিচে আসতেই দেখলো রীতি রান্না করছে।

“কি করছো আপু?”

“পায়েস রান্না করছি!”

“বাহ, আমাকে একটু দেও।”

“নীতি, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি!”

নীতি দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। হেসে বললো, “সরি!”

কিছুক্ষণের মাঝেই বড়রা এসে টেবিলে বসলো। সালেহা বেগমের স্বামী নুরুল আলম, সাথে তার ভাই মোস্তফা, আর সালেহা বেগমের বোন সেলিনা বসলো। আত্মীয় বলতে এরাই। এরই মাঝে সাজ্জাদ, তাহসিন আর নাহিয়ান এসে বসলো। নীতিকে বসতে বললে সে জানায় পরে সালেহাদের সাথে বসবে সে। ওদের নাশতা শেষে রীতি সবাইকে পায়েস দিলো। নতুন বউ হিসেবে সালেহা ওকে কেবল পায়েসটুকুই করতে বলেছেন। পায়েস মুখে দেয়ার পর অন্যরা কিছু না বললেও সেলিনা বলে উঠলো, “চিনি কি দিছো বউ?”

রীতি চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো সে পায়েস চেক করে দেখেনি আদো সব ঠিকঠাক আছে কিনা। নুরুল উত্তর দিলেন, “দিয়েছে, কিন্তু কম হয়েছে। ব্যাপার না, প্রথম প্রথম হয় এমন!”

সেলিনা মুখ বাঁকিয়ে বললো, “এটা ঠিক না দুলাভাই। বাড়ির বউকে প্রথমেই শাসন করা উচিত। নয়তো পরে মাথায় চড়ে বসে। তা রীতি, তুমি রান্না বান্না পারো তো?”

রীতি মাথা নিচু করে উত্তর দিলো, “জি পারি!”

“তাহলে পায়েসে চিনি এত কম কেনো? নেই বললেই চলে। তো আমাদেরকে কি ডায়বেটিসের রোগী মনে হয়?”

রীতি উত্তর দিলো না। নীতি রীতির দিকে তাকিয়ে রইলো। এখানে সে কিছু বললে রীতির উপরেই দোষ যাবে সব। তাই চুপ করে আছে।

“তূর্ণা একটু চিনি এনে দে তো।”

নাহিয়ানের কণ্ঠ শুনে সবার মনোযোগ ওর দিকে গেলো। তুর্ণা সেলিনার মেয়ে। সে এতক্ষণ রীতির সাথেই ছিল। নাহিয়ান তার কাছে কিছু চেয়েছে, এটা শুনেই দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো। আহা, তার ক্রাশ তার সাথে নিজে থেকে কথা বলছে। তার যে কি আনন্দ লাগছে। চিনির কৌটা নিয়ে সে নাহিয়ানের কাছে গেলো। নাহিয়ান সেখান থেকে একটু চিনি নিয়ে পায়েসে মিশিয়ে খেতে লাগলো। তাই দেখে সেলিনা নাক মুখ কুঁচকে বললো, “এ আবার কেমন খাওয়া?”

“চিনির জন্য না চিল্লিয়ে এভাবে চিনি নিয়ে খাও, মজা লাগবে।”

“কেনো? নিয়ে খাবো কেনো? ওর আক্কেল নেই?”

নাহিয়ান রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “চিনি কম হয়েছে কেনো?”

রীতি একবার নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বললো, “চেক করিনি। আর খেয়ালও ছিল না কতটুকু দিয়েছি।”

অতঃপর নাহিয়ান সেলিনার দিকে তাকিয়ে বললো, “এবার হয়েছে?”

“এমন করলে সংসার করবে কি করে? খেয়াল কই থাকে?”

“আন্টি, রীতি এই বাড়িতে আগে আসলেও এখন ও এখানে এক নতুন পরিচয়ে আছে। এ বাড়ির বউ। আর আজ ওর বিয়ের পরের দিন। হুট করেই ও স্বাভাবিক হতে পারবে না। এতদিন এ বাড়িতে আসলেও ওর নতুন পরিচয়ে আজ প্রথমদিন। এ সময় ও নার্ভাস থাকবেই। তাই একটু চিনি এদিক সেদিক হয়েছে। নয়তো মাও জানে রীতি কতটা পারফেক্ট রান্না করে। তুমিও তো ভালো রান্না করতে। তাও বিয়ে পরের দিন যখন তোমাকে ডাল রাঁধতে দিলো তখন মনে আছে? কতগুলো লবণ দিয়েছিলে? ওটা খেয়ে সবাই হেসেছিল, কিন্তু কেউ তোমাকে বকেনি। উল্টে তোমার নার্ভাসনেস বুঝেছিল। তাহলে আজ রীতিরটা বুঝতে অসুবিধা কোথায়?”

সেলিনা অপমানবোধ করলেন । আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলেন। রীতিকে তার এমন বলার কারণ ছিল ওকে ছোট করা। তিনি শাফিনের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কেননা তার ধারণা এই বাড়ির সবাই তার মেয়েকে বড্ড ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। একটা মায়ের তো এইটুকুই চাওয়া হয়। কিন্তু শাফিনের হটাৎ বিয়ে উনি মানতে পারছেন না। তাই রীতিকেও তার সহ্য হচ্ছে না। সেলিনার পর বাকিরাও উঠলো। নুরুল রীতিকে বললেন, “ওর কথায় কিছু মনে করো না মা!”

রীতি কেবল হাসলো। সালেহা নাহিয়ানকে নিজের কাছে ডাকলে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “আমার ছেলেটাকে আমি মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছি!”

“মানুষ হয়ে জন্মেছি, তো মানুষ না হয়ে কি ছা’গল হবো?”

“এর থেকেই বা কম কি আপনি!”

নীতির বিড়বিড় করে বলা কথা রীতি আর নাহিয়ানের কানে গেলেও আর কেউ শুনলো না। নাহিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। নীতি পাত্তা দিলো না। সালেহা নাহিয়ানের কান টেনে বললেন, “তাই না?”

উপস্থিত সবাই হাসলো। নুরুলের ডাকে তিনি ঘরে গেলেন। নাহিয়ান নীতিকে কিছু বলবে তার আগেই তুর্ণা ওর কাছে এসে বললো, “আর কি লাগবে ভাইয়া?”

নাহিয়ান তূর্ণার দিকে তাকালো। হেসে বললো, “আর কি লাগবে বলতে?”

“না মানে চিনি! অনেকক্ষণ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তো!”

“এটা রেখে আয় বইন!”

বলে একবার নীতির দিকে তাকিয়ে হাঁটা ধরলো। নীতি সেসব খেয়াল না করে তূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই যে চিনির কৌটা নিয়ে নাহিয়ানের পাশে ঘুরছে আর রাখার নাম নেয় নি মেয়েটা। বড্ড অদ্ভুত না? পাশে সাজ্জাদকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “এই মালটা কে ভাই?”

সাজ্জাদ ফোন দেখছিল। তাই নাহিয়ান আর তাহসিন কখন গিয়েছে সেটা খেয়াল করেনি। নীতি আমতা আমতা করে বলল, “এই মেয়েটা কে সেটাই বলছি!”

“ওহ, আমি কি না কি শুনলাম!”

“কি শুনলেন?”

“আব..কিছু না! ও তুর্ণা, ঐযে যিনি রীতিকে কথা শুনাচ্ছিলেন তার মেয়ে। মানে নাহির খালাতো বোন, হবু বউও বলতে পারো।”

“হবু বউ?”

“হ্যাঁ, তূর্ণার একমাত্র স্বপ্ন এটাই!”

বলেই সে চলে গেল।

“বাবা, সব দেখি সেটিংকৃত মাল!”

“এসব কি কথা নীতি?”

“রাগছো কেনো আপু?”

“নাহির পিছে কম লাগ। ওর রাগ উঠলে কিন্তু তোকে ছাদ থেকে ফেলতেও দুইবার ভাববে না।”

”আমি কি কম নাকি?”

রীতি হতাশ হয়ে বললো, “সেটাই ভয়! দুইজন না জানি খু’নাখু’নি শুরু করিস। যা ওই দুই মহিলাকে ডাক। খাওয়া লাগবে তো!”

নীতি হেসে উপরে গেলো।

__________________________________

বাইরে প্রচন্ড রোদ। নীতি ভেবে পাচ্ছে না, শীত আসতে চললো, তবুও শীতের কোনো নিশানা নেই। এই গরমে তাও দুপুরে লেহেঙ্গা পড়বে কি করে? বিছানার উপর লেহেঙ্গা বিছিয়ে পাশে বসে আছে ও। বর্ষা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নীতিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো, “কি রে? এমন দেবদাস হয়ে আছিস কেন?”

“দেবদাস কেন হবো?”

“অনুভবকে না পাওয়ার দুঃখে।”

নীতি চমকালো। হুট করেই মনে পড়লো সে আজ সকাল থেকে ফোন ধরেনি। সাথে সাথে উঠে ফোনের কাছে গেলো। আইডিতে ঢুকতেই দেখলো পোস্টে তিনটা লাইক পড়েছে। কমেন্ট নেই ই! স্বাভাবিক, তার এটাই এই আইডি দিয়ে তার প্রথম পোস্ট। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রাখলো।

“রেডি হবি না?”

“এই লেহেঙ্গা পড়ার আগেই আমার গরম লাগছে। পড়লে কি হবে?”

“আর কিছু তো আনিস নাই!”

“সেটাই তো! মাও আসবে অনুষ্ঠান শুরুর পর।”

“গিয়ে নিয়ে আয়!”

“হ্যাঁ, বাড়িতে যেতে তো দশ মিনিট লাগে, তাই না?”

“এক ঘন্টা লাগে!”

“তো যেতে আসতেই তো দুই ঘণ্টা শেষ!”

“তাইলে মুড়ি খা বসে বসে।”

বলেই বর্ষা রেডি হতে শুরু করলো। নীতি উপায় না পেয়ে রীতির কাছে গেলো। রীতিকে তখন পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছিলো।

“আপু!”

“কি হয়েছে?”

“তোমার কাছে হালকা কাজের লেহেঙ্গা বা গাউন আছে?”

“আছে, তবে বাড়িতে। এখানে আনা হয়নি। কেনো?”

“ধুর এই গরমে এর কাজের লেহেঙ্গা কেমনে পড়বো?”

“লুঙ্গি পড়বে?”

নাহিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিল। নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকাতেই বললো, “বাবার একটা লুঙ্গি এনে দেই! আর আমার একটা টিশার্ট পড়। দারুন লাগবে!”

নীতি হাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলো।

“এনে দিবো?”

কোনোরূপ জবাব না দিয়ে নীতি হনহন করে বেরিয়ে গেলো। ও যেতেই রীতি নাহিয়ানকে বলে উঠলো, “ওর সাথে এমন করিস কেন তুই?”

“ও যে আমাকে উল্টা পাল্টা বলে?”

“তুই বড়, বড় ভাই হিসেবে ছোট বোনের মজা মনে করতেও তো পারিস!”

“ছি, এমন মেয়ে বোন বানানোর শখ নাই আমার!”

রীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো, “তাহলে কি বউ বানানোর শখ?”

“সেটা হতে হলে তোর বোনকে আরো দশ বছর সাধনা করতে হবে!”

রীতি হাসলো।

__________________________________

বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। নীতি আশেপাশে দেখছে সবাইকে। তখনই তূর্ণা ওর কাছে আসলো।

“নীতি!”

“আরে তুর্ণা। ধন্যবাদ আমাকে হেল্প করার জন্য। সত্যি বলতে আমি এমন হালকার মাঝেই আউটফিট খুঁজছিলাম।”

“আরে, এটা আমাকে আঙ্কেল দিয়েছিল। কিন্তু আমার হালকা কাজের লেহেঙ্গা ভালো লাগে না। তাই রেখে দিয়েছিলাম। ফিট হয়েছে এটা?”

“হুমম হয়েছে!”

“নীতি, এটা না তুমি ই রেখে দেও।”

“সেকি? কেনো? এটা তো তোমার আংকেলের দেয়া।”

“আঙ্কেল আমায় অনেক কিছু দেয়। এইযে এই লেহেঙ্গা পড়েছি না? এটাও আঙ্কেল দিয়েছে। সত্যি বলতে এই লেহেঙ্গা তোমাকে আমার থেকেও বেশি মানাচ্ছে। ইশ, কি মিষ্টি লাগছে তোমায়!”

নীতি একবার নিজের দিকে তাকালো। উপরের অংশ আর নিচের অংশ পুরোটাই কালো এর মাঝে গলার দিকে মিষ্টি কালার সুতোর কাজ করা। পিঠের দিকটা তেও হালকা কাজ আছে। আর নিচের অংশে পারের দিকে কাজ করা। ওড়নাটা সেই সুতোর সাথেই মিলানো। আর তার পার কালো। সব মিলিয়ে সুন্দর, তবে তুর্ণার এত হালকা কাজ পছন্দ না। তার মতে অনুষ্ঠানে পড়তে হলে গর্জিয়াস কিছু চাই।

“তাও, এটা আমি কি করে নেই? আমি পারবো না।”

“এটা আমি একবারও পড়িনি। তাই ভেবো না ইউজ করে দিচ্ছি!”

“আরে আমি সেটা মিন করিনি!”

“তাহলে আর কোনো কথা নয়! শাফিন ভাইয়া আর ভাবীকে দেখো। দুইজনকে লাভবার্ড লাগছে না?”

নীতি ওদের দিকে তাকাতেই দেখলো দুইজন নিজেদের মাঝে খুনসুটি করছে। ভালো লাগলো ভীষণ তার। চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে অনুভব করলো সে! আচ্ছা, যেই মানুষটাকে সে চায়, তাকে যখন সম্পূর্ণভাবে নিজের করে পেয়ে যাবে তখন কেমন লাগবে ওর! ভাবলো সে, অনুভব করলো তার অনুভবকে! কিছুক্ষণ বাদে চোখ খুললো। চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু আঙ্গুলে নিয়ে তাকালো তার দিকে! তার উত্তর যে সেই পানিটুকু। উহু, কষ্টের নয়! সে অনুভব করেছে! গভীরভাবে তাকে অনুভব করেছে! অনুভব করেছে তার প্রিয় অনুভবকে, যেখানে শান্তি আর শান্তি! রয়েছে তৃপ্তি! তৃপ্তি থাকবে না ই বা কেনো? সে যে তার প্রিয় মানুষ! কেবল তারর…প্রিয় অনুভব। আবারও বোনের দিকে তাকালো। রীতিও কত খুশি! সত্যি বলতে প্রিয় মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়াটাই বিরাট সুখের ব্যাপার। যা সবাই পায় না। একদম পায় না!

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৭

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৭

“অপছন্দের কারণ?”

চলে যেতে যেতেই নাহিয়ান থেমে গেলো। নীতির দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিলো, “বলার ইচ্ছে নেই। কিন্তু আপনি আমার অপছন্দ!”

বলেই এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না সে। নীতি তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। হুট করেই অনুভব করলো তার মন ভার হয়ে আসছে। এর কারণ সে জানে। সবসময় সবার মুখে ‘সে প্রিয়’ শুনেই অভ্যস্ত। তাই ‘অপছন্দ’ শব্দটা ভীষণ পীড়া দিচ্ছে তাকে। নিজের মনকে বুঝ দিলো, “সবসময় সবার প্রিয় হওয়া যায় না। নাহিয়ানের মতো আরো অনেকেই আছে যারা ওকে অপছন্দ করে কিন্তু সামনে বলে না।”

নীতি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর সেও চললো।

__________________________________

বাসর ঘরে না রেখে বর বউকে নিয়ে বসে আছে সবাই। যদিও বড়রা কেউ নেই। নাহিয়ান, তাহসিন, সাজ্জাদ, প্রীতি, বর্ষা। নীতি আপাতত রুমে এখনও। ড্রেস পাল্টিয়ে আসবে একেবারে। বাকিরা এখনও ফ্রেশটুকুও হয়নি। আড্ডার মাঝেই বর্ষা প্রশ্ন করে বসলো, “আচ্ছা শাফিন ভাইয়া, তোমাদের প্রেমের বিয়ে নাকি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ?”

বর্ষা এখানে তখন ছিল না। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানে না সে। বর্ষার প্রশ্নে প্রীতি উত্তর দিলো, “অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ!”

নাহিয়ান মাঝ থেকে বলে উঠলো, “লাভ ম্যারেজ!”

প্রীতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “কে বলেছে?”

“তোমার বোন আমাদের ফ্রেন্ড। তাই আমরা বেশীই জানি!”

তাহসিনের কথায় প্রীতি চমকে তাকালো রীতির দিকে। সে মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসছে। ততক্ষণে নীতিও হাজির। সে এসেই প্রীতি আর বর্ষার মাঝে বসে বললো, “কত বছরের প্রেম?”

নাহিয়ান নীতিকে দেখে নাক মুখ কুচকে বললো, “আসছে এক মুরুব্বী।”

“মুরুব্বী কাকে বলেন?”

“তোমাকে!”

“আমি মুরুব্বী?”

“এভাবে সম্পূর্ন সাদা জামা পড়ে বিধবা সেজে থাকলে তো মুরুব্বীই বলবো!”

নীতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো, “আপনাকে আমার জামা নিয়ে কমেন্ট করতে কেউ বলেনি। তাই মুখ বন্ধ রাখেন।”

নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই বর্ষা বললো, “আরে তোরা ঝগড়া থামা। ওদেরও তো বাসর রাত। আমাদের সাথে কি এতক্ষণ বসে থাকতে পারবে? গল্প শুনতে দে। ওদের বাসরে দেরী হয়ে যাবে।”

রীতি সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে বললো, “লাগাম দে মুখে।”

“নো লাগাম। তুমি কাহিনী বলো।”

রীতি লজ্জাবতী লতার ন্যায় নুইয়ে গিয়ে বললো, “কাহিনী তেমন কিছুই না।”
সাজ্জাদ মাঝ দিয়ে বলে উঠলো, “ওরা কিছুই বলবে না। আমরা বলছি, শোনো।”

নীতি,প্রীতি,বর্ষা কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালো। মূলত ওদের সামনে ব্যাপারটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হিসাবে হলেও ভিতরে কি হয়েছে, তা জানার প্রবল আগ্রহ তাদের। সাজ্জাদ বলতে শুরু করলো,

“আমি, নাহি, তাহসিন আর রীতি একই ভার্সিটির হলেও নাহি রীতির বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে নাহির মা রীতিকে চিনেন। মাঝে মাঝে উনার গল্প করার মানুষ না থাকলে উনি রীতিকে বাড়িতে ডাকেন। রীতিও আসতো। তখনই শাফিনের সাথে আলাপ ওর।”

বর্ষা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তারপর?”

“তারপর তাদের কথা বার্তা, প্রেম আরো কত কি!”

বর্ষা রীতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “প্রপোজ কে আগে করেছিলো?”

শাফিন জলদি করে বলে উঠলো, “ও!”

রীতিও চেতে বলে উঠলো, “একদমই না! তুমি বলেছিলে আমার চোখের মাঝে তুমি ডুবে যাচ্ছো, তোমাকে যেনো বাঁচাই!”

সঙ্গে সঙ্গে সবাই হেসে উঠলো। শাফিন মাথা চুলকালো। প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “ভাইয়া সত্যি এটাই বলেছিলো?”

“হুমম?”

“তোমাদের রিলেশন কয় বছরের?”

নীতির প্রশ্নে রীতি উত্তর দিলো, “তিন বছরের!”

নীতি, প্রীতি, বর্ষা একসাথে অবাক হয়ে বলে উঠলো, “তিন বছর!”

বর্ষা আবার আগ্রহী জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে ভাইয়া কি বলে প্রপোজ করেছিলো এখনও মনে আছে কি করে? আমি তো জানতাম তুমি মনে রাখায় একদম জিরো টাইপ!”

রীতি হেসে বললো, “প্রিয় মানুষের কথাগুলো একটু বেশীই স্পেশাল হয়। ওগুলো মনের মাঝে এমনিতেই গেঁথে যায়!”

বর্ষা মন দিয়ে কথাটা শুনলো। অতঃপর চোখ বড় বড় করে চিল্লিয়ে বলে উঠলো, “পেয়েছি।”

প্রীতি চমকে উঠে বর্ষার গালে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দিলো। বর্ষা আর্তনাদ করে উঠলো, “আহ! মা’রলি কেন?”

“এমন চিৎকার দিলি কেন? হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মা’রবি নাকি? কি পেয়েছিস?”

বর্ষা নীতির দিকে তাকাতেই নীতিও আরেক গালে চ’ড় দিয়ে বললো, “এমনে কেউ চিল্লায়? আরেকটু হলে জান যেতো আমার!”

বর্ষা দু গালে হাত বুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইলো। তাই দেখে বাকিরা হেসে দিলো। সাজ্জাদ হেসে হেসে বললো, “রীতি কিন্তু আবার শাফিন ভাইয়াকে নিয়ে হেব্বি পজেসিভ ছিল।”

তাহসিন তাল মিলিয়ে বললো, “তা আর বলতে? সুরাইয়া একবার কেবল শাফিন ভাইয়ের সাথে ফ্লার্ট করতে এসেছিল। ওকে কি যে ঝাড়লো!”

“এটা তো নরমাল। মেসেঞ্জারে কোথাকার কোন মেয়ে নিজেকে ওর সতীন বলেছিলো। সেই নিয়ে আমার সাথে কি যে ঝগড়া।”

নীতি চমকে উঠলো। প্রীতি অবাক হয়ে বললো, “সে কি? কি হয়েছিলো?”

এবার সবাই ই উৎসুক। কারণ এই কাহিনী এখানে কেউ ই জানে না।

“মেসেঞ্জারে এক মেয়ে ওকে নক দিয়ে বলে আমি নাকি তার সাথে ফ্লার্ট করি। আমাকে যেনো সামলে রাখে। আরো অনেক কথা। আর একদিন তো নিজেকে সতীন বলে দাবী করেছিলো। তাই সে নিয়ে আমার সাথে এমন ঝগড়া করলো যে আমিও রাগ করে মেয়েটার আইডি নষ্ট করে দিয়েছিলাম।”

“আইডি কেনো নষ্ট করলেন? তাকে বোঝালেই তো হতো।”

নীতির কণ্ঠে উত্তেজনা। রীতি বলে উঠলো, “নিজের প্রিয় মানুষের ভাগ অন্য কাউকে দেয়া যায় না। সেটা মজার ছলেই হোক না কেনো! মেয়েটাকে অনেক বার বারন করেছি, কিন্তু সে শোনেনি। আর আমিও জানতাম না শাফিন এমন করবে।”

নীতি চুপ করে গেলো। আজ বুঝলো রীতি কেনো রেগে যেতো। তারই বা কি দোষ? রীতি কখনো বলেনি শাফিনের কথা।

প্রীতি জিজ্ঞেস করলো, “মেয়েটার নাম কি ছিলো?”

রীতি মনে করার চেষ্টা করে বললো, “পিউ মেবী! মনেও নেই। এসব কে মনে রাখে?”

“তাও ঠিক!”

“কিরে নীতি, এমন চুপ করে গেলি কেন?”

বর্ষার কথা শুনে নাহিয়ান টিটকারী দিয়ে বললো, “নতুন কি দুর্নীতিগিরি করা যায় ভাবছে ।”

নীতি রাগ দেখালো না এবার। শুধু একবার মলিন চোখে রীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “তিনবছরের মাঝে একবার বললেও পারতে আপু। এতটাও পর ছিলাম না কিন্তু আমরা!”

বলে আর বসে রইলো না সে। ওদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো সে। রীতি বেশ কয়েকবার ডাকলো তাকে। কিন্তু সে তাকালোও না।

“নীতি ভুল বুঝছে আমায়।”

বর্ষা মানিয়ে নেয়ার জন্য বললো, “আরে আপু চিল। ওকে তো চিনোই এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে।”

নাহিয়ান ফোন বের করতে করতে বলল,“ওকে জানালে নির্ঘাত দুর্নীতি করে বসতো। এখন নিউ কাপলদের ছাড়! এই দেখ দেড়টা বাজতে চললো।”

বলেই তার ফোন দেখালো। প্রীতি আর বর্ষা উঠলো রীতিকে নিয়ে। আর তাহসিন, সাজ্জাদ শাফিনকে নিয়ে। অতঃপর তাদের ঘরে দিয়ে যে যার ঘরে গেলো।

__________________________________

রাত তিনটা। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে নীতি। চোখে তার ঘুম নেই। চোখের কোণে তার পানি। ভীষণ আফসোস হচ্ছে তার। ইশ, যদি রীতি তাকে আগে এসব বলতো সে হয়তো কোনদিনই মজা করতো না। বরাবরই বোনদের ভীষণ ভালোবাসে সে। ওরা কষ্ট পাক এমন কিছু সে কখনোই করতে চায় না। সেই হিসেবে ও হয়তো এমন মজা করতো না। তার আইডিও থাকতো। সব স্বাভাবিক থাকতো। ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখের কোণে থাকা পানিটুকু মুছে ফেললো। এখন প্রতি মুহূর্তে সে বুঝতে পারছে অনুভব তার অনুভবই। কোনো আবেগ নয়, না কোনো টাইম পাস। কেবল ভালোবাসা!

“ওই আইডিটা তোর ছিল?”

বর্ষার আওয়াজে কিছুটা চমকালেও প্রকাশ করলো না নীতি।

“ঘুমাস নি?”

“ঘুমিয়েছিলাম! তোকে পাশে না পেয়ে দেখলাম এখানে দাঁড়িয়ে আছিস!”

নীতি হাসলো! বর্ষা আবার বললো, “অনুভবকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”

“অনেক বেশি!”

“খোঁজার রাস্তা পেয়েছি তাকে!”

নীতি বর্ষার দিকে তাকালো।

“কিরকম রাস্তা?”

“তোর আর অনুভবের আলাপ তো একটা গ্রুপের জন্য। আর অনুভব তো ছন্দ লিখতো বেশি। তাহলে এমন কিছু নিশ্চয়ই আছে যেটা কেবল তোর জন্য লিখা! সেটা তুই ওই গ্রুপে পোস্ট কর। অনুভব যদি দেখে তাহলে তো অবশ্যই তোকে রেসপন্স করবে। তাই না?”

“ও বুঝবে কি করে ওটা আমি?”

“ছন্দ যদি কেবল তোর জন্যই লিখা হয়, তাহলে অবশ্যই বুঝবে। এমন কিছু কি নেই?”

“আছে তো!”

“কি সেটা?”

নীতি হাসলো। আইডি লগ ইন করে সেই গ্রুপে গেলো। অতঃপর লিখলো, “প্রিয়! তুমি আমার জীবনে লিখিত এক অসম্পূর্ণ কাব্য; যাকে নিয়ে যতই লিখি, তা কখনো শেষ হবার নয়! তুমি এমন একজন যাকে যতই ভালোবাসি না কেনো, তা কখনো ফুরাবার নয়!”

তাই দেখে বর্ষা জিজ্ঞেস করলো, “এটা সে বলেছে?”

“হুমম!”

নীতি চোখ বন্ধ করলো। স্মৃতিচারণ করলো সেই মুহূর্তের!

__________________________________

“এই যে মিস প্রিয়!”

“বলেন জনাব!”

“কি করছেন?”

“আপনার জন্য লিখছি!”

“কি লিখছেন?”

“স্পেশাল কিছু?”

“কিরকম?”

“কিছু কথা!”

“ওহ!”

প্রিয় সেই কথাগুলো লিখে সেন্ড করলো। আর জিজ্ঞেস করলো, “কেমন হয়েছে?”

“আমি পড়িনি!”

“কেনো?”

“আমি শুনতে চাই প্রিয়!”

“মানে?”

“আপনার কণ্ঠে শুনতে চাই!”

প্রিয় চমকালো। ওদের কখনো কলে কথা হয়নি। প্রিয় অনুভবের আওয়াজ শুনলেও, অনুভব কখনো শুনেনি। তাই হয়তো এই আবদার।

প্রিয়র উত্তর না পেয়ে অনুভব মেসেজ করলো, “প্রিয়? রাগ করলে? আরে আমি জোর করছি না। ইচ্ছে হলো হঠাৎ! তুমি না চাইলে আমার চাই না। আমি পড়েছি! সুন্দর হয়েছে অনেক।”

প্রিয় হাসলো। ইশ, ওর রাগের কত খেয়াল রাখে মানুষটা। অনেক সাহস জুগিয়ে প্রিয় কল করলো মেসেঞ্জারে। ওপাশে রিসিভও হলো। দুইজন নিশ্চুপ । কেউ কোনো কথা বলছে না। অনুভব মৃদু স্বরে ডাক দিলো, “প্রিয়!”

প্রিয় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো। তাদের প্রথম কথা। নতুন অনুভূতি। তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। কথা আটকে আসছে। কিছু বলতে পারছে না সে।

“রেখে দিবো?”

প্রিয় লম্বা শ্বাস নিলো। অতঃপর অনুভবের মতোই মৃদু কণ্ঠে বলতে লাগলো,
“তুমি আমার প্রিয় প্রহরের, প্রিয় অভিমান..

তুমি আমার প্রিয় নগরের, প্রিয় ভালোবাসা!

তুমি আমার স্নিগ্ধ বিকেলের, শুভ্র রঙা লাল খামের চিরকুট..

তুমি আমার প্রিয় প্রভাতের এক ফালি রোদ্দুর!”

বলেই থামলো সে। অপরপাশে অনুভব হাসলো।

“প্রিয় ছন্দ সাজাতে শিখে গেছে দেখছি!”

“আরো অনেক কিছুই শিখেছে প্রিয়!”

“কি কি?”

“অনুভূতিগুলো বুঝতে শিখেছে সে। উপলব্ধি করতে শিখেছে সে। ভালোবাসতে শিখেছে সে।”

“তাহলে ছন্দগুলো কি স্বীকারোক্তি ছিলো?”

“এত দেরিতে বুঝলেন?”

অনুভব হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইলো সে। প্রিয় তাকে ডাকলো।

“অনুভব?”

“প্রিয়! তুমি আমার জীবনে লিখিত এক অসম্পূর্ণ কাব্য; যাকে নিয়ে যতই লিখি, তা কখনো শেষ হবার নয়! তুমি এমন একজন যাকে যতই ভালোবাসি না কেনো, তা কখনো ফুরাবার নয়!”

প্রিয় হাসলো। নতুন নতুন অনুভূতির জোয়ারে ভাসছে সে! হুট করেই বলে উঠলো, “ভালোবাসি অনুভব!”

__________________________________

ধরফরিয়ে উঠে বসলো অনুভব। বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। জলদি করে পাশে থাকা বোতল থেকে পানি খেলো সে। তবুও শান্ত হতে পারলো না। দেয়াল ঘড়িতে তাকাতেই দেখতে পেলো ভোর সাড়ে চারটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথার চুল টেনে ধরলো নিজের। বির বির করে বললো, “শান্তিতে কেনো থাকতে দিচ্ছো না প্রিয়? তুমি তো ভুলে গিয়েছো। তবে আমাকে কেনো ভুলতে দিচ্ছো না? কেনো এভাবে তোমার স্মৃতিতে বেঁধে রেখেছো? কেনো সেদিন বলেছিলে ‘তুমি স্বীকার করছো ভালোবাসো’? কেনো বলেছিলে ‘ভালোবাসি’? আমি মা’রা যাচ্ছি প্রিয়। পুরুষ হয়েও আমি পারছি না থাকতে। অসহ্য লাগছে আমার প্রিয়! বলেছিলে তো অনুভূতি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তখনের পদক্ষেপ নিবে। তাহলে তোমার নিশ্চিতকরণ কোনটা ছিল?”

অনুভব বিছানা থেকে উঠলো। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিলো। সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিলো একবার। রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে প্রিয়। যদি যেতেই হয় তবে এত মায়ায় কেনো জড়ালো? সে কি টের পাচ্ছে না কেউ একজন ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে? অনুভব বির বির করে বললো,

“যদি ক্ষমতা থাকতো, তবে আমার ঘুম কেড়ে নেয়ার দায়ে তোমাকে আমার জীবনে বন্দী করে রাখতাম প্রিয়! আমায় ছাড়া তুমি ভালো আছো প্রিয়?”

ওয়াশরুম থেকে এসে ফোন হাতে নিলো সে। অনুভব নামক আইডিতে ঢুকলো সে। প্রিয়র স্মৃতি মুছে ফেলতে আগের আইডি সেই কবেই ডিলেট করে দিয়েছে। কিন্তু পারেনি মুছতে। মাস খানেক আগেই নতুন আরেক আইডি খুলেছে। তার মন বলে প্রিয় তার কাছে আবার আসবে। তাই এই নামেই খুলে রেখেছে। প্রতিদিন প্রিয়র আইডি খোঁজে সে। কিন্তু পায় না। তাদের আলাপকৃত সেই গ্রুপে আবার গেলো। নাহ, কিচ্ছুটি নেই। রেগে সেখান থেকে লিভ নিলো ও। দুই হাতে মাথা চেপে বললো, “আমি দেখিয়ে দিবো, তোমায় ছাড়া আমি ভালো আছি। একদম ভালো আছি!”

কিছুক্ষণ বাদে নামাজ পড়ে নিলো। আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো সে। কিন্তু ঘুমেরা যে এত সহজে ধরা দেয় না।

__________________________________

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৬

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৬

সকাল সকাল বাড়িতে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে। তবুও এর মাঝে নীতি আর বর্ষা ম’রার মতো ঘুমাচ্ছে। ঘুমাবে নাই বা কেনো? ফজরেরও অনেক পরে ঘুমিয়েছে দুইজন। প্রীতি ডেকে ডেকে হয়রান। কত কাজ এখন বাড়িতে, সব ওকে একা করতে হচ্ছে। এই দুইজন ওঠার নামই নিচ্ছে না!

“নীতি, বর্ষা! উঠবি তোরা?”

নীতি ঘুম জড়িত কণ্ঠে বললো, “ডিস্টার্ব করিস না। ঘুমাতে দে।”

প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “সারারাত দুইটা নিশ্চয়ই ফোন চালিয়েছে, আর আড্ডা দিয়েছে। এখন উঠতে পারে না। তোদের ভাগের কাজ আমি করতে পারবো না। উঠ!”

দুই একটু নড়ে চড়ে কাঁথা মুরো দিয়ে শুয়ে রইলো। প্রীতি রেগে বললো, “লাস্ট বার বলছি, উঠ..নয়তো পানি এনে তোদের গায়ে ফেলবো।”

দুইজন নিরুত্তর। প্রীতি আর একটা কথাও না বলে ওয়াশরুমে গেল। ছোট বালতিতে পানি ভরে নিয়ে এলো রুমে। আজ দরকার পড়লে মায়ের কাছে দুটো বকা নাহয় খাবে। কিন্তু এদের ও এভাবে কিছুতেই ছাড়বে না। বালতিটা উচু করে ধরে বললো, “তোরা উঠবি নাকি পানি ঢালবো?”

বর্ষা এবার জবাব দিল, “পানি ঢাললে ছোট আন্টির কাছে তুই ই বকা খাবি। বিছানা ভিজলে বড় আন্টির কাছে বকা খাবি। সো পক পক না করে যা কাজ কর!”

“আমি কিন্তু সত্যিই ঢেলে দিবো!”

“ঢাল যা!”

“ওকে!”

বলেই সব পানি দুইজনের দিকে ছুড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠলো নীতি। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

“এটা কি করলি?”

“ঘুম ভেঙেছে?”

“কু’ত্তী তুই পানি ফেললি কেনো? ভালোভাবে বললে একটু পরেই তো উঠে যেতাম!”

“হ্যাঁ দেখছিলামই কেমন উঠছিলে। আর বর্ষাই বলেছে দিতে!”

নীতি আশেপাশে তাকালো, পুরো বিছানায় পানি। সেও প্রায় অনেকটা ভিজে আছে। বর্ষার দিকে তাকাতেই দেখলো সে পানির মধ্যেই ঘুমিয়ে আছে। তার মাঝে এই পানির কোনো ইফেক্ট পড়ে নি। নীতি প্রীতির রাগ বর্ষার উপর ঝাড়লো। বর্ষা ওর উল্টো দিকে ঘুরে থাকায় নীতি পা দিয়ে জোরে বর্ষাকে লা’থি দিলো। ফলস্বরুপ বর্ষা নিচে গিয়ে পড়লো।

“আউচ, কি শুরু করছিস তোরা দুই বোন সকাল বেলা? ঘুমাতে দিস না কেন?”

বলেই কোমর ধরে উঠে বসলো! চোখ এখনও বন্ধ খুলতে পারছে না সে। নীতি ধমকে বললো, “তুই ওকে পানি ঢালতে কেন বলেছিস?”

বর্ষা আধো আধো চোখ খুলে বললো, “কাকে?”

নীতি বিছানার সাইড থাকা টি টেবিলের উপর থেকে পানি ভরতি গ্লাস হাতে নিলো। সেগুলো বর্ষার মুখে ছুঁড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা লাফিয়ে উঠলো।

“আরে পানি ছুড়ছিস কেনো? বিছানা ভিজবে তো!”

নীতি চেঁচিয়ে বললো, “অলরেডি ভিজে গেছে।”

বর্ষা চোখ ছোট ছোট করে বললো, “নীতি তুই না বড়? তাহলে কেমনে কি? ছি, লোকের কাছে মুখ দেখাবি কি করে?”

নীতি প্রথমে বুঝলো না কথাটার মানে। মস্তিষ্ক যখন কথাটা ধরতে পারলো তখন তেড়ে বর্ষার কাছে গিয়ে ওর চুল টেনে বললো, “আবা* , তোর নেগেটিভ মাইন্ড তোর মনের ভিতরে রাখ। বেদ্যোপ বেডি। সকাল সকাল একজন পানি দিচ্ছে তো একজন আবোল তাবোল অপবাদ!”

বলেই বর্ষাকে তুলে বিছানায় ফেললো। বর্ষা চমকে ওঠা কণ্ঠে বলল, “এত পানি কেন?”

“বালতি ভরে পানি ফেলেছে।”

“কে?”

নীতি রেগে প্রীতির দিকে তাকালো। প্রীতি এতক্ষণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “কাম কাজ না করে ম’রার মতো ঘুমালে এমনই হবে।”

নীতি এবার প্রীতির দিকে তেড়ে গেলো। ধাক্কা দিয়ে ওকে বিছানায় ফেলে ওর উপর উঠে বসলো। কিছু বলবে তার আগেই প্রীতি তার দুই হাত দিয়ে আটকে দেয়ার ভঙ্গিমা করে বললো, “ছি নীতি তোকে তো ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম। তোর মনে মনে তাহলে এই?”

নীতি হতাশ হয়ে বর্ষার দিকে তাকালো। সেও হাতগুলো সামনে এনে একই ভঙ্গিমা করলো। নীতি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে প্রীতির পাশে শুয়ে বললো, “ও আল্লাহ! এই দুই নমুনা কোন থেকে টপকাইছে? এই দুই অসুস্থ মানুষের সাথে আমি সুস্থ মানুষ কেমনে থাকবো? একেকটা একটা চিজ! সকাল সকাল কি শুরু করছে আমার সাথে।”

বলেই কাঁদার ভঙ্গিমা করলো। প্রীতি আর বর্ষা শব্দ করে হেসে দিলো।

“তোদের তিনটার ড্রামা শেষ কখন হবে জানতে পারি?”

রীতির আওয়াজ শুনে নীতি উঠে দাঁড়ালো ৷ ঠোঁট উল্টে ওর কাছে গিয়ে বললো,

“দেখো ওরা আমায় কিসব বলছে।”

রীতি ভ্রু কুঁচকে বললো, “ওদের কথা বাদ দে, তুই এমন বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে রেখেছিস কেন?”

বর্ষা হাসতে হাসতে বললো, “ও তো বাচ্চাই। তাই তো বিছানায়-..”

বলেই হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেলো, ওর সাথে প্রীতিও তাল মেলালো। নীতি এবার ভীষণ ক্ষেপে গেলো।

“তোদের আমি..”

বলেই ওদের গিয়ে উত্তম মধ্যম দিতে লাগলো। রীতি বিরক্ত হয়ে একপ্রকার চিল্লিয়ে বললো, “তোরা থামবি? সেই কখন থেকে রুমে বসে তোদের যুদ্ধ দেখছি!”

“ওরাই তো সক্কাল সক্কাল আমার সাথে লাগছে।”

রীতি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, “তোদের জন্য মা আমায় এসে কাজ দিচ্ছে। এর ওর বিছানা গুছাতে বলছে। এটা কর , ওটা কর! আরে আমারই বিয়ে ভাই! আমি কাজ করলে কোন বিয়ে বাড়ির জাত থাকবে শুনি?”

ওরা তিনজন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। রীতি শান্ত কণ্ঠে বললো, “তিনটা কাজে যা। নয়তো সত্যি ই বলছি আমার বিয়ের রোস্ট, পোলাও কিচ্ছুটি পাবি না!”
সঙ্গে সঙ্গে তিনজন উঠে দাঁড়ালো। নীতি চট জলদি জামা কাপড় বের করতে করতে বলল, “নে তোরা বিছানা গুছিয়ে ফেল। আমি গোসল সেরে বাকি কাজে হাত লাগাচ্ছি!”

বলেই এক মুহুর্ত দেরী না করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। বর্ষা ওকে পিছু ডেকে বললো, “আরে এই ভিজা বিছানা কি করে কি করবো সেটা তো বল?”

কিন্তু ততক্ষণে নীতি ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে। বর্ষা এবার প্রীতির দিকে তাকালো। ওর তাকানো দেখে প্রীতি তাড়াতাড়ি বালতি উঠিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে রেখে বললো, “নীতি, বালতি ভিতরে নে। আমি গেলাম!”

বলেই দৌড়! নীতিও হাত বাড়িয়ে জলদি বালতি নিয়ে দরজা আটকে দিলো। বর্ষা অসহায় হয়ে রীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “আপু!”

ওর অবস্থা দেখে রীতি হেসে দিলো। ভরসা দিয়ে বললো, “আমিও সাহায্য করছি। আয়!”

বর্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।

__________________________________

বিয়ে বাড়ীতে হৈচৈ ভরপুর। দু হাতে লেহেঙ্গা ধরে সারা বাড়িতে সিনথীকে খুঁজছে নীতি। গতকাল থেকে ওর কাছেও আসেনি মেয়েটা। এমনকি আজকে সাজতেও আসেনি। অথচ নীতির হাত না সাজলে নাকি ওর মন ভরে না। বেশ বুঝেছে অভিমান করে আছে সে। ওদিকে বরযাত্রীও এসে গেছে। সেখানেও সিনথী নেই। তাই বর্ষার হাতে সবটা দিয়ে সে এখন খুঁজছে ওকে। ওদিকে মাও ব্যাস্ত থাকায় ওদের খোঁজ নিতে পারছে না। অনেক খুঁজে প্রীতির রুমে ওকে পেলো। প্রীতির ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে মন খারাপ করে। নীতি ধীরে ওর কাছে গেলো। ধীরে চললেও ওর পায়ের পায়েল সিনথীকে জানান দিলো কেউ এসেছে। ঘুরে তাকালো ও। নীতিকে দেখে মাথা নিচু করে বসলো। নীতি ওর সামনে ড্রেসিং টেবিলের পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাড়ালো। মিহি কণ্ঠে বলল, “কেউ কি এখানে আমার উপর রাগ করেছে?”

সিনথী দু দিকে মাথা নাড়লো। নীতি হেসে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো, “তাহলে এমন মুখ ঘুরিয়ে আছে কেনো আমার থেকে?”

সিনথী ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, “কেউ একজন বলেছে আপনজনদের উপর রাগ হয় না, হয় অভিমান!”

নীতি আবার হাসলো। কথাটা সে-ই বলেছে। প্রিয়জনদের উপরে আমাদের রাগ থাকে না। যা থাকে, তা হচ্ছে অভিমান, অভিযোগ আর ভালোবাসা।

“অভিমান করেছেন?”

“অনেক!”

নীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “সরি মাই লিটল সিস্টার! আসলে ঐ ফোনে বেশ দরকারি জিনিস ছিল। আর তুমি তো জানো, যারা আমাদের প্রিয় তাদের কোনো জিনিস আমরা হারিয়ে যেতে দেই না। এই যেমন দিদা দাদুর জিনিসগুলো সামলে রাখে। তাই ওমন করেছি। নাহলে তো জানো, আপু কি কখনো এভাবে বকেছি? মজা করেছি, কিন্তু সিরিয়াস হয়েছি কি?”

“উহুম!”

“সরি!”

“সরি বলে হামি দিতে হয়!”

নীতি হেসে ওকে আদর করে দিলো।

“এবার সাজিয়ে দেও। কেউ আমার খোঁজও নেয়নি। কখন থেকে বসে আছি!”

“আমাকে ডাকলেই হতো!”

“হ্যাঁ, দুর্নীতিকে ডাকলেই দুর্নীতি হাজির হয়ে যেতো।”

পুরুষালি কণ্ঠ শুনে নীতি চোখ ছোট ছোট করে পিছে ঘুরে তাকালো। নাহিয়ান যে মানুষটা তা সম্বোধন শুনেই বুঝছিলো। নাহিয়ান সিনথীর কাছে এসে বললো,

“বুঝলে ক্রাশ?”

“দুর্নীতি কে হ্যান্ডু ভাইয়া?”

“কেনো তোমার আপু!”

সিনথী নীতির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, “দুর্নীতি আপু!”

সঙ্গে সঙ্গে নীতি ধমক দিলো, “চুপ!”

সিনথী আবার ঠোঁট উল্টালো ধমক খেয়ে। নীতি তড়িঘড়ি ওকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বললো, “সরি সরি!”

নাহিয়ান বাঁকা হেসে বেরিয়ে যেতে নিলেই নীতি ডেকে উঠলো, “নাহি…”

নাহিয়ান চমকে ওর দিকে তাকালো। নীতি বাঁকা হেসে বললো, “ভাইয়া!”

নাহিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আমার নাম নাহিয়ান। নাহি না!”

“আমিও নীতি, দুর্নীতি না!”

“আমার লিস্টের অপছন্দের মানুষদের আমি এমন নামই দেই।”

“আমিও আমার লিস্টের অপছন্দের মানুষদের কথা একটু কমই শুনি!”

নাহিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। নীতি বাঁকা হাসলো। দুইজন দুইজনার অপছন্দের লিস্টে এখন!

__________________________________

সুষ্ঠভাবে বিয়ে সম্পন্ন হলো। এখন রীতির বিদায়ের পালা। বিদায়ের সময় রীতির কি কান্না। শাফিন পারছে না বউকে এখনই বুকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিতে। শাফিনের অবস্থা দেখে একদিকে প্রীতি, বর্ষা আর নীতির যেমন হাসি পাচ্ছে, তেমনই আবার রীতির জন্য কষ্টও হচ্ছে। অবশেষে ঠিক হলো রীতির সাথে প্রীতি, নীতি আর বর্ষাও যাবে। অতঃপর সব রওনা হলো।

__________________________________

শাফিনদের বাড়িতে পৌঁছে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ওরা। কিসব নিয়ম আছে সেগুলো পালন করবে। শাফিনের মা সালেহা বেগম রীতির জন্য মিষ্টি আর পানি আনতে বললেন কাজের ছেলেকে। তার পাশেই নাহিয়ান দাড়িয়ে আছে। ছেলেটি মিষ্টি আর পানি হাতে করে আনছিলো। এ বাড়িতে সে নতুন। বিয়ের কাজ বেশি হওয়ায় তাকে রাখা হয়েছে। তাই এত আদব জানে না। সে তাড়াতাড়ি সেগুলো নিয়ে আসছিলো, তখনই নাহিয়ান তার ডান পা বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটি খেয়াল না করায় নাহিয়ানের পায়ে তার পা ঠেকে গেলো। ফলস্বরূপ মিষ্টির বাটি আর পানির গ্লাস শক্ত করে ধরে রাখলেও সেগুলো ছিটকে গিয়ে সামনে থাকা এক রমণীর ড্রেসে গিয়ে পড়লো। সেই রমণী আর কেউ নয়, নীতি! নীতি অবাক হয়ে নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নাহিয়ানের দিকে। সে লক্ষ করছিলো নাহিয়ান তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ডান পা ওভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তখনও বুঝেনি এর কারণ। এখন বেশ বুঝেছে। সালেহা বিরক্ত হয়ে বললো, “দেখে চলতে পারিস না? দিলি তো মেয়েটার জামা নষ্ট করে? আর হাতে করে এগুলো কে আনতে বলেছে? বাড়িতে কি ট্রে নেই?”

ছেলেটি অসহায় ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে রইলো। নাহিয়ান তখন বলে উঠলো, “আহা মা। রেগো না তো। ও নতুন! বুঝে না এত কিছু। ব্যাপার না। বেয়াইন সাহেবা কিছু মনে করেনি। বরং তার মিষ্টি মুখের বদলে মিষ্টি জামা হওয়াতে সে খুশিই হয়েছে। তাই না বেয়াইন?”

নীতি ক্ষোভ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “জি আন্টি! ওর কোনো দোষ নেই।”

আবার বির বির করে বললো, “যার দোষ, সেই ই ত আড়ালে!”

সালেহা শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি বললে?”

নীতি মেকি হেসে বললো,

“কই কিছু না! আমি চেঞ্জ করে নিবো। জামা এনেছি সাথে!”

বলেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। অতঃপর নিয়ম মেনে ওদের ঘরে আনা হলো। সবাই যার যার মতো এগিয়ে গেলেও নীতি ওর ড্রেস ঝাড়ায় ব্যাস্ত ছিল। সেই সুযোগে নাহিয়ান কাছে এসে বললো, “আপ্যায়ন কেমন ছিল বেয়াইন?”

নীতি বড়সড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো, “নীতি অনেক ভালো মেয়ে। অহেতুক কারো পিছে লাগে না। তাই কিছু বললো না। ক্ষমা করলো আপনায়!”

“দুর্নীতির কাছে ক্ষমা কে চায়? ভালো মেয়ে, কিন্তু দুর্নীতি করে বেড়ায়!”

“সমস্যা কি? এমন পিছে লাগছেন কেনো?”

“অন্ধ নাকি? দেখছো না আমি সামনে?”

“উফফ! আপনার গিটার ভেঙেছি বলে এমন করছেন? মাফ চাই ভাই! তাও দয়া করে থামেন।”

বলেই এগিয়ে গেলো। পিছ থেকে নাহিয়ান বলে উঠলো,

“হারানো মানুষের জিনিস খুব স্পেশাল হয়। তাই বলে তার জন্য আশেপাশের কেউ কষ্ট পায় এমন কিছু করা আমার লাইফে নেই। তাই ওই বিষয় নিয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করার মানে হয় না।”

নীতি দাড়ালো। ঘুরে তাকালো ওর দিকে। নাহিয়ান ওর কিছুটা কাছে এসে বললো, “কেনো যেনো আপনাকে আমার বড্ড অপছন্দ। তাই আপনাকে একদম শান্তিতে থাকতে দিতে ইচ্ছে করছে না। অপছন্দের মানুষদের আমি শান্তিতে রাখতে চাই না। একদম না!”

নীতি থমকে গেলো। সবসময় সবার প্রিয় হয়েছে সে। কারণে, অকারণে। আজ কেউ বলছে সে বিনা কারণে অপছন্দ তার? কেনো অপছন্দ?

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৫

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৫

“প্রিয়?”

“আছি!”

“বাদ দেও, আমাদের কথা না বলাই উচিত। কয়েকদিন গেলে এভাবেই ঠিক হয়ে যাবে!”

“যদি না হয়?”

“জানা নেই!”

“বাড়িয়ে ভাবলে কি বেশি ক্ষতি হবে?”

“প্রিয় অনুভব হওয়াটা কি ঠিক হবে?”

“হতে দোষ কি?”

“এই অনুভূতি নিয়ে আমরা কেউই নিশ্চিত নই!”

“সমস্যা কি? আস্তে আস্তে সিউর হয়ে নিবো। তাই বলে এভাবে কথা বন্ধ করার কি মানে?”

“এসব কেমন অদ্ভুত লাগছে!”

“যেখানে আমি নিজেই অদ্ভুত, আর অদ্ভুত কি হবে?”

”তাও ঠিক!”

“হুমম তো কি করছেন?”

এভাবেই তাদের সম্পর্ক চলতে লাগলো। সত্যি বলতে নীতি কেবল ওর বোরিং সময়টুকু কাটাতেই সম্মতি দিয়েছে। ওর মতে কয়েকদিন গেলেই যখন বর্ষা আবার আগের মত ওকে সময় দিবে তখন অনুভবকে ভুলে যাবে। আর অনুভবও হয়তো যাবে। তাই বেশি ভাবলো না। এভাবেই চলছে কয়েকমাস!

__________________________________

সময় তার নিজ গতিতে চলছে। এর মাঝে পরিবর্তন এসেছে নীতি আর অনুভবের সম্পর্কেও। নিয়ম করে তিনবেলা কথা না বললে যেনো তাদের পেটের ভাত হজম হয় না। মজার ব্যাপার, ওদের পরিচয় আর সম্পর্কের আট মাস চলছে, তবুও কেউ একে অপরকে দেখেনি। নীতির অনেক আগ্রহ অনুভবকে দেখার। এইতো সেদিনের কথা,

“এইযে মিষ্টার অনুভব!”

“বলো!”

“তোমার দেখা কবে পাবো শুনি?”

তারা একে অপরকে এখন তুমি করেই বলে।

“যেদিন আমার চাকরি হবে। সেদিন!”

“মানে? চাকরি পেতেও তো অনেক সময় লাগে। এর মাঝে নো দেখা শোনা?”

“উহু, নো দেখা! কিন্তু শোনা অবশ্য করা যায়!”

“দেখা নয় কেনো?”

“কারণ… আমি চাই আমার সফলতার পর তোমার সাথে দেখা হোক । তখন আমার মনে কোনো প্রকার ভয় থাকবে না হারানোর। না থাকবে বেকারের অজুহাতে ছেড়ে যাওয়ার রাস্তা! আমরা সেদিন হাসবো। প্রাণ খুলে হাসবো! আমাদের প্রথম দেখার দিন আমরা একে অপরকে দেখবো। থমকাবো। এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে কথা বলবো। সূচনাটা অদ্ভুত, দেখাটাও অদ্ভুত হোক!”

“আমরা একে অপরকে চিনবো কি করে?”

“তুমি শুভ্ররাঙা শাড়ি পড়বে, হাত ভর্তি থাকবে কালো কাঁচের চুড়ি, মাথায় আমার প্রিয় বেলি ফুলের গাঁজরা। আমি পড়বো সাদা পাঞ্জাবি। তারপর দুইজনে সেই শুভ্র সাজে নাহয় শহরটাকে ঘুরে দেখবো? বুঝেছো?”

“হুমম!”

“কী?”

“আপনি শুভ্রপুরুষ হবেন আর আমি শুভ্রময়ী!”

“বেশ বুঝেছো!”

নীতি হাসলো। অদ্ভুত ভালোলাগে এই মানুষটার সাথে কথা বলতে তার। হুট করেই লিখে ফেললো,

“তোমার আমার দেখা হবে এক চেনা শহরে! প্রথম আলাপ, প্রথম দেখা! আমরা চমকাবো, থমকাবো সেদিন, যখন দেখবো দু’জন দু’জনাকে। তুমি শুভ্রপুরুষ আর আমি শুভ্রময়ী.. অতঃপর ঘুরবো দুইজন সেই শহরের অলি গলি।”

“বাহ, ছন্দ সাজাচ্ছেন?”

“ছন্দ আর হলো কোথায়? তোমার মতো তো আর গায়ক নই! আর না ছন্দ সাজাতে পারি।”

“আমার জীবনের ছন্দই না হয় হয়ে যাও!”

“হবো তো!”

“সত্যি?”

“তাজা!”

এভাবেই চলতে থাকলো তাদের প্রেমকথন। দেখতে দেখতে নীতির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হলো। হাতে এখন অনেক সময়! অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে সে। এর মাঝে অনুভবের সাথে কথাও হয় তার। তবে আগের তুলনায় কম। পড়াশোনা শেষ করে ফোন হাতে নিলো সে। অনুভব লাইনে নেই। রীতিকে লাইনে দেখে আবার বদ বুদ্ধি মাথায় এলো নীতির। সঙ্গে সঙ্গে নক করলো,

“হাই সতিন!”

রীতি রাগী ইমুজী দিয়ে বললো,

“আপনি আবার নক করেছেন? আর এসব কেমন ডাক?”

নীতির মাথায় ঢুকে না, রীতি সতিন বললে এত রেগে যায় কেনো? তবুও নীতি তার কাজ চলমান রাখলো।

“তোমার জামাই আমার সাথে ফ্লার্ট করে তারে বলতে পারো না আমার সতিন চাই না?”

মেসেজটা সিন হলেও রিপ্লাই আসলো না। অ্যাডমিশনের প্রিপারেশনের জন্য রাত জেগে পড়ার কারণে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টের পায়নি। ঘুম ভাঙলো এশারের দিকে। ফ্রেশ হয়ে একেবারে খেয়ে নিজের রুমে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পড়ে রাত সাড়ে বারোটার দিকে অনলাইন হলো সে। অনলাইন হতেই তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেনো। তার আইডি ডিজেবল হয়ে গেছে। কেনো হয়েছে জানা নেই তার। বুক কাঁপছে তার। প্রায় ঘন্টা খানেক চেষ্টা করেও আইডি ফিরিয়ে আনতে পারলো না। আর কিছু না ভেবে নতুন আইডি খুললো জলদি। সেম নামে। প্রোফাইল পিকের কথা বেমালুম ভুলে গেলো। ‘অনুভব’ নাম দিয়ে আইডি সার্চ করলো। কিন্তু পেলো না। এমনিতেই ওর আইডি খুঁজলে পাওয়া যেতো না আগে থেকেই। নীতি বিচলিত হলো। ওদের মাঝে নাম্বার আদান প্রদানও হয়নি। কি করবে, না করবে ভেবে হুট করেই ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো সে। তার ভয় করছে, হারানোর ভয়। ইশ, কি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। তবুও মনকে শান্ত করে চেনা জানা সবার সাহায্য নিলো। কেউ কিছু করতে পারলো না। সারাটা রাত নীতির ছটফট করেই কাটলো।

__________________________________

অনুভবের সাথে যোগাযোগ নেই ছয় মাস হয়ে গেছে। তাই বলে অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য পড়ালেখার প্রতি কোনো প্রকার অবহেলা করা হয় নি। মন ঠিক রেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছে। নীতি ভীষণ পজিটিভ মাইন্ডের মানুষ। তার বিশ্বাস অনুভবকে সে আবার পাবে। কিন্তু প্রতি রাতে সেই বিশ্বাসটুকু ধরে রাখতে পারে না। চোখের পানি পড়াটাই যেনো নিয়ম হয়ে গেছে রাতের জন্য। প্রতিদিন আইডিতে যায় সে, খুঁজে সেই নামে! পায় না তাকে আর। হতাশ হয়, ফিরে আসে। এভাবেই চলছে…

সব শুনে বর্ষা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে! দূর থেকে ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে। এতক্ষণ যাবৎ কথা বলে চোখ বন্ধ করে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে নীতি।

“তুই কি সত্যি সুস্থ মানুষ?”

“অসুস্থ হওয়ার কি হলো?”

“আরে অনলাইনের কে না কে, তার জন্য এমন করবি?”

“সে আমার অনুভব বর্ষা!”

“ছেলে সম্পর্কে কিছু জানিস না। না আছে ফোন নাম্বার, না আছে ছবি। আর না আছে কোনো অ্যাড্রেস! তো খোঁজ পাবি কি করে? আর আদো কি সে ছেলে? যদি মেয়ে হয়? বা কোনো ফ্রড?”

“আমি তার সাথে ফোনে কথা বলেছি বর্ষা।”

“অডিও না ভিডিও?”

“অডিও!”

“তাহলে? আজকাল মেয়েদের ভয়েসও ছেলেদের মতো হয় বা তাদের মতো করে কথা বলে। সামান্য কথা বলাতে কি করে তুই ভালোবেসে ফেলতে পারিস?”

নীতি চোখ খুললো, বর্ষার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো,

“ভালোবাসি! সেটা হয়তো উপলব্ধিও করেছি। তবে সেটা রূপ দেখে নয়! তাকে অনুভব করে। অনুভব করে ভালোবাসাটা, মানুষকে দেখার পরের ভালোবাসার থেকেও কঠিন!”

“আচ্ছা, আচ্ছা। সব মানলাম! কিন্তু তোদের আর যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই। তাহলে আর দেখা হবে কি করে? আর সেও হয়তো ভুলে গেছে। তুই মনে রেখে কেন কষ্ট পাবি? ভুলে যা! এসব অনলাইন ভালোবাসা বলতে কোনো কিছুই হয় না!”

নীতি আবার হাসলো। দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমার সে, যাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে চাই। এই ভালোবাসার মেয়াদ কয়দিন জানা নেই। জানা নেই, কখনো তার দেখা পাবো কিনা! জানা নেই, কখনো তাকে ছুঁয়ে দেখা হবে কিনা, কখনো তার হাত ধরে শুভ্র জুটি সেজে প্রিয় শহর ঘোরা হবে কিনা, কখনো স্নিগ্ধ বিকেলে তার হাত থেকে চিরকুট নেয়া হবে কিনা, বা কখনো তার চোখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করা হবে কিনা। কিন্তু এটা জানি, সে আমার অনুভব। আমার প্রিয় অনুভব..! যাকে না দেখে, না ছুঁয়ে আমি ভালোবেসেছি! দেখা হওয়ার পর যে ভালোবাসা হয় সে ভালোবাসাকে হয়তো ভুলার চেষ্টা করা যায়। একটা সময় ভুলে ফেলাও যায়। কিন্তু যাকে অনুভব করে ভালেবেসেছি, তাকে শত চেষ্টা করেও মোছা যাবে না কখনোই! সে আমার প্রিয়! বড্ড প্রিয়! আমার প্রিয় অনুভব..! তারে আমি পাই বা না পাই, মনে মনে সে আমার থাকুক। কেবল আমার।”

বলেই কিছুক্ষণ থামলো নীতি। অতঃপর গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো,

“ও বাতাস তুমি বলে দিও তারে…
সে যেনো আমারই থাকে,
ভোলে না আমারে!”

বর্ষা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নীতির মুখে ভোরের স্নিগ্ধ আলো পড়ছে। স্নিগ্ধ আলোয়, স্নিগ্ধ হাসিটার মাঝে চাপা কষ্ট বর্ষা উপলব্ধি করলো। তার বোনের মতো বান্ধবী যে তার অনুভবকে কতটা ভালোবাসে, তা হয়তো আর তাকে বোঝানো লাগবে না। সবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“চল নামাজ পড়ি! ঘুমানোও লাগবে। আজ বিয়ে। তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠবো! নয়তো ছবি বাজে আসবে। কে জানতো তুই সত্যিই ছ্যাকা খেয়েছিস! নয়তো কালকেই শুনতাম। এখন তোর জন্য আমায় ঢুলতে ঢুলতে কাজ করতে হবে। ধুর! উঠ উঠ..”

বলেই রুমে গেলো। নীতি শব্দ করে হাসলো। ও জানে বর্ষা এখন সব দিয়ে চেষ্টা করবে ওকে স্বাভাবিক করতে। কিন্তু সে কি আদো স্বাভাবিক হবে? মনের মাঝে এসব চেপে রাখতে রাখতে সে ভীষণ রকমের খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিলো। কথায় কথায় রাগ যেনো তার রুটিন হয়ে গেছে।হুমম, হয়তো বর্ষাই পারবে ওকে স্বাভাবিক করতে! হয়তো!

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৪

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৪

রাত দুটোর দিকে নীতি ঘুমোতে এলো। বিছনায় শুয়ে মোবাইল হাতে নিলো টাইম দেখার জন্য। সেই মুহূর্তেই স্ক্রিনে কিছু মেসেজ নোটিফিকেশন দেখতে পেলো। নীতি তাড়াতাড়ি মেসেজগুলো সিন করলে। মেসেজগুলো এরকম ছিল, “দেখুন আমি তো এসব জানি না। তবে কেউ আপনার আইডিতে ঢোকার জন্য হয়তো পাসওয়ার্ড রিসেট দিচ্ছে। আপনি বরং আপনার জিমেইল আর পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলুন।”

“ওকে, ধন্যবাদ!”
বলেই ফোন রেখে দিল। ওর এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। আইডিতে ওর তেমন কিছুই নেই যে কেউ হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল করবে। অতঃপর ঘুম….

__________________________________

কলেজের বোরিং ক্লাসে বসে আছে নীতি। বরাবরই ম্যাথ ওর বোরিং লাগে। আর এই চুলহীন স্যারকে তো আরো। চুলহীন বলার কারণ তার মাথায় চুল নেই। নীতি বিরক্ত হয়ে লুকিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো। ফেসবুকে ঢুকলো। কি মনে করে ‘অনুভব’ নামক মানুষটার আইডিতে ঢুকলো। নীতি এখনও কনফিউজড। এটা আদো ছেলে নাকি মেয়ে? আইডি লক করা নেই বিধায় সহজেই পোস্ট দেখতে পারছে।

অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর এটা বুঝলো মানুষটা দারুন ছন্দ লিখে। নীতি কৌতূহল দমাতে না পেরে মেসেঞ্জারে গেলো। নীতির দেয়া গতকালের মেসেজে লাইক দিয়েছে সে। বিড়বিড় করে বললো, “ধন্যবাদ দিলে ওয়েলকাম বলতে হয়। ম্যানার্স নাই কোনো।”

অতঃপর মেসেজ দিবে কি দিবে না ভাবতে ভাবতে দিয়েই ফেললো। কি আর হবে? সে তো আর ওকে বাস্তবে চিনে না। তাই লিখে ফেললো,

“আচ্ছা আপনি আপু না ভাইয়া?”

সে লাইনেই ছিল।

“নাম দেখে কি মনে হয়?”

“আপনার নাম অনুভব?”

ওপারে কিছুক্ষণ নিরবতা। অতঃপর জবাব এলো, “জি!”

“শুধু অনুভব? আগে পরে কিছু নেই?”

“আপনার নাম কি?”

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এভাবে পাল্টা প্রশ্ন করাটা পছন্দ হলো না নীতির।

“আইডিতে আছে দেখেন না?”

“প্রিয় আবার কেমন নাম? শুধু প্রিয়? আগে পরে কিছু নেই?”

নীতি বুঝতে পারলো লোকটা তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে। তার মানে ওর মতো লোকটারও ফেক আইডি এটা।

“তার মানে আপনিও ফেক?”

“আমি না! আমার আইডি ফেক।”

নীতি কিছু বলবে তার আগেই শুনতে পেলো চুলহীন স্যার তাকে ডাকছে।

“মিস নীতি!”

ফোন ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে নীতি জলদি উঠে দাঁড়ালো।

“জী স্যার?”

“আপনি কি করছেন ম্যাম?”

নীতি মেকি হেসে বললো, “আপনার পড়া শুনছি স্যার।”

“ব্যাগের মাঝে আমার পড়া?”

“ইয়ে মানে স্যার কলম খুঁজছিলাম!”

“ওহ, তো বলুনতো আমি এখন কি পড়াচ্ছি?”

নীতি হোয়াইট বোর্ডে তাকিয়ে টপিকের নাম খোঁজার ট্রাই করলো। কিন্তু পেলো না। এক সাথে অনেক কিছু লিখা। যার কারণে ধরতেও পারছে না কি করাচ্ছে।

“ক্লাস কি ফোন চালানোর জায়গা?”

নীতি চুপ করে রইলো।

“যান, ক্লাসে ফোন চালাতে হবে না কষ্ট করে। বাইরে দাঁড়িয়ে আরামে চালান।”

“স্যার, সরি…”

“গেট আউট!”

নীতি আর কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে বের হলো। এতে অবশ্য ও খুশিই হয়েছে। আহা! এখন আর লুকিয়ে ফোন চালাতে হবে না। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাঠে গেলো ও। ফোন বের করে তাকে মেসেজ দিলো,

“আপনার জন্য ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে আমায়!”

এক্টিভ থাকলেও সিন হলো না। নীতি মাঠে গিয়ে বসলো। কলেজে ওর তেমন আড্ডা দেয়ার ফ্রেন্ড হয়নি। নামে মাত্র কিছু ফ্রেন্ড হয়েছে। তিন মিনিটের মাথায় মেসেজ এলো, “আমি কি করলাম?”

“এইযে আপনার সাথে কথা বলছিলাম বলে স্যার বের করে দিল!”

“কোন ক্লাসে পড়েন?”

নীতি প্রথমে ভাবলো বলবে কি না। তারপর ভাবলো এক ক্লাসে তো ও আর একা পড়ে না।

“ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার, আপনি?”

“বাচ্চা মেয়ে। অনার্স ফাইনাল ইয়ার আমি!”

“জোক করছেন নিশ্চয়ই?”

“এখনও সেই সম্পর্ক হয়নি!”

“তাও ঠিক! তো কি নিয়ে পড়ছেন?”

“এত জেনে কাজ কি?”

“বলবেন না বললেই হয়। কাজ কি আবার কি?”

“হুমম!”

নীতি অসহায় হয়ে ফোনের দিকে তাকালো। এখন এই ‘হুম’ এর রিপ্লাই কি দিবে? যাহ, কথা বলাই মাটি করে দিলো। এখন টাইম পাস করবে কি করে? কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ওপাশ থেকে মেসেজ এলো, “ক্লাসের মাঝে ফোন টিপতে গেলেন কেনো?”

খুশিতে গদগদ হয়ে রিপ্লাই করলো, “টাকলা স্যারের ক্লাস ভালো লাগে না। ইয়াং হলে তাও করা যেতো!”

“ইয়াং নয় দেখে ফোন চালান?”

“হুমম! ইয়াং হলে কি আর ফোন ধরতাম? তার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম!”

“শিক্ষক বাপের সমান!”

“তারা বিয়ে তো কোনো না কোনো ছাত্রীকেই করে!”

“অদ্ভুত মানুষ আপনি। ছাত্রীকে করলেও তাদের সম্মান করা উচিত। পরে যদি কিছু হয় সেটা পরের ব্যাপার।”

“আচ্ছা বুঝলাম। মজা করছিলাম। তো বলুন আপনার আইডিতে ছন্দগুলো আপনার লিখা?”

“হুমম! আমার আইডিও ঘুরেছেন?”

“আসলে আমার কৌতুহল অনেক বেশি। তাই একটু ছন্নছাড়া। ভাববেন না আপনাকে পটাতে আসছি। আসলে টাইম পাসের জন্য কথা বলার কেউ নেই।”

“আর আমাকে পেলেন?”

“ওরকমই!”

সে আর রিপ্লাই দিলো না। নীতি জিজ্ঞেস করলো, “রাগ করলেন নাকি?”

নো রিপ্লাই। নীতি আর না ঘেঁটে নিজের আইডিতে গেলো। ওখানে যদি বর্ষাকে পায়। পেলোও। অতঃপর আড্ডা জমালো।

__________________________________

এভাবেই বেশ কিছুদিন চললো নীতির কথা বার্তা। দুইজন দুইজনার আইডিতে ফ্রেন্ডও হয়ে গেলো। প্রায়ই ওদের কথা হয়।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ফেসবুকে ঢুকলো নীতি। তখনই ফীডে অনুভবের পোস্ট দেখলো।

“একটা মানুষ কাছে ছিলো
একটা মানুষ দূরে..
আমার যত কথা ছিল
বলতে যে চাই তারে।”

নীতি কমেন্ট করলো, “বেশ সুন্দর ছন্দ লিখেন আপনি!”

“এটা ছন্দ নয়, এটা গান!”, অনুভবের রিপ্লাইয়ে নীতি ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তারপর রিপ্লাই করলো,

“এমন গান তো জন্মেও শুনি নি।”

কোনো উত্তর এলো না। মিনিট খানেক পরে অনুভব মেসেজ দিলো, “আছেন?”

“জি!”

কিছুক্ষণ পরেই অনুভব ভয়েস মেসেজ দিলো। নীতি কিছুটা চমকালো। রিপ্লাই করলো,

“কি এটা?”

“শুনেন!”

নীতি ভয়েসটা চালু করলো। সঙ্গে সঙ্গে পুরুষালি কণ্ঠের কিছু ছন্দ ভেসে এলো। উহু ছন্দ না, গানের কথা! গাম্ভীর্যপূর্ন সু-মধুর কণ্ঠের গানটা নীতির মন এলো মেলো করে দিচ্ছে। ফোনটা কাছে রাখতে পারলো না সে। বিছানার এক কোণায় ছুঁড়ে দিলো। ভয়েস চলছে। নীতি চোখ বন্ধ করে শুনছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই গান থেমে গেলো। নীতি লম্বা শ্বাস নিলো। ও জানে না ও কেনো এমন আচারণ করলো। ফোন আবার হাতে দিলো। স্বাভাবিকভাবেই মেসেজ দিলো,

“সুন্দর তো! সিঙ্গার এর নাম কি? বেশ দারুন গলা তার!”

“অনুভব!”

আরেকদফা চমকালো নীতি।

“আপনার গাওয়া?”

“জি ম্যাম!”

“লিরিক্সও কি আপনার?”

“নাহ, ওটা অন্যের!”

“গান শিখেন নাকি?”

“না!”

“তাহলে এত সুন্দর গাইলেন কি করে?”

“গান ভালোবাসি। তাই সুর মনেতেই আসে। শিখা হয়নি।”

“আমিও গান ভালোবাসি।”

“তাহলে একটা গান শুনান!”

“আপনি ছেলে, আর আমি মেয়ে। নিশ্চয়ই বুঝেছেন কি বুঝিয়েছি!”

“আমি অতটাও বাজে ছেলে নই!”

“নিজেই স্বীকার করলেন যে অতটা নন, তবে কিছুটা আছেন!”

অনুভব কয়েক জোড় রাগী ইমুজি পাঠালো। তা দেখে মৃদু হাসলো নীতি।

__________________________________

সেদিনের পর নীতি , না.. প্রিয়! প্রিয় আর অনুভবের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আগে মাঝে মাঝে কথা হতো। কিন্তু এখন, নিয়ম করে কথা বলাটা যেনো অভ্যাস হয়ে গেছে।।

“কি করছেন?”

“এইতো কলেজে আপনি?”

“বাসায়! কলেজে ফোন ইউজ করছেন যে? আবার ক্লাস থেকে বের হওয়ার শখ আছে নাকি?”

“ইয়াং স্যার আসবে না কতদিন, ফোন চলবে ততদিন!”

হুট করেই অনুভব চুপ হয়ে গেলো। নীতি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার মেসেজ দিলো , “কোথায় গেলেন?”

“ভাবছিলাম!”

“কি?”

“ইয়াং স্যার আসলে আমার প্রয়োজন তখন ফুরিয়ে যাবে!”

কথাটায় অনেকটা অভিমান প্রকাশ পেলো নীতির কাছে। সে মজার ছলে বললো, “হুমম, আমার টাইম পাস ফ্রেন্ড তো আপনি! ইয়াং কোনো স্যার আসলে আমার এর ফোন কেনো প্রয়োজন হবে?”

অনুভব নিরুত্তর রইলো।

“আবার চুপ করে গেলেন কেনো?”

“আমাদের আর কথা বলা উচিত নয় প্রিয়!”

নীতি চমকে উঠলো।

“কেনো?”

“কারণ উচিত নয়। আর মেসেজ করবেন না।”

নীতি অবাক হলো। অনেক কিছুই জানার ইচ্ছে ছিলো ওর। হুট করেই কি হলো? কিন্তু তবুও মেসেজ করলো না। যতই হোক, একজন মানা করার পর মেসেজ দেয়াটা বিব্রতকর।

__________________________________

পরপর কয়েকদিন কথা বলা অফ রইলো তাদের। পরিবারের সাথে ভালোই সময় কাটায় নীতি। কিন্তু তবুও সারাদিন ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কখনো অনুভবকে অনলাইন দেখলে ওর ভীষণ ইচ্ছে করে নক দিতে। কিন্তু অনুভবের লাস্ট মেসেজ ওকে আটকে দেয়। নীতির বড্ড অশান্তি অশান্তি লাগছে। ও বুঝছে না এমনটা কেনো? তাই ওই আইডি ফোন থেকেই রিমুভ করে দিলো। ও এই ‘অনুভব’ নামক মানুষটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায়। একদম ঝেড়ে ফেলতে চায়!

“নীতি!”

রীতির ডাকে চমকে উঠলো নীতি। এতক্ষণ অনুভবের ভাবনায় মশগুল ছিল সে।

“হুমম?”

“কখন থেকে ডাকছি তোকে?”

“শুনি নি বলো।”

“বর্ষা ফোন করেছিলো!”

“তোমাকে?”

“হুমম! তুই নাকি ওর সাথে ঠিকমতো কথা বলছিস না। কেমন উদাস উদাস হয়ে থাকিস! কি হয়েছে তোর? প্রেম করে ছ্যাকা খেয়েছিস নাকি আবার?”

“ধুর, কি যে বলো! ওই ছেরি আমায় ইগনোর করে পড়ালেখার জন্য। তাই আমিও করলাম!”

“ওহ, তাই বল।”

“হুমম!”

রীতি নীতির পাশে বসে ফোন দেখতে লাগলো। হুট করেই নীতি জিজ্ঞেস করলো, ”আচ্ছা আপু! প্রেম করে ছ্যাকা খেলেই কি মানুষ এমন উদাস হয়? অন্য কোনো কারণে হয় না?”

নীতির প্রশ্নে একটু ভেবে বললো, “দেখ মানুষ উদাস হয় অনেক কারণে। ফ্রেন্ডসদের জন্য হয়, লাভ সাভের বিষয় হলে হয় আবার অনেক সময় ফ্যামিলি প্রবলেমেও হয়। আরেকটা কারণেও হয়!”

“কি কারণ?”

“পার্সোনাল কোনো কারণে হয়!”

“ওহ!”

“বর্ষাকে কল দিস। গেলাম আমি।”

রীতি যেতেই নীতি বর্ষাকে কল দিলো। দুই বার রিং হতেই কেটে দিলো। ভালো লাগছে না কথা বলতে ওর। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পড়েই বর্ষা ব্যাক করলো। নীতি কল পিক করতেই ওপাশ থেকে দুটো ভয়ংকর গালি শুনতে পেলো।

“ছি, শিক্ষিত মানুষ এগুলো কি বলিস?”

“তোর কাছে নিজেকে শিক্ষিত প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই আমার। এমন ইগনোর করছিস কেনো?”

“ইগনোর কই করলাম? তুই ই তো বললি পড়ালেখা ধুমিয়ে করবি। তাই ডিস্টার্ব করি না!”

“এই নীতি, সত্যি করে বল তো! কাউকে পাইছিস নাকি?”

“আউল ফাউল কথা কমাইয়া বল!”

“কি আউল ফাউল! নইলে তুই আমার কথা এত ভাববি সেটা আমি বিশ্বাস করবো?”

“করলে কর, নাইলে নাই!”

“অত্যন্ত অদ্ভুত মানুষ তুই!”

“জানি!”

“কি করে?”

“একজন বলেছে..”

“কে?”

অনুভবের নাম বলতে গিয়েও বললো না নীতি।

“এইযে তুই বললি!”

বর্ষা হতাশ হলো। এ শুধু অদ্ভুত নয়, একদম আশ্চর্যজনক প্রাণী!

__________________________________

আরো সপ্তাহখানেক কেটে গেলো। নীতির মন খারাপের এখনও অন্ত নেই। বড্ড বিরক্ত সে। অনুভবের সাথে কথা বলার মাঝে এত জড়িয়ে গেলো কেনো ও? অনুভবের তো ইচ্ছে নেই কোনো কথা বলার। তবে সে কেনো এত বিচলিত? ফোনটাও ফেলে রেখেছে। অনলাইনেও যেতে ইচ্ছে করে না। এই এক সপ্তাহ অনলাইন হয়নি সে। আজ আবারও অনুভবের সাথে ভীষণ করে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার। তাই অনলাইন হলো। হতেই চমকে উঠলো। অনুভবের মেসেজ এসেছে তিনদিন আগে। বেশ কয়েকটা!

“সারাদিন যে লাইনে দেখলাম না! কিছু হয়েছে কি?”

তারপরের মেসেজ, “আপনি ঠিক আছেন?”

লাস্ট মেসেজ, “চারদিন ধরে আসছেন না যে?”

পর পর লম্বা নিঃশ্বাস নিলো নীতি। অতঃপর উত্তর দিলো, “এসে কি করবো?”

অনুভব লাইনেই ছিল।

“কিছু করার নেই?”

“আপনি তো টাইম পাস ফ্রেন্ড ছিলেন। এখন আপনি মেসেজ দিতে মানা করলেন, তো আমার আর এখানে কাজ কি?”

“তাও ঠিক!”

“তো হঠাৎ মনে পড়লো যে আমায়?”

“এমনি, লাইনে দেখিনি।”

“তার মানে খেয়াল রাখেন আমি লাইনে আছি নাকি!”

পাঁচ মিনিটের মত মেসেজ সিন করে ফেলে রাখলো অনুভব।

“উত্তর দিলেন না যে?”

“সরাসরি কিছু কথা বলি। ভালো না লাগলে বলে দিবেন।”

“কি কথা?”

“আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। টাইম পাস ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি কিছু হতে চাইছি! আর এসব বুঝতে পেরেছি সেই দিনই, যেদিন বললেন ইয়াং কোনো টিচার আসলে আপনার আর আমাকে প্রয়োজন পড়বে না। কেনো যেনো কথাটা মানতে পারছিলাম না। যখন বুঝতে পারলাম তখন ভাবলাম কথা না বলাটাই সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু…”

“কিন্তু?”

“প্রতিনিয়ত কথা বলার জন্য মন ছট ফট করতো। রোজ আইডি ঘাটা হতো। আমি বুঝছি না এই ব্যাপারে কি করা যায়!”

নীতি উত্তর দিলো না। ও নিজেও এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করছে। নিজেও বুঝছে না এই বিষয়ে কি করবে?

“আমার কথায় ভুল বুঝবেন না। আমি কথা চেপে রাখতে পারি না। বলে ফেলি।”

“এসব কেনো হয় জানেন?”

“জানি তবে সিউর না!”

“কি?”

“আদো কিছু আছে নাকি!”

“আমিও!”

“মানে?”

“বোঝার কথা!”

“কি করা উচিৎ এখন?”

নীতি উত্তর দিলো না। কি হচ্ছে, কি হবে কিছুই জানে না ও। নিজেও বুঝতে পারছে না কি করা উচিত!

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০৩

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০৩

রুমে এসেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো নীতি। ওর পিছু পিছু বর্ষা, রীতি, প্রীতিও হাজির। রীতি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“নীতি কি হয়েছে? কার স্মৃতি?”

নীতি কয়েক পলক ওদের দিকে তাকালো। পরক্ষণেই লম্বা শ্বাস টেনে হেসে বললো, “কি হবে আবার?”

“তাহলে ওভাবে রিয়েক্ট করলি কেনো? আজকাল একটুতেই কেমন রেগে যাচ্ছিস। প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিস। নাহিয়ানের সাথেও ওরকম করলি। কিছু কি হয়েছে?”

বর্ষা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি করেছে নাহিয়ানের সাথে?”

প্রীতি বর্ষাকে সব বললো। সব শুনে বর্ষা নীতির দিকে তাকালো। নীতি চুপচাপ ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর বললো,

“আসলে আপু এই ফোনে আমাদের পুরোনো বন্ধুদের ছবি আছে। ওরা তো সাথে নেই। তাই নীতি এমন করলো। ব্যাপার না ঠিক হয়ে যাবে।”

“কিন্তু..”

“কোনো কিন্তু না, তুমি এখানে কি করছো? শাড়ি পড়ে ঘুরছো কেনো? গয়না কে পড়বে? সাজবে কে? আরে বরের বাড়ির লোক এসেছে। তারা তো ছবি তুলবে। প্রীতি আপুকে নিয়ে যাও তো। আমি আর নীতি রেডি হয়ে আসছি। তোমার মাকে বলো আপুকে আগে সাজিয়ে দিতে। এরপর আমার আর নীতির টার্ন!”

প্রীতি মাথা নেড়ে রীতিকে নিয়ে গেলো। বর্ষা নীতির দিকে তাকিয়ে বললো,

“বসে আছিস কেনো? জলদি রেডি হয়ে নে। ছবি তুলতে হবে তো।”

নীতি কিছু না বলে চুপচাপ রেডি হতে থাকলো। বর্ষা নীতির অন্যমনস্কতা খেয়াল করছে। কিন্তু তাও এড়িয়ে গেলো।

__________________________________

গায়ে হলুদের পর্ব সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নাহিয়ানেরা রীতিকে হলুদ দিয়ে চলে গিয়েছে। শাফিনও যে আছে, তাই। সবশেষে নীতি কেবল ফ্রেশ হয়ে নিজের বিছানায় বসলো। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। প্রতিদিনের মতো আজও সেম নামে সার্চ করলো। অনেক আইডি তার সামনে আসলো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত আইডিটা এলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলো।

“এবার বল কি হয়েছে?”

বর্ষার প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকালো নীতি।

“কি হবে?”

“তোর এমন পরিবর্তনের কারণ কি?”

“কিসের পরিবর্তন?”

বর্ষা স্থির চাহনিতে বললো, “তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু নীতি। বলতে গেলে সবার থেকে তোকে আমি ই বেশি জানি। তোর প্রত্যেকটা অভ্যাস আমার চেনা। তোর চাল চলন আমার চেনা। তাই আর কারোর ক্ষেত্রে না হলেও আমার ক্ষেত্রে এসব ধরা খুব কঠিন নয়।”

“বেশি ভাবছিস! তেমন কিছুই নয়।”

“বেশি ভাবছি? হাসালি। যেই নীতি আমার সাথে সকালে কথা শুরু করলে রাতে গিয়ে থামতো সে গত ছয় মাস আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলেনি। এমনকি, আমি ফোন দিলেও উদাস হয়ে থাকতো। যার ফোন হারিয়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা ছিলো না আগে, সবসময় ভাবতো একটা ফোন হারালে আরেকটা পাবে, সে হুট করেই ফোনের জন্য এতটা বিচলিত হলো? তাও কি? কোনো হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্মৃতি হারানোর ভয়ে! কে সেই হারানো মানুষ? আর নাহিয়ান ভাইয়ার সাথে তোর ওরকম বিহেভ! আমার জানামতে নীতি কখনো এরকম ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে কারো সাথে ঝগড়া করে না। উল্টো কেউ ঝগড়া করলেও সে সব কিছু পজিটিভলি নিতো। সেখানে অপরিচিতদের সাথে এমন বিহেভ…”

বলেই থামলো। আবার বললো, ”এবার কিছু বলবি?”

নীতি কিছু না বলে বেলকনিতে গেলো। বেলকনির রেলিংয়ের উপর হাত রেখে আকাশের দিকে তাকালো।

মধ্যরাত প্রায়। বিয়ে বাড়ি দেখে এখনও মৃদু আলো জ্বলছে চারপাশে। তবুও অনেকটা শুনশান। মাঝে মাঝে দুই একজনের কথা শোনা যাচ্ছে। নীতির পাশে দাড়িয়ে আছে বর্ষা। নীতিকে সময় দিচ্ছে বলার জন্য। নীতি আর বর্ষা দুইজন দুইজনার বেস্ট ফ্রেন্ড। বর্ষাকে নীতির জন্যই রীতি, প্রীতি চেনে। এমনকি বাড়ির সবাইও। নার্সারি থেকে নীতির সাথে বর্ষার আলাপ। এখনও আছে। এই জিনিসটা বেশ ইউনিক। কারণ আজকাল বন্ধুত্ব বলো আর রিলেশন! সব কিছুই টাইম পাসে পরিণত হয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর নীতি বলে উঠলো,

“মেঝেতে বসি চল।”

নীতির কথামতো রেলিংয়ের সামনের দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসলো বর্ষা। ওর পাশেই নীতি বসলো। চাঁদ দেখতে দেখতে বললো,

“মানুষের জীবন সব সময় এক গতিতে চলে না। মাঝে মাঝে ভিন্ন কিছুও জীবনে ঘটে থাকে। কখনো মন্দ, কখনো ভালো। আমারটা কি আমার জানা নেই!”

বর্ষা নীতির দিকে তাকিয়ে রইলো।

“গত বছরের সময়টা মনে আছে? ইন্টারে তুই আমি ভিন্ন কলেজে ছিলাম। ফোনেই আড্ডা বেশি হতো। কিন্তু হুট করেই পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস হয়ে গেলি। বললি ভালো রেজাল্ট করা লাগবে।”

“হুমম, যাতে সেম ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারি। তোর ব্রেইন তো ভালো। আমারটা তো..”

নীতি হাসলো।

“এই জন্যই তোর পড়াশোনার ব্যাস্ততা আমার মনে সন্দেহ জাগালো। যেই মেয়ে পড়াশোনা করতে চায় না, বিয়ে করে সংসার পাতবে বলে, পড়া দেখলেই যার মাথা ঘুরায়, সে হুট করে এত সিরিয়াস?”

বর্ষা চোখ ছোট ছোট করে বললো, “তোর কাছে কোন কাহিনী জানতে চাইলাম বলতো? তুই দেখি বসে বসে আমায় নিয়ে মজা নিচ্ছিস?”

নীতি স্বশব্দে হেসে ফেললো। আবারো চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো, “কাহিনীটা যে সম্পূর্ণ ভিন্ন! তাই সূচনাটাও এত সুখকর?”

বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বেশ অন্যরকম লাগছে ওর নীতিকে। কি এমন হয়েছে? বর্ষা কি কোনোভাবে নীতির পরিবর্তনের জন্য দায়ী?

__________________________________

গত বছরের স্মৃতিচারণ—

“বর্ষার বাচ্চা! ফোন ধরতে এত সময় লাগে কেনো তোর?”

“পড়ছিলাম ভাই।”

“তুই এত সিরিয়াস কি করে হয়ে গেলি বইন?”

“দেখ নীতি, ফাজলামো পরে করিস। আমি চাই না ভার্সিটিতেও আমরা আলাদা থাকি। সো আমার একটা ভালো রেজাল্ট করা অবশ্যই দরকার!”

“বর্ষা, সত্যি করে বল। তুই আমার জন্য এসব করছিস? নাকি কোনো বয়ফ্রেন্ড জুগিয়েছিস। লুকিয়ে প্রেম করিস না তো আবার? আমি কিন্তু এক পলকেই বের করে ফেলতে পারি।”

“তোর এই সুন্দর বুদ্ধিগুলো খাটিয়ে তুই বের কর আমার বয়ফ্রেন্ডকে। আমি পড়ি। বাই!”

বলেই ফোন রেখে দিলো বর্ষা। নীতি বিরক্ত হয়ে বসে রইলো।

“এই প্রীতি! প্রীতি..”

নীতির ডাক শুনে দৌড়ে এলো প্রীতি।

“কি হয়েছে?”

“ভাল্লাগে না।”

“তো?”

“আয় কিছু করি!”

“পরে করবো। আমার ফেভারিট সিরিয়াল চলছে এখন। কালকে রাতে দেখিনি। এখন রিপিটটা দেখছি। ডিস্টার্ব করিস না।”

বলেই ছুটলো। নীতি গাল ফুলালো। একজনের পড়ালেখার সিরিয়াসনেস। আরেকজনের সিরিয়ালের। উফ….

নীতিদের যৌথ পরিবার। নীতির দাদার তিন ছেলে। বড় ছেলে তোফায়েল আমজাদের বড় মেয়ে রীতি আর ছোট ছেলে আনাফ। মেজো ছেলে মনির আহমেদ এর বড় মেয়ে নীতি ও ছোট মেয়ে সিনথী। ছোট ছেলে হামিদ রহমানের বড় ছেলে রাদিফ আর ছোট মেয়ে প্রীতি। তারা সকলেই স্ব-পরিবারে একসাথে থাকেন।

নীতি বিরক্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো। তার এখন পড়তেও ইচ্ছে করছে না। রান্নাঘরে গিয়ে দেখতে পেলো তার মা, চাচীরা কোনো গোপন আলোচনায় ব্যাস্ত! তাই সে রীতির ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।যদিও নীতি জানে তাদের গোপন আলোচনা পাশের বাড়ির চাচী। বড় চাচী বলবে, “জানিস ছোটো? পাশের বাড়ির রেশমা নতুন শাড়ি কিনেছে।” তারপর ওর মা বলবে, “এ আর নতুন কি? পাঁচশো টাকার শাড়ি আমাদের কাছে এসে বলবে পঁচিশশো টাকা।” তখন ছোট চাচী বলবে, “কিন্তু আমরা তো সব আগেই জানি।” এরপর তিনজন হাসা শুরু করবে। ঠিকই তার কিছুক্ষণ পর নীতি হাসির শব্দ পেলো। নীতিও মুচকি হাসলো।

রীতির রুমে পা ফেলতে যাবে তার আগেই রীতি চেঁচিয়ে উঠে বললো, “খবরদার নীতি। এখন একদম এখানে আসবি না!”

নীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেনো?”

“ভার্সিটির অ্যাসাইনমেনটের কাজ চলছে। আমরা গ্রুপ কলে করছি সবাই মিলে। এখন এসে ডিস্টার্ব করিস না।”

নীতি এবার চরম বিরক্ত হলো। এত বড় বাড়ি, এত মানুষ! অথচ কারোর কাছে সময় নেই বিন্দুমাত্র? ধপাধপ পা ফেলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো ও। কান্না পাচ্ছে এখন ওর। টেবিলে বসলো পড়বে বলে। কিন্তু আজকে ওর পড়াতেও মন বসছে না। বইয়ের দিকে আনমনে তাকিয়ে রইলো ও। হুট করেই ফোনে নজর পড়ায় কু-বুদ্ধি মাথায় হানা দিলো। বাঁকা হেসে ফোন হাতে নিলো।

“চলো, দেখা যাক। বর্ষা আদো পড়ছে কিনা।”

ফেসবুকে ঢুকে নিজের আসল আইডি থেকে বের হয়ে ফেক আইডিতে লগ ইন করলো। এই আইডিটা খুলেছিলো শখবশত। কখন কি কাজে লেগে যায়। এই ভেবেই। আজ লাগবে। আইডির নাম ‘নীল পরী’। নাম দেখে নিজেই নাক মুখ কুঁচকে বললো , “এটা কি নাম দিয়েছি আমি?”

পরক্ষণেই মনে পড়লো আইডিটা দুই বছরেরও বেশি সময়ের আগে খোলা। তখন যা মনে এসেছে দিয়ে দিয়েছে। প্রথমে নাম পাল্টালো। নাম দিলো ‘প্রিয়’। হুমম, সে তো সবার প্রিয়!

তারপর বর্ষার আইডি খুঁজে বের করলো। রিকোয়েস্ট দিয়ে মেসেজ দিলো, “আপনার বিএফ অন্য মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমাকেও ডিস্টার্ব করছে। সামলান প্লিজ!”

মেসেজটা সেন্ড করেই ঠোঁট চেপে হাসলো নীতি। তারপর রীতির আইডি বের করলো। সেখানেও মেসেজ দিলো, “হাই মিস! ভালো আছেন? আপনি কি আমার বন্ধু হবেন? আপনার বিএফকে আমার ভালো লেগেছে। আসেন দুইজন সতিন হয়ে যাই।”

অতঃপর হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে মেসেজ আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু মিনিট খানেক যেতেই নীতি বিরক্ত হয়ে আবার ফেসবুকে ঢুকলো। এটা ও অনেক আগে লুকিয়ে খুলেছিল। বাবাকে দেখতো ফেসবুক চালাতে। ওর মনেও ইন্টারেস্ট জাগে। কিন্তু ছোট ছিল বলে সবাই মানা করে দেয়। কিন্তু তার আগ্রহ কমে না। সে নিজেই লুকিয়ে খুলেছিল। টানা কয়েকদিন চালানোর পর বিরক্ত হয়ে উঠেছিলো ও। ফেসবুকে আসলে করে কি? ব্যস! আর যায়নি সেখানে। কিন্তু আইডিটা ছিলোই। আর পাসওয়ার্ডও মনে রাখার মতো। “বর্ষা পা’গল মেয়ে”— এই পাসওয়ার্ড ও সত্তর বছর পরেও মনে রাখতে পারবে। ফেসবুক স্ক্রলিং করতে করতে হুট করেই একটা গ্রুপ সাজেস্ট এ এলো ওর। সেখানেও ঢুকলো। স্ক্রলিং শুরু করলো। এভাবেই কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আবার ফোন রেখে শুয়ে রইলো। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তা ওর খেয়ালে নেই।

মাগরিবের সময় ঘুম ভাঙলো ওর। কোনো মতে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অতঃপর বাইরে গেলো। ফোন আর আইডির কথা ভুলেই গেল।

__________________________________

রাত এগারোটা। খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গিয়েছে। নীতি পড়ছে। রাত জেগে পড়াটা ওর অভ্যাস। মোবাইলে নোটিফিকেশনের শব্দে তার পড়া থেকে মন সরলো। হুট করেই মনে পড়লো আইডি এর কথা। ঝটপট ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রীতি রিপ্লাই করেছে, “কে আপনি?”

নীতি বিছানায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। রিপ্লাই করলো, “আপাতত কেউ নই। কিন্তু হতে পারি, সতিন!”

রীতি রিপ্লাই করলো, “মাথায় সমস্যা নাকি? যত্তসব আউল ফাউল পাবলিক। অপরিচিত কারোর সাথে কি করে কথা বলতে হয় জানেন না? অন্যের দিকে নজর দেন কেনো?”

সঙ্গে দুটো গালি ছিল। নীতি ভরকে গেলো। রীতি এমন রেগে গেলো কেনো? কার দিকে নজর দিলো সে? এসব ভাবতে ভাবতেই আবার জিমেইল থেকে নোটিফিকেশন এলো, “59334 is your Facebook password recovery code”

ভরকে গেলো নীতি। এই আইডিটা জিমেইল দিয়েই খোলা। কিন্তু ও তো কিছু করেনি। কি করবে বুঝতে না পেরে একটা গ্রুপে পোস্ট করলো করলো সাহায্য চেয়ে। যদিও ওর তেমন মাথা ব্যাথা নেই এ নিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কোনো রেসপন্স পেলো না। হুট করেই একজন কমেন্ট করলো, “কেউ আপনার আইডিতে ঢোকার চেষ্টা করছে!”

নীতি সাথে সাথে রিপ্লাই করলো, “কে সে?”

“আমি কি করে জানবো আজব। আমার তো আপনার পোস্ট দেখে বললাম।”

নীতি ভরকে গেলো। আইডি নেম খেয়াল করে দেখলো লিখা, ‘অনুভব’। নিজের মনে নিজেই বললো, “অনুভব? কিসের অনুভব? উনার নাম অনুভব?”

পরক্ষণেই কি করবে বুঝতে না পেরে আইডিতে নক দিলো।

“আসসালামু অলাইকুম অপরিচিত। আচ্ছা আমাকে বলতে পারবেন আমি জানবো কি করে কে চেষ্টা করছে?”

দুই মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মেসেজ রিকুয়েস্ট একসেপ্ট হলো না। নীতি ঠোঁট উল্টে বললো, “কি ভাব! বাবাগো!”

অতঃপর উঠে গিয়ে পড়তে বসলো। এখন না পড়লে ওর পড়াই হবে না। সবাই যখন পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস হচ্ছে ও তখন আলসেমি করছে। হাস্যকর না?

#চলবে

প্রিয় অনুভব পর্ব-০২

0

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০২

“নীতি‚ এসব কি করছিস?”

“বরের বাড়ির লোকদের ওয়েলকাম করার জন্য ব্যাবস্থা করছি!”

“এই লাল রঙা পানি দিয়ে কেমন করে ওয়েলকাম করবি? আর পানি দিয়ে ওয়েলকাম হবেই বা কি করে? তুই কি তাদের মাথায় পানি ঢালার ফন্দি আটছিস নাকি?”

নীতি হেসে বললো‚ “একদম ঠিক ধরেছিস! কিন্তু তাদের না! শুধু বরের ভাইয়ের!”

প্রীতি চমকে তাকালো। এতক্ষণে নীতির পানিতে রঙ মেশানোর কারণ বুঝতে পারলো।

“নীতি না! একদম এসব করবি না! আজকে কিন্তু শাফিন ভাইয়ার ফুপিরাও আসবে রীতি আপুকে হলুদ দিতে। ঝামেলা করলে যদি বিয়েতে সমস্যা করে?”

“নীতি থাকতে ভয় কিসের? কিছু হবে না!”

প্রীতি বির বির করে বললো‚ “তুই আছিস দেখেই বড় ভয়! আল্লাহই জানে আবার কি ঝামেলা পাকাবি তুই!”

নীতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো‚ “তোর বির বির করে কথা বলার লেভেল অত্যন্ত জিরো টাইপ! আমি কিন্তু স্পষ্ট শুনছি‚ কি কি বলছিস!”

প্রীতি মেকি হাসার চেষ্টা করলো! পরক্ষণেই বললো‚ “ তুই কি করবি এখন এগুলো? মানে প্ল্যানটা কি?”

নীতি মুচকি হেসে বললো‚ “আমাকে কি পাগলে ধরেছে? তোকে প্ল্যান বলি‚ আর তুই ওই টাকলা মুরাদকে গিয়ে বলে দিস। এমনেই তার জন্য তোর যত দরদ!”

“তুই উনাকে টাকলা মুরাদ বলিস কেনো? সে কি টাকলা নাকি?”

“না হোক‚ আমি তো করেই ছাড়বো।”

“কি করে ছাড়বি?”

“টাকলা।”

প্রীতি কপাল চাপড়ালো। আর কিছু হোক বা না হোক যুদ্ধ আজ লাগবেই। প্রীতি চলে যেতে নিলেই নীতি ওকে পিছু ডাকলো।

“প্রীতি শোন!”

“বল!”

“একটা হেল্প করবি?”

প্রীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো‚ “কি হেল্প ?”

নীতি ইনোসেন্ট ফেস করে ওর দিকে তাকালো । প্রীতি ভরকে গিয়ে কিছু একটা ভাবলো। তৎক্ষণাৎ দুপাশে মাথা নেড়ে বললো‚ “না‚ না! তোর এই আউল-ফাউল প্ল্যানে আমি কোনো সাহায্য করবো না।”

“প্লিজ!”

“মোটেও না!”

“ওকে তাহলে আমি ফুঁপিকে বলে দিচ্ছি‚ তোর আর আনাফের মাঝে কিছু কিছু চলছে।”

প্রীতি চমকে উঠে বললো‚ “মানে?”

“খাই না তো সুজি‚ সবকিছুই বুঝি।”

প্রীতি বুঝতে পারলো নীতির কাছে কোনো কিছুই অজানা নয়। আনাফ রীতির ছোট ভাই। যদিও নীতি-প্রীতির থেকে বড়। । প্রীতি আর আনাফের মাঝে যে কিছু চলছে‚ তা নীতি বেশ জানতো। কিন্তু প্রয়োজন পড়েনি এতদিন এটা। আজ সুযোগ পেয়ে ছক্কা মেরে দিলো। নীতি প্রশস্ত হাসলো। আহা! যেনো যুদ্ধ জয় করেছে প্রীতিকে ভয় দেখাতে পেরে। ওর হাসি দেখে প্রীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দিয়ে বললো‚ “থাক প্রীতি‚ কাঁদিস না! ভালা মানুষদের সাথে এমনই হয়।”

নীতি আফসোস করার মতো করে বললো‚ “আহারে!” ‚বলেই গাল টেনে দিলো ওর। প্রীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। এই মেয়েটা এমন কেন? সত্যি সত্যি কি মাথায় সমস্যা আছে নাকি? পরমুহুর্তে ঠোঁট চেপে হাসলো। মেয়েটা বড্ড পজিটিভ চিন্তাধারা করে! নেগেটিভ ওয়ার্ড যেনো ওর লাইফেই নেই!
__________________________________

“নাহিয়ান, ভাইয়া!”

প্রীতির কম্পিত কণ্ঠের ডাক শুনে ঘুরে তাকালো নাহিয়ান। মা‚ ফুপির সাথে এখানে এসেছে ও। যেহেতু ওর সুবাদে রীতিকে আগে থেকেই চেনে তারা‚ তাই তাদের ইচ্ছে তারাও মেয়েকে হলুদ দিবে। ওদের বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। তাই নাহিয়ানও এসেছে।

“কিছু বলবে?”

প্রীতি ইতস্তত করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বললো‚ “ইয়ে‚ মানে ভাইয়া। ছাদে না কিছু বক্স রাখা আছে। ওগুলো ডেকোরেশনের লোকদের সরাতে বলেছিলাম। ওরা সরায়নি। আবার ওগুলো অনেক ভারী। কাওকে পাচ্ছিও না যে বলবো সরাতে হেল্প করতে৷ তাই যদি কিছু মনে না করেন‚ একটু হেল্প করবেন প্লিজ?”

নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে আনাফ বলে উঠলো‚ “ওকে কেনো বলছো? আমি আছি তো!”

আনাফের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো প্রীতি। বিরবির করে বললো‚

“এই নমুনা আবার কখন টপকালো এখানে ?”

আনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“কি বির বির করছো? চলো!”

প্রীতি চমকে ওঠা কন্ঠে বললো, “কোথায়?”

“কোথায় আবার? বললে না কিসব বক্স সরাতে হবে?”

“কিন্তু তুমি কেন? আমি তো নাহিয়ান…..”

বলতে বলতেই তার দিকে তাকালো প্রীতি। নাহিয়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে।

আনাফ আবার বললো‚ “থামলে কেনো ?”

প্রীতি কি করবে ভেবে পেলো না। এখন কিছু বললে নাহিয়ান সন্দেহ করবে, আবার না বললে আনাফ চলে যাবে। ভয়ে ঢোক গিললো ও। নীতির জন্য দারুনভাবে ফেঁসে গেছে ও। আর উপায় না পেয়ে বললো‚ “চলো!”

দুজন এগিয়ে গেলে নাহিয়ানও পিছু পিছু এলো। কেননা প্রীতির মুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো না কোনো ঘাপলা তো নিশ্চয়ই আছে।

__________________________________

লাল রঙে মিশ্রিত পানি ভরা বালতি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীতি! যুদ্ধ! হ্যাঁ, এটা ওর যুদ্ধ। জিততেই হবে ওকে! ওদিকে ছাদের দরজা খুলে ভিতরে আসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে আনাফ। একটু দূরেই প্রীতি দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। আর আল্লাহ আল্লাহ করছে। নাহিয়ান ওর সাথে থাকায় কোনো প্রকার সতর্কতার বাণীও দিতে পারছে না সে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই আনাফের মনে হলো ওর উপর দিয়ে সুনামি বয়ে গেছে। মুখে রইলো তার এক বিরাট হা! সাদা পাঞ্জাবি লাল পাঞ্জাবিতে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ তার শরীরে র’ক্তের বৃষ্টি ঝরিয়েছে… আনাফ তৎক্ষণাৎ বিস্মিত দৃষ্টিতে সামনে তাকালো। ওর থেকেও দ্বিগুণ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে নীতি। যেনো এই মুহুর্তে আনাফের এখানে থাকার কথা ছিলোই না!

“এটা কি করলে নীতি?”

পিছনেই প্রীতি দাড়িয়ে আছে। মুখে তার রাজ্যের ভয়। কেনো যে নীতির কথা মানতে গেলো ও। এদিকে নাহিয়ান ভিতরে কি হচ্ছে বুঝতে না পেরে প্রীতিকে পাশ কেটে ভিতরে ঢুকলো। আনাফের অবস্থা আর নীতিকে দেখে তার বোঝার বাকি নেই এই আয়োজনটা তার জন্যই ছিল। কিন্তু ভুলে সেটা আনাফের ভাগ্যে পড়েছে। তার হঠাৎ হাসি পেলো। সেটাকে আটকালো না। শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসির শব্দে বিস্ময় কাটে নীতির। নাহিয়ানকে দেখতেই চোখে মুখে তীব্র ক্ষোভ উপচে পড়লো তার। পরক্ষণেই আনাফের কথা ভাবতেই মুখ মলিন হয়ে গেলো।

“তুমি এখানে কেনো ভাইয়া?”

“প্রীতি ই তো বললো এখানে কিসের বক্স আছে। ওগুলো নাকি ও সরাতে পারছে না। ”

প্রীতির নাম শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো নীতি। তাই দেখে প্রীতি নিজের পক্ষে সাফাই দিতে ঝট পট সামনে এসে বললো, “আমি উনাকে ডাকিনি। ডেকেছি তো নাহিয়া…”

বলতে বলতে নাহিয়ানের দিকে চোখ পড়াতে থেমে গেলো ও। নাহিয়ান মুখে হাত দিয়ে হাসছে। সব এখন পরিষ্কার তার কাছে। প্রীতির কথার প্রেক্ষিতে আনাফ বললো, “ও আমাদের বাড়ির মেহমান। কোন আক্কেলে তুমি ওকে ডাকো? তাই তো আমি এসেছি। আর নীতি তুমি এভাবে পানি ছুঁড়লে কেনো? আর করছিলেই বা কি?”

নীতি আমতা আমতা করে বললো, “এগুলো বাচ্চারা করেছে। কোথায় ফেলবো ভেবে ভাবছিলাম না। পরে দেখি ছাদের ফ্লোর গরম অনেক। ভাবলাম এখানেই ফেলে দেই। কেউ ছিলো না দেখে ওভাবে ফেলেছি। আমি কি জানতাম নাকি তুমি আসবে।”

“দেখে ফেলবে না! আমার পাঞ্জাবীটাই নষ্ট হলো।”

এমন হাজারো আফসোস করতে করতে নিচে গেলো আনাফ। নাহিয়ান এবার নীতির কাছে এলো।

“নিজেকে বাচ্চা বলতে লজ্জা করলো না তোমার?”

নীতি দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো।

“তুমি দেখি দারুন অভিনয় করো। কোনো ফিল্মে চান্স পেয়েছো নাকি? কাজ করো কোথাও?”

“আপনার মুখ বন্ধ রাখবেন একটু?”

“নাহ, রাখতে পারলাম না। তুমি আমার জন্যে এত সুন্দর আয়োজন করলে, তোমার বোনকে দিয়ে ডেকেও আনলে। কিন্তু আফসোস আমি কিছুই পেলাম না!”

“খুব আফসোস হচ্ছে তাই না?”

নাহিয়ান মুচকি হাসলো। নীতি ঝট করে বালতির অবশিষ্ট পানি নাহিয়ানের পাঞ্জাবীতে ছুঁড়ে দিলো। তাই দেখে প্রীতির মুখে হাত। একবার নাহিয়ান তো একবার নীতির দিকে তাকালো। এদিকে নাহিয়ান ভাবেও নি এমন কিছু হতে যাচ্ছে। তখন আনাফের শরীরে পানিগুলো দেয়ার পরেও আরো পানি অবশিষ্ট ছিল। যদিও কম, কিন্তু যথেষ্ট! একটু হলেও তো পাঞ্জাবী নষ্ট করতে তো পেরেছে। প্রীতি জলদি করে নিচে নেমে গেলো। না জানি এই নীতির জন্য ওর উপর কোন শনি আসে।

“এটা কি করলে?”

“আপনি যা চাইলেন!”

“তোমাকে আমি…”

“ওমা, রাগছেন কেনো? এই না আফসোস করছিলেন?”

নাহিয়ান রাগে ফুসছে। এক মুহূর্ত আর দাড়িয়ে না থেকে নিচে চলে গেলো ও। নীতি বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো। নাহিয়ানের চুপ করে থাকাকে নিজের জয় ভেবে নিলো অবুঝ নীতি! এটা বুঝলো না, ইট ছুঁড়লে পাটকেল যে খেতেই হয়!

__________________________________

“কি শুরু করেছিস নীতি?”

রীতির কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না নীতি। কেননা ও জানে, প্রীতিই ওকে বলেছে সব। রীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীতির পাশে বসলো।

“ওর সাথে এমন করার কি প্রয়োজন ছিল?”

“নীতি ধার বাকি রাখে না। আমার মাথায় উনি পানি ঢেলেছিলো। আমি উনার শরীরে। শুধু কালার ভিন্ন মাঝে। আর কিছুই নয়।”

রীতি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, “নাহিয়ানের বাবা নেই নীতি।”

নীতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সে এসব জেনে কি করবে? আবার খারাপও লাগলো। রীতি থেমে বললো, “আমরা আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে যখন হারিয়ে ফেলি না? তখন তাদের স্মৃতিগুলোই হয় আমাদের সম্বল, যা দ্বারা আমরা অনুভব করি তারা আমাদেরই সাথে আছে।”

নীতি মনোযোগ দিয়ে শুনলো। রীতি আবারও বললো, “নাহিয়ানের কাছে ওর বাবার অন্যসব স্মৃতি থাকলেও গিটারটা একটু বেশীই স্পেশাল ছিল।”

নীতি চমকে তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে বলল, “গিটার?”

“হুমম, ওর বাবার গান অনেক প্রিয় ছিল। নাহিয়ান বা ওর ভাইয়ের এই গানের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে আঙ্কেল চাইতেন তার এক ছেলে অন্তত তার এই গানের ধারাটা রাখুক নিজের জীবনে। তার বড় ছেলে তো বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত রইলো। কিন্তু নাহিয়ান আংকেলের জন্য গিটার শিখেছিলো। গানও টুকটাক জানে। তবে অত গায় না। তবে গিটার নিয়ে ঘুরে। মন খারাপ হলে বা ফ্রি থাকলেই গিটার নিয়ে বসে। এটা ওকে অনুভব করায় ওর বাবা আছে ওর সাথে। ও আবার ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে। সব মিলিয়ে ওটা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওর জীবনে। তাই গিটারের ওই অবস্থা দেখে রাগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর তুই ওকে টাকা অফার করেছিস। যদি কেবল সরি বলতি তাও হয়তো ও রিয়েক্ট করতো না। কিন্তু টাকা অফার করাতেই ও রেগে গিয়েছে। তাই বলে ওর সাথে এমন বিহেভ করা তোর শোভা পাচ্ছে না।”

নীতি চুপ করে রইলো।

“মানুষ যখন থাকে না তখন তার স্মৃতিগুলো বড় মূল্যবান হয়। যার হারায় সে বুঝে। তুই বা আমি বুঝবো না।”

নীতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ”হুমম, সেই বুঝে!”

রীতি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কথা এড়িয়ে যেতে বললো, “বাই দ্যা ওয়ে! তুমি শাফিন ভাইয়াকে বার বার ওর ভাই, আংকেলের বড় ছেলে বলছো কেনো?”

ভরকে গেলো রীতি। নীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত হলো ও। এই মেয়েটা কি বুঝে না? ওর লজ্জা করে নাম ধরে ডাকতে? কিছু বলবে তার আগেই বিছানায় কেউ লাফিয়ে ওদের সামনে এসে বসলো।

“ধাপ্পা!”

দুইজনই চমকে উঠলো। নীতি বুকে ফু দিয়ে বললো , “হার্ট অ্যাটাক করাতে চাস নাকি?”

নীতির কথায় বর্ষা দাঁত বের করে হাসলো। রীতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “হুট করে আসলি যে? তুই না বলেছিলি বিয়ের আগের দিন আসবি?”

“সারপ্রাইজ চিনো? ওটাই দিতে আসলাম। আমি তো রাজশাহী থেকে এসেছি আরো দুই ঘণ্টা আগে।”

“এতক্ষণ কই ছিলি তাহলে?”

বর্ষা মাথা চুলকে বললো, “তোমাদের বাসায় এসেছি ছয় মাস আগে। রাস্তাঘাট চিনে, খুঁজে আসতে আসতে এতক্ষণ লাগলো।”

“ব’ল’দ নাকি? তুই নাহয় আপুকে সারপ্রাইজ দিতে আসছিলি। আমাকে তো ফোন করতেই পারতি?”

নীতির প্রশ্নে বর্ষা বুকে হাত গুঁজে বললো, “আমি তোর মতো না। ফোন দিয়েছি কয়েকবার। বাট বরাবরই এক কথা। ফোন বন্ধ আপনার। তো মিস, আপনার ফোন কোথায়?”

“আমার ফোন..”

বলেই আশেপাশে খুঁজলো নীতি। কিন্তু পেলো না। বর্ষা রীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে আবার ব’ল’দ বলে?”

নীতি বিচলিত হয়ে পুরো ঘর খুঁজলো। কিন্তু পেলো না।

“ফোন কোথায় রেখেছিস? সামলে রাখবি না? দেখিস না এখন মানুষের ভিড় বেশি হয়! কোন ফাঁকে কেউ কিছু নিয়ে গেলে জানবি কেমন করে?”(রীতি)

নীতির মনে ভয় ঢুকে গেলো। ভালো করে পুরো রুম খুঁজলো। রীতি আর বর্ষাও দেখলো। সেই মুহুর্তে প্রীতি আসলো।

“তোমরা এমন করে কি খুঁজছো?”

“নীতির ফোন দেখেছিস কোথাও?”

রীতির কথা শুনে প্রীতি উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, সিনথীর হাতে দেখে আসলাম কেবল।”
নীতি তড়িঘড়ি প্রীতির কাছে এসে বললো, “ও কোথায়?”

“বাগানে। অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছে।”

বলতে দেরী নীতির রুম থেকে বের হতে দেরী হয় নি। রীতি, প্রীতি আর বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ফোন নিয়ে নীতিকে কখনো এত বিচলিত হতে দেখেনি ওরা।

__________________________________

বাগানে গিয়েই সিনথীর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো নীতি। ফোন অন করার ট্রাই করতেই দেখলো অন হয়ে গেছে। সিনথীর বয়স বারো বছর। হয়তো কোনো ভাবে বন্ধ করে ফেলেছে ফোন। ফোন ঠিক আছে এটা দেখেই খুশি নীতি। পরক্ষণেই রাগ হলো ওর।

“না বলে আমার ফোন কেনো এনেছিস?”

নীতির ধমকে কেঁপে উঠলো সিনথী। কিছুটা বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আপুর সাথে ঝগড়া হলেও কখনো এভাবে ধমক দেয় নি।

“এমনি খেলতে..”

“ফোন কি খেলার জিনিস? না বলে ফোন কেনো আনবি? আর অফ করে রেখেছিস কেনো এমন? ইম্পর্ট্যান্ট কল আসে না আমার?”

সিনথী এবার কেঁদে দিলো।

“আমি তো জানি না অফ কি করে হলো। ভুলে হয়েছে হয়তো!”

নীতি আরও কিছু বলবে তখনই কেউ বলে উঠলো, “বাচ্চাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তার সেন্স কি আদো আছে?”

পুরুষালি কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো নীতি। সামনে নাহিয়ান। চোয়াল শক্ত করে আবার বললো, “তুমি কি মেন্টালি সিক? অপরিচিত একজনের গিটার ভেঙ্গেছো। আবার তার উপর আমার সাথে দু দু বার অসভ্যতামি করেছো। এখন নিজেরই বোন জাস্ট ফোন নেয়াতে এমন বিহেভ করছো। এটা কোনো সুস্থ মানুষ তো আর করতে পারে না।”

নাহিয়ানের ”মেন্টালি সিক” কথাটা গায়ে লাগলো নীতির। পরক্ষণেই মন বলে উঠলো, “আসলেই তুই পা’গল হয়ে যাচ্ছিস নীতি!”

তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিলো, “হারানো মানুষগুলোর স্মৃতি অনেক দামী এটা তো জানেন। আপনার কাছে সেই মানুষের গিটার ছাড়াও অন্য কিছু আছে। কিন্তু আমার কাছে এই ফোনটুকুতেই সব আছে। এটা হারালে সব শেষ!”

নাহিয়ান থমকালো। তাকিয়ে রইলো নীতির ছল ছল করতে থাকা চোখের দিকে। নীতিরও কি কেউ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে? নয়তো ওর হারানো মানুষ কে?

#চলবে