আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৮

0
514

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৮(বোনাস পর্ব)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ চিত্রা তুমি আমাকে ভাইয়ের নজরে দেখো বলে বিয়ে করতে চাইলে না অথচ তোমার ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করতে ঠিকই রাজি হলে।

চিত্রা গ্রাম থেকে নিজের বাসায় এসে ঘুমিয়েছিল। সন্ধ্যার আগে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য বসার রুমে আসে। চয়নিকা বেগম কে এক কাপ কফি দিতে বলে সোফয় মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। হঠাৎ পাশ থেকে রাতুলের কথ শুনে চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। রাতুল তার দিকে নির্নিমেষ চোখে চেয়ে আছে। চিত্রা ঠিক হয়ে বসলো। খোলা চুল গুলো হাত খোঁপা করে শুধালো –

-“ আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হই নি তার একটা কারন আছে রাতুল ভাই। যেই কারন টা কখনই প্রকাশ্যে আনা সম্ভব না আমার পক্ষে। তবে অস্বীকার করাও সম্ভব নয়, আপনি যথেষ্ট ভালো ছেলে। আমার থেকে বেস্ট কাউকে পাবেন।
-“ আমি তো বেস্ট কাউকে চাই নি চিত্রা। ট্রাস্ট মি আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি।
-“ বাট আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। আমার বিয়ে অলরেডি ঠিক হতে যাচ্ছে। একজন মানুষ আছে যে আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তার সামনে যাইহোক এসব বইলেন না সে কিন্তু ছেড়ে দিবে না।
-“ তার ভালোবাসা টা দেখলে আমার ভালোবাসা টা দেখলে না?
-“ ভুল মানুষের প্রতি ভালোবাসা এনে ফেলছেন। মন থেকে ভুলতে না চাইলে পস্তাবেন খুব।
-“ তোমাকে নিজের করে পাওয়ার কি কোনো পথ আর খোলা নেই?
-“ কখনও পথ ছিলোই না আপনার আমাকে পাওয়ার সেখানে আমায় পাওয়ার পথ খোঁজা মানে বৃথা চেষ্টা করা।
-“ তুমি এতো কঠিন হৃদয়ের কেনো?

চিত্রা মুচকি হাসলো।
-“ আমি ব্যাক্তি ভেদে নিজেকে প্রকাশ করতে পছন্দ করি। আমার হৃদয় কে সবাই স্পর্শ করতে পারে না।
-“ তুষার পেরেছে?
-“ যার হৃদয়ে তুষারপাত ঘটছে সর্বদা, আর সেই হৃদয় তুষার স্পর্শ করতে পারবে না এটা হাস্যকর হয়ে গেলো না?
-“ বিয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।
-“ আপনাকেও।

চয়নিকা বেগম রান্নাঘর থেকে কফির মগ এনে চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা কফির মগ টা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দেখে রিয়া নামছে। কোলে রিমি এমনি অসুস্থ রিয়া তার উপর মেয়েকে কোলে নিয়েছে বিষয় টা ভালো লাগলো না চিত্রার। রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ তোর তো শরীর ভালো না ওকে কোলে নিছিস কেনো? আমার কাছে দে আমি রাখছি।

রিয়া রিমিকে চিত্রার কোলে দিলো। চিত্রা রিমি কে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রিয়া ভাইকে দেখে ভাইয়ের পাশে বসে। রাতুল রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ শরীর টা এখন কেমন আছে?
-“ মোটামুটি ভালোই আছে।
-“ হঠাৎ এমন অসুস্থ হলি যে?
-“ আসলে প্রথম বার গ্রামে গিয়েছি সেখান কার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারি নি তার উপর পানি গুলো যেনো কেমন।
-“ হু বুঝতে পেরেছি। তা ননদের বিয়ে ভাসুরের সাথে ঠিক করলি তাহলে।
-“ তুষার ভাইয়া ভালোবাসে চিত্রা কে সেখানে আমরা রাজি না হয়ে থাকি কিভাবে?
-“ আমার দিকটা ভাবলি না!
-“ জীবন বড় অদ্ভুত ভাইয়া। সবাই কে ভালবাসা উচিত না। সবার কপালে ভালোবাসা জোটে না। তুমি চিত্রার থেকেও পারফেক্ট কাউকে পাবে।

রাতুল কিছু বললো না।চুপচাপ বসা থেকে উঠে চলে গেলো। চয়নিকা বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব টা শুলো। জীবন টা কেমন যে যাকে ভালোবাসে সে তাকে পায় না। তাহলে কেনো যার তার প্রতি মায়া ভালোবাসা চলে আসে?

রাফি ঢাকা এসেই বাবা ভাইয়ের সাথে বিজনেসে হাত দিয়েছে। তামিম খান স্পষ্ট বলেছে বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে না। বিয়ে করলে বউয়ের তেল সাবান শাড়ি গয়না দিতে দিতে নাকি ফকির হয়ে যেতে হয়। আর সেখানে বেকার থাকলে নাকি বউ কপালে ঝাঁটার বারি দিয়ে চলে যায়। রায়ানের সুবিধা হচ্ছে রাফির বিজনেসে হাত দেওয়ায়। কাজের প্রেসার টা একটু কমেছে। কাজের ফাঁকে রায়ান ফোন দিয়ে একবার রিয়ার শরীরের খোঁজ নেয়। রাফি ল্যাপটপ নিয়ে কিছু ডকুমেন্টস চেক করছে। হঠাৎ ফোনে রিংটোন বেজে উঠায় রাফি ফোন টা সাইড থেকে তুলে দেখে অধরার নম্বর। হঠাৎ অধরার ফোন আসায় কপালে দু ভাজ পড়ে রাফির। ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফোন টা কেটে যায়। রাফি ফোনটা কেটে যাওয়ায় ফোনটা সাইডে রাখতেই ফের ফোন টা বেজে উঠে।

রাফি ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে আছে-
-“ কেমন আছেন মিস্টার রাফি?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হঠাৎ ফোন দিলেন যে আমায়, কোনো দরকার?
-“ হ্যাঁ দরকার না হলে ফোন দিতাম না।
-“ জ্বি বলুন কি দরকার?
-“ শুনলাম আপনাদের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হতে যাচ্ছে।

রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আপনি কিভাবে জানেন আমাদের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হতে যাচ্ছে?

অধরা হাসলো।
-“ সুখবর বাতাসের বেগের চাইতেও দ্রুত বেগে ছড়িয়ে যায়।
-“ তা আপনি কি যেচে দাওয়াত নেওয়ার জন্য ফোন দিছেন?
-“ না বিষয় টা সেটা নয়। দাওয়াত চাইছি না।
-“ তবে?
-“ বিয়েটা আসলে কার সাথে আপনার?

রাফি বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ আমার বাচ্চার মায়ের সাথে।
-“ বাচ্চার মা টা কে?
-“ আমার নাতির দাদি। এখন রাখি কাজ আছে। বেকার নই আমি। সময়ের মূল্য আছে। আপনার সাথে যতক্ষণ কথা বলছি ততক্ষণে আমার কাজ অনেক দূর এগিয়ে যেত।

রাফি ফোন কেটে দেয়। অধরা হাতে থাকা ফোনটা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। আশরাফুল কিছু ছিটকে পড়ার শব্দ শুনে মেয়ের রুমে এসে দেখে মেয়ের ফোন ফ্লোরে পড়ে আছে কয়েক টুকরো হয়ে।
-“ এভাবে ফোন টা ভাঙলো কি করে?

অধরা আশরাফুল কে দেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
-“ হাত ফস্কে পড়ে গেছে।
-“হাত থেকে পড়ে গেলে এভাবে কয়েক টুকরো হয় না ফোন।
-“ আশ্চর্য বললাম তো হাত ফস্কে পড়ে গেছে। তোমার কি মনে হয় আমি আমার ফোন ইচ্ছে করে ফেলে ভেঙেছি।

অধরার আচমকা রাগ দেখে আশরাফুল বলে-
-“ রেগে যাচ্ছিস কেনো। কোনো সমস্যা হয়েছে?
-“ না আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আশরাফুল চলে গেলেন মেয়ের রুম থেকে। অধরা বিছানার এক প্রান্তে বসে মাথার চুল গুলো চেপে ধরে। রাগ হিংসা দিন কে দিন বেড়ে চলছে। এটাকে কন্ট্রোল করতে হবে।

তুষার নিজের রুমে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। তানিয়া বেগম তুষারের রুমে ঢুকে তুষারের পাশে বসে বলেন-
-“ কাল তোর আর চিত্রার বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে যাবো।

তুষার ফোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়-
-“ আচ্ছা।
-“ তৃষ্ণার বিয়ের কথা এখন ভাবছি না।

তুষার ফোনের থেকে দৃষ্টি সরায়।
-“ কেনো?
-“ কয়েক মাস যাক রাফি কেবল বিজনেসের হাল ধরলো। আরেকটু পাকা পোক্ত হোক। তুই তো জানিস তোর বাবা কেমন। সে বলেছে রাফি এখনও উপযুক্ত নয়।

তুষার বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে-
-“ তোমার ভাইপো মানলে হয়।
-“ না মানার কি আছে?

তুষার রুম থেকে বের হতে হতে বলে-
-“ সেটা তোমার ভাইপো কে জিজ্ঞেস করো সে সুন্দর করে বলে দিবে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে