আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১৭

0
498

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৭
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ এই আপনি সবাই কে বলে দিয়েছেন কেনো আমি রায়ান ভাইকে ভালোবাসতাম?

তুষার ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। চিত্রার কথা শুনে চিত্রার পানে ঘুরে। দু হাত বুকে গুঁজে বলে-
-“ ভুল কিছু তো বলি নি,সত্যি টাই বলেছি।
-“ আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
-“ অস্বস্তি হচ্ছে কেনো?
-“ রায়ান ভাই আর রিয়ার সামনে যেতে।
-“ তোমাকে কে বলেছে তাদের সামনে যেতে।
-“ আশ্চর্য কেউ বলবে কেনো? একই বাড়িতে থাকছি সামনে তো চলে আসবেই।
-“ আচ্ছা বাড়ি পাল্টানোর ব্যাবস্থা করেছি।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো তুষারের কথায়।
-“ বাড়ি পাল্টানোর ব্যবস্থা করেছেন মানে?

তুষার চিত্রার কোমড়ে বা হাত দিয়ে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ হ্যাঁ। এই যে তোমার আমার বিয়ে হবে। আমি তো আর আমার বউকে বিয়ের পর তার বাবার বাসায় রেখে নিজের বাসায় ঠিক থাকতে পারবো না।
-“ ঠিক থাকতে পারবেন না কেনো,বউ তার বাবার বাসায় থাকলে?

তুষার চিত্রা কে ঘুরিয়ে চিত্রার কাঁধে থুতনি রেখে বলে-
-“ কারন আমি বউ পাগল। বউ পাগল ছেলেরা বউ ছেড়ে এক সেকেন্ড ও থাকতে পারে না।

চিত্রা তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। নিরাশ হয়ে বলে-
-“ আপনি কথায় কথায় এতো চেপে ধরেন কেনো?

তুষার চিত্রার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে নেশালো কন্ঠে বলে-
-“আমি তো এখনও কিছু চেপে ধরি নি। সব বিয়ের পরের জন্য তুলে রাখছি।
মুহুর্তে চিত্রার চোখ মুখ শক্ত হলো।
-“ সব সময় নেগেটিভ জিনিস ঘুরে কেনো মাথায়? আমি কি ওসব ঈঙ্গিত দিয়েছি।
-“ কি করবো বলো তুমি এমন ভাবে বলো, না চাইতেও ওসব এসে পড়ে মাথায়।

চিত্রা তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে-
-“ মাথা একদম ফা’টিয়ে ফেলবো,লাগাম নেই কথায়?
তুষার চুল গুলো কে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে
দিতে বলে-
-“ না নেই।
-“আপনি চরম লেভেলের অভদ্র।
-“তোমার সামনে এতো ভদ্র সেজে কি হবে আমার?
-“ আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না। আপনি থাকুন আমি চলে যাচ্ছি।

কথাটা বলে চিত্রা চলে যাবার জন্য ঘুরলে তুষার চিত্রার হাত চেপে ধরে। চিত্রা তুষারের দিকে ঘুরে বলে-
-“ আবার হাত ধরলেন কেনো?
-“ এই হাত ধরার অধিকার কেবল আমারই তাই ধরেছি।
-“ এখনও হয় নি।

তুষার চিত্রার হাত ছেড়ে দিলো। চিত্রা নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তুষার মুখ টাকে গম্ভীর করে বলে-
-“ আমরা কালই ঢাকায় ব্যাক করবো। ঢাকায় গিয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট ফিক্সড করে বিয়ে করবো।
-“ কেনো তর সইছে না বুঝি?
-“ না, বউকে চোখের সামনে দেখছি চাইলেও নিজের মতো করো ছুঁতে পারছি এর চাইতে কষ্ট আর কি হতে পারে পুরুষের জন্য।
-“ ইশ পুরুষ মানুষের আবার কষ্ট ও হয়?
-“ না পুরুষ রা তো মানুষ নয় তাদের হৃদয় বলতে কিছু নেই,তারা তাদের বউয়ের হৃদয় নিয়ে চলে।
-“ রেগে রেগে কথা বলছেন কেনো?
-“ রেগে রেগে বলি নি কথা।
-“ আমি তো স্পষ্ট আপনার কথায় রাগের আভাস পেলাম।
-“ কারন চিত্রা নামক রমণী দু লাইন এক্সট্রা করে নিজের মতো ভেবে নেয়।

চিত্রা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই আমার চোখের দিকে তাকান তো।
তুষার না তাকিয়ে বলে-
-“ পাগল করার ধান্দা?
-“ চোখের দিকে তাকালে বুঝি মানুষ পাগল হয়?
-“ মানুষ হয় কি না জানি না তবে তোমার চোখের দিকে তাকালে আমার ভুলভাল জিনিস করে ফেলতে ইচ্ছে করে। ভুলভাল মানে কি আই মিন বুঝতে পেরেছো।

চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ছাঁদ থেকে নেমে যেতে যেতে বলে-
-“ এমন লাগামহীন বেলেল্লাপনা পুরুষ কেনো আমার কপালে জুটলো?

তুষার চিত্রার কথা শুনে শব্দ করে হেসে ফেললো।

তৃষ্ণা বসে আছে নিজের রুমে। সামনে সোফায় বসে তৃষ্ণা কে পর্যবেক্ষণ করছে রাফি। বা হাতের তালু দিয়ে মাথার চুল গুলো কে সেট করে বলে-
-“ ঐ তৃষ্ণা এভাবে বসে আছো কেনো?

তৃষ্ণা রাফির দিকে তাকালো। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ এই ভাবে কেউ কখনও মেয়ে চায় তার বাপ মায়ের কাছে?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিভাবে চাইলাম? ব্রো যেভাবে চিতা কে চাইলো আমিও তো সেভাবেই চাইলাম।
-“ আশ্চর্য ভাই যেভাবে চাইবে সেভাবে কি আপনার ও চাইতে হবে? আপনি একটু সুন্দর করে চাইতে পারলেন না? বলতেন যে ফুপি আমি তৃষ্ণা কে অনেক ভালোবাসি। তোমার মেয়েকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তোমার মেয়ে আমার অক্সিজেন সাপ্লাই হিসেবে কাজ করে। অক্সিজেন ছাড়া কি মানুষ বাঁচতে পারে বলো? এভাবে চাইতে হয়।

রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে এসে কোমড়ে দু হাত দিয়ে বলে-
-” এই মেয়ে তুমি আমার অক্সিজেন?
-“ অবশ্যই।
-“ আসো তো তোমায় বেলকনি থেকে ফেলে দেই দেখি আমার অক্সিজেন সাপ্লাই করা বন্ধ হয় নাকি।
-“ উফ আপনি প্র্যাক্টিক্যালি দেখতে চাচ্ছেন কেনো? এটা কথার কথা। সব প্রেমিক প্রেমিকা এমন ডায়লগ দেয়।
-“ আমি তোমার প্রেমিক নই।
-“ প্রেম করলে তো প্রেমিক হতেন। আমরা বরং বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবো।

রাফি হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ খেয়ে দেয়ে কাজ নেই বিয়ের পর প্রেম করে টাইম ওয়েস্ট করবো। কোনো প্রেম ট্রেম নেই সোজা হেক্সা মিশন কমপ্লিট করবো।

তৃষ্ণা বুঝলো না রাফি কিসের মিশন কমপ্লিট করার কথা বললো।
-“ কিসের মিশন কমপ্লিট করবেন?
-“ কিসের আবার বাবা হবো দাদা হবো নানা হবো। কত মিশন কমপ্লিট করা বাকি এখনও। তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করতে হবে নাতি নাতনির বিয়ে দেখবো তাদের বাচ্চাদের ও বিয়ে দেখবো।

তৃষ্ণা হা হয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো। মিনিট কয়েক চুপ থেকে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে-
-“ এহ বিয়ের কোনো নামগন্ধ নেই সে আসছে নাতি নাতনির বিয়ে দেখতে।
-“ আরে প্যারা কিসের? তুষার ব্রোর বিয়ে হলে আমার ও হবে।
-“ আপনি সবসময় আমার ভাইকে কপি করেন কেনো?
-“ তোমার ভাইরে কপি না করলে আমার নিজের ফিউচার ক্যামনে গড়বো? সে আমার আইডল।
-“ আমার ভাই আপনার আইডল? রসকষহীন কাঠখোট্টা আমার ভাই আপনার আইডল হাস্যকর!

রাফি তৃষ্ণার মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
-“ তুষার ব্রো রসকষহীন কাঠখোট্টা কে বলছে?এতো কিছু হওয়ার পরও বলছো সে রসকষহীন কাঠখোট্টা? তুমি ব্রো এর রোমান্স দেখলে কি বলতা সে জায়গাবেধ বুঝে না যেখানে সেখানে…..

তৃষ্ণা রাফির মুখ চেপে ধরে বলে-
-“ চুপ থাকেন তো। কিসব বলছেন আমার ভাইয়ের নামে,বোন হই আমি তার।
-“ ব্যাপার টা জোশ তাই না? ব্রো তোমার ভাই হয় আবার ভাসুর ও হয়।

কথাটা বলে রাফি হাসতে থাকে। তৃষ্ণা রাফির হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকায়। এই হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে সে সহস্র বছর কাটিয়ে দিতে পারবে মানুষটার পাশে থেকে। কখনও টু শব্দ ও করবে না।

-“ রায়ান আমার কেমন যেনো লাগছে?

রিয়ার কথা শুনে রায়ান তড়িঘড়ি করে রিয়ার কাছে আসে। মাথায় হাত দিয়ে বলে-
-“ খুব খারাপ লাগছে? ডক্টর ডেকে আনবো?

রিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো আস্তেধীরে।
-“ না ডক্টর ডাকতে হবে না। আমার চিত্রার ব্যাপার টা নিয়ে খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে তোমাকে আমি চিত্রার থেকে কেড়ে নিয়েছি। আমি একটু বুঝতে পারলাম না ও তোমায় এতোদিন ভালোবেসে এসেছে।

রায়ান রিয়ার মাথা বুকে চেপে ধরে বলে-
-“ হুঁশ মন খারাপ করো না।আমি তো নিজেও বুঝতে পারি নি।
-“ আমি কি একটু চিত্রার সাথে কথা বলবো?
-“ না থাক বলার দরকার নেই, হিতে বিপরীত হতে পারে। বিষয় টা হয়তো কাটা গায়ে নুনের ছিটার মতো হয়ে যাবে।

রিয়া আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ রায়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

রাসেল আহমেদ স্ত্রীর উপর ভীষণ রেগে আছে। রিক্তা বেগম স্বামীর সামনে দিয়ে বারবার ঘুরঘুর করছে।রাসেল আহমেদ বিরক্তি নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“এভাবে আমার সামনে পায়চারি করছো কেনো? সমস্যা কি?

রিক্তা বেগম দাড়িয়ে পড়ে।
-“রেগে আছো আমার উপর?
-“ বিষয় টা কি রাগার মতন নয়?
-“ একটু আমার দিকটা ও ভাবো। আমি তো যেচে চিত্রা কে কষ্ট দেই নি। রায়ান নিজেই তো রিয়াকে পছন্দ করেছে। এমন তো না যে আমি রিয়াকে পছন্দ করে রায়ান কে বিয়ে করতে বলেছি।আমি শুধু স্বার্থপর হয়ে ছেলের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছি।

রাসেল আহমেদ এবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সেই তখন থেকে একই পেঁচাল শুনছে।রুম থেকে বেরিয়ে বসার রুমে যেতেই তুষারের সাথে দেখা হয় রাসেল আহমেদের। তুষার মামার রাগান্বিত চেহারা দেখে মামার পাশে বসেন।
-“ মামা আপনি কি বিষয় টা নিয়ে এখনও মামির উপর রেগে আছেন?
রাসেল আহমেদ চোখ বন্ধ করে রেখে বলেন-
-“ রেগে থাকার মতোই কান্ড করেছে তোমার মামি।
-“ মামির জায়গায় একটু নিজেকে বসিয়ে ভাবুন বিষয় টা মামা। যার যার জায়গায় সে সে ঠিকই আছে। শুধু শুধু বিষয় টা নিয়ে মামির উপর রেগে থাকবেন না।

উপর থেকে চিত্রা দাঁড়িয়ে দেখলো সব টা। লোকটা কি করে যেনো ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে জানে।

তামিম খান আর তানিয়া বেগম দু’জনে রুমে বসে আলোচনা করছেন ছেলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে। কতজন মানুষ ইনভাইট করবে, কিভাবে কি করবে না করবে। তানিয়া বেগম খুশিই হয়েছে তার ছেলে মেয়ে গুলো ঘরের মেয়ে ছেলে কে বিয়ে করবে দেখে। এবার ঢাকা ফিরেই আগে বিয়ের বন্দবস্ত করবে। বয়স হচ্ছে তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখবে।

সজল আহমেদ আর সানজিদা বেগমের রুমে বসে আছে সাহেল আর চয়নিকা বেগম। সজল আহমেদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন-
-“ সাহেল বেশি ভেবো না বাবা। মেয়ে তোমার কাছেই তো থাকছে। তুষার যথেষ্ট দায়িত্বশীল একজন মানুষ। তোমার মেয়েকে সে অনেক সুখে রাখবে।

সাহেল আহমেদ সজল আহমেদের দিকে তাকায়।
-“ না বাবা আমার ভরসা আছে তুষারের উপর। আমরা কাল সকালে বাড়ি ব্যাক করতে চাই। তুমি আর মা ও যাচ্ছো আমাদের সাথে।
-“ সে না হয় যাবো আমরা কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ফিরতে চাইছিস কেনো?
-“ নতুন কনস্ট্রাকশন এর কাজ ধরেছি সেখানে না গেলে চলবে না। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে