Sunday, July 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 354



অবিবাহিত বউ পর্ব-১৭+১৮

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ভার্সিটিতে গিয়েই তোহা হত’ভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অরিন তোহার পাশে দাঁড়িয়ে নাহিদকে দেখছে। বাম পা টা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে সে। তার পাশেই রনি আর ফাহিম রয়েছে। তোহার সাথে নাহিদের চোখাচোখি হতেই নাহিদ মুচকি হাসল।

তোহা আর দাঁড়িয়ে রইল না। অরিনের সাথে ওদের দিকে এগিয়ে গেল। তোহা নাহিদের কাছাকাছি যেতেই তোহাকে শুনিয়ে রনি বলল,
“সুন্দর করে বললাম আজ যখন ক্লাস করবি না তাহলে ভার্সিটিতে আসার দরকার নেই। কিন্তু রোমিও তো আমার এই সুন্দর কথাটা শুনল না। তার জুলিয়েডকে দেখার জন্য আমার কথাটা অমান্য করে ভার্সিটিতে চলে আসল। আর আসার সময় বাইক এক্সি’ডেন্ট করে পায়ে চোট পেয়ে অঘ’টন ঘটিয়ে এলো।

তোহা বেশ বুঝতে পারল রনি তাকে শুনাতেই এই কথাগুলো বলল। নাহিদ রনির কথায় কিছুটা শাসিয়ে বলল,
“শা’লা, তুই বেশি কথা বলছিস।

“উচিত কথা বলছি তো তাই বেশি বলছি।

নাহিদ রনির কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দিল না। তোহার দিকে তাকিয়ে দেখল তোহার চোখ জোড়া তার পায়ের দিকে স্থি’র হয়ে আছে। নাহিদের হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল। মেয়েটা অবশেষে তাকে লক্ষ্য করছে।
নাহিদের পা থেকে চোখ সরিয়ে তোহা যেই নাহিদের মুখের দিকে তাকাল অমনি দেখল নাহিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তোহার বুকটা ছ্যা’ৎ করে উঠল। ছেলেটা তাকে দেখতে এসেই এক্সি’ডেন্ট করল। তোহার চোখ দুটোতে পানি চিকচিক করল। নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“বউটা কাল বোধহয় ল’জ্জা পেয়েছিল। আমি সেই লাজে রাঙা মুখ দেখতেই ছুটে এসেছি। কিন্তু তার পরিবর্তে আমাকে বউয়ের ছল’ছল দৃষ্টিতে কেন দেখতে হচ্ছে? ত্ত

নাহিদের বলা কথাগুলো তোহার এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেড়িয়ে গেল। তার মনে চলছে আরেক ভাবনা। ছেলেটা তাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করল। এখন তার দুজন বন্ধু কি ভাববে? তোহার প্রতি নাহিদের প্রেমটা দেখবে নাকি এক্সি’ডেন্ট হওয়ায় তোহাকে দায়ী করবে?

তোহার মনে এসব ভাবনা এলেও ফাহিম, রনি তোহার প্রতি নাহিদের প্রেমটাই দেখল। নাহিদের কথাগুলো তোহা অ’স্পষ্ট শুনলেও ফাহিম নাহিদের কথার জবাবে বলল,
“নাহিদ তুই কি লুকিয়ে প্রেম-ট্রেম করে ফেলেছিস? অথচ আমাদের একবারও জানালি না।

ফাহিমের কথায় নাহিদ ক’ন্ঠে আ’ক্ষেপ, হতা’শা নিয়ে বলল,
“প্রেমটা হয়েও হচ্ছে না রে বন্ধু। একবার মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রেমটা হয়ে গেল। কিন্তু পরে দেখছি আর হচ্ছে না। এই প্রেম আমায় বহুত পো’ড়াচ্ছে।

নাহিদের কথায় রনি, ফাহিম দুঃখ প্রকাশ করতে সমস্বরে বলে উঠল,
“আহারে।

তোহার চোখে নাহিদের প্রেমটা চোখে পড়লেও সেই সাথে নাহিদের প্রতি তী’ব্র ক্ষো’ভ, রা’গ, অভিমান জমল। কে বলেছিল এতো প্রেম দেখাতে? প্রেম দেখাতে গিয়ে এক্সি’ডেন্ট করে বসে আছে? তাও আমার জন্য। আমি বলেছিলাম এমন করতে? তোহা নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি যখন ক্লাস করবেন না তখন কেন ভার্সিটিতে আসতে গেলেন? আমার প্রতি প্রেম দেখিয়ে মহৎ সাজা হচ্ছে তাই না?

তোহার এমন কথায় নাহিদ ভেতরে ভেতরে আহত হলো। কার জন্য আসলো এতোটা পথ পেরিয়ে? কাকে দেখার জন্য মনটা বারবার ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল? যাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করে পায়ে চোট পেল সে তার মনের ব্যাকুলতা বুঝল না। তার প্রেম বুঝল না। তবে লাভ কি দেখতে এসে? হয়তো চোখের তৃষ্ণা মিটবে, মনের শান্তি মিলবে কিন্তু প্রেম মিলবে না।

নাহিদ মুখ খুলতে গেলে তোহা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে শ্বা’স নিয়ে বলল,
“আপনার আর কিছু বলে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে না। দয়া করে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন। আর এসব লোক দেখানো প্রেম, ভালোবাসা বন্ধ করুন।

তোহার বলা কথাটা ধনুকের তীরের মতো নাহিদের বুকে বিঁধলো। কি বলল মেয়েটা? এতো সহজে, এতো সহজে তার মনের প্রেমটাকে, ভালোবাসাটাকে লোক দেখানো প্রেম ভালোবাসা বলে উপে’ক্ষা করে গেল। তার মনের প্রেম, ভালোবাসা কি এতোই ফিকে, এতোই তু’চ্ছ?

তোহা যখন অরিনকে নিয়ে নাহিদদের থেকে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে তখন অরিন বলে উঠল,
“এটা তুই কি বললি তোহা? নাহিদ ভাইয়াকে কি করে বললি লোক দেখানো প্রেম, ভালোবাসা বদ্ধ করতে? তোর মনে হয় নাহিদ ভাইয়ার ভালোবাসাটা লোক দেখানো?

তোহা অরিনের দিকে তাকাল। চোখ দুটোতে পানি টলটল করছে। একটু হলেই গড়িয়ে পড়বে। তোহা অরিনকে বলল,
“উনি কেন আমাকে দেখতে এলো? ভালোবাসেন ঠিক আছে কিন্তু উনার বন্ধু কি বলল শুনলি না। আমাকে দেখতে এসে এক্সি’ডেন্ট করেছে। তার মানে উনার এক্সি’ডেন্টের জন্য আমি দায়ী।

তোহার এমন কথায় অরিন ক্রু’দ্ধ হলো অরিন। ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“তুই যে এমন গবেট আমি কল্পনা ও করিনি। তোর মাথায় কি করে এসব ফালতু চিন্তা ভাবনা এলো? নাহিদ ভাইয়া তোকে কতোটা ভালোবাসে সেটা বুঝাতেই উনার বন্ধু কথাটা বলেছে। আর তুই তার উল্টো মানে বের করে বসে আছিস।

তোহার চোখের পানিগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। অরিনের কথাটা বুঝতে পেরে করুণ স্ব’রে বলল,
“আমি না বুঝেই উনাকে ক’ষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?

অরিন তোহার দিকে ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। মেয়েটা এতো বোকা হলো কবে থেকে। ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“সেটা বুঝতে তোর এতক্ষণ সময় লাগলো?

তোহা কোনো কথা বলল না। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। কি করল সে? এমন করে ছেলেটাকে ক’ষ্ট দিয়ে ফেলল?

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাসের ভিতরে গেল। প্রথম বেঞ্চে রিয়াকে দেখল একটা মেয়ের সাথে হেসে কথা বলছে। রিয়াকে দেখা মাত্রই রিয়ার গতকালের দৃষ্টির কথা মনে পড়ল। তোহা কিছু একটা ভেবে রিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“তুমি কি জানো? তোমার নাহিদ ভাইয়া এক্সি’ডেন্ট করেছে।

তোহার কথাটা কর্নকুহুরে প্রবেশ করা মাত্র রিয়া উঠে দাঁড়াল। বুকের ভেতরে জ্বা’লা শুরু হয়েছে। চোখ দুটোতে পানি এসে ভর করছে। রিয়া ব্যা’কুল হয়ে বলল,
“এক্সি’ডেন্ট করেছে মানে? কোথায় এক্সি’ডেন্ট করেছে? কীভাবে করেছে? আজকে তো ভার্সিটিতে ক্লাস করবে না বলেছিল। তাহলে এক্সি’ডেন্ট করল কোথায়? এখন কেমন আছে ও?

তোহা দুচোখ দিয়ে রিয়ার ব্যাকু’লতা দেখল। মেয়েটা উত্তরের আশায় কেমন ছটফট করছে। তোহা রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করল,
“তুমি কি তোমার নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবাসো রিয়া?

আচমকা তোহার এমন প্রশ্নে হত’ভম্ব হয়ে গেল রিয়া। মেয়েটা বুঝল কীভাবে? না, না। ওকে তো বুঝতে দিলে চলবে না। রিয়া নিজেকে সামলে বলল,
“মানে? আমি কেন নাহিদ ভাইয়াকে ভালোবাসবো? তোমাকে তো বলেছিলাম এমনি দুষ্টুমি করতে তোমার কাছে নিজেকে নাহিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছি। নাকি আমার এসব প্রশ্ন শুনে ভাবলে? ছোট থেকে এক ছাদের নিচে বসবাস করছি। হঠাৎ করে যদি শুনি উনি এক্সি’ডেন্ট করেছে তবে এই প্রশ্ন গুলো করা স্বাভাবিক না?

রিয়ার কথায় তোহা দমে গেল। নিজের মনের ভাবনাগুলো অহেতুক মনে হলো। দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে বলল,
“উনি পায়ে চোট পেয়েছেন। এখন হয়তো বাসায় চলে গিয়েছে।

তোহার কথায় রিয়া স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। তবুও মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে নাহিদকে এক পলক দেখার জন্য। তোহা নিজের জায়গায় চলে গেল। তোহা যেতেই রিয়া নিজ মনে বলল,
“কি অ’দ্ভুত! দুদিনের এই মেয়েটা বুঝে ফেলল আমি তোমাকে ভালোবাসি। অথচ ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েও তুমি বুঝলে না।
_________________

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় যখন বারোটা বাজলো তখন হুট করে তোহার ঘুমটা ভেঙে গেল। হয়তো গত তিনদিন ঘুম ভাঙার কারনেই। তবে গত তিনদিনের মতো আজকে নাহিদের কল আসলো না। তোহা মোবাইল হাতে অপেক্ষা করতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক সময় কেটে গেল। তবুও কল এলো না। তোহার মনটা ছটফট করছে। আজকে কি উনি কল করবেন না?

তোহা হাঁস’ফাঁস করতে লাগলো। কল কেন করছে না। তোহার অ’স্থিরতা বাড়তে লাগলো। আরো দশ মিনিট পেরিয়ে যেতেই তোহা নিজে কল করল নাহিদের নাম্বারে। একবার রিং হতেই নাহিদ কল রিসিভ করল। তোহা ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আজকে কল করলেন না কেন?

তোহার কথায় নাহিদ অবাক হলো। মেয়েটা কি তার কলের জন্য অপেক্ষা করছিল? মুহূর্তের মধ্যেই নাহিদ খুশি হয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষনেই সকালে তোহার বলা কথাটা মনে পড়ল। প্রচন্ড অভিমান জমল মনে। অভিমান নিয়ে বলল,
“ভাবছি আর লোক দেখানো ভালোবাসা দেখাবো না। তাই কল করিনি।

তোহা বেশ বুঝতে পারল নাহিদের অভিমান। সকালে নিজের বলা কথাটার জন্য অনুশোচনা হতে লাগলো। ভেতরটা পুড়তে লাগলো। নাহিদকে বলল,
“আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।

তোহার কথায় নাহিদ হেসে উঠল। মুখে হাসলেও তার ভেতরটাও জ্ব’লে যাচ্ছে। মেয়েটা কি করে এতো কঠিন কথাটা বলতে পারল?

নাহিদ হাসি থামিয়ে নি’ষ্প্রাণ ক’ন্ঠে বলল,
“আমি জানি কীভাবে বলেছিলে।

তোহা এবার একটা অভাবনীয় কাজ করে বসল। নাহিদকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠল,
“আমাকে আপনার অবিবাহিত বউ থেকে বিবাহিত বউ করবেন?

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

আক’স্মিক তোহার অভাবনীয়, অকল্পনীয় কথায় বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হয়ে যায় নাহিদ। অপ্রত্যা’শিত আনন্দ এসে হানা দেয় হৃ’দয় আঙি’নায়। নাহিদ নিজেকে ধা’তস্থ করে। নিজের এই আনন্দ খুব সন্ত’র্পনে গোপন করে তোহার কাছ থেকে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“যে লোক দেখানো ভালোবাসে তার বউ হয়ে লাভ কী? দিনশেষে হাহাকার আর আফসোস মিলবে।

তোহা এক পাশ থেকে আরেক পাশে শুয়ে চোখ দুটো ব’ন্ধ করে বলল,
“আফসোস তো এখন হচ্ছে। সকালে বলা কথাটার জন্য। বউ হলে কেবল প্রণয় মিলবে। হাহাকার, আফসোস এক ছুটে পালাবে।

নাহিদ খুব গোপনে মুচকি হাসল। সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছে প্রণয় বাতাস। ইশ, প্রেম এতো সুখের কেন? ভালোবাসার মানুষের কথাগুলো এতো মিষ্টি কেন? নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কে বলল প্রণয় মিলবে? প্রণয়ের বদলে যদি প্রলয় হয়ে যায় তখন?

তোহা বড্ড বি’রক্ত বোধ করার চেষ্টা করল‌। কিন্তু হায়! বিরক্তি’কর ছিটে ফোটা ও আসছে না। কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে। তোহা অ’ধৈর্য গলায় বলল,
“উফ! আপনি কি হ্যাঁ? আমি নিজ ইচ্ছায় প্রণয় চাইছি আর আপনি প্রলয়ের কথা বলছেন। কেন হ্যাঁ? আমার প্রণয়কে প্রলয়ে পরিনত করার এতো শখ কেন?

নাহিদ তোহার অ’ধৈর্য ক’ন্ঠে হেসে উঠল। শব্দ করে হেসে জবাব দিল,
“কারণ প্রণয় পাওয়া এতো সহজ নয়। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, সাধনা করে পেতে হয়।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“এ্যা’হ! বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, সাধনা করে পেতে হয়। আপনি কোন সাধনা করেছেন শুনি।

“সাধনা করিনি বলছো? এই যে বারবার, অকারণে তোমার মুখটা চোখের সাথে ভেসে উঠে। কথা বলার তৃষ্ণা মেটাতে রাত-বিরাতে কল দিয়ে কথা বলা। চোখে তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে এক্সি’ডেন্ট করা। এই গুলো সাধনা নয় বলছো?

তোহা নাহিদের কথার জবাব দিল না। চোখ দুটো ব’ন্ধ রেখেই মোহনীয় স্বরে বলল,
“এই শুনুন না। একটু প্রেম প্রেম কথা বলুন তো।

তোহার কথায় নাহিদ হেসে ফেললো। কিছু একটা বলতে গেলেই মাথার মধ্যে দু’ষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“একটু প্রেম প্রেম কথা।

নাহিদের কথা শুনে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। তৎক্ষণাৎ নাহিদের কথাটার মানে বুঝতে পারল না। কয়েক সেকেন্ড পার হতেই যখন কথার মানে বুঝতে স’ক্ষম হলো তখন বলে উঠল,
“আপনি তো দেখছি ভারী অস’ভ্য। ইচ্ছে করে এমন করছেন।

নাহিদ এবারো হাসল। ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমি অস’ভ্য বুঝি? আচ্ছা, তুমি কি করে বুঝলে আমি অস’ভ্য? আমি কি তোমার সাথে অস’ভ্যতা করেছিলাম? ঠিক কি কি করেছিলাম? মানে, আমাকে একটু ব্যাখ্যা করে বলো তো।

তোহা মুখ খুলতে নিল। তখনই নাহিদ তোহাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এই শুনো, শুনো। আচ্ছা, তুমি যেহেতু অস’ভ্যতার স্বীকার হয়েছো সেহেতু অস’ভ্য কাকে বলে? অস’ভ্যতা কতো প্রকার ও কি কি বলো তো।

নাহিদ যে ইচ্ছে করে এসব বলছে তোহার বুঝতে এক মিনিট ও সময় লাগে নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনি শুধু অস’ভ্য না। মারা’ত্মক লেভেলের ভয়া’নক অস’ভ্য।

তোহা কথাটা বলেই কলটা কেটে দিল। ছেলেটা ইচ্ছে করে তাকে জ্বালা’চ্ছে। কিন্তু এই জ্বা’লায় যে শরীরে জ্ব’লুনি জ্ব’লছে না। উল্টো ভালো লাগছে। অ’দ্ভুত রকমের ভালোলাগার সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটছে। প্রেম কতো অ’দ্ভুত, কতো আ’শ্চর্যময়। ইশ, প্রেম এতো সুখ কেন? প্রেম কেন হৃদয় আঙি’নায় ভয়া’বহ তোলপাড়ের সৃষ্টি করে?

তোহা কলটা কেটে দিতেই নাহিদ হেসে উঠল। মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে ভাবল আরেক বার কল করবে কিনা। তারপর ভাবল থাক। আজকে আর কল করার দরকার নেই।

নাহিদ মোবাইলটা হাত থেকে বিছানার পাশে রেখে দিল। বালিশে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে নিজ মনে বলল,
“অবশেষে, অবশেষে তাহলে প্রেমটা হয়ে গেল।

নাহিদের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। চোখ দুটো ব’ন্ধ করতেই চোখের সামনে তোহার রাগী মুখটা ভেসে উঠলো। নাহিদ আবারো বলল,
“মেয়েটা রেগে গেলেও সেই লাগে।
__________________

তারেকুল সাহেব ডাইনিং টেবিলে বসে তোহার জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়ে আসছে। তারেকুলের হাতে খবরের কাগজ। আপাতত চোখ দুটো কাগজের দিকে স্থি’র হয়ে আছে। তোহা আসলেই খাওয়ায় মন দিবে। তারেকুল যখন খবরের কাগজে ম’গ্ন হয়ে আছে তখনই তোহা পেছন থেকে ডেকে উঠল,
“আব্বু।

তারেকুল তোহার ডাক শুনে কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে তোহার দিকে তাকাল। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাসি মুখে এগিয়ে আসছে। তারেকুল মুচকি হেসে বলল,
“আসো মামনি।

তোহা আসলো। তারেকুলের পাশের চেয়ারটায় বসল। তোহার আম্মু নাস্তা এগিয়ে দিতেই খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তোহা খাওয়ার মাঝে হুট করে বলে উঠল,
“আচ্ছা আব্বু? আমি যদি কাউকে ভালোবাসি তুমি কি আমাকে তার সাথে বিয়ে দেবে?

তোহার প্রশ্নে তারেকুল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মুখের খাবারটা খেয়ে ধীরে সুস্থে বলল,
“কেন দেব না মামনি? ছেলেটা যদি তোমার যোগ্য মনে হয় তাহলে অবশ্যই বিয়ে দেব।

তোহা মুচকি হাসল। মুহূর্তের মধ্যেই মুখে আঁধার নেমে এলো। আচ্ছা, আমি যদি বলি আমি নাহিদকে ভালোবাসি তাহলে কি আব্বু বিয়ে দিবে? আমি যে সেদিন আব্বুকে বুঝিয়ে কথাগুলো বললাম, আব্বু কথাগুলো মিথ্যে ভাববে না তো? নাহিদের কথা বললে যদি আমাকে ভুল বুঝে?

তোহা এসব ভাবনায় যখন অন্য মনস্ক হয়ে পড়ল তখনই তারেকুল বলল,
“কি হয়েছে মামনি? তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?

তারেকুলের কথায় তোহা স্ত’ম্ভিত ফিরে পেল। মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“না, আব্বু। আমি কি নিয়ে চিন্তা করবো। তেমন কিছু না।

তারেকুল আর কিছু বলল না। তবে তোহার মাথায় প্রশ্ন গুলো রয়েই গেল। প্রশ্নগুলো তাকে অজানা আ’তঙ্কে জর্জ’রিত করে তুলছে।
____________

তোহা অরিনকে যখন গতকাল রাতের কথা বলল অরিন তখন উৎ’কণ্ঠায়, উত্তেজনায় চেঁচিয়ে বলল,
“কি সত্যি? তুই সত্যি বলছিস? তুই এমনে কীভাবে প্রোপোজ করে ফেললি?

অরিন কথাটা একটু চেঁচিয়ে বলায় কয়েক জোড়া চোখ তার দিকে তাকাল। তা দেখে তোহা কিছুটা ধ’মক দিয়ে বলল,
“আরে, আস্তে কথা বলবি তো। এভাবে চেঁচিয়ে কথা বলে? সকলে কেমন করে তাকিয়ে আছে। তাছাড়া আমি কি এমন বলেছি? এভাবে চেঁচানোর কি আছে? আমি কি কাউকে প্রোপোজ করতে পারি না? অ’দ্ভুত!

তোহার কথাটায় অরিন খুশি হলো। তখনই দেখল ফাহিম, রনি, নাহিদ এদিকে এগিয়ে আসছে। অরিন তোহাকে দেখিয়ে বলল,
“ওই দেখ তোর বর আসছে।

তোহা সামনের দিকে তাকাল। নাহিদের চোখে চোখ পড়তেই নাহিদ চোখ টিপ মারল। ল’জ্জায় তোহা চোখ নামিয়ে নিল। নাহিদ তোহার সামনে এসে দাড়িয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে রইল। তবে তোহার চোখ দুটো মাটির দিকে। নাহিদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিম বলল,
“দেখ, দেখ। এখন তো তোরই দেখার দিন।

নাহিদ ফাহিমের ঠাট্টার ছলে বলা কথাটার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
“আর দেখবো কি? বউ তো তাকাচ্ছেই না।

পাশ থেকে রনি তোহার উদ্দেশ্যে বলল,
“এই যে ভাবি, তাকান তাকান। আপনাদের মধ্যে শুভ দৃষ্টিটা হয়ে যাক। তা দেখে আমরা ধন্য হই।

রনির কথায় তোহা আরো ল’জ্জা পেল। এমন ল’জ্জার সম্মুখীন তাকে কখনো হতে হয়নি। তোহাকে ল’জ্জা পেতে দেখে অরিন বলে উঠল,
“আপনারা দেখছেন তো তোহা ল’জ্জা পাচ্ছে। তারপরও ইচ্ছে করে ল’জ্জায় ফেলছেন কেন?

ফাহিম এবার বলে উঠল,
“আমরা ল’জ্জায় ফেলছি বুঝি? কই? আমরা তো ল’জ্জায় ফেলছি না। আমরা একটু মজা করছি। এতে যদি ভাবি ল’জ্জা পায় আমাদের কি দোষ? আমরা কি ভাবির সাথে একটু মজা করতে পারব না?

“এখনো পার্মানেন্টলি ভাবি হয়নি। এতেই আপনারা যা শুরু করেছেন। পার্মানেন্টলি ভাবি হলে না জানি কি করেন।

নাহিদ তোহার দিকে এগিয়ে গেল। তোহার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“একটু তাকাও না বউ।

নাহিদের কথায় তোহা একপলক তাকাল। চোখাচোখি হতেই সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। ভীষণ ল’জ্জা লাগছে। নিচু সুরে বলল,
“আপনি আমায় বড্ড ল’জ্জা দেন।

তোহা কথাটা বলে দাঁড়ালো না। অরিনকে নিয়ে চলে গেল। নাহিদ তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নিজ মনে বলল,
“বউটা বড্ড বেশি ল’জ্জা পায়।

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-১৫+১৬

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহা চট করে চোখ খুলে ফেলল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল নাহিদের নাম্বার থেকে কল আসছে। তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঠাস করে কলটা কেটে দিল। তবে ঘুমালো না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে শুয়ে রইল। মন বলছে নাহিদ আবারো কল দিবে। ঠিক তাই হলো। মিনিট দুয়েক পর মোবাইলটা আবারো বেজে উঠলো। তোহা ফোনটা কানে দিল। তখনই ওপাশ থেকে ভারী স্ব’রে নাহিদ বলে উঠল,
“আমার প্রচ’ন্ড ঘুম দরকার বউ।

তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। এ কেমন কথা? ঘুমে ধরলে ঘুমাবে তা না কল দিয়ে ফাজলামি শুরু করছে। তারপর আবারো বউ বউ করছে। তোহা বেশ অস’ন্তোষ্ট হয়ে বলল,
“আপনি আমাকে এতোবার বউ বলেন কেন? আপনি কি জানেন? কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে এতো বার বউ বলে না, যতবার আপনি আমাকে বউ বলেন। আপনি কি আমাকে বিয়ে করেছেন? কেন বউ ডাকেন আমায়?

ওপাশ থেকে নাহিদ কেবল মুচকি হাসল। মৃদু স্বরে বলল,
“আমাদের প্রথম দেখা হওয়া মাত্রই তুমি আমায় বর বলেছিলে। আমাদের বিয়ে হয়নি তাহলে কেন সেদিন আমাকে বর বলেছিলে?

তোহা আমতা – আমতা করে বলল,
“আমি তো শুধু একদিনই বলেছিলাম। তাও শুধু শুধু বলিনি, কোনো কারণ ছিল বিধায় বলেছিলাম। কিন্তু আপনি তো প্রতিনিয়ত অবলীলায় আমাকে বউ বলে যাচ্ছেন। এই ডাকটা আমার পছন্দ না।

নাহিদ আবারো মুচকি হেসে বলল,
“আমার এই ডাকটা যে ভীষণ পছন্দ। তোমার নামটা আমার মাথায় ছিল না। শুধু মাথায় ছিল বউ। বিয়ে না করলেও তুমি আমার অবিবাহিত বউ।

তোহা নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
“কিসব অ’দ্ভুত কথা বলছেন? বউ তো বউই হয়। অবিবাহিত বউ আবার কি?

নাহিদ অকপটে বলল,
“এই যে আমি তোমায় বউ বলছি। কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হলেও আমার মনে-মস্তিষ্কে তুমি বউ বলে অভিহিত। যদিও আমার মনের থেকে ম’স্তিষ্ক আগে বুঝেছে যে তুমি আমার বউ । তবে এখন আমার মনও বুঝে গেছে।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। তবে সেটা নাহিদ বুঝতে পারল না। তোহা কিছুটা রাগী গলায় বলল,
“আপনি এই রাত-বিরাতে কল দিয়ে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘাটাবেন না তো। আমি ঘুমাবো।

তোহা কল কেটে দিতে উদ্যত হলো। তবে নাহিদ কল কাটতে দিল না। ব্যতিব্যস্ত ক’ন্ঠে বলল,
“এই তোহা, শোনো।

তোহা কল কাটল না। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কী?

“শোনো না।

“শুনছি তো বলুন।

“ভালোবাসি।

তোহার সর্বা’ঙ্গে শিহরণ বয়ে গেল। কিছুটা কেঁপে উঠল। অদ্ভুত এক ভালোলাগার অনুভূতি মনে বিরাজ করল। তোহা কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বুকে চেপে ধরল।
_________________

ভার্সিটিতে যাওয়া মাত্রই এদিক-ওদিক তাকিয়ে নাহিদকে খুঁজছে। তবে এর বিশেষ কোনো কারণ নেই। শুধুমাত্র নাহিদকে দেখার জন্যই এদিক-ওদিক তাকানো। তোহার হঠাৎ মনে হলো, আ’শ্চর্য তো! আমি কেন উনাকে খুঁজছি? উনাকে দেখার কোনো কারণ নেই। তবে?

তোহার প্রশ্নের উত্তর মিলল না। তবে অ’স্থির চোখ জোড়া এখনো এদিক-ওদিক খুঁজে বেরাচ্ছে নাহিদকে। তোহাকে এমন তাকাতে দেখে অরিন ঠাট্টার ছলে বলল,
“আমার দুলাভাইকে খুঁজছিস বুঝি?

অরিনের কথাটা শুনে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। এই কথার কারণ বুঝতে পারলো না। কারণ অরিনের কোনো বড় বোন নেই। তাইতো অবাক কন্ঠে বলল,
“তোর দুলা….

কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল তোহা। এতক্ষণে অরিনের কথার অর্থ সে ধরতে পেরেছে। অরিন নাহিদকে দুলাভাই বলে অভিহিত করেছে বলে রাগী গলায় বলল,
“মশকরা করছিস? একটা থাপ্পড় দিলে সব মশকরা বেরিয়ে যাবে।

অরিন মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“সত্যি কথা বললে এমনই হয়। তুই যে নাহিদ ভাইয়াকে খুঁজছিস তোর চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

তোহা অরিনের কথাটায় কিছুতেই সায় দিল না। নিজের মনের ভাবটা লুকাতে বলল,
“আরে আমি কেন উনাকে খুঁজতে যাব? এমনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলাম।

অরিন ব্য’ঙ্গ করে বলল,
“হুহ। বুঝি বুঝি। আমি সবই বুঝি।
_______________

ক্লাস শেষ হলে অরিন, তোহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। আ’শ্চর্যজনক ভাবে আজকে নাহিদ, রিয়া কারোরই দেখা পাওয়া গেল না। তবে ভার্সিটির গেইট পেরোতেই বাইকে করে নাহিদ এসে হাজির হলো তোহার সামনে। তোহার সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে বলল,
“তুমি আমার সাথে যাবে?

তোহার মুখে অবাকতা ফুটে উঠল। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“যাব মানে? কোথায় যাব আমি? আপনার সাথেই বা কেন যাব?

নাহিদ দায়সারা ভাবে বলল,
“আমি বলেছি বলে যাবে। তোমাকে মেরে তো ফেলবো না। শুধু একটা জায়গায় নিয়ে যাব।

তোহা জেদ ধরে বলল,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

তোহার জেদ তাকে নাহিদ পাত্তাই দিল না। তোহার কথাটা শুনেনি ভাব করে অরিনকে বিনয়ী স্বরে বলল,
“তুমি আমাদের সাথে যাবে?

নাহিদের কথা শুনে তোহা অবাক হলো। ‘আমাদের সাথে’ মানে? উনি কি ধরেই নিয়েছেন আমি যাব? আমি যে না বললাম উনি শুনেন নি?

নাহিদের কথায় অরিন দ্বি’মত করে বলল,
“না ভাইয়া। আমি কোথাও যাবো না। আপনি বরং তোহাকে নিয়েই যান।

অরিনের কথায় তোহা চোখ বড়বড় করে তাকাল। অরিন যেতে বলছে? তাও এই ছেলেটার সাথে? বলবেই তো। এখন তো এই ছেলের পক্ষেই কথা বলবে। তোহার এই সব ভাবনার মাঝেই নাহিদ বলল,
“বাইকে উঠো।

তোহা মাথা নাড়ালো। নাহিদের কথাটা প্রত্যাখান করে বলল,
“উঠবো না। আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।

নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা এতো নাছোড়’বান্দা কেন? নাহিদ তোহার হাত ধরে বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। হাত ছেড়ে দিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে কড়া গলায় বলল,
“বাইকে উঠতে বলেছি।

নাহিদের কড়া গলার কথাটা তোহা তোয়া’ক্কা করল না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। নাহিদ বি’রক্ত হয়ে বলল,
“তুমি কি উঠবে নাকি কোলে করে উঠাতে হবে। তুমি চাইলে অবশ্য আমি বাইক রেখে তোমাকে কোলে করে রিকশায় বসিয়ে নিয়ে যেতে পারি। বাইকে উঠবে না আমি রিকশা ডাকব?

তোহা চোখ বড়বড় করে তাকাল। কি বলছে এসব? সত্যি সত্যি কোলে তুলে রিকশায় উঠাবে নাকি? না, না। হয়তো ভয় দেখাচ্ছে। নাহিদ ভয় দেখাচ্ছে ভেবে তোহা জোর গলায় বলল,
“আমি আপনার সাথে যাব না মানে যাব না।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“সোজাসাপ্টা বললেই পারো তোমার কোলে উঠার শখ হয়েছে। দেখো তুমি যদি চেঁচামেচি করো তাহলে আমি মানুষকে বলব ‘তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। আমার সাথে রাগ করেছো তাই কোলে নিয়েছি’। ভার্সিটির প্রায় সকলেই কিন্তু জানে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তাই আমাকে কেউ কিছু বলবে না। তাহলে তোমার ইচ্ছে তাই পূর্ণ হোক।

তোহা আঁতকে উঠল। নাহিদ সত্যি সত্যি বাইক থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তোহা দ্রুত নাহিদকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“এই না, না। আপনি নামবেন না। আমি বাইকে উঠছি।

নাহিদ হাসল। বাইক থেকে নামালো না। তোহা নাহিদের বাইকে উঠে বসল। বাইকে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রাখল। নাহিদ মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিল।

প্রায় আধাঘণ্টার পথ পেরিয়ে একটা বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করালো। তোহা বাইক থেকে নেমে নাহিদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। নাহিদ বাইক থেকে নেমে বলল,
“আমাদের বাসা। চলো।

নাহিদ আগে আগে গেল। তোহা নাহিদের পেছন পেছন গেল। বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই রিয়া দরজা খুলে দিল। তোহা রিয়াকে দেখে মনে মনে ভাবল,
“ও কি এখানেই থাকে নাকি?

রিয়া তোহাকে দেখে হাসি মুখে বলল,
“আরে তোহা তুমি? এসো এসো , ভেতরে এসো।

তোহা ভেতরে গেল। নাহিদ ভেতরে গিয়েই চেঁচাতে শুরু করল,
“আম্মু? কোথায় তুমি? দেখে যাও।

মিনিক খানেক পার হতেই মাঝবয়সী এক মহিলা বেরিয়ে এলেন। নাহিদ তার আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ মাখানো ক’ন্ঠে তোহাকে দেখিয়ে বলল,
“আম্মু বল তো, এই মেয়েটাকে তোমার ছেলের বউ হিসেবে কেমন লাগবে?

নাহিদের এমন লাগামহীন কথায় তোহা বেশ ল’জ্জা পেল। বলছে কি ছেলেটা? একটু ও কি ল’জ্জা শরম নেই? আম্মুর কাছে কেউ এভাবে বলে? হুট করেই তোহার হিচকি উঠে গেল। তা দেখে নাহিদের আম্মু রিয়াকে বলল,
“রিয়া একটু পানি নিয়ে আয় তো মা।

রিয়া তৎক্ষণাৎ চলে গেল। দুই মিনিটের মধ্যেই রিয়া পানির গ্লাস হাতে নিয়ে এলো। তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“পানিটা খেয়ে নাও।

তোহা রিয়ার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিল। নাহিদের আম্মু তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“ছেলের বউ হিসেবে খুব একটা খারাপ লাগবে না।

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

নাহিদের আম্মুর কথায় তোহা হত’ভম্ব হয়ে গেল। বি’স্ময়, ল’জ্জা যেন দ্বিগুন হলো। তোহা ল’জ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। তা দেখে নাহিদের আম্মু হেসে বলল,
“ওমা। মেয়ে তো দেখছি ল’জ্জা পাচ্ছে।

নাহিদের আম্মুর সরাসরি বলে ফেলায় তোহার অস্ব’স্তি লাগলো। তখনই নাহিদের আম্মু তোহার বাহুতে ধরে বিনয়ী স্বরে বলল,
“এখানে ল’জ্জা পাওয়ার কিছু নেই আম্মু। তুমি আমার সাথে বসো তো।

ভদ্রমহিলার কথায় তোহার যেন স্ব’স্তি মিলল। তোহাকে ধরে সোফায় নিয়ে বসালেন। নাহিদ তখন নিজের রুমে দিকে চলে গেল। নাহিদ চলে যেতেই তোহা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। নাহিদের আম্মু সরাসরিই প্রশ্ন করল,
“আমার ছেলেকে তোমার পছন্দ নয়?

তোহা কল্পনাও করতে পারেননি উনি এই প্রশ্ন করে বসবেন। কি উত্তর দিবে? এভাবে কেউ প্রশ্ন করে? তোহা এবার হাঁস’ফাঁস করতে লাগলো। কি করে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া যায় তারই পরিকল্পনা করতে লাগলো। তোহার মনোভাব হয়তো নাহিদের আম্মু আঁচ করতে পারলেন। মুচকি হেসে বলল,
“হুট করে একদিন নাহিদ এসে আমাকে আর রিয়াকে বলল রেস্টুরেন্টে কোন মেয়ে নাকি তাকে বর বলেছে। আচ্ছা, রিয়াকে চিনো তো? আমার দেবরের মেয়ে। ওর মা মারা গেছে আর দেবর প্রবাসী বিধায় আমাদের এইখানেই থাকে।

তোহা এক পলক রিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটার মা নেই? তোহার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

নাহিদের আম্মু আবারো বলতে শুরু করল,
“সেদিন নাহিদের চোখে-মুখে অচেনা মেয়েটার প্রতি সে-কি রাগ দেখলাম। রেস্টুরেন্টে নাকি ঝগড়া হয়েছিল। তারপর কয়েকদিন কেটে গেল। হুট করে আমার ছেলেটা এসে বলল ‘আম্মু আমি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি’। আমার ছেলের মুখে এমন অপ্রত্যা’শিত কথা শুনে আমার খুব ইচ্ছে হলো সেই মেয়েটাকে দেখার। ইচ্ছেটা পোষন করার কারণেই তুমি আজকে এখানে।

তোহা এতক্ষণে বুঝতে পারল তাকে কেন এখানে আনা হয়েছে। নাহিদের আম্মু আবারো বলল,
“আমার ছেলের পছন্দটা কিন্তু খারাপ না।

তোহা মুচকি হাসল। তখনই নাহিদ বেরিয়ে এলো। ভেজা ভেজা চুল। হয়তো সদ্য গোসল সেরে এসেছে। তোহা নাহিদের দিকে এক পলক তাকাতেই ল’জ্জা এসে ভর করল তার মুখশ্রীতে। অহেতুক এহেন ল’জ্জার কারণ ধরতে পারল না তোহা। একি ল’জ্জা কেন লাগছে?

তোহার ল’জ্জা মাখা মুখ নাহিদের চোখ এড়ালো না। নাহিদ তা দেখে অবাক হলো। মেয়েটা এমন ল’জ্জা পাচ্ছে কেন? ল’জ্জা পাওয়ার মতো কি বলল আম্মু? নাহিদ নিজ মনের প্রশ্নগুলো নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রেখে বলল,
“আম্মু ক্ষু’ধা লেগেছে। খাবার দাও। ওকে ও আবার দিয়ে আসতে হবে।

নাহিদের আম্মু এবার তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়াল। সত্যি তো এবার খাবার খাওয়া দরকার। উঠি তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়ালেন। এক মুহুর্ত ব্যয় না করে রান্নাঘরে ছুটলেন।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকে গেলে তোহা অ’স্থির হয়ে গেল বাসায় যাওয়ার জন্য। নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“শুনোন, আমি বাসায় যাব।

নাহিদ চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
“বাসায় তো যাবেই। তোমাকে তো এখানে সারা জীবনের জন্য রেখে দিব না। বাসায় দিয়েই আসব।

রিয়া সোফায় বসে থেকে নাহিদের মুখের দিকে তাকাল। নাহিদের চোখ, মুখ, কথা বলার ভ’ঙ্গি খুব গভীরভাবে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করেই তোহার চোখ গেল রিয়ার দিকে। রিয়াকে নাহিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে খানিকটা ভ্রুঁ কুঁচকালো। রিয়ার চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করল।

এতোটা বুঝতে স’ক্ষম না হলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। রিয়া কি তাহলে নাহিদকে সত্যি ভালোবাসে? রিয়া নাহিদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহাকে তার দিকে তাকাতে দেখেই চমকে গেল। অপ্র’স্তুত ভ’ঙ্গিতে হাসলো। মেয়েটা কখন তাকাল এই দিকে? কিছু বুঝে ফেলল না তো?

রিয়াকে হাসতে দেখে তোহাও সৌজন্যতা রক্ষার্থে হাসলো। তবে রিয়ার ওমন দৃষ্টির কারণ তাকে ভাবাচ্ছে।

নাহিদ উঠে দাঁড়াল। তোহাকে নিয়ে এখন বাসায় ফিরে যাওয়া দরকার। চোখের ইশারায় তোহাকে উঠতে বললে তোহা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। নাহিদের আম্মুর কাছে গিয়ে বলল,
“আসছি আন্টি।

নাহিদের আম্মু মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা আম্মু। আবার এসো কেমন।

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে তোহা নাহিদ বেরিয়ে পড়ল। তোহা নাহিদের বাইকে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রাখতেই নাহিদ বলে উঠল,
“কাঁধে হাত না রেখে একটু জড়িয়ে ধরলে তো পারো।

তোহা শব্দ করে হাসল। হাসি থামিয়ে কটা’ক্ষের স্ব’রে বলল,
“আপনি আশা করছেন আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরবো? আমি কখনোই আপনাকে জড়িয়ে ধরবো না।

নাহিদ মাথায় হেলমেট পড়ে নিল। বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
“জড়িয়ে তো তুমি ধরবেই। তাও নিজ ইচ্ছাতে।

তোহা মুখ ভেং’চি দিল। নাহিদ বাইকের আয়নার তা স্প’ষ্ট দেখল। তোহার মুখ ভেং’চি দেওয়া দেখে মুচকি হাসল। মেয়েটার এই মুখ ভেং’চি দেওয়া ও ভালো লাগছে। ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই কি ভালো লাগে?

বাইকে করে নাহিদ ভার্সিটি পর্যন্ত এলো। কিন্তু এর পরের রাস্তা তো জানা নেই। তোহার বাসা কোথায় সে তো জানে না। তোহা সেটা বুঝতে পেরে রাস্তা বলে দিল। নাহিদ সেই অনুযায়ী গিয়ে তোহার বাসার সামনে বাইক থামাল।

তারেকুল বারান্দা থেকে তোহাকে একটা ছেলের বাইক থেকে নামতে দেখলেন। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে এলো উনার। কে হতে পারে এই ছেলেটা? তোহার বয়ফ্রেন্ড?

তোহা বাইক থেকে নেমে নাহিদের দিকে এক পলক তাকাল। কোনো কথা না বলেই বাসার ভিতরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। নাহিদ বাইকে ঠাঁই বসে রইল। তোহা যেই ভেতরে চলে গেল তখনই সে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

তোহা বাসায় ফিরতেই তোহার সম্মুখীন হলো তারেকুল। তোহা আব্বুকে দেখে মুচকি হাসল। তারেকুল তোহাকে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করল,
“তুমি যেই ছেলেটার বাইকে করে এলে সেই ছেলেটা কে মামনি?

তারেকুলের প্রশ্নে তোহা শুকনো ঢোক গিলল। আব্বু কি নাহিদকে দেখে ফেলল? তোহা তারেকুলের প্রশ্নের উত্তরে কি জবাব দিবে বুঝতে পারল না। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বুঝ হওয়ার পর জীবনে প্রথম আজ আব্বুকে মি’থ্যে বলল,
“আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে আব্বু। আমি আর ও অরিনের বাসায় গিয়েছিলাম। তাই আমাকে ও বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেল।

বরাবরের মতোই মেয়ের কথাটা তারেকুল বিশ্বাস করল। মেয়েটা যে তাকে কখনো মিথ্যে বলেনি। মুচকি হেসে বলল,
“ঠিক আছে মামনি। তুমি রুমে যাও।

তোহা বাধ্য মেয়ের মতো রুমে চলে গেল। আব্বুকে মি’থ্যে বলায় তার ভেতরটা জ্ব’লছে। কখনো তো মি’থ্যে বলার প্রয়োজন হয়নি।
__________________

ঘড়িতে যখন কাঁটায় কাঁটায় বারোটা বাজলো, গত দুই দিনের মতো আজকে ও নাহিদ কল করল। তবে তাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। তিনবার রিং হওয়ার মাঝেই তোহা কল রিসিভ করে কানে দিল। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, বলুন।

তোহার এমন শান্ত কথায় নাহিদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সেই নিঃশব্দের হাসি তোহা বুঝতে পারল না। নাহিদ মশকরা করে বলল,
“জী? কে আপনি?

নাহিদের কথায় তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। কে আপনি মানে কি? উনি কি জানেন না আমি কে? কল দিয়ে এমন ভনিতা করার কি আছে? তোহা নাহিদকে বলল,
“আপনি চেনেন না আমায়? চিনেও ঢং করছেন কেন? ঢং তো মেয়েরা করে। আপনি কি করে মেয়েলি স্বভাব পেলেন?

তোহার এমন কথায় নাহিদ হত’ভম্ব হয়ে গেল। কি বলছে মেয়েটা? গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আমি তো জানতে চেয়েছিলাম তোমার পরিচয়টা আর তুমি আমাকে মেয়েদের সাথে তুলনা করলে? এমনটা করতে পারলে?

নাহিদের কথার ধরন শুনে তোহা হেসে উঠল। ছেলেটাকে ভালোই জব্দ করা হয়েছে। তোহা হাসি থামিয়ে বলল,
“মেয়েদের সাথে তুলনা করলাম বুঝি? কই আমি তো বুঝতে পারিনি।

নাহিদ কোনো কথা বলল না। মিনিট দুয়েক দুজনই চুপ করে রইল। নিরবতা কাটিয়ে নাহিদ বলে উঠল,
“কে তুমি? আমার বউ?

তোহা আনমনেই বলে উঠল,
“হুম।

আক’স্মিক কথায় নাহিদ বি’স্মিত হলো। তারপরই বুঝতে পারল তোহা আনমনেই কথাটা বলে ফেলেছে। নাহিদ এবার মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে স্বীকার করছো তুমি আমার বউ?

তোহা এবার নিজের কথাটা বুঝতে পারল। মুহূর্তের মধ্যেই ল’জ্জায় লাল হয়ে গেল মুখশ্রী। তোহা ল’জ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“ধ্যাৎ।

নাহিদ এবার একটু জোরে হেসে উঠল। তাতে আরো লজ্জা পেল তোহা। মুখের উপর কলটা কেটে দিল। মোবাইলটা বুকে চেপে ধরে বলল,
“আমায় এতো ল’জ্জায় ফেলেন কেন আপনি?

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-১৩+১৪

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

নাহিদ বাইকের উপর বসে গেইটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে তোহার জন্য। মনটা কেমন উরুউরু করছে। তোহাকে দেখার জন্য মনটা আনচান আনচান করছে। নাহিদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে গেইটের দিকে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। তোহা এসেছে। কিছু একটা নিয়ে হাসতে হাসতে অরিনের সাথে কথা বলছে। নাহিদ গালে হাত দিয়ে মিহি কন্ঠে বলল,
“বউটা এতো সুন্দর কেন?

তোহা অরিনের সাথে কথা বলতে বলতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। মূলত নাহিদকে খুঁজার জন্যই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বেশিক্ষণ তাকাতে হয়নি। সামনে তাকাতেই নাহিদের দেখা পেল। মুখে হাসি ঝুলিয়ে এইদিকেই আসছে। নাহিদকে দেখা মাত্রই তোহার গতকালের কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সর্বা’ঙ্গ কেঁপে উঠলো।

নাহিদ তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। হাসি মুখে বলে উঠল,
“কেমন আছো বউ?

নাহিদ আবারো বউ বলে সম্বোধন করার তোহা তেঁতে উঠল। তবে নাহিদকে কোনো কিছু বলল না। নাহিদকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নাহিদের পাশ কেটে চলে যেতে চাইল।

তোহা চলে যেতে চাইলে নাহিদ মুচকি হাসল। ফট করে তোহার বাম হাতটা ধরে ফেলল। তোহা দাঁড়িয়ে পড়ল। নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদ বলে উঠল,
“কালকে বলেছিলাম কথা বলা বাধ্যতামূলক। অথচ তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো?

তোহা এক ঝটকায় নাহিদের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল। সোজা নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“আপনি কথা বলতে বললেই আমাকে কথা বলতে হবে? কেন? আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি? যে ভয়ে আপত্তনার সব কথা মান্য করবো।

নাহিদ হেসে উঠল। তোহার ক্ষানিকটা কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ভয় পাও না বলেই তো তোমাকে এতো ভালো লাগে। এই ভালোলাগাটা যদি হুট করে ভালোবাসায় রূপ নেয় আমি কি করবো বল তো?

নাহিদের কথার বিপরীতে তোহাও হেসে উঠল। নাহিদের মতো বলে উঠল,
“ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। তো মিস্টার? এক মন দিয়ে কয়জনকে ভালোবাসবেন আপনি? ভালোবাসা কি মুড়ির মোয়া? যাকে ইচ্ছে তাকেই দিবেন।

তোহার কথায় নাহিদ ক্ষানিকটা ভ্রুঁ কুঁচকালো। তখনই রিয়ার কথাটা মনে পড়ল। মনে মনে বড্ড আফসোস হলো নাহিদের। ধুর, রিয়া যে কেন এই ঝামেলাটা করতে গেল? নাহিদ হেসে বলল,
“তুমি বললে শুরু তোমাকেই দেব। অন্য কাউকে দিব না কিংবা দিলেও ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।

তোহা মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“আপনার মন আপনার কাছেই রাখেন। আমার এসবের দরকার নেই। তোহা অন্য কারো জিনিস নেয় না। যারটা তারই থাক।

তোহা নাহিদকে আর কথা বলার সুযোগ দিল না। অরিনকে নিয়ে ক্লাসে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। অরিন কিছুটা পথ যেতেই বলে উঠল,
“তোহা নাহিদ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে?

তোহা নি’ষ্প্রাণ ক’ন্ঠে বলল,
“উনি ভালোবাসলেই কি না বাসলেই কি? আমি তো উনাকে ভালোবাসি না। আর কখনো বাসবো ও না।

অরিন হেসে উঠল। তোহা আড়চোখে তাকাল। হাসির কি আছে এখানে? অরিন হাসি থামিয়ে বলল,
“এখনই বলছিস ভালোবাসবি না? কে বলতে পারে? হুট করে একদিন এসে বলবি, ‘অরিন আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ‘।

তোহা দ্বিমত করল। অরিনের কথাটাকে প্রতিবাদ করে বলল,
“কখনো না। আমি এমনটা কখনোই বলবো না।

অরিন তোহার চোখ এড়িয়ে মুচকি হাসল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“সময় কখন কি করে কেউ বলতে পারে না। তুই কখন কি বলবি তা সময়ই বলে দিবে।

তোহা অরিনের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল,
“তোর কথাবার্তা কিন্তু আমার একটুও ভালো ঠেকছে না। তুই কি চাচ্ছিস বল তো? তুই কি চাচ্ছিস আমি ওই নাহিদকে ভালোবেসে ফেলি?

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন কিছু বললেই হয়তো তোহা বলে উঠবে ‘তুই নাহিদ পক্ষে কথা বলছিস ‘। অরিন আর কথা বাড়াতে চাইল না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“আরে না। এসব কথা এখন বাদ দিয়ে চলে ক্লাসে যাই।

ক্লাসে গিয়ে তোহা দেখতে পেল রিয়াকে। দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে খাতায় কিছু লিখছে। তোহা রিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। রিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ইশ, তুমি যে ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেললে। মানুষটা মোটেই সুবিধার না। হঠাৎ একদিন দেখবে তোমাকে একা করে চলে যাবে।

তোহা হঠাৎ করে কথা বলায় রিয়া চমকে উঠল। মাথাটা বাম দিকে ঘুরিয়ে তোহাকে দেখে স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। তোহার কথাটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলল,
“ভালোবাসার মানুষটা যেহেতু আমার সেহেতু মানুষটা সুবিধার না অসুবিধার সেটা দেখার দায়িত্ব ও আমার। তুমি কেন এসব দেখতে যাচ্ছো?

“তোমার ভালোবাসার মানুষটা যদি আমায় ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে বি’ভ্রান্ত করে তাহলে কি করবো বল? সময় থাকতে আটতে রাখো।

তোহা আর দাঁড়াল না। নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ল। রিয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর শুরু হয়েছে তোলপাড়। তোহার কথাটা কানে বাজল। ‘সময় থাকতে আটকে রাখো’। রিয়া নিজ মনে হাসল। তাচ্ছি’ল্য মাখা হাসি। বি’ষাক্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“আটকে রাখবো? কাকে আটকে রাখবো? যে চোখের ভাষা বুঝে না, মনের গভীরতা জানে না তাকে আটকে রাখা যায়? সে যে তোমাতে আ’সক্ত, আমি তার কাছে বি’ষাক্ত।
__________

নাহিদ ফাহিম রনির কাছে গেল। দুজনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোহার নাম্বারটা কিভাবে পাব বল তো?

ফাহিম অকপটে বলে উঠল,
“কেন? সরাসরি ওর কাছে চাইলেই তো হয়।

নাহিদ ফাহিমের বাহুতে একটা থাপ্পড় দিল। আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোর কি মনে হয়? আমি নাম্বারটা চাইবো আর আমাকে দিয়ে দিবে? এতোই সোজা?

ফাহিম নাহিদের মতো করে নাহিদের বাহুতে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
“সেই কথাটা মুখে বললেই তো হয়। কথায় কথায় এতো হাত চলে কেন? শা’লা!

নাহিদ চোখ পাকিয়ে তাকাল। ফাহিম তা পাত্তাই দিল না। তখনই রনি বলে উঠল,
“তোরা এভাবে ঝগড়া না করে ভাব নাম্বার কীভাবে ম্যানেজ করা যায়।

ফাহিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। মুচকি হেসে বলে উঠল,
“আরে নাম্বার ম্যানেজ হয়ে যাবে। একটু বুদ্ধি খাটালেই হবে।

নাহিদ রনি দুজনই একসাথে বলে উঠল,
“কীভাবে?

“সেটা সময় হলেই দেখতে পাবি।
_______

ছুটি হতেই তোহা অরিন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। মাঠে পা রাখতেই ওদের সামনে ফাহিম, রনি এসে দাঁড়াল। দুজনের মুখেই হাসি। ফাহিম অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমার সাথে একটু কথা আছে। একটু সাইডে আসবে?

ফাহিম কি কথা বলবে অরিন বুঝতে পারল না। তোহার দিকে তাকাল। তোহার ও একই অবস্থা। ওরা ঠিক কি চাচ্ছে বুঝতে পারছে না। অরিন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“কেন? সাইডে যাওয়ার কি দরকার? আপনি যা বলার এখানেই বলুন।

ফাহিম রনির দিকে তাকাল। চোখ দিয়ে আশ্বা’স দিল। তারপর অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“প্লিজ একটু সাইডে আসো। এখানে বলা যাবে না বলেই তো সাইডে আসতে বলছি।

অরিন তোহার দিকে তাকাল। তোহা চোখের ইশারায় যেতে বলল। অরিন তাই বলে উঠল,
“ঠিক আছে। চলুন।

ফাহিম, রনির চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল। তোহার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ফাহিম অরিনকে বলে উঠল,
“তোমার ফোনটা একটু দেবে?

ফাহিমের কথায় অরিন ভ্রুঁ কুঁচকালো। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“মানে? আমার ফোন কেন দেব? আমি শুধু শুধু আপনাকে কেন আমার ফোন দিতে যাব?

রনি তখন বলল,
“আসলে হয়েছে কি। ওর তো নতুন রিলেশন। তবে ওর গার্লফ্রেন্ডের ফোনটা ন’ষ্ট হয়ে গেছে। এখন আপনার নাম্বার থেকে ওর গার্লফ্রেন্ডের আম্মুর নাম্বারে কল দিবে। যদি ওর গার্লফ্রেন্ডের আম্মু কল রিসিভ করে তাহলে তুমি কথা বলবেন।

রনির কথাটা অরিনের কেন যেন বিশ্বাস হলো না। মনের মধ্যে খটকা লাগলো। তখনই ফাহিম বলে উঠল,
“প্লিজ, জাস্ট একবার কল করবো।

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে লক খুলে ফাহিমের হাতে দিল। ফাহিম ফট করে কল লিস্টে চলে গেল। ভাগ্যক্রমে প্রথমেই তোহার নাম্বারটা পেয়ে গেল। রনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার নাম্বারটা মুখস্থ আছে। তাও তুই দেখত মিলে কি-না। আমি নাম্বারটা বলছি।

রনি মাথা নাড়ালো। ফাহিম তখন তোহার নাম্বারটা বলতে শুরু করল। সাত ভিজিট বলতেই অরিনের নাম্বারটা চেনা মনে হলো। অরিন মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে গেল। এটা তোহার নাম্বার। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। রনি তার ফোনে তোহার নাম্বারটা তুলে নিয়েছে। অরিন রাগী গলায় বলল,
“আপনার এটা কি করলেন? আমাকে বোকা বানিয়ে তোহার নাম্বারটা নিয়ে নিলেন?

ফাহিম অরিনের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কি করবো বল? বন্ধু হেল্প চেয়েছে। হেল্প তো করতেই হবে। তাই তোমাকে বোকা বানালাম।

অরিন ফাহিমের থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। তখনই ফাহিম, রনি এক ছুটে চলে গেল। অরিন তোহার কাছে যেতেই তোহা প্রশ্ন করল,
“কিরে? কি বলেছে তোকে?

অরিন জবাব দিল না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। তোহা আরো দুই বার জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু তাতেও লাভ হলো না। অরিন বলল না ওখানে ঠিক কি হয়েছে।

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

রাত বারোটার এপাড় কি ওপাড়। তোহা গভীর ঘুমে আ’চ্ছন্ন হয়ে আছে। তোহার ঘুমটাকে হালকা করতে এই রাতের বেলা তার ফোনটা বেজে উঠলো। তোহার কপালে বি’রক্তির ভাঁজ পড়ল। অসময় কে কল দিল? কল যখন দিবেই তখন আরো আগে কল দিত। এই রাত-বিরাতে কেউ কল দেয়?

তোহা চোখ খুলে তাকালো না। হাতড়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিল। একটা চোখ একটু মেলে কলটা রিসিভ করে কানে দিয়ে আবারো চোখটা বন্ধ করে নিল। তোহা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“হ্যালো, কে?

ওপাশ থেকে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া ওপর পাশের মানুষটা কোনো কিছু বলার প্রয়াস করল না। তোহা প্রচ’ন্ড বি’রক্ত হয়ে বলল,
“আপনি কি জানেন আপনার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই? সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন মানুষ আপনি।

তোহা একটু চুপ করল। কিন্তু তখনো ওপর পাশ থেকে কেউ কিছু বলছে না। হয়তো বা বলবে ও না। ঘুমে তোহার চোখ দুটো জ্বা’লা করছে। অনেক ক’ষ্টে নিজেকে জাগিয়ে রেখেছে। যখন দেখল ওপাশের মানুষটা এখনো নি’শ্চুপ হয়ে আছে তখন আবারো বলল,
“এতো রাত করে কল দিয়ে আমার ঘুমের ব্যা’ঘাত ঘটিয়েছেন। সেই সাথে এখন আবার চুপ করে আছেন। চুপ করে থাকলে কল দেওয়ার দরকার কি ছিল? কলটা কেটে দিলেই তো হয়।

এবার ওপাশ থেকে কথা শোনা গেল। ওপাশের মানুষটা পুরুষেয়ালী ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“কল কেটে দিলে তোমার বিরক্তি’কর কন্ঠ শুনতে পেতাম?

কন্ঠটা বড্ড চেনা মনে হলো তোহার। কোথাও একটা শুনেছে। কিন্তু কোথায় শুনেছে? ঘুমের ঘোরে ঠিক মনে করতে পারছে না। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কে আপনি?

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ কানে এলো। মানুষটা হাসছে। আ’শ্চর্য তো! এখানে হাসির কি আছে? হাসি থামিয়ে ধীরে সুস্থে বলল,
“চিনতে পারছো না বউ?

তোহার ঘুম একছুটে পালিয়ে যায়। দুচোখ মেলে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার। তবে কি এটা নাহিদের নাম্বার? তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনি কেন কল দিয়েছেন? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন আপনি?

নাহিদ সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিল না। বরং হেঁয়ালি করে বলল,
“নাম্বার পাওয়া কোনো ব্যাপার হলো নাকি? তুমি যেমন করে আমার স্বপ্নে এসে হানা দিচ্ছো, তেমন করেই মনে মনে এসে নাম্বারটা দিয়ে গেছো।

তোহা বি’রক্তিকর ক’ন্ঠে বলল,
“আপনার এইসব আজগুবি কথা শোনার টাইম নেই আমার কাছে। আমি ঘুমাবো। আপনি রাখুন তো।

তোহা নাহিদকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কেটে দিল। মোবাইলটা সাই’লেন্ট করে বালিশের পাশে রেখে দিল।
________________

অরিন তোহার দিকে কাঁচুমাচু মুখ করে চেয়ে আছে। তোহা কখন থেকে কাল রাতের কথা বলে যাচ্ছে। নাহিদ কল দিয়ে কি কি বলেছে সেইসব বলছে। অরিন মনে মনে ভাবলো,
“কালকে যদি মোবাইলটা না দিতাম তাহলে তো নাম্বারটা পেত না।

অরিনের ভাবনার মাঝেই তোহা অবাক ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“নাম্বারটা কোথায় পেল বল তো? তুই ছাড়া কারো কাছে তো আমার নাম্বার নেই।

অরিন চমকে উঠল। তোহা বুঝে ফেলবে না তো? অরিন আমতা-আমতা করে বলল,
“তো? আমার কাছে আছে বলে আমি দিয়েছি নাকি? তোর মনে হয় আমি ইচ্ছে করে তোর নাম্বার দিয়ে দিব?

তোহা মাথা নাড়ালো। অরিনের কথা পরিপ্রেক্ষিতে বলে উঠল,
“তুই তো দিবি না। তাহলে নাম্বারটা পেল কোথায়?

অরিন মনে মনে স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। যাক তোহা তাহলে সন্দেহ করছে না। অরিন মুখে হাসি ফুটিয়ে মশকরা করে বলল,
“আরে নাহিদ ভাইয়া বলল না ‘তুই মনে মনে উনাকে গিয়ে নাম্বারটা দিয়ে এসেছিস’। সত্যি সত্যি বোধহয় তাই করেছিস।

তোহা অরিনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। অরিনের কথায় প্রতিবাদ করে বলল,
“তুই ও উনার মতো আজাইরা কথা বলছিস। যত্ত’সব ফালতু কথা।

তোহার কথায় অরিন হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“কিরে? আজকে ভার্সিটিতে আসার পর নাহিদ ভাইয়াকে দেখলাম না যে?

তোহা অরিনের দিকে চোড়াচোখে তাকাল। নাহিদের কথা বলায় কিছুটা বি’রক্ত হলো। তাইতো বি’দ্রুপ করে বলল,
“তোর নাহিদ ভাইয়ার নাম্বার আমার কাছে আছে। তুই ফোন দিয়ে বল ‘নাহিদ ভাইয়া আপনি কোথায়? আপনাকে দেখার জন্য আমি আকুল হয়ে আছি ‘। দেব নাম্বার?

তোহার কথায় অরিন মুখ ভেং’চি দিল। তখনই রিয়া এসে দাঁড়াল তোহার সামনে। তোহা অরিনকে অবাক করে দিয়ে তোহাকে বলল,
“তুমি কি জানো? আমার তোমাকে অনেক ভালোলাগে।

আক’স্মিক রিয়ার এমন কথায় তোহা, অরিন বি’স্মিত হলো। হতবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। অরিন শেষমেষ বলেই ফেলল,
“এইতো দেখছি ভুতের মুখে রাম নাম। থুক্কু রিয়ার মুখে তোহার নাম।

অরিনের কথাটা রিয়ার কানে গেল। তাইতো রিয়া মুচকি হাসল। তোহা অরিন আরেক ধাপ অবাক হলো রিয়াকে হাসতে দেখে। সব সময় গ’ম্ভীর রাগী মুখ করে থাকা মেয়েটাকে হঠাৎ করে হাসতে দেখলে অবাক তো হবেই। তোহা অরিন ও তার ব্যাতিক্রম নয়। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে ধীর গলায় বলল,
“হঠাৎ আমাকে এতো ভালোলাগার কারণ?

রিয়া দুর্বোধ্য হাসল। নিজ মনে বলল,
“ভালোলাগার হবে না? তুমি যে আমার ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা। দুনিয়ার সকলে তার ভালোবাসার মানুষটির পাশে অন্য কাউকে স’হ্য করতে পারে না। অথচ আমাকে দেখো। কতো অনায়াসে তোমায় বরণ করে নিচ্ছি। কারণ তোমার কারনে আমার ভালোবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। আর তার হাসিতেই আমি খুশি থাকবো।

রিয়া মনে মনে কথাগুলো বললে ও মুখে বলল,
“তোমাকে তো আমার আগে থেকেই ভালোলাগে। এতদিন তো তোমার সাথে নাটক করছিলাম।

রিয়ার কথায় তোহা অবাক হলো। বি’স্মিত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“নাটক মানে?

রিয়া আবারো হাসল। তোহাকে শীতল কন্ঠে বলল,
“আমি নাহিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড না। আমি উনার চাচাতো বোন। তোমার সাথে একটু নাটক করে বলেছিলাম আমি উনাকে পছন্দ করি।

তোহা ভ্রুঁ নাঁচালো। রিয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বললো না। রিয়া আবারো বলল,
“আজকাল জানতে পারলাম নাহিদ ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে ফেলেছে। শুধু ভালোবেসেই ক্ষা’ন্ত হননি। ইদানিং তোমায় নাকি স্বপ্নে ও দেখছে। তুমি ভাবতে পারছো? তোমাকে কিন্তু নাহিদ ভাইয়ার সাথে দারুণ মানাবে।

তোহা কেবল মুচকি হাসল। বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। তখনই ক্লাসে স্যার চলে এলো। রিয়া তার জায়গায় চলে গেল।
_____________

ক্লাস ছুটি হতেই তোহা অরিন বেরিয়ে এলো। মাঠে আসতেই নাহিদের দেখা পেল। মুখে হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তোহা বি’রক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতে চাইল। কিন্তু হঠাৎ করে খেয়াল করল বি’রক্তি আসছে না। কি হলো হঠাৎ?

নাহিদ তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইশ, সকালে বউটার দেখা পাইনি। আমার বুকটা হাহাকার করছিল। তোমাকে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছিল বউ।

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কি আ’শ্চর্য! ছেলেটাকে যতই বউ বলতে মানা করে ছেলেটা ততই বউ বলে। তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনার এসব প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা ছাড়ুন তো। আমার সামনে এসব একদম বলবেন না।

নাহিদ জিভে কামড় দিল। তোহা কথাটা বলে ঘোর অন্যা’য় করেছে এমন ভান করে বলল,
“এইটা তুমি কি বললে বউ? প্রেমিক হয়ে যদি প্রেমিকাকে প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা না বলি তাহলে আমি কিসের প্রেমিক?

তোহা ভারী গ’ম্ভীর স্বরে বলল,
“আপনার যদি এতোই প্রেমিক প্রেমিক কথাবার্তা বলার ইচ্ছে হয় তাহলে আপনি আপনার প্রেমিকার কাছে গিয়ে বলুন। আমার সামনে একদম বলবেন না।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“কিন্তু আমার যে প্রেমিকা হিসেবে তোমাকেই চাই।

তোহা কড়া গলায় বলল,
“আপনি মানুষটাই অস’হ্য।

তোহা কথাটা বলে কয়েক পা এগিয়ে গেল। নাহিদ তখন পেছন থেকে ডেকে উঠল,
“এই তোহা, শোনো।

তোহা দাঁড়িয়ে পড়ল। পেছন ফিরে ভ্রুঁ নাচিয়ে ইশারায় বলল ‘কী’? নাহিদ মুচকি হেসে মোহনীয় স্বরে বলল,
“ভালোবাসি।

তোহা দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। চোখ খুলে বলল,
“ধুর।

সামনে তাকিয়ে আবারো নিজ গন্তব্যে পা বাড়াল।
______________

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় রাত বারোটা বাজে। গত রাতের মতো আজকে ও তোহার ফোনটা বেজে উঠল। কিন্তু তোহার ঘুম ভাঙল না। মোবাইলটা বাজতে বাজতে কেটে গেল। মিনিট দুয়েক পর আবারো আগের মতোই বাজতে শুরু করলো। এবার তোহার ঘুম কিছুটা হালকা হলো। তখনই মনে হলো কালকে রাতে নাহিদ কল দিয়েছিল। এখনও কি তবে নাহিদই কল দিয়েছে?

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-১১+১২

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তোহা সিদ্ধান্ত নিল আজকে আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে। তাই তো ফ্রেশ হয়ে ছুটল রান্নাঘরে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল তোহার আম্মু সানজিদা বেগম নাস্তা তৈরি করছেন। তোহা পেছন থেকে সানজিদা বেগমকে জড়িয়ে ধরল। সানজিদা বেগম চমকে উঠলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন,
“কী ব্যাপার? কী চাই?

তোহা আম্মুর প্রশ্নে ঠোঁটের হাসিটা আরেকটু প্রসারিত করে। মুচকি হেসে বলে,
“আমার কিছু চাই না তো।

সানজিদা বেগম ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে রেখেই বললেন,
“তাহলে? এই সকাল বেলা রান্নাঘরে কী?

তোহা সানজিদা বেগমকে ছেড়ে দিল। সানজিদা বেগমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আম্মু, আব্বু আমার সাথে রাগ করে আছে। আমি একটু আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করি? আব্বু সকালে যে চা খায় সেই চা টা আমি বানিয়ে নিয়ে যাই?

সানজিদা বেগম তোহার কথায় খুশি হলেন। মেয়েটা তার আব্বুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কথাটা ভাবলেই পুলকিত হচ্ছেন। তোহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আচ্ছা।

তোহা খুশি মনে চা বানাতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো কি করে আব্বুর রাগ ভাঙানো যায়। আব্বু তার কথাগুলো শুনলেই হলো। কিন্তু শুনবে তো? নাকি ওই দিনের মতোই কথার মাঝপথে থামিয়ে দিবে?

চা বানানো শেষ হলে তোহা চায়ের কাপে চা নিয়ে পা বাড়ায় আব্বুর রুমে যাওয়ার জন্য। তোহা দুরুদুরু বুকে তারেকুলের রুমে প্রবেশ করল। রুম থেকেই বারান্দায় স্প’ষ্ট তারেকুলকে দেখা যাচ্ছে। চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তোহা ধীর পায়ে এগিয়ে গেল।

তারেকুলের সামনে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“আব্বু তোমার চা।

তারেকুল তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিল। মুখে কোনো জবাব দিল না। নিরব থেকেই বুঝিয়ে দিল মেয়ের প্রতি রাগটা তার কমেনি।

তোহা বারান্দায় থাকা মোড়াটা তারেকুলের চেয়ারের পাশে এনে বসে পড়ল। তারেকুল রইল নি’র্বিক। তোহা তারেকুলকে শুনিয়ে বলল,
“জানো আব্বু? রেস্টুরেন্টে অচেনা ছেলেটাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলাম। অকারণে দেইনি। অবশ্যই কারণ ছিল। তাই বর বলেছিলাম। বরং বলেছিলাম বলে আমার সাথে ছেলেটা তুমুল ঝগড়া করল। ঝগড়ার সমাপ্তি টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। ভেবেছিলাম আর দেখা হবে না। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে দেখা হয়ে গেল।

তোহা তারেকুলের দিকে তাকালো। তারেকুলের মাঝে কোনো কৌতুহল দেখা যাচ্ছে না। সে আগের মতোই নি’র্বিক রইল। তা দেখে তোহা হতাশ হলো। নিজ মনে ভাবল,
“আব্বু আমার কথা শুনছে তো?

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাল ছাড়লে হবে না। তাই নতুন উদ্যমে আবারো বলতে শুরু করল,
“ভার্সিটির প্রথম দিন আমাকে বউ বলে ডেকে উঠল। উনাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলাম বলে। তারপর থেকে শুরু হলো ঝগড়া। কারনে-অকারনে ঝগড়া হতো। সেদিন যখন সুমনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাই তখনও ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যায়। দেখা হওয়া মাত্রই সে আমায় বউ বলে সম্বোধন করে। সুমন ও আমায় ভুল বুঝে বেরিয়ে যায়।

তোহা এবার খেয়াল করে দেখল তারেকুল নড়েচড়ে বসেছেন। ক’ন্ঠে গম্ভীরতা রেখেই তোহাকে প্রশ্ন করলেন,
“তার মানে ছেলেটার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই?

তোহা দুদিকে মাথা নাড়ালো। শীতল স্বরে বলল,
“আমার কোনো ছেলের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। সেই দিন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।

তারেকুল উঠে দাঁড়ালো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো তোহার সেদিনের অভিমানী মুখশ্রী, ছলছল চোখ জোড়া। তারেকুলের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। মেয়েটাকে অকারণেই সেদিন ধ’মকে কথা বলছিলেন। তারেকুল তোহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তোহা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরল। তারেকুল তোহাকে জড়িয়ে ধরে স্বস্নেহে বলে উঠল,
“আব্বু সরি মামনি।

তোহার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠল। শেষ পর্যন্ত আব্বুর রাগ ভেঙ্গেছে। তোহা মিষ্টি হেসে বলল,
“আমি তোমায় ভালোবাসি আব্বু।
__________________

তোহা খুশি মনে ভার্সিটিতে পা রাখলো। চোখ-মুখ দেখে যে কেউ নির্দ্বি’ধায় বলে দিতে পারবে আজকে তোহার মন ভালো। চোখ-মুখে যে খুশির ঝিলিক স্প’ষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অরিন তোহার এই খুশির কারণ ধরতে পারল না। কয়েকবার তোহার দিকে আড়চোখে তাকিয়েছে। এবার আর আড়চোখে তাকাল না। সরাসরি তোহার মুখের দিকে তাকাল। অরিনকে তাকাতে দেখে তোহা বলল,
“কিরে? কি দেখছিস?

অরিন তৎক্ষণাৎ তোহার প্রশ্নের উত্তর দিল না। ভ্রুঁ কুঁচকে তোহার এই খুশির কারণটা ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হলো না। অরিন ব্য’র্থ হয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
“তোকে যেন আজকে খুব খুশি খুশি লাগছে।

তোহা হেসে উঠল। হাসিটা যেন তার খুশিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিল। তোহা হাসি মুখে বলল,
“আমি তো খুশিই। তাইতো আমাকে দেখে খুশি খুশি লাগছে।

“তোর এই খুশির কারণটা কি জানতে পারি?

তোহা মাথা উপর নিচ করল। যার মানে অরিন জানতে পারে। তোহা মুখে বলল,
“আব্বুকে সব বলে দিয়েছি। সবকিছু শুনে আব্বুর রাগ একদম পানি হয়ে গেছে।

অরিন ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“তাই বলি, আজ তোকে এতো খুশি কেন লাগছে।

নাহিদ বাইকে বসে থেকে তোহা আর অরিনকে দেখল। তোহাকে দেখা মাত্রই রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল। নাহিদ চমকে তোহার দিকে তাকাল। স্বপ্নের মধ্যে তোহা লাল শাড়ি পড়ে থাকলেও আজকে তোহা লাল থ্রী পিস পড়েছে। নাহিদ দুচোখ ভরে দেখল। আচ্ছা? এখন যদি মেয়েটি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে স্বপ্নের মতো বলে ‘আমায় আপনার বউ বানাবেন ‘ তাহলে কেমন হবে?

নিজ মনে কথাটা ভেবেই নাহিদ চমকে উঠলো। নিজেই নিজেকে ধি’ক্কার জানিয়ে বলল,
“কি ভাবছি এই সব? আমার এই কি অবনতি হলো? না, না। এটা ঠিক না। যেখানে আমাদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক আমি কি-না সেখানে এইসব ভাবছি। ছিঃ ছিঃ।

নিজেকে এসব বলে ধি’ক্কার জানালেও অবাধ্য চোখ জোড়া তোহার মুখের গিয়ে স্থি’র হলো। নাহিদ চোখ সরালো না। চোখ সরানোর চেষ্টা ও করলো না। পলকহীন চোখে চেয়ে রইল তোহার দিকে।

হাঁটতে হাঁটতে তোহা খেয়াল করল তার অস্ব’স্তি হচ্ছে। কেউ যেন খুব গভীর ভাবে তাকে লক্ষ্য করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তোহা হাঁসফাঁস করতে লাগলো। এমন লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে?

তোহা আশেপাশে তাকাল। তখনই চোখ গেল বাইকে বসে থাকা নাহিদের উপর। নাহিদের দৃষ্টি এইদিকেই স্থি’র। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে নিজে নিজেকে বলল,
“অ’দ্ভুত! এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে?

তোহা এবার দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। নাহিদের চোখের সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না। তাইতো দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো। ক্লাসে গিয়ে স্ব’স্তির শ্বাস নিল। যাক এখন শান্তি লাগছে।

বেঞ্চে গিয়ে বসতেই রিয়া তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তখনই তোহার মনে পড়ল সেদিন রেস্টুরেন্টের কথা। সেদিন তো নাহিদের সাথে রিয়াই ছিল। তোহা দেখল রিয়া কেমন রাগী দৃষ্টিতে আছে। তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“দেখো ভাই তোমার নাহিদকে আমি নিয়ে যাব না। আমার দিকে এমন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাভ নেই।

রিয়ার মাঝে কোনো পরিবর্তন হলো না। আগের মতোই তাকিয়ে রইল। কেমন যেন হেঁয়ালি করে বলল,
“কে বলল তুমি নিয়ে যাবে না? যদি নিয়ে চলে যাও? তাই তো আগে থেকে সাবধান করছি।

তোহা হেসে উঠলো। হাসবেই তো। রিয়ার কথাটা তার কাছে বড্ড বেশি হাস্য’কর মনে হলো। হাসি থামিয়ে বলে উঠল,
“আমার উপর না হয় বিশ্বাস নেই। কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস নেই বুঝি? সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস না থাকলে সেই সম্পর্ক তো এমনি ভে’ঙ্গে যাবে।

রিয়ার মুখের রাগটা যেন মিলিয়ে গেল। কেমন ফ্যাকাশে দেখালো মুখশ্রী। তোহার কথায় পরিবর্তে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেল। তোহা, অরিন অবাক হলো। অরিন অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“অদ্ভুত তো!

ভার্সিটি ছুটি হলে তোহা, অরিন বেরিয়ে এলো। মাঠের মাঝখানে আসতেই নাহিদ সামনে এসে দাঁড়াল। তোহা চমকে তাকালো। তারপর মুখ ঘুরিয়ে পাশ কেটে চলে গেল। নাহিদ স্ত’ম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটা এভাবে এড়িয়ে চলে গেল? নাহিদ তোহাকে ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে লাগলো। আনমনেই ডেকে উঠল,
“তোহা।

তোহা দাঁড়িয়ে গেল। অরিনের দিকে তাকাল। অরিনও তোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তোহা ভাবলো নাহিদকে আবারো কথা বলতে মানা করবে। তখনই আবারো মনে হলো ‘কি দরকার মানা করার? সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করলেই তো হয় ‘। তোহা তাই করল। নাহিদের দিকে ফিরেও তাকাল না। সোজা চলে যেতে লাগল নিজ গন্তব্যে।

পেছন থেকে নাহিদ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা এতো অভিমানী কেন?

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নাহিদ। চোখ দুটো দিয়ে মহাকাশের চন্দ্র, নক্ষত্র দেখছে সে। নাহিদের রুমে দুই কাপ কফি হাতে প্রবেশ করল এক রমনী। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। নাহিদের রুমে প্রবেশ করেই ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। তারপরই মনে হলো নাহিদ বারান্দায় থাকতে পারে। সে বারান্দায় গেল। ডানহাতে থাকা কফির কাপটা নাহিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার কফি।

নাহিদ ঘুরে দাঁড়ালো। রিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া কফির কাপটা হাতে নিল। আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির কাপে চুমুক দিল। রিয়া নাহিদকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“তোমার বউয়ের কথা ভাবছো বুঝি?

নাহিদ আবারো রিয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আক্ষে’পের সুরে বলল,
“আর বউ। সে তো আমাকে স’হ্যই করতে পারে না।

নাহিদের কথায় রিয়া হেসে উঠল। কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠে বলল,
“এই দিকে আমি তোহাকে সাবধান করছি। যাতে তোমার প্রেমে না পড়ে।

নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“কেনো? এমন কেন করেছিস?

রিয়া কফির কাপে চুমুক দিয়ে বেশ আয়েশ করে বলল,
“রেস্টুরেন্টের ঘটনাটা তো তুমি বলেছিলে। কিন্তু ভার্সিটিতে গিয়ে যখন তুমি কাউকে বউ বলে ডেকেছিলে সেই কথাটা পাঁচ কান হতেই আমি শুনতে পেলাম। তখনই বুঝে ফেললাম এইটাই সেই রেস্টুরেন্টের মেয়েটা। তাই একটু বাজিয়ে দেখলাম মেয়েটা কেমন।

নাহিদ ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“তুই তো দেখছি আরেক কাহিনী করে রেখেছিস।

রিয়া মুচকি হেসে বলল,
“তোমার বউ কিন্তু জানে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। তুমি পা’ক্কা মিঙ্গেল।

নাহিদ রিয়ার দিকে তাকালো। হায় হায় করে বলে উঠলো,
“এখন আমার কি হবে? তুই তো আমার কাজটা আরো কঠিন করে দিয়েছিস।

তোহার সামনে রাগী, গ’ম্ভীর মুখ করে রাখা রিয়া হেসে উঠল। প্রাণ খোলা সেই হাসি। হাসি থামিয়ে বলল,
“কঠিন হয়েছে তো কি হয়েছে? কঠিন বাঁধা পেরুতে পারলেই তো আসল জিত। যখন প্রেমটা হয়ে যাবে তখন দেখবে পৃথিবীর সমস্ত সুখ আছে প্রেমে।

নাহিদ রিয়ার চুলটা হালকা টান টান মেরে বলল,
“খুব পাকা হয়ে গেছিস তাই না? কারো প্রেম-ট্রেমে পড়েছিস নাকি?

নাহিদের প্রশ্নে রিয়া থম মেরে গেল। হুট করে যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কিরে? বলতে সমস্যা হলে বলার দরকার নেই। তবে নির্ভয়ে বলতে পারিস।

রিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। নিজ মনেই বলল,
“আল্লাহ যদি সবাইকে সবার মন বুঝার ক্ষমতা দিত তাহলে তুমি কতো সহজেই আমার মনের কথা গুলো বুঝে ফেলতে।
___________________

তোহা সকালের নাস্তা না করেই তড়িগড়ি করে ভার্সিটিতে চলে যেতে চাইল। তখনই তারেকুল বলে উঠল,
“সকালের নাস্তা করে যাও তোহা। একদম অনিয়ম করবে না। আমি অনিয়ম পছন্দ করি না।

তোহা ঠোঁট উল্টে আব্বুর দিকে তাকালো। ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“আজকে চলে যাই না আব্বু? রাস্তায় কিছু খেয়ে নেব। নয়তো দেরী হয়ে যাবে।

তারেকুল তার হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে নিল। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“খুব একটা দেরী হবে বলে মনে হচ্ছে না। এদিকে এসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

তোহা আর আপত্তি করল না। আব্বুর হাতে খাওয়ার লোভে চেয়ারে বসে পড়ল। তারেকুল তোহাকে খাইয়ে দিল। খেতে খেতে তোহার চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল। আব্বু নামক মানুষটা এতো ভালোবাসে কেন? এতো যত্ন করে আগলে রাখে কেন?

তোহা খাওয়া শেষ হতেই তারেকুলকে প্রশ্ন করল,
“আচ্ছা আব্বু? সব আব্বুরা এতো ভালো হয় কেন?

তারেকুল হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“এই যে তোমার মতো এমন আদুরে একটা মা পেলে সব আব্বুরা তো ভালো হবেই।

তোহা হেসে উঠল। তারেকুলকে বিদায় জানিয়ে বলল,
“আমি যাচ্ছি আব্বু। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
_____________

নাহিদ তার ক্লাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরই ক্লাস শুরু হবে। তবে আজকে ভার্সিটিতে আসার পর একবার ও তোহা বা অরিনের দেখা পায়নি। মেয়েটা কি আজকে ভার্সিটিতে আসবে না? নাহিদের মনটা ছটফট করতে লাগলো। কেন আসবে না? প্রতিদিনই তো আসে। তবে আজকে কি হলো? কোনো অসুখ হলো না তো?

নাহিদ দুচোখ বন্ধ করল। এতোটা অ’স্থির কেন লাগছে? কেন এতো ছটফটানি শুরু হচ্ছে মেয়েটার জন্য? কয়েকদিন আগেই তো পরিচয় হলো। তবে কিসের এতো অস্থি’রতা?

নাহিদ চোখ খুলে ফেলল। তখনই ঘন্টা বাজলো। রনি নাহিদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“কিরে? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ক্লাসে চল।

নাহিদ রনির দিকে তাকাল। অ’দ্ভুত স্বরে বলে উঠল,
“আমি ফেঁসে যাচ্ছি মামা। খুব বাজে ভাবে ফেঁসে যাচ্ছি।

রনি তার পাশে থাকা ফাহিমের দিকে তাকাল। নাহিদের কথার অর্থ বুঝতে পারছে না। ফাহিম অবাক ক’ন্ঠে প্রশ্ন করল,
“ফেঁসে যাচ্ছিস? কীভাবে ফেঁসে যাচ্ছিস? আমরা বুঝতে পারছি না। একটু ক্লিয়ার করে বল তো?

নাহিদের চোখ গেল ভার্সিটির গেইটের দিকে। তোহা, অরিন এসেছে। দুজনই দ্রুত পায়ে হাঁটছে। নাহিদের মুখে হাসি ফুটল। তোহার দিকে আঙুল তাক করে বলল,
“এই মেয়েটার প্রেমে ফেঁসে যাচ্ছি।

ফাহিম, রনি একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। তারপর দুজনই একসাথে হেসে উঠল। রনি বলল,
“একটু বুঝিয়ে বলবি তো। আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।

নাহিদ কোনো জবাব দিল না। তার চোখ জোড়া মাঠের মধ্যে স্থি’র। ফাহিম নাহিদকে উদ্দেশ্য বলল,
“প্রেমে ফেঁসে গেলে জানিয়ে দে। নয়তো দেখবি পাখি উড়ে গিয়ে অন্য ডালে বাসা বাঁধবে।

তোহাকে আর দেখা যাচ্ছে না। নাহিদ ফাহিমের দিকে ঘুরে বুকে দুহাত গুঁজে বলল,
“কি করবো বল? পাখিটা যে পোষ মানে না। বড্ড বেশি জেদী।

রনি মুচকি হেসে বলল,
“তবে যাই বলিস। তোহাকে কিন্তু তোর সাথে দারুণ মানাবে। দুজন যখন ঝগড়া করবি তুই একটা কথা বললে তোকে দশটা কথা শুনিয়ে দিবে।

নাহিদ মুচকি হাসল। মেয়েটা বেশ ঝগড়াটে। দশটা কথা না শুনিয়ে তো ছাড়বে না। কিন্তু এই ঝগড়াটে মেয়েটা কীভাবে শয়নে-স্বপনে জায়গা করে নিল? কি অ’দ্ভুত! আমি শেষমেষ প্রেমে পড়ে গেলাম।

নাহিদ একা একা হেসে উঠল। কেমন যেন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়? নাহিদকে হাসতে দেখে ফাহিম বলে উঠল,
“প্রেমে পড়ে ছেলেটা পাগলই হয়ে গেল।
______________

ছুটির পর তোহা ক্লাস থেকে বেরুতেই নাহিদের দেখা পেল। নাহিদ সরাসরি তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। তোহা পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়ায়। তোহা বি’রক্ত হয়ে বলে,
“সমস্যা কি আপনার?

নাহিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“আমার সমস্যা? কোথায়? আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার সমস্যা কি? গতকাল যে ডাকলাম শুনতে পাওনি? নাকি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছো?

তোহা বুকে দুহাত ভাঁজ করে কড়া গলায় বলল,
“ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছি। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।

নাহিদ এবার হেসে উঠল। তোহার দিকে তাকিয়ে শীতল স্বরে বলল,
“এখন থেকে কথা তো তোমায় বলতেই হবে। আমার সাথে কথা বলা বাধ্যতামূলক।

তোহা ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
“বাধ্যতামূলক? আমি কথা বলবো না। কি করবেন আপনি?

নাহিদ আশেপাশে তাকাল। সকলেই চলে গেছে। কেবল তোহা, অরিন আর নাহিদই আছে। নাহিদ মুচকি হেসে তোহার দিকে এগিয়ে গেল। আচমকা নাহিদকে এগিয়ে আসতে দেখে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকালো। যখন দেখল নাহিদ খুব কাছে চলে আসছে তখন সে পিছোতে শুরু করল। পিছোতে পিছোতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।

নাহিদ ডান হাতটা দেয়ালে ঠেকিয়ে তোহার মুখের উপর ঝুঁকে গেল। আচমকা নাহিদ এতোটা কাছে আসায় তোহার হৃদস্প’ন্দন বাড়তে লাগলো। তোহা বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। গলা শুকিয়ে আসছে। নাহিদ তোহার চোখের দিকে তাকিয়ে নেশা’লো কন্ঠে বলল,
“কিছু করে দেখাবো?

তোহা কেঁপে উঠলো। কি করতে চাইছে ছেলেটা? তোহার হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসছে। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। ঠিক তখনই নাহিদ সরে গেল। জোরে হেসে উঠে বলল,
“এইটুকুতেই এই অবস্থা? কিছু করলে না জানি কি করতে। আমার সাথে কথা বলা কিন্তু বাধ্যতামূলক। নাহলে কি করতে পারি দেখলে তো।

নাহিদ আর দাঁড়াল না। শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। পেছন থেকে তোহা অবাক চোখে চেয়ে রইল। কি হয়ে গেল তার সাথে?

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-১০

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ছুটির ঘন্টা বাজলো। তোহা, অরিন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। মাঠের মাঝখানে আসতেই নাহিদ দৌড়ে তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। দৌড়ে আসার কারণে হাঁপাতে লাগলো। নাহিদ সামনে এসে দাঁড়ায় তোহা মুখ ঘুরিয়ে নিল। নাহিদকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল। কিন্তু নাহিদ নাছোড়’বান্দা। আবারো তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। শীতল স্বরে বলল,
“সরি।

তোহা নাহিদের কথাটা শুনল। কিন্তু কোনো প্রতি’ক্রিয়া দেখাল না। আগের ন্যায় কঠোর রইল। তোহার এমন নি’র্বিক আচরণ দেখে নাহিদ আবারো বলল,
“দেখো আমি জানতাম না ছেলেটার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ছেলেটা তোমার বয়ফ্রেন্ড। তাই একটু দুষ্টুমি করছিলাম। কিন্তু এমন যে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

তোহা এবারো নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। মুখে কোনো জবাব দিল না। তা দেখে নাহিদের ভেতরটা জ্ব’লে উঠল। নাহিদ করুণ স্বরে বলল,
“প্লিজ কিছু একটা বলো। এভাবে চুপ থেকো না।

তোহা নাহিদের দিকে তাকাল। হাত দুটো বুকে ভাঁজ করা। কড়া গলায় বলল,
হা”কি বলবো আপনাকে? আপনাকে কিছু বলে আমি নতুন করে কোনো ঝামেলা করতে চাই না। এমনি আপনার জন্য আমার আর আমার আব্বুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যা কোনো কালেই হয়নি।

তোহার কথা শুনে নাহিদ স্ত’ব্ধ হয়ে গেল। নাহিদ বুঝতে পারছে না সে কি করে তোহা আর তোহার আব্বুর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করল। তাই অবাক কন্ঠে বলল,
“মানে? আমি তোমার আর তোমার আব্বুর মাঝে কীভাবে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করলাম?

তোহা নাহিদের কথায় ভ্রুঁ উঁচিয়ে বি’দ্রুপ করে বলল,
“ওহ এখন বুঝতে পারছেন না? এখন তো আপনি এমন ভান করছেন যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেন না।

নাহিদ তী’ক্ষ্ণ কথার ভানে ক্রু’দ্ধ হলো। মেয়েটা কি একটু ও ভালো করে কথা বলতে পারে না? নাহিদ তার চোখ দুটো ব’ন্ধ করল। নিজের রাগটাকে দমিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরম সুরে বলল,
“দেখো তোমার আব্বুকে আমি চিনি না। উনার সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। এখন আমি কীভাবে তোমার আর আব্বুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করবো বলো?

নাহিদের নরম সুরে বলা কথাটাতে ও তোহার কড়া দৃষ্টি শীতল হলো না। তোহা কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়েই জবাব দিল,
“আপনি যে ওই দিন রেস্টুরেন্টে আমাকে বউ বলে সম্বোধন করলেন কথাটা কি আমার আব্বুর কানে যায়নি? আপনি তো দেখেছিলেন আমার সাথে একটা মানুষ আছে। তারপরও কেন বললেন?

“তোমাকে তো বললাম আমি ভেবেছিলাম ছেলেটা তোমার বয়ফ্রেন্ড। তাই দুষ্টুমি করছিলাম।

তোহা নাহিদের একটু কাছে গেল। গলার স্বরটা নিচু করেই রাগী কন্ঠে বলল,
“আপনি কেন দুষ্টুমি করবেন? কে আপনি? আপনার সাথে আমার দুষ্টুমির কোনো সম্পর্ক আছে? আপনি আমার কোনো আত্মীয়? আমার মাঝে রসিকতা করার অধিকার তো আমি আপনাকে দেইনি। তাহলে কেন এটা করলেন?

নাহিদ জবাব দেওয়ার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না। চুপ করে রইল। একবার মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে হলো,
“তুমিও তো রেস্টুরেন্টে অচেনা, অজানা আমাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলে। আমাকে বর বলার অধিকার তো আমি তোমাকে দেইনি। তাহলে কেন আমাকে বর বলে পরিচয় দিলে?

নাহিদের কথাগুলো বলা হলো না। নিজের মাঝেই মনের কথা গুলো চেপে রাখলো। তখনই তোহা বলে উঠল,
“উত্তর নেই তো আপনার কাছে? দেখুন আপনি আমার কেউ নন। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সেই হিসেবে আপনার সাথে আমার কথা নাহলে ও আহামরি কিছু হবে না। আপনি এবার আপনার মতো থাকুন। আমি আমার মতো থাকছি।

তোহার এতগুলো কথার মাঝে কেবল “আপনি আমার কেউ নন” কথাটা নাহিদের কানে বাজতে লাগলো। বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠলো। হুট করে মনে হলো কেউ যেন তাকে একা করে চলে যাচ্ছে।

নাহিদ হত’ভম্ব, হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তোহা তখন অরিনকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। নাহিদের চেতনা ফিরতেই দেখল ওরা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। নাহিদ তখন ডেকে উঠল,
“এ….।

নাহিদের আর ডেকে উঠা হলো না। কী বলে ডাকবে সে? বউ? কিন্তু বউ বলে ডাকলে যে মেয়েটা আরো রেগে যাবে। মেয়েটার নাম যেন কী? কী আ’শ্চর্য! নাহিদ মনে করতে পারল না। হয়তো দুই-এক বার শুনেছে কিন্তু কখনো নাম ধরে ডাকা হয়নি।

নাহিদ বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হলো। নিজেই নিজেকে অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আমি ওর নামটাই জানি না?

নাহিদ নিজ মনে প্রশ্নটা করেই দৌড়ে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিঙ্গেস করল,
“এই তোমার নামটা যেন কি?

নাহিদের কথায় তোহা, অরিন বিস্ফো’রিত নয়নে তাকাল। কী শুনছে ওরা? তোহা হতবাক হলো। ছেলেটা আমার নাম জানে না? তোহার তখন মনে হলো নাহিদ কখনো তাকে নাম ধরে ডাকেনি। সবসময় বউ বলেই ডেকেছে। তোহা অবাক হলেও তা প্রকাশ করল না।

অরিন নাহিদের কথা শুনে অবাক হয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহার মুখ দেখে মনে হলো না তোহা অবাক হয়েছে। বরং স্বাভাবিকই লাগছে তার মুখভঙ্গি। অরিন নাহিদের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
“আপনি ওর নাম জানেন না? ওর নাম তো…!

অরিন কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই তোহা অরিনের হাতটা চেপে ধরে থামিয়ে দিল। নাহিদের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল,
“নামটা যখন জানেন না তখন অজানাই থাক। আমার নাম জানার কোনো প্রয়োজন নেই আপনার।

নাহিদ তোহার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। হুট করেই তোহা যেন কঠিন হয়ে গেল। কাঠি’ণ্যতা তাকে যেন আষ্টে’পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। নাহিদ নিজ মনে বলল,
“এই কা’ঠিন্যতায় ঘেরা মেয়েটাকে তো আমি দেখতে চাইনি। মেয়েটা এক দিনেই এমন কঠিন হয়ে গেল? এতোটা কঠিন?

নাহিদ তোহার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দিল না। নি’শ্চুপে চলে গেল। নাহিদ চলে যেতেই অরিন অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“তোহা তোর মনে হয় নাহিদ ভাইয়া সত্যি তোর নামটা জানে না?

অরিনের প্রশ্নে তোহার মাঝে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেল না। তোহা নি’র্লিপ্ত ভ’ঙ্গিতে বলল,
“কি জানি? কখনো নাম ধরে ডাকেনি।

তোহার কথায় অরিনের মুখে অবাকতার ছাপ আরেকটু স্প’ষ্ট হলো। আবারো অবাক কন্ঠে বলল,
“কখনো নাম ধরে ডাকেনি?

অরিনের প্রশ্নে তোহা বেশ বি’রক্ত হলো। মূলত নাহিদকে নিয়ে কথা বলায় এই বি’রক্তি। কিছুটা গলা উঁচু করে বলল,
“বললাম তো ডাকেনি। এবার চুপ কর তো। উনার কথা আর বলবি না।

অরিন চুপ করে গেল। নাহিদকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইল না। কিন্তু মুখে অবাকতার রেশ স্প’ষ্ট। অরিনের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না নাহিদ তোহার নাম জানে না। এতো দিন এভাবে ঝগড়া করে হুট করে এসে জিজ্ঞেস করছে ‘এই তোমার নামটা যেন কি ‘ বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্য’জনক।

অরিনের মতো তোহাও অবাক হলো। তবে সেটা অরিনের মতো সেটা প্রকাশ পেল না। নিজের মাঝেই চেপে রাখল। মুখের মধ্যে কাঠি’ণ্যতা ফুটিয়ে রাখল।

নাহিদ ফাহিম রনির কাছে গেল। ওদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“ওর নামটা কি?

নাহিদের কথাটার অর্থ ফাহিম, রনির কাছে অ’স্পষ্ট। একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। কেউই নাহিদ কার কথা বলছে বুঝতে পারল না। দুজন একই সাথে বলে উঠলো,
“ওর মানে?

ওদের কথায় নাহিদ বিপাকে পড়ল। এখন কীভাবে বুঝাবে? নাহিদের বি’রক্ত লাগছে। বিরক্তি’কর কন্ঠে বলল,
“আরে ওর মানে বুঝতে পারছিস না? ওর মানে ও। ওর নামটা কি?

নাহিদের কথায় দুজন আরো বি’রক্ত হলো। রনি বি’রক্ত হয়ে বলল,
“তোর ও টা কে? তুই ও ও বললে আমরা বুঝবো কীভাবে?

নাহিদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল। তখনই মনে হলো এখানে তোহার উপস্থিতি নেই। এখন তো বউ বলা যেতেই পারে। হাসি মুখে বলল,
“বউয়ের নামটা কি?

নাহিদের কথায় ফাহিম, রনি অবাক হলো। দুজনের চোখই বি’স্ময় উপচে পড়ছে। ফাহিম অবাক কন্ঠে বলল,
“কি বলছিস তুই ওর নাম জানিস না? নামটা পর্যন্ত না জেনে এতদিন ঝগড়া করে গেছিস? এটাও সম্ভব?

নাহিদ মাথা নাড়ালো। মুখে বলল,
“নাম শুনেছি। এখন মনে পড়ছে না। এখন তোরা ওর না বলে নামটা কি বল।

রনি বলে উঠল,
“ওর নাম তোহা।

নাহিদ ভ্রুঁ নাঁচালো। আনমনেই বলে উঠল,
“তোহা।
_____________

লাল টকটকে শাড়ি পড়া মেয়েটা এগিয়ে আসছে। হাতে একটা লাল গোলাপ। মুখটা আবছা আলোয় স্প’ষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকালো। মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়াতেই নাহিদ চমকে উঠলো। একি তোহা। তোহা নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মিষ্টি হাসি বিরাজ করছে। নাহিদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আমায় আপনার বউ বানাবেন?

নাহিদ ধরফরিয়ে উঠে বসল। এতক্ষণ সে তাহলে স্বপ্ন দেখেছিল? হ্যাঁ স্বপ্নই তো। নাহিদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সে তার বেড রুমে। নাহিদ বিছানায় পাশের টেবিলে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢাললো। এক চুমুকে পানিটা শেষ করল। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে নিজে নিজেই বলল,
“মেয়েটা আজকাল স্বপ্নে ও হানা দিচ্ছে।

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-০৯

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৯
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েই তারেকুলের সম্মুখীন হলো। বুকের ভেতরের তোলপাড় বেড়ে গেল। তারেকুলের চোখ-মুখ শক্ত দেখাচ্ছে। তোহা আশে পাশে তাকাল। সুমনকে দেখা যায় কি-না। কিন্তু না। সুমন এখানে নেই। তাহলে কি সুমন আব্বুকে সব বলে দিয়ে চলে গেছে? তাছাড়া আব্বুই বা এখানে এলো কি করে? আব্বু তো চলে গিয়েছিল। তোহা প্রশ্ন গুলো নিজের মনে থামা চাপা দিয়ে করুণ স্ব’রে ডাকল,
“আব্বু..।

তারেকুল তোহার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। মুখ ভ’ঙ্গি শক্ত রেখেই গম্ভীর গলায় বলল,
“ছেলেটা কে?

তোহার আর কিছু বোঝার বাকি রইল না। তার মানে সুমন সব বলে দিয়েছে। তোহার বুকটা কেঁপে উঠছে। আব্বুও কি তাকে সুমনের মতোই ভুল বুঝবে? তোহা সব বিস্তারিত বলতে মুখ খুলল,
“আব্বু সুমন যা…!

তারেকুল তোহার কথাটা সম্পূর্ণ হতে দিল না। কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুটা ধ’মক দিয়ে বলল,
“তোমার থেকে কোনো কথা আমি শুনতে চাইনি। ছেলেটা কে জানতে চেয়েছি।

তোহার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। আব্বু তাকে ধ’মক দিয়ে কথা বলল। এমনটা আগে কখনো হয়েছিল? উহু। তোহার মনে পড়ছে না। তারেকুল কখনো তাকে ধ’মক দিয়ে কথা বলে না। সবসময় স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। ভুল করলে ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার একই ভুল করতে মানা করেন।

তবে আজকের তারেকুলের মাঝে এসব কোনো কিছুর লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। এ যেন অন্য এক তারেকুল। তোহাকে নি’শ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারেকুল আবারো গম্ভীর গলায় বলল,
“তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তো।

তোহা শুকনো ঢোক গিলল। রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। তোহার সাথে সাথে তারেকুল ও গেল। তোহা দরজা থেকেই ওদের বরাবর চার নম্বর টেবিলে নাহিদকে দেখতে পেল। নাহিদের মুখোমুখি রিয়া বসে আছে। তোহা আঙুল উঠিয়ে নাহিদের দিকে তাক করে বলল,
“ওই যে ওই ছেলেটা।

তারেকুল কিছুক্ষণ তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। তোহা তারেকুলের পিছু পিছু গেল। তারেকুলের হাব-ভাব তোহা বুঝতে পারছে না। এতদিনের চেনা আব্বু আজ বড় অচেনা ঢেকছে।

তারেকুল গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল। তোহা ধীর পায়ে গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল। গাড়িতে উঠার কোনো প্রয়াস তার মাঝে দেখা গেল না। কিছুক্ষণ এভাবেই চলে গেল। তারেকুল এবার বলে উঠল,
“কি হলো? গাড়িতে উঠছো না কেন? নাকি ওই ছেলেটা গিয়ে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে?

তারেকুলের তী’ক্ষ্ণ কথার তীর তোহাকে এফোড়ওফোড় করে দিল। তোহার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। হুট করেই আব্বুর প্রতি বড্ড অভিমান জমল। আব্বু কেন তার কথা না শুনে আরেকজনের কথা বিশ্বাস করল? সে কি আব্বুর কাছে এতোটাই অবহেলার পাত্রী হয়ে গেল?

তোহা ভীষণ অভিমান নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। তারেকুল গাড়ি ছাড়ল। তোহার চোখে পানি চিকচিক করে উঠল। এক্ষুনি যেন গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি ঝড়ে পড়বে। কিন্তু তা হলো না। তোহা নিজেকে সামলে নিল। আব্বুর-ই বা দোষ কোথায়? সে তো না জেনেই রাগ করে আছে। কিন্তু একবার অন্তত তোহার কথাটা শোনার উচিত ছিল।

তোহা নিশ্চুপ হয়ে সারা রাস্তা পাড় করল। বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই তোহা গাড়ি থেকে নেমে গেল। বাসার ভিতরে যাওয়ার পর তারেকুল বলে উঠল,
“আমার মান-সম্মান এভাবে ধূলোয় মিশানোর জন্য তোমাকে এতো বড় করেছিলাম?

তোহা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আব্বু তাকে এটা বলল? তোহার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শব্দ গুলো যেন বিদ্রোহ শুরু করেছে। তারেকুল আবারো গম্ভীর গলায় বলল,
“তোমাকে বারবার জিঙ্গেস করেছিলাম তোমার পছন্দের কেউ আছে কি-না। তুমি আমাকে বললে আমি কি তোমাকে মেরে ফেলতাম? তোমার কোন ইচ্ছেটা আমি অপূর্ন রেখেছি? আজকে যাওয়ার সময় ও তো জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার পছন্দের কেউ আছে কি-না। জিঙ্গেস করিনি?

তোহা তারেকুলের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তারেকুলের ভুলটা ধরিয়ে দিতে বলল,
“আব্বু তুমি আমায় ভুল বুঝ…..

তারেকুল তোহাকে ধ’মক দিয়ে বলল,
“তোমাকে যেই প্রশ্ন জিঙ্গেস করেছি সেই প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি অন্য কিছু শুনতে চাচ্ছি না।

তোহা মাথা নিচু করে ফেলল। নিচু স্বরে সরাসরি জবাব দিল,
“হুম। জিঙ্গেস করেছিলে।

“তাহলে আমাকে বললে না কেন? কেন আমাকে সুমনের মুখ থেকে শুনতে হলো। ওইটুকু ছেলের কাছে আমার সম্মান’হানি করিয়ে খুব ভালো লাগছে না?

তোহা মাথা নিচু করে রইল। কোনো জবাব দিল না। নি’শ্চুপে দাঁড়িয়ে রইল। তারেকুল তোহাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেলেন নিজের রুমে। তারেকুল যেতেই তোহার আম্মু এসে দাঁড়াল। উ’দ্বিগ্ন হয়ে শুধাল,
“কি হয়েছে তোহা? তোর আব্বু তোর সাথে এমন ব্যবহার করল কেন?

তোহা কোনো জবাব দিল না। ধীর পায়ে হেঁটে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। পেছন থেকে তোহার আম্মু অবুঝ চোখে চেয়ে রইল। কি হয়েছে আজকে? তোহা কোনো জবাব দিল না কেন?
________
রাতের বেলা তোহা বি’ষন্ন মনে রুমে শুয়ে ছিল। তখনই তার ফোনটা বেজে উঠল। তোহা এতটা তাড়াহুড়ো করল না। সে জানে ফোনটা কে করেছে। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল। তারপর আবারো আগের ন্যায় বেজে উঠল। তোহা রয়ে সয়ে কলটা রিসিভ করল। তখনই ওপাশ থেকে উ’দ্বিগ্ন কন্ঠে অরিন বলে উঠল,
“তোহা তোর বিয়ের কি হলো?

তোহা মনমরা ক’ন্ঠে জবাব দিল,
“বিয়ে ভে’স্তে গেছে।

তোহার জবাবে অরিন খুশি হয়ে গেল। কিন্তু তোহার মনমরা ক’ন্ঠ শুনে তার ভ্রঁ কুঁচকে এলো। তোহাকে পরিহাস করে বলল,
“বিয়ে ভে’স্তে গেছে বলে কি মনমরা হয়ে অনশন শুরু করছিস নাকি?

অরিনের পরিহাস বুঝতে পেরে ও তোহা নির্বি’কার রইল। স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিল,
“না। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আব্বু, সুমন আমাকে ভুল বুঝেছে।

তোহার কথার অর্থ অরিন বুঝতে পারল না। অবুঝ কন্ঠে শুধাল,
“কিসের ভুল বোঝাবুঝি? কীভাবে হলো?

অরিন প্রশ্নটা করার সাথে সাথে তোহার মুখের সামনে নাহিদদের চেহারাটা ভেসে উঠলো। তোহার নাহিদের উপর রাগটা চওড়া হলো। এক আকাশ সমান বির’ক্তি নিয়ে বলল,
“সবটা হয়েছে ওই নাহিদের জন্য।

নাহিদের কথা বলায় অরিন অবাক হলো। অবাক কন্ঠে শুধাল,
“নাহিদ ভাইয়ার জন্য? নাহিদ ভাইয়া তোদের মাঝখানে এলো কোথা থেকে? কি করেছে নাহিদ ভাইয়া?

তোহা অরিনকে রেস্টুরেন্টে ঘটে যাওয়া সবটা ঘটনা বলল। সবটা শুনে অরিন বি’স্মিত হলো। সাথে খুশিও হলো। তোহাকে বলল,
“যাই বলিস, নাহিদ ভাইয়া ছিল বলেই আজকে বিয়েটা ভে’ঙ্গে গেছে। নাহলে তোর বিয়েটা হয়েই যেত। তখন তোর ও আমাকে একা করে স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়া লাগতো।

অরিনের কথায় তোহা বি’রক্ত হলো। নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“তুই এখনো নাহিদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস। কেন? আমি কি বিয়েটা ভা’ঙ্গে দিতে পারতাম না? আব্বুকে বললে কি আব্বু আমার কথা শুনতো না? মাঝ খান থেকে ওই নাহিদ এসে আমার আর আব্বুর মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিল।

অরিন তোহার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
“আঙ্কেল তোকে খুব বকেছে না?

তোহা নি’ষ্প্রাণ ক’ন্ঠে জবাব দিল,
“হুম।

“আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আমি এখন রাখি কেমন?

তোহা জবাব দিল না। অরিন কল কেটে দিল। তোহা আগের মতো শুয়ে রইল। তারেকুলের চেহারাটা তোহার মুখের সামনে ভেসে উঠল। আব্বু তাকে এভাবে ভুল বুঝতে পারল? তারপর নাহিদের চেহারাটা ভেসে উঠল। ওদের বাবা মেয়ের ভুল বুঝাবুঝির মূলে রয়েছে নাহিদ। হ্যাঁ। নাহিদই তো সবটা করল।
___________

ভার্সিটিতে পা রেখেই তোহা এদিক ওদিক তাকাল। আজ মন’স্থির করে নিয়েছে নাহিদের সাথে দেখা হলে কথা বলা তো দূরের কথা নাহিদের মুখ দর্শন করার ইচ্ছে ও তোহার নেই। আশে পাশে তাকিয়ে দেখল নাহিদকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তোহা স্ব’স্তির শ্বাস ফেলে অরিনকে বলল,
“নাহিদকে আসতে দেখলে আমাকে বলবি।

অরিন মাথা নাড়ল। শীতল স্বরে মুখে বলল,
“আচ্ছা।

তোহার গতকালের ঘৃ’নিত দৃষ্টি নাহিদকে শান্তি দিচ্ছে না। বারংবার হৃদয়টা ক্ষ’ত-বি’ক্ষত করে তুলছে। নাহিদ তোহার রাগ, বি’রক্ত মাখা চাহনি দেখতে ভালোবাসে। কিন্তু ঘৃ’না? উহু সে তো তোহার ঘৃ’না ভরা দৃষ্টিতে দেখতে চায়নি। কিন্তু তাকে তোহার ঘৃ’না ভরা দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাকে কী তোহা ঘৃ’না করে?

কেন্টিন থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে আসতেই তোহাকে মাঠের মাঝখান দিয়ে যেতে দেখল নাহিদ। মনটা আবারো তোহাকে বলতে উদগ্রীব হয়ে আছে। নাহিদ দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে লাগলো।

অরিন নাহিদকে আসতে দেখেই তোহাকে বলল,
“তোহা নাহিদ ভাইয়া এইদিকে আসছে।

অরিনের কথা শুনে তোহা অরিনের হাতটা ধরল। যতটা দ্রুত হাঁটা যায় ততটা দ্রুত হাঁটতে লাগলো। নাহিদ তাড়াতাড়ি হেঁটেও তোহাকে ধরতে পারল না। নাহিদ আসার আগেই তোহা ক্লাসে চলে গেছে। এখন কিছু করার নেই। কেবল ছুটি দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া।

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-০৮

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তোহা আয়নার সামনে এসে চুল আঁচড়াচ্ছে। তখনই দরজার টোকা পড়ল। তোহার আম্মু বাহির থেকে বলে উঠল,
“তোহা তোর হয়েছে? তাড়াতাড়ি আয়। তোর আব্বু তোর জন্য ওয়েট করছে।

তোহা চুল বাঁধতে বাঁধতে জবাব দিল,
“এই তো আম্মু আসছি। পাঁচ মিনিট লাগবে। তুমি যাও আমি চলে আসছি।

বাহির থেকে তোহার মায়ের কন্ঠ আর পাওয়া গেল না। হয়তো চলে গেছেন। তোহা চুল বাঁধা শেষ করে ফোনটা হাতে নিল। অরিনকে একটা কল দেওয়া দরকার। তোহা কল দিল। রিং হওয়ার কয়েক সেকেন্ড পরই অরিন কল রিসিভ করল। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“কল দিয়ে বি’রক্ত করছিস কেন? আমার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘাটালে হয় না? কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।

“তুই তোর ঘুম নিয়ে পড়ে থাক। এইদিকে আমি পাত্রের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

অরিন আবারো ঘুম ঘুম ক’ন্ঠে বলল ‘আচ্ছা’। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পর কথাটা বোধগম্য হতেই অরিনের চোখের ঘুম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসল। অবাক হয়ে শুধাল,
“এই কি বলছিস তুই? পাত্র? কিসের পাত্র? কার পাত্র? তুই কেন পাত্রের সাথে দেখা করতে যাবি?

অরিনের পরপর করা এতো গুলো প্রশ্নে তোহা হতাশ হলো। ঘুম থেকে উঠে মেয়েটা সব ভুলে গেছে। এই বিকেল পর্যন্ত কেউ ঘুমায়? তোহা মিহি স্বরে বলল,
“আব্বুর বন্ধুর ছেলের কথা ভুলে গেছিস?

অরিনের তখনই মনে হলো তাদের এইচএসসি পরীক্ষার আগেই তোহার আব্বুর বন্ধু তোহাকে তার পুত্রবধূ করে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু তোহা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল পরীক্ষার আগে সে বিয়ে করবে না। অরিন বি’ষন্ন গলায় বলল,
“ওই ছেলের জন্য কি দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে নেই? তোকেই কেন বিয়ে করতে হবে?

তোহা ঠোঁট উল্টে বলল,
“কি জানি? আমি তো ভেবেছিলাম এতদিনে হয়তো বিয়ে করে বিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ কালকে আব্বু এসে বলল ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চায়।

অরিন আবারো বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“শোন তুই ছেলেটার সাথে কথা বলে এসে আংকেলকে বলবি দীর্ঘ নয় মাসে ছেলেটার বেশ বয়স বেড়ে গেছে। তুই এই বৃদ্ধ ছেলেকে বিয়ে করবি না।

অরিনের বাচ্চামো কথায় তোহা জোরে জোরে হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“নয় মাসে কোনো যুবক ছেলে বৃদ্ধ হয়ে যায়? কি বলছিস তুই?

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ওহ! হয়না বুঝি? না হলে নেই। আমি কিছু জানিনা। তুই এই বিয়েটা করবি না। তুই বিয়ে করে চলে গেলে আমি ভার্সিটিতে যাব কার সাথে? আমার মনের কথাগুলো কাকে বলবো?

তোহা জবাব দিতে গেলে আবারো দরজায় টোকা পড়ে। তোহার মা বলে,
“রেডি হতে কতক্ষন লাগবে তোহা? তোর আব্বু অপেক্ষা করছে তো।

তোহা অরিনকে ছোট করে বলল,
“আম্মু ডাকছে। এখন রাখছি।

তোহা দরজা খুলে বের হলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
“এই তো আম্মু হয়ে গেছে।

তোহা তার আব্বুর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসল। এখন তাদের গন্তব্য রেস্টুরেন্টে। গাড়ি চালাতে চালাতে তোহা আব্বু তারেকুল বলে উঠল,
“শোনো মামনি। সুমন তোমার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করেছে। তোমাকে ওর পছন্দ হয়েছে বলেই এতোদিন অপেক্ষা করেছে। তোমাকে আমরা আগেই বলেছি তোমার কাউকে পছন্দ আছে কি-না। আমি চাই না আমার সম্মানহানি হোক। তাই আবারো বলছি, তোমার কোনো পছন্দের মানুষ আছে?

তোহা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে তারেকুলের দিকে তাকাল। মিষ্টি হেসে বলল,
“তোমার আত্মসম্মান কতোখানি প্রখর আমি জানি আব্বু। আমি কখনো আমার কারনে তোমার সম্মানহানি হতে দেব না। আমার পছন্দের কেউ নেই।

তোহার কথায় তারেকুল সন্তু’ষ্ট হলো খুশি হলো। চোখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। তোহা বাবার খুশি মুখটা খানিকটা গর্ব বোধ করল। তারেকুল তার মেয়েকে নিয়ে খুব প্রস’ন্ন। মেয়েটা বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান কি-না।

রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামল তারেকুল। তোহা গাড়ি থেকে নেমে আব্বুর দিকে তাকাল। তারেকুল গাড়ির ভেতর থেকে বলল,
“আমি যাই মামনি।

তোহা মাথা নাড়ালো। তারেকুল গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল। তোহা হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাল। বিকেল পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট। সুমন বলেছিল পাঁচটায় আসবে। ইশ! পনেরো মিনিট দেরি হয়ে গেল। তোহা বি’ব্রত বোধ করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গেল।

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দুইটা টেবিল পড়েই সুমনকে দেখতে পেল। আগে দেখা হয়েছে বিধায় চিনতে অসুবিধা হলো না। তোহা টেবিলের সামনে গেল। সুমনের দৃষ্টি মোবাইলের দিকে। তোহা সুমনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গলা খাঁকারি দিল। সুমন চোখ তুলে তাকাল। তোহাকে ডেকে হেসে বলল,
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।

তোহা বসল। প্রচুর অস্ব’স্তি লাগছে। সুমন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাক্কা আঠারো মিনিট দেরি। অপেক্ষা করাতে ভালো লাগে বুঝি?

তোহা ল’জ্জিত বোধ করল। খানিকটা হেসে বলল,
“না, না। অপেক্ষা করাতে ভালো কেন লাগবে? আসলে অরিনের সাথে কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে গিয়েছে।

সুমন ভ্রুঁ কুঁচকালো। কয়েক সেকেন্ড পরই ভ্রুঁ সোজা করে বলল,
“ওহ আচ্ছা। তোমার ফ্রেন্ড অরিন?

তোহা মাথা নাড়ল। হুট করেই দরজার দিকে নজর গেল। নাহিদ রেস্টুরেন্টে ঢুকছে। তোহা চমকে গেল। একটু তাকিয়ে থাকতেই অবাক হলো সে। নাহিদের পেছনে রিয়া আসছে। তার মানে কি নাহিদ আর রিয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?

তোহার হুট করে মনে হলো এখানে সুমন আছে। সুমনের সামনে নাহিদ যদি তাকে বউ বলে ডাকে তাহলে কি হবে? সুমন তো ভুল বুঝবে। তোহা মুখটা নিচু করে ফেলল। হাত দুটো মুখের সামনে এনে মুখ আড়ালের প্রচেষ্টা করতে লাগলো। তোহাকে এমন করতে দেখে সুমন বলল,
“কি হলো? মুখের সামনে হাত দিয়ে রেখেছো কেন?

তোহা একটা আঙ্গুল ফাঁক করে ডান চোখটা মেলে দেখল নাহিদ তাদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। নাহিদের পিছু রিয়া। নাহিদ তোহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তোহা নাহিদ চলে গেছে ভেবে হাত নামিয়ে মেকি হেসে বলল,
“কিছু না। এমনি হাত দিয়েছিলাম।

তোহার ক’ন্ঠ পেয়ে চমকে গেল। পেছন ঘুরে একটা ছেলেকে দেখতে পেল। ছেলেটার মুখোমুখি একটা মেয়ে বসে আছে। নাহিদ মেয়েটার পেছন দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটা তোহা কি-না নিশ্চিত হতে সামনে গেল। তোহাকে দেখে অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“বউ তুমি?

তোহা চমকে উঠল। শেষ রক্ষা হলো না। নাহিদ তোহাকে দেখেই নিল। তোহার বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা বেড়েই চলেছে। এখানে কোনো ঝামেলা না হলেই হয়। তোহাকে নাহিদকে সাবধান করতে মুখ খুলতে নিল। তখনই সুমন তোহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ছেলেটা তোমাকে বউ বলল?

সুমনের প্র’শ্নে তোহা শুকনো ঢোক গিলল। নাহিদ এবার উল্টা পাল্টা কিছু না বললেই হয়। তোহা শীতল ক’ন্ঠে বলল,
“আমি কেন উনা…..!

তোহার কথাটা নাহিদ সম্পন্ন করতে দিল না। তোহাকে মাঝ পথে থামিয়ে বলল,
“বউ কেন হবে? আপনি জানেন না ওর বিয়ে হয়নি? আমি যেহেতু বউ বলছি তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে।

নাহিদ মনে করল সুমন তোহার বয়ফ্রেন্ড। তাই দুজনের মাঝে একটু ফাটল ধরাতে তোহাকে উদ্দেশ্য করে মিছিমিছি ভনিতা করে বলল,
“বউ তুমি আমাকে না জানিয়ে অন্য আরেকজনের সাথে দেখা করতে এসেছো? তাও একটা ছেলের সাথে? তুমি এটা কীভাবে করলে?

নাহিদের কথা বলার স্টাইল দেখে সুমন বুঝে গেল ওদের মাঝে কোনো রিলেশন আছে। কয়েক মুহূর্ত হত’ভম্ব হয়ে বসে রইল। তোহা নাহিদের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
“আপনি কিন্তু স’হ্যের সী….

তোহা তার কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই সুমন তোহাকে বলল,
“হয়েছে। তোমাকে আর নতুন করে নাটক করতে হবে না। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। নাহলে আমরা যখন বলেছিলাম বিয়ের পরও তোমাকে পড়ালেখা করাবো তখন কেন তুমি রাজি হলে না? তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে বলেই। অথচ দেখো আমি বোকার মতো তোমার জন্য অপেক্ষা করে গেলাম। আমায় একবার বলতে পারতে তোমার যে বয়ফ্রেন্ড আছে। তাহলে আমি এতদিন বৃথা অপেক্ষা করতাম না।

তোহাকে কিছু বলতে না দিয়ে সুমন হনহন করে চলে গেল। তোহা হতবাক হয়ে বসে রইল। নাহিদ এতক্ষণে বুঝতে পারল সুমন তোহার বয়ফ্রেন্ড না। ওদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই তোহার দিকে তাকিয়ে নিচু স্ব’রে বলল,
“সরি।

তোহা ঘৃ’না ভরা দৃষ্টিতে নাহিদের দিকে তাকাল। ভার্সিটিতে নাহিদের প্রতি যতটা সম্মান জন্মেছিল সবটা ধূলোয় মিশে গেল। তোহা নাহিদকে উদ্দেশ্য করে ঘৃ’ণিত স্বরে বলল,
“আপনি এমনটা না করলেও পারতেন, ছি’হ।

তোহা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন সবটা না জেনেই আব্বুকে যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয়? তোহার চোখে পানি চিকচিক করে উঠল। তখন বড় মুখ করে আব্বুকে যে বলেছিল ‘ আমি কখনো আমার কারনে তোমার সম্মানহানি হতে দেব না’। সেই কথার কি হবে?

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-০৭

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ভার্সিটিতে আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভার্সিটির সকলে রঙ বেরঙের সাজে সেজেছে। একেক জনের একেক রকম পোশাক।‌ মনে আনন্দ। নাহিদ বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একবার আশেপাশে তাকাচ্ছে তো আরেকবার গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। সম্ভবত কাউকে খুঁজছে। নাহিদকে এমন করতে দেখে রনি ঠেস মেরে বলল,
“কীরে মামা। বউকে খুঁজছিস বুঝি? তোর বউ এখনো আসেনি। আর অমনি ছটফটানি শুরু হয়ে গেল।

নাহিদ মুচকি হেসে বলল,
“কী করবো বল? বউয়ের সাথে ঝগড়া করাটা বড্ড মিস করছি। বউটা কতো সুন্দর করে ঝগড়া করতে পারে।

ফাহিম পাশ থেকে বলে উঠল,
“শা’লা এমন ভাবে বলছে যেন নিজের বিয়ে করা বউ। বিয়ে না করেই এসব বলছিস। বিয়ে করলে না জানি কি বলবি।

রনি ফাহিমের কথার জবাবে বি’দ্রুপ করে বলল,
“বিয়ে না করে সংক্ষেপে বলছে। যখন বিয়ে করবে তখন ইতিহাস বলবে।

রনি কথাটা বলে হাসতে লাগলো। রনির সাথে ফাহিমও তাল মিলিয়ে হাসলো। দুজনকে হাসতে দেখে নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। ক’ন্ঠে তীব্র প্রতিবাদ, বি’রক্তি নিয়ে বলল,
“শা’লা তোরা একটু বেশিই বুঝিস। বেশি বুঝে যা ইচ্ছে তা বলে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস।

নাহিদ কথাটা বলে আবারো গেইটের দিকে তাকাল। তখনই নীল শাড়ি পড়া তোহাকে দেখতে পেল। চুলগুলো ছেড়ে রাখা। হেসে হেসে অরিনের সাথে কথা বলছে। নাহিদ ফট করে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফাহিম, রনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোরা দাঁড়া আমি আসছি।

নাহিদ চলে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল,
“এই বউ। আজকে শাড়ি পড়েছো। শাড়িতে কিন্তু তোমাকে সত্যি সত্যি বউয়ের মতো লাগছে।

হুট করে নাহিদ সামনে চলে আসায় তোহা হচকচিয়ে গেল। নাহিদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বলতে চাইল না। তাই মুখ ঘুরিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে চাইল। তোহাকে চলে যেতে দেখলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়াল। আগের ন্যায় বলে উঠল,
“বউ বুঝি কথা বলবে না?

তোহা আবারো জবাব না দিয়ে চলে যেতে চাইল। তখনই মনে হলো তোহা চলে যেতে চাইলে নাহিদ আবারো সামনে এসে দাঁড়াবে। তোহা তাই বাধ্য হয়েই জবাব দিল,
“দেখুন আমি কোনো ঝামেলা চাইছি না। তাই আমাকে বি’রক্ত করবেন না।

তোহার বলা কথাটা নাহিদ মনে মনে মেনে নিল। আজ সেও ঝগড়া-ঝাটি করতে চাইছে না। কিন্তু তাও তোহার রাগী মুখটা দেখতে মিছিমিছি বলে উঠল,
“বি’রক্ত না করলে কীভাবে হবে? তোমায় বি’রক্ত না করলে যে আমার শান্তি লাগে না বউ।

তোহা রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। যেইনা মুখ খুলতে যাবে তখনই নাহিদ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
“আরে আমি এমনি মজা করছিলাম। রেগে রণ’চন্ডী রূপ ধারণ করার কোনো দরকার নেই।

তোহা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কথা বাড়ালো না। তার ইচ্ছে নাহিদ সরে গেলেই সে চলে যাবে। কিন্তু নাহিদ সরে গেল না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তোহা বি’রক্ত হয়ে বলল,
“পথ ছাড়বেন তো নাকি?

নাহিদ সরে দাঁড়াল। তোহা, অরিন চলে যেতে পা বাড়াল। নাহিদ ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলেই একটা অশ্রা’ব্য ভাষা কানে এলো। কেউ একজন বলল,
“নীল শাড়ি পড়া মেয়েটাকে দেখেছিস? মা’লটা কিন্তু সেই।

নাহিদ দাঁড়িয়ে পড়ল। আবারো পিছু ফিরে দেখল দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনই নাহিদদের ক্লাসের বখা’টে ছেলে। নাহিদের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। একবার চোখ উঠিয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহার গায়ে জড়ানো নীল শাড়িটা দেখে রাগটা আরেকটু বেড়ে গেল। ছেলে দুটোর সামনে দাঁড়িয়ে একটু ফর্সা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সমস্যা কি রোহান? মেয়ে দেখলেই তোর গায়ে চুল’কানি উঠে? মেয়েদেরকে সম্মান করতে জানিস না?

নাহিদের কথা শুনে রোহান খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। নাহিদের কথা শুনে যেন বেশ মজা পেয়েছে। হাসি থামিয়ে বলল,
“কেন? তোর গার্লফ্রেন্ডকে বলেছি বলে গায়ে লাগলো বুঝি?

“গার্লফ্রেন্ড পড়ে। গার্লফ্রেন্ড হওয়ার আগে ও একটা মেয়েকে। যেকোনো মেয়েকেই এই কথাটা বললে আমি প্রতি’বাদ করতাম। সময় থাকতে শুধরে যা। নয়তো ফল ভালো হবে না।

নাহিদ কথাটা বলার সাথে সাথেই রোহান নাহিদের শার্টের কলার চেপে ধরল। তীব্র ক্ষো’ভ নিয়ে বলল,
“শুধরাবো না। কি করবি তুই? মারবি? শরীরে স্প’র্শ করে দেখা তো।‌

দূর থেকে নাহিদ আর রোহানের কাহিনী দেখে ফাহিম আর রনি ছুটে আসতে লাগল। নাহিদ নিজের শার্টের কলারের দিকে তাকিয়ে আবার রোহানের দিকে তাকাল। যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রেখে বলল,
“শার্টের কলারটা ছেড়ে দে।

নাহিদ কথাটা বলায় রোহান শার্টের কলারটা আরেকটু জোরে চেপে ধরল। ফাহিম রনি নাহিদের পাশে এসে দাঁড়াল। রোহান বলল,
“ছাড়বো না কলার। কি করবি তুই?

ফাহিম নাহিদের হয়ে বলল,
“কি করবে মানে? তুই নাহিদের শার্টের কলার ধরেছিস কেন? ছেড়ে দে কলার।

ওদের এমন অবস্থা দেখে বেশ কয়েকজন ভীড় জমিয়ে ফেলেছে। কানাঘুষো শুরু হয়েছে। তোহা অরিন স্টেজের দিকে যেতে গিয়েও কানাঘুষো শুনে পেছন ফিরে তাকাল। নাহিদ আর রোহানের এই অবস্থা দেখে অরিন বলে উঠল,
“কিরে ওখানে আবার কি হলো? নাহিদ ভাইয়ার সাথে কী মারামারি করছে নাকি?

তোহা নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে বলল,
“তুই যেখানে আমিও সেখানে। আমি কি করে বলবো ওখানে কি হচ্ছে?

অরিন তোহার হাতটা ধরে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“চল তো দেখে আসি।

ফাহিমের কথার জবাবে রোহান বলল,
“নিজে সাধু সেজে আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছে। তার সঙ্গে আবার হুমকি। ওর শার্টের কলার ধরবো না তো কি আদর করবো?

নাহিদ এবার রোহানের শার্টের কলারটা চেপে ধরল। রাগী গলায় বলল,
“তুই খুব বাড়া বেড়েছিস। কখন থেকে কলার ছাড়তে বলছি কিন্তু তুই কথা কানেই নিচ্ছিস না। আমি কোনো ঝামেলা করতে চাইছিলাম না। তুই তো আবার ভালো কথার মানুষ না। শেষ পর্যন্ত আমাকে রাগিয়েই দিলি।

রোহান আবারো হেসে উঠল। চোখে স্প’ষ্ট ক্ষো’ভ দেখা যাচ্ছে। তাচ্ছি’ল্য করে বলল,
“তোকে রাগিয়ে দিয়েছি? তো? কি হয়েছে? তুই রাগে গেলেই আমার কি আর শান্ত থাকলেই আমার কি? রেগে গেছিস বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস?

রোহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রোহানের গালে পরপর দুইটা থা’প্পড় বসিয়ে দিল নাহিদ। রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি রেগে গেলে কি হয় দেখেছিস? নাকি আরো দেখার ইচ্ছে আছে? তুই দেখতে চাইলে আমার দেখাতে আপত্তি নেই।

তোহা অরিন এসে নাহিদের কথাগুলো শুনল। তোহা মনে মনে বলে উঠল,
“উনি রেগে গেছে বলে কাউকে এভাবে মারবেন?

নাহিদের কথাগুলো শুনে রোহান হিং’স্র বাঘের ন্যায় ক্ষে’পে গেল। তীব্র ক্ষো’ভে ফেটে পড়ল। রাগ সংবরণ করতে না পেরে নাহিদের গালে দুইটা থা’প্পড় বসিয়ে দিল। তারপর নাহিদকে বলল,
“থা’প্পড় কি তুই একাই দিতে পারিস? আমি পারি না?

নাহিদ এবার রোহানের গালে আবারো থা’প্পড় মারতে হাত উঠালো। ফাহিম, রনির মাঝে নাহিদকে থামানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অ’গত্যা তোহা এগিয়ে গিয়ে নাহিদের উঠিয়ে রাখা হাতটা ধরে ফেলল। কন্ঠে তীব্র ক্ষো’ভ নিয়ে বলল,
“আপনি কি শুরু করেছেন? ভার্সিটিতে কি গু’ন্ডামি করার জন্য এসেছেন?

তোহা নাহিদকে আটকিয়ে দিয়েছে দেখে নাহিদের রাগটা আরো বেড়ে গেল। তোহাকে উদ্দেশ্যে করে রাগী গলায় বলল,
“আমি গু’ন্ডা না যে ভার্সিটিতে এসে গু’ন্ডামি করবো। কেন এমন করছি জানো? এই রোহান তোমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে ‘মা’লটা কিন্তু সেই’। তুমি মা’ল?

নাহিদের কথা শুনে তোহা বিস্ম’য়ে হত’ভম্ব হয়ে গেল। উনি আমার জন্য ওই ছেলেটাকে মারছিল। অথচ আমি? বোকার মতো কোনো কিছু না জেনেই উনাকে গু’ন্ডা বলছি। ছি ছি।

তোহা মনে মনে নিজেকে ধি’ক্কার জানাল। তারপর নাহিদকে বলল,
“আমাকে এসব বলেছে উনি?

নাহিদ মাথা নাড়ালো। অমনি রাগে সপাটে রোহানের গালে থা’প্পড় বসিয়ে দিল তোহা। রোহানের দিকে অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ল’জ্জা থাকলে আর কখনো কোনো মেয়েকে এসব কথা বলবেন না। এসব কথা বলার আগে অন্তত দশবার এই থা’প্পড়ের কথাটা মাথায় রাখবেন।

রোহান অবাক দৃষ্টিতে তোহার দিকে তাকিয়ে রইল। তার থেকে অন্তত তিন-চার বছরের ছোট একটা মেয়ে তার গালে থা’প্পড় বসালো? এর থেকে ল’জ্জার আর কি হতে পারে।

তোহা নাহিদের দিকে তাকাল। নাহিদ তোহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তোহা নাহিদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি।

নাহিদ তোহাকে আড়চোখে দেখে বলল,
“কোনো কিছু না জেনে আগে আগে ফটরফটর করবে না।

তোহা মাথা নাড়ালো। নাহিদ ফাহিম রনি সেখান থেকে চলে গেল। নাহিদের প্রতি তোহার আলাদা একটা সম্মান কাজ করল।

#চলব

অবিবাহিত বউ পর্ব-০৬

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

আজ ভার্সিটিতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। অবশ্য অরিনের জন্যই দেরি হয়েছে। তোহা অরিন রিকশা থেকে নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিল। ভাড়া মিটিয়ে পেছনে ফিরতেই তোহার চোখ গেল ভীড় জমে থাকা মেয়েদের দিকে। কালকে যেখানে নাহিদের ছবিটা লাগিয়ে ছিল সেই খানেই মেয়েদের ভীড় জমে আছে। তোহার মুখে হাসি ফুটলো। সকলে তাহলে এখনো নাহিদের ছবিটা দেখছে। তোহা অরিনকে বলল,
“দেখেছিস? উনি সবার কাছে কি রকম ভাইরাল হয়ে গেছে। চল আমরাও একটু দেখে আসি।

অরিন তোহার সাথে পা বাড়াল। ভীড় জমিয়ে রাখা মেয়ে গুলো কেমন করে যেন তাকালো তোহার দিকে। দেয়ালের দিকে তাকাতেই তোহা বিস্ম’য়ে হত’ভম্ব হয়ে গেল। অরিন ও কম অবাক হলো না। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। চেতনা ফিরতেই হাসতে শুরু করল। অরিনকে হাসতে দেখে তোহা চোখ পাকিয়ে তাকাল। কিন্তু অরিন সেই দিকে পাত্তা দিল না। সে হাসতেই লাগলো। তোহা বি’রক্ত হয়ে রাগী গলায় বলল,
“এমন একটা অবস্থায় তোর হাসি পাচ্ছে? আমার তো জাস্ট রাগে শরীরটা জ্ব’লে যাচ্ছে।

তোহার কথাটা কানে গেলেও অরিন হাসি থামাল না। কোনো মতে মুখ চেপে ধরে হাসি থামিয়ে বলল,
“তো হাসবো না? তোদের যা কাহিনী দেখছি তাতে না হেসে উপায় আছে? এক জনের থেকে আরেকজন এক কাঠি উপরে। উফ দোস্ত। তুই যেমন তোর বরটাও ঠিক তেমন। দুজনের মধ্যে এতো মিল? আমি তো জাস্ট হা হয়ে গেছি।

তোহা কড়া দৃষ্টিতে তাকাল। কিন্তু তাতে অরিনের কি? অরিন তার মতোই রইল।‌ তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। অরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“একদম হাসবি না তুই। আমার এই অবস্থা দেখে তোর খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? তুই আমার বান্ধবী? আমার এই অবস্থায় তুই হাসছিস?

অরিন মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“কি এমন হয়েছে তোর? আজকে তোর যেমন লাগছে গতকাল নাহিদ ভাইয়ার ও এমনই লেগেছিল। আমি তো মানা করেছিলাম এইসব করতে। তখন তো শুনিসনি। এখন বুঝ।

তোহা আবারো দেয়ালের দিকে তাকাল। সেখানে নাহিদের আর তোহার একটা ছবি লাগানো। তাদের ছবির নিচে লেখা ‘এদের রিলেশনের আজ দুই দিন। সবাই এদের জন্য দোয়া করবেন। যাতে দুজনের রিলেশনটা বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

তোহা লেখাটা পড়ে আবারো জ্ব’লে উঠলো। প্রচুর রাগ লাগছে তার। অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি তো ভেবেছিলাম কিছু করবো না। কিন্তু তুই ফোন দিয়ে আইডিয়াটা দিলি। এখন সব দোষ তোর। তুই আইডিয়া না দিলে আমি এমন কিছুই করতাম না।

অরিন তোহার কথায় হাঁ হয়ে গেল। বি’দ্রুপ করে বলল,
“এই জন্যই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। আমি কি তোর কাছে গিয়ে বলেছিলাম যে ‘তোহা নাহিদ ভাইয়াকে শায়ে’স্তা করার একটা আইডিয়া পেয়েছি। তুই আমার আইডিয়াটা ফলো কর।

তোহা জবাব দিল না। চুপ করে রইল। জবাব দিবেই বা কি? অরিন তো আর যেচে আইডিয়া দিতে আসেনি। তোহাকে চুপ থাকতে দেখে অরিন আবারো বলল,
“আমি এইসব কিছুই বলিনি। উল্টো তুই বলেছিস নাহিদ ভাইয়াকে শায়ে’স্তা করার জন্য আইডিয়া দিতে। আমি মানা করাতে জোর করেছিস। আর এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল?

তোহা অরিনের দিকে মুখ ছোট করে তাকাল। তারপর করুণ স্ব’রে বলল,
“এইসব বাদ দে। এখন বল এই কাগজটার কি করবো? সকলে কিভাবে দেখছে।

অরিন সাথে সাথে জবাব দিল,
“একটা রঙিন কাগজ কিনে এইটার উপর লাগিয়ে দে। তাইলেই রঙিন কাগজের আড়ালে এই কাগজটা ঢেকে যাবে। তখন আর কেউ দেখতে পারবে না।

তোহা তাতেই রাজি হলো। দোকান থেকে একটা কালো রঙের কাগজ নিয়ে এলো। দেয়ালে লাগানো কাগজটার উপর কালো কাগজটা লাগিয়ে দিল। ব্যাস। ভেতরের কাগজটা আর দেখা গেল না। তোহা হাসি মুখে বলল,
“এবার শান্তি। এখন আর কেউ দেখতে পারবে না।

এবার কেউ দেখতে না পারলেও তোহা ভার্সিটিতে আসার আগেই অনেকে দেখে নিয়েছে। তোহা ভার্সিটির ভেতরে যেতেই তোহার সামনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“তোমরা কি ভার্সিটিতে নতুন নাটক শুরু করেছো। প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে আসলে সকলে বুঝল তুমি নাহিদের বউ। কিন্তু কালকে পোস্টারে দেখি নাহিদ সিঙ্গেল। কিন্তু আজকে দেখি তোমার আর নাহিদের রিলেশন আছে। যত্ত’সব ডং।

তোহা করুণ চোখে অরিনের মুখের দিকে তাকাল। মেয়েটা সম্ভবত তার সিনিয়র। তাই কোনো কিছু বলার সাহস পেল না। চুপ করে রইল। তোহার নীরবতা দেখে মেয়েটা বুঝে গেল নাহিদের সাথে সত্যিই তোহার রিলেশন আছে। তোহার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেল।

মেয়েটা চলে যেতেই তোহা রাগে ফেটে পড়ল। একমাত্র ওই নাহিদের জন্য এতো গুলো কথা শুনতে হলো। তোহা দ্রুত পায়ে হেঁটে ক্লাসে চলে গেল। ক্লাসে গিয়ে আরেক কাহিনী। রিয়া তোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কঠিন স্ব’রে বলল,
“সব তোমার প্ল্যান তাইনা? ভার্সিটির সকলের সামনে নাহিদের গার্লফ্রেন্ড সেজে বসে আছো। ইচ্ছে করে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছো যেন সবাই জানে তুমি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু সেই দিন তো মুখ দিয়ে অন্য কথা বের হয়েছিল।

তোহা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে তাকাল। কৌতুক করে বলল,
“আমি তো তোমার নাহিদের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি। দেখো আমার প্রান যায় যায়। বেঁচে থাকার জন্যই দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছি। নাহলে যে নাহিদের বিরহে আমার মরণ হতো। যত্ত’সব আজাইরা প্যাঁ’চাল।

শেষের কথাটা তোহা বি’রক্তি নিয়ে বলল। রিয়া ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এখন আজাইরা প্যাঁ’চাল বলছো। কিন্তু সকলের কাছে তো ঠিকই নাহিদের গার্লফ্রেন্ড সেজে বসে আছো।

তোহা দুচোখ বন্ধ করল। এইসব যন্ত্র’নায় মাথা ব্য’থা শুরু হয়েছে। রিয়ার কথার জবাবে অরিন বলল,
“দেখো তোহা এসবের কিছুই জানে না। যা করার তোমার নাহিদই বলেছে। তোহাকে কিছু না বলে নাহিদ ভাইয়াকে গিয়ে বল।

রিয়া জবাব দেওয়ার আগেই অরিন তোহাকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেল। তোহা ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ক্লাসে আসার সময় একবার ও নাহিদের দেখা পায়নি সে। অতএব এখন ছুটির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।

ক্লাস শেষে ছুটির ঘন্টা বাজলো। তোহা অরিন ক্লাস থেকে বের হলো। মাঠের মাঝখানেই নাহিদ, ফাহিম ও রনি দেখা পেল। তোহা নাহিদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নাহিদ তোহাকে দেখে হেসে বলল,
“সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো বউ? দারুন না?

পাশ থেকে রনি বলে উঠল,
“আরে কি বলছিস? দারুণ তো লাগবেই। এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? এখন সবাই জেনে গেছে ভাবী তোর গার্লফ্রেন্ড। এখন কেউ ভাবীকে বি’রক্ত করবে না।

“আপনারা কিন্তু বেশি বেশি করছেন। আমার সাথে এমনটা করার খুব দরকার ছিল? এমন হেন’স্থা না করলে হতো না? আমাকে হেন’স্থা করে খুব মজা পান তাই না?

তোহার কথায় নাহিদ হেসে বলল,
“শুরুটা তো তুমিই করো বউ। আমি নাহয় শেষটা করলাম।

তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখুন শুরু শেষ কিছু করার দরকার নেই। আপনি আপনার মতো থাকুন আমি আমার মতো থাকি। আমি ও কিছু করবো না আপনি ও কিছু করবেন না।

“এতো তাড়াতাড়ি হেরে গেলে হবে? যু’দ্ধ তো এখনও শুরুই হলো না। তুমি এতো জলদি হার মেনে নিচ্ছ। তোমার থেকে এটা আশা করিনি বউ।

তোহার রাগটা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। এই ছেলেটা কিছুতেই শান্ত থাকতে দেয় না। কোনো না কোনো ভাবে রাগিয়ে দেয়। তোহা তবুও শীতল কন্ঠে বলল,
“আমাকে বউ বলবেন না। আমি আপনার বউ না।

তোহার এমন ভাবে কথা বলা নাহিদের স’হ্য হচ্ছে না। তোহাকে রাগাতে বলে উঠল,
“রেস্টুরেন্টে তুমিই তো বলেছিলে আমি তোমার বর। আমি তোমার বর হলে তুমিই তো আমার বউ। তো বউকে বউ বলবো না? তুমি যতই বল আমি তোমাকে বউ বলবোই।

নাহিদ তার কাজে সফল হলো। তোহা বেশ ভালো ভাবেই রেগে গেল। রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে। তোহা রাগী গলায় বলল,
“এই মিস্টার ভালো কথা বললে ভালো লাগে না বুঝি? আমি যে ভালোভাবে কথা বলছি আপনি কানে শুনতে পাচ্ছেন না? নাকি এখন কানে তুলো গুঁজে রেখেছেন? আপনার সাথে রেগে কথা না বললে আপনার শিক্ষা হয় না।

নাহিদ তোহার কাছে এগিয়ে এলো। গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল,
“রেগে কথা বললে তো শিক্ষা হয় না। শিক্ষা হয় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে পড়লে। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। তুমি এমন শান্ত ভাবে কথা বললে আমার ভালো লাগে না। আমার বউকে রাগলেই সুন্দর লাগে।

তোহা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“আপনি মানুষটা সত্যিই বিরক্তি’কর।

#চলবে

অবিবাহিত বউ পর্ব-০৫

0

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ৫
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

সারা ঘরময় পায়চারী করছে তোহা। রাগে তার শরীর জ্বল’ছে। ডান গালটা এখনো কিছুটা লাল হয়ে আছে। ভার্সিটিতে গিয়ে তার জীবনটা নাহিদের যন্ত্র’নায় অ’তিষ্ট হয়ে উঠেছে। নাহিদকে একটা শিক্ষা না দিলে হচ্ছে না। কি ভেবেছে কি ও? তোহাকে হারানো এতোই সোজা? উহু! তোহা এতো সহজে হারবে না। কিন্তু করবে টা কি? তোহার মাথায় কিছু আসছে না।

তোহা কিছু ভাবতে না পেরে অরিনকে ফোন লাগালো। অরিন যদি কোনো আইডিয়া দিতে পারে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই অরিন কল রিসিভ করল। হয়তো ফোনটা হাতেই ছিল। তোহা সাথে সাথে বলে উঠল,
“এই অরিন একটা আইডিয়া দে তো। ওই নাহিদকে কীভাবে শায়ে’স্তা করবো বল তো?

তোহার কথায় অরিন প্রচ’ন্ড বি’রক্ত হলো। শুরু করেছে কি মেয়েটা? একটু কি শান্তিতে থাকতে মন চায় না। একটা না একটা কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকছে। অরিন বি’রক্তি নিয়ে বলল,
“আবার কিসের শায়ে’স্তা করবি? তোর কি একটু শান্তিতে থাকতে মন চায় না?

অরিনের কথায় তোহা অবাক হলো, বি’স্মিত হলো। কিসের শায়ে’স্তা মানে? অরিন কি সব ভুলে গেছে? তোহা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
“শা’য়েস্তা করবো না? তুই দেখিস নি আমাকে কীভাবে রঙ লাগিয়ে দিয়েছে? সকলে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল। ওই নাহিদকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব? এতো সহজে?

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তোহাকে বুঝানোর জন্য বলে উঠল,
“এখানে উনার দোষটা কোথায় তোহা? তুই তো আগে উনার বাইকে সেন্টার ফ্রুট লাগিয়ে দেয়েছিস। উনি সেটা বুঝতে পেরে তোকে রঙ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে ঝামেলা করার কি দরকার?

তোহার অবাকতা আরেক ধাপ বেড়ে গেল। অরিন আবারো ওই ছেলেটার পক্ষ নিয়ে কথা বলছে? তোহা ক্ষানিকটা রাগ নিয়ে বলল,
“তুই কি আমার ফ্রেন্ড নাকি ওই নাহিদের? আমার পক্ষে কথা না বলে তুই উনার পক্ষে কথা বলছিস।

অরিন বি’স্মিত হয়ে বলল,
“আরে এখানে পক্ষ-বিপক্ষের কি আছে? যেটা সত্যি আমি তো সেটাই বললাম। আমি কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলিনি।

অরিনের কথাটা মানতে তোহা নারাজ। অরিন ওই নাহিদের পক্ষেই কথা বলছে। তাইতো বলে উঠল,
“উনার পক্ষে কথা না বললে আমাকে একটা আইডিয়া দে। উনাকে কীভাবে শায়ে’স্তা করবো সেটা বল? নয়তো আমি মনে করবো তুই উনার পক্ষে কথা বলছিস।

“কি অ’দ্ভুত! আমি নাহিদ ভাইয়ার পক্ষে কথা বলছি না, এটা প্রমাণ করতে আমাকে আইডিয়া দিতে হবে? তাও আবার যেই সেই আইডিয়া না। পুরাই অসৎ আইডিয়া। আমি পারবো না দোস্ত। আমায় ক্ষমা কর। তোর এই সব আজগুবি কান্ড কারখানা তুই-ই কর। আমাকে এর মধ্যে জড়াচ্ছিস কেন?

তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“তোকে জড়াবো না তো কাকে জড়াবো? আমার কী আরো দশটা ফ্রেন্ড আছে যে ওদের কাছে আইডিয়া চাইব। আমার একটা মাত্র ফ্রেন্ড হচ্ছিস তুই। আমি তো তোকেই বলবো।

অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তোহাকে আশ্বা’স দিয়ে বলল,
“হুট করে আইডিয়া চাইলে কীভাবে দেব? আগে তো ভাবতে হবে কি করা যায়। তুই কল রাখ। আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়। তুই ও ভাবতে থাক।

অরিনের কথা মতো তোহা কল কেটে দিল। ভাবতে লাগলো কি করা যায়। কিন্তু ভাবনা শেষে ফলাফল শূন্য। তোহা আর ভাবতে পারছে না। অরিন কিছু ভেবে পেলে পাবে, না পেলে কিছু করার দরকার নেই।

তোহার ভাবনার মাঝেই অরিন কল দিল। তোহা রিসিভ করে কানে দিলে অরিন বলল,
“শোন একটা আইডিয়া পেয়েছি। তবে কতটুকু কাজে দিবে বলতে পারছি না। কারন এটার জন্য যা লাগবে আমাদের কাছে তা নেই।

তোহা অবাক ক’ন্ঠে জিঙ্গেস করল,
“কি এমন লাগবে?

“নাহিদ ভাইয়ার ছবি। ভাইয়ার একটা ছবি কাগজে ছাপিয়ে দিয়ে ভার্সিটির দেয়ালে লাগিয়ে দিবি। সেই ছবির নিচে লিখা থাকবে। “নাহিদ আহমেদ প্রেম করার জন্য পাত্রী খুঁজছে , কিন্তু কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ যদি উনার সাথে প্রেম করতে আগ্রহী হোন তাহলে সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করুন।

তোহা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“সেই তো। উনার ছবি আনা কোনো ব্যাপার হলো। ওনার ফেসবুক আইডিতে নিশ্চয়ই আছে। আচ্ছা রাখ আমি খুঁজে দেখছি।

অরিন কল কেটে দিল। তোহা ফেসবুকে গিয়ে প্রথমে বাংলায় নাহিদ আহমেদ লিখে সার্চ দিলেন। অনেক গুলো আইডি এলো। কিন্তু তোহার কাঙ্ক্ষিত নাহিদের আইডি এলো না। তোহা আবারো ইংরেজিতে সার্চ দিল। এবার সবার প্রথমেই নাহিদের আইডি চলে এলো। আইডি পাবলিক করা। তোহার মুখে হাসি ফুটল। নাহিদের ছবির স্ক্রিন’শর্ট নিয়ে বলল,
“মিস্টার নাহিদ আগামীকালের জন্য রেডি থাকুন।
_______________

ভার্সিটিতে আসা মাত্র নাহিদ খেয়াল করল কিছু কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অ’দ্ভুত তাদের মুখভঙ্গি। নাহিদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। এদের হাবভাব তার কাছে ভালো ঠেকছে না। এদিকে রনি, ফাহিম ও এখনো আসেনি। একটা মেয়ে নাহিদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মেয়েটা সম্ভবত ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। নাহিদ মেয়েটাকে ডাক দিল। মেয়েটা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো। ল’জ্জায় মুখটা নুইয়ে রেখেছে। নাহিদ কড়া গলায় বলল,
“এই মেয়ে সমস্যা কী? আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছো কেন?

মেয়েটা আরেকটু ল’জ্জা পেল। ল’জ্জায় তার গাল দুটো খানিকটা লাল হয়ে গেল। গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল,
“আপনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। অন্য কেউ আপনাকে পাত্তা না দিলেও আমি আপনাকে পাত্তা দেবে।

মেয়েটার কথার মানে নাহিদ বুঝতে পারল না। ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“কি বলছো এই সব? তোমার মাথা ঠিক আছে? যত্ত’সব উ’দ্ভট কথাবার্তা।

মেয়েটা মুখটা কালো করে ফেলল। জবাব দেওয়ার আগেই সেখানে রনি, ফাহিম এসে হাজির হলো। নাহিদের সামনে মেয়েটাকে দেখে মেয়েটার উদ্দেশ্যে রনি বলল,
“আপু তুমি একটু যাও তো। আমরা নাহিদের সাথে একটু কথা বলবো।

মেয়েটা মাথা নেড়ে চলে গেল। চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ফাহিম জোরে নাহিদের মাথায় গা’ট্টা মারল। নাহিদ মাথাটা ঢলে ফাহিমের দিকে ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। ফাহিম বলে উঠল,
“শা’লা এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? কেউ তোমায় পাত্তা দেয় না বলে? প্রেম করার এতো শখ?

নাহিদ ফাহিমের কথার মানে বুঝতে পারল না। তাই বলল,
“কিসের পাত্তা? কিসের প্রেম?

এবার ফাহিম উত্তর না দিয়ে রনি উত্তর দিল,
“তোর ছবি দেয়ালে লাগিয়ে নিচে লিখে রেখেছে ‘নাহিদ আহমেদ প্রেম করার জন্য পাত্রী খুঁজছে , কিন্তু কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ যদি উনার সাথে প্রেম করতে আগ্রহী হোন তাহলে সরাসরি উনার সাথে যোগাযোগ করুন।

নাহিদকে অবি’শ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিম বলল,
“বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে চল আমার সাথে।

নাহিদ দ্বি’মত করল না। রনি আর ফাহিমের সাথে চলে গেল। গেইট পেরিয়ে দেয়ালের দিকে তাকাতেই তার চোখ দুটি বড় বড় হয়ে গেল। সত্যি তো। অনেক গুলো মেয়ে এখানে ভিড় জমিয়েছে। নাহিদকে দেখা মাত্রই কানাঘুষো শুরু করেছে। কেউ কেউ হাসছে। নাহিদ আজকে তাদের কাছে হাসির পাত্র।

রাগে নাহিদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। কাউকে কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। তোহাদের ক্লাসের ভেতরে ঢুকে দেখল তোহা, অরিন কিছু একটা নিয়ে হাসছে। নাহিদের রাগটা আরেকটু বেড়ে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তোহার হাতটা ধরে টান দিয়ে দাঁড় করালো। তোহার সাথে অরিনও দাঁড়ালো। তোহা প্রশ্ন করল,
“সমস্যা কি? আমার হাত ধরেছেন কেন? ছাড়েন আমার হাত।

নাহিদ কোনো জবাব দিল না। তোহার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। তোহা বারবার হাত ছাড়তে বলছে। কিন্তু নাহিদ শুনছেই না। তোহার পিছু পিছু অরিন ও গেল। নাহিদ তোহাকে ভার্সিটির বাহিরে নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিল। ছবিটা দেখিয়ে বলল,
“এইটা কি?

তোহা কিছু জানে না ভাব করে বলল,
“ওমা তাইতো। কি এটা? আপনার বুঝি প্রেম করার এতো ইচ্ছে? শেষমেষ কারো পাত্তা না পেয়ে কাগজে ছাপিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছেন। আহারে বেচারা। প্রার্থনা করি এবার যদি প্রেমটা হয়।

নাহিদ বুঝতে পারল তোহা যে এই কাজটা করেছে সেটা কিছুতেই স্বীকার করবে না। তাই নিজের রাগটাকে সংবরন করে বলল,
“আমাকে এভাবে ভাইরাল করে দিলে এর জন্য তো তোমাকে ইয়া বড় একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে বউ। যেই সারপ্রাইজ পেয়ে তুমি চমকে যাবে, থমকে যাবে।

তোহা হেসে উঠল। মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“কি করবেন দেখা যাবে?

#চলবে