অবিবাহিত বউ পর্ব-১০

0
367

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ছুটির ঘন্টা বাজলো। তোহা, অরিন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। মাঠের মাঝখানে আসতেই নাহিদ দৌড়ে তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। দৌড়ে আসার কারণে হাঁপাতে লাগলো। নাহিদ সামনে এসে দাঁড়ায় তোহা মুখ ঘুরিয়ে নিল। নাহিদকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল। কিন্তু নাহিদ নাছোড়’বান্দা। আবারো তোহার সামনে এসে দাঁড়াল। শীতল স্বরে বলল,
“সরি।

তোহা নাহিদের কথাটা শুনল। কিন্তু কোনো প্রতি’ক্রিয়া দেখাল না। আগের ন্যায় কঠোর রইল। তোহার এমন নি’র্বিক আচরণ দেখে নাহিদ আবারো বলল,
“দেখো আমি জানতাম না ছেলেটার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ছেলেটা তোমার বয়ফ্রেন্ড। তাই একটু দুষ্টুমি করছিলাম। কিন্তু এমন যে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

তোহা এবারো নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। মুখে কোনো জবাব দিল না। তা দেখে নাহিদের ভেতরটা জ্ব’লে উঠল। নাহিদ করুণ স্বরে বলল,
“প্লিজ কিছু একটা বলো। এভাবে চুপ থেকো না।

তোহা নাহিদের দিকে তাকাল। হাত দুটো বুকে ভাঁজ করা। কড়া গলায় বলল,
হা”কি বলবো আপনাকে? আপনাকে কিছু বলে আমি নতুন করে কোনো ঝামেলা করতে চাই না। এমনি আপনার জন্য আমার আর আমার আব্বুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যা কোনো কালেই হয়নি।

তোহার কথা শুনে নাহিদ স্ত’ব্ধ হয়ে গেল। নাহিদ বুঝতে পারছে না সে কি করে তোহা আর তোহার আব্বুর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করল। তাই অবাক কন্ঠে বলল,
“মানে? আমি তোমার আর তোমার আব্বুর মাঝে কীভাবে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করলাম?

তোহা নাহিদের কথায় ভ্রুঁ উঁচিয়ে বি’দ্রুপ করে বলল,
“ওহ এখন বুঝতে পারছেন না? এখন তো আপনি এমন ভান করছেন যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেন না।

নাহিদ তী’ক্ষ্ণ কথার ভানে ক্রু’দ্ধ হলো। মেয়েটা কি একটু ও ভালো করে কথা বলতে পারে না? নাহিদ তার চোখ দুটো ব’ন্ধ করল। নিজের রাগটাকে দমিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নরম সুরে বলল,
“দেখো তোমার আব্বুকে আমি চিনি না। উনার সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। এখন আমি কীভাবে তোমার আর আব্বুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করবো বলো?

নাহিদের নরম সুরে বলা কথাটাতে ও তোহার কড়া দৃষ্টি শীতল হলো না। তোহা কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়েই জবাব দিল,
“আপনি যে ওই দিন রেস্টুরেন্টে আমাকে বউ বলে সম্বোধন করলেন কথাটা কি আমার আব্বুর কানে যায়নি? আপনি তো দেখেছিলেন আমার সাথে একটা মানুষ আছে। তারপরও কেন বললেন?

“তোমাকে তো বললাম আমি ভেবেছিলাম ছেলেটা তোমার বয়ফ্রেন্ড। তাই দুষ্টুমি করছিলাম।

তোহা নাহিদের একটু কাছে গেল। গলার স্বরটা নিচু করেই রাগী কন্ঠে বলল,
“আপনি কেন দুষ্টুমি করবেন? কে আপনি? আপনার সাথে আমার দুষ্টুমির কোনো সম্পর্ক আছে? আপনি আমার কোনো আত্মীয়? আমার মাঝে রসিকতা করার অধিকার তো আমি আপনাকে দেইনি। তাহলে কেন এটা করলেন?

নাহিদ জবাব দেওয়ার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না। চুপ করে রইল। একবার মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে হলো,
“তুমিও তো রেস্টুরেন্টে অচেনা, অজানা আমাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছিলে। আমাকে বর বলার অধিকার তো আমি তোমাকে দেইনি। তাহলে কেন আমাকে বর বলে পরিচয় দিলে?

নাহিদের কথাগুলো বলা হলো না। নিজের মাঝেই মনের কথা গুলো চেপে রাখলো। তখনই তোহা বলে উঠল,
“উত্তর নেই তো আপনার কাছে? দেখুন আপনি আমার কেউ নন। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সেই হিসেবে আপনার সাথে আমার কথা নাহলে ও আহামরি কিছু হবে না। আপনি এবার আপনার মতো থাকুন। আমি আমার মতো থাকছি।

তোহার এতগুলো কথার মাঝে কেবল “আপনি আমার কেউ নন” কথাটা নাহিদের কানে বাজতে লাগলো। বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠলো। হুট করে মনে হলো কেউ যেন তাকে একা করে চলে যাচ্ছে।

নাহিদ হত’ভম্ব, হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তোহা তখন অরিনকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। নাহিদের চেতনা ফিরতেই দেখল ওরা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। নাহিদ তখন ডেকে উঠল,
“এ….।

নাহিদের আর ডেকে উঠা হলো না। কী বলে ডাকবে সে? বউ? কিন্তু বউ বলে ডাকলে যে মেয়েটা আরো রেগে যাবে। মেয়েটার নাম যেন কী? কী আ’শ্চর্য! নাহিদ মনে করতে পারল না। হয়তো দুই-এক বার শুনেছে কিন্তু কখনো নাম ধরে ডাকা হয়নি।

নাহিদ বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হলো। নিজেই নিজেকে অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আমি ওর নামটাই জানি না?

নাহিদ নিজ মনে প্রশ্নটা করেই দৌড়ে গেল। তোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিঙ্গেস করল,
“এই তোমার নামটা যেন কি?

নাহিদের কথায় তোহা, অরিন বিস্ফো’রিত নয়নে তাকাল। কী শুনছে ওরা? তোহা হতবাক হলো। ছেলেটা আমার নাম জানে না? তোহার তখন মনে হলো নাহিদ কখনো তাকে নাম ধরে ডাকেনি। সবসময় বউ বলেই ডেকেছে। তোহা অবাক হলেও তা প্রকাশ করল না।

অরিন নাহিদের কথা শুনে অবাক হয়ে তোহার দিকে তাকাল। তোহার মুখ দেখে মনে হলো না তোহা অবাক হয়েছে। বরং স্বাভাবিকই লাগছে তার মুখভঙ্গি। অরিন নাহিদের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
“আপনি ওর নাম জানেন না? ওর নাম তো…!

অরিন কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই তোহা অরিনের হাতটা চেপে ধরে থামিয়ে দিল। নাহিদের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল,
“নামটা যখন জানেন না তখন অজানাই থাক। আমার নাম জানার কোনো প্রয়োজন নেই আপনার।

নাহিদ তোহার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। হুট করেই তোহা যেন কঠিন হয়ে গেল। কাঠি’ণ্যতা তাকে যেন আষ্টে’পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। নাহিদ নিজ মনে বলল,
“এই কা’ঠিন্যতায় ঘেরা মেয়েটাকে তো আমি দেখতে চাইনি। মেয়েটা এক দিনেই এমন কঠিন হয়ে গেল? এতোটা কঠিন?

নাহিদ তোহার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দিল না। নি’শ্চুপে চলে গেল। নাহিদ চলে যেতেই অরিন অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“তোহা তোর মনে হয় নাহিদ ভাইয়া সত্যি তোর নামটা জানে না?

অরিনের প্রশ্নে তোহার মাঝে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেল না। তোহা নি’র্লিপ্ত ভ’ঙ্গিতে বলল,
“কি জানি? কখনো নাম ধরে ডাকেনি।

তোহার কথায় অরিনের মুখে অবাকতার ছাপ আরেকটু স্প’ষ্ট হলো। আবারো অবাক কন্ঠে বলল,
“কখনো নাম ধরে ডাকেনি?

অরিনের প্রশ্নে তোহা বেশ বি’রক্ত হলো। মূলত নাহিদকে নিয়ে কথা বলায় এই বি’রক্তি। কিছুটা গলা উঁচু করে বলল,
“বললাম তো ডাকেনি। এবার চুপ কর তো। উনার কথা আর বলবি না।

অরিন চুপ করে গেল। নাহিদকে নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইল না। কিন্তু মুখে অবাকতার রেশ স্প’ষ্ট। অরিনের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না নাহিদ তোহার নাম জানে না। এতো দিন এভাবে ঝগড়া করে হুট করে এসে জিজ্ঞেস করছে ‘এই তোমার নামটা যেন কি ‘ বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্য’জনক।

অরিনের মতো তোহাও অবাক হলো। তবে সেটা অরিনের মতো সেটা প্রকাশ পেল না। নিজের মাঝেই চেপে রাখল। মুখের মধ্যে কাঠি’ণ্যতা ফুটিয়ে রাখল।

নাহিদ ফাহিম রনির কাছে গেল। ওদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“ওর নামটা কি?

নাহিদের কথাটার অর্থ ফাহিম, রনির কাছে অ’স্পষ্ট। একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। কেউই নাহিদ কার কথা বলছে বুঝতে পারল না। দুজন একই সাথে বলে উঠলো,
“ওর মানে?

ওদের কথায় নাহিদ বিপাকে পড়ল। এখন কীভাবে বুঝাবে? নাহিদের বি’রক্ত লাগছে। বিরক্তি’কর কন্ঠে বলল,
“আরে ওর মানে বুঝতে পারছিস না? ওর মানে ও। ওর নামটা কি?

নাহিদের কথায় দুজন আরো বি’রক্ত হলো। রনি বি’রক্ত হয়ে বলল,
“তোর ও টা কে? তুই ও ও বললে আমরা বুঝবো কীভাবে?

নাহিদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল। তখনই মনে হলো এখানে তোহার উপস্থিতি নেই। এখন তো বউ বলা যেতেই পারে। হাসি মুখে বলল,
“বউয়ের নামটা কি?

নাহিদের কথায় ফাহিম, রনি অবাক হলো। দুজনের চোখই বি’স্ময় উপচে পড়ছে। ফাহিম অবাক কন্ঠে বলল,
“কি বলছিস তুই ওর নাম জানিস না? নামটা পর্যন্ত না জেনে এতদিন ঝগড়া করে গেছিস? এটাও সম্ভব?

নাহিদ মাথা নাড়ালো। মুখে বলল,
“নাম শুনেছি। এখন মনে পড়ছে না। এখন তোরা ওর না বলে নামটা কি বল।

রনি বলে উঠল,
“ওর নাম তোহা।

নাহিদ ভ্রুঁ নাঁচালো। আনমনেই বলে উঠল,
“তোহা।
_____________

লাল টকটকে শাড়ি পড়া মেয়েটা এগিয়ে আসছে। হাতে একটা লাল গোলাপ। মুখটা আবছা আলোয় স্প’ষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকালো। মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়াতেই নাহিদ চমকে উঠলো। একি তোহা। তোহা নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মিষ্টি হাসি বিরাজ করছে। নাহিদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আমায় আপনার বউ বানাবেন?

নাহিদ ধরফরিয়ে উঠে বসল। এতক্ষণ সে তাহলে স্বপ্ন দেখেছিল? হ্যাঁ স্বপ্নই তো। নাহিদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সে তার বেড রুমে। নাহিদ বিছানায় পাশের টেবিলে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢাললো। এক চুমুকে পানিটা শেষ করল। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে নিজে নিজেই বলল,
“মেয়েটা আজকাল স্বপ্নে ও হানা দিচ্ছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে