অবিবাহিত বউ পর্ব-২১+২২

0
339

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ২১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

সকালে তারেকুলের হুং’কার শুনে তোহার ঘুম ভে’ঙ্গে গেল। হুট করে এমন হুমকি, ধামকি শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসল। চোখ কচলে ভাবতে লাগলো তারেকুলের এমন হুমকি দেওয়ার কারণ। কিন্তু কোনো কারণই খুঁজে পেল না। তোহা বি’স্মিত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পেটে কিছু না থাকায় পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তোহা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গিয়ে থেমে গেল।

চোখের সামনে অনাকা’ঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখে চমকে উঠল। চোখ দুটো বড়বড় করে তাকাল। সামনে থাকা মানুষটাকে সত্যি দেখছে তো, নাকি স্বপ্ন? তোহা তারেকুলের দিকে তাকিয়ে দেখল তারেকুলের চোখ, মুখ শক্ত। তারেকুলের পাশেই তোহার আম্মু সানজিদা ভীত ভ’ঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তোহা শুকনো ঢোক গিলল। মানুষটা এখানে এসেছে কেন? কি করবে এখন? কিছুই বুঝতে পারছে না।

তোহা ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। বুকটা ক্রমাগত উঠানামা করছে। একবার তারেকুলের দিকে তাকাল। তারেকুল নির্বি’কার ভ’ঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। তোহা সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকাতেই মানুষটা মুচকি হাসল। সেই হাসি দেখে তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। আব্বু কি তাহলে এতক্ষণ উনাকে ধ’মক দিয়েছিল? তোহা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আপনি এখানে কি করছেন?

তোহার প্রশ্নটা কর্ন’গোচর হতেই নাহিদ মুখ খোলার আগেই তারেকুল তাচ্ছি’ল্য করে বলল,
“এমন ভান করছো যেন তুমি কিছুই জানো না? তোমার আশকারা না পেলে এমনি এমনি এসেছে?

তোহা আ’হত দৃষ্টিতে তারেকুলের দিকে তাকাল। আব্বু হঠাৎ করে এতোটা কঠিন হয়ে গেল কেন? তোহা হতা’শার শ্বা’স ফেলল। তখনই নাহিদ বিনীত স্বরে তারেকুলের উদ্দেশ্যে বলল,
“আঙ্কেল তোহা সত্যিই কিছু জানে না। আমি যে এখানে আসবো তোহাকে জানিয়ে আসিনি। আপনি দয়া করে ওকে কিছু বলবেন না।

নাহিদের কথায় তারেকুল বি’দ্রুপ করে হাসল। নাহিদের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্ব’রে বলল,
“তুমি এখন আমাকে শিখাবে আমার মেয়েকে আমি কি বলবো না বলবো? এখন থেকেই নিজেকে ওর অভিভাবক মনে করছো?

তারেকুলের কথায় তোহা ল’জ্জায় দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। হুট করে আব্বুর এতো পরিবর্তন মানতে পারছে না। আব্বু কি করে এতোটা পাল্টে গেল? নাহিদ তারেকুলকে বুঝাতে বলল,
“ছিঃ ছিঃ আঙ্কেল। আমি তা মনে করবো কেন? আমি ওর অভিভাবক হতে যাব কেন? আপনিই তো ওর সব। আঙ্কেল তোহা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আপনি শুধু শুধু ওকে ভুল বুঝছেন।

তারেকুল আবারো তাচ্ছি’ল্য করে হাসল। এক পলক তোহার দিকে তাকিয়ে আবারো নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে ভালোবাসে? আমাকে ভালোবাসলে আমাকে কেন মি’থ্যে কথা বলল? আমি তো বারবার ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর পছন্দের কেউ আছি কিনা। তখন কেন বলল না? কেন প্লেন করে বিয়ে ভে’ঙে আমার সম্মান’হানি করলো? আমাকে ভালোবাসে বলেই কি এমন করল?

তোহা তারেকুলের দিকে তাকিয়ে হতাশ ক’ন্ঠে বলল,
“আব্বু এভাবে বলো না। আমার সত্যি পছন্দের কেউ ছিল না।

“তাহলে এখন পছন্দের মানুষ কোথা থেকে এলো?

তোহা জবাব দিতে গেলে নাহিদ তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“একটু পানি নিয়ে আসো তো।

তোহা থেমে গিয়ে মাথা নাড়িয়ে নাহিদের কথামতো পানি আনতে গেল। মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে নাহিদের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল। নাহিদ গ্লাসটা হাতে নিয়ে তারেকুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আঙ্কেল পানিটা খেয়ে একটু শান্ত হোন। তারপর আমাদের কথা শুনবেন। আপনার মেয়েকে তো আপনি চিনেন। মেয়ের উপর একটু আ’স্থা রাখুন।

তারেকুল কিছুটা শান্ত হয়ে নাহিদের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে সবটা পানি খেয়ে ফেলল। নাহিদ এবার শীতল কন্ঠে মাথা নিচু করে বলল,
“আঙ্কেল সেদিন আমরা প্লেন করে বিয়েটা ভে’ঙ্গে দেইনি। আমি জানতাম না ওদের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। দুষ্টুমি করে তোহাকে বউ বলতেই ছেলেটা ভুল বুঝে বেরিয়ে গেল। আমাদের মাঝে তখন কোনো সম্পর্ক ছিল না। তোহা আপনাকে কোনো মিথ্যে কথা বলেনি। সম্পর্কটা শুরু হয়েছে অনেক পরে। আপনি শুধু শুধুই তোহাকে ভুল বুঝছেন।

তারেকুল নাহিদের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তবে তার রাগটা গিয়ে পড়ল নাহিদের উপর। নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সেদিন নাহলে মি’থ্যে বলেনি। কিন্তু যেই ছেলের জন্য আমার সম্মান’হানি হয়েছে সেই ছেলের সাথে কীভাবে সম্পর্কে গেল? ও ভাবলো কীভাবে আমি সেই ছেলেটাকে মেনে নিব? আমি তোমাকে কখনও মেনে নিব না। তাই তোহার তোমাকে ভুলে যেতে হবে।

তারেকুলের কথায় তোহা, নাহিদ চমকে উঠলো। নাহিদ যেন বাক’শক্তি হারিয়ে ফেলল। কি বলা উচিত, কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারলো না। তোহার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। এ কেমন সংকট? এক জনকে পেতে হলে আরেকজনকে হারাতে হবে। তোহা তারেকুলের কাছে গিয়ে তারেকুলের হাত ধরে বলল,
“প্লিজ আব্বু এভাবে বলো না। উনি তো ইচ্ছে করে তোমার সম্মান’হানি করতে চাননি। জাস্ট একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

তারেকুল তোহার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নাহিদ তোহার দিকে তাকাল। মেয়েটার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। নাহিদের বুকটা ধক করে উঠল। বুকের ভেতর জ্বা’লা শুরু হয়েছে। এখন থেকে তোহাকে ভুলে থাকতে হবে। নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে মি’থ্যে মুচকি হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
“আপনি যা বলবেন তাই হবে আঙ্কেল। আপনি না চাইলে সম্পর্ক রাখার কোনো মানেই হয় না। আপনার যখন আমার মেনে নিবেন না, আমি তোহার জীবনে থাকব না।

নাহিদ মুচকি হেসে তোহার দিকে এগিয়ে গেল। তোহা ছল’ছল দৃষ্টিতে তাকাল। নাহিদ তোহার মাথায় হাত রেখে মুখে মুচকি হাসি, বুকে য’ন্ত্রণা নিয়ে বলল,
“ভালো থেকো বউ।
_______________

ছাদের মধ্যে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো আকাশের দিকে স্থি’র। বুকের মধ্যে ক’ষ্ট, য’ন্ত্রণা। নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ছাদের মধ্যে স্প’ষ্ট কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেল। কে-ই বা আসবে। হয়তো রিয়া এসেছে। রিয়ার নাহিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নাহিদের দিকে কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছো যে? মন খারাপ?

নাহিদ পকেট থেকে ডান হাতটা বের করে রিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া কফির কাপটা হাতে নিল। কফির কাপে ধীরে সু’স্থে চুমুক দিল। রিয়া প্রশ্নের উত্তরের আশায় নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইল। নাহিদ শীতল ক’ন্ঠে বলল,
“রিয়া তুই তো কাউকে ভালোবাসিস। তোর ভালোবাসার মানুষটা যদি তোর না হয় তাহলে কি করবি?

রিয়া নাহিদের কথায় চমকে উঠল। হুট করে নাহিদের এমন প্রশ্নের কারণ বুঝতে পারল না। তবে কি তোহা আর নাহিদ ভাইয়ার মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে? রিয়া নি’রাশ ক’ন্ঠে বলল,
“আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার হবে না ভাইয়া। সে অন্য কারো।

নাহিদ রিয়ার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রিয়ার মুখের দিকে তাকাল। আবছা আলোয় রিয়ার মুখটা দেখতে পেল। রিয়াকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“তোর ক’ষ্ট হয় না?

নাহিদের কথায় রিয়া হেসে উঠলো। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। রিয়া হাসি থামিয়ে বি’ষন্ন ক’ন্ঠে বলল,
“ভালোবাসা মানেই তো ক’ষ্ট, যন্ত্র’ণা।

রিয়া কথাটা বলে কিছুক্ষন চুপ করে রইল। তারপর আবারো বলে উঠল,
“ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। না পাওয়ায় মাঝেও শান্তি আছে, স্ব’স্তি আছে। ভালোবাসার মানুষটা হয়তো বাস্তবে আমার হবে না। তবে আমার স্বপ্নে কল্পনায় সে সবসময় আমার। যার উপর কারো আধি’পত্য নেই। কারো কোনো অধিকার নেই। যার উপর শুধু আমার অধিকার থাকবে।

নাহিদ রিয়াকে বলল,
“তোর ভালোবাসার মানুষটা কে? আমি একবার তাকে তোর কথা বলে দেখি।

রিয়া নাহিদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনের সমস্ত প্রেম নিয়ে বলল,
“ধরো তুমি।

নাহিদ অবাক চোখে তাকাল। রিয়া নাহিদের মুখ দেখে বলল,
“আরে আমি সত্যি বলিনি। জাস্ট উদাহরণ দিচ্ছি। তুমি তো তোহাকে ভালোবাসো। এখন আমি যদি বলি আমি তোমায় ভালোবাসি তাহলে তুমি কি আমায় মেনে নিবে?

“ভালোবাসার অনুভূতিটা সবার জন্য আসে না। তোহার প্রতি আমার যেই ভালোবাসাটা সেটা আমি কখনো কাউকে দিতে পারবো না। ভালোবাসা জোর করে হয় না।

“তাইতো আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। তুমি বললেও সে আমায় ভালোবাসতে পারবে না। যাই হোক, রাত বাড়ছে। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

রিয়া চলে গেল। নাহিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর ভালোবাসার মানুষটা অন্য কাউকে ভালোবাসে বলে তোর হবে না। অথচ আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে ভালোবেসে ও আমার হবে না।

#চলবে

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ২২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

সময়টা যখন রাত বারোটায় গিয়ে পৌঁছাল তোহার তখন ছটফ’টানি বাড়তে লাগলো। সারাদিন প্র’চন্ড বিষন্ন’তায় দিন কাটলেও এখন আর স’হ্য হচ্ছে না। নাহিদের সাথে কথা বলার তৃ’ষ্ণায় ছট’ফট করতে লাগলো। তোহা বারবার মোবাইলটার দিকে তাকাল। কিন্তু নাহিদের কল আসার কোনো নামই নেই। তোহার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। আব্বুকে বুঝালেও কিছুতেই বুঝছে না। নাহিদকে উনি কোনো মতেই মেনে নিবে না। অবশেষে ব্য’র্থ হয়ে তোহা রুমের দরজা লাগিয়েছে। তারপর থেকে একবারের জন্যও রুমের বাহিরে পা রাখেনি। তোহা মোবাইলের সময় দেখল। ঘড়িতে ইতিমধ্যে বারোটা পাঁচ বেজে গেছে।

তোহা বুকের ভেতরের দহন সইতে না পেরে অবশেষে কল লাগলো নাহিদের নাম্বারে। রিং হতে হতে কলটা কেটে গেল। কিন্তু নাহিদ কল রিসিভ করল না। তোহা হতা’শ চোখে মোবাইলের দিকে তাকাল।

রিয়া চলে যাওয়ার পরও নাহিদ ছাদ থেকে নামেনি। একই ভ’ঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল। নি’স্তব্ধ পরিবেশটা যখন মোবাইলে কল আসার শব্দে মুখরিত হলো ঠিক তখনই নাহিদের বুকটা ছ’লাৎ করে উঠলো। তবে কি তোহা কল দিয়েছে? নাহিদ দ্রুত পকেট থেকে মোবাইলটা হাতে নিল। মোবাইলের স্ক্রি’নে তোহার নাম্বারটা দেখেই ব’ক্ষ জুড়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল। নাহিদ কলটা রিসিভ করতে গিয়ে থেমে গেল। কী হবে কলটা রিসিভ করে? তোহার প্রতি দূর্ব’লতা আরো প্র’বল হবে। কিন্তু তার তো তোহাকে ভুলে থাকার কথা।

নাহিদ মিইয়ে গেল। কলটা বাজতে বাজতে একসময় কেটে গেল। কিন্তু তোহা থেমে নেই। আবারো নাহিদকে কল দিল। তিনবার কল দেওয়ার সময় নাহিদ কলটা রিসিভ করল। সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে তোহা কান্না’মিশ্রিত ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“আপনি আব্বুর কথায় আমায় ভুলে যাবেন?

নাহিদ দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। ভুলে যাবে? ভুলে যাওয়া কি এতোই সহজ? চাইলেই কি কাউকে ভুলে থাকা যায়? নাহিদ স্থি’ত হেসে বলল,
“ভুলে তো যাচ্ছি না। শুধু দূরে সরে যাচ্ছি।

তোহা ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। উনি কতো সুন্দর করে বলে ফেললেন ‘ভুলে তো যাচ্ছি না। শুধু দূরে সরে যাচ্ছি ‘। উনার কি কথাটা বলতে একটু বুক কাঁপল না? তোহা ভেজা ক’ন্ঠে বলল,
“ভুলে যাওয়া আর দূরে যাওয়া তো একই।

“উহু। ভুলে যাওয়া আর দূরে যাওয়া এক না। আমি তোমায় ভুলতে পারবো না। দূরে সরে যাচ্ছি বলে ভুলে যাচ্ছি এমনটা ভেবো না। দূরে সরে যেতে চাইলেও আমি তোমায় মনের মাঝে যতন করে গেঁথে রেখেছি।

তোহা দুচোখ বন্ধ করে কাতর স্বরে বলল,
“প্লিজ দূরে সরে যাবেন না। দূরে যাওয়ার জন্য তো ভালোবাসেননি। আপনি এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছেন। আপনার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না আমি। আপনি বুঝতে পারছেন না কেন? ক’ষ্ট হয় আমার?

তোহার কথায় নাহিদের বুকটা জ্ব’লে উঠল। ইচ্ছে করল তোহাকে দুহাতে জাপটে ধরে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিতে। কিন্তু নাহিদ তা পারবে না। তোহার কাতর স্বরে বলা কথাটা শুনে পাল্টা প্রশ্ন করল,
“তোমার আব্বু্কে ক’ষ্ট দিতে ক’ষ্ট হবে না?

নাহিদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো কোনো উত্তর খুঁজে পেল না তোহা। আব্বুর কথা না মেনে যদি নাহিদকে চায় তাহলে তো আব্বু ক’ষ্ট পাবে। আব্বুকে ক’ষ্ট দিয়ে কি ভালো থাকতে পারবে?

তোহা নিজের ভাবনা গুলোর উত্তর পেল না। তোহাকে চুপ থাকতে দেখে নাহিদ আবারো বলল,
“আমি তোমায় ভুলে যাচ্ছি না। তোমার আব্বু যদি আমায় মেনে নেয় তবে তুমি আমার হবে। কিন্তু তোমার আব্বু তো আমায় মেনে নিতে রাজি না। আমি যদি জানতাম সেদিনের করা দুষ্টু’মির জন্য তোমাকে হারাতে হবে তাহলে কখনোই এমন দু’ষ্টুমি করতাম না।

“সেদিন যদি দুষ্টুমিটা না করতেন তাহলে হয়তো আমি অন্য কারো হয়ে যেতাম। যদিও আমি বিয়েটা ভা’ঙ্গার চেষ্টা করতাম। তবে কতটুকু সফল হতাম জানিনা। সেদিন দুষ্টু’মি করেছিলেন বলেই এখন আমার ভালোবাসা পেয়েছেন।

নাহিদ মৃদু হেসে বি’ষন্ন গলায় বলল,
“ভালোবাসা পেয়ে কি হলো বলো? ভালোবাসার মানুষটাকেই তো হারাতে হচ্ছে।

তোহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“আপনি প্লিজ আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবেন না। আব্বু আপনাকে ঠিক মেনে নিবে। আমি আপনার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না। শুধু একটু কথা বললেই হবে। কথা বলবেন তো?

“তোমার আব্বু যদি আমায় মেনে না নেয়? তোমার কথা অনুযায়ী আমি এখন তোমার সাথে কথা বললাম কিন্তু পরে যদি তোমার আব্বু আমায় মেনে না নেয় তখন তো কথা না বলে থাকতে হবে। কথা বলতে বলতে আরো মায়া বাড়বে, ভালোবাসা বাড়বে। তখন কথা না বললে ক’ষ্টটা আরো গভীর হবে।

নাহিদের কথাটা তোহা শুনলো না। জে’দ ধরে বসে রইল। সে কিছুতেই কথা না বলে থাকতে পারবে না। তাইতো দৃঢ় গলায় বলল,
“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবেন না। আব্বুকে আমি রাজি করাবো। আমি যে করেই হোক আব্বুকে রাজি করাবো। আপনি শুধু কথা বলা বন্ধ করবেন না।

নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ক’ষ্ট তো তারও কম হচ্ছে না। শুধু তোহার মতো সেটা প্রকাশ করতে পারছে না। প্রকাশ করলেই তো তোহা আরো জে’দ ধরবে। নাহিদ শীতল ক’ন্ঠে বলল,
“তুমি অবুঝ না তোহা। একটু বোঝার চেষ্টা করো।

তোহা এবার কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“আপনি ও তো অবুঝ না। আপনি কেন আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করছেন না? আমি তো একটু কথা বলতেই চাইছি। বেশি কিছু চাইছি কি?

নাহিদ তোহার একনাগাড়ে বলা কথা গুলো শুনল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“তুমি যদি তোমার আব্বুকে রাজি করাতে পারো তবেই আমি কথা বলবো। তার আগে না।

নাহিদ কথাটা বলে তোহাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কেটে দিল। সে তো এমনিই তোহার প্রতি দুর্বল। আর কতক্ষন এভাবে কঠোর হয়ে থাকা যেত? হয়তো আরেকটু পরে তোহার কথাই মেনে নিত। তাইতো কথা না বাড়িয়ে কলটা কেটে দিল।
_____________

সকালে ঘুম থেকে উঠে তোহা ওয়াশরুমে গেল। চোখ মুখ ধুয়ে রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের চেহারা দেখে নিজেই চমকে গেল। ইশ, কতো বিধ্ব’স্ত দেখাচ্ছে তাকে। চোখ মুখ যেন বসে গিয়েছে। এমন হবেই তো। দুটো দিন খাওয়ার সাথে কোনো যোগসূত্র নেই। সেই সাথে মনের অবস্থাও ভালো না। কান্না করেই সময় কেটেছে তার।

তোহা চুল গুলো আঁচড়ে নিল। রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। যে করেই হোক আব্বুকে রাজি করাতেই হবে। আব্বু তো তাকে ভালোবাসে। তাকে নিশ্চয়ই ক’ষ্ট পেতে দেবে না। তোহা নিচে নেমে দেখল তারেকুল খবরের কাগজ পড়ছেন। তোহা শুকনো ঢোক গিলে শীতল কন্ঠে ডাকল,
“আব্বু।

মেয়ের ডাকে তারেকুলের বুকটা জুড়িয়ে গেল। চোখ তুলে তোহার দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলেন। একি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার? মেয়েটার চোখ মুখ যেন শুকিয়ে গিয়েছে। তারেকুল উ’দ্বিগ্ন স্বরে বলল,
“তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?

তারেকুলের কথায় তোহা একছুটে তারেকুলের পাশে গিয়ে বসল। তারেকুলের দিকে তাকিয়ে ভেজা ক’ন্ঠে বলল,
“আমার ক’ষ্ট হচ্ছে আব্বু। তুমি দেখো, তোমার মামনি ক’ষ্ট পাচ্ছে।

তারেকুলের বুকটা মেয়ের কথায় কেঁপে উঠল। তার একমাত্র আদরের মেয়েটা ক’ষ্ট পাচ্ছে। তোহার ক’ষ্টের কারণটা ধরতে পেরে তারেকুল মুখে কা’ঠিন্যতা ফুটিয়ে তুলল। তোহা তারেকুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আব্বু তুমি আমার ক’ষ্ট দূর করবে না? তোমার কথা মানতে উনি আমার সাথে কথা বলছে না। তুমি প্লিজ উনাকে মেনে নাও। আমি ক’ষ্ট স’হ্য করতে পারছি না আব্বু।

তোহার আহাজারি করে বলা কথাগুলোতে তারেকুলের মন গলল না। রেস্টুরেন্টের সামনে সেদিন সুমনের বলা কথাগুলো কানে বাজলো। তারেকুল সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“তুমি যা চাইছ তা কখনোই সম্ভব হবে না। আমি ওই ছেলেটাকে মেনে নিব না।

তারেকুল কথাটা বলে এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। হনহন করে চলে গেল। তোহা ফ্যাল’ফ্যল দৃষ্টিতে তারেকুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। মনকে বোঝাতে পারছে না। আব্বু সত্যি চলে গেল? তোহা বি’ষন্ন গলায় বলল,
“আমার ক’ষ্ট হচ্ছে জেনেও তুমি চলে গেলে? তুমি এতটা নি’ষ্ঠুর কীভাবে হলে আব্বু?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে