অবিবাহিত বউ পর্ব-২৩

0
325

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

বিকালে তোহার মোবাইলে অরিনের কল এলে তোহা কল রিসিভ করে কানে দেয়। ওপাশ থেকে অরিন উ’দ্বিগ্ন হয়ে বলল,
“কিরে তোহা? আজকাল তো তোর কোনো খবরই পাচ্ছি না। ভার্সিটিতে ও যাচ্ছিস না। কোনো সমস্যা হয়েছে?

তোহা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলল। সমস্যা? হ্যাঁ‌। সম’স্যাই তো। এটা তো তার জীবনে সবচেয়ে বড় সম’স্যা। এমন কঠিন সম’স্যার মুখোমুখি এর আগে কখনো হয়নি। তোহা মলিন ক’ন্ঠে বলল,
“কিছুনা।

তোহার মলিন কন্ঠ শুনে অরিন বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে তা বুঝতে পারল না। শীতল স্ব’রে বলল,
“কি হয়েছে তোহা? তুই আমার কাছে কথা লুকো’চ্ছিস? আমার কাছে? কি হয়েছে বল।

তোহা এবার মুখ খুলল। দুদিনের সম’স্ত ঘটনা বলে চুপ করে রইল। অরিন সব শুনে অবাক কন্ঠে বলল,
“আঙ্কেল তোর কথা শুনছে না? তুই কান্না করেছিস জেনেও মুখ বুজে স’হ্য করছে?

তোহা কোনো জবাব দিল না। চুপ করে থাকল। অরিন দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে আবারো বলল,
“আমি তো জানি আঙ্কেল তোকে অনেক ভালবাসে। এখন হয়তো রাগের কারনে মেনে নিতে চাইছে না। পরে ঠিকই মেনে নেবে। তুই ক’ষ্ট পাস না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস। আমি রাখছি, হ্যাঁ।
______________

রাতের বেলা তারেকুল খাবার টেবিলে খেতে এলো। তখনই উদাস মুখে সানজিদাকে বসে থাকতে দেখল। চেয়ারের কোথাও তোহার দেখা পেল না। তারেকুল গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“তোহা কোথায়? তোহা খাবে না?

তারেকুলের প্রশ্নে সানজিদা যেন গ’র্জে উঠলেন। চোখ মুখ শক্ত করে চেঁচিয়ে বলল,
“তোহার কথা জেনে তুমি কি করবে? তোমার খাওয়া তুমি খাও। তোহা খেলো কি খেলো না তা জেনে তোমার কি? মেয়েটার দিকে তোমার খেয়াল আছে? সকালে যে এতো করে বলল মেয়েটা ক’ষ্ট পাচ্ছে তাতে তোমার জে’দের কি একটুও নড়চড় হয়েছে? তুমি তো তোমার আত্ম’সম্মান নিয়ে আছো।

সানজিদার কথায় তারেকুল হত’ভম্ব হয়ে গেল। বিয়ের পর এই প্রথম মুখের উপর চেঁচিয়ে কথা বলল সানজিদা। তারেকুল ধমক দিয়ে বলল,
“তুমি আমার সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছো?

তারেকুলের ধ’মকে সানজিদার ভাব’ভঙ্গির কি’ঞ্চিত ও হেরফের হলো না। সে আগের মতোই চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“চেঁচাবো না তোমার সাথে? তুমি কি চেঁচানোর মতো কাজ করছো না? কিসের আত্ম’সম্মান তোমার? হ্যাঁ, কিসের আত্ম’সম্মান? এই আত্ম’সম্মান দিয়ে তুমি কি করবে? মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে তখন তোমার আত্ম’সম্মান আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেয় কি-না দেখব আমি। আমার কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রেখো।

তারেকুল এবার নড়েচড়ে উঠলেন। সত্যি তো মেয়েটা যদি কোনো অঘ’টন ঘটিয়ে ফেলে। সানজিদা এবার দু’চোখ বন্ধ করে শ্বা’স ফেলল। নিজেকে শান্ত করে শীতল ক’ন্ঠে বলল,
“আচ্ছা, তোমার রাগটা কিসের বলো তো? নাহিদের জন্য তোমার সম্মান’হানি হয়েছে বলে? একবার ভেবে দেখো তো। নাহিদ দুয়েকটা কথা বলেছিল আর সেই কথাটা সত্য নাকি মি’থ্যে সেটা যাচাই না করেই সুমন তোমাকে তোহাকে কথা শুনালো। এখানে কি সুমনের কোনো দোষ নেই? সুমনের কি উচিত ছিল না নাহিদের কথাটা সত্যি না মি’থ্যে যাচাই করার?

তারেকুল চুপ করে থাকল। সানজিদার কথা গুলো যে মি’থ্যে নয় সেটা বুঝতে পারল। সানজিদা আবারো বলল,
“সুমন কিন্তু তোহার একটা কথাও শুনেনি। এতোদিন যেহেতু অপেক্ষা করতে পেরেছে তাহলে কয়েকটা কথা শুনলে কি এমন ক্ষ’তি হতো? নাহিদকে দেখো। তোমার কথা নি’শ্চুপে মেনে নিল। কোনো কথা বলল না। তোমার কথায় তোহার সাথে কথা বলা ব’ন্ধ করে দিল।

তারেকুল এবারো চুপ করে রইল। কোনো কথা বলল না। সানজিদার কথা গুলো যে সত্যি সেটা বুঝতে পারল। নিজের ভুলটা ও বুঝতে পারল। সানজিদা আবারো বলল,
“ওদের মেনে নাও। একবার যাও না তোহার কাছে। একবার তোহাকে গিয়ে ডাক দাও। মেয়েটা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমার থেকেও তোমায় বেশি ভালোবাসে। তোমার ডাক উ’পেক্ষা করতে পারবে না। একবার যাও না।

তারেকুল সানজিদার কথা শুনল। নি’শ্চুপে হেঁটে চলে গেল তোহার রুমের সামনে। তোহার রুমটা ভেতর থেকে আটকানো। তারেকুল দরজায় আঙুল দিয়ে ঠক ঠক করে শব্দ করল। তোহা ভেতরে বিছানায় শুয়ে ছিল। আম্মু এসেছে ভেবে বলল,
“তুমি চলে যাও আম্মু। আমায় ডাকবে না। আমি এখন খেতে যাব না।

তারেকুল হুট করে যেন কথা বলতে ভুলে গেলেন। “আমি” শব্দটাও তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না। আবারো দরজায় টোকা দিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে ধা’তস্থ করে বলল,
“দরজাটা খুলো।

আব্বুর গলা পেয়ে তোহা ধরফরিয়ে উঠে বসল। আব্বু এসেছে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। কিন্তু নাহিদকে মেনে না নেওয়ায় কথাটা মনে পড়তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল। তোহা বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে দিল। তারেকুল তোহার মলিন মুখটা দেখে ক’ষ্ট পেল। তোহা বিছানায় গিয়ে বসতেই তারেকুল বলে উঠল,
“আব্বু সরি মামনি।

তোহা অবাক দৃষ্টিতে তারেকুলের দিকে তাকাল। তোহার দৃষ্টি থেকে তারেকুল বলে উঠল,
“আব্বু তোমায় অনেক ক’ষ্ট দিয়েছে। তোমাকে প্রমিজ করছি আমি আর তোমায় ক’ষ্ট পেতে দিব না। আব্বু অনেক অনেক সরি মামনি।

তারেকুলের কথায় তোহার চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করে উঠল। বুকের ভেতরটায় সুখের ঢেউ বয়ে গেল। অবি’শ্বাস্য ক’ন্ঠে বলে উঠল,
“তুমি সত্যি বলছো আব্বু? তুমি আমায় আর ক’ষ্ট পেতে দিবে না? তুমি উনাকে মেনে নিবে?

তারেকুল মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। বিছানায় তোহার পাশে আয়েশ করে বসে বলল,
“দেখি ছেলেটার নাম্বার দে তো।

তোহা অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরক্ষনেই নাহিদের নাম্বারটা গড়গড় করে বলে দিল। তারেকুল নিজের মোবাইল দিয়ে নাহিদের নাম্বারে কল দিল। নাহিদ কলটা রিসিভ করতেই কিছুটা গ’ম্ভীর গলায় বলে উঠল,
“এই ছেলে তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমার মেয়েকে ক’ষ্ট দিচ্ছো।

নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলল। অচেনা নাম্বার থেকে কেউ ফোন দিয়ে এমন কথা বলায় কিছুটা বি’ব্রত বোধ করল। শীতল স্ব’রে বলল,
“আপনার মেয়েকে আমি কেন ক’ষ্ট দেব? কে আপনার মেয়ে? আমি তো আপনাকেই চিনি না। আপনার মেয়েকে চিনব কি করে?

ফোনটা লাউড স্পিকারে থাকায় তোহা নাহিদের কথাগুলো শুনতে পেল। এবং নাহিদের কথায় মুখ টিপে হাসতে লাগল। তারেকুল বলল,
“এখন তো আমাকে চিনবেই না। আমি তোমাকে মেনে নিব না বলেছি কিন্তু আমার মেয়েকে ক’ষ্ট দিতে বলিনি। তুমি কোন সাহসে আমার মেয়েকে ক’ষ্ট দিচ্ছো।

নাহিদ এবার বুঝতে পারল তারেকুল কল দিয়েছে। তারেকুলের কথায় নাহিদ ভড়কে গেল। আমতা-আমতা করে বলল,
“আঙ্কেল আমি কি…..

নাহিদকে কথাটা শেষ করতে দিল না তারেকুল। তার আগেই বলে উঠল,
“আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আমি শুধু আমার মেয়েকে খুশি দেখতে চাই। আমার মেয়ের যদি একটু ও ক’ষ্ট হয় সব দায়ভার তোমার।

নাহিদ হেসে বলল,
“আপনার মেয়েকে আমি কখনো আমার কারণে ক’ষ্ট পেতে দেব না।
_____________

ঘড়িতে যখন বারোটা বাজলো ঠিক তখনই আগের মতোই তোহার ফোনটা বেজে উঠলো। তোহা ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে নাহিদ নেশা’লো কন্ঠে বলল,
“এই বউ।

তোহা আবেশে চোখ দুটো ব’ন্ধ করে ফেলল। ডাকটা একেবারে বুকের ভেতরে গিয়ে লেগেছে। তোহা মুচকি হেসে মুখ ভেং’চি দিয়ে বলল,
“এখন বউ বলতে আসছে। আমি যে এতো করে বললাম আব্বু ঠিক মেনে নেবে তখন তো কথা শুনলেন না। তখন ঠাস করে মুখের উপর কলটা কেটে দিলেন।

তোহার কথায় নাহিদ হেসে উঠল। ফিসফিসিয়ে বলল,
“সরি বউ।

“এতো বউ বউ করেন কেন? বিয়ে না করে বউ কেন বলবেন? বিয়ে করার পর বউ বলবেন।

“আরে তুমি বুঝ না কেন? এখন যেহেতু বিয়ে করিনি সেহেতু তুমি আমার অবিবাহিত বউ। বিয়ে করে ঘরে তুলে আনলে বিবাহিত বউ হবে। তো বউ তো বলাই যায়।

তোহা হাসলো। নাহিদ আবারো বলল,
“তোমাকে বিয়ে করে বুকে জড়িয়ে আমার শূন্য বুকটা পুর্ন করবো।

“আপনি জানেন আমার এই কয়টা দিন কেমন বিদ’ঘুটে লেগেছে। কতোটা যন্ত্র’ণায় ছটফট করতে হয়েছে। কিন্তু এখন, এখন আপনার সাথে কথা বলার সময় মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটা আমি।

নাহিদ হাসল। যন্ত্র’ণা কি তার কম হয়েছিল? উহু, কম হয়নি। বরং তোহার থেকে বেশিই হয়েছিল। তোহা তো কান্না করতে পেরেছে, মুখ ফুটে বলতে পেরেছে ক’ষ্টের কথা। কিন্তু তার ক’ষ্টতা কেবল সে নিজেই উপ’লব্ধি করেছিল, খুব গোপনে নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এখন যেন সব ক’ষ্ট, সব যন্ত্র’ণার অবসান ঘটল। পৃথিবীটা যেন রঙিন হয়ে উঠল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে